Site icon BnBoi.Com

সহিহ বুখারী ০২য় খণ্ড (৪৯৭-১৩১২)

Sahi Bukhari 2nd Part by Imam Bukhari

সহিহ বুখারী ০২য় খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

 

সালাতের ওয়াক্তসমূহ অধ্যায় (৪৯৭-৫৭৫)

হাদিস ৪৯৭

আব্দুল্লাহইবন মাসলামা (র.)…….ইবন শিহাব (র.) থেকে বর্ণিত,উমর ই্বন আবদুল আযীয (র.) একদিন কোন এক সালাত আদায়ে বিলম্ব করলেন। তখন উরওয়া ইব্ন যুবাইর (রা.) তাঁর কাছে গেলেন এবং তাঁর কাছে বর্ণনা করলেন যে, ইরাকে অবস্বানকালে মুগীরা ইব্ন শু’বা (রা.) একনিন এক সালাত আদায়ে বিলম্ব করেছিলেন। ফলে আবু মাসঊন আনসারী (রা.) তাঁর নিকট গিয়ে বললেন, হে মুগীরা ! একি ? তুমি কি অবগত নও যে, জিব্রাঈল (আ.) অবতরন করে সালাত আদায় করলেন, আর রাসূলুল্লাহ(সা.) ও সালাত আদায় করলেন। আবার তিনি সালাত আদায় করলেন। রাসূলুল্লাহ(সা.) ও সালাত আদায় করলেন। পুনরায় তিনি সালাত আদায় করলেন এবং রাসূলুল্লাহ(সা.) ও সালাত আদায় করলেন। আবার তিনি সালাত আদায় করলেন। রাসূলুল্লাহ(সা.) ও সালাত আদায় করলেন। পুনরায় তিনি সালাত আদায় করলেন এবং রাসূলুল্লাহ(সা.) ও সালাত আদায় করলেন। তারপর জিব্রাঈল (আ.) বললেন, এরই জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি। উমর (ইব্ন আবদুল আযীয) (র.) উরওয়া (র.)- কে বললেন, “তুমি যা রিওয়ায়াত করছ তা একটু ভেবে দেখ। জিব্রাঈলই (আ.) কি রাসূলুল্লাহ(সা.) এর জন্য সালাতের ওয়াক্ত নিধারন করে দিয়েছিলেন ?” উরওয়া (র.) বলেনঃ অবশ্য আয়িশা (রা.) আমার কাছে বর্ননা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এমন মুহূর্তে আসরের সালাত আদায় করতেন যে, সূর্যরশ্মি তখনও তাঁর হুজরার মধ্যে বিরাজমান থাকত। তবে তা উপরের দিকে উঠে যাওয়ার আগেই।

হাদিস ৪৯৮
কুতাইবা ইব্ন সায়ীদ (র.)……ইব্ন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আবদুল কায়স গোএের একটি দল রাসূলুল্লাহ্(সা.) – এর দরবারে এসে বলল, আপনার ও আমাদের মাঝে সে ‘রাবীআ’ গোএ থাকায় শাহ্রে হারাম (নিষিদ্ধ মাসসমূহ) ছাড়া অন্য কোন সময় আমারা আপনার নিকট আসতে পারি না। কাজেই আপনি আমাদের এমন কিছু নির্দেশ দিন যা আমরা নিজেরাও গ্রহণ করব এবং যারা পিছনে রয়েগেছে তাদের প্রতিও আহবান জানাব। রাসূলুল্লাহ্(সা.) বললেনঃ আমি তোমাদের চারটি বিষয়ে নির্দেশ দিচ্ছি, আর চারটি বিষয় থেকে তোমাদের নিষেধ করছি। নির্দেশিত বিষয়ের মাঝে একটি হল ‘ঈমান বিল্লাহ্’ (আল্লাহর প্রতি বিশাস স্থাপন করা)। তারপর তিনি তাদেরকে ব্যাখ্যা করে বুঝালেন যে, ‘ঈমান বিল্লাহ্র’ আর্থ হল, এ কথার সাক্ষ্য স্থাপন করা যে, এক আল্লাহ্ব্যতীত অন্য কোন ইলাহেই আর আমি আল্লাহর রাসূল (সা); সালাত কায়েম করা, য়াকাত দেওয়া, আর গনীমতের মালের এক-পঞ্চমাংশ দান করা। আর তোমাদের নিষেধ করছি কদুর পাএ, সবুজ রঙের মাটির পাএ, বিশেষ ধরনের তৈলাক্ত পাএ ও গাছের গুড়ি খোদাই করে তৈরী পাত্র ব্যবহার করতে।

৪৯৯
মুহাম্মাদ ইবনুল মছান্না (র.)……জারীর ইব্ন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্(সা.) – এর নিকট সালাত আদায়, যাকাত প্রদান এবং প্রত্যেক মুসলমানকে নসীহত করার বায়’আত গ্রহন করেছি।

হাদিস ৫০০
মুসাদ্দাদ (র.)……হুযাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা উমর (রা.) – এর কাছে বসা ছিলাম। তছন তিনি বললেন, ফিত্না সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ্(সা.) – এর বক্তব্য তোমাদের মধ্যে কে স্মরণ রেখেছ? হযরত হুযাইফা (রা.) বললেন, ‘যেমনি তিনি বলেছিলেন হুবহু তেমনিই আমি মনে রেখেছি’। উমর (রা.) বললেন, রাসূলুল্লাহ্(সা.) – এর বাণী স্মরণ রাখার ব্যপারে তুমি খুব দৃঢ়তার পরিচয় দিচ্ছ। আমি বললাম, (রাসূলুল্লাহ্(সা.) বলেছিলেন) মানুষ নিজের পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি, পাড়া-প্রতিবেশীদের ব্যাপারে যে ফেত্নায় পতিত হয়-সালাত, সিয়াম, সাদাকা, (ন্যায়ের) আদেশ ও (অন্যায়ের) নিষেধ তা দূরীভূত করে দেয়। হযরত উমর(রা.) বললেন, তা আমার উদ্দেশ্যে নয়। বরং আমি সেই ফিত্নার কথা বলছি, যা সমুদ্র তরঙ্গের ন্যায় ভয়াল হবে। হুযাইফা (রা.) বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! সে ব্যাপারে আপনার ভয়ের কোন কারন নেই। কেননা, আপনার ও সে ফিত্নার মাঝখানে একটি বন্ধ দরজা রয়েছে। হযরত উমর (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, সে দরজাটি ভেঙ্গে ফেলা হবে, না খুলে দওয়া হবে? হুযাইফা (রা.) বললেন, ভেঙ্গে ফেলা হবে। উমর (রা.) বললেন, তাহলে তো আর কোন দিন তা বন্ধ করা যাবে না। [হুযাইফা (রা.) – এর ছাএ শাকীক (র.) বললেন], আমরা জিজ্ঞাসা করতে আমার ভয় পাছিলাম। তাই, আমরা মাসরূক (র.) – কে বললাম এবং তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, দরজাটি উমর (রা.) নিজেই।

হাদিস ৫০১
কুতাইবা (র.)……আবদুল্লাহ্ ইবন মাসঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি জনৈক মহিলাকে চুম্বন করে বসে। পরে সে রাসূলুল্লাহ্(সা.)- এর আছে এসে বিষয়টি তাঁর গোচরীভূত করে। তখন আল্লাহ্তা’আলা আয়াত নাযিল করেনঃ “দিনের দু’প্রান্তে-সকাল ও সন্ধ্যায় এবং রাতের প্রথম অংশে সালাত কায়েম কর। নিশ্চয়ই ভাল কাজ পাপাচারকে মিটিয়ে দেয়”। লোকটি জিজ্ঞাস করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্(সা.)! এ কি শুধু আমার বেলায়? রাসূলুল্লাহ্(সা.) বলেছেনঃ আমার সকল উম্মাতের জন্যই।

হাদিস ৫০২
আবুল ওয়ালীদ হেশাম ইব্ন আবদুল মালেক (র.)…..আবূ আমর শাবানী (র.) থেকে বর্ণিত, তিনি আবদুল্লাহ্ইব্ন মাসঊদ (রা.)- এর বাড়ীর দেকে ইশারা করে বলেন, এ বাড়ীর মালিক আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ্(সা.)- কে জিজ্ঞাস করলাম, কোন্আমল আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়? তিনি বললেন, ‘যথাসময়ে সালাত আদায় করা। ইবন্মাসঊদ (রা.) পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, এরপর কোন্টি? তিনি বললেন, এরপর পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার। ইবন্মাসঊদ (রা.) আবার জিজ্ঞাস করলেন, এরপর কোন্টি? রাসূলুল্লাহ্(সা.) বললেন, এরপর জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ্(আল্লাহর পথে জিহাদ)। ইব্ন মাসঊদ (রা.) বলেন, এগুলো তো রাসূলুল্লাহ্(সা.) আমাকে বলেছেনই, যদি আমি আরও বেশী জানতে চাইতাম, তাহলে তিনি আরও বলতেন।

হাদিস ৫০৩
ইব্রাহীম ইব্ন হামযা (র.) …… আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ্(সা.) – কে বলতে শুনেছেন, “বলত যদি তোমাদের কারো বাড়ীর সামনে একটি নদী থাকে, আর সে তাতে প্রত্যহ পাঁচবার গোসল করে, তাহলে কি তার দেহে কোন ময়লা থাকবে?” তারা বললেন, তার দেহে কোনরূপ ময়লা বাকী থাকবে না। রাসূলুল্লাহ্(সা.) বললেনঃ এ হল পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের উদাহরণ। এর মাধ্যমে আল্লাহ্তা’আলা (বান্দার) গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেন।

হাদিস ৫০৪
মূসা ইব্ন ইসমায়ীল (র.)…..আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আজকাল কোন জিনিসই সে অবস্থায় পাই না, যেমন নবী (সা.) – এর যুগে ছিল। প্রশ্ন করা হল, সালাতও কি? তিনি বললেন, সে ক্ষেএেও যা হক নষ্ট করার তা-কি তোমরা করনি?

হাদিস ৫০৫
আমর ইবনে যুরারা (র.)……যুহরী (র.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি দামেশ্কে আনাস ইব্ন মালিক (রা.)-এর নিকট উপস্থিত হলাম, তিনি তখন কাঁদছিলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ্(সা.)-এর যুগে যা কেছু পেয়েছি তার মধ্যে কেবলমাএ সালাত ছাড়া আর কিছুই বহাল নেই। কিন্তু সালাতকেও নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। বাক্র (র.) বলেন, আমার কাছে মুহাম্মাদ ইব্ন বক্র বুরসানী (র.) উসমান ইবন্আবূ রাওওয়াদ (র.) সূএে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

হাদিস ৫০৬
মুসলিম ইবন্ইব্রাহীম (র.) ……আনাস ইব্ন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন সালাতে দাঁড়ায়, তখন সে তার প্রতিপালকের সঙ্গে গোপনে কথা বলে। কাজেই, সে যেন ডানদিকে থুথু না ফেলে, তবে (প্রয়োজনে) বাম পায়ের নীচে ফেলতে পারে। তবে সায়ীদ (র.) কাতাদা (র.) থেকে বর্ণনা করেছেন, সে যেণ সামনের দিকে থুথু না ফেলে, কিন্তু বামদিকে অথবা পায়ের নীচে ফেলতে পারে। আর শু’বা (র.) বলেন, সে যেন কিব্লার দিকে অথবা ডান দিকে থুথু না ফেলে, কিন্তু বামদিকে অথবা পায়ের নীচে ফেলতে পারে। আর হুমাইদ (র.) আনাস (রা.) সূএে নবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, সে যেন কিব্লার দিকে বা ডানদিকে থুথু না ফেলে, কিন্তু বামদিকে অথবা পায়ের নীচে ফেলতে পারে।

হাদিস ৫০৭
হাফ্সা ইব্ন উমর (র.)……আনাস ইব্ন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেনঃ তোমরা সিজদায় মধ্যপন্থা অবলম্বন কর। তোমাদের কেউ যেন তার বাহুদ্বয় বিছিয়ে না দেয় কুকুরের মত। আর যদি থুথু ফেলতে হয়, তাহলে সে যেন সমনে বা ডানে না ফেলে। কেননা, সে তখন তার প্রতিপালকের সঙ্গে গোপন কথায় লিপ্ত থাকে।

হাদিস ৫০৮
আয়্যূব ইব্ন সুলাইমান (র.)……আবূ হুরায়রা ও আবদুল্লাহ্ইব্ন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্(সা.) বলেছেনঃ যখন গরমের প্রচণ্ডতা বৃদ্ধি পায়, তখন গরম কমলে সালাত আদায় করবে। কেননা, গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের নিঃশ্বাসের অংশ।

হাদিস ৫০৯
মুহাম্মদ ইব্ন বাশা্শার (র.)…… আবূ যার্র (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সা.) – এর মুআয্যিন আযান দিলে তিনি বললেনঃ ঠান্ডা হতে দাও। আথবা তিনি বললেন, অপেক্ষা কর, অপেক্ষা কর। তিনি আরও বলেন, গরমের প্রণ্ডতা জাহান্নামের নিঃশ্বাসের ফলেই সৃষ্টি হয়। কাজেই গরম যখন বেড়ে যায় তখন গরম কমলেই সালাত আদায় করবে। এমনকি (বিলম্ব করতে করতে বেলা এতটুকু গড়িয়ে গিয়েছিল যে) আমরা টিলাগুলোর ছায়া দেখতে পেলাম।

হাদিস ৫১০
আলী ইব্ন আবদুল্লাহ্মাদীনী (র.)……আবূ হূরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেনঃ যখন গরম বৃদ্ধি পায় তখন তোমরা তা কমে এলে (যুহরের) সালাত আদায় করো। কেননা, গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের উওাপের অংশ। (তারপর তিনি বলেন), জাহান্নাম তার প্রতিপালকের কাছে এ বলে নালিশ করেছিল, হে আমার প্রতিপালক! (দহনের প্রচণ্ডতায়) আমার এক অংশ আর এক অংশকে হ্রাস করে ফলেছে। ফলে আল্লাহ্তা’আলা তাকে দু’টি শ্বাস ফেলার অনুমতি দিলেন, একটি শীতকালে আর একটি গ্রীষ্মকালে। আর সে দু’টি হলো, তোমরা গ্রীষ্মকালে যে প্রচণ্ঠ উত্তাপ এবং শীতকালে যে প্রচণ্ড থান্ডা অনুভব কর তাই।

হাদিস ৫১১
উমর ইব্‌ন হাফস (র.)……আবূ সায়ীদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সা.) বলেছেনঃ যুহরের সালাত গরম কমলে আদায় কর। কেননা, গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ থেকে। সুফিয়ান, ইয়াহ্ইয়া এবং আবূ আওয়ানা (র.) আ’মাশ (র.) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

হাদিস ৫১২
আদম ইব্‌ন আবূ ইয়াস (র.)……আবূ যার্র (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সফরে আমরা রাসূলুল্লাহ্(সা.)- এর সঙ্গে ছিলাম। এক সময় মুয়ায্যিন যুহরের আযান দিতে চেয়েছিল। তখন নবী (সা.) বললেনঃ গরম কমতে দাও। কিছুক্ষন পর আবার মুয়ায্যিন আযান দিতে চাইলে নবী (সা.) (পুনরায়) বললেনঃ গরম কমতে দাও। এভাবে তিনি (সালাত আদায়ে) এত বিলম্ব করলেন যে, আমার টিলাগুলোর ছায়া দেখতে পেলাম। তারপ্র নবী (সা.) বললেনঃ গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ থেকে। কাজেই গরম প্রচন্ড হলে উত্তাপ কমার পর সালাত আদায় করো। ইব্‌ন আব্বাস (রা.) বলেন, হাদীসে শব্দটি ঝুঁকে পড়া, গড়িয়ে পড়ার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

হাদিস ৫১৩
আবুল ইয়ামান (র.)……আনাস ইবন্মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন সূয ঢলে পড়লে রাসূলুল্লাহ্(সা.) বেরিয়ে এলেন এবং যুহরের সালাত আদায় করলেন। তারপর মিম্বরে দাঁড়িয়ে কিয়ামত সম্বন্ধে আলোচনা করেন এবং বলেন যে, কেয়ামতে বহু ভয়াঙ্ক ঘটনা ঘটবে। এরপর তিনি বলেন, আমাকে কেউ কোন বিষয়ে প্রশ্ন করতে চাইলে করতে পারে। আমি যতক্ষন এ বৈঠকে আছি, এর মধ্যে তোমরা আমাকে যা কিছু জিজ্ঞাসা করবে আমি তা জানিয়ে দিব। এ শুনে লোকেরা খুব কাঁদতে শুরু করল। আর তিনি বলতে থাকলেনঃ আমাকে প্রশ্ন কর, আমাকে প্রশ্ন কর। এ সময় আব্দুল্লাহ্ইব্‌ন হুযাইফা সাহমী (রা.) দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, আমার পিতা কে? রাসূলুল্লাহ্(সা.) বললেন, তোমার পিতা ‘হুযাইফা’। এরপর তিনি অনেকবার বললেনঃ আমাকে প্রশ্ন কর। তখন হযরত উমর (রা.) নতজানু হয়ে বসে বললেন, “আমরা আল্লাহ্কে প্রতিপালক হিসাবে। ইসলামকে দীন হিসাবে এবং মুহাম্মদ (সা.) – কে নবী হিসাবে হ্রহণ করে সন্তুষ্ট। এরপর নবী (সা.) নীরব থাকলেন। কিছুক্ষণ পর বললেনঃ এক্ষনি এ দেওয়ালের পাশে জান্নাত ও জাহান্নাম আমার সামনে তুলে ধরা হয়েছিল; এত উত্তম ও এত নিকৃষ্টের মত কিছু আমি আর দেখিনি।

হাদিস ৫১৪
হাফ্সা ইব্‌ন উম্র (র)……আবূ বারযা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) এমন সময় ফজরের সালাত আদায় করতেন, যখন আমাদের একজন তার পাশব্বতী আপরজনকে চিনতে পারত। আর এ সালাতে তিনি ষাট থেকে একশ’ আয়াত তিলাওয়াত করতেন এবং যুহরের সালাত আদায় করতেন যখন সূর্য পশিম দিকে ঢলে পড়ত। তিনি আসরের সালাত আদায় করতেন এমন সময় যে, আমাদের কেউ মদীনার শেষ প্রান্তে পৌছে আবার ফেরে আসতে পারত, তখনও সূর্য সতেজ থাকত। রাবী বলেন, মাগরিব সম্পর্কে তিনি [আবূ বারযা (রা.] কী বলেছিলেন,আমি তা ভুলে গেছি। আর ইশার সালাত রাতের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত পিছিয়ে নিতে তিনি কোনরূপ দ্ধিধাবোধ করতেন না। তারপর রাবী বলেন, রাতের অর্ধাংশ পর্যন্ত পিছিয়ে নিতে অসুবিধা বোধ করতেন না। আর মু’আয (র.) বর্ণনা করেন যে, শু’বা (র.) বলেছেন, পরে আবুল মিনহালের (র.) সংগে সাক্ষাত হয়েছিল, সে সময় তিনি বলেছেন, রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বলম্ব করতে অসুবিধা বোধ করতেন না।

হাদিস ৫১৫
মুহাম্মদ ইব্‌ন মুকাতিল (র.)……আনাস ইব্‌ন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ্(সা.) – এর পিছনে গরমের সময় সালাত আদায় করতাম, তখন উত্তাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কাপড়ের উপর সিজদা করতাম।

হাদিস ৫১৬
আবূ নু’মান (র.)……ইব্‌ন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সা.) মদীনা শরীফে অবস্থানকালে (একবার) যুহর ও আসরের আট রাকাআত এবং মাগরিব ও ইশার সাত রাকাআত একএে মিলেয়ে আদায় করেন। আয়্যূব (র.) বলেন, সম্ভবত এটা বৃষ্টির রাতে হয়েছিল। জাবির (র.) বললেন, সম্ভবত তাই।

হাদিস ৫১৭
ইব্রাহীম ইব্‌ন মুনযির (র.)…… আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এমন সময় আসরের সালাত আদায় করতেন যে, তখনো সূর্যরশ্মি ঘরের বাইরে যায়নি।

হাদিস ৫১৮
কুতাইবা (র.)…..আয়িশা (রা.) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সা.) এমন সময় আসরের সালাত আদায় করেছেন যে, সূর্যরশ্মি তখনো তাঁর ঘরের মধ্যে ছিল, আর ছায়া তখনো তাঁর ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েনি।

হাদিস ৫১৯
আবূ নু’আইম (র.)……আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) আসরের সালাত আদায় করতেন, আর সূর্যকিরণ তখনো আমার ঘরে থাকত। সালাত আদায় করার পড়ও পশ্চিমের ছায়া ঘরে দৃষ্টিগোচর হত না। আবূ আবদুল্লাহ্[ইমাম বুখারী (র.)] বলেন, ইমাম মালিক, ইয়াহ্ইয়া ইব্‌ন সাঈদ, শুআইব ও ইব্‌ন আবূ হাফস্(র.) উক্ত সনদে এ হাদীসটির বর্ণনায়’ সূর্যরশ্মি আমার ঘরের ভিতরে থাকত, ঘরের মেঝে ছায়া নেমে আসেনি’ এরূপ বলেছেন।

হাদিস ৫২০
মুহাম্মদ ইব্‌ন মুকাতিল (র.)…..সায়্যার ইব্‌ন সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি ও আমার পিতা আবূ বারযা আসলামী (রা.) – কাছে গেলাম। আমার পিতা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, রাসূলুল্লাহ্(সা.) ফরয সালাতসমূহ কিভাবে আদায় করতেন? তিনি বললেন, আল-হাজীর, যাকে তোমরা আল-উলা বা যুহর বলে থাক, তা তিনি আদায় করতেন যখন সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ত। আর আসরের সালাত এমন সময় আদায় করতেন যে, তারপর আমাদের কেউ মদীনার শেষ প্রন্তে তার ঘরে ফিরে যেতো সূর্য তখনও সতেজ থাকতো। মাগরিব সম্পর্কে তিনি কি বলেছিলেন তা আমি ভুলে গেছি। আর ইশার সালাত যাকে তোমরা ‘আতামা’ বলে থাক, তা তিনি বিলম্বে আদায় করা পসন্দ করতেন। আর তিনি ইশার সালাতের আগে নিদ্রা যাওয়া এবং পরে কথাবার্তা বলা অপসন্দ করতেন। তিনি ফজরের সালাত এমন সময় সমাপ্ত করতেন যখন প্রত্যেকে তার পাশ্ববর্তী ব্যক্তিকে চিনতে পারত। এ সালাতে তিনি ষাট থেকে একশ’ আয়াত তেলাওয়াত করতেন।

হাদিস ৫২১
আবদুল্লাহ্ইব্‌ন মাসলামা (র.)……আনাস ইব্‌ন মালিক(রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ্(সা.)- এর সঙ্গে আসরের সালাত আদায় করতাম। সালাতের পর লোকেরা আওফ গোএের মহল্লায় গিয়ে তাদেরকে সালাত আদায় করা অবস্থায় পেত।

হাদিস ৫২২
মুহাম্মদ ইব্‌ন মুকাতিল (র.)……আবূ উমামা(রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমারা উমর ইব্‌ন আযীয (র.)-এর সঙ্গে যুহরের সালাত আদায় করলাম। তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে আনাস ইব্‌ন মালিক(রা.)- এর কাছে গেলাম। আমরা গিয়ে তাঁকে আসরের সালাত আদায়ে রত পেলাম। আমি তাঁকে বললাম চাচা ! এ কোন সালাত যা আপনি আদায় করলেন? তিনি বললেন, আসরের সালাত আর এ হলো রাসূলুল্লাহ্(সা.)-এর সালাত, যা আমরা তাঁর সাথে আদায় করতাম।

হাদিস ৫২৩
আবলুল্লাহ্ইব্‌ন ইউসুফ (র.)……আনাস ইব্‌ন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,আমরা আসরের সালাত আদায় করতাম, তারপর আমাদের কোন গমনকারী কুবার দিকে যেত এবং সূর্য যথেষ্ট উপরে থাকতেই সে তাদের কাছে পৌঁছে যেত।

হাদিস ৫২৪
আবুল ইয়ামান (র.)……আনাস ইব্‌ন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সা.) আসরের সালাত আদায় করতেন, আর সূর্য তখনও যথেষ্ট উপরে উজ্জ্বল অবস্থায় বিরাজমান থাকত। সালাতের পর কোন গমনকারী ‘আওয়ালী’র’ দিকে রওয়ানা হয়ে তাদের কাছে পৌঁছে যেত, আর তখনও সূর্য উপরে থাকত। আওয়ালীর কোন কোন অংশ ছিল মদীনা থেকে চার মেইল বা তার কাছাকাছি দূরত্বে।

হাদিস ৫২৫
আব্দুল্ললাহ্ইব্‌ন ইউসুফ (র.)……আবদুল্লাহ্ইব্‌ন উমর(রা.) থেকে বর্ণিত, সাসূলুল্লাহ্(সা.) বলেছেনঃ যদি কোন ব্যক্তির আসরের সালাত ছুটে যায়, তাহলে যেন তার পরিবার-পরিজন ও মাল-সম্পদ সব কিছুই ধ্বংস হয়ে গেল। আবূ আবদুল্লাহ্(ইমাম বুখারী বলেন, (আরবী পরিভাষায়)) বাক্যটি ব্যবহার করা হয় যখন কেউ কাউকে হত্যা করে অথবা মাল-সম্পদ ছিনিয়ে নেয়।

হাদিস ৫২৬
মুসলিম ইব্‌ন ইব্রাহীম (র.)……আবূ মালীহ্(রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক যুদ্ধে আমরা হযরত বুরাইদা (রা.) – এর সঙ্গে ছিলাম। দিনটি ছিল মেঘাচ্ছন্ন। তাই বুরাইদা (রা.) বলেন, শীঘ্র আসরের সালাত আদায় করে নাও। কারণ নবী (সা.) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আসরের সালাত ছেড়ে দেয় তার আমল বিনষ্ট হয়ে যায়।

হাদিস ৫২৭
হুমাইদী (র.)……জরীর ইব্‌ন আবদুল্লাহ্(রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা নবী (সা.) – এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি রাতে (পূর্ণিমার) চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ ঐ চাঁদকে তোমরা যেমন দেখছ, ঠিক তেমনি অচিরেই তোমাদের প্রতিপালককে তোমরা দেখতে পাবে। তাঁকে দেখতে তোমরা কোন ভীড়ের সম্মুখীন হবে না। কাজেই সূর্য উদয়ের এবং অস্ত যাওয়ার আগের সালাত (শয়তানের প্রভাবমুক্ত হয়ে) আদায় করতে পারলে তোমরা তাই করবে। তারপর তিনি নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করলেন, “কাজেই তোমার প্রতিপালকের প্রশ্নংসার তাসবীহ্পাঠ কর সূর্য উদয়ের আগে ও অস্ত যওয়ার আগে।” ইসমাঈল (র.) বলেন, এর অর্থ হল – এমনভাবে আদায় করার চেষ্টা করবে যেন কখনো ছুটে না যায়।

হাদিস ৫২৮
আবদুল্লাহ্ইব্‌ন ইউসুফ (র.)……আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, সাসূলুল্লাহ্(সা.) বলেছেনঃ ফিরিশ্তাগণ পালা বদল করে তোমাদের মাঝে আগমন করেন; একদল দিনে, একদল রাতে। আসর ও ফজরের সালাতে উভয় দল একএ হন। তারপর তোমাদের মাঝে রাত যাপনকারী দলটি উঠে যান। তখন তাদের প্রতিপালক তাদের জিজ্ঞাসা করেন, আমার বান্দাদের কোন অবস্থায় রেখে আসলে? অবশ্য তিনি নিজেই তাদের ব্যাপারে সর্বাধিক পরিজ্ঞাত। উত্তরে তাঁরা বলেন; আমারা তাদের সালাতে রেখে এসেছি, আর আমরা যখন তাদের কাছে গিয়েছিলাম তখনও তারা সালাতে রত ছিলেন।

হাদিস ৫২৯
আবূ ন’আইম (র.)……আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সা.) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে আসরের সালাতের এক সিজ্দা পায়, তাহলে সে যেন সালাত পূর্ণ করে নেয়। আর যদি সূর্য উদিত হওয়ার আগে ফজরের সালাতের এক সিজ্দা পায়, তাহলে সে যেন সালাত পূর্ণ করে নেয়।

হাদিস ৫৩০
আবদুল আযীয ইব্‌ন আবদুল্লাহ্(র.)…..সালিম ইব্‌ন আবদুল্লাহ্(র.) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি সাসূলুল্লাহ্(সা.) – কে বলতে শুনেছেন যে, পুর্বেকার উম্মাতের স্থায়িত্বের তুলনায় তোমাদের স্থায়িত্ব হল আসর থেকে নিয়ে সূর্য অস্ত যাওয়ার মধ্যবর্তী সময়ের অনুরূপ। তাওরাত অনুসারীদেরকে তাওরাত দেওয়া হয়েছিল। তারা তদনুসারে কাজ করতে লাগল; যখন দুপুর হলো, তখন তারা অপারগ হয়ে পড়ল। তাদের এক এক ‘কীরাত’ করে পারিশ্রমিক প্রদান করা হয়। তারপর ইন্জীল অনুসারীদেরকে ইন্জীল দেওয়া হল। তারা আসরের সালাত পর্যন্ত কাজ করে অপারগ হয়ে পড়ল। তাদেরকে এক এক ‘কীরাত’ করে পারিশ্রমিক দেওয়া হল। তারপর আমাদেরকে কুরাআন দেওয়া হল। আমারা সূর্যাস্ত পর্যন্ত কাজ করলাম। আমদের দুই দুই ‘কীরাত’ করে দেওয়া হল। এতে উভয় কিতাবী সম্প্রদায় বলল, হে আমাদেরে প্রতিপাল্ক! তাদের দুই দুই ‘কীরাত’ করে দান করেছেন, আর আমাদেরে দিয়েছেন এক এক কীরাত করে; অথচ আমলের দিক দিয়ে আমরাই বেশী। আল্লাহ্তা’আলা বলেলেনঃ তোমাদের পারিশ্রমিকের ব্যাবারে আমি কি তোমাদের প্রতি কোনরূপ যুলুম করেছি? তারা বলল, না। তখন আল্লাহ্তা’আলা বললেনঃ এ হলো, আমার অনুগ্রহ যাকে ইচ্ছা তাকে দেই।

হাদিস ৫৩১
আবূ কুরাইব (র.)……আবূ মূসা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, মুসলিম, ইয়াহূদী ও নাসারাদের উদাহারণ হল এরূপ, এক ব্যক্তি একদল লোককে কাজে নিয়োগ করল, তারা তার জন্য রাত পর্যন্ত কাজ করবে। কিন্তু অর্ধদিবস পর্যন্ত কাজ করার পর তারা বলল, আপনার পারিশ্রমিকের আমাদের কোন প্রয়োজন নেই। সে ব্যক্তি অন্য আরেক দল লোককে কাজে নিয়োগ করল এবং বলল, তোমরা দিনের বাকী অংশ কাজ কর, তোমরা আমার নির্ধারিত পারিশ্রমিক পাবে। তারা কাজ করতে শুরু করলে। যখন আসরের সালাতের সময় হল, তখন তারা বলল, আমরা যা কাজ করেছি তা আপনার জন্য রেখে গেলাম। তারপর সে ব্যক্তি আরেক দল লোককে কাজে নিয়োগ করল। তারা সূর্যাস্ত পর্যন্ত দিনের বাকী অংশ কাজ করল এবং সে দুই দলের পূর্ণ পারিশ্রমিক হাসিল করে নিল।

হাদিস ৫৩২
মুহাম্মদ ইব্‌ন মিহারান (র.)……রাফি’ ইব্‌ন খাদীজ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী (সা.) – এর সঙ্গে মাগরিবের সালাত আদায় করে এমন সময় ফিরে আসতাম যে, আমাদের কেউ (তীর নিক্ষেপ করলে) নিক্ষিপ্ত তীর পতিত হওয়ার স্থান দেখতে পেত।

হাদিস ৫৩৩
মুহাম্মদ ইব্‌ন বাশ্শার (র.)…..মুহাম্মদ ইব্‌ন আমর ইব্‌ন হাসান ইব্‌ন আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, মুহাম্মদ ইব্‌ন আমর(র.) বলেন, হাজ্জাজ (ইব্‌ন ইউসুফ) (মদীনা শরীফে) এলে আমরা জাবির ইব্‌ন আব্দুল্লাহ্(রা.)-কে সালাতের ওয়াক্ত সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম, (কেননা, হাজ্জাজ ইব্‌ন ইউসুফ বিলম্ব করে সালাত আদায় করতেন)। তিনি বললেন, নবী (সা.) যুহরের সালাত প্রচণ্ড গরমের সময় আদায় করতেন। আর আসরের সালাত সূর্য উজ্জল থাকতে আদায় করতেন, মাগরিবের সালাত সূর্য অস্ত যেতেই আর ইশার সালাত বিভিন্ন সময়ে আদায় করতেন। যদি দেখতেন, সবাই সমবেত হয়েছেন, তাহলে সাকাল সকাল আদয় করতেন। আর যদি দেখতেন, লোকজন আসতে দেরী করছে, তাহলে বিলম্বে আদায় করতেন। আর ফজরের সালাত তাঁরা কিংবা রাসূলুল্লাহ্(সা.) অন্ধকার থাকতে আদায় করতেন।

হাদিস ৫৩৪
মাক্কী ইবনে ইব্রাহীম (র.)……সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সূর্য পর্দার আড়ালে ঢাকা পড়ে যাওয়ার সাথে সাথেই আমরা নবী (সা.) – এর সঙ্গে মাগরিবের সালাত আদায় করতাম।

হাদিস ৫৩৫
আদম (র.)…..ইব্‌ন আব্বাস (রা.) বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) (মাগরিব ও ইশার) সাত রাকআত ও (যুহর ও আসরের) আট রাকাআত একসাথে আদায় করেছেন।

হাদিস ৫৩৬
আবু মা’মার আবদুল্লাহ্ইব্‌ন আমর (র.)……আবদুল্লাহ্মুযানী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সা.) বলেছেনঃ বেদুঈনরা মাগরিবের সালাতের নামের ব্যাপারে তোমাদের উপর যেন প্রভাব বিস্তার না করে। রাবী (আবদুল্লাহ্মুযানী (রা.)) বলেন, বেদুঈনরা মাগরিবকে ইশা বলে থাকে।

হাদিস ৫৩৭
আবদান (র.)……আবদুল্লাহ্(রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে রাসূলুল্লাহ্(সা.) আমাদের নিয়ে ইশার সালাত আদায় করেন, যে সালাতকে লোকেরা ‘আতামা’ বলে থাকে। তারপর তিনি ফিরে আমাদের দিকে মুখ করে বললেন, আজকের এ রাত সম্পর্কে তোমারা জান কি? এ রাত থেকে নিয়ে একশ’ বছরের শেষ মাথায় আজ যারা ভূপৃষ্ঠে আছে তাদের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না।

হাদিস ৫৩৮
মুসলিম ইব্‌ন ইব্রাহীম (র.)……মুহাম্মাদ ইব্‌ন আমর ইব্‌ন হাসান ইব্‌ন আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহ্(রা.)-কে নবী (সা.)-এর সালাত সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, মধ্যাহ্ন গড়ালেই নবী (সা.) যুহরের সালাত আদায় করতেন এবং সূর্য সতেজ থাকতেই আসর আদায় করতেন, আর সূর্য আস্ত গেলেই মাগরিব আদায় করতেন, আর লোক বেশী হয়ে গেলে ইশার সালাত তাড়াতাড়ি আদায় করতেন এবং লোক কম হলয়ে দেরী করতেন, আর ফজরের সালাত অন্ধকার থাকতেই আদায় করতেন।

হাদিস ৫৩৯
ইয়াহ্ইয়া ইব্‌ন বুকাইর (র.)…..আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ইশার সালাত আদায় করতে বিলম্ব করলেন। এ হলো ব্যাপকভাবে ইসলাম প্রসারের আগের কথা। (সালাতের জন্য) তিনি বেরিয়ে আসেননি, এমন কি উমর (রা.) বললেন, মহিলা ও শিশুরা ঘুমিয়ে পড়েছে।এরপর তিনি বেরিয়ে এলেন এবং মসজিদের লোকদের লক্ষ্য করে বললেনঃ “তোমারা ব্যতীত যমীনের অধিবাসীদের কেউ ইশার সালাতের জন্য অপেক্ষায় নেই।”

হাদিস ৫৪০
মুহাম্মদ ইব্‌ন আলা (র.)……আবূ মূসা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ও আমার সংগীরা-যারা (আবিসিনিয়া থেকে) জাহাজ যোগে আমার সংগে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন- বাকী’য়ে বুতহানের একটি মুক্ত এলাকায় বসবাসরত ছিলাম। তখন নবী (সা.) থাকতেন মদীনায়। বুতহানের অধিবাসীরা পালাক্রমে একদল করে প্রতি রাতে এশার সালাতের সময় রাসূলুল্লাহ্(সা.) – এর খিদমতে আসতেন। পালাক্রমে ইশার সালাতের সময় আমি ও আমার কতিপয় সঙ্গী নবী (সা.) – এর কাছে হাযির হলাম। তখন তিনি কোন কাজে খুব ব্যস্ত ছিলেন, ফলে সালাত আদায়ে বিলম্ব করলেন। এমন কি রাত অর্ধেক হয়ে গেল। তারপর নবী (সা.) বেরিয়ে এলেন এবং সবাইকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষে তিনি উপস্থিত ব্যক্তিদেরকে বললেনঃ প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্থানে বসে যাও। তোমাদের সুসংবাদ দিছি যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য এটি এক নিয়ামত যে, তোমরা ব্যতীত মানুষের মধ্যে কেউ এ মুহূর্তে সালাত আদায় করছে না। কিংবা তিনি বলেছিলেনঃ তোমরা ব্যতীত কোন উম্মাত এ সময় সালাত আদায় করেনি। রাসূলুল্লাহ্(সা.) কোন বাক্যটি বলেছিলেন বর্ণনাকারী তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। হযরত আবূ মূসা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সা.) – এর এ কথা শুনে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত মনে বাড়ী ফিরলাম।

হাদিস ৫৪১
মুহাম্মদ ইব্‌ন সালাম (র.)……আবূ বারযা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সা.) ইশার পূর্বে নিদ্রা যাওয়া এবং পরে কথাবার্তা বলা অপসন্দ করতেন।

হাদিস ৫৪২
আয়্যূব ইব্‌ন সুলাইমান (র.)……আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ্(সা.) ইশার সালাত আদায় করতে দেরী করলেন। উমর (রা.) তাঁকে বললেন, আস্সালাত। নারী ও শিশুরা ঘুমিয়ে পড়েছে। তারপর তিনি বেরিয়ে আসলেন এবং বললেনঃ তোমরা ব্যতীত পৃথিবীর আর কেউ এ সালাতের জন্য অপেক্ষা করছে না। (রাবী বলেন) তখন মদীনা ব্যতীত অন্য কোথাও সালাত আদায় করা হত না। (তিনি আরও বলেন যে) পশ্চিম আকাশের ‘শাফাক’ অন্তর্হিত হওয়ার পর থেকে রাতের প্রথম এক-তৃতীয়াংশের মধ্যে তাঁরা ইশার সালাত আদায় করতেন।

হাদিস ৫৪৩
মাহমূদ (র.)……আব্দুল্লাহ্ইব্‌ন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত যে, এক রাতে কর্মব্যস্ততার কারণে রাসূলুল্লাহ্(সা.) ইশার সালাত আদায়ে দেরী করলেন, এমন কি আমরা মসজিদে ঘুমিয়ে পড়লাম। তারপর জেগে উঠে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। এরপর আবার জেগে উঠলাম। তখন রাসূলুল্লাহ্(সা.) আমাদের কাছে এলেন, তারপর বললেনঃ তোমরা ব্যতীত পৃথিবীর আর কেউ এ সালাতের জন্য অপেক্ষা করছে না। ঘুম প্রবল হওয়ার কারণে এশার সালাত বিনষ্ট হওয়ার আশংকা না থাকলে ইব্‌ন উমর (রা.) তা আগেভাগে বা বিলম্ব করে আদায় করতে দ্বিধা করতেন না। কখনও কখনও তিনি ইশার আগে নিদ্রাও যেতেন। ইব্‌ন জুরাইজ (র.) বলেন, এ বিষয়ে আমি আতা (র.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, আমি ইব্‌ন আব্বাস (রা.)-কে বলতে শুনেছি যে, এক রাতে রাসূলুল্লাহ্(সা.) ইশার সালাত আদায় করতে দেরী করেছিলেন, এমন কি লোকজন একবার ঘুমিয়ে জেগে উঠল, আবার ঘুমিয়ে পড়ে জাগ্রত হল। তখন উমর ইব্‌ন খাত্তাব (রা.) উঠে গিয়ে রাসূলুল্লাহ্(সা.)-কে বললেন, ‘আস-সালাত’। আতা(র.) বলেন যে, ইব্‌ন আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, তারপর আল্লাহর নবী (সা.) বেরিয়ে এলেন-যেন এখনো আমি তাঁকে দেখছি- তাঁর মাথা থেকে পানি টপ্কে পড়ছিল এবং তাঁর হাত মাথার উপর ছিল। তিনি এসে বললেনঃ যদি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর হবে বলে মনে না করতাম, তাহলে তাদেরকে এভাবে (বিলম্ব করে) ইশার সালাত আদায় করার নির্দেশ দিতাম। ইব্‌ন জুরাইজ (র.) বলেন, ইব্‌ন আব্বাস (রা.) – এর বর্ণনা অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ্(সা.) যে মাথায় হাত রেখেছিলেন তা কিভাবে রেখেছিলেন, বিষয়টি সুস্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করার জন্য আতা (র.)-কে বললাম। আতা (র.) তাঁর আঙ্গুলগুলো সামান্য ফাঁকা করলেন, তারপর সেগুলোর অগ্রভাগ সম্মুখ দিক থেকে (চুলের অভ্যন্তরে) প্রবেশ করালেন। তারপর আঙ্গুলীগুলো একএিত করে মাথার উপর দিয়ে এভাবে টেনে নিলেন যে, তার বৃদ্ধাঙ্গুলী কানের সে পার্শবকে স্পর্শ করে গেল যা মুখমন্ডল সংলগ্ন চোয়ালের হাড্ডির উপর শ্মশ্রুর পাশে অবস্থিত। তিনি নবী (সা.) চুলের পানি ঝরাতে কিংবা চুল চাপড়াতে এরূপই করতেন। এবং তিনি বলেছিলেনঃ যদি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর হবে বলে মনে না করতাম, তাহলে তাদেরকে এভাবেই (বিলম্ব করে) সালাত আদায় করার নির্দেশ দিতাম।

হাদিস ৫৪৪
আবদুর রহীম মুহারিবী (র.)…….আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একরাতে নবী (সা.) ইশার সালাত অর্ধেক রাত পর্যন্ত বিলম্ব করলেন। তারপর সালাত আদায় করে তিনি বললেন। লোকেরা সালাত আদায় করে ঘুমিয়ে পড়েছে। শোন! তোমরা যতক্ষণ সালাতের অপেক্ষায় ছিলে ততক্ষণ তোমরা সালাতেই ছিলে। ইব্‌ন আবূ মারইয়াম (র.)-এর বর্ণনায় আরও আছে, তিনি বলেন, ইয়াহ্ইয়া ইব্‌ন আইউব (র.) হুমাইদ (র.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (হুমাইদ) আনাস (রা.)-কে বলতে শুনেছেন, সে রাতে রাসূলুল্লাহ্(সা.)-এর আংটির উজ্জবলতা আমি যেন এখনও দেখতে পাচ্ছি।

হাদিস ৫৪৫
মুসাদ্দাদ (র.)……জারীর ইব্‌ন আব্দুল্লাহ্(রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে নবী (সা.) – এর নিকট ছিলাম। হঠাৎ তিনি পূর্ণিমা রাতের চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, শোন! এটি যেমন দেখতে পাছ – তোমাদের প্রতিপালককেও তোমরা তেমনি দেখতে পাবে। তাঁকে দেখতে তোমরা ভিড়ের সম্মুখীন হবে না। কাজেই তোমারা যদি সূর্য উঠার আগের সালাত ও সূর্য ডুবার আগের সালাত আদায়ে সমর্থ হও, তাহলে তাই কর। তারপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ “সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে আপনি আপনার প্রতিপালকের প্রশংসার তাসবীহ্পাঠ করুন।” আবূ আব্দুল্লাহ্(ইমাম বুখারী (র.) বলেন, ইব্‌ন শিহাব (র.)……জারীর (রা.) থেকে আরো বলেন, নবী (সা.) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে খালি চোখে দেখতে পাবে।

হাদিস ৫৪৬
হুদবা ইব্‌ন খালিদ (র.)……আবূ বক্র ইব্‌ন আবূ মূসা (রা.) থেকে তাঁর পিতার সূএে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সা.) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দুই শীতের (ফজর ও আসরের) সালাত আদায় করবে, সে জান্নাতে দাখিল হবে। ইব্‌ন রাজা (র.) বলেন, হাম্মাম (র.) আবূ জামরা (র.) থেকে বর্ণনা করেন যে, আবূ বক্র ইব্‌ন আব্দুল্লাহ ইব্‌ন কায়স (র.) তাঁর নিকট এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

হাদিস ৫৪৭
ইস্‌হাক (র.)…আবদুল্লাহ্‌ (রা.) সূত্রে নবী (সাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

হাদিস ৫৪৮
আম্‌র ইব্‌ন আসিম (র.)……যায়িদ ইব্‌ন সাবিত (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাঁরা নবী (সা.) – এর সাঙ্গে সাহরী খেয়েছেন, তারপর ফজরের সালাতে দাঁড়িয়েছেন। আনাস (রা.) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ দু’য়ের মাঝে কতটুকু সময়ের ব্যবধান ছিল? তিনি বললেন, পঞ্চাশ বা ষাট আয়াত তিলাওয়াত করা যায়, এরূপ সময়ের ব্যবধান ছিল।

হাদিস ৫৪৯
হাসান ইব্‌ন সাব্বাহ্(র.)……আনাস ইব্‌ন মালিক(রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর নবী (সা.) ও যায়িদ ইব্‌ন সাবিত (রা.) একসাথে সাহরী খাচ্ছিলেন, যখন তাঁদের খাওয়া হয়ে গেল – আল্লাহর নবী (সা.) (ফজরের) সালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং সালাত আদায় করলেন। কাতাদা (র.) বলেন, আমরা আনাস (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, তাঁদের সাহরী খওয়া থেকে অবসর হয়ে সালাত শুরু করার মধ্যে কতটুকু সময় ব্যবধান ছিল? তিনি বললেন, একজন লোক পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত করতে পারে এতটুকু সময়।

হাদিস ৫৫০
ইসমায়ীল ইব্‌ন আবূ উওয়াইস (র.)……সাহ্ল ইব্‌ন সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পরিবার-পরিজনের সাথে সাহরী খেতাম। খাওয়ার পরে রাসূলুল্লাহ্(সা.) – এর সঙ্গে ফজরের সালাত পাওয়ার জন্য আমাকে খুব তাড়াহুড়া করতে হত।

হাদিস ৫৫১
ইয়াহ্ইয়া ইব্‌ন বুকাইর (র.)……আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, মুসলিম মহিলাগণ সর্বাঙ্গ চাদরে ঢেকে রাসূলুল্লাহ্(সা.) – এর সঙ্গে ফজরের জামা’আতে হাযির হতেন। তারপর সালাত আদায় করে তারা যার যার ঘরে ফিরে যেতেন। আবছা আঁধারে কেউ তাঁদের চিনতে পারত না।

হাদিস ৫৫২
আব্দুল্লাহ্ইব্‌ন মাসলামা (র.)……আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্(সা.) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূর্য উঠার আগে ফজরের সালাতের এক রাকআত পায়, সে ফজরের সালাত পেল। আর যে ব্যক্তি সূর্য ডুবার আগে আসরের সালাতের এক রাকাআত পেল সে আসরের সালাত পেল।

হাদিস ৫৫৩
আবদুল্লাহ্ইব্‌ন ইউসুফ(র.)……আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্(সা.) বলেনঃ যে ব্যক্তি কোন সালাতের এক রাকআত পায়, সে সালাত পেল।

হাদিস ৫৫৪
হাফস ইব্‌ন উমর (র.)……ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কয়েক জন আস্থাভাজন ব্যক্তি আমার কাছে – যাঁদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন উমর (রা.) আমাকে বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্(সা.) ফজরের পর সূর্য উজ্জ্বল হয়ে না উঠা পর্যন্ত এবং আসরের পর সূর্য অস্তমিত না হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন।

হাদিস ৫৫৫
মুসাদ্দাদ (র.)……ইব্‌ন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার নিকট কয়েক ব্যক্তি এরূপ বর্ণনা করেছেন।

হাদিস ৫৫৬
মুসাদ্দাদ (র.)…..ইব্‌ন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সা.) বলেছেনঃ তোমরা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় সালাত আদায়ের ইচ্ছা করো না। উরওয়া (র.) বলেন, ইব্‌ন উমর (রা.) আমাকে আরও বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্(সা.) বলেছেনঃ যদি সূর্যের একাংশ প্রকাশ পেয়ে যায়, তাহলে পূর্ণরূপে উদিত না হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায়ে বিলম্ব করো। আর যদি তার একাংশ ডুবে যায় তাহলে সম্পূর্ণরূপে অস্তমিত না হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায়ে বিলম্ব করো। আবদাও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

হাদিস ৫৫৭
উবায়দ ইব্‌ন ইসমায়ীল (র.)……আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্(সা.) দু’ধরণের বেচা-কেনা করতে, দু’ভাবে পোষাক পরিধান করতে এবং দু’সময়ে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। ফজরের পর সূর্য পূর্ণরূপে উদিত না হওয়া পর্যন্ত এবং আসরের পর সূর্য অস্তমিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি কোন সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। আর পুরো শরীর জড়িয়ে কাপড় পরতে এবং এক কাপড়ে (যেমন লুঙ্গি ইত্যাদি পরে) হাঁটু খাড়া করে এমনভাবে বসতে যাতে লজ্জাস্থান উপরের দিকে খুলে যায় – নিষেধ করেছেন। আর মুনাবাযা ও মুলামাসা (এর পন্থায় বেচা-কেনা) নিষেধ করেছেন।
মুনাবাযাঃ বিভিন্ন দরের একাধিক পণ্যদ্রব্য একস্থানে রেখে মূল্য হিসেবে একটি অংক নির্ধারণ করে এ শর্তে বিক্রি করা যে, ক্রেতা নির্দিষ্ট পরিমাণ দূরত্ব থেকে পাথর নিক্ষেপ করে যে পণ্যের গায়ে লাগাতে পারবে, উল্লেখিত মূল্যে তাকে তা বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ করতে হবে। এ পন্থার বেচা-কেনা “মুনাবাযা” বলে অভিহিত।
মুলামাসাঃ একাধিক পণ্যের প্রত্যেকটির ভিন্ন ভিন্নভাবে মূল্য নির্ধারণ করে এভাবে বিক্রি কারা যে, ক্রেতা যেটি স্পর্শ করবে, পূর্ব নির্ধারিত মূল্যে তাকে অবশ্যই তা গ্রহণ করতে হবে। এ ধরনের বেচাকেনা শরয়ী পরিভাষায় ‘মুলামাসা’ বলে অভিহিত। যেহেতু এতে পসন্দ অপসন্দের স্বাধীনতা থাকে না, তাই শরীয়াত এ দু’টো পন্থাকে নিষিদ্ধ করেছে।

হাদিস ৫৫৮
আবদুল্লাহ্ইব্‌ন ইউসুফ (র.)……ইব্‌ন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্(সা.) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন সর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় সালাত আদায়ের উদ্যোগ না নেয়।

হাদিস ৫৫৯
আবদুল আযীয ইব্‌ন আবদুল্লাহ্(র.)……আবূ সায়ীদ খুদ্রী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্(সা.) – কে বলতে শুনেছি যে, ফজরের পর সূর্য উদিত হয়ে (একটু) উপরে না উঠা পর্যন্ত এবং আসরের পর সূর্য অস্তমিত না হওয়া পর্যন্ত কোন সালাত নেই।

হাদিস ৫৬০
মুহাম্মদ ইব্‌ন আবান (র.)……মু’আবিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমরা এমন এক সালাত আদায় করে থাক – রাসূলুল্লাহ্(সা.) – এর সাহচর্য লাভ সত্ত্বেও আমরা তাঁকে কখনও তা আদায় করতে দেখিনি। বরং তিনি তা থেকে নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ আসরের পর দু’রাকাআত আদায় করতে।

হাদিস ৫৬১
মুহাম্মদ ইব্‌ন সালাম (র.)……আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সা.) দু’ সময়ে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। ফজরের পর সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত এবং আসরের পর সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত।

হাদিস ৫৬২
আবু নু’মান (র.)…ইব্‌ন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার সঙ্গীদের যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখেছি সেভাবেই আমি সালাত আদায় করি। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময়ে সালাতের ইচ্ছা করা ব্যতীত রাতে বা দিনে যে কোন সময় কেউ সালাত আদায় করতে চাইলে আমি নিষেধ করি না।

হাদিস ৫৬৩
আবূ নু’আইম (র.)…….আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সে মাহান সত্তার শপথ, যিনি তাঁকে (নবী (সা.) – কে) উঠিয়ে নিয়েছেন, আল্লাহর সান্নিধ্যে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি দু’রাকাআত সালাত কখনই ছাড়েননি। আর সালাতে দাঁড়ানো যখন তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি, তখন তিনি আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে গেছেন। তিনি তাঁর এ সালাত অধিকাংশ সময় বসে বসেই আদায় করতেন। আয়িশা (রা.) এ সালাত দ্বারা আসরের পরবর্তী দু’রাকাআতের কথা বুঝিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ্(সা.) এ দু’রাকাআত সালাত আদায় করতেন, তবে উম্মাতের উপর বোঝা হয়ে পড়ার আশংকায় তা মসজিদে আদায় করতেন না। কেননা, উম্মাতের জন্য যা সহজ হয় তাই তাঁর কাম্য ছিল।

হাদিস ৫৬৪
মুসাদ্দাদ (র.)…….আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হে ভাগিনে! নবী (সা.) আমার কাছে উপস্থিত থাকার কালে আসরের পরবর্তী দু’রাকাআত কখনও ছাড়েননি।

হাদিস ৫৬৫
মূসা ইব্‌ন ইসমায়ীল (র.)…….আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, দু’রাকাআত সালাত রাসূলুল্লাহ্(সা.) প্রকাশ্যে বা গোপনে কোন অবস্থাতেই ছাড়তেন না। তা হল ফজরের সালাতের আগের দু’রাকাআত ও আসরের পরের দু’রাকাআত।

হাদিস ৫৬৬
মুহাম্মদ ইব্‌ন আর’আরা (র.)……আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সা.) যে দিনই আসরের পর আমার কাছে আসতেন সে দিনই দু’রাকাআত সালাত আদায় করতেন।

হাদিস ৫৬৭
মু’আয ইব্‌ন ফাযালা (র.)…….আবূ মালীহ্(রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক মেঘলা দিনে আমরা বুরাইদা (রা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি বললেন, শীঘ্র সালাত আদায় করে নাও। কেননা, নবী (সা.) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আসরের সালাত ছেড়ে দেয় তার সমস্ত আমল বিনষ্ট হয়ে যায়।

হাদিস ৫৬৮
ইমরান ইব্‌ন মাইসারা (র.) আবূ কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে আমরা রাসূলুল্লাহ্(সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। যাএী দলের কেউ কেউ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! (সা.) রাতের এ শেষ প্রহরে আমাদের নিয়ে যদি একটু বিশ্রাম নিতেন। রাসূলুল্লাহ্(সা.) বললেনঃ আমার ভয় হচ্ছে সালাতের সময়ও তোমরা ঘুমিয়ে থাকবে। বিলাল (রা.) বললেন, আমি আপনাদের জাগিয়ে দিব। কাজেই সবাই শুয়ে পড়লেন। এ দিকে বিলাল (রা.) তাঁর হাওদার গায়ে একটু হেলান দিয়ে বসলেন। এতে তাঁর দু’চোখ মূদে আসল। ফলে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। সূর্য কেবল উঠতে শুরু করেছে, এমন সময় রাসূলুল্লাহ্(সা.) জাগ্রত হলেন এবং বিলাল (রা.)-কে ডেকে বললেন, হে বিলাল! তোমার কথা গেল কোথায়? বিলাল (রা.) বললেন, আমার এত অধিক ঘুম আর কখনও পায়নি। রাসূলুল্লাহ্(সা.) বললেনঃ আল্লাহ্তা’আলা যখন ইচ্ছা করেছেন তখন তোমাদের রূহ্কব্য করে নিয়েছেন; আবার যখন ইচ্ছা করেছেন তখন তা তোমাদের ফিরিয়ে দিয়েছেন। হে বিলাল! উঠ, লোকদের জন্য সালাতের আযান দাও। তারপর তিনি উযূ করলেন এবং সূর্য যখন উপরে উঠল এবং উজ্জ্বল হলো তখন তিনি দাঁড়ালেন এবং সালাত আদায় করলেন।

হাদিস ৫৬৯
মু’আয ইব্‌ন ফাযালা (র.)……জাবির ইব্‌ন আব্দুল্লাহ্(রা.) থেকে বর্ণিত যে, খন্দকের দিন সূর্য অস্ত যাওয়ার পর উমর ইব্‌ন খাত্তাব (রা.) এসে কুরাইশ গোএীয় কাফিরদের ভর্ৎসনা করতে লাগলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! (সা.) আমি এখনও আসরের সালাত আদায় করতে পারিনি, এমন কি সূর্য অস্ত যায় যায়। নবী (সা.) বললেনঃ আল্লাহর শপথ! আমিও তা আদায় করিনি। তারপর আমরা উঠে বুতহানের দিকে গেলাম। সেখানে তিনি সালাতের জন্য উযূ করলেন এবং আমরাও উযূ করলাম; এরপর সূর্য ডুবে গেলে আসরের সালাত আদায় করেন, তারপর মাগরিবের সালাত আদায় করেন।

হাদিস ৫৭০
আবূ নু’আইম ও মূসা ইব্‌ন ইসমায়ীল (র.)……আনাস ইব্‌ন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সা.) বলেছেনঃ যদি কেউ কোন সালাতের কথা ভুলে যায়, তাহলে যখনই স্মরণ হবে, তখন তাকে তা আদায় করতে হবে। এ ব্যতীত সে সালাতের অন্য কোন কাফ্ফারা নেই। (কেননা, আল্লাহ্তা’আলা ইরশাদ করেছেন) “আমাকে স্মরণের উদ্দেশ্যে সালাত কায়েম কর”। মুসা (র.) বলেন, হাম্মাম (র.) বলেছেন যে, আমি তাকে (কাতাদা (র.)) পরে বলতে শুনেছি, “আমাকে স্মরণের উদ্দেশ্যে সালাত কায়েম কর।” হাব্বান (র.) আনাস (রা.) –এর সূএে রাসূলুল্লাহ্(সা.) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে।

হাদিস ৫৭১
মুসাদ্দাদ (র.)…….জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধকালে এক সময় উমর (রা.) কুরাইশ কাফিরদের ভর্ৎসনা করতে লাগলেন এবং বললেন, সূর্যাস্তের পূর্বে আমি আসরের সালাত আদায় করতে পরিনি, (জাবির (রা.) বলেন) তারপর আমার বুতহান উপত্যকায় উপস্থিত হলাম। সেখানে তিনি সূর্যাস্তের পর সে সালাত আদায় করলেন, তারপরে মাগরিবের সালাত আদায় করলেন।

হাদিস ৫৭২
মুসাদ্দাদ (র.)……আবূ মিনহাল (র.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতার সঙ্গে আবূ বারযা আসলামী (রা.)-এর নিকট গেলাম। আমার পিতা তাঁকে জিজ্ঞাস করলেন, রাসূলুল্লাহ্(সা.) ফরয সালাতসমূহ কোন সময় আদায় করতেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ্(সা.) – যুহরের সালাত যাকে তোমরা প্রথম সালাত বলে থাক, সূর্য ঢলে পড়লে আদায় করতেন। আর আসরের সালাত এমন সময় আদায় করতেন যে, আমাদের কেউ সূর্য সজীব থাকতেই মদীনার শেষ প্রান্তে নিজ পরিজনের কাছে ফিরে আসতে পারত। মাগরিব সম্পর্কে তিনি কি বলেছিলেন, তা আমি ভুলে গেছি। তারপর আবূ বারযা (রা.) বলেন, ইশার সালত একটু বিলম্বে আদায় করাকে তিনি পসন্দ করতেন। আর ইশার আগে ঘুমানো এবং পরে কথাবার্তা বাল তিনি অপসন্দ করতেন। আর এমন মুগূর্তে তিনি ফজরের সালাত শেষ করতেন যে, আমাদের যে কেউ তার পার্শ্ববর্তী ব্যক্তিকে চিনতে পারত। এ সালাতে তিনি ষাট থেকে একশ’ আয়াত তিলাওয়াত করতেন।

হাদিস ৫৭৩
আব্দুল্লাহ্ইব্‌ন সাব্বাহ্(র.)……কুর্রা ইব্‌ন খালিদ (র.) থকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা হাসান (বসরী (র.)) – এর অপেক্ষায় ছিলাম। তিনি এত বিলম্বে আসলেন যে, নিয়মিত সালাত শেষে চলে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসল। এরপর তিনি এসে বললেন, আমাদের এ প্রতিবেশীগণ আমাদের ডেকেছিলেন। তারপর তিনি বললেন, আনাস ইব্‌ন মালিক (রা.) বর্ণনা করেছেন, এক রাতে আমরা রাসূলুল্লাহ্(সা.)-এর অপেক্ষায় ছিলাম। এমন কি প্রায় অর্ধেক রাত হয়ে গেল, তখন এসে তিনি আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। এরপর আমাদের সম্বোধন করে তিনি বললেনঃ জেনে রাখ! লোকেরা সালাত আদায় করে ঘুমিয়ে পড়েছে, তবে তোমরা যতক্ষন সালাতের অপেক্ষায় ছিলে ততক্ষন সালাতেই রত ছিলে। হাসন (বসরী (র.)) বলেন, মানুষ যতক্ষন কল্যাণের অপেক্ষায় থাকে, ততক্ষন তারা কল্যাণেই নিরত থাকে। কুর্রা (র.) বলেন, এ উক্তি আনাস (রা.) কর্তৃক বর্ণিত রাসূলুল্লাহ্(সা.) এর হাদিসেরই অংশ।

হাদিস ৫৭৪
আবুল ইয়ামান (র.)……আব্দুল্লাহ্ইব্‌ন উমর (রা.) থকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্(সা.) একবার তাঁর শেষ জীবনে ইশার সালাত আদায় করে সালাম ফিরাবার পর বললেনঃ আজকের এ রাত সম্পর্কে তোমাদের অভিমত কি? আজ থেকে নিয়ে একশ’ বছরের মাথায় আজ যারা ভূ-পৃষ্ঠে আছে তাদের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। কিন্তু সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ্(সা.)-এর ‘একশ’ বছরের’ এ উক্তি সম্পর্কে নানাবিধ জল্পনা-কল্পনা করতে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে রাসূলুল্লাহ্(সা.) বলেছেনঃ আজকে যারা জীবিত আছে তাদের কেউ ভূ-পৃষ্ঠে থাকবে না। এর দ্বারা তিনি বুঝাতে চেয়েছেন যে, এ শতাব্দী ঐ যুগের পরিসমাপ্তি ঘটাবে।

হাদিস ৫৭৫
মাহমূদ (র.)…….আবদুর-রাহমান ইব্‌ন আবূ বকর (রা.) থেকে বর্ণিত যে, আসহাবে সুফ্ফা ছিলেন খুবই দরিদ্র । (একদা) নবী (সা.) বললেনঃ যার কাছে দু’জনের আহার আছে সে যেন (তাঁদের থেকে) তৃতীয় জনকে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। আর যার কাছে চারজনের আহারের সংস্থান আছে, সে যেন পঞ্চম বা ষষ্ঠজন সঙ্গে নিয়ে যায়। আবূ বকর (রা.) তিনজন সাথে নিয়ে আসেন এবং রাসূলুল্লাহ্(সা.) দশজন নিয়ে আসেন। আবদুর রাহমান (রা.) বলেন, আমাদের ঘরে এবং আবূ বাকরের ঘরে আমি, আমার পিতা ও মাতা (এই নিত জন সদস্য) ছিলাম। রাবী বলেন, আমি জানি না, তিনি আমার স্ত্রী এবং খাদিম একথা বলেছিলেন কি না? আবূ বাকর (রা.) রাসূলুল্লাহ্(সা.)-এর ঘরেই রাতের আহার করেন এবং ইশার সালাত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। ইশার সালাতের পর তিনি আবার (রাসূলুল্লাহ্(সা.) এর ঘরে) ফিরে আসেন এবং রাসূলুল্লাহ্(সা.) – এর রাতের আহার শেষ করা পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করেন। আল্লাহর ইচ্ছায় কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর বাড়ী ফিরলে তাঁর স্ত্রী তাঁকে বললেন, মেহমানদের কাছে আসতে কিসে আপনাকে ব্যস্ত রেখেছিল? কিংবা তিনি বলেছিলেন, (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) মেহমান থেকে। আবূ বকর (রা.) বললেন, এখনও তাদের খাবার দাওনি? তিনি বললেন, আপনি না আসা পর্যন্ত তারা খেতে অস্বীকার করেন। তাদের সামনে হাযির করা হয়েছিল, তবে তারা খেতে সম্মত হননি। তিনি (রাগান্বিত হয়ে) বললেন, ওরে বোকা এবং ভর্ৎসনা করলেন। আর (মেহমানদের) বললেন, খেয়ে নিন। আপনারা অস্বস্তিতে ছিলেন। এরপর তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমি এ কখনই খাব না। আবদুর রাহমান (র.) বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা লুক্মা উঠিয়ে নিতেই নীচ থেকে তা অধিক পরিমাণে বেড়ে যাচ্ছিল। তিনি বলেন, সকলেই পেট ভরে খেলেন। অথচ আগের চাইতে অধিক খাবার রয়ে গেল। আবূ বকর (রা.) খাবারের দিকে তাকিয়ে দেখেতে পেলেন তা আগের সমপরিমাণ কিংবা তার চাইতেও বেশী। তিনি তাঁর স্ত্রীকে বললেন, হে বনূ ফিরাসের বোন। এ কি? তিনি বললেন, আমার চোখের প্রশান্তির কসম! এতো এখন আগের চাইতে তিনগুন বেশী! আবূ বকর (রা.)-ও তা থেকে আহার করলেন এবং বললেন, আমার সে শপথ শয়তানের পক্ষ থেকেই হয়েছিল। এরপর তিনি আরও লুক্মা মুখে দিলেন এবং অবশিষ্ট খাবার নবী (সা.)-এর দরবারে নিয়ে গেলেন। ভোর পর্যন্ত সে খাদ্য রাসূলুল্লাহ্(সা.)-এর সেখানেই ছিল। এদিকে আমাদের ও অন্য একটি গোএের মাঝে সে সন্ধি ছিল তার সময়সীমা পূর্ন হয়ে যায়। (এবং তারা মদীনায় আসে) আমরা তাদের বারজনের নেতৃত্বে ভাগ করে দেই। তাদের প্রত্যকের সংগেই কিছু কিছু লোক ছিল। তবে প্রত্যকের সঙ্গে কতজন ছিল তা আল্লাহই জানেন। তারা সকলেই সেই খাদ্য থেকে আহার করেন। (রাবী বলেন) কিংবা আবদুর রাহমান (রা.) যে ভাবে বর্ণনা করেছেন।

আযান অধ্যায় (৫৭৬-৮৩১)

হাদিস ৫৭৬
ইমরান ইর্বন মাইসারা (র.)……আনাস (রা.) থকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (সালাতে সমবেত হওয়ার জন্য) সাহাবা-ই কিরাম (রা.) আগুন জ্বালানো অথবা নাকূস বাজানোর কথা আলোচনা করেন। আবার এগুলোকে (যথাক্রমে) ইয়াহূদী ও নাসারাদের প্রথা বলে উল্লেখ করা হয়। তারপর বেলাল (রা.)- কে আযানের বাক্য দু’বার করে ও ইকামতের বাক্য বেজোড় করে বলার নির্দেশ দেওয়া হয়।

হাদিস ৫৭৭
মাহমূদ ইর্বন গায়লান (র.)……নাফি (র.) থকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইব্‌ন উমর (রা.) বলতেন যে, মুসলমানগন যখন মদীনায় আগমন করেন, তখন তাঁরা সালাতের সময় অনুমান করে সমবেত হতেন। এর জন্য কোন ঘোষণা দেওয়া হতো না। একদিন তাঁরা এ বিষয়ে আলোচনা করলেন। কয়েকজন সাহাবী বললেন, নাসারাদের ন্যায় নাকূস বাজানোর ব্যবস্থা করা হোক। আর কয়েকজন বললেন, ইয়াহূদীদের শিঙ্গার ন্যায় শিঙ্গা ফোকানোর ব্যবস্থা করা হোক। উমর(রা.) বললেন, সালাতের ঘোষণা দেওয়ার জন্য তোমরা কি একজন লোক পঠাতে পার না? তখন রাসূলুল্লাহ্(সা.) বললেনঃ হে বেলাল, উঠ এবং সালাতের জন্য ঘোষণা দাও।

হাদিস ৫৭৮
সুলাইমান ইব্‌ন হারব্(র.)……আনাস (রা.) থকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিলাল (রা.)- কে আযানের শব্দ দু’বার এবং ব্যতীত ইকামাতের শব্দগুলো বেজোড় করে বলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

হাদিস ৫৭৯
মুহাম্মদ(র.)……আনাস ইব্‌ন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুসলিমগণের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে তাঁরা সালাতের সময়ের জন্য এমন কোন সংকেত নির্ধারণ করার প্রস্তাব দিলেন, যার সাহায্যে সালাতের সময় উপস্থিত এ কথা বুঝা যায়। কেউ কেউ বললেন, আগুন জ্বালানো হোক, কিংবা ঘণ্টা বাজানো হোক। তখন বিলাল (রা.) – কে আযানের শব্দগুলো দু দু’বার এবং ইকামতের শব্দগুলো বেজোড় বলার নির্দেশ দেওয়া হলো।

হাদিস ৫৮০
আলী ইব্‌ন আবদুল্লাহ্(র.)……আনাস (রা.) থকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিলাল (রা.)-কে আযানের বাক্যগুলো দু’ দু’বার এবং ইকামতের শব্দগুলো বেজোড় বলার নির্দেশ দেওয়া হলো। ইসমায়ীল (র.) বলেন, আমি এ হাদীস আইয়্যূবের নিকট বর্ণনা করলে তিনি বলেন, তবে ‘কাদ্কামাতিস্সালাতু’ ব্যতীত।

হাদিস ৫৮১
আবদুল্লাহ্ইব্‌ন ইউসুফ (র.)……আবূ হুরায়রা (রা.) থকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সা.) বলেছেনঃ যখন সালাতের জন্য আযান দেওয়া হয়, তখন শয়তান হাওয়া ছেড়ে পলায়ণ করে, যাতে সে আযানের শব্দ না শোনে। যখন আযান শেষ হয়ে যায়, তখন সে আবার ফিরে আসে। আবার যখন সালাতের জন্য ইকামত বলা হয়, তখন আবার দূরে সরে যায়। ইকামত শেষ হলে সে পুনরায় ফিরে এসে লোকের মনে কুমন্ত্রণা দেয় এবং বলে এটা স্মরণ কর, ওটা স্মরণ কর, বিস্মৃত বিষয়গুলো সে স্মরণ করিয়ে দেয়। এভাবে লোকটি এমন পর্যায়ে পৌছে যে, সে কয় রাকাআত সালাত আদায় করেছে তা মনে করতে পারে না।

হাদিস ৫৮২
আবদুল্লাহ্ইব্‌ন ইউসুফ (র.)……আবদুল্লাহ্ইব্‌ন আবদুর রহমান আনসারী মাযিনী (র.) থকে বর্ণিত, যে আবূ সায়ীদ খুদ্রী (রা.) তাঁকে বললেন, আমি দেখছি তুমি বক্রী চরানো এবং বন-জঙ্গলকে ভালবাস। তাই তুমি যখন বক্রী নিয়ে থাক, বা বন-জঙ্গলে থাক এবং সালাতের জন্য আযান দাও, তখন উচ্ছকণ্ঠে আযান দাও। কেননা, জিন্, ইনসান বা যে কোন বস্তুই যতদূর পর্যন্ত মুয়াযযিনের আওয়ায শুনবে, সে কিয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে। আবূ সায়ীদ (রা.) বলেন, একথা আমি রাসূলুল্লাহ্(সা.)-এর কাছে শুনেছি।

হাদিস ৫৮৩
কুতাইবা ইব্‌ন সায়ীদ (র.) আনাস (রা.) থকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্(সা.) যখনই আমাদের নিয়ে কোন গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যেতেন, ভোর না হওয়া পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করতেন না বরং লক্ষ্য রাখতেন, যদি তিনি তখন আযান শুনতে পেতেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা থেকে বিরত থাকতেন। আর যদি আযান শুনতে না পেতেন, তাহলে অভিযান চালাতেন। আনাস (রা.) বলেন, আমারা খায়বারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম এবং রাতের বেলায় তাদের সেখানে পৌছলাম। যখন প্রভাত হল এবং তিনি আযান শুনতে পেলেন না; তখন রাসূলুল্লাহ্(সা.) সাওয়ার হলেন। আমি আবূ তালহা (রা.)-এর পিছনে সাওয়ার হলাম। আমার পা, নবী (সা.) –এর কদম মুবারকের সাথে লেগে যাচ্ছিল। আনাস (রা.) বলেন, তারা তাদের থলে ও কোদাল নিয়ে বেরিয়ে আমাদের দিকে আসল। হঠাৎ তারা যখন নবী (সা.) কে দেখতে পেল, তখন বলে উঠল, ‘এ যে মুহাম্মদ (সা.), আল্লাহর শপথ! মুহাম্মদ (সা.) তাঁর পঞ্চ বাহিনী সহ!’ আনাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সা.) তাদের দেখে বলে উঠলেনঃ ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, খায়বার ধ্বংস হোক। আমরা যখন কোন কাওমের আঙ্গিনায় অবতরণ করি, তখন সতর্কীকৃতদের প্রভাত হবে কত মন্দ!’

হাদিস ৫৮৪
আব্দুল্লহাহ্ইব্‌ন ইউসুফ (র.)……আবূ সায়ীদ খুদরী (রা.) থকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্(সা.) বলেছেনঃ যখন তোমরা আযান শুনতে পাও তখন মুয়ায্যিন যা বলে তোমরাও তার অনুরূপ বলবে।

হাদিস ৫৮৫
মু’আয ইব্‌ন ফাযালা (র.)……। ঈসা ইব্‌ন তালহা (রা.) থকে বর্ণিত, একদিন তিনি মু’আবিয়া (রা.)-কে (আযানের জবাব দিতে) শুনেছেন যে, তিনি ‘আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্’ পর্যন্ত মুয়ায্যিনের অনুরূপ বলেছেন।

হাদিস ৫৮৬
ইসহাক ইব্‌ন রাহওয়াই (র.)……ইয়াহ্ইয়া (র.) থকে অনুরূপ বর্ণিত আছে। ইয়াহ্ইয়া (র.) বলেছেন। আমার কোন ভাই আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, মুয়ায্যিন যখন বলল, তখন তিনি (মু’আবিয়া (রা.)) বললেন। তারপর তিনি বললেন, তোমাদের নবী (সা.)-কে আমরা এরূপ বলতে শুনেছি।

হাদিস ৫৮৭
আলী ইব্‌ন আইয়্যাশ (র.)……জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহ্(রা.) থকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্(সা.) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আযান শুনে দু’আ করেঃ ‘হে আল্লাহ্এ পরিপূর্ণ আহবান ও সালাতের প্রতিষ্ঠিত মালিক, মুহাম্মাদ (সা.) –কে ওয়াসীলা ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী করুন এবং তাঁকে সে মাকেমে মাহমূদে পৌছিয়ে দিন যার অঙ্গিকার আপনি করেছেন’-কিয়ামতের দিন সে আমার শাফা’আত লাভের অধিকারী হবে।

হাদিস ৫৮৮
আবদুল্লাহ্ইব্‌ন ইউসুফ (র.)……আবূ হুরায়রা (রা.) থকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্(সা.) বলেছেনঃ আযানে ও প্রথম কাতারে কী (ফযীলত) রয়েছে, তা যদি লোকেরা জানত, কুরআহর মাধ্যমে নির্বাচন ব্যতীত এ সুযোগ লাভ করা যদি সম্ভব না হত, তাহলে অবশ্যই তারা কুরআহর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিত। যুহরে সালাত আউয়াল ওয়াক্তে আদায় করার মধ্যে কী (ফযীলত) রয়েছে, যদি তারা জানত, তাহলে তারা এর জন্য প্রতিযোগিতা করত। আর ইশা ও ফজরের সালাত (জামা’আতে) আদায়ের কী ফযীলত তা যদি তারা জানত, তাহলে নিঃসন্দেহে হামাগুঁড়ি দিয়ে হলেও তারা উপস্থিত হত।

হাদিস ৫৮৯
মুসাদ্দাদ (র.)…… আবদুল্লাহ্ইব্‌ন হারিস (রা.) থকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার বর্ষণ সিক্ত দিনে ইব্‌ন আব্বাস (রা.) আমাদের উদ্দেশ্যে খুত্বা দিচ্ছিলেন। এ দিকে মুয়আয্যিন আযান দিতে গিয়ে যখন -এ পৌছল, তখন তিনি তাকে এ ঘোষণা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন যে, ‘লোকেরা যেন আব্বাসে সালাত আদায় করে নেয়।’ এতে লোকেরা একে অপরের দিকে তাকাতে লাগল। তখন ইব্‌ন আব্বাস (রা.) বললেন, তাঁর চাইতে যিনি অধিক উত্তম ছিলেন (রাসূলুল্লাহ্(সা.)) তিনিই এরূপ করেছেন। অবশ্য জুমু’আর সালাত ওয়াজিব। (তবে ওযরের কারণে নিজ আবাসে সালাত আদায় করার অনুমতি রয়েছে)।

হাদিস ৫৯০
আবদুল্লাহ্ইব্‌ন মাসলামা (র.)……আবদুল্লাহ্ইব্‌ন উমর (রা.) থকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সা.) বলেছেনঃ বিলাল (রা.) রাত থাকতেই আযান দেন। কাজেই ইব্‌ন উম্মে মাকতূম (রা.) আযান না দেওয়া পর্যন্ত তোমরা (সাহ্রীর) পানাহার করতে পার। আবদুল্লাহ্(রা.) বলেন, ইব্‌ন উম্মে মাকতূম (রা.) ছিলেন অন্ধ। যতক্ষন না তাঁকে বলে দেওয়া হত যে, ‘ভোর হয়েছে, ভোর হয়েছে’-ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি আযান দিতেন না।

হাদিস ৫৯১
আবদুল্লাহ্ইব্‌ন ইউসুফ (র.)……হাফসা (রা.) থকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন মুআয্যিন সুব্হে সাদিকের প্রতীক্ষায় থাকত (ও আযান দিত) এবং ভোর স্পষ্ট হতো- জামা’আত দাঁড়ানোর আগে রাসূলুল্লাহ্(সা.) সংক্ষেপে দু’রাকাআত সালাত আদায় করে নিতেন।

হাদিস ৫৯২
আবূ নু’আইম (র.)…… আযিশা (রা.) থকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সা.) ফজরের আযান ও ইকামতের মাঝে দু’রাকাত সালাত সংক্ষেপে আদায় করতেন।

হাদিস ৫৯৩
আবদুল্লাহ্ইব্‌ন ইউসুফ (র.)…… আবদুল্লাহ্ইব্‌ন উমর(রা..) থকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্(সা.) বলেছেনঃ বিলাল (রা.) রাত থাকতে আযান দিয়ে থাকেন। কাজেই তোমরা (সাহ্রী) পানাহার করতে থাক; যতক্ষণ না ইব্‌ন উম্মে মাক্তূম (রা.) আযান দেন।

হাদিস ৫৯৪
আহ্মদ ইব্‌ন ইউনুস (র.)…… আবদুল্লাহ্ইব্‌ন মাসঊদ (রা.) থকে বর্ণিত, নবী (সা.) ইরাশাদ করেছেনঃ বিলালের আযান যেন তোমাদের কাউকে সাহ্রী খাওয়া থেকে বিরত না রাখে। কেননা, সে রাত থাকতে আযান দেয়-যেন তোমাদের মধ্যে যারা তাহাজ্জুদের সালাতে রত তারা ফিরে যায় আর যারা ঘুমন্ত তাদেরকে জাগিয়ে দেয়। তারপর তিনি আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বললেনঃ ফজর বা সুবহে সাদিক বলা যায় না, যখন এরূপ হয়-তিনি একবার আঙ্গুল উপরের দিকে উঠিয়ে নীচের দিকে নামিয়ে ইশারা করলেন, যতক্ষন না এরূপ হয়ে যায়। বর্ণনাকারী যুহাইর (র.) তাঁর শাহাদাত আঙ্গুলদ্বয় একটি আপরটির উপর রাখার পর তাঁর ডানে ও বামে প্রসারিত করে দেখালেন।

হাদিস ৫৯৫
ইসহাক ইউসুফ ইব্‌ন ঈসা (র.)……আয়িশা (রা.) সূএে নবী (সা.) থকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিলাল (রা.) রাত থাকতে আযান দিয়ে থাকেন। কাজেই, ইব্‌ন উম্মে মাকতূম (রা.) যতক্ষণ আযান না দেয়, ততক্ষন তোমরা পানাহার করতে পার।

হাদিস ৫৯৬
ইসহাক ওয়াসিতী (র.)……আবদুল্লাহ্ইব্‌ন মুগাফ্ফাল মুযানী (রা.)থকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্(রা.) বলেছেনঃ প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মধ্যে সালাত রয়েছে। একথা তিনি তিনবার বলেন। (তারপর বলেন) যে চায় তার জন্য।

হাদিস ৫৯৭
মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ…….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুআযযিন যখন আযান দিত, তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবী গণের মধ্যে কয়েকজন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি -এর বের হওয়া পর্যন্ত (মসজিদের) স্তম্ভের কাছে গিয়ে দাঁড়াতেন এবং এ অবস্থায় মাগরিবের আগে দু’রাকাআত সালাত আদায় করতেন। অথচ মাগরিবের আযান ও ইকামতের মধ্যে কিছু (সময়) থাকত না। উসমান ইবনে জাবালা ও আবু দাউদ রহ. শু’বা রহ. থেকে বর্ণনা করেন যে, এ দুয়ের মধ্যবর্তী ব্যবধান খুবই সামান্য হত।

হাদিস ৫৯৮
আবুল ইয়ামান রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন মুআযযিন ফজরের সালাতের প্রথম আযান শেষ করতেন তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে যেতেন এবং সুবহে সাদিকের পর ফজরের সালাতের আগে দু’রাকাআত সালাত সংক্ষেপে আদায় করতেন, তারপর ডান কাতে শুয়ে পড়তেন এবং ইকামতের জন্য মুআযযিন তাঁর কাছে না আসা পর্যন্ত শুয়ে থাকতেন।

হাদিস ৫৯৯
আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াযীদ রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে সালাত আদায় করা যায় । প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে সালাত আদায় করা যায়। তৃতীয়বার একথা বলার পর তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে।

হাদিস ৬০০
মু’আল্লা ইবনে আসাদ রহ……….মালিক ইবনে হুয়াইরিস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার গোত্রের কয়েকজন লোকের সঙ্গে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলাম এবং আমরা তাঁর নিকট বিশ রাত অবস্থান করলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত দয়ালু ও বন্ধু ছিলেন। তিনি যখন আমাদের মধ্যে নিজ পরিজনের কাছে ফিরে যাওয়ার আগ্রহ লক্ষ্য করলেন, তখন তিনি আমাদের বললেন : তোমরা পরিজনের কাছে ফিরে যাও এবং তাদের মধ্যে বসবাস কর, আর তাদের দীন শিক্ষা দিবে এবং সালাত আদায় করবে। যখন সালাতের সময় উপস্থিত হয়, তখন তোমাদের একজন আযান দিবে এবং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বয়সে বড় সে ইমামতি করবে।

হাদিস ৬০১
মুসলিম ইবনে ইবরাহীম (র.)…… আবু যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা এক সফরে নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সঙ্গে ছিলাম। মুয়াজ্জিন আযান দিতে চাইলে তিনি বললেনঃ ঠাণ্ডা হতে দাও। কিছুক্ষন পর মুয়াজ্জিন আবার আযান দিতে চাইলে তিনি বললেন, ঠাণ্ডা হতে দাও। তারপর সে আবার আযান দিতে চাইলে তিনি বললেন, ঠাণ্ডা হতে দাও। এভাবে বিলম্ব করতে করতে টিলাগুলোর ছায়া তার সমান হয়ে গেল। পরে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ উত্তাপের তীব্রতা জাহান্নামের নিঃশ্বাসের ফল।

হাদিস ৬০২
মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ (র.)……… মালিক ইবনে হুওয়ায়রিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, দু’জন লোক সফরে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করার জন্য নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে এল। নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের বললেনঃ তোমরা উভয় যখন সফরে বেরুবে (সালাতের সময় হলে) তখন আযান দিবে, এরপর ইকামত দিবে এবং তোমাদের উভয়ের মধ্যে যে বয়সে বড় সে ইমামতি করবে।

হাদিস ৬০৩
মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না (র.)……… মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা সমবয়সী একদল যুবক নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে হাযির হলাম। বিশ দিন ও বিশ রাত আমরা তাঁর নিকট অবস্থান করলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অত্যন্ত দয়ালু ও নম্র স্বভাবের লোক ছিলেন। তিনি যখন বুঝতে পারলেন যে, আমরা আমাদের পরিজনের কাছে ফিরে যেতে চাই বা ফিরে যাওয়ার জন্য উৎসুক হয়ে পড়েছি। যখন তিনি আমাদের জিজ্ঞাসা করলেন, আমরা আমাদের পিছনে কাদের রেখে এসেছি। আমরা তাঁকে জানালাম। তারপর তিনি বল্লেনঃ তোমরা তোমাদের পরিজনের কাছে ফিরে যাও এবং তাদের মধ্যে বসবাস কর। আর তাদের (দীন) শিক্ষা দাও এবং (সৎ কাজের) নির্দেশ দাও। (বর্ণনাকারী বলেন) মালিক (রাঃ) আরও কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করেছিলেন যা আমার মনে আছে বা মনে নেই। তারপর নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছিলেনঃ তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখেছ সেভাবে সালাত আদায় করবে। সালাতের সময় উপস্থিত হলে তোমাদের একজন যেন আযান দেয় এবং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বয়সে বড় সে যেন তোমাদের ইমামতি করে।

হাদিস ৬০৪
মুসাজ্জাদ (র.)……… নাফি’ (র.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রচন্ড এক শীতের রাতে ইবন উমর (রাঃ) যাজনান নামক স্থানে আযান দিলেন। এরপর তিনি ঘোষণা করলেনঃ তোমরা আবাস স্থলেই সালাত আদায় করে নাও। পরে তিনি আমাদের জানালেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সফরের অবস্থায় বৃষ্টি অথবা প্রচন্ড শীতের রাতে মুয়াজ্জিনকে আযান দিতে বললেন এওং সাথে সাথে একথাও ঘোষণা করতে বললেন যে, তোমরা আবাসে সালাত আদায় করে নাও।

হাদিস ৬০৫
ইসহাক (র.) ………… আবু জুহায়ফা (রাঃ)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে আবতাহ নামক স্থানে দেখলাম, বিলাল (রাঃ) একটি বর্শা নিয়ে বেরুলেন। অবশেষ আবতাহে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সামনে তা পূতে দিলেন, এরপর সালাতের ইকামত দিলেন।

হাদিস ৬০৬
মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ (র.)……… আবু জুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বিলাল (রাঃ) কে আযান দিতে দেখেছেন। (এরপর তিনি বলেন) তাই আমি তাঁর (বিলালের) ন্যায় আযানের মাঝে মুখ এদিক সেদিক (ডানে-বামে) ফিরাই।

হাদিস ৬০৭
আব নু’আইম (র.)……… আবু কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমরা নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সঙ্গে সালাত আদায় করছিলাম। হঠাত তিনি লোকদের (আগমনের) আওয়াজ শুনতে পেলেন। সাতাল শেষে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন তোমাদের কি হয়েছিল? তারা বললেন, আমরা সালাতের জন্য তাড়াহুড়া করে আসছিলাম। (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এরুপ করবে না। যখন সালাতে আসবে ধীরস্থিরভাবে আসবে (ইমামের সাথে) যতটুকু পাও আদায় করবে, আর যতটুকু ফাওত হয়ে যায় তা (ইমামের সালাম ফেরানোর পর) পূরা করে নিবে।

হাদিস ৬০৮
আদম (র.) …………… আবু হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন তোমরা ইকামত শুনতে পাবে, তখন সালাতের দিকে চলে আসবে, তোমাদের উচিত ধীরস্থীরতা ও গাম্ভীর্যতা বজায় রাখা। তাড়াহুড়া করবেনা। ইমামের সাথে যতটুকু পাও তা আদায় করবে, আর ছুটে যায় তা পূরা করে নিবে।

হাদিস ৬০৯
মুসলিম ইবন ইব্রাহীম (র.) ………… আবু কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ সালাতের ইকামাত হলে আমাকে না দেখা পর্যন্ত তোমরা দাঁড়াবে না।

হাদিস ৬১০
আবু নু’আইম (র.)…………… আবু কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ সালাতের ইকামাত হলে আমাকে না দেখা পর্যন্ত তোমরা দাঁড়াবে না। ধীরস্থিরতার প্রতি লক্ষ রাখা তোমাদের জন্য একান্ত আবশ্যক। আলী ইবন মুবারাক (র.) হাদীস বর্ণনায় শায়বান (র.) এর অনুসরণ করেছেন।

হাদিস ৬১১
আবদুল আযীয ইবন আবদুল্লাহ (র.)………… আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আপন হুজরা থেকে সালাতের জন্য তাশরীফ নিয়ে আসলেন। এদিকে সালাতের ইকামাত দেওয়া হয়েছে এবং কাতার সোজা করে নেওয়া হয়েছে, এমন কি তিনি মুসাল্লায় দাঁড়ালেন, আমরা তাকবীরের অপেক্ষা করছি, এমন সময় তিনি ফিরে গেলেন এবং বলে গেলেন তোমরা নিজ নিজ স্থলে অপেক্ষা কর। আমরা নিজ নিজ স্থানে অপেক্ষা করতে লাগলাম। শেষ পর্যন্ত তিনি তাশরিফ নিয়ে আসলেন, তাঁর মাথা মুবারক থেকে পানি টপকে পড়ছিলো এবং তিনি গোসল করে এসেছিলেন।

হাদিস ৬১২
ইসহাক (র.)…………… আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একবার) সালাতের ইকামাত দেয়া হয়ে গেছে, লোকেরা তাদের কাতার সোজা করে নিয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বেরিয়ে আসলেনএবং সামনে এগিয়ে গেলেন, তখন তাঁর উপর গোসল ফরজ ছিল। তিনি বল্লেনঃ তোমরা নিজ নিজ এলাকায় অপেক্ষা কর। এরপর তিনি ফিরে গেলেন এবং গোসল করলেন, তারপর ফিরে আসলেন, তখন তাঁর মাথা মুবারক থেকে টপটপ করে পানি পড়ছিল। এরপর সবাইকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন।

হাদিস ৬১৩
আবু নু’আইম (র.)…………… জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধের দিন হযরত উমর ইবন খাত্তাব (রাঃ) নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আল্লাহর কসম! আমি সালাত আদায় করতে পারিনি, এমন কি সুর্য ডুবতে লাগলো, (জাবির (রাঃ) বলেন,) যখন কথা হচ্ছিল তখন এমন সময়, যে সাওম পালনকারী ইফতার করে ফেলেন। নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমিও সে সালাত আদায় করিনি। তারপর নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘বুহতান’ নামক উপত্যকায় গেলেন, আমিও তাঁর সঙ্গে ছিলাম। সেখানে তিনি উযু করলেন এবং সূর্য ডুবে যাওয়ার পরে তিনি (প্রথমে) আসরের সালাত আদায় করলেন, এরপর তিনি মাগ্রিবের সালাত আদায় করলেন।

হাদিস ৬১৪
আবু মা’মার আবদুল্লাহ ইবন আমর (র.)………… আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সালাতের ইকামাত হয়ে গেছে তখনও নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মসজিদের একপাশে একব্যক্তির সাথে একান্তে কথা বলছিলেন, অবশেষে যখন লোকদের ঘুম আসছিল তখন তিনি সালাতে দাঁড়ালেন।

হাদিস ৬১৫
আইয়্যাশ ইবন ওয়ালিদ (র.) ………… হুমাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সালাতের ইকামাত হয়ে যাওয়ার পর কোন ব্যক্তির কথা বলা সম্পর্কে আমি সাবিত বুনানীকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাকে আনাস ইবন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি হাদীস শুনালেন। তিনি বলেন, সালাতের ইকামাত দেওয়া হয় এমন সময় এক ব্যক্তি নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে এলো এবং সালাতের ইকামাতের পর তাঁকে ব্যস্ত রাখল। আর হাসান বাসরী (র.) বলেন, কোন মা যদি তার সন্তানের প্রতি স্নেহবশত ইশার সালাত জামা’আতে আদায় করতে নিষেধ করে, তবে এ ব্যাপারে সন্তান তাঁর মায়ের আনুগত্য করবে না।

হাদিস ৬১৬
আবদুল্লাহ ইবন ইউসুফ (র.)…………… হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে মহান সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর কসম! আমার ইচ্ছা হয়, জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে আদেশ দেই, তারপর সালাত কায়েমের নির্দেশ দেই, এরপর সালাতের আযান দেওয়া হোক, তারপর এক ব্যক্তিকে লোকদের ইমামতি করার নির্দেশ দেই। এরপর আমি লোকদের কাছে যাই এবং তাদের (যারা সালাতে শামিল হয় নাই) ঘর জ্বালিয়ে দেই। যে মহান সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর কসম! যদি তাদের কেউ জানত যে, একটি গোশতহীন মোটা হাঁড় বা ছাগলের ভালো দুটি পা পাবে তাহলে অবশ্যই সে ইশার জামা’য়াতে হাযির হত।

হাদিস ৬১৭
আবদুল্লাহ ইবন ইউসুফ (র.)………… আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ জামা’আতে সালাতের ফযিলত একাকীএ আদায়কৃত সালাতের থেকে সাতাশ’ গুণ বেশি।

হাদিস ৬১৮
মুসা ইবন ইসমাইল (র.) …………… আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির জামা’আতের সাথে সালাতের সাওয়াব, তাঁর নিজের ঘরে বাজারে আদায়কৃত সালাতের সাওয়াব দ্বিগুণ করে ২৫ গুন বাড়িয়ে দেয়া হয়। এর কারণে এই যে, সে যখন উত্তমরূপে উযু করল, তারপর একমাত্র সালাতের উদ্দেশ্যে মসজিদে রওয়ানা করল তখন তাঁর প্রতি কদমের বিনিময়ে একটী মর্তবা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি গুনাহ মাফ করা হয়। সালাত আদায়ের পর সে যতক্ষণ নিজ সালাতের স্থানে থাকে, ফিরিশতাগণ তার জন্য এ বলে দু’আ করতে থাকেন- “হে আল্লাহ্! আপনি তার উপর রহমত বর্ষণ করুণ এবং তার প্রতি অনুগ্রহ করুণ। “আর তোমাদের কেউ যতক্ষণ সালাতের অপেক্ষায় থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত সে সালাতে রত বলে গণ্য হয়।

হাদিস ৬১৯
আবুল ইয়ামান (র.) ………… আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে, জামা’আতের সালাত তোমাদের কারো একাকি সালাত থেকে পঁচিশ গুণ বেশি মর্তবা রাখে। আর ফজরের সালাতে রাতের ও দিনের ফিরিশতারা সম্মিলিত হয়। তারপর আবু হুরায়রা (রাঃ) বলতেন, তোমরা চাইলে (এর প্রমান স্বরূপ) ফজরের সালাতে উপস্থিত হয় (ফিরিশতাগণ) এ আয়াত পাঠ কর। শুয়াইব (র.) বলেন, আমাকে নাফি (র.) আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ননা করে শুনিয়েছেন যে, জামা’আতের সালাত একাকী সালাতের থেকে সাতাশ গুণ বেশি মর্তবা রাখে।

হাদিস ৬২০
উমর ইবন হাফস (র.)……… উম্মে দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আবু দারদা (রাঃ) রাগান্বিত অবস্থায় আমার নিকট আসলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কিসে তোমাকে রাগান্বিত করেছে? তিনি বললেন, আল্লাহর কসম মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উম্মতের মধ্যে জামা’আতে সালাত আদায় করা ব্যতিত তাঁর তরীকার আর কিছুই দেখছি না। (এখন এতেও ত্রুটি দেখছি)

হাদিস ৬২১
মুহাম্মদ ইবন আলা (র.)…………… আবু মুসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন (মসজিদ থেকে) যে যত বেশি দূরত্ব অতিক্রম করে সালাতে আসে, তার তত বেশি সাওয়াব হবে। আর যে ব্যক্তি ইমামের সাথে সালাত আদায় করা পর্যন্ত অপেক্ষা করে, তার সাওয়াব সে ব্যক্তির চাইতে বেশি, যে একাকী সালাত আদায় করে ঘুমিয়ে পড়ে।

হাদিস ৬২২
কুতাইবা (র.)…………… আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে চলার সময় একটি কাটাযুক্ত ডাল দেখে তা সরিয়ে ফেলল। আল্লাহ্তা’লা তার এ কাজ সাদরে কবুল করে তার গুনাহ মাফ করে দিলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ শহীদ পাঁচ প্রকার –
১. প্লেগে মৃত ব্যক্তি
২. কলেরায় মৃত ব্যক্তি
৩. নিমজ্জিত ব্যক্তি
৪. চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি
৫. আল্লাহর পথে (জিহাদে) শহীদ।
তিনি আরো বলেছেনঃ মানুষ যদি আযান দেওয়া, প্রথম কাতারে সালাত আদায় করার কী ফযিলত তা জানত, কুরআহর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ছাড়া সে সুযোগ না পেত, তাহলে কুরআহর মাধ্যমে হলেও তারা সে সুযোগ গ্রহণ করত আর আওয়াল ওয়াক্ত (যোহরের সালাতে যাওয়ার) কী ফযিলত তা যদি মানুষ জানত, তাহলে এর জন্য তারা অবশ্যই সর্বাগ্রে যেত। আর ইশা ও ফজরের সালাত (জামা’আতে) আদায়ে কী ফযিলত, তা যদি তারা জানত তা হলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা (জামা’আতে) উপস্থিত হতো।

হাদিস ৬২৩
মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহ ইবন হাওশাব (র.)…………… আনাস ইবন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ হে বনী সালিমা! তোমরা কি (স্বীয় আবাস স্থল থেকে মসজিদে আসার পথে) তোমাদের পদচিহ্নগুলোর সাওয়াবের কামনা কর না? ইবন মারিয়াম (র.) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, বনী সালিমা গোত্রের লোকেরা নিজেদের ঘর-বাড়ী ছেড়ে নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে এসে বসতি স্থাপন করতে চেয়েছিল। আনাস (রাঃ) বলেন, কিন্তু মদীনার কোন এলাকা একেবারে শূন্য হওয়াটা নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পছন্দ করেন নাই। তাই তিনি বললেনঃ তোমরা কি (মসজিদে আসা যাওয়ায়) তোমাদের পদচিহ্নগুলোর সাওয়াব কামনা কর না? কুরআনে উল্লেখিত ‘আসার’ শব্দের ব্যাখ্যা সম্পর্কে মুজাহিদ (র.) বলেন, ‘আসার’ অর্থ পদক্ষেপ। অর্থাৎ যমীনে পায়ে চলার চিহ্নসমূহ।

হাদিস ৬২৪
উমর ইবন হাফস (র.)…………… আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ মুনাফিকদের উপস ফজর ও ইশার সালাতের চাইতে অধিক ভারী সালাত আর নেই। এ দু’ সালাতের কি ফযিলত, তা যদি তারা জানত, তা হলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা (জামা’আতে) উপস্থিত হতো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ আমি সংকল্প করছিলাম যে, মুয়াজ্জিন কে ইকামত দিতে বলি এবং কাউকে লোকদের ইমামতি করতে বলি, আর আমি নিজে একটি আগুনের মশাল নিয়ে গিয়ে এরপর ও যারা সালাতে আসেনি, তাদের উপর আগুন ধরিয়ে দেই।

হাদিস ৬২৫
মুসাদ্দাদ (র.)…………… মালিক ইবন হুওয়াইরিস (রাঃ) সূত্রে নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন সালাতের সময় হয়, তখন তোমাদের দু’জনের একজন আযান দিবে ও ইকামত বলবে। তারপর তোমাদের দু’জনের মধ্যে যে অধিক বয়স্ক সে ইমামতি করবে।

হাদিস ৬২৬
আবদুল্লাহ ইবন মাসলামা (র.)…………… আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যতক্ষণ তার সালাতের স্থানে থাকে তার উজু ভঙ্গ না হওয়া পর্যন্ত তার জন্য ফিরিশতা গণ এ বলে দোয়া করতে থাকে যে, ইয়া আল্লাহ্! আপনি তাঁকে মাফ করে দিন, ইয়া আল্লাহ্! আপনি তার উপর রহম করুণ। আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সালাতই তাকে বাড়ি ফিরে যাওয়া থেকে বিরত রাখে, সে সালাতে রত আছে বলে গণ্য হবে।

হাদিস ৬২৭
মুহাম্মদ ইবন বাশশার (র.)…………… আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে দিন আল্লাহর রহমতের ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না, সেদিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ্তা’লা তাঁর নিজের (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দিবেন।
১. ন্যায়পরায়ণ শাসক,
২. সে যুবক যার জীবন গড়ে উঠেছে তার রবের ইবাদাতের মধ্যে,
৩. সে ব্যক্তি যার কলব মসজিদের সাথে লাগা রয়েছে,
৪. সে দু’ব্যক্তি যারা পরস্পরকে ভালোবাসে আল্লাহর ওয়াস্তে, একত্র হয় আল্লাহর জন্য এবং পৃথকও হয় আল্লাহর জন্য,
৫. সে ব্যক্তি যাকে কোন উচ্চ বংশীয় রূপসী নারী আহ্বান জানায়, কিন্তু সে এ বলে তা প্রত্যাখ্যান করে যে, ‘আমি আল্লাহ্কে ভয় করি’,
৬. সে ব্যক্তি যে এমন গোপনে দান করে যে, তার ডান হাত যা খরচ করে বাম হাত তা জানে না,
৭. সে ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহর জিকির করে, ফলে তার দু’চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হয়।

হাদিস ৬২৭
মুহাম্মদ ইবন বাশশার (র.)…………… আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে দিন আল্লাহর রহমতের ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না, সেদিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ্তা’লা তাঁর নিজের (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দিবেন।
১. ন্যায়পরায়ণ শাসক,
২. সে যুবক যার জীবন গড়ে উঠেছে তার রবের ইবাদাতের মধ্যে,
৩. সে ব্যক্তি যার কলব মসজিদের সাথে লাগা রয়েছে,
৪. সে দু’ব্যক্তি যারা পরস্পরকে ভালোবাসে আল্লাহর ওয়াস্তে, একত্র হয় আল্লাহর জন্য এবং পৃথকও হয় আল্লাহর জন্য,
৫. সে ব্যক্তি যাকে কোন উচ্চ বংশীয় রূপসী নারী আহ্বান জানায়, কিন্তু সে এ বলে তা প্রত্যাখ্যান করে যে, ‘আমি আল্লাহ্কে ভয় করি’,
৬. সে ব্যক্তি যে এমন গোপনে দান করে যে, তার ডান হাত যা খরচ করে বাম হাত তা জানে না,
৭. সে ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহর জিকির করে, ফলে তার দু’চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হয়।

হাদিস ৬২৮
কুতাইবা (র.)…………… হুমাইদ (র.)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনাস (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কি আংটি বুবহার করতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। একরাতে তিনি ইশার সালাত অর্ধরাত পর্যন্ত বিলম্বে আদায় করলেন। সালাত শেষ করে আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, লোকেরা সালাত আদায় করে ঘুমিয়ে গেছে। কিন্তু তোমরা যতক্ষণ সালাতের জন্য অপেক্ষা করেছ, ততক্ষণ সালাতে রত ছিলে বলে গণ্য করা হয়েছে। আনাস (রাঃ) বলেন। এ সময় আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর আংটির চমক দেখতে পাচ্ছিলাম।

হাদিস ৬২৯
আলী ইবন আবদুল্লাহ (র.)………… আবু হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি সকাল বা বিকালে যতবার মসজিদে যায়, আল্লাহ্তা’লা তার জন্য ততবার মেহমানদারীর আয়োজন করেন।

হাদিস ৬৩০
আবদুল আযীয ইবন আবদুল্লাহ (র.)………… আবদুল্লাহ ইবন মালিক ইবন বুহাইনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক ব্যক্তির পাশ দিয়ে গেলেন। (অন্য সুত্রে ইমাম বুখারী (র.) বলেন, আব্দুর রাহমান(র.)…………. হাফস ইবন আসিম (র.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মালিক ইবন বুহাইনা নামক আযদ গোত্রীয় এক ব্যক্তিকে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক ব্যক্তিকে দু’রাকাআত সালাত আদায় করতে দেখলেন। তখন ইকামত হয়ে গেছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন সালাত শেষ করলেন, লোকেরা সে লোকটিকে ঘিরে ফেলল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে বললেন, ফজরের সালাত কি চার রাকাআত? ফজরের সালাত কি চার রাকাআত? গুনদার ও মুয়াজ (র.) শু’বা (র.) থেকে হাদিসটি বর্ণিত বলে উল্লেখ করেছেন। (এ বর্ণনাটিই সঠিক) তবে হাম্মাদ (র.) ও সাদ (র.) এর মধ্যে সে হাফস (র.) থেকে হাদীসটি বর্ননা করতে গিয়ে মালিক ইবন বুহাইনা (র.) থেকে বর্ণিত বলে উল্লেখ করেছেন।

হাদিস ৬৩১
উমর ইবন হাফস ইবন গিয়াস (র.)………… আসওয়াদ (র.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আয়িশা (রাঃ) এর কাছে নিলাম এবং সালাতের পাবন্দী ও উহার তা’যীম সম্বন্ধে আলোচনা করছিলাম। আয়েশা (রাঃ) বললেন, নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন অন্তিম রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লেন, তখন সালাতের সময় হলে আযান দেওয়া হল। তখন তিনি বললেন, আবু বকরকে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করতে বল। তাঁকে বলা হল যে, আবু বকর (রাঃ) অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের লোক। তিনি যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেন তখন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবারো সে কথা বললেন এবং তারা আবারো তা-ই বললেন। তৃতীয়বারও তিনি সে কথা বললেন। তিনি আরো বললেনঃ তোমরা ইউসুফ (আঃ) এর সাথী মহিলাদের মত। আবু বকরকেই বল, যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে নেয়। আবু বকর (রাঃ) এগিয়ে গিয়ে সালাত আদায় শুরু করলেন। এদিকে নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজেকে একটু হালকাবোধ করলেন। দু’জন লোকের কাঁধে ভর দিয়ে বেরিয়ে এলেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমার চোখে এখনও স্পষ্ট ভাসছে। অসুস্থতার কারণে তাঁর দু’পা মাটির উপর দিয়ে হেঁচড়ে যাচ্ছিল। তখন আবু বকর (রাঃ) পেছনে সরে আসতে চাইলেন। নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে স্বস্থানে থাকার জন্য ইঙ্গিত করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে একটু সামনে আনা হলো, তিনি আবু বকর (রাঃ) এর পাশে বসলেন। আ’মাশকে জিজ্ঞাসা করা হলঃ তাহলে নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইমামতি করছিলেন। আবু বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর অনুসরণে সালাত আদায় করছিলেন এবং লোকেরা আবু বকর (রাঃ) এর সালাতের অনুকরন করছিল। আ’মাশ (রাঃ) মাথার ইশারায় বললেন, হ্যাঁ। আবু দাউদ (র.) শু’বা (র.) সূত্রে আ’মাশ (রাঃ) থেকে হাদীসের কতকাংশ উল্লেখ করেছেন। আবু মু’আবিয়া (র.) অতিরিক্ত বলেছেন, তিনি আবু বকর (রাঃ) এর বাঁ দিকে বসেছিলেন এবং আবু বকর (রাঃ) দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করেছিলেন।

হাদিস ৬৩২
ইব্রাহীম ইবন মূসা (র.)………… আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন একেবারে কাতর হয়ে গেলেন এবং তাঁর রোগ বেড়ে গেল, তখন তিনি আমার ঘরে সেবা-শুশ্রূষার জন্য তাঁর অন্যান্য স্ত্রীগণের কাছে সম্মতি চাইলেন। তাঁরা সম্মতি দিলেন। সে সময় দু’জন লোকের কাঁধে ভর দিয়ে (সালাতের জন্য) তিনি বের হলেন, তাঁর দু’পা মাটিতে হেঁচড়িয়ে যাচ্ছিলো। তিনি ছিলেন আব্বাসা (রাঃ) ও অপর এক সাহাবীর মাঝখানে। (বর্ননাকারী) উবায়দুল্লাহ (র.) বলেন, আয়িশা (রাঃ) এর বর্ণিত এ ঘটনা ইবন আব্বাস (রাঃ) এর নিকট ব্যক্ত করি। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি জান, তিনি কে ছিলেন, যার নাম আয়েশা (রাঃ) বলেন নি? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তিনি ছিলেন আলী ইবন আবু তালিব (রাঃ)।

হাদিস ৬৩৩
আবদুল্লাহ ইবন ইউসুফ (র.)………… নাফি’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবন উমর (রাঃ) একবার প্রচন্ড শীত ও বাতাসের রাতে সালাতের আযান দিলেন। তারপর ঘোষণা দিলেন, প্রত্যেকে নিজ নিজ আবাসে সালাত আদায় করে নাও, এরপর তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রচণ্ড শীত ও বৃষ্টির রাত হলে মুয়াজ্জিনকে এ কথা বলার নির্দেশ দিতেন – প্রত্যেকে নিজ নিজ আবাসে সালাত আদায় করে নাও।

হাদিস ৬৩৪
ইসমাইল (র.)………… মাহমুদ ইবন রাবী’ আল আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইতবান ইবন মালিক (রাঃ) তাঁর নিজ গোত্রের ইমামতি করতেন। তিনি ছিলেন অন্ধ। একদিন তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বললেন। ইয়া রাসূলুল্লাহ ! কখনো কখনো ঘোর অন্ধকার ও বর্ষণ প্রবাহ হয়ে পড়ে। অথচ আমি একজন অন্ধ ব্যক্তি। ইয়া রাসূলুল্লাহ ! আপনি আমার ঘরে কোন একস্থানে সালাত আদায় করুণ, যে স্থানটিকে আমার সালাতের স্থান হিসেবে নির্ধারন করবো। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর ঘরে এলেন এবং বললেনঃ আমার সালাত আদায়ের জন্য কোন জায়গাটি তুমি ভালো মনে কর? তিনি ইশারা করে ঘরের জায়গা দেখিয়ে দিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেখানে সালার আদায় করলেন।

হাদিস ৬৩৫
আবদুল্লাহ ইবন আবদুল ওয়াহহাব (র.)………… আবদুল্লাহ ইবন হারিস (র.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক বৃষ্টির দিনে ইবন আব্বাস (রাঃ) আমাদের উদ্দেশ্যে খুৎবা দিচ্ছিলেন। মুয়াজ্জিন যখন ‘হাইয়া আলাস সালাহ’ পর্যন্ত পৌছলো, তখন তিনি তাঁকে বললেন, ঘোষণা করে দাও যে, সালাত যার যার আবাসে। এ শুনে লোকেরা একে অন্যের দিকে তাকাতে লাগল – যেন তারা বিষয়টিকে অপছন্দ করল। তিনি তাদের লক্ষ করে বললেন, মনে হয় তোমরা বিষয়টি অপছন্দ করছ। তবে, আমার চেয়ে যিনি উত্তম ছিলেন অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিনিই এরূপ করেছেন। একথা সত্য যে জুমু’আর সালাত ওয়াজিব। তবে তোমাদের অসুবিধায় ফেলা আমি পছন্দ করি না। হাম্মাদ (র.)………… ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকেও অনুরূপ বর্ণিত আছে। তবে এ সূত্রে এরূপ উল্লেখ আছে, আমি তোমাদের গুনাহর অভিযোগে ফেলতে পছন্দ করি না যে, তোমরা হাঁটু পর্যন্ত কাদা মাড়িয়ে আসবে।

হাদিস ৬৩৬
মুসলিম ইবন ইব্রাহীম (র.)………… আবু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু সায়ীদ খুদরী (রাঃ) কে (শবে-কদর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা) করলাম, তিনি বললেন, একখন্ড মেঘ এসে এমন ভাবে বর্ষণ শুরু করল যে, যার ফলে (মসজিদে নববীর) ছাদ দিয়ে পানি পড়া শুরু হল। কেননা, (তখন মসজিদের) ছাদ ছিল খেজুরের ডালের তৈরী। এমন সময় সালাতের ইকামত দেওয়া হল, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে পানি ও কাদার উপর সিজদা করতে দেখলাম, এমন কি আমি তাঁর কপালেও কাদার চিহ্ন দেখতে পেলাম।

হাদিস ৬৩৭
আদম (র.) …………… আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, এক আনসারী (সাহাবী) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বললেন আমি আপনার সাথে মসজিদে এসে সালাত আদায় করতে অক্ষম। তিনি ছিলেন মোটা। তিনি নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জন্য কিছু খাবার তৈরি করলেন এবং তাঁকে বাড়িতে দাওয়াত করে নিয়ে গেলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে এর জন্য এর জন্য একটি চাটাই পেতে দিলেন এবং চাটাইয়ের একপ্রান্তে কিছু পানি ছিটিয়ে দিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সে চাটাইয়ের উপর দু’ রাকা’আত সালাত আদায় করলেন। জারুদ গোত্রীয় একব্যক্তি আনাস (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করল, নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কি চাশতের সালাত আদায় করতেন নাকি? তিনি বললেন, সে দিন ব্যতীত আর কোন দিন তাঁকে তা আদায় করতে দেখিনি।

হাদিস ৬৩৮
মুসাদ্দাদ (র.)………… আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যখন রাতের খাবার উপস্থিত করা হয়, আর সে সময় সালাতের ইকামত হয়ে যায়, তখন প্রথমে খাবার খেয়ে নাও।

হাদিস ৬৩৯
ইয়াহইয়া ইবন বুকাইর (র.)………… আনাস ইবন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ বিকেলের খাবার পরিবেশন করা হলে মাগরিবের সালাতের আগে তা খেয়ে নিবে। খাওয়া রেখে সালাতে তাড়াহুড়া করবে না।

হাদিস ৬৪০
উবায়দুল্লাহ ইবন ইসমাইল (র.)………… ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কারো সামনে রাতের খাবার উপস্থিত করা হয়, অপর দিকে সালাতের ইকামত হয়ে যায়, তখন আগে খাবার খেয়ে নিবে। খাওয়া রেখে সালাতে তাড়াহুড়া করবে না। (নাফি’ (র.) বলেন) ইবন উমর (রাঃ) এর জন্য খাবার পরিবেশন করা হত, সে সময় সালাতের ইকামত দেয়া হত, তিনি খাবার শেষ না করে সালাতে আসতেন না। অথচ তিনি ইমামের কিরাআত শুনতে পেতেন। যুহাইর (র.) ও ওয়াহব ইবন উসমান (র.) মুসা ইবন ওকবা (র.) সূত্রে ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন খাবার খেতে থাক, তখন সালাতের ইকামত হয়ে গেলেও খাওয়া শেষ না করে তাড়াহুড়া করবে না। আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী (র.) বলেন, আমাকে ইব্রাহীম ইবন মুনযির (র.) এ হাদিসটি ওয়াহাব ইবন উসমান (র.) থেকে বর্ননা করেছেন এবং ওয়াহাব হলেন মদীনাবাসী।

হাদিস ৬৪১
যুহাইর (র.) ও ওয়াহব ইবন উসমান (র.) মুসা ইবন ওকবা (র.) সূত্রে ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন খাবার খেতে থাক, তখন সালাতের ইকামত হয়ে গেলেও খাওয়া শেষ না করে তাড়াহুড়া করবে না। আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী (র.) বলেন, আমাকে ইব্রাহীম ইবন মুনযির (র.) এ হাদিসটি ওয়াহাব ইবন উসমান (র.) থেকে বর্ননা করেছেন এবং ওয়াহাব হলেন মদীনাবাসী।

হাদিস ৬৪২
আব্দুল আযীয ইবন আবদুল্লাহ (র.)………… আমর ইবন উমাইয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি দেখলাম রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (বকরির) সামনের রানের গোশত কেটে খাচ্ছেন, এমন সময় তাঁকে সালাতের জন্য ডাকা হল। তিনি তখনই ছুরি রেখে দিয়ে উঠে গেলেন ও সালাত আদায় করলেন, কিন্তু এজন্য নতুন উযু করেন নি।

হাদিস ৬৪৩

 

হাদিস ৬৪৪
ইসহাক ইবন নাসর (র.)………… আবু মুসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অসুস্থ হয়ে পড়লেন, ক্রমে তাঁর অসুস্থতা বেড়ে যায়। তখন তিনি বললেন, আবু বকরকে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করতে বল। আয়িশা (রাঃ) বললেন তিনি তো কোমল হৃদয়ের লোক। যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেন, তখন তিনি লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করতে পারবেন না। নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবারো বললেন, আবু বকরকে বল, সে যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে। আয়িশা (রাঃ) আবার সে কথা বললেন। তখন তিনি আবার বললেন, আবু বকরকে বল, সে যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে। তোমরা ইউসুফের (আঃ) সাথী রমণীদেরই মত। তারপর একজন সংবাদ দাতা আবু বকর (রাঃ) এর নিকট সংবাদ নিয়ে আসলেন এবং তিনি নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জীবদ্দশায়ই লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন।

হাদিস ৬৪৫
আবদুল্লাহ ইবন ইউসুফ (র.)………… উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অন্তিম রোগে আক্রান্ত অবস্থায় বললেন, আবু বকর (রাঃ) কে বল, সে যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আবু বকর (রাঃ) যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেন, তখন তাঁর কান্নার দরুন লোকেরা তাঁর কিছুই শুনতে পাবেনা। কাজেই উমর (রাঃ) কে লোকদের নিয়ে সালাত আদায়ের নির্দেশ দিন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি হাফসা (রাঃ) কে বললাম, তুমিও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বল যে,আবু বকর (রাঃ) আপনার স্থানে দাঁড়ালে কান্নার দরুন লোকেরা তাঁর কিছুই শুনতে পাবেনা। তাই উমর (রাঃ) কে লোকদের নিয়ে সালাত আদায়ের নির্দেশ দিন। হাফসা (রাঃ)ও তাই করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, থাম, তোমরা তোমরা ইউসুফের (আঃ) সাথী রমণীদেরই ন্যায়। আবু বকর (রাঃ) কে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করতে বল। হাফসা (রাঃ) তখন আয়িশা (রাঃ) কে বললেন, আমি তোমার কাছ থেকে কখনও কল্যাণকর কিছু পাইনি।

হাদিস ৬৪৬
আবু ইয়ামান (র.)………… আনাস ইবন মালিক আনসারী (রাঃ) যিনি নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর অনুসারী, খাদিম ও সাহাবী ছিলেন। তিনি বর্ননা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অন্তিম রোগে আক্রান্ত অবস্থায় আবু বকর (রাঃ) সাহাবীগণকে নিয়ে সালাত আদায় করতেন। অবশেষে যখন সোমবার এবং লোকেরা সালাতের জন্য কাতারে দাঁড়ালো, তখন নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হুজরা শরীফের পর্দা উঠিয়ে আমাদের দিকে তাকালেন। তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর চেহারা যেন কোরআনে করীমের পৃষ্ঠা (এর ন্যায় ঝলমল করছিল)। তিনি মুচকি হাসলেন। নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে দেখতে পেয়ে আমরা খুশিতে প্রায় আত্মহারা হয়ে গিয়ে ছিলাম এবং আবু বকর (রাঃ) কাতারে দাঁড়ানোর জন্য পিছন দিকে সরে আসছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন, নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হয়তো সালাতে আসবেন। নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে ইশারায় বললেন যে, তোমরা তোমাদের সালাত পূর্ণ করে নাও। এরপর তিনি পর্দা ফেলে দিলেন। সে দিনই তিনি ইনতিকাল করেন।

হাদিস ৬৪৭
আবু মা’মার (র.)………… আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (রোগশয্যায় থাকার কারণে) তিনি দিন পর্যন্ত নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বাইরে আসেন নি। এ সময় একবার সালাতের ইকামত দেওয়া হল। আবু বকর (রাঃ) ইমামতি করার জন্য অগ্রসর হচ্ছিলেন। এমন সময় নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর ঘরের পর্দা ধরে উঠালেন। নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর চেহারা যখন আমাদের সম্মুখে প্রকাশ পেল, তখন নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হাতের ইশারায় আবু বকর (রাঃ) কে (ইমামতির জন্য) এগিয়ে যেতে বললেন এবং পর্দা ফেলে দেন। তারপর মৃত্যুর পূর্বে তাঁকে আর দেখার সৌভাগ্য হয়নি।

হাদিস ৬৪৮
ইয়াহিয়া ইবন সুলাইমান (র.)………… আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর রোগ যখন খুব বেড়ে গেল, তখন তাঁকে সালাতের জামা’আত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন, আবু বকরকে বল, সে যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে নেয়। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আবু বকর (রাঃ) অত্যন্ত কোমল মনের লোক। কিরা’আতের সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়বেন। তিনি বললেন, তাকেই সালাত আদায় করতে বল। আয়িশা (রাঃ) সে কথার পুনরাবৃত্তি করলেন। তিনি আবারো বললেন, তাঁকেও সালাত আদায় করতে বল। তোমরা ইউসুফ (আঃ) এর সাথী রমণীদের মত। এ হাদীসটি যুহরীর (র.) থেকে বর্ণনা করার ব্যাপারে যুবাইদী যুহরীর ভাতিজা ও ইসহাক ইবন ইয়াহইয়া কালবী (র.) ইউনুস (র.) এর অনুসরণ করেছেন এবং মা’মার ও উকায়ল (র.) যুহরী (র.) এর মাধ্যমে হামযা (র.) সূত্রে নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে হাদিসটি (মুরসাল হিসাবে) বর্ণনা করেন।

হাদিস ৬৪৯
যাকারিয়া ইবন ইয়াহইয়া (র.)………… আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, অন্তিম রোগে আক্রান্ত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবু বকর (রাঃ) কে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাই তিনি লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করেন। উরওয়া (রাঃ) বর্ননা করেন, ইতিমধ্যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটু সুস্থতা বোধ করলেন এবং সালাতের জন্য বেরিয়ে আসলেন। তখন আবু বকর (রাঃ) লোকদের ইমামতি করছিলেন। তিনি নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে দেখে পিছিয়ে আসতে চাইলেন। নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে ইশারা করলেন যে, যেভাবে আছ সেভাবেই থাক। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবু বকর (রাঃ) এর বরাবর তাঁর পাশে বসে গেলেন। তখন আবু বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে অনুসরণ করে সালাত আদায় করছিলেন আর লোকেরা আবু বকর (রাঃ) কে অনুসরণ করে সালাত আদায় করছিল।

হাদিস ৬৫০
আবুদুল্লাহ ইবন ইউসুফ (র.)………… সাহল ইবন সা’দ সায়িদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমর ইবন আওফ গোত্রের এক বিবাদ মীমাংসার জন্য সেখানে যান। ইতিমধ্যে (আসরের) সালাতের সময় হয়ে গেলে, মুয়াজ্জিন আবু বকর (রাঃ) এর কাছে এসে বললেন, আপনি কি লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে নেবেন? তা হলে ইকামত দেই? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আবু বকর (রাঃ) সালাত আরম্ভ করলেন। লোকেরা সালাতে থাকতে থাকতেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাশরীফ আনলেন এবং তিনি সারিগুলো ভেদ করে প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে গেলেন।১ তখন সাহাবীগন হাতে তালি দিতে লাগলেন। আবু বকর (রাঃ) সালাতে আর কোন দিকে তাকাতেন না। কিন্তু সাহাবীগন বেশী করে হাতে তালি দিতে লাগলেন, তখন তিনি তাকালেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে দেখতে পেলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার প্রতি ইশারা করলেন – নিজের জায়গায় থাক। তখন আবু বকর (রাঃ) দু’হাত উঠিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নির্দেশের জন্য আল্লাহর প্রশংসা করে পিছিয়ে গেলেন এবং কাতারের বরাবর দাঁড়ালেন। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সামনে এগিয়ে সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষ করে তিনি বললেন, হে আবু বকর! আমি তোমাকে নির্দেশ দেয়ার পর কি সে তোমাকে বাধা দিয়েছিল? আবু বকর (রাঃ) বললেন, আবু কুহাফার পুত্রের জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সামনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা শোভা পায় না। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আমি তোমাদের এত হাতে তালি দিতে দেখলাম। ব্যাপার কি? শোন! সালাতে কারো কিছু ঘটলে সুবহানাল্লাহ বলবে। সুবহানাল্লাহ বললেই তাঁর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া হবে। আর হাতে তালি দেওয়া তো মহিলাদের জন্য।

হাদিস ৬৫১
সুলাইমান ইবন হারব (র.)………… মালিক ইবন হুওয়ায়রিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা একদল যুবক একবার নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর খেদমতে হাযির হলাম এবং প্রায় বিশ দিন আমরা সেখানে থাকলাম। নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু। তাই তিনি আমাদের বললেনঃ তোমরা যখন নিজ দেশে ফিরে গিয়ে লোকদের দীন শিক্ষা দিবে, তখন তাদের এ সময়ে অমুক সালাত আদায় করতে বলবে। এবং ওই সময়ে অমুক সালাত আদায় করতে বলবে। তারপর যখন সালাতের সময় হয় তখন তোমাদের একজন আযান দিবে এবং তোমাদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ ইমামতি করবে।

হাদিস ৬৫২
মু’আয ইবন আসাদ (র.)………… ইতবান ইবন মালিক আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (আমার ঘরে প্রবেশের) অনুমতি চাইলেন। আমি তাঁকে অনুমতি দিলাম। তিনি বল্লেনঃ তোমার ঘরের কোন জায়গাটি আমার সালাত আদায়ের জন্য তুমি পছন্দ কর? আমি আমার পছন্দ মত একটি স্থান ইশারা করে দেখালাম। তিনি সেখানে সালাতের জন্য দাঁড়ালেন, আমরা তাঁর পিছনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। এরপর তিনি সালাম ফিরালেন এবং আমরা সালাম ফিরালাম।

হাদিস ৬৫৩
আহমদ ইবন ইউনুস (র.)………… উবায়দুল্লাহ ইবন আবদুল্লাহ ইবন উতবা (র.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে বললাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর (অন্তিম কালের) অসুস্থতা সম্পর্কে কি আপনি আমাকে কিছু শুনাবেন? তিনি বললেন, অবশ্যই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মারাত্মক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞাসা করলেন, লোকেরা কি সালাত আদায় করে ফেলেছে? আমরা বললাম, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তারা আপনার অপেক্ষায় আছেন। তিনি বললেন, আমার জন্য গসলের পাত্রে পানি দাও। আয়িশা (রাঃ) বলেন আমরা তাই করলাম। তিনি গোসল করলেন। তারপর একটু উঠতে চাইলেন। কিন্তু বেহুঁশ পয়ে পড়লেন। কিছুক্ষন পর একটু হুঁশ ফিরে পেলে আবার তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, লোকেরা কি সালাত আদায় করে ফেলেছে? আমরা বললাম, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ ! তারা আপনার অপেক্ষায় আছেন। তিনি বললেন, আমার জন্য গোসলের পাত্রে পানি নিয়ে রাখ। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমরা তাই করলাম। তিনি গোসল করলেন। আবার উঠতে চাইলেন, কিন্তু বেহুঁশ হয়ে পড়লেন। কিছুক্ষন পর আবার হুঁশ ফিরে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, লোকেরা কি সালাত আদায় করে ফেলেছে? আমরা বললাম, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ ! তারা আপনার অপেক্ষায় আছেন। তিনি বললেন, আমার জন্য গোসলের পাত্রে পানি নিয়ে রাখ। তারপর তিনি উঠে বসলেন, এবং গোসল করলেন এবং উঠতে গিয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়লেন। কিছুক্ষন পর আবার হুঁশ ফিরে পেলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, লোকেরা কি সালাত আদায় করে ফেলেছে? আমরা বললাম, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ ! তারা আপনার অপেক্ষায় আছেন। ওদিকে সাহাবীগণ ইশার সালাতের জন্য নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর অপেক্ষায় মসজিদে বসে ছিলেন। নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবু বকরের নিকট এ মর্মে লোক পাঠান যে, তিনি যেন লোকদের হিয়ে সালাত আদায় করে নেন। সংবাদ বাহক আবু বকর (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আপনাকে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। আবু বকর (রাঃ) অত্যন্ত কোমল মনের লোক ছিলেন, তাই তিনি উমর (রাঃ) কে বললেন, হে উমর! আপনি সাহাবীগণকে নিয়ে সালাত আদায় করে নিন। উমর (রাঃ) বললেন, আপনিই এর জন্য বেশি হকদার। তাই আবু বকর সে কদিন সালাত আদায় করলেন। তারপর নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটু নিজে হালকাবোধ করলেন এবং দু’জন লোকের কাঁধে ভর করে যোহরের সালাতের জন্য বের হলেন। সে দু’জনের একজন ছিলেন আব্বাস (রাঃ) আবু বকর (রাঃ) তখন সাহাবীগণকে নিয়ে সালাত আদায় করছিলেন। তিনি যখন নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে দেখতে পেলেন, পিছনে সরে আসতে চাইলেন। নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে পিছিয়ে না আসার জন্য ইশারা করলেন এবং বললেন তোমরা আমাকে তাঁর পাশে বসিয়ে দাও। তারা তাঁকে আবু বকর (রাঃ) এর পাশে বসিয়ে দিলেন। বর্ননাকারী বলেন, তারপর আবু বকর (রাঃ) নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সালাতের ইক্তিদা করে সালাত আদায় করতে লাগলেন। আর সাহাবীগণ আবু বকর (রাঃ) এর সালাতের ইক্তিদা করতে লাগলেন। নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন উপবিষ্ট ছিলেন। উবায়দুল্লাহ বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর অন্তিম কালের অসুস্থতা সম্পর্কে আয়িশা (রাঃ) আমাকে যে হাদীস বর্ননা করেছেন, তা কি আমি আপনার নিকট বর্ননা করব না? তিনি বললেন, করুণ। তাই আমি তাঁকে সে হাদীস শুনালাম। তিনি এ বর্ণনার কোন অংশেই আপত্তি করলেন না, তবে তাঁকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন যে, আব্বাস (রাঃ) এর সাথে যে অপর সাহাবী ছিলেন, আয়িশা (রাঃ) কি আপনার নিকট তাঁর নাম উল্লেখ করেছেন ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তিনি হলেন, আলী (রাঃ)।

হাদিস ৬৫৪
আবদুল্লাহ ইবন ইউসুফ (র.)………… উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা অসুস্থতার কারণে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজ গৃহে সালাত আদায় করেন এবং বসে সালাত আদায় করেছিলেন, একদল সাহাবী তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে লাগলেন। তিনি তাদের প্রতি ইশারা করলেন যে, বসে যাও। সালাত শেষ করার পর তিনি বললেন, ইমাম নির্ধারণ করা হয় তাঁর ইক্তিদা করার জন্য। কাজেই সে যখন রুকু করে তোমরা ও তখন রুকু করবে, এবং সে যখন রুকু থেকে মাথা উঠায় তখন তোমরাও মাথা উঠাবে, আর সে যখন বসে সালাত আদায় করে, তখন তোমরা সকলেই বসে সালাত আদায় করবে।১

————

১. এ হুকুমের পরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মৃত্যু রোগের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রহিত হয়ে গেছে। কাজেই ইমাম বসে সালাত আদায় করলে সক্ষম মুক্তাদি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবেন।

হাদিস ৬৫৫
আবদুল্লাহ ইবন ইউসুফ (র.)………… আনাস ইবন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘোড়ায় সাওয়ার হন এরপর তিনি তা থেকে পড়ে যান, এতে তাঁর ডান পাশে একটু আঘাত লাগে। তিনি কোন এক ওয়াক্তের সালাত বসে আদায় করেছিলেন, আমরাও তাঁর পেছনে বসে সালাত আদায় করলাম। সালাত শেষ করার পর তিনি বললেন, ইমাম নির্ধারণই করা হয় তাঁর ইক্তিদা করার জন্য। কাজেই ইমাম যখন দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে তখন তোমরাও দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবে, সে যখন রুকু করে তখন তোমরাও রুকু করবে, সে যখন উঠে, তখন তোমরাও উঠবে, আরা সে যখন ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলে তোমরাও তখন ‘রব্বানা ওয়ালাকাল হামদ’ বলবে। আর সে যখন বসে সালাত আদায় করবে, তখন তোমরা সবাই বসে সালাত আদায় করবে। আবু আবদুল্লাহ ইমাম বুখারী (র.) বলেন, হুমাইদী (র.) বলেছেন যে, যখন ইমাম বসে সালাত আদায় করেন, তখন তোমরাও বসে সালাত আদায় করবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নির্দেশ ছিল পূর্বে অসুস্থকালীন। এরপর তিনি বসে সালাত আদায় করেন এবং সাহাবীগণ তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন, কিন্তু তিনি তাদের বসতে নির্দেশ দেননি। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর আমলের মধ্যে সর্বশেষ আমলই গ্রহণীয়।

হাদিস ৬৫৬
মুসাদ্দার (র.)………… বারা’আ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি মিথ্যাবাদী নন১ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলার পর যতক্ষণ পর্যন্ত সিজদায় না যেতেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কেউ পিঠ বাঁকা করতেন না। তিনি সিজদায় যাওয়ার পর আমরা সিজদায় যেতাম।

হাদিস ৬৫৭
আব নু’আইম (র.)………… সুফিয়ান (র.) সূত্রে আবু ইসহাক (র.) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

হাদিস ৬৫৮
হাজ্জাজ ইবন মিনহাল (র.)………… আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তোমাদের কেউ যখন ইমামের আগে মাথা উঠিয়ে ফেলে, তহন সে কি ভয় করে না যে, আল্লাহ্তা’লা তাঁর মাথা গাধার মাথায় পরিণত করে দিবেন, তাঁর আকৃতি গাধার আকৃতি করে দেবেন।

হাদিস ৬৫৯
ইব্রাহীম ইবন মুনযির (র.)………… আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মদিনায় আগমনের পূর্বে মুহাজিরগণের প্রথম দল যখন কুবা এলাকার কোন এক স্থানে এলেন, তখন আবু হুযাইফা (রাঃ) এর আযাদকৃত গোলাম সালিম (রাঃ) তাঁদের ইমামতি করতেন। তাঁদের মধ্যে তিনি কোরআন সম্পর্কে অধিক অভিজ্ঞ ছিলেন।

হাদিস ৬৬০
মুহাম্মদ ইবন বাশশার (র.)………… আনাস ইবন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা শোন ও আনুগত্য প্রকাশ কর, যদিও তোমাদের উপর এমন কোন হাবশীকে আমীর নিযুক্ত করা হয় – যার মাথা কিসমিসের মতো।

হাদিস ৬৬১
ফাযল ইবন সাহল (র.)………… আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তারা তোমাদের ইমামতি করে। যদি তারা সঠিকভাবে আদায় করে তা হলে তার সাওয়াব তোমরা পাবে। আর যদি তারা ত্রুটি করে, তাহলে তোমাদের জন্য সাওয়াব রয়েছে, আর ত্রুটি তাদের (ইমামের) উপরই বর্তাবে।

হাদিস ৬৬২

মুহাম্মদ ইবন আবান (র.)………… আনাস (ইব্‌ন মালিক) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবু যার্ব (রাঃ) কে বলেন, শোন এবং আনুগত্য কর, যদিও কোন হাবশী আমীর হয়-যার মাথা কিসমিসের মতো।

আবু আবদুল্লাহ ইমাম বুখারী (র.) বলেন, আমাকে মোহাম্মদ ইবন ইউসুফ (র.) উবাইদুল্লাহ ইবন আদী ইবন খিয়ার (র.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি উসমান ইবন আফফান (রাঃ) অবরুদ্ধ থাকাকালে তাঁর নিকট গিয়ে বললেন, প্রকৃতপক্ষে আপনিই জনগনের ইমাম। আর আপনার বিপদ তো নিজেই বুঝতে পারছেন। আর আমাদের ইমামতি করছে কখনো বিদ্রোহীদের ইমাম। ফলে আমরা গুনাহগার হওয়ার আশঙ্কা করছি। তিনি বলেন, মানুষের আমলের মধ্যে সালাতই সর্বোত্তম। কাজেই লোকেরা যখন উত্তম কাজ করে, তখন তুমিও তাদের সাথে উত্তম কাজে শরীক হবে, আর যখন তারা মন্দ কাজে লিপ্ত হয়, তখন তাঁদের অপকর্ম থেকে বেঁচে থাকবে। যুবাইদী (র.) বর্ণনা করেন যে, যুহরী (র.) বলেছেন, যারা স্বেচ্ছায় নপুংসক সাজে, তাদের পেছনে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া সালাত আদায় করা সঙ্গত বলে মনে করি না।

হাদিস ৬৬৩
সুলাইমান ইবন হারব (র.)………… ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি আমার খালা মায়মুনা (রাঃ) এর ঘরে রাত যাপন করলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইশার সালাত আদায় করে আসলেন এবং চার রাকাআত সালাত আদায় করে শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর উঠে সালাতে দাঁড়ালেন। তখন আমিও তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে তাঁর ডানপাশে নিয়ে নিলেন এবং পাঁচ রাকাআত সালাত আদায় করলেন। এরপর আরো দু’রাকাত সালাত আদায় করে নিদ্রায় গেলেন। এমনকি আমি তাঁর নাক ডাকার আওয়াজ শুনলাম। তারপর তিনি (উঠে ফজরের) সালাতের জন্য বেরিয়ে গেলেন।

হাদিস ৬৬৪
আহমদ (র.)………… ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার খালা মায়মুনা (রাঃ) এর ঘরে ঘুমালাম। নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সে রাতে তাঁর কেছে ছিলেন। তিনি নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উযু করলেন। তারপর সালাতে দাঁড়ালেন। আমিও তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে ধরে তাঁর ডানপাশে নিয়ে আসলেন। আর তিনি তের রাকআত সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন, এমনকি তাঁর নাক ডাকতে শুরু করল। এবং তিনি যখন ঘুমাতেন তাঁর নাক ডাকত। তারপর তাঁর কাছে মুয়াজ্জিন এলেন, তিনি বেরিয়ে গিয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন এবং নতুন উজু করেননি। আমর (রাঃ) বলেন, এ হাদিস আমি বুকাইর (রাঃ) কে শুনালে তিনি বলেন, কুরাইব (র.) ও এ হাদীস আমার কাছে বর্ণনা করেছেন।

হাদিস ৬৬৫
মুসাদ্দাদ (র.)………… ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি আমার খালার (মায়মুনা) (রাঃ) এর কাছে রাত যাপন করলাম। নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রাতের সালাতে দাঁড়ালেন। আমিও তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করতে দাঁড়ালাম। আমি তাঁর বামপাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তিনি আমার মাথা ধরে তাঁর ডানপাশে দাঁড় করালেন।

হাদিস ৬৬৬
মুসলিম (র.)………… জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মু’আয ইবন জাবাল (রাঃ) নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সঙ্গে সালাত আদায় করার পর ফিরে গিয়ে আপন গোত্রের ইমামতি করতেন। এই হাদিস মুহাম্মদ ইবন বাশশার (রা.) সূত্রে জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, মুয়ায ইবন জাবাল (রাঃ) নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সঙ্গে সালাত আদায় করার পর ফিরে গিয়ে নিজ গোত্রের ইমামতি করতেন। একদিন তিনি ইশার সালাতে সুরা বাকারা পাঠ করেন, এতে এক ব্যক্তি জামা’আত থেকে বেরিয়ে যায়। এ জন্য মু’আয (রাঃ) তার সমালোচনা করেন, এ খবর নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট পৌছালে তিনি তিনবার ‘ফুতান’ অথবা ‘ফাতিনান’ (বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী) শব্দটি বললেন। এবং তিনি তাকে আওসাতে মুফাসসালের দুটি সুরা পাঠের নির্দেশ দেন। আমর (রাঃ) বলেন, কোন দুটি সুরার কথা বলেছিলেন, তা আমার স্মরণ নেই।

এই হাদিস মুহাম্মদ ইবন বাশশার (রা.) সূত্রে জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, মুয়ায ইবন জাবাল (রাঃ) নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সঙ্গে সালাত আদায় করার পর ফিরে গিয়ে নিজ গোত্রের ইমামতি করতেন। একদিন তিনি ইশার সালাতে সুরা বাকারা পাঠ করেন, এতে এক ব্যক্তি জামা’আত থেকে বেরিয়ে যায়। এ জন্য মু’আয (রাঃ) তার সমালোচনা করেন, এ খবর নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট পৌছালে তিনি তিনবার ‘ফুতান’ অথবা ‘ফাতিনান’ (বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী) শব্দটি বললেন। এবং তিনি তাকে আওসাতে মুফাসসালের দুটি সুরা পাঠের নির্দেশ দেন। আমর (রাঃ) বলেন, কোন দুটি সুরার কথা বলেছিলেন, তা আমার স্মরণ নেই।

হাদিস ৬৬৭
আহমদ ইবন ইউনুস (র.)………… আবু মাসউদ(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সাহাবী এসে বললেন ইয়া রাসূলুল্লাহ! আল্লাহর শপথ! আমি অমুকের কারণে ফজরের সালাতে অনুপস্থিত থাকি। তিনি জামা’আতে সালাতকে খুব দীর্ঘ করেন। আবু মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে নসীহত করতে গিয়ে সেদিনের ন্যায় এত বেশি রাগান্বিত আর কোন দিন দেখিনি। তিনি বলেন, তোমাদের মাঝে বিতৃষ্ণা সৃষ্টিকারী রয়েছে। তোমাদের মধ্যে যে কেউ অন্য লোক নিয়ে সালাত আদায় করে, সে যেন সংক্ষেপ করে। কেননা, তাঁদের মধ্যে দুর্বল, বৃদ্ধ ও হাজতমন্দ লোকও থাকে।

হাদিস ৬৬৮
আবদুল্লাহ ইবন ইউসুফ (র.)………… আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে, তখন সে যেন সংক্ষেপ করে। কেননা তাঁদের মাঝে দুর্বল, অসুস্থ ও বৃদ্ধ রয়েছে। আর যদি কেউ একাকী সালাত আদায় করে তখন ইচ্ছামত দীর্ঘ করতে পারে।

হাদিস ৬৬৯
মুহাম্মদ ইবন ইউসুফ (র.)………… আবু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সাহাবী এসে বলল ইয়া রাসূলুল্লাহ! অমুক ব্যক্তির জন্য আমি ফজরের সালাতে অনুপস্থিত থাকি। কেননা তিনি আমাদের সালাত খুব দীর্ঘ করেন। এ শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রাগান্বিত হলেন। আবু মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে নসীহত করতে গিয়ে সেদিনের ন্যায় এত বেশি রাগান্বিত আর কোন দিন দেখিনি। তারপর তিনি বলেনঃ হে লোকেরা! তোমাদের মাঝে বিতৃষ্ণা সৃষ্টিকারী রয়েছে। তোমাদের মধ্যে যে কেউ লোকদের ইমামতি করে, সে যেন সংক্ষেপ করে। কেননা, তাঁদের মধ্যে দুর্বল, বৃদ্ধ ও হাজতমন্দ লোকও থাকে।

হাদিস ৬৭০
আদম ইবন আবু ইয়াস (র.)………… জাবির ইবন আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সাহাবী দু’টি পানি বহনকারী উট নিয়ে আসছিলেন। রাতের অন্ধকার তখন ঘনীভূত হয়ে এসেছে। এ সময় তিনি মু’আয (রাঃ) কে সালাত আদায়রত পান, তিনি তার উট দুটি বসিয়ে দিয়ে মু’আয (রাঃ) এর দিকে (সালাত আদায় করতে) এগিয়ে এলেন, মু’আয (রাঃ) সুরা বাকারা বাঁ সুরা নিসা পড়তে শুরু করেন। এতে সাহাবী (জামা’আত ছেড়ে) চলে যান। পরে তিনি জানতে পারেন যে, মু’আয (রাঃ) এর জন্য তার সমালোচনা করেছেন। তিনি নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এসে মু’আয (রাঃ) এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এতে নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে মু’আয! তুমি কি লোকদের ফিতনায় ফেলতে চাও? বা তিনি বলেছিলেন তুমি কি ফিতনা সৃষ্টিকারী? তিনি একথা তিনবার বলেন। তারপর তিনি বললেন, তুমি ‘সাব্বিহিস্মি রাব্বিকা, ওয়াশশামসি ওয়াদুহা হা’ এবং ওয়াল্লাইলি ইজা ইয়াগশা (সুরা) দ্বারা সালাত আদায় করলেনা কেন? কারন তোমার পিছনে দুর্বল, বৃদ্ধ ও হাজতমন্দ লোক সালাত আদায় করে। (শু’বা (র.) বলেন) আমার ধারণা শেষোক্ত বাক্যটি হাদিসের অংশ। সায়ীদ ইবন মাসরুক, মিসওয়ার এবং শাইবানী (র.) – ও অনুরূপ রেওয়ায়াত করেছেন। আমর, উবাইদুল্লাহ ইবন মিকসাম আবু যুবাইর (র.) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, মু’আয (রাঃ) ইশার সালাতে সুরা বাকারা পাঠ করেছিলেন। আ’মাশ (র.) ও মুহারিব (র.) সূত্রে অনুরূপ রিওয়ায়েত করেন।

হাদিস ৬৭১
আবু মা’মার (র.)………… আনাস ইবন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাত সংক্ষেপে এবং পুর্ণভাবে আদায় করতেন।

হাদিস ৬৭২
ইব্রাহীম ইবন মুসা (র.)………… আবু কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আমি অনেক সময় দীর্ঘ করে সালাত আদায়ের ইচ্ছা নিয়ে দাঁড়াই। পরে শিশুর কান্নাকাটি শুনে সালাত সংক্ষেপ করি। কারন আমি পছন্দ করি না যে, শিশুর মাকে কষ্টে ফেলি। বিশর ইবন বাকর, বাকিয়্যা ও ইবন মোবারক আওযারী (র.) থেকে হাদীস বর্ণনায় ওয়ালীদ ইবন মুসলিম (র.) এর অনুসরণ করেছেন।

হাদিস ৬৭৩
খালিদ ইবন মাখলাদ (র.)………… আনাস ইবন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর চেয়ে সংক্ষিপ্ত এবং পুর্ণাঙ্গ সালাত কোন ইমামের পেছনে কখনো পড়িনি। আর তা এ জন্য যে, তিনি শিশুর কান্না শুনতে পেতেন এবং তার মায়ের ফিতনায় পড়ার আশঙ্কায় সংক্ষেপ করতেন।

হাদিস ৬৭৪
আলী ইবন আবদুল্লাহ (র.)………… আনাস ইবন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আমি দীর্ঘ করার ইচ্ছা নিয়ে সালাত শুরু করি। কিন্তু পরে শিশুর কান্না শুনে আমার সালাত সংক্ষেপ করে ফেলি। কেননা, শিশু কাঁদলে মায়ের মন যে অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়ে তা আমি জানি।

হাদিস ৬৭৫
মুহাম্মদ ইবন বাশশার (র.)………… আনাস ইবন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আমি দীর্ঘ করার ইচ্ছা নিয়ে সালাত শুরু করি এবং শিশুর কান্না শুনে আমার সালাত সংক্ষেপ করে ফেলি। কেননা, শিশু কাঁদলে মায়ের মন যে অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়ে তা আমি জানি। মুসা (র.)………… আনাস (রাঃ) সূত্রে নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন।

হাদিস ৬৭৬
সুলাইমান ইবন হারব ও আবু নু’মান (র.)………… জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মু’আয (রাঃ) নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সঙ্গে সালাত আদায় করে নিজ গোত্রে ফিরে গিয়ে তাঁদের ইমামতি করতেন।

হাদিস ৬৭৭
মুসাদ্দাদ (র.)………… আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অন্তিম রোগে আক্রান্ত থাকা কালে একবার বিলাল (রাঃ) তাঁর নিকট এসে সালাতের (সময় হয়েছে বলে) সংবাদ দিলেন। নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আবু বকরকে বল, যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে। (আয়িশা (রাঃ) বললেন), আমি বললাম, আবু বকর (রাঃ) কোমল হৃদয়ের লোক, তিনি আপনার স্থানে দাঁড়ালে কেঁদে ফেলবেন এবং কিরাআত পড়তে পারবেন না। তিনি আবার বললেনঃ আবু বকরকে বল, সালাত আদায় করতে। আমি আবারও সে কথা বললাম। তখন তৃতীয় বা চতুর্থবারে তিনি বললেন, তোমরা তো ইউসুফের (আঃ) সাথী রমণীদেরই মত। আবু বকরকে বল, সে যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে। আবু বকর (রাঃ) লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করতে লাগলেন। ইতিমধ্যে নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দু’জনের কাঁধে ভর করে বের হলেন। (আয়িশা (রাঃ) বললেন) আমি যেন এখনও সে দৃশ্য দেখতে পাই। তিনি দু’পা মুবারাক মাটির উপর দিয়ে হেঁচড়িয়ে যান। আবু বকর (রাঃ) তাঁকে দেখতে পেয়ে পেছনে সরে আসতে লাগলেন। নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইশারায় তাঁকে সালাত আদায় করতে বললেন, (তবুও) আবু বকর (রাঃ) পেছনে সরে আসলেন। নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর পাশে বসলেন, আবু বকর (রাঃ) তাকবীর শুনাতে লাগলেন। মুহাযির (র.) আমাশ (র.) থেকে হাদীস বর্ণনায় আবদুল্লাহ ইবন দাউদ (র.) এর অনুসরণ করেছেন।

হাদিস ৬৭৮
কুতাইবা ইবন সায়ীদ (র.)………… আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন পীড়িত হয়ে পড়েছিলেন, বিলাল (রাঃ) এসে সালাতের কথা বললেন। নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আবু বকরকে বল, লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করতে। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আবু বকর অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের ব্যক্তি। তিনি যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেন, তখন সাহাবীগণকে কিছুই শুনাতে পারবেন না। যদি আপনি উমর (রাঃ) কে নির্দেশ দেন (তাহলে ভালো হয়)। তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবার বললেনঃ লোকদের নিয়ে আবু বকরকে সালাত আদায় করতে বল। আমি হাফসা (রাঃ) কে বললাম, তুমি তাঁকে একটু বল যে, আবু বকর (রাঃ) অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের ব্যক্তি। তিনি যখন আপনার পরিবর্তে সে স্থানে দাঁড়াবেন, তখন সাহাবীগণকে কিছুই শুনাতে পারবেন না। যদি আপনি উমর (রাঃ) কে নির্দেশ দেন (তাহলে ভালো হত)। এ শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমরা ইউসুফের সাথী রমণীদেরই মত। আবু বকর (রাঃ) কে লোকদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করতে বল। আবু বকর (রাঃ) লোকদের নিয়ে সালাত আদায় শুরু করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজে একটু সুস্থ বোধ করলেন এবং দু’জন সাহাবীর কাঁধে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে মসজিদে গেলেন। তাঁর দু’পা মুবারক মাটির উপর দিয়ে হেঁচড়ে যাচ্ছিল। আবু বকর (রাঃ) যখন তাঁর আগমন আঁচ করলেন, পেছনে সরে যেতে উদ্যত হলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর প্রতি ইশারা করলেন (পিছিয়ে না যাওয়ার জন্য)। তারপর তিনি এসে আবু বকর (রাঃ) এর বাম পাশে গেলেন। অবশেষে আবু বকর (রাঃ) দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন। আর সাহাবীগণ হযরত আবু বকর (রাঃ) এর সালাতের অনুসরণ করছিল।

হাদিস ৬৭৯
আবদুল্লাহ ইবন মাসলামা (র.)………… আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দু’রাকাআত আদায় করে সালাত শেষ করে ফেললেন। যুল-ইয়াদাইন তাঁকে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! সালাত কি কম করা হয়েছে? না আপনি ভুলে গেছেন? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (অন্যদের লক্ষ করে) বল্লেনঃ যুল-ইয়াদাইন কি ঠিকই বলছে? সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দাঁড়ালেন এবং আরও দু’রাকাআত সালাত আদায় করলেন, তারপর সালাম ফিরালেন এবং তাকবীর বলে স্বাভাবিক সিজদার মত অথবা তার চাইতে দীর্ঘ সিজদা করলেন।

হাদিস ৬৮০
আবুল ওয়ালীদ (র.)………… আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাত দু’রাকাআত পড়লেন। তাঁকে বলা হল আপনি দু’রাকাআত সালাত আদায় করেছেন। তখন তিনি আরও দু’রাকাআত সালাত আদায় করলেন এবং সালাম ফেরানোর পর দুটি সিজদা করলেন।

হাদিস ৬৮১
ইসমাইল (র.)………… উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অন্তিম রোগে আক্রান্ত অবস্থায় বললেনঃ আবু বকর কে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করতে বল। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি তাঁকে বললাম, আবু বকর (রাঃ) যখন আপনার স্থলে দাঁড়াবেন, তখন কান্নার কারণে সাহাবীগণ কিছুই শুনতে পারবেন না। কাজেই উমর (রাঃ) কে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করতে নির্দেশ দিন। তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবার বললেনঃ আবু বকরকে বল লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে নিতে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখন আমি হাফসা (রাঃ) কে বললাম, তুমি তাঁকে বল যে, আবু বকর (রাঃ) যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেন, তখন কান্নার কারণে সাহাবীগণকে কিছুই শুনাতে পারবেন না। কাজেই উমর (রাঃ) কে বলুন তিনি যেন সাহাবীগণকে নিয়ে সালাত আদায় করেন। হাফসা (রাঃ) তাই করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ চুপ কর! তোমরা ইউসুফের সাথি নারীদেরই মত। আবু বকরকে বল সে যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে। এতে হাফসা (রাঃ) আয়িশা (রাঃ) কে (অভিমান করে) বললেন, তোমার কাছ থেকে আমি কখনো আমার জন্য হিতকর কিছু পাইনি।

হাদিস ৬৮২
আবদুল ওয়ালীদ হিশাম ইবন আবদুল মালিক (র.)………… নু’মান ইবন বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা অবশ্যই কাতার সোজা করে নিবে, তা না হলে আল্লাহ্তা’লা তোমাদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি করে দেবেন।

হাদিস ৬৮৩
আবু মা’মার (র.) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ তোমরা কাতার সোজা করে নেবে। আমি আমার পেছনের দিক থেকেও তোমাদের দেখতে পাই।

হাদিস ৬৮৪
আহমদ ইবন আবু রাজা (র.)………… আনাস ইবন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সালাতের ইকামত হচ্ছে, এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের দিকে মুখ করে তাকালেন এবং বললেনঃ তোমরা কাতার গুলো সোজা করে নাও আর মিলে দাড়াও। কেননা, আমি আমার পেছনের দিক থেকেও তোমাদের দেখতে পাই।

হাদিস ৬৮৫
আবু আসিমের (র.)………… আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ পানিতে ডুবে, কলেরায়, প্লেগে এবং ভুমিধসে বা চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তিরা শহীদ। যদি লোকেরা জানত যে, প্রথম ওয়াক্তে সালাত আদায়ে কি ফযিলত, তা হলে তারা এর জন্য প্রতিযোগিতা করে আগেভাগে আসার চেষ্টা করত। আর ইশা ও ফজরের জামা’আতের কি মর্তবা তা যদি তারা জানত তাহলে হামাগুঁড়ি দিয়ে হলেও তাতে উপস্থিত হত এবং সামনের কাতারের কী ফযিলত তা যদি জানত, তাহলে এর জন্য তারা কুরআন ব্যবহার করত।

হাদিস ৬৮৬
আবদুল্লাহ ইবন মুহাম্মদ (র.)………… আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ অনুসরণ করার জন্যই উমাম নির্ধারণ করা হয়। কাজেই তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করবে না। তিনি যখন রুকু করেন তোমরাও রুকু করবে। তিনি যখন ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলেন তখন তোমরা রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলবে। তিনি যখন সিজদা করবেন তোমরাও তখন সিজদা করবে। তিনি যখন বসে সালাত আদায় করেন, তখন তোমরাও সবাই বসে সালাত আদায় করবে। আর তোমরা সালাতে কাতার সোজা করে নিবে, কেননা কাতার সোজা করা সালাতের সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত।

হাদিস ৬৮৭
আবুল ওয়ালীদ (র.)………… থেকে বর্ণিত যে, নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তোমরা তোমাদের কাতার গুলো সোজা করে নেবে। কেননা কাতার সোজা করা সালাতের সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত।

হাদিস ৬৮৮
মু’আয ইবন আসাদ (র.)………… আনাস ইবন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একবার তিনি (আনাস) মদিনায় আসলেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর যুগের তুলনায় আপনি আমাদের সময়ের অপছন্দনীয় কী দেখতে পাচ্ছেন? তিনি বললেন, অন্য কোন কাজ তেমন অপছন্দনীয় মনে হচ্ছে না। তবে তোমরা (সালাতে) কাতার ঠিকমত সোজা কর না। উকবা ইবন উবাইদ (র.) বুশাইর ইবন ইয়াসার (র.) থেকে বর্ণনা করেন যে, আনাস ইবন মালিক (রাঃ) আমাদের কাছে মদিনায় এলেন……… বাকী অংশ অনুরূপ।

হাদিস ৬৮৯
আমর ইবন খালিদ (র.)………… আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ তোমরা তোমাদের কাতার সোজা করে নাও। কেননা, আমি আমার পেছনের দিক থেকেও তোমাদের দেখতে পাই। (আনাস (রাঃ) বলেন) আমাদের প্রত্যেকেরই তার পাশ্ববর্তী ব্যক্তির কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে পা মিলাতাম।

হাদিস ৬৯০
কুতাইবা ইবন সায়ীদ (র.)………… ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একরাতে আমি নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সঙ্গে সালাত আদায় করতে গিয়ে তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমার মাথার পেছনের দিক ধরে তাঁর ডানপাশে নিয়ে এলেন্তারপর সালাত আদায় করে শুয়ে পড়লেন। পড়ে তার কাছে মুয়াজ্জিন এলো। তিনি উঠে সালাত আদায় করলেন, কিন্তু (নতুনভাবে) উযু করেন নি।

হাদিস ৬৯১
আবদুল্লাহ ইবন মুহাম্মদ (র.)………… আনাস ইবন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমাদের ঘরে আমি ও একটি ইয়াতিম ছেলে নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর পেছনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলাম। আর আমার মা উম্মে সুলাইম (রাঃ) আমাদের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

হাদিস ৬৯২
মুসা (র.)………… ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একরাতে আমি সালাত আদায়ের জন্য নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমার হাত বা বাহু ধরে তাঁর ডানপাশে দাঁড় করালেন এবং তিনি তাঁর হাতের ইশারায় বললেন, আমার পেছনের দিক দিয়ে।

হাদিস ৬৯৩
মুহাম্মদ (ইবন সালাম) (র.)………… আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রাতের সালাত তাঁর নিজ কামরায় আদায় করতেন। কামরার দেয়ালটি ছিল নিচু। ফলে একদিন সাহাবীগণ নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর শরীর মুবারক দেখতে পেলেন এবং (দেয়ালের অপর পার্শ্বে) সাহাবীগণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাঁর সহিত সালাত আদায় করলেন। সকালে তারা একথা বলাবলি করছিলেন। দ্বিতীয় রাতে তিনি (সালাতে) দাঁড়ালেন। সাহাবীগণ দাঁড়িয়ে তাঁর সাথে সালাত আদায় করলেন। দু’ বা তিন রাত তারা এরূপ করলেন। এরপর (রাতে) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বসে থাকলেন, আর বের হলেন না। ভোরে সাহাবীগণ এ বিষয়ে আলোচনা করলেন। তখন তিনি বললেনঃ আমার আশঙ্কা হচ্ছিল যে, রাতের সালাত তোমাদের উপর ফরয করে দেয়া হতে পারে।

হাদিস ৬৯৪
ইব্রাহীম ইবন মুনযির (র.)………… আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর একটি চাটাই ছিল। তিনি তা দিনের বেলায় বিছিয়ে রাখতেন এবং রাতের বেলায় তা দিয়ে কামরা বানিয়ে নিতেন। সাহাবীগণ তাঁর পেছনে কাতার বন্দী হয়ে দাঁড়ান এবং পেছনে সালাত আদায় করেন।

হাদিস ৬৯৫
আবদুল আলা ইবন হাম্মদ (র.)………… যায়িদ ইবন সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রমযান মাসে একটি ছোট কামরা বানালেন। তিনি (বুসর ইবন সায়ীদ (রা.) বলেন, মনে হয়, (যায়িদ ইবন সাবিত (রাঃ) কাম্রাটি চাটাইর তৈরী ছিল বলে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি সেখানে কয়েক রাত সালাত আদায় করেন। আর তাঁর সাহাবীগনের মধ্যে কিছু সাহাবীও তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করতেন। তিনি যখন তাঁদের সম্বন্ধে জানতে পারলেন, তখন তিনি বসে থাকলেন। পড়ে তিনি তাঁদের কাছে এসে বললেন, তোমাদের কার্যকলাপ দেখে আমি বুঝতে পেরেছি। হে লোকেরা! তোমরা তোমাদের ঘরেই সালাত আদায় কর। কেননা, ফজর সালাত ব্যতীত লোকেরা ঘরে যে সালাত আদায় করে তা-ই উত্তম। আফফান (র.)………… যায়িদ ইবন সাবিত (রাঃ) সূত্রে নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে অনুরূপ বলেছেন।

হাদিস ৬৯৬
আবুল ইয়ামান (র.)………… আনাস ইবন মালিক আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘোড়ায় চড়েন। ফলে তাঁর ডান পাঁজরে আঁচড় লাগে। আনাস (রাঃ) বলেন, এ সময় কোন এক সালাত আমাদের নিয়ে তিনি বসে আদায় করলেন। আমরাও তাঁর পেছনে বসে সালাত আদায় করি। সালাম ফেরানোর পর তিনি বললেনঃ ইমাম নির্ধারণ করা হয় তাঁকে অনুসরণ করার জন্যই। তাই তিনি যখন দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করেন তখন তোমরাও দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবে। আর তিনি যখন রুকু করেন তখন তোমরাও রুকু করবে। তিনি যখন সিজদা করেন তখন তোমরাও সিজদা করবে। তিনি যখন ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলবে তখন তোমরা রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলবে।

হাদিস ৬৯৭
কুতাইবা ইবন সায়ীদ (র.)………… আনাস ইবন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে আহত হন। তাই তিনি আমাদের নিয়ে বসে সালাত আদায় করেন। আমরাও তাঁর সঙ্গে বসে সালাত আদায় করি। তারপর তিনি ফিরে বললেনঃ ইমাম অনুসরণের জন্যই বা তিনি বলেছিলেন, ইমাম নির্ধারন করা হয় তাঁর অনুসরনের জন্য। তাই যখন তিনি তাকবীর বলেন, তখন তোমরাও তাকবীর বলবে, যখন রুকু করেন তখন তোমরাও রুকু করবে। যখন তিনি উঠেন তখন তোমরাও উঠবে। তিনি যখন ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলবে তখন তোমরা রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলবে এবং তিনি যখন সিজদাহ করেন তখন তোমরাও সিজদা করবে।

হাদিস ৬৯৮
আবুল ইয়ামান (র.)………… আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ ইমাম নির্ধারন করা হয় তাঁর অনুসরণের জন্য। তাই যখন তিনি তাকবীর বলেন, তখন তোমরাও তাকবীর বলবে, যখন তিনি রুকু করেন তখন তোমরাও রুকু করবে। তিনি যখন ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলবে তখন তোমরা রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলবে। আর তিনি যখন সিজদা করেন তখন তোমরাও সিজদা করবে। যখন তিনি বসে সালাত আদায় করেন তখন তোমরাও বসে সালাত আদায় করবে।

হাদিস ৬৯৯

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলাম রহ…….সালিম ইবনে আবদুল্লাহ রা. তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত শুরু করতেন, তখন উভয় হাত তাঁর কাঁধ বরাবর উঠাতেন। আর রুকুতে যাওয়ার জন্য তাকবীর বলতেন এবং যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখনও অনুরূপভাবে দুহাত উঠাতেন এবং سمع الله لمن حمده ও ربنا لك الحمد বলতেন। কিন্তু সিজদার সময় এরূপ করতেন না।

হাদিস ৭০০

মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল রহ…….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখেছি, তিনি যখন সালাতের জন্য দাঁড়াতেন তখন উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন। এবং যখন তিনি রুকুর জন্য তাকবীর বলতেন তখনও এরূপ করতেন। আবার যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখনও এরূপ করতেন এবং سمع الله لمن حمده বলতেন। তবে সিজদার সময় এরূপ করতেন না।

হাদিস ৭০১

ইসহাক ওয়াসিতী রহ………আবু কিলাবা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি মালিক ইবনে হুওয়ায়রিস রা.-কে দেখেছেন, তিনি যখন সালাত আদায় করতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং তাঁর দু’হাত উঠাতেন। আর যখন রুকু করার ইচ্ছা করতেন তখনও তাঁর উভয় হাত উঠাতেন, আবার যখন রুককু থেকে মাথা উঠাতেন তখনও তাঁর উভয় হাত উঠাতেন এবং তিনি বর্ণনা করেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করেছেন।

হাদিস ৭০২

আবুল ইয়ামান রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাকবীর দিয়ে সালাত শুরু করতে দেখেছি, তিনি যখন তাকবীর বলতেন তখন তাঁর উভয় হাত উঠাতেন এবং কাঁধ বরাবর করতেন। আর যখন রুকুর তাকবীর বলতেন তখনও এরূপ করতেন। আবার যখনন سمع الله لمن حمده বলতেন, তখনও এরূপ করতেন এবং ربنا لك الحمد বলতেন। কিন্তু সিজদায় যেতে এরূপ করতেন না। আর সিজদা থেকে মাথা উঠাবার সময়ও এরূপ করতেন না।

হাদিস ৭০৩

আইয়্যাশ রহ………নাফি রহ. থেকে বর্ণিত যে, ইবনে উমর রা. যখন সালাত শুরু করতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং দু’হাত উঠাতেন আর যখন রুকু করতেন তখনও দু’হাত উঠাতেন। এরপর যখন سمع الله لمن حمده বলতেন তখনও দু’হাত উঠাতেন এবং দু’রাকাআত আদায়ের পর যখন দাঁড়াতেন তখনও দু’হাত উঠাতেন। এ সমস্ত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত বলে ইবনে উমর রা. বলেছেন। এ হাদীসটি হাম্মাদ ইবনে সালামা ইবনে উমর রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। ইবনে তাহমান, আইউব ও মূসা ইবনে উকবা রহ. থেকে এ হাদীসটি সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন।

হাদিস ৭০৪

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ……….সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকদের নির্দেশ দেওয়া হত যে, সালাতে প্রত্যেক ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর রাখবে। আবু হাযিম রহ. বলেন, সাহল রহ. এ হাদীসটি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করতেন বলেই জানি। ইসমাঈল রহ. বলেন, এ হাদীসটি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই বর্ণনা করা হত। তবে তিনি এরূপ বলেন নি যে, সাহল রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করতেন।

হাদিস ৭০৫

ইসমাঈল রহ…….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা কি মনে কিছুই আমার কাছে গোপন থাকে না। আর নিঃসন্দেহে আমি তোমাদের দেখি আমার পিছনে দিক থেকেও।

হাদিস ৭০৬

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা রুকু ও সিজদাগুলো যথাযথভাবে আদায় করবে। আল্লাহর শপথ! আমি আমার পিছনে থেকে বা রাবী বলেন, আমার পিঠের পিছনে থেকে তোমাদের দেখতে পাই, যখন তোমরা রুকু ও সিজদা কর।

হাদিস ৭০৭

হাফস ইবনে উমর রহ……..আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর রা. এবং উমর রা. ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ দিয়ে সালাত শুরু করতেন।

হাদিস ৭০৮

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীরে তাহরীমা ও কিরাআতের মধ্যে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকতেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমার মাতাপিতা আপনার উপর কুরবান হোক, তাকবীর ও কিরাআত এর মধ্যে চুপ থাকার সময় আপনি কি পাঠ করে থাকেন ? তিনি বললেন : এ সময় আমি বলি ইয়া আল্লাহ ! আপনি মাশরিক ও মাগরিবের মধ্যে যেরূপ দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন, আমার ও আমার ত্রুটি-বিচ্যুতির মধ্যে ঠিক তদ্রুপ দুরত্ব সৃষ্টি করে দিন। ইয়া আল্লাহ ! শুভ্র বস্ত্রকে যেরূপ নির্মল করা হয় আমাকেও সেরূপ পাক-সাফ করুন। আমার অপরাধসমূহ পানি, বরফ ও হিমশিলা দ্বারা বিধৌত করে দিন।

হাদিস ৭০৯

ইবনে আবু মারইয়াম রহ……..আসমা বিনতে আবু বকর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার সালাতুল কুসুফ (সূর্য গ্রহণের সালাত) আদায় করলেন। তিনি সালাতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। তারপর রুকুতে গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ থাকলেন। তারপর দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। তারপর আবার রুকুতে গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ রুকুতে থাকলে। এরপর উঠলেন, পরে সিজদায় গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ সিজদায় থাকলেন। আবার সিজদায় গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ সিজদায় থাকলেন। এরপর আবার দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। আবার রুকুতে গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ রুকুতে থাকলেন। এরপর রুকু থেকে উঠে আবার দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন এবং আবার রুকুতে গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ থাকলেন। এরপর রুকু থেকে উঠে সিজদায় গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ সিজদায় থাকলেন। তারপর উঠে সিজদায় গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ সিজদায় থাকলেন। এরপর সালাত শেষ করে ফিরে দাঁড়িয়ে বললেন : জান্নাত আমার খুবই নিকটে এসে গিয়েছির এমনকি আমি যদি চেষ্টা করতাম তা হলে জান্নাতের একগুচ্ছ আঙ্গুর তোমাদের এনে দিতে পারতাম। আর জাহান্নামও আমার একেবারে নিকটবর্তী হয়ে গিয়েছিল। এমনকি আমি বলে উঠলাম, ইয়া রব! আমিও কি তাদের সাথে? আমি একজন স্ত্রী লোককে দেখতে পেলাম। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ স্ত্রী লোকটির এমন অবস্থা কেন ? ফেরেশতাগণ জবাব দিলেন, সে একটি বিড়ালকে আটকিয়ে রেখেছিল, ফলে বিড়ালটি অনাহারে মারা যায়। উক্ত স্ত্রী লোকটি তাকে খেতেও দেয়নি এবং তাকে ছেড়েও দেয়নি, যাতে সে আহার করতে পারে। নাফি রহ. বলেন, আমার মনে হয়, (ইবনে আবু মুলায়কা রা. বর্ণনা করেছিলেন, যাতে সে যমীনের পোকা মাকড় খেতে পারে।

হাদিস ৭১০

মূসা রহ…….আবু মামার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা খাব্বাব রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনারা কি করে বুঝতে পারতেন ? তিনি বলনে, তাঁর দাঁড়িয়ে নড়াচড়া দেখে।

হাদিস ৭১১

হাজ্জাজ রহ…….বারা রা. থেকে বর্ণিত, আর তিনি মিথ্যাবাদী ছিলেন না, তাঁরা যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সালাত আদায় করতেন, তখন রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দেখতেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় গেছেন।

হাদিস ৭১২

ইসমাঈল রহ………আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে একবার সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। তখন তিনি এজন্য সালাত আদায় করেন। সাহাবায়ে কিরাম রা. জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! সালাতে দাঁড়ানো অবস্থায় আপনাকে দেখলাম যেন কিছু একটা ধরতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু পরে দেখলাম, আবার পিছিয়ে এলেন। তিনি বললেন, আমাকে জান্নাত দেখানো হয় এবং তারই একটি আঙ্গুরের ছড়া নিতে যাচ্ছিলাম। আমি যদি তা নিয়ে আসতাম, তাহলে দুনিয়ার স্থায়িত্বকাল পর্যন্ত তোমরা তা থেকে খেতে পারতে।

হাদিস ৭১৩

মুহাম্মদ ইবনে সিনান রহ…….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি মিম্বরে আরোহণ করলেন এবং মসজিদের কিবলার দিকে ইশারা করে বললেন, এইমাত্র আমি যখন তোমাদের নিয়ে সালাত আদায় করছিলাম তখন এ দেওয়ালের সামনের দিকে আমি জান্নাত ও জাহান্নামের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলাম। আজকের মত এত মঙ্গল ও অমঙ্গল আমি আর দেখিনি, একথা তিনি তিনবার বললেন।

হাদিস ৭১৪

আলী ইবেন আবদুল্লাহ রহ……..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : লোকদের কি হল যে, তারা সালাতে আকাশের দিকে চোখ তুলে তাকায় ? এ ব্যাপারে তিনি কঠোর বক্তব্য রাখলেন ; এমনকি তিনি বললেন : যেন তারা অবশ্যই এ থেকে বিরত থাকে, অন্যথায় অবশ্যই তাদের দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেওয়া হবে।

হাদিস ৭১৫

মুসাদ্দাদ রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাতে এদিক ওদিক তাকানো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন : এটা এক ধরণের ছিনতাই, যার মাধ্যমে শয়তান বান্দার সালাত ও কে অংশ বিশেষ কেড়ে নেয়।

হাদিস ৭১৬

কুতাইবা রহ…….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, একবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি নকশা করা চাদর পরে সালাত আদায় করলেন। সালাতের পর তিনি বললেন : এ চাদরের কারুকার্য আমার মনকে নিবিষ্ট করে রেখেছিল। এটি আবু জাহমের কাছে নিয়ে যাও এবং এর পরিবর্তে একটি ‘আম্বজানিয়্যাহ’ নিয়ে এস।

হাদিস ৭১৭

কুতাইবা রহ……..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের সামনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন, এমতাবস্থায় মসজিদে কিবলার দিকে থুথু দেখতে পেয়ে তা পরিষ্কার করে ফেললেন। তারপর তিনি সালাত শেষ করে বললেন : তোমাদের কেউ যখন সালাতে থাকে, তখন আল্লাহ তার সামনে থাকেন। কাজেই সালাতে থাকা অবস্থায় কেউ সামনের দিকে থুথু ফেলবে না। মূসা ইবনে উকবা ও ইবনে আবু রাওয়াদ রহ. নাফি রহ. থেকেও হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

হাদিস ৭১৮

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ…….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুসলমানগণ ফযরের সালাতে রত এ সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়িশা রা.-এর হুজরার পর্দা উঠালে তাঁরা চমকে উঠলেন। তিনি তাদের দিকে তাকিয়ে দেখলেন, তারা কাতারবদ্ধ হয়ে আছেন। তা দেখে তিনি মুচকী হাসলেন। আবু বকর রা. তাঁর ইমামতির স্থান ছেড়ে দিয়ে কাতারে শামিল হওয়ার জন্য পিছিয়ে আসতে চাইলেন। তিনি মনে করেছিলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হতে চান। মুসলিম গণ সালাত ছেড়ে দিতে উদ্যত হয়েছিলেন। তিনি ইশারায় তাদের বললেন, তোমরা তোমাদের সালাত পূর্ণ কর। তারপর তিনি পর্দা ফেলে দিলেন। সে দিনেরই শেষভাগে তাঁর ইনতিকাল হয়।

হাদিস ৭১৯

মূসা রহ…..জাবির ইবনে সামুরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কুফাবাসীরা সাদ রা.-এ বিরুদ্ধে উমর রা.-এর নিকট অভিযোগ করেন। কুফার লোকেরা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেন এবং আম্মার রা.-কে তাদের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। কুফার লোকেরা সাদ রা.-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে গিয়ে এ-ও বলে যে, তিনি ভালোরূপে সালাত আদায় করতে পারেন না। উমর রা. তাকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, হে আবু ইসহাক! তারা আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে, আপনি নাকি ভালোরূপে সালাত আদায় করতে পারেন না। সাদ রা. বললেন, আল্লাহর শপথ ! আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাতের অনুরূপই সালাত আদায় করে থাকি। তাঁতে কোন ত্রুটি করি না। আমি ইশার সালাত আদায় করতে প্রথম দু’রাকাআতে একটু দীর্ঘ ও শেষের দু’রাকাআতে সংক্ষেপ করতা। উমর রা. বললেন, হে আবু ইসহাক! আপনার সম্পর্কে আমরা এ-ই ধারণা। তারপর উমর রা. কুফার অধিবাসীদের এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক বা একাধিক ব্যক্তিকে সাদ রা. -এর সঙ্গে কুফায় পাঠান। সে ব্যক্তি প্রতিটি মসজিদে গিয়ে সাদ রা. সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল এবং তারা সকলেই তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করলেন। অবশেষে সে ব্যক্তি বনু আবস গোত্রের মসজিদে উপস্থিত হয়। এখানে উসামা ইবনে কাতাদাহ নামে এক ব্যক্তি যাকে আবু সাদাহ বলে ডাকা হত-দাঁড়িয়ে বলল, যেহেতু তুমি আল্লাহর নামের শপথ দিয়ে জিজ্ঞাসা করেছ, সাদ রা. কখনো সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে যান না, গনীমতের মাল সবভাবে বন্টন করেন না এবং বিচারে ইনসাফ করেন না। তখন সাদ রা. বললেন, মনে রেখো, আল্লাহর শপথ! আমি তিনটি দুআ করছি : ইয়া আল্লাহ ! যদি তোমার এ বান্দা মিথ্যাবাদী হয়, লোক দেখানো এবং আত্মপ্রচারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে-১. তার হায়াত বাড়িয়ে দিন, ২. তার অভাব বাড়িয়ে দিন এবং ৩. তাকে ফিতার সম্মুখীন করুন। পরবর্তীকালে লোকটিকে (তার অবস্থা সম্পর্কে) জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলত, আমি বয়সে বৃদ্ধ, ফিতনায় লিপ্ত। সাদ রা. -এর দুআ আমার উপর লেগে আছে। বর্ণনাকারী আবদুল মালিক রহ. বলেন, পরে আমি সে লোকটিকে দেখেছি, অতিবৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে তার উভয় ভ্রু চোখের উপর ঝুলে পড়েছে এবং সে পথে মেয়েদের উত্যক্ত করত এবং তাদের চিমটি কাটতো।

হাদিস ৭২০

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ…….উবাদা ইবনে সামিত রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি সালাতে সূরা ফাতিহা পড়ল না তার নামায হল না।

হাদিস ৭২১

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করলেন, তখন একজন সাহাবী এসে সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম করলেন। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, আবার গিয়ে সালাত আদায় করলেন। তারপর এসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম করলেন। তিনি বললেন : ফিরে গিয়ে আবার সালাত আদায় কর। কেননা, তুমি সালাত আদায় করনি। এভাবে তিনবার বললেন। সাহাবী বললেন, সেই মহান সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন-আমি তো এর চেয়ে সুন্দর করে সালাত আদায় করতে জানি না। কাজেই আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন : যখন তুমি সালাতের জন্য দাঁড়াবে, তখন তাকবীর বলবে। তারপর কুরআন থেকে যা তোমার পক্ষে সহজ তা পড়বে। তারপর রুকতে যাবে এবং ধীরস্থিরভাবে রুকু আদায় করবে। তারপর সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর সিজদায় যাবে এবং ধীরস্থিরভাবে সিজদা করবে। তারপর সিজদা থেকে উঠে স্থির হয়ে বসবে। আর এভাবেই পুরো সালাত আদায় করবে।

হাদিস ৭২২

আবু নুমান রহ………জাবির ইবনে সামুরা রা. থেকে বর্ণিত যে, সাদ রা. বলেন, আমি তাদেরকে নিয়ে বিকালের দু’ সালাত (যুহর ও আসর) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালতের ন্যায় সালাত আদায় করতাম। এতে কোন ত্রুটি করতাম না। প্রথম দু’রাকাআতে কিরাআত দীর্ঘয়িত এবং শেষে দু’রাকাআতে তা সংক্ষিপ্ত করতাম। উমর রা. বলেন, তোমার সম্পর্কে এরূপই ধারণা।

হাদিস ৭২৩

আবু নুআইম রহ……আবু কাতাদাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের প্রথম দু’রাকাআতে সূরা ফাতিহার সহিত আরও দুটি সূরা পাঠ করতেন। প্রথম রাকাআতে দীর্ঘ করতেন এবং দ্বিতীয় রাকাআতে সংক্ষেপ করতেন। কখনো কোন আদায় শুনিয়ে পড়তেন। আসরের সালাতেও তিনি সূরা ফাতিহার সাথে দুটি সূরা পড়তেন। প্রথম রাকাআতে দীর্ঘ করতেন। ফজরের প্রথম রাকাআতেও তিনি দীর্ঘ করতেন এবং দ্বিতীয় রাকাআতে সংক্ষেপ করতেন।

হাদিস ৭২৪

উমর ইবনে হাফস রহ……আবু মামার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা খাব্বাব রা. কে জিজ্ঞাসা করলাম, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি যুহর ও আসরের সালাতে কিরাআত পড়তেন ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমরা প্রশ্ন করলাম, আপনারা কি করে তা বুঝতেন? তিনি বললেন, তাঁর দাঁড়ির (মুবারকের) নড়াচড়ায়।

হাদিস ৭২৫

মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ…….. আবু মামার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা খাব্বাব ইবনে আরত রা. কে জিজ্ঞাসা করলাম, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি যুহর ও আসরের সালাতে কিরাআত পড়তেন ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা কি করে তা বুঝতেন? তিনি বললেন, তাঁর দাঁড়ির (মুবারকের) নড়াচড়ায়।

হাদিস ৭২৬

মাক্কী ইবনে ইবরাহীম রহ………আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহর ও আসরের প্রথম দু’রাকাআতে সূরা ফাতিহার সাথে একটি সূরা পড়তেন। আর কখনো কখনো কোন আয়াত আমাদের শুনিয়ে পড়তেন।

হাদিস ৭২৭

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উম্মুল ফাযল রা. তাকে “ওয়াল মুরসালাত” সূরাটি তিলাওয়াত করতে শুনে বললেন, বেটা। তুমি এ সূরা তিলাওয়াত করে আমাকে স্মরণ করিয়ে দিলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মাগরিবের সালাতে এ সূরাটি পড়তে শেষবারের মত শুনেছিলাম।

হাদিস ৭২৮

আবু আসিম রহ……….মারওয়অন ইবনে হাকাম রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা যায়েদ ইবনে সাবিত রা. আমাকে বললেন, কি ব্যাপার, মাগরিবের সালাতে তুমি যে কেবল ছোট ছোট সূরা তিলাওয়াত কর? অথচ আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দুটি দীর্ঘ সূরার মধ্যে দীর্ঘতমটি থেকে পাঠ করতে শুনেছি।

হাদিস ৭২৯

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……..জুবাইর ইবনে মুতইম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মাগরিবের সালাতে সূরা তূর থেকে পড়তে শুনেছি।

হাদিস ৭৩০

আবু নুমান রহ……..আবু রাফি রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি আবু হুরায়রা রা.-এর সঙ্গে ইশার সালাত আদায় করলাম। সেদিন তিনি إذا السماء انشفت সূরাটি তিলাওয়াত করে সিজদা করলেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমি আবু কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে এ সিজদা করেছি, তাই তাঁর সঙ্গে মিলিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এ সূরায় সিজদা করব।

হাদিস ৭৩১

আবুল ওয়ালীদ রহ…….আদী (ইবনে সাবিত) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বারা রা. থেকে শুনেছি যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সফরে ইশার সালাতের প্রথম দু’রাকাআতের এক রাকাআতে সূরা والتين الزيتون পাঠ করতেন।

হাদিস ৭৩২

মুসাদ্দাদ রহ……..আবু রাফি রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রা রা.-এর সঙ্গে ইশার সালাত আদায় করলাম। তিনি إذا السماء انشقت সূরাটি তিলাওয়াত করে সিজদা করলেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, এ সিজদা কেন ? তিনি বলেন, আমি আবুল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে এ সূরায় সিজদা করেছি, তাই তাঁর সঙ্গে মিলিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আমি এতে সিজদা করব।

হাদিস ৭৩৩

খাল্লাদ ইবনে ইয়াহইয়া রহ…….বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ইশার সালাতে والتين الزيتون পড়তে শুনেছি। আমি কাউকে তাঁর চাইতে সুন্দর কণ্ঠ অথবা কিরাআত শুনিনি।

হাদিস ৭৩৪

সুলাইমান ইবনে হারব রহ……..জাবির ইবনে সামুরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর রা. সাদ রা.-কে বললেন আপনার বিরুদ্ধে তারা (কুফাবাসীরা) সর্ব বিষয়ে অভিযোগ করেছে, এমনকি সালাত সম্পর্কেও। সাদ রা. বললেন, আমি প্রথম দু’রাকাআতে কিরাআত দীর্ঘ করে থাকি এবং শেষের দু’রাকাআতে তা সংক্ষেপ করি। আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে যেরূপ সালাত আদায় করেছি, অনুরূপই সালাত আদায়ের ব্যাপারে আমি ত্র“টি করিনি। উমর রা. বললেন, আপনি ঠিকই বলছেন, আপনার ব্যাপারে ধারনা তো এ রূপই ছিল, কিংবা (তিনি বলেছিলেন) আপনার সম্পর্কে আমার এ রূপই ধারণা।

হাদিস ৭৩৫

আদম রহ……..সাইয়ার ইবনে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ও আমার পিতা আবু বারযা আসলামী রা.-এর নিকট উপস্থিত হয়ে সালাত সমূহের সময় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত সূর্য সজীব থাকতে থাকতেই মদীনার প্রান্ত সীমায় ফিরে আসতে পারত। মাগরিব সম্পর্কে তিনি কি বলেছিলেন, তা আমি ভুলে গেছি। আর তিনি ইশা রাতের তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বিলম্ব করতে কোন দ্বিধা করতেন না। এবং ইশার আগে ঘুমানো ও পরে কথাবার্তা বলা তিনি পছন্দ করতেন না। আর তিনি ফজর আদায় করতেন এমন সময় যে, সালাত শেষে ফিরে যেতে লোকেরা তার পার্শ্ববর্তী ব্যক্তিকে চিনতে পারত। এর দু’রাকাআতে অথবা রাবী বলেছেন, এক রাকাআতে তিনি ষাট থেকে একশ আয়াত পড়তেন।

হাদিস ৭৩৬

মুসাদ্দাদ রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,প্রত্যেক সালাতেই কিরাআত পড়া হয়। তবে যে সব সালাত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের শুনিয়ে পড়েছেন, আমরাও আমরাও তোমাদের শুনিয়ে পড়ব। আর যে সব সালাতে আমাদের না শুনিয়ে পড়েছেন, আমরাও তোমাদের না শুনিয়ে পড়ব। যদি তোমরা সূরা ফাতিহার চাইতে বেশী না পড়, সালাত আদায় হয়ে যাবে। আর যদি বেশী পড় তা উত্তম।

হাদিস ৭৩৭

মুসাদ্দাদ রহ…….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকজন সাহাবীকে সঙ্গে নিয়ে উকায বাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন। আর দুষ্ট জিনদের উর্ধলোকের সংবাদ সংগ্রহের পথে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয় এবং তাদের দিকে অগ্নিপিন্ড নিক্ষিপ্ত হয়। কাজেই শয়তানরা তাদের সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে আসে। তারা জিজ্ঞাসা করল, তোমাদের কি হয়েছে ? তারা বলল, আমাদের এবং আকাশের সংবাদ সংগ্রহের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে এবং আমাদের দিকে অগ্নিপিন্ড ছুঁড়ে মারা হয়েছে। তখন তারা বলল, নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ একটা কিছু ঘটেছে বলেই তোমাদের এবং আকাশের সংবাদ সংগ্রহের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। কাজেই, পৃথিবীর পূর্ব এবং পশ্চিম অঞ্চল পর্যন্ত বিচরণ করে দেখ, কী কারণে তোমাদের ও আকাশের সংবাদ সংগ্রহের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে ? তাই তাদের যে দলটি তিহামার দিকে গিয়েছিল, তারা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিকে অগ্রসর হল। তিনি তখন উকায বাজারের পথে নাখলা নামক স্থানে সাহাবীগণ কে নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করছিলেন। তারা যখন কুরআন শুনতে পেল, তখন সেদিকে মনোনিবেশ করল। তারপর তারা বলে উঠল, আল্লাহর শপথ! এটিই তোমাদের ও আকাশের সংবাদ সংগ্রহের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এমন সময় যখন তারা সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাইকে শরীক স্থির করব না। এ প্রসঙ্গেই আল্লাহ তাআলা তাঁর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি قل أوحى إلى…………. সূরা নাযিল করেন। মূলত তাঁর নিকট জিনদের বক্তব্যই ওহী রূপে নাযিল করা হয়েছে।

হাদিস ৭৩৮

মুসাদ্দাদ রহ……..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানে কিরাআত পড়ার জন্য নির্দেশ পেয়েছেন, সেখানে পড়েছেন। আর যেখানে চুপ করে থাকতে নির্দেশ পেয়েছেন সেখানে চুপ করে থেকেছেন। (আল্লাহ তাআলার বাণী) “নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।”

হাদিস ৭৩৯

আদম রহ………আবু ওয়াইল রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ইবনে মাসউদ রা.-এর নিকট এসে বলল, গতরাতে আমি মুফসসাল সূরাগুলো এক রাকাআতেই তিলাওয়াত করেছি। তিনি বললেন, তাহলে নিশ্চয়ই কবিতার ন্যায় দ্রুত পড়েছ। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরস্পর সমতূল্য যে সব সূরা মিলিয়ে পড়তেন, সেগুলো সম্পর্কে আমি জানি। এ বলে তিনি মুফাসসাল সূরা সমূহের বিশটি সূরার কথা উল্লেখ করে বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রাকাআতে এর দুটি করে সূরা পড়তেন।

হাদিস ৭৪০

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ…….আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের প্রথম দু’রাকাআতে সূরা ফাতিহা ও দুটি সুরা পড়তেন এবং শেষ দু’রাকাআতে সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন এবং তিনি কোন কোন আয়াত আমাদের শোনাতেন, আর তিনি প্রথম রাকাআতে যতটুকু দীর্ঘ করতেন, দ্বিতীয় রাকাআতে ততটুকু দীর্ঘ করতেন না। এরূপ করতেন আসরে এবং ফজরেও।

হাদিস ৭৪১

কুতাইবা রহ………আবু মামার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা খাব্বাব রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি যুহর ও আসরের সালাতে কিরাআত পড়তেন ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, কি করে বুঝলেন ? তিনি বললেন, তাঁর দাঁড়ি মুবারকের নড়াচড়া দেখে।

হাদিস ৭৪২

মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ………আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহর ও আসরের সালাতের প্রথম দু’রাকাআতে সূরা ফাতিহার সাথে আরেকটি সূরা পড়তেন। কখনো কোন কোন আয়াত আমাদের শুনিয়ে পড়তেন এবং তিনি প্রথম রাকাআতে কিরাআত দীর্ঘ করতেন।

হাদিস ৭৪৩

আবু নুআইম রহ……….আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাতের প্রথম রাকাআতে কিরাআত দীর্ঘ করতেন ও দ্বিতীয় রাকাআতে সংক্ষিপ্ত করতেন এবং এরূপ করতেন ফযরের সালাতেও।

হাদিস ৭৪৪

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ…….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ইমাম যখন ‘আমীন’ বলেন, তখন তোমরাও ‘আমীন’ বল। কেননা, যার ‘আমীন’ (বলা) ও ফেরেশতাদের ‘আমীন’ (বলা) এক হয়, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। ইবনে শিহাব রহ. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ‘আমীন’ বলতেন।

হাদিস ৭৪৫

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যখন তোমাদের কেউ (সালাতে) ‘আমীন’ বলে, আর আসমানে ফেরেশতাগণ ‘আমীন’ বলেন এবং উভয়ের ‘আমীন’ একই সময় হলে, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।

হাদিস ৭৪৬

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলাম রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ইমাম غير المغضوب عليهم ولا الضالين পড়লে তোমরা ‘আমীন’ বল। কেননা, যার এ (আমীন) বলা ফেরেশতাদের (আমীন) বলার সাথে একই সময় হয়, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। মুহাম্মদ ইবনে আমর রহ. আবু সালামা রহ. সূত্রে আবু হুরায়রা রা. -এর মাধ্যমে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এবং নুআইম-মুজমির রহ. আবু হুরায়রা রা. থেকে হাদীস বর্ণনায় সুমাই রহ. এর অনুসরণ করেছেন।

হাদিস ৭৪৭

মুসা ইবনে ইসমাঈল রহ……..আবু বাকরা রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এমন অবস্থায় পৌছলেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন রুকতে ছিলেন। তখন কাতার পর্যন্ত পৌছার আগেই তিনি রুকুতে চলে যান। এ ঘটনা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ব্যক্ত করা হলে, তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা তোমার আগ্রহকে আরও বাড়িয়ে দিন। তবে এরূপ আর করবে না।

হাদিস ৭৪৮

ইসহাক ওয়াসিতী রহ……….ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বসরায় আলী রা.-এর সঙ্গে সালাত আদায় করলেন। তারপর বললেন, ইনি (আলী রা. আমাকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আদায়কৃত সালাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। আর তিনি উল্লেখ করেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিবার (মাথা) উঠাতে ও নামাতে তাকবীব বলতেন।

হাদিস ৭৪৯

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি তাদের সঙ্গে সালাত আদায় করতেন এবং প্রতিবার উঠা বসার তাকবীর বলতেন। সালাত শেষ করে তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে আমার সালাতই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাতের সাথে বেশী সাদৃশ্যপূর্ণ।

হাদিস ৭৫০

আবু নুমান রহ………..মুতাররিফ ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এবং ইমরান ইবনে হুসাইন রা. আলী ইবনে আবি তালিব রা.-বর পিছনে সালাত আদায করলাম। তিনি যখন সিজদায় গেলেন তখন তাকবীর বললেন, সিজদা থেকে যখন মাথা উঠালেন তখনও তাকবীর বললেন, আবার দু’রাকাআতের পর যখন দাঁড়ালেন তখনও তাকবীর বললেন। তিনি যখন সালাত শেষ করলেন তখন ইমরান ইবনে হুসাইন রা. আমার হাত ধরে বললেন, ইনি (আলী রা.) আমাকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বা তিনি বলেছিলেন, আমাদের নিয়ে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাতের ন্যায় সালাত আদায় করেছেন।

হাদিস ৭৫১

আমর ইবনে আওন রহ……..ইকরিমা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মাকামে (ইবরাহীমের নিকট) এক ব্যক্তিকে দেখলাম যে, প্রতিবার উঠা ও ঝুকার সময় দাঁড়ানো ও বসার সময় তাকবীর বলছেন। আমি ইবনে আব্বাস রা. কে জানালে তিনি বললেন, তুমি মাতৃহীন হও, একি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত নয় ?

হাদিস ৭৫২

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……… ইকরিমা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মক্কা শরীফে এক বৃদ্ধের পিছনে সালাত আদায় করলাম। তিনি বাইশবার তাকবীর বললেন। আমি ইবনে আব্বাস রা.-কে বললাম, লোকটি তো আহমক। তিনি বললেন, তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক। এ যে আবুল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত। মূসা রহ. বলেন, আবান রহ. কাতাদা রহ. সূত্রেও ইকরিমা রা. থেকে এ হাদীসটি সরাসরি বর্ণনা করেছেন।

হাদিস ৭৫৩

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আরম্ভ করার সময় দাঁড়িয়ে তাকবীর বলতেন। এরপর রুকুতে যাওয়ার সময় তাকবীর বলতেন, আবার যখন রুকু থেকে পিঠ সোজা করে উঠতেন তখন سمع الله لمن حمده বলতেন, তারপর দাঁড়িয়ে ربنا لك الحمد বলতেন। এরপর সিজদায় যাওয়ার সময় তাকবীর বলতেন। এবং যখন মাথা উঠাতেন তখনও তাকবীর বলতেন। আবার (দ্বিতীয়) সিজদায় যেতে তাকবীর বলতেন এবং পুনরায় মাথা উঠাতেন তখনও তাকবীর বলতেন। এভাবেই তিনি পুরো সালাত শেষ করতেন। আর দ্বিতীয় রাকাআতের বৈঠক শেষে যখন (তৃতীয় রাকাআতের জন্য) দাঁড়াতেন তখনও তাকবীর বলতেন। আবদুল্লাহ ইবনে সালিহ রহ. লাইস রহ. সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করতেولك الحمد উল্লেখ করেছেন।

হাদিস ৭৫৪

আবুল ওয়ালীদ রহ…….. মুসআব ইবেন সাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি আমার পিতার পাশে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলাম। এবং (রুকুর সময়) দু’হাত জোড় করে উভয় উরুর মাঝে রাখলাম। আমার পিতা আমাকে এরূপ করতে নিষেধ করলেন এবং বললেন, পূর্বে আমরা এরূপ করতাম; পরে আমাদেরকে এ থেকে নিষেধ করা হয়েছে এবং হাত হাঁটুর উপর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

হাদিস ৭৫৫

হাফস ইবনে উমর রহ………যায়েদ ইবনে ওয়াহব রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুযাইফা রা. এক ব্যক্তিকে দেখলেন যে, সে রুকু ও সিজদা ঠিকমত আদায় করছে ননা। তিনি তাকে বললেন, তোমার সালাত হয়নি। যদি তুমি (এই অবস্থায়) মারা যাও, তাহলে আল্লাহ কর্তৃক মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রদত্ত আদর্শ হতে বিচ্যুত অবস্থায় তুমি মারা যাবে।

হাদিস ৭৫৬

বাদাল ইবনে মুহাব্বার রহ………বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সালাতে দাঁড়ানো ও বসা অবস্থা ব্যতীত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রুকু এবং সিজদার মধ্যবর্তী সময় এবং রুকু থেকে উঠে দাঁড়ানো, এগুলো প্রায় সমপরিমাণ ছিল।

হাদিস ৭৫৭

মুসাদ্দাদ রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, একসময়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে তাশরীফ আনলেন, তখন এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সালাত আদায় করলো। তারপর সে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম করলো। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের জবাব দিয়ে বললেন : তুমি ফিরে গিয়ে সালাত আদায় কর, কেননা, তুমি সালাত আদায় করনি। লোকটি আবার সালাত আদায় করল এবং পুনরায় এসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম দিল। তিনি বললেন : আবার গিয়ে সালাত আদায় কর, কেননা, তুমি সালাত আদায় করনি। এভাবে তিনবার ঘটনার পূনরাবৃত্তি। তারপর লোকটি বলল, সে মহান সত্তার শপথ ! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, আমি এর চেয়ে সুন্দর সালাত আদায় করতে জানিনা। কাজেই আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন। তখন তিনি বললেন : যখন তুমি সালাতে দাঁড়াবে, তখন তাকবীর বলবে। তারপর কুরআন থেকে যতটুকু তোমার পক্ষে সহজ পড়বে। এরপর রুকুতে যাবে এবং ধীরস্থিরভাবে রুকু আদায় করবে। তারপর রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। ধীরস্থিরভাবে সিজদা করবে। এরপর সিজদা থেকে উঠে স্থিরভাবে বসবে এবং পুনরায় সিজদায় গিয়ে স্থিরভাবে সিজদা করবে। তারপর পূর্ণ সালাত এভাবে আদায় করবে।

হাদিস ৭৫৮

হাফস ইবনে উমর রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু ও সিজদায় এ দুআ পড়তেন سبحانك اللهم ربنا وبحمدك اللهم اغفرلي ‘হে আমাদের রব আল্লাহ ! আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি এবং আপনার প্রশংসা করছি। হে আল্লাহ ! আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।

হাদিস ৭৫৯

আদম রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম سمع الله لمن حمده বলে (রুকু থেকে উঠতেন) তখন اللهم ربنا ولك الحمد বলতেন, আর তিনি যখন রুকুতে যেতেন এবং রুকু থেকে মাথা উঠাতেন, তখন তাকবীর বলতেন এবং সিজদা থেকে যখন দাঁড়াতেন, তখনالله أكبر বলতেন।

হাদিস ৭৬০

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসূফ রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ইমাম যখন سمع الله لمن حمده বলেন, তখন তোমার اللهم ربنا ولك الحمد বলবে। কেননা, যার এ উক্তি ফেরেশতাগণের উক্তির সঙ্গে একই সময়ে উচ্চারিত হয়, তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।

হাদিস ৭৬১

মুআয ইবনে ফাযালা রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি অবশ্যই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাতের ন্যায় সালাত আদায় করব। আবু হুরায়রা রা. যুহর, ইশা ও ফজরের সালাতের শেষ রাকাআতে سمع الله لمن حمده বলার পর কুনুত পড়তেন। এতে তিনি মুমিন গণের জন্য দুআ করতেন এবং কাফিরদের প্রতি লানত করতেন।

হাদিস ৭৬২

আবদুল্লাহ ইবনে আবুল আসওয়াদ রহ………..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সময়ে) কুনুত ও মাগরিবের সালাতে পড়া হত।

হাদিস ৭৬৩

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ………..রিফাআ ইবনে রাফি যুহকী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পিছনে সালাত আদায় করলাম। তিনি যখন রুকু থেকে মাথা উঠিয়েسمع الله لمن حمده বললেন, তখন পিছন থেকে এক সাহাবীربنا ولك الحمد حمدا كثيرا طيبا مباركا فيه বললেন। সালাত শেষ করে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কে এরূপ বলেছিল ? সে সাহাবী বললেন, আমি। তখন তিনি বললেন, আমি দেখলাম ত্রিশ জনের বেশী ফেরেশতা এর সওয়াব কে আগে লিখবেন তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছেন।

হাদিস ৭৬৪

আবুল ওয়ালীদ রহ………সাবিত রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনাস ইবেন মালিক রা. আমাদেরকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাতের বর্ণনা দিলেন। তারপর তিনি সালাত আদায় করে দেখালেন। তিনি যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন, তখন (এতক্ষণ) দাঁড়িয়ে রইলেন, যে, আমরা মনে করলাম, তিনি (সিজদার কথা) ভুলে গেছেন।

হাদিস ৭৬৫

আবুল ওয়ালীদ রহ………বারা রা. থেকে বর্ণিত, বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রুকু ও সিজদা এবং তিনি যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন, এবং দু’সিজদার মধ্যবর্তী সময় সবই প্রায় সমান হত।

হাদিস ৭৬৬

সুলাইমান ইবনে হারব রহ………..আবু কিলাবা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মালিক ইবনে হুওয়াইরিস রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত কেমন ছিল তা আমাদের দেখালেন। তারপর রুকুতে গেলেন এবং ধীরস্থিভাবে রুকু আদায় করলেন, তারপর তাঁর মাথা উঠালেন এবং কিছুক্ষণ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন। তারপর তিনি আমাদের নিয়ে আমাদের এই শায়খ আবু বুরাইদ রহ.-এর ন্যায় সালাত আদায় করলেন। আর আবু বুরাইদ রহ. দ্বিতীয় সিজদা থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে বসতেন, তারপর দাঁড়াতেন।

হাদিস ৭৬৭

আবুল ইয়ামান রহ………আবু বকর ইবনে আবদুর রহমান রহ. ও আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান রহ. থেকে বর্ণিত যে, আবু হুরায়রা রা. রমযান মাসের সালাত বা অন্য কোন সময়ের সালাত ফরয হোক বা অন্য কোন সালাত হোক, দাঁড়িয়ে শুরু করার সময় তাকবীর বলতেন, আবার রুকুতে যাওয়ার সময় তাকবীর বলতেন। তারপর (রুকু থেকে উঠার সময়) سمع الله لمن حمده বলতেন, সিজদায় যাওয়ার পূর্বে ربنا ولك الحمد বলতেন। তারপর সিজদার জন্য অবনত হওয়ার সময় আল্লাহু আকবার বলতেন। আবার সিজদা থেকে মাথা উঠানোর সময় তাকবীর বলতেন। এরপর (দ্বিতীয়) সিজদায় যাওয়ার সময় তাকবীর বলতেন এবং সিজদা থেকে মাথা উঠানোর সময় তাকবীর বলতেন। দু’রাকাআত আদায় করে দাঁড়ানের সময় আবার তাকবীর বলতেন। সালাত শেষ করা পর্যন্ত প্রতি রাকাআতে এইরূপ করতেন। সালাত শেষে তিনি বলতেন, যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ ! তোমাদের মধ্য থেকে আমার সালাত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাতের সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ। দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত এ রূপই ছিল। উভয় বর্ণনাকারী (আবু বকর ইবনে আবদুর রহমান ও আবু সালাম রহ. বলেন, আবু হুরায়রা রা. বলেছেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখন سمع الله لمن حمده ربنا ولك الحمد বলতেন। আর কতিপয় লোকের নাম উল্লেখ করে তাদের জন্য দুআ করতেন। দুআয় তিনি বলতেন, ইয়া আল্লাহ ! ওয়ালীদ ইবনে ওয়ালীদ, সালামা ইবনে হিশাম, আইয়্যাস ইবনে আবু রাবীআ এবং অপরাপর দুর্বল মুসলমানদেরকে রক্ষা করুন। ইয়া আল্লাহ ! মুদার গোত্রের উপর আপনার পাকড়াও কঠোর করুন, ইউসুফ আ.-এর যুগে যেমন খাদ্য সংকট ছিল তাদের জন্যও অনুরূপ খাদ্য সংকট সৃষ্টি করে দিন। (রাবী বলেন) এ যুগে পূর্বাঞ্চলের অধিবাসী মুদার গোত্রের লোকেরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বিরোধী ছিল।

হাদিস ৭৬৮

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা.থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়া থেকে পড়ে যান। কোন কোন সময় সুফিয়ান রহ. হাদীস বর্ণনা করার সময় عن فرس শব্দের স্থলে من فرس শব্দ বলতেন। ফলে তার ডান পাজর আহত হয়ে পড়ে। আমরা তার শুশ্রূষা করার জন্য সেখানে গেলাম। এ সময় সালাতের ওয়াক্ত হল। তিনি আমাদের নিযে বসে সালাত আদায় করলেন, আমরাও বসেই আদায় করলাম। সুফিয়ান রহ. আর একবার বলেছেন, আমরা বসে সালাত আদায় করলাম। সালাতের পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : ইমাম নির্ধারণ করা হয় তাকে ইকতিদা করার জন্য। তিনি যখন তাকবীর বলেন, তখন তোমরাও তাকবীর বলবে, তিনি যখন রুকু করেন তখন তোমরাও রুকু করবে। তিনি যখন রুকু থেকে উঠেন তখন তোমরাও উঠবে, তিনি যখন سمع الله لمن حمده বলবে, তখন তোমরা ربنا ولك الحمد বলবে। তিনি যখন সিজদা করেন, তখন তোমরাও সিজদা করবে। সুফিয়ান রহ. বলেন, তিনি ঠিকই স্মরণ রেখেছেন, এ রূপই যুহরী রহ. ولك الحمد বর্ণনা করেছেন। সুফিয়ান রহ. বলেন, (যুহরীর কাছ থেকে) ডান পাজর যখন হওয়ার কথা মুখস্থ করেছিলাম। কিন্তু যখন তাঁর কাছ থেকে বেরিয়ে আসলাম, তখন ইবনে জুরায়জ রহ. বললেন, আমিও তাঁর কাছে ছিলাম। (তিনি বলেছেন,) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ডান পায়ের নল যখম হয়েছিল।

হাদিস ৭৬৯

আবুল ইয়ামান রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, সাহাবীগণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমরা কি কিয়ামতের দিনি আমাদের রবকে দেখতে পাব ? তিনি বললেন : মেঘমুক্ত পূর্ণিমার রাতের চাঁদকে দেখার ব্যাপারে তোমরা কি সন্দেহ পোষণ কর ? তারা বললেন, না ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তিনি বললেন, মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখার ব্যাপারে কি তোমাদের কোন সন্দেহ আছে ? সবাই বললেন, না। তখন তিনি বললেন : নি:সন্দেহে তোমরাও আল্লাহকে অনুরূপভাবে দেখতে পাবেব। কিয়ামতের দিন সকল মানুষকে সমবেত করা হবে। তারপর আল্লাহ তা’আলা বলবেল, যে যার উপাসনা করত সে যেন তার অনুসরণ করে। তাই তাদের কেউ সূর্যের অনুসরণ করবে, কেউ চন্দ্রের অনুসরণ করবে, কেউ তাগুতের অনুসরণ করবে। আর অবশিষ্ট থাকবে শুধুমাত্র এ উম্মাহ, তবে তাদের সাথে মুনাফিকরাও থাকবে। তাদের মাঝে এ সময় আল্লাহ তা’আলা শুভাগমন করবেন এবং বলবেন : আমি তোমাদের রব। তখন তারা বলবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের রবের শুভাগমন না হবে, ততক্ষণ আমরা এখানেই থাকব। আর তার যখন শুভাগমন হবে তখন আমরা অবশ্যই তাকে চিনতে পারব। তখন তাদের মাঝে মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ তা’আলা শুভাগমন করবেন এবং তাকে চিনতে পারব। তখন তাদের মাঝে মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ তা’আলা শুভাগমন করবেন এবং বলবেন, আমি তোমাদের রব। তারা বলবে, হাঁ, আপনিই আমাদের রব। আল্লাহ তা’আলা তাদের ডাকবেন। আর জাহান্নামের উপর একটি সেতু পথ ((পুলসিরাত) স্থাপন করা হবে। রাসূলগণের মধ্যে আমিই সবার আগে আমার উম্মাত নিয়ে এ পথ অতিক্রম করব। সেদিন রাসূলগণ ব্যতীত আর কেউ কথা বলবে না। আর রাসূলগণের কথা হবে : ‘আল্লাহুম্মা সাল্লিম সাল্লিম) ইয়া আল্লাহ, রক্ষা করুন, রক্ষা করুন। আর জাহান্নামে বাঁকা লোহার বহু শলাকা থাকবে, সেগুলো হবে সাদান কাটার মতো। তোমরা কি সাদান কাটা দেখেছ ? তারা বলবে, হাঁ, দেখেছি। তিনি বলবেন, সেগুলো দেখতে সাদান কাটার মতোই। তবে সেগুলো কত বড় হবে তা একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ জানে না। সে কাটা লোকের আমল অনুযায়ী তাদের তড়িৎ গতিতে ধরবে। তাদের কিছু লোক ধ্বংস হবে আমালের কারণে। আর কারোর পায়ে যখম হবে, কিন্তু লোক কাটায় আক্রান্ত হবে, তারপর নাজাত পেয়ে যাবে। জাহান্নামীদের থেকে যাদের প্রতি আল্লাহ পাক রহমত করতে ইচ্ছা করবেন, তাদের ব্যাপারে ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দেবেন যে, যারা আল্লাহর ইবাদত করত, তাদের যেন জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হয়। ফেরেশতাগণ তাদের বের করে আনবেন এবং সিজদার চিহ্ন দেখে তাঁরা তাদের চিনতে পারবেন। কেননা, আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামের জন্য সিজদার চিহ্নগুলো মিটিয়ে দেওয়া হারাম করে দিয়েছেন। ফলে তাদের জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে। কাজেই সিজদার চিহ্ন ছাড়া আগুন বনী আদমের সব কিছুই গ্রাস করে ফেলবে। অবশেষে, তাদেরকে অঙ্গারে পরিণত অবস্থায় জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। তাদের উপর আবে-হায়াত ঢেলে দেওয়া হবে ফলে তারা স্রোতে বাহিত ফেনার উপর গজিয়ে উঠা উদ্ভিদের মত সঞ্জীবিত হয়ে উঠবে। এরপর আল্লাহ তা’আলা বান্দাদের বিচার কাজ সমাপ্ত করবেন। কিন্তু একজন লোক জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে থেকে যাবে। তার মুখমণ্ডল তখনও জাহান্নামের দিকে ফেরানো থাকবে। জাহান্নামিদের মধ্যে জান্নাতে প্রবেশকারী সেই শেষ ব্যক্তি। সে তখন নিবেদন করবে, হে আমার রব ! জাহান্নাম থেকে আমার চেহারা ফিরিয়ে দিন। এর দূষিত হাওয়া আমাকে বিষিয়ে তুলছে, এর লেলিহান শিখা আমাকে যন্ত্রনা দিচ্ছে। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তোমার নিবেদন গ্রহণ করা হলে, তুমি এ ছাড়া আর কিছুই চাইবে না তো ? সে বলবে, না, আপনার ইজ্জতের শপথ ! সে তার ইচ্ছামত আল্লাহ তা’আলাকে অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দিবে। কাজেই আল্লাহ তা’আলা তার চেহারাকে জাহান্নামের দিক থেকে ফিরিয়ে দিবেন। এরপর সে যখন জান্নাতের দিকে মুখ ফিরাবে, তখন সে জান্নাতের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে পাবে। যতক্ষণ আল্লাহর ইচ্ছা সে চুপ করে থাকবে। তারপর সে বলবে, হে আমার রব ! আপনি জান্নাতের দরজার কাছে পৌছে দিন। তখন আল্লাহ তা’আলা তাকে বলবেন, তুমি পূর্বে যা চেয়েছিলে, তা ছাড়া আর কিছু চাইবে না বলে তুমি কি অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দাওনি ? তখন সে বলবে, হে আমার রব ! তোমার সৃষ্টির সবচাইতে হতভাগ্য আমি হতে চাই না। আল্লাহ তাৎক্ষণিক বলবেন, তোমার এটি পুরন করা হলে তুমি এ ছাড়া চাইবে না তো ? সে বলবে, না, আপনার ইজ্জতের কসম ! এছাড়া আমি আর কিছুই চাইব না। এ ব্যাপারে সে তার ইচ্ছানুযায়ী অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দেবে। সে যখন জান্নাতের দরজায় পৌছবে তখন জান্নাতের অনাবিল সৌন্দর্য্য ও তার আভ্যন্তরীণ সুখ শান্তি ও আনন্দঘন পরিবেশ দেখতে পাবে। যতক্ষণ আল্লাহ তা’আলা ইচ্ছা করবেন, সে চুপ করে থাকবে। এরপর সে বলবে, হে আমার রব ! আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দাও। তখন পরাক্রমশালী মহান আল্লাহ বলবেন : হে আদম সন্তান, কি আশ্চর্য ! তুমি কত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী ! তুমি কি আমার সঙ্গে অঙ্গীকার করনি এবং প্রতিশ্রুতি দাওনি যে, তোমাকে যা দেওয়া হয়েছে, তা ছাড়া আর কিছু চাইবে না ? তখন সে বলবে, হে আমার রব ! আপনার সৃষ্টির মধ্যে আমাকে সবচাইতে হতভাগ্য করবেন না। এতে আল্লাহ হেসে দেবেন। এরপর তাকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দিবেন এবং বলবেন, চাও। সে তখন চাইবে, এমন কি তার চাওয়ার আকাঙ্খা ফুরিয়ে যাবে। তখন পরাক্রমশালী মহান আল্লাহ বলবেন : এটা চাও, ওটা চাও। এভাবে তার রব তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে থাকবেন। অবশেষে যখন তার আকাংখা শেষ হয়ে যাবে, তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন : এ সবই তোমার, এ সাথে আরো সমপরিমাণ (তোমাকে দেওয়া হল) । আবু সাঈদ খুদরী রা. আবু হুরায়রা রা. কে বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন যে, আল্লাহ তা’আলা বলবেন : এ সবই তোমার, তার সাথে আরও দশগুণ (তোমাকে দেওয়া হল)। আবু হুরায়রা রা. বললেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুধু এ কথাটি স্মরণ রেখেছি যে, এসব তোমার এবং এর সাথে আরও দশগুণ।

হাদিস ৭৭০

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……..আবদুল্লাহ ইবনে মালিক ইবনে বুহাইনা রা. তাঁর থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত আদায় করতেন, তখন উভয় হাত এরূপ করতেন যে, তাঁর উভয় বগলের শুভ্রতা প্রকাশ হয়ে পড়ত। লাইস রহ. বলেন, জাফর ইবনে রাবীআ রহ. আমার কাছে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

হাদিস ৭৭১

সালত ইবনে মুহাম্মদ রহ………হুযায়ফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি এক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে রুকু ও সিজদা পূর্ণরূপে আদায় করছে না। সে যখন তার সালাত শেষ করল, তখন হুযায়ফা রা. তাকে বললেন, তুমি তো সালাত আদায় করনি। আবু ওয়াইল রহ. বলেন, আমার মনে হয়, তিনি এও বলেছিলেন যে, এভাবে সালাত আদায় করে তুমি যদি মারা যাও, তাহলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর তরীকা থেকে বিচ্যুত হয়ে মারা যাবে।

হাদিস ৭৭২

কাবীসা রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাতটি অঙ্গের দ্বারা সিজদা করতে এবং চুল ও কাপড় না গুটাতে আদিষ্ট হয়েছিলেন। (অঙ্গ সাতটি হল) কপাল, দু’হাত, দু’হাটু ও দু’পা।

হাদিস ৭৭৩

মুসলিম ইবনে ইবরাহীম রহ…….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমরা সাতটি অঙ্গের দ্বারা সিজদা করতে এবং চুল ও কাপড় না গুটাতে আদিষ্ট হয়েছি।

হাদিস ৭৭৪

আদম রহ……..বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, যিনি অবশ্যই মিথ্যাবাদী ছিলেন না। তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পিছনে সালাত আদায় করতাম। তিনি سمع الله لمن حمده বলার পর যতক্ষণ না কপাল মাটিতে স্থাপন করতেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কেউ সিজদার জন্য পিঠ ঝুকাত না।

হাদিস ৭৭৫

মুআল্লা ইবনে আসাদ রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন : আমি সাতটি অঙ্গের দ্বারা সিজদা করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি। কপাল দ্বারা এবং তিনি হাত দিয়ে নাকের প্রতি ইশারা করে এর অন্তর্ভূক্ত করেন, আর দু’হাত দু’হাটু এবং দু’পায়ের আঙ্গুলসমূহ দ্বারা। আর আমরা যেন চুল ও কাপড় না গুটাই।

হাদিস ৭৭৬

মূসা রহ……….আবু সালামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু সাঈদ খুদরী রা.-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, আমাদের সঙ্গে খেজুর বাগানে চলুন, (হাদীস সংক্রান্ত) আলাপ আলোচনা করব। তিনি বেরিয়ে আসলেন। আবু সালামা রা. বলেন, আমি তাকে বললাম, লাইলাতুল কাদর সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা শুনেছেন, তা আমার কাছে বর্ণনা করুন। তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের প্রথম দশ দিন ইতিকাফ করলেন। আমরাও তাঁর সঙ্গে ইতিকাফ করলাম। জিবরাঈল আ. এসে বললেন, আপনি যা তালাশ করছেন, তা আপনার সামনে রয়েছে। এরপর তিনি মধ্যবর্তী দশ দিন ইতিকাফ করলেন, আমরাও তাঁর সাথে ইতিকাফ করলাম। পুনরায় জিবরাঈল আ. এসে বললেন, আপনি যা তালাশ করছেন, তা আপনার সামনে রয়েছে। এরপর রমযানের বিশ তারিখ সকালে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিতে দাঁড়িয়ে বললেন, যারা আল্লাহর নবীর সঙ্গে ইতিকাফ করেছেন, তারা যেন ফিরে আসেন (আবার ইতিকাফ করেন) কেননা, আমাকে স্বপ্নে লাইলাতুল কাদর অবগত করানো হয়েছে। তবে আমাকে তা (নির্ধারিত তারিখটি) ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। নি:সন্দেহে তা শেষ দশ দিনের কোন এক বেজোড় তারিখে। স্বপ্নে দেখলাম যেন আমি কাদা ও পানির উপর সিজদা করছি। তখন মসজিদের ছাদ খেজুরের ডাল দ্বারা নির্মিত ছিল। আমরা আকাশে কোন কিছুই (মেঘ) দেখিনি, সালাত আদায় করলেন। এমন কি আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কপাল ও নাকের অগ্রভাগে পানি ও কাঁদার চিহ্ন দেখতে পেলাম। এভাবেই তাঁর স্বপ্ন সত্যে পরিণত হলো।

হাদিস ৭৭৭

মুহাম্মদ ইবনে কাসীর রহ……..সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাহাবীগণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে সালাত আদায় করতেন। কিন্তু ইযার বা লুঙ্গী ছোট হওয়ার কারণে তা গলার সাথে বেঁধে নিতেন। আর মহিলাগণকে বলে দেওয়া হয়েছিল, তোমরা সিজদা থেকে মাথা উঠাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত পুরুষগণ ঠিকমত না বসবে।

হাদিস ৭৭৮

আবু নুমান রহ……..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাতটি অঙ্গের সাহায্যে সিজদা করতে এবং সালাতের মধ্যে চুল একত্র না করতে এবং কাপড় টেনে না ধরতে আদিষ্ট হয়েছিলেন।

হাদিস ৭৭৯

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ…….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমি সাত অঙ্গে সিজদা করার, সালাতের মধ্যে চুল একত্র না করার এবং কাপড় টেনে না ধরার জন্য আদিষ্ট হয়েছি।

হাদিস ৭৮১

আবু নুমান রহ………আবু কিলাবা রহ. থেকে বর্ণিত যে মালিক ইবনে হুয়াইরিস রা. তাঁর সাথীদের বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত সম্পর্কে আমি কি তোমাদের অবহিত করব না ? (রাবী) আবু কিলাবা রা. বলেন, এ ছিল সালাতের সময় ছাড়া অন্য সময়। তারপর তিনি (সালাতে) দাঁড়ালেন, তারপর রুকু করলেন, এবং তাকবীর বলে মাথা উঠালেন আর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। তারপর সিজদায় গেলেন এবং সিজদা থেকে মাথা উঠিয়ে কিছুক্ষণ বসে পুনরায় সিজদা করলেন। তারপর মাথা উঠিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষ করলেন। এভাবে তিনি আমাদের এ শায়খ আমর ইবনে সালিমার সালাতের মত সালাত আদায় করলেন। আইয়ুব রহ. বলেন, আমর ইবনে সালিমা রহ. এমন কিছু করতেন যা অন্যদের করতে দেখিনি। তা হল তিনি তৃতীয় অথবা চতুর্থ রাকাআতে বসতেন। মালিক ইবনে হুয়াইরিস রা. বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে কিছু দিন অবস্থান করলাম। তিনি আমাদের বললেন, তোমরা তোমাদের পরিবার পরিজনদের মধ্যে ফিরে যাওয়ার পর অমুক সালাত অমুক সময়, অমুক সালাত অমুক সময় আদায় করবে। সময় হলে তোমাদের একজন আযান দেবে এবং তোমাদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি ইমামতি করবে।

হাদিস ৭৮২

মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রাহীম রহ………বারা রা. সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সিজদা ও রুকু এবং দু’সিজদার মধ্যে বসা প্রায় সমান হতো।

হাদিস ৭৮৩

সুলাইমান ইবনে হারব রহ……..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে যে ভাবে আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করতে দেখেছি, কম বেশী না করে আমি তোমাদের সে ভাবেই সালাত আদায় করে দেখাব। সাবিত রহ. বলেন, আনাস ইবনে মালিক রা. এমন কিছু করতেন যা তোমাদের করতে দেখিনি। তিনি রুকু হতে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে এত বিলম্ব করতেন যে, কেউ বলত, তিনি (সিজদার কথা) ভুলে গেছেন।

হাদিস ৭৮৪

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সিজদায় (অঙ্গ প্রত্যঙ্গার) সামঞ্জস্যতা রক্ষা কর এবং তোমাদের মধ্যে কেউ যেন দু’হাত বিছিয়ে না দেয় যেমন কুকুর বিছিয়ে দেয়।

হাদিস ৭৮৫

মুহাম্মদ ইবনে সাব্বাহ রহ…….মালিক ইবনে হুয়াইরিস লাইসী রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সালাত আদায় করতে দেখেছেন। তিনি তাঁর সালাতের বেজোড় রাকাআতে (সিজদা থেকে) উঠে না বসে দাঁড়াতেন না।

হাদিস ৭৮৬

মুআল্লা ইবনে আসাদ রহ………আবু কিলাবা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনে হুয়াইরিস রা. এসে আমাদের এ মসজিদে আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করেন। তিনি বললেন, আমি তোমাদের নিয়ে সালাত আদায় করব। এখন আমার সালাত আদায়ের কোন ইচ্ছা ছিল না, তবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যে ভাবে সালাত আদায় করতে দেখেছি তা তোমাদের দেখাতে চাই। আইয়ূব রহ. বলেন, আমি আবু কিলাবা রা. কে জিজ্ঞাসা করলাম, তাঁর (মালিক ইবনে হুয়াইরিস রা.-এর সালাত কিরূপ ছিল? তিনি (আবু কিলাবা রা.) বলেন, আমাদের এ শায়খ অর্থাৎ আমর ইবনে সালিমা রা.-এর সালাতের মত। আইয়ূব রহ. বললেন, শায়খ তাকবীর পূর্ণ বলতেন এবং যখন দ্বিতীয় সিজদা থেকে মাথা উঠাতেন তখন বসতেন, তারপর মাটিতে ভর দিয়ে দাঁড়াতেন।

হাদিস ৭৮৭

ইয়াহইয়া ইবনে সালিহ রহ……..সাঈদ ইবনে হারিস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আবু সাঈদ রা. সালাতে আমাদের ইমামতি করেন। তিনি প্রথম সিজদা থেকে মাথা উঠানোর সময়, দ্বিতীয় সিজদা করার সময়, দ্বিতীয় সিজদা থেকে মাথা উঠানোর সময় দু’রাকাআত শেষে (তাশাহুদের বৈঠকের পর) দাঁড়ানোর সময় স্বশদ্ধে তাকবীর বলেন। তিনি বলেন, আমি এভাবেই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে (সালাত আদায় করতে) দেখেছি।

হাদিস ৭৮৮

সুলাইমান ইবনে হারব রহ……….মুতাররিফ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ও ইমরান রা. একবার আলী ইবনে আবু তালিব রা. এর পিছনে সালাত আদায় করি। তিনি সিজদা করার সময় তাকবীর বলেছেন। উঠার সময় তাকবীর বলেন এবং দু’রাকাআত শেষে দাঁড়ানোর সময় তাকবীর বলেছেন। সালাম ফিরানোর পর ইমরান রহ. আমার হত ধরে বললেন, ইনি তো (আলী) আমাকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত স্মরণ করিয়ে দিলেন।

হাদিস ৭৮৯

আবদুল্লা ইবনে মাসলামা রহ…….আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-কে সালাতে আসন পিড়ি করে বসতে দেখেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ রা. বলেন, আমি সে সময় অল্প বয়স্ক ছিলাম। আমিও সেরূপ করলাম। আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা আমাকে নিষেধ করলেন এবং তিনি বললেন, সালাতে (বসার) সুন্নাত তরীকা হল তুমি ডান পা খাড়া করবে এবং বাঁ পা বিছিয়ে রাখবে। তখন আমি বললাম, আপনি এরূপ করেন ? তিনি বললেন, আমার দু’পা আমার ভার বহণ করতে পারে না।

হাদিস ৭৯০

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর এবং লায়স রহ……….মুহাম্মদ ইবনে আমর ইবনে আতা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একদল সাহাবীর সঙ্গে বসা ছিলেন। তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তখন আবু হুমাইদ সাঈদী রা. বলেন, আমিই তোমাদের মধ্যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত সম্পর্কে বেশী স্মরণ রেখেছি। আমি তাকে দেখেছি (সালাত শুরু করার সময়) তিনি তাকবীর বলে দু’হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন। আর যখন রুকু করতেন তখন দু’হাত দিয়ে হাটু শক্ত করে ধরতেন এবং পিঠ সমান করে রাখতেন। তারপর রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন যাতে মেরুদণ্ডের হাড়গুলো স্ব-স্ব স্থানে ফিরে আসত। এরপর যখন সিজদা করতেন তখন দু’হাত সম্পূর্ণভাবে মাটির উপর বিছিয়ে দিতেন না, আবার গুটিয়েও রাখতেন না। এবং তাঁর উভয় পায়ের আঙ্গুলীর মাথা কেবলামুখী করে দিতেন। যখন দু’রাকাআতের পর বসতেন তখন বাঁ পার-এর উপর বসে ডান পা খাড়া করে দিতেন এবং যখন শেষ রাকাআতে বসতেন তখন বাঁ পা এগিয়ে দিয়ে ডান পা খাড়া করে নিতম্বের উপর বসতেন।

লায়স রহ……..ইবনে আতা রহ. থেকে হাদীসটি শুনেছেন। আবু সালিহ রহ. লায়স রা. থেকে كل فقار مكانه বলেছেন। আর ইবনে মুবারক রহ……..মুহাম্মদ ইবনে আমর রহ. থেকে শুধুكل فقار বর্ণনা করেছেন।

হাদিস ৭৯১

আবুল ইয়ামান রহ………বনূ আবদুল মুত্তালিবের আযাদকৃত দাস এবং রাবী কোন সময়ে বলেছেন রাবীআ ইবনে হারিসের আযাদকৃত দাস, আবদুর রহমান ইবনে হুরমুয রা. থেকে বর্ণিত যে বনূ আবদে মানাফের বন্ধু গোত্র আযদ শানআর লোক আবদুল্লাহ ইবনে বুহাইনা রা. যিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবী গণের অন্যতম। তিনি বলেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিয়ে যুহরের সালাত আদায় করলেন। তিনি প্রথম দু’রাকআত পড়ার পর না বসে দাঁড়িয়ে গেলেন। মুক্তাদীগণ তাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলেন। এ ভাবে সালাতের শেষভাগে মুকতাদীগণ সালামের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসা অবস্থায় তাকবীর বললেন এবং সালাম ফিরানোর পূর্বে দু’বার সিজদা করলেন, পরে সালাম ফিরালেন।

হাদিস ৭৯২

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ……..আবদুল্লাহ ইবনে মালিক রা. যিনি ইবনে বুহাইনা, তাঁর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে যুহরের সালাত আদায় করলেন। দু’রাকাআত পড়ার পর তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন অথচ তাঁর বসা জরুরী ছিল। তারপর সালাতের শেষভাগে বসে তিনি দুটো সিজদা করলেন।

হাদিস ৭৯৩

আবু নুআইম রহ……..শাকীক ইবনে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) রা. বলেন, আমরা যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে সালাত আদায় করতাম, তখন আমরা বলতাম, “আসসালামু আলা জিবরীল ওয়া মিকাইল এবং আসসালামু আলা ফুলান ওয়া ফুলান”। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন : আল্লাহ নিজেই তো সালাম, তাই যখন তোমরা কেউ সালাত আদায় করবে, তখন সে যেন বলে – التحيات لله والصلوات والطيبات السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته السلام علينا وعلى عباد الله الصالحين কেননা, যখন তোমরা এ বলবে তখন আসমান ও যমীনের আল্লাহর সকল নেক বান্দার কাছে পৌছে যাবে। এর সঙ্গে أشهد أن لا إله إلا الله وأشهد أن محمدا عبده ورسوله ও পড়বে।

হাদিস ৭৯৪

আবুল ইয়ামান রহ……উরওয়া ইবনে যুবাইর রা. থেকে বর্ণিত, যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিনী আয়িশা রা. তাকে বলেছেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে এ বলে দু’আ করতেন اللهم إني أعوذبك من عذاب الفبر وأعوذبك من فتنة المسيح الدجال وأعوذبك من فتنة المحيا وفتنة الممات “কবরের আযাব থেকে, মাসীহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে এবং জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে ইয়া আল্লাহ ! আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। ইয়া আল্লাহ ! গুনাহ ও ঋণগ্রস্ততা থেকে আপনার নিকট আশ্রয় চাই। তখন এক ব্যক্তি তাকে বলল, আপনি কতই না ঋণগ্রস্ততা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : যখন কোন ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখন কথা বলার সময় মিথ্যা বলে এবং ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে। মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ. বলেন, খালফ ইবনে আমির রহ.-কে বলতে আমি শুনেছি যে مَسِيح ও مَسّيح এর মধ্যে পার্থক্য নেই। উভয় শব্দই সমার্থ বোধক তবে একজন হলেন ঈসা আ. অপর ব্যক্তি হলো দাজ্জাল। যুহরী রহ. বলেছেন, উরওয়া ইবনে যুবাইর রহ. আয়িশা রা. থেকে আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, আয়িশা রা. বলেছেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সালাতে মধ্যে মধ্যে দাজ্জালের ফিতনা থেকে (আল্লাহর নিকট) আশ্রয় প্রার্থনা করতে শুনেছি।

হাদিস ৭৯৫

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………আবু বকর সিদ্দীক রা. থেকে বর্ণিত,একদিন তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আরয করলেন, আমাকে সালাতে পাঠ করার জন্য একটি দু’আ শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, এ দু’আটি বলবে- اللهم إني ظلمت نفسي ظلما كثيرا ولا يغفر الذنوب إلا أنت فاغفرلي مغفرة من عندك وارحمني إنك أنت الغفور الرحيم “ইয়া আল্লাহ ! আমি নিজের উপর অধিক যুলুম করেছি। আপনি ছাড়া সে অপরাধ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। আপনার পক্ষ থেকে আমাকে তা ক্ষমা করে দিন এবং আমার উপর রহমত বর্ষণ করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।

হাদিস ৭৯৬

মুসাদ্দাদ রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের অবস্থা এ ছিল যে, যখন আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সালাতে থাকতাম, তখন আমরা বলতাম বান্দার পক্ষ হতে আল্লাহর প্রতি সালাম। সালাম অমুকের প্রতি, সালাম অমুকের প্রতি। এতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আল্লাহর প্রতি সালাম, তোমরা এরূপ বল না। কারণ আল্লাহ নিজেই সালাম। বরং তোমরা বল- التحيات لله والصلوات والطيبات السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته السلام علينا وعلى عباد الله الصالحين (সমস্ত মৌখিক, দৈহিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহর জন্য। হে নবী ! আপনার প্রতি সালাম এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। সালাম আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের প্রতি)। তোমরা যখন তা বলবে তখন আসমান বা আসমান ও যমীনের মধ্যে আল্লাহর প্রত্যেক বান্দার কাছে তা পৌছে যাবে। (এরূপ বলবে – أشهد أن لا إله إلا الله وأشهد أن محمدا عبده ورسوله “আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোন মাবুদ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।” তারপর যে দু’আ তার পছন্দ হয় তা সে বেছে নিবে এবং পড়বে।

হাদিস ৭৯৭

মুসলিম ইবনে ইবরাহীম রহ………আবু সালাম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু সাঈদ খুদরী রা.-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পানি ও কাদার মধ্যে সিজদা করতে দেখেছি। এমন কি তাঁর (মুবারক) কপালে কাদামাটির চিহ্ন লেগে থাকতে দেখেছি।

হাদিস ৭৯৮

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……..উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাম ফিরাতেন, তখন সালাম শেষ হলেই মহিলাগণ দাঁড়িয়ে পড়তেন। তিনি দাঁড়ানোর পূর্বে কিছুক্ষণ বসে অপেক্ষা করতেন। ইবনে শিহাব রহ. বলেন, আমার মনে হয়, তাঁর এ অপেক্ষা এ কারণে যাতে মুসল্লীগণ থেকে যে সব পুরুষ ফিরে যান তাদের পূর্বেই মহিলাগণ নিজ অবস্থানে পৌছে যান।

হাদিস ৭৯৯

হিব্বান ইবনে মূসা রহ……..ইতবান ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সালাত আদায় করছি। তিনি যখন সালাম ফিরান তখন আমরাও সালাম ফিরাই।

হাদিস ৮০০

আবদান রহ……..মাহমুদ ইবনে রাবী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা তাঁর স্পষ্ট মনে আছে, যে তাদের বাড়ীতে রাখা একটি বালতির (পানি নিয়ে) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুলি করেছেন। তিনি বলেছেন, আমি ইতবান ইবনে মালিক আনসারী রা. যিনি বনূ সালিম গোত্রের একজন, তাকে বলতে শুনেছি, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গিয়ে বললাম, আমার দৃষ্টিশক্তি ক্ষীন হয়ে গিয়েছে এবং আমার বাড়ী থেকে আমার কাওমের মসজিদ পর্যন্ত পানি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। আমার একান্ত ইচ্ছা আপনি আমার বাড়িতে এসে এক জায়গায় সালাত আদায় করবেন সে জায়গাটুকু আমি সালাত আদায় করার জন্য নির্দিষ্ট করে নিব। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : ইনশা আল্লাহ, আমি তা করব। পরদিন রোদের তেজ বৃদ্ধি পাওয়ার পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবু বকর রা. আমার বাড়িতে এলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবেশের অনুমতি চাইলে আমি তাকে দিলাম। তিনি না বসেই বললেন : তোমার ঘরের কোন স্থানে তুমি আমার সালাত আদায় পছন্দ কর। তিনি পছন্দ মত একটি জায়গা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাত আদায়ের ইশারা করে দেখালেন। তারপর তিনি দাঁড়ালেন আমরাও তাঁর পিছনে কাতারবন্দী হলাম। অবশেষে তিনি সালাম ফিরালেন, আমরাও তাঁর সালামের সময় সালাম ফিরালাম।

হাদিস ৮০১

ইসহাক ইবনে নাসর রহ…….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সময় মুসল্লীগণ ফরয শেষ হলে উচ্চস্বরে যিকির করতেন। আব্বাস রা. বলেন, আমি এরূপ শুনে বুঝলাম, মুসল্লীগণ সালাত শেষ করে ফিরছেন।

হাদিস ৮০২

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাকবীর শুনে আমি বুঝতে পারতাম সালাত শেষ হয়েছে।

হাদিস ৮০৩

মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, দরিদ্রলোক নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, সম্পদশালী ও ধনী ব্যক্তিরা তাদের সম্পদের দ্বারা উচ্চমর্যাদা ও স্থায়ী আবাস লাভ করছেন, তারা আমাদের মত সালাত আদায় করছেন, আমাদের মত সিয়াম পালন করছেন এবং অর্থের দ্বারা হজ্জ, উমরা, জিহাদ ও সাদকা করার মর্যাদাও লাভ করছেন। এ শুনে তিনি বললেন, আমি কি তোমাদের এমন কিছু কাজের কথা বলব, যা তোমরা করলে, যারা নেক কাজে তোমাদের চাইতে অগ্রগামী হয়ে গিয়েছে, তাদের সমপর্যায়ে পৌছতে পারবে। তবে যারা পুনরায় এ ধরণের কাজ করবে তাদের কথা স্বতন্ত্র। তোমরা প্রত্যেক সালাতের পর তেত্রিশ বার করে তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) তাহমীদ (আলহামদু লিল্লাহ) এবং তাকবীর (আল্লাহু আকবার) পাঠ করবে। (এ বিষয়টি নিয়ে) আমাদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হলো। কেউ বলল, আমরা তেত্রিশ বার তাসবীহ পড়ব। তেত্রিশ বার তাহমীদ আর চৌত্রিশ বার তাকবীর পড়ব। এরপর আমি তাঁর কাছে ফিরে গেলাম। তিনি বললেন,سبحان الله والحمد لله والله أكبر বলবে, যাতে সবগুলোই তেত্রিশ বার করে হয়ে যায়।

হাদিস ৮০৩

মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, দরিদ্রলোক নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, সম্পদশালী ও ধনী ব্যক্তিরা তাদের সম্পদের দ্বারা উচ্চমর্যাদা ও স্থায়ী আবাস লাভ করছেন, তারা আমাদের মত সালাত আদায় করছেন, আমাদের মত সিয়াম পালন করছেন এবং অর্থের দ্বারা হজ্জ, উমরা, জিহাদ ও সাদকা করার মর্যাদাও লাভ করছেন। এ শুনে তিনি বললেন, আমি কি তোমাদের এমন কিছু কাজের কথা বলব, যা তোমরা করলে, যারা নেক কাজে তোমাদের চাইতে অগ্রগামী হয়ে গিয়েছে, তাদের সমপর্যায়ে পৌছতে পারবে। তবে যারা পুনরায় এ ধরণের কাজ করবে তাদের কথা স্বতন্ত্র। তোমরা প্রত্যেক সালাতের পর তেত্রিশ বার করে তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) তাহমীদ (আলহামদু লিল্লাহ) এবং তাকবীর (আল্লাহু আকবার) পাঠ করবে। (এ বিষয়টি নিয়ে) আমাদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হলো। কেউ বলল, আমরা তেত্রিশ বার তাসবীহ পড়ব। তেত্রিশ বার তাহমীদ আর চৌত্রিশ বার তাকবীর পড়ব। এরপর আমি তাঁর কাছে ফিরে গেলাম। তিনি বললেন,سبحان الله والحمد لله والله أكبر বলবে, যাতে সবগুলোই তেত্রিশ বার করে হয়ে যায়।

হাদিস ৮০৪

মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ……..মুগীরা ইবনে শুবা রা.-এর কাতিব ওয়াররাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুগীরা ইবনে শুবা রা. আমাকে দিয়ে মুআবিয়া রা.-কে (এ মর্মে) একখানা পত্র লিখালেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক ফরয সালাতের পর বলতেন لا إله إلا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو على كل شيئ قدير اللهم لا منع لما أعطيت ولا معطي لما منعت ولا ينفع ذا الجد منك الجد “এক আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, সার্বভৌমত্ব একমাত্র তাঁরই, সমস্ত প্রশংসা একমাত্র তাঁরই জন্য, তিনি সব কিছুর উপরই ক্ষমতাশীল। ইয়া আল্লাহ ! আপনি যা প্রদান করতে চান তা রোধ করব কেউ নেই, আর আপনি যা রোধ করেন তা প্রদান করার কেউ নেই। আপনার কাছে (সৎকাজ ভিন্ন) কোন সম্পদশালীর সম্পদ উপকারে আসে না।” শুবা রহ. আবদুল মালিক রহ. থেকে অনুরূপ বলেছেন, আপনার কাছে (সৎকাজ ছাড়া) এবং হাসান রহ. বলেন,جد অর্থ সম্পদ এবং শুবা রহ……..ওয়াররাদ রহ. থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

হাদিস ৮০৫

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……….সামুরা ইবনে জুনদব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত শেষ করতেন, তখন আমাদের দিকে মুখ ফিরাতেন।

হাদিস ৮০৬

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ………যায়েদ ইবনে খালিদ জুহানী রহ. থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে বৃষ্টি হওয়অর পর হুদায়বিয়াতে আমাদের নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষ করে তিনি লোকদের দিকে ফিরে বললেন : তোমরা কি জান, তোমাদের পরাক্রমশালী ও মহিমাময় প্রতিপালক কি বলেছেন ? তাঁরা বললেন : আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই উত্তম জানেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : (রব) বলেন, আমার বান্দাদের মধ্যে কেউ আমার প্রতি মু’মিন হয়ে গেল এবং কেউ কাফির। যে বলেছে, আল্লাহর করুণা ও রহমতে আমরা বৃষ্টি লাভ করেছি, সে হল আমার প্রতি বিশ্বাসী এবং নক্ষত্রের প্রতি অবিশ্বাসী। আর যে বলেছে, অমুক অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে আমাদের উপর বৃষ্টিপাত হয়েছে, সে আমার প্রতি অবিশ্বাসী হয়েছে এবং নক্ষত্রের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী হয়েছে।

হাদিস ৮০৭

আবদুল্লাহ ইবনে মুনীর রহ…….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অর্ধরাত পর্যন্ত সালাত বিলম্ব করলেন। এরপর তিনি আমাদের সামনে বের হয়ে এলেন। সালাত শেষে তিনি আমাদের দিকে মুখ ফিরায়ে বললেন, লোকেরা সালাত আদায় করে ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু তোমরা যতক্ষণ পর্যন্ত সালাতের অপেক্ষায় থাকবে ততক্ষণ তোমরা যেন সালাতে রত থাকবে।

হাদিস ৮০৮

আবুল ওয়ালীদ হিশাম ইবনে আবদুল মালিক রহ………উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরানোর পর নিজ জায়গায় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেন। ইবনে শিহাব রহ. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বসে থাকার কারণ আমার মনে হয় সালাতের পর মহিলাগণ যাতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পান। তবে আল্লাহই তা অধিক জ্ঞাত। ইবনে আবু মারইয়াম রহ…….হিন্দ বিনতে হারিস ফিরাসিয়াহ রা. যিনি উম্মে সালামা রা.-এর বান্ধবী তাঁর সূত্রে নবী পতœী উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরাতেন, তারপর মহিলাগণ ফিরে গিয়ে তাদের ঘরে প্রবেশ করতেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ফিরবার আগেই। ইবনে ওহাব রহ. ইউনুস রহ. সূত্রে শিহাব রহ. থেকে বলেন যে, আমকে হিন্দ ফিরাসিয়াহ রা. বর্ণনা করেছেন এবং উসমান ইবনে উমর রহ. বলেন, আমাকে ইউনুস রহ. যুহরী রহ. থেকে বলেন যে, আমাকে হিন্দ ফিরাসিয়াহ রা. বর্ণনা করেছেন, আর যুবাইদী রহ. বলেন, আমাকে যুহরী রহ. বর্ণনা করেছেন যে, হিন্দ বিনতে হারিস কুরাশিয়াহ রা. তাকে বর্ণনা করেছেন এবং তিনি মাবাদ ইবনে মিকদাদ রহ.-এর স্ত্রী। আর মাবাদ বনূ যুহরার সাথে সন্ধি চুক্ততি আবদ্ধ ছিলেন এবং তিনি (হিন্দ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিনীগণের নিকট যাতায়ত করতেন। শুআইব রহ. যুহরী রহ. থেকে বলেন যে, আমাকে হিন্দ কুরাশিয়াহ রহ. বর্ণনা করেছেন। আর ইবনে আবু আতীক রহ. যুহরী রহ. সূত্রে হিন্দ ফিরাসিয়াহ রা. থেকে বর্ণনা করেছেন। রাইস রহ. ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ রহ. সূত্রে ইবনে শিহাব রহ. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, কুরাইশের এক মহিলা তাকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।

হাদিস ৮০৯

মুহাম্মদ ইবনে উবাইদ রহ……….উকবা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মদীনায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে আসরের সালাত আদায় করলাম। সালাম ফিরানোর পর তিনি তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে যান এবং মুসল্লীগণকে ডিঙ্গিয়ে তাঁর সহধর্মিনীগণের কোন একজনের কক্ষে গেলেন। তাঁর এই দ্রুততায় মুসল্লীগণ ঘাবড়িয়ে গেলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে ফিরে এলেন এবং দেখলেন যে, তাঁর দ্রুততার কারণে তাঁরা বিস্মিত হয়ে পড়েছেন। তাই তিনি বললেন : আমাদের কাছে রক্ষিত কিছু স্বর্ণের কথা মনে পড়ে যায়। তা আমার প্রতিবন্ধক হোক, তা আমি পছন্দ করি না। তাই তা বন্টন করার নির্দেশ দিয়ে দিলাম।

হাদিস ৮১০

আবুল ওয়ালীদ রহ………..আসওয়াদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) রা. বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন তার সালাতের কোন কিছু শয়তানের জন্য না করে। তা হল, শুধুমাত্র ডান দিকে ফিরানো জরুরী মনে করা। আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অধিকাংশ সময়ই বাম দিকে ফিরতে দেখেছি।

হাদিস ৮১১

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……..জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কেউ যদি এ জাতীয় গাছ খায়, তিনি এ দ্বারা রসুন বুঝিয়েছেন, সে যেন আমাদের মসজিদে না আসে। (রাবী আত রহ. বলেন) আমি জাবির রা. কে জিজ্ঞাসা করলাম, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দ্বারা কি বুঝিয়েছেন (জাবির রা বলেন, আমার ধারণা যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দ্বারা কাচা রসুন বুঝিয়েছেন এবং মাখলাদ ইবনে ইয়াযীদ রহ. ইবনে জুরায়জ রহ. থেকে দুর্গন্ধযুক্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।

হাদিস ৮১২

মুসাদ্দাদ রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের যুদ্ধের সময় বলেন, যে ব্যক্তি এই জাতীয় বৃক্ষ থেকে অর্থাৎ কাচা রসুন ভক্ষণ করবে সে যেন অবশ্যই আমাদের মসজিদের কাছে না আসে।

হাদিস ৮১৩

সাঈদ ইবনে উফাইর রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি রসুন অথবা পিয়াজ খায় সে যেন আমাদের থেকে দূরে থাকে অথবা বলেছেন, সে যেন আমাদের মসজিদ থেকে দূরে থাকে আর নিজ ঘরে বসে থাকে। (উক্ত সনদে আরো বর্ণিত আছে যে,) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে একটি পাত্র যার মধ্যে শাক-সব্জী ছিল আনা হলো। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গন্ধ পেলেন এবং এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন, তখন তাকে সে পাত্রে রক্ষিত শাক-সব্জী সম্পর্কে অবহিত করা হলো, তখন একজন সাহাবী (আবু আইয়ূব রা.) কে উদ্দেশ্য করে বললেন, তাঁর কাছে এগুলো পৌঁছিয়ে দাও। কিন্তু তিনি তা খেতে অপছন্দ মনে করলেন, এ দেখে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তুমি খাও। আমি যার সাথে গোপনে আলাপ করি তাঁর সাথে তুমি আলাপ করি তাঁর সাথে তুমি আলাপ কর না (ফেরেশতার সাথে আমার আলাপ হয় তাঁরা দুর্গন্ধকে অপছন্দ করেন) আহমাদ ইবনে সালিহ রহ. ইবনে ওয়াহাব রহ. থেকে বলেছেন أتي ببدر ইবনে ওয়াহব-এর অর্থ বলেছেন, খাঞ্চা যার মধ্যে শাক-সব্জী ছিল। আর লায়স ও আবু সাফওয়া রহ. ইউনুস রহ. থেকে রিওয়ায়েত বর্ণনায় قدر এর বর্ণনা উল্লেখ করেন নি। (ইমাম বুখারী রহ. বলেন) قدر এর বর্ণনা যুহরী রহ.-এর উক্তি, না হাদীসের অংশ তা আমি বলতে পারছি না।

হাদিস ৮১৪

আবু মামার রহ………আবদুল আযীয রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আনাস ইবনে মালিক রা.-কে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রসুন খাওয়া সম্পর্কে কি বলতে শুনেছেন ? তখন আনাস রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি এ জাতীয় গাছ থেকে খায় সে যেন, অবশ্যই আমদের কাছে না আসে এবং আমাদের সঙ্গে সালাত আদায় না করে।

হাদিস ৮১৫

মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ……….শাবী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আমাকে খবর দিয়েছেন, যিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে একটি পৃথক কবরের কাছে গেলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে লোকদের ইমামতি করেন। লোকজন কাতারবন্দী হয়ে তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে গেল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আবু আমর ! কে আপনাকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন ? তিনি বললেন, ইবনে আব্বাস রা.।

হাদিস ৮১৬

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আবু সাঈদ খুদরী রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জুমুআর দিন প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক (মুসলমানের) গোসল করা কর্তব্য।

হাদিস ৮১৭

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এক রাতে আমার খালা (উম্মুল মু’মিনীন) মায়মূনা রা. এর কাছে রাত্র কাটালাম। সে রাতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও সেখানে নিদ্রা যান। রাতের কিছু অংশ অতিবাহিত হলে তিনি উঠলেন এবং একটি ঝুলন্ত মশক থেকে পানি নিয়ে হালকা উযূ করলেন। আমর (বর্ণনাকারী) এটাকে হালকা এবং অতি কম বুঝালেন। এরপর তিনি সালাতে দাঁড়ালেন। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, আমি উঠে তাঁর মতই সংক্ষিপ্ত উযূ করলাম, এরপর এসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বামপাশে দাঁড়িয়ে গেলাম। তখন তিনি আমাকে ঘুরিয়ে তাঁর ডানপাশে করে দিলেন। এরপর যতক্ষণ আল্লাহর ইচ্ছা সালাত আদায় করলেন, এরপর বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাসের আওয়াজ হতে লাগল, এরপর মুআযযিন এসে সালাতের কথা জানালে তিনি উঠে তাঁর সালাতের জন্য চলে গেলেন এবং সালাত আদায় করলেন। কিন্তু (নতুন) উযূ করলেন না। সুফিয়ান রহ. বলেন, আমি আমর রা. কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, লোকজন বলে থাকেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চোখ নিদ্রায় যেত কিন্তু তাঁর কালব (হৃদয়) জাগ্রত থাকত। আমর রহ. বললেন, উবাইদ ইবনে উমাইর রহ. কে আমি বলতে শুনেছি যে, নিশ্চয়ই নবীগণের স্বপ্ন অহী। তারপর তিনি তিলাওয়াত করলেন إني أرى في المنام أني أذبحك (ইবরাহীম আ. ইসমাঈল আ.কে বললেন) আমি স্বপ্নে দেখলাম, তোমাকে কুরবানী করছি…………(৩৭ : ১০২)।

হাদিস ৮১৮

ইসমাঈল রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, ইসহাক রহ.এর দাদী মুলাইকা রা. খাদ্য তৈরী করে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দাওয়াত করলেন। তিনি তার তৈরী খাবার খেলেন। এরপর তিনি বললেন : তোমরা উঠে দাঁড়াও, আমি তোমাদের নিয়ে সালাত আদায় করব। আনাস রা. বলেন, আমি একটি চাটাইয়ে দাঁড়ালাম যা অধিক ব্যবহারের কারণে কালো হয়ে গিয়েছিল। আমি এতে পানি ছিটিয়ে দিলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে দাঁড়ালেন, আমার সঙ্গে একটি ইয়াতিম বাচ্চাও দাঁড়াল এবং বৃদ্ধা আমাদের পিছনে দাঁড়ালেন। আমাদের নিয়ে তিনি দু’রাকাআত সালাত আদায় করলেন।

হাদিস ৮১৯

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ……..আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বেলন, আমি একটি গাধার উপর আরোপহণ করে অগ্রসর হলাম। তখন আমি প্রায় সাবালক। এ সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনায় প্রাচীর ব্যতীত অন্য কিছু সামনে রেখে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। আমি কোন এক কাতারের সম্মুখ দিয়ে অগ্রসর হয়ে এর জায়গায় নেমে পড়লাম এবং গাধাটিকে চরে বেড়ানোর জন্য ছেড়ে দিলাম। এরপর আমি কাতারে প্রবেশ করলাম। আমার এ কাজে কেউ আপত্তি করলেন না।

হাদিস ৮২০

আবুল ইয়ামান ও আইয়াশ রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার সালাত আদায় করতে অনেক বিলম্ব করলেন। অবশেষে উমর রা. তাঁকে আহবান করে বললেন, নারী ও শিশুরা ঘুমিয়ে পড়েছে। আয়িশা রা. বলেন, তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে বললেন : তোমরা ব্যতীত পৃথিবীর আর কেউ এ সালাত আদায় করে না। (রাবী বলেন) মদীনাবাসী ব্যতীত আর কেউ সে সময় সালাত আদায় করতেন না।

হাদিস ৮২১

আমর ইবনে আলী রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞাসা করল, আপনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কখনো ঈদের মাঠে গমন করেছেন ? তিনি বললেন, হ্যাঁ, গিয়েছি। তবে তাঁর কাছে আমার যে মর্যাদা ছিল তা না থাকলে আমি অল্প বয়স্ক হওয়ার কারণে সেখানে যেতে পারতাম না। তিনি কাসীর ইবনে সালাতের বাড়ীর কাছে যে নিশানা ছিল সেখানে আসলেন (নামাযান্তে) পরে খুতবা দিলেন। এরপর মহিলাদের নিকট গিয়ে তিনি তাদের ওয়াজ ও নসীহত করেন। এবং তাদের সাদকা করতে নির্দেশ দেন। ফলে মহিলারা তাদের হাতের আংটি খুলে বিলাল রা.-এর কাপড়ের মধ্যে ফেলতে লাগলেন। এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও বিলাল রা. বাড়ী চলে এলেন।

হাদিস ৮২২

আবুল ইয়ামান রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার সালাত আদায় করতে অনেক বিলম্ব করলেন। ফলে উমর রা. তাকে আহবান করে বললেন, মহিলা ও শিশুরা ঘুমিয়ে পড়েছে। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে এসে বললেন : এ সালাতের জন্য পৃথিবীতে অন্য কেউ অপেক্ষারত নেই। সে সময় মদীনাবাসী ব্যতীত অন্য কোথাও সালাত আদায় করা হত না। মদীনাবাসীরা সূর্যাস্তের পর পশ্চিম আকাশের দৃশ্যমান লালিমা অদৃশ্য হওয়ার সময় থেকে রাতের প্রথম তৃতীয়াংশ সময় পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ইশার সালাত আদায় করতেন।

হাদিস ৮২৩

উবাইদুল্লাহ ইবনে মূসা রহ……..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যদি তোমাদের স্ত্রী গণ রাতে মসজিদে আসার জন্য তোমাদের নিকট অনুমতি প্রার্থনা করে, তাহলে তাদের অনুমতি দিবে। শুবা রহ……….ইবনে উমর রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনায় উবাইদুল্লাহ ইবনে মূসা রহ. এর অনুসরণ করেছেন।

হাদিস ৮২৪

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……..হিন্দ বিনতে হারিস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিনী সালামা রা. তাকে জানিয়েছেন, মহিলাগণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর সাথে সাথে উঠে যেতেন এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও তাঁর সঙ্গে সালাত আদায়কারী পুরুষগণ, আল্লাহ যতক্ষণ ইচ্ছা করেন, (তথায়) অবস্থান করতেন। তারপর যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠতেন, তখন পুরুষগণও উঠে যেতেন।

হাদিস ৮২৫

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা ও আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ফজরের সালাত শেষ করতেন তখন মহিলাগণ চাদরে সর্বাঙ্গ আচ্ছাদিত করে ঘরে ফিরতেন। অন্ধকারের কারণে তখন তাদেরকে চিনা যেতো না।

হাদিস ৮২৬

মুহাম্মদ ইবনে মিসকীন রহ………আবু কাতাদা আনসারী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমি সালাতে দাঁড়িয়ে তা দীর্ঘায়িত করব বলে ইচ্ছা করি, এরপর শিশুর কান্না শুনতে পেয়ে আমি সালাত সংক্ষিপ্ত করি এ আশংকায় যে, তার মায়ের কষ্ট হবে।

হাদিস ৮২৭

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যদি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতেন যে, মহিলারা কি অবস্থা সৃষ্টি করেছে, তা হলে বনী ইসরাঈলের মহিলাদের যেমন নিষেধ করা হয়েছিল, তেমনি এদেরও মসজিদে আসা নিষেধ করে দিতেন। (রাবী) ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ রহ. বলেন) আমি আমরাহ রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, তাদের কি নিষেধ করা হয়েছিল ? তিনি বললেন, হ্যাঁ।

হাদিস ৮২৮

ইয়াহইয়া ইবনে কাযআ রহ……..উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাম ফিরাতেন, তখন মহিলাগণ তাঁর সালাম শেষ করার পর উঠে যেতেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ানোর আগে নিজ জায়গায় কিছুক্ষণ অবস্থান করতেন। রাবী (যুহরী রহ.) বলেন, আমাদের মনে হয়, তিনি এজন্য যে, অবশ্য আল্লাহ ভাল জানেন, যাতে মহিলাগণ চলে যেতে পারেন, পুরুষগণ তাদের যাওয়ার আগেই।

হাদিস ৮২৯

আবু নুআইম রহ……….আনাস (ইবনে মালিক) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে সুলাইম রা.-এর ঘরে সালাত আদায় করেন। আমি এবং একটি ইয়াতীম তাঁর পিছনে দাঁড়ালাম আর উম্মে সুলাইম রা. আমাদের পিছনে দাঁড়ালেন।

হাদিস ৮৩০

ইয়াহইয়া ইবনে মূসা রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্ধকার থাকতেই ফজরের সালাত আদায় করতেন। এরপর মু’মিনদের স্ত্রীগণ চলে যেতেন, অন্ধকারের জন্য তাদের চেনা যেত না অথবা বলেছেন, অন্ধকারের জন্য তাঁরা একে অপরকে চিনতেন না।

হাদিস ৮৩১

মুসাদ্দাদ রহ………আবদুল্লাহ রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমাদের কারো স্ত্রী যদি (সালাতের জন্য মসজিদে যাওয়ার) অনুমতি চায় তা হলে স্বামী যেন তাকে বাঁধা না দেয়।

জুমু’আ অধ্যায় (৮৩২-৯০০)

হাদীস ৮৩২

আবু ইয়ামান রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, আমরা দুনিয়ায় (আগমনের দিক দিয়ে) সর্বশেষ, কিন্তু কিয়ামতের দিন আমরা মর্যাদার দিক দিয়ে সবার আগে। পার্থক্য শুধু এই যে, তাদের কিতাব দেওয়া হয়েছে আমাদের আগে। তারপর তাদের সে দিন যে দিন তাদের জন্য ইবাদত ফরয করা হয়েছিল তারা এ বিষয়ে মতানৈক্য করেছে। কিন্তু সে বিষয়ে আল্লাহ আমাদের হিদায়েত করেছেন। কাজেই এ ব্যাপারে লোকেরা আমাদের পশ্চাদ্বর্তী। ইয়াহুদীদের (সম্মানিত দিন হল) আগামী কাল (শনিবার) এবং নাসারাদের আগামী পরশু (রবিবার)।

হাদীস ৮৩৩

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমাদের মধ্যে কেউ জুমুআর সালাতে আসলে (তার আগে) সে যেন গোসল করে।

হাদীস নং ৮৩৪

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আসমা রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, উমর ইবনে ইবনে খাত্তাব রা. জুমুআর দিন দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন, এমন সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রথম যুগের একজন মুহাজির সাহাবী এলেন। উমর রা. তাকে ডেকে বললেন, এখন সময় কত? তিনি বললেন, আমি ব্যস্ত ছিলাম, তাই ঘরে ফিরে আসতে পারিনি। এমন সময় আযান শুনতে পেয়ে শুধু উযূ করে নিলাম। উমর রা. বললেন, কেবল উযূই ? অথচ আপনি জানেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোসলের আদেশ দিতেন।

হাদীস ৮৩৫

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : জুমুআর দিন প্রত্যেক বালিগের জন্য গোসল করা কর্তব্য।

হাদীস নং ৮৩৬

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……..আমর ইবনে সুলাইম আনসারী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন, আমি এ মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন জুমুআর দিন প্রত্যেক বালিগের জন্য গোসল করা কর্তব্য। আর মিসওয়াক করবে এবং সুগন্ধি পাওয়অ গেলে তা ব্যবহার করবে। আমর (ইবনে সুলাইম) রহ. বলেন, গোসল সম্পর্কে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি তা কর্তব্য। কিন্তু মিসওয়াক ও সুগন্ধি কর্তব্য কিনা তা আল্লাহই ভাল জানেন। তবে হাদীসে এ রূপই আছে। আবু আবদুল্লাহ বুখারী রহ. বলেন, আবু বকর ইবনে মুনকাদির রহ. হলেন মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদির-এর ভাই। কিন্তু তিনি আবু বকর হিসাবেই পরিচিত নন। বুকাইর ইবনে আশাজ্জ, সাঈদ ইবনে আবু হিলাল সহ অনেকে তাঁর থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদির রহ.-এর কুনিয়াত (উপনাম) ছিল আবু বকর ও আবু আবদুল্লাহ।

হাদীস ৮৩৭

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ…….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি জুমুআর দিন জানাবাত গোসলের ন্যায় গোসল করে এবং সালাতের জন্য আগমন করে সে যেন, একটি উট কুরবানী করল। যে ব্যক্তি দ্বিতী

হাদীস নং ৮৩৮

আবু নুআইম রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, জুমুআর দিন উমর ইবনে খাত্তাব রা. খুতবা দিচ্ছিলেন, এমন সময় এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করেন। উমর রা. তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, সালাতে সময় মত আসতে তোমরা কেন বাঁধাগ্রস্ত হও ? তিনি বললেন, আযান শোনার সাথে সাথেই তো আমি উযূ করেছি। তখন উমর রা. বললেন, তোমরা কি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে শোননি যে, যখন তোমাদের কেউ জুমুআর সালাতে রওয়ানা হয়, তখন সে যেন গোসল করে নেয়।

হাদীস নং ৮৩৯

আদম রহ………সালমান ফারিসী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি জুমুআর দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালরূপে পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তৈল থেকে ব্যবহার হরে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে এরপর বের হয় এবং দুজন লোকের মাঝে ফাঁক না করে, তারপর তার নির্ধারিত সালাত আদায় করে এবং ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় চুপ থাকে, তা হলে তার সে জুমুআ থেকে আরেক জুমুআ পর্যন্ত সময়ের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।

হাদীস নং ৮৪০

আবুল ইয়ামান রহ……..তাউস রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনে আব্বাস রা. কে বললাম, সাহাবীগণ বর্ণনা করেছেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : জুমুআর দিন গোসল কর এবং মাথা ধুয়ে ফেল যদিও তোমরা জুনুবী না হয়ে থাক এবং সুগন্ধি ব্যবহার কর। ইবনে আব্বাস রা. বললেন, গোসল সম্পর্কে নির্দেশ ঠিকই আছে, কিন্তু সুগন্ধি সম্পর্কে আমার জানা নেই।

হাদীস নং ৮৪১

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ………তাউস রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি যখন জুমুআর দিন গোসল সংক্রান্ত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীর উল্লেখ করেন তখন আমি ইবনে আব্বাস রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পরিবারবর্গের সঙ্গে অবস্থান করতেন তখনও কি তিনি সুগন্ধি বা তৈল ব্যবহার করতেন ? তিনি বললেন, আমি তা জানি না।

হাদীস নং ৮৪২

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, উমর ইবনে খাত্তাব রা. মসজিদে নববীর দরজার নিকটে এক জোড়া রেশমী পেষাক ( বিক্রি হতে) দেখে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! যদি এটি আপনি খরিদ করতেন আর জুমুআর দিন এবং যখন আপনার কাছে প্রতিনিধি দল আসে তখন আপনি তা পরিধান করতেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এটা তো সে ব্যক্তিই পরিধান করে, আখিরাতে যার (মঙ্গলের) কোন অংশ নেই। এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ ধরনের কয়েক জোড়া পোষাক আসে, তখন তার এক জোড়া তিনি উমর রা.-কে প্রদান করেন। উমর রা. আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি আমাকে এটি পরিধান করতে দিলেন অথচ আপনি উতারিদের (রেশম) পোষাক সম্পর্কে যা বলার তা তো বলেছিলেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আমি তোমাকে এটি নিজের পরিধানের জন্য প্রদান করিনি। উমর ইবনে খাত্তাব রা. তখন এটি মক্কায় তাঁর এক ভাইকে দিয়ে দেন, যে তখন মুশরিক ছিল।

হাদীস নং ৮৪৩

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমার উম্মতের জন্য বা তিনি বলেছেন, লোকদের জন্য যদি কঠিন মনে না করতাম, তা হলে প্রত্যেক সালাতের সাথে তাদের মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।

হাদীস নং ৮৪৪

আবু মামার রহ………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমি মিসওয়াক সম্পর্কে তোমাদের অনেক বলেছি।

হাদীস নং ৮৪৫

মুহাম্মদ ইবনে কাসীর রহ…………হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রাতে সালাতের জন্য উঠতেন তখন দাঁত মেজে মুখ পরিষ্কার করে নিতেন।

হাদীস নং ৮৪৬

ইসমাঈল রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর রা. একটি মিসওয়াক হাতে নিয়ে দাঁত মাজতে প্রবেশ করলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দিকে তাকালেন। আমি তাকে বললাম, হে আবদুর রহমান ! মিসওয়াকটি আমাকে দাও। সে তা আমাকে দিল। আমি ব্যবহৃত অংশ ভেঙ্গে ফেললাম এবং তা চিবিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দিলাম। তিনি আমার বুকে হেলান দিয়ে তা দিয়ে মিসওয়াক করলেন।

হাদীস নং ৮৪৭

আবু নুআইম রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমুআর দিন ফজরের সালাতে (কোন সময়) الم تنزيل السجدة এবং هل أتى على الإنسان এ দুটি সূরা তিলাওয়াত করতেন।

হাদীস নং ৮৪৮

মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মসজিদে জুমুআর সালাত অনুষ্ঠিত হওয়ার পর প্রথম জুমুআর সালাত অনুষ্ঠিত হয় বাহরাইনে জুওয়াসা নামক স্থানে অবস্থিত আবদুল কায়স গোত্রের মসজিদে।

হাদীস নং ৮৪৯

বিশর ইবনে মুহাম্মদ রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তোমরা সকলেই রক্ষণাবেক্ষণকারী। লাইস (ইবনে সাদ রা. আরো অতিরিক্ত বলেন, (পরবর্তী রাবী) ইউনুস রহ. বলেছেন, আমি একদিন ইবনে শিহাব রহ.-এর সঙ্গে ওয়াদিইল কুরা নামক স্থানে ছিলাম। তখন রুযাইক (ইবনে হুকায়ম রহ. ইবনে শিহাব রহ.-এর নিকট লিখলেন, আপনি কি মনে করেন, আমি কি (এখানে) জুমুআর সালাত আদায় করব ? রুযাইক রহ. তখন সেখানে তাঁর জমির কৃষি কাজের তত্ত্বাবধান করতেন। সেখানে একদল সুদানী ও অন্যান্য লোক বাস করত। রুযাইক রহ. সে সময় আইলা শহরের (আমীর) ছিলেন। ইবনে শিহাব রহ. তাঁকে জুমুআ কায়িম করার নির্দেশ দিয়ে লিখেছিলেন এবং আমি তাকে এ নির্দেশ দিতে শুনলাম। সালিম রহ. তার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তোমরা সকলেই রক্ষণাবেক্ষণকারী এবং তোমাদের প্রত্যেককেই অধীনস্থদের (দায়িত্ব) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। পুরুষ তার পরিবার বর্গের অভিভাবক, তাকে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। ইবনে উমর রা. বলেন, আমার মনে হয় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন : পুত্র তার পিতার ধন-সম্পদের রক্ষক এবং এগুলো সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। তোমরা সবাই রক্ষণাবেক্ষণকারী এবং সবাইকে তাদের অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।

হাদীস নং ৮৫০

আবুল ইয়ামান রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, “যে ব্যক্তি জুমুআর সালাতে আসবে সে যেন গোসল করে।”

হাদীস নং ৮৫১

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ………আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্কের জন্য জুমুআর দিন গোসল করা কর্তব্য।

হাদীস নং ৮৫২

মুসলিম ইবনে ইবরাহীম রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমরা দুনিয়ায় (আগমনের দিক দিয়ে) সর্বশেষ। কিন্তু কিয়ামতের দিন মর্যাদার দিক দিয়ে সবার আগে। তবে তাদের কিতাব প্রদান করা হয়েছে আমাদের আগে এবং আমাদের তা দেয় হয়েছে তাদের পরে। তারপর এই দিন (শুক্রবার নির্ধারণ) সম্বন্ধে তাদের মধ্যে মতানৈক্য হয়েছে। আল্লাহ আমাদের এ শুক্রবার সম্পর্কে হিদায়েত দান করেছেন। পরের দিন (শনিবার) ইয়াহুদীদের এবং তারপরের দিন (রবিবার) নাসারাদের। এরপর কিছুক্ষণ নীরব থেকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : প্রত্যেক মুসলিমের উপর হক রয়েছে যে, প্রতি সাত দিনের এক দিন সে গোসল করবে, তার মাথা ও শরীর ধৌত করবে। আবান ইবনে সালিহ রহ. আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : প্রত্যেক মুসলিমের উপর হক রয়েছে যে, প্রতি সাত দিনের এক দিন সে যেন গোসল করে।

হাদীস নং ৮৫৩

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….ইবনে উমর রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমরা মহিলাগণকে রাতে (সালাতের জন্য) মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দিবে।

হাদীস নং ৮৫৪

ইউসুফ ইবনে মূসা রহ……..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর রা.-এর স্ত্রী (আতিকাহ বিনতে যায়েদ) ফজর ও ইশার সালাতের জামাআতে মসজিদে হাজির হতেন। তাকে বলা হল, আপনি কেন (সালাতের জন্য) বের হন? অথচ আপনি জানেন যে, উমর রা. তা অপছন্দ করেন এবং মর্যাদা হানিকর মনে করেন। তিনি জবাব দিলেন, তা হলে এমন কি বাধা রয়েছে রয়েছে যে, উমর রা স্বয়ং আমাকে নিষেধ করছেন না ? বলা হল, তাকে বাধা দেয় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী : আল্লাহর দাসীদের আল্লাহর মসজিদে যেতে নিষেধ করো না।

হাদীস নং ৮৫৫

মুসাদ্দাদ রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি তাঁর মুআযযিনকে এক বর্ষণমুখর দিনে বললেন, যখন তুমি (আযানে) ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ বলবে, তখন ‘হাইয়া আলাস সালাহ’ বলবে না, বলবে, ‘সাললু ফী বুয়ুতিকুম’ তোমরা নিজ নিজ বাসগৃহে সালাত আদায় কর। তা লোকেরা অপছন্দ করল। তখন তিনি বললেন : আমার চাইতে উত্তম ব্যক্তিই (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা করেছেন। জুমুআ নি:সন্দেহ জরুরী। আমি অপছন্দ করি যে, তোমাদেরকে মাটি ও কাদার মধ্য দিয়ে যাতায়ত করার অসুবিধায় ফেলি।

হাদীস নং ৮৫৬

আহমদ ইবনে সালিহ রহ……… নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিনী আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকজন তাদের বাড়ী ও উচু এলাকা থেকেও জুমআর সালাতের জন্য পালাক্রমে আসতেন। আর যেহেতু তারা ধুলো-বালির মধ্য দিয়ে আগমন করতেন, তাই তারা ধুলা মলিন ও ঘর্মাক্ত হয়ে যেতেন। তাদের দেহ থেকে ঘাম বের হত। একদিন তাদের একজন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট ছিলেন। তিনি তাকে বললেন : যদি তোমরা এ দিনটিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে।

হাদীস নং ৮৫৭

আবদান রহ………ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি আমরাহ রহ.-কে জুমুআর দিনে গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। আমরাহ রহ. বলেন, আয়িশা রা. বলেছেন যে, লোকজন নিজেদের কাজকর্ম নিজেরাই করতেন। যখন তারা দুপুরের পরে জুমুআর জন্য যেতেন তখন সে অবস্থায়ই চলে যেতেন। তাই তাদের বলা হল, যদি তোমরা গোসল করে নিতে।

হাদীস নং ৮৫৮

সুরাইজ ইবনে নুমান রহ………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমুআর সালাত আদায় করতেন, যখন সূর্য হেলে যেতো।

হাদীস নং ৮৫৯

আবদান রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা প্রথম ওয়াক্তেই জুমুআর সালাতে যেতাম এবং জুমুআর পরে কাইলুলা (দুপুরের বিশ্রাম) করতাম।

হাদীস নং ৮৬০

মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর মুকাদ্দামী রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রচণ্ড শীতের সময় প্রথম ওয়াক্তেই সালাত আদায় করতেন। আর প্রখর গরমের সময় ঠান্ডা করে (বিলম্ব করে)) সালাত আদায় করতেন। অর্থাৎ জুমুআর সালাত। ইউনুস ইবনে বুকাইর রহ. আমাদের বলেছেন, আর তিনি সালাত শব্দের উল্লেখ করেছেন, জুমুআর শব্দের উল্লেখ করেন নি। আর বিশর ইবনে সাবিত রহ. বলেন, আমাদের কাছে আবু খালদা রহ. বর্ণনা করছেন যে, জুমুআর ইমাম আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করেন। তারপর তিনি আনাস রা. কে বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত কি ভাবে আদায় করতেন ?

হাদীস নং ৮৬১

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………আবায়া ইবনে রিফাআ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জুমুআর সালাতে যাওয়ার সময় আবু আব্বাস রা.-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তিনি বললেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে শুনেছি যে, যার দু’পা আল্লাহর পথে ধুলি ধু সারিত হয়, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন।

হাদীস নং ৮৬২

আদাম ও আবুল ইয়ামান রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যখন সালাত শুরু হয়, তখন দৌড়িয়ে গিয়ে সালাতে যোগদান করবে না, বরং হেটে গিয়ে সালাতে যোগদান করবে। সালাতে ধীর-স্থিরভাবে যাওয়া তোমাদের জন্য অপরিহার্য। কাজেই জামাআতের সাথে সালাত যতটুকু পাও আদায় কর, আর যা ফাওত হয়ে গেছে পরে তা পুরো করে নাও।

হাদীস নং ৮৬৩

আমর ইবনে আলী রহ……..আবু কাতাদা রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : তোমরা আমাকে না দেখা পর্যন্ত সালাতে দাঁড়াবে না। তোমাদের জন্য ধীর-স্থির থাকা অপরিহার্য।

হাদীস নং ৮৬৪

আবদান ইবনে আবদুল্লাহ রহ………সালমান ফারিসী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি জুমুআর দিন গোসল করে এবং যথাসম্ভব উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, এরপর তৈল মেখে নেয় অথবা সুগন্ধি ব্যবহার করে, তারপর (মসজিদে) যায়, আর দুজনের মধ্যে ফাক করে না এবং তার ভাগ্যে নির্ধারিত পরিমাণ সালাত আদায় করে। আর ইমাম যখন (খুতবার জন্য) বের হন তখন চুপ থাকে। তার এ জুমুআ এবং পরবর্তী জুমুআর মধ্যবর্তী যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।

জুমুআর দিন সালাতে দু’জনের মধ্যে ফাক না করা।

৮৬৪ আবদান ইবনে আবদুল্লাহ রহ………সালমান ফারিসী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি জুমুআর দিন গোসল করে এবং যথাসম্ভব উত্তমরূপে পরিত্রতা অর্জন করে, এরপর তৈল মেখে নেয় অথবা সুগন্ধি ব্যবহার করে, তারপর (মসজিদে) যায়, আর দু’জনের মধ্যে ফাক করে না এবং তার ভাগ্যে নির্ধারিত পরিমাণ সালাত আদায় করে। আর ইমাম যখন (খুতবার জন্য) বের হন তখন চুপ থাকে। তার এ জুমুআ এবং পরবর্তী জুমুআর মধ্যবর্তী যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।

হাদীস নং ৮৬৫

মুহাম্মদ ইবনে সাল্লাম রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন, যেন কেউ তার ভাইকে তার বসার জায়গা থেকে দিয়ে নিজে সে জায়গায় না বসে। ইবনে জুরাইজ রহ. বলেন, আমি নাফি রহ. কে জিজ্ঞাসা করলাম, এ কি শুধু জুমুআর ব্যাপারে ? তিনি বললেন, জুমুআ ও অন্যান্য (সালাতের) ব্যাপারেও (এ নির্দেশ প্রযোজ্য)।

হাদীস নং ৮৬৬

আদম রহ………সায়িব ইবনে ইয়াযীদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর রা. এবং উমর রা.-এর সময় জুমুআর দিন ইমাম যখন মিম্বরের উপর বসতেন, তখন প্রথম আযান দেওয়া হত। পরে যখন উসমান রা. খলিফা হলেন এবং লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেল, তখন তিনি যাওয়া থেকে তৃতীয় আযান বৃদ্ধি করেন। আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী রহ. বলেন, ‘যাওরা’ হল মদীনার অদূরে বাজারে একটি স্থান।

হাদীস নং ৮৬৭

আবু নুআইম রহ……..সায়িব ইবনে ইয়াযীদ রা. থেকে বর্ণিত, মদীনার অধিবাসীদের সংখ্যা যখন বৃদ্ধি পেল, তখন জুমুআর দিন তৃতীয় আযান যিনি বৃদ্ধি করলেন, তিনি হলেন, উসমান ইবনে আফফান রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় (জুমুআর জন্য) একজন ব্যতীত মুআযযিন ছিল না এবং জুমুআর দিন আযান দেওয়া হত যখন ইমাম বসতেন অর্থাৎ মিম্বারের উপর খুতবার পূর্বে।

হাদীস নং ৮৬৮

ইবনে মুকাতিল রহ…………মুআবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি মিম্বরে বসা অবস্থায় মুয়াযযিন আযান দিলেন। মুয়াযযিন বললেন, “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার” মুআবিয়া রা. বললেন, “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার”। মুয়াযযিন বললেন, “আশহাদু আল-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু” তিনি বললেন, এবং আমিও (বলছি “আশহাদু আল্লাহ আল-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু)। মুয়াযযিন বললেন, “আশহাদু আল-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু” তিনি বললেন, এবং আমিও (বলছি……..। যখন (মুয়াযযিন) আযান শেষ করলেন, তখন মুআবিয়া রা. বললেন, হে লোক সকল ! তোমরা আমার থেকে যে বাক্যগুলো শুনেছ, তা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মুয়াযযিনের আযানের সময় এ মজলিসে বাক্যগুলো বলতে আমি শুনেছি।

হাদীস নং ৮৬৯

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………সায়িব ইবনে ইয়াযীদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মসজিদে মুসল্লীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে, ইসমান রা. জুমুআর দিন দ্বিতীয় আযানের নির্দেশ দেন।

হাদীস নং ৮৭০

মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল রহ……….সায়িব ইবনে ইয়াযীদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর এবং উমর রা-এর যুগে জুমুআর দিন ইমাম যখন মিম্বারের উপর বসতেন, তখন প্রথম আযান দেওয়া হত। এরপর যখন উসমান রা. -এর খিলাফতের সময় এ এবং লোক সংখ্যা বৃদ্ধি পেল, তখন উসমান রা. জুমুআর দিন তৃতীয় আযানের নির্দেশ দেন। ‘যাওয়া’ নামক স্থান থেকে এ আযান দেওয়া হয়, পরে এ আযান অব্যাহত থাকে।

হাদীস নং ৮৭১

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………আবু হাযিম ইবনে দীনার রা. থেকে বর্ণিত যে, (একদিন) কিছু লোক সাহল ইবনে সাদ সাঈদীর নিকট আগমন করে এবং মিম্বারটি কোন কাঠের তৈরী ছিল, এ নিয়ে তাদের মনে প্রশ্ন জেগে ছিল। তারা এ সম্পর্কে তাঁর নিকট জিজ্ঞাসা করল। এতে তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ ! আমি সম্যকরূপে অবগত আছি যে, তা কিসের ছিল। প্রথম যে দিন তা স্থাপন করা হয় এবং প্রথম যে দিন এর উপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসেন তা আমি দেখেছি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের অমুক মহিলার (বর্ণনাকারী বলেন, সাহল রা. তার নামও উল্লেখ করেছিলেন) নিকট লোক পাঠিয়ে বলেছিলেন, তোমার কাঠমিস্ত্রি গোলামকে আমার জন্য কিছু কাঠ দিয়ে এমন জিনিস তৈরী করার নির্দেশ দাও, যার উপর বসে আমি লোকদের সাথে কথা বলতে পারি। এরপর সে মহিলা তাকে আদেশ করেন এবং সে (মদীনা থেকে নয় মাইল দূরবর্তী) গাবা নামক স্থানের ঝাউ কাঠ দিয়ে তা তৈরী করে নিয়ে আসে। মহিলাটি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট তা পাঠিয়েছেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশে এখানেই তা স্থাপন করা হয়। এরপর আমি দেখেছি, এর উপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করেছেন। এর উপর উঠে তাকবীর দিয়েছেন এবং এখানে (দাঁড়িয়ে) রুকু করেছেন। এরপর পিছনের দিকে নেমে এসে মিম্বারের গোড়ায় সিজদা করেছেন এবং (এ সিজদা) পুনরায় করেছেন, এরপর সালাত শেষ করে সমবেত লোদের দিকে ফিরে বলেছেন : হে লোক সকল ! আমি এটা এ জন্য করেছি যে, তোমরা যেন আমার ইক্তিদা করতে এবং আমার সালাত শিখে নিতে পার।

হাদীস নং ৮৭২

সাঈদ ইবনে আব মারয়াম রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (মসজিদে নববীতে) এমন একটি (খেজুর গাছের) খুঁটি ছিল যার সাথে হেলান দিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়াতেন। এরপর যখন তাঁর জন্য মিম্বর স্থাপন করা হল, আমরা তখন খুঁটি থেকে দশ মাসের গর্ভবতী উটনীর মত ক্রন্দন করার শব্দ শুনতে পেলাম। এমনকি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বার থেকে নেমে এসে খুঁটির উপর হাত রাখলেন।

হাদীস নং ৮৭৩

আদম ইবনে ইয়াস রহ……..সালিম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মিম্বারের উপর থেকে খুতবা দিতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমুআর সালাতে আসে সে যেন গোসল কর নেয়।

হাদীস নং ৮৭৪

উবাইদুল্লাহ ইবনে উমর কাওয়ারিরী রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন। এরপর বসতেন এবং পুনরায় দাঁড়াতেন। যেমন তোমরা এখন করে থাক।

হাদীস নং ৮৭৫

মুআয ইবনে ফাযালা রহ………..আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন মিম্বারের উপর বসলেন এবং আমরা তাঁর চারপাশে বসলাম।

হাদীস নং ৮৭৬

মুহাম্মদ ইবনে মা’মার রহ……….আমর ইবনে তাগলিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কিছু মাল বা কিছু সংখ্যক যুদ্ধবন্দী উপস্থিত করা হলো তিনি তা বন্টন করে দিলেন। বন্টনের সময় কিছু লোককে দিলেন এবং কিছু লোককে বাদ দিলেন। তারপর তাঁর নিকট সংবাদ পৌঁছল যে, যাদের তিনি দেননি. তারা অসন্তুষ্ট হয়েছে। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রশংসা করলেন ও তাঁর মহিমা বর্ণনা করলেন, তারপর বললেন : আম্ম বা’দ। আল্লাহর শপথ ! আমি কোন লোককে দেই আর কোন লোককে দেই না। যাকে আমি দেই না, সে যাকে আমি দেই, তার চাইতে আমার কাছে অধিক প্রিয়। তবে আমি এমন লোকদের দেই যাদের অন্তরে অধৈর্য ও মালের প্রতি লিপ্সা দেখতে পাই ; আর কিছু লোককে আল্লাহ যাদের অন্তরে অমুখাপেক্ষিতা ও কল্যাণ রেখেছেন, তাদের সে অবস্থার উপর ন্যস্ত করি। তাদের মধ্যে আমর ইবনে তাগলিব একজন। বর্ণনাকারী আমর ইবনে তাগলিব রা. বলেন, আল্লাহর শপথ! নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ বাণীর পরিবর্তে আমি লাল উটও পছন্দ করি না।

হাদীস নং ৮৭৭

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক রাতের মধ্যভাগে বের হলেন এবং মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করলেন। তাঁর সঙ্গে সাহাবীগণও সালাত আদায় করলেন, সকালে তাঁরা এ নিয়ে আলোচনা করলেন। ফলে (দ্বিতীয় রাতে) এর চাইতে অধিক সংখ্যক সাহাবী একত্রিত হলেন এবং তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করলেন। পরের দিন সকালেও তাঁরা এ সম্পর্কে আলোচনা করলেন। ফলে তৃতীয় রাতে মসজিদে লোকসংখ্যা অত্যাধিক বৃদ্বি পেল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন এবং সাহাবীগণ তাঁর সঙ্গে সালাত করলেন। চতুর্থ রাতে মসজিদে মুসল্লীগণের স্থান সংকুলান হচ্ছিল না। অবশেষে তিনি ফজরের সালাতের জন্য বের হলেন এবং ফজরের সালাত শেষ করে লোকদের দিকে ফিরলেন। তারপর আল্লাহর হামদ ও সানা বর্ণনা করেন। এরপর বললেন : আম্মা বা’দ (তারপর বক্তব্য এই যে) এখানে তোমাদের উপস্থিতি আমার কাছে গোপন ছিল না, কিন্তু আমার আশংকা ছিল, তা তোমাদের জন্য ফরয করে দেওয়া হয় আর তোমরা তা আদায় করতে অসমর্থ হয়ে পড়।

হাদীস নং ৮৭৮

আবুল ইয়ামান রহ………আবু হুমাইদ সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, এক সন্ধ্যায় সালাতের পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন এবং তৌহিদের সাক্ষ্য বাণী পাঠ করলেন। আর যথাযথভাবে আল্লাহর প্রশংসা করলেন। এরপর বললেন, ‘আম্ম বা’দ’।

হাদীস নং ৮৭৯

আবুল ইয়ামান রহ……….মিসওয়াব ইবনে মাখরামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন। এরপর আমি তাকে সৌদিদের সাক্ষ্য বাণী পাঠ করার পর বলতে শুনলাম, ‘আম্মা বা’দ’।

হাদীস নং ৮৮০

ইসমাঈল ইবনে আবান রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারের উপর আরোহণ করলেন। এ ছিল তাঁর জীবনের শেষ মজলিস। তিনি বসেছিলেন, তাঁর দুকাঁধের উপর বড় চাদর জড়ানো ছিল এবং মাথায় বাঁধা ছিল কালো পট্রি। তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং তাঁর মহিমা বর্ণনা করলেন, এরপর বললেন, হে লোক সকল ! তোমরা আমার নিকট আস। লোকজন তাঁর নিকট একত্র হলেন। এরপর তিনি বললেন : ‘আম্মা বা’দ’। শুনে রাখ, এ আনসার গোত্র সংখ্যায় কমতে থাকবে এবং অন্য লোকেরা সংখ্যায় বাড়তে থাকবে। কাজেই যে ব্যক্তি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মতের কোন বিষয়ের কর্তৃত্ব লাভ করবে এবং সে এর সাহায্যে কারো ক্ষতি বা উপকার করার সুযোগ পাবে, সে যেন এই আনসারদের সৎ লোকদের ভাল কাজগুলো গ্রহণ করে এবং তাদের মন্দ কাজগুলো ক্ষমা করে দেয়।

হাদীস নং ৮৮১

মুসাদ্দাদ রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’খুতবা দিতেন আর দু’খুতবার মাঝে বসতেন।

হাদীস নং ৮৮২

আদম রহ…………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : জুমুআর দিন মসজিদের দরোয়াজায় ফেরেশতাগণ অবস্থান করেন এবং ক্রমানুসারে আগে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। যে সবার আগে আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি মোটাতাজা উট কুরবানী করে। এরপর যে আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি গাভী কুরবানী করে। তারপর আগমনকারী ব্যক্তি মুরগী দানকারীর ন্যায়। এরপর আগমনকারী ব্যক্তি একটি ডিম দানকারীর ন্যায়। তারপর ইমাম যখন বের হন তখন ফেরেশতাগণ তাদের দফতর বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগ সহ খুতবা শোনাতে থাকেন।

হাদীস নং ৮৮৩

আবু নুমান রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (কোন এক) জুমুআর দিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের সামনে খুতবা দিচ্ছিলেন। এমনি সময় এক ব্যক্তি আগমন করল। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে অমুক ! তুমি কি সালাত আদায় করেছ ? সে বলল, না, তিনি বললেন, উঠ, সালাত আদায় করে নাও।

হাদীস নং ৮৮৪

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক জুমুআর দিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দেওয়ার সময় এক ব্যক্তি প্রবেশ করল। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, সালাত আদায় করেছ ? সে বলল, না, তিনি বললেন : উঠ, দু’রাকাআত সালাত আদায় করে নাও।

হাদীস নং ৮৮৫

মুসাদ্দাদ রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক জুমুআর দিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছিলেন। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ ! (পানির অভাবে) ঘোড়া মরে যাচ্ছে, ছাগল বকরীও মরে যাচ্ছে। কাজেই আপনি দু’আ করুন, যেন আল্লাহ আমাদেরকে বৃষ্টি দান করেন। তখন তিনি দু’হাত প্রসারিত করলেন এবং দু’আ করলেন।

হাদীস নং ৮৮৬

ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ……..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে একবার দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। সে সময় এক জুমুআর দিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছিলেন। তখন এক বেদুইন উঠে দাঁড়াল এবং আরয করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! (বৃষ্টির অভাবে) সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পরিবার পরিজনও অনাহারে রয়েছে। তাই আপনি আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য দু’আ করুন। তিনি দু’হাত তুললেন। সে সময় আমরা আকাশে এক খণ্ড মেঘও দেখিনি। যার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ (করে বলছি)! (দু’আ শেষে) তিনি দু’হাত (এখনও) নামান নি, এমন সময় পাহাড়ের ন্যায় মেঘের বিরাট বিরাট খন্ড উঠে আসল। তারপর তিনি মিম্বর থেকে অবতরণ করেন নাই, এমন সময় দেখতে পেলাম তাঁর (পবিত্র) দাঁড়ির উপর ফোটা ফোটা বৃষ্টি পড়ছে। সে দিন আমাদের এখানে বৃষ্টি হল। এর পরে ক্রমাগত দু’দিন এবং পরবর্তী জুমুআ পর্যন্ত প্রত্যেক দিন। (পরবর্তী জুমুআর দিন) সে বেদুইন অথবা অন্য কেউ উঠে দাঁড়াল এবং আরয করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! (বৃষ্টির কারণে) এখন আমাদের বাড়ী ঘর ধ্বসে পড়ছে, সম্পদ ডুবে যাচ্ছে। তাই আপনি আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট দু’আ করুন। তখন তিনি দু’হাত তুললেন এবং বললেন : হে আল্লাহ আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় (বৃষ্টি দাও) আমাদের উপর নয়। (দু’আর সময়) তিনি মেঘের এক পরিবেষ্টিত অবস্থায় ঢালের ন্যায় মদীনার আকাশ মেঘমুক্ত হয়ে গেল এবং কানাত উপত্যকার পানি এক মাস ধরে প্রবাহিত হতে লাগল, তখন (মদীনার) চতুর পাশে যে কোন অঞ্চল হতে যে কেউ এসেছে, সে এ মুষলধারে বৃষ্টির কথা আলোচনা করেছে।

হাদীস নং ৮৮৭

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : জুমুআর দিন যখন তোমার পাশের মুসল্লীকে বলবে চুপ থাক, অথচ ইমাম খুতবা দিচ্ছেন, তা হলে তুমি একটি অনর্থক কথা বললে।

হাদীস নং ৮৮৮

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমুআর দিন সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং বলেন, এ দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যে কোন মুসলিম বান্দা যদি এ সময় সালাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহর নিকট কিছু চায়, তাহলে তিনি তাকে অবশ্যই তা দান করে থাকেন এবং তিনি হাত দিয়ে ইশারা করে বুঝিয়ে দিলেন যে, সে মুহূর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত।

হাদীস নং ৮৮৯

মুআবিয়া ইবনে আমর রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে (জুমুআর) সালাত আদায় করছিলাম। এমন সময় খাদ্য দ্রব বহনকারী একটি উটের কাফেলা হাজির হল এবং তার (মুসল্লীগণ) সে দিকে এত বেশী মনোযোগী হলেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে মাত্র বারোজন মুসল্লী অবশিষ্ট ছিলেন। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হল : وإذا رأوا تجارة أو لهوا انفضوا إليها وتركوك قائما “এবং যখন তারা ব্যবসা বা খেল তামাশা দেখতে পেল। তখন সে দিকে দ্রুত চলে গেল এবং আপনাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে গেল”। (সূরা জুমুআ)

হাদীস নং ৮৯০

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের পূর্বে দু’রাকাআত ও পরে দু’রাকাআত, মাগরিবের পর নিজের ঘরে দু’রাকআত এবং ইশার পর দু’রাকাআত সালাত আদায় করতেন। আর জুমুআর দিন নিজের ঘরে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করতেন না। (ঘরে গিয়ে) দু’রাকাআত সালাত আদায় করতেন।

হাদীস নং ৮৯১

সাঈদ ইবনে আবু মারয়াম রহ………..সাহল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে বসবাসকারীনী জনৈক মহিলা একটি ছোট নহরের পাশে ক্ষেতে বীটের চাষ করতেন। জুমুআর দিনে সে বীটের মূল তুলে এনে রান্নার জন্য ডেগে চড়াতেন এবং এর উপর এক মুঠো যবের আটা দিয়ে রান্না করতেন। তখন এ বীট মুলই এর গোশত (গোশতের বিকল্প) হয়ে যেত। আমরা জুমুআর সালাত থেকে ফিরে এসে তাঁকে সালাম দিতাম। তিনি তখন খাদ্য আমাদের সামনে পেশ করতেন এবং আমরা তা খেতাম। আমরা সে খাদ্যের আশায় জুমুআ বারে উদগ্রীব থাকতাম।

হাদীস নং ৮৯২

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ………সাহল ইবনে সাদ রা থেকে এ হাদীস বর্ণিত, তিনি আরো বলেছেন, জুমুআর (সালাতের পরই আমরা কায়লূলা (দুপুরের শয়ন ও হালকা নিদ্রা) এবং দুপুরের আহার্য গ্রহণ করতাম।

হাদীস নং ৮৯৩

মুহাম্মদ ইবনে উকবা শায়বানী রহ………হুমাইদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনাস রা. বলেছেন : আমরা জুমুআর দিন সকালে যেতাম তারপর (সালাত শেষে) কায়লূলা করতাম।

হাদীস নং ৮৯৪

সাঈদ ইবনে আবু মারইয়াম রহ………সাহল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে জুমুআর সালাত আদায় করতাম। তারপর হতো কায়লূলা।

হাদীস নং ৮৯৫

আবু ইয়ামান রহ………শুআইব রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যুহরী রহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি সালাত আদায় করতেন অর্থাৎ খাওফের সালাত ? তিনি বললেন, আমাকে সালিম রহ. জানিয়েছেন যে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেছেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে নাজদ এলাকায় যুদ্ধ করেছিলাম। সেখানে আমরা শত্রুর মুখোমুখি কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়ালাম। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। একদল তাঁর সঙ্গে সালাতে দাঁড়ালেন এবং অন্য একটি দল শত্রুর মুখোমুখি অবস্থান করলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে যাঁরা চিলেন তাদের নিয়ে রুকু ও দুটি সিজদা করলেন। এরপর এ দলটি যারা সালাত আদায় করেনি, তাদের স্থানে চলে গেলেন এবং তাঁরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে এগিয়ে এলেন, তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সঙ্গে এক রুকু ও দুটি সিজদা করলেন এবং পরে সালাম ফিরালেন। এরপর তাদের প্রত্যেকে উঠে দাঁড়ালেন এবং নিজে নিজে একটি রুকু ও দুটি সিজদা (সহ সালাতে) শেষ করলেন।

হাদীস নং ৮৯৬

সাঈদ ইবনে ইয়াহইয়া রহ………নাফি রহ. সূত্রে ইবনে উমর রা. থেকে মুজাহিদ রহ.-এর বর্ণনার মতো উল্লেখ করেছেন যে, সৈন্যরা যখন পরস্পর (শত্রুমিত্র) মিলিত হয়ে যায়, তখন দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবে। ইবনে উমর রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আরো বলেছেন যে, যদি সৈন্যদের অবস্থা এর চেয়ে গুরুতর হয়ে যায়, তাহলে দাঁড়ানো অবস্থায় এবং আরোহী অবস্থায় সালাত আদায় করবে।

হাদীস নং ৮৯৭

হাইওয়া ইবনে শুরাইহ রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে দাঁড়ানোর এবং সাহাবীগণ তাঁর পিছনে (ইক্তিদা করে) দাঁড়ালেন। তিনি তাকবীর বললেন, তারাও তাকবীর বললেন, তিনি রুকু করলেন, তারাও তাঁর সঙ্গে রুকু করলেন। এরপর তিনি সিজদা করলেন এবং তারাও তাঁর সঙ্গে সিজদা করলেন। তারপর তিনি দ্বিতীয় রাকাআতের জন্য দাঁড়ালেন, তখন যারা তাঁর সঙ্গে সিজদা করছিলেন তারা উঠে দাঁড়ালেন এবং তাদের ভাইদের পাহারা দিতে লাগলেন। তখন অপর দলটি এসে তাঁর সঙ্গে রুকু করলেন। এভাবে সকলেই সালাত অংশগ্রহণ করলেন। অথচ একদল অপর দলকে পাহারাও দিলেন।

হাদীস নং ৮৯৮

ইয়াহইয়া (ইবনে জাফর) রহ………..জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খন্দক যুদ্ধের দিন উমর রা কুরাইশ গোত্রের কাফিরদের মন্দ বলতে বলতে আসলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! সূর্য প্রায় ডুবে যাচ্ছে, অথচ আসরের সালাত আদায় করতে পারিনি। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আল্লাহর শপথ ! আমিও তা এখনও আদায় করতে পারিনি। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর তিনি মদীনার বুতহান উপত্যকায় নেমে উযূ করলেন এবং সূর্য ডুবে যাওয়ার পর আসরের সালাত আদায় করলেন, এরপর মাগরিবের সালাত আদায় করলেন।

হাদীস নং ৮৯৯

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহযাব যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পথে আমাদেরকে বললেন, বনু কুরাইযা এলাকায় পৌছার আগে কেউ যেন আসরের সালাত আদায় না করে। কিন্তু অনেকের পথিমধ্যেই আসরের সময় হয়ে গেল, তখন তাদের কেউ কেউ বললেন, আমরা সেখানে না পৌছে সালাত আদায় করব না। আবার কেউ কেউ বললেন, আমরা সালাত আদায় করে নেব, আমাদের নিষেধ করার ও উদ্দেশ্য ছিল না (বরং উদ্দেশ্য ছিল তাড়াতাড়ি যাওয়া) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ কথা উল্লেখ করা হলে, তিনি তাদের কারোর সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেননি।

হাদীস নং ৯০০

মুসাদ্দাদ রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদিন) ফজরের সালাত অন্ধকার থাকতে আদায় করলেন। এরপর সাওয়ারীতে আরোহণ করলেন এবং বললেন : আল্লাহ আকবার, খায়বার ধ্বংস হোক ! যখন আমরা কোন সম্প্রদায়ের এলাকায় অবতরণ করি তখন সতর্কীকৃতদের প্রভাত হয় কতই না মন্দ। তখন তারা (ইয়াহুদীরা) বের হয়ে গলির মধ্যে দৌড়াতে লাগল এবং বলতে লাগল, মুহাম্মদ ও তাঁর খামীস এসে গেছে। বর্ণনাকারী বলেন, খামীস হচ্ছে, সৈন্য-সামন্ত। পরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উপর জয়লাভ করেন। তিনি যোদ্ধাদের হত্যা করলেন এবং নারী-শিশুদের বন্দী করলেন। তখন সাফিয়্যা প্রথমত দিহইয়া কালবীর এবং পরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অংশে পড়ল। তারপর তিনি তাকে বিয়ে করেন এবং তাঁর মুক্তি দানকে মহর রূপে গণ্য করেন। আবদুল আযীয রহ. সাবিত রা.-এর কাছে জানতে চাইলেন, তাকে কি মহর দেওয়া হয়েছিল ? তা কি আপনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন ? তিনি বললেন, তাঁর মুক্তিই তাঁর মহর, আর মুচকি হাসলেন।

 দু’ঈদ অধ্যায় (৯০১-৯৩৬)

হাদীস নং ৯০১

আবুল ইয়ামান রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বাজারে বিক্রি হচ্ছিল এমন একটি রেশমী জুব্বা নিয়ে উমর রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি এটি কিনে নিন। ঈদের সময় এবং প্রতিনিধি দলের সংগে সাক্ষাতকালে এটি দিয়ে নিজেকে সজ্জিত করবেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন : এটি তো তার পোষাক, যার (আখিরাতে) কল্যাণের কোন অংশ নেই। এ ঘটনার পর উমর রা. আল্লাহর যতদিন ইচ্ছা ততদিন অতিবাহিত করলেন। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকট একটি রেশমী জুব্বা পাঠালেন, উমর রা. তা গ্রহণ করেন এবং সেটি নিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি তো বলেছিলেন, এটা তার পোষাক যার (আখিরাতে) কল্যাণের কোন অংশ নেই। অথচ আপনি এ জুব্বা আমার নিকট পাঠিয়েছেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন : তুমি এটি বিক্রি করে দাও এবং বিক্রয়লব্ধ অর্থে তোমার প্রয়োজন মিটাও।

হাদীস নং ৯০২

আহমদ ইবনে ঈসা রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে এলেন তখন আমার নিকট দুটি মেয়ে বুআস যুদ্ধ সংক্রান্ত কবিতা আবৃত্তি করছিল। তিনি বিছানায় শুয়ে পড়লেন এবং চেহারা অন্যদিকে ফিরিয়ে রাখলেন। এ সময় আবু বকর রা. এলেন, তিনি আমাকে ধমক দিয়ে বললেন, শয়তানী বাদ্যযন্ত্র (দফ) বাজান হচ্ছে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ! তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, তাদের ছেড়ে দাও। তারপর তিনি যখন অন্যদিকে ফিরলেন তখন আমি তাদের ইঙ্গিত করলাম এবং তারা বের হয়ে গেল। আর ঈদের দিন সুদানীরা বর্শা ও ঢালের দ্বারা খেলা করত। আমি নিজে (একবার) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আরয করেছিলাম অথবা তিনি নিজেই বলেছিলেন, তুমি কি তাদের খেলা দেখতে চাও ? আমি বললাম, হ্যাঁ, তারপর তিনি আমাকে তাঁর পিছনে এমনভাবে দাঁড় করিয়ে দিলেন যে, আমার গাল ছিল তাঁর গালের সাথে লাগান। তিনি তাদের বললেন, তোমরা যা করতে ছিলে তা করতে থাক, হে বনু আরফিদা ! পরিশেষে আমি যখন ক্লান্ত হয়ে পড়লাম, তখন তিনি আমাকে বললেন, তোমার কি দেখা শেষ হয়েছে ? আমি বললাম, হ্যাঁ, তিনি বললেন, তাহলে চলে যাও।

হাদীস নং ৯০৩

হাজ্জাজ (ইবনে মিনহাল) রহ……….বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খুতবা দিতে শুনেছি। তিনি বলেছেন : আমাদের আজকের এ দিনে আমরা যে কাজ প্রথম শুরু করব, তা হল সালাত আদায় করা। এরপর ফিরে আসব এবং কুরবানী করব। তাই যে এরূপ করে সে আমাদের রীতিনীতি সঠিকভাবে পালন করল।

হাদীস নং ৯০৪

উবাইদ ইবনে ইসমাঈল রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একদিন আমার ঘরে) আবু বকর রা. এলেন তখন আমার নিকট আনসার দুটি মেয়ে বুআস যুদ্ধের দিন আনসারীগণ পরস্পর যা বলেছিলন সে সম্পর্কে কবিতা আবৃত্তি করছিল। তিনি বলেন, তারা কোন পেশাগত গায়িকা ছিল না। আবু বকর রা. বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘরে শয়তানী বাদ্যযন্ত্র। আর এটি ছিল ঈদের দিন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : হে আবু বকর ! প্রত্যেক জাতির জন্যই আনন্দ উৎসব রয়েছে আর এ হলো আমাদের আনন্দ।

হাদীস নং ৯০৫

মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রহীম রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন কিছু খেজুর না খেয়ে বের হতেন না। অপর বর্ণনায় আনাস রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি তা বেজোড় সংখ্যক খেতেন।

হাদীস নং ৯০৬

মুসাদ্দাদ রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সালাতের আগে যে যবেহ করবে তাকে আবার যবেহ (কুরবানী) করতে হবে। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, আজকের এদিন গোশত খাওয়ার আকাংখ্যা করা হয়। সে তার প্রতিবেশীদের অবস্থা উল্লেখ করল। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেন তার কথার সত্যতা স্বীকার করলেন। সে বলল, আমার নিকট এখন ছয় মাসের এমন একটি মেষ শাবক আছে, যা আমার কাছে দুটি হৃষ্টপুষ্ট বকরীর চাইতেও বেশী পছন্দনীয়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সেটা কুরবানী করার অনুমতি দিলেন। অবশ্য আমি জানি না, এ অনুমতি তাকে ছাড়া অন্যদের জন্যও কি না ?

হাদীস নং ৯০৭

উসমান রহ……….বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল আযহার দিন সালাতের পর আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দান করেন। খুতবায় তিনি বলেন : যে আমাদের মত সালাত আদায় করল এবং আমাদের মত কুরবানী করল, সে কুরবানীর রীতিনীতি যথাযথ পালন করল। আর যে ব্যক্তি সালাতের আগে কুরবানী করল তা সালাতের আগে হয়ে গেল, কিন্তু এতে তার কুরবানী হবে না। বারা-এর মামা আবু বুরদাহ ইবেন নিয়ার রা. তখন বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ ! আমার জানামতে আজকের দিনটি পানাহারের দিন। তাই আমি পছন্দ করলাম যে, আমার ঘরে সর্বপ্রথম যবেহ করা হোক আমার বকরীই। তাই আমি আমার বকরীটি যবেহ করেছি এবং সালাতে আসার পূর্বে তা দিয়ে নাশতাও করেছি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তোমার বকরীটি গোশতের উদ্দেশ্যে যবেহ করা হয়েছে । তখন তিনি আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমাদের কাছে এমন একটি ছয় মাসের মেষ শাবক আছে যা আমার কাছে দুটি বকরীর চাইতেও পছন্দনীয়। এটি (কুরবানী দিলে) কি আমার জন্য যথেষ্ট হবে ? তিনি বললেন : হ্যাঁ, তবে তুমি ব্যতীত অন্য কারো জন যথেষ্ট হবে না।

হাদীস নং ৯০৮

সাঈদ ইবনে আবু মারয়াম রহ……….আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহে গমন করে সেখানে তিনি প্রথম যে কাজ শুরু করতেন তা হলে সালাত। আর সালাত শেষ করে তিনি লোকদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন এবং তাঁরা তাদের কাতারে বসে থাকতেন। তিনি তাদের নসীহত করতেন, উপদেশ দিতেন এবং নির্দেশ দান করতেন। যদি তিনি কোন সেনাদল পাঠাবার ইচ্ছা করতেন, তবে তাদের আলাদা করে নিতেন। অথবা যদি কোন বিষয়ে নির্দেশ জারী করার ইচ্ছা করতেন, তবে তা জারী করতেন। তারপর তিনি ফিরে যেতেন। আবু সাঈদ রা. বলেন, লোকেরা বরাবর এ নিয়মই অনুরসরণ করে আসছিল। অবশেষে যখন মারওয়ান মদীনার আমীর হলেন, তখন ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিতরের উদ্দেশ্যে আমি তাঁর সঙ্গে বের হলাম। আমরা যখন ঈদগাহে পৌঁছলাম তখন সেখানে একটি মিম্বর দেখতে পেলাম সেটি কাসীর ইবনে সালত রা. তৈরী করেছিলেন। মারওয়ান সালাত আদায়ের আগেই এর উপর আরোহণ করতে উদ্যত হলেন। আমি তাঁর কাপড় টেনে ধরলাম। কিন্তু তিনি কাপড় ছাড়িয়ে খুতবা দিলেন। আমি তাকে বললাম, আল্লাহর কসম ! তোমরা (রাসূলের সুন্নাত) পরিবর্তন করে ফেলেছ । সে বলল, হে আবু সাঈদ ! তোমরা যা জানতে, তা গত হয়ে গিয়েছে। আমি বললাম, আল্লাহর কসম ! আমি যা জানি, তা তার চেয়ে ভাল, যা আমি জানি না। সে তখন বলল, লোকজন সালাতের পর আমাদের জন্য বসে থাকে না, তাই আমি খুতবা সালাতের আগেই দিয়েছি।

হাদীস নং ৯০৯

ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের সালাত আদায় করতেন। আর সালাত শেষে খুতবা দিতেন।

হাদীস নং ৯১০

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন বের হতেন। এরপর খুতবার আগে সালাত শুরু করেন। রাবী বলেন, আমাকে আতা রহ. বলেছেন যে, ইবনে যুবাইর রা. এর বায়আত গ্রহণের প্রথম দিকে ইবনে আব্বাস রা. এ বলে লোক পাঠালেন যে, ঈদুল ফিতরের সালাতে আযান দেওয়া হত না এবং খুতবা দেওয়া হত সালাতের পরে। আতা রহ. ইবনে আব্বাস ও জাবির ইবনে আবদুল্লাহ সূত্রে বর্ণিত তাঁরা বলেন, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার সালাতে আযান দেওয়া হত না।জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে এ-ও বর্ণিত আছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে প্রথমে সালাত আদায় করলেন, এবং পরে লোকদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিলেন। যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা শেষ করলেন, তিনি (মিম্বর থেকে) নেমে মহিলাগণের (কাতারের) কাছে আসলেন এবং তাদের নসীহত করলেন। তখন তিনি বিলাল রা. -এর হাতে ভর করেছিলেন এবং বিলাল রা. তাঁর কাপড় জড়িয়ে ধরলে, মহিলাগণ এতে সাদকার বস্তু দিতে লাগলেন। আমি আতা রহ. কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি এখনো জরুরী মনে করেন যে, ইমাম খুতবা শেষ করে মহিলাগণের নিকট এসে তাদের নসীহত করবেন ? তিনি বললেন, নিশ্চয় তা তাদের জন্য অবশ্যই জরুরী। তাদের কি হয়েছে যে, তাঁরা তা করবে না ?

হাদীস নং ৯১১

আবু আসিম রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর, উমর এবং উসমান রা.-এর সঙ্গে সালাতে হাজির ছিলাম। তাঁরা সবাই খুতবার আগে সালাত আদায় করতেন।

হাদীস নং ৯১২

ইয়াকুব ইবনে ইবরাহীম রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর এবং উমর রা. উভয় ঈদের সালাত খুতবার পূর্বে আদায় করতেন।

হাদীস নং ৯১৩

সুলাইমান ইবনে হারব রহ……..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরে দু’রাকাআত সালাত আদায় করেন। এর আগে ও পরে কোন সালাত আদায় করেননি। তারপর বিলাল রা. কে সঙ্গে নিয়ে মহিলাগণের কাছে এলেন এবং সাদকা প্রদানের জন্য তাদের নির্দেশ দিলেন। তখন তাঁরা দিতে লাগলেন। কেউ দিলেন আংটি, আবার কেউ দিলেন গলার হার।

হাদীস নং ৯১৪

আদম রহ……….বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আজকের এ দিনে আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে সালাত আদায় করা। এরপর আমরা (বাড়ী) ফিরে আসব এবং কুরবানী করব। কাজেই যে ব্যক্তি তা করল, সে আমাদের নিয়ম পালন করল। যে ব্যক্তি সালাতের আগে কুরবানী করল, তা শুধু গোশত বলেই গন্য হবে, যা সে পরিবারবর্গের জন্য আগেই করে ফেলেছে। এতে কুরবানীর কিছুই নেই। তখন আবু বুরদা ইবনে নিয়ার রা. নামক এক আনসারী বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি তো (আগেই) যবেহ করে ফেলেছি। এখন আমার নিকট এমন একটি মেষ শাবক আছে যা এক বছর বয়সের মেষের চাইতে উৎকৃষ্ট। তিনি বললেন, সেটির স্থলে এটাকে যবেহ করে ফেল । তবে তোমার পর অন্য কারো জন্য তা যথেষ্ট হবে না।

হাদীস নং ৯১৫

যাকারিয়া ইবনে ইয়াহইয়া আবু সুকাইন রহ………..সাঈদ ইবনে জুবাইর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনে উমর রা.-এর সঙ্গে ছিলাম যখন বর্শার অগ্রভাগ তাঁর পায়ের তলদেশে বিদ্ধ হয়েছিল। ফলে তাঁর পা রেকাবের সাথে আটকে গিয়েছিল। আমি তখন নেমে সেটি টেনে বের করে ফেললাম। এ ঘটে ছিল মিনায়। এ সংবাদ হাজ্জাজের নিকট পৌঁছলে তিনি তাকে দেখতে আসেন। হাজ্জাজ বলল, যদি আমি জানতে পারতাম কে আপনাকে আঘাত করেছে, (তাকে আমি শাস্তি দিতাম)। তখন ইবনে উমর রা. বললেন, তুমিই আমাকে আঘাত করেছ। সে বলল, তা কিভাবে ? ইবনে উমর রা. বললেন, তুমিই সেদিন (ঈদের দিন) অস্ত্র ধারণ করেছ, যে দিন অস্ত্র ধারণ করা হত না। তুমিই অস্ত্রকে হারাম শরীফে প্রবেশ করিয়েছ, অথচ হারাম শরীফে কখনো অস্ত্র প্রবেশ করা হয় না।

হাদীস নং ৯১৬

আহমদ ইবনে ইয়াকুব রহ………সাঈদ ইবনে আস রা.-এর পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনে উমর রা.-এর নিকট হাজ্জাজ এলো। আমি তখন তাঁর কাছে ছিলাম। হাজ্জাজ জিজ্ঞাসা করলো, তিনি কেমন আছেন ? ইবনে উমর রা. বললেন, ভাল। হাজ্জাজ জিজ্ঞাসা করলো, আপনাকে কে আঘাত করেছে ? তিনি বললেন, আমাকে সে ব্যক্তি আঘাত করেছে, যে সে দিন অস্ত্র ধারণের আদেশ দিয়েছে, যে দিন তা ধারণ করা বৈধ নয়। অর্থাৎ হাজ্জাজ।

হাদীস নং ৯১৭

সুলাইমান ইবনে হাবর রহ…………বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দেন। তিনি বলেন, আজকের দিনে আমাদের প্রথম কাজ হল সালাত আদায় করা। তারপর ফিরে এসে কুরবানী করা। যে ব্যক্তি এরূপ করবে সে আমাদের নিয়ম পালন করল। যে ব্যক্তি সালাতের আগেই যবেহ করবে, তা শুধু গোশতের জন্যই হবে, যা সে পরিবারের জন্য তাড়াতাড়ি করে ফেলেছে। কুরবানীর সাথে এর কোন সম্পর্কে নেই। তখন আমার মামা আবু বুরদা ইবনে নিয়ার রা. দাঁড়িয়ে বললেন ,ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি তো সালাতের আগেই যবেহ করে ফেলেছি। তবে এখন আমার নিকট এমন একটি মেষ শাবক আছে যা ‘মুসিন্ন’ মেষের চাইতেও উত্তম। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তার স্থলে এটিই (কুরবানী) করে নাও। অথবা তিনি বললেন : এটিই যবেহ । তবে তুমি ব্যতীত আর কারো জন্যই মেষ শাবক যথেষ্ট হবে না।

হাদীস নং ৯১৮

মুহাম্মদ ইবনে আরআরা রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের আমল, অন্যান্য দিনের আমলের তুলনায় উত্তম। তাঁরা জিজ্ঞাসা করলেন, জিহাদও কি (উত্তম) নয় ? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : জিহাদও নয়। তবে সে ব্যক্তির কথা স্বতন্ত্র, যে নিজের জান ও মালের ঝুকি নিয়েও জিহাদ করে এবং কিছুই নিয়ে ফিরে আসে না।

হাদীস নং ৯১৯

আবু নুআইম রহ………..মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর সাকাফী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা সকাল বেলা মিনা থেকে যখন আরাফাতের দিকে যাচ্ছিলাম, তখন আনাস ইবনে মালিক রা. এর নিকট তালবিয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কিরূপ করতেন ? তিনি বললেন, তালবিয়া পাঠকারী তালবিয়া পড়ত, তাকে নিষেধ করা হতো না। তাকবীর পাঠকারী তাকবীর পাঠ করত, তাকেও নিষেধ করা হতো না।

হাদীস নং ৯২০

মুহাম্মদ রহ………উম্মে আতিয়্যা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ঈদের দিন আমাদের বের হওয়ার আদেশ দেওয়া হত। এমন কি আমরা কুমারী মেয়েদেরকেও অন্দর মহল থেকে বের করতাম এবং ঋতুমতী মেয়েদেরকেও। তারা পুরুষদের পিছনে থাকতো এবং তাদের তাকবীরের সাথে তাকবীর বলতো এবং তাদের দুআর সাথে দু’আ করত- তারা আশা করত সে দিনের বরকত এবং পবিত্রতা।

হাদীস নং ৯২১

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, ঈদুল ফিতর ও কুরবানীর দিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে বর্শা পুতে দেওয়া হত। তারপর তিনি সালাত আদায় করতেন।

হাদীস নং ৯২২

ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ………ইবনে উমর রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সকাল বেলায় ঈদগাহে যেতেন, তখন তাঁর সামনে বর্শা বহন করা হত। এবং তাঁর সামনে ঈদগাহে তা স্থাপন করা হত এবং একে সামনে রেখে তিনি সালাত আদায় করতেন।

হাদীস নং ৯২৩

আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব রহ………..উম্মে আতিয়্যা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (ঈদের সালাতের উদ্দেশ্যে) যুবতী ও পর্দানশিন মেয়েদের নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের আদেশ করা হত। আইয়্যূব রহ. থেকে হাফসা রা. সূত্রে অনুরূপ বর্ণিত আছে এবং হাফসা রা. থেকে বর্ণিত রেওয়ায়েতে অতিরিক্ত বর্ণনা আছে যে, ঈদগাহে ঋতুমতী মহিলাগণ আলাদা থাকতেন।

হাদীস নং ৯২৪

আমর ইবনে আব্বাস রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ঈদুল ফিতর বা আযহার দিন বের হলাম। তিনি সালাত আদায় করলেন। এরপর খুতবা দিলেন। তারপর মহিলাগণের কাছে গিয়ে তাদের উপদেশ দিলেন, তাদের নসীহত করলেন এবং তাদেরকে সাদকা দানের নির্দেশ দিলেন।

হাদীস নং ৯২৫

আবু নুআইম রহ………..বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল আযহার দিন বাকী (নামক কবরস্থানে) গমন করেন। তারপর তিনি দু’রাকাআত সালাত আদায় করেন। এরপর আমাদের দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন এবং তিনি বলেন, আজকের দিনের প্রথম ইবাদত হল সালাত আদায় করা। এরপর (বাড়ী) ফিরে গিয়ে কুরবানী করা। যে ব্যক্তি এরূপ করবে সে আমাদের নিয়ম অনুযায়ী কাজ করবে। আর যে এর পূর্বেই যবেহ করবে তাহলে তার যবেহ হবে এমন একটি কাজ, যা সে নিজের পরিবারবর্গের জন্যই তাড়াতাড়ি করে ফেলেছে, এর সাথে কুরবানীর কোন সম্পর্ক নেই । তখন এক ব্যক্তি (আবু বুরদা ইবনে নিয়ার রা. দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি (তো সালাতের পূর্বেই) যবেহ করে ফেলেছি। এখন আমার নিকট এমন একটি মেষ শাবক আছে যা পূর্ণবয়স্ক মেষের চাইতে উত্তম। (এটা কুরবানী করা যাবে কি ?) তিনি বললেন, এটাই যবেহ কর। তবে তোমার পর আর কারো জন্য তা যথেষ্ট হবে না।

হাদীস নং ৯২৬

মুসাদ্দাদ রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনি কি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সংগে কখনো ঈদে উপস্থিত হয়েছেন ? তিনি বললেন হ্যাঁ। যদি তাঁর কাছে আমার মর্যাদা না থাকত তাহলে কম বয়সী হওয়ার কারণে আমি ঈদে উপস্থিত হতে পারতাম না। তিনি বের হয়ে কাসীর ইবনে সালতের গৃহের কাছে স্থাপিত নিশানার কাছে এলেন এবং সালাত আদায় করলেন। এরপর খুতবা দিলেন। তারপর তিনি মহিলাগণের নিকট উপস্থিত হলেন। তখন তাঁর সংগে বিলাল রা. ছিলেন। তিনি মহিলাগণের উপদেশ দিলেন, নসীহত করলেন এবং দান সাদকা করার জন্য নির্দেশ দিলেন। আমি তখন মহিলাগণের নিজ নিজ হাত বাড়িয়ে বিলাল রা.-এর কাপড়ে দান সামগ্রী ফেলতে দেখলাম। এরপর তিনি এবং বিলাল রা. নিজ বাড়ীর দিকে চলে গেলেন।

হাদীস নং ৯২৭

ইসহাক ইবনে ইবরাহীম ইবনে নাসর রহ………..জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলেন, পরে খুতবা দিলেন। খুতবা শেষে নেমে মহিলাণের নিকট আসলেন এবং তাদের নসীহত করলেন। তখন তিনি বিলাল রা.-এর হাতের উপর ভর দিয়ে ছিলেন এবং বিলাল রা. তাঁর কাপড় প্রসারিত করে ধরলেন। মহিলাগণ এতে দান সামগ্রী ফেলতে লাগলেন (আমি ইবনে জুরাইজ) আতা রহ.কে জিজ্ঞাসা করলাম, এ কি ঈদুল ফিতরের সাদকা ? তিনি বললেন, না, বরং এ সাধারণ সাদকা যা তাঁরা ঐ সময় দিচ্ছিলেন। কোন মহিলা তাঁর আংটি দান করলে অন্যান্য মহিলাগণও তাদের আংটি দান করতে লাগলেন। আমি আতা রহ. কে (আবার) জিজ্ঞাসা করলাম, মহিলাগণকে উপদেশ দেওয়া কি ইমামের জন্য জরুরী ? তিনি বললেন, অবশ্যই, তাদের উপর তা জরুরী। তাদের (ইমামগণ) কি হয়েছে যে, তাঁরা এরূপ করবেন না ? ইবনে জুরাইজ রহ. বলেছেন, হাসান ইবনে মুসলিম রহ. তাউস রহ. এর মাধ্যমে ইবনে আব্বাস রা. থেকে আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর, উমর ও উসমান রা -এর সংগে ঈদুল ফিতরে আমি উপস্থিত ছিলাম। তাঁরা খুতবার আগে সালাত আদায় করতেন, পরে খুতবা দিতেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন, আমি যেন দেখতে পাচ্ছি তিনি হাতের ইশারায় (লোকদের) বসিয়ে দিচ্ছেন। এরপর তাদের কাতার ফাক করে অগ্রসর হয়ে মহিলাদের কাছে এলেন। বিলাল রা. তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের এ আয়াত পাঠ করলেন : “হে নবী ! যখন ঈমানদার মহিলাগণ আপনার নিকট এ শর্তে বায়আত করতে আসেন………..(সূরা মুমতাহিনা : ১২)। এ আয়াত শেষ করে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা এ বায়আতের উপর আছ ? তাদের মধ্যে একজন মহিলা বলল, হ্যাঁ, সে ছাড়া আর কেউ এর জবাব দিল না। হাসান রহ. জানেন না, সে মহিলা কে ? এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তোমরা সাদকা কর। সে সময় বিলাল রা. তাঁর কাপড় প্রসারিত করে বললেন, আমার মা-বাপ আপনাদের জন্য কুরবান হোক, আসুন , আপনারা দান করুন। তখন মহিলাগণ তাদের ছাট-বড় আংটি গুলো বিলাল রা. -এর কাপড়ের মধ্যে ফেলতে লাগলেন। আবদুর রাজ্জাক রহ. বলেন ‘আল-ফাতখ’ হলো বড় আংটি যা জাহেলী যুগে ব্যবহৃত হত।

হাদীস নং ৯২৮

আবু মামার রহ………..হাফসা বিনতে সীরীন রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা ঈদের দিন আমাদের যুবতীদের বের হতে নিষেধ করতাম। একবার জনৈক মহিলা এলেন এবং বনু খালাফের প্রাসাদে অবস্থান করলেন। আমি তাঁর নিকট গেলে তিনি বললেন, তাঁর ভগ্নিপতি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বারটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, এর মধ্যে ছয়টি যুদ্ধে স্বয়ং তাঁর বোনও স্বামীর সাথে অংশগ্রহণ করেছেন, (মহিলা বলেন) আমার বোন বলেছেন, আমরা রুগ্ণদের সেবা করতাম, আহতদের শুশ্রূষা করতাম। একবার তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! যদি আমাদের কারো ওড়না না থাকে, তখন কি সে বের হবে না ? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এ অবস্থায় তার বান্ধবী যেন তাকে নিজ ওড়না পরিধান করতে দেয় এবং এভাবে মহিলাগণ যেন কল্যাণকর কাজে ও মুমিনদের দু’আয় অংশগ্রহণ করেন। হাফসা রা. বলেন, যখন উম্মে আতিয়্যা রা. এলেন, তখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, আপনি কি এসব ব্যাপারে কিছু শুনেছেন ? তিনি বললেন, হ্যাঁ, হাফসা রা. বলেন, আমার পিতা, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য উৎসর্গিত হোক এবং তিনি যখনই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম উল্লেখ করতেন, তখনই এ কথা বলতেন। সালাতের স্থান থেকে সরে থাকেন। তারা সকলেই যেন কল্যাণকর কাজে ও মুমিনদের দু’আয় অংশগ্রহণ করেন। হাফসা রা. বলেন আমি তাকে বললাম, ঋতুমতী মহিলাগণও ? তিনি বললেন, হ্যাঁ, ঋতুমতী মহিলা কি আরাফাত এবং অন্যান্য স্থানে উপস্থিত হয় না ?

হাদীস নং ৯২৯

মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ……….উম্মে আতিয়্যা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (ঈদের দিন) আমাদেরকে বের হওয়ার জন্য নির্দেশ হয়েছিল। তাই আমরা ঋতুমতী, যুবতী এবং তাঁবুতে অবস্থানকারীনী মহিলাগণকে নিয়ে বের হতাম। ইবনে আওন রহ. এর এক বর্ণনায় রয়েছে, অথবা তাঁবুতে অবস্থানকারীনী যুবতী মহিলাগণকে নিয়ে হতাম। অতঃপর ঋতুমতী মহিলাগণ মুসলমানদের জামাআত এবং তাদের দু’আয় অংশগ্রহণ করতেন। তবে ঈদগাহে পৃথকভাবে অবস্থান করতেন।

হাদীস নং ৯৩০

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহে নাহর করতেন কিংবা যবেহ করতেন।

হাদীস নং ৯৩১

মুসাদ্দাদ রহ……….বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কুরবানীর দিন সালাতের পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে খুতবা দিলেন। খুতবায় তিনি বললেন, যে আমাদের মত সালাত আদায় করবে এবং আমাদের করবানী করবে তার কুরবানী যথার্থ বলে গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি সালাতের পূর্বে কুরবানী করবে তার সে কুরবানী গোশত খাওয়া ছাড়া আর কিছু হবে না। তখন আবু বুরদাহ ইবনে নিয়ার রা. দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আল্লাহর কসম ! আমি তো সালাতে বের হবার পূর্বেই কুরবানী করে ফেলেছি। আমি ভেবেছি যে, আজকের দিনটি তো পানাহারের দিন। তাই আমি তাড়াতাড়ি করে ফেলেছি। আমি নিজে খেয়েছি এবং আমার পরিবারবর্গ ও প্রতিবেশীদের আহার করিয়াছি। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : ওটা গোশত খাওয়ার বকরী ছাড়া আর কিছুই হয়নি। আবু বুরদা রা. বলেন, তবে আমার নিকট এমন একটি মেষ শাবক আছে যা দুটো (গোশত খাওয়ার) বকরীর চেয়ে ভাল। এটা কি আমার পক্ষে কুরবানীর জন্য যথেষ্ট হবে ? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তবে তোমার পরে অন্য কারো জন্য যথেষ্ট হবে না।

হাদীস নং ৯৩২

হামিদ ইবনে উমর রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন সালাত আদায় করেন, তারপর খুতবা দিলেন। এরপর নির্দেশ দিলেন, যে ব্যক্তি সালাতের পূর্বে কুরবানী করেছে সে যেন পুনরায় কুরবানী করে। তখন আনসারগণের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমার প্রতিবেশীরা ছিল উপবাসী অথবা বলেছেন দারিদ্র। তাই আমি সালাতের পূর্বেই যবেহ করে ফেলেছি। তবে আমার নিকট এমন মেষশাবক আছে যা দুটি হৃষ্টপুষ্ট বকরীর চাইতেও আমার নিকট অধিক পছন্দ সই। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সেটা কুরবানী করার অনুমতি প্রদান করেন।

হাদীস নং ৯৩৩

মুসলিম ইবনে ইবরাহীম রহ………জুনদাব ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন সালাত আদায় করেন, এরপর খুতবা দেন। তারপর যবেহ করেন এবং তিনি বলেন : সালাতের পূর্বে যে ব্যক্তি যবেহ করবে তাকে তার স্থলে আর একটি যবেহ করতে হবে এবং যে যবেহ করেনি, আল্লাহর নামে তার যবেহ করা উচিৎ ।

হাদীস নং ৯৩৪

মুহাম্মদ রহ……….জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন (বাড়ী ফেরার সময়) ভিন্ন পথে আসতেন। ইউনুস ইবনে মুহাম্মদ রহ. আবু হুরায়রা রা. থেকে হাদীস বর্ণনায় আবু তুমাইল ইয়াহইয়া রহ. এর অনুসরণ করেছেন। তবে জাবির রা. থেকে হাদীসটি অধিকতর সহীহ।

হাদীস নং ৯৩৫

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, আবু বকর রা. তাঁর নিকট এলেন। এ সময় মিনার দিবসগুলোর এক দিবসে তাঁর নিককট দুটি মেয়ে দফ বাজাচ্ছিল, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চাদর আবৃত অবস্থায় ছিলেন। তখন আবু বকর রা. মেয়ে দুটিকে ধমক দিলেন। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখমণ্ডল থেকে কাপড় সরিয়ে নিয়ে বললেন, হে আবু বকর ! ওদের বাঁধা দিও না। কেননা, এসব ঈদের দিন। আর সে দিনগুলো ছিল মিনার দিন। আয়িশা রা. আরো বলেছেন, হাবশীরা যখন মসজিদে (এর প্রাঙ্গণে) খেলাধুলা করছিল, তখন আমি তাদের দেখছিলাম এবং আমি দেখেছি, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আড়াল করে রেখেছেন। উমর রা. হাবশীদের ধমক দিলেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ওদের ধমক দিও না। হে বণূ আরফিদা ! তোমরা যা করছিলে তা নিশ্চিন্তে কর।

হাদীস নং ৯৩৬

আবুল ওয়ালীদ রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল রা.-কে সঙ্গে নিয়ে ঈদুল ফিতরের দিন বের হয়ে দু’রাকাআত সালাত আদায় করেন। তিনি এর আগে ও পরে কোন সালাত আদায় করেননি।

বিতর অধ্যায় (৯৩৭-৯৫০)

হাদীস নং ৯৩৭

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট রাতের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : রাতের সালাত দু’দু ((রাকাআত) করে। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি ফজর হওয়ার আশংকা করে, সে যেন এক রাকাআত মিলিয়ে সালাত আদায় করে নেয়। আর সে যে সালাত আদায় করল, তা তার জন্য বিতর হয়ে যাবে। নাফি রহ. থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বিতর সালাতের এক ও দু’রাকাআতের মাঝে সালাম ফিরাতেন। এরপর কাউকে কোন প্রয়োজনীয় কাজের নির্দেশ দিতেন।

হাদীস নং ৯৩৮

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ…..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি তাঁর খালা উম্মুল মুমিনীন মায়মূনা রা. এর ঘরে রাত কাটান। (তিনি বলেন) আমি বালিশের প্রস্থের দিক দিয়ে শয়ন করলাম এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাঁর পরিবার সেটির দৈর্ঘ্যের দিক দিয়ে শয়ন করলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের অর্ধেক বা তার কাছাকাছি সময় পর্যন্ত ঘুমালেন। এরপর তিনি জাগ্রত হলেন এবং চেহারা থেকে ঘুমের আবেশ দূর করেন। পরে তিনি সূরা আল-ইমরানের (শেষ) দশ আয়াত তিলাওয়াত করলেন। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ঝুলন্ত মশকের নিকট গেলেন এবং উত্তমরূপে উযূ করলেন। এরপর তিনি সালাতে দাঁড়ালেন। আমিও তাঁর মতই করলাম এবং তাঁর পাশেই দাঁড়ালাম। তিনি তাঁর ডান হাত আমার মাথার উপর রাখলেন এবং আমার কান ধরলেন। এরপর তিনি দু’রাকাআত সালাত আদায় করলেন। এরপর দু’রাকাআত, এরপর দু’রাকাআত, এরপর দু’রাকাআত, এরপর তিনি বিতর আদায় করলেন। তারপর তিনি শুয়ে পড়লেন। অবশেষে মুআযযিন তাঁর কাছে এলো। তখন তিনি দাঁড়িয়ে দু’আকাআত সালাত আদায় করলেন। তারপর বের হয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন।

হাদীস নং ৯৩৯

ইয়াহইয়া ইবনে সুলাইমান রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : রাতের সালাত দু’ দু’ রাকাআত করে। তারপর যখন তুমি সালাত শেষ করতে চাইবে, তখন এক রাকাআত আদায় করে নিবে। তা তোমার পূর্ববর্তী সালাতকে বিতর করে দিবে। কাসিম রহ. বলেন, আমরা সাবালক হয়ে লোকদের তিন রাকাআত বিতর আদায় করতে দেখেছি। উভয় নিয়মেরই অবকাশ রয়েছে। আমি আশা করি এর কোনটিই দোষনীয় নয়।

হাদীস নং ৯৪০

আবুল ইয়ামান রহ…….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগার রাকাআত সালাত আদায় করতেন। এ ছিল তাঁর রাত্রিকালীন সালাত। একে তিনি এমন দীর্ঘ সিজদা করতেন যে, তাঁর মাথা উঠাবার আগে তোমাদের কেউ পঞ্চাশ আয়াত পড়তে পারে এবং ফজরের সালাতের আগে তিনি আরো দু’রাকাআত পড়তেন। তারপর তিনি ডান কাতে শুয়ে বিশ্রাম করতেন, সালাতের জন্য মুআযযিনের আসা পর্যন্ত।

হাদীস নং ৯৪১

আবু নুমান রহ………আনাস ইবনে সীরীন রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনে উমর রা.কে বললাম, ফজরের পূর্বের দু’রাকাআতে আমি কিরাআত দীর্ঘ করব কি না, এ সম্পর্কে আপনার অভিমত কি ? তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে দু’ দু’ রাকাআত করে সালাত আদায় করতেন এবং এক রাকাআতে মিলিয়ে বিতর পড়তেন। এরপর ফজরের সালাতের পূর্বে তিনি দু’রাকাআত এমন সময় আদায় করতেন যেন ইকামতের শব্দ তাঁর কানে আসছে। রাবী হাম্মাদ রহ. বলেন, অর্থাৎ দ্রুততার সাথে। (সংক্ষিপ্ত কিরাআতে)

হাদীস নং ৯৪২

উমর ইবনে হাফস রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের সকল অংশে (অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন রাতে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে) বিতর আদায় করতেন আর (জীবনের) শেষ দিকে সাহরীর সময় তিনি বিতর আদায় করতেন।

হাদীস নং ৯৪৩

মুসাদ্দাদ রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রাতে) সালাত আদায় করতেন, তখন আমি তাঁর বিছানায় আড়াআড়িভাবে ঘুমিয়ে থাকতাম। এরপর তিনি যখন বিতর পড়ার ইচ্ছা করতেন, তখন আমাকে জাগিয়ে দিতে এবং আমিও বিতর আদায় করে নিতাম।

হাদীস নং ৯৪৪

মুসাদ্দাদ রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : বিতরকে তোমাদের রাতের শেষ সালাত করবে।

হাদীস নং ৯৪৫

ইসমাঈল রহ………..সাঈদ ইবনে ইয়াসার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর সঙ্গে মক্কার পথে সফর করছিলাম। সাঈদ রহ. বলেন, আমি যখন ফজর হওয়ার আশংকা করলাম, তখন সাওয়ারী থেকে নেমে পড়লাম এবং এবং বিতরের সালাত আদায় করলাম। এরপর তাঁর সঙ্গে মিলিত হলাম। তখন আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কোথায় ছিলে ? আমি বললাম, ভোর হওয়ার আশংকা করে নেমে বিতর আদায় করেছি। তখন আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মধ্যে কি তোমার জন্য আদর্শ নেই ? আমি বললাম, হ্যাঁ, আল্লাহর কসম ! তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের পিঠে (আরোহী অবস্থায়) বিতরের সালাত আদায় করতেন।

হাদীস নং ৯৪৬

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে ফরয সালাত ব্যতীত তাঁর সাওয়ারীতে থেকেই ইশারায় রাতের সালাত আদায় করতেন। সাওয়ারী যে দিকেই ফিরুক না কেন, আর তিনি বাহনের উপরেই বিতর আদায় করতেন।

হাদীস নং ৯৪৭

মুসাদ্দাদ রহ……..মুহাম্মদ ইবনে সীরীন রহ. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আনাস ইবনে মালিক রা.-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, ফজরের সালাতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুনুত পড়েছেন ? তিনি বললেন, হ্যাঁ । তাকে জিজ্ঞাসা করা হল তিনি কি রুকুর আগে কুনুত পড়েছেন ? তিনি বললেন, কিছুদিন রুকুর পরে পড়েছেন।

হাদীস নং ৯৪৮

মুসাদ্দাদ রহ………আসিম রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনে মালিক রা. কে কুনুত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, কুনুত অবশ্যই পড়া হত। আমি জিজ্ঞাসা করলাম। রুকুর আগে না পরে ? তিনি বললেন, রুকুর আগে। আসিম রহ. বললেন, অমুক ব্যক্তি আমাকে আপনার বরাত দিয়ে বলেছেন যে, আপনি বলেছেন, রুকুর পরে। তখন আনাস রা. বলেন, সে ভুল বলেছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকুর পরে এক মাস ব্যাপি কুনুত পাঠ করেছেন। আমার জান মতে, তিনি সত্তর জন সাহাবীর একটি দল, যাদের কুবরা (অভিজ্ঞ ক্বারীগণ) বলা হত মুশরিকদের কোন এক কওমের উদ্দেশ্যে পাঠান। এরা সেই কওম নয়, যাদের বিরুদ্ধে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদ দু’আ করেছিলেন। বরং তিনি এক মাস ব্যাপি কুনুতে সে সব কাফিরদের জন্য বদ দু’আ করেছিলেন যাদের সাথে তাঁর চুক্তি ছিল এবং তারা চুক্তি ভঙ্গ করে ক্বারীগণকে হত্যা করেছিল।

হাদীস নং ৯৪৯

আহমদ ইবনে ইউনুস রহ……..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক মাস ব্যাপি রি’ল ও যাকওয়ান গোত্রের বিরুদ্ধে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুনুতে দু’আ পাঠ করেছিলেন।

হাদীস নং ৯৫০

মুসাদ্দাদ রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মাগরিব ও ফজরের সালাতে কুনুত পাঠ করা হত।

 

সূর্যগ্রহণ অধ্যায় (৯৮৩-১০০৫)

হাদীস নং ৯৮৩

আমর ইবনে আওন রহ……….আবু বাকরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে ছিলাম, এ সময় সূর্যগ্রহণ শুরু হয়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন উঠে দাঁড়ালেন এবং নিজের চাদর টানতে টানতে মসজিদে প্রবেশ করলেন এবং আমরাও প্রবেশ করলাম। তিনি আমাদেরকে নিয়ে সূর্য প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত দু’রাকাআত সালাত আদায় করলেন। এরপর তিনি বললেন : কারো মৃত্যুর কারণে কখনো সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। তোমরা যখন সূর্যগ্রহণ দেখবে তখন এ অবস্থা কেটে যাওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করবে এবং দু’আ করতে থাকবে।

হাদীস নং ৯৮৪

শিহাব ইবনে আব্বাদ রহ……….আবু মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কোন লোকের মৃত্যুর কারণে কখনো সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। তবে তা আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। তাই তোমরা যখন সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হতে দেখবে, তখন দাঁড়িয়ে যাবে এবং সালাত আদায় করবে।

হাদীস নং ৯৮৫

আসবাগ রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, কারো মৃত্যুর কারণে কখনো সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। তবে তা আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। তাই তোমরা যখন সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হতে দেখবে, তখনই সালাত আদায় করবে।

হাদীস নং ৯৮৬

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……..মুগীরা ইবনে শুবা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় যে দিন (তাঁর পুত্র) ইবরাহীম রা. ইন্তিকাল করেন, সেদিন সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। লোকেরা তখন বলতে লাগল, ইবরাহীম রা. এর মৃত্যুর কারণেই সূর্যগ্রহণ হয়েছে। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : কারো মৃত্যুর অথবা জন্মের কারণে কখনো সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। তবে তা আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। তাই তোমরা যখন তা দেখবে, তখনই সালাত আদায় করবে এবং আল্লাহর নিকট দু’আ করবে।

হাদীস নং ৯৮৭

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় একবার সূর্যগ্রহণ হল। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করেন। তিনি দীর্ঘ সময় কিয়াম করেন, এরপর দীর্ঘক্ষণ রুকু করেন। এরপর পুনরায় (সালাতে) তিনি উঠি দাঁড়ান এবং দীর্ঘ কিয়াম করেন। অবশ্য তা প্রথম কিয়াম চাইতে অল্পস্থায়ী ছিল। আবার তিনি রুকু করেন এবং এ রুকুও দীর্ঘ করেন। তবে তা প্রথম রুকুর চাইতে অল্পস্থায়ী ছিল। এরপর তিনি সিজদা করেন এবং সিজদাও দীর্ঘক্ষণ করেন। এরপর তিনি প্রথম রাকাআতে যা করেছিলেন তার অনুরূপ দ্বিতীয় রাকাআতে করেন এবং যখন সূর্য প্রকাশিত হয় তখন সালাত শেষ করেন। এরপর তিনি লোকজনের উদ্দেশ্যে খুতবা দান করেন। প্রথমে তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করেন। এরপর তিনি বলেন : সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয় না। কাজেই যখন তোমরা তা দেখবে তখন তোমরা আল্লাহর নিকট দু’আ করবে। তাঁর মহত্ব ঘোষণা করবে এবং সালাত আদায় করবে ও সাদকা প্রদান করবে। এরপর তিনি আরো বললেন : হে উম্মতে মুহাম্মদী ! আল্লাহর কসম, আল্লাহর কোন বান্দা যিনা করলে কিংবা কোন নারী যিনা করলে, আল্লাহর চাইতে বেশী অপছন্দকারী কেউ নেই। হে উম্মতে মুহাম্মাদী ! আল্লাহর কসম, আমি যা জানি তা যাদ তোমরা জানতে তাহলে তোমরা অবশ্যই কম হাসতে এবং বেশী কাঁদতে।

হাদীস নং ৯৮৮

ইসহাক রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সময় যখন সূর্যগ্রহণ হল, তখন (সালাতে সমবেত হওয়ার জন্য) ‘আস-সালাতু জামিয়াতুন’ বলে আহবান জানানো হল।

হাদীস নং ৯৮৯

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর ও আহমাদ ইবনে সালিহ রহ…….. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিনী আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবৎকালে একবার সূর্যগ্রহণ হলো। তিনি মসজিদে গমন করেন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর লোকেরা তাঁর পিছনে সারিবদ্ধ হলো। তিনি তাকবীর বললেন। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ কিরাআত পাঠ করলেন। এরপর তাবীর বললেন এবং দীর্ঘক্ষণ রুকুতে থাকলেন। এরপর “সামিআল্লাহু লিমান হামীদাহ” বলে দাঁড়ালেন এবং সিজদায় না গিয়েই আবার দীর্ঘক্ষণ কিরাআত পাঠ করলেন। তবে তা প্রথম কিরাআতের চাইতে কম। তারপর তিনি ‘আল্লাহু আকবার’ বললেন এবং দীর্ঘ রুকু করলেন, তবে তা প্রথম রুকুর চাইতে অল্পস্থায়ী। তারপর তিনি বললেন : “সামিআল্লাহু লিমান হামীদাহ, রাব্বানা ওয়ালাকাল হামদ”। এরপর সিজদায় গেলেন। তারপর তিনি পরবর্তী রাকাআতেও অনুরূপ করলেন এবং এভাবে চার সিজদার সাথে চার রাকাআত পূর্ণ করলেন। তাঁর সালাত শেষ করার পূর্বেই সূর্যগ্রহণ মুক্ত হয়ে গেল। এরপর তিনি দাঁড়িয়ে আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করলেন এবং বললেন : সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন মাত্র। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে গ্রহণ হয় না। কাজেই যখনই তোমরা গ্রহণ হতে দেখবে, তখনই ভীত হয়ে সালাতের দিকে গমন করবে। রাবী বর্ণনা করেন, কাসীর ইবনে আব্বাস রহ. বলতেন, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে আয়িশা রা. থেকে উরওয়া রহ. বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তাই আমি উরওয়াকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনার ভাই (আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর) তো মদীনায় যেদিন সূর্যগ্রহণ হয়েছিল, সেদিন ফজরের সালাতের ন্যায় দু’রাকাআত সালাত আদায়ের অতিরিক্ত কিছু করেননি। তিনি বললেন, তা ঠিক, তবে তিনি নিয়ম অনুসারে ভুল করেছেন।

হাদীস নং ৯৯০

সাঈদ ইবনে উফাইর রহ……… নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনী আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যগ্রহণের সময় সালাত আদায় করেন। তিনি দাঁড়িয়ে তাকবীর বললেন। এরপর দীর্ঘ কিরাআত পাঠ করেন। তারপর তিনি দীর্ঘ রুকু করলেন। এরপর মাথা তুললেন, আর “সামিআল্লাহু লিমান হামীদাহ” বলে আগের মতই দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘ কিরাআত পাফ করলেন। তবে তা প্রথম কিরাআতের চাইতে কম। তারপর তিনি আবার রুকু করলেন, তবে তা প্রথম রুকুর চাইতে অল্পস্থায়ী। তারপর তিনি দীর্ঘ সিজদায় গেলেন। তারপর তিনি পরবর্তী রাকাআতেও অনুরূপ করলেন এবং সালাম ফিরালেন। তখন সূর্যগ্রহণ মুক্ত হয়ে গেল। এরপর তিনি লোকদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিলেন। খুতবায় তিনি সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ সম্পর্কে বললেন : সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন মাত্র। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে গ্রহণ হয় না। কাজেই যখনই তোমরা গ্রহণ হতে দেখবে, তখনই ভীত হয়ে সালাতের দিকে গমন করবে।

হাদীস নং ৯৯১

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………..আবু বাকরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন মাত্র। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে গ্রহণ হয় না। আল্লাহ তা’আলা সূর্যগ্রহণ দিয়ে তাঁর বান্দাদের সতর্ক করেন।

ইমাম বুখারী রহ. বলেন, আবদুল্লাহ ওয়ারিস, শুআইব, খালিদ ইবনে আবদুল্লাহ, হাম্মাদ ইবনে সালাম রহ .ইউনুস রহ. থেকে ‘এ দিয়ে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে সতর্ক করেন’ বাক্যটি বর্ণনা করেননি; আর মূসা রহ. মুবারক রহ. স্থলে হাসান রহ. থেকে ইউনুস রহ. এর অনুসরণ করেছেন। তিনি বলেন, আমাকে আবু বাকরা রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ এ দিয়ে তাঁর বান্দাদেরকে সতর্ক করেন। আশআস রহ. হাসান রহ. থেকে ইউনুস রহ.-এর অনুসরণ করেছেন।

হাদীস নং ৯৯২

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ……… নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিনী আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, এক ইয়াহুদী মহিলা তাঁর নিকট কিছু জিজ্ঞাসা করতে এলো। সে আয়িশা রা.-কে বলল, আল্লাহ তা’আলা আপনাকে কবর আযাব থেকে রক্ষা করুন। এরপর আয়িশা রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করেন, কবরে কি মানুষকে আযাব দেওয়া হবে ? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। পরে কোন এক সকালে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওয়ারীতে আরোহণ করেন। তখন সূর্যগ্রহণ আরম্ভ হয়। তিনি সূর্যোদয় ও দুপুরের মাঝামাঝি সময় ফিরে আসেন এবং কামরাগুলোর মাঝখান দিয়ে অতিক্রম করেন। এরপর তিনি সালাতে দাঁড়ালেন এবং লোকেরা তাঁর পিছনে দাঁড়াল। তিনি দীর্ঘ সময় কিয়াম করেন, এরপর দীর্ঘক্ষণ রুকু করেন। এরপর পুনরায় মাথা তুলে দীর্ঘ কিয়াম করেন। অবশ্য তা প্রথম কিয়াম চাইতে অল্পস্থায়ী ছিল। আবার তিনি দীর্ঘ রুকু করেন। তবে তা প্রথম রুকুর চাইতে অল্পস্থায়ী ছিল। এরপর তিনি মাথা তুললেন এবং সিজদায় গেলেন। এরপর তিনি দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘ কিয়াম করলেন। তবে তা প্রথম কিয়ামের চাইতে অল্পস্থায়ী ছিল। তারপর দীর্ঘ রুকু করলেন। এ রুকু প্রথম রাকাআতের রুকুর চাইতে অল্পস্থায়ী ছিল। তারপর তিনি মাথা উঠালেন এবং দীর্ঘ কিয়াম করলেন এবং এ কিয়াম আগের কিয়ামের চাইতে অল্পস্থায়ী ছিল। তারপর আবার রুকু করলেন এবং তা প্রথম রাকআতের রুকুর চাইতে অল্পস্থায়ী ছিল। পরে মাথা তুললেন এবং সিজদায় গেলেন। এরপর সালাত শেষ করলেন। আল্লাহর যা ইচ্ছা তিনি তা বললেন এবং কবরের আযাব থেকে পানাহ চাওয়ার জন্য উপস্থিত লোকদের নির্দেশ দেন।

হাদীস নং ৯৯৩

আবু নুআইম রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় যখন সূর্যগ্রহণ হয় তখন ‘আস-সালাতু জামিয়াতুন’ বলে ঘোষণা দেয়া হয়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন এক রাকাআতে দু’বার রুকু করেন, এরপর দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় রাকাআতেও দু’বার রুকু করেন এরপর বসেন আর এতক্ষণে সূর্যগ্রহণ মুক্ত হয়ে যায়। বর্ণনাকারী বলেন, আয়িশা রা. বলেছেন, এ সালাত ব্যতীত এত দীর্ঘ সিজদা আমি কখনও করিনি।

হাদীস নং ৯৯৪

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলাম রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সময় সূর্যগ্রহণ হল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন সালাত আদায় করেন এবং তিনি সূরা বাকারা পাঠ করতে যত সময় লাগে সে পরিমাণ দীর্ঘ কিয়াম করেন। এরপর দীর্ঘক্ষণ রুকু করেন। এরপর পুনরায় মাথা তুলে দীর্ঘ কিয়াম করেন। অবশ্য তা প্রথম কিয়াম চাইতে অল্পস্থায়ী ছিল। আবার তিনি দীর্ঘ রুকু করেন। তবে তা প্রথম রুকুর চাইতে অল্পস্থায়ী ছিল। এরপর সিজদায় গেলেন। এরপর তিনি দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘ কিয়াম করলেন। তবে তা প্রথম কিয়ামের চাইতে অল্পস্থায়ী ছিল। তারপর দীর্ঘ রুকু করলেন। এ রুকু প্রথম রাকাআতের রুকুর চাইতে অল্পস্থায়ী ছিল। তারপর তিনি মাথা উঠালেন এবং দীর্ঘ কিয়াম করলেন এবং এ কিয়াম আগের কিয়ামের চাইতে অল্পস্থায়ী ছিল। তারপর আবার রুকু করলেন এবং তা প্রথম রাকআতের রুকুর চাইতে অল্পস্থায়ী ছিল। পরে মাথা তুললেন এবং সিজদায় গেলেন। এরপর সালাত শেষ করলেন। তখন সূর্যগ্রহণ মুক্ত হয়ে গেল। এরপর তিনি বললেন : নিঃসন্দেহে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন মাত্র। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে গ্রহণ হয় না। কাজেই যখনই তোমরা আল্লাহকে স্মরণ করবে।। লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমরা দেখলাম, আপনি নিজের জায়গা থেকে কি যেন ধরছেন, আবার দেখলাম, আপনি যেন পিছনে সরে এলেন। তিনি বললেন : আমি তো জান্নাত দেখেছিলাম এবং এক গুচ্ছ আঙ্গুরের প্রতি হাত বাড়িয়েছিলাম। আমি তা পেয়ে গেলে, দুনিয়া কায়েম থাকা পর্যন্ত অবশ্য তোমরা তা খেতে পারতে। এরপর আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়, আমি আজকের মত ভয়াবহ দৃশ্য কখনো দেখিনি। আর আমি দেখলাম, জাহান্নামের অধিকাংশ বাসিন্দা স্ত্রীলোক। লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! কী কারণে ? তিনি বললেন : তাদের কুফরীর কারণে। জিজ্ঞাসা করা হল, তারা কি আল্লাহর সাথে কুফরী করে ? তিনি জবাব দিলেন, তারা স্বামীর অবাধ্য থাকে এবং ইহসান অস্বীকার করে। তুমি যদি তাদের কারো প্রতি সারা জীবন সদাচরণ কর, এরপর সে তোমার থেকে (যদি) সামান্য ত্রুটি পায়, তাহলে বলে ফেলে, তোমার থেকে কখনো ভাল ব্যবহার পেলাম না।

হাদীস নং ৯৯৫

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আসমা বিনতে আবু বকর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সূর্যগ্রহণের সময় আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিনী আয়িশা রা. -এর নিকট গেলাম। তখন লোকজন দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিল। তখন আয়িশা রা. ও সালাতে দাঁড়িয়েছিলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, লোকদের কী হয়েছে ? তখন তিনি হাত দিয়ে আসমানের দিকে ইশারা করলেন এবং ‘সুবহানাল্লাহ’ বললেন। আমি বললাম, এ কি কোন নিদর্শন ? তখন তিনি ইশারায় বললেন, হ্যাঁ। আসমা রা. বলেন, আমিও দাঁড়িয়ে গেলাম। এমন কি (দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ানোর ফলে) আমি প্রায় বেহুঁশ হয়ে পড়লাম এবং মাথায় পানি ঢালতে লাগলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত শেষ করলেন, তখন আল্লাহর হামদ ও সানা বর্ণনা করলেন। তারপর তিনি বললেন : আমি এ স্থান থেকে দেখতে পেলাম যা এর আগে দেখিনি, এমন কি জান্নাত এবং জাহান্নাম। আর আমার নিকট ওহী পাঠান হয়েছে যে, নিশ্চয়ই তোমাদেরকে কবরের মধ্যে দাজ্জালের ফিতনার ন্যায় অথবা বলেছেন তার কাছাকাছি ফিতনায় লিপ্ত করা হবে। বর্ণনাকারী বলেন, (মিসলা ও কারীবান) দুটির মধ্যে কোনটি আসমারা. বলেছিলেন, তা আমার মনে নেই। তোমাদের এক একজনকে উপস্থিত করা হবে এবং তাকে প্রশ্ন করা হবে, এ ব্যক্তি সম্পর্কে কি জান ? তখন মু’মিন (ঈমানদার) অথবা মু’কীন (বিশ্বাসী) বলবেন- বর্ণনাকারী বলেন যে, আসমা রা. ‘মু’মিন’ শব্দ বলেছিলেন, না ‘মু’কীন’ তা আমার স্মরণ নেই, তিনি হলেন, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুস্পষ্ট দলীল ও হিদায়েত নিয়ে আমাদের কাছে এসেছিলেন এবং আমরা এতে সাড়া দিয়ে ঈমান এনেছি ও তাঁর অনুসরণ করেছি। এরপর তাকে বলা হবে, তুমি নেককার বান্দা হিসেবে ঘুমিয়ে থাক। আমরা অবশ্যই জানতাম যে, নিশ্চিতই তুমি দৃঢ়বিশ্বাস স্থাপনকারী ছিলে। আর মুনাফিক কিংবা সন্দেহ কারী বর্ণনাকারী বলেন, আসমা রা. ‘মুনাফিক’ না ‘সন্দেহ কারী’ বলেছিলেন তা আমার মনে নেই, সে শুধু বলবে, আমি কিছুই জানি না। আমি মানুষকে কিছু বলতে শুনেছি এবং আমিও তাই বলেছি।

হাদীস নং ৯৯৬

রাবী ইবনে ইয়াহইয়া রহ………আসমা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যগ্রহণের সময় গোলাম আযাদ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

হাদীস নং ৯৯৭

ইসমাঈল রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, এক ইয়াহুদী মহিলা তাঁর নিকট কিছু জিজ্ঞাসা করতে এল। মহিলাটি বলল, আল্লাহ তা’আলা আপনাকে কবর আযাব থেকে রক্ষা করুন। এরপর আয়িশা রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করেন, কবরে কি মানুষকে আযাব দেওয়া হবে ? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আমি আল্লাহর কাছে পানাহ চাই কবরের আযাব থেকে। পরে কোন এক সকালে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওয়ারীতে আরোহণ করেন। তখন সূর্যগ্রহণ আরম্ভ হয়। তিনি সূর্যোদয় ও দুপুরের মাঝামাঝি সময় ফিরে আসেন এবং কামরাগুলোর মাঝখান দিয়ে অতিক্রম করেন। এরপর তিনি সালাতে দাঁড়ালেন এবং লোকেরা তাঁর পিছনে দাঁড়াল। তিনি দীর্ঘ সময় কিয়াম করেন, এরপর দীর্ঘক্ষণ রুকু করেন। এরপর পুনরায় মাথা তুলে দীর্ঘ কিয়াম করেন। অবশ্য তা প্রথম কিয়াম চাইতে অল্পস্থায়ী ছিল। আবার তিনি দীর্ঘ রুকু করেন। তবে তা প্রথম রুকুর চাইতে অল্পস্থায়ী ছিল। এরপর তিনি মাথা তুললেন এবং সিজদায় গেলেন। এরপর তিনি দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘ কিয়াম করলেন। তবে তা প্রথম কিয়ামের চাইতে অল্পস্থায়ী ছিল। তারপর দীর্ঘ রুকু করলেন। এ রুকু প্রথম রাকাআতের রুকুর চাইতে অল্পস্থায়ী ছিল। তারপর তিনি মাথা উঠালেন এবং দীর্ঘ কিয়াম করলেন এবং এ কিয়াম আগের কিয়ামের চাইতে অল্পস্থায়ী ছিল। তারপর আবার রুকু করলেন এবং তা প্রথম রাকআতের রুকুর চাইতে অল্পস্থায়ী ছিল। পরে মাথা তুললেন এবং সিজদায় গেলেন। এরপর সালাত শেষ করলেন। আল্লাহর যা ইচ্ছা তিনি তা বললেন। পরিশেষে তিনি সবাইকে কবরের আযাব থেকে পানাহ চাওয়ার লোকদের নির্দেশ দেন।

হাদীস নং ৯৯৮

মুসাদ্দাদ রহ………আবু মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয় না। সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন মাত্র। কাজেই যখনই তোমরা গ্রহণ হতে দেখবে, তখন সালাত আদায় করবে।

হাদীস নং ৯৯৯

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় একবার সূর্যগ্রহণ হল। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন এবং লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করেন। তিনি কিরাত দীর্ঘ করলেন, এরপর দীর্ঘক্ষণ রুকু করেন। এরপর পুনরায় তিনি মাথা তুললেন এবং দীর্ঘ কিরাত পড়লেন। অবশ্য তা প্রথম কিরাতের চাইতে অল্পস্থায়ী ছিল। আবার তিনি রুকু করেন এবং এ রুকুও দীর্ঘ করেন। তবে তা প্রথম রুকুর চাইতে অল্পস্থায়ী ছিল। এরপর তিনি মাথা তুললেন এবং দুটি সিজদা করলেন। এরপর তিনি দাঁড়ালেন প্রথম রাকাআতে যা করেছিলেন তার অনুরূপ দ্বিতীয় রাকাআতে করলেন। তারপর তিনি দাঁড়িয়ে বললেন : কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয় না। আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন ; যা আল্লাহ তাঁর বান্দাদের দেখিয়ে থাকেন। কাজেই যখন তোমরা তা দেখবে তখন ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় সালাতের দিকে গমন করবে।

হাদীস নং ১০০০

মুহাম্মদ ইবনে আলা রহ……….আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার সূর্যগ্রহণ হল, তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় উঠলেন এবং কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার আশংকা করছিলেন। এরপর তিনি মসজিদে আসেন এবং এর আগে আমি তাকে যেমন করতে দেখেছি, তার চাইতে দীর্ঘ সময় ধরে কিয়াম, রুকু ও সিজদা সহকারে সালাত আদায় করলেন। আর তিনি বললেন : এগুলো হল নিদর্শন যা আল্লাহ পাঠিয়ে থাকেন, তা কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে হয় না। বরং আল্লাহ তা’আলা এর দ্বারা তাঁর বান্দাদের সতর্ক করেন। কাজেই যখন তোমরা এর কিছু দেখতে পাবে, তখন ভীত বিহবল অবস্থায় আল্লাহর যিকির, দু’আ এবং ইস্তিগফারের দিকে অগ্রসর হবে।

হাদীস নং ১০০১

আবুল ওয়ালীদ রহ…….মুগীরা ইবনে শুবা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -(এর পুত্র)) ইবারাহীম রা. যে দিন ইন্তিকাল করেন, সে দিন সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। লোকেরা বলল, ইবরাহীম রা.-এর মৃত্যুর কারণেই সূর্যগ্রহণ হয়েছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন : নিশ্চয়ই সূর্য ও চন্দ আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে এ দুটোর গ্রহণণ হয় না। কাজেই যখন তোমরা এদের গ্রহণ হতে দেখবে, তখন তাদের গ্রহণ মুক্ত হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর নিকট দু’আ করবে এবং সালাত আদায় করতে থাকবে।

হাদীস নং ১০০২

মাহমুদ রহ……….আবু বাকরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় সূর্যগ্রহণ হল। তখন তিনি দু’রাকাআত সালাত আদায় করলেন।

হাদীস নং ১০০৩

আবু মামার রহ……….আবু বাকরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় সূর্যগ্রহণ হল। তিনি বের হয়ে তাঁর চাদর টেনে টেনে মসজিদে পৌঁছলেন এবং লোকজনও তাঁর কাছে একত্রিত হল। তারপর তিনি তাদের নিয়ে দু’রাকাআত সালাত আদায় করেন। এরপর সূর্যগ্রহণ মুক্ত হলে তিনি বললেন : ও চন্দ আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে এ দুটোর গ্রহণ হয় না। কাজেই যখন তোমরা এদের গ্রহণ হতে দেখবে, তখন তাদের গ্রহণ মুক্ত হওয়া পর্যন্ত এবং সালাত আদায় করবে এবং আল্লাহর নিকট দু’আ করতে থাকবে। এ কথা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কারণেই বলেছেন যে, সেদিন তাঁর পুত্র ইবরাহীম রা.-এর ওফাত হয়েছিল এবং লোকেরা সে ব্যাপারে বলাবলি করছিল।

হাদীস নং ১০০৪

মাহমুদ ইবনে গাইলান রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যগ্রহণের সময় লোকদের নিয়ে দু’রাকাআতে চার রুকু সহ সালাত আদায় করেন। প্রথমটি (রাকাআত দ্বিতীয়টির চাইতে) দীর্ঘস্থায়ী ছিল।

হাদীস নং ১০০৫

মুহাম্মদ ইবনে মিনরান রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যগ্রহণের সালাতে তাঁর কিরাআত সশব্দে পাঠ করেন। কিরাআত সমাপ্ত করার পর তাকবীর বলে রুকু করেন। যখন রুকু থেকে তুললেন, তখন বললেন : ‘সামিআল্লাহু লিমান হামীদাহ, রাব্বানা ওয়ালাকাল হামদ’ । তারপর এ গ্রহণ-এর সালতেই তিনি আবার কিরাআত পাঠ করেন এবং চার রুকু ও চার সিজদাসহ দু’রাকাআত সালাত আদায় করেন। বর্ণনাকারী আওযায়ী রহ. ও অন্যান্য রাবীগণ বলেন, যহরী রহ. কে উরওয়া রহ. এর মাধ্যমে আয়িশা রা. থেকে বর্ণনা করতে শুনেছি যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে সূর্যগ্রহণ হলে তিনি একজনকে ‘আস-সালাতু জামিয়াতুন’ বলে ঘোষণা দেওয়ার জন্য প্রেরণ করেন। তারপর তিনি অগ্রসর হন এবং চার রুকু ও চার সিজদাসহ দু’রাকাআত সালাত আদায় করেন। ওয়ালীদ রহ. বলেন, আমাকে আবদুর রহমান ইবনে নামির আরো বলেন যে, তিনি ইবনে শিহাব রহ. থেকে অনুরূপ শুনেছেন যুহরী রহ. বলেন, যে, আমি উরওয়াকে রহ. বললাম, তোমার ভাই আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রহ. এরূপ করেন নি। তিনি যখন মদীনায় গ্রহণ -এর সালাত আদায় করেন, তখন ফজরের সালাতের ন্যায় দু’রাকআত সালাত আদায় করেন। উরওয়া রহ. বললেন, হ্যাঁ, তিনি নিয়ম অনুসরণে ভুল করেছেন। সুলাইমান ইবনে কাসীর রহ .যুহরী রহ. থেকে সশব্দে কিরাআতের ব্যাপারে ইবনে কাসীর রহ.-এর অনুসরণ করেছেন।

কুরআন তিলাওয়াতের সিজ্‌দা অধ্যায় (১০০৬-১০১৮)

হাদীস নং ১০০৬

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……….আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় সূরা আন-নাজম তিলাওয়াত করেন। এরপর তিনি সিজদা করেন এবং একজন বৃদ্ধ লোক ছাড়া তাঁর সঙ্গে সবাই সিজদা করেন। বৃদ্ধ লোকটি এক মুঠো কংকর বা মাটি হাতে নিয়ে তার কপাল পর্যন্ত উঠিয়ে বলল, আমার জন্য এ যথেষ্ট। আমি পরবর্তী যমানায় দেখেছি যে, সে কাফির অবস্থায় নিহত হয়েছে।

হাদীস নং ১০০৭

মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ…………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুক্রবার ফজরের সালাতে الم تنزيل السجدة هل এবং أتى على الإنسان সূরা দুটি তিলাওয়াত করতেন।

হাদীস নং ১০০৮

সুলাইমান ইবনে হারব ও আবু নুমান রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সূরা সোয়াদ এর সিজদা অত্যাবশ্যক সিজদা সমূহের মধ্যে গণ্য নয়। তবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি তা তিলাওয়াতের পর সিজদা করতে দেখেছি।

হাদীস নং ১০০৯

হাফস ইবনে উমর রহ…………আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত যে, একবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা আন নাজম তিলাওয়াত করেন, এরপর সিজদা করেন। তখন উপস্থিত লোকদের এমন কেউ বাকী ছিল না, যে তাঁর সঙ্গে সিজদা করেনি। কিন্তু এক ব্যক্তি এক মুঠো কংকর বা মাটি হাতে নিয়ে কপাল পর্যন্ত তুলে বলল, এটাই আমার জন্য যথেষ্ট। (আব্দুল্লাহ রা. বলেন) পরে আমি এ ব্যক্তিকে দেখেছি যে, সে কাফির অবস্থায় নিহত হয়েছে।

হাদীস নং ১০১০

মুসাদ্দাদ রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা ওয়ান-নাজম তিলাওয়াতের পর সিজদা করেন এবং তাঁর সঙ্গে সমস্ত মুসলিম, মুশরিক, জ্বিন ও ইনসান সবাই সিজদা করেছিল।

হাদীস নং ১০১১

সুলাইমান ইবনে দাউদ আবু রাবী রহ…………যায়েদ ইবনে সাবিত রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা ওয়ান-নাজম তিলাওয়াত করেন অথচ এতে সিজদা করেননি।

হাদীস নং ১০১২

আদম ইবনে আবু ইয়াস রহ……..যায়েদ ইবনে সাবিত রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে সূরা ওয়ান-নাজম তিলাওয়াত করলাম। কিন্তু তিন এতে সিজদা করেননি।

হাদীস নং ১০১৩

মুসলিম ও মুআয ইবনে ফাযালা রহ………..আবু সালামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আবু হুরায়রা রা. -কে দেখলাম, তিনি ইযাস সামাউন শাক্কাত সূরা তিলাওয়াত করলেন এবং সিজদা করলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আবু হুরায়রা ! আমি কি আপনাকে সিজদা করতে দেখিনি ? তিনি বললেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সিজদা করতে না দেখলে সিজদা করতাম না।

হাদীস নং ১০১৪

মুসাদ্দাদ রহ……..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আমাদের সামনে এমন এক সূরা তিলাওয়াত করলেন, যাতে সিজদার আয়াত রয়েছে। তাই তিনি সিজদা করলেন এবং আমরাও সিজদা করলাম। ফলে অবস্থা এমন দাঁড়াল যে, আমাদের কেউ কেউ কপাল রাখার জায়গা পাচ্ছিলেন না।

হাদীস নং ১০১৫

বিশর ইবনে আদম রহ……..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করতেন এবং আমরা তাঁর নিকট থাকতাম. তখন তিনি সিজদা করতেন এবং আমরাও তাঁর সঙ্গে সিজদা করতাম। এতে ভীড় হত যে, আমাদের মধ্যে কেউ কেউ সিজদা করার জন্য কপাল রাখার জায়গা পেত না।

হাদীস নং ১০১৬

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ……….উমর ইবনে খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি এক জুমুআর দিন মিম্বরে দাঁড়িয়ে সূরা নাহল তিলাওয়াত করেন। এতে যখন সিজদার আয়াত এল, তখন তিনি মিম্বর থেকে নেমে সিজদা করলেন এবং লোকেরাও সিজদা করল। এভাবে যখন পরবর্তী জুমুআ এল, তখন তিনি সে সূরা পাঠ করেন। এতে যখন সিজদার আয়াত এল, তখন তিনি বললেন, হে লোক সকল ! আমরা যখন সিজাদর আয়াত তিলাওয়াত করি, তখন যে সিজদা করবে সে ঠিকই করবে, যে সিজদা করবে না তার কোন গুনাই নেই। তার বর্ণনায়। (বর্ণনাকারী বলেন) আর উমর রা. সিজদা করেন নি। নাফি রহ. ইবনে উমর রা. থেকে আরো বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা সিজদা ফরয করেন নি, তবে আমরা ইচ্ছা করলে সিজদা করতে পারি।

হাদীস নং ১০১৭

মুসাদ্দাদ রহ……….আবু রাফি রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একবার আবু হুরায়রা রা. -এর সাথে ইশার সালাত আদায় করেছিলাম। তিনি সালাতে ‘ইযাস সামাউন শাক্কাত’ সূরা তিলাওয়াত করে সিজদা করলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ কী ? তিনি বললেন, এ সূরা তিলাওয়াতের সময় আবুল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পিছনে আমি এ সিজদা করেছিলাম। তাই তাঁর সঙ্গে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত এভাবে আমি সিজদা করতে থাকব।

হাদীস নং ১০১৮

সাদাকা রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এমন সূরা তিলাওয়াত করতেন যাতে সিজদা রয়েছে, তখন তিনি সিজদা করতেন এবং আমরাও তাঁর সঙ্গে সিজদা করতাম। এমন কি (ভিড়ের কারণে) আমাদের মধ্যে কেউ কেউ কপাল রাখার জায়গা পেত না।

 সালাতে কসর করা অধ্যায় (১০১৯-১০৫৩)

হাদীস নং ১০১৯

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……….ইবনে আব্বাস রা, থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার সফরে উনিশ দিন পর্যন্ত অবস্থান করেন এবং সালাতে কসর করেন। কাজেই (কোথাও) আমরা উনিশ দিনের সফরে থাকলে কসর করি এবং এর চাইতে বেশী হলে পুরোপুরি সালাত আদায় করি।

হাদীস নং ১০২০

আবু মামার রহ…………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সংগে মক্কা থেকে মদীনায় গমন করি, আমরা মদীনা ফিরে আসা পর্যন্ত তিনি দু’রাকাআত, দুরাকাআত সালাত আদায় করেছেন। (রাবী বলেন) আমি (আনাস রা.-কে বললাম, আপনারা মক্কায় কত দিন ছিলেন তিনি বললেন, আমরা সেখানে দশ দিন ছিলাম।

হাদীস নং ১০২১

মুসাদ্দাদ রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর এবং উমর রা. -এর সংগে মিনায় দু’রাকাআত সালাত আদায় করেছি। উসমান রা.-এর সঙ্গেও তাঁর খিলাফতের প্রথম দিকে দু’রাকাআত আদায় করেছি। তারপর তিনি পূর্ণ সালাত আদায় করেতে লাগলেন।

হাদীস নং ১০২২

আবুল ওয়ালীদ রহ………হারিসা ইবনে ওয়াহব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিরাপদ অবস্থায় আমাদেরকে নিয়ে মিনায় দু’রাকাআত সালাত আদায় করেন।

হাদীস নং ১০২৩

কুতাইবা রহ……..ইবরাহীম রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবদুর রহমান ইবনে ইয়াযীদ রহ.-কে বলতে শুনেছি, উসমান ইবনে আফফান রহ. আমাদেরকে নিয়ে মিনায় চার রাকাআত সালাত আদায় করেছেন। তারপর এ সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. -কে বলা হল, তিনি প্রথমে ‘ইন্না লিল্লাহ’ পড়লেন। এরপর বললেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে মিনায় দু’রাকাআত পড়েছি, হযরত আবু বকর রা. -এর সংগে মিনায় দু’রাকাআত পড়েছি এবং উমর ইবনে খাত্তাব রা.-এর সংগে মিনায় দু’রাকাআত পড়েছি। কতই না ভাল হত যদি চার রাকআতের পরিবর্তে দু’রাকাআত মাকবুল সালাত হত।

হাদীস নং ১০২৪

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ…….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীগণ (যিল হজ্জের) ৪র্থ তারিখ সকালে (মক্কায়) আগমন করেন এবং তাঁরা হজ্জের জন্য তালবীয়া পাঠ করতে থাকেন। তারপর তিনি তাদের হজ্জকে উমরায় রূপান্তরিত করার নির্দেশ দিলেন। তবে যাদের সঙ্গে কুরবানীর জানোয়ার ছিল তাঁরা এ নির্দেশের অন্তর্ভূক্ত নন। হাদীস বর্ণনায় আতা রহ. আবুল আলিয়াহ রহ.-এর অনুসরণ করেছেন।

হাদীস নং ১০২৫

ইসহাক ইবনে ইবরাহীম রহ………….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কোন মহিলাই যেন মাহরাম পুরুষকে সঙ্গে নিয়ে তিন দিনের সফর না করে।

হাদীস নং ১০২৬

মুসাদ্দাদ রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কোন মহিলার সাথে কোন মাহরাম পুরুষ না থাকলে, সে যেন তিন দিনের সফর না করে। আহমাদ রহ……ইবনে উমর রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনায় উবাইদুল্লাহ রহ.-এর অনুসরণ করেছেন।

হাদীস নং ১০২৭

আদম রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে মহিলা আল্লাহ এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, তার পক্ষে কোন মাহরাম পুরুষকে সাথে না নিয়ে এক দিন ও এক রাত্রির পথ সফর করা জায়েয নয়। ইয়াহইয়া ইবনে আবু কাসীর সুহাইল ও মালিক রহ…….হাদীস বর্ণনায় ইবনে আবু যিব রহ.-এর অনুসরণ করেছেন।

হাদীস নং ১০২৮

আবু নুআইম রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে মদীনায় যুহরের সালাত চার রাকাআত আদায় করেছি এবং যুল-হুলাইফায় আসরের সালাত দু’রাকাআত আদায় করেছি।

হাদীস নং ১০২৯

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রথম অবস্থায় সালাত দু’রাকাআত করে ফরয করা হয় তারপর সফরে সালাত সে ভাবেই স্থায়ী থাকে এবং মুকীম অবস্থায় সালাত পূর্ণ (চার রাকআত) করা হয়েছে। যুহরী রহ. বলেন, আমি উরওয়া রহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, (মিনায়) আয়িশা রা. কোন সালাত পূর্ণ আদায় করতেন ? তিনি বললেন, উসমান রা. যে ব্যাখ্যা গ্রহণ করেছেন, আয়িশা রা. তা গ্রহণ করেছেন।

হাদীস নং ১০৩০

আবুল ইয়ামান রহ……..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখেছি, সফরে যখনই তাঁর ব্যস্ততার কারণ ঘটেছে, তখন তিনি মাগরিবের সালাত বিলম্বিত করেছেন, এমন কি মাগরিব ও ইশার সালাত একত্রে আদায় করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. সফরের ব্যস্ততার সময় অনুরূপ করতেন। অপর এক সূত্রে সালিম রহ. বলেন, ইবনে উমর রা. মুযদালিফায় মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করতেন। সালিম রহ. আরও বলেন, ইবনে উমর রা. তাঁর স্ত্রী সাফিয়্যা বিনতে আবু উবাইদ -এর দুঃসংবাদ পেয়ে মদীনা প্রত্যাবর্তনকালে মাগরিবের সালাত বিলম্বিত করেন। আমি তাকে বললাম, সালাতের সময় হয়ে গেছে। তিনি বললেন, চলতে থাক। আমি আবার বললাম , সালাত ? তিনি বললেন, চলতে থাক। এমন কি (এ ভাবে) দু’ বা তিন মাইল অগ্রসর হলেন। এরপর নেমে সালাত আদায় করলেন। পরে বললেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সফরের ব্যস্ততার সময় এরূপভাবে সালাত আদায় করতে দেখেছি। আবদুল্লাহ রা. আরো বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি, সফরে যখনই তাঁর ব্যস্ততার কারণ ঘটেছে, তখন তিনি মাগরিবের সালাত (দেরি করে) আদায় করেছেন এবং তা তিন রাকাআতই আদায় করেছেন। মাগরিবের সালাম ফিরিয়ে কিছু বিলম্ব করেই ইশার ইকামত দেওয়া হত এবং দু’রাকাআত আদায় করে সালাম ফিরাতেন। কিন্তু ইশার পরে গভীর রাত না হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করতেন না।

হাদীস নং ১০৩১

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আমির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখেছি, তাঁর সাওয়ারী যে দিকেই ফিরেছে, তিনি সে দিকেই সালাত আদায় করেছেন।

হাদীস নং ১০৩২

আবু নুআইম রহ………..জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওয়ার থাকাবস্থায় কিবলা ছাড়া অন্য দিকে মুখ করে নফল সালাত আদায় করেছেন।

হাদীস নং ১০৩৩

আবদুল আলা ইবনে হাম্মাদ রহ…………নাফি রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনে উমর রা. তাঁর সাওয়ারীর উপর (নফল) সালাত আদায় করতেন এবং এর উপর বিতরও আদায় করতেন। তিনি বর্ণনা করেছেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করতেন।

হাদীস নং ১০৩৪

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………আবদুল্লাহ ইবনে দীনার রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. সফরে সাওয়ারী যে দিকেই ফিরেছে সে দিকেই মুখ ফিরে ইশারায় সালাত আদায় করতেন এবং আবদুল্লাহ রা. বর্ণনা করেছেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করতেন।

হাদীস নং ১০৩৫

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………আমির ইবনে রাবীআ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখেছি, তিনি সাওয়ারীর উপর উপবিষ্ট অবস্থায় মাথা দিয়ে ইশারা করে সে দিকেই সালাত আদায় করতেন যে দিকে সাওয়ারী ফিরত। কিন্তু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরয সালাতে এরূপ করতেন না। লাইস রহ………সালিম রহ. থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ রা. সফরকালে রাতের বেলায় সাওয়ারীর উপর থাকা অবস্থায় সালাত আদায় করতেন, কোন দিকে তাঁর মুখ রয়েছে সে দিকে লক্ষ্য করতেন না এবং ইবনে উমর রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওয়ারীর উপর নফল সালাত আদায় করেছেন, সাওয়ারী যে দিকে মুখ ফিরিয়েছে সে দিকেই এবং তার উপর বিতরও আদায় করেছেন। কিন্তু সাওয়ারীর উপর ফরয সালাত আদায় করতেন না।

হাদীস নং ১০৩৬

মুআয ইবনে ফাযালা রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওয়ারীর উপর থাকা অবস্থায় পূর্ব দিকে ফিরেও সালাত আদায় করেছেন। কিন্তু যখন তিনি ফরয সালাত আদায় করার ইচ্ছা করতেন, তখন তিনি সাওয়ারী থেকে নেমে যেতেন এবং কিবলামুখী হতেন।

হাদীস নং ১০৩৭

আহমদ ইবনে সাঈদ রহ………আনাস ইবনে সীরীন রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনাস ইবনে মালিক রা. যখন শাম (সিরিয়া) থেকে ফিরে আসছিলেন, তখন আমরা তাঁর সাক্ষাৎ পেলাম। তখন আমি তাকে দেখলাম গাধার পিঠে (আরোহী অবস্থায়) সামনের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করেছেন। অর্থাৎ কিবলার বাম দিকে মুখ করে। তখন তাকে আমি প্রশ্ন করলাম, আপনাকে তো দেখলাম কিবলা ছাড়া অন্য দিকে মুখ করে সালাত আদায় করেছেন ? তিনি বললেন, যদি আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এরূপ করতে না দেখতাম, তাবে আমিও তা করতাম না।

হাদীস নং ১০৩৮

ইয়াহইয়া ইবনে সুলাইমান রহ………হাফস ইবনে আসিম রা. থেকে বর্ণিত যে, ইবনে উমর রা. একবার সফর করেন এবং বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহচর্যে থেকেছি, সফরে তাকে নফল সালাত আদায় করতে দেখিনি এবং আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন : “নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ”। (সূরা আহযাব : ২১১)

হাদীস নং ১০৫৩

আবদুল্লাহ ইবেন ইউসুফ রহ………উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে সালাত আদায় করতেন। বসেই তিনি কিরাআত পাঠ করতেন। যখন তাঁর কিরাআতের প্রায় ত্রিশ বা চল্লিশ আয়াত বাকী থাকত, তখন তিনি দাঁড়িয়ে তা তিলাওয়াত করতেন, তারপর রুকু করতেন, পরে সিজদা করতেন। দ্বিতীয় রাকআতেও অনুরূপ করতেন। সালাত শেষ করে তিনি লক্ষ্য করতেন, আমি জাগ্রত থাকলে আমার সাথে বাক্যলাপ করতেন আর ঘুমিয়ে থাকলে তিনিও শুয়ে পড়তেন।

তাহাজ্জুদ অধ্যায় (১০৫৪-১১৬৪)

হাদীস নং ১০৫৪

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তাহাজ্জুদের উদ্দেশ্যে যখন দাঁড়াতেন, তখন দু’আ পড়তেন “ইয়া আল্লাহ ! আপনারই জন্য সমস্ত প্রশংসা, আপনি আসমান যমীন ও এ দুয়ের মাঝে বিদ্যমান সব কিছুর নিয়ামক এবং আপনারই জন্য সমস্ত প্রশংসা। আপনি আসমান যমীন ও এ দুয়ের মাঝে বিদ্যমান সব কিছুর মালিক এবং আপনারই জন্য সমস্ত প্রশংসা। আপনি আসমান যমীন ও এ দুয়ের মাঝে বিদ্যমান সব কিছুর নূর। আপনারই জন্য সমস্ত প্রশংসা। আপনিই চির সত্য। আপনার ওয়াদা চির সত্য ; আপনার সাক্ষাত সত্য ; আপনার বাণী সত্য ; জান্নাত সত্য ; জাহান্নাম সত্য ; নবীগণ সত্য ; মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্য, কিয়ামত সত্য। ইয়া আল্লাহ ! আপনার কাছেই আমি আত্মসমর্পন করলা ; আপনার প্রতি ঈমান আনলাম ; আপননার উপরেই তাওয়াক্কুল করলা, আপনার দিকেই রুজু করলা ; আপনার (সন্তুষ্টির জন্যই) শত্রুতায় লিপ্ত হলাম, আপনাকেই বিচারক মেনে নিলাম। তাই আপনি আমার পূর্বাপর ও প্রকাশ্য গোপন সব অপরাধ ক্ষমা করুন। আপনিই অগ্র পশ্চাতের মালিক। আপনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, অথবা (অপর বর্ণনায়) আপনি ব্যতীত আর কোন মা’বুদ নেই। সুফিয়ান রহ. বলেছেন, (অপর সূত্রে) আবদুল করীম আবু উমাইয়্যা রহ. তাঁর বর্ণনায় “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি” (অংশটুকু) অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন। সুফিয়ান রহ………ইবনে আব্বাস রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ১০৫৫

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ও মাহমুদ রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জীবিতকালে কোন ব্যক্তি স্বপ্ন দেখলে তা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে বর্ণনা করত। এতে আমার মনে আকাঙ্খা জাগল যে, আমি কোন স্বপ্ন দেখলে তা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বর্ণনা করব। তখন আমি যুবক ছিলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সময়ে আমি মসজিদে ঘুমাতাম। আমি স্বপ্নে দেখলাম, যেন দুজন ফেরেশতা আমাকে ধরে জাহান্নামের দিকে নিয়ে চলেছেন। তা যেন কুপের পাড় বাঁধানোর ন্যায় পাড় বাঁধানো। তাঁতে দুটি খুটি রয়েছে এবং এর মধ্যে রয়েছে এমন কতক লোক, যাদের আমি চিনতে পারলাম। তখন আমি বলতে লাগলাম, আমি জাহান্নাম থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাই। তিনি বলেন, তখন অন্য একজন ফেরেশতা আমাদের সংগে মিলিত হলেন। তিনি আমাকে বললেন, ভয় পেয়ো না। আমি এ স্বপ্ন ((আমার বোন উম্মুল মু’মিনীন) হাফসা রা. -এর কাছে বর্ণনা করলাম। এরপর হাফসা রা. তা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বর্ণনা করলেন। তখন তিনি বললেন : আব্দুল্লাহ কতই ভাল লোক ! যদি রাত জেগে সে সালাত (তাহাজ্জুদ) আদায় করত ! এরপর থেকে আবদুল্লাহ রা. খুব অল্প সময়ই ঘুমাতেন।

হাদীস নং ১০৫৬

আবুল ইয়ামান রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাহাজ্জুদের) এগার রাকাআত সালাত আদায় করতেন এবং তা ছিল তাঁর (স্বাভাবিক) সালাত। সে সালাতে তিনি এক একটি সিজদা এত পরিমাণ (দীর্ঘয়িত) করতেন যে, তোমাদের কেউ (সিজদা থেকে) তাঁর মাথা তোলার আগে পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত করতে পারত। আর ফজরের (ফরয) সালাতের আগে তিনি দু’রাকাআত সালাত আদায় করতেন। তারপর তিনি ডান কাতে শুইতেন যতক্ষণ না সালাতের জন্য তাঁর কাছে মুআযযিন আসত।

হাদীস নং ১০৫৭

আবু নুআইম রহ……..জুনদাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একবার) অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে এক রাত বা দু’রাত তিনি (তাহাজ্জুদ সালাতের উদ্দেশ্যে) উঠেননি।

হাদীস নং ১০৫৮

মুহাম্মদ ইবনে কাসীর রহ……….জুনদাব ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার সমারিকভাবে জিবরীল আলাইহিস সালাম নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে হাজিরা থেকে বিরত থাকেন। এতে জনৈকা কুরাইশ নারী বলল, তার শয়তানটি তাঁর কাছে আসতে দেরি করছে। তখন নাযিল হল : “শপথ পূর্বাহ্নের ও রজনীর ! যখন তা হয় নিঝুম। আপনার প্রতি পালক আপনাকে পরিত্যাগ করেননি এবং আপনার প্রতি বিরূপও হননি”।(সূরা দুহা)

হাদীস নং ১০৫৯

ইবনে মুকাতিল রহ………উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একরাতে ঘুম থেকে জেগে উঠে বললেন : সুবহানাল্লাহ ! আজ রাতে কত না ফিতনা নাযিল করা হল ! আজ রাতে কত না (রহমতের) ভান্ডারই নাযিল করা হল ! কে জাগিয়ে দিবে হুজরাগুলোর বাসিন্দাদের ? ওহে ! শোন, দুনিয়ার অনেক বস্ত্র পরিহিত আখিরাতে বিবস্ত্রা হয়ে যাবে।

হাদীস নং ১০৬০

আবুল ইয়ামান রহ………..আলী ইবনে আবু তালিব রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাতে তাঁর কন্যা ফাতিমা রা.-এর কাছে এসে বললেন : তোমরা কি সালাত আদায় করছ না ? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমাদের আত্মাগুলো তো আল্লাহ পাকের হাতে রয়েছে। তিনি যখন আমাদের জাগাতে মরযী করবেন, জাগিয়ে দিবেন। আমরা যখন একথা বললাম, তখন তিনি চলে গেলেন। আমার কথার কোন প্রতিউত্তর করলেন না। পরে আমি শুনতে পেলাম যে, তিনি ফিরে যেতে যেতে আপন উরুতে করাঘাত করছিলেন এবং কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করছিলেন -“মানুষ অধিকাংশ ব্যাপারেই বিতর্ক প্রিয়”।

হাদীস নং ১০৬১

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে আমল করা পছন্দ করতেন, সে আমল কোন কোন সময় এ আশংকায় ছেড়েও দিতেন যে, লোকেরা সে আমল করতে থাকবে, ফলে তাদের উপর তা ফরয হয়ে যাবে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো চাশতের সালাত আদায় করেন নি। আমি সে সালাত আদায় করি।

হাদীস নং ১০৬২

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একরাতে মসজিদে সালাত আদায় করছিলেন, কিছু লোক আরো বেড়ে গেল। এরপর তৃতীয় কিংবা চতুর্থ রাতে লোকজন সমবেত হলেন, কিন্তু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন না। সকাল হলে তিনি বললেন : তোমাদের কার্যকলাপ আমি লক্ষ্য করেছি। তোমাদের কাছে বেরিয়ে আসার ব্যাপারে শুধু এ আশংকাই আমাকে বাঁধা দিয়েছে যে, তোমাদের উপর তা ফরয হয়ে যাবে। আর ঘটনাটি ছিল রমযান মাসের (তারাবীহর সালাতের)।

হাদীস নং ১০৬৩

আবু নুআইম রহ………মুগীরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রি জাগরণ করতেন অথবা রাবী বলেছেন, সালাত আদায় করতেন, এমন কি তাঁর পদযুগল অথবা তাঁর দু’পায়ের গোছা ফুলে যেত। তখন এ ব্যাপারে তাকে বলা হল, এত কষ্ট কেন করছেন ? তিনি বলতেন, তাই বলে আমি কি একজন শুকরগুজারী বান্দা হব না ?

হাদীস নং ১০৬৪

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন : আল্লাহ পাকের নিকট সর্বাধিক প্রিয় সালাত হল দাউদ আ.-এ সালাত। আর আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় সিয়াম হল দাউদ আ. -এর সিয়াম। তিনি (দাউদ আ. অর্ধরাত পর্যন্ত ঘুমাতেন, এক তৃতীয়াংশ তাহাজ্জুদ পড়তেন এবং রাতের এক ষষ্ঠাংশ ঘুমাতেন । তিনি একদিন সিয়াম পালন করতেন, একদিন করতেন না।

হাদীস নং ১০৬৫

আবদান রহ………মাসরূক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়িশা রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কোন আমলটি সর্বাধিক প্রিয় ছিল ? তিনি বললেন : নিয়মিত আমল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি কখন তাহাজ্জুদের জন্য উঠতেন ? তিনি বললেন, যখন মোরগের ডাক শুনতে পেতেন।

হাদীস নং ১০৬৬

মুহাম্মদ ইবনে সালাম রহ……….আশআস রা. তাঁর বর্ণনায় বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মোরগের ডাক শুনে উঠতেন এর সালাত আদায় করতেন।

হাদীস নং ১০৬৭

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ…………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনি আমার কাছে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায়ই সাহরীর সময় হত। তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে এ কথা বলেছেন।

হাদীস নং ১০৬৮

ইয়াকুব ইবনে ইবরাহীম রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং যায়েদ ইবনে সাবিত রা. সাহরী খেলেন। যখন তারা দুজন সাহরী সমাপ্ত করলেন,তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং সালাত আদায় করলেন। (কাতাদা রা. বলেন) আমরা আনাস ইবনে মালিক রা. -কে জিজ্ঞাসা করলাম, তাদের সাহরী সমাপ্ত করা ও (ফজরের) সালাত শুরু করার মধ্যে কি পরিমাণ সময় ছিল ? তিনি বললেন, কেউ পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত করতে পারে এ পরিমাণ সময়।

হাদীস নং ১০৬৯

সুলাইমান ইবনে হারব রহ………আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাতে আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে সালাত আদায় করলাম। তিনি এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন যে, আমি একটি মন্দ কাজের ইচ্ছা করে ফেলেছিলাম। (আবু ওয়াইল রহ. বলেন) আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি ইচ্ছা করেছিলেন ? তিনি বললেন, ইচ্ছা করেছিলাম, বসে পড়ি এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ইক্তিদা ছেড়ে দেই।

হাদীস নং ১০৭০

হাফস ইবনে উমর রহ………হুযায়ফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের বেলা যখন তাহাজ্জুদ সালাতের জন্য উঠতেন তখন মিসওয়াক দ্বারা তাঁর মুখ (দাঁত) পরিষ্কার করে নিতেন।

হাদীস নং ১০৭১

আবুল ইয়ামান রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, একজন জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! রাতের সালাতের ((আদায়ের) পদ্ধতি কি ? তিনি বললেন : দু’রাকাআত করে। আর ফজর হয়ে যাওয়ার আশংকা করলে এক রাকাআত মিলিয়ে বিতর আদায় কর নিবে।

হাদীস নং ১০৭২

মুসাদ্দাদ রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত ছিল তের রাকাআত অর্থাৎ রাতে। (তাহাজ্জুদ ও বিতরসহ)।

হাদীস নং ১০৭৩

ইসহাক রহ……….মাসরূক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়িশা রা.-কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাতের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, ফজরের দু’রাকাআত (সুন্নাত) ব্যতিরেকে সাত বা নয় কিংবা এগার রাকাআত।

হাদীস নং ১০৭৪

উবায়দুল্লাহ ইবনে মূসা রহ…………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের বেলা তের রাকাআত সালাত আদায় করতেন, বিতর এবং ফজরের দু’রাকাআত (সুন্নাত) ও এর অন্তর্ভূক্ত।

হাদীস নং ১০৭৫

আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কোন মাসে সিয়াম পালন করতেন না। এমন কি আমরা ধারণা করতাম যে, সে মাসে তিনি সিয়াম পালন করবেন না। আবার কোন কোন মাসে সিয়াম পালন করতে থাকতেন, এমন কি আমাদের ধারণা হত যে, সে মাসে তিনি সিয়াম ছাড়বেন না। তাকে তুমি সালাত রত অবস্থায় দেখতে চাইলে তাই দেখতে পেতে এবং ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে চাইলে তাও দেখতে পেতে। সুলাইমান ও আবু খালিদ আহমার রহ. হুমাইদ রহ. থেকে হাদীস বর্ণনায় মুহাম্মদ ইবনে জাফর রহ.-এর অনুসরণ করেছেন।

হাদীস নং ১০৭৬

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার গ্রীবাদেশে তিনটি গিঠ দেয়। প্রতি গিঠ সে এ বলে চাপড়ায়, তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত। তারপর সে যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে একটি গিঠ খুলে যায়, পরে উযূ করলে আর একটি গিঠ খুলে যায়, তারপর সালাত আদায় করলে আর একটি গিঠ খুলে যায়। তখন তার প্রভাত হয়, প্রফুল্ল মনে ও নির্মল চিত্তে। অন্যথায় সে সকালে উঠে কলুষিত মনে ও অলসতা নিয়ে।

হাদীস নং ১০৭৭

মুআম্মাল ইবনে হিশাম রহ………..সামুরা ইবনে জুনদাব রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি তাঁর স্বপ্ন বর্ণনার এক পর্যায়ে বলেছেন, যে ব্যক্তির মাথা পাথর দিয়ে বিচূর্ণ করা হচ্ছিল, সে হল ঐ লোক যে কুরাআন শরীফ শিখে তা পরিত্যাগ করে এবং ফরয সালাত আদায় না করে ঘুমিয়ে থাকে।

হাদীস নং ১০৭৮

মুসাদ্দাদ রহ…………আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে এক ব্যক্তির সম্পর্কে আলোচনা করা হল- সকাল বেলা পর্যন্ত সে ঘুমিয়েই কাটিয়েছে, সালাতের জন্য (যথা সময়ে) জাগ্রত হয়নি, তখন তিনি (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করলেন : শয়তান তার কানে পেশাব করে দিয়েছে।

হাদীস নং ১০৭৯

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মহামহিম আল্লাহ তা’আলা প্রতি রাতে রাতের তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেন : কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে ? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছে এমন যে আমার কাছে চাইবে ? আমি তাকে তা দিব । কে আছে এমন, যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে ? আমি তাকে ক্ষমা করব।

হাদীস নং ১০৮০

আবুল ওয়ালীদ ও সুলাইমান রহ………আসওয়াদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আয়িশা রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত কেমন ছিল ? তিনি বললেন, তিনি প্রথমাংশে ঘুমাতেন, শেষাংশে জেগে সালাত আদায় করতেন। এরপর তাঁর শয্যায় ফিরে যেতেন, মুআযযিন আযান দিলে দ্রুত উঠে পড়তেন, তখন তাঁর প্রয়োজন থাকলে গোসল করতেন, অন্যথায় উযূ করে (মসজিদের দিকে) বেরিয়ে যেতেন।

হাদীস নং ১০৮১

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি আয়িশা রা.-কে জিজ্ঞাসা করেন, রমযান মাসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত কেমন ছিল ? তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে এবং অন্যান্য সময় (রাতের বেলা) এগার রাকাআতের অধিক সালাত আদায় করতেন না। তিনি চার রাকআত সালাত আদায় করতেন। তুমি সেই সালাতের সৌন্দর্য ও দীর্ঘত্ব সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করো না। তারপর চার রাকাআত সালাত আদায় করতেন, এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘত্ব সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করো না। তারপর তিনি তিন রাকাআত (বিতর) সালাত আদায় করতেন। আয়িশা রা. বলেন, (একদিন) আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি কি বিতরের আগে ঘুমিয়ে থাকেন ? তিনি ইরশাদ করলেন : আমার চোখ দুটি ঘুমায়, কিন্তু আমার হৃদয় ঘুমায় না।

হাদীস নং ১০৮২

মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ………..উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাতের কোন সালাতে আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বসে কিরাআত পড়তে দেখিনি। অবশ্য শেষ দিকে বার্ধক্য উপনীত হলে তিনি বসে কিরাআত পড়তেন। যখন (আরম্ভকৃত) সূরার ত্রিশ চল্লিশ আয়াত অবশিষ্ট থাকত, তখন দাঁড়িয়ে যেতেন এবং সে পরিমাণ কিরাআত পড়ার পর রুকু করতেন।

হাদীস নং ১০৮৩

ইসহাক ইবনে নাসর রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন ফজরের সালাতের সময় বিলাল রা. কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে বিলাল ! ইসলাম গ্রহণের পর সর্বাধিক আশাব্যঞ্জক যে আমল তুমি করেছ, তার কথা আমার নিকট ব্যক্ত কর। কেননা, জান্নাতে আমি আমার সামনে তোমার পাদুকার আওয়াজ শুনতে পেয়েছি। বিলাল রা. বললেন, দিন রাতের যে কোন প্রহরে আমি তাহারাত ও পবিত্রতা অর্জন করেছি, তখনই সে তাহারাত দ্বারা সালাত আদায় করেছি, যে পরিমাণ সালাত আদায় করা আমার তাকদীরে লেখা ছিল। আমার কাছে এর চাইতে (অধিক) আশাব্যঞ্জক হয়, এমন কোন বিশেষ আমল আমি করিনি।

হাদীস নং ১০৮৪

আবু মামার রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মসজিদে) প্রবেশ করে দেখতে পেলেন যে, দুটি স্তম্ভের মাঝে একটি রশি টাঙানো রয়েছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এ রশিটি কি কাজের জন্য ? লোকেরা বললো, এটি যায়নাবের রশি, তিনি (ইবাদত করতে করতে) অবসন্ন হয়ে পড়লে এটির সাথে নিজেকে বেধে দেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন : না, এটা খুলে ফেল। তোমাদের যে কোন ব্যক্তির প্রফুল্লতা ও সজীবতা থাকা পর্যন্ত ইবাদত করা উচিত। যখন সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন যেন সে বসে পড়ে। অন্য এক বর্ণনায় আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ…….উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনু আসাদের এক মহিলা আমার কাছে উপস্থিত ছিলেন, তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আগমন করলেন এবং তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এ মহিলাটি কে ? আমি বললাম, অমুক । তিনি রাতে ঘুমান না। তখন তাঁর সালাতের কথা উল্লেখ করা হলে তিনি (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন : রেখে দাও। সাধ্যানুযায়ী আমল করতে থাকাই তোমাদের কর্তব্য। কেননা, আল্লাহ তা’আলা (সাওয়াব প্রদানে) বিরক্ত হন না, যতক্ষণ না তোমরা বিরক্ত ও ক্লান্ত হয়ে পড়।

হাদীস নং ১০৮৫

আব্বাস ইবনে হুসাইন ও মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল আবুল হাসান রহ………আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন : হে আবদুল্লাহ ! তুমি অমুক ব্যক্তির মত হয়ো না, সে রাত জেগে ইবাদত করত, পরে রাত জেগে ইবাদত করা ছেড়ে দিয়েছে। হিশাম রহ………আবু সালামা রা. থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে।

হাদীস নং ১০৮৬

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……..আবুল আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে শুনেছি, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন : আমাকে কি জানানো হয়নি যে, তুমি রাত ভর ইবাদতে জেগে থাক, আর দিনভর সিয়াম পালন কর ? আমি বললাম, হ্যাঁ, তা আমি করে থাকি। তিনি ইরশাদ করলেন : একথা নিশ্চিত যে, তুমি এমন করতে থাকলে তোমার দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে যাবে এবং তুমি ক্লান্ত হয়ে পড়বে। তোমার দেহের অধিকার রয়েছে, তোমার পরিবার পরিজনেরও অধিকার রয়েছে। কাজেই তুমি সিয়াম পালন করবে এবং বাদও দেবে। আর জেগে ইবাদত করবে এবং ঘুমাবেও।

হাদীস নং ১০৮৭

সাদাকা ইবনে ফাযল রহ……….উবাদা ইবনে সামিত রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি রাতে জেগে ওঠে এ দু’আ পড়ে “এক আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই। রাজ্য তাঁরই। যাবতীয় প্রশংসা তাঁরই। তিনিই সব কিছুর উপরে শক্তিমান। যাবতীয় হামদ আল্লাহরই জন্য, আল্লাহ তা’আলা পবিত্র, আল্লাহ ব্যতীত ইলাহ নেই। আল্লাহ মহান, গুনাহ থেকে বাঁচার এবং নেক কাজ করার কোন শক্তি নেই আল্লাহর তাওফীক ব্যতীত। তারপর বলে, ইয়া আল্লাহ ! আমাকে ক্ষমা করুন। বা (অন্য কোন) দু’আ করে, তাঁর দু’আ কবুল করা হয়। এরপর উযূ করে (সালাত আদায় করলে) তার সালাত কবুল করা হয়।

হাদীস নং ১০৮৮

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………হায়সাম ইবনে আবু সিনান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু হুরায়রা রা. তাঁর ওয়াজ বর্ণনাকালে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, তোমাদের এক ভাই অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রা. অনর্থক কথা বলেননি। “আর আমাদের মাঝে বর্তমান রয়েছেন আল্লাহহর রাসূল, যিনি আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করেন, যখন উদ্ভাসিত হয় ভোরের আলো। গোমরাহীর পর তিনি আমাদের হিদায়েতের পথ দেখিয়েছেন, তাই আমাদের হৃদয় সমূহ, তাঁর প্রতি নিশ্চিত বিশ্বাস স্থাপনকারী যে তিনি যা বলেছেন তা অবশ্য সত্য। তিনি রাত কাটান শয্যা থেকে পার্শ্ব কে দূরে সরিয়ে রেখে, যখন মুশরিকরা শয্যা গুলোতে নিদ্রামগ্ন থাকে”।

আর উকাইল রহ. ইউনুস রহ.-এর অনুসরণ করেছেন। যুবায়দী রহ………আবু হুরায়রা রা. সূত্রেও তা বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ১০৮৯

আবু নুমান রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সময়ে আমি (এক রাতে) স্বপ্নে দেখলাম যেন আমার হাতে একখণ্ড মোটা রেশমী কাপড় রয়েছে এবং যেন আমি জান্নাতের যে কোন স্থানে যেতে ইচ্ছা করছি। কাপড় (আমাকে) সেখানে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অপর একটি স্বপ্নে আমি দেখলাম, যেন দু’জন ফেরেশতা আমার কাছে এসে আমাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন। তখন অন্য একজন ফেরেশতা তাদের সামনে এসে বললেন, তোমার কোন ভয় নেই। (আর ঐ দু’জনকে বললেন) তাকে ছেড়ে দাও। (উম্মুল মু’মিনীন) হাফসা রা. আমার স্বপ্ন দ্বয়ের একটি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বর্ণনা করলে তিনি বললেন : আবদুল্লাহ কত ভাল লোক ! যদি সে রাতের বেলা সালাত (তাহাজ্জুদ) আদায় করত। এরপর থেকে আবদুল্লাহ রা. রাতের এক অংশে সালাত আদায় করতেন। সাহাবীগণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট (তাদের দেখা) স্বপ্ন বর্ণনা দিলেন। লাইলাতুল কাদর রমযানের শেষ দশকের সপ্তম রাতে। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আমি মনে করি যে, (লাইলাতুল কাদর শেষ দশকে হওয়ার ব্যাপারে) তোমাদের স্বপ্নগুলোর মধ্যে পরষ্পর মিল রয়েছে। কাজেই যে ব্যক্তি লাইলাতুল কাদরের অনুসন্ধান করতে চায় সে যেন তা (রমযানের) শেষ দশকে অনুসন্ধান করে।

হাদীস নং ১০৯০

আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াযীদ রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার সালাত আদায় করলেন, এরপর আট রাকআত সালাত আদায় করেন। এবং দু’রাকাআত আদায় করেন বসে। আর দু’রাকাআত সালাত আদায় করেন আযান ও ইকামত-এর মধ্যবর্তী সময়ে। এ দু’রাকাআত তিনি কখনো পরিত্যাগ করতেন না।

হাদীস নং ১০৯১

আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াযীদ রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের দু’রাকাআত করার পর ডান কাতে শুইতেন।

হাদীস নং ১০৯২

বিশর ইবনে হাকাম রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ফজরের সুন্নাত) সালাত আদায় করার পর আমি জেগে থাকলে, তিনি আমার সাথে কথাবার্তা বলতেন, অন্যথায় (জামাআতের সময় হয়ে যাওয়ার) অবগতি প্রদান পর্যন্ত ডান কাতে শুয়ে থাকতেন।

হাদীস নং ১০৯৩

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ফজরের আযানের পর) দু’রাকাআত (সুন্নাত) সালাত আদায় করতেন। তারপর আমি সজাগ থাকলে আমার সাথে কথাবার্তা করতেন. অন্যথায় (ডান) কাতে শয়ন করতেন। (বর্ণনাকারী আলী বলেন) আমি সুফিয়ান রহ. কে জিজ্ঞাসা করলাম, কেউ কেউ এ হাদীসে (দু’রাকাআতের স্থলে) ফজরের দু’রাকাআত বর্ণনা করে থাকেন। (এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি ?) সুফিয়ান রহ. বললেন, এটা তা-ই।

হাদীস নং ১০৯৪

বায়ান ইবনে আমর রহ……আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন নফল সালাতকে ফজরের সুন্নাতের ন্যায় অধিক হিফাযত ও গুরুত্ব প্রদানকারী ছিলেন না।

হাদীস নং ১০৯৫

আবদুল্লাহ ইবেন ইউসুফ রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তের রাকাআত সালাত আদায় করতেন, এরপর সকালে (ফজরের) আযান শোনার পর সংক্ষিপ্ত (কিরাআতে) দু’রাকআত সালাত আদায় করতেন।

হাদীস নং ১০৯৬

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার ও আহমদ ইবনে ইউনুস রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের (ফরয) সালাতের আগের দু’রাকাআত (সুন্নাত) এত সংক্ষিপ্ত করতেন এমনকি আমি (মনে মনে) বলতাম, তিনি কি (শুধু) উম্মুল কিতাব (সুরা ফাতিহা) তিলাওয়াত করলেন ?

হাদীস নং ১০৯৭

কুতাইবা রহ………..জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সব কাজে ইস্তিখারাহ শিক্ষা দিতেন। যেমন পবিত্র কুরআনের সূরা আমাদের শিখাতেন। তিনি বলেছেন : তোমাদের কেউ কোন কাজের ইচ্ছা করলে সে যেন ফরয নয় এমন দু’রাকাআত (নফল) সালাত আদায় করার পর এ দুআ পড়ে : “ ইয়া আল্লাহ ! আমি আপনার ইলমের ওয়াসীলায় আপনার কাছে (উদ্দীষ্ট বিষয়ের) কল্যাণ চাই এবং আপনার কুদরতের ওয়াসীলায় আপনার কাছে শক্তি চাই এর আপনার কাছে চাই আপনার মহান অনুগ্রহ। কেননা, আপনিই (সব কিছুতে) ক্ষমতা রাখেন, আমি কোন ক্ষমতা রাখি না; আপনিই (সব বিষয়ে) অবগত আর আমি অবগত নই; আপনিই গায়েব সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত। ইয়া আল্লাহ ! আমার দীন, আমার জীবন-জীবিকা ও আমার কাজের পরিণাম বিচারে, অথবা বলেছেন, আমার কাজের আশু ও শেষ পরিণতি হিসাবে যদি এ কাজটি আমার জন্য কল্যাণকর বলে জানেন তাহলে আমার জন্য তার ব্যবস্থা করে দিন। আর তা আমার দীন, আমার জীবন-জীবিকা ও আমার কাজের পরিণাম অথবা বলেছেন, আমার কাজের আশু ও শেষ পরিণতি হিসাবে আমার জন্য ক্ষতি হয় বলে জানেন; তাহলে আপনি তা আমার থেকে সরিয়ে নিন এবং আমাকে তা থেকে ফিরিয়ে রাখুন আর আমার জন্য কল্যাণ নির্ধারিত রাখুন ; তা যেখানেই হোক। এরপর সে বিষয়ে আমাকে রাযী থাকার তৌফিক দিন। তিনি ইরশাদ করেন هذا الأمر এখানে তার প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করবে।

হাদীস নং ১০৯৮

মাক্কী ইবনে ইবরাহীম রহ………আবু কাতাদা ইবনে রিবআ আনসারী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন : তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে দু’রাকাআত সালাত (তাহিয়্যাতুল মসজিদ) আদায় করার আগে বসবে না।

হাদীস নং ১০৯৯

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন, তারপর চলে গেলেন।

হাদীস নং ১১০০

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে যুহরের আগে দু’রাকাআত, যুহরের পরে দু’রাকাআত, জুমুআর পরে দু’রাকাআত, মাগরিবের পরে দু’রাকাআত এবং ইশার পরে দু’রাকাআত (সুন্নাত) সালাত আদায় করেছি।

হাদীস নং ১১০১

আদম রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর খুতবা প্রদান কালে ইরশাদ করলেন : তোমরা কেউ এমন সময় মসজিদে উপস্থিত হলে, যখন ইমাম (জুমুআর) খুতবা দিচ্ছেন, কিংবা মিম্বরে আরোহণের জন্য (হুজরা থেকে) বেরিয়ে পড়েছেন, তাহলে সে তখন দু’রাকাআত সালাত আদায় করে নেয়।

হাদীস নং ১১০২

আবু নুআইম রহ……..মুজাহিদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ইবনে উমর রা. এর বাড়িতে এসে তাকে খবর দিল, এই মাত্র নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবা শরীফে প্রবেশ করলেন। ইবনে উমর রা. বলেন, আমি অগ্রসর হলাম। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবা ঘর থেকে বের হয়ে পড়েছেন। বিলাল রা. দরওয়াজার কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আমি বললাম, হে বিলাল ! নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবা শরীফের ভিতরে সালাত আদায় করেছেন কি ? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কোন স্থানে ? তিনি বললেন, দুস্তম্ভের মাঝখানে। এরপর তিনি বেরিয়ে এসে কাবার সামনে দু’রাকাআত সালাত আদায় করলেন। ইমাম বুখারী রহ. বলেন, আবু হুরায়রা রা. বলেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দু’রাকাআত সালাতুয যুহা (চাশতের সালাত) এর আদেশ করেছেন। ইতবান (ইবনে মালিক আনসারী) রা. বলেন, একদিন বেশ বেলা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর এবং উমর রা. আমার এখানে আগমন করলেন। আমরা তাঁর পিছনে কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়ালাম আর তিনি (আমাদের নিয়ে) দু’রাকআত সালাত (চাশত) আদায় করলেন।

হাদীস নং ১১০৩

মুসাদ্দাদ রহ…………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অনুসরণে আমি যুহরের আগে দু’রাকাআত, যুহরের পর দু’রাকাআত, মাগরিবের পর দু’রাকাআত, ইশার পর দু’রাকাআত এবং জুমুআর পর দু’রাকাআত সালাত আদায় করেছি। তবে মাগরিব ও ইশার পরের সালাত তিনি তাঁর ঘরে আদায় করতেন। ইবনে উমর রা. আরও বলেন, আমার বোন (উম্মুল মু’মিনীন) হাফসা রা. আমাকে হাদীস শুনিয়েছেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজর হওয়ার পর সংক্ষিপ্ত দু’রাকাআত সালাত আদায় করতেন। (ইবনে উমর রা. বলেন) এটি ছিল এমন একটি সময়, যখন আমরা কেউ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে হাজির হতাম না। (তাই সে সময়ের আমল সম্পর্কে উম্মহাতুল মু’মিনীন অধিক জানতেন)। কাসীর ইবনে ফরকাদ ও আইয়্যূব রহ. নাফি রহ. থেকে হাদীস বর্ণনায় উবাইদুল্লাহ রহ.-এর অনুসরণ করেছেন। ইবনে আবুয যিনাদ রহ. বলেছেন, মূসা ইবনে উকবা রহ. নাফি রহ. থেকে ইশার পরে তাঁর পরিজনের মধ্যে কথাটি বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ১১০৪

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে আট রাকাআত একত্রে যুহর ও আসরের এবং সাত রাকাআত একত্রে মাগরিব-ইশার আদায় করেছি। (তাই সে ক্ষেত্রে যুহর ও মাগরিবের পর সুন্নাত আদায় করা হয়নি)। আমর রহ. বলেন, আমি বললাম, হে আবুশ শা’সা ! আমার ধারণা, তিনি যুহর শেষ ওয়াক্তে এবং আসর প্রথম ওয়াক্তে আর ইশা প্রথম ওয়াক্তে ও মাগরিব শেষ ওয়াক্তে আদায় করেছিলেন। তিনি বলেছেন, আমিও তাই মনে করি।

হাদীস নং ১১০৫

মুসাদ্দাদ রহ………..মুওয়াররিক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনে উমর রা. -কে জিজ্ঞাসা করলাম, আনি কি চাশত-এর সালাত আদায় করে থাকেন ? তিনি বললেন, না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, উমর রা. তা আদায় করতেন কি? তিনি বললেন না। আমি বললাম, আবু বকর রা. ? তিনি বললেন, না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ? তিনি বললেন, আমি তা মনে করি না। (আমার মনে হয় তিনিও তা আদায় করতেন না, তবে এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত কিছু বলতে পারছি না)।

হাদীস নং ১১০৬

আদম রহ………..আবদুর রহমান ইবনে আবু লায়লা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উম্মু হানী রা. (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চাচাত বোন) ব্যতীত অন্য কেউ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে চাশতের সালাত আদায় করতে দেখেছেন, এরূপ আমাদের কাছে কেউ বর্ণনা করেননি। তিনি উম্মে হানী রা. অবশ্য বলেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন (পূর্বাহ্নে) তাঁর ঘরে গিয়ে গোসল করেছেন। (তিনি বলেছেন যে, আমি আর কখনো (তাকে) অনুরূপ সংক্ষিপ্ত সালাত (আদায় করতে) দেখিনি। তবে কিরাআত সংক্ষিপ্ত হলেও তিনি রুকু ও সিজদা পূর্ণাঙ্গরূপে আদায় করছিলেন।

হাদীস নং ১১০৭

আদম রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে চাশত-এর সালাত আদায় করতে আমি দেখিনি। তবে আমি তা আদায় করে থাকি।

হাদীস নং ১১০৮

মুসলিম ইবনে ইবরাহীম রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার খলীল ও বন্ধু (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে তিনটি কাজের ওসিয়্যাত (বিশেষ আদেশ) করেছেন, আমৃত্যু তা আমি পরিত্যাগ করব না। (কাজ তিনটি) ১. প্রতি মাসে তিন দিন সিয়াম (পালন করা), ২. সালাতুয-যুহা (চাশত-এর সালাত আদায় করা) এবং ৩. বিতর (সালাত) আদায় করে ঘুমান।

হাদীস নং ১১০৯

আলী ইবনুল জাদ রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক স্থুলদেহী আনসারী নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খিদমত আরয করলেন, আমি আপনার সংগে (জামাআতে) সালাত আদায় করতে পারি না। তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উদ্দেশ্যে খাবার তৈরী করে তাকে দাওয়াত করে নিজ বাড়ীতে নিয়ে এলেন এবং একটি চাটাইয়ের এক অংশে (কোমল ও পরিচ্ছন্ন করার উদ্দেশ্যে) পানি ছিটিয়ে (তা বিছিয়ে) দিলেন। তখন তিনি (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপরে দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন। ইবনে জারূদ রহ. (নিশ্চিত হওয়ার উদ্দেশ্যে) আনাস ইবনে মালিক রা. কে জিজ্ঞাসা করলেন, (তবে কি) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাশত-এর সালাত আদায় করেছেন ? আনাস রা. বললেন, সেদিন ব্যতীত অন্য সময়ে তাকে এ সালাত আদায় করতে দেখিনি।

হাদীস নং ১১১০

সুলাইমান ইবনে হারব রহ………..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমি দশ রাকাআত সালাত আমার স্মৃতিতে সংরক্ষণ করে রেখেছি। যুহরের আগে দু’রাকআত পরে দু’রাকাআত, মাগরিবের পরে দু’রাকাআত তাঁর ঘরে, ইশার পরে দু’রাকাআত তাঁর ঘরে এবং দু’রাকাআত সকালের (ফজরের) সালাতের আগে। ইবনে উমর রা. বলেন,) আর সময়টি ছিল এমন, যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খিদমতে (সাধারণত) কোন ব্যক্তিকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হত না। তবে উম্মুল মু’মিনীন হাফসা রা. আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, যখন মুআযযিন আযান দিতেন এবং ফজর (সুবহে-সাদিক) উদিত হত তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’রাকাআত সালাত আদায় করতেন।

হাদীস নং ১১১১

মুসাদ্দাদ রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের আগে চার রাকাআত এবং (ফজরের আগে) দু’রাকাআত (কখনো) ছাড়তেন না। ইবনে আবু আদী ও আমর রহ. শুবা রহ. থেকে হাদীস বর্ণনায় ইয়াহইয়া রহ.-এর অনুসরণ করেছেন।

হাদীস নং ১১১২

আবু মামার রহ………..আবদুল্লাহ মুযানী রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন : তোমরা মাগরিবের (ফরযের) আগে (নফল) সালাত আদায় করবে ; (এ কথাটি তিনি তিনবার ইরশাদ করলেন) লোকেরা আমলকে সুন্নাতের মর্যাদায় গ্রহণ করতে পারে, এ কারণে তৃতীয়বারে তিনি বললেন : এ তার জন্য যে ইচ্ছা করে।

হাদীস নং ১১১৩

আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াযীদ রহ……….মারসাদ ইবনে আবদুল্লাহ ইয়াযানী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উকবা ইবনে জুহানী রা.-এর কাছে গিয়ে তাকে বললাম, আবু তামীম রহ. সম্পর্কে এ কথা বলে কি আমি আপনাকে বিস্মিত করে দিব না যে, তিনি মাগরিবের (ফরয) সালাতের আগে দু’রাকাআত (নফল) সালাত আদায় করে থাকেন। উকবা রা. বলেন, (এতে বিস্মিত হওয়ার কি আছে ?) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সময়ে তো আমরা তা আদায় করতাম। আমি প্রশ্ন করলাম, তাহলে এখন কিসে আপনাকে বিরত রাখছে ? তিনি বললেন, কর্মব্যস্ততা।

হাদীস নং ১১১৪

ইসহাক রহ………ইবনে শিহাব রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মাহমুদ ইবনে রাবী আনসারী রা. আমকে খবর দিয়েছেন যে, (শৈশবে তাঁর দেখা) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কথা তাঁর ভাল স্মরণ আছে এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বাড়ীর কূপ থেকে (পানি মুখে নিয়ে বরকতের জন্য) তার মুখমণ্ডলে যে দিচ্ছিলেন সে কথাও তার ভাল স্মরণ আছে। মাহমুদ রহ. বলেন, যে, ইতবান ইবনে মালিক আনসারী রা.-কে (যিনি ছিলেন বদর জিহাদে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে উপস্থিত বদরী সাহাবীগণের অন্যতম) বলতে শুনেছেন যে ,আমি আমার কওম বনু সালিমের সালাতে ইমামতি করতাম। আমার ও তাদের (কওমের মসজিদের) মধ্যে বিদ্যমান একটি উপত্যকা। উপত্যকা বৃষ্টি হলে আমার মসজিদ গমনে অন্তরায় সৃষ্টি করত। এবং এ উপত্যকা অতিক্রম করে তাদের মসজিদে যাওয়া আমার জন্য কষ্টকর হত। তাই আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খিদমতে হাজির হয়ে আরয করলাম, (ইয়া রাসূলাল্লাহ !) আমি আমার দৃষ্টিশক্তির ঘাটতি অনুভব করছি (এ ছাড়া) আমার ও আমার গোত্রের মধ্যকার উপত্যকাটি বৃষ্টি হলে প্লাবিত হয়ে যায়। তখন তা পার হওয়া আমার জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে। তাই আমার একান্ত আশা যা আপনি শুভাগমণ করে (বরকত স্বরূপ) আমার ঘরের কোন স্থানে সালাত আদায় করবেন; আমি সে স্থানটিকে মুসাল্লা (সালাতের স্থানরূপে নির্ধারিত) করে নিব। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, অচিরেই তা করব। পরের দিন সূর্যের উত্তাপ যখন বেড়ে গেল, তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবু বকর রা. (আমার বাড়ীতে) তাশরীফ আনলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ঘরে প্রবেশের) অনুমতি চাইলে আমি তাকে স্বাগত জানালাম, তিনি উপবেশন না করেই আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার ঘরের কোন জায়গায় আমার সালাত আদায় করা তুমি পছন্দ কর ? যে স্থানে তাঁর সালাত আদায় করা আমার মনঃপূত ছিল, তাকে আমি সে স্থানের দিকে ইশারা করে (দেখিয়ে) দিলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে তাকবীর বললেন, আমরা সারিবদ্ধভাবে তাঁর পিছনে দাঁড়ালাম। তিনি দু’রাকাআত সালাত আদায় করে সালাম ফিরালেন। তাঁর সালাম ফিরানোর সময় আমরাও সালাম ফিরালাম। এরপর তাঁল উদ্দেশ্যে যে খাযীরা প্রস্তত করা হচ্ছিল তা আহারের জন্য তাঁর প্রত্যাগমনে আমি বিলম্ব ঘটালাম। ইতিমধ্যে মহল্লার লোকেরা আমার বাড়ীতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবস্থানের সংবাদ শুনতে পেয়ে তাদের কিছু লোক এসে গেলেন। এমন কি আমার ঘরে অনেক লোকের সমাগম ঘটলো । তাদের একজন বললেন, মালিক (ইবনে দুখায়শিন) করল কি ? তাকে দেখছি না যে ? তাদের একজন জবাব দিলেন, যে মুনাফিক ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে মুহাব্বত করে না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন : এমন কথা বলবে না। তুমি কি লক্ষ্য করছ না, যে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ উচ্চারণ করেছে। সে ব্যক্তি বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সমধিক অবগত। তবে আল্লাহর কসম ! আমরা মুনাফিকদের সাথেই তার ভালবাসা ও আলাপ-আলোচন দেখতে পাই। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন : আল্লাহ পাক সে ব্যক্তিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিয়েছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ উচ্চারণ করে। মাহমুদ রা. বলেন, এক যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে একদল লোকের কাছে বর্ণনা করলাম তাদের মধ্যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবী আবু আইয়্যূব (আনসারী) রা. ছিলেন। তিনি সে যুদ্ধে ওফাত পেয়েছিলেন। আর ইয়াযীদ ইবনে মুআবিয়া রা. রোমানদের দেশে তাদের আমীর ছিলেন। আবু আইয়ূব রা. আমার বর্ণিত হাদীসটি অস্বীকার করে বললেন, আল্লাহ কসম! তুমি যে কথা বলেছ তা যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তা আমি বিশ্বাস করতে পারি না। ফলে তা আমার কাছে ভারী মনে হল। তখন আমি আল্লাহর নামে প্রতিজ্ঞা করলাম যে, যদি এ যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত তিনি আমাকে নিরাপদ রাখেন, তাহলে আমি ইতবান ইবনে মালিক রা.-কে তাঁর কওমের মসজিদের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করব, যদি তাকে জীবিত অবস্থায় পেয়ে যাই। এরপর আমি ফিরে চললাম এবং হজ্জ কিংবা উমরার নিয়্যাতে ইহরাম বাঁধলাম। তারপর সফর করতে করতে আমি মদীনায় উপনীত হয়ে বনু সালিম গোত্রে উপস্থিত হলাম। দেখতে পেলাম ইতবান রা. যিনি তখন একজন বৃদ্ধ ও অন্ধ ব্যক্তি কওমের সালাতে ইমামতি করছেন। তিনি সালাত শেষ করলে আমি তাকে সালাম করলাম এবং আমার পরিচয় দিয়ে উক্ত হাদীস সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি প্রথমবারের মতই অবিকল হাদীস খানা আমাকে শুনাইলেন।

হাদীস নং ১১১৫

আবুল আলা ইবনে হাম্মাদ রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন : তোমরা তোমাদের কিছু কিছু সালাত তোমাদের ঘরে আদায় করবে, তোমাদের ঘরগুলোকে কবর বানাবে না। আবদুল ওহহাব রহ. আইউব রা. থেকে হাদীস বর্ণনায় ওহাইব রহ. এর অনুসরণ করেছেন।

হাদীস নং ১১১৬

হাফস ইবনে উমর রহ………কাযআ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু সাঈদ খুদরী রা. কে চারটি (বিষয়) বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি। আবু সাঈদ খুদরী রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে বারটি যুদ্ধে শরীক হয়েছিলেন। অন্য সূত্রে আলী রহ. আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, মসজিদুল হারাম, মসজিদুর রাসূল এবং মসজিদুল আকসা (রায়তুল মুকাদ্দাস) তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদে (সালাতের) উদ্দেশ্যে হাওদা বাঁধা যাবে না (অর্থাৎ সফর করবে না)।

হাদীস নং ১১১৭

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ…………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মাসজিদুল হারাম ব্যতীত আমার এ মসজিদে সালাত আদায় করা অপরাপর মসজিদে এক হাজার সালাতের চাইতে উত্তম।

হাদীস নং ১১১৮

ইয়াকুব ইবনে ইবরাহীম রহ………নাফি রহ. থেকে বর্ণিত যে, ইবনে উমর রা. দু’দিন ব্যতীত অন্য সময়ে চাশতের সালাত আদায় করতেন না, যে দিন তিনি মক্কায় আগমন করতেন, তাঁর অভ্যাস ছিল যে, তিনি চাশতের সময় মক্কায় আগমণ করতেন। তিনি বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করার পর মাকামে ইবরাহীম-এর পিছনে দাঁড়িয়ে দু’রাকাআত সালাত আদায় করতেন। আর যে দিন তিনি কুবা মসজিদে গমন করতেন। তিনি প্রতি শনিবার সেখানে গমন করতেন এবং সেখানে সালাত আদায় না করে বেরিয়ে আসা অপছন্দ করতেন। নাফি রহ. বলেন, তিনি (ইবনে উমর রা. হাদীস বর্ণনা করতেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুবা মসজিদ যিয়ারত করতেন – কখনো আরোহী হয়ে, কখনো পায়ে হেটে। নাফি রহ. বলেন, তিনি (ইবনে উমর রা. তাকে বলতেন, আমি আমার সাথীদের যেমন করতে দেখেছি তেমন করব। আর কাউকে আমি দিন রাতে কোন সময়ই সালাত আদায় করতে বাঁধা দেই না, তবে তাঁরা যেন সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় (সালাত আদায়ের) ইচ্ছা না করে।

হাদীস নং ১১১৯

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি শনিবার কুবা মসজিদে আসতেন, কখনো পায়ে হেটে, কখনো আরোহণ করে। আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-ও তা-ই করতেন।

হাদীস নং ১১২০

মুসাদ্দাদ রহ…………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরোহণ করে কিংবা পায়ে হেটে কুবা মসজিদে আসতেন। ইবনে নুমাইর রহ. নাফি রহ. থেকে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে দু’রাকাআত সালাত আদায় করতেন।

হাদীস নং ১১২১

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ মাযিনী রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমার ঘর ও মিম্বর-এর মধ্যবর্তী স্থানটুকু জান্নাতের বাগান সমূহের একটি বাগান।

হাদীস নং ১১২২

মুসাদ্দাদ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমার ঘর ও মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থানে জান্নাতের বাগান সমূহের একটি বাগান আর আমার মিম্বর অবস্থিত (রয়েছে) আমার হাউজ (কাউসার)-এর উপরে।

হাদীস নং ১১২৩

আবুল ওয়ালীদ রহ………যিয়াদের আযাদকৃত দাস কাযাআ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু সাঈদ খুদরী রা. -কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে চারটি বিষয় বর্ণনা করতে শুনেছি, যা আমাকে আনন্দিত ও মুগ্ধ করেছে। তিনি বলেছেন ; মহিলারা স্বামী কিংবা মাহরাম ব্যতীত দু’দিনের দূরত্বের পথে সফর করবে না। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনগুলোতে সিয়াম পালন নেই। দু’ (ফরয) সালাতের পর কোন (নফল ও সুন্নাত) সালাত নেই। ফজরের পর সূর্যোদয় (সম্পন্ন) হওয়া পর্যন্ত এবং আসরের পর সূর্য অস্তমিত হয়ে যাওয়া পর্যন্ত। এবং ১. মাসজিদুল হারাম, (কাবা শরীফ ও সংলগ্ন মসজিদ) ২. মাসজিদুল আকসা (বায়তুল মুকাদ্দাসের মসজিদ) এবং ৩. আমার মসজিদ (মদীনার মসজিদে নববী) ব্যতীত অন্য কোন মসজিদে (সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে) হাওদা বাঁধা যাবে না। (সফর করা যাবে না।

হাদীস নং ১১২৪

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনি তাঁর খালা উম্মুল মু’মিনীন মায়মূনা রা.-এর ঘরে রাত কাটালেন। তিনি বলেন, আমি বালিশের প্রস্থের দিকে শুয়ে পড়লাম, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সহধর্মিনী বালিশের দৈর্ঘ্যে শয়ন করলেন। এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধ্যরাত তার কিছু আগ বা পর পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকলেন। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেগে উঠে বসলেন এবং দু’হাতে মুখমণ্ডল মুছে ঘুমের আমেজ দূর করলেন। এরপর তিনি সূরা আল-ইমরানের শেষ দশ আয়াত তিলাওয়াত করলেন। পরে একটি ঝুলন্ত মশকের দিকে এগিয়ে গেলেন এবং এর পানি দ্বারা উত্তমরূপে উযূ করে সালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, আমিও উঠে পড়লাম এবং তিনি যেরূপ করেছিলেন, আমিও সেরূপ করলাম। এরপর আমি গিয়ে তাঁর পাশে দাঁড়ালাম। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান হাত আমার মাথার উপরে রেখে আমার ডান কানে মোচড়াতে লাগলেন (এবং আমাকে তাঁর পিছন থেকে ঘুরিয়ে এনে তাঁর ডানপাশে দাঁড় করিয়ে দিলেন) তিনি তখন দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন, তারপর দু’রাকআত, তারপর দু’রাকাআত, তারপর দু’রাকাআত তারপর দু’রাকাআত, তারপর (শেষ দু’রাকাআতের সাথে আর এক রাকাআত দ্বারা বেজোড় করে) বিতর আদায় করে শুয়ে পড়লেন। অবশেষে (ফজরের জামাআতের জন্য) মুআযিযন এলেন। তিনি দাঁড়িয়ে সংক্ষিপ্ত (কিরাআতে) দু’রাকাআত (ফজরের জামাআতের জন্য) আদায় করলেন। এরপর (মসজিদের দিকে) বেরিয়ে যান এবং ফজরের সালাত আদায় করলেন।

হাদীস নং ১১২৫

ইবনে নুমাইর রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তাঁর সালাতরত অবস্থায় সালাম করতাম, তিনি আমাদের সালামের জওয়াব দিতেন। পরে যখন আমরা নাজাশীর নিকট থেকে ফিরে এলাম, তখন তাকে (সালাতরত অবস্থায়) সালাম করলে তিনি আমাদের সালামের জওয়াব দিলেন না এবং পরে ইরশাদ করলেন : সালাতে অনেক ব্যস্ততা ও নিমগ্নতা রয়েছে।

হাদীস নং ১১২৬

ইবনে নুমাইর রহ………আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ১১২৭

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ…………যায়েদ ইবনে আরকাম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সময়ে সালাতের মধ্যে কথা বলতাম।আমাদের কেউ তার সংগীর সাথে নিজ দরকারী বিষয়ে কথা বলত। অবশেষে এ আদায় নাযিল হল- “তোমরা তোমাদের সালাতসমূহের সংরক্ষণ কর ও নিয়ামানুবর্তী রক্ষা কর; বিশেষত মধ্যবর্তী (আসর) সালাতে, আর তোমরা (সালাতে) আল্লাহর উদ্দেশ্যে একাগ্রচিত্ত হও”। (২ : ২৩৮) এরপর থেকে আমরা সালাতে নিরব থাকতে আদিষ্ট হলাম।

হাদীস নং ১১২৮

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ……….সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনু আমর ইবনে আওফ এর মধ্যে মীমাংসা করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলেন, ইতিমধ্যে সালাতের সময় উপস্থিত হল। তখন বিলাল রা. আবু বকর রা. -এর কাছে এসে বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আপনি লোকদের সালাতে ইমামতি করবেন ? তিনি বললেন, হ্যাঁ, যদি তোমরা চাও। তখন বিলাল রা. সালাতের ইকামত বললেন, আবু বকর রা. সামনে এগিয়ে গিয়ে সালাত শুরু করলেন। ইতিমধ্যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশরীফ আনলেন এবং কাতার ফাঁক করে সামনে এগিয়ে গিয়ে প্রথম কাতারে দাঁড়ালেন। মুসল্লীগণ ‘তাসফীহ’ করতে লাগলেন। সাহল রা. বললেন, তাসফীহ কি তা তোমরা জান ? তা হল ‘তাসফীক’ (তালি বাজান) আবু বকর রা. সালাত অবস্থায় এদিক সেদিক লক্ষ্য করতেন না। মুসল্লীগণ অধিক তালি বাজালে তিনি সে দিকে লক্ষ্য করামাত্র নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কাতারে দেখতে পেলেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ইশারা করলেন, যথাস্থানে থাক। আবু বকর রা. তখন দু’হাত তুলে আল্লাহ তা’আলার হামদ বর্ণনা করলেন এবং পিছু হেটে চলে এলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে অগ্রসর হয়ে সালাত আদায় করলেন।

হাদীস নং ১১২৯

আমর ইবনে ঈসা রহ………আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা সালাতের (বৈঠকে) আত্তাহিয়্যাতু……..বলতাম, তখন আমাদের একে অপরকে সালামও করতাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনে ইরশাদ করলেন : তোমার বলবে “যাবতীয় মৌখিক, দৈহিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহরই জন্য। হে (মহান) নবী ! আপনার প্রতি সালাম এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত (বর্ষিত) হোক। সালাম আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর সালিহ বান্দাদের প্রতি ; আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এক আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল”। কেননা, তোমরা এরূপ করলে আসমান ও যমীনে আল্লাহর সকল নেক বান্দাকে তোমরা যেন সালাম করলে।

হাদীস নং ১১৩০

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন : (ইমামের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য) পুরুষদের বেলায় তাসবীহ-সুবহানাল্লাহ বলা। তবে মহিলাদের বেলায় ‘তাসফীক’।

হাদীস নং ১১৩১

ইয়াহইয়া রহ……..সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সালাতে (দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে) পুরুষদের বেলায় ‘তাসবীহ’ আর মহিলাদের বেলায় ‘তাসফীহ’।

হাদীস নং ১১৩২

বিশর ইবনে মুহাম্মদ রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, মুসলিমগণ সোমবার (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাতের দিন) ফজরের সালাতে ছিলেন, আবু বকর রা. তাদের নিয়ে সালাত আদায় করছিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়িশা রা. -এর হুজরার পর্দা সরিয়ে তাদের দিকে তাকালেন। তখন তাঁর সারিবদ্ধ ছিলেন। তা দেখে তিনি মৃদু হাসলেন। তখন আবু বকর রা. তাঁর গোড়ালির উপর ভর দিয়ে পিছে সরে আসলেন। তিনি ধারণা করলেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের জন্য আসার ইচ্ছা করছেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখার আনন্দে মুসলিমগণের সালাত ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তখন তিনি সালাত সুসম্পন্ন করার জন তাদের দিকে হাতে ইশারা করলেন। এরপর তিনি হুজরায় প্রবেশ করেন এবং পর্দা ছেড়ে দেন আর সে দিনই তাঁর ওফাত হয়।

হাদীস নং ১১৩৩

লাইস রহ……..বলেন, জাফর রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : এক মহিলা তার ছেলেকে ডাকল। তখন তার ছেলে গীর্জায় ছিল। বলল, জুরাইজ ! ছেলে মনে মনে বলল, ইয়া আল্লাহ ! (এক দিকে) আমার মা (এর ডাক) আর (অপর দিকে) আমার সালাত ! মা আবার ডাকলেন, হে জুরাইজ ! ছেলে বলল, ইয়া আল্লাহ ! আমার মা ও আমার সালাত ! মা আবার ডাকলেন, হে জুরাইজ ! ছেলে বলল, ইয়া আল্লাহ ! আমার মা ও আমার সালাত । মা (বিরক্ত হয়ে) বললেন, ইয়া আল্লাহ ! পতিতাদের সামনে দেখা না যাওয়া পর্যন্ত যেন জুরাইজের মৃত্যু না হয়। এক রাখালিনী যে বকরী চরাতো, সে জুরাইজের গীর্জায় আসা যাওয়া করত। সে একটি সন্তান প্রসব করল। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল-এ সন্তান কার ঔরষের ? সে জবাব দিল, জুরাইজের ঔরষের। জুরাইজ তাঁর গীর্জা থেকে নেমে এসে জিজ্ঞাসা করল, কোথায় সে মেয়েটি, যে বলে যে, তার সন্তানটি আমর ? (সন্তানসহ মেয়েটিকে উপস্থিত করা হলে, নিজে নিদোর্ষ প্রমাণের উদ্দেশ্যে শিশুটিকে লক্ষ্য করে) জুরাইজ বলেন, হে বাবুস ! তোমার পিতা কে ? সে বলল, বকরীর অমুক রাখাল।

হাদীস নং ১১৩৪

আবু নুআইম রহ……….মুআইকীব রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে ব্যক্তি সম্পর্কে বলেছেন, যে সিজদার স্থান থেকে মাটি সমান করে। তিনি বলেন, যদি তোমার একান্তই করতে হয়, তাহলে একবার।

হাদীস নং ১১৩৫

মুসাদ্দাদ রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রচণ্ড গরমে আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সালাত আদায় করতাম। আমাদের কেউ মাটিতে তার চেহারা (কপাল) স্থির রাখতে সক্ষম না হলে সে তার কাপড় বিছিয়ে উহার উপর সিজদা করত।

হাদীস নং ১১৩৬

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত আদায়কালে আমি তাঁর কিবলার দিকে পা ছড়িয়ে রাখতাম, তিনি সিজদা করার সময় আমাকে খোঁচা দিলে আমি পা সরিয়ে নিতাম; তিনি দাঁড়িয়ে গেলে আবার পা ছড়িয়ে দিতাম।

হাদীস নং ১১৩৭

মাহমুদ রহ…………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার সালাত আদায় করার পর বললেন : শয়তান আমার সামনে এসে আমার সালাত বিনষ্ট করার জন্য আমার উপর আক্রমণ করল। তখন আল্লাহ পাক আমাকে তার উপর ক্ষমতা দান করলেন, আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে গলা চেপে ধরলাম। আমার ইচ্ছা হয়েছিল, তাকে কোন স্তম্ভের সাথে বেঁধে রাখি। যাতে তোমরা সকাল বেলা উঠে তাকে দেখতে পাও। তখন সুলাইমান আ.-এর দু’আ আমার মনে পড়ে গেল “ইয়া রব ! আমাকে এমন এক রাজ্য দান করুন যার অধিকারী আমার পরে আর কেউ না হয়”। তখন আল্লাহ তাকে (শয়তানকে) অপমাণিত করে দূর করে দিলেন। নযর ইবনে শুমাইল রহ. বলেন, فذعته শব্দটি ذالসহ অর্থাৎ তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে গলা চেপে ধরলাম এবং فدعته আল্লাহর কালাম يوم يدعون থেকে অর্থাৎ তাদেরকে ধাক্কা মেরে নিয়ে যাওয়া হবে এবং সঠিক হল فدعته তবে ع ও ت অক্ষর দুটি তাশদীদ সহ পাঠ করেছেন।

হাদীস নং ১১৩৮

আদম রহ………আযরাক ইবনে কায়স রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আওয়াজ শহরে হারুরী (খারিজী) সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ছিলাম। যখন আমরা নহরের তীর ছিলাম তখন সেখানে এক ব্যক্তি এসে সালাত আদায় করতে লাগল আর তার বাহনের লাগাম তার হাতে রয়েছে। বাহনটি (ছুটে যাওয়ার জন্য) টানাটানি করতে লাগল, তিনিও তার অনুসরণ করতে লাগলেন। রাবী শুবা রহ. বলেন, তিনি ছিলেন (সাহাবী) আবুবারযাহ আসলামী রা. । এ অবস্থা দেখে এক খারিজী বলে উঠলো, ইয়া আল্লাহ! এ বৃদ্ধকে কিছু করুন। বৃদ্ধ সালাত শেষ করে বললেন, আমি তোমাদের কথা শুনেছি। আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ছয়, সাত কিংবা আট যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি এবং আমি তাঁর সহজীকরণ লক্ষ্য করেছি। আমার বাহনটির সাথে আগপিছ হওয়া বাহনটিকে তার চারণ ভূমিতে ছেড়ে দেওয়ার চাইতে আমার কাছে অধিক প্রিয়। কেননা, তাঁতে আমাকে কষ্টভোগ করতে হবে।

হাদীস নং ১১৩৯

মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার সূর্যগ্রহণ হল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সালাতে) দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘ সূরা পাঠ করলেন, এরপর রুকু করলেন, আর তা দীর্ঘ করলেন। তারপর রুকু সমাপ্ত করে সিজদা করলেন। দ্বিতীয় রাকাআতেও এরূপ করলেন। তারপর বললেন : এ দুটি (চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ) আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্যতম। তোমরা তা দেখলে গ্রহণ মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করবে। আমি আমার এ স্থানে দাঁড়িয়ে, আমাকে যা ওয়াদা করা হয়েছে তা সবই দেখতে পেয়েছি। এমন কি যখন তোমরা আমাকে সামনে এগিয়ে যেতে দেখেছিলে তখন আমি দেখলাম যে, জান্নাতের একটি (আঙ্গুর) গুচ্ছ নেওয়ার ইচ্ছা করছি। আর যখন তোমরা আমাকে পিছনে সরে আসতে দেখেছিলে আমি দেখলাম জাহান্নাম সেখানে আমর ইবনে লুহাইকে যে সারিবাহ প্রথা প্রবর্তন করেছিল।

হাদীস নং ১১৪০

সুলাইমান ইবনে হারব রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের কিবলার দিকে নাকের শ্লেষ্মা দেখতে পেয়ে মসজিদের লোকদের উপর রাগান্বিত হলেন এবং বললেন : আল্লাহ পাক তোমাদের প্রত্যেকের সামনে রয়েছেন, কাজেই তোমাদের কেউ সালাতে থাকাকালে থুথু ফেলবে না বা রাবী বলেছেন, নাক ঝাড়বে না। এ কথা বলার পর তিনি (মিম্বর থেকে) নেমে এসে নিজের হাতে তা ঘষে ঘষে পরিষ্কার করলেন। এবং ইবনে উমর রা. বলেন, তোমাদের কেউ যখন থুথু ফেলে তখন সে যেন তার বা দিকে ফেলে।

হাদীস নং ১১৪১

মুহাম্মদ রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমাদের কেউ যখন সালাতে থাকে, তখন তো সে তার রবের সাথে নিবিড় আলাপে মশগুল থাকে। কাজেই সে যেন তার সামনে বা ডানে থুথু না ফেলে ; তবে (প্রয়োজনে) বাঁ দিকে বা পায়ের নীচে ফেলবে।

হাদীস নং ১১৪২

মুহাম্মদ ইবনে কাসীর রহ………..সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনে, সাহাবীগণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সংগে সালাত আদায় করতেন এবং তাঁরা তাদের লুঙ্গি ছোট হওয়ার কারণে ঘাড়ের সাথে বেঁধে রাখতেন। তাই মহিলাগণকে বলা হল, পুরুষগণ সোজা হয়ে না বসা পর্যন্ত তোমরা (সিজদা থেকে) মাথা তুলবে না।

হাদীস নং ১১৪৩

আবদুল্লাহ ইবনে আবু শায়বাহ রহ……….আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তাঁর সালাত রত অবস্থায় সালাম করতাম। তিনি আমাকে সালামের জওয়াব দিতেন। আমরা (আবিসিনিয়া থেকে) ফিরে এসে তাকে (সালাতরত অবস্থায়) সালাম করলাম। তিনি জওয়াব দিলেন না এবং পরে বললেন : সালাতে অনেক ব্যস্ততা ও নিমগ্নতা রয়েছে।

হাদীস নং ১১৪৪

আবু মামার রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাঁর একটি কাজে পাঠালেন, আমি গেলাম এবং কাজটি সেরে ফিরে এলাম। এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সালাম করলাম। তিনি জওয়াব দিলেন না। এতে আমার মনে এমন খটকা লাগল যা আল্লাহই ভাল জানেন। আমি মনে মনে বললাম, সম্ভবত আমি বিলম্বে আসার কারণে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার উপর অসন্তুষ্ট হয়েছেন। আবার আমি তাকে সালাম করলাম, তিনি জওয়াব দিলেন না। ফলে আমার মনে প্রথম বারের চাইতেও অধিক খটকা লাগল। (সালাত শেষে)) আবার আমি তাকে সালাম করলাম।এবার তিনি সালামের জওয়াব দিলেন এবং বললেন : সালাতে ছিলাম বলে তোমার সালামের জওয়াব দিতে পারিনি। তিনি তখন তাঁর বাহনের পিঠে কিবলা থেকে ভিন্নমুখী ছিলেন।

হাদীস নং ১১৪৫

কুতাইবা রহ………..সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এ সংবাদ পৌঁছল যে, কুবায় বনু আমর ইবনে আওফ গোত্রে কোন ব্যাপার ঘটেছে। তাদের মধ্যে মীমাংসার উদ্দেশ্যে তিনি কয়েকজন সাহাবীসহ বেরিয়ে গেলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েন। ইতিমধ্যে সালাতের সময় হয়ে গেল। বিলাল রা. আবু বকর রা. -এর কাছে এসে বললেন, হে আবু বকর ! নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্মব্যস্ত রয়েছেন। এদিকে সালাতের সময় উপস্থিত। আপনি কি লোকদের ইমামতি করবেন ? তিনি বললেন, হ্যাঁ, যদি তুমি চাও। তখন বিলাল রা. সালাতের ইকামত বললেন এবং কাতার ফাঁক করে সামনে এগিয়ে গিয়ে কাতারে দাঁড়ালেন। মুসল্লীগণ তখন তাসফীহ করতে লাগলেন। সাহল রা. বলেন, তাসফীহ মানে তাসফীক (হাতে তালি দেওয়া) তিনি আরো বললেন, আবু বকর রা. সালাতে এদিক সেদিক তাকাতেন না। মুসল্লীগণ বেশী (হাত চাপড়াতে শুরু) করলে, তিনি লক্ষ্য করে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পেলেন। তিনি তাকে ইশারায় সালাত আদায় করার আদেশ দিলেন। তখন আবু বকর রা. তাঁর দুহাত তুললেন এবং আল্লাহর হামদ বর্ণনা করলেন। তারপর পিছু হেটে পিছনে চলে এসে কাতারে দাঁড়ালেন। আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে এগিয়ে গেলেন এবং মুসল্লীগণকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষ করে তিনি মুসল্লীগণের দিকে মুখ করে বললেন : হে লোক সকল ! তোমাদের কি হয়েছে ? সালাতে কোন ব্যাপার ঘটলে তোমরা হাত চাপড়াতে শুরু কর কেন ? হাত চাপড়ানো তো মেয়েদের জন্য। সালাত রত অবস্থায় কারো কিছু ঘটলে পুরুষরা সুবহানাল্লাহ বলবে। তারপর তিনি আবু বকর রা. -এর দিকে লক্ষ্য করে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আবু বকর ! তোমাকে আমি ইশারা করা সত্ত্বেও কিসে তোমাকে সালাত আদায়ে বাঁধা দিল ? আবু বকর রা. বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা ইবনে আবু কুহাফার জন্য সংগত নয়।

হাদীস নং ১১৪৬

আবু নুমান রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সালাতে কোমরে হাত রাখা নিষেধ করা হয়েছে। হিশাম ও আবু হিলাল রহ. ইবনে সীরীন রহ.-এর মাধ্যমে আবু হুরায়রা রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ১১৪৭

আমর ইবনে আলী রহ…….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোমরে হাত রেখে সালাত আদায় করতে লোকদের নিষেধ করা হয়েছে।

হাদীস নং ১১৪৮

ইসাহক ইবনে মানসুর রহ……….উকবা ইবনে হারিস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে আসরের সালাত আদায় করলাম। সালাম করেই তিনি দ্রুত উঠে তাঁর কোন এক সহধর্মিণীর কাছে গেলেন, এরপর বেরিয়ে এলেন। তাঁর দ্রুত যাওয়া আসার ফলে (উপস্থিত) সাহাবীগণের চেহারায় বিস্ময়ের আভাস দেখে তিনি বললেন : সালাতে আমার কাছে রাখা একটি সোনার টুকরার কথা আমার মনে পড়ে গেল। সন্ধ্যায় বা রাতে তা আমার কাছে থাকবে আমি এটা অপছন্দ করলাম। তাই তা বন্টন করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে ছিলাম।

হাদীস নং ১১৪৯

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ…….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সালাতের আযান হলে শয়তান পিঠ ফিরিয়ে পালায় যাতে সে আযান শুনতে না পায়। তখন তার পশ্চাদ-বায়ু নিঃসরণ হতে থাকে। মুআযযিন আযান শেষে নিরব হলে সে আবার এগিয়ে আসে। আবার ইকামত বলা হলে পালিয়ে যায়। মুআযযিন (ইকামত) শেষ করলে এগিয়ে আসে। তখন সে মুসল্লীকে বলতে থাকে, (ওটা) স্মরণ কর, যে বিষয় তার স্মরণে ছিল না শেষ পর্যন্ত সে কত রাকাআত সালাত আদায় করল তা মনে করতে পারে না। আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান রহ. বলেছেন, তোমাদের কেউ এরূপ অবস্থায় পড়লে (শেষ বৈঠকে) বসা অবস্থায় যেন দুটি সিজদা করে। একথা আবু সালামা রা. আবু হুরায়রা রা. থেকে শুনেছেন।

হাদীস নং ১১৫০

মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু হুরায়রা রা বেশী হাদীস বর্ণনা করেছে। এক ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত হলে আমি জিজ্ঞাসা করলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গতরাতে ইশার সালাতে কোন সূরা পড়েছেন ? লোকটি বলল, আমি জানি না। আমি বললাম, কেন, তুমি কি সে সালাতে উপস্থিত ছিলে না ? সে বলল, হ্যাঁ, ছিলাম। আমি বললাম, কিন্তু আমি জানি তিনি অমুক অমুক সূরা পড়েছেন।

হাদীস নং ১১৫১

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আবদুল্লাহ ইবনে বুহায়না রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন এক সাললাতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’রাকাআত আদায় করে না বসে দাঁড়িয়ে গেলেন। মুসল্লীগণ তাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলেন। যখন তাঁর সালাত সমাপ্ত করার সময় হল এবং আমরা তাঁর সালাম ফিরানোর অপেক্ষা করছিলাম, তখন তিনি সালাম ফিরানোর আগে তাকবীর বলে বসে বসেই দুটি সিজদা করলেন। তারপর সালাম ফিরালেন।

হাদীস নং ১১৫২

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে বুহায়না রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের দু’রাকাআত আদায় করে দাঁড়িয়ে গেলেন। দু’রাকাআতের পর তিনি বসলেন না। সালাত শেষ হয়ে গেলে তিনি দুটি সিজদা করলেন এবং এরপর সালাম ফিরালেন।

হাদীস নং ১১৫৩

আবুল ওয়ালীদ রহ…………আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত পাঁচ রাকাআত আদায় করলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, সালাত কি বৃদ্ধি করা হয়েছে ? তিনি বললেন, এ প্রশ্ন কেন ? (প্রশ্নকারী) বললেন, আপনি তো পাঁচ রাকাআত সালাত আদায় করেছেন। এরপর সালাম ফিরানোর পর দুটি সিজদা করলেন।

হাদীস নং ১১৫৪

আদম রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে যুহর বা আসরের সালাত আদায় করলেন এবং সালাম ফিরালেন। তখন যুল-ইয়াদাইন রা. তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! সালাত কি কম হয়ে গেল ? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীগণকে জিজ্ঞাসা করলেন, সে যা বলছে, তা কি ঠিক ? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ। তখন তিনি আরও দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন। পরে দুটি সিজদা করলেন। সাদ রা. বলেন, আমি উরওয়া ইবনে যুবাইর রা. কে দেখেছি, তিনি মাগরিবের দু’রাআত সালাত আদায় করে সালাম ফিরালেন এবং কথা বললেন। পরে অবশিষ্ট সালাত আদায় করে দুটি সিজদা করলেন। এবং বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করেছেন।

হাদীস নং ১১৫৫

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’রাকাআত আদায় করে সালাত শেষ করলেন। যুল-ইয়াদাইন রা. তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! সালাত কি কম করে দেওয়া হয়েছে, না কি আপনি ভুলে গেছেন ? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, যুল-ইয়াদাইন কি সত্য বলেছে ? মুসল্লীগণ বললেন, হ্যাঁ। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে আরও দু’রাকাআত সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি সালাম ফিরালেন এবং তাকবীর বললেন, পরে সিজদা করলেন, স্বাভাবিক সিজদার মত বা তার চেয়ে দীর্ঘ। এরপর তিনি মাথা তুললেন।

হাদীস নং ১১৫৬

সুলাইমান ইবনে হারব রহ……….সালামা ইবনে আলকামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মুহাম্মদ (ইবনে সীরীন) রহ. কে জিজ্ঞাসা করলাম সিজদায়ে সাহুর পর তাশাহুদ আছে কি ? তিনি বললেন, আবু হুরায়রা রা.এর হাদীসে তা নেই।

হাদীস নং ১১৫৭

হাফস ইবনে উমর রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিকালের কোন এক সালাত দু’রাকাআত আদায় করে সালাম ফিরালেন। মুহাম্মদ রহ. বলেন, আমার প্রবল ধারণা, তা ছিল আসরের সালাত। তারপর মসজিদের একটি কাষ্ঠ খণ্ডের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং উহার উপর হাত রাখলেন। মুসল্লীগণের ভিতরে সামনের দিকে আবু বকর রা. ও উমর রা.ও ছিলেন। তাঁরা উভয়ে তাঁর সাথে কথা বলতে ভয় পাচ্ছিলেন। তাড়াহুড়া-কারী মুসল্লীগণ বেরিয়ে পড়লেন। তাঁরা বলাবলি করতে লাগলেন, সালাত কি কমিয়ে দেয়া হয়েছে ? কিন্তু এক ব্যক্তি, যাকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুল-ইয়াদাইন বলে ডাকতেন, জিজ্ঞাসা করল আপনি কি ভুলে গেছেন, না কি সলাত কমিয়ে দেওয়া হয়েছে ? তিনি বললেন : আমি ভুলিনি আর সালাতও কম করা হয়নি। তখন তিনি দু’রাকাআত সালাত আদায় করে সালাম ফিরালেন। তারপর তাকবীর বলে সিজদা করলেন, স্বাভাবিক সিজদার ন্যায় বা তার চেয়ে দীর্ঘ। তারপর মাথা উঠিয়ে আবার তাকবীর বলে মাথা রাখলেন, অর্থাৎ তাকবীর বলে সিজদায় গিয়ে স্বাভাবিক সিজদার মত অথবা তার চাইতে দীর্ঘ সিজদা করলেন। এরপর মাথা উঠিয়ে তাকবীর বললেন।

হাদীস নং ১১৫৮

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে বুহাইনা আসাদী রা. যিনি বনূ আবদুল মুত্তালিবের সঙ্গে মৈত্রী চুক্তিবদ্ধ ছিলেন তাঁর থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাতে (দু’রাকাআত আদায় করার পর) না বসে দাঁড়িয়ে গেলেন। সালাত পূর্ণ করার পর সালাম ফিরাবার আগে তিনি বসা অবস্থায় ভুলে যাওয়া বৈঠকের স্থলে দু’টি সিজদা সম্পূর্ণ করলেন, প্রতি সিজদায় তাকবীর বললেন। মুসল্লীগণও তাঁর সঙ্গে এ দুটি সিজদা করল। ইবনে শিহাব রহ. থেকে তাকবীরের কথা বর্ণনায় ইবনে জুরাইজ রহ. লায়স রহ.-এর অনুসরণ করেছেন।

হাদীস নং ১১৫৯

মুআয ইবনে ফাযালা রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যখন সালাতের জন্য আযান দেওয়া হয়, তখন শয়তান পিঠ ফিরিয়ে পালায় যাতে আযান শুনতে না পায় আর তার পশ্চাদ-বায়ু সশব্দে নির্গত হতে থাকে। আযান শেষ হয়ে গেলে সে এগিয়ে আসে। আবার সালাতের জন্য ইকামত দেওয়া হলে সে পিঠ ফিরিয়ে পালায়। ইকামত শেষ হয়ে গেলে আবার ফিরে আসে। এমন কি সে সালাত রত ব্যক্তির মনে ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি করে এবং বলতে থাকে, অমুক অমুক বিষয় স্মরণ কর, যা তার স্মরণে ছিল না। এভাবে সে ব্যক্তি কত রাকাআত সালাত আদায় করেছে তা স্মরণ করতে পারে না । তাই, তোমাদের কেউ তিন রাকাআত বা চার রাকাআত সালাত আদায় করেছে, তা মনে রাখতে না পারলে বসা অবস্থায় দুটি সিজদা করবে।\

হাদীস নং ১১৬০

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমাদের কেউ সালাতে দাঁড়ালে শয়তান এসে তাকে সন্দেহে ফেলে, এমনকি সে বুঝতে পারে না যে, সে কত রাকাআত সালাত আদায় করেছে। তোমাদের কারো এ অবস্থা হলে সে যেন বসা অবস্থায় দুটি সিজদা করে।

হাদীস নং ১১৬১

ইয়াহইয়া ইবনে সুলাইমান রহ………কুরাইব রহ. থেকে বর্ণিত, ইবনে আব্বাস রা. মিসওয়ার ইবনে মাখরামা এবং আবদুর রহমান ইবনে আযহার রা. তাকে আয়িশা রা.-এর কাছে পাঠালেন এবং বলে দিলেন, তাকে আমাদের সকলের তরফ থেকে সালাম পৌঁছিয়ে আসরের পরের দু’রাকাআত সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে। তাকে একথাও বলবে যে, আমরা খবর পেয়েছি যে, আপনি সে দু’রাকাআত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। ইবনে আব্বাস রা. সংবাদ আরও বললেন যে, আমি উমর ইবনে খাত্তাব রা.-এর সাথে এ সালাতের কারণে লোকদের মারধোর করতাম। কুরাইব রহ. বলেন, আমি আয়িশা রা.-এর কাছে গিয়ে তাকে তাদের পয়গাম পৌঁছিয়ে দিলাম। তিনি বললেন, উম্মে সালামা রা.-কে জিজ্ঞাসা কর। (কুরাইব রহ. বলেন) আমি সেখান থেকে বের হয়ে তাদের কাছে গেলাম এবং তাদেরকে আয়িশা রা. -এর কথা জানালাম। তখন তাঁরা আমাকে আয়িশা রা.-এর কাছে যে বিষয় নিয়ে পাঠিয়েছিলেন, তা নিয়ে পুনরায় উম্মে সালামা রা.-এর কাছে পাঠালেন। উম্মে সালামা রা. বললেন, আমিও নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তা নিষেধ করতে শুনেছি। অথচ তারপর তাকে তা আদায় করতেও দেখেছি। একদিন তিনি আসরের সালাতের পর আমার ঘরে তাশরীফ আনলেন। তখন আমার কাছে বনূ হারাম গোত্রের আনসারী কয়েকজন মহিলা উপস্থিত ছিলেন। আমি বাদীকে এ বলে তার কাছে পাঠালাম যে, তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে তাকে বলবে, উম্মে সালামা রা. আপনার কাছে জানতে চেয়েছেন, আপনাকে (আসরের পর সালাতের) দু’রাকাআত নিষেধ করতে শুনেছি ; অথচ দেখছি, আপনি তা আদায় করছেন ? যদি তিনি হাত দিয়ে ইশারা করেন, তাহলে পিছনে সরে থাকবে, বাদী তা-ই করল। তিনি ইশারা করলেন, সে পিছনে সরে থাকল। সালাত শেষ করে তিনি বললেন, হে আবু উমায়্যার কন্যা ! আসরের পরের দু’রাকাআত সালাত সম্পর্কে তুমি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছ । আবদুল কায়স গোত্রের কিছু লোক আমার কাছে এসেছিল। তাদের কারণে যুহরের পরের দু’রাকাআত আদায় করা থেকে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। এ দু’রাকাআত সে দু’রাকাআত।

হাদীস নং ১১৬২

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………..সাহল ইবনে সাদ সাঈদী রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে সংবাদ পৌঁছে যে, বনূ আমর ইবনে আওফ -এ কিছু ঘটেছে। তাদের মধ্যে আপোস করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি কয়েকজন সাহাবীসহ বেরিয়ে গেলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েন। ইতিমধ্যে সালাতের সময় হয়ে গেল। বিলাল রা. আবু বকর রা.-এর কাছে এসে বললেন, হে আবু বকর ! নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এদিকে সালাতের সময় হয়ে গিয়েছে, আপনি কি সালাতে লোকদের ইমামতি করতে প্রস্তুত আছেন ? তিনি বললেন, হ্যাঁ, যদি তুমি চাও। তখন বিলাল রা. ইকামত বললেন এবং আবু বকর রা. সামনে এগিয়ে গিয়ে লোকদের জন্য তাকবীর বললেন। এদিকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশরীফ আনলেন এবং কাতারের ভিতর দিয়ে হেটে (প্রথম) কাতারে এসে দাঁড়িয়ে গেলেন। মুসল্লীগণ তখন হাততালি দিতে লাগলেন। আবু বকর রা. -এর অভ্যাস ছিল যে, সালাতে এদিক সেদিক তাকাতেন না। মুসল্লীগণ যখন অধিক পরিমাণে হাততালি দিতে লাগলেন, তখন তিনি সেদিকে তাকালেন এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখতে পেলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ইশারা করে সালাত আদায় করতে থাকার নির্দেশ দিলেন। আবু বকর রা. দু’হাত তুলে আল্লাহর হামদ বর্ণনা করলেন এবং পিছনের দিকে সরে গিয়ে কাতারে দাঁড়ালেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে এগিয়ে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষ করে মুসল্লীগণের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, হে লোক সকল ! তোমাদের কি হয়েছে, সালাতে কোন ব্যাপার ঘটলে তোমরা হাততালি দিতে থাক কেন ? হাততালি তে মেয়েদের জন্য। কারো সালাতের মধ্যে কোন সমস্যা দেখা দিলে সে যেন ‘সুবহানাল্লাহ’ বলে। কারণ, কেউ অন্যকে ‘সুবহানাল্লাহ’ বলতে শুনলে অবশ্যই সেদিকে লক্ষ্য করবে। তারপর তিনি বললেন, হে আবু বকর ! তোমাকে আমি ইশারা করা সত্ত্বেও কিসে তোমাকে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করতে বাধা দিল ? আবু বকর রা. বললেন, কুহাফার ছেলের জন্য এ সমীচীন নয় যে, সে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবে।

হাদীস নং ১১৬৩

ইয়াহইয়া ইবনে সুলাইমান রহ……….আসমা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়িশা রা.-এর কাছে গেলাম, তখন তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন, আর লোকেরাও সালাতে দাঁড়ানো ছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, লোকদের অবস্থা কি? তখন তিনি তাঁর মাথা দ্বারা আকাশের দিকে ইশারা করলেন। আমি বললাম, ইহা কি নিদর্শন ? তিনি আবার তাঁর মাথার ইশারায় বললেন, হ্যাঁ।

হাদীস নং ১১৬৪

ইসমাঈল রহ……… নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর অসুস্থ অবস্থায় তাঁর ঘরে বসে সালাত আদায় করছিলেন । একদল সাহাবী তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে লাগলেন। তিনি তাদের প্রতি ইশারা করলেন, বসে যাও। সালাত শেষ করে তিনি বললেন, ইমাম নির্ধারণ করা হয়েছে তাকে অনুসরণ করার জন্য। কাজেই তিনি রুকু করলে তোমরা রুকু করবে; আর তিনি মাথা তুললে তোমরাও মাথা তুলবে।

জানাযা অধ্যায় (১১৬৫-১৩১২)

হাদীস নং ১১৬৫

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………..আবু যার (গিফারী) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : একজন আগন্তুক (হযরত জিবরীল আ. আমার রবের কাছ থেকে এসে আমাকে খবর দিলেন অথবা তিনি বলেছিলেন, আমাকে সুসংবাদ দিলেন, আমার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক না করা অবস্থায় মারা যাবে, সে জান্নাতে দাখিল হবে। আমি বললাম, যদিও সে যিনা করে থাকে এবং যদিও সে চুরি করে থাকে ? তিনি বললেন, যদিও সে যিনা করে থাকে এবং যদিও সে চুরি করে থাকে।

হাদীস নং ১১৬৬

উমর ইবনে হাফস রহ………আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে আল্লাহর সংগে শিরক রা অবস্থায় মারা যায়, সে জান্নামে প্রবেশ করবে। আমি বললাম, যে আল্লাহর সংগে কোন কিছুর শিরক না করা অবস্থায় মারা যায়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

হাদীস নং ১১৬৭

আবুল ওয়ালীদ রহ………বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাতটি বিষয়ে আমাদের আদেশ করেছেন এবং সাতটি বিষয়ে আমাদের নিষেধ করেছেন। তিনি আমাদের আদেশ করেছেন – ১. জানাযার অনুগমন করতে, ২. অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজ-খববর নিতে, ৩. দাওয়াত দাতার দাওয়াত কবুল করতে, ৪. মাজলুমকে সাহায্য করতে, ৫. কসম থেকে দায়মুক্ত করতে, ৬. সালামের জওয়াব দিতে এবং ৭. হাঁচিদাতাকে (ইয়ারহামুকাল্লাহ বলে) খুশী করতে। আর তিনি নিষেধ করেছেন – ১. রূপার পাত্র, ২. সোনার আংটি, ৩. রেশম, ৪. দীবাজ, ৫. কাসসী (কেস রেশম), ৬. ইসতিবরাক (তসর জাতীয় রেশম) ব্যবহার করতে।

হাদীস নং ১১৬৮

মুহাম্মদ রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, এক মুসলিমের প্রতি অপর মুসলিমের হক পাঁচটি : ১. সালামের জওয়াব দেওয়া, ২. অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজ-খবর নেওয়া, ৩. জানাযার অনুগমন করা, ৪. দাওয়াত কবুল করা এবং ৫. হাঁচিদাতাকে খুশী করা। আবদুর রাজ্জাক রহ. আমর ইবনে আবু সালামা রহ এর অনুসরণ করেছেন। আবদুর রাজ্জাক রহ. বলেন, আমাকে মামার রহ. -এরূপ অবহিত করেছেন এবং এ হাদীস সালামা রহ. উকাইল রহ. থেকে রিওয়ায়েত করেছেন।

হাদীস নং ১১৬৯

বিশর ইবনে মুহাম্মদ রহ…………আবু সালামা রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়িশা রা. আমাকে বলেছেন, (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাতের পর খবর পেয়ে) আবু বকর রা. ‘সুনহ’-এ অবস্থিত তাঁর বাড়ী থেকে ঘোড়ায় চড়ে চলে এলেন এবং নেমে মসজিদে প্রবেশ করলেন। সেখানে লোকদের সাথে কোন কথা না বলে আয়িশা রা. -এর ঘরে প্রবেশ করে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিকে অগ্রসর হলেন। তখন তিনি একখানি ‘হিবারহ’ ইয়ামানী চাদর দ্বারা আবৃত ছিলেন। আবু বকর রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মুখমণ্ডল উম্মুক্ত করে তাঁর উপর ঝুঁকে পড়লেন এবং চুমু খেলেন, তারপর কাঁদতে লাগলেন এবং বললেন, ইয়া নাবী আল্লাহ ! আমার পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আল্লাহ আপনার জন্য দুই মৃত্যু একত্রিত করবেন না। তবে যে মৃত্যু আপনার জন্য নির্ধারিত ছিল তা তো আপনি কবুল করেছেন। আবু সালামা রা. বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. আমাকে খবর দিয়েছেন যে, (তারপর) আবু বকর রা. বেরিয়ে এলেন। তখন উমর রা. লোকদের সাথে কথা বলছিলেন। আবু বকর রা. তাকে বললেন, বসে পড়ুন। তিনি তা মানলেন না। আবু বকর রা. তাকে বললেন, বসে পড়ুন, তিনি তা মানলেন না। তখন আবু বকর রা. কালিমায়ে শাহাদাতের দ্বারা (বক্তব্য) আরম্ভ করলেন। লোকেরা উমর রা.-কে ছেড়ে তাঁর দিকে আকৃষ্ট হন। আবু বকর রা. বললেন……..আম্মা বাদু, তোমাদের মধ্যে যারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইবাদত করতে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যই ইন্তিকাল করেছেন। আর যারা মহান আল্লাহর ইবাদত করতে, নিশ্চয় আল্লাহ চিরঞ্জীব, অমর। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন “মুহাম্মদ একজন রাসূল মাত্র……….শাকিরীন পর্যন্ত। (৩ : ১১৪) আল্লাহর কসম, মনে হচ্ছিল যেন আবু বকর রা.-এর তিলাওয়াত করার পূর্ব পর্যন্ত লোকদের জানাই ছিল না যে, আল্লাহ পাক এ আয়াত নাযিল করেছেন। এখনই যেন লোকেরা আয়াত খানা তার কাছ থেকে পেলেন। প্রতিটি মানুষকেই তখন ঐ আয়াত তিলাওয়াত করতে শোনা গেল।

হাদীস নং ১১৭০

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……….আনসারী মহিলা ও নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বায়আতকারী উম্মুল আলা রা. থেকে বর্ণিত, (হিজরতের পর) কোরআর মাধ্যমে মুহাজিরদের বন্টন করা হচ্ছিল। তাঁতে উসমান ইবনে মাযউন রা. আমাদের ভাগে পড়লেন, আমরা (সাদরে) তাকে আমাদের বাড়ীতে স্থান দিলাম। এক সময় তিনি সেই রোগে আক্রান্ত হলেন, যাতে তাঁর মৃত্যু হল। যখন তাঁর মৃত্যু হল এবং তাকে গোসল করিয়ে কাফনের কাপড় পরানো হল, তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবেশ করলেন। তখন আমি বললাম, হে আবুস-সায়িব, আপনার উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক ! আপনার সম্বন্ধে আমার সাক্ষ্য এই যে, আল্লাহ আপনাকে সম্মানিত করেছেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তুমি কি করে জানলে যে, আল্লাহ তাকে সম্মানিত করেছেন ? আমি বললাম, আমার পিতা আপনার জন্য কুরবান, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তাহলে আল্লাহ আর কাকে সম্মানিত করবেন ? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তাঁর ব্যাপার তো এই যে, নিশ্চয় তাঁর মৃত্যু হচ্ছে এবং আল্লাহর কসম ! আমি তাঁর জন্য মঙ্গল কামনা করি। আল্লাহর কসম ! আমি জানি না আমার সঙ্গে কী ব্যবহার করা হবে, অথচ আমি আল্লাহর রাসূল । সেই আনসারী মহিলা বলেন, আল্লাহ কসম ! এরপর আর কোন দিন আমি কোন ব্যক্তি সম্পর্কে পবিত্র বলে মন্তব্য করব না।

হাদীস নং ১১৭১

সাঈদ ইবনে উফাইর রহ……….লায়স রহ. সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেন। আর নাফি ইবনে ইয়াযীদ রহ উকাইল রহ. সূত্রে বলেন ‘তার সঙ্গে কি ব্যবহার করা হবে?’ শুয়াইব, আমর ইবনে দীনার ও মামার রহ. উকাইল রহ.-এর অনুসরণ করেছেন।

হাদীস নং ১১৭২

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (উহুদ যুদ্ধে) আমার পিতা (আবদুল্লাহ রা.) শহীদ হয়ে গেলে আমি তাঁর মুখমণ্ডল থেকে কাপড় সরিয়ে কাঁদতে লাগলাম। লোকেরা আমাকে নিষেধ করতে লাগল। কিন্তু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নিষেধ করেন নি। আমার ফুফী ফাতিমা রা.ও কাঁদতে লাগলেন। এতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তুমি কাঁদ বা না-ই কাঁদ (উভয় সমান) তোমরা তাকে তুলে নেওয়া পর্যন্ত ফেরেশতাগণ তাদের ডানা দিয়ে ছায়া বিস্তার করে রেখেছেন। ইবনে জুরাইজ রহ. মুহাম্মদ ইবেন মুনকাদির রহ. সূত্রে জাবির রা. থেকে হাদীস বর্ণনায় শুবা রা. -এর অনুসরণ করেছেন।

হাদীস নং ১১৭৩

ইসমাঈল রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নাজাশী যে দিন মারা যান সেদিন-ই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মৃত্যু সংবাদ দেন এবং জানাযার স্থানে গিয়ে লোকদের কাতারবদ্ধ করে চার তাকবীর আদায় করলেন।

হাদীস নং ১১৭৪

আবু মামার রহ………..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মূতা যুদ্ধের অবস্থা বর্ণনায়) বললেন : যায়েদ রা. পতাকা বহন করেছে তারপর শহীদ হয়েছে। তারপর জাফর রা. (পতাকা) হাতে নিয়েছে, সেও শহীদ হয়। তারপর আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রা. (পতাকা) ধারণ করে এবং সেও শহীদ হয়। এ সংবাদ বলছিলেন এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দু’চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছিল। এরপর খালিদ ইবনে ওয়ালিদ রা. পরামর্শ ছাড়াই (পতাকা) হাতে তুলে নেয় এবং তাঁর দ্বারা বিজয় সূচিত হয়।

হাদীস নং ১১৭৫

মুহাম্মদ রহ…………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি মারা গেল। যার অসুস্থতার সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খোঁজ-খবর নিতেন। তার মৃত্যু হয় এবং রাতেই লোকেরা তাকে দাফন করেন। সকাল হলে তাঁরা (এ বিষয়ে) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে অবহিত করেন। তিনি বললেন : আমাকে সংবাদ দিতে তোমাদের কিসে বাঁধা দিল ? তারা বলল, তখন ছিল রাত এবং ঘোর অন্ধকার। তাই আপনাকে কষ্ট দেওয়া আমরা পছন্দ করিনি। তিনি ঐ ব্যক্তির কবরের কাছে গেলেন এবং তাঁর উপর সালাতে জানাযা আদায় করলেন।

হাদীস নং ১১৭৬

আবু মামার রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কোন মুসলিমের তিনটি সন্তান সাবালিগ হওয়ার আগে মারা গেলে তাদের প্রতি তাঁর রহমত স্বরূপ অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা ঐ ব্যক্তিকে জান্নাতে দাখিল করাবেন।

হাদীস নং ১১৭৬

আবু মামার রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কোন মুসলিমের তিনটি সন্তান সাবালিগ হওয়ার আগে মারা গেলে তাদের প্রতি তাঁর রহমত স্বরূপ অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা ঐ ব্যক্তিকে জান্নাতে দাখিল করাবেন।

হাদীস নং ১১৭৮

আলী রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কোন মুসলিমের তিনটি (নাবালিগ) সন্তান মারা গেল, তারপরও সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে-এমন হবে না। তবে শুধু কসম পূর্ণ হওয়ার পরিমাণ পর্যন্ত। আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) বহ. বলেন, আল্লাহ তা’আলার ইরশাদ : “তোমাদের প্রত্যেকেই তা অতিক্রম করবে”।

হাদীস নং ১১৭৯

আদম রহ…………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি কবরের কাছে উপস্থিত এক মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, সে তখন কাঁদছিল। তখন তিনি বললেন : আল্লাহকে ভয় কর এবং সবর কর।

হাদীস নং ১১৮০

ইসমাঈল ইবনে আবদুল্লাহ রহ……..উম্মে আতিয়্যা আনসারী রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কন্যা (যায়নাব রা.-এর ইন্তিকাল হলে তিনি আমাদের কাছে এসে বললেন : তোমরা তাকে তিন, পাঁচ প্রয়োজন মনে করলে তার চাইতে অধিকবার বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল দাও। শেষবার কর্পূর বা (তিনি বলেছেন) কিছু কর্পূর ব্যবহার করবে। তোমরা শেষ করে আমাকে জানাও। আমরা শেষ করার পর তাকে জানালাম। তখন তিনি তাঁর চাদরখানা আমাদের দিয়ে বললেন : এটি তাঁর গায়ের সাথে জড়িয়ে দাও।

হাদীস নং ১১৮১

মুহাম্মদ রহ………উম্মে আতিয়্যা আনসারী রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কন্যা (যায়নাব রা. এর ইন্তিকাল হলে তিনি আমাদের কাছে এসে বললেন : তোমরা তাকে তিন, পাঁচ প্রয়োজন মনে করলে তার চাইতে অধিকবার বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল দাও। শেষবার কর্পূর বা (তিনি বলেছেন) কিছু কর্পূর ব্যবহার করবে। তোমরা শেষ করে আমাকে জানাও। আমরা শেষ করার পর তাকে জানালাম। তখন তিনি তাঁর চাদরখানা আমাদের দিয়ে বললেন : এটি তাঁর ভিতরের কাপড় হিসেবে পরাও। আইয়ূব রহ. বলেছেন, হাফসা রহ. আমাকে মুহাম্মদ বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস শুনিয়েছেন। তবে তাঁর হাদীসে রয়েছে যে, তাকে বেজোড় সংখ্যায় গোসল দিবে। আরও রয়েছে, তিনবার, পাঁচবার অথবা সাতবার করে আরো তাঁতে রয়েছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “তোমরা তার ডান দিক থেকে এবং তার উযূর স্থানসমূহ থেকে শুরু করবে”। তাঁতে একথাও রয়েছে (বর্ণনাকারিণী) উম্মে আতিয়্যা রা. বলেছেন, আমরা তার চুলগুলি আচড়ে তিনটি বেণী করে দিলাম।

হাদীস নং ১১৮২

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..উম্মে আতিয়্যাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কন্যার গোসলের ব্যাপারে ইরশাদ করেন : তোমরা তাঁর ডান দিক থেকে এবং উযূর স্থানসমূহ থেকে শুরু কর।

হাদীস নং ১১৮৩

ইয়াহইয়া ইবনে মূসা রহ………উম্মে আতিয়্যাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা (যায়নাব রা.)-কে গোসল দিতে যাচ্ছিলাম, গোসল দেওয়ার সময় তিনি আমাদের বলেন : তোমরা তাঁর ডান দিক থেকে এবং উযূর স্থানসমূহ থেকে শুরু করবে।

হাদীস নং ১১৮৪

আবদুর রহমান ইবনে হাম্মাদ রহ………..উম্মে আতিয়্যাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কন্যার ইন্তিকাল হলে তিনি আমাদের বললেন : তোমরা তাকে তিনবার পাঁচবার অথবা যদি তোমরা প্রয়োজনীয় মনে কর, তবে তার চাইতে অধিকবার গোসল দাও। তোমরা শেষ করে আমাকে জানাবে। আমরা শেষ করে তাকে জানালাম। তখন তিনি তাঁর কোমর থেকে তাঁর চাদর (খুলে দিয়ে) বললেন : এটি তাঁর ভিতরের কাপড় হিসেবে পরিয়ে দাও।

হাদীস নং ১১৮৫

হামিদ ইবনে উমর রহ………..উম্মে আতিয়্যাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কন্যাগণের মধ্যে একজনের ইন্তিকাল হল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে গেলেন এবং বললেন : তোমরা তাকে তিনবার পাঁচবার অথবা যদি তোমরা প্রয়োজনীয় মনে কর, তবে তার চাইতে অধিকবার বরই পাতাসহ পানি দ্বারা গোসল দাও। শেষবার কর্পূর (অথবা তিনি বলেন) কিছু কর্পূর ব্যবহার করবে। গোসল শেষ করে আমাকে জানাবে। উম্মে আতিয়্যাহ রা. বলেন, আমরা শেষ করে তাকে জানালাম। তখন তিনি তাঁর চাদর আমাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন : এটি তাঁর ভিতরের কাপড় হিসেবে পরিয়ে দাও। আইয়ূব রহ. হাফসা রহ. সূত্রে উম্মে আতিয়্যাহ রা. থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন এবং তাঁতে তিনি (উম্মে আতিয়্যাহ রা. বলেছেন, তিনি ইরশাদ করেছিলেন : তাকে তিন, পাঁচ, সাত বা প্রয়োজনবোধে তার চাইতে অধিকবার গোসল দাও। হাফসা রহ. বলেন, আতিয়্যাহ রা. বলেন, আমরা তাঁর মাথার চুলকে তিনটি বেণী বানিয়ে দেই।

হাদীস নং ১১৮৬

আহমদ রহ………উম্মে আতিয়্যাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কন্যার মাথার চুল তিনটি বেণী করে দেন। তাঁরা তা খুলেছেন, এরপর তা ধুয়ে তিনটি বেণী করে দেন।

হাদীস নং ১১৮৭

আহমদ রহ……..আইয়্যূব রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনে সীরীন র.-কে বলতে শুনেছি যে, আনসারী মহিলা উম্মে আতিয়্যাহ রা. আসলেন, যিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে বায়আতকারীদের অন্যতম। তিনি তাঁর এক ছেলে দেখার জন্য দ্রুততার সাথে বসরায় এসেছিলেন, কিন্তু তিনি তাকে পাননি। তখন তিনি আমাদের হাদীস শুনালেন। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে তাশরীফ নিয়ে আসেন, তখন আমরা তাঁর কন্যাকে গোসল দিচ্ছিলাম। তিনি বললেন : তোমরা তাকে তিনবার, পাঁচবার, অথবা প্রয়োজনবোধে তার চাইতে অধিকবার বরই পাতাসহ পানি দ্বারা গোসল দাও। আর শেষবারে কর্পুর দিও। তোমরা শেষ করে আমাকে জানাবে। তিনি বলেন, আমরা যখন শেষ করলাম, তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চাদর আমাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন : এটাকে তাঁর গায়ের সাথে জড়িয়ে দাও। উম্মে আতিয়্যাহ রা. -এর বেশী বর্ণনা করেন নি। (আইয়্যূব রহ. বলেন) আমি জানিনা, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কোন কন্যা ছিলেন ? তিনি বলেন, ‘ইশআর’ অর্থ গায়ের সাথে জড়িয়ে দাও। ইবনে সীরীন রহ. মহিলা সম্পর্কে এই রূপই আদেশ করতেন যে, ভিতরের কাপড় (চাদরের মত পূর্ণ শরীরে) জড়িয়ে দিবে ইযারের মত ব্যবহার করবে না।

হাদীস নং ১১৮৮

কাবীসা রহ……..উম্মে আতিয়্যাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কন্যার কেশগুচ্ছ বেণী পাকিয়ে দিয়েছিলাম, অর্থাৎ তিনটি বেণী। ওয়াকী রহ. বলেন, সুফিয়ান রহ. বলেছেন, মাথার সামনের অংশে একটি বেণী এবং দু’পাশে দুটি বেণী।

হাদীস নং ১১৮৯

মুসাদ্দাদ রহ……….উম্মে আতিয়্যাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যাদের মধ্যে একজনের ইন্তিকাল হলে। তিনি আমাদের নিকট এসে বললেন : তোমরা তাকে বরই পাতার পানি দিয়ে বেজোড় সংখ্যক তিনবার পাঁচবার অথবা প্রয়োজনবোধে ততোধিকবার গোসল দাও। শেষবার কর্পূর অথবা তিনি বলেছিলেন কিছু কর্পূর ব্যবহার করবে। তোমরা গোসল শেষ করে আমাকে জানাবে। আমরা শেষ করে তাকে জানালাম। তখন তিনি তাঁর চাদর আমাদের দিকে এগিয়ে দিলেন, আমরা তাঁর মাথার চুলগুলো তিনটি বেণী করে পিছনে রেখে দিলাম।

হাদীস নং ১১৯০

মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তিনখানা ইয়ামানী সাহুলী সাদা সূতী কাপড় দিয়ে কাফন দেওয়া হয়। তার মধ্যে কামীস এবং পাগড়ী ছিল না।

হাদীস নং ১১৯১

আবু নুমান রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আরাফাতে ওয়াকুফ অবস্থায় হঠাৎ তার উটনী থেকে পড়ে যায়। এতে তাঁর ঘাড় মটকে গেল অথবা রাবী বলেছেন, তাঁর ঘাড় মটকিয়ে দিল। (এতে সে মারা যায়)। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তাকে বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল করাও এবং দু’ কাপড়ে তাকে কাফন দাও। তাকে সুগন্ধি লাগাবে না এবং তাঁর মাথা ঢাকবে না। কেননা, কিয়ামতের দিন সে তালবিয়া পাঠ করতে করতে উত্থিত হবে।

হাদীস নং ১১৯২

কুতাইবা রহ…….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে আরাফাতে ওয়াকুফ (অবস্থান) কালে হঠাৎ তার সাওয়ারী থেকে পড়ে যায়। ফলে তার ঘাড় মটকে গেল অথবা রাবী বলেন, দ্রুত মৃত্যুমুখে ফেলে দিল। (ফলে তিনি মারা গেলেন)। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তাকে বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল করাও এবং দু’ কাপড়ে তাকে কাফন দাও ; তাকে সুগন্ধি লাগাবে না এবং তার মাথা আবৃত করবে না। কেননা, আল্লাহ পাক কিয়ামতের দিন তাকে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উত্থিত করবেন।

হাদীস নং ১১৯৩

আবু নামান রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তির উট তার ঘাড় মটকে দিল। (ফলে সে মারা গেল)। আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সংগে ছিলাম। সে ছিল ইহরাম অবস্থায় । তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তাকে বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল করাও এবং দু’ কাপড়ে তাকে কাফন দাও। তাকে সুগন্ধি লাগাবে না এবং তার মাথা আবৃত করো না। কেননা, আল্লাহ পাক কিয়ামতের দিন তাকে মুলাব্বিদ অবস্থায় উঠাবেন।

হাদীস নং ১১৯৪

মুসাদ্দাদ রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে আরফাতে অবস্থান করছিল। সে তার সাওয়ারী থেকে পড়ে গেল। (পরবর্তী অংশের বর্ণনায়) আইয়্যূব রহ. বলেন, তার ঘাড় মটকে দিল। আর আমর রহ. বলেন, তাকে দ্রুত মৃত্যুমুখে ঠেলে দিল। ফলে সে মারা গেল। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল দাও এবং দু’ কাপড়ে তাকে কাফন দাও। তাকে সুগন্ধি লাগাবে না এবং তার মাথাও আবৃত করবে না। কেননা, তাকে কিয়ামতের দিন উত্থিত করা হবে এ অবস্থায় যে, আইয়্যূব রহ. বলেছেন, সে তালবিয়া পাঠ করছে আর আমর রহ. বলেন, সে তালবিয়া পাঠরত।

হাদীস নং ১১৯৫

মুসাদ্দাদ রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ ইবনে উবাই (মুনাফিক সর্দার) এর মৃত্যু হলে তার পুত্র (যিনি সাহাবী ছিলেন) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, আপনার জামাটি আমাকে দান করুন। আমি তা দিয়ে আমার পিতার কাফন পরাতে ইচ্ছা করি। আর আপনি তার জানাযা পড়বেন এবং তার জন্য মাগফিরাত কামনা করবেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জামাটি তাকে দিয়ে দিলেন এবং বললেন : আমাকে সংবাদ দিও, আমি তার জানাযা আদায় করব। তিনি তাকে সংবাদ দিলেন। যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযা আদায়ের ইচ্ছা করলেন, তখন উমর রা. তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন : আল্লাহ কি আপনাকে মুনাফিকদের জানাযা আদায় করতে নিষেধ করেন নি ? তিনি বললেন : আমাকে তো দু’টির মধ্যে কোন একটি করার ইখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। (আল্লাহ তা’আলা বলেছেন) আপনি তাদের (মুনাফিকদের) জন্য মাগফিরাত কামনা করুন বা মাগফিরাত কামনা না-ই করুন (একই কথা) আপনি যদি সত্তর বারও তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করেন; কখনো আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন না। কাজেই তিনি তার জানাযা পড়লেন, তারপর নাযিল হল : “তাদের কেউ মারা গেলে কখনও আপনি তাদের জানাযা আদায় করবেন না”।

হাদীস নং ১১৯৬

মালিক ইবনে ইসমাঈল রহ……….জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে দাফন করার পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার (কবরের) কাছে এলেন এবং তাকে বের করলেন। তারপর তার উপর থুথু দিলেন, আর নিজের জামাটি তাকে পরিয়ে দিলেন।

হাদীস নং ১১৯৭

আবু নুআইম রহ………..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তিনখানা সূতী সাদা সাহুলী (ইয়ামানী) কাপড়ে কাফন দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে কামীস এবং পাগড়ী ছিল না।

হাদীস নং ১১৯৮

মুসাদ্দাদ রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তিনখানা কাপড় দিয়ে কাফন দেওয়া হয়েছে, তাতে কামীস ও পাগড়ী ছিল না। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, আবু নুআইম রহ. ‘সালাসাতুন’ শব্দটি বলেন নি। আর আবদুল্লাহ ইবনে ওয়ালীদ রহ. থেকে হাদীস বর্ণনায় ‘সালাসাতুন’ শব্দটি বলেছেন।

হাদীস নং ১১৯৯

ইসমাঈল রহ………..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তিনখানা সাদা সাহুলী কাপড় দিয়ে কাফন দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে কোন কামীস ও পাগড়ী ছিল না।

হাদীস নং ১২০০

আহমদ ইবনে মুহাম্মদ মাক্কী রহ………সাদ রহ.-এর পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আবদুর রহমান ইবনে আওফ রা. -কে খাবার দেওয়া হল। তখন তিনি বললেন, মুসআব ইবনে উমাইর রা. শহীদ হন আর তিনি আমার চাইতে শ্রেষ্ঠ ছিলেন অথচ তাঁর কাফনের জন্য একখানা চাদর ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় নি। হামযা রা. বা অপর এক ব্যক্তি শহীদ হন, তিনিও ছিলেন আমার চাইতে শ্রেষ্ঠ, অথচ তাঁর কাফনের জন্যও একখানা চাদর ছাড়া কিছুই পাওয়া যায়নি। তাই আমার আশংকা হয়, আমাদের নেক আমলের বিনিময় আমাদের এ পার্থিব জীবনে আগেই দেয়া হল। তারপর তিনি কাঁদতে লাগলেন।

হাদীস নং ১২০১

মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল রহ………ইবরাহীম রহ. থেকে বর্ণিত, একদা আবদুর রহমান ইবনে আওফ রা.-কে খাদ্য পরিবেশন করা হল, তখন তিনি সিয়াম পালন করছিলেন। তিনি বললেন, মুসআব ইবনে উমাইর রা. শহীদ হন। তিনি ছিলেন, আমার চাইতে শ্রেষ্ঠ। (অথচ) তাকে এমন একখানা চাদর দিয়ে কাফন দেয়া হল যে, তাঁর মাথা ঢাকলে তাঁর দু’ পা বাইরে থাকে আর দু’ পা ঢাকলে মাথা বাইরে থাকে । (বর্ণনাকারী বলেন) আমার মনে পড়ে, তিনি আরও বলেছিলেন, হামযা রা. শহীদ হন। তিনিও ছিলেন আমার চাইতে শ্রেষ্ঠ। তারপর আমাদের জন্য পৃথিবীতে অত্যাধিক প্রাচুর্য দেওয়া হয়েছে। আশংকা হয় যে, আমাদের নেক আমলগুলো (এর বিনিময়ে) আমাদের আগেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপর তিনি কাঁদতে লাগলেন, এমনকি খাদ্যও পরিহার করলেন।

হাদীস নং ১২০২

আমর ইবনে হাফস ইবনে গিয়াস রহ……….খাব্বাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে মদীনা হিজরত করেছিলাম, এতে আল্লাহর সন্তুষ্টি চেয়েছিলাম। আমাদের প্রতিদান আল্লাহর দরবারে নির্ধারিত হয়ে আছে। তারপর আমাদের মধ্যে অনেকে শহীদ হয়েছেন। কিন্তু তাঁরা তাদের বিনিময়ের কিছুই ভোগ করে যান নি। তাদেরই একজন মুসআব ইবনে উমাইর রা. আর আমাদের মধ্যে অনেক এমনও রয়েছেন যাদের অবদানের ফল পরিপক্ক হয়েছে। আর তাঁরা তা ভোগ করছেন। মুসআব রা. উহুদের দিন শহীদ হলেন। আমরা তাকে কাফন দেওয়ার জন্য এমন একখানা চাদর ব্যতীত আর কিছুই পেলাম না; যা দিয়ে তাঁর মাথা ঢাকলে তাঁর দু’ পা বাইরে থাকে আর তাঁর দু’ খানা পায়ের উপর ইযখির দিয়ে দিতে আমাদের নির্দেশ দিলেন।

হাদীস নং ১২০৩

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ………সাহল রা. থেকে বর্ণিত, এক মহিলা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে একখানা বুরদাহ (চাদর) নিয়ে এলেন যার সাথে ঝালর যুক্ত ছিল। সাহল রা. বললেন, তোমরা জান, বুরদাহ কি ? তারা বলল, চাদর। সাহল রা. বললেন, ঠিকই। মহিলা বললেন, চাদরখানা আমি নিজ হাতে বুনছি এবং তা আপনার পরিধানের জন্য নিয়ে এসেছি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা গ্রহণ করলেন এবং তাঁর চাদরের প্রয়োজনও ছিল। তারপর তিনি তা ইযাররূপে পরিধান করে আমাদের সামনে তাশরীফ আনেন। তখন জনৈক ব্যক্তি তার সৌন্দর্য বর্ণনা করে বললেন, বাহ ! এ যে কত সুন্দর। আমাকে তা পড়ার জন্য দান করুন। সহাবীগণ বললেন, তুমি ভাল করনি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা তাঁর প্রয়োজনে পরেছেন : তবুও তুমি তা চেয়ে বসলে। অথচ তুমি জান যে, তিনি কাউকে বিমুখ করেন না। ঐ ব্যক্তি বলল, আল্লাহর কসম ! আমি তা পরার উদ্দেশ্যে চাইনি। আমার চাওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য যেন তা আমার কাফন হয়। সাহল রা. বলেন, শেষ পর্যন্ত তা তাঁর কাফনই হয়েছিল।

হাদীস নং ১২০৪

কাবীসা ইবনে উকবা রহ ………..উম্মে আতিয়্যাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জানাযার অনুগমন করতে আমাদের নিষেধ করা হয়েছে, তবে আমাদের উপর কড়াকড়ি করা হয়নি।

হাদীস নং ১২০৫

মুসাদ্দাদ রহ………..মুহাম্মদ ইবনে সীরীন রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উম্মে আতিয়্যাহ রা. -এর এক পুত্রের ইন্তিকাল হল। তৃতীয় দিনে তিনি হলুদ বর্ণের সুগন্ধি আনিয়ে ব্যবহার করলেন, আর বললেন, স্বামী ব্যতীত অন্য কারো জন্য তিন দিনের বেশী শোক করতে আমাদের নিষেধ করা হয়েছে।

হাদীস নং ১২০৬

হুমাইদী রহ………যায়নাব বিনতে আবু সালামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন শাম থেকে আবু সুফিয়ান রা. -এর মৃত্যু সংবাদ পৌঁছল, তার তৃতীয় দিন উম্মে হাবীবা রা. হলুদ বর্ণের সুগন্ধি আনলেন এবং তাঁর উভয় গাল ও বাহুতে মাখলেন। তারপর বললেন, অবশ্য আমার এর কোন প্রয়োজন ছিল না, যদি আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে না শুনতাম যে স্ত্রীলোক আল্লাহ এবং কিয়ামতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে তার পক্ষে স্বামী ব্যতীত অন্য কোন মৃত ব্যক্তির জন্য তিন দিনের বেশী শোক পালন করা হালাল নয়। অবশ্য স্বামীর জন্য সে চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে।

হাদীস নং ১২০৭

ইসমাঈল রহ……….যায়নাব বিনতে আবু সালামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী উম্মে হাবীবা রা.-এর কাছে গেলাম। তখন তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে স্ত্রীলোক আল্লাহ এবং কিয়ামতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে তার পক্ষে কোন মৃত ব্যক্তির জন্য তিন দিনের বেশী শোক পালন করা হালাল নয়। তবে স্বামীর জন্য চার মাস দশ দিন (হালাল)। তারপর যায়নাব বিনতে জাহাশ রা.-এর ভাইয়ের মৃত্যু হলে আমি তাঁর কাছে গেলাম। তখন তিনি কিছু সুগন্ধি আনিয়ে তা ব্যবহার করলেন। এরপর বললেন, সুগন্ধি ব্যবহারে আমার কোন প্রয়োজন নেই, তবে যেহেতু আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং কিয়ামতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে এমন কোন স্ত্রীলোকের পক্ষে কোন মৃত ব্যক্তির জন্য তিন দিনের বেশী শোক পালন করা জায়েয নয়। তবে স্বামীর জন্য চার মাস দশ দিন (পালন করবে)।

হাদীস নং ১২০৮

আদম রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যিনি কবরের পাশে কাঁদছিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং সবর কর। মহিলাটি বললেন, আমার কাছ থেকে চলে যান। আপনার উপর তো আমার মত মসিবত আসেনি। তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে চিনতে পারেন নি। পরে তাকে বলা হল, তিনি তো নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তখন তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দুয়ারে হাজির হলেন, তাঁর কাছে কোন পাহারাদার পেলেন না। তিনি আরয করলেন, আমি আপনাকে চিনতে পারিনি। তিনি বললেন : সবর তো বিপদের প্রথম অবস্থাতেই।

হাদীস নং ১২০৯

আবদান ও মুহাম্মদ রহ………..উসামা ইবনে যায়েদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কন্যা (যায়নাব) তাঁর খিদমতে লোক পাঠালেন যে, আমার এক পুত্র মুমুর্ষ অবস্থায় রয়েছে, তাই আপনি আমাদের এখানে আসুন। তিনি বলে পাঠালেন, (তাকে) সালাম দিবে এবং বলবে : আল্লাহরই অধিকারে যা কিছু তিনি নিয়ে যান আর তাঁরই অধিকারে যা কিছু তিনি দান করেন। তাঁর কাছে সবকিছুরই একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। কাজেই সে যেন সবর করে এবং সাওয়াবের আশায় থাকে। তখন তিনি তাঁর কাছে কসম দিয়ে পাঠালেন, তিনি যেন অবশ্যই আসেন। তখন তিনি দাঁড়ালেন এবং তাঁর সাথে ছিলেন সাদ ইবনে উবাদা, মুআয ইবনে জাবাল, উবাই ইবনে কাব, যায়েদ ইবনে সাবিত রা. এবং আরও কয়েকজন। তখন শিশুটিকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে তুলে দেওয়া হল । তখন তার জান ছটফট করছিল। রাবী বলেন, আমার ধারনা যে, তিনি এ বলেছিলেন, যেন তার শ্বাস মশকের মত (আওয়াজ হচ্ছিল)। আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দু’ চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছিল। সাদ রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! একি ? তিনি বললেন : এ হচ্ছে রহমত, যা আল্লাহ পাক তাঁর বান্দার অন্তরে আমানত রেখেছেন। আর আল্লাহ পাক তো তাঁর দয়ালু বান্দাদের প্রতিই দয়া করেন।

হাদীস নং ১২১০

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এক কন্যা (উম্মে কুলসুম রা.) এর জানাযায় উপস্থিত হলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের পাশে বসেছিলেন। আনাস রা. বলেন, তখন আমি তাঁর চোখ থেকে পানি ঝরতে দেখলাম। রাবী বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছে, যে আজ রাতে স্ত্রী সহবাস করেনি ? আবু তালহা রা. বললেন, আমি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তাহলে তুমি (কবরে) অবতরণ কর। রাবী বলেন, তখন তিনি তাঁর কবরে অবতরণ করলেন।

হাদীস নং ১২১১

আবদান রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে উবাইদুল্লাহ ইবনে আবু মুলাইকা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মক্কায় উসমান রা.-এর এক কন্যার ওফাত হল। আমরা সেখানে (জানাযায়) শরীক হওয়ার জন্য গেলাম। ইবনে উমর রা. এবং ইবনে আব্বাস রা.ও সেখানে হাজির হলেন। আমি তাদের দু’ জনের মাঝে বসা ছিলাম, অথবা তিনি বলেছেন, আমি তাদের একজনের পাশে গিয়ে বসলাম, পরে অন্যজন এসে আমার পাশে বসলেন। (কান্নার আওয়ায শুনে) ইবনে উমর রা. আমর ইবনে উসমানকে বললেন, তুমি কেন কাঁদতে নিষেধ করছ না ? কেননা, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মৃত ব্যক্তিকে তার পরিজনদের কান্নার কারণে আযাব দেওয়া হয়। তখন ইবনে আব্বাস রা. বললেন, উমর রা.ও এ রকম কিছু বলতেন। এরপর ইবনে আব্বাস রা. বর্ণনা করলেন, উমর রা.-এর সাথে মক্কা থেকে ফিরছিলাম। আমরা বায়দা (নামক স্থানে) পৌঁছলে উমর রা. বাবলা গাছের ছায়ায় একটি কাফেলা দেখতে পেয়ে আমাকে বললেন, গিয়ে দেখো তো এ কাফেলা কারা ? ইবনে আব্বাস রা. বলেন, আমি গিয়ে দেখলাম সেখানে সুহাইব রা. রয়েছেন। আমি তাকে তা জানালাম। তিনি বললেন, আমার কাছে ডেকে নিয়ে আস। আমি সুহাইব রা. -এর নিকটে আবার গেলাম এবং বললাম, চলুন আমীরুল মুমিনীনের সংগে সাক্ষাত করুন । এরপর যখন উমর রা. (ঘাতকের আঘাতে) আহত হলেন, তখন সুহাইব রা. তাঁর কাছে এসে এ বলে কাঁদতে লাগলেন, হায় আমার ভাই ! হায় আমার বন্ধু ! এতে উমর রা. তাকে বললেন, তুমি আমার জন্য কাঁদছো ? অথচ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মৃত ব্যক্তির জন্য তার আপন জনের কোন কোন কান্নার কারণে অবশ্যই তাকে আযাব দেওয়া হয় । ইবনে আব্বাস রা. বলেন, উমর রা. -এর ওফাতের পর আয়িশা রা. -এর কাছে আমি উমর রা. -এর এ উক্তি উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, আল্লাহ উমর রা.-কে রহম করুন। আল্লাহর কসম ! নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একথা বলেননি যে, আল্লাহ ঈমানদার (মৃত) ব্যক্তিকে, তার জন্য তার পরিজনের কান্নার কারণে আযাব দেবেন। তবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আল্লাহ তা’আলা কাফিরদের আযাব বাড়িয়ে দেন, তার জন্য তার পরিজনের কান্নার কারণে। এরপর আয়িশা রা. বললেন, আল্লাহর কুরআনই তোমাদের জন্য যথেষ্ট (ইরশাদ হয়েছে) : ‘বোঝা বহনকারী কোন ব্যক্তি অপরের বোঝা বহন করবে না। তখন ইবনে আব্বাস রা. বললেন, আল্লাহই (বান্দাকে) হাসান এবং কাঁদান। রাবী ইবনে আবু মুলাইকা রহ. বলেন, আল্লাহর কসম ! (একথা শুনে) ইবনে উমর রা. কোন মন্তব্য করলেন না।

হাদীস নং ১২১৩

ইসমাঈল ইবনে খলীল রহ……….আবু বুরদাহ পিতা (আবু মূসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন উমর রা. আহত হলেন, তখন সুহাইব রা. হায় ! আমার ভাই ! বলতে লাগলেন। উমর রা. বললেন, তুমি কি জান না, যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : জীবিতদের কান্নার কারণে অবশ্যই মৃতদের আযাব দেওয়া হয় ?

হাদীস নং ১২১৪

আবু নুআইম রহ……….মুগীরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করা অন্য কারো প্রতি মিথ্যা আরোপ করার মত নয়। যে ব্যক্তি আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে, সে যেন অবশ্যই তার ঠিকানা জাহান্নামে করে নেয়। (মুগীরা রা. আরও বলেছেন) আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে (মৃত) ব্যক্তির জন্য বিলাপ করা হয়, তাকে বিলাপ কৃত বিষয়ের উপর আযাব দেওয়া হবে।

হাদীস নং ১২১৫

আবদান রহ………উমর রা. সূত্রে আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মৃত ব্যক্তিকে তার জন্য কৃত বিলাপের বিষয়ের উপর কবরে আযাব দেওয়া হয়। আবদুল আলা রহ……..কাতাদা রহ. থেকে বর্ণনায় আবদান রহ.-এর অনুসরণ করেছেন। আদম রহ. শুবা রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, মৃত ব্যক্তিকে তার জন্য জীবিতদের কান্নার কারণে আযাব দেওয়া হয়।

হাদীস নং ১২১৬

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদের দিন আমার পিতাকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কর্তিত অবস্থায় নিয়ে এসে আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে রাখা হল। তখন একখানা কাপড় দিয়ে তাকে ঢেকে রাখা হয়েছিল। আমি তাঁর উপর থেকে আবরণ উম্মোচন করতে আসলে, আমার কওমের লোকেরা (আবার) আমাকে নিষেধ করল। পরে আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নির্দেশে তাকে উঠিয়ে নেওয়া হল। তখন তিনি এক রোদনকারীনীর আওয়াজ শুনে জিজ্ঞাসা করলেন, কাদো কেন ? অথবা বলেছেন, কেঁদো না। কেননা, তাকে উঠিয়ে নেওয়া পর্যন্ত ফেরেশতাগণ তাদের পাখা বিস্তার করে তাকে ছায়া দিয়ে রেখেছিলেন।

হাদীস নং ১২১৭

আবু নুআইম রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যারা (মৃত ব্যক্তির জন্য শোক প্রকাশে) গাল চাপড়ায়, জামার বুক ছিড়ে ফেলে এবং জাহিলীয়াত যুগের মত চীৎকার দেয়, তারা আমাদের তরীকাভূক্ত নয়।

হাদীস নং ১২১৮

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….সা’দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিদায় হজ্জে একটি কঠিন রোগে আমি আক্রান্ত হলে, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য আসতেন। একদিন আমি তাঁর কাছে আরয করলাম, আমার রোগ চরমে পৌছেছে আর আমি সম্পদশালী। একটি মাত্র কন্যা ছাড়া কেউ আমার ওয়ারিস নেই। তবে আমি কি আমার সম্পদের দু’ তৃতীয়াংশ সাদকা করতে পারি ? তিনি বললেন, না । আমি আবার আরয করলাম, তাহলে অর্ধেক। তিনি বললেন, না। তারপর তিনি বললেন, এক তৃতীয়াংশ আর এক তৃতীয়াংশও বিরাট পরিমাণ অথবা অধিক। তোমার ওয়ারিসদের অভাবমুক্ত রেখে যাওয়া, তাদের অভাবগ্রস্ত রেখে যাওয়া মানুষের কাছে হাত পাতার চাইতে উত্তম। আর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য তুমি যে কোন ব্যয় কর না কেন, তোমাকে তার বিনিময় দেওয়া হবে। এমন কি যা তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দিবে (তারও প্রতিদান পাবে) আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! (আফসোস) আমি আমার সাথীদের থেকে পিছনে থেকে যাব ? তিনি বললেন, তুমি যদি পিছনে থেকে নেক আমাল করতে থাক, তাহলে তাঁতে তোমার মর্যাদা ও উন্নতি বৃদ্ধিই পেতে থাকবে । তা ছাড়া, সম্ভবত, তুমি পিছনে (থেকে যাবে) যার ফলে তোমার দ্বারা অনেক কওম উপকার লাভ করবে। আর অন্যরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হে আল্লাহ ! আমার সাহাবীগণের হিজরত বলবৎ রাখুন। পশ্চাতে ফিরিয়ে দিবেন না। কিন্তু আফসোস ! সা’দ ইবনে খাওলার জন্য (এ বলে) আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্য শোক প্রকাশ করছিলেন, যেহেতু মক্কায় তাঁর ইন্তিকাল হয়েছিল।

হাদীস নং ১২১৯

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন : যারা শোকে গালে চাপড়ায়, জামার বুক ছিড়ে ফেলে ও জাহিলীয়াত যুগের মত চিৎকার দেয়, তারা আমাদের তরীকাভূক্ত নয়।

হাদীস নং ১২২০

উমর ইবনে হাফস রহ……….আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন : যারা (শোকে) গালে চাপড়ায়, জামার বুক ছিড়ে ফেলে ও জাহিলী যুগের মত চিৎকার দেয় তারা আমাদের তরীকাভূক্ত নয়।

হাদীস নং ১২২১

মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন (মুতার যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে (যায়েদ) ইবেন হারিসা, জাফর ও ইবনে রাওয়াহা রা.-এর শাহাদাতের সংবাদ পৌঁছল, তখন তিনি (এমনভাবে) বসে পড়লেন যে, তাঁর মধ্যে দুঃখের চিহ্ন ফুটে উঠেছিল। আমি (আয়িশা রা. দরওয়াযার ফাঁক দিয়ে তা দেখছিলাম। এক ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হয়ে জাফর রা. -এর পরিবারের মহিলাদের কান্নাকাটির কথা উল্লেখ করলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ব্যক্তিকে নির্দেশ দিলেন, তিনি যেন তাদেরকে (কাঁদতে) নিষেধ করেন, লোকটি চলে গেল এবং দ্বিতীয়বার এসে (বলল) তারা তাঁর কথা মানেনি। তিনি ইরশাদ করলেন : তাদেরকে নিষেধ করে। ঐ ব্যক্তি তৃতীয়বার এসে বললেন, আল্লাহর কসম ! ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তাঁরা আমাদের হার মানিয়েছে। আয়িশা রা. বলেন, আমার মনে হয়, তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বিরক্তির সাথে) বললেন : তাহলে তাদের মুখে মাটি নিক্ষেপ কর। আয়িশা রা. বলেন, আমি বললাম, আল্লাহ তোমার নাকে ধূলি মিলিয়ে দেন। তুমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ পালন করতে পারনি। অথচ তুমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বিরক্ত করতেও কসুর করনি।

হাদীস নং ১২২২

আমর ইবনে আলী রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (বীর-ই-মাউনার ঘটনায়) ক্বারী (সাহাবীগণের) শাহাদতের পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ফজরের সালাতে) একমাস যাবত কুনুত-ই-নাযিলা পড়েছিলেন। (রাবী বলেন) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আমি আর কখনো এর চাইতে অধিক শোকাভিভূক্ত হতে দেখিনি।

হাদীস নং ১২২৩

বিশর ইবনে হাকাম রহ……..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু তালহা রা.-এর এক পুত্র অসুস্থ হয়ে পড়ল। রাবী বলেন সে মারা গেল। তখন আবু হালহা রা. বাড়ীর বাইরে ছিলেন। তাঁর স্ত্রী যখন দেখলেন যে, ছেলেটি মারা গেছে, তখন তিনি কিছু প্রস্তুতি নিলেন। এবং ছেলেটিকে ঘরের এক কোণে রেখে দিলেন। আবু তালহা রা. বাড়ীতে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ছেলের অবস্থা কেমন ? স্ত্রী জওয়াব দিলেন, তার আত্মা শান্ত হয়েছে এবং আশা করি সে এখন আরাম পাচ্ছে। আবু তালহা রা. ভাবলেন, তাঁর স্ত্রী সত্য বলেছেন। রাবী বলেন, তিনি রাত যাপন করলেন এবং ভোরে গোসল করলেন। তিনি বাইরে যেতে উদ্যত হলে স্ত্রী তাকে জানালেন, ছেলেটি মারা গেছে। এরপর তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সংগে (ফজরের) সালাত আদায় করলেন। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তাদের রাতের ঘটনা জানালেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন : আশা করা যায়, আল্লাহ পাক তোমাদের এ রাতে বরকত দিবেন। সুফিয়ান রা. বলেন, এক ব্যক্তি বর্ণনা করেছেন, আমি (আবু তালহা রা. দম্পতির নয়জন সন্তান দেখেছি, তাঁরা সবাই কুরআন সম্পর্কে দক্ষ ছিলেন।

হাদীস নং ১২২৪

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……..আনাস রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন বিপদের প্রথম অবস্থায়ই প্রকৃত সবর।

হাদীস নং ১২২৫

হাসান ইবনে আবদুল আযীয রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে আবু সায়ফ কর্মকারের কাছে গেলাম। তিনি ছিলেন (নবী-তনয়) ইবরাহীম রা.-এর দুধ সম্পর্কীয় পিতা। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তুলে নিয়ে চুমু খেলেন এবং তাকে নাকে-মুখে লাগালেন। এরপর (আর একদিন) আমরা তার (আবু সায়ফ-এর) বাড়িতে গেলাম। তখন ইবরাহীম মুমূর্ষ অবস্থায়। এতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উভয় চোখ থেকে অশ্রু ঝরতে লাগল। তখন আবদুর রহমান ইবনে আওফ রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আর আপনিও ? (কাঁদছেন ?) তখন তিনি বললেন : অশ্রু প্রবাহিত হয় আর হৃদয় হয় ব্যথিত। তবে আমরা মুখে তা-ই বলি যা আমাদের রব পছন্দ করেন। আর হে ইবরাহীম ! তোমার বিচ্ছেদে আমরা অবশ্যই শোকাভিভূত । মূসা রহ………আনাস রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেন।

হাদীস নং ১২২৬

আসবাগ রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সা’দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস এবং আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-কে সাথে নিয়ে তাকে দেখতে আসলেন। তিনি তাঁর ঘরে প্রবেশ করে তাকে পরিজন-বেষ্টিত দেখতে পেলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, তার কি মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা বললেন, না । ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেদে ফেললেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কান্না দেখে উপস্থিত লোকেরা কাঁদতে লাগলেন। তখন তিনি ইরশাদ করলেন : শুনে রাখ ! নিঃসন্দেহে আল্লাহ পাক চোখের পানি ও অন্তরের শোক-ব্যথার কারণে আযাব দিবেন না। তিনি আযাব দিবেন এর কারণে (এ বলে) জিহবার দিকে ইশারা করলেন। অথবা এর কারণেই তিনি রহম করে থাকেন। আর নিশ্চয় মৃত ব্যক্তির জন্য তার পরিজনের বিলাপের কারণে তাকে আযাব দেওয়া হয় । উমর রা. এ (ধরণের কান্নার) কারণে লাঠি দ্বারা প্রহার করতেন, কংকর নিক্ষেপ করতেন বা মাটি ছুড়ে মারতেন।

হাদীস নং ১২২৭

মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে হাওশাব রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (মুতার যুদ্ধক্ষেত্র থেকে) যায়েদ ইবনে হারিসা, জাফর এবং আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রা.-এর শাহাদাত লাভের খবর পৌঁছলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে পড়লেন; তাঁর মধ্যে শোকের চিহ্ন প্রকাশ পেল। আমি (আয়িশা রা. দরওয়াযার ফাঁক দিয়ে ঝুঁকে তা দেখছিলাম। তখন এক ব্যক্তি তাঁর কাছে এসে সম্বোধন করেন, (ইয়া রাসূলাল্লাহ! জাফর রা.-এর (পরিবারের) মহিলাগণের কান্নাকাটির কথা উল্লেখ করলেন। তিনি তাদের নিষেধ করার জন্য তাকে আদেশ করলেন। সেই ব্যক্তি চলে গেলেন। পরে এসে বললেন, আমি তাদের নিষেধ করেছি। তিনি উল্লেখ করলেন যে, তারা তাকে মানেনি। তিনি তাদের নিষেধ করার জন্য দ্বিতীয়বার তাকে নির্দেশ দিলেন। তিনি চলে গেলেন এবং আবার এসে বললেন, আল্লাহর কসম ! অবশ্যই তাঁরা আমাকে (বা বলেছেন আমাদেরকে) হার মানিয়েছে। আয়িশা রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তাদের মুখে মাটি ছুড়ে মারো। (আয়িশা রা. বলেন) আমি বললাম, আল্লাহ তোমার নাক ধুলি মিশ্রিত করুন। আল্লাহ কসম ! তোমাকে যে কাজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা করতে পারছো না আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বিরক্ত করতেও কসুর করনি।

হাদীস নং ১২২৮

আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব রহ……….উম্মে আতিয়্যাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়আত গ্রহণকালে আমাদের কাছ থেকে এ অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, আমরা (কোন মৃতের জন্য) বিলাপ করব না। আমাদের মধ্যে হতে পাঁচজন মহিলা উম্মু সুলাইম, উম্মুল আলা, আবু সাবরাহর কন্যা মুআযের স্ত্রী, আরো দু’ জন মহিলা বা মুআযের স্ত্রী ও আরেকজন মহিলা ব্যতীত কোন নারীই সে অঙ্গীকার রক্ষা করেনি।

হাদীস নং ১২২৯

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আমির ইবনে রাবীআ রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমরা জানাযা (যেতে) দেখলে তা তোমাদের পিছনে ফেলে যাওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকবে। হুমাইদী আরও উল্লেখ করেছেন, তা তোমাদের পিছনে ফেলে যাওয়া বা মাটিতে নামিয়ে রাখা পর্যন্ত

হাদীস নং ১২৩০

মুসলিম ইবনে ইবরাহীম রহ………..আবু সাঈদ খুদরী রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমরা জানাযা যেতে দেখলে দাঁড়িয়ে পড়বে, এরপর যারা তার অনুগামী হবে, তারা তা নামিয়ে না রাখা পর্যন্ত বসবে না।

হাদীস নং ১২৩১

আহমদ ইবনে ইউনুস রহ………সাঈদ মাকবুরী রহ. এর পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা একটি জানাযায় শরীক হলাম । (সেখানে) আবু হুরায়রা রা. মারওয়ানের হাত ধরলেন এবং তাঁরা জানাযা নামিয়ে রাখার আগেই বসে পড়লেন। তখন আবু সাঈদ রা. এগিয়ে এসে মারওয়ানের হাত ধরে বললেন, দাঁড়িয়ে পড়ুন। আল্লাহর কসম ! ইনি (আবু হুরায়রা রা. তো জানেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ কাজ করতে (জানাযা নামিয়ে রাখার আগে বসতে) নিষেধ করেছেন। তখন আবু হুরায়রা রা. বললেন, তিনি ঠিকই বলেছেন।

হাদীস নং ১২৩২

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………..আমির ইবনে রাবীআ রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমাদের কেউ জানাযা যেতে দেখলে সে তার সহযাত্রী না হয়, তবে ততক্ষণ সে দাঁড়িয়ে থাকবে, যতক্ষণ না সে ব্যক্তি জানাযা পিছনে ফেলে বা জানাযা তাকে পিছনে ফেলে যায়, অথবা পিছনে ফেলে যাওয়ার পূর্বে তা (মাটিতে) নামিয়ে রাখা হয়।

হাদীস নং ১২৩৩

মুআয ইবনে ফাযালা রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের পাশ দিয়ে একটি জানাযা যাচ্ছিল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন। আমরাও দাঁড়িয়ে পড়লাম এবং আরয করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! এ তো এক ইয়াহুদীর জানাযা। তিনি বললেন : তোমরা যে কোন জানাযা দেখলে দাঁড়িয়ে পড়বে।

হাদীস নং ১২৩৪

আদম রহ………আবদুর রহমান ইবনে আবু লায়লা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাহল ইবনে হুনাইফ ও কায়স ইবনে সা’দ রা. কাদেসিয়াতে বসাছিলেন, তখন লোকেরা তাদের সামনে দিয়ে একটি জানাযা নিয়ে যাচ্ছিল। (তা দেখে) তাঁরা দাঁড়িয়ে গেলেন। তখন তাদের বলা হল, এটাতো এ দেশীয় জিম্মী ব্যক্তির জানাযা।। তখন তাঁরা বললেন, (একবার) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে দিয়ে একটি জানাযা যাচ্ছিল। তখন তিনি দাঁড়িয়ে গেলে তাকে বলা হল, এটা তো এক ইয়াহুদীর জানাযা। তিনি এরশাদ করলেন : সে কি মানুষ নয় ? আবু হামযা রহ………ইবনে আবু লায়লা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সাহল এবং কায়স রা.-এর সাথে ছিলাম। তখন তাঁরা দু’জন বললেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সংগে ছিলাম। যাকারিয়া রহ. সূত্রে ইবনে আবু লায়লা রহ. থেকে বর্ণনা করেন, আবু আবু মাসউদ ও কায়স রা. জানাযা যেতে দেখলে দাঁড়িয়ে যেতেন।

হাদীস নং ১২৩৫

আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যখন জানাযা খাটে রাখা হয় এবং পুরুষরা তা কাধে বহন করে নেয়, তখন সে নেককার হলে বলতে থাকে, আমাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাও। আর নেককার না হলে সে বলতে থাকে হায় আফসুস ! তোমরা এটাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ ? মানব জাতি ব্যতীত সবাই তার চিৎকার শুনতে পায়। মানুষেরা তা শুনলে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলত।

হাদীস নং ১২৩৬

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমরা জানাযা নিয়ে দ্রুতগতিতে চলবে। কেননা, সে যদি পূণ্যবান হয়, তবে এটা উত্তম, যার দিকে তোমরা তাকে এগিয়ে দিচ্ছ আর যদি সে অন্য কিছু হয়, তবে সে একটি অকল্যাণ, যাকে তোমরা তোমাদের ঘাড় থেকে দ্রুত নামিয়ে ফেলছ।

হাদীস নং ১২৩৭

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………..আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন : যখন জানাযা (খাটিয়ায়) রাখা হয় এবং পুরুষ লোকেরা তা তাদের কাধে তুলে নেয়, সে নেককার হলে, তখন বলতে থাকে আমাকে সামনে এগিয়ে দাও। আর নেককার না হলে সে আপন পরিজনকে বলতে থাকে, হায় আফসুস ! এটা নিয়ে তোমরা কোথায় যাচ্ছ ? মানুষ জাতি ব্যতীত সবাই তার চিৎকার শুনতে পায়। মানুষ যদি তা শুনতে পেত তবে অবশ্য সজ্ঞা হারিয়ে ফেলত।

হাদীস নং ১২৩৮

মুসাদ্দাদ রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আবিসিনিয়ার বাদশাহ) নাজাশীর জানাযা আদায় করেন। আমি দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় কাতারে ছিলাম।

হাদীস নং ১২৩৯

মুসাদ্দাদ রহ………….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীগণকে নাজাশীর মৃত্যু সংবাদ শোনালেন, পরে তিনি সামনে অগ্রসর হলেন এবং সাহাবীগণ তাঁর পিছনে কাতারবদ্ধ হলে তিনি চার তাকবীরে (জানাযার সালাত) আদায় করলেন।

হাদীস নং ১২৪০

মুসলিম রহ………..শাবী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এমন এক সাহাবী যিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সংগে উপস্থিত ছিলেন, তিনি আমাকে খবর দিয়েছেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি পৃথক কবরের কাছে গমন করলেন এবং লোকদের কাতারবদ্ধ করে চার তাকবীরের সংগে (জানাযার সালাত) আদায় করলেন। (শায়বানী রহ. বলন) আমি শা’বী রহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, এ হাদীস আপনাকে কে বর্ণনা করেছেন ? তিনি বললেন, ইবনে আব্বাস রা. ।

হাদীস নং ১২৪১

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : হাবশা দেশের একজন নেককার লোকের ওফাত হয়েছে, তোমরা এসো তাঁর জন্য (জানাযার) সালাত আদায় কর। রাবী বলেন, আমরা তখন কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (জানাযার) সালাত আদায় করলেন, আমরা ছিলাম কয়েক কাতার। আবু যুবাইর রহ. জাবির রা. থেকে বর্ণনা করেন, জাবির রা. বলেছেন, আমি দ্বিতীয় কাতারে ছিলাম।

হাদীস নং ১২৪২

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ…………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক (ব্যক্তির) কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যাকে রাতের বেলা দাফন করা হয়েছিল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, একে কখন দাফন করা হল ? সাহাবীগণ বললেন, গত রাতে। তিনি বললেন, তোমরা আমাকে অবহিত করলে না কেন ? তাঁরা বললেন, আমরা তাকে রাতের আধাঁরে দাফন করেছিলাম, তাই আপনাকে জাগানো পছন্দ করিনি। তখন তিনি (সেখানে) দাঁড়িয়ে গেলেন। আমরাও তাঁর পিছনে কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, আমিও তাদের মধ্যে ছিলাম। তিনি তাঁর (জানাযার) সালাত আদায় করলেন।

হাদীস নং ১২৪৩

সুলাইমান ইবনে হারব রহ……….শা’বী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এমন এক সাহাবী আমাকে খবর দিয়েছেন, যিনি তোমাদের নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সংগে একটি পৃথক কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইমামতি করলেন, আমরা তাঁর পিছনে কাতার করলাম এবং সালাত আদায় করলাম। (শায়বানী রহ. বলেন) আমরা (শা’বীকে) জিজ্ঞাসা করলাম, হে আবু আমর ! আপনাকে এ হাদীস কে বর্ণনা করেছেন ? তিনি বললেন, ইবনে আব্বাস রা.।

হাদীস নং ১২৪৪

আবু নুমান রহ………নাফি রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনে উমর রা.-এর নিকট বর্ণনা করা হল যে, আবু হুরায়রা রা. বলে থাকেন, যিনি জানাযার অনুগমন করবেন তিনি এক কীরাত (পরিমাণ) সওয়াব পাবেন । তিনি বললেন, আবু হুরায়রা রা. আমাদের বেশী বেশী হাদীস শোনান। তবে আয়িশা রা. এ বিষয়ে আবু হুরায়রা রা.-কে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমিও নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ হাদীস বলতে শুনেছি। ইবনে উমর রা. বললেন, তাহলে তো আমরা অনেক কীরাত (সওয়াব) হারিয়ে ফেলেছি। ‘ফাররাত্তু’ এর অর্থ আল্লাহর আদেশ আমি খুইয়ে ফেলেছি।

হাদীস নং ১২৪৫

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা, আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ও আহমদ ইবনে শাবীব ইবনে সাঈদ রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি মৃতের জন্য সালাত আদায় করা পর্যন্ত জানাযায় উপস্থিত থাকবে, তার জন্য এক কীরাত (সওয়াব) । আর যে ব্যক্তি মৃতের দাফন হয়ে যাওয়া পর্যন্ত উপস্থিত থাকবে তার জন্য দু’ কীরাত (সওয়াব) জিজ্ঞাসা করা হল দু’ কীরাত কি ? তিনি বললেন, দুটি বিশাল পর্বত সমতুল্য।

হাদীস নং ১২৪৬

ইয়াকুব ইবনে ইবরাহীম রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি কবরের কাছে তাশরীফ আনেন। সাহাবাগণ বললেন, একে গত রাতে দাফন করা হয়েছে। তিনি তার জানাযার সালাত আদায় করলেন।

হাদীস নং ১২৪৭

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আবিসিনিয়ার বাদশাহ) নাজাশীর মৃত্যুর দিনই আমাদের তাঁর মৃত্যু সংবাদ জানান এবং ইরশাদ করেন : তোমরা তোমাদের ভাইয়ের (নাজাশীর) জন্য ইসতিগফার কর। আর ইবনে শিহাব সাঈদ ইবনে মুসায়্যাব রহ. সূত্রে আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিয়ে মুসাল্লায় কাতার করলেন, এরপর চার তাকবীর আদায় করেন।

হাদীস নং ১২৪৮

ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে (খায়বারের) ইয়াহুদীরা তাদের এক পুরুষ ও এক স্ত্রীলোককে হাজির করল, যারা যিনা করেছিল। তখন তিনি তাদের উভয়কে (রজম করার) নির্দেশ দেন। মসজিদের পাশে জানাযার স্থানের কাছে তাদের দু’ জনকে রজম (পাথর নিক্ষেপ) করা হল।

হাদীস নং ১২৪৯

উবাইদুল্লাহ ইবনে মূসা রহ…….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রোগে ইন্তিকাল করেছিলেন, সে রোগাবস্থায় তিনি বলেছিলেন : ইয়াহুদী ও নাসারা সম্প্রদায়ের প্রতি আল্লাহর লা’নত, তারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে। আয়িশা রা. বলেন, সে আশংকা না থাকলে তাঁর (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) কবরকে উম্মুক্ত রাখা হত, কিন্তু আমার আশংকা যে, (খুলে দেয়া হলে) একে মসজিদে পরিণত করা হবে।

হাদীস নং ১‌২৫০

মুসাদ্দাদ রহ………..সামুরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে আমি এমন এক মহিলার জানাযার সালাত আদায় করেছিলাম, যে নিফাস অবস্থায় মারা গিয়েছিল। তিনি তার মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে ছিলেন।

 

হাদীস নং ১২৫১

ইমরান ইবনে মায়সারা রহ………..সামুরা ইবনে জুনদাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পিছনে আমি এমন এক মহিলার জানাযার সালাত আদায় করেছিলাম, যে নিফাস অবস্থায় মারা গিয়েছিল। তিনি তার মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে ছিলেন।

হাদীস নং ১২৫২

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আবিসিনিয়ার বাদশাহ) নাজাশীর মৃত্যুর দিন তাঁর মৃত্যু সংবাদ জানালেন এবং সাহাবীগণকে নিয়ে জানাযার সালাতের স্থানে চার তাকবীর আদায় করলেন।

হাদীস নং ১২৫৩

মুহাম্মদ ইবনে সিনান রহ………….জাবির রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আবিসিনিয়ার বাদশাহ) আসহামা-নাজশীর জানাযা সালাত আদায় করলেন, তাঁতে তিনি চার তাকবীর বললেন। ইয়াযীদ ইবনে হারুন ও আবদুস সামাদ রহ. সালীম রহ. থেকে ‘আসহামা’ শব্দ বর্ণনা করেন।

হাদীস নং ১২৫৪

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার ও মুহাম্মদ ইবনে কাসীর রহ……..তালহা ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আউফ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি (আবদুল্লাহ) ইবনে আব্বাস রা.-এর পিছনে জানাযার সালাত আদায় করলাম। তাঁতে তিনি সূরা ফাতিহা তিলাওয়াত করলেন এবং (সালাত শেষে) বললেন, (আমি এমন করলাম) যাতে সবাই জানতে পারে যে, তা (সূরা ফাতিহা তিলাওয়াত করা) জানাযার সালাতে সুন্নাত ( একটি পদ্ধতি)।

হাদীস নং ১২৫৫

হাজ্জাজ ইবনে মিনহাল রহ……..শাবী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে এমন এক সাহাবী বর্ণনা করেছেন, যিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সংগে একটি পৃথক কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি তাদের ইমামতি করলেন এবং তাঁরা তাঁর পিছনে জানাযার সালাত আদায় করলেন। (রাবী বলেন) আমি শা’বী কে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আবু আমর ! আপনার কাছে এ হাদীস কে বর্ণনা করেছেন ? তিনি বললেন, ইবনে আব্বাস রা.।

হাদীস নং ১২৫৬

মুহাম্মদ ইবনে ফাযল রহ…………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, কাল বর্ণের এক পুরুষ বা এক মহিলা মসজিদে ঝাড়ু দিত। সে মারা গেল। কিন্তু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মৃত্যু সংবাদ জানতে পারেননি। একদিন তার কথা উল্লেখ করে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এ লোকটির কি হল ? সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! সে তো মারা গিয়েছে। তিনি বললেন : তোমরা আমাকে অবহিত করলে না কেন ? তাঁরা বললেন, সে ছিল এমন এমন (তার) ঘটনা উল্লেখ করলেন। রাবী বলেন, তাঁরা (যেন) তাকে খাট করে দেখলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আমাকে তার কবর দেখিয়ে দাও। রাবী বলেন, তখন তিনি তার কবরের কাছে তাশরীফ এনে তার জন্য জানাযার সালাত আদায় করলেন।

হাদীস নং ১২৫৭

আয়্যাশ ও খলীফা রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : বান্দাকে যখন তার কবরে রাখা হয় এবং তাকে পিছনে রেখে তার সাথীরা চলে যায় (এতটুকু দূরে যে) তখনও সে তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায়, এমন সময় তার কাছে দু’ জন ফেরেশতা এসে তাকে বসিয়ে দেন। এরপর তাঁরা প্রশ্ন করেন, এই যে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সম্পর্কে তুমি কি বলতে ? তখন সে বলবে, আমি তো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল। তখন তাকে বলা হবে, জাহান্নামে তোমার অবস্থানের জায়গাটি দেখে নাও, যার পরিবর্তে আল্লাহ পাক তোমার জন্য জান্নাতে একটি স্থান নির্ধারিত করেছেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : তখন সে দুটি স্থান একই সময় দেখতে পাবে। আর যারা কাফির বা মুনাফিক, তারা বলবে, তুমি নিজে জেনেছ, না তিলাওয়াত করে শিখেছ। এরপর তার দু’ কানের মধ্যবর্তী স্থানে লোহার মুগুর দিয়ে এমন জোরে আঘাত করা হবে, এতে সে চিৎকার করে উঠবে, মানুষ ও জীন ব্যতীত তার আশেপাশের সকলেই তা শুনতে পাবে।

হাদীস নং ১২৫৮

মাহমুদ রহ………….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন মালাকুল মাওতকে মূসা আ.-এর কাছে পাঠানো হল। তিনি তাঁর কাছে আসলে, মূসা আ. তাকে চপেটাঘাত করলেন। (এতে তাঁর চোখ বেরিয়ে গেল)। তখন মালাকুল মাওত তাঁর প্রতিপালক এর দরবারে ফিরে গিয়ে বললেন, আমাকে এমন এক বান্দার কাছে পাঠিয়েছেন , যে মরতে চায় না। তখন আল্লাহ তাঁর চোখ ফিরিয়ে দিয়ে হুকুম করলেন, আবার গিয়ে তাকে বল, তিনি একটি ষাঁড়ের পিঠে তাঁর হাত রাখবেন, তখন তাঁর হাত যতটুকু আবৃত করবে, তার সম্পূর্ণ অংশের প্রতিটি পশমের বিনিময়ে তাকে এক বছর করে আয়ু দান করা হবে। মূসা আ. এ শুনে বললেন, হে আমার রব ! তারপর কি হবে ? আল্লাহ বললেন : তারপর মৃত্যু। মূসা আ. বললেন, তাহলে এখনই আমি প্রস্তুত। তখন তিনি একটি পাথর নিক্ষেপ করলে যতদূর যায় বাইতুল মুকাদ্দাসের ততটুকু নিকটবর্তী স্থানে তাকে পৌঁছিয়ে দেওয়ার জন্য আল্লাহ তা’আলার কাছে আরয করলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : এখন আমি সেখানে থাকলে অবশ্যই পাথরের পাশে লাল বালুর টিলার নিকটে তাঁর কবর তোমাদের দেখিয়ে দিতাম।

হাদীস নং ১২৫৯

উসমান ইবনে আবু শায়বা রহ……..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তিকে রাত্রিকালে দাফন করার পর তার (জানাযার) সালাত আদায় করার জন্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ (দাফনকৃত ব্যক্তির কবরের পাশে) গিয়ে দাঁড়ালেন। তখন তিনি লোকটির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন এবং বললেন, এ লোকটি কে ? তাঁরা জবাব দিলেন, অমুক গত রাতে তাকে দাফন করা হয়েছে। তখন তাঁরা সকলে তার (জানাযার) সালাত আদায় করলেন।

হাদীস নং ১২৬০

ইসমাঈল রহ…………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অসুস্থতাকালে তাঁর এক সহধর্মিণী হাবশা দেশে তাঁর দেখা ‘মারিয়া’ নামক একটি গীর্জার কথা আলোচনা করলেন। (উম্মাহাতুল মু’মিনীনের মধ্যে) উম্মে সালামা এবং উম্মে হাবীবা রা. হাবশায় গিয়েছিলেন। তাঁরা ঐ গীর্জাটির সৌন্দর্য এবং তাঁতে রক্ষিত চিত্রসমূহের বিবরণ দিলেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মাথা তুলে বললেন : সে সব দেশের লোকেরা তাদের কোন পূণ্যবান ব্যক্তি মারা গেলে তাঁর সমাধিতে মসজিদ নির্মাণ করত এবং তাঁতে সে সব চিত্র অংকন করত। তারা হল, আল্লাহর দরবারে নিকৃষ্ট মাখলুক।

হাদীস নং ১২৬১

মুহাম্মদ ইবনে সিনান রহ……..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এক কন্যার দাফনে হাজির ছিলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের পাশেই বসেছিলেন। আমি দেখলাম, তাঁর দু’ চোখে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি, যে আজ রাতে স্ত্রী মিলনে লিপ্ত হয়নি ? আবু তালহা রা. বলেন, আমি । তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তাঁর কবরে নেমে পড়, তিনি তাঁর কবরে নেমে গেলেন এবং তাকে দাফন করলেন।

হাদীস নং ১২৬২

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের শহীদগণের দু’দু’ জনকে একই কাপড়ে (কবরে) একত্র করতেন। এরপর জিজ্ঞাসা করতেন, তাদের উভয়ের মধ্যে কে কুরআন সম্পর্কে অধিক জানত ? দু’ জনের মধ্যে এক জনের দিকে ইশারা করা হলে তাকে কবরে আগে রাখতেন এবং বললেন, আমি কিয়ামতের দিন এদের ব্যাপারে সাক্ষী হব। তিনি রক্তমাখা অবস্থায় তাদের দাফন করার নির্দেশ দিলেন, তাদের গোসল দেওয়া হয়নি এবং তাদের (জানাযার) সালাতও আদায় করা হয়নি।

হাদীস নং ১২৬৩

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….উকবা ইবনে আমির রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন বের হলেন এবং উহুদে পৌছে মৃতের জন্য যেরূপ (জানাযার) সালাত আদায় করা হয় উহুদের শহীদানের জন্য অনুরূপ সালাত আদায় করলেন। এরপর ফিরে এসে মিম্বরে তাশরীফ রেখে বললেন : আমি হব তোমাদের জন্য অগ্রে প্রেরিত এবং আমি তোমাদের জন্য সাক্ষী। আল্লাহর কসম ! এ মুহূর্তে আমি অবশ্যই আমার হাউয (হাউয-ই কাউসার) দেখছি। আর অবশ্যই আমাকে পৃথিবীর ঝান্ডার সমূহের চাবি গুচ্ছ প্রদান করা হয়েছে। অথবা (রাবী বলেন ) পৃথিবীর চাবি গুচ্ছ আর আল্লাহর কসম ! তোমরা আমার পরে শিরক করবে এ আশংকা করি না। তবে তোমাদের ব্যাপারে আমার আশংকা যে, তোমরা পার্থিব সম্পদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বে।

হাদীস নং ১২৬৪

সাঈদ ইবনে সুলাইমান রহ………..জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি খবর দিয়েছেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের শহীদগণের দু’ দু’ জনকে একত্র করে দাফন করেছিলেন।

হাদীস নং ১২৬৫

আবুল ওয়ালীদ রহ………জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তাদেরকে তাদের রক্ত সহ দাফন কর। অর্থাৎ উহুদের যুদ্ধের দিন শহীদগণের সম্পর্কে আর তিনি তাদের গোসলও দেননি।

হাদীস নং ১২৬৬

ইবনে মুকাতিল রহ……..জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের শহীদগণের দু’ দু’ জনকে একই কাপড়ে (কবরে) একত্রে দাফন করার ব্যবস্থা করে জিজ্ঞাসা করলেন। তাদের মধ্যে কে কুরআন সম্পর্কে অধিক জানত ? দু’ জনের মধ্যে এক জনের দিকে ইশারা করা হলে তাকে কবরে আগে রাখতেন এবং বলতেন, আমি কিয়ামতের দিন এদের ব্যাপারে সাক্ষী হব। তিনি রক্তমাখা অবস্থায় তাদের দাফন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং তিনি তাদের জানাযার সালাতও আদায় করা হয়নি। তাদের গোসলও দেননি। রাবী আওযায়ী রহ. যুহরী রহ. সূত্রে জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ যুদ্ধের শহীদগণের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন, তাদের মধ্যে কে কুরআন সম্পর্কে অধিক জানত ? দু’ জনের মধ্যে এক জনের দিকে ইশারা করা হলে তাকে কবরে আগে রাখতেন । জাবির রা. বলেন, আমার পিতা ও চাচাকে একখানা পশমের তৈরী নকশা করা কাপড়ে কাফন দেওয়া হয়েছিল (আর সুলাইমান ইবনে কাসীর রহ. সূত্রে যুহরী রহ. থেকে বর্ণনা করেন যে, আমার নিকট এমন এক ব্যক্তি হাদীস বর্ণনা করেছেন, যিনি জাবির রা. থেকে শুনেছেন।

হাদীস নং ১২৬৭

মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে হাওশাব রহ………ইবনে আব্বাস রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ পাক মক্কাকে হারাম (সম্মানিত বা নিষিদ্ধ এলাকা) সাব্যস্ত করেছেন। আমার পূর্বে তা, কারো জন্য হালাল (বৈধ ও উন্মক্ত এলাকা) ছিল না এবং আমার পরেও কারো জন্য তা হালাল হবে না। আমার জন্য একটি দিনের (মক্কা বিজয়ের দিন) কিছু সময় হালাল করা হয়েছিল। কাজেই তার ঘাস উৎপাটন করা যাবে না, তার গাছ কাটা যাবে না, শিকারকে তাড়িয়ে দেওয়া যাবে না। সেখানে পড়ে থাকা (হারানো) বস্তু উঠিয়ে নেওয়া যাবে না, তবে হারানো প্রাপ্তির ঘোষণা প্রদানকারীর জন্য (অনুমতি থাকবে)। তখন আব্বাস রা. বললেন, তবে ইযখির ঘাস, আমাদের স্বর্ণকারদের জন্য এবং আমাদের কবরগুলির জন্য প্রয়োজন। তখন তিনি বললেন : ইযখির ব্যতীত। আবু হুরায়রা রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, আমাদের কবর ও বাড়ী ঘরের জন্য। আর আবান ইবনে সালিহ রহ. সাফিয়্যা বিনত শায়বা রা. সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমি অনুরূপ বলতে শুনেছি আর মুজাহিদ রহ. ইবনে আব্বাস রা. সূত্রে বলেন, তাদের কর্মকার ও ঘর-বাড়ীর জন্য।

হাদীস নং ১২৬৮

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উবাই (মুনাফিক সরদাকে) কবর দেওয়ার পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার (কবরের) কাছে আসলেন এবং তিনি তাকে বের করার নির্দেশ দিলে তাকে বের করা হল। তখন তিনি তাকে তাঁর (নিজের) দু’ হাটুর উপরে রাখলেন, নিজের (মুখের) লালা (তার উপরে ফুকে) দিলেন এবং নিজের জামা তাকে পরিয়ে দিলেন। আল্লাহ সমধিক অবগত। সে আব্বাস রা. -কে একটি জামা পরতে দিয়েছিল। আর সুফিয়ান রহ. বলেন, আবু হুরায়রা রা. বলেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পরিধানে তখন দুটি জামা ছিল। আবদুল্লাহ (ইবনে উবাই)-এর পুত্র (আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ রহ.) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনার (পবিত্র) দেহের সাথে জড়িয়ে থাকা জামাটি আমার পিতাকে পরিয়ে দিন। সুফিয়ান রহ. বলেন, তারা মনে করেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জামা আবদুল্লাহ (ইবনে উবাই)-কে পরিয়ে দিয়েছিলেন, তার কৃত (ইহসানের) বিনিময় স্বরূপ।

হাদীস নং ১২৬৯

মুসাদ্দাদ রহ………জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন উহুদ যুদ্ধের সময় উপস্থিত হল, তখন রাতের বেলা আমার পিতা আমাকে ডেকে বললেন, আমার এমনই মনে হয় যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণের মধ্যে যারা প্রথমে শহীদ হবেন, আমি তাদের মধ্যে একজন হব। আর আমি আমার (মৃত্যুর) পরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত তোমার চাইতে অধিকতর প্রিয় কাউকে রেখে যাচ্ছি না। আমার জিম্মায় করয রয়েছে। তুমি তা পরিশোধ করবে। তোমার বোনদের ব্যাপারে সদুপদেশ গ্রহণ করবে। (জাবির রা. বলেন) পরদিন সকাল হলে (আমরা দেখলাম যে,) তিনিই প্রথম শহীদ । তাঁর কবরে আর একজন সাহাবীকে তাঁর সাথে দাফন করা হয়েছিল। কিন্তু পরে অন্য একজনের সাথে (একই) কবরে তাকে রাখা আমার মনে ভাল লাগল না। তাই ছয় মাস পর আমি তাকে (কবর থেকে) বের করলাম এবং দেখলাম যে, তাঁর কানে সামান্য চিহ্ন ব্যতীত তিনি সেই দিনের মতই (অক্ষত ও অবিকৃত) রয়েছেন, যে দিন তাকে (কবরে) রেখেছিলাম।

হাদীস নং ১২৭০

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার পিতার সাথে আরেকজন শহীদকে দাফন করা হলে আমার মন তাঁতে তুষ্ট হতে পারল না। অবশেষে আমি তাকে (কবর থেকে) বের করলাম এবং একটি পৃথক কবরে তাকে দাফন করলাম।

হাদীস নং ১২৭১

আবদান রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের শহীদগণের দু’ দু’জনকে একত্র করে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তাদের মধ্যে কুরআন সম্পর্কে কে অধিক জ্ঞাত ? দু’জনের কোন একজনের দিকে ইশারা করা হলে প্রথমে তাকে লাহদ কবরে রাখতেন। তারপর ইরশাদ করেন : কিয়ামতের দিন আমি তাদের জন্য সাক্ষী হব। তিনি রক্তমাখা অবস্থায়ই তাদের দাফন করার আদেশ করলেন এবং তাদের গোসলও দেননি।

হাদীস নং ১২৭২

আবদান রহ……..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, উমর রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সংগে একটি দলের অন্তর্ভূক্ত হয়ে ইবনে সাইয়াদ-এর (বাড়ীর) দিকে গেলেন। তাঁরা তাকে (ইবনে সাইয়াদকে) বনূ মাগালা দূর্গের পাশে অন্যান্য বালকদের সাথে খেলাধূলারত পেলেন। তখন ইবনে সাইয়াদ বালিগ হওয়ার নিকটবর্তী হয়েছিল। সে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আগমন অনুভব করার আগেই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত ধরে ফেললেন। তারপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি সাক্ষ্য দিচ্ছ যে, আমি আল্লাহর রাসূল ? ইবনে সাইয়াদ তাঁর দিকে দৃষ্টি করে বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি উম্মীদের রাসূল। এরপর সে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলল, আপনি কি সাক্ষ্য দিবেন যে, আমি আল্লাহর রাসূল ? তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন : আমি আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান এনেছি। তারপর তিনি তাকে (ইবনে সাইয়াদকে) জিজ্ঞাসা করলেন ? তুমি কি দেখে থাক ? ইবনে সাইয়াদ বলল, আমার কাছে সত্যবাদী ও মিথ্যাবাদী আগমন করে থাকে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেলেন : ব্যাপারটি তোমার কাছে বিভ্রান্তিকর করা হয়েছে। এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন : আমি একটি বিষয়ে তোমার থেকে (আমার মনের মধ্যে) গোপন রেখেছি। (বলতো সেটি কি ?) ইবনে সাইয়াদ বলল, তা হচ্ছে ‘আদ-দুখখু’। তখন তিনি ইরশাদ করলেন : তুমি লাঞ্চিত হও ! তুমি কখনো তোমার (জন্য নির্ধারিত) সীমা অতিক্রম করতে পারবে না। তখন উমর রা. বললেন : যদি সে সেই (অর্থাৎ মাসীহ দাজ্জাল) হয়ে থাকে, তাহলে তাকে কাবু করার ক্ষমতা তোমাকে দেওয়া হবে না। আর যদি সে সেই (দাজ্জাল) না হয়, তাহলে তাকে হত্যা করার মধ্যে তোমার তোমার কোন কল্যাণ নেই। রাবী সালিম রহ. বলেন, আমি ইবনে উমর রা. -কে বলতে শুনেছি, এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং উবাই ইবনে কা’ব রা. ঐ খেজুর বাগানের দিকে গমন করলেন। যেখানে ইবনে সাইয়াদ ছিল। ইবনে সাইয়াদ তাকে দেখে ফেলার আগেই ইবনে সাইয়াদের কিছু কথা তিনি শুনে নিতে চাচ্ছিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে একটি চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকতে দেখলেন। যার ভিতর থেকে তার গুনগুন আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। ইবনে সাইয়াদের মা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পেল যে, তিনি খেজুর (গাছের) কান্ডের আড়ালে আত্মগোপন করে চলছেন। সে তখন ইবনে সাইয়াদকে ডেকে বলল, ও সাফ ! (এটি ইবনে সাইয়াদের ডাক) নাম। এই যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ইবনে সাইয়াদ লাফিয়ে উঠল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন : সে (ইবনে সাইয়াদের মা) তাকে (যথাস্থায়) থাকতে দিলে (ব্যাপারটি) স্পষ্ট হয়ে যেত। শুআইব রহ. তাঁর হাদীসে فرفضه বলেন. এবং সন্দেহের সাথে বলেন, رمرمة অথবা زمزمة এবং উকাইল রহ. বলেছেন, رمرمة আর মামার বলেছেন رمزة ।

হাদীস নং ১২৭৩

সুলাইমান ইবনে হারব রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ইয়াহুদী বালক, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমত করত, সে একবার অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখার জন্য আসলেন। তিনি তার মাথার কাছে বসে তাকে বললেন : তুমি ইসলাম গ্রহণ কর, সে তখন তার পিতার দিকে তাকাল, সে তার কাছেই ছিল, পিতা তাকে বলল, আবুল কাসিম (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কুনিয়াত) এর কথা মেনে নাও, তখন সে ইসলাম গ্রহণ করল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় ইরশাদ করলেন। যাবতীয় প্রশংসা সে আল্লাহর, যিনি তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিলেন।

হাদীস নং ১২৭৪

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এবং আমার মা (লুবাবাহ বিনতে হারিস) মুসতায আফীন (দুর্বল, অসহায়) এর অন্তর্ভূক্ত ছিলাম। আমি ছিলাম নাবালিগ শিশুদের মধ্যে আর আমার মা ছিলেন মহিলাদের মধ্যে।

হাদীস নং ১২৭৫

আবুল ইয়ামান রহ……..শুআইব রহ. থেকে বর্ণিত যে, ইবনে শিহাব রহ. বলেছেন , নবজাত শিশু মারা গেলে তাদের প্রত্যেকের জানাযার সালাত আদায় করা হবে। যদিও সে কোন ভ্রষ্টা মায়ের সন্তানও হয়। এ কারণে যে, সে সন্তানটি ইসলামী ফিতরাত (তাওহীদ) এর উপর জন্মলাভ করেছে। তার পিতামাতা ইসলামের দাবীদার হোক বা বিশেষভাবে তার পিতা। যদিও তার মা ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মের অনুসারী হয়। নবজাত শিশু স্বরবে কেদে থাকলে তার জানাযার সালাত আদায় করা হবে। আর যে শিশু না কাঁদবে, তার জানাযার সালাত আদায় করা হবে না। কেননা, সে অপূর্ণাংগ সন্তান। কারণ, আবু হুরায়রা রা. হাদীস বর্ণনা করতেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন : প্রতিটি নবজাতকই জন্মলাভ করে ফিতরাতের উপর। এরপর তার মা-বাবা তাকে ইয়াহুদী বা খ্রীষ্টান বা অগ্নিপূজারী রূপে গড়ে তোলে। যেমন, চতুষ্পদ পশু নিখুত বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাদের মধ্যে কোন কানকাটা দেখতে পাও ? (বরং মানুষেরাই তার নাক কান কেটে দিয়ে বা ছিদ্র করে তাকে বিকৃত করে থাকে। অনুরূপ ইসলামের ফিতরাতে ভূমিষ্ট সন্তানকে মা-বাবা তাদের শিক্ষা-দীক্ষা ও জীবন ধারায় প্রবাহিত করে ভ্রান্ত ধর্মী বানিয়ে ফেলে) পরে আবু হুরায়রা রা. তিলাওয়াত করলেন فطرة الله التي فطر الناس عليها الآية আল্লাহর দেওয়া ফিতরাতের অনুসরণ কর যে ফিতরাতের উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন……..। (সূরা রূম : ৩০)।

হাদীস নং ১২৭৬

আবদান রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন : প্রত্যেক নবজাতকই ফিতরাতের উপর জন্মলাভ করে। এরপর তার পিতামাতা তাকে ইয়াহুদী, নাসারা বা মাজূসী রূপে গড়ে তোলে। যেমন, চতুষ্পদ পশু একটি পূর্ণাংগ বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাকে কোন (জন্মগত) কানকাটা দেখতে পাও ? এরপর আবু হুরায়রা রা. তিলাওয়াত করেলন : فطرة الله التي فطر الناس عليها لا تبديل لخلق الله ذلك الدين القيم আল্লাহর দেওয়া ফিতরাতের অনুসরণ কর, সে ফিতরাতের উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন, এটাই সরল সুদৃঢ় দীন। (সূরা রূম : ৩০)।

হাদীস নং ১২৭৭

ইসহাক রহ……সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু তালিব এর মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে আসলেন। তিনি সেখানে আবু জাহল ইবনে হিশাম ও আবদুল্লাহ ইবনে আবু উমায়্যা ইবনে মুগীরাকে উপস্থিত দেখতে পেলেন। (রাবী বলেন) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু তালিবকে লক্ষ্য করে বললেন : চাচাজান ! ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কালিমা পাঠ করুন, তাহলে এর অসীলায় আমি আল্লাহর সমীপে আপনার জন্য সাক্ষ্য দিতে পারব। আবু জাহল ও আবু আবদুল্লাহ ইবনে আবু উমায়্যা বলে উঠল, ওহে আবু তালিব ! তুমি কি আবদুল মুত্তালিবের ধর্ম থেকে বিমুখ হবে ? এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে কালিমা পেশ করতে থাকেন, আর তারা দু’জনও তাদের উক্তি পুনরাবৃত্তি করতে থাকে। অবশেষে আবু তালিব তাদের সামনে শেষ কথাটি বলল, তা এই যে, সে আবদুল মুত্তালিবের ধর্মের উপর অবিচল রয়েছে, সে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলতে অস্বীকার করল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আল্লাহর কসম! তবুও আমি আপনার জন্য মাগফিরাত কামনা করতে থাকব, যতক্ষণ না আমাকে তা থেকে নিষেধ করা হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ নাযিল করেন : ما كان للنبي الآية নবীর জন্য সংগত নয়…….(সূরা তাওবা : ১১৩)।

হাদীস নং ১২৭৮

ইয়াহইয়া রহ……..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এমন দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যে কবর দুটির বাসিন্দাদের আযাব দেওয়া হচ্ছিল। তখন তিনি বললেন : এদের বিরত থাকা) দুরূহ ছিল। তাদের একজন পেশাবের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করত না আর অপরজন চুগলখুরী করে বেড়াত। এরপর তিনি খেজুরের একটি তাজা ডাল নিয়ে তা দু’ভাগ করলেন। তারপর প্রতিটি কবরে একটি করে পুঁতে দিলেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি কি কেন এরূপ করলেন ? তিনি বললেন : ডাল দুটি না শুকান পর্যন্ত আশা করি তাদের আযাব হালকা করা হবে।

হাদীস নং ১২৭৯

উসমান রহ…………আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা বাকীউল গারফাদ (কবরস্থানে) এক জানাযানায় উপস্থিত ছিলাম ছিলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে আগমন করলেন। তিনি উপবেশন করলে আমরাও তাঁর চারদিকে বসে পড়লাম। তাঁর হাতে একটি ছুড়ি ছিল। তিনি নীচের দিকে তাকিয়ে তাঁর ছুড়িটি দ্বারা মাটি খুদতে লাগলেন। এরপর বললেন : তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, অথবা বললেন : এমন কোন সৃষ্ট প্রাণী নেই, যার জন্য জান্নাত ও জাহান্নমে জায়গা নির্ধারিত করে দেওয়া হয়নি আর এ কথা লিখে দেওয়া হয়নি যে, সে দুর্ভাগা হবে কিংবা ভাগ্যবান। তখন এক ব্যক্তি আরয করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তাহলে কি আমরা আমাদের ভাগ্যলিপির উপর ভরসা করে আমল করা ছেড়ে দিব না ? কেননা, আমাদের মধ্যে যারা ভাগ্যবান তারা অচিরেই ভাগ্যবানদের আমলের দিকে ধাবিত হবে। আর যারা দুর্ভাগা তারা অচিরেই দুর্ভাগাদের আমলের দিকে ধাবিত হবে। তিনি বললেন :যারা ভাগ্যবান, তাদের জন্য সৌভাগ্যেরও আমল সহজ করে দেওয়া হয় আর ভাগ্যাহতদের জন্য দুর্ভাগ্যের আমল সহজ করে দেওয়া হবে। এরপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন: “কাজেই যে দান করে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে………।(সূরা লাইল : ৫-১০)।

হাদীস নং ১২৮০

মুসাদ্দাদ রহ……….সাবিত ইবনে যাহহাক রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মের (অনুসারী হওয়ার) ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা হলফ করে সে যেমন বলল, তেমনই হবে আর যে ব্যক্তি কোন ধারলো লোহা দিয়ে আত্মহত্যা করে তাকে তা দিয়েই জাহান্নামে শাস্তি দেওয়া হবে। হাজ্জাজ ইবনে মিনহাল রহ. বলেন, জারীর ইবনে হাযিম রহ. আমাদের হাদীস শুনিয়েছেন, আর তা আমরা ভুলে যাই নি এবং আমরা এ আশংকাও করিনি যে, জুনদাব রহ. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামে মিথ্যা বলেছেন। তিনি বলেছেন, এক ব্যক্তির (দেহে) যখন ছিল, সে আত্মহত্যা করল। তখন আল্লাহ পাক বললেন, আমার বান্দা তার প্রাণ নিয়ে আমার সাথে তাড়াহুড়া করল। আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম।

হাদীস নং ১২৮১

আবুল ইয়ামান রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে (অনুরূপভাবে) নিজেকে ফাঁস লাগাতে থাকবে আর যে ব্যক্তি বর্শার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে (অনুরূপভাবে) বর্শা বিঁধতে থাকবে।

হাদীস নং ১২৮২

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………..উমর ইবনে খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (মুনাফিক সর্দার) আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুল মারা গেলে তার জানাযার সালাতের জন্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আহবান করা হল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে) দাঁড়ালে আমি দ্রুত তাঁর কাছে গিয়ে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি ইবনে উবাই-র জানাযার সালাত আদায় করতে যাচ্ছেন ? অথচ সে অমুক অমুক দিন (আপনার শানে এবং ঈমানদারদের সম্পর্কে) এই এই কথা বলেছে। এ বলে আমি তার উক্তিগুলো গুনেগুনে পুনরাবৃত্তি করলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, উমর, সরে যাও। আমি বারবার আপত্তি করলে তিনি বললেন, আমাকে (তার সালাত আদায় করার ব্যাপারে) ইখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। কাজেই আমি তা গ্রহণ করলাম। আমি যদি জানতাম যে, সত্তর বারের অধিক মাগফিরাত কামনা করলে তাকে মাফ করা হবে তাহলে আমি অবশ্যই তার চাইতে অধিক বার মাফ চাইতাম । উমর রা. বলেন, এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযার সালাত আদায় করেন এবং ফিরে আসেন। এর কিছুক্ষণ পরেই সূরা বারাআতের এ দুটি আয়াত নাযিল হল: “ তাদের কেউ মারা গেলে আপনি কখনো তার জানাযার সালাত আদায় করবেন না। এমতাবস্থায় যে তারা ফাসিক। (আয়াত : ৮৪) রাবী বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে আমার ঐ দিনের দুঃসাহসিক আচরণ করায় আমি বিস্মিত হয়েছি। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই সমধিক অবগত।

হাদীস নং ১২৮৩

আদম রহ………..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কিছু সংখ্যক সাহাবী একটি জানাযার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তাঁরা তার প্রশংসা করলেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : ওয়াজিব হয়ে গেল। একটু পরে তাঁরা অপর একটি জানাযা অতিক্রম করলেন। তখন তাঁরা তার নিন্দাসূচক মন্তব্য করলেন। (এবারও) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : ওয়াজিব হয়ে গেল। তখন উমর ইবনে খাত্তাব রা. আরয করলেন, (ইয়া রাসূলাল্লাহ) কি ওয়াজিব হয়ে গেল ? তিনি বললেন : এ (প্রথম ) ব্যক্তি সম্পর্কে তোমরা উত্তম মন্তব্য করলে, তাই তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেল। আর এ (দ্বিতীয়) ব্যক্তি সম্পর্কে তোমরা নিন্দাসূচক মন্তব্য করায় তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গেল। তোমরা তো পৃথিবীর বুকে আল্লাহর সাক্ষী।

হাদীস নং ১২৮৪

আফফান ইবনে মুসলিম রহ……..আবুল আসওয়াদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মদীনায় আসলাম, তখন সেখানে একটি রোগ (মহামারী আকারে) ছড়িয়ে পড়েছিল। আমি উমর ইবনে খাত্তাব রা.-এর কাছে বসা ছিলাম। এ সময় তাদের পাশ দিয়ে একটি জানাযা অতিক্রম করল। তখন জানাযার লোকটি সম্পর্কে প্রশংসাসূচক মন্তব্য করা হল। উমর রা. বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেল। এরপর অপর একটি (জানাযা) অতিক্রম করল, তখন সে লোকটি সম্পর্কেও প্রশংসাসূচক মন্তব্য করা হল। (এবারও) তিনি বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেল। এরপর তৃতীয় একটি (জানাযা) অতিক্রম করলে, লোকটি সম্বন্ধে নিন্দাসূচক মন্তব্য করা হল। তিনি বলেন, ওয়াজিব হয়ে গেল। আবুল আসওয়াদ রা. বলেন, আমি বললাম, হে আমীরুল মু’মিনীন ! কি ওয়াজিব হয়ে গেল ? তিনি বললেন, আমি তেমনই বলেছি, যেমন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, যে কোন মুসলমান সম্পর্কে চার ব্যক্তি ভাল হওয়ার সাক্ষ্য দিবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন। উমর রা. বলেন ) তখন আমরা বলেছিলাম, তিন জন হলে ? তিনি বললেন, তিনজন হলেও। আমরা বললাম, দু’জন হলে ? তিনি বললেন, দু’জন হলেও। তারপর আমরা একজন সম্পর্কে আর তাকে জিজ্ঞাসা করিনি।

হাদীস নং ১২৮৫

হাফস ইবনে উমর রহ………বারা ইবনে আযিব রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মু’মিন ব্যক্তিকে যখন তার কবরে বসানো হয় তখন তার কাছে উপস্থিত করা হেব ফেরেশতাগণকে। তারপর (ফেরেশতাগণের জিজ্ঞাসার জওয়াবে) সে সাক্ষ্য প্রদান করে যে “আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। ঐ বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করেছে আল্লাহর কালাম :আল্লাহ পার্থিব জীবনে ও আখিরাতে অবিচল রাখবেন সে সকল লোককে যারা ঈমান এনেছে, শাশ্বত বাণীতে (কালিমায়ে তায়্যিবা) । ( ১৪ : ২৭ )

হাদীস নং ১২৮৬

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..ইবনে উমর রা. থেকে সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বদরে নিহত) গর্তবাসীদের দিকে ঝুঁকে দেখে বললেন : তোমাদের সাথে তোমাদের রব যে ওয়াদা করেছিলেন, তা তোমরা বাস্তব পেয়েছো তো ? তখন তাকে বলা হল, আপনি মৃতদের ডেকে কথা বলছেন ? (ও কি শুনতে পায় ?) তিনি বললেন :তোমরা তাদের চাইতে বেশী শুনতে পাও না, তবে তারা সাড়া দিতে পারছে না।

হাদীস নং ১২৮৭

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে , নিশ্চয়ই তারা এখন ভালভাবে জানতে (ও বুঝতে) পেরেছে যে, (কবর আযাব প্রসঙ্গে) আমি তাদের যা বলতাম তা বাস্তব। আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন : “আপনি (হে নবী !) নিশ্চিতই মৃতদের (কোন কথা) শোনাতে পারেন না”।

হাদীস নং ১২৮৮

আবদান রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত যে, এক ইয়াহুদী স্ত্রীলোক আয়িশা রা.-এর কাছে এসে কবর আযাব সম্পর্কে আলোচনা করে তাকে (দু’আ করে) বলল, আল্লাহ আপনাকে কবর আযাব থেকে রক্ষা করুন। পরে আয়িশা রা. কবর আযাব সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন : হ্যাঁ, কবর আযাব (সত্য)। আয়িশা রা. বলেন, এরপর থেকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এমন কোন সালাত আদায় করতে আমি দেখিনি, যাতে তিনি কবর আযাব থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করেননি। (এ হাদীসের বর্ণনায়) গুনদার অধিক উল্লেখ করেছেন যে, কবর আযাব বাস্তব সত্য।

হাদীস নং ১২৮৯

ইয়াহইয়া ইবনে সুলাইমান রহ………উরওয়া ইবনে যুবাইর রা. সূত্রে বর্ণিত, তিনি আসমা বিনতে আবু বকর রা.-কে বলতে শুনেছেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একবার) দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন, তাঁতে তিনি কবরে মানুষ যে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হবে, তার বর্ণনা দিলে মুসলমানগণ ভয়ার্ত চিৎকার করতে লাগলেন।

হাদীস নং ১২৯০

আইয়াশ ইবনে ওয়ালীদ রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : (মৃত) বান্দাকে যখন তার কবরে রাখা হয় এবং তার সাথী এতটুকু মাত্র দূরে যায় যে সে (মৃত ব্যক্তি) তখনও তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়। এ সময় দু’জন ফেরেশতা তার কাছে এসে তাকে বসান এবং তাঁরা বলেন, এ ব্যক্তি অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে তুমি কি বলতে ? তখন মু’মিন ব্যক্তি বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল। তখন তাকে বলা হবে, জাহান্নামে তোমার অবস্থানস্থলটির দিকে নযর কর, আল্লাহ তোমাকে তার বদলে জান্নাতের একটি অবস্থান স্থল দান করেছেন। তখন সে দুটি স্থলের দিকেই দৃষ্টি করে দেখবে। কাতাদা রহ. বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করা হয়েছে যে, সে ব্যক্তির জন্য তাঁর কবর প্রশস্ত করে দেওয়া হবে। এরপর তিনি পুনরায় আনাস রা. এর হাদীসের বর্ণনায় ফিরে আসেন। তিনি (আনাস) রা. বলেন, আর মুনাফিক বা কাফির ব্যক্তিকেও প্রশ্ন করা হবে তুমি এ ব্যক্তি (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে কি বলতে ? সে উত্তরে বলবে, আমি জানি না। লোকেরা যা বলত আমি তা-ই বলতাম। তখন তাকে বলা হবে, তুমি না নিজে জেনেছ, না তিলাওয়াত করে শিখেছ। আর তাকে লোহার মুগুর দ্বারা এমনভাবে আঘাত করা হবে, যার ফরে সে এমন বিকট চিৎকার করে উঠবে যে, দু’ জাতি (মানব ও জিন) ব্যতীত তার আশপাশের সকলেই তা শুনতে পাবে।

হাদীস নং ১২৯১

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……..শু’বা সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি অতিরিক্ত বলেছেন যে, “আল্লাহ অবিচল রাখবেন যারা ঈমান এনেছে……..১৪ : ২৭ ) এ আয়াত কবরের আযাব সম্পর্কে নাযিল হয়েছিল।

হাদীস নং ১২৯২

মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ………..আবু আইয়ূব (আনসারী) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একবার) সূর্য ডুবে যাওয়ার পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন। তখন তিনি একটি আওয়াজ শুনতে পেয়ে বললেন : ইয়াহুদীদের কবরে আযাব দেওয়া হচ্ছে। (এটা আযাব দেওয়ার বা আযাবের ফেরেশতাগণের বা ইয়াহুদীদের আওয়াজ)। (ইমাম বুখারী রহ. বলেন) নযর রহ………..আবু আইয়ূব রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে (অনুরূপ) বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ১২৯৩

মুআল্লা রহ………বিনতে খালিদ ইবনে সাঈদ ইবনে আস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কবর আযাব থেকে পানাহ চাইতে শুনেছেন।

হাদীস নং ১২৯৪

মুসলিম ইবনে ইবরাহীম রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’আ করতেন, ইয়া আল্লাহ ! আমি আপনার সমীপে পানাহ চাচ্ছি কবর আযাব থেকে, জাহান্নামের আযাব থেকে, জীবন ও মরণের ফিতনা থেকে এবং মাসীহ দাজ্জাল এর ফিতনা থেকে।

হাদীস নং ১২৯৫

কুতাইবা রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একবার) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন : ঐ দু’জনকে আযাব দেওয়া হচ্ছে আর কোন কঠিন কাজের কারণে তাদের আযাব দেওয়া হচ্ছে না। এরপর তিনি বললেন : হ্যাঁ (আযাব দেওয়া হচ্ছে) তবে তাদের একজন পরনিন্দা করে বেড়াত, অন্যজন তার পেশাবের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করত না। (রাবী বলেন) এরপর তিনি একটি তাজা ডাল নিয়ে দু’খণ্ডে ভেঙ্গে ফেললেন। তারপর সে দু’খণ্ডের প্রতিটি এক এক কবরে পুঁতে দিলেন। এরপর বললেন : আশা করা যায় যে এ দুটি শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত তাদের আযাব লঘু করা হবে।

হাদীস নং ১২৯৬

ইসমাঈল রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমাদের কেউ মারা গেলে অবশ্যই তার সামনে সকাল ও সন্ধ্যায় তার অবস্থান স্থল উপস্থাপন করা হয়। যদি সে জান্নাতী হয়, তবে (অবস্থান স্থল) জান্নাতীদের মধ্যে দেখানো হয়। আর সে জাহান্নামী হলে, তাকে জাহান্নামীদের (অবস্থান স্থল দেখানো হয়) আর তাকে বলা হয় , এ হচ্ছে তোমার অবস্থান স্থল, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ পাক তোমাকে উত্থিত করা পর্যন্ত।

হাদীস নং ১২৯৭

কুতাইবা রহ……….আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মৃত ব্যক্তিকে খাটিয়ায় রেখে লোকেরা যখন কাঁধে বহন করে নিয়ে যায় তখন সে নেককার হলে বলতে থাকে, আমাকে এগিয়ে নিয়ে চল, আমাকে এগিয়ে নিয়ে চল, আর সে নেককার না হলে বলতে থাকে হায় আফসুস ! এটাকে নিয়ে তোমরা কোথায় যাচ্ছ ? মানুষ ব্যতীত সব কিছুই তার এ আওয়াজ শুনতে পায়। মানুষেরা তা শুনতে পেলে অবশ্যই বেহুঁশ হয়ে যেত।

হাদীস নং ১২৯৮

ইয়াকুব ইবনে ইবরাহীম রহ………..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে কোন মুসলিম ব্যক্তির এমন তিনটি (সন্তান) মারা যাবে, যারা বালিগ হয়নি, আল্লাহ পাক তাদের প্রতি তাঁর রহমতের ফযলে সে ব্যক্তিকে (মা-বাবাকে) জান্নাতে দাখিল করবেন।

হাদীস নং ১২৯৯

আবুল ওয়ালীদ রহ……….বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (নবী তনয়) ইবরাহীম রা.-এর ওফাত হলে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তাঁর জন্য তো জান্নাতে একজন দুধ-মা রয়েছেন।

হাদীস নং ১৩০০

হিব্বান ইবনে মূসা রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মুশরিকদের শিশু সন্তানদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন : আল্লাহ তাদের সৃষ্টি লগ্নেই তাদের ভবিষৎ আমল সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন।

হাদীস নং ১৩০১

আবুল ইয়ামান রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মুশরিকদের অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে বলেন : আল্লাহ তাদের ভবিষৎ আমল সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন।

হাদীস নং ১৩০২

আদম রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : প্রত্যেক নবজাতক ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে। এরপর তার মাতাপিতা তাকে ইয়াহুদী বা খৃষ্টান অথবা অগ্নি উপাসকরূপে রূপান্তরিত করে, যেমন চতুষ্পদ জন্তু একটি পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাকে (জন্মগত) কানকাটা দেখেছ।

হাদীস নং ১৩০৩

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………সামুরা ইবনে জুনদাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ফজর) সালাত শেষে আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসতেন এবং জিজ্ঞাসা করতেন, তোমাদের কেউ গত রাতে কোন স্বপ্ন দেখেছ কি ? (বর্ণনাকারী) বলেন, কেউ স্বপ্ন দেখে থাকলে তিনি তা বিবৃত করতেন। তিনি তখন আল্লাহর মর্জি মুতাবিক তাবীর বলতেন। একদিন আমাদেরকে প্রশ্ন করলেন, তোমাদের কেউ কি কোন স্বপ্ন দেখেছ ? আমরা বললাম, জী না । নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : গত রাতে আমি দেখলাম, দু’জন লোক এসে আমার দু’হাত ধরে আমাকে পবিত্র ভূমির দিকে নিয়ে চললো। হঠাৎ দেখতে পেলাম, এক ব্যক্তি বসে আছে আর এক ব্যক্তি লোহার আকড়া হাতে দাঁড়িয়ে আছে। (ইমাম বুখারী রহ. বলেন) আমাদের এক সাথী মূসা রহ. বর্ণনা করেছেন যে, দণ্ডায়মান ব্যক্তি উপবিষ্ট ব্যক্তির (এক পাশের) চোয়ালটা এমনভাবে আখড়াধারী বিদ্ধ করছিল যে, তা (চোয়াল বিদীর্ণ করে) মস্তকের পশ্চাদ্ভাগ পর্যন্ত পৌছে যাচ্ছিল। তারপর অপর চোয়ালটিও পূর্ববৎ বিদীর্ণ করল। ততক্ষণ প্রথম চোয়ালটা জোড়া লেগে যাচ্ছিল। আখড়াধারী ব্যক্তি পুনরায় সেরূপ করছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ কি হচ্ছে ? সাথী দ্বয় বললেন, (পরে বলা হবে এখন) চলুন। আমরা চলতে চলতে চিৎ হয়ে শায়িত এক ব্যক্তির পাশে এসে উপস্থিত হলাম, তার শিয়রে পাথর হাতে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে পাথর দিয়ে তার মাথা চূর্ণ করে দিচ্ছিল। নিক্ষিপ্ত পাথর দূরে গড়িয়ে যাওয়ার ফলে তা তুলে নিয়ে শায়িত ব্যক্তির নিকট ফিরে আসার পূর্বেই বিচূর্ণ মাথা পূর্ববৎ জোড়া লেগে যাচ্ছিল। সে পুনরায় মাথার উপরে পাথ র নিক্ষেপ করছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, লোকটি কে ? তাঁরা বললেন চলুন। আমরা অগ্রসর হয়ে চুলার ন্যায় এক গর্তের নিকট উপস্থিত হলাম। গর্তের উপরিভাগ ছিল সংকীর্ণ ও নীচের অংশ প্রশস্ত এবং এর নীচ দেশ থেকে আগুন জ্বলছিল। আগুন গর্ত মুখের নিকটবর্তী হলে সেখানের লোকগুলোও উপরে চলে আসত যেন তার গর্ত থেকে বের হয়ে যাবে। আগুন ক্ষীণ হয়ে গেলে তারাও (তলদেশে) ফিরে যায়। গর্তের মধ্যে বহুসংখ্যক উলঙ্গ নারী-পুরুষ ছিল। জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা ? তাঁরা বললেন, চলুন। আমরা চলতে চলতে একটি রক্ত প্রবাহিত নদীর নিকট উপস্থিত হলাম। নদীর মাঝখানে এক ব্যক্তি দাঁড়ানো ছিল, (ইমাম বুখারী রহ. বলেন) ইয়াযীদ ইবনে হারূন ও ওহাব ইবনে জারীর ইবনে হাযিম রহ. বর্ণনায় وعلى شط النهر رجر بين يديه حجارة রয়েছে। নদীর তীরে অপর এক ব্যক্তি যার সামনে ছিল পাথর । নদীর মাঝখানের লোকটি নদী থেকে বের হয়ে আসার জন্য অগ্রসর হলেই তীরে দাঁড়ানো লোকটি সে ব্যক্তির মুখ বরাবর পাথর নিক্ষেপ করত, এতে সে পূর্ব স্থানে ফিরিয়ে দিত। এমনভাবে যতবার সে তীরে উঠে আসতে চেষ্টা করে ততবার সে ব্যক্তি তার মুখ বরাবর পাথর নিক্ষেপ করে পূর্ব স্থানে ফিরে যেতে বাধ্য করে। আমি জানতে চাইলাম এ ঘটনার কারণ কি ? তাঁরা বললেন, চলতে থাকুন। আমরা চলতে চলতে একটি সবুজ বাগানে উপস্থিত হলাম। এতে একটি বড় গাছ ছিল। গাছটির গোড়ায় একজন বয়ঃবৃদ্ধ লোক ও বেশ কিছু বালক-বালিকা ছিল। হঠাৎ দেখি যে, গাছটির সন্নিকটে এক ব্যক্তি সামনে আগুন রেখে তা প্রজ্ব্বলিত করছিল। সাথী দ্বয় আমাকে নিয়ে গাছে আরোহণ করে এমন একটি বাড়ীতে প্রবেশ করালেন যে, এর চেয়ে সুদৃশ্য বাড়ী পূর্বে আমি কখনো দেখিনি। বাড়ীতে বহ সংখ্যক বৃদ্ধ, যুবক, নারী এবং বালক-বালিকা ছিল। এরপর তাঁরা আমাকে সেখান হতে বের করে নিয়ে গাছে আরো উপরে আরোহণ করে অপর একটি বাড়ীতে প্রবেশ করালেন। এটা পূর্বাপেক্ষা অধিক সুদৃশ্য ও সুন্দর । বাড়িটিতে কতিপয় বৃদ্ধ ও যুবক অবস্থান করছিলেন। আমি বললাম, আজ রাতে আপনারা আমাকে (বহুদূর পর্যন্ত) ভ্রমণ করালেন। এখন বলুন, যা দেখলাম তার তাৎপর্য কি ? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ, আপনি যে ব্যক্তির চোয়াল বিদীর্ণ করার দৃশ্য দেখলেন সে মিথ্যাবাদী ; মিথ্যা কথা বলে বেড়াত, তার বিবৃত মিথ্যা বর্ণনা ক্রমাগত বর্ণিত হয়ে দূর দূরান্তে পৌছে যেত। কিয়ামত পর্যন্ত তার সাথে এ ব্যবহার করা হবে। আপনি যার মাথা চূর্ণ করতে দেখলেন, সে এমন ব্যক্তি যাকে আল্লাহ কুরাআনের শিক্ষা দান করেছিলেন, কিন্তু রাতের বেলায় সে কুরআন থেকে বিরত হয়ে নিদ্রা যেত এবং দিনের বেলায় কুরআন আনুযায়ী আমল করত না। তার সাথে কিয়ামত পর্যন্ত এরূপই করা হবে। গর্তের মধ্যে যাদেরকে আপনি দেখলেন, তারা ব্যভিচারী। (রক্ত প্রবাহিত) নদীতে আপনি যাকে দেখলেন, সে সুদখোর। গাছের গোড়ায় যে বৃদ্ধ ছিলেন তিনি ইবরাহীম আ. এবং তাঁর চারপাশের বালক-বালিকারা মানুষের সন্তান। যিনি আগুন জ্বালাচ্ছিলেন তিনি হলেন, জাহান্নামের খাযিন-মালিক নামক ফেরেশতা। প্রথম যে বাড়ীতে আপনি প্রবেশ করলেন তা সাধারণ মুমিনদের বাসস্থান। আর এ বাড়িটি হল শহীদগণের আবাস । আমি (হলাম) জিবরাঈল আর ইনি হলেন মীকাঈল। (এরপর জিবরাঈল আমাকে বললেন) আপনার মাথা উপরে উঠান। আমি উঠিয়ে মেঘমালার ন্যায় কিছু দেখতে পেলাম। তাঁরা বললেন, এটাই হল আপনার আবাসস্থল। আমি বললাম, আমাকে ছেড়ে দিন আমি আমার আবাসস্থলে প্রবেশ করি। তাঁরা বললেন, এখনো আপনার হায়াতের কিছু সময় অবশিষ্ট রয়ে গেছে যা পূর্ণ হয়নি। অবশিষ্ট সময় পূর্ণ হলে অবশ্যই আপনি নিজ আবাসে চলে আসবেন।

হাদীস নং ১৩০৪

মুআল্লা ইবনে আসাদ রহ…….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু বকর রা.-এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কয় খণ্ড কাপড়ে তোমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কাফন দিয়েছেলেন ? আয়িশা রা. বললেন, তিন খণ্ড সাদা সাহুলী কাপড়ে, এগুলোতে (সেলাই কৃত) জামা ও পাগড়ি ছিল না। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, কোন দিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন ? আয়িশা রা. বলেন, সোমবার। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আজ কি বার ? তিনি (আয়িশা রা. বললেন, আজ সোমবার। তিনি (আবু বকর রা. বললেন, আমি আশা করি এখন থেকে আগত রাতের মধ্যে (আমার মৃত্যু হবে) এরপর অসুস্থ কালীন আপন পরিধেয় কাপড়ের প্রতি লক্ষ্য করে তাঁতে জাফরানী রং এর চিহ্ন দেখতে পেয়ে বললেন, আমার এ কাপড়টি ধুয়ে তার সাথে আরো দু’খণ্ড কাপড় বৃদ্ধি করে আমার কাফন দিবে। আমি (আয়িশা) বললাম, এটা (পরিধেয় কাপড়টি) পুরাতন। তিনি বললেন, মৃত ব্যক্তির চেয়ে জীবিতদের নতুন কাপড়ের প্রয়োজন অধিক। আর কাফন হল বিগলিত শবদেহের জন্য। তিনি মঙ্গলবার রাতের সন্ধ্যায় ইন্তিকাল করেন, প্রভাতের পূর্বেই তাকে দাফন করা হয়।

হাদীস নং ১৩০৫

সাঈদ ইবনে আবু মারয়াম রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, আমার জননীর আকস্মিক মৃত্যু ঘটে, আমার বিশ্বাস তিনি (মৃত্যুর পূর্বে) কথা বলতে সক্ষম হলে কিছু সাদাকা করে যেতেন। এখন আমি তাঁর পক্ষ হতে সাদকা করলে তিনি এর সওয়াব পাবেন কি ? তিনি (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন : হ্যাঁ (অবশ্যই পাবে)।

হাদীস নং ১৩০৬

ইসমাঈল ও মুহাম্মদ ইবনে হারব রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোগশয্যায় (স্ত্রীগণের নিকট অবস্থানের) পালার সময় কাল জানতে চাইতেন। আমার অবস্থান আজ কোথায় হবে ? আগামি কাল কোথায় হবে ? আয়িশা রা. এর পালা বিলম্বিত হচ্ছে বলে ধারণা করেই এ প্রশ্ন করতেন। (আয়িশা রা. বলেন) যে দিন আমার পালা আসল, সেদিন আল্লাহ তাকে আমার কণ্ঠদেশ ও বক্ষের মাঝে (হেলান দেওয়া অবস্থায়) রূহ কবয করলেন এবং ঘরে তাকে দাফন করা হয়।

হাদীস নং ১৩০৭

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ…….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তিম রোগশয্যায় বলেন, ইয়াহুদী ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহর লা’নত হোক। কারণ, তারা নিজেদের নবীগণের কবরকে সিজদার স্থানে পরিণত করেছে। (রাবী উরওয়া বলেন) এরূপ আশংকা না থাকলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবরকে (ঘরের বেষ্টনীতে না রেখে) খোলা রাখা হত। কিন্তু তিনি (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আশংকা করেন বা আশংকা করা হয় যে, পরবর্তীতে একে মসজিদে পরিণত করা হবে । রাবী হিলাল রহ. বলেন, উরওয়া আমাকে (আবু আমর) কুনিয়াতে ভূষিত করেন আর তখন পর্যন্ত আমি কোন সন্তানের পিতা হইনি।

হাদীস নং ১৩০৮

মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল রহ………..সুফিয়ান তাম্মার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর রাওযা উটের কুঁচের ন্যায় (উচু) দেখেছেন।

হাদীস নং ১৩০৯

ফারওয়া রহ…………উরওয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ওয়ালীদ ইবনে আবদুল মালিক এর শাসনামলে যখন (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রওযার) বেষ্টনী দেওয়াল ধসে পড়ে, তখন তাঁরা সংস্কার করতে আরম্ভ করলে একটি পা প্রকাশ পায়, তা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কদম মুবারক বলে ধারণা করার কারণে লোকেরা খুব ঘাবড়ে যায়। সনাক্ত করার মত কাউকে তারা পায় নি। অবশেষে উরওয়া রহ. তাদের বললেন, আল্লাহর কসম ! এ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লা-এর কদম মুবারক নয় বরং এতো উমর রা.-এর পা। (ইমাম বুখারী রা. বলেন) হিশাম রহ. তার পিতা সূত্রে……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত যে তিনি আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা.-কে অসিয়্যত করেছিলেন, আমাকে তাদের (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর দু’ সাহাবী) পাশে দাফন করবে না। বরং আমাকে আমার সঙ্গিনী (অন্যান্য উম্মুল মু’মিনীন)-দের সাথে জান্নাতুল বাকীতে দাফন করবে। (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর পাশে সমাহিত হওয়ার কারণে আমি যেন বিশেষ প্রসংশিত না হই)।

হাদীস নং ১৩১০

কুতাইবা রহ………..আমর ইবনে মায়মুন আওদী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উমর রা. কে দেখেছি, তিনি আপন পুত্র আবদুল্লাহ রা.-কে ডেকে বললেন, তুমি উম্মুল মুমিনীন আয়িশা রা.-এর নিকট গিয়ে বল, উমর ইবনে খাত্তাব রা. আপনাকে সালাম জানিয়েছেন এরপর আমাকে আপন সাথীদ্বয় (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবু বকর রা.)-এর পাশে দাফন করতে তিনি রাযী আছেন কি না ? আয়িশা রা. বললেন, আমি পূর্ব থেকেই নিজের জন্য এর আশা পোষণ করতাম, কিন্তু আজ উমর রা.-কে নিজের উপর প্রাধান্য দিচ্ছি। আবদুল্লাহ রা. ফিরে এলে উমর রা. তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কি বার্তা নিয়ে এলে ? তিনি বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন ! তিনি আপনার জন্য অনুমতি প্রদান করেছেন। উমর রা. বললেন, সেখানে শয্যা লাভ করাই আমার কাছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মৃত্যুর পর আমার শবদেহ বহন করে (আয়িশা রা. এর নিকট উপস্থিত করে) তাকে সালাম জানিয়ে বলবে, উমর ইবনে খাত্তাব (পুনরায়) আপনার অনুমতি প্রার্থনা করেছেন। তিনি অনুমতি দিলে, সেখানে আমাকে দাফন করবে। অন্যথায় আমাকে মুসলমানদের সাধারণ কবরস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। তারপর উর রা. বলেন, এ কয়েকজন ব্যক্তি যাদের সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু পর্যন্ত সন্তুষ্ট ছিলেন, তাদের অপেক্ষা অন্য কাউকে আমি এ খিলাফতের (দায়িত্বপালনে) অধিক যোগ্য বলে মনে করি না। তাই আমার পর তাঁরা (তাদের মধ্য থেকে) যাকে খলীফা মনোনীত করবেন তিনি খলীফা হবেন। তোমরা সকলেই তাঁর আদেশ মেনে চলবে, তাঁর আনুগত্য করবে। এ বলে তিনি উসমান, আলী, তালহা , যুবাইর, আবদুর রহমান ইবনে আওফ ও সা’দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা.-এর নাম উল্লেখ করলেন। এ সময়ে এক আনসারী যুবক উমর রা. এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, হে আমীরুল মু’মিনীন ! আল্লাহ প্রদত্ত সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আপনি ইসলামের ছায়াতলে দীর্ঘদিন অতিবাহিত করার সৌভাগ্য লাভ করেছেন যা আপনিও জানেন। এরপর আপনাকে খলীফা নিযুক্ত করা হয় এবং আপনি ন্যায়বিচার করেছেন। সর্বোপরি আপনি শাহাদাত লাভ করছেন। উমর রা. বললেন, হে ভাতিজা ! যদি তা আমার জন্য লাভ লোকসানের না হয়ে বরাবর হয়, তবে কতই না ভাল হবে। (তিনি বললেন) আমার পরবর্তী খলীফাকে ওয়াসিয়্যাত করে যাচ্ছি, তিনি যেন প্রথম দিকের মুহাজিরদের ব্যাপারে যত্নবান হন, তাদের হক আদায় করে চলেন, যেন তাদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করেন। আমি তাকে আনসারদের সাথেও সদাচারের উপদেশ দেই, যারা ঈমান ও মদীনাকে আকড়ে ধরে রয়েছেন, যেন তাদের মধ্যকার সৎকর্মশীলদের কাজের স্বীকৃতি প্রদান করা হয় এবং তাদের মধ্যকার (লঘু) অপরাধীকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। সর্বশেষে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দায়িত্বভুক্ত (সর্বস্তরের মু’মিনদের সম্পর্কে) সতর্ক করে দিচ্ছি যেন মুমিনদের সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা হয়, তাদের রক্ষার জন্য যুদ্ধ করা হয় এবং সাধ্যাতীত কোন দায়িত্ব তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া না হয়।

হাদীস নং ১৩১১

আদম রহ………..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন : তোমরা মৃতদের গালমন্দ কর না। কেননা, তারা আপন কৃত কর্মের ফলাফল পর্যন্ত পৌছে গেছে। (ইমাম বুখারী রহ. বলেন) আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল কুদ্দুস ও মুহাম্মদ ইবনে আনাস রহ. আমাশ রহ. থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আলী ইবনে জা’দ, ইবনে আরআরা ও ইবনে আবু আদী রহ. শু’বা রহ. থেকে হাদীস বর্ণনায় আদম রহ. এর অনুসরণ করেছেন।

হাদীস নং ১৩১২

উমর ইবনে হাফস রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু লাহাব লানাতুল্লাহি আলাইহি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে লক্ষ্য করে বলল, সারা দিনের জন্য তোমার ক্ষতি হোক ! (তার এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে) অবতীর্ণ হয় : আবু লাহাবের হস্ত দ্বয় ধ্বংস হোক এবং সেও ধ্বংস হোক।

 

 

Exit mobile version