Site icon BnBoi.Com

সূরা ইয়াসিন বাংলা

সূরা ইয়াসিন

সূরা ইয়াসিন

 

আয়াতঃ 036.001

ইয়া-সীন
Ya Sin.

يس
Ya-seen

YUSUFALI: Ya Sin.
PICKTHAL: Ya Sin.
SHAKIR: Ya Seen.
KHALIFA: Y. S. (Yaa Seen)

০১। ইয়া – সীন ৩৯৪৩

৩৯৪৩। ‘ইয়া-সীন ‘ বর্ণমালাদ্বয় প্রতীক অর্থে ব্যবহৃত। অনেক তফসীরকার ‘ইয়া ‘ বর্ণমালাটিকে সম্বোধন সূচক কারক হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং ‘সীন’ বর্ণটি দ্বারা মানুষ অর্থে ব্যবহার করেছেন। সে ক্ষেত্রে ‘ইয়া-সীন’ বর্ণমালাদ্বয়ের অর্থ দাড়াবে হে মানুষ ! এখানে মানুষ অর্থ মানব সম্প্রদায়ের নেতাকে বোঝানো হয়েছে। যিনি পৃথিবীর সকল আদম সন্তানদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা মহৎ ব্যক্তিত্বরূপে পরিচিত। তিনি হচ্ছেন আল্লাহ্‌র রাসুল হযরত মুহম্মদ [ সা ]। কারণ এই সূরাটি প্রধানতঃ রাসুল [ সা ] ও তাঁর প্রচারিত শিক্ষা সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু এ কথা স্মরণ রাখতে হবে যে, এই প্রতীক অক্ষরমালার সম্বন্ধে দৃঢ়ভাবে কোনও মতবাদ প্রকাশ করা উচিত নয়। কারণ আল্লাহ্‌-ই জানেন এর প্রকৃত অর্থ। সাধারণতঃ ‘ইয়াসীন ‘ অক্ষরমালাকে রাসুলের উপাধিরূপে ব্যবহার করা হয়।

 

আয়াতঃ 036.002

প্রজ্ঞাময় কোরআনের কসম।
By the Qur’an, full of Wisdom,-

وَالْقُرْآنِ الْحَكِيمِ
Waalqur-ani alhakeemi

YUSUFALI: By the Qur’an, full of Wisdom,-
PICKTHAL: By the wise Qur’an,
SHAKIR: I swear by the Quran full of wisdom
KHALIFA: And the Quran that is full of wisdom.

০২। কুর-আনের শপথ ৩৯৪৪ , যা জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় পরিপূর্ণ।

৩৯৪৪। রাসুলের পরিচয় পত্র সম্বন্ধে এখানে দুটি যুক্তির অবতারণা করা হয়েছে :

১) তিনি যে ঐশ্বরিক প্রত্যাদেশ [ কোরাণ ] প্রাপ্ত হন এবং

২) তিনি যে আত্মত্যাগ ও বীরত্ব পরিপূর্ণ জীবন যাপন [ সরল পথ ] করেন।

রাসুলের জীবনের এই দুটো প্রামাণিক সাক্ষ্যের প্রতি আবেদন করা হয়েছে এই সূরাতে।

 

আয়াতঃ 036.003

নিশ্চয় আপনি প্রেরিত রসূলগণের একজন।
Thou art indeed one of the apostles,

إِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِينَ
Innaka lamina almursaleena

YUSUFALI: Thou art indeed one of the messengers,
PICKTHAL: Lo! thou art of those sent
SHAKIR: Most surely you are one of the messengers
KHALIFA: Most assuredly, you (Rashad) are one of the messengers.

০৩। অবশ্যই তুমি রাসুলদের মধ্যে একজন

০৪। সরল পথে রয়েছ।

০৫। মহাশক্তিমান দয়াময় [আল্লাহ্‌ ] এই প্রত্যাদেশ প্রেরণ করেছেন , – ৩৯৪৫

৩৯৪৫। কোরাণের দুটি বৈশিষ্ট্য এই আয়াতের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে ; যার মাধ্যমে আল্লাহ্‌র ধারণা হৃদয়ে ধারণ করা অনেক সহজ হবে। আধ্যাত্মিক জগতকে উজ্জীবিত করার বিশেষ শক্তি ও ক্ষমতা কোরাণের আছে। কারণ কোরাণ হচেছ আল্লাহ্‌র বাণী। আল্লাহ্‌ শক্তিতে পরাক্রমশালী এবং তাঁর ইচ্ছাকে কার্যকর করতে সক্ষম। দ্বিতীয়ত কোরাণ মানুষের জন্য রহমত স্বরূপ ; কারণ আল্লাহ্‌ তো সর্বাপেক্ষা করুণাময় ও দয়ালু। এ সব বৈশিষ্ট্য প্রমাণ করে যে, কোরাণ আল্লাহ্‌র নিকট থেকে আগত।

 

আয়াতঃ 036.004

সরল পথে প্রতিষ্ঠিত।
On a Straight Way.

عَلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
AAala siratin mustaqeemin

YUSUFALI: On a Straight Way.
PICKTHAL: On a straight path,
SHAKIR: On a right way.
KHALIFA: On a straight path.

০৩। অবশ্যই তুমি রাসুলদের মধ্যে একজন

০৪। সরল পথে রয়েছ।

০৫। মহাশক্তিমান দয়াময় [আল্লাহ্‌ ] এই প্রত্যাদেশ প্রেরণ করেছেন , – ৩৯৪৫

৩৯৪৫। কোরাণের দুটি বৈশিষ্ট্য এই আয়াতের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে ; যার মাধ্যমে আল্লাহ্‌র ধারণা হৃদয়ে ধারণ করা অনেক সহজ হবে। আধ্যাত্মিক জগতকে উজ্জীবিত করার বিশেষ শক্তি ও ক্ষমতা কোরাণের আছে। কারণ কোরাণ হচেছ আল্লাহ্‌র বাণী। আল্লাহ্‌ শক্তিতে পরাক্রমশালী এবং তাঁর ইচ্ছাকে কার্যকর করতে সক্ষম। দ্বিতীয়ত কোরাণ মানুষের জন্য রহমত স্বরূপ ; কারণ আল্লাহ্‌ তো সর্বাপেক্ষা করুণাময় ও দয়ালু। এ সব বৈশিষ্ট্য প্রমাণ করে যে, কোরাণ আল্লাহ্‌র নিকট থেকে আগত।

 

আয়াতঃ 036.005

কোরআন পরাক্রমশালী পরম দয়ালু আল্লাহর তরফ থেকে অবতীর্ণ,
It is a Revelation sent down by (Him), the Exalted in Might, Most Merciful.

تَنزِيلَ الْعَزِيزِ الرَّحِيمِ
Tanzeela alAAazeezi alrraheemi

YUSUFALI: It is a Revelation sent down by (Him), the Exalted in Might, Most Merciful.
PICKTHAL: A revelation of the Mighty, the Merciful,
SHAKIR: A revelation of the Mighty, the Merciful.
KHALIFA: This revelation is from the Almighty, Most Merciful.

০৩। অবশ্যই তুমি রাসুলদের মধ্যে একজন

০৪। সরল পথে রয়েছ।

০৫। মহাশক্তিমান দয়াময় [আল্লাহ্‌ ] এই প্রত্যাদেশ প্রেরণ করেছেন , – ৩৯৪৫

৩৯৪৫। কোরাণের দুটি বৈশিষ্ট্য এই আয়াতের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে ; যার মাধ্যমে আল্লাহ্‌র ধারণা হৃদয়ে ধারণ করা অনেক সহজ হবে। আধ্যাত্মিক জগতকে উজ্জীবিত করার বিশেষ শক্তি ও ক্ষমতা কোরাণের আছে। কারণ কোরাণ হচেছ আল্লাহ্‌র বাণী। আল্লাহ্‌ শক্তিতে পরাক্রমশালী এবং তাঁর ইচ্ছাকে কার্যকর করতে সক্ষম। দ্বিতীয়ত কোরাণ মানুষের জন্য রহমত স্বরূপ ; কারণ আল্লাহ্‌ তো সর্বাপেক্ষা করুণাময় ও দয়ালু। এ সব বৈশিষ্ট্য প্রমাণ করে যে, কোরাণ আল্লাহ্‌র নিকট থেকে আগত।

 

আয়াতঃ 036.006

যাতে আপনি এমন এক জাতিকে সতর্ক করেন, যাদের পূর্ব পুরুষগণকেও সতর্ক করা হয়নি। ফলে তারা গাফেল।
In order that thou mayest admonish a people, whose fathers had received no admonition, and who therefore remain heedless (of the Signs of Allah..

لِتُنذِرَ قَوْمًا مَّا أُنذِرَ آبَاؤُهُمْ فَهُمْ غَافِلُونَ
Litunthira qawman ma onthira abaohum fahum ghafiloona

YUSUFALI: In order that thou mayest admonish a people, whose fathers had received no admonition, and who therefore remain heedless (of the Signs of Allah).
PICKTHAL: That thou mayst warn a folk whose fathers were not warned, so they are heedless.
SHAKIR: That you may warn a people whose fathers were not warned, so they are heedless.
KHALIFA: To warn people whose parents were never warned, and therefore, they are unaware.

০৬। যেনো, তুমি সর্তক করতে পার এমন এক সম্প্রদায়কে যাদের পূর্বপুরুষেরা কোন সর্তকবাণী প্রাপ্ত হয় নাই ৩৯৪৬। সুতারাং [তারা আল্লাহ্‌র নিদর্শন সম্বন্ধে ] মনোযোগ দেয় না।

৩৯৪৬। রাসুলের পূর্বে কোরেশদের মাঝে কোনও নবীর আগমন ঘটে নাই। সুতারাং তাদের মধ্যে থেকে একজনকে আল্লাহ্‌র বাণী প্রচারের জন্য প্রেরণ করা হয়। সারা পৃথিবীর জন্য যে ঐশী বাণী হবে আল্লাহ্‌র রহমত স্বরূপ।

 

আয়াতঃ 036.007

তাদের অধিকাংশের জন্যে শাস্তির বিষয় অবধারিত হয়েছে। সুতরাং তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না।
The Word is proved true against the greater part of them: for they do not believe.

لَقَدْ حَقَّ الْقَوْلُ عَلَى أَكْثَرِهِمْ فَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ
Laqad haqqa alqawlu AAala aktharihim fahum la yu/minoona

YUSUFALI: The Word is proved true against the greater part of them: for they do not believe.
PICKTHAL: Already hath the judgment, (for their infidelity) proved true of most of them, for they believe not.
SHAKIR: Certainly the word has proved true of most of them, so they do not believe.
KHALIFA: It has been predetermined that most of them do not believe.

০৭। তাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে আল্লাহ্‌র [ শাস্তির ] বাণী অবধারিত হয়ে গেছে। সুতারাং তারা ঈমান আনবে না ৩৯৪৭।

৩৯৪৭। দেখুন [ ৭ : ৩০ ] ও টিকা ১০১২ আরও দেখুন [ ১৭ : ১৬ ] এবং টিকা ২১৯৩। অবিশ্বাস আত্মার মাঝে ক্ষতের সৃষ্টি করে। যারা ইচ্ছাকৃত ভাবে অবিশ্বাস করে থাকে অর্থাৎ যারা একগুঁয়ে ও অবাধ্যভাবে আল্লাহ্‌র পথ নির্দ্দেশ সাবধান বাণী উপেক্ষা করে , তাদের উপর থেকে ধীরে ধীরে আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ ও দয়া ফিরিয়ে নেয়া হয়। তারা মানসিক দিক থেকে বিকৃত চিন্তাধারাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। তাদের মানসিক বিকৃতির ফলে , তাদের আত্মশুদ্ধির সকল পথ রুদ্ধ হয়ে যায় – শান্তি হয় বিদূরীত।

 

আয়াতঃ 036.008

আমি তাদের গর্দানে চিবুক পর্যন্ত বেড়ী পরিয়েছি। ফলে তাদের মস্তক উর্দ্ধমুখী হয়ে গেছে।
We have put yokes round their necks right up to their chins, so that their heads are forced up (and they cannot see).

إِنَّا جَعَلْنَا فِي أَعْنَاقِهِمْ أَغْلاَلاً فَهِيَ إِلَى الأَذْقَانِ فَهُم مُّقْمَحُونَ
Inna jaAAalna fee aAAnaqihim aghlalan fahiya ila al-athqani fahum muqmahoona

YUSUFALI: We have put yokes round their necks right up to their chins, so that their heads are forced up (and they cannot see).
PICKTHAL: Lo! We have put on their necks carcans reaching unto the chins, so that they are made stiff-necked.
SHAKIR: Surely We have placed chains on their necks, and these reach up to their chins, so they have their heads raised aloft.
KHALIFA: For we place around their necks shackles, up to their chins. Consequently, they become locked in their disbelief.

০৮। আমি তাদের গলদেশ ঘিরে বেড়ী পরিয়েছি , যা তাদের চিবুক পর্যন্ত পৌঁছিয়েছে। ফলে , তাদের মাথাকে উর্দ্ধমুখী করতে বাধ্য করা হয়েছে [ যেনো তারা দেখতে না পায় ] ৩৯৪৮।

৩৯৪৮। পৃথিবীতে সকল কিছুই আল্লাহ্‌র আইনের অধীন। প্রকৃতির আইনের ন্যায়, নৈতিক আইন সমূহও আল্লাহ্‌র আইনের অধীন। মানুষের ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহ্‌কে এবং আল্লাহ্‌র আইনকে অস্বীকার করার পরিণামসমূহ রূপক অলংকারে মাধ্যমে এই আয়াতে তুলে ধরা হয়েছে।

১) আল্লাহ্‌র প্রেরিত নৈতিক আইন সমূহ অস্বীকার করার অর্থ, আত্মাকে অন্ধকারে নিক্ষিপ্ত করার সামিল। আত্মাকে আল্লাহ্‌র নূর ও আল্লাহ্‌র সান্নিধ্য বঞ্চিত করা। মানুষ ধীরে ধীরে পাপের পঙ্কে নিমগ্ন হয় পাপের দাসত্ব গ্রহণের ফলে তার আত্মার স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হয়। উদাহরণ দিয়ে বক্তব্য সহজ করতে চেষ্টা করবো। যেমন : স্বার্থপরতা পাপ। যারা এ পাপে নিমগ্ন তারা নিজ স্বার্থের বাইরে কোনও সৌন্দর্য্য খুঁজে পায় না। পৃথিবীর বৃহত্তর কর্মযজ্ঞে , সভ্যতার বিকাশের সাথে মানুষের যে ত্যাগ ও তিতিক্ষা জড়িত ,আত্ম সুখের পরিবর্তে আত্মত্যাগে যে সৌন্দর্য্য ও মহত্ব তা তারা উপলব্ধি করতে পারে না। তাদের সকল চিন্তা ভাবনা আত্মসুখের মাঝেই আবর্তিত হতে থাকে। প্রতিটি কর্মেরই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া আছে। ফলাফল বিহীন কোনও কার্য-ই হতে পারে না। প্রতিটি খারাপ কাজেরই প্রতিক্রিয়া বর্তমান – যার প্রভাব পাপীর সমস্ত সত্বাকে আচ্ছন্ন করে রাখে এবং আল্লাহ্‌র নূর আত্মার মাঝে প্রবেশে বাঁধা দান করে থাকে। একেই রূপক অলংকারের মাধ্যমে বলা হয়েছে , ” গলদেশ ঘিরে চিবুক পর্যন্ত বেড়ি পরিয়েছি। ” এই বেরী হচ্ছে পাপের বেড়ী, এটা যদি এতটা প্রশস্ত হয় যে তা চিবুক পর্যন্ত প্রসারিত থাকে এবং শক্তভাবে বেষ্টন করে থাকে, তবে ব্যক্তির নড়াচড়ার স্বাধীনতা ব্যহত হয়। সেরূপ পাপী লোকের চিন্তার স্বাধীনতা থাকে না। তার চিন্তা তার পাপ কার্যকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হতে থাকে। ফলে আত্মার স্বাধীনতা হারায়।

২) প্রশস্ত ও শক্ত বেড়ি যদি গলদেশকে বেষ্টন করে থাকে , তবে মাথা নড়াচড়ার ক্ষমতা থাকে না – ফলে তারা উর্দ্ধমুখী হয়ে থাকে। এই রূপক বর্ণনার মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে, উর্দ্ধমুখী থাকার ফলে এসব ব্যক্তি চারিপার্শ্বের অবস্থা বুঝতে অক্ষম হবে , অর্থাৎ এ সব ব্যক্তির স্বচ্ছ চিন্তা ধারা থেকে বঞ্চিত হবে। তাদের মন মানসিকতা কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে পড়বে – চোখ থাকতেও প্রকৃত জিনিষ দেখতে পাবে না, কান থাকতেও সত্যের বাণী বুঝতে পারবে না। বুদ্ধি থাকতেও বুদ্ধিমত্তার সঠিক প্রয়োগ করতে পারবে না। নৈতিক বিকৃতি তাদের স্বাভাবিক বুদ্ধিকে বিনষ্ট করে দেবে। বুদ্ধি থাকা সত্বেও কোন সৃজনশীল কর্ম করতে তারা অক্ষম হবে। সংস্কৃতে একটি প্রবাদ আছে , “যখন ধ্বংস দ্বারপ্রান্তে আঘাত হানে, স্বাভাবিক অনুধাবন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। ” ল্যাটিন প্রবাদ বলে, ” ঈশ্বর যাকে ধ্বংস করতে চান, তিনি তাদের উম্মত্ত করে দেন।” সংক্ষেপে বলা যায় ,পাপ ও অন্যায় যে শুধুমাত্র বোকামী তাই-ই নয়, তা মানুষের বুদ্ধিভ্রংশ ঘটায়। মানুষের যত বুদ্ধিভ্রংশ ঘটে, তারা আরও পাপের পঙ্কে নিমজ্জিত হয়। এ এক অধার্মিকতাপূর্ণ , অসৎ আবর্তচক্র [Vicious circle] যত তারা অন্যায় ও অধার্মিকতায় আসক্ত হয় , তত তাদের দুরদৃষ্টি , অন্তর্দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে আসে ; জ্ঞান ও প্রজ্ঞার অভাব ঘটে শেষ পর্যন্ত জীবনের সৌন্দর্য্য সংস্কৃতি সুরুচি সব কিছু নষ্ট হয়ে যায়।

৩) এ সব-ই হচ্ছে আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ বঞ্চিত অবস্থার ফল। আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ বঞ্চিত অবস্থায় আত্মিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয় এবং এমন এক অবস্থায় পতিত হয় যে, আত্মার সমৃদ্ধি লাভের শক্তি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। সম্মুখেও অগ্রসর হতে পারে না পূর্বাস্থাতেও ফিরতে পারে না। দেখুন অনুরূপ আয়াত [ ৩ : ১৮০ ] ; [ ১৭ : ১৩ ] এবং [ ৪০ : ৭১ ]। [ ৭৬ : ৪ ও ৫৮৩]

 

আয়াতঃ  036.009

আমি তাদের সামনে ও পিছনে প্রাচীর স্থাপন করেছি, অতঃপর তাদেরকে আবৃত করে দিয়েছি, ফলে তারা দেখে না।
And We have put a bar in front of them and a bar behind them, and further, We have covered them up; so that they cannot see.

وَجَعَلْنَا مِن بَيْنِ أَيْدِيهِمْ سَدًّا وَمِنْ خَلْفِهِمْ سَدًّا فَأَغْشَيْنَاهُمْ فَهُمْ لاَ يُبْصِرُونَ
WajaAAalna min bayni aydeehim saddan wamin khalfihim saddan faaghshaynahum fahum la yubsiroona

YUSUFALI: And We have put a bar in front of them and a bar behind them, and further, We have covered them up; so that they cannot see.
PICKTHAL: And We have set a bar before them and a bar behind them, and (thus) have covered them so that they see not.
SHAKIR: And We have made before them a barrier and a barrier behind them, then We have covered them over so that they do not see.
KHALIFA: And we place a barrier in front of them, and a barrier behind them, and thus, we veil them; they cannot see.

০৯। এবং ওদের সম্মুখে প্রাচীর ও পেছনে প্রাচীর স্থাপন করেছি ৩৯৪৯ ; উপরন্তু তাদের আবৃত করেছি। সুতারাং তারা [সত্যের আলো ] দেখতে পায় না।

৩৯৪৯। কেউ যদি প্রাচীর দ্বারা চতুর্দিক ঘেরা স্থানে অবস্থান করে , তবে সে সামনেও দেখতে পায় না পিছনেও দেখতে পায় না। আত্মা পাপে নিমগ্ন হওয়ার ফলে যখন আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ বঞ্চিত হয় তাদের অবস্থাকে উপরের রূপকের সাহায্যে বর্ণনা করা হয়েছে। এই সব লোকের আত্মিক অবস্থা কারাগারের রূপকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। এদের আত্মিক অগ্রগতি সামনেও যেতে পারে না অথবা পিছনে বা পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে পারে না। এদের আত্মিক বিকাশ সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে যায়। আল্লাহ্‌র নূর এ সব আত্মায় প্রবেশ লাভ বন্ধ হয়ে পড়ে। এদের আত্মিক মুক্তির আর কোনও আশা নাই। আত্মিক বিকাশের শেষ রশ্মিটিও এদের নিকট অস্তমিত।

 

আয়াতঃ 036.010

আপনি তাদেরকে সতর্ক করুন বা না করুন, তাদের পক্ষে দুয়েই সমান; তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না।
The same is it to them whether thou admonish them or thou do not admonish them: they will not believe.

وَسَوَاء عَلَيْهِمْ أَأَنذَرْتَهُمْ أَمْ لَمْ تُنذِرْهُمْ لاَ يُؤْمِنُونَ
Wasawaon AAalayhim aanthartahum am lam tunthirhum la yu/minoona

YUSUFALI: The same is it to them whether thou admonish them or thou do not admonish them: they will not believe.
PICKTHAL: Whether thou warn them or thou warn them not, it is alike for them, for they believe not.
SHAKIR: And it is alike to them whether you warn them or warn them not: they do not believe.
KHALIFA: It is the same whether you warn them or not, they cannot believe.

১০। তাদের তুমি সর্তক কর বা না কর ওদের পক্ষে উভয়েই সমান ৩৯৫০। তারা বিশ্বাস করবে না।

৩৯৫০। যখন মানুষের আত্মিক অবস্থা উপরের অবস্থা প্রাপ্ত হয় , তাদের নিকট আধ্যাত্মিক জগতকে অর্থহীন মনে হবে। আল্লাহ্‌র প্রত্যাদেশ তাদের নিকট কোনও গুরুত্বই বহন করবে না। তারা কোনওরূপ আধ্যাত্মিক শিক্ষা গ্রহণে অক্ষম। এদের সম্বন্ধেই সূরা বাকারাতে বলা হয়েছে এরা অন্ধ ও বধির। এদের হৃদয়ে সীলমোহর করে দেয়া হয়েছে। [২ : ৭ ]। কারণ এদের অন্তর ব্যধিগ্রস্থ [ ২ : ১০ ]। এদের নিকট আল্লাহ্‌র বাণী প্রচার করা বা না করার মধ্যে কোনও পার্থক্য নাই।

 

আয়াতঃ 036.011

আপনি কেবল তাদেরকেই সতর্ক করতে পারেন, যারা উপদেশ অনুসরণ করে এবং দয়াময় আল্লাহকে না দেখে ভয় করে। অতএব আপনি তাদেরকে সুসংবাদ দিয়ে দিন ক্ষমা ও সম্মানজনক পুরস্কারের।
Thou canst but admonish such a one as follows the Message and fears the (Lord) Most Gracious, unseen: give such a one, therefore, good tidings, of Forgiveness and a Reward most generous.

إِنَّمَا تُنذِرُ مَنِ اتَّبَعَ الذِّكْرَ وَخَشِيَ الرَّحْمَن بِالْغَيْبِ فَبَشِّرْهُ بِمَغْفِرَةٍ وَأَجْرٍ كَرِيمٍ
Innama tunthiru mani ittabaAAa alththikra wakhashiya alrrahmana bialghaybi fabashshirhu bimaghfiratin waajrin kareemin

YUSUFALI: Thou canst but admonish such a one as follows the Message and fears the (Lord) Most Gracious, unseen: give such a one, therefore, good tidings, of Forgiveness and a Reward most generous.
PICKTHAL: Thou warnest only him who followeth the Reminder and feareth the Beneficent in secret. To him bear tidings of forgiveness and a rich reward.
SHAKIR: You can only warn him who follows the reminder and fears the Beneficent Allah in secret; so announce to him forgiveness and an honorable reward.
KHALIFA: You will be heeded only by those who uphold this message, and reverence the Most Gracious – even when alone in their privacy. Give them good news of forgiveness and a generous recompense.

১১। তুমি কেবল তাদেরকেই সর্তক করতে পারবে ৩৯৫১ যে উপদেশ মেনে চলে, এবং না দেখেও পরম করুণাময় [ প্রভুকে ] ভয় করে ৩৯৫২। সুতারাং এরূপ ব্যক্তিদের ক্ষমা এবং উদার পুরষ্কারের সুসংবাদ দাও ৩৯৫৩।

৩৯৫১। দেখুন [ ৩৫ : ১৮ ] আয়াত। যারা ইচ্ছাকৃত ভাবে আল্লাহকে অস্বীকার করে , এবং একগুঁয়ে অবাধ্যভাবে পাপের নিকট নিজেকে সোপার্দ্দ করে , তাদের নিকট রসুলের ধর্মোপদেশ এবং আল্লাহ্‌র প্রত্যাদেশ মূল্যহীন। আল্লাহ্‌র বাণীর কোনও আবেদনই তাদের নিকট পৌঁছাবে না কারণ , তারা ইচ্ছাকৃত ভাবে নিজেকে বিরত রাখে। কিন্তু আর এক শ্রেণীর লোক আছেন যারা আল্লাহ্‌র প্রত্যাদেশ শোনার জন্য ও অনুসরণ করার জন্য ব্যকুল ও ব্যগ্র এবং আল্লাহ্‌র অনুগ্রহের আশায় ক্ষমা ভিক্ষা করেন। এরা আল্লাহ্‌র দেয়া নৈতিক আইন ভঙ্গ করেন না, কারণ তারা আল্লাহকে ভালোবাসে , ভয় করে। তাদের এই ভয় ও ভালোবাসা শুধুমাত্র বাহ্যিক নয়, তা তাদের অন্তরের মাঝে দৃঢ়ভাবে প্রোথিত। আল্লাহকে না দেখেও তারা আল্লাহ্‌র উপস্থিতি এমন ভাবে তাদের অন্তরের মাঝে অনুভব করে , যেনো আল্লাহ্‌ তাদের সম্মুখে উপস্থিত। তারা আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছেন। ধর্ম তাদের নিকট বাস্তব সত্য, তা শুধুমাত্র মানুষকে দেখানোর জন্য ভান মাত্র নয়।

৩৯৫২। দেখুন টিকা ৩৯০২ ও আয়াত [ ৩৫ : ১৮ ]। ” না দেখে ” অর্থাৎ মোমেন বান্দারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে। যারা অবিশ্বাসী , তাদের নিকট মূর্ত ধারণাই সর্বাপেক্ষা বিশ্বাসযোগ্য। কিন্তু আধ্যাত্মিক জগতের ধারণা কোনও মূর্ত বিষয়বস্তু নয়। মোমেন বান্দার নিকট আল্লাহ্‌র উপস্থিতির ধারণা চোখে দেখার উপরে নির্ভরশীল নয়, কারণ তাদের অন্তরে আধ্যাত্মিক জগতের ধারণা মূর্ত জগতের ন্যায় বাস্তব সত্য। কেউ তাতে বিশ্বাস করুক বা না করুক মোমেন বান্দাদের তাতে কিছু যায় আসে না, কারণ তাদের বিশ্বাসের মূল ভিত্তি আল্লাহ্‌র প্রতি ভালোবাসার উপরে প্রতিষ্ঠিত।

৩৯৫৩। এ সব মোমেন বান্দাদের জন্য আল্লাহ্‌ ক্ষমা ও মহাপুরষ্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁদের অতীতের সকল পাপের ক্ষমার সুসংবাদ ও ভবিষ্যতের জন্য মহাপুরষ্কার আল্লাহ্‌র কাছে রক্ষিত। আল্লাহ্‌র পুরষ্কার প্রাপ্যকে ছাড়িয়ে বহুগুণ হবে, কারণ তাঁর অনুগ্রহ সীমাহীন।

 

আয়াতঃ 036.012

আমিই মৃতদেরকে জীবিত করি এবং তাদের কর্ম ও কীর্তিসমূহ লিপিবদ্ধ করি। আমি প্রত্যেক বস্তু স্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষিত রেখেছি।
Verily We shall give life to the dead, and We record that which they send before and that which they leave behind, and of all things have We taken account in a clear Book (of evidence).

إِنَّا نَحْنُ نُحْيِي الْمَوْتَى وَنَكْتُبُ مَا قَدَّمُوا وَآثَارَهُمْ وَكُلَّ شَيْءٍ أحْصَيْنَاهُ فِي إِمَامٍ مُبِينٍ
Inna nahnu nuhyee almawta wanaktubu ma qaddamoo waatharahum wakulla shay-in ahsaynahu fee imamin mubeenin

YUSUFALI: Verily We shall give life to the dead, and We record that which they send before and that which they leave behind, and of all things have We taken account in a clear Book (of evidence).
PICKTHAL: Lo! We it is Who bring the dead to life. We record that which they send before (them, and their footprints. And all things We have kept in a clear Register.
SHAKIR: Surely We give life to the dead, and We write down what they have sent before and their footprints, and We have recorded everything in a clear writing.
KHALIFA: We will certainly revive the dead, and we have recorded everything they have done in this life, as well as the consequences that continue after their death. Everything we have counted in a profound record.

১২। অবশ্যই আমি মৃতকে জীবন দান করবো ৩৯৫৪ , এবং লোকে যা [ যে কাজ ] অগ্রে প্রেরণ করে ও যা [যে কাজের প্রভাবগুলি ] পিছনে রেখে যায় সব নথিভুক্ত করি ৩৯৫৫। এবং আমি তো প্রতিটি জিনিষ সুস্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষিত রেখেছি ৩৯৫৬।

৩৯৫৪। পাপীকে শাস্তি ও পূণ্যাত্মাকে পুরষ্কার দান করা সম্ভব হবে এই কারণে যে, মৃত্যুর পরেও সকলকেই পুণরুজ্জীবিত করা হবে। পরলোকে কারও কোনও ক্ষমতা থাকবে না। সেখানে সকল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হবেন সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌। সেদিন পাপীরা চাইলেও আল্লাহ্‌র শাস্তিকে প্রতিহত করতে পারবে না ,কারণ তাদের পৃথিবীতে যে সময় , অবসর , ও শক্তি দান করা হয়েছিলো তার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে।

৩৯৫৫। ভালো বা মন্দ আমাদের সকল কাজ মহান আল্লাহ্‌র দরবারে তৎক্ষণাত নীত হয় – আমাদের তার সমীপে পৌঁছানোর বহু পূর্বে। দেখুন টিকা নং ৩৯২৯। প্রতিটি মানুষের প্রতিটি কর্মের বিবরণ আল্লাহ্‌র নিকট সংরক্ষিত থাকে। ভালো বা মন্দ কর্ম দুনিয়াতেই শেষ হয়ে যায় না , সৎকর্ম বেহেশতের কুসুমাস্তীর্ণ উদ্যানে পরিণত হবে, এবং অসৎকর্ম জাহান্নামের অঙ্গারে পরিণত হবে। তাদের সম্পাদিত কর্মের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়াও সংরক্ষিত হবে। অর্থাৎ মৃত্যুর পরেও কোনও ব্যক্তির সৎকর্মের ক্রিয়া -প্রতিক্রিয়া যতদূর পৌঁছাবে এবং যতদিন পর্যন্ত পৌঁছাতে থাকবে , সবই তার আমলনামায় লিখিত হতে থাকবে। যেমন কেউ যদি হাসপাতাল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে যায়, তবে যতদিন এই সব প্রতিষ্ঠান থেকে মানুষ সেবা লাভ করবে, ততদিন ঐ ব্যক্তির আমলনামায় তা লিপিবদ্ধ হতে থাকবে। অনুরূপ ভাবে কোন রকম মন্দ কর্ম যার মন্দ ফলাফল ও প্রতিক্রিয়া তার মৃত্যুর পরও পৃথিবীতে থেকে যায়, এবং যে পর্যন্ত থাকবে , ততদিন তার আমলনামায় সে সব লিখিত হতে থাকবে। এভাবেই “যা তারা পিছনে রেখে যায় ” সবই ব্যক্তির আমলনামায় সংরক্ষিত হতে থাকে। সুতারাং আমাদের আধ্যাত্মিক দায়িত্ব শুধুমাত্র পৃথিবীর জীবনের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়- তা পার্থিব জীবনকে অতিক্রম করে পারলৌকিক জীবন পর্যন্ত প্রবাহমান।

৩৯৫৬। দেখুন আয়াত [ ২ : ১২৪ ] এবং টিকা ১২৪। আমাদের কর্মের প্রতিটি হিসাব সুস্পষ্ট ও নির্ভুলভাবে আমাদের আমলনামায় সংরক্ষিত হবে।

 

আয়াতঃ 036.013

আপনি তাদের কাছে সে জনপদের অধিবাসীদের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করুন, যখন সেখানে রসূল আগমন করেছিলেন।
Set forth to them, by way of a parable, the (story of) the Companions of the City. Behold!, there came apostles to it.

وَاضْرِبْ لَهُم مَّثَلاً أَصْحَابَ الْقَرْيَةِ إِذْ جَاءهَا الْمُرْسَلُونَ
Waidrib lahum mathalan as-haba alqaryati ith jaaha almursaloona

YUSUFALI: Set forth to them, by way of a parable, the (story of) the Companions of the City. Behold!, there came messengers to it.
PICKTHAL: Coin for them a similitude: The people of the city when those sent (from Allah) came unto them;
SHAKIR: And set out to them an example of the people of the town, when the messengers came to it.
KHALIFA: Cite for them the example of people in a community that received the messengers.

রুকু – ২

১৩। ওদের নিকট জনপদের অধিবাসীদের দৃষ্টান্ত বর্ণনা কর ৩৯৫৭। দেখো ,তাদের নিকট রাসুলগণ এসেছিলো।

৩৯৫৭। অনেক প্রধান তফসীরকারগণ মনে করেন যে, এখানে যে জনপদের উল্লেখ আছে, সে শহরটির নাম আন্টিওক [Antioch]। সিরিয়ার উত্তরে অবস্থিত এই শহরটি খৃষ্টীয় প্রথম শতাব্দীতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। এটি একটি গ্রীক নগরী ছিলো যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সেলুকাস নিকাটর [Seleucus Nicator] যাকে সম্রাট আলেকজান্ডারের উত্তরাধিকারী রূপে বর্ণনা করা হয়। তিনি তাঁর পিতা এন্টিওকাস [Antiichus] এর স্মৃতি হিসেবে খৃষ্টপূর্ব ৩০০ শতাব্দীতে শহরটি স্থাপন করেন। শহরটি সমুদ্রের নিকটে অবস্থিত এবং এর একটি সামুদ্রিক বন্দর আছে যার নাম সেলুসিয়া [Seleucia]।এখানে খৃষ্টের শিষ্যরা খৃষ্টান ধর্ম প্রচার করেন। পরবর্তীতে এই স্থানটি খৃষ্টান বিশপদের গুরুত্বপূর্ণ গীর্জা হিসেবে পরিগণিত হয়। এই আয়াতে রূপক বর্ণনার মাধ্যমে যে শহরের কথা বলা হয়েছে , সে শহরটির অধিবাসীরা আল্লাহ্‌র নবীকে প্রত্যাখান করে এবং নগরীটি ধ্বংস হয়ে যায় [ ৩৬ : ২৯ ]। তবে ইবনে খাতিরকে অনুসরণ করে মাওলানা ইউসুফ আলীও শহরটিকে নিশ্চিতভাবে Antioch বলে সিদ্ধান্ত নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

কোরাণের আয়াতে কোনও নাম বা সময় বা স্থানের উল্লেখ করা হয় নাই। এই জনপদের অবস্থান কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এর নৈতিক শিক্ষা। এই কাহিনীর উপদেশ রূপকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে যা বর্ণনা করা হয়েছে পরবর্তী টিকাতে। কাহিনীর শিক্ষণীয় বিষয় নাম, সময় ও স্থানের উর্দ্ধে।

 

আয়াতঃ 036.014

আমি তাদের নিকট দুজন রসূল প্রেরণ করেছিলাম, অতঃপর ওরা তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল। তখন আমি তাদেরকে শক্তিশালী করলাম তৃতীয় একজনের মাধ্যমে। তারা সবাই বলল, আমরা তোমাদের প্রতি প্রেরিত হয়েছি।
When We (first) sent to them two apostles, they rejected them: But We strengthened them with a third: they said, “Truly, we have been sent on a mission to you.”

إِذْ أَرْسَلْنَا إِلَيْهِمُ اثْنَيْنِ فَكَذَّبُوهُمَا فَعَزَّزْنَا بِثَالِثٍ فَقَالُوا إِنَّا إِلَيْكُم مُّرْسَلُونَ
Ith arsalna ilayhimu ithnayni fakaththaboohuma faAAazzazna bithalithin faqaloo inna ilaykum mursaloona

YUSUFALI: When We (first) sent to them two messengers, they rejected them: But We strengthened them with a third: they said, “Truly, we have been sent on a mission to you.”
PICKTHAL: When We sent unto them twain, and they denied them both, so We reinforced them with a third, and they said: Lo! we have been sent unto you.
SHAKIR: When We sent to them two, they rejected both of them, then We strengthened (them) with a third, so they said: Surely we are messengers to you.
KHALIFA: When we sent to them two (messengers), they disbelieved them. We then supported them by a third. They said, “We are (God’s) messengers to you.”

১৪। যখন আমি তাদের নিকট দুজন রাসুল প্রেরণ করেছিলাম, তারা তাদের প্রত্যাখান করেছিলো। কিন্তু আমি তাদের শক্তিশালী করেছিলাম তৃতীয় একজন দ্বারা ৩৯৫৮। তারা [ তিনজনে ] বলেছিলো , “আমরা সত্যিই তোমাদের নিকট রাসুল হিসেবে এসেছি। ”

৩৯৫৮। সত্য প্রচারের জন্য আল্লাহ্‌ তাঁর একজন বা দুজন নবীকে প্রেরণ করেন। কিন্তু যখন প্রতিপক্ষের বাঁধা অত্যন্ত প্রবল হয়, আল্লাহ্‌ তাদের তৃতীয় জন দ্বারা সাহায্য করেন। যদিও তাদের কর্তব্য হচ্ছে ঐশ্বরিক। কিন্তু তারা নিজেদের অতিমানব বলে দাবী করতেন না। তারা নিজেদের সাধারণ মানুষ হিসেবেই জনসমক্ষে তুলে ধরেন। যারা মন্দ, যারা পাপী, তারা এই ব্যাপারটিকে নিন্দনীয় মনে করতো যে সাধারণ মানুষের নিকট থেকে তারা শিক্ষা গ্রহণ করবে। কিন্তু তারা উপলব্ধি করতে পারতো না যে, আল্লাহ্‌র বাণী সাধারণ মানুষের মাধ্যমে প্রেরণের দ্বারা মানুষকে আল্লাহ্‌ সম্মানিত করেছেন। আল্লাহ্‌র বাণী মানুষের ভাষাতেই প্রকাশ করা হয়, কিন্তু যেহেতু এই বাণী মানুষের সত্যকে প্রকাশ করে, পাপীদের স্বার্থপরতা ও বিভিন্ন ঘৃণ্য আচরণের নিন্দা জ্ঞাপন করে থাকে। সুতারাং তারা এই প্রচারিত সত্যকে ভালো চক্ষে দেখে না। এ সব ক্ষেত্রে দেখা যায়, সমাজে যারা প্রভাবশালী ও সম্পদশালী তারা প্রকৃত সত্যকে গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করে , কারণ তা তাদের ব্যক্তিস্বার্থের বিরুদ্ধে যায়। বিশেষতঃ সমাজে যারা দরিদ্র ও অবহেলিত তারাই সত্যকে গ্রহণে আগ্রহী হয় এবং প্রয়োজনে তারা সত্যের জন্য জীবন দিতেও দ্বিধা বোধ করে না। যারা উদ্ধত , অহংকারী ও অবাধ্য তারা সত্যকে প্রতিহত দ্বারা নিজের ধ্বংস নিজেই ঢেকে আনে।

 

আয়াতঃ 036.015

তারা বলল, তোমরা তো আমাদের মতই মানুষ, রহমান আল্লাহ কিছুই নাযিল করেননি। তোমরা কেবল মিথ্যাই বলে যাচ্ছ।
The (people) said: “Ye are only men like ourselves; and ((Allah)) Most Gracious sends no sort of revelation: ye do nothing but lie.”

قَالُوا مَا أَنتُمْ إِلاَّ بَشَرٌ مِّثْلُنَا وَمَا أَنزَلَ الرَّحْمن مِن شَيْءٍ إِنْ أَنتُمْ إِلاَّ تَكْذِبُونَ
Qaloo ma antum illa basharun mithluna wama anzala alrrahmanu min shay-in in antum illa takthiboona

YUSUFALI: The (people) said: “Ye are only men like ourselves; and (Allah) Most Gracious sends no sort of revelation: ye do nothing but lie.”
PICKTHAL: They said: Ye are but mortals like unto us. The Beneficent hath naught revealed. Ye do but lie!
SHAKIR: They said: You are naught but mortals like ourselves, nor has the Beneficent Allah revealed anything; you only lie.
KHALIFA: They said, “You are no more than human beings like us. The Most Gracious did not send down anything. You are liars.”

১৫। [ সম্প্রদায়ের লোকেরা ] বলেছিলো , ” তোমরা তো আমাদের মতই মানুষ মাত্র ৩৯৫৯। এবং পরম করুণাময় [আল্লাহ্‌ ] কোনরকম প্রত্যাদেশ প্রেরণ করেন নাই ৩৯৬০। তোমরা শুধু মিথ্যা কথাই বলছো।”

৩৯৫৯। মন্দ লোকদের বক্তব্য ছিলো যে, ” তোমরা তো আমাদের মতই রক্ত মাংসের মানুষ , যাদের আমাদের মতই আবেগ অনুভূতি আছে, তবে তোমরা আমাদের থেকে শ্রেষ্ঠ কিসে ? ”

৩৯৬০। তারা শুধু যে তাদের নবীদের শিক্ষাকে প্রত্যাখান করেছিলো তাই-ই নয় , তারা আল্লাহ্‌র প্রত্যাদেশ প্রেরণের সম্ভাবনাকেও তুচ্ছ জ্ঞান করেছিলো। এখানে লক্ষ্যনীয় যে, তাদের আচরণ ছিলো প্রতারণামূলক, অসঙ্গত এবং অপরাধমূলক। কারণ তারা আল্লাহ্‌র প্রত্যাদেশকে প্রত্যাখান করেছিলো । আল্লাহ্‌র নামের পূর্বে “পরম করুণাময়” শব্দটির ব্যবহার বিদ্রূপাত্মক অর্থেই তারা করেছিলো।

 

আয়াতঃ 036.016

রাসূলগণ বলল, আমাদের পরওয়ারদেগার জানেন, আমরা অবশ্যই তোমাদের প্রতি প্রেরিত হয়েছি।
They said: “Our Lord doth know that we have been sent on a mission to you:

قَالُوا رَبُّنَا يَعْلَمُ إِنَّا إِلَيْكُمْ لَمُرْسَلُونَ
Qaloo rabbuna yaAAlamu inna ilaykum lamursaloona

YUSUFALI: They said: “Our Lord doth know that we have been sent on a mission to you:
PICKTHAL: They answered: Our Lord knoweth that we are indeed sent unto you,
SHAKIR: They said: Our Lord knows that we are most surely messengers to you.
KHALIFA: They said, “Our Lord knows that we have been sent to you.

১৬। তারা বলেছিলো , ” আমাদের প্রভু জানেন যে আমরা তোমাদের নিকট বিশেষ কাজে প্রেরিত হয়েছি।” ৩৯৬১

৩৯৬১। তারা আল্লাহ্‌র নবীদের পরিচয় সম্বন্ধে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলো। কিন্তু নবীদের পূর্ণ পরিচয় হচ্ছে তারা যে সত্যকে প্রচার করেন, সে সত্য শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র নিকট থেকেই আগত হতে পারে। এটাই তাদের নবুয়তের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রমাণ। নবীদের বক্তব্য ছিলো , ” জ্ঞানে আল্লাহ্‌ সম্পূর্ণ এবং আমাদের প্রতি অর্পিত দায়িত্ব তাঁর নিকট থেকে প্রাপ্ত। “

 

আয়াতঃ 036.017

পরিস্কারভাবে আল্লাহর বাণী পৌছে দেয়াই আমাদের দায়িত্ব।
“And our duty is only to proclaim the clear Message.”

وَمَا عَلَيْنَا إِلاَّ الْبَلاَغُ الْمُبِينُ
Wama AAalayna illa albalaghu almubeenu

YUSUFALI: “And our duty is only to proclaim the clear Message.”
PICKTHAL: And our duty is but plain conveyance (of the message).
SHAKIR: And nothing devolves on us but a clear deliverance (of the message).
KHALIFA: “Our sole mission is to deliver the message.”

১৭। “এবং আমাদের একমাত্র কর্তব্য হচ্ছে স্পষ্টভাবে প্রচার করা।” ৩৯৬২

৩৯৬২। নবীদ্বয় তাদের প্রতি অর্পিত দায়িত্ব সম্বন্ধে জনগণকে অবহিত করতে সচেষ্ট হন। তারা তাদের সত্য পথে আহ্বানের জন্য প্রমাণ ও যুক্তি দ্বারা দৃঢ় প্রত্যয়ন উৎপাদন করতে প্রয়াস পান। তারা পরিষ্কার ভাষায় আল্লাহ্‌র আইন সমূহ প্রচার করেন – যারা আল্লাহ্‌র আইন ভঙ্গ করে পাপের পথে ধাবিত হচ্ছিল তাদের সঠিক পথে আনায়নের চেষ্টাই তারা করেছিলেন। কিন্তু কেউ যদি সঠিক পথ দেখানোর পরেও তা গ্রহণ না করে অবাধ্য উদ্ধতভাবে তা প্রত্যাখান করতেই থাকে ; তবে তা তাদের নিজেদেরই ক্ষতির কারণ। আল্লাহ্‌র আইনের বিরুদ্ধাচারণ করার ফলে তারা আল্লাহ্‌র বিরুদ্ধে বিদ্রোহী বলে প্রতীয়মান হবে। সুতারাং তাদের জন্য শাস্তি অবধারিত।

 

আয়াতঃ 036.018

তারা বলল, আমরা তোমাদেরকে অশুভ-অকল্যাণকর দেখছি। যদি তোমরা বিরত না হও, তবে অবশ্যই তোমাদেরকে প্রস্তর বর্ষণে হত্যা করব এবং আমাদের পক্ষ থেকে তোমাদেরকে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি স্পর্শ করবে।
The (people) said: “for us, we augur an evil omen from you: if ye desist not, we will certainly stone you. And a grievous punishment indeed will be inflicted on you by us.”

قَالُوا إِنَّا تَطَيَّرْنَا بِكُمْ لَئِن لَّمْ تَنتَهُوا لَنَرْجُمَنَّكُمْ وَلَيَمَسَّنَّكُم مِّنَّا عَذَابٌ أَلِيمٌ
Qaloo inna tatayyarna bikum la-in lam tantahoo lanarjumannakum walayamassannakum minna AAathabun aleemun

YUSUFALI: The (people) said: “for us, we augur an evil omen from you: if ye desist not, we will certainly stone you. And a grievous punishment indeed will be inflicted on you by us.”
PICKTHAL: (The people of the city) said: We augur ill of you. If ye desist not, we shall surely stone you, and grievous torture will befall you at our hands.
SHAKIR: They said: Surely we augur evil from you; if you do not desist, we will certainly stone you, and there shall certainly afflict vou a painful chastisement from us.
KHALIFA: They said, “We consider you bad omens. Unless you refrain, we will surely stone you, or afflict you with painful retribution.”

১৮। [ সম্প্রদায়ের লোকেরা ] বলেছিলো , ” আমরা তোমাদের অবশ্যই অমঙ্গল মনে করি ৩৯৬৩। যদি তোমরা বিরত না হও, তোমাদের অবশ্যই প্রস্তরাঘাত করা হবে। এবং আমাদের পক্ষ থেকে তোমাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেয়া হবে।”

৩৯৬৩। ‘Tair’ পক্ষীকূল। রোমানদের মত আরবেরাও কুসংস্কারচ্ছন্ন ভাবে বিশ্বাস করতো যে অশুভ শক্তি পক্ষীরূপে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পদচারণা করতে পারে। যারা পাপী তারা আল্লাহ্‌র নবীকে অমঙ্গলের কারণ বলে মনে করতো ; কারণ নবী সকল পাপ কার্যকে অবৈধ ঘোষণা করেছিলেন এবং যার ফলে তাদের কায়েমী স্বার্থে আঘাত লাগে। সুতারাং আল্লাহ্‌র নবীকে তারা দুর্ভাগ্যের প্রতীক বলে মনে করতো। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে পাপের ফলশ্রুতি যে পাপীর কর্মফল এই সহজ সত্যটুকু অনুধাবনে তারা ব্যর্থ। দেখুন আয়াত [ ৭ : ১৩১ ] যেখানে বলা হয়েছে মিশরবাসীরা ধারণা করেছিলো যে, হযরত মুসাই তাদের বিপদ-বিপর্যয়ের মূল কারণ। এবং আয়াত [ ২৭ : ৪৭ ] তে বর্ণনা করা হয়েছে , সামুদ জাতি সালেহ্‌ নবীর শিক্ষাকে তাদের দুর্ভাগ্যের কারণ বলে মনে করেছিলো। যুগে যুগে সত্য প্রত্যাখানকারীরা সত্যের আলোকে অবদমিত করতে প্রয়াস পায়, কারণ সত্যের শিক্ষা পাপীদের কায়েমী স্বার্থের বিরুদ্ধে চলে যায় – সেটাকেই তারা তাদের জন্য অমঙ্গলের কারণ মনে করে। কারণ পাপীরা পরলোকের পরিবর্তে ইহকালকে-ই জীবনের সর্বস্ব বলে ধারণা করে।

 

আয়াতঃ 036.019

রসূলগণ বলল, তোমাদের অকল্যাণ তোমাদের সাথেই! এটা কি এজন্যে যে, আমরা তোমাদেরকে সদুপদেশ দিয়েছি? বস্তুতঃ তোমরা সীমা লংঘনকারী সম্প্রদায় বৈ নও।
They said: “Your evil omens are with yourselves: (deem ye this an evil omen). If ye are admonished? Nay, but ye are a people transgressing all bounds!”

قَالُوا طَائِرُكُمْ مَعَكُمْ أَئِن ذُكِّرْتُم بَلْ أَنتُمْ قَوْمٌ مُّسْرِفُونَ
Qaloo ta-irukum maAAakum a-in thukkirtum bal antum qawmun musrifoona

YUSUFALI: They said: “Your evil omens are with yourselves: (deem ye this an evil omen). If ye are admonished? Nay, but ye are a people transgressing all bounds!”
PICKTHAL: They said: Your evil augury be with you! Is it because ye are reminded (of the truth)? Nay, but ye are froward folk!
SHAKIR: They said: Your evil fortune is with you; what! if you are reminded! Nay, you are an extravagant people.
KHALIFA: They said, “Your omen depends on your response, now that you have been reminded. Indeed, you are transgressing people.”

১৯। তারা বলেছিলো, “তোমাদের অমঙ্গল [ পাপ ] তোমাদের সাথেই আছে ৩৯৬৪। যদি তোমাদের সাবধান করা হয় [ তা কি অশুভ মনে কর ] ? বরং বাস্তবিকই তোমরা সকলে সীমালংঘনকারী এক সম্প্রদায় ৩৯৬৫। ”

৩৯৬৪। নবীদ্বয় বলেছিলেন যে, ” তোমাদের অমঙ্গল তোমাদের সাথেই ” অর্থাৎ এ অমঙ্গল তোমাদেরই কুকর্মের ফল। তোমরা কি মনে কর যে, যিনি সত্য পথের সন্ধান দেন এবং সত্যকে প্রচার করেন তিনি তোমাদের জন্য মন্দভাগ্য বা বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারেন ? ধিক্‌ তোমাদের।

৩৯৬৫। আল্লাহ্‌র নবীদ্বয়ের দায়িত্ব ছিলো নিঃস্বার্থ। তাঁরা আল্লাহ্‌র দয়া ও করুণা প্রচার করেছেন ,কিন্তু যারা পাপী ও অন্যায়কারী তারা ভালোকে পাপ আখ্যা দেয় , এবং সত্যকে মিথ্যা বলে অভিযুক্ত করে থাকে। এ প্রবণতা পৃথিবীতে সকল যুগেই সকল সীমালঙ্ঘনকারী ও সৎপথ বিচ্যুতদের মধ্যে বিদ্যামান ছিলো , বর্তমানেও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। সুতারাং সত্যপথের পথিকদের জন্য এ এক বিশ্বজনীন উপদেশ।

 

আয়াতঃ 036.020

অতঃপর শহরের প্রান্তভাগ থেকে এক ব্যক্তি দৌড়ে এল। সে বলল, হে আমার সম্প্রদায় তোমরা রসূলগণের অনুসরণ কর।
Then there came running, from the farthest part of the City, a man, saying, “O my people! Obey the apostles:

وَجَاء مِنْ أَقْصَى الْمَدِينَةِ رَجُلٌ يَسْعَى قَالَ يَا قَوْمِ اتَّبِعُوا الْمُرْسَلِينَ
Wajaa min aqsa almadeenati rajulun yasAAa qala ya qawmi ittabiAAoo almursaleena

YUSUFALI: Then there came running, from the farthest part of the City, a man, saying, “O my people! Obey the messengers:
PICKTHAL: And there came from the uttermost part of the city a man running. He cried: O my people! Follow those who have been sent!
SHAKIR: And from the remote part of the city there came a man running, he said: O my people! follow the messengers;
KHALIFA: A man came from the other end of the city, saying, “O my people, follow the messengers.

২০। তখন শহরের দূরবর্তী প্রান্ত থেকে একজন লোক দৌড়ে এলো ৩৯৬৬ ; এই বলে , ” হে আমার সম্প্রদায় রাসুলদের মান্য কর, –

৩৯৬৬। নগরের ধনী, প্রভাবশালী ও প্রগতিবাদী লোকেরা যখন আল্লাহ্‌র দয়া, করুণা ও সদয় তত্বাবধান সম্বন্ধে সন্দিহান হয়ে পড়ে এবং কুসংস্কারচ্ছন্ন ভাবে নবীদের শিক্ষাকে অশুভ শক্তি হিসেবে পরিগণিত করে , সে সময়ে নগরের শেষ প্রান্তে‌ বসবাসরত এক ব্যক্তি প্রকৃত সত্যকে অনুধাবন করতে সক্ষম হয়। সে নিজে সত্যকে বিশ্বাস করে, এবং নগরের অন্যান্য বাসিন্দাদের সত্য গ্রহণের জন্য অণুপ্রাণীত করে। এই বর্ণনাটি রূপক। যুগে যুগে সত্যের বাণী বা কোনও মহৎ কর্ম প্রথমেই স্বীকৃতি লাভ করে নাই। কায়েমী স্বার্থবাদীদের দ্বারা প্রত্যাখাত হয়েছে প্রথমে। কিন্তু সত্যের বীজের বা মহৎ কর্ম প্রচেষ্টার প্রথম অঙ্কুরোদ্গম ঘটে খুবই নগণ্য ভাবে – ধীরে ধীরে তা বিস্তার লাভ করে এবং একদিন বিশ্বজগত সভায় তা স্বীকৃত লাভ করে বিশ্বকে সত্যের আলোতে উদ্ভাসিত করে তোলে। আমাদের নবী হযরত মুহম্মদের [ সা ] বেলাতেও এই সত্যের ব্যতায় ঘটে নাই। আরবের উদ্ধত অহংকারী কোরেশরা যখন পূণ্যাত্মা নবীকে [ সা ] নির্বাসিত করলো, তাঁর পবিত্র জন্মভূমি থেকে , মক্কার দূরপ্রান্তে অবস্থিত মদিনার লোকেরা তাঁকে স্বাগত জানালো , তাঁর প্রচারিত সত্যতে বিশ্বাস স্থাপন করলো এবং তাঁর প্রচার কার্যে সহযোগীতা করলো। প্রথমে ইসলাম ক্ষুদ্র গোষ্ঠির মাঝে সীমাবদ্ধ ছিলো , পরে তা ধীরে ধীরে মদিনার সীমান্ত অতিক্রম করে যায় – যার ইতিহাস সকলেরই জানা।

 

আয়াতঃ 036.021

অনুসরণ কর তাদের, যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় কামনা করে না, অথচ তারা সুপথ প্রাপ্ত।
“Obey those who ask no reward of you (for themselves), and who have themselves received Guidance.

اتَّبِعُوا مَن لاَّ يَسْأَلُكُمْ أَجْرًا وَهُم مُّهْتَدُونَ
IttabiAAoo man la yas-alukum ajran wahum muhtadoona

YUSUFALI: “Obey those who ask no reward of you (for themselves), and who have themselves received Guidance.
PICKTHAL: Follow those who ask of you no fee, and who are rightly guided.
SHAKIR: Follow him who does not ask you for reward, and they are the followers of the right course;
KHALIFA: “Follow those who do not ask you for any wage, and are guided.

২১। ” যারা সৎপথ প্রাপ্ত ,তাদের অনুসরণ কর, তার পরিবর্তে তারা কোন পুরষ্কার আশা করে না ৩৯৬৭।

৩৯৬৭। সত্য প্রচারের জন্য নবীদ্বয় কোনও সুযোগ সুবিধার দাবী করেন নাই। তাঁরা আল্লাহ্‌র রাস্তায় এবং মানবতার সেবায় নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছিলেন। আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি লাভই ছিলো তাঁদের একমাত্র কামনা ও বাসনা। দেখুন আয়াত [ ১০ : ৭২ ] ; [ ১২ : ১০৪ ] ইত্যাদি।

 

আয়াতঃ 036.022

আমার কি হল যে, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং যার কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে, আমি তাঁর এবাদত করব না?
“It would not be reasonable in me if I did not serve Him Who created me, and to Whom ye shall (all) be brought back.

وَمَا لِي لاَ أَعْبُدُ الَّذِي فَطَرَنِي وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
Wama liya la aAAbudu allathee fataranee wa-ilayhi turjaAAoona

YUSUFALI: “It would not be reasonable in me if I did not serve Him Who created me, and to Whom ye shall (all) be brought back.
PICKTHAL: For what cause should I not serve Him Who hath created me, and unto Whom ye will be brought back?
SHAKIR: And what reason have I that I should not serve Him Who brought me into existence? And to Him you shall be brought back;
KHALIFA: “Why should I not worship the One who initiated me, and to Him is your ultimate return?

ত্রয়োবিংশতিতম পারা

২২। ” আমার জন্য এটা যুক্তিসঙ্গত নয় যে, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, এবং যার নিকট তোমাদের সকলকে প্রত্যাবর্তিত করা হবে , আমি তাঁর এবাদত করবো না ৩৯৬৮।

৩৯৬৮। এই সকল যুক্তির উত্থাপন করা হয়েছে , – ব্যক্তিগত বিশ্বাসের গভীরতা থেকে। দুরপ্রান্তের এই ব্যক্তির বিশ্বাসের গভীরতা এবং আন্তরিকতা ছিলো তীব্র এবং তীক্ষ্ণ। সে তার বিশ্বাসের সত্য শুধুমাত্র নিজের মাঝে সীমাবদ্ধ না রেখে সেই সত্যের প্রতি তাঁর সম্প্রদায়কেও আহ্বান করেছিলো। সত্য গ্রহণের ফলে আধ্যাত্মিক যে শান্তি ও সফলতা সে লাভ করেছিলো তার আস্বাদন তাঁর সম্প্রদায়ের লোকেরাও করুক এই ছিলো তাঁর একমাত্র আকাঙ্খা। এ কারণেই তিনি ঘোষণা করেন যে, ” এটা কি ভাবে সম্ভব যে আমি আমার স্রষ্টা ব্যতীত অন্য কারও এবাদত করবো ? আমি শেষ পর্যন্ত তাঁর কাছেই প্রত্যাবর্তন করবো এবং তোমাদের জন্যও তা সমভাবে প্রযোজ্য। ” আয়াতগুলির বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করুণ যে, কি ভাবে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে সমষ্টিগত মঙ্গলের জন্য প্রয়োগ করার আবেদন করা হয়েছে।

 

আয়াতঃ 036.023

আমি কি তাঁর পরিবর্তে অন্যান্যদেরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করব? করুণাময় যদি আমাকে কষ্টে নিপতিত করতে চান, তবে তাদের সুপারিশ আমার কোনই কাজে আসবে না এবং তারা আমাকে রক্ষাও করতে পারবে না।
“Shall I take (other) gods besides Him? If ((Allah)) Most Gracious should intend some adversity for me, of no use whatever will be their intercession for me, nor can they deliver me.

أَأَتَّخِذُ مِن دُونِهِ آلِهَةً إِن يُرِدْنِ الرَّحْمَن بِضُرٍّ لاَّ تُغْنِ عَنِّي شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا وَلاَ يُنقِذُونِ
Aattakhithu min doonihi alihatan in yuridni alrrahmanu bidurrin la tughni AAannee shafaAAatuhum shay-an wala yunqithooni

YUSUFALI: “Shall I take (other) gods besides Him? If (Allah) Most Gracious should intend some adversity for me, of no use whatever will be their intercession for me, nor can they deliver me.
PICKTHAL: Shall I take (other) gods in place of Him when, if the Beneficent should wish me any harm, their intercession will avail me naught, nor can they save?
SHAKIR: What! shall I take besides Him gods whose intercession, If the Beneficent Allah should desire to afflict me with a harm, shall not avail me aught, nor shall they be able to deliver me?
KHALIFA: “Shall I set up beside Him gods? If the Most Gracious willed any harm for me, their intercession cannot help me one bit, nor can they rescue me.

২৩। ” তাঁকে বাদ দিয়ে আমি কি [ অন্য ] উপাস্য গ্রহণ করতে পারি ? যদি পরম করুণাময় [আল্লাহ্‌ ] আমার কোন দুর্ভাগ্য ঘটাতে চান তাহলে ওদের সুপারিশ আমার কোন কাজে আসবে না এবং উহারা আমাকে উদ্ধারও করতে পারবে না ৩৯৬৯।

৩৯৬৯। এরপরের আয়াতগুলিতে আবেদন করা হয়েছে শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র উদ্দেশ্যে সকল এবাদত নিবেদিত করার জন্য। আল্লাহ্‌র পরিবর্তে অন্য কোনও দেবতা বা উপদেবতার এবাদত বা কাল্পনিক উপাস্য যেমন নিজস্ব কৃতিত্ব বা প্রতিভা বা বীরপূঁজা বা আত্ম অহংকার বা গরিমা বা অন্য যে কোনও রূপেই হোক না কেন মানুষ যখন আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কিছুকে সাফল্য বা কৃতিত্বের জন্য শ্রেষ্ঠত্ব দাবী করে , তখনই তা আল্লাহ্‌র সাথে অংশীদারিত্বের পর্যায়ে পড়ে যায়। সমস্ত ক্ষমতা আল্লাহ্‌র। বিশ্বভূবন তাঁর পরিকল্পনার অংশ। এই বিশাল বিশ্ব ব্রহ্মান্ড সূদূর অতীত থেকে সূদূর ভবিষ্যতের পানে ধেয়ে চলেছে তারই পরিকল্পনার পরিণতি হিসেবে । এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সুখ ও দুঃখ, জাতির উত্থান ও পতন ঘটে থাকে এবং মানব সভ্যতা অগ্রসরমান হয়। যদি তিনি কাউকে দুঃখ কষ্ট দেন, তা দূর করার সাধ্য কি কোনও দেবতা, উপদেবতা বা অন্য কোনও কিছুর আছে ? আল্লাহ্‌র পরিকল্পনা বা ক্ষমতাকে বাঁধা দান করে, এমন ক্ষমতা পৃথিবীতে কোনও কিছুর নাই। তবে কেন মানুষ আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কিছুর এবাদত করবে ? প্রকৃতপক্ষে কেউ যদি তা করে , তবে সে অবশ্যই বিপথগামী।

 

আয়াতঃ 036.024

এরূপ করলে আমি প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হব।
“I would indeed, if I were to do so, be in manifest Error.

إِنِّي إِذًا لَّفِي ضَلاَلٍ مُّبِينٍ
Innee ithan lafee dalalin mubeenin

YUSUFALI: “I would indeed, if I were to do so, be in manifest Error.
PICKTHAL: Then truly I should be in error manifest.
SHAKIR: In that case I shall most surely be in clear error:
KHALIFA: “In that case, I would be totally astray.

২৪। ” যদি আমি এরূপ করি, তবে আমি অবশ্যই স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পড়বো

২৫। ” আমার জন্য, আমি তোমাদের [ সকলের ] প্রভুর উপর ঈমান এনেছি। অতএব, তোমরা আমার কথা শোন।” ৩৯৭০

৩৯৭০। এখানে পুণরায় ব্যক্তিগত বিশ্বাস , এবং এই বিশ্বাসের ভিত্তিতে নিজস্ব উন্নতি ও উপকারের আলোতে সকলের কাছে আবেদন করা হয়েছে। আবেদনটি এরূপ ” আমি আল্লাহ্‌র নিকট আত্মসমর্পনের মাধ্যমে আত্মার মাঝে যে তৃপ্তি , শান্তি ও সুখের সন্ধান পেয়েছি তা অতুলণীয়। আল্লাহ্‌ আমার প্রভু। তিনি তোমাদের ও সমস্ত সৃষ্ট পদার্থের প্রভু। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তোমাদের ও অভিজ্ঞতা হতে পারে। এর পরেও কি তোমরা আমার উপদেশ গ্রহণ করে আধ্যাত্মিক সুখের মাধ্যমে বুঝতে চেষ্টা করবে না যে, আল্লাহ্‌ পরম করুণাময়।”

 

আয়াতঃ 036.025

আমি নিশ্চিতভাবে তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম। অতএব আমার কাছ থেকে শুনে নাও।
“For me, I have faith in the Lord of you (all): listen, then, to me!”

إِنِّي آمَنتُ بِرَبِّكُمْ فَاسْمَعُونِ
Innee amantu birabbikum faismaAAooni

YUSUFALI: “For me, I have faith in the Lord of you (all): listen, then, to me!”
PICKTHAL: Lo! I have believed in your Lord, so hear me!
SHAKIR: Surely I believe in your Lord, therefore hear me.
KHALIFA: “I have believed in your Lord; please listen to me.”

২৪। ” যদি আমি এরূপ করি, তবে আমি অবশ্যই স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পড়বো

২৫। ” আমার জন্য, আমি তোমাদের [ সকলের ] প্রভুর উপর ঈমান এনেছি। অতএব, তোমরা আমার কথা শোন।” ৩৯৭০

৩৯৭০। এখানে পুণরায় ব্যক্তিগত বিশ্বাস , এবং এই বিশ্বাসের ভিত্তিতে নিজস্ব উন্নতি ও উপকারের আলোতে সকলের কাছে আবেদন করা হয়েছে। আবেদনটি এরূপ ” আমি আল্লাহ্‌র নিকট আত্মসমর্পনের মাধ্যমে আত্মার মাঝে যে তৃপ্তি , শান্তি ও সুখের সন্ধান পেয়েছি তা অতুলণীয়। আল্লাহ্‌ আমার প্রভু। তিনি তোমাদের ও সমস্ত সৃষ্ট পদার্থের প্রভু। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তোমাদের ও অভিজ্ঞতা হতে পারে। এর পরেও কি তোমরা আমার উপদেশ গ্রহণ করে আধ্যাত্মিক সুখের মাধ্যমে বুঝতে চেষ্টা করবে না যে, আল্লাহ্‌ পরম করুণাময়।”

 

আয়াতঃ 036.026

তাকে বলা হল, জান্নাতে প্রবেশ কর। সে বলল হায়, আমার সম্প্রদায় যদি কোন ক্রমে জানতে পারত-
It was said: “Enter thou the Garden.” He said: “Ah me! Would that my People knew (what I know)!-

قِيلَ ادْخُلِ الْجَنَّةَ قَالَ يَا لَيْتَ قَوْمِي يَعْلَمُونَ
Qeela odkhuli aljannata qala ya layta qawmee yaAAlamoona

YUSUFALI: It was said: “Enter thou the Garden.” He said: “Ah me! Would that my People knew (what I know)!-
PICKTHAL: It was said (unto him): Enter paradise. He said: Would that my people knew
SHAKIR: It was said: Enter the garden. He said: O would that my people had known
KHALIFA: (At the time of his death) he was told, “Enter Paradise.” He said, “Oh, I wish my people knew.

২৬। বলা হলো, ” বেহেশতে প্রবেশ কর।” ৩৯৭১। সে বলেছিলো , ” হায় ! [ আমি যা জানি ] আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা যদি তা জানতে পারতো , –

৩৯৭১। সম্ভবতঃ আল্লাহ্‌র নবীকে সমর্থন করায় বিধর্মীরা তাঁকে হত্যা করে এবং তিনি শাহাদাৎ বরণ করেন। পূণ্যাত্মা ব্যক্তিটির জন্য বেহেশত নির্ধারিত ছিলো। বেহেশতে প্রবেশ কালেও তাঁর চিন্তাধারা জনগণের কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্য প্রবাহিত ছিলো। তাঁর সম্প্রদায়ের অবাধ্যতা, একগুয়েমী এবং অনুধাবন না করার জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। এবং মৃত্যুর পরেও তিনি ইচ্ছা প্রকাশ করেন যে তারা যেনো অনুতাপের মাধ্যমে সঠিক পথের সন্ধান লাভ করে এবং আধ্যাত্মিক মুক্তির সন্ধান পায়। কিন্তু তাদের আত্মা কঠিন হয়ে পড়েছিলো , সুতারাং তারা সঠিকপথে আসে নাই , যার পরিণাম বর্ণনা করা হয়েছে আয়াতে [ ২ ৮ – ২৯ ]।

 

আয়াতঃ 036.027

যে আমার পরওয়ারদেগার আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং আমাকে সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
“For that my Lord has granted me Forgiveness and has enrolled me among those held in honour!”

بِمَا غَفَرَ لِي رَبِّي وَجَعَلَنِي مِنَ الْمُكْرَمِينَ
Bima ghafara lee rabbee wajaAAalanee mina almukrameena

YUSUFALI: “For that my Lord has granted me Forgiveness and has enrolled me among those held in honour!”
PICKTHAL: With what (munificence) my Lord hath pardoned me and made me of the honoured ones!
SHAKIR: Of that on account of which my Lord has forgiven me and made me of the honored ones!
KHALIFA: “That my Lord has forgiven me, and made me honorable.”

২৭। ” যে আমার প্রভু আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং সম্মানিতদের মাঝে আমাকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন ৩৯৭২।”

৩৯৭২। উপরের বর্ণিত ব্যক্তিটি ছিলেন সৎ, পূত ও পবিত্র আত্মা , যার ফলে আল্লাহ্‌র নবীর সত্যের আহ্বান তিনি অনুধাবনে সক্ষম হন, এবং সত্যের আলো তাঁর পবিত্র আত্মায় প্রবেশ করে। তিনি তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে তাঁর সম্প্রদায়ের জনগণের আধ্যাত্মিক মুক্তির জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। কারণ তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে ভালোবাসতেন এবং পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্যকে শ্রদ্ধা করতেন , যদি তা মঙ্গলজনক হতো। কিন্তু তাঁর এই ভালোবাসা বা শ্রদ্ধা তাকে সত্যের আলো গ্রহণে বাধাস্বরূপ হয় নাই। যখন সত্যের আগমন ঘটলো তিনি তা গ্রহণ করেন, আল্লাহ্‌র নিকট আত্মসমর্পন করেন। ফলে আল্লাহ্‌ তাঁর পূর্বের সমস্ত পাপকে মার্জনা করে দেন এবং তাঁকে সম্মানিত করে বেহেশতে প্রবেশ করান।

উপদেশ : আত্মসংশোধনের মাধ্যমে যে কোনও মূহুর্তে আল্লাহ্‌র প্রদর্শিত রাস্তায় ফিরে যাওয়া যায়। আল্লাহ্‌র রাস্তা পাপী পূণ্যাত্মা সকলের জন্য অবারিত উম্মুক্ত।

 

আয়াতঃ 036.028

তারপর আমি তার সম্প্রদায়ের উপর আকাশ থেকে কোন বাহিনী অবতীর্ণ করিনি এবং আমি (বাহিনী) অবতরণকারীও না।
And We sent not down against his People, after him, any hosts from heaven, nor was it needful for Us so to do.

وَمَا أَنزَلْنَا عَلَى قَوْمِهِ مِن بَعْدِهِ مِنْ جُندٍ مِّنَ السَّمَاء وَمَا كُنَّا مُنزِلِينَ
Wama anzalna AAala qawmihi min baAAdihi min jundin mina alssama-i wama kunna munzileena

YUSUFALI: And We sent not down against his People, after him, any hosts from heaven, nor was it needful for Us so to do.
PICKTHAL: We sent not down against his people after him a host from heaven, nor do We ever send.
SHAKIR: And We did not send down upon his people after him any hosts from heaven, nor do We ever send down.
KHALIFA: We did not send down upon his people, after him, soldiers from the sky; we did not need to send them down.

২৮। এবং আমি তার মৃত্যুর পরে তার সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আকাশ থেকে কোন বাহিনী প্রেরণ করি নাই এবং আমার জন্য তা করার প্রয়োজনও ছিলো না।

২৯। উহা ছিলো একটি মাত্র শক্তিশালী বিস্ফোরণ ৩৯৭৩ এবং দেখো ! তারা [ ছাই এর ন্যায় ] নির্বাপিত ও নিস্তব্ধ হয়ে গেলো ৩৯৭৪।

৩৯৭৩। আল্লাহ্‌র বিচার ও শাস্তি কোনও জাঁকজমক বা ঘটা করে ঘটে না। সমস্ত বিশ্ব প্রকৃতি-ই আল্লাহ্‌র দাস। প্রকৃতির মাঝেই সেই সর্বশক্তিমানের ক্ষমতা লুক্কায়িত আছে। আমরা জানি কয়েক সেকেন্ডের প্রচন্ড ভূমিকম্প বা টর্নেডো বা জলোচ্ছ্বাস এক মূহুর্তে এক জনপদকে ধ্বংস করতে সক্ষম। বিষ্ফোরণ অর্থাৎ বিকট শব্দ এই সম্প্রদায়কে ধ্বংসের জন্য কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে আল্লাহ্‌ প্রেরণ করেছিলেন যাকে বিস্ফোরণ বলা হয়েছে। দেখুন [ ১১ : ৬৭ ] আয়াত ও টিকা ১৫৬১ [ যেখানে সামুদ জাতির জন্য সম্বন্ধে বলা হয়েছে ] এবং আয়াত [ ২৯ : ৪ ০ ] ও টিকা ৩৪৬৩।

৩৯৭৪। দেখুন আয়াত [ ২১ : ১৫ ]। তাদের জীবন জীবনের কোলাহলে মূখর ছিলো। কিন্তু কয়েক মূহুর্তের মধ্যেই তা স্তব্ধ হয়ে গেলো প্রাণহীন ও বিবর্ণ। ঠিক যেনো মূল্যহীন ছাই।

 

আয়াতঃ 036.029

বস্তুতঃ এ ছিল এক মহানাদ। অতঃপর সঙ্গে সঙ্গে সবাই স্তদ্ধ হয়ে গেল।
It was no more than a single mighty Blast, and behold! they were (like ashes) quenched and silent.

إِن كَانَتْ إِلاَّ صَيْحَةً وَاحِدَةً فَإِذَا هُمْ خَامِدُونَ
In kanat illa sayhatan wahidatan fa-itha hum khamidoona

YUSUFALI: It was no more than a single mighty Blast, and behold! they were (like ashes) quenched and silent.
PICKTHAL: It was but one Shout, and lo! they were extinct.
SHAKIR: It was naught but a single cry, and lo! they were still.
KHALIFA: All it took was one blow, whereupon they were stilled.

২৮। এবং আমি তার মৃত্যুর পরে তার সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আকাশ থেকে কোন বাহিনী প্রেরণ করি নাই এবং আমার জন্য তা করার প্রয়োজনও ছিলো না।

২৯। উহা ছিলো একটি মাত্র শক্তিশালী বিস্ফোরণ ৩৯৭৩ এবং দেখো ! তারা [ ছাই এর ন্যায় ] নির্বাপিত ও নিস্তব্ধ হয়ে গেলো ৩৯৭৪।

৩৯৭৩। আল্লাহ্‌র বিচার ও শাস্তি কোনও জাঁকজমক বা ঘটা করে ঘটে না। সমস্ত বিশ্ব প্রকৃতি-ই আল্লাহ্‌র দাস। প্রকৃতির মাঝেই সেই সর্বশক্তিমানের ক্ষমতা লুক্কায়িত আছে। আমরা জানি কয়েক সেকেন্ডের প্রচন্ড ভূমিকম্প বা টর্নেডো বা জলোচ্ছ্বাস এক মূহুর্তে এক জনপদকে ধ্বংস করতে সক্ষম। বিষ্ফোরণ অর্থাৎ বিকট শব্দ এই সম্প্রদায়কে ধ্বংসের জন্য কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে আল্লাহ্‌ প্রেরণ করেছিলেন যাকে বিস্ফোরণ বলা হয়েছে। দেখুন [ ১১ : ৬৭ ] আয়াত ও টিকা ১৫৬১ [ যেখানে সামুদ জাতির জন্য সম্বন্ধে বলা হয়েছে ] এবং আয়াত [ ২৯ : ৪ ০ ] ও টিকা ৩৪৬৩।

৩৯৭৪। দেখুন আয়াত [ ২১ : ১৫ ]। তাদের জীবন জীবনের কোলাহলে মূখর ছিলো। কিন্তু কয়েক মূহুর্তের মধ্যেই তা স্তব্ধ হয়ে গেলো প্রাণহীন ও বিবর্ণ। ঠিক যেনো মূল্যহীন ছাই।

 

আয়াতঃ 036.030

বান্দাদের জন্যে আক্ষেপ যে, তাদের কাছে এমন কোন রসূলই আগমন করেনি যাদের প্রতি তারা বিদ্রুপ করে না।
Ah! Alas for (My) Servants! There comes not an apostle to them but they mock him!

يَا حَسْرَةً عَلَى الْعِبَادِ مَا يَأْتِيهِم مِّن رَّسُولٍ إِلاَّ كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِؤُون
Ya hasratan AAala alAAibadi ma ya/teehim min rasoolin illa kanoo bihi yastahzi-oona

YUSUFALI: Ah! Alas for (My) Servants! There comes not a messenger to them but they mock him!
PICKTHAL: Ah, the anguish for the bondmen! Never came there unto them a messenger but they did mock him!
SHAKIR: Alas for the servants! there comes not to them an messenger but they mock at him.
KHALIFA: How sorry is the people’s condition! Every time a messenger went to them, they always ridiculed him.

৩০। হায় ! [ আমার ] বান্দাদের জন্য আফসোস্‌ ! উহাদের নিকট যখনই কোন রাসুল এসেছে , তখনই তারা তাকে ঠাট্টা – বিদ্রূপ করেছে ৩৯৭৫।

৩৯৭৫। দেখুন [ ৬ : ১০ ] এবং আরও অনেক আয়াতে এই কথা বলা হয়েছে। যারা অজ্ঞ, তারাই আল্লাহ্‌র বাণীকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে না। তাদের এই চপলতা তাদেরই ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পৃথিবীতে তাদের অস্তিত্ব হয়ে পড়ে বিপন্ন। পৃথিবীর ইতিহাস এই সাক্ষ্য দেয়। পৃথিবীতে বহু জাতির উত্থান ঘটেছে যখন তারা আল্লাহ্‌ প্রদর্শিত ন্যায় ও সত্যের পথে পরিচালিত হয়েছে, কিন্তু যখনই তারা আল্লাহ্‌ প্রদর্শিত পথ থেকে অপসৃয়মান হয়েছে তখনই বজ্রনাদে তাদের ধ্বংস ঘটেছে। সত্যকে যারা আন্তরিক ও গুরুত্বপূর্ণ ভাবে জীবনে গ্রহণ করে না তখনই তাদের অস্তিত্ব বিনাশের সম্মুখীন হয় – সেটা ব্যক্তিগত হতে পারে বা জাতিগত হতে পারে।

“বান্দাদিগের ” শব্দটি দ্বারা মানব জাতিকে বোঝানো হয়েছে।

 

আয়াতঃ 036.031

তারা কি প্রত্যক্ষ করে না, তাদের পূর্বে আমি কত সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছি যে, তারা তাদের মধ্যে আর ফিরে আসবে না।
See they not how many generations before them we destroyed? Not to them will they return:

أَلَمْ يَرَوْا كَمْ أَهْلَكْنَا قَبْلَهُم مِّنْ الْقُرُونِ أَنَّهُمْ إِلَيْهِمْ لاَ يَرْجِعُونَ
Alam yaraw kam ahlakna qablahum mina alqurooni annahum ilayhim la yarjiAAoona

YUSUFALI: See they not how many generations before them we destroyed? Not to them will they return:
PICKTHAL: Have they not seen how many generations We destroyed before them, which indeed returned not unto them;
SHAKIR: Do they not consider how many of the generations have We destroyed before them, because they do not turn to them?
KHALIFA: Did they not see how many generations we annihilated before them, and how they never return to them?

৩১। তারা কি দেখে না তাদের পূর্বে আমি কত [মানব] প্রজন্মকে ধ্বংস করেছি ? যারা উহাদের নিকট ফিরে আসবে না ৩৯৭৬।

৩২। কিন্তু তাদের সকলের প্রত্যেককেই আমার সম্মুখে নিয়ে আসা হবে [ বিচারের জন্য ]।

৩৯৭৬। “যারা উহাদের নিকট ফিরে আসবে না।” এখানে “যারা ” এবং “উহাদের ” এই দুটি সর্বনাম ব্যবহার করা হয়েছে। এরা কারা ? বিভিন্ন তফসীরকারগণ এবং অনুবাদক এদের ব্যাখ্যা বিভিন্নভাবে করেছেন। হযরত ইউসুফ আলীর সর্বাপেক্ষা ভালো ব্যাখ্যা হচ্ছে : সাম্প্রতিক মানবগোষ্ঠি যাদের সম্বোধন করা হচ্ছে [তারা কি দেখে না ] তাদের আগমনের পূর্বে পৃথিবীতে যাদের ধ্বংস করা হয়েছে তারা আর উহাদের [ যাদের সম্বোধন করা হয়েছে ] মাঝে ফিরে আসবে না। ‘Qurun’ বা মানবগোষ্ঠি যারা পূর্বে পৃথিবীতে এসেছিলেন এবং পৃথিবীর সুখ ও সম্পদ ভোগ করেছেন। এদের সকলকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। তারা আর পৃথিবীতে ফিরে আসবে না। কিন্তু শেষ বিচারের দিনে সকলকেই মহান আল্লাহ্‌র সম্মুখে হাজির করা হবে কৃতকর্মের হিসাব দাখিলের জন্য।

 

আয়াতঃ 036.032

ওদের সবাইকে সমবেত অবস্থায় আমার দরবারে উপস্থিত হতেই হবে।
But each one of them all – will be brought before Us (for judgment).

وَإِن كُلٌّ لَّمَّا جَمِيعٌ لَّدَيْنَا مُحْضَرُونَ
Wa-in kullun lamma jameeAAun ladayna muhdaroona

YUSUFALI: But each one of them all – will be brought before Us (for judgment).
PICKTHAL: But all, without exception, will be brought before Us.
SHAKIR: And all of them shall surely be brought before Us.
KHALIFA: Every one of them will be summoned before us.

৩১। তারা কি দেখে না তাদের পূর্বে আমি কত [মানব] প্রজন্মকে ধ্বংস করেছি ? যারা উহাদের নিকট ফিরে আসবে না ৩৯৭৬।

৩২। কিন্তু তাদের সকলের প্রত্যেককেই আমার সম্মুখে নিয়ে আসা হবে [ বিচারের জন্য ]।

৩৯৭৬। “যারা উহাদের নিকট ফিরে আসবে না।” এখানে “যারা ” এবং “উহাদের ” এই দুটি সর্বনাম ব্যবহার করা হয়েছে। এরা কারা ? বিভিন্ন তফসীরকারগণ এবং অনুবাদক এদের ব্যাখ্যা বিভিন্নভাবে করেছেন। হযরত ইউসুফ আলীর সর্বাপেক্ষা ভালো ব্যাখ্যা হচ্ছে : সাম্প্রতিক মানবগোষ্ঠি যাদের সম্বোধন করা হচ্ছে [তারা কি দেখে না ] তাদের আগমনের পূর্বে পৃথিবীতে যাদের ধ্বংস করা হয়েছে তারা আর উহাদের [ যাদের সম্বোধন করা হয়েছে ] মাঝে ফিরে আসবে না। ‘Qurun’ বা মানবগোষ্ঠি যারা পূর্বে পৃথিবীতে এসেছিলেন এবং পৃথিবীর সুখ ও সম্পদ ভোগ করেছেন। এদের সকলকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। তারা আর পৃথিবীতে ফিরে আসবে না। কিন্তু শেষ বিচারের দিনে সকলকেই মহান আল্লাহ্‌র সম্মুখে হাজির করা হবে কৃতকর্মের হিসাব দাখিলের জন্য।

 

আয়াতঃ 036.033

তাদের জন্যে একটি নিদর্শন মৃত পৃথিবী। আমি একে সঞ্জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, তারা তা থেকে ভক্ষণ করে।
A Sign for them is the earth that is dead: We do give it life, and produce grain therefrom, of which ye do eat.

وَآيَةٌ لَّهُمُ الْأَرْضُ الْمَيْتَةُ أَحْيَيْنَاهَا وَأَخْرَجْنَا مِنْهَا حَبًّا فَمِنْهُ يَأْكُلُونَ
Waayatun lahumu al-ardu almaytatu ahyaynaha waakhrajna minha habban faminhu ya/kuloona

YUSUFALI: A Sign for them is the earth that is dead: We do give it life, and produce grain therefrom, of which ye do eat.
PICKTHAL: A token unto them is the dead earth. We revive it, and We bring forth from it grain so that they eat thereof;
SHAKIR: And a sign to them is the dead earth: We give life to it and bring forth from it grain SQ they eat of it.
KHALIFA: One sign for them is the dead land: we revive it and produce from it grains for their food.

রুকু – ৩

৩৩। তাদের জন্য এক নিদর্শন হচ্ছে মৃত মৃত্তিকা। আমি তাকে জীবন দান করি, এবং তাতে শষ্য উৎপন্ন করি যা তোমরা আহার কর ৩৯৭৭।

৩৯৭৭। অবিশ্বাসীদের আল্লাহ্‌র ক্ষমতা সম্বন্ধে সন্দেহ থাকতে পারে যে, শেষ বিচারের দিনে তাদের আবার কিভাবে জীবিত করে সমবেত করা সম্ভব ? রূপকের মাধ্যমে এই সত্যকেই এই আয়াতে তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের দৈনন্দিক জীবনের সাধারণ ঘটনাকে রূপক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে আল্লাহ্‌র অসীম ক্ষমতাকে বোঝানোর জন্য। শীতে বৃক্ষরাজি মৃতপ্রায় হয়ে পড়ে ; বিশেষতঃ শীতপ্রধান দেশে বৃক্ষের সকল পাতা ঝরে যেয়ে গাছগুলি ডালপালা মেলে পাতাশূণ্য অবস্থায় যখন দাড়িয়ে থাকে , তাদের তখন মৃতপ্রায় বৃক্ষ মনে হয়। কিন্তু বসন্তের আগমেন সেই মৃতপ্রায় বৃক্ষসমূহ প্রাণের স্পর্শে সঞ্জীবিত হয়ে সবুজ পাতা ও ফুলে ছেয়ে যায়। দেখুন আয়াত [ ২ : ১৬৪ ] ; [ ৩০ : ১৯ ] এবং আরও অনেক আয়াতে। বৃষ্টিপাতের ফলে মৃত মাটি সবুজ রূপ ধারণ করে এবং শষ্য উৎপাদন করে।

 

আয়াতঃ 036.034

আমি তাতে সৃষ্টি করি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান এবং প্রবাহিত করি তাতে নির্ঝরিণী।
And We produce therein orchard with date-palms and vines, and We cause springs to gush forth therein:

وَجَعَلْنَا فِيهَا جَنَّاتٍ مِن نَّخِيلٍ وَأَعْنَابٍ وَفَجَّرْنَا فِيهَا مِنْ الْعُيُونِ
WajaAAalna feeha jannatin min nakheelin waaAAnabin wafajjarna feeha mina alAAuyooni

YUSUFALI: And We produce therein orchard with date-palms and vines, and We cause springs to gush forth therein:
PICKTHAL: And We have placed therein gardens of the date-palm and grapes, and We have caused springs of water to gush forth therein,
SHAKIR: And We make therein gardens of palms and grapevines and We make springs to flow forth in it,
KHALIFA: We grow in it gardens of date palms, and grapes, and we cause springs to gush out therein.

৩৪। এবং আমি সেখানে সৃষ্টি করি খেজুর এবং আঙ্গুরের উদ্যান , এবং সেখান থেকে উৎসারিত করি প্রস্রবন ৩৯৭৮।

৩৯৭৮। ‘খেজুর ‘ ও ‘আঙ্গুর ‘ হচ্ছে সুস্বাদু ফলের প্রতীক স্বরূপ। এই ফলগুলি আরব দেশের বিশেষ ফল, সুতারাং পৃথিবীর সকল সুস্বাদু ফলের প্রতীক হিসেবে এই ফলের নাম বলা হয়েছে। পূর্বের আয়াতে শষ্যের উল্লেখ করা হয়েছে। এই আয়াতে ফলের উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ বলা হয়েছে জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য এবং তৃপ্তি নিবারণের জন্য সুস্বাদু ফল আল্লাহ্‌ উৎপন্ন করেন মাটি থেকে যে মাটিকে মনে হয়েছিলো মৃতপ্রায়। বসন্তের আগমন এবং বৃষ্টি দ্বারা মৃতপ্রায় মাটিকে আল্লাহ্‌ সজীব করেন। এসব উপমা এবং রূপকের মাধ্যমে আল্লাহ্‌র ক্ষমতা , সদয় তত্বাবধান এবং শিল্পী সত্ত্বাকে তুলে ধরা হয়েছে।

 

আয়াতঃ 036.035

যাতে তারা তার ফল খায়। তাদের হাত একে সৃষ্টি করে না। অতঃপর তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না কেন?
That they may enjoy the fruits of this (artistry): It was not their hands that made this: will they not then give thanks?

لِيَأْكُلُوا مِن ثَمَرِهِ وَمَا عَمِلَتْهُ أَيْدِيهِمْ أَفَلَا يَشْكُرُونَ
Liya/kuloo min thamarihi wama AAamilat-hu aydeehim afala yashkuroona

YUSUFALI: That they may enjoy the fruits of this (artistry): It was not their hands that made this: will they not then give thanks?
PICKTHAL: That they may eat of the fruit thereof, and their hands made it not. Will they not, then, give thanks?
SHAKIR: That they may eat of the fruit thereof, and their hands did not make it; will they not then be grateful?
KHALIFA: This is to provide them with fruits, and to let them manufacture with their own hands whatever they need. Would they be thankful?

৩৫। যেনো এই [ সৌন্দর্যের ] ফল তারা ভোগ করতে পারে ৩৯৭৯। অথচ , এসব তাদের হস্ত সৃষ্টি করে নাই , তবুও কি তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না ? ৩৯৮০

৩৯৭৯। উপরে ৩৩ নং আয়াতে এবং এই আয়াতে ভোগ করা অর্থাৎ জীবন ধারণ করা , উপভোগ করা এবং তৃপ্তি লাভ করা বোঝানো হয়েছে। দেখুন আয়াত [ ৭ : ১৯ ] ও টিকা ১০০৪ এবং আয়াত [ ৫ : ৬৯। ও টিকা ৭৭৬।

৩৯৮০। মানুষ ফসল উৎপন্ন করার জন্য জমি চাষ করে, ফসল বোনে , সার ও সেচ ইত্যাদি কর্ম সম্পাদন করে সত্য, কিন্তু বীজের অঙ্কুরোদ্গম , বা ফসলের বৃদ্ধি ও ফুল ও ফলের পরিণতির উপরে মানুষের কোনও হাত নাই। এ সকলই হচ্ছে সেই বিশ্ব স্রষ্টার হাতের কাজ তার জ্ঞান , প্রজ্ঞা ও শিল্প সত্ত্বার প্রকাশ মাত্র। সৃষ্ট জীবের জন্য স্রষ্টার সদয় তত্বাবধান নিহিত আছে প্রকৃতির বিভিন্ন ঘটনার মাঝে।

 

আয়াতঃ 036.036

পবিত্র তিনি যিনি যমীন থেকে উৎপন্ন উদ্ভিদকে, তাদেরই মানুষকে এবং যা তারা জানে না, তার প্রত্যেককে জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন।
Glory to Allah, Who created in pairs all things that the earth produces, as well as their own (human) kind and (other) things of which they have no knowledge.

سُبْحَانَ الَّذِي خَلَقَ الْأَزْوَاجَ كُلَّهَا مِمَّا تُنبِتُ الْأَرْضُ وَمِنْ أَنفُسِهِمْ وَمِمَّا لَا يَعْلَمُونَ
Subhana allathee khalaqa al-azwaja kullaha mimma tunbitu al-ardu wamin anfusihim wamimma la yaAAlamoona

YUSUFALI: Glory to Allah, Who created in pairs all things that the earth produces, as well as their own (human) kind and (other) things of which they have no knowledge.
PICKTHAL: Glory be to Him Who created all the sexual pairs, of that which the earth groweth, and of themselves, and of that which they know not!
SHAKIR: Glory be to Him Who created pairs of all things, of what the earth grows, and of their kind and of what they do not know.
KHALIFA: Glory be to the One who created all kinds of plants from the earth, as well as themselves, and other creations that they do not even know.

৩৬। সব মহিমা আল্লাহ্‌র ! যিনি সকল বস্তুর মধ্যে জোড়া সৃষ্টি করেছেন ৩৯৮১ – যা জমি থেকে উৎপন্ন হয় [তার মধ্যে ] এবং [মানুষের ] নিজেদের মধ্যে এবং [অন্য ] জিনিষের মধ্যে, যে সম্বন্ধে তাদের কোন জ্ঞান নাই।

৩৯৮১। মানুষ, প্রাণী, তরুলতা সকল কিছুরই যৌন জীবন বিদ্যমান। প্রকৃতিতে যৌন জীবন এক রহস্য , যার মূল হচ্ছে বিপরীত লিঙ্গের অবস্থান থেকে। বিপরীত লিঙ্গ বিপরীত শক্তির প্রতীক। আমাদের চেনা জানা পৃথিবীতে সকল কিছু্তেই বিপরীত শক্তি বিদ্যমান আর বিপরীত শক্তির প্রতি আকর্ষণ বিদ্যমান। বস্তুর মূল কণিকা পরমাণু [Atom] যা গঠিত হয়েছে ধনাত্মক বিদ্যুত ও ঋণাত্মক বিদ্যুত দ্বারা যারা পরস্পর বিপরীত ধর্মী। এখানে বিদ্যুত কণিকা জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করে থাকে। অর্থাৎ বিপরীত শক্তি জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করে থাকে এবং পরস্পরকে আকর্ষণ করে। ‘ যে সম্বন্ধে তাদের কোন জ্ঞান নাই ‘ – এই লাইনটি দ্বারা আল্লাহ্‌ আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন যে আমাদের সীমিত জ্ঞানের বাইরেও হয়তো জগত আছে যেখানে বিপরীত শক্তিকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে।

 

আয়াতঃ 036.037

তাদের জন্যে এক নিদর্শন রাত্রি, আমি তা থেকে দিনকে অপসারিত করি, তখনই তারা অন্ধকারে থেকে যায়।
And a Sign for them is the Night: We withdraw therefrom the Day, and behold they are plunged in darkness;

وَآيَةٌ لَّهُمْ اللَّيْلُ نَسْلَخُ مِنْهُ النَّهَارَ فَإِذَا هُم مُّظْلِمُونَ
Waayatun lahumu allaylu naslakhu minhu alnnahara fa-itha hum muthlimoona

YUSUFALI: And a Sign for them is the Night: We withdraw therefrom the Day, and behold they are plunged in darkness;
PICKTHAL: A token unto them is night. We strip it of the day, and lo! they are in darkness.
SHAKIR: And a sign to them is the night: We draw forth from it the day, then lo! they are in the dark;
KHALIFA: Another sign for them is the night: we remove the daylight therefrom, whereupon they are in darkness.

৩৭। তাদের জন্য একটি নিদর্শন হচ্ছে রাত্রি। আমি তা থেকে দিনকে অপসারণ করি ৩৯৮২, এবং দেখো, তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়।

৩৯৮২। “রাত্রি থেকে দিনকে অপসারণ করি।” – এই উপমাটি এক আশ্চর্য সুন্দর ও সঙ্গতিপূর্ণ উপমা। দিন ও রাত্রি হচ্ছে বিপরীতধর্মী। দিন হচ্ছে আলোর প্রতীক , রাত্রি হচ্ছে অন্ধকারের প্রতীক। আলো হচ্ছে স্পষ্ট, সন্দেহাতীত সত্য এবং প্রকৃত বস্তু। অপরপক্ষে অন্ধকার হচ্ছে অস্পষ্ট , অস্তিত্ববিহীন। প্রকৃত বস্তুর অপসারণের পরে সেখানে আর কিছুই থাকবে না , তা হবে অস্তিত্ববিহীন। এই সত্যকেই তুলে ধরা হয়েছে দিন ও রাত্রির উপমা দ্বারা। দিনের আলোর অপসারণের পরে যা থাকে তা হচ্ছে অস্তিত্ববিহীন রাত্রির অন্ধকার। সেরূপ আল্লাহ্‌র সত্যকে অস্বীকারের পরে প্রকৃত সত্য বলে আর কিছু অবশিষ্ট থাকে না। আমাদের চারিপার্শ্বের বস্তু জগতকে অপূর্ব উপমা প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে , আল্লাহ্‌র শিল্পনৈপুন্য , সদয়, তত্বাবধান , জ্ঞান , প্রজ্ঞা ও ক্ষমতাকে বোঝানোর জন্য, যেনো আমরা আধ্যাত্মিক সত্যকে আত্মার মাঝে অনুভবের মাধ্যমে আল্লাহ্‌র পথের সন্ধান লাভ করি।

 

আয়াতঃ 036.038

সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ, আল্লাহর নিয়ন্ত্রণ।
And the sun runs his course for a period determined for him: that is the decree of (Him), the Exalted in Might, the All-Knowing.

وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ
Waalshshamsu tajree limustaqarrin laha thalika taqdeeru alAAazeezi alAAaleemi

YUSUFALI: And the sun runs his course for a period determined for him: that is the decree of (Him), the Exalted in Might, the All-Knowing.
PICKTHAL: And the sun runneth on unto a resting-place for him. That is the measuring of the Mighty, the Wise.
SHAKIR: And the sun runs on to a term appointed for it; that is the ordinance of the Mighty, the Knowing.
KHALIFA: The sun sets into a specific location, according to the design of the Almighty, the Omniscient.

৩৮। এবং সূর্য তার জন্য নির্ধারিত সময় কালে নিজ কক্ষপথ অতিক্রম করে চলেছে ৩৯৮৩। এটাই মহাশক্তিশালী , সর্বজ্ঞ [ আল্লাহ্‌র ] আদেশ।

৩৯৮৩। ‘Mustaqarr’ -অর্থ ; ১) নির্দ্দিষ্ট সময়কাল বা নির্দ্দিষ্ট পর্যায় যেমন আয়াত [ ৬ : ৬৭ ] তে বলা হয়েছে। অথবা ২) বিশ্রামের স্থান বা শান্ত অবস্থা। অথবা ৩) গন্তব্য বা বাসস্থান , যে ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে আয়াত [ ২ : ৩৬ ]। মওলানা ইউসুফ আলী সাহেবের মতে ১ নং অর্থটি এখানে সঠিকভাবে প্রযোজ্য হবে। আবার কোন কোন তফসীরকার দ্বিতীয় অর্থটি গ্রহণ করে থাকেন। সে ক্ষেত্রে উপমাটি এরূপ দাঁড়ায় যে, দিনের বেলা যখন সূর্য আকাশে দৃশ্যমান , সূর্যের দিনের কর্মশেষে রাত্রির বিশ্রাম স্থানে গমন করে, রাত্রির বিশ্রামের জন্য , পরবর্তী দিনের কার্যের প্রস্তুতি হিসেবে। পৃথিবীর যে স্থানে রাত্রি, সে স্থানের অধিবাসীদের বিপরীত অবস্থানে সূর্য থাকার জন্য আমাদের মনে হতে পারে সূর্য বিশ্রামে গিয়েছে। অনেক বাংলা অনুবাদে তৃতীয় অর্থ “গন্তব্য ” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে ১) ও ৩) উভয়েই বিজ্ঞানের যুক্তির ভিত্তিতে সঠিক। বিজ্ঞানের মতে সূর্য নির্দ্দিষ্ট সময়ে নির্দ্দিষ্ট গতিপথ অতিক্রম করছে তার সকল নক্ষত্র সমূহ সঙ্গে নিয়ে। সেটাই সূর্যের গন্তব্য স্থল।

 

আয়াতঃ 036.039

চন্দ্রের জন্যে আমি বিভিন্ন মনযিল নির্ধারিত করেছি। অবশেষে সে পুরাতন খর্জুর শাখার অনুরূপ হয়ে যায়।
And the Moon,- We have measured for her mansions (to traverse) till she returns like the old (and withered) lower part of a date-stalk.

وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتَّى عَادَ كَالْعُرْجُونِ الْقَدِيمِ
Waalqamara qaddarnahu manazila hatta AAada kaalAAurjooni alqadeemi

YUSUFALI: And the Moon,- We have measured for her mansions (to traverse) till she returns like the old (and withered) lower part of a date-stalk.
PICKTHAL: And for the moon We have appointed mansions till she return like an old shrivelled palm-leaf.
SHAKIR: And (as for) the moon, We have ordained for it stages till it becomes again as an old dry palm branch.
KHALIFA: The moon we designed to appear in stages, until it becomes like an old curved sheath.

৩৯। এবং চন্দ্রের [ অতিক্রমের জন্য ] নির্দ্দিষ্ট করেছি বিভিন্ন মঞ্জিল ৩৯৮৪ , যতদিন না সে পুরাতন [ শুষ্ক ] খেজুর শাখার আকার ধারণ করে ৩৯৮৫।

৩৯৮৪। চন্দ্র তার অক্ষরেখার উপরে ২৮ দিনে একবার সম্পূর্ণ পৃথিবীকে ঘুরে আসে – একেই আমরা বলি চন্দ্রকলা। অমাবস্যা ও পূর্ণিমা এই চন্দ্রকলারই অংশ। অমাবস্যা ও পূর্ণিমার মাঝে চাঁদের বিভিন্ন অবস্থান থাকে যা এই আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে ” বিভিন্ন মঞ্জিল ” রূপে।

৩৯৮৫। ‘Urjun’ – খেজুর পাতার দণ্ডবিশেষ বা বৃন্ত। খেজুর পাতা যখন পুরাতন হয়ে শুকিয়ে হলুদ বিবর্ণ হয়ে যায় , তখন তার দণ্ডটি বাঁকা হয়ে কাস্তের আকার ধারণ করে। চাঁদের কাস্তের ন্যায় আকৃতিকে খেজুর পাতার শুষ্ক আকৃতির সাথে তুলনা করা হয়েছে। চন্দ্রকলার বিভিন্ন সময়ে চাঁদ বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করে – কখনও চাঁদ বড় হতে হতে সম্পূর্ণ গোল হয়ে যায় আবার কখনও কমতে কমতে সরু কাস্তের আকার ধারণ করে অমবস্যার রাতে সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে যায়। পরদিন আবার নূতন চাঁদ হিসেবে সরু চাঁদ আকাশে দেখা দেয়।

 

আয়াতঃ 036.040

সূর্য নাগাল পেতে পারে না চন্দ্রের এবং রাত্রি অগ্রে চলে না দিনের প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে।
It is not permitted to the Sun to catch up the Moon, nor can the Night outstrip the Day: Each (just) swims along in (its own) orbit (according to Law).

لَا الشَّمْسُ يَنبَغِي لَهَا أَن تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ
La alshshamsu yanbaghee laha an tudrika alqamara wala allaylu sabiqu alnnahari wakullun fee falakin yasbahoona

YUSUFALI: It is not permitted to the Sun to catch up the Moon, nor can the Night outstrip the Day: Each (just) swims along in (its own) orbit (according to Law).
PICKTHAL: It is not for the sun to overtake the moon, nor doth the night outstrip the day. They float each in an orbit.
SHAKIR: Neither is it allowable to the sun that it should overtake the moon, nor can the night outstrip the day; and all float on in a sphere.
KHALIFA: The sun is never to catch up with the moon – the night and the day never deviate – each of them is floating in its own orbit.

৪০। সূর্যকে অনুমতি দেয়া হয় নাই চন্দ্রকে নাগাল পাওয়ার ৩৯৮৬, এবং রাত্রির পক্ষে সম্ভব নয় দিবসকে অতিক্রম করা। এরা প্রত্যেকেই [ নিজ নিজ ] কক্ষপথে সাঁতার কাটছে [ নিয়ম অনুযায়ী ] ৩৯৮৭।

৩৯৮৬। রাশিচক্রে চন্দ্র ও সূর্যের গতিপথ পরস্পর পরস্পরকে ছেদ করলেও তাদের মধ্যে সংঘর্ষ সম্ভব নয়। যদিও তাদের গতিপথ আলাদা ,কিন্তু আল্লাহ্‌ তাদের গতিপথ এমন ভাবে সুনির্দ্দিষ্ট করে দিয়েছেন যে কেউ কারও নাগাল পাবে না। যখন চন্দ্র , পৃথিবী ও সূর্যের মাঝে একই সরলরেখাতে অবস্থান করে তখন সূর্যগ্রহণ ঘটে থাকে , আবার যখন পৃথিবী , চন্দ্র ও সূর্যের মাঝে একই সরলরেখাতে থাকে তখন চন্দ্র গ্রহণ ঘটে থাকে। সূর্য , চন্দ্র ,ও পৃথিবীর গতিপথ আল্লাহ্‌র আইন দ্বারা নির্দ্দিষ্ট। বিজ্ঞান যার নাম দিয়েছে জ্যোতির্বিদ্যা। ঠিক সেই একই ভাবে দিন ও রাত্রি পরস্পর পরস্পরকে অনুসরণ করে , কিন্তু কেউ কাউকে অতিক্রম করতে পারে না বা পরস্পরের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে না। এই বর্ণনাটি ভালো, মন্দ , সত্য-মিথ্যা , ন্যায়-অন্যায়কে বোঝানোর জন্য উপমা স্বরূপ , এরা কেউই একে অপরকে স্পর্শ করতে পারে না। দেখুন টিকা নং ৩৯৮২।

৩৯৮৭। দেখুন [ ২১ : ৩৩ ] আয়াত ও টিকা ২৬৯৫। কত সুন্দর ও কাব্যিক ভাবে গ্রহনক্ষত্রের গতিপথের বর্ণনা একটি লাইনে করা হয়েছে তা লক্ষ্যনীয়। অনন্ত মহাশূন্যে গ্রহ নক্ষত্র ভেসে থাকে কোনও কিছু অবলম্বন ব্যতীত এবং সে ভাবেই তারা তাদের গতিপথকে অতিক্রম করে চলেছে। এই বর্ণনাটিকে গ্রহ নক্ষত্রের “সন্তরণ” শব্দটি দ্বারা উপস্থাপন করা হয়েছে, যার থেকে অধিক প্রযোজ্য ও কাব্যিক শব্দ আর কিছু হতে পারতো না।

 

আয়াতঃ 036.041

তাদের জন্যে একটি নিদর্শন এই যে, আমি তাদের সন্তান-সন্ততিকে বোঝাই নৌকায় আরোহণ করিয়েছি।
And a Sign for them is that We bore their race (through the Flood) in the loaded Ark;

وَآيَةٌ لَّهُمْ أَنَّا حَمَلْنَا ذُرِّيَّتَهُمْ فِي الْفُلْكِ الْمَشْحُونِ
Waayatun lahum anna hamalna thurriyyatahum fee alfulki almashhooni

YUSUFALI: And a Sign for them is that We bore their race (through the Flood) in the loaded Ark;
PICKTHAL: And a token unto them is that We bear their offspring in the laden ship,
SHAKIR: And a sign to them is that We bear their offspring in the laden ship.
KHALIFA: Another sign for them is that we carried their ancestors on the loaded ark.

৪১। তাদের জন্য আর এক নিদর্শন হচেছ , আমি তাদের বংশধরদের [ বন্যার মাঝে ] বোঝাই নৌযানে আরোহণ করিয়েছিলাম ৩৯৮৮।

৩৯৮৮। অনন্ত মহাশূন্যে নক্ষত্ররাজি ও গ্রহরা নির্দ্দিষ্ট কক্ষপথে ভেসে ভেসে অবিরত সন্তরণ করে চলেছে – যে পথের সীমানা আল্লাহ্‌র আইন দ্বারা নির্ধারিত। মানুষ কি একবারও চিন্তা করে দেখে যে দূর আকাশের ছায়াপথে লক্ষ লক্ষ নক্ষত্ররাজি , সৌরমন্ডল প্রভৃতি পরস্পরের সাথে সংঘর্ষ না ঘটিয়ে ,কোন প্রাচীন অতীত যুগ থেকে মহাকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে ? তাদের গতি পথ সমন্বিত শৃঙ্খলার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। মানুষের উপলব্ধির জন্য আল্লাহ্‌ আরও নিদর্শন স্থাপন করেছেন যা জীবনের খুব কাছাকাছি। এই উদাহরণগুলি মানুষের প্রাচীন ইতিহাস এবং বর্তমান জীবনধারা সকল ক্ষেত্রেই সমভাবে প্রযোজ্য। দিগন্ত বিস্তৃত অসীম সমুদ্রে মানুষ যখন ভেসে বেড়ায় গ্রহ নক্ষত্রের ন্যায়। কিন্তু হারিয়ে না যেয়ে ঠিক তার নিজস্ব ঠিকানায় ফিরে আসে সে কি স্রষ্টার অপার করুণা ও মহিমা নয় কি ? প্রাচীন যুগের উদাহরণ হচ্ছে নূহ্‌ নবীর নৌকা ও তার সময়ের বন্যা এবং এর পরেও সকল সৃষ্ট জীবের অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকা আল্লাহ্‌র ন্যায় বিচার ও করুণার নিদর্শন নয় কি সকল মানুষের জন্য ? দেখুন আয়াত [ ২৯ : ১৫ ]। বর্তমানেও মানুষ যখন নৌযানে আরোহণ করে তখন কি সেই একইভাবে আল্লাহ্‌র করুণা ও দয়া হৃদয়ের মাঝে অনুভব করে না? দেখুন পরবর্তী টিকা।

 

আয়াতঃ 036.042

এবং তাদের জন্যে নৌকার অনুরূপ যানবাহন সৃষ্টি করেছি, যাতে তারা আরোহণ করে।
And We have created for them similar (vessels) on which they ride.

وَخَلَقْنَا لَهُم مِّن مِّثْلِهِ مَا يَرْكَبُونَ
Wakhalaqna lahum min mithlihi ma yarkaboona

YUSUFALI: And We have created for them similar (vessels) on which they ride.
PICKTHAL: And have created for them of the like thereof whereon they ride.
SHAKIR: And We have created for them the like of it, what they will ride on.
KHALIFA: Then we created the same for them to ride in.

৪২। এবং আমি তাদের জন্য অনুরূপ [ যানবাহন ] সৃষ্টি করেছি যাতে তারা আরোহণ করতে পারে ৩৯৮৯।

৩৯৮৯। বিশাল বিশাল সামুদ্রিক জাহাজ কত সহজে সমুদ্রে ভেসে বেড়ায়। এই বিরাট সামুদ্রিক জাহাজগুলির এত বিশাল ওজন থাকা সত্বেও পানিতে ভেসে বেড়ায় সে কি আল্লাহ্‌র বিশেষ অনুগ্রহ নয় ? অবিশ্বাসীরা বলবে যে, ভেসে বেড়ানোর সুত্র তো আর্কিমিডেসের বিজ্ঞানের সুত্র। কিন্তু সে সুত্র কি আল্লাহ্‌র সৃষ্টি নয় ? প্রকৃতির মাঝেই তো আল্লাহ্‌ নিদর্শন বিদ্যমান। মানুষ তো বিজ্ঞানের মাধ্যমে সেই মহাজ্ঞানীর জ্ঞানের অনুসন্ধান করে মাত্র। জাহাজ শুধু নিজেই ভাসে না , মানুষ এবং অত্যন্ত বিশাল বাণিজ্য বহর নিয়ে তা একদেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াত করে। এই আয়াতে জাহাজের উল্লেখ নাই তবে “অনুরূপ যানবাহন ” শব্দটি দ্বারা সকল রকম সামুদ্রিক যানবাহন এবং উড়োজাহাজকেও বোঝানো যায়। কারণ উড়োজাহাজ পানির পরিবর্তে বাতাসে সাতার কাটে। রাসুলের যুগে উড়োজাহাজের আবিষ্কার ঘটে নাই , কিন্তু “অনুরূপ যানবাহন” দ্বারা আল্লাহ্‌ বর্তমান যুগের অনুরূপ যানবাহনের ইঙ্গিত দান করেছেন।

 

আয়াতঃ 036.043

আমি ইচ্ছা করলে তাদেরকে নিমজ্জত করতে পারি, তখন তাদের জন্যে কোন সাহায্যকারী নেই এবং তারা পরিত্রাণও পাবে না।
If it were Our Will, We could drown them: then would there be no helper (to hear their cry), nor could they be delivered,

وَإِن نَّشَأْ نُغْرِقْهُمْ فَلَا صَرِيخَ لَهُمْ وَلَا هُمْ يُنقَذُونَ
Wa-in nasha/ nughriqhum fala sareekha lahum wala hum yunqathoona

YUSUFALI: If it were Our Will, We could drown them: then would there be no helper (to hear their cry), nor could they be delivered,
PICKTHAL: And if We will, We drown them, and there is no help for them, neither can they be saved;
SHAKIR: And if We please, We can drown them, then there shall be no succorer for them, nor shall they be rescued
KHALIFA: If we willed, we could have drowned them, so that their screaming would not be heard, nor could they be saved.

৪৩। এটাই যদি আমার অভিলাষ হতো, তবে আমি তাদের ডুবিয়ে দিতে পারতাম ৩৯৯০। তখন সেখানে তাদের [ আর্তনাদ শোনার জন্য ] কোন সাহায্যকারী থাকতো না। তারা উদ্ধারও পেতো না ; –

৩৯৯০। মানুষ প্রকৃতিকে জয় করেছে। মানুষ নিজস্ব উদ্ভাবনী কৌশল ও আবিষ্কারের জন্য গর্বিত। কিন্তু সে কি ভেবে দেখে না , এই ক্ষমতা , এই বুদ্ধি তাকে কে দান করেছে ? প্রকৃতিকে জয় করার এই উদ্ভাবনী দক্ষতা আল্লাহ্‌ যদি মানুষকে দান না করতেন তবে মানুষ কি পারতো আকাশ ও সমুদ্রে বিহার করতে ? তার এই ক্ষমতা তো আল্লাহ্‌রই বিশেষ দান।

 

আয়াতঃ 036.044

কিন্তু আমারই পক্ষ থেকে কৃপা এবং তাদেরকে কিছু কাল জীবনোপভোগ করার সুযোগ দেয়ার কারণে তা করি না।
Except by way of Mercy from Us, and by way of (world) convenience (to serve them) for a time.

إِلَّا رَحْمَةً مِّنَّا وَمَتَاعًا إِلَى حِينٍ
Illa rahmatan minna wamataAAan ila heenin

YUSUFALI: Except by way of Mercy from Us, and by way of (world) convenience (to serve them) for a time.
PICKTHAL: Unless by mercy from Us and as comfort for a while.
SHAKIR: But (by) mercy from Us and for enjoyment till a time.
KHALIFA: Instead, we shower them with mercy, and let them enjoy for awhile.

৪৪। আমার অনুগ্রহ না থাকলে এবং এটা ছিলো সুনির্দ্দিষ্ট কাল পর্যন্ত [পার্থিব ] সুযোগ সুবিধা [ উপভোগ করার সুযোগ ] ৩৯৯১।

৩৯৯১। মানুষের আরাম আয়েশের জন্য আল্লাহ্‌ প্রকৃতিতে বিভিন্ন নেয়ামত দান করেছেন। মানুষ নিজস্ব উদ্ভাবনী কৌশল , বুদ্ধি ও দক্ষতার প্রয়োগের মাধ্যমে প্রকৃতির এই সব সম্পদ ব্যবহারে সক্ষম হয় – জীবনটা আরাম ও আয়েশে কাটানো সম্ভব হয়। মানুষকে যদি আল্লাহ্‌ এই বুদ্ধিমত্তা দান না করতেন তবে তার জীবনযাপন পদ্ধতি অন্যান্য পশুদের থেকে খুব একটা পার্থক্য থাকতো না। প্রকৃতির শক্তির কাছে মানুষ তখন অসহায় ভাবে নিজেকে সমর্পন করতে বাধ্য হতো। সমুদ্রে বা আকাশে ভ্রমণ মানুষের জীবনকে অনিশ্চিত করে তুলতো। আল্লাহ্‌র করুণাই মানুষকে নিরাপত্তা দান করেছে , এবং পার্থিব জীবনকে আরাম আয়েশে ভরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এ সব কিছু অনন্তকালের জন্য নয়। এ সব শুধুমাত্র পৃথিবীর জীবনের জন্য ;” পৃথিবীর শিক্ষানবীশ কালের জন্য।”

 

আয়াতঃ 036.045

আর যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা সামনের আযাব ও পেছনের আযাবকে ভয় কর, যাতে তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়, তখন তারা তা অগ্রাহ্য করে।
When they are told, “Fear ye that which is before you and that which will be after you, in order that ye may receive Mercy,” (they turn back).

وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اتَّقُوا مَا بَيْنَ أَيْدِيكُمْ وَمَا خَلْفَكُمْ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
Wa-itha qeela lahumu ittaqoo ma bayna aydeekum wama khalfakum laAAallakum turhamoona

YUSUFALI: When they are told, “Fear ye that which is before you and that which will be after you, in order that ye may receive Mercy,” (they turn back).
PICKTHAL: When it is said unto them: Beware of that which is before you and that which is behind you, that haply ye may find mercy (they are heedless).
SHAKIR: And when it is said to them: Guard against what is before you and what is behind you, that mercy may be had on you.
KHALIFA: Yet, when they are told, “Learn from your past, to work righteousness for your future, that you may attain mercy,”

৪৫। যখন তাদের বলা হয়, ” তোমাদের সামনে যা আছে এবং পিছনে যা থাকবে , সে সম্বন্ধে ভয় কর , যেনো তোমরা [আল্লাহ্‌র ] অনুগ্রহ লাভ করতে পার ; [ তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় ]।” ৩৯৯২।

৩৯৯২। মানুষ বুদ্ধিমান প্রাণী। সে অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে এবং ভবিষ্যত সম্বন্ধেও সাবধান হবে। বর্তমান সময় অতীতের উপরে ভিত্তি করে দাড়িয়ে আছে সত্য, কিছু তা খুবই ক্ষণস্থায়ী। ‘বর্তমান’ কাল অতীত ও ভবিষ্যতের সংযোগ স্থল এবং দ্রুত ধাবমান। মূহুর্তের মধ্যে বর্তমানের প্রতিটি পলও অতীত হয়ে চলেছে। সুতারাং বর্তমানেই মানুষকে গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে ভবিষ্যত জীবন সম্বন্ধে ; পরলোকের জীবন সম্বন্ধে। নিজেকে পরলোকের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। যদি মানুষ সে চেষ্টা করে তবে আল্লাহ্‌ করুণাময়। তিনি মানুষের অতীত সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন, এবং ভবিষ্যত জীবনের প্রস্তুতির জন্য কল্যাণের হস্ত প্রসারিত করবেন। মানুষ তখন পৃথিবীর মলিনতাতে অবস্থান করেও এর উর্দ্ধে উঠতে সক্ষম হবে। কিন্তু যারা পার্থিব জীবনটাকেই সর্বস্ব মনে করে এবং উদ্ধত একগুঁয়ে ভাবে আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ অস্বীকার করে তাদের জন্য আল্লাহ্‌র নিদর্শন শিক্ষনীয় বিষয়বস্তু নয়। তারা আধ্যাত্মিক শিক্ষার উপরে বিরক্ত ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। যা তাদের নিজেরই ক্ষতি।

 

আয়াতঃ 036.046

যখনই তাদের পালনকর্তার নির্দেশাবলীর মধ্যে থেকে কোন নির্দেশ তাদের কাছে আসে, তখনই তারা তা থেকে মুখে ফিরিয়ে নেয়।
Not a Sign comes to them from among the Signs of their Lord, but they turn away therefrom.

وَمَا تَأْتِيهِم مِّنْ آيَةٍ مِّنْ آيَاتِ رَبِّهِمْ إِلَّا كَانُوا عَنْهَا مُعْرِضِينَ
Wama ta/teehim min ayatin min ayati rabbihim illa kanoo AAanha muAArideena

YUSUFALI: Not a Sign comes to them from among the Signs of their Lord, but they turn away therefrom.
PICKTHAL: Never came a token of the tokens of their Lord to them, but they did turn away from it!
SHAKIR: And there comes not to them a communication of the communications of their Lord but they turn aside from it.
KHALIFA: No matter what kind of proof is given to them from their Lord, they consistently disregard it.

৪৬। এবং যখনই ওদের প্রভুর নিদর্শনাবলীর কোন নিদর্শন তাদের নিকট আসে , তখনই তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় ৩৯৯৩।

৩৯৯৩। আল্লাহ্‌ নিরাকার আল্লাহ্‌র অনুভূতি অন্তরের মাঝে ধারণ করার জন্য এই বিশাল বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে , আকাশে , বাতাসে, দ্যুলোকে -ভূলোকে প্রকৃতিতে আল্লাহ্‌র নিদর্শন পরিব্যপ্ত হয়ে আছে। এ ব্যতীতও মানুষের অন্তরে, আত্মার মাঝে অনুভবের মাধ্যমে বিশ্বস্রষ্টাকে অনুভব করা যায়, যে অনুভব করতে চায়। তদুপরি আল্লাহ্‌ যুগে যুগে তাঁর নবী রসুলদের প্রেরণ করেছেন, মানুষের কল্যাণের জন্য। এত নিদর্শন থাকা সত্বেও যারা আল্লাহ্‌র অনুগত হওয়ার পরিবর্তে আল্লাহ্‌র দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তারা তাদের অন্তর্দৃষ্টিকে ধ্বংস করে ফেলে , কারণ আলোর বিপরীতে অন্ধকারের দিকে তাদের যাত্রা।

 

আয়াতঃ 036.047

যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ তোমাদেরকে যা দিয়েছেন, তা থেকে ব্যয় কর। তখন কাফেররা মুমিনগণকে বলে, ইচ্ছা করলেই আল্লাহ যাকে খাওয়াতে পারতেন, আমরা তাকে কেন খাওয়াব? তোমরা তো স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পতিত রয়েছ।
And when they are told, “Spend ye of (the bounties) with which Allah has provided you,” the Unbelievers say to those who believe: “Shall we then feed those whom, if Allah had so willed, He would have fed, (Himself)?- Ye are in nothing but manifest error.”

وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ أَنفِقُوا مِمَّا رَزَقَكُمْ اللَّهُ قَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِلَّذِينَ آمَنُوا أَنُطْعِمُ مَن لَّوْ يَشَاء اللَّهُ أَطْعَمَهُ إِنْ أَنتُمْ إِلَّا فِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ
Wa-itha qeela lahum anfiqoo mimma razaqakumu Allahu qala allatheena kafaroo lillatheena amanoo anutAAimu man law yashao Allahu atAAamahu in antum illa fee dalalin mubeenin

YUSUFALI: And when they are told, “Spend ye of (the bounties) with which Allah has provided you,” the Unbelievers say to those who believe: “Shall we then feed those whom, if Allah had so willed, He would have fed, (Himself)?- Ye are in nothing but manifest error.”
PICKTHAL: And when it is said unto them: Spend of that wherewith Allah hath provided you, those who disbelieve say unto those who believe: Shall we feed those whom Allah, if He willed, would feed? Ye are in naught else than error manifest.
SHAKIR: And when it is said to them: Spend out of what Allah has given you, those who disbelieve say to those who believe: Shall we feed him whom, if Allah please, He could feed? You are in naught but clear error.
KHALIFA: When they are told, “Give from GOD’s provisions to you,” those who disbelieve say to those who believe, “Why should we give to those whom GOD could feed, if He so willed? You are really far astray.”

৪৭। এবং তাদের বল হয়, ” আল্লাহ্‌ তোমাদের যে [ জীবনোপকরণ ] দান করেছেন ৩৯৯৪, তা থেকে ব্যয় কর।” অবিশ্বাসীরা বিশ্বাসীদের বলে, ” যাকে আল্লাহ্‌ ইচ্ছা করলে খাওয়াতে পারতেন , আমরা কি তাকে খাওয়াবো ? ৩৯৯৫। তোমরা তো স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছ।”

৩৯৯৪। ইসলাম ধর্ম শুধুমাত্র ব্যক্তিগত এবাদতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ব্যক্তিগত এবাদত এবং অপরের জন্য কল্যাণ দান এই দুয়ের সমষ্টিই হচ্ছে ইসলামিক জীবন ব্যবস্থা। যারা বিশ্বাসী বা পূণ্যাত্মা ব্যক্তি তারা দানে হবেন অকৃপণ। এই দান শুধুমাত্র অর্থ-সম্পদের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। “জীবনোপকরণ ” অর্থাৎ আল্লাহ্‌ যাকে যে নেয়ামত দান করেছেন যথাঃ অর্থ, সম্পদ, প্রভাব-প্রতিপ্রত্তি ,জ্ঞান-প্রজ্ঞা,মেধা, প্রতিভা ইত্যাদি যার যে প্রকৃতিগত সম্পদ রয়েছে তাই আল্লাহ্‌ সৃষ্টির সেবায় ব্যয় করতে বলা হয়েছে ,যেনো পৃথিবী আরও সুন্দর হয়ে ওঠে। কিন্তু পূণ্যাত্মাদের কাফেরদের প্রতি দানের আবেদনের প্রেক্ষিতে কাফেররা যে বিদ্রূপ ও ব্যঙ্গক্তি করে তাই এই আয়াতে তুলে ধরা হয়েছে। লক্ষণীয়, এখানে কাফের বা অবিশ্বাসী তাদেরই বলা হয়েছে যারা অত্যন্ত স্বার্থপর। ব্যক্তিগত স্বার্থের বাইরে যারা সমষ্টিগত স্বার্থের কথা চিন্তা করতে পারে না। যারা শুধুমাত্র নিজস্ব স্বার্থ ও সুখের জন্য ব্যস্ত ,তারা কাফের সমতুল্য। প্রতিটি মুসলমানের জন্য এই উপদেশ অনুধাবনযোগ্য।

৩৯৯৫। স্বার্থপর ব্যক্তিরা নিজস্ব স্বার্থের চিন্তায় সর্বদা ব্যস্ত থাকে। তাদের হৃদয় স্বার্থ চিন্তায় এত পরিপূর্ণ থাকে যে, তারা উদ্ধত হয়ে পড়ে এবং আল্লাহ্‌র প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশ করে থাকে। তারা বলে , “আল্লাহ্‌ যদি তাদের , [ অভাবীদের ] কিছু না দিয়ে থাকেন, তবে আমরা কেন তাদের দেবো ? ” তাদের এই উক্তির দ্বারা অহংকার এবং আল্লাহ্‌র প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করা হয়। অহংকার এ জন্য যে, তারা মনে করে যে তারা বিশেষ ব্যক্তি এবং সে কারণেই আল্লাহ্‌ তাদের নেয়ামত দান করেছেন। যোগ্যতার ভিত্তিতে তারা এসব নেয়ামতের হক্‌দার। তারা আরও মনে করে যে, আল্লাহ্‌র অবিবেচনার কারণেই অভাবগ্রস্থদের দুর্ভাগ্য – এখানে তারা আল্লাহ্‌র ন্যায়নিষ্ঠতার প্রতি ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করে থাকে। এ ভাবেই তারা আল্লাহ্‌র নিন্দায় অগ্রবর্তী ভূমিকা গ্রহণ করে যা তাদের অহংকার ও গর্ব থেকে উৎপত্তি। উপরন্তু তারা মোমেনদের দোষারোপ করে যে, ” তোমরা তো স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছো।” তাদের ধারণা মোমেনদের জীবন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভুল। এ সব লোক পার্থিব জীবন সম্বন্ধে এত অন্ধ থাকে যে, পরলোকের কথা তাদের অন্তরে কোনও রেখাপাতই করে না। তারা ভুলে যায় যে, এই জীবন পরলোকের অনন্ত জীবনের জন্য শিক্ষানবীশ কাল মাত্র এবং সে তুলনায় ক্ষণস্থায়ী। পৃথিবীতে মানুষকে প্রেরণ করা হয়েছে পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য। পৃথিবীতে আল্লাহ্‌ তাদের বিভিন্ন নেয়ামতে ধন্য করেছেন যার কিছুই তাদের নিজস্ব নয়। এগুলি সবই তাদের জন্য আল্লাহ্‌র আমানত। এ সব আমানতের জন্য পরলোকে আল্লাহ্‌র নিকট জবাবদিহি করতে হবে। আর এই জবাবদিহিতার মানদন্ডেই তার বিচার হবে এবং বেহেশত বা দোযখ তার জন্য নির্ধারিত হবে। সুতারাং যারা পৃথিবীতে আল্লাহ্‌র কম নেয়ামত প্রাপ্ত [ অর্থ, সম্পদ, প্রভাব-প্রতিপত্তি, মেধা, প্রতিভা ইত্যাদি ] তারা একদিক থেকে ভাগ্যবান বৈকি। কারণ পৃথিবীতে আধিক্যহীন ও পরিমিত জীবন যাপন করার ফলে তারা হন বিনয়ী , ধৈর্য্যশীল, আত্মসংযমী এবং ক্ষণস্থায়ী জীবনের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণে সক্ষম। সংযমী জীবন যাপন তাদের প্রকৃত মূল্যবোধ শিক্ষা দেয়। সম্পদের আধিক্য তাদের দৃষ্টি ,মন ও অনুভবকে আচ্ছন্ন করতে পারে না।

 

আয়াতঃ 036.048

তারা বলে, তোমরা সত্যবাদী হলে বল এই ওয়াদা কবে পূর্ণ হবে?
Further, they say, “When will this promise (come to pass), if what ye say is true?”

وَيَقُولُونَ مَتَى هَذَا الْوَعْدُ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ
Wayaqooloona mata hatha alwaAAdu in kuntum sadiqeena

YUSUFALI: Further, they say, “When will this promise (come to pass), if what ye say is true?”
PICKTHAL: And they say: When will this promise be fulfilled, if ye are truthful?
SHAKIR: And they say: When will this threat come to pass, if you are truthful?
KHALIFA: They also challenge, “When will that promise come to pass, if you are truthful?”

৪৮। উপরন্তু তারা বলে, ” তোমরা যা বলছো তা যদি সত্যি হয়, তবে বল এই প্রতিশ্রুতি কখন পূর্ণ হবে? ” ৩৯৯৬

৩৯৯৬। অহংকার ও আল্লাহ্‌র প্রতি ব্যঙ্গ বিদ্রূপ দ্বারা এ সব লোক শুধু যে বিশ্বাসকে প্রতিহত করে তাই-ই নয়, তারা আরও আল্লাহ্‌র ক্ষমতার প্রতি প্রতিদ্বন্দ্বিতা আহ্বান করে। তারা মোমেন বান্দাদের মিথ্যাবাদী প্রমাণিত করতে চায়। তারা বলে, ” যদি পরকাল থাকেই ,তবে বল কখন তা আসবে ? ” , তাদের এই উদ্ধত অহংকারের উত্তর হচ্ছে , ” তা শীঘ্রই আসবে, তোমাদের প্রত্যাশার পূর্র্বেই যখন তোমরা বিশ্বাস ও অবিশ্বাস সম্বন্ধে মিথ্যা তর্কে লিপ্ত থাকবে। যখন সে আসবে, তখন আর তোমরা তোমাদের জীবনকে শোধরানোর সুযোগ পাবে না। পৃথিবীতে যাদের তোমরা সর্বাপেক্ষা নিকট জন মনে করতে, সহায় সম্বল মনে করতে তাদের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয়া হবে। তারা তোমাদের কোনও সাহায্যেই আসবে না। “

 

আয়াতঃ 036.049

তারা কেবল একটা ভয়াবহ শব্দের অপেক্ষা করছে, যা তাদেরকে আঘাত করবে তাদের পারস্পরিক বাকবিতন্ডাকালে।
They will not (have to) wait for aught but a single Blast: it will seize them while they are yet disputing among themselves!

مَا يَنظُرُونَ إِلَّا صَيْحَةً وَاحِدَةً تَأْخُذُهُمْ وَهُمْ يَخِصِّمُونَ
Ma yanthuroona illa sayhatan wahidatan ta/khuthuhum wahum yakhissimoona

YUSUFALI: They will not (have to) wait for aught but a single Blast: it will seize them while they are yet disputing among themselves!
PICKTHAL: They await but one Shout, which will surprise them while they are disputing.
SHAKIR: They wait not for aught but a single cry which will overtake them while they yet contend with one another.
KHALIFA: All they see will be one blow that overwhelms them, while they dispute.

৪৯। তারা তো শুধু একটিমাত্র বিষ্ফোরণের অপেক্ষায় আছে। এটা তাদের পাকড়াও করবে তাদের [উহার সত্য সম্বন্ধে ] বাক্‌-বিতন্ডা কালে।

 

আয়াতঃ 036.050

তখন তারা ওছিয়ত করতেও সক্ষম হবে না। এবং তাদের পরিবার-পরিজনের কাছেও ফিরে যেতে পারবে না।
No (chance) will they then have, by will, to dispose (of their affairs), nor to return to their own people!

فَلَا يَسْتَطِيعُونَ تَوْصِيَةً وَلَا إِلَى أَهْلِهِمْ يَرْجِعُونَ
Fala yastateeAAoona tawsiyatan wala ila ahlihim yarjiAAoona

YUSUFALI: No (chance) will they then have, by will, to dispose (of their affairs), nor to return to their own people!
PICKTHAL: Then they cannot make bequest, nor can they return to their own folk.
SHAKIR: So they shall not be able to make a bequest, nor shall they return to their families.
KHALIFA: They will not even have time to make a will, nor will they be able to return to their people.

৫০। তখন তারা তাদের শেষ ইচ্ছা [ ওসিয়ত ] জানাতে সমর্থ হবে না এবং নিজ পরিবার পরিজনের নিকট ফিরে আসতেও পারবে না।

 

আয়াতঃ 036.051

শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, তখনই তারা কবর থেকে তাদের পালনকর্তার দিকে ছুটে চলবে।
The trumpet shall be sounded, when behold! from the sepulchres (men) will rush forth to their Lord!

وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَإِذَا هُم مِّنَ الْأَجْدَاثِ إِلَى رَبِّهِمْ يَنسِلُونَ
Wanufikha fee alssoori fa-itha hum mina al-ajdathi ila rabbihim yansiloona

YUSUFALI: The trumpet shall be sounded, when behold! from the sepulchres (men) will rush forth to their Lord!
PICKTHAL: And the trumpet is blown and lo! from the graves they hie unto their Lord,
SHAKIR: And the trumpet shall be blown, when lo ! from their graves they shall hasten on to their Lord.
KHALIFA: The horn will be blown, whereupon they will rise from the grave and go to their Lord.

রুকু – ৪

৫১। যখন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে ,তখনই [মানুষ ] কবর থেকে তাদের প্রভুর দিকে ছুটে যাবে ৩৯৯৭।

৩৯৯৭। সাধারণ বিশ্বাস যে ,যে ফেরেশতা শিঙ্গায় ফুৎকার দেবেন তার নাম ইস্রাফিল। কিন্তু কোরাণে কোথাও তাঁর নামের উল্লেখ নাই। শিঙ্গাতে ফুৎকারের কথা কোরাণের বহুস্থানে উল্লেখ আছে যেমন : [৬ :৭৩ ] আয়াতে, [৭৮ : ১৮ ] আয়াতে ইত্যাদি।

 

আয়াতঃ 036.052

তারা বলবে, হায় আমাদের দুর্ভোগ! কে আমাদেরকে নিদ্রাস্থল থেকে উখিত করল? রহমান আল্লাহ তো এরই ওয়াদা দিয়েছিলেন এবং রসূলগণ সত্য বলেছিলেন।
They will say: “Ah! Woe unto us! Who hath raised us up from our beds of repose?”… (A voice will say:) “This is what ((Allah)) Most Gracious had promised. And true was the word of the apostles!”

قَالُوا يَا وَيْلَنَا مَن بَعَثَنَا مِن مَّرْقَدِنَا هَذَا مَا وَعَدَ الرَّحْمَنُ وَصَدَقَ الْمُرْسَلُونَ
Qaloo ya waylana man baAAathana min marqadina hatha ma waAAada alrrahmanu wasadaqa almursaloona

YUSUFALI: They will say: “Ah! Woe unto us! Who hath raised us up from our beds of repose?”… (A voice will say:) “This is what (Allah) Most Gracious had promised. And true was the word of the messengers!”
PICKTHAL: Crying: Woe upon us! Who hath raised us from our place of sleep? This is that which the Beneficent did promise, and the messengers spoke truth.
SHAKIR: They shall say: O woe to us! who has raised us up from our sleeping-place? This is what the Beneficent Allah promised and the messengers told the truth.
KHALIFA: They will say, “Woe to us. Who resurrected us from our death? This is what the Most Gracious has promised. The messengers were right.”

৫২। তারা বলবে, ” হায় ! আমাদের দুর্ভোগ ! কে আমাদের নিদ্রাস্থলে থেকে উঠালো ? ” ৩৯৯৮। [তখন বলা হবে ] ” পরম করুণাময় [আল্লাহ্‌ ] তো এরই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং রাসুলগণ সত্য কথাই বলেছিলেন। ”

৩৯৯৮। পরলোকে যখন পুণরুত্থান ঘটবে, মৃত ব্যক্তিরা তাদের কবর থেকে জেগে উঠবে, গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ব্যক্তিদের ন্যায় অসাড় ও নিশ্চল অবস্থায় থাকার পরে, তারা তাদের নূতন অবস্থানে হতভম্ব ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়বে। ধীরে ধীরে তারা তাদের পূর্বের স্মৃতিশক্তি ও নিজস্ব ব্যক্তিত্ব ফিরে পাবে। তখন তাদের স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে যে, করুণাময় আল্লাহ্‌র পৃথিবীর শিক্ষানবীশ কালে পরলোকের সংবাদ প্রেরণ করেছিলেন, নবী রসুলদের প্রেরণ করেছিলেন যারা পৃথিবীর কৃতকর্মের বার্তা বারে বারে প্রচার করেছেন। কিন্তু সে সময়ে তাদের নিকট সে বার্তা মনে হয়েছিলো অদ্ভুদ এবং পরলোকের দিনকে মনে হয়েছিলো বহু দূরে , সূদূরে অবস্থিত। কিন্তু এখন তা প্রকৃত সত্য এবং সন্নিকটে।

 

আয়াতঃ 036.053

এটা তো হবে কেবল এক মহানাদ। সে মুহুর্তেই তাদের সবাইকে আমার সামনে উপস্থিত করা হবে।
It will be no more than a single Blast, when lo! they will all be brought up before Us!

إِن كَانَتْ إِلَّا صَيْحَةً وَاحِدَةً فَإِذَا هُمْ جَمِيعٌ لَّدَيْنَا مُحْضَرُونَ
In kanat illa sayhatan wahidatan fa-itha hum jameeAAun ladayna muhdaroona
YUSUFALI: It will be no more than a single Blast, when lo! they will all be brought up before Us!
PICKTHAL: It is but one Shout, and behold them brought together before Us!
SHAKIR: There would be naught but a single cry, when lo ! they shall all be brought before Us;
KHALIFA: All it will take is one blow, whereupon they are summoned before us.

৫৩। এটা হবে কেবল একটি মাত্র বিস্ফোরণ। তখনই তাদের সকলকে আমার সামনে উপস্থিত করা হবে ৩৯৯৯।

৩৯৯৯। পরলোকের নূতন পৃথিবী হবে সময় ও কালের উর্দ্ধে। বর্তমানের পৃথিবীর আহ্নিক ও বার্ষিক গতির কারণে আমরা সময়ের ধারণা লাভ করে থাকি দিন-রাত্রি বা বৎসরের হিসাব করি। যদি তা না থাকতো অনন্ত দিন বা অনন্ত রাত্রি দ্বারা সময়ের ধারণা লাভ করা সম্ভব হতো না। সকল মানুষকে সেখানে সমবেত করা হবে, চোখের পলকে। দেখুন আয়াত [ ৩৬ : ৪৯ ] যেখানে মহানাদের উল্লেখ আছে।

 

আয়াতঃ 036.054

আজকের দিনে কারও প্রতি জুলুম করা হবে না এবং তোমরা যা করবে কেবল তারই প্রতিদান পাবে।
Then, on that Day, not a soul will be wronged in the least, and ye shall but be repaid the meeds of your past Deeds.

فَالْيَوْمَ لَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًا وَلَا تُجْزَوْنَ إِلَّا مَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ
Faalyawma la tuthlamu nafsun shay-an wala tujzawna illa ma kuntum taAAmaloona

YUSUFALI: Then, on that Day, not a soul will be wronged in the least, and ye shall but be repaid the meeds of your past Deeds.
PICKTHAL: This day no soul is wronged in aught; nor are ye requited aught save what ye used to do.
SHAKIR: So this day no soul shall be dealt with unjustly in the least; and you shall not be rewarded aught but that which you did.
KHALIFA: On that day, no soul will be wronged in the least. You will be paid precisely for whatever you did.

৫৪। সেদিন কারও প্রতি বিন্দুমাত্র অবিচার করা হবে না। অতীতে তোমরা [ দুনিয়ায় ] যা করতে শুধু তারই মূল্য পরিশোধ ৪০০০ করা হবে।

৪০০০। শেষ বিচার সংঘটিত হবে আল্লাহ্‌র মহিমা ও ন্যায়বিচারের দ্বারা। প্রত্যেকেরই কৃতকর্মের ফল দান করা হবে। তিল পরিমাণ সুকৃতিও হারিয়ে যাবে না। যদিও পূণ্যাত্মাদের পুরষ্কার তাদের কৃতকর্মের জন্য যা প্রাপ্য, তার বহুগুণ করে দেয়া হবে ; পাপীদের শাস্তি ততটুকুই দেয়া হবে যতটুকু অপরাধ তারা করেছে ; তার বেশী নয়। দেখুন [ ২৮ : ৮৪ ] আয়াত।

 

আয়াতঃ 036.055

এদিন জান্নাতীরা আনন্দে মশগুল থাকবে।
Verily the Companions of the Garden shall that Day have joy in all that they do;

إِنَّ أَصْحَابَ الْجَنَّةِ الْيَوْمَ فِي شُغُلٍ فَاكِهُونَ
Inna as-haba aljannati alyawma fee shughulin fakihoona

YUSUFALI: Verily the Companions of the Garden shall that Day have joy in all that they do;
PICKTHAL: Lo! those who merit paradise this day are happily employed,
SHAKIR: Surely the dwellers of the garden shall on that day be in an occupation quite happy.
KHALIFA: The dwellers of Paradise will be, on that day, happily busy.

৫৫। এই দিনে বেহেশতের অধিবাসীগণ আনন্দে মগ্ন থাকবে ; ৪০০১

৪০০১। লক্ষ্য করুণ বেহেশতের বর্ণনা দান করা হয়েছে ধাপে ধাপে কয়েকটি আয়াতে। বর্ণনায় প্রথমেই যে বর্ণনাটি স্থান লাভ করে তা হচ্ছে স্থান। সে স্থান হবে এক আনন্দময় মনোরম স্থান। বেহেশতকে বিশেষতঃ বাগানের সাথে তুলনা করা হয় এর মনোরম সৌন্দর্য্যকে প্রকাশের জন্য। সেখানের সকল কিছুর স্বাদ ,গন্ধ, অনুভূতি,দৃশ্য সবই হবে অতি মনোরম যা প্রকাশ করা পৃথিবীর কোনও ভাষাতেই সম্ভব নয়। আমাদের ধারণা ও অনুভূতির জন্য তা এ ভাবে বর্ণনা করা যায় ; ছোট্ট নদীর কূল ঘেষে সবুজ মাঠ, মাঠের ধারে ফুলের বাগান, লন, সবুজ গাছ, তৃণলতা ,উদ্ভিদ সম্পূর্ণ স্থানকে করেছে মনোরম, ছায়া সন্নিবেশিত ও সুষমামন্ডিত। নদীর কুলকুল ধ্বনির সাথে পাখীর কলকাকলি মিশে যায়, বাতাস ফুলের গন্ধে মাতাল হয়ে পড়ে, অলির গুঞ্জন মনকে নেশাগ্রস্থ করে, তাঁর সাথে মিশে যায় পাখীর কল-কাকলী। নীল আকাশের পটভূমিতে তুষার শুভ্র মেঘের ভেলায় মৃদুমন্দ দক্ষিণা মলয়ে এরূপ বাগানে অবস্থান কতই না মনোরম। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অনুভূতিকে পরিতৃপ্ত করার জন্য সেখানে থাকবে সুমিষ্ঠ ফলের সমাহার। বেহেশতের আনন্দ , শান্তি, তৃপ্তি ,সবই হবে সীমাহীন, কোনদিনও তা ক্লান্তিকর মনে হবে না। সেখানের অবস্থান হবে চিরশান্তির চির আনন্দের দেশ।

 

আয়াতঃ 036.056

তারা এবং তাদের স্ত্রীরা উপবিষ্ট থাকবে ছায়াময় পরিবেশে আসনে হেলান দিয়ে।
They and their associates will be in groves of (cool) shade, reclining on Thrones (of dignity);

هُمْ وَأَزْوَاجُهُمْ فِي ظِلَالٍ عَلَى الْأَرَائِكِ مُتَّكِؤُونَ
Hum waazwajuhum fee thilalin AAala al-ara-iki muttaki-oona

YUSUFALI: They and their associates will be in groves of (cool) shade, reclining on Thrones (of dignity);
PICKTHAL: They and their wives, in pleasant shade, on thrones reclining;
SHAKIR: They and their wives shall be in shades, reclining on raised couches.
KHALIFA: They abide with their spouses in beautiful shade, enjoying comfortable furnishings.

৫৬। তারা এবং তাদের সাথীগণ ৪০০২, কুঞ্জবনের [ সুশীতল ] ছায়াতে [সম্মানের ] সিংহাসনে হেলান দিয়ে বসবে।

৪০০২। আনন্দ ও সুখ শান্তির অনুভূতি যখন তীব্র হয়, অন্যের সাথে অংশগ্রহণে তার তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পায়, তৃপ্তি ও শান্তিতে হৃদয় মন ভরে যায়। বেহেশতের দ্বিতীয় বর্ণনাতে আছে সাথীর কথা, সব কিছু ভোগ করার জন্য আত্মার সঙ্গী বা সঙ্গীনি থাকবে যেনো বেহেশতের সুখ-শান্তি, আনন্দ উপভোগ্য হয়। নিঃসঙ্গতা যেনো কষ্ট না দেয়। অনুবাদে সঙ্গিনী শব্দটি প্রযোজ্য হলে নারীদের জন্য নিঃসঙ্গতার বার্তা বহন করে। অনুবাদের শব্দটি হবে ‘সাথী’ যাতে উভয় লিঙ্গকে বোঝায়। দেখুন টিকা নং ৪৪ এবং আয়াত [ ৪ : ৫৭ ]।

 

আয়াতঃ  036.057

সেখানে তাদের জন্যে থাকবে ফল-মূল এবং যা চাইবে।
(Every) fruit (enjoyment) will be there for them; they shall have whatever they call for;

لَهُمْ فِيهَا فَاكِهَةٌ وَلَهُم مَّا يَدَّعُونَ
Lahum feeha fakihatun walahum ma yaddaAAoona

YUSUFALI: (Every) fruit (enjoyment) will be there for them; they shall have whatever they call for;
PICKTHAL: Theirs the fruit (of their good deeds) and theirs (all) that they ask;
SHAKIR: They shall have fruits therein, and they shall have whatever they desire.
KHALIFA: They will have fruits therein; they will have anything they wish.

৫৭। [ উপভোগের সকল রকম ] ফল সেখানে তাদের জন্য থাকবে। তারা যা চাইবে তাই-ই পাবে ৪০০৩।

৪০০৩। বেহেশতের বর্ণনায় তৃতীয় কথা বলা হয়েছে যে, এই সুখানুভূতি , শান্তি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে উৎসারিত হবে। ” বাঞ্ছিত সমস্ত কিছু ” – অর্থাৎ অন্তর যা কিছু কামনা করবে তাই তাদের পরিতৃপ্তির জন্য সেখানে থাকবে।

 

আয়াতঃ 036.058

করুণাময় পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাদেরকে বলা হবে সালাম।
“Peace!” – a word (of salutation) from a Lord Most Merciful!

سَلَامٌ قَوْلًا مِن رَّبٍّ رَّحِيمٍ
Salamun qawlan min rabbin raheemin

YUSUFALI: “Peace!” – a word (of salutation) from a Lord Most Merciful!
PICKTHAL: The word from a Merciful Lord (for them) is: Peace!
SHAKIR: Peace: a word from a Merciful Lord.
KHALIFA: Greetings of peace from a Most Merciful Lord.

৫৮। “শান্তি !” – পরম দয়ালু প্রভুর নিকট থেকে সম্ভাষণ ৪০০৪।

৪০০৪। বেহেশতি শান্তির সর্বোচ্চ অবস্থা এই আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে। দেখুন আয়াত [ ১০ : ১০]। আল্লাহ্‌ স্বয়ং মোমেন বান্দাদের ‘সালাম’ জানাবেন। ‘সালাম’ অর্থ শান্তি -তিনি অবারিত হস্তে পূণ্যাত্মাদের উপরে শান্তির বারি বর্ষণ করবেন। সেই চিরমুক্তি , চিরশান্তির দেশে মানবাত্মা অসীম শান্তির রাজ্যে ডুবে যাবে। আল্লাহ্‌ শুধু আমাদের প্রভু ও পালনকর্তাই নন , তাঁর সর্বোচ্চ মহিমা হচ্ছে, করুণা, দয়া, শান্তি ও সমন্বিত শৃঙ্খলা। ‘সালাম’ শব্দটি বান্দার জন্য এ সব কিছুই বহন কর আনে।

 

আয়াতঃ 036.059

হে অপরাধীরা! আজ তোমরা আলাদা হয়ে যাও।
“And O ye in sin! Get ye apart this Day!

وَامْتَازُوا الْيَوْمَ أَيُّهَا الْمُجْرِمُونَ
Waimtazoo alyawma ayyuha almujrimoona

YUSUFALI: “And O ye in sin! Get ye apart this Day!
PICKTHAL: But avaunt ye, O ye guilty, this day!
SHAKIR: And get aside today, O guilty ones!
KHALIFA: As for you, O guilty ones, you will be set aside.

৫৯। ” আর যারা পাপে আসক্ত ! আজকের দিনে তোমরা পৃথক হয়ে যাও ৪০০৫।

৪০০৫। আল্লাহ্‌র আশীর্বাদ ধন্যদের অবস্থা ধাপে ধাপে বর্ণনার পরে সর্বোচ্চ পরিপূর্ণতা বর্ণনা করা হয়েছে আল্লাহ্‌র সম্বোধনের মাধ্যমে ; ‘সালাম’ বা পরিপূর্ণ শান্তি হচ্ছে সেই বিশেষ অবস্থা। এই বর্ণনার পটভূমিতে বলা হয়েছে পাপীদের কথা।

প্রথমে বলা হয়েছে ; তাদের পৃথকীকরণ অবস্থা। পৃথিবীতে পাপী ও পূণ্যাত্মা পাশাপাশি থাকে। কিন্তু পৃথিবীর জীবন শেষে পরলোকে শেষ বিচারের দিনে পাপীরা পূণ্যাত্মাদের সাথে সহ অবস্থানে থাকার সুযোগ পাবে না। পৃথিবীতে পূণ্যাত্মাদের কাছাকাছি থেকে তারা আত্মিক উন্নতির সুযোগ গ্রহণ করতে পারতো , কিন্তু তারা সে সুযোগ পৃথিবীতে গ্রহণ করে নাই। এখন পরলোকে প্রথমেই তাদের পূণ্যাত্মাদের নিকট থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে। শেষ বিচারের দিন হবে “পৃথকীকরণের দিন” বা ভালো ও মন্দের বিচ্ছিন্নকরণের দিন। প্রতিটি আত্মা তার প্রকৃত অবস্থাকে উপলব্ধি করতে পারবে। প্রকৃত সত্যকে অনুধাবনের মাধ্যমে সে পৃথিবীতে তার কৃতকর্মের পরিণাম বুঝতে সক্ষম হবে। কারণ তখন তার পৃথিবীর ‘শিক্ষানবীশকাল ‘ শেষ হয়ে যাবে – যে জীবনে আর ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়।

 

আয়াতঃ  036.060

হে বনী-আদম! আমি কি তোমাদেরকে বলে রাখিনি যে, শয়তানের এবাদত করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু?
“Did I not enjoin on you, O ye Children of Adam, that ye should not worship Satan; for that he was to you an enemy avowed?-

أَلَمْ أَعْهَدْ إِلَيْكُمْ يَا بَنِي آدَمَ أَن لَّا تَعْبُدُوا الشَّيْطَانَ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
Alam aAAhad ilaykum ya banee adama an la taAAbudoo alshshaytana innahu lakum AAaduwwun mubeenun

YUSUFALI: “Did I not enjoin on you, O ye Children of Adam, that ye should not worship Satan; for that he was to you an enemy avowed?-
PICKTHAL: Did I not charge you, O ye sons of Adam, that ye worship not the devil – Lo! he is your open foe! –
SHAKIR: Did I not charge you, O children of Adam ! that you should not serve the Shaitan? Surely he is your open enemy,
KHALIFA: Did I not covenant with you, O Children of Adam, that you shall not worship the devil? That he is your most ardent enemy?

৬০। ” হে আদমের সন্তানগণ ! আমি কি তোমাদের এই নির্দ্দেশ দিই নাই যে , তোমরা শয়তানের দাসত্ব করবে না ? কারণ সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু ৪০০৬,-

৪০০৬। দ্বিতীয়তঃ এই আয়াতে পাপীদের মৃদু ভর্ৎসনা করা হয়েছে, যে ভর্ৎসনার সাথে রাগ অপেক্ষা দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে অধিক। তাদের সকলকে সম্বোধন করা হয়েছে , ” বনী আদম” বা আদমের সন্তান রূপে। এখানে দুটো বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে :

১) হযরত আদম বেহেশতে শয়তানের প্রলোভনে আল্লাহ্‌র আদেশ অমান্য করেন কিন্তু পরে অনুতপ্ত হলে আল্লাহ্‌ তাঁকে ক্ষমা করে দেন এবং তাঁকে ও তাঁর সন্তানদের সম্মানিত করেন পৃথিবীতে আল্লাহ্‌র প্রতিনিধিরূপে। পাপীরা তাদের পাপ কাজ দ্বারা আল্লাহ্‌র দেয়া দায়িত্বের অবমাননা করে , ফলে তারা তাদের পূর্বপুরুষের অসম্মান করে।

২) পরম করুণাময় আল্লাহ্‌ যুগে যুগে নবী রসুলদের দ্বারা মানুষকে শয়তানের প্রতারণার বিরুদ্ধে সর্তক করে দিয়েছেন। বলা হয়েছে শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। একথাও বলা হয়েছে যে, আল্লাহ্‌র করুণা সর্বদা মানুষকে শয়তানের ফাঁদ থেকে রক্ষা করার জন্য ব্যকুল।

 

আয়াতঃ 036.061

এবং আমার এবাদত কর। এটাই সরল পথ।
“And that ye should worship Me, (for that) this was the Straight Way?

وَأَنْ اعْبُدُونِي هَذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيمٌ
Waani oAAbudoonee hatha siratun mustaqeemun

YUSUFALI: “And that ye should worship Me, (for that) this was the Straight Way?
PICKTHAL: But that ye worship Me? That was the right path.
SHAKIR: And that you should serve Me; this is the right way.
KHALIFA: And that you shall worship Me alone? This is the right path.

৬১। ” এবং তোমরা আমারই এবাদত করবে ৪০০৭ ; [ কারণ ] এটাই ছিলো সরল পথ।

৪০০৭। তৃতীয়তঃ পাপীদের সর্তক করার পরেও তাদের জন্য সুসংবাদ দান করা হয়েছে। তাদের সরল পথের ঠিকানা বলা হয়েছে। এই সেই পথ যে পথে আল্লাহ্‌র রহমত ও করুণা লাভ করা যায় এবং শান্তির সন্ধান লাভ করা যায়। সরল পথের বর্ণনায় বলা হয়, এই সেই রজ্জু যা ডুবন্ত জাহাজের যাত্রীদের রক্ষার জন্য নিক্ষেপ করা হয়েছে , এই সেই বর্ম বা ঢাল যা তাদের শয়তানের অপমান থেকে রক্ষা করবে , এই সেই দরজা যা আল্লাহ্‌র সান্নিধ্য লাভের দুয়ার খুলে দেবে।

 

আয়াতঃ 036.062

শয়তান তোমাদের অনেক দলকে পথভ্রষ্ট করেছে। তবুও কি তোমরা বুঝনি?
“But he did lead astray a great multitude of you. Did ye not, then, understand?

وَلَقَدْ أَضَلَّ مِنكُمْ جِبِلًّا كَثِيرًا أَفَلَمْ تَكُونُوا تَعْقِلُونَ
Walaqad adalla minkum jibillan katheeran afalam takoonoo taAAqiloona

YUSUFALI: “But he did lead astray a great multitude of you. Did ye not, then, understand?
PICKTHAL: Yet he hath led astray of you a great multitude. Had ye then no sense?
SHAKIR: And certainly he led astray numerous people from among you. What! could you not then understand?
KHALIFA: He has misled multitudes of you. Did you not possess any understanding?

৬২। ” কিন্তু শয়তান তোমাদের অনেককেই বিপথগামী করেছিলো। তোমরা কি তা বুঝতে পার নাই ? ৪০০৮

৪০০৮। চতুর্থতঃ এই আয়াতে আল্লাহ্‌ মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন যে, তিনি মানুষকে ভালো-মন্দ বোঝার ক্ষমতা বা বিবেক দান করেছেন , তারা যেনো জীবনের সকল কাজে সেই বিবেকের ব্যবহার করে। ভালো-মন্দ , ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যার ওজন বিবেকের দাঁড়িপাল্লাতে করে জীবনের পথে অগ্রসর হতে হয়- তাদের জন্য সেটাই হবে সর্বশ্রেষ্ঠ। কিন্তু মানুষ তবুও শয়তানের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়। এই বিভ্রান্তি শুধু দু একজনের নয়, বহু মানুষের ঘটে। বিপথের বা শয়তানের আকর্ষণ অত্যন্ত তীব্র – খুব সহজেই মানুষ সে পথে ধাবিত হয় এবং শীঘ্রই তারা দলবদ্ধভাবে তা করে। আল্লাহ্‌র সদয় তত্বাবধানে প্রতিটি মানুষের জন্য অবারিত , কিন্তু তবুও মানুষ তা পরিত্যাগ করে শয়তানের বিভ্রান্তিতে যুথবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পতঙ্গ যে ভাবে বহ্নিশিখাতে আত্মাহুতি দেয়।

 

আয়াতঃ 036.063

এই সে জাহান্নাম, যার ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হতো।
“This is the Hell of which ye were (repeatedly) warned!

هَذِهِ جَهَنَّمُ الَّتِي كُنتُمْ تُوعَدُونَ
Hathihi jahannamu allatee kuntum tooAAadoona

YUSUFALI: “This is the Hell of which ye were (repeatedly) warned!
PICKTHAL: This is hell which ye were promised (if ye followed him).
SHAKIR: This is the hell with which you were threatened.
KHALIFA: This is the Hell that was promised for you.

৬৩। ” এটাই হলো জাহান্নাম , যার সর্ম্পকে তোমাদের [ বারে বারে ] সর্তক করা হয়েছিলো ৪০০৯।

৪০০৯। পঞ্চমতঃ পাপীদের পরিণামকে এখানে সংক্ষেপে সুস্পষ্ট রূপে প্রকাশ করা হয়েছে। জাহান্নাম – যে অবস্থাকে তারা খুব সহজেই পরিহার করে চলতে পারতো।

 

আয়াতঃ 036.064

তোমাদের কুফরের কারণে আজ এতে প্রবেশ কর।
“Embrace ye the (fire) this Day, for that ye (persistently) rejected (Truth).”

اصْلَوْهَا الْيَوْمَ بِمَا كُنتُمْ تَكْفُرُونَ
Islawha alyawma bima kuntum takfuroona

YUSUFALI: “Embrace ye the (fire) this Day, for that ye (persistently) rejected (Truth).”
PICKTHAL: Burn therein this day for that ye disbelieved.
SHAKIR: Enter into it this day because you disbelieved.
KHALIFA: Today you will burn in it, as a consequence of your disbelief.

৬৪।”[ সত্যকে নাছোরবান্দাভাবে ] প্রত্যাখানের জন্য আজকের দিনে আগুনকে আলিঙ্গন কর।” ৪০১০

৪০১০। পৃথিবীতে তারা ইচ্ছাকৃত , একগুঁয়ে এবং অবাধ্যভাবে আল্লাহ্‌র শিক্ষা, পথনির্দ্দেশ এবং সর্তকবাণীকে অটলভাবে উপেক্ষা করেছে কারণ তারা তা অবিশ্বাস করতো। সেহেতু এখন তাদের বলা হচ্ছে দোযখের শাস্তিকে আস্বাদন করার জন্য। এটা তাদের কৃতকর্মের প্রতিফল বা ফলশ্রুতি।

 

আয়াতঃ 036.065

আজ আমি তাদের মুখে মোহর এঁটে দেব তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে।
That Day shall We set a seal on their mouths. But their hands will speak to us, and their feet bear witness, to all that they did.

الْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلَى أَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَا أَيْدِيهِمْ وَتَشْهَدُ أَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ
Alyawma nakhtimu AAala afwahihim watukallimuna aydeehim watashhadu arjuluhum bima kanoo yaksiboona

YUSUFALI: That Day shall We set a seal on their mouths. But their hands will speak to us, and their feet bear witness, to all that they did.
PICKTHAL: This day We seal up their mouths, and their hands speak out to Us and their feet bear witness as to what they used to earn.
SHAKIR: On that day We will set a seal upon their mouths, and their hands shall speak to Us, and their feet shall bear witness of what they earned.
KHALIFA: On that day we will seal their mouths; their hands and feet will bear witness to everything they had done.

৬৫। সেদিন আমি তাদের মুখে মোহর এঁটে দেবো ৪০১১। কিন্তু তাদের হস্তদ্বয় আমার সাথে কথা বলবে , এবং তাদের চরণদ্বয় তারা যা করেছিলো [ সে সম্বন্ধে ] সাক্ষ্য দেবে।

৪০১১।শেষ বিচারের দিনে পাপীদের অবস্থা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, তাদের নিকট থেকে মুখের ভাষা কেড়ে নেয়া হবে, তারা বোবা জন্তুর মত আচরণ করবে। তারা আত্মরক্ষা বা প্রতিরক্ষার জন্য কোনও কথাই উচ্চারণ করতে পারবে না। প্রতিটি কর্মেরই প্রতিফল বর্তমান। পৃথিবীতে তাদের ভাষার জন্য মুখ দান করা হয়েছিলো , কিন্তু তারা তার অপব্যবহারের মাধ্যমে দোযখের উপযুক্ত হয়েছে সুতারাং তার প্রকাশ ক্ষমতা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পৃথিবীতে হাত বা পা এদের কোন প্রকাশ ক্ষমতা ছিলো না। এখন তাদের প্রকাশ ক্ষমতা হবে তারা সাক্ষ্য দান করবে। “হস্ত এবং চরণ ” এ দুটি শব্দ এখানে প্রতীক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। পৃথিবীতে হাত এবং পা হচ্ছে কর্ম দক্ষতার যন্ত্র স্বরূপ – কারণ পৃথিবীতে সকল কাজই সম্পাদন করা হয় হাত ও পায়ের সাহায্যে। সুতারাং সকল সম্পাদিত কর্মের প্রতীক হচ্ছে “হস্ত এবং চরণ”।

এভাবেই চক্ষুকে প্রতীক হিসেবে উত্থাপন করা হয়েছে পরের আয়াতে। অনুরূপ আয়াতের জন্য দেখুন [ ৪১ : ২০-২১ ] ,যেখানে চক্ষু, কান, গাত্রচর্মের উল্লেখ আছে যারা তাদের অপব্যবহারের দ্বারা অপবিত্র করার বিরুদ্ধে শেষ বিচারের দিনে সাক্ষ্য দান করবে। সকল কাজেরই পরিণাম বিদ্যমান , যা আল্লাহ্‌র আইন অনুযায়ী পরিচালিত হয়; যার উল্লেখ করা হয়েছে কোরাণের ভাষাতে। পাপীদের পরিণাম নির্ধারিত হবে তাদেরই কর্মফল দ্বারা যা তারা দুনিয়াতে করে থাকে।

 

আয়াতঃ 036.066

আমি ইচ্ছা করলে তাদের দৃষ্টি শক্তি বিলুপ্ত করে দিতে পারতাম, তখন তারা পথের দিকে দৌড়াতে চাইলে কেমন করে দেখতে পেত!
If it had been our Will, We could surely have blotted out their eyes; then should they have run about groping for the Path, but how could they have seen?

وَلَوْ نَشَاء لَطَمَسْنَا عَلَى أَعْيُنِهِمْ فَاسْتَبَقُوا الصِّرَاطَ فَأَنَّى يُبْصِرُونَ
Walaw nashao latamasna AAala aAAyunihim faistabaqoo alssirata faanna yubsiroona

YUSUFALI: If it had been our Will, We could surely have blotted out their eyes; then should they have run about groping for the Path, but how could they have seen?
PICKTHAL: And had We willed, We verily could have quenched their eyesight so that they should struggle for the way. Then how could they have seen?
SHAKIR: And if We please We would certainly put out their eyes, then they would run about groping for the way, but how should they see?
KHALIFA: If we will, we can veil their eyes and, consequently, when they seek the path, they will not see.

৬৬। এটা যদি আমি ইচ্ছা করতাম তাহলে তাদের চক্ষুদ্বয়কে মুছে ফেলতে পারতাম। তখন তারা অন্ধকারে পথ চলতো হাতড়িয়ে কিন্তু তারা কিভাবে দেখতে পেতো ? ৪০১২

৪০১২। “আমি ইচ্ছা করলে” – অর্থাৎ যদি তা আল্লাহ্‌র পরিকল্পনার অন্তর্গত হয়। যদি আল্লাহ্‌ সীমিত স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দান না করতেন ,ভালো মন্দ ,পাপ-পূণ্যকে নিজ বিচার বিবেচনার ক্ষমতা দান না করতেন তবে সম্পূর্ণ ঘটনা ভিন্নরূপ ধারণ করতো। পৃথিবীতে মানুষ ব্যতীত অন্যান্য জীবিত প্রাণীরা যথা প্রাণীজগৎ , উদ্ভিদ জগৎ কেউই বিবেক প্রাপ্ত নয় এবং কাউকে আল্লাহ্‌ সীমিত স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি দান করেন নাই , সুতারাং তাদের কোন নৈতিক দায়-দায়িত্বও থাকে না , যার জন্য তাদের জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে। তাদের কোন বুদ্ধি নাই অর্থাৎ দেখার ক্ষমতা নাই – স্রষ্টা যদি ইচ্ছা করতেন তবে মানুষকেও এই অবস্থা দান করতে পারতেন। তখন মানুষ প্রাণী কূলের ন্যায় চক্ষু থাকতেও অন্ধ সমতুল্য হতো, একেই বলা হয়েছে “চক্ষুদ্বয়কে মুছে ফেলতে পারতাম।” বিবেক বুদ্ধি না থাকার দরুণ তাদের বোঝার ক্ষমতা থাকতো না, সুতারাং জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হতো না। কিন্তু মানুষের জন্য ব্যাপারটি তো তা নয়।

 

আয়াতঃ 036.067

আমি ইচ্ছা করলে তাদেরকে স্ব স্ব স্থানে আকার বিকৃত করতে পারতাম, ফলে তারা আগেও চলতে পারত না এবং পেছনেও ফিরে যেতে পারত না।
And if it had been Our Will, We could have transformed them (to remain) in their places; then should they have been unable to move about, nor could they have returned (after error).

وَلَوْ نَشَاء لَمَسَخْنَاهُمْ عَلَى مَكَانَتِهِمْ فَمَا اسْتَطَاعُوا مُضِيًّا وَلَا يَرْجِعُونَ
Walaw nashao lamasakhnahum AAala makanatihim fama istataAAoo mudiyyan wala yarjiAAoona

YUSUFALI: And if it had been Our Will, We could have transformed them (to remain) in their places; then should they have been unable to move about, nor could they have returned (after error).
PICKTHAL: And had We willed, We verily could have fixed them in their place, making them powerless to go forward or turn back.
SHAKIR: And if We please We would surely transform them in their place, then they would not be able to go on, nor will they return.
KHALIFA: If we will, we can freeze them in place; thus, they can neither move forward, nor go back.

৬৭। এবং আমি যদি ইচ্ছা করতাম তবে তাদের স্ব স্থানে [ স্থির ] থাকার মত [ প্রাণী বা পদার্থে ] রূপান্তরিত করে দিতে পারতাম ৪০১৩। তাহলে তারা চলতে সক্ষম হতো না অথবা [ভুল করার পরে ] ফিরে আসতে পারতো না।

৪০১৩। আল্লাহ্‌ মানুষকে সীমিত স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তবে তিনি যদি ইচ্ছা করতেন তবে মানুষকে বর্তমান রূপে সৃষ্টি না করে অন্যরূপেও সৃষ্টি করতে পারতেন যারা হতো গাছের মত চলশক্তিহীন বা এমন প্রাণী যাদের কোন আধ্যাত্মিক শক্তি থাকতো না। এই আধ্যাত্মিক শক্তির কারণেই মানুষ হচ্ছে মানুষ – আল্লাহ্‌র প্রাণীকূলের শ্রেষ্ঠ প্রাণী, আশরাফুল মাখলুকাত বা আল্লাহ্‌র প্রতিনিধি। মানুষের জন্য এ এক বিশাল সম্মান ও মহান দায়িত্ব স্রষ্টার নিকট থেকে প্রাপ্ত। যদি মানুষ তার পথে চলতে ভুল ভ্রান্তি করে এবং বিপথে চালিত হয় , তবে অপার করুণাময় স্রষ্টা তার জন্য অনুতাপের মাধ্যমে সঠিক পথে ফিরে আসার পথ উম্মুক্ত রেখেছেন ; যেনো আধ্যাত্মিক উন্নতির দুয়ার তার জন্য রুদ্ধ হয়ে না যায়। মানুষকে আধ্যাত্মিক ক্ষমতা দান পরম করুণাময়ের ইচ্ছা। মানুষের জন্য এ হচ্ছে এক বিশেষ সুবিধা ও সম্মান যার দায় দায়িত্ব মানুষকেই নিতে হবে। ভালো কাজের পুরষ্কার ও মন্দ কাজের শাস্তি।

 

আয়াতঃ 036.068

আমি যাকে দীর্ঘ জীবন দান করি, তাকে সৃষ্টিগত পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেই। তবুও কি তারা বুঝে না?
If We grant long life to any, We cause him to be reversed in nature: Will they not then understand?

وَمَنْ نُعَمِّرْهُ نُنَكِّسْهُ فِي الْخَلْقِ أَفَلَا يَعْقِلُونَ
Waman nuAAammirhu nunakkis-hu fee alkhalqi afala yaAAqiloona

YUSUFALI: If We grant long life to any, We cause him to be reversed in nature: Will they not then understand?
PICKTHAL: He whom we bring unto old age, We reverse him in creation (making him go back to weakness after strength). Have ye then no sense?
SHAKIR: And whomsoever We cause to live long, We reduce (him) to an abject state in constitution; do they not then understand?
KHALIFA: Whomever we permit to live for a long time, we revert him to weakness. Do they not understand?

রুকু – ৫

৬৮। যদি আমি কাউকে দীর্ঘজীবন দান করি , আমি তাকে প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী পিছন দিকে ফিরিয়ে দেই ৪০১৪। তবুও কি তারা বুঝবে না ?

৪০১৪। এই আয়াতটি পূর্বের আয়াতের ধারাবাহিকতা স্বরূপ। কারণ এই আয়াতেও আল্লাহ্‌র ক্ষমতাকে প্রকাশ করা হয়েছে এবং একে অনুধাবন করার জন্য উদাহরণের উল্লেখ করা হয়েছে যার সাহায্যে মানুষকে চিন্তা করে উপলব্ধি করতে বলা হয়েছে। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সম্পূর্ণ ব্যাপারটি গভীরভাবে চিন্তা করলে মানুষকে অবশ্যই অভিভূত ভাবে বলতে হবে ” আল্লাহ্‌ তুমি-ই মহান ও ধন্য।” মানব সন্তান পৃথিবীতে আসে সকল প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে অসহায় অবস্থায় সে একটি মাংসের মন্ড ব্যতীত অন্য কিছু নয়। আস্তে আস্তে সে বড় হয় এবং বিভিন্ন নৈতিক ও চারিত্রিক গুণাবলীতে আল্লাহ্‌ তাঁকে ধন্য করেন। তার মাঝে জন্ম নেয় সাহস, শৈর্য্য-বীর্য, অজানাকে জয়ের আকাঙ্খা, জ্ঞান, প্রজ্ঞা ইত্যাদি। ধীরে ধীরে সে নিজেকে প্রকাশ করে – পৃথিবীকে সে তার সেবা দিয়ে ধন্য করে, পৃথিবীর অগ্রযাত্রায় সে অংশগ্রহণ করে। যৌবনে সে মধ্যাহ্ন সূর্যের ন্যায় দীপ্ত , ভাস্বর । এর পরে আসে বাদ্ধর্ক্য। ধীরে ধীরে তার সকল গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য লুপ্ত হয়ে সে আবার শিশুর ন্যায় আচরণ প্রাপ্ত হয়। একই জীবনে সে আবার শৈশব প্রাপ্ত হয়। যে মানুষ উন্নত মস্তকে দৃপ্ত পদভরে ,পৃথিবীতে প্রকম্পিত করতো , সেই মানুষ কুব্জনুব্জ ভাবে কম্পিত পদক্ষেপে পদচারণ করে। একই মানুষের মাঝে বিভিন্ন বয়েসে যে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে থাকে সেকি স্রষ্টার সৃষ্টি নৈপুন্যের স্বাক্ষর নয় ? যদি একই ব্যক্তির বিভিন্ন পরিবর্তন স্রষ্টা করতে পারেন এই পৃথিবীতেই তবে সেই মানুষকে পুণঃসৃষ্টি আল্লাহ্‌র পক্ষে কত সহজ। মানুষের দোষত্রুটি সত্বেও আল্লাহ্‌ মানুষকে করেছেন সম্মানীত যা বর্ণনা করা হয়েছে উপরের আয়াতে।

 

আয়াতঃ 036.069

আমি রসূলকে কবিতা শিক্ষা দেইনি এবং তা তার জন্যে শোভনীয়ও নয়। এটা তো এক উপদেশ ও প্রকাশ্য কোরআন।
We have not instructed the (Prophet) in Poetry, nor is it meet for him: this is no less than a Message and a Qur’an making things clear:

وَمَا عَلَّمْنَاهُ الشِّعْرَ وَمَا يَنبَغِي لَهُ إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرٌ وَقُرْآنٌ مُّبِينٌ
Wama AAallamnahu alshshiAAra wama yanbaghee lahu in huwa illa thikrun waqur-anun mubeenun

YUSUFALI: We have not instructed the (Prophet) in Poetry, nor is it meet for him: this is no less than a Message and a Qur’an making things clear:
PICKTHAL: And We have not taught him (Muhammad) poetry, nor is it meet for him. This is naught else than a Reminder and a Lecture making plain,
SHAKIR: And We have not taught him poetry, nor is it meet for him; it is nothing but a reminder and a plain Quran,
KHALIFA: What we taught him (the messenger) was not poetry, nor is he (a poet). This is but a formidable proof, and a profound Quran.

৬৯। আমি রাসুলকে কাব্য রচনা করতে শিক্ষা দেই নাই ৪০১৫। এটা তার জন্য উপযুক্তও নয়। ইহা তো কেবল এক উপদেশ এবং কুর-আন , যা সব কিছু সুষ্পষ্ট করে থাকে।

৪০১৫। দেখুন আয়াত [ ২৬ : ২২৪ ] এবং টিকা ৩২৩৭ যেখানে কবিদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে। বিশেষত : কাব্য হচ্ছে রূপকথার গল্প স্বরূপ , যার কোনও বাস্তব ভিত্তি নাই যা কাল্পনিক , অবাস্তব ও মিথ্যা ঘটনার বর্ণনা ব্যতীত অন্য কিছু নয়। শুধুমাত্র শব্দের ঝংকারে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ঘটানোর চেষ্টা মাত্র। অপরপক্ষে কোরাণ হচ্ছে, জীবনের বাস্তব পথপ্রদর্শক , সত্য এবং স্বচ্ছ ধারণার প্রকাশ। সুতারাং রাসুলকে কবি বলার অবকাশ নাই , তিনি কোনও কাব্যও রচনা করেন নাই।

 

আয়াতঃ 036.070

যাতে তিনি সতর্ক করেন জীবিতকে এবং যাতে কাফেরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়।
That it may give admonition to any (who are) alive, and that the charge may be proved against those who reject (Truth).

لِيُنذِرَ مَن كَانَ حَيًّا وَيَحِقَّ الْقَوْلُ عَلَى الْكَافِرِينَ
Liyunthira man kana hayyan wayahiqqa alqawlu AAala alkafireena

YUSUFALI: That it may give admonition to any (who are) alive, and that the charge may be proved against those who reject (Truth).
PICKTHAL: To warn whosoever liveth, and that the word may be fulfilled against the disbelievers.
SHAKIR: That it may warn him who would have life, and (that) the word may prove true against the unbelievers.
KHALIFA: To preach to those who are alive, and to expose the disbelievers.

৭০। জীবিতদের যেনো সাবধান করতে পারে ৪০১৬ এবং যারা [ সত্যকে ] প্রত্যাখান করেছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হতে পারে ৪০১৭।

৪০১৬। “জীবিতগণ” এই শব্দটি আক্ষরিক অর্থে এবং উপমার্থে এখানে ব্যবহার করা হয়েছে। আক্ষরিক অর্থে যার জীবন আছে উপমার্থে শুধু শারীরিক জীবন তাই নয়, জীবনের সাথে যে সব কর্মকান্ড জড়িত থাকে তাকেও বোঝানো হয়েছে। ধর্মের পটভূমিতে এই জীবনকে এ ভাবে উপস্থাপন করা যায় ; ধর্মীয় জীবনের আহ্বানে যারা প্রতিবেদনশীল নয় , আধ্যাত্মিক জীবন যাদের নিকট বাস্তব সত্য নয়, তারা শারীরিক দিক থেকে জীবিত থাকলেও তারা মৃত।

মৃত ব্যক্তি যেরূপ কোনও কিছু শুনতে অক্ষম , এরাও সেরূপ আল্লাহ্‌র বাণী বুঝতে পারে না , কারণ আত্মিক দিক থেকে তারা মৃত। আল্লাহ্‌র বাণী তাঁদেরই মর্মদেশে স্থান লাভ করে , অন্তরের অনুভূতিকে স্পর্শ করে যারা আধ্যাত্মিক দিক থেকে জীবন্ত। “জীবিতগণ ” শব্দটি এই আয়াতে আধ্যাত্মিক দিক থেকে জীবিতদের বুঝানো হয়েছে।

৪০১৭। দেখুন আয়াত [ ২৮: ৬৩ ]। যদি বার বার সর্তকতা ও উপদেশের পরেও কেউ সত্যকে প্রত্যাখান করে এবং আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করে , তবে তাদের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে অবাধ্যতা এবং বিদ্রোহের অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত হয়। এরপরে কাফেররা আর এ কথা বলে রেহাই পাবে না যে তারা প্রকৃত সত্য সম্বন্ধে অজ্ঞ ছিলো বা তাদের কেউ সর্তক করে দেয় নাই।

 

আয়াতঃ 036.071

তারা কি দেখে না, তাদের জন্যে আমি আমার নিজ হাতের তৈরী বস্তুর দ্বারা চতুস্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছি, অতঃপর তারাই এগুলোর মালিক।
See they not that it is We Who have created for them – among the things which Our hands have fashioned – cattle, which are under their dominion?-

أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا خَلَقْنَا لَهُمْ مِمَّا عَمِلَتْ أَيْدِينَا أَنْعَامًا فَهُمْ لَهَا مَالِكُونَ
Awa lam yaraw anna khalaqna lahum mimma AAamilat aydeena anAAaman fahum laha malikoona

YUSUFALI: See they not that it is We Who have created for them – among the things which Our hands have fashioned – cattle, which are under their dominion?-
PICKTHAL: Have they not seen how We have created for them of Our handiwork the cattle, so that they are their owners,
SHAKIR: Do they not see that We have created cattle for them, out of what Our hands have wrought, so they are their masters?
KHALIFA: Have they not seen that we created for them, with our own hands, livestock that they own?

৭১। তারা কি দেখে না যে, আমার হাতে সৃষ্ট বস্তুসমূহের মধ্য থেকে আমি তাদের জন্য সৃষ্টি করেছি গৃহপালিত জন্তু ,যেগুলিকে তাদের অধীন করেছি ? – ৪০১৮।
৪০১৮। আল্লাহ্‌র নিদর্শন সমূহের প্রতি এই আয়াতে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। তারা যদি আল্লাহ্‌র হাতের স্পর্শ এই বিশাল বিশ্ব ভূবনের মাঝে অনুভব করতে অক্ষম হয়, তবে তাদের দৈনন্দিক জীবনের ক্ষুদ্র গন্ডিতে তা উপলব্ধি করতে বলা হয়েছে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আল্লাহ্‌র অসীম করুণা, প্রবাহিত। আল্লাহ্‌র করুণায় বন্য প্রাণী মানুষের গৃহে পালিত হয় – যার দ্বারা মানুষ বিভিন্ন ভাবে উপকৃত হয়। মানুষ তাতে আরোহণ করে, ভার বহনের জন্য ব্যবহার করে, তাদের মাংস খায়, দুধ খায় , পশম ব্যবহার করে পশমী বস্ত্রের জন্য। সুতারাং কার অনুগ্রহের ফলে তারা পৃথিবীর জীবন সুখ ও স্বাচ্ছন্দে , আরামে ও আয়েশে ভরে উঠেছে তা উপলব্ধি করতে বলা হয়েছে।

 

আয়াতঃ 036.072

আমি এগুলোকে তাদের হাতে অসহায় করে দিয়েছি। ফলে এদের কতক তাদের বাহন এবং কতক তারা ভক্ষণ করে।
And that We have subjected them to their (use)? of them some do carry them and some they eat:

وَذَلَّلْنَاهَا لَهُمْ فَمِنْهَا رَكُوبُهُمْ وَمِنْهَا يَأْكُلُونَ
Wathallalnaha lahum faminha rakoobuhum waminha ya/kuloona

YUSUFALI: And that We have subjected them to their (use)? of them some do carry them and some they eat:
PICKTHAL: And have subdued them unto them, so that some of them they have for riding, some for food?
SHAKIR: And We have subjected them to them, so some of them they have to ride upon, and some of them they eat.
KHALIFA: And we subdued them for them; some they ride, and some they eat.

৭২। এবং তাদের [ ব্যবহারের ] জন্য বশীভূত করে দিয়েছি ? এগুলির কতক তাদের বহন করে এবং কতক তারা ভক্ষণ করে।

৭৩। এবং [ এছাড়াও ] তাদের জন্য এগুলিতে আছে [বহু ] উপকারিতা ৪০১৯। আর তাদের জন্য আছে পানীয় [ দুগ্ধ ]। তবুও কি তারা কৃতজ্ঞ হবে না ৪০২০।

৪০১৯। বহু উপকারীতা যেমন : পশুর চামড়া ব্যবহৃত হয়, পশম ব্যবহার শীত বস্ত্রের জন্য, ভেড়ার লোমে উল তৈরী হয, উটের লোমে কম্বল ও গরম কাপড় হয়। লোমশ পশুর চামড়া [ far ] কোট তৈরীর জন্য ইত্যাদি বিবিধ ব্যবহার হয়

৪০২০। এতক্ষণ আল্লাহ্‌র করুণার যে বিবরণ দেয়া হলো ,তা এই জন্য যে , আল্লাহ্‌র শিক্ষা মানুষের মঙ্গলের জন্য, এতে আল্লাহ্‌র কোন লাভ নাই। আল্লাহ্‌ মানুষকে তাঁর বিভিন্ন নেয়ামতের ধন্য করেছেন, তবুও কি মানুষ আল্লাহ্‌র আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পরিবর্তে আল্লাহ্‌র আহ্বানকে প্রত্যাখান করে তাদের কাল্পনিক উপাস্যের প্রতি ধাবিত হবে ?

 

আয়াতঃ 036.073

তাদের জন্যে চতুস্পদ জন্তুর মধ্যে অনেক উপকারিতা ও পানীয় রয়েছে। তবুও কেন তারা শুকরিয়া আদায় করে না?
And they have (other) profits from them (besides), and they get (milk) to drink. Will they not then be grateful?

وَلَهُمْ فِيهَا مَنَافِعُ وَمَشَارِبُ أَفَلَا يَشْكُرُونَ
Walahum feeha manafiAAu wamasharibu afala yashkuroona

YUSUFALI: And they have (other) profits from them (besides), and they get (milk) to drink. Will they not then be grateful?
PICKTHAL: Benefits and (divers) drinks have they from them. Will they not then give thanks?
SHAKIR: And therein they have advantages and drinks; will they not then be grateful?
KHALIFA: They derive other benefits from them, as well as drinks. Would they not be appreciative?

৭২। এবং তাদের [ ব্যবহারের ] জন্য বশীভূত করে দিয়েছি ? এগুলির কতক তাদের বহন করে এবং কতক তারা ভক্ষণ করে।

৭৩। এবং [ এছাড়াও ] তাদের জন্য এগুলিতে আছে [বহু ] উপকারিতা ৪০১৯। আর তাদের জন্য আছে পানীয় [ দুগ্ধ ]। তবুও কি তারা কৃতজ্ঞ হবে না ৪০২০।

৪০১৯। বহু উপকারীতা যেমন : পশুর চামড়া ব্যবহৃত হয়, পশম ব্যবহার শীত বস্ত্রের জন্য, ভেড়ার লোমে উল তৈরী হয, উটের লোমে কম্বল ও গরম কাপড় হয়। লোমশ পশুর চামড়া [ far ] কোট তৈরীর জন্য ইত্যাদি বিবিধ ব্যবহার হয়

৪০২০। এতক্ষণ আল্লাহ্‌র করুণার যে বিবরণ দেয়া হলো ,তা এই জন্য যে , আল্লাহ্‌র শিক্ষা মানুষের মঙ্গলের জন্য, এতে আল্লাহ্‌র কোন লাভ নাই। আল্লাহ্‌ মানুষকে তাঁর বিভিন্ন নেয়ামতের ধন্য করেছেন, তবুও কি মানুষ আল্লাহ্‌র আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পরিবর্তে আল্লাহ্‌র আহ্বানকে প্রত্যাখান করে তাদের কাল্পনিক উপাস্যের প্রতি ধাবিত হবে ?

 

আয়াতঃ 036.074

তারা আল্লাহর পরিবর্তে অনেক উপাস্য গ্রহণ করেছে যাতে তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হতে পারে।
Yet they take (for worship) gods other than Allah, (hoping) that they might be helped!

وَاتَّخَذُوا مِن دُونِ اللَّهِ آلِهَةً لَعَلَّهُمْ يُنصَرُونَ
Waittakhathoo min dooni Allahi alihatan laAAallahum yunsaroona

YUSUFALI: Yet they take (for worship) gods other than Allah, (hoping) that they might be helped!
PICKTHAL: And they have taken (other) gods beside Allah, in order that they may be helped.
SHAKIR: And they have taken gods besides Allah that they may be helped.
KHALIFA: They set up beside GOD other gods, perhaps they can be of help to them!

৭৪। তবুও তারা [ উপাসনার জন্য ] আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য দেবতা গ্রহণ করে। [ আশা করে ] তারা হয়তো সাহায্যপ্রাপ্ত হবে।

৭৫। দেবতাদের সাহায্য করার মত কোন ক্ষমতাই নাই। উপরন্তু তাদেরকে উপস্থিত করা হবে [ বিচাকের সম্মুখে ] দল হিসেবে [ নিন্দা জ্ঞাপনের জন্য ] ৪০২১।

৪০২১। এই আয়াতটির ব্যাখ্যা সম্বন্ধে তফসীরকারদের মধ্যে মতভেদ আছে। মওলানা ইউসুফ আলী সাহেবের মতে এর ব্যাখ্যা নিম্নরূপ। মানুষ সুখ ও স্বাচ্ছন্দে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে যায় যে, সে প্রকৃতপক্ষে ভুলে যায় যে, এ সব কিছু আল্লাহ্‌র দান। মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা হচ্ছে আল্লাহকে ভুলে কাল্পনিক শক্তির উপাসনা করা। সকল কল্যাণ ও মঙ্গল যে আল্লাহ্‌র হাতে এই স্বাভাবিক সত্যকে ভুলে সে কাল্পনিক ক্ষমতার দাসত্ব করে তার অস্তিত্ব বা সুখের জন্য। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যেমন : মানুষ পীরের মাজার পূঁজা করে, ভন্ডপীরের আশ্রয় প্রার্থনা করে , আবার কেউ বীর বা আদর্শ পুরুষের পূঁজা করে, যেমন কমুনিষ্টরা তাদের আদর্শের অনুসরণের নামে ব্যক্তিপূঁজা করে থাকে, আবার যারা প্রগতিবাদী তারা বিমূর্ত জিনিষের উপাসনা করে, যেমনঃ এদের কেউ বিজ্ঞানকে সকল শক্তির উৎস মনে করে, আবার কেউ প্রকৃতিবাদী। কেউ কেউ আবার কুসংস্কারচ্ছন্ন , এরা অলৌকিক কর্মকান্ডে যেমন যাদু-টোনা , সৌভাগ্যের জন্য রত্নপাথর ধারণ বা দুর্ভাগ্যের জন্য মাদুলি ধারণ ইত্যাদি। এ সব বিশ্লেষণ করলে যে সত্য বেরিয়ে আসে তা হচ্ছে এরা সকলেই নিজস্ব স্বার্থের পরিপূর্ণতা দানের জন্য আল্লাহ্‌র পরিবর্তে অন্য উপাস্যকে গ্রহণ করে থাকে। এরা মনে করে যে এ সব মিথ্যা উপাস্যরা তাদের ইহকাল এবং পরকাল উভয় দুনিয়াতেই সাহায্য করতে পারবে। অবশ্য তারা যদি সত্যিই পরলোকে বিশ্বাস করে থাকে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এ সব মিথ্যা উপাস্যরা তাদের কোনরূপ উপকার করতে অক্ষম। প্রকৃত পক্ষে যা কিছু মিথ্যা সব কিছু শেষ বিচারের দিনে আল্লাহ্‌র সম্মুখে উপস্থিত করা হবে এবং দণ্ডাদেশ দেয়া হবে। মিথ্যাকে লালন পালন ও বহন করার অপরাধে উপাসনাকারীদের অপরাধী সাব্যাস্ত করা হবে – সুতারাং তারা হবে শাস্তিযোগ্য। সুতারাং মিথ্যা উপাসনা তাদের সাহায্য করার পরিবর্তে তাদের অপরাধ ও শাস্তির বৃদ্ধি করবে।

 

আয়াতঃ 036.075

অথচ এসব উপাস্য তাদেরকে সাহায্য করতে সক্ষম হবে না এবং এগুলো তাদের বাহিনী রূপে ধৃত হয়ে আসবে।
They have not the power to help them: but they will be brought up (before Our Judgment-seat) as a troop (to be condemned).

لَا يَسْتَطِيعُونَ نَصْرَهُمْ وَهُمْ لَهُمْ جُندٌ مُّحْضَرُونَ
La yastateeAAoona nasrahum wahum lahum jundun muhdaroona

YUSUFALI: They have not the power to help them: but they will be brought up (before Our Judgment-seat) as a troop (to be condemned).
PICKTHAL: It is not in their power to help them; but they (the worshippers) are unto them a host in arms.
SHAKIR: (But) they shall not be able to assist them, and they shall be a host brought up before them.
KHALIFA: On the contrary, they cannot help them; they end up serving them as devoted soldiers.

৭৬। [ হে নবী ! ] তাদের কথা যেনো তোমাকে দুঃখিত না করে। অবশ্যই আমি জানি তারা যা গোপন করে এবং তারা যা প্রকাশ করে ৪০২২।

৪০২২। যদি মানুষ এতটাই নির্বুদ্ধি হয় যে তারা এত নিদর্শন দেখা সত্বেও আত্মার মাঝে আল্লাহ্‌র উপস্থিতি অনুভবে অক্ষম হয় এবং আল্লাহকে প্রত্যাখান করে, তবে রসুল [ সা ] যেনো তাদের জন্য দুঃখ অনুভব না করেন। এই উপদেশটি সার্বজনীন। সকল মোমেন ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য। মোমেন বান্দারা তাদের কর্তব্য করে যাবে ফলাফল আল্লাহ্‌র হাতে ন্যস্ত থাকবে। আল্লাহ্‌র সর্বজ্ঞ – প্রকাশ্য ও গোপন সকল কিছুই তিনি জানেন। দুষ্টদের চক্রান্ত সম্বন্ধেও তিনি সম্যক অবগত আছেন। কিন্তু সব কিছুর উপরে আল্লাহ্‌র ক্ষমতা। আল্লাহ্‌র পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হবেই – যত প্রতিবন্ধকতা এবং বাধা আসুক না কেন।

 

আয়াতঃ 036.076

অতএব তাদের কথা যেন আপনাকে দুঃখিত না করে। আমি জানি যা তারা গোপনে করে এবং যা তারা প্রকাশ্যে করে।
Let not their speech, then, grieve thee. Verily We know what they hide as well as what they disclose.

فَلَا يَحْزُنكَ قَوْلُهُمْ إِنَّا نَعْلَمُ مَا يُسِرُّونَ وَمَا يُعْلِنُونَ
Fala yahzunka qawluhum inna naAAlamu ma yusirroona wama yuAAlinoona

YUSUFALI: Let not their speech, then, grieve thee. Verily We know what they hide as well as what they disclose.
PICKTHAL: So let not their speech grieve thee (O Muhammad). Lo! We know what they conceal and what proclaim.
SHAKIR: Therefore let not their speech grieve you; surely We know what they do in secret and what they do openly.
KHALIFA: Therefore, do not be saddened by their utterances. We are fully aware of everything they conceal and everything they declare.

৭৬। [ হে নবী ! ] তাদের কথা যেনো তোমাকে দুঃখিত না করে। অবশ্যই আমি জানি তারা যা গোপন করে এবং তারা যা প্রকাশ করে ৪০২২।

৪০২২। যদি মানুষ এতটাই নির্বুদ্ধি হয় যে তারা এত নিদর্শন দেখা সত্বেও আত্মার মাঝে আল্লাহ্‌র উপস্থিতি অনুভবে অক্ষম হয় এবং আল্লাহকে প্রত্যাখান করে, তবে রসুল [ সা ] যেনো তাদের জন্য দুঃখ অনুভব না করেন। এই উপদেশটি সার্বজনীন। সকল মোমেন ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য। মোমেন বান্দারা তাদের কর্তব্য করে যাবে ফলাফল আল্লাহ্‌র হাতে ন্যস্ত থাকবে। আল্লাহ্‌র সর্বজ্ঞ – প্রকাশ্য ও গোপন সকল কিছুই তিনি জানেন। দুষ্টদের চক্রান্ত সম্বন্ধেও তিনি সম্যক অবগত আছেন। কিন্তু সব কিছুর উপরে আল্লাহ্‌র ক্ষমতা। আল্লাহ্‌র পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হবেই – যত প্রতিবন্ধকতা এবং বাধা আসুক না কেন।

 

আয়াতঃ 036.077

মানুষ কি দেখে না যে, আমি তাকে সৃষ্টি করেছি বীর্য থেকে? অতঃপর তখনই সে হয়ে গেল প্রকাশ্য বাকবিতন্ডাকারী।
Doth not man see that it is We Who created him from sperm? yet behold! he (stands forth) as an open adversary!

أَوَلَمْ يَرَ الْإِنسَانُ أَنَّا خَلَقْنَاهُ مِن نُّطْفَةٍ فَإِذَا هُوَ خَصِيمٌ مُّبِينٌ
Awa lam yara al-insanu anna khalaqnahu min nutfatin fa-itha huwa khaseemun mubeenun

YUSUFALI: Doth not man see that it is We Who created him from sperm? yet behold! he (stands forth) as an open adversary!
PICKTHAL: Hath not man seen that We have created him from a drop of seed? Yet lo! he is an open opponent.
SHAKIR: Does not man see that We have created him from the small seed? Then lo! he is an open disputant.
KHALIFA: Does the human being not see that we created him from a tiny drop, then he turns into an ardent enemy?

৭৭। মানুষ কি দেখে না যে, আমি তাদের [ নগণ্য ] শুক্র বিন্দু থেকে সৃষ্টি করেছি ? ৪০২৩। তবুও দেখ! সে আমার সম্বন্ধে প্রকাশ্যে বিরোধ করছে।

৪০২৩। মানুষের দুর্বিনীত অবাধ্যতা এবং পরিণামে বোকামী এক অসম্ভব অদ্ভুদ ব্যাপার। তারা কি উপলব্ধি করে না যে , আল্লাহ্‌র মাহাত্ব্য ব্যতীত তাদের অস্তিত্ব খুবই নগন্য , ক্ষুদ্র্‌। তাদের সৃষ্টি ক্ষুদ্র্র শুক্রবিন্দু থেকে যা শুধুমাত্র অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যেই দেখা যায়। বিশাল সমুদ্রের মাঝে একবিন্দু পানির ক্ষুদ্রত্বের যে তুলনা শুক্রবিন্দুর তুলনা সেরূপ। যার উৎপত্তি এত ক্ষুদ্র – এতো আল্লাহ্‌রই অনুগ্রহ যে, সে পৃথিবীতে মানুষরূপে আর্বিভূত হয়। এর পরেও মানুষ আল্লাহ্‌র সাথে স্পর্ধা ও ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে, স্রষ্টা সম্বন্ধে তর্কবির্তকে লিপ্ত হয় এবং অলীক তুলনা করে, যার কথা পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে।

 

আয়াতঃ 036.078

সে আমার সম্পর্কে এক অদ্ভূত কথা বর্ণনা করে, অথচ সে নিজের সৃষ্টি ভুলে যায়। সে বলে কে জীবিত করবে অস্থিসমূহকে যখন সেগুলো পচে গলে যাবে?
And he makes comparisons for Us, and forgets his own (origin and) Creation: He says, “Who can give life to (dry) bones and decomposed ones (at that)?”

وَضَرَبَ لَنَا مَثَلًا وَنَسِيَ خَلْقَهُ قَالَ مَنْ يُحْيِي الْعِظَامَ وَهِيَ رَمِيمٌ
Wadaraba lana mathalan wanasiya khalqahu qala man yuhyee alAAithama wahiya rameemun

YUSUFALI: And he makes comparisons for Us, and forgets his own (origin and) Creation: He says, “Who can give life to (dry) bones and decomposed ones (at that)?”
PICKTHAL: And he hath coined for Us a similitude, and hath forgotten the fact of his creation, saying: Who will revive these bones when they have rotted away?
SHAKIR: And he strikes out a likeness for Us and forgets his own creation. Says he: Who will give life to the bones when they are rotten?
KHALIFA: He raises a question to us – while forgetting his initial creation – “Who can resurrect the bones after they had rotted?”

৭৮। সে আমার সমকক্ষ তুলনা করে , এবং নিজের সৃষ্টির [প্রথম আরম্ভ ] ভুলে যায় ৪০২৪। সে বলে, ” [ শুষ্ক ] অস্থিতে কে জীবন সঞ্চারণ করতে পারে যখন তা পচে গলে যায় ? ”

৪০২৪। মানুষের চিন্তা শক্তি সীমিত। সে আল্লাহ্‌ সম্বন্ধে তার চর্তুপার্শ্বের চেনা জগতের বাইরে ধারণা করতে অক্ষম। অবিশ্বাসীরা ধারণা করে আল্লাহ্‌র ক্ষমতাও সীমাবদ্ধ। তারা আল্লাহ্‌র ক্ষমতাকে নিজেদের সাদৃশ্যে কল্পনা করে , তুলনা করে থাকে। তারা বিশ্বাস করতে অপারগ যে, মৃত্যুর পরে দেহ বিনষ্ট হওয়ার পরেও আবার পুণরুত্থান ঘটবে। শুধু মানুষ নয় পৃথিবীর কোনও শক্তিই তা করতে পারে না। কিন্তু মানুষ যদি তার উৎপত্তির ক্ষুদ্র্‌ত্ব সম্বন্ধে সচেতন থাকতো তবে অবশ্যই কখনও সে আল্লাহ্‌র সৃষ্ট পদার্থের ক্ষমতা ও যোগ্যতাকে আল্লাহ্‌র শক্তি ও যোগ্যতার সাথে তুলনা করতো না। কি ভাবে সে কল্পনা করে যে, যেহেতু মানুষ মৃতের জীবনদানে অক্ষম , সুতারাং আল্লাহ্‌রও সে ক্ষমতা নাই ? প্রথম সৃষ্টি শূন্য থেকে করা হয়েছে যা আমরা সাধারণ মানুষ কল্পনাও করতে পারি না। অবশ্যই সর্ব প্রথম সৃষ্টি পরবর্তী সৃষ্টি প্রক্রিয়া থেকে অনেক বেশী কঠিন ও জটিল। পরবর্তী সৃষ্টির ভিত্তি হচ্ছে প্রথম সৃষ্টি; সুতারাং তার বুনিয়াদ বর্তমান। প্রথম সৃষ্টিকে যদি বিশ্বাস করা যায় , তবে পরবর্তী সৃষ্টি সম্বন্ধে সন্দেহের অবকাশ কোথায় ? আল্লাহ্‌র সকল কিছুর উপরে শক্তিমান।

 

আয়াতঃ 036.079

বলুন, যিনি প্রথমবার সেগুলোকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই জীবিত করবেন। তিনি সর্বপ্রকার সৃষ্টি সম্পর্কে সম্যক অবগত।
Say, “He will give them life Who created them for the first time! for He is Well-versed in every kind of creation!-

قُلْ يُحْيِيهَا الَّذِي أَنشَأَهَا أَوَّلَ مَرَّةٍ وَهُوَ بِكُلِّ خَلْقٍ عَلِيمٌ
Qul yuhyeeha allathee anshaaha awwala marratin wahuwa bikulli khalqin AAaleemun

YUSUFALI: Say, “He will give them life Who created them for the first time! for He is Well-versed in every kind of creation!-
PICKTHAL: Say: He will revive them Who produced them at the first, for He is Knower of every creation,
SHAKIR: Say: He will give life to them Who brought them into existence at first, and He is cognizant of all creation
KHALIFA: Say, “The One who initiated them in the first place will resurrect them. He is fully aware of every creation.”

৭৯। বল, ” যিনি তাদের প্রথম সৃষ্টি করেছেন, তিনিই তাদের প্রাণ সঞ্চারণ করবেন ৪০২৫। নিশ্চয়ই তিনি প্রত্যেকটি সৃষ্টি সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত। ”

৪০২৫। আল্লাহ্‌র সৃষ্টি নৈপুন্য প্রকৃতির প্রতিটি স্তরে বিদ্যমান এবং প্রতি মূহুর্তে, প্রতি পলে তা ক্রমান্বয়ে প্রবাহমান। পৃথিবীতে প্রতি মূহুর্তে মৃত্যু ও নূতনের সৃষ্টি হচ্ছে সেই অনাদি অনন্তকাল থেকে – এক মূহুর্তের জন্য তা থেমে নাই। মহাশক্তিধর সেই প্রভু যিনি অসীম মহাবিশ্ব ও এই ক্ষুদ্র পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা। সেই মানুষই হচ্ছে নির্বোধ যে এই মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ্‌র অসীম ক্ষমতাকে সসীম করে দেখে। সৃষ্টির অপার রহস্য একমাত্র আল্লাহ্‌রই করতলগত। মানুষ সে জ্ঞানের সামান্যই করতলগত করেছে বিজ্ঞানের সাধনার মাধ্যমে। সে জ্ঞানের গভীরতা ও অসীমত্ব মানুষের সর্বোচ্চ কল্পনারও বাইরে। নিউটন ঠিকই বলেছিলেন যে, ” আমরা জ্ঞান সমুদ্রের তীরে নূড়ি কুড়াচ্ছি।” আল্লাহ্‌র জ্ঞানকে যদি সমুদ্রের সাথে তুলনা করা যায়। তবে মানুষের জ্ঞান ঐ নূড়ি পাথরের সমতুল্য।

 

আয়াতঃ 036.080

যিনি তোমাদের জন্যে সবুজ বৃক্ষ থেকে আগুন উৎপন্ন করেন। তখন তোমরা তা থেকে আগুন জ্বালাও।
“The same Who produces for you fire out of the green tree, when behold! ye kindle therewith (your own fires)!

الَّذِي جَعَلَ لَكُم مِّنَ الشَّجَرِ الْأَخْضَرِ نَارًا فَإِذَا أَنتُم مِّنْهُ تُوقِدُونَ
Allathee jaAAala lakum mina alshshajari al-akhdari naran fa-itha antum minhu tooqidoona

YUSUFALI: “The same Who produces for you fire out of the green tree, when behold! ye kindle therewith (your own fires)!
PICKTHAL: Who hath appointed for you fire from the green tree, and behold! ye kindle from it.
SHAKIR: He Who has made for you the fire (to burn) from the green tree, so that with it you kindle (fire).
KHALIFA: He is the One who creates for you, from the green trees, fuel which you burn for light.

৮০। যিনি সবুজ বৃক্ষ থেকে তোমাদের জন্য অগ্নি উৎপাদন করেছেন এবং তোমরা উহা প্রজ্জ্বলিত কর [নিজেদের অগ্নির জন্য ] ৪০২৬।

৪০২৬। প্রাচীনকালে মানুষ শুকনা ডালকে পরস্পর ঘর্ষণ করে অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করতো রসুলের সময়েও আরবে তা প্রচলিত ছিলো। বর্তমানে বিভিন্ন স্থানে যে দাবাগ্নির সৃষ্টি হয় তা গাছের শুকনা ডালের ঘর্ষণের ফল। এই আয়াত দ্বারা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে , আল্লাহ্‌র অসীম ক্ষমতার প্রতি। সবুজ বৃক্ষের ডাল তার মাঝে যে দাহিকা শক্তি সুপ্ত থাকে সে তো আল্লাহ্‌রই সৃষ্টি নৈপুন্য। অনুভবের মাধ্যমে আল্লাহ্‌র অসীম শক্তিকে উপলব্দি করা সম্ভব।

 

আয়াতঃ 036.081

যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন, তিনিই কি তাদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে সক্ষম নন? হ্যাঁ তিনি মহাস্রষ্টা, সর্বজ্ঞ।
“Is not He Who created the heavens and the earth able to create the like thereof?” – Yea, indeed! for He is the Creator Supreme, of skill and knowledge (infinite)!

أَوَلَيْسَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِقَادِرٍ عَلَى أَنْ يَخْلُقَ مِثْلَهُم بَلَى وَهُوَ الْخَلَّاقُ الْعَلِيمُ
Awa laysa allathee khalaqa alssamawati waal-arda biqadirin AAala an yakhluqa mithlahum bala wahuwa alkhallaqu alAAaleemu

YUSUFALI: “Is not He Who created the heavens and the earth able to create the like thereof?” – Yea, indeed! for He is the Creator Supreme, of skill and knowledge (infinite)!
PICKTHAL: Is not He Who created the heavens and the earth Able to create the like of them? Aye, that He is! for He is the All-Wise Creator,
SHAKIR: Is not He Who created the heavens and the earth able to create the like of them? Yea! and He is the Creator (of all), the Knower.
KHALIFA: Is not the One who created the heavens and the earth able to recreate the same? Yes indeed; He is the Creator, the Omniscient.

৮১। যিনি আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন , তিনি কি অনুরূপ সৃষ্টি করতে সক্ষম নন ? – হ্যাঁ অবশ্যই! নিশ্চয়ই তিনি দক্ষতা এবং জ্ঞানে [ অসীম ] মহা স্রষ্টা ৪০২৭।

৪০২৭। দেখুন আয়াত [৬৯ : ২৭ ] । মানুষ পুনরুত্থানে অবিশ্বাস করে। কিন্তু কোনটি বেশী জটিল ও কঠিন, মানুষ সৃষ্টি না আকাশ ও নভোমন্ডল ও এর অন্তর্গত সকল প্রাণী জগত ? আল্লাহ্‌ আকাশ,পৃথিবী ও নভোমন্ডল সৃষ্টি করেছেন। নভোমন্ডল ও পৃথিবীর অন্তর্ভূক্ত সকল জীবের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা আল্লাহ্‌। যিনি এই বিশাল বিশ্বভূবন সৃষ্টির ক্ষমতা রাখেন তাঁর পক্ষে পুনরুত্থানের মাধ্যমে নূতন সৃষ্টি কি এতই অসম্ভব?
কেয়ামত দিবসে পুণরুত্থান মহাস্রষ্টার পক্ষে অতি নগন্য ঘটনা মাত্র। মানুষের অনুভবের দিগন্তকে প্রসারিত করে স্রষ্টার বিশালত্ব অনুভব করতে বলা হয়েছে।

 

আয়াতঃ 036.082

তিনি যখন কোন কিছু করতে ইচ্ছা করেন, তখন তাকে কেবল বলে দেন, ‘হও’ তখনই তা হয়ে যায়।
Verily, when He intends a thing, His Command is, “be”, and it is!

إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَقُولَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ
Innama amruhu itha arada shay-an an yaqoola lahu kun fayakoonu

YUSUFALI: Verily, when He intends a thing, His Command is, “be”, and it is! PICKTHAL: But His command, when He intendeth a thing, is only that He saith unto it: Be! and it is.
SHAKIR: His command, when He intends anything, is only to say to it: Be, so it is.
KHALIFA: All He needs to do to carry out any command is to say to it, “Be,” and it is.

৮২। যখন তিনি কোন কিছুর ইচ্ছা করেন তিনি আদেশ করেন ” হও ” , এবং তা হয়ে যায় ৪০২৮।

৪০২৮। মানুষ কোনও কিছু তৈরী করতে চাইলে তাকে সময় সাপেক্ষ পরিকল্পনার মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হতে হয় যথা : পরিকল্পনা গ্রহণ , উপকরণ সংগ্রহ , দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ , সময় ইত্যাদি। কিন্তু আল্লাহ্‌র সৃষ্টি প্রক্রিয়া সময় বা উপকরণ, সুযোগ সুবিধা কোনও কিছুর উপরেই নির্ভরশীল নয়। তা শুধুমাত্র নির্ভরশীল আল্লাহ্‌র ইচ্ছার উপরে। তিনি ইচ্ছা প্রকাশ করেন এবং বলেন ” হও” সঙ্গে সঙ্গে বস্তুটি হয়ে যায়।

 

আয়াতঃ 036.083

অতএব পবিত্র তিনি, যাঁর হাতে সবকিছুর রাজত্ব এবং তাঁরই দিকে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।
So glory to Him in Whose hands is the dominion of all things: and to Him will ye be all brought back.

فَسُبْحَانَ الَّذِي بِيَدِهِ مَلَكُوتُ كُلِّ شَيْءٍ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
Fasubhana allathee biyadihi malakootu kulli shay-in wa-ilayhi turjaAAoona

YUSUFALI: So glory to Him in Whose hands is the dominion of all things: and to Him will ye be all brought back.
PICKTHAL: Therefor Glory be to Him in Whose hand is the dominion over all things! Unto Him ye will be brought back.
SHAKIR: Therefore glory be to Him in Whose hand is the kingdom of all things, and to Him you shall be brought back.
KHALIFA: Therefore, glory be to the One in whose hand is the sovereignty over all things, and to Him you will be returned.

৮৩। অতএব , সকল মহিমা তাঁরই যার হাতে রয়েছে সকল বিষয়ের কর্তৃত্ব। এবং তাঁর নিকটেই সকলকে ফিরিয়ে আনা হবে ৪০২৯।

৪০২৯। সকল বস্তু আল্লাহ্‌র সৃষ্টি ; তিনি এর রক্ষণাবেক্ষণ করেন এবং নির্দ্দিষ্ট সময় অন্তে সকল কিছুই তাঁর নিকট প্রত্যার্পন করবে। একমাত্র তাঁর নিকটই সকলকে কৃতকর্মের জবাবদিহি করতে হবে। আল্লাহ্‌র প্রত্যাদেশের এই হচ্ছে মূল নির্যাস। এভাবেই প্রত্যাদেশের মাধ্যমে মৃত্যুর পরবর্তী পৃথিবীর ধারণাকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং এই আয়াতটির মাধ্যমে সূরাটি শেষ করা হয়েছে। সূরাটিকে এই আয়াত দ্বারা শেষ করা উপযুক্ত হয়েছে এবং বিশেষ ভাবে রাসুলের [ সা ] নামের সাথে [ ইয়া-সীন ] সংযুক্তির ফলে।

Exit mobile version