পাপিয়া ম্যাডাম শান্ত গলায় বললেন, বকুল তুমি ঐ মওলানার সঙ্গে গুটগুট করে কী কথা বলছিলে?।
কী হচ্ছে না হচ্ছে উনি জানতে চাচ্ছিলেন।
পাবলিকের সঙ্গে কোন রকম মেলামেশা করবে না। সে যদি কিছু জানতে চায়— ইউনিটের সঙ্গে কথা বলবে। তোমার কভু ফড় করে এত কথা বলার দরকার কী? আমি তোমার ভালর জন্যেই বলছি।
জ্বি আচ্ছা। তু
মি আমার উপর রাগ করছ নাতো?
জি না।
শো বিজনেসে যারা থাকে তাদের সবার উচিত মানুষজনের কাছ থেকে একটু দূরে থাকা। লোকজন আসবে নানান কথা তোমাকে জিজ্ঞেস করবে। তুমি খোলা মনে উত্তর দেবে–তারপর সেগুলি ফুলিয়ে ফাপিয়ে অন্যদের বলবে। মওলানা সাহেবকে আমার খুব কনসপিকিউয়াস মনে হচ্ছে। মওলানা মানুষ তিনি থাকবেন মসজিদে, শুটিং স্পটে কেন?
মঈন সাহেব হাসি মুখে বললেন— মানুষের স্বাভাবিক কৌতূহল। বেচারা মওলানা বলে তার কৌতূহল থাকবে না?
পাপিয়া ম্যাডাম খুব ঝাঝের সঙ্গে বললেন, প্লীজ দয়া করে তুমি আল্লাদী ধরনের কথা বলবে না। মওলানাকে বেচারা বলছ কেন? বেচারার ডেফিনেশন কী?
মঈন সাহেব বেচারার ডেফিনেশন শুরু করলেন–আর আমি আশ্চর্য হয়ে ভাবলাম ব্যাপারটা কী, পাপিয়া ম্যাডাম ইনাকে তুমি তুমি করে বলছেন কেন?
কে ডিরেক্টর সাহেবের সঙ্গে যতবার কথা বলতে শুনেছি ততবারই আপনি বলতে শুনেছি। আজ হঠাৎ তুমি কেন?
পাপিয়া শোন, বেচারা মানে হচ্ছে নেই-চারা। বে হল নেই, কাজেই বে চারা—নেই চারা। চারা হল চারাগাছ। অর্থাৎ যার শিকর আছে। গাছ নেই মানে শিকড়ও নেই। কাজেই বেচারার অর্থ দাঁড়াচ্ছে–শিকড়হীন মানুষ।
পাপিয়া ম্যাডাম কঠিন গলায় বললেন, মঈন ভাই শুনুন। যা কিছু একটা জিক দাঁড়া করালেইতো হয় না। লজিক ব্যাপারটাকে আপনি খেলো করে লেছেন।
তাই কি?
হ্যাঁ তাই। আমি আপনার লজিক লজিক খেলা দেখতে দেখতে ক্লান্ত। এবার ক্ষান্ত দিন। অনেকতো হল।
তুমি দেখি সত্যি সত্যি রাগ করছ——শোন পাপিয়া আমি আসলে রসিকতা ছিলাম। তুমি মনে হচ্ছে আজকাল রসিকতাও নিতে পারছ না। তোমার কি রীর খারাপ?
হ্যাঁ আমার শরীর খারাপ।
পাপিয়া শোন, তুমি একটা কাজ কর— নার্ভ রিলাক্স করে এ জাতীয় দুটা ট্যাবলেট খেয়ে শুয়ে থাক। বিশ্রাম নাও। আজ তোমার কোন শট হবে না।
পাপিয়া ম্যাডাম সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ালেন। দুজনের কথা কাটাকাটির মধ্যে পড়ে আমি খুবই বিব্রত বোধ করছি। পাপিয়া ম্যাডাম এখন অবশ্যি ডিরেক্টর সাহেবের সঙ্গে আপনি আপনি করেই কথা বলছেন। মনে হয় উনার শরীর আসলেই ভাল না। কখন আপনি বলছেন, কখন তুমি বলছেন বুঝতে পারছেন না। উনি দ্রুত পা ফেলে এগুচ্ছেন আমি যাচ্ছি তার পেছনে পেছনে। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে উনি এখনই বলবেন— এই মেয়ে তুমি আমার পেছনে পেছনে অসছ কেন? আমি কেন উনার পেছনে পেছনে যাচ্ছি তাও বুঝতে পারছি না। রেগে যাওয়া মানুষের সঙ্গে থাকতে নেই। রেগে যাওয়া মানুষ তার রাগ চারদিকে হড়িয়ে দেয়। আমি জানি কিছুক্ষণের মধ্যেই উনার রাগের খানিকটা আমার উপর এসে পড়বে। বকুল।
জি।
তোমার মা তোমাকে বকু ডাকে কেন?
আদর করে ডাকেন। বকুল থেকে বকু।
এইসব আদর ভাল না। তুমি শো বিজনেসের মেয়ে। তোমার নাম লোকের মুখে মুখে ফিরবে—এইখানে বকু আবার কী? তা ছাড়া বকুল নামটাওতো ভাল। শো বিজনেসে নাম হবে ফ্লাওয়ারী। বকুল ফুলের নাম হলেও ফ্লাওয়ারী নাম। তোমার আর কোন নাম নেই?।
আমার ভাল নাম–মালিহা রুমালী।
রুমালী নামটাতো বেশ ইন্টারেস্টিং। তবে মালিহা না। মা দিয়ে যে সব নাম শুরু তার কোনটাই আমার ভাল লাগে না। সেইসব নামে মা মা গন্ধ থাকে। শো বিজনেসের মেয়ের নামে মা মা গন্ধ থাকা ঠিক না। রুমালী নামটা অবশ্যি ভাল।
রুমালী নাম আমার বাবা রেখেছিলেন।
ভাল কথা মনে করেছ। তোমার বাবা প্রসঙ্গে একটা কথা বলি। কথাটা তোমার বাবা প্রসঙ্গে না–তোমার মা প্রসঙ্গে। তুমি বাবার কথা বলায় মনে পড়ল।
বলুন।
তোমার মা সবচে অপছন্দের কাজ যেটা করেন সেটা হচ্ছে দুঃখের কাদুনী শুরু করেন। তোমার মার কাছ থেকে এই পর্যন্ত তিনবার আমি শুনেছি–তোমার বাবা তোমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তোমরা কী ভয়ঙ্কর কষ্টের মধ্যে পড়েছিলে, খেয়ে না খেয়ে ছিলে। সবাইকে এইসব বলে বেড়ানোর অর্থ কী? এটাতো কোন আনন্দের ঘটনা না যে পৃথিবী শুদ্ধ সবাইকে জানাতে হবে? সহানুভূতি পাবার জন্যে বলা? সহানুভূতির দরকার কী? আর শোন রুমালী, মানুষ সহানুভূতির বস্তা খুলে বসে নি যে দুঃখের কঁদুনি শুনলেই সহানুভূতির বস্তা থেকে পাঁচ কেজি সহানুভূতি দিয়ে দেবে। সহানুভূতি হচ্ছে——খুবই ফাইনার ফিলিংস। একমাত্র মহাপুরুষদের মধ্যেই এই ফিলিংস আছে। বুঝতে পারছ কী বলছি?
জ্বি।
তুমি কি তোমার মাকে খুব পছন্দ কর?
জ্বি।
তোমাকে জরুরি একটা কথা বলি— কাউকে খুব বেশি পছন্দ করবে না। খুব বেশি পছন্দ করলে কী হয় জান?
জ্বি না।
খুব বেশি পছন্দ যাকে করবে সে তোমাকে গ্রাস করে ফেলবে। কখন যে গ্রাস করবে তুমি বুঝতেই পারবে না। মানুষের মধ্যে আছে ঝিনুক স্বভাব। ঝিনুক ক করে? মুখ খুলে হা করে থাকে। ধরা যাক তুমি কোন একটা ঝিনুককে খুব বেশি পছন্দ করে ফেললে–তুমি তখন করবে কী, তার পেটের ভেতর গিয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়বে। ওন্নি ঝিনুক তার ডালা বন্ধ করে ফেলবে। সেই ডালা খুলে তুমি আর কখনো বের হতে পারবে না। চির জীবনের জন্যে ঝিনুকের ভেতর আটকা পড়ে যাবে। তুমি কি আমার কথায় রাগ করছ?