Site icon BnBoi.Com

সহিহ বুখারী ০৭ম খণ্ড (৩৭৪৬-৪৩৩০)

Sahi Bukhari 7th Part by Imam Bukhari

 

সহিহ বুখারী ০৭ম খণ্ড (৩৭৪৬-৪৩৩০)

 

 যুদ্ধাভিযান (অবশিষ্ট অংশ) (৩৭৪৬-৪১২১)

হাদীস নং ৩৭৪৬

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ যুদ্ধের দিন বলেছেন, এই তো জিবরাঈল, তাঁর ঘোড়ার মাথায় হাত রেখে (লাগাম হাতে) এসে পৌঁছেছেন, তাঁর পরিধানে রয়েছে সমরাস্ত্র।

হাদীস নং ৩৭৪৭

মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রাহীম রহ………..উকবা ইবনে আমির রা. থেকে বর্ণি, তিনি বলেন, আট বছর পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ যুদ্ধের শহীদদের জন্য (কবরস্থানে গিয়ে) এমনভাবে দোয়া করলেন যেমন কোন বিদায় গ্রহণকারী জীবিত ও মৃতদের জন্য দোয়া করেন। তারপর তিনি (সেখান থেকে ফিরে এসে) মিম্বরে উঠে বললেন, আমি তোমাদের অগ্রে প্রেরিত এবং আমিই তোমাদের সাক্ষীদাতা। এরপর হাউযে কাউসারের পাড়ে তোমাদের সাথে আমার সাক্ষাত হবে। আমার এ জায়গা থেকেই হাউযে কাউসার দেখতে পাচ্ছি। তোমরা শিরকে লিপ্ত হয়ে যাবে আমি এ আশংকা করি না। তবে আমার আশংকা হয় যে, তোমরা দুনিয়ার আরাম আয়েশে অত্যাধিক আকৃষ্ট হয়ে পড়ব। রাবী বরেন, আমার এ দেখাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে শেষবারের মত দেখা।

হাদীস নং ৩৭৪৮

উবায়দুল্লাহ ইবনে মূসা রহ………বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ঐ দিন (উহুদ যুদ্ধের দিন) আমরা মুশরিকদের মুকাবিলায় অবতীর্ণ হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল্লাহ (ইবনে যুবাইর) রা. কে তীরন্দাজ বাহিনীর অধিনায়ক নিযুক্ত করে তাদেরকে (নির্ধারিত এক স্থানে) মোতায়েন করলেন এবং বললেন, যদি তোমরা আমাদেরকে দেখ যে, আমরা তাদের উপর বিজয় লাভ করেছি, তাহলেও তোমরা এখান থেকে সরবে না। অথবা যদি তোমরা তাদেরকে দেখ যে, তারা আমাদের উপর জয় লাভ করেছে, তাহলেও তোমারা এই স্থান পরিত্যাগ করে আমাদের সহযোগিতার জন্য আসবে না। এরপর আমরা তাদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলে তারা পালাতে আরম্ভ করল। এমনি আমরা দেখতে পেলাম যে, মাহিলাগণ দ্রুত দৌড়ে পাহাড়ে আশ্রয় নিচ্ছে। তারা বস্ত্র পায়ে গোছা থেকে টেনে তুলেছে, ফলে পায়ের অলংকারগুলো পর্যন্ত বেরিয়ে পড়ছে। এ সময় তারা (তীরন্দাজ বাহিনীর লোকেরা) বলতে লাগলেন এই গনীমত গনীমত ! তখন আবদুল্লাহ (ইবনে যুবাইর) রা. বললেন, তোমরা যেন এ স্থান না ছাড় এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। তারা এ কথা অগ্রাহ্য করল। যখন তারা এ কথা অগ্রাহ্য করল, তখন তাদের রেখে ফিরিয়ে দেয়া হল এবং শহীদ হলেন তাদের সত্তর জন্য সাহাবী। আবু সুফিয়ান একটি উটু স্থানে উঠে বলল, কাওমের মধ্যে মুহাম্মদ জীবিত আছে কি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তার কোন উত্তর দিও না। সে আবার বলল, কাওমের মধ্যে ইবনে কুহাফা (আবু বকর) বেঁচে আছে কি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তার কোন জবাব দিও না। সে পুনরায় বলল, কাওমের মধ্যে ইবনুল খাত্তাব জীবিত আছে কি? তারপর সে বলল, এরা সকলেই নিহত হয়েছে। বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই জবাব দিত। সময় উমর রা. নিজেকে সামলাতে না পেরে বললেন, হে আল্লাহর দুশমন, তুমি মিথ্যা কথা বলছ। যে জিনিসে তোমাকে লাঞ্ছিত করবে আল্লাহ বাকী রেখেছেন। আবু সুফিয়ান বলল, হুবালের জয়। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে বললেন, তোমরা তার উত্তর দাও। তারা বললেন, আমরা কি বলব? তিনি বললেন, তোমরা বল الله أعلى وأجل لنا আল্লাহ সমুন্নত ও মহান। আবু সুফিয়ান বলল, العزى ولا عزى لكم আমাদের উযযা আছে, তোমাদের উযযা নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তার জবাব দাও। তারা বললেন, আমরা কি জবাব দেব? তিনি বললেন, বল الله مولانا ولا مولى لكم আল্লাহ আমাদের অভিভাবক, তোমাদের তো কোন অভিভাবক নেই। পরিশেষে আবু সুফিয়ান বলল, আজকের দিন বদর যুদ্ধের বিনিময়ের দিন। যুদ্ধ কূপ থেকে পানি উঠানোর পাত্রের মত (অর্থাৎ একবার এক হাতে আরেকবার অন্য হাতে) (যুদ্ধের ময়দানে) তোমরা নাক-কান কাটা কিছু সংখ্যক সাহাবী সকাল বেলা শরাব পান করেছিলেন। এরপর তাঁরা শাহাদত বরণ করেন।

হাদীস নং ৩৭৪৯

আবদান রহ……….সাদ ইবনে ইবরাহীমের পিতা ইবরাহীম রহ. থেকে বর্ণিত যে, আবদুর রহমান ইবনে আউফ রা.-এর নিকট কিছু খানা আনা হল। তিনি তখন রোযা ছিলেন। তিনি বললেন, মুসআব ইবনে উমাইর রা. ছিলেন আমার থেকেও উত্তম ব্যক্তি। তিনি শাহাদত বরণ করেছেন। তাকে এমন একটি চাদরে কাফন দেওয়া হয়েছিল যে, তা দিয়ে মাথা ঢাকলে পা বের হয়ে যেত আর পা ঢাকলে মাথা বের হয়ে যেত। রাবী বলেন, আমার মনে হয় তিনি এ কথাও বলছিলেন যে, হামযা রা. আমার চেয়েও উত্তম লোক ছিলেন। তিনি শাহাদত বরণ করেছেন। এরপর দুনিয়াতে আমাদেরকে যথেষ্ট সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দেয়া হয়েছে অথবা বলেছেন পর্যাপ্ত পরিমাণে দুনিয়ার ধন-সম্পদ দেওয়া হয়েছে। আমার আশংকা হচ্ছে, হয়তো আমাদের নেকীর বদলা এখানেই (দুনিয়াতে) দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর কাঁদতে লাগলেন, এমনকি আহার্য পরিত্যাগ করলেন।

হাদীস নং ৩৭৫০

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি উহুদ যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, আপনি কি মনে করেন, আমি যদি শহীদ হয়ে যাই তাহলে আমি কোথায় অবস্থান করব? তিনি বললেন, জান্নাতে। তারপর উক্ত ব্যক্তি হাতে খেজুরগুলো ছুড়ে ফেললেন, এরপর তিনি লড়াই করলেন। অবশেষে তিনি শহীদ হয়ে গেলেন।

হাদীস নং ৩৭৫১

আহমদ ইবনে ইউনুস রহ………খাব্বাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে (মদীনায়) হিজরত করেছিলাম। ফলে আল্লাহর কাছে আমাদের পুরস্কার সাব্যস্ত গিয়েছে। আমাদের কতক দুনিয়াতে পুরস্কার ভোগ না করেই অতীত হয়ে গিয়েছেন অথবা চলে গিয়েছেন। মাসআব ইবনে উমাইর রা. তাদের মধ্যে একজন। তিনি উহুদ যুদ্ধে শাহাদত বরণ করেছেন। তিনি একটি ধারাদার পশমী বস্ত্র ব্যতীত আর কিছুই রেখে যাননি। এ দিয়ে আমরা তার মাথা ঢাকলে পা বরে হয়ে যেত এবং পা ঢাকলে মাথা বের হয়ে যেত। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ কাপড় দিয়ে তার মাথা ঢেকে দাও এবং পায়ের উপর দাও ইযখির অথবা তিনি বলেছেন, ইযখির দ্বারা তার পা আবৃত কর। আমাদের কতক এমনও আছেন, যাদের ফল পেকেছে এবং তিনি এখন তা সংগ্রহ করেছেন।

হাদীস নং ৩৭৫২

হাসসান ইবনে হাসসান রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, (তিনি বলেছেন) তাঁর চাচা (আনাস ইবনে নযর রা.) বদর যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি (আনাস ইবনে নাযর রা.) বলেছেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সর্বপ্রথম যুদ্ধে তাঁর সঙ্গে অংশগ্রহণ করতে পারিনি। যদি আল্লাহ তায়ালা আমাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কোন যুদ্ধে শরীক করেন তাহলে অবশ্যই আল্লাহ দেখবেন, আমি কত প্রাণপণ চেষ্টা করে লড়াই করি। এরপর তিনি উহুদ যুদ্ধের দিন সম্মুখসমরে অবতীর্ণ হওয়ার পর লোকেরা পরাজিত হলে (পরাজিত হয়ে পলায়ন করতে আরম্ভ করলো) তিনি বললেন, হে আল্লাহ ! এ সমস্ত লোক অর্থাৎ মুসলমানগণ যা করলেন, আমি এর জন্য আপনার নিকট ওযরখাহী পেশ করছি এবং মুশরিকগণ যা করল তা থেকে আমি আমার সম্পর্কহীনতা প্রকাশ করছি। এরপর তিনি তলোয়ার নিয়ে অগ্রসর হলেন। এ সময় সাদ ইবনে মুআয রা.-এর সাথে তাঁর সাক্ষাত হল। তিনি বললেন, তুমি কোথায় যাচ্ছ হে সাদ? আমি উহুদের অপর প্রান্ত হতে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাচ্ছি। এরপর তিনি (বীর বিক্রমে) যুদ্ধ করে শাহাদত বরণ করলেন। তাকে চেনা যাচ্ছিল না। অবশেষে তাঁর বোন তাঁর শরীরে একটি তিল অথবা অঙ্গুলীর মাথা দেখে তাকে চিনলেন। তাঁর শরীরে আশিটিরও বেশী বর্শা, তরবারি ও তীরের আঘাত ছিল।

হাদীস নং ৩৭৫৩

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………..যায়েদ ইবনে সাবিত রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা কুরআন মজীদকে গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করার সময় সূরা আহযাবের একটি আয়াত আমি হারিয়ে ফেলি, যা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পাঠ করতে শুনতাম। তাই আমরা উক্ত আয়াতটি অনুসন্ধান করতে লাগলাম। অবশেষে তা পেলাম খুযায়মা ইবনে সাবিত আনসারী রা. -এর কাছে। আয়াতটি হল : “মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে, তাদের কেউ কেউ শাহাদত বরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায়”। (৩৩: ২৩) এরপর এ আয়াতটিকে আমরা কুরআন মজীদের ঐ সূরাতে (আহযাবে) সংযুক্ত করে নিলাম।

হাদীস নং ৩৭৫৪

আবুল ওয়ালীদ রহ………..যায়েদ ইবনে সাবিত রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদের উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলে যারা তাঁর সঙ্গে বের হয়েছিল, তাদের কিছুসংখ্যক লোক ফিরে এলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ তাদের সম্পর্কে দুদলে বিভক্ত হয়ে পড়েন। একদল বললেন, আমরা তাদের সাথে লড়াই করব। অপর দল বললেন, আমরা তাদের সাথে লড়াই করব না। এ সময় নাযিল হয় (নিম্নবর্ণিত আয়াতখানা) “তোমাদের কী হল যে, তোমরা মুনাফিকদের সম্বন্ধে দু’দল হয়ে গেলে, যখন তাদের কৃতকর্মের দরুন আল্লাহ তাদেরকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিয়েছেন”। (৪: ৮৮) এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ (মদীনা) পবিত্র স্থান। আগুন যেমন রূপার ময়লা দূর করে দেয়, এমনিভাবে মদীনাও গুনাহকে দূর করে দেয়।

 

হাদীস নং ৩৭৫৫

মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ…………জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যখন তোমাদের মধ্যে দুদলের সাহস হারাবার উপক্রম হয়েছিল’ আয়াতটি আমাদের সম্পর্কে তথা বনু সালিমা এবং বনু হারিসা সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। আয়াতটি নাযিল না হোক এ কথা আমি চাইনি। কেননা এ আয়াতেই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আল্লাহ উভয় দলেরই সহায়ক।

হাদীস নং ৩৭৫৬

কুতাইবা রহ………..জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে জাবির ! তুমি বিয়ে করেছে কি? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, কেমন, কুমারী না অকুমারী? আমি বললাম, না (কুমারী নয়) অকুমারী। তিনি বললেন, কোন কুমারী মেয়েকে বিয়ে করলে না কেন? সে তো তোমার সাথে আমোদ-প্রমোদ করত। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার আব্বা উহুদের যুদ্ধে শাহাদত বরণ করেছেন। এবং রেখে গেছেন নয়টি মেয়ে। এখন আমার নয় বোন। এ কারণে আমি তাদের সাথে তাদেরই মত একজন অনভিজ্ঞ মেয়েকে এনে একত্রিত করা পছন্দ করলাম না। বরং এমন একটি মহিলাকে (বিয়ে করা পছন্দ করলাম) যে তাদের চুল আঁচড়িয়ে দিতে পারবে এবং তাদের দেখাশোনা করতে পারবে। (এ কথা শুনে) তিনি বললেন, ঠিক করেছ।

হাদীস নং ৩৭৫৭

আহমদ ইবনে আবু সুরাইজ রহ………….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত যে, উহুদ যুদ্ধের দিন তার পিতা ছয়টি মেয়ে ও কিছু ঋণ তার উপর রেখে শাহাদত বরণ করেন। এরপর যখন খেজুর কাটার সময় এল তখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললাম, আপনি জানেন যে, আমার পিতা উহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন এবং বিপুল পরিমাণ ঋণের বোঝা রেখে গেছেন। এখন আমি চাই, ঋণদাতাগণ আপনাকে দেখুক। তখন তিনি বললেন, তুমি যাও এবং বাগানের এক কোণে সব খেজুর কেটে জমা কর। (জাবির রা. বলেন) আমি তাই করলাম। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ডেকে আনলাম। যখন তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখলেন, সে মুহূর্তে যেন তারা আমার উপর আরো ক্ষেপে গেলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের আচরণ দেখে বাগানের বড় গোলাটির চতুষ্পার্শ্বে তিনবার চক্কর দিয়ে এর উপর বসে বললেন, তোমার ঋণদাতাদেরকে ডাক। (তারা এলে) তিনি তাদেরকে মেপে মেপে দিতে লাগলেন। অবশেষে আল্লাহ তায়ালা আমার পিতার আমানত আদায় করে দিলেন। আমিও চাচ্ছিলাম যে, একটি খেজুর নিয়ে আমি আমার বোনদের নিকট না যেতে পারলেও আল্লাহ তায়ালা যেন আমার পিতার আমানত আদায় করে দেন। অবশ্য আল্লাহ তায়ালা খেজুরের সবকটি গোলাই অবশিষ্ট রাখলেন। এমনকি আমি দেখলাম যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে গোলার উপর বসা ছিলেন তার থেকে যেন একটি খেজুরও কমেনি।

হাদীস নং ৩৭৫৮

আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ…………সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে আমি আরো দুই ব্যক্তিকে দেখলাম, যারা সাদা পোশাক পরিহিত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ হয়ে তুমুল লড়াই করছে। আমি তাদেরকে পূর্বেও কোনদিন দেখিনি এবং পরেও কোনদিন দেখিনি।

হাদীস নং ৩৭৫৯

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………..সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার জন্য তাঁর তীরদানী থেকে তীর খুলে দিয়ে বললেন, তোমার জন্য আমার মাতা-পিতা কুরবান হোক; তুমি তীর নিক্ষেপ করতে থাক।

হাদীস নং ৩৭৬০

মুসাদ্দাদ রহ……….সাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার উদ্দেশ্যে তাঁর পিতা-মাতাকে এক সাথে উল্লেখ করেছেন।

হাদীস নং ৩৭৬১

কুতাইবা রহ……….সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ যুদ্ধের দিন আমার জন্য তাঁর পিতা-মাতা উভয়কে একসাথে উল্লেখ করেছেন। এ কথা বলে তিনি বোঝাতে চান যে, তিনি লড়াই করছিলেন এমতাবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন, তোমার জন্য আমার পিতামাতা কুরবান হোক।

হাদীস নং ৩৭৬২

আবু নুআইম রহ………আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাদ রা. ব্যতীত অন্য কারো জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর পিতা-মাতা (কুরবান হোক) এক সাথে উল্লেখ করতে আমি শুনিনি।

হাদীস নং ৩৭৬৩

ইয়াসারা ইবনে সাফওয়ান রহ…………আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাদ ইবনে মালিক রা. ব্যতীত অন্য কারো জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর পিতা-মাতা (কুরবান হোক) এক সাথে উল্লেখ করতে আমি শুনিনি। উহুদ যুদ্ধের দিন আমি তাকে বলতে শুনেছি, হে সাদ ! তুমি তীর নিক্ষেপ কর, আমার পিতা-মাতা তোমার জন্য কুরবান হোক।

হাদীস নং ৩৭৬৪

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……….আবু উসমান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে দিনগুলোতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধ করেছেন তার কোন এক সময়ে তালহা এবং সাদ রা. ব্যতীত (অন্য কেউ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলেন না। হাদীসটি আবু উসমান রা. তাদের উভয়ের নিকট থেকে শুনে বর্ণনা করেছেন।

 

হাদীস নং ৩৭৬৫

আবদুল্লাহ ইবনে আবুল আসওয়াদ রহ………..সায়েব ইবনে ইয়াযীদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবদুর রহমান ইবনে আউফ, তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ, মিকদাদ এবং সাদ রা.-এর সাহচর্য লাভ করেছি। তাদের কাউকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করতে শুনিনি, তবে কেবল তালহা রা.-কে উহুদ যুদ্ধ সম্পর্কে বর্ণনা করতে শুনেছি।

হাদীস নং ৩৭৬৬

আবদুল্লাহ ইবনে আবু শায়বা রহ…………কায়েস রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি তালহা রা.-এর হাত অবশ (অবস্থায়) দেখেছি। উহুদ যুদ্ধের দিন তিনি এ হাত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতিরক্ষায় ব্যবহার করেছিলেন।

হাদীস নং ৩৭৬৭

আবু মামার রহ………..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধের দিন লোকজন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ছেড়ে যেতে আরম্ভ করলেও আবু তালহা রা. ঢাল হাতে দাঁড়িয়ে তাকে আড়াল করে রাখলেন। আবু তালহা রা. ছিলেন সুদক্ষ তীরন্দাজ, ধনুক খুব জোরে টেনে তিনি তীর ছুড়তেন। সেদিন (উহুদ যুদ্ধে) তিনি দুটি অথবা তিনটি ধনুক ভেঙ্গেছিলেন। সেদিন যে কেউ ভরা তীরদানী নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন তাকেই তিনি বলেছেন, তীরগুলো খুলে আবু তালহার সামনে রেখে দাও। রাবী আনাস রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা উচু করে যখনই শত্রু দের প্রতি তাকাতেন, তখনই আবু তালহা রা. বলতেন, আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, আপনি মাথা উচু করবেন না। হঠাৎ তাদের নিক্ষিপ্ত তীর আপনার শরীরে লেগে যেতে পারে। আপনার বক্ষ রক্ষা করার জন্য আমার বক্ষই রয়েছে (অর্থাৎ আপনার জন্য আমার জীবন কুরবান) (আনাস রা. বলেন) সেদিন আমি আয়েশা বিনতে আবু বকর এবং উম্মে সুলাইম রা.-কে দেখেছি, তাঁরা উভয়েই পায়ের কাপড় গুটিয়ে নিয়েছিলেন। আমি তাদের পায়ের তলা দেখতে পেয়েছি। তারা মশক ভরে পিঠে বহন করে পানি আনতেন এবং (আহত) লোকদের মুখে ঢেলে দিতেন। আবার চলে যেতেন এবং মশক ভরে পানি এনে লোকদের মুখে ঢেলে দিতেন। সেদিন আবু তালহা রা-এর হাত থেকে দু’বার অথবা তিনবার তরবারিটি পড়ে গিয়েছিল।

হাদীস নং ৩৭৬৮

উবায়দুল্লাহ ইবনে সাঈদ রহ…………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধে মুশরিকরা পরাজিত হয়ে গেলে অভিশপ্ত ইবলীস চীৎকার করে বলল, হে আল্লাহর বান্দারা, তোমাদের পেছন দিকে থেকে আরেকটি দল আসছে। এ কথা শুনে তারা পেছনের দিকে ফিরে গেল। তখন অগ্রভাগ ও পশ্চাদ ভাগের মধ্যে পরস্পর সংঘর্ষ হল। এ পরিস্থিতিতে হুযায়ফা রা. দেখতে পেলেন যে, তিনি তাঁর পিতা ইয়ামন রা.-এর সাথে লড়াই করছেন। তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহর বান্দাগণ, (ইনি তো) আমার পিতা, আমার পিতা (তাকে আক্রমণ করবেন না)। রাবী বলেন, আল্লাহর কসম, এতে তাঁরা বিরত হলেন না। বরং তাকে হত্যা করে ফেললেন। তখন হুযায়ফা রা. বললেন, আল্লাহ আপনাদেরকে ক্ষমা করে দিন। উরওয়া রা. বলেন, আল্লাহর কসম, আল্লাহর সাথে মিলনের (মৃত্যুর) পূর্ব পর্যন্ত হুযায়ফা রা.-এর মনে এ ঘটনার অনুতাপ বাকী ছিল।

হাদীস নং ৩৭৬৯

আবদান রহ…………ইসমান ইবনে মাওহাব রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে এক ব্যক্তি বায়তুল্লাহ এসে সেখানে একদল লোককে বসা অবস্থায় দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, এসব লোক কারা? তারা বললেন, এরা হচ্ছেন কুরাইশ গোত্রের লোক। লোকটি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, এ বৃদ্ধ লোকটি কে? উপস্থিত সকলেই বললেন, ইনি হচ্ছেন (আবদুল্লাহ) ইবনে উমর রা.। তখন লোকটি তাঁর (ইবনে উমর) কাছে গিয়ে বললেন, আমি আপনাকে কিছু কথা জিজ্ঞাসা করব, আপনি আমাকে বলেন দেবেন কি? এরপর লোকটি বললেন, আমি আপনাকে এই ঘরের মর্যাদার কসম দিয়ে বলছি, উহুদ যুদ্ধের দিন উসমান ইবনে আফফান রা. পালিয়েছিলেন, এ কথা আপনি কি জানেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। লোকটি বললেন, তিনি বদরের রণাঙ্গনে অনুপস্থিত ছিলেন, যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি— এ কথাও কি আপনি জানেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। লোকটি পুনরায় বললেন, তিনি বায়আতে রিদওয়ানেও অনুপস্থিত ছিলেন—- এ কথাও কি আপনি জানেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাবী বলেন, লোকটি তখন আল্লাহু আকবার ধ্বনি উচ্চারণ করল। তখন ইবনে উমর রা. বললেন, এসো এখন আমি তোমাকে সব ব্যাপারে অবহিত করছি এবং তোমার প্রশ্নগুলোর উত্তর খুলে বলছি। (১) উহুদের রণাঙ্গন থেকে তাঁর পালানোর ব্যাপারে সম্বন্ধে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। (২) বদর যুদ্ধে তাঁর অনুপস্থিত থাকার কারণ হচ্ছে এই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা (রুকাইয়া) তাঁর স্ত্রী ছিলেন। তিনি ছিলেন অসুস্থ। তাই তাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের মতই তুমি সাওয়াব লাভ করবে এবং গনীমতের অংশ পাবে। (৩) বায়আতে রিদওয়ান থেকে তাঁর অনুপস্থিত থাকার কারণ হল এই যে, মক্কাবাসীদের নিকট উসমান ইবনে আফফান রা. থেকে অধিক মর্যাদাসম্পন্ন কোন ব্যক্তি থাকলে অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা পাঠাতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জন্য উসমান রা.-কে (মক্কা) পাঠালেন। তাঁর মক্কা গমনের পরই বায়আতে রিদওয়ান সংঘটিত হয়েছিল। তাই (বায়আত গ্রহণের সময়) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান হাতখানা অপর হাতের উপর রেখে বলেছিলেন, এটাই উসামানের হাত। এরপর তিনি (আবদুল্লাহ ইবনে উমর) বললেন, এই হল উসমান রা.-এর অনুপস্থিতির মূল কারণ। এখন তুমি যাও এবং এ কথাগুলো মনে গেথে রেখ।

হাদীস নং ৩৭৭০

আমর ইবনে খালিদ রহ……….বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ যুদ্ধের দিন আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা.-কে পদাতিক বাহিনীর অধিনায়ক নিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু তারা পরাজিত হয়ে (মদীনার দিকে) ছুটে গিয়েছিলেন। এটাই হচ্ছে, রাসূল (সা.) এর তাদেরকে পেছনের দিকে থেকে ডাকা।

হাদীস নং ৩৭৭১

ইয়াহইয়া ইবনে আবদুল্লাহ সুলামী রহ……….আবদুল্লাহ ইবন উমর রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ফজরের নামাযের শেষ রাকাতে রুকূ থেকে মাথা উত্তোলন করে “সামিআল্লাহু লিমান হামীদা” বলার পর বলতে শুনেছেন, হে আল্লাহ আপনি অমুক, অমুক এবং অমুকের উপর লানত বর্ষণ করুন, তখন আল্লাহ নাযিল করলেন, তিনি তাদের প্রতি ক্ষমাশীল হবেন অথবা তাদেরকে শাস্তি দেবেন, এ বিষয়ে আপনার করণীয় কিছুই নেই। কারণ তারা যালিম। হানজালা রহ……..সালিম ইবনে আবদুল্লাহ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া, সুহাইল ইবনে আমর এবং হারিস ইবনে হিশামের জন্য বদদোয়া করতেন। এ প্রেক্ষিতেই নাযিল হয়েছে নিম্নোক্ত আয়াতখানা। তিনি তাদের প্রতি ক্ষমাশীল হবেন অথবা তাদেরকে শাস্তি দেবেন, এ বিষয়ে আপনার করণীয় কিছুই নেই। কারণ তারা যালিম।

হাদীস নং ৩৭৭২

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………….সালাবা ইবনে আবু মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার উমর খাত্তাব রা কতগুলো চাদর মদীনাবাসী মহিলাদের মধ্যে বন্টন করলেন। পরে একটি সুন্দর চাদর অবশিষ্ট রয়ে গেল। তার নিকট উপস্থিত লোকদের একজন বলে উঠলেন, হে আমীরুল মুমিনীন ! এ চাদরখান আপনার স্ত্রী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাতনী আলী রা-এর কন্যা উম্মে কুলসুম রা.-কে দিয়ে দিন। উমর রা. বললেন, উম্মে সালীত রা. তার চেয়েও অধিক হকদার। উম্মে সালীত রা. আনসারী মহিলা। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে বায়আত গ্রহণ করেছেন। উমর রা. বললেন, উহুদের দিন এ মহিলা আমাদের জন্য মশক ভরে পানি এনেছিলেন।

হাদীস নং ৩৭৭৩

আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..জাফর ইবনে আমর ইবনে উমাইয়া যামরী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উবায়দুল্লাহ ইবনে আদী ইবনে খিয়ার রহ-এর সাথে ভ্রমণে বের হলাম। আমরা যখন হিমস নামক স্থানে পৌঁছলাম তখন উবায়দুল্লাহ রহ. আমাকে বললেন, ওয়াহশীর কাছে যেতে তোমার ইচ্ছা আছে কি? আমরা তাকে হাযমা রা.-এর শাহাদত বরণ করার ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করব। আমি বললাম, হ্যাঁ যাব। ওয়াহশী তখন হিমস শহরে বসবাস করতেন। আমরা তার সম্পর্কে (লোকদেরকে) জিজ্ঞাসা করলাম। আমাদেরকে বলা হল, ঐ তো তিনি তার প্রাসাদের ছায়ার মধ্যে পশম হীন মশকের মত স্থির হয়ে বসে আছেন। রাবী বলেন, আমরা গিয়ে তার থেকে অল্প কিছু দূরে থামলাম এবং তাকে সালাম করলাম। তিনি আমাদের সালামের উত্তর দিলেন। জাফর রহ. বর্ণনা করেন, তখন উবায়দুল্লাহ রহ. তার মাথা পাগড়ী দ্বারা এমনভাবে আবৃত করে রেখেছিলেন যে, ওয়াহশী তার দুই চোখ এবং দুই পা ব্যতীত আর কিছুই দেখতে পাচ্ছিলেন না। এমতাবস্থায় উবায়দুল্লাহ রহ. ওয়াহশীকে লক্ষ্য করে বললেন, হে ওয়াহশী, আপনি আমাকে চিনেন কি? রাবী বলেন, তিনি তখন তাঁর দিকে তাকালেন এবং এরপর বললেন, না আল্লাহর কসম! আমি আপনাকে চিনি না। তবে আমি এতটুকু জানিযে, আদী ইবনে খিয়ার উম্মে কিতাল বিনতে আবুল ঈসা নামক এক মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন। মক্কায় তার একটি সন্তান জন্মগ্রহণ করলে আমি তার দাই খোঁজ করছিলাম, তখন ঐ বাচ্চাকে নিয়ে তার মায়ের সাথে গিয়ে ধাত্রীমাতার কাছে তাকে সোপর্দ করলাম। সে দিনের সে বাচ্চার পা দুটির মত যেন আপনার পা দুটি দেখতে পাচ্ছি। রাবী বলেন, তখন উবায়দুল্লাহ রহ. তার মুখের পর্দা সরিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হামযা রা.-এর শাহাদত সম্পর্কে আমাদেরকে খবর দেবেন কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বদর যুদ্ধে হামযা রা. তুআইমা ইবনে আদী ইবনে খিযারকে হত্যা করেছিলেন। তাই আমার মনিব যুবাইর ইবনে মুতঈম আমাকে বললেন, তুমি যদি আমার চাচার প্রতিশোধস্বরূপ হামযাকে হত্যা করতে পার তাহলে তুমি আযাদ। রাবী বলেন, যে বছর উহুদ পাহাড় সংলগ্ন আইনাইন পাহাড়ের উপত্যকায় যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল সে যুদ্ধে আমি সকলের সাথে রওয়ানা হয়ে যাই। এরপর লড়াইয়ের জন্য সকলেই সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালে (কাফির সৈন্যদলের মধ্য থেকে) সিবা নামক এক ব্যক্তি ময়দানে এসে বলল, দ্বন্দ্বযুদ্ধের জন্য কেউ প্রস্তুত আছ কি? ওয়াহশী বলেন, তখন হামযা ইবনে আবদুল মুত্তালিব রা. (বীর বিক্রমে) তার সামনে গিয়ে বললেন, হে মেয়েদের খতনাকারিণী উম্মে আনমারের পুত্র সিবা! তুমি কি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে দুশমনী করছ? রাবী বলেন, এরপর তিনি তার উপর প্রচন্ড আঘাত করলেন, যার ফলে সে অতীত দিনের মত বিলীন হয়ে গেল। ওয়াহশী বলেন, আমি হামযা রা.-কে কতল করার উদ্দেশ্যে একটি পাথরের নিচে আত্মগোপন ককরে ওত পেতে বসেছিলাম। যখন তিনি আমার নিকটবর্তী হলেন তখন আমি আমার অস্ত্র দ্বারা এমন জোরে আঘাত করলাম যে, তার মূত্রথলি ভেদ করে নিতম্বের মাঝখান দিয়ে তা বেরিয়ে গেল। ওয়াহশী বলেন, এটাই হল তাঁর শাহাদতের মূল ঘটনা। এরপর সবাই ফিরে এলে আমিও তাদের সাথে ফিরে এসে মক্কায় অবস্থান করতে লাগলাম। এরপর মক্কায় ইসলাম প্রসার লাভ করলে আমি তায়েফ চলে গেলাম। কিছুদিনের মধ্যে তায়েফবাসীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে দূত প্রেরণের ব্যবস্থা করলে আমাকে বলা হল যে, তিনি দূতের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন না। তাই আমি তাদের সাথে রওয়ানা হলাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে গিয়ে হাযির হলাম। তিনি আমাকে দেখে বললেন, তুমিই কি ওয়াহশী ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তুমিই কি হাযমাকে হত্যা করেছিলে? আমি বললাম, আপনার কাছে যে সংবাদ পৌঁছেছে ব্যাপারটি তাই। তিনি বললেন, আমার সামনে থেকে তোমার চেহারা কি সরিয়ে রাখতে পারে? ওয়াহশী বলেন, তখন আমি চলে আসলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ইন্তিকালের পর (নবুওয়াতের মিথ্যাদাবীদার) মুসায়লামাতুল কাযযাব আবির্ভূত হলে আমি বললাম, আমি অবশ্যই মুসায়লামার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হব এবং তাকে হত্যা করে হামযা রা.-কে হত্যা করার ক্ষতিপূরণ করব। ওয়াহশী বলেন, তাই আমি লোকদের সাথে রওয়ানা করলাম। তার অবস্থা যা হওয়ার তাই হল। তিনি বর্ণনা করেন যে, এক সময় আমি দেখলাম যে, হালকা কালো বর্ণের উটের ন্যায় উস্কখুস্ক চুল বিশিষ্ট এক ব্যক্তি একটি ভাঙ্গা পাচীরের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে। তখন সাথে সাথে আমি আমার বর্শা দ্বারা তার উপর আঘাত করলাম। এবং তার বক্ষের উপর এমনভাবে বসিয়ে দিলাম যে, তা দু’কাধের মাঝখান দিয়ে বেরিয়ে পড়ল। এরপর আনসারী এক সাহাবী এসে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং তরবারি দ্বারা তার মাথার খুলিতে প্রচন্ড আঘাত করলেন। আবদুল্লাহ ইবনে ফযল রহ. বর্ণনা করেছেন যে, সুলায়মান ইবনে ইয়াসির রহ. আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-কে বলতে শুনেছেন যে, (মুসায়লামা নিহত হলে) ঘরের ছাদে উঠে একটি বালিকা বলছিল, হায়, হায়, আমীরুল মুমিনীন (মুসায়লামা) কে একজন কালো ক্রীতদাস হত্যা করল।

হাদীস নং ৩৭৭৪

ইসহাক ইবনে নাসর রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর (ভাঙ্গা) দাঁতের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, যে সম্প্রদায় তাদের নবীর সাথে। এরূপ আচরণ করেছে তাদের প্রতি আল্লাহর গযব অত্যন্ত ভয়াবহ এবং যে ব্যক্তিকে আল্লাহর রাসূল আল্লাহর পথে (জিহাদরত অবস্থায়) হত্যা করেছে তার প্রতিও আল্লাহর গযব অত্যন্ত ভয়াবহ।

হাদীস নং ৩৭৭৫

মাখলাদ ইবনে মালিক রহ…………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পথে হত্যা করেছে, তার জন্য আল্লাহর গযব ভীষণতর। আর যে সম্প্রদায় আল্লাহর নবীর চেহারাকে রক্তে রঞ্জিত করে দিয়েছে তাদের প্রতিও আল্লাহর গযব।

হাদীস নং ৩৭৭৬

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………….সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আহত হওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়েছিলেন। উত্তরে তিনি বলেছেন, আল্লাহর কসম, সে সময় যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জখম ধুয়েছিলেন এবং যিনি পানি ঢালছিলেন তাদেরকে আমি খুব ভালভাবেই চিনি এবং কোন বস্তু দিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছিল এবং সম্পর্কেও আমি অবগত আছি। ঢালে করে পানি এনে ঢালছিলেন। ফাতিমা রা. যখন দেখলেন যে, পানির দ্বারা রক্ত পড়া বন্ধ না হয়ে কেবল তা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন তিনি একখণ্ড চাটাই নিয়ে তা জ্বালিয়ে তার ছাই জখমের উপর লাগিয়ে দিলেন। এতে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গেল। এ ছাড়া সেদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ডান দিকের একটি দাঁত ভেঙ্গে গিয়েছিল। চেহারা মোবারক জখম হয়েছিল এবং এবং লৌহ শিরস্ত্রাণ ভেঙ্গে গিয়ে মাথায় বিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল।

হাদীস নং ৩৭৭৭

আমর ইবনে আলী রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর গযব অত্যন্ত কঠোর ঐ ব্যক্তির জন্য, যাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হত্যা করেছেন এবং যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারাকে রক্তে রঞ্জিত করেছে তার জন্যও আল্লাহর গযব অত্যন্ত ভয়াবহ।

হাদীস নং ৩৭৭৮

মুহাম্মদ রহ…………আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি উরওয়া রা.-কে সম্বোধন করে বললেন, হে ভাগ্নে জান? যখম হওয়ার পর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ডাকে সাড়া দিয়েছেন, তাদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে চলে তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার। উক্ত আয়াতটিতে যাদের কথা বলা হয়েছে তাদের মধ্যে তোমার পিতা যুবাইর রা. এবং (তোমার নানা) আবু বকর রা.-ও শামিল আছেন। উহুদ যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বহু ক্ষয়ক্ষতি এবং দুঃখ-যাতনার সম্মুখীন হয়েছিলেন। এ অবস্থায় (শত্রুসেনা) মুশরিকগণ চলে গেলে তিনি আশংকা করলেন যে, তারা আবারও ফিরে আসতে পারে। তিনি বললেন, কে আছ যে, তাদের পেছনে ধাওয়া করার জন্য যাবে। এ আহবানে সত্তরজন সাহাবী সাড়া দিয়ে প্রস্তুত হলেন। উরওয়া রা. বলেন, তাদের মধ্যে আবু বকর ও যুবাইর রা.-ও ছিলেন।

হাদীস নং ৩৭৭৯

আমর ইবনে আলী রহ………..কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কিয়ামতের দিন আরবের কোন জনগোষ্ঠীই আনসারদের তুলনায় অধিক সংখ্যক শহীদ এবং অধিক মর্যাদার হকদার হবে বলে আমরা জানি না। কাতাদা রা. বলেন, আনাস ইবনে মালিক রা. আমাকে বলেছেন, উহুদ যুদ্ধের দিন আনসারদের সত্তর জন শহীদ হয়েছেন, বিরে মাউনার ঘটনায় তাদের সত্তর জন শহীদ হয়েছেন এবং ইয়ামামার যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন সত্তর জন। রাবী বলেন যে, বিরে মাউনার ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায় এবং ইয়ামামার যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল (মিথ্যা নবী) মুসায়লামাতুল কাযযাবের বিরুদ্ধে আবু বকর রা.-এর খিলাফত কালে।

হাদীস নং ৩৭৮০

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ…………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ যুদ্ধে শহীদের দু’জনকে একই কাপড়ে (একই কবরে) দাফন করেছিলেন। কাফনে জড়ানোর পর তিনি জিজ্ঞাসা করতেন, এদের মধ্যে কে কুরআন শরীফ সম্বন্ধে অধিক জ্ঞাত? যখন কোন একজনের প্রতি ইঙ্গিত করা হত তখন তিনি তাকেই কবরে আগে নামাতেন এবং বলতেন, কিয়ামতের দিন আমি তাদের জন্য সাক্ষ্য হব। সেদিন তিনি তাদেরকে তাদেরকে রক্তসহ দাফন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং তাদের জানাযার নামাযও আদায় করা হয়নি এবং তাদেরকে গোসলও দেওয়া হয়নি। (অন্য সনদে) আবুল ওয়ালী রহ………..জাবির রা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, আমার পিতা শাহাদত বরণ করার পর (তার শোকে) আমি কাঁদতে লাগলাম এবং বারবার তার চেহারা থেকে কাপড় সরিয়ে দিচ্ছিলাম। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ আমাকে এ থেকে বারণ করছিলেন। তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এ ব্যাপারে) আমাকে নিষেধ করেননি। অধিকন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আবদুল্লাহর ফুফুকে বলেছেন) তোমরা তার জন্য কাঁদছ! অথচ জানাযা না উঠানো পর্যন্ত ফেরেশতারা নিজেদের ডানা দিয়ে তাঁর উপর ছায়া বিস্তার করেছিলেন।

হাদীস নং ৩৭৮১

মুহাম্মদ ইবনে আলা রহ…………আবু মূসা রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আমি একখানা তরবারি নাড়া দিলাম, অমনি এর মধ্যস্থলে ভেঙ্গে গেল। (আমি বুঝতে পারলাম) এটা উহুদ যুদ্ধে মুমিনদের উপর আগত বিপদেরই প্রতিচ্ছবি ছিল। এরপর আমি তরবারিটিকে পুনারায় নাড়া দিলাম। এতে তার পূর্বের থেকেও অধিক সুন্দর হয়ে গেল। এর অর্থ হল (পরবর্তীকালে) মুমিনদের বিজয় লাভ ও তাদের একতাবদ্ধ হওয়া এবং স্বপ্নে আমি একটি গরুও দেখেছিলাম। উহুদ যুদ্ধে মুমিনদের শাহাদত বরণ করাই হচ্ছে এর তাবীর। আল্লাহর প্রতিদান অতি উত্তম বা আল্লাহর সকল কাজ কল্যাণময়।

হাদীস নং ৩৭৮২

আহমদ ইবনে ইউনুস রহ………. খাব্বাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে হিজরত করেছিলাম। এতে আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা। অতএব আল্লাহর কাছে আমাদের প্রতিদিন নির্ধারিত হয়ে আছে। আমাদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ অতিবাহিত হয়ে গিয়েছেন অথবা (রাবী বলেছেন) কেউ চলে গিয়েছেন। অথচ পার্থিব প্রতিদান থেকে তিনি কিছুই ভোগ করতে পারেননি। মুসআব ইবনে উমাইর রা. হলেন তাদের মধ্যে একজন। উহুদ যুদ্ধের দিন তিনি শাহাদত বরণ করেছেন। একখান মোটা চাদর ব্যতীত তিনি আর কিছুই রেখে যাননি। এ দ্বারা আমরা তাঁর মাথা ঢাকলে পা দু’খানা বেরিয়ে যেত এবং পা দু’খানা ঢাকলে মাথা বেরিয়ে যেত। (এ দেখে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বললেন, এ কাপড় দ্বারা তার মাথা ঢেকে দাও এবং উভয় পা ইযখির (এক প্রকার ঘাস) দ্বারা আবৃত করে দাও। অথবা বললেন, (রাবীর সন্দেহ) তাঁর উভয় পায়ের উপর ইযখির দিয়ে দাও। আর আমাদের মধ্যে কেউ এমনও আছেন, যার ফল উত্তমরূপে পেকেছে, এখন তিনি তা সংগ্রহ করছেন।

হাদীস নং ৩৭৮৩

নাসর ইবনে আলী রহ………..কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস রা.-এর নিকট থেকে শুনেছি যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (উহুদ পাহাড়ের দিকে ইঙ্গিত করে) বলেছেন, এ পাহাড় আমাদেরকে ভালবাসে এবং আমরাও একে ভালবাসি।

হাদীস নং ৩৭৮৪

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে উহুদ পাহাড় পরিলক্ষিত হলে তিনি বললেন, এ পাহাড় আমাদেরকে ভালবাসে এবং আমরাও একে ভালবাসি। হে আল্লাহ ! ইবরাহীম আ. মক্কাকে হরম শরীফ ঘোষণা দিয়েছেন এবং আমি দুটি কংকরময় স্থানের মধ্যবর্তী জায়গাকে (মদীনাকে) হরম শরীফ ঘোষণা দিচ্ছি।

হাদীস নং ৩৭৮৫

আমর ইবনে খালিদ রহ…………উকবা রা. থেকে বর্ণিত যে, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মদীনা থেকে) রেব হয়ে (উহুদ প্রান্তরে গিয়ে) উহুদের শহীদগণের জন্য জানাযার নামাযেরও মত নামায আদায় করলেন। এরপর মিম্বরের দিকে ফিরে এসে বললেন, আমি তোমাদের অগ্রগামী ব্যক্তি এবং আমিই তোমাদের সাক্ষ্যদাতা। আমি এ মুহূর্তেই আমার হাউয (কাউসার) দেখতে পাচ্ছি। আমাকে পৃথিবীর ধন ভাণ্ডারের চাবি দেওয়া হয়েছে অথবা বললেন, (রাবীর সন্দেহ) আমাকে পৃথিবীর চাবি দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর কসম, আমার ইন্তিকালের পর তোমরা শিরকে লিপ্ত হবে— আমার এ ধরণের কোন আশংকা নেই। তবে আমি আশংকা করি যে, তোমরা পৃথিবীর ভোগবিলাসে মত্ত হয়ে পড়বে।

হাদীস নং ৩৭৮৬

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ………….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মুশরিকদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য) আসিম ইবনে উমর ইবনে খাত্তাব রা.-এর নানা আসিম ইবনে সাবিত আনসারী রা.-এর নেতৃত্বে একটি গোয়েন্দা দল কোথাও প্রেরণ করলেন। যেতে যেতে তারা উসফান ও মক্কার মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছলে হুযায়ল গোত্রের একটি শাখা বনী লিহইয়ানের নিকট তাদের আগমনের কথা জানিয়ে দেওয়া হল। এ সংবাদ পাওয়ার পর বনী লিহইয়ানের প্রায় একশ তীরন্দাজ সমভিব্যাহারে তাদের প্রতি ধাওয়া করল। দলটি তাদের (মুসলিম গোয়েন্দা দলের) পদচিহ্ন অনুসরণ করে এমন এক স্থানে গিয়ে পৌঁছল, যে স্থানে অবতরণ করে সাহাবীগণ খেজুর খেয়েছিলেন তারা সেখানে খেজুরের আটি দেখতে পেল যা সাহাবীগণ মদীনা থেকে পাথেয়রূপে এনেছিলেন। তখন তারা বলল, এগুলো তো ইয়াসরিবের খেজুর (এর আটি)। এরপর তারা পদচিহ্ন ধরে খুজতে খুজতে শেষে পর্যন্ত তাদেরকে ধরে ফেলল। আসিম ও তাঁর সাথীগণ বুঝতে পেরে ফাদফাদ নামক টিলায় উঠে আশ্রয় নিলেন। এবার শত্রু দল এসে তাদেরকে ঘিরে ফেলল এবং বলল, আমরা তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যদি তোমরা নেমে আস তাহলে আমরা তোমাদের একজনকেও হত্যা করব না। আসিম রা. বললেন, আমি কোন কাফেরের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়ে এখান থেকে অবতরণ করব না। হে আল্লাহ আমাদের এ সংবাদ আপনার রাসূলের নিকট পৌঁছিয়ে দিন। এরপর তারা মুসলিম গোয়েন্দা দলে প্রতি আক্রমন করল এবং তীর বর্ষণ করতে শুরু করল। এভঅবে তারা আসম রা.-সহ সাতজনকে তীর নিক্ষেপ করে শহীদ করে দিল। এখন শুধু বাকী রইলেন খুবাইর রা. যায়েদ রা. এবং অপর একজন (আবদুল্লাহ ইবনে তারিক) সাহাবী রা.। পুনরায় তারা তাদেরকে ওয়াদা দিল। এই ওয়াদায় আশ্বস্ত হয়ে তাঁরা তাদের কাছে নেমে এলেন। এবার তারা তাদেরকে কাবু করে ফেলার পর নিজেদের ধনুকের তার খুলে এর দ্বারা তাদেরকে বেঁধে ফেলল। এ দেখে তাদের সাথী তৃতীয় সাহাবী (আবদুল্লাহ ইবনে তারিক) রা. বললেন, এটাই প্রথম বিশ্বাসঘাতকতা। তাই তিনি তাদের সাথে যেতে অস্বীকার করলেন। তারা তাকে তাদের সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য বহু টানা-হেচড়া করল এবং বহু চেষ্টা করল। কিন্তু তিনি তাতে রাযী হলেন না। অবশেষে কাফেররা তাকে শহীদ করে দিল এবং খুবাইব ও যায়েদ রা.-কে মক্কার বাজারে নিয়ে বিক্রি করে দিল। বনী হারিস ইবনে আমির ইবনে নাওফল গোত্রের লোকেরা খুবাইব রা.-কে কিনে নিল। কেননা বদর যুদ্ধের দিন খুবাইব রা. হারিসকে হত্যা করেছিলেন। তাই তিনি তাদের নিকট বেশ কিছু দিনি বন্দী অবস্থায় কাটান। অবশেষে তারা তাকে হত্যা করার দৃঢ় সংকল্প করলে তিনি নাভির নিচের পশম পরিষ্কার করার জন্য হারিসের এক কন্যার নিকট থেকে একখানা ক্ষুর চাইলেন। সে তাকে তা দিল। (পরবর্তীকালে মুসলমান হওয়ার পর) হারিসের উক্ত কন্যা বর্ণনা করেছেন যে, আমি আমার একটি শিশু বাচ্চা সম্পর্কে অসাবধান থাকায় সে পায়ে হেটে তাঁর কাছে চলে যায় এবং তিনি তাকে স্বীয় উরুর উপর বসিয়ে রাখেন। এ সময় তাঁর হাতে ছিল সেই ক্ষুর। এ দেখে আমি অত্যন্ত ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি। খুবাইব রা. তা বুঝতে পেরে বললেন, তাকে মেরে ফেলব বলে তুমি কি ভয় পাচ্ছ? ইনশা আল্লাহ আমিতা করার নই। সে (হারিসের কন্যা) বলত, আমি খুবাইব রা. থেকে উত্তম বন্দী আর কখনো দেখিনি। আমি তাকে আঙ্গুরের থোকা থেকে আঙ্গুর থেকে দেখেছি। অথচ তখন মক্কার কোন ফলই ছিল না। অধিকন্তু তিনি তখন লোহার শিকলে আবদ্ধ ছিলেন। এ আঙ্গুর তার জন্য আল্লাহর তরফ থেকে প্রদত্ত রিযিক ব্যতীত আর কিছুই নয়। এরপর তারা তাকে হত্যা করার জন্য হারাম শরীফের বাইরে নিয়ে গেল। তিনি তাদেরকে বললেন, আমাকে দুরাকাত নামায আদায় করার সুযোগ দাও। (নামায আদায় করে) তিনি তাদের কাছে ফিরে এসে বললেন, আমি মৃত্যুর ভয়ে শংকিত হয়ে পড়েছি, তোমরা যদি এ কথা মনে না করতে তাহলে আমি (নামাযকে) আরো দীর্ঘায়িত করতাম। হত্যার পূর্বে দু’রাকাআত নামায আদায়ের সুন্নাত প্রবর্তন করেছেন সর্বপ্রথম তিনিই । এরপরতিনি বললেন, হে আল্লাহ, তাদেরকে এক এক কর গুণে রাখুন। এরপর তিনি দুটি পঙক্তি আবৃত্তি করলেন, “যেহেতু আমি মুসলিম হিসেবে মৃত্যুবরণ করছি তাই আমার কোন শংকা নেই। আল্লাহ সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যেকোন পার্শ্বে আমি ঢলে পড়ি”। আমি যেহেতু আল্লাহর পথেই মৃত্যুবরণ করছি তাই তিনি ইচ্ছা করলে আমার ছিন্নভিন্ন প্রতিটি অঙ্গে বরকত দান করতে পারেন”। এরপর উকবা ইবনে হারিস তাঁর দিকে এগিয়ে গেল এবং তাকে শহীদ করে দিল। কুরাইশ গোত্রের লোকেরা আসিম রা.-এর শাহাদতের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাঁর মৃতদেহ থেকে কিছু অংশ নিয়ে আসার জন্য লোক পাঠিয়েছিল। কারণ আসিম রা. বদর যুদ্ধের দিন তাদের একজন বড় নেতাকে হত্যা করেছিলেন। তখন আল্লাহ মেঘের মত এক ঝাঁক মৌমাছি পাঠিয়ে দিলেন, যা তাদের প্রেরিত লোকদের হাত থেকে আসিম রা.-রক্ষা করল। ফলে তারা তাঁর দেহ থেকে কোন অংশ নিতে সক্ষম হল না।

হাদীস নং ৩৭৮৭

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………….জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খুবাইব রা.-এর হত্যাকারী হল আবু সিরওয়া (উকবা ইবনে হারিস)।

হাদীস নং ৩৭৮৮

আবু মামার রহ………….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক প্রয়োজনে সত্তরজন সাহাবীকে (এক জায়গায়) পাঠালেন, যাদের ক্বারী বলা হত। বনী সুলাইম গোত্রের দুটি শাখা–রিল ও যাকওয়ান বিরে মাউনা নামক একটি কূপের নিকট তাদেরকে আক্রমণ করলে তাঁর বললেন, আল্লাহর কসম, আমরা তোমাদের সাথে লড়াই করার উদ্দেশ্যে আসিনি। আমরা তো কেবল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশীত একটি কাজের জন্য এ পথ দিয়ে যাচ্ছি। এতদসত্ত্বেও তারা তাদেরকে হত্যা করে দিল। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মাস পর্যন্ত ফজরের নামাযে তাদের জন্য বদদোয়া করলেন। এভাবেই কুনুত পড়া আরম্ভ হয়। (রাবী বলেন : এর পূর্বে আমরা) কখনো আর কুনুত (এ নাযিলা) পড়িনি। আবদুল আযীয রহ. বলেন, এক ব্যক্তি আনাস রা. -কে জিজ্ঞাসা করলেন, কুনুত কি রুকুর পর পড়তে হবে না কিরাত শেষ করে পড়তে হবে? উত্তরে তিনি বললেন না কিরাত শেষ করে পড়তে হবে।

হাদীস নং ৩৭৮৯

মুসলিম রহ…………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরবের কয়েকটি গোত্রের প্রতি বদদোয়া করার জন্য নামাযে রুকুর পর কুনুত পাঠ করেছেন।

হাদীস নং ৩৭৯০

আবদুল আলা ইবনে হাম্মাদ রহ………….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, রিল, যাওয়অন উসায়্যা ও বনূ লিহইয়ানের লোকেরা শত্রু র মুকাবিলা কারার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলে সত্তরজন আনসারী সাহাবী পাঠিয়ে তিনি তাদেরকে সাহায্য করলেন। সেকালে আমরা তাদেরকে ক্বারী নামে অভিহিত করতাম। তারা দিনের বেলা লাকড়ি কুড়াতেন এবং রাতের বেলা নামাযে কাটাতেন। যেতে যেতে তাঁরা বিরে মাউনার নিকট পৌঁছলে তারা (আমির ইবনে তোফায়লের আহবানে ঐ গোত্র চতুষ্টয়ের লোকেরা) তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে এবং তাদেরকে শহীদ করে দেয়। এ সংবাদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পৌঁছলে তিনি এক মাস পর্যন্ত ফজরের নামাযে আরবের কতিপয় গোত্র তথা রিল, যাকওয়ান, উসায়্যা এবং বনূ লিহইয়ানের প্রতি বদদোয়া করে কুনূত পাঠ করেন। আনাস রা. বর্ণনা করেছেন যে, তাদের সম্পর্কি কিছু আয়াত পাঠ করতাম। অবশ্য পরে এর তিলাওয়াত রহিত হয়ে যায়। (একটি আয়াত ছিল) অর্থাৎ “আমাদের কাওমের লোকদেরকে জানিয়ে দাও। আমরা আমাদের প্রভুর সান্নিধ্যে পৌঁছে গিয়েছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং আমাদেরকেও সন্তুষ্ট করেছেন”। কাতাদা রা. আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি তাকে বলেছেন, আল্লাহর নবী হযরত মুহাম্মদ সা. এক মাস পর্যন্ত ফজরের নামাযে আরবের কতিপয় গোত্র —তথা রিল, যাকওয়ান, উসায়্যা এবং বনূ লিহইয়ানের প্রতি বদদোয়া করে কুনুত পাঠ করেছেন। (ইমাম বুখারী রহ.-এর উস্তাদ) খলীফা রহ. এতটুকু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, ইবনে যুরাই রহ. সাঈদ ও কাতাদা রা.-এর মাধ্যমে আনাস রা. থেকে বর্ণনা করেছেন, যে ,তাঁরা ৭০ জন সকলেই ছিলেন আনসার। তাদেরকে বিরে মাউনা নামক স্থানে শহীদ করা হয়েছিল। (ইমাম বুখারী রহ.) বলেন, এখানে “কুরআন” শব্দটি কিতাব বা অনুরূপ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

হাদীস নং ৩৭৯১

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ…………আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী ৱসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মামা উম্মে সুলাইমানের (আনাসের মা) ভাই (হারাম ইবনে মিলহান রা.) কে সত্তরজন অশ্বারোহীসহ (আমির ইবনে তুফায়েলের নিকট) পাঠালেন। মুশরিকদের দলপতি আমির ইবনে তুফায়েল (পূর্বে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তিনটি বিষয়ের যেকোন একটি গ্রহণ করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিল। সে বলেছিল, পল্লী এলাকায় আপনার কর্তৃত্ব থাকবে এবং শহর এলাকায় আমার কর্তৃত্ব থাকবে। অথবা আমি আপনার খলীফা হব বা গাতফান গোত্রের দুই হাজার সৈন্য নিয়ে আমি আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। এরপর আমির উম্মে ফুলানের গৃহে মহামারিতে আক্রান্ত হল। সে বলল, অমুক গোত্রের মহিলার বাড়িতে উটের যেমন ফোড়া হয় আমরাও তেমন ফোঁড়া আক্রান্ত হল। সে বলল, অমুক গোত্রের মহিলার বাড়িতে উটের যেমন ফোড়া হয় আমারও তেমন ফোঁড়া হয়েছে। তোমরা আমার ঘোড়া নিয়ে আস। তারপর (ঘোড়ায় আরোহণ করে) অশ্বপৃষ্ঠেই সে মৃত্যুবরণ করে। উম্মে সুলাইম রা.-এর ভাই হারাম (ইবনে মিলহান রা.) এক খোঁড়া ব্যক্তি ও কোন এক গোত্রের অপর এক ব্যক্তি সহ সে এলাকার দিকে রওয়ানা করলেন। (হারাম ইবনে মিলহান রা.) তার দুই সাথীকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা নিকটেই অবস্থান কর। আমিই তাদের নিকট যাচ্ছি। তারা যদি আমাকে নিরাপত্তা দেয়, তাহলে তোমরা এখানেই থাকবে। আর যদি তারা আমাকে শহীদ করে দেয় তাহলে তোমরা তোমাদের নিজেদের সাথীদের কাছে চলে যাবে। এরপর তিনি (তাদের নিকট গিয়ে) বললেন, তোমরা (আমাকে) নিরাপত্তা দিবে কি? দিলে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি পয়গাম তোমাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিতাম। তিনি তাদের সাথে এ ধরনের আলাপ-আলোচনা করছিলেন। এমতাবস্থায় তারা এক ব্যক্তিকে ইঙ্গিত করলে সে পেছন দিক থেকে এসে তাকে বর্শা দ্বারা আঘাত করল। হাম্মাদ রহ. বলেন, আমাম মনে হয় আমার শায়খ (ইসহাক রহ.) বলেছিলেন যে, বর্শা দ্বারা আঘাত করে এপার ওপার করে দিয়েছিল। (আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে) হারাম ইবনে মিলহান রা. বললেন, আল্লাহ আকবার, কাবার প্রভুর শপথ! আমি সফলকাম হয়েছি। এরপর উক্ত (হারামের সঙ্গী) লোকটি (অপেক্ষমান সাথীদের সাথে) মিলিত হলেন। তারা হারামের সঙ্গীদের উপর আক্রমণ করলে খোঁড়া ব্যক্তি ব্যতীত সকলেই নিহত হলেন। খোঁড়া লোকটি ছিলেন পাহাড়ের চুড়ায়। এরপর আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রতি (একখানা) আয়াত নাযিল করলেন যা পরে মানসুখ হয়ে যায়। আয়াতটি ছিল এই “আমরা আমাদের প্রতিপালকের সান্নিধ্যে পৌঁছে গিয়েছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং আমাদেরকেও সন্তুষ্ট করেছে”। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ত্রিশ দিন পর্যন্ত ফজরের নামাযে রিল, যাকওয়ান, বনূ লিহইয়ান এবং উসায়্যা গোত্রের জন্য বদদোয়া করেছেন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হয়েছিল।

হাদীস নং ৩৭৯২

হিব্বান রহ……….. আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাঁর মামা হারাম ইবনে মিলহান রা.-কে বিরে মাউনার দিন বর্শা বিদ্ধ করা হলে তিনি এভাবে দুহাতে রক্ত নিয়ে নিজের চেহারা ও মাথায় মেখে বললেন, কাবার প্রভুর কসম, আমি সফলকাম হয়েছি।

হাদীস নং ৩৭৯৩

উবায়দ ইবনে ইসমাঈল রহ………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (মক্কার কাফেরদের) অত্যাচার চরম আকার ধারণ করলে আবু বকর রা. (মক্কা থেকে) বেরিয়ে যাওয়ার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে অনুমতি চাইলে তিনি তাকে বললেন, (আরো কিছুদিন) অবস্থান কর। তখন তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি কি আশা করেন যে, আপনাকে অনুমতি দেওয়া হোক? তিনি বললেন, আমি তো তাই আশা করি। আয়েশা রা. বলেন, আবু বকর রা. এর জন্য অপেক্ষা করলেন। একদিন যুহরের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে তাকে ডেকে বললেন, তোমার কাছে যারা আছে তাদেরকে সরিয়ে দাও। তখন আবু বকর রা. বললেন, এরা তো আমার দু’মেয়ে (আয়েশা ও আসমা)। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি জান আমকে চলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে? আবু বকর রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি কি আপনার সাথে যেতে পারব? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ আমার সাথে যেতে পারবে। আবু বকর রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমার কাছে দুটি উটনী আছে। এখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্যই এ দুটিকে আমি প্রস্তুত করে রেখেছি। এরপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দুটি উটের একটি উট প্রদান করলেন। এ উটটি ছিল কান-নাক কাটা। তাঁরা উভয়ে সওয়ার হয়ে রওয়ানা হলেন এবং গারে সাওরে পৌঁছে সেখানে আত্মগোপন করলেন। আয়েশা রা.- এর বৈমাত্রেয় ভাই আমির ইবনে ফুহায়রা ছিলেন আবদুল্লহ ইবনে তুফায়ল ইবনে সাখবারার গোলাম। আবু বকর রা.-এর একটি দুধের গাভী ছিল। তিনি (আমি ইবনে ফুহায়রা) সেটিকে সন্ধ্যাবেলা চরাতে নিয়ে গিয়ে রাতের অন্ধকারে তাদের (মক্কার কাফেরদের) কাছে নিয়ে যেতেন এবং ভোরবেলা তাদের উভয়ের কাছে নিয়ে যেতেন। কোন রাখালই এ বিষয়টি বুঝতে পারত না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবু বকর রা. গারে সাওর থেকে বের হলে তিনিও তাদের সাথে রওয়ানা হলেন। তাঁরা মদীনা পৌঁছে যান। আমির ইবনে ফুহায়রা পরবর্তীকালে বিরে মাউনার দুর্ঘটনায় শাহাদত বরণ করেন। (অন্য সনদে) আবু উসামা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হিশাম ইবনে উরওয়ান রহ. বলেন, আমার পিতা (উরওয়া রা.) আমাকে বলেছেন, বিরে মাউনার যুদ্ধে শাহাদতবরণকারীগণ শহীদ হলে আমর ইবনে উমাইয়া যামরী বন্দী হলেন। তাকে আমির ইবনে তুফায়েল নিহত আমির ইবনে ফুহায়রা। তখন সে (আমির ইবনে তুফায়েল) বলল, আমি দেখলাম, নিহত হওয়ার পর তার লাশ আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। এমনকি আমি তার লাশ আসমান যমীনের মাঝে দেখেছি। এরপর তা রেখে দেয়া হল। (যমিনের উপর)। এ সংবাদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পৌঁছলে তিনি সাহাবীগণকে তাদের শাহাদতের সংবাদ জানিয়ে বললেন, তোমাদের সাথীদেরকে হত্যা করা হয়েছে। মৃত্যুর পূর্বে তারা তাদের প্রতিপালকের প্রার্থনা করে বলেছিলেন, হে আমাদের প্রতি পালক! আমরা আপনার প্রতি সন্তুষ্ট এবং আপনিও আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট —এ সংবাদ আমাদের ভাইদের কাছে পৌঁছে দিন। তাই মহান আল্লাহ তাদের এ সংবাদ মুসলমানদের কাছে পৌঁছিয়ে দিলেন। ঐ দিনের নিহতদের মধ্যে উরওয়া ইবনে আসমা ইবনে সাল্লাত রা.-ও ছিলেন। তাই এ নামেই উরওরা (ইবনে যুবাইরের) এর নামকরণ করা হয়েছে। আর মুনযির ইবনে আমর রা.-ও এ দিন শাহাদত বরণ করেছিলেন। তাই এ নামেই মুনযির-এর নামকরণ করা হয়েছে।

হাদীস নং ৩৭৯৪

মুহাম্মদ রহ………..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মাস পর্যন্ত নামাযে রুকুর পরে কুনুত পাঠ করেছেন। এতে তিনি রিল, যাকওয়ান গোত্রের জন্য বদদোয়া করেছেন। তিনি বলেন, উসায়্যা গোত্র আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করেছে।

হাদীস নং ৩৭৯৫

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যারা বিরে মাউনার নিকট নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণকে শহীদ করেছিল সে হত্যাকারী রিল, যাকওয়ান, বনী লিহইয়ান এবং উসায়্যা গোত্রের প্রতি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ত্রিশদিন পর্যন্ত ফজরের নামাযে বদদোয়া করেছেন। তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করেছে। আনাস রা. বর্ণনা করেছেন যে, বিরে মাউনা নামক স্থানে যারা শাহাদতবরণ করেছেন তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাঁর নবীর প্রতি আয়াত নাযিল করেছিলেন। আমরা তা পাঠ করতাম। অবশ্য পরে এর তিলাওয়াত রহিত হয়ে গিয়েছে। (আয়াতটি হল) অর্থাৎ “ আমাদের কাওমের কাছে এ সংবাদ পৌঁছিয়ে দাও যে, আমরা আমাদের প্রতিপালকের সান্নিধ্যে পৌঁছে গিয়েছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং আমরাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছি।

হাদীস নং ৩৭৯৬

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………..আসিমুল আহওয়াল রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনে মালিক রা.-কে নামাযে (দোয়া) কুনুত পড়তে হবে কি না–এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার পর তিনি বললেন, হ্যাঁ, পড়তে হবে। আমি বললাম, রুকুর আগে পড়তে হবে, না পরে? তিনি বললেন, রুকুর আগে। আমি বললাম, অমুক ব্যক্তি আপনার সূত্রে আমার কাছে বর্ণনা করেছেন, আপনি রুকুর পর কুনুত পাঠ করার কথা বলেছেন। তিনি বললেন, সে মিথ্যা বলেছে। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাত্র একমাস পর্যন্ত রুকুর পর পাঠ করেছেন। এর কারণ ছিল এই যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্তরজন কারীর একটি দলকে মুশরিকদের নিকট কোন এক কাজে পাঠিয়েছিলেন। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাদের মধ্যে চুক্তি ছিল। তারা (আক্রমণ করে সাহাবীগণের উপর) বিজয়ী হল। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের প্রতি বদদোয়া করে নামাযে রুকুর পর এক মাস পর্যন্ত কুনুত পাঠ করেছেন।

হাদীস নং ৩৭৯৭

ইয়াকুব ইবনে ইবরাহীম রহ…………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, উহুদ যুদ্ধের দিন তিনি (ইবনে উমর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য) নিজেকে পেশ করার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দেননি। তখন তাঁর বয়স ছিল চৌদ্দ বছর। তবে খন্দক যুদ্ধের দিন তিনি (যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য) নিজেকে পেশ করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দিলেন। তখন তাঁর বয়স পনের বছর।

হাদীস নং ৩৭৯৮

কুতাইবা রহ………….সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, পরিখা খননের কাজে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছিলাম। তাঁরা পরিখা খনন করেছিলেন আর আমরা কাঁধে করে মাটি বহন করছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাদের জন্য দোয়া করে) বলছিলেন, হে আ

হাদীস নং ৩৭৯৯

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে পরিখা খননের স্থানে উপস্থিত হন। এ সময় মুহাজির এবং আনসারগণ ভোরে তীব্র শীতের মধ্যে পরিখা খনন করছিলাম। তাদের কোন গোলাম ছিল না যারা তাদের পক্ষ হতে এ কাজ আঞ্জাম দিবে। যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের অনাহার ও কষ্ট ক্লেশ দেখতে পান, তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ ! আখিরাতের শাস্তিই প্রকৃত শাস্তি, তাই আপনি আনসার ও মুহাজিরদেরকে ক্ষমা করে দিন। সাহাবীগণ এর উত্তরে বললেন, “আমরা সে সব লোক, যারা জিহাদে আত্মনিয়োগ করার ব্যাপারে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে বায়আত গ্রহণ করেছি, যতদিন আমরা জীবিত থাকি ততদিন পর্যন্ত”।

হাদীস নং ৩৮০০

আবু মামার রহ…………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনসার ও মুহাজিরগণ মদীনার চারপাশে পরিখা খনন করছিলেন এবং নিজ নিজ পিঠে মাটি বহন করছিলেন। আর (আনন্দ কণ্ঠে) আবৃত্তি করছিলেন, “আমরা তো সে সব লোক যারা ইসলামের ব্যাপারে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে বায়আত গ্রহণ করেছি, যতদিন আমরা জীবিত থাকি ততদিনের জন্য। বর্ণনাকারী বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের এ কথার উত্তরে বলতেন, হে আল্লাহ ! আখিরাতের কল্যাণ ব্যতীত আর কোন কল্যাণ নেই, তাই আনসার ও মুহাজিরদের কাজে বরকত দান করুন। বর্ণনাকারী (আনাস রা.) বর্ণনা করছেন যে, (পরিখা খননের সময়) তাদেরকে এক মুষ্টি ভরে যব দেওয়া হত। তা বাসি, স্বাদবিকৃত চর্বিতে মিশিয়ে খানা পাকিয়ে ক্ষুধার্ত কাওমের সামনে পরিবেশন করা হত। অথচ এ খাদ্য ছিল একেবারে স্বাদহীন ও ভীষণ দুর্গন্ধময়।

হাদীস নং ৩৮০১

খাল্লাদ ইবনে ইয়াহইয়া রহ………….আয়মান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জাবির রা.-এর নিকট গেলে তিনি বললেন, খন্দক যুদ্ধের দিন আমরা পরিখা খনন করছিলাম। এ সময় একখণ্ড কঠিন পাথর বেরিয়ে আসলে (যা ভাঙ্গা যাচ্ছিল না) সকলেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছ এসে বললেন, খন্দকের মাঝে একখণ্ড শক্ত পাথর বেরিয়েছে (আমরা তা ভাংতে পারছি না)। এ কথা শুনে তিনি বললেন, আমি নিজে খন্দকে অবতরণ করব। এরপর তিনি দাঁড়ালেন। এ সময় তাঁর পেটে একটি পাথর বাঁধা ছিল। আর আমরাও তিন দিন পর্যন্ত অনাহারী ছিলাম। কোন কিছুর স্বাদও গ্রহণ করিনি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একখানা কোদাল হাতে নিয়ে প্রস্তরখণ্ডে আঘাত করলেন। ফলে তৎক্ষণাৎ তা চূর্ণ হয়ে বালুকারাশিতে পরিণত হল। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমাকে বাড়ি যাওয়ার জন্য অনুমতি দিন। (তিনি অনুমতি দিলে বাড়ি পৌঁছে) আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মধ্যে আমি এমন কিছু দেখলাম যা আমি সহ্য করতে পারছি না। তোমার নিকট কোন খাবার আছে কি? সে বলল, আমার কাছে কিছু যব ও একটি বকরীর বাচ্চা আছে। তখন বকরীর বাচ্চাটি আমি যবেহ করলাম। এবং সে (আমার স্ত্রী) যব পিষে দিল। এরপর গোশত ডেকচিতে দিয়ে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসলাম। এ সময় আটা খামির হচ্ছিল এবং ডেকটি চুলার উপর ছিল ও গোশত প্রায় রান্না হয়ে আসছিল। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমার (বাড়িতে) সামান্য কিছু খাবার আছে। আপনি একজন বা দুইজন সাথে নিয়ে চলুন। তিনি বললেন, কি পরিমাণ খাবার আছে? আমি তার নিকট সব খুলে বললে তিনি বললেন, এ তো অনেক ও উত্তম। এরপর আমাকে বললেন, তুমি তোমার স্ত্রীকে গিয়ে বল, সে যেন আমি না আসা পর্যন্ত উনান থেকে ডেকচি ও রুটি না নামায়। এরপর তিনি বললেন, উঠ ! (জাবির তোমাদেরকে খাবার দাওয়াত দিয়েছে) মুহাজিরগণ উঠলেন (এবং চলতে লাগলেন) জাবির রা. তার স্ত্রীর নিকট গিয়ে বললেন, তোমার সর্বনাশ হোক ! (এখন কি হবে?) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো মুহাজির, আনসার এবং তাদের অন্য সাথীদের নিয়ে চলে আসছেন। (জাবিরের স্ত্রী) বললেন, তিনি কি আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (উপস্থিত হয়ে) বললেন, তোমরা সকলেই প্রবেশ কর এবং ভিড় করো না। এ বলে তিনি রুটি টুকরো করে এর উপর গোশত দিয়ে সাহাবীগণের নিকট তা বিতরণ করতে শুরু করলেন। (এগুলো পরিবেশন করার সময়) তিনি ডেকচি এবং উনান ঢেকে রেখেছিলেন। এমনি করে তিনি রুটি টুকরো করে হাত ভরে বিতরণ করতে লাগলেন। এতে সকলে পেচ ভরে খাবার পরেও কিছু বাকী রয়ে গেল। তাই তিনি (জাবিরের স্ত্রীকে) বললেন, এ তুমি খাও এবং অন্যকে হাদিয়া দাও। কেননা লোকদেরও ক্ষুধা পেয়েছে।

হাদীস নং ৩৮০২

আমর ইবনে আলী রহ………..জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন পরিখা খনন করা হচ্ছিল তখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ভীষণ ক্ষুধার্ত অবস্থায় দেখতে পেলাম। তখন আমার স্ত্রীর কাছে ফিরে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার কাছে কোন কিছু আছে কি? আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দারুণ ক্ষুধার্ত দেখেছি। (এ কথা শুনে) তিনি একটি চামড়ার পাত্র এনে তা থেকে এক সা পরিমাণ যব বের করে দিলেন।আমাদের গৃহপালিত একটি বকরীর বাচ্চা ছিল। আমি সেটি যবেহ করলাম এবং গোশত কেটে কেটে ডেকচিতে ভরলাম। আর সে (আমার স্ত্রী) যব পিয়ে দিল। আমি আমার কাজ শেষ করার সাথে সাথে সেও তার কাজ শেষ করল। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ফিরে চললাম। তখন সে বলল, আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের নিকট লজ্জিত করবেন না। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট চুপে চুপে বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ ! আমরা আমাদের একটি বকরীর বাচ্চা যবেহ করেছি এবং আমাদের ঘরে এক সা যব ছিল। তা আমার স্ত্রী পিষে দিয়েছে। আপনি আরো কয়েকজনকে সাথে নিয়ে আসুন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উচ্চ স্বরে সবাইকে বললেন, হে পরিখা খননকারিগণ ! জাবির খানার ব্যবস্থা করেছে। এসো, তোমরা সকলেই চল। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার আসার পূর্বে তোমাদের ডেকচি নামাবে না এবং খামির থেকে রুটিও তৈরী করবে না। আমি (বাড়ীতে) আসলাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামসহ তাশরীফ আনলেন। এরপর আমি আমার স্ত্রীর নিকট আসলে সে বলল, আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুন। (তুমি এ কি করলে? এতগুলো লোক নিয়ে আসলে? অথচ খাদ্য একেবারে নগণ্য) আমি বললাম, তুমি যা বলেছ আমি তাই করেছি। এরপর সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে আটার খামির বের করে দিলে তিনি তাতে মুখের লালা মিশিয়ে দিলেন এবং বরকতের দোয়া করলেন। এরপর তিনি ডেকচির দিকে এগিয়ে গেলেন এবং তাতে মুখের লালা মিশিয়ে এর জন্য বরকতের দোয়া করলেন। তারপর বললেন, (হে জাবির) রুটি প্রস্তুতকারিণীকে ডাক। সে আমার কাছে বসে রুটি প্রস্তুত করুক এবং ডেকচি থেকে পেয়ালা ভরে গোশত পরিবেশন করুক। তবে (চুলা থেকে) ডেকচি নামাবে না। তাঁরা (আগন্তুক সাবাহায়ে কেরাম) ছিলেন সংখ্যায় এক হাজার। আমি আল্লাহর কসম করে বলছি, তাঁরা সকলেই তৃপ্তিসহকারে খেয়ে অবশিষ্ট খাদ্য রেখে চলে গেলেন। অথচ আমাদের ডেকচি পূর্বের ন্যায় তখনও টগবগ করছিল এবং আমাদের আটার খামির থেকেও পূর্বের মত রুটি তৈরী হচ্ছিল।

হাদীস নং ৩৮০৩

উসমান ইবনে আবু শায়বা রহ………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “যখন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সমাগত হয়েছিল উচু অঞ্চল ও নীচু অঞ্চল হতে এবং তোমাদের চক্ষু বিস্ফারিত হয়েছিল……..(৩৩: ১০) তিনি বলেন, এ আয়াতখানা খন্দকের যুদ্ধে নাযিল হয়েছে।

হাদীস নং ৩৮০৪

মুসলিম ইবনে ইবরাহীম রহ…………বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দক যুদ্ধের দিন মাটি বহন করেছিলেন। এমনকি মাটি তাঁর পেট ঢেকে ফেলেছিল অথবা (রাবী সন্দেহ) তাঁর পেট ধূলায় আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল। এ সময় তিনি বলছিলেন, আল্লাহর কসম! আল্লাহ হেদায়েত না করলে আমরা হেদায়েত পেতাম না, দান সদকা করতাম না, এবং নামাযও আদায় করতাম না। সুতরাং (হে আল্লাহ!) আমাদের প্রতি রহমত নাযিল করুন এবং আমাদেরকে শত্রুর সাথে মুকাবিলা করার সময় দৃঢ় পদ রাখুন। নিশ্চয়ই মক্কাবাসীরা আমাদের প্রতি বিদ্রোহ করেছে। যখনই তারা ফিতনার প্রয়াস পেয়েছে তখনই আমরা উপেক্ষা করেছি। শেষের কথাগুলো বলার সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উচ্চ স্বরে “উপেক্ষা করেছি” “উপেক্ষা করেছি” বলে উঠেছেন।

হাদীস নং ৩৮০৫

মুসাদ্দাদ রহ…………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে পূবালি বায়ূ দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে, আর আদ জাতিকে পশ্চিমা বায়ূ দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে।

হাদীস নং ৩৮০৬

আহমদ ইবনে উসমান রহ…………..বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আহযাব (খন্দক) যুদ্ধের সময় র পরিখা খনন করেছেন। আমি তাকে খন্দকের মাটি বহন করতে দেখেছি। এমনকি ধূলাবালি পড়ার কারণে তার পেটের চামড়া ঢাকা পড়ে গিয়েছে। তিনি অধিক পশম বিশিষ্ট ছিলেন। সে সময় আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মাটি বহন করা অবস্থায় ইবনে রাওয়াহার কবিতা আবৃত্তি করতে শুনেছি। তিনি বলছিলেন, হে আল্লাহ ! আপনি যদি হেদায়েত না করতেন তাহলে আমরা হেদায়েত পেতাম না, আমরা সদকা করতাম না এবং আমরা নামাযও আদায় করতাম না। সুতরাং আমাদের প্রতি আপনার রহমত নাযিল করুন এবং দুশমনের মুকাবিলা করার সময় আমাদেরকে দৃঢ় পদ রাখুন। অবশ্য মক্কাবাসীরাই আমাদের প্রতি ভীতি প্রদর্শন করেছে। তারা ফিতনা বিস্তার করতে চাইলে আমরা তা প্রত্যাখ্যান করেছি। রাবী (বারা) বলেন, শেষ পঙক্তিটি আবৃত্তি করার সময় তিনি তা প্রলম্বিত করে পড়তেন।

হাদীস নং ৩৮০৭

আবদা ইবনে আবদুল্লাহ রহ…………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রথম আমি যে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি তা ছিল খন্দকের যুদ্ধ।

হাদীস নং ৩৮০৮

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ…………….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি হাফসা রা.-এর নিকট গেলাম। সে সময় তাঁর চুলের বেণি থেকে ফোটা ফোটা পানি ঝরছিল। আমি তাকে বললাম, আপনি তে দেখছেন, নেতৃত্বের ব্যাপারে লোকজন কি কাণ্ড করছে। ইমারত ও নেতৃত্বের কিছুই আমাকে দেওয়া হয়নি। তখন তিনি বললেন, আপনি গিয়ে তাদের সাথে যোগ দিন। কেননা তাঁরা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। আপনি তাদের থেকে দূরে সরে থাকার কারণে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হতে পারে বলে আমি আশংকা করছি। হাফসা রা. তাকে (এ কথা) বলতে থাকেন। (অবশেষে) তিনি (সেখানে) গেলেন। এরপর লোকজন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে মুআবিয়া রা. বক্তৃতা দিয়ে বললেন, ইমারত ও খিলাফতের ব্যাপারে কারো কিছু বলার ইচ্ছা থাকলে সে আমাদের সামনে মাথা উচু করুক। এ ব্যাপারে আমরাই তাঁর ও তাঁর পিতার চাইতে অধিক হকদার। তখন হাবীব ইবনে মাসলামা রহ. তাকে বললেন, আপনি এ কথার জবাব দেননি কেন? তখন আবদুল্লাহ (ইবনে উমর) বললেন, আমি তখন আমার গায়ের চাদর ঠিক করলাম এবং এ কথা বলার ইচ্ছা করলাম যে, এ বিষয়ে ঐ ব্যক্তিই অধিক হকদার যে ইসলামের জন্য আপনার ও আপনার পিতার সাথে লড়াই করেছেন। তবে আমার এ কথায় (মুসলমানদের মাঝে) অনৈক্য সৃষ্টি হবে, অযথা রক্তপাত হবে এবং আমার ও কথার অপব্যাখ্যা করা হবে এ আশংকায় এবং আল্লাহ জান্নাতে যে নিয়ামত তৈরী করে রেখেছেন তার কথা স্মরণ করে আমি উক্ত কথা বলা থেকে বিরত থাকি। তখন হাবীব রহ. বললেন, এভাবেই আপনি (ফিতনা থেকে) রক্ষা পেয়েছেন এবং বেঁচে গিয়েছেন।

হাদীস নং ৩৮০৯

আবু নুআইম রহ………….সুলাইমান ইবনে সুরাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খন্দক যুদ্ধের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, এখন থেকে আমরাই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব, তারা আর আমাদের প্রতি আক্রমণ করতে পারবে না।

হাদীস নং ৩৮১০

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….সুলাইমান ইবনে সুরাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আহযাব যুদ্ধের দিন কাফেরদের সম্মিলিত বাহিনী মদীনা ছেড়ে ফিরে যেতে বাধ্য হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি বলতে শুনেছি যে, এখন থেকে আমরাই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। তারা আমাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ করতে পারবে না। আর আমরা তাদের এলাকায় গিয়েই আক্রমণ করব।

হাদীস নং ৩৮১১

ইসহাক রহ………….আলী রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যে, তিনি খন্দকের যুদ্ধের দিন (কাফের মুশরিকদের প্রতি) বদদোয়া করে বলেছেন, আল্লাহ তাদের ঘরবাড়ি ও কবর আগুন দ্বারা ভরপুর করে দিন। কেননা তারা আমাদেরকে (যুদ্ধে ব্যস্ত করে) মধ্যবর্তী নামায থেকে বিরত রেখেছে, এমনকি সূর্য অস্ত গিয়েছে।

হাদীস নং ৩৮১২

মক্কী ইবনে ইবরাহীম রহ…………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত যে, খন্দক যুদ্ধের দিন সূর্যাস্তের পর উমর ইবনে খাত্তাব রা. এসে কুরাইশ কাফেরদের গালি দিতে আরম্ভ করলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! (আজ) সূর্যাস্তের পূর্বে আমি (আসর) নামায আদায় করতে পারিনি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর কসম! আমিও আজ এ নামায আদায় করতে পারিনি। (জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. বলেন) এরপর আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বুতহান উপত্যকায় গেলাম। এরপর তিনি নামাযের জন্য ওযু করলেন। আমরাও নামাযের জন্য ওযু করলাম। এরপর তিনি সূর্যাস্তের পর প্রথমে আসরের নামায এবং পরে মাগরিবের নামায আদায় করলেন।

হাদীস নং ৩৮১৩

মুহাম্মদ ইবনে কাসীর রহ…………জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আহযাব যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কুরাইশ কাফেরদের কবর আমাদের নিকট এনে দিতে পারবে কে? যুবাইর রা. বললেন, আমি পারব। তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবার বললেন, কুরাইশদের খবর আমাদের নিকট কে এনে দিতে পারবে? তখনও যুবাইর রা. বললেন, আমি পারব। তিনি পুনরায় বললেন, কুরাইশদের সংবাদ আমাদের নিকট কে এনে দিতে পারবে? এবারও যুবাইর রা. বললেন, আমি পারব। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রত্যেক নবীরই হাওয়ারী (বিশেষ সাহাস্যকারী) ছিল। আমার হাওয়ারী হল যুবাইর।

হাদীস নং ৩৮১৪

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (খন্দকের যুদ্ধের সময়) বলতেন, এক আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনিই তাঁর বাহিণীকে মর্যদা দিয়েছেন। তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং তিনি একাই শত্রু দল সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করেছেন। তারপর আর কিছুই থাকবে না অথবা এরপর আর ভয়ের কোন কারণ নেই।

হাদীস নং ৩৮১৫

মুহাম্মদ (ইবনে সালাম) রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফেরদের সম্মিলিত বাহিনীর প্রতি বদদোয়া করে বলেছেন, কিতাবে নাযিলকারী ও হিসেব গ্রহণে তৎপর হে আল্লাহ ! আপনি কাফেরদের সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করুন। হে আল্লাহ ! তাদেরকে পরাজিত এবং ভীত ও কম্পিত করে দিন।

হাদীস নং ৩৮১৬

মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল রহ………….আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধ, হজ্জ বা উমরা থেকে ফিরে এসে প্রথমে তিনবার তাকবীর বলতেন। এরপর বলতেন, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। রাজত্ব এবং প্রশংসা একমাত্র তাঁরই। সব বিষয়ে তিনিই সর্বশক্তিমান। আমরা তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তনকারী, তাঁরই কাছে তওবাকারী, তাঁর ইবাদতকারী। আমরা আমাদের প্রভুর দরবারেই সিজদা নিবেদনকারী, তাঁরই প্রশংসা বর্ণনাকারী। আল্লাহ তাঁর ওয়াদা পূরণ করেছেন। তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং তিনি একাই কাফেরদের সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করেছেন।

হাদীস নং ৩৮১৭

আবদুল্লাহ ইবনে আবু শায়বা রহ…………আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দক যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করে সমরাস্ত্র রেখে গোসল করেছেন মাত্র। এমতাবস্থায় তাঁর কাছে জিবরাঈল আ. এসে বললেন, আপনি তো অস্ত্রশস্ত্র (খুলে) রেখে দিয়েছেন। আল্লাহর কসম ! আমরা এখনো তা খুলিনি। চলুন তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, কোথায় যেতে হবে? তিনি বনূ কুরায়যা গোত্রের প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন, ঐদিকে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিরুদ্ধে অভিযানে রওয়ানা হলেন।

হাদীস নং ৩৮১৮

মূসা রহ…………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বনূ কুরায়যার মহল্লার দিকে যাচ্ছিলেন তখন (জিবরাঈল আ.-এর অধীন) ফেরেশতা বাহিনীও তাঁর সঙ্গে যাচ্ছিলেন এমনকি (পথিমধ্যে) বনূ গানম গোত্রের গলিতে জিবরাঈল বাহিনীর গমনে উত্থিত ধূলারাশি এখনো যেন আমি দেখতে পাচ্ছি।

হাদীস নং ৩৮১৯

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আসমা রহ…………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহযাব যুদ্ধের দিন (যুদ্ধ সমাপ্তির পর) বলেছেন, বনূ কুরায়যার মহল্লায় না পৌঁছে কেউ যেন আসরের নামায আদায় না করে। পথিমধ্যে আসরের নামাযের সময় হয়ে গেলে কেউ কেউ বললেন, আমরা সেখানে পৌঁছার পূর্বে নামায আদায় করব না। আবার কেউ কেউ বললেন, আমরা এখনই নামায আদায় করব, কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিষেধাজ্ঞার অর্থ এই নয় যে, রাস্তায় নামাযের সময় হয়ে গেলেও তা আদায় করা যাবে না। বিষয়টি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে উত্থাপন করা হলে তিনি তাদের কোন দলের প্রতিই অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেননি

হাদীস নং ৩৮২০

ইবনে আবুল আসওয়াদ ও খলীফা রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (ব্যয় নির্বাহের জন্য) লোকেরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খেজুর বৃক্ষ হাদিয়া দিতেন। অবশেষে তিনি বনী নাযীর এবং বনী কুরায়যার উপর জয়লাভ করলে আমার পরিবারের লোকেরা আমাকে আদেশ করল, যেন আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গিয়ে তাদের দেয়া সবগুলো খেজুর গাছ অথবা কিছু সংখ্যক খেজুর গাছ তাঁর নিকট থেকে ফেরত আনার জন্য আবেদন করি। অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ গাছগুলো উম্মে আয়মান রা.-কে দান করে দিয়েছিলেন। এ সময় উম্মে আয়মান রা. আসলেন এবং আমার গলায় কাপড় লাগিয়ে বললেন, এ কখনো হতে পারে না। সেই আল্লাহর কসম, যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনি ঐ বৃক্ষগুলো তোমাকে আর দেবেন না। তিনি তো এগুলো আমাকে দিয়ে দিয়েছেন। অথবা (রাবীর সন্দেহ) যেমন তিনি বলেছেন। এদিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছিলেন, তুমি ঐ গাছগুলোর পরিবর্তে আমার নিকট থেকে এই এই পাবে। কিন্তু উম্মে আয়মান রা. বলছিলেন, আল্লাহর কসম ! এ কখনো হতে পারে না। অবশেষে নবী রাসূলুল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে (অনেক বেশি) দিলেন। রাবী আনাস রা. বলেন, আমার মনে হয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে (উম্মে আয়মান রা.-কে) বলেছেন, এর দশগুণ অথবা যেমন তিনি বলেছেন।

হাদীস নং ৩৮২১

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………….আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাদ ইবনে মুআয রা.-এর ফয়সালা মেনে নিয়ে বনী কুরায়যা গোত্রের লোকেরা দুর্গ থেকে বেরিয়ে আসলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদকে আনার জন্য লোক পাঠালেন। এরপর তিনি গাধার পিঠে চড়ে আসলেন। তিনি মসজিদে নববীর নিকটবর্তী হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসার সাহাবীগণকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা তোমাদের নেতা বা সর্বোত্তম ব্যক্তিকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য দাঁড়িয়ে যাও। (তিনি আসলে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে লক্ষ্য করে বললেন, এরা তোমার ফয়সালা মেনে নিয়ে দুর্গ থেকে নিচে নেমে এসেছে। তখন তিনি বললেন, তাদের যোদ্ধদেরকে হত্যা করা হবে এবং তাদের সন্তানদেরকে বন্দী করা হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে সাদ ! তুমি আল্লাহর হুকুম মুতাবিক ফয়সালা করেছ। কোন কোন সময় তিনি বলেছেন, তুমি রাজধিরাজ আল্লাহর বিধান মুতাবিক ফয়সালা করেছ।

হাদীস নং ৩৮২২

যাকারিয়া ইবনে ইয়াহইয়া রহ………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধে সাদ রা. আহত হয়েছিলেন। কুরাইশ গোত্রের হিব্বান ইবনে ইরকা নামক এক ব্যক্তি তাঁর উভয় বাহুর মধ্যবর্তী রগে তীর বিদ্ধ করেছিল। কাছে থেকে তার শুশ্রুষা করার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে একটি খিমা তৈরী করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দাকের যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করে যখন হাতিয়ার রেখে গোসল সমাপন করলেন তখন জিবরাঈল আ. তাঁর মাথার ধূলোবালি ঝাড়তে ঝাড়তে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে উপস্থিত হলেন এবং বললেন, আপনি তো হাতিয়ার রেখে দিয়েছেন, কিন্তু আল্লাহর কসম ! আমি এখনো তা রেখে দেইনি। চলুন তাদের প্রতি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন কোথায়? তিনি বনী কুরায়যা গোত্রের প্রতি ইঙ্গিত করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ কুরায়যার মহল্লায় এলেন। পরিশেষে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ফয়সালা মেনে নিয়ে দুর্গ থেকে নিচে নেমে এল। কিন্তু তিনি ফয়সালার ভার সাদ রা.-এর উপর অর্পণ করলেন। তখন সাদ রা. বললেন, তাদের ব্যাপারে আমি এই রায় দিচ্ছি যে, তাদের যোদ্ধাদেরকে হত্যা করা হবে, নারী ও সন্তানদেরকে বন্দী করা হবে এবং তাদের ধন-সম্পদ (মুসলমানদের মধ্যে) বন্টন করে দেওয়া হবে। রাবী হিশাম রহ. বলেন, আমার পিতা (উরওয়া রা.) আয়েশা রা. থেকে আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, সাদ রা. (বনূ কুরায়যার ঘটনার পর) আল্লাহর কাছে এ বলে দোয়া করেছিলেন, হে আল্লাহ ! আপনি তো জানেন, যে সম্প্রদায় আপনার রাসূলকে মিথ্যাবাদী বলেছে এবং দেশ থেকে বের করে দিয়েছে আপনার সন্তুষ্টির জন্য তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার চেয়ে কোন কিছু আমার কাছে অধিক প্রিয় নয়। হে আল্লাহ ! আমি মনে করি (খন্দক যুদ্ধের পর) আপনি তো আমাদের ও তাদের মধ্যে যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছেন তবে এখনো যদি কুরাইশদের বিরুদ্ধে কোন যুদ্ধ বাকী থেকে থঅকে তাহলে আমাকে সে জন্য বাঁচিয়ে রাখুন, যেন আমি আপনার রাস্তায় তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে পারি। আর যদি যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে থাকেন তাহলে ক্ষতস্থান থেকে রক্ত প্রবাহিত করুন এবং এতেই আমার মৃত্যু ঘটান। এরপর তাঁর ক্ষত থেকে রক্তক্ষরণ হয়ে তা প্রবাহিত হতে লাগল। মসজিদে বনী গিফার গোত্রের একটি তাঁবু ছিল। তাদেরদিকে রক্ত প্রবাহিত হয়ে আসতে দেখে তারা ভীত হয়ে বললেন, হে তাঁবুবাসিগণ আপনাদের দিক থেকে এসব কি আমাদের দিকে বয়ে আসছে? পরে তাঁরা দেখলেন যে, সাদ রা.-এর ক্ষতস্থান থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অবশেষে এ জখমের কারণেই তিনি মারা যান।

হাদীস নং ৩৮২৩

হাজ্জাজ ইবনে মিনহাল রহ………..আদী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বারা রা.-কে বলতে শুনেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসসান রা.-কে বলেছেন, কবিতার মাধ্যমে তাদের (কাফেরদে) দোষত্রুটি বর্ণনা কর অথবা (রাবীর সন্দেহ) তাদের দোষত্রুটি বর্ণনা করার জবাব দাও। (তোমার সাহায্যার্থে) জিবরাঈল আ. তোমার সাথে থাকবেন। (অন্য এক সনদে) ইবরাহীম ইবনে তাহমান রহ……….বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনী কুরায়যার সাথে যুদ্ধ করার দিন হাসসান ইবনে সাবিত রা.-কে বলেছিলেন (কবিতার মাধ্যমে) মুশরিকদের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা কর। এ ব্যাপারে জিবরাঈল আ. তোমার সাথে থাকবেন।

হাদীস নং ৩৮২৪

মুহাম্মদ ইবনে আলা রহ…………আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন এক যুদ্ধে আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে রওয়ানা করলাম। আমরা ছিলাম ছয়জন। আমাদের একটি মাত্র উট ছিল। পালাক্রমে আমরা এর পিঠে আরোহণ করতাম। (হেটে হেটে) আমাদের পা ফেটে যায়। আমার পা দু’খানাও ফেটে গেল, খসে পড়ল নখগুলে। এ কারণে আমরা আমাদের পায়ে নেকড়া জড়িয়ে বাঁধলাম। এ জন্য এ যুদ্ধকে যাতুর রিকা যুদ্ধ বলা হয়। কেননা এ যুদ্ধে আমরা আমাদের পায়ে নেকড়া দ্বারা পট্রি বেঁধেছিলাম। আবু মূসা রা. উক্ত ঘটনা বর্ণনা করেছেন। পরবর্তীতে তিনি এ ঘটনা বর্ণনা করাকে অপছন্দ করেন। তিনি বলেন, আমি এভাবে বর্ণনা করাকে ভাল মনে করি না। সম্ভবত তিনি তার কোন আমল প্রকাশ করাকে অপছন্দ করতেন।

হাদীস নং ৩৮২৫

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ…………সালিহ ইবনে খাওয়াত রা. এমন একজন সাহাবী থেকে বর্ণনা করেন যিনি যাতুর রিকার যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাতুল খাওফ আদায় করেছেন। তিনি বলেছেন, একদল লোক (নামায আদায়ের জন্য) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে কাতারে দাঁড়ালেন এবং অপর দলটি রইলেন শত্রুর সম্মুখীন। এরপর তিনি তার সাথে দাঁড়ানো দলটি নিয়ে এক রাকাত নামায আদায় করে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। মুকতাদিগণ তাদের নামায পুরা করে ফিরে গেলেন এবং শত্রুর সম্মুখে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালেন। এরপর দ্বিতীয় দলটি এলে তিনি তাদেরকে নিয়ে অবশিষ্ট রাকাত আদায় করে স্থির হয়ে বসে রইলেন। এবার মুকতাদিগণ তাদের নিজেদের নামায সম্পূর্ণ করলে তিনি তাদেরকে নিয়ে সালাম ফিরালেন। মুআয রহ……….জাবির রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন, আমরা নাখল নামক স্থানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। এরপর জাবির রা. সালাতুল খাওফের কথা উল্লেখ করেন। এ হাদীস সম্পর্কে ইমাম মালিক রহ. বলেছেন, সালতুল খাওফ সম্পর্কে আমি যত হাদীস শুনেছি এর মধ্যে এ হাদীসটিই সবচেয়ে উত্তম। লাইস রহ………….কাসেম ইবনে মুহাম্মদ রা. থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গাযওয়ায়ে বনূ আনমারে সালতুল খাওফ আদায় করেছেন। এই বর্ণনায় মুয়ায রা.-এর অনুসরণ করেছেন।

হাদীস নং ৩৮২৬

মুসাদ্দাদ রহ………..সাহল ইবনে আবু হাসমা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (সালাতুল খাওফে) ইমাম কেবলামুখী হয়ে দাঁড়াবেন। মুকতাদীদের একদল থাকবেন তাঁর সাথে। এবং অন্যদল শত্রুদের মুখোমুখি হয়ে তাদের মুকাবিলায় দাঁড়িয়ে থাকবেন। তখন ইমাম তাঁর পেছনে ইকতেদাকারী লোকদের নিয়ে এক রাকতা নামায আদায় করবেন। এরপর ইকতেদাকারীগণ নিজ স্থানে দাঁড়িয়ে রুকু ও দুসিজদাসহ আরো এক রাকাত নামায আদায় করে ঐ দলের স্থানে গিয়ে দাঁড়াবেন। এরপর তারা এসে ইকতেদা করার পর ইমাম তাদের নিয়ে আরো এক রাকাত নামায আদায় করবেন। এভাবে ইমামের দু’রাকআত নামায পূর্ণ হয়ে যাবে। এরপর মুকাতাদিগণ রুকু সিজদাসহ আরো এক রাকারাত নামায আদায় করবেন।

হাদীস নং ৩৮২৭

মুসাদ্দাদ রহ…………সাহল ইবনে আবু হাসমা রা. সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৩৮২৮

মুহাম্মদ ইবনে উবায়দুল্লাহ রহ…………সাহল রা. থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (পূর্ব বর্ণিত) হাদীসখানা বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৩৮২৯

আবুল ইয়ামান রহ…………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে নাজদ এলাকায় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। এ যুদ্ধে আমরা শত্রু দের মুকাবিলা করেছিলাম এবং তাদের সামনে কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম।

হাদীস নং ৩৮৩০

মুসাদ্দাদ রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সৈন্যদেরকে দু’দলে বিভক্ত করে) একদল সাথে নিয়ে নামায আদায় করেছেন। অন্যদলকে নিয়োজিত রেখেছেন শত্রুর মুকাবিলায়। তারপর (যে দল তাঁর সাথে এক রাকাত নামায আদায় করেছেন) তাঁরা শত্রুর মুকাবিলায় নিজ সাথীদের স্থানে চলে গেলেন। অন্যদল (যারা শত্রুর মুকাবিলায় দাঁড়িয়েছিলেন) চলে আসেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে নিয়ে এক রাকাত নামায আদায় করে সালাম ফিরালেন। এরপর তাঁরা তাদের বাকী আরেক রাকাত আদায় করলেন এবং শত্রুর মুকাবিলায় গিয়ে দাঁড়ালেন। এবার পূর্বের দলটি এসে নিজেদের অবশিষ্ট রাকতটি পূর্ণ করলেন।

হাদীস নং ৩৮৩১

আবুল ইয়ামান রহ………..জাবির রা. থেকে বর্ণিত ,তিনি নাজদ এলাকায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। (অন্য এক সনদে) ইসমাঈল রহ………..জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি নাজদ এলাকায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। যুদ্ধ শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সেখান থেকে) প্রত্যাবর্তন করলে তিনিও তাঁর সাথে প্রত্যাবর্তন করলেন। পথিমধ্যে কাঁটা গাছ ভরা এক উপত্যকায় মধ্যাহ্নের সময় তাদের ভীষণ গরম অনুভূত হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানেই অবতরণ করলেন। লোকজন সবাই ছায়াবান গাছের খোঁজে কাঁটাবনের মাঝে ছড়িয়ে পড়ল। এদিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বাবলা গাছের নিচে অবস্থান করে তরবারিখানা গাছে লটকিয়ে রাখলেন। জাবির রা. বলেন, সবেমাত্র আমরা নিদ্রা গিয়েছি। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ডাকতে আরম্ভ করলেন। আমরা সকলেই তাঁর কাছে উপস্থিত হলাম। তখন তাঁর কাছে এক বেদুঈন বসা ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি নিদ্রিত ছিলাম, এমতাবস্থায় সে আমার তরবারিখানা হস্তগত করে কোষমুক্ত অবস্থায় তা আমার উপর উচিয়ে ধরলে আমি জাগ্রত হই। তখন সে আমাকে বলল, এখন তোমাকে আমার হাত থেকে কে রক্ষা করবে? আমি বললাম, আল্লাহ ! দেখ না, এই তো সে বসা আছে। (এ জঘন্যতম অপরাধের পরও) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কোন প্রকার শাস্তি প্রদান করেননি। (অপর এক সনদে) আবান রহ……….জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, যাতুর রিকার যুদ্ধে আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। আমরা একটি ছায়বান বৃক্ষের কাছে গিয়ে পৌঁছলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আরামের জন্য আমরা তা ছেড়ে দিলাম। এমন সময় এক মুশরিক ব্যক্তি এসে গাছের সাথে লটকানো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তরবারিখানা হাতে নিয়ে তা তাঁর উপর উচিয়ে ধরে বলল, তুমি আমাকে ভয় পাও কি? তিনি বললেন, না। এরপর সে বলল, এখন তোমাকে আমার হাত থেকে রক্ষা করবে কে? তিনি বললেন, আল্লাহ। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ তাকে ধমক দিলেন। এরপর নামায আরম্ভ হলে তিনি মুসলমানদের একটি দলকে নিয়ে দু’রাকআত নামায আদায় করলেন। তারা এখান থেকে হটে গেলে অপর দলটি নিয়ে তিনি আরো দু’রাকাত নামায আদায় করলেন। এভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হল চার রাকাত এবং সাহাবীগণের হল দু’রাকআত নামায। (অন্য এক সুত্রে) মুসাদ্দাদ রহ………..আবু বিশর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি যে লোকটি তলোয়ার উচু করেছিল তার নাম হল গাওরাস ইবনে হারিস। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অভিযানে খাসাফার বংশধর মুহারিব গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। আবু যুবাইর রহ…………জাবির রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেছেন, নাখল নামক স্থানে আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। তিনি এ সময় সালাতুল খাওফ আদায় করেছেন। আবু হুরায়রা রা. বলেন, নাজদের যুদ্ধে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাতুল খাওফ আদায় করেছি। আবু হুরায়রা রা. খায়বার যুদ্ধের সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসেছিলেন।

হাদীস নং ৩৮৩২

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ…………..ইবনে মুহায়রীয রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি মসজিদে প্রবেশ করে আবু সাঈদ খুদরী রা.-কে দেখতে পেয়ে তার কাছে গিয়ে বসলাম এবং তাকে আযল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। আবু সাঈদ খুদরী রা. বললেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বনূ মুসতালিকের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। এ যুদ্ধে আরবের বহু বন্দী আমাদের হস্তগত হয়। মহিলাদের প্রতি আমাদের মনে খাহেশ হল এবং বিবাহ-শাদী ব্যতীত এবং স্ত্রীহীন অবস্থা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াল। তাই আমরা আযল করা পছন্দ করলাম এবং তা করার মনস্থ করলাম। তখন আমরা বলাবলি করতে লাগলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বিদ্যমান। এ সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা না করেই আমরা আযল করতে যাচ্ছি। আমরা তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, এরূপ না করলে তোমাদের কি ক্ষতি? জেনে রাখ , কিয়ামত পর্যন্ত যতগুলো প্রাণের আগমন ঘটবার আছে, ততগুলোর আগমন ঘটবেই।

হাদীস নং ৩৮৩৩

মাহমূদ রহ………..জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নাজদের যুদ্ধে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছি। কাটা গাছ ভরা উপত্যকায় প্রচণ্ড গরম লাগলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি গাছে নিচে অবতরণ করে তার ছায়ায় আশ্রয় নিলেন এবং তরবারিখানা (গাছের সাথে) লটকিয়ে রাখলেন। সাহাবীগণ সকলেই গাছের ছায়ায় আশ্রয় নেয়ার জন্য বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়লেন। আমরা এ অবস্থায় ছিলাম, হঠাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ডাকলেন। আমরা তাঁর নিকট গিয়ে দেখলাম, এক বেদুঈন তাঁর সামনে বসে আছে। তিনি বললেন, আমি ঘুমিয়েছিলাম। এমন সময় সে আমার কাছে এসে আমার তরবারিখানা নিয়ে উচিয়ে ধরল। ঘুম ভেঙ্গে গেলে আমি দেখলাম, সে মুক্ত কৃপাণ হস্তে আমার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে বলছে, এখন তোমাকে আমার থেকে রক্ষা করবে? আমি বললাম, আল্লাহ। ফলে সে তরবারিখানা খাপে ঢুকিয়ে বসে যায়। সে তো এই ব্যক্তি। রাবী জাবির রা. বলেন, (এ ধরণের অপরাধ করা সত্ত্বেও) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কোন প্রকার শাস্তি প্রদান করেননি।

হাদীস নং ৩৮৩৪

আদম রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ আনসারী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আনমার যুদ্ধে সাওয়ারীতে আরোহণ করে মাশরিকের দিকে মুখ করে নফল নামায আদায় করতে দেখেছি।

হাদীস নং ৩৮৩৫

আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..উরওয়া ইবনে যুবাইর, সাঈদ ইবনে মুসায়্যিব, আলকামা ইবনে ওয়াক্কাস ও উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবা ইবনে মাসউদ রা. সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে, যখন অপবাদ রটনাকারীগণ তাঁর প্রতি অপবাদ রটিয়েছিল রাবী যুহরী রহ. বলেন, তারা প্রত্যেকেই হাদীসটির অংশবিশেষ আমার কাছে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি স্মরণ রাখা ও সঠিকভাবে বর্ণনা করার ক্ষেত্রে তাদের কেউ কেউ একে অন্যের চেয়ে অধিকতর অগ্রগামী ও নির্ভরযোগ্য। আয়েশা রা. সম্পর্কে তারা আমার কাছে যা বর্ণনা করেছেন আমি তাদের প্রত্যেকের কথাই যথাযথভাবে স্মরণ রেখেছি। তাদের একজনের বর্ণিত হাদীসের অংশবিশেষ অপরের বর্ণিত হাদীসের অংশবিশেষের সত্যতা প্রমাণ করে। যদিও তাদের একজন অন্যজনের চেয়ে অধিক স্মৃতিশক্তির অধিকারী। রাবীগণ বলেন, আয়েশা রা. বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফরের ইচ্ছা করতেন তখন তিনি তাঁর স্ত্রীগণের (নামের জন্য) কোরা ব্যবহার করতেন। এতে যার নাম আসত তাকেই তিনি সাথে করে সফরে বের হতেন। আয়েশা রা. বলেন, এমনি এক যুদ্ধে (মুরায়সীর যুদ্ধ) তিনি আমাদের মাঝে কোরা ব্যবহার করেন, এতে আমার নাম বেরিয়ে আসে। তাই আমিই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সফরে বের হলাম। এ ঘটনাটি পর্দার হুকুম নাযিল হওয়ার পর সংঘটিত হয়েছিল। তখন আমাকে হাওদাজ সহ সাওয়ারীতে উটানো ও নামানো হত। এমনি করে আমরা চলতে থাকলাম। অবশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এ যুদ্ধ থেকে অবসর হলেন, তখন তিনি (বাড়ির দিকে) ফিরলেন। ফেরার পথে আমরা মদীনার নিকটবর্তী হলে তিনি একদিন রাতের বেলা রওয়ানা হওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন। রওয়ানা হওয়ার ঘোষণার পর আমি উঠলাম এবং (প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য) পায়ে হেটে সেনাছাউনী অতিক্রম করে (একটু সামনে) গেলাম। এরপর প্রয়োজন সেরে আমি আমার সাওয়ারীর কাছে ফিরে এসে বুকে হাত দিয়ে দেখলাম যে, (ইয়ামানের অন্তর্গত) যিফার শহরের পুতি দ্বারা তৈরী করা আমার গলার হারটি ছিড়ে কোথায় পড়ে গিয়েছে। তাই আমি ফিরে গিয়ে আমার হারটি তালাশ করতে আরম্ভ করলাম। হার তালাশ করতে করতে আমার আসতে বিলম্ব হয়ে যায়। আয়েশা রা. বলেন, যে সমস্ত লোক উটের পিঠে আমাকে উঠিয়ে দিতেন তারা এসে আমার হাওদাজ উঠিয়ে তা আমার উটের পিঠে তুলে দিলেন, যার উপর আরোহণ করতাম। তারা মনে করেছিলেন যে, আমি এর মধ্যে আছি, কারণ খাদ্যভাবে মহিলাগণ তখন খুবই হালকা পাতলা হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের দেহ মাংসল ছিলনা। তাঁরা খুবই স্বল্প পরিমাণ খানা খেতে পেত। তাই তারা যখন হাওদাজ উঠিয়ে উপরে রাখেন তখন তখন তা হালকা হওয়ার বিষয়টিকে কোন প্রকার অস্বাভাবিক মনে করেননি। অধিকন্তু আমি ছিলাম একজন অল্প বয়স্কা কিশোরী। এরপর তারা উট হাঁকিয়ে নিয়ে চলে যায়। সৈন্যদল রওয়ানা হওয়ার পর আমি আমার হারটি খুঁজে পাই এবং নিজস্ব স্থানে ফিরে এসে দেখি তাদের (সৈন্যদল) কোন আহবায়ক এবং কোন উত্তরদাতা তথায় নেই। ( নিরুপায় হয়ে) তখন আমি পূর্বে যেখানে ছিলাম সেখানে বসে রইলাম। ভাবছিলাম, তাঁরা আমাকে দেখতে না পেলে অবশ্যই আমার কাছে ফিরে আসবে। ঐ স্থানে বসে থাকা অবস্থায় ঘুম চেপে আসলে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। বানূ সুলামী গোত্রের যাকওয়ান শাখার সাফওয়ান ইবনে মুআত্তাল রা. (যাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফেলে যাওয়া আসবাবপত্র কুড়িয়ে নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন) সৈন্যদল চলে যাওয়ার পর সেখানে ছিলেন। তিনি প্রত্যুষে আমার অবস্থানস্থলের কাছে পৌঁছে একজন ঘুমন্ত মানুষ দেখে আমার দিকে তাকানোর পর আমাকে চিলে ফেললেন। তিনি আমাকে দেখেছিলে পর্দার বিধান নাযিল হওয়ার পূর্বে। তিনি আমাকে চিনতে পেরে ‘ইন্না লিল্লাহহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজিউন’ পড়লে আমি তা শুনতে পেয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠলাম এবং চাদর টেনে আমার চেহারা ঢেকে ফেললাম। আল্লাহর কসম, আমি কোন কথা বলিনি এবং তাঁর থেকে ইন্না লিল্লাহ……..পাঠ ছাড়া আর কোন কথাই শুনতে পাইনি। এরপর তিনি সাওয়ারী থেকে অবতরণ করলেন এবং সাওয়ারীকে বসিয়ে তার সামনের পা নিচু করে দিলে আমি গিয়ে তাতে আরোহণ করলাম। পরে তিনি আমাকেসহ সাওয়ারীকে টেনে আগে আগে চলতে লাগলেন, পরিশেষে ঠিক দ্বিপ্রহরে প্রচণ্ড গরমের সময় আমরা গিয়ে সেনাদলের সাথে মিলিত হলাম। সে সময় তাঁরা একটি জায়গায় অবতরণ করছিলেন। আয়েশা রা. বলেন, এরপর যাদের ধ্বংস হওয়ার ছিল তারা (আমার প্রতি অপবাদ আরোপ করে) ধ্বংস হয়ে গেল। তাদের মধ্যে এ অপবাদ আরোপের ব্যাপারে যে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিল সে হচ্ছে আবদুল্লাহ ইবনে উবায় ইবনে সুলুল। রাবী উরওয়া রা. বলেন, আমি জানতে পেরেছি যে, তার সামনে অপবাদের কথাগুলো প্রচার করা হত এবং আলোচনা করা হত আর অমনি সে এগুলোকে বিশ্বাস করত, খুব ভালভাবে শ্রবণ করত এবং শোনা কথার ভিত্তিতেই বিষয়টিকে প্রমাণ করার চেষ্টা করত। উরওয়া রা. আরো বর্ণনা করেছন যে, অপবাদ আরোপকারী ব্যক্তিদের মধ্যে হাসসান ইবনে সাবিত, মিসতাহ ইবনে উসাসা এবং হামনা বিনতে জাহাশ রা. ব্যতীত আরো কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। তারা গুটিকয়েক ব্যক্তির একটি দল ছিল, এতটুক ব্যতীত তাদের সম্পর্কে আমার আর কিছু জানা নেই। যেমন (আল কুরআনে) মহান আল্লাহ পাক বলেছেন, এ ব্যাপারে যে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিল তাকে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই বিন সুলুল বলে ডাকা হয়ে থাকে। বর্ণনাকারী উরওয়া রা. বলেন, আয়েশা রা.-এর এ ব্যাপারে হাসসান ইবনে সাবিত রা.-কে গালমন্দ করাকে পছন্দ করতেন না। তিনি বলতেন, হাসসান ইবনে সাবিত রা. তো ঐ ব্যক্তি যিনি তার এক কবিতায় বলেছেন, আমার মান সম্মান এবং আমার বাপ দাদা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মান সম্মান রক্ষায় নিবেদিত। আয়েশা রা. বলেন, এরপর আমরা মদীনায় আসলাম। মদীনায় আগমন করার পর এক মাস পর্যন্ত আমি অসুস্থ থাকলাম। এদিকে অপবাদ রটনাকরীদের কথা নিয়ে লোকদের মধ্যে আলোচনা ও চর্চা হতে লাগল। কিন্তু এসবের কিছুই আমি জানি না। তবে আমার সন্দেহ হচ্ছিল এবং তা আরো দৃঢ় হচ্ছিল আমার এ অসুখের সময়। কেননা এর পূর্বে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যেরূপ স্নেহ-ভালবাসা লাভ করতাম আমার এ অসুখের সময় তা আমি পাচ্ছিলাম না। তিনি আমার কাছে এসে সালাম করে কেবল ‘তুমি কেমন আছ’ জিজ্ঞাসা করে চলে যেতেন। তাঁর এ আচরণই আমার মনে চরম সন্দেহের উদ্রেক করে। তবে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাইরে বের হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এ জঘন্য অপবাদ সম্বন্ধে আমি কিছুই জানতাম না। উম্মে মিসতাহ রা. একদা আমার সাথে পায়খানার দিকে বের হন। আর প্রকৃতির ডাকে আমাদের বের হওয়ার অবস্থা এই ছিল যে, এক রাতে বের হলে আমরা আবার পরের রাতে বের হতাম। এ ছিল আমাদের ঘরের পার্শ্বে পায়খানা তৈরী করার পূর্বের ঘটনা। আমাদের অবস্থা প্রাচীন আরবীয় লোকদের অবস্থার মত ছিল। তাদের মত আমরাও পায়খানা করার জন্য ঝোঁপঝাড়ে চলে যেতাম। এমনকি বাড়ির পার্শ্বে পায়খান তৈরী করলে আমরা খুব কষ্ট পেতাম। আয়েশা রা. বলেন, একদা আমি এবং উম্মে মিসতাহ “যিনি ছিলেন আবু রূহম ইবনে মুত্তালিব ইবনে আবদে মানাফের কন্যা, যার মা সাখার ইবনে আমির-এর কন্যা ও আবু বকর রা. সিদ্দীকের খালা এবং মিসতাহ ইবনে উসাসা ইবনে আব্বাদ ইবনে মুত্তালিব যার” একত্রে বের হলাম। আমরা আমাদের কাজ থেকে ফারিগ হওয়ার পর বাড়ি ফেরার পথে উম্মে মিসতাহ তার কাপড়ে জাড়িয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে বললেন, মিসতাহ ধ্বংস হোক। আমি তাকে বললাম, আপনি খুব খারাপ কথা বলছেন। আপনি কি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিকে গালি দিচ্ছেন? তিনি আমাকে বললেন, ওগো অবলা, সে তোমার সম্পর্কে কি বলে বেড়াচ্ছে তুমি তো তা শোননি। আয়েশা রা. বলেন, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, সে আমার সম্পর্কে কি বলছে? তখন তিনি অপবাদ রটনাকরীদের কথাবার্তা সম্পর্কে আমাকে জানালেন। আয়েশা রা. বর্ণনা করেন, এরপর আমার পুরানো রোগ আরো বেড়ে গেল। আমি বাড়ি ফেরার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আসলেন এবং সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কেমন আছ? আয়েশা রা. বলেন, আমি আমার পিতা-মাতার কাছে গিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক খবর জানতে চাচ্ছিলাম, তাই আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, আপনি কি আমাকে আমার পিতা-মাতার কাছে যাওয়ার জন্য অনুমতি দেবেন? আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমকে অনুমতি দিলেন। তখন (বাড়িতে গিয়ে) আমি আমার আম্মাকে বললাম, আম্মাজান, লোকজন কি আলোচনা করছে? তিনি বললেন, বেটী ও বিষয়টিকে হালকা করে ফেল। আল্লাহর কসম, সতীন আছে এমন স্বামী সোহাগিনী সুন্দরী রমণীকে তাঁর সতীনরা বদনাম করবে না, এমন খুব কমই হয়ে থাকে। আয়েশা রা. বলেন, আমি বিস্ময়ের সাথে বললাম, সুবহানাল্লাহ । লোকজন কি এমন গুজবই রটিয়েছে। আয়েশা রা. বর্ণনা করেন, রাতভর আমি কাঁদলাম। কাঁদতে কাঁদতে ভোর হয়ে গেল। এর মধ্যে আমার অশ্রুও বন্ধ হল না এবং আমি ঘুমাতেও পারলাম না। এরপর ভোরবেলাও আমি কাঁদছিলাম। তিনি আরো বলেন যে, এ সময ওহী নাযিল হতে বিলম্ব হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রীর (আমার) বিচ্ছেদের বিষয়টি সম্পর্কে পরামর্শ ও আলোচনা করার নিমিত্তে আলী ইবনে আবু তালিব এবং উসামা ইবনে যায়েদ রা.-কে ডেকে পাঠালেন। আয়েশা রা. বলেন, উসামা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের পবিত্রতা এবং তাদের প্রতি (নবীজীর) ভালবাসার কারণে বললেন, (হে আল্লাহর রাসূল) তাঁরা আপনার স্ত্রী, তাদের সম্পর্কে আমি ভাল ছাড়া আর কিছুই জানি না। আর আলী রা. বললেন, হে আল্লাহ রাসূল, আল্লাহ তো আপনার জন্য সংকীর্ণতা রাখেননি। তাকে (আয়েশা) ব্যতীত আরো বহু মহিলা রয়েছে। তবে আপনি এ ব্যাপারে দাসী (বারীরা রা.) কে জিজ্ঞাসা করুন। সে আপনার কাছে সত্য কথাই বলবে। আয়েশা রা. বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারীরা রা.-কে ডেকে বললেন, হে বারীরা তুমি তাঁর মধ্যে কোন সন্দেহমূলক আচরণ দেখেছ কি? বারীরা রা. তাকে বললেন, সেই আল্লাহর শপথ যিনি আপনাকে সত্য বিধানসহ পাঠিয়েছেন আমি তার মধ্যে কখনো এমন কিছু দেখিনি যার দ্বারা তাকে দোষী বলা যায়। তবে তাঁর ব্যাপারে শুধু এতটুকু বলা যায় যে, তিনি হলেন অল্প বয়স্কা যুবতী, রুটি তৈরী করার জন্য আটা খামির করে রেখে ঘুমিয়ে পড়েন। আর বকরী এসে অমনি তা খেয়ে ফেলে। আয়েশা রা .বলেন, (এ কথা শুনে) সেদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাথে সাথে উঠে গিয়ে মিম্বরে বসে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই-এর ক্ষতি থেকে রক্ষার আহবান জানিয়ে বললেন, হে মুসলিম সম্প্রদায়, যে আমার স্ত্রীর ব্যাপারে অপবাদ ও বদনাম রটিয়ে আমাকে কষ্ট দিয়েছে তার এ অপবাদ থেকে আমাকে কে মুক্ত করবে? আল্লাহর কসম, আমি আমার স্ত্রী সম্পর্কে ভাল ছাড়া আর কিছুই জানিনা। আর তাঁরা (অপবাদ রটনাকারীরা) এমন এক ব্যক্তির (সাফওয়ান ইবনে মুআত্তাল) নাম উল্লেখ করছে যার সম্বন্ধেও আমি ভাল ছাড়া কিছু জানি না। সে তো আমর সাথেই আমার ঘরে যায়। আয়েশা রা. বলেন, (এ কথা শুনে) বনী আবদুল আশহাল গোত্রের সাদ (ইবনে মুআয) রা. উঠে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি আপনাকে এ অপবাদ থেকে মুক্তি দেব। সে যদি আউস গোত্রের লোক হয় তা হলে তার শিরচ্ছেদ করব। আর যদি সে আমাদের ভাই খাযরাজের লোক হয় তাহলে তার ব্যাপারে আপনি যা বলবেন তাই পালন করব। আয়েশা রা. বলেন, এ সময় হাসসান ইবনে সাবিত রা.-এর মায়ের চাচাতো ভাই খাযরাজ গোত্রের সর্দার সাঈদ ইবনে উবাদা রা. দাঁড়িয়ে এ কথার প্রতিবাদ করলেন। আয়েশা রা. বলেন, এ ঘটনার পূর্বে তিনি একজন সৎ ও নেককার লোক ছিলেন। কিন্তু (এ সময়) গোত্রীয় অহমিকায় উত্তেজিত হয়ে তিনি সাদ ইবনে মুআয রা.-কে বললেন, তুমি মিথ্যা কথা বলছ। আল্লাহর কসম, তুমি তাকে হত্যা করতে পারবে না এবং তাকে হত্যা করার ক্ষমতাও তোমার নেই। যদিসে তোমার গোত্রের লোক হত তাহলে তুমি তার হত্যা হওয়া কখনো পছন্দ করতে না। তখন সাদ ইবনে মুআয রা.-এর চাচাতো ভাই উসাইদ ইবনে হুযাইর রা. সাদ ইবনে ওবায়দা রা.-কে বললেন, বরং তুমি মিথ্যা কথা বললে। আল্লাহর কসম, আমরা অবশ্যই তাকে হত্যা করব। তুমি হলে মুনাফিক। তাই মুনাফিকদের পক্ষ অবলম্বন করে কথাবার্তা বলছ। আয়েশা রা. বলেন, এ সময় আউস ও খাযরাজ উভয় গোত্র খুব উত্তেজিত হয়ে উঠে। এমনকি তারা যুদ্ধের সংকল্প পর্যন্ত করে বসে। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের থামিয়ে শান্ত করলেন এবং নিজেও চুপ হয়ে গেলেন। আয়েশা রা. বলেন, আমি সেদিন সারাক্ষণ কেঁদে কাটালাম। অশ্রুঝরা আমার বন্ধ হয়নি এবং একটু ঘুমও আমার আসেনি। তিনি বলেন, আমি ক্রন্দনরত ছিলাম আর আমার পিতা-মাতা আমার পার্শ্বে বসা ছিলেন। এমনি করে একদিন দুই রাত কেঁদে কেঁদে কাটিয়ে দিই। এর মাঝে আমার কোন ঘুম আসেনি। বরং অবারিত ধারায় আমার চোখ থেকে অশ্রুপাত হতে থাকে। মনে হচ্ছিল যেন, কান্নার ফলে আমার কলিজা ফেটে যাবে। আমি ক্রন্দনরত ছিলাম আর আমার আব্বা-আম্মা আমার পাশে বসা ছিলেন। এমতাবস্থায় একজন আনসারী মহিলা আমার কাছে আসার অনুমতি চাইলে আমি তাকে আসার অনুমতি দিলাম। সে এসে বসল এবং আমার সাথে কাঁদতে আরম্ভ করল। তিনি বলেন, আমরা ক্রন্দনরত ছিলাম ঠিক এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এসে সালাম করলেন এবং আমাদের পাশে বসে গেলেন। আয়েশা রা. বলেন, অপবাদ রটানোর পর আমার কাছে এসে এভাবে তিনি আর কখনো বসেননি। এদিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ একমাস কাল অপেক্ষা করার পরও আমার বিষয়ে তাঁর নিকট কোন ওহী আসেনি। আয়েশা রা. বলেন, বসার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কালিমা শাহাদাত পড়লেন। এরপর বললেন, যা হোক, আয়েশা তোমার সম্বন্ধে আমার কাছে অনেক কথাই পৌঁছেছে, যদি তুমি এর থেকে মুক্ত হও তাহলে শীঘ্রই আল্লাহ তোমাকে এ অপবাদ থেকে মুক্ত করে দেবেন। আর যদি তুমি কোন গুনাহ করে থাক তাহলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তাওবা কর। কেননা বান্দা গুনাহ স্বীকার করে তাওবা করলে আল্লাহ তায়ালা তাওবা কবূল করেন। আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কথা বলে শেষ করলে আমার অশ্রুপাত বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি এক ফোটা অশ্রুও আমি আর অনুভব করলাম না। তখন আমি আমার আব্বাকে বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলছেন আমার পক্ষ হতে আপনি তার জবাব দিন। আমার আব্বা বললেন, আল্লাহর কসম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কি জবাব দিব আমি তা জানিনা। তখন আমি আমার আম্মাকে বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন, আপনি তার জবাব দিন। আম্মা বললেন, আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কি জবাব দিব আমি তা জানি না। তখন আমি ছিলাম অল্প বয়স্কা কিশোরী। কুরআনও বেশি পড়তে পারতাম না। তথাপিও এ অবস্থা দেখে নিজেই বললাম, আমি জানি আপনারা এ অপবাদের ঘটনা শুনেছেন, আপনারা তা বিশ্বাস করেছেন এবং বিষয়টি আপনাদের মনে সুদৃঢ় হয়ে আছে। এখন যদি আমি বলি যে, এর থেকে আমি পবিত্র এবং আমি নিষ্কলুষ তাহলে আপনারা আমাকে বিশ্বাস করবেন না। আর যদি আমি এ অপরাধের কথা স্বীকার করে নেই যা সম্পর্কে আল্লাহ জানেন যে, আমি এর থেকে পবিত্র তাহলে আপনারা তা বিশ্বাস করবেন। আল্লাহর কসম, আমি ও আপনারা যে অবস্থায় শিকার হয়েছি এর জন্য (নবী) ইউসুফ আ.-এর পিতার কথা উদাহরণ ব্যতীত আমি কোন উদাহরণ খুঁজে পাচ্ছি না। তিনি বলেছিলেন: “সুতরাং পূর্ণ ধৈর্যই শ্রেয়, তোমরা যা বলছ সে বিষয়ে আল্লাহই একমাত্র আমার আশ্রয়স্থল” এরপর আমি মুখ ফিরিয়ে আমার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। আল্লাহ তায়ালা জানেন যে, সে মুহূর্তেও আমি পবিত্র। অবশ্যই আল্লাহ আমার পবিত্রতা প্রকাশ করে দেবেন। (একথার প্রতি আমার বিশ্বাস ছিল) তবে আল্লাহর কসম,আমি কখনো ধারণা করিনি যে, আমার ব্যাপারে আল্লাহর ওহী নাযিল করবেন যা পঠিত হবে। আমার ব্যাপারে আল্লাহ কোন কথা বলবেন আমি নিজেকে এতখানি যোগ্য মনে করিনি বরং আমি নিজেকে এর চেয়ে অধিক অযোগ্য বলে মনে করতাম। তবে আমি আশা করাতাম যে, হয়তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এমন স্বপ্ন দেখানো হবে যার দ্বারা আল্লাহ আমার পবিত্রতা প্রকাশ করে দেবেন। আল্লাহর কসম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখনো তাঁর বসার জায়গা ছাড়েননি এবং ঘরের লোকদের থেকেও কেউ ঘর থেকে বাইরে যাননি। এমতাবস্থায় তাঁর উপর ওহী নাযিল হতে শুরু হল। ওহী নাযিল হওয়ার সময় তাঁর যে বিশেষ কষ্ট হত তখনও সে অবস্থা তাঁর হল। এমনকি প্রচণ্ড শীতের দিনেও তাঁর দেহ থেকে মোতির দানার মত বিন্দু বিন্দু ঘাম গড়িয়ে পড়ত ঐ বাণীর গুরুভাবের কারণে, যা তাঁর প্রতি নাযিল করা হয়েছে। আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ অবস্থা দূরীভূত হলে তিনি হাসিমুখে প্রথমে যে কথাটি বললেন, তা হল, হে আয়েশা ! আল্লাহ তোমার পবিত্রতা জাহির করে দিয়েছেন। আয়েশা রা. বলেন, এ কথা শুনে আমার আম্মা আমাকে বললেন, তুমি উঠে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন কর। আমি বললাম, আল্লাহর কসম আমি এখন তাঁর দিকে উঠে যাব না। মহান আল্লাহ ব্যতীত আমি কারো প্রশংসা করব না। আয়েশা রা বললেন, আল্লাহ (আমার পবিত্রতা ঘোষণা করে) যে দশটি আয়াত নাযিল করেছেন, তা হল এই : “যারা এ অপবাদ রটনা করেছে (তারা তো তোমাদেরই একটি দল; এ ঘটনাকে তোমরা তোমাদের জন্য অনিষ্টকর মনে করো না; বরং এও তোমাদের জন্য কল্যাণকর। তাদের প্রত্যেকের জন্য আছে তাদের কৃত পাপকর্মের ফল এবং তাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছে তার জন্য আছ কঠিন শাস্তি। এ কথা শোনার পর মুমিন পুরুষ এবং নারীগণ কেন নিজেদের বিষয়ে সৎ ধারণা করেনি এবং বলেনি, এটা তো সুষ্পষ্ট অপবাদ। তারা কেন এ ব্যাপারে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করেনি? যেহেতু তারা সাক্ষী উপস্থিত করেনি, সেহেতু তারা আল্লাহর বিধানে মিথ্যাবাদী। দুনিয়া ও আখিরাতে তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমরা যাতে লিপ্ত ছিলে তার জন্য কঠিন শাস্তি তোমাদেরকে স্পর্শ করত। যখন তোমরা মুখে মুখে এ মিথ্যা ছড়াচ্ছিলে এবং এমন বিষয় মুখে উচ্চারণ করছিলে যার কোন জ্ঞান তোমাদের ছিলনা এবং একে তোমরা তুচ্ছ ব্যাপার বলে ভাবছিলে, অথচ আল্লাহর কাছে তা ছিল খুবই গুরুতর ব্যাপার। আল্লাহ পবিত্র, মহান! এ তো এক গুরুতর অপনাদ। আল্লাহ তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছেন, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক তাহলে কখনো অনুরূপ আচরণের পুনরাবৃত্তি করবে না, আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বিবৃত করেন এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। যারা মুনিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতের মর্মন্তুদ শাস্তি। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমাদের কেউই অব্যাহতি পেতে না। আল্লাহ দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। (২৪ : ১১-২০) এরপর আমার পবিত্রতা ঘোষণা করে আল্লাহ এ আয়াতগুলো নাযিল করলেন। আত্মীয়তা এবং দারিদ্রের কারণে আবু বকর সিদ্দীক রা. মিসতাহ ইবনে উসাসাকে আর্থিক ও বৈষয়িক সাহায্য করতেন। কিন্তু আয়েশা রা. সম্পর্কে তিনি যে অপবাদ রটিয়েছিলেন এ কারণে আবু বকর সিদ্দীক রা কসম করে বললেন, আমি আর কখনো মিসতাহকে আর্থিক কোন সাহায্য করব না। তখন আল্লাহ তায়ালা নাযিল করলে, তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেন শপথ গ্রহণ করে যে, তারা আত্মীয়-স্বজন ও অভাবগ্রস্তকে এবং আল্লাহর রাস্তায় যারা গৃহত্যাগ করেছে তাদেরকে কিছুই দিবে না। তারা যেন তাদেরকে ক্ষমা করে এবং তাদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করে। শোন! তোমরা কি পছন্দ কর না যে, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (২৪: ২২) (এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর) আবু বকর সিদ্দীক রা. বলে উঠলেন হ্যাঁ, আল্লাহর কসম অবশ্যই আমি পছন্দ করি যে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিন। এরপর তিনি মিসতাহ রা.-এর জন্য যে অর্থ খরচ করতেন তা পুন: দিতে শুরু করলেন এবং বললেন, আল্লাহর কসম, আমি তাকে এ অর্থ দেওয়া আর কখনো বন্ধ করব না। আয়েশা রা .বললেন, আমার এ বিষয় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়নাব বিনতে জাহাশ রা.-কেও জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তিনি যায়নাব রা. -কে বলেছিলেন, তুমি আয়েশা রা. সম্পর্কে কি জান অথবা বলেছিলেন তুমি কী দেখেছ? তখন তিনি বলেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি আমার চোখ ও কানকে সংরক্ষণ করেছি। আল্লাহর কসম ! আমি তাঁর সম্পর্কে ভাল ছাড়া আর কিছুই জানি না। আয়েশ রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর স্ত্রীগণের মধ্যে তিনি আমার সমকক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। আল্লাহ তাকে আল্লাহ-ভীতির ফলে রক্ষা করেছেন। আয়েশা রা. বলেন, অথচ তাঁর বোন হামনা রা. তাঁর পক্ষ অবলম্বন করে অপবাদ রটনাকারীদের মত অপবাদ রটনা করে বেড়াচ্ছিলেন। ফলে তিনি ধ্বংসপ্রাপ্তদের সাথে ধ্বংস হয়ে গেলেন। বর্ণনাকারী ইবনে শিহাব রহ. বলেন, ঐ সমস্ত লোকের ঘটনা সম্পর্কে আমার কাছে যা পৌঁছেছে তা হল এই : উরওয়ার রা. বলেন, আয়েশা রা. বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ কসম, যে ব্যক্তি সম্পর্কে অপবাদ দেওয়া হয়েছিল, তিনি এসব কথা শুনে বলতেন, আল্লাহ মহান। ঐ সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, আমি কোন স্ত্রীলোকের কাপড় খু্লেও কোনদিন দেখিনি। আয়েশা রা. বলেন, পরে তিনি আল্লাহর পথে শাহাদত লাভ করেছিলেন।

হাদীস নং ৩৮৩৬

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………..যুহরী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, ওয়ালীদ ইবনে আবদুল মালিক রহ. আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার নিকট কি এ সংবাদ পৌঁছেছে যে, আয়েশা রা.-এর প্রতি অপবাদ আরোপকারীদের মধ্যে আলী রা.-ও শামিল ছিলেন? আমি বললাম, না, তবে আবু সালমা ইবনে আবদুর রহমান ও আবু বকর ইবনে আবদুর রহমান ইবনে হারিস নামক তোমার গোত্রের দুই ব্যক্তি আমাকে জানিয়েছে যে আয়েশা রা. তাদের দু’জনকে বলেছেন যে, আলী রা. তার ব্যাপারে সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ ছিলেন।

হাদীস নং ৩৮৩৭

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ…………..আয়েশা রা.-এর মা উম্মে রুমান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ও আয়েশা রা. বসা ছিলাম। এমতাবস্থায় একজন আনসারী মহিলা প্রবেশ করে বলতে লাগল আল্লাহ অমুক অমুককে ধ্বংস করুন। এ কথা শুনে উম্মে রুমান রা. বললেন, তুমি কি বলছ? সে বলল, যারা অপবাদ রটিয়েছে তাদের মধ্যে আমার ছেলেও আছে। উম্মে রুমান রা. পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, কি অপবাদ রুটিয়েছে। আয়েশা রা. বললেন, (এ কথা কি) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনেছেন? সে বলল, হ্যাঁ। আয়েশা রা. বললেন, আবু বকরও কি শুনেছেন? সে বলল, হ্যাঁ। এ কথা শুনে আয়েশা রা. বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেলেন। হুঁশ ফিরে আসলে তাঁর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসল। এরপর আমি চাদর দিয়ে তাকে ঢেকে দিলাম। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে জিজ্ঞাসা করলেন, তাঁর কি অবস্থা? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তাঁর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হয়তো সে অপবাদের ঘটনার কারণে। তিনি বললেন, হ্যাঁ। এ সময় আয়েশা রা. উঠে বসলেন এবং বললেন, আল্লাহর কসম ! (আমার পবিত্রতার ব্যাপারে) আমি যদি কসম করি, তাহলেও আপনারা আমাকে বিশ্বাস করবেন না, আর যদি আমি ওযর পেশ করি তবুও আমার ওযর আপনারা কবুল করবেন না, আমার এবং আপনাদের উদাহরণ নবী ইয়াকুব আ. এবং তাঁর ছেলেদের উদাহরণের মতই। তিনি বলেছিলেন, “তোমরা যা বলছ সে বিষয়ে আল্লাহই একমাত্র আমার সাহায্যস্থল”। উম্মে রুমান রা. বলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কিছু না বলেই চলে গেলেন। এরপর আল্লাহ তায়ালা তাঁর (আয়েশা রা.) পবিত্রতা বর্ণনা করে আয়াত নাযিল করলেন। আয়েশা রা. বললেন, একমাত্র আল্লাহরই প্রশংসা করি আর কারো না, আপনারও না।

হাদীস নং ৩৮৩৮

ইয়াহইয়া রহ………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি আয়াতাংশ إذ تلقونه بألسنتكم পড়তেন এবং বলতেন الولق অর্থ الكذب । ইবনে আবু মুলায়কা রহ. বলেছেন, এ আয়াতের ব্যাখ্যা আয়েশা রা. অন্যদের চাইতে বেশী জানতেন। কেননা এ আয়াত তারই ব্যাপারে নাযিল হয়েছিল।

হাদীস নং ৩৮৩৯

উসমান ইবনে আবু শায়বা রহ………..হিশামের পিতা (উরওয়া রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়েশা রা. -এর সম্মুখে হাসসান ইবনে সাবিত রা.-কে গালি দিতে আরম্ভ করলে তিনি বললেন, তাকে গালি দিও না। কেননা তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ অবলম্বন করে কাফেরদের বিরুদ্ধে লড়াই করতেন। আয়েশা রা. বলেছেন হাসসান ইবনে সাবিত রা. কবিতার মাধ্যমে মুশরিকদের নিন্দাবাদ করার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে অনুমতি চাইলে তিনি বললেন, তুমি কুরাইশদের নিন্দাসূচক কবিতা রচনা করলে আমার বংশকে কি করে রক্ষা করবে? তিনি বললেন, আমি আপনাকে তাদের থেকে এমনিভাবে পৃথক করে রাখব যেমনিভাবে আটার খামির থেকে চুলকে পৃথক করে রাখা হয়। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, উসমান ইবনে ফারকাদ রহ. আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, আমি হিশাম রহ.-কে তার পিতা উরওয়া রা. থেকে বর্ণনা করতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আমি হাসসান ইবনে সাবিত রা.-কে গালি দিয়েছি। কেননা তিনি ছিলেন আয়েশা রা.-এর প্রতি অপবাদ রটনাকারীদের অন্যতম।

হাদীস নং ৩৮৪০

বিশর ইবনে খালিদ রহ…………মাসরূক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়েশা রা.-এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন তাঁর কাছে হাসসান ইবনে সাবিত রা. তাকে তাঁর নিজের রচিত কবিতা আবৃত্তি করে শোনাচ্ছেন। তিনি আয়েশা রা.-এর প্রশংসা করে বলছেন, তিনি সতী, ব্যক্তিত্বসম্পন্না ও জ্ঞানবতী, তাঁর প্রতি কোন সন্দেহই আরোপ করা যায় না। তিনি অভুক্ত থাকেন, তবুও অনুপস্থিত লোকদের গোশত খান না অর্থাৎ গীবত করেন না। এ কথা শুনে আয়েশা রা. বললেন, কিন্তু আপনি তো এরূপ নন। মাসরূক রহ. বলেছেন যে, আমি আয়েশা রা. -কে বললাম যে, আপনি কেন তাকে আপনার কাছে আসতে অনুমতি দেন? অথচ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “তাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছে তার জন্য আছে কঠিন শাস্তি। আয়েশা রা. বলেন, অন্ধত্ব থেকে কঠিন শাস্তি আর কি হতে পারে? তিনি তাকে আরো বলেন যে, হাসসান ইবনে সাবিত রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ হয়ে কাফেরদের সাথে মুকাবিলা করতেন অথবা কাফেরদের বিরুদ্ধে নিন্দাসূচক কবিতা রচনা করতেন।

হাদীস নং ৩৮৪১

খালিদ ইবনে মাখলাদ রহ………..যায়েদ ইবনে খালিদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুদায়বিয়ার যুদ্ধের বছর আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বের হলাম। এক রাতে খুব বৃষ্টি হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে ফজরের নামায আদায় করলেন। এরপরে আমাদের দিকে ফিরে বললেন, তোমরা জান কি তোমাদের রব কি বলেছেন? আমরা বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলই অধিক জানেন। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন (এ বৃষ্টির কারণে) আমার কতিপয় বান্দা আমার প্রতি ঈমান এনে মুমিন হয়েছে, আবার কেউ কেউ আমাকে অমান্য করে কাফের হয়েছে। যারা বলেছে, আল্লাহর রহমত, আল্লাহর করুণা এবং আল্লাহর রিযিক প্রদানের পূর্বাভাস হিসাবে আমাদের প্রতি বৃষ্টি হয়েছে, তারা আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী মুমিন এবং নক্ষত্রের প্রভাব অস্বীকারকারী (কাফের)। আর যারা বলেছে যে অমুক তারকার কারণে বৃষ্টি হয়েছে, তারা তারকার প্রতি ঈমান আনয়নকারী এবং আমাকে অস্বীকারকারী কাফের।

হাদীস নং ৩৮৪২

হুদবা ইবনে খালিদ রহ…………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারটি উমরা পালন করেছেন। তিনি হজ্জের সাথে যে উমরাটি পালন করেছিলেন সেটি ব্যতীত সবকটিই যিলকাদাহ মাসে পালন করেছেন। হুদায়বিয়া নামক স্থানে তিনি যে উমরাটি পালন করেছিলেন তা ছিল যিলকাদাহ মাসে। হুদায়বিয়ার পরবর্তী বছর যে উমরাটি পালন করেছিলেন, সেটি ছিল যিলকাদাহ মাসে এবং হুনায়ইনের যুদ্ধলব্ধ সম্পদ যে জিঈরানা নামক স্থানে বন্টন করেছিলেন, সেখান থেকে যে উমরাটি করা হয়েছিল তাও ছিল যিলকাদাহ মাসে, আর তিনি হজ্জের সাথে একটি উমরা পালন করেন।

হাদীস নং ৩৮৪৩

সাঈদ ইবনে রাবী রহ…………আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুদায়বিয়ার যুদ্ধের বছর আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে রওয়ানা করেছিলাম। এ সময় তাঁর সাহাবীগণ ইহরাম বেঁধেছিলেন কিন্তু আমি ইহরাম বাঁধিনি।

হাদীস নং ৩৮৪৪

উবায়দুল্লাহ ইবনে মূসা রহ…………বারা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, মক্কা বিজয়কে তোমরা মৌল বিজয় বলে মনে করছ। অথচ মক্কা বিজয়ও একটি বিজয়। কিন্তু হুদায়বিয়ার দিনে অনুষ্ঠিত বায়আতে রিদওয়ানকে আমরা মৌল বিজয় বলে মনে করি। সে সময় আমরা চৌদ্দশ সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে ছিলাম। হুদায়বিয়া একটি কূপ। আমরা তা থেকে পানি উঠাতে উঠাতে তার মধ্যে এক বিন্দুও অবশিষ্ট রাখিনি। আর এ সংবাদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে পৌঁছলে তিনি এসে সে কূপের পাড়ে বসলেন। এরপর এক পাত্র পানি আনিয়ে ওযু করলেন এবং কুল্লি করলেন। পরিশেষে দোয়া করে অবশিষ্ট পানি কূপের মধ্যে ফেলে দিলেন। আমরা অল্প কিছুক্ষণ পর্যন্ত কূপের পানি উঠানো বন্ধ রাখলাম। এরপর আমরা আমাদের নিজেদের ও আরোহী পশুর জন্য প্রচুর পানি কূপ থেকে বের করলাম।

হাদীস নং ৩৮৪৫

ফাযল ইবনে ইয়াকুব রহ………….আবু ইসহাক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে বারা ইবনে আযিব রা. সংবাদ দিয়েছেন যে, হুদায়বিয়ার যুদ্ধের দিন তাঁরা চৌদ্দশ কিংবা তার চেয়েও অধিক লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলেন। তখন তারা একটি কূপের পার্শ্বে অবতরণ করেন এবং তা থেকে পানি উত্তোলন করতে থাকেন। (এতে সব পানি নিঃশেষ হয়ে যায়) তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম­-এর কাছে এসে এ সংবাদ জানালেন। তখন তিনি কূপটির কাছে এসে এর পাড়ে বসলেন। এরপর বললেন, আমার কাছে এই কূপের এক বালতি পানি নিয়ে আস। তখন তা নিয়ে দেয়া হল। তিনি এতে থুথু ফেললেন এবং দোয়া করলেন। এরপর তিনি বললেন, এ থেকে কিছুক্ষণের জন্য তোমরা পানি উঠানো বন্ধ রাখ। এরপর সকলেই নিজেদের ও আরোহী জীবসমূহের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি সংগ্রহ করলেন এবং পরে চলে গেলেন।

হাদীস নং ৩৮৪৬

ইউসুফ ইবনে ঈসা রহ…………জাবির রা. থেকে বর্ণিত ,তিনি বলেন, হুদায়বিয়ার দিন লোকেরা পিপাসার্ত হয়ে পড়লেন। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট একটি চর্ম পাত্র ভর্তি পানি ছিল মাত্র। তিনি তা দিয়ে ওযু করলেন। তখন লোকেরা তাঁর প্রতি এগিয়ে আসলে তিনি তাদেরকে বললেন, কি হয়েছে তোমাদের ? তারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনার চর্ম পাত্রের পানি ব্যতীত আমাদের কাছে এমন কোন পানি নেই যার দ্বারা আমরা ওযু করব এবং যা আমরা পান করব। রাবী জাবির রা. বলেন, এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মুবারক হাতখানা ঐ চর্ম পাত্রে রাখলেন। অমনি তার আঙ্গুগুলোর মধ্যস্থল থেকে ঝরনাধারর মত পানি উথলিতে উঠতে লাগল। জাবির রা. বলেন, আমরা সে পানি পান করলাম এবং তা দিয়ে ওযু করলাম। (সালিম রহ. বলেন) আমি জাবির রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা সেদিন কত জন লোক ছিলেন? তিনি বললেন, আমাদের সংখ্যা এক লাখ হলেও এ পানিই আমাদের জন্য যথেষ্ট হত। আমরা ছিলাম তখন পনেরশ লোক মাত্র।

হাদীস নং ৩৮৪৭

সালত ইবনে মুহাম্মদ রহ…………কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সাঈদ ইবনে মুসায়্যিব রা.-কে বললাম, আমি শুনতে পেয়েছি যে, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা বলতেন, তাঁরা (হুদায়বিয়ার যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবাদের সংখ্যা) চৌদ্দশ ছিল। সাঈদ রা. আমাকে বললেন, জাবির রা. আমাকে বর্ণনা করেছেন যে, হুদায়বিয়ার যুদ্ধে যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে বায়আত গ্রহণ করেছিলেন, তাদের সংখ্যা ছিল পনেরশ। আবু দাউদ কুররা রহ.-এর মাধ্যমে কাতাদা রহ. থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ.-ও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আবু দাউদ রহ. (অন্য সনদে) শুবা রহ. থেকেও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৩৮৪৮

আলী রহ………….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদায়বিয়ার যুদ্ধের দিন আমাদেরকে বলেছেন, পৃথিবীবাসীদের মধ্যে তোমরাই সর্বোত্তম। সেদিন আমরা ছিলাম চৌদ্দশ। আজ আমি যদি দেখতাম, তাহলে আমি তোমাদেরকে সে বৃক্ষ-স্থানটি দেখিয়ে দিতাম। আমাশ রহ. হাদীসটি সালিম রা.-এর মাধ্যমে জাবির রা. থেকে সুফয়ান রহ.-এর অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ হুদায়বিয়ার সন্ধির দিন সাহাবীদের সংখ্যা ছিল চৌদ্দশ। উবায়দুল্লাহ ইবনে মুআয রহ…………আবদুল্লাহ ইবনে আবু আউফারহ. থেকে বর্ণনা করেন যে, গাছের নিচে বায়আত গ্রহণকারীদের সংখ্যা ছিল তেরশ। সৈন্যদের মধ্যে আসলাম গোত্রের সাহাবীগণের সংখ্যা ছিল মুহাজিরগণের মোট সংখ্যার-এ অষ্টমাংশ।

হাদীস নং ৩৮৪৯

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ…………কায়েস রহ. থেকে বর্ণিত যে, তিনি হুদায়বিয়ার সন্ধির দিন বৃক্ষের নিচে বায়আত গ্রহণকারী সাহাবী মিরদাস আসলামীকে বলতে শুনেছে যে, পূণ্যবান লোকদেরকে একের পর এক উঠিয়ে নেওয়া হবে। এরপর অবশিষ্ট থাকবে খেজুর ও যবের ছালের মত কতিপয় নিম্নস্তরের লোক, যাদের কোন পরোয়া আল্লাহ করবেন না।

হাদীস নং ৩৮৫০

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ…………মারওয়ান এবং মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রা. থেকে বর্ণিত, তাঁরা উভয়ই বলেছেন যে, হুদায়বিয়ার বছর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এব হাজারেরও অধিক সাহাবীকে সঙ্গে নিয়ে মদীনা থেকে যাত্রা করলেন। যুল-হুলায়ফা নামক স্থানে পৌঁছে তিনি কুরবানীর পশুর গলায় কিলাদা বাঁধলেন, (কুরবানীর পশুর) কুজ কাটলেন এবং সেখান থেকে ইহরাম বাঁধলেন। (রাবী) বলেন, এ হাদীস সুফিয়ান থেকে কতবার শুনেছি তার সংখ্যা আমি নির্ণয় করতে পারছি না। পরিশেষে তাকে বলতে শুনেছি, যুহরীথেকে কুরবানীর পশুর গলায় কিলাদা বাঁধা এবং ইশআর করার কথা আমার স্মরণ নেই। রাবী আলী ইবনে আবদুল্লাহ বলেন, সুফিয়ান এ কথা বলে কি বোঝাতে চেয়েছে তা আমি জানি না। তিনি কি এ কথা বলতে চেয়েছেন যে, যুহরী থেকে ইশআর ও কিলাদা কথা তাঁর স্মরণ নেই, না পুরা হাদীসটি স্মরণ না থাকার কথা বলতে চেয়েছেন?

হাদীস নং ৩৮৫১

হাসান ইবনে খালীফ রহ………..কাব ইবনে উজরা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এমতাবস্থায় দেখলেন যে, উকুন (তার মাথা থেকে) মুখমণ্ডলে ঝরে পড়ছে। তখন তিনি বললেন, কীটগুলো কি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদায়বিয়ায় অবস্থানকালে তাঁর মাথা মুণ্ডিয়ে ফেলার জন্য নির্দেশ দেন। তখন সাহাবীগণ মক্কা প্রবেশ করার জন্য খুবই উদগ্রীব হয়ে উঠেছিলেন। হুদায়বিয়াতেই তাদেরকে হালাল হয়ে যেতে হবে এ কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে বর্ণনা করেননি। তাই আল্লাহ ফিদইয়ার হুকুম নাযিল করলেন। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ছয়জন মিসকীনকে এক ফারাক (প্রায় বারো সের) খাদ্য খাওয়ানোর অথবা একটি বকরী কুরবানী করার অথবা তিন দিন রোযা পালন করার নির্দেশ দিলেন।

হাদীস নং ৩৮৫২

ইসমাঈল ইবনে আবদুল্লাহ রহ…………..আসলাম রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি উমর ইবনে খাত্তাব রা.-এর সঙ্গে বাজারে বের হলাম। সেখানে একজন যুবতী মহিলা তাঁর সাথে সাক্ষাত করে বলল, হে আমীরুল মুমিনীন, আমার স্বামী ছোট ছোট বাচ্চা রেখে ইন্তিকাল করেছেন। আল্লাহর কসম, তাদের আহারের জন্য পাকানোর মত কোন বকরীর খুরাও নেই এবং নেই কোন ফসলের ব্যবস্থা ও দুধেল উট, বকরী। পোকা তাদেরকে খেয়ে ফেলবে বলে আমর আশংকা হচ্ছে অথচ আমি হলাম খুফাফ ইবনে আয়মা গিফারীর কন্যা। আমার পিতা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে হুদায়বিয়ার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এ কথা শুনে উমর রা. তাকে অতিক্রম না করে পার্শ্বে দাঁড়ালেন। এরপর বললেন, তোমার গোত্রকে ধন্যবাদ। তাঁরা তো আমার খুব নিকটেরই মানুষ । এরপর তিনি বাড়িতে এসে আস্তাবল বাঁধা উটের থেকে একটি মোটা তাজা উট এনে দুই বস্তা খাদ্য এবং এর মধ্যে কিছু নগদ অর্থ ও বস্ত্র রেখে এগুলো উক্ত উটের পৃষ্ঠে উঠিয়ে দিয়ে মহিলার হাতে এর লাগাম দিয়ে বললেন, তুমি এটি টেনে নিয়ে যাও। এগুলো শেষ হওয়ার পুর্বেই হয়তো আল্লাহ তোমাদের জন্য এর চেয়ে উত্তম কিছু দান করবেন। তখন এক ব্যক্তি বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন, আপনি তাকে খুব বেশী দিলেন। উমর রা. বললেন, তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক। আল্লাহর কসম, আমি দেখেছি এ মহিলার আব্বা ও ভাই দীর্ঘদিন পর্যন্ত একটি দুর্গ অবরোধ করে রেখেছিলেন এবং পরে তা জয়ও করেছিলেন। এরপর ঐ দুর্গ থেকে অর্জিত তাদের অংশ থেকে আমরাও যুদ্ধলব্ধ সম্পদের দাবি করি (এবং কিছু অংশ আমরা নিজেরা গ্রহণ করি এবং কিছু অংশ তাদেরকে দেই)।

হাদীস নং ৩৮৫৩

মুহাম্মদ ইবনে রাফি রহ…………..মুসায়্যিব (ইবনে হুযন) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (যে বৃক্ষের নিচে বায়আত গ্রহণ করা হয়েছিল) আমি সে বৃক্ষটি দেখেছিলাম। কিন্তু এরপর যখন সেখানে আসলাম তখন আর তা চিনতে পারলাম না। মাহমুদ রহ. বলেন, (মুসায়্যিব ইবনে হুযন বলেছেন) পরে তা আমাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে।

হাদীস নং ৩৮৫৪

মাহমূদ রহ…………….তারিক ইবনে আবদুর রহমান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হজ্জ করতে যাওয়ার পথে নামাযরত এক কাওমের নিকট দিয়ে রাস্তা অতিক্রম করার সময় তাদেরকে বললাম, এ জায়গাটি কিরূপ নামাযের স্থান? তাঁরা বললেন, এটা সেই বৃক্ষ যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়আতে রিদওয়ান গ্রহণ করেছিলেন। এরপর আমি সাঈদ ইবনে মুসায়িব্য রহ-এর কাছে গেলাম এবং এ ব্যাপারে তাকে সংবাদ দিলাম। এ ব্যাপারে তাকে সংবাদ দিলাম। তখন সাঈদ (ইবনে মুসায়্যিব) রহ. বললেন, আমার পিতা আমার কাছে বর্ণনা করেছেন, বৃক্ষটির নিচে যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে বায়আত গ্রহণ করেছিলেন তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে একজন। মুসায়্যিব রা. বলেছেন, পরবর্তী বছর আমরা যখন সেখানে গেলাম তখন আমরা আর ঐ বৃক্ষটিকে নির্দিষ্ট করতে পারলাম না। আমাদেরকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। সাঈদ রহ. বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ (এখানে উপস্থিত হয়ে বায়আত গ্রহণ করা সত্ত্বেও) তা চিনতে পারলেন না আর তোমরা তা চিনে ফেলেছ? তাহলে তোমরা কি তাদের চেয়েও অধিক বিজ্ঞ?

হাদীস নং ৩৮৫৫

মূসা রহ………..মুসায়্যিব রা. থেকে বর্ণিত, বৃক্ষের নিচে যারা বায়আত গ্রহণ করেছিলেন তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে একজন। তিনি বলেন, পরবর্তী বছর আমরা আবার সে গাছের স্থানে উপস্থিত হলে আমরা গাছটিকে চিনতে পারলাম না। গাছটি আমাদের কাছে সন্দেহপূর্ণ হয়ে গেল।

হাদীস নং ৩৮৫৬

কাবীসা রহ……….তারিক রহ. থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেছেন, সাঈদ ইবনে মুসায়্যিব রা.-এর কাছে সে গাছটির কথা উল্লেখ করা হলে তিনি হেসে বললেন, আমার পিতা আমাকে জানিয়েছেন যে, তিনি বৃক্ষের নিচে বায়আতে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

হাদীস নং ৩৮৫৭

আদম ইবনে আবু ইয়াস রহ………..আমর ইবনে মুররা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বৃক্ষের নিচে বায়আতকারী সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে আবু আউফাকে বলতে শুনেছি যে, তিনি বর্ণনা করেছেন, কোন কাওম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে সাদকার অর্থ নিয়ে আসলে তিনি তাদের জন্য দোয়া করে বলতেন, ‘হে আল্লাহ আপনি তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন’। এ সময় আমার পিতা তাঁর কাছে সাদকার অর্থ নিয়ে আসলে তিনি বললেন, হে আল্লাহ ! আপনি আবু আউফার বংশধরদের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন।

হাদীস নং ৩৮৫৮

ইসমাঈল রহ………….আব্বাদ ইবনে তামীম রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হাররার ঘটনার দিন যখন লোকজন আবদুল্লাহ ইবনে হানযালা রা.-এর হাতে বায়আত গ্রহণ করছিলেন, তখন ইবনে যায়েদ রা. জিজ্ঞাসা করলেন, ইবনে হানযালা রা. লোকদেরকে কিসের উপর বায়আত গ্রহণ করেছেন? তখন তাকে বলা হল, মৃত্যুর উপর বায়আত গ্রহণ করেছেন। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরে এ ব্যাপারে আমি আর কারো উপর বায়আত গ্রহণ করব না। তিনি হুদায়বিয়ার সন্ধিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

হাদীস নং ৩৮৫৯

ইয়াহইয়া ইবনে ইয়ালা মুহারিবী রহ………….ইয়াস ইবনে সালামা ইবনে আকওয়া রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বৃক্ষের নিচে অনুষ্ঠিত বায়আতে অংশগ্রহণকারী আমার পিতা আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে জুমআর নামায আদায় করে যখন বাড়ি ফিরতাম তখনও প্রাচীরের নিচে ছায়া পড়ত না, যার ছায়ায় বসে আরাম করা যায়।

হাদীস নং ৩৮৬০

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………..ইয়াযীদ ইবনে আবু উবাইদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সালামা ইবনে আকওয়া রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, হুদায়বিয়ার দিন আপনারা কিসের উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে বায়আত করেছিলেন। তিনি বললেন, মৃত্যুর উপর।

হাদীস নং ৩৮৬১

আহমদ ইবনে আশকা রহ……….মুসায়্যিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি বারা ইবনে আযিব রা.-এর সাথে সাক্ষাত করে তাকে বললাম, আপনার জন্য সুসংবাদ, আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহচর্য লাভ করেছেন এবং বৃক্ষের নিচে তাঁর হাতে বায়আতও করেছেন। তখন তিনি বললেন, ভাতিজা তুমি তো জান না, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকালের পর আমরা কি করেছি।

হাদীস নং ৩৮৬২

ইসহাক রহ…………..আবু কিলাবা রহ. থেকে বর্ণিত যে, সাবিত ইবনে দাহহাক রা. তাকে জানিয়েছেন, তিনি গাছের নিচে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে বায়আত করেছেন।

হাদীস নং ৩৮৬৩

আহমদ ইবনে ইসহাক রহ………..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়”। তিনি বলেন, এ আয়াতটিতে ‘সুস্পষ্ট বিজয়’ বলে হুদায়বিয়ার সন্ধিকেই বোঝানো হয়েছে। (আয়াতটি নাযিল হওয়ার পর) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ বললেন, (আপনার জন্য তো) এটা খুশী ও আনন্দের ব্যাপার। কিন্তু আমাদের জন্য কিছু আছে কি? তখন আল্লাহ তায়ালা নাযিল করলেন, “এটা এ জন্য যে, তিনি মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীগণকে দাখিল করবেন জান্নাতে”। শুবা রহ. বলেন, এরপর আমি কুফায় পৌঁছলাম এবং কাতাদা থেকে হাদীসটির সবটুকু বর্ণনা করলাম, এরপর কুফা থেকে ফিরে সে কাতাদাকে সবকিছু জানালে তিনি বললেন, إنا فتحنا لك (এর অর্থ হুদায়বিয়ায় অনুষ্ঠিত বায়আতে রিদওয়ান) আয়াতখানা আনাস থেকে বর্ণিত। আর هنيئا مريئا কথাটি ইকরামা রা. থেকে বর্ণিত।

হাদীস নং ৩৮৬৪

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………..মাজযা ইবনে যাহির আসলামী রহ.-এর পিতা “যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে হুদায়বিয়ার গাছের নিচে বায়আত গ্রহণ করেছিলেন” তাঁর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি ডেকচিতে করে গাধার গোশত পাকাতে ছিলাম, এমন সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ থেকে তাঁর মুনাদী (ঘোষক আবু তালহা) ঘোষণা দিয়ে বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদেরকে গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। (অন্য এক সনদে) মাজযা রহ……… অপর এক ব্যক্তি থেকে অর্থাৎ বৃক্ষের নিচে অনুষ্ঠিত বায়আতে রিদওয়ানে অংশগ্রহণকারী সাহাবী উহবান ইবনে আউস রা. থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তাঁর (উহবান ইবনে আউস রা.) এর হাঁটুতে আঘাত লেগেছিল। তাই তিনি নামায আদায় করার সময় হাঁটুর নিচে বালিশ রাখতেন।

হাদীস নং ৩৮৬৫

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………….গাছের নিচে অনুষ্ঠিত বায়আতে রিদওয়ানে অংশগ্রহণকারী সাবাহী সুওয়াইদ ইবনে নুমান রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের জন্য ছাতু আনা হত। তাঁরা পানিতে গুলিয়ে তা খেয়ে নিতেন। মুআয রহ. শুবা রহ. থেকে ইবনে আবু আদী রহ. বর্ণিত, হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৩৮৬৫

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………….গাছের নিচে অনুষ্ঠিত বায়আতে রিদওয়ানে অংশগ্রহণকারী সাবাহী সুওয়াইদ ইবনে নুমান রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের জন্য ছাতু আনা হত। তাঁরা পানিতে গুলিয়ে তা খেয়ে নিতেন। মুআয রহ. শুবা রহ. থেকে ইবনে আবু আদী রহ. বর্ণিত, হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৩৮৬৬

মুহাম্মদ ইবনে হাতিম ইবনে বাযী রহ………..আবু জামরা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, গাছের নিচে অনুষ্ঠিত বায়আতে রিদওয়ানে অংশগ্রহণকারী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবী আয়েয ইবনে আমর রা.-কে আম জিজ্ঞাসা করলাম, বিতর নামায কি দ্বিতীয়বার আদায় করা যাবে? তিনি বললেন, রাতের প্রথম একবার বিতর আদায় করে থাকলে দ্বিতীয়বার রাতের শেষে আর আদায় করবে না।

হাদীস নং ৩৮৬৭

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ…………আসলাম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোন এক সফরে রাত্রিকালে চলছিলেন। এ সফরে উমর রা.-ও তাঁর সাথে চলছিলেন। এক সময় উমর ইবনে খাত্তাব রা. তাকে কোন এক বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি কোন উত্তর করলেন না। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, তবুও তিনি তাকে কোন জবাব দিলেন না। এরপর আবার তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এবারও তার কোন উত্তর দিলেন না। তখন উমর ইবনে খাত্তাব রা. নিজেকে লক্ষ্য করে মনে মনে বললেন, হে উমর ! তোমাকে তোমায় মা হারিয়ে ফেলুক। তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তিনবার পীড়াপীড়ি করলে। কিন্তু কোন বারই তিনি তোমাকে উত্তর দেননি। উমর রা. বললেন, এরপর আমি আমার উটকে তাড়া দিয়ে মুসলমানদের সামনে চলে যাই। কারণ আমি আশংকা করছিলাম যে, হয়তো আমার সম্পর্কে কুরআন শরীফের কোন আয়াত অবতীর্ণ হতে পারে। এ কথা বলে আমি বেশী দেরি করিনি এমতাবস্থায় শুনতে পেলাম এক ব্যক্তি চীৎকার করে আমাকে ডাকতে শুরু করলেন। উমর রা. বলেন, আমি বললাম, আমার সম্পর্কে হয়তো কুরআন নাযিল হয়েছে। এ মনে করে আমি ভীত হয়ে পড়লাম। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে তাকে সালাম করলাম। তখন তিনি বললেন, আজ রাতে আমার প্রতি এমন একটি সূরা নাযিল হয়েছে যা আমার কাছে সূর্য উদিত পৃথিবী থেকেও অধিক প্রিয়। তারপর তিনি “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি” তিলাওয়াত করলেন।

হাদীস নং ৩৮৬৮

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………..মিসওয়ার ইবনে মাখরামা ও মারওয়ান ইবনে হাকাম রা. থেকে বর্ণিত, তাঁরা একে অন্যের চেয়ে অধিক বর্ণনা করেছেন। তারা উভয়ে বলেন, হুদায়বিয়ার বছর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাজারের অধিক সাহাবী সঙ্গে নিয়ে বের হলেন। তাঁরা যুল হুলায়ফা পৌঁছে কুরবানীর পশুর গলায় কিলাদা বাঁধলেন, ইশআর করলেন। সেখান থেকে উমরার জন্য ইহরাম বাঁধলেন, এবং খুযাআ গোত্রের এক ব্যক্তিকে গোয়েন্দা হিসেবে পাঠালেন। পরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও সেদিকে রওয়ানা হলেন। যেতে যেতে গাদীরুল আশতাত নামক স্থানে পৌঁছার পর প্রেরিত গোয়েন্দা এসে তাকে বলল, কুরাইশরা বিরাট সৈন্যদল নিয়ে আপনার বিরুদ্ধে প্রস্তুত হয়ে আছে। তারা আপনার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বিভিন্ন গোত্র থেকে এসে আশতাত নামক স্থানে জমায়েত হয়েছে। তারা আপনার বিরুদ্ধে লড়াই করবে এবং বায়তুল্লাহর যিয়ারতে বাঁধা দিবে ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। তখন তিনি বললেন, হে লোক সকল, তোমরা আমাকে পরামর্শ দাও এবং বল, যারা আমাদেরকে বায়তুল্লাহর যিয়ারতে বাঁধা দেয়ার ইচ্ছা করছে, আমি কি তাদের পরিবারবর্গ এবং সন্তান-সন্তুতিদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ব? তারা আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার সংকল্প করে থাকলে আল্লাহ আমাদের সাহায্য করবেন, যিনি মুশরিকদের থেকে একজন গোয়েন্দাকে নিরাপদে ফিরিয়ে এনেছেন। আর যদি তারা আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই না করে তাহলে আমরা তাদের পরিবার এবং অর্থ-সম্পদ থেকে বিরত থাকব এবং তাদেরকে তাদের পরিবার ও অর্থ সম্পদ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেব। তখন আবু বকর রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনি তো বায়তুল্লাহর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে এখানে এসেছেন, কাউকে হত্যা করা এবং কারো সাথে লড়াই করার উদ্দেশ্যে তো এখানে আসেননি। তাই বায়তুল্লাহর দিকে অগ্রসর হোন। যে আমাদেরকে তা থেকে বাঁধা দিবে আমরা তার সাথে লড়াই করব। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (ঠিক আছে) চলো আল্লাহর নামে।

হাদীস নং ৩৮৬৯

ইসহাক রহ…………..উরওয়া ইবনে যুবাইর রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি মারওয়ান ইবনে হাকাম এবং মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রা. উভয়ের থেকে হুদায়বিয়ায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উমরা আদায় করার ঘটনা বর্ণনা করতে শুনেছেন। তাদের থেকে উরওয়া রা. আমার নিকট যা বর্ণনা করেছেনত তা হচ্ছে এই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুহায়ল ইবনে আমরকে হুদায়বিয়ার দিন সন্ধিনামায় যা লিখিয়েছিলেন তার মধ্যে সুহায়ল ইবনে আমরের আরোপিত শর্তসমূহের মধ্যে একটি শর্ত এই : আমাদের থেকে যদি কেউ আপনার কাছে চলে আসে তবে সে আপনার দীনে বিশ্বাসী হলেও তাকে আমাদের কাছে ফেরত দিয়ে দিতে হবে এবং তার ও আমাদের মধ্যে আপনি কোন বাঁধা সৃষ্টি করতে পারবে না। এ শর্ত মেনে না নিলে সুহায়ই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সন্ধি করতেই অস্বীকৃতি প্রকাশ করে। এ শর্তটিকে মুমিনগণ অপছন্দ করলেন এবং এতে তারা অত্যন্ত মনক্ষুন্ন হলেন ও এর বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপন করলেন। কিন্তু যখন সুহায়ল এ শর্ত ব্যতীত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে চুক্তি সম্পাদনে অস্বীকৃতি জানাল তখন এ শর্তের উপরই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সন্ধিপত্র লেখালেন। এবং আবু জানদাল ইবনে সুহায়ল রা.-কে এ মুহূর্তেই তার পিতা সুহায়ল ইবনে আমরের কাছে ফিরিয়ে দিলেন। সন্ধির মেয়াদকালে পুরুষদের মধ্যে যারাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে চলে আসতেন, মুসলমান হলেও তিনি তাদেরকে ফিরিয়ে দিতেন। এ সময় কিছুসংখ্যক মুসলিম মহিলা হিজরত করে চলে আসেন। উম্মে কুলছুম বিনতে উকবা আবু মুআইত রা. ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি হিজরতকারীনী একজন যুবতী মহিলা। তিনি হিজরত করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে পৌঁছলে তার পরিবারের লোকেরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে তাকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানালো। এসময় আল্লাহ পাক মুমিন মহিলাদের সম্পর্কে যা নাযিল করার তা নাযিল করলেন। বর্ণনাকারী ইবনে শিহাব রহ………… বলেন, আমাকে উরওয়া ইবনে যুবাইর রা বলেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়েশা রা. বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিন্মেক্ত আয়াতের নির্দেশ অনুযায়ী হিজরতকারিণী মুমিন মহিলাদেরকে পরীক্ষা করতেন। আয়াতটি হল এই : হে নবী ! মুমিন মহিলাগণ যখন আপনার নিকট আসে………(শেষ পর্যন্ত (৬০ : ১২) (অন্য সনদে) ইবনে শিহাব রহ. তাঁর চাচা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমাদের কাছে এ বিবরণও পৌঁছেছে যে, যখন আল্লাহ তায়ালা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মুশরিক স্বামীর তরফ থেকে হিজরতকারী মুসলমান স্ত্রীকে দেওয়া মুহারানা মুশরিক স্বামীকে ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। আর আবু বাসীর রা.-এর ঘটনা সম্বলিত হাদীসও আমাদের নিকট পৌঁছেছে। এরপর তিনি আবু বাসীর রা.-এর ঘটনা সম্বলিত হাদীসটি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করলেন।

হাদীস নং ৩৮৭০

কুতাইবা রহ…………….নাফি রহ. থেকে বর্ণিত যে, ফিতনার যমানায় (হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের মক্কা আক্রমণের সময়) আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. উমরা পালন করার নিয়তে রওয়ানা হয়ে বললেন, যদি আমাকে বায়তুল্লাহর যিয়ারতে বাঁধা প্রদান করা হয় তাহলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে আমরা যা করেছিলাম এ ক্ষেত্রেও আমরা তাই করব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু হুদায়বিয়ার বছর উমরার ইহরাম বেঁধে যাত্রা করেছিলেন তাই তিনিও উমরার ইহরাম বেঁধে যাত্রা করলেন।

হাদীস নং ৩৮৭১

মুসাদ্দাদ রহ………….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, ফিতনার বছর তিনি (উমরার) ইহরাম বেঁধে বললেন, যদি আমার আর তার (যিয়ারতে বায়তুল্লাহর) মধ্যে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয় তাহলে কুরাইশ কাফেররা বায়তুল্লাহর যিয়ারতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা করেছিলেন আমিও ঠিক তাই করব। এবং তিনি তিলাওয়াত করলেন, “তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ”।

হাদীস নং ৩৮৭২

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আসমা ও মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……….নাফি রহ. থেকে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ রা.-এর কোন ছেলে তাকে লক্ষ্য করে বলেন, এ বছর আপনি মক্কা শরীফ যাওয়া স্থগিত রাখলেই উত্তম হত। কারণ আমি আশংকা করছি যে, আপনি বায়তুল্লাহ শরীফ যেতে পারবেনা না। তখন আবদুল্লাহ রা. বললেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে রওয়ানা হয়েছিলাম। পথে কুরাইশ কাফেররা বায়তুল্লাহর যিয়ারতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কুরবানীর পশুগুলো যবেহ করে মাথা কামিয়ে ফেললেন। সাহাবীগণ চুল ছাঁটলেন। (এরপর তিনি বললেন,) আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমার জন্য উমরা আদায় করা আমি ওয়াজিব করে নিয়েছি। যদি আমার ও বায়তুল্লাহর মধ্যে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা না হয় তাহলে আমি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করব। আর যদি আমার ও বায়তুল্লাহর মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয় তাহলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা করেছেন আমি তাই করব। এরপর তিনি কিছুক্ষণ পথ চলে বললেন, আমি হজ্জ এবং উমরার বিষয়টি একই মনে করি। আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি আমার হজ্জকেও উমরার সাথে আমার জন্য ওয়াজিব করে নিয়েছি। এরপর তিনি উভয়ের জন্য একই তাওয়াফ এবং একই সায়ী করলেন এবং হজ্জ ও উমরার ইহরাম খুলে ফেললেন।

হাদীস নং ৩৮৭৩

শুজা ইবনে ওয়ালীদ রহ………..নাফি রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকজন বলে থাকে যে, ইবনে উমর রা. উমর রা.-এর পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। অথচ ব্যাপারটি এমন নয়। তবে (মূল ঘটনা ছিল এই যে) হুদায়বিয়ার দিন উমর রা. (তাঁর পুত্র) আবদুল্লাহ রা.-কে এক আনসারী সাহাবার কাছে রাখা তাঁর ঘোড়াটি আনার জন্য পাঠিয়েছিলেন, যাতে তিনি এর উপর আরোহণ করে লড়াই করতে পারেন। এদিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃক্ষের কাছে (লোকদের) বায়আত গ্রহণ করছিলেন। বিষয়টি উমর রা. জানতেন না। আবদুল্লাহ রা. তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসলেন। এ সময় উমর রা. যুদ্ধের পোশাক পরিধান করছিলেন।তখন আবদুল্লাহ রা. তাকে জানালেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গাছের নিচে বায়আত গ্রহণ করছেন। রাবী বলেন, তখন উমর রা. (আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.) সাথে গেলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে বায়আত গ্রহণ করলেন। এ ঘটনার প্রেক্ষিতেই লোকেরা এ কথা বলাবলি করছে যে, ইবনে উমর রা. উমর রা.-এর পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। (অন্য সনদে) হিশাম ইবনে আম্মার রহ………..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, হুদায়বিয়ার সন্ধির দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ঘিরে দাঁড়ালে উমর রা. তার পুত্র আবদুল্লাহ রা.-কে বললেন, হে আবদুল্লাহ ! দেখতো মানুষের কি হয়েছে? তাঁরা এভাবে ভিড় করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে কেন? ইবনে উমর রা. দেখতে পেলেন যে, তাঁরা বায়আত গ্রহণ করছেন। তাই তিনিও বায়আত গ্রহণ করলেন। এরপর উমর রা.-এর কাছে ফিরে গিয়ে বললেন, তিনিও রওয়ানা করে এসে বায়আত গ্রহণ করলেন।

হাদীস নং ৩৮৭৪

ইবনে নুমাইর রহ…………..আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন উমরাতুল কাযা আদায় করেন, তখন আমরাও তাঁর সাথে ছিলাম। তিনি তাওয়াফ করলেন আমরাও তাঁর সঙ্গে তাওয়াফ করলাম। তিনি নামায আদায় করলে আমরাও তাঁর সঙ্গে নামায আদায় করলাম। তিনি সাফা-মারওয়ার মাঝে সায়ী করলেন। মক্কাবাসীদের কেউ যাতে কোন কিছুর দ্বারা তাকে আঘাত করতে না পারে সেজন্য সর্বদা আমরা তাকে আড়াল করে রাখতাম।

হাদীস নং ৩৮৭৫

হাসান ইবনে ইসহাক রহ…………..আবু হাসীন রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু ওয়াইল রহ. বলেছেন যে, সাহল ইবনে হুনাইফ রা. যখন সিফফীন যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করলেন তখন যুদ্ধের খবরাখবর জানার জন্য আমরা তাঁর কাছে আসলে তিনি বললেন, নিজেদের মতামতকে সন্দেহযুক্ত মনে করবে। আবু জানদাল রা.-এর ঘটনার দিন আমি আমাকে (আল্লাহর পথে) দেখতে পেয়েছিলাম। সেদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশ আমি উপক্ষো করতে পারলে উপেক্ষা করতাম। কিন্তু আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সর্বাধিক জ্ঞাত। আর কোন দুঃসাধ্য কাজের জন্য আমরা যখন তরবারি হাতে নিয়েছি তখন তা আমাদের জন্য অত্যন্ত সহজবোধ্য হয়ে গিয়েছে। এ যুদ্ধের পূর্বে আমরা যত যুদ্ধ করেছি তার সবগুলোকে আমরা নিজেদের জন্য কল্যাণকর মনে করেছি। কিন্তু এ যুদ্ধের অবস্থা এই যে, আমরা একটি সমস্যা সামাল দিতে না দিতেই আরেকটি নতুন সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু কোন সমাধানের পথ আমাদের জানা নেই।

হাদীস নং ৩৮৭৬

সুলাইমান ইবনে হারব রহ…………কাব ইবনে উজরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুদায়বিয়ার সন্ধিকালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আসলেন। সে সময় আমার মাথার চুল থেকে উকুন ঝরে ঝরে আমার মুখমণ্ডলে পড়ছিল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মাথার এ উকুন তোমাকে কি কষ্ট দিচ্ছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, তুমি মাথা মুণ্ডিয়ে ফেল। আর এ জন্য তিন দিন রোযা পালন কর অথবা ছয়জন মিসকিনকে খানা খাওয়াও অথবা একটি পশু কুরবানী কর। আইয়্যূব রহ. বলেন, এ তিনটির থেকে কোনটির কথা আগে বলেছিলেন তা আমি জানি না।

হাদীস নং ৩৮৭৭

মুহাম্মদ ইবনে হিশাম আবু আবদুল্লাহ রহ………..কাব ইবনে উজরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুদায়বিয়ায় অবস্থানকালে মুহরিম অবস্থায় আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। মুশরিকরা আমাদেরকে আটকে রেখেছিল। কাব ইবনে উজরা রা. বলেন, আমার কান পর্যন্ত মাথায় বাবরী চুল ছিল। (মাথার চুল থেকে) উকুনগুলো আমার মুখমণ্ডলের উপর ঝরে ঝরে পড়ছিল। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন, তোমরা মাথার এ উকুনগুলো তোমাকে কি কষ্ট দিচ্ছে ? আমি বললাম, হ্যাঁ। কাব ইবনে উজরা রা. বলেন, এরপর আয়াত নাযিল হল, তোমাদের মধ্যে যদি কেউ পীড়িত হয় কিংবা তার মাথায় ক্লেশ থাকে তবে রোযা কিংবা সাদকা অথবা কুরবানীর দ্বারা তার ফিদইয়া আদায় করবে। (২: ১৯৬)

হাদীস নং ৩৮৭৮

আবদুল আলা ইবনে হাম্মদ রহ………….কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত যে, আনাস রা. তাদেরকে বলেছেন, উকল এবং উরায়না গোত্রের কতিপয় লোক মদীনাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে কালেমা পড়ে ইসলাম গ্রহণ করল। এরপর তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলল, হে আল্লাহর নবী ! আমরা দুগ্ধপানে অভ্যস্ত লোক, আমরা কৃষক নই। তারা মদীনার আবহাওয়া তাদের নিজেদের জন্য অনুকূল বলে মনে করল না। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে একজন রাখালসহ কতগুলো উট দিয়ে মদীনার বাইরে মাঠে চলে যেতে এবং ঐগুলোর দুধ ও পেশাব পান করার নির্দেশ দিলেন। তারা যেতে যেতে হাররা নামক স্থানে পৌঁছে ইসলাম ত্যাগ করে পুনরায় কাফের হয়ে যায়। এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাখাল (ইয়াসার)-কে হত্যা করে উটগুলো হাঁকিয়ে নিয়ে যায়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি তাদের অনুসন্ধানে তাদের পিছনে লোক পাঠিয়ে দেন। (তাদের পাকড়াও করে আনা হলে) তিনি তাদের প্রতি কঠিন দণ্ডাদেশ প্রদান করলেন। সাহাবীগণ লৌহ শলাকা দিয়ে তাদের চক্ষু উৎপাটিত করে দিলেন এবং তাদের হাত কেটে দিলেন। এরপর হাররা এলাকার এক প্রান্তে তাদেরকে ফেলে রাখা হল। অবশেষে তাদের এ অবস্থায়ই তারা মারা গেল। কাতাদা রা. বলেন, এ ঘটনার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায়ই লোকজনকে সাদকা প্রদান করার জন্য উৎসাহিত করতেন এবং মুসলা থেকে বিরত রাখতেন। শুবা, আবান এবং হাম্মাদ রহ. কাতাদা রা. থেকে উরায়না গোত্রের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। ইয়াহইয়া ইবনে আবু কাসীর ও আইয়্যূব রহ. আবু কিলাবা রহ.-এর মাধ্যমে আনাস রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, উকল গোত্রের কতিপয় লোক নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসেছিল।

হাদীস নং ৩৮৭৯

মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রহীম রহ………….উমর ইবনে আবদুল আযীয রহ. থেকে বর্ণিত যে, একদিন তিনি লোকদের কাছে কাসমাত সম্পর্কে পরামর্শ জানতে চেয়ে বললেন, তোমরা এ কাসামা সম্পর্কে কি বল? তাঁরা বললেন, এটা সত্য এবং হক। আপনার পূর্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং খলীফাগণ সকলেই কাসামাতের নির্দেশ দিয়েছেন। রাবী বলেন, এ সময় আবু কিলাবা র. উমর ইবনে আবদুল্লাহ রহ.-এর পেছনে দাঁড়িয়েছিলেন। তখন আম্বাসা ইবনে সাঈদ রহ. বললেন, উরায়না গোত্র সম্পর্কে আনাস রা.-এর হাদীসটি কোথায় এবং কে জান? তখন আবু কিলাবা রহ . বলেন, হাদীসটি আমার জানা আছে। আনাস ইবনে মালিক রা. আমার কাছেই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আবদুল আযীয ইবনে সুহাইব রহ. আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, আনাস ইবনে মালিক রা. উরায়না গোত্রের কিছু লোক কথা উল্লেখ করেছেন। আর আবু কিলাবা রহ. আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে উকল গোত্রের কথা উল্লেখ করে ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৩৮৮০

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ…………সালমা ইবনে আকওয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একদা) আমি ফজরের নামাযের আযানের পূর্বে (মদীনার বাইরে মাঠের দিকে) বের হলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দুগ্ববতী উটগুলোকে যি-কারাদ নামক স্থানে চরানো হতো। সালমা রা. বলেন, তখন আমার সাথে আবদুর রাহমান ইবনে আউফ রা.-এর গোলামের সাক্ষাত হল। সে বলল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দুগ্ধবতী উটগুলো লুণ্ঠিত হয়েছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কে ওগুলো লুণ্ঠন করেছে? সে বলল, গাতফানের লোকজন। তিনি বলেন, তখন আমি ইয়া সাবাহা বলে তিনবার উচ্চস্বরে চীৎকার দিলাম। আর মদীনার উভয় পর্বতের মধ্যবর্তী সকল অধিবাসীর কানে আমার এ চীৎকার শুনিয়ে দিলাম। তারপর দ্রুতপদে সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে তাদের (শত্রুদের) কাছে পৌঁছে গেলাম। এ সময় তারা উটগুলোকে পানি পান করাতে আরম্ভ করেছিল। আমি ছিলাম একজন দক্ষ তীরন্দাজ, তাই তখন তাদের দিকে তীর নিক্ষেপ করছিলাম আর বলছিলাম, আমি হলাম আকওয়া-এর পুত্র, আজকের দিনটি তোদের সবচেয়ে নিকৃষ্ট। এভাবে শেষ পর্যন্ত আমি তাদের কাছ থেকে উটগুলোকে কেড়ে নিলাম এবং সে সঙ্গে তাদের ত্রিশখানা চাদরও কেড়ে নিলাম। তিনি বললেন, এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও অন্যান্য লোক সেখানে পৌঁছলে আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী ! কাফেলাটি পিপাসার্ত ছিল, আমি তাদেরকে পানি পান করতেও দেইনি। আপনি এখনই এদের পিছু ধাওয়া করার জন্য সৈন্য প্রেরণ করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে ইবনুল আকওয়া ! তুমি (তাদেরকে তাড়িয়ে দিতে) সক্ষম হয়েছ, এখন একটু শান্ত হও। সালমা রা. বলেন, এরপর আমরা (মদীনার দিকে) ফিরে আসলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাঁর উটনীর পেছনে বসালেন এবং এ অবস্থায় আমরা মদীনায় প্রবেশ করলাম।

হাদীস নং ৩৮৮১

আবদুল্লাহ ইবনে মাসালামা রহ…………সুওয়াইদ ইবনে নুমান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি (সুওয়াইদ ইবনে নুমান) খায়বারের বছর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে খায়বার অভিযানে বেরিয়েছিলেন। (সুওয়াইদ রা. বলেন) যখন আমরা খায়বারের ঢালু এলাকার ‘সাহবা’ নামক স্থানে পৌঁছলাম, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের নামায আদায় করলেন। তারপর সাথে করে আনা খাবার পরিবেশন করতে হুকুম দিলেন। কিন্তু ছাতু ব্যতীত আর কিছুই দেওয়া সম্ভব হল না। তাই তিনি ছাতুগুলোকে গুলতে বললেন। ছাতুগুলোকে গুলানো হল। এরপর (তা থেকে) তিনিও খেলেন, আমরাও খেলাম। তারপর তিনি মাগরিবের নামাযের জন্য উঠে পড়লেন এবং কুল্লি করলেন। আমরাও কুল্লি করলাম। তারপর তিনি নতুন ওযু না করেই নামায আদায় করলেন।

হাদীস নং ৩৮৮২

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ…………….সালমা ইবনে আকওয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে খায়বার অভিযানে বের হলাম। আমরা রাতের বেলা পথ অতিক্রম করছিলাম, এমন সময় কাফেলার জনৈক ব্যক্তি আমির রা.-কে লক্ষ্য করে বলল, হে আমির ! তোমার সমর সঙ্গীত থেকে আমাদেরকে কিছু শোনাবে না কি? আমির রা. ছিলেন একজন কবি। তখন তিনি সাওয়ারী থেকে নেমে গেলেন এবং সঙ্গীতের তালে গোটা কাফেলা হাঁকিয়ে চললেন। সঙ্গীতে তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আপনার তাওফীক না হলে আমরা হেদায়েত লাভ করতাম না, সাদকা দিতাম না আর নামায আদায় করতাম না। তাই আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন। যতদিন আমরা বেঁচে থাকব ততদিন আপনার জন্য সমর্পিত-প্রাণ হয়ে থাকব। আর আমরা যখন শত্রুর মুকাবিলায় যাব তখন আপনি আমাদেরকে দৃঢ়পধ রাখুন এবং আমাদের উপর ‘সাকিনা’ (শান্তি) বর্ষণ করুন। আমাদেরকে যখন (কুফরের দিকে) সজোরে আওয়াজে ডাকা হয় আমরা তখন তা প্রত্যাখ্যান করি। আর এ কারণে তারা চীৎকার দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে লোক জমা করে। (কবিতাগুলো শুনে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাকে রহম করুন। কাফেলার একজন বলল, হে আল্লাহর নবী ! তার জন্য (শাহাদত) নিশ্চিত হয়ে গেল। (আহ) আমাদেরকে যদি তার কাছ থেকে আরো উপকার হাসিল করার সুযোগ দিতেন। এরপর আমরা এসে খায়বার পৌঁছলাম এবং তাদেরকে অবরোধ করলাম। অবশেষে এক পর্যায়ে আমাদেরকে কঠিন ক্ষুধার জ্বালাও বরণ করতে হল। কিন্তু পরেই মহান আল্লাহ আমাদেরকে তাদের উপর বিজয় দান করলেন। বিজয়ের দিন সন্ধ্যায় মুসলমানগণ (রান্নাবান্নার জন্য) অনেক আগুন জ্বালালেন। (তা দেখে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, এ সব কিসের আগুন? তোমরা কি পাকাচ্ছ? তারা জানালেন, গোশত পাকাচ্ছি। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কিসের গোশত ? লোকজন উত্তর করলেন, গৃহপালিত গাধার গোশত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এগুলি ঢেলে দাও এবং ডেকচিগুলো ভেঙ্গে ফেল। একজন বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! গোশতগুলো ঢেলে দিয়ে যদি পাত্রগুলো ধুয়ে নেই তাতে যথেষ্ট হবে কি? তিনি বললেন, তাও করতে পার। এরপর যখন সবাই যুদ্ধের জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে গেলেন, আর আমির ইবনুল আকওয়া রা.-এর তরবানীখানা ছিল খাটো, তা দিযে তিনি জনৈক ইহূদীর পায়ের গোছায় আঘাত করলে তরবারীর তীক্ষ্ণ ভাগ ঘুরে গিয়ে তাঁর নিজের ঠিক হাঁটুতে লেগে পড়ে। তিনি এ আঘাতের কারণে মারা যান। সালামা ইবনে আকওয়া রা. বলেন, তারপর সব লোক খায়বার থেকে প্রত্যাবর্তন শুরু করলে এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখে আমার হাত ধরে বললেন, কি খবর? আমি বললাম, আমার পিতামাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক। লোকজন ধারণা করছে যে, (স্বীয় হস্তের আঘাতে মারা যাওয়ার কারণে) আমির রা. -এর আমল বাতিল হয়ে গিয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ কথা যে বলেছে সে ভুল বলেছে। র তাঁর দুটি আঙ্গুল একত্রিত করে সেদিকে ইঙ্গিত করে বললেন, বরং আমিরের রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব। অবশ্যই সে একজন কর্মতত্পর ব্যক্তি ও আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদ । তাঁর মত গুণসম্পন্ন আরবী খুব কমই আছে।

হাদীস নং ৩৮৮৩

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ…………আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রিতে খায়বারে পৌঁছলেন। আর তাঁর নিয়ম ছিল, তিনি যদি (কোন অভিযানে) কোন গোত্রের এলাকায় রাত্রিকালে গিয়ে পৌঁছতেন, তাহলে ভোর না হওয়া পর্যন্ত তাদের উপর আক্রমণ পরিচালনা করতেন না (বরং অপেক্ষা করতেন)। ভোর হলে ইহুদীরা তাদের কৃষি সরঞ্জামাদি ও টুকরি নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসল, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যখন (সসৈন্য) দেখতে পেল, তখন তারা (ভীত হয়ে) বলতে লাগল, মুহাম্মদ, আল্লাহর কসম, মুহাম্মদ তার সেনাদলসহ এসে পড়েছে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, খায়বার ধ্বংস হয়েছে। আমরা যখনই কোন গোত্রের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে পৌঁছি তখন সেই সতর্ককৃত গোত্রেরে রাত পোহায় অশুভভাবে।

হাদীস নং ৩৮৮৪

সাদাকা ইবনে ফাযল রহ………..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা প্রত্যুষে খায়বার এলাকায় গিয়ে পৌঁছলাম। তখন সেখানকার অধিবাসীরা কৃষি সরঞ্জামাদি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। তারা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পেল তখন বলতে শুরু করল, মুহাম্মদ, আল্লাহর কসম, মুহাম্মদ তার সেনাদলসহ এসে পড়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এ কথা শুনে) আল্লাহ আকবার ধ্বনি উচ্চরণ করে বললেন, খায়বার ধ্বংস হয়েছে। আমরা যখনই কোন গোত্রের এলাকায় গিয়ে পৌঁছি, তখন সেই সতর্ককৃত গোত্রের রাত পোহায় অশুভভাবে। (আনাস রা. বলেন) এ যুদ্ধে আমরা (গনীমত হিসেবে) গাধার গোশত লাভ করেছিলাম (আর তা পাকানোও হচ্ছিল) এমন সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ থেকে জনৈক ঘোষণাকারী ঘোষণা করলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদিকে গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। কেননা তা নাপাক।

হাদীস নং ৩৮৮৫

আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব রহ………..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে একজন আগন্তুক এসে বলল, (গনীমতের) গাধাগুলো খেয়ে ফেলা হচ্ছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ রইলেন। এরপর লোকটি দ্বিতীয়বার এসে বলল, গাধাগুলো খেয়ে ফেলা হচ্ছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ রইলেন। লোকটি তৃতীয়বার এসে বলল, গৃহপালিত গাধাগুলো খতম করে দেওয়া হচ্ছে। তখন তিনি একজন ঘোষণাকারীকে হুকুম দিলেন, সে লোকজনের সামনে গিয়ে ঘোষনা দিল, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদেরকে গৃহপালিত গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। (ঘোষণা শুনে) ডেকচিগুলো উল্টিয়ে দেয়া হল। অথচ ডেকচিগুলোতে গাধার গোশত তখন টগবগ করে ফুটছিল।

হাদীস নং ৩৮৮৬

সুলাইমান ইবনে হারব রহ………..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের নিকটবর্তী এক স্থানে প্রত্যুষে সামান্য অন্ধকার থাকতেই ফজরের নামায আদায় করলেন। তারপর আল্লাহু আকবার ধ্বনি উচ্চারণ করে বললেন, খায়বার ধ্বংস হয়েছে। আমরা যখন কোন গোত্রের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে পৌঁছি তখনই সতর্ককৃত সেই গোত্রের সকাল হয় অশুভ রূপ নিয়ে। এ সময় খায়বার অধিবাসীরা (ভয়ে) বিভিন্ন অলি-গলিতে গিয়ে আশ্রয় নিতে আরম্ভ করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মধ্যকার যুদ্ধে সক্ষম লোকদেরকে হত্যা করলেন। আর শিশু (ও মহিলা)-দেরকে বন্দী করলেন। বন্দীদের মধ্যে ছিলেন সাফিয়্যা (বিনতে হুইয়াই রা.) প্রথমে তিনি দাহইয়াতুল কালবীর অংশে এবং পরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অংশে বণ্টিত হন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আযাদ করত এই আযাদীকে মোহর ধার্য করেন (এবং বিবাহ করে নেন)। আবদুল আযীয ইবনে সুহাইব রহ. সাবিত রহ.-কে বললেন, হে আবু মুহাম্মদ ! আপনি কি আনাস রা.-কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মোহর কি ধার্য করেছিলেন? তখন সাবিত রা. হাঁ-সূচক ইঙ্গিত করে মাথা নাড়ালেন।

হাদীস নং ৩৮৮৭

আদম রহ…………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (খায়বারের যুদ্ধে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফিয়্যা রা.-কে (প্রথমত) বন্দী করেছিলেন। পরে তিনি তাকে আযাদ করে বিয়ে করেছিলেন। সাবিত রা. আনাস রা.-কে জিজ্ঞাসা করলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মোহর কত ধার্য করেছিলেন? আনাস রা. বললেন, স্বয়ং সাফিয়্যা রা.-কেই মোহর ধার্য করেছিলেন এবং তাকে আযাদ করে দিয়েছিলেন।

হাদীস নং ৩৮৮৮

কুতাইবা রহ………….সাহল ইবনে সাদ সাঈদী রা. থেকে বর্ণিত যে, (খায়বার যুদ্ধ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মুশরিকরা মুখোমুখি হলেন। পরস্পরের মধ্যে তুমুল লড়াই হল। (দিনের শেষে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সেনা ছাউনিতে ফিরে আসলেন আর অন্যরাও (মুশরিকরা) তাদের ছাউনিতে ফিরে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি ছিল, যে তার তরবারি থেকে একাকী কিংবা দলবদ্ধ কোন শত্রু সৈন্যকেই রেহাই দেয়নি। বরং পিছু ধাওয়া করে তাকে তরবারির আঘাতে হত্যা করেছে। (সাহাবাগণের মধ্যে তার আলোচনা উঠল) তাদের কেউ বললেন, অমুক ব্যক্তি আজ যা করেছে আমাদের মধ্যে আর অন্য কেউ এমনটি করতে সক্ষম হয়নি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (ব্যাপারটি) দেখার জন্য আমি তার সঙ্গী হব। সাহল ইবনে সাদ সাঈদী রা. বলেন, পরে তিনি ঐ লোকটির সাথে বের হলেন, লোকটি যখন থেমে যেতো তিনিও তার সাথে থেমে যেতেন, আর যখন লোকটি দ্রুত চলতো তিনিও তার সাথে দ্রুত চলতেন। রাবী বলেন, এক সময়ে লোকটি মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হল এবং (যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে) সে দ্রুত মৃত্যু কামনা করল। তাই সে (এক পর্যায়ে) তার তরবারির গোড়ার অংশ মাটিতে রেখে এর তীক্ষ্ণ ভাগ বুকের বরাবরে রাখল। এরপর সে তরবারির উপর নিজেকে সজোরে চেপে ধরে আত্মহত্যা করল। এ অবস্থা দেখে অনুসরণকারী সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ছুটে এসে বললেন, আমি সাক্ষী দিচ্ছি, নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রাসূল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কি ব্যাপার? তিনি বললেন, একটু পূর্বে আপনি যে, লোকটির ব্যাপারে মন্তব্য করেছিলেন যে, লোকটি জাহান্নামী, আর তার সম্পর্কে এরূপ কথা সকলের কাছে আশ্চর্যকর অনুভূত হয়েছিল। তখন আমি তাদেরকে বলেছিলাম, আমি লোকটির অনুসরণ করে ব্যাপারটি দেখব। কাজেই আমি ব্যাপারটির অনুসন্ধানে বেরিয়ে পড়লাম। এরপর (এক সময়ে দেখলাম) লোকটি মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হল এবং দ্রুত মৃত্যু কামনা করল, তাই সে নিজের তরবারির হাতলের দিক মাটিতে বসিয়ে এর তীক্ষ্ণ ভাগ নিজের বুকের বরাবরে রাখল। এরপর তরবারির উপর নিজেকে সজোড়ে চেপে ধরে আত্মহত্যা করল। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অনেক সময় মানুষ (বাহ্যত) জান্নাতীদের ন্যায় আমল করতে থাকে, যা দেখে অন্যরা তাকে জান্নাতীই মনে করে। অথচ প্রকৃতপক্ষে সে জাহান্নামী। আবার অনেক সময় মানুষ (বাহ্যত) জাহান্নামীদের মত আমল করতে থাকে যা দেখে লোকজনও সেইরূপই মনে করে থাকে, অথচ প্রকৃতপক্ষে সে জান্নাতী।

হাদীস নং ৩৮৮৯

আবুল ইয়ামান রহ…………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা খায়বার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাঁর সঙ্গীদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি যে মুসলমান বলে দাবি করত, তার সম্পর্কে বললেন, লোকটি জাহান্নামী। এরপর যুদ্ধ আরম্ভ হলে লোকটি ভীষণভাবে যুদ্ধ চালিয়ে গেল, এমনকি তার দেহের অনেক স্থান ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেল। এতে কারো কারো (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর ভবিষ্যতবাণীর উপর) সন্দেহের উপক্রম হল। (কিন্তু তারপরেই দেখা গেল) লোকটি আঘাতের যন্ত্রণায় অসহ্য হয়ে তূণীরের ভিতর হাত ঢুকিয়ে দিয়ে সেখান থেকে তীর বের করে আনল। আর তীরটি নিজের বক্ষদেশে ঢুকিয়ে আত্মহত্যা করল। তা দেখে কতিপয় মুসলমান দ্রুত ছুটে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আল্লাহ আপনার কথাকে সত্য প্রমাণিত করেছেন। ঐ লোকটি নিজেই নিজের বক্ষে আঘাত করে আত্মহত্যা করেছে। তখন তিনি বললেন, হে অমুক ! দাঁড়াও এবং ঘোষণা দাও যে, মুমিন ব্যতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। অবশ্য আল্লাহ (কখনো কখনো) ফাসিক ব্যক্তি দ্বারাও দীনের সাহায্য করে থাকেন। মামার রহ. যুহরী রহ. থেকে উপরোক্ত হাদীস বর্ণনায় শুআইব রহ.-এর সাথে খায়বার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলাম…….। (আবদুল্লাহ) ইবনে মুবারক হাদীসটি ইউনুস-যুহরী-সাঈদ (ইবনে মুসাইয়্যাব রহ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। সালিহ রহ. যুহরী রহ. থেকে ইবনে মুবারক রা. এর মতোই বর্ণনা করেছেন। আর যুবায়দী রহ. হাদীসটি যুহরী আবদুর রহমান ইবনে কাব, উবায়দুল্লাহ ইবনে কাব রহ. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে খায়বারে অংশগ্রহণকারী জনৈক সাহাবী থেকে বর্ণনা করেছেন। (যুবায়দী আরো বলেন) যুহরী রহ. এ হাদীসটিতে আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ এবং সাঈদ (ইবনুল মুসাইয়্যাব) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৩৮৯০

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………..আবু মূসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খায়বার যুদ্ধের জন্য বের হলেন কিংবা রাবী বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খায়বার অভিমুখে যাত্রা করলেন, তখন সাথী লোকজন একটি উপত্যকায় পৌঁছে এই বলে উচ্চস্বরে তাকবীর দিতে শুরু করলে—আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা নিজেদের প্রতি সদয় হও। কারণ তোমরা এমন কোন সত্তাকে ডাকছ না যিনি বধির বা অনুপস্থিত। বরং তোমরা তো ডাকছ সেই সত্তাকে যিনি শ্রবণকারী ও অতি নিকটে অবস্থানকারী, যিনি তোমাদের সাথেই রয়েছেন। (আবু মূসা আশআরী রা. বলেন) আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাওয়ারীর পেছনে ছিলাম। তিনি আমাকে লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ বলতে শুনে বললেন, হে আবদুল্লাহ ইবনে কায়েস। আমি বললাম, আমি হাযির ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তিনি বললেন, আমি তোমাকে এমন একটি কথা শিখিয়ে দেব কি যা জান্নাতের ডাণ্ডারসমূহের মধ্যে একটি ভাণ্ডার? আমি বললাম, হ্যাঁ। ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান হোক। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কথাটি হল লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।

হাদীস নং ৩৮৯১

মাক্কী ইবনে ইবরাহীম রহ…………ইয়াযীদ ইবনে আবু উবাইদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সালমা (ইবনে আকওয়া) রা.-এর পায়ের নলায় আঘাতের চিহ্ন দেখে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আবু মুসলিম ! এ আঘাতটি কিসের? তিনি বললেন, এটি খায়বার যুদ্ধে প্রাপ্ত আঘাত। (যুদ্ধক্ষেত্রে আমাকে আঘাতটি মারার পর) লোকজন বলাবলি শুরু করে দিল যে, সালমা মারা যাবে। কিন্তু এরপর আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসলাম। তিনি ক্ষতস্থানটিতে তিনবার ফু দিয়ে দেন। ফলে আজ পর্যন্ত আমি এতে কোন ব্যথ্যা অনুভব করিনি।

হাদীস নং ৩৮৯২

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ………..সাহল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন এক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মুশরিকরা মুখোমুখি হলেন। পরস্পরের মধ্যে তুমুল লড়াই হল। (শেষে) সকলেই নিজ নিজ সেনা ছাউনিতে ফিরে গেল। মুসলিম সৈন্যদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি ছিল, যে মুশরিকের কোন একাকী কিংবা দলবদ্ধ কো শত্রুকেই তার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে দেয়নি বরং সবাইকেই তাড়া করে তার তরবারির আঘাতে হত্যা করেছে। তখন (তার ব্যাপারে) বলা হল; হে আল্লাহর রাসূল ! অমুক ব্যক্তি আজ যে পরিমাণ আমল করেছে অন্য কেউ আজ সে পরিমাণ করতে পারেনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে ব্যক্তি তো জাহান্নামী। তারা বলল, তাহলে আমাদের মধ্যে আর কে জান্নাতবাসী হতে পারবে যদি এ ব্যক্তিই জাহান্নামী হয়? তখন কাফেলার মধ্যে থেকে একজন বলল, অবশ্যই আমি তাকে অনুসরণ করে দেখব, লোকটি যখন দ্রুত চলতো আর ধীরে চলতো সর্বাবস্থায়ই আমি তার সাথে থাকতাম। পরিশেষে, লোকটি আঘাতপ্রাপ্ত হলে আর(আঘাতের যন্ত্রণায়) সে দ্রুত মৃত্যু কামনা করে তার তরবারির বাট মাটিতে স্থাপন করল এবং ধারালো ভাগ নিজের বুকের বরাবর রেখে এর উপর সজোড়ে ঝুঁকে পড়ে আত্মহত্যা করল। তখন সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রাসূল। তখন তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞাসা করলেন, কি ব্যাপার? তিনি তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সব ঘটনা জানালেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কেউ কেউ (দৃশ্যত) জান্নাতবাসীদের মত আমল করতে থাকে আর লোকজন তাকে অনুরূপই মনে করে থাকে অথচ প্রকৃতপক্ষে সে জাহান্নামী। আবার কেউ কেউ জাহান্নামীর মত আমল করে থাকে আর লোকজনও তাকে তাই মনে করে অথচ সে জান্নাতী।

হাদীস নং ৩৮৯২

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ………..সাহল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন এক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মুশরিকরা মুখোমুখি হলেন। পরস্পরের মধ্যে তুমুল লড়াই হল। (শেষে) সকলেই নিজ নিজ সেনা ছাউনিতে ফিরে গেল। মুসলিম সৈন্যদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি ছিল, যে মুশরিকের কোন একাকী কিংবা দলবদ্ধ কো শত্রুকেই তার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে দেয়নি বরং সবাইকেই তাড়া করে তার তরবারির আঘাতে হত্যা করেছে। তখন (তার ব্যাপারে) বলা হল; হে আল্লাহর রাসূল ! অমুক ব্যক্তি আজ যে পরিমাণ আমল করেছে অন্য কেউ আজ সে পরিমাণ করতে পারেনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে ব্যক্তি তো জাহান্নামী। তারা বলল, তাহলে আমাদের মধ্যে আর কে জান্নাতবাসী হতে পারবে যদি এ ব্যক্তিই জাহান্নামী হয়? তখন কাফেলার মধ্যে থেকে একজন বলল, অবশ্যই আমি তাকে অনুসরণ করে দেখব, লোকটি যখন দ্রুত চলতো আর ধীরে চলতো সর্বাবস্থায়ই আমি তার সাথে থাকতাম। পরিশেষে, লোকটি আঘাতপ্রাপ্ত হলে আর(আঘাতের যন্ত্রণায়) সে দ্রুত মৃত্যু কামনা করে তার তরবারির বাট মাটিতে স্থাপন করল এবং ধারালো ভাগ নিজের বুকের বরাবর রেখে এর উপর সজোড়ে ঝুঁকে পড়ে আত্মহত্যা করল। তখন সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রাসূল। তখন তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞাসা করলেন, কি ব্যাপার? তিনি তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সব ঘটনা জানালেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কেউ কেউ (দৃশ্যত) জান্নাতবাসীদের মত আমল করতে থাকে আর লোকজন তাকে অনুরূপই মনে করে থাকে অথচ প্রকৃতপক্ষে সে জাহান্নামী। আবার কেউ কেউ জাহান্নামীর মত আমল করে থাকে আর লোকজনও তাকে তাই মনে করে অথচ সে জান্নাতী।

হাদীস নং ৩৮৯৩

মুহাম্মদ ইবনে সাঈদ খুযাঈ রহ…………….আবু ইমরান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন এক জুমুআর দিনে আনাস রা. লোকজনের দিকে দিকে তাকিয়ে দেখলেন তাদের (মাথায়) তায়ালিসা চাদর। তখন তিনি বললেন, এ মুহূর্তে এদেরকে যেন খায়বারের ইহুদীতের মত দেখাচ্ছে।

হাদীস নং ৩৮৯৪

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ………….সালমা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, চক্ষু রোগে আক্রান্ত থাকার দরুন আলী রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর থেকে খায়বার অভিযানে পেছনে ছিলেন। (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে রওয়ানা হয়ে এসে পড়লে) আলী রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে (যুদ্ধে অংশগ্রহন না করে) আমি পেছনে বসে থাকব ! সুতরাং তিনি গিয়ে তাঁর সাথে মিলিত হলেন। (সালমা রা. বলেন) খায়বার বিজিত হওয়ার পূর্ব রাতে তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আগামী কাল সকালে আমি এমন ব্যক্তির হাতে ঝাণ্ডা অর্পণ করব অথবা তিনি বলেছেন, আগামীকাল সকালে এমন এক ব্যক্তি ঝাণ্ডা গ্রহণ করবে যাকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল ভালবাসেন। আর তাঁর হাতেই খায়বার বিজিত হবে। কাজেই আমরা সবাই তা পাওয়ার আকাঙ্খা করছিলাম। তখন বলা হল, ইনি তো আলী। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ঝাণ্ডা প্রদান করলেন এবং তাঁর হাতেই খায়বার বিজিত হল।

হাদীস নং ৩৮৯৫

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ……….সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, খায়বারের একদা রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, আগামীকাল সকালে আমি এমন এক ব্যক্তির হাতে ঝাণ্ডা অর্পণ করব যার হাতে আল্লাহ খায়বারে বিজয় দান করবেন এবং যাকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল ভালবাসেন আর সেও আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে ভালবাসে। সাহল রা. বলেন, (ঘোষণাটি শুনে) মুসলমানগণ এ জল্পনা-কল্পনা মধ্যেই রাত কাটালো যে, তাদের মধ্যে কাকে অর্পণ করা হবে এ ঝাণ্ডা। সকাল হল, সবাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসলেন, আর প্রত্যেকেই মনে মনে এ ঝাণ্ডা লাভ করার আকাঙ্খা পোষণ করছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আলী ইবনে আবু তালিব রা. কোথায়? সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তিনি তো চক্ষুরোগে আক্রান্ত অবস্থায় আছেন। তিনি বললেন, তাকে লোক পাঠিয়ে সংবাদ দাও। সে মতে তাকে আনা হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উভয় চোখে থুথু লাগিয়ে তাঁর জন্য দোয়া করলেন। ফলে চোখ এরূপ সুস্থ হয়ে গেল যে, যেন কখনো চোখে কোন রোগেই ছিল না। এরপর তিনি তাঁর হাতে ঝাণ্ডা অর্পণ করলেন। তখন আলী রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তারা আমাদের মত (মুসলমান) না হওয়া পর্যন্ত আমি তাদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি বর্তমান অবস্থায়ই তাদের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে উপনীত হও, এরপর তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের প্রতি আহবান করো (যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে) ইসলামী বিধানে ওদের উপর যেসব হক বর্তায় সেসব সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করে দিও। কারণ আল্লাহর কসম! তোমরা দাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ যদি মাত্র একজন মানুষকেও হেদায়েত দেন তাহলে তা তোমার জন্য লোহিত বর্ণের (মূল্যবান) উটের মালিক হওয়া অপেক্ষাও অনেক উত্তম।

হাদীস নং ৩৮৯৬

আবদুল গাফফার ইবনে দাউদ ও আহমদ রহ………..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা খায়বারে এসে পৌঁছলাম। এরপর যখন আল্লাহ তাকে খায়বার দুর্গের বিজয় দান করলেন তখন তাঁর কাছে (ইহুদী দলপতি) হুয়াই ইবনে আখতাবের কন্যা সাফিয়্যা রা.-এর সৌন্দর্যের কথা আলোচনা করা হল। তার স্বামী (কেননা ইবনুর রাবী এ যুদ্ধে) নিহত হয়। সে ছিল নববধু। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নিজের জন্য মনোনীত করেন এবং তাকে সঙ্গে করে (খায়বার থেকে) রওয়ানা হন। এরপর আমরা যখন সাদ্দুস সাহবা নামক স্থানে পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছলাম তখন সাফিয়্যা রা. তাঁর মাসিক ঋতুস্রাব থেকে পবিত্রতা লাভ করলেন। এ সময়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথে বাসঘরে সাক্ষাত করলেন। তারপর একটি ছোট দস্তরখানে (খেজুর ঘি ও ছাতু মেশানো এক প্রকার) হায়স নামক খানা সাজিয়ে আমাকে বললেন, তোমার আশেপাশে যারা আছে সবাইকে ডাক। আর এটিই ছিল সাফিয়্যা রা.-এর সাথে বিয়ের ওয়ালীমা। তারপর আমরা মদীনার দিকে রওয়ানা হলাম, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর পেছনে (সাওয়ারীর পিঠে) সাফিয়্যা রা.-এর জন্য একটি চাদর বিছাতে দেখেছি। এরপর তিনি তাঁর সাওয়ারীর উপর হাঁটুদ্বয় মেলে বসতেন আর সাফিয়্যা রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাঁটুর উপর পা রেখে সাওয়ারীতে আরোহণ করতেন।

হাদীস নং ৩৮৯৭

ইসমাঈল রহ…………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার থেকে প্রত্যাবর্তন করার পথে সাফিয়্যা রা. বিনতে হুয়াঈ -এর কাছে তিনদিন অবস্থান করে তাঁর সাথে বাসর যাপন করেছেন। আর সাফিয়্যা রা. ছিলেন সে সব মহিলাদের একজন যাদের জন্য পর্দার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

হাদীস নং ৩৮৯৮

সাঈদ ইবনে আবু মারয়াম রহ…………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার ও মদীনার মধ্যবর্তী এক জায়গায় তিনদিন অবস্থান করেছিলেন আর এ সময় তিনি সাফিয়্যা রা.-এর সঙ্গে বাসর যাপন করেছেন। আমি মুসলমানগণকে তাঁর ওয়ালীমার জন্য দাওয়াত দিলাম। অবশ্য এ ওয়ালীমাতে গোশত রুটির ব্যবস্থা ছিল না, কেবল এতটুকু ছিল যে, তিনি বিলাল রা.-কে দস্তরখান বিছাতে বললেন। দস্তরখান বিছানো হল। এরপর তাতে কিছু খেজুর, পনির ও ঘি রাখা হল। এ অবস্থা দেখে মুসলিমগণ পরস্পর বলাবলি করতে লাগল যে, তিনি (সাফিয়্যা রা.) কি উম্মাহাতুল মুমিনীনেরই একজন, না ক্রীতদাসীদের একজন? তাঁরা (আরো) বললেন, যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্য পর্দার ব্যবস্থা করেন তাহলে তিনি উম্মাহাতুল মুমিনীনেরই একজন বোঝা যাবে। আর পর্দার ব্যবস্থা না করলে ক্রীতদাসী হিসেবেই বুঝতে হবে। এরপর যখন তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রওয়ানা হলেন তখন তিনি নিজের পেছনে সাফিয়্যা রা.-এর জন্য বসার জায়গা করে দিয়ে পর্দা টানিয়ে দিলেন।

হাদীস নং ৩৮৯৯

আবুল ওয়ালীদ ও আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ…………..আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা খায়বারের দুর্গ অবরোধ করে রাখলাম, এমন সময়ে এক ব্যক্তি একটি থলে নিক্ষেপ করল। তাতে ছিল কিছু চর্বি। আমি সেটি কুড়িয়ে নেয়ার জন্য দ্রুত এগিয়ে আসলাম, হঠাৎ পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখলাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমার দিকে তাকিয়ে আছেন) তাই আমি লজ্জিত হয়ে গেলাম।

হাদীস নং ৩৯০০

উবাইদ ইবনে ইসমাঈল রহ…………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, খায়বার যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রসুন ও গৃহপালিত গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। তিনি রসুর খেতে নিষেধ করেছেন কথাটি কেবল নাফি, থেকে বর্ণিত হয়েছে, আর গৃহপালিত গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন কথাটি সালিম (ইবনে আবদুল্লাহ) রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে।

হাদীস নং ৩৯০১

ইয়াহইয়া ইবনে কাযাআ রহ…………..আলী ইবনে আবু তালিব রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার যুদ্ধের দিন মহিলাদের মুতআ (মেয়াদী বিয়ে) করা থেকে এবং গৃহপালিত গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন।

হাদীস নং ৩৯০২

মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল রহ………….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার যুদ্ধের দিন গৃহপালিত গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন।

হাদীস নং ৩৯০৩

ইসহাক ইবনে নাসর রহ………….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গৃহপালিত গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন।

হাদীস নং ৩৯০৪

সুলাইমান ইবনে হারব রহ…………..জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের যুদ্ধের দিন (গৃহপালিত) গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন এবং ঘোড়ার গোশত খেতে অনুমতি দিয়েছেন।

হাদীস নং ৩৯০৫

সাঈদ ইবনে সুলাইমান রহ…………ইবনে আবী আওফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খায়বার যুদ্ধে আমরা অত্যন্ত ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েছিলাম, আর তখন আমাদের ডেকচিগুলোতে (গাধার গোশত) টগবগ করে ফুটছিল। রাবী বলেন, কোন কোন ডেকচির গোশত পাকানো হয়ে গিয়েছিল এমন সময়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পক্ষে থেকে এক ঘোষণাকারী এসে ঘোষণা দিলেন, তোমরা (গৃহপালিত) গাধার গোশত থেকে সামান্য পরিমাণও খাবে না এবং তা ঢেলে দেবে। ইবনে আবী আওফা রা. বলেন, ঘোষণা শুনে আমরা পরস্পর বলাবলি করলাম যেহেতু গাধাগুলো থেকে খুমুছ আদায় করা হয়নি এ কারণেই তিনি সেগুলো খেতে নিষেধ করেছেন। আর কেউ কেউ মন্তব্য করলেন, না, তিনি চিরদিনের জন্যই গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। কেননা গাধা অপবিত্র জিনিস খেয়ে থাকে।

হাদীস নং ৩৯০৬

হাজ্জাজ ইবনে মিনহাল রহ…………..বারা এবং আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রা. থেকে বর্ণিত যে, (খায়বার যুদ্ধে) তাঁরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলেন। (খায়বারের জন্য তাঁরা) গাধার গোশত পেলেন। তাঁরা তা রান্না করলেন। এমন সময়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ থেকে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করলেন, ডেকচিগুলো সব উল্টিয়ে ফেল।

হাদীস নং ৩৯০৭

ইসহাক রহ………..আদী ইবনে সাবিত রা. থেকে বর্ণিত যে, (তিনি বলেন,) আমি বারা এবং ইবনে আবু আওফা রা.-কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করতে শুনেছি যে, খায়বারের দিন তাঁরা গাধার গোশত পাকানোর জন্য ডেকচি বসিয়েছিলেন, এমন সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ডেকচিগুলো উল্টিয়ে ফেল।

হাদীস নং ৩৯০৮

মুসলিম রহ………….বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে খায়বারে অভিযানে অংশগ্রহণ করেছিলাম………। পরে তিনি উপরোল্লিখিত বর্ণনার অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৩৯০৯

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ…………..বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খায়বার যুদ্ধের সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে কাঁচা ও রান্না করা সকল প্রকারের গৃহপালিত গাধার গোশত ঢেলে দিতে হুকুম করেছেন। এরপরে আর কখনো তা খেতে অনুমতি দেননি।

হাদীস নং ৩৯১০

মুহাম্মদ ইবনে আবুল হুসায়ন রহ…………….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ঠিক জানিনা যে, গৃহপালিত গাধাগুলো মানুষের মাল-সমান আনা-নেয়ার কাজে ব্যবহার হতো, কাজেই এর গোশত খেলে মানুষের বোঝা বহনকারী পশু নিঃশেষ হয়ে যাবে এবং লোকজনের চলাচলে কষ্টকর হয়ে পড়বে, এ জন্য কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা খেতে নিষেধ করেছিলেন, না খায়বারের দিন এর গোশত (আমাদের জন্য) স্থায়ীভাবে হারাম ঘোষণা দিয়েছেন।

হাদীস নং ৩৯১১

হাসান ইবনে ইসহাক রহ………..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খায়বার যুদ্ধের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়ার জন্য দুই অংশ এবং পদাতিক যোদ্ধার জন্য এক অংশ হিসেবে (গনীমতের) সম্পদ বণ্টন করেছেন। রাবী (উবায়দুল্লাহ ইবনে উমর রা.) বলেন, নাফি হাদীসটির ব্যাখ্যা করে বলেছেন, (যুদ্ধে) যার সঙ্গে ঘোড়া থাকে তার জন্য তিন অংশ এবং যার সঙ্গে ঘোড়া থাকে না, তার জন্য এক অংশ।

হাদীস নং ৩৯১২

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………….যুবাইর ইবনে মুতঈম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এবং উসমান ইবনে আফফান রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গিয়ে বললাম, আপনি খায়বারের প্রাপ্ত খুমুস থেকে বনী মুত্তালিবকে অংশ দিয়েছেন, আমাদেরকে দেননি। অথচ আপনার সাথে বংশের দিকে থেকে আমরা এবং বনী মুত্তালিব সম-মর্যাদার অধিকারী। যুবাইর রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনী আবদে শামস ও বনী নাওফিলকে (খায়বার যুদ্ধের খুমুস থেকে) কিছুই দেননি।

হাদীস নং ৩৯১৩

মুহাম্মদ ইবনে আলা রহ…………আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা ইয়ামানে থাকা অবস্থায় আমাদের কাছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হিজরতে খবর পৌঁছলো। তাই আমি ও দু’ভাই আবু বুরদা ও আবু রুহম এবং আমাদের কাওমের আরো মোট বায়ান্ন কি তিপ্পান্ন কিংবা আরো কিছু লোকজনসহ আমরা হিজরতের জন্য বেরিয়ে পড়লাম। আমি ছিলাম আমার অপর দু’ভাইয়ের চেয়ে বয়সে ছোট। আমরা একটি জাহাজে আরোহণ করলাম। জাহাজটি আমাদেরকে আবিসিনিয়া দেশের (বাদশাহ) নাজ্জাশীর নিকট পৌঁছিয়ে দিল। সেখানে আমরা জাফর ইবনে আবু তালিবের সাক্ষাত পেলাম এবং তাঁর সাথেই আমরা রয়ে গেলাম। অবশেষে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খায়বার বিজয়কালে সকলে (হাবশা থেকে) প্রত্যাবর্তন করে এসে তাঁর সঙ্গে একত্রিত হলাম। এ সময় মুসলমানদের কেউ কেউ আমাদেরকে অর্থাৎ জাহাজযোগে আগমনকারীদেরকে বলল, হিজরতে ব্যাপারে আমরা তোমাদের অপেক্ষা অগ্রগামী। আমাদের সাথে আগমনকারী আসমা বিনতে উমায়স একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী হাফসার সাথে সাক্ষাত করতে এসেছিলেন। অবশ্য তিনিও (তাঁর স্বামী জাফরসহ) নাজ্জাশী বাদশাহর দেশের হিজরতকারীদের সাথে হিজরত করেছিলাম। আসমা রা. হাফসার কাছেই ছিলেন। এ সময়ে উমর রা. তাঁর ঘরে প্রবেশ করলেন। উমর রা. আসমাকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, ইনি কে? হাফসা রা. বললেন, তিনি আসমা বিনতে উমাইস রা.। উমর রা. বললেন, হ্যাঁ, তখন উমর রা. বললেন, হিজরতের ব্যাপারে আমরা তোমাদের চেয়ে আগে আছি। সুতরাং তোমাদের তুলনায় আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলেন, তিনি আপনাদের ক্ষুধার্তদের আহারের ব্যবস্থা করতেন, আপনাদের মধ্যকার অবুঝ লোকদেরকে সদুপদেশ দিতেন। আর আমরা ছিলাম এমন এক এলাকায় অথবা তিনি বলেছেন এমন এক দেশে যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বহুদূর এবং সর্বদা শত্রু কবলিত–হাবশা দেশে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যেই ছিল আমাদের এ কুরবানী। আল্লাহর কসম, আমি ততক্ষণ পর্যন্ত কোন খাবার গ্রহণ করব না এবং পানিও পান করব না,
যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি যা বলেছেন তা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এসব কথা বলব। এবং তাকে জিজ্ঞাসা করব। তবে আল্লাহর কসম, আমি মিথ্যা বলব না, ঘুরিয়ে কিংবা এর উপর বাড়িয়েও কিছু বলবো না। এরপর যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন, তখন আসমা রা. বললেন, হে আল্লাহর নবী ! উমর রা. এসব কথা বলেছেন, তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি তাকে কি উত্তর দিয়েছ? আসমা রা. বললেন, আমি তাকে এরূপ এরূপ বলেছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (এ ব্যাপারে) তোমাদের তুলনায় উমর রা. আমার বেশি ঘনিষ্ঠ নয়। কারণ উমর রা. এবং তাঁর সাথীদের তো মাত্র একটিই হিজরত লাভ হয়েছে, আর তোমরা যারা জাহাজে আরোহণকারী ছিলে তাদের দুটি হিজরত অর্জিত হয়েছে। আসমা রা. বলেন, এ ঘটনার পর আমি আবু মূসা রা. এবং জাহাজযোগ আগমনকারী অন্যদেরকে দেখেছি যে, তাঁরা দলে দলে এসে আমার নিকট থেকে এ হাদীস শুনতেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সম্পর্কে যে কথাটি বলেছিলেন এ কথাটি তাদের কাছে এতই প্রিয় ছিল যে, তাদের কাছে দুনিয়ার অন্য কোন জিনিস এত প্রিয় ছিল না। আবু বুরদা রা .বলেন যে, আসমা রা. বলেছেন, আমি আবু মূসা (আশআরী রা.) কে দেখেছি, তিনি বারবারই আমার কাছ থেকে হাদীসটি শুনতে চাইতেন।
আবু বুরদা রা……….. আবু মূসা থেকে আরো বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আশআরী গোত্রের লোকজন রাতের বেলায় এলেও আমি তাদেরকে তাদের কুরআন তিলাওয়াতের আওয়াজ থেকেই চিনতে পারি। এবং রাতের বেলায় তাদেরকে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করতে দেখিনি। হাকীম ছিলেন আশআরীদের একজন। যখন তিনি কোন দল কিংবা (রাবী বলেছেন) কোন শত্রুর মুকাবিলায় আসতেন তখন তিনি তাদেরকে বলতেন, আমার বন্ধুরা তোমাদের বলেছেন, যেন তোমরা তাদের জন্য অপেক্ষা কর।

হাদীস নং ৩৯১৪

ইসহাক ইবনে ইবরাহীম রহ…………আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার জয় করার পরে আমরা তাঁর কাছে গিয়ে পৌঁছলাম। তিনি আমাদের জন্য গনীমতের মাল বণ্টন করেছেন। আমাদেরকে ছাড়া বিজয়ে অংশগ্রহণ করেনি এমন করুর জন্য তিনি (খায়বারের গনীমতের মাল) বণ্টন করেননি।

হাদীস নং ৩৯১৫

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খায়বার যুদ্ধে আমরা বিজয় লাভ করেছি কিন্তু গনীমত হিসেবে আমরা সোনা, রূপা কিছুই লাভ করিনি। আমরা যা পেয়েছিলাম তা ছিল গরু, উট, বিভিন্ন দ্রব্য-সামগ্রী এবং ফলের বাগান। (যুদ্ধ শেষ করে) আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ওয়াদিউ কুরা নামক স্থান পর্যন্ত ফিরে আসলাম। তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সঙ্গে ছিল মিদআম নামক একটি গোলাম। নবী যুবাইর-এর জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এটি হাদিয়া দিয়েছিল। এক সময়ে সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাওদা নামানোর কাজে ব্যস্ত ছিল আর ঐ মুহূর্তে এক অজ্ঞাত স্থান থেকে একটি তীর ছুটে এসে তার গায়ে পড়ল। ফলে গোলামটি মারা গেল। এ অবস্থা দেখে লোকজন বলাবলি শুরু করল যে, কি আনন্দদায়ক তার এ শাহাদত ! তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাই নাকি? সেই মহান সত্তার কসম, তাঁর হাতে আমার প্রাণ, বণ্টনের আগে খায়বার যুদ্ধলব্ধ গনীমত থেকে সে যে চাদরখানা তুলে নিয়েছিল সেটি আগুন হয়ে অবশ্যই তাকে দগ্ধ করবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ কথাটি শোনার পর আরেক ব্যক্তি একটি অথবা দুটি জুতার ফিতা নিয়ে এসে বলল, এ জিনিসটি আমি বণ্টনের আগেই নিয়েছিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ কথাটি অথবা দুটি ফিতাও আগুনের ফিতায় রূপান্তরিত হত।

হাদীস নং ৩৯১৬

সাঈদ ইবনে আবু মারিয়াম রহ…………উমর ইবনে খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মনে রেখো! সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, যদি পরবর্তী বংশধরদের নিঃস্ব ও রিক্ত-হস্ত হয়ে যাওয়ার আশংকা না থাকত তাহলে আমি আমার সমুদয় বিজিত এলাকা সেভাবে বণ্টন করে দিতাম যেভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার বণ্টন করে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি তা তাদের জন্য গচ্ছিত আমানত হিসেবে রেখে যাচ্ছি যেন পরবর্তী বংশধরগণ তা নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নিতে পারে।

হাদীস নং ৩৯১৭

মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ………….উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, পরবর্তী মুসলমানদের উপর আমার আশংকা না থাকলে আমি তাদের বিজিত এলাকাগুলো তাদের মধ্যে সেভাবে বণ্টন করে দিতাম যেভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার বণ্টন করে দিয়েছিলেন।

হাদীস নং ৩৯১৮

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ…………আমবাসা ইবনে সাঈদ রহ. থেকে বর্ণিত যে, আবু হুরায়রা রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে (খায়বার যুদ্ধের গনীমতের) অংশ চাইলেন। তখন বনূ সাঈদ ইবনে আস গোত্রের জনৈক ব্যক্তি বলে উঠল, না, তাকে দিবেন না। আবু হুরায়রা রা. বললেন, এ লোক তো ইবনে কাওকালের হত্যাকারী। কথাটি শুনে সে ব্যক্তি বলল, বাঃ ! দান পাহাড় থেকে নেমে আসা অদ্ভুত বিড়ালের কথায় আশ্চর্য বোধ করছি। যুবায়দী-যুহরী-আমবাসা ইবনে সাঈদ রহ. আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি সাঈদ ইবনে আস রা. সম্পর্কে বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবান (ইবনে সাইদ রা.) এর নেতৃত্বে একটি সৈন্যদল মদীনা থেকে নাজদের দিকে পাঠিয়েছিলেন। আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খায়বা বিজয় করে সেখানে অবস্থানরত ছিলেন তখন আবান রা. ও তাঁর সঙ্গীগণ সেখানে এসে তাঁর (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) সাথে মিলিত হলেন। তাদের ঘোড়াগুলোর লাগাম ছিল খেজুরের ছালের বানানো। (অর্থা তাঁরা ছিলেন বড়ই নিঃস্ব) আবু হুরায়রা রা. বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তাদেরকে কোন অংশ দিবেন না। তখন আবান রা. বললেন, আরে বুনো বিড়াল, দান পাহাড় থেকে নেমে আসছ বরং তুমিই না পাওয়ার যোগ্য। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবান, বসো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে (আবান ও তার সঙ্গীদেরকে) অংশ দিলেন না।

হাদীস নং ৩৯১৯

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………….আমর ইবনে ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার দাদা আমাকে জানিয়েছেন যে, আবান ইবনে সাইদ রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে সালাম দিলেন। তখন আবু হুরায়রা রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! এ লোক তো ইবনে কাওকাল রা.-এর হত্যাকারী। তখন আবান রা. আবু হুরায়রা রা. কে বললেন, আশ্চর্য ! দান পাহাড়ের চূড়া থেকে অকস্মাৎ নেমে আসা বুনো বিড়াল ! সে এমন এক ব্যক্তির সম্পর্কে আমাকে দোষারূপ করছে যাকে আল্লাহ আমার হাত দ্বারা সম্মানিত করেছেন (শাহাদত দান করেছেন) আর তাঁর হাত দ্বারা অপমানিত হওয়া থেকে আমাকে রক্ষা করেছেন।

হাদীস নং ৩৯২০

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………….আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা ফাতিমা রা. আবু বকর রা.-এর নিকট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ত্যাজ্য সম্পত্তি মদীনা ও ফাদকে অবস্থিত ফাই এবং খায়বারের খুমুসের অবশিষ্টাংশ থেকে মিরাসী স্বত্ব চেয়ে পাঠালেন। তখন আবু বকর রা. উত্তরে বললেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে গেছেন, আমাদের (নবীদের) কোন ওয়ারিস হয় না, আমরা যা রেখে যাব তা সাদকা হিসেবে পরিগণিত হবে। অবশ্য মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বংশধরগণ এ সম্পত্তি কেবল ভোগ করতে পারেন। আল্লাহর কসম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাদকা তাঁর জীবদ্দশায় যে অবস্থায় ছিল আমি সে অবস্থা থেকে সামান্যতমও পরিবর্তন করব না। এ কথা বলে আবু বকর রা. ফাতিমা রা.-কে এ সম্পদ থেকে কিছু প্রদান করতে অস্বীকার করলেন। এতে ফাতিমা রা. (মানবোচিত কারণে) আবু বকর রা.-এর উপর নারাজ হয়ে গেলেন এবং তাঁর থেকে নিস্পৃহ হয়ে রইলেন। পরে তাঁর ওফাত পর্যন্ত তিনি (মানসিক সংকোচের দরুন) আবু বকর রা.-এর সাথে কথা বলেননি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাতের পর তিনি ছয় মাস পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। এরপর তিনি ইন্তিকাল করলে তাঁর স্বামী আলী রা. রাতের বেলা তাঁর দাফন কার্য শেষ করে নেন। আবু বকর রা.-কেও এ সংবাদ দেননি। এবং তিনি তার জানাযার নামায আদায় করে নেন। ফাতিমা রা. জীবিত থাকা পর্যন্ত লোকজনের মনে আলী রা. -এর বেশ সম্মান ও প্রভাব ছিল। এরপর যখন ফাতিমা রা. ইন্তিকাল করলেন, তখন আলী রা. লোকজনের চেহারায় অসন্তুষ্টির চিহ্ন দেখতে পেলেন। তাই তিনি আবু বকর রা.-এর সাথে সমঝোতা ও তাঁর হাতে বায়আত গ্রহণের ইচ্ছা করলেন। (ফাতিমা রা.-এর অসুস্থতা ও অন্যান্য) ব্যস্ততার দরুন এ ছয় মাসে তাঁর পক্ষে বায়আত গ্রহণের অবসর হয়নি। তাই তিনি আবু বকর রা.-এর কাছে লোক পাঠিয়ে জানালেন যে, আপনি আমার কাছে আসুন। তবে অন্য কেউ যেন আপনার সঙ্গে না আসে। কারণ আবু বকর রা.-এর সঙ্গে উমর রা. ও উপস্থিত হোক—–তিনি তা পছন্দ করেননি। (বিষয়টি শোনার পর) উমর রা. বললেন, আল্লাহর কসম, আপনি এক একা তাঁর কাছে যাবেন না। আবু বকর রা. বললেন, তাঁরা আমার সাথে খারাপ আচরণ করবে বলে তোমরা আশংকা করছ? আল্লাহর কসম, আমি তাদের কাছে যাব। তারপর আবু বকর রা. তাদের কাছে গেলেন। আলী রা. তাশাহহুদ পাঠ করে বললেন, আমরা আপনার মর্যদা এবং আল্লাহ আপনাকে যা কিছু দান করেছেন সে সম্পর্কে অবগত আছি। আর যে কল্যাণ (খিলাফত) আল্লাহ আপনাকে দান করেছেন সে ব্যাপারেও আমরা আপনার সাথে হিংসা রাখি না। তবে খিলাফতের ব্যাপারে আপনি আমাদের উপর নিজের মতের প্রাধান্য দিয়ে যাচ্ছেন অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটাত্মীয় হিসেবে খিলাফতের কাজে আমাদেরও কিছু অধিকার রয়েছে। এ কথায় আবু বকর রা.-এর চোখ-যুগল থেকে অশ্রু ঝরতে লাগল। এরপর তিনি যখন আলোচনা আরম্ভ করলেন তখন বললেন, সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ, আমার কাছে আমার নিকত্মীয় অপেক্ষাও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আত্মীয় বর্গ বেশি প্রিয়। আর এসম্পদগুলোতে আমার এবং আপনাদের মধ্যে যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে সে ব্যাপারেও আমি কল্যাণকর পথ অনসরণে কোন কসুর করিনি। বরং এ ক্ষেত্রেও আমি কোন কাজ পরিত্যাগ করিনি যা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে করতে দেখেছি। তারপর আলী রা. আবু বকর রা.-কে বললেন, যুহরের পর আপনার হাতে বায়আত গ্রহণের ওয়াদা রইল। যুহরের নামায আদায়ের পর আবু বকর রা. মিম্বরে বসে তাশাহহুদ পাঠ করলেন, তারপর আলী রা.-এর বর্তমান অবস্থা এবং বায়আত গ্রহণে তার দেরি করার কারণ ও তাঁর (আবু বকরের) কাছে পেশকৃত আপত্তিগুলো তিনি বর্ণনা করলেন। এরপর আলী রা. দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাশাহহুদ পাঠ করলেন এবং আবু বকর রা.-এর মর্যাদার কথা উল্লেখ করে বললেন, তিনি বিলম্বজনিত যা কিছু করেছেন তা আবু বকর রা.-এর প্রতি হিংসা কিংবা আল্লাহ প্রদত্ত তাঁর এ সম্মানের অস্বীকার করার মনোবৃত্তি নিয়ে করেননি। (তিনি বলেন,) তবে আমরা ভেবেছিলাম যে, এ ব্যাপারে আমাদের পরামর্শও দেওয়ার অধিকার থাকবে। অথচ তিনি (আবু বকর রা.) আমাদের পরামর্শ ত্যাগ করে স্বাধীন মতের উপর রয়ে গেছেন। তাই আমরা মানসিকভাবে ব্যাথা পেয়েছিলাম। (উভয়ের এ আলোচনা শুনে) মুসলমানগণ আনন্দিত হয়ে বললেন, আপনি ঠিকই করেছেন। এরপর আলী রা. আমর বিল মারূফ (অর্থাৎ বায়আত গ্রহণ)-এর দিকে ফিরে এসেছেন দেখে সব মুসলমান আবার তাঁর প্রতি ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলেন।

হাদীস নং ৩৯২১

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ…………আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খায়বার বিজয় হওয়ার পর আমরা (পরস্পর) বললাম, এখন আমরা পরিতৃপ্ত হয়ে খেজুর খেতে পারব।

হাদীস নং ৩৯২২

হাসান রহ…………..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খায়বার বিজয় লাভ করার পূর্ব পর্যন্ত আমরা তৃপ্তি সহকারে খেতে পাইনি।

হাদীস নং ৩৯২৩

ইসমাঈল রহ………..আবু সাঈদ খুদরী ও আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার অধিবাসীদের জন্য (সাওয়াদ ইবনে গাযিয়া নামক) এক ব্যক্তিকে প্রশাসক নিযুক্ত করলেন। এরপর এক সময়ে তিনি (প্রশাসক) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে উন্নত জাতের কিছু খেজুর নিয়ে উপস্থিত হলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, খায়বারের সব খেজুরই কি এরূপ হয়ে থাকে? প্রশাসক উত্তর করলেন, জী, না, আল্লাহর কসম ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তবে আমরা এরূপ খেজুরের এক সা’ সাধারণ খেজুরের দু’সা-এর বিনিময়ে কিংবা এ প্রকারের খেজুরের দু’সা সাধারণ খেজুরের তিন সার বিনিময়ে সংগ্রহ করে থাকি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এরূপ করো না। দিরহামের বিনিময়ে সব খেজুর বিক্রয় করে ফেলবে। তারপর দিরহাম দিয়ে উত্তম খেজুর খরিদ করবে।
আবদুল আযীয ইবনে মুহাম্মদ রহ………..সাঈদ রহ. থেকে বর্ণনা করেন যে, আবু সাঈদ ও আবু হুরায়রা রা. তাকে বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের বনী আদী গোত্রের এক ব্যক্তিকে খায়বার পাঠিয়েছেন এবং তাকে খায়বার অধিবাসীদের জন্য প্রশাসক নিযুক্ত করে দিয়েছেন। অন্য সনদে আবদুল মাজীদ-আবু সালিহ সাম্মান রহ. আবু হুরায়রা ও আবু সাঈদ রা. থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৩৯২৪

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………….আবদুল্লাহ (ইবনে উমর) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের কৃষিভূমি সেখানকার অধিবাসী ইহুদীদেরকে এ চুক্তিতে প্রদান করেছিলেন যে, তারা ভূমি চাষ করবে এবং ফসল উৎপাদন করবে। বিনিময়ে তার উৎপন্ন ফসরের অর্ধেক তারা লাভ করবে।

হাদীস নং ৩৯২৫

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ…………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, যখন খায়বার বিজয় হযে গেল তখন (ইহুদীদের পক্ষ থেকে) একটি বকরী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হাদিয়া দেওয়া হয়। সেই বকরীটি বিষ মেশানো ছিল।

হাদীস নং ৩৯২৬

মুসাদ্দাদ রহ…………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসামা (ইবনে যায়েদ) রা.-কে একটি বাহিনীর আমীর নিযুক্ত করেছিলেন। লোকজন তাঁর আমীর নিযুক্ত হওয়ার উপর সমালোচনা শুরু করলে তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আজ তোমরা তার আমীর নিযুক্ত হওয়ার ব্যাপারে সমালোচনা শুরু করলে, অবশ্য ইতিপূর্বে তোমরা তার পিতার আমীর নিযুক্ত হওয়ার ব্যাপারেও সমালোচনা করেছিলে। আল্লাহর কসম, তিনি (উসামার পিতা যায়েদ ইবনে হারিসা) ছিলেন আমীর হওয়ার জন্য যথাযোগ্য এবং আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। তার মৃত্যুর পর এ (উসামা ইবনে যায়েদ) আমার নিকট বেশি প্রিয় ব্যক্তি।

হাদীস নং ৩৯২৭

উবায়দুল্লাহ ইবনে মূসা রহ………….বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিলকাদা মাসে উমরা আদায করার ইচ্ছায় মক্কা অভিমুখে রওয়ানা করেন। মক্কাবাসীরা তাকে নগরীতে প্রবেশের অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানালো। অবশেষে তিনি তাদের সঙ্গে এ কথার উপর সন্ধি-চুক্তি সম্পাদন করেন যে, (আগামী বছর উমরা পালন করতে এসে) তিনি মাত্র তিনদিন মক্কায় অবস্থান করবেন। মুসলিমগণ সন্ধিপত্র লেখার সময় এভাবে লিখেছিলেন, আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ আমাদের সঙ্গে এ চুক্তি সম্পাদন করেছেন। ফলে তারা (কথাটির উপর আপত্তি উঠিয়ে) বলল, আমরা তো এ কথা (মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল) স্বীকার করিনি। যদি আমরা আপনাকে আল্লাহর রাসূল বলে স্বীকারই করতাম তাহলে মক্কা প্রবেশে মোটেই বাধা দিতাম না। বরং আপনি তো মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ। তখন তিনি বললেন, আমি আল্লারহ রাসূল এবং মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ (উভয়টিই)। তারপর তিনি আলী রা.-কে বললেন, রাসূলুল্লাহ শব্দটি মুছে ফেল। আলী রা. উত্তর করলেন, আল্লাহর কসম, আমি কখনো এ কথা মুছতে পারব না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন নিজেই চুক্তিপত্রটি হাতে নিলেন। তিনি (আক্ষরিকভাবে) লিখতে জানতেন না, তবুও তিনি (তার এক মুজিযা হিসেবে) লিখে দিলেন যে, মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ এ চুক্তিপত্র সম্পাদন করে দিয়েছে যে, তিনি কোষবদ্ধ তরবারি ব্যতীত অন্য কোন অস্ত্র নিয়ে মক্কায় প্রবেশ করবেন না। মক্কার অধিবাসীদের কেউ তাঁর সাথে যেতে চাইলেও তিনি তাকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন না। তাঁর সাথীদের কেউ মক্কায় (পুনরায়) অবস্থান করতে চাইলে তিনি তাকে বাধা দেবেন না। (পরবর্তী বছর সন্ধি অনুসারে) যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় প্রবেশ করলেন এবং নির্দিষ্ট মেয়াদ অতিক্রম হল তখন মুশরিকরা আলীর কাছে এসে বলল, আপনার সাথী (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলুন যে, নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। তাই তিনি যেন আমাদের নিকট থেকে চলে যান। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে মতে প্রত্যাবর্তন করলেন। এ সময়ে হাযমা রা.-এর কন্যা চাচা চাচা বলে ডাকতে ডাকতে তার পেছনে ছুটলো। আলী রা. তার হাত ধরে তুলে নিয়ে ফাতিমা রা.-কে দিয়ে বললেন, তোমার চাচার কন্যাকে নাও। ফাতিমা রা. বাচ্চাটিকে তুলে নিলেন। (কাফেলা মদীনা পৌঁছার পর) বাচ্চাটি নিয়ে আলী, যায়েদ (ইবনে হারিসা) ও জাফর (ইবনে আবু তালিব রা.)-এর মধ্যে ঝগড়া আরম্ভ হয়ে গেল। আলী রা. বললেন, আমি তাকে (প্রথমে) কোলে নিয়েছি এবং সে আমার চাচার কন্যা (তাই সে আমার কাছে থাকবে) জাফর দাবি করলেন, সে আমার চাচার কন্যা এবং তার খালা হল আমার স্ত্রী। যায়েদ (ইবনে হারিসা রা.) বললেন, সে ভাইয়ের কন্যা (অর্থাৎ সবাই নিজ নিজ সম্পর্কের ভিত্তিতে নিজের কাছে রাখার অধিকার পেশ করল)। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেয়েটিকে তার খালার জন্য (অর্থাৎ জাফরের পক্ষে) ফায়সালা দিয়ে বললেন, (আদর ও লালন-পালনের ব্যাপারে) খালা মায়ের সমপর্যায়ের। এরপর তিনি আলীর দিকে লক্ষ্য করে বললেন, তুমি আমার এবং আমি তোমার। জাফর রা.-কে বললেন, তুমি দৈহিক গঠন এবং চারিত্রিক গুণে আমার মতো। আর যায়েদ রা.-কে বললেন, তুমি আমাদের ঈমানী ভাই ও আযাদকৃত গোলাম। আলী রা. (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) বললেন, আপনি হামযার মেয়েটিকে বিয়ে করছেন না কেন? তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উত্তরে বললেন, সে আমার দুধ-ভাই (হামযা)-এর মেয়ে।

হাদীস নং ৩৯২৮

মুহাম্মদ ইবনে রাফি ও মুহাম্মদ ইবনে হুসাইন ইবনে ইবরাহীম রহ…………..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, উমরা পালনের উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মক্কা অভিমুখে) রওয়ানা করলে কুরাইশী কাফেররা তাঁর এবং বায়তুল্লাহর মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ালো। কাজেই তিনি হুদায়বিয়া নামক স্থানেই কুরবানীর জন্তু যবেহ করলেন এবং মাথা মুণ্ডন করলেন (হালাল হয়ে গেলেন) আর তিনি তাদের সঙ্গে এই মর্মে চুক্তি সম্পাদন করলেন যে, আগামী বছর তিনি উমরা পালনের জন্য আসবেন। কিন্তু তরবারি ব্যতীত অন্য কোন অস্ত্র সাথে আনবেন না এবং মক্কাবাসীরা যে ক’দিন ইচ্ছা করবে এর বেশি দিন তিনি সেখানে অবস্থান করবেন না। সে মতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (পরবর্তী বছর উমরা পালন করতে আসলে) সম্পাদিত চুক্তিনামা অনুসারে তিনি মক্কায় প্রবেশ করলেন। তারপর তিনদিন অবস্থান করলে মক্কাবাসীরা তাকে চলে যেতে বলল। তাই তিনি (মক্কা থেকে) চলে গেলেন।

হাদীস নং ৩৯২৯

উসমান ইবনে আবু শায়বা রহ………….মুজাহিদ রহ. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি এবং উরওয়া ইবনে যুবাইর রা. মসজিদে নববীতে প্রবেশ করেই দেখলাম আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. আয়েশা রা.-এর হুজরার কিনারেই বসে আছে। উরওয়া রা. তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক’টি উমরা আদায় করেছিলেন? উত্তরে তিনি বললেন, চারটি। এ সময় আমরা (ঘরের ভিতরে) আয়েশা রা.-এর মিসওয়াক করার আওয়াজ শুনতে পেলাম। উরওয়া রা. বললেন, হে উম্মুল মুমিনীন ! আবু আবদুর রহমান (ইবনে উমর রা.) কি বলছেন, তা আপনি শুনেছেন কি যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারটি উমরা করেছেন? আয়েশা রা. উত্তর দিলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ক’টি উমরা আদায় করেছিলেন তার সবটিতেই তিনি (ইবনে উমর) তাঁর সাথে ছিলেন। (তাই ইবনে উমর রা. ঠিকই বলবেন) তবে তিনি রজব মাসে কখনো উমরা আদায় করেননি।

হাদীস নং ৩৯৩০

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ…………..ইবনে আবু আওফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন উমরাতুল কাযা আদায় করছিলেন তখন আমরা তাকে মুশরিক ও তাদের যুবকদের থেকে (তাঁর চতুর্দিকে ঘিরে দাঁড়িয়ে) আড়াল করে রেখেছিলাম যেন তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কোন প্রকার কষ্ট বা আঘাত দিতে না পারে।

হাদীস নং ৩৯৩১

সুলাইমান ইবনে হারব রহ…………….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীগণ (উমরাতুল কাযা আদায়ের উদ্দেশ্যে মক্কা) আগমন করলে মুশরিকরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল যে, তোমাদের সামনে এমন একদল লোক আসছে, ইয়াসরিবের জ্বর যাদেরকে দুর্বল করে দিয়েছে। এজন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে প্রথম তিন সাওত বা চক্করে দেহ হেলিয়ে দুলিয়ে চলার জন্য এবং দু’রুকনের মধ্যবর্তী স্থানে স্বাভাবিকভাবে চলতে নির্দেশ দেন। অবশ্য তিনি তাদেরকে সবকটি চক্করেই হেলে দুলে চলার আদেশ করতেন। কিন্তু তাদের প্রতি তাঁর অনুভূতিই কেবল তাকে এ হুকুম দেওয়া থেকে বিরত রেখেছিল। অন্য এক সনদে ইবনে সালমা রহ. আইয়্যূব ও সাঈদ ইবনে যুবাইর রা.-এর মাধ্যমে ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেছে যে, সন্ধি সম্পাদনের মাধ্যমে নিরাপত্তা লাভের পরবর্তী বছর যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করলেন তখন মুশরিকরা যেন সাহাবীদের দৈহিক-বল অবলোকন করতে পারে এজন্য তিনি তাদের বলেছেন, তোমরা হেলেদুলে তাওয়াফ করো। এ সময় মুশরিকরা কুআয়কিআন পাহাড়ের দিক থেকে মুসলমানদেরকে দেখছিল।

হাদীস নং ৩৯৩২

মুহাম্মদ রহ…………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বায়তুল্লাহ এবং সাফা ও মারওয়া-এর মধ্যখানে এ জন্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সায়ী করেছিলেন, যেন মুশরিকদেরকে তাঁর শৌর্য-বীর্য অবলোকন করাতে পারেন।

হাদীস নং ৩৯৩৩

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় মায়মূনা রা.-কে বিয়ে করেছেন এবং (ইহরাম খোলার পরে) হালাল অবস্থায় তিনি তাঁর সাথে বাসর যাপন করেন। মায়মূনা রা. (মক্কায় নিকটেই) সারিফ নামক স্থানে ইন্তিকাল করেছেন। (ইমাম বুখারী রহ. বলেন) অপর একটি সনদে ইবনে ইসহাক ইবনে আবু নাজীহ ও আবান ইবনে সালিহ-আতা ও মুহাজিদ রহ. ইবনে আব্বাস রা. থেকে অতিরিক্ত এতটুকু বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমরাতুল কাযা আদায়ের সফরে মায়মূনা রা.-কে বিয়ে করেছিলেন।

হাদীস নং ৩৯৩৪

আহমদ রহ…………আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, সেদিন (মূতার যুদ্ধের দিন) তিনি শাহাদত প্রাপ্ত জাফর ইবনে আবু তালিব রা.-এর লাশের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। (তিনি বলেন) আমি জাফর রা.-এর দেহে তখন বর্শা ও তরবারির পঞ্চাশটি আঘাতের চিহ্ন গুণেছি। আর তন্মধ্যে কোনটাই তাঁর পশ্চাৎ দিকে ছিল না।

হাদীস নং ৩৯৩৫

আহমদ ইবনে আবু বকর রহ……………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, মূতার যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়েদ ইবনে হারিসা রা.-কে সেনাপতি নিযুক্ত করে বলেছিলেন, যদি যায়েদ রা. শহীদ হয়ে যায় তাহলে জাফর ইবনে আবু তালিব রা. সেনাপতি হবে। যদি জাফর রা.-ও শহীদ হয়ে যায় তাহলে আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রা. সেনাপতি হবে। আবদুল্লাহ (ইবনে উমর রা.) বলেন, ঐ যুদ্ধে তাদের সাথে আমিও ছিলাম। যুদ্ধ শেষে আমরা জাফর ইবনে আবু তালিব রা.-কে তালাশ করলে তাকে শহীদগণের মধ্যে পেলাম।তখন আমরা তার দেহে তরবারি ও বর্শার নব্বইটিরও অধিক আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়েছি।

হাদীস নং ৩৯৩৬

আহমদ ইবনে ওয়াকিদ রহ………..আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট (মূতার) যুদ্ধক্ষেত্র থেকে খবর এসে পৌঁছার পূর্বেই তিনি উপস্থিত মুসলমানদেরকে যায়েদ, জাফর ও ইবনে রাওয়াহা রা.-এর শাহাদতের কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন,যায়েদ রা. পতাকা হাতে অগ্রসর হলে তাকে শহীদ করা হয়। তখন জাফর রা. পতাকা হাতে অগ্রসর হল, তাকেও শহীদ করে ফেলা হয়। তারপর ইবনে রাওয়াহা রা. পতাকা হাতে নিল। এবার তাকেও শহীদ করে দেয়া হল। এ সময়ে তাঁর দু’চোখ থেকে অশ্রুধারা প্রবাহিত হচ্ছিল।(তারপর তিনি বললেন) অবশেষে সাইফুল্লাহদের মধ্যে এক সাইফুল্লাহ (আল্লাহর তরবারি) হাতে পতাকা ধারণ করেছে। ফলত আল্লাহ তাদের উপর (আমাদের) বিজয় দান করেছেন।

হাদীস নং ৩৯৩৭

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ…………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যায়েদ ইবনে হারিসা রা. জাফর ইবনে আবু তালিব ও আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রা.-এর শাহাদতের সংবাদ এসে পৌঁছলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে পড়লেন। তাঁর চেহারায় শোকের চিহ্ন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। আয়েশা রা. বলেন, আমি তখন দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে তাকিয়ে দেখলাম, জনৈক ব্যক্তি তাঁর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! জাফর রা.-এর পরিবারের মেয়েরা কান্নাকাটি করছে। তখন তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মেয়েদেরকে বারণ করার জন্য লোকটিকে হুকুম করলেন। তারপর আবার এসে বলল, আমি তাদেরকে নিষেধ করেছি। কিন্তু তারা তা শোনেনি। আয়েশা রা. বলেন, এবারও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পুনঃ হুকুম করলেন। লোকটি সেখানে গেল কিন্তু পুনরায় এসে বলল, আল্লাহর কসম, তারা আমার কথা মানছে না। আয়েশা রা. বলেন, (তারপর) সম্ভবত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছিলেন, তাহলে তাদের মুখের উপর মাটি ছুঁড়ে মার। আয়েশা রা. বলেন, আমি লোকটিকে বললাম, আল্লাহ তোমার নাককে অপমানিত করুক। আল্লাহর শপথ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে যে কাজ করতে বলেছেন তাতে তুমি সক্ষম নও অথচ তুমি তাকে বিরক্ত করা পরিত্যাগ করছ না।

হাদীস নং ৩৯৩৮

মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর রহ………….আমির রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনে উমর রা.-এর নিয়ম ছিল যে, যখনই তিনি জাফর ইবনে আবু তালিব রা.-এর পুত্র (আবদুল্লাহ)-কে সালাম দিতেন তখনই তিনি বলতেন, তোমার প্রতি সালাম, হে দু’ডানাওয়ালা পুত্র।

হাদীস নং ৩৯৩৯

আবু নুআইম রহ………….কায়েস ইবনে আবু হাযিম রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি খালিদ ইবনে ওয়ালিদ রা. থেকে শুনেছি, তিনি বলেছেন, মূতার যুদ্ধে আমার হাতে নয়টি তরবারি ভেঙ্গে গিয়েছিল। পরিশেষে আমার হাতে একটি প্রশস্ত ইয়ামানী তরবারি ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট ছিল না।

হাদীস নং ৩৯৪০

আবু নুআইম রহ………….কায়েস ইবনে আবু হাযিম রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি খালিদ ইবনে ওয়ালিদ রা. থেকে শুনেছি, তিনি বলেছেন, মূতার যুদ্ধে আমার হাতে নয়টি তরবারি ভেঙ্গে গিয়েছিল। পরিশেষে আমার হাতে একটি প্রশস্ত ইয়ামানী তরবারি ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট ছিল না।

হাদীস নং ৩৯৪১

ইমরান ইবনে মায়সারা রহ………..নুমান ইবনে বাশীর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সময় আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রা. (কোন কারণে) সংজ্ঞাহীন হয়ে গিয়েছিলেন, তখন তাঁর বোন আমরা (বিনতে রাওয়াহা রা.) হায়, হায় পাহাড়ের মত্যে আমার ভাই, হায়রে অমুকের মত, তমুকের মত ইত্যাদি গুণ উল্লেখ করে কান্নাকাটি শুরু করল। এরপর সংজ্ঞা ফিরে পেয়ে তিনি তাঁর বোনকে বললেন, তুমি যেসব কথা বলে কান্নাকাটি করেছিলে সেসব কথা সম্পর্কে আমাকে (বিদ্রূপাত্মকভাবে) জিজ্ঞাসা করে বলা হয়েছে, তুমি কি সত্যই এরূপ?

হাদীস নং ৩৯৪২

কুতাইবা রহ………….নুমান ইবনে বাশীর রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সময় আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রা. বেহুঁশ হয়ে পড়লেন………….যেভাবে উপরোক্ত হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে। (তারপর তিনি বলেছেন) এরপর তিনি (আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রা.) যখন (মূতার লড়াইয়ে) শহীদ হন তখন তাঁর বোন মোটেই কান্নাকাটি করেনি।

হাদীস নং ৩৯৪৩

আমর ইবনে মুহাম্মদ রহ……… উসামা ইবনে যায়েদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে হুরকা গোত্রের বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন। আমরা প্রত্যুষে গোত্রটির উপর আক্রমণ করি এবং তাদেরকে পরাজিত করে দেই। এ সময়ে আনসারদের এক ব্যক্তি ও আমি তাদের (হুরকাদের) একজনের পিছু ধাওয়া করলাম। আমরা যখন তাকে ঘিরে ফেললাম তখন সে বলে উঠলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এ বাক্য শুনে আনসারী তার অস্ত্র সামলে নিলেন। কিন্তু আমি তাকে আমার বর্শা দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে ফেললেন। আমরা মদীনা প্রত্যাবর্তন করার পর এ সংবাদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কান পর্যন্ত পৌঁছলে তিনি বললেন, হে উসামা। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার পরেও তুমি তাকে হত্যা করেছ? আমি বললাম, সে তো আত্মরক্ষার জন্য কালেমা পড়েছিল। এরপরেও তিনি এ কথাটি হে উসামা ! লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার পরেও তুমি তাকে হত্যা করেছ, বারবার বলতে থাকলেন। এতে আমার মন চাচ্ছিল যে, হায় যদি সেই দিনটির পূর্বে আমি ইসলামই গ্রহণ করতাম ! (তাহলে কতই ভাল হত, আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এহেন অনুতাপের কারণ হতে হত না।)

হাদীস নং ৩৯৪৪

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………..সালমা ইবনে আকওয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সাতটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। আর তিনি যেসব অভিযান (বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দিকে) পাঠিয়েছিলেন তন্মধ্যে নয়টি অভিযানে আমি অংশ নিয়েছি। এসব অভিযানে একবার আবু বকর রা. আমাদের সেনাপতি থাকতেন, আরেকবার উসামা রা. আমাদের সেনাপতি থাকতেন। উমর ইবনে হাফস ইবনে গিয়াস রহ. অপর একটি হাদীসে তাঁর পিতা ইয়াযীদ ইবনে আবী উবায়দা রা.-এর মাধ্যমে সালমা ইবনুল আকওয়া রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সাতটি যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। আর তিনি (বিভিন্ন দিকে) যেসব সেনাদল পাঠিয়েছিলেন এর নয়টি সেনাদলে অংশ নিয়েছি। এ সব সেনাদলে একবার আবু বকর রা. আমাদের সেনাপতি থাকতেন। আরেকবার উসামা রা. আমাদের সেনাপতি থাকতেন।

হাদীস নং ৩৯৪৫

আবু আসিম দাহহাক ইবনে মাখলাদ রহ………..সালমা ইবনে আকওয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সাতটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি এবং যায়েদ ইবনে হারিসা রা.-এর সাথেও যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে (যায়েকে) আমাদের সেনাপতি নিযুক্ত করেছিলেন।

হাদীস নং ৩৯৪৬

মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..সালমা ইবনে আকওয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সাতটি যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। এতে তিনি খায়বার, হুদায়বিয়া, হুনায়ন ও যিকারাদের যুদ্ধের কথা উল্লেখ করেছেন। রাবী ইয়াযীদ রহ. বলেন, অবশিষ্ট যুদ্ধগুলোর নাম আমি ভুলে গিয়েছি।

হাদীস নং ৩৯৪৭

কুতাইবা রহ……………..আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে এবং যুবাইর ও মিকদাদ রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলে পাঠালেন যে, তোমরা রওয়ানা হয়ে রাওযায়ে খাখ নামক স্থানে চলে যাও, সেখানে সাওয়ারীর পিঠে হাওদার আরোহিণী জনৈক মহিলার কাছে একখানা পত্র আছে। তোমরা ঐ পত্রটি সেই মহিলা থেকে কেড়ে আনবে। আলী রা. বলেন, আমরা রওয়ানা হলাম। আর আমাদের অশ্বগুলো আমাদেরকে নিয়ে খুব দ্রুত ছুটে চলল। অবশেষে আমরা রাওযায়ে খাখ পর্যন্ত পৌঁছে গেলাম। গিয়েই আমরা হাওদায় আরোহিণী মহিলাটিকে দেখতে পেলাম। আমরা (তাকে) বললাম, পত্রটি বের করে। সে উত্তর দিল: আমার কাছে কোন পত্র নেই। আমরা বললাম অবশ্যই তোমাকে পত্রটি বের করতে হবে, অন্যথায় আমরা তোমার কাপড়-চোপড় খুলে তালাশ করব। রাবী বলেন, মহিলাটি তখন তার চুলের খোপা থেকে পত্রটি বের করল। আমরা পত্রটি নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আসলাম। দেখা গেল এটি হাতিব ইবনে আবু বালতাআ রা.-এর পক্ষ থেকে মক্কার কতিপয় মুশরিকের কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি এতে মক্কার কাফেরদের বিরুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গৃহীত কিছু গোপন তৎপরতার সংবাদ ফাঁস করে দিয়েছেন । তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে হাতিব! এ কি কাজ করেছ? তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! (অনুগ্রহ পূর্বক) আমার ব্যাপারে তাড়াতাড়ি কোন সিন্ধান্ত গ্রহণ করবেন না। আমি কুরাইশদের স্বগোত্রীয় কেউ ছিলাম না বরং তাদের বন্ধু অর্থাৎ তাদের মিত্র গোত্রের একজন ছিলাম। আপনার সঙ্গে যেসব মুহাজির আছেন কুরাইশ গোত্রে তাদের অনেক আত্মীয়-স্বজন রয়েছেন। যারা এদের পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদের হিফাজত করছে। আর কুরাইশ গোত্রে যখন আমার বংশগত কোন সম্পর্ক নেই তাই আমি ভাবলাম যদি আমি তাদের কোন উপকার করে দেই তাহরে তারা আমার পরিবার পরিজনের হিফাজতে এগিয়ে আসবে। কখনো আমি আমার দীন পরিত্যাগ করা কিংবা ইসলাম গ্রহণের পর কুফরকে গ্রহণ করার জন্য এ কাজ করিনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, সে (হাতিব) তোমাদের কাছে সত্য কথাই বলেছে। উমর রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমাকে অনুমতি দিন, আমি এ মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দেবো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দেখ, সে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। তুমি তো জান না, হয়তো আল্লাহ তায়ালা বদরে অংশগ্রহণকারীরদের উপর সন্তুষ্ট হয়ে বলে দিয়েছেন, তোমরা যা খুশী করতে থাক, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি। তখন আল্লাহ তায়ালা এ সূরা অবতীর্ণ করেন : হে মুমিনীগণ ! আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করছ অথচ তারা তোমাদের কাছে যে সত্য এসেছে তা প্রত্যাখ্যান করেছে। রাসূলকে এবং তোমাদেরকে (স্বদেশ থেকে) বহিষ্কার করেছে এ কারণে যে তোমরা তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহকে বিশ্বাস কর। যদি তোমরা আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমার পথে জিহাদের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে থাক তবে কেন তোমরা ওদের সাথে গোপনে বন্ধুত্ব করছ? তোমরা যা গোপন কর এবং যা প্রকাশ কর তা আমি সম্যক অবগত আছি। আর তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ কাজ করে সে তো বিচ্যুত হয়ে যায় সরল পথ থেকে (৬০:১)।

হাদীস নং ৩৯৪৮

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি জানিয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে মক্কা বিজয়ের যুদ্ধ করেছেন। রাবী যুহরী রহ. বলেন, আমি সাঈদ ইবনে মুসায়্যাব রহ.-কেও অনুরূপ বর্ণনা করেতে শুনেছি। আরেকটি সূত্র দিয়ে তিনি উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ রহ.-এর মাধ্যমে ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেছে যে, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন, (মক্কা অভিমুখে রওয়ানা হয়ে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা পালন করছিলেন। অবশেষে তিনি যখন কুদায়দ এবং উসফান নামক স্থানদ্বয়ের মধ্যবর্তী কাদীদ নাম স্থানে ঝরনাটির কাছে পৌঁছেন তখন তিনি ইফাতার করেন। এরপর রমযান মাস খতম হওয়া পর্যন্ত তিনি আর রোযা পালন করেননি।

হাদীস নং ৩৯৪৯

মাহমূদ রহ…………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে মদীনা থেকে (মক্কা অভিযানে) রওয়ানা হন। তাঁর সঙ্গে ছিল দশ হাজার সাহাবী। তখন (মক্কা থেকে) হিজরত করে মদীনা চলে আসার সাড়ে আট বছর অতিক্রম হয়ে গিয়েছিল। তিনি ও তাঁর সঙ্গী মুসলিমগণ রোযা অবস্থায়ই মক্কা অভিমুখে রওয়ানা হন। অবশেষে তিনি যখন উসফান ও কুদায়দ স্থানদ্বয়ের মধ্যবর্তী কাদীদ নামক জায়গার ঝরনার নিকট পৌঁছলেন তখন তিনি ও সঙ্গী মুসলিমগণ ইফতার করলেন। যুহরী রহ. বলেছেন: (উম্মতের জীবযাত্রায়) ফাতওয়া হিসেবে গ্রহণ করার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাজকর্মের শেষোক্ত আমলটিকেই চূড়ান্ত দলীল হিসেবে গণ্য করা হবে। (কেননা শেষোক্ত আমলের পূর্ববর্তী আমলকে রহিত করে দেয়)।

হাদীস নং ৩৯৫০

আইয়াশ ইবনে ওয়ালীদ রহ………….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে হুনায়নের দিকে রওয়ানা হয়েছিলেন। সঙ্গী মুসলিমদের অবস্থা ছিল ভিন্ন ভিন্ন। কেউ ছিলেন রোযাদার। আবার কেউ রোযাবিহীন অবস্থায়। তাই তিনি যখন সাওয়ারীর উপর বসলেন তখন তিনি একপাত্র দুধ কিংবা পানি আনতে বললেন। তারপর তিনি পাত্রটি হাতের উপর কিংবা সাওয়ারীর উপর রেখে (সমবেত) লোকজনের দিকে তাকালেন। এ অবস্থা দেখে রোযাবিহীন লোকেরা রোযাদার লোকদেরকে ডেকে বললেন: তোমরা রোযা ভেঙ্গে ফেল। আবদুর রাজ্জাক, মামার, আইয়্যূব, ইকরিমা রহ. সূত্রে ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, মক্কা বিজয়ের বছর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিযানে বের হয়েছিল। এভাবে হাম্মাদ ইবনে যায়েদ আইয়্যূব ইকরিমা রহ. ইবনে আব্বাস রা. সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেও বিষয়টি বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৩৯৫১

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ…………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে রোযা অবস্থায় (মক্কা অভিমুখে) সফর করেছেন। অবশেষে তিনি উসফান নামক স্থানে উপনীত হলে একপাত্র পানি দিতে বললেন, তারপর দিনের বেলাই তিনি সে পানি পান করলেন যেন তিনি লোকজনকে তাঁর রোযাবিহীন অবস্থা দেখাতে পারেন। এরপর মক্কা পৌঁছা পর্যন্ত তিনি আর রোযা পালন করেননি। রাবী বলেছেন, পরবর্তীকালে ইবনে আব্বাস রা. বলতেন সফরে কোন সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা পালন করতেন আবার কোন কোন সময় তিনি রোযাবিহীন অবস্থায়ও ছিলেন। তাই সফরে (তোমাদের) যার ইচ্ছা সে রোযা পালন করতে পার আর যার ইচ্ছা সে রোযাবিহীন অবস্থায়ও থাকতে পার। (সফর শেষে আবাসে তা আদায় করে নেবে)।

হাদীস নং ৩৯৫২ – মক্কা বিজয়ের দিন নবী (সা.) কোথায় ঝাণ্ডা স্থাপন করেছিলেন।

উবাইদ ইবনে ইসমাঈল রহ………….হিশামের পিতা (উরওয়া ইবনে যুবাইর রা.) থেকে বর্ণিত যে, মক্কা বিজয়ের বছর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মক্কা অভিমুখে) রওয়ানা করেছেন। এ সংবাদ কুরাইশদের কাছে পৌঁছলে আবু সুফিয়ান ইবনে হারব, হাকীম ইবনে হিযাম এবং বুদাইল ইবনে ওয়ারকা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গতিবিধি লক্ষ্য করার জন্য বেরিয়ে এল। তারা রাতের বেলা সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে (মক্কার অদূরে) মাররুয জাহরান নামক স্থান পর্যন্ত এসে পৌঁছলে আরাফার ময়দানে প্রজ্বলিত আলোর মত অসংখ্য আগুন দেখতে পেল। আবু সুফিয়ান (আশ্চর্যানিত হয়ে) বলে উঠল এ সব কিসের আলো? ঠিক যেন আমর গোত্রের (চুলার) আলো। আবু সুফিয়ান বলল, আমর গোত্রের সংখ্যা এ অপেক্ষা অনেক কম। ইত্যবসরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর কয়েকজন সামরিক প্রহরী তাদেরকে দেখে ফেলল এবং কাছে গিয়ে তাদেরকে পাকড়াও করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে নিয়ে এল। এ সময় আবু সুফিয়ান ইসলাম গ্রহণ করল। এরপর তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন (সেনাবাহিনী সহ মক্কা নগরীর দিকে) রওয়ানা হলেন তখন আব্বাস রা.-কে বললেন, আবু সুফিয়ানকে পথের একটি সংকীর্ণ জায়গায় (পাহাড়ের কোণে) দাঁড় করাবে, যেন সে মুসলমানদের সমগ্র সেনাদলটি দেখতে পায়। তাই আব্বাস রা. তাকে যথাস্থানে থামিয়ে রাখলেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে আগমনকারী বিভিন্ন গোত্রের লোকজন আলাদা আলাদাভাবে খণ্ডদল হয়ে আবু সুফিয়ানের সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করে যেতে লাগল। প্রথমে একটি দল অতিক্রম করে গেল। আবু সুফিয়ান বললেন, হে আব্বাস রা. এরা কারা? আব্বাস রা. বললেন, এরা গিফার গোত্রের লোক। আবু সুফিয়ান বললেন, আমার এবং গিফার গোত্রের মধ্যে কোন যুদ্ধ-বিগ্রহ ছিলনা। এরপর জুহায়না গোত্রের লোকেরা অতিক্রম করে গেলেন, আবু সুফিয়ান অনুরূপ বললেন। তারপর সাদ ইবনে হুযায়ম গোত্র অতিক্রম করল, তখনো আবু সুফিয়ান অনুরূপ বললেন, তারপর সুলাইম গোত্র অতিক্রম করলেও আবু সুফিয়ান অনুরূপ বললেন। অবশেষে একটি বিরাট বাহিনী তার সামনে এল যে, এত বিরাট বাহিনী এ সময় তিনি আর দেখেননি। তাই (আশ্চর্য হয়ে) জিজ্ঞাসা করলেন, এরা কারা? আব্বাস রা. উত্তর দিলেন, এরাই (মদীনার) আনসারবৃন্দ। সাদ ইবনে উবাদা রা. তাদের দলপতি। তাঁর হাতেই রয়েছে তাদের পতাকা। (অতিক্রমকালে) সাদ ইবনে উবাদা রা. বললেন, হে আবু সুফিয়ান ! আজকের দিন রক্তপাতের দিন, আজকের দিন কাবার অভ্যন্তরে রক্তপাত হালাল হওয়ার দিন। আবু সুফিয়ান বললেন, হে আব্বাস ! আজ হারাম ও তার অধিবাসীদের প্রতি তোমাদের করুণা প্রদর্শণেরও কত উত্তম দিন। তারপর আরেকটি সেনাদল আসল। সংখ্যাগত দিক থেকে এটি ছিল সবচেয়ে ছোট দল। আর এদের মধ্যেই ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ। যুবাইর ইবনে আওয়াম রা.-এর হাতে ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঝাণ্ডা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আবু সুফিয়ানের সামনে দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, তখন আবু সুফিয়ান বললেন, সাদ ইবনে উবাদা কি বলছে আপনি কি তা জানেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে কি বলেছে? আবু সুফিয়ান বললেন, সে এ রকম এ রকম বলেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে কি বলেছে? বরং আজ এমন একটি দিন যেদিন আল্লাহ কাবাকে মর্যাদায় সুমুন্নত করবেন। আজকের দিনে কাবাকে গিলাফে আচ্ছাদিত করা হবে। রাবী বলেন, (মক্কা নগরীতে পৌঁছে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজুন নামক স্থানে তাঁর পতাকা স্থাপনের নির্দেশ দেন। রাবী উরওয়া নাফি যুবাইর ইবনে মুতঈম আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি যুবাইর ইবনে আওয়াম রা.-কে (মক্কা বিজয়ের পর একদা) বললেন, হে আবু আবদুল্লাহ ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপানাকে এ জায়গাই পতাকা স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। উরওয়া রা. আরো বলেন, যে দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খালিদ ইবনে ওয়ালীদকে মক্কার উচু এলাকা কাদার দিকে থেকে প্রবেশ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (নিম্ন এলাকা) কুদার দিকে থেকে প্রবেশ করেছিলেন। সেদিন খালিদ ইবনে ওয়ালীদের অশ্বারোহী সৈন্যদের মধ্য থেকে হুবায়শ ইবনুল আশআর এবং করয ইবনে জাবির ফিহরী রা.-এ দুজন শহীদ হয়েছিলেন।

হাদীস নং ৩৯৫৩

আবুল ওয়ালীদ রহ…………আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর উটনীর উপর দেখেছি, তিনি তারজী করে সূরা ফাতিহা তিলাওয়াত করছেন। রাবী মুআবিয়া ইবনে কুররা রহ. বলেন, যদি আমার চতুষ্পার্শ্বে লোকজন জমায়েত হয়ে যাওয়ার আশংকা না থাকত, তাহলে আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তিলাওয়াত বর্ণনা করতে যেভাবে তারজী করেছিলেন আমিও ঠিক সে রকমে তারজী করে তিলাওয়াত করতাম।

হাদীস নং ৩৯৫৪

সুলাইমান ইবনে আবদুর রহমান রহ………..উসামা ইবনে যায়েদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি মক্কা বিজয়ের কালে (বিজয়ের একদিন পূর্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগামীকাল আপনি কোথায় অবস্থান করবেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আকীল কী আমাদের জন্য কোন বাড়ি অবশিষ্ট রেখে গিয়েছে? এরপর তিনি বললেন, মুমিন ব্যক্তি কাফেরের ওয়ারিশ হয় না, আর কাফেরও মুমিন ব্যক্তির ওয়ারিশ হয় না। (পরবর্তীকালে) যুহরী রহ.-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, আবু তালিবের ওয়ারিশ কে হয়েছিল? তিনি বলেছেন, আকীল এবং তালিব তার ওয়ারিশ হয়েছিল। মামার রহ. যুহরী রহ. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, আপনি আগামীকাল কোথায় অবস্থান করবেন কথাটি (উসামা ইবনে যায়েদ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তার হজ্জের সফরে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। কিন্তু ইউনুস রহ. তাঁর হাদীসে মক্কা বিজয়ের সময় বা হজ্জের সফর কোনটিই উল্লেখ করেননি।

হাদীস নং ৩৯৫৫

আবুল ইয়ামান রহ………….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (মক্কা বিজয়ের পূর্বে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ আমাদেরকে বিজয় দান করলে ইনশাআল্লাহ খাইফ হবে আমাদের অবস্থানস্থল, যেখানে কাফেররা কুফরীর উপর পরস্পরে শপথ গ্রহণ করেছিল।

হাদীস নং ৩৯৫৬

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনায়নের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে বললেন, বনী কিনানার খাইফ নামক স্থানেই হবে আমাদের আগামী কালের অবস্থানস্থল, যেখানে কাফেররা কুফরের উপর পরস্পর শপথ গ্রহণ করেছিল।

হাদীস নং ৩৯৫৭

ইয়াহইয়া ইবনে কাযাআ রহ………….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, মক্কা বিজয়ের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথায় লোহার টুপি পরিহিত অবস্থায় মক্কায় প্রবেশ করেছেন। তিনি সবেমাত্র টুপি খুলেছেন এ সময় এক ব্যক্তি এসে বলল, ইবনে খাতাল কাবার গিলাফ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে হত্যা কর। ইমাম মালিক রহ. বলেছেন, আমাদের ধারণামতে সেদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় ছিলেন না। তবে আল্লাহ আমাদের চেয়ে ভাল জানেন।

হাদীস নং ৩৯৫৮

সাদাকা ইবনে ফাযল রহ…………আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবেশ করলেন, তখন বায়তুল্লাহর চারপাশে ঘিরে তিনশত ষাটটি প্রতিমা স্থাপিত ছিল। তিনি হাতে একটি লাঠি নিয়ে (বায়তুল্লাহ অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেন এবং ) প্রতিমাগুলেকে আঘাত করতে থাকলেন আর (মুখে) বলতে থাকলেন, হক এসেছে, বাতিল অপসৃত হয়েছে। হক এসেছে বাতিলের আর উদ্ভব ও পুনরুদ্ভব ঘটবে না।

হাদীস নং ৩৯৫৯

ইসহাক রহ…………….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় আগমন করার পর তৎক্ষণাৎ বায়তুল্লাহর অভ্যন্তরে প্রবেশ করা থেকে বিরত রইলেন, কারণ সে সময় বায়তুল্লাহর অভ্যন্তরে অনেক প্রতিমা স্থাপিত ছিল। তিনি এগুলোকে বের করে ফেলার জন্য আদেশ দিলেন। প্রতিমাগুলো বের করা হল। তখন (ঐগুলোর সাথে) ইবরাহীম ও ইসমাঈল আ.-এর মূর্তিও বেরিয়ে আসল। তাদের উভয়ের হাতে ছিল মুশরিকদের ভাগ্য নির্ণয়ের কয়েকটি তীর। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করুক। তারা অবশ্যই জানত যে, ইবরাহীম আ. ও ইসমাঈল আ. কখনো তীর দিয়ে ভাগ্য নির্ণয়ের কাজ করেননি। এরপর তিনি বায়তুল্লাহর ভিতরে প্রবেশ করলেন। আর প্রত্যেক কোণায় কোণায় গিয়ে আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিলেন এবং বেরিয়ে আসলেন। আর সেখানে নামায আদায় করেননি। মামার রহ. আইয়্যূব রহ. সূত্রে এবং ওহায়ব রহ. আইয়্যূব রহ.-এর মাধ্যমে ইকরামা রা. সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৩৯৬০

হায়সাম ইবনে খারিজা রহ…………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে, মক্কা বিজয়ের বছর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার উচু এলাকা ‘কাদা’-এর দিক দিয়ে প্রবেশ করেছেন। আবু উসামা এবং ওহায়ব রহ. ‘কাদা’-এর দিক দিয়ে প্রবেশ করার বর্ণনায় হাবস ইবনে মায়সারা রহ.-এর অনুসরণ করেছেন।

হাদীস নং ৩৯৬১

উবাইদ ইবনে ইসমাঈল রহ……………..হিশামের পিতা থেকে বর্ণিত যে, মক্কা বিজয়ের বছর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার উচু এলাকা অর্থাৎ ‘কাদা’ নামক স্থান দিয়ে প্রবেশ করেছিলেন।

হাদীস নং ৩৯৬২ – মক্কা বিজয়ের দিন নবী (সা.)-এর অবস্থানস্থল।

আবুল ওয়ালীদ রহ……….ইবনে আবী লায়লা রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে চাশতের নামায আদায় করতে দেখেছে—-এ কথাটি একমাত্র উম্মে হানী রা. ছাড়া অন্য কেউ আমাদের কাছে বর্ণনা করেননি। তিনি বলেছেন যে, মক্কা বিজয়ের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাড়িতে গোসল করেছিলেন, এরপর তিনি আট রাকাত নামায আদায় করেছেন। উম্মে হানী রা. বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ নামায অপেক্ষা হালকাভাবে অন্য কোন নামায আদায় করতে দেখিনি। তবে তিনি রুকু, সিজদা পুরোপুরিই আদায় করেছিলেন।

হাদীস নং ৩৯৬৩ – পরিচ্ছেদ ২২১৫

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নামাযের রুকু ও সিজদায় পড়তেন, সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকাল্লাহুম্মা ইগফির লী অর্থাৎ অতি পবিত্র হে আল্লাহ ! হে আমাদের প্রভু ! আমি তোমারই প্রশংসা করছি। হে আল্লাহ ! আমাকে ক্ষমা করে দাও।

হাদীস নং ৩৯৬৪

আবু নুমান রহ…………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর রা. তাঁর (পরামর্শ মজলিসে) বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বর্ষীয়ান সাহাবাদের সঙ্গে আমাকেও শামিল করতেন। তাই তাদের কেউ কেউ বললেন, আপনি এ তরুণকে কেন আমাদের সাথে মজলিসে শামিল করেন। তার মত সন্তান তো আমাদেরও আছে। তখন উমর রা. বললেন, ইবনে আব্বাস রা. ঐ সব মানুষের একজন যাদের (মর্যাদা ও জ্ঞানের গভীরতা) সম্পর্কে আপনারা অবহিত আছেন। ইবনে আব্বাস বলেন, একদিন তিনি (উমর) তাদেরকে পরামর্শ মজলিসে আহবান করলেন এবং তাদের সাথে তিনি আমাকেও ডাকলেন। তিনি (ইবনে আব্বাস) বলেন, আমার মনে হয় সেদিন তিনি তাদেরকে আমার ইলমের গভীরতা দেখানোর জন্যই ডেকেছিলেন। উমর বলেন, إذا جاء نصر الله والفتح ورايت الناس يدخولون في دين الله أفواجا এভাবে সূরাটি শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এ সূরা সম্পর্কে আপনাদের কি বক্তব্য? তখন তাদের মধ্যে কেউ বেউ বললেন, এখানে আমদেরকে আদেশ করা হয়েছে যে, যখন আমাদেরকে সাহায্য করা হবে এবং বিজয় দান করা হবে তখন যেন আমরা আল্লাহর প্রশংসা করি এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। আর কেউ কেউ বললেন, আমরা অবগত নই। আবার কেউ কেউ উত্তরই করেননি। এ সময় উমর রা. আমাকে বললেন, ওহে ইবনে আব্বাস ! তুমি কি এ রকমই মনে কর? আমি বললাম, জ্বী, না। তিনি বললেন, তাহলে তুমি কি রকম মনে কর? আমি বললাম, এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাতের সংবাদ। আল্লাহ তাকে তা জানিয়ে দিয়েছেন। ‘যখন আল্লাহর সাহায্য এবং বিজয় আসবে’ অর্থাৎ মক্কা বিজয়। সেটিই হবে আপনার ওফাতের পূর্বাভাস। সুতরাং এ সময় আপনি আপনার প্রতিপালকের প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনা করবেন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। অবশ্যই তিনি তাওবা কবুলকারী। এ কথা শুনে উমর রা. বললেন, এ সূরা থেকে তুমি যা যা উপলব্ধি করেছ আমি ঐটি ছাড়া অন্য কিছু উপলব্ধি করিনি।

হাদীস নং ৩৯৬৫

সাঈদ ইবনে শুরাহবীল রহ…………আবু শুরায়হিল আদাবী রা. থেকে বর্ণিত যে, (মদীনার শাসনকর্তা) আমর ইবনে সাঈদ যে সময় মক্কা অভিমুখে সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করছিলেন তখন আবু শুরয়হিল আদাবী রা. তাকে বলেছিলেন, হে আমাদের আমীর ! আপনি আমাকে একটু অনুমতি দিন, আমি আপনাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি বাণী শোনাবো, যেটি তিনি মক্কা বিজয়ের পরের দিন বলেছিলেন। সেই বাণীটি আমার দু’কান শুনেছে। আমার হৃদয় তা হিফাজত করে রেখেছে । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সে কথাটি বলছিলেন তখন আমার দুচোখ তাকে অবলোকন করেছে। প্রথমে তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর প্রশংসা করেন এবং সানা পাঠ করেন। এর পর তিনি বলেন, আল্লাহ নিজে মক্কাকে হারাম ঘোষণা দিয়েছেন। কোন মানুষ এ ঘোষণা দেয়নি। কাজেই যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং কিয়ামত দিবসের উপর ঈমান এনেছে তার পক্ষে (অন্যায়ভাবে) সেখানে রক্তপাত করা কিংবা এখানকার গাছপালা কর্তন করা কিছু্তেই হালাল নয়। আর আল্লাহর রাসূলের সে স্থানে লড়াইয়ের কথা বলে যদি কেউ নিজের জন্যও সুযোগ করে নিতে চায় তবে তোমরা তাকে বলে দিও আল্লাহ তাঁর রাসূলের ক্ষেত্রে (বিশেষভাবে) অনুমতি দিয়েছিলেন, তোমাদের জন্য কোন অনুমতি দেননি। আর আমার ক্ষেত্রেও তা একদিনের কিছু নির্দিষ্ট সময়ের জন্যই কেবল অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এরপর সেদিনই তা পুনরায় সেরূপ হারাম হয়ে গেছে যেরূপে তা একদিন পূর্বে হারাম ছিল। উপস্থিত লোকজন (এ কথাটি) অনুপস্থিত লোকদের কাছে পৌঁছিয়ে দেবে। (রাবী বলেন) পরবর্তী সময় আবু শুরায়হ রা.-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, (হাদীসটি শোনার পর) আমর ইবনে সাঈদ আপনাকে কি উত্তর করেছিলেন? তিনি বললেন, আমর আমাকে বললেন, হে আবু শুরায়হ ! হাদীসটির বিষয়ে আমি তোমার চেয়ে অধিক অবগত আছি। (কথা ঠিক) কিন্তু, হারামে মক্কা কোন অপরাধী বা খুন থেকে পলায়নকারী কিংবা কোন চোর বা বিপর্যয় সৃষ্টিকারীকে আশ্রয় দেয় না।

হাদীস নং ৩৯৬৬

কুতাইবা রহ………….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত যে, মক্কা বিজয়ের বছর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মক্কায় অবস্থানকালে এ কথা বলতে শুনেছেন যে, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল মদের বেচাকেনা হারাম ঘোষণা করেছেন।

হাদীস নং ৩৯৬৭

আহমদ ইবনে ইউনুস রহ…………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (মক্কা বিজয়ের সময়ে) সফরে আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ঊনিশ দিন (মক্কায়) অবস্থান করেছিলাম। এ সময়ে আমরা নামাযে কসর করেছিলাম। ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন, আমরা সফরে ঊনিশ দিন পর্যন্ত কসর করতাম। এর চাইতে অধিক দিন অবস্থান করলে আমরা পূর্ণ নামায আদায় করতাম। (অর্থাৎ চার রাকআত আদায় করতাম)।

হাদীস নং ৩৯৬৮ – মক্কা বিজয়ের সময়ে নবী (সা.)-এর মক্কা নগরীতে অবস্থান।

আবু নুআইম ও কাবীসা রহ…………..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে (মক্কায়) দশ দিন অবস্থান করেছিলাম। এ সময়ে আমরা নামাযের কসম করতাম।

হাদীস নং ৩৯৬৯

আবদান রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (মক্কা বিজয়ের সময়ে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় ঊনিশ দিন অবস্থান করেছিলেন, এ সময়ে তিনি দু’রাকআত নামায আদায় করতেন।

হাদীস নং ৩৯৭০ – লায়স রহ. বলেছেন, ইউনুস আমার কাছে ইবনে শিহাব থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আবদুল্লাহ ইবনে সালাবা ইবনে সুআইর রা. আমাকে বর্ণনা করেছেন, আর মক্কা বিজয়ের বছর নবী (সা.) তাঁর মুখমণ্ডল মাসাহ করে দিয়েছিলেন।

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ………….যুহরী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সুনাইন আবু জামিলা রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যুহরী রহ. বলেন, আমরা (সাঈদ) ইবনে মুসায়্যাব রহ.-এর সাথে উপস্থিত ছিলাম। এ সময় আবু জামিলা রা. দাবি করেন য, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাক্ষাত পেয়েছেন এবং তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মক্কা বিজয়ের বছর (যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য) বের হয়েছিলেন।

হাদীস নং ৩৯৭১

সুলামইমান ইবনে হারব রহ………….আমর ইবনে সালিমা রা. থেকে বর্ণিত, আইয়্যূব রহ. বলেছেন, আবু কিলাবা আমাকে বললেন, তুমি আমরা ইবনে সালিমার সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কর না কেন? আবু কিলাবা রহ. বলেন, এরপর আমি আমর ইবনে সালিমার সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে তাঁর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। উত্তরে তিনি বললেন, আমরা (আমাদের গোত্র) পথিকদের যাতায়াত পথের পাশে একটি ঝরনার নিকট বাস করতাম। আমাদের পাশ ঘেষে অতিক্রম করে যেতো অনেক কাফেলা। তখন আমরা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করতাম, (মক্কার) লোকজনের কি অবস্থা? মক্কার লোকজনের কি অবস্থা? আর ঐ লোকটিরই কি অবস্থা? তারা বলত, সে ব্যক্তি তো দাবি করেন যে, আল্লাহ তাকে রাসূল বানিয়ে পাঠিয়েছেন। তাঁর প্রতি ওহী অবতীর্ণ করেছেন। (কুরআনের কিছু অংশ পাঠ করে বললেন,) তাঁর কাছে আল্লাহ এ রকম ওহী নাযিল করেছেন। (আমর ইবনে সালিমা বলেন) তখন (পথিকদের মুখ থেকে শুনে) আমি সে বাণীগুলো মুখস্থ করে ফেলতাম যেন তা আজ আমার হৃদয়ে গেথে রয়েছে। সমগ্র আরবাসী ইসলাম গ্রহণের জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিজয়ের অপেক্ষা করছিল। তারা বলত, তাকে তাঁর স্বগোত্রীয় লোকদের সঙ্গে (প্রথমে) বোঝাপড়া করতে দাও। কেননা তিনি যদি তাদের উপর বিজয় লাভ করেন তাহলে তিনি সত্য সত্যই নবী । এরপর মক্কা বিজয়ের ঘটনা সংঘটিত হল। এবার সব গোত্রই তাড়াহুড়া করে ইসলামে দীক্ষিত হতে শুরু করল। আমাদের কাওমের ইসলাম গ্রহণ করার ব্যাপারে আমার পিতা বেশ তাড়াহুড়া করলেন। যখন তিনি ইসলাম গ্রহণ করে বাড়ী ফিরলেন তখন তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ আমি সত্য নবীর দরবার থেকে তোমাদের কাছে এসেছি। তিনি বলে দিয়েছেন যে, অমুক সময়ে তোমরা অমুক নামায এবং অমুক সময় অমুক নামায আদায় করবে। এভাবে নামাযের ওয়াক্ত হলে তোমাদের একজন আযান দিবে এবং তোমাদের মধ্যে যে কুরআন বেশি মুখস্থ করেছে সে নামাযের ইমামতি করবে। (এরপর নামায আদায় করার সময় হল) সবাই এ রকম একজন লোককে খুঁজতে লাগল। কিন্তু আমার চেয়ে অধিক কুরআন মুখস্থকারী অন্য কাউকে পাওয়া গেল না। কেননা আমি কাফেলার লোকদের থেকে শুনে (কুরআন) মুখস্থ করতাম। কাজেই সকলে আমাকেই (নামায আদায়ের জন্য) তাদের সামনে এগিয়ে দিল। অথচ তখনো আমি ছয় কিংবা সাত বছরের বালক। আমার একটি চাদর ছিল, যখন আমি সিজদায় যেতাম তখন চাদরটি আমার গায়ের সঙ্গে জড়িয়ে উপরের দিকে উঠে যেত। (ফলে পেছনের অংশ অনাবৃত হয়ে পড়ত) তখন গোত্রের জনৈক মহিলা বলল, তোমরা তোমাদের ইমামের পেছনের অংশ আবৃত করে দাও না কেন? তাই সবাই মিলে কাপড় খরিদ করে আমাকে একটি জামা তৈরী করে দিল। এ জামা পেয়ে আমি এত আনন্দিত হয়েছিলাম যে, কখনো অন্য কিছুতে এত আনন্দিত হইনি।

হাদীস নং ৩৯৭২

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ………….আয়েশা রা. সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, অন্য সনদে লায়েস রহ………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উতবা ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা. তার ভাই সাদ (ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা.)কে ওয়াসিয়াত করে গিয়েছিল যে, সে যেন যামআর বাঁদীর সন্তানটি তাঁর নিজের কাছে নিয়ে নেয়। উতবা বলেছিল, পুত্রটি আমার ঔরসজাত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কা বিজয়কালে সেখানে আগমন করলেন (সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাসও তাঁর সাথে মক্কায় আসেন। সুযোগ পেয়ে) তখন তিনি যামআর বাঁদীর সন্তানটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে উপস্থিত করলেন। তাঁর সাথে আবদ ইবনে যামআ (যামআর পুত্র) ও আসলেন। সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস দাবি উত্থাপন করে বললেন, সন্তানটি তো আমার ভাতিজা। আমার ভাই আমাকে বলে গিয়েছেন যে, এ সন্তান তার ঔরসজাত কিন্তু আবদ ইবনে যামআ তার দাবি পেশ করে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! এ আমার ভাই, এ যামআর সন্তান, তাঁর বিছানায় এর জন্ম হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন যামআর ক্রীতদাসীর সন্তানের প্রতি নযর দিয়ে দেখলেন যে, সন্তানটি দৈহিক আকৃতিগত দিক থেকে উতবা ইবনে আবু ওয়াক্কাসের সাথেই বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবদ ইবনে যামআ ! সন্তানটি তুমি নিয়ে নাও। সে তোমার ভাই। কেননা সে তার (তোমার পিতা যামআর) বিছানায় জন্মগ্রহণ করেছে। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সন্তানটির দৈহিক আকৃতি উতবা ইবনে আবী ওয়াক্কাসের আকৃতির সাদৃশ্য দেখার কারণে (তাঁর স্ত্রী) সাওদা বিনতে যামআর রা.-কে বললেন, হে সাওদা ! তুমি তার (বিতর্কিত সন্তানটির) থেকে পর্দা করবে। ইবনে শিহাব যুহরী রহ. বলেন, আয়েশা রা. বলেছেন যে, এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সন্তানের (আইনগত) পিতৃত্ব স্বামীর। আর ব্যভিচারীর জন্য রয়েছে পাথর। ইবনে শিহাব যুহরী বলেছেন, আবু হুরায়রা রা.-এর নিয়ম ছিল যে তিনি এ কথাটি উচ্চস্বরে বলতেন।

হাদীস নং ৩৯৭৩

মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল রহ…………..উরওয়া ইবনে যুবাইর রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় (মক্কা) বিজয় অভিযানের সময়ে জনৈক মহিলা চুরি করেছিল। তাই তার গোত্রের লোকজন আতংকিত হয়ে গেল এবং উসামা ইবনে যায়েদ রা.-এর কাছে এসে (উক্ত মহিলার ব্যাপারে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট সুপারিশ করার জন্য অনুরোধ করল। উরওয়া রা. বলেন, উসামা রা. এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে যখনি কথা বললেন, তখন তাঁর চেহারার রং পরিবর্তিত হয়ে গেল। তিনি উসামা রা.-কে বললেন, তুমি কি নির্ধারিত একটি হুকুম (হাদ) প্রয়োগ করার ব্যাপারে আমার কাছে সুপারিশ করছ? উসামা রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। এরপর সন্ধ্যা হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিতে দাঁড়ালেন। যথাযথভাবে আল্লাহর হামদ ও প্রশংসা পাঠ করে বললেন, ‘আম্মা বাদ’ তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতরা এ কারণে ধ্বংস হয়েছিল যে, তারা তাদের মধ্যকার অভিজাত শ্রেণীর কোন লোক চুরি করলে তার উপর শরীয়ত নির্ধারিত দণ্ড প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকত। পক্ষান্তরে কোন দুর্বল লোক চুরি করলে তার উপর দণ্ড প্রয়োগ করত। যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ তাঁর শপথ, যদি মুহাম্মদের কন্যা ফাতিমাও চুরি করত তাহলে আমি তার হাত কেটে দিতাম। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই মহিলাটির হাত কেটে দিতে আদেশ দিলেন। ফলে তার হাত কেটে দেওয়া হল। অবশ্য পরবর্তীকালে সে উত্তম তাওবার অধিকারিণী হয়েছিল এবং (বানু সুলামের গোতের এক ব্যক্তির সঙ্গে) তার বিয়ে হয়েছিল। আয়েশা রা. বলেন, এ ঘটনার পর সে আমার কাছে প্রায়ই আসত। আমি তার বিভিন্ন প্রয়োজন ও সমস্যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে পেশ করতাম।

হাদীস নং ৩৯৭৪

আমর ইবনে খালিদ রহ………..মুজাশি রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের পর আমি আমার ভাই (মুজালিদ) -কে নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি আমার ভাইকে আপনার কাছে নিয়ে এসেছি যেন আপনি তার কাছ থেকে হিজরত করার ব্যাপারে বায়আত গ্রহণ করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হিজরতকারিগণ (মক্কা বিজয়ের পূর্বে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতকারিগণ) হিজরতের সমুদয় মর্যাদা ও বরকত পেয়ে গেছেন। (এখন আর হিজরতের অবকাশ নেই) আমি বললাম, আমি তাঁর কাছে থেকে বায়আত গ্রহণ করব ইসলাম, ঈমান ও জিহাদের উপর (রাবী আবু উসমান রা. বলেছেন) পরে আমি আবু মাবাদ রা.-এর সাথে সাক্ষাত করলাম। তিনি ছিলেন তাদের দু’ভাইয়ের মধ্যে বড়। আমি তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, মুজাশি’ রা. ঠিকই বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৩৯৭৫

মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর রহ………….মুজাশি ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনি বলেন, আমি আবু মাবাদ রা. (মুজালিদ)-কে নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গেলাম, যেন তিনি তাঁর কাছ থেকে হিজরতের জন্য বায়আত গ্রহণ করেন। তখন তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হিজরতের মর্যাদা (মক্কা বিজয়ের পূর্বেকার) হিজরতকারীদের দ্বারা সমাপ্ত হয়ে গেছে। আমি তার কাছে থেকে ইসলাম ও জিহাদের জন্য বায়আত গ্রহণ করব। (বর্ণনাকারী আবু উসমান নাহদী রহ. বলেন) এরপরে আমি আবু মাবাদ রা-এর সাথে সাক্ষাত করে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, মুজাশি রা. সত্যই বলেছেন। অন্য সনদে খালিদ রহ. আবু উসমান রহ. আবু উসমান রহ. মুজাশি রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি তার ভাই মুজালিদ রা.-কে নিয়ে এসেছিলেন।

হাদীস নং ৩৯৭৬

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………..মুজাহিদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনে উমর রা.-কে বললাম, আমি সিরিয়া দেশে হিজরত করার ইচ্ছা করেছি। তিনি বললেন, এখন হিজরতের কোন প্রয়োজন নেই, বরং প্রয়োজন আছে জিহাদের। সুতরাং যাও, নিজ অন্তরের সাথে বোঝাপড়া করে দেখ যদি,জিহাদের সাহস খুঁজে পাও (তবে ভাল, গিয়ে জিহাদে অংশগ্রহণ কর)। অন্যথায় হিজরতের ইচ্ছা থেকে ফিরে আস। অন্য সনদে নাযর (ইবনে শুমাইল রহ.) মুজাহিদ রহ. থেকে বর্ণিত, (তিনি বলেছেন) আমি ইবনে উমর রা.-কে (এ কথা) বললে তিনি উত্তর করলেন, বর্তমানে হিজরতের কোন প্রয়োজন নেই, অথবা তিনি বলেছেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাতের পর হিজরতের কোন প্রয়োজন নেই। এরপর তিনি উপরোল্লিখিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন।

হাদীস নং ৩৯৭৭

ইসহাক ইবনে ইয়াযীদ রহ………..মুজাহিদ ইবন জাবর আল-মাক্কী রহ. থেকে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলতেন: মক্কা বিজয়ের পর হিজরতের কোন প্রয়োজন অবশিষ্ট নেই।

হাদীস নং ৩৯৭৮

ইসহাক ইবনে ইয়াযীদ রহ………..আতা ইবনে আবু রাবাহ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উবাইদ ইবনে উমায়র রহ. সহ আয়েশা রা.-এর সাক্ষাতে গিয়েছিলাম। সে সময় উবাইদ রহ. তাকে হিজরত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, বর্তমানে হিজরতের কোন প্রয়োজন নেই। পূর্বে মুমিন ব্যক্তির এ অবস্থা ছিল যে, সে তার দীনকে ফিতনার হাত থেকে হিফাজত করতে হলে তাকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের দিকে (মদীনার দিকে) পালিয়ে যেতে হতো। কিন্তু বর্তমানে (মক্কা বিজয়ের পর) আল্লাহ ইসলামকে বিজয় দান করেছেন। তাই এখন মুমিন যেখানে যেভাবে চায় আল্লাহর ইবাদত করতে পারে। তবে বর্তমানে জিহাদ এবং হিজরতের সাওয়াবের নিয়্যাত রাখা যেতে পারে।

হাদীস নং ৩৯৭৯

ইসহাক রহ…………মুজাহিদ রহ. থেকে বর্ণিত যে, মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবার জন্য দাঁড়িয়ে বললেন, যেদিন আল্লাহ সমূদয় আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, সেই দিন থেকেই তিনি মক্কা নগরীকে সম্মান দান করেছেন। তাই আল্লাহ কর্তৃক এ সম্মান প্রদানের কারণে এটি কিয়ামত দিবস পর্যন্ত সম্মানিত থাকবে। আমার পূর্বেকার কারো জন্য তা (কখনো) হালাল করা হয়নি, আমার পরবর্তী কারো জন্যও তা হালাল করা হবে না। আর আমার জন্যও মাত্র একদিনের সামান্য অংশের জন্যই তা হালাল করা হয়েছিল। এখানে অবস্থিত শিকারকে তাড়ানো যাবে না, কাঁটাযুক্ত বৃক্ষের কাটাতেও কাস্তে ব্যবহার করা যাবে না। ঘাস কাটা যাবে না। রাস্তায় পড়ে থাকা কোন জিনিসকে মালিকের হাতে পৌঁছিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে হারানো প্রাপ্তি সংবাদ প্রচারকারী ব্যতীত অন্য কেউ তুলতে পারবে না। এ ঘোষণা শুনে আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! ইযখির ঘাস ব্যতীত। কেননা, ইযখির ঘাস আমাদের কর্মকার ও বাড়ির (ঘরের ছাউনির) কাজে প্রয়োজন হয়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ থাকলেন। এর কিছুক্ষণ পরে বললেন, ইযখির ব্যতীত। ইযখির ঘাস কাটা জায়েয। অন্য সনদে ইবনে যুবাইর রহ…………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে। তাছাড়া এ হাদীস আবু হুরায়রা রা. ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৩৯৮০ – আল্লাহর বাণী: এবং হুনায়নের যুদ্ধের দিনে যখন তোমাদেরকে উৎফুল্ল করেছিল তোমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা, কিন্তু তা তোমাদের কোন কাজে আসেনি এবং বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও পৃথিবী তোমাদের জন্য সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল শেষে তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পলায়ন করেছিলেন……………..(৯: ২৫-২৭)।

মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে নুমাইর রহ………..ইসমাঈল রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আবু আউফা রা.-এর হাতে একটি আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়েছি। (আঘাতের ব্যাপারে) তিনি বলেছেন, হুনাইনের (যুদ্ধের) দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে থাকা অবস্থায় আমাকে এ আঘাত করা হয়েছিল। আমি বললাম, আপনি কি হুনাইন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন? তিনি বললেন, এর পূর্বের যুদ্ধগুলোতেও অংশগ্রহণ করেছি।

হাদীস নং ৩৯৮১

মুহাম্মদ ইবনে কাসীর রহ………..আবু ইসহাক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি বারা ইবনে আযিব রা.-কে বলতে শুনেছি যে, এক ব্যক্তি এসে তাকে জিজ্ঞাসা করল, হে আবু উমর ! হুনাইনের যুদ্ধের দিন আপনি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেছিলেন কি? তখন তিনি বলেন যে, আমি তো নিজেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেননি। তবে মুজাহিদদের অগ্রবর্তী যোদ্ধা গণ (গনীমত কুড়ানোর কাজে) তাড়াহুড়া করলে হাওয়াযিন গোত্রের লোকেরা তাদের প্রতি তীর নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় আবু সুফিয়ান ইবনুল হারিস রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাদা খচ্চরটির মাথা ধরে দাঁড়িয়েছিলেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বলছিলেন, আমি যে আল্লাহর নবী তাঁতে কোন মিথ্যা নেই, আমি তো (কুরাইশ নেতা) মুত্তালিবের সন্তান।

হাদীস নং ৩৯৮২

আবুল ওয়ালীদ রহ………….আবু ইসহাক রহ. থেকে বর্ণিত, আমি শুনলাম যে, বারা ইবনে আযিব রা.-কে জিজ্ঞাসা করা হল, হুনাইন যুদ্ধের দিন আপনারা কি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছিলেন? তিনি বললেন, কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেনি। তবে তারা (হাওয়াযিন গোত্রেরে লোকেরা) ছিল দক্ষ তীরন্দাজ, (এ কারণে তারা তীর বর্ষণ আরম্ভ করলে সবাইকে পেছনে হেটে যেতে হয়েছে তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেছনে হটেননি) তিনি (অটলভাবে দাঁড়িয়ে) বলছিলেন, আমি যে আল্লাহর নবী এতে কোন মিথ্যা নেই। আমি (তো কুরাইশ নেতা) আবদুল মুত্তালিবের সন্তান।

হাদীস নং ৩৯৮৩

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………….আবু ইসহাক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বারা রা.-কে বলতে শুনেছেন যে, তাকে কায়েস গোত্রের জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করেছিল যে, হুনাইন যুদ্ধের দিন আপনারা কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছ থেকে পালিয়েছিলেন? তখন তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালান নি। তবে হাওয়াযিন গোত্রের লোকেরা ছিল সুদক্ষ তীরন্দাজ। আমরা যখন তাদের উপর আক্রমণ চালালাম তখন তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালতে আরম্ভ করে। আমরা গনীমত তুলতে শুরু করলাম ঠিক সেই মুহূর্তে আমরা (অতর্কিতভাবে) তাদের তীরন্দাজ বাহিনীর হাতে আক্রান্ত হলাম। তখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর সাদা রংয়ের খচ্চরটির পিঠে আরোহণ অবস্থায় দেখেছি। আর আবু সুফিয়ান রা. তাঁর খচ্চরের লাগাম ধরেছিলেন, তিনি বলছিলেন, আমি আল্লাহর নবী, এতে কোন মিথ্যা নেই। রাবী ইসরাঈল এবং যুহাইর রহ. বলেছেন যে, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর খচ্চরটির (পিঠ থেকে) নীচে অবতরণ করেছিলেন।

হাদীস নং ৩৯৮৪

সাঈদ ইবনে উফাইর ও ইসহাক রহ……….মারওয়ান এবং মিওয়ার ইবনে মাখরামা রা. থেকে বর্ণিত যে, হাওয়াযিন গোত্রের প্রতিনিধিগণ যখন ইসলাম গ্রহণ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে এল এবং তাদের (যুদ্ধ লুণ্ঠিত) সম্পদ ও বন্দীদেরকে ফের দেওয়ার প্রার্থনা জানালো তখন তিনি দাঁড়ালেন এবং তাদের বললেন, আমার সঙ্গে যারা আছে (সাহাবাগণ) তাদের অবস্থা তো তোমরা দেখতে পাচ্ছ। সত্য কথাই আমার কাছে বেশি প্রিয়। কাজেই তোমরা যুদ্ধবন্দী অথবা সম্পদের যে কোন একটিকে গ্রহণ করতে পার। আমি তোমাদের জন্য (পথেই) অপেক্ষা করছিলাম। বস্তুত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তায়েফ থেকে প্রত্যাবর্তন করার পথে (জিরানা জায়গায়) দশ রাতেরও অধিক সময় পর্যন্ত তাদের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। (রাবী বলেন) হাওয়াযিন গোত্রের প্রতিনিধিদের কাছে যখন এ কথা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে এ দুটির মধ্যে একটির বেশি ফেরত দিতে সম্মত নন তখন তারা বললেন, আমরা আমাদের বন্দীদেরকে গ্রহণ করতে চাই। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের সম্মুখে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর যথাযোগ্য হামদ ও সানা পাঠ করে বললেন, আম্মা বায়াদ তোমাদের (হাওয়াযিন গোত্রের মুসলিম) ভাইয়েরা তাওবা করে আমাদের কাছে এসেছে, আমি তাদের বন্দীদেরকে তাদের নিকট ফেরত দেওয়ার সিন্ধান্ত করেছি। অতএব তোমাদের মধ্যে যে আমার এ সিদ্ধান্তকে খুশি মনে গ্রহণ করে নেবে সে (তার অংশের বন্দীকে) ফেরত দাও। আর তোমাদের মধ্যে যে তার অংশের অধিকারকে অবশিষ্ট রেখে তা এভাবে ফেরত দিতে চাইবে যে, ফাইয়ের সম্পদ থেকে (আগামীতে) আল্লাহ আমাকে সর্বপ্রথম যা দান করবেন তা দিয়ে আমি তার এ বন্দীর মূল পরিশোধ করব, তবে সেই তাই কর। তখন সকল লোক উত্তর করল: ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমরা আপনার প্রথম সিদ্ধান্ত খুশিমনে গ্রহণ করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমদের মধ্যে এ ব্যাপারে কে খুশিমনে অনুমতি দিয়েছে আর কে খুশিমনে অনুমতি দেয়নি আমি তা বুঝতে পারিনি। তাই তোমরা ফিরে যাও এবং তোমাদের মধ্যকার বিজ্ঞ ব্যক্তিদের সাথে আলাপ কর। তাঁরা আমার কাছে বিষয়টি পেশ করবে। সবাই ফিরে গেল। পরে তাদের বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ তাদের সাথে (আলাদা আলাদাভাবে) আলাপ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট ফিরে এসে জানাল যে, সবাই তাঁর (প্রথম) সিন্ধান্তকেই খুশি মনে মেনে নিয়েছে এবং (ফেরত দেয়া) অনুমতি দিয়েছে। (ইমাম ইবনে শিহাব যুহরী রহ. বলেন,) হাওয়াযিন গোত্রের বন্দীদের বিষয়ে এ হাদীসটিই আমি অবহিত হয়েছি।

হাদীস নং ৩৯৮৫

আবু নুমান রহ………….নাফি রহ. থেকে বর্ণিত যে, উমর রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ !……..! হাদীসটি অন্য সনদে মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা হুনায়নের যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করার কালে উমর রা .নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জাহিলিয়্যাতের যুগে মানত করা তাঁর একটি ইতিকাফ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সেটি পূরণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কেউ কেউ বলেছেন হাদীসটি হাম্মাদ-আইয়ূব-নাফে রহ. ইবনে উমর রা. সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া জারীর ইবনে হাযিম এবং হাম্মাদ ইবনে সালামা রহ.-ও এ হাদীসটি আইয়ূব, নাফে রহ. ইবনে উমর রা. সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৩৯৮৬

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বলেন, হুনায়নের বছর আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমরা যখন (যুদ্ধের জন্য) শত্রুদের মুখোমুখি হলাম তখন মুসলিমদের মধ্যে বিশৃংখলা দেখা দিল। এ সময় আমি মুশরিকদের এক ব্যক্তিকে দেখলাম সে মুসলিমদের এক ব্যক্তিকে পরাভূত কের ফেলেছে। তাই আমি কফের লোকটির পশ্চাৎ দিকে গিয়ে তরবারি দিয়ে তার কাঁধ ও ঘাড়ের মধ্যবর্তী শক্ত শিরার উপর আঘাত হানলাম এবং লোকটির পরিহিত লৌহ বর্মটি কেটে ফেললাম। এ সময় সে আমার উপর আক্রমণ করে বসলো এবং আমাকে এত জোরে চাপ দিয়ে জড়িয়ে ধরল যে, আমি আমার মৃত্যুর গন্ধ অনুভব করতে লাগলাম। এরপর লোকটিই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো আর আমাকে ছেড়ে দিল। এরপর আমি উমর রা.-এর কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, লোকজনের কি হল? তিনি বললেন, মহান ও শক্তিশালী আল্লাহর ইচ্ছা। এরপর সবাই (আবার) ফিরে এল (এবং মুশরিকদের উপর হামলা চালিয়ে যুদ্ধে জয়ী হল) যুদ্ধের পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এক স্থানে) বসলেন এবং ঘোষণা দিলেন, যে ব্যক্তি কোন মুশরিক যোদ্ধাকে হত্যা করেছে এবং তার কাছে এর প্রমাণ রয়েছে তাকে তার (নিহত ব্যক্তির) পরিত্যক্ত সব সম্পদ প্রদান করা হবে। এ ঘোষণা শুনে আমি (দাঁড়িয়ে সবাইকে লক্ষ্য করে) বললাম, আমার পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার মত কেউ আছে কি? (কিন্তু কোন জবাব না পেয়ে) আমি বসে পড়লাম। আবু কাতাদা রা. বলেন, (তারপর) আবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুরূপ ঘোষণা দিলেন। আমি দাঁড়িয়ে বললাম, আমার পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার মত কেউ আছে কি? কিন্তু (এবারও কোন সাড়া না পেয়ে) আমি বসে পড়লাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারপর অনুরূপ ঘোষণা দিলে আমি দাঁড়ালাম। আমাকে দেখে তিনি বললেন, আবু কাতাদা ! তোমার কি হয়েছে? আমি তাকে ব্যাপারটি জানালাম। এ সময়ে এক ব্যক্তি বলল, আবু কাতাদা রা. ঠিকই বলেছেন, তবে নিহত ব্যক্তির পরিত্যক্ত দ্রব্যগুলো আমার কাছে আছে। সুতরাং সেগুলো আমাকে দিয়ে দেওয়ার জন্য আপনি তাকে সম্মত করে দিন। তখন আবু বকর রা. বললেন, না, আল্লাহর শপথ, তা হতে পারে না। আল্লার সিংহদের এক সিংহ যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করেছে তার যুদ্ধলব্ধ দ্রব্যাদি তোমাকে দিয়ে দেয়ার ইচ্ছা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করতে পারেন না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবু বকর রা. ঠিকই বলছে। সুতরাং এসব দ্রব্য তুমি তাকে (আবু কাতাদা) দিয়ে দাও। (আবু কাতাদা রা. বলেন) তখন সে আমাকে পরিত্যক্ত দ্রব্যগুলো দিয়ে দিল। এ দ্রব্যগুলোর বিনিময়ে আমি বনী সালিমার এলাকায় একটি বাগান খরিদ করলাম। আর ইসলাম কবুল করার পর এটিই ছিল প্রথম উপার্জিত মাল যা দিয়ে আমি আমার অর্থের বুনিয়াদ রেখেছি। অপর সনদে লাইস রহ…………আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুনাইন যুদ্ধের দিন আমি দেখতে পেলাম যে, একজন মুসলিম এক মুশরিকের সাথে লড়াই করছে। অপর এক মুশরিক মুসলিম ব্যক্তির পেছন দিকে থেকে তাকে হত্যা করার জন্য আক্রমণ করছে। আমি আক্রমণকারীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। সে আমাকে আঘাত করার জন্য তার হাত উঠাল। আমি তার হাতের উপর আঘাত করলাম এবং তা কেটে ফেললাম। সে আমাকে ধরে সজোরে চাপ দিল। এমনকি আমি (মৃত্যুর) ভয় পেয়ে গেলাম। এরপর সে আমাকে ছেড়ে দিল ও সে দুর্বল হয়ে পড়ল। আমি তাকে আক্রমণ করে মেরে ফেললাম। মুসলিমগণ পালাতে লাগলেন। আমিও তাদের সাথে পালালাম। হঠাৎ লোকদের মাঝে উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-কে দেখতে পেয়ে আমি তাকে বললাম, লোকজনের অবস্থা কি? তিনি বললেন, আল্লাহর যা ইচ্ছা তাই হয়েছে। এরপর লোকেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ফিরে এলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যে মুসলিম ব্যক্তি (শত্রু দলের) কাউকে হত্যা করেছে বলে প্রমাণ পেশ করতে পারবে নিহত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদ সে-ই পাবে। আমি যে একজনকে হত্যা করেছি সে ব্যাপারে আমি দাঁড়িয়ে সাক্ষী খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু আমার পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার কাউকে পেলাম না। তখন আমি বসে পড়লাম। এরপর আমি ঘটনাটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বর্ণনা করলাম। তখন তাঁর সঙ্গীদের একজন বললেন, উল্লিখিত নিহত ব্যক্তির (পরিত্যক্ত) হাতিয়ার আমার কাছে আছে। তা আমাকে দিয়ে দেওয়ার জন্য আপনি তাকে সম্মত করে দিন। তখন আবু বকর রা. বললেন, না, তা হতে পারে না। আল্লাহর সিংহদের এক সিংহ যে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করেছে তাকে না দিয়ে এ কুরাইশী দুর্বল ব্যক্তিকে তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দিতে পারেন না। রাবী বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন এবং আমাকে তা দিয়ে দিলেন। আমি এর দ্বারা একটি বাগান খরিদ করলাম। আর ইসলাম কবুল করার পর এটিই ছিল প্রথম উপার্জিত মাল, যা দিয়ে আমি আমার অর্থের বুনিয়াদ রেখেছি।

হাদীস নং ৩৯৮৭ – আওতাসের যুদ্ধ।

মুহাম্মদ ইবনে আলা রহ………….আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুনাইন যুদ্ধ থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবসর হওয়ার পর তিনি আবু আমির রা.-কে একটি সৈন্যবাহিনীর আমীর নিযুক্ত করে আওতাস গোত্রের প্রতি পাঠালেন। যুদ্ধে তিনি (আবু আমির) দুরায়দ ইবন সিম্মার সাথে মুকাবিলা করলে দুরাইদ নিহত হয় এবং আল্লাহ তার সহযোগী যোদ্ধাদেরকেও পরাজিত করেন। আবু মূসা রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু আমির রা.-এর সাথে আমাকেও পাঠিয়েছিলেন। এ যুদ্ধে আবু আমির রা.-এর হাঁটুতে একটি তীর নিক্ষিপ্ত হয়। জুশাম গোত্রের এক লোক তীরটি নিক্ষেপ করে তাঁর হাঁটুর মধ্যে বসিয়ে দিয়েছিল। তখন আমি তাঁর কাছে গিয়ে বললাম, চাচাজান ! কে আপনার উপর তীর ছুঁড়েছে? তখন তিনি আবু মূসা রা.-কে ইশারার মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়ে বললেন, ঐ যে, ঐ ব্যক্তি আমাকে তীর মেরেছে। আমাকে হত্যা করেছে। আমি লোকটিকে লক্ষ্য করে তার কাছে গিয়ে পৌঁছলাম আর সে আমাকে দেখামাত্র ভাগতে শুরু করল। আমি এ কথা বলতে বলতে তার পশ্চাদ্ধাবন করলাম, (পালাচ্ছো কেন) বেহায়া দাঁড়াও না, দাঁড়াও। লোকটি থেমে গেল। এবার আমরা দুজনে তরবারি দিয়ে পরস্পরকে আক্রমণ করলাম এবং শেষ পর্যন্ত আমি ওকে হত্যা করে ফেললাম। তারপর আমি আবু আমির রা-কে বললাম, আল্লাহ আপনার আঘাতকারীকে হত্যা করেছেন। তিনি বললেন, (ঠিক আছে, এবার তুমি আমার হাঁটু থেকে) তীরটি বের করে দাও। আমি তীরটি বের করে দিলাম। তখন ক্ষতস্থান থেকে কিছু পানিও বেরিয়ে আসল। তিনি আমাকে বললেন, হে জাতিজা ! (আমি হয়তো বাঁচাব না) তাই তুমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার সালাম জানাবে এবং আমার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করতে বলবে। আবু আমির রা. তাঁর স্থলে আমাকে সেনাবাহিনীর আমীর নিযুক্ত করলেন। এরপর তিনি কিছুক্ষণ বেঁচেছিলেন, তারপর ইন্তিকাল করলেন। (যুদ্ধ শেষে) আমি ফিরে এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাড়ি প্রবেশ করলাম। তিনি তখন পাকানো দড়ির তৈরী একটি খাটিয়ায় শায়িত ছিলেন। খাটিয়ার উপর (নামেমাত্র) একটি বিছানা ছিল। কাজেই তাঁর পিঠে এবং পার্শ্ব দেশে পাকানো দড়ির দাগ পড়ে গিয়েছিল। আমি তাকে আমাদের এবং আবু আমির রা.-এর সংবাদ জানালাম। (তাকে এ কথাও বললাম যে,) তিনি (মৃত্যুর পূর্বে) বলে গিয়েছেন, তাকে (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) আমার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করতে বলবে। এ কথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি আনাতে বললেন এবং ওযু করলেন। তারপর তাঁর দুহাত উপরে তুলে তিনি দোয়া করে বললেন, হে আল্লাহ ! তোমার প্রিয় বান্দা আবু আমিরকে মাগফিরাত দান কর। (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়ার মুহূর্তে হাতদ্বয় এত উপরে তুললেন যে) আমি তাঁর বগলদ্বয়ের শুভ্রাংশ পর্যন্ত দেখতে পেয়েছি। তারপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ ! কিয়ামত দিবসে তুমি তাকে তোমার অনেক মাখলুকের উপর, অনেক মানুষের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করো। আমি বললাম, আমার জন্যও (দোয়া করুন)। তিনি দোয়া করলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ ! আবদুল্লাহ ইবনে কায়সের গুনাহ ক্ষমা করে দাও এবং কিয়ামত দিবসে তুমি তাকে সম্মানিত স্থানে প্রবেশ করাও। রাবী আবু বুরদা রা. বলেন, দুটি দোয়ার একটি ছিল আবু আমির রা.-এর জন্য আর অপরটি ছিল আবু মূসা (আশআরী) রা.-এর জন্য।

হাদীস নং ৩৯৮৮ – তায়েফের যুদ্ধ।

হুমাইদী রহ…………উম্মে সালমা রা. থেকে থেকে বর্ণিত যে, আমার কাছে এক হিজড়া ব্যক্তি বসা ছিল, এমন সময়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। আমি শুনলাম, সে (হিজড়া ব্যক্তি) আবদুল্লাহ ইবনে আবু উমাইয়া রা.-কে বলছে, হে আবদুল্লাহ ! কি বলো, আগামীকাল যদি আল্লাহ তোমাদেরকে তায়েফের উপর বিজয় দান করেন তাহলে গায়লানের কন্যাকে অবশ্যই তুমি লুফে নেবে। কেননা সে (এতই স্থুল দেহ ও কোমল যে) সামনের দিকে আসার সময়ে তার পিঠে চারটি ভাঁজ পড়ে আবার পিঠ ফিরালে সেখানে আটটি ভাঁজ পড়ে। (উম্মে সালামা রা. বলেন) তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এদেরকে (হিজড়াদেরকে) তোমাদের কাছে প্রবেশ করতে দিও না। ইবনে উয়াইনা রা. বর্ণনা করেন যে, ইবনে জুরাইজ রা. বলেছেন, হিজড়া লোকটির নাম ছিল হীত।

হাদীস নং ৩৯৮৯

মাহমুদ রহ…………হিশাম রহ. থেকে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে তিনি এ হাদীসে এতটুকু বৃদ্ধি করেছেন যে, সেদিন তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তায়েফ অবরোধ করা অবস্থায় ছিলেন।

হাদীস নং ৩৯৯০

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ…………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তায়েফ অবরোধ করলেন। (এবং দীর্ঘ পনেরোরও অধিক দিন পর্যন্ত অবরোধ চালিয়ে গেলেন) কিন্তু তাদের কাছ থেকে কিছুই হাসিল করতে পারেননি। তাই তিনি বললেন, ইনশা আল্লাহ আমরা (অবরোধ উঠিয়ে মদীনার দিকে) ফিরে যাব। কথাটি সাহাবীদের মনে ভারী অনুভূত হল। তাঁরা বললেন, আমরা চলে যাব, তায়েফ বিজয় করব না? রাবী একবার কাফিলুন শব্দের স্থলে নাকফুলো (অর্থাৎ আমরা যুদ্ধবিহীন ফিরে যাব) বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঠিক আছে, সকালে গিয়ে লড়াই করো। তাঁরা (পরদিন) সকালে লড়াই করতে গেলেন, এতে তাদের অনেকেই আহত হলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইনশা আল্লাহ আমরা আগামীকাল ফিরে চলে যাব। তখন সাহাবাদের কাছে কথাটি মনঃপূত হল। এ অবস্থা দেখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে দিলেন। রাবী সুফিয়ান রহ. একবার বর্ণনা করেছেন যে, তিনি মুচকি হাসি হেসেছেন। হুমাইদী রহ. বলেন, সুফিয়ান আমাদিগকে এ হাদীসের পূর্ণ সূত্রটিতে ‘খবর’ শব্দ প্রয়োগ করে বর্ণনা করেছেন (অর্থাৎ কোথাও ‘আন’ শব্দ প্রয়োগ করেন নি)।

হাদীস নং ৩৯৯১

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………….আবু উসমান (নাহদী রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হাদীসটি শুনেছি সাদ থেকে, যিনি আল্লাহর পথে গিয়ে সর্বপ্রথম তীর নিক্ষেপ করেছিলেন এবং আবু বকর রা. থেকেও শুনেছি যিনি (তায়েফ অবরোধক) সেখানকার স্থানীয় কয়েকজনসহ তায়েফের পাঁচিলের উপ চড়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসেছিলেন। তাঁরা দু’জনই বলেছেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি তার জানা থাকা সত্ত্বেও অন্যকে নিজের পিতা বলে দাবি করে, তার জন্য জান্নাত হারাম। হিশাম রহ. বলেন, মামার রহ. আমাদের কাছে আসিম-আবুল আলিয়া রহ. অথবা আবু উসমান নাহদী রহ. থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, আমি সাদ এবং আবু বকর রা.-এর মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীসটি শুনেছি। আসিম রহ. বলেন, আমি (আবুল আলিয়া অথবা আবু উসমান) রহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, নিশ্চয় আপনাকে হাদীসটি এমন দু’জন রাবী বর্ণনা করেছেন। যাদেরকে আপনি আপনার নিশ্চয়তার জন্য যথেষ্ট মনে করেন। তিনি উত্তরে বললেন, অবশ্যই, কেননা তাদের একজন হলেন সেই ব্যক্তি যিনি আল্লাহর রাস্তায় সর্বপ্রথম তীর নিক্ষেপ করেছিলেন। আর অপর জন হলেন যিনি তায়েফের (নগরপাচিঁল টপকিয়ে) এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাৎকারী তেইশ জনের একজন।

হাদীস নং ৩৯৯২

মুহাম্মদ ইবনে আলা রহ…………আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল রা-সহ মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী জিরানা নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। তখন আমি তাঁর কাছে ছিলাম। এমন সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এক বেদুঈন এসে বলল, আপনি আমাকে যে ওয়াদা দিয়েছিলেন তা পূরণ করবেন না? তিনি তাকে বললেন, সুসংবাদ গ্রহণ করো। সে বলল, সুসংবাদ গ্রহণ কর কথাটি তো আপনি আমাকে অনেকবারই বলেছেন। তখন তিনি আবু মূসা ও বিলাল রা.-এর দিকে ফিরে সক্রোধে বললেন, লোকটি সুসংবাদ ফিরেয়ে দিয়েছে। তোমরা দু’জন তা গ্রহণ কর। তাঁরা উভয়ে বললেন, আমরা তা গ্রহণ করলাম। এরপর তিনি পানি ভরে একটি পাত্র আনতে বললেন। (পানি আনা হলো) তিনি এর মধ্যে নিজের উভয় হাত ও মুখমণ্ডল ধুয়ে কুল্লি করলেন। তারপর (আবু মূসা ও বিলাল রা.-কে) বললেন, তোমরা উভয়ে এ থেকে পানি পান কর এবং নিজেদের মুখমণ্ডল ও বুকে ছিটিয়ে দাও। আর সুসংবাদ গ্রহণ কর। তাঁরা উভয়ে পাত্রটি তুলে নিয়ে যথা নির্দেশ কাজ করলেন। এমন সময় উম্মে সালামা রা. পর্দার আড়াল থেকে ডেকে বললেন, তোমাদের মায়ের জন্যও কিছু অবশিষ্ট রেখে দিও। অতএব তাঁরা এ থেকে অবশিষ্ট কিছু উম্মে সালমা রা.-এর জন্য রেখে দিলেন।

হাদীস নং ৩৯৯৩

ইয়াকুব ইবনে ইবরাহীম রহ……………সাফওয়ান ইবনে ইয়ালা ইবনে উমাইয়া রহ. থেকে বর্ণিত যে, ইয়ালা রা. (অনেক সময়) বলতেন যে, আহা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর ওহী অবতীর্ণ হওয়ার মুহূর্তে যদি তাকে দেখতে পেতাম। ইয়ালা রা. বলেন, এরই মধ্যে একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিরানা নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। তাঁর (মাথার) উপর একটি কাপড় টানিয়ে ছায়া করে দেয়া হয়েছিল। আর সেখানে তাঁর সঙ্গে সাহাবীদের কয়েকজনও উপস্থিত ছিলেন। এমন সময় তাঁর কাছে এক বেদুঈন আসল। তার গায়ে খুশবু মাখানো ছিল এবং পরনে ছিল একটি জোব্বা। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে আপনি কী মনে করেন যে গায়ে খুশবু মাখানোর পর জোব্বা পরিধান করা অবস্থায় উমরা আদায়ের জন্য ইহরাম বেঁধেছে? (প্রশ্নকারীর জবাব দেয়ার পূর্বেই উমর রা. দেখলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারায় ওহী অবতীর্ণ হওয়ার চিহ্ন দেখা যাচ্ছে) তাই উমর রা. হাত দিয়ে ইশারা করে ইয়ালা রা.-কে আসতে বললেন। ইয়ালা রা. এলে উমর রা. তাঁর মাথাটি (ছায়ার নিচে) ঢুকিয়ে দিলেন। তখন তিনি (ইয়ালা) দেখতে পেলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারা লাল বর্ণ হয়ে রয়েছে। আর ভিতরে শ্বাস দ্রুত যাতায়াত করছে। এ অবস্থা কিছুক্ষণ পর্যন্ত ছিল, তারপর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এল। তখন তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে লোকটি কোথায়, কিছুক্ষণ আগে যে আমাকে উমরার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিল। এরপর লোকটি খুঁজে আনা হলে তিনি বললেন, তোমার গায়ে যে খুশবু রয়েছে তা তুমি তিনবার ধুয়ে ফেল এবং জোব্বাটি খুলে ফেল। তারপর হজ্জ আদায়ে যা কিছু করে থাক উমরাতেও সেগুলোই পালন কর।

হাদীস নং ৩৯৯৪

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ…………..আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ ইবন আসিম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুনাইনের দিবসে আল্লাহ যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে গনীমতের সম্পদ দান করলেন তখন তিনি ঐগুলো সেসব মানুষের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন যাদের হৃদয়কে ঈমানের উপর সুদৃঢ় করার প্রয়োজন তিনি অনুভব করেছিলেন। আর আনসারগণকে কিছুই তিনি দেননি। ফলে তাঁরা যেন নাখোশ হয়ে গেলেন। কেননা অন্যান্য লোক যা পেয়েছে তাঁরা তা পান নি। অথবা তিনি বলেছেন : তাঁরা যেন দুঃখিত হয়ে গেলেন। কেননা অন্যান্য লোক যা পেয়েছে তারা তা পাননি। কাজেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, হে আনসারগণ ! আমি কি তোমাদেরকে গুমরাহীর মধ্যে লিপ্ত পাইনি, যার পরে আল্লাহ আমার দ্বারা তোমাদেরকে হেদায়েত দান করেছেন? তোমরা ছিলে পরস্পর বিচ্ছিন্ন, যার পর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরকে জুড়ে দিয়েছেন। তোমরা ছিলে রিক্তহস্ত, যার পরে আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে অভাবমুক্ত করেছেন। এভাবে যখনই তিনি কোন কথা বলেছেন তখন আনসারগণ জবাবে বলতেন, আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলই আমাদের উপর অধিক ইহসানকারী। তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূলের জবাব দিতে তোমাদেরকে বাধা দিচ্ছে কিসে? তাঁরা তখনও তিনি যা কিছু বলছেন তার উত্তরে বলে গেলেন, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই আমাদের উপর অধিক ইহসানকারী। তিনি বললেন, তোমরা ইচ্ছা করলে বলতে পার যে, আপনি আমাদের কাছে এমন এমন (সংকটময়) সময়ে এসেছিলেন (যেগুলোকে আমরা বিদূরিত করেছি এবং আপনাকে সাহায্য করেছি) কিন্তু তোমরা কি এ কথায় সন্তুষ্ট নও যে, অন্যান্য লোক বকরী ও উট নিয়ে ফিরে যাবে আর তোমরা তোমাদের বাড়ি ফিরে যাবে আল্লাহর নবীকে সাথে নিয়ে। যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাকে হিজরত করানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত না থাকত তাহলে আমি আনসারদের মধ্যকারই একজন থাকতাম। যদি লোকজন কোন উপত্যকা ও গিরিপথ দিয়ে চলে তাহলে আমি আনসারদের উপত্যকা ও গিরিপথ দিয়েই চলব। আনাসরগণ হল (নববী) দেহ সংযুক্ত গেঞ্জি আর অন্যান্য লোক হল উপরের জামা। আমার বিদায়ের পর অচিরেই তোমরা দেখতে পাবে অন্যদের অগ্রাধিকার। তখন ধৈর্যধারণ করবে (দীনের উপর টিকে থাকবে) অবশেষে তোমরা হাউজে কাউসারে আমার সঙ্গে সাক্ষাত করবে।

হাদীস নং ৩৯৯৫

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ…………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন আল্লাহ তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হাওয়াযিন গোত্রের সম্পদ থেকে গনীমত হিসেবে যতটুকু দান করতে চেয়েছেন দান করলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতিপয় লোককে এক একশ করে উট দান করতে লাগলেন। (এ অবস্থা দেখে) আনসারদের কিছুসংখ্যক লোক বলে ফেললেন, আল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ক্ষমা করুন, তিনি আমাদেরকে বাদ দিয়ে কুরাইশদেরকে (গনীমতের মাল) দিচ্ছেন। অথচ আমাদের তরবারি থেকে এখনো তাদের তাজা রক্ত টপকাচ্ছে। আনাস রা বলেন, তাদের এ কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বর্ণনা করা হলে তিনি আনসারদের কাছে সংবাদ পাঠালেন এবং তাদেরকে একটি চামড়ার তৈরী তাবুতে জমায়েত করলেন। এবং তাঁরা ব্যতীত অন্য কাউকে এখানে উপস্থিত থাকতে অনুমতি দেননি। এরপর তাঁরা সবাই জমায়েত হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে বললেন, তোমাদের কাছ থেকে কি কথা আমার নিকট পৌঁছলো? আনসারদের বিজ্ঞ উলামাবৃন্দ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমাদের নেতৃস্থানীয় কেউ তো কিছু বলেনি, তবে আমাদের কতিপয় কমবয়সী লোকেরা বলেছে যে, আল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ক্ষমা করুন, তিনি আমাদেরকে বাদ দিয়ে কুরাইশদেরকে (গনীমতের মাল) দিচ্ছেন। অথচ আমাদের তরবারিগুলো থেকে এখনো তাদের তাজা রক্ত টপকাচ্ছে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি অবশ্য এমন কিছু লোককে (গনীমতের মাল) দিচ্ছি যারা সবেমাত্র কুফর ত্যাগ করে ইসলামে প্রবেশ করেছে। আর তা এ জন্য যেন তাদের মনকে আমি ঈমানের উপর সুদৃঘ করতে পারি। তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, অন্যান্য লোক ফিরে যাবে ধন-সম্পদ নিয়ে আর তোমরা বাড়ি ফিরে যাবে (আল্লাহর) নবীকে সঙ্গে নিয়ে? আল্লাহর কসম, তোমরা যে জিনিস নিয়ে ফিরে যাবে তা অনেক উত্তম ঐ ধন-সম্পদ অপেক্ষা, যা নিয়ে তারা ফিরে যাচ্ছে। আনসারগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমরা এতে সন্তুষ্ট থাকলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, অচিরেই তোমরা (নিজেদের উপর) অন্যদের প্রাধান্য প্রবলভাবে অনুভব করতে থাকবে। অতএব, আমার মৃত্যুর পর আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের সঙ্গে সাক্ষাত করা পর্যন্ত তোমরা সবর করে থাকবে। আমি হাউযে কাউসারের নিকট থাকব। আনাস রা. বলেন, কিন্তু তাঁরা (আনসাররা) সবর করেননি।

হাদীস নং ৩৯৯৬

সুলাইমান ইবনে হারব রহ………….আনাস (ইবনে মালিক) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশদের মধ্যে গনীমতের মাল বণ্টন করে দিলেন। এতে আনসারগণ নাখোশ হয়ে গেলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট না যে, লোকজন পার্থিব সম্পদ নিয়ে ফিরে যাবে আর তোমরা আল্লাহর রাসূলকে নিয়ে ফিরবে? তাঁরা উত্তর দিলেন, অবশ্যই (সন্তুষ্ট থাকব)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি লোকজন কোন উপত্যকা বা গিরিপথ দিয়ে অতিক্রম করে তাহলে আমি আনসারদের উপত্যকা বা গিরিপথ দিয়ে অতিক্রম করব।

হাদীস নং ৩৯৯৭

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুনাইনের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাওয়াযিন গোত্রের মুখোমুখি হলেন। তাঁর সঙ্গে ছিল দশ হাজার (মুহাজির ও আনসার সৈনিক) এবং (মক্কা বিজয়ের দিন ইসলাম গ্রহণকারী) নও-মুসলিমগণ। যুদ্ধে এরা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করল। এ মুহূর্তে তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ওহে আনসার সকল ! তাঁরা জওয়াব দিলেন, আমরা হাযির, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনার সাহায্য করতে আমরা প্রস্তুত এবং আপনার সামনেই আমরা উপস্থিত। (অবস্থা আরো তীব্র আকার ধারণ করলে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাওয়ারী থেকে নেমে পড়লেন আর বলতে থাকলেন, আমি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল। (শেষ পর্যন্ত) মুশরিকরাই পরাজিত হলো। (যুদ্ধশেষে) তিনি নও-মুসলিম এবং মুহাজিরদেরকে (গনীমতের সম্পূর্ণ সম্পদ) বণ্টন করে দিলেন। আর আনসারদেরকে কিছুই দিলেন না। এতে তারা নিজেদের মধ্যে সে কথা বলাবলি করছিল। তখন তিনি তাদেরকে ডেকে এনে একটি তাঁবুর ভিতর একত্রিত করলেন এবং বললেন, তোমরা কি সন্তুষ্ট থাকবে না যে, লোকজন তো বকরী ও উট নিয়ে চলে যাবে আর তোমরা চলে যাবে আল্লাহর রাসূলকে নিয়ে। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বললেন, যদি লোকজন একটি উপত্যকা দিয়ে গমন করে আর আনসারগণ একটি গিরিপথ দিয়ে গমন করে তাহলে আমি আমার জন্য আনসারদের গিরিপথকেই গ্রহণ করব।

হাদীস নং ৩৯৯৮

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ…………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের লোকজনকে জমায়েত করে বললেন, কুরাইশরা অতি সাম্প্রতিকালের জাহিলিয়াত বর্জনকারী (নও-মুসলিম) এবং দুর্দশাগ্রস্ত। তাই আমি তাদেরকে অনুদান দিয়ে তাদের মন জয় করার ইচ্ছা করেছি। তোমরা কি সন্তুষ্ট থাকবে না যে, অন্যান্য লোক পার্থিব ধন-সম্পদ নিয়ে ফিরে যাবে আর তোমরা তোমাদের ঘরে ফিরে যাবে আল্লাহর রাসুলকে নিয়ে। তারা বললেন, অবশ্যই (সন্তুষ্ট থাকবে)। তিনি আরো বললেন, যদি লোকজন একটি উপত্যকা দিয়ে অতিক্রম করে আর আনসারগণ একটি গিরিপথ দিয়ে অতিক্রম করে যায়, তাহলে আমি আনসারদের গিরিপথ অথবা তিনি বলেছেন, আনসারদের উপত্যকা দিয়েই অতিক্রম করে যাব।

হাদীস নং ৩৯৯৯

কাবীসা রহ…………আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনাইনের গনীমত বণ্টন করে দিলেন, তখন আনসারদের এক ব্যক্তি বলে ফেলল যে, এই বণ্টনের এবং তাকে কথাটি জানিয়ে দিলাম। তখন তাঁর চেহারার রং পরিবর্তিত হয়ে গেল। এরপর তিনি বললেন, আল্লাহ, মূসা আ.-এর উপর রহমত বর্ষণ করুন। তাকে এর চেয়েও অধিক কষ্ট দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি সবর করেছিলেন।

হাদীস নং ৪০০০

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ……….আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) রা. বর্ণিত, তিনি বলেন, হুনাইনের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কোন লোককে (গনীমতের মাল) বেশি বেশি করে দিয়েছিলেন। যেমন আকরাকে একশ উট দিয়েছিলেন। উয়ায়নাকে অনুরূপ (একশ উট) দিয়েছিলেন। এভাবে আরো কয়েকজনকে দিয়েছেন। এতে এক ব্যক্তি বলে উঠলো, এ বণ্টন পদ্ধতিতে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্য রাখা হয়নি। (রাবী বলেন) আমি বললাম, অবশ্যই আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা জানিয়ে দিব। এরপর (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাটি শুনে) বললেন, আল্লাহ মূসা আ.-এর উপর করুণা বর্ষণ করুন। তাকে এর চেয়েও অধিক কষ্ট দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি ধৈর্যধারণ করেছেন।

হাদীস নং ৪০০১

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুনাইনের দিন হাওয়াযিন, গাতফান ইত্যাদি গোত্র নিজেদের গৃহপালিত চতুষ্পদ প্রাণী ও সন্তান-সন্ততিসহ যুদ্ধক্ষেত্রে এল। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিল দশ হাজার তুলাকা সৈনিক। যুদ্ধে তারা সবাই তাঁর পাশ থেকে পিছনে সরে গেল। ফলে তিনি একাকী রয়ে যান। সেই সংকট মুহূর্তে তিনি আলাদা আলাদাভাবে দুটি ডক দিয়েছিলেন, তিনি ডান দিক ফিরে বলেছিলেন, ওহে আনসারসকল। তাঁরা সবাই উত্তর করলেন, আমরা হাযির ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি সুসংবাদ নিন, আমরা আপনার সঙ্গেই আছি। এরপর তিনি বাম দিকে ফিরে বলেছিলেন, ওহে আনসারসকল। তাঁরা সবাই উত্তর করলেন, আমরা হাযির ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি সুসংবাদ নিন, আমরা আপনার সঙ্গেই আছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাদা রঙের খচ্চরটির পিঠে ছিলেন। (অবস্থা আরো তীব্র হলে) তিনি নিচে নেমে পড়লেন এবং বললেন, আমি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল। (শেষ পর্যন্ত) মুশরিক দলই পরাজিত হল। সে যুদ্ধে বিপুল পরিমাণ গনীমত হস্তগত হল। তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেসব সম্পদ মুহাজির এবং নও-মুসলিমদের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। আর আনসারদেরকে তার কিছুই দেননি। তখন আনসারদের (কেউ কেউ) বললেন, কঠিন মুহূর্তে আসলে আমাদেরকে ডাকা হয় আর গনীমত অন্যদেরকে দেওয়া হয়। কথাটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছে গেল। তাই তিনি তাদেরকে একটি তাঁবুতে জমায়েত করে বললেন, হে আনসারগণ ! একি কথা আমার কাছে পৌঁছল? তাঁরা চুপ করে থাকলেন। তিনি বললেন, হে আনসারগণ ! তোমরা কি খুশি থাকবে না যে, লোকজন দুনিয়ার ধন-সম্পদ নিয়ে ফিরে যাবে আর তোমরা (বাড়ি) ফিরে যাবে আল্লাহর রাসূলকে সঙ্গে নিয়ে? তাঁরা বললেন: অবশ্যই। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি লোকজন একটি উপত্যকা দিয়ে চলে আর আনসারগণ একটি গিরিপথ দিয়ে চলে তাহলে আমি আনসারদের গিরিপথকেই গ্রহণ করে নেব। রাবী হিশাম রহ. বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আবু হামযা (আনাস ইবনে মালিক) আপনি কি এ ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন? উত্তরে তিনি বললেন, আমি তাঁর কাছ থেকে আলাদা থাকতাম বা কখন? (যে আমি তখন সেখানে থাকব না)।

হাদীস নং ৪০০২ – নাজদের দিকে প্রেরিত অভিযান।

আবু নুমান রহ………….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজদের দিকে একটি সৈন্যদল পাঠিয়েছিলেন, তাতে আমিও ছিলাম। (এ যুদ্ধে প্রাপ্ত গনীমতের অংশে) আমাদের সবার ভাগে বারোটি করে উট পৌঁছল। উপরন্তু আমাদেরকে একটি করে উট বেশিও দেওয়া হল। কাজেই আমরা সকলে তেরোটি করে উট নিয়ে ফিরে আসলাম।

হাদীস নং ৪০০৩ – মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রা.-কে জাযিমার দিকে প্রেরণ।

মাহমূদ (ইবনে গায়লান) ও নুআইম রহ………….সালিমের পিতা (আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রা.-কে বনী জাযিমার বিরুদ্ধে এক অভিযানে পাঠিয়েছিলেন। (সেখানে পৌঁছে) খালিদ রা. তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। (তারা দাওয়াত কবূল করেছিল) কিন্তু আমরা ইসলাম কবূল করলাম, এ কথাটি বুঝিয়ে বলতে পারছিল না। তাই তারা বলতে লাগল, আমরা স্বধর্ম ত্যাগ করলাম, আমরা স্বধর্ম ত্যাগ করলাম। খালিদ তাদেরকে হত্যা ও বন্দী করতে থাকলেন। এবং আমাদের প্রত্যেকের কাছে বন্দীদেরকে সোপর্দ করতে থাকলেন। অবশেষে একদিন তিনি আদেশ দিলেন আমাদের সবাই যেন নিজ নিজ বন্দীকে হত্যা করে ফেলি। আমি বললাম, আল্লাহর কসম, আমি আমার বন্দীকে হত্যা করব না। আর আমার সাথীদের কেউই তার বন্দীকে হত্যা করবে না (কারণ ব্যাপারটি সন্দেহযুক্ত)। অবশেষে আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ফিরে আসলাম। আমরা তাঁর কাছে এ ব্যাপারটি উল্লেখ করলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন দুহাত তুলে বললেন, হে আল্লাহ ! খালিদ যা করেছে আমি তার দায় থেকে মুক্ত (আমি এর সাথে জড়িত নই)। এ কথাটি তিনি দু’বার বলেছেন।

হাদীস নং ৪০০৪ – আবদুল্লাহ ইবনে হুযাফা সাহমী এবং আলকামা ইবনে মুযাযবিল মুদাল্লিজীর সৈন্যবাহিনী, যাকে আনসারদের সৈন্যবাহিনীও বলা হয়।

মুসাদ্দাদ রহ………….আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক অভিযানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সৈন্যবাহিনী পাঠিয়েছিলেন। এবং আনসারদের এক ব্যক্তিকে তার সেনাপতি নিযুক্ত করে তিনি তাদেরকে তাঁর (সেনাপতির) আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। (পরে কোন কারণে) আমীর ক্রুদ্ধ হয়ে গেলেন। তিনি বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তোমাদেরকে আমার আনুগত্য করতে নির্দেশ দেননি? তাঁরা বলল, অবশ্যই। তিনি বললেন, তাহলে তোমরা আমার জন্য কিছু কাঠ সংগ্রহ কর। তাঁরা কাঠ সংগ্রহ করলেন। তিনি বললেন, এগুলোতে আগুন লাগিয়ে দাও। তাঁরা আগুন লাগালেন। তখন তিনি বললেন, এবার তোমরা সকলে এ আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়। (আদেশ মত) তাঁরা ঝাঁপ দেয়ার সংকল্পও করে ফেললেন। কিন্তু তাদের কয়েকজন বাধা দিয়ে বলতে লাগলেন, আগুন থেকেই তো আমরা পালিয়ে গিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আশ্রয় নিয়েছিলাম। (অথচ এখানে সেই আগুনেই ঝাঁপ দেয়াররই আদেশ) এভাবে জ্বলতে জ্বলতে অবশেষে আগুন নিভে গেল এবং তার ক্রোধও থেমে গেল। এরপর এ সংবাদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পৌঁছলে তিনি বললেন, যদি তারা আগুনে ঝাঁপ দিত তাহলে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত আর এ আগুন থেকে বের হতে পারত না। কেননা আনুগত্য কেবল সৎ কাজের।

হাদীস নং ৪০০৫ – বিদায় হজ্জের পূর্বে আবু মূসা আশআরী রা. এবং মুআয (ইবনে জাবাল) কে ইয়ামানের উদ্দেশ্যে প্রেরণ।

মূসা রহ………….আবু বুরদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু মূসা এবং মুআয ইবনে জাবাল রা-কে ইয়ামানের উদ্দেশ্য পাঠালেন। রাবী বলেন, তৎকালে ইয়ামানে দুটি প্রদেশ ছিল। তিনি তাদের প্রত্যেককে ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশে পাঠিয়ে বলে দিলেন, তোমরা (এলাকাবাসীদের সাথে) কোমল আচরণ করবে, কঠিন আচরণ করবে না। এলাকাবাসীদের মনে সুসংবাদের মাধ্যমে উৎসাহ সৃষ্টি করবে, অনীহা সৃষ্টি হতে দেবে না। এরপর তাঁরা দুজনে নিজ নিজ শাসন এলাকায় চলে গেলেন। আবু বুরদা রা. বললেন, তাদের প্রত্যেকেই যখন নিজ নিজ এলাকায় সফর করতেন এবং অন্যজনের কাছাকাছি স্থানে পৌঁছে যেতেন তখন তাঁর সাথে সাক্ষাৎ হলে তাদের সালাম বিনিময় করতেন। এভাবে মুআয রা. একবার তাঁর এলাকায় এমন স্থানে সফর করছিলেন, যে স্থানটি তাঁর সাথী আবু মূসা রা.-এর এলাকার নিকটবর্তী ছিল। সুযোগ পেয়ে তিনি খচ্চরের পিঠে চড়ে (আবু মূসার এলাকায়) পৌঁছে গেলেন। তখন তিনি দেখলেন যে আবু মূসা রা. বসে আছেন আর তাঁর চারপাশে অনেক লোক জমায়েত হয়ে রয়েছে। আরো দেখলেন, পাশে এক লোককে তার গলার সাথে উভয় হাত বেঁধে রাখা হয়েছে। মুআয রা. তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আবদুল্লাহ ইবনে কায়েস ! এ লোকটি কে? তিনি উত্তর দিলেন, এ লোকটি ইসলাম গ্রহণ করার পর মুরতাদ হয়ে গেছে। মুআয রা. বলেন, তাকে হত্যা না করা পর্যন্ত আমি সাওয়ারী থেকে অবতরণ করব না। আবু মূসা রা. বললেন, এ উদ্দেশ্যেই তাকে এখানে আনা হয়েছে। সুতরাং আপনি অবতরণ করুন। তিনি বললেন, না তাকে হত্যা না করা পর্যন্ত আমি নামব না। ফলে আবু মূসা রা. হুকুম করলেন এবং লোকটিকে হত্যা করা হল। এরপর মুআয রা. অবতরণ করলেন। মুআয রা. বললেন, হে আবদুল্লাহ ! আপনি কিভাবে কুরআন তিলাওয়াত করেন? তিনি বললেন, আমি (রাত-দিনের সব সময়ই) কিছুক্ষণ পরপর কিছু অংশ কর তিলাওয়াত করে থাকি। তিনি বললেন, আর আপনি কিভাবে তিলাওয়াত করেন, হে মুআয ! উত্তরে তিনি বললেন, আমি রাতের প্রথম ভাগে শুয়ে পড়ি এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিদ্রা যাওয়ার পর আমি উঠে পড়ি। এরপর আল্লাহ আমাকে যতটুকু তাওফীক দান করেন তিলাওয়াত করতে থাকি। এ পদ্ধতি অবলম্বন করার জন্য আমি আমার নিদ্রার অংশকেও সাওয়াবের বিষয় বলে মনে করি, যেভাবে আমি আমার তিলাওয়াতকে সাওয়াবের বিষয় বলে মনে করে থাকি।

হাদীস নং ৪০০৬

ইসহাক রহ…………আবু মূসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে (আবু মূসাকে গভর্নর নিযুক্ত করে) ইয়ামানে পাঠিয়েছেন। তখন তিনি ইয়ামানে তৈরী করা হয় এমন কতিপয় শরাব সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললন, ঐগুলো কি কি? আবু মূসা রা. বললেন, তাহল বিতউ ও মিযর শরাব। রাবী সাঈদ রহ. বলেন, (কথার ফাকেঁ) আমি আবু বুরদাকে জিজ্ঞাসা করলাম, বিতউ কি? তিনি বললেন, বিতউ হলো মধু থেকে গ্যাজানো রস আর মিযর হল যবের গ্যাজানো রস। (সাঈদ বলেন) তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সকল নেশা উৎপাদক বস্তুই হারাম। হাদীসটি জারীর এবং আবদুল ওয়াহিদ শায়বানী রহ.-এর মাধ্যমে আবু বুরদা রা. সূত্রেও বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৪০০৭

মুসলিম রহ…………..আবু বুরদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তার দাদা আবু মূসা ও মুআয রা-কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (গভর্নর হিসেবে) ইয়ামানে পাঠালেন। এ সময় তিনি (উপদেশস্বরূপ) বলে দিয়েছিলেন, তোমরা লোকজনের সাথে কোমল আচরণ করবে। কখনো কঠিন আচরণ করব না। মানুষের মনে সুসংবাদের মাধ্যমে উৎসাহ সৃষ্টি করবে। কখনো তাদের মনে অনীহা আসতে দিবে না এবং একে অপরকে মেনে চলবে। আবু মূসা বললেন, হে আল্লাহর নবী ! আমাদের এলাকায় মিযর নামের এক প্রকার শরাব যব থেকে তৈরী করা হয় আর বিতউ নামের এক প্রকার শরাব মধু থেকে তৈরী করা হয় (অতএব এগুলোর হুকুম কি?) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নেশা উৎপাদনকারী সকল বস্তুই হারাম। এরপর দুজনেই চলে গেলেন। মুআয আবু মূসাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কিভাবে কুরআন তিলাওয়াত করেন? তিনি উত্তর দিলেন, দাঁড়িয়ে, বসে সাওয়ারীর পিঠে সাওয়ার অবস্থায় এবং কিছুক্ষণ পরপরই তিলাওয়াত করি। তিনি বললেন, তবে আমি রাতের প্রথমদিকে ঘুমিয়ে পড়ি তারপর (শেষ ভাগে তিলাওয়াতের জন্য নামাযে) দাঁড়িয়ে যাই। এ রকমে আমি আমার নিদ্রার সময়কেও সাওয়াবের অন্তর্ভূক্ত মনে করি যেভাবে আমি আমার নামাযে দাঁড়ানোকে সাওয়াবের বিষয় মনে করে থাকি। এরপর (প্রত্যেকেই নিজ নিজ শাসন এলাকায় কার্যপরিচালনার জন্য) তাঁবু খাটালেন। এবং পরস্পরের সাক্ষাৎ বজায় রেখে চললেন। (সে মতে এক সময়) মুআয রা. আবু মূসা রা.-এর সাক্ষাতে এসে দেখলেন সেখানে এক ব্যক্তি হাতপা বাঁধা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এ লোকটি কে? আবু মূসা রা. বললেন, লোকটি ইহুদী ছিল, ইসলাম গ্রহণ করার পর মুরতাদ হয়ে গেছে। মুআয রা. বললেন, আমি ওর গর্দান উড়িয়ে দেব। শুবা (ইবনুল হাজ্জাজ) থেকে আফাদী এবং ওয়াহাব অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আর ওকী রহ. নযর ও আবু দাউদ রহ. এ হাদীসের সনদে শুবা রহ.- সাঈদ-সাঈদের পিতা-সাঈদের দাদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি জারীর ইবনে আবদুল হামীদ রহ. শায়বানী রহ.-এর মাধ্যমে আবু বুরদার সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৪০০৮

আব্বাস ইবনে ওয়ালীদ রহ…………আবু মূসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আমার গোত্রের এলাকায় (গভর্নর নিযুক্ত করে) পাঠালেন। (আমি সেখানেই রয়ে গেলেম। এরপর বিদায় হজ্জের বছর আমিও হজ্জ করার জন্য আসলাম) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবতাহ নামক স্থানে অবস্থান করার সময় আমি তাঁর সাক্ষাতে উপস্থিত হলাম। তিনি আমাকে বললেন, হে আবদুল্লাহ ইবনে কায়েস, তুমি ইহরাম বেঁধেছ কি? আমি বললাম, জী হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তিনি বললেন, (তালবিয়া) কিরূপে বলেছিলে? আমি উত্তর দিলাম, আমি তালবিয়া এরূপ বলেছি যে, হে আল্লাহ ! আমি হাযির হয়েছি এবং আপনার (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) ইহরামের মত ইহরাম বাঁধলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আচ্ছা, তুমি কি তোমার সঙ্গে কুরবানীর পশু এনেছ? আমি জবাব দিলাম, আনিনি। তিনি বললেন, (ঠিক আছে) বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করো এবং সাফা ও মারওয়ার সায়ী আদায় করো, তারপর হালাল হয়ে যাও। আমি সে রকমই করলাম। এমন কি বনী কাইসের জনৈক মহিলা আমার চুল পর্যন্ত আঁচড়িয়ে দিয়েছিল। আমি উমর রা. -এর খিলাফত আমল পর্যন্ত এ রকম আমলকেই অব্যাহত রেখেছি।

হাদীস নং ৪০০৯

হিব্বান রহ………….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুআয ইবনে জাবালকে (গভর্নর বানিয়ে) ইয়ামানে পাঠানোর সময় তাকে বললেন, অচিরেই তুমি আহলে কিতাবের এক গোত্রের কাছে যাচ্ছ। যখন তুমি তাদের কাছে গিয়ে পৌঁছবে তখন তাদেরকে এ দাওয়াত দেবে তারা যেন সাক্ষ্য দেয় যে আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, এরপর তারা যদি তোমার এ কথা মেনে নেয়, তখন তাদেরকে এ কথা জানিয়ে দেবে যে, আল্লাহ তোমাদের উপর দিনে ও রাতে পাঁচবার নামায ফরয করে দিয়েছেন। তারা তোমার এ কথা মেনে নিলে তুমি তাদেরকে জানিয়ে দেবে যে, আল্লাহ তোমাদের উপর যাকাত ফরয করে দিয়েছেন, যা তাদের (মুসলমানদের) সম্পদশালীদের কাছ থেকে গ্রহণ করা হবে এবং তাদের অভাবগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে। যদি তারা তোমার এ কথা মেনে নেয়, তাহলে (তাদের সম্পদ থেকে যাকাত গ্রহণ করার সময়) তাদের মালের উৎকৃষ্টতম অংশ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে। মজলুমের বদদোয়াকে ভয় করবে, কেননা মজলুমের বদদোয়া এবং আল্লাহর মাঝখানে কোন পর্দার আড়াল থাকেনা। আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) রহ. বলেন, طاعت , طوعت এবং اطاعت সমার্থবোধক শব্দ এবং طُعت, طِعت এবং اطعتُ এর অর্থ একই।

হাদীস নং ৪০১০

সুলামইমান ইবনে হারব রহ………..আমর ইবনে মায়মুন রা. থেকে বর্ণিত যে, মুআয (ইবনে জাবাল) রা. ইয়ামানে পৌঁছার পর লোকজনকে নিয়ে ফজরের নামায আদায় করতে গিয়ে তিনি (এই আয়াত) “আল্লাহ ইবরাহীমকে বন্ধু বানিয়ে নিলেন” তিলাওয়াত করলেন। তখন কাওমের এক ব্যক্তি বলে উঠল, ইবরাহীমের মায়ের চোখ ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। মুআয (ইবনে মুআয বাসরী), শুবা-হাবীব-সাঈদ রহ.-আমর রা. থেকে এতটুকু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুআয (ইবনে জাবাল) রা.-কে ইয়ামানে পাঠালেন। (সেখানে পৌঁছে) মুআয রা. ফজরের নামাযে সূরা নিসা তিলাওয়াত করলেন। যখন তিনি (তিলাওয়াত করতে করতে) (এই আয়াত) “আল্লাহ ইবরাহীমকে বন্ধু বানিয়ে নিলেন” পড়লেন তখন তাঁর পেছন থেকে জনৈক ব্যক্তি বলে, উঠল, ইবরাহীমের মায়ের চোখ ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।

হাদীস নং ৪০১১ – হাজ্জাতুল বিদা-এর পূর্বে আলী ইবনে আবু তালিব এবং খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রা.-কে ইয়ামানে প্রেরণ।

আহমদ ইবনে উসমান রহ……….বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রহ.-এর সঙ্গে ইয়ামানে পাঠালেন। বারা রা. বলেন, তারপর কিছু দিন পরেই তিনি খালিদ রা.-এর স্থলে আলী রা.-কে পাঠিয়ে বলে দিয়েছেন যে, খালিদ রা.-এর সাথীদেরকে বলবে, তাদের মধ্যে যে তোমার সাথে (ইয়ামানের দিকে) যেতে ইচ্ছা করে সে যেন তোমার সাথে চলে যায়, আর যে (মদীনায়) ফিরে যেতে চায় সে যেন ফিরে যায়। (রাবী বলেন) তখন আমি আলী রা.-এর সাথে ইয়ামানগামীদের মধ্যে থাকতাম। ফলে আমি গনীমত হিসেবে অনেক পরিমাণ আওকিয়া লাভ করলাম।

হাদীস নং ৪০১২

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………….বুরাইদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রা.-কে খুমুস নিয়ে আসার জন্য খালিদ রা.-এর কাছে পাঠালেন। (বারী বুরায়দা বলেন, কোন কারণে) আমি আলী রা.-এর প্রতি নারাজ ছিলাম, আর তিনি গোসলও করেছেন। (রাবী বলেন) তাই আমি খালিদ রা.-কে বললাম, আপনি কি তার দিকে দেখছেন না? এরপর আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ফিরে আসলে আমি তাঁর কাছে বিষয়টি উল্লেখ করলাম। তখন তিনি বললেন, হে বুবায়দা ! তুমি কি আলীর প্রতি অসন্তুষ্ট ? আমি উত্তর করলাম, জ্বী, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তার উপর অসন্তুষ্ট থেকো না। কারণ খুমসের ভিতরে তার প্রাপ্য অধিকার এ অপেক্ষাও বেশি রয়েছে।

হাদীস নং ৪০১৩

কুতাইবা রহ………..আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আলী ইবনে আবু তালিব রা. ইয়ামান থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে সিলম বৃক্ষের পাতা দ্বারা পরিশোধিত এক প্রকার (রঙিন) চামড়ার থলে করে সামান্য কিছু তাজা স্বর্ণ পাঠিয়েছিলেন। তখনও এগুলো থেকে সংযুক্ত খনিজ মাটিও পরিষ্কার করা হয়নি। আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চার ব্যক্তির মধ্যে স্বর্ণ খণ্ডটি বণ্টন করে দিলেন। তারা হলেন, ইয়ায়না ইবনে বাদর, আকরা ইবনে হারিস, যায়েদ আল-খায়ল এবং চতুর্থ জন আলকামা কিংবা আমির ইবনে তুফাইল রা.। তখন সাহাবীগণের মধ্য থেকে একজন বললেন, এ স্বর্ণের ব্যাপারে তাদের অপেক্ষা আমরাই অধিক হকদার ছিলাম। (রাবী বলেন, কথাটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছল। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা কি আমার উপর আস্থা রাখ না অথচ আমি আসমান অধিবাসীদের আস্থাভাজন, সকাল-বিকাল আমার কাছে আসমানের সংবাদ আসছে। এমন সময়ে এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়াল। লোকটির চোখ দুটি ছিল কোটরাগত, চোয়ালের হাড় যেন বেরিয়ে পড়ছে, উচু কলাপধারী, তার দাড়ি ছিল অতিশয় ঘন, মাথাটি ন্যাড়া, পরনের লুঙ্গী ছিল উপরের দিকে উঠান। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আল্লাহকে ভয় করুন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার জন্য আফসোস ! আল্লাহকে ভয় করার ব্যাপারে দুনিয়াবাসিদের মধ্যে আমি কি বেশি হকদার নই? আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন, লোকটি (এ কথা বলে) চলে যেতে লাগলে খালিদ বিন ওয়ালীদ রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি কি লোকটির গর্দান উড়িয়ে দেব না? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না, হতে পারে সে নামায আদায় করে। (বাহ্যত মুসলমান)। খালিদ রা. বললেন, অনেক নামায আদায়কারী এমন আছে যারা মুখে এমন এমন কথা উচ্চারণ করে যা তাদের অন্তরে নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাকে মানুষের দিল ছিদ্র করে, পেট ফেঁড়ে (ঈমানের উপস্থিতি) দেখার জন্য বলা হয়নি। তারপর তিনি লোকটির দিকে তাকিয়ে দেখলেন। তখন লোকটি পিঠ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছে। তিনি বললেন, এ ব্যক্তির বংশ থেকে এমন এক জাতির উদ্ভব ঘটবে যারা শ্রুতিমধুর কণ্ঠে আল্লাহর কিতাবে তিলাওয়াত করবে অথচ আল্লাহর বাণী তাদের গলদেশের নিচে নামবে না। তারা দীন থেকে এভাবে বেরিয়ে যাবে যেভাবে নিক্ষেপ কৃত জন্তুর দেহ থেকে তীর বেরিয়ে যায়। (রাবী বলেন) আমার মনে হয় তিনি এ কথাও বলেছেন, যদি আমি তাদেরকে হাতে পাই তাহলে অবশ্যই আমি তাদের সামুদ জাতির মত হত্যা করে দেব।

হাদীস নং ৪০১৪

মাক্কী ইবনে ইবরাহীম রহ………….জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রা.-কে তাঁর কৃত ইহরামের উপর কায়েম থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। মুহাম্মদ ইবনে বকর ইবনে জুরাজজ -আতা রহ.-জাবির রা. সূত্রে আরও বর্ণনা করেন যে, জাবির রা. বলেছেন, আলী ইবনে আবু তালিব রা. আদায়কৃত কর খুমুস নিয়ে (মক্কায়) আসলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, হে আলী ! তুমি কিসের ইহরাম বেঁধেছ? তিনি উত্তর করলেন, নবী যেটির ইহরাম বেঁধেছেন (আমিও সেটির ইহরাম বেঁধেছি) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললন, তাহলে তুমি কুরবানীর পশু পাঠিয়ে দাও এবং এখন যেভাবে আছ সেভাবে ইহরাম বাঁধা অবস্থায় অবস্থান করতে থাক। রাবী বলেন, সে সময় আলী রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য কুরবানীর পশু পাঠিয়েছিলেন।

হাদীস নং ৪০১৫

মুসাদ্দাদ রহ………..বকর রহ. থেকে বর্ণিত যে, ইবনে উমর রা.-এর কাছে এ কথা উল্লেখ করা হল, আনাস রা. লোকদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জ এবং উমরার জন্য ইহরাম বেঁধেছিলেন। তখন ইবনে উমর রা. বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জের জন্য ইহরাম বেঁধেছেন, তাঁর সাথে আমরাও হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধি। যখন আমরা মক্কায় উপনীত হই তিনি বললেন, তোমাদের যার সঙ্গে কুরবানীর পশু নেই সে যেন তার হজ্জের ইহরাম উমরার ইহরামে পরিণত করে ফেলে। অবশ্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কুরবানীর পশু ছিল। এরপর আলী ইবনে আবু তালিব রা. হজ্জের উদ্দেশ্যে ইয়ামান থেকে আসলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাকে) জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কিসের ইহরাম বেঁধেছ? কারণ আমাদের সাথে তোমার স্ত্রী (ফাতিমা) রয়েছে। তিনি উত্তর দিলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেটির ইহরাম বেঁধেছেন আমি সেটিরই ইহরাম বেঁধেছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে এ অবস্থায়ই থাক, কারণ আমাদের কাছে কুরবানীর জন্তু আছে।

হাদীস নং ৪০১৬ – যুল খালাসার যুদ্ধ।

মুসাদ্দাদ রহ………..জারীর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাহিলিয়্যাতের যুগে একটি (নকল তীর্থ) ঘর ছিল যাকে ‘যুল খালাসা’ ইয়ামানী কাবা এবং সিরীয় কাবা বলা হত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, তুমি কি যুল-খালাসার পেরেশানী থেকে আমাকে স্বস্তি দেবে না? এ কথা শুনে আমি একশ’ পঞ্চাশজন অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে ছুটে চললাম। আর এ ঘরটি ভেঙ্গে টুকরা টুকরা করে দিলাম এবং সেখানে যাদেরকে পেলাম তাদের হত্যা করে ফেললাম। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ফিরে এসে তাকে এ সংবাদ জানালে তিনি আমাদের জন্য এবং (আমাদের গোত্র) আহমাসের জন্য দোয়া করলেন।

হাদীস নং ৪০১৭

মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ………….কায়েস রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বর্ণিত, জারীর রা. আমাকে বলেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি কি আমাকে যুল খালাসা থেকে স্বস্তি দেবে না? যুল খালাসা ছিল খাসআম গোত্রের একটি (বানোয়াট তীর্থ) ঘর, যাকে বলা হত ইয়ামনী কাবা। এ কথা শুনে আমি আহমাস গোত্র থেকে একশ পঞ্চাশজন অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে চললাম। তাদের সকলেই অশ্ব পরিচালনায় পারদর্শী ছিল। আর আমি তখন ঘোড়ার পিঠে শক্তভাবে বসতে পারছিলাম না। কাজেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুকের উপর হাত দিয়ে আঘাত করলেন। এমন কি আমি আমার বুকের উপর তার আঙ্গুলগুলোর ছাপ পর্যন্ত দেখতে পেলাম। (এ অবস্থায়) তিনি দোয়া করলেন, হে আল্লাহ ! একে (ঘোড়ার পিঠে) শক্তভাবে বসে থাকতে দিন এবং তাকে হেদায়েত দানকারী ও হেদায়েত লাভকারী বানিয়ে দিন। এরপর জারীর রা. সেখানে গেলেন এবং ঘরটি ভেঙ্গে দিয়ে তা জ্বালিয়ে ফেললেন। এরপর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে দূত পাঠালেন। তখন জারীরের দূত (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) বলল, সেই মহান সত্তার শপথ যিনি আপনাকে সত্য বাণী দিয়ে পাঠিয়েছেন, আমি ঘরটিকে খুজলি-পাঁচড়া আক্রান্ত কাল উটের মত রেখে আপনার কাছে এসেছি। রাবী বলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহমাস গোত্রের অশ্বারোহী ও পদাতিক সৈনিকদের জন্য পাঁচবার বরকতের দোয়া করলেন।

হাদীস নং ৪০১৮

ইউসুফ ইবনে মূসা রহ………….জারীর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি আমাকে যুল খালাসার পেরেশানী থেকে স্বস্তি দেবে না? আমি বললাম, অবশ্যই। এরপর আমি (আমাদের) আহমাস গোত্র থেকে একশ’ পঞ্চাশজন অশ্বারোহী সৈনিক নিয়ে চললাম। তাদের সবাই ছিল অশ্ব পরিচালায় অভিজ্ঞ। কিন্তু আমি তখনো ঘোড়ার উপর স্থির হয়ে বসতে পারতাম না। তাই ব্যাপারটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানালাম। তিনি তাঁর হাত দিয়ে আমার বুকের উপর আঘাত করলেন। এমনকি আমি আমার বুকে তাঁর হাতের চিহ্ন পর্যন্ত দেখতে পেলাম। তিনি দোয়া করলেন : হে আল্লাহ ! একে স্থির হয়ে বসে থাকতে দিন এবং তাকে হেদায়েতদানকারী ও হেদায়েত লাভকারী বানিয়ে দিন। জারীর রা. বলেন, এরপরে আর কখনো আমি আমার ঘোড়া থেকে পড়ে যাইনি। তিনি আরো বলেছেন যে, যুল খালাসা ছিল ইয়ামানের অন্তর্গত খাসআম ও বাজীলা গোত্রের একটি (তীর্থ) ঘর। সেখানে কতগুলো মূর্তি স্থাপিত ছিল। লোকেরা এগুলোর পূজা করত এবং এ ঘরটিকে বলা হত কাবা। রাবী বলেন, এরপর তিনি সেখানে গেলেন এবং ঘরটি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলেন আর এর ভিটামাটিও চুরমান করে দিলেন। রাবী আরো বলেন, আর যখন জারীর রা. ইয়ামানে গিয়ে উঠলেন তখন সেখানে এক লোক থাকত, সে তীরের সাহায্য ভাগ্য নির্ণয় করত; তাকে বলা হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতিনিধি এখানে আছেন, তিনি যদি তোমাকে পাকড়াও করার সুযোগ পান তাহলে তোমার গর্দান উড়িয়ে দেবেন। রাবী বলেন, এরপর একদা সে ভাগ্য নির্ণয়ের কাজে লিপ্ত ছিল, সেই মুহূর্তে জারীর রা. সেখানে পৌঁছে গেলেন। তিনি বললেন, তীরগুলো ভেঙ্গে ফেল এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই—এ কথার সাক্ষ্য দাও, অন্যথায় তোমার গর্দান উড়িয়ে দেব। লোকটি তখন তীরগুলো ভেঙ্গে ফেলল এবং (আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এ কথার) সাক্ষ্য দিল। এরপর জারীর রা. আবু আরতাত নামক আহমাস গোত্রের এক ব্যক্তিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে পাঠালেন খোশখবরী শোনানোর জন্য। লোকটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! সে সত্তার কসম করে বলছি, যিনি আপনাকে সত্য বাণী দিয়ে পাঠিয়েছেন, ঘরটিকে ঠিক খুজলি-পাঁচড়া আক্রান্ত উটের মত কালো করে রেখে আমি এসেছি। রাবী বলেন, এ কথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহমাস গোত্রে অশ্বারোহী এবং পদাতিক সৈনিকদের সার্বিক কল্যাণ ও বরকতের জন্য পাঁচবার দোয়া করলেন।

হাদীস নং ৪০১৯ – যাতুল সালাসিল যুদ্ধ।

ইসহাক রহ………..আবু উসমান রহ. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমর ইবনুল আস রা. কে (সেনাপতি নিযুক্ত করে) যাতুস সালাসিল বাহিনীর বিরুদ্ধে পাঠিয়েছেন। আমর ইবনুল আস বলেন : (যুদ্ধ শেষ করে) আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে এসে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার কাছে কোন লোকটি অধিকতর প্রিয় ? তিনি উত্তর দিলেন, আয়েশা রা.। আমি বললাম, পুরুষদের মধ্যে কে? তিনি বললেন, তার (আয়েশার) পিতা। আমি বললাম, তারপর কে? তিনি বললেন, উমর রা. এভাবে তিনি (আমার প্রশ্নের জবাবে) একের পর এক আরো কয়েকজনের নাম বললেন। আমি চুপ হয়ে গেলাম এ আশংকায় যে, আমাকে না তিনি সকলের শেষে স্থাপন করে বসেন।

হাদীস নং ৪০২০ – জারীর রা.-এর ইয়ামান গমন।

আবদুল্লাহ ইবনে আবু শায়বা আবসী রহ…………জারীর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইয়ামানে ছিলাম। এ সময়ে একদা যুকালা ও যু’আমর নামে ইয়ামানের দু’ব্যক্তির সাথে আমার সাক্ষাত হল। আমি তাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস শোনাতে লাগলাম। (রাবী বলেন) এমন সময়ে যুআমর রাবী জারীর রা.-কে বললেন, তুমি যা বর্ণনা করছ তা যদি তোমার সাথীরই (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) কথা হয়ে থাকে তাহলে মনে রেখো যে, তিন দিন আগে তিনি ইন্তিকাল করে গেছেন। (জারীর বলেন, কথাটি শুনে আমি মদীনা অভিমুখে ছুটলাম) তারা দুজনেও আমার সাথে সম্মুখের দিকে চললেন। অবশেষে আমরা একটি রাস্তার ধারে পৌঁছলে মদীনার দিক থেকে আসা একদল সাওয়ারীর সাক্ষাৎ পেলাম। আমরা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাত হয়ে গেছে। মুসলমানদের সম্মতিক্রমে আবু বকর রা. খলীফা নির্বাচিত হয়েছেন। তারপর তারা দু’জন (আমাকে) বলল, (তুমি মদীনায় পৌঁছলে) তোমার সাথী (আবু বকর) রা. কে বলবে যে, আমরা কিছুদূর পর্যন্ত এসেছিলাম। সম্ভবত আবার আসব ইনশাআল্লাহ, এ কথা বলে তারা দু’জনে ইয়ামানের দিকে ফিরে গেল। এরপর আমি আবু বকর রা.-কে তাদরে কথা জানালাম। তিনি (আমাকে) বললেন, তাদেরকে তুমি নিয়ে আসলে না কেন? পরে আরেক সময় (যুআমরের সাথে সাক্ষাৎ হলে০ তিনি আমাকে বললেন, হে জারীর ! তুমি আমার চেয়ে অধিক সম্মানী। তবুও আমি তোমাকে একটি কথা জানিয়ে দিচ্ছি যে, তোমরা আরব জাতি ততক্ষণ পর্যন্ত কল্যাণ ও সাফল্যের মধ্যে অবস্থান করতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা একজন আমীর মারা গেলে অপরজনকে (পরামর্শের মাধ্যমে) আমীর বানিয়ে নেবে। আর তা যদি তরবারির জোরে ফায়সালা হয় তাহলে তোমাদের আমীরগণ (জাগতিক) অন্যান্য রাজা বাদশাদের মতোই হয়ে যাবে। তারা রাজাসুলভ ক্রোধ, রাজাসুলভ সন্তুষ্টি প্রকাশ করবে। (খলীফা ও খিলাফত আর অবশিষ্ট থাকবে না)।

হাদীস নং ৪০২১ – সীফুল বাহরের যুদ্ধ।

ইসমাঈল রহ………..জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমুদ্র সৈকতের দিকে একটি সৈন্যবাহিনী পাঠালেন। আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ রা.-কে তাদের আমীর নিযুক্ত করে দিলেন। তাঁরা সংখ্যায় ছিলেন তিনশ। (তন্মধ্যে আমিও ছিলাম) আমরা যুদ্ধের জন্য বেরিয়ে পড়লাম। আমরা এক রাস্তা দিয়ে পথ চলছিলাম, তখন আমাদের রসদপত্র নিঃশেষ হয়ে গেল, তাই আবু উবায়দা রা. আদেশ দিলেন সমগ্র সেনাদলের অবশিষ্ট পাথেয় একত্রিত করতে। অতএব সব একত্রিত করা হল। দেখা গেল মাত্র দুথলে খেজুর রয়েছে। এরপর তিনি অল্প অল্প করে আমাদের মাঝে খাদ্য সরবরাহ করতে লাগলেন। পরিশেষে তাও শেষ হয়ে গেল এবং কেবল তখন একটি মাত্র খেজুর আমাদের মিলত। (রাবী বলেন) আমি জাবির রা. -কে বললাম, একটি করে খেজুর খেয়ে আপনাদের কতটুকু ক্ষুধা নিবারণ হত? তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, একটি খেজুর পাওয়াও বন্ধ হয়ে গেলে আমরা একটির কদরও অনুভব করতে লাগলাম। সমগ্র বাহিনী আঠারো দিন পর্যন্ত তা খেল। তারপর আবু উবায়দা রা. মাছটির পাঁজরের দুটি হাড় আনতে হুকুম দিলেন। (দুটি হাড় আনা হল) সেগুলো দাঁড় করান হল। এরপর তিনি একটি সাওয়ারী তৈয়ার করতে বললেন। সাওয়ারী তৈয়ার হল এবং হাড় দুটির নিচে দিয়ে সাওয়ারীটি অতিক্রম করান হল। কিন্তু হাড় দুটিতে কোন স্পর্শ লাগল না।

হাদীস নং ৪০২৩

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ…………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের তিনশ’ সাওয়ারীর একটি সৈন্যবাহিনীকে কুরাইশের একটি কাফেলার উপর সুযোগমত আক্রমণ চালানোর জন্য পাঠিয়েছিলেন। আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ রা. ছিলেন আমাদের সেনাপতি। আমরা অর্ধমাস পর্যন্ত সমুদ্র সৈকতে অবস্থান করলাম। (ইতিমধ্যে রসদপত্র নিঃশেষ হয়ে গেল) আমরা ভীষণ ক্ষুধার শিকার হয়ে গেলাম। অবশেষে ক্ষুধার যন্ত্রণায় গাছের পাতা পর্যন্ত খেতে থাকলাম। এ জন্যইএ সৈন্যবাহিনীর নাম রাখা হয়েছে জায়গুল খাবাত অর্থাৎ পাতাওয়ালা সেনাদল। এরপর সমুদ্র আমাদের জন্য আম্বর নামক একটি প্রাণী নিক্ষেপ করল। আমরা অর্ধমাস ধরে তা থেকে খেলাম। এর চর্বি শরীরে লাগালাম। ফলে আমাদের শরীর পূর্বের ন্যায় হৃষ্টপুষ্ট হয়ে গেল। এরপর আবু উবায়দা রা. আম্বরটির শরীর থেকে একটি পাঁজর ধরে খাড়া করালেন। এরপর তাঁর সাথীদের মধ্যকার সবচেয়ে লম্বা লোকটিকে আসতে বললেন। সুফিয়ান রা. আরেক বর্ণনায় বলেছেন, আবু উবায়দা রা. আম্বরটির পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্য থেকে একটি হাড় ধরে খাড়া করালেন। এবং (ঐ) লোকটিকে উটের পিঠে বসিয়ে এর নিচে দিয়ে অতিক্রম করালেন। জাবির রা. বলেন, সেনাদলের এক ব্যক্তি (খাদ্যের অভাব দেখে) প্রথমে তিনটি উট যবেহ করেছিলেন, তারপর আরো তিনটি উট যবেহ করেছিলেন, তারপর আরো তিনটি উট যবেহ করেছিলেন। এরপর আবু উবায়দা রা. তাকে (উট যবেহ করতে) নিষেধ করলেন। আমর ইবনে দীনার রা. বলতেন, আবু সালিহ রহ. আমাদের জানিয়েছেন যে, কায়েস ইবনে সাদ রা. তাঁর পিতার কাছে বর্ণনা করছিলেন যে, সেনাদলে আমিও ছিলাম, এক সময়ে সমগ্র সেনাদল ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ল, সাদ বললেন, এমতাবস্থায় তুমি উট যবেহ করে দিতে। কায়েস বললেন, (হ্যাঁ) আমি উট যবেহ করেছি। তিনি বললেন, তারপর আবার সবাই ক্ষুধার্ত হয়ে গেল। এবারো তার পিতা বললেন, তুমি যবেহ করতে। তিনি বললেন, (হ্যাঁ) যবেহ করেছি। তিনি বললেন, তারপর আবার সবাই ক্ষুধার্ত হল। সাদ বললেন, এবারো উট যবেহ করতে। তিনি বললেন, (হ্যাঁ) যবেহ করেছি। তিনি বললেন, এরপরও আবার সবাই ক্ষুধার্ত হল। সাদ রা. বললেন, উট যবেহ করতে। তখন কায়েস ইবনে সাদ রা. বললেন, এবার আমাকে (যবেহ করতে) নিষেধ করা হয়েছে।

হাদীস নং ৪০২৪

মুসাদ্দাদ রহ………….জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা জায়শূল খাবাতের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম, আর আবু উবায়দা রা.-কে আমাদের সেনাপতি নিযুক্ত করা হয়েছিল। পথে আমরা ভীষণ ক্ষুধায় আক্রান্ত হয়ে পড়ি। তখন সমুদ্র আমাদের জন্য আম্বর নামের একটি মরা মাছ তীরে নিক্ষেপ করে দিল। এত বড় মাছ আমরা আর কখনো দেখিনি। এরপর মাছটি থেকে আমরা অর্ধ মাস আহার করলাম। একবার আবু উবায়দা রা. মাছটির একটি হাড় তুলে ধরলেন আর সাওয়ারীর পিঠে চড়ে একজন হাড়টির নিচ দিয়ে অতিক্রম করল (হাড়ে স্পর্শও লাগেনি)। (ইবনে জুরাইজ বলেন) আবু যুবাইর রহ. আমাকে জানিয়েছেন যে, তিনি জাবির রা. থেকে শুনেছেন, জাবির রা. বলেন, ঐ সময় আবু উবায়দা রা. বললেন, তোমরা মাছটি আহার কর। এরপর আমরা মদীনা ফিরে আসলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বিষয়টি অবগত করলাম। তিনি বললেন, খাও। এটি তোমাদের জন্য রিযক, আল্লাহ পাঠিয়ে দিয়েছেন। আর তোমাদের কাছে কিছু অবশিষ্ট থাকলে আমাদেরকেও স্বাদ গ্রহণ করতে দাও। একজন মাছটির কিছু অংশ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এনে দিলে তিনি তা খেলেন।

হাদীস নং ৪০২৫ – হিজরতের নবম বছর লোকজনসহ আবু বকর রা.-এর হজ্জ পালন।

সুলাইমান ইবনে দাউদ আবু রাবী রহ…………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, বিদায় হজ্জের পূর্ববর্তী যে হজ্জ অনুষ্ঠানে র আবু বকর রা.-কে আমীরুল হাজ্জ নিযুক্ত করেছিলেন সেই হজ্জের সময় আবু বকর রা. তাকে (আবু হুরায়রা রা.-কে) একটি ছোট দলসহ লোকজনের মধ্যে এ ঘোষণা দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছিলেন যে, আগামী বছর কোন মুশরিক হজ্জ করত পারবে না। আর উলঙ্গ অবস্থায়ও কেউ বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করতে পারবে না।

হাদীস নং ৪০২৬

আবদুল্লাহ ইবনে রাজা রহ…………বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সর্বশেষে যে সূরাটি পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় অবতীর্ণ হয়েছিল তা ছিল সূরা বারাআত। আর সর্বশেষ যে সূরার আয়াতটি সমাপ্তি রূপে অবতীর্ণ হয়েছিল সেটি ছিল সূরা নিসার এ আয়াত : ইয়াসতাফতূনাকা কুলিল্লাহু ইয়ুফতীকুম ফিল কালালা”। অর্থাৎ লোকেরা আপনার কাছে সমাধান জানতে চায়, বলুন, পিতা-মাতাহীন নিঃসন্তান ব্যক্তি সম্বন্ধে তোমাদিগকে আল্লাহ সমাধান জানাচ্ছেন, (কোন পুরুষ মারা গেলে সে যদি সন্তানহীন হয় এবং তার এক বোন থাকে তাহলে বোনের জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধাংশ হবে) । (৪: ১৭৬)

হাদীস নং ৪০২৭ – বনী তামীমের প্রতিনিধি দল।

আবু নুআইম রহ…………ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনী তামীমের একটি প্রতিনিধি দল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে আসলে তিনি তাদেরকে বললেন, হে বনী তামীম ! খোশ খবরী গ্রহণ কর। তারা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ আপনি খোশ-খবরী দিয়ে থাকেন, এবার আমাদেরকে কিছু (অর্থ-সম্পদ) দিন। কথাটি শুনে তাঁর চেহারায় অসন্তোষের ভাব প্রকাশ পেল। এপর ইয়ামানের একটি প্রতিনিধি দল আসলে তিনি তাদেরকে বললেন, বনী তামীম যখন খোশ-খবরী গ্রহণ করলোই না তখন তোমরা গ্রহণ কর। তারা বললেন, আমরা তা গ্রহণ করলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ !

হাদীস নং ৪০২৮ – বনী তামীমের উপগোত্র বনী আম্বরের বিরুদ্ধে উয়াইনা ইবনে হিসন ইবনে হুযাইফা ইবনে বদরের যুদ্ধ।

যুবাইর ইবনে হারব রহ…………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনী তামীমের পক্ষে তিনটি কথা বলেছেন। এগুলো শুনার পর থেকেই আমি বনী তামীমকে ভালবাসতে থাকি। (তিনি বলেছেন) তারা আমার উম্মতের মধ্যে দাজ্জালের বিরোধিতায় সবচেয়ে বেশি কঠোর থাকবে। তাদের গোত্রের একটি বাঁদী আয়েশা রা.-এর কাছে ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, একে আযাদ করে দাও, কারণ সে ইসমাঈল আ.-এর বংশধর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে তাদের সাদকার অর্থ-সম্পদ আসলে তিনি বললেন, এটি একটি কাওমের সাদকা বা তিনি বলেন, এটি আমার কাওমের সাদকা।

হাদীস নং ৪০২৯

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. থেকে বর্ণিত যে, বনী তামীম গোত্র থেকে একটি অশ্বারোহী দল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে আসল। (তাঁরা তাদের একজনকে সেনাপতি নিযুক্ত করার প্রার্থনা জানালে) আবু বকর রা. প্রস্তাব দিলেন, কাকা ইবনে মাবাদ ইবনে যারারা রা.-কে এদের আমীর নিযুক্ত করে দিন। উমর রা. বললেন, বরং আকরা ইবনে হাবিস রা.-কে আমীর বানিয়ে দিন। আবু বকর রা. বললেন, তুমি কেবল আমার বিরোধিতাই করতে চাও। উমর রা. বললেন, আপনার বিরোধিতা করার ইচ্ছা আমি কখনো করি না। এর উপর দুজনের বাক-বিতণ্ডা চলতে চলতে শেষ পর্যায়ে উভয়ের আওয়াজ উচ্চতর হল। ফলে এ সম্পর্কে এ আয়াত নাযিল হল, হে মুমিনগণ ! আল্লাহ এবং তার রাসূলের সামনে তোমরা কোন ব্যাপারে অগ্রণী হয়ো না। বরং আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর কণ্ঠস্বরের উপর নিজেদের কণ্ঠস্বর উচু করো না। এবং নিজেদের মধ্যে যেভাবে উচ্চস্বরে কথা বল তাঁর সাথে সেরূপ উচ্চস্বরে কথা বলো না। কারণ এতে তোমাদের আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে তোমাদের অজ্ঞাতসারে। (৪৯: ১-২)

হাদীস নং ৪০২৯ – আবদুল কায়েস গোত্রের প্রতিনিধি দল।

ইসহাক রহ………..আবু জামরা রা. থেকে বর্ণিত, (তিনি বলেন) আমি ইবনে আব্বাস রা-কে বললাম, আমার একটি কলসী আছে। তাতে আমার জন্য (খেজুর ভিজিয়ে) নাবীয তৈরী করা হয় এবং পানি মিঠা হয়ে সারলে আমি তা আরেটি পাত্রে (ছোট গ্লাসে) ঢেলে পান করি। কিন্তু কখনো যদি ঐ পানি বেশি পরিমাণ পান করে লোকজনের সাথে বসে যাই এবং দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত মজলিসে বসে থাকি তখন আমার আশংকা হয় যে, (নেশার দোষে) আমি (লোকসম্মুখে) অপমানিত হব। তখন ইবনে আব্বাস রা. বললেন, আবদুল কায়েস গোত্রের একটি প্রতিনিধি দল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে আসলে তিনি বললেন, কাওমের জন্য খোশ-আমদেদ। যাদের আগমন না ক্ষতিগ্রস্থ অবস্থায় হয়েছে, না অপমানিত অবস্থায়। তারা আরয করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমাদের ও আপনার মধ্যে মুদার গোত্রের মুশরিকরা প্রতিবন্ধক হয়ে আছে। এ জন্য আমরা আপনার কাছে আশহুরুল হুরুম ব্যতীত অন্য সময়ে আসতে পারি না। কাজেই আমাদেরকে সংক্ষিপ্ত কয়েকটি কথা বলে দিন, যেগুলোর উপর আমল করলে আমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব। আর যারা আমাদের পেছনে (বাড়িতে) রয়ে গেছে তাদেরকে এর দাওয়াত দেব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমাদেরকে চারটি জিনিস পালন করার নির্দেশ দিচ্ছি। আর চারটি জিনিস থেকে বিরত থাকতে বলছি। (আমি তোমাদেরকে) আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার নির্দেশ দিচ্ছি। তোমরা কি জান আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা কাকে বলে? তাহলে : আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া, আর নামায আদায় করা, যাকাত দেওয়া রমযানের রোযা পালন করা এবং গনীমতের মালেন এক -পঞ্চমাংশ (বায়তুল মালে) জমা দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছি। আর চারটি জিনিস–লাউয়ের পাত্র, কাঠের তৈরী নাকীর নামক পাত্র, সবুজ কলসী এবং মুযাফফাত নামক তৈল মাখানো পাত্রে নাবীয তৈরী করা থেকে নিষেধ করছি।

হাদীস নং ৪০৩০

সুলাইমান ইবনে হারব রহ………..আবু জামরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনে আব্বাস রা. থেকে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আবদুল কায়েস গোত্রের একটি প্রতিনিধি দল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমরা অর্থাৎ এই ছোট দল রাবীআর গোত্র। আমাদের এবং আপনার মাঝখানে প্রতিবন্ধক হয়ে আছে মুদার গোত্রের মুশরিকরা। কাজেই আমরা নিষিদ্ধ মাসগুলো ছাড়া অন্য সময়ে আপনার কাছে আসতে পারি না। এ জন্য আপনি আমাদেরকে এমন কিছু বিষয়ের নির্দেশ দিয়ে দিন যেগুলোর উপর আমরা আমল করতে থাকব এবং যারা আমাদের পেছনে রয়েছে তাদেরকেও সেইদিকে আহবান জানাব। তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে চারটি জিনিস পালন করার নির্দেশ দিচ্ছি। আর চারটি জিনিস থেকে বিরত থাকতে বলছি। (আমি তোমাদেরকে) আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া। কথাটি বলে তিনি আঙ্গুলের সাহায্য এক গুণেছেন। আর নামায আদায় করা, যাকাত এবং তোমরা যে গনীমত লাভ করবে তার এক -পঞ্চমাংশ (বায়তুল মালে) জমা দেওয়া। আর আমি তোমাদেরকে লাউয়ের পাত্র, নাকীর নামক খোদাইকৃত কাঠের পাত্র, সবুজ কলসী এবং মুযাফফাত নামক তৈল মাখানো পাত্র ব্যবহার থেকে নিষেধ করছি।

হাদীস নং ৪০৩১

ইয়াহইয়া ইবনে সুলাইমান ও বকর ইবনে মুদার রহ………..বুকাইর রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনে আব্বাস রা. -এর আযাদকৃত গোলাম কুরাইব রহ. তাকে বর্ণনা করেছেন যে, ইবনে আব্বাস আবদুর রহমান ইবনে আযহার এবং মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রা. (এ তিনজনে) আমাকে আয়েশা রা. -এর কাছ পাঠিয়ে বললেন, তাকে আমাদের সবার পক্ষ থেকে সালাম জানাবে। এবং তাকে আসরের পরের দু’রাকআত নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে। কারণ আমরা অবহিত হয়েছি যে, আপনি নাকি এই দ’রাকআত নামায আদায় করেন অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু’রাকআত নামায আদায় করত নিষেধ করেছেন—এ হাদীসও আমাদের কাছে পৌঁছেছে। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, আমি উমর রা. সহ এ দু’রাকআত নামায আদায়কারী লোকজদেরকে প্রহার করতাম। কুরাইব রহ. বলেন, আমি তাঁর (আয়েশা রা.) কাছে গেলাম এবং তারা আমাকে যে ব্যাপারে পাঠিয়েছেন তা জানালাম। তিনি বললেন, বিষয়টি উম্মে সালমা রা.-এর কাছে জিজ্ঞাসা কর। এরপর আমি তাদেরকে (আয়েশা রা.-এর জবাবের কথা) জানালে তাঁরা আবার আমাকে উম্মে সালামা রা.-এর কাছে পাঠালেন এবং আয়েশা রা.-এর কাছে যা বলতে বলেছিলেন সেসব কথা তাঁর কাছেও গিয়ে বলতে বললেন। তখন উম্মে সালমা রা. বললেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি যে, তিনি দু’রাকআত নামায আদায় করা থেকে নিষেধ করেছেন। কিন্তু একদিন তিনি আসরের নামায আদায় করে আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। এ সময় আমার কাছে ছিল আনসারদের বনী হারাম গোত্রের কতিপয় মহিলা। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’রাকআত নামায আদায় করলেন। আমি তা দেখে খাদীমা-কে পাঠিয়ে বললাম, তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পাশে গিয়ে দাঁড়াবে এবং বলবে উম্মে সালমা রা. আপনাকে এ কথা বলছেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি কি আপনাকে এ দু’রাকআত আদায় করা থেকে নিষেধ করতে শুনিনি? অথচ দেখতে পাচ্ছি আপনি সেই দু’রাকআত আদায় করছেন। এরপর যদি তিনি হাত দিয়ে ইশারা করেন তাহলে পিছনে সরে যাবে। খাদীমা গিয়ে (সেভাবে কথাটি) বলল। তিনি হাত দিয়ে ইশারা করলেন। খাদীমা পেছনের দিকে সরে গেল। এরপর নামায সেরে তিনি বললেন, হে আবু উমাইয়ার কন্যা ! (উম্মে সালমা) তুমি আমাকে আসরের পরের দু’রাকআত নামাযের কথা জিজ্ঞাসা করছ। আসলে আজ আবদুল কায়েস গোত্র থেকে তাদের কয়েকজন লোক আমার কাছে ইসলাম গ্রহণ করতে এসেছিল। তাঁরা আমাকে ব্যস্ত রাখার কারণে যুহরের পরের দু’রাকআত নামায আদায় করার সুযোগ আমার হয়নি। আর সেই দু’রাকআত হল এ দু’রাকআত নামায।

হাদীস নং ৪০৩২

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ জুফী রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মসজিদে জুমআর নামায জারী করার পরে সর্বপ্রথম যে মসজিদে জুমআর নামায জারী করা হয়েছিল তাহল বাহরাইনের জুয়াসা এলাকার আবদুল কায়েস গোত্রের মসজিদ।

হাদীস নং ৪০৩৪

আবুল ইয়ামান রহ…………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে একবার মিথ্যুক মুসায়লামা (মদীনায়) এসেছিল। সে বলতে লাগল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি আমাকে তাঁর পরবর্তীতে নিয়োগ করে যায় তাহলে আমি তাঁর অনুগত হয়ে যাব। সে তার গোত্রের বহু লোকজনসহ এসেছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাবিত ইবনে কায়েস ইবনে সাম্মাসকে সাথে নিয়ে তার দিকে অগ্রসর হলেন। সে সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে ছিল একটি খেজুরের ডাল। মুসায়লামা তার সাথীদের মধ্যে ছিল, এমতাবস্থায় তিনি তার কাছে গিয়ে পৌঁছলেন। তিনি বললেন, যদি তুমি আমার কাছে এ তুচ্ছ ডালটিও চাও তবে এটিও আমি তোমাকে দেব না। তোমার ব্যাপারে আল্লাহর ফায়সালা লঙ্ঘিত হতে পারে না। যদি তুমি আমার আনুগত্য থেকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন কর তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করে দিবেন। আমি তোমাকে ঠিক তেমনই দেখতে পাচ্ছি যেমনটি আমাকে (স্বপ্নযোগে) দেখানো হয়েছে। এই সাবিত আমার পক্ষ থেকে তোমাকে জবাব দেবে। এরপর তিনি তার কাছ থেকে চলে আসলেন। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি ‘আমি তোমাকে তেমনই দেখতে পাচ্ছি যেমনটি আমাকে দেখানো হয়েছিল’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে আবু হুরায়রা রা আমাকে জানালেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একদিন আমি ঘুমাচ্ছিলাম তখন স্বপ্নে দেখলাম, আমার দু’হাতে স্বর্ণের দুটি খাড়ু। খাড়ু দুটি আমাকে ঘাবড়িয়ে দিল (পুরুষের জন্য স্বর্ণের খাড়ু অবৈধ) তখন ঘুমের মধ্যেই আমার প্রতি নির্দেশ দেয়া হল, খাড়ু দুটির উপর ফু দাও। আমি সে দুটির উপর ফু দিলে তা উড়ে গেল। এরপর আমি এর ব্যাখ্যা করেছি দু’জন মিথ্যাবাদী (নবী) বলে যারা আমার পরে বের হবে। এদের একজন আনসী আর অপরজন মুসায়লামা।

হাদীস নং ৪০৩৫

ইসহাক ইবনে নাসর রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি ঘুমাচ্ছিলাম এমতাবস্থায় (স্বপ্নে) আমার নিকট যমীনের সমুদয় সম্পদ উপস্থাপন করা হল এবং আমার হাতে দুটি সোনার খাড়ু রাখা হল। ফলে আমার মনে ব্যাপারটি গুরুতর অনুভূত হলে আমাকে ওহীর মাধ্যমে জানানো হল যে, এগুলোর উপর ফু দাও। আমি ফু দিলাম খাড়ু দুটি উধাও হয়ে গেল। এরপর আমি এ দুটির ব্যাখ্যা করলাম যে, এরা সেই সে দু’ মিথ্যাবাদী (নবী) যাদের মাঝখানে আমি অবস্থান করছি। অর্থাৎ সানআ শহরের অধিবাসী (আসওয়াদ আনসী) এবং ইয়ামামা শহরের অধিবাসী ((মুসায়লামাতুল কাযযাব)।

হাদীস নং ৪০৩৬

সালত ইবনে মুহাম্মদ রহ………….আবু রাজা উতারিদী রহ. বলেন যে, (ইসলাম গ্রহণ করার পূর্বে) আমরা একটি পাথরের পূজা করতাম। যখন এ অপেক্ষা উত্তম কোন পাথর পেতাম তখন এটিকে নিক্ষেপ করে দিয়ে অপরটির পূজা আরম্ভ করতাম আর কখনো যদি আমরা কোন পাথর না পেতাম তাহলে কিছু মাটি একত্রিত করে স্তুপ বানিয়ে নিতাম। তারপর একটি বকরী এনে সেই স্তুপের উপর দোহন করতাম (যেনো কৃত্রিমভাবে তা পাথরের মত দেখায়) তারপর এর চারপাশে তাওয়াফ করতাম। আর রজব মাস আসলে আমরা বলতাম, এটা তীর থেকে ফলা বিচ্ছিন্ন করার মাস। কাজেই আমরা রজব মাসে তীক্ষ্ণতা যুক্ত সব কটি তীর ও বর্শা থেকে এর তীক্ষ্ণ অংশ খুলে আলাদা করে রেখে দিতাম। রাবী (মাহদী) রহ. বলেন, আমি আমাদের উট চরাতাম। তারপর যখন আমরা শুনলাম যে, তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজের কাওমের উপর অভিযান চালিয়েছেন (এবং মক্কা জয় করে ফেলছেন) তখন আমরা পালিয়ে এলাম জাহান্নামের দিকে অর্থাৎ মিথ্যাবাদী (নবী) মুসায়লামার দিকে।

হাদীস নং ৪০৩৭ – আসওয়াদ আনসীর ঘটনা।

সাঈদ ইবনে মুহাম্মদ জারমী রহ………..উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবা রহ. বলেন, আমাদের কাছে এ খবর পৌঁছে যে, (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায়) মিথ্যাবাদী মুসায়লামা একবার মদীনায় এসে হারিসের কন্যার ঘরে অবস্থান করেছিল। হারিস ইবনে কুরায়যের কন্যা তথা আবদুল্লাহ ইবনে আমিরের মা ছিল তার স্ত্রী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে আসলেন। তখন তার সঙ্গে ছিলেন সাবিত ইবনে কায়েস ইবনে শাম্মাস রা. তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খতীব বলা হত। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে ছিল একটি খেজুরের ডাল। তিনি তার কাছে গিয়ে তার সাথে কথাবার্তা রাখলেন।। মুসায়লামা তাকে (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) বলল, আপনি ইচ্ছা করলে আমার এবং আপনার মাঝে কর্তৃত্বের বাধা এভাবে তুলে দিতে পারেন যে, আপনার পরে তা আমার জন্য নির্দিষ্ট করে দেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি যদি এ ডালটিও আমার কাছে চাও, তাও আমি তোমাকে দেব না। আমি তোমাকে ঠিক তেমনই দেখতে পাচ্ছি যেমনটি আমাকে দেখানো হয়েছে। এই সাবিত ইবনে কায়েস এখানে রইল সে আমার সাথে যেমনটি আমাকে (স্বপ্নযোগে) দেখানো হয়েছে। এই সাবিত ইবনে কায়েস এখানে রইল সে আমার পক্ষ থেকে তোমার জবাব দেবে। এ কথা বল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলে গেলেন। উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ রহ. বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উল্লেখিত স্বপ্ন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন ইবনে আব্বাস রা. বললেন, (আবু হুরায়রা রা. কর্তৃক) আমাকে বলা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি ঘুমাচ্ছিলাম এমতাবস্থায় আমাকে দেখানো হল যে, আমার দুহাতে দুটি সোনার খাড়ু রাখা হয়েছে। এতে আমি ঘাবড়ে গেলাম এবং তা অপছন্দ করলাম। তখন আমাকে (ফুঁ দিতে) বলা হল। আমি এ দুটির উপর ফুঁ দিলে সে দুটি উড়ে গেল। আমি এ দুটির ব্যাখ্যা করলাম যে, দুজন মিথ্যাবাদী (নবী) আবির্ভূত হবে। উবায়দুল্লাহ রহ. বলেন, এ দু’জনের একজন হল আসওয়াদ আল আনসী, যাকে ফায়রুয নামক এক ব্যক্তি ইয়ামান এলাকায় হত্যা করেছে আর অপর জন হল মুসায়লামা।

হাদীস নং ৪০৩৮ – নাজরান অধিবাসীদের ঘটনা।

আব্বাস ইবনে হুসাইন রহ………..হুযায়ফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাজরান এলাকার দু’জন সরদার আকিব এবং সাইয়িদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে তাঁর সাথে মুবাহালা করতে চেয়েছিল। রাবী হুযায়ফা রা. বলেন, তখন তাদের একজন অপরজনকে বলল, এরূপ করো না। কারণ আল্লাহর কসম, তিনি যদি নবী হয়ে থাকেন আর আমরা তাঁর সাথে মুবাহালা করি তাহলে আমরা এবং আমাদের পরবর্তী সন্তান-সন্ততি (কেউ) রক্ষা পাবে না। তারা উভয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বলল যে, আপনি আমাদের কাছ থেকে যা চাবেন আপনাকে আমরা তা-ই দেব। তবে এর জন্য আপনি আমাদের সাথে একজন আমানতদার ব্যক্তিকে পাঠিয়ে দিন। আমানতদার ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তিকে আমাদের সাথে পাঠাবেন না। তিনি বললেন, আমি তোমাদের সাথে অবশ্যই একজন পুরা আমানতদার ব্যক্তিকেই পাঠাবো, এ দায়িত্ব গ্রহণের নিমিত্তে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ আগ্রহ প্রকাশ করলেন। তখন তিনি বললেন, হে আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ তুমি উঠে দাঁড়াও। তিনি যখন দাঁড়ালেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ হচ্ছে এই উম্মতের আমানতদার।

হাদীস নং ৪০৩৯

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………..হুযায়ফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাজরান অধিবাসীরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, আমাদের এলাকার জন্য একজন আমানতদার ব্যক্তি পাঠিয়ে দিন। তিনি বললেন, তোমাদের কাছে আমি একজন আমানতদার ব্যক্তিকেই পাঠাবো যিনি সত্যিই আমানতদার। কথাটি শুনে লোকজন সবাই আগ্রহভরে তাকিয়ে রইল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ রা.-কে পাঠালেন।

হাদীস নং ৪০৪০

আবুল ওয়ালীদ রহ…………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি সূত্রে নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রত্যেক উম্মতের একজন আমানতদার রয়েছে। আর এ উম্মতের সেই আমানতদার হল আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ।

হাদীস নং ৪০৪১ – ওমান ও বাহরাইনের ঘটনা।

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, বাহরাইনের অর্থ সম্পদ (জিযিয়া) আসলে তোমাকে এতো পরিমাণ এতো পরিমাণ এতো পরিমাণ দেব। তিনবার বললেন। এরপর বাহরাইন থেকে আর কোন অর্থ সম্পদ আসেনি। অবশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাত হয়ে গেল। এরপর আবু বাকরের যুগে যখন সেই অর্থ সম্পদ আসল তখন তিনি একজন ঘোষণাকারীকে নির্দেশ দিলেন। সে ঘোষণা করল: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে যার ঋণ প্রাপ্য রয়েছে কিংবা কোন ওয়াদা অপূরণ রয়ে গেছে সে যেন আমার কাছে আসে (এবং তা নিয়ে নেয়) জাবির রা. বলেন, আমি আবু বকর রা.-এর কাছে এসে তাকে জানালাম যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছিলেন, যদি বাহরাইন থেকে অর্থ-সম্পদ আসে তাহলে তোমাকে আমি এতো পরিমাণ এতো পরিমাণ দেব। (এতো পরিমাণ কথাটি) তিনবার বললেন। জাবরি রা. বলেন, তখন আবু বকর রা. আমাকে অর্থ-সম্পদ দিলেন। জাবির রা. বলেন, এর কিছুদিন পর আমি আবু বকর রা.-এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম। এবং তার কাছে মাল চাইলাম। কিন্তু তিনি আমাকে কিছুই দিলেন না। এরপর আমি তাঁর কাছে দ্বিতীয়বার আসি, তিনি আমাকে কিছুই দেননি। এরপর আমি তাঁর কাছে তৃতীয়বার এলাম। তখনো তিনি আমাকে কিছুই দিলেন না। কাজেই আমি তাকে বললাম, আমি আপনার কাছে এসেছিলাম কিন্তু আপনি আমাকে দেননি। তারপর (আবার) এসেছিলাম তখনো দেননি। এরপরেও এসেছিলাম তখনো আমাকে আপনি দেননি। কাজেই এখন হয়তো আপনি আমাকে সম্পদ দিবেন নয়তো আমি মনে করব: আপনি আমার ব্যাপারে কৃপণতা অবলম্বন করেছেন। তখন তিনি বললেন, এ কি বলছ তুমি ‘আমার ব্যাপারে কৃপণতা করছেন’ (তিনি বললেন) কৃপণতা থেকে মারাত্মক ব্যাধি আর কি হতে পারে। কথাটি তিনি তিনবার বললেন। (এরপর তিনি বললেন) যতবারই আমি তোমাকে সম্পদ দেয়া থেকে বিরত রয়েছি ততবারই আমার ইচ্ছা ছিল যে, (অন্য কোথাও থেকে) তোমাকে দেব। আমর (ইবনে দীনার রহ.) মুহাম্মদ ইবনে আলী রা.-এর মাধ্যমে জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু বকর রা.-এর কাছে আসলে তিনি আমাকে বললেন, এ (আশরাফী) গুলো গুণ, আমি ঐগুলো গুণে দেখলাম এখানে পাঁচ শ’ রয়েছে। তিনি বললেন, (ওখান থেকে) এ পরিমাণ আরো দু’বার তুলে নাও।

হাদীস নং ৪০৪২

আবু নুআইম রহ………….যাহদাম রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু মূসা রা. এ এলাকায় এসে জারম গোত্রের লোকদেরকে মর্যাদাবান করেছেন। একদা আমরা তাঁর কাছে বসা ছিলাম। এ সময়ে তিনি মুরগীর গোশত দিয়ে দুপুরের খানা খাচ্ছিলেন। উপস্থিতদের মধ্যে এক ব্যক্তি বসা ছিল। তিনি তাকে খানা খেতে ডাকলেন। সে বলল, আমি মুরগীটিকে একটি (খারাপ) জিনিস খেতে দেখেছি। এ জন্য খেতে আমার অরুচি লাগছে। তিনি বললেন, এসো। কেননা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মুরগী খেতে দেখেছি। সে বলল, আমি শপথ করে ফেলছি যে, এটি খাবো না। তিনি বললেন, এসে পড়। তোমার শপথ সম্বন্ধে আমি তোমাকে জানাচ্ছি যে, আমরা আশআরীদের একটি দল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে তার কাছে সাওয়ারী চেয়েছিলাম। তিনি আমাদেরকে সাওয়ারী দিতে অস্বীকার করলেন। এরপর আমরা (পুনরায়) তাঁর কাছে সাওয়ারী চাইলাম। তিনি তখন শপথ করে ফেললেন যে, আমাদেরকে তিনি সাওয়ারী দেবেন না। কিছুক্ষণ পরেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গনীমতের কিছু উট আনা হল। তিনি আমাদেরকে পাঁচটি করে উট দেয়ার আদেশ দিলেন। উটগুলো হাতে নেয়ার পর আমরা পরস্পর বললাম, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর শপথ থেকে অমনোযোগী করে ফেলছি এমন অবস্থায় কখনো আমরা কামিয়াব হতে পারব না। কাজেই আমি তাঁর কাছে এসে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি শপথ করেছিলেন যে, আমাদের সাওয়ারী দেবেন না। এখন তো আপনি আমাদের সাওয়ারী দিলেন। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই। তবে আমার নিয়ম হল, আমি যদি কোন ব্যাপারে শপথ করি আর এর বিপরীত কোনটিকে এ অপেক্ষা উত্তম মনে করি তাহলে (শপথ কৃত ব্যাপার ত্যাগ করি) উত্তমটিকেই গ্রহণ করে নেই।

হাদীস নং ৪০৪৩ – বনী হানীফার প্রতিনিধি দল এবং সুমামা ইবনে উসাল রা.-এর ঘটনা

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল অশ্বারোহী সৈন্য নজদের দিকে পাঠিয়েছিলেন। (সেখানে গিয়ে) তারা সুমামা ইবনে উসাল নামক বনূ হানীফার এক ব্যক্তিকে ধরে আনলেন এবং মসজিদে নববীর একটি খুঁটির সাথে তাকে বেঁধে রাখলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে এসে বললেন, ওহে সুমামা ! তোমার কাছে কেমন মনে হচ্ছে ? সে উত্তর দিল, হে মুহাম্মদ ! আমার কাছে তো ভালই মনে হচ্ছে। (কারণ আপনি মানুষের উপর কখনো জুলুম করেন না বরং অনুগ্রহই করে থাকেন) যদি আমাকে হত্যা করেন তাহলে আপনি একজন খুনীকে হত্যা করবেন। আর যদি আপনি অনুগ্রহ দান করেন তাহলে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তিকে অনুগ্রহ দান করবেন। আর যদি আপনি (এর বিনিময়ে) অর্থ সম্পদ চান তাহলে যতটা খুশী দাবী করুন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সেই অবস্থার উপর রেখে দিলেন। এভাবে পরের দিন আসল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার তাকে বললেন, ওহে সুমামা ! তোমার কাছে কেমন মনে হচ্ছে ? সে বলল, আমার কাছে সেটিই মনে হচ্ছে যা (গতকাল) আমি আপনাকে বলেছিলাম যে, যদি আপনি অনুগ্রহ প্রদর্শন করেন তাহলে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপর অনুগ্রহ করবেন। তিনি তাকে সেই অবস্থায় রেখে দিলেন। এভাবে এর পরের দিনও আসল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হে সুমামা ! তোমার কাছে কেমন মনে হচ্ছে ? সে বলল, আমার কাছে তা-ই মনে হচ্ছে যা আমি পূর্বেই বলেছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা সুমামার বন্ধন ছেড়ে দাও। এবার (মুক্তি পেয়ে) সুমামা মসজিদে নববীর নিকটস্থ একটি খেজুরের বাগানে গেল এবং গোসল করল এরপর ফিরে এসে মসজিদে নববীতে প্রবেশ করে বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। (তিনি আরো বললেন) হে মুহাম্মদ ‍! আল্লাহর কসম, ইতিপূর্বে আমার কাছে যমীনের বুকে আপনার চেহারার চাইতে অধিক অপছন্দনীয় আর কোন চেহারা ছিল না। কিন্তু এখন আপনার চোহারাই আমার কাছে সকল চেহারা অপেক্ষা অধিক প্রিয়। আল্লাহর কসম, আমার কাছে আপনার দীন অপেক্ষা অধিক ঘৃণ্য অপর কোন দীন ছিল না। কিন্তু এখন আপনার দীনই আমার কাছে অধিক সমাদৃত। আল্লাহর কসম, আমার মনে আপনার শহরের চেয়ে বেশি খারাপ শহর অন্য কোনটি ছিলনা। কিন্তু এখন আপনার শহরটিই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয়। আপনার অশ্বারোহী সৈনিকগণ আমাকে ধরে এনেছে, সে সময় আমি উমরার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে ছিলাম। তাই এখন আপনি আমাকে কি কাজ করার হুকুম করেন? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে (দুনিয়া ও আখিরাতের) সু-সংবাদ প্রদান করলেন এবং উমরা আদায়ের জন্য নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি যখন মক্কায় আসলেন তখন জনৈক ব্যক্তি তাকে বলল, তুমি নাকি নিজের দীন ছেড়ে দিয়ে অন্য দীন গ্রহণ করেছ? তিনি উত্তর করলেন না, (বেদীন হয়নি? কুফর শিরক তো কোন দীনই নয়) বরং আমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ইসলাম গ্রহণ করেছি। আর আল্লাহর কসম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিনানুমতিতে তোমাদের কাছে ইমামা থেকে গমের একটি দানাও আসবে না।

হাদীস নং ৪০৪৪

আমর ইবনে আলী রহ…………ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনী তামীমের লোকজন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসলে তিনি তাদেরকে বললেন, হে বনী তামীম ! খোশ-খবরী গ্রহণ কর। তারা বলল, আপনি খোশ-খবরী তো দিলেন, কিন্তু এখন আমাদেরকে (কিছু আর্থিক সাহায্য) দান করুন। কথাটি শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। এমন সময়ে ইয়ামানী কিছু লোক আসল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বনী তামীম যখন খোশ-খবর গ্রহণ করল না, তাহলে তোমরাই তা গ্রহণ কর। তাঁরা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমরা তা কবূল করলাম।

হাদীস নং ৪০৪৫

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ আল-জুফী রহ…………আবু মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়ামানের দিকে তাঁর হাত দিয়ে ইশারা করে বলেছেন, ঈমান হল ওখানে। আর কঠোরতা ও হৃদয় হীনতা হল রাবীয়া ও মুদার গোত্রদ্বয়ের সেসব মানুষের মধ্যে যারা উটের লেজের কাছে দাঁড়িয়ে চীৎকার দেয়, যেখান থেকে উদিত হয়ে থাকে শয়তানের উভয় শিং।

হাদীস নং ৪০৪৬

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………..আবু হুরায়রা রা. সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়ামানবাসীরা তোমাদের কাছে এসেছে। তাঁরা অন্তরের দিক থেকে অত্যন্ত কোমল ও দরদী। ঈমান হল ইয়ামানীদের, হিকমত হল ইয়ামানীদের, আত্মরিতা ও অহংকার রয়েছে উট-ওয়ালাদের মধ্যে, বকরী পালকদের মধ্যে আছে প্রশান্তি ও গাম্ভীর্য। গুনদর রহ. এ হাদীসটি শুবা-সুলাইমান-যাকওয়ান রহ. আবু হুরায়রা রা. সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৪০৪৭

ইসমাঈল রহ………….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঈমান হল ইয়ামানীদের। আর ফিতনা (বিপর্যয়ের) গোড়া হল ওখানে, যেখানে উদিত হয় শয়তানের শিং।

হাদীস নং ৪০৪৮

আবুল ইয়ামান রহ…………আবু হুরায়রা রা. সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়ামানবাসীরা তোমাদের কাছে এসেছে। তাঁরা অন্তরের দিক থেকে অত্যন্ত কোমল। আর মনের দিক থেকে অত্যন্ত দয়ার্দ্র। ফিকাহ হল ইয়ামানীদের আর হিকমত হল ইয়ামানীদের।

হাদীস নং ৪০৪৯

আবদান রহ…………….আলকামা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা ইবনে মাসউদ রা.-এর কাছে বসা ছিলাম। তখন সেখানে খাব্বাব রা. এসে বললেন, হে আবু আবদুর রাহমান (ইবনে মাসউদ) ! এসব তরুণ কি আপনার তিলাওয়াতের মত তিলাওয়াত করতে পারে ? তিনি বললেন, আপনি যদি চান তাহলে একজনকে হুকুম দেই যে, সে আপনাকে তিলাওয়াত করে শুনাবে। তি বললেন, অবশ্যই। ইবনে মাসউদ রা. বললেন, ওহে আলকামা, পড় তো। তখন যিয়াদ ইবনে হুদায়রের ভাই যায়েদ ইবনে হুদায়র বলল, আপনি আলকামাকে পড়তে হুকুম করেছেন, অথচ সে তো আমাদের মধ্যে ভাল তিলাওয়াতকারী নয়। ইবনে মাসউদ রা. বললেন, যদি তুমি চাও তাহলে আমি তোমার গোত্র ও তার গোত্র সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেছেন তা জানিয়ে দিতে পারি । (আলকামা বলেন) এরপর আমি সূরায়ে মারইয়াম থেকে পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত করলাম। আবদুল্লাহ রা. বললেন, আপনার কেমন মনে হয়? তিনি বললেন, বেশ ভালই পড়েছে। আবদুল্লাহ রা. বললেন, আমি যা কিছু পড়ি তার সবই সে পড়ে নেয়। এরপর তিনি খাব্বাবের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলেন, তার হাতে একটি সোনার আংটি। তিনি বললেন, এখনো কি এ আংটি খুলে ফেলার সময় হয়নি? খাব্বাব রা. বললেন, ঠিক আছে, আজকের পর আর এটি আমার হাতে দেখতে পাবেন না। এ কথা বলে তিনি আংটিটি ফেলে দিলেন। হাদীসটি গুনদূর রহ. শুবা রহ. থেকে বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৪০৫০ – দাউস গোত্র এবং তুফায়েল ইবনে আমর দাউসীর ঘটনা।

আবু নুআইম রহ……………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তুফায়েল ইবনে আমর রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, দাওস গোত্র হালাক হয়ে গেছে। তারা নাফরমানী করেছে এবং (দীনের দাওয়াত) গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে। সুতরাং আপনি তাদের প্রতি বদদোয়া করুন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আল্লাহ ! দাওস গোত্রকে হিদায়েত দান করুন এবং (দীনের দিকে) নিয়ে আসুন।

হাদীস নং ৪০৫১

মুহাম্মদ ইবনে আলা রহ……………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসার জন্য রওয়ানা হয়ে রাস্তার মধ্যে বলেছিলাম, হে সুদীর্ঘ ও চরম পরিশ্রমের রাত ! (তবে) এ রাত আমাকে দারুল কুফর থেকে মুক্তি দিয়েছে। (এটিই আমার পরম পাওয়া) আমার একটি গোলাম ছিল। আসার পথে সে পালিয়ে গেল। এরপর আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বায়আত করলাম। এরপর একদিন আমি তাঁর খেদমতে বসা ছিলাম। এমন সময় গোলামটি এসে হাযির। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে আবু হুরায়রা ! এই যে তোমার গোলাম (নিয়ে যাও)। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সে আযাদ –এই বলে আমি তাকে আযাদ করে দিলাম।

হাদীস নং ৪০৫২- তায়ী গোত্রের প্রতিনিধি দল এবং আদী ইবনে হাতিমের ঘটনা।

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ…………….আলী ইবনে হাতিম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা একটি প্রতিনিধি দলসহ উমর রা.-এর দরবারে আসলাম। তিনি প্রত্যেকের নাম নিয়ে একজন একজন করে ডাকতে শুরু করলেন। তাই আমি বললাম , হে আমীরুল মুমিনীন ! আপনি কি আমাকে চিনেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ চিনি। লোকজন যখন ইসলামকে অস্বীকার করেছিল তখন তুমি ইসলাম গ্রহণ করেছ। লোকজন যখন পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেছিল তখন তুমি সম্মুখে অগ্রসর হয়েছ। লোকেরা যখন বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল তুমি তখন ইসলামের ওয়াদা পূরণ করেছ। লোকরা যখন দীনের সত্যতা অস্বীকার করেছিল তুমি তখন দীনকে হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করেছ। এ কথা শুনে আদী রা. বললেন, তাহল এখন আমার কোন চিন্তা নেই।

হাদীস নং ৪০৫৩ – বিদায় হজ্জ।

ইসমাঈল ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বিদায় হজ্জে (মক্কার পথে) রওয়ানা হই। তখন আমরা উমরার ইহরাম বাঁধি। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা দিলেন, যাদের সঙ্গে কুরবানীর পশু রয়েছে, তারা যেন হজ্জ ও উমরা উভয়ের একসাথে ইহরামের নিয়ত করে এবং হজ্জ ও উমরার অনুষ্ঠানাদি সমাধা করার পূর্বে হালাল না হয়। এভাবে তাঁর সঙ্গে আমি মক্কায় পৌঁছি এবং ঋতুবতী হয়ে পড়ি। এ কারণে আমি বায়তুল্লাহর তাওয়াফের সাফা ও মারওয়ার সায়ী করতে পারলাম না। এ খবর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অবহিত করলাম। তখন তিনি বললেন, তুমি তোমার মাথার চুল ছেড়ে দাও এবং মাথা (চিরুনি দ্বারা) আঁচড়াও আর কেবল হজ্জের ইহরাম বাঁধ ও উমরা ছেড়ে দাও। আমি তাই করলাম। এরপর আমরা যখন হজ্জের কাজসমূহ সম্পন্ন করলাম, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আবু বকর রা. সিদ্দীক রা.-এর পুত্র (আমার ভাই) আবদুর রাহমান রা.-এর সাথে তানঈম স্থানে পাঠিয়ে দিলেন। সেখান থেকে (ইহরাম বেঁধে) উমরা আদায় করলাম। তখন তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এই উমরা তোমার পূর্বের কাযা উমরার পরিপূরক হল। আয়েশা রা. বলেন, যারা উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন তারা বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করে এবং সাফা ও মারওয়ার সায়ী করার পর হালাল হয়ে যান এবং পরে মিনা থেকে প্রত্যাবর্তন করার পর আর এক তাওয়াফ আদায় করেন। আর যারা হজ্জ ও উমরার ইহরাম এক সাথে বাঁধেন (হজ্জে কিরানে) তাঁরা কেবল এক তাওয়াফ আদায় করেন।

হাদীস নং ৪০৫৪

আমর ইবনে আলী রহ……………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, মুহরিম ব্যক্তি যখন বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করল তখন সে তাঁরইহরাম থেকে হালাল হয়ে গেল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম যে, ইবনে আব্বাস রা. এ কথা কি করে বলতে পারেন? রাবী আতা রহ. উত্তরে বলেন, আল্লাহ তায়ালার এই কালামের দলীল থেকে যে, এরপর তার হালাল হওয়ার স্থল হচ্ছে বায়তুল্লাহ এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক তাঁর সাহাবীদের হুজ্জাতুল বিদায় হালাল হয়ে যাওয়ার হুকুম দেওয়ার ঘটনা থেকে। আমি বললাম, এ হুকুম তো আরাফা-এ উকূফ করার পর প্রযোজ্য। তখন আতা রহ. বললেন, ইবনে আব্বাস রা.-এর মতে উকূফে আরাফার পূর্বে ও পরে উভয় অবস্থায়ই এ হুকুম প্রযোজ্য।

হাদীস নং ৪০৫৫

বায়ান রহ…………..আবু মূসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি (বিদায় হজ্জে) মক্কার বাতহা নামক স্থানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মিলিত হলাম। তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি হজ্জের ইহরাম বেঁধেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কোন প্রকার হজ্জের ইহরামের নিয়ত করেছ? আমি বললাম, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইহরামের মত ইহরামের নিয়ত করে তালবিয়া পড়েছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বায়তুল্লাহ তাওয়াফ কর এবং সাফা ও মারওয়া সায়ী কর। এরপর হালার হয়ে যাও। তখন আমি বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করলাম ও সাফা এবং মারওয়া সায়ী করলাম। এরপর আমি কায়েস গোত্রের এক মহিলার কাচে গেলাম, সে আমার চুল আঁচড়ে (দিয়ে ইহরাম থেকে মুক্ত করে) দিল।

হাদীস নং ৪০৫৬

ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ………….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাফলা রা. ইবনে উমর রা.-কে জানিয়েছেন যে, বিদায় হজ্জের বছর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের হালাল হয়ে যেতে নির্দেশ দেন। তখন হাফসা রা. জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি কারণে হালাল হচ্ছেন না? তদুত্তরে তিনি বললেন, আমি আঠা (গাম) জাতীয় বস্তু দ্বারা আমার মাথার চুল জমাট করে ফেলেছি এবং কুরবানীর পশুর (নিদর্শনস্বরূপ) গলায় চর্ম বেঁধে দিয়েছি। কাজেই, আমি তদুত্তরে তিনি বললেন, আমি আঠা (গাম) জাতীয় বস্তু দ্বারা আমার মাথার চুল জমাট করে ফেলেছি এবং কুরবানীর পশুর (নিদর্শনস্বরূপ) গলায় চর্ম বেঁধে (গলতানী বা গলকণ্ঠ) দিয়েছি। কাজেই, আমি আমার (হজ্জ সমাধা করার পর) কুরবানীর পশু যবেহ করার পূর্বে হালাল হতে পারব না।

হাদীস নং ৪০৫৭

আবুল ইয়ামান রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, আশআম গোত্রের এ মহিলা বিদায় হজ্জের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জিজ্ঞাসা করে। এ সময় ফযল ইবনে আব্বাস রা. )একই যানবাহনে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে উপবিষ্ট ছিলেন। মহিলাটি আবেদন করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি হজ্জ ফরয করেছেন। আমার পিতার উপর তা এমন অবস্থায় ফরয হল যে তিনি অতীব বয়োবৃদ্ধ, যে কারণে যানবাহনের উপর সোজা হয়ে বসতেও সমর্থ নন। এমতাবস্থায় আমি তাঁর পক্ষ থেকে (নায়েবী) হজ্জ আদায় করলে তা আদায় হবে কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ।

হাদীস নং ৪০৫৮

মুহাম্মদ রহ…………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ফাতহে মক্কার বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগিয়ে চললেন। তিনি (তাঁর) কসওয়া নামক উটনীর উপর উসামা রা.-কে পিছনে বসালেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিলাল ও উসমান ইবনে তালহা রা। অবশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাঁর বাহনকে) বায়তুল্লাহর নিকট বসালেন। তারপর উসমান (ইবনে তালহা) রা কে বললেন, আমার কাছে চাবি নিয়ে এসো। তিনি তাকে চাবি এনে দিলেন। এরপর কাবা শরীফের দরজা তাঁর জন্য খোলা হল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, উসামা, বিলাল এবং উসমান রা. কাবা ঘরে প্রবেশ করলেন। তারপর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হল। এরপর তিনি দিবা ভাগের দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন এবং পরে বের হয়ে আসেন। তখন লোকেরা কাবার অভ্যন্তরে প্রবেশ করার জন্য তাড়াহুড়া করতে থাকে। আর আমি তাদের অগ্রগামী হই এবং বিলাল রা.-কে কাবার দরজার পিছনে দাঁড়ানোবস্থায় পাই। তখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন স্থানে নামায আদায় করেছেন? তিনি বললেন, ঐ সামনের দু’স্তম্ভের মাঝখানে। এ সময় বায়তুল্লাহর দুই সারিতে ছয়টি স্তম্ভ চিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনের দুই খামের মাঝখানে নামায আদায় করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল্লাহর দরজা তার পিছনে রেখেছিলেন এবং তাঁর চেহারা ছিল আপনার বায়তুল্লাহয় প্রবেশকালে সামনে য দেয়ালে পড়ে সেদিকে। ইবনে উমর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত রাকাত নামায আদায় করেছেন তা জিজ্ঞাসা করতে আমি ভুলে গিয়েছিলাম। আর যে স্থানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায আদায় করেছিলেন সেখানে লাল বর্ণের মর্মর পাথর ছিল।

হাদীস নং ৪০৫৯

আবুল ইয়ামান রহ…………নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী হুয়াই-এর কন্যা সাফিয়া রা. বিদায় হজ্জের সময় ঋতুবতী হয়ে পড়েন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে কি আমাদের (মদীনার পথে প্রত্যাবর্তনে) বাঁধ সাধল? তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তিনি তো তাওয়াফে যিয়ারাহ আদায় করে নিয়েছেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে সেও রওয়ানা করুক।

হাদীস নং ৪০৬০

ইয়াইয়া ইবনে সুলাইমান রহ………..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে উপস্থিত থাকাবস্থায় আমরা বিদায় হজ্জ সম্পর্কে আলোচনা করতাম। আর আমরা বিদায় হজ্জ কাকে বলে তা জানতাম না। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা বর্ণনা করেন। তারপর তিনি মাসীহ দাজ্জাল সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা করেন এবং বলেন, আল্লাহ এমন কোন নবী প্রেরণ করেননি যিনি তাঁর উম্মতকে সতর্ক করেননি। নূহ আ. এবং তাঁর পরবর্তী নবীগণও তাদের উম্মতগণকে এ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। সে তোমাদের মধ্যে প্রকাশিত হবে। তার অবস্থা তোমাদের উপর প্রচ্ছন্ন থাকবে না। তোমাদের কাছে এও অস্পষ্ট নয় যে, তোমাদের রব (আল্লাহ) এক চোখ কানা নন। অথচ দাজ্জালের ডান চোখ কানা হবে। যেন তার চোখ একটি ফোলা আঙ্গুর। তোমরা সতর্ক থাক। আজকের তোমার উপর হারাম করেছেন। তোমরা লক্ষ্য কর, আমি কি আল্লাহর পয়গাম পৌঁছে দিয়েছি। সমবেত সকলে বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, হে আল্লাহ ! আপনি সাক্ষী থাকুন। তিনি এ কথা তিনবার বললেন, (তারপর বললেন) তোমাদের জন্য পরিতাপ অথবা তিনি বললেন, তোমাদের জন্য আফসোস, সতর্ক থেকো, আমার পরে তোমরা কুফরের দিকে প্রত্যাবর্তন করো না যে, একে অপরের গর্দান মারবে।

হাদীস নং ৪০৬১

আমর ইবনে খালিদ রহ……..যায়েদ ইবনে আরকাম রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনিশটি যুদ্ধে স্বয়ং অংশগ্রহণ করেন। আর হিজরতের পর তিনি কেবল একটি হজ্জ আদায় করেন। এরপর তিনি আর কোন হজ্জ আদায় করেননি এবং তা হল বিদায় হজ্জ। আবু ইসহাক রহ. বলেন, মক্কায় অবস্থানকালে তিনি (নফল) হজ্জ আদায় করেন।

হাদীস নং ৪০৬২

হাফস ইবনে উমর রহ…………জাবির রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জারীর রা-কে বিদায়-হজ্জে বললেন, লোকজনকে চুপ থাকতে বল। তারপর বললেন, মনে রেখ ! আমার ইন্তিকালের পর তোমরা কাফিরে পরিণত হয়ো না যে, একে অপরের গর্দান মারবে।

হাদীস নং ৪০৬৩

মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ…………আবু বাকরা রা. সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সময় ও কাল আবর্তিত হয় নিজ চক্রে ও অবস্থায়। যেদিন থেকে আল্লাহ আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। এক বছর বার মাসে হয়ে থাকে। এর মধ্যে চার মাস সম্মানিত। তিনমাস পরপর আসে —যেমন যিলকদ, যিলহজ্জ ও মুহাররম এবং রজব মুদার যা জমাদিউল আখির ও শাবার মাসের মধ্যবর্তী সময়ে হয়ে থাকে। (এরপর তিনি প্রশ্ন করলেন) এটি কোন মাস? আমরা বললাম, আল্লাহর তাঁর রাসূলই অধিক জানেন। এরপর তিনি চুপ থাকলেন। এমনকি আমরা ধারণা করলাম যে, হয়ত বা অচিরেই তিনি এ মাসের অন্য কোন নাম রাখবেন। (তারপর) তিনি বললেন, এ কি যিলহজ্জ মাস নয়? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তারপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এটি কোন শহর? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক জ্ঞাত। তারপর তিনি চুপ থাকলেন। আমরা ধারণা করলাম যে, হয়ত বা তিনি অচিরেই এ শহরের অন্য কোন নাম রাখবেন। তারপর তিনি বললেন, এটি কি (মক্কা) শহর নয়? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, এ দিনটি কোন দিন? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক জ্ঞাত। তারপর তিন চুপ থাকলেন। এতে আমরা মনে করলাম যে, তিনি এ দিনটির অন্য কোন নামকরণ করবেন। তারপর তিনি বললেন, এটি কি কুরবানীর দিন নয়? আমরা বললাম, হ্যাঁ। এরপর তিনি বললেন, তোমাদের রক্ত তোমাদের সম্পদ । রাবী মুহাম্মদ বলেন, আমার ধারণা যে, তিনি আরও বলেছিলেন, তোমাদের মান-ইজ্জত তোমাদের উপর পবিত্র, যেমন পবিত্র তোমাদের আজকের এই দিন, তোমাদের এই শহর ও তোমাদের এই মাস। তোমরা অচিরেই তোমাদের রবের সাথে মিলিত হবে। তখন তিনি তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। খবরদার! তোমরা আমার ইন্তিকালের পর বিভ্রান্ত হয়ে পড়ো না যে, একে অপরের গর্দান মারবে। শোন, তোমাদের উপস্থিত ব্যক্তি অনুপস্থিত ব্যক্তিকে আমার গয়গাম পৌঁছে দেবে। এটা বাস্তব যে, অনেক সময় যে প্রত্যক্ষভাবে শ্রবণ করেছে তার থেকেও প্রচারকৃত ব্যক্তি অধিকতর সংরক্ষণকারী হয়ে থাকে। রাবী মুহাম্মদ (ইবনে সীরীন রহ.) যখনই এ হাদীস বর্ণনা করতেন তখন তিনি বলতেন—মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যই বলেছেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, জেনে রাখ, আমি কি (আল্লাহর বাণী তোমাদের কাছে) পৌঁছিয়ে দিয়েছি? এভাবে দু’বার বললেন।

হাদীস নং ৪০৬৪

মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ………..তারিক ইবনে শিহাব রা. থেকে বর্ণিত যে, একদল ইহুদী বলল, যদি এ আয়াত আমাদের প্রতি অবতীর্ণ হত, তাহলে আমরা উক্ত অবতরণের দিনকে ঈদের দিন হিসাবে উদযাপন করতাম। তখন উমর রা. তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, কোন আয়াত? তারা বললা, এই আয়াত: আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীন (জীবন-বিধান)-কে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করলাম। (৫:৩) তখন উমর রা. বললেন, কোন স্থানে এ আয়াত নাযিল হয়েছিল তা আমি জানি। এ আয়াত নাযিল হওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফা ময়দানে (জাবালে রহমতে) দাঁড়ানো অবস্থায় ছিলেন।

হাদীস নং ৪০৬৫

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা (মদীনা মুনাওয়ারা থেকে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে রওয়ানা হলাম। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন আর কেউ কেউ হজ্জের ইহরাম, আবার কেউ কেউ হজ্জ ও উমরা উভয়ের ইহরাম বেঁধেছিলেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জের ইহরাম বেঁধেছিলেন। যারা শুধু হজ্জের ইহরাম বাঁধেন অথবা হজ্জ ও উমরার ইহরাম একসঙ্গে বাঁধেন, তারা কুরবানীর দিন দশই যিলহজ্জ-এর পূর্বে হালাল হতে পারবে না।

হাদীস নং ৪০৬৬

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………..মালিক রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, উপরোক্ত ঘটনা ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বিদায় হজ্জকালীন সময়ের। ইসমাঈল রহ. সূত্রেও মালিক রহ. থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে।

হাদীস নং ৪০৬৭

আহমদ ইবনে ইউনুস রহ………..সাদ (ইবনে আবু ওয়াক্কাস) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিদায় হজ্জের সময় আমি বেদনাজনিত মরণাপন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখতে এলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমার রোগে যে কঠিন আকার ধারণ করেছে তা আপনি দেখতেই পাচ্ছেন। আমি একজন বিত্তশালী লোক অথচ আমার একমাত্র কন্যা ব্যতীত অন্য কোন উত্তরাধিকারী নেই। এমতাবস্থায় আমি কি আমার সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ সাদকা করে দেব? তিনি বললেন, না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তবে কি আমি এর অর্ধেক সাদকা করে দেব? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, এক-তৃতীয়াংশ, তখন তিনি বললেন, হ্যাঁ, এক-তৃতীয়াংশ অনেক। তুমি তোমার উত্তরাধিকারীদের সচ্ছল অবস্থায় ছেড়ে যাওয়া তাদেরকে অভাবগ্রস্থ অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে উত্তম—যারা পরে মানুষের কাছে হাত পেতে বেড়াবে। আর তুমি যা-ই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্ত খরচ কর, তার বিনিময়ে তোমাকে প্রতিদান প্রদান করা হবে। এমনকি যে লোকমা তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে ধর তারও। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি কি আমার সাথীদের পিছনে পড়ে থাকব? তিনি বললেন, তুমি পিছনে পড়ে থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমল করবে তা দ্বারা তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে ও সমুন্নত হবে। সম্ভবত তুমি পিছনে থেকে যাবে। ফলে তোমার দ্বারা এক সম্প্রদায় উপকৃত হবে। অন্য সম্প্রদায় ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ইয়া আল্লাহ ! আমার সাহাবীদের হিজরত আপনি জারী করে রাখুন। এবং তাদের পিছনের দিকে ফিরিয়ে দিবেন না। কিন্তু আফসোস সাদ ইবনে খাওলা রা.-এর জন্য, (রাবী বলেন) মক্কায় তার মৃত্যু হওয়ায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

হাদীস নং ৪০৬৮

ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ………..নাফি রহ. থেকে বর্ণিত, ইবনে উমর রা. তাদেরকে অবহিত করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জে তাঁর মাথা মুণ্ডন করেছিলেন।

হাদীস নং ৪০৬৯

উবায়দুল্লাহ ইবনে সাঈদ রহ………….নাফি রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনে উমর রা. তাকে অবহিত করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জে মাথা মুণ্ডন করেন এবং তাঁর সাহাবীদের অনেকেই আর তাদের কেউ কেউ মাথার চুল ছেটে ফেলেন।

হাদীস নং ৪০৭০

ইয়াহইয়া ইবনে কাযাআ ও লায়িস রহ…………..আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি গাধায় আরোহণ করে রওয়ানা হন। এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জকালে মিনায় দাঁড়িয়ে লোকদের নিয়ে নামায আদায় করছিলেন। তখন গাধাটি নামাযের একটি কাতারের সামনে এসে পড়ে। এরপর তিনি গাধার পিঠ থেকে অবতরণ করেন এবং তিনি লোকদের সঙ্গে নামাযের কাতারে সামিল হন।

হাদীস নং ৪০৭১

মুসাদ্দাদ রহ……………হিশামের পিতা (উরওয়া রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার উপস্থিতিতে উসামা রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিদায় হজ্জের সফর সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলে বললেন, মধ্যম গতিতে চলেছেন আবার যখন প্রশস্ত পথ পেয়েছেন তখন দ্রুতগতিতে চলেছেন।

হাদীস নং ৪০৭২

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ…………আবু আইয়ূব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বিদায় হজ্জে (মুযদালিফায়) মাগরিব ও ইশার নামায এক সাথে আদায় করেছেন।

হাদীস নং ৪০৭৩

মুহাম্মদ ইবনে আলা রহ………….আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার সাথীরা আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পাঠালেন তাদের জন্য যানবাহন চাওয়ার জন্য। কারণ তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কঠিনতর যুদ্ধ অর্থাৎ তাবুকের যুদ্ধে অংশগ্রহণেচ্ছু ছিলেন। অনন্তর আমি এসে বললাম, হে আল্লাহর নবী ! আমার সাথীরা আমাকে আপনার সমীপে এ জন্য পাঠিয়েছেন যে, আপনি যেন তাদের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করেন। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, আমি তোমাদের জন্য কোন যানবাহনের ব্যবস্থা করতে পারব না। আমি লক্ষ্য করলাম, তিনি রাগান্বিত। অথচ আমি তা অবগত নই। আর আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যানবাহন না দেয়ার কারণে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ফিরে আসি। আবার এ ভয়ও ছিল যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হৃদয়ে আমার প্রতি না আবার অসন্তোষ আসে। তাই আমি সাথীদের কাছে ফিরে যাই এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন তা আমি তাদের অবহিত করে। পরক্ষণেই শুনতে পেলাম যে বিলাল রা. ডাকছেন এ বলে যে, আবদুল্লাহ ইবনে কায়েস কোথায়? তখন আমি তাঁর ডাকে সাড়া দিলাম। তখন তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে ডাকছেন, আপনি উপস্থিত হন। আমি যখন তাঁর কাছে উপস্থিত হলাম তখন তিনি বললেন, এই জোড়া এবং ঐ জোড়া এমনি ছয়টি উটনী যা সাদ থেকে ক্রয় করা হয়েছে, তা গ্রহণ কর। এবং সেগুলো তোমার সাথীদের কাছে নিয়ে যাও। এবং বল যে, আল্লাহ তায়ালা (রাবীর সন্দেহ) অথবা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগুলো তোমাদের যাহবাহনের জন্য ব্যবস্থা করেছেন, তোমরা এগুলোর উপর আরোহণ কর। এরপর আমি সেগুলোসহ তাদের কাছে গেলাম এবং বললাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগুলোকে তোমাদের বাহন হিসেবে দিয়েছেন। আল্লাহর কসম ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা যারা শুনেছিল আমার সাথে তোমাদের কেউ এমন কারুর কাছে না যাওয়া পর্যন্ত আমি তোমাদের চলে যেতে দিতে পারি না। যাতে তোমরা এমন ধারণা না কর যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেননি আমি তা তোমাদের বর্ণনা করেছি। তখন তারা আমাকে এমন ধারণা না করে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেননি আমি তা তোমাদের বর্ণনা করেছি। তখন তারা আমাকে বললেন, আল্লাহর কসম, আপনি আমাদের কাছে সত্যবাদী বলে খ্যাত। তবুও আপনি পছন্দ করেন আমরা অবশ্য করব। অনন্তর আবু মূসা রা. তাদের মধ্যকার একদল লোককে সঙ্গে নিয়ে রওয়ানা হন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক অপারগতা প্রকাশ এবং পরে তাদেরকে দেয়ার কথা শুনেছিলেন, তাদের কাছে আসেন। এরপর তাদের কাছে সেরূপ ঘটনা বর্ণনা করলেন যেমন আবু মূসা আশআরী রা. বর্ণনা করেছিলেন।

হাদীস নং ৪০৭৪

মুসাদ্দাদ রহ………….মুসআব ইবনে সাদ তাঁর পিতা (আবু ওয়াক্কাস) রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুক যুদ্ধাভিযানে রওয়ানা হন। আর আলী রা.-কে খলীফা মনোনীত করেন। আলী রা. বলেন, আপনি কি আমাকে শিশু ও মহিলাদের মধ্যে ছেড়ে যাচ্ছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি এ কথায় রাযী নও যে তুমি আমার কাছে সে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হবে যেমন হারূন আ. মূসা আ.-এর পক্ষ থেকে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তবে এতটুকু পার্থক্য যে, (তিনি নবী ছিলেন আর) আমার পরে কোন নবী নেই। আবু দাউদ রহ. বলেন, শুবা রহ. আমাকে হাকাম রহ. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি মুসআব রহ. থেকে শুনেছি।

হাদীস নং ৪০৭৫

উবায়দুল্লাহ ইবনে সাঈদ রহ……….সাফওয়ান -এর পিতা ইয়ালা ইবনে উমাইয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে উসরা-এর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। ইয়ালা বলতেন যে, উক্ত যুদ্ধ আমার কাছে নির্ভরযোগ্য আমলের অন্যতম বলে বিবেচিত হত। আতা রহ. বলেন যে, সাফওয়ান বলেছেন, ইয়ালা রা. বর্ণনা করেন, আমার একজন (দিনমজুর) চাকর ছিল, সে একবার এক ব্যক্তির সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হল এবং একপর্যায়ে একজন অন্যজনের হাত দাঁত দ্বারা কেটে ফেলল। আতা রা. বলেন, আমাকে সাফওয়ান রহ. অবহিত করেছেন যে, উভয়ের মধ্যে কে কার হাত দাঁত দ্বারা কেটেছিল তার নাম আমি ভুলে গেছি। রাবী বলেন, আহত ব্যক্তি ঘাতকের মুখ থেকে নিজ হাত মুক্ত করার পর দেখা গেল, তার সম্মুখের দুটো দাঁত উৎপাটিত হয়ে গেছে। তারপর তারা এ মামলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সমীপে পেশ করে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দাঁতের ক্ষতিপূরণের দাবি বাতিল করেছেন। আতা বলেন যে, আমার ধারণা যে বর্ণনাকারী এ কথাও বলেছেন যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তবে কি সে তার হাত তোমার মুখে চিবানোর জন্য ছেড়ে দিবে? যেমন উটের মুখে চিবানোর জন্য ছেড়ে দেয়া হয়?

হাদীস নং ৪০৭৬ – কাব ইবনে মালিকের ঘটনা এবং মহান আল্লাহর বাণী: এবং তিনি ক্ষমা করলেন অপর তিন জনকেও যাদের সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছিল।(৯: ১১৮)

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………….আবদুল্লাহ ইবনে কাব ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, কাব রা. অন্ধ হয়ে গেলে তাঁর সন্তানদের মধ্য থেকে যিনি তাঁর সাহায্যকারী ও পথ-প্রদর্শনকারী ছিলেন, তিনি বলেন, বলেন, আমি কাব ইবনে মালিক রা.-কে বলতে শুনেছি, যখন তাবুক যুদ্ধ থেকে তিনি পশ্চাতে থেকে যান তখনকার অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যতগুলো যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তার মধ্যে তাবূক যুদ্ধ ছাড়া আমি আর কোন যুদ্ধ থেকে পেছনে থাকিনি। তবে আমি বদর যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করিনি। কিন্তু উক্ত যুদ্ধ থেকে যারা পেছনে পড়ে গেছেন, তাদের কাউকে ভর্ৎসনা করা হয়নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল কুরাইশ দলের সন্ধানে বের হয়েছিলেন। অবশেষে আল্লাহ তায়ালা তাদের এবং তাদের শত্রু বাহিনীর মধ্যে অঘোষিত যুদ্ধ সংঘটিত করেন। আর আমি আকাবা রজনীতে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের থেকে ইসলামের উপর অঙ্গীকার গ্রহণ করেন, আমি তখন তাঁর সঙ্গে ছিলাম। ফলে বদর প্রান্তরের উপস্থিতিকে আমি প্রিয়তর ও শ্রেষ্ঠতর বলে বিবেচনা করিনি। যদিও আকাবার ঘটনা অপেক্ষা লোকদের মধ্যে বদরের ঘটনা প্রসিদ্ধ ছিল। আর আমার অবস্থার বিবরণ এই—তাবূক যুদ্ধ থেকে আমি যখন পেছনে থাকি তখন আমি এত অধিক সুস্থ, শক্তিশালী ও সচ্ছল ছিলাম যে আল্লাহর কসম, আমার কাছে কখনো ইতিপূর্বে কোন যুদ্ধে একই সাথে দুটো যানবাহন সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি, যা আমি এ যুদ্ধের সময় সংগ্রহ করেছিলাম। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে অভিযান পরিচালনার সংকল্প গ্রহণ করতেন, দৃশ্যত তার বিপরীত ভাব দেখাতেন। এ যুদ্ধ ছিল ভীষণ উত্তাপের সময়, অতি দূরের সফর, বিশাল মরুভূমি এবং অধিক সংখ্যক শত্রু সেনার মুকাবিলা করার। কাজেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অভিযানের অবস্থা মুসলমানদের কাছে প্রকাশ করে দেন যেন তারা যুদ্ধের প্রয়োজনীয় সম্বল সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গী লোক সংখ্যা ছিল অধিক যাদের হিসাব কোন রেজিস্ট্রারে লিখিত ছিল না। কাব রা. বলেন, যার ফলে যেকোন লোক যুদ্ধাভিযান থেকে বিরত থাকতে ইচ্ছা করলে তা সহজেই করতে পারত এবং ওহী মারফত এ খবর পরিজ্ঞাত না করা পর্যন্ত তা সংগোপন থাকবে বলে সে ধারণা করত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অভিযান পরিচালনা করেছিলেন এমন সময় যখন ফল-ফলাদি পাকার ও গাছের ছায়ায় আরাম উপভোগের সময় ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং এবং তাঁর সঙ্গী মুসলিম বাহিনী অভিযানে যাত্রার প্রস্তুতি গ্রহণ করে ফেলেন। আমিও প্রতি সকালে তাদের সঙ্গে রওয়ানা হওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকি। কিন্তু কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারিনি। মনে মনে ধারণা করতে থাকি, আমি তো যখন ইচ্ছা যেতে সক্ষম। এই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আমার সময় কেটে যেতে লাগল। এদিকে অন্য লোকেরা পুরাপুরি প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলল। ইতিমধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাথী মুসলিমগণ রওয়ানা করলেন অথচ কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারলাম না। আমি মনে মনে ভাবলাম, আচ্ছা ঠিক আছে, এক দুদিনের মধ্যে আমি প্রস্তুত হয়ে পরে তাদের সঙ্গে মিলিত হব। এভাবে আমি প্রতিদিন বাড়ি হতে প্রস্তুতিপর্ব সম্পন্ন করার মানসে বের হই, কিন্তু কিছু না করেই ফিরে আসি। আবার বের হই, আবার কিছু না করে ঘরে ফিরে আসি। ইত্যবসরে বাহিনী অগ্রসর হয়ে অনেক দূর চলে গেল। আর আমি রওয়ানা করে তাদের সাথে পথে মিলে যাবার ইচ্ছা পোষণ করতে থাকলাম। আফসোস যদি আমি তাই করতাম। কিন্তু তা আমার ভাগ্যে জোটেনি। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রওয়ানা হওয়ার পর আমি লোকদের মধ্যে বের হয়ে তাদের মাঝে বিচরণ করতাম। একথা আমার মনেকে পীড়া দিত যে, আমি তখন (মদীনায়) মুনাফিক এবং দুর্বল ও অক্ষম লোক ছাড়া অন্য কাউকে দেখতে পেতাম না। এদিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবূক পৌঁছার পূর্ব পর্যন্ত আমার কথা আলোচনা করেননি। অনন্তর তাবূকে একথা তিনি জনতার মধ্যে উপবিষ্টাবস্থায় জিজ্ঞাসা করে বসলেন, কাব কি করল? বনী সালমা গোত্রের এক লোক বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ধন-সম্পদ ও আত্মগরিমা তাকে আসতে দেয়নি। একথা শুনে মুআয ইবনে জাবাল রা. বললেন, তুমি যা বললে তা ঠিক নয়। ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কসম, আমরা তাকে উত্তম ব্যক্তি বলে জানি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব রইলেন। কাব ইবনে মালিক রা. বলেন, আমি যখন অবগত হলাম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা মুনাওয়ারার দিকে প্রত্যাবর্তন করেছেন, তখন আমি চিন্তাযুক্ত হয়ে পড়লাম এবং মিথ্যার বাহানা খুঁজতে থাকলাম। মনে স্থির করলাম, আগামীকাল এমন কথা বলব যাতে করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্রোধকে প্রশমিত করতে পারি। আর এ সম্পর্কে আমার পরিবারস্থ জ্ঞানীগুণীদের থেকে পরামর্শ গ্রহণ করতে থাকি।এরপর যখন প্রচারিত হল যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় এসে পৌঁছে যাচ্ছেন, তখন আমার অন্তর থেকে মিথ্যা তিরোহিত হয়ে গেল। আর মনে দৃঢ় প্রত্যয় জন্মাল যে, এমন কোন পন্থা অবলম্বন করে আমি তাকে কখনো ক্রোধমুক্ত করতে সক্ষম হব না, যাতে মিথ্যার নামগন্ধ থাকে। অতএব আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম যে, আমি সত্যই বলব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রভাতে মদীনায় পদার্পণ করলেন। তিনি সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করে প্রথমে মসজিদে গিয়ে দু’রাকআত নামায আদায় করতেন, তারপর লোকদের সামনে বসতেন। যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করলেন, তখন যারা পশ্চাদপদ ছিলেন তাঁরা তাঁর কাছে কাছে এসে শপথ করে করে অক্ষমতা ও আপত্তি পেশ করতে লাগল। এরা সংখ্যায় আশির অধিক ছিল। অনন্তর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহ্যিকভাবে তাদের ওযর-আপত্তি গ্রহণ করলেন, তাদের বায়আত করলেন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। কিন্তু তাদের অন্তর্নিহিত অবস্থা আল্লাহর হাওয়ালা করে দিলেন। (কাব রা. বলেন) আমিও এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে উপস্থিত হলাম। আমি যখন তাকে সালাম দিলাম তখন তিনি রাগান্বিত চেহারায় মুচকি হাসি হাসলেন। তারপর বললেন, এস। আমি সে অনুসারে অগ্রসর হয়ে একেবারে তাঁর সম্মুখে বসে গেলাম। তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কি কারণে তুমি অংশগ্রহণ করলে না? তুমি কি যানবাহন ক্রয় করনি? তখন আমি বললাম, হ্যাঁ, করেছি। আল্লাহর কসম, এ কথা সুনিশ্চিত যে, আমি যদি আপনি ছাড়া অন্য কোন দুনিয়াদার ব্যক্তির সামনে বসতাম তাহলে আমি তার অসন্তুষ্টিকে ওযর-আপত্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রশমিত করার প্রয়াস চালাতাম। আর আমি তর্কে সিদ্ধহস্ত। কিন্তু আল্লাহর কসম আমি পরিজ্ঞাত যে, আজ যদি আমি আপনার কাছে মিথ্যা কথা বলে আমার প্রতি আপনাকে রাযী করার চেষ্টা করি তাহলে অচিরেই আল্লাহ তায়ালা আপনাকে আমার প্রতি অসন্তুষ্ট করে দিতে পারেন। আর যদি আপনরার কাছে সত্য প্রকাশ করি যাতে আপনি আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হন, তবুও আমি এতে আল্লাহর ক্ষমা পাওয়ার নির্ঘাত আশা রাখি। না, আল্লাহর কসম, আমার কোন ওযর ছিল না। আল্লাহর কসম, সেই অভিযানে আপনার সাথে না যাওয়াকালীন সময় আমি সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী ও সামর্থ্যবান ছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে সত্য কথাই বলেছে। তুমি এখন চলে যাও, যতদিনে না তোমার সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ফায়সালা করে দেন। তাই আমি উঠে চলে গেলাম। তখন বনী সালিমার কতিপয় লোক আমার অনুসরণ করল। তারা আমাকে বলল, আল্লাহর কসম, তুমি ইতিপূর্বে কোন গুনাহ করেছ বলে আমাদের জানা নেই। তুমি কি অন্যান্য পশ্চাদগামীর মত তোমার অক্ষমতার একটি ওযর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পেশ করে দিতে পারতে না? আর তোমার এ অপরাধের কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনাই তো যথেষ্ট ছিল। আল্লাহর কসম তারা আমাকে অনবরত কঠিনভাবে ভর্ৎসনা করতে থাকে। ফলে আমি পূর্বে স্বীকারোক্তি থেকে প্রত্যাবর্তন করে মিথ্যা বলার বিষয়ে মনে মনে চিন্তা করতে থাকি। এরপর আমি তাদের বললাম, আমার মত এ কাজ আর কেউ করেছে কি? তারা জওয়াব দিল, হ্যাঁ, আরও দু’জন তোমার মত বলেছে। এবং তাদের ক্ষেত্রেও তোমার মত একই রূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করলাম, তারা কে কে ? তারা বলল, একজন মুরারা ইবনে রবী আমরী এবং অপরজন হলেন, হিলাল ইবনে উমায়্যা ওয়াকিফী। এরপর তারা আমাকে অবহিত করল যে, তারা উভয়ে উত্তম মানুষ এবং তারা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। সেজন্য উভয়ে আদর্শবাদ। যখন তারা তাদের নাম উল্লেখ করল, তখন আমি পূর্ব মতের উপর অটল রইলাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মধ্যকার যে তিনজন তাবূকে অংশগ্রহণ হতে বিরত ছিল তাদের সাথে কথা বলতে মুসলমানদের নিষেধ করে দিলেন। তদনুসারে মুসলমানরা আমাদের পরিহার করে চলল। আমাদের প্রতি তাদের আচরণ পরিবর্তন করে নিল। এমনকি এদেশ যেন আমাদের কাছে অপরিচিত হয়ে গেল। এ অবস্থায় আমরা পঞ্চাশ রাত অতিবাহিত করলাম। আমার অপর দু’জন সাথী তো সংকট ও শোচনীয় অবস্থায় নিপতিত হলেন। তারা নিজেদের ঘরে বসে বসে কাঁদতে থাকেন। আর আমি যেহেতু অধিকতর যুবক ও শক্তিশালী ছিলাম তাই বাইরে বের হয়ে আসতাম, মুসলমানদের জামাআতে নামায আদায় করতাম। এবং বাজারে চলাফেরা করতাম কিন্তু কেউ আমার সাথে কথা বলত না। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে হাযির হয়ে হয়ে তাকে সালাম দিতাম। যখন তিনি নামায শেষে মজলিসে বসতেন তখন আমি মনে মনে বলতাম ও লক্ষ্য করতাম, তিনি আমার সালামের জবাবে তার ঠোটদ্বয় নেড়েছেন কি না। তারপর আমি তাঁর নিকটবর্তী স্থানে নামায আদায় করতাম এবং গোপন দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতেন। এভাবে আমার প্রতি লোকদের কঠোরতা ও এড়িয়ে চলার আচরণ দীর্ঘকাল ধরে বিরাজমান থাকে। একদা আমি আমার চাচাত ভাই ও প্রিয় বন্ধু আবু কাতাদা রা.-এর বাগানের প্রাচীর টপকে প্রবেশ করে তাকে সালাম দেই। কিন্তু আল্লাহর কসম তিনি আমার সালামের জওয়াব দিলেন না। আমি তখন বললাম, হে আবু কাতাদা, আপনাকে আমি আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, আপনি কি জানেন যে, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ভালবাসি? তখন তিনি নীরবতা পালন করলেন। আমি পুনরায় তাকে কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি এবারও কোন জবাব দিলেন না। আমি পুনঃ (তৃতীয়বারও) তাকে কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই ভাল জানেন। তখন আমার চক্ষুদ্বয় থেকে অশ্রু ঝরতে লাগল। অগত্যা আমি পুনরায় প্রাচীর টপকে ফিরে এলাম। কাব রা. বলেন, একদা আমি মদীনার বাজারে বিচরণ করছিলাম। এমতাবস্থায় সিরিয়ার এক কৃষক বণিক যে মদীনার বাজারে খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করার উদ্দেশ্যে এসেছিল, সে বলছে, আমাকে কাব ইবনে মালিককে কেউ পরিচয় করে দিতে পারে কি? তখন লোকেরা তাকে আমার প্রতি ইশারায় দেখাচ্ছিল। তখন সে এসে গাসসানি বাদশার একটি পত্র আমার কাছে হস্তান্তর করল। তাতে লেখা ছিল, পর সমাচার এই, আমি জানতে পারলাম যে, আপনার সাথী আপনার প্রতি জুলুম করেছে। আর আল্লাহ আপনাকে মর্যাদাহীন ও আশ্রয়হীন করে সৃষ্টি করেননি। আপনি আমাদের দেশে চলে আসুন, আমরা আপনার সাহায্য-সহানুভূতি করব। আমি যখন এ পত্র পড়লাম তখন আমি বললাম, এটাও আর একটি পরীক্ষা। তখন আমি চুলা খোঁজ করে তার মধ্যে পত্রটি নিক্ষেপ করে জ্বালিয়ে দিলাম। এ সময় পঞ্চাশ দিনের চল্লিশ দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ থেকে এক সংবাদ বাহক আমার কাছে এসে বলল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন যে, আপনি আপনার স্ত্রী হতে পৃথক থাকবেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আমি কি তাকে তালাক দিয়ে দিব, না অন্য কিছু করব? তিনি উত্তর দিলেন, তালাক দিতে হবে না বরং তার থেকে পৃথক থাকুন এবং তার নিকটবর্তী হবেন না। আমার অপর দু’জন সঙ্গীর প্রতি একই আদেশ পৌঁছালেন। তখন আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, তুমি তোমার পিত্রালয়ে চলে যাও। আমার এ ব্যাপারে আল্লাহর ফায়সালা না হওয়া পর্যন্ত তুমি তথায় অবস্থান কর। কাব রা. বলেন, আমার সঙ্গী হিলাল ইবনে উমায়্যার স্ত্রী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! হিলাল ইবনে উমায়্যা অতি বৃদ্ধ, এমন বৃদ্ধ যে, তাঁর কোন খাদিম নেই। আমি তাঁর খেদমত করি, এটা কি আপনি অপছন্দ করেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না তবে সে তোমার বিছানায় আসতে পারবে না। সে বলল, আল্লাহর কসম, এ সম্পর্কে তার কোন অনুভূতিই নেই। আল্লাহর কসম, তিনি এ নির্দেশ পাওয়া অবধি সর্বদা কান্নাকাটি করছেন। (কাব রা বলেন) আমার পরিবারের কেউ আমাকে পরামর্শ দিল যে, আপনিও যদি আপনার স্ত্রী সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে অনুমতি চাইতেন যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিলাল ইবনে উমায়্যার স্ত্রীকে তার (স্বামীর) খেদমত করার অনুমতি চাইব না। আমি যদি তার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুমতি চাই তবে তিনি কি বলেন, তা আমার জানা নেই। আমি তো নিজেই আমার খেদমতে সক্ষম। এরপর আরও দশ রাত অতিবাহিত করলাম। এভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন থেকে আমাদের সাথে কথা বলতে নিষেধ করেন তখন থেকে পঞ্চাশ রাত পূর্ণ হল। এরপর আমি পঞ্চাশতম রাত শেষে ফজরের নামায আদায় করলাম এবং আমাদের এক ঘরের ছাদে এমন অবস্থায় বসে ছিলাম যা আল্লাহ তায়ালা বর্ণনা করেছেন। আমার জান-প্রাণ দুর্বিষহ এবং গোটা জগতটা যেন আমার জন্য প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। এমতাবস্থায় শুনতে পেলাম এক চীৎকারকারীর চীৎকার। সে সালা পাহাড়ের উপর চড়ে উচ্চস্বরে ঘোষণা করছে, হে কাব ইবনে মালিক। সুসংবাদ গ্রহণ করুন। কাব রা বলেন, এ শব্দ আমার কানে পৌঁছামাত্র আমি সিজদায় লুটে পড়লাম। আর আমি অনুভব করলাম যে আমার সুদিন ও খুশীর খবর এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামায আদায়ের পর আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে আমাদের তাওবা কবুল হওয়ার সুসংবাদ প্রকাশ করেন। তখন লোকেরা আমার এবং আমার সঙ্গী দ্বয়ের কাছে সুসংবাদ পরিবেশন করতে থাকে। এবং তড়িঘড়ি একজন অশ্বারোহী লোক আমার কাছে আসে এবং আসলাম গোত্রের অপর এক ব্যক্তি দ্রুত আগমন করে পাহাড়ের উপর আরোহণ করত চীৎকার দিতে থাকে। তার চিৎকারের শব্দ ঘোড়া অপেক্ষাও দ্রুত পৌঁছল। যার শব্দ আমি শুনেছিলাম সে যখন আমার কাছে সুসংবাদ প্রদান করতে আসল, আমি তখন আমার নিজের পরিধেয় দুটো কাপড় তাকে সুসংবাদ দেয়ার জন্য দান করলাম। আর আমি আল্লাহর কসম করে বলছি যে, ঐ সময় সেই দুটো কাপড় ছাড়া আমার কাছে আর কোন কাপড় ছিল না। আমি দুটো কাপড় ধার করে পরিধান করলাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে রওয়ানা হলাম। লোকেরা দলে দলে আমাকে ধন্যবাদ জানাতে আসতে লাগল। তারা তাওবা কবূলের মুবারকবাদ জানাচ্ছিল। তারা বলছিল, তোমাকে মুবারকবাদ যে আল্লাহ তায়ালা তোমার তাওবা কবূল করেছেন। কাব রা. বলেন, অবশেষে আমি মসজিদে প্রবেশ করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে বসা ছিলেন এবং তাঁর চতুষ্পার্শ্বে জনতার সমাবেশ ছিল। তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ রা দ্রুত উঠে এসে আমার সাথে মুসাফাহা করলেন ও মুবারকবাদ জানালেন। আল্লাহর কসম তিনি ব্যতীত আর কোন মুহাজির আমার জন্য দাঁড়াননি। আমি তালহার ব্যবহার ভুলতে পারব না। কাব রা. বলেন, এরপর আমি যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম জানালাম, তখন তাঁর চেহারা আনন্দের আতিশয্যে ঝকঝক করছিল। তিনি আমাকে বললেন, তোমার মাতা তোমাকে জন্মদানের দিন হতে যতদিন তোমার উপর অতিবাহিত হয়েছে তার মধ্যে উৎকৃষ্ট ও উত্তম দিনের সুসংবাদ গ্রহণ কর। কাব বলেন, আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা কি আপনার পক্ষ থেকে না আল্লাহর পক্ষ থকে ? তিনি বললেন, আমার পক্ষ থেকে নয় বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খুশী হতেন তখন তাঁর চেহারা এত উজ্জ্বল ও প্রোজ্জ্বল হত সে যেন পূর্ণিমার চাঁদের ফালি। এতে আমরা তাঁর সন্তুষ্টি বুঝতে পারতাম। আমি যখন তাঁর সম্মুখে বসলাম তখন আমি আরয করলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার তাওবা কবূলের শুকরিয়া স্বরূপ আমার ধন-সম্পদ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পথে দান করত চাই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কিছু মাল তোমার কাছে রেখে দাও। তা তোমার জন্য উত্তম। আমি বললাম, খায়বরে অবস্থিত আমার অংশটি আমার জন্য রাখলাম। আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আল্লাহ তায়ালা সত্য বলার কারণে আমাকে রক্ষা করেছেন, তাই আমার তাওবা কবূলের নিদর্শন অক্ষুন্ন রাখতে আমার অবশিষ্ট জীবনে সত্যই বলব। আল্লাহর কসম, যখন থেকে আমি এ সত্য বলার কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে জানিয়েছি, তখন থেকে আজ পর্যন্ত আমার জানামতে কোন মুসলিমকে সত্য কথার বিনিময়ে এরূপ নিয়ামত আল্লাহ দান করেননি যে, নিয়ামত আমাকে দান করেছেন (কাব রা. বলেন) যেদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে সত্য কথা বলেছি সেদিন হতে আজ পর্যন্ত অন্তরে মিথ্যা বলার ইচ্ছাও করিনি। আমি আশা পোষণ করি যে, বাকী জীবনও আল্লাহ তায়ালা আমাকে মিথ্যা থেকে হিফাজত করবেন। এরপর আল্লাহ তায়ালা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর এই আয়াত নাযিল করেন ‘আল্লাহ অনুগ্রহ পরায়ণ হলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি এবং মুহাজিরদের প্রতি………এবং তোমরা সত্যবাদীদের অন্তর্ভূক্ত হও’। (৯: ১১৭-১১৯) (কাব রা. বলেন) আল্লাহর শপথ, ইসলাম গ্রহণের পর থেকে কখনো আমার উপর এত উৎকৃষ্ট নিয়ামত আল্লাহ প্রদান করেননি যা আমার কাছে শ্রেষ্ঠতর, তাহলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আমার সত্য বলা ও তাঁর সাথে মিথ্যা না বলা, যদি মিথ্যা বলতাম তবে মিথ্যাবাদীদের মত আমিও ধ্বংস হয়ে যেতাম। সেই মিথ্যাবাদীদের সম্পর্কে যখন ওহী নাযিল হয়েছে তখন জঘন্য অন্তরের সেই লোকদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন : তোমরা তাদের নিকট ফিরে আসলে তারা আল্লাহর শপথ করবে…………আল্লাহ সত্য ত্যাগী সম্প্রদায়ের প্রতি তুষ্ট হবেন না। (৯: ৯৫-৯৬)। কাব রা বলেন, আমাদের তিনজনের তাওবা কবূল করতে বিলম্ব করা হয়েছে—যাদের তাওবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবূল করেছেন যখন তাঁরা তার কাছে শপথ করেছে, তিনি তাদের বায়আত গ্রহণ করেছেন, এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আমাদের বিষয়টি আল্লাহর ফায়সালা না হওয়া পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্থগিত রেখেছেন। এর প্রেক্ষাপটে আল্লাহ বলেন—সেই তিনজনের প্রতিও যাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছিল। (৯: ১১৮) কুরআনের এই আয়াতে তাদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়নি যারা তাবূক যুদ্ধ থেকে পিছনে ছিল ও মিথ্যা কসম করে ওযর-আপত্তি পেশ করেছিল এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও তা গ্রহণ করেছিলেন। বরং এই আয়াতে তাদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে আমরা যারা পেছনে ছিলাম এবং যাদের প্রতি সিদ্ধান্ত দেয়া স্থগিত রাখা হয়েছিল।

হাদীস নং ৪০৭৭ – রাসূল (সা.) এর হিজর বস্তিতে অবতরণ।

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ জুফী রহ………….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সামূদ গোত্রের) হিজর বস্তি অতিক্রম করেন, তখন তিনি বললেন, যারা নিজ আত্মার উপর অত্যাচার করছে তাদের আবাস স্থল ক্রন্দনাবস্থা ব্যতীত প্রবেশ কর না। যেন তোমাদের প্রতিও শাস্তি নিপতিত না হয় যা তাদের প্রতি নিপতিত হয়েছিল। তারপর তিনি তাঁর মস্তক আবৃত করেন এবং অতি দ্রুতবেগে চলে উক্ত স্থান অতিক্রম করেন।

হাদীস নং ৪০৭৮

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ…………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজর নামক স্থান দিয়ে অতিক্রমকালে তাঁর সঙ্গীদের বললেন, তোমরা ঐ শাস্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে ক্রন্দনরত অবস্থা ছাড়া প্রবেশ কর না—যাতে তোমাদের উপরও সেরূপ বিপদ আপতিত না হয় যেরূপ তাদের উপর আপতিত হয়েছিল।

হাদীস নং ৪০৭৯ – পরিচ্ছেদ ২২৪৫

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………….মুগীরা ইবনে শুবা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (প্রকৃতির) প্রয়োজনে বাহিরে গেলেন। (ফিরে এলে) আমি দাঁড়িয়ে তাঁর (অজুর) পানি ঢেলে দিচ্ছিলাম। (স্থানটি কোথায়) তা আমার স্মরণ নেই। তবে তা ছিল তাবূক যুদ্ধের সময়কার। এরপর তিনি তাঁর চেহারা ধৌত করেন। এবং তাঁর বাহুদ্বয় ধৌত করতে গেলে দেখা গেল যে, তাঁর জামার আস্তিন আটসাট। তখন তিনি উভয় বাহুকে জামার মধ্য থেকে বের করে আনেন এবং তা ধৌত করেন। তারপর তিনি তাঁর মোজার উপর মাসেহ করেন।

হাদীস নং ৪০৮০

খালিদ ইবনে মাখলাদ রহ……………আবু হুমাইদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে তাবূক যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করে মদীনাতে পদার্পন করলাম তখন তিনি বললেন, এই মদীনার অপর নাম ত্বাবা (পবিত্র)। এবং এই উহুদ এমন পাহাড় যে, সে আমাদের ভালবাসে আর আমরাও তাকে ভালবাসি।

হাদীস নং ৪০৮১

আহমদ ইবনে মুহাম্মদ রহ…………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবূক যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করে মদীনার নিকটবর্তী হলেন, তখন তিনি বললেন, মদীনাতে এমন সম্প্রদায় রয়েছে যারা কোন দূরপথ ভ্রমণ করেনি, এবং কোন উপত্যকাও অতিক্রম করেনি তবুও তারা তোমাদের সাথে (সাওয়াবে) শরীক রয়েছে। সাহাবায়ে কিরাম রা. আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তারা তো মদীনায়-ই অবস্থান করছিল। তখন তিনি বললেন, তারা মদীনায়ই রয়ে গেছে, তবে ওযর তাদের আটকে রেখেছিল।

হাদীস নং ৪০৮২ – পারস্য অধিপতি কিসরা ও রোম অধিপতি কায়সারের কাছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পত্র।

ইসহাক রহ…………..ইবনে আব্বাস রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল্লাহ ইবনে হুযাফা সামী রা.-কে তাঁর পত্রসহ কিসরার কাছে প্রেরণ করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এ নির্দেশ দেন যে, সে যেন পত্রখানা প্রথমে বাহরাইনের গভর্নরের কাছে দেয় এবং পরে বাহরাইনের গভর্নর যেন কিসরার হাতে পত্রটি পৌঁছিয়ে দেয়। কিসরা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পত্রখানা পড়ল, তখন তা ছিড়ে টুকরা করে ফেলল। (রাবী বলেন) আমার যতদূর মনে পড়ে ইবনুল মুসায়্যাব রা. বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের প্রতি এ বলে বদদোয়া করেন, আল্লাহ তাদেরকেও সম্পূর্ণরূপে টুকরো টুকরো করে দিন।

হাদীস নং ৪০৮৩

উসমান ইবনে হায়সাম রহ………….আবু বাকরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শ্রুত একটি বাণী আমাকে জঙ্গে জামালের (উষ্টের যুদ্ধ) দিন মহা উপকার করেছে, যে সময় আমি সাহাবায়ে কিরামের সাথে মিলিত হয়ে জামাল যুদ্ধে শরীক হতে প্রায় প্রস্তুত হয়েছিলাম। আবু বাকরা রা. বলেন, সে বাণীটি হল, যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এ খবর পৌঁছল যে, পারস্যবাসী কিসরা তনয়াকে তাদের বাদশাহ মনোনীত করেছেন, তখন তিনি বললেন, কখনই সে জাতি সফলতার মুখ দেখবে না যারা স্ত্রীলোককে তাদের প্রশাসক নির্বাচন করে।

হাদীস নং ৪০৮৪

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………….সায়িব ইবনে ইয়াযীদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার স্মৃতিপটে এখনও সে ঘটনা জাগে যে, মদীনার ছেলেপুলের সাথে ছানিয়্যাতুল বিদায়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে স্বাগত জানাতে আমি গিয়েছিলাম। সুফিয়ান রা.-রিওয়ায়েতে ‘গিলমান’ এর স্থলে ‘চিবইয়ান’ শব্দের উল্লেখ রয়েছে।

হাদীস নং ৪০৮৫

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ…………সায়িব (ইবনে ইয়াযীদ) রা. থেকে বর্ণিত যে, আমি স্মৃতিচারণ করি যে, ছানিয়্যাতুল বিদায়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে স্বাগত জানাতে মদীনার ছেলেদের সাথে গিয়েছিলাম যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবূক যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করছিলেন।

হাদীস নং ৪০৮৬ – নবী (সা.) এর রোগ ও তাঁর ওফাত।

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………..উম্মুল ফজল বিনতে হারিস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মাগরিবের নামাযে সূরা ‘ওয়াল মুরসালাতে উরফা’ পাঠ করতে শুনেছি। তারপর আল্লাহ তায়ালা তাঁর রূহ মুবারক কবজ করা পর্যন্ত তিনি আর আমাদের নিয়ে কোন নামায আদায় করেননি।

হাদীস নং ৪০৮৭

মুহাম্মদ ইবনে আরআরা রহ…………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর ইবনে খাত্তাব রা. ইবনে আব্বাস রা.-কে তাঁর কাছে বসাতেন। এতে আবদুর রাহমান ইবনে আউফ রা. তাকে বললেন, আমাদেরও তো ইবনে আব্বাস রা.-এর সমবয়সী ছেলেপুলে আছে ! তখন উমর রা. বললেন, সে কিরূপ মর্যাদার লোক তা তো আপনারাও জানেন। এরপর উমর রা. ইবনে আব্বাস রা.-কে এই إذا جاء نصر الله والفتح আয়াতের প্রকৃত মর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তখন তিনি বললেন, এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকালের খবর (তাকে অবগত করানো হয়েছে) তখন উমর রা. বললেন, আমিও তা-ই মনে করি যা তুমি মনে করছ।

হাদীস নং ৪০৮৮

কুতাইবা রহ…………সাঈদ ইবনে জুরাইর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনে আব্বাস রা. বললেন, বৃহস্পতিবার ! বৃহস্পতিবারের ঘটনা কি ? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রোগ জ্বালা প্রবলভাবে দেখা দেয়। তখন তিনি বললেন, তোমরা আমার কাছে আস, আমি তোমাদের জন্য কিছু লিখে দিয়ে যাই যেন তোমরা এরপর কখনও বিভ্রান্ত না হও। তখন তারা পরস্পর মতভেদ করতে থাকে। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সান্নিধ্যে মতবিরোধ করা শোভনীয় নয়। এরপর কিছুসংখ্যক লোক বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবস্থা কেমন? তিনি কি ব্যাপারটি পুনরুত্থাপনের উদ্যেগ নিলেন। তখন তিনি বললেন, তোমরা আমাকে আমার অবস্থায় ছেড়ে দাও, তোমরা যে কাজের দিকে আমাকে আহবান জানাচ্ছ তার চেয়ে আমি উত্তম অবস্থায় অবস্থান করছি। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের তিনটি নসীহত করলেন (১) আরব উপদ্বীপ থেকে মুশরিকদের বহিষ্কার করে দিবে (২) দূতদের সেরূপ আদর-আপ্যায়ন করবে যেমন আমি করতাম এবং তৃতীয়টি বলা থেকে তিনি নীরব থাকলেন অথবা বর্ণনাকারী বলেন, তৃতীয়টি আমি ভুলে গিয়েছি।

হাদীস নং ৪০৮৯

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ…………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাতের সময় যখন নিকটবর্তী হল এবং ঘরে ছিল লোকের সমাবেশ, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আস আমি তোমাদের জন্য কিছু লিখে দেই, যেন তোমরা পরবর্তীতে পথভ্রষ্ট না হও। তখন তাদের মধ্যকার কিছু লোক বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রোগ-যন্ত্রণা কঠিনতর অবস্থায়, আর তোমাদের কাছে তো কুরআন মওজুদ আছে। আল্লাহর কিতাবই আমাদের জন্য যথেষ্ট। ইত্যবসরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিবারের লোকজনের মধ্যে মতানৈক্য শুরু হয়ে যায়, এবং তারা পরস্পর বাক-বিতণ্ডা করতে থাকেন। তাদের কেউ বললেন, তোমরা কাগজ উপস্থিত কর, তিনি তোমাদের জন্য কিছু লিখে দিন। যাতে তোমরা তাঁর পরে কোন বিভ্রান্তিতে নিপতিত না হও। আবার কেউ বললেন এর বিপরীত। এরপর যখন বাক-বিতণ্ডা ও মতবিরোধ চরমে পৌঁছল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা উঠে চলে যাও। উবায়দুল্লাহ রা. বলেন, ইবনে আব্বাস রা. বলতেন, এ ছিল অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কিরামের জন্য কিছু লিখে দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের মতবিরোধ ও উচ্চ শব্দই মূলত প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

হাদীস নং ৪০৯০

ইয়াসারা ইবনে সাফয়ান ইবনে জামীল আল লাখমী রহ…………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু-রোগকালে ফাতিমা রা.-কে ডেকে আনলেন এবং চুপে চুপে কিছু বললেন, তখন তিনি হাসলেন। পরে আমরা এ সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রোগে আক্রান্ত আছেন এ রোগেই তাঁর ইন্তিকাল হবে। এ কথাটিই তিনি গোপনে আমাকে বলেছেন। তখন আমি কাঁদলাম। আবার তিনি আমাকে চুপে চুপে বললেন, তাঁর পরিবার-পরিজনের মধ্যে সর্বপ্রথম আমিই তাঁর সঙ্গে মিলিত হব, তখন আমি হাসলাম।

হাদীস নং ৪০৯১

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ…………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একথা শুনছিলাম যে, কোন নবী মারা যান যতক্ষণ না তাকে ইখতিয়ার প্রদান করা হয় দুনিয়া বা আখিরাত গ্রহণ করার। যে রোগে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন সে রোগে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মৃত্যু যন্ত্রণায় আক্রান্তাবস্থায় বলতে শুনেছি, তাদের সাথে যাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালা নিয়ামত প্রদান করেছেন (তাঁরা হলেন, নবী (আ)-গণ, সিদ্দীকগণ এবং শহীদগণ) (৪: ৭২) তখন আমি ধারণা করলাম যে তিনিও ইখতিয়ার প্রাপ্ত হয়েছেন।

হাদীস নং ৪০৯২

মুসলিম রহ…………আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুত্যু-রোগে আক্রান্ত হন, তখন তিনি বলিতেছিলেন, ‘ফির রফীকিল আলা’। – মহান ঊর্ধ্বলোকের বন্ধুর সাথে (আমাকে মিলিত করুন)।

হাদীস নং ৪০৯৩

আবুল ইয়ামান রহ…………আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুস্থাবস্থায় বলতেন, কোন নবী আ.-এর প্রাণ কখনো কবজ করা হয়নি, যতক্ষণ না তাঁর স্থান জান্নাতে দেখান হয়েছে। তারপর তাকে জীবিত রাখা হয় অথবা ইন্তিকালের ইখতিয়ার দেয়া হয়। এরপর যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবং তাঁর মাথা আয়েশা রা.-এর উরুতে রাখাবস্থায় তাঁর জান কবজের সময় উপস্থিত হল তখন তিনি চৈতন্যহীন হয়ে পড়লেন। এরপর যখন তিনি চেতনা ফিরে পেলেন তখন তিনি ঘরের ছাদের দিকে দৃষ্টি দিয়ে বললেন, হে আল্লাহ ! মহান ঊর্ধ্বজগতের বন্ধুর সাথে (আমাকে মিলিত করুন)। অনন্তর আমি বললাম, তিনি আর আমাদের মাঝে থাকছেন না। এরপর আমি উপলব্ধি করলাম যে, এ ঐ কথাই যা তিনি আমাদের কাছে বর্ণনা করতেন। আর তাই ঠিক।

হাদীস নং ৪০৯৪

মুহাম্মদ রহ…………আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে, আবদুর রাহমান ইবনে আবু বকর রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলেন। তখন আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার বুকে হেলান দেওয়া অবস্থায় রেখেছিলাম এবং আবদুর রাহমানের হাতে তাজা মিসওয়াকের ডালা ছিল যা দিয়ে সে দাঁত পরিস্কার করছিল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে বিশেষ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিলেন। আমি মিসওয়াকটি নিলাম এবং তা চিবিয়ে নরম করলাম। তারপর তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দিলাম। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দিয়ে দাঁত মর্দন করলেন। আমি তাকে এর আগে এত সুন্দরভাবে মিসওয়াক করতে আর কখনও দেখিনি। এ থেকে অবসর হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উভয় হাত অথবা আঙ্গুল উপরে উঠিয়ে তিনবার বললেন, ঊর্ধ্বলোকের মহান বন্ধুর সাথে (আমাকে মিলিত করুন)। তারপর তিনি ইন্তিকাল করলেন। আয়েশা রা. বলতেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুক ও থুতনির মধ্যস্থলে থাকাবস্থায় ইন্তিকাল করেন।

হাদীস নং ৪০৯৫

হিব্বান রহ………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হয়ে পড়তেন তখন তিনি আশ্রয় প্রার্থনার দুই সূরা (ফালাক ও নাস) পাঠ করে নিজ দেহে ফুঁক দিতেন এবং স্বীয় হাত দ্বারা শরীর মাসেহ করতেন। এরপর যখন তিনি মৃত্যু-রোগে আক্রান্ত হলেন, তখন আমি আশ্রয় প্রার্থনার সূরাদ্বয় দ্বারা তাঁর শরীরে দম করতাম, যা দিয়ে তিনি দম করতেন। আমি তাঁর হাত দ্বারা তাঁর শরীর মাসেহ করিয়ে দিতাম।

হাদীস নং ৪০৯৬

মুআল্লাহ ইবনে আসাদ রহ…………আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকালের পূর্বে যখন তাঁর পিঠ আমার উপর হেলান দেয়া অবস্থায় ছিল, তখন আমি কোন ঝুঁকিয়ে দিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, হে আল্লাহ ! আমাকে মাফ করুন, রহম করুন এবং (ঊর্ধ্বজগতের) মহান বন্ধুর সাথে আমাকে মিলিত করুন।

হাদীস নং ৪০৯৭

সালত ইবনে মুহাম্মদ রহ…………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে রোগ থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আর সুস্থ হয়ে উঠেননি সে রোগবস্থায় তিনি বলেন, ইহুদীদের প্রতি আল্লাহ লা’নত করেছেন। তারা তাদের নবীদের কবরগুলোকে সিজদার স্থানে পরিণত করেছে। আয়েশা রা. মন্তব্য করেন, এরূপ প্রথা যদি না থাকত তবে তাঁর কবরকেও খোলা রাখা হত। কারণ তাঁর কবরকেও মসজিদ (সিজদার স্থান) বানানোর আশংকা ছিল।

হাদীস নং ৪০৯৮

সাঈদ ইবনে উফাইর রহ……….নবী সহধর্মিণী আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর রোগ প্রবল হল ও ব্যথা তীব্র আকার ধারণ করল, তখন তিনি আমার ঘরে সেবা শুশ্রুষা করার ব্যাপারে তাঁর বিবিগণের নিকট অনুমতি চাইলেন। তখন তাঁরা তাকে অনুমতি দিলেন। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘর থেকে বের হয়ে ইবনে আব্বাস রা. ও অপর একজন সাহাবীর সাহায্যে জমীনের উপর পা হিচড়ে চলতে লাগলেন। উবায়দুল্লাহ রা. বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-কে আয়েশা কথিত ব্যক্তি সম্পর্কে অবহিত করলাম, তখন তিনি আমাকে বললেন, তুমি কি সেই দ্বিতীয় ব্যক্তি যার নাম আয়েশা রা. উল্লেখ করেননি তার নাম জান? আমি বললাম, না। ইবনে আব্বাস রা. বললেন, তিনি হলেন আলী রা.। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়েশা রা. বর্ণনা করতেন যে, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে প্রবেশ করলেন এবং তাঁর ব্যথা বেড়ে গেল, তখন তিনি বললেন, তোমরা এমন সাত মশক যার মুখ এখনও খোলা হয়নি, তা থেকে আমার শরীরে পানি ঢেলে দাও। যেন আমি (সুস্থ হয়ে) লোকদের উপদেশ দিতে পারি। এরপর আমরা তাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী হাফসা রা.-এর একটি বড় গামলায় বসালাম। তারপর আমরা উক্ত মশক হতে তাঁর উপর ততক্ষণ পর্যন্ত পানি ঢালা অব্যাহত রাখলাম যতক্ষণ না তিনি তাঁর হাত দ্বারা আমাদের ইশারা করে জানালেন যে, তোমরা তোমাদের কাজ সম্পন্ন করেছ। আয়েশা রা বলেন, তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের কাছে গিয়ে তাদের সাথে জামাতে নামায আদায় করলেন এবং তাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিলেন। উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবা রহ. আমাকে জানালেন যে, আয়েশা ও আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. উভয়ে বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোগ-যাতনায় অস্থির হতেন তখন তিনি তাঁর কালো চাদর দিয়ে নিজ মুখমণ্ডল ঢেকে রাখতেন। আবার যখন জ্বরের উষ্ণতা হ্রাস পেত তখন মুখমণ্ডল থেকে চাদর সরিয়ে ফেলতেন। রাবী বলেন, এরূপ অবস্থায়ও তিনি বলতেন, ইহুদী ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহর লানত, তারা নবীদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে। তাদের কৃতকর্ম থেকে সতর্ক করা হয়েছে। উবায়দুল্লাহ রহ. বলেন যে, আয়েশা রা. বলেন, আমি আবু বকর রা.-এর ইমামতির ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বারবার আপত্তি করেছি। আর আমার তাঁর কাছ বারবার আপত্তি করার কারণ ছিল এই, আমার অন্তরে একথা আসেনি যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরে তাঁর স্থলে কেউ দাঁড়ালে লোকেরা তাকে পছন্দ করবে। বরং আমি মনে করতাম যে কেউ তাঁর স্থলে দাঁড়ালে লোকরো তাঁর প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করবে, তাই আমি ইচ্ছা করলাম যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দায়িত্ব আবু বকর রা.-এর পরিবর্তে অন্যকাউকে প্রদান করুন। আবু আবদুল্লাহ বুখারী রহ. বলেন, এ হাদীস ইবনে উমর, আবু মূসা ও ইবনে আব্বাস রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৪০৯৯

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন অবস্থায় ইন্তিকাল করেন যে, আমার বুক ও থুতনির মধ্যস্থলে তিনি হেলান দেওয়া অবস্থায় ছিলেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যু-যন্ত্রণার পর আমি আর কারো জন্য মৃত্যু-যন্ত্রণাকে কঠোর বলে মনে করি না।

হাদীস নং ৪১০০

ইসহাক রহ…………আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, আলী ইবনে আবু তালিব রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছ হতে বের হয়ে আসেন যখন তিনি মৃত্যুরোগে আক্রান্ত ছিলেন। তখন সাহাবীগণ তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আবুল হাসান, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজ কেমন আছেন? তিনি বললেন, আল-হামদুলিল্লাহ , তিনি কিছুটা সুস্থ। তখন আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব রা. তাঁর হাত ধরে তাকে বললেন, আল্লাহর কসম, তুমি তিনদিন পরে অন্যের দ্বারা পরিচালিত হবে। আল্লাহর শপথ, আমি মনে করি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই রোগে অচিরেই ইন্তিকাল করবেন। কারণ আমি আবদুল মুত্তালিবের বংশের অনেকের মৃত্যুকালীন চেহারার অবস্থা লক্ষ্য করেছি। চল যাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এবং তাকে জিজ্ঞাসা করি যে, তিনি দায়িত্ব কার উপর ন্যস্ত করে যাচ্ছেন। যদি আমাদের মধ্যে থাকে তো তা আমরা জানব। আর যদি আমাদের ছাড়া অন্যদের উপর ন্যস্ত করে যান, তাহলে তাও আমরা জানতে পারব এবং তিনি এ ব্যাপারে আমাদের তখন অসীয়ত করে যাবেন। তখন আলী রা. বললেন, আল্লাহর কসম, যদি এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমরা জিজ্ঞাসা করি আর তিনি আমাদের নিষেধ করে দেন, তবে তারপরে লোকেরা আর আমাদের তা প্রদান করবে না। আল্লাহর কসম, এজন্য আমি কখনই এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করব না।

হাদীস নং ৪১০১

সাঈদ ইবনে উফাইর রহ…………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, সোমবার সাহাবীগণ ফজরের নামাযে রত ছিলেন। আর আবু বকর রা. তাদের নামাযের জামাতের ইমামতী করছিলেন। হঠাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রা.-এর কক্ষের পর্দা উঠিয়ে তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন। সাহাবীগণ কাতারবন্দী অবস্থায় নামায আদায় করছিলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসি দিলেন। আবু বকর রা. পেছনে মুক্তদির সারিতে নামায আদায়ের নিমিত্ত পিছিয়ে আসতে মনস্থ করলেন। তিনি ধারণা করেছিলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে নামায আদায়ের জন্য বেরিয়ে আসার ইচ্ছা করছেন। আনাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমনের আনন্দে সাহাবীগণের নামায ভঙ্গের উপক্রম হয়েছিল। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে ইশারায় তাদের নামায পুরা করতে বললেন। তারপর তিনি কক্ষে প্রবেশ করলেনও পর্দা টেনে দিলেন।

হাদীস নং ৪১০২

মুহাম্মদ ইবনে উবায়দা রহ…………আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তি বলেন প্রায়ই বলতেন, আমার প্রতি আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে আমার পালার দিনে এবং আমার হলকুম ও সিনার মধ্যস্থলে থাকাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকাল হয় এবং আল্লাহ তায়ালা তাঁর ইন্তিকালের সময় আমার থুথু তাঁর থুথুর সাথে মিশ্রিত করে দেন। এ সময় আবদুর রহমান রা. আমার নিকট প্রবেশ করে এবং তার হাতে মিসওয়াক ছিল। আর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে (আমার বুকে) হেলান অবস্থায় রেখেছিলাম। আমি লক্ষ্য করলাম যে, তিনি আবদুর রাহমানের দিকে তাকাচ্ছেন। আমি অনুভব করতে পারলাম যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিসওয়াক চাচ্ছেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আমি কি আপনার জন্য মিসওয়াক আনব? তিনি তখন মাথার ইশারায় জানালেন যে, হ্যা, আন। তখন আমি মিসওয়াক আনলাম। কিন্তু মিসওয়াক শক্ত ছিল, তাই আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমি কি এটি আপনার জন্য নরম করে দিব? তখন তিনি মাথার ইশারায় হ্যাঁ বললেন। তখন আমি মিসওয়াকটি চিবিয়ে নরম করে দিলাম। এরপর তিনি মিসওয়াক করলেন। তাঁর সম্মুখে পাত্র অথবা পেয়ালা ছিল (রাবী উমরের সন্দেহ) তাতে পানি ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারবার স্বীয় হস্তদ্বয় উক্ত পানির মধ্যে প্রবেশ করিয়ে তার দ্বারা তাঁর চেহারা মাসেহ করালেন। এবং বলছিলেন ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই, সত্যিই মৃত্যুযন্ত্রণা কঠিন’। তারপর উভয় হাত উপর দিকে উত্তেলন করে বলছিলেন, আমি ঊর্ধ্বলোকের মহান বন্ধুর সাথে মিলিত হতে চাই। এ অবস্থায় তাঁর ইন্তিকাল হল আর হাত শিথিল হয়ে গেল।

হাদীস নং ৪১০৩

ইসমাঈল রহ………….আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, যে রোগে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন সে অবস্থায় তিনি জিজ্ঞাসা করতেন, আমি আগামীকাল কার ঘরে থাকব। আগামীকাল কার ঘরে থাকব? এর দ্বারা তিনি আয়েশা রা.-এর ঘরে থাকার পালার প্রতি ইচ্ছা প্রকাশ করতেন। অন্য সহধর্মিণীগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যার ঘরে ইচ্ছা সেখানে অবস্থান করার অনুমতি দিলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রা.-এর ঘরে অবস্থান করতে থাকেন। এমনকি তাঁর ঘরেই তিনি ইন্তিকাল করেন। আয়েশা রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার জন্য নির্ধারিত পালার দিন আমার ঘরে ইন্তিকাল করেন এবং আল্লাহ তাঁর রূহ কবজ করেন এ অবস্থায় যে, তাঁর মাথা আমার হলকুম ও সীনার মধ্যস্থলে ছিল। এবং আমার থুথুর সাথে তাঁর থুথু মিশ্রিত হয়ে যায়। তারপর তিনি বলেন, আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর রা.-এর হাতে একটি মিসওয়াক ছিল যা দিয়ে সে তার দাঁত মাজছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে তাকালেন। আমি তখন তাকে বললাম, হে আবদুল রহমান এই মিসওয়াকটি আমাকে দাও ; তখন সে তা আমাকে দিয়ে দিল। আমি সেটি চিবিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দিলাম। তিনি মিসওয়াকটি দ্বারা দাঁত পরিষ্কার করলেন, আর তিনি তখন আমার বুকে হেলান লাগান অবস্থায় ছিলেন।

হাদীস নং ৪১০৪

সুলাইমান ইবনে হারব রহ…………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পালার দিনে এবং আমার হলকুম ও সীনার মধ্যস্থলে থাকা অবস্থায় ইন্তিকাল করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন অসুস্থ হতেন তখন আমাদের মধ্যকার কেউ দোয়া পড়ে তাকে ঝাড়ফুঁক করতেন। আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ঝাড়ফুঁক করার জন্য তাঁর কাছে গেলাম। তখন তিনি তাঁর মাথা আকাশের দিকে উঠিয়ে বললেন, ঊর্ধ্বলোকের বন্ধুর সাথে (মিলিত হতে চাই), ঊর্ধ্বজগতের মহান বন্ধুর সাথে সাথে (মিলিত হতে চাই)। এ সময় আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর রা. আগমন করলেন। তাঁর হাতে মিসওয়াকের একটি তাজা ডাল ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন সেদিকে তাকালেন। তখন আমি বুঝতে পারলাম যে, তাঁর (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মিসওয়াকের প্রয়োজন। তখন আমি সেটি নিয়ে চিবালাম, ঝেড়ে পরিষ্কার করলাম এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তা দিলাম। তখন তিনি এর দ্বারা এত সুন্দরভাবে দাঁত পরিষ্কার করলেন যে, এর আগে কখনও এরূপ করেননি। তারপর তা আমাকে দিলেন। এরপর তাঁর হাত ঢলে পড়ল অথবা রাবী বলেন তাঁর হাত থেকে ঢলে পড়ল। আল্লাহ তায়ালা আমার থুথুকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর থুথুর সাথে মিলিয়ে দিলেন। দুনিয়ার জীবনের শেষ দিনে এবং আখিরাতের প্রথম দিনে।

হাদীস নং ৪১০৫

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………….আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু বকর রা. ঘোড়ার উপর সাওয়ার হয়ে তার সুনহের বাড়ি থেকে আগমন করেন। ঘোড়া থেকে অবতরণ করে তিনি মসজিদে নববীতে প্রবেশ করেন, কিন্তু কারো সঙ্গে কোন কথা না বলে সোজা আয়েশা রা.-এর কাছে উপস্থিত হন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উদ্দেশ্যে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়ামানী চাদর দ্বারা আবৃত ছিলেন। তখন তিনি চেহারা হতে কাপড় হটিয়ে তাঁর উপর ঝুঁকে পড়েন এবং তাকে চুমু দেন ও কেঁদে ফেললেন। তারপর বললেন, আমার মাতাপিতা আপনার প্রতি কুরবান হোক ! আল্লাহর কসম আল্লাহ তো আপনাকে দু’বার মৃত্যু দিবেন না, যে মৃত্যু ছিল আপনার জন্য নির্ধারিত সে মৃত্যু আপনি গ্রহণ করে নিলেন। ইমাম যুহরী রহ. বলেন, আমাকে আবু সালামা রা. আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেছেন, আবু বকর রা. বের হয়ে আসেন তখন উমর রা. লোকজনের সাথে কথা বলছিলেন। এ সময় আবু বকর রা. তাকে বলেন, হে উমর রা. বসে পড়। উমর রা. বসতে অস্বীকার করলেন। তখন সাহাবীগণ উমর রা.-কে ছেড়ে আবু বকর রা.-এর প্রতি মনোনিবেশ করলেন। তখন আবু বকর রা. ভাষণ দিলেন— “এরপর আপনাদের মধ্যে যারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ইবাদত করতেন, তিনি তো ইন্তিকাল করেছেন। আর যারা আপনাদের মধ্যে আল্লাহর ইবাদত করতেন (জেনে রাখুন) আল্লাহ চিরঞ্জীব, চির অমর। মহান আল্লাহ বলেন, “মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন রাসূল মাত্র, তাঁর পুর্বে বহু রাসূত গত হয়েছেন।………কৃতজ্ঞদের পুরস্কৃত করবেন (৩: ১৪৪) ইবনে আব্বাস রা. বলেন, আল্লাহর কসম, আবু বকর রা.-এর পাঠ করার পূর্বে লোকেরা যেন জানত না যে আল্লাহ তায়ালা এরূপ আয়াত নাযিল করেছেন। এরপর সমস্ত সাহাবী তাঁর থেকে উক্ত আয়াত শিখে নিলেন। তখন সকলে উক্ত আয়াত তিলাওয়াত করতে লাগলেন। আমাকে সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব রহ. অবহিত করেন যে, উমর রা. বলেছেন, আল্লাহর কসম, আমি যখন আবু বকর রা.-কে উক্ত আয়াত তিলাওয়াত করতে শুনলাম, তখন হতভম্ব হয়ে গেলাম, এবং আমার পা দুটি যেন আমাকে আর বহন করতে পারছিল না, আমি জমীনের উপর পড়ে গেলাম। যখন আমি শুনতে পেলাম যে, তিনি তিলাওয়াত করছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেছেন।

হাদীস নং ৪১০৬

আবদুল্লাহ ইবনে আবু শায়বা রহ…………..আয়েশা ও ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, আবু বকর রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকালের পর তাকে চুমু দেন।

হাদীস নং ৪১০৭

আলী (ইবনে মাদিনী) রহ. বলেন, আমার কাছে ইয়াহইয়া রহ. এতদ অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন……….আয়েশা রা. বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রোগাক্রান্ত অবস্থায় তাঁর মুখে ঔষধ ঢেলে দিলাম। তিনি ইশারায় আমাদেরকে তাঁর মুখে ঔষধ ঢালতে নিষেধ করলেন। আমরা বললাম, এটা ঔষধের প্রতি রোগীর সাধারণ বিরক্তি ভাবে (তাই নিষেধ মানলাম না)। যখন তিনি সুস্থবোধ করলেন তখন তিনি বললেন, আমি তোমাদের ওষুধ সেবন করাতে নিষেধ করিনি? আমরা বললাম, আমরা মনে করেছিলাম এটা ঔষধের প্রতি রোগীর সাধারণ বিরক্তিভাব। তখন তিনি বললেন, আব্বাস ব্যতীত বাড়ির প্রত্যেকের মুখে ঔষধ ঢালা তা আমি দেখি। কেননা সে তোমাদের মাঝে উপস্থিত নেই। এ হাদীস ইবনে আবু যিনাদ……….আয়েশা রা. থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবস্থা সম্পর্কে বর্ণনা করেন।

হাদীস নং ৪১০৮

আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আসওয়াদ ইবনু ইয়াযীদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনি বলেন, আয়িশা (রাঃ) এর কাছে উল্লেখ করা হল যে, রাসূল ﷺ আলী (রাঃ)-কে ওসীয়াত করে গেছেন। তখন তিনি বললেন, একথা কে বলেছে? আমার বুকের সাথে হেলান দেওয়া অবস্থায় আমি রাসূল ﷺ কে দেখেছি। তিনি একটি চিলিমচি আনতে বললেন, তাতে থুথু ফেললেন এবং ইন্তেকাল করলেন। অতএব আমি বুঝতে পারছি না তিনি কিভাবে আলী (রাঃ)- কে ওসীয়াত করলেন।

হাদীস নং ৪১০৯

আবু নুআইম রহ………….তালহা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি ওসীয়াত করে গেছেন? তিনি বললেন, না। তখন আমি বললাম, তাহলে কেমন করে মানুষের জন্য ওসীয়াত লিপিবদ্ধ করা হল অথবা কিভাবে এর নির্দেশ দেয়া হল? তিনি বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন সম্পর্কে ওসীয়াত করে গেছেন।

হাদীস নং ৪১১০

কুতাইবা রহ………….আমর ইবনে হারিস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন দীনার, দিরহাম, গোলাম ও বাঁদি রেখে যাননি। কেবলমাত্র মাদা উষ্ট্রীটি যার উপর তিনি আরোহণ করতেন এবং তাঁর যুদ্ধাস্ত্র আর একখণ্ড (খায়বর ও ফদাকের) জমীন যা মুসাফিরদের জন্য দান করে গেছেন।

হাদীস নং ৪১১১

সুলাইমান ইবনে হারব রহ………..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রোগ প্রকট রূপ ধারণ করে তখন তিনি বেহুঁশ হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় ফাতিমা রা. বললেন, উহ ! আমার পিতার উপর কত কষ্ট ! তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, আজকের পরে তোমার পিতার উপর আর কোন কষ্ট নেই। যখন তিনি ইন্তিকাল করলেন তখন ফাতিমা রা. বললেন, হায় ! আমার পিতা ! রবের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। হায় আমার পিতা ! জান্নাতুল ফিরদাউসে তাঁর বাসস্থান ! হায় পিতা জিবরাঈল আ.-কে তাঁর ইন্তিকালে খবর পরিবেশন করছি। যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সমাহিত করা হল, তখন ফাতিমা রা. বললেন, হে আনাস! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মাটি চাপা দিতে কি করে তোমাদের প্রাণ সায় দিল।

হাদীস নং ৪১১২ – নবী (সা.) সবশেষে যে কথা বলেছেন।

বিশর ইবনে মুহাম্মদ রহ…………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুস্থ থাকাকালীন বলতেন, কোন নবীর ওফাত হয়নি যতক্ষণ না তাকে জান্নাতে তাঁর ঠিকানা দেখানো হয়। তারপর তাকে ইখতিয়ার প্রদান করা হয় (দুনিয়া বা আখিরাত গ্রহণের) যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রোগ বৃদ্ধি পেল তখন তাঁর মাথা আমার উরুর উপর ছিল এ সময় তিনি মূর্ছা যান। তারপর আবার হুশ ফিরে এলে, ছাদের দিকে তিনি দৃষ্টি উত্তোলন করেন। তারপর বলেন, হে আল্লাহ আমাকে ঊর্ধ্বজগতের মহান বন্ধুর (সান্নিধ্য দান করুন)। তখন আমি বললাম, তাহলে তো তিনি আর আমাদের মাঝে থাকতে চাচ্ছেন না। আমি বুঝতে পারলাম যে, এটা ঐ কথা যা তিনি সুস্থাবস্থায় আমাদের কাছে বর্ণনা করতেন। আয়েশা রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শেষ কথা যা তিনি উচ্চারণ করেছিলেন তাহল ‘ হে আল্লাহ ! ঊর্ধ্বলোকের বন্ধুর সাথে আমাকে মিলিত করুন’।

হাদীস নং ৪১১৩ – নবী (সা.)-এর ওফাত।

আবু নুআইম রহ…………..আয়েশা ও ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নুযুলে কুরআনের দশ বছর মক্কায় বসবাস করেছেন এবং মদীনাতেও দশ বছর কাটান।

হাদীস নং ৪১১৪

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তেষট্টি বছর বয়সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাত হয়। ইবনে শিহাব যুহরী বহ. বলেন, আমাকে সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব এরূপই অবহিত করেন।

হাদীস নং ৪১১৫ – পরিচ্ছেদ ২২৫০

কাবীসা রহ…………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন এমন অবস্থায় যে, তাঁর বর্ম (যুদ্ধাস্ত্র) ইহুদীর কাছে ত্রিশ সা’ যবের বিনিময়ে বন্ধক রাখা ছিল।

হাদীস নং ৪১১৬ – নবী (সা.)-এর মৃত্যু-রোগে আক্রান্ত অবস্থায় উসামা ইবনে যায়েদ রা.-কে যুদ্ধাভিযানে প্রেরণ।

আবু আসিম যাহহাক ইবনে মাখলাদ রহ…………আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসামা ইবনে যায়েদ রা.-কে (একটি যুদ্ধের আমীর) নিযুক্ত করেন। এতে সাহাবীগণ (নিজেদের মধ্যে) সমালোচনা করেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি জানতে পেরেছি যে, তোমরা উসামার আমীর নিযুক্তি সম্পর্কে সমালোচনা করছো, অথচ সে আমার নিকট প্রিয়তম লোক।

হাদীস নং ৪১১৭

ইসমাঈল রহ…………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সেনাদল প্রেরণ করেন এবং উসামা ইবনে যায়েদ রা.-কে তাদের আমির নিযুক্ত করেন। তখন সাহাবীগণ নেতৃত্বের সমালোচনা করতে থাকেন। এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন এবং বললেন, তোমরা আজ তার নেতৃত্বের সমালোচনা করছ, এভাবে তোমরা তাঁর পিতা (যায়েদ)-এর নেতৃত্বের প্রতিও সমালোচনা করতে। আল্লাহর কসমসে (যায়েদ) ছিল নেতৃত্বের জন্য যোগ্য ব্যক্তি এবং আর সে আমার কাছে লোকদের মধ্যে প্রিয়তম ব্যক্তি। আর এ (উসামা) তার পিতার পর লোকদের মধ্যে আমার কাছে প্রিয়তম ব্যক্তি।

হাদীস নং ৪১১৮ – পরিচ্ছেদ ২২৫২

আসবাগ রহ…………সুনাবিহী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাকে কেউ জিজ্ঞাসা করেন আপনি কখন হিজরত করেছেন? তিনি বলেন, আমরা ইয়ামান থেকে হিজরতের উদ্দেশ্যে বের হয়ে জুহফাতে পৌঁছি। তখন একজন অশ্বরোহীকে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, খবর কি খবর কি? তিনি বললেন, পাঁচদিন অতিবাহিত হল আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সমাহিত করেছি। তখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কি শবেকদর সম্পর্কে কিছু শুনেছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুয়াযযিন বিলাল রা. আমাকে জানিয়েছেন যে, তা রমযানের শেষ দশ দিনে সপ্তম দিনে রয়েছে।

হাদীস নং ৪১১৯ – নবী (সা.) কতটি যুদ্ধ করেছেন।

আবদুল্লাহ ইবনে রাজা রহ………….আবু ইসহাক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যায়েদ ইবনে আরকাম রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কতটি যুদ্ধ করেছেন ? তিনি বলেন, সতেরটি। আমি বললাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতটি যুদ্ধ করেছেন? তিনি বললেন, উনিশটি।

হাদীস নং ৪১২০

আবদুল্লাহ ইবনে রাজা রহ………….বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে পনেরটি যুদ্ধ করেছি।

হাদীস নং ৪১২১

আহমদ ইবনে হাসান রহ………….বুরাইদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ষোলটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন।

তাফসীর অধ্যায় (৪১২২-৪৩৩০)

হাদীস নং ৪১২২ – সূরা ফাতিহা প্রসঙ্গে।

মুসাদ্দাদ রহ…………….আবু সাঈদ ইবনে মুআল্লা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদা মসজিদে নববীতে নামায আদায় করছিলাম, এমন সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ডাকেন। কিন্তু সে ডাকে আমি সাড়া দেইনি। পরে আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি নামাযে রত ছিলাম (এ কারণে জবাব দিতে পারিনি) তখন তিনি বললেন, আল্লাহ কি বলেননি যে, হে মুমিনগণ ! তোমরা আল্লাহর ডাকে সাড়া দিবে এবং রাসূলের ডাকেও যখন তিনি তোমাদেরকে আহবান করেন। (৮: ২৪)। তারপর তিনি আমাকে বললেন, তুমি মসজিদ থেকে বের হওয়ার পূর্বেই তোমাকে আমি কুরআনের এক মহান সূরা শিক্ষা দিব। তারপর তিনি আমার হাত ধরেন। এরপর যখন তিনি মসজিদ থেকে বের হওয়ার ইচ্ছা করেন তখন আমি তাকে বললাম, আপনি না আমাকে কুরআনের শ্রেষ্ঠতম সূরা শিক্ষা দিবেন বলে বলেছিলেন? তিনি বললেন, “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক, এটা বারবার পঠিত সাতটি আয়াত এবং মহান কুরআন যা আমাকেই প্রদান করা হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪১২৩

পরিচ্ছদঃ ২২৫৫. যারা ক্রোধে নিপতিত নয়
৪১২৩। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন ইমাম বলবে غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ তখন তোমরা বলবে آمِينَ‏ অর্থ আল্লাহ আপনি কবূল করুন। যার পড়া ফেরেশতাদের পড়ার সময়ে হবে, তার পূর্বে গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪১২৪ | 4124 | ٤۱۲٤

পরিচ্ছদঃ وعلم ادم الاسماء كلها এবং তিনি আদম (আঃ) কে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিলেন (২ঃ ৩১)
৪১২৪। মুসলিম ও খলীফা (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন মু’মিনগণ একত্রিত হবে এবং তারা বলবে, আমরা যদি আমাদের রবের কাছে আমাদের জন্য একজন সুপারিশকারী পেতাম। এরপর তারা আদম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসবে এবং তাঁকে বলবে আপনি মানব জাতির পিতা। আপনাকে আল্লাহ তা‘আলা নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। আর ফেরেশতা দ্বারা আপনাকে সিজদা করিয়েছেন এবং যাবতীয় বস্তুর নাম আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন। অতএব আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন, যেন আমাদের কঠিন স্থান থেকে আরাম দিতে পারেন। তিনি বলবেন, তোমাদের এ কাজের আমার সাহস হচ্ছে না। তিনি নিজ ভুলের কথা স্মরণ করে লজ্জাবোধ করবেন। (তিনি বলবেন) তোমরা নূহ (আলাইহিস সালাম) এর কাছে যাও। তিনই প্রথম রাসূল যাকে আল্লাহ জগতবাসীর কাছে পাঠিয়েছেন।

তখন তারা তাঁর শরণাপন্ন হবে। তিনিও বলবেন, তোমাদের এ কাজের জন্য আমার সাহস হচ্ছে না। তিনি তাঁর রবের কাছে প্রশ্ন করেছিলেন এমন বিষয় যা তাঁর জানা ছিল না। সেকথা স্মরণ করে তিনি লজ্জাবোধ করবেন। এবং বলবেন বরং তোমরা আল্লাহর খলীল (ইবরাহীম) (আলাইহিস সালাম) এর কাছে যাও। তারা তখন তাঁর কাছে আসবে, তখন তিনি বলবেন, তোমাদের এ কাজের জন্য আমার সাহস হচ্ছে না। তোমরা মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে যাও। তিনি এমন বান্দা যে তাঁর সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন এবং তাঁকে তাওরাত গ্রন্থ দান করেছেন। তখন তারা তাঁর কাছে আসবে। তিনি বলবেন, তোমাদের এ কাজের জন্য আমার সাহস হচ্ছে না। এবং তিনি এক কিবতীকে বিনা দোষে হত্যা করার কথা স্মরণ করে তাঁর রবের নিকট লজ্জাবোধ করবেন।

তিনি বলবেন, তোমরা ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে যাও। তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল এবং আল্লাহর বাণী ও রূহ্। (তারা সেখানে যাবে) তিনি বলবেন, তোমাদের এ কাজের জন্য আমার সাহস হচ্ছে না। তোমরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে যাও। তিনি এমন এক বান্দা যার পূর্ব ও পরের ভুলত্রটি আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেন। তখন তারা আমার কাছে আসবে। তখন আমি আমার রবের কাছে যাব এবং অনুমতি চাব, আমাকে অনুমতি প্রদান করা হবে। আর আমি যখন আমার রবকে দেখব, তখন আমি সিজদায় লুটিয়ে পড়ব। আল্লাহ যতক্ষণ চান আমাকে এ অবস্থায় রাখবেন। তারপর বলা হবে, আপনার মাথা উঠান এবং চান দেওয়া হবে, বলুন শোনা হবে, সুপারিশ করুন কবুল করা হবে। তখন আমি আমার মাথা উঠাব এবং আমাকে যে প্রশংসাসূচক বাক্য শিক্ষা দিবেন তা দ্বারা আমি তাঁর প্রশংসা করব। তারপ সুপারিশ করব। আমাকে একটি সীমারেখা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। (সেই সীমিত সংখ্যায়) আমি তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাব।

আমি পুনরায় রবের সমীপে ফিরে আসব। যখন আমি আমার রবকে দেখব তখন পূর্বের ন্যায় সব কিছু করব। তারপর আমি সুপারিশ করব। আবার আমাকে একটি সীমারেখা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। তদনুসারে আমি তাদের জান্নাতে দাখিল করাব। (তারপর তৃতীয়বার) আমি আবার রবের নিকটে উপস্থিত হয়ে অনুরূপ করব। এরপর আমি চতুর্থবার ফিরে আসব এবং আরজ করব এখন কেবল তারাই জাহান্নামে অবশিষ্ট রয়ে গেছে যারা কুরআনের ঘোষণা অনুযায়ী আটকে রয়েছে আর যাদের উপর চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকা অবধারিত রয়েছে।

আবূ আবদুল্লাহ বুখারী (রহঃ) বলেন, কুরআনের যে ঘোষণায় তারা জাহান্নামে আবদ্ধ রয়েছে তা হল মহান আল্লাহর বাণীঃ خَالِدِينَ فِيهَا অর্থাৎ তারা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪১২৫ | 4125 | ٤۱۲۵

পরিচ্ছদঃ ২২৫৭. মহান আল্লাহর বাণীঃ কাজেই জেনেশুনে কাউকে তোমরা আল্লাহর সমকক্ষ দাঁড় করবে না (২ঃ ২২)
২২৫৬. অনুচ্ছেদঃ মুজাহিদ (রহ.) বলেন, إِلَى شَيَاطِيْنِهِمْ তাদের সঙ্গী-সাথী মুনাফিক ও মুশরিক। مُحِيْطٌ بِالْكَافِرِيْنَ -আল্লাহ কাফিরদের পরিবেষ্টন করে আছেন- (২ঃ ১৯)। অর্থাৎ আল্লাহ তাদের একত্রকারী। صِبْغَةَ অর্থাৎ দ্বীন। عَلَى الْخَاشِعِيْنَ-প্রকৃত মু’মিনদের নিকট। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, بِقُوَّةٍ-তাতে যা আছে তা ‘আমাল করে। আবুল আলিয়া (রহ.) বলেন, مَرَضٌ-সন্দেহ। وَمَا خَلْفَهَا -পরবর্তীদের জন্য নাসীহাত। لَا شِيَةَ -দাগ বিহীন। অন্যরা বলেন, يَسُوْمُوْنَكُمْ-তারা তোমাদের কষ্ট দিত- (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/৪৯)। الْوَلَايَةُ আল ওয়াও মাফতুহ্ অবস্থায় الْوَلَاء আল-ওয়ালা এর ধাতু। অর্থাৎ প্রভুত্ব, আর যখন ‘ওয়াও’-কে যের দেয়া হবে, তখন অর্থ দাঁড়াবে নেতৃত্ব। কেউ কেউ বলেন, যে সমস্ত বীজ খাওয়া হয় তাকে ফুম فُوْمٌ বলে। ক্বাতাদাহ (রহ.) বলেন, فَبَاءُوْا তারা (আল্লাহর গযবের দিকে) ফিরে গেল। يَسْتَفْتِحُوْنَ তারা সাহায্য চাইতো। شَرَوْا-তারা বিক্রি করল। رَاعِنَا নির্গত হয়েছে الرُّعُوْنَةِ মাসদার থেকে। যখন তারা লোককে বোকা বানাতে চাইত তখন বলত, রায়িনা رَاعِنَا

لَا يَجْزِيঅর্থাৎ কোন কাজে আসবে না। ابْتَلَى -পরীক্ষা করলেন। خُطُوَاتِ নির্গত (خطو) থেকে, অর্থ পদচিহ্ন।

৪১২৫। উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … আবদুল্লাহ (ইবনু মাসউদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, কোন গুনাহ আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা বড়? তিনি বললেন, আল্লাহর জন্য সমকক্ষ দাঁড়ান করান। অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি বললাম, এতো সত্যি বড় গুনাহ। আমি বললাম, তারপর কোন গুনাহ? তিনি উত্তর দিলেন, তুমি তোমার সন্তানকে এই ভয়ে হত্যা করবে যে সে তোমার সাথে আহার করবে। আমি আরয করলাম, এরপর কেনটি? তিনি উত্তর দিলেন, তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে তোমার ব্যভিচার করা।

হাদিস নম্বরঃ ৪১২৬ | 4126 | ٤۱۲٦

পরিচ্ছদঃ ২২৫৮. মহান আল্লহর বাণীঃ “আর আমি মেঘমালা দিয়ে তোমাদের উপর ছায়া দান করেছি এবং তোমাদের জন্য খাবার পাঠিয়েছি মান্না ও সালওয়া । তোমরা খাও সেসব পবিত্র বস্তু যা আমি তোমাদেরকে দান করেছি । তারা আমার প্রতি কোন যুলম করেনি বরং তারা নিজেদের উপরই যুলম করেছিল । (সূরাহ আল-বাক্বারা ২ঃ ৫৭) মুজাহিদ (র) বলেন, মান্না শিশির জাতীয় সুস্বাদু খাদ্য (যা পাথর ও গাছের উপর অবতীর্ণ হত পরে জমে গিয়ে ব্যাঙের ছাতার মত হত) আর সাল্ওয়া-পাখি।
৪১২৬। আবূ নুআইম (রহঃ) … সাঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ الْكَمْأَةُ আল কামাআত (ব্যাঙের ছাতা) মান্ন জাতীয়। আর তার পানি চক্ষু রোগের শিফা।

হাদিস নম্বরঃ ৪১২৭ | 4127 | ٤۱۲۷

পরিচ্ছদঃ ২২৫৯. মহান আল্লাহর বাণীঃ “স্মরন করুন, যখন আমি বললাম, এই জনপদে প্রবেশ কর, যেখানে ইচ্ছা স্বাচ্ছন্দে খাও, অবনত মস্তকে প্রবেশ কর দার দিয়ে এবং বল حِطَّةٌ ‘ক্ষমা চাই’। আমি তোমাদের ভূল-ত্রুটি ক্ষমা করব এবং সৎকর্মশীলদের প্রতি আমার দান বৃদ্ধি করব”- (সূরাহ আল-বাক্বারা ২/৫৮)। رَغَدَّا প্রভূত স্বাচ্ছন্দ্য।
৪১২৭। মুহাম্মদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বনী ইসরাঈলকে বলা হয়েছিল যে, তোমরা সিজদা অবস্থায় শহর দ্বারে প্রবেশ কর এবং বল حِطَّةٌ (ক্ষমা চাই) কিন্তু তারা প্রবেশ করল নিতম্ব হেঁচড়িয়ে এবং নির্দেশিত শব্দকে পরিবর্তন করে তদস্থলে বলল, গম ও যবের দানা। আল্লাহর বাণীঃ مَنْ كَانَ عَدُوًّا لِجِبْرِيلَ ‘যারা জিবরীলের শত্রুতা করবে। ‘ইকরিমা (রহঃ) বলেন, জবর, মীক, সারাফ অর্থ ‘আবদ-বান্দা, ঈল-আল্লাহ। (অর্থ দাঁড়াল আবদুল্লাহ-আল্লাহর বান্দা)

হাদিস নম্বরঃ ৪১২৮ | 4128 | ٤۱۲۸

পরিচ্ছদঃ ২২৫৯. মহান আল্লাহর বাণীঃ “স্মরন করুন, যখন আমি বললাম, এই জনপদে প্রবেশ কর, যেখানে ইচ্ছা স্বাচ্ছন্দে খাও, অবনত মস্তকে প্রবেশ কর দার দিয়ে এবং বল حِطَّةٌ ‘ক্ষমা চাই’। আমি তোমাদের ভূল-ত্রুটি ক্ষমা করব এবং সৎকর্মশীলদের প্রতি আমার দান বৃদ্ধি করব”- (সূরাহ আল-বাক্বারা ২/৫৮)। رَغَدَّا প্রভূত স্বাচ্ছন্দ্য।
৪১২৮। আবদুল্লাহ ইবন মুনীর (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শুভাগম বার্তা শুনতে পেলেন। তখন তিনি (আবদুল্লাহ ইবনু সালাম) বাগানে ফল আহোরণ করছিলেন। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, আমি আপনাকে তিনটি বিষয় জিজ্ঞাসা করব যা নাবী বতীত অন্য কেউ জানেন না। তা হল কিয়ামতের প্রথম লক্ষণ কি? জান্নাতীদের প্রথম খাদ্য কি হবে? এবং সন্তান কখন পিতার সদৃশ হয় আর কখন মাতার সদৃশ হয়? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাকে জিবরীল (আলাইহিস সালাম) এখনি এসব সম্পর্কে অবহিত করলেন, আবদুল্লাহ ইবনু সালাম বললেন, জিবরীল? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললে, হ্যাঁ। ইবনু সালাম বললেন, সে তো ফেরেশতাদের মধ্যে ইয়াদীদের শত্রু। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আয়াত পাঠ করলেন, যে ব্যাক্তি জিবরীলের শত্রু হবে, এ জন্য যে তিনি তো আপনার অন্তরে, (আল্লাহর হুকুমে) ওহী নাযিল করেন। (২ঃ ৯৭)।

কিয়ামতের প্রথম লক্ষণ হল, এক প্রকার আগুন বের হবে যা মানবকুলকে পূর্ব প্রান্ত হতে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত একত্রিত করবে। আর জান্নাতীরা প্রথমে যা আহার করবে তা হল মাছের কলিজার টুকরা। আর যখন পুরুষের বীর্য স্ত্রীর উপর প্রাধান্য লাভ করবে তখন সন্তান পিতার সদৃশ হয় এবং যখন স্ত্রীর বীর্য পুরুষের উপ প্রাধান্য লাভ করে তখন সন্তান মাতার সদৃশ হয়।

তখন আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বললেন, আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আরও সাক্ষ্য দেই যে, আপনি নিঃসন্দেহে আল্লাহর রাসূল। ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইয়াহুদিরা সাংঘাতিক মিথ্যারূপকারী। যদি তারা আপনাকে প্রশ্ন করার পূর্বেই আমার ইসলাম গ্রহণের সংবাদ জেনে যায় তবে তারা আমার প্রতি অপবাদ আনবে। ইতিমধ্যে ইহুদীরা এসে গেল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহুদীদের জিজ্ঞাসা করলেন, আবদুল্লাহ তোমাদের মধ্যে কেমন লোক? তারা উত্তর দিল, তিনি আমাদের মধ্যে উত্তম এবং আমাদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত ব্যাক্তির পুত্র। তিনি আমাদের নেতা এবং আমাদের নেতার ছেলে।

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি আবদুল্লাহ ইবনু ইসলাম গ্রহণ করেন, তবে তোমরা কেমন মনে করবে। তারা বলল, আল্লাহ তাকে এর থেকে পানাহ দিন। তখন [আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ)] বের হয়ে এসে বললেন, আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ নিঃসন্দেহে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল। তখন তারা বলল, সে আমাদের মধ্যে মন্দ ব্যাক্তি ও মন্দ ব্যাক্তির ছেলে। তারপর তারা ইবনু সালাম (রাঃ) কে দোষী সাব্যস্ত করে সমালোচনা করতে লাগল। তখন আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটাই আমি ভয় করছিলাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪১২৯ | 4129 | ٤۱۲۹

পরিচ্ছদঃ ২২৬০. মহান আল্লাহর বাণীঃ আমি কোন আয়াত রহিত করলে কিংবা বিস্মৃতি হতে দিলে। (সূরাহ আল-বাক্বারা ২/১০৬)
৪১২৯। আমর ইবনু আলী (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর (রাঃ) বলেন, উবাই (রাঃ) আমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম কারী, আর আলী (রাঃ) আমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বিচারক। কিন্তু আমরা উবাই (রাঃ) এর সব কথাই গ্রহণ করি না। কারণ উবাই (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা শুনেছি তা ছেড়ে দিতে পারি না। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলে, আমি যে আয়াত রহিত করি অথবা বিস্মৃত হতে দেই … (২ঃ ১০৬)।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৩০ | 4130 | ٤۱۳۰

পরিচ্ছদঃ ২২৬১. মহান আল্লাহর বানীঃ আর তাঁরা বলেঃ ‘আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন।’ তিনি অতি পবিত্র। (সূরাহ আল –বাক্বারা ২/১১৬)
৪১৩০। আবূল ইয়ামান (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আদম সন্তান আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে। অথচ তার তা উচিত নয়। আমাকে গালি দিয়েছে অথচ তার জন্য তা উচিত নয়। তার আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ হল, সে বলে যে, আমি তাকে পূর্বের ন্যায় পুনরুজ্জীবনে সক্ষম নই। আর আমাকে তার গালি প্রদন হল–তার বক্তব্য যে, আমার সন্তান আছে অথচ আমি স্ত্রী ও সন্তান গ্রহণ থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৩১ | 4131 | ٤۱۳۱

পরিচ্ছদঃ ২২৬২. মহান আল্লাহর বাণীঃ তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে নামাযের স্থান নির্ধারণ কর। (২ঃ ১২৫) مثابة প্রত্যাবর্তন স্থল। يثوبون অর্থ লোকজন প্রত্যাবর্তন করে।
৪১৩১। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর (রাঃ) বলেছেন, তিনটি বিষয়ে আমার মতামত আল্লাহর ওহীর অনুরূপ হয়েছে অথবা (তিনি বলেছেন) তিনটি বিষয়ে আমার মতামতের অনুকুলে আল্লাহ ওহী নাযিল করেছেন। তা হল, আমি বলেছিলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আপনি মাকামে ইবরাহীমকে সালাত (নামায/নামাজ)-এর স্থান হিসাবে গ্রহণ করতেন। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করলেন। তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাত (নামায/নামাজ)-এর স্থানে নির্ধারণ কর (২: ১২৫) আমি আরয করেছিলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার কাছে ভাল ও মন্দ উভয় প্রকারে লোক আসে। কাজেই আপনি যদি উম্মাহাতুল মু’মিনীনদেরকে (আপনার স্ত্রীদের) পর্দা করার নির্দেশ দিতেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা পর্দার আয়াত নাযিল করেন। তিনি আরো বলেন, আমি জানতে পেরেছিলাম যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কতক বিবির প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তখন আমি তাদের কাছে উপস্থিত হই, এবং বলি যে, আপনারা এর থেকে বিরত হবেন অথবা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে আপনাদের চেয়েও উত্তম স্ত্রী প্রদান করবেন। এরপর আমি তাঁর কোন এক স্ত্রীর কাছে আসি, তখন তিনি বললেন, হে উমর! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীগণকে নসীহত করে থাকেন আর এখন তুমি তাদের উপদেশ দিতে আরম্ভ করেছ? তখন আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেনঃ عَسَى رَبُّهُ إِنْ طَلَّقَكُنَّ أَنْ يُبَدِّلَهُ أَزْوَاجًا خَيْرًا مِنْكُنَّ مُسْلِمَاتٍ নাবী যদি তোমাদের সকলকে পরিত্যাগ করেন তবে তাঁর রব সম্ভবত তোমাদের স্থলে তাঁকে দিবেন তোমাদের অপেক্ষা উত্তম স্ত্রী যারা হবে আত্মসমপর্ণকারী। (৬৬: ৫)

ইবনু আবী মারয়াম (রহঃ) বলেন, আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, উমর (রাঃ) আমার কাছে এরূপ বলেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৩২ | 4132 | ٤۱۳۲

পরিচ্ছদঃ ২২৬৩. মহান আল্লাহর বাণীঃ স্মরন করুন যখন ইব্রাহীম ও ইসমাইল কা‘বা ঘরের প্রাচীর তুলছিলেন তখন তারা বলছিলেনঃ হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের এই কাজ গ্রহন করুন, নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা ।” (সূরাহ আল-বাক্বারা ২ঃ ১২৭)। القواعد অর্থ ভিত্তি, একবচনে قاعدة আল-কাওয়ায়িদ মহিলাদের সম্পর্কে বলা হলে এর অর্থ বৃদ্ধা নারী, তখন এর একবচন (قاعد) হবে।
৪১৩২। ইসমাঈল (রহঃ) … নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমার কি জানা নেই যে তোমার সম্প্রদায় কুরাইশ কা’বা তৈরী করেছে এবং ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর ভিত্তির থেকে ছোট নির্মাণ করেছে?’ [আয়িশা (রাঃ) বলেন] আমি তখন বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর ভিত্তির উপর কা’বাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে পারেন না? তিনি বললেন, যদি তোমার গ্রোত্রের কুফরীর যামানা অতীতে না হত। এ কথা শুনে আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, যদি আয়িশা (রাঃ) এ কথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে শুনে থাকেন, তবে আমার মনে হয় যে এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতিমের দিকের দুই রোকনে (রোকনে ইরাকী ও রোকন শামী) চুম্বন বর্জন করেছেন, যেহেতু বায়তুল্লাহ ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর ভিত্তির উপর সম্পূর্ণভাবে নির্মিত নয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৩৩ | 4133 | ٤۱۳۳

পরিচ্ছদঃ ২২৬৪. মহান আল্লাহর বাণীঃ তোমরা বল, আমরা আল্লাহতে ঈমান এনেছি এবং যা আমাদের প্রতি নাযিল হয়েছে তার প্রতিও। (২ঃ১৩৬)
৪১৩৩। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আহলে কিতাব (ইহুদী) ইবরানী ভাষায় তাওরাত পাঠ করে মুসলিমদের জন্য তা আরবী ভাষায় ব্যাখ্যা করত। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আহলে কিতাবকে বিশ্বস করো না আর অবিশ্বাসও কর না এবং (আল্লাহর বাণী) ‘তোমরা বল আমরা আল্লাহতে ঈমান এনেছি এবং যা নাযিল করা হয়েছে তা।’

হাদিস নম্বরঃ ৪১৩৪ | 4134 | ٤۱۳٤

পরিচ্ছদঃ ২২৬৫. মহান আল্লাহর বাণীঃ নির্বোধ লোকেরা অচিরেই বলবে যে, তারা এ যাবত যে কিবলা অনুসরণ করে আসছিল তা থেকে তাদেরকে কিসে ফিরিয়ে দিল! বলুনঃ পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা সরল-সঠিক পথে পরিচালনা করেন।” (সূরাহ আল-বাক্বারা ২ঃ ১৪২)
৪১৩৪। আবূ নু‘আইম (রহঃ) … বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনাতে ষোল অথবা সতের মাস যাবত বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। অথচ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল্লাহর দিকে তাঁর কিবলা হওয়াকে পছন্দ করতেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের সালাত (নামায/নামাজ) (কাবার দিকে মুখ করে) আদায় করেন এবং লোকেরাও তাঁর সাথে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। এরপর তাঁর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায়কারী একজন বের হন এবং তিনি একটি মসজিদের লোকদের কাছ দিয়ে গেলেন তখন তারা রুকু অবস্থায় ছিলেন। তিনি বললেন, আমি আল্লাহকে সাক্ষি রেখে বলছি যে, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মক্কার দিকে মুখ করে নামায আদায় করেছি। একথা শোনার পর তাঁরা যে অবস্থায় ছিলেন, সে অবস্থায় বায়তুল্লাহর দিকে ফিরে গেলেন। আর যারা কিবলা বায়তুল্লাহর দিকে পরিবর্তের পূর্বে বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় অবস্থায় মারা গিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন, তাদের সম্পর্কে আমরা কি বলব তা আমাদের জানা ছিল না। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন “আল্লাহ এরূপ নন যে, তোমাদের ঈমানকে তিনি ব্যর্থ করে দিবেন, নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি দয়ার্দ্র, পরমদয়ালু।” (২:১৪৩)

হাদিস নম্বরঃ ৪১৩৫ | 4135 | ٤۱۳۵

পরিচ্ছদঃ ২২৬৬. আল্লাহর বাণীঃ “আর এইভাবে আমি তোমাদেরকে এক মধমপন্থী জাতিরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছি, যাতে তোমরা মানব জাতির জন্য সাক্ষীস্বরূপ হবে এবং রাসুল (সাঃ) তোমাদের জন্য সাক্ষীস্বরূপ হবেন (সূরাহ আল-বাক্বারা ২ঃ ৪৩)
৪১৩৫। ইউসুফ ইবনু রাশিদ (রহঃ) … আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন নূহ (আলাইহিস সালাম) কে ডাকা হবে। তখন তিনি উত্তর দিবেন এ বলেঃ হে আমাদের রব! আমি আপনার পবিত্র নিকটে উপস্থিত (তখন আল্লাহ জিজ্ঞাসা করবেন) তুমি কি (আল্লাহর পায়গাম লোকদের) পৌঁছে দিয়েছিলেন? তিনি বলবেন, হ্যাঁ। এরূপ তাঁর উম্মাতকে জিজ্ঞাসা করা হবে, [নূহ্ (আলাইহিস সালাম) কি] তোমাদের নিকট (আল্লাহর পয়গাম) পৌঁছে দিয়েছে? তারা তখন বলবে, আমাদের কাছে কোন সতর্কবাণী আগমন করেনি। তখন আল্লাহ তা‘আলা [নূহ (আলাইহিস সালাম) কে] বলবেন, তোমা দাবির প্রতি সাক্ষী কে? তিনি বলবেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর উম্মাতগণ। তখন তারা সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, নূহ (আলাইহিস সালাম) তাঁর উম্মাতের নিকট আল্লাহর পয়গাম প্রচার করেছেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের প্রতি সাক্ষ্য হবেন। এটাই মহান আল্লাহর বাণী وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا ওয়াসাত শব্দের অর্থ ন্যায়নিষ্ঠ।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৩৬ | 4136 | ٤۱۳٦

পরিচ্ছদঃ ২২৬৭. আল্লাহর বাণীঃ আপনি এ যাবৎ যে কিবলার অনুসরণ করেছিলেন তাকে আমি এইজন্য প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম যাতে জানতে পারি কে রসূলের অনুসরণ করে এবং কে ফিরে যায়? আল্লাহ যাদের সৎপথ প্রদর্শন করেছেন তাদের ব্যতীত অন্যদের কাছে এটা নিশ্চিত কঠিন বিষয়। আল্লাহ এমন নন যে, তোমাদের ঈমান ব্যর্থ করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি পরম মমতাময়, পরম দয়ালু। (সূরাহ-আল বাক্বারা্ ২ঃ ১৪৩)
৪১৩৬। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদিন লোকেরা কুবা মসজিদে ফযরের সালাত আদায় করছিলেন। এমন সময় এক আগন্তুক এসে বলল, আল্লাহ তা‘আলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি কুরআনের এ আয়াত নাযিল করেছেন যে, তিনি যেন কাবার দিকে (সালাত (নামায/নামাজ) মুখ করেন। কাজেই আপনারাও কাবার দিকে মুখ করে নিন। সে মুতাবিক লোকেরা কাবার দিকে মুখ করে নেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৩৭ | 4137 | ٤۱۳۷

পরিচ্ছদঃ ২২৬৮. মহান আল্লাহর বাণীঃ “আকাশের দিকে বার বার আপনার তাকানোকে আমি অবশ্য লক্ষ্য করেছি। তারা যা করে সে সম্বন্ধে আল্লাহ অনবহিত নন (সূরাহ-আল বাক্বারা ২ঃ ১৪৪)
৪১৩৭। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যারা উভয় কিবলার (কাবা ও বায়তুল মুকাদ্দাস) এর দিকে ফিরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন তাদের মধ্যে আমি ছাড়া আর কেউ জীবিত নেই।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৩৮ | 4138 | ٤۱۳۸

পরিচ্ছদঃ ২২৬৯. আল্লাহর বাণীঃ “যাদের কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের কাছে আপনি সকল দলীল পেশ করেন তবুও তারা আপনার কিবলার অনুসরণ করবে না, আর আপনিও তাদের কিবলার অনুসারী নন। এবং তারা একে অন্যের অনুসরণ করে না। আপনি যদি আপনার কাছে জ্ঞান আসার পর তাদের বাসনার অনুসরণ করেন, তবে নিশ্চয় আপনি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।”(সূরাহ-আল বাক্বারা ২ঃ ১৪৫)
৪১৩৮। খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা লোকেরা মসজিদে কুবায় ফযরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। এমন সময় তাদের কাছে একজন লোক এসে বলল, এই রাত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর কুরআনের আয়াত নাযিল হয়েছে এবং তিনি নির্দেশপ্রাপ্ত হয়েছেন কাবার দিকে মুখ ফিরিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার জন্য। অতএব আপনারা কাবার দিকে মুখ ফিরান। আর তখন লোকদের চেহারা শামের দিকে ছিল। এরপর তারা তাদের চেহারা কাবার দিকে ফিরিয়ে নিলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৩৯ | 4139 | ٤۱۳۹

পরিচ্ছদঃ ২২৭০. আল্লাহর বাণীঃ “ যাদের আমি কিতাব দিয়েছি তারা তাকে সেইরূপে জানে, যেরূপ তারা তাদের পুত্রদের জানে। এবং একদল জেনেশুনে সত্য গোপন করে থাকে। আর সত্য আপনার প্রভুর পক্ষ থেকে। সুতরাং আপনি যেন সন্দেহ ও সংশয় পোষণকারীদের অন্তর্ভুক্ত না হন।” (সূরাহ-আল বাক্বারা ২ঃ ১৪৬-১৪৭)
৪১৩৯। ইয়াহইয়া ইবনু কাযাআ (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা লোকেরা কুবা মসজিদে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) রত ছিলেন, তখন তাদের নিকট একজন আগুন্তুক এসে বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি এ রাতে কুরআনের আয়াত নাযিল করা হয়েছে, তাতে তাঁকে কাবার দিকে মুখ ফিরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অতএব আপনারা কাবার দিকে মুখ ফিরিয়ে নেন। তার তখন তাদের মুখ সিরিয়ার দিকে ছিল। এরপর তাদের মুখ কাবার দিকে ফিরে গেল।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৪০ | 4140 | ٤۱٤۰

পরিচ্ছদঃ ২২৭১. আল্লাহর বাণীঃ আর তাদের প্রত্যেকেরেই রয়েছে একটি দিক, যেদিকে সে মুখ করে । সুতরাং তোমরা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা কর। তোমরা যেখানেই থাক না কেন, আল্লাহ তোমাদের সকলকে একত্র করবেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান (২ঃ ১৪৮)
৪১৪০। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) … বারা (ইবনু আযিব) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ষোল অথবা সতের মাস যাবত (মদিনাতে) বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছি। তারপর আল্লাহ তাঁকে কাবার দিকে ফিরিয়ে দেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৪১ | 4141 | ٤۱٤۱

পরিচ্ছদঃ ২২৭২. আল্লাহর বাণীঃ “যেখান হতেই তুমি বের হও না কেন, মাসজিদুল হারামের দিকে ফেরাও । নিশ্চয় এটা তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে প্রেরিত সত্য। তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আল্লাহ বেখবর নন। (সূরাহ-আল বাক্বারা ২ঃ ১৪৯) । شَطْرُهُ অর্থ সেই দিকে।
৪১৪১। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা কূবা মসজিদে সাহাবীগণ ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) রত ছিলেন। এমন সময় এক ব্যাক্তি এসে বলল, আজ রাতে [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি] কুরআনের আযাত নাযিল হয়েছে, তাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবার দিকে মুখ ফিরাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অতএব আপনারা সে দিকে মুখ ফিরিয়ে নেন। তখন তারা আপন আপন অবস্থায় মুখ ফিরিয়ে নেন এবং কাবার দিকে মুখ করেন। সে সময় তাদের মুখ সিরিয়ার দিকে ছিল।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৪২ | 4142 | ٤۱٤۲

পরিচ্ছদঃ ২২৭৩. আল্লাহর বাণীঃ এবং তুমি যেখান হতেই বের হও না কেন মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরাও এবং তোমরা যেখানেই তাহনা কেন তার দিকে মুখ ফিরাবে, যাতে তোমরা সৎ পথে পরিচালিত হতে পার। (২ঃ ১৫০)
৪১৪২। কুতাইবা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা কুবাতে সাহাবীগণ ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) রত ছিলেন, এমতাবস্থায় জনৈক আগুন্তুক এসে বলল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি আজ রাতে কুরআনের আয়াত নাযিল হয়েছে এবং তাঁকে কাবার দিকে মুখ ফিরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অতএব আপনারাও সে দিকে মুখ ফিরান। তাদের মুখ তখন সিরিয়ার দিকে ছিল। এরপর তারা কাবার দিকে ফিরে গেলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৪৩ | 4143 | ٤۱٤۳

পরিচ্ছদঃ ২২৭৪. মহান আল্লাহর বাণীঃ নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া হল আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত । অতএব যে কেউ কা‘বা ঘরে হাজ্জ বা ‘উমরাহ সম্পন্ন করে এ দুটির মধ্যে সায়ী (যাতায়াত) করলে কোন পাপ নেই । আর কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোন নেক কাজ করলে আল্লাহ তার পুরস্কার দেবেন, তিনি সর্বজ্ঞ । (সূরাহ-আল বাক্বারা ২/১৫৮)। শা’আয়ির (شَعَائِرِ) শারাতুনের বহু বচন। অর্থ নিদর্শন। ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, সাফওয়ান অর্থ পাথর; বলা হতো এমন পাথর যা কোন কিছু উৎপন্ন করে না। একবচনে صفوانة হয়ে থাকে। ব্যবহৃত হয় صفا বহুবচনে।
৪১৪৩। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … উরওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম আর সে সময় আমি অল্প বয়স্ক ছিলাম। মহান আল্লাহর বাণীঃ إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ এ আয়াত সম্পর্কে আপনার অভীমত কি? “সাফা এবং মারওয়া পর্বদ্বয় আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শসমূহের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই যে বায়তুল্লাহর হাজ্জ (হজ্জ) বা উমরা ইচ্ছা করে তার জন্য উভয় পর্বতের মধ্যে সায়ী করণে কোন দোষ নেই।” (২ঃ ১৫৮) আমি মনে করি উক্ত দুই পর্বত সায়ী নাকরণের কোন ব্যাক্তির উপর গুনাহ বর্তাবে না। তখন আয়িশা (রাঃ) বললেন, কখনই এরূপ নয়। তুমি যা বলছ যদি তাই হতো তা হলে বলা হতো এভাবে فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ لاَ يَطَّوَّفَ بِهِمَا “উভয় পর্বত তাওয়াফ না করলে কোন গুনাহ বর্তাবে না। বস্ত্তত এই আয়াত নাযিল হয়েছে আনসারদের শানে। তারা ‘মানাত’ এর পূজা করত। আর ‘মানাত’ ছিল কুদায়েদের পথে অবস্থিত। আনসারগণ সাফা ও মারওয়ার মধ্যে সায়ী করা মন্দ জানতো। ইসলামের আগমনের পর তারা এ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করল। তখন আল্লাহ উক্ত আয়াত নাযিল করেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৪৪ | 4144 | ٤۱٤٤

পরিচ্ছদঃ ২২৭৪. মহান আল্লাহর বাণীঃ নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া হল আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত । অতএব যে কেউ কা‘বা ঘরে হাজ্জ বা ‘উমরাহ সম্পন্ন করে এ দুটির মধ্যে সায়ী (যাতায়াত) করলে কোন পাপ নেই । আর কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোন নেক কাজ করলে আল্লাহ তার পুরস্কার দেবেন, তিনি সর্বজ্ঞ । (সূরাহ-আল বাক্বারা ২/১৫৮)। শা’আয়ির (شَعَائِرِ) শারাতুনের বহু বচন। অর্থ নিদর্শন। ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, সাফওয়ান অর্থ পাথর; বলা হতো এমন পাথর যা কোন কিছু উৎপন্ন করে না। একবচনে صفوانة হয়ে থাকে। ব্যবহৃত হয় صفا বহুবচনে।
৪১৪৪। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আসিম ইবনু সুলাইমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে সাফা ও মারওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমরা ঐ দু’টিকে জাহেলী যুগের প্রথা বলে বিবেচনা করতাম। এরপর যখন ইসলাম আসলো, তখন আমরা উভয়ের মধ্যে সায়ী করা থেকে বিরত থাকি। তখন উক্ত আয়াত নাযিল হয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৪৫ | 4145 | ٤۱٤۵

পরিচ্ছদঃ ২২৭৫. মহান আল্লাহর বাণীঃ তথাপি কেউ কেউ আল্লাহ ছাড়া অপরকে আল্লাহর সমকক্ষরূপে গ্রহন করে (২ঃ ১৬৫) এখানে أندادا শব্দের অর্থ সমকক্ষ ও বরাবর। এর একবচন ند
৪১৪৫। আবদান (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি কথা বললেন, আর আমি আর একটি বললাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যাক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যকে তাঁর সমকক্ষে স্থাপন করতঃ মৃত্যুবরণ করে, সে জাহান্নামে যাবে। আর আমি বললাম, যে ব্যাক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক ও সমকক্ষ স্থাপন না করা অবস্থায় মারা যায়, (তখন তিনি বললেন) সে জান্নাতে যাবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৪৬ | 4146 | ٤۱٤٦

পরিচ্ছদঃ ২২৭৬. হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য নিহতদের ব্যপারে কিসাসের বিধান দেয়া হল, স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস এবং নারীর বদলে নারী। তবে তার ভাইয়ের তরফ থেকে কাউকে কিছু ক্ষমা করে দেয়া হলে যথাযথ বিধির অনুসরণ করতে হবে এবং সততার সঙ্গে তা তাকে প্রদান করতে হবে। এটা তোমাদের প্রতিপালকের তরফ থেকে ভার লাঘব ও বিশেষ রাহমাত। এরপরও যে কেউ বাড়াবাড়ি করে, তার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি । (সূরাহ-আল বাক্বারা ২/১৭৮) উফিয়ার (عفى) অর্থ পরিত্যাগ করে।
৪১৪৬। হুমায়দী (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনী ইসরাঈল সম্প্রদায়ে কিসাস প্রথা চালু ছিল কিন্তু দিয়াত* তাদের মধ্যে চালু ছিল না। অনন্তর আল্লাহ তা‘আলা এ উম্মতের জন্য এ আয়াত নাযিল করেনঃ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِصَاصُ উল্লেখিত আয়াতে আলআফুব (الْعَفْوُ) এর অর্থ ইচ্ছাকৃত হত্যার বিনিময়ে দিয়াত গ্রহণ করে কিসাস ক্ষমা করে দেওয়া। ‘‘ফাত্তবাউন বিল মারুফি ওয়া আদাউন ইলাহি বি ইহসানিন’ অর্থাৎ এ ব্যাপারে যথাযথ বিধির অনুসরণ করবে এবং সততার সাথে দিয়াত আয়াত করে দেবে। তোমাদের প্রতি অবধারিতভাবে আরোপিত কেবল কিসাস হতে তোমাদের প্রতি দিয়াত ব্যবস্থা আল্লাহর পক্ষ হতে তোমাদের প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ ও হ্রাস ও লঘু শাস্তির বিধান। দিয়াত কবুল করার পরও যদি হত্যা করে তাহলে তার জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে।

* হত্যার শাস্তি ক্ষমা করে দেওয়ার বিনিময়ে গৃহীত ক্ষতিপূরণের অর্থকে দিয়াত বলে।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৪৭ | 4147 | ٤۱٤۷

পরিচ্ছদঃ ২২৭৬. হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য নিহতদের ব্যপারে কিসাসের বিধান দেয়া হল, স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস এবং নারীর বদলে নারী। তবে তার ভাইয়ের তরফ থেকে কাউকে কিছু ক্ষমা করে দেয়া হলে যথাযথ বিধির অনুসরণ করতে হবে এবং সততার সঙ্গে তা তাকে প্রদান করতে হবে। এটা তোমাদের প্রতিপালকের তরফ থেকে ভার লাঘব ও বিশেষ রাহমাত। এরপরও যে কেউ বাড়াবাড়ি করে, তার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি । (সূরাহ-আল বাক্বারা ২/১৭৮) উফিয়ার (عفى) অর্থ পরিত্যাগ করে।
৪১৪৭। মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রহঃ) … আনাস (রাঃ) তাদের কাছে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, আল্লাহর কিতাবেই কিসাসের নির্দেশ রয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৪৮ | 4148 | ٤۱٤۸

পরিচ্ছদঃ ২২৭৬. হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য নিহতদের ব্যপারে কিসাসের বিধান দেয়া হল, স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস এবং নারীর বদলে নারী। তবে তার ভাইয়ের তরফ থেকে কাউকে কিছু ক্ষমা করে দেয়া হলে যথাযথ বিধির অনুসরণ করতে হবে এবং সততার সঙ্গে তা তাকে প্রদান করতে হবে। এটা তোমাদের প্রতিপালকের তরফ থেকে ভার লাঘব ও বিশেষ রাহমাত। এরপরও যে কেউ বাড়াবাড়ি করে, তার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি । (সূরাহ-আল বাক্বারা ২/১৭৮) উফিয়ার (عفى) অর্থ পরিত্যাগ করে।
৪১৪৮। আবদুল্লাহ ইবনু মুনীর (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আনাসের ফুফু রুবাঈ জনৈক বাঁদির সামনের দাঁদ ভেঙ্গে ফেলে। এরপর বাঁদির কাছে রুবাঈয়ের লোকেরা ক্ষামাপ্রার্থী হলে বাঁদির লোকেরা অস্বীকার করে। তখন তাদের কাছে দীয়াত পেশ করা হল, তখন তা তারা গ্রহণ করল না। অগত্যা তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সমীপে এসে ঘটনা জানাল। কিন্তু বাঁদির লোকেরা কিসাস ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিসাসের নির্দেশ দিলেন। তখন আনাস ইবনু নযর (রাঃ) নিবেদন করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! রুবাঈয়ের সামনে দাঁত ভেঙ্গে দেওয়া হবে? না যে সত্তা আপনাকে সত্য ধর্ম দিয়ে প্রেরণ করেছেন তাঁর শপথ, তাঁর দাঁত ভাঙ্গা হবে না। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আনাস! আল্লাহর কিতাবই কিসাসের নির্দেশ দেয়। এরপর বাঁদির সম্প্রদায় রাযী হয়ে যায় এবং রুবাঈকে ক্ষমা করে দেয়। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এমন লোকও আছে যিনি আল্লাহর নামে শপথ করেন, আল্লাহ তা পূরণ করেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৪৯ | 4149 | ٤۱٤۹

পরিচ্ছদঃ ২২৭৭. মহান আল্লাহর বাণীঃ হে মু’মিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেয়া হল, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা সাবধান হয়ে চলতে পার (২ঃ ১৮৩)
৪১৪৯। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাহেলী যুগের লোকেরা আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা) রোযা পালন করত। এরপর যখন রমযানের রোযা বিধান অবতীর্ণ হল, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার ইচ্ছা সে আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র রোযা পালন করতে পারে আর যে চায় সে পালন না-ও করতে পারে।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৫০ | 4150 | ٤۱۵۰

পরিচ্ছদঃ ২২৭৭. মহান আল্লাহর বাণীঃ হে মু’মিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেয়া হল, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা সাবধান হয়ে চলতে পার (২ঃ ১৮৩)
৪১৫০। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রমযানের রোযা অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র রোযা পালন করা হত। এরপর যখন রমযানের রোযার বিধান অবতীর্ণ হল, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ইচ্ছা করে সাওমে ‘আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা) পালন করবে, আর যে চায় সে রোযা পালন করবে না।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৫১ | 4151 | ٤۱۵۱

পরিচ্ছদঃ ২২৭৭. মহান আল্লাহর বাণীঃ হে মু’মিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেয়া হল, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা সাবধান হয়ে চলতে পার (২ঃ ১৮৩)
৪১৫১। মাহমুদ (ইবনু গায়লা) (রহঃ) … আবদুল্লাহ (ইবনু মাসউদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাঁর নিকট ‘আশ‘আস (রাঃ) আসেন। এ সময় ইবনু মাসঊদ (রাঃ) পানাহার করছিলেন। তখন আশ‘আস (রাঃ) বললেন, আজকে তো ‘আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)। তিনি বললেন, রমযানের রোযার বিধান নাযিল হওয়ার পূর্বে ‘আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র রোযা পালন করা হতো। যখন রমযানের রোযা নাযিল হল তখন তা পরিত্যাগ করা হয়েছে। এস, তুমিও খাও।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৫২ | 4152 | ٤۱۵۲

পরিচ্ছদঃ ২২৭৭. মহান আল্লাহর বাণীঃ হে মু’মিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেয়া হল, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা সাবধান হয়ে চলতে পার (২ঃ ১৮৩)
৪১৫২। মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাহেলী যুগে কুরাইশগণ আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন রোযা পালন করত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও সে রোযা পালন করতেন। যখন তিনি মদিনায় হিজরত করলেন তখনও তিনি সে রোযা পালন করতেন এবং অন্যদেরকেও তা পালনের নির্দেশ দিতেন। এরপর যখন রমযানের ফরয রোযার হুকুম নাযিল হল তখন আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র রোযা ছেড়ে দেওয়া হল। এরপর যে চাইত সে উক্ত রোযা পালন করত আর যে চাইত পালন করত না।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৫৩ | 4153 | ٤۱۵۳

পরিচ্ছদঃ ২২৭৮. মহান আল্লাহর বাণীঃ (রোযা ফরয করা হয়েছে তা) নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্য। তবে তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে কিংবা সফরে থাকলে সে অন্য সময়ে সওমের সংখ্যা পূরণ করে নিবে। আর সওম যাদের জন্য অতিশয় কষ্টদায়ক, তারা এর পরিবর্তে ফিদয়া দিবে একজন মিসকীনকে খাদ্যদান করে। কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎকাজ করে তবে তা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। যদি তোমার উপলব্ধি করতে তবে বুঝতে যে রোযা পালন করাই তোমাদের জন্য অধিক ফলপ্রসু (২ঃ ১৮৪) ইমাম আতা (র) বলেন, সর্বপ্রকার রোগেই সওম ভঙ্গ করা যাবে। যেমন আল্লাহ বলেছেন। পক্ষান্তরে ইমাম হাসান ও ইবরাহীম (র) বলেন, স্তন্যদাত্রী এবং গর্ভবতী স্ত্রীলোক যখন নিজ প্রাণ অথবা তাদের সম্মানের জীবনের প্রতি হুমকির আশংকা করে তখন তারা উভয়ে সওম ভঙ্গ করতে পারবে। পরে তা আদায় করে নিতে হতে। অতিবৃদ্ধ ব্যক্তি যখন সওম পালনে অক্ষম হয়ে পড়ে (তখন ফিদয়া আদায় করবে।) আনাস (রাঃ) বৃদ্ধ হওয়া পর এক বছর অথবা দু’বছর প্রতিদিন এক দরিদ্র ব্যক্তিকে রুটি ও গোশত খেতে দিতেন এবং সওম ছেড়ে দিতেন। অধিকাংশ লোকের কিরাআত হল- يُطِيْقُوْنَه অর্থাৎ যারা সওমর সামর্থ রাখে, এবং সাধারণত এরূপই পড়া হয়।
৪১৫৩। ইসহাক (রহঃ) … থেকে বর্ণিত, ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে পড়তে শুনেছেন وَعَلَى الَّذِينَ يُطَوَّقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ অর্থাৎ যাদের প্রতি রোযার বিধান আরোপ করা হয়েছে অথচ তারা এর সময় নয়। তাদের প্রতি একজন মিসকিনকে খানা খাওয়ানোই ফিদয়া। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, এ আয়াত রহিত হয়নি। এর হুকুম সেই অতিবৃদ্ধ পুরুষ ও স্ত্রীলোকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যারা রোযা পালনে সামর্থ্য রাখে না, তখন প্রত্যেকদিনের রোযার পরিবর্তে একজন মিসকিনকে পেট ভরে আহার করাবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৫৪ | 4154 | ٤۱۵٤

পরিচ্ছদঃ ২২৭৯. মহান আল্লাহর বাণীঃ সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে তারা যেন এ মাসে সওম পালন করে।” (সূরাহ আল-বাক্বারা ২/১৮৫)
৪১৫৪। আইয়্যাশ ইবনুল ওয়ালিদ (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি পাঠ করতেন ‏فِدْيَةٌ طَعَامُ مَسَاكِينَ রাবী বলে, এ আয়াত فمن شهد الخ আয়াত দ্বারা রহিত হয়ে গেছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৫৫ | 4155 | ٤۱۵۵

পরিচ্ছদঃ ২২৭৯. মহান আল্লাহর বাণীঃ সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে তারা যেন এ মাসে সওম পালন করে।” (সূরাহ আল-বাক্বারা ২/১৮৫)
৪১৫৫। কুতায়বা (রহঃ) … সালাম ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হল এবং যারা রোযা পালনের সামর্থ রাখে তারা একজন মিসকীনকে ফিদয়াস্বরূপ আহার্য দান করবে। তখন যে ইচ্ছা রোযা ভঙ্গ করত এবং তার পরিবর্তে ফিদয়া প্রদান করত। এরপর পরবর্তী আয়াত নাযিল হয় এবং পূর্বোক্ত আয়াতের হুকুম রহিত করে দেয়। আবূ আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, ইয়াযীদের পূর্বে বুকায়র মারা যান।

আবূ মামার মুজাহিদ (রহঃ) বর্ণিত, ইবনু আব্বাস (রাঃ) এ আয়াত এভাবে তিলাওয়াত করতেন ‏وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ তিনি বলতেন, ‏وَعَلَى الَّذِينَ يحملونه যাদের প্রতি রোযার বোঝা চাপানো হয়েছে (আর সে হল অতিবৃদ্ধ যে রোযা পালনে অসমর্থ। তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সে প্রতিদিন একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করবে। আর ومن تطوع خيرا স্বতঃস্ফূর্তভাবে অতিরিক্ত নেক কাজ করবে তা তার জন্য উত্তম। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, যে ব্যাক্তি অতিরিক্ত করে এবং নির্ধারিত সংখ্যক মিসকীনদের অধিক জনকে খাদ্যদান করে তা তার জন্য কল্যাণকর হবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৫৬ | 4156 | ٤۱۵٦

পরিচ্ছদঃ ২২৮০. মহান আল্লাহর বাণীঃ রোযার রাত্রে তোমাদের জন্য স্ত্রীসম্ভোগ বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক। আল্লাহ জানতেন যে, তোমরা নিজেদের প্রতি অবিচার করছিলে। এরপর তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হলেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করলেন। সুতরাং, এখন তোমরা তাদের সাথে সঙ্গত হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা কিছু বিধিবদ্ধ করেছেন তা কামনা কর। (সূরাহ আল-বাক্বারা ২ঃ ১৮৭)
৪১৫৬। উবায়দুল্লাহ ও আহমদ ইবনু উসমান (রহঃ) … বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রমযানের রোযার হুকুম নাযিল হল তখন মুসলিমরা গোটা রমযান মাস স্ত্রী-সম্ভোগ থেকে বিরত থাকতেন আর কিছু সংখ্যক লোক এ ব্যাপারে নিজেদের উপরে (স্ত্রী-সম্ভোগ করে) অবিচার করে বসে তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন ‏عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ كُنْتُمْ تَخْتَانُونَ أَنْفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنْكُمْ ‘‘আল্লাহ জানতেন যে, তোমরা নিজেদের প্রতি অবিচার করছিলে। এরপর তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করেন। সুতরাং এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও এবং আল্লাহ যা তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন তা কামনা কর। (২ঃ ১৮৭)

হাদিস নম্বরঃ ৪১৫৭ | 4157 | ٤۱۵۷

পরিচ্ছদঃ ২২৮১. মহান আল্লাহর বাণীঃ আর তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ না কালো রেখা থেকে ভোরের সাদা রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। তারপর সওম পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত। আর তোমরা যখন মাসজিদে ই’তিকাফ করবে তখন স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস করবে না। এগুলো আল্লাহর বেঁধে দেয়া সীমারেখা। সুতরাং এর কাছেও যেও না। এমনিভাবে আল্লাহ তাঁর নিদর্শনাবলী মানুষের জন্য সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তারা সতর্কতা অবলম্বন করতে পারে। (সূরাহ আল-বাক্বারা ২ঃ ১৮৭)। আল-আকিফু (العاكف) অর্থ (المقيم) অবস্থানকারী
৪১৫৭। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) … ‘আদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি (আদী) একটি সাদা ও একটি কালো সুতা সঙ্গে রাখলেন। কিছু রাত অতিবাহিত হলে খুলে দেখলেন কিন্তু তাঁর কাছে সাদা কালোর কোন ব্যবধান স্পষ্ট হল না। যখন সকাল হল তখন তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আমার বালিশের নিচে (সাদা ও কালো রঙের দু’টি সুতা) রেখেছিলাম এবং তিনি রাতের ঘটনাটি উল্লেখ করলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার বালিশ তাহলে বেশ চওড়া ছিল, যদি কালো ও সাদা সুতা তোমার বালিশের নিচে থেকে থাকে।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৫৮ | 4158 | ٤۱۵۸

পরিচ্ছদঃ ২২৮১. মহান আল্লাহর বাণীঃ আর তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ না কালো রেখা থেকে ভোরের সাদা রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। তারপর সওম পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত। আর তোমরা যখন মাসজিদে ই’তিকাফ করবে তখন স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস করবে না। এগুলো আল্লাহর বেঁধে দেয়া সীমারেখা। সুতরাং এর কাছেও যেও না। এমনিভাবে আল্লাহ তাঁর নিদর্শনাবলী মানুষের জন্য সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তারা সতর্কতা অবলম্বন করতে পারে। (সূরাহ আল-বাক্বারা ২ঃ ১৮৭)। আল-আকিফু (العاكف) অর্থ (المقيم) অবস্থানকারী
৪১৫৮। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! (আল্লাহর বাণীতে) الْخَيْطُ الأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الأَسْوَدِ সাদা সুতা কালো সুতা বের হয়ে আসার অর্থ কি? আসলে কি ঐ দুটি সুতা? তিনি উত্তর দিলেন, তুমি অবশ্য চওড়া পিঠ ও পশ্চাৎ বিশিষ্ট দু’টি সুতা দেখতে। তারপর তিনি বললেন, তা নয় বরং এ হল রাতের অন্ধকার ও দিনের শুভ্রতা।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৫৯ | 4159 | ٤۱۵۹

পরিচ্ছদঃ ২২৮১. মহান আল্লাহর বাণীঃ আর তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ না কালো রেখা থেকে ভোরের সাদা রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। তারপর সওম পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত। আর তোমরা যখন মাসজিদে ই’তিকাফ করবে তখন স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস করবে না। এগুলো আল্লাহর বেঁধে দেয়া সীমারেখা। সুতরাং এর কাছেও যেও না। এমনিভাবে আল্লাহ তাঁর নিদর্শনাবলী মানুষের জন্য সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তারা সতর্কতা অবলম্বন করতে পারে। (সূরাহ আল-বাক্বারা ২ঃ ১৮৭)। আল-আকিফু (العاكف) অর্থ (المقيم) অবস্থানকারী
৪১৫৯। ইবনু আবূ মারয়াম (রহঃ) … সাহল ইবনু সা‘আদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‏وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الأَسْوَدِ এ আয়াত যখন নাযিল হয় তখন مِنَ الْفَجْرِ ‘ফজর হতে’ কথাটি নাযিল হয়নি। তাই লোকেরা রোযা পালনের ইচ্ছা করলে তখন তাদের কেউ কেউ দুই পায়ে সাদা ও কালো রঙের সুতা বেঁধে রাখতো। এরপর ঐ দুই সুতা পরিস্কারভাবে দেখা না যাওয়া পর্যন্ত তারা পানাহার করতো। তখন আল্লাহ তা‘আলা পরে مِنَ الْفَجْرِ শব্দটি নাযিল করেন। এতে লোকেরা জানতে পারেন যে, এ দ্বারা উদ্দেশ্য হল রাত ও দিন।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৬০ | 4160 | ٤۱٦۰

পরিচ্ছদঃ ২২৮২. মহান আল্লাহর বাণীঃ পশ্চাতদিক দিয়ে গৃহে প্রবেশ করাতে কোন পুণ্য নেই, কিন্তু পুণ্য আছে কেউ তাকওয়া অবলম্বন করলে। সুতরাং তোমরা সামনের দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ কর এবং আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরাহ আল-বাক্বারা ২ঃ ১৮৯)
৪১৬০। উবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ) … বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জাহেলীযুগে যখন লোকেরা ইহরাম বাঁধতো, (এ সময় বাড়িতে আসার প্রয়োজন দেখা দিলে) তারা পেছনের দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করত। তখন আল্লাহ তা‘আলা وَلَيْسَ الْبِرُّ بِأَنْ تَأْتُوا الْبُيُوتَ مِنْ ظُهُورِهَا وَلَكِنَّ الْبِرَّ مَنِ اتَّقَى وَأْتُوا الْبُيُوتَ مِنْ أَبْوَابِهَا‏ আয়াত নাযিল করেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৬১ | 4161 | ٤۱٦۱

পরিচ্ছদঃ ২২৮৩. মহান আল্লাহর বাণীঃ তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে যাবত ফিতনা দূরিভুত না হয় এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত না হয়। যদি তারা নিবৃত হয়ে যায় তবে জালিমদের ব্যতীত আর কাউকে আক্রমণ করা চলবে না।” (সূরাহ আল-বাক্বারা ২ঃ ১৯৩)
৪১৬১। মুহাম্মদ ইবনু বাশ্‌শার (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তাঁর কাছে দুই ব্যাক্তি আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়রকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ফিতনার সময় আগমন করল এবং বলল, লোকেরা সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আর আপনি উমর (রাঃ) এর পুত্র এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী! কি কারণে আপনি বের হন না? তিনি উত্তর দিলেন আমাকে নিষেধ করেছে এ কথা নিশ্চই আল্লাহ তা‘আলা আমার ভাইয়ের রক্ত হারাম করেছে। তারা দু’জন বললেন, আল্লাহ কি এ কথা বলেননি যে, তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ কর যাবত না ফিতনার অবসান ঘটে। তখন ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, আমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি যাবত না ফিতনার অবসান ঘটেছে এবং দ্বীনও আল্লাহর জন্য হয়ে গেছে। আর তোমরা ফিতনা প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করার ইচ্ছা করছ আর যেন আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য দ্বীন হয়ে গেছে।

উসমান ইবনু সালিহ ইবনু ওহাব (রহঃ) সূত্রে নাফে (রহঃ) থেকে কিছু বাড়িয়ে বলেন যে, এক ব্যাক্তি ইবনু উমর (রাঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে আবূ আবদুর রহমান! কি করণে আপনি এক বছর হাজ্জ (হজ্জ) করেন এবং একবছর উমরা করেন অথচ আপনি আল্লাহর পথে জিহাদ পরিত্যাগ করেছেন? আপনি পরিজ্ঞাত আছেন যে, আল্লাহ এ বিষয়ে জিহাদ সম্পর্কে কিভাবে উদ্বুদ্ধ করেছেন। ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, হে ভাতিজা; ইসলামের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে পাঁচটি বস্তুর উপরঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনা, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) প্রতিষ্ঠা, রমযানের রোযা পালন, যাকাত প্রদান এবং বায়তুল্লাহর হাজ্জ (হজ্জ) উদযাপন। তখন সে ব্যাক্তি বলল, হে আবূ আবদুর রহমান! আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাবে কি বর্ণনা করেছেন তা কি আপনি শুনেননি? ‏‏وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا‏}‏ ‏{‏إِلَى أَمْرِ اللَّهِ‏}‏ ‏{‏قَاتِلُوهُمْ حَتَّى لاَ تَكُونَ فِتْنَةٌ‏ অর্থাৎ মু’মিনদের দু’দল দ্বন্ধে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংশা করে দিবে। এরপর তাদের একদল অপর দলকে আক্রমণ করলে তোমরা আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে যতক্ষন না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি তারা ফিরে আসে-তবে তাদের মধ্যে ন্যায়ের সাথে ফায়সালা করবে এবং সুবিচার করবে। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালবাসেন। (৪৯: ৯)

‏قَاتِلُو الاية (এ আয়াতগুলো শ্রবণ করার পর) ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, আমরা এ কাজ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে করেছি এবং তখন ইসলামের অনুসারীর দল স্বল্পসংখ্যক ছিল। যদি কোন লোক দ্বীন সম্পর্কে ফিতনায় নিপতিত হতো তখন হয় তাকে হত্যা করা হত অথবা শাস্তি প্রদান করা হত। এভাবে ইসলামের অনুসারীর সংখ্যা বেড়ে গেল। তখন আর কোন ফিতনা রইল না। সে ব্যাক্তি বলল, আলী ও উসমান (রাঃ) সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি বললেন, উসমান (রাঃ)-কে তো আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করেছেন অথচ তোমরা তাঁকে ক্ষমা করা পছন্দ করো না। আর আলী (রাঃ)-তিনি তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাচাতো ভাই এবং তাঁর জামাতা। তিনি নিজ হাত দ্বারা ইশারা করে বলেন, এই তো তাঁর ঘর [রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘরের কাছে] যেমন তোমরা দেখতে পাচ্ছ।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৬২ | 4162 | ٤۱٦۲

পরিচ্ছদঃ ২২৮৪. মহান আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহর পথে ব্যয় কর এবং নিজেদের হাতে নিজদেরকে তোমরা ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করো না। আর তোমরা সৎকাজ কর। নিশ্চয় আল্লাহ সতকর্মশীলদের ভালবাসেন” – (সূরা আল-বাক্বারা ২/১৯৫)। আয়াতে উল্লাখিত التَّهْلُكَةِ ও الْهَلأَك একই অর্থে ব্যবহৃত।
৪১৬২। ইসহাক (রহঃ) … হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এ আয়াত আল্লাহর পথে ব্যয় করা সম্পর্কে নাযিল হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৬৩ | 4163 | ٤۱٦۳

পরিচ্ছদঃ ২২৮৫. আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের মধ্যে যদি কেউ পীড়িত হয় কিংবা মাথায় ক্লেশ থাকে তবে সওম কিংবা সদাকাহ অথবা কুরবানীর দ্বারা তার ফিদয়া দিবে (বাক্বারা ২ঃ ১৯৬)
৪১৬৩। আদম … আবদুল্লাহ ইবনু মা‘কিল (রাঃ) থেকে বর্ণত। তিনি বলেন, আমি কা‘ব ইবনু উজরা-এর নিকট এই কূফার মসজিদে বসা থাকাকালে রিাযার ফিদয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, আমার চেহারায় উকুন ছড়িয়ে পড়া অবস্থায় আমাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আনা হয়। তিনি তখন বললেন, আমি মনে করি যে, এতে তোমার কষ্ট হচ্ছে। তুমি কি একটি বকরী যোগাড় করতে পার? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তুমি তিনদিন রোযা পালন কর অথবা ছয়জন দরিদ্রকে খাদ্য প্রদান কর। প্রতিটি দরিদ্রকে অর্ধ সা‘ খাদ্য প্রদান করতে হবে এবং তোমার মাথার চুল কামিয়ে ফেল। তখন আমার সম্পর্কে বিশেষভাবে আয়াত নাযিল হয়। তবে তা তোমাদের সকলের জন্য প্রযোজ্য।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৬৪ | 4164 | ٤۱٦٤

পরিচ্ছদঃ ২২৮৬. আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি হজ্জের প্রাক্কালে উমরা দ্বারা লাভবান হতে চায়, সে সহজলভ্য কুরবানী করবে (২ঃ ১৯৬)
৪১৬৪। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তামাত্তুর আয়াত আল্লাহর কিতাবে নাযিল হয়েছে। এরপর আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে তা আদায় করেছি। এবং একে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে কুরআনের কোন আয়াত নাযিল হয়নি। এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল পর্যন্ত তা থেকে নিষেধও করেনি। এখন যে তা নিষেধ করতে চায় তা হচ্ছে তার নিজস্ব অভিমত।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৬৫ | 4165 | ٤۱٦۵

পরিচ্ছদঃ ২২৮৭. মহান আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ সন্ধান করাতে তোমাদের কোন পাপ নেই। (সূরা আল-বাক্বারা ২ঃ ১৯৮)
৪১৬৫। মুহাম্মদ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উকায, মাজান্না এবং যুল-মাজায নামক তিনটি স্থানে জাহেলী যুগে বাজার ছিল। কুরাইশগণ তথায় হাজ্জের মওসুমে ব্যবসা করতে যেত। তাই মুসলিমগণ সেখানে যাওয়া দোষ মনে করত। তাই এ আয়াত নাযিল হয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৬৬ | 4166 | ٤۱٦٦

পরিচ্ছদঃ ২২৮৮. আল্লাহর বাণীঃ এরপর অন্যান্য লোক যেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করে তোমরাও সে স্থান থেকে প্রত্যাবর্তন করবে (২ঃ ১৯৯)
৪১৬৬। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, কুরাইশ এবং যারা তাদের দ্বীনের অনুসারী ছিল তারা (হাজ্জের সময়) মুযদালিফায় অবস্থান করত। আর কুরাইশগণ নিজেদের সাহসী ধর্মে অটল বলে অভিহিত করত এবং অপরাপর আরবগণ আরাফাতে অবস্থান করত। এরপর যখন ইসলামের আগমন হল, তখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আরাফাতে ওকুফের এবং এরপর সেখান থেকে প্রত্যাবর্তনের নির্দেশ দিলেন। ‏ثُمَّ أَفِيضُوا مِنْ حَيْثُ أَفَاضَ النَّاسُ আয়াতে সেদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৬৭ | 4167 | ٤۱٦۷

পরিচ্ছদঃ ২২৮৮. আল্লাহর বাণীঃ এরপর অন্যান্য লোক যেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করে তোমরাও সে স্থান থেকে প্রত্যাবর্তন করবে (২ঃ ১৯৯)
৪১৬৭। মুহাম্মদ ইবনু আবূ বকর (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তামাত্তু আদায়কারী ব্যাক্তি উমরা আদায়ের পরে যতদিন হালাল অবস্থায় থাকবে ততদিন বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করবে। তারপর হাজ্জের (হজ্জ) জন্য ইহরাম বাঁধবে। এরপর যখন আরাফাতে যাবে তখন উট, গরু, ছাগল প্রভৃতি যা মুহারিমের জন্য সহজলভ্য হয় তা মীনাতে কুরবানী করবে। আর যে কুরবানীর সঙ্গতি রাখে না সে হাজ্জের (হজ্জ) দিনসমূহের মধ্যে তিনটি রোযা পালন করবে। আর তা আরাফার দিবসের পূর্বে হতে হবে। আর তিন দিনের শেষ দিন যদি আরাফার দিন হয়, তবে তাতে কোন দোষ নেই। তারপর আরাফাত ময়দানে যাবে এবং সেখানে সালাতে আসর হতে সূর্যাস্তের অন্ধকার পর্যন্ত ওকুফ (অবস্থান) করবে। এরপর আরাফা হতে প্রত্যাবর্তন করে মুযদালিফায় পৌঁছে সেখানে নেকী হাসিলের কাজ করতে থাকবে এবং অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকর করবে। সেখানে ফজর হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাকবীর ও তাহলীল পাঠ করবে। এরপর (মদিনার) দিকে প্রত্যাবর্তন করবে যেভাবে অন্যান্য লোক প্রর্ত্যাবর্তন করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “এরপর প্রত্যাবর্তন কর সেখান হতে, যেখান হতে লোকজন প্রত্যাবর্তন করে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমাশীল, দয়াময়।” তারপর জমরাতুল উকাযার প্রস্তর নিক্ষেপ করবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৬৮ | 4168 | ٤۱٦۸

পরিচ্ছদঃ ২২৮৯. আল্লাহর বাণীঃ এবং তাদের মধ্যে যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন এবং আখিরাতেও কল্যাণ দান করুন এবং আমাদের জাহান্নামের অগ্নি যন্ত্রনা হতে রক্ষা করুন।’’ (বাকারাঃ ২: ২০১)
৪১৬৮। আবূ মা‘মার (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বলে দুআ করতেন, اللَّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ “হে আমাদের রব! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন এবং আখিরাতেও কল্যাণ দান করুন এবং আমাদের জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন।” (২ঃ ২০১)

হাদিস নম্বরঃ ৪১৬৯ | 4169 | ٤۱٦۹

পরিচ্ছদঃ ২২৯০. আল্লাহর বাণীঃ প্রকৃতপক্ষে সে কিন্তু ঘোর বিরোধী। (সূরা আল-বাক্বারা ২ঃ ২০৪) النسل অর্থ হল الحيوان জানোয়ার।
৪১৬৯। কাবীসা (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহর নিকট ঘৃণিত মানুষ হচ্ছে অতিরিক্ত ঝগড়াটে ব্যাক্তি।

আবদুল্লাহ বলেন, আমার কাছে সুফিয়ান হাদীস বর্ণনা করেন, সুফিয়ান বলেন আমার কাছে ইবনু যুরায়জ ইবনু আবূ মূলায়কা হতে আয়িশা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই মর্মে বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৭০ | 4170 | ٤۱۷۰

পরিচ্ছদঃ ২২৯১. আল্লাহর বাণীঃ তোমরা কি মনে কর যে, তোমরা জান্নাতে চলে যাবে, যদিও এখনও তোমরা তাদের অবস্থা অতিক্রম করনি যারা তোমাদের পূর্বে গত হয়েছে? তাদের উপর পতিত হয়েছিল অর্থ-সংকট ও দুঃখ-ক্লেশ। তারা এমনভাবে ভীত-শিহরিত হয়েছিল যে, রসূল এবং তাঁর সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিল তাদের বলতে হয়েছিলঃ কখন আসবে আল্লাহর সাহায্য? হাঁ, আল্লাহর সাহায্য নিকটেই। (সূরা আল-বাক্বারা ২/২১৪)
৪১৭০। ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘‘আল্লাহর বাণীঃ ‘‘অবশেষে রাসূলগণ যখন নিরাশ হলেন এবং লোকেরা ভাবলো যে, রাসূলগণকে মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া হয়েছে (১২: ১১০), তখন ইবনু আববাস (রাঃ) এই আয়াতসহ সূরা বাকারার আয়াতের শরনাপন্ন হন ও তিলাওয়াত করেন, যেমনঃ ‏حَتَّى يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَى نَصْرُ اللَّهِ أَلاَ إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيب এমন কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাথে ঈমান আনয়নকারীগণ বলে উঠেছিল-আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে? হ্যাঁ, হ্যাঁ, আল্লাহর সাহায্য নিকটেই (২: ২১৪)

রাবী বলেন, এরপর আমি উরওয়া ইবনু যুবায়রের সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁকে এ সম্পর্কে অবহিত করি, তখন তিনি বলেন যে, আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি, আল্লাহর কসম, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলের নিকট যেসব অঙ্গীকার করেছেন, তিনি জানতেন যে তা তাঁর মৃত্যুর পূর্বেই বাস্তবে পরিণত হবে। কিন্তু রাসূলগণের প্রতি সমূহ বিপথ-আপদ নিপতিত হতে থাকবে। এমন কি তারা আশঙ্কা করবে যে, সঙ্গী-সাথীরা তাদেরকে মিথ্যুক প্রতিপন্ন করবে। এ প্রসঙ্গে আয়িশা (রাঃ) এ আয়াত পাঠ করতেন ‏وَظَنُّوا أَنَّهُمْ قَدْ كُذِّبُوا‏ তারা ভাবল যে, তারা তাদেরকে মিথ্যুক সাব্যস্ত করবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৭১ | 4171 | ٤۱۷۱

পরিচ্ছদঃ ২২৯২. মহান আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের স্ত্রী তোমাদের শস্যক্ষেত্র। অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন করতে পার। পূর্বাহ্ণে তোমরা তোমাদের জন্য কিছু করো এবং আল্লাহকে ভয় কর। আর জেনে রাখ যে, তোমরা আল্লাহর সম্মুখীন হতে যাচ্ছ এবং মুমিনগণকে সুসংবাদ দাও। (২ঃ ২৩৩)
৪১৭১। ইসহাক (রহঃ) … নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনু উমর (রাঃ) যখন কুরআন তিলাওয়াত করতেন তখন কুরআন তিলাওয়াত হতে অবসর না হয়ে কোন কথা বলতেন না। একদা আমি সূরা বাকারা পাঠ করা অবস্থায় তাঁকে পেলাম। পড়তে পড়তে তিনি এক স্থানে পৌঁছলেন। তখন তিনি বললেন, তুমি জানো, কি উপলক্ষ্যে এ আয়াত নাযিল হয়েছে? আমি বললাম, না। তিনি তখন বললেন, অমুক অমুক ব্যাপারে আয়াত নাযিল হয়েছে। তারপর আবার তিনি তিলাওয়াত করতে থাকেন।

আবদুস সামাদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার কাছে হাদীস বর্ণনা করেন আমার পিতা, তিনি বলেন, আমার কাছে হাদীস বর্ণনা করে আইয়ুব, তিনি নাফি‘ থেকে আর নাফি‘ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে। ‏فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّى شِئْتُمْ অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন করতে পার। (২: ২২৩)। রাবী বলেন, স্ত্রীলোকের পশ্চাৎ দিক দিয়ে সহবাস করতে পারে। মুহাম্মদ ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ তাঁর পিতা থেকে, তিনি উবায়দুল্লাহ থেকে, তিনি নাফি‘ থেকে এবং তিনি ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৭২ | 4172 | ٤۱۷۲

পরিচ্ছদঃ ২২৯২. মহান আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের স্ত্রী তোমাদের শস্যক্ষেত্র। অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন করতে পার। পূর্বাহ্ণে তোমরা তোমাদের জন্য কিছু করো এবং আল্লাহকে ভয় কর। আর জেনে রাখ যে, তোমরা আল্লাহর সম্মুখীন হতে যাচ্ছ এবং মুমিনগণকে সুসংবাদ দাও। (২ঃ ২৩৩)
৪১৭২। আবূ নু‘আইম (রহঃ) … জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইহুদীরা বলতো যে, যদি কেউ স্ত্রীর পেছন দিক থেকে সহবাস করে তাহলে সন্তান টেরা চোখের হয়। তখন (তাদের এ ধারণা রদ করে) سَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَكُمْ আয়াত অবতীর্ণ হয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৭৩ | 4173 | ٤۱۷۳

পরিচ্ছদঃ ২২৯৩. আল্লাহর বাণীঃ তোমরা যখন তোমাদের স্ত্রীদের ত্বালাক্ব দিয়ে দাও এবং তারা তাদের ইদ্দত্’কাল পূর্ণ করে তবে স্ত্রীগণ নিজেদের স্বামীদেরকে বিয়ে করতে চাইলে তোমরা তাদের বাধা দিও না (যদি তারা পরস্পর সম্মত হয়) (২ঃ ২৩২)
৪১৭৩। উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) … মা‘কিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমার এক বোনের বিয়ের পয়গাম আমার নিকট পেশ করা হয়। আবূ আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন যে, ইবরাহীম (রহঃ) ইউনুস (রহঃ) থেকে, তিনি হাসান বসরী (রহঃ) থেকে এবং তিনি মা‘কিল ইবনু ইয়াসার (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। আবূ মা‘মার (রহঃ) হাসান (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মা‘কিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ)-এর বোনকে তার স্বামী তালাক দিয়ে তারপর পৃথক করে রাখে। যখন ‘ইদ্দত পালন পূর্ণ হয় তখন তার স্বামী তাকে আবার পয়গাম পাঠায়। মা‘কিল (রাঃ) অমত পোষণ করে তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। ‏فَلاَ تَعْضُلُوهُنَّ أَنْ يَنْكِحْنَ أَزْوَاجَهُنَّ ‘‘তারা তাদের স্বামীর সাথে পুনরায় বিধিমত বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হতে চাইলে তাদের তোমরা বাঁধা দিওনা। (২: ২৩২)

হাদিস নম্বরঃ ৪১৭৪ | 4174 | ٤۱۷٤

পরিচ্ছদঃ ২২৯৪. আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তাদের স্ত্রীরা চার মাস দশদিন প্রতীক্ষায় থাকবে। যখন তারা তাদের ইদ্দতকাল পূর্ণ করবে তখন যথাবিধি নিজেদের জন্য যা করবে তাতে তোমাদের কোন অপরাধ নেই। তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত (২ঃ ২৩৪)
৪১৭৪। উমাইয়া (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ) কে উক্ত আয়াত সম্পর্কে বললাম যে, এ আয়াত তো অন্য আয়াত দ্বারা মানসুখ (রহিত) হয়ে গেছে। অতএব উক্ত আয়াত আপনি মুসহাফে লিখেছেন (অথবা রাবী বলেন) কেন বর্জন করছেন না, তখন তিনি [উসমান (রাঃ)] বললেন, হে ভাতিজা আমি মুসহাফের স্থান থেকে কোন জিনিস পরিবর্তন করব না।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৭৫ | 4175 | ٤۱۷۵

পরিচ্ছদঃ ২২৯৪. আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তাদের স্ত্রীরা চার মাস দশদিন প্রতীক্ষায় থাকবে। যখন তারা তাদের ইদ্দতকাল পূর্ণ করবে তখন যথাবিধি নিজেদের জন্য যা করবে তাতে তোমাদের কোন অপরাধ নেই। তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত (২ঃ ২৩৪)
৪১৭৫। ইসহাক (রহঃ) … মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا‏ এ আয়াতে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর পরিবার থেকে ইদ্দত পালন করা ওয়াজিব। আয়াতে উল্লিখত يعفون শব্দের অর্থ يهبن দান করে। অনন্তর আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেনঃ وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا وَصِيَّةً لأَزْوَاجِهِمْ مَتَاعًا إِلَى الْحَوْلِ غَيْرَ إِخْرَاجٍ فَإِنْ خَرَجْنَ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا فَعَلْنَ فِي أَنْفُسِهِنَّ مِنْ مَعْرُوفٍ ‘‘তোমাদের মধ্যে সপত্নীক অবস্থায় যাদের মৃত্যু আসন্ন তারা যেন তাদের স্ত্রীদের গৃহ হতে বহিস্কার না করে তাদের এক বছরের ভরণ পোষণের ওসীয়ত করে। কিন্তু যদি তারা বের হয়ে যায় তবে বিধিমত নিজেদের জন্য তারা যা করবে তাতে তোমাদের কোন পাপ নেই। আল্লাহ পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়। (২: ২৪০)

রাবী বলেন, আল্লাহ তা‘আলা স্ত্রীর জন্য পূর্ণ বছর সতের মাস এবং বিশ রজনী নির্ধারিত করেছেন ওসীয়ত হিসেবে। সে ইচ্ছা করলে তার ওসয়ত থাকতে পারে, ইচ্ছা করলে বের হয়েও যেতে পারে। এ কথারই ইঙ্গিত করে আল্লাহর বাণীঃ غَيْرَ إِخْرَاجٍ فَإِنْ خَرَجْنَ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْكُمْ‏ মোট কথা যেভাবেই হোক স্ত্রীর উপর ইদ্দত পালন করা ওয়াজিব। মুজাহিদ থেকে এরূপই জানা গেছে। কিন্তু ইমাম আতা বলেন যে, ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, এই আয়াত স্ত্রীর প্রতি তার স্বামীর বাড়িতে ‘ইদ্দত পালন করার হুকুম রহিত করে দিয়েছে। সুতরাং স্ত্রী যথেচ্ছা ‘ইদ্দত পালন করতে পারে। আল্লাহর এ বাণী দলীল বলেঃ غَيْرَ إِخْرَاجٍ ইমাম আতা বলেন, স্ত্রী ইচ্ছা করলে স্বামীর পরিজনের নিকট ‘ইদ্দত পালন করতে পারে এবং তার ওসীয়ত থাকতে পারে অথবা তথা হতে চলেও যেতে পারে। ‏فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا فَعَلْنَ‏ আয়াতের মর্মানুসারে।

ইমাম আতা (রহঃ) বলেন, তারপর মিরাস বা উত্তরাধিকারের হুকুম ولهن الربع مما تركتم আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হল। সুতরাং ঘর ও বাসস্থানের নির্দেশ রহিত হয়ে যায়। কাজেই যথেচ্ছা স্ত্রী ‘ইদ্দত পালন করতে পারে। আর তার জন্য ঘরের বা বাসস্থানের দাবি আগ্রহ্য।

মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ হতে বর্ণিত, হাদীস বর্ণনা করেন আমার নিকট ওয়াকা’ ইবনুু আবি নাজীহ থেকে আর তিনি মুজাহিদ থেকে এ সম্পর্কে। এবং আরো আবী নাজীহ আতা থেকে এবং তিনি ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, এই আয়াত স্ত্রীর ‘ইদ্দত পালন স্বামীর বাড়িতে ইদ্দত পালন করার হুকুম রহিত করে দেয়। সুতরাং স্ত্রী যথেচ্ছা ইদ্দত পালন করতে পারে। আল্লাহর এই বাণীঃ غَيْرَ إِخْرَاجٍ‏ এবং তদনুরূপ আয়াত এর দলীল মুতাবিক।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৭৬ | 4176 | ٤۱۷٦

পরিচ্ছদঃ ২২৯৪. আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তাদের স্ত্রীরা চার মাস দশদিন প্রতীক্ষায় থাকবে। যখন তারা তাদের ইদ্দতকাল পূর্ণ করবে তখন যথাবিধি নিজেদের জন্য যা করবে তাতে তোমাদের কোন অপরাধ নেই। তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত (২ঃ ২৩৪)
৪১৭৬। হিব্বান (রহঃ) … মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এমন একটি জলসায় (সভায়) উপবিষ্ট ছিলাম যেখানে নেতৃস্থানীয় আনসারদের কতেক ছিলেন, এবং তাদের মাঝে আবদুর রহমান বিন আবূ লায়লা (রহঃ)-ও ছিলেন। এরপর সুবাইয়া বিনতে হারিস (রহঃ) প্রসঙ্গে বর্ণিত আবদুল্লাহ বিন উতবা (রহঃ) হাদীসটি উত্থাপন করলাম, এরপর আবদুর রহমান (রহঃ) বললেন, ‘‘পক্ষান্তরে তাঁর চাচা এ রকম বলতেন না’’ অনন্ত আমি বললাম, কূফায় বসবাসরত ব্যাক্তিটি সম্পর্কে যদি আমি মিথ্যা বলি তবে আমি হব চরম ধৃষ্ট এবং তিনি তার স্বর উচু করলেন, তিনি বললেন, তারপর আমি বের হলাম এবং মালিক বিন আমির (রাঃ) মালিক ইবনু আউফ (রহঃ)-এর সাথে আমি বললাম, গর্ভাবস্থায় বিধবা রমণীর ব্যাপারে ইবনু মাসঊদ (রাঃ) এর মন্তব্য কি ছিল, বললেন যে ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেছেন, তোমরা কি তার উপর কঠোরতা অবলম্বন করছ আর তার জন্য সহজ বিধানটি অবলম্বন করছ না, সংক্ষিপ্ত ‘‘সূরা নিসাটি (সূরা ত্বালাক) দীর্ঘটির পরে অবতীর্ণ হয়েছে। আইয়ুব (রহঃ) মুহাম্মদ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, আবূ আতিয়হ মালিক বিন আমির (রহঃ)-এর সাথে আমি সাক্ষাৎ করেছিলাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৭৭ | 4177 | ٤۱۷۷

পরিচ্ছদঃ ২২৯৫. তোমরা নামাযের প্রতি যত্নবান হবে বিশেষত মধ্যবর্তী নামাযের। (সূরাহ আল-বাক্বারা ২ঃ ২৩৮)
৪১৭৭। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আবদুর রহমান … আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, খন্দক যুদ্ধের দিন কাফিরগণ আমাদের মধ্যবর্তী সালাত (নামায/নামাজ) থেকে বিরত রাখে এমনকি এ অবস্থায় সূর্য অস্তে চলে যায়। আল্লাহ তাদের কবর ও তাদের ঘরকে অথবা পেটকে আগুন দ্বারা পূর্ণ করুক। এখানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘর না পেট বলেছেন তাতে ইয়াহইয়া রাবীর সন্দেহ রয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৭৮ | 4178 | ٤۱۷۸

পরিচ্ছদঃ ২২৯৬. আল্লাহর বাণীঃ এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে তোমরা বিনীতভাবে দাঁড়াবে। (সূরাহ আল-বাক্বারা ২ঃ ২৩৮) قانتين অর্থ مطيعين অনুগত, বিনীত
৪১৭৮। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … যায়িদ ইবনু আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা সালাত (নামায/নামাজ) এর মধ্যে আলাপ-আলোচনা করতাম আর আমাদের কেউ তার ভাইয়ের প্রসঙ্গে কথা বলতেন। তখন এ আয়াত নাযিল হয়ঃ حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلاَةِ الْوُسْطَى وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ তখন আমাদেরকে চুপ থাকার ও সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে কথা না বলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৭৯ | 4179 | ٤۱۷۹

পরিচ্ছদঃ ২২৯৭. আল্লাহর বাণীঃ তবে যদি তোমরা আশঙ্কা কর তবে পদচারী অথবা আরোহী অবস্থায়; যখন তোমরা নিরাপদ বোধ কর তখন আল্লাহকে স্মরণ করবে, যেভাবে তিনি তোমাদের শিক্ষা দিয়েছেন যা তোমরা জানতে না। ইবন যুবায়র বলেন, كرسيه আল্লাহর কুরসীর অর্থ হলঃ علمه তার জ্ঞান। আর بسطة অর্থ হল অতিরিক্ত ও বেশী। أفرغ অর্থ নাযিল কর। ولا يئوده অর্থ ভারী ও বোঝা বোধ হয় না তার। যেমন آدني অর্থ أثقلني শক্ত ও ভারী করেছে আমাকে। الآد والأيد শব্দের অর্থ হলঃ القوة শক্ত ও শক্তি। فبهت শব্দের অর্থ হলঃ তার দলীল-প্রমান শেষ হয়ে গেছে।
৪১৭৯। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … নাফি‘ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)-কে যখন সালাতুল খাওফ (যুদ্ধ ক্ষেত্রে শত্রুভয়ের মধে সালাত (নামায/নামাজ) প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হত তখন তিনি বলতেন, ইমাম সাহেব সামনে যাবেন এবং একদল লোকও জামাতে শামিল হবে। তিনি তাদের সঙ্গে এক রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবেন এবং তাদের আর একদল জামাতে শামিল না হয়ে তাদের ও শত্রুর মাঝখানে থেকে যারা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেনি তাদের পাহারা দিবে। ইমামের সাথে যারা এক রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছে তারা পেছনে গিয়ে যারা এখনও নামায় আদায় করেনি তাদের স্থানে দাঁড়াবে কিন্তু সালাম ফিরাবে না। যারা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেনি তারা আগে বাড়বে এবং ইমামের সাথে এক রাকাআত আদায় করবে। তারপর ইমাম সালাত (নামায/নামাজ) হতে অবসর গ্রহণ করবে। কেননা তিনি দু’রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন।

এরপর উভয় দল দাঁড়িয়ে নিজে নিজে বাকি এক রাকাআত ইমামের সালাত (নামায/নামাজ)-এর শেষে আদায় করে নিবে। তাহলে প্রত্যেক জনেরই দু’রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় হয়ে যাবে। আর যদি ভয়-ভীতি ভীষণতর হয় নিজে নিজে দাঁড়িয়ে অথবা যানবাহনে আরোহিত অবস্থায় কিবলার দিকে মুখ করে অসুবিধা হলে যেদিকে সম্ভব মুখ করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে। ইমাম মালিক (রহঃ) বলেন, ইমাম নাফি‘ (রহঃ) বলেন, আমি অবশ্য মনে করি ইবনু উমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেই এ হাদীস বর্ণণা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৮০ | 4180 | ٤۱۸۰

পরিচ্ছদঃ ২২৯৮. আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের সপতীক অবস্থায় যাদের মৃত্যু আসন্ন তারা যেন তাদের স্ত্রীদের গৃহ হতে বহিস্কার না করে তাদের ভরন পোষণের ওসীয়ত করে। কিন্তু যদি তারা বের হয়ে যায় তবে বিধিমত নিজেদের জন্য তারা যা করে তাতে তোমাদের কোন পাপ নেই। আল্লাহ পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময় (২ঃ ২৪০)
৪১৮০। আবদুল্লাহ ইবনু আবূল আসওয়াদ (রহঃ) … ইবনু আবূ মূলায়কা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনু যুবায়র (রাঃ) বললেন, আমি উসমান (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, সূরা বাকারার এ আয়াতটি ‏وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا‏}‏ إِلَى قَوْلِهِ ‏{‏غَيْرَ إِخْرَاجٍ কে তো অন্য একটি আয়াত রহিত করে দিয়েছে। তারপরও আপনি এভাবে লিখছেন কেন? জবাবে উসমান (রাঃ) বললেন, ভ্রাতুষ্পুত্র। আমরা তা যথাস্থানে রেখে দিয়েছি। আপন স্থান থেকে কোন কিছুই আমরা পরিবর্তন করিনি। হুমাইদ (রহঃ) বললেন, ‘‘অথবা প্রায় এরকমই উত্তর দিয়ে দিলেন।’’

হাদিস নম্বরঃ ৪১৮১ | 4181 | ٤۱۸۱

পরিচ্ছদঃ ২২৯৯. আল্লাহর বাণীঃ আর যখন ইবরাহীম (আঃ) বললেনঃ হে আমার পালনকর্তা! কীভাবে তুমি মৃতকে জীবিত কর তা আমাকে দেখাও । (বাক্বারা ২ঃ ২৬০)
৪১৮১। আহমদ ইবনু সালিহ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) যখন ‏رَبِّ أَرِنِي كَيْفَ تُحْيِي الْمَوْتَى প্রভু! তুমি আমাকে দেখাও কেমন করে তুমি মৃতকে জীবিত কর? তখন তাঁর তুলনায় আমার সন্দেহ পোষণের ক্ষেত্রে অধিক যোগ্য ছিলাম। فصرهن শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘সেগুলোকে টুকরো টুকরো করুন।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৮২ | 4182 | ٤۱۸۲

পরিচ্ছদঃ ২৩০০. আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের কেউ কি চায় যে, তার একটি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান থাকবে, যার পাদদেশ দিয়ে নহর প্রবাহিত হবে এবং যাতে সর্বপ্রকার ফলমূল বিরাজ করে। যখন সে ব্যক্তি বার্ধক্যে উপনীত হয় এবং তার সন্তান-সন্তুতি দুর্বল, তারপর উক্ত বাগানের উপর এক অগ্নিক্ষরা ঘূর্ণিঝড় আপতিত হয় এবং তা জলে পুড়ে যায়। এভাবে আল্লাহ তা’আলা তার নিদর্শন তোমাদের জন্য সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন, যাতে তোমরা অনুধাবন করতে পার। (২ঃ ২৬৬)
৪১৮২। ইবরাহীম … উবায়দ ইবনু ইমায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদা উমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণদের জিজ্ঞাসা করলেন যে, ‏أَيَوَدُّ أَحَدُكُمْ أَنْ تَكُونَ لَهُ جَنَّةٌএ আয়াতটি যে উপলক্ষে অবতীর্ণ হয়েছে, সে ব্যাপারে আপনাদের মতামত কি? তখন তারা বললেন, আল্লাহই জানেন। উমর (রাঃ) এতে রেগে গিয়ে বললেন, আমরা জানি অথবা জানিনা এদুটোর একটি বল। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! এ ব্যাপারে আমার অন্তরে কিছুটা ধারণা আছে। উমর (রাঃ) বলেন, বৎস! বলে ফেল এবং নিজেকে তুচ্ছ ভেবো না। তখন ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, এটা কর্মে দৃষ্টান্ত হিসাবে পেশ করা হয়েছে। উমর (রাঃ) বললেন, কোন কর্মের? ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, একটি কর্মের। উমর (রাঃ) বললেন, এটি উদাহরণ হচ্ছে সেই ধনবান ব্যাক্তির, যে আল্লাহর ইবাদত করতে থাকে, এরপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রতি শয়তানকে প্রেরণ করেন। অনন্তর সে পাপ কার্যে লিপ্ত হয় এবং তার সকল সৎকর্ম নষ্ট করে দেয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৮৩ | 4183 | ٤۱۸۳

পরিচ্ছদঃ ২৩০১. আল্লাহর বাণীঃ তারা মানুষের নিকট নাছোড় হয়ে যাঞ্চা করে না। ألحف علي وألح علي এবং أحفاني بالمسألة সবই একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। فيحفكم অর্থ জোর প্রচেষ্টা চালায়।
৪১৮৩। ইবনু আবূ মারয়াম (রহঃ) … আতা ইবনু ইয়াসার এবং আবূ আমরা আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তারা উভয়ে বলেন যে, আমরা আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একটি খেজুর কি দু’টি খেজুর আর এক গ্রাস খাদ্য কি দু’ গ্রাস খাদ্য যাকে দ্বারে দ্বারে ঘোরাতে থাকে সে প্রকৃত মিসকীন নয়। মিসকীন সে ব্যাক্তই, যে ভিক্ষা করা থেকে বেঁচে থাকে। তোমরা ইচ্ছা করলে আল্লাহর বাণী পাঠ করতে পার ‏لاَ يَسْأَلُونَ النَّاسَ إِلْحَافًا‏

হাদিস নম্বরঃ ৪১৮৪ | 4184 | ٤۱۸٤

পরিচ্ছদঃ ২৩০২. আল্লাহর বাণীঃ অথচ আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে বৈধ এবং সুদকে অবৈধ করেছেন- (সূরাহ আল-বাক্বারা ২ঃ ২৭৩) المس অর্থ পাগলামী।
৪১৮৪। উমর ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সুদ সম্পর্কিত সূরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো অবতীর্ণ হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের নিকট তা পাঠ করে শোনালেন। তারপর মদের ব্যবসা নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৮৫ | 4185 | ٤۱۸۵

পরিচ্ছদঃ ২৩০৩. আল্লাহর বাণী: আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন। (সূরাহ আল-বাক্বারা ২ঃ ২৭৬) ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, বিদূরিত করেন।
৪১৮৫। বিশর ইবনু খালিদ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, সূরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো অবতীর্ণ হল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘর থেকে বের হলেন এবং মসজিদে গিয়ে লোকদের নিকট পাঠ করে শোনালেন। এরপর মদের ব্যবসা নিসিদ্ধ ঘোষণা করলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৮৬ | 4186 | ٤۱۸٦

পরিচ্ছদঃ ২৩০৪. আল্লাহর বাণীঃ যদি তোমরা না ছাড় তবে জেনে রাখ যে, এটা আল্লাহ ও তার রাসুলের সাথে যুদ্ধ। (২ঃ ২৭৯) [ইমাম বুঝারী (রহঃ) বলেন] فَأْذَنُوا অর্থ জেনে রাখ
৪১৮৬। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সূরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো যখন অবতীর্ণ হল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে গিয়ে তা পাঠ করে আমাদের শোনান এবং মদের ব্যবসা নিষিদ্ধ ঘোষনা করলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৮৭ | 4187 | ٤۱۸۷

পরিচ্ছদঃ ২৩০৫. আল্লাহর বাণীঃ যদি খাতক অভবগ্রস্থ হয়, তবে সচ্ছলতা পর্যন্ত তাকে অবকাশ দেয়া বিধেয়। আর যদি তোমরা ছেড়ে দাও তবে তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে (২ঃ ২৮০)
৪১৮৭। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সূরা বাকারার শেষ দিকের আয়াতগুলো যখন অবতীর্ণ হল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন এবং আমাদের সম্মুখে তা পাঠ করলেন। তারপর মদের ব্যবসা নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৮৮ | 4188 | ٤۱۸۸

পরিচ্ছদঃ ২৩০৬. আল্লাহর বাণীঃ তোমরা সেদিনকে ভয় কর, যেদিন তোমরা আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে (সূরাহ আল-বাক্বারা ২ঃ ২৮১)
৪১৮৮। কাবীসা ইবনু উকবা (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর অবতারিত শেষ আয়াতটি হচ্ছে সুদ সম্পর্কিত।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৮৯ | 4189 | ٤۱۸۹

পরিচ্ছদঃ ২৩০৭. আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের মনে যা আছে তা তোমরা প্রকাশ কর কিংবা গোপন রাখ আল্লাহ তোমাদের নিকট হতে তার হিসাব নেবেন। এরপর যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন আর যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেবেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান (২ঃ ২৮৪)
৪১৮৯। মুহাম্মদ (রহঃ) … মারওয়ান আল আসফার (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন একজন সাহাবীদরে থেকে বর্ণনা করেন, আর তিনি হচ্ছেন ইবন উমর (রাঃ) যে وَإِنْ تُبْدُوا مَا فِي أَنْفُسِكُمْ আয়াতটি রহিত হয়ে গেছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৯০ | 4190 | ٤۱۹۰

পরিচ্ছদঃ ২৩০৮. আল্লাহর বাণীঃ রাসুল তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতারিত বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছেন এবং মু’মিনগনও (২ঃ ২৮৫) ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, غفرانك অর্থ مغفرتك আর مغفرتك অর্থ فاغفر لنا আমাদের মার্জনা করুন (২ঃ ২৮৫)
৪১৯০। ইসহাক (রহঃ) … মারওয়ানুল আসফার (রাঃ) একজন সাহাবী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন আর তিনি ধারণা করেন যে, তিনি ইবনু উমর (রাঃ) হবেন। إِنْ تُبْدُوا مَا فِي أَنْفُسِكُمْ আয়াতটি রহিত হয়ে গিয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৯১ | 4191 | ٤۱۹۱

পরিচ্ছদঃ ২৩০৯. আল্লাহর বাণীঃ مِنْهُ ا”يَاتٌ مُحْكَمَاتٌ যার কতক আয়াত সুস্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন। ইমাম মুজাহিদ (রহ.) বলেন যে, সেটি হচ্ছে হালাল আর হারাম সম্পর্কিত। وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ আর অন্যগুলো রূপক, একটি অন্যটির সত্যতা প্রমাণ করে। যেমনঃ আল্লাহর বাণীঃ وَمَا يُضِلُّ بِهٰٓ إِلَّا الْفَاسِقِيْنَ -‘‘তিনি পথ পরিত্যাগকারী ব্যতীত বস্তুত কাউকে বিভ্রান্ত করেন না।’’ আবার- وَيَجْعَلُ الرِّجْسَ عَلَى الَّذِيْنَ لَا يَعْقِلُوْنَ যারা অনুধাবন করে না আল্লাহ তাদের কলুষলিপ্ত করেন। (সূরাহ ইউনুস ১০/১০০) তদুপরি আল্লাহর বাণীঃ وَالَّذِيْنَ اهْتَدَوْا زَادَهُمْ هُدًى وَّاٰتَاهُمْ تَقْوٰهُمْ ‘‘যারা সৎপথ অবলম্বন করেছে, আল্লাহ্ তাদেরকে আরও অধিক হিদায়াত দান করেন এবং তাদেরকে তাকওয়ার তাওফীক দেন’’- (সূরাহ মুহাম্মাদ ৪৭/১৭)। زَيْغٌ -সন্দেহ, ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ -ফিতনা শব্দের অর্থ রূপক। والراسخون في العلم যাঁরা জ্ঞানে সু-গভীর তারা জানে এবং বলে আমরা তা বিশ্বাস করি।
সুরা আলে ইমরান

تُقَاةٌ وَتَقِيَّةٌ একই অর্থে ব্যবহৃত অর্থাৎ ভীতি ও সংযম, صِرٌّ ঠান্ডা। شَفَا حُفْرَةٍ কথাটি شَفَا الرَّكِيَّةِ এর মত অর্থাৎ গর্তের তীর ও কিনারা। تُبَوِّئُ অস্ত্রে সজ্জিত সৈনিককে সারিবদ্ধ করছিল। الْمُسَوَّم কোন প্রতীক কিংবা অন্য কিছু দ্বারা চিহ্নিত করা। رِبِّيُّوْنَ বহুবচন। একবচনে رِبِّيٌّ আল্লাহ তা‘আলা ও আল্লাহ্পন্থী। تَحُسُّوْنَهُمْ তোমরা তাদের হত্যার দ্বারা সমূলে উৎপাটিত করছিলে। غُزًّا বহুবচন। একবচনে غَازٍ যোদ্ধা। سَنَكْتُبُ অচিরে আমি সংরক্ষণ করব। نُزُلًا প্রতিদান ও আতিথেয়তা হিসাবে। مُنْزَلٌ مِنْ عِنْدِ اللهِ পড়াও বৈধ। মুফাস্সির ইমাম মুজাহিদ (রহ.)-এর মতে الْخَيْلُ الْمُسَوَّمَةُ পরিপূর্ণ সুন্দর অশ্বপাল, ইবনু যুবায়র (রাঃ) বলেন, حَصُوْرًا কামভাব নিয়ে কোন মহিলার কাছে যায় না। ‘ইকরামাহ (রাঃ) বলেন, فَوْرِهِمْ বাদরের দিনে তাদের ক্রোধ নিয়ে, মুজাহিদ (রহ.) বলেন, يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ নিষ্প্রাণ বীর্য নির্গত হয় এরপর তা থেকে জীবিত বের হয়। الإِبْكَارُ ঊষালগ্ন। وَالْعَشِيُّ সূর্য ঢলে যাওয়া থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।

৪১৯১। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়াতটি

‏هُوَ الَّذِي أَنْزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ آيَاتٌ مُحْكَمَاتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ فَأَمَّا الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَاءَ تَأْوِيلِهِ‏}‏ إِلَى قَوْلِهِ ‏{‏أُولُو الأَلْبَابِ

তিনিই তোমার প্রতি এ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন যার কতক আয়াত সুস্পষ্ট, দ্ব্যর্থহীন। এগুলো কিতাবের মূল অংশ; আর অন্যগুলো রূপক; যাদের অন্তরে সত্য লংঘন প্রবণতা রয়েছে শুধু তারাইফিতনা এবং ভুল ব্যাখ্যার উদ্ধেশ্যে যা রূপক তা অনুসরণ করে। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ এর ব্যাখ্যা জানে না। আর যারা জ্ঞানে সু-গভীর, তাঁরা বলেন, আমরা এসব বিশ্বাস কির, সমস্ত আমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে আগত; এবং বোধশক্তিসম্পন্নেরা ব্যতীত অপর কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না। (৩: ৭) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করলেন।

আয়িশা (রাঃ) বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেছেন যে, যারা মুতাশাবাহাত আয়াতের পেছনে ছুটে তাদের যখন তুমি দেখবে তখন মনে করব যে তাদের কথাই আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। আল্লাহর বাণীঃ وَإِنِّي أُعِيذُهَا بِكَ وَذُرِّيَّتَهَا مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ অভিশপ্ত শয়তান থেকে তার ও তার বংশধরদের জন্য তোমার শরণ ও আশ্রয় চাচ্ছি। (৩: ৩৬)

হাদিস নম্বরঃ ৪১৯২ | 4192 | ٤۱۹۲

পরিচ্ছদঃ ২৩০৯. আল্লাহর বাণীঃ مِنْهُ ا”يَاتٌ مُحْكَمَاتٌ যার কতক আয়াত সুস্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন। ইমাম মুজাহিদ (রহ.) বলেন যে, সেটি হচ্ছে হালাল আর হারাম সম্পর্কিত। وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ আর অন্যগুলো রূপক, একটি অন্যটির সত্যতা প্রমাণ করে। যেমনঃ আল্লাহর বাণীঃ وَمَا يُضِلُّ بِهٰٓ إِلَّا الْفَاسِقِيْنَ -‘‘তিনি পথ পরিত্যাগকারী ব্যতীত বস্তুত কাউকে বিভ্রান্ত করেন না।’’ আবার- وَيَجْعَلُ الرِّجْسَ عَلَى الَّذِيْنَ لَا يَعْقِلُوْنَ যারা অনুধাবন করে না আল্লাহ তাদের কলুষলিপ্ত করেন। (সূরাহ ইউনুস ১০/১০০) তদুপরি আল্লাহর বাণীঃ وَالَّذِيْنَ اهْتَدَوْا زَادَهُمْ هُدًى وَّاٰتَاهُمْ تَقْوٰهُمْ ‘‘যারা সৎপথ অবলম্বন করেছে, আল্লাহ্ তাদেরকে আরও অধিক হিদায়াত দান করেন এবং তাদেরকে তাকওয়ার তাওফীক দেন’’- (সূরাহ মুহাম্মাদ ৪৭/১৭)। زَيْغٌ -সন্দেহ, ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ -ফিতনা শব্দের অর্থ রূপক। والراسخون في العلم যাঁরা জ্ঞানে সু-গভীর তারা জানে এবং বলে আমরা তা বিশ্বাস করি।
৪১৯২। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, প্রত্যেক নবপ্রসূত বাচ্চা জন্ম গ্রহণ করার সময় শয়তান তাকে স্পর্শ করেই। যার ফলশ্রুতিতে শয়তানের স্পর্শমাত্র সে চিৎকার করে উঠে। কিন্তু মরিয়ম (আলাইহিস সালাম) ও তাঁর পুত্র ঈসা (আলাইহিস সালাম) কে পারেনি। তারপর আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলতেন, যদি তোমরা ইচ্ছা কর তাহলে পড়ঃ ‏وَإِنِّي أُعِيذُهَا بِكَ وَذُرِّيَّتَهَا مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ ‏ (৩ঃ ৩৬)

”অতঃপর যখন তাকে প্রসব করলো বলল, হে আমার পালনকর্তা! আমি একে কন্যা প্রসব করেছি। বস্তুতঃ কি সে প্রসব করেছে আল্লাহ তা ভালই জানেন। সেই কন্যার মত কোন পুত্রই যে নেই। আর আমি তার নাম রাখলাম মারইয়াম। আর আমি তাকে ও তার সন্তানদেরকে তোমার আশ্রয়ে সমর্পণ করছি। অভিশপ্ত শয়তানের কবল থেকে।”

হাদিস নম্বরঃ ৪১৯৩ | 4193 | ٤۱۹۳

পরিচ্ছদঃ ২৩১০. আল্লাহর বাণীঃ যারা আল্লাহর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মুল্যে বিক্রয় করে, আখেরাতে তাদের কোন অংশ নেই (৩ঃ ৭৭) لا خلاق কোন কল্যাণ নেই। أليم শব্দটি مفعل এর আকৃতিতে ألم থেকে গঠিত। অর্থাৎ জ্বালাময়ী।
৪১৯৩। হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন মুসলিম ব্যাক্তির সম্পত্তি আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে যে মিথ্যা শপথ করে, সে আল্লাহ সম্মুখীন হবে এমন অবস্থায় যে, আল্লাহ তার উপর ক্রুদ্ধ থাকবেন। এর সত্যতা প্রমাণের জন্য আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করেনঃ ‏إِنَّ الَّذِينَ يَشْتَرُونَ بِعَهْدِ اللَّهِ وَأَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِيلاً أُولَئِكَ لاَ خَلاَقَ لَهُمْ فِي الآخِرَةِ (৩ঃ ৭৭) ”যারা আল্লাহর নামে কৃত অঙ্গীকার এবং প্রতিজ্ঞা সামান্য মুল্যে বিক্রয় করে, আখেরাতে তাদের কোন অংশ নেই। আর তাদের সাথে কেয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না। তাদের প্রতি (করুণার) দৃষ্টিও দেবেন না। আর তাদেরকে পরিশুদ্ধও করবেন না। বস্তুতঃ তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব।”

বর্ণনাকারী বললেন, এরপর আশআস ইবনু কায়েস (রহঃ) সেখানে প্রবেশ করলেন এবং বললেন, আবূ আবদুর রহমান (রাঃ) তোমাদের নিকট কোন হাদীস বর্ণনা করেছেন? আমরা বললাম, এ রকম এ রকম বলেছে। তখন তিনি বললেন, এ আয়াত তো আমাকে উপলক্ষ করেই অবতীর্ণ হয়েছে। আমার চাচাতো ভাইয়ের এলাকায় আমার একটি কূপ ছিল। এ ঘটনায় জ্ঞাত হয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হয়তো তুমি প্রমাণ উপস্থাপন করবে নতুবা সে শপথ করবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে তো শপথ করে বসবে। অনন্তর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যাক্তি কোন মুসলমানের সম্পত্তি হরণ করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা শপথ করে সে আল্লাহর সম্মুখীন হবে এমন অবস্থায় যে, আল্লাহই তার উপর ক্রুদ্ধ থাকবেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৯৪ | 4194 | ٤۱۹٤

পরিচ্ছদঃ ২৩১০. আল্লাহর বাণীঃ যারা আল্লাহর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মুল্যে বিক্রয় করে, আখেরাতে তাদের কোন অংশ নেই (৩ঃ ৭৭) لا خلاق কোন কল্যাণ নেই। أليم শব্দটি مفعل এর আকৃতিতে ألم থেকে গঠিত। অর্থাৎ জ্বালাময়ী।
৪১৯৪। আলী (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি বাজারে তার একটি দ্রব্য উপস্থি করল এবং মসলিমদের আটক করার জন্য শপথ সহকারে প্রচার করল যে, এর যে মূল্য দেওয়া কথা হচ্ছে এর চেয়ে অধিক দিতে কোন ক্রেতা রাযী হয়েছিল। তখন এ আয়াত নাযিল হলঃ إِنَّ الَّذِينَ يَشْتَرُونَ بِعَهْدِ اللَّهِ وَأَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِيلاً‏

”যারা আল্লাহর নামে কৃত অঙ্গীকার এবং প্রতিজ্ঞা সামান্য মুল্যে বিক্রয় করে, আখেরাতে তাদের কেন অংশ নেই। আর তাদের সাথে কেয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না। তাদের প্রতি (করুণার) দৃষ্টিও দেবেন না। আর তাদেরকে পরিশুদ্ধও করবেন না। বস্তুতঃ তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব।” (৩ : ৭৭)

হাদিস নম্বরঃ ৪১৯৫ | 4195 | ٤۱۹۵

পরিচ্ছদঃ ২৩১০. আল্লাহর বাণীঃ যারা আল্লাহর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মুল্যে বিক্রয় করে, আখেরাতে তাদের কোন অংশ নেই (৩ঃ ৭৭) لا خلاق কোন কল্যাণ নেই। أليم শব্দটি مفعل এর আকৃতিতে ألم থেকে গঠিত। অর্থাৎ জ্বালাময়ী।
৪১৯৫। নসর ইবনু আলী (রহঃ) … ইবনু আবূ মূলায়কা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, দু’জন মহিলা একটি ঘর কিংবা একটি কক্ষে সেলাই করছিল। হাতের তালুতে সুই বিদ্ধ হয়ে তাদের একজন বেরিয়ে পড়ল এবং অপর জনের বিরুদ্ধে সুই ফুটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করল। এই ব্যাপারটি ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর নিকট উপস্থাপন করা হলে তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি শুধু মাত্র দাবির উপর ভিত্তি করে মানুষের দাবি পূরণ করা হয়, তাহলে তাদের জান ও মালের নিরাপত্তা থাকবে না। সুতরাং তোমরা বিবাদিদের আল্লাহর নামে শপথ করাও এ আয়াত তার সম্মুখে পাঠ কর। এরপর তারা তাকে শপথ করাল এবং সে নিজ দোষ স্বীকার করল। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শপথ করা বিবাদীর জন্য প্রযোজ্য।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৯৬ | 4196 | ٤۱۹٦

পরিচ্ছদঃ ২৩১১. আল্লাহর বাণীঃ তুমি বলঃ হে আহলে কিতাব! এসো সে কথায় যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই; যেন আমরা আল্লাহ ব্যতীত কারো ইবাদাত না করি। (ইমরান ৩ঃ ৬৪) سَوَاءِ সঠিক ও ন্যায়।
৪১৯৬। ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ সুফিয়ান আমাকে সামনাসামনি হাদীস শুনিয়েছেন। আবূ সুফিয়ান বলেন, আমাদের আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির মেয়াদে আমি ভ্রমণে বের হয়ে ছিলাম। আমি তখন সিরিয়ায় অবস্থান করছিলাম। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে হিরাক্লিয়াসের নিকট থেকে একখানা পত্র পৌছান। দাহইয়াতুল কালবী এ চিঠিটা বসরাধিপতিকে দিয়েছিলেন। এরপর তিনি হিরাক্লিয়াসের নিকট পৌছিয়ে দিলেন। পত্র পেয়ে হিরাক্লিয়াস নাবীর দাবিদার ব্যাক্তির গোত্রস্থি কেউ এখানে আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলেন। তারা বলল, হ্যাঁ আছে। কয়েকজন কুরাইশীসহ আমাকে ডাকা হলে আমরা হিরাক্লিয়াসের নিকট গেলাম এবং আমাদেরকে তাঁর সম্মুখে বসালেন। এরপর তিনি বললেন, নাবীর দাবিদার ব্যাক্তির তোমাদের মধ্যে নিকটতম আত্মীয় কে? আবূ সুফিয়ান বললেন, উত্তরে বললাম আমিই।

তারা আমাকে তাদের সম্মুখে এবং আমার সাথীদেরকে আমার পিছনে বসালেন। তারপর দোভাষিকে ডাকলেন এবং বললেন, এদেরকে জানিয়ে দাও যে, আমি নাবীর দাবিদার ব্যাক্তিটি সম্পর্কে আবূ সুফিয়ানকে কিছু জিজ্ঞাসা করলে সে যদি আমার নিকট মিথ্যা বলে তোমরা তার মিথ্যাচারিতা ধরিয়ে দিবে। আবূ সুফিয়ান বলেন, যদি তাদের পক্ষ থেকে আমাকে মিথ্যুক প্রমাণের আশংকা না থাকত তাহলে আমি মিথ্যা বলতামই।

সুফিয়ান বললেন, তিনি আমাদের মধ্যে অভিজাত বংশের অধিকারী। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন যে, তাঁর পূর্বপুরুষদের কেউ কি রাজা-বাদশাহ ছিলেন? আমি বললাম, না। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্যের পূর্বে তোমরা তাঁকে কখনো মিথ্যাচারের অপবাদ দিতে পেরেছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, সম্ভ্রান্ত ব্যাক্তিবর্গ তাঁর অনুসরণ করছে, না দুর্বলগণ? আমি বললাম, বরং দুর্বলগণ। তিনি বললেন, তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে না হ্রাস পাচ্ছে। আমি বললাম বরং বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বললেন, তাঁর ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর তাঁর প্রতি ভীতশ্রদ্ধ হয়ে কেউ কি ধর্ম ত্যাগ করে? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তোমরা তাঁর বিরুদ্ধে কোন যুদ্ধ করেছ কি? আমি বললাম, জি হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধের ফলাফল কি? আমি বললাম, আমাদের ও তাদের মধ্যে যুদ্ধের ফলাফল হলঃ একবার তিনি জয়ী হন, আর একবার আমরা জয়ী হই।

তিনি বললেন, তিনি প্রতিশ্রতি ভঙ্গ করেন কি? বললাম, না। তবে বর্তমানে আমরা একটি সন্ধির মেয়াদে আছি। দেখি এতে তিনি কি করেন। আবূ সুফিয়ান বলেন, আল্লাহর শপথ এর সাথে আর অতিরিক্ত কিছু বক্তব্য সংযোজন করার সাহস আমার ছিল না। বললেন, তাঁর পূর্বে এমন কেউ কি আর দাবি করেছে? বললাম না। তারপর তিনি তার দোভাষিকে বললেন যে, একে জানিয়ে দাও যে আমি তোমাকে তোমাদের সাথে সে ব্যাক্তির বংশ মর্যাদা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তারপর তুমি বলেছ যে, সে আমাদের মধ্যে কুলীন। তদ্রুপ রাসূলগণ শ্রেষ্ঠ বংশেই জন্মগ্রহণ করে থাকেন।

আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে তাঁর পূর্বপুরুষের কেউ রাজা-বাদশাহ ছিলেন কিনা? তুমি বলেছ, না। তাই আমি বলছি যে, যদি তাঁর পূর্বপুরুষের কেউ রাজা-বাদশাহ থাকতেন তাহলে বলতাম তিনি তাঁর পূর্বপুরুষদের রাজত্ব পুনরুদ্ধার করতে চাচ্ছেন। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, দুর্বলগণ তাঁর অনুসারী না সম্ভ্রান্তগণ? তুমি বলেছ দুর্বলগণই। আমি বলেছি যে যুগে যুগে দুর্বলগণই রাসূলদের অনুসারী হয়ে থাকি। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, এ দাবির পূর্বে তোমরা তাঁকে কখনো মিথ্যাচারের অপবাদ দিয়েছিলে কি? তুমি উত্তরে বলেছ যে, না। তাতে আমি বুঝেছি যে, যে ব্যাক্তি প্রথমে মানুষদের সাথে মিথ্যাচার ত্যাগ করেন, তারপর আল্লাহর সাথে মিথ্যাচারিতা করবেন, তা হতে পারে না। আমি তোমাদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, তাঁর ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর তাঁর প্রতি বিরক্ত ও অসন্তুষ্ট হয়ে কেউ ধর্ম ত্যাগ করে কিনা? তুমি বলেছ, না।

আমি বলেছি, ঈমান যখন অন্তরের অন্তস্থলে একবার প্রবিষ্ট হয় তখন এ রকমই হয়। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তাঁর অনুসারীরা বৃদ্ধি পাচ্ছে না হ্রাস পাচ্ছে? তুমি বলেছ, ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমি বলেছি, ঈমান পূর্ণতা লাভ করলে এ অবস্থাই হয়। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, তাঁর বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ করেছ কি? তুমি বলেছ যে, যুদ্ধ করেছ এবং তার ফলাফল হচ্ছে পানি উত্তোলনের বালতির ন্যায়। কখনো তোমাদের বিরুদ্ধে তারা জয়লাভ করে আবার কখনো তাদের বিরুদ্ধে তোমরা জয়লাভ কর। এমনিভাবেই রাসূলদের পরীক্ষা করা হয়, তাপর চুড়ান্ত বিজয় তাদের পক্ষেই হয়ে থাকে। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেন কিনা? তুমি বলেছ না। তদ্রুপ রাসূলগণ প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেন না।

আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তাঁর পূর্বে কেউ এ দাবি উত্থাপন করেছিল কিনা? তুমি বলেছ, না। আমি বলি যদি কেউ তাঁর পূর্বে এ ধরণের দাবি করে থাকত তাহলে আমি মনে করতাম এ ব্যাক্তি পূর্ববর্তী দাবির অনুসরণ করছে। আবূ সুফিয়ান বলেন, তারপর হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি তোমাদের কি কাজের নির্দেশ দেন? আমি বললাম, সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করতে, যাকাত প্রদান করতে, আত্মীয়তা রক্ষা করতে এবং পাপচারিতা থেকে পবিত্র থাকার নির্দেশ দেন। হিরাক্লিয়াস বললেন, তাঁর সম্পর্কে তোমার বক্তব্য যদি সঠিক হয়, তাহলে তিনি ঠিকই নাবী, তিনি আবির্ভূত হবেন তা আমি জানতাম বটে তবে তোমাদের মধ্যে আবির্ভূত হবেন তা মনে করিনি। যদি আমি তাঁর সান্নিধ্যে পৌছাবার সুযোগ পেতাম তাহলে আমি তাঁর সাক্ষাতকে অগ্রাধিকার দিতাম। যদি আমি তাঁর নিকট অবস্থান করতাম তাহলে আমি তাঁর পদযুগল ধুইয়ে দিতাম। আমার নিচের জমীন পর্যন্ত তাঁর রাজত্ব বিস্তৃত লাভ করবে।

আবূ সুফিয়ান বলেন, তারপর হিরাক্লিয়াস রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পত্রখানি আনতে বললেন। এরূপ পাঠ করতে বললেন। চিঠির বক্তব্য এইঃ

দয়াময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে, আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে রোমের অধিপতি হিরাক্লিয়াসের প্রতি। হেদায়েতের অনুসারীর প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। এরপর আমি আপনাকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছি, ইসলাম গ্রহণ করুন, মুক্তি পাবেন। ইসলাম গ্রহণ করুন, আল্লাহ তাআলা আপনাকে দ্বিগুন প্রতিদান দেবেন। আর যদি মুখ ফিরিয়ে থাকেন তাহলে সকল প্রজার পাপরাশিও আপনার উপর নিপতিত হবে। হে কিতাবিগণ! এসো সে কথায়, যামাদের ও তোমাদের মধ্যে একই যে, আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবো না, কোন কিছুতেই তাঁর সাথে শরীক না করি। আর আমাদের একে অন্যকে আল্লাহ ব্যতীত প্রতিপালকরূপে গ্রহণ না করি। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বল, তোমরা সাক্ষী থাক, আমরা মুসলিম।

যখন তিনি পত্র পাঠ সমাপ্ত করলেন চতুর্দিকে উচ্চ রব উঠল এবং গুনজন বৃদ্ধি পেল। তারপর তাঁর নির্দেশে আমাদের বাইরে নিয়ে আসা হল। আবূ সুফিয়ান বলেন, আমরা বেরিয়ে আসার পর আমি আমার সাথীদের বললা যে, আবূ কাবশার সন্তানের ব্যাপারে তো বিস্তর প্রভাব লাভ করেছে। রোমীয় রাষ্ট্র নায়ক পর্যন্ত তাকে ভয় পায়। তখন থেকে আমার মনে এ দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছিল যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দ্বীন অতি সত্বর বিজয় লাভ করবে। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা আমাকে ইসলামে দীক্ষিত করলেন।

ইমাম যুহরী (রহঃ) বলেন, তারপর হিরাক্লিয়াস রোমের নেতৃবৃন্দকে ডেকে একটি কক্ষে একত্রিত করলেন এবং বললেন, হে রোমকগণ! তোমরা কি আজীবন সৎপথ ও সফলতার প্রত্যাশী এবং তোমাদের রাজত্ব অটুট থাকুক? এতে তারা তার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে বন্য-গর্দভের ন্যায় পলায়নরত হল। কিন্তু দরজা গুলো সবই বন্ধ পেল। এরপর বাদশাহ নির্দেশ দিলেন যে, তাদের সবাইকে আমার নিকট নিয়ে এসো। তিনি তাদের সবাইকে ডাকলেন এবং বললেন, তোমাদের ধর্মের উপর তোমাদের আস্থা কতটুকু আছে তা আমি পরীক্ষা করলাম। আমি যা আশা করেছিলাম তা তোমাদের থেকে পেয়েছি। অনন্তর সবাই তাঁকে জিজ্ঞাসা করল এবং তার উপর সন্তুষ্ট থাকল।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৯৭ | 4197 | ٤۱۹۷

পরিচ্ছদঃ ২৩১২. আল্লাহর বাণীঃ তোমরা যা ভালবাস তা হতে ব্যয় না করা পর্যন্ত কখনো পুণ্য লাভ করতে পারবে না। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় কর আল্লাহ সে সম্বন্ধে সবিশেষে অবহিত। (৩ঃ ৯২)
৪১৯৭। ইসমাঈল (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, মদিনা মনোয়ারায় আবূ তালহা (রাঃ)-ই অধিক সংখ্যক খেজুর বৃক্ষের মালিক ছিলেন। তার নিকট সর্বাধিক প্রিয় সম্পত্তি ছিল “বীরাহা” নামক বাগান। আর তা ছিল মসজিদের সম্মুখে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে এসে সেখানকার (কূপের) সুমিষ্ট পানি পান করতেন। যখন لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ‏ আয়াতটি নাযিল হল, তখন আবূ তালহা (রাঃ) উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা যা ভালবাস তা হতে ব্যায় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো পুণ্য লাভ করতে পারবে না।” (৩ঃ ৯২) আমার সর্বাধিক প্রিয় সম্পত্তি বীরাহা। এটা আল্লাহ ওয়াস্তে আমি দান করে দিলাম। আমি আল্লাহর নিকট পূণ্য ও সঞ্চয় চাই। আল্লাহ আপনাকে যেখানে নির্দেশ দেন আপনি সেখানে তা ব্যয় করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বাহ! ওটি তো ক্ষয়িঞ্চু সম্পদ ওটি তো ক্ষয়িঞ্চু সম্পদ, তুমি যা বলেছ আমি তা শুনেছি। তুমি তা তোমার নিকট আত্মীয়কে দিয়ে দাও, আমি এ রায় দিচ্ছি। আবূ তালহা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তা করব। তারপর আবূ তালহা (রাঃ) সেটা তাঁর চাচাতো ভাই-বোন ও আত্মীয়দের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ ও ইবনু উবাদাহ (রাঃ) এর বর্ণনায় “ওটা তো লাভ জনক সম্পত্তি” বলে উল্লেখিত হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪১৯৮ | 4198 | ٤۱۹۸

পরিচ্ছদঃ ২৩১২. আল্লাহর বাণীঃ তোমরা যা ভালবাস তা হতে ব্যয় না করা পর্যন্ত কখনো পুণ্য লাভ করতে পারবে না। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় কর আল্লাহ সে সম্বন্ধে সবিশেষে অবহিত। (৩ঃ ৯২)
৪১৯৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) বলেন, আমি মালিক (রহঃ)-এর নিকট مَالٌ رَايِحٌ “ক্ষয়িষ্ণু সম্পদ পড়েছি।”

হাদিস নম্বরঃ ৪১৯৯ | 4199 | ٤۱۹۹

পরিচ্ছদঃ ২৩১২. আল্লাহর বাণীঃ তোমরা যা ভালবাস তা হতে ব্যয় না করা পর্যন্ত কখনো পুণ্য লাভ করতে পারবে না। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় কর আল্লাহ সে সম্বন্ধে সবিশেষে অবহিত। (৩ঃ ৯২)
৪১৯৯। মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এরপর আবূ তালহা (রাঃ) হাসসান ইবনু সাবিত এবং উবায় ইবনু কাআবের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। আমি তার নিকটাত্মীয় ছিলাম। কিন্তু আমাকে তা থেকে কিছুই দেননি।

হাদিস নম্বরঃ ৪২০০ | 4200 | ٤۲۰۰

পরিচ্ছদঃ ২৩১৩. বল, যদি তোমরা সত্যবাদী হও তবে তাওরাত আন এবং পাঠ কর (সূরাহ আলে-‘ইমরান ৩ঃ ৯৩)
৪২০০। ইবরাহীম ইবনু মুনযির … আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছে এমন দু’জন পুরুষ ও মহিলা নিয়ে ইহুদীগণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে উপস্থিত হল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, তোমাদের ব্যভিচারীদেরকে তোমরা কিভাবে শাস্তি দাও? তারা বলল, আমরা তাদের চেহারা কালিমালিপ্ত করি এবং তাদের প্রহার করি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তাওরাতে প্রস্তর নিক্ষেপের বিধান পাও না? তারা বলল, আমরা তাতে এতদ সম্পর্কিত কোন কিছু পাই না। তখন আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বললেন, তোমরা মিথ্যা বলছ। তাওরাত আন এবং তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তবে তা পাঠ কর। এরপর তাওরাত পাঠের সময় তাদের পন্ডিত-পাঠক প্রস্তর নিক্ষেপ বিধির আয়াতের উপর স্বীয় হস্ত রেখে তা থেকে কেবল পূর্ব ও পরের অংশ পড়তে লাগল। রজমের আয়াত পড়ছিল না। আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) তার হাতটি তুলে ফেলে বললেন, এটা কি? যখন তারা পরিস্থিতি বেগতিক দেখল তখন বলল, এটি রজমের আয়াত। অনন্তর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে রজম করার নির্দেশ দিলেন। এবং মসজিদের পার্শ্বে জানাযাগাহের নিকটে উভয়কে ‘রজম’ করা হল। ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, আমি সেই পুরুষটিকে দেখেছি যে নিজে মহিলার উপর উপুড় হয়ে তাকে প্রস্তরাঘাত হতে বাচানোর চেষ্টা করছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪২০১ | 4201 | ٤۲۰۱

পরিচ্ছদঃ ২৩১৪. আল্লাহর বাণীঃ তোমরা শ্রেষ্ঠ উম্মাত, মানব জাতির জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে (৩ঃ ১১০)
৪২০১। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) ‏كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ আয়াত সম্পর্কে বলেন, মানুষের জন্যে মানুষ কল্যাণজনক তখনই হয় যখন তাদের গ্রীবাদেশে শিকল লাগিয়ে নিয়ে আসে। এরপর তারা ইসলামে প্রবেশ করে।

হাদিস নম্বরঃ ৪২০২ | 4202 | ٤۲۰۲

পরিচ্ছদঃ ২৩১৫. আল্লাহর বাণীঃ যখন তোমাদের মধ্যের দু’দলের সাহস হারানোর উপক্রম হয়েছিল এবং আল্লাহ তাদের অভিভাবক (৩ঃ ১২২)
৪২০২। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, إِذْ هَمَّتْ طَائِفَتَانِ مِنْكُمْ أَنْ تَفْشَلاَ وَاللَّهُ وَلِيُّهُمَا আয়াতটি আমাদেরকে উপলক্ষ করেই অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বলেন, ‏ আমরা দু’দল বনী হারিছা আর বনী ছালিমা। যেহেতু এ আয়াতে ‏وَاللَّهُ وَلِيُّهُمَا “আল্লাহ উভয়ের সহায়ক” উল্লেখ আছে, সেহেতু এটা অবতীর্ণ না হোক তা আমরা পছন্দ করতাম না। সুফিয়ান (রাঃ)-এর এক বর্ণনায় وما يسرني ‘আমাকে ভাল লাগেনি’ আছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪২০৩ | 4203 | ٤۲۰۳

পরিচ্ছদঃ ২৩১৬. আল্লাহর বাণীঃ এই বিষয়ে আপনার করণীয় কিছুই নেই।(সূরাহ আলে-‘ইমরান ৩ঃ ১২৮)
৪২০৩। হিব্বান (রহঃ) … সালিম (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছেন যে, তিনি ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) এর শেষ রাকাআতে রুকু থেকে মাথা তুলে ‘সামিআল্লাহ লিমান হামিদা, রাব্বানা ওলাকাল হামদ’ বলার পর এটা বলতেনঃ হে আল্লাহ! অমুক, অমুক, এবং অমুককে লানত দিন। তখন আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করলেন। ‏لَيْسَ لَكَ مِنَ الأَمْرِ شَىْءٌ‏}‏ إِلَى قَوْلِهِ ‏{‏فَإِنَّهُمْ ظَالِمُونَ তিনি তাদের প্রতি ক্ষমাশীল হবেন অথবা তাদের শাস্তি দিবেন, এবিষয়ে তোমার করনীয় কিছুই নেই। কারণ তারা জালিম। (৩: ১২৮) ইসহাক ইবনু রাশিদ (রহঃ) ইমাম যুহরী (রহঃ) থেকে এটা বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪২০৪ | 4204 | ٤۲۰٤

পরিচ্ছদঃ ২৩১৬. আল্লাহর বাণীঃ এই বিষয়ে আপনার করণীয় কিছুই নেই।(সূরাহ আলে-‘ইমরান ৩ঃ ১২৮)
৪২০৪। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারো জন্য বদদোয়া অথবা দোয়া করার মনস্থ করতেন, তখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর রুকুর পরেই কুনূতে নাযিলা পড়তেন। কখনো কখনো সামি আল্লাহ লিমান হামিদা, আল্লাহুম্মা রাব্বানা লাকাল হামদ বলার পর বলতেন, হে আল্লাহ! ওয়ালিদ ইবনু ওয়ালিদ, সালমা ইবনু হিশাম এবং আইয়াশ ইবনু আবূ রাবিয়াকে মুক্ত করুন। হে আল্লাহ! মুদার গোত্রের উপর শাস্তি কঠোর করুন। এ শাস্তিকে ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর যুগের দূর্ভক্ষের ন্যায় দুর্ভিক্ষে রূপান্তরিত করে দিন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা গুলোকে উচ্চস্বরে বলতেন। কখনো কখনো তিনি কয়েকটি আরব গোত্রের নাম উল্লেখ করে ফজরের সালাতে বলতেন, হে আল্লাহ! অমুক এবং অমুককে লানত দিন। অবশেষ আল্লাহ তাআলা নাযিল করলেনঃ ‏لَيْسَ لَكَ مِنَ الأَمْرِ شَىْءٌ‏ “হয় আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন কিংবা তাদেরকে আযাব দেবেন। এ ব্যাপারে আপনার কোন করণীয় নাই। কারণ তারা রয়েছে অন্যায়ের উপর।” (৩ঃ ১২৮)

হাদিস নম্বরঃ ৪২০৫ | 4205 | ٤۲۰۵

পরিচ্ছদঃ ২৩১৭. আল্লাহর বাণীঃ রসূল (সাঃ) তোমাদের পেছনের দিক থেকে আহবান করছিলেন। آخركم এর স্ত্রীলিঙ্গ أخراكم ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, দু’কল্যাণের একটি এর অর্থ হল বিজয় অথবা শহীদ হওয়া
৪২০৫। আমর ইবনু খালিদ (রহঃ) … বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পদাতিক বাহিনীর উপর আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) কে সেনাপতি নির্ধারণ করেন। এরপর তাদের কতক পরাজিত হলে পালাতে লাগল, এটাই হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তোমাদের পেছন দিক থেকে ডাকছিলেন। মাত্র বারজন ছাড়া আর কেউ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলেন না।

হাদিস নম্বরঃ ৪২০৬ | 4206 | ٤۲۰٦

পরিচ্ছদঃ ২৩১৮. আল্লাহর বাণীঃ প্রশান্তি তন্দ্রারূপে
৪২০৬। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … আবূ তালহা (রাঃ) বলেন, আমরা উহুদ যুদ্ধের দিন আপন আপন সারিতে ছিলাম। তন্দ্রা আমাদের আচ্ছাদিত করে ফেলেছিল। তিনি বলেছিলেন, আমার তরবারী আমার হাত থেকে পড়ে যাচ্ছিল, আর আমি তা উঠাচ্ছিলাম, আবার পড়ে যাচ্ছিল, আবার আমি উঠাচ্ছিলাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪২০৭ | 4207 | ٤۲۰۷

পরিচ্ছদঃ ২৩২০. আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের বিরুদ্ধে লোক জমায়েত হয়েছে (৩ঃ ১৭৩)
باب قوله الذين استجابوا لله والرسول من بعد ما أصابهم القرح للذين أحسنوا منهم واتقوا أجر عظيم القرح الجراح استجابوا أجابوا يستجيب يجيب

২৩১৯. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহর বাণীঃ যখম হওয়ার পরও যারা আল্লাহ ও রাসুলের ডাকে সাড়া দিয়েছে তাদের মধ্যে যারা সৎকার্য করে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে চলে, তাদের জন্য মহাপুরস্কার রয়েছে (৩ঃ ১৭২) القرح যখম। استجابوا ডাকে সাড়া দিন। يستجيب সাড়া দেয়।

৪২০৭। আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ বাক্যটি ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) বলেছিলেন, যখন তিনি অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। আর মুহাম্মদ বলেছিলেন যখন লোকেরা বলল, ‘‘তোমাদের বিরুদ্ধে লোক জমায়েত হয়েছে, সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় কর কিন্তু এটি তাদের ঈমান দৃঢ়তর করেছিল এবং তারা বলেছিল ‘‘আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি কত উত্তম কর্ম বিধায়ক’’ (৩: ১৭৩)

হাদিস নম্বরঃ ৪২০৮ | 4208 | ٤۲۰۸

পরিচ্ছদঃ ২৩২০. আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের বিরুদ্ধে লোক জমায়েত হয়েছে (৩ঃ ১৭৩)
৪২০৮। মালিক ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) যখন অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন তখন তাঁর শেষ বক্তব্য ছিল حَسْبِيَ اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ ‘‘আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট’’ তিনি কত উত্তম কর্ম বিধায়ক।

হাদিস নম্বরঃ ৪২০৯ | 4209 | ٤۲۰۹

পরিচ্ছদঃ ২৩২১. আল্লাহর বাণীঃ এবং আল্লাহ তাদেরকে নিজের অনুগ্রহে যা দান করেছেন তাতে যারা কৃপণতা করে এই কার্পন্য তাদের জন্য মঙ্গলকর হবে বলে তারা যেন ধারণা না করে। বরং এটা তাদের পক্ষে একান্তই ক্ষতিকর প্রতিপন্ন হবে। যাতে তারা কার্পন্য করে সে সমস্ত ধন-সম্পদকে কিয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ী বানিয়ে পরানো হবে। আর আল্লাহ হচ্ছেন আসমান ও যমীনের পরম সত্ত্বাধিকারী। আর যা কিছু তোমরা কর; আল্লাহ সে সম্পর্কে জানেন। سَؤُطَوَّقُوْنَ এটা আরবী বাক্য طوقته بطوق (তাকে বেড়ি লাগিয়ে দিয়েছি) এর ন্যায়।
৪২০৯। আবদুল্লাহ ইবনু মুনীর (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, যাকে আল্লাহ তাআলা ধন-সম্পদ দেন, তারপর সে তার যাকাত পরিশোধ করে না- কিয়ামত দিবসে তার ধন-সম্পদকে তার জন্য লোমবিহীন কালো-চিহৃ বিশিষ্ট সর্পে রূপান্তরিত করা হবে এবং তার গলায় পরিয়ে দেয়া হবে। মুখের দু’ধার দিয়ে সে তাকে দংশন করতে থাকবে এবং বলবে, ‘আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার সঞ্চয়।’ এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন وَلاَ يَحْسِبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ

অর্থ আল্লাহ তাদেরকে নিজের অনুগ্রহে যা দান করেছেন তাতে যারা কৃপণতা করে এই কার্পন্য তাদের জন্য মঙ্গলকর হবে বলে তারা যেন ধারণা না করে। বরং এটা তাদের পক্ষে একান্তই ক্ষতিকর প্রতিপন্ন হবে। যাতে তারা কার্পন্য করে সে সমস্ত ধন-সম্পদকে কিয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ী বানিয়ে পরানো হবে। আর আল্লাহ হচ্ছেন আসমান ও যমীনের পরম সত্ত্বাধিকারী। আর যা কিছু তোমরা কর; আল্লাহ সে সম্পর্কে জানেন। (৩ঃ ১৮০)

হাদিস নম্বরঃ ৪২১০ | 4210 | ٤۲۱۰

পরিচ্ছদঃ ২৩২২. আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল তাদের এবং মুশরীকদের কাছ থেকে তোমরা অনেক কষ্টদায়ক কথা শুনবে (৩ঃ ১৮৬)
৪২১০। আবূল ইয়ামান (রহঃ) … উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি গাধার পিঠে আরোহন করেছিলেন, একটি ফদকী চাঁদর তাঁর পরনে ছিল। উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) কে তাঁর পেছনে বসিয়েছিলেন। তিনি বনী হারিস ইবনু খাযরায গোত্রে অসুস্থ সা’দ ইবনু উবায়দা (রাঃ) কে দেখতে যাচ্ছিলেন। এটা ছিল বদর যুদ্ধের পূর্বেকার ঘটনা। বর্ণনাকারী বলেন যে, যেতে যেতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন একটি মজলিশের সামনে গিয়ে পৌছলেন, যেখানে আবদুল্লাহ ইবনু উবায় বিন সালুলও ছিল, সে তখনও ইসলাম গ্রহণ করেনি। সে মজলিসে মুসলিম, মুশরিক, প্রতিমা পূজারী এবং ইহুদী সকল প্রকারের লোক ছিল এবং তথায় আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ)-ও ছিলেন। জন্তুর পদধূলি যখন মজলিস ছেয়ে ফেলল, তখন আবদুল্লাহ ইবনু উবায় আপন চাঁদরে নাক ঢেকে ফেলল। তারপর বলল, আমাদের এখানে ধুলো উড়িয়ো না।

এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এদরকে সালাম করলেন। তারপর বাহন থেকে অবতরণ করলেন এবং তাদেরকে আল্লাহর প্রতি দাওয়াত দিলেন এবং তাদেরকে কুরআন মজীদ পাঠ করলেন। আবদুল্লাহ ইবনু উবায় বলল, এই লোকটি! তুমি যা বলছ তা যদি সত্যি হয় তাহলে এর চেয়ে উত্তম কিছুই নেই। তবে আমাদের মজলিসে আমাদেরকে জ্বালাতন করবে না। তুমি তোমার তাবুতে যাও। যে তোমার কাছে যাবে তুমি তাকে তোমার কথা বলবে। অনন্তর আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমাদের মজলিসে এগুলো আমাদের কাছে বলবেন, কারণ আমরা তা পছন্দ করি। এতে মুসলমান, মুশরিক এবং ইহুদীরা পরস্পর গালাগালি শুরু করল। এমনকি তারা মারামারিতে লিপ্ত হওয়ার উপক্রম হল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে থামাচ্ছিলেন। অবশেষে তারা থামলো।

এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্তুর পিঠে আরোহণ করে রওয়ানা দিলেন এবং সা’দ ইবনু উবাদা (রাঃ) এর কাছে গেলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, হে সা’দ! আবূ হুবাব অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবনু উবায় কি বলেছে, তুমি শুনেছ কি! সে এমন বলেছে। সা’দ ইবনু উবাদা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাকে ক্ষমা করে দিন। তার দিকে ভ্রক্ষেপ করবেন না। যিনি আপনার উপর কিতাব নাযিল করেছেন, তাঁর শপথ করে বলছি, আল্লাহ আপনার উপর যা নাযিল করেছেন তা সত্য। এতদঞ্চলের অধিবাসীগণ চুক্তি সম্পাদন করেছিল যে, তাকে শাহী টুপি পরাবে এবং নেতৃত্বের শিরস্ত্রানে ভুষিত করবে। যখন আল্লাহ তাআলা সত্য প্রদানের মাধ্যমে এ পরিকল্পনা অস্বীকার করলেন তখন সে ক্রদ্ধ ও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এবং আপনার সাথে যে ব্যবহার করেছে যা আপনি দেখেছেন।

এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ক্ষমা করে দিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীগণ (রাঃ) মুশরিক এবং কিতাবীদেরতে ক্ষমা করে দিতেন এবং তাদের জ্বালাতনে ধৈর্যধারণ করতেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘‘তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল তাদের এবং মুশরিকদের নিকট থেকে তোমরা অনেক কষ্টদায়ক কথা শুনবে (৩ঃ ১৮৬)। আল্লাহ তাআলা আরো বলেছেন, ‘‘তাদের কাছে সত্য প্রকাশিত হওয়ার পরও কিতাবীদরে মধ্যে অনেকই তোমাদের ঈমান আনার পর ঈর্ষামূলক মনোভাববশত আবার তোমাদেরকে সত্য প্রত্যাখানকারীরূপে ফিরে পাওয়ার আকাঙ্খা করে। তোমরা ক্ষমা কর এবং উপেক্ষা কর, যতক্ষণ না আল্লাহ কোন নির্দেশ দেন। আল্লাহর সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।’’ (২: ১০৯)

আল্লাহ তাআলার নির্দেশ মোতাবেক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ষমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করতেন। শেষ পর্যন্ত তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা অনুমতি দিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বদরের যুদ্ধ চালিয়ে গেলেন এবং তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা কাফের কুরাইশ নেতাদেরকে হত্যা করলেন তখন ইবনু উবায় ইবনু সালুল তার সঙ্গী মুশরিক ও প্রতিমা পূজারীরা বলল, এটাতো এমন একটি ব্যাপার যা বিজয় লাভ করেছে। এরপর তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ইসলামের বায়আত করে জাহেরীভাবে ইসলাম গ্রহণ করল।

হাদিস নম্বরঃ ৪২১১ | 4211 | ٤۲۱۱

পরিচ্ছদঃ ২৩২৩. আল্লাহর বাণীঃ যারা নিজেরা যা করেছে তাতে আনন্দ প্রকাশ করে এবং নিজেরা যা করেনি এমন কার্যের জন্যে প্রশংসিত হতে ভালবাসে, তারা শাস্তি হতে মুক্তি পাবে, এরূপ আপনি কখনো মনে করবেন না। তাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে (৩ঃ ১৮৮)
৪২১১। সাঈদ ইবনু আবূ মারয়াম (রহঃ) … আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে তিনি যখন যুদ্ধে বের হতেন তখন কিছু সংখ্যক মুনাফিক ঘরে বসে থাকত এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে যাওয়ার পর বসে থাকতে পারার আনন্দ প্রকাশ করত। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যাবর্তন করলে তাঁর কাছে শপথ সহকারে অক্ষমতা প্রকাশ করত এবং যা করেনি তার জণ্যে প্রশংসিত হওয়াকে ভালবাসত। তখন এ আয়াত নাযিল হলঃ لاَ يَحْسِبَنَّ الَّذِينَ يَفْرَحُونَ‏

হাদিস নম্বরঃ ৪২১২ | 4212 | ٤۲۱۲

পরিচ্ছদঃ ২৩২৩. আল্লাহর বাণীঃ যারা নিজেরা যা করেছে তাতে আনন্দ প্রকাশ করে এবং নিজেরা যা করেনি এমন কার্যের জন্যে প্রশংসিত হতে ভালবাসে, তারা শাস্তি হতে মুক্তি পাবে, এরূপ আপনি কখনো মনে করবেন না। তাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে (৩ঃ ১৮৮)
৪২১২। ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) … আলকামা ইবনু ওয়াক্কাস অবহিত করেছেন যে, মারওয়ান (রাঃ) তাঁর দারোয়ানকে বললেন, হে নাফি! তুমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর কাছে গিয়ে বল, যদি প্রাপ্ত বস্তুতে আনন্দিত এবং করেনি এমন কাজ সম্পর্কে প্রশংসিত হতে আশাবাদী প্রত্যেক ব্যাক্তই শাস্তি প্রাপ্ত হয় তাহলে তাবৎ মানুষই শাস্তি প্রাপ্ত হবে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, এটা নিয়ে তোমাদের মাথা ঘামানো হচ্ছে একটা অবান্তর ব্যাপার। একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহুদীদেরকে ডেকে একটা বিষয় জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তাতে তারা সত্য গোপন করে বিপরীত তথ্য দিয়েছিল। এতদসত্বেও তারা প্রদত্ত উত্তরের বিনিময়ে প্রশংসা লাভের আশা করেছির এবং তাদের সত্য গোপনের জন্য উল্লাসিত হয়েছিল। তারপর ইবনু আব্বাস (রাঃ) পাঠ করলেন- وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ‏}‏ … ‏{‏يَفْرَحُونَ بِمَا أَتَوْا وَيُحِبُّونَ أَنْ يُحْمَدُوا بِمَا لَمْ يَفْعَلُوا‏ ‘‘স্মরণ কর, যদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল আল্লাহ তাদের প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন, তোমরা এটা মানুষের কাছে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করবে এবং তা গোপন করবে না। এরপরও তারা তা অগ্রহ্য করে এবং তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে। অতএব তারা যা ক্রয় করে তা কত নিকৃষ্ট! যারা নিজেরা যা করেছে তাতে আনন্ত প্রকাশ করে এবং যা করেনি এমন কাজের জণ্যে প্রশংসিত হতে ভালবাসে, তারা শাস্তি থেকে মুক্তি পাবে এরূপ তুমি কখনো মনে করো না, তাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে (৩ঃ ১৮৭-১৮৮)।

বর্ণনাকারী আবদুর রাযযাক (রহঃ) ইবনু জুরায়য (রহঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪২১৩ | 4213 | ٤۲۱۳

পরিচ্ছদঃ ২৩২৩. আল্লাহর বাণীঃ যারা নিজেরা যা করেছে তাতে আনন্দ প্রকাশ করে এবং নিজেরা যা করেনি এমন কার্যের জন্যে প্রশংসিত হতে ভালবাসে, তারা শাস্তি হতে মুক্তি পাবে, এরূপ আপনি কখনো মনে করবেন না। তাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে (৩ঃ ১৮৮)
৪২১৩। ইবনু মুকাতিল (রহঃ) … হুমাইদ ইবনু আবদুর রাহমান ইবনু আওফ (রাঃ) অবহিত করেছেনযে, মারওয়ান এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪২১৪ | 4214 | ٤۲۱٤

পরিচ্ছদঃ ২৩২৪. আল্লাহর বাণীঃ আকশমন্ডল এবং পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে নিদর্শনাবলী রয়েছে বোধশক্তি সম্পন্ন লোকের জন্য (৩ঃ ১৯০)
৪২১৪। সাঈদ ইবনু আবূ মারয়াম (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি আমার খালাম্মা মায়মুনা (রাঃ) এর কাছে রাত্রি যাপন করেছিলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুক্ষণ তাঁর পরিবারবর্গের সাখে আলাপ-আলোচনা করে শুয়ে পড়লেন। তারপর রাত্রির শেষ তৃতীয়াংশে তিনি উঠলেন এবং আসমানের দিকে তাকিয়ে পাঠ করলেন إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَاخْتِلاَفِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لآيَاتٍ لأُولِي الأَلْبَابِ এরপর দাঁড়ালেন এবং ওযু করে মিসওয়াক করে এগার রাকায়াত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এরপর বিলাল (রাঃ) আযান দিলে তিনি দু’ রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর বের হয়ে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪২১৫ | 4215 | ٤۲۱۵

পরিচ্ছদঃ ২৩২৫. আল্লাহর বাণীঃ যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে (৩ঃ ১৯১)
৪২১৫। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার খালাম্মা মায়মুনা (রাঃ) এর কাছে রাত্রি যাপন করি। আমি মনে স্থির করলাম যে, অবশ্যই আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা দেখব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য একটা বিছানা বিছিয়ে দেয়া হল। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটার লম্বালম্বি দিকে নিদ্রামগ্ন হলেন। এরপর জাগ্রত হয়ে মুখমন্ডল থেকে ঘুমের রেশ মুছতে লাগলেন এবং সূরা আলে ইমরানের শেষ দশ আয়াত পাঠ করে তা সমাপ্ত করলেন। তারপর ঝুলন্ত একটি পুরাতন মশকের পানি পাত্রের নিকট এসে তা নিলেন এবং ওযু করে সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়ালেন, আমি দাঁড়িয়ে তিনি যা যা করছিলেন তা তা করলাম। তারপর আমি এসে তাঁর পার্শ্বে দাঁড়ালাম। তিনি আমার মাথায় হাত রাখলেন, তারপর আমার কান ধরে মলতে লাগলেন। তারপর দু’ রাকাআত, তারপর দু’ রাকাআত, তারপর দু’ রাকাআত, তারপর দু’ রাকাআত তারপর দু’ রাকাআত, তারপর দু’ রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং তারপর বিতরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪২১৬ | 4216 | ٤۲۱٦

পরিচ্ছদঃ ২৩২৬. আল্লাহর বাণীঃ হে আমাদের রব! কাউকে আপনি অগ্নিতে নিক্ষেপ করলে তাকে তো আপনি নিশ্চয় হেয় করলেন এবং জালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই (৩ঃ ১৯২)
৪২১৬। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে তিনি মায়মুনা (রাঃ)-এর কাছে রাত্রি যাপন করেন, তিনি হলেন তার খালাম্মা। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি বিছানায় আড়াআড়িভাবে শুয়েছিলাম আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার পরিবারবর্গ লম্বালম্বি দিকে শুয়েছিলেন। অর্ধরাত্রি কিংবা এর সামান্য পূর্ব অথবা সামান্য পর পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমালেন। তারপর তিনি জাগ্রত হলেন। এরপর দু’হাত দিয়ে মুখ থেকে ঘুমের আবেশ মুছতে লাগলেন। তারপর ঝুলন্ত একটি পুরাতন মশকের কাছে গেলেন এবং তা থেকে পরিপাটিভাবে উজু করলেন। এরপর সালাতে দাঁড়ালেন। তিনি যা যা করেছিলেন আমিও ঠিক তা করলাম। তারপর গিয়ে তার পার্শ্বে দাঁড়ালাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ডান হাত আমার মাথায় রেখে আমার ডান কান ধরে মলতে লাগলেন। এরপর তিনি দু’রাকাত, তারপর দু’ রাকাআত, তারপর দু’ রাকাআত, তারপর দু’ রাকাআত, তারপর দু’ রাকাআত, তারপর দু’ রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং তারপর বিতরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর তিনি একটু শুয়ে পড়লেন। অবশেষে মুয়াজ্জ্বীন আসল, তিনি হালকাভাবে দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এরপর বের হলেন এবং ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪২১৭ | 4217 | ٤۲۱۷

পরিচ্ছদঃ ২৩২৭. আল্লাহর বাণীঃ হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয় আমরা এক আহবানকারীকে ঈমানের প্রতি আহবান করতে শুনেছি, ‘তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনয়ন কর’ অতএব আমরা ঈমান এনেছি (৩ঃ ১৯৩)
৪২১৭। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … কুরায়ব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। ইবনু আব্বাস (রাঃ) তাকে অবহিত করেছেন যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী মায়মূনা (রাঃ) এর নিকট রাত্রি যাপন করেছিলেন। মায়মূনা (রাঃ) হলেন তাঁর খালাম্মা। তিনি বলেন, আমি বিছানার প্রস্থের দিকে শুয়েছিলাম এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গ দৈর্ঘ্যের দিকে শুয়েছিলেন। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিদ্রামগ্ন হয়েছিলেন। অর্ধরাত্রি কিংবা এর সামান্যাগে কিংবা সামান্য পরক্ষনে তিনি ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। এবং মুখ থেকে ঘুমের আবেশ মুছতে মুছতে বসলেন। তারপর সূরা আলে ইমরানের শেষ দশ আয়াত পাঠ করলেন। এরপর সালাতে দাঁড়ালেন। তারপর ঝুলন্ত একটি পরাতন মশকের দিকে গিয়ে ভালভাবে ওযু করলেন। এরপর সালাতে দাঁড়ালেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, আমিও দাঁড়ালাম এবং তিনি যা করেছেন আমিও তা করলাম। তারপর আমি গিয়ে তাঁর পার্শ্বে দাঁড়ালাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান হাত আমার মাথায় রেখে আমার ডান কান মলতে শুরু করলেন। তারপর তিনি দু’ রাকাআত ছয়বারে বারো রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং তারপর তিনি বিতরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। শেষে মুয়াযযিন ফজরের আযান দিলে তিনি উঠে দাঁড়িয়ে সংক্ষিপ্ত কিরাআতে দু’ রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর হুজরা থেকে বের হলেন এবং ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪২১৮ | 4218 | ٤۲۱۸

পরিচ্ছদঃ ২৩২৮. আল্লাহর বাণীঃ আর যদি আশংকা কর যে, ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে বিয়ে করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে (নিসা ৪ঃ ৩)
সুরা নিসা

قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ : {يَسْتَنْكِفُ} يَسْتَكْبِرُ. {قِوَامًا} : قِوَامُكُمْ مِنْ مَعَايِشِكُمْ. {لَهُنَّ سَبِيْلًا} يَعْنِي الرَّجْمَ لِلثَّيِّبِ، وَالْجَلْدَ لِلْبِكْرِ. وَقَالَ غَيْرُهُ : {مَثْنَى وَثُلَاثَ وَرُبَاع} يَعْنِي اثْنَتَيْنِ وَثَلَاثًا وَأَرْبَعًا وَلَا تُجَاوِزُ الْعَرَبُ رُبَاعَ.

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, يَسْتَنْكِفُ অহঙ্কার করে, قِوَامًا -তোমাদের জীবিকার্জনের মাধ্যম। لَهُنَّ سَبِيْلًا -সাইয়েবা বা বিবাহিতার জন্য প্রস্তর নিক্ষেপ (রজম) আর কুমারীর জন্য বেত্রাঘাত। তিনি ব্যতীত অন্যান্য তাফসীরকারক বলেন, مَثْنَى وَثُلَاثَ وَرُبَاع অর্থাৎ দুই, তিন এবং চার; আরবগণ رُبَاعَ শব্দকে غير منصرف বা অপরিবর্তনশীল শব্দ মনে করে।

৪২১৮। ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তির তত্ত্বাবধানে এক ইয়াতীম বালিকা ছিল। এরপর সে তাকে বিয়ে করল, সে বালিকার একটি বাগান ছিল। তার অন্তরে ঐ বালিকার প্রতি কোন আকর্ষণ না থাকা সত্ত্বেও বাগানের কারণে সে ঐ বালিকাটিকে সে বিবাহ করে রেখে দিতে চায়। এ সম্পর্কে আয়াত অবতীর্ণ হয়। আর যদি আশংকা কর যে, ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না। আমার ধারণা যে, উরওয়া বলেন, ইয়াতীম বালিকাটি সে বাগান ও মালের মধ্যে শরীক ছিল।

হাদিস নম্বরঃ ৪২১৯ | 4219 | ٤۲۱۹

পরিচ্ছদঃ ২৩২৮. আল্লাহর বাণীঃ আর যদি আশংকা কর যে, ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে বিয়ে করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে (নিসা ৪ঃ ৩)
৪২১৯। আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … ‘উরওয়া ইবনু যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন মহান আল্লাহ বাণী وَإِنْ خِفْتُمْ أَنْ لاَ تُقْسِطُوا فِي الْيَتَامَى‏ সম্পর্কে। তিনি উত্তরে বললেন, হে ভাগ্নে! সে হচ্ছে পিতৃহীন বালিকা, অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে থাকে এবং তার সম্পত্তিতে অংশীদার হয় এবং তার রূপ ও সম্পদ তাকে (অভিভাবককে) আকৃষ্ট করে। এরপর সে অভিভাবক উপযুক্ত মোহরানা না দিয়ে তাকে বিবাহ করতে চায়। তদুপরি অন্য ব্যাক্তি যে পরিমাণ মোহর দেয় তা না দিয়ে এবং তার প্রতি ন্যায় বিচার না করে তাকে বিয়ে করতে চায়। এরপর তাদের পারিবারিক ঐতিহ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ মোহর এবং ন্যায় ও সমুচিত মোহর প্রদান ব্যতীত তাদের বিয়ে করতে নিষেধ করা হয়েছে। এবং তদ্ব্যতীত যে সকল মহিলা পছন্দ হয় তাদেরকে বিয়ে করতে অনুমতি দেয়া হয়েছে।

‘উরওয়া (রহঃ) বলেন যে, আয়িশা (রাঃ) বলেছন, এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর লোকেরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে মহিলাদের ব্যাপারে জানতে চাইলে আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেন, ‏وَيَسْتَفْتُونَكَ فِي النِّسَاءِ এবং লোকেরা আপনার কাছে নারীদের বিষয়ৈ জানতে চায়। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর বাণী অন্য এক আয়াতে— তোমরা তাদেরকে বিয়ে করতে আগ্রহ প্রকাশ কর। ইয়াতীম বালিকার ধন-সম্পদ কম হলে এবং সুন্দরী না হলে তাকে বিবাহ করতে আগ্রহ প্রকাশ করো না। আয়েশো (রাঃ) বলেন, তাই ইয়াতীম বালিকাদের মাল ও সৌন্দর্যের আকর্ষনে বিবাহ করতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে ন্যায় বিচার করলে ভিন্ন কথা। কেননা তারা সম্পদের অধিকারী না হলে তাদেরকেও বিবাহ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে না।

হাদিস নম্বরঃ ৪২২০ | 4220 | ٤۲۲۰

পরিচ্ছদঃ ২৩২৯. আল্লাহর বাণীঃ এবং যে বিত্তহীন সে যেন সঙ্গত পরিমাণে ভোগ করে। তোমরা যখন তাদেরকে তাদের সম্পদ সমর্পণ করবে তখন সাক্ষী রাখবে (৪ঃ ৬) بِدَارًا অর্থ مبادرة তাড়াতাড়ি। أعددنا অর্থ أعتدنا অর্থাৎ প্রস্তুত করে রেখেছি। আর أعددنا – عتاد থেকে أفعلنا এর ওযনে।
৪২২০। ইসহাক (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহর বাণী وَمَنْ كَانَ غَنِيًّا فَلْيَسْتَعْفِفْ وَمَنْ كَانَ فَقِيرًا فَلْيَأْكُلْ بِالْمَعْرُوفِ বিত্তশালী গ্রহণ করবে না। অবতীর্ণ হয়েছে ইয়াতীমের সম্পদ উপলক্ষ্যে, যদি তত্ত্বাবধায়ক বিত্তহীন হয় তাহলে রক্ষনাবেক্ষণের বিনিময়ে সংগত পরিমাণে তা থেকে ভোগ করবে।

পরিচ্ছদঃ ২৩৩০. আল্লাহর বাণীঃ সম্পত্তি বণ্টনকালে আত্মীয়, ইয়াতীম এবং অভাবগ্রস্থ লোক উপস্থিত থাকলে তাদেরকে তা হতে কিছু দেবে এবং তাদের সাথে সদালাপ করবে (৪ঃ ৮)
৪২২১। আহমদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়াতটি সুস্পষ্ট, রহিত বা মানসুখ নয়। সাঈদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে ইকরামা (রহঃ) অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আল্লাহর বাণী ‏يُوصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلاَدِكُمْ‏ অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তোমাদের সন্তান সম্বন্ধে নির্দেশ দিচ্ছেন। (৪ঃ ১১)

হাদিস নম্বরঃ ৪২২২ | 4222 | ٤۲۲۲

পরিচ্ছদঃ ২৩৩০. আল্লাহর বাণীঃ সম্পত্তি বণ্টনকালে আত্মীয়, ইয়াতীম এবং অভাবগ্রস্থ লোক উপস্থিত থাকলে তাদেরকে তা হতে কিছু দেবে এবং তাদের সাথে সদালাপ করবে (৪ঃ ৮)
৪২২২। ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) … জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবূ বকর (রাঃ) বনী সালমা গোত্রে পদব্রজে আমার রোগ সম্পর্কে খোজ খবর নিতে গিয়েছিলেন। অনন্তর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পেলেন। কাজেই তিনি পানি আনালেন এবং ওযু করে ওযুর পানি আমার উপর ছিটিয়ে দিলেন। তখন আমি হুশ ফিরে পেলাম। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার সম্পত্তিতে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আপনি আমাকে নির্দেশ দেবেন? তখন এ আয়াত নাযিল হলঃ يُوصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلاَدِكُمْ

হাদিস নম্বরঃ ৪২২৩ | 4223 | ٤۲۲۳

পরিচ্ছদঃ ২৩৩১. আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের স্ত্রীদের পরিত্যাক্ত সম্পত্তির অর্ধাংশ তোমাদের জন্য (৪ঃ ১২)
৪২২৩। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মৃত ব্যাক্তির সম্পদ ছিল সন্তানের জন্য, আর ওসীয়ত ছিল পিতামাতার জন্য। এরপর তা থেকে আল্লাহ তাআলা তাঁর পছন্দ অনুযায়ী কিছু রহিত করলেন এবং পুরুষদের জন্য মহিলার দ্বিগুন নির্ধারণ করলেন। পিতামাতা প্রত্যেকের জন্য ৬ ভাগের ১ অংশ ও ৩ ভাগের ১ অংশ নির্ধারণ করলেন, স্ত্রীদের জন্য ৮ ভাগের ১ ও ৪ ভাগের ১ অংশ নির্ধারণ করলেন এবং স্বামীর জন্য ২ ভাগের ১ ও ৪ ভাগের ১ অংশ নির্ধারণ করলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪২২৪ | 4224 | ٤۲۲٤

পরিচ্ছদঃ ২৩৩২. আল্লাহর বাণীঃ হে ঈমানদারগণ! নারীদেরকে যবরদস্তি তোমাদের উত্তরাধিকারী গণ্য করা বৈধ নহে (৪ঃ ১৯) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত لَا تَعْضُلُوْهُنَّ তাদের উপর বল প্রয়োগ করো না। حُوْبًا -গুনাহ, تَعُوْلُوْا ঝুঁকে পড়। نِحْلَةً মোহর।
৪২২৪। মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‏يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ يَحِلُّ لَكُمْ أَنْ تَرِثُوا النِّسَاءَ كَرْهًا وَلاَ تَعْضُلُوهُنَّ لِتَذْهَبُوا بِبَعْضِ مَا آتَيْتُمُوهُنَّ ইসলামের প্রারম্ভিক যুগে অবস্থা এরূপ ছিল যে, কোন ব্যাক্তি মারা গেলে তার অভিভাবকগণ তার স্ত্রীর উপর দাবিদার হত। তারা ইচ্ছা করলে ঐ মহিলাকে বিয়ে করত। ইচ্ছে করলে অন্যের কাছে বিয়ে দিত। আর নতুবা তাকে আমরণ আটকে রাখত। কারো কাছে বিয়ে দিত না। মহিলার পরিবারের তুলনায় এরা অধিক দাবিদার ছিল। এরপর এ আয়াত নাযিল হল।

হাদিস নম্বরঃ ৪২২৫ | 4225 | ٤۲۲۵

পরিচ্ছদঃ ২৩৩৩. আল্লাহর বাণীঃ পিতামাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যাক্ত সম্পত্তির প্রত্যেকটির জন্য আমি উত্তরাধিকারী করেছি এবং যাদের সাথে তোমরা অঙ্গীকারবদ্ধ তাদেরকে তাদের অংশ দেবে। আল্লাহ সর্ববিষয়ের দ্রষ্টা (৪ঃ ৩৩)
مَوَالِيْ এক প্রকার হচ্ছে সে সকল আত্মীয়, যারা রক্ত সম্বন্ধের উত্তরাধিকারী। অপরপক্ষ عَاقَدَتْ أَيْمَانُكُمْ অর্থাৎ চুক্তিবদ্ধ উত্তরাধিকারী। আবার مَوْلَى চাচাত ভাই, مَوْلَى الْمُنْعِمُ যে দাস মুক্ত করে, مَوْلَى আযাদকৃত দাস, مَوْلَى বাদশাহ, مَوْلَى মহাজন।

৪২২৫। সালত ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‏وَلِكُلٍّ جَعَلْنَا مَوَالِيَ‏ হচ্ছে বংশীয় উত্তরাধিকারী, وَالَّذِينَ عَاقَدَتْ أَيْمَانُكُمْ হচ্ছে মুহাজিরগণ যখন মদিনায় এসেছিলেন তখন তারা আনসারদের উত্তরাধিকারী হতেন। আত্মীয়তার কারণে নয় বরং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক তাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের স্থাপনের কারণে। যখন وَلِكُلٍّ جَعَلْنَا مَوَالِيَ‏ নাযিল হল, তখন এ হুকুম রহিত হয়ে গেল। তারপর বললেন, যাদের সাথে তোমরা চুক্তি করে থাক সাহায্য সহযোগীতা ও পরস্পরের উপকার করার। পূর্বতন উত্তরাধিকার বিলুপ্ত হল এবং এদের জন্য ওসীয়ত বৈধ।

হাদীসটি আবূ উসামা ইদ্রিসের কাছে এবং ইদ্রিস তালহার কাছে থেকে শুনেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪২২৬ | 4226 | ٤۲۲٦

পরিচ্ছদঃ ২৩৩৪. আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহ অণু পরিমাণও যুলম করেন না। مثقال ذرة এর অর্থ অনু পরিমান
৪২২৬। মুহাম্মদ ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ) … আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে একদল লোক বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি কিয়ামতের দিন আমাদের প্রভুকে দেখব? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। গ্রীষ্মকালের মেঘবিহীন ভর দুপুরের প্রখর কিরণ বিশিষ্ট সূর্য দেখতে তোমরা কি পরস্পর ভিড় করে থাক? তারা বলল, না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পূর্ণিমার রাতে মেঘবিহীন আলো বিশিষ্ট চন্দ্র দেখতে গিয়ে তোমরা কি ভিড় কর? আবার তারা বলল, না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এদের কোনটিকে দেখতে যেমন ভিড় করো না; কিয়ামতের দিনও আল্লাহকে দেখতেও তোমরা পরস্পর ভিড় করবে না।

কিয়ামত যখন আসবে তখন এক ঘোষক ঘোসণা দেবে। তখন প্রত্যেকেই আপন আপন উপাস্যের অনুসরণ করবে। আল্লাহ ব্যতীত প্রতিমা ও পাথর ইত্যাদির যারা পূজা করেছে, তারা সবাই দোযখে গিয়ে পড়বে, একজনও অবশিষ্ট থাকবে না। পুণ্যবান হোক চাই পাপী, এরা এবং আল্লাহ অবশিষ্ট বিশ্বাসীরা ব্যতীত যখন আর কেউ থাকবে না, তখন ইহুদীদেরকে ডেকে বলা হবে, তোমরা কার ইবাদত করতে? তারা বলবে, আমরা আল্লাহর পুত্র উযাইরের ইবাদত করতাম। তাদেরকে বলা হবে যে, তোমরা মিথ্যা বলছ। আল্লাহ স্ত্রীও গ্রহণ করেননি পুত্রও গ্রহণ করেননি। তোমরা কি চাও? তারা বলবে, হে প্রভু! আমরা তৃষ্ণার্ত, আমাদেরকে পানি পান করান। এরপর তাদেরকে ইঙ্গিত করা হবে যে, তোমরা পানির ধারে যাওনা কেন? এরপর তাদেরকে দোযখের দিকে একত্র করা হবে তা যেন মরুভূমির মরিচীকা, এক এক অংশ অন্য অংশকে ভেঙ্গে ফেলছে। অনন্তর তারা সবাই দোযখে পতিত হবে।

তারপর খ্রিষ্টানদেরকে ডাকা হবে। তাদেরকে বলা হবে, তোমরা কার ইবাদত করতে? তারা বলবে, আমরা আল্লাহর পুত্র মসীহের ইবাদত করতাম। তাদেরকে বলা হবে তোমরা মিথ্যা বলছ। আল্লাহ স্ত্রীও গ্রহণ করেননি এবং পুত্রও নয়। তাদেরকে বলা হবে, তোমরা কি চাও? তারা প্রথম পক্ষের মত বলবে, এবং তাদের মত দোযখে নিপতিত হবে।

অবশেষে পুণ্যবান হোক কিংবা পাপী হোক আল্লাহর উপাসকগণ ব্যতীত আর কেউ যখন বাকি থাকবে না, তখন তাদের কাছে পরিচিত রূপের নিকটতম একটি রূপ নিয়ে রাববুল আলামীন তাদের কাছে আবির্ভূত হবেন। এরপর বলা হবে, প্রত্যেক দল নিজ নিজ উপাস্যের অনুসরণ করে চলে গেছে। তোমরা কিসের অপেক্ষা করছ? তারা বলবে, দুনিয়াতে এ সকল লোকের প্রতিামাদের চরম প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও আমরা সেখানে তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন থেকেছি এবং তাদের সাথে মেলামেশা করিনি। এখন আমরা আমাদের প্রতিপালকের অপেক্ষায় আছি, আমরা তাঁর ইবাদত করতাম। এরপর তিনি বলবেন, আমিই তোমাদের প্রতিপালক। তারা বলবে, আমরা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করব না। এ কথাটি দু’বার কি তিনবার বলবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪২২৭ | 4227 | ٤۲۲۷

পরিচ্ছদঃ ২৩৩৫. আল্লাহর বাণীঃ যখন প্রত্যেক উম্মত হতে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং তোমাকে ওদের বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব তখন কী অবস্থা হবে (৪ ঃ ৪১) الْخَتَّالُ الْمُخْتَالُ একই অর্থে ব্যবহৃত, দাম্ভিক। نَطْمِسَ সমান করে দেব। শেষ পর্যন্ত তাদের গর্দানের পশ্চাৎদিকের মতো হয়ে যাবে। طَمَسَ الْكِتَابَ কিতাবের লেখা মুছে ফেলা। سَعِيْرًا জ্বলন্ত।
৪২২৭। সাদকাহ (রহঃ) … আমর ইবনু মুররা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, আমার কাছে কুরআন পাঠ কর। আমি বললাম, আমি আপনার কাছে পাঠ করব? অথছ তা আপনার কাছেই অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বললেন, অন্যের মুখে শ্রবণ করাকে আমি পছন্দ করি। এরপর আমি তাঁর নিকপ ‘সূরা নিসা’ পড়লাম, যখন আমি فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَؤُلاَءِ شَهِيدًا পর্যন্ত পাঠ করলাম, তিনি বললেন, থাম, থাম, তখন তাঁর দুচোখ থেকে টপ টপ করে অশ্রু নির্গত হচ্ছিল।

আল্লাহর বাণীঃ وإن كنتم مرضى أو على سفر أو جاء أحد منكم من الغائط আর যদি তোমরা পীড়িত হও অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ শৌচ স্থান থেকে আসে ’’(৪: ৪৩)। صَعِيْدًا মাটির উপরি ভাগ। জাবির (রাঃ) বলেন যে সকল তাগুদের কাছে তারা বিচারের জন্য যেত তাদের একজন ছিল বুহাইনা গোত্রের, একজন আসলাম গোত্রের এবং এভাবে প্রত্যেক গোত্রে এক-একজন করে তাগুত ছিল। তারা হচ্ছে গণক। তাদের কাছে শয়তান আসত।

‘উমার (রাঃ) বলেন, الْجِبْتُ জাদু, وَالطَّاغُوْتُ শায়তান। ‘ইকরামাহ (রাঃ) বলেন, হাবশী ভাষায় শায়ত্বনকে الْجِبْتُ বলা হয়। আর গণককে طَّاغُوْتُ বলা হয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪২২৮ | 4228 | ٤۲۲۸

পরিচ্ছদঃ ২৩৩৫. আল্লাহর বাণীঃ যখন প্রত্যেক উম্মত হতে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং তোমাকে ওদের বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব তখন কী অবস্থা হবে (৪ ঃ ৪১) الْخَتَّالُ الْمُخْتَالُ একই অর্থে ব্যবহৃত, দাম্ভিক। نَطْمِسَ সমান করে দেব। শেষ পর্যন্ত তাদের গর্দানের পশ্চাৎদিকের মতো হয়ে যাবে। طَمَسَ الْكِتَابَ কিতাবের লেখা মুছে ফেলা। سَعِيْرًا জ্বলন্ত।
৪২২৮। মুহাম্মদ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার নিকট থেকে আসমা (রাঃ) এর একটি হার হারিয়ে গিয়েছিল। তা খোজতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকজন লোক পাঠিয়েছিলেন। তখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় হল, তাদের কাছে পানি ছিল না। আবার ওযুর পানিও পেলেন না। এরপর বিনা ওযুতে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে ফেললেন। তখন আল্লাহ তাআলা তায়াম্মুমের বিধান নাযিল করলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪২২৯ | 4229 | ٤۲۲۹

পরিচ্ছদঃ ২৩৩৬. আল্লাহর বাণীঃ হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আনুগত্য কর রাসুলের এবং তাদের, যারা তোমাদের মধ্যে ক্ষমতার অধিকারী। কোন বিষয়ে তোমাদের মতভেদ থাকলে তা উপস্থিত কর, আল্লাহ ও রাসুলের কাছে তা-ই উত্তম এবং পরিনামে প্রকৃষ্টতর (৪ঃ ৫৯) وَأُولِي الأَمْرِ – দায়িত্বশীল।
৪২২৯। সাদাকাহ ইবনু ফাযল (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন যে, أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الأَمْرِ مِنْكُمْ‏ আয়াতটি নাযিল হয়েছে আবদুল্লাহ ইবনু হুযাফা ইবনু কায়স ইবনু আদী সম্পর্কে যখন তাঁকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সৈন্য দলের প্রধান করে প্রেরণ করেছিলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৩০ | 4230 | ٤۲۳۰

পরিচ্ছদঃ ২৩৩৭. আল্লাহর বাণীঃ কিন্তু না, আপনার প্রতিপালকের শপথ! তারা মুমিন হবে না, যতক্ষন পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচারাভার আপনার উপর অর্পণ না করে; এরপর আপনার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তকরনে তা মেনে না নেয় (৪ঃ ৬৫)
৪২৩০। ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) … উরওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, হারব বা মদিনার কঙ্করময় ভূমিতে একটি পানির নালা নিয়ে একজন আনসার যুবায়র (রাঃ) এর সাথে ঝগড়া করছিলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে যুবায়র! প্রথমত তুমি তোমার জমিতে পানি দাও, তারপর তুমি প্রতিবেশীর জমিতে পানি ছেড়ে দিবে। আনসারী বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে আপনার ফুফাত ভাই, তাই এই ফয়সালা দিলেন। এতে অসন্তুষ্টিবশত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা রক্তিম হয়ে গেল। তারপর তিনি বললেন, হে যুবায়র! তুমি পানি চালাবে তারপর আইল পর্যন্ত ফিরে না আসা পর্যন্ত তা আটকে রাখবে তারপর প্রতিবেশীর জমির দিকে ছাড়বে।

আনসারী যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে রাগিয়ে তুললেন তখন তিনি তার হক পুরোপুরি যুবায়র (রাঃ) কে প্রদানের জন্য স্পষ্ট নির্দেশ দিলেন। তাদেরকে প্রথমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন একটি নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে উদারতা ছিল।

যুবায়র (রাঃ) বলেন, فَلاَ وَرَبِّكَ لاَ يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ আয়াতটি এই উপলক্ষে নাযিল হয়েছে বলে আমার ধারনা।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৩১ | 4231 | ٤۲۳۱

পরিচ্ছদঃ ২৩৩৮. আল্লাহর বাণীঃ কেউ আল্লাহএবং রসূলের আনুগত্য করে ……… যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন। (সূরাহ আন-নিসা ৪ঃ ৬৯)
৪২৩১। মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু হাওশাব (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন যে, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, প্রত্যেক নাবী অন্তিম সময়ে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লে তাকে দুনিয়া ও আখিরাতের যে কোন একটি নির্বাচন করার এখতিয়ার দেওয়া হয়। যে অসুস্থতায় তাকে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে সে অসুস্থতায় তাঁর ভিষণ শাসকষ্ট আরম্ভ হয়েছিল। সে সময় আমি তাঁকে ‏مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ [তাঁরা নাবীগণ, সত্যনিষ্ঠ শহীদ ও সৎকর্মপরায়ন যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন, তাঁদের সঙ্গী হবেন (৪: ৬৯)] বলতে শুনেছি। এরপর আমি বুঝে নিয়েছি যে তাঁকে ইখতিয়ার (শাসকষ্ট) দেওয়া হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৩২ | 4232 | ٤۲۳۲

পরিচ্ছদঃ ২৩৩৯. আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের কী হল যে, তোমরা যুদ্ধ করবে না আল্লাহর পথে এবং অসহায় নর-নারী ও শিশুগণের জন্য … যার অধিবাসী জালিম (৪ঃ ৭৫)
৪২৩২। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … ‘উবায়দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন যে, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছি তিনি বলেছিলেন যে, আমি এবং আমার আম্মা (আয়াতে উল্লিখিত) অসহায়দের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৩৩ | 4233 | ٤۲۳۳

পরিচ্ছদঃ ২৩৩৯. আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের কী হল যে, তোমরা যুদ্ধ করবে না আল্লাহর পথে এবং অসহায় নর-নারী ও শিশুগণের জন্য … যার অধিবাসী জালিম (৪ঃ ৭৫)
৪২৩৩। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) … ইবনু আবূ মূলায়কা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) الاَّ الْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ‏ ‘‘তবে যেসব অসহায় পুরুষ, নারী ও শিশু (৪ঃ ৯৮) আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন এবং বললেন, আল্লাহ যাদের অক্ষমতা অনুমোদন করেছেন আমি এবং আমার আম্মা তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত حَصِرَتْ‏ সংকুচিত হয়েছে। ‏تَلْوُوا‏ أَلْسِنَتَكُمْ بِالشَّهَادَةِ‏ সাক্ষ্য দিতে তাদের জিহবা বক্র হয়। الْمُرَاغَمُ الْمُهَاجَرُ হিজরতের স্থান, رَاغَمْتُ قَوْمِي আমার গোত্রকে ছেড়ে দিয়েছি, ‏مَوْقُوتًا এবং مُوَقَّتًا তাদের উপর সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৩৪ | 4234 | ٤۲۳٤

পরিচ্ছদঃ ২৩৪০. আল্লাহর বাণীঃ “তোমাদের কী হল যে, তোমরা মুনাফিকদের সম্বন্ধে দু’দল হয়ে গেলে! যখন আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের জন্যে পুর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিয়েছেন (৪ঃ ৮৮) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, بَدَّدَهُمْ-তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করেছেন, فِئَةٌ-দল।
৪২৩৪। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‏فَمَا لَكُمْ فِي الْمُنَافِقِينَ فِئَتَيْنِ উহুদের যুদ্ধ থেকে একদল লোক দল ত্যাগ করে ফিরে এসেছিল, এরপর তাদের ব্যাপারে লোকেরা দু’দল হয়ে গেল, একদল বলেছে তাদেরকে হত্যা করে ফেল; অপর দল বলছিল তাদেরকে হত্যা করো না, তখন নাযিল হলঃ ‏فَمَا لَكُمْ فِي الْمُنَافِقِينَ فِئَتَيْنِ অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এই মদিনা হচ্ছে পবিত্র স্থান, আগুন যেভাবে রোপ্যের কালিমা বিদূরিত করে এটাও খবিস ও অসৎদেরকে বিদূরিত করে।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৩৫ | 4235 | ٤۲۳۵

পরিচ্ছদঃ ২৩৪২. আল্লাহর বাণীঃ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মু’মিনগণকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম (৪ঃ ৯৩)
২৩৪১. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহর বাণীঃ যখন শাস্তি অথবা শঙ্কার কোন সংবাদ তাদের কাছে আসে তখন তারা তা প্রচার করে থাকে (৪ঃ ৮৩) أذاعوا به তা প্রচার করে দেয়, يستنبطونه খুজে বের করে, حسيبا যথেষ্ট, إناثا মৃত, পাথর হোক কিংবা মাটি অথবা এ রকম কিছু مريدا বিদ্রোহী, قيلا আর قولا একই অর্থাৎ বলা, طبع সীলকৃত।

৪২৩৫। আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) … সাঈদ ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন যে, এই আয়াত সম্পর্কে কূফাবাসীগণ ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করল। (কেউ বলেন তা মনসূখ, কেউ বলেন মনসূখ নয়, এরপর এর সমাধানের জন্য) আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর কাছে গেলাম এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, উত্তরে তিনি বললেন, ‏وَمَنْ يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُتَعَمِّدًا فَجَزَاؤُهُ جَهَنَّمُ আয়াতটি অবতীর্ন হয়েছে এবং এটি শেষের দিকে অবতীর্ন আয়াত; এটাকে কোন কিছু মনসূখ করেনি।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৩৬ | 4236 | ٤۲۳٦

পরিচ্ছদঃ ২৩৪৩. আল্লাহর বাণীঃ কেউ তোমাদেরকে সালাম করলে তাকে বলো না ‘তুমি মু’মিন নও’ (৪ঃ ৯৪)
৪২৩৬। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন যে, وَلاَ تَقُولُوا لِمَنْ أَلْقَى إِلَيْكُمُ السَّلاَمَ لَسْتَ مُؤْمِنًا‏ আয়াতের ঘটনা হচ্ছে এই যে, এক ব্যাক্তির কিছু সংখ্যক ছাগল ছিল, মুসলিমদের সাথে তাদের সাক্ষাত ঘটায় সে তাদেরকে বলল “আসসালামু আলাইকুম”, মুসলিমরা তাকে হত্যা করল এবং তার ছাগলগুলো হস্তগত করে ফেলল, এই প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা এই আয়াত নায়িল করলেন عَرَضَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا تِلْكَ الْغُنَيْمَةُ

”হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন আল্লাহর পথে সফর কর, তখন যাচাই করে নিও এবং যে, তোমাদেরকে সালাম করে তাকে বলো না যে, তুমি মুসলমান নও। তোমরা পার্থিব জীবনের সম্পদ অন্বেষণ কর, বস্তুতঃ আল্লাহর কাছে অনেক সম্পদ রয়েছে। তোমরা ও তো এমনি ছিলে ইতিপূর্বে; অতঃপর আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। অতএব, এখন অনুসন্ধান করে নিও। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের কাজ কর্মের খবর রাখেন। ইহজীবনের সম্পদের আকাঙ্খায়-আর সে সম্পদ হচ্ছে এ ছাগল পাল।” (৪ঃ ৯৪)

আতা (রহঃ) বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) السَّلاَمَ‏ পড়েছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৩৭ | 4237 | ٤۲۳۷

পরিচ্ছদঃ ২৩৪৪. আল্লাহর বাণীঃ মু’মিনদের মধ্যে যারা অক্ষম নয় অথচ ঘরে বসে থাকে ও যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে তারা সমান নয় (৪ঃ ৯৫)
৪২৩৭। ইসমাঈল ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে لاَ يَسْتَوِي الْقَاعِدُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ আয়াতটি লেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি আমাকে বলে যাচ্ছিলেন এমতাবস্থায় উম্মে মাকতুম (রাঃ) তাঁর কাছে আগমন করলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর শপথ যদি আমি জিহাতে সক্ষম হতাম তা হলে অবশ্যই জিহাদ করতাম। তিনি অন্ধ ছিলেন। এরপর আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূলের উপর ওহী অবতীর্ন করলেন, এমতাবস্থায় যে তাঁর উরু আমার উরুর উপর ছিল আর তা আমার কাছে এতই ভারী অনুভুত হচ্ছিল যে, আমি আমার উরু থেতলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছিলাম। তারপর তাঁর থেকে এই অবস্থা কেটে গেল, আর আল্লাহ তাআলা নাযিল করলেনঃ غَيْرَ أُولِي الضَّرَرِ‏ অক্ষমদের ব্যতীত। (৪ঃ ৯৫)

হাদিস নম্বরঃ ৪২৩৮ | 4238 | ٤۲۳۸

পরিচ্ছদঃ ২৩৪৪. আল্লাহর বাণীঃ মু’মিনদের মধ্যে যারা অক্ষম নয় অথচ ঘরে বসে থাকে ও যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে তারা সমান নয় (৪ঃ ৯৫)
৪২৩৮। হাফস ইবনু ‘উমর (রহঃ) … বারা‘ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেলেন, যখন ‏لاَ يَسْتَوِي الْقَاعِدُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ‏ আয়াতটি নাযিল হল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়দ (রাঃ) কে ডাকলেন। তিনি তা লিখে নিলেন। ইবনু উম্মে মাকতুম (রাঃ) এসে তাঁর দৃষ্টিহীনতার ‘ওযর পেশ করলেন, আল্লাহ তাআলা নাযিল করলেনঃ غَيْرَ أُولِي الضَّرَرِ অক্ষমদের ব্যতীত। (৪ঃ ৯৫)

হাদিস নম্বরঃ ৪২৩৯ | 4239 | ٤۲۳۹

পরিচ্ছদঃ ২৩৪৪. আল্লাহর বাণীঃ মু’মিনদের মধ্যে যারা অক্ষম নয় অথচ ঘরে বসে থাকে ও যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে তারা সমান নয় (৪ঃ ৯৫)
৪২৩৯। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … বারা‘ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন যে, لاَ يَسْتَوِي الْقَاعِدُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ আয়াতটি যখন নাযিল হল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন অমুককে ডেকে আন। এরপর দোয়াত, কাঠ অথবা হাড় খন্ড নিয়ে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলেন। তিনি বললেন, লিখে নাওঃ لاَ يَسْتَوِي الْقَاعِدُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পেছনে ছিলেন ইবনু উম্মে মাকতুম (রাঃ)। তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি দৃষ্টিহীন। এরপর তখনই অবতীর্ন হলঃ ‏لاَ يَسْتَوِي الْقَاعِدُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ غَيْرُ أُولِي الضَّرَرِ وَالْمُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ

হাদিস নম্বরঃ ৪২৪০ | 4240 | ٤۲٤۰

পরিচ্ছদঃ ২৩৪৪. আল্লাহর বাণীঃ মু’মিনদের মধ্যে যারা অক্ষম নয় অথচ ঘরে বসে থাকে ও যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে তারা সমান নয় (৪ঃ ৯৫)
৪২৪০। ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) অবহিত করেছেন যে, বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী আর বদরের যুদ্ধে অনুপস্থিত মু’মিনগণ সমান নয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৪১ | 4241 | ٤۲٤۱

পরিচ্ছদঃ ২৩৪৫. আল্লাহর বাণীঃ যারা নিজেদের উপর জুলুম করে তাদের প্রাণ গ্রহণের সময় ফেরেশতাগণ বলে, তোমরা কী অবস্থায় ছিলে? তারা বলে, দুনিয়ায় আমরা অসহায় ছিলাম; তারা বলে, দুনিয়া কি এমন প্রশস্ত ছিল না যেথায় তোমরা হিজরত করতে? (৪ঃ ৯৭)
৪২৪১। আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ মুকরী (রহঃ) … আবূল আসওয়াদ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আবদুর রাহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন যে, একদল সৈন্য পাঠানোর জন্য মদিনাবাসীদের উপর নির্দেশ জারি করা হল, এরপর আমাকেও তাতে অন্তর্ভূক্ত করা হল। আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর মুক্ত গোলাম ইকরামের সাথে সাক্ষাৎ করলাম এবং তাঁকে এ ব্যাপারে অবহিত করলাম। তিনি আমাকে এ ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধ করলেন, তারপর বললেন, কিছুসংখ্যক মুসলিম মুশরিকদের সাথে থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিরুদ্ধে মুশরিকদের দল ভারী করেছিল, তীর এসে তাদের কারো উপর পতিত হতো এবং তাকে মেরে ফেলত অথবা তাদের কেউ মার খেত এবং নিহত হত তখন আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ন করলেনঃ ‏إِنَّ الَّذِينَ تَوَفَّاهُمُ الْمَلاَئِكَةُ ظَالِمِي أَنْفُسِهِمْ‏ আবূল আসওয়াদ থেকে লাইস এটা বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৪২ | 4242 | ٤۲٤۲

পরিচ্ছদঃ ২৩৪৬. আল্লাহর বাণীঃ তবে সেসব অসহায় পুরুষ, নারী ও শিশু কোন উপায় অবলম্বন করতে পারে না এবং কোন পথও পায় না (৪ঃ ৯৮)
৪২৪২। আবূ নু‘মান (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‏إِلاَّ الْمُسْتَضْعَفِينَ সম্পর্কে তিনি বলেছেন যে, আল্লাহর তা‘আলা যাদের অক্ষমতা কবূল করেছেন আমার মাতা তাঁদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৪৩ | 4243 | ٤۲٤۳

পরিচ্ছদঃ ২৩৪৭. আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহ অচিরেই তাদের পাপ মোচন করব্রেন, আল্লাহ পাপ মোচনকারী, ক্ষমাশীল (৪ঃ ৯৯)
৪২৪৩। আবূ নু‘আইম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ইশার সালাত (নামায/নামাজ) পড়েছিলেন, তিনি সামি আল্লাহলিমান হামিদা বললেন, তারপর সিজদা করার পূর্বে বললেন, হে আল্লাহ! আয়্যাশ ইবনু আবূ রাবিয়াকে মুক্ত করুন, হে আল্লাহ! সালামা ইবনু হিশামকে মুক্ত করুন, হে আল্লাহ, ওয়ালিদ ইবনু ওয়ালিদকে মুক্ত করুন, হে আল্লাহ! অসহায় মু’মিনদেরকে মুক্ত করুন, হে আল্লাহ, মুযার গোত্রের উপর কঠিন শাস্তি নাযিল করুন, হে আল্লাহ! এটাকে ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর যুগের দূর্ভিক্ষে রূপান্তরিত করুন।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৪৪ | 4244 | ٤۲٤٤

পরিচ্ছদঃ ২৩৪৮. আল্লাহর বাণীঃ যদি তোমরা বৃষ্টির কারণে কষ্ট পাও অথবা পীড়িত থাক তবে তোমরা অস্র রেখে দিলে তোমাদের কোন দোষ নেই (৪ঃ ১০২)
৪২৪৪। আবূল হাসান ইবনু মুহাম্মদ মুকাতিল (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, إِنْ كَانَ بِكُمْ أَذًى مِنْ مَطَرٍ أَوْ كُنْتُمْ مَرْضَى তিনি বলেছেন যে আবদুর রাহমান ইবনু ‘আউফ (রাঃ) আহত ছিলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৪৫ | 4245 | ٤۲٤۵

পরিচ্ছদঃ ২৩৪৯. আল্লাহর বাণীঃ লোকে আপনার কাছে নারীদের বিষয়ে ব্যবস্থা জানতে চায় আপনি বলুন আল্লাহই তাদের সম্বন্ধে তোমাদেরকে জানিয়ে দিচ্ছেন, এবং ইয়াতীম নারীদের সম্পর্কে (যাদের প্রাপ্য তোমরা প্রদান কর না অথচ তোমরা তাদেরকে বিয়ে করতে চাও, অসহায় শিশুদের সম্বন্ধে এবং ইয়াতীমদের প্রতি তোমাদের ন্যায় বিচার সম্পর্কে) যা কিতাবে শোনানো হয় (৪ঃ ১২৭)
৪২৪৫। ‘উবায়দ ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‏وَيَسْتَفْتُونَكَ فِي النِّسَاءِ قُلِ اللَّهُ يُفْتِيكُمْ فِيهِنَّ‏}‏ إِلَى قَوْلِهِ ‏{‏وَتَرْغَبُونَ أَنْ تَنْكِحُوهُنَّ আয়াত সম্পর্কে তিনি বলেছেন যে, সে হচ্ছে ঐ ব্যাক্তি যার নিকট ইয়াতীম বালিকা থাকে সে তার অভিভাবক এবং তার মুরুব্বি এরপর সেই বালিকা সেই অভিভাবকের অংশিদার হয়ে যায়, এমনকি খেজুর বৃক্ষেও। সে ব্যাক্তি তাকে বিবাহ করা থেকে বিরত থাকে এবং অন্য কারো নিকট বিয়ে দিতেও অপছন্দ করে এ আশংকায় যে, তার সেই সম্পত্তিতে বালিকা অংশীদার সেই সম্পত্তিতে তৃতীয় ব্যাক্তি অংশীদার হয়ে যাবে। এভাবে সেই ব্যাক্তি ঐ বালিকাকে আবদ্ধ করে রাখে। তাই এই আয়াত অবতীর্ন হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৪৬ | 4246 | ٤۲٤٦

পরিচ্ছদঃ ২৩৫০. কোন স্ত্রী যদি তার স্বামীর দুর্ব্যবহার ও উপেক্ষার আশংকা করে (৪ঃ ১২৮) ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেছেন, شِقَاقٌ পরস্পর ঝগড়া-বিবাদ, وَأُحْضِرَتْ الْأَنْفُسُ الشُّحَّ কোন বস্তুর প্রতি অত্যধিক আশঙ্কা বা লোভ করা, كَالْمُعَلَّقَةِ সধবাও নয়, বিধবাও নয়। نُشُوْزًا হিংসা।
৪২৪৬। মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‏وَإِنِ امْرَأَةٌ خَافَتْ مِنْ بَعْلِهَا نُشُوزًا أَوْ إِعْرَاضًا‏ আয়াত সম্পর্কে তিনি বলেছেন, যে কোন ব্যাক্তির যাওযিয়তে কোন মহিলা থাকে কিন্তু স্বামী তার প্রতি আকৃষ্ট নয় বরং তাকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে চায়, তখন স্ত্রী বলে আমার এই এই পাওনা আমি তোমাকে অব্যাহতি দিচ্ছি, এতদুপলক্ষে এ আয়াত নাযিল হল।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৪৭ | 4247 | ٤۲٤۷

পরিচ্ছদঃ ২৩৫১. আল্লাহর বাণীঃ মুনাফিকগণ তো জাহান্নামের নিন্মতম স্তরে থাকবে (৪ঃ ১৪৫) ইবনু ‘আববাস (রাঃ) أَسْفَلَ النَّارِ সম্বন্ধে পদের সঙ্গে পড়েছেন। نَفَقًا ভূগর্ভ, সুড়ঙ্গ।
৪২৪৭। উমর ইবনু হাফস (রহঃ) … আসওয়াদ (রহঃ) বলেছেন, আমরা আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) এর মজলিশে ছিলাম, সেখানে হুযায়ফা আসলেন এবং আমাদের সম্মুখে দন্ডায়মান হয়ে সালাম দিলেন। এরপর বললেন, তোমাদের চেয়ে উত্তম গোত্রের উপরও মুনাফিকী এসেছিল পরীক্ষাসরূপ। আসওয়াদ বললেন, সুবহানাল্লাহ! অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘মুনাফিকগণ জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে থাকবে’’ হুযায়ফা (রাঃ) এর সত্য প্রকাশে আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হেসে উঠলেন। হুযায়ফা (রাঃ) মসজিদের এক কোনে গিয়ে বসলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) উঠে গেল তাঁর শাগরিদরাও চলে গেলেন। এরপর হুযায়ফা (রাঃ) আমার দিকে একটি পাথর টুকরো নিক্ষেপ করে আমাকে ডাকলেন। আমি তার নিকট গেলে তিনি বললেন, তাঁর নিছক হাশিতে আমি আশ্চর্য হলাম অথচ আমি যা বলেছি তা তিনি বুঝেছেন। এমন গোত্র যারা তোমাদের চেয়ে উত্তম তাদের উপর মুনাফিকী অবতরণ করা হয়েছিল। তারপর তারা তওবা করেছে এবং আল্লাহ তা‘আলা তাদের তওবা কবূল করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৪৮ | 4248 | ٤۲٤۸

পরিচ্ছদঃ ২৩৫২. আল্লাহর বাণীঃ তোমার নিকট ওহী প্রেরণ করেছি যেমন ইউনুস, হারুন এবং সুলাইমান (আঃ) এর নিকট ওয়াহী প্রেরণ করেছিলাম। (নিসা ৪ঃ ১৬৩)
৪২৪৮। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, ‘‘আমি ইউনুছ ইবনু মাত্তা (আলাইহিস সালাম) থেকে উত্তম’’ এটা বলা কারো উচিত নয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৪৯ | 4249 | ٤۲٤۹

পরিচ্ছদঃ ২৩৫২. আল্লাহর বাণীঃ তোমার নিকট ওহী প্রেরণ করেছি যেমন ইউনুস, হারুন এবং সুলাইমান (আঃ) এর নিকট ওয়াহী প্রেরণ করেছিলাম। (নিসা ৪ঃ ১৬৩)
৪২৪৯। মুহাম্মদ ইবনু সিনান (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, যে ব্যাক্তি বলে “আমি ইউনুছ ইবনু মাত্তা থেকে উত্তম” সে মিথ্যা বলে।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৫০ | 4250 | ٤۲۵۰

পরিচ্ছদঃ ২৩৫৩. আল্লাহর বাণীঃ লোকে তোমার নিকট ব্যবস্থা জানতে চায়। বল, পিতা-মাতাহীন নিঃসন্তান ব্যক্তি সম্বন্ধে তোমাদেরকে আল্লাহ ব্যবস্থা জানাচ্ছেন – কোন পুরুষ মারা গেলে সে যদি সন্তানহীন হয় এবং তার এক ভগ্নি থাকে তবে তার জন্য পরিত্যাক্ত সম্পত্তির অর্ধাংশ, এবং সে যদি সন্তানহীনা হয় তবে তার ভাই তার উত্তরাধিকারী হবে (৪ঃ ১৭৬) كَلَالَةِ যার পিতা কিংবা পুত্র উত্তরাধিকারী না থাকে مُكَلَّةُ النَّسَبِ বাক্য থেকে এটা ক্রিয়াপদ।
৪২৫০। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) … আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আমি ‘বারা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, সর্বশেষ অবতীর্ন সূরা হচ্ছে ‘‘বারাআ’ত’’ এবং সর্বশেষ অবতীর্ন আয়াত হচ্ছে- ‏يَسْتَفْتُونَكَ قل الله يفتيكم فى الكلالة

হাদিস নম্বরঃ ৪২৫১ | 4251 | ٤۲۵۱

পরিচ্ছদঃ ২৩৫৪. আল্লাহর বাণীঃ আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম। (৫ঃ ৩)
সুরা আল-মায়িদা

حُرُمٌ একবচনে حَرَامٌ নিষিদ্ধ অবস্থায় (৫ঃ ১), فَبِمَا نَقْضِهِمْ তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণ (আল-মায়িদাহ ৫/১৩), الَّتِيْ كَتَبَ اللهُ যা আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন, تَبُوْءُ বহন করবে, অন্য একজন বলেছেন الإِغْرَاءُ শক্তিশালী করে দেয়া, دَائِرَةٌ ওলট-পালট, أُجُوْرَهُنَّ তাদের মাহর, مَخْمَصَةٍ ক্ষুধার তাড়নায় (৫ঃ ৩)।

(হে কিতাবীগণ) তাওরাত, ইনজিল ও যাহা তোমাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তোমরা তা প্রতিষ্ঠিত না করা পর্যন্ত তোমাদের কোন ভিত্তিই নেই (৫ঃ ৬৮)

সুফ্ইয়ান সাওরী (রহঃ) বলেন, আমার দৃষ্টিতে কুরআন মাজীদে لَسْتُمْ عَلٰى شَيْءٍ حَتّٰى تُقِيْمُوا التَّوْرَاةَ وَالْإِنْجِيْلَ وَمَآ أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِّنْ رَّبِّكُمْ مَّخْمَصَةٍ আয়াতটির চেয়ে কঠোর অন্য কোন আয়াত নেই। مَنْ أَحْيَاهَا আর যে কেউ কারো জীবন রক্ষা করল, সে যেন সমস্ত মানুষের জীবন রক্ষা করল- (সূরাহ আল-মায়িদাহ ৫/৩২)। شِرْعَةً وَمِنْهَاجًا আইন ও স্পষ্ট পথ, নিয়ম- (৫ঃ ৪৮) مُهَيْمِنُ আমানতদার, কুরআন তার পূর্বের কিতাবসমূহের আমানতদার। (৫ঃ ৪৮)

৪২৫১। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … তারিক ইবনু শিহাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ইহুদীগণ ‘উমর ফারুক (রাঃ) কে বলল যে, আপনারা এমন একটি আয়াত পড়ে থাকেন তা যদি আমাদের মধ্যে অবতীর্ন হত, তবে আমরা সেটাকে “ঈদ” করে রাখতাম। উমর (রাঃ) বললেন, এটা কখন অবতীর্ন হয়েছে, কোথায় অবতীর্ন হয়েছে এবং নাযিলের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথায় ছিলেন, আল্লাহর শপথ আমরা সবাই ‘আরাফাতে ছিলা, সেই আয়াতটি হল- ‏الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ‏

হাদিস নম্বরঃ ৪২৫২ | 4252 | ٤۲۵۲

পরিচ্ছদঃ ২৩৫৫. আল্লাহর বাণীঃ এবং যদি পানি না পাও তবে পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করবে (৫ঃ ৬)
تَيَمَّمُوْا তোমরা ইচ্ছে করবে, آمِّيْنَ উদ্দেশ্য করে, أَمَّمْتُ আর تَيَمَّمْتُ একই, আমি ইচ্ছে করেছি, ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন- وَ اللَّاتِيْ دَخَلْتُمْ بِهِنَّ، تَمَسُّوْهُنَّ، لَمَسْتُمْ এবং وَالإِفْضَاءُ এই চারটিরই অর্থ সহবাস করা।

৪২৫২। ইসমাঈল (রহঃ) … নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পত্নী আয়িশা (রাঃ) বলেছেন যে, আমরা সবাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে এক সফরে বের হলাম, বায়দা কিংবা বায়তুল জায়শ নামক স্থানে পৌছার পর আমর গলার হার হারিয়ে গেল। তা খোজার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তথায় অবস্থান করলেন এবং অন্যান্যলোকও তাঁর সাথে অবস্থান করল। সেখানেও কোন পানি ছিল না এবং তাদের সাথেও পানি ছিল না। এরপর লোকেরা আবূ বকর (রাঃ) এর কাছে আসল এবং বলল, আয়িশা (রাঃ) যা করেছেন আপনি তা দেখেছেন কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সকল লোককে আটকিয়ে রেখেছেন, অথচ তাদের কাছেও পানি নেই আবার সেখানেও পানি নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঊরুতে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় আবূ বকর (রাঃ) এলেন এবং বললেন, তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সকল লোককে আটকে রেখেচ অথচ সেখানেও পানি নেই আবার তাদের সাথেও পানি নেই।

আয়িশা (রাঃ) বললেন যে, আবূ বকর (রাঃ) আমাকে দোষারূপ করলেন এবং আল্লাহ যা চেয়েছেন তা বলেছেন এবং তাঁর অঙ্গুলি দিয়ে আমার কোমরে ঠুসি দিতে লাগলেন, আমার কোলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অবস্থানই আমাকে পালিয়ে যেতে বাধা দিয়েছে। পানিবিহীন অবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে উঠলেন। এরপর فتيمموا বলে আল্লাহ তা‘আলা তায়াম্মুমোর আয়াত নাযিল করলেন, তখন উসায়দ ইবনু হুযায়র বলেছেন, হে আবূ বকর এর বংশধর! এটা আপনাদের প্রথম মাত্র বরকত নয়। আয়িশা (রাঃ) বললেন, যে উটের উপর আমি ছিলাম, তাকে আমরা উঠালাম তখন দেখি হারটি তার নিচে।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৫৩ | 4253 | ٤۲۵۳

পরিচ্ছদঃ ২৩৫৫. আল্লাহর বাণীঃ এবং যদি পানি না পাও তবে পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করবে (৫ঃ ৬)
৪২৫৩। ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, মদিনায় প্রবেশের পথে বায়দা নামক স্থানে আমার গলার হারটি পড়ে গেল। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে উট বসিয়ে অবস্থান করলেন। তিনি আমার কোলে মাথা রেখে শুয়েছিলেন। আবূ বকর (রাঃ) এসে আমাকে কঠোরভাবে থাপ্পর লাগালেন এবং বললেন একটি হার হারিয়ে তুমি সকল লোককে আটকে রেখেছ। এদিকে তিনি আমাকে ব্যথা দিয়েছেন, অপর দিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অবস্থায় আছেন, এতে আমি মৃত্যু যাতনা ভোগ করছিলাম। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত হলেন, ফজর সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় হল এবং পানি খোজ করে পাওয়া গেল না, তখন নাযিল হলঃ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلاَةِ‏‏ الآيَةَ‏ হে মু’মিনগণ, যখন তোমরা সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত কণুই পর্যন্ত ধৌত করবে। (৫ঃ ৬)

এরপর উসায়দ ইবনু হুযায়র বললেন, হে আবূ বকরের বংশধর! আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের কারণে মানুষের জন্য বরকত নাযিল করেছেন। তোমাদের আপাদ মস্তক তাদের জন্য বরকতই বরকত।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৫৪ | 4254 | ٤۲۵٤

পরিচ্ছদঃ ২৩৫৬. আল্লাহর বাণীঃ সুতরাং তুমি ও তোমার প্রতিপালক যাও এবং যুদ্ধ কর, আমরা এখানে বসে থাকব (৫ঃ ২৪)
৪২৫৪। আবূ নু‘আঈম (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন যে, বদর যুদ্ধের দিন মিকদাদ (রাঃ) বলেীছলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইসরাঈলীরা মূসা (আলাইহিস সালাম) কে যে রকম বলেছিল, ‘‘যাও তুমি ও তোমার প্রতিপালক যুদ্ধ কর, আমরা এখানে বসে থাকব’’ আমরা আপনাকে সে রকম বলব না বরং আপনি অগ্রসর হোন, আমরা সবাই আপনার সাথেই আছি, তখন যেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সব দুশ্চিন্তা দূর হয়ে গেল।

এই হাদীসটি ওয়াকা-সুফিয়ান থেকে, তিনি মুখারিক থেকে এবং তিনি (মুখারিক) তারিক থেকে বর্ণণা করেছেন যে, মিকদাদ এটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলেছিলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৫৫ | 4255 | ٤۲۵۵

পরিচ্ছদঃ ২৩৫৭. আল্লাহর বাণীঃ যারা আল্লাহ ও তার রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কার্য করে বেড়ায় তাদের শাস্তি এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা ক্রুশবিদ্ধ করা হবে অথবা বিপরীত দিক হতে তাদের হাত পা কেটে ফেলা হবে অথবা তাদেরকে দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে (দুনিয়ায় এটাই তাদের লাঞ্চনা ও আখিরাতে তাদের জন্য মহাশাস্তি রয়েছে) (৫ঃ ৩৩) [ الْمُحَارَبَتُ لِلَّهِ الْكُفْرُبِهِ ]-আল্লাহর সাথে কুফরী করা।
৪২৫৫। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আবূ কিলাবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি উমর ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ) এর পেছনে উপবিষ্ট ছিলেন। তাঁরা কিসামাত দন্ড সম্পর্কিত হাদীসটি আলোচনা করলেন এবং এর অবস্থা সম্পর্কে আলাপ করলেন, তারা মৃত্যুদন্ডের পক্ষে বললেন এবং এও বললেন যে, খুলাফায়ে রাশেদীন এ পদ্ধতিতে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেছেন। এরপর তিনি আবূ কিলাবার প্রতি তাকালেন, আবূ কিলাবা তাঁর পেছনে ছিলেন। তিনি আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ নামে কিংবা আবূ কিলাবা নামে ডেকে বললেন, এই ব্যাপারে তোমার মতামত কি? আমি বললাম বিয়ের পর ব্যভিচার, কিসাসবিহীন খুন এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনার কোন একটি ব্যতীত অন্য কোন কারণে কাউকে মৃত্যুদন্ড দেয়া ইসলামে বৈধ বলে আমার জানা নেই।

আনবাসা বললেন, আনাস (রাঃ) আমাদেরকে এভাবে হাদীস বর্ণনা করেছেন (অর্থাৎ হাদীসে আরনিন।) আমি (আবূ কিলাবা) বললাম, আমাকেও আনাস (রাঃ) এই হাদীস বর্ণণা করেছেন। তিনি বলেছেন, একদল লোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে এসে তাঁর সাথে আলাপ করল, তারা বলল, (প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে) আমরা এদেশের সাথে মিলতে পারছি না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এগুলো আমার উট, ঘাস খাওয়ানোর জন্য বের হচ্ছে, তোমরা এগুলোর সাথে যাও এবং এদের দুধ ও পস্রাব পান কর। তারা ওগুলোর সাথে বেরিয়ে গেল এবং দুধ ও প্রসাব পান করে সুস্থ হয়ে উঠল, এরপর রাখালের উপর আক্রমন করে তাকে হত্যা করে পশুগুলো লুট করে নিয়ে গেল।

মৃত্যুদন্ড ভোগ করার অপরাধসমূহ তাদের থেকে কতটুকু দূরে ছিল? তারা নর হত্যা করেছে,আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ভয় দেখিয়েছে। আনবাসা আশ্চর্য হয়ে বলল, সুবহানাল্লাহ! আমি বললাম, আমার এ হাদীস সম্পর্কে তুমি কি আমাকে মিথ্যা অপবাদ দেবে? আনবাসা বলল, আনাস (রাঃ) আমাদেরকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন, আবূ কিলাবা বললেন, তখন ‘আনবাসা বলল, হে দেশবাসী (অর্থাৎ সিরিয়াবাসী) এ রকম ব্যাক্তিবর্গ যতদিন তোমাদের মধ্যে থাকবে ততদিন তোমরা কল্যাণের মধ্যে থাকবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৫৬ | 4256 | ٤۲۵٦

পরিচ্ছদঃ ২৩৫৮. আল্লাহর বাণীঃ এবং যখমের বদল অনুরূপ যখম (৫ঃ ৪৫)
৪২৫৬। মুহাম্মদ ইবনু সাল্লাম (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রুবাই যিনি আনাস (রাঃ) এর ফুফু, এক আনসার মহিলার সামনের একটি বড় দাঁত ভেঙ্গে ফেলেছিল। এরপর আহত মহিলার গোত্র এর কিসাস দাবি করে। তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলো, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিসাসের নির্দেশ দিলেন, আনাস ইবনু মালিক এর চাচা আনাস ইবনু নযর বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর শপথ রুবাই এর দাত ভাঙ্গা হবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আনাস! আল্লাহর কিতাব তো ‘বদলা’র বিধান দেয়। পরবর্তীতে বিরোধী পক্ষ রাযী হয়ে মুক্তিপণ বা দিয়ত গ্রহণ করল। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর এমন কিছু বান্দা আছে যারা আল্লাহর নামে শপথ করলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের শপথ সত্যে পরিণত করেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৫৭ | 4257 | ٤۲۵۷

পরিচ্ছদঃ ২৩৫৯. আল্লাহর বাণীঃ হে রাসুল! তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচার কর (৫ঃ ৬৭)
৪২৫৭। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন যে, যদি কেউ তোমাকে বলে যে, তাঁর অবতীর্ণ বিষয়ের যৎসামান্য কিছুও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোপন করেছেন তা হলে নিশ্চিত যে, সে মিথ্যা বলেছে। আল্লাহ বলেছেন, হে রাসূল! তোমার প্রতিপালকের নিকট থেকে তোমর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা তুমি প্রচার কর।’

হাদিস নম্বরঃ ৪২৫৮ | 4258 | ٤۲۵۸

পরিচ্ছদঃ ২৩৬০. আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের নিরর্থক শপথের জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে দায়ী করবেন না (৫ঃ ৮৯)
৪২৫৮। আলী (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ‏لاَ يُؤَاخِذُكُمُ اللَّهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ‏ আয়াতটি নাযিল হয়েছে মানুষের উদ্দেশ্যবিহীন উক্তি لاَ وَاللَّهِ আল্লাহর শপথ, بَلَى وَاللَّهِ‏ হ্যাঁ আল্লাহর শপথ ইত্যাদি উপলক্ষে।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৫৯ | 4259 | ٤۲۵۹

পরিচ্ছদঃ ২৩৬০. আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের নিরর্থক শপথের জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে দায়ী করবেন না (৫ঃ ৮৯)
৪২৫৯। আহমদ ইবনু আবূ রাযা’ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তাঁর পিতা কোন শপথই ভঙ্গ করতেন না। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা শপথ ভঙ্গের কাফফারার বিধান নাযিল করলেন। আবূ বকর (রাঃ) বলেছেন, শপথকৃত কার্যের বিপরীতটি যদি আমি উত্তম ধারণা করি তবে আমি আল্লাহ প্রদত্ত সুযোগটি গ্রহণ করি এবং উত্তম কাজটি সম্পাদন করি।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৬০ | 4260 | ٤۲٦۰

পরিচ্ছদঃ ২৩৬১. আল্লাহর বাণীঃ হে মুমিনগণ ! আল্লাহ তোমাদের জন্যে উৎকৃষ্ট যেসব বস্তু হালাল করেছেন সেগুলোকে তোমরা হারাম করো না। (এবং সীমালঙ্ঘন করে না। আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীকে পছন্দ করেন না) (৫ঃ ৮৭)
৪২৬০। আমর ইবনু আউন (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন যে, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে যুদ্ধে বের হতাম, তখন আমাদের সাথে স্ত্রীগণ থাকত না, তখন আমরা বলতাম আমরা খাসি হয়ে যাব না? তিনি আমাদেরকে এ থেকে নিষেধ করলেন এং কাপড়ের বিনিময়ে হলেও মহিলাদেরকে বিয়ে করার অর্থাৎ নিকাহে মু‘আর অনুমতি দিলেন এবং পাঠ করলেনঃ ‏يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تُحَرِّمُوا طَيِّبَاتِ مَا أَحَلَّ اللَّهُ لَكُمْ

হাদিস নম্বরঃ ৪২৬১ | 4261 | ٤۲٦۱

পরিচ্ছদঃ ২৩৬২. আল্লাহর বাণীঃ হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজা, বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কার্য (সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার) (৫ঃ ৯০) ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেছেন, الْأَزْلَامُ সে সকল তীর যেগুলো দ্বারা তারা কর্মসমূহের ভাগ্য পরীক্ষা করে। النُّصُبُ বেদী, সেগুলো তারা প্রতিষ্ঠা করে এবং সেখানে পশু যবহ করে। অন্য কেউ বলেছেন الزَّلَمُ তীর, الْأَزْلَامُ এর একবচন, ভাগ্য পরীক্ষার পদ্ধতি এই যে, তীরটাকে ঘুরাতে থাকবে। তীর যদি নিষেধ করে তো বিরত থাকবে আর যদি তাকে কর্মের নির্দেশ দেয় তাহলে সে নির্দেশিত কাজ করে যাবে। তীরগুলোকে বিভিন্ন প্রকার চিহ্ন দ্বারা চি‎‎হ্নত করা হয় এবং তা দ্বারা তথাকথিত ভাগ্য পরীক্ষা করা হয়। এতদসম্পর্কে فَعَلْتُ-এর কাঠামোতে قَسَمْتُ ব্যবহার করা হয় অর্থাৎ আমি ভাগ্য যাচাই করেছি, এর ক্রিয়া হচ্ছে الْقُسُوْمُ
৪২৬১। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন মদ নিষিদ্ধ হওয়ার বিধান যখন নাযিল হল, তখন মদিনাতে পাঁচ প্রকারে মদের প্রচলন ছিল, আঙ্গুরের পানিগুলো এর অন্তর্ভুক্ত ছিল না।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৬২ | 4262 | ٤۲٦۲

পরিচ্ছদঃ ২৩৬২. আল্লাহর বাণীঃ হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজা, বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কার্য (সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার) (৫ঃ ৯০) ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেছেন, الْأَزْلَامُ সে সকল তীর যেগুলো দ্বারা তারা কর্মসমূহের ভাগ্য পরীক্ষা করে। النُّصُبُ বেদী, সেগুলো তারা প্রতিষ্ঠা করে এবং সেখানে পশু যবহ করে। অন্য কেউ বলেছেন الزَّلَمُ তীর, الْأَزْلَامُ এর একবচন, ভাগ্য পরীক্ষার পদ্ধতি এই যে, তীরটাকে ঘুরাতে থাকবে। তীর যদি নিষেধ করে তো বিরত থাকবে আর যদি তাকে কর্মের নির্দেশ দেয় তাহলে সে নির্দেশিত কাজ করে যাবে। তীরগুলোকে বিভিন্ন প্রকার চিহ্ন দ্বারা চি‎‎হ্নত করা হয় এবং তা দ্বারা তথাকথিত ভাগ্য পরীক্ষা করা হয়। এতদসম্পর্কে فَعَلْتُ-এর কাঠামোতে قَسَمْتُ ব্যবহার করা হয় অর্থাৎ আমি ভাগ্য যাচাই করেছি, এর ক্রিয়া হচ্ছে الْقُسُوْمُ
৪২৬২। ইয়াকূব ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, তোমরা যেটাকে ফাযীক অর্থাৎ কাঁচা খুরমা ভিজানো পানি নাম রেখেছ সেই ফাযিখ ব্যতীত আমাদের অন্য কোন মদ ছিল না। একদিন আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আবূ তালহা, অমুক এবং অমুককে তা পান করাচ্ছিলাম। তখনই এক ব্যাক্তি এসে বলল, আপনাদের কাছে এ সংবাদ এসেছে কি? তাঁরা বললেন, ঐ কি সংবাদ? সে বললঃ মদ হারাম করে দেয়া হয়েছে, তাঁরা বললেন, হে আনাস! এই পাত্রগুলো ঢেলে দাও। আনাস (রাঃ) বললেন যে, তাঁরা এতদ প্রসঙ্গে কিছু জিজ্ঞাসাও করলেন না এবং এই ব্যাক্তির সংবাদের পর তাঁরা দ্বিতীয়বার পান করেন নি।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৬৩ | 4263 | ٤۲٦۳

পরিচ্ছদঃ ২৩৬২. আল্লাহর বাণীঃ হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজা, বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কার্য (সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার) (৫ঃ ৯০) ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেছেন, الْأَزْلَامُ সে সকল তীর যেগুলো দ্বারা তারা কর্মসমূহের ভাগ্য পরীক্ষা করে। النُّصُبُ বেদী, সেগুলো তারা প্রতিষ্ঠা করে এবং সেখানে পশু যবহ করে। অন্য কেউ বলেছেন الزَّلَمُ তীর, الْأَزْلَامُ এর একবচন, ভাগ্য পরীক্ষার পদ্ধতি এই যে, তীরটাকে ঘুরাতে থাকবে। তীর যদি নিষেধ করে তো বিরত থাকবে আর যদি তাকে কর্মের নির্দেশ দেয় তাহলে সে নির্দেশিত কাজ করে যাবে। তীরগুলোকে বিভিন্ন প্রকার চিহ্ন দ্বারা চি‎‎হ্নত করা হয় এবং তা দ্বারা তথাকথিত ভাগ্য পরীক্ষা করা হয়। এতদসম্পর্কে فَعَلْتُ-এর কাঠামোতে قَسَمْتُ ব্যবহার করা হয় অর্থাৎ আমি ভাগ্য যাচাই করেছি, এর ক্রিয়া হচ্ছে الْقُسُوْمُ
৪২৬৩। সাদকা ইবনু ফাযল (রহঃ) … জাবির (রাঃ) বলেছেন যে, উহুদের যুদ্ধের দিন ভোরে কিছু লোক মদ পান করেছিলেন এবং সেদিন তারা সবাই শহীদ হয়েছেন। এই মদ্যপান ছিল তা হারাম হওয়ার পূর্বেকার ঘটনা।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৬৪ | 4264 | ٤۲٦٤

পরিচ্ছদঃ ২৩৬২. আল্লাহর বাণীঃ হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজা, বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কার্য (সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার) (৫ঃ ৯০) ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেছেন, الْأَزْلَامُ সে সকল তীর যেগুলো দ্বারা তারা কর্মসমূহের ভাগ্য পরীক্ষা করে। النُّصُبُ বেদী, সেগুলো তারা প্রতিষ্ঠা করে এবং সেখানে পশু যবহ করে। অন্য কেউ বলেছেন الزَّلَمُ তীর, الْأَزْلَامُ এর একবচন, ভাগ্য পরীক্ষার পদ্ধতি এই যে, তীরটাকে ঘুরাতে থাকবে। তীর যদি নিষেধ করে তো বিরত থাকবে আর যদি তাকে কর্মের নির্দেশ দেয় তাহলে সে নির্দেশিত কাজ করে যাবে। তীরগুলোকে বিভিন্ন প্রকার চিহ্ন দ্বারা চি‎‎হ্নত করা হয় এবং তা দ্বারা তথাকথিত ভাগ্য পরীক্ষা করা হয়। এতদসম্পর্কে فَعَلْتُ-এর কাঠামোতে قَسَمْتُ ব্যবহার করা হয় অর্থাৎ আমি ভাগ্য যাচাই করেছি, এর ক্রিয়া হচ্ছে الْقُسُوْمُ
৪২৬৪। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানজালী (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন যে, আমি ‘উমর (রাঃ) কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিম্বরে বসে বলতে শুনেছি যে, এরপর হে লোকসকল! মদপানের নিষেধাজ্ঞা অবতীর্ণ হয়েছে আর তা হচ্ছে পাঁচ প্রকার, খুরমা থেকে, আঙ্গুর, খেজুর থেকে, মধু থেকে, গম থেকে এবং যা থেকে আর মদ হচ্ছে যব সুস্থ ও জ্ঞানকে আচ্ছাদিত করে রাখে।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৬৫ | 4265 | ٤۲٦۵

পরিচ্ছদঃ ২৩৬৩. আল্লাহর বাণীঃ যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তারা পূর্বে যা ভক্ষন করেছে তজ্জন্য তাদের কোন পাপ নেই, যদি তারা সাবধান হয় এবং ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, সাবধান হয় ও বিশ্বাস করে, পুনরায় সাবধান হয় এবং সৎকর্ম করে এবং আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের ভালবাসেন (৫ঃ ৯৩)
৪২৬৫। আবূ নু‘মান (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ঢেলে দেয়া মদগুলো ছিল ফাযীখ। আবূ নু‘মান থেকে মুহাম্মদ ইবন সাল্লাম আরও অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন, আনাস (রাঃ) বলেছেন, আমি আবূ তালহা (রাঃ) এর ঘরে লোকদেরকে মদ পরিবেশন করছিলাম, তখনই মদের নিষেধাজ্ঞা অবতীর্ণ হল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন ঘোষককে তা প্রচারের নির্দেশ দিলেন। এরপর সে ঘোষণা দিল। আবূ তালহা বলল, বেরিয়ে দেখ তো ঘোষণা কিসের? আনাস (রাঃ) বললেন, আমি বেরুলাম এবং বললাম যে, একজন ঘোষক ঘোষণা দিচ্ছেযে, যেনে রাখ মদ হারাম করে দেয়া হয়েছে। এরপর তিনি আমাকে বললেন যাও, এগুলো সব ঢেলে দাও। আনাস (রাঃ) বললেন, সেদিন মদিনার রাস্তায় রাস্তায় মদের স্রোত প্রবাহিত হয়েছিল। তিনি বলেন, সে যুগে তাদের মদ ছিল ফাযীখ, তখন একজন বললেন, যারা মদপান করে শহীদ হয়েছেন তাঁদের কি অবস্থা হবে? তিনি বলেন, এরপর আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করলেন- ‏لَيْسَ عَلَى الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ جُنَاحٌ فِيمَا طَعِمُوا‏

হাদিস নম্বরঃ ৪২৬৬ | 4266 | ٤۲٦٦

পরিচ্ছদঃ ২৩৬৪. আল্লাহর বাণীঃ হে মু’মিনগণ ! তোমরা সেসব বিষয়ে প্রশ্ন করো না, যা প্রকাশিত হলে তোমরা দুঃখিত হবে (৫ঃ ১০১)
৪২৬৬। মুনযির ইবনু ওয়ালিদ (রহঃ) … আনাস (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন একটি খুতবা দিলেন যেরূপ আমি আর কখনো শুনিনি। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তবে তোমরা হাসতে খুব কমই এবং বেশী বেশী করে কাঁদতে’’। তিনি বলেন, সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) আপন আপন চেহারা আবৃত করে গুনগুন করে কান্না জুড়ে দিলেন এরপর এক ব্যাক্তি (আবদুল্লাহ ইবনু হুযায়ফা বা অন্য কেউ) বলল, আমার পিতা কে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘অমুক’’। তখন এই আয়াত নাযিল হলঃ ‏لاَ تَسْأَلُوا عَنْ أَشْيَاءَ إِنْ تُبْدَ لَكُمْ تَسُؤْكُمْ‏

এই হাদীসটি শুবা থেকে নযর এবং রাওহ ইবনু উবাদা বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৬৭ | 4267 | ٤۲٦۷

পরিচ্ছদঃ ২৩৬৪. আল্লাহর বাণীঃ হে মু’মিনগণ ! তোমরা সেসব বিষয়ে প্রশ্ন করো না, যা প্রকাশিত হলে তোমরা দুঃখিত হবে (৫ঃ ১০১)
৪২৬৭। ফাযল ইবনু সাহল (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, কিছু লোক ছিল তারা ঠাট্টা করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশ্ন করত, কেউ বলত আমার পিতা কে? আবার কেউ বলত আমার উষ্ট্রী হারিয়ে গেছে তা কোথায়? তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা এই আয়াত নাযিল করেছেন – ‏يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَسْأَلُوا عَنْ أَشْيَاءَ إِنْ تُبْدَ لَكُمْ تَسُؤْكُمْ‏

হাদিস নম্বরঃ ৪২৬৮ | 4268 | ٤۲٦۸

পরিচ্ছদঃ ২৩৬৫. আল্লাহর বাণীঃ বাহীরা, সাইবা, ওয়াসীলা ও হাম আল্লাহ স্থির করেন নি (৫ঃ ১০১)
وَإِذْ قَالَ اللهُ বাক্যে قَالَ اللهُ মানে يَقُوْلُ অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামাতের দিবসে বলবেন আর إِذْ শব্দটি অতিরিক্ত। الْمَائِدَةُ মূলে مَفْعُوْلَةٌ এর কাঠামোতে مَمْيُوْدَة ছিল, যেমন عِيْشَةٍ رَاضِيَةٍ এর মধ্যে رَاضِيَةٍ অর্থ مَرْضِيَةٌٍ এবং تَطْلِيْقَةٍ بَائِنَةٍ এর মধ্যে بَائِنَةٍ অর্থ مُبَائِنَةٍ, সুতরাং অর্থ হবে مِيْدَ بِهَا صَاحِبُهَا مِنْ خَيْرٍ ‘‘তার মালিক কল্যাণ বিছিয়েছেন’’ যেমন مَادَنِي-يَمِيْدُنِيْ বলা হয়।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, مُتَوَفِّيْكَ আমি তোমার মৃত্যু ঘটাব। (৩ঃ ৫৫)

৪২৬৮। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) … সাঈদ ইবনু মূসায়্যাব (রহঃ) বলেছেন, الْبَحِيرَةُ বাহীরা যে জন্তুর স্তন প্রতিমার উদ্দেশ্যে সংরক্ষিত থাকে কেউ তা দোহন করে না। السَّائِبَةُ সায়িবা, যে জন্তু তারা তার উপাস্যের নামে ছেড়ে দিত এবং তা বহন কার্যে ব্যবহার করে না। তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, আমি আমর ইবনু আমির খুযায়ীকে দোযখের মধ্যে দেখেছি সে তার নাড়িভুড়ি টানছে, সে-ই প্রথম ব্যাক্তি যে সায়ীবা প্রথা প্রথম চালু করে। الْوَصِيلَةُ ওয়াসীলাহ, যে উষ্ট্রী প্রথম বারে মাদী বাচ্চা প্রসব করে এবং দ্বীতীয়বারেও মাদী বাচ্চা প্রসব করে, (যেহেতু নর বাচ্চার ব্যবধান ব্যতীত একটা অন্যটার সাথে সংযুক্ত হয়েছে সেহেতু) ঐ উষ্ট্রীকে তারা তাদের তাগুতের উদ্দেশ্যে ছেড়ে দিত।

الْحَامِ হাম, নর উট যা দ্বারা কয়েকবার প্রজনন কার্য নেয়া হয়, প্রজনন কার্য সমাপ্ত হলে সেটাকে তারা তাদের প্রতিমার জন্য ছেড়ে দেয়, এবং বোঝা বহন থেকে ওটাকে মুক্তি দেয়। সেটির উপর কিছু বহন করা হয় না। এটাকে তারা ‘হাম’ নামে অভিহিত করত।

আমাকে আবূল ইয়ামান বলেছেন যে, শুয়াইব, ইমাম যুহরী (রহঃ) থেকে আমাদের অবিহিত করেছেন, যুহরী বলেন, আমি সাঈদ ইবনু মূসাইয়্যিব (রহঃ) থেকে শুনেছি, তিনি তাকে এ ব্যাপারে অবিহিত করেছেন। সাঈদ ইবনু মূসাইয়্যিব বলেছেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ রকম শুনেছি। ইবনু হাদ এটা বর্ণনা করেছেন ইবনু শিহাব থেকে। আর তিনি সাঈদ থেকে, তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে যে, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৬৯ | 4269 | ٤۲٦۹

পরিচ্ছদঃ ২৩৬৫. আল্লাহর বাণীঃ বাহীরা, সাইবা, ওয়াসীলা ও হাম আল্লাহ স্থির করেন নি (৫ঃ ১০১)
৪২৬৯। মুহাম্মদ ইবনু আবূ ইয়াকূব (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) বলেছেন যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি জাহান্নামকে দেখেছি তার একাংশ অন্য অংশকে ভেঙ্গে ফেলছে বা প্রবলভাবে জড়িয়ে রয়েছে, ‘আমরকে দেখেছি সে তার নাড়িভুড়ি টানছে, সে-ই প্রথম ব্যাক্তি যে, ‘‘সায়ীবা’’ প্রথা চালু করে।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৭০ | 4270 | ٤۲۷۰

পরিচ্ছদঃ ২৩৬৬. আল্লাহর বাণীঃ যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি ছিলাম তাদের কার্যকলাপের সাক্ষী; কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে তখন তুমি তো ছিলে তাদের কর্যকলাপের তত্ত্বাবধায়ক এবং তুমিই সর্ববিষয়ে সাক্ষী (৫ঃ ১১৭)
৪২৭০। আবূ ওয়ালিদ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন খুতবা দিলেন, বললেন, হে লোক সকল! তোমরা খালি পা, উলঙ্গ এবং খতনাবিহীন অবস্থায় আল্লাহর নিকট একত্রিত হবে, তারপর তিনি পড়লেন, كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ‏ যেভাবে আমি প্রথম সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব, প্রতিশ্রুতি পালন আমার কর্তব্য, আমি তা পালন করবই। আয়াতের শেষ পর্যন্ত (২১: ১০৪)

তারপর তিনি বললেন, কিয়ামত দিবসে সর্ব প্রথম যাকে বস্ত্র পরিধান করানো হবে তিনি হচ্ছেন ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)। তোমরা জেনে রাখ, আমার উম্মতের কতগুলো লোককে উপস্থিত করা হবে এবং তাদেরকে বাম দিকে অর্থাৎ দোযখের দিকে নেয়া হবে। আমি তখন বলব, প্রভু হে! এগুলো তো আমার গুটি কয়েক সাহাবী, তখন বলা হবে যে, আপনার পর তারা কি জঘন্য কাজ করেছে তা আপানি জানেন না।

এরপর পুণ্যবান বান্দা যেমন বলেছিলেন আম তেমন বলবঃ ‏وَكُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا مَا دُمْتُ فِيهِمْ فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِي كُنْتَ أَنْتَ الرَّقِيبَ عَلَيْهِمْ‏

এরপর বলা হবে আপনি তাদের ছেড়ে আসার পর থেকে তারা তাদের গোড়ালির উপর ফিরে গিয়ে অর্থাৎ পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে ধর্মত্যাগী হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৭১ | 4271 | ٤۲۷۱

পরিচ্ছদঃ ২৩৬৭. আল্লাহর বাণীঃ তুমি যদি তাদেরকে শাস্তি দাও তো তবে তারা তো তোমারই বান্দা, আর যদি তাদেরকে মাফ কর, তবে তুমি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় (৫ঃ ১১৮)
৪২৭১। মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, আমাদের হাশর করা হবে এবং কিছু সংখ্যক লোককে বাম দিকে নিয়ে যাওয়া হবে, তখন আমি পুণ্যবান বান্দার অর্থাৎ ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর মত বলব- ‏وَكُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا مَا دُمْتُ فِيهِمْ‏}‏ إِلَى قَوْلِهِ ‏{‏الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

হাদিস নম্বরঃ ৪২৭২ | 4272 | ٤۲۷۲

পরিচ্ছদঃ ২৩৬৮. আল্লাহর বাণীঃ অদৃশ্যের কুঞ্জি তারই কাছে রয়েছে, তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তা জানে না (৬ঃ ৫৯)
সুরা আল-আন‘আম

ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, فِتْنَتُهُمْ ওযর পেশ করা, অক্ষমতা পেশ করা, مَعْرُوْشَاتٍ আঙ্গুরলতা ইত্যাদি যেগুলোকে উঁচুতে তুলে দেয়া হয়, لاُنْذِرَكُمْبِهِ তোমাদেরকে কথা দ্বারা সতর্ক করার জন্য, অর্থাৎ মক্কাবাসীকে, حَمُوْلَةً বহনকারী, لَلَبَسْنَ আমি তাদেরকে বিভ্রমে ফেলতাম,َيَنْأَوْنَ তারা দূরে থাকে, تُبْسَلُ অপমানিত হওয়া, أُبْسِلُوْا তারা অপমানিত হয়েছে, الْبَسْطُ-بَاسِطُوْأَيْدِيْهِمْ আঘাত করা, اسْتَكْثَرْتُمْ অনেককেই বিপথগামী করেছ, ذَرَأَ مِنَ الْحَرْثِ তাদের ফল-মূল ও ধন-সম্পদ থেকে এক অংশ আল্লাহর জন্যে নির্ধারণ করেছে আর একাংশ শায়ত্বন ও দেব-দেবীর জন্য। أَمَّا اشْتَمَلَتْ অর্থাৎ জরায়ুতে নর কিংবা মাদী ব্যতীত অন্য কিছু থাকে কি? সূতরাং কেন তোমরা কতক হারাম আবার কতক হালাল কর? مَسْفُوْحًا প্রবাহিত, صَدَفَ মুখ ফিরিয়েছে, أُبْلِسُوْا তারা নিরাশ হয়েছে, أُبْلِسُوْا সমর্পণ করা হয়েছে, سَرْمَدًا অনন্তকাল, اسْتَهْوَتْهُ তাকে বিপথগামী করেছে, تَمْتَرُوْنَ তোমরা সন্দেহ পোষণ করছ, وَقْرٌ বধিরতা, তবে الْوِقْرُ মানে বোঝা, أَسَاطِيْرُ বহুবচন, এক বচনে أُسْطُوْرَةٌ এবং إِسْطَارَةٌ মিথ্যা গল্প, الْبَأْسَاءُ কঠোরতা بَأْسٌ থেকে উৎপন্ন কখনো কখনো بُأْسٌ থেকে আসে, جَهْرَةً সরাসরি, الصُّوَرُ হচ্ছে صُوْرَةٍ-এর বহু বচন, যেমন سَوْرَةٌ এর বহু বচন سَوَر।مُلْك-مَلَكُوْتٌ রাজত্ব যেমন رَحْمَةٌ থেকে رَحْمُوْةٌ থেকে رَهْبُ থেকে رَهْبُوْتٌ আরবে প্রবাদ আছে جَنَّ ارَهْبُوْتٌ خَيْرٌ مِنْ رَحْمُوْتٌ – تُرْهَبُ خَيْرٌ مِنْ اَنْ تُرْحَمَ অন্ধকার হল, عَلَى اللهِ حُسْبَانُهُ মানে তার হিসাব আল্লাহর কাছে কখনো কখনো বা হয়, حُسْبَانًا মানে শায়ত্বনের জন্যে অগ্নি স্ফুলিঙ্গ উৎক্ষেপণ এবং উল্কাপিন্ড।

مُسْتَقِرٌ পৃষ্ঠে অবস্থান, مُسْتَوْدَعٌ জরায়ুতে অবস্থান, الْقِنْوُ কাঁদি, দ্বিবচনে قِنْوَانُ বহুবচনেরও قِنْوَانُ যেমন صِنْوَانِ-صِنْوٍ

৪২৭২। আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অদৃশ্যের কুঞ্জি পাঁচটি – ‘‘কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহর কাছে রয়েছে, তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনি জানেন যা জরায়ুতে আছে, কেউ জাননা আগামীকাল সে কি অর্জন করবে এবং কেউ জাননা কোন স্থানে তাঁর মৃত্যু ঘটবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে অবহিত। (৩১ঃ ৩৪)

হাদিস নম্বরঃ ৪২৭৩ | 4273 | ٤۲۷۳

পরিচ্ছদঃ ২৩৬৯. আল্লাহর বাণীঃ বল, তোমাদের ঊর্ধ্বদেশ থেকে শাস্তি প্রেরণ করতে কিংবা তলদেশ থেকে (তোমাদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করতে এবং একদল অপর দলের সংঘর্ষের আস্বাদ গ্রহন করাতে তিনি সক্ষম। দেখ, কী রূপ বিভিন্ন প্রকারের আয়াত বিবৃত করি যাতে তারা অনুধাবন করে (৬ঃ ৬৫) )
يَلْبِسَكُمْ শব্দটিالْتِبَاسٌ থেকে উৎসারিত, তোমাদেরকে মিশ্রিত করে দিবেন,يَلْبِسُوْا তারা মিশ্রিত হয়,شِيَعًا বিভিন্ন দল।

৪২৭৩। আবূ নূ‘মান (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন, যখনই এই আয়াত ‏قُلْ هُوَ الْقَادِرُ عَلَى أَنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عَذَابًا مِنْ فَوْقِكُمْ নাযিল হল তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি, আবার যখন ‏أَوْ مِنْ تَحْتِ أَرْجُلِكُمْ‏ অবতীর্ণ হল তখনও বললেন আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। এবং যখন ‏أَوْ يَلْبِسَكُمْ شِيَعًا وَيُذِيقَ بَعْضَكُمْ بَأْسَ بَعْضٍ নাযিল হল তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা তুলনামূলকভাবে হালকা, তিনি هَذَا أَهْوَنُ কিংবা هَذَا أَيْسَرُ বলেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৭৪ | 4274 | ٤۲۷٤

পরিচ্ছদঃ ২৩৭০. আল্লাহর বাণীঃ এবং তাদের ঈমানকে জুলুম দ্বারা কলুষিত করে নি (৬ঃ ৮২)
৪২৭৪। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, যখন ‏وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُمْ بِظُلْمٍ‏ আয়াত নাযিল হল, তখন তাঁর সাহাবাগণ বললেন, ‘‘জুলুম করেনি আমাদের মধ্যে এমন কে আছে?’’ এরপর নাযিল হল ‏إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ‏ নিশ্চয় শিরক চরম জুলুম।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৭৫ | 4275 | ٤۲۷۵

পরিচ্ছদঃ ২৩৭১. আল্লাহর বাণীঃ ইউনুস ও লুতকে এবং শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলাম বিশ্বজগতের উপর প্রত্যেককে (৬ঃ ৮৬)
৪২৭৫। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিনা করেছেন, তিনি বলেছেন, ‘‘আমি ইউনুস এবং মাত্তা থেকে উত্তম’’ এ উক্তি করা কারো জন্য উচিত নয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৭৬ | 4276 | ٤۲۷٦

পরিচ্ছদঃ ২৩৭১. আল্লাহর বাণীঃ ইউনুস ও লুতকে এবং শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলাম বিশ্বজগতের উপর প্রত্যেককে (৬ঃ ৮৬)
৪২৭৬। আদম ইবনু আবূ আয়াস (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, ‘‘আমি ই্নুস ইবনু মাত্তা থেকে উত্তম’’ এ উক্তি করা কারো জন্য উচিত নয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৭৭ | 4277 | ٤۲۷۷

পরিচ্ছদঃ ২৩৭২. আল্লাহর বাণীঃ তাদেরকে আল্লাহ সৎ পথে পরিচালিত করেছেন সুতরাং তুমি তাদের পথ অনুসরণ কর (৬ঃ ৯০)
৪২৭৭। ইবরাহীম ইবনু মূসা … মুজাহিদ ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, সূরা “ص” এ সিজদা আছে কি না। তিনি উত্তরে বললেন, হ্যাঁ আছে। এরপর এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন- وَوَهَبْنَا‏}‏ إِلَى قَوْلِهِ ‏{‏فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهْ তারপর বললেন যে তিনি অর্থাৎ দাউদ (আলাইহিস সালাম) তাদের অন্তর্ভুক্ত ইয়াযিদ ইবনু হারূন, মুহাম্মদ ইবনু উবায়দ এবং সাহল ইবনু ইউসুফ আওয়াম থেকে, তিনি মুজাহিদ থেকে একটু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন, মুজাহিদ বললেন যে, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এরপর তিনি বললেন, যাদের অনুসরণ করতে নির্দেশ করা হয়েছে তোমাদের নাবী তাদের অন্তর্ভুক্ত।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৭৮ | 4278 | ٤۲۷۸

পরিচ্ছদঃ ২৩৭৩. আল্লাহর বাণীঃ ইহুদীদিগের জন্নে নখরযুক্ত সমস্ত পশু নিষিদ্ধ করেছিলাম এবং গরু ও ছাগলের চর্বিও তাদের জন্নে নিষিদ্ধ করেছিলাম। তবে এগুলোর পৃষ্ঠের অথবা অস্রের কিংবা অগ্নিসংলগ্ন চর্বি ব্যতীত, তাদের অবাধ্যতার দরুন তাদেরকে এই প্রতিফল দিয়েছিলাম, আমি তো সত্যবাদী (৬ঃ ১৪৬)
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, كُلَّ ذِيْ ظُفُرٍ উট, উটপাখী, الْحَوَايَا অন্ত্রসমূহ। অন্যজন বলেছেন هَادُوْا ইয়াহুদী হয়ে গেছে, তবে আল্লাহর বাণী هُدْنَا মানে تُبْنَا অর্থাৎ আমরা তাওবাহ করেছি, هَائِدٌ تَائِبٌ তাওবাহ্কারী।

৪২৭৮। ‘আমর ইবনু খালিদ (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন যে, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তা‘আলা ইহুদীদেরকে লানত করেছেন, যখন তিনি তাদের উপর চর্বি হারাম করেছেন তখন তারা ওটাকে তরল করে জমা করেছে, তারপর বিক্রি করে তার মূল্য ভোগ করেছে। আবূ আসিম (রহঃ) … হাদীস বর্ণনা করেছেন জাবির (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৭৯ | 4279 | ٤۲۷۹

পরিচ্ছদঃ ২৩৭৪. আল্লাহর বাণীঃ প্রকাশ্য হোক কিংবা গোপন হোক অশ্লীল আচরণের নিকটও যাবে না (৬ঃ ১৫১)
৪২৭৯। হাফস ইবনু উমর (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হারাম কাজে মু’মিনদেরকে বাধা দানকারী আল্লাহর চেয়ে অধিক কেউ নেই, এই জন্যই প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে সকল অশ্লীলতা হারাম করেছেন, আল্লাহর স্তুতি প্রকাশ করার চেয়ে প্রিয় তাঁর কাছে অন্য কিছু নেই, সেজন্যই আল্লাহ আপন প্রশংসা নিজেই করেছেন।

আমর ইবনু মুররাহ (রহঃ) বলেন, আমি আবূ ওয়ায়েলকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি তা আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ থেকে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, এটাকে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী হিসাবে বর্ণনা করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ।

ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন, وَكِيْلٌ রক্ষক ও বেষ্টনকারী, قُبُلًا একবচনে قَبِيْلٌ অর্থাৎ শাস্তি বহু প্রকারের, এগুলোর এক একটি এক এক قَبِيْلٌ বা প্রকার। زُخْرُفٌ বাতিল ও অসার কথাকে শোভনীয় ও অলঙ্কৃত করে প্রকাশ করলে তাকে বলা হয় زُخْرُفٌ। حَرْثٌ حِجْرٌ নিষিদ্ধ, প্রত্যেক নিষিদ্ধ বস্তুকে مَحْجُوْرٌ حِجْرٌ বলা হয়, আবার নির্মিত ঘরও حِجْرٌ, মাদী ঘোড়াকেও حِجْرٌ বলা হয়, عَقْلٌ বা বুদ্ধি-বিবেচনাকেও حِجْى حِجْرٌ বলা হয়। আবার حِجْرٌ নামক স্থানে হচ্ছে সামূদ গোত্রের স্থান, ভূমির যে অংশকে তুমি নিষিদ্ধ ও সংরক্ষিত ঘোষণা করেছ তার নাম حِجْرٌ। এই জন্যে বাইতুল্লাহ শরীফের হাতীম নামক অংশকে حِجْرٌ বলা হয়, مَقْتُوْلٌ থেকে, যেমন قَتِيْلٌ তেমনি مَحْطُوْمٌথেকে গৃহীত, حَطِيْمٌ ইয়ামামার حِجْرٌ হচ্ছে একটি মনজিল বা ছোট্ট ঘর।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৮০ | 4280 | ٤۲۸۰

পরিচ্ছদঃ ২৩৭৬. আল্লাহর বাণীঃ যেদিন তোমর প্রতিপালকের কোন নির্দেশ আসবে সেদিন তার ঈমান কাজে আসবে না (যে ব্যক্তি পূর্বে ঈমান আনেনি কিংবা যে ব্যক্তি ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণ অর্জন করেনি) (৬ঃ ১৫৮)
২৩৭৫. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহর বাণীঃ সাক্ষীদেরকে হাযির কর। (৬ঃ ১৫০)

হিজাযীদের পরিভাষায় একবচন, দ্বিবচন এবং বহুবচনের জন্যে هَلُمَّ ব্যবহৃত হয়।

৪২৮০ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘পশ্চিম দিক থেকে সূর্যদয়ের পূর্ব পর্যন্ত কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে না। লোকেরা যখন তা দেখবে, তখন পৃথিবীর সকলে ঈমান আনবে, এবং সেটি হচ্ছে এমন সময় ‘‘পূর্ব ঈমান আনেনি এমন ব্যাক্তির ঈমান তার কাজে আসবে না।’’

হাদিস নম্বরঃ ৪২৮১ | 4281 | ٤۲۸۱

পরিচ্ছদঃ ২৩৭৬. আল্লাহর বাণীঃ যেদিন তোমর প্রতিপালকের কোন নির্দেশ আসবে সেদিন তার ঈমান কাজে আসবে না (যে ব্যক্তি পূর্বে ঈমান আনেনি কিংবা যে ব্যক্তি ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণ অর্জন করেনি) (৬ঃ ১৫৮)
৪২৮১। ইসহাক (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যতক্ষন না পশ্চিম দিক থেকে সূর্যদয় ঘটবে ততক্ষন কিয়ামত হবে না, যখন সেদিক থেকে সূর্য উদিত হবে এবং লোকেরা তা দেখবে তখন সবাই ঈমান গ্রহণ করবে, এটাই সেই সময় যখন কোন ব্যাক্তিকে তার ঈমান কল্যাণ সাধন করবে না। তারপর তিনি আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৮২ | 4282 | ٤۲۸۲

পরিচ্ছদঃ ২৩৭৭. আল্লাহর বাণীঃ বল, আমার প্রতিপালক নিষিদ্ধ করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা (৭ঃ ৩৩)
সুরা আ’রাফ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন; وَرِيَاشًا সম্পদ, إِنَّه لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِيْنَ- তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালবাসতেন না, দু‘আ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে, عَفَوْا- তারা সংখ্যাধিক্য হয় এবং তাদের সম্পত্তি প্রাচুর্য লাভ করে, الْفَتَّاحُ বিচারক, افْتَحْ بَيْنَنَا আমাদের মাঝে ফয়সালা করে দিন। نَتَقْنَا الْجَبَلَ উপরে তুলেছি পর্বত, انْبَجَسَتْ প্রবাহিত হয়েছে,مُتَبَّرٌ ক্ষতিগ্রস্ত, آسَى আমি আক্ষেপ করি, تَأْسَ- আক্ষেপ করবে, অন্যজন বলেছেন أَنْ لَّا تَسْجُدَ সাজদাহ করতে, يَخْصِفَانِ তাঁরা উভয়ে সেলাই করে জোড়া লাগাচ্ছিলেন, مِنْ وَرَقِ الْجَنَّةِ বেহেশতের পাতা, উভয়ে সংগ্রহ করেছিলেন এবং পাতা একটা অন্যটার সঙ্গে সেলাই করে জোড়া লাগাচ্ছিলেন, سَوْآتِهِمْ তাঁদের যৌনাঙ্গ, وَمَتَاعٌ إِلٰى حِيْنٍ এখন থেকে ক্বিয়ামাত পর্যন্ত, আরবদের ভাষায় حِيْنُ বলা হয় একটি নির্দিষ্ট সময় থেকে অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত, الرِّيَاشُوَالرِّيْشُ একই অর্থাৎ পোশাকের বহিরাংশ, قَبِيْلُهُ তার দল সে যে দলের অন্তর্ভুক্ত। ادَّارَكُوْا একত্রিত হল। মানুষ এবং অন্যান্য জন্তুর ছিদ্রসমূহকে سُمُوْمٌ বলা হয়, এর একবচন سُمُمٌّ সেগুলো চক্ষুদ্বয়, নাসারন্ধ্র, মুখ, দু’টি কান, বাহ্য পথ স্রাবনালী, غَوَاشٌ আচ্ছাদন, نُشُرًا বিক্ষিপ্ত, نَكِدًا স্বল্প পরিমাণ, يَغْنَوْا জীবন যাপন করেন, حَقِيْقٌ হক ও উপযুক্ত, যোগ্য, اسْتَرْهَبُوْهُمْ তাদেরকে আতংকিত করল, رَهْبَةٌ থেকে উৎপন্ন, تَلَقَّفُ গো গ্রাসে গিলে ফেলা, طَآئِرُهُمْ-তাদের ভাগ্য, বন্যা, طُوْفَانٌ-বন্যা অধিক হারে মৃত্যুকে ও طُوْفَانٌ বলা হয়, الْقُمَّلُ উকুন, عُرُوْشٌ-عَرِيْشٌ অট্টালিকা, سُقِطَ যারা অপমানিত হয় তাদেরকে বলা হয় سُقِطَ فِيْيَدِهِ। أَلَاسْبَاطُ বনী ইসরাঈলের গোত্রসমূহ, يَعْدُوْنَও يَتَعَدَّوْنَ সীমালঙ্ঘন করে; تَعَدَّوْ সীমালঙ্ঘন করেছে, شُرَّعًا প্রকাশ্যভাবে, بَئِيْسٍ কঠোর, أَخْلَدَ বসে থাকল এবং পেছনে পড়ল, سَنَسْتَدْرِجُهُمْ তাদের নিরাপদ স্থান থেকে তাদেরকে এসে ক্রমে বের করে আনবে, যেমন فَأَتَاهُمُاللهُ مِنْ حَيْثُ لَمْ يَحْتَسِبُوْا তাদেরকে আল্লাহ এমন শাস্তি দিলেন যা তারা ধারণা করেনি। مِنْجِنَّةٍ উন্মাদনা, কখন তাদেরকে পুনরায় বের করা হবে? فَمَرَّتْ بِهِ তাঁর গর্ভ অটুটু থাকল এরপর সেটাকে পূর্ণতা দান করলে, يَنْزَغَنَّكَ يَسْتَخِفَّنَّكَ তোমাকে কু-মন্ত্রণা দেয়া, طَيْفٌ আগত সংযোগযোগ্য, طَيْفٌ এবং طَائِفٌ এক রকম, يَمُدُّوْنَهُمْ অলংকৃত করে, خِيْفَةٌ ভয়, خُفْيَةٌ শব্দটি إِخْفَاءٌ থেকে নির্গত অর্থ গোপন করা, وَالْآصَالُ একবচনে أَصِيْلٌ আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়, যেমন আল্লাহর বাণী بُكْرَةً وَّأَصِيْلًا সকাল-সন্ধ্যা।

৪২৮২। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) … আমর ইবনু মুররাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ ওয়ায়েলকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি এটা আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ এবং তিনি এটাকে মারফু‘ হাদীস হিসাবে বর্ণনা করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অন্যায়কে ঘৃণাকরী আল্লাহর তুলনায় অন্য কেউ নেই, এজন্যই তিনি প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে অশ্লীলতা হারাম করে দিয়েছেন, আবার আল্লাহর চেয়ে প্রশংসা প্রিয় কেউ নেই, এজন্যই তিনি নিজে নিজের প্রশংসা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৮৩ | 4283 | ٤۲۸۳

পরিচ্ছদঃ ২৩৭৮. আল্লাহর বাণীঃ মুসা যখন আমার নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হল এবং তার প্রতিপালক তার সাথে কথা বললেন, তখন তিনি বললেন, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দর্শন দাও, আমি তোমাকে দেখব, তিনি বললেন, তুমি আমাকে কখনোই দেখতে পাবে না। তুমি বরং পাহাড়ের প্রতি লক্ষ কর, তা যদি স্ব-স্থানে স্থির থাকে তবে তুমি আমাকে দেখবে, যখন তার প্রতিপালক পাহাড়ে জ্যোতি প্রকাশ করলেন তখন তা পাহাড়কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করল আর মুসা (আঃ) সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লেন। যখকন তিনি জ্ঞান ফিরে পেলেন, তখন বললেন, মহিমময় তুমি, আমি অনুতপ্ত হয়ে তোমাতেই প্রত্যাবর্তন করলাম এবং মুমিনদের মধ্যে আমিই প্রথম (৭ঃ ১৪৩) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, أَرِنِيْ আমাকে দেখা দাও।
৪২৮৩। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ … আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেছেন যে এক ইহুদী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে এসে হাজির হল। তার মুখমন্ডলে চপেটাঘাত খেয়ে বলল, হে মুহাম্মদ! আপনার এক আনসারী সাহাবী আমার মুখমন্ডলে চপেটাঘাত করেছে। তিনি বললেন, তাকে ডেকোন। তারা ওকে ডেকে আনল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘একে চপেটাঘাত করেছ কেন?’’ সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি এই ইহুদীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন শুনলাম যে, সে বলছে তারই শপথ যিনি মূসা (আলাইহিস সালাম) কে মানবজাতির উপর মনোনীত করেছেন, আমি বললাম মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপরও মনোনীত করেছেন কি? এরপর আমার রাগ এসে গিয়েছিল, তাই তাকে চপেটাঘাত করেছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (অন্যের মানহানি হতে পারে কিংবা নিজেদের খেয়াল খুশী মত) তোমরা আমাকে অন্যান্য নাবী থেকে উত্তম বলো না’’ (বরং আল্লাহর ঘোষণায় আমি তো উত্তম আছিই বরং থাকবোই), কারণ কিয়ামত দিবসে সব মানুষই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়বে, সর্বপ্রথম আমিই সচেতন হয়ে পড়ব, সর্বপ্রথম আমিই সচেতন হব। তিনি বলেন, তখন আমি দেখব যে, মূসা (আলাইহিস সালাম) আরশের খুটি ধরে রেখেছেন, আমার বোধগম্য হবে না যে, তিনি কি আমার পূর্বে সচেতন হবেন নাকি তুর পাহাড়ের সংজ্ঞাহীনতাকে এর বিনিময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৮৪ | 4284 | ٤۲۸٤

পরিচ্ছদঃ ২৩৭৯. আল্লাহর বাণীঃ মান্না এবং সালওয়া (৭ঃ ১৬০)
৪২৮৪। মুসলিম (রহঃ) … সাঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, الْكَمْأَةُ জাতীয় উদ্ভিদ মান্না-এর মত এবং এর পানি চোখের রোগমুক্তি।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৮৫ | 4285 | ٤۲۸۵

পরিচ্ছদঃ ২৩৮০. আল্লাহর বাণীঃ বল, হে মানুষ! আমি তোমাদের সকলের জন্যে আল্লাহর রাসুল। যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্বের অধিকারী; তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই, তিনিই জীবিত করেন ও মৃত্যু ঘটান, সুতরাং তোমরা ঈমান আন আল্লাহর প্রতি ও তার বার্তাবাহক উম্মী নবীর প্রতি, যে আল্লাহ ও তার বাণীতে ঈমান আনে এবং তোমরা তার অনুসরণ কর যাতে তোমরা পথ পাও। (৭ঃ ১৫৮)
৪২৮৫। আবদুল্লাহ (রহঃ) … আবূদ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আবূ বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ) এর মধ্যে বিতর্ক হয়েছিল, আবূ বকর (রাঃ) উমর (রাঃ) কে চটিয়ে দিয়েছিলেন, এরপর রাগান্বিত অবস্থায় উমর (রাঃ) সেখান থেকে প্রস্থান করলেন, আবূ বকর (রাঃ) তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে করতে তাঁর পিছু ছুটলেন কিন্তু উমর (রাঃ) ক্ষমা করলেন না, বরং তাঁর সম্মুখের দরজা বন্ধ করে দিলেন। এরপর আবূ বকর (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে আসলেন। আবূদ দারদা (রাঃ) বলেন, আমরা তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ছিলাম, ঘটনা শোনার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের এই সাথী আবূ বকর (রাঃ) অগ্রে কল্যাণ লাভ করেছে। তিনি বলেন, এতে উমর লজ্জাবোধ করলেন এবং সালাম করে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাশে বসে পড়লেন ও ইতিবৃত্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে সব বর্ণনা করলেন।

আবূ দারদা (রাঃ) বলেন, এতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসন্তুষ্ট হলেন। সিদ্দিকে আকবর (রাঃ) বারবার বলছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি অধিক দোষী ছিলাম। অনন্তর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আমার জন্য আমার সাথীটাকে রাখবে কি? তোমরা আমার জন্য আমার সাথীটাকে রাখবে কি? এমন একদিন ছিল যখন আমি বলেছিলাম, ‘‘হে লোক সকল! আমি তোমাদের সকলের জন্য রাসূল, তখন তোমরা বলেছিলেন, ‘‘তুমি মিথ্যা বলেছ’’ আর আবূ বকর (রাঃ) বলেছিল, ‘‘আপনি সত্য বলেছেন। ’’ ইমাম আবূ আবদুল্লাহ বুখারী (রহঃ) বলেন غَامَرَ অগ্রে কল্যাণ লাভ করেছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৮৬ | 4286 | ٤۲۸٦

পরিচ্ছদঃ ২৩৮২. আল্লাহর বাণীঃ তোমরা বল ক্ষমা চাই (৭ঃ ১৬১)
২৩৮১. আল্লাহ্‌র বাণীঃ এবং সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ল (৭ঃ ১৪৩) এ অধ্যায়ে আবু সাঈদ এবং আবু হুরায়রা (রাঃ) এর হাদীস বর্ণিত আছে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে।

৪২৮৬। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইসরাঈলীদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, “নতশিরে প্রবেশ কর এবং বল, ক্ষমা চাই, আমি তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করব।” (৭: ১৬১) এরপর তারা তার বিপরীত করল, তারা নিজেদের নিতম্বে ভর দিয়ে মাটিতে বসে বসে প্রবেশ করল এবং বলল حَبَّةٌ فِي شَعَرَةٍ যবের মধ্যে বিচি চাই।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৮৭ | 4287 | ٤۲۸۷

পরিচ্ছদঃ ২৩৮৩. আল্লাহর বাণীঃ তুমি ক্ষমাপরায়নতা অবলম্বন কর, সৎ কাজের নির্দেশ দাও এবং অজ্ঞদের উপেক্ষা কর (৭ঃ ১৯৯)
৪২৮৭। আবূল ইয়ামান (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, ‘উয়াইনা ইবনু হিসন ইবনু হুযাইফা এসে তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র হুর ইবনু কায়সের কাছে অবস্থান করলেন। উমর (রাঃ) যাদেরকে পার্শ্বে রাখতেন হুর হলেন তাদের মধ্যে একজন। কারীবৃন্দ, যুবক-বৃদ্ধ সকলেই উমর ফারূক (রাঃ) এর মজলিশের সদস্য এবং উপদেষ্টা ছিলেন। এরপর ‘উয়াইনা তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্রকে ডেকে বললেন, এই আমীরের কাছে তো তোমার একটা মর্যাদা আছে, সুতরাং তুমি আমার জন্য তাঁর কাছে প্রবেশের একটা অনুমতি নিয়ে দাও। তিনি বললেন হ্যাঁ, তাঁর কাছে আমি আপনার প্রবেশের প্রার্থনা করব।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, এরপর হুর অনুমতি প্রার্থনা করলেন ‘‘উয়াইনার জন্য এবং উমর (রাঃ) অনুমতি দিলেন। ‘উয়াইনা উমরের কাছে গিয়ে বললেন, হ্যাঁ আপনি তো আমাদেরকে বেশী বেশী দানও করেন না এবং আমাদের মাঝে ন্যায় বিচারও করেন না। উমর (রাঃ) ক্রোধান্বিত হলেন এবং তাকে কিছু একটা করাতে উদ্যত হলেন। তখন হুর বললেন, আমিরুল মু’মিনীন! আল্লাহ তা‘আলা তো তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলেছেন, ‘‘ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন কর’ সৎ কাজের নির্দেশ দাও এবং অজ্ঞ দিগকে উপেক্ষা কর’’ আর এই ব্যাক্তি তো নিঃসন্দেহে অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত। (হুর যখন তাঁর নিকট এটা তিলাওয়াত করলেন তখন আল্লাহর কসম তখন উমর (রাঃ) আয়াতের অমান্য করেননি। উমর আল্লাহর কিতাবের বিধানের সামনে স্থির দাঁড়িয়ে থাকতেন, অর্থাৎ তা অতিক্রম করতেন না।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৮৮ | 4288 | ٤۲۸۸

পরিচ্ছদঃ ২৩৮৩. আল্লাহর বাণীঃ তুমি ক্ষমাপরায়নতা অবলম্বন কর, সৎ কাজের নির্দেশ দাও এবং অজ্ঞদের উপেক্ষা কর (৭ঃ ১৯৯)
৪২৮৮। ইয়াহইয়া (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) বলেছেন, خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ আয়াতটি আল্লাহ তা‘আলা মানুষের চরিত্র সম্পর্কেই নাযিল করেছেন।

আবদুল্লাহ ইবনু বাররাদ বলেন, আবূ উসামা আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মানুষের আচরণ সম্পর্কে ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৮৯ | 4289 | ٤۲۸۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহর বাণীঃ লোকে তোমাকে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ সম্বন্ধে প্রশ্ন করে, বল, যুদ্ধলব্ধ সম্পদ আল্লাহ এবং রাসুলের, সুতরাং আল্লাহকে ভয় কর এবং নিজদিগের মধ্যে সদভাব স্থাপন কর (৮ঃ ১) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, الْأَنْفَالُ যুদ্ধলব্ধ সম্পদ, কাতাদাহ বলেন, رِيْحُكُمْ যুদ্ধ, نَافِلَةٌ দান।
৪২৮৯। মুহাম্মদ ইবনু আবদুর রহীম (রহঃ) … সা‘ঈদ ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম সূরা আনফাল সম্পর্কে, তিনি বললেন, বদরের যুদ্ধে নাযিল হয়েছে।

الشَّوْكَةُ-الْحَدُّ শক্তি, مُرْدَفِيْنَ একদল সৈন্যের পর আরেক দল, رَدِفَنِيْ এবং أَرْدَفَنِيْ আমার পেছন পেছন এসেছে, ذُوْقُوْا সরাসরি জড়িয়ে পড় এবং অভিজ্ঞতা অর্জন কর, মুখে আস্বাদন করা হয়, فَيَرْكُمَهُ এরপর তাকে একত্রিত করবেন,شَرِّدْ বিচ্ছিন্ন করে দাও, وَإِنْ جَنَحُوْا যদি তারা চায়, السِّلْمُ، السِّلْمُ এবং السَّلَامُ একই অর্থ সন্ধি, يُثْخِنَ জয়ী হওয়া, মুফাসসির মুজাহিদ বলেন, مُكَاءً তাদের অঙ্গুলিসমূহ মুখে ঢুকিয়ে দেয়া, শিস দেয়া, تَصْدِيَةً করতালি, لِيُثْبِتُوْكَ তোমাকে আটকে রাখার জন্যে।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৯০ | 4290 | ٤۲۹۰

পরিচ্ছদঃ ২৩৮৪. আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহর কাছে নিকৃষ্টতম জীব সেই বধির ও মূক যারা কিছুই বুঝে না (৮ঃ ২২) قال هم نفر من بني عبد الدار ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেছেন তারা বনী আবদুদ দার গোষ্ঠীর একদল লোক।
৪২৯০। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‏إِنَّ شَرَّ الدَّوَابِّ عِنْدَ اللَّهِ الصُّمُّ الْبُكْمُ الَّذِينَ لاَ يَعْقِلُونَ সম্পর্কে তিনি বলেছেন যে, তারা হচ্ছে বনী আবদুদদার গোষ্ঠীর একদল লোক।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৯১ | 4291 | ٤۲۹۱

পরিচ্ছদঃ ২৩৮৫. আল্লাহর বাণীঃ হে মুমিনগণ! রাসুল যখন তোমাদেরকে এমন কিছুর দিকে আহবান করেন যা তোমাদেরকে প্রানবন্ত করে, তখন আল্লাহ ও রাসুলের আহবানে সাড়া দেবে এবং জেনে রাখ যে, আল্লাহ মানুষ ও তার অন্তরের অন্তরালে থাকেন এবং তারই কাছে তোমাদের একত্র করা হবে (৮ঃ ২৪) اسْتَجِيْبُوْا তোমরা সাড়া দাও, لِمَا يُحْيِيْكُمْ তোমাদেরকে সংশোধন করার জন্যে।
৪২৯১। ইসহাক (রহঃ) … আবূ সাঈদ ইবনু মুয়াল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদা নামাযে ছিলাম, এমতাবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পাশ দিয়ে গেলেন এবং আমাকে ডাকলেন, সালাত (নামায/নামাজ) শেষ না করা পর্যন্ত আমি তাঁর কাছে যাইনি, তারপর গেলাম, তিনি বললেন, তোমাকে আসতে বাধা দিল কিসে? আল্লাহ কি বলেননি, ‘‘রাসূল তোমাদেরকে ডাক দিলে, আল্লাহ ও রাসূলের ডাকে সাড়া দেবে?’’ তারপর তিনি বললেন, আমি মসজিদ থেকে বের হবার পূর্বে তোমাকে একটি বড় সওয়াবযুক্ত সূরা শিক্ষা দেব। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন আমি তাঁর নিকট প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দিলাম।

মু‘আয বলেন হাফস শুনেছেন, একজন সাহাবী আবূ সাঈদ ইবনুল মু‘আল্লাকে এ হাদীস বর্ণনা করতে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন সেই সূরাটি হচ্ছে ‏الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ সাত আয়াত বিশিষ্ট ও পুনঃ পুনঃ উল্লেখ্য আবৃত।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৯২ | 4292 | ٤۲۹۲

পরিচ্ছদঃ ২৩৮৬. আল্লাহর বাণীঃ স্মরণ কর, তারা বলেছিল, হে আল্লাহ! এটা যদি তোমার পক্ষ থেকে সত্য হয়, তবে আমাদের উপর আকাশ হতে প্রস্তর বর্ষণ কর কিংবা আমাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তি দাও (৮ঃ ৩২)
৪২৯২। আহমদ (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আবূ জাহেল বলেছিল, ‘‘হে আল্লাহ! এটা যদি তোমার পক্ষ থেকে সত্য হয়, তবে আমাদের উপর আকাশ হতে প্রস্তর বর্ষণ কর কিংবা আমাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তি দাও। তখনই নাযিল হল- وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنْتَ فِيهِمْ وَمَا كَانَ اللَّهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ * وَمَا لَهُمْ أَنْ لاَ يُعَذِّبَهُمُ اللَّهُ وَهُمْ يَصُدُّونَ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ‏}‏ الآيَةَ আল্লাহ এমন নহেন যে, তুমি তাদের মধ্যে থাকবে অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দিবেন এবং আল্লাহ এমনও নহেন যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দিবেন, এবং তাদের কি-বা বলবার আছে যে, আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দেবেন না যখন তারা লোকদের মসজিদুল হারাম থেকে নিবৃত করে? (যদিও তারা এর তত্ত্বাবধায়ক নয়, মুত্তাকীগণই এর তত্ত্বাবধায়ক; কিন্তু তাদের অধিকাংশ তা অবগত নয়) (৮: ৩৩-৩৪)

হাদিস নম্বরঃ ৪২৯৩ | 4293 | ٤۲۹۳

পরিচ্ছদঃ ২৩৮৭. আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহ এমন নহেন যে, তুমি তাদের মধ্যে থাকবে অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দিবেন এবং আল্লাহ এমনও নহেন যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন (৮ঃ ৩৩)
৪২৯৩। মুহাম্মদ ইবনু নযর (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেছেন, আবূ জাহেল বলেছিল। এরপর নাযিল হল-

وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنْتَ فِيهِمْ وَمَا كَانَ اللَّهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ * وَمَا لَهُمْ أَنْ لاَ يُعَذِّبَهُمُ اللَّهُ وَهُمْ يَصُدُّونَ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ‏}‏ الآيَةَ‏

হাদিস নম্বরঃ ৪২৯৪ | 4294 | ٤۲۹٤

পরিচ্ছদঃ ২৩৮৮. আল্লাহর বাণীঃ তোমরা তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে থাকবে যতক্ষন না ফিতনা দূরীভূত হয় এবং আল্লাহর দীন সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং যদি তারা বিরত হয় তবে তারা যা করে আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা (৮ঃ ৩৯)
৪২৯৪। হাসান ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক ব্যাক্তি তাঁর কাছে এসে বলল, হে আবূ আবদুর রহমান! আল্লাহ তাঁর কিতাবে যা উল্লেখ করেছেন আপনি কি তা শোনেন না? ‏وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا মু’মিনদের দু’দল দন্ধে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে মিমাংশা করে দেবে সুতরাং আল্লাহর কিতাবের নির্দেশ অনুযায়ী যুদ্ধ করতে কোন বস্তু আপনাকে নিষেধ করছে? এরপর তিনি বললেন, হে ভাতিজা! এই আয়াতের তাবিল বা ব্যাখ্যা করে যুদ্ধ না করা আমার কাছে অধিক প্রিয় وَمَنْ يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُتَعَمِّدًا‏}‏ إِلَى آخِرِهَا ‘‘যে স্বেচ্ছায় মু’মিন খুন করে’’ আয়াতে তাবিল করার তুলনায়। সে ব্যাক্তি বলল, আল্লাহ বলেছেন وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لاَ تَكُونَ فِتْنَةٌ ‘‘তোমরা ফিতনা নির্মূল না করা পর্যন্ত যুদ্ধ করবে’’ ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে আমরা তা করেছি যখন ইসলাম দুর্বল ছিল। ফলে লোক তার দ্বীন নিয়ে ফিতনায় পড়ত, হয়ত কাফেররা তাকে হত্যা করত নতুবা বেঁধে রাখত, ক্রমেক্রমে ইসলামের প্রসার ঘটল এবং ফিতনা থাকল না।

সে লোকটি যখন দেখল যে, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) তার উদ্দেশ্যের অনুকুল হচ্ছেন না তখন সে বলল যে, ‘আলী (রাঃ) এবং ‘উসমান (রাঃ) সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? ইবনু উমর (রাঃ) বললেন যে, ‘আলী (রাঃ) এবং ‘উসমান (রাঃ) সম্পর্কে আমার কোন বক্তব্য নেই, তবে ‘উসমান (রাঃ) কে আল্লাহ তা‘আলা নিজেই ক্ষমা করে দিয়েছেন কিন্তু তোমরা তাঁকে ক্ষমা করতে রাযি নও, আর ‘আলী (রাঃ), তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাচাতো ভাই এবং জামাতা, তিনি অঙ্গুলি নির্দেশ করে বললেন, ঐ উনি হচ্ছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কন্যা, যেথায় তোমরা তাঁর ঘর দেখছ, هَذِهِ ابْنَتُهُ বলেছেন কিংবা هَذِهِ بِنْتُهُ বলেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৯৫ | 4295 | ٤۲۹۵

পরিচ্ছদঃ ২৩৮৮. আল্লাহর বাণীঃ তোমরা তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে থাকবে যতক্ষন না ফিতনা দূরীভূত হয় এবং আল্লাহর দীন সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং যদি তারা বিরত হয় তবে তারা যা করে আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা (৮ঃ ৩৯)
৪২৯৫। আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) … সা‘ঈদ ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনু উমর (রাঃ) আমাদের কাছে এলেন। বর্ণনাকারী إِلَيْنَا অথবা عَلَيْنَا শব্দ বলেছেন। এরপর এক ব্যাক্তি বলল, ফিতনা সম্পর্কিত যুদ্ধের ব্যাপারে আপনার রায় কি? আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, ফিতনা কি তা তুমি জানো? মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেন। সুতরাং তাদের কছে যাওয়া ছিল ফিতনা, তার সঙ্গে গিয়ে যুদ্ধ করা তোমাদের রাজত্বের জন্য যুদ্ধ করার সমতুল্য নয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৯৬ | 4296 | ٤۲۹٦

পরিচ্ছদঃ ২৩৮৯. আল্লাহর বাণীঃ হে নবী ! মুমিনদের জিহাদের জন্যে উদ্বুদ্ধ কর। তোমাদের মধ্যে বিশজন ধৈর্যশীল থাকলে তারা দু’শ জনের উপর বিজয়ী হবে এবং তোমাদের মধ্যে একশ’জন থাকলে এক সহস্র কাফেরের উপর বিজয়ী হবে। কারন তারা এমন এক সম্প্রদায় যার বোধশক্তি নেই (৮ঃ ৬৫)
৪২৯৬। ‘আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, (আল্লাহর বাণীঃ) إِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ عِشْرُونَ صَابِرُونَ يَغْلِبُوا مِائَتَيْنِ যখন নাযিল হল। এরপর দশজন কাফেরের বিপরীত একজন মুসলিম থাকলেও পালায়ন না করা ফরয করে দেয়া হল। সুফিয়ান ইবনু উয়াইনা (রহঃ) আবার বর্ণনা করেন, দু’শ জন কাফেরের বিপরীত ২০ জন মুসলিম থাকলেও পলায়ন করা যাবে না। তারপর নাযিল হল- ‏الآنَ خَفَّفَ اللَّهُ عَنْكُمُ‏}‏ الآيَةَ আল্লাহ এখন তোমাদের ভার লাঘব করলেন। তিনি অবগত আছেন যে, তোমাদের মধ্যে দুর্বলতা আছে, সুতরাং তোমাদের মধ্যে একশ’জন ধৈর্যশীল থাকলে তারা দু’শ জনের উপর বিজয়ী হবে। আর তোমাদের মধ্যে এক সহস্র থাকলে আল্লাহ অনুজ্ঞাক্রমে তারা দু’সহস্রের উপর বিজয়ী হবে। আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (৮: ৬৬)

এরপর দু’শ কাফেরের বিপক্ষে এক’শ জন মুসলিম থাকলে পলায়ন না করা (আল্লাহ পাক) ফরয করে দিলেন। সুফিয়ান ইবনু উয়াইনা (রহঃ) একবার বর্ণনা করেছেন যে, (তাতে কিছু অতিরিক্তাছে যেমন,) حَرِّضِ الْمُؤْمِنِينَ عَلَى الْقِتَالِ إِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ عِشْرُونَ صَابِرُونَ নাযিল হল, সুফিয়ান বলেন, ইবনু শুবরুমা বলেছেন, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ এর ব্যাপারটাও আমি এরকম মনে করি।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৯৭ | 4297 | ٤۲۹۷

পরিচ্ছদঃ ২৩৯০. আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহ এখন তোমাদের ভার লাঘব করলেন। তিনি অবগত আছেন যে তোমাদের মধ্যে দুর্বলতা আছে … আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন (৮ঃ ৬৬)
৪২৯৭। ইয়াহইয়া ইবনু আবদুল্লাহ সুলামী … ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, যখন إِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ عِشْرُونَ صَابِرُونَ يَغْلِبُوا مِائَتَيْنِ আয়াতটি নাযিল হল তখন দশজনের বিপরীত একজনের পলায়নও নিষিদ্ধ করা হল, তখন এটা মুসলমানদের উপর দুৎসাধ্য মনে হলে পরে তা লাঘবের বিধান এলো الآنَ خَفَّفَ اللَّهُ عَنْكُمْ وَعَلِمَ أَنَّ فِيكُمْ ضُعْفًا فَإِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ مِائَةٌ صَابِرَةٌ يَغْلِبُوا مِائَتَيْنِ‏ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহ এদেরকে যখন সংখ্যার দিক থেকে হাল্কা করে দিলেন, সেই নমনীয়তার সমপরিমাণ তাদের ধর্মও হ্রাস পেল।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৯৮ | 4298 | ٤۲۹۸

পরিচ্ছদঃ ২৩৯১. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ তোমরা মুশরিকদের সাথে যেসব চুক্তি করেছিলে আল্লাহ ও তার রাসুলের তরফ থেকে সেসব বিচ্ছেদ করা হল (৯ঃ ১) ইব্ন ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, أَذَنٌ কারো কথা শুনে তা সত্য বলে ধারণা করা। تُطَهِّرُهُمْ এবং تُزَكِّيْهِمْ এর একই অর্থ, এ ব্যবহার পদ্ধতি অধিক। সে পবিত্র করে। زَكْوَةٌ ‘ইবাদাত ও নিষ্ঠা لَا يُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ (তারা যাকাত প্রদান করে না) (এবং) তারা এ সাক্ষ্যও প্রদান করে না যে, আর কোন উপাস্য নেই এক আল্লাহ ব্যতীত। يُضَاهُوْنَ তারা তুলনা দিচ্ছে।
সুরা বারাআত

وَلِيْجَةً এমন বস্তু যাকে তুমি আরেকটা বস্তুর মধ্যে ঢুকিয়ে দিলে। الشُّقَّةُ সফর, ভ্রমণ, الْخَبَالُ বিশৃঙ্খলা, বিপর্যয়, الْخَبَالُ মৃত্যু। وَلَاتَفْتِنِّيْ আমাকে হুমকি দিও না। كَرْهًا-وَ- كُرْهًا বাধ্যবাধকতা, উভয়টা একই অর্থবোধক, مُدَّخَلًا প্রবেশস্থল, যেথায় তারা প্রবেশ করবে। يَجْمَحُوْنَ তারা ত্বরান্বিত করবে। وَالْمُؤْتَفِكَاتِ যাদের নিয়ে ভূমি উল্টে গেছে। أَهْوَى তাকে গর্তে নিক্ষেপ করল। عَدْنٍ স্থায়িত্ব অবস্থান, যেমন, عَدَنْتُبِأَرْضٍ আমি অবস্থান করলাম, এগুলো থেকে مَعْدِنٍ শব্দ আসছে এবং বলা হয় فِيْ مَعْدِنِ صِدْقٍ অর্থাৎ সত্যের উৎপত্তিস্থল। الْخَوَالِفُ-الْخَالِفُ শব্দের বহুবচন অর্থ, যে আমার পিছনে থাকল। এবং আমার পরে বসে থাকল এবং এর অর্থ থেকে يُخْلِفُهُفِيالْغَابِرِيْنَ অর্থ, অবশিষ্টদের মধ্যে পিছনে রাখা হয় এবং الْخَالِفَةُ শব্দের বহুবচন হিসাবে الْخَوَالِفُ স্ত্রীলিঙ্গে ব্যবহার করা বৈধ আছে যদিও তা পুরুষ শব্দের বহুবচন, তা হলে তার এভাবে বহুবচন আরবী ভাষায় দু’টি শব্দ ব্যতীত পাওয়া যায় না, যথা فَارِسٌ এর বহুবচন فَوَارِسُ এবং هَالِكٌ এর বহুবচন هَوَالِكُالْخَيْرَاتُ শব্দের এক বচন خَيْرَةٌ অর্থ, কল্যাণ ও মর্যাদাসম্পন্ন বস্তু। مُرْجَئُوْنَ বিলম্বিত ব্যক্তিবর্গ। الشَّفَا কিনারা বা পার্শ্ব। الْجُرُفُ যা উঁচু স্থান বা উপত্যকা থেকে প্রবাহিত হয়। هَائِرٍ-هَارٍ পতিত হওয়া। যেমন বলা হয়, কুয়া ভেঙ্গে পড়েছে যখন তা ধ্বংস হয়ে যায়, আর এরূপভাবে انْهَدَمَتْ শব্দের অর্থ হয়ে থাকে। لَأَوَّاهٌ অধিক কোমল হৃদয়, ভয়-ভীতির কারণে। কবি বলেন, ‘‘যখন আমি রাতের বেলায় উষ্ট্রীর পিঠে আরোহণ করলাম, তখন সেটি দুশ্চিন্তাগ্রস্থ ব্যক্তির মত দীর্ঘশ্বাস ফেলে আহ! করতে থাকে।’’

৪২৯৮। আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) … বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) বলেছেনঃ সর্বশেষে যে আয়াত অবতীর্ণ হয়, তা হল يَسْتَفْتُونَكَ قُلِ اللَّهُ يُفْتِيكُمْ فِي الْكَلاَلَةِ লোকে আপনার নিকট ব্যবস্থা জানতে চায়; বলুন! পিতা-মাতাহীন নিঃসন্তান ব্যাক্তি সম্বন্ধে আল্লাহ তোমাদের ব্যবস্থা জানোাচ্ছেন। (৪: ১৭৬) এবং সর্বশেষে যে সূরাটি অবতীর্ণ হয়, তা হল সূরায়ে বারাআত।

হাদিস নম্বরঃ ৪২৯৯ | 4299 | ٤۲۹۹

পরিচ্ছদঃ ২৩৯২. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ (হে মুশরিকদল) তোমরা তারপর দেশে চার মাস কাল পরিভ্রমন কর ও জেনে রাখ যে, তোমরা আল্লাহকে হীনবল করতে পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদের লাঞ্চিত করে থাকেন (৯ঃ ২) سيحوا سيروا পরিভ্রমন করা।
৪২৯৯। সাঈদ ইবনু উফায়র (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) নবম হিজরীর হাজ্জে (হজ্জ) আমাকে এ নির্দেশ দিয়ে পাঠিয়ে দেন যে, আমি কুরবানীর দিন ঘোষণাকারীদের সঙ্গে মিনায় (সমবেত লোকদের) এ ঘোষণা করে দেই যে, এ বছরের পর কোন মুশরিক হাজ্জ (হজ্জ) করার জন্য আসবে না। আল্লাহর ঘর উলঙ্গ অবস্থা তাওয়াফ করবে না।

হুমায়দ ইবনু আবদুর রাহমান (রাঃ) বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রাঃ) কে পুনরায় এ নির্দেশ দিয়ে প্রেরণ করলেন যে, তুমি সূরায়ে বারাআতের বিধানসমূহ ঘোষণা করে দাও। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, মীনায় অবস্থানকারীদের মাঝে (কুরবানীর পর) আলী (রাঃ) আমাদের সাথে ছিলেন এবং সূরায়ে বারাআতের বিধানসমূহ ঘোষণা করলেন, এ বছরের পর কোন মুশরিক হাজ্জ (হজ্জ) করার জন্য আসবে না। কেউ উলঙ্গ অবস্থায় ঘর তাওয়াপ করবে না। আবূ আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেনঃ أَذَنهم অর্থ, তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩০০ | 4300 | ٤۳۰۰

পরিচ্ছদঃ ২৩৯৩. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ আল্লাহ ও তার রাসুলের পক্ষ থেকে হজ্জে আকবরের দিনে আল্লাহর পক্ষ হতে মানুষের প্রতি এটা এক ঘোষণা যে, আল্লাহর সাথে মশরিকদের কোন সম্পর্ক রইল না এবং তার রাসুলেরও নয়। যদি তোমরা তওবা কর তাহলে তা (তোমাদের জন্য) মঙ্গলকর। আর যদি বিমুখ হও, তবে জেনে রাখ যে, তোমরা আল্লাহকে হীনবল করতে পারবে না। আর হে নবী! কাফেরদের যন্ত্রনাময় শাস্তির সংবাদ দিন (৯ঃ ৩)
৪৩০০। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আবূ বকর (রাঃ) আমাকে সেই কুরবানীর দিন ঘোষণাকারীদের সাথে মীনায় এ (কথা) ঘোষণা করার জন্য পাঠালেন যে, এ বছরের পর আর কোন মুশরিক (মক্কায়) হাজ্জ (হজ্জ) করতে পারবে না। আল্লাহর ঘর উলঙ্গ অবস্থায় কাউকে তাওয়াফ করতে দেওয়া হবে না। হুমায়দ (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরে আলী ইবনু আবূ তালিবকে পাঠালেন এবং বললেনঃ সূরায়ে বারাআতের বিধানসমূহ ঘোষণা করে দাও। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আলী (রাঃ) আমাদের সাথেই মীনাবাসীদের মধ্যে সূরায়ে বারাআত কুরবানীর দিন ঘোষণা করলেন। বললেন, এ বছরের পরে কেউ হাজ্জ (হজ্জ) (মক্কা) করতে আসতে পারবে না। এবং উলঙ্গ অবস্থায় আল্লাহর ঘরকে তাওয়াফ করবে না।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩০১ | 4301 | ٤۳۰۱

পরিচ্ছদঃ ২৩৯৪. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ তবে মুশরীকদের মধ্যে যাদের সাথে তোমরা চুক্তিতে আবদ্ধ রয়েছ (৯ঃ৪)
৪৩০১। ইসহাক (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) পূর্বের বছর আবূ বকর (রাঃ) কে যে হাজ্জের (হজ্জ) আমীর বানিয়ে পাঠিয়েছিলেন, সেই হাজ্জে (হজ্জ) তিনি যেন লোকদের মধ্যে ঘোষণা দেন, এ বছরের পর কোন মুশরিক হাজ্জ (হজ্জ) করতে আসতে পারবে না এবং উলঙ্গ অবস্থায় কেউ আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করতে পারবে না। হুমায়দ ইবনু আবদুর রহমান বলেন [আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হাজ্জে (হজ্জ) আকবেরর দিন হল কুরবানীর দিন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩০২ | 4302 | ٤۳۰۲

পরিচ্ছদঃ ২৩৯৫. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ তবে কাফের নেতৃবৃন্দের সাথে যুদ্ধ করবে। এরা এমন লোক যাদের প্রতিশ্রুতিই নয় (৯ঃ ১২)
৪৩০২। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) … যায়িদ ইবনু ওয়াহাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা হুযায়ফা (রাঃ) এর কাছে ছিলাম, তখন তিনি বলেন, এ আয়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিদের মধ্যে শুধু তিনজন মুসলমান ও চারজন মুনাফিক বেঁচে আছে। ইত্যবসরে একজর বেদুঈন বলল, আপনারা সকলে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী। আমাদের এমন লোকদের অবস্থা সম্পর্কে খবর দিন যারা আমাদের ঘরে সিদ কেটে ঘরের অতি মূল্যবান জিনিসগুলো চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে, কেননা তাদের অবস্থা সম্পর্কে আমরা অবগত নই। হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, তারা সবাই ফাসীক ও অন্যায়কারী। হ্যাঁ, তাদের মধ্যে হতে চার ব্যাক্তি এখনও জীবতি-তাদের মধ্যে একজন এত বৃদ্ধ হয়ে পড়েছে যে, শীতল পানি পান করার পর তার শীতলতাটুকুর অনুভূতি সে উপলব্ধি করতে পারে না।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩০৩ | 4303 | ٤۳۰۳

পরিচ্ছদঃ ২৩৯৬. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ যারা স্বর্ণ, রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে রাখে এবং আল্লাহর পথে তা ব্যয় করে বা, তাদেরকে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তির সংবাদ দিন (৯ঃ ৩৪)
৪৩০৩। হাকাম ইবনু নাফি (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, তোমাদের মধ্যে অনেকের পুঞ্জিভূত সম্পদ (যার যাকাত আদায় করা হয় না) কিয়ামতের দিন বিষাক্ত সর্পে পরিণত হবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩০৪ | 4304 | ٤۳۰٤

পরিচ্ছদঃ ২৩৯৬. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ যারা স্বর্ণ, রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে রাখে এবং আল্লাহর পথে তা ব্যয় করে বা, তাদেরকে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তির সংবাদ দিন (৯ঃ ৩৪)
৪৩০৪। কুতায়বা ইবনু সা‘ঈদ (রহঃ) … যায়িদ ইবনু ওয়াহাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদা রাবাযা নামক স্থানে আবূ যার (রাঃ) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমি (তাকে) জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কিসের জন্য এ স্থানে উপস্থিত হয়েছেন? তিনি বললেন, আমি সিরিয়া ছিলাম, তখন আমি [মুআবিয় (রাঃ) এর সামনে] এ আয়াত পাঠ করে শোনালাম। ‏وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلاَ يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ “যারা স্বর্ণ, রোপ্য পঞ্জিভূত করে রাখে এবং আল্লাহর পথে তা ব্যয় করে না, তাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির খবর দিন।” (৯: ৩৪)

মু‘আবিয়া (রাঃ) এ আয়াত শুনে বললেন, এ আয়াত আমাদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়নি। বরং আহলে কিতাবদের (ইহুদী ও নাসারা) সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। আমি (জবাবে) বললাম, এ আয়াত আমাদের ও তাদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। (এ তর্ক বিতর্কের কারণে সব কিছু বর্জন করে আমি এখানে চলে এসেছি। )

হাদিস নম্বরঃ ৪৩০৫ | 4305 | ٤۳۰۵

পরিচ্ছদঃ ২৩৯৮. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ নিশ্চয় আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টির দিন হতেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর নিকট মাস গননায়, মাস বারোটি। তন্মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান (৯ঃ ৩৬) القيم শব্দটি قائم (প্রতিষ্ঠিত) অর্থে ব্যবহৃত হয়।
২৩৯৭. অনুচ্ছেদ: আল্লাহর বাণীঃ সে দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দিয়ে দাগিয়ে দেয়া হবে তাদের কপাল, তাদের পাঁজর এবং তাদের পৃষ্ঠদেশ, বলা হবেঃ এগুলো হল তা, যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। সুতরাং যা তোমরা জমা করে রাখতে তার সাদ গ্রহণ কর। (৯: ৩৫)

আহমাদ ইবন শু’আয়ব ইবন সা’ঈদ (রহঃ) … খালিদ ইবনু আসলাম (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা ‘আবদুল্লাহ ইবন ‘উমার (রাঃ)-এর সঙ্গে বের হলাম। তখন তিনি বললেন, এ আয়াতটি যাকাতের বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বের। এরপর যাকাতের বিধান অবতীর্ণ হলে আল্লাহ তা সম্পদের পরিশুদ্ধকারী রূপে নির্ধারণ করেন।

৪৩০৫ আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল ওয়াহাব (রহঃ) আবূ বকর (রাঃ) কর্তৃক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আল্লাহর যেদিন আসমান যমীন সৃষ্টি করে সেদিন যেভাবে কাল (যামানা) ছিল তা আজও অনুরূপভাবে বিদ্যমান। বারমাসে এক বছর, তন্মধ্যে চার মাস পবিত্র। যার তিন মাস ধারাবাহিক যথা যিলকাদ, যিলহাজ্জ ও মুহাররম আর মুযার গোত্রের রজব যা জামিদিউসসানী ও সাবান মাসদ্বয়ের মধ্যবর্তী।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩০৬ | 4306 | ٤۳۰٦

পরিচ্ছদঃ ২৩৯৯. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ যখন তারা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিলেন এবং তিনি ছিলেন দু’জনের একজন (৯ঃ ৪০) معنا অর্থ আল্লাহ আমাদের সাহায্যকারী, فعيلة السكينة এর সম ওযনে سكون থেকে, অর্থ প্রশান্তি
৪৩০৬। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) আমার কাছে বলেছেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে (সওর) গুহায় ছিলাম। তখন আমি মুশরিকদের পদচারণা দেখতে পেয়ে [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে] বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি তাদের (মুশরিকদের) কেউ পা উঠায় তাহলে আমাদের দেখে ফেলবে। তখন তিনি বললেন, এমন দু’জন সম্পর্কে তোমার কি ধারণা, যাদের তৃতীয় জন হলেন আল্লাহ।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩০৭ | 4307 | ٤۳۰۷

পরিচ্ছদঃ ২৩৯৯. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ যখন তারা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিলেন এবং তিনি ছিলেন দু’জনের একজন (৯ঃ ৪০) معنا অর্থ আল্লাহ আমাদের সাহায্যকারী, فعيلة السكينة এর সম ওযনে سكون থেকে, অর্থ প্রশান্তি
৪৩০৭। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন তাঁর ও ইবনু যুবায়র (রাঃ) এর মধ্যে (বায়আতের প্রেক্ষিতে) মতভেদ ঘটল, তখন আমি বললাম, তার পিতা যুবায়ের, তার মাতা আসমা (রাঃ) ও তার খালা আয়েশা (রাঃ), তার নানা আবূ বকর (রাঃ) ও তার নানী সুফিয়া (রাঃ)। আমি সুফিয়ানকে বললাম, এর সনদ বর্ণনা করুন। তিনি বললেন, حَدَّثَنَا এবং ইবনু জুরায়জ (রহঃ) বলার আগেই অন্য এক ব্যাক্তি তাকে অন্যদিকে আকৃষ্ট করল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩০৮ | 4308 | ٤۳۰۸

পরিচ্ছদঃ ২৩৯৯. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ যখন তারা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিলেন এবং তিনি ছিলেন দু’জনের একজন (৯ঃ ৪০) معنا অর্থ আল্লাহ আমাদের সাহায্যকারী, فعيلة السكينة এর সম ওযনে سكون থেকে, অর্থ প্রশান্তি
৪৩০৮। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … ইবনু আবূ মূলায়কা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন ইবনু আব্বাস (রাঃ) ও ইবনু যুবায়র (রাঃ) এর মধ্যে বায়আত নিয়ে মতভেদ সৃষ্টি হল, তখন আমি ইবনু আব্বাসের কাছে গিয়ে বললাম, আপনি কি আল্লাহ যা হারাম করেছেন, তা হালাল করে ইবনু যুবায়রের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চান? তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কাছে পানাহ চাচ্ছি, এ কাজ তো ইবনু যুবায়র ও বনী উমাইয়ার জন্যই আল্লাহ লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। আল্লাহর কসম! কখনো আমি তা হালাল মনে করব না, (আবূ মূলায়কা বলেন) তখন লোকজন ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বলল, আপনি ইবনু যুবায়রের পক্ষে বায়আত গ্রহণ করুন। তখন ইবনু আব্বাস বললেন, তাতে ক্ষতির কি আছে? তিনি এটার জন্য যোগ্যতম ব্যাক্তি। তাঁর পিতা যুবায়র তো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহায্যকারী ছিলেন, তার নানা আবূ বকর (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সওর গুহার সহচর ছিলেন। তার মা আসমা, যার উপাধি ছিল খাতুন নেতাক। তার খালা আয়িশা (রাঃ) উম্মূল মু’মিনীন ছিলেন, তার ফুফু খাদিজা (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী ছিলেন, আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ফুফু সফিয়া ছিলেন তার দাদী। এ ছাড়া তিনি (ইবনু যুবায়রের) তো ইসলামী জগতে নিষ্কলুষ ব্যাক্তি ও কুরআনের ক্বারী। আল্লাহর কসম! যদি তারা (বনী উমাইয়া) আমার সাথে সম্পর্ক রাখে তবে তারা আমার নিকটত্মীায়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক রাখল। আর যদি তারা আমাদের রক্ষণাবেক্ষণ করে তবে তারা সমকক্ষ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যাক্তিরই রক্ষণাবেক্ষণ করল। ইবনু যুবায়র, বনী আসা’দ, বনী তুআইত, বনী উসামা-এসব গোত্রকে আমার চেয়ে নিকটতম করে নিয়েছেন। নিশ্চই আবিল আস-এর পুত্র অর্থাৎ আবদুল মালিক ইবনু মারওয়ান অহংকারী চালচলন আরম্ভ করেছে। নিশ্চই তিনি অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) তার লেজ গুটিয়ে নিয়েছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩০৯ | 4309 | ٤۳۰۹

পরিচ্ছদঃ ২৩৯৯. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ যখন তারা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিলেন এবং তিনি ছিলেন দু’জনের একজন (৯ঃ ৪০) معنا অর্থ আল্লাহ আমাদের সাহায্যকারী, فعيلة السكينة এর সম ওযনে سكون থেকে, অর্থ প্রশান্তি
৪৩০৯। মুহাম্মদ ইবনু ‘উবায়দ ইবনু মায়মূনা (রহঃ) … ইবনু আবূ মূলায়কা (রহঃ) বলেন, আমরা ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর ঘরে প্রবেশ করলাম। তিনি বললেন, তোমরা কি ইবনু যুবায়রের বিষয়ে বিষ্মিত হবে না? তিনি তো আর এ কাজে (খিলাফতের বিষয়) স্থিতিশীল। আমি বললাম, আমি অবশ্য মনে মনে তার ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করি, কিন্তু আবূ বকর (রাঃ) কিংবা উমর (রাঃ) এর ব্যাপারে তটুকু চিন্তা-ভাবনা করিনি। সব দিক থেকে তার চেয়ে তারা উভয়ে উত্তম ছিলেন। আমি বললাম, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ফুফু সফিয়া (রাঃ) এর সন্তান, যুবায়রের ছেলে, আবূ বকর (রাঃ) এর নাতি। খাদিজা (রাঃ) এর ভাতিজা, আয়িশা (রাঃ) এর বোন আসমার ছেলে। কিন্তু তিনি (নিজেকে বড় মনে করে) আমার থেকে দূরে সরে থাকেন এবং তিনি আমার সহযোগিতা কামনা করেন না। আমি বললাম, আমি নিজে থেকে এজন্য তা প্রকাশ করি না যে, হয়ত তিনি তা প্রত্যাখান করবেন। এবং আমি মনে করি না যে, তিনি এটা ভাল করেছেন। অগত্যা বণী উমাইয়ার নেতৃত্ব ও শাসন আমার কাছে অন্যদের থেকে উত্তম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩১০ | 4310 | ٤۳۱۰

পরিচ্ছদঃ ২৪০০. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ এবং যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য (৯ঃ ৬০) মুজাহিদ বলেছেন, তাদেরকে দানের মাধ্যমে আকৃষ্ট করতেন।
৪৩১০। মুহাম্মদ ইবনু কাছীর (রহঃ) … আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কিছু জিনিস প্রেরণ করা হল। এরপর তিনি সেগুলো চার জনের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। আর বললেন, তাদেরকে (এর দ্বারা) আকৃষ্ট করছি। তখন এক ব্যাক্তি বলল, আপনি সঠিকভাবে দান করেননি। এতদশ্রবনে তিনি বললেন, এ ব্যাক্তির বংশ থেকে এমন সব লোক জন্ম নেবে যারা দ্বীন থেকে বের হয়ে যাবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩১১ | 4311 | ٤۳۱۱

পরিচ্ছদঃ ২৪০১. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ মু’মিনদের মধ্যে যারা স্বতঃস্ফুর্তভাবে সাদকা প্রদান করে এবং যারা নিজ শ্রম ব্যতীরেকে কিছুই পায় না, তাদেরকে যারা দোষারূপ করে ও বিদ্রুপ করে আল্লাহ তাদের বিদ্রুপ করেন; তাদের জন্য রয়েছে অতি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (৯ঃ ৭৯) يلمزون يعيبون و جهدهم وجهدهم طاقتهم – তাদের সাধ্যমত। অর্থ তাদের পরিশ্রমে ত্রুটি ধরে, جهد অর্থ শক্তি (৯ঃ ৭৯)
৪৩১১। বিশর ইবনু আবূ খালিদ আবূ মুহাম্মদ (রহঃ) … আবূ মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন আমাদের সাদকা প্রদানের নির্দেশ দেয়া হল, তখন আমরা পরিশ্রমের বিনিময়ে বোঝা বহন করতাম। একদিন আবূ ‘আকীল (রাঃ) অর্ধ সা’ খেজুর (দান করার উদ্দেশ্যে) নিয়ে আসলেন এবং অন্য এক ব্যাক্তি (আবদুর রহমান ইবনু আউফ তার চেয়ে অধিক মালামাল (একই উদ্দেশ্যে) নিয়ে উপস্থিত হলেন। (এগুলো দেখে) মুনাফিকরা সমালোচনা করতে লাগল, আল্লাহ এ ব্যাক্তির সাদকার মুখাপেক্ষী নন। আর দ্বিতীয় ব্যাক্তি [আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ)] শুধু মানূষ দেখানোর জন্য অধিক মালামাল দান করেছে। এ সময় এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় – “মু’মিনদের মধ্যে যারা স্বতঃস্ফুর্তভাবে সাদকা প্রদান করে এবং যারা নিজ শ্রম ব্যতীরেকে কিছুই পায় না, তাদেরকে যারা দোষারূপ করে ও বিদ্রুপ করে আল্লাহ তাদের বিদ্রুপ করেন; তাদের জন্য রয়েছে অতি মর্মন্তুদ শাস্তি।” (৯: ৭৯)

হাদিস নম্বরঃ ৪৩১২ | 4312 | ٤۳۱۲

পরিচ্ছদঃ ২৪০১. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ মু’মিনদের মধ্যে যারা স্বতঃস্ফুর্তভাবে সাদকা প্রদান করে এবং যারা নিজ শ্রম ব্যতীরেকে কিছুই পায় না, তাদেরকে যারা দোষারূপ করে ও বিদ্রুপ করে আল্লাহ তাদের বিদ্রুপ করেন; তাদের জন্য রয়েছে অতি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (৯ঃ ৭৯) يلمزون يعيبون و جهدهم وجهدهم طاقتهم – তাদের সাধ্যমত। অর্থ তাদের পরিশ্রমে ত্রুটি ধরে, جهد অর্থ শক্তি (৯ঃ ৭৯)
৪৩১২। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … আবূ মাসঊদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদকা করার আদেশ প্রদান করলে আমাদের মধ্য হতে কেউ কেউ অত্যন্ত পরিশ্রম করে, (গম অথবা খেজুর ইত্যাদি) এক মুদ্দ আনতে পারত কিন্তু এখন আমাদের মধ্যে কারো কারো এক লাখ পরিমাণ (দিরহাম) রয়েছে। আবূ মাসঊদ (রাঃ) যেন (এ কথা বলে) নিজের দিকে ইঙ্গিত করলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩১৩ | 4313 | ٤۳۱۳

পরিচ্ছদঃ ২৪০২. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ (হে রাসুল) আপনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন অথবা তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা না করুন, একই কথা, আপনি তাদের জন্য সত্তর বার ক্ষমা প্রার্থনা করলেও আল্লাহ তাদের কখনই ক্ষমা করবেন না (এর কারন, তারা আল্লাহ ও তার রাসুলকে অস্বীকার করেছে। আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়কে পথপ্রদর্শন করেন না) (৯ঃ ৮০)
৪৩১৩। উবায়েদ ইবনু ইসমাঊল (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উবায় (মুনাফিক) মারা গেল, তখন তার ছেলে আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে আসলেন এবং তার পিতাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোর্তা দিয়ে কাফন দেবার আবেদন করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোর্তাটি প্রদান করলেন, এরপর (আবদুল্লাহ তার পিতার) জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) পড়ানোর জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আবেদন জানালেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) পড়ানোর জন্য (বসা থেকে) উঠে দাঁড়ালেন, ইত্যবসরে উমর (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাপড় টেনে ধরে আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি কি তার জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) পড়াতে যাচ্ছেন?

অথচ আপনার রব (আল্লাহ তা‘আলা) আপনাকে তার জন্য দোআ করতে নিষেধ করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তা‘আলা আমাকে এ ব্যাপারে ইখতিয়ার দিয়েছেন। আর আল্লাহ তা ইরশাদ করেছেন, ‘‘তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর আর না কর; যদি সত্তর বারও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর তুব আমি তাদের ক্ষমা করব না।’’ সুতরাং আমি তার জন্য সত্তর বারের চেয়েও অধিক ক্ষমা প্রার্থনা করব। উমর (রাঃ) বললেন, সে তো মুনাফিক, শেষ পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানোযার সালাত (নামায/নামাজ) পড়ালেন, এরপর এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। “তাদের মুনাফিকদের) কেউ মারা গেলে আপনি কখনো তাদের জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবেন না এবং তাদের কবরের কাছেও দাঁড়াবেন না।”

হাদিস নম্বরঃ ৪৩১৪ | 4314 | ٤۳۱٤

পরিচ্ছদঃ ২৪০২. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ (হে রাসুল) আপনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন অথবা তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা না করুন, একই কথা, আপনি তাদের জন্য সত্তর বার ক্ষমা প্রার্থনা করলেও আল্লাহ তাদের কখনই ক্ষমা করবেন না (এর কারন, তারা আল্লাহ ও তার রাসুলকে অস্বীকার করেছে। আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়কে পথপ্রদর্শন করেন না) (৯ঃ ৮০)
৪৩১৪। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) … উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন আবদুল্লাহ ইবনু উবায় ইবনু সালুল মারা গেল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তার জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) পড়বার জন্য আহবান করা হল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন (জানাযার জন্য) উঠে দাঁড়ালে, আমি তাঁর কাছে গিয়ে আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি ইবনু উবায়ের জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) পড়াবেন? অথচ যে লোক অমুক দিন অমুক অমুক কথা বলেছে। উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) বলেন, আমি তার কথাগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে এক একটি করে উল্লেখ করেছিলাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসি দিয়ে আমাকে বললেন, হে উমর, আমাকে যেতে দাও। আমি বারবার বলাতে তিনি বললেন, আল্লাহর আমাকে ইখতিয়ার দিয়েছেন। আমি তা গ্রহণ করেছি।

আমি যদি বুঝতে পারি যে, সত্তরবারের চেয়েও অধিক ক্ষমা প্রার্থনা করলে তাকে আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করে দিবেন, তবে আমি সত্তরবারের অধিক ক্ষমা প্রার্থনা করবো। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং (জানাযা) থেকে প্রত্যাবর্তন করে আসার পরই সূরা বারাআতের এ আয়াত অবতীর্ণ হয়, “তাদের কেউ মারা গেলে কখনো তার জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে না। এরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি অবিশ্বাস করেছে। এবং পাপাচারী অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। (৯: ৮৪)

উমর (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে আমার এ দুৎসাহসের জন্য পরে আমি চিন্তা করে আশ্চর্যান্বিত হতাম। বস্তুত আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক জ্ঞাত।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩১৫ | 4315 | ٤۳۱۵

পরিচ্ছদঃ ২৪০৩. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ যদি তাদের (মুনাফিকদের) কেউ মারা যায় আপনি কখনো তাদের জানাযার নামায আদায় করবেন না এবং তাদের কবরের কাছেও দাঁড়াবেন না (৯ঃ ৮৪)
৪৩১৫। ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন (মুনাফিক) আবদুল্লাহ ইবনু উবাই মারা গেল, তখন তার ছেলে আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলেন। তিনি [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাঁর নিজ জামাটি তাকে দিয়ে দিলেন এবং এর দ্বারা তার পিতার কাফনের ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশ দিলেন। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার জন্য উঠে দাঁড়ালেন। তখন ইবনু উমর খাত্তাব (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাপড় ধরে আরজ করলেন, [ইয়া রাসূলাল্লাহ!] আপনি কি তার (আবদুল্লাহ ইবনু উবাই) এর জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবেন? সে তো মুনাফিক, অথচ আল্লাহ তা‘আলা তাদের (মুনাফিকদের) জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে আপনাকে নিষেধ করেছেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (হে উমর!) আল্লাহ আমাকে ইখতিয়ার দিয়েছেন, অথবা বলেছেন, আল্লাহ আমাকে অবহিত করেছেন এবং বলেছেন, ‘‘আপনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন আর না করেন, আপনি যদি সত্তরবারও ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তবুও আল্লাহ কখনো তাদেরকে ক্ষমা করবেন না।’’ (৯: ৮০) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি সত্তরবারের চেয়েও বেশীবার ক্ষমা প্রার্থনা করবো। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। আমরাও তাঁর সাথে জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। এরপর এ আয়াত অবতীর্ণ হল, ‘‘তাদের (মুনাফিকদের) কেউ মারা গেলে আপনি তার জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) কখনো আদায় করবেন না এবং তার কবরের পার্শ্বেও দাঁড়াবেন না। তারা তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কে অস্বীকার করেছে এবং পাপাচারী অবস্থায়ই মৃত্যু বরণ করেছে। (৯: ৮৪)

হাদিস নম্বরঃ ৪৩১৬ | 4316 | ٤۳۱٦

পরিচ্ছদঃ ২৪০৪. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ তোমরা তাদের কাছে ফিরে আসলে তারা আল্লাহর শপথ করবে, যাতে তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা কর, সুতরাং তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা করবে। তারা অপবিত্র, তাদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ জাহান্নাম তাদের আবাসস্থল (৯ঃ ৯৫)
৪৩১৬। ইয়াহইয়া (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু কা‘আব ইবনু মালিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, তিনি যখন তাবুকের যুদ্ধে পিছনে রয়ে গেলেন (অংশ গ্রহণ করলেন না), আল্লাহর কসম! তখন আল্লাহ আমাকে এমন এক নিয়ামত দান করেন যা মুসলমান হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত এতবড় নিয়ামত পাইনি। তা হল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে সত্য কথা প্রকাশ করা। আমি তাঁর কাছে মিথ্যা বলিনি। যদি মিথ্যা বলতাম, তবে অন্যান্য (মুনাফিক ও) মিথ্যাবাদী ধ্বংস হয়েছে, আমিও সেভাবে ধ্বংস হয়ে যেতাম। যে সময় ওহী নাযিল হল ‘‘তোমরা তাদের নিকট (মদিনায়) ফিরে আসলে তারা আল্লাহর শপথ করবে, আল্লাহ সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের প্রতি তুষ্ট হবেন না।’’ (৯: ৯৫)

হাদিস নম্বরঃ ৪৩১৭ | 4317 | ٤۳۱۷

পরিচ্ছদঃ ২৪০৬. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ এবং অপর কতক লোক নিজেদের অপরাধ স্বীকার করেছে, তারা সৎকর্মের সাথে অপর অসৎকর্মের মিশ্রন ঘটিয়েছে। সম্ভবত, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (৯ঃ ১০২)
২৪০৫. অনুচ্ছেদ: আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ তারা তোমাদের সামনে কসম করবে যাতে তোমরা তাদের প্রতি রাজি হও। যদি তোমরা তাদের প্রতি রাজি হয়ে যাও তবুও আল্লাহ এসব ফাসিক লোকদের প্রতি রাজি হবেন না। ( ৯: ৯৬)

৪৩১৭। মুয়াম্মিল ইবনু হিশাম (রহঃ) … সামুরা ইবনু জন্দুর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বলেছেন, রাতে দু’জন ফেরেশতা এসে আমাকে নিদ্রা থেকে জাগ্রত করলেন। এরপর আমরা এমন এক শহরে পৌছলাম, যা স্বর্ণ ও রৌপ্যের ইট দ্বারা নির্মিত। সেখানে এমন কিছু সংখ্যক লোকের সাথে আমাদের সাক্ষাত ঘটর, যাদের শরীরের অর্ধেক খুবই সুন্দর যা তোমরা কখনো দেখনি। এবং আর এক অর্ধেক এমন কুৎসিত যা তোমরা কখনো দেখনি। ফেরেশতা দু’জন তাদেরকে বললেন, তোমরা ঐ নহরে গিয়ে ডুব দাও। তারা সেখানে গিয়ে ডুব দিয়ে আমাদের নিকট ফিরে এল। তখন তাদের বিশ্রী চেহারা সম্পূর্ণ দূর হয়ে গেল এবং তারা সুন্দর চেহারা লাভ করলো। ফেরেশতাদ্বয় আমাকে বললেন, এটা হল ‘জান্নাতে আদন’ এটাই হল আপনার আসল আরামস্থল। ফেরেশতাদ্বয় (বিস্তারিত বুঝিয়ে) বললেন, (আপনি) যেসব লোকের দেহের অর্ধেক সুন্দর এবং অর্ধেক বিশরী (দেখেছেন), তারা ঐ সকল লোক যারা দুনিয়াতে সৎকর্মের সাথে অসৎকর্ম মিশিয়ে ফেলেছে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন (এবং তারা অতি সুন্দর চেহারা লাভ করেছে)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩১৮ | 4318 | ٤۳۱۸

পরিচ্ছদঃ ২৪০৭. মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা নাবী এবং মু’মিনদের জন্য সঙ্গত নয় (৯ঃ ১১৩)
৪৩১৮। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … মূসায়্যাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন আবূ তালিবে মৃত্যুর আলামত দেখা দিল তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে গেলেন। এ সময় আবূ জেহেল এবং আবদুল্লাহ ইবনু আবূ উমাইয়াও সেখানে বসা ছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে চাচা! আপনি পড়ুন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ!। আপনার মুক্তির জন্য আল্লাহর নিকট এ নিয়ে আবেদন পেশ করব এ কথা শুনে আবূ জেহেল ও আবদুল্লাহ ইবনু উমইয়া বলল, হে আবূ তালিব! তুমি কি মৃত্যুর সময় (তোমার পিতা) আবদুল মুত্তালিবের ধর্ম ত্যাগ করতে চাও? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে চাচা! আমি আপনার জন্য আল্লাহর তরফ থেকে যতক্ষণ আমাকে নিষেধ না করা হবে ততক্ষণ ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবো। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়ঃ

‘‘আত্মীয়-স্বজন হলেও মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা নাবী এবং মু’মিনদের জন্য সঙ্গত নয়, যখন এ কথা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা জাহান্নামী।’’ (৯: ১১৩)

হাদিস নম্বরঃ ৪৩১৯ | 4319 | ٤۳۱۹

পরিচ্ছদঃ ২৪০৮. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ অবশ্যই আল্লাহ অনুগ্রহপরায়ণ হলেন নবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনসারদের প্রতি, যারা সংকটকালে তার অনুগমন করেছিল। এমনকি তাদের একদলের অন্তর বাঁকা হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল, পরে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করলেন, নিশ্চয়ই তিনি তাদের প্রতি দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু (৯ঃ ১১৭)
৪৩১৯। আহমদ ইবনু সালিহ (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু কা‘আব (রহঃ) থেকে বর্ণিত, কা‘আব (রাঃ) যখন দৃষ্টিহীন হয়ে পড়লেন, তখন তাঁর ছেলেদের মধ্যে যার সাহায্যে তিনি চলাফেরা করতেন, তিনি বলেন, আমি (আমার পিতা) কা‘আব ইবনু মালিক (রাঃ) এর কাছে তার ঘটনা বর্ণনায় وَعَلَى الثَّلاَثَةِ الَّذِينَ خُلِّفُوا‏ এ আয়াত এর তাফসীর সম্পর্কে বলতে শুনেছি। তিনি তার ঘটনার সর্বশেষে বলতেন, আমি আমার তওবা কবুল হওয়ার খুশিতে আমার সকল মাল আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পথে দান করতে চেয়েছছিলাম। কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (সকল মাল সাদকা করো না) কিচু সাদকা করো এবং কিছু নিজের জন্য রেখে দাও। এটাই তোমার জন্য কল্যাণকর হবে।

পরিচ্ছদঃ ২৪০৯. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ এবং তিনি সে তিনজনকে ক্ষমা করলেন যাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত মুলতবী রাখা হয়েছিল, যে পর্যন্ত না পৃথিবী বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য অতি সংকুচিত হয়েছিল এবং তাদের জীবন তাদের জন্য দুর্বিষহ হয়েছিল এবং তারা উপলব্ধি করতে পেরেছিল যে, আল্লাহ ছাড়া কোন আশ্রয়স্থল নেই, পরে তিনি তাদের প্রতি মেহেরবান হলেন, যাতে তারা তাওবা করে, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (৯ঃ ১১৮)
৪৩২০ মুহাম্মদ (রহঃ) … আবদুর রহমান ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু কা‘আব ইবনু মালিক (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি আমার পিতা কা‘আব মালিক (রাঃ) থেকে শুনেছি, যে তিনজনের তওবা কবূল হয়েছিল, তার মধ্যে তিনি একজন। তিনি বদরের যুদ্ধ ও তাবুকের যুদ্ধ এ দুটি ছাড়া অন্য কোন যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পশ্চাতে থাকেন নি। কা‘আব ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুক যুদ্ধ হতে সূর্যোদয়ের সময় মদিনায় প্রত্যাবর্তন করলে আমি (মিথ্যা আযুহাতের পরিবর্তে) সত্যপ্রকাশের দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করলাম। তিনি [রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যে কোন সফর হতে সাধারণত সূর্যোদয়ের সময়ই ফিরে আসতেন। এবং সর্বপ্রথম মসজিদে গিয়ে দু’রাকাআত নফল সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। (তাবুকের যুদ্ধ থেকে এসে) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার সাথে এবং আমার সঙ্গীদের সাথে কথা বলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন, অথচ আমাদের ছাড়া অন্য যারা যুদ্ধে যাওয়া থেকে বিরত ছিল, তাদের সাথে কথা বলায় কোন প্রকার বাধা প্রদান করলেন না। সুতরাং লোকেরা আমাদের সাথে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে লাগলেন।

এভাবে চিন্তার বিষয় এ ছিল যে যদি এ অবস্থায় আমার মৃত্যু এসে যায়, আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় না করেন, অথবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাত হলে আমি মানুষের কাছে এই অবস্থায় থেকে যাব তারা কেউ আমার সাথে কথাও বলবে না, আর আমার জানোযার সালাত (নামায/নামাজ)ও আদায় করবে না। এরপর (পঞ্চাঁশ দিন পর) আল্লাহ তা‘আলা আমার তওবা কবূল করে তাঁর [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি আয়াত অবতীর্ণ করেন। তখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকী ছিল। সে রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে সালমা (রাঃ) এর কাছে ছিলেন, উম্মে সালমা (রাঃ) আমার প্রতি সদয় ও সহানুভূতিশীল ছিলেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে উম্মে সালমা! কা‘আবের তওবা কবূল করা হয়েছে। উমম সালমা (রাঃ) বললেন, তাকে সুসংবাদ দেয়ার জন্য কাউকে তাঁর কাছে পাঠাব? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এখন খবর পেলে সব লোক এসে সমবেত হবে। তারা তোমাদের ঘুম নষ্ট করে দিবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের পর (সকলের মধ্যে) আমাদের তওবা কবূল হওয়ার কথা ঘোষণা করে দিলেন। এ (ঘোষণার) সময় (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা মুবারক খুশততে চাঁদের ন্যায় চমকাচ্ছিল। যেসব মুনাফিক মিথ্যা আযুহাত দেখিয়ে [রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসন্তুষ্টি থেকে] রেহাই পেয়েছিল, তাদের চেয়ে তওবা কবূলের ব্যপারে আমরা তিনজন পিছনে পড়ে গিয়েছিলাম, এরপর আল্লাহ তা‘আলা আমাদের তওবা কবূল করে আয়াত অবতীর্ণ করেন।

(তাবুকের যুদ্ধে) অনুপস্থিতিদের মধ্যে যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে মিথ্যা কথা বলেছে এবং যারা মিথ্যা আযুহাত দেখিয়েছে তাদের অত্যন্ত জঘন্যভাবে নিন্দাবাদ করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, ‘‘তোমরা তাদের কাছে ফিরে আসলে তারা তোমাদের কাছে আযুহাত পেশ করবে, বল, মিথ্যা অযুহাত পেশ করো না, আমরা তোমাদেরকে কখনোই বিশ্বাস করবো না। আল্লাহ আমাদেরকে তোমাদের খবর জানিয়ে দিয়েছেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করবেন। (৯ঃ ৯৪)

হাদিস নম্বরঃ ৪৩২১ | 4321 | ٤۳۲۱

পরিচ্ছদঃ ২৪১০. আল্লাহর বাণীঃ হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও (৯ঃ ১১৯)
৪৩২১। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু কা‘আব ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যিনি কা‘আব ইবনু মালিক (রাঃ) (দৃষ্টিহীন হওয়ার পরে) এর পথপ্রদর্শক হিসেবে ছিলেন। তিনি (আবদুল্লাহ) বলেন, আমি কা‘আব ইবনু মালিক (রাঃ), তাবুক যুদ্ধে যারা পশ্চাতে থেকে গিয়েছিলেন তাদের ঘটনা বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আল্লাহর কসম! হয়ত আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে সত্য কথা কথা প্রকাশের কারণে, অন্য কাউকে এত বড় নিয়ামত দান করেন নি যতটুকু আমাকে প্রদান করেছেন। যখন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তাবুক যুদ্ধে না যাওয়ার সঠিক কারণ বর্ণণা করেছি তখন থেকে আজ পর্যন্ত (যে কোন ব্যাপারে) মিথ্যা বলার ইচ্ছাটুকু পর্যন্ত আমার হয়নি। শেষে পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর আয়াত নাযিল করলেন, ‘‘আল্লাহ অনুগ্রহপরায়ণ হলেন নাবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনসারদিগকের প্রতি …… এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও।’’ (৯: ১১৭-১১৯)

হাদিস নম্বরঃ ৪৩২২ | 4322 | ٤۳۲۲

পরিচ্ছদঃ ২৪১১. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের কাছে এক রাসুল এসেছেন। তোমাদের যা বিপন্ন করে, তা তার জন্য অতি কষ্টদায়ক। সে তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি সে দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু (৯ঃ ১২৮)
৪৩২২। আবূল ইয়ামান (রহঃ) … যায়েদ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যিনি ওহী লেখকদের মধ্যে একজন ছিলেন, তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) (তার খিলাফতের সময়) এক ব্যাক্তিকে আমার কাছে পাঠালেন। এ সময় ইয়ামামার যুদ্ধ চলছিল। (আমি তার কাছে চলে আসলাম) তখন তাঁর কাছে উমর (রাঃ) বসা ছিলেন। তিনি [আবূ বকর (রাঃ) আমাকে] বললেন, উমর (রাঃ) আমার কাছে এসে বললেন যে, ইয়ামামার যুদ্ধ তীব্র গতিতে চলছে, আমার ভয় হচ্ছে, কুরআনের অভিজ্ঞগণ (হাফিজগণ) ইয়ামামার যুদ্ধে শহীদ হয়ে যান নাকি! যদি আপনার তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করেন তবে কুরআনের অনেক অংশ বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং কুরআনকে একত্রিত করে সংরক্ষণ করা ভাল মনে করি। আবূ বকর (রাঃ) বলেন, আমি উমর (রাঃ) কে বললাম, আমি এ কাজ কিভাবে করতে পারি, যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করে যাননি।

কিন্তু উমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! এটা কল্যাণকর হবে। উমর (রাঃ) তাঁর এ কথার পুনরুক্তি করতে থাকেন, শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা এ কাজ কনরার জন্য আমার বক্ষকে উন্মুক্ত করে দেন। (অর্থাৎ এ প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে সক্ষম হই) এবং শেষ পর্যন্ত (এ ব্যাপারে) আমার অভিমত উমর (রাঃ) এর মতই হয়ে যায়। যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) বলেন, উমর (রাঃ) সেখানে নিরবে বসা ছিলেন, কোন কথা বলছিলেন না। এরপর আবূ বকর (রাঃ) আমাকে বললেন, দেখ, তুমি যুবক এবং জ্ঞানি ব্যাক্তি। আমরা তোমার প্রতি কোনরূপ বিরূপ ধারণা পোষণ করি না। কেননা, তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়ে ওহী লিপিবদ্ধ করতে। সুতরাং তুমি কুরআনের আয়াত সংগ্রহ করে একত্রিত কর। কসম! তিনি কুরআন একত্রিত করার যে নির্দেশ আমাকে দিলেন সেটি আমার কাছে এত ভারী মনে হল যে, তিনি যদি কোন একটি পাহাড় স্থানান্তরিত করতে নির্দেশ দিতেন তাও আমার কাছে এরূপ ভারী মনে হতো না।

আমি বললাম, যে কাজ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করে যাননি, সে কাজটি আপনারা কিভাবে করবেন? এরপর আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! এ কাজ করাটাই কল্যাণকর হবে। এরপর আমিও আমার কথায় অটল থেকে বারবার জোর দিতে লাগলাম। পরিশেষে আল্লাহ যেটা উপলব্ধি করার জন্য আবু বকর ও উমর (রাঃ) এর বক্ষকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন, আমার বক্ষকেও তা উপলব্ধি করার জন্য উন্মুক্ত করে দিলেন (অর্থাৎ এর প্রয়োজনীয়তা তাদের ন্যায় আমিও অনুভব করলাম)। এরপর আমি কুরআন সংগ্রহে লেগে গেলাম এবং হাড়, চামড়া, খেজুর ডালে ও বাকলে এবং মানুষের বক্ষস্থল (অর্থাৎ মানুষের কাছে যা মুখস্ত ছিল। থেকে তা সংগ্রহ করলাম।

পরিশেষে খুযায়মা আনসারীর কাছে সূরায়ে তওবার দু’টি আয়াত (লিখিত) পেয়ে গেলাম, যা অন্য কারো কাছ থেকে সংগ্রহ করতে পারিনি। (যে আয়াতদ্বয়ের একটি হল) ‘লাকাদ জা আকুম’’ থেকে ষেশ পর্যন্ত। এরপর এ জমাকৃত কুরআন আবূ বকর (রাঃ)-এর ইন্তিকাল পর্যন্ত তাঁর কাছেই জমা ছিল তারপর উমর (রাঃ) এর কাছে এলো। তার ইন্তিকাল পর্যন্ত তার কাছেই এটি জমা ছিল। তারপর এটি হাফসা বিনত উমর (রাঃ) এর কাছে এলো।

উসমান এবং লায়স (রহঃ) خُزَيْمَةَ শব্দের বর্ণণায় শু‘আয়ব এর অনুসরণ করেছেন। অন্য এক সনদেও ইবনু শিহাব থেকে এ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তাতে খুযায়মার স্থলে আবূ খুযায়মা আনসারী বলা হয়েছে। মূসা এর সনদে عَنْ ابْنُ شِهَابٍ এর স্থলে حَدَّثَنَا ابْنُ شِهَابٍ এবং আবু খুযায়মা আনসারী বলা হয়েছে। ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীমের অনুসরণ করেছেন।

অন্য এক সনদে সাবিত (রহঃ) এর عَنْ إِبْرَاهِيمَ এর পরিবর্তে حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ বলেছেন এবং খুযায়মা অথবা আবূ খুযয়মা নিয়ে সন্দেহ আছে।

আয়াতটির অর্থঃ ‘‘এরপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তুমি বলে দিও, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। আমি তারই উপর নির্ভর করি এবং তিনি মহা ‘আরশের অধিপতি।’’ (৯ঃ ১২৯) সূরা ইউনুস

হাদিস নম্বরঃ ৪৩২৩ | 4323 | ٤۳۲۳

পরিচ্ছদঃ ২৪১২. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ আমি বনী ইসরাইলকে সমুদ্র পার করলাম ফেরাউন ও তার সেনাবাহিনী ঔদ্ধত্য সহকারে সীমালঙ্ঘন করে তাদের পশ্চাদ্ধাবন করল। পরিশেষে যখন সে নিমজ্জিত হল তখন সে বলল, আমি বিশ্বাস করলাম, যার প্রতি বনী ইসরাইল বিশ্বাস করেছে। এবং আমি আত্মসমার্পনকারীদের অন্তর্ভুক্ত। (১০ঃ ৯০) نُنَجِّيْكَ আমি তোমাকে যমীনের উঁচু স্থানে ফেলে রাখব। نَجْوَةٍ উচ্চ স্থান।
সুরা ইউনুস

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, فَاخْتَلَطَ অর্থাৎ বৃষ্টির দ্বারা ভূ-পৃষ্ঠে বিভিন্ন প্রকারের উদ্ভিদ উদ্গত হয়। আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ وَقَالُوا اتَّخَذَ اللهُ وَلَدًا سُبْحَانَه هُوَ الْغَنِيُّ -‘‘তারা বলেঃ ‘‘আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন। তিনি মহান, পবিত্র। তিনি অমুখাপেক্ষী।’’ (১০: ৬৮)

যায়দ ইবনু আসলাম (রহ.) বলেন, قَدَمَ صِدْقٍ দ্বারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বুঝানো হয়েছে। মুজাহিদ বলেন, এর অর্থ কল্যাণ। تِلْكَ آيَاتُ এগুলো কুরআনের নিদর্শন ও অনুরূপ, حَتَّى إِذَا كُنْتُمْ فِي الْفُلْكِ وَجَرَيْنَ بِهِمْ এখানে بِهِمْ দ্বারা بِكُمْ (তোমাদের নিয়ে) অর্থে دَعْوَاهُمْ তাদের দু‘আ। أُحِيْطَبِهِمْ তারা ধ্বংসোন্মুখ হল। أَحَاطَتْ بِهٰ خَطِيئَتُه গুনাহ তাদের ঘিরে ফেলছে। فَاتَّبَعَهُمْ وَأَتْبَعَهُمْ সমপর্যায়ের (তাদের পশ্চাদ্ধাবন করল।) عَدْوًا এখানে সীমা অতিক্রম অর্থে, মুজাহিদ (রহ.) বলেন, لِلنَّاسِ الشَّرَّ اسْتِعْجَالَهُمْ بِالْخَيْرِ এর দ্বারা মানুষের সেই কথা বুঝাচ্ছে, যখন সে রাগান্বিত হয়ে নিজ নিজ সন্তান-সন্ততি ও ধন-সম্পদ সম্পর্কে বলে, হে আল্লাহ! এতে বারাকাত দিও না, এর ওপর লা‘নাত কর। لَقُضِيَ إِلَيْهِمْ أَجَلُهُمْ যার প্রতি বদদু‘আ করা হয়েছে, তাকে ধ্বংস করে দিতেন এবং তাকে মেরে ফেলতেন। أَحْسَنُواالْحُسْنَى কল্যাণকর কাজের জন্য রয়েছে কল্যাণ এবং আরো অধিক। وَزِيَادَةٌ এবং অতিরিক্ত অর্থাৎ ক্ষমা। অন্যরা বলেন, আল্লাহর দীদার, الْكِبْرِيَاءُ রাজত্ব।

৪৩২৩। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় এলেন, তখন ইহুদীরা আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন রোযা পালন করত। (জিজ্ঞাসা করা হলে) তারা বলল, এদিন মূসা (আলাইহিস সালাম) ফেরাউনের উপর বিজয় লাভ করেছিলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের বললেন, মূসা (আলাইহিস সালাম) সম্পর্কে তাদের (ইহুদিদের) চাইতে তোমরাই অধিক হকদার। সুতরাং তোমরাও রোযা পালন কর।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩২৪ | 4324 | ٤۳۲٤

পরিচ্ছদঃ ২৪১৩. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ সাবধান! ওরা তার কাছে গোপন রাখার জন্য ওদের দ্বিভাজ (সংকুচিত) করে। সাবধান! ওরা যখন নিজেদেরকে বস্রে আচ্ছাদিত করে, তখন ওরা যা কিছু গোপন করে ও প্রকাশ করে, তিনি তা জানেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের অন্তরের বিষয় অবগত আছে। ( ১১ঃ ৫) অন্যজন বলেন, حَاقَ অবতীর্ণ হল। يَحِيْقُ অবতীর্ণ হয়। فَعُوْلٌ-يَئُوْسٌ এর ওযন يَئِسْتُ থেকে (নিরাশ হওয়ার অর্থে)। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, تَبْتَئِسْ দুঃখ করা।يَثْنُوْنَ صُدُوْرَهُمْ হকের মধ্যে সন্দেহ করা। لِيَسْتَخْفُوْا مِنْهُ আল্লাহ থেকে, গোপন রাখে যদি তারা সক্ষম হয়।
সুরা হুদ

আবূ মাইসারা (রহ.) বলেন, الْأَوَّاهُ হাবশী ভাষায় দয়ালু। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, بَادِئَالرَّأْيِ যা আমাদের সামনে স্পষ্ট। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, الْجُوْدِيُّ জাযিয়ার একটি পর্বত। হাসান (রহ.) বলেন, إِنَّكَ لَأَنْتَ الْحَلِيْمُ আপনি অতি সহনশীল। এর দ্বারা তারা ঠাট্টা করত। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, أَقْلِعِي থেমে যাও। عَصِيْبٌ কঠিন। لَا جَرَمَ অবশ্যই। فَارَ التَّنُّوْرُ পানি উথলে উঠল। ইকরামাহ (রহ.) বলেন, تَّنُّوْرُ ভূ-পৃষ্ঠকে বুঝানো হয়েছে।

৪৩২৪। হাসান ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … মুহাম্মদ ইবনু আব্বাস ইবনু জা‘ফর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে এমনিভাবে পড়তে শুনেছেন, ‏أَلاَ إِنَّهُمْ تَثْنَوْنِي صُدُورُهُمْ‏

মুহাম্মদ ইবনু আব্বাস বলেন, আমি তাঁকে এর মর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, কিছু লোক খোলা আকাশের দিকে উন্মুক্ত হওয়ার ভয়ে পেশাব-পায়খানা অথবা স্ত্রী সহবাস করতে লজ্জাবোধ করতে লাগল। তারপর তাদের সম্পর্কে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩২৫ | 4325 | ٤۳۲۵

পরিচ্ছদঃ ২৪১৩. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ সাবধান! ওরা তার কাছে গোপন রাখার জন্য ওদের দ্বিভাজ (সংকুচিত) করে। সাবধান! ওরা যখন নিজেদেরকে বস্রে আচ্ছাদিত করে, তখন ওরা যা কিছু গোপন করে ও প্রকাশ করে, তিনি তা জানেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের অন্তরের বিষয় অবগত আছে। ( ১১ঃ ৫) অন্যজন বলেন, حَاقَ অবতীর্ণ হল। يَحِيْقُ অবতীর্ণ হয়। فَعُوْلٌ-يَئُوْسٌ এর ওযন يَئِسْتُ থেকে (নিরাশ হওয়ার অর্থে)। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, تَبْتَئِسْ দুঃখ করা।يَثْنُوْنَ صُدُوْرَهُمْ হকের মধ্যে সন্দেহ করা। لِيَسْتَخْفُوْا مِنْهُ আল্লাহ থেকে, গোপন রাখে যদি তারা সক্ষম হয়।
৪৩২৫। ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) … মুহাম্মদ ইবনু আব্বাস ইবনু জা‘ফর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইবনু আববাস (রাঃ) ‏أَلاَ إِنَّهُمْ تَثْنَوْنِي صُدُورُهُمْ পাঠ করলেন। আমি বললাম, হে আবূল আব্বাস تَثْنَوْنِي صُدُورُهُمْ দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে? তিনি বললেন, কিছু লোক স্বীয় স্ত্রীর সাথে সহবাসের সময় অথবা পেশাব-পায়খানা (করার) সময় (উলঙ্গ হতে) লজ্জাবোধ করত, তখন ‏أَلاَ إِنَّهُمْ يَثْنُونَ صُدُورَهُمْ আয়াত অবতীর্ণ হয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩২৬ | 4326 | ٤۳۲٦

পরিচ্ছদঃ ২৪১৩. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ সাবধান! ওরা তার কাছে গোপন রাখার জন্য ওদের দ্বিভাজ (সংকুচিত) করে। সাবধান! ওরা যখন নিজেদেরকে বস্রে আচ্ছাদিত করে, তখন ওরা যা কিছু গোপন করে ও প্রকাশ করে, তিনি তা জানেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের অন্তরের বিষয় অবগত আছে। ( ১১ঃ ৫) অন্যজন বলেন, حَاقَ অবতীর্ণ হল। يَحِيْقُ অবতীর্ণ হয়। فَعُوْلٌ-يَئُوْسٌ এর ওযন يَئِسْتُ থেকে (নিরাশ হওয়ার অর্থে)। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, تَبْتَئِسْ দুঃখ করা।يَثْنُوْنَ صُدُوْرَهُمْ হকের মধ্যে সন্দেহ করা। لِيَسْتَخْفُوْا مِنْهُ আল্লাহ থেকে, গোপন রাখে যদি তারা সক্ষম হয়।
৪৩২৬। হুমায়দী (রহঃ) … আমর (রহঃ) বলেন, ইবন আব্বাস (রাঃ) এ আয়াত এভাবে পাঠ করলেন, ‏أَلاَ إِنَّهُمْ يَثْنُونَ صُدُورَهُمْ لِيَسْتَخْفُوا مِنْهُ أَلاَ حِينَ يَسْتَغْشُونَ ثِيَابَهُمْ আমর ব্যতীত অন্যরা ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন ‏يَسْتَغْشُونَ‏ তারা তাদের মাথা ঢেকে নিত। ‏سِيءَ بِهِمْ তারা সম্প্রদায় সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করেন। এবং وَضَاقَ অর্থাৎ নিজ অতিথিকে দেখে সঙ্কুচিত হলেন। بِقِطْعٍ مِنَ اللَّيْلِ রাতের আঁধারে। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, ‏أُنِيبُ আমি তাঁরই অভিমুখী।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩২৭ | 4327 | ٤۳۲۷

পরিচ্ছদঃ ২৪১৪. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ এবং তাঁর ‘আরশ ছিল পানির ওপরে
৪৩২৭। আবূল ইয়ামান (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তুমি খরচ কর। আমি তোমাকে দান করব এবং [রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, আল্লাহ তা‘আলার হাত পরিপূর্ণ। (তোমার) রাতদিন অবিরাম খরচেও তা কমবে না। তিনি বলেন, তোমরা দেখ না, যখন থেকে (আল্লাহ) আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, তখন থেকে কি পরিমাণ খরচ করেছেন? কিন্তু এত খরচ করার পরও তাঁর হতে সম্পদের কোন কমতি হয়নি। আর আল্লাহ তা‘আলার ‘আরশ পানির উপর ছিল। তাঁর হাতেই রয়েছে পাল্লা। তিনি ঝুকান, তিনি উপরে উঠান।

اعْتَرَاكَ افْتَعَلَتَ-এর বাব থেকে। عَرَوْتُه এ অর্থে বলা হয়, তাকে পেয়েছি। তা থেকে يَعْرُوْهُ (তার উপর ঘটেছে) ও اعْتَرَانِيْ (আমার উপর ঘটেছে) ব্যবহার হয়। اٰخِذٌمبِنَاصِيَتِهَا অর্থাৎ তাঁর রাজত্ব এবং عَنِيْدٌ-عَنُوْدٌ-عَانِدٌ সবগুলোর একই অর্থ- স্বেচ্ছাচারী।

ওটি দাম্ভিকতা অর্থের প্রতি জোর দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। اسْتَعْمَرَكُمْ তোমাদের বসতি দান করলেন। আরবগণ বলত أَعْمَرْتُهُ الدَّارَ فَهِيَ عُمْرَى আমি এ ঘর তাকে জীবন ধারণের জন্য দিলাম। نَكِرَهُمْ وَأَنْكَرَهُمْ এবং اسْتَنْكَرَهُمْ সবগুলো একই অর্থে ব্যবহৃত। فَعِيْلٌ مَجِبْدٌ حَمِيْدٌ -مَجِيْدٌ-এর ওযনে مَاجِدٌ (মর্যাদা সম্পন্ন) থেকে حَمِيْدٌ (প্রশংসিত) এর অর্থে مَحْمُوْدٌ থেকে سِجِّيْلٌ অতি কঠিন বা শক্ত। سِجِّيْلٌ এবং سِجِّيْنٌ উভয় রূপেই ব্যবহৃত হয়। لَامُ এবং نُوْنٌ যেন দুই বোন। তামীম ইবনু মুকবেল বলেন, ‘‘বহু পদাতিক বাহিনী মধ্যাহ্নে স্কন্ধে শুভ্র ধারালো তলোয়ার দ্বারা আঘাত হানে। কঠিন প্রস্তর দ্বারা তার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য বিপক্ষের বীর পুরুষগণ পরস্পরকে ওসীয়ত করে থাকে।

والى مدين اخاهم شعيبا মাদইয়ান-এর নিকট অর্থাৎ মাদইয়ানবাসীর নিকট, কেননা মাদইয়ান তো একটি শহর। এর অনুরূপ وَاسْأَلْ الْقَرْيَةَ وَاسْأَلْ الْعِيْرَ অর্থাৎ গ্রামবাসীদের কাছে এবং কাফেলার লোকদের কাছে জিজ্ঞেস কর। وَرَاءَكُمْ ظِهْرِيًّا অর্থাৎ তারা তার প্রতি দৃষ্টি দেয়নি। যখন কেউ কারও উদ্দেশ্য পূর্ণ না করে, তখন বলা হয় ظَهَرْتَ بِحَاجَتِيْ এবং وَجَعَلْتَنِيْ ظِهْرِيًّا এখানে ظِهْرِيُّ দ্বারা এ ধরনের জানোয়ার বা পাত্র বোঝায় যা কাজের প্রয়োজনে তুমি তার দ্বারা নিজেকে আড়াল করবে। أَرَاذِلُنَا-আমাদের মধ্যে অধম, إِجْرَامِيْ এটা أَجْرَمْتُ -এর মাসদার। কেউ বলেন, جَرَمْتُ হতে উদ্গত الْفَلَكَ، والْفُلْكُ একবচন, বহুবচন উভয় ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ নৌকা এবং নৌকাগুলো। مُجْرَاهَا (নৌকার গতি) এটা أَجْرَيْتُ -এর মাসদার এবং أَرْسَيْتُ-নৌকা আমি থামিয়েছি। কেউ কেউ পড়েনঃ مَرْسَاَهَا অর্থাৎ তার স্থিতি এবং مَجْرَاهَا অর্থাৎ তার গতি। مُجْرِيْهَا এবং مُرْسِيْهَا অর্থাৎ যার সঙ্গে এরূপ (চালিত, স্থগিত) করা হয়েছে لرَّاسِيَاتُ অর্থাৎ স্থিত।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩২৭ | 4327 | ٤۳۲۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ ويتم نعمته عليك وعلى آل يعقوب كما أتمها على أبويك من قبل إبراهيم وإسحاق আর আল্লাহ তোমার প্রতি এবং ইয়াকুব পরিবার-পরিজনের প্রতি তার অনুগ্রহ পূর্ণ করবেন, যেভাবে তিন তা করেছিলেন তোমার পিতৃপুরুষ ইব্রাহীম ও ইসহাকের প্রতি।
সুরা ইউসুফ

ফুযায়ল (রহ.) হুসায়ন (র.) মুজাহিদ (রহ.) বলেন, مُتْكَاءً (এক জাতীয়) লেবু এবং ফুযায়ল (রহ.) বলেন যে, مُتْكًا হাবশী ভাষায় (এক জাতীয়) লেবুকে বলা হয়। ইবনু ‘উয়াইনাহ (রহ.) …… মুজাহিদ (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন যে, مُتْكًا ঐ সব, যা চাকু দিয়ে কাটা হয়। ক্বাদাতাহ (রহ.) বলেন, لَذُوْعِلْمٍ সে ‘আলিম, যে তার ‘ইল্মের উপর ‘আমাল করে। ইবনু যুবায়র (রহ.) বলেন, صُوَاعٌ ফারসী মাপ-পাত্র, যার উভয় পাশ মিলানো থাকে; আজমীগণ এটা দিয়ে পানি পান করে। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, تُفَنِّدُوْنِ আমাকে মূর্খ মনে কর। অন্য হতে বর্ণিতঃ غَيَابَةٌ যেসব বস্তু তোমা হতে গোপন রয়েছে। وَالْجُبُّ ঐ কূপকে বলে যার মুখ বাঁধা হয়নি। بِمُؤْمِنٍلَنَا তুমি আমার কথায় বিশ্বাসী। بِمُؤْمِنٍلَنَا অধোগতি শুরু হওয়ার আগের বয়স। বলা হয় بَلَغَ أَشُدَّهُ وَبَلَغُوْا أَشُدَّهُمْ অর্থাৎ সে বা তারা পূর্ণ বয়সে উপনীত হয়েছে। কেউ কেউ বলেন, এর একবচন شَدٌّ (কারো কারো মতে) الْمُتَّكَأُ যে জিনিসের উপর পানাহার করার বা কথাবার্তা বলার সময় হেলান দেয়া হয়। যাঁরা مَتَكًا অর্থ লেবু বলেছেন এতে তা রদ হল। আরবদের ভাষায় ‘উতরুঞ্জ’ শব্দের ব্যবহার নেই। যখন তাদের প্রতি এই অভিযোগ দ্বারা প্রমাণ করা হয় যে, ‘মুত্তাকা’ অর্থ বিছানা, তখন তাঁরা আরো খারাপ অর্থ গ্রহণ করল এবং বলল যে, এখানে مُتْكٌ এর ت সাকিন। এর অর্থ স্ত্রীলোকের লজ্জাস্থানের পার্শ্ব। এ থেকে ব্যবহার হয় مَتْكَاءِ (যে নারীর সে অংশ কাটা হয়নি) এবং ابْنُ الْمَتْكَاءِ (মাত্কার পুত্র)। সে ঘটনায় লেবু হলেও তা তাকিয়া দেয়ার পরই হবে। شَعَفَهَا তার অন্তরকে আচ্ছন্ন করল। مَشْعُوْفٌ যার অন্তর প্রেমে জ্বালিয়ে দিয়েছে। أَصْبُ আমি আসক্ত হয়ে যাব। أَحْلَامٍ অনর্থক স্বপ্ন যার কোন ব্যাখ্যা নেই। أَضْغَاثُ ঘাসের মুঠা এবং যা এ জাতীয়। যেমন পূর্বের আয়াতে আছে خُذْ بِيَدِكَ ضِغْثًا এক মুঠো ঘাস লও। একবচনে ضِغْثٌ থেকে গঠিত نَمِيْرُ আমরা খাদ্যদ্রব্য এনে দিব। نَزْدَادُكَيْلَبَعِيْرٍ আমরা আরো এক উট বোঝাই পণ্য আনব। أَوَىإِلَيْهِ নিজের কাছে রাখল। السِّقَايَةُ পান পাত্র, পরিমাপ-পাত্র। সারাক্ষণ থাকবে حَرَضًامُحْرَضًا খুব দুর্বল হওয়া) يُذِيْبُكَ الْهَمُّ দুশ্চিন্তা-তোমাকে শেষ করে দিবে, تَحَسَّسُوْا তোমরা খোঁজ লও। مُزْجاةٌ স্বল্প, غَاشِيَةٌمِنْ عَذابِ الله عَامَّةٌ مُجَلِّلَةٌ আল্লাহর শাস্তি সকলকে বেষ্টন করে নিয়েছে।

৪৩২৭ আবদুল্লাহ্ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবদুল্লাহ্ ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বনিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সন্মানিত ব্যাক্তি, সন্মানিত ব্যাক্তির পুত্র, সন্মানিত ব্যাক্তির পুত্র, সন্মানিত ব্যাক্তির পুত্র, সন্মানিত ব্যাক্তি হলেন, ইউসুফ (আলাইহিস সালাম), তাঁর পিতা ইসহাক (আলাইহিস সালাম), তাঁর পিতা ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম), তাঁর পিতা ইবরাহিম (আলাইহিস সালাম)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩২৮ | 4328 | ٤۳۲۸

পরিচ্ছদঃ ২৪১৫. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ সাক্ষীগণ বলবেঃ এরাই হলো সেসব লোক যারা তাদের প্রতিপালকের বিরুদ্ধে মিথ্যা আরোপ করেছিল। সাবধান! আল্লাহর লা’নত জালিমদের ওপর (১১ঃ ১৮) أَشْهَادُ-এর একবচন হল, شَاهِدٌ যেমন, أَصْحَابٌ -এর এক বচন صَاحِبٌ
৪৩২৮। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … সাফওয়ান ইবনু মুহরিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা উমর ইবনু (রাঃ) তাওয়াফ করছিলেন। হঠাৎ এক ব্যাক্তি তাঁর সম্মুখে এসে বলল, হে আবূ আবদুর রহমান অথবা বলল, হে ইবনু উমর (রাঃ) আপনি কি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে (কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা এবং মু’মিনদের মধ্যকার) গোপন আলোচনা সম্পর্কে কিছু শুনেছে? তিনি বললেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, (কিয়ামতের দিন) মু’মিনকে তাঁর নিকটবর্তী করা হবে। হিশাম বলেন, মু’মিন নিকটবর্তী হবে, এমনকি আল্লাহ তা‘আলা তাকে নিজ পর্দায় আবৃত করে নেবেন এবং তার কাছ থেকে তার গুনাহসমূহের স্বীকারোক্তি নেবেন। (আল্লাহ জিজ্ঞাসা করবেন) অমুক গুনাহ সম্পর্কে তুমি জান কি? বান্দা বলবে, হে আমার রব! আমি জানি, আমি জানি। এভাবে দু’বার বলবে। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, আমি দুনিয়ায় তোমার গুনাহ গোপন রেখেছি। আজ তোমার সে গুনাহ মাফ করে দিচ্ছি। তারপর তার নেক আমল নামা গুটিয়ে নেয়া হবে।

পক্ষান্তরে অন্যদলকে অথবা (রাবী বলেছেন) কাফিরদের সকলের সামনে ডেকে বলা হবে, এরাই সে লোক যারা আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বলেছিল এবং শায়বান حَدَّثَنَا قَتَادَةُ এর পরিবর্তে قَتَادَةُعَنْ এবং عَنْ صَفْوَانُ এর পরিবর্তে حَدَّثَنَا صَفْوَانُ বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩২৮ | 4328 | ٤۳۲۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ لقد كان في يوسف وإخوته آيات للسائلين “ইউসুফ ও তার ভাইদের ঘটনায় জিজ্ঞাসুদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।“ (১২:৭)।
৪৩২৮। মুহাম্মদ … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হল, কোন ব্যাক্তি অধিক সন্মানিত? তিনি বললেন, তাদের মধ্যে সেই আল্লাহ্’র নিকট বেশি সন্মানিত যে তাদের মধ্যে সবচে বেশি পরহেজগার। লোকেরা বলল, আমরা এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিনি। তিনি বললেন, সর্বাধিক সন্মানিত ব্যাক্তি আল্লাহ্’র নাবী ইউসুফ (আলাইহিস সালাম)। তিনি তো নাবী’র পুত্র, নাবী’র পুত্র, নাবী’র পুত্র এবং খলিলুল্লাহ্ (আলাইহিস সালাম) এর পুত্র। লোকেরা বলল, আমাদের প্রশ্ন এ ব্যপারে ছিলনা। তিনি বললেন, সম্ভবত তোমরা আরব বংশ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছ। তারা বলল, হ্যাঁ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যারা জাহেলিয়াতে তোমাদের মাঝে উত্তম ছিল, ইসলামেও তারা উত্তম যদি তারা দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞানের অধিকারী হয়। আবূ উসামা (রাঃ) উবায়দুল্লা’র সুত্রে এটাকে সমর্থন ব্যক্ত করেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩২৯ | 4329 | ٤۳۲۹

পরিচ্ছদঃ ২৪১৬. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ এবং এরূপই তোমার প্রতিপালকের শাস্তি। তিনি শাস্তি দান করেন জনপদসমূহকে, যখন তারা জুলুম করে থাকে। তার শাস্তি মর্মন্তুদ কঠিন (১১ঃ ১০২) الرِّفْدُ الْمَرْفُوْدُ অর্থাৎ সাহায্য, যে সাহায্য করা হয় (বলা হয়) رَفَدْتُهُ আমি তাকে সাহায্য করলাম। تَرْكَنُوْا ঝুঁকে পড়। فَلَوْلَا كَانَ কেন হয়নি। أُتْرِفُوْا তাদের ধ্বংস করে দেয়া হল। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, زَفِيْرٌ وَشَهِيْقٌ বিকট আওয়াজ এবং ক্ষীণ আওয়াজ।
৪৩২৯। সাদাকা ইবনু ফাযল (রহঃ) … আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা জালিমদের অবকাশ দিয়ে থাকেন। অবশেষে যখন তাকে পাকড়াও করেন, তখন আর ছাড়েন না। (বর্ণনাকারী বলেন) এরপর তিনি [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এ আয়াত পাঠ করেন। “এবং এরূপই তোমার রবের শাস্তি।” তিনি শাস্তি দান করেন জনপদসমূকে যখন তারা জুলুম করে থাকে। তার শাস্তি মর্মন্তুদ, কঠিন। (১১: ১০২)

হাদিস নম্বরঃ ৪৩২৯ | 4329 | ٤۳۲۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ “সে (ইয়াকুব (আঃ) বলল, না, তোমাদের মন তোমাদের জন্য একটি কাহিনী সাজিয়ে দিয়েছে।“ (১২ঃ ১৮)। سولت সুন্দর করে সাজিয়ে শোভনীয় করে দেখান।
৪৩২৯। আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … যুহরী (রহঃ) উরওয়া ইবনু যুবাইর, সাইদ ইবনু মূসাইয়্যিব, আলকামা ইবনু ওয়াক্কাস এবং উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী আয়শা (রাঃ) এর ইফক সম্পর্কে أَهْلُ الإِفْكِ যা বলেছেন তা শুনেছি। আল্লাহ এটা নির্দোষ প্রমানিত করেছেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়শা (রাঃ) কে বললেন, যদি তুমি নির্দোষ হয়ে থাক তবে অতি শীঘ্র আল্লাহ তোমার নির্দোষিতা প্রমান করে দিবেন। আর যদি তোমার দ্বারা এ গুনাহ সংঘটিত হয়ে থাকে, তবে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর ও তওবা কর। আয়শা (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! এ সময় আমি ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর পিতা ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম) এর উদাহরন ছাড়া বলার মত আর কিছু জবাব দেয়ার মত খুজে পাচ্ছিনা। (তিনি যা বলেছিলেন) সুতরাং পূর্ণ ধৈর্য ই শ্রেয়। তোমরা যা বলছ সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহ ই আমার সাহায্য স্থল। অবশেষে আল্লাহ আমার (নির্দোষিতা ঘোষণা করে) ‏إِنَّ الَّذِينَ جَاءُوا بِالإِفْكِ‏ দশটি আয়াত নাযিল করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৩০ | 4330 | ٤۳۳۰

পরিচ্ছদঃ ২৪১৭. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ নামায কায়েম করবে দিবসের দু’প্রান্তভাগে ও রজনীর প্রথমাংশে। নেক কাজ অবশ্যই পাপ মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহন করে এটি তাদের জন্য এক উপদেশ (১১ঃ ১১৪) زُلَفًا সময়ের পর সময় এবং এসব থেকেই مُزْدَلِفَةُ এর নামকরণ করা হয়েছে। মনযিলের পর মনযিল এবং زُلْفَى মাসদার অর্থ নিকটবর্তী হওয়া। ازْدَلَفُوْا একত্রিত হয়েছে। أَزْلَفْنَا আমরা একত্রিত হয়েছি।
৪৩৩০ মুসাদ্দাদ (রহঃ) … ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার কোন এক ব্যাক্তি জনৈক মহিলাকে চুমু দিলেন। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে এ ঘটনা বললেন, তখন (এ ঘটনার প্রেক্ষিতে) এ আয়াত অবতীর্ণ হয় وَأَقِمِ الصَّلاَةَ طَرَفَىِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ذَلِكَ ذِكْرَى لِلذَّاكِرِينَ ‘‘সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করবে দিবসের দু’প্রান্ত ভাগে ও রাত্রির প্রথমাংশে নেক কার্য অবশ্যই পাপকে মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে তাদের জন্য এ এক উপদেশ। (১১: ১১৪) তখন লোকটি বলল, এ হুকুম কি শুধু আমার জন্য? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যারাই এ অনুসারে করবে, তাদের জন্য।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৩০ | 4330 | ٤۳۳۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ “সে (ইয়াকুব (আঃ) বলল, না, তোমাদের মন তোমাদের জন্য একটি কাহিনী সাজিয়ে দিয়েছে।“ (১২ঃ ১৮)। سولت সুন্দর করে সাজিয়ে শোভনীয় করে দেখান।
৪৩৩০। মূসা (রহঃ) … আয়শা (রাঃ) এর মাতা উম্মে রুমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, (অপবাদ রটনার সময়) আয়শা (রাঃ) আমাদের ঘরে জ্বরে আক্রান্ত ছিল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সম্ভবত এ অপবাদের কারনে জ্বর হয়েছে। আয়শা (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ। তিনি উঠে বসলেন এবং বললেন, আমার এবং আপনার উদাহরন ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম) এবং তার পুত্র ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর ন্যায়। তার ভাইয়েরা কাহিনী সাজাল। তখন ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম) বলেছিলেন, পূর্ণ ধৈর্য্যই শ্রেয়। তোমরা যা বলছ সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহ ই আমার সাহায্য স্থল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬০১ | 4601 | ٤٦۰۱

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
৪৬০১। খালিদ ইবনু ইয়াযীদ কাহিলী (রহঃ) … আবূ উবায়দা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) কে আল্লাহ তা’আলার বাণী إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি বললেন, কাউছার একটি নহর যা তোমাদের নাবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রদান করা হয়েছে। এর দু’টো পাড় রয়েছে। উভয় পাড়ে বিছানো রয়েছে খোখলা মোতি। এর পাত্রের সংখ্যা তারকারাজির অনুরূপ। (অন্য সনদে) যাকারিয়া (রহঃ) … আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬০২ | 4602 | ٤٦۰۲

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
৪৬০২। ইয়াকূব ইবনু ইব্‌রাহীম (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি কাউছার সম্পর্কে বলেছেন যে, এ এমন একটি কল্যাণ যা আল্লাহ তাঁকে দান করেছেন্। বর্ণনাকারী আবূ বিশর (রহঃ) বলেন, আমি সাঈদ ইবনু জুবায়র (রহঃ) কে বললাম, লোকেরা মনে করে যে, কাউছার হচ্ছে জান্নাতের একটি নহর। এ কথা শুনে সাঈদ (রহঃ) বললেন, জান্নাতের নহরটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেয়া কল্যানের একটি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬০৩ | 4603 | ٤٦۰۳

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা কাফিরুন

বলা হয় لَكُمْ دِيْنُكُمْ তোমাদের দ্বীন তোমাদের, অর্থাৎ কুফর। আর وَلِيَ دِيْنِ আমাদের দ্বীন ইসলাম। এখানে دِيْنِيْ বলা হয়নি। পূর্বের আয়াতগুলো نঅক্ষরের উপর যেহেতু শেষ করা হয়েছে, তাই পূর্বের আয়াতগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করার জন্য ياঅক্ষরটিকে মুছে ফেলে এ আয়াতটিকেও ن অক্ষরের ওপর সমাপ্ত করা হয়েছে। যেমন অন্য স্থানে আল্লাহ্ তা‘আলা يَهْدِيْنِ এবং يَشْفِيْنِ ব্যবহার করেছেন। (মুজাহিদ ব্যতীত) অপরাপর মুফাসসির বলেছেন, لَآ أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُوْنَ -এর মর্মার্থ হচ্ছেঃ তোমরা বর্তমানে যার ‘ইবাদাত কর, আমি তার ‘ইবাদাত করি না এবং অবশিষ্ট জীবনেও আমি তোমাদের এ আহবানে সাড়া দেব না। وَلَآ أَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَآ أَعْبُدُ এবং তোমরাও তাঁর ‘ইবাদাতকারী নও- ‘যাঁর ‘ইবাদাত আমি করি।’ তারা ঐ সমস্ত লোক, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ্ তা‘আলা অন্যত্র ইরশাদ করেছেনঃ ‘‘তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে তোমার প্রতি যা নাযিল হয়েছে তা তাদের অনেকের ধর্মদ্রোহিতা ও অবিশ্বাসই বর্ধিত করবে।’’

৪৬০৩। হাসান ইবনু রাবী (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ সূরা নাযিল হবার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন তখনই তিনি সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করেছেনঃ سُبْحَانَكَ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي “হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র, তুমিই আমার রব। সকল প্রশংসা তোমারই জন্য নির্ধারিত। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা কর”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬০৪ | 4604 | ٤٦۰٤

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
৪৬০৪। উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সূরা নাস্‌র নাযিল হাবার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي (হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র, তুমিই আমার রব, সমস্ত প্রশংসা তোমারই জন্য নির্দিষ্ট। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও)। দোয়াটি রুকু-সিজদার মধ্যে বেশী বেশী পাঠ করতেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬০৫ | 4605 | ٤٦۰۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ورأيت الناس يدخلون في دين الله أفواجا “এবং তুমি মানুষকে দলে দলে আল্লাহ্‌র দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবে” (১১০ঃ ২)
৪৬০৫। আবদুল্লাহ ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমর (রাঃ) লোকদেরকে আল্লাহর বাণী إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ এর ব্যাখ্যা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করার পর তারা বললেন, এ আয়াতে শহর এবং প্রাসাদসমূহের বিজয়ের কথা বলা হয়েছে। এ কথা শুনে উমর (রাঃ) বললেন, হে ইবনু আব্বাস! তুমি কি বল? তিনি বললেন, এ আয়াতে ওফাত অথবা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দৃষ্টান্ত এবং তাঁর শান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬০৬ | 4606 | ٤٦۰٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ فسبح بحمد ربك واستغفره إنه كان توابا “অতঃপর তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি তো তওবা কবুলকারী (১১০ঃ ৩)
تَوَّابٌ মানে تَوَّابٌ عَلَى الْعِبَادِ বান্দাদের তওবা কবূলকারী। التَّوَّابُ مِنَ النَّاسِ ঐ ব্যক্তিকে বলা হয় যে গুনাহ থেকে তওবা করে।

৪৬০৬। মূসা ইবনু ইসমাইল (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমর (রাঃ) বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রবীণ সাহাবীদের সঙ্গে আমাকেও শামিল করতেন। এ কারণে কারো কারো মনে প্রশ্ন দেখা দিল। একজন বললেন, আপনি তাঁকে আমাদের সাথে কেন শামিল করছেন। আমাদের তো তাঁর মত সন্তানই রয়েছে। উমর (রাঃ) বললেন, এর কারণ তো আপনারাও জানেন। সুতরাং একদিন তিনি তাঁকে ডাকলেন এবং তাঁদের সাথে বসলেন। ইবনু আব্বাস (রহঃ) বলেন, আমি বুঝতে পারলাম, আজকে তিনি আমাকে ডেকেছেন এজন্য যে, তিনি আমার প্রজ্ঞা তাঁদেরকে দেখবেন। তিনি তাদেরকে বললেন। আল্লাহর বাণীঃ ‏إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে আপনারা কি বলেন, তখন তাঁদের কেউ বললেন, আমরা সাহায্য প্রাপ্ত হলে এবং আমরা বিজয় লাভ করলে। এ আয়াতে আমাদেরকে আল্লাহর প্রশংসা এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আবার কেউ কিছু না বলে চুপ করে থাকলেন। এরপর তিনি আমাকে বললেন, হে ইবনু আব্বাস! তুমিও কি তাই বল? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তাহলে তুমি কি বলতে চাও? উত্তরে আমি বললাম, “এ আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাঁর ইন্তেকালের সংবাদ জানিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসলে’ এটই হবে তোমার মৃত্যুর আলামত। তখন তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা কর এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি তো তওবা কবুলকারী”। এ কথা শুনে উমর (রাঃ) বললেন, তুমি যা বলছ, এ আয়াতের ব্যাখ্যা আমিও তা-ই জানি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬০৭ | 4607 | ٤٦۰۷

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
৪৬০৭। ইউসুফ ইবনু মূসা (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‏وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الأَقْرَبِينَ “তুমি তোমার কাছে আত্মীয়-স্বজনকে সতর্ক করে দাও” আয়াতটি নাযিল হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে সাফা পাহাড়ে গিয়ে উঠলেন এবং (সকাল বেলার বিপদ সাবধান) বলে উচ্চস্বরে ডাক দিলেন। আওয়াজ শুনে তারা বলল, এ কে? তারপর সবাই তাঁর কাছে গিয়ে সমবেত হল। তিনি বললেন, আমি যদি তোমাদেরকে বলি, আশি অশ্বারোহী সৈন্যবাহিনী ও পাহাড়ের পেছনে তোমাদের উপর হামলা করার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে, তাহলে কি তোমরা আমাকে বিশ্বাস করবে? সকলেই বলল, আপনার মিথ্যা বলার ব্যাপারে আমাদের অভিজ্ঞতা নেই। তখন তিনি বললেন, আমি তোমাদের আসন্ন কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছি। এ কথা শুনে আবূ লাহাব বলল, তোমার ধ্বংস হোক। তুমি কি এ জন্যই আমাদেরকে একত্র করেছ। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন। তারপর নাযিল হলঃ ‏تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ “ধ্বংস হোক আবূ লাহাবের দু’গাত এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও”। আমাশ (রহঃ) আয়াতটিতে تَبَّ শব্দের পূর্বে قَدْ সংযোগ করে وَقَدْ تَبَّ পড়েছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬০৮ | 4608 | ٤٦۰۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وتب ما أغنى عنه ماله وما كسب এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও। তার ধন-সম্পদ ও উপার্জন কোন কাজে আসেনি (১১১ঃ ১-২)
৪৬০৮। মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাত্‌হা প্রান্তরের দিকে চলে গেলেন এবং পাহাড়ে আরোহণ করে বলে উচ্চস্বরে ডাকলেন। কুরাইশরা তাঁর কাছে এসে সমবেত হল। তিনি বললেন, আমি যদি তোমাদেরকে বলি, শত্রু সৈন্যরা সকালে বা সন্ধ্যায় তোমাদের উপর আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে, তাহলে কি তোমরা আমাকে সত্য বলে বিশ্বাস করবে? তারা সকলেই বলল, হাঁ, আমরা বিশ্বাস করব। তখন তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে আসন্ন কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছি। এ কথা শুনে আবূ লাহাব বলল, তুমি কে এজন্যই আমাদেরকে একত্রিত করেছ? তোমাদের ধ্বংস হোক। তখন আল্লাহ তা’আলা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সূরা লাহাব নাযিল করলেন, ধ্বংস হোক আবূ লাহাবের দুই হস্ত এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও। তার ধন-সম্পদ এবং উপার্জন তার কোন কাজে আসেনি। অচিরে সে দগ্ধ হবে লেলিহান অগ্নিতে এবং তার স্ত্রীও, যে ইন্ধন বহন করে তার গলদেশে পাকান রজ্জু।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬০৯ | 4609 | ٤٦۰۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ سيصلى نارا ذات لهب “অচিরে সে দগ্ধ হবে লেলিহান অগ্নিতে।” (১১১ঃ ৩)
৪৬০৯। উমর ইবনু হাফ্‌স (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ লাহাব, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললো, তোমার ধ্বংস হোক, তুমি কি এ জন্যই আমাদেরকে একত্রিত করেছ? তখন ‏تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ‏ সূরাটি নাযিল হল।

অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وَامْرَأَتُهُ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ “এবং তার স্ত্রীও যে ইন্ধন বহন করবে” (১১১ঃ ৪) মুজাহিদ (রহ.) বলেন, حَمَّالَةَ الْحَطَبِ এমন মহিলা যে পরের নিন্দা করে বেড়ায়। فِيْ جِيْدِهَا حَبْلٌ مِّنْ مَّسَدٍ তার গলদেশে থাকবে পাকানো রশি। বলা হয় مَسَدٍপাকানো মোটা শক্ত দড়ি। (কারো কারো মতে) এর দ্বারা জাহান্নামের ঐ শৃঙ্খলকে বোঝানো হয়েছে, যা তার গলদেশে লাগানো হবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬১০ | 4610 | ٤٦۱۰

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা ইখলাস

বলা হয়, أَحَدٌ শব্দটি (যখন তৎপরবর্তী শব্দের সঙ্গে মিলিয়ে পড়া হবে তখন) تنوين পড়া হয় না। أَحَدٌ ও وَاحِدٌ সমার্থবোধক।

৪৬১০। আবূল ইয়ামন (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, “বনী আদম আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে; অথচ এরূপ করা তার জন্য সমীচীন হয়নি। বণী আদম আমাকে গালি দিয়েছে; অথচ এমন করা তার জন্য উচিত হয়নি। আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করার অর্থ হচ্ছে এই যে, সে বলে, আল্লাহ আমাকে যেমনিভাবে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন, অনুরূপভাবে তিনি আমাকে দ্বিতীয়বার জীবিত করবেন না। অথচ তাকে পুনরায় জীবিত করা অপেক্ষা প্রথম সৃষ্টি করা আমার জন্য সহজ ছিল না। আমাকে তার গালি দেয়ার অর্থ হচ্ছে এই যে, সে বলে, আল্লাহ্ তা’আলা সন্তান গ্রহণ করেছেন; অথচ আমি একক, কারো মুখাপেক্ষী নই। আমি কাউকে জন্ম দেইনি, আমাকেও জন্ম হয়নি এবং কেউ আমার সমতুল্য নয়”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬১১ | 4611 | ٤٦۱۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ الله الصمد “আল্লাহ্‌ কারো মুখপেক্ষী নন” (১১২ঃ ২) আরবীয় লোকেরা তাদের নেতাদেরকে صمد বলে থাকেন। আবু ওয়াইল (রহঃ) বলেন, এমন নেতাকে বলা হয় যার নেতৃত্ব চুড়ান্ত বা যার উপর নেতৃত্বের পরিসমাপ্তি ঘটে।
৪৬১১। ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন বলেন, আদম সন্তান আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছেন; অথচ এরূপ করা তার জন্য উচিত হয়নি। সে আমাকে গালি দিয়েছে; অথচ এমন করা তার পক্ষে সমীচীন হয়নি। আমার প্রতি তার মিথ্যা আরোপ করার মানে হচ্ছে এই যে, সে বলে, আমি পুনর্জীবিত করতে সক্ষম নই যেমনিভাবে আমি তাকে প্রথমে সৃষ্টি করেছি। আমাকে তার গালি দেয়া হচ্ছে এই যে, সে বলে, আল্লাহ্ তা’আলা সন্তান গ্রহণ করেছেন; অথচ আমি কারো মুখাপেক্ষী নই। আমি এমন এক সত্তা যে, আমি কাউকে জন্ম দেইনি, আমাকেও জন্ম দেয়নি এবং আমার সমতুম্য কেউ নেই। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলনেঃ كَفِيئًا – كفوا এবং كِفَاءً এবং সম অর্থবোধক শব্দ।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬১২ | 4612 | ٤٦۱۲

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা ফালাক

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, الْفَلَقُ রাত। غَاسِقٍ সূর্য অস্তমিত হওয়া। আরবীতে فَلَقِ ও فَرَقِ একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। তাই বলা হয়, أَبْيَنُ مِنْ فَرَقِ وَفَلَقِ الصُّبْحِ ভোরের আলো প্রকাশিত হওয়ার চেয়েও তা স্পষ্ট। وَقَبَ অন্ধকার সব জায়গায় প্রবেশ করে এবং আচ্ছন্ন করে ফেলে।

৪৬১২। কুতায়রা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … যির ইবনু হুবাইশ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি উবায় ইবনু কা’বকে مُعَوِّذَتَيْنِ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার পর তিনি বললেন, এ বিষয়ে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেছেন, আমাকে বলা হয়েছে, তাই আমি বলছি। উবায় ইবনু কা’ব (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন বলেছেন, আমরাও ঠিক তেমনি বলছি।

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা নাস
ইবনু ‘আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, الْوَسْوَاسِ এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, শিশু ভূমিষ্ঠ হলে শায়ত্বন এসে তাকে স্পর্শ করে। তারপর সেখানে আল্লাহর নাম নিলে শায়ত্বন পালিয়ে যায়। আর আল্লাহর নাম না নিলে সে তার অন্তরে জায়গা করে নেয়।
৪৬১৩। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … যির ইবনু হুবাইশ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উবায় ইবনু কা’ব (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, বললাম, হে আবূল মুনযির! আপনার ভাই ইবনু মাসউদ (রাঃ) তো এ ধরনের কথা বলে থাকেন। তখন উবায় (রাঃ) বললেন, আমি এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলে তিনি আমাকে বললেন, আমাকে বলা হয়েছে। তাই আমি বেলেছি। উবায় ইবনু কা’ব (রাঃ) বলেন, সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন আমরাও তাই বলি।

 

Exit mobile version