Site icon BnBoi.Com

সূরা ফজর বাংলা

সূরা ফজর

সূরা ফজর

 

আয়াতঃ 089.001

শপথ ফজরের,
By the dawn;

وَالْفَجْرِ
Waalfajri

YUSUFALI: By the break of Day
PICKTHAL: By the Dawn
SHAKIR: I swear by the daybreak,
KHALIFA: By the dawn.

=================
সূরা ফজর বা ঊষা – ৮৯
৩০ আয়াত, ১ রুকু, মক্কী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্‌র নামে ]

ভূমিকা ও সার সংক্ষেপ : এই সূরাটি প্রথমে অবতীর্ণ হওয়া সূরাগুলির অন্যতম। সম্ভবতঃ ধারাবাহিকতায় এই সূরাটি প্রথম দশটি সূরার অন্তর্গত।

মানুষের সুদীর্ঘ ইতিহাস এবং মানুষের প্রকৃতির মধ্যে তুলনা দ্বারা এই সূরার বিষয়বস্তুকে তুলে ধরা হয়েছে। যার ফলে যারা পরলোকের ধারণায় বিশ্বাসী তাদের বিশ্বাসের ভিত্তিকে আরও শক্ত করা হয়েছে। ইতিহাসে উদ্ধৃত কল্পকাহিনী আমাদের এই শিক্ষা দেয় যে, কোনও বীরত্ব বা শ্রেষ্ঠত্ব চিরদিন টিকে থাকে না এবং উদ্ধত ও অহংকারীরা ধ্বংস হয়েছে যুগে যুগে। ইতিহাসের কাহিনী যুগে যুগে নৈতিক নীতিমালার এই অভ্রান্ত সত্যকেই তুলে ধরেছে। প্রকৃত পক্ষে ঐতিহাসিক কাহিনী সব সময়ই নৈতিক নীতিমালার এক অপূর্ব সৃষ্টিকর্ম যার প্রত্যেকটি কাহিনীকে জীবনের বিশেষ বিশেষ প্রেক্ষাপটকে তুলে ধরে।

মানুষ সব সময়েই সৌভাগ্যের বিপরীত অবস্থানকে ভয় পায়। ভয় পায় দুর্ভাগ্যকে। তবুও সে অন্যের দুঃখ দুর্দ্দশাতে ক্ষমা ও দয়া প্রদর্শনের শিক্ষা লাভ করে না, এবং ভালো কাজের মাধ্যমে পরলোকের উন্নত জীবনের সন্ধান করে না। পৃথিবীর কর্মব্যস্ত জীবন তাকে পরকালকে ভুলিয়ে দেয়। এই পৃথিবীর যা কিছু পার্থিব চিন্তা ভাবনা মানুষের মনকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিলো, তা যখন মৃত্যুর সাথে সাথে অদৃশ্য হয়ে যাবে তখন সে প্রকৃত সত্যকে উপলব্ধি করতে পারবে। আল্লাহ্‌র ক্ষমতা,মহিমা, ভালোবাসা, মহত্ব এবং সৌন্দর্য্য হবে বেহেশতের বাগানের আলো স্বরূপ।

সূরা ফজর বা ঊষা – ৮৯
৩০ আয়াত, ১ রুকু, মক্কী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্‌র নামে ]

১। শপথ ঊষার ; ৬১০৮

৬১০৮। আল্লাহ্‌র শক্তি ও ন্যায়পরায়ণতাকে, চারটি আকর্ষণীয় তুলনামূলক শপথের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। ” বোধশক্তি সম্পন্নদের জন্য।” প্রথমটি : ঊষার লগ্নের রহস্য ও সৌন্দর্য্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। ঊষা হচ্ছে রাত্রির সুচীভেদ্য অন্ধকার ভেদ করে প্রথম আলোক রশ্মী যখন দিক্‌চক্রবালকে আলোকিত করে, সেই সময়। এই সময়টাকে মুসলমানেরা বলে সুবে সাদেকের সময় এবং হিন্দুরা বলে ব্রহ্মমূহুর্ত। দিন রাত্রির সন্ধিক্ষণের এই সময়টি মানুষের মনের উপরে গভীরভাবে রেখাপাত করার ক্ষমতা রাখে। যে ব্যক্তিগত ভাবে উম্মুক্ত প্রান্তরে কখনও সূর্যদয়ের পূর্বে এরূপ সময়কে অবলোকন করেছে সে জানে এই মূহুর্তের কি ক্ষমতা মনোজগতের উপরে। এই সময়টি হচ্ছে রাত্রির সূচীভেদ্য অন্ধকারের শঙ্কা ও দিনের আলোর সৌন্দর্য্যের মধ্যবর্তী অবস্থা যা আশা আকাঙ্খার প্রতীক। সুবেহ সাদেক হচ্ছে অন্ধকারের সমাপ্তি ঘোষণা ও আলোর যাত্রা শুরুর র্বাতা, যা অত্যন্ত পবিত্র সময়। সুবেহ্‌ সাদেকের শপথের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক জগতের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, যে জগতে অবিশ্বাসের অন্ধকারের থেকে আত্মার জাগরণ ঘটে বিশ্বাসের আলোতে ; মৃত্যু থেকে জাগরণ ঘটে পুণরুত্থানের মাধ্যমে।

 

আয়াতঃ 089.002

শপথ দশ রাত্রির, শপথ তার,
By the ten nights (i.e. the first ten days of the month of Dhul-Hîjjah) ,

وَلَيَالٍ عَشْرٍ
Walayalin AAashrin

YUSUFALI: By the Nights twice five;
PICKTHAL: And ten nights,
SHAKIR: And the ten nights,
KHALIFA: And the ten nights.

২। পাঁচের দ্বিগুণ [ দশ ] রাত্রির শপথ ; ৬১০৯

৬১০৯। যে দশ রজনীর শপথ করা হয়েছে, ধারণা করা হয় এই দশ রজনী হচ্ছে জুল-হজ্ব মাসের প্রথম দশ রাত্রি। প্রাচীন কাল থেকে মক্কা হচ্ছে আরব তীর্থযাত্রীদের জন্য পবিত্র নগরী। হযরত ইব্রাহীমের সাথে পবিত্র মক্কা নগরীর নাম জড়িত। দেখুন সূরা [ ২ : ১২৫ – ১২৭ ] এবং সংলগ্ন টিকাসমূহ এবং সূরা [ ২ : ১৯৭ ] আয়াতের টিকা ২১৭। মোশরেক আরবদের সময়ে পবিত্র কাবা ঘরে বহুধরণের কুসংস্কার বিদ্যমান ছিলো। ইসলাম এ সব কুসংস্কার দূরীভুত করে সমস্ত আনুষ্ঠানিকতাকে পূত ও পবিত্র রূপ দান করে। তাতে নূতন দিক্‌ নির্দ্দেশনা প্রদান করে। এই দশদিন হজ্বযাত্রীদের বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। মক্কা নগরী চর্তদ্দিকে পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত হওয়ার জন্য অন্যান্য শহর থেকে স্বতন্ত্রভাবে অবস্থিত। এই নির্জন নগরী হজ্বের প্রাক্কালে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ হজ্বযাত্রীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। তারা তাদের সৌখিন বস্ত্র ত্যাগ করে সাধারণ এহ্‌রাম পরিধান করে থাকেন [ দেখুন টিকা ২১৭] ; তারা সকল প্রকার যুদ্ধ ও বিবাদ বিসংবাদ ত্যাগ করেন; তারা সকল প্রকার সৌখিনতা ত্যাগ করেন ; তারা অসংযমী হওয়া থেকে বিরত থাকেন; তারা সকল জীবনকে পবিত্র বলে বিশ্বাস করেন ফলে কোন জীব হত্যা করেন না; – কোরবানী ব্যতীত। বিনয় ও নম্রতা হয় তাদের ভূষণ। তারা দিবা রাত্রির অধিকাংশ সময় এবাদতে মশগুল থাকেন। এই দশ রাত্রির সাথে উক্ত পবিত্র ক্রিয়াকর্ম বিদ্যমান। সুতারাং এই দশ রাত্রির শপথ এখানে করা হয়েছে।

 

আয়াতঃ 089.003

যা জোড় ও যা বিজোড়
And by the even and the odd (of all the creations of Allâh) .

وَالشَّفْعِ وَالْوَتْرِ
WaalshshafAAi waalwatri

YUSUFALI: By the even and odd (contrasted);
PICKTHAL: And the Even and the Odd,
SHAKIR: And the even and the odd,
KHALIFA: By the even and the odd.

৩। জোড় ও বিজোড়ের শপথ, ৬১১০

৬১১০। সংখ্যাতত্ব নিয়ে যারা গবেষণা করেন তারা জোড় ও বিজোড় সংখ্যার গুণাগুণ ব্যক্ত করবেন। সাধারণ ভাবে বলা যায় জোড় ও বিজোড় সংখ্যা পরস্পর সর্ম্পকযুক্ত; একে অপরের পরেই আগমন করে থাকে। তবুও এরা প্রত্যেকেই স্বতন্ত্র সংখ্যা। তবুও দুটি বিজোড় সংখ্যার সমষ্টি জোড় সংখ্যা। এখানে জোড় বলে সমগ্র সৃষ্ট জগতকে বোঝানো হয়েছে। কেননা আল্লাহ্‌ সমস্ত সৃষ্ট জগতকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন ; দেখুন [৩৬: ৩৬] আয়াত ও টিকা ৩৯৮১।জীব জগতে ‘জোড়া ‘ শব্দটি দ্বারা দুজনকে বুঝানো হয়। যদিও তারা ভিন্ন ব্যক্তিসত্ত্বা; তবুও নারী ও পুরুষ এই মিলে একক মানুষ সত্ত্বা [ বিজোড় ] ; কারণ তারা একে অপরের সম্পুরক। এভাবেই জোড় থেকে বিজোড় হয়। সৃষ্টিতে নারী পুরুষের ন্যায় বহু জিনিষ বিদ্যমান যা একে অপরের সম্পুরক হয়ে একক সত্ত্বার ন্যায় বিরাজ করে। যেমন পরমাণুর মৌলিক উপাদান প্রোটন ও ইলেক্ট্রন জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করে, যদিও তারা একক ভাবে সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্মাম্বলী। সুতারাং ইহকাল ও পরকালকে ভিন্ন ভাবে চিন্তা না করে পরকালকে ইহকালের পটভূমিতে বিচার করতে হবে। ইহকালের কর্মফলই হবে পরকালের জীবনের পটভূমি। ইহকাল ও পরকাল মিলে একক সত্ত্বা। এখানে যে বিষয়ের জন্য শপথ করা হয়েছে তা এই যে, মানুষের প্রত্যেক কর্মের পরকালে হিসাব নেওয়া হবে এবং সে অনুযায়ী তার শাস্তি ও পুরষ্কার হওয়া সন্দেহ ও সংশয়ের উর্দ্ধে, তবুও কেন আমরা পরকালে অবিশ্বাস করি ?

 

আয়াতঃ 089.004

এবং শপথ রাত্রির যখন তা গত হতে থাকে
And by the night when it departs.

وَاللَّيْلِ إِذَا يَسْرِ
Waallayli itha yasri

YUSUFALI: And by the Night when it passeth away;-
PICKTHAL: And the night when it departeth,
SHAKIR: And the night when it departs.
KHALIFA: By the night as it passes.

৪। এবং শপথ রজনীর যখন তা অপসৃয়মান হয়; ৬১১১

৬১১১। রজনী যখন গত হয়, অর্থাৎ রাত্রির শেষ যাম অর্থাৎ সূর্যদয়ের পূর্বে রাত্রির যে অংশ থাকে। শপথ বাক্যগুলির ধারাবাহিকতা গুলির সৌন্দর্য লক্ষ্য করুণ। প্রথমে বলা হয়েছে রাত্রির অন্ধকার ভেদ করে প্রথম আলোক রশ্মির ঘোষণা ; দ্বিতীয়ত : বলা হয়েছে ধর্মের যে আনুষ্ঠানিককতা আছে সে সম্বন্ধে যেমন জুল -হজ্ব মাসের প্রথম দশ রাত্রি তীর্থযাত্রীদের নিকট ; তৃতীয়তঃ বলা হয়েছে যখন ইহকাল ও পরকালের বৈষম্য দূর হয়ে যাবে ; চতুর্থতঃ শেষ শপথে বলা হয়েছে রাত্রির শেষ যামের, যার পরেই আসবে দিনের আলো। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যখন এই পৃথিবী অদৃশ্য হয়ে যাবে পরলোকের প্রকৃত জীবন তখন দিবালোকের ন্যায় সত্য বলে প্রতিভাত হবে।

 

আয়াতঃ 089.005

এর মধ্যে আছে শপথ জ্ঞানী ব্যক্তির জন্যে।
There is indeed in them (the above oaths) sufficient proofs for men of understanding (and that, they should avoid all kinds of sins and disbeliefs, etc.)!

هَلْ فِي ذَلِكَ قَسَمٌ لِّذِي حِجْرٍ
Hal fee thalika qasamun lithee hijrin

YUSUFALI: Is there (not) in these an adjuration (or evidence) for those who understand?
PICKTHAL: There surely is an oath for thinking man.
SHAKIR: Truly in that there is an oath for those who possess understanding.
KHALIFA: A profound oath, for one who possesses intelligence.

৫। নিশ্চয়ই এর মাঝে শপথ রয়েছে বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য, ৬১১২

৬১১২। এ সব পবিত্র শপথের মাধ্যমে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়েছে আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনের গুরুত্বের প্রতি। আধ্যাত্মিক অজ্ঞতা, বিভ্রান্তি ও ধ্বংসের অন্ধকার থেকে মানব আত্মা কিভাবে প্রত্যাদেশের আলোতে গৌরবময় আলোকজ্জ্বল আধ্যাত্মিক আলোর সন্ধান লাভ করবে, তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। আবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে সে সব জাতির প্রতি যারা আল্লাহ্‌র বিধানকে অস্বীকার করার ফলে নিজেদের ধ্বংস নিজেরাই ডেকে এনেছিলো। উদাহরণ স্বরূপ বলা হয়েছে আ’দ ও সামুদ জাতির কথা যারা নিজেদের গৌরব ও শ্রেষ্ঠত্ব সত্ত্বেও তাদের ধ্বংস কেউ রোধ করতে পারে নাই। এ সব উদাহরণের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ মানুষের সীমিত পার্থিব জ্ঞানের সীমানার সীমারেখাকে বিস্তৃত করতে চেয়েছেন। যতক্ষণ আত্মা নশ্বর দেহকে ধারণ করে থাকে ততক্ষণ আত্মা তার জ্ঞানের সীমারেখাকে পরলোক পর্যন্ত বিস্তৃত করতে পারে না। শুধুমাত্র উপলব্ধি ও অনুভবই পারে এই সীমাকে অতিক্রম করে সসীমকে অসীমে পরিণত করতে। সুতারাং আমাদের সেই বিশ্ব স্রষ্টার নিকট প্রার্থনা করা প্রয়োজন যেনো আমরা আমাদের সসীম জ্ঞানের সীমারেখাকে অতিক্রম করে “বোধ জ্ঞান সম্পন্ন মানুষে পরিণত হতে পারি।

 

আয়াতঃ 089.006

আপনি কি লক্ষ্য করেননি, আপনার পালনকর্তা আদ বংশের ইরাম গোত্রের সাথে কি আচরণ করেছিলেন,
Did you (O Muhammad (Peace be upon him)) not see (thought) how your Lord dealt with ’Ad (people)?

أَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِعَادٍ
Alam tara kayfa faAAala rabbuka biAAadin

YUSUFALI: Seest thou not how thy Lord dealt with the ‘Ad (people),-
PICKTHAL: Dost thou not consider how thy Lord dealt with (the tribe of) A’ad,
SHAKIR: Have you not considered how your Lord dealt with Ad,
KHALIFA: Have you noted what your Lord did to `Aad?

৬। তুমি কি দেখো নাই, তোমার প্রভু কি ভাবে আ’দ [জাতির ] সাথে ব্যবহার করেছিলেন ৬১১৩, –

৬১১৩। আ’দ জাতির সম্পর্কে দেখুন [ ৭ : ৬৫ ] আয়াতের টিকা নং ১০৪০। বর্ণনা করা হয়েছে যে এই প্রাচীন জাতি উন্নত সভ্যতার অধিকারী ছিলো, কিন্তু বারে বারে আল্লাহ্‌র হুকুম সমূহ প্রত্যাখান করার ফলে তাদের ধ্বংস করে দেয়া হয়।

 

আয়াতঃ 089.007

যাদের দৈহিক গঠন স্তম্ভ ও খুঁটির ন্যায় দীর্ঘ ছিল এবং
Who were very tall like lofty pillars,

إِرَمَ ذَاتِ الْعِمَادِ
Irama thati alAAimadi

YUSUFALI: Of the (city of) Iram, with lofty pillars,
PICKTHAL: With many-columned Iram,
SHAKIR: (The people of) Aram, possessors of lofty buildings,
KHALIFA: Erum; the town with tall buildings.

৭। ইরাম গোত্রের প্রতি – যারা অধিকারী ছিলো সুউচ্চ প্রাসাদের, ৬১১৪ –

৬১১৪। এই আয়াতের প্রচলিত বাংলা অনুবাদে বিভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। ইংরেজী অনুবাদ নিম্নরূপ : Of the [ City of ] Iram , with lofty pillars। ইরাম হচ্ছে আরবের দক্ষিণে অবস্থিত প্রাচীন আ’দদের রাজধানী। রাজধানীর স্থাপত্য শিল্পের জন্য আ’দ জাতিরা অত্যন্ত গর্বিত ছিলো। কোন কোন তফসীরকারের মতে ইরাম ছিলেন আ’দ জাতিদের পূর্বপুরুষদের একজন। এক মতে ইনি স্যাম ইবন নূহ্‌ এর পুত্র। জাতি হিসেবে এরা ছিলো অত্যন্ত দীর্ঘকায়।

 

আয়াতঃ 089.008

যাদের সমান শক্তি ও বলবীর্যে সারা বিশ্বের শহরসমূহে কোন লোক সৃজিত হয়নি
The like of which were not created in the land?

الَّتِي لَمْ يُخْلَقْ مِثْلُهَا فِي الْبِلَادِ
Allatee lam yukhlaq mithluha fee albiladi

YUSUFALI: The like of which were not produced in (all) the land?
PICKTHAL: The like of which was not created in the lands;
SHAKIR: The like of which were not created in the (other) cities;
KHALIFA: There was nothing like it anywhere.

৮। যার সমতুল্য, কোন দেশে নির্মিত হয় নাই ; ৬১১৫

৬১১৫। আরবের দক্ষিণের এই অঞ্চলগুলি [ Arabian Felix ] এক সময়ে সভ্যতা ও সমৃদ্ধিতে অতি উন্নত ছিলো যার ধ্বংসাবশেষ ও শিলালিপি এ কথার প্রমাণ করে। Muawiya এর সময়ে এই অঞ্চলের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে থেকে কিছু মুল্যবান প্রস্তর আবিষ্কৃত হয়। বর্তমান কালে এখানে ব্রোঞ্জ নির্মিত সিংহের মাথা ও ব্রোঞ্জের কিছু টুকরা পাওয়া যায় যেগুলির উপরে সাবিঈনদের নাম মুদ্রিত আছে। এগুলি পাওয়া যায় নাজরানা প্রদেশে যার বর্ণনা আছে British Museum Quarterly [Vol xi , no. 4, sept. 1937 ] ।

 

আয়াতঃ 089.009

এবং সামুদ গোত্রের সাথে, যারা উপত্যকায় পাথর কেটে গৃহ নির্মাণ করেছিল।
And (with) Thamûd (people), who cut (hewed) out rocks in the valley (to make dwellings)?

وَثَمُودَ الَّذِينَ جَابُوا الصَّخْرَ بِالْوَادِ
Wathamooda allatheena jaboo alssakhra bialwadi

YUSUFALI: And with the Thamud (people), who cut out (huge) rocks in the valley?-
PICKTHAL: And with (the tribe of) Thamud, who clove the rocks in the valley;
SHAKIR: And (with) Samood, who hewed out the rocks in the valley,
KHALIFA: Also Thamoud, who carved the rocks in their valley.

৯। এবং সামুদ [ জাতি ] ৬১১৬, যারা উপত্যকায় [বিশাল ] পাথর কেটেছিলো [ গৃহ নির্মাণের জন্য ] ?

৬১১৬। সামুদ জাতির জন্য দেখুন [ ৬: ৭৩ ] আয়াতের টিকা ১০৪৩। এদের সভ্যতায় মিশর, সিরিয়া এবং শেষ দিকে গ্রীস ও রোমান প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এরা সুন্দর মন্দির,কবর, এবং অট্টালিকা তৈরি করেছিলো পাথর কেটে। এদের মধ্যে ‘লাত’ দেবীর উপাসনা প্রাধান্য লাভ করে।

 

আয়াতঃ 089.010

এবং বহু কীলকের অধিপতি ফেরাউনের সাথে
And (with) Fir’aun (Pharaoh), who had pegs (who used to torture men by binding them to pegs)?

وَفِرْعَوْنَ ذِي الْأَوْتَادِ
WafirAAawna thee al-awtadi

YUSUFALI: And with Pharaoh, lord of stakes?
PICKTHAL: And with Pharaoh, firm of might,
SHAKIR: And (with) Firon, the lord of hosts,
KHALIFA: And Pharaoh who possessed might.

১০। এবং বহু কীলকের অধিপতি ফেরাউনের প্রতি ? ৬১১৭

৬১১৭। আরবী শব্দটির অনুবাদ হবে “কীলকের অধিপতি “। এ স্থলে ইহার ভাবার্থ করা হয়েছে। সৈনিকদের শিবির যা বড় বড় কীলক দ্বারা ভূমিতে স্থাপন করা হয়। “কীলকের অধিপতি সম্বন্ধে দেখুন সূরা [৩৮: ১২ ] আয়াত ও টিকা ৪১৬০। ফেরাউনের দম্ভ,অহংকার ও তার পতনের জন্য দেখুন [ ২০ : ৪৩, ৭৮ – ৭৯ ] আয়াত। আ’দ,সামুদ ও ফেরাউন এই তিনটি শক্তিশালী জাতি ও ব্যক্তির উদাহরণ এখানে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই উদাহরণের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে যে, ব্যক্তি বা জাতি যত শক্তিশালী ও সমৃদ্ধিশালীই হোক না কেন, যদি তারা আল্লাহ্‌র আইনকে অস্বীকার করে এবং অন্যায়, অত্যাচার করে তবে তাদের পতন অবশ্যম্ভবী। আল্লাহ্‌র আইন হচ্ছে প্রকৃতির আইন। মানুষের প্রবৃত্তিকে স্রষ্টা যে ভাবে সৃষ্টি করেছেন যদি তার স্বাভাবিক বিকাশ ঘটে তবেই মানুষ ইহ জীবনে ও পরলোকে সুখ ও শান্তি লাভ করতে পারবে। প্রবৃত্তির এই স্বাভাবিক বিকাশকে নিশ্চিত করার জন্যই আল্লাহ্‌ তাঁর বিধান সমূহ অবতীর্ণ করেছেন, মানুষের কল্যাণের জন্য, মঙ্গলের জন্য। মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ভর করে মানুষ কিভাবে আল্লাহ্‌ নির্দ্দেশিত পথে নিজেকে বিকশিত করতে পেরেছে। যদি তারা তা না পারে তবে তাদের ধবং স অনিবার্য। পৃথিবীর বুক থেকে তারা চিরতরে মুছে যাবে।

 

আয়াতঃ 089.011

যারা দেশে সীমালঙ্ঘন করেছিল।
Who did transgress beyond bounds in the lands (in the disobedience of Allâh).

الَّذِينَ طَغَوْا فِي الْبِلَادِ
Allatheena taghaw fee albiladi

YUSUFALI: (All) these transgressed beyond bounds in the lands,
PICKTHAL: Who (all) were rebellious (to Allah) in these lands,
SHAKIR: Who committed inordinacy in the cities,
KHALIFA: They all transgressed in the land.

১১। এরা [ সকলেই ] দেশে সীমালংঘন করেছিলো,

১২। অশান্তির [ উপরে অশান্তি ] বৃদ্ধি করেছিলো।

১৩। সুতারাং তোমার প্রভু তাদের উপরে শাস্তির কশাঘাত হানলেন।

১৪। নিশ্চয়ই তোমার প্রভু সতর্ক দৃষ্টি রাখেন। ৬১১৮

৬১১৮। পৃথিবীতে কখনও কখনও দেখা যায়, অন্যায়কারীরা শাস্তি লাভ করছে না। এর মানে এই নয় যে, অত্যাচারীর পাপ কার্য আল্লাহ্‌ দেখতে পান নাই। এর কারণ আল্লাহ্‌র শাস্তি কখনও কখনও দেরীতে আসে। আল্লাহ্‌র দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতা সদা সতর্কভাবে তাঁর সৃষ্টিকে ঘিরে থাকে। পাপীদের প্রতি আল্লাহ্‌র শাস্তি হচ্ছে ন্যায়বিচার কারণ তারা দুর্বল ও মোমেন বান্দাদের প্রতি অন্যায় অত্যাচার করে থাকে। এভাবেই আল্লাহ্‌ তার সৃষ্টির মাঝে ন্যায় বিচার করে থাকেন। আর এ জন্যই তিনি নিখিল বিশ্বের জন্য ‘রব’।

 

আয়াতঃ 089.012

অতঃপর সেখানে বিস্তর অশান্তি সৃষ্টি করেছিল।
And made therein much mischief.

فَأَكْثَرُوا فِيهَا الْفَسَادَ
Faaktharoo feeha alfasada

YUSUFALI: And heaped therein mischief (on mischief).
PICKTHAL: And multiplied iniquity therein?
SHAKIR: So they made great mischief therein?
KHALIFA: They spread evil throughout.

১১। এরা [ সকলেই ] দেশে সীমালংঘন করেছিলো,

১২। অশান্তির [ উপরে অশান্তি ] বৃদ্ধি করেছিলো।

১৩। সুতারাং তোমার প্রভু তাদের উপরে শাস্তির কশাঘাত হানলেন।

১৪। নিশ্চয়ই তোমার প্রভু সতর্ক দৃষ্টি রাখেন। ৬১১৮

৬১১৮। পৃথিবীতে কখনও কখনও দেখা যায়, অন্যায়কারীরা শাস্তি লাভ করছে না। এর মানে এই নয় যে, অত্যাচারীর পাপ কার্য আল্লাহ্‌ দেখতে পান নাই। এর কারণ আল্লাহ্‌র শাস্তি কখনও কখনও দেরীতে আসে। আল্লাহ্‌র দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতা সদা সতর্কভাবে তাঁর সৃষ্টিকে ঘিরে থাকে। পাপীদের প্রতি আল্লাহ্‌র শাস্তি হচ্ছে ন্যায়বিচার কারণ তারা দুর্বল ও মোমেন বান্দাদের প্রতি অন্যায় অত্যাচার করে থাকে। এভাবেই আল্লাহ্‌ তার সৃষ্টির মাঝে ন্যায় বিচার করে থাকেন। আর এ জন্যই তিনি নিখিল বিশ্বের জন্য ‘রব’।

 

আয়াতঃ 089.013

অতঃপর আপনার পালনকর্তা তাদেরকে শাস্তির কশাঘাত করলেন।
So your Lord poured on them different kinds of severe torment.

فَصَبَّ عَلَيْهِمْ رَبُّكَ سَوْطَ عَذَابٍ
Fasabba AAalayhim rabbuka sawta AAathabin

YUSUFALI: Therefore did thy Lord pour on them a scourge of diverse chastisements:
PICKTHAL: Therefore thy Lord poured on them the disaster of His punishment.
SHAKIR: Therefore your Lord let down upon them a portion of the chastisement.
KHALIFA: Consequently, your Lord poured upon them a whipping retribution.

১১। এরা [ সকলেই ] দেশে সীমালংঘন করেছিলো,

১২। অশান্তির [ উপরে অশান্তি ] বৃদ্ধি করেছিলো।

১৩। সুতারাং তোমার প্রভু তাদের উপরে শাস্তির কশাঘাত হানলেন।

১৪। নিশ্চয়ই তোমার প্রভু সতর্ক দৃষ্টি রাখেন। ৬১১৮

৬১১৮। পৃথিবীতে কখনও কখনও দেখা যায়, অন্যায়কারীরা শাস্তি লাভ করছে না। এর মানে এই নয় যে, অত্যাচারীর পাপ কার্য আল্লাহ্‌ দেখতে পান নাই। এর কারণ আল্লাহ্‌র শাস্তি কখনও কখনও দেরীতে আসে। আল্লাহ্‌র দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতা সদা সতর্কভাবে তাঁর সৃষ্টিকে ঘিরে থাকে। পাপীদের প্রতি আল্লাহ্‌র শাস্তি হচ্ছে ন্যায়বিচার কারণ তারা দুর্বল ও মোমেন বান্দাদের প্রতি অন্যায় অত্যাচার করে থাকে। এভাবেই আল্লাহ্‌ তার সৃষ্টির মাঝে ন্যায় বিচার করে থাকেন। আর এ জন্যই তিনি নিখিল বিশ্বের জন্য ‘রব’।

 

আয়াতঃ 089.014

নিশ্চয় আপনার পালকর্তা সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।
Verily, your Lord is Ever Watchful (over them).

إِنَّ رَبَّكَ لَبِالْمِرْصَادِ
Inna rabbaka labialmirsadi

YUSUFALI: For thy Lord is (as a Guardian) on a watch-tower.
PICKTHAL: Lo! thy Lord is ever watchful.
SHAKIR: Most sure!y your Lord is watching.
KHALIFA: Your Lord is ever watchful.

১১। এরা [ সকলেই ] দেশে সীমালংঘন করেছিলো,

১২। অশান্তির [ উপরে অশান্তি ] বৃদ্ধি করেছিলো।

১৩। সুতারাং তোমার প্রভু তাদের উপরে শাস্তির কশাঘাত হানলেন।

১৪। নিশ্চয়ই তোমার প্রভু সতর্ক দৃষ্টি রাখেন। ৬১১৮

৬১১৮। পৃথিবীতে কখনও কখনও দেখা যায়, অন্যায়কারীরা শাস্তি লাভ করছে না। এর মানে এই নয় যে, অত্যাচারীর পাপ কার্য আল্লাহ্‌ দেখতে পান নাই। এর কারণ আল্লাহ্‌র শাস্তি কখনও কখনও দেরীতে আসে। আল্লাহ্‌র দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতা সদা সতর্কভাবে তাঁর সৃষ্টিকে ঘিরে থাকে। পাপীদের প্রতি আল্লাহ্‌র শাস্তি হচ্ছে ন্যায়বিচার কারণ তারা দুর্বল ও মোমেন বান্দাদের প্রতি অন্যায় অত্যাচার করে থাকে। এভাবেই আল্লাহ্‌ তার সৃষ্টির মাঝে ন্যায় বিচার করে থাকেন। আর এ জন্যই তিনি নিখিল বিশ্বের জন্য ‘রব’।

 

আয়াতঃ 089.015

মানুষ এরূপ যে, যখন তার পালনকর্তা তাকে পরীক্ষা করেন, অতঃপর সম্মান ও অনুগ্রহ দান করেন, তখন বলে, আমার পালনকর্তা আমাকে সম্মান দান করেছেন।
As for man, when his Lord tries him by giving him honour and gifts, then he says (puffed up): ”My Lord has honoured me.”

فَأَمَّا الْإِنسَانُ إِذَا مَا ابْتَلَاهُ رَبُّهُ فَأَكْرَمَهُ وَنَعَّمَهُ فَيَقُولُ رَبِّي أَكْرَمَنِ
Faamma al-insanu itha ma ibtalahu rabbuhu faakramahu wanaAAAAamahu fayaqoolu rabbee akramani

YUSUFALI: Now, as for man, when his Lord trieth him, giving him honour and gifts, then saith he, (puffed up), “My Lord hath honoured me.”
PICKTHAL: As for man, whenever his Lord trieth him by honouring him, and is gracious unto him, he saith: My Lord honoureth me.
SHAKIR: And as for man, when his Lord tries him, then treats him with honor and makes him lead an easy life, he says: My Lord honors me.
KHALIFA: When the human being is tested by his Lord, through blessings and joy, he says, “My Lord is generous towards me.”

১৫। এখন, যখন তার প্রভু তাকে সম্মান ও অনুগ্রহ দান করে পরীক্ষা করেন ৬১১৯, তখন সে বলে, ” আমার প্রভু আমাকে সম্মানিত করেছেন। ”

৬১১৯। নিখিল বিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহ্‌র সতর্ক দৃষ্টি ও ন্যায় বিচারের বিপরীতে তুলে ধরা হয়েছে মানুষের স্বার্থপরতার দরুণ ক্ষুব্ধ মনোভাবকে। আল্লাহ্‌ আমাদের পরীক্ষা করেন সুখে-দুঃখে, সম্পদে- অভাবে। সুখ ও সম্পদ যখন আমাদের হস্তগত হয়, তখন প্রয়োজন বিনয়ের। আল্লাহ্‌র দানকে কৃতজ্ঞ ও বিনয়াবনত চিত্তে গ্রহণ করে তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী তা ব্যবহার করা উচিত। আবার দুঃখে, বিপর্যয়ে ও অভাবে আল্লাহ্‌র উপরে নির্ভর করে ধৈর্য্য অবলম্বন করা উচিত। কিন্তু বাস্তবে এই চিত্র বিপরীত। আল্লাহ্‌র নেয়ামতে ধন্য ব্যক্তিরা ধনের গর্বে, অহংকারে দম্ভ প্রকাশ করে আবার দুঃখ,বিপদ, বিপর্যয়ে আল্লাহ্‌র উপরে নির্ভরশীল হয়ে ধৈর্য্য ধারণের পরিবর্তে হতাশ ও বিষন্ন হয়ে পড়ে। তারা মিথ্যা মূল্যবোধের দ্বারা হীনমন্যতায় ভোগে।

 

আয়াতঃ 089.016

এবং যখন তাকে পরীক্ষা করেন, অতঃপর রিযিক সংকুচিত করে দেন, তখন বলেঃ আমার পালনকর্তা আমাকে হেয় করেছেন।
But when He tries him, by straitening his means of life, he says: ”My Lord has humiliated me!”

وَأَمَّا إِذَا مَا ابْتَلَاهُ فَقَدَرَ عَلَيْهِ رِزْقَهُ فَيَقُولُ رَبِّي أَهَانَنِ
Waamma itha ma ibtalahu faqadara AAalayhi rizqahu fayaqoolu rabbee ahanani

YUSUFALI: But when He trieth him, restricting his subsistence for him, then saith he (in despair), “My Lord hath humiliated me!”
PICKTHAL: But whenever He trieth him by straitening his means of life, he saith: My Lord despiseth me.
SHAKIR: But when He tries him (differently), then straitens to him his means of subsistence, he says: My Lord has disgraced me.
KHALIFA: But if He tests him through reduction in provisions, he says, “My Lord is humiliating me!”

১৬। কিন্তু যখন আল্লাহ্‌ তার জীবনোপকরণ সংকুচিত করে তাকে পরীক্ষা করেন, ৬১২০ তখন সে বলে, ” আমার প্রভু আমাকে লাঞ্ছিত করেছেন। ”

৬১২০। ‘রিযক সংকুচিত ‘ করার অর্থ আক্ষরিক ভাবেও হতে পারে ও রূপক অর্থেও হতে পারে। আল্লাহ্‌ মানুষকে সমভাবে তাঁর নেয়ামত দান করেন না। তাঁর নেয়ামত বা জীবনোপকরণ হতে পারে ধন-সম্পদ, সমৃদ্ধি ও স্বচ্ছন্দ্য ও সুস্বাস্থ্য বা ক্ষমতা, প্রভাব প্রতিপত্তি ইত্যাদি। যদি কখনও তার ঘাটতি হয়, অভাব অনটনের সম্মুখীন হয়, বা দারিদ্র পীড়িত হয়, তবে তারা ক্রুব্ধ হয়, কারণ তারা মনে করে তারা সম্মানের ও অনুগ্রহের পাত্র ছিলো, কিন্তু এখন তাকে অহেতুক লাঞ্ছনা ও অপমান করা হয়েছে।

 

আয়াতঃ 089.017

এটা অমূলক, বরং তোমরা এতীমকে সম্মান কর না।
Nay! But you treat not the orphans with kindness and generosity (i.e. you neither treat them well, nor give them their exact right of inheritance)!

كَلَّا بَل لَّا تُكْرِمُونَ الْيَتِيمَ
Kalla bal la tukrimoona alyateema

YUSUFALI: Nay, nay! but ye honour not the orphans!
PICKTHAL: Nay, but ye (for your part) honour not the orphan
SHAKIR: Nay! but you do not honor the orphan,
KHALIFA: Wrong! It is you who brought it on yourselves by not regarding the orphan.

১৭। না, না ! তোমরা কিন্তু এতিমদের সম্মান কর নাই ! ৬১২১

৬১২১। প্রকৃত পক্ষে মানুষ যখন এরূপ ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয় যে, জীবনোকরণের প্রাচুর্য্য দ্বারা সম্মানীত করেন তখনও কি তারা হতভাগ্য এতিমদের কথা চিন্তা করে? গরীবদের কথা স্মরণে রাখে ? বরং এসব সম্পদশালীরা অনেকেই এতিমদের সম্পত্তি গ্রাস করতে উদগ্রীব হয়, এবং গরীবকে শোষণ করে নিজেদের বিলাস ব্যসনে ব্যয় করাকে অধিক শ্রেয় মনে করে। পাপীদের মনঃস্তত্বের এ এক রূপ।

 

আয়াতঃ 089.018

এবং মিসকীনকে অন্নদানে পরস্পরকে উৎসাহিত কর না।
And urge not on the feeding of AlMiskîn (the poor)!

وَلَا تَحَاضُّونَ عَلَى طَعَامِ الْمِسْكِينِ
Wala tahaddoona AAala taAAami almiskeeni

YUSUFALI: Nor do ye encourage one another to feed the poor!-
PICKTHAL: And urge not on the feeding of the poor.
SHAKIR: Nor do you urge one another to feed the poor,
KHALIFA: And not advocating charity towards the poor.

১৮। অভাবগ্রস্থদের খাদ্যদানে তোমরা পরস্পরকে উৎসাহিত করা নাই ৬১১২

৬১২২। পাপীদের মনঃস্তত্বের দ্বিতীয় রূপ হচ্ছে তারা দয়া ও দানের ব্যাপারে অত্যন্ত কৃপণ। নিজেরা তো দান করেই না অন্যকেও এ কাজে উৎসাহিত করে না।

 

আয়াতঃ 089.019

এবং তোমরা মৃতের ত্যাজ্য সম্পত্তি সম্পূর্ণরূপে কুক্ষিগত করে ফেল
And you devour inheritance all with greed,

وَتَأْكُلُونَ التُّرَاثَ أَكْلًا لَّمًّا
Wata/kuloona altturatha aklan lamman

YUSUFALI: And ye devour inheritance – all with greed,
PICKTHAL: And ye devour heritages with devouring greed.
SHAKIR: And you eat away the heritage, devouring (everything) indiscriminately,
KHALIFA: And consuming the inheritance of helpless orphans.

১৯। এবং তোমরা লোভের বশবর্তী হয়ে উত্তরাধীকারীদের প্রাপ্য সম্পদ আত্মসাৎ করতে ৬১২৩

৬১২৩। তৃতীয় মন্দ অভ্যাস হচ্ছে এরা হালাল সম্পত্তি ব্যতীতও অন্যের ওয়ারীস সম্পত্তিও দখল করে নেয়। উত্তরাধীকার প্রাপ্ত সম্পত্তি দুভাবে অপব্যবহার হতে পারে। ১) অনেক সময়ে নাবালক এতিম,বা মহিলাদের বিষয় সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব যাদের উপরে দেয়া হয় তারা সেই সম্পত্তি সুচতুর কৌশলে হস্তগত করে ফেলে। এখানে আল্লাহ্‌র হুকুম হচ্ছে এসব সম্পত্তি আল্লাহ্‌র আমানত হিসেবে রক্ষা করা। ২) যদি কেউ ন্যায্য ভাবে সম্পত্তির উত্তরাধীকার হয়, সে ক্ষেত্রেও সম্পদের দায়িত্ব তার উপরে বর্তায়। যদিও সম্পদ তার নিজস্ব তবুও বিলাস ব্যসনে সেই সম্পত্তি যথেচ্ছ ব্যয় করার অধিকার আল্লাহ্‌ তাকে সম্পূর্ণ দান করেন নাই। গরীবের অধিকার আছে তাঁর সম্পদের উপরে। মানুষকে এই ভাবে সম্পদের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়ার কারণ মানুষ সম্পদ অত্যন্ত ভালোবাসে।

 

আয়াতঃ 089.020

এবং তোমরা ধন-সম্পদকে প্রাণভরে ভালবাস।
And you love wealth with much love!

وَتُحِبُّونَ الْمَالَ حُبًّا جَمًّا
Watuhibboona almala hubban jamman

YUSUFALI: And ye love wealth with inordinate love!
PICKTHAL: And love wealth with abounding love.
SHAKIR: And you love wealth with exceeding love.
KHALIFA: And loving the money too much.

২০। তোমরা সম্পদকে অতিশয় ভালোবাসতে।

২১। না, [ ইহা সংগত নয় ] ! পৃথিবীকে যখন চূর্ণবিচূর্ণ করা হবে, ৬১২৪

৬১২৪। এই আয়াতের মাধ্যমে পুণরুত্থান দিবসের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। পৃথিবীতে আমরা গরীবের ও অসহায়ের অধিকার সম্বন্ধে সচেতন নাও হতে পারি। সম্পদের ভূবন গ্রাসী ক্ষুধা ও লোভ আমাদের ন্যায় ও অন্যায়ের সীমারেখা ভুলিয়ে দিতে পারে। ফলে গরীবের উপরে দমননীতি প্রয়োগ করতে আমাদের বিবেক পীড়িত হয় না। কিন্তু পরলোকে আমাদের এ সব অন্যায় কর্মের জবাবদিহি করতে হবে। এ কথা অতি বাস্তব সত্য যে পৃথিবীকে আমরা জন্মাবধি দেখে থাকি অবিচল সত্যরূপে। যাকে মনে হয় ধ্বংস নাই, সেই পৃথিবী সেদিন চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। মরিচীকার ন্যায় মিলিয়ে যাবে এবং প্রকৃত সত্য উদ্ভাসিত হবে।

 

আয়াতঃ 089.021

এটা অনুচিত। যখন পৃথিবী চুর্ণ-বিচুর্ণ হবে
Nay! When the earth is ground to powder,

كَلَّا إِذَا دُكَّتِ الْأَرْضُ دَكًّا دَكًّا
Kalla itha dukkati al-ardu dakkan dakkan

YUSUFALI: Nay! When the earth is pounded to powder,
PICKTHAL: Nay, but when the earth is ground to atoms, grinding, grinding,
SHAKIR: Nay! when the earth is made to crumble to pieces,
KHALIFA: Indeed, when the earth is crushed, utterly crushed.

২০। তোমরা সম্পদকে অতিশয় ভালোবাসতে।

২১। না, [ ইহা সংগত নয় ] ! পৃথিবীকে যখন চূর্ণবিচূর্ণ করা হবে, ৬১২৪

৬১২৪। এই আয়াতের মাধ্যমে পুণরুত্থান দিবসের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। পৃথিবীতে আমরা গরীবের ও অসহায়ের অধিকার সম্বন্ধে সচেতন নাও হতে পারি। সম্পদের ভূবন গ্রাসী ক্ষুধা ও লোভ আমাদের ন্যায় ও অন্যায়ের সীমারেখা ভুলিয়ে দিতে পারে। ফলে গরীবের উপরে দমননীতি প্রয়োগ করতে আমাদের বিবেক পীড়িত হয় না। কিন্তু পরলোকে আমাদের এ সব অন্যায় কর্মের জবাবদিহি করতে হবে। এ কথা অতি বাস্তব সত্য যে পৃথিবীকে আমরা জন্মাবধি দেখে থাকি অবিচল সত্যরূপে। যাকে মনে হয় ধ্বংস নাই, সেই পৃথিবী সেদিন চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। মরিচীকার ন্যায় মিলিয়ে যাবে এবং প্রকৃত সত্য উদ্ভাসিত হবে।

 

আয়াতঃ 089.022

এবং আপনার পালনকর্তা ও ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে উপস্থিত হবেন,
And your Lord comes with the angels in rows,

وَجَاء رَبُّكَ وَالْمَلَكُ صَفًّا صَفًّا
Wajaa rabbuka waalmalaku saffan saffan

YUSUFALI: And thy Lord cometh, and His angels, rank upon rank,
PICKTHAL: And thy Lord shall come with angels, rank on rank,
SHAKIR: And your Lord comes and (also) the angels in ranks,
KHALIFA: And your Lord comes, together with the angels in row after row.

২২। যখন তোমার প্রভু উপস্থিত হবেন, এবং সারিবদ্ধ ভাবে ফেরেশতারা,

২৩। জাহান্নামকে সেদিন [ মুখোমুখি ] আনা হবে ৬১২৫ সেদিন মানুষ উপলব্ধি করতে পারবে, কিন্তু কি ভাবে সে উপলব্ধি তার উপকারে আসবে ?

৬১২৫। অন্যায়কারীর অন্যায়ের প্রতিশোধ প্রতিদান সেদিন প্রদান করা হবে। অন্যায়কারীরা সেদিন আত্মার অন্তঃস্থলে হৃদয়ঙ্গম করবে প্রকৃত সত্যের রূপকে। পৃথিবীর জীবনে যত বিভ্রান্তি তাকে সত্য হৃদয়ঙ্গমে বাঁধার সৃষ্টি করেছিলো সে সকল বাধা অপসারিত হবে। অপসৃয়মান পৃথিবীর রূপ দ্রুতবেগে দৃষ্টি থেকে মুছে যাবে। সেদিন সকল অন্যায়কারীরা অনুতাপ করার জন্য ব্যগ্র হবে। কিন্তু তখন তাদের সে সময় দেয়া হবে না অনুতাপের জন্য তা হবে অনেক দেরী, কেননা, পরকাল কর্মজগত নয়, প্রতিদান জগত। তবে এখন এই পার্থিব জীবনে কেন অনুতাপ করে না অন্যায়কারীরা, কেন তারা পরলোকের জীবনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে না ?

 

আয়াতঃ 089.023

এবং সেদিন জাহান্নামকে আনা হবে, সেদিন মানুষ স্মরণ করবে, কিন্তু এই স্মরণ তার কি কাজে আসবে?
And Hell will be brought near that Day. On that Day will man remember, but how will that remembrance (then) avail him?

وَجِيءَ يَوْمَئِذٍ بِجَهَنَّمَ يَوْمَئِذٍ يَتَذَكَّرُ الْإِنسَانُ وَأَنَّى لَهُ الذِّكْرَى
Wajee-a yawma-ithin bijahannama yawma-ithin yatathakkaru al-insanu waanna lahu alththikra

YUSUFALI: And Hell, that Day, is brought (face to face),- on that Day will man remember, but how will that remembrance profit him?
PICKTHAL: And hell is brought near that day; on that day man will remember, but how will the remembrance (then avail him)?
SHAKIR: And hell is made to appear on that day. On that day shall man be mindful, and what shall being mindful (then) avail him?
KHALIFA: On that day, Gehenna will be brought forth. On that day, the human being will remember – but what a remembrance – it will be too late.

২২। যখন তোমার প্রভু উপস্থিত হবেন, এবং সারিবদ্ধ ভাবে ফেরেশতারা,

২৩। জাহান্নামকে সেদিন [ মুখোমুখি ] আনা হবে ৬১২৫ সেদিন মানুষ উপলব্ধি করতে পারবে, কিন্তু কি ভাবে সে উপলব্ধি তার উপকারে আসবে ?

৬১২৫। অন্যায়কারীর অন্যায়ের প্রতিশোধ প্রতিদান সেদিন প্রদান করা হবে। অন্যায়কারীরা সেদিন আত্মার অন্তঃস্থলে হৃদয়ঙ্গম করবে প্রকৃত সত্যের রূপকে। পৃথিবীর জীবনে যত বিভ্রান্তি তাকে সত্য হৃদয়ঙ্গমে বাঁধার সৃষ্টি করেছিলো সে সকল বাধা অপসারিত হবে। অপসৃয়মান পৃথিবীর রূপ দ্রুতবেগে দৃষ্টি থেকে মুছে যাবে। সেদিন সকল অন্যায়কারীরা অনুতাপ করার জন্য ব্যগ্র হবে। কিন্তু তখন তাদের সে সময় দেয়া হবে না অনুতাপের জন্য তা হবে অনেক দেরী, কেননা, পরকাল কর্মজগত নয়, প্রতিদান জগত। তবে এখন এই পার্থিব জীবনে কেন অনুতাপ করে না অন্যায়কারীরা, কেন তারা পরলোকের জীবনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে না ?

 

আয়াতঃ 089.024

সে বলবেঃ হায়, এ জীবনের জন্যে আমি যদি কিছু অগ্রে প্রেরণ করতাম!
He will say: ”Alas! Would that I had sent forth (good deeds) for (this) my life!”

يَقُولُ يَا لَيْتَنِي قَدَّمْتُ لِحَيَاتِي
Yaqoolu ya laytanee qaddamtu lihayatee

YUSUFALI: He will say: “Ah! Would that I had sent forth (good deeds) for (this) my (Future) Life!”
PICKTHAL: He will say: Ah, would that I had sent before me (some provision) for my life!
SHAKIR: He shall say: O! would that I had sent before for (this) my life!
KHALIFA: He will say, “Oh, I wish I prepared for my (eternal) life.”

২৪। সে বলবে, ” হায় ! আমার [ এই ভবিষ্যত ] জীবনের জন্য যদি কিছু [ সৎ কাজ ] পূর্বে প্রেরণ করতাম। ”

২৫। কেন না, সেদিন তাঁর শাস্তির মত শাস্তি কেহ দিতে পারবে না, ৬১২৬

২৬। এবং তাঁর বন্ধনের মত বন্ধন কেহ করতে পারবে না।

৬১২৬। এই আয়াতে ‘শাস্তি’ ও পরের আয়াতে ‘বন্ধন ‘ এই দুটি হচ্ছে শাস্তিরই দুটি বিভিন্ন ধারা। ‘শাস্তি ‘ দ্বারা বুঝানো হয়েছে যন্ত্রণা, উদ্বেগ, যে যন্ত্রণা বা উদ্বেগের পরিণাম এই পৃথিবীতে বসে কল্পনা করাও অসম্ভব। এই উদ্বেগের ও যন্ত্রণার তীব্রতা এতটাই গভীর হবে যে, তা অন্তরের অন্তঃস্থলকে তীব্র দহনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেবে – যার তুলনায় শারীরিক যন্ত্রণাকে মনে হবে অতি নগণ্য। এ যন্ত্রণা প্রকাশের ভাষা পৃথিবীর কারও নাই, কোনও লেখনীও তা প্রকাশে সক্ষম নয়। ‘বন্ধন’ দ্বারা বুঝানো হয়েছে,আত্মার বন্ধন। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে সত্যকে প্রত্যাখান করে তাদের জন্য সত্যকে ধারণ করা,অনুভব করা ও উপলব্ধি করার সকল দরজা বন্ধ হয়ে যায়। এরা পরিণত হয়ে পড়ে সংস্কার ও নীতি বা প্রথার দাসে যার সাথে সত্যের কোন সর্ম্পক নাই। ধর্মীয় দিক থেকে এরা হয় মৌলবাদী, আবার নাস্তিকেরা হয়ে পড়ে কোনও অন্ধ নীতি বা প্রথার দাস কারণ ধর্মহীনতা তাদের আত্মার মাঝে অবলম্বনহীনতার সৃষ্টি করে। এদের আত্মা সত্যের আলোর বিচ্যুতির ফলে সামাজিক প্রথা বা ধমীর্য় আনুষ্ঠানিকতা ও সংস্কারের দাসে পরিণত হয়। আত্মার এই বন্ধনের নিকট পৃথিবীর সকল বন্ধন বা বন্দীত্ব অতি তুচ্ছ। পৃথিবীর জীবনে আত্মার এই বন্ধনের ফলে এরা ন্যায় ও সত্যকে অনুধাবনের ক্ষমতা হারাবে এরা হচ্ছে মূক ও বধির [ ২ : ৭]। ‘মূক’ কারণ প্রকৃত সত্যকে উপলব্ধি না করার দরুণ তারা সত্য ভাষণে বা প্রচারে হবে অপারগ এবং ‘বধির ‘ কারণ সত্যের আহ্বান তাদের শ্রবণে পৌঁছাবে না। এই আত্মিক অন্ধত্ব তাদের মাঝে ইহলোকেই যন্ত্রণার সৃষ্টি করবে। পরলোকে সে যন্ত্রণা আরও বৃদ্ধি পাবে।

 

আয়াতঃ 089.025

সেদিন তার শাস্তির মত শাস্তি কেউ দিবে না।
So on that Day, none will punish as He will punish.

فَيَوْمَئِذٍ لَّا يُعَذِّبُ عَذَابَهُ أَحَدٌ
Fayawma-ithin la yuAAaththibu AAathabahu ahadun

YUSUFALI: For, that Day, His Chastisement will be such as none (else) can inflict,
PICKTHAL: None punisheth as He will punish on that day!
SHAKIR: But on that day shall no one chastise with (anything like) His chastisement,
KHALIFA: On that day, no retribution could be worse than His retribution.

২৪। সে বলবে, ” হায় ! আমার [ এই ভবিষ্যত ] জীবনের জন্য যদি কিছু [ সৎ কাজ ] পূর্বে প্রেরণ করতাম। ”

২৫। কেন না, সেদিন তাঁর শাস্তির মত শাস্তি কেহ দিতে পারবে না, ৬১২৬

২৬। এবং তাঁর বন্ধনের মত বন্ধন কেহ করতে পারবে না।

৬১২৬। এই আয়াতে ‘শাস্তি’ ও পরের আয়াতে ‘বন্ধন ‘ এই দুটি হচ্ছে শাস্তিরই দুটি বিভিন্ন ধারা। ‘শাস্তি ‘ দ্বারা বুঝানো হয়েছে যন্ত্রণা, উদ্বেগ, যে যন্ত্রণা বা উদ্বেগের পরিণাম এই পৃথিবীতে বসে কল্পনা করাও অসম্ভব। এই উদ্বেগের ও যন্ত্রণার তীব্রতা এতটাই গভীর হবে যে, তা অন্তরের অন্তঃস্থলকে তীব্র দহনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেবে – যার তুলনায় শারীরিক যন্ত্রণাকে মনে হবে অতি নগণ্য। এ যন্ত্রণা প্রকাশের ভাষা পৃথিবীর কারও নাই, কোনও লেখনীও তা প্রকাশে সক্ষম নয়। ‘বন্ধন’ দ্বারা বুঝানো হয়েছে,আত্মার বন্ধন। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে সত্যকে প্রত্যাখান করে তাদের জন্য সত্যকে ধারণ করা,অনুভব করা ও উপলব্ধি করার সকল দরজা বন্ধ হয়ে যায়। এরা পরিণত হয়ে পড়ে সংস্কার ও নীতি বা প্রথার দাসে যার সাথে সত্যের কোন সর্ম্পক নাই। ধর্মীয় দিক থেকে এরা হয় মৌলবাদী, আবার নাস্তিকেরা হয়ে পড়ে কোনও অন্ধ নীতি বা প্রথার দাস কারণ ধর্মহীনতা তাদের আত্মার মাঝে অবলম্বনহীনতার সৃষ্টি করে। এদের আত্মা সত্যের আলোর বিচ্যুতির ফলে সামাজিক প্রথা বা ধমীর্য় আনুষ্ঠানিকতা ও সংস্কারের দাসে পরিণত হয়। আত্মার এই বন্ধনের নিকট পৃথিবীর সকল বন্ধন বা বন্দীত্ব অতি তুচ্ছ। পৃথিবীর জীবনে আত্মার এই বন্ধনের ফলে এরা ন্যায় ও সত্যকে অনুধাবনের ক্ষমতা হারাবে এরা হচ্ছে মূক ও বধির [ ২ : ৭]। ‘মূক’ কারণ প্রকৃত সত্যকে উপলব্ধি না করার দরুণ তারা সত্য ভাষণে বা প্রচারে হবে অপারগ এবং ‘বধির ‘ কারণ সত্যের আহ্বান তাদের শ্রবণে পৌঁছাবে না। এই আত্মিক অন্ধত্ব তাদের মাঝে ইহলোকেই যন্ত্রণার সৃষ্টি করবে। পরলোকে সে যন্ত্রণা আরও বৃদ্ধি পাবে।

 

আয়াতঃ 089.026

এবং তার বন্ধনের মত বন্ধন কেউ দিবে না।
And none will bind as He will bind.

وَلَا يُوثِقُ وَثَاقَهُ أَحَدٌ
Wala yoothiqu wathaqahu ahadun

YUSUFALI: And His bonds will be such as none (other) can bind.
PICKTHAL: None bindeth as He then will bind.
SHAKIR: And no one shall bind with (anything like) His binding.
KHALIFA: And no confinement is as effective as His confinement.

২৪। সে বলবে, ” হায় ! আমার [ এই ভবিষ্যত ] জীবনের জন্য যদি কিছু [ সৎ কাজ ] পূর্বে প্রেরণ করতাম। ”

২৫। কেন না, সেদিন তাঁর শাস্তির মত শাস্তি কেহ দিতে পারবে না, ৬১২৬

২৬। এবং তাঁর বন্ধনের মত বন্ধন কেহ করতে পারবে না।

৬১২৬। এই আয়াতে ‘শাস্তি’ ও পরের আয়াতে ‘বন্ধন ‘ এই দুটি হচ্ছে শাস্তিরই দুটি বিভিন্ন ধারা। ‘শাস্তি ‘ দ্বারা বুঝানো হয়েছে যন্ত্রণা, উদ্বেগ, যে যন্ত্রণা বা উদ্বেগের পরিণাম এই পৃথিবীতে বসে কল্পনা করাও অসম্ভব। এই উদ্বেগের ও যন্ত্রণার তীব্রতা এতটাই গভীর হবে যে, তা অন্তরের অন্তঃস্থলকে তীব্র দহনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেবে – যার তুলনায় শারীরিক যন্ত্রণাকে মনে হবে অতি নগণ্য। এ যন্ত্রণা প্রকাশের ভাষা পৃথিবীর কারও নাই, কোনও লেখনীও তা প্রকাশে সক্ষম নয়। ‘বন্ধন’ দ্বারা বুঝানো হয়েছে,আত্মার বন্ধন। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে সত্যকে প্রত্যাখান করে তাদের জন্য সত্যকে ধারণ করা,অনুভব করা ও উপলব্ধি করার সকল দরজা বন্ধ হয়ে যায়। এরা পরিণত হয়ে পড়ে সংস্কার ও নীতি বা প্রথার দাসে যার সাথে সত্যের কোন সর্ম্পক নাই। ধর্মীয় দিক থেকে এরা হয় মৌলবাদী, আবার নাস্তিকেরা হয়ে পড়ে কোনও অন্ধ নীতি বা প্রথার দাস কারণ ধর্মহীনতা তাদের আত্মার মাঝে অবলম্বনহীনতার সৃষ্টি করে। এদের আত্মা সত্যের আলোর বিচ্যুতির ফলে সামাজিক প্রথা বা ধমীর্য় আনুষ্ঠানিকতা ও সংস্কারের দাসে পরিণত হয়। আত্মার এই বন্ধনের নিকট পৃথিবীর সকল বন্ধন বা বন্দীত্ব অতি তুচ্ছ। পৃথিবীর জীবনে আত্মার এই বন্ধনের ফলে এরা ন্যায় ও সত্যকে অনুধাবনের ক্ষমতা হারাবে এরা হচ্ছে মূক ও বধির [ ২ : ৭]। ‘মূক’ কারণ প্রকৃত সত্যকে উপলব্ধি না করার দরুণ তারা সত্য ভাষণে বা প্রচারে হবে অপারগ এবং ‘বধির ‘ কারণ সত্যের আহ্বান তাদের শ্রবণে পৌঁছাবে না। এই আত্মিক অন্ধত্ব তাদের মাঝে ইহলোকেই যন্ত্রণার সৃষ্টি করবে। পরলোকে সে যন্ত্রণা আরও বৃদ্ধি পাবে।

 

আয়াতঃ 089.027

হে প্রশান্ত মন,
(It will be said to the pious): ”O (you) the one in (complete) rest and satisfaction!

يَا أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ
Ya ayyatuha alnnafsu almutma-innatu

YUSUFALI: (To the righteous soul will be said:) “O (thou) soul, in (complete) rest and satisfaction!
PICKTHAL: But ah! thou soul at peace!
SHAKIR: O soul that art at rest!
KHALIFA: As for you, O content soul.

২৭। [ পূণ্যাত্মাদের বলা হবে ] : ” হে প্রশান্ত চিত্ত আত্মা ৬১২৭ ;

৬১২৭। পৃথিবীর অন্ধ নিয়ম, নীতি, কুসংস্কার বা প্রথার বন্ধন মুক্ত যে আত্মা, অন্যায়, অপরাধ থেকে পবিত্র যে আত্মা, সেই আত্মা হচ্ছে প্রভাতের আলোর ন্যায় উজ্জ্বল পবিত্র মুক্ত আত্মা, যার মাঝে আল্লাহ্‌র নূর বা সত্যের আলো হীরক খন্ডের ন্যায় প্রতিফলিত হয়। এ সব চিত্ত আল্লাহ্‌র স্মরণেই শান্তি লাভ করে। এদেরকেই স্বাগত জানানো হয়েছে। এ সব আত্মাকেই বলা হয়েছে প্রশান্ত আত্মা যারা পার্থিব সকল যন্ত্রণা, দুঃখ, সন্দেহ, ভয়, দ্বিধা, ঈর্ষা, হিংসা দ্বেষ ইত্যাদি মুক্ত। অসীম উন্মুক্ত নীল আকাশের মত উদার ও মুক্ত যে আত্মা। যে আত্মার মাঝে হতাশা ছায়া ফেলতে পারে না, আবেগের তীব্রতা যে আত্মার মাঝে বিবেককের প্রকাশকে অবরুদ্ধ করতে পারে না, পাওয়ার আকাঙ্খা বা লোভ যে আত্মার ন্যায় অন্যায় বোধকে অবলুপ্ত করতে পারে না; সে সব আত্মার মাঝে বিরাজ করে অপার প্রশান্তি যার উৎপত্তি আল্লাহ্‌র উপরে সম্পূর্ণ নির্ভরশীলতা থেকে।

মুসলিম দর্শনে আত্মার এই অবস্থাকে বলা হয় পরিপূর্ণ শান্তি বা প্রশান্তির অবস্থা [Bliss ]। সাধারণ মানুষ দেহের বাইরে, পার্থিব জগতের বাইরে যে আধ্যাত্মিক জগত সে সম্বন্ধে কোনও চিন্তাই বা ধারণা করতে পারে না। যাদের জীবনে পার্থিব সুখ স্বাচ্ছন্দ ও সন্তুষ্টিই একমাত্র কাম্য। যারা পৃথিবীর এই সহজবোধ্য জীবনের বাইরে কিছু চিন্তা করতে অক্ষম এরাই হচ্ছে কোরাণের ভাষায় ‘Ammara’ দেখুন [ ১২ : ৫৩ ] আয়াত ও [ ৭৫ : ২ ] আয়াতের টিকা ৫৮১০। এরা পাপ ও পূণ্যের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। যারা বিবেকবান তারা পাপকে সনাক্ত করতে সক্ষম এবং চেষ্টা করে পাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে। এদের কোরাণের ভাষাতে বলা হয় ‘Lawama’ দেখুন আয়াত [ ৭৫ : ২] এবং টিকা ৫৮১০।

 

আয়াতঃ 089.028

তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট ফিরে যাও সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে।
”Come back to your Lord, Well-pleased (yourself) and well-pleasing unto Him!

ارْجِعِي إِلَى رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً
IrjiAAee ila rabbiki radiyatan mardiyyatan

YUSUFALI: “Come back thou to thy Lord,- well pleased (thyself), and well-pleasing unto Him!
PICKTHAL: Return unto thy Lord, content in His good pleasure!
SHAKIR: Return to your Lord, well-pleased (with him), well-pleasing (Him),
KHALIFA: Return to your Lord, pleased and pleasing.

২৮। “তোমার প্রভুর দিকে ফিরে এসো সন্তুষ্ট ও সন্তোষ ভাজন হয়ে। ৬১২৮

৬১২৮। ২৪নং আয়াতে বলা হয়েছে যে পাপীরা পরলোকে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়বে এবং উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় চিৎকার করতে থাকবে, অপর পক্ষে এই আয়াতে পূণ্যাত্মাদের পরলোকের অবস্থানকে বর্ণনা করা হয়েছে। পূণ্যাত্মাদের সেদিন মহান আল্লাহ্‌ স্বাগত জানাবেন। এই আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে আত্মাই পরলোকে বেহেশতে প্রবেশ করবে, মৃত্তিকার তৈরী নশ্বর দেহ নয়।

 

আয়াতঃ 089.029

অতঃপর আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও।
”Enter you, then, among My honoured slaves,

فَادْخُلِي فِي عِبَادِي
Faodkhulee fee AAibadee

YUSUFALI: “Enter thou, then, among My devotees!
PICKTHAL: Enter thou among My bondmen!
SHAKIR: So enter among My servants,
KHALIFA: Welcome into My servants.

২৯। ” আমার সেবক দলের অন্তর্ভূক্ত হও!

৩০। ” হ্যাঁ, আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।” ৬১২৯

৬১২৯। বেহেশতের সর্বোচ্চ বর্ণনা হচ্ছে “Enter my heaven”। মানুষ বেহেশত সম্বন্ধে নানা ধরণের কল্পনার জাল বুনতে পারে,নানা ভাবে তার বর্ণনা করতে পারে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে কোন ভাষাই সে বর্ণনার প্রকৃত যোগ্যতা রাখে না। ” আমার জান্নাত ” আল্লাহ্‌র নিজস্ব যে বেহেশত এই বাক্যটি দ্বারা বেহেশতের বর্ণনার সর্বোচ্চ প্রকাশ করা হয়েছে। আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ হলে আমরা সেখানে প্রবেশের অনুমতি পেয়ে ধন্য হব।

 

আয়াতঃ 089.030

এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।
”And enter you My Paradise!”

وَادْخُلِي جَنَّتِي
Waodkhulee jannatee

YUSUFALI: “Yea, enter thou My Heaven!
PICKTHAL: Enter thou My Garden!
SHAKIR: And enter into My garden.
KHALIFA: Welcome into My Paradise.

২৯। ” আমার সেবক দলের অন্তর্ভূক্ত হও!

৩০। ” হ্যাঁ, আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।” ৬১২৯

৬১২৯। বেহেশতের সর্বোচ্চ বর্ণনা হচ্ছে “Enter my heaven”। মানুষ বেহেশত সম্বন্ধে নানা ধরণের কল্পনার জাল বুনতে পারে,নানা ভাবে তার বর্ণনা করতে পারে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে কোন ভাষাই সে বর্ণনার প্রকৃত যোগ্যতা রাখে না। ” আমার জান্নাত ” আল্লাহ্‌র নিজস্ব যে বেহেশত এই বাক্যটি দ্বারা বেহেশতের বর্ণনার সর্বোচ্চ প্রকাশ করা হয়েছে। আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ হলে আমরা সেখানে প্রবেশের অনুমতি পেয়ে ধন্য হব।

Exit mobile version