Site icon BnBoi.Com

সূরা মুলক বাংলা

সূরা মুলক

সূরা মুলক

 

আয়াতঃ 067.001

(১) মহা মহিমান্বিত তিনি সর্বময় কর্তৃত্ব যাঁর হাতে[1] এবং তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।

[1] تَبَارَكَ শব্দটি بَرَكة থেকে এসেছে। এর শাব্দিক অর্থ হল বর্ধনশীল ও বেশী হওয়া। কেউ কেউ এর অর্থ করেছেন, সৃষ্টিকুলের গুণাবলীর বহু ঊর্ধ্বে ও উচ্চে। تَفَاعل এর স্বীগা (আরবী ব্যাকরণ অনুযায়ী) অনেক ও আধিক্য বুঝাতে ব্যবহার হয়। ‘‘সর্বময় কর্তৃত্ব বা রাজত্ব যাঁর হাতে’’ অর্থাৎ, সব রকমের শক্তি এবং আধিপত্য তাঁরই। তিনি যেভাবে চান বিশ্বজাহান পরিচালনা করেন। তাঁর কাজে কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে না। তিনি ভিখারীকে বাদশাহ, আর বাদশাহকে ভিখারী, ধনীকে গরীব এবং গরীবকে ধনী বানান। তাঁর কৌশল ও ইচ্ছায় কারো হস্তক্ষেপ চলে না।

 

আয়াতঃ 067.002

যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়।
Who has created death and life, that He may test you which of you is best in deed. And He is the All-Mighty, the Oft-Forgiving;

الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا وَهُوَ الْعَزِيزُ الْغَفُورُ
Allathee khalaqa almawta waalhayata liyabluwakum ayyukum ahsanu AAamalan wahuwa alAAazeezu alghafooru

YUSUFALI: He Who created Death and Life, that He may try which of you is best in deed: and He is the Exalted in Might, Oft-Forgiving;-
PICKTHAL: Who hath created life and death that He may try you which of you is best in conduct; and He is the Mighty, the Forgiving,
SHAKIR: Who created death and life that He may try you– which of you is best in deeds; and He is the Mighty, the Forgiving,
KHALIFA: The One who created death and life for the purpose of distinguishing those among you who would do better. He is the Almighty, the Forgiving.

২। তিনিই সৃষ্টি করেছেন মরণ এবং জীবন ৫৫৫৬, যেনো তিনি পরীক্ষা করতে পারেন তোমাদের মধ্যে কর্মে কে উত্তম ৫৫৫৭। এবং তিনি ক্ষমতায় পরাক্রমাশালী। বারে বারে ক্ষমাশীল ৫৫৫৮।

৫৫৫৬। ‘ তিনিই সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন।’ লক্ষ্য করুন এই আয়াতে “জীবনের” উল্লেখের পূর্বে “মরণ” উল্লেখ করা হয়েছে। আয়াত [ ২ : ১৮ ] এর বর্ণনা হচ্ছে ” অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন, তিনি তোমাদের জীবন্ত করেছেন, আবার তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন ও পুণরায় জীবন্ত করবেন, পরিণামে তাঁর দিকেই তোমাদের ফিরিয়ে আনা হবে। ” আবার সূরা [ ৫৩ : ৪৪ ] আয়াতের বর্ণনাতে মৃত্যুর উল্লেখ জীবনের পূর্বে করা হয়েছে। এ সব আয়াত থেকে সিদ্ধান্তে আসা যায় যে,

১) পৃথিবীর জীবন শুরুর পূর্বে হয়তো আমরা ছিলাম অস্তিত্ববিহীন বা অন্যরূপে বিরাজমান;

২) পৃথিবীতে আমরা যে ভাবে অবস্থান করছি একদিন সে জীবনের অবসান ঘটবে, কিন্তু আমাদের অস্তিত্ব ধ্বংস হয়ে যাবে না। কারণ আত্মা অমর। শুধু আত্মার সামনে থাকবে পর্দা বা বাঁধার প্রাচীর যা উল্লেখ আছে সূরা [ ২৩ : ১০০] আয়াতে ‘Barzak’ শব্দটি দ্বারা। এই পর্দার আবরণ থাকবে দৈহিক মৃত্যুর পর থেকে শেষ বিচারের পূর্ব পর্যন্ত। শেষ বিচারের দিনে এই পর্দার অবসান ঘটবে এবং পরে প্রত্যেকের জন্য হবে নূতন জীবনে যাত্রা। সে জীবন হবে অনন্ত জীবন নূতন পৃথিবীতে নূতন আঙ্গিকে যার উল্লেখ আছে সূরা [ ১৪ : ৪৮ ] আয়াতে।

৫৫৫৭। আমরা জানি না পৃথিবীতে আগমনের পূর্বে আমাদের অবস্থান কি ছিলো, আবার পৃথিবীর জীবনকে মৃত্যুর মাধ্যমে ত্যাগ করার পরে আমাদের অবস্থান কি হবে। আমাদের চেতনা শুধু এই পার্থিব জীবনকেই ঘিরে থাকে। এ কথা কেউ যেনো মনে না করে যে জীবন শুধুমাত্র পৃথিবীর কর্মক্ষেত্রে আনন্দ উৎসবের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে; এ জীবন উদ্দেশ্য বিহীন, মৃত্যুই জীবনের সমাপ্তি এনে দেবে। যদিও পার্থিব জীবন শুরু করার পূর্বের অবস্থা এবং মৃত্যুর পরের অবস্থান আমরা কল্পনা করতে পারি না; কিন্তু আল্লাহ্‌ আমাদের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এই আয়াতের মাধ্যমে। জীবনের বৃহত্তর ও মহত্তর উদ্দেশ্য রয়েছে এবং সে লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য প্রত্যেককে উত্তম কর্ম বা সৎ কাজের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যেতে হবে। এ পৃথিবীর জীবনে, পৃথিবীর জীবনকে আল্লাহ্‌ সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষা করবার জন্য “তোমাদের মধ্যে কর্মে কে উত্তম।”

৫৫৫৮। মানুষ দুর্বলচিত্ত। এই দুর্বলচিত্ত মানুষ জীবনের বন্ধুর পথ অতিক্রম করে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছাতে সক্ষম। কারণ সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌ তার সাহায্যে এগিয়ে আসেন। তিনি “পরাক্রমশালী ” এবং তার ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করতে সক্ষম। তিনি ক্ষমাশীল অন্যথায় দুর্বল মানুষের পক্ষে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব ছিলো না।

 

আয়াতঃ 067.003

তিনি সপ্ত আকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। তুমি করুণাময় আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টিতে কোন তফাত দেখতে পাবে না। আবার দৃষ্টিফেরাও; কোন ফাটল দেখতে পাও কি?
Who has created the seven heavens one above another, you can see no fault in the creations of the Most Beneficent. Then look again: ”Can you see any rifts?”

الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ طِبَاقًا مَّا تَرَى فِي خَلْقِ الرَّحْمَنِ مِن تَفَاوُتٍ فَارْجِعِ الْبَصَرَ هَلْ تَرَى مِن فُطُورٍ
Allathee khalaqa sabAAa samawatin tibaqan ma tara fee khalqi alrrahmani min tafawutin fairjiAAi albasara hal tara min futoorin

YUSUFALI: He Who created the seven heavens one above another: No want of proportion wilt thou see in the Creation of (Allah) Most Gracious. So turn thy vision again: seest thou any flaw?
PICKTHAL: Who hath created seven heavens in harmony. Thou (Muhammad) canst see no fault in the Beneficent One’s creation; then look again: Canst thou see any rifts?
SHAKIR: Who created the seven heavens one above another; you see no incongruity in the creation of the Beneficent Allah; then look again, can you see any disorder?
KHALIFA: He created seven universes in layers. You do not see any imperfection in the creation by the Most Gracious. Keep looking; do you see any flaw?

৩। তিনিই স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন সপ্ত আকাশ ৫৫৫৯। তুমি পরম করুণাময়ের সৃষ্টিতে কোন ত্রুটি দেখতে পাবে না। সুতারাং পুণরায় তোমার দৃষ্টিকে ফেরাও, [ দেখ ] কোন ত্রুটি দেখতে পাও কি?

৫৫৫৯। দেখুন সূরা [ ৬৫ : ১২ ] আয়াত ও টিকা ৫৫২৬ – ২৭। আকাশকে বর্ণনা করা হয়েছে সপ্তাকাশ হিসেবে। বর্তমান বিজ্ঞান মহাকাশের রহস্যভেদে আত্মনিয়োগ করেছে – তারা স্বীকার করে যে মহাকাশের রহস্য তারা খুব কমই জানে। হয়তো তা হবে সাতটি ছায়াপথের সমষ্টি – ভবিষ্যতের বিজ্ঞানই বলে দেবে এর সমাধান। আমরা অনন্ত নক্ষত্রবীথির মাঝে ক্ষুদ্র মানব সন্তান যার অস্তিত্ব বিশাল ব্রহ্মাণ্ডের তুলনায় অতি নগণ্য। আমাদের দৃষ্টিতে যা ভাস্বর তা হচ্ছে অনন্তের বিশাল ব্যপ্তির মাঝে অপরূপ শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য। যেখানে ছায়াপথে বিরাজমান শত শত নক্ষত্রপুঞ্জ নির্দিষ্ট নিয়মে ছুটে চলেছে যার ক্ষুদ্র অংশই পৃথিবীর মানুষের দৃষ্টি পথে ভাস্বর। মহাশূন্যের এই বিশালত্বের ধারণাই মানুষকে পৌঁছে দিতে পারে স্রষ্টার বিশালত্বের ধারণায়। তবেই উপলব্ধির সিড়ি বেয়ে আমরা অর্ন্তদৃষ্টির মাধ্যমে পরলোকের জীবনের বিশালত্ব অনুভব করতে পারবো।

 

আয়াতঃ 067.004

অতঃপর তুমি বার বার তাকিয়ে দেখ-তোমার দৃষ্টি ব্যর্থ ও পরিশ্রান্ত হয়ে তোমার দিকে ফিরে আসবে।
Then look again and yet again, your sight will return to you in a state of humiliation and worn out.

ثُمَّ ارْجِعِ الْبَصَرَ كَرَّتَيْنِ يَنقَلِبْ إِلَيْكَ الْبَصَرُ خَاسِأً وَهُوَ حَسِيرٌ
Thumma irjiAAi albasara karratayni yanqalib ilayka albasaru khasi-an wahuwa haseerun

YUSUFALI: Again turn thy vision a second time: (thy) vision will come back to thee dull and discomfited, in a state worn out.
PICKTHAL: Then look again and yet again, thy sight will return unto thee weakened and made dim.
SHAKIR: Then turn back the eye again and again; your look shall ‘~ come back to you confused while it is fatigued.
KHALIFA: Look again and again; your eyes will come back stumped and conquered.

৪। পুণরায় বারে বারে তুমি দৃষ্টি ফেরাও, সেই দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে তোমার দিকে ফিরে আসবে ৫৫৬০।

৫৫৬০। বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে অসীম আকাশের উপমার মাধ্যমে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে আল্লাহ্‌র জ্ঞান, প্রজ্ঞা, ক্ষমতার ও বিশালত্বের প্রতি। বিশ্ব ব্রহ্মান্ড আল্লাহ্‌র জ্ঞান ও প্রজ্ঞার প্রতীক। বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের এই প্রতীকের মাধ্যমে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে আল্লাহ্‌র ক্ষমতার প্রতি যা নির্ভুল ও ত্রুটিমুক্ত। আমাদের বলা হয়েছে অনন্ত নীলাকাশ এবং এর মাঝে বিরাজমান নক্ষত্রপুঞ্জ পুনঃপুনঃ গভীর অভিনিবেশ সহকারে পর্যবেক্ষণ করি না কেন আল্লাহ্‌র সৃষ্টির মাঝে আমরা কোন ত্রুটি বা বিশৃঙ্খলা বের করতে পারবো না। তাঁর সৃষ্টি করার ক্ষমতা, সমন্বিত, নির্ভুল ও ত্রুটিমুক্ত। আল্লাহ্‌র সৃষ্ট সপ্ত আকাশ এত বিশাল যে সে বিশালত্বের ধারণা করা আমাদের মত ক্ষুদ্র মানুষের পক্ষে অসম্ভব। পর্যবেক্ষণ আমাদের দৃষ্টিকে ক্লান্ত করে দেবে তবুও আমরা এর শেষ দেখতে পাব না। এমনকি জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ টেলিস্কোপের সাহাযেও আকাশের শেষ প্রান্ত দেখা সম্ভব নয়। বর্তমানে বিজ্ঞানীগণ হাবেল টেলিস্কোপ স্থাপন করেছেন মহাশূন্যে – যার সাহায্যে প্রতিনিয়ত অনন্ত নক্ষত্র বীথির, নিঃসীম নীল আকাশের ছবি পৃথিবীর মানুষ প্রাপ্ত হচ্ছে। মানুষ আশ্চর্য হয়ে যায় আকাশের সীমাহীন ব্যপ্তি লক্ষ্য করে। যত মানুষের জ্ঞান বৃদ্ধি পাচ্ছে, তত মানুষ মহাকাশের বিশালত্বের ধারণাতে হতবাক হয়ে পড়ছে। মহাকাশের রহস্যের কোন সীমা নাই। এই বিশাল সৃষ্টি কৌশলের মধ্যে কোনও ত্রুটি নাই। যদি সামান্যতম ত্রুটিও থাকতো তবে গ্রহ নক্ষত্র পরস্পর সংঘর্ষে মহাকাশে বিপর্যয় ঘটে যেতো। এ থেকে মানুষকে তার ক্ষুদ্রতা ও অসহায়ত্বের ধারণা করতে বলা হয়েছে।

 

আয়াতঃ 067.005

আমি সর্বনিম্ন আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুসজ্জত করেছি; সেগুলোকে শয়তানদের জন্যে ক্ষেপণাস্ত্রবৎ করেছি এবং প্রস্তুত করে রেখেছি তাদের জন্যে জলন্ত অগ্নির শাস্তি।
And indeed We have adorned the nearest heaven with lamps, and We have made such lamps (as) missiles to drive away the Shayâtin (devils), and have prepared for them the torment of the blazing Fire.

وَلَقَدْ زَيَّنَّا السَّمَاء الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَجَعَلْنَاهَا رُجُومًا لِّلشَّيَاطِينِ وَأَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابَ السَّعِيرِ
Walaqad zayyanna alssamaa alddunya bimasabeeha wajaAAalnaha rujooman lilshshayateeni waaAAtadna lahum AAathaba alssaAAeeri

YUSUFALI: And we have, (from of old), adorned the lowest heaven with Lamps, and We have made such (Lamps) (as) missiles to drive away the Evil Ones, and have prepared for them the Penalty of the Blazing Fire.
PICKTHAL: And verily We have beautified the world’s heaven with lamps, and We have made them missiles for the devils, and for them We have prepared the doom of flame.
SHAKIR: And certainly We have adorned this lower heaven with lamps and We have made these missiles for the Shaitans, and We have prepared for them the chastisement of burning.
KHALIFA: We adorned the lowest universe with lamps, and guarded its borders with projectiles against the devils; we prepared for them a retribution in Hell.

৫। আর নিশ্চয় আমি [ দুনিয়ার ] নিকটতম আসমানকে ৫৫৬১ সুশোভিত করেছি প্রদীপমালা দ্বারা এবং এই সব [ প্রদীপকে ] করেছি শয়তানকে বিতাড়ণের ক্ষেপনাস্ত্র ৫৫৬২। এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত অগ্নির শাস্তি।

৫৫৬১। “নিকটবর্তী আকাশের” জন্য দেখুন টিকা সূরা [ ৩৭: ৫ ] আয়াতের টিকা ৪০৩৫।

৫৫৬২। নির্মেঘ রাতের আকাশে যে উল্কাখন্ডের পতন হয়, তা প্রতীকের সাহায্যে তুলে ধরা হয়েছে সূরা [ ১৫ : ১৬- ১৮ ] আয়াতে এবং টিকাতে ১৯৫১ – ৫৪ ] উল্কাকেও সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য কারণ বলা হয়েছে, ” উহাদের করেছি শয়তানকে বিতাড়ণের ক্ষেপনাস্ত্র।” কিন্তু কেউ যদি এ সব বস্তুর প্রতি অযৌক্তিকভাবে, কুসংস্কারবশতঃ ভক্তি ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে, যা তাদের কল্পনা প্রসূত, তবে তারা কি জলন্ত অগ্নির শাস্তি নিয়ে খেলা করছে না ? সে শাস্তির পরিমাণ র্নিধারণ করার ক্ষমতা কারও নাই।

 

আয়াতঃ 067.006

যারা তাদের পালনকর্তাকে অস্বীকার করেছে তাদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি। সেটা কতই না নিকৃষ্ট স্থান।
And for those who disbelieve in their Lord (Allâh) is the torment of Hell, and worst indeed is that destination.

وَلِلَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ
Walillatheena kafaroo birabbihim AAathabu jahannama wabi/sa almaseeru

YUSUFALI: For those who reject their Lord (and Cherisher) is the Penalty of Hell: and evil is (such), Destination.
PICKTHAL: And for those who disbelieve in their Lord there is the doom of hell, a hapless journey’s end!
SHAKIR: And for those who disbelieve in their Lord is the punishment of hell, and evil is the resort.
KHALIFA: For those who disbelieved in their Lord, the retribution of Gehenna. What a miserable destiny.

৬। যারা তাদের প্রভু [ ও প্রতিপালককে ] ৫৫৬৩, প্রত্যাখান করে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি। উহা অতি মন্দ গন্তব্যস্থল।

৫৫৬৩। পূর্বের আয়াত সমূহে নক্ষত্রপুঞ্জকে বলা হয়েছে আকাশের সৌন্দর্য প্রদীপরূপে। নিঃসীম মহাশূন্যে নক্ষত্রপুঞ্জ ছুটে চলেছে নির্দিষ্ট শৃঙ্খলার মাধ্যমে। দৃশ্যমান আকাশে কোথাও বিশৃঙ্খলা লক্ষ্য করা যায় না। কিন্তু কোন তারা যদি তার গতিপথে বাধাপ্রাপ্ত হয় তবে তা বিশৃঙ্খলার সম্মুখীন হয় ও শেষ পর্যন্ত পুড়ে ছাই হয়ে ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। উল্কা খন্ড হচ্ছে তারই প্রমাণ। এই উপমার সাহায্যে আধ্যাত্মিক জগতকে তুলে ধরা হয়েছে। যখন কেউ তার প্রতিপালককে অস্বীকার করে, তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, এর থেকে বড় পাপ, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক জগতে আর কি আছে ? কারণ আমাদের স্রষ্টা, আমাদের প্রতিপালক শুধুমাত্র আমাদের কল্যাণ প্রত্যাশী। সুতারাং তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পরিণাম হচ্ছে জাহান্নামের আগুন যার বর্ণনা আছে পরবর্তী দুটো আয়াতে। উল্কা যেরূপ বাধাপ্রাপ্ত হলে ছাই হয়ে যায়, আধ্যাত্মিক ও নৈতিক জগতও সেরূপ খোদাদ্রোহিতার ফলে ধ্বংস প্রাপ্ত হয়।

 

আয়াতঃ 067.007

যখন তারা তথায় নিক্ষিপ্ত হবে, তখন তার উৎক্ষিপ্ত গর্জন শুনতে পাবে।
When they are cast therein, they will hear the (terrible) drawing in of its breath as it blazes forth.

إِذَا أُلْقُوا فِيهَا سَمِعُوا لَهَا شَهِيقًا وَهِيَ تَفُورُ
Itha olqoo feeha samiAAoo laha shaheeqan wahiya tafooru

YUSUFALI: When they are cast therein, they will hear the (terrible) drawing in of its breath even as it blazes forth,
PICKTHAL: When they are flung therein they hear its roaring as it boileth up,
SHAKIR: When they shall be cast therein, they shall hear a loud moaning of it as it heaves,
KHALIFA: When they get thrown therein, they hear its furor as it fumes.

৭। যখন তাদের সেখানে নিক্ষেপ করা হবে, তখন তারা উহার [ ভয়ংকর ] নিঃশ্বাস টানার শব্দ শুনতে পাবে ৫৫৬৪ ; আর উহা হবে উদ্বেলিত ; –

৫৫৬৪। ‘Shahiq’ -শব্দটির জন্য দেখুন সূরা [ ১১ : ১০৬ ] আয়াত। সেখানে [ ফোঁপাইয়া কাঁদা ] শব্দটিকে তুলনা করা হয়েছে ‘Zafir’ [ দীর্ঘশ্বাস ] শব্দটির সাথে। এখানে ক্রিয়াপদ ‘fara’ ক্রিয়াপদটি দ্বারা বুঝানো হয়েছে উদ্বেলিত হওয়া বা বিষ্ফোরিত হওয়া, তীব্র বেগে নির্গত হওয়া। সূরা [ ১১ : ৪০ ] আয়াতে ‘fara’ ক্রিয়াপদটি ব্যবহার করা হয়েছে তীব্রবেগে বন্যার পানি বের হওয়া বুঝানোর জন্য। এখানে ঐ একই ক্রিয়াপদ ব্যবহার করা হয়েছে তীব্রবেগে জ্বলন্ত অগ্নিশিখাকে বুঝানোর জন্য যা শাস্তির প্রতীক। জাহান্নামের আগুন হবে সর্বগ্রাসী ক্ষুধা। পাপীদের শেষ পরিণতি ধ্বংস তা পানির দ্বারাই হোক বা আগুনের দ্বারাই হোক।

 

আয়াতঃ 067.008

ক্রোধে জাহান্নাম যেন ফেটে পড়বে। যখনই তাতে কোন সম্প্রদায় নিক্ষিপ্ত হবে তখন তাদেরকে তার সিপাহীরা জিজ্ঞাসা করবে। তোমাদের কাছে কি কোন সতর্ককারী আগমন করেনি?
It almost bursts up with fury. Every time a group is cast therein, its keeper will ask: ”Did no warner come to you?”

تَكَادُ تَمَيَّزُ مِنَ الْغَيْظِ كُلَّمَا أُلْقِيَ فِيهَا فَوْجٌ سَأَلَهُمْ خَزَنَتُهَا أَلَمْ يَأْتِكُمْ نَذِيرٌ
Takadu tamayyazu mina alghaythi kullama olqiya feeha fawjun saalahum khazanatuha alam ya/tikum natheerun

YUSUFALI: Almost bursting with fury: Every time a Group is cast therein, its Keepers will ask, “Did no Warner come to you?”
PICKTHAL: As it would burst with rage. Whenever a (fresh) host is flung therein the wardens thereof ask them: Came there unto you no warner?
SHAKIR: Almost bursting for fury. Whenever a group is cast into it, its keeper shall ask them: Did there not come to you a warner?
KHALIFA: It almost explodes from rage. Whenever a group is thrown therein, its guards would ask them, “Did you not receive a warner?”

৮। যেনো ক্রোধে ফেটে পড়বে। যখনই কোন দলকে উহাতে নিক্ষেপ করা হবে, ইহার রক্ষীরা জিজ্ঞাসা করবে, ” তোমাদের নিকট কি কোন সর্তককারী আসে নাই ? ” ৫৫৬৫

৫৫৬৫। দেখুন সূরা [ ৩৯ : ৭১ ] আয়াত ও টিকা ৪৩৪৮। ‘যখনই ‘ শব্দটি দ্বারা বুঝানো হয়েছে প্রত্যেকবার। হয়তো একই ফেরেশতা সর্বক্ষণ দোযখের দ্বার পাহারাতে নিযুক্ত থাকবেন না। সুতারাং যখনই নূতন লোক দোযখে নিক্ষিপ্ত হবে, সে সময়ে যে ফেরেশতা দ্বারে থাকবেন এই আয়াতের জিজ্ঞাসা হবে সেই ফেরেশতার। ফেরেশতাদের চরিত্রে কোন বক্রতার বা পাপের স্থান নাই, সুতারাং তাদের পক্ষে মানুষের চরিত্রের মন্দ ও পাপকে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। সুতারাং এত লোক শাস্তির জন্য আগমন করছে দেখে তারা আশ্চর্য হয়ে যাবে। সে কারণেই তারা জিজ্ঞাসা করবে যে, তাদের নিকট কি কোনও সতর্ককারী প্রেরিত হয় নাই ? প্রকৃত সত্য হচ্ছে মানুষ তার পৃথিবীর শিক্ষানবীশকালে আল্লাহ্‌ মানুষকে বারে বারে নবী-রসুলদের মাধ্যমে তাঁর নিদর্শন সমূহ প্রেরণ করেছেন। এই নিদর্শন এসেছে প্রত্যাদেশের মাধ্যমে, সৎ মানুষের বিবেকের মাধ্যমে এবং আমাদের চারিদিকের বিশ্ব প্রকৃতির মাধ্যমে।

 

আয়াতঃ 067.009

তারা বলবেঃ হ্যাঁ আমাদের কাছে সতর্ককারী আগমন করেছিল, অতঃপর আমরা মিথ্যারোপ করেছিলাম এবং বলেছিলামঃ আল্লাহ তা’আলা কোন কিছু নাজিল করেননি। তোমরা মহাবিভ্রান্তিতে পড়ে রয়েছ।
They will say: ”Yes indeed; a warner did come to us, but we belied him and said: ’Allâh never sent down anything (of revelation), you are only in great error.’”

قَالُوا بَلَى قَدْ جَاءنَا نَذِيرٌ فَكَذَّبْنَا وَقُلْنَا مَا نَزَّلَ اللَّهُ مِن شَيْءٍ إِنْ أَنتُمْ إِلَّا فِي ضَلَالٍ كَبِيرٍ
Qaloo bala qad jaana natheerun fakaththabna waqulna ma nazzala Allahu min shay-in in antum illa fee dalalin kabeerin

YUSUFALI: They will say: “Yes indeed; a Warner did come to us, but we rejected him and said, ‘Allah never sent down any (Message): ye are nothing but an egregious delusion!’”
PICKTHAL: They say: Yea, verily, a warner came unto us; but we denied and said: Allah hath naught revealed; ye are in naught but a great error.
SHAKIR: They shall say: Yea! indeed there came to us a warner, but we rejected (him) and said: Allah has not revealed anything, you are only in a great error.
KHALIFA: They would answer, “Yes indeed; a warner did come to us, but we disbelieved and said, `GOD did not reveal anything. You are totally astray.’ ”

৯। তারা বলবে, ” হ্যাঁ, অবশ্যই আমাদের নিকট একজন সর্তককারী এসেছিলো, কিন্তু আমরা তাকে প্রত্যাখান করেছিলাম এবং বলেছিলাম, আল্লাহ্‌ কোন [ প্রত্যাদেশ ] প্রেরণ করেন নাই। তোমরা তো মহা বিভ্রান্তিতে রয়েছ।” ৫৫৬৬

৫৫৬৬। এ সব পাপীরা আল্লাহ্‌র নিদর্শনকে প্রত্যাখানই করেছিলো শুধু তাই-ই নয় তারা আল্লাহ্‌র অস্তিত্বকেই অস্বীকার করেছিলো। শুধু তাই নয় এরা আল্লাহ্‌র প্রেরিত নবী ও রসুলদের নির্যাতন ও হত্যা করেছিলো। [ ৩৬ : ৩০ ]। এরা এসব আধ্যাত্মিক শিক্ষকদের বোকা, পাগল, এবং বিভ্রান্ত বলে আখ্যায়িত করতো।

 

আয়াতঃ 067.010

তারা আরও বলবেঃ যদি আমরা শুনতাম অথবা বুদ্ধি খাটাতাম, তবে আমরা জাহান্নামবাসীদের মধ্যে থাকতাম না।
And they will say: ”Had we but listened or used our intelligence, we would not have been among the dwellers of the blazing Fire!”

وَقَالُوا لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِي أَصْحَابِ السَّعِيرِ
Waqaloo law kunna nasmaAAu aw naAAqilu ma kunna fee as-habi alssaAAeeri

YUSUFALI: They will further say: “Had we but listened or used our intelligence, we should not (now) be among the Companions of the Blazing Fire!”
PICKTHAL: And they say: Had we been wont to listen or have sense, we had not been among the dwellers in the flames.
SHAKIR: And they shall say: Had we but listened or pondered, we should not have been among the inmates of the burning fire.
KHALIFA: They also say, “If we heard or understood, we would not be among the dwellers of Hell!”

১০। তারা আরও বলবে, ” যদি আমরা শুনতাম অথবা আমাদের বিবেক বুদ্ধি প্রয়োগ করতাম ৫৫৬৭, তাহলে আমরা এখন জ্বলন্ত অগ্নিবাসীদের দলভূক্ত হতাম না।”

৫৫৬৭। মানুষ হচ্ছে আল্লাহ্‌র খলিফা। আল্লাহ্‌ তাঁকে সীমিত আকারে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দান করেছেন, বিবেক দান করেছেন, ভালো-মন্দ, পাপ-পূণ্যের মধ্যে পাথর্ক্য করার মত ক্ষমতা দান করেছেন। পূণ্যের রাস্তায় চলার জন্য আল্লাহ্‌ আধ্যাত্মিক শিক্ষকদের প্রেরণ করেছেন যুগে যুগে। সকল যুগের সকল মানুষের পক্ষে এসব শিক্ষকদের সাথে ব্যক্তিগত সংস্পর্শ লাভ করা সম্ভব নয় সত্য। কিন্তু তাদের মত ও চিন্তাধারা পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়ে যা যুগে যুগে মানুষকে প্রেরণা জাগায়, মানুষের বিবেককে জাগরিত করতে সাহায্য করে। মানুষ ইচ্ছা করলেই বিবেক ও বুদ্ধির সাহায্যে তাদের শিক্ষাকে বুঝতে ও অন্তরে ধারণ করতে সক্ষম হতো। কারণ আল্লাহ্‌ প্রতিটি মানুষের আত্মার মাঝে এই ধারণ ক্ষমতা দান করেছেন। মানুষ এই বিবেক বুদ্ধি প্রয়োগে অক্ষমতার দরুণ জাহান্নামবাসী হয়ে নরক যন্ত্রণা ভোগ করবে।

 

আয়াতঃ 067.011

অতঃপর তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করবে। জাহান্নামীরা দূর হোক।
Then they will confess their sin. So, away with the dwellers of the blazing Fire.

فَاعْتَرَفُوا بِذَنبِهِمْ فَسُحْقًا لِّأَصْحَابِ السَّعِيرِ
FaiAAtarafoo bithanbihim fasuhqan li-as-habi alssaAAeeri

YUSUFALI: They will then confess their sins: but far will be (Forgiveness) from the Companions of the Blazing Fire!
PICKTHAL: So they acknowledge their sins; but far removed (from mercy) are the dwellers in the flames.
SHAKIR: So they shall acknowledge their sins, but far will be (forgiveness) from the inmates of the burning fire.
KHALIFA: Thus, they confessed their sins. Woe to the dwellers of Hell.

১১। অতঃপর তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করবে ৫৫৬৮। কিন্তু [ তখন ] জাহান্নামের অধিবাসীদের থেকে [ ক্ষমা হবে ] বহুদূর।

৫৫৬৮। এসব জাহান্নামের অপরাধীরা শেষ বিচারের অগ্নি পরীক্ষাতে অনুত্তীর্ণ হয়ে দোযখে নিক্ষিপ্ত হবে। তখন তাদের জ্ঞানচক্ষু উম্মীলিত হবে। এমনকি ফেরেশতার প্রশ্নের উত্তরেও তারা মিথ্যাভান করতে ভয় পাবে। তারা স্বতঃস্ফুর্তভাবে তাদের অপরাধ স্বীকার করবে। কিন্তু তাদের এই স্বীকারোক্তি অনুতাপ হিসেবে গৃহীত হবে না। কারণ অনুতাপের শর্তই হচ্ছে আত্মসংশোধন। আর পৃথিবীর জীবন শেষে সেই আত্মসংশোধনের সুযোগ লাভ করা যায় না।

 

আয়াতঃ 067.012

নিশ্চয় যারা তাদের পালনকর্তাকে না দেখে ভয় করে, তাদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।
Verily! Those who fear their Lord unseen (i.e. they do not see Him, nor His Punishment in the Hereafter, etc.), theirs will be forgiveness and a great reward (i.e. Paradise).

إِنَّ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُم بِالْغَيْبِ لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ كَبِيرٌ
Inna allatheena yakhshawna rabbahum bialghaybi lahum maghfiratun waajrun kabeerun

YUSUFALI: As for those who fear their Lord unseen, for them is Forgiveness and a great Reward.
PICKTHAL: Lo! those who fear their Lord in secret, theirs will be forgiveness and a great reward.
SHAKIR: (As for) those who fear their Lord in secret, they shall surely have forgiveness and a great reward.
KHALIFA: As for those who reverence their Lord, when alone in their privacy, they have attained forgiveness and a great recompense.

১২। যারা আল্লাহকে না দেখেও ভয় করে ৫৫৬৯, তাদের জন্য আছে ক্ষমা এবং মহাপুরষ্কার।

৫৫৬৯। দেখুন সূরা [ ৩৫ : ১৮ ] আয়াতের টিকা ৩৯০২। দৃষ্টির অগোচরে অর্থ আল্লাহকে না দেখেও অন্তরের মাঝে তাঁর অস্তিত্বকে অনুভব করা এবং তার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ভয় করা মন্দ বা পাপ কাজ থেকে দূরে থাকা। এরূপ ক্ষেত্রে ভয় হচ্ছে আল্লাহ্‌র প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ। এই ভালোবাসা এতটাই তীব্র যে সে আল্লাহ্‌র অপছন্দ যে কোনও কাজ করতে ভয় পাবে কারণ প্রভুর ভালোবাসা হারানোর ভয়ে তার অন্তর সর্বদা ভীত থাকবে। আল্লাহ্‌র ভালোবাসা পাওয়ার আকাঙ্খায় তার সর্বসত্ত্বা উম্মুখ হয়ে থাকবে। এই ভালোবাসার স্রোত ফল্গুধারার ন্যায় অন্তরের মাঝে প্রবাহিত হতে থাকে। বাইরের পৃথিবীর স্বীকৃতি বা সুনাম বা লোক দেখানোর জন্য তার কোনও কাজ হবে না। তার কাজের একমাত্র উদ্দেশ্য হবে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা অর্জন। অন্তরে যখন আল্লাহ্‌র জন্য এরূপ সুতীব্র ভালোবাসার স্রোত প্রবাহিত হয়, তখন পরম করুণাময়ের ক্ষমা, যে পাপ বান্দার জীবনে অতীতে ঘটে গেছে, লাভ করা যায়। এরূপ ক্ষেত্রেই আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দাদের “মহাপুরষ্কারে” পুরষ্কৃত করেন, আল্লাহ্‌র ভালোবাসার পূণ্য সলিলে অবগাহন দ্বারা। যে পুরষ্কার আল্লাহ্‌র ভালোবাসা, তা মানুষের কল্পনা, স্বপ্ন -সাধনার, ধ্যানের সীমা অতিক্রম করে যায়।

 

আয়াতঃ 067.013

তোমরা তোমাদের কথা গোপনে বল অথবা প্রকাশ্যে বল, তিনি তো অন্তরের বিষয়াদি সম্পর্কে সম্যক অবগত।
And whether you keep your talk secret or disclose it, verily, He is the All-Knower of what is in the breasts (of men).

وَأَسِرُّوا قَوْلَكُمْ أَوِ اجْهَرُوا بِهِ إِنَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ
Waasirroo qawlakum awi ijharoo bihi innahu AAaleemun bithati alssudoori

YUSUFALI: And whether ye hide your word or publish it, He certainly has (full) knowledge, of the secrets of (all) hearts.
PICKTHAL: And keep your opinion secret or proclaim it, lo! He is Knower of all that is in the breasts (of men).
SHAKIR: And conceal your word or manifest it; surely He is Cognizant of what is in the hearts.
KHALIFA: Whether you keep your utterances secret, or declare them, He is fully aware of the innermost thoughts.

১৩। তোমাদের কথা গোপনেই বল বা প্রকাশ্যেই বল, অবশ্যই [ সকল ] হৃদয়ের গোপনীয়তা সম্বন্ধে তিনি সম্পূর্ণ অবগত।

১৪। যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি জানবেন না ৫৫৭০? এবং তিনিই বুঝতে পারেন সুক্ষ রহস্য [এবং] সে সম্বন্ধে সম্যক অবগত।

৫৫৭০। শিল্পী তার শিল্পের প্রতিটি আচরণ সম্বন্ধে অবগত। যিনি বিশ্ব সৃষ্টির শিল্পী তিনি তাঁর শিল্প কর্মের প্রতিটি খুটিঁনাটি অবশ্যই অবগত। আমাদের মত সীমিত অপূর্ণ জ্ঞানের আদম সন্তানের উচিত নয় আল্লাহ্‌র জ্ঞানের পরিমাপ করা। তাঁর জ্ঞানকে ‘Latif’ এবং ‘Khabir’ শব্দদ্বয় দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে। যার বঙ্গানুবাদ করা হয়েছে ‘সুক্ষদর্শী ‘ ও ‘সম্যক অবগত’ দেখুন সূরা [ ২২ : ৬৩ আয়াতের টিকা ২৮৪৪ ]।

 

আয়াতঃ 067.014

যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি করে জানবেন না? তিনি সূক্ষ্নজ্ঞানী, সম্যক জ্ঞাত।
Should not He Who has created know? And He is the Most Kind and Courteous (to His slaves) All-Aware (of everything).

أَلَا يَعْلَمُ مَنْ خَلَقَ وَهُوَ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ
Ala yaAAlamu man khalaqa wahuwa allateefu alkhabeeru

YUSUFALI: Should He not know,- He that created? and He is the One that understands the finest mysteries (and) is well-acquainted (with them).
PICKTHAL: Should He not know what He created? And He is the Subtile, the Aware.
SHAKIR: Does He not know, Who created? And He is the Knower of the subtleties, the Aware.
KHALIFA: Should He not know what He created? He is the Sublime, Most Cognizant.

১৩। তোমাদের কথা গোপনেই বল বা প্রকাশ্যেই বল, অবশ্যই [ সকল ] হৃদয়ের গোপনীয়তা সম্বন্ধে তিনি সম্পূর্ণ অবগত।

১৪। যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি জানবেন না ৫৫৭০? এবং তিনিই বুঝতে পারেন সুক্ষ রহস্য [এবং] সে সম্বন্ধে সম্যক অবগত।

৫৫৭০। শিল্পী তার শিল্পের প্রতিটি আচরণ সম্বন্ধে অবগত। যিনি বিশ্ব সৃষ্টির শিল্পী তিনি তাঁর শিল্প কর্মের প্রতিটি খুটিঁনাটি অবশ্যই অবগত। আমাদের মত সীমিত অপূর্ণ জ্ঞানের আদম সন্তানের উচিত নয় আল্লাহ্‌র জ্ঞানের পরিমাপ করা। তাঁর জ্ঞানকে ‘Latif’ এবং ‘Khabir’ শব্দদ্বয় দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে। যার বঙ্গানুবাদ করা হয়েছে ‘সুক্ষদর্শী ‘ ও ‘সম্যক অবগত’ দেখুন সূরা [ ২২ : ৬৩ আয়াতের টিকা ২৮৪৪ ]।

 

আয়াতঃ 067.015

তিনি তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে সুগম করেছেন, অতএব, তোমরা তার কাঁধে বিচরণ কর এবং তাঁর দেয়া রিযিক আহার কর। তাঁরই কাছে পুনরুজ্জীবন হবে।
He it is, Who has made the earth subservient to you (i.e. easy for you to walk, to live and to do agriculture on it, etc.), so walk in the path thereof and eat of His provision, and to Him will be the Resurrection.

هُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ ذَلُولًا فَامْشُوا فِي مَنَاكِبِهَا وَكُلُوا مِن رِّزْقِهِ وَإِلَيْهِ النُّشُورُ
Huwa allathee jaAAala lakumu al-arda thaloolan faimshoo fee manakibiha wakuloo min rizqihi wa-ilayhi alnnushooru

YUSUFALI: It is He Who has made the earth manageable for you, so traverse ye through its tracts and enjoy of the Sustenance which He furnishes: but unto Him is the Resurrection.
PICKTHAL: He it is Who hath made the earth subservient unto you, so Walk in the paths thereof and eat of His providence. And unto Him will be the resurrection (of the dead).
SHAKIR: He it is Who made the earth smooth for you, therefore go about in the spacious sides thereof, and eat of His sustenance, and to Him is the return after death.
KHALIFA: He is the One who put the Earth at your service. Roam its corners, and eat from His provisions. To Him is the final summoning.

রুকু -২

১৫। তিনিই ভূমিকে তোমাদের জন্য ব্যবহারযোগ্য করেছেন ৫৫৭১। সুতারাং এর দিগ-দিগন্তে ভ্রমণ কর এবং তিনি যে জীবনোপকরণ দিয়েছেন, তা উপভোগ কর। কিন্তু তাঁর নিকটেই ঘটবে পুণরুত্থান। ৫৫৭২

৫৫৭১। ” তোমাদের জন্য ভূমিকে ব্যবহারযোগ্য করে দিয়েছেন ” – এই বিশাল পৃথিবী মানুষের জন্য দুর্গম সন্দেহ নাই। কিন্তু মানুষ তার বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে মরুভূমির মধ্যে পথ তৈরী করে মরুভূমিকে জয় করেছে। সুউচ্চ পর্বতকে অতিক্রম করার রাস্তা তৈরী করেছে, নদী ও সমুদ্র পথকে জয় করেছে নৌকা ও জাহাজের সাহায্যে। আকাশ পথকে অতিক্রম করেছে উড়োজাহাজের সাহায্যে। সুতারাং প্রকৃতি যে দুর্গমতা দ্বারা মানুষকে ভয় দেখাতো মানুষ তা নিজ বুদ্ধিমত্তার দ্বারা জয় করেছে। আর এই বুদ্ধিমত্তা আল্লাহ্‌র দান, যার ব্যবহারের ফলে জলে, স্থলে, আকাশে, মানুষের বিচরণ হয়েছে সহজ ও আরামদায়ক।

৫৫৭২। আল্লাহ্‌র করুণা, দয়া এবং সদয় তত্বাবধান আমাদের পৃথিবীর এই ক্ষণস্থায়ী জীবনকে করেছে আরামদায়ক। কিন্তু আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছে পরলোকের অনন্ত জীবন।

 

আয়াতঃ 067.016

তোমরা কি ভাবনামুক্ত হয়ে গেছ যে, আকাশে যিনি আছেন তিনি তোমাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করে দেবেন, অতঃপর তা কাঁপতে থাকবে।
Do you feel secure that He, Who is over the heaven (Allâh), will not cause the earth to sink with you, then behold it shakes (as in an earthquake)?

أَأَمِنتُم مَّن فِي السَّمَاء أَن يَخْسِفَ بِكُمُ الأَرْضَ فَإِذَا هِيَ تَمُورُ
Aamintum man fee alssama-i an yakhsifa bikumu al-arda fa-itha hiya tamooru

YUSUFALI: Do ye feel secure that He Who is in heaven will not cause you to be swallowed up by the earth when it shakes (as in an earthquake)?
PICKTHAL: Have ye taken security from Him Who is in the heaven that He will not cause the earth to swallow you when lo! it is convulsed?
SHAKIR: Are you secure of those in the heaven that He should not make the earth to swallow you up? Then lo! it shall be in a state of commotion.
KHALIFA: Have you guaranteed that the One in heaven will not strike the earth and cause it to tumble?

১৬। তোমরা কি [ তখন ] নিরাপদ বোধ কর যে, যিনি আকাশে রয়েছেন, তিনি [ ইচ্ছা করলে ] পৃথিবী তোমাদের আত্মসাৎ করে নিতে পারে, যখন তা [ ভূমিকম্পের সময়ে ] কাঁপতে থাকে ? ৫৫৭৩

৫৫৭৩। দেখুন সূরা [ ১৭ : ৬৮] আয়াত ও টিকা ২২৬৩। আরও দেখুন কারুণের গল্প সূরা [ ২৮: ৭৬- ৮২ ] আয়াতে। যদিও আমাদের নিকট পৃথিবীটাকে সুন্দর, আরামদায়ক এবং নিরাপদ মনে হয়, তবে তার কারণ আল্লাহ্‌ ভূমিকে করেছেন মানুষের জন্য বাধ্য, পরিচালনা যোগ্য, সেবা করতে ইচ্ছুক; সুবিধাজনক এবং কার্যোপযোগী [ উপরের আয়াত ১৫ ]। মানুষের জন্য এই দান আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ। যদি আমরা আল্লাহ্‌র আইনকে প্রত্যাখান করি তবে কি আমরা পার্থিব জীবনের এই নিরাপত্তা ভোগ করতে পারবো ? পৃথিবীর এই ক্ষণস্থায়ী আরাম আয়েশ কি দীর্ঘস্থায়ী হবে ? ভূমিকম্প বা টর্ণেডো, ঘুর্ণিঝড়, বন্যা, প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মূহুর্তের মধ্যে আমাদের সকল নিরাপত্তা, সুখ, শান্তি ধূলোয় মিশিয়ে দিতে পারে। সুতারাং বর্তমান জীবনের নিরাপত্তা আরাম আয়েশ সবই আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ মাত্র।

 

আয়াতঃ 067.017

না তোমরা নিশ্চিন্ত হয়ে গেছ যে, আকাশে যিনি আছেন, তিনি তোমাদের উপর প্রস্তর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, অতঃপর তোমরা জানতে পারবে কেমন ছিল আমার সতর্কবাণী।
Or do you feel secure that He, Who is over the heaven (Allâh), will not send against you a violent whirlwind? Then you shall know how (terrible) has been My Warning?

أَمْ أَمِنتُم مَّن فِي السَّمَاء أَن يُرْسِلَ عَلَيْكُمْ حَاصِبًا فَسَتَعْلَمُونَ كَيْفَ نَذِيرِ
Am amintum man fee alssama-i an yursila AAalaykum hasiban fasataAAlamoona kayfa natheeri

YUSUFALI: Or do ye feel secure that He Who is in Heaven will not send against you a violent tornado (with showers of stones), so that ye shall know how (terrible) was My warning?
PICKTHAL: Or have ye taken security from Him Who is in the heaven that He will not let loose on you a hurricane? But ye shall know the manner of My warning.
SHAKIR: Or are you secure of those in the heaven that He should not send down upon you a punishment? Then shall you know how was My warning.
KHALIFA: Have you guaranteed that the One in heaven will not send upon you a violent storm? Will you then appreciate the value of My warning?

১৭। অথবা তোমরা কি [ তখন] নিরাপদ বোধ কর যে, যিনি আকাশে রয়েছেন, তিনি [ ইচ্ছা করলে,কঙ্কর বর্ষণ সহ ] ভয়াবহ ঘুর্ণিঝড় তোমাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করবেন ৫৫৭৪? যেনো তোমরা জানতে পার আমার সর্তকবাণী কতটা [ ভয়ঙ্কর ] ছিলো?

৫৫৭৪। দেখুন [ ১৭: ৬৮ ] আয়াত ; এবং সূরা [ ২৯: ৪০] আয়াত ও টিকা ৩৪৬২ ] লূতের উপদেশ প্রত্যাখান করার ফলে এরূপ প্রচন্ড ‘কঙ্কর বর্ষী ঝঞা তাদের উপরে পতিত হয়।

 

আয়াতঃ 067.018

তাদের পূর্ববর্তীরা মিথ্যারোপ করেছিল, অতঃপর কত কঠোর হয়েছিল আমার অস্বীকৃতি।
And indeed those before them belied (the Messengers of Allâh), then how terrible was My denial (punishment)?

وَلَقَدْ كَذَّبَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ فَكَيْفَ كَانَ نَكِيرِ
Walaqad kaththaba allatheena min qablihim fakayfa kana nakeeri

YUSUFALI: But indeed men before them rejected (My warning): then how (terrible) was My rejection (of them)?
PICKTHAL: And verily those before them denied, then (see) the manner of My wrath (with them)!
SHAKIR: And certainly those before them rejected (the truth), then how was My disapproval.
KHALIFA: Others before them have disbelieved; how terrible was My requital!

১৮। তাদের পূর্ববর্তী মানুষেরা আমার [ সর্তকবাণী ] অবশ্যই প্রত্যাখান করেছিলো। ফলে, তাদের প্রতি আমার প্রত্যাখান ছিলো কতটা [ ভয়ংকর ] ? ৫৫৭৫

৫৫৭৫। দেখুন সূরা [ ২২ : ৪২ – ৪৪ ] আয়াত ও টিকা ২৮২২।

 

আয়াতঃ 067.019

তারা কি লক্ষ্য করে না, তাদের মাথার উপর উড়ন্ত পক্ষীকুলের প্রতি পাখা বিস্তারকারী ও পাখা সংকোচনকারী? রহমান আল্লাহ-ই তাদেরকে স্থির রাখেন। তিনি সর্ব-বিষয় দেখেন।
Do they not see the birds above them, spreading out their wings and folding them in? None upholds them except the Most Beneficent (Allâh). Verily, He is the All-Seer of everything.

أَوَلَمْ يَرَوْا إِلَى الطَّيْرِ فَوْقَهُمْ صَافَّاتٍ وَيَقْبِضْنَ مَا يُمْسِكُهُنَّ إِلَّا الرَّحْمَنُ إِنَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ بَصِيرٌ
Awa lam yaraw ila alttayri fawqahum saffatin wayaqbidna ma yumsikuhunna illa alrrahmanu innahu bikulli shay-in baseerun

YUSUFALI: Do they not observe the birds above them, spreading their wings and folding them in? None can uphold them except (Allah) Most Gracious: Truly (Allah) Most Gracious: Truly it is He that watches over all things.
PICKTHAL: Have they not seen the birds above them spreading out their wings and closing them? Naught upholdeth them save the Beneficent. Lo! He is Seer of all things.
SHAKIR: Have they not seen the birds above them expanding (their wings) and contracting (them)? What is it that withholds them save the Beneficent Allah? Surely He sees everything.
KHALIFA: Have they not seen the birds above them lined up in columns and spreading their wings? The Most Gracious is the One who holds them in the air. He is Seer of all things.

১৯। তারা কি তাদের উর্দ্ধদেশের বিহঙ্গকুলকে লক্ষ্য করে না ৫৫৭৬ ? যারা তাদের ডানাগুলিকে মেলে দেয় ও গুটিয়ে ফেলে ? ৫৫৭৭। পরম করুণাময় [আল্লাহ্‌ ] ব্যতীত কেউ তাদের [ উর্দ্ধে ] ধারণ করে রাখতে পারে না। অবশ্যই তিনিই সব কিছুর সম্যক দ্রষ্টা।

৫৫৭৬। প্রকৃতির রাজ্যে বিহঙ্গকূলের আকাশে উড্ডীয়মান হওয়া এক অত্যাশ্চর্য সুন্দর ঘটনা। তাদের পালক, শরীরের কাঠামো, হাড়, আকৃতি অর্থাৎ চঞ্চু থেকে পুচ্ছ পর্যন্ত সকল কিছুই এমন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সৃষ্টি যে তারা পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তিকে অতিক্রম করে নীল আকাশে ডানা মেলে বিচরণের ক্ষমতা রাখে। বিহঙ্গকূলের নীল আকাশে ডানা মেলে ওড়া, আকাশ থেকে ডানা গুটিয়ে পৃথিবীর মাটি থেকে শীকারকে ছো মেরে ধরা, বা নীলাকাশে ডানা মেলে স্থির থাকা সব কিছুই মানুষকে প্রেরণা যুগিয়েছে বিমান ও বিমান চালনা সংক্রান্ত বিজ্ঞান আবিষ্কারে। কিন্তু পাখীকে আকাশে ওড়ার এই জ্ঞান কে শিখিয়েছে ? কে তাকে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের সাথে ভারসাম্য রক্ষার ক্ষমতা দান করেছে? সেটা একমাত্র বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহ্‌রই দান। তাঁরই অশেষ করুণাতে প্রতিটি প্রাণী লাভ করে পৃথিবীতে বাঁচার এবং পরিবেশের সাথে ভারসাম্য রক্ষা করে চলার ক্ষমতা। মানুষ বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারে মুগ্ধ ও চমৎকৃত হয়ে যায়। কিন্তু বিজ্ঞানের সব জ্ঞানই প্রকৃতি বিজ্ঞানের জ্ঞান যা আল্লাহ্‌ প্রদত্ত।

৫৫৭৭। বিহঙ্গকূল উড়ার প্রক্রিয়ায় পক্ষযুগলকে বিভিন্নভাবে আন্দোলিত করে থাকে। এর বর্ণনায় যে আরবী শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তা যেরূপ সুন্দর ও শৈল্পিক যে তার উপযুক্ত অনুবাদ করা কোন ভাষাতেই সম্ভব নয়। ‘Saffat’ অর্থাৎ শূন্যে ডানা মেলে দেয়া ; যার দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে অনুভূতি তা হচ্ছে ডানা মেলে ক্রমাগত উচ্চে ওঠা। আবার ‘yaqbidhna’ অর্থ ডানা গুটানো। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে ছন্দে ছন্দে ডানাকে আন্দোলিত করা।

 

আয়াতঃ 067.020

রহমান আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত তোমাদের কোন সৈন্য আছে কি, যে তোমাদেরকে সাহায্য করবে? কাফেররা বিভ্রান্তিতেই পতিত আছে।
Who is he besides the Most Beneficent that can be an army to you to help you? The disbelievers are in nothing but delusion.

أَمَّنْ هَذَا الَّذِي هُوَ جُندٌ لَّكُمْ يَنصُرُكُم مِّن دُونِ الرَّحْمَنِ إِنِ الْكَافِرُونَ إِلَّا فِي غُرُورٍ
Amman hatha allathee huwa jundun lakum yansurukum min dooni alrrahmani ini alkafiroona illa fee ghuroorin

YUSUFALI: Nay, who is there that can help you, (even as) an army, besides (Allah) Most Merciful? In nothing but delusion are the Unbelievers.
PICKTHAL: Or who is he that will be an army unto you to help you instead of the Beneficent? The disbelievers are in naught but illusion.
SHAKIR: Or who is it that will be a host for you to assist you besides the Beneficent Allah? The unbelievers are only in deception.
KHALIFA: Where are those soldiers who can help you against the Most Gracious? Indeed, the disbelievers are deceived.

২০। পরম করুণাময় আল্লাহ্‌ ব্যতীত আর কে তোমাদের সৈন্য হয়ে তোমাদের সাহায্য করতে পারে ? অবিশ্বাসীরা তো রয়েছে বিভ্রান্তির মধ্যে। ৫৫৭৮

৫৫৭৮। মানুষের সর্বোচ্চ ক্ষমতা, সর্বাপেক্ষা বিশাল সৈন্য সমাবেশেরও সাধ্য নাই আল্লাহ্‌র ক্রোধকে মোকাবিলা করার। পৃথিবীতে আমরা বেঁচে থাকি সে তো আল্লাহ্‌রই সদয় তত্বাবধানের জন্য। যদি কেউ আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কারও সাহায্য কামনা করে তবে তারা আত্ম প্রবঞ্চনার মধ্যে বাস করে। তারা বিভ্রান্ত।

 

আয়াতঃ 067.021

তিনি যদি রিযিক বন্ধ করে দেন, তবে কে আছে, যে তোমাদেরকে রিযিক দিবে বরং তারা অবাধ্যতা ও বিমুখতায় ডুবে রয়েছে।
Who is he that can provide for you if He should withhold His provision? Nay, but they continue to be in pride, and (they) flee (from the truth).

أَمَّنْ هَذَا الَّذِي يَرْزُقُكُمْ إِنْ أَمْسَكَ رِزْقَهُ بَل لَّجُّوا فِي عُتُوٍّ وَنُفُورٍ
Amman hatha allathee yarzuqukum in amsaka rizqahu bal lajjoo fee AAutuwwin wanufoorin

YUSUFALI: Or who is there that can provide you with Sustenance if He were to withhold His provision? Nay, they obstinately persist in insolent impiety and flight (from the Truth).
PICKTHAL: Or who is he that will provide for you if He should withhold His providence? Nay, but they are set in pride and frowardness.
SHAKIR: Or who is it that will give you sustenance if He should withhold His sustenance? Nay! they persist in disdain and aversion.
KHALIFA: Who is there to provide for you, if He withholds His provisions? Indeed, they have plunged deep into transgression and aversion.

২১। যদি আল্লাহ্‌ জীবনোপকরণ বন্ধ করে দেন, তবে কে তোমাদের জীবনোপকরণ সরবরাহ করবে ৫৫৭৯ ? বস্তুত ওরা উদ্ধত্য, অবিশ্বাস ও সত্য বিমুখতায় অবিচল রয়েছে।

৫৫৭৯। দেখুন সূরা [ ১৬ : ৭৩ ] ও টিকা ২১০৫। ‘জীবনোপকরণ’ শব্দটি কোরাণ শরীফের বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে। জীবনোপকরণ বলতে সেই সব উপকরণকেই বোঝানো হয় যা পার্থিব, মানসিক ও আধ্যাত্মিক জগতের উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন। অর্থাৎ পৃথিবীতে শান্তি ও সমৃদ্ধিপূর্ণ জীবন ধারণের জন্য যে সব উপকরণের প্রয়োজন সবই “জীবনোপকরণ “। আমাদের এই জীবনোপকরণ আল্লাহ্‌র একক দান। যদি কেউ মনে করে আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কেউ তার সাহায্যকারী আছে তবে সে মহাবিভ্রান্তির মাঝে বাস করে। আত্ম অহংকার মানুষকে আল্লাহ্‌র উপরে নির্ভরতার পরিবর্তে স্বনির্ভরতার প্রতি আকর্ষণ করে। এ সব লোক উদ্ধত অহংকারে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং দাম্ভিকতা হয় এদের বৈশিষ্ট্য যা অধার্মিকতা। “বস্তুত উহারা উদ্ধত্য, অবিশ্বাস, অবাধ্যতা, ও সত্য বিমুখতায় অবিচল রয়েছে।

 

আয়াতঃ 067.022

যে ব্যক্তি উপুড় হয়ে মুখে ভর দিয়ে চলে, সে-ই কি সৎ পথে চলে, না সে ব্যক্তি যে সোজা হয়ে সরলপথে চলে?
Is he who walks without seeing on his face, more rightly guided, or he who (sees and) walks on a Straight Way (i.e. Islâmic Monotheism).

أَفَمَن يَمْشِي مُكِبًّا عَلَى وَجْهِهِ أَهْدَى أَمَّن يَمْشِي سَوِيًّا عَلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
Afaman yamshee mukibban AAala wajhihi ahda amman yamshee sawiyyan AAala siratin mustaqeemin

YUSUFALI: Is then one who walks headlong, with his face grovelling, better guided,- or one who walks evenly on a Straight Way?
PICKTHAL: Is he who goeth groping on his face more rightly guided, or he who walketh upright on a straight road?
SHAKIR: What! is he who goes prone upon his face better guided or he who walks upright upon a straight path?
KHALIFA: Is one who walks while slumped over on his face better guided, or one who walks straight on the right path?

২২। সুতারাং যে অবিবেচকের ন্যায় মুখ নীচু করে চলে ৫৫৮০, সেই সঠিক ভাবে পরিচালিত না কি সেই ব্যক্তি যে ঋজু হয়ে সরল পথে চলে ? ৫৫৮১

৫৫৮০। দেখুন [ ২৭ : ৯০ ] আয়াত ও টিকা ৩৩২০। যে ব্যক্তি ন্যায়পরায়ণ ও সাধু সে সর্বদা “ঋজু হয়ে সরল পথে ” চলবে। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ তাঁর হবে আল্লাহ্‌র অনুগ্রহে সিক্ত। ঋজু হয়ে, অর্থাৎ উন্নত মস্তকে ভয়হীন ও দ্বিধাহীন, নিঃশব্দ চিত্তে জীবনের পথকে সে অতিক্রম করবে। অপরপক্ষে যে ব্যক্তি অন্যায়কারী ও পাপী তার বর্ণনা হচ্ছে সে “মুখ নীচু করে চলে।” এর অর্থ হচ্ছে পাপ ও অন্যায়বোধ তার চিত্তকে ভয় ও শঙ্কাতে পরিপূর্ণ করে তোলে। পাপের পথ হচ্ছে জীবনের জন্য অন্ধকার পথ, সে পথে পাপীর পদচারণা হচ্ছে নিম্নাভূমুখী। এর উপমা হচ্ছে অন্ধকার পথে সে চলে হোচ্‌ট খেতে খেতে – তার হৃদয় সর্বদা পরিপূর্ণ থাকে ভয়, শঙ্কা ও অবিশ্বাসে। এই দুধরণের লোকের ব্যবধান হচ্ছে পৃথিবীর দুই মেরুর মাঝে যে ব্যবধান। যদিও তারা একই পৃথিবীতে বাস করে একই আলো বাতাসে নিঃশ্বাস নেয়। আল্লাহ্‌র একই নিদর্শন প্রত্যক্ষ করে এবং আল্লাহ্‌র নেয়ামত সমভাবে ভোগ করে, তবুও তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদের মানসিকতার মধ্যে হয় দুস্তর ব্যবধান।

৫৫৮১। “সরল পথ” দ্বারা সেই পথকে বোঝানো হয়েছে যে পথের সন্ধান হযরত ইব্রাহীম তাঁর পিতাকে দিতে চেয়েছিলেন। দেখুন সূরা [ ১৯ : ৪৩ ] আয়াত।

 

আয়াতঃ 067.023

বলুন, তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং দিয়েছেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তর। তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
Say it is He Who has created you, and endowed you with hearing (ears), seeing (eyes), and hearts. Little thanks you give.

قُلْ هُوَ الَّذِي أَنشَأَكُمْ وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ قَلِيلًا مَّا تَشْكُرُونَ
Qul huwa allathee anshaakum wajaAAala lakumu alssamAAa waal-absara waal-af-idata qaleelan ma tashkuroona

YUSUFALI: Say: “It is He Who has created you (and made you grow), and made for you the faculties of hearing, seeing, feeling and understanding: little thanks it is ye give.
PICKTHAL: Say (unto them, O Muhammad): He it is who gave you being, and hath assigned unto you ears and eyes and hearts. Small thanks give ye!
SHAKIR: Say: He it is Who brought you into being and made for you the ears and the eyes and the hearts: little is it that you give thanks.
KHALIFA: Say, “He is the One who initiated you, and granted you the hearing, the eyes, and the brains. Rarely are you appreciative.”

২৩। বল, “তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন ৫৫৮২, [ এবং শারীরিক বৃদ্ধি ঘটান ] ৫৫৮৩, এবং তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি, অনুভূতি এবং অনুধাবন ক্ষমতা। তোমরা খুব কমই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।

৫৫৮২। ‘বল’ দ্বারা রাসুলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। বিশ্ববাসীকে বলতে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ্‌ সকল কিছুর স্রষ্টা সকল সমৃদ্ধি ও উন্নতির কেন্দ্রবিন্দু। তিনি মানুষকে বিভিন্ন মানসিক দক্ষতাতে সমৃদ্ধ করেন। যার সাহায্যে মানুষ উচ্চতর সম্মান ও মানসিক সমৃদ্ধি এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভে সক্ষম। এই উচ্চতর মানসিক দক্ষতাসমূহকে প্রকাশ করা হয়েছে ‘শ্রবণশক্তি” অর্থাৎ সাধারণ থেকে অসাধারণ শোনার ক্ষমতা, ‘দৃষ্টিশক্তি’ অর্থাৎ সাধারণ থেকে অসাধারণ কিছু দেখার ক্ষমতা, ‘অনুধাবন’ অর্থাৎ উপলব্ধি করার ক্ষমতা। এই ক্ষমতা বলেই মানুষ পশু থেকে উন্নত এবং মানুষ পৃথিবীর সকল বাধাকে অতিক্রম করে নিজ আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। এই ক্ষমতা বলেই সে আধ্যাত্মিক জগতে ফেরেশতাদের থেকেও সমুন্নত। সে পৃথিবীর খলিফা।

৫৫৮৩। ‘Anshaa’ শব্দটির জন্য দেখুন সূরা [ ৬ : ৯৮] আয়াতের টিকা ৯২৩।

 

আয়াতঃ 067.024

বলুন, তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে বিস্তৃত করেছেন এবং তাঁরই কাছে তোমরা সমবেত হবে।
Say: ”It is He Who has created you from the earth, and to Him shall you be gathered (in the Hereafter).”

قُلْ هُوَ الَّذِي ذَرَأَكُمْ فِي الْأَرْضِ وَإِلَيْهِ تُحْشَرُونَ
Qul huwa allathee tharaakum fee al-ardi wa-ilayhi tuhsharoona

YUSUFALI: Say: “It is He Who has multiplied you through the earth, and to Him shall ye be gathered together.”
PICKTHAL: Say: He it is Who multiplieth you in the earth, and unto Whom ye will be gathered.
SHAKIR: Say: He it is Who multiplied you in the earth and to Him you shall be gathered.
KHALIFA: Say, “He is the One who placed you on earth, and before Him you will be summoned.”

২৪। বল, ” তিনিই পৃথিবীতে তোমাদের বংশ বৃদ্ধি করেছেন ৫৫৮৪, এবং তাঁর নিকটই তোমাদের সমবেত করা হবে”।

৫৫৮৪। মানুষ একজোড়া পিতামাতা থেকে সৃষ্টি হয়ে বংশবৃদ্ধি করে বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। সেই সাথে তারা বিভিন্ন ভাষা, বিভিন্ন সংস্কৃতির জন্ম দান করেছে। যত পার্থক্যই তাদের মাঝে লক্ষ্য করা যাক না কেন তাদের সকলকেই শেষ বিচারের দিনে একস্থানে সমবেত করা হবে। সেদিন মানুষের সকল পাপকে ধ্বংস করে ফেলা হবে, শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র সত্য সারা পৃথিবীতে বিরাজ করবে।

 

আয়াতঃ 067.025

কাফেররা বলেঃ এই প্রতিশ্রুতি কবে হবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও?
They say: ”When will this promise (i.e. the Day of Resurrection) come to pass? if you are telling the truth.”

وَيَقُولُونَ مَتَى هَذَا الْوَعْدُ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ
Wayaqooloona mata hatha alwaAAdu in kuntum sadiqeena

YUSUFALI: They ask: When will this promise be (fulfilled)? – If ye are telling the truth.
PICKTHAL: And they say: When (will) this promise (be fulfilled), if ye are truthful?
SHAKIR: And they say: When shall this threat be (executed) if you are truthful?
KHALIFA: They challenge: “When will that prophecy come to pass, if you are truthful?”

২৫। তারা জিজ্ঞাসা করে; ” তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তবে বল কবে এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে? ” ৫৫৮৫

৫৫৮৫। যারা আল্লাহ্‌র একত্বে এবং অস্তিত্বে বিশ্বাসী নয় তাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্যকে এখানে তুলে ধরা হয়েছে। তারা হয় সন্দেহবাতিক তাদের প্রশ্নের উত্তর পরবর্তী আয়াতে দেয়া হয়েছে।

 

আয়াতঃ 067.026

বলুন, এর জ্ঞান আল্লাহ তা’আলার কাছেই আছে। আমি তো কেবল প্রকাশ্য সতর্ককারী।
Say (O Muhammad SAW): ”The knowledge (of its exact time) is with Allâh only, and I am only a plain warner.”

قُلْ إِنَّمَا الْعِلْمُ عِندَ اللَّهِ وَإِنَّمَا أَنَا نَذِيرٌ مُّبِينٌ
Qul innama alAAilmu AAinda Allahi wa-innama ana natheerun mubeenun

YUSUFALI: Say: “As to the knowledge of the time, it is with Allah alone: I am (sent) only to warn plainly in public.”
PICKTHAL: Say: The knowledge is with Allah only, and I am but a plain warner;
SHAKIR: Say: The knowledge (thereof is only with Allah and I am only a plain warner.
KHALIFA: Say, “Such knowledge is with GOD; I am no more than a manifest warner.”

২৬। বল, ” সময় সম্বন্ধে জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ্‌র নিকটেই রয়েছে ৫৫৮৬ আমাকে [ প্রেরণ ] করা হয়েছে জনসাধারণকে সুস্পষ্টভাবে সাবধান করার জন্য।

৫৫৮৬। অবশ্যই প্রতিটি মানুষকে তাঁর পৃথিবীতে কৃত কর্মের হিসাব দাখিল করতে হবে। তবে কখন সেই শেষ বিচার অনুষ্ঠিত হবে তা জানেন শুধুমাত্র সেই সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌। রাসুলের দায়িত্ব হচ্ছে সর্বসাধারণের অবগতির জন্য তা প্রকাশ্যে পরিষ্কার ভাবে ঘোষণা করা। দুষ্কৃতিকারী অন্যায়কারী, পাপীদের শাস্তি দান করা তার কর্তব্য নয়, অথবা তাদের জন্য শাস্তি ত্বরাণ্বিত করাও তার কাজ নয়।

 

আয়াতঃ 067.027

যখন তারা সেই প্রতিশ্রুতিকে আসন্ন দেখবে তখন কাফেরদের মুখমন্ডল মলিন হয়ে পড়বে এবং বলা হবেঃ এটাই তো তোমরা চাইতে।
But when they will see it (the torment on the Day of Resurrection) approaching, the faces of those who disbelieve will be different (black, sad, and in grieve), and it will be said (to them): ”This is (the promise) which you were calling for!”

فَلَمَّا رَأَوْهُ زُلْفَةً سِيئَتْ وُجُوهُ الَّذِينَ كَفَرُوا وَقِيلَ هَذَا الَّذِي كُنتُم بِهِ تَدَّعُونَ
Falamma raawhu zulfatan see-at wujoohu allatheena kafaroo waqeela hatha allathee kuntum bihi taddaAAoona

YUSUFALI: At length, when they see it close at hand, grieved will be the faces of the Unbelievers, and it will be said (to them): “This is (the promise fulfilled), which ye were calling for!”
PICKTHAL: But when they see it nigh, the faces of those who disbelieve will be awry, and it will be said (unto them): This is that for which ye used to call.
SHAKIR: But when they shall see it nigh, the faces of those who disbelieve shall be sorry, and it shall be said; This is that which you used to call for.
KHALIFA: When they see it happening, the faces of those who disbelieved will turn miserable, and it will be proclaimed: “This is what you used to mock.”

২৭। অবশেষে, যখন তারা তা অতি নিকটে দেখবে ৫৫৮৭, তখন অবিশ্বাসীদের মুখমন্ডল ম্লান হয়ে পড়বে। এবং [ তাদের ] বলা হবে, ” এই হল [ প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন ], যা তোমরা আহ্বান করছিলে।” ৫৫৮৮

৫৫৮৭। “তা” অর্থাৎ কেয়ামতের শাস্তি। যখন তা প্রকৃতপক্ষে কাফেরদের দৃষ্টিগোচর করানো হবে তখন তাদের বোধদয় ঘটবে। অবিশ্বাসীরা বুঝতে পারবে যে তারা যাদের ধর্মমত বা বিশ্বাসকে উপহাস করতো তাই-ই প্রকৃত সত্য। তাদের সন্দেহ পোষণ ছিলো পরিপূর্ণ ভ্রান্ত।

৫৫৮৮। কেয়ামত দিবসকে অবিশ্বাসের দরুণই তারা তা উপহাসের পাত্র বলে বিবেচনা করতো। অবশ্যই তারা কেয়ামতের শাস্তিকে প্রত্যক্ষ করতে চেয়েছিলো। এখন তা নিকটবর্তী এবং অনুতাপের মাধ্যমে আত্মসংশোধনের পথ রুদ্ধ।

 

আয়াতঃ 067.028

বলুন, তোমরা কি ভেবে দেখেছ-যদি আল্লাহ তা’আলা আমাকে ও আমার সংগীদেরকে ধ্বংস করেন অথবা আমাদের প্রতি দয়া করেন, তবে কাফেরদেরকে কে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে রক্ষা করবে?
Say (O Muhammad SAW): ”Tell me! If Allâh destroys me, and those with me, or He bestows His Mercy on us, – who can save the disbelievers from a painful torment?”

قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَهْلَكَنِيَ اللَّهُ وَمَن مَّعِيَ أَوْ رَحِمَنَا فَمَن يُجِيرُ الْكَافِرِينَ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ
Qul araaytum in ahlakaniya Allahu waman maAAiya aw rahimana faman yujeeru alkafireena min AAathabin aleemin

YUSUFALI: Say: “See ye?- If Allah were to destroy me, and those with me, or if He bestows His Mercy on us,- yet who can deliver the Unbelievers from a grievous Penalty?”
PICKTHAL: Say (O Muhammad): Have ye thought: Whether Allah causeth me (Muhammad) and those with me to perish or hath mercy on us, still, who will protect the disbelievers from a painful doom?
SHAKIR: Say: Have you considered if Allah should destroy me and those with me– rather He will have mercy on us; yet who will protect the unbelievers from a painful punishment?
KHALIFA: Say, “Whether GOD decides to annihilate me and those with me, or to shower us with His mercy, who is there to protect the disbelievers from a painful retribution?”

২৮। বল, ” তোমরা কি চিন্তা করেছ ? যদি আল্লাহ্‌ আমাকে ও আমার সাক্ষীদের ধ্বংস করতে চান ৫৫৮৯ অথবা আমাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করেন, [অবশ্যই তা করতে পারেন ], তবে অবিশ্বাসীদের কে ভয়াবহ শাস্তি থেকে উদ্ধার করবে” ?

৫৫৮৯। যারা অবিশ্বাসী ও সন্দেহবাতিক তাদের বক্তব্য দুনিয়াতে এরূপ হবে, ” যদি সেরূপ বিপর্যয় আসে তবে ভালো ও মন্দ সকলেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তোমরা যেরূপ বল যে, আল্লাহ্‌ তাঁর করুণা ধারা পাপী পূণ্যাত্মা সকলের জন্য সমভাবে বর্ষণ করে থাকেন।” এর উত্তর এই আয়াতে দেয়া হয়েছে, ” আমাদের [ পূণ্যাত্মাদের ] জন্য চিন্তা করো না। যদি আমরা আমাদের সকল পূণ্যবান সঙ্গী সাথীসহ ধ্বংস হয়ে যাই, তাতে তোমাদের তো কোনও উপকারে আসবে না। তাতে তোমাদের কি সান্তনা ? তোমাদের পাপের দরুণ তোমরা নিদারুণ কষ্টে পতিত হবে, কিন্তু আমরা যদি কষ্টে পতিত হই তবে আমরা মনে করি তা আমাদের আত্মিক বিশুদ্ধতার জন্য, আমাদের কল্যাণের জন্য আল্লাহ্‌র দান ক্ষমা লাভ করবো। কারণ আমরা জানি আল্লাহ্‌ করুণাময়, আমরা তারই করুণার উপরে বিশ্বাসী। কাফেরদের অন্তরে এরূপ বিশ্বাসের কোনও স্থান নাই। দেখুন পরের আয়াত।

 

আয়াতঃ 067.029

বলুন, তিনি পরম করুণাময়, আমরা তাতে বিশ্বাস রাখি এবং তাঁরই উপর ভরসা করি। সত্ত্বরই তোমরা জানতে পারবে, কে প্রকাশ্য পথ-ভ্রষ্টতায় আছে।
Say: ”He is the Most Beneficent (Allâh), in Him we believe, and in Him we put our trust. So you will come to know who is it that is in manifest error.”

قُلْ هُوَ الرَّحْمَنُ آمَنَّا بِهِ وَعَلَيْهِ تَوَكَّلْنَا فَسَتَعْلَمُونَ مَنْ هُوَ فِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ
Qul huwa alrrahmanu amanna bihi waAAalayhi tawakkalna fasataAAlamoona man huwa fee dalalin mubeenin

YUSUFALI: Say: “He is (Allah) Most Gracious: We have believed in Him, and on Him have we put our trust: So, soon will ye know which (of us) it is that is in manifest error.”
PICKTHAL: Say: He is the Beneficent. In Him we believe and in Him we put our trust. And ye will soon know who it is that is in error manifest.
SHAKIR: Say: He is the Beneficent Allah, we believe in Him and on Him do we rely, so you shall come to know who it is that is in clear error.
KHALIFA: Say, “He is the Most Gracious; we believe in Him, and we trust in Him. You will surely find out who is really far astray.”

২৯। বল; ” তিনিই পরম করুণাময় আল্লাহ্‌। আমরা তাঁকে বিশ্বাস করি; ও তারই উপরে নির্ভর করি। শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে [ আমাদের মধ্যে ] কে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছে “। ৫৫৯০

৫৫৯০। দেখুন উপরের টিকা। আমরা মুসলমান হিসেবে বিশ্বাস করি আল্লাহ্‌ আমাদের মালিক। তিনি আমাদের সকল বিপদ বিপর্যয়ের থেকে রক্ষা করবেন – যদি আমরা সৎ পথে জীবনধারণ করি এবং অতীতের পাপের জন্য অনুতাপের মাধ্যমে আত্মসংশোধন করি। আল্লাহ্‌র উপরে এই নির্ভরশীলতা আত্মার মাঝে শান্তি আনে। দুঃখভরা পৃথিবীতে বাস করেও দুঃখ থেকে নিষ্কৃতি লাভ করা যায়। কিন্তু অবিশ্বাসী কাফেরদের দুঃখ থেকে নিষ্কৃতি লাভের এরূপ কোনও স্থান নাই। হতভাগ্য তারা। পরলোকে যখন তারা প্রকৃত সত্যের মুখোমুখি হবে, তখন তারা বুঝতে সক্ষম হবে বিশ্বাসী না অবিশ্বাসীরা কারা সঠিক পথে ছিলো। “কে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছে।”

 

আয়াতঃ 067.030

বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি তোমাদের পানি ভূগর্ভের গভীরে চলে যায়, তবে কে তোমাদেরকে সরবরাহ করবে পানির স্রোতধারা?
Say (O Muhammad SAW): ”Tell me! If (all) your water were to be sunk away, who then can supply you with flowing (spring) water?”

قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَصْبَحَ مَاؤُكُمْ غَوْرًا فَمَن يَأْتِيكُم بِمَاء مَّعِينٍ
Qul araaytum in asbaha maokum ghawran faman ya/teekum bima-in maAAeenin

YUSUFALI: Say: “See ye?- If your stream be some morning lost (in the underground earth), who then can supply you with clear-flowing water?”
PICKTHAL: Say: Have ye thought: If (all) your water were to disappear into the earth, who then could bring you gushing water?
SHAKIR: Say: Have you considered if your water should go down, who is it then that will bring you flowing water?
KHALIFA: Say, “What if your water sinks away, who will provide you with pure water?”

৩০। বল, ” তোমরা ভেবে দেখেছ কি ? কোন সকালে যদি তোমাদের নদীগুলি [ ভূগর্ভে ] হারিয়ে যায়, তবে কে তোমাদের স্বচ্ছ প্রবাহিত পানি সরবরাহ করতে পারবে ? ” ৫৫৯১

৫৫৯১। সূরাটি শেষ করা হয়েছে অপরূপ সুন্দর একটি উপমার মাধ্যমে যার সাহায্যে আধ্যাত্মিক জীবনের উৎসকে তুলে ধরা হয়েছে। পানির গতির ধারা যেরূপ নিম্নাভিমূখী ; আল্লাহ্‌র রহমতের ধারাও সেরূপ নিম্নাভিমূখী। প্রতিদিনের জীবনে আমরা যদি কখনও প্রভাতে ঘুম ভেঙ্গে দেখি পৃথিবীর উপরিভাগ পানি শূন্য হয়ে গেছে, সকল উৎস শুকিয়ে মাটির নীচে চলে গেছে; তাহলে তার অবশ্যাম্ভবী পরিণতি হবে পৃথিবীর সকল জীবের মৃত্যু। সেরূপ ঐশ্বরিক প্রজ্ঞা ও করুণা ব্যতীত আধ্যাত্মিক জীবনের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন। আধ্যাত্মিক জীবনের প্রাণ হচ্ছে, ঐশ্বরিক প্রজ্ঞা, করুণা, ও দয়া যার গতি পানির ন্যায় উর্দ্ধলোক থেকে নিম্নলোকে। ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনের মূল কেন্দ্র হচ্ছে ঐশ্বরিক করুণাধারা। আমাদের সর্ব অস্তিত্বের জন্য আমরা সর্বশক্তিমানের দয়া ও করুণার প্রার্থী। জাগতিক কোনও শক্তিই আল্লাহ্‌র সমকক্ষ নয়। আল্লাহ্‌র জ্ঞান, প্রজ্ঞা, দয়া ও করুণা ঝরণার স্বচ্ছ পানির ন্যায়। ঝরণার প্রবাহমান পানি যেরূপ পরিষ্কার, সুস্বাদু যার সাথে কর্দমাক্ত ঘোলা পানির কোনও তুলনাই চলে না। ঠিক সেরূপ আল্লাহ্‌র সদয় তত্বাবধান, প্রজ্ঞা, করুণা যা মানব জীবনকে ঘিরে থাকে যা মানুষের আধ্যাত্মিক শক্তিকে উজ্জীবিত করতে তুলনাহীন। পৃথিবীর সকল জ্ঞানের ভান্ডার তার তুলনায় ঐ কর্দমাক্ত পানির ন্যায়। কারণ পার্থিব জ্ঞান অনেক সময়েই জীবনকে আলোকিত করার পরিবর্তে তমসাচ্ছন্ন করে ফেলে। পানির অভাবে পৃথিবী যেরূপ জীবন শূন্য হয়ে যাবে ঠিক সেরূপ যে আত্মা আল্লাহ্‌র রহমত বঞ্চিত হবে সে আত্মা শেষ পর্যন্ত মৃত আত্মাতে রূপান্তরিত হবে। এই আয়াতটিতে পার্থিব জীবনের উপমার মাধ্যমে ইহলোককে অতিক্রম করে পারলৌকিক জীবনকে উপলব্ধিতে সাহায্য করেছে। প্রবাহমান পানির স্রোত যেরূপ তার গতিধারার জন্য উৎস হিসেবে ঝরনার উপরে নির্ভরশীল। ঠিক তদ্রূপ হচ্ছে ঐশ্বরিক করুণা ধারা যার প্রবাহ উচ্চ থেকে নিম্নে মানুষের আধ্যাত্মিক জগতের মাঝে।

Exit mobile version