Site icon BnBoi.Com

রাঙা জবা – শ্যামাসংগীত – কাজী নজরুল ইসলাম

রাঙা জবা - শ্যামাসংগীত - কাজী নজরুল ইসলাম

আঁধার-ভীত এ চিতে যাচে মা গো আলো আলো

আঁধার-ভীত এ চিতে যাচে মা গো আলো আলো ।
বিশ্ববিধাত্রী আলোকদাত্রী
নিরাশ পরানে আশার সবিতা জ্বালো
জ্বালো আলো আলো॥
হারিয়েছি পথ গভীর তিমিরে,
লহো হাতে ধরে প্রভাতের তীরে,
পাপ তাপ মুছি করো মাগো শুচি
আশিস অমৃত ঢালো॥
দশপ্রহরণধারিণী দুর্গতিহারিনী দুর্গে
মা অগতির গতি
সিদ্ধিবিধায়িনী দনুজদলনী
বাহুতে দাও মা শকতি।

তন্দ্রা ভুলিয়া যেন মোরা জাগি
এবার প্রবল মৃত্যু লাগি
রুদ্র দাহনে ক্ষুদ্রতা দহো
বিনাশো গ্লানির কালো॥

আজও মা তোর পাইনি প্রসাদ

আজও মা তোর পাইনি প্রসাদ
আজও মুক্ত নহি।
আজও অন্যে আঘাত দিয়ে
কঠোর ভাষা কহি॥
মোর আচরণ, আমার কথা
আজও অন্যে দেয় মা ব্যথা,
আজও আমার দাহন দিয়ে
শতজনে দহি॥
শত্রু-মিত্র মন্দ-ভালোর যায়নি আজও ভেদ,
কেহ পীড়া দিলে, প্রাণে আজও জাগে খেদ।
আজও জাগে দুঃখশোকে
অশ্রু ঝরে আমার চোখে
আমার আমার ভাব মা আজও
জাগে রহি রহি॥

আদরিণী মোর শ্যামা মেয়েরে কেমনে কোথায় রাখি

আদরিণী মোর শ্যামা মেয়েরে
কেমনে কোথায় রাখি।
রাখিলে চোখে বাজে ব্যথা বুকে
(তারে) বুকে রাখিলে দুখে ঝুরে আঁখি॥
শিরে তারে রাখি যদি
মন কাঁদে নিরবধি,
(সে) চলতে পায়ে দলবে বলে
পথে হৃদয় পেতে থাকি॥
কাঙাল যেমন পাইলে রতন
লুকাতে ঠাঁই নাহি পায়।
তেমনি আমার শ্যামা মেয়েরে
জানি না রাখিব কোথায়।
দুরন্ত মোর এই মেয়েরে
বাঁধিব আমি কী দিয়ে রে,
(তাই) পালিয়ে যেতে চায় সে যবে
অমনি মা বলে ডাকি॥

আমার ভবের অভাব লয় হয়েছে শ্যামা-ভাবসমাধিতে

আমার ভবের অভাব লয় হয়েছে
শ্যামা-ভাবসমাধিতে।
শ্যামা-রসে যে-মন আছে ডুবে
কাজ কীরে তার যশ-খ্যাতিতে॥
মধু যে পায় শ্যামা-পদে
কাজ কী রে তার বিষয়-মদে,
মুক্তি যে-মন যোগমায়াতে
ভাবনা কী তার রোগ-ব্যাধিতে॥
কাজ কী রে তার লক্ষ টাকায়,
মোক্ষ-লক্ষ্মী যাহার ঘরে;
কত, রাজার রাজা প্রসাদ মাগে
সেই ভিখারির পায়ে ধরে।

ও মা, শান্তিময়ী অন্তরে যার,
দুঃখ-শোকে ভয় কী রে তার,
সে, সদানন্দ সদাশিব জীবন্মুক্ত ধরণিতে॥

আমার হৃদয় অধিক রাঙা মাগো

আমার হৃদয় অধিক রাঙা মাগো
রাঙা জবার চেয়ে।
আমিসেই জবাতে ভবানী তোর
চরণ দিলাম ছেয়ে॥
মোর বেদনার বেদির পরে
বিগ্রহ তোর রাখব ধরে,
পাষাণ-দেউল সাজে না তোর
আদরিণী মেয়ে॥
স্নেহ-পূজার ভোগ দেব মা, অশ্রু-পূজাঞ্জলি,
অনুরাগের থালায় দেব ভক্তি-কুসুমকলি।

অনিমেষ আঁখির বাতি
রাখব জ্বেলে দিবারাতি,
(তোর) রূপ হবে মা আরও শ্যামা
অশ্রুজলে নেয়ে।
(আমার) অশ্রুজলে নেয়ে॥

আমার আনন্দিনী উমা আজও এল না তার মায়ের কাছে

(আমার) আনন্দিনী উমা আজও
এল না তার মায়ের কাছে।
হে গিরিরাজ দেখে এসো
কৈলাসে মা কেমন আছে॥
মোর মা যে প্রতি আশ্বিন মাসে
মা মা বলে ছুটে আসে;
মা আসেনি বলে আজও
ফুল ফোটেনি লতায় গাছে॥
তত্ত্ব-তালাশ নিইনি মায়ের
তাই বুঝি মা অভিমানে
না এসে তার মায়ের কোলে
ফিরিছে শ্মশানে মশানে।
ক্ষীর নবনী লয়ে থালায়
কেঁদে ডাকি, ‘আয় উমা আয়!’
যে কন্যারে চায় ত্রিভুবন
তাকে ছেড়ে মা কি বাঁচে।

আমার উমা কই, গিরিরাজ, কোথায় আমার নন্দিনী

আমার উমা কই, গিরিরাজ,
কোথায় আমার নন্দিনী?
এ যে দেখি দশভুজা
এ কোন রণরঙ্গিণী॥
মোর লীলাময়ী চঞ্চলারে ফেলে,
এ কোন দেবীমূর্তি নিয়ে এলে।
এ যেমহীয়সী মহামায়া বামা মহিষমর্দিনী॥
মোর মধুর স্নেহে জ্বালাতে আগুন
আনলে কারে ভুল করে,
এরে কোলে নিতে হয় না সাহস,
ডাকতে নারি নাম ধরে।মা,
কে এলি তুই দনুজদলনী বেশে,
কন্যারূপে মা বলে ডাক হেসে,
তুই চিরকাল যে দুলালি মোর
মাতৃস্নেহে বন্দিনী॥

আমার কালো মেয়ে পালিয়ে বেড়ায়

(আমার) কালো মেয়ে পালিয়ে বেড়ায়
কে দেবে তায় ধরে।
(তারে) যেই ধরেছি মনে করি
অমনি সে যায় সরে॥
বনের ফাঁকে দেখা দিয়ে
চঞ্চলা মোর যায় পালিয়ে,
(দেখি) ফুল হয়ে মা-র নূপুরগুলি
পথে আছে ঝরে।
তার কন্ঠহারের মুক্তাগুলি আকাশ-আঙিনাতে
তারা হয়ে ছড়িয়ে আছে, দেখি আধেক রাতে।
আমি কেঁদে বেড়াই, কাঁদলে যদি
আসে দয়া করে॥

আমার কালো মেয়ে রাগ করেছে, কে দিয়েছে গালি

আমার কালো মেয়ে রাগ করেছে,
কে দিয়েছে গালি
(তারে) কে দিয়েছে গালি।
রাগ করে সে সারা গায়ে
মেখেছে তাই কালি॥
যখন রাগ করে মোর অভিমানী মেয়ে
আরও মধুর লাগে তাহার হাসিমুখের চেয়ে।
কে কালো দেউল করল আলো
অনুরাগের প্রদীপ জ্বালি॥
পরেনি সে বসন-ভূষণ,
বাঁধেনি সে কেশ,
তারই কাছে হার মানে রে ভুবনমোহন বেশ।
রাগিয়ে তারে কাঁদি যখন দুখে
দয়াময়ী মেয়ে আমার ঝাঁপিয়ে পড়ে বুকে;
(আমার) রাগি মেয়ে, তাই তারে দিই
জবা ফুলের ডালি॥

আমার মা আছে রে সকল নামে

আমার মা আছে রে সকল নামে,
মা যে আমার সর্বনাম।যেনামে ডাক শ্যামা মাকে
পুরবে তাতেই মনস্কাম॥
ভালোবেসে আমার শ্যামা মাকে
যার যাহা সাধ সেই নামে সে ডাকে,
সেই নামে মা দেয় রে ধরা
কেউ শ্যামা কয়, কেহ শ্যাম।
এক সাগরে মিশে গিয়ে
সকল নামের নদী সেই হরিহর কৃষ্ণ ও রাম,
দেখিস তাঁকে যদি,
নিরাকার সাকারা সে কভু,
সকল জাতির উপাস্য সে প্রভু,
নয় সে নারী নয় সে পুরুষ,
সর্বলোকে তাঁহার ধাম॥

আমার মানস-বনে ফুটেছে রে শ্যামা-লতার মঞ্জরী

আমার মানস-বনে ফুটেছে রে
শ্যামা-লতার মঞ্জরী।
সেই মঞ্জুবনে ফিরছে রে তাই
ভক্তি-ভ্রমর গুঞ্জরি॥
সেথা আনন্দে দেয় করতালি
প্রেমের কিশোর বনমালী
সেই লতামূলে শিবের জটায়
গঙ্গা ঝরে ঝরঝরি॥
কোটি তরু শাখা মেলি
এই সে লতার পরশ চায়,
শিরে ধরে ধন্য হতে
এই শ্যামারই শ্যাম শোভায়।
এই লতারই ফুল সুবাসে
কোটি চন্দ্র সূর্য আসে নীল আকাশে
এই লতার ছায়ায় প্রাণ জুড়াতে
ত্রিলোক আছে প্রাণ ধরি॥

আমার মুক্তি নিয়ে কী হবে মা

আমার) মুক্তি নিয়ে কী হবে মা,
আমি তোরে চাই।
স্বর্গ আমি চাই না মা গো
কোল যদি তোর পাই।
মা কী হবে সে মুক্তি নিয়ে
কী হবে সে স্বর্গে গিয়ে,
যেথায় গিয়ে তোকে ডাকার
কোল যদি তোর পাই
আর প্রয়োজন নাই॥
যুগে যুগে যে লোকে মা প্রকাশ হবে তোর,
পুত্র হয়ে দেখব লীলা, এই কামনা মোর।
তুই মাখাস যদি মাখব ধূলি,
শুধু তোকে যেন নাহি ভুলি,
তুই মুছিয়ে ধূলি নিবি তুলি,
বক্ষে দিবি ঠাঁই॥

আমার শ্যামা বড়ো লাজুক মেয়ে

আমার শ্যামা বড়ো লাজুক মেয়ে
কেবলই সে লুকাতে চায়।
আলো-আঁধার পর্দা টেনে
(ভীরু) বালিকা সে পালিয়ে বেড়ায়॥
নিখিল ভুবন আছে তারে ঘিরে,
(আমার) মেয়ে তবু বসন খুঁজে ফিরে;
তারেযে দেখে সে এক নিমেষে
তারই মাঝে লয় হয়ে যায়॥
কোটি শিব ব্রহ্মা হরি অনন্তকাল গভীর ধ্যানে
তার সে লুকোচুরি খেলায় পায় না দিশা, পায় না মানে।

রবি-শশি গ্রহ-তারার ফাঁকে
যে দেখেছে পালিয়ে যেতে মাকে;
সে আপনাকে আর পায় না খুঁজে
মায়াবিনীর মহামায়ায়॥

আমার হৃদয় হবে রাঙাজবা, দেহ বিল্বদল

আমার হৃদয় হবে রাঙাজবা, দেহ বিল্বদল।
মুক্তি পাব ছুঁয়ে মুক্তকেশীর চরণতল॥
মোর     বলির পশু হবে সর্বকাম,
মোর     পূজার মন্ত্র হবে মায়ের নাম,
মোর অশ্রু দেব মা-র চরণে, সেই তো গঙ্গাজল॥
মোর আনন্দ মাকে দেব তাই হবে চন্দন,
মোর পুষ্পাঞ্জলি হবে আমার প্রাণ মন।
মোর জীবন হবে আরতি-দীপ,
মোর গুরু হবেন শংকর শিব,
মোর কাঁটার জ্বালা পদ্ম হবে শুভ্র সুনির্মল॥

আমায় আর কতদিন মহামায়া

(আমায়) আর কতদিন মহামায়া
রাখবি মায়ার ঘোরে।
মোরে কেন মায়ার ঘুর্ণিপাকে
ফেললি এমন করে॥
ও মা কত জনম করেছি পাপ
কত লোকের কুড়িয়েছি শাপ,
তবু মা তোর নাই কি গো মাফ
ভুগব চিরতরে॥
এমনি করে সন্তানে তোর
ফেললি মা অকূলে,
তোর নাম যে জপমালা
তাও যাই হায় ভুলে।

পাছে মা তোর কাছে আসি
তাই বাঁধন দিলি রাশি রাশি
কবে মুক্ত হব মুক্তকেশী
(তোর) অভয় চরণ ধরে॥

আমায় যারা দেয় মা ব্যথা, আমায় যারা আঘাত করে

আমায় যারা দেয় মা ব্যথা, আমায় যারা আঘাত করে,
তোরই ইচ্ছায় ইচ্ছাময়ী।
আমায় যারা ভালোবাসে বন্ধু বলে বক্ষে ধরে,
তোরই ইচ্ছায় ইচ্ছাময়ী॥

আমায় অপমান করে যে
মা গো তোরই ইচ্ছা সে যে,
আমায় যারা যায় মা ত্যেজে,
যারা আমার আসে ঘরে
তোরই ইচ্ছায় ইচ্ছাময়ী॥
আমার ক্ষতি করতে পারে অন্য লোকের সাধ্য কী মা,
দুঃখ যা পাই তোরই সে দান, মা গো সবই তোর মহিমা।
তাই পায়ে কেহ দলে যবে
হেসে সয়ে যাই নীরবে,
কে কারে দুখ দেয় মা কবে
তোর আদেশ না পেলে পরে
তোরই ইচ্ছায় ইচ্ছাময়ী॥

আমি নামের নেশায় শিশুর মতো ডাকি গো মা বলে

আমি নামের নেশায় শিশুর মতো
ডাকি গো মা বলে।
নাই দিলি তুই সাড়া মা গো
নাই নিলি তুই কোলে॥
শুনলে ‘মা’ নাম জেগে উঠি,
ব্যাকুল হয়ে বাইরে ছুটি,
ওই নামে মোর নয়ন দুটি
ভরে উঠে জলে॥
ও নাম আমার মুখের বুলি, ও নাম খেলার সাথি,
ও নাম বুকে জড়িয়ে ধরে পোহায় দুখের রাতি।
মা-হারানো শিশুর মতো
জানি ও-নাম অবিরত,
ওই নামের মন্ত্র আমার বুকে
কবচ হয়ে দোলে॥

আমি মুক্তা নিতে আসিনি মা ওমা, তোর মুক্তি-সাগর কূলে

আমি মুক্তা নিতে আসিনি মা
ওমা, তোর মুক্তি-সাগর কূলে।
মোর, ভিক্ষা ঝুলি হতে মায়ার
মুক্তামানিক নে মা তুলে॥
মা তুই,         সবই জানিস অন্তর্যামী,
সেই        চরণ-প্রসাদ ভিক্ষু আমি,
শবেরও হয় শিবত্ব লাভ, মা, তোর যে চরণ ছুঁলে॥
তুই,        অর্থ দিয়ে কেন ভুলাস
এই পরমার্থ-ভিখারিরে,
তোর, প্রসাদিফুল পাই যদি মা
গঙ্গাধারাও চাই না শিরে॥
তোর,        শক্তিমন্ত্রে শক্তিময়ী
আমি,        হতে পারি ব্রহ্মজয়ী,
সেই, মাতৃনামের মহাভিক্ষু তোর মায়াতে নাহি ভুলে॥

আমি সাধ করে মোর গৌরী মেয়ের                 নাম রেখেছি কালী

আমি সাধ করে মোর গৌরী মেয়ের
নাম রেখেছি কালী।
পাছে লোকের দৃষ্টি লাগে
মাখিয়ে দিলাম কালি
তার, সোনার আঙ্গে মাখিয়ে দিলাম কালি॥
হাড়ের মালা গলায় দিয়ে
দিয়েছি তার কেশ এলিয়ে,
তবু, আনন্দিনী নন্দিনী মোর দেয় রে করতালি।
নেচে নেচে দেয় রে করতালি॥
চোখে চোখে রাখি তারে, পাছে সে হারায়;
তাই, কালো মেয়ের রূপ লেগেছে মোর আঁখিতারায়।
সে শ্মশান পথে বেড়ায় একা,
সহজে সে দেয় না দেখা (রে),
শুধু, বনের জবা জানে আমার মেয়ে রূপের ডালি॥

আমি সুন্দর নহি জানি হে বন্ধু জানি

বেহাগ দাদরা

আমি সুন্দর নহি জানি হে বন্ধু জানি।
তুমি সুন্দর, তব গান গেয়ে
নিজেরে ধন্য মানি॥
আসিয়াছি সুন্দর ধরণিতে
সুন্দর যারা তাদেরে দেখিতে
রূপ-সুন্দর দেবতার পায়ে
অঞ্জলি দিই বাণী॥
রূপের তীর্থে তীর্থ-পথিক
যুগে যুগে আমি আসি
ওগো সুন্দর, বাজাইয়া যাই
তোমার নামের বাঁশি।

পরিয়া তোমার রূপ-অঞ্জন
ভুলেছে নয়ন, রাঙিয়াছে মন,
উছলি উঠুক মোর সংগীতে
সেই আনন্দখানি॥

আয় অশুচি আয় রে পতিত, এবার মায়ের পূজা হবে

আয় অশুচি আয় রে পতিত,
এবার মায়ের পূজা হবে।
(যেথা) সকল জাতির সকল মানুষ
নির্ভয়ে মা-র চরণ ছোঁবে।
(সেথা) এবার মায়ের পূজা হবে॥
(সেথা) নাই মন্দির নাই পূজারি,
নাই শাস্ত্র নাই রে দ্বারী,
(যেথা) মা বলে যে ডাকবে এসে
মা তাহারেই কোলে লবে॥
(মা) সিংহ-আসন হতে নেমে বসেছে দেখ ধূলির তলে,
(মা-র) মঙ্গলঘট পূর্ণ হবে সবার ছোঁয়া তীর্থজলে।
জননীকে দেখেনি, তাই
ভাইকে আঘাত হেনেছে ভাই,(আজ)
মাকে দেখে বুঝবি মোরা
এক মা-র সন্তান সবে।(এবার)
ত্রিলোক জুড়ে পড়বে সাড়া
মাতৃমন্ত্রের মাভৈঃ-রবে॥

আয় নেচে আয় এ বুকে

আয় নেচে আয় এ বুকে
দুলালি মোর কালো মেয়ে।
দগ্ধ দিনের বুকে যেমন
আসে শীতল আঁধার ছেয়ে॥
আমার হৃদয়-আঙিনাতে
খেলবি মা তুই দিনে রাতে,
আমার  সকল দেহ নয়ন হয়ে
দেখবে মা তাই চেয়ে চেয়ে॥
হাত ধরে মোর নিয়ে যাবি
তোর খেলাঘর দেখাবি মা,
এইটুকু তুই মেয়ে আমার
কেমন করে হস অসীমা।
নিবি লুটে চতুর্ভুজা
আমার স্নেহ প্রেম-পূজা,
নাম ধরে তোর ডাকব মা যেই
যেথায় থাকিস আসবি ধেয়ে॥

আয় বিজয়া আয় রে জয়া উমার লীলা যা রে দেখে

আয় বিজয়া আয় রে জয়া
উমার লীলা যা রে দেখে।
সেজেছে সে মহাকালী
চোখের কাজল মুখে মেখে॥
সে ঘুমিয়েছিল আমার কোলে
জেগে উঠে কেঁদে বলে :
আমায় কালী সাজিয়ে দে মা
ছেলেরা মোর কাঁদছে ডেকে॥
চেয়ে দেখি মোর উমা নাই নাচে কালী দিগম্বরী;
হুংকার দেয় কোটি গ্রহের মুণ্ডমালা গলায় পরি।
আমি শুধু উমায় চিনি,
এ কোন মহা মায়াবিনী
কালো রূপে বিশ্বভুবন
আকাশ পবন দিল ঢেকে।

 আয় মা চঞ্চলা মুক্তকেশী শ্যামা কালী

আয় মা চঞ্চলা মুক্তকেশী শ্যামা কালী।
নেচে নেচে আয় বুকে দিয়ে তাথই তাথই করতালি॥
দশদিক আলো করে
ঝঞ্ঝার মঞ্জীর পরে
দুরন্ত রূপ ধরে
আয় মায়ার সংসারে আগুন জ্বালি॥
আমার স্নেহের রাঙা জবা পায়ে দলে
কালো রূপ তরঙ্গ তুলে গগনতলে
সিন্ধু জলে আমার কোলে
আয় মা আয়।
তোর চপলতায় মা কবে
শান্ত ভবন প্রাণ-চঞ্চল হবে,
এলোকেশে এনে ঝড়
মায়ার এ খেলাঘর
ভেঙে দে মা আনন্দদুলালি॥

আয় মা ডাকাত কালী আমার ঘরে কর ডাকাতি

আয় মা ডাকাত কালী আমার ঘরে কর ডাকাতি।
যা আছে সব কিছু মোর লুটে নে মা রাতারাতি॥
আয় মা মশাল জ্বেলে ডাকাত ছেলে ভৈরবদের করে সাথি;
জমেছে ভবের ঘরে অনেক টাকা যশঃ খ্যাতি।
কেড়ে মোর ঘরের চাবি নে মা সবই পুত্রকন্যা স্বজন জ্ঞাতি॥
মায়ার দুর্গে আমার দুর্গা নামও হার মেনেছে;
ভেঙে দে সেই দুর্গ, আয় কালিকা তাথই নেচে।
রবে না কিছুই যখন রইবে ভাঁড়ে মা ভবানী
পাব সেদিন টানব না আর মায়ার ঘানি।
খালি হাতে তালি দিয়ে কালী বলে উঠব মাতি,
কালী কালী বলে খালি হাতে তালি দিয়ে উঠব মাতি।

এসো আনন্দিতা ত্রিলোকবন্দিতা

এসো আনন্দিতা ত্রিলোকবন্দিতা
করো দীপান্বিতা আঁধার অবনী মা।
ব্যাপিয়া চরাচর শারদ অম্বর
ছড়াও অভয় হাসির লাবণি মা॥
সারাটি বরষ নিখিল ব্যথিত
চাহিয়া আছে না তব আসা-পথ,
ধরার সন্তানে ধরো তব কোলে
ভোলাও দুঃখ-শোক চির করুণাময়ী মা॥
অটুট স্বাস্থ্য দীর্ঘ পরমায়ু
দাও আরও নির্মল বায়ু,
দশ হাতে তব আনো মা কল্যাণ,
পীড়িত চিত্ত গাহে অকাল জাগরিণী মা॥

ও মা তুই আমারে ছেড়ে আছিস

ও মা তুই আমারে ছেড়ে আছিস
আমি        তাই হয়েছি লক্ষ্মীছাড়া।
তোর কৃপা বিনা শক্তিময়ী শুকিয়ে গেল ভক্তিধারা॥
ও মা তুই আশ্রয় দিলি না তাই
আমি যা পাই তা পথে হারাই
তোর রসময় ভুবন আমার শ্মশান হল, ও মা তারা॥
আজ আনন্দ-যমুনা ফেলে এসেছি তাই যমের দ্বারে,
ও মা জীবনে যা পেলাম না তা মরণ যদি দিতে পারে।
ও মা তত বাড়ে বুকের জ্বালা
পাই যত যশ খ্যাতির মালা॥
রাজপ্রাসাদে শুয়ে, মাগো, শান্তি কি পায় মাতৃহারা॥

ও মা, তোর ভুবনে জ্বলে এত আলো

ও মা, তোর ভুবনে জ্বলে এত আলো
আমি কেন অন্ধ মা গো–
দেখি শুধু কালো॥
সর্বলোকে শক্তি ফিরিস নাচি,
ও মা,আমি কেন পঙ্গু হয়ে আছি?
ও মা ছেলে কেন মন্দ হল, জননী যার ভালো।
তুই নিত্য মহাপ্রসাদ বিলাস কৃপার দুয়ার খুলি
কেন, চির-শূন্য রইল মা গো আমার ভিক্ষার ঝুলি?
বিন্দু বারি পেলাম না মা সিন্ধুজলে রয়ে,
তোর চোখের কাছে পড়ে আছি চোখের বালি হয়ে।
মোর জীবন্মৃত এই দেহে মা চিতার আগুন জ্বালো॥

ওমা খড়্গ নিয়ে মাতিস রণে,  নয়ন দিয়ে বহে ধারা

ওমা খড়্গ নিয়ে মাতিস রণে,
নয়ন দিয়ে বহে ধারা।
(এমন) একাধারে নিষ্ঠুরতা কৃপা তোরই সাজে তারা॥
করে অসুর মুণ্ডরাশি
অধরে না ধরে হাসি
(তুই) জানিস মরলে তোর আঘাতে তোরই কোলে যাবে তারা॥
(মা) দুই হাতে তোর বর ও অভয়
আর দু-হাতে মুণ্ড অসি,
ললাটে তোর পূর্ণিমা চাঁদ
কেশে কৃষ্ণা চতুর্দশী।
(তুই) জননী প্রায় আঘাত করে,
দিস মা দোলা বক্ষে ধরে,
(তুই) পাপমুক্ত করার ছলে অসুর বধিস ভব-দারা॥

ওমা ত্রিনয়নী! সেই চোখ দে যে চোখ তোরে দেখতে পায়

ওমা ত্রিনয়নী! সেই চোখ দে
যে চোখ তোরে দেখতে পায়।
সে নয়ন-তারায় কাজ কী তারাযে
তারা লুকায় মা তারায়॥
চাইনে সে চোখ যে চোখ দেখে মায়া,
অনিত্য এই সংসারেরই ছায়া,
যে দৃষ্টি দেখে নিত্য তোরে
সেই দৃষ্টি দে আমায়॥
ওমা নিভিয়ে দে এ নয়ন-প্রদীপ
দেখায় যাহা দুঃখ-শোক,
এই আলেয়া পথ ভুলিয়ে
যায় মা নিয়ে নরলোক।

তোর সৃষ্টি চির-আনন্দময় না কি!
দেখব সে লোক, দে মোরে সেই আঁখি;
দেখে মা রোগ-মৃত্যু-জরা যা
তোর সন্তান সেই দৃষ্টি চায়॥

ওমা দুঃখ অভাব ঋণ যত মোর

(ওমা)      দুঃখ অভাব ঋণ যত মোর
রাখলাম তোর পায়ে
(এবার)      তুই দিবি মা, ভক্তের তোর

         সকল ঋণ মিটায়ে॥
মাগো       সমন-হাতে মোর মহাজন
ধরতে যদি আসে এখন,
তোরই পায়ে পড়বে বাঁধন
ছেলের ঋণের দায়ে॥
ওমা     সুদ-আসলে এ সংসারের বেড়েই চলে দেনা,
এবার      ঋণমুক্তির তুই নে মা ভার, রইব তোরই কেনা।

আমি আমার আর নহি তো,
(আমি)     তোর পায়ে যে নিবেদিত,
এখন তুই হয়েছিস জামিন আমার –
দে ওদের বুঝায়ে॥

ওমা নির্গুণেরে প্রসাদ দিতে

ওমা নির্গুণেরে প্রসাদ দিতে
তোর মতো কেউ নাই।
তোর পায়ে মা তাই রক্তজবা
গায়ে মাখা ছাই।
দৈত্য-অসুর হনন-ছলে
ঠাঁই দিস তুই চরণতলে,
আমি তামসিকের দলে মা গো
তাই নিয়েছি ঠাঁই॥
কালো বলে গৌরী তোরে
কে দিয়েছে গালি,
(ওমা) ত্রিভুবনের পাপ নিয়ে তোর
অঙ্গ হল কালি।
অপরাধ না করলে শ্যামা
ক্ষমা যে তোর পেতাম না মা,
(আমি) পাপী বলে আশা রাখি
চরণ যদি পাই॥

 ওমা বক্ষে ধরেন শিব যে চরণ

(ওমা) বক্ষে ধরেন শিব যে চরণ
শরণ নিলাম সেই চরণে।
জীবন আমার ধন্য হল,
ভয় নাই মা আর মরণে॥
যা ছিল মোর এই ত্রিলোকে
তোকে দিলাম, দিলাম তোকে,
আমার বলে রইল শুধু
তোর চরণের ধ্যান এ মনে॥

(তোর) কেশ নাকি মা মুক্ত হল
ছুঁয়ে তোরই রাঙা চরণ,
(ও মা) মুক্তকেশী, মুক্ত হব
সেই চরণে নিয়ে শরণ।
(তোর) চরণ-চিহ্ন বক্ষে এঁকে
বিশ্বজনে বলব ডেকে,
দেখে যা কোন রত্ন রাজে
আমার হৃদয়-সিংহাসনে॥

ওরে আলয়ে আজ মহালয়া, মা এসেছে ঘর

ওরে আলয়ে আজ মহালয়া, মা এসেছে ঘর।
তোরা উলু দে রে শঙ্খ বাজা, প্রদীপ তুলে ধর॥
(এল মা, আমার মা।)
মাকে ভুলে ছিলাম ওরে
কাজের মাঝে মায়ার ঘোরে,
আজ বরষ পরে মাকে ডাকার মিলল অবসর।
(এল মা, আমার মা।)
মা ছিল না বলে সবাই গেছে পায়ে দলে
মার খেয়েছি যত তত ডেকেছি মা বলে।
মা এসেছে ছুটে রে তাই,
ভয় নাই রে আর ভয় নাই,
মা অভয়া এসেছে রে দশ হাতে তাঁর বর।
(এল মা, আমার মা।)

করুণা তোর জানি মাগো আসবে শুভদিন

করুণা তোর জানি মাগো
আসবে শুভদিন
হোক না আমার চরম ক্ষতি
থাক না অভাব ঋণ॥
আমায় ব্যথা দেওয়ার ছলে
টানিস মা তোর অভয় কোলে,
সন্তানে মা দুঃখ দিয়ে
রয় কি উদাসীন॥
তোর কঠোরতার চেয়ে দয়া বেশি জানি বলে
ভয় যত মা দেখাস তত লুকাই তোরই কোলে।
সন্তানে ক্লেশ দিস যে এমন
হয়তো মা তার আছে কারণ,
তুই      কাঁদাস বলে বলব কি মা
হলাম মাতৃহীন॥

কালী কালী মন্ত্র জপি বসে লোকের ঘোর শ্মশানে

কালী কালী মন্ত্র জপি
বসে লোকের ঘোর শ্মশানে।
মা অভয়ার নামের গুণে
শান্তি যদি পাই এ প্রাণে।

এই শ্মশানে ঘুমিয়ে আছে
যে ছিল মোর বুকের কাছে,
সে হয়তো আবার উঠবে জেগে
মা ভবানীর নামগানে॥
সকল সুখ শান্তি আমার
হরে নিল যে পাষাণী,
শূন্য বুকে বন্দি করে
রাখব আমি তারেই আনি।

মোর যাহা প্রিয় মাকে দিয়ে
জেগে আছি আশা-দীপ জ্বালিয়ে,
মা-র সেই চরণের নিলাম শরণ
যে চরণে আঘাত হানে॥

কে বলে মোর মাকে কালো

কে বলে মোর মাকে কালো
মা যে আমার জ্যোতির্মতী
কোটি চন্দ্র সূর্য তারা
নিত্য করে মা-র আরতি
কালো রূপের মায়া দিয়ে
মহামায়া রয় লুকিয়ে,
মাকে আমার খুঁজে খুঁজে
নিবল কোটি রবির জ্যোতি॥
যোগীন্দ্র যাঁর চরণতলে
ধ্যান করে রে যাঁর মহিমা
(মোরা) দুটি নয়ন-প্রদীপ জ্বেলে
খুঁজি সেই অসীমার সীমা॥
মোরা সাজিয়ে কালী গৌরী মাকে
পূজা করি তমসাকে
মায়ের শুভ্রা রূপ দেখে সে
শুভ্র-শুচি যার ভকতি॥

কে সাজাল মাকে আমার বিসর্জনের বিদায়-সাজে

কে সাজাল মাকে আমার
বিসর্জনের বিদায়-সাজে।
আজ সারাদিন কেন এমন
করুণ সুরে বাঁশি বাজে॥
আনন্দেরই প্রতিমাকে, হায়
বিদায় দিতে পরান নাহি চায়।
মাকে ভাসিয়ে জলে কেমন করে
রইব আঁধার ভবন মাঝে॥
মা-র আগমনে বেজেছিল
প্রাণে নতুন আশার বাঁশি।
দুখ-শোক-ভয় ভুলেছিলাম
(দেখে) মা অভয়ার মুখের হাসি।
মা দশ হাতে আনন্দ এনেছিল,
বিশ হাতে আজ দুঃখ ব্যথা দিল ;
মা মৃন্ময়ীকে ভাসিয়ে জলে পাব
চিন্ময়ীকে বুকের মাঝে॥

কেঁদো না কেঁদো না, মাকে কে বলেছে কালো

কেঁদো না কেঁদো না, মাকে কে বলেছে কালো।
(মা) ঈষৎ হাসিতে তোর ত্রিভুবন আলো॥
কে দিয়েছে গালি তোরে, মন্দ সে মন্দ
যে বলেছে কালী তোরে, অন্ধ সে অন্ধ।
(মোর তারায় সে দেখে নাই।
তার নয়নতারায় নাই আলো, তাই
তারায় সে দেখে নাই।)
(রাখে) লুকিয়ে মা তোর নয়ন-কমল
কোটি আলোয় সহস্রদল,
(তোর) রূপ দেখে মা লজ্জায় শিব-অঙ্গে ছাই মাখাল,
(তুষার-ধবল কান্তি যাঁহার চন্দ্রলেখা যাঁর চূড়ায়
চন্দ্রকান্তমণির জ্যোতি রূপ দেখে যা লজ্জা পায়)
সেই চন্দ্রচূড়ও রূপ দেখে তোর অঙ্গে ছাই মাখাল॥
তোর নীল কপোলে কোটি তারা
চন্দনেরই ফোঁটার পারা
ঝিকিমিকি করে গো,
(যেন আলোর অলকা-তিলক ঝলমল করে গো)
মা তোর দেহলতায় অতুল কোটি রবিশশী মুকুল
ফুটে আবার ঝরে গো।
তুমি হোমের শিখা বহ্নি-জ্যোতি
তুমিই স্বাহা দীপ্তিমতি,
আঁধার ভুবন-ভবনে মা কল্যাণদীপ জ্বালো
তুমিই কল্যাণদীপ জ্বালো॥

কেন আমায় আনলি মাগো মহাবাণীর সিন্ধুকূলে

কেন আমায় আনলি মাগো মহাবাণীর সিন্ধুকূলে
(মোর) ক্ষুদ্র ঘটে এ সিন্ধুজল কেমন করে নেব তুলে॥
চতুর্বেদে এ সিন্ধুর জল
ক্ষুদ্রবারিবিন্দু হয়ে করছে টলমল
এই বাণীরই বিন্দু যে মা গ্রহ তারা গগনমূলে।
ইহারই বেগ ধরতে গিয়ে শিবের জটা পড়ে খুলে॥
অনন্তকাল রবি শশী এই যে মহাসাগর হতে
সোনার ঘটে রসের ধারা নিয়ে ছড়ায় ত্রিজগতে॥
বাঁশিতে মোর, স্বল্প এ আঁধারে
অনন্ত সে বাণীর ধারা ধরতে কি মা পারে,
শুনেছি মা হয় সীমাহীন ক্ষুদ্রও তোর চরণ ছুঁলে॥

কোথায় গেলি মা গো আমার

কোথায় গেলি মা গো আমার
খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রেখে।
ক্লান্ত আমি খেলে খেলে
এ সংসারের ধূলি মেখে॥
বলেছিলি সন্ধ্যা হলে
ধূলি মুছে নিবি কোলে,
ছেলেরে তুই গেলি ছলে–
(এখন) পাই না সাড়া মাকে ডেকে॥
একি খেলার পুতুল মাগো
দিয়েছিলি মন ভুলাতে,
আধেক তাহার হারিয়ে গেছে
আধেক ভেঙে আছে হাতে।
এ পুতুলও লাগছে মা ভার,
তোর পুতুল তুই নে মা এবার
(এখন) দিন ফুরাল, নামল আঁধার,
ঘুম পাড়া তুই আঁচল ঢেকে॥

 জগৎ জুড়ে জাল ফেলেছিস শ্যামা কি তুই জেলের মেয়ে

জগৎ জুড়ে জাল ফেলেছিস
শ্যামা কি তুই জেলের মেয়ে।
(তোর) মায়ার জালে মহামায়া
বিশ্বভুবন আছে ছেয়ে॥
পড়ে মা তোর মায়ার ফাঁদে
কোটি নরনারী কাঁদে,
তোর মায়াজাল তত বাঁধে
পালাতে চায় যত ধেয়ে॥
চতুর যে মীন সে জানে মা,
জাল থেকে কি মুক্তি আছে?
(তাই) জেলে যখন জাল ফেলে,
সে লুকায় জেলের পায়ের কাছে।
ওমা জাল এড়িয়ে তাই সে বাঁচে।
তাই মা আমি নিলাম শরণ
তোর ও দুটি রাঙা চরণ
(আমি) এড়িয়ে গেলাম মায়ার বাঁধন
মা তোমার অভয় চরণ পেয়ে॥

জ্যোতির্ময়ী মা এসেছে আঁধার আঙিনায়

জ্যোতির্ময়ী মা এসেছে আঁধার আঙিনায়।
ত্রিভুবনবাসী ছেলেমেয়ে আয় রে ছুটে আয়।
আনন্দ আজ লুট হতেছে কে কুড়াবি আয়।
আনন্দিনী দশভুজা দশ হাতে ছড়ায়॥
মা অভয় দিতে এল ভয়ের অসুর দলে পায়।
আজ জিনব জগৎ মাভৈঃ বাণীর বিপুল ভরসায়॥
বুকের মাঝে টইটুম্বুর ভরা নদীর জল
ওরে দুলছে টলমল।
ঝিলের জলে ফুটল কত রঙের শতদল
ছুঁতে মায়ের পদতল॥
দেব-সেনারা বাচ খেলে রে আকাশ-গাঙের স্রোতে,
সেই আনন্দে যোগ দিবে কে, আয় রে বাহির-পথে।
আর যেতে দেব না মাকে রাখব ধরে পায়–
মাতৃহারা মা পেলে কি ছাড়তে কভু চায়॥

তুই পাষাণগিরির মেয়ে হলি পাষাণ ভালো বাসিস বলে

তুই পাষাণগিরির মেয়ে হলি
পাষাণ ভালো বাসিস বলে।
মা গলবে কি তোর পাষাণ-হৃদয়
তপ্ত আমার নয়নজলে॥
তুই বইয়ে নদী পিতার চোখে
লুকিয়ে বেড়াস লোকে লোকে;
মহেশ্বরও পায় না তোকে
পড়ে মা তোর চরণতলে॥
কোটি ভক্ত যোগী ঋষি
ঠাঁই পেল না তোর চরণে।
তাই ব্যথায় রাঙা তাদের হৃদয়,
জবা হয়ে ফোটে বনে।
আমি শুনেছি মা ভক্তিভরে
মা বলে যে ডাকে তোরে,
(তুই) অমনি গলে অশ্রুলোরে
ঠাঁই দিস তোর অভয় কোলে॥

তুই বলহীনের বোঝা বহিস যেথায় ভৃত্য হয়ে

(তুই) বলহীনের বোঝা বহিস যেথায় ভৃত্য হয়ে
(যথা) দাসী হয়ে করিস সেবা, যা মা সেথায় লয়ে
(মোরে)        যা মা সেথায় লয়ে॥
(যথা) রুগ্‌ণ ছেলে বক্ষে ধরে
নিশীথ জাগিস একলা ঘরে
(যথা) দুঃখী পিতার সাথে কাঁদিস উপবাসী রয়ে।
(মোরে)        যা মা সেথায় লয়ে॥
শ্রমিক চাষার তরে যথা আঁধার খাদে মাঠে
ক্ষুধার অন্ন নিস মা বয়ে, নে মা তাদের হাটে
(মোরে)        নে মা তাদের হাটে॥
(তুই) ত্রিজগতের পাপ কুড়ালি
(তাই) সোনার অঙ্গ হল কালি
(তোরে) সেই কোলেতে পাব মহাকালীর পরিচয়ে॥

তোর কালো রূপ দেখতে মা গো

তোর কালো রূপ দেখতে মা গো
কালো হল মোর আঁখি।
চোখের ফাঁকে যাস পালিয়ে
মা তুই কালো পাখি॥
আমার নয়ন-দুয়ার বন্ধ করে এই দেহ-পিঞ্জরে
চঞ্চলা-গো বুকের মাঝে রাখি তোরে ধরে,
চোখ চেয়ে তাই খুঁজি তোরে পাইনে ভুবন ভরে
সাধ যায় মা জন্ম জন্ম অন্ধ হয়ে থাকি॥
তোর কালো রূপের বিজলি-চমক কোটি লোকের জ্যোতি,
অনন্ত তোর কালোতে মা, সকল আলোর গতি!
তোর কালো রূপকে বলে মা ‘তমঃ’,
ওই রূপে তুই মহাকালী মা গো নমো নমঃ
তুই আলোর আড়ালে টেনে মা গো
দিসনে মোরে ফাঁকি॥

তোর কালো রূপ লুকাতে মা বৃথাই আয়োজন

তোর কালো রূপ লুকাতে মা বৃথাই আয়োজন।
ঢাকতে নারে ও রূপ কোটি চন্দ্র ও তপন॥
মাখিয়ে কালো আমার চোখে
লুকিয়ে রাখিস তোর কালোকে
(তোর)কালো রূপে মা গো অখিল বিশ্ব নিমগন॥
আঁধার নিশীথ সে যেন তোর কালো রূপের ধ্যান
(তোর)গহন কালোয় গাহন করে পুড়ায় ধরার প্রাণ॥
হেরি তোর কালোরূপ স্নিগ্ধ করা
শ্যামা হল বসুন্ধরা,
নিবল কোটি সূর্য তোরে খুঁজে অনুক্ষণ॥

তোরই নামের কবচ দোলে  আমার বুকে, হে শংকরী

তোরই নামের কবচ দোলে
আমার বুকে, হে শংকরী!
কী ভয় দেখাস? আমি তোকেও
ভয় করি না ভয়ংকরী॥
মৃত্যু-প্রলয় তাদের লাগি
নয় যারা তোর অনুরাগী
(ও মা) তোর শ্রীচরণ আশ্রয় মোর
(দেখে)        মরণ আছে ভয়ে মরি॥
আমি তোরই মাঝে ঘুমাই জাগি,
তোরই কোলে কাঁদি হাসি!
তোর যদি না হয় মা বিনাশ
মা আমিও অবিনাশী॥
(তোর) চরণ ছেড়ে পালায় যারা
মায়ার জালে মরে তারা
তোর মায়াজাল এড়িয়ে গেলাম
মা তোর অভয়-চরণ ধরি॥

থির হয়ে তুই বোস দেখি মা

থির হয়ে তুই বোস দেখি মা
খানিক আমার আঁখির আগে।
দেখব নিত্য-লীলাময়ী,
থির হলে তুই কেমন লাগে॥
শান্ত হলে ডাকাত মেয়ে
কেমন দেখায় দেখব চেয়ে,
চিন্ময় শিবশম্ভু কেন চরণতলে শরণ মাগে॥
দেখব চেয়ে জননী তুই সাকারা না নিরাকারা ,
কেমন করে কালী হয়ে নামে ব্রহ্ম জ্যোতির্ধারা।
কোলে নিতে কোলের ছেলে
শ্মশান জাগিস বাহু মেলে,
কেমন করে মহামায়ার বুকে মায়ের মায়া জাগে।

দীনের হতে দীন দুঃখী অধম যথা থাকে

দীনের হতে দীন দুঃখী অধম যথা থাকে
ভিখারিনি বেশে সেথা দেখেছি মোর মাকে
(মোর) অন্নপূর্ণা মাকে॥
অহংকারের প্রদীপ নিয়ে স্বর্গে মাকে খুঁজি,
মা ফেরেন ধূলির পথে যখন ঘটা করে পূজি,
ঘুরে ঘুরে দূর আকাশে
প্রণাম আমার ফিরে আসে
যথায় আতুর সন্তানে মা কোলে বাড়ায়ে ডাকে॥
নামতে নারি তাদের কাছে সবার নীচে যারা
যাদের তরে আমার জগন্মাতা সর্বহারা।
অপমানের পাতালতলে লুকিয়ে যারা আছে
তোর শ্রীচরণ রাজে সেথায়, নে মা তাদের কাছে
আমায় নে মা তাদের কাছে।
আনন্দময় তোর ভবনে
আনব কবে বিশ্বজনে
দেখব জ্যোতির্ময়ী রূপে সেদিন তমসাকে॥

 দুর্গতিনাশিনী আমার শ্যামা মায়ের চরণ ধর

দুর্গতিনাশিনী আমার
শ্যামা মায়ের চরণ ধর।
যত বিপদ তরে যাবি
মাকে বারেক স্মরণ কর॥
তোর সংসার-ভাবনার ভার
সঁপে দে রে চরণে মা-র
যে চরণে বক্ষ পেতে
আছেন ভূমানন্দে মেতে
দেবাদিদেব দিগম্বর॥
যে দিয়েছে এ সংসারের শিকল পায়ে বেঁধে,
সেই মহামায়ার শ্রীচরণে শরণ নে তুই কেঁদে।
কেটে যাবে সকল মায়া,
পাবি মায়ের চরণ-ছায়া,
শান্তি পাবি রোগে শোকে,
অন্তে যাবি মোক্ষলোকে
শিবানীরে বরণ কর॥

 নন্দলোক হতে আমি এনেছি রে মহামায়ায়

নন্দলোক হতে আমি এনেছি রে মহামায়ায়।
বন্ধ যথায় বন্দি যত কংস রাজার অন্ধ কারায়॥
বন্দি জাগো! ভাঙো আগল
ফেল রে ছিঁড়ে পায়ের শিকল
বুকের পাষাণ ছুঁড়ে ফেলে
মুক্তলোকে বেরিয়ে আয়॥
আমার বুকের গোপালকে রে
রেখে এলাম নন্দালয়ে,
সেইখানে সে বংশী বাজায়
আনন্দে গোপ-দুলাল হয়ে।
মা-র আদেশে বাজাবে সে
অভয় শঙ্খ দেশে দেশে
তোরা, নারায়ণী-সেনা হবি
এবার নারায়ণীর কৃপায়॥

পরমপুরুষ সিদ্ধযোগী মাতৃভক্ত যুগাবতার

পরমপুরুষ সিদ্ধযোগী মাতৃভক্ত যুগাবতার
পরমহংস স্রীরামকৃষ্ণ লহো প্রণাম নমস্কার॥
জাগালে ভারত-শ্মশানতীরে
অশিবনাশিনী মহাকালীরে,
মাতৃনামের অমৃত নীরে
বাঁচালে মৃত ভারত আবার॥
সত্যযুগের পুণ্য স্মৃতি আনিলে কলিতে তুমি তাপস,
পাঠালে ধরার দেশে দেশে ঋষি পূর্ণতীর্থ বারি-কলস॥
মন্দিরে মসজিদে গির্জায়
পূজিলে ব্রহ্মে সমশ্রদ্ধায়,
তব নামমাখা প্রেমনিকেতনে
ভরিয়াছে তাই ত্রিসংসার॥

ফিরিয়ে দে মা ফিরিয়ে দে গো

ফিরিয়ে দে মা ফিরিয়ে দে গো
ওমা দে ফিরিয়ে মোর হারানিধি!
তুই দিয়ে নিধি নিলি কেড়ে
মা তোর এ কোন নিঠুর বিধি॥
বল মা তারা কেমন করে
নয়নতারা নিলি হরে,
দিলি মা হয়ে তুই শিশু বুকে
নিঠুর মরণ-সায়ক বিঁধি॥
তরু যেমন শিকড় দিয়ে তাহার মাটির মাকে
জড়িয়ে ধরে থাকে স্নেহের সহস্র সে পাকে;
মা গো তেমনি করে তাহার মায়া
আঁকড়ে ছিল আমার কায়া,
তারে নিলি কেন মহামায়া
শূন্য করে আমার হৃদি॥

 বল মা শ্যামা বল, তোর বিগ্রহ কী মায়া জানে

বল মা শ্যামা বল, তোর বিগ্রহ কী মায়া জানে,
(আমি) যত দেখি তত কাঁদি ওই রূপ দেখি মা সকলখানে॥
মাতৃহারা শিশু যেমন মায়ের ছবি দেখে
চোখ ফিরাতে নারে-মা গো, কাঁদে বুকে রেখে।
তোর মূর্তি মোরে তেমনি করে টানে মা গো মরণটানে॥
ওমা,রাত্রে নিতুই ঘুমের ঘোরে দেখি বুকের কাছে
যেন, বিগ্রহ তোর মায়ের মতো জড়িয়ে মোর আছে।
জেগে উঠে আঁধার ঘরে
কাঁদি যবে মা তোর তরে,
দেখি বিগ্রহ তোর কাঁদছে যেন চেয়ে চেয়ে আমার পানে॥
(দেখি) আরসিতে মুখ দেখতে গিয়ে মূর্তি তোরই রাজে,
মুদলে আঁখি বিগ্রহ তোর দেখি বুকের মাঝে,
আর কতকাল ছবি দিয়ে
রাখবি মোরে মা ভুলিয়ে,
তোর কোলে মা যাব কবে, শান্তি কবে পাব প্রাণে॥

বল রে জবা বল কোন সাধনায় পেলি শ্যামা মায়ের চরণতল

বল রে জবা বল।
কোন সাধনায় পেলি শ্যামা মায়ের চরণতল।।

মায়া–তরুর বাঁধন টুটে
মায়ের পায়ে পড়লি লটে
মুক্তি পেলি, উঠলি ফুটে আনন্দ–বিহ্বল!
তোর সাধনা আমায় শেখা, জবা, জীবন হোক সফল।।

কোটি গন্ধ –কুসুম ফোটে, বনে মনোলোভা –
কেমনে মা’র চরণ পেলি, তুই তামসী জবা!

তোর মত মা’র পায়ে রাতুল
হব কবে প্রসাদী-ফুল,
কবে উঠবে রেঙে
ওরে মায়ের পায়ের ছোঁয়া লেগে উঠবে রেঙে,
কবে তোরই মতো রাঙবে রে মোর মলিন চিত্ত-দল।।

ভাগীরথীর ধারার মতো সুধার সাগর পড়ুক ঝরে

ভাগীরথীর ধারার মতো সুধার সাগর পড়ুক ঝরে
মা গো এবার ত্রিভুবনের সকল জড় জীবের পরে॥
যত মলিন আঁধার কালো
হোক সুধাময়, পড়ুক আলো,
সকল জীব শিব হোক মা, সেই সুধাতে সিনান করে॥
তোর শক্তি-প্রসাদ পেয়ে মানুষ হবে অমর সেনা,
দিব্য জ্যোতির্দেহ পাবে, দানব-অসুর ভয় রবে না।
এই পৃথিবী ব্যথাহত
শ্বেত শতদলের মতো
মা তোর পূজাঞ্জলি হয়ে উঠবে ফুটে সেই সাগরে॥

ভুল করেছি ওমা শ্যামা বনের পশু বলি দিয়ে

ভুল করেছি ওমা শ্যামা বনের পশু বলি দিয়ে।
(তাই) পুজিতে তোর রাঙা চরণ এলাম মনের পশু নিয়ে॥
তুই যে বলিদান চেয়েছি
কাম-ছাগ ক্রোধরূপী মহিষ ;
তোর পায়ে দিলাম লোভের জবা মোহ-রিপুর ধূম জ্বালিয়ে॥
দিলাম হৃদয়-কমন্ডলুর মদ-সলিল তোর চরণে,
মাৎসর্যের পূর্ণাহুতি দিলাম পায়ে পূর্ণ মনে।

ষড়্‌রিপুর উপচারে
যে পূজা চাস বারে বারে
সেই পূজারই মন্ত্র মা গো ভক্তরে দে শিখিয়ে॥

 মহাকালের কোলে এসে গৌরী হল মহাকালী

মহাকালের কোলে এসে
গৌরী হল মহাকালী।
শ্মশান-চিতার ভস্ম মেখে
ম্লান হল মা-র রূপের ডালি॥
তবু মায়ের রূপ কি হারায়
(সে যে) ছড়িয়ে আছে চন্দ্র-তারায়
মায়ের রূপের আরতি হয়
নিত্য সূর্য-প্রদীপ জ্বালি॥
উমা হল ভৈরবী হায়
বরণ করে ভৈরবেরে,
হেরি শিবের শিরে জাহ্নবীরে
শ্মশানে মশানে ফেরে।

অন্ন দিয়ে ত্রিজগতে
অন্নদা মোর বেড়ায় পথে,
ভিক্ষু শিবের অনুরাগে
ভিক্ষা মাগে রাজদুলালি॥

মা আমি তোর অন্ধ ছেলে হাত ধরে মোর নিয়ে যা মা

মা! আমি তোর অন্ধ ছেলে
হাত ধরে মোর নিয়ে যা মা!
পথ নাহি পাই, যে দিকে চাই
দেখি আঁধার ঘোর ত্রিযামা॥
আমি নিজে পথ চলিতে চাই
বারে বারে পথ ভুলি মা তাই
মায়া রূপে পড়ে কাঁদি
কোথায় দয়াময়ী শ্যামা॥
মা তুই যবে হাত ধরে চলিস,
রয় না পতন-ভয়
তুই যবে পথ দেখাস মা গো,
সে পথ জ্যোতির্ময়।
কী হবে জ্ঞান-প্রদীপ নিয়ে সাথে,
বৃথা এ দীপ জন্মান্ধের হাতে
মা তুই যদি হস নির্ভর মোর
পথের ভয় আর রবে না মা॥

 মা একলা ঘরে ডাকব না আর

(মা) একলা ঘরে ডাকব না আর
দুয়ার বন্ধ করে।
(তুই) সকল ছেলের মা যেখানে
ডাকব মা সেই ঘরে॥
রুদ্ধ আমার একলা এ মন্দিরে
পথ না পেয়ে যাস বুঝি মা ফিরে
(ঘুরে) জ্যোতির্লোকে ঘুম পাড়িয়ে
তাপিত সন্তান নিয়ে
কাঁদিস মা তুই বুকে ধরে॥
(তুই) সকল ছেলের মা যেখানে
ডাকব মা সেই ঘরে॥
(আমি) একলা মানুষ হতে গিয়ে হারাই মা তোর স্নেহ,
(আমি) যে ঘর যেতে ঘৃণা করি, মা! সেই তোর গেহ।
দুর্বল মোর ভাই বোনদের তুলে
দাঁড়াব মা সেদিন চরণমূলে,
কোলে তুলে নিবি হেসে
(আর) হারাব না তোরে॥

মা কবে তোরে পারব দিতে

মা কবে তোরে পারব দিতে
আমার সকল ভার।
ভাবতে কখন পারব মা গো।
নাই কিছু আমার॥
(কারেও) আনিনি মা সঙ্গে করে,
রাখতে নারি কারেও ধরে
তুই দিস তুই নিস মা হরে–
আমার কোথায় আধিকার॥
হাসি খেলি চলে ফিরি ইঙ্গিতে মা তোরই,
তোর মাঝে মা জনম লভি, তোরই মাঝে মরি
পুত্র মিত্র কন্যা জায়া
মহামায়া তোর এ মায়া,
মা তোর লীলার পুতুল আমি
ভাবতে দে এবার॥

 মা গো আমি আর কি ভুলি

মা গো, আমি আর কি ভুলি।
চরণ যখন ধরেছি তোর মা গো,
আমি আর কি ভুলি।
(তুই) বহু জনম ঘুরিয়েছিস মা
পরিয়ে চোখে মায়ার ঠুলি॥
(তোর) পা ছেড়ে যে মোক্ষ যাচে
(তুই) বর নিয়ে যাস তাহার কাছে;
আমি যেন যুগে যুগে পাই মা প্রসাদ চরণধূলি॥
(মোরে) শিশু পেয়ে খেলনা দিয়ে রেখেছিলি মা ভুলিয়ে,
(এখন) খেলনা ফেলে কোলে নিতে
মাকে ডাকি দু-হাত তুলি॥
তোর ঐশ্বর্য যা কিছু মা
সে ভক্তগণে বিলিয়ে উমা,
ভিখারি এই সন্তানে দিস
মাতৃনামের ভিক্ষা-ঝুলি॥

মা গো আমি তান্ত্রিক নই

মা গো আমি তান্ত্রিক নই,
তন্ত্র মন্ত্র জানি না মা।
আমার মন্ত্র যোগ-সাধনা
ডাকি শুধু শ্যামা শ্যামা॥
যাই না আমি শ্মশান মশান
দিই না পায়ে জীব বলিদান,
খুঁজতে তোকে খুঁজি না মা
অমাবস্যা ঘোর ত্রিযামা॥
ঝিল্লি যেমন নিশীথ রাতে
একটানা সুর গায় অবিরাম,
তেমনি করে নিত্য আমি
জপি শ্যামা তোমারই নাম।
শিশু যেমন অনায়াসে
জননীকে ভালোবাসে,
তেমনি সহজ সাধনা মোর
তাতেই পাব তোর দেখা মা॥

মা গো তোমার অসীম মাধুরী

মা গো তোমার অসীম মাধুরী
বিশ্বে পড়িছে ছড়ায়ে।
তোমার আঁখির স্নিগ্ধ লাবণি
ঝরিছে গগন গড়ায়ে॥
কুমুদে কমলে দিঘি সরোবরে
তোমার পূজাঞ্জলি থরে থরে
তব অপরূপ রূপ বিহরে
নিখিল প্রকৃতি জড়ায়ে॥
অরুণ-কিরণে হেরি মা তোমারই
মুখের অভয় হাসি,
নাচে আনন্দে নদীতরঙ্গ
প্রাণে প্রাণে বাজে বাঁশি।
আগমনি গায় সৃষ্টি অশেষ
ধ্যান ভেঙে চায় হাসিয়া মহেশ,
তোমারে পূজিতে পূজারিনি বেশ
ধরণিরে দিল পরায়ে॥

মা গো তোরই পায়ের নূপুর বাজে

মা গো তোরই পায়ের নূপুর বাজে
এই বিশ্বের সকল ধ্বনির মাঝে॥
জীবের ভাষায় পাখির মধুর গানে
সাগর-রোলে নদীর কলতানে
সমীরণের মরমরে শুনি সকল সাঁঝে।
মা গো তোরই পায়ের নূপুর বাজে॥
আমার প্রতি নিশ্বাসে মা রক্তধারার মাঝে
প্রাণের অনুরণনে তোর চরণধ্বনি বাজে।
গভীর প্রণব ওংকারে তোর কালী
(মা গো মহাকালী)
তাথই নাচের শুনি করতালি
সেই নৃত্যলীলার স্তবগাথা গান
চরণতলে নটরাজে॥

মা গো, আজও বেঁচে আছি তোরই প্রসাদ পেয়ে

মা গো, আজও বেঁচে আছি তোরই প্রসাদ পেয়ে।
তোর দয়ায় মা অন্নপূর্ণা তোরই অন্ন খেয়ে॥
কবে কখন খেলার ছলে
ডেকেছিলাম শ্যামা বলে,
সেই পুণ্যে ধন্য আমি
আজ তোর নাম গেয়ে॥
তোর নাম-গান বিনা আমার পুণ্য কিছু নাই,
পাপী হয়েও পাই আমি তাই যখন যাহা চাই॥
দুঃখ শোকে বিপদ-ঝড়ে
বাঁচাস মা তুই বক্ষে ধরে,
দয়াময়ী নাই কেহ মা
ভবানী তোর চেয়ে॥

মা গো, আমি মন্দমতি তবু যে সন্তান তোরই

মা গো, আমি মন্দমতি
তবু যে সন্তান তোরই।
(হায়) পুত্র বেড়ায় কাঙালবেশে
মা যার ভুবনেশ্বরী॥
তুই যে এত বাসিস হেলা
(তবু) তোরেই ডাকি সারাবেলা;
মার খেয়ে তোর শিশুর মতোমাগো
তোকেই জড়িয়ে ধরি॥
মা হয়ে তুই কেমন করে
কোল থেকে তোর দিলি ফেলে,
(মাগো) কেন দিলি ধুলায় ফেলে?
(আমি) মন্দ এত হতাম না মা
মায়ের স্নেহ-সুধা পেলে।
(মা) তোর উপরে অভিমানে
দু-চোখ যায় যেদিক পানে
সেই দিকে তাই ধাই মা এখন
মরণ-বাঁচন ভয় না করি॥

মা তোর চরণ-কমল ঘিরে

মা তোর চরণ-কমল ঘিরে
চিত্ত-ভ্রমর বেড়ায় ঘুরে।
(ও মা) সাধ মেটে না দেখে দেখে(যত)
দেখি, তত নয়ন ঝুরে॥
(ওই) চরণচিহ্ন বক্ষে এঁকে
চরণ-পরাগ-ধূলি মেখে
গ্রহ-তারায় লোকে লোকে
(তোর) নাম গেয়ে যাই সুরে সুরে॥
তোর চরণের ধূলি নিয়ে ললাটে মোর তিলক আঁকি
ওই চরণের পানে চেয়ে ধ্রুবতারা হল আঁখি।
তোর চরণের মধু যদি
(মা)পাই এমনই নিরবধি,
লক্ষ কোটি জনম নিয়ে
বেড়াব ত্রিভুবন জুড়ে॥

মা হবি না মেয়ে হবি

মা হবি না মেয়ে হবি
দে মা উমা বলে।
তুই আমারে কোল দিবি না
আমিই নেব কোলে॥
মা হয়ে তুই মাগো আমার
নিবি কি মোর সংসার-ভার,
দিন ফুরালে আসব ছুটে
মা তোর চরণতলে।
(তুই) মুছিয়ে দিবি দুঃখ-জ্বালা তোর স্নেহ-অঞ্চলে॥
এক হাতে মোর পূজার থালা ভক্তি-শতদল,
আর এক হাতে ক্ষীর নবনী, কী নিবি তুই বল।

মেয়ে হয়ে মুক্তকেশে
খেলবি ঘরে হেসে হেসে,
ডাকলে মা তুই ছুটে এসে
জড়াবি মোর গলে।
(তোরে) বক্ষে ধরে শিবলোকে যাব আমি চলে।

মাকে ভাসায়ে জলে কেমনে রহিবে ঘরে

মাকে ভাসায়ে জলে কেমনে রহিবে ঘরে,
শূন্য ভুবন শূন্য ভবন কাঁদে হাহাকার করে॥
মা যে নদীর ঢেউ-এর মতো,
পালিয়ে বেড়ায় অবিরত,
হৃদয়-ঘাটে একটু থেকে অমনি সে যায় সরে॥
বিসর্জনের প্রতিমা এ নয়
(এরে) নিত্য কাছে রাখতে সাধ হয়
পাষাণ দেউল ঘিরে রে ভাই বেঁধে ভক্তিডোরে॥
সেই মাকে মোর ভাসিয়ে নদীর জলে
মাতৃহারা শিশুর মতো কাঁদি ‘মা মা’ বলে।
তেমনি সুদিন আসবে কবে
(মোর) নিত্য আগমনি হবে
বিশ্ব-চরাচরে॥

মাতৃনামের হোমের শিখা আমার বুকে কে জ্বালাল

মাতৃনামের হোমের শিখা
আমার বুকে কে জ্বালাল।
সেই শিখা আজ হরবে যেন
ত্রিজগতের আঁধার কালো॥
আজ মনে হয় দিবস যামী
অমৃতেরই পুত্র আমি
আনন্দময় হল ত্রিলোক
যেদিকে চাই কেবল আলো॥
সূর্য যেমন জানে না, তার
আলোয় কত জগৎ জাগে,
বিকারবিহীন তেমনি আমি,
জ্বলি নামের অনুরাগে।

হয়তো আমার আলোক লেগে
নতুন সৃষ্টি উঠছে জেগে,
তাই কি বিপুল আকর্ষণে
সবারে চাই বাসতে ভালো॥

মায়ের অসীম রূপ-সিন্ধুতে রে

(মায়ের) অসীম রূপ-সিন্ধুতে রে
বিন্দুসম বেড়ায় ঘুরে,
কোটি চন্দ্র সূর্য তারা
অনন্ত এই বিশ্ব জুড়ে॥
যোগীন্দ্র শিব পায়ের তলায়
ধ্যান করে রে সেই অসীমায়,
কোটি ব্রহ্মা মহিমা গায়
প্রণব ওংকারের সুরে॥
কোটি গ্রহের নিবল জ্যোতি মহাকালীর সীমা খুঁজে,
সৃষ্টি-প্রলয় বলয় হয়ে ঘোরে শ্যামার চতুর্ভুজে।
মায়ের একটি আঁখির চাওয়ায়
যুগ-যুগান্ত হারিয়ে যায়,
মায়ের রূপের ঈষৎ আভাস পেয়ে
সাগর দুলে, তিমির ঝুরে॥

 মায়ের চেয়েও শান্তিময়ী মিষ্টি বেশি মেয়ের চেয়ে

মায়ের চেয়েও শান্তিময়ী
মিষ্টি বেশি মেয়ের চেয়ে।
চঞ্চলা এই লীলাময়ী
মুক্তকেশী কালো মেয়ে॥
(সে মিষ্টি যত দুষ্টু তত এই কালো মেয়ে
গিরিঝরনা-সম এল ধেয়ে এই পার্বতী মেয়ে
করুণা-অমৃতধারায় ভুবন ছেয়ে রে
এল এই কালো মেয়ে॥)
মোর নন্দিনী এই আনন্দিনী
আমি সেই গরবে গরবিনি।
তার আর কী চাওয়ার আছে গো
যার অন্তরে মা আনন্দিনী
তার আর কী পাওয়ার আছে গো।
এই মা যে আমার হৃদয়-গগন
আলোর মতো আছে ছেয়ে॥
মাকে তবু চোখে চোখে রাখি
যদি কভু দেয় সে ফাঁকি
(আমি ভয়ে ভয়ে থাকি গো
এই মায়াময়ী মেয়ে নিয়ে ভয়ে ভয়ে থাকি গো
আমি বহু সাধ্য-সাধনাতে পেয়েছি এই মাকে রে
আমি কোটি জন্মের তপস্যাতে পেয়েছি এই মাকে রে।)
আমিকাঙালিনি, কোথায় রাখি
এই স্বর্গের রত্ন পেয়ে॥

মোর আঘাত যত হানবি শ্যামা

মোর আঘাত যত হানবি শ্যামা
ডাকব তত তোরে।
মায়ের ভয়ে শিশু যেমন
লুকায় মায়ের ক্রোড়ে॥
(ও মা) চারধারে মোর দুখের পাথার,
(তুই) পরখ কত করবি মা আর,
(আমি) জানি তবু হব মা পার
চরণ-তরি ধরে
(তোরই) চরণ-তরি ধরে॥
(আমি) ছাড়ব না তোর নামের ধেয়ান বিশ্বভুবন পেলে,
(আমার) দুঃখ দিয়ে নাম ভুলাবি, নই মা তেমন ছেলে।

আমায় দুঃখ দেওয়ার ছলে
(তুই) স্মরণ করিস পলেপলে,
আমি সেই আনন্দে দুঃখের অসীম
সাগর যাব তরে॥

যে কালীর চরণ পায় রে কালীর চরণ পায়

যে কালীর চরণ পায় রে কালীর চরণ পায়।
সে মোক্ষ মুক্তি কিছুই নাহি চায়॥
সে চায় না স্বর্গ চায় না ভগবান,
শ্রীকালীর চরণ আত্মা তাহার দেহ-মন ও প্রাণ;
সে কালীর চরণ ছেড়ে ব্রহ্মলোকেও নাহি যায়॥
শিবের জটা গঙ্গা নিত্য চরণ ধোয়ায় যাঁর
যোগ-সাধনা আরাধনা সে জানে না ভাই
ওই চরণ তাহার সার॥
ধর্মাধর্ম ভেদ জানে না সে বলে সবাই মায়ের ছেলে,
বন্ধু বলে জড়িয়ে ধরে চাঁড়াল কাছে এলে;
সে বেদ-বেদান্ত জানে না শ্রীকালীর নাম গায়॥

যে নামে মা ডেকেছিল সুরথ আর শ্রীমন্ত তোরে

যে নামে মা ডেকেছিল সুরথ আর শ্রীমন্ত তোরে
সেই নাম তুই শিখিয়ে দে মা, ডাকব আমি তেমন করে॥
বেদ-পুরাণে যে নাম শুনি,
যে নাম জপে ঋষি মুনি,
সেই নাম দে, যে নাম নিতে
বক্ষ ভাসে অশ্রুলোরে॥
ভয় যদি তোর ভক্তি দিতে, কর মা অসুর দানব মোরে,
(তুই) আসবি যখন শাস্তি দিতে, দেখব তোরে নয়ন ভরে।
তোর হাতে মা মরণ হলে
ঠাঁই পাব যে তোরই কোলে;
আঘাত করে ছেলেকে মা কাছে যেমন বক্ষ ধরে॥

রক্ষা-কালীর রক্ষা-কবচ আছে আমায় ঘিরে

রক্ষা-কালীর রক্ষা-কবচ আছে আমায় ঘিরে।
মায়ের পায়ের ফুল কুড়িয়ে বেঁধেছি মোর শিরে॥
মা-র চরণামৃত খেয়ে
অমৃতে প্রাণ আছে ছেয়ে,
দুঃখ-অভাব ভাবনার ভার
দিয়েছি মা ভবানীরে॥
তার নামের নামাবলি গড়িয়ে আমার বুকে
মায়ের কোলের শিশুর মতো ঘুমাই পরম সুখে।
মা-র ভক্তের চরণ-ধূলি
নিয়েছি মোর বক্ষে তুলি,
(মায়ের) পূজার প্রসাদ পেতে আমি
আসি ফিরে ফিরে॥

শক্তের তুই ভক্ত শ্যামা

শক্তের তুই ভক্ত শ্যামা
(তোরে) যায় না পাওয়া কেঁদে।
(তাই) শক্তিসাধক রাখে তোরে
ভক্তিডোরে বেঁধে॥
(মা) শক্ত বড়ো শক্ত ছেলে
(সে) জানে, দড়ি আলগা পেলে
যাবি পালিয়ে চোখে ধুলা দিয়ে
মায়াফাঁদ ফেঁদে।
(তাই) ভয় পেয়ে তুই মুক্তি দিতে চাস মা নিজে সেধে॥
(তুই) সুরাসুরে ভুলিয়ে রাখিস ইন্দ্রত্বের মোহে,
(ওমা) গুণের কিছু ঘাট নাই তোর নির্গুণ তাই কহে
(তোরে) নির্গুণ তাই কহে॥
তোর মায়াতে ভুলে গিয়ে
বিষ্ণু ঘুমান লক্ষ্মী নিয়ে,
চতুর্মুখে ব্রহ্মা ভাবেন
দেবী আছেন চতুর্বেদে।
(তোর)অন্ত খুঁজে শিব হয়েছেন ভবঘুরে বেদে॥

শ্মশানে জাগিছে শ্যামা অন্তিমে সন্তানে নিতে কোলে

কৌশী তেতালা

শ্মশানে জাগিছে শ্যামা
অন্তিমে সন্তানে নিতে কোলে।
জননী শান্তিময়ী বসিয়া আছে ওই
চিতার আগুন ঢেকে স্নেহ-আঁচলে॥
‍সন্তানে দিতে কোল ছাড়ি সুখ-কৈলাস
বরাভয়া-রূপে মা শ্মশানে করেন বাস;
কী ভয় শ্মশানে শান্তিতে যেখানে
ঘুমাবি জননীর চরণতলে॥
জ্বলিয়া মরিলি কে সংসার-জ্বালায়–
তাহারে ডাকিছে মা, কোলে আয় কোলে আয়!
জীবনে শান্ত ওরে
ঘুম পাড়াইতে তোরে
কোলে তুলে নেয় মা মরণের ছলে॥

শ্যামা তোর নাম যার জপমালা

শ্যামা তোর নাম যার জপমালা
তার কি মা ভয় ভাবনা আছে।
দুঃখ অভাব রোগ শোক জরা
লুটায় তাহার পায়ের কাছে॥
যার চিত্ত নিবেদিত তোর চরণে
ওমা কী ভয় তাহার জীবনে মরণে,
মায়ের কোলে সে যে শিশুর সম
নির্ভয় চিতে সদা খেলে নাচে॥
রক্ষামন্ত্র যার শ্যামা তোর নাম
সকল বিপদ তারে করে প্রণাম।

সদা প্রসন্ন মন তার ধ্যানে মা তোর,
ভূমানন্দে মা গো রহে সে বিভোর;
(তার) নিকটে আসিতে নারে কাল কঠোর
তব নাম প্রসাদ যে লভিয়াছে॥

শ্যামা নামের লাগল আগুন আমার দেহ-ধূপকাঠিতে

শ্যামা নামের লাগল আগুন
আমার দেহ-ধূপকাঠিতে।
যত জ্বালি সুবাস তত
ছড়িয়ে পড়ে চারিভিতে॥
ভক্তি আমার ধূপের মতো
ঊর্ধ্বে ওঠে অবিরত,
শিবলোকের দেব-দেউলে মা-র শ্রীচরণ পরশিতে॥
অন্তরলোক শুদ্ধ হল পবিত্র সেই ধূপ-সুবাসে,
(ওরে) মা-র হাসি মুখ চিত্তে ভাসে চন্দ্রসম নীল আকাশে।
সব কিছু মোর পুড়ে কবে
চিরতরে ভস্ম হবে,
মা-র ললাটে আঁকব তিলক সেই ভস্ম-বিভূতিতে॥

শ্যামা মায়ের কোলে চড়ে জপি আমি শ্যামের নাম

শ্যামা মায়ের কোলে চড়ে
জপি আমি শ্যামের নাম।
মা হলেন মোর মন্ত্রগুরু
ঠাকুর হলেন রাধাশ্যাম॥
ডুবে শ্যামা-যমুনাতে
খেলব খেলা শ্যামের সাথে
শ্যামা যবে মোর হানবে হেলা
মা পুরাবেন মনস্কাম॥
আমার মনের দো-তারাতে
শ্যামা ও শ্যামা দুটি তার,
সেই দো-তারায় ঝংকার দেয়
ওংকার রব অনিবার॥
মহামায়ার মায়ার ডোরে
আনবে বেঁধে শ্যাম কিশোরে,
কৈলাসে তাই মাকে ডাকি
দেখব সেথায় ব্রজধাম॥

সংসারেরই দোলনাতে মা ঘুম পাড়িয়ে কোথায় গেলি

সংসারেরই দোলনাতে মা
ঘুম পাড়িয়ে কোথায় গেলি?
আমি অসহায় শিশুর মতো
ডাকি মা দুই বাহু মেলি॥
মোর অন্য শক্তি নাই মা তারা
‘মা’ বুলি আর কান্না ছাড়া,
তোরে না দেখলে কেঁদে উঠি
(তোর) কোল পেলে মা হাসি খেলি॥
(ওমা) ছেলেরে তোর তাড়ন করে
মায়ারূপী সৎমা এসে
ছয় রিপুতে দেখায় মা ভয়
পাপ এল পুতনির বেশে।

মরি ক্ষুধা তৃষ্ণাতে মা,
শ্যামা আমায় কোলে নে মা,
আমি ক্ষণে ক্ষণে চমকে উঠি
দয়াময়ী মা কি এলি॥

সর্বনাশী! মেখে এলি এ কোন চুলোর ছাই

সর্বনাশী! মেখে এলি এ কোন চুলোর ছাই?
শ্মশান ছাড়া খেলবার তোর জায়গা কি আর নাই॥
মুক্তকেশী, কেশ এলিয়ে
বেড়াস কখন কোথায় গিয়ে,
এক নিমেষও তোকে নিয়ে শান্তি নাহি পাই॥
হাড়-জ্বালানি মেয়ে! হাড়ের মালা কোথায় পেলি?
ভুবনমোহন গোরী-রূপে কালি মেখে এলি!
তোর গায়ের কালি চোখের জলে
ধুইয়ে দেব, আয় মা কোলে।
তোরে বুকে ধরেও মরি জ্বলে, দিই মা গালি তাই॥

Exit mobile version