Site icon BnBoi.Com

নক্ষত্র জয়ের জন্য – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

নক্ষত্র জয়ের জন্য - নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

অমানুষ

শিম্পাঞ্জি, তোমাকে আজ বড় বেশি বিমর্ষ দেখলুম
চিড়িয়াখানায়। তুমি ঝিলের কিনারে।
দারুণ দুঃখিতভাবে বসে ছিলে। তুমি
একবারও উঠলে না এসে লোহার দোলনায়;
চাঁপাকলা, বাদাম, কাবলি-ছোলা–সবকিছু
উপেক্ষিত ছড়ানো রইল। তুমি ফিরেও দেখলে না।
দুঃখী মানুষের মতো হাঁটুর ভিতরে মাথা গুঁজে
ঝিলের কিনারে শুধু বসে রইলে একা।

শিম্পাঞ্জি, তোমাকে কেন এত বেশি বিমর্ষ দেখলুম?
কী দুঃখ তোমার? তুমি মানুষের মতো
হতে গিয়ে লক্ষ-লক্ষ বছরের সিঁড়ি
ভেঙে এসেছিলে, তুমি মাত্রই কয়েকটা সিঁড়ি টপকাবার ভুলে
মানুষ হওনি। এই দুঃখে তুমি ঝিলের কিনারে
বসে ছিলে নাকি?

শিম্পাঞ্জি, তোমাকে আজ বড় বেশি দুঃখিত দেখলুম।
প্রায় হয়েছিলে, তবু সম্পূর্ণ মানুষ
হওনি, হয়তো সেই দুঃখে তুমি আজ
দোলনায় উঠলে না; তুমি ছেলেবুড়ো দর্শক মজিয়ে
অর্ধমানবের মতো নানাবিধ কায়দা দেখালে না।
হয়তো দেখনি তুমি, কিংবা দেখেছিলে,
দর্শকেরা পুরোপুরি বাঁদুরে কায়দায়
তোমাকে টিট্‌কিরি দিয়ে বাঘের খাঁচার দিকে চলে গেল।

কবিতা কল্পনালতা

ভালবাসলে শান্তি হয়, কিন্তু আমি কাকে আজ ভালবাসতে পারি?
কবিতাকে? কবিতার অর্থ কী? কবিতা
বলতে কি এখনও আমি কল্পনালতার ছবি দেখে যাব?
যে-ছবি সকলে দেখে, যে-ছবি দেখবার জন্যে অনেকে এখনও,
এখনও অর্থাৎ এই উনিশ শো পঁয়ষট্টি সনে
হরেক অদ্ভুত কর্মে সারা দিন আঙুল বাঁকিয়ে তবু বসে থাকে
অচিরে কুয়াশা কাটবে এই নাবালক প্রতীক্ষায়?
আমিও কি বসে থাকব? আমিও কি একবার বুঝব না
কুয়াশার অন্তরালে অন্য কোনো মূর্তি নেই?
এই অবয়বহীন ধবধবে দৃশ্যের আড়ালে
অন্য কোনো দৃশ্য নেই?
থাকলেও দ্বিতীয় এক কুয়াশার দৃশ্য পড়ে আছে,
জেনে কি একেই আমি কবিতার সম্মান দেব না?
কবিতা মানে কি আজও কল্পনালতায় কিছু কুসুম ফোটানো?
কবিতা মানে এই কুয়াশার ভিতরে একবার
বাঘ সিংহ হায়েনা ইত্যাদি
পশুর দাঁতের শক্তি বুঝে নেওয়া নয়?

স্পষ্ট কথাটাকে আজ অন্তত একবার খুব স্পষ্ট করে বলে দেওয়া ভাল।
অন্তত একবার আজ বলা ভাল,
যা-কিছু সামনে দেখছি, ধোঁয়া বা পাহাড় কিংবা পরস্পর-আলাপনিরত
ক্ষিপ্র পশু–
হয়তো এ ছাড়া কোন দৃশ্য নেই।
বলা ভাল,
কল্পনালতায় ফুল কুয়াশা কাটলেও কেউ দেখতে পাবে না
কেননা কুয়াশা আজ প্রত্যেকের মগজে ঢুকেছে। তাই
কবিতাকে ভালবেসে, ক্রমাগত ভালবেসে-বেসে
তোমাকে আমাকে আজ অন্তত একবার
ভিতরে-বাহিরে ব্যাপ্ত এই অন্তহীন কুয়াশায়
আলাপে-উৎসুক ধূর্ত বাঘের খাঁচার মধ্যে হেঁটে যেতে হবে।

কিচেন গারডেন

ফুটেছ গোলাপ তুমি কলকাতার কিচেন গারডেনে।
বিলক্ষণ অন্যায় করেছ। তুমি জানো,
এখন খাদ্যের খুব অনটন।
এখন চিচিঙ্গে, লাউ, ঢ্যাঁড়শের উদ্দেশে ধাবিত
জনতাকে ফেরানো যাবে না।
অন্য দিকে।
বাড়ির হাতায়, শীর্ষে, বারান্দায়, ঝুলন্ত কারনিসে
যেখানে যেটুকু ফালতু জায়গা ছিল–
ইনচি-সেণ্টিমিটারের চৌখুপি বিন্যাসে সব বুঝে নিয়ে
এখন সবাই
বাতিল কড়াই, গামলা, কাঠের বারকোষে
পালং, বরবটি, শিম, ধানিলঙ্কা
ইত্যাদি বসিয়ে যাচ্ছে।

তারই মধ্যে নিঃশব্দে দিয়েছ তুড়ি, ফুটেছ গোলাপ।
অন্যায় করেছ।
“আরেব্বাস, কত বড় গোলাপ ফুটেছে!”
কে যেন উদ্‌ভ্রান্ত স্বরে বলেছিল; কিন্তু তার ভোটার জোটেনি।
জনতা হুড়মুড় করে প্রাইভেট বাসের
বাম্পারে দাঁড়িয়ে গিয়ে হুলুধ্বনি দিয়ে উঠল : গোলদিঘি চলো হে।

শুধুই গোলদিঘি বলে কথা নেই। উত্তরে দক্ষিণে
সমস্ত কলকাতা
জুড়ে আজ চমৎকার সবজির বাগান
জমে উঠছে।
শুধুই গোলাপ বলে কথা নেই। সমস্ত ফুলের
বোঁটাসুদ্ধ খেয়ে ফেলছে চ্যাপলিনি তামাসা।
সবাই টোমাটো, উচ্ছে, ধুঁদুলের মধ্যে ডুবে গিয়ে
মনে মনে
অঙ্ক কষছে, কোথায় কতটা জমি এক লপ্তে চষে ফেলা যায়–
গঙ্গার জেটিতে, ডকে, নির্বাচনী মিটিঙে, সন্ধ্যার
ময়দানে অথবা শতবার্ষিকী ভবনে।

কেন যাওয়া, কেন আসা

অন্ধকারের মধ্যে জ্বলে ভালবাসা,
পাখিটা সব বুঝতে পারে।
কেন যাওয়া, গিয়েও কেন ফিরে আসা,
নিষেধ কেন চার দুয়ারে।
এবং কেন ফোটাও আলোর পরিভাষা
খাঁচার মধ্যে, অন্ধকারে।

পাখি জানে, ঘরের বাইরে নদী পাহাড়
লুঠ করে নেয় সকল সোনা,
দূরের দর্জি মেঘে বসায় রূপালি পাড়;
দূরে তোমার সায় ছিল না।
কিন্তু এই যে চাবির গোছা, এও তো তোমার
মস্ত বড় বিড়ম্বনা।

পাখিটা সব বুঝতে পারে, চালাক পাখি
তাই আসে ফের খাঁচার ধারে।
আমিও তেমনি রঙ্গমঞ্চে ঘুরতে থাকি
স্বর্গেমর্তে বারে-বারে।
দূরে গিয়েও সেইমতো হাত বাড়িয়ে রাখি
বুকের মধ্যে, অন্ধকারে।

তার চেয়ে

সকলকে জ্বালিয়ে কোনো লাভ নেই।
তার চেয়ে বরং
আজন্ম যেমন জ্বলছ ধিকিধিকি, একা
দিনরাত্রি
তেমনি করে জ্বলতে থাকো,
জ্বলতে-জ্বলতে ক্ষয়ে যেতে থাকো,
দিনরাত্রি
অর্থাৎ মুখের
কশ বেয়ে যতদিন রক্ত না গড়ায়।

একদিন মুখের কশ বেয়ে
রক্ত ঠিক গড়িয়ে পড়বে।
ততদিন তুমি কী করবে?
পালিয়ে-পালিয়ে ফিরবে নাকি?

পালিয়ে-পালিয়ে কোনো লাভ নেই।
তার চেয়ে বরং
আজন্ম যেমন আছ, একা
পৃথিবীর মাঝখানে দাঁড়িয়ে
দিনরাত্রি
তেমনি করে জ্বলতে থাকো,
জ্বলতে-জ্বলতে ক্ষয়ে যেতে থাকো,
দিনরাত্রি
অর্থাৎ নিয়তি
যতদিন ঘোমটা না সরায়।

নিয়তির ঘোমটা একদিন
হঠাৎ সরবে।
সরে গেলে তুমি কী করবে?
মুখে রক্ত, চোখে অন্ধকার
নিয়ে তাকে বলবে নাকি “আর যে না-জ্বলি”?

না না, তা বোলো না।
তার চেয়ে বরং
বোলো, “আমি দ্বিতীয় কাউকে
না-জ্বালিয়ে একা-একা জ্বলতে পেরেছি,
সে-ই ভাল;
আগুনে হাত রেখে তবু বলতে চেয়েছি,
‘সবকিছু সুন্দর’–
সে-ই ভাল।”
বোলো যে, এ ছাড়া কিছু বলবার ছিল না।

দুপুরবেলা বিকেলবেলা

।।১।।
কথা ছিল, ঘরে যাব; ‘ঘর হৈল পর্বত প্রমাণ’।
চেয়ে দেখি দিগন্ত অবধি
দুপুরেই এঁকে দিচ্ছ সমস্ত স্বপ্নের অবসান।

বয়সের নদী–
আঁজলায় সামান্য জল তুলে ধরে। বুকের ভিতরে
যতখানি জল, তার চতুর্গুণ নুড়ির ছলনা।
খরায় শুকিয়ে ওঠে ধান।

।।২।।
সারা দুপুর খরায় তোমার ধান পুড়েছে।
বিকেলবেলা
হঠাৎ শুরু উথালপাতাল জলের খেলা।
জল ঘুরে যায়, জল ঘুরে যায় নিখিলবিশ্বচরাচরে–
আমার ঘরে, তোমার ঘরে!

দুপুরবেলায় নিলাম

অকস্মাৎ কে চেঁচিয়ে উঠল রক্তে ঝাঁকি দিয়ে
“নিলাম, নিলাম, নিলাম!”
আমি তোমার বুকের মধ্যে উঁকি মারতে গিয়ে
চমকে উঠেছিলাম।

অথচ কেউ কোথাও নেই তো, খাঁ-খাঁ করছে বাড়ি,
পিছন দিকে ঘুরে
দেখেছিলাম, রেলিং থেকে ঝাঁপ দিয়েছে শাড়ি
একগলা রোদ্দুরে।

বারান্দাটা পিছন দিকে, ডাইনে-বাঁয়ে ঘরে,
সামনে গাছের সারি।
দৃশ্যটা খুব পরিচিত, এখনও পর-পর
সাজিয়ে নিতে পারি।

এবং স্পষ্ট বুঝতে পারি, বুকের মধ্যে কার
বুকের শব্দ বাজে।
হায়, তবু সেই দ্বিপ্রাহরিক নিলাম-ঘোষণার
অর্থ বুঝি না যে।

“নিলাম নিলাম!” কিসের নিলাম? দুপুরে দুঃসহ
সকাল বেলার ভুলের?
এক বেণীতে ক্ষুব্ধ নারীর বুকের-গন্ধবহ
বাসী বকুল ফুলের?

“নিলাম নিলাম!” ঘণ্টা বাজে বুকের মধ্যে, আর
ঘণ্টা বাজে দূরে।
“নিলাম নিলাম।” ঘণ্টা বাজে সমস্ত সংসার
সারা জীবন জুড়ে।

দেখা-শোনা, ক্বচিৎ কখনো

সর্বদা দেখি না, শুধু মাঝে-মাঝে দেখতে পাই।
যেমন গভীর রাত্রে, অন্ধকারে,
ক্বচিৎ কখনো
দুঃখের তাপিত বুক, বুকের উন্মত্ত ওঠানামা
করতলে ধরা পড়ে,
যেমন সমস্ত কিছু আঙুলের চক্ষু দিয়ে দেখা যায়!
সেইমতো।
যে-শরীর কোথাও দেখিনি, তার নতজানু অর্পিত ভঙ্গিমা;
যে-ওষ্ঠ কোথাও নেই, তার নিমন্ত্রণ;
যে-কঙ্কণ কোথাও ছিল না, তার রিনিঠিনি;
যে-আতর কোথাও বাসিনি, তার মাতাল সুবাস–
সব দেখা যায়।
সর্বদা শুনি না, শুধু মাঝে-মাঝে শুনতে পাই।
যেমন বধির তার কব্জির ঘড়িকে
কপালে ঠেকায়;
ঠেকিয়ে, যন্ত্রের হৃৎপণ্ডের ধুকধুক ধ্বনি
শুনে নেয়;
যেমন ললাট-লিপি তা-ই তার।
সেইমতো
শ্রবণে পড়ে না ধরা যত কিছু, যা-কিছু। রাত্রির
খরস্রোত প্রতীক্ষার
বিশাল ধুকধুক। ঘন অন্ধকারে
নয়নের তরল আগুন। যেন আগুলের মধ্যে যে বাসনা
পুড়ে যাচ্ছে, এই মাত্র তার
শব্দহীন অথচ বুকের-রক্ত-জমানো ভীষণ আর্তনাদ
শোনা গেল।

নক্ষত্রজয়ের জন্য

হুশ করে নক্ষত্রলোকে উঠে যেতে চাই
কিন্তু তার জন্য, মহাশয়,
স্প্রিং লাগানো দারুণ মজবুত একটা শব্দের দরকার।
সেইটের উপরে গিয়ে উঠতে হবে।
প্রাণপণে বাতাস টেনে ফুসফুস ফুলিয়ে
নক্ষত্রলোকের দিকে গর্বিত ভঙ্গিতে একবার
চোখ রাখতে হবে।
তারপরে প্রাণপণ জোরে লাথি মারতে হবে সেই শব্দের পাঁজরে!
আসলে কী ব্যাপার জানেন,
রক্তের ভিতরে একটা বিপরীত বিরুদ্ধ গতিকে
সঞ্চারিত করা চাই।

একটা শব্দ চাই, একটা শব্দ চাই, মহাশয়।
নক্ষত্রজয়ের শব্দ কিছুতে পাচ্ছি না। তাই
আপাতত
কুকুরের মতো একটা বশংবদ শব্দ দিন,
যেটাকে পায়ের কাছে কিছুক্ষণ ইচ্ছেমতো নাচিয়ে খেলিয়ে,
ঘাড়ে ধরে, ঘরের বাইরে বারান্দায়
ছুড়ে দিতে পারি।
সুপুরির মতো একটা শব্দ দিন,
যেটাকে দাঁতের মধ্যে ভেঙে পিষে ছাতু করে দিয়ে
থুতুতে মিশিয়ে আমি ঘৃণাভরে চারদিকে ছিটিয়ে দিতে পারি।
কিংবা–কিংবা–
বুঝতেই পারছেন, সব নাট-বল্‌টু একে-একে খুলে যাচ্ছে;
বুঝতেই পারছেন, নৌকো ফেঁসে যাচ্ছে;
বুঝতেই পারছেন, আমি ক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছি, মহাশয়।

‘খ্যাপা খুঁজে-খুঁজে ফেরে পরশপাথর।’
আমি একটা শব্দ খুঁজছি, মহাশয়।
নক্ষত্রলোকের দিকে যাব বলে আমি
চল্লিশ বছর ধরে হাটেমাঠে টই-টই রোদ্দুরে
বিস্তর শব্দের ঘাড় মটকালুম। অথচ দেখুন,
‘আচমন’-এর তুল্য কোনো সুলক্ষণ শব্দ আমি এখনও পাইনি।
দুই কশে গড়াচ্ছে রক্ত, চক্ষু লাল, বুকের ভিতরে
গনগনে আগুন জ্বেলে
চল্লিশ বছর ধরে শুধু আমি হাতের চেটোর উলটো পিঠে
কপাল ঘষছি।

অথচ ভাবুন,
কিছু সুলক্ষণ শব্দ হাতের সামনেই ছিল কি না।
বহু সুলক্ষণ শব্দ হাতের সামনেই ছিল, কিন্তু আমি আজ
আচমকা তাদের দেখলে চিনতে পারি না।
একদা-দুর্দান্ত-কিন্তু-রকবাজের-হাতে-পড়ে-নষ্ট-হয়-যাওয়া
সমুন্নত সুন্দর-ললাট বহু শব্দ ইদানীং
হাড্ডিসার, রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিড়ি ফোঁকে।
জাহাজ, পতন, মৃত্যু, মাস্তুল প্রমুখ
পরাক্রান্ত শব্দগুলি
এখন ক্রমেই
ইঁদুরের মতন ছুঁচলো-মুখ হয়ে যাচ্ছে, মহাশয়।
পাউডার-পমেড-মাখা যে-কোনো ছোকরার
পুরনো কম্বলে লাথি ঝাড়লেই ‘পতন’ ‘মৃত্যু’ ‘মাস্তুল’ ইত্যাদি
ইঁদুর কিচকিচ করে ওঠে।

কিচকিচ কিচকিচ, শুধু কিচকিচ কিচকিচ ছাড়া ইদানীং
অন্য-কোনো ধ্বনি
শুনতে পাই না!
শুধুই লোভের ধূর্ত মার্কামারা মুখ ভিন্ন অন্য-কোনো মুখ
দেখতে পাই না।
বুঝতেই পারছেন, সব নাট-বল্‌টু একে-একে খুলে যাচ্ছে;
বুঝতেই পারছেন, নৌকো ফেঁসে যাচ্ছে,
বুঝতেই পারছেন, আমি ক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছি, মহাশয়।

অথচ এখনও আমি সুলক্ষণ একটা-কোনো শব্দের উপরে
সওয়ার হবার জন্যে বসে আছি।
অথচ এখনও আমি নক্ষত্রলোকের দিকে যেতে চাই।
অথচ এখনও আমি মেঘের পৈঠায় মা ঝুলিয়ে
জ্যোৎস্নায় কুলকুচো করব, এইরকম আশা রাখি।
একটা শব্দ দিন, একটা শব্দ দিন, মহাশয়।
রক্তের ভিতরে ঘোর জলস্তম্ভ ঘটিয়ে যা মুহূর্তে আমাকে
শূণ্যলোকে ছুড়ে দেবে–
চাঁদমারি-খসানো আমি এমন একটাই মাত্র শব্দ চাই।
নেই নাকি?
তবে দিন,
বুলেটের মতো একটা শব্দ দিন। আমি
যেটাকে বন্দুকে পুরে, ট্রিগারে আঙুল রেখে–কড়াক পিং–
নকল বুঁদির কেল্লা ভেঙে দিয়ে ফাটা কপালের রক্ত মুছে
হেসে উঠতে পারি।

নিজের কাছে প্রতিশ্রুতি

বলেছিলে, দেবেই দেবে।
আজ না হোক তো কাল, না হোক তো পরশু দেবে।
আলোর পাখি এনে দেবে!
তবে কেন এখন তোমার এই অবস্থা?
কথা রাখো, উঠে দাঁড়াও,
আবার দীর্ঘ বাহু বাড়াও আলোর দিকে।
আকন্দ ফুল মুখে রেখে ধুলোর মধ্যে শুয়ে আছ,
এই কি তোমার কথা রাখা?
আমি তোমার দুই জানুতে নতুন শক্তি ঢেলে দিলাম,
আবার তুমি উঠে দাঁড়াও।
আমি তোমার ওষ্ঠ থেকে শুষে নিলাম সমস্ত বিষ,
আবার তুমি বাহু বাড়াও আলোর দিকে।
রাখো তোমার প্রতিশ্রুতি।

যে-দিকে চাই, দৃশ্যগুলি এখন একটু ঝাপসা দেখায়;
জানলা তবু খোলা রাখি।
যে-দিকে যাই, নদীর রেখা একটু-একটু পিছিয়ে যায়।
বুঝতে পারি, অন্তরিক্ষে জলে-স্থলে
পাকিয়ে উঠছে একটা-কোনো ষড়যন্ত্র।
বুঝতে পারি, কেউ উচাটন-মন্ত্র পড়ছে কোনোখানে।
তাই আগুনের জিহ্বা এখন লাফ দিয়ে ছোঁয় আকাশটাকে।
একটা-কিছু ব্যাপার চলছে তলে-তলে,
তাই বাড়িঘর খাঁখাঁ শূন্য, শুকিয়ে যাচ্ছে তরুলতা।
বুঝতে পারি ক্রমেই এখন পায়ের তলায়
বসে যাচ্ছে আল্‌গা মাটি,
ধসে যাচ্ছে রাস্তা-জমি শহরে আর মফস্বলে।

তাই বলে কি ধুলোর মধ্যে শয্যা নেব?
বন্ধ করব চক্ষু আমার?
এখন আরও বেশিরকম টান্‌-বাঁধনে দাঁড়িয়ে থাকি।
দৃষ্টি ঝাপসা, তবুও জানি, চোখের সামনে
আজ না হোক তো কাল, না হোক তো পরশু আবার
ফুটে উঠবে আলোর পাখি।

বলেছিলে, দেবেই দেবে।
যেমন করেই পারো, তুমি আলোর পাখি এনে দেবে।
তবে কেন ধুলোর মধ্যে শুয়ে আছ?
আবার তুমি উঠে দাঁড়াও।
তবে কেন আনন্দ ফুল মুখে তোমার?
আবার দীর্ঘ বাহু বাড়াও আলোর দিকে।
আজ না হোক তো কাল, না হোক তো পরশু তুমি
পাখিটাকে ধরে আনবে, কথা ছিল।
এই কি তোমার কথা রাখা?
উঠে দাঁড়াও, রাখো তোমার প্রতিশ্রুতি।

নিজের কাছে স্বীকারোক্তি

আমি পাহাড় থেকে পড়তে পড়তে
তোমাকে ধরে বেঁচে রয়েছি, কবিতা।
আমি পাতালে ডুবে মরতে মরতে
তোমাকে ধরে আবার ভেসে উঠেছি।
আমি রাজ্যজয় করে এসেও
তোমার কাছে নত হয়েছি, কবিতা।
আমি হাজার দরজা ভালবেসেও
তোমার বন্ধ দুয়ারে মাথা কুটেছি।
কখনও এর, কখনও ওর দখলে
গিয়েও ফিরি তোমারই টানে, কবিতা।
আমাকে নাকি ভীষণ জানে সকলে,
তোমার থেকে বেশি কে জানে, কবিতা?

আমি ভিড়ের মধ্যে ঘুরে বেড়াই,
গোপন রাখি সকল শোক, কবিতা।
আমি শ্মশানে ফুল ঘটাব, তাই
তোমার বুকে চেয়েছি ঢেউ রটাতে।
আমি সকল সুখ মিথ্যে মানি,
তোমার সুখ পূর্ণ হোক, কবিতা।
আমি নিজের চোখ উপড়ে আনি,
তোমাকে দিই, তোমার চোখ ফোটাতে।
তুমি তৃপ্ত হও, পূর্ণ হও,
জ্বালো ভূলোক, জ্বালো দ্যুলোক, কবিতা।

 পূর্ব গোলার্ধের ট্রেন

মাঝ-রাত্রে ঘুম ভেঙে যায়।
হঠাৎ ধড়মড় করে উঠে বসি।
মনে হয়,
ঘণ্টা পড়ে গেছে, ট্রেন আসতে আর দেরি নেই।
অথচ বিছানাপত্র, তোরঙ্গ, জলের কুঁজো–সব কিছু
ছত্রখান হয়ে আছে।
আমি দ্রুত হাতে ওয়েটিং রুমের সেই ছড়ানো সংসার
গুছিয়ে তুলতে থাকি।
বাইরে হুলুস্থুলু চলছে, ইনজিনের শানটিং, লোহার-
চাকাওয়ালা গাড়ি ছুটছে, হাজার পায়ের শব্দ,
আলো ছায়া আলো ছায়া
উন্মাদের মতন কে যেন
তারই মধ্যে
পরিত্রাহি ডেকে যাচ্ছে : কুলি, কুলি, এই দিকে, এ-দিকে।

মাঝ-রাত্রে ঘুম ভেঙে যায়।
হঠাৎ ধড়মড় করে উঠে বসি, চারদিকে তাকিয়ে
কিচ্ছুই বুঝি না।
আমি কেন ওয়েটিং রুমের মধ্যে, প্রাচ্যের সুন্দরী ভীরু বালিকার মতো,
সংসার গুছিয়ে তুলছি মধ্য-রাতে?
আমি কেন ছিটকিয়ে-ছড়িয়ে-যাওয়া পুঁতিগুলি
খুঁটে তুলছি।
আমি কি কোথাও যাব? কোনোখানে যাব?
আমি কি ট্রেনের জন্য প্রতীক্ষায় থাকতে থাকতে
ঘুমিয়ে পড়েছি?

ইদানীং এই রকম ঘটছে। ইদানীং
শব্দে-শব্দে তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। মধ্যরাতে
টুপটাপ শিশির ঝরলে চমলে উঠি; মনে হয়,
দেড় কাঠা উঠোন, তার স্বত্ব নিয়ে
স্বর্গে-মর্তে ঘোরতর সংঘাত চলেছে।
অন্ধকারে
বৃষ্টির ঝর্ঝর শুনলে মনে হয়,
দুদিকে পাহাড়, তার হৃৎপ্রদেশে
আচম্বিতে ট্রেনের চাকার শব্দ বেজে উঠল।
অথচ কোথায় ট্রেন, উদ্ধারের-সম্ভাবনাহীন
যাত্রীদের বুকে নিয়ে কোনখানে চলেছে, আমি
কিচ্ছুই বুঝি না–
সূর্যকে পিছনে রেখে
পূর্ব গোলার্ধের থেকে পশ্চিম গোলার্ধে কোন্‌ নরকের দিকে।

প্রতীকী সংলাপ

দিনমান তো বৃথাই গেল, এখন আমার যুদ্ধ;
এখন আমার অস্ত্রসজ্জা সব কিছুর বিরুদ্ধে।”
বলেই তিনি হাত বাড়িয়ে নিলেন পদ্মফুল।

এটা কেমন যুদ্ধ? সাদা পদ্মফুলের কান্তি
যে-বস্তুটার প্রতীক, সেটা নিতান্তই যে শান্তি!”
দ্বিতীয় জন তন্মুহূর্তে ধরিয়ে দিলেন ভুল।

“তবে বৃথাই বর্ম আঁটো, সাজাও চতুরঙ্গ,
এখন আমি সন্ধি করব ঈশ্বরের সঙ্গে।”
বলেই তিনি পদ্ম ফেলে গোপাল তুলে নিলেন।

“এটা কেমন সন্ধি? জানে সবাই জগৎ সুদ্ধ
গোলাপ ঝরায় রক্তধারা, গোলাপ মানেই যুদ্ধ।”
দ্বিতীয় জন পুনশ্চ তাঁর ভুল ধরিয়ে দিলেন।

আমরা দেখছি খেলায় মত্ত প্রতীকী উদ্‌ভ্রান্তি।
রৌদ্রে ভাসে চবুতরা, ছায়ায় ভাসে খিলেন।
ভুল ঠিকানায় ঘুরে বেড়ায় যুদ্ধ এবং শান্তি।

প্রবাস-চিত্র

যেখানে পা ফেলবি, তোর মনে হবে, বিদেশে আছিস।
এই তোর ভাগ্যলিপি।
গাছপালা অচেনা লাগবে, রাস্তাঘাট
অন্যতর বিন্যাসে ছড়ানো,
সদরে সমস্ত রাত কড়া নাড়বি, তবু
বাড়িগুলি নিদ্রার গভীর থেকে বেরিয়ে আসবে না।
এই তোর ভাগ্যলিপি।
সকলে বলবে না কথা; যারা বলবে,
তারা পর্যটন বিভাগের কর্মী মাত্র,
যে-কোনো টুরিস্‌ট্‌কে তারা দুটি-চারটি ধোপদুরস্ত কথা
উপহার দিয়ে থাকে,
তার জন্যে মাসান্তে মাইনে পায়।
এই তোর ভাগ্যলিপি।
যেখানি যাবি, তোর মনে হবে, এইমাত্র উড়োজাহাজের
পেটের ভিতর থেকে ভিন্ন-কোনো ভূমির উপরে
নেমে এসেছিস।
এই তোর ভাগ্যলিপি।
কাপড় সরিয়ে কেউ বুকের রহস্য দেখবে না।

 বাতাসি

“বাতাসি ! বাতাসি !”—লোকটা ভয়ংকর চেঁচাতে চেঁচাতে
গুমটির পিছন দিকে ছুটে গেল ।
ধাবিত ট্রেনের থেকে এই দৃশ্য চকিতে দেখলুম ।
কে বাতাসি ? জোয়ান লোকটা অত ভয়ংকরভাবে
তাকে ডাকে কেন ? কেন
হাওয়ার ভিতরে বাবরি-চুল উড়িয়ে
পাগলের মতো
“বাতাসি ! বাতাসি !” ব’লে ছুটে যায় ?

টুকরো টুকরো কথাগুলি ইদানিং যেন বড় বেশি—
গোঁয়ার মাছির মতো
জ্বালাচ্ছে । কে যেন কাকে বাসের ভিতরে
বলেছিল, “ভাবতে হবে না,
এবারে দুদ্দাড় করে হেমাঙ্গ ভীষণভাবে উঠে যাবে, দেখে নিস” ।
কে হেমাঙ্গ ? কে জানে, এখন
সত্যিই দুদ্দাড় ক’রে কোথাও উঠে যাচ্ছে কিনা ।
কিংবা সেই ছেলেটা, যে ট্রাম-স্টপে দাঁড়িয়ে পাশের
মেয়েটিকে অদ্ভুত কঠিন স্বরে বলেছিল,
“চুপ করো, না হলে আমি
সেই রকম শাস্তি দেব আবার—” কে জানে
“সেইরকম” মানে কি রকম । আমি ভেবে যাচ্ছি,
ক্রমাগত ভেবে যাচ্ছি, তবু—
গল্পের সবটা যেন নাগালে পাচ্ছি না ।
গল্পের সবটা আমি পাব না নাগালে ।
শুধু শুনে যাব । শুধু এখানে ওখানে,
জনারণ্যে, বাতাসের ভিতরে, হাটেমাঠে,
অথবা ফুটপাথে, কিংবা ট্রেনের জানলায়
টুকরো টুকরো কথা শুনবো, শুধু শুনে যাব । আর
হঠাত্ কখনো কোনো ভুতুড়ে দুপুরে
কানে বাজাবে “বাতাসি ! বাতাসি !”

 রাজপথে কিছুক্ষণ

দেখুন মশায়,
অনেকক্ষণ ধরে আপনি ঘুরঘুর করছেন,
কিন্তু আর নয়, এখন আপনার সরে পড়াই ভাল।
এই আমি থেকে হলফ করে বলছি,
কলকাতা থেকে কৈম্বাটুর অব্দি একটা
প্যাসেঞ্জার বাস-সারভিস খুলবার সত্যিই খুব দরকার আছে কি না,
তা আমি জানি না।
আপনার যদি মনে হয়, আছে,
তা হলে বেশ তো, যান,
যেখানে-যেখানে সিন্নি দেবার, দিয়ে,
জায়গামতন ইনফ্লুয়েনস খাটিয়ে
লাইসেন্‌স পারমিট ইত্যাদি সব জোগাড় করুন,
যাঁকে যাঁকে ধরতে হয়, ধরুন,
আমাকে আর জ্বালাবেন না। আমি
নেহাতই একজন ছাপোষা লোক,
টাইমের ভাত খেয়ে আপিস যাই,
অবসর-টবসর পেলে ছোট মেয়েটাকে নামতা শেখাই,
কৈম্বাটুর যে কোথায়,
মাদ্রাজে না পাঞ্জাবে, তা-ই আমি জানি না।
আপাতত তাড়াতাড়ি
শ্যামবাজারে যাওয়া দরকার, ভাগ্যবলে যদি একটা
শাট্‌ল-বাস পাই,
তা হলেই আমি আজকের মতন ধন্য হতে পারি।

দেখুন মহাশয়,
সেই থেকে আপনি আমার সঙ্গে সেঁটে আছেন।
কিন্তু আর নয়, এখন আপনার সরে পড়াই ভাল। আপনি
বিশ্বাস করুন চাই না-করুন,
দুই হাতের পাতা উল্‌টে দিয়ে এই আমি
শেষবারের মতো জানালুম, কেন
কৃষ্ণমাচারী গেলেন এবং
শচীন চৌধুরী এলেন,
তার বিন্দুবিসর্গও আমি জানি না।
আমি একজন ধিনিকেষ্ট,
কলম পিষতে বড়বাজারে যাই,
পিষি,
সাবান কিংবা তরল আলতার শিশি
কিনে বাড়ি ফিরি, গিন্নি
কলঘরে ঢুকলে বাচ্চা সামলাই।
আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করা না-করা সমান,
ভোটারদের আল্‌জিভ না-দেখিয়ে যাঁরা বক্তৃতা দিতে পারেন না
আপনি বরং তাঁদের কাছে যান।
আমার এখন তাড়াতাড়ি
শ্যামবাজারে যেতে হবে। সঙ্গে যদি আসতে চান, আসুন,
লজ্জা-টজ্জা না-করে একটু শব্দ করে কাসুন,
তা হলেই আপনার বাসভাড়াটা চুকিয়ে দিতে পারি।

সভাকক্ষ থেকে কিছু দূরে

কী করলে হাততালি মেলে, বিলক্ষণ জানি;
কিন্তু আমি হাততালির জন্য কোনোদিন
প্রলুব্ধ হব না।
তোমার চারদিকে বহু কিঙ্কর জুটেছে, মহারানি।
ইঙ্গিত করলেই তারা ক্রিরিরিং
ঘড়িতে বাজিয়ে ঘণ্টি অদ্ভুত উল্লাসে গান গায়!
আমিও দু-একটা গান জানি,
কিন্তু আমি কোরাসের ভিতরে যাব না।
মহারানি,
যেমন জেনেছি, ঠিক সেইরকম উচ্চারণে বাজাব তোমাকে।

তুমি সিংহাসনে খুব চমৎকার ভঙ্গিতে বসেছ।
দেখাচ্ছ ধবল গ্রীবা, বুকের খানিক;
ধরেছ সুমিষ্ট ইচ্ছা চক্ষুর তারায়,
বাঁ হাতে রেখেছ থুতনি, ডান হাতে
খোঁপা থেকে দু-একটা নির্মল জুঁই খুঁটে নিচ্ছ,
ছুড়ে দিচ্ছ সভার ভিতরে।

কিন্তু, মহারানি, আমি তোমাকে আর-একটু বেশি জানি।
ইঙ্গিত করলেই তার ক্রিরিরিং
ঘড়িতে ঘণ্টির তাল বাজাতে পারি না।
বাজিয়ে দেখেছি, তবু বুকের ভিতরে বহু জমিজমা
অন্ধকার থাকে।
সভাকক্ষ থেকে তাই কিছু দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছি।
মহারানি,
অন্তত একদিন তুমি অনুমতি দাও,
যেমন জেনেছি, ঠিক সেইরকম উচ্চারণে বাজাব তোমাকে।

সাংকেতিক তারবার্তা

সারাদিন আলোর তরঙ্গ থেকে ধ্বনি জাগে :
দূরে যাও।
সারারাত্রি অন্ধকার কানে-কানে মন্ত্র দেয় :
দূরে যাও!
বাল্যবয়সের বন্ধু, পরবর্তী জীবনে তোমরা
কে কোথায়
কর্মসূত্রে জড়িয়ে রয়েছ, আমি খবর রাখি না।
কেউ কি অনেক দূরে রয়ে গেলে?
কৈশোর-দিন্র সঙ্গী, তোমরা কেউ কি
দূর-ভুবনের মৃত্তিকায়
সংসার পেতেছ, তবু
কৈশোর-দিনের কথা ভুলতে পারোনি?
কিংবা যারা প্রথম-যৌবনে কাছে এসেছিলে,
তারাই কেউ কি
অজ্ঞাত বিদেশে আজ অবেলায়
পর্বতচূড়ায় উঠে অকস্মাৎ পূর্বাস্য হয়েছ?
তোমরা কেউ কি
উন্মাদের মতো ঢিল ছুঁড়ে যাচ্ছ স্মৃতির অতলে?

আলোর অক্লান্ত ধ্বনি প্রাণে বাজে : দূরে যাও।
কেন বাজে?
অন্ধকার কানে-কানে মন্ত্র দেয় : দূরে যাও।
কেন দেয়?
অন্য জীবনের মধ্যে ডুব দিয়ে তবুও কেউ কি
পরিপূর্ণ ডুবতে পারোনি?
কেউ কি নিঃসঙ্গ দূর দ্বীপ থেকে উদ্ধার চাইছ?
বুঝতে পারি, স্মরণ করছ কেউ রাত্রিদিন।
বুঝতে পারি, নিরুপায় সংকেত পাঠাচ্ছ কেউ
আলোর তরঙ্গে, অন্ধকারে।

 স্নানযাত্রা

বাইরে এসো …কে যেন বুকের মধ্যে
বলে ওঠে… বাইরে এসো… এখুনি আমার
বুকের ভিতরে কার
স্নান সমাপন হল!

সারাদিন ঘুরেছি অনেক দূরে দূরে।
তবুও বাইরে যাওয়া হলো না। ঘরের
ভিতরে অনেক দূরে দূরে
পা ফেলেছি। ঘরের ভিতরে
দশ-বিশ মাইল আমি ঘুরেছি! এখন
সন্ধ্যায় কে যেন ফের বুকের ভিতরে
বলে উঠল : এসো।

বাইরে এসো… কে যেন বুকের ভিতর ঘড়ির ঘন্টায়
বলে যাচ্ছে। এখুনি আমার
বুকের ভিতর যেন কার
অবগাহনের পালা সমাপন হল।

Exit mobile version