তোমার সাথে তর্কে কোনোদিন পারব না বলে সেলিম উঠে বাথরুমে গেল। ফিরে এলে লাইলী তোয়ালে এগিয়ে দিল।
সেলিম বলল, মায়ের কাছে যাবে না।
লাইলী বলল, যাব তো; কিন্তু একজন ভদ্রলোক আমাকে এমন বিপদে ফেলেছেন যে, আমি এখন লজ্জায় মায়ের কাছে যেতে পারছি না।
তা হলে তো ভদ্রলোকটার শাস্তি হওয়া উচিৎ। দেবে নাকি শাস্তি বলে সেলিম মুখটা তার ঠোঁটের কাছে নিয়ে গেল।
লাইলী তার ঠোঁটে খুব আস্তে করে কামড়ে দিতে সেলিম ওকে জাপটে ধরল। লাইলী বলল, অপরাধ বেশি হয়ে যাচ্ছে।
সেলিম বলল, আমিও শাস্তি বেশি পেতে চাই।
লাইলী বলল, হার মানছি, প্রীজ ছেড়ে দাও। চল দুজনে আম্মাকে সালাম করব। কালকেই সালাম করা উচিৎ ছিল। কিন্তু আমরা নিজেদেরকে নিয়ে এমনই মশগুল ছিলাম যে, সে কথা কারুরই মনে আসেনি। তার দোয়া নেওয়া উচিত।
সেলিম তাকে আলিঙ্গন মুক্ত করে বলল, চল। তারপর বলল, সত্যি তোমার বুদ্ধির তারিফ না করে পারছি না। আল্লাহ তোমাকে রূপের সঙ্গে সবকটা গুণও দিয়েছেন। আর দেরি করে লাভ নেই বলে সে তার হাত ধরে এগোতে গেল।
লাইলীকে দাঁড়িয়ে মিটি মিটি হাসতে দেখে বলল, কি হল যাবে না?
শুধু গেঞ্জী গায়ে দিয়েই যাবে নাকি?
সেলিম নিজের শরীরের দিকে চেয়ে বলল, তাই তো লাইলী ততক্ষণে তার জামাটা এনে হাতে দিল। তারপর দুজনে মায়ের ঘরে গেল।
হামিদা বানু জাভেদের সঙ্গে নাস্তা তৈরী করে সবেমাত্র বসে বসে মেয়ের ভাগ্যের কথা চিন্তা করছিলেন। তাদেরকে আসতে দেখে বললেন, এস বাবা এস।
ওরা পায়ে হাত দিয়ে সালাম করল।
হামিদা বানু দুজনকে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমা খেয়ে দোয়া করলেন, আল্লাহপাক তোমাদের দুজনকে অক্ষে ওশ্মর করুন। তোমাদের সুখী করুন। লাইলীর আব্বা বেঁচে থাকলে বড় খুশি হতেন।
সেলিম বলল, আল্লাহপাক তার রূহের মাগফেরাত দিন। তাঁকে কাঁদতে দেখে সেলিম আবার বলল, আম্মা, আপনি কাঁদবেন না। সবকিছু আল্লাহপাকের ইচ্ছা। তারপর লাইলীকে বলল, তুমি নাস্তার ব্যবস্থা কর।
হামিদা বানু চোখ মুখ মুছে বললেন, তোমরা এখানে বস, নাস্তা তৈরি আছে। আমি জাভেদকে নিয়ে আসছি।
নাস্তা খেয়ে রুমে ফিরে এসে সেলিম বলল, নিচেই তো অফিস। যাওয়ার পারমিসান চাই। দর হলে আজ অবশ্য যেতাম না।
লাইলী জামা-কাপড় এগিয়ে দিয়ে বলল, তোমার অফিসের ষ্টেনো কি করবে? তার চাকরি আছে তো?
সেলিস বলল, সে ম্যানেজার সাহেবের ষ্টেনো ছিল। তাকে মালিক প্রমোশন দিয়ে পার্টনার করে নিয়েছে। এখন সেও কোম্পানীর মালিক। মালিক তো আর নিজের অফিসে ষ্টেনোর কাজ করতে পারে না।
লইলী বলল, দুজন মালিকের মধ্যে একজন যখন অফিসের স্টাফের মত কাজ করতে পারে, তখন অন্যজনই বা পারবে কেন।
দোষ আছে বলে আমি বলছি না। অন্য জন পুরুষ হলে কোনো কথা ছিল না। তিনি একজন মহিলা। যিনি বর্তমানে একজনের স্ত্রী। বিয়ের পর মেয়েদের আগের জীবনের সবকিছু পরিত্যাগ করে স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখার কাজ করবে।
লাইলী এরপর আর কিছু বলতে পারল না। কয়েক সেকেণ্ড চুপ করে থেকে বলল, ঠিক একটায় আসবে কিন্তু। তারপর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে উঠে দাঁড়াল।
সেলিম তাকে জড়িয়ে ধরে তার গোলাপী নরম ঠোঁটে চুমো খেয়ে বলল, তাই হবে, আসি, আল্লাহ হাফেজ।
লাইলীও বলল, আল্লাহ হাফেজ।
প্রতিদিন অফিসের পর সেলিম লাইলীকে নিয়ে বেড়াতে যায়। ছুটির দিনে সুলতানাদের বাসায় হৈ হুল্লোড় করে দিন কাটায়।
বিয়ের পর লাইলী সব কিছু জানিয়ে রহিমা ভাবিকে চিঠি দিয়েছে। তারা লাইলীর পত্র পেয়ে আল্লাহর কাছে শোকর গুজারী করেছে।
একদিন লাইলী স্বামীকে বলল, আম্মাকে পত্র দিয়ে তোমাদের বাড়ির সবাইকে আমাদের বিয়ের কথা জানাবে না?
সেলিম বলল, না, আর কয়েকদিন পর দুজনে এক সঙ্গে গিয়ে সবাইকে অবাক করে দেব। সেইজন্য ম্যানেজারকেও জানাতে নিষেধ করে দিয়েছি।
প্রায় মাসখানেক পর সেলিম আরিফের টাঙ্কল পেল, মা খুব অসুস্থ, তুমি আজই আসবার চেষ্টা করবে। সেলিম ম্যানেজারকে ডেকে বলল, মা অসুস্থ, আরিফ ট্রাঙ্কল করেছে। আমি আজই যেতে চাই। আপনি বিমান অফিসে ফোন করে দেখুন, তিনটে সীট পাওয়া যাবে কিনা। যদি না পাওয়া যায়, তা হলে গাড়ি নিয়ে যাব। আপনি তাড়াতাড়ি ব্যাবস্থা করুন।
ম্যানেজার সাহেব বিমান অফিসে ফোন করে জেনে বলেন, একটা সীটও খালি নেই।
সেলিম বলল, ঠিক আছে আমি গাড়ি নিয়ে যাব।
স্বামীকে দুপুরের আগেই মন ভার করে আসতে দেখে লাইলী সালাম দিয়ে এগিয়ে এলে তার একটা হাত ধরে জিজ্ঞেস করল, তোমার কী শরীর খারাপ?
সেলিম সালামের জবাব দিয়ে তাকে উদ্বিগ্ন হতে দেখে জড়িয়ে ধরে বলল, আরিফ ট্রাঙ্কল করেছে, মায়ের অসুখ। আমি এক্ষুণি রওয়ানা হতে চাই। প্লেনে সীট নেই, তাই ঠিক করেছি, অফিসের গাড়ি নিয়ে যাব।
সেলিমের কথাগুলো লাইলীর কানে কান্নার মতো শোনাল। তার বুকে মাথা রেখে বলল, আল্লাহপাক আম্মাকে সহিসালামতে রাখুন। তুমি হাত মুখ ধুয়ে খেয়ে একটু বিশ্রাম নাও। আমি মাকে নিয়ে সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছি।
সেলিম সবাইকে নিয়ে বেলা দুটোয় রওয়ানা দিল। গাড়িতে লাইলী জিজ্ঞেস করল, আরিফ কে?
সেলিম বলল, আরিফ আমার ছোট ভাই। ম্যাটিক পাশ করে ধর্মের দিকে খুব ঝুঁকে পড়ে। ধর্মের জ্ঞান আহরণের জন্য আজ থেকে প্রায় পাঁচ ছ বছর আগে কাউকে কিছু না জানিয়ে দেওবন্দ চলে গিয়েছিল। সেখানে পড়াশুনা শেষ করে মাস দুয়েক হল ফিরে এসেছে।