Site icon BnBoi.Com

সহিহ বুখারী ০৮ম খণ্ড (ইফা)

Sahi Bukhari 8th Part by Imam Bukhari

 

সহিহ বুখারী ০৮ম খণ্ড (ইফা)

 

বুখারি হাদিস নং ৪৩০১-৪৪০০

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৩১ | 4331 | ٤۳۳۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ সে (ইউসুফ (আঃ) যে স্ত্রী লোকের ঘরে ছিল সে তার থেকে অসৎ কর্ম কামনা করল এবং দরজা গুলো বন্ধ করে দিল ও বলল, এসো। ইকরিমা বলেন, هيت আইস হুরানের ভাষা, ইবন জুবায়র বলেন, تعاله এসো।
৪৩৩১। আহমাদ ইবনু সাইদ (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, هَيْتَ لَكَ আমরা সেভাবেই পড়তাম যেভাবে আমাদের শিখানো হয়েছে। مَثْوَاهُ অর্থ স্থান এবং أَلْفَيَا‏ অর্থ সে পেয়েছে। এ থেকে ‏أَلْفَوْا آبَاءَهُمْ হয়েছে। এমনিভাবে ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে بَلْ عَجِبْتَ وَيَسْخَرُونَ এর মধ্যে ‏‏ ت কে পেশ যুক্ত করে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি এভাবে পড়তেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৩২ | 4332 | ٤۳۳۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ সে (ইউসুফ (আঃ) যে স্ত্রী লোকের ঘরে ছিল সে তার থেকে অসৎ কর্ম কামনা করল এবং দরজা গুলো বন্ধ করে দিল ও বলল, এসো। ইকরিমা বলেন, هيت আইস হুরানের ভাষা, ইবন জুবায়র বলেন, تعاله এসো।
৪৩৩২। হুমায়দি (রহঃ) … আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত, যখন কুরাইশগন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইসলাম এর দাওয়াত অস্বীকার করল, তখন তিনি আল্লাহর নিকটে আরজ করলেন, ইয়া আল্লাহ! যেমনি ভাবে আপনি ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর সময় সাত বছর ধরে দুর্ভিক্ষ দিয়েছিলেন, তেমনি ভাবে ওদের উপর দুর্ভিক্ষ নাযিল করুন। তারপর কুরাইশগন এক বছর পর্যন্ত এমন দুর্ভিক্ষের মধ্যে আপতিত হল যে সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেল। এমনকি তারা হাড় পর্যন্ত খেতে শুরু করল; যখন কোন ব্যাক্তি আকাশের দিকে নজর করত, তখন আকাশ ও তার মধ্যে শুধু ধোঁয়া দেখত।

আল্লাহ বলেন فَارْتَقِبْ يَوْمَ تَأْتِي السَّمَاءُ بِدُخَانٍ مُبِينٍ‏ “সেদিনের অপেক্ষায় থাক যেদিন আকাশ স্পষ্ট ধোঁয়া নিয়ে আশবে”।

আল্লাহ আরও বলেন, ‏إِنَّا كَاشِفُو الْعَذَابِ قَلِيلاً إِنَّكُمْ عَائِدُونَ “আমি শাস্তি কিছুটা সরিয়ে নিব; নিশ্চয়ই তোমরা (পূর্বাবস্থায়) প্রত্যাবর্তন করবে”। কিয়ামত এর দিন তাদের থেকে আযাব দূর করা হবে কি? এবং دخَان ও بَطْشَةُ এর ব্যাখ্যা আগে বলা হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৩৩ | 4333 | ٤۳۳۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ فلما جاءه الرسول قال ارجع إلى ربك “যখন দূত ইয়ুসুফ (আ) এর নিকট উপস্থিত হল তখন সে বলল, তুমি তোমার প্রভুর নিকট ফিরে যাও এবং তাকে জিজ্ঞেস কর, যে সকল নারী হাত কেটে ফেলেছিল তাদের অবস্থা কি! আমার প্রতিপালক তো তাদের অবস্থা সম্যক অবগত। বাদশাহ নারীদের বলল, যখন তোমরা ইয়ুসুফ থেকে অসৎ কর্ম কামনা করেছিলে তখন তোমাদের কি অবস্থা হয়েছিল? তারা বলল, অদ্ভুত আল্লাহর মাহাত্ম্য! আমাদের ও তার মধ্যে কোন দোষ দেখিনি। حاش وحاشى এটা تنزيه এবং استثناء এর জন্য। حصحص অর্থ প্রকাশ হয়ে গেল।
৪৩৩৩। সাইদ ইবনু তালিদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা লুত (আলাইহিস সালাম) এর উপর রহম করুন। তিনি তার সম্প্রদায়ের চরম শত্রুতায় বাধ্য হয়ে, নিজের নিরাপত্তার জন্য আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন। যতদিন পর্যন্ত ইয়ুসুফ (আলাইহিস সালাম) বন্দীখানায় ছিলেন, আমি যদি তদ্রূপ (বন্দীখানায়) থাকতাম, তবে পরিত্রানের জন্য অবশ্যই সাড়া দিতাম। আমরা ইব্রাহিম (আলাইহিস সালাম) থেকে সর্বাগ্রে থাকতাম যখন আল্লাহ তাকে বললেন, তুমি কি বিশ্বাস করনা? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ। তবে আমার মনের প্রশান্তির জন্য।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৩৪ | 4334 | ٤۳۳٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ حتى إذا استيأس الرسل “এমনকি যখন রাসুলগন নিরাশ হয়ে গেলেন”।
৪৩৩৪। আবদুল আযিয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) উরওয়া ইবনু যুবাইর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়শা (রাঃ) কে আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ ‏حَتَّى إِذَا اسْتَيْأَسَ الرُّسُلُ‏ এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম যে এই আয়াতে শব্দটা أَكُذِبُوا না كُذِّبُوا আয়শা (রাঃ) বললেন, أَكُذِبُوا আমি জিজ্ঞেস করলাম, যখন আম্বিয়ায়ে কিরাম পূর্ণ বিশ্বাস করে নিলেন, এখন তাদের সম্প্রদায় তাদের প্রতি মিথ্যা আরোপ করবে, তখন الظَّن ব্যাবহারের উদ্দেশ্য কি? আয়শা (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ আমার জীবনের কসম! তারা পূর্ণ বিশ্বাস করেই নিয়েছিলেন। আমি তাঁকে বললাম, ظَنُّوا أَنَّهُمْ قَدْ كُذِبُوا অর্থ কি দাঁড়ায়? আয়শা (রাঃ) বললেন, মা’আযাল্লাহ! রাসুলগন কখনও আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা ধারনা করতে পারেন না। আমি বললাম, তবে আয়াতের অর্থ কি হবে? তিনি বললেন, তারা রাসুলদের অনুসারী যারা তাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছে। এবং রাসুলদের সত্য বলে স্বীকার করেছে। তারপর তাদের প্রতি দীর্ঘকাল ধরে (কাফেরদের) নির্যাতন চলেছে এবং আল্লাহর সাহায্য আসতেও অনেক বিলম্ব হয়েছে, এমনকি যখন রাসুলগন তাদের সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে তাদের প্রতি মিথ্যরোপ কারীদের ঈমান আনা সম্পর্কে নিরাশ হয়ে গেছেন এবং রাসুলদের এ ধারনা হল যে এখন তাদের অনুসারীরাও তাদের প্রতি মিথ্যরোপ করতে শুরু করবে, এমতাবস্থায় তাদের কাছে আল্লাহর সাহায্য এল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৩৫ | 4335 | ٤۳۳۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ حتى إذا استيأس الرسل “এমনকি যখন রাসুলগন নিরাশ হয়ে গেলেন”।
৪৩৩৫। আবূল ইয়ামান (রহঃ) … উরওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বললেন, আমি আয়শা (রাঃ) কে বললাম, সম্ভবত كُذِبُوا (তাখফিফ সহ)। তিনি বললেন, মা’আযাল্লাহ! ঐরূপ (‏كُذِبُوا)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৩৬ | 4336 | ٤۳۳٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ الله يعلم ما تحمل كل أنثى প্রত্যেক নারী যা গর্ভে ধারন করে এবং জরায়ু তে যা কিছু কমে ও বাড়ে আল্লাহ তা জানেন। غيض হ্রাস পেল ।
সুরা রা’দ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, كَبَاسِطِ كَفَّيْهِ যেমন, কেউ হাত বাড়িয়ে দেয়। এটি মুশরিকের দৃষ্টান্ত যারা ‘ইবাদাতে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যকে শরীক করে। যেমন পিপাসার্ত ব্যক্তি যে দূর থেকে পানি পাওয়ার আশা করে, অথচ পানি সংগ্রহ করতে সমর্থ হয় না। অন্যেরা বলেন, سَخَّرَ সে অনুগত হল।’’ مُتَجَاوِرَاتٌ পরস্পর নিকটবর্তী হল। الْمَثُلَاتُ (উপমা, দৃষ্টান্ত) مَثُلَةٌ-এর বহুবচন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন, ‘ওরা কি ওদের পূর্বে যা ঘটেছে তারই অনুরূপ ঘটনারই প্রতীক্ষা করে? بِمِقْدَارٍ নির্দিষ্ট পরিমাণ। مُعَقِّبَاتٌ ফেরেশতা, যারা একের পর এক সকাল-সন্ধ্যায় বদলি হয়ে থাকে। যেমন عَقِيْبُ পিছনে (বদলি)। যেমন বলা হয় عَقَّبْتُ فِيْٓ إِثْرِهِ আমি তার পরে (বদলি) এসেছি। الْمِحَالِ শাস্তি كَبَاسِطِ كَفَّيْهِ إِلَى الْمَآءِ সে তৃষ্ণার্তের মত, যে নিজের দুই হাত পানির দিকে বাড়িয়ে দেয়, পানি পাওয়ার জন্য। رَابِيًا (বর্ধনশীল) رَبَايَرْبُوْ থেকে গঠিত। زَبَدٌ ফেনা, সর। الْمَتَاعُ যা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়, যা উপভোগ করা হয়। جُفَاءً বলা হয়, গোশতের পাতিল যখন উত্তপ্ত করা হয়, তখন তার ওপরে ফেনা জমে। এরপর ঠান্ডা হয় এবং ফেনার বিলুপ্তি ঘটে। সেরূপ সত্য, বাতিল (মিথ্যা) থেকে আলাদা হয়ে থাকে।’’ الْمِهَادُ বিছানা يَدْرَءُوْنَ তারা প্রতিহত করে। دَرَأْتُهُ ও دَفَعْتُهُ আমি তাকে দূরে হটিয়ে দিলাম। মালায়িকাহ বলবেন, سَلَامٌعَلَيْكُمْ তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। وَإِلَيْهِ مَتَابِ আমি তাঁর কাছে প্রত্যাবর্তন করছি। أَفَلَمْيَيْئَسْ এটা কি তাদের কাছে প্রকাশ পায়নি, قَارِعَةٌ আকস্মিক বিপদ فَأَمْلَيْتُ আমি অবকাশ দিয়েছি। مَلِيِّ ও مِلَاوَةٌ হতে পঠিত। সে অর্থে مَلِيًّا ব্যবহৃত। প্রশস্ত ও দীর্ঘ যমীনকে مَلًى مِنَ الْأَرْضِ বলা হয়। أَشَقُّ (অধিক কঠিন) اِسْمِ تَفْضِيْلَ-مَشَقَّةِ থেকে গঠিত। مُعَقِّبَ পরিবর্তনশীল। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, مُتَجَاوِرَاتٌ অর্থ, কিছু জমি কৃষি উপযোগী এবং কিছু জমি কৃষির অনুপযোগী। আর তাতে একটা থেকে দুই বা ততোধিক খেজুর গাছ উৎপন্ন হয় এবং কতিপয় যমীনে পৃথক পৃথকভাবে উৎপন্ন হয়। সেরূপ অবস্থা আদম (আঃ)-এর সন্তানদের। কেউ নেক্কার আর কেউ বদকার, অথচ সকলেই আদমের সন্তান। السَّحَابُ الثِّقَالُ পানিতে পূর্ণ মেঘমালা। كَبَاسِطِ كَفَّيْهِ তৃষ্ণার্ত ব্যক্তি মুখ দিয়ে পানি চায় এবং হাত দিয়ে পানির দিকে ইশারা করে। তারপর সে সর্বদা তা থেকে বঞ্চিত থাকে। سَالَتْ أَوْدِيَةٌ بِقَدَرِهَا নানাসমূহ তার পরিমাণ মাফিক প্রবাহিত হয়ে ‘‘বাতনে ওয়াদী’’ কে ভরে দেয়। زَبَدًا رَابِيًا প্রবাহিত ফেনা। লোহা ও অলংকার উত্তপ্ত করা হলে যেমন ময়লা বের হয়ে আসে।

৪৩৩৬। ইব্রাহিম ইবনু মুনযির (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত , নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইল্‌ম গায়েব এর চাবি কাঠি পাঁচটি, যা আল্লাহ ভিন্ন আর কেউ জানেনা। তা হল, আগামী দিন কি হবে তা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেনা। মাতৃগর্ভে কি আছে তা আল্লাহ ভিন্ন আর কেউ জানেনা। বৃষ্টি কখন আসবে তা আল্লাহ ব্যতিত আর কেউ জানেনা। কোন ব্যাক্তি জানেনা তার মৃত্যু কোথায় হবে এবং কিয়ামত কবে সংঘটিত হবে তা আল্লাহ ভিন্ন আর কেউ জানেনা।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৩৭ | 4337 | ٤۳۳۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণী, كشجرة طيبة أصلها “সে উৎকৃষ্ট বৃক্ষের ন্যায় যার মূল সুদৃঢ় ও যার শাখা প্রশাখা ঊর্ধ্বাকাশে বিস্তৃত , যা প্রতি মৌসুমে ফল দান করে”।
সুরা ইবরাহীম

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, هَادٍ আহবানকারী। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, صَدِيْدٌ পুঁজ ও রক্ত। ইবনু ‘উয়াইনাহ বলেন, اذْكُرُوْا نِعْمَةَ اللهِ عَلَيْكُمْ আল্লাহর যেসব নিয়ামত তোমাদের উপর আছে এবং যা কিছু ঘটছে (তা স্মরণ কর)। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, مِنْ كُلِّ مَا سَأَلْتُمُوْهُ তোমরা যা কিছু আল্লাহর কাছে চেয়েছিলে যাতে তোমাদের আগ্রহ ছিল। يَبْغُوْنَهَاعِوَجًا তারা এর অপব্যাখ্যা তালাশ করছে। إِذْ تَأَذَّنَرَبُّكُمْ তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জানিয়েছেন, তোমাদের অবহিত করেছেন। رَدُّوْا أَيْدِيَهُمْ فِيْأَفْوَاهِهِمْ এটা একটা প্রবাদ বাক্য, যার অর্থ, তাদের যে বিষয়ে আদেশ দেয়া হয়েছিল তা থেকে তারা বিরত রয়েছে। مَقَامِيْ সে স্থান তাকে যেখানে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর সামনে দাঁড় করাবেন। مِنْوَرَآئِهٰ তার সম্মুখে لَكُمْ تَبَعًا এর একবচন تَابِعٌ যেমন غَائِبٌ -এর বহুবচন غَائِبٍ। اسْتَصْرَخَنِيْ সে আমার কাছে সাহায্য চেয়েছে। يَسْتَصْرِخُهُ এটা الصُّرَاخِ থেকে গঠিত। وَلَاخِلَالَ আর কোন বন্ধুত্ব নয়। এটা خَالَلْتُهُخِلَالًا এর মাসদার আর خُلَّةٍ-خِلَالٍ এর বহুবচনও হতে পারে। اجْتُثَّتْ মূলোচ্ছেদ করা হয়েছে।

৪৩৩৭। উবায়দ ইবনু ইসমাইল (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ছিলাম। তিনি বললেন, বলতো সেটা কোন বৃক্ষ, যা কোন মুসলিম ব্যাক্তির মতো যার পাতা ঝরেনা, এরুপ নয়, এরুপ নয় এবং এরূপও নয় যা সর্বদা খাদ্য প্রদান করে। ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, আমার মনে হল এটা খেজুর বৃক্ষ। কিন্তু আমি দেখলাম আবূ বকর (রাঃ) ও ওমর (রাঃ) কোন কথা বলছেন না। তাই আমি এ ব্যাপারে কিছু বলা পছন্দ করিনি। অবশেষে যখন কেউ কিছু বললেন না তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সেটা খেজুর গাছ। পরে যখন আমরা উঠে গেলাম, তখন আমি ওমর (রাঃ) কে বললাম, হে আব্বা! আল্লাহর কসম! আমার মনেও হয়েছিল খেজুর বৃক্ষ। উমর (রাঃ) বললেন, একথা বলতে তোমার কিসে বাধা দিল? বললাম, আমি আপনাদের বলতে দেখিনি, তাই আমি কিছু বলতে এবং আমার মত ব্যক্ত করতে পছন্দ করিনি। উমর (রাঃ) বললেন, অবশ্য যদি তুমি বলতে তবে তা আমার নিকট এত এত থেকে বেশি প্রিয় হত।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৩৮ | 4338 | ٤۳۳۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণী, يثبت الله الذين آمنوا بالقول الثابت “যারা শাশ্বত বাণীতে বিশ্বাসী , তাদের আল্লাহ সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন”।
৪৩৩৮। আবূ ওয়ালিদ (রহঃ) … বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কবরে মুসলমান ব্যাক্তিকে যখন প্রশ্ন করা হবে তখন সে সাক্ষ্য দিবে, “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াআন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ” আল্লাহর বাণীতে এর প্রতই ইংগিত করা হয়েছে। বানীটি হল এইঃ يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الآخِرَةِ‏

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৩৯ | 4339 | ٤۳۳۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ ألم تر إلى الذين بدلوا نعمة الله كفرا “আপনি কি তাদের লক্ষ্য করেন না যারা আল্লাহর অনুগ্রহের বদলে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ألم تر আপনি কি জানেন না ألم تعلم এর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন ألم تر كيف অথবা ألم تر إلى الذين خرجوا আয়াতে এ অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। البوار ধ্বংস । এটা بار يبور بورا থেকে গঠিত । قوما بورا অর্থ ধ্বংসশীল সম্প্রদায় ।
৪৩৩৯। আলি ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আতা (রহঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন, أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ بَدَّلُوا نِعْمَةَ اللَّهِ كُفْرًا‏ এ আয়াত দ্বারা মক্কার কাফেরদেরকে বোঝানো হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৪০ | 4340 | ٤۳٤۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বানী, إلا من استرق السمع فأتبعه شهاب مبين “আর কেউ চুপিসারে সংবাদ শুনতে চাইলে তার পশ্চাৎ ধাবন করে প্রদীপ্ত শিখা”।
সুরা হিজ্‌র

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, صِرَاطٌ عَلَيَّ مُسْتَقِيْمٌ সঠিক পথ যা আল্লাহ্ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে এবং তাঁর দিকে রয়েছে এ রাস্তা। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, لَعَمْرُكَ তোমার জীবনের কসম। قَوْمٌ مُنْكَرُوْنَ এমন সম্প্রদায়, যাদের লূত (আঃ) চিনেননি। অন্যেরা বলেন, كِتَابٌ مَعْلُوْمٌ নির্দিষ্ট সময়। لَوْ مَا تَأْتِيْنَا কেন আমার কাছে আসে না। شِيَعٌ বহু সম্প্রদায়। বন্ধুবর্গকেও شِيَعٌ বলা হয়। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, يُهْرَعُوْنَ তারা দ্রুতগতিতে ছুটে চলছে। لِلْمُتَوَسِّمِيْنَ প্রত্যক্ষকারীদেরকে জন্য سُكِّرَتْ ঢেকে দেয়া হয়েছে। চন্দ্র-সূর্যের মনযিল। بُرُوْجًا অর্থাৎ (ভার-গর্ভ মেঘমালা), এটার একবচন مُلْقَحَةً حَمَإٍ جَمَاعَةُ এর বহুবচন পচা কাদামাটি। وَالْمَسْنُوْنُ ঢেলে দেয়া হয়েছে। تَوْجَلْ ভীত হও। دَابِرَ অর্থ-শেষাংশ। الْإِمَامُ যার তুমি অনুসরণ করেছ, এবং যার দ্বারা সঠিক পথের সন্ধান পেয়েছ। الصَّيْحَةُ ধ্বংস।

৪৩৪০। আলি ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, যখন আল্লাহ তা’আলা আকাশের কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেন, তখন ফেরেশতারা তার কথা শোনার জন্য অতি বিনয়ের সাথে নিজ নিজ পালক ঝাড়তে থাকে মসৃণ পাথরের উপর জিঞ্জীরের শব্দের মত। আলি (রাঃ) বলেন, صَفْوَانٍ এর মধ্যে فا সাকিন যুক্ত এবং অন্যরা বলেন, فا ফাতাহ যুক্ত। এভাবে আল্লাহ তা’আলা তার বাণী ফেরেশতাদের পৌঁছান। যখন ফেরেশতাদের অন্তর থেকে ভয় দূরীভূত হয় তখন তারা পরস্পরকে জিজ্ঞেস করে, তোমাদের প্রভু কি বলেছেন? তখন তারা বলে, যা সত্য তিনি তাই বলেছেন এবং তিনি সর্বোচ্চ, মহান। চুরি করে কান লাগিয়ে (শয়তানরা) তা শুনে নেয়। শোনার জন্য শয়তানগুলো একের ওপর এক এভাবে থাকে। সুফিয়ান ডান হাতের আঙ্গুল এর উপর অন্য আঙ্গুল রেখে হাতের ইশারায় ব্যপারটা প্রকাশ করলেন। তারপর কখনো আগুনের ফুলকি শ্রবণকারীকে তার সাথীর কাছে এ কথাটি পৌঁছানর আগেই আঘাত করে এবং তাকে জ্বালিয়ে দেয়। আবার কখনও সে ফুলকি প্রথম শ্রবণকারী শয়তান পর্যন্ত পোঁছার পূর্বেই সে তার নিচের সাথীকে খবরটি জানিয়ে দেয়। এমনি করে এ কথা পৃথিবী পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। কখনও সুফিয়ান বলেছেন, এমনি করে পৃথিবী পর্যন্ত পোঁছে যায়। তারপর তা জাদুকরের মুখে ঢেলে দেওয়া হয় এবং সে তার সাথে শত মিথ্যা মিলিয়ে প্রচার করে। তাই তার কথা সত্য হয়ে যায়। তখন লোকেরা বলতে থাকে যে, দেখ এ জাদুকর আমাদের কাছে অমুক অমুক দিন অমুক অমুক কথা বলেছিল, আমরা তা সঠিক পেয়েছি। বস্তুত আসমান থেকে শোনা কথার কারনেই তা সত্যে পরিনত হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৪১ | 4341 | ٤۳٤۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বানী, إلا من استرق السمع فأتبعه شهاب مبين “আর কেউ চুপিসারে সংবাদ শুনতে চাইলে তার পশ্চাৎ ধাবন করে প্রদীপ্ত শিখা”।
৪৩৪১। আলি ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যখন আল্লাহ তা’আলা কোন সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন এ বর্ণনায় – كَاهِن (জ্যোতির্বিদ কথাটি) অতিরিক্ত। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন, যখন আল্লাহ তা’আলা কোন ব্যপারে সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। এ বর্ণনায় عَلَى فَمِ السَّاحِرِ (জাদুকরের মুখের উপর) উল্লেখ করেছেন। আলি ইবনু আবদুল্লাহ বলেন, আমি সুফিয়ান কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি আমর থেকে শুনেছেন যে, তিনি বলেছেন, আমি ইকরামা থেকে শুনেছি এবং (ইকরামা) বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে শুনেছি। সুফিয়ান বলেন, হ্যাঁ। আলি বলেন, আমি সুফিয়ান কে জিজ্ঞেস করলাম, এক ব্যাক্তি আপনার থেকে এভাবে বর্ণনা করেছেন, আমর ইকরামা থেকে, তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে, তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম فُزِّعَ পাঠ করেছেন। সুফিয়ান বললেন, আমি আমর কে এভাবে পড়তে শুনেছি। তবে আমি জানিনা, তিনি এভাবেই শুনেছেন কিনা তবে এ-ই আমাদের পাঠ।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৪২ | 4342 | ٤۳٤۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণী, ولقد كذب أصحاب الحجر المرسلين নিশ্চয়ই হিজর বাসীগন রাসুলদের প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছিল”।
৪৩৪২। ইব্রাহিম ইবনু মুনযির (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরবাসীগন* সম্পর্কে সাহাবায়ে কিরামদের বললেন, তোমরা ক্রন্দনরত অবস্থায় ছাড়া এ জাতির এলাকায় প্রবেশ করবে না। যদি তোমাদের ক্রন্দন না আসে, তবে তোমরা তাদের এলাকায় প্রবেশই করবেনা। আশংকা আছে, তাদের উপর যা আপতিত হয়েছিল তা তোমাদের উপরও আপতিত হয়ে যায়।

* হিজর একটি উপত্যকার নাম। সেখানে সামুদ সম্প্রদায় বাস করত।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৪৩ | 4343 | ٤۳٤۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ ولقد آتيناك سبعا من المثاني والقرآن العظيم “আমি তো তোমাকে দিয়েছি সাত আয়াত যা পুনঃপুন আবৃত্ত হয় এবং দিয়েছি মহা কুরআন।
৪৩৪৩। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … আবূ সাইদ ইবনু মুয়াল্লা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পাশ দিয়ে গেলেন, তখন আমি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলাম। তিনি আমাকে ডাক দিলেন, তখন আমি সালাত (নামায/নামাজ) শেষ না করে আসিনি। এরপর আমি আসলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, আমার কাছে আসতে তোমাকে কিসে বাধা দিয়েছিল? আমি বললাম, আমি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলাম। তিনি বললেন, আল্লাহ তা’আলা কি একথা বলেননি, “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ এবং রাসুলের ডাকে সাড়া দাও”? তারপর তিনি বললেন, আমি মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়ার আগেই কি তোমাকে কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ সূরাটি শিখিয়ে দিবনা? তারপর যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদ থেকে বের হতে লাগলেন , আমি তাঁকে সে কথা স্মরণ করিয়ে দিলাম। তিনি বললেন, সে সূরাটি হল, “আল হামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন”। এটি হল [১] পুনরাবৃত্ত সাতটি আয়াত এবং মহা কুরআন [২] যা আমাকে দান করা হয়েছে।

[১] সাত আয়াতের অর্থ – সূরা ফাতিহার সাত আয়াত, যে আয়াতগুলো প্রত্যহ সালাত (নামায/নামাজ) আমরা বারবার পাঠ করে থাকি।

[২] সুরা ফাতিহাকে মহা কুরআন বলা হয়েছে। কারন কুরআনের সকল বিষয়বস্তুর মূলকথা এর মধ্যে রয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৪৪ | 4344 | ٤۳٤٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ ولقد آتيناك سبعا من المثاني والقرآن العظيم “আমি তো তোমাকে দিয়েছি সাত আয়াত যা পুনঃপুন আবৃত্ত হয় এবং দিয়েছি মহা কুরআন।
৪৩৪৪। আদম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, উম্মুল কুরআন* (সূরা ফাতিহা) হচ্ছে পুনরাবৃত্ত সাতটি আয়াত এবং মহান কুরআন।

* উম্মুল কুরআন বলা হয় সুরা ফাতিহাকে। কুরআন শরীফের সকল বিষয়বস্তু এর মধ্যে সংক্ষেপে রয়েছে বলে উম্মুল কুরআন অর্থাৎ কুরআনের মা বলা হয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৪৫ | 4345 | ٤۳٤۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা”আলার বাণী, الذين جعلوا القرآن عضين যারা কুরআনকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত করেছে। المقتسمين যারা শপথ করেছিল এবং এ অর্থে لا أقسم অর্থাৎ أقسم আমি শপথ করছি এবং لأقسم ও পড়া হয় قاسمهما (ইবলিস) শপথ করেছিল দুজনার কাছে। তারা দুজন (আদম য় হাওয়া ) তার জন্য শপথ করেনি। মুজাহিদ (র) বলেন, تقاسموا তারা শপথ করেছিল।
৪৩৪৫। ইয়াকুব ইবনু ইব্রাহিম (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, “যারা কুরআন কে বিভক্ত করে দিয়েছে” এরা হল আহলে কিতাব (ইহুদী )। তারা কুরআনকে বিভিন্ন অংশে বিভক্ত করে দিয়েছে। এরা কোন অংশের উপর ঈমান এনেছে এবং কোন অংশকে অস্বীকার করেছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৪৬ | 4346 | ٤۳٤٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা”আলার বাণী, الذين جعلوا القرآن عضين যারা কুরআনকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত করেছে। المقتسمين যারা শপথ করেছিল এবং এ অর্থে لا أقسم অর্থাৎ أقسم আমি শপথ করছি এবং لأقسم ও পড়া হয় قاسمهما (ইবলিস) শপথ করেছিল দুজনার কাছে। তারা দুজন (আদম য় হাওয়া ) তার জন্য শপথ করেনি। মুজাহিদ (র) বলেন, تقاسموا তারা শপথ করেছিল।
৪৩৪৬। উবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) ‏كَمَا أَنْزَلْنَا عَلَى الْمُقْتَسِمِينَ এর ব্যখ্যায় বলেন, তারা কিছু অংশের উপর ঈমান আনে আর কিছু অংশ অস্বীকার করে। এরা হল ইহুদী ও নাসারা।

باب قوله وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتّٰى يَأْتِيَكَ الْيَقِيْنُ قَالَ سَالِمٌ {الْيَقِيْنُ} الْمَوْتُ

অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتّٰى يَأْتِيَكَ الْيَقِيْنُ ইয়াকীন তোমার কাছে উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার রবের ইবাদত কর।

সালিম বলেন, يَقِيْنُ এখানে মৃত্যু অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৪৭ | 4347 | ٤۳٤۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণী, ومنكم من يرد إلى أرذل العمر “এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে উপনীত করা হবে নিকৃষ্ট বয়সে”।
সুরা নাহল

رُوْحُ الْقُدُسِ অর্থাৎ জিবরীল (আঃ)। অন্য আয়াতে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, نَزَلَ بِهِ الرُّوْحُ الْأَمِيْنُ অর্থাৎ রূহুল আমীন (জিবরীল) ওয়াহী নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন। فِيْ ضَيْقٍ সংকটে কিংবা সংকুচিত হৃদয়। বলা হয়, أَمْرٌ ضَيْقٌ وَضَيِّقٌ (يا মুশাদ্দাদ অথবা সাকিন) যেমন- هَيْنٌ-و-هَيِّنٌ-وَ-لَيْنٌ-لَيِّنٌ-وَ-مَيْتٌ-مَيِّتٌ এবং ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, فِيْ تَقَلُّبِهِمْ তাদের সর্বত্র গমনাগমনে। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, تَمِيْدُ আন্দোলিত হয়। مُفْرَطُوْنَ বিস্মৃত অবস্থায় রাখা হবে। অন্যের মতে, فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْاٰنَ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ এ বাক্যটি আগ-পিছু রয়েছে। কেননা কুরআন পাঠের আগে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হয়। অর্থাৎ আল্লাহ্কে অাঁকড়িয়ে ধরা شَاكِلَتِهِ নিজ প্রকৃতি অনুযায়ী। قَصْدُالسَّبِيْلِ (আল্লাহর যিম্মায়) সরল পথ প্রদর্শন الدِّفْءُ যা দ্বারা তুমি শীত নিবারণ কর। تُرِيْحُوْنَ বিকেল বেলা (পশুগুলিকে চারণ ভূমি থেকে গৃহে) নিয়ে আস। تَسْرَحُوْنَ সকাল বেলায় নিয়ে যাও। بِشِقِّ কষ্টের সঙ্গে। عَلٰى تَخَوُّفٍ কম করার মাধ্যমে الْأَنْعَامِلَعِبْرَةً (আন‘আমের মধ্যে অবশ্যই শিক্ষা রয়েছে) أَنْعَامِ শব্দটি পুং বাচক ও স্ত্রীবাচক দুইই ব্যবহার হয়। এরূপ أَنْعَام- শব্দটি نَعَامِ এর বহুবচন। سَرَابِيْلَ জামাগুলো। تَقِيْكُمْ الْحَرَّ (তাপ থেকে তোমাদের রক্ষা করে) এবং سَرَابِيْلَ تَقِيْكُمْ بَأْسَكُمْ এ سَرَابِيْلَ মানে বর্ম (যা তোমাদের যুদ্ধ-আঘাত থেকে রক্ষা করে) دَخَلًا بَيْنَكُمْ যে কোন কাজ অযথার্থ হয় তাকে ‘দাখাল’ বলে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, حَفَدَةً পৌত্র অর্থাৎ এরাও নিজ সন্তান বলে গণ্য। السَّكَرُ মাদক, যা ফল থেকে তৈরি করা হয়, তা হারাম করা হয়েছে। الرِّزْقُالْحَسَنُ (উত্তম খাদ্য) যা আল্লাহ্ হালাল করেছেন।

ইবনু ‘উয়াইনাহ সদাকাহ (রহ.) থেকে বর্ণনা করেছেন, أَنْكَاثًا (টুকরো টুকরো করা) মক্কা্য় এক নির্বোধ মহিলা যে মজবুত করে সূতা পাকানোর পর তা টুকরো টুকরো করে ফেলত। ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) বলেন, الْأُمَّةُ কল্যাণের শিক্ষাদানকারী। الْقَانِتُ অনুগত।

৪৩৪৭। মূসা ইবনু ইসমাইল (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দোয়া করতেন, (হে আল্লাহ!) আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই কৃপণতা থেকে, অলসতা থেকে, নিকৃষ্ট বয়স থেকে* কবরের আযাব থেকে, দাজ্জালের ফিতনা থেকে এবং জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে।

[৩] বার্ধক্যজনিত জরা।

সালাতের শেষভাগে তিনি এই দুয়া করতেন [সালাম ফেরানোর আগে]

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৪৮ | 4348 | ٤۳٤۸

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
৪৩৪৮। আদম (রহঃ) … ইবনু মাসুদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেছেন, সূরা বনী ইসরাইল, কাহফ এবং মরিয়ম প্রথমে অবতীর্ণ অতি উত্তম সূরা। এগুলো আমার পুরানো রক্ষিত সম্পদ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, فسينغضون তারা তাদের মাথা নাড়াবে। অন্য থেকে বর্ণিত, نغضت سنك তোমার দাঁত নড়ে গেছে। وَقَضَيْنَآ إِلٰى بَنِيْٓ إِسْرَائِيْلَ আমি বানী ইসরাঈলকে জানিয়ে দিয়েছিলাম যে, তারা শীঘ্রই বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। وَقَضٰى رَبُّكَ বহু অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন الْقَضَا তোমার রব নির্দেশ দিয়েছেন। ‘ফয়সালা’ অর্থে, যেমন বলা হয়েছে- إِنَّ رَبَّكَ يَقْضِيْ بَيْنَهُمْ নিশ্চয় তোমার রব তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দিবেন’, এবং ‘সৃষ্টি করা’ অর্থেও ব্যবহৃত হয়; যেমন- فَقَضَاهُنَّ سَبْعَ سَمَوٰتٍ সৃষ্টি করেছেন সাত আসমান। نَفِيْرًا দল। যারা তার সঙ্গে চলে। وَلِيُتَبِّرُوْا তাদের প্রাধান্য সম্পূর্ণ খতম করার জন্য। حَصِيْرًا বন্দীখানা। فَحَقَّ অনিবার্য হয়েছে। مَيْسُوْرًا নম্র। خِطْئًا পাপ। এটা خَطِئْتُ থেকে اسْمٌ এবং وَالْخَطَأُ (জবর সহকারে) তার মাসদার গুনাহের অর্থে। خَطِئْتُ আমি পাপ করেছি। لَنْتَخْرِقَ কখনও বিদীর্ণ করতে পারবে না। وَإِذْ هُمْ نَجْوٰى এটি نَاجَيْتُ থেকে مَصْدَرٌ এর দ্বারা তাদের (জালিমদের) অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থ পরস্পর কানাঘুষা করছে। رُفَاتًا চূর্ণ-বিচূর্ণ। وَاسْتَفْزِزْ উত্তেজিত কর। بِخَيْلِكَ তোমার অশ্বারোহী দ্বারা وَالرِّجَالُ الرَّجَّالَةُ (পদাতিক বাহিনী) এর একবচন رَاجِلٌ যেমন صَاحِبٌ এর বহুবচন صَحْبٍ এবং تَاجِرٍ এর বহুবচন حَاصِبًا،تَجْرٌ প্রবাহিত প্রচন্ড বাতাস এবং حَاصِبُ যা ঝঞঝা-বায়ু প্রবাহিত করে। এর থেকেই حَصَبُجَهَنَّمَ জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়। অর্থাৎ তারা হচ্ছে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত বস্তু। حَصَبَ فِيالْأَرْضِ যমীনে চলে গেছে। الْحَصْبَاءِالْحَصْبُ থেকে গঠিত। অর্থ পাথরগুলো। تَارَةً একবার। তার বহুবচন لَأَحْتَنِكَنَّ-تَارَاتُ- وَتِيَرْةَ طَاَئِرَهُ তাদের সমূলে উৎপাটিত করব। বলা হয় احْتَنَكَ فُلَانٌ مَا عِنْدَ فُلَانٍ مِنْ عِلْمٍ অর্থাৎ অন্যের যে ইল্ম ছিল তা সে সবটুকু হাসিল করে নিয়েছে। طَائِرَهُ তার ভাগ্য। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, কুরআন মাজীদে যত জায়গায় سُلْطَانٍ শব্দ রয়েছে, তার অর্থ প্রমাণ। وَلِيٌّ مِنْ الذُّلِّ অর্থাৎ দুঃখ-দুর্দশার কারণে কারো সঙ্গে তার বন্ধুত্ব করতে পারে না। (১৫;৬)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৪৯ | 4349 | ٤۳٤۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণী, أسرى بعبده ليلا من المسجد الحرام তিনি তার বান্দাকে রজনীতে ভ্রমন করিয়েছিলেন মসজিদুল হারাম থেকে।
৪৩৪৯। আবদান … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বায়তুল মুকাদ্দাস সফর করানো হয়, সে রাতে তাঁর সামনে দুটি পেয়ালা পেশ করা হয়েছিল। তার একটিতে ছিল শরাব, আরেকটিতে ছিল দুধ। তিনি উভয়টির দিকে তাকালেন এবং দুধ গ্রহন করলেন। তখন জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেন, সমস্ত প্রশংসা সে আল্লাহর, যিনি আপনাকে ফিতরাতের পথ দেখিয়েছেন। যদি আপনি শরাব গ্রহন করতেন, তাহলে আপনার উম্মত অবাধ্য হয়ে যেত।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৫০ | 4350 | ٤۳۵۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণী, أسرى بعبده ليلا من المسجد الحرام তিনি তার বান্দাকে রজনীতে ভ্রমন করিয়েছিলেন মসজিদুল হারাম থেকে।
৪৩৫০। আহমদ ইবনু সালিহ (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যখন কুরাইশরা মিরাজের ঘটনায় আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে লাগলো, তখন আমি হিজরে* দাঁড়ালাম। আল্লাহ তা’আলা বায়তুল মুকাদ্দাস কে আমার সামনে উম্মুক্ত করে দিলেন। আমি তা দেখে দেখে তার সকল চিহ্ন তাদের বলে দিতে লাগলাম।

ইয়াকুব ইবনু ইব্রাহিম ইবনু শিহাব সূত্রে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন। যখন কুরাইশরা আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে লাগল , সেই ঘটনার ব্যাপারে যখন আমাকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত সফর করানো হয়েছিল। পরবর্তী অনুরূপ। এমন যা সবকিছু চুরমার করে দেয়। আমাকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত সফর করানোর ঘটনাটি যখন কুরাইশরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে লাগল।

* হিজর – বায়তুল্লাহ শরিফের মিযাবে রহমতের নিচে যে অংশটি পাথর দিয়ে ঘেরা তাকে হিজর বলা হয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৫১ | 4351 | ٤۳۵۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণী, وإذا أردنا أن نهلك قرية أمرنا مترفيها “আমি যখন কোন জনপদ ধ্বংস করতে চাই তখন তার সমৃদ্ধশালী ব্যক্তিদেরকে আদেশ করি”।
অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِيْٓاٰدَمَ এবং আমি মর্যাদা দান করেছি বনী আদমকে। এবং أَكْرَمْنَا উভয় একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। ضِعْفَ الْحَيَاةِ দুনিয়ার জীবনের শাস্তি, মৃত্যুর শাস্তি خِلَافَكَ এবং خَلْفَكَ উভয় একই অর্থে। (অর্থাৎ-তোমার পিছনে) نَأَى দূরীভূত হল। شَاكِلَةِ নিজ প্রকৃতি মুতাবিক। এটি شَكْلُتُه থেকে উপন্ন। صَرَّفْنَا আমরা অভিমুখী করেছি। قَبِيْلًا চাক্ষুষ এবং সম্মুখে। বলা হয় قَابِلَةُ (ধাত্রী যেহেতু প্রসূতির সামনে থাকে এবং সন্তান ধারণ করে। خَشْيَةَ الإِنْفَاقِ খরচের ভয় أَنْفَقَ الرَّجُلُ লোকটি অভাবী হয়ে গেল। نَفِقَ الشَّيْءُ জিনিসটি চলে গেল। قَتُوْرًا অতি কৃপণ। ذَقَنٌ أَذْقَانٌ এর বহুবচন, যার অর্থ হল, উভয় চোয়ালের সংযোগস্থল। মুজাহিদ (রহ.) বলেন مَوْفُوْرًا পূর্ণ। تَبِيْعًا প্রতিশোধ গ্রহণকারী। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, এর অর্থ সাহায্যকারী। خَبَتْ নিভিয়ে যায়। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, لَا تُبَذِّرْ অপব্যয় করো না। ابْتِغَاءَ رَحْمَةٍ রুজির আশায়। مَثْبُوْرًا অভিশপ্ত। لَا تَقْفُবলো না। فَجَاسُوْا প্রতিজ্ঞা করেছে। يُزْجِي الْفُلْكَ নৌকা চালনা করছে। لِلْأَذْقَانِ মুখমন্ডল (ভূমিতে লুটিয়ে দেয়)।

৪৩৫১। আলি ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাহিলিয়াতের যুগে কোন গোত্রের লোক সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে আমরা বলতাম أَمِرَ بَنُو فُلاَنٍ অমুক গোত্রের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৫২ | 4352 | ٤۳۵۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণী, وإذا أردنا أن نهلك قرية أمرنا مترفيها “আমি যখন কোন জনপদ ধ্বংস করতে চাই তখন তার সমৃদ্ধশালী ব্যক্তিদেরকে আদেশ করি”।
৪৩৫২। হুমায়দি সুফিয়ান থেকে বর্ণনা করে বলেন, أَمِرَ (মীম কাসরাহ যুক্ত)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৫৩ | 4353 | ٤۳۵۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণী, ذرية من حملنا مع نوح إنه كان عبدا شكورا “যাদেরকে আমি নূহের সাথে নৌকায় আরোহণ করিয়েছিলাম, এরা হচ্ছে তাদের বংশধর। তারা ছিল পরম কৃতজ্ঞ বান্দা”।
৪৩৫৩। মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে গোশত আনা হল এবং তাকে সামনের রান পরিবেশন করা হল। তিনি এটা পছন্দ করতেন। তিনি তার থেকে কামড় দিয়ে খেলেন। এরপর বললেন, আমি হব কিয়ামতের দিন মানবকুলের সরদার। তোমাদের কি জানা আছে তা কেন? কিয়ামতের দিন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল মানুষ এমন এক ময়দানে সমবেত হবে, যেখানে একজন আহ্বানকারীর আহবান সকলে শুনতে পাবে। এবং সকলেই একসঙ্গে দৃষ্টিগোচর হবে। সূর্য নিকটে এসে যাবে। মানুষ এমনি কষ্ট ক্লেশের সম্মুখিন হবে যা অসহনীয় ও অসহ্যকর হয়ে পড়বে। তখন লোকেরা বলবে, তোমরা কি বিপদের সম্মুখীন হয়েছ তা কি দেখতে পাচ্ছনা? তোমরা কি এমন কাউকে খুঁজে বের করবেনা যিনি তোমাদের রবের কাছে তোমাদের জন্য সুপারিশকারি হবেন?

কেউ কেউ অন্যদের বলবে যে, আদমের কাছে চল। তখন সকলে তার কাছে এসে তাকে বলবে, আপনি আবূল বাশার। আল্লাহ তা’আলা আপনাকে স্বীয় হাত দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তার রুহ আপনার মধ্যে ফুঁকে দিয়েছেন, এবং ফেরেশতাদের নির্দেশ দিলে তারা আপনাকে সিজদা করেন। আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না যে, আমরা কিসের মধ্যে আছি? আপনি কি দেখছেন না যে আমরা কি অবস্থায় পৌঁছেছি? তখন আদম (আলাইহিস সালাম) বলবেন, আজ আমার রব এত রাগান্বিত হয়েছেন যার আগে কোনদিন এরূপ রাগান্বিত হন নি আর পরেও এরুপ রাগান্বিত হবেন না। তিনি আমাকে একটি বৃক্ষের কাছে যেতে নিষেধ করেছিলেন, কিন্তু আমি অমান্য করেছি। নফসি, নফসি, নফসি (আমি নিজেই সুপারিশ প্রার্থী ), তোমরা অন্যের কাছে যাও। তোমরা নূহ (আলাইহিস সালাম) এর কাছে যাও।

তখন সকলে নূহ (আলাইহিস সালাম) এর কাছে এসে বলবে, হে নূহ (আলাইহিস সালাম)! নিশ্চয়ই আপনি পৃথিবীর মানুষের প্রতি প্রথম রাসুল। আর আল্লাহ তা’আলা আপনাকে পরম কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে অভিহিত করেছেন। সুতরাং আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না যে আমরা কিসের মধ্যে আছি? তিনি বলবেন, আজ আমার রব এত রাগান্বিত হয়েছেন যার আগে কোনদিন এরূপ রাগান্বিত হন নি আর পরেও এরূপ রাগান্বিত হবেন না। আমার একটি গ্রহণীয় দোয়া ছিল যা আমি আমার কওমের ব্যপারে করে ফেলেছি। (এখন) নফসি, নফসি, নফসি। তোমরা অন্যের কাছে যাও। যাও তোমরা ইব্রাহিম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে।

তখন তারা ইব্রাহিম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে এসে বলবে, হে ইব্রাহিম (আলাইহিস সালাম)! আপনি আল্লাহর নাবী এবং পৃথিবীর মানুষের মধ্যে আপনি আল্লাহর বন্ধু। আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না যে আমরা কিসের মধ্যে আছি? তিনি বলবেন, আজ আমার রব এত রাগান্বিত হয়েছেন যার আগে কোনদিন এরূপ রাগান্বিত হন নি আর পরেও এরূপ রাগান্বিত হবেন না। আর আমিতো তিনটি মিথ্যা বলে ফেলেছিলাম। রাবি আবূ হাইয়ান তার বর্ণনায় এগুলোর উল্লেখ করেছেন। (এখন) নফসি, নফসি, নফসি। তোমরা অন্যের কাছে যাও। যাও তোমরা মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে।

তারা মূসা র কাছে এসে বলবে, হে মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আপনি আল্লাহর রাসুল। আল্লাহ আপনাকে রিসালাত এর সম্মান দান করেন এবং আপনার সাথে কথা বলে সমগ্র মানব জাতির উপর মর্যাদা দান করেছেন। আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না যে আমরা কিসের মধ্যে আছি? তিনি বলবেন, আজ আমার রব এত রাগান্বিত হয়েছেন যার আগে কোনদিন এরূপ রাগান্বিত হন নি আর পরেও এরূপ রাগান্বিত হবেন না। আর আমিতো এক ব্যাক্তিকে হত্যা করে ফেলেছিলাম। যাকে হত্যা করার জন্য আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়নি। (এখন) নফসি, নফসি, নফসি। তোমরা অন্যের কাছে যাও। যাও তোমরা ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে।

তারা ঈসার কাছে এসে বলবে, হে ঈসা (আলাইহিস সালাম)! আপনি আল্লাহর রাসুল এবং কালেমা যা তিনি মরিয়ম (আলাইহিস সালাম) এর উপর ঢেলে দিয়েছিলেন। আপনি রূহ আপনি দোলনায় থেকে মানুষের সাথে কথা বলেছেন। আজ আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না যে আমরা কিসের মধ্যে আছি? তিনি বলবেন, আজ আমার রব এত রাগান্বিত হয়েছেন যার আগে কোনদিন এরূপ রাগান্বিত হন নি আর পরেও এরুপ রাগান্বিত হবেন না। তিনি নিজের কন গুনাহের কথা বলবেন না। নফসি, নফসি, নফসি। তোমরা অন্যের কাছে যাও। যাও তোমরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে। তারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলবে, হে মুহাম্মদ! আপনি আল্লাহর রাসুল শেষ নাবী। আল্লাহ তা’আলা আপনার আগের, পরের সব গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। আপনি আমাদের জন্য আপনার রবের কাছে সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কিসের মধ্যে আছি?

তখন আমি আরশের নীচে এসে আমার রবের সামনে সিজদা দিয়ে পড়ব। তারপর আল্লাহ তা’আলা তার প্রশংসা এবং গুণগানের এমন সুন্দর পদ্ধতি আমার সামনে খুলে দিবেন যা এর আগে অন্য কারও জন্য খুলেন নি। এরপর বলা হবে, হে মুহাম্মদ! তোমার মাথা উঠাও। তুমি যা চাও তোমাকে দেওয়া হবে। তুমি সুপারিশ কর, তোমার সুপারিশ কবুল করা হবে। এরপর আমি মাথা উঠিয়ে বলব, “হে আমার রব! আমার উম্মত! হে আমার রব! আমার উম্মত! হে আমার রব! আমার উম্মত! তখন বলা হবে, হে মুহাম্মদ! আপনার উম্মতের মধ্যে যাদের কোন হিসাব নিকাশ হবে না, তাদেরকে জান্নাতের দরজাসমূহের ডান পাশের দরজা দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দিন। এ দরজা ছাড়া অন্যদের সাথে অন্য দরজায় ও তাদের প্রবেশের অধিকার থাকবে। তারপর তিনি বলবেন, যার হাতে আমার প্রান সে সত্তার শপথ! বেহেশতের এক দরজার দুই পাশের মধ্যবর্তী প্রশস্ততা যেমন মক্কা ও হামিরের মধ্যবর্তী দূরত্ব, অথবা মক্কা ও বসরার মাঝখানের দূরত্ব।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৫৪ | 4354 | ٤۳۵٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ وآتينا داود زبورا আর আমি দাউদকে যাবুর দান করেছি”।
৪৩৫৪। ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দাউদ (আলাইহিস সালাম) এর উপর (যাবুর) পড়া এত সহজ করে দেওয়া হয়েছিল যে, তিনি তার সওয়ারির উপর জ্বীন বাঁধার জন্য নির্দেশ দিতেন, জ্বীন বাঁধা শেষ হওয়ার আগেই তিনি পড়ে ফেলতেন তার উপর অবতীর্ণ কিতাব।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৫৫ | 4355 | ٤۳۵۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ قل ادعوا الذين زعمتم من دونه فلا يملكون كشف الضر عنكم ولا تحويلا “বল, তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর যাদের ইলাহ মনে কর, তাদের আহবান কর; তমদের দুঃখ দৈন্য দূর করার অথবা পরিবর্তন করার শক্তি ওদের নেই”।
৪৩৫৫। আমর ইবনু আলি (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত , ‏إِلَى رَبِّهِمِ الْوَسِيلَةَ তিনি আয়াতটি সম্পর্কে বলেন, কিছু মানুষ কিছু জ্বীনকে ইবাদত করত। সেই জ্বীনেরা তো ইসলাম গ্রহন করে ফেলল। আর ঐ লোকজন তাদের (বাতিল) ধর্ম আঁকড়িয়ে রইল। আশজায়ী সুফয়ান সূত্রে আমাশ (রহঃ) থেকে ‏قُلِ ادْعُوا الَّذِينَ زَعَمْتُمْ‏ আয়াতটি অতিরিক্ত বর্ণনা করেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৫৬ | 4356 | ٤۳۵٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ أولئك الذين يدعون يبتغون إلى ربهم الوسيلة “তারা যাদের আহবান করে, তারাই তো তাদের প্রতিপালকের নৈকট্য লাভের উপায় সন্ধান করে”।
৪৩৫৬। বিশর ইবনু খালিদ (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) الَّذِينَ يَدْعُونَ يَبْتَغُونَ إِلَى رَبِّهِمِ الْوَسِيلَةَ এ আয়াতটি সম্পর্কে বলেন, কিছু লোক জ্বীনের পূজা করত। পরে জ্বীনগুলো ইসলাম ধর্ম গ্রহন করল। তাদের সম্পর্কে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৫৭ | 4357 | ٤۳۵۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ وما جعلنا الرؤيا التي أريناك إلا فتنة للناس (হে রাসুল!) “আমি যে দৃশ্য আপনাকে দেখিয়েছি, তা কেবলমাত্র মানুষের পরীক্ষার জন্য”।
৪৩৫৭। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) وَمَا جَعَلْنَا الرُّؤْيَا الَّتِي أَرَيْنَاكَ إِلاَّ فِتْنَةً لِلنَّاسِ এ আয়াত সম্পর্কে বলেন, এ আয়াতে رُؤْيَا (স্বপ্নে দেখা নয়, বরং) চোখ দ্বারা প্রত্যক্ষ ভাবে দেখা বোঝানো হয়েছে, যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মিরাজের রাতে প্রত্যক্ষ ভাবে দেখানো হয়েছিল। আর এখানে الشَّجَرَةَ الْمَلْعُونَةَ‏ (অভিশপ্ত বৃক্ষ) বলতে যাক্কুম বৃক্ষ কে বোঝানো হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৫৮ | 4358 | ٤۳۵۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণী, إن قرآن الفجر كان مشهودا “ফজরের সালাতে কুরআন পাঠ পরিলক্ষিত হয় বিশেষ ভাবে”। মুজাহিদ (র) বলেন, الفجر দ্বারা এখানে সালাতে ফজর বুঝানো হয়েছে।
৪৩৫৮। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বরনিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জামাতের সাথে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার ফজিলত একাকী পড়ার চেয়ে পঁচিশ গুন বেশি। আর প্রাতঃকালের সালাত (নামায/নামাজ) রাতের ফেরেশতারা এবং দিনের ফেরেশতারা সমবেত হয় (এ প্রসঙ্গে) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, তোমরা ইচ্ছা করলে এ আয়াতটি পড়ে নিতে পার – وَقُرْآنَ الْفَجْرِ إِنَّ قُرْآنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُودًا (কায়েম করবে) “ফজরের সালাত (নামায/নামাজ), ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)” পরিলক্ষিত হয় বিশেষ ভাবে”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৫৯ | 4359 | ٤۳۵۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ عسى أن يبعثك ربك مقاما محمودا “আশা করা যায় তমার রব তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন মাকামে মাহমুদে” ।
৪৩৫৯। ইসমাইল ইবনু আবান (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন লোকেরা ভিন্ন ভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে। প্রত্যেক নাবীর উম্মত নিজ নিজ নাবীর অনুসরন করবে। তারা বলবে, হে অমুক (নাবী)! আপনি সুপারিশ করুন। হে অমুক (নাবী)! আপনি সুপারিশ করুন। তারা কেউ সুপারিশ করতে রাজী হবেন না। শেষ পর্যন্ত সুপারিশের দায়িত্ব নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর বর্তাবে। আর এ দিনেই আল্লাহ তা’আলা তাকে প্রশংসিত স্থানে* (মাকামে মাহমুদে) প্রতিষ্ঠিত করবেন।

* মাকামে মাহমুদ অর্থ প্রশংসিত স্থান। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেই সর্বপ্রথম “শাফায়াতকারির” মর্যাদা দান করে প্রশংসিত স্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৬০ | 4360 | ٤۳٦۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ عسى أن يبعثك ربك مقاما محمودا “আশা করা যায় তমার রব তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন মাকামে মাহমুদে” ।
৪৩৬০। আলি ইবনু আইয়াশ (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি আজান শোনার পর এ দোয়া পড়বে , “হে আল্লাহ! এ পরিপূর্ণ আহবানের এবং প্রতিষ্ঠিত সালাতে এর প্রতিপালক, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ওসিলা ও শ্রেষ্ঠত্ব দান কর। প্রতিষ্ঠিত কর তাকে মাকামে মাহমুদে, যার ওয়াদা তুমি করেছ”। কিয়ামতের দিন তার জন্য আমার শাফায়াত অনিবার্য হয়ে যাবে। এ হাদিসটি হামযা ইবনু আবদুল্লাহ তার পিতার থেকে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৬১ | 4361 | ٤۳٦۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বানীঃ وقل جاء الحق وزهق الباطل إن الباطل كان زهوقا “এবং বল, সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। মিথ্যা ত বিলুপ্ত হওয়ারই”। يزهق ধ্বংস হবে।
৪৩৬১। হুমায়দি (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। (মক্কা বিজয়ের দিন) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় প্রবেশ করলেন। তখন কা’বা ঘরের চারপাশে তিনশ ষাট টি মূর্তি ছিল। তাঁর হাতের ছড়ি দিয়ে তিনি এগুলোকে ঠোকা দিতে লাগলেন এবং বলছিলেন, “সত্য এসেছে আর মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। মিথ্যা তো বিলুপ্ত হওয়ারই” (৩৪ঃ ৪৯) “বল সত্য এসেছে আর অসত্য না পারে নতুন কিছু সৃষ্টি করতে এবং না পারে পুনরাবৃত্তি করতে”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৬২ | 4362 | ٤۳٦۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ ويسألونك عن الروح “তোমাকে তারা রুহ সম্পর্কে প্রশ্ন করছে”।
৪৩৬২। উমর ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে একটি ক্ষেতের মাঝে উপস্থিত ছিলাম। তিনি একটি খেজুর যষ্ঠীতে ভর করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এমন সময় কিছু সংখ্যক ইহুদী যাচ্ছিল। তারা একে অন্যকে বলতে লাগলো, তাঁকে রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন কর। কেউ বলল, কেন তাকে জিজ্ঞেস করতে চাইছ? আবার কেউ বলল, তিনি এমন উত্তর দিবেন না যা তোমরা অপছন্দ কর। তারপর তারা বলল যে, তাকে প্রশ্ন কর। এরপরে তাকে রুহ সম্পর্কে প্রশ্ন করল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিরত রইলেন। এ সম্পর্কে তাদের কোন উত্তর দিলেন না। আমি বুঝতে পারলাম, তার উপর ওহি নাযিল হবে। আমি আমার জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলাম। তারপর যখন ওহি নাযিল হল, তখন তিনি [রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, ‏وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الرُّوحِ قُلِ الرُّوحُ مِنْ أَمْرِ رَبِّي وَمَا أُوتِيتُمْ مِنَ الْعِلْمِ إِلاَّ قَلِيلاً “তোমাকে তারা রুহ সম্পর্কে প্রশ্ন করছে। বল, রুহ আমার রবের আদেশ এবং তোমাদের সামান্য জ্ঞানই দেওয়া হয়েছে। (১৭: ৮৫)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৬৩ | 4363 | ٤۳٦۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ ولا تجهر بصلاتك ولا تخافت بها “সালাতে স্বর উঁচু করবেনা এবং অতিশয় ক্ষীণ ও করবেনা”। (১৭ঃ ১১০)।
৪৩৬৩। ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সালাতে স্বর উঁচু করবেনা এবং অতিশয় ক্ষীণও করবেনা। এ আয়াত টি এমন সময় অবতীর্ণ হয় যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় অপ্রকাশ্যে অবস্থান করছিলেন। তিনি যখন তার সাহাবাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন তখন তিনি উচ্চস্বরে কুরআন পাঠ করতেন। মুশরিকরা তা শুনে কুরআনকে গালি দিত। আর গালি দিত যিনি তা অবতীর্ণ করেছেন ও যিনি তা নিয়ে এসেছেন। এজন্য আল্লাহ তা’আলা তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলেছিলেন, “তুমি তোমার সালাতে উচ্চস্বরে কিরাত পড়বে না, যাতে মুশরিকরা শুনে কুরআনকে গালি দেয়, এবং তা এত নিম্ন স্বরে ও পড়বে না, যাতে তোমার সাহাবীরা শুনতে না পায়, বরং এ দুয়ের মধ্যপথ অবলম্বন কর”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৬৪ | 4364 | ٤۳٦٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ ولا تجهر بصلاتك ولا تخافت بها “সালাতে স্বর উঁচু করবেনা এবং অতিশয় ক্ষীণ ও করবেনা”। (১৭ঃ ১১০)।
৪৩৬৪। তালক ইবনু গাননাম (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‏وَلاَ تَجْهَرْ بِصَلاَتِكَ এ আয়াতটি দোয়ার ব্যপারে অবতীর্ণ হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৬৫ | 4365 | ٤۳٦۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ وكان الإنسان أكثر شيء جدلا মানুষ অধিকাংশ ব্যপারেই বিতর্ক প্রিয়।
সুরা কাহাফ

মুজাহিদ (রহ.) বলেন تَقْرِضُهُمْ তাদের ছেড়ে যায়। وَكَانَ لَه ثُمُرٌ স্বর্ণ, রৌপ্য। অন্য হতে বর্ণিত যে, এটি الثَّمَرُ-এর বহুবচন। بَاخِعٌ ধ্বংসকারী أَسَفًا লজ্জায়। الْكَهْفُ পর্বতের গুহা। وَالرَّقِيْمُ লিপিবদ্ধ। مَرْقُوْمٌ লিখিত। الرَّقْمُ থেকে গঠিত। رَبَطْنَا عَلٰى قُلُوْبِهِمْ আমি তাদের অন্তরে সবর ঢেলে দিলাম। (অন্যত্র আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন) لَوْلَآ أَنْ رَّبَطْنَا عَلٰى قَلْبِهَا (যদি আমি তাঁর অন্তরে সবর ঢেলে না দিতাম) شَطَطًا সীমা অতিক্রম।

الْوَصِيْدُ আঙ্গিণা, এর বহুবচন وَصَائِدُ وَوُصُدٌ আর বলা হয় الْوَصِيْدُ দরজা, مَوْصَدَةَ আবদ্ধ ও আটকানো, آصَدَ الْبَابَ وَأَوْصَدَه উভয়ই ব্যবহার হয়। بَعَثْنَاهُمْ আমি তাদের জীবিত করলাম। أَزْكٰى প্রাচুর্য বলা হয় أَحَلُّ যা অধিক হালাল অর্থে ব্যবহৃত এবং বলা হয়, أَكْثَرُرَيْعًا অধিক পরিবর্ধিত। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, أُكْلَهَا অর্থাৎ ফল وَلَمْتَظْلِمْ ফলহ্রাস পায়নি। সা‘ঈদ (রহ.) …..ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, الرَّقِيْمُ সীসার তৈরি ফলক; যার ওপর সে সময়ের রাজাদের নাম খোদিত করে এবং পরে তাঁর কোষাগারে রেখে দিত। فَضَرَبَ اللهُ عَلٰىاٰذَانِهِمْ তাঁরা ঘুমিয়ে পড়লেন। অন্যগণ বলেন, وَأَلَتْ تَئِلُ তোমরা নাজাহত পাবে। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, مَوْئِلًا সংরক্ষিত স্থান। لَا يَسْتَطِيْعُوْنَ سَمْعًا তারা বুঝে না।

৪৩৬৫। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা রাতের বেলা তার ও ফাতিমার (রাঃ) কাছে এসে বললেন, তোমরা কি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছনা? رَجْمًامبِالْغَيْبِ ব্যাপারটি অস্পষ্ট ছিল। فُرُطًا লজ্জিত। سُرَادِقُهَا তার বেষ্টনীর মত। অর্থাৎ ক্ষুদ্র কক্ষসমূহ, যা তাঁবু পরিবেষ্টন করে রেখেছে। يُحَاوِرُه শব্দটি مُحَاوَرَةِ থেকে গঠিত। অর্থ কথার-আদান-প্রদান। لٰكِنَّا هُوَ اللهُ رَبِّيْ (কিন্তু আল্লাহ্ই আমার প্রতিপালক।) এখানে আসলে ছিল لَكِنَّ أَنَا هُوَ اللهُ رَبِّيْ কিন্তু ‘আলিফ’ বিলুপ্ত করে একটা ‘নুন’ আর একটি ‘নুনের’ সঙ্গে এদগাম যুক্ত করে দেয়া হয়েছে زَلَقًا অর্থ, যার ওপর পা টিকে থাকে না। هُنَالِكَالْوِلَايَةُ (এ ক্ষেত্রে সাহায্য করার অধিকার) الْوِلَايَةُ এটি وَلِيِّ শব্দের মাসদার عُقْبَةً -عُقْبَى-عَاقِبَةً-عُقُبًا সবগুলো এই অর্থে ব্যবহৃত। এর অর্থ আখিরাত। قَبْلًا-قُبُلًا-قِبْلًا সম্মুখ لِيُدْحِضُوْا (সূচনা করা) الدَّحْضُ থেকে গঠিত। দূরীভূত করা, অর্থ পদস্খলন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৬৬ | 4366 | ٤۳٦٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ وإذ قال موسى لفتاه لا أبرح حتى أبلغ مجمع البحرين أو أمضي حقبا স্মরণ কর যখন মুসা তার খাদেমকে বলেছিলেন, দুই সমুদ্রের সঙ্গমস্থলে না পৌঁছে আমি থামব না অথবা আমি যুগ যুগ ধরে চলতে থাকব। حقبا অর্থ যুগ, তার বহুবচন أحقاب
৪৩৬৬। হুমায়দি (রহঃ) … সাইদ ইবনু জুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস কে বললাম, নওফাল বাককালীর ধারনা, খিযিরের সাথী – মূসা, তিনি বনী ইসরাইলের নাবী মূসা ছিলেন না। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর দুশমন* মিথ্যা কথা বলেছে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন) উবায় ইবনু কা’আব (রাঃ) আমাকে বলেছেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, মূসা (আলাইহিস সালাম) একদা বনী ইসরাইলের সামনে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। তাঁকে প্রশ্ন করা হল, কোন ব্যাক্তি সবচে অধিক জ্ঞানী? তিনি বললেন, আমি। এতে আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট হলেন। কেননা এ জ্ঞানের কথাটিকে তিনি আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করেন নি। আল্লাহ তার প্রতি ওহী পাঠালেন, দু সমুদ্রের সঙ্গমস্থলে আমার এক বান্দা রয়েছে। সে তোমার চেয়ে অধিক জ্ঞানী।

মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, ইয়া রব! আমি কিভাবে তার সাক্ষাত পেতে পারি? আল্লাহ বললেন, তোমার সাথে একটি মাছ নাও এবং সেটা থলের মধ্যে রাখ। যেখানে মাছটি হারিয়ে যাবে সেখানেই। তারপর তিনি একটি মাছ নিলেন এবং সেটাকে থলের মধ্যে রাখলেন। অতঃপর রওনা দিলেন। আর সঙ্গে চললেন তাঁর খাদেম ‘য়ূশা’ ইবনু নুন। তারা যখন সমুদ্রের তীরে একটি বিরাট পাথরের কাছে এসে পৌঁছলেন, তখন তারা উভয়ই তার উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন। এ সময় মাছটি থলের মধ্যে লাফিয়ে উঠল এবং থলে থেকে বের হয়ে সমুদ্রে পড়ে গেল। “মাছটি সুড়ঙ্গের মত পথ করে সমুদ্রে নেমে গেল”। আর মাছটি যেখান দিয়ে চলে গিয়েছিল, আল্লাহ সেখানে পানির প্রবাহ বন্ধ করে দিলেন। এবং সেখানে একটি সুড়ঙ্গের মত হয়ে গেল। যখন তিনি জাগলেন, তার সাথী তাকে মাছটির সংবাদ দিতে ভুলে গিয়েছিলেন। সেদিনের বাকি সময় ও পরবর্তী রাত তারা চললেন।

যখন ভোর হল, মূসা (আলাইহিস সালাম) তার খাদেমকে বললেন, ‘আমাদের প্রাতঃরাশ আন, আমরা তো আমাদের এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি’। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ যে স্থানের নির্দেশ করেছিলেন, সে স্থান অতিক্রম করার পূর্বে মূসা (আলাইহিস সালাম) ক্লান্তি অনুভব করেন নি। তখন তার খাদিম তাকে বলল, ‘আপনি কি লক্ষ্য করেছেন আমরা যখন শিলা খণ্ডে বিশ্রাম করছিলাম তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম। শয়তানই এ কথা বলতে আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। মাছটি আশ্চর্যজনকভাবে নিজের পথ করে নেমে গেল সমুদ্রে’। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মাছটি তার পথ করে সমুদ্রে নেমে গিয়েছিল এবং মূসা (আলাইহিস সালাম) ও তার খাদেম কে তা আশ্চর্যান্বিত করে দিয়েছিল। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমরা তো সে স্থান টিরই অনুসন্ধান করছিলাম।

তারপর তারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চলল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারা উভয়ে তাদের পদচিহ্ন অনুসরন করে সে শিলাখন্ডের কাছে ফিরে আসলেন। সেখানে এসে এক ব্যাক্তিকে কাপড় জড়ানো অবস্থায় পেলেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) তাকে সালাম দিলেন। খিযির (আলাইহিস সালাম) বললেন, তোমাদের এ স্থলে সালাম কোত্থেকে? তিনি বললেন, আমি মূসা। খিযির জিজ্ঞেশ করলেন, বনী ইসরাইলের মূসা? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি আপনার কাছে এসেছি এ জন্য যে, সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে তা থেকে আমাকে শিক্ষা দিবেন। তিনি বললেন, তুমি কিছুতেই আমার সাথে ধৈর্য ধারন করে থাকতে পারবে না। হে মূসা! আল্লাহর জ্ঞান থেকে আমাকে এমন কিছু জ্ঞান দান করা হয়েছে যা তুমি জাননা আর তোমাকে আল্লাহ তাঁর জ্ঞান থেকে যে জ্ঞান দান করেছেন তা আমি জানিনা।

মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আল্লাহ চাহেতু, আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন। এবং আপনার কোন আদেশ আমি অমান্য করবনা। তখন খিযির (আলাইহিস সালাম) তাকে বললেন, আচ্ছা তুমি যদি আমার অনুসরন করই, তবে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করবে না, যতক্ষণ আমি তোমাকে সে সম্পর্কে না বলি।

তারপর উভয়ে চললেন। তারা সমুদ্রের তীর ধরে চলতে লাগলেন। তখন একটি নৌকা যাচ্ছিল। তারা তাদের নৌকায় উঠিয়ে নেওয়ার ব্যপারে নৌকার চালকদের সাথে আলাপ করলেন। তারা খিযির (আলাইহিস সালাম) কে চিনে ফেলল। তাই তাদেরকে বিনা পারিশ্রমিকে নৌকায় উঠিয়ে নিল। “যখন তারা উভয়ে নৌকায় আরোহণ করলেন” খিযির (আলাইহিস সালাম) কুড়াল দিয়ে নৌকার একটি তক্তা বিদীর্ণ করলেন। (এ দেখে) মূসা (আলাইহিস সালাম) তাকে বললেন, এ লোকেরা তো বিনা পারিশ্রমিকে আমাদের বহন করছে, অথচ আপনি এদের নৌকাটি বিনষ্ট করতে চাইছেন? “আপনি নৌকাটি বিদীর্ণ করে ফেললেন, যাতে আরোহীরা ডুবে যায়। আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন। আমি কি বলিনি যে তুমি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্য ধারন করতে পারবেনা? মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমার ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না ও আমার ব্যপারে অত্যধিক কঠোরতা আবিলম্ব করবেন না’।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মূসা (আলাইহিস সালাম) এর প্রথমবারের এই অপরাধ টি ভুলবশত হয়েছিল। তিনি বললেন, এরপরে একটি চড়ুই পাখি এসে নৌকার পাশে বসে ঠোঁট দিয়ে সমুদ্রে এক ঠোকর মারল। খিযির (আলাইহিস সালাম) মূসা (আলাইহিস সালাম) কে বললেন, এ সমুদ্র হতে পাখিটি যতটুকু পানি ঠোঁটে নিল, আমার ও তোমার জ্ঞান আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় ততটুকু। তারপর তারা নৌকা থেকে অবতরন করে সমুদ্রের তীর ধরে চলতে লাগলেন। এমন সময় খিযির (আলাইহিস সালাম) একটি বালককে অন্য বালকদের সাথে খেলতে দেখলেন। খিযির (আলাইহিস সালাম) হাত দিয়ে ছেলেটির মাথা ধরে তাকে হত্যা করলেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) খিযির (আলাইহিস সালাম) কে বললেন, “আপনি কি জানের বদলা ছাড়াই এক নিষ্পাপ জীবনকে হত্যা করলেন? আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন। তিনি বললেন, আমি কি তোমাকে বলিনি যে, তুমি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্যধারণ করতে পারবেনা? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এ অভিযোগ করাটা ছিল প্রথমটির চাইতেও গুরুতর। (মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন) এরপর যদি আমি আপনাকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস করি তাহলে আপনি আমাকে সঙ্গে রাখবেন না। আপনার কাছে আমার ওজর আপত্তি চূড়ান্তে পৌঁছে গিয়েছে।

তারপর উভয়ে চলতে লাগলেন। অবশেষে তারা এক জনপদের কাছে পৌঁছে তার অধিবাসীদের কাছে খাদ্য চাইলেন। কিন্তু তারা তাদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল। তারপর তথায় তারা এক পতনম্মুখ প্রাচীর দেখতে পেলেন। বর্ণনাকারী বলেন, সেটি ঝুঁকে পড়েছিল। খিযির (আলাইহিস সালাম) নিজ হাতে সেতি সোজা করে দিলেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, এ লোকদের কাছে আমরা এলাম। তারা আমাদের খাবার দিলনা এবং আমাদের মেহমানদারীও করলনা। “আপনি তো ইচ্ছা করলে এর জন্য পারিশ্রমিক গ্রহন করতে পারতেন”। তিনি বললেন, এখানেই তোমার এবং আমার মধ্যে পার্থক্য ঘটল। যে বিষয়ে তুমি ধৈর্য ধারন করতে পারনি, এ তার ব্যাখ্যা”।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার মনোবাঞ্ছা হচ্ছে যে, যদি মূসা (আলাইহিস সালাম) আর একটু ধৈর্য ধারন করতেন, তাহলে আল্লাহ তাদের আরও ঘটনা আমাদের জানাতেন। সাইদ ইবনু জুবায়র (রাঃ) বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) এভাবে এ আয়াত পাঠ করতেন – নিচের আয়াতটি এভাবে পাঠ করলেন وَكَانَ أَمَامَهُمْ مَلِكٌ يَأْخُذُ كُلَّ سَفِينَةٍ صَالِحَةٍ غَصْبًا، وَكَانَ يَقْرَأُ وَأَمَّا الْغُلاَمُ فَكَانَ كَافِرًا وَكَانَ أَبَوَاهُ مُؤْمِنَيْنِ

* নওফাল বাককালি একজন মুসলমান। ইবনু আব্বাস তাকে আল্লাহর দুশমন বলেছেন রাগান্বিত অবস্থায়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৬৭ | 4367 | ٤۳٦۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহর বাণীঃ “যখন তারা দুজন দুসমুদ্রের সঙ্গমস্থলে পৌঁছলেন , তারা তাদের মাছের কথা ভুলে গেলেন। আর মাছটি সুড়ঙ্গের মত পথ করে সমুদ্রে নেমে গেল। سربا চলার পথ يسرب সে চলছে। এর থেকেই বলা হয়েছে سارب بالنهار দিনে পথ অতিক্রমকারী” ।
৪৩৬৭ ইব্রাহিম ইবনু মূসা (রহঃ) … সাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর কাছে তার ঘরে ছিলাম। তখন তিনি বললেন, ইচ্ছা করলে আমার কাছে প্রশ্ন কর। আমি বললাম, হে আবূ আব্বাস! আল্লাহ আমাকে আপনার উপর উৎসর্গ করুন। কুফায় নওফ নামে একজন বক্তা আছে। সে বলছে যে, (খিযির (আলাইহিস সালাম) এর সাথে যে মূসার সাক্ষাত হয়েছিল তিনি বনী ইসরাইলের প্রতি প্রেরিত মূসা (আলাইহিস সালাম) নন। তবে, আমর ইবনু দিনার আমাকে বলেছেন যে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) এ কথা শুনে বললেন, আল্লাহর দুশমন মিথ্যা বলেছে। কিন্তু ইয়ালা (একজন বর্ণনাকারী) আমাকে বলেছেন যে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) একথা শুনে বললেন, উবায় ইবনু কা’আব আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর রাসুল মূসা (আলাইহিস সালাম) একদিন লোকদের সামনে ওয়াজ করছিলেন। অবশেষে যখন তাদের চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হতে লাগল এবং তাদের অন্তর বিগলিত হল, তখন তিনি (ওয়াজ সমাপ্ত করে) ফিরলেন।

এক ব্যাক্তি তার কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! এ পৃথিবীতে আপনার চাইতে অধিক জ্ঞানী আর কেউ আছে? তিনি বললেন, না। এতে আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট হলেন। কেননা তিনি এ কথাটি আল্লাহর উপর হাওয়ালা করেন নি। তখন তাকে বলা হল, নিশ্চই আছে। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, হে রব! তিনি কোথায়? আল্লাহ বললেন, তিনি দুসমুদ্রের সঙ্গমস্থলে। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, হে রব! আপনি আমাকে এমন চিহ্ন বলুন, যার সাহায্যে আমি তার পরিচয় লাভ করতে পারি। বর্ণনাকারী ইবনু জুরাইহ বলেন, আমর আমাকে এভাবে বলেছেন যে, তাকে (সেখানে পাবে), যেখানে মাছটি তোমার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। আর ইয়ালা আমাকে এভাবে বলেছেন, একটি মৃত মাছ নাও। যেখানে মাছটির মধ্যে প্রান দেওয়া হবে (সেখানেই তাকে পাবে)।

তারপর মূসা (আলাইহিস সালাম) একটি মাছ নিলেন এবং তা থলের মধ্যে রাখলেন। তিনি তার খাদেম কে বললেন, আমি তোমাকে শুধু এ দায়িত্ব দিচ্ছি যে, মাছটি যে স্থানে তোমার থেকে চলে যাবে সে স্থানটির কথা আমাকে বলবে। খাদেম বলল, এ তো বড় দায়িত্ব নয়। এরই বিবরন রয়েছে আল্লাহ তা’আলার এ বাণীতেঃ “আর যখন মূসা বললেন, তার খাদেমকে অর্থাৎ ইউশা ইবনু নুনকে”। সাইদ (বর্ণনাকারী) এর বর্ণনায় নামের উল্লেখ নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন তিনি একটি বড় পাথরের ছায়ায় ভিজা মাটির কাছে অবস্থান করছিলেন তখন মাছটি লাফিয়ে উঠল। মূসা (আলাইহিস সালাম) তখন নিদ্রায় ছিলেন। তার খাদেম (মনে মনে) বললেন, তাকে এখন জাগাব না। অবশেষে যখন তিনি জাগালেন, তখন তাকে মাছের খবর বলতে ভুলে গেল। আর মাছটি লাফিয়ে সমুদ্রে ঢুকে পড়ল। আল্লাহ তা’আলা মাছটির চলার পথে পানি বন্ধ করে দিলেন। পরিনামে যেন পাথরের মধ্যে চিহ্ন পড়েছে।

বর্ণনাকারী বলেন, আমর আমাকে বলেছেন যে, যেন পাথরের মধ্যে চিহ্ন এরূপ হয়ে রইল, বলে তিনি তার দুটি বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তার পাশের আঙ্গুলগুলো একসাথে মিলিয়ে বৃত্তাকার বানিয়ে দেখালেন। (মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন) ‘আমরা তো আমাদের এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি’। ইউশা বললেন, আল্লাহ আপনার থেকে ক্লান্তি দূর করে দিয়েছেন। সাইদের বর্ণনায় এ কথার উল্লেখ নেই। খাদেম তাকে মাছের পালিয়ে যাবার সংবাদ দিলেন। তারপর তারা উভয়ে ফিরে এলেন এবং খিযির (আলাইহিস সালাম) কে পেলেন। বর্ণনাকারী ইবনু যুরাইজ বলেন, উসমান ইবনু আবূ সুলাইমান আমাকে বলেছেন যে, মূসা (আলাইহিস সালাম) খিজির (আলাইহিস সালাম) কে পেলেন সমুদ্রের বুকে সবুজ বিছানার উপর। সাইদ ইবনু জুবায়র (রাঃ) বলেন, তিনি চাঁদর মুড়ি দিয়েছিলেন। চাঁদরের এক পাশ ছিল তার দুপায়ের নিচে এবং অন্য পাশ ছিল তার মাথার উপর।

মূসা (আলাইহিস সালাম) তাকে সালাম দিলেন। তিনি তার চেহারা থেকে কাপড় সরিয়ে বললেন, আমার এ অঞ্চলেও কি সালাম আছে? তুমি কে? তিনি বললেন, আমি মূসা। খিজির (আলাইহিস সালাম) বললেন, বনী ইসরাইলের মূসা? উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তোমার ব্যপার কি? মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমি এসেছি, “সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে তা থেকে আমাকে শিক্ষা দিবেন” তিনি বললেন, তোমার কাছে যে তাওরাত রয়েছে তা কি তোমার জন্য যথেষ্ট নয়? তোমার কাছে তো ওহী আসে। হে মূসা! আমার কাছে যে জ্ঞান আছে তা তোমার জানা সমীচীন নয়। আর তোমার কাছে যে জ্ঞান আছে তা আমার জানা উচিত নয়। এ সময় একটি পাখি এসে তার ঠোঁট দিয়ে সমুদ্র থেকে পানি নিল। (এ দৃশ্য দেখে) খিযির (আলাইহিস সালাম) বললেন, আল্লাহর কসম, আল্লাহর জ্ঞানের কাছে আমার ও তোমার জ্ঞান এতটুকু। যতটুকু এ পাখীটি সমুদ্র হতে তার ঠোঁটে করে নিয়েছে।

অবশেষে তারা উভয়ে নৌকায় আরোহণ করলেন। তারা ছোট খেয়া নৌকা পেলেন, যা এ পাড়ের লোকদের ও পাড়ে এবং ও পাড়ের লোকদের এ পাড়ে বহন করত। নৌকার লোকেরা খিযির কে চিনতে পারল। তারা বলল, আল্লাহর নেক বান্দা। ইয়ালা বলেন, আমরা সাইদকে জিজ্ঞেস করলাম, তারা কি খিযির সম্পর্কে এ মন্তব্য করেছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। (তারা বলল) আমরা তাকে পারিশ্রমিক নিয়ে বহন করব না। এরপর খিযির (আলাইহিস সালাম) তাদের নৌকা (এর একস্থান) বিদীর্ণ করে দিলেন এবং একটি গোঁজ দিয়ে তা বন্ধ করে দিলেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনি কি আরোহীদের নিমজ্জিত করার জন্য নৌকাটি বিদীর্ণ করলেন? আপনি তো গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন।

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, اِمْرًا অর্থাৎ নিষিদ্ধ কাজ। তিনি (খিযির) বললেন, আমি কি বলিনি যে তুমি কিছুতেই আমার সঙ্গে ধৈর্য ধারন করতে পারবেনা?’ প্রথমটি ছিল মূসা (আলাইহিস সালাম) এর পক্ষ থেকে ভুল। দ্বিতীয়টি শর্তস্বরূপ এবং তৃতীয় ইচ্ছাকৃত বলে গণ্য। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমার ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না ও আমার ব্যপারে অত্যধিক কঠোরতা অবলম্বন করবেন না। (এরপর) তারা এক বালকের সাক্ষাত পেলেন, খিযির তাকে হত্যা করে ফেললেন। ইয়ালা বলেন, সাইদ বলেছেন, খিযির (আলাইহিস সালাম) বালকদের খেলাধুলা করতে দেখতে পেলেন। তিনি একটি চটপটে কাফের বালককে ধরলেন এবং তাকে পাশে শুইয়ে যবেহ করে ফেললেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, ’আপনি কি এক নিষ্পাপ জীবন নাশ করলেন অপরাধ ছাড়াই?’ সে তো কন গুনাহের কাজ করেনি।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) এখানে زَاكِيَّةً পড়তেন। زَاكِيَّةً ভাল মুসলমান। যেমন তুনি পড় غُلَامً زَكِيَّا। তারপর তারা দুজন চলতে লাগল এবং একটি পতনোম্মুখ প্রাচীর পেল। খিযির (আলাইহিস সালাম) সেটাকে সোজা করে দিলেন। সাইদ তার হাত দ্বারা ইশারা করে বললেন এরুপ, এবং তিনি তার হাত উঠিয়ে সোজা করলেন। ইয়ালা বলেন, আমার মনে হয় সাইদ বলেছিলেন, খিযির (আলাইহিস সালাম) প্রাচীরের উপর দুহাতে স্পর্শ করলেন এবং প্রাচীর দাঁড়িয়ে গেল। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, لَوْ شِئْتَ لَاتَّخَذْتَ عَلَيْهِ أَجْرًا আপনি ইচ্ছা করলে এ জন্য পারিশ্রমিক গ্রহন করতে পারতেন। সাইদ বলেন, أَجْرًا দ্বারা এখানে খাদ্য দ্রব্য বোঝান হয়েছে। وَكَانَ وَرَآءَهُمْ এর অর্থ তাদের সামনে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) এ আয়াতে أَمَامَهُمْ (তাদের সামনে ছিল এক রাজা) পড়েন। সাইদ ব্যতীত অন্য বর্ণনাকারীরা সে রাজার নাম বলেছেন “হুদাদ ইবনু বুদাদ” আর হত্যা কৃত বালকটির নাম ছিল জাইসুর।

সে রাজা প্রত্যেকটি ভাল নৌকা বল প্রয়োগে ছিনিয়ে নিত। খিযির (আলাইহিস সালাম) এর নৌকা বিদীর্ণ করার উদ্দেশ্য ছিল , (সে অত্যাচারী রাজা) ত্রুটি যুক্ত নৌকা দেখলে তা ছিনিয়ে নিবে না। তারপর যখন অতিক্রম করে গেল, তখন তাদের নৌকা মেরামত করে নিল এবং তা ব্যবহার যোগ্য করে তুলল। কেউ বলে নৌকার ছিদ্রটা মেরামত করেছিল সীসা গলিয়ে। আবার কেউ বলে, আলকাতরা মিলিয়ে নৌকা মেরামত করেছিল। “তার পিতা মাতা ছিল মুমিন”। আর সে বালকটি ছিল কাফের। আমি আশংকা করলাম যে সে বিদ্রোহচরন ও কুফরির দ্বারা তাদের বিব্রত করবে। অর্থাৎ তার স্নেহ ভালবাসায় তাদের তার ধর্মের অনুসারী করে ফেলবে। এরপর আমি চাইলাম যে তাদের প্রতিপালক যেন তাদের ওর পরিবর্তে এক সন্তান দান করেন, যে হবে পবিত্রতায় মহত্তর ও ভক্তি ভালবাসায় ঘনিষ্টতর।

খিযির (আলাইহিস সালাম) যে বালকটিকে হত্যা করেছিলেন, সে বালকটির চেয়ে পরবর্তী বালকটির প্রতি তার পিতামাতা অধিক স্নেহশীল ও দয়াশীল হবেন। ইবনু জুরাইয বলেন) সাইদ ব্যতীত অন্য সকল বর্ণনাকারী বলেছেন যে, এর অর্থ হল, সে বালকটির পরিবর্তে আল্লাহ তাদের একটি কন্যা সন্তান দান করেন। দাউদ ইবনু আবূ আনিস বলেন, এখানে কন্যা সন্তান বোঝানো হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৬৮ | 4368 | ٤۳٦۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ ‘যখন তারা আরও অগ্রসর হল, মুসা তার সাথীকে বললেন, আমাদের নাস্তা আন, আমরা তো আমাদের এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। (বলল আপনি কি লক্ষ করেছেন, আমরা যখন শিলা খণ্ডে বিশ্রাম করছিলাম, তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম? শয়তান এ কথা বলতে আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল।) মাছটি আশ্চর্যজনক ভাবে নিজের পথ করে সমুদ্রে নেমে গেল। صنعا কাজ, حولا ঘুরে যাওয়া, পরিবর্তন হওয়া । قال ذلك ما كنا نبغ فارتدا على آثارهما قصصا মুসা বললেন, আমরা তো সে স্থানটি অনুসন্ধান করছিলাম। এরপর তারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চলল। إمرا و نكرا উভয়ের একি অর্থ, অন্যায় কাজ ينقض শব্দের অর্থ নিপতিত হবে। لتخذت واتخذت উভয়ের একই অর্থ। رحما শব্দটি رحم থেকে গঠিত। অত্যধিক দয়া ও করুনা। কারও মতে এটা رحيم থেকে গঠিত। মক্কাকে বলা হয় أم رحم যেহেতু সেখানে রহমত নাযিল হয়।
৪৩৬৮। কুতায়বা ইবনু সাইদ (রহঃ) … সাইদ ইবনু জুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বললাম, নওফুল বাক্‌কালির ধারনা, বনী ইসরাইলের মূসা, (আলাইহিস সালাম) ওয়া সাল্লাম এর সাথী মূসা একই ব্যাক্তি নয়। এ কথা শুনে ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, আল্লাহর শত্রু মিথ্যা বলেছে। উবায় ইবনু কা’আব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, একদা মূসা (আলাইহিস সালাম) বনী ইসরাইলের সামনে ভাষণ দিচ্ছিলেন। তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হল, সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যাক্তি কে? তিনি বললেন, আমি। আল্লাহ তার একথায় অসন্তুষ্ট হলেন। কেননা, তিনি এ কথাটি আল্লাহর দিকে নিসবত করেন নি। আল্লাহ তার উপর ওহী নাযিল করে বললেন, (হে মূসা!) দু’সমুদ্রের সঙ্গমস্থলে আমার এক বান্দা আছে। সে তোমার চাইতে অধিক জ্ঞানী। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, হে রব! আমি তার কাছে কিভাবে যেতে পারি? আল্লাহ বললেন, থলের মধ্যে একটি মাছ নিয়ে রওয়ানা হও। যেখানে মাছটি হারিয়ে যাবে সেখানেই তার অনুসরন করবে।

মূসা (আলাইহিস সালাম) রওয়ানা হলেন এবং তার সাথে ছিল তার খাদেম ইয়ুশা ইবনু নুন। তারা মাছ সাথে নিলেন। তারা চলতে চলতে সমুদ্রের তীরে একটি বিশাল শিলা খণ্ডের কাছে পৌঁছে গেলেন। সেখানে তারা বিশ্রামের জন্য থামলেন। বর্ণনাকারী বলেন, মূসা (আলাইহিস সালাম) শিলা খণ্ডের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরলেন। সুফিয়ান বলেন, আমর ইবনু দ্বীনার ছাড়া সকল বর্ণনাকারী বলেছেন, শিলা খণ্ডের তলদেশে একটি ঝরনা ছিল। তাকে হায়াত বলা হত। কেননা যে মৃতের উপর তার পানি পড়ে, সে অমনি জীবিত হয়ে উঠে। সে মাছটির উপরও ওই ঝরনার পানি পড়ল এবং সাথে সাথে সে লাফিয়ে উঠল। তারপর মাছটি বের হয়ে সমুদ্রে চলে গেল। এরপরে মূসা (আলাইহিস সালাম) যখন জেগে উঠলেন। “মূসা তার খাদেমকে বললেন, আমাদের নাস্তা আন। আমরা তো আমাদের এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি”। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে স্থান সম্পর্কে তাকে বলা হয়েছিল সে স্থান অতিক্রম করার পর থেকেই তিনি ক্লান্তি অনুভব করছিলেন।

তার খাদেম ইউশা ইবনু নুন তাকে বললেন, ‘আপনি কি লক্ষ করেছেন আমরা যখন শিলা খণ্ডে বিশ্রাম করছিলাম তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম? বর্ণনাকারী বলেন, তারপর তারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে সে স্থানে প্রত্যাবর্তন করলেন। তারা সমুদ্রে মাছটির চলে যাওয়ার জায়গায় সুড়ঙ্গের মত দেখতে পেলেন। যা মূসা (আলাইহিস সালাম) এর সাথী যুবক কে আশ্চর্যান্বিত করে দিল। যখন তারা শিলা খণ্ডের কাছে পৌঁছলেন, সেখানে এক ব্যাক্তিকে কাপড় আবৃত অবস্থায় দেখতে পেলেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) তাকে সালাম দিলেন। তিনি বললেন, তোমাদের এলাকায় সালামের প্রথা কিভাবে এল? মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমি মূসা। তিনি (খিযির) বললেন, বনী ইসরাইলের মূসা? মূসা (আলাইহিস সালাম) উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। তারপর বললেন, সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে তা থেকে আমাকে শিক্ষা দিবেন – এ শর্তে আমি আপনার অনুসরন করব কি?

খিযির আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে মূসা! তুমি আল্লাহ কর্তৃক যে জ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছ তা আমি (সম্পূর্ণভাবে) জানিনা। আর আমি আল্লাহর থেকে যে ‘ইল্‌ম’ লাভ করেছি তাও (সম্পূর্ণভাবে) তুমি জাননা। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমি আপনার অনুসরন করব। খিযির (আলাইহিস সালাম) বললেন, আচ্ছা তুমি যদি আমার অনুসরন করই, তবে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করবেনা, যতক্ষণ না আমি সে বিষয়ে তোমাকে কিছু বলি।

তারপর তারা সমুদ্রের তীর দিয়ে চলতে লাগলেন। একটি নৌকা তাদের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। নৌকার লোকেরা খিযির কে দেখে চিনতে পারল। তারা বিনা পারিশ্রমিকে তাদের নৌকায় উঠিয়ে নিল। তারা নৌকায় আরোহণ করলেন। এ সময় একটি চড়ুই পাখি এসে নৌকার অগ্রভাগে বসলো। পাখীটি সমুদ্রে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল। খিযির (আলাইহিস সালাম) মূসা (আলাইহিস সালাম) কে বললেন, তোমার, আমার এবং সৃষ্টি জগতের জ্ঞান আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় অতখানি, যতখানি এ চড়ুই পাখি তার ঠোঁট দিয়ে সমুদ্র থেকে পানি উঠাল।

বর্ণনাকারী বলেন, মূসা (আলাইহিস সালাম) স্থান পরিবর্তন করেন নি। খিযির (আলাইহিস সালাম) অগ্রসর হওয়ার ইচ্ছা করলেন। এমতাবস্থায় খিযির (আলাইহিস সালাম) নৌকা বিদীর্ণ করে দিলেন। তখন মূসা (আলাইহিস সালাম) তাকে বললেন, এরা আমাদেরকে বিনা পারিশ্রমিকে তাদের নৌকায় নিয়ে এল আর আপনি আরোহীদের নিমজ্জিত করার জন্য নৌকাটি বিদীর্ণ করে দিলেন। আপনি তো এক গর্হিত কাজ করলেন।

তারপর তারা আবার চলতে লাগলেন। (পথে) এবং দেখতে পেলেন যে, একটি বালক কতগুলো বালকের সাথে খেলা করছে। খিযির (আলাইহিস সালাম) সে বালকটির শিরশ্ছেদ করে দিলেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনি কি এক নিষ্পাপ জীবন নাশ করলেন অপরাধ ছাড়াই? আপনি তো এক গর্হিত কাজ করে ফেলেছেন। তিনি বললেন, আমি কি বলিনি যে তুমি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্যধারণ করতে পারবেনা? মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, এরপর যদি আমি আপনাকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস করি, তবে আপনি আমাকে সঙ্গে রাখবেন না। আমার ওজরের চূড়ান্ত হয়েছে।

তারপর তারা চলতে লাগলেন। তারা এক জনপদের অধিবাসীদের কাছে পৌঁছলেন এবং তাদের কাছে খাদ্য চাইলেন। তারা তাদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল। তারপর সেখানে তারা এক পতনম্মুখ প্রাচীর দেখতে পেল। বর্ণনাকারী হাতের ইশারায় দেখালেন যে, এভাবে খিযির (আলাইহিস সালাম) পতনম্মুখ প্রাচীর সোজা করে দিলেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) খিযির (আলাইহিস সালাম) কে বললেন, আমরা যখন এ জনপদে প্রবেশ করছিলাম, তখন জনপদের অধিবাসীরা আমাদের মেহমানদারী করেনি এবং আমাদের খেতে দেয়নি। এ জন্য আপনি ইচ্ছা করলে পারিশ্রমিক গ্রহন করতে পারতেন। খিযির (আলাইহিস সালাম) বললেন, এখানেই তোমার এবং আমার মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হল।

যে বিষয়ে তুমি ধৈর্য ধরতে পারনি আমি তার তারপর্য ব্যাখ্যা করছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মূসা (আলাইহিস সালাম) যদি আরেকটু ধৈর্যধারণ করতেন তবে আমরা তাদের দুজনের ঘটনাবলী সম্পর্কে আরও জানতে পারতাম। সাইদ বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) وراهم ملك এর স্থানে أَمَامَهُمْ مَلِكٌ পড়তেন। অর্থ তাদের সম্মুখে ছিল এক রাজা। , যে বল প্রয়োগে ভাল নৌকা ছিনিয়ে নিত। আর বালকটি ছিল কাফের”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৬৯ | 4369 | ٤۳٦۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ বল, আমি কি তোমাদের সংবাদ দিব কর্মে ক্ষতিগ্রস্তদের?
৪৩৬৯। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … মূসায়াব (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে[১] জিজ্ঞেস করলাম, قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالأَخْسَرِينَ أَعْمَالاً‏ এ আয়াতে যাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, তারা ‘হারুরি’ [২] গ্রামের অধিবাসী। তিনি বললেন, না। তারা হল ইহুদি ও খ্রিষ্টান। কেননা ইহুদিরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল এবং খ্রিষ্টানরা জান্নাতকে অস্বীকার করত এবং বলত, সেখানে কোন খাদ্য পানীয় নেই। আর হারুরিরা হচ্ছে, যারা আল্লাহর সাথে ওয়াদা করার পরও তা ভঙ্গ করে। সা’দ তাদের বলতেন ফাসিক।

১। সা’দ ইবনু আবি ওয়াক্কাস।

২। কুফার নিকটবর্তী একটি গ্রামের নাম। আলি (রাঃ) এর বিরুদ্ধে ‘খারিজী সম্প্রদায়ের’ আন্দোলন এ গ্রাম থেকেই শুরু হয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৭০ | 4370 | ٤۳۷۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ তারা এমন যারা অস্বীকার করে নিজেদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলী এবং তার সাথে তাদের সাক্ষাতের বিষয়। ফলে তাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যায়।
৪৩৭০। মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন একজন খুব মোটা ব্যাক্তি আসবে। কিন্তু সে আল্লাহর নিকট মশার ডানার চেয়েও ক্ষুদ্র হবে। তারপর তিনি বলেন, পাঠ করো, ‘কিয়ামতের দিন তাদের কাজের কোন গুরুত্ব রাখব না। ইয়াহিয়াহ ইবনু বুকায়র (রহঃ) … আবূ যিনাদ থেকে অনুরূপ হাদিস বর্ণিত আছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৭১ | 4371 | ٤۳۷۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ “তাদেরকে সতর্ক করে দাও পরিতাপের দিন সম্বন্ধে”…………
সুরা মরিয়ম

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, তারা আজ (দুনিয়ায়) কোন নাসীহাত শুনছে না এবং কোন নিদর্শন দেখছে না এবং তারা প্রকাশ্য ভ্রান্তিতে নিমজ্জিত। অথচ ক্বিয়ামাতের দিন কাফিরেরা কত স্পষ্ট শুনবে ও দেখবে। لَأَرْجُمَنَّكَ আমি অবশ্যই তোমাকে প্রস্তরাঘাতে বিচূর্ণ করে দিব। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, এর অর্থ لَأَشْتِمَنَّكَ অবশ্যই আমি তোমাকে গালি দিব। رِئِيْنًا দৃশ্য। ইবনু উয়াইনা (রহঃ) বলেন, تَوُزُّهُمْ শায়ত্বন তাদের পাপের দিকে চরমভাবে প্ররোচিত করছে। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, إِدًّا বক্রতা। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, وِرْدًا তৃষ্ণার্ত। أَثَاثًا মাল। إِدًّا কঠোর বাক্য। رِكْزًا ফিসফিস আওয়াজ। عِتِيَّا অবাধ্য। بُكِيًّا ক্রন্দনকারী একটি দল। صِلِيًّا (প্রবেশ করা)। صَلِيَ يَصْلَى এর মাসদার। نَدِيًّا এবং النَّادِيْ বৈঠকখানা।

৪৩৭১। উমর ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) … আবূ সাইদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন মৃত্যুকে একটি ধুসর রঙের মেষের আকৃতিতে আনা হবে। তখন একজন সম্বোধনকারী ডাক দিয়ে বলবেন, হে জান্নাতবাসী! তখন তারা ঘাড় মাথা উঁচু করে দেখতে থাকবে। সম্বোধনকারী বলবেন, তোমরা কি একে চিন? তারা বলবে, হ্যাঁ, এতো মৃত্যু। কেননা প্রত্যেকেই তাকে দেখেছে। তারপর সম্বোধনকারী আবার ডেকে বলবেন, হে জাহান্নামবাসী! জাহান্নামীরা মাথা উঁচু করে দেখতে থাকবে। তখন সম্বোধনকারী বলবে, তোমরা কি একে চিন? তারা বলবে, হ্যাঁ, এতো মৃত্যু। কেননা প্রত্যেকেই তাকে দেখেছে। তারপর (সেটি) যবেহ করা হবে। আর ঘোষক বলবেন, হে জান্নাতবাসী! স্থায়ী ভাবে এখানে থাক। তোমাদের আর কোন মৃত্যু নেই। আর হে জাহান্নামবাসী! চিরদিন এখানে থাক। তোমাদের আর মৃত্যু নেই। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করলেন, أَنْذِرْهُمْ يَوْمَ الْحَسْرَةِ إِذْ قُضِيَ الأَمْرُ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ‏ “তাদের সতর্ক করে দাও পরিতাপের দিবস সম্বন্ধে যখন সকল সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে অথচ এখন তারা গাফিল, তারা অসতর্ক দুনিয়াবাসি, অবিশ্বাসী”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৭২ | 4372 | ٤۳۷۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ “আমরা আপনার প্রতিপালকের আদেশ ব্যতীত অবতরণ করবনা (যা রয়েছে আমাদের সম্মুখে ও পেছনে)”।
৪৩৭২। আবূ নুয়াইম (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার জিবরীলকে বললেন, আপনি আমার সঙ্গে যতবার সাক্ষাত করেন, তার চাইতে বেশি সাক্ষাত করতে আপনাকে কিসে বাধা দেয়? [১] তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হল “আমরা আপনার প্রতিপালকের আদেশ ব্যতীত অবতরণ করবনা (যা রয়েছে আমাদের সম্মুখে ও পেছনে)”।

১। কিছু কালের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ওহী বন্ধ ছিল। এতে রাসুল খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। পরে জিবরীল উপস্থিত হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিলম্বের কারন জিজ্ঞেস করেন। এ হাদিসখানা সাওরি (রহঃ) আ’মাশ থেকে বর্ণনা করেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৭৩ | 4373 | ٤۳۷۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ “তুমি লক্ষ্য করেছ তাকে, যে আমার আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করে এবং বলে, আমাকে ধন সম্পদ ও সন্তান সন্ততি দেওয়া হবেই”।
৪৩৭৩। হুমায়দি (রহঃ) … মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি খাব্বাব (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, তিনি (খাব্বাব) বলেন, আমি আস ইবনু ওয়ায়েল সাহমির নিকট গেলাম। তার কাছে আমার কিছু পাওনা ছিল, তা আদায় করার জন্য। আস ইবনু ওয়ায়েল বলল, আমি তোমার প্রাপ্য তোমাকে দিব না যতক্ষন তুমি মুহাম্মদের প্রতি অবিশ্বাস না করো। [১] তখন আমি বললাম, না, এমনকি তুমি মরে গিয়ে আবার জীবিত হয়ে আসলেও তা হওয়ার নয়। আস ইবনু ওয়ায়েল বলল, আমি কি মরে যাবার পর আবার জীবিত হব? আমি বললাম, হ্যাঁ। আস ইবনু ওয়ায়েল বলল, নিশ্চয়ই তথায়ও আমার ধন সম্পদ এবং সন্তান সন্ততি থাকবে, তা থেকে আমি তোমার ঋণ পরিশোধ করব। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়ঃ “তুমি লক্ষ্য করেছ তাকে, যে আমার আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করে এবং বলে, আমাকে ধন সম্পদ ও সন্তান সন্ততি দেওয়া হবেই”।

এ হাদিসখানা সাওরী … আ’মাশ থেকে বর্ণনা করেন।

১। অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নাবী হিসেবে অস্বীকার করা।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৭৪ | 4374 | ٤۳۷٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ ‘সেকি অদৃশ্য সম্বন্ধে অবহিত হয়েছে অথবা দয়াময়ের নিকট হতে প্রতিশ্রুতি লাভ করেছে? عهد অর্থ দৃঢ় প্রতিশ্রুতি।
৪৩৭৪। মুহাম্মদ ইবনু কাসির (রহঃ) … খাব্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মক্কায় থাকাকালে কর্মকারের কাজ করতাম। এ সময় আস ইবনু ওয়ায়েল কে একখানা তরবারি বানিয়ে দিয়েছিলাম। তারপর একদিন আমার সে (তরবারির) পাওনার তাগাদায় তার নিকট আসলাম। সে বলল, মুহাম্মদ কে অস্বীকার না করা পর্যন্ত তোমার পাওনা দেবনা। আমি বললাম, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অস্বীকার করব না। এমনকি আল্লাহ তোমাকে মৃত্যু দিবার পর তোমাকে পুনরায় জীবিত করা পর্যন্ত। সে বলল, আল্লাহ যখন আমাকে মৃত্যুর পরে আবার জীবিত করবেন, তখন আমার ধন সম্পদ ও সন্তান সন্ততিও থাকবে। (সেখানে তোমার পাওনা দিয়ে দিব)। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা নাযিল করেনঃ “তুমি লক্ষ্য করেছ তাকে, যে আমার আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করে এবং বলে, আমাকে ধন সম্পদ ও সন্তান সন্ততি দেওয়া হবেই। সেকি অদৃশ্য সম্বন্ধে অবহিত হয়েছে অথবা দয়াময়ের নিকট হতে প্রতিশ্রুতি লাভ করেছে’? রাবি বলেন, عهد এর অর্থ দৃঢ় প্রতিশ্রুতি। আশজায়ি (রহঃ) সুফিয়ান থেকে বর্ণনার মধ্যে سَيْفًا (তরবারি) শব্দ এবং مَوْثِقًا (প্রতিশ্রুতি) শব্দ উল্লেখ করেন নি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৭৫ | 4375 | ٤۳۷۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ “ কখনওই নয়, তারা যা বলে, আমি তা অনতিবলম্বে লিখে রাখব এবং তাদের শাস্তি বৃদ্ধি করতে থাকব”।
৪৩৭৫। বিশর ইবনু খলিদ (রহঃ) … খাব্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জাহিলিয়াতের যুগে কর্মকার ছিলাম। সে সময় আস ইবনু ওয়ায়েলের কাছে আমার কিছু পাওনা ছিল। আমি পাওনা তাগাদা করতে তার কাছে আসলে সে বলল, আমি তোমার পাওনা পরিশোধ করবনা। যতক্ষণ না তুমি মুহাম্মদকে অস্বীকার করো। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কসম। আমি অস্বীকার করবনা। এমনকি আল্লাহ তোমাকে মেরে ফেলার পর আবার তোমাকে জীবিত করার পরও নয়। বলল, তাহলে তুমি আমাকে ছেড়ে দাও আমি মরে আবার জীবিত হয়ে উঠা পর্যন্ত। তখন তো আমাকে সম্পদ সন্তান দেওয়া হবে। তখন তোমাকে পরিশোধ করে দিব। এ প্রসঙ্গে আ আয়াত নাযিল হয়। “তুমি কি লক্ষ্য করেছ তাকে, যে আমার আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করে এবং বলে, আমাকে ধন সম্পদ ও সন্তান সন্ততি দেওয়া হবেই”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৭৬ | 4376 | ٤۳۷٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ সে যে বিষয়ের কথা বলে তা থাকবে আমার অধিকারে এবং সে আমার নিকট আসবে একা। ইবন আব্বাস (রা) বলেন, الجبال هدا এর অর্থ পাহাড় গুলো চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে।
৪৩৭৬। ইয়াহইয়া (রহঃ) … খাব্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একজন কর্মকার ছিলাম। এবং আস ইবনু ওয়ায়েল এর নিকট আমার কিছু পাওনা ছিল। আমি পাওনা তাগাদা করতে তার কাছে আসলে সে বলল, আমি তোমার পাওনা পরিশোধ করবনা। যতক্ষণ না তুমি মুহাম্মদকে অস্বীকার করো। তখন তিনি বললেন, আমি কখনও তাকে অস্বীকার করবনা। এমনকি তুমি মরার মর জীবিত হওয়া পর্যন্তও না। আস বলল, আমি যখন মৃত্যুর পর আবার জীবিত হব তখন অবলম্বনে আমি সম্পদ ও সন্তানের দিকে প্রত্যাবর্তন করব এবং তোমাকে পরিশোধ করে দিব। এ সময় আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করেন। “তুমি লক্ষ্য করেছ তাকে, যে আমার আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করে এবং বলে, আমাকে ধন সম্পদ ও সন্তান সন্ততি দেওয়া হবেই। ‘সেকি অদৃশ্য সম্বন্ধে অবহিত হয়েছে অথবা দয়াময়ের নিকট হতে প্রতিশ্রুতি লাভ করেছে? কখনওই নয়, তারা যা বলে, আমি তা অনতিবলম্বে লিখে রাখব এবং তাদের শাস্তি বৃদ্ধি করতে থাকব। সে যে বিষয়ের কথা বলে তা থাকবে আমার অধিকারে এবং সে আমার নিকট আসবে একা”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৭৭ | 4377 | ٤۳۷۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ “এবং আমি তোমাকে আমার নিজের জন্য প্রস্তুত করে দিয়েছি”।
সুরা তাহা

ইবন জুবায়র (রাঃ) বলেন, নাবতী ভাষায় طَه এর অর্থ يَارَجُلُ হে ব্যক্তি! যে সকল ব্যক্তি কোন অক্ষর স্পষ্ট উচ্চারণ করতে পারে না অথবা ‘তা’ অথবা ‘ফা’ উচ্চারণে তোতলামি করে, তাকে عقده বলা হয়। أَزْرِيْ আমার পিঠ। فَيَسْحَتَكُمْ সে তোমাদেরকে ধ্বংস করে দেবে। الْمُثْلٰى এটা الْأَمْثَلِ এর স্ত্রীলিঙ্গ। বলা হয়, خُذِ الْمُثْلٰى – خُذِ الْأَمْثَلَ উত্তম পন্থা অবলম্বন কর ثُمَّ ااتوا صَفًّا এরপর তোমরা সারিবদ্ধ হয়ে উপস্থিত হও। বলা হয়, ‘‘তুমি কি আজ সারিতে এসেছ?’’ অর্থাৎ সালাতের নির্ধারিত জায়গায় যেখানে সালাত আদায় করা হয়। فَأَوْجَسَ তিনি অন্তরে গোপন করলেন। خِيْفَةً মূলে خَوْفًا ছিল। অক্ষরটি ‘কাসরার’ কারণে وَاوُ টি يَاء দ্বারা পরিবর্তিত হয়েছে। فِيْجُذُوْعِ (খেজুর বৃক্ষের) কান্ডের উপরে। خَطْبُكَ তোমার ব্যাপার। مِسَاسَ স্পর্শ করা, শব্দটি مِسَاسًا-مَاسَّهُ এর মাসদার لَنَنْسِفَنَّهُ অবশ্যই আমি তাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ছড়িয়ে দিব। قَاعًا এমন জায়গা যার ওপর দিয়ে পানি চলে যায়। الصَّفْصَفُ সমতল ভূমি। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, مِنْزِيْنَةِ الْقَوْمِ অর্থাৎ সে সব অলংকার, যা তারা ফির‘আউনের বংশধর হতে ধার করে এনেছিল। فَقَذَفْتُهَا আমি তা নিক্ষেপ করলাম। أَلْقٰى সে তৈরি করল। فَنَسِيَ অর্থাৎ মূসা (আঃ) ভুলে গিয়েছেন। তারা বলতে লাগল, তিনি রবকে চিনতে ভুল করেছেন। يَرْجِعُإِلَيْهِمْقَوْلًا অর্থাৎ গো বৎস তাদের কথার জওয়াব দিতে পারে না। هَمْسًا পদধ্বনি। حَشَرْتَنِيْأَعْمٰى আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালে আমার প্রমাণাদি থেকে كُنْتُبَصِيْرًا আমার তো দুনিয়ায় চক্ষু ছিল। ইবনু ‘উয়াইনাই বলেন, أَمْثَلُهُمْ (জ্ঞানী ব্যক্তি) অর্থাৎ তাদের মধ্যে ন্যায় বিচারক।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, هَضْمًا এর অর্থ অবিচার করা হবে না যাতে তার পুণ্য বিনষ্ট হয়। عِوَجًا বক্রতা, উপত্যকা أَمْتًا উঁচু ভূমি, টিলা। مِسيرَتَهَا তার অবস্থা। النُّهٰى সংযমী, পরহিজগার। ضَنْعًا দুর্ভাগ্য। هَوَى দুর্ভাগা হওয়া। الْمُقَدَّسِ বারাকাতময় طُوًى একটি উপত্যকার নাম। بِمِلْكِنَا আমাদের নির্দেশে। مَكَانًاسُوًي তাদের মধ্যবর্তী স্থান। يَبَسًا শুষ্ক। عَلٰىقَدَرٍ প্রতিশ্রুতি সময়ে لَاتَنِيَا তোমরা উভয়ে দুর্বল হয়ো না।

৪৩৭৭। সালত ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আদম (আলাইহিস সালাম) ও মূসা (আলাইহিস সালাম) মিলিত হলেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) আদম (আলাইহিস সালাম) কে বললেন, আপনি তো সে ব্যাক্তি মানব জাতিকে কষ্টের মধ্যে ফেলেছেন এবং তাদের জান্নাত থেকে বহিষ্কার করিয়েছেন? আদম (আলাইহিস সালাম) তাকে বললেন, আপনি তো সে ব্যাক্তি আপনাকে আল্লাহ তা’আলা তাঁর রিসালাত এর জন্য মনোনীত করে নিয়েছেন, এবং বাছাই করেছেন আপনাকে নিজের জন্য এবং আপনার উপর তাওরাত নাযিল করেছেন? মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, হ্যাঁ। আদম (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনি তাতে অবশ্যই পেয়েছেন যে, আমার সৃষ্টির আগেই আল্লাহ তা’আলা তা আমার জন্য লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, হ্যাঁ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এভাবে আদম (আলাইহিস সালাম) মূসা (আলাইহিস সালাম) এর উপর জয়ী হলেন। الْيَمُّ সমুদ্র।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৭৮ | 4378 | ٤۳۷۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ “আমি অবশ্যই মুসার প্রতি ওহী নাযিল করেচ্ছিলেম এ মর্মে, আমার বান্দাদেরকে নিয়ে রজনীতে বের হও এবং তাদের জন্য সমুদ্রের মধ্য দিয়ে এক শুকনো পথ বের করে নাও। পশ্চাৎ থেকে এসে তোমাকে ধরে ফেলা হবে এ আশংকা করোনা। এবং ভয় করোনা। তারপর ফিরাউন তাঁর সেনাবাহিনী সহ তাদের পিছনে ধাওয়া করল। আর সমুদ্র তাদের সম্পূর্ণভাবে নিমজ্জিত করল। আর ফিরাউন তাঁর সম্প্রদায়কে পথভ্রষ্ট করেছিল এবং সৎপথ দেখায়নি”।
৪৩৭৮। ইয়াকুব ইবনু ইব্রাহিম (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় এলেন, তখন ইহুদিরা আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করত। তিনি তাদের (সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এর কারন) জিজ্ঞেস করলেন। তারা বলল, এ দিনে মূসা (আলাইহিস সালাম) ফিরাউনের উপর জয় লাভ করেছিলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমরাই তো তাদের চাইতে মূসা (আলাইহিস সালাম) এর নিকটবর্তী। এরপর মুসলিমদের নির্দেশ দিলেন, তোমরা এ দিন সিয়াম পালন কর।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৭৯ | 4379 | ٤۳۷۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ فلا يخرجنكما من الجنة فتشقى “সে যেন কিছুতেই তোমাদের জান্নাত থেকে বের করে না দেয়, যাতে তোমরা কষ্টে পতিত হও”।
৪৩৭৯। কুতায়বা ইবনু সাইদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মূসা (আলাইহিস সালাম) আদম (আলাইহিস সালাম) এর সঙ্গে যুক্তি উত্থাপন করে বললেন, আপনি তো সে ব্যাক্তি, আপনার গুনাহ দ্বারা মানব জাতিকে জান্নাত থেকে বের করেছেন এবং তাদের দুঃখ কষ্টে ফেলেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আদম (আলাইহিস সালাম) বলেন, হে মূসা! আপনি তো সে ব্যাক্তি, আল্লাহ পাক আপনাকে রিসালাতএর দায়িত্ব অর্পণ করার জন্য এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলার জন্য মনোনীত করেছেন। তবুও কি আপনি আমাকে এমন বিষয়ের জন্য ভর্ৎসনা করবেন, যা আল্লাহ আমার সৃষ্টির আগেই আমার সম্পর্কে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন, অথবা বললেন, আমার সৃষ্টির পূর্বেই তা আমার সম্পর্কে নির্ধারণ করে রেখেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এ (যুক্তির মাধ্যমে) আদম (আলাইহিস সালাম) মূসা (আলাইহিস সালাম) এর উপর জয়ী হলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৮০ | 4380 | ٤۳۸۰

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা আম্বিয়া

৪৩৮০। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সূরা বনী ইসরাইল, কাহফ, মরিয়ম, তাহা এবং আম্বিয়া প্রথমে অবতীর্ণ অতি উত্তম সূরা। এগুল আমার পুরনো রক্ষিত সম্পদ। ক্বাতাদাহ (রহঃ) বলেন, جُذَاذًا টুকরা টুকরা করা। হাসান বলেন, فِيْ فَلَكٍ (কক্ষ পথ) সূতা কাটার চরকির মত। يَسْبَحُوْنَ ঘুরছে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, نَفَشَتْ মানে চরে খেয়েছিল। يُصْحَبُوْنَ বাধা দেয়া হবে। أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَّاحِدَةً অর্থাৎ তোমাদের দ্বীন একই দ্বীন। ইক্বরামাহ বলেন, حَصَبُ অর্থ, হাবশী ভাষায় জ্বালানি কাষ্ঠ। অন্যরা বলেন, أَحَسُّوْا তারা অনুভব করেছিল। আর এ শব্দটি أَحْسَسْتُ থেকে উদ্ভূত। خَامِدِيْنَ নির্বাপিত। حَصِيْدُ কর্তিত শস্য। শব্দটি একবচন, দ্বিচন, বহুবচনেও ব্যবহৃত হয়। لَايَسْتَحْسِرُوْنَ ক্লান্তি হয় না। এর থেকে উদ্ভূত حَسَرْتُ بَعِيْرِي-حَسِيْرٌ আমি আমার উটকে পরিশ্রান্ত করে দিয়েছি। عَمِيْقٌ দূরত্ব। نُكِّسُوْا উল্টিয়ে দেয়া হয়েছে। صَنْعَة لَبُوْسٍ অর্থাৎ বর্মাদি। تَقَطَّعُوْآ أَمْرَهُمْ তারা মতবিরোধে জড়িয়ে পড়েছে। الْجَرْسُ، الْحِسُّ، الْحَسِيْسُ، الْهَمْسُ এগুলোর একই অর্থ-মৃদু আওয়াজ। آذَنَّاكَ আমি তোমাকে জানিয়েছি। آذَنْتُكُمْ যখন তুমি তাকে জানিয়ে দিলে তখন তুমি আর সে একই পর্যায়ের। তুমি চুক্তি ভঙ্গ কররে না। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, لَعَلَّكُمْ تُسْأَلُوْنَ অর্থাৎ তোমাদের বুঝিয়ে দেয়া হবে। ارْتَضٰى সে রাজী হল। التَّمَاثِيْلُ মূর্তিসমূহ। السِّجِلُّ লিপিবদ্ধ কাগজ।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৮১ | 4381 | ٤۳۸۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ كما بدأنا أول خلق “যেভাবে আমি প্রথম সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম।
৪৩৮১। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ভাষণে বলেন, কিয়ামতের দ্বীন তোমরা আল্লাহ তা’আলার সামনে বিবস্ত্র এবং খাতনা বিহীন অবস্থায় একত্রিত হবে। (এরপর তিনি এ আয়াত পাঠ করেন)। كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ “যেভাবে আমি প্রথম সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব; আমার উপর এ ওয়াদা রইল; অবশ্যই আমি তা কার্যকর করব”। এরপর কিয়ামতের দ্বীন সর্বপ্রথম পোশাক পরিধান করানো হবে ইব্রাহিম (আলাইহিস সালাম) কে। জেনে রাখ। আমার উম্মতের মধ্য থেকে বহু লোককে উপস্থিত করা হবে। এরপর তাদের ধরে বাম (জাহান্নামের) দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। আমি বলব, হে রব! এরা তো আমার সঙ্গী-সাথি (উম্মত)। এরপর বলা হবে, আপনি জানেন না আপনার পরে অরা নতুন কাজে (ইসলামের মধ্যে) (বিদআত) লিপ্ত হয়েছে। তখন আমি সে কথা বলব যেমন আল্লাহর নেক বান্দা (ঈসা আলাইহিস সালাম) বলেছিলেনঃ ‏وَكُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا مَا دُمْتُ‏}‏ إِلَى قَوْلِهِ ‏{‏شَهِيدٌ‏ “যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম, ততদিন আমি ছিলাম তাদের কার্যাবলীর প্রত্যক্ষদর্শী। কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে, তখন তুমিই ছিলে তাদের কার্যাবলীর প্রত্যক্ষকারী এবং তুমিই সর্ববিষয়ে সাক্ষী”। এরপর বলা হবে, তুমি এদের থেকে চলে আসার পর এরা মুরতাদ হতে চলেছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৮২ | 4382 | ٤۳۸۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ وترى الناس سكارى “এবং মানুষকে দেখবে মাতাল”।
সুরা হাজ্জ

ইবনু ‘উয়াইনাহ (রহ.) বলেন, الْمُخْبِتِيْنَ বিনয়ী, শাস্তিপ্রাপ্ত। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, فِيْٓ أُمْنِيَّتِهٰ অর্থাৎ যখন তিনি কোন কথা বলেন, তখন শায়ত্বন তাঁর কথার সঙ্গে নিজের কথা মিলিয়ে দেয়। এরপর আল্লাহ্ তা‘আলা শয়তানের সে মিলানো কথা মিটিয়ে দিয়ে তাঁর আয়াতকে সুদৃঢ় করেন। কেউ কেউ বলেন, أُمْنِيَّتِهٰ অর্থাৎ তার কিরাআত (পাঠ) إِلَّآ أَمَانِيَّ তাঁরা পড়তে জানতেন লিখতে জানতেন না। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, مَشِيْدٌ অর্থাৎ চুন-সুরকি দ্বারা দৃঢ় নির্মিত। অন্যরা বলেন, يَسْطُوْنَ অর্থাৎ বাড়াবাড়ি করে। এটি سَطْوَةً থেকে উদ্ভূত। বলা হয় يَسْطُوْنَ অর্থাৎ মজবুত করে ধরে। وَهُدُوْآ إِلَى الطَّيِّبِ مِنَ الْقَوْلِ অর্থাৎ তাদের অন্তরে পবিত্র বাক্য ঢেলে দেয়া হয়েছে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, بِسَبَبٍ রজ্জু দ্বারা যা ঘরের ছাদের দিকে। تَذْهَلُ তুমি বিস্মৃত হবে।

৪৩৮২। উমর ইবনু হাফস (রহঃ) … আবূ সাইদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, হে আদম! তিনি বলবেন, হে রব! আমার সৌভাগ্য, আমি হাজির। তারপর তাকে উচ্চস্বরে ডেকে বলা হবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা তোমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমার বংশধর থেকে একদলকে বের করে জাহান্নামের দিকে নিয়ে আস। আদম (আলাইহিস সালাম) বলবেন, হে রব! জাহান্নামের দলের পরিমান কি? বলবে, প্রতি হাজার থেকে আমার ধারনা যে, বললেন, নয়শত নিরানব্বই, এ সময় গর্ভবতী মহিলা গর্ভপাত করবে, শিশুরা বৃদ্ধ হয়ে যাবে এবং তুমি মানুষকে দেখেবে মাতাল; অথচ তারা নেশাগ্রস্ত নয়। বস্তুত আল্লাহর শাস্তি কঠিন। (পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াতটি পাঠ করলেন), এ কথা লোকদের কাছে ভয়াবহ মনে হল। এমনকি তাদের চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল।

এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রতি হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন তো ইয়াজুজ মাজুজ থেকে নেওয়া হবে এবং তোমাদের মধ্য থেকে একজন। আবার মানবকুলের মধ্যে তোমাদের তুলনা হবে যেমন, সাদা গরুর পার্শ্ব মধ্যে যেন একটি কালো পশম অথবা কালো গরুর পার্শ্ব মধ্যে যেন একটি সাদা পশম। আমি অবশ্য আশা রাখি যে জান্নাতবাসীদের মধ্যে তোমরাই হবে এক চতুর্থাংশ। (রাবি বলেন) আমরা সবাই খুশিতে বলে উঠলাম, আল্লাহু আকবর। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা হবে জান্নাতবাসীদের এক তৃতীয়াংশ। আমরা বলে উঠলাম, আল্লাহু আকবর। তারপর তিনি বললেন, তোমরা হবে জান্নাতবাসীদের অর্ধেক। আমরা বলে উঠলাম, আল্লাহু আকবর। আ’মাশ থেকে উসামার বর্ণনায় রয়েছে تَرَى النَّاسَ سُكَارٰى وَمَا هُمْ بِسُكَارٰى এবং তিনি (সন্দেহাতীতভাবে) বলেন, প্রতি হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন। জারীর, ঈসা, ইবনু ইউনুস ও আবূ মুয়াবিয়ার বর্ণনায় سُكَرٰى এবং وَمَا هُمْ بِسُكَارٰى রয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৮৩ | 4383 | ٤۳۸۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ ومن الناس من يعبد الله على حرف “মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর ইবাদত করে দ্বিধার সাথে”। حرف অর্থ দ্বিধা। فإن أصابه خير اطمأن به وإن أصابته فتنة انقلب على وجهه خسر الدنيا والآخرة إلى قوله ذلك هو الضلال البعيد “যখন তার কল্যাণ হয় তখন তার চিত্ত প্রশান্ত হয় এবং যখন কোন বিপর্যয় ঘটে তখন সে তার পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। সে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দুনিয়া ও আখিরাতে”……………… এ হল চরম বিভ্রান্তি বাক্য পর্যন্ত। أترفناهم অর্থ আমি তাদের প্রশস্ততা দান করলাম।
৪৩৮৩। ইব্রাহিম ইবনু হারিস (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি ‏وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَعْبُدُ اللَّهَ عَلَى حَرْفٍ সম্পর্কে বলেন, কোন ব্যাক্তি মদিনায় আসার পর যদি তার স্ত্রী পুত্র-সন্তান প্রসব করত এবং তার ঘোড়ায় বাচ্চা দিত , তখন বলত এ দ্বীন ভাল। আর যদি তার স্ত্রী গর্ভে পুত্র সন্তান না হত এবং তার ঘোড়াও বাচ্চা না দিত, তখন বলত এ ধর্ম খারাপ।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৮৪ | 4384 | ٤۳۸٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ هذان خصمان اختصموا في ربهم “এরা দুটি বিবাদমান পক্ষ, তারা তাদের প্রতিপালকের ব্যপারে বিতর্ক করছে”।
৪৩৮৪। হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) … আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি এ আয়াত সম্পর্কে কসম খেয়ে বলেন, এ আয়াত هَذَانِ خَصْمَانِ اخْتَصَمُوا فِي رَبِّهِمْ (এরা দুটি বিবাদমান পক্ষ, তারা তাদের প্রতিপালকের ব্যপারে বিতর্ক করছে)। হামযা এবং তার দুই সঙ্গী, এবং উতবা ও তার দুই সঙ্গীর ব্যপারে, নাযিল হয়েছে, যেদিন তারা বদরের যুদ্ধে প্রতিপক্ষের সাথে মোকাবেলা করেছিল। সুফিয়ান আবূ হাশিম সূত্রে এবং উসমান …… এ বক্তব্যটি আবূ মিজলাযের উক্তি হিসেবে বর্ণনা করেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৮৫ | 4385 | ٤۳۸۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ هذان خصمان اختصموا في ربهم “এরা দুটি বিবাদমান পক্ষ, তারা তাদের প্রতিপালকের ব্যপারে বিতর্ক করছে”।
৪৩৮৫। হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) … আলি ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমিই সর্বপ্রথম কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে নতজানু হয়ে নালিশ নিয়ে দাঁড়াব। কায়েস বলেন, এ ব্যপারেই هَذَانِ خَصْمَانِ اخْتَصَمُوا فِي رَبِّهِمْ‏ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বলেন, এরাই বদরের যুদ্ধে সর্বপ্রথম প্রতিপক্ষের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। অর্থাৎ আলী, হামযা ও উবায়দা, শায়বা ইবনু রাবিয়া, উতবা ইবনু রাবিয়া এবং ওয়ালিদ ইবনু উতবা।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৮৬ | 4386 | ٤۳۸٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ والذين يرمون أزواجهم ولم يكن لهم شهداء إلا أنفسهم فشهادة أحدهم أربع شهادات بالله إنه لمن الصادقين “এবং যারা নিজেদের স্ত্রীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, অথচ নিজেরা ব্যতীত তাদের কোন সাক্ষী নেই, তাদের প্রত্যেকের সাক্ষ এ হবে যে, সে আল্লাহর নামে চারবার শপথ করে বলবে যে, সে অবশ্যই সত্যবাদী”।
সুরা মু’মিনীন

ইবনু ‘উয়াইনাহ বলেন, سَبْعَ طَرَآئِقَ সাত আকাশ। لَهَا سَابِقُوْنَ সৌভাগ্য তাদের ওপর অগ্রগামী। قُلُوْبُهُمْ وَجِلَةٌ তাদের অন্তর সব সময় ভীত ও সন্ত্রস্ত। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, هَيْهَاتَ هَيْهَاتَ বহুদূর, বহুদূর। فَاسْأَلْ الْعَادِّيْنَ ফেরেশতাদের জিজ্ঞেস করুন। لَنَاكِبُوْنَ তারা (সরল পথ থেকে) বিচ্যুত। كَالِحُوْنَ বীভৎস হয়ে যাবে। مِنْ سُلَالَةٍ সন্তান। نُّطْفَةُ নির্গত বীর্য। وَالْجِنَّةُ وَالْجُنُوْنُ এ দু’টি একই অর্থে ব্যবহৃত (অর্থাৎ পাগল)। وَالْغُثَآءُ অর্থ ফেনা, যা পানির ওপরে ভাসে এবং তা কোন উপকারে আসে না।

সুরা নুর

مِنْ خِلَالِهٰ মেঘমালার মাঝ থেকে। বিদ্যুতের আলো। سَنَا بَرْقِهِ বিনীত হওয়া। مُذْعِنِيْنَ বিনীত হওয়া। বিনয়ী ব্যক্তিকে مُذْعِنٌ বলা হয়। أَشْتَاتًا (দলে দলে) شَتَاتٌ-شَتّٰى-وَ-شَتٌّ একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। সা‘দ ইবনু আয়ায সুমালী বলেন, الْمِشْكَاةُ হাবশী ভাষায় ‘তাক’। ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, سُوْرَةٌ أَنْزَلْنَاهَا (এমন একটি সূরা) যার বর্ণনা ও ব্যাখ্যা আমি প্রদান করেছি। অন্য হতে বর্ণিত। সূরার সমষ্টিকে কুরআন নাম দেয়া হয়েছে। সূরার নামকরণ করা হয়েছে একটি অপরটি থেকে বিচ্ছিন্ন বলে। তারপর যখন পরস্পরকে একত্র করা হয়, তখন তাকে ‘কুরআন’ বলা হয়। আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ إِنَّ عَلَيْنَا جَمْعَه وَقُرْاٰنَهُ এর এক অংশকে অন্য অংশের সঙ্গে যুক্ত করা। فَإِذَا قَرَأْنَاه فَاتَّبِعْ قُرْاٰنَهচতারপর যখন আমি তাকে একত্র করি ও সংযুক্ত করে দেই তখন তুমি অনুসরণ করবে সে কুরআনের অর্থাৎ যা একত্রিত করা হয়েছে। আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাকে যে কাজের নির্দেশ দিয়েছেন, সে কাজ করবে এবং যে কাজ থেকে নিষেধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাকবে। বলা হয়, لَيْسَ لِشِعْرِهٰ قُرْاٰنٌ অর্থাৎ (তার কাব্যে সামঞ্জস্য) নেই। আর কুরআনকে ফুরকান এজন্য নাম দেয়া হয়েছে যে, তা হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য করে। আর বলা হয়, স্ত্রীলোকের জন্য مَا قَرَأَتْ بِسَلًا قَطُّ অর্থাৎ তার পেটে সন্তান আসেনি। আর বলে, فَرَّضْنَا (তাশদীদ যুক্ত অবস্থায়) অর্থাৎ আমি তাতে বিভিন্ন ফরয অবতীর্ণ করেছি। আর যাঁরা فَرَّضْنَاهَا (তাশদীদবিহীন) পড়েন তিনি এর অর্থ করেন, আমি তোমাদের এবং তোমাদের পরবর্তীদের উপর ফরয করেছি। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, أَوِالطِّفْلِ الَّذِيْنَ لَمْ يَظْهَرُوْا এর অর্থ সে সব বালক যারা অল্প বয়স্ক হওয়ার কারণে নারীদের ব্যাপারে বুঝে না।

৪৩৮৬। ইসহাক (রহঃ) … সালাহ ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। উয়াইমির (রাঃ) আসিম ইবনু আদির নিকট আসলেন। তিনি আজলান গোত্রের সর্দার। উয়াইমির তাকে বললেন, তোমরা ঐ ব্যাক্তি সম্পর্কে কি বল, যে তার স্ত্রীর সাথে অন্য পুরুষ দেখতে পায়। সেকি তাকে হত্যা করবে? এরপর তো তোমরা তাকেই হত্যা করবে অথবা সে কি করবে? তুমি আমার তরফ থেকে এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জিজ্ঞেস কর। তারপর আসিম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! …… রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ধরনের প্রশ্ন অপছন্দ করলেন। তারপর উয়াইমির (রাঃ) তাকে প্রশ্ন করলেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ধরনের প্রশ্ন না-পছন্দ করেছেন ও দূষণীয় মনে করেছেন। তখন উয়াইমির বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি এ বিষয়টি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জিজ্ঞেস না করা পর্যন্ত বিরত হবনা।

তারপর তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কোন ব্যাক্তি তার স্ত্রীর সাথে অন্য একটি পুরুষকে দেখতে পেলে সেকি তাকে হত্যা করবে? তখন তো আপনারা তাকে (কিসাস স্বরূপ) হত্যা করে ফেলবেন। অথবা সে কি করবে? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার ও তোমার স্ত্রী সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বামী স্ত্রী দুজনকে ‘লিয়ান’ করার নির্দেশ দিলেন, যেভাবে আল্লাহ তা’আলা তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন।

তারপর উয়াইমির তার স্ত্রীর সাথে লিয়ান করলেন। এরপর বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! (এরপরও) যদি আমি তাকে রাখি তবে তার প্রতি আমি জালিম হব। তারপর তিনি তাকে তালাক দিয়ে দিলেন। অতএব, তাদের পরবর্তী লোকদের জন্য, যারা পরস্পর ‘লিয়ান’ করে, এটই সুন্নতে পরিনত হল। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লক্ষ্য কর, যদি মহিলাটি একটি কালো ডাগর চক্ষু, বড় পাছা ও বড় পা বিশিষ্ট সন্তান জন্ম দেয়, তবে আমি মনে করব, উয়াইমিরই তার সম্পর্কে সত্য বলেছে। এবং যদি সে লাল গিরগিটির মত একটি লাল বর্ণের সন্তান প্রসব করে তবে আমি মনে করব, উয়াইমির তার সম্পর্কে মিথ্যা বলেছে। এরপর সে এমন একটি সন্তান প্রসব করল, যার গুনাবলি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উয়াইমির সত্যবাদী হওয়ার পক্ষে বলেছিলেন। তারপর সন্তানটিকে মায়ের দিকে সম্পৃক্ত করে পরিচয় দেওয়া হত।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৮৭ | 4387 | ٤۳۸۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ والخامسة أن لعنة الله عليه إن كان من الكاذبين “এবং পঞ্চম বারে বলবে, সে মিথ্যাবাদী হলে তার উপর নেমে আসবে আল্লাহর লানত”।
৪৩৮৭। সুলাইমান ইবনু দাউদ (রহঃ) … আবূ রবি (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উপস্থিত হয়ে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আমাকে বলুন তো, একজন তার স্ত্রীর সাথে এক ব্যাক্তিকে দেখতে পেল। সেকি তাকে হত্যা করবে? পরিনামে আপনারা তাকে হত্যা করবেন। অথবা সে আর কি করতে পারে? তারপর আল্লাহ তা’আলা এ দুজন সম্পর্কে আয়াত নাযিল করেন, যা কুরআন শরিফে পরস্পর লানত করা সম্পর্কে বর্ণিত। তখন তাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমার ও তোমার স্ত্রীর সম্পর্কে ফয়সালা হয়ে গেছে। বর্ণনাকারী বলেন, তারা উভয়ে পরস্পর ‘লিয়ান’ করল। তখন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তারপর সে তার স্ত্রীকে পৃথক করে দিল। এরপর তা নিয়মে পরিনত হল যে, লিয়ানকারী উভয়কে পৃথক করে দেওয়া হবে। মহিলাটি গর্ভবতী ছিল। তার স্বামী তার গর্ভ অস্বীকার করল। সুতরাং সন্তানটিকে তার মায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে ডাকা হত। তারপর উত্তরাধিকার স্বত্বে এ নিয়ম চালু হল যে, সন্তান মায়ের ‘মিরাস’ পাবে। আর মাতাও সন্তানের মিরাস পাবে, যা আল্লাহ তা’আলা তার ব্যপারে নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৮৮ | 4388 | ٤۳۸۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ ويدرأ عنها العذاب أن تشهد أربع شهادات بالله إنه لمن الكاذبين তবে স্ত্রীর শাস্তি রহিত হবে যদি সে চারবার আল্লাহর নামে শপথ করে সাক্ষ্য দেয় যে, তার স্বামীই মিথ্যাবাদী”।
৪৩৮৮। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। হিলাল ইবনু উমাইয়া রাসুলুল্লাহ এর কাছে শারিক ইবনু সাহমার সাথে তার স্ত্রীর ব্যভিচারের অভিযোগ করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সাক্ষী (হাযির কর) নতুবা শাস্তি তোমার পিঠে পরবে। হিলাল বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! যখন আমাদের মধ্যে কেউ তার স্ত্রীর উপর অন্য কাউকে দেখে তখন সে কি সাক্ষী তালাশ করতে যাবে? তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে লাগলেন, সাক্ষী নতুবা শাস্তি তোমার পিঠে। হিলাল বললেন, শপথ সে সত্তার, যিনি আপনাকে সত্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিসেবে পাঠিয়েছেন, নিশ্চয়ই আমি সত্যবাদী। অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা এমন বিধান অবতীর্ণ করবেন, যা আমার পিঠকে শাস্তি থেকে মুক্ত করে দিবেন। তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) এলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর নাযিল করা হলঃ ‏وَالَّذِينَ يَرْمُونَ أَزْوَاجَهُم … الصَّادِقِينَ “যারা নিজেদের স্ত্রীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে” থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করলেন, “যদি সে সত্যবাদী হয়ে থাকে” পর্যন্ত।

তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরলেন এবং তার স্ত্রীকে ডেকে আনার জন্য লোক পাঠালেন।। হিলাল এসে সাক্ষী দিলেন আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছিলেন, আল্লাহ তা’আলা তো জানেন যে তোমাদের দুজনের মধ্যে অবশ্যই একজন মিথ্যাবাদী। তবে কি তোমাদের মধ্যে কেউ তওবা করবে? স্ত্রী লোকটি দাঁড়িয়ে সাক্ষ্য দিল। সে যখন পঞ্চম বারের কাছে পৌঁছল, তখন লোকেরা তাকে বাঁধা দিল এবং বলল, নিশ্চয়ই এটি তোমার উপর অবশ্যম্ভাবী। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, একথা শুনে সে দ্বিধাগ্রস্ত হল এবং ইতস্তত করতে লাগল। এমনকি আমরা মনে করতে লাগলাম যে, সে নিশ্চয়ই প্রত্যাবর্তন করবে। পরে সে বলে উঠল, আমি চিরকালের জন্য আমার বংশকে কলুষিত করব না। সে তার সাক্ষ্য পূর্ণ করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এর প্রতি দৃষ্টি রেখ। যদি সে কালো, ডাগর চক্ষু, বড় পাছা ও মোটা নলা বিশিষ্ট সন্তান প্রসব করে তবে ও সন্তান শারিক ইবনু সাহমার। পরে সে অনুরূপ সন্তান জন্ম দিল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি এ বিষয়ে আল্লাহর কিতাব কার্যকর না হত, তাহলে অবশ্যই আমার ও তার মধ্যে কি ব্যপার যে ঘটত।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৮৯ | 4389 | ٤۳۸۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ والخامسة أن غضب الله عليها إن كان من الصادقين “এবং পঞ্চম বারে বলে, তার স্বামী সত্যবাদী হলে তার নিজের উপর নেমে আসবে আল্লাহর গযব”।
৪৩৮৯। মুকাদ্দাম ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে তার স্ত্রীর উপর (যেনার) অভিযোগ আনে এবং সে তার স্ত্রী সন্তানের অস্বীকার করে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয়কে লিয়ান করতে আদেশ দেন। আল্লাহ তা’আলা যেভাবে বলেছেন, সেভাবে সে লিয়ান করে। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সিদ্ধান্ত দিলেন যে, সন্তানটি স্ত্রীর আর তিনি লিয়ানকারী দুজনকে পৃথক করে দিলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৯০ | 4390 | ٤۳۹۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ إن الذين جاءوا بالإفك عصبة منكم لا تحسبوه شرا لكم بل هو خير لكم لكل امرئ منهم ما اكتسب من الإثم والذي تولى كبره منهم له عذاب عظيم “যারা এ অপবাদ রচনা করেছে , তারা তো তোমাদেরই একটি দল; একে তোমরা তোমাদের জন্য অনিষ্টকর মনে করোনা; বরং এ তো তোমাদের জন্য কল্যাণকর। তাদের প্রত্যেকের জন্য আছে তাদের কৃত পাপকর্মের ফল এবং তাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে, তার জন্য আছে কঠিন শাস্তি”। أفاك অর্থ অতি মিথ্যাবাদী।
৪৩৯০। আবূ নুয়াইম (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “যে এ অপবাদের প্রধান ভূমিকা নিয়েছিল, সে হল আবদুল্লাহ ইবনু উবায়। যখন তোমরা তা শ্রবন করলে, তখন কেন বললে না, এ বিষয়ে বলাবলি করা আমাদের উচিত নয়। আল্লাহ পবিত্র, এ তো এক গুরুতর অপবাদ। তারা কেন এ ব্যপারে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করেনি? যেহেতু তারা সাক্ষী উপস্থিত করেনি, যেহেতু তারা সাক্ষী উপস্থিত করেনি, সে কারনে তারা আল্লাহর বিধানে মিথ্যাবাদী”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৯১ | 4391 | ٤۳۹۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ إن الذين جاءوا بالإفك عصبة منكم لا تحسبوه شرا لكم بل هو خير لكم لكل امرئ منهم ما اكتسب من الإثم والذي تولى كبره منهم له عذاب عظيم “যারা এ অপবাদ রচনা করেছে , তারা তো তোমাদেরই একটি দল; একে তোমরা তোমাদের জন্য অনিষ্টকর মনে করোনা; বরং এ তো তোমাদের জন্য কল্যাণকর। তাদের প্রত্যেকের জন্য আছে তাদের কৃত পাপকর্মের ফল এবং তাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে, তার জন্য আছে কঠিন শাস্তি”। أفاك অর্থ অতি মিথ্যাবাদী।
৪৩৯১। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) … ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন উরওয়া ইবনু যুবায়র, সাইদ ইবনু মূসাইয়িব, আলকামা ইবনু ওয়াক্কাস, উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উতবা ইবনু মাসুদ (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী আয়িশা (রাঃ) এর ঘটনা সম্পর্কে বলেন, যখন অপবাদকারীরা তার প্রতি অপবাদ এনেছিল এবং আল্লাহ তা’আলা তাঁকে তাদের অভিযোগ থেকে নির্দোষ থাকার বর্ণনা দেন। তাদের প্রত্যেকেই ঘটনার অংশবিশেষ আমাকে অবহিত করেন। অবশ্য তাদের পরস্পর পরস্পরের বর্ণনা সমর্থন করে, যদিও তাদের মধ্যে কেউ অন্যের তুলনায় এ ঘটনাটি বেশি সংরক্ষণ করেছে। তবে উরওয়া আয়শা (রাঃ) থেকে এরুপ বলেছিলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী আয়শা (রাঃ) বলেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কথাও সফরে বের হতেন, তখন তিনি তার স্ত্রী গনের মধ্যে লটারি দিতেন। এতে যার নাম উঠত, তাঁকে সঙ্গে নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হতেন।

আয়শা (রাঃ) বলেন, অতএব, কোন এক যুদ্ধে যাওয়ার সময় আমাদের মধ্যে লটারি দিলেন। তাতে আমার নাম উঠল। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বের হলাম, পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পরে। আমাকে হাওদায় করে উঠান হত এবং তাতে করে নামান হত। এ ভাবেই আমরা চললাম। যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধ শেষ করে ফিরলেন এবং ফেরার পথে আমরা মদিনার নিকটবর্তী হলাম। একদা (মনজিল থেকে) রওয়ানা দেওার জন্য রাত থাকতেই ঘোষণা দিলেন। এ ঘোষণা দিলে আমি উটে চড়ে সৈন্যদের অবস্থানস্থল থেকে কিছু দূরে চলে গেলাম। আমার প্রাকৃতিক প্রয়োজন সেরে যখন সওয়ারীর কাছে এলাম, তখন দেখতে পেলাম যে, জাফারের দানা খচিত আমার হারটি ছিঁড়ে কোথাও পড়ে গেছে। আমি তা খোঁজ করতে লাগলাম। খোঁজ করতে আমার একটু দেরি হয়ে গেল। ইতিমধ্যে এ সকল লোক যারা আমাকে সওয়ার করাতো, তারা, আমি আমার হাওদার ভিতরে আছি মনে করে, আমার হাওদা উটের পিঠে রেখে দিল। কেননা এ সময় শরীরের গোশত আমাকে (হালকা পাতলা ছিলাম) ভারী করেনি। আমরা তো খুব অল্প খাদ্য গ্রহন করতাম। আমি ছিলাম অল্পবয়স্কা এক বালিকা। সুতরাং হাওদা উঠাবার তা যে খুব হালকা, তা তারা বুঝতে পারেনি এবং তারা উট হাঁকিয়ে রওয়ানা দিল।

সেনাদল চলে যাওয়ার পর আমি আমার হার পেয়ে গেলাম এবং যেখানে তারা ছিল সেখানে ফিরে এলাম। তখন সেখানে এমন কেউ ছিলনা যে ডাকবে বা ডাকে সাড়া দিবে। আমি যেখানে ছিলাম সে স্থানেই থেকে গেলাম। এ ধারনায় বসে থাকলাম যে যখন কিছুদূর গিয়ে আমাকে দেখতে পাবেনা, তখন এ স্থানে অবশ্যই খুঁজতে আসবে। সেখানে বসা অবস্থায় আমার চোখে ঘুম এসে গেল, আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। আর সৈন্যবাহিনীর পিছনে সাফওান ইবনু মুয়াত্তাল সুলামি যাকওয়ানি ছিলেন। তিনি শেষ রাতে রওয়ানা দিয়ে ভোর বেলা আমার এ স্থানে এসে পৌঁছলেন। তিনি একজন মানুষের আকৃতি নিদ্রাবস্থায় দেখতে পেলেন। তিনি আমার কাছে এসে আমাকে দেখে চিনতে পারলেন। কেননা, পর্দার হুকুম নাযিল হওয়ার আগে আমাকে দেখেছিলেন। কাজেই আমাকে চেনার পর উচ্চকণ্ঠে “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” পড়লেন। পড়ার আওয়াজে আমি উঠে গেলাম এবং আমি আমার চাঁদর দিয়ে চেহারা ধেকে নিলাম। আল্লাহর কসম তিনি আমার সঙ্গে কোন কথাই বলেননি এবং তার মুখ হতে “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” আর কোন কথা আমি শুনিনি।

এরপর তিনি তার উট বসালেন এবং সামনের দুই পা নিজ পায়ে দাবিয়ে রাখলেন। আর আমি তাতে আরোহণ করলাম। তখন সাফওয়ান উটের লাগাম ধরে চললেন। শেষ পর্যন্ত আমরা সৈন্যবাহিনীর নিকট এ সময় গিয়ে পৌঁছলাম, যখন তারা দুপুরের প্রচণ্ড উত্তাপের সময় অবতরণ করে। (এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে) যারা ধ্বংস হওয়ার তারা ধ্বংস হল। আর যে ব্যাক্তি এ অপবাদের নেতৃত্ব দেয়, সে ছিল (মুনাফিক সর্দার) আবদুল্লাহ ইবনু উবায় ইবনু সলুল। তারপর আমি মদিনায় এসে পৌঁছলাম এবং পৌঁছার পর আমি দীর্ঘ একমাস পর্যন্ত অসুস্থ ছিলাম। আর অপবাদকারীদের কথা নিয়ে লোকেরা রটনা করছিল। আমি এসব কিছুই বুঝতে পারিনি। তবে এতে আমাকে সন্দেহে ফেলেছিল যে, আমার অসুস্থ অবস্থায় স্বাভাবিকভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রকম স্নেহ ভালবাসা দেখাতেন, এবারে তেমনি ভালবাসা দেখাচ্ছেন না। শুধু এতটুকুই ছিল যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আসতেন এবং সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করতেন, তোমার অবস্থা কি? তারপর তিনি ফিরে যেতেন। এই আচরণই আমাকে সন্দেহে ফেলেছিল। অথচ আমি এই অপপ্রচার সম্বন্ধে জানতেই পারিনি।

অবশেষে একটু সুস্থ হওয়ার পর মিসতাহের মায়ের সঙ্গে মানাসের দিকে বের হলাম। সে জায়গাটই ছিল আমাদের প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারার স্থান। আর আমরা কেবল রাতের পর রাতেই বাইরে যেতাম। এ ছিল সে সময়ের কথা যখন আমাদের ঘর সংলগ্ন পায়খানা নির্মিত হয়নি। আমাদের অবস্থা ছিল অনেকটা প্রাচীন আরবদের নিচু ময়দানের দিকে বের হয়ে প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারা। কেননা, ঘর সংলগ্ন পায়খানা নির্মাণ আমরা কষ্টকর মনে করতাম। কাজেই আমি ও মিসতাহের মা বাইরে গেলাম। তিনি ছিলেন আবূ রুহম ইবনু আবদ মানাফের কন্যা এবং মিসতাহের মায়ের মা ছিলেন সাখর ইবনু আমিরের কন্যা, যিনি আবূ বকর (রাঃ) এর খালা ছিলেন। আর তার পুত্র ছিলেন মিসতাহ ইবনু উসাসাহ।

আমি ও উম্মে মিসতাহ আমাদের প্রয়োজন সেরে ঘরের দিকে ফিরলাম। তখন মিসতাহের মা তার চাঁদরে হোঁচট খেয়ে বললেন, মিসতাহ ধ্বংস হোক। আমি তাঁকে বললাম, তুমি খুব খারাপ কথা বলছ, তুমি কি এমন এক ব্যাক্তিকে মন্দ বলছ, যে বদরের যুদ্ধে হাজির ছিল। তিনি বললেন, হে আত্মভোলা! তুমি কি শোননি সে কি বলেছে? আমি বললাম, সে কি বলেছে? তিনি বললেন, এমন এমন। এ বলে তিনি অপবাদকারীদের অপবাদ সম্পর্কে আমাকে বিস্তারিত খবর দিলেন। এতে আমার অসুখের মাত্রা বৃদ্ধি পেল। যখন আমি ঘরে ফিরে আসলাম এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে প্রবেশ করে বললেন, তুমি কেমন আছ? তখন আমি বললাম, আপনি কি আমাকে আমার আব্বা আম্মার নিকট যেতে অনুমতি দিবেন? তিনি বললেন, তখন আমার উদ্দেশ্য ছিল যে, আমি তাদের কাছে গিয়ে তাদের থেকে আমার এ ঘটনা সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে জেনে নেই।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আসার জন্য অনুমতি দিলেন। আমি আব্বা আম্মার কাছে চলে গেলাম এবং আমার আম্মাকে বললাম, ও গো আম্মা! লোকেরা কি বলাবলি করছে? তিনি বললেন, বৎস! তুমি তোমার মন হালকা রাখ। আল্লাহর কসম! এমন কমই দেখা যায় যে, কোন পুরুষের কাছে এমন সুন্দরী রূপবতী স্ত্রী আছে, যাকে সে ভালবাসে এবং তার সতীনও আছে, অথচ তার ত্রুটি বের করা হয়না। রাবি বলেন, আমি বললাম, সুবহানাল্লাহ। সত্যি কি লোকেরা এ ব্যপারে বলাবলি করছে? তিনি বললেন, আমি সে রাত কেঁদে কাটালাম। এমনকি ভোর হয়ে গেল তথাপি আমার কান্না থামল না। এবং আমি ঘুমাতেও পারলাম না। আমি কাঁদতে কাঁদতেই ভোর করলাম।

যখন ওহী আসতে দেরি হল, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) ও উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ) কে তার স্ত্রীর বিচ্ছেদের ব্যপারে তাদের পরামর্শের জন্য ডাকলেন। তিনি বলেন, উসামা ইবনু যায়েদ তার সহধর্মিণী (আয়িশা (রাঃ) এর পবিত্রতা এবং তার অন্তরে তাদের প্রতি তার ভালবাসা সম্পর্কে যা জানেন তার আলোকে তাঁকে পরামর্শ দিতে গিয়ে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার পরিবার সম্পর্কে আমরা ভাল ধারনাই পোষণ করি। আর আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহ আপনার উপর কোন সংকীর্ণতা আরোপ করেন নি এবং তিনি ছাড়া বহু মহিলা রয়েছেন। আর আপনি যদি দাসীকে জিজ্ঞেস করেন, সে আপনার কাছে সত্য ঘটনা বলবে। তিনি [আয়শা (রাঃ)] বলেন, তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারিরাকে ডাকলেন এবং বললেন, হে বারিরা! তুমি কি তার কাছ থেকে সন্দেহজনক কিছু দেখেছ? বারিরা বলল, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরন করেছেন, তাঁর কসম! আমি এমন কোন কিছু তাঁর মধ্যে দেখতে পাইনি, যা আমি গোপন করতে পারি। তবে তাঁর মধ্যে সবচাইতে বেশি যা দেখেছি, তা হল তিনি একজন অল্প বয়স্ক বালিকা। তিনি কখনও তাঁর পরিবাবের আটার খামির রেখে ঘুমিয়ে পড়তেন। আর বকরীর বাচ্চা এসে তা খেয়ে ফেলত।

এরপরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মিম্বরে) দাঁড়ালেন। আবদুল্লাহ ইবনু উবায় ইবনু সলুলের বিরুদ্ধে তিনি সমর্থন চাইলেন। আয়শা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরের উপর থেকে বললেন, হে মুসলিম সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে, ঐ ব্যাক্তির মিথ্যা অপবাদ থেকে আমাকে সাহায্য করতে পারে, যে আমার স্ত্রীর ব্যপারে আমাকে কষ্ট দিয়েছে। আল্লাহর কসম! আমি আমার স্ত্রী সম্পর্কে ভালই জানতে পেরেছি। এবং তারা এমন এক পুরুষ সম্পর্কে অভিযোগ এনেছে, যার সম্পর্কে আমি ভাল ছাড়া কিছুই জানিনা। সে কখনও আমাকে ছাড়া আমার ঘরে আসেনি।

এ কথা শুনে সা’দ ইবনু মু’য়াজ আনসারি (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তাঁর বিরুদ্ধে আমি আপনাকে সাহায্য করব, যদি সে আউস গোত্রের হয় তবে আমি তাঁর গর্দান মেরে দিব। আর যদি আমাদের ভাই খাযরাজ গোত্রের লোক হয়, তবে আপনি নির্দেশ দিলে আমি আপনার নির্দেশ কার্যকর করব। আয়িশা (রাঃ) বললেন, এরপর সা’দ ইবনু উবাদা দাঁড়ালেন। তিনি খাযরাজ গোত্রের সর্দার। তিনি পূর্বে একজন নেককার লোক ছিলেন কিন্তু এ সময় স্বগোত্রের পক্ষপাতিত্ব তাকে উত্তেজিত করে তোলে। কাজেই তিনি সা’দ কে বললেন, চিরঞ্জীব আল্লাহর কসম! তুমি মিথ্যা বলেছ। তুমি তাকে হত্যা করতে পারবে না। এবং তাকে হত্যা করার ক্ষমতা তুমি রাখ না। তারপর উসায়দ ইবনু হুদায়র দাঁড়ালেন, যিনি সা’দের চাচাতো ভাই। তিনি সা’দ ইবনু উবায়দা কে বললেন, চিরঞ্জীব আল্লাহর কসম! তুমি মিথ্যা বলেছ। আমরা অবশ্যই তাকে হত্যা করব। তুমি নিজেও মুনাফিক এবং মুনাফিকের পক্ষে প্রতিবাদ করছ। এতে আউস এবং খাযরাজ উভয় গোত্রের লোকেরা উত্তেজিত হয়ে উঠল। এমনকি তারা পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার উপক্রম হল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে দাঁড়ানো ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের থামাতে লাগলেন। অবশেষে তারা থামল।

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও নিরব হলেন। আয়শা (রাঃ) বলেন, আমি সেদিন এমনভাবে কাটালাম যে, আমার চোখের অশ্রুও থামেনি এবং চোখে ঘুমও আসেনি। আয়শা (রাঃ) বলেন, সকাল বেলা আমার কাছে আমার আব্বা আম্মা আসলেন, আর আমি দু’ রাত এবং একদিন (একাধারে) কাঁদছিলাম। এর মধ্যে না আমার ঘুম হয় না আমার চোখের পানি বন্ধ হয়। তারা ধারনা করছিলেন যে এ ক্রন্দনে আমার কলিজা ফেটে যাবে। আয়শা (রাঃ) বলেন, এর পূর্বে তারা যখন আমার কাছে বসা ছিলেন এবং আমি কাঁদছিলাম, ইত্যবসরে জনৈক আনসারি মহিলা আমার কাছে আসার জন্য অনুমতি চাইলেন। আমি তাকে অনুমতি দিলাম। সে বসে আমার সাথে কাঁদতে লাগল। আমাদের এ অবস্থার মধ্যেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে প্রবেশ করলেন এবং সালাম দিয়ে বসলেন।

আয়শা (রাঃ) বলেন, এর পূর্বে যখন থেকে এ কথা রটনা চলেছে, তিনি আমার কাছে বসেন নি। এ অবস্থায় তিনি এক মাস অপেক্ষা করেছেন। আমার সম্পর্কে ওহী আসেনি। আয়শা (রাঃ) বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশাহুদ পাঠ করলেন। তারপর বললেন, হে আয়শা! তোমার সম্পর্কে এরুপ এরুপ কথা আমার কাছে পৌঁছেছে। তুমি যদি নির্দোষ হয়ে থাক, তবে অচিরেই আল্লাহ তা’আলা তোমার পবিত্রতা ব্যক্ত করে দিবেন। আর যদি তুমি কোন পাপে লিপ্ত হয়ে থাক, তবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও এবং তাঁর কাছে তওবা কর। কেননা, বান্দা যখন তার পাপ স্বীকার করে নেয় এবং আল্লাহর কাছে তওবা করে তখন আল্লাহ তাঁর তওবা কবুল করেন।

আয়শা (রাঃ) বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কথা শেষ করলেন, তখন আমার চোখের পানি এমনভাবে শুকিয়ে গেল যে, এক ফোঁটা পানিও অনুভব করছিলাম না। আমি আমার পিতাকে বললাম, আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে (তিনি যা কিছু বলেছেন তার) জবাব দিন। তিনি বললেন। আল্লাহর কসম! আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কি জবাব দিব তা আমার বুঝে আসছেনা। তারপর আমার আম্মাকে বললাম, আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জবাব দিন। তিনি বললেন, আমি বুঝতে পারছিনা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কি জবাব দিব। আয়শা (রাঃ) বলেন, তখন আমি নিজেই জবাব দিলাম। অথচ আমি একজন অল্প বয়স্কা বালিকা। কুরআন খুব বেশি পড়িনি। আল্লাহর কসম আমি জানি আপনারা এ ঘটনা শুনেছেন, এমনকি তা আপনাদের অন্তরে বসে গেছে এবং সত্য বলে বিশ্বাস করে নিয়েছেন। এখন যদি আমি বলি যে আমি নির্দোষ এবং আল্লাহ ভালভাবেই জানেন যে, আমি নির্দোষ; তবে আপনারা তা বিশ্বাস করবেন না। আর আমি যদি আপনাদের কাছে এ বিষয় স্বীকার করে নেই, অথচ আল্লাহ জানেন , আমি তা থেকে নির্দোষ; তবে আপনারা আমার এই উক্তি বিশ্বাস করে নিবেন। আল্লাহর কসম! এ ক্ষেত্রে আমি আপনাদের জন্য ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর পিতার উক্তি ব্যতীত আর কোন দৃষ্টান্ত পাচ্ছিনা। তিনি বলেছিলেন, ‏فَصَبْرٌ جَمِيلٌ وَاللَّهُ الْمُسْتَعَانُ عَلَى مَا تَصِفُونَ “পূর্ণ ধৈর্যই শ্রেয় তোমরা যা বলছ; সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাওয়া যায়”।

তিনি বলেন, এরপর আমি আমার চেহারা ঘুরিয়ে নিলাম এবং কাত হয়ে আমার বিছানায় শুয়ে পড়লাম। তিনি বলেন, এ সময় আমার বিশ্বাস ছিল যে আমি নির্দোষ এবং আল্লাহ তা’আলা আমার নির্দোষিতা প্রকাশ করে দিবেন। কিন্তু আল্লাহর কসম! আমি তখন এ ধারনা করতে পারিনি যে, আল্লাহ আমার সম্পর্কে এমন ওহী অবতীর্ণ করবেন যা তিলাওয়াত করা হবে। আমার দৃষ্টিতে আমার মর্যাদা এর চাইতে অনেক নিচে ছিল। বরং আমি আশা করেছিলাম যে, হয়ত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিদ্রায় কোন স্বপ্ন দেখবেন যাতে আল্লাহ তা’আলা আমার নির্দোষিতা জানিয়ে দিবেন। আয়শা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ান নি এবং ঘরের কেউ বের হন নি। এমন সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ওহী নাযিল হতে লাগল এবং তাঁর শরীর ঘামতে লাগল। এমনকি যদিও শীতের দিন ছিল তবুও তাঁর উপর যে ওহী অবতীর্ণ হচ্ছিল এর বোঝার ফলে মুক্তার মত তাঁর ঘাম ঝরছিল। যখন ওহী শেষ হল, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসছিলেন। তখন তিনি প্রথম যে বাক্যটি বলেছিলেন তা হলঃ হে আয়শা! আল্লাহ তোমার নির্দোষিতা প্রকাশ করেছেন।

এ সময় আমার মা আমাকে বললেন, তুমি উঠে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব না, আল্লাহ ছাড়া আর কারও প্রশংসা করবনা। আল্লাহ তা’আলা অবতীর্ণ করলেন পূর্ণ দশ আয়াত পর্যন্ত। نَّ الَّذِينَ جَاءُوا بِالإِفْكِ عُصْبَةٌ যারা এ অপবাদ রচনা করেছে, তারা তোমাদেরই একটি দল। যখন আল্লাহ তা’আলা আমার নির্দোষিতার আয়াত অবতীর্ণ করলেন, তখন আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) যিনি মিসতাহ ইবনু উসাসাকে নিকটবর্তী আত্মীয়তা এবং দারিদ্র্যের কারনে আর্থিক সাহায্য করতেন, তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! মিসতাহ আয়শা সম্পর্কে যা বলেছে, এরপর আমি তাকে কখনওই কিছুই দান করবনা।

তারপর আল্লাহ তা’আলা আয়াত অবতীর্ণ করেলন, “তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেন শপথ গ্রহন না করে যে তার আত্মীয় স্বজন ও অভাবগ্রস্থ কে এবং আল্লাহর রাস্তায় যারা গৃহত্যাগ করেছে তাদের কিছুই দেবে না। তারা যেন তাদের ক্ষমা করে এবং তাদের দোষত্রুটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি চাওনা যে আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করেন? এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।

আবূ বকর (রাঃ) এ সময় বললেন, আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই পছন্দ করি যে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করেন। তারপর তিনি মিসতাহের সাহায্য আগের মত দিতে লাগলেন এবং বললেন, আল্লাহর কসম! আমি এ সাহায্য কখনও বন্ধ করবনা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জয়নব বিনতে জাহশকেও আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, হে জয়নব! (আয়শা সম্পর্কে) কি জানো আর কি দেখেছ? তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি আমার কান ও চোখকে বাচিয়ে রাখতে চাই। আমি তার সম্পর্কে ভাল ছাড়া অন্য কিছু জানি না। আয়শা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণীদের মধ্যে তিনি আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা তার পরহেযগারির কারনে রক্ষা করেন। আর তার বোন হামনা তার পক্ষাবিলম্ব করে মুকাবিলা করে এবং অপবাদ আনয়নকারী যারা ধ্বংস হয়েছিল তাদের মধ্যে সেও ধ্বংস হল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৯২ | 4392 | ٤۳۹۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ “তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে , তোমরা যাতে লিপ্ত ছিলে তার কারনে কঠিন শাস্তি তোমাদেরকে স্পর্শ করত”। মুজাহিদ (র) বলেন, تلقونه এর অর্থ একে অপরের থেকে বর্ণনা করতে লাগল। تفيضون তোমরা বলাবলি করতে লাগলে।
৪৩৯২। মুহাম্মদ ইবনু কাসির (রহঃ) … আয়শা (রাঃ) এর মা উম্মে রুমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন আয়শা (রাঃ) এর উপর মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হল তখন তিনি বেহুঁশ হয়ে পড়লেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৯৩ | 4393 | ٤۳۹۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ “যখন তোমরা মুখে মুখে এ ঘটনা ছড়াচ্ছিলে এবং এমন বিষয় মুখে উচ্চারন করছিলে যার কোন জ্ঞান তোমাদের ছিলনা এবং তোমরা একে তুচ্ছ মনে করেছিলে, যদিও আল্লাহর নিকট এটা ছিল গুরুতর বিষয়”।
৪৩৯৩। ইব্রাহিম ইবনু মূসা (রহঃ) … ইবনু আবূ মুলায়কা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি আয়শা (রাঃ) কে ل এর জের ও ق এর পেশ দিয়ে পড়তে শুনেছি। আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ “ এবং তোমরা যখন এ কথা শ্রবন করলে, তখন কেন বললে না; এ বিষয় বলাবলি করা আমাদের উচিত নয়, আল্লাহ পবিত্র ও মহান, এ তো এক গুরুতর মিথ্যা অপবাদ”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৯৪ | 4394 | ٤۳۹٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ “যখন তোমরা মুখে মুখে এ ঘটনা ছড়াচ্ছিলে এবং এমন বিষয় মুখে উচ্চারন করছিলে যার কোন জ্ঞান তোমাদের ছিলনা এবং তোমরা একে তুচ্ছ মনে করেছিলে, যদিও আল্লাহর নিকট এটা ছিল গুরুতর বিষয়”।
৪৩৯৪। মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) … ইবনু আবূ মুলায়কা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) আয়শা (রাঃ) এর ইন্তেকালের পূর্বে তার কাছে যাওয়ার জন্য অনুমতি চাইলেন। এ সময় তিনি (আয়শা (রাঃ) মৃত্যুশয্যায় শায়িত ছিলেন। তিনি বললেন, আমি ভয় করছি তিনি আমার কাছে এসে প্রশংসা করবেন। তখন তাঁর (আয়শা (রাঃ) এর কাছে বলা হল, তিনি হলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাচাতো ভাই এবং সম্মানিত মুসলমানের অন্তর্ভুক্ত। তিনি বললেন, তবে তাকে অনুমতি দাও। তিনি এসে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার কাছে আপনার অবস্থা কেমন লাগছে? তিনি বললেন, আমি যদি নেক হই তবে ভালই আছি। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, আল্লাহ চাহেতু আপনি নেকই আছেন। আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী এবং তিনি আপনাকে ছাড়া আর কোন কুমারীকে বিয়ে করেন নি এবং আপনার সাফাই আসমান থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। এরপর তাঁর পিছনে ইবনু যুবায়র (রাঃ) প্রবেশ করলেন। তখন আয়শা (রাঃ) বললেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমার কাছে এসেছিলেন এবং আমার প্রশংসা করেছেন। কিন্তু আমি এ-ই পছন্দ করি যে, আমি লোকের স্মৃতি থেকে সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়ে যেতাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৯৫ | 4395 | ٤۳۹۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ “যখন তোমরা মুখে মুখে এ ঘটনা ছড়াচ্ছিলে এবং এমন বিষয় মুখে উচ্চারন করছিলে যার কোন জ্ঞান তোমাদের ছিলনা এবং তোমরা একে তুচ্ছ মনে করেছিলে, যদিও আল্লাহর নিকট এটা ছিল গুরুতর বিষয়”।
৪৩৯৫। মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) … কাসিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) আয়শা (রাঃ) এর নিকট যাওয়ার জন্য অনুমতি চাইলেন। পরবর্তী অংশ উক্তি হাদিসের অনুরূপ। এতে نِسْيًا مَنْسِيًّا (স্মৃতি থেকে বিস্মৃত হয়ে যেতাম) অংশটি নেই।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৯৬ | 4396 | ٤۳۹٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ ‘আল্লাহ তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন (তোমরা যদি মুমিন হও তবে) কখনও অনুরূপ আচরনের পুনরাবৃত্তি করোনা”।
৪৩৯৬। মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … মাসরুক (রহঃ) আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, হাসান ইবনু সাবিত এসে (তাঁর ঘরে প্রবেশের) অনুমতি চাইলেন। আমি বললাম, এ লোকটিকে কি আপনি অনুমতি দিবেন? তিনি [আয়শা (রাঃ)] বললেন, তাঁর উপরে কি কঠিন শাস্তি আপতিত হয়নি? সুফিয়ান (রাঃ) বলেন, এর দ্বারা আয়শা (রাঃ) তাঁর দৃষ্টি শক্তি চলে যাওয়ার কথা উদ্দেশ্য করেছেন। হাসান ইবনু সাবিত আয়শা (রাঃ) এর প্রশংসায় নিম্নের ছন্দ দুটি পাঠ করলেন, (আমার প্রিয়তমা) একজন, পবিত্র ও জ্ঞানী মহিলা যার চরিত্রে কোন সন্দেহ করা হয়না। সতীধর্মী মহিলাদের গোশত ভক্ষন থেকে মুক্ত অবস্থায় ভোরে ওঠে। (অর্থাৎ তিনি কারও গীবত করেন না) আয়শা (রাঃ) বললেন, কিন্তু তুমি (এ চরিত্রের নও)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৯৭ | 4397 | ٤۳۹۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ “আল্লাহ তমদের জন্য আয়াত সমূহ সুস্পষ্ট ভাবে বিবৃত করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়”।
৪৩৯৭। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাসসান ইবনু সাবিত আয়শা (রাঃ) এর কাছে এসে নিচের শ্লোকটি আবৃত্তি করলেন। সে একজন পবিত্র মহিলা যার চরিত্রে কোন সন্দেহ করা হয়না। সে সতীধর্মী মহিলাদের গোশত ভক্ষন থেকে মুক্ত অবস্থায় ভোরে ওঠে। আয়শা (রাঃ) বললেন, ‘তুমি তো এরুপ নও’। (মাসরুক বললেন) আমি বললাম, আপনি এমন এক ব্যাক্তিকে কেন আপনার কাছে আসতে দিলেন, যার সম্পর্কে আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন। আর যে ব্যাক্তি এর বিরাট অংশ নিজের উপর নিয়েছে, তাঁর জন্য তো রয়েছে কঠিন শাস্তি। আয়শা (রাঃ) বললেন, দৃষ্টিহীনতার চেয়ে কঠোর শাস্তি আর কি হতে পারে? তিনি আরও বললেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তরফ হতে জবাব দিতেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৯৮ | 4398 | ٤۳۹۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ وليضربن بخمرهن على جيوبهن “তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন ওড়না দ্বারা আবৃত করে”।
অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ ‘যারা মু’মিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে মর্মন্তুদ শাস্তি এবং আল্লাহ্ জানেন তোমরা জান না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমাদের কেউ অব্যাহতি পেত না। আর আল্লাহ্ দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী, তারা যেন শপথ গ্রহণ না করে যে, তারা আত্মীয়-স্বজন ও অভাবগ্রস্তকে এবং আল্লাহর পথে যারা গৃহ ত্যাগ করেছে, তাদের কিছুই দেবে না। তারা যেন তাদের ক্ষমা করে এবং তাদের দোষত্রুটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ্ তোমাদের ক্ষমা করেন? আর আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

আবু উসামাহ … ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন আমার সম্পর্কে আলোচনা চলছিল যা রটনা হয়েছে এবং আমি এ সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। তখন আমার ব্যাপারে ভাষণ দিতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন। তিনি প্রথমে কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করলেন। তারপর আল্লাহর প্রতি যথাযোগ্য হাম্দ ও সানা পাঠ করলেন। এরপরে বললেন, হে মুসলিমগণ! যে সকল লোক আমার স্ত্রী সম্পর্কে অপবাদ দিয়েছে, তাদের ব্যাপারে আমাকে পরামর্শ দাও। আল্লাহর কসম! আমি আমার পরিবারের ব্যাপারে মন্দ কিছুই জানি না। তাঁরা এমন এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছে, আল্লাহর কসম, তার ব্যাপারেও আমি কখনও খারাপ কিছু জানি না এবং সে কখনও আমার অনুপস্থিতিতে আমার ঘরে প্রবেশ করে না এবং আমি যখন কোন সফরে গিয়েছি সেও আমার সঙ্গে সফরে গিয়েছে।

সা‘দ ইবনু উবাদা দাঁড়িয়ে বললেন, আমাকে তাদের শিরশ্ছেদ করার অনুমতি দিন। এর মধ্যে বানী খাযরাজ গোত্রের এক ব্যক্তি, যে হাসসান ইবনু সাবিতের মাতার আত্মীয় ছিল, সে দাঁড়িয়ে বলল, তুমি মিথ্যা বলেছ, জেনে রাখ, আল্লাহর কসম! যদি সে (অপবাদকারী) ব্যক্তিরা আউস্ গোত্রের হত, তাহলে তুমি শিরশ্ছেদ করতে পছন্দ করতে না। আউস ও খাযরাজের মধ্যে মসজিদেই একটা দুর্ঘটনা ঘটার অবস্থা দেখা দিল। আর আমি এ বিষয় কিছুই জানি না। সেদিন সন্ধ্যায় যখন আমি আমার প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বাইরে গেলাম, তখন উম্মু মিসতাহ্ আমার সঙ্গে ছিলেন এবং তিনি হোঁচট খেয়ে বললেন, ‘মিসতাহ্ ধ্বংস হোক’! আমি বললাম, হে উম্মু মিসতাহ! তুমি তোমার সন্তানকে গালি দিচ্ছ? তিনি নীরব থাকলেন।

তারপর দ্বিতীয় হোঁচট খেয়ে বললেন, ‘মিসতাহ্ ধ্বংস হোক’। আমি তাকে বললাম, ‘তুমি তোমার সন্তানকে গালি দিচ্ছ?’ তিনি (উম্মু মিসতাহ্) তৃতীয়বার পড়ে গিয়ে বললেন, ‘মিসতাহ্ ধ্বংস হোক’। আমি এবারে তাঁকে ধমক দিলাম। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমি তাকে তোমার কারণেই গালি দিচ্ছি। আমি বললাম আমার ব্যাপারে? ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, তখন তিনি আমার কাছে সব ঘটনা বিস্তারিত বললেন। আমি বললাম, তাই হচ্ছে নাকি? তিনি বললেন, হ্যাঁ আল্লাহর কসম! এরপর আমি আমার ঘরে ফিরে এলাম এবং যে প্রয়োজনে বাইরে গিয়েছিলাম তা একেবারেই ভুলে গেলাম। এরপর আমি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লাম এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম যে, আমাকে আমার পিতার বাড়িতে পাঠিয়ে দিন। তিনি একটি ছেলেকে আমার সঙ্গে দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন।

আমি যখন ঘরে প্রবেশ করলাম, তখন উম্মু রূমানকে নিচে দেখতে পেলাম এবং আবূ বাকর (রাঃ) ঘরের ওপরে পড়ছিলেন। আমার আম্মা জিজ্ঞেস করলেন, হে বৎস! কিসে তোমাকে নিয়ে এসেছে? আমি তাকে সংবাদ দিলাম এবং তাঁর কাছে ঘটনা বললাম। এ ঘটনা তার ওপর তেমন প্রভাব বিস্তার করেনি, যেমন আমার ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে। তিনি বললেন, হে বৎস! এটাকে তুমি হাল্কাভাবে গ্রহণ কর, কেননা, এমন সুন্দরী নারী কমই আছে, যার স্বামী তাঁকে ভালবাসে আর তার সতীনরা তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয় না এবং তার বিরুদ্ধে কিছু বলে না। বস্তুত তার ওপর ঘটনাটি অতখানি প্রভাব বিস্তার করেনি যতখানি আমার উপর করেছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আমার আববা [আবূ বাকর (রাঃ)] কি এ ঘটনা জেনেছেন? তিনি জবাব দিলেন, হ্যাঁ। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও কি? তিনি জবাব দিলেন হ্যাঁ।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামও এ ঘটনা জানেন। তখন আমি অশ্রু ঝরিয়ে কাঁদতে লাগলাম। আবূ বকর (রাঃ) আমার কান্না শুনতে পেলেন। তখন তিনি ঘরের ওপরে পড়ছিলেন। তিনি নিচে নেমে আসলেন এবং আমার আম্মাকে জিজ্ঞেস করলেন, তার কী হয়েছে? তিনি বললেন, তার সম্পর্কে যা রটেছে তা তার গোচরীভূত হয়েছে। এতে আবূ বাকরের চোখের পানি ঝরতে লাগল। তিনি বললেন, হে বৎস! আমি তোমাকে কসম দিয়ে বলছি, তুমি তোমার ঘরে ফিরে যাও। আমি আমার ঘরে ফিরে এলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে আসলেন। তিনি আমার খাদিমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। সে বলল, আল্লাহর কসম, আমি এ ব্যতীত তাঁর কোন দোষ জানি না যে, তিনি ঘুমিয়ে পড়তেন এবং ছাগল এসে তাঁর খামির অথবা বললেন, গোলা আটা খেয়ে যেত। তখন কয়েকজন সহাবী তাকে ধমক দিয়ে বললেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে সত্য কথা বল। এমনকি তাঁরা তার নিকট ঘটনা খুলে বললেন। তখন সে বলল, সুবহান আল্লাহ্, আল্লাহর কসম! আমি তাঁর ব্যাপারে এর চেয়ে অধিক কিছু জানি না, যা একজন স্বর্ণকার তার এক টুকরা লাল খাঁটি স্বর্ণ সম্পর্কে জানে।

এ ঘটনা সে ব্যক্তির কাছেও পৌঁছল যার সম্পর্কে এ অভিযোগ উঠেছে। তখন তিনি বললেন, সুবহান আল্লাহ্! আল্লাহর কসম, আমি কখনও কোন মহিলার পর্দা খুলিনি। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, পরবর্তী সময়ে এ (অভিযুক্ত) লোকটি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ রূপে নিহত হন। তিনি বলেন, ভোর বেলায় আমার আববা ও আম্মা আমার কাছে এলেন। তাঁরা এতক্ষণ থাকলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের সালাত আদায় করে আমার কাছে এলেন। এ সময় আমার ডানে ও বামে আমার আববা আমাকে ঘিরে বসা ছিলেন। তিনি [রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আল্লাহ্ তা‘আলার হামদ ও সানা পাঠ করে বললেন, হে ‘আয়িশাহ! তুমি যদি কোন গুনাহর কাজ বা অন্যায় করে থাক তবে আল্লাহর কাছে তাওবা কর, কেননা, আল্লাহ্ তাঁর বান্দার তাওবা কবূল করে থাকেন। তখন জনৈকা আনসারী মহিলা দরজার কাছে বসা ছিল। আমি বললাম, আপনি কি এ মহিলাকেও লজ্জা করছেন না, এসব কিছু বলতে? তবুও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নাসীহাত করলেন। তখন আমি আমার আববার দিকে লক্ষ্য করে বললাম, আপনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জবাব দিন। তিনি বললেন, আমি কী বলব? এরপরে আমি আম্মার দিকে লক্ষ্য করে বললাম, আপনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জবাব দিন। তিনিও বললেন, আমি কী বলব? যখন তাঁরা কেউই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কোন জবাব দিলেন না, তখন আমি কালিমায়ে শাহাদাত পাঠ করে আল্লাহর যথোপযুক্ত হামদ ও সানা পাঠ করলাম।

এরপর বললাম, আল্লাহর কসম! আমি যদি বলি যে, আমি এ কাজ করিনি এবং আমি যে সত্যবাদী এ সম্পর্কে আল্লাহ্ই সাক্ষী, তবে তা আপনাদের নিকট আমার কোন উপকারে আসবে না। কেননা, এ ব্যাপারটি আপনারা পরস্পরে বলাবলি করেছেন এবং তা আপনাদের অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে গেছে। আর আমি যদি আপনাদের বলি, আমি তা করেছি অথচ আল্লাহ্ জানেন যে আমি এ কাজ করিনি, তবে আপনারা অবশ্যই বলবেন যে, সে তার নিজের দোষ নিজেই স্বীকার করেছে। আল্লাহর কসম! আমি আমার এবং আপনাদের জন্য আর কোন দৃষ্টান্ত পাচ্ছি না। তখন আমি ইয়াকূব (আলাইহিস সালাম) এর নাম স্মরণ করার চেষ্টা করলাম কিন্তু পারিনি-তাই বললাম, যখন ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর পিতার অবস্থা ব্যতীত, যখন তিনি বলেছিলেন, (তোমরা ইউসুফ সম্পর্কে যা বলছ তার প্রেক্ষিতে) পূর্ণ ধৈর্যই শ্রেয়, তোমরা যা বলছ সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহ্ই আমার সাহায্যকারী।

ঠিক এ সময়ই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট ওহী অবতীর্ণ হল। আমরা সবাই নীরব রইলাম। ওহী শেষ হলে আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারায় খুশীর নমুনা দেখতে পেলাম। তিনি তাঁর কপাল থেকে ঘাম মুছতে মুছতে বলছিলেন, হে ‘আয়িশাহ! তোমার জন্য খোশখবর! আল্লাহ্ তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করেছেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, এ সময় আমি অত্যন্ত রাগান্বিত ছিলাম। আমার আব্বা ও আম্মা বললেন, ‘তুমি উঠে তাঁর কাছে যাও’, (এবং তার শুকরিয়া আদায় কর)। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি তাঁর দিকে যাব না এবং তাঁর শুকরিয়া আদায় করব না। আর আপনাদেরও শুকরিয়া আদায় করব না। কিন্তু আমি একমাত্র আল্লাহর প্রশংসা করব, যিনি আমার পবিত্রতা ঘোষণা করেছেন।

আপনারা (অপবাদ রটনা) শুনছেন কিন্তু তা অস্বীকার করেননি এবং তার পাল্টা ব্যবস্থাও গ্রহণ করেননি। ‘আয়িশাহ (রাঃ) আরও বলেন, জয়নাব বিনতে জাহাশকে আল্লাহ্ তাঁর দ্বীনদারীর কারণে তাঁকে রক্ষা করেছেন। তিনি (আমার ব্যাপারে) ভাল ব্যতীত কিছুই বলেন নি। কিন্তু তার বোন হামনা ধ্বংসপ্রাপ্তদের সঙ্গে নিজেও ধ্বংস হল। যারা এই ব্যাপারে কটুক্তি করত তাদের মধ্যে ছিল মিসতাহ্, হাসসান ইবনু সাবিত এবং মুনাফিক ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু উবাই। সে-ই এ সংবাদ সংগ্রহ করে ছড়াত। আর পুরুষদের মধ্যে সে এবং হামনাই এ ব্যাপারে বিরাট ভূমিকা পালন করত।

রাবী বলেন, তখন আবূ বাকর (রাঃ) কখনও মিসতাহ্কে কোন প্রকার উপকার করবেন না বলে কসম খেলেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা‘আলা আয়াত অবতীর্ণ করলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী অর্থাৎ (আবূ বাকর) তারা যেন কসম না করে যে তারা আত্মীয়-স্বজন ও অভাবগ্রস্তকে অর্থাৎ মিসতাহ্কে কিছুই দেবে না। তোমরা কি চাও না আল্লাহ্ তোমাদেরকে ক্ষমা করেন? এবং আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’’ আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, হাঁ আল্লাহর কসম! হে আমাদের রব! আমরা অবশ্যই এ চাই যে, আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিবেন। তারপর আবূ বাকর (রাঃ) আবার মিস্তাহকে আগের মত আচরণ করতে লাগলেন।

আহমাদ ইবন শাবিব (রহঃ) … আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহ্ তা‘আলা প্রাথমিক যুগের মুহাজির মহিলাদের উপর রহম করুন, যখন আল্লাহ্ তা‘আলা এ আয়াত ‘‘তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন ওড়না দ্বারা আবৃত করে’’ নাযিল করলেন, তখন তারা নিজ চাদর ছিঁড়ে ওড়না হিসাবে ব্যবহার করল।

৪৩৯৮। আবূ নু’আইম (রহঃ) … সাফিয়া বিনতে শায়বা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আয়শা (রাঃ) বলতেন, যখন এ আয়াত, “তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন ওড়না দ্বারা আবৃত করে” অবতীর্ণ হল তখন মুহাজির মহিলারা তাদের তহবন্দের পার্শ্ব ছিঁড়ে তা ওড়না হিসাবে ব্যবহার করতে লাগল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৯৯ | 4399 | ٤۳۹۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ “যাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায় জাহান্নামে একত্র করা হবে, তাদেরই স্থান অতি নিকৃষ্ট এবং তারাই পথভ্রষ্ট”।
সুরা ফুরকান

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, هَبَاءً مَنْثُوْرًا যা কিছু বাতাস উড়িয়ে নেয়। مَدَّ الظِّلَّ ফজরের উদয় থেকে সূর্যোদয়ের মধ্যবর্তী সময়। سَاكِنًا উপরস্থিত। عَلَيْهِ دَلِيْلًا সূর্যোদয়। خِلْفَةً যার রাতের ‘আমাল ছুটে যায়, সে তা দিনে আদায় করে আর যার দিনের কাজ ছুটে যায়, সে তা রাতে আদায় করে। হাসান বলেন, هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَاআল্লাহর আনুগত্যে; মু’মিনের চোখে এ ব্যতীত আর কিছু আনন্দদায়ক নয় যে, সে তার প্রিয়জনকে পায় আল্লাহর অনুগত। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, ثُبُوْرًاধ্বংস। কেউ বলেন, السَّعِيْرُ পুংলিঙ্গ, এবং التَّسَعُّرُ ও الاضْطِرَامُতীব্রভাবে, অগ্নি প্রজ্বলিত হওয়া। تُمْلٰى عَلَيْهِ তার প্রতি পড়া হয়। এ শব্দ أَمْلَيْتُ অথবা وَأَمْلَلْتُ থেকে নির্গত। الرَّسُّ খণি, এর বহুবচনرِسَاسٌ। مَا يَعْبَأُ যা গ্রাহ্য করা না হয়। غَرَامًا ধ্বংস। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, وَعَتَوْا তারা অবাধ্য হয়েছে। ইবনু ‘উয়াইনাহ বলেন, عَاتِيَةٍ নিয়ন্ত্রণকারীর নিয়ন্ত্রণ লঙ্ঘন করেছে।

৪৩৯৯। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তি বলল, হে আল্লাহর নাবী! কিয়ামতের দিন কাফিরদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায় একত্র করা হবে? তিনি বললেন, যিনি এ দুনিয়ায় তাকে দুপায়ের উপর ভর দিয়ে চালাতে পারছেন, তিনি কি কিয়ামতের দিন মুখে ভর দিয়ে চালাতে সক্ষম হবেন না? কাতাদা (রহঃ) বলেন, নিশ্চয়ই আমার রবের ইজ্জতের কসম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪০০ | 4400 | ٤٤۰۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ আর তারা আল্লাহর সঙ্গে কোন ইলাহ কে ডাকেনা। আল্লাহই যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারন ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করেনা এবং ব্যভিচার করেনা। যে এগুলো করে সে শাস্তি ভোগ করবে’। الثام মানে শাস্তি।
৪৪০০। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম, অথবা অন্য কেউ জিজ্ঞেস করল, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বড় গুনাহ কোনটি? তিনি বললেন, কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যাস্ত করা, অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম এরপর কোনটি? তিনি জবাব দিলেন, তোমার সন্তানকে এ আশংকায় হত্যা করা যে, তারা তোমার খাদ্যে অংশীদার হবে। আমি বললাম, এরপর কোনটি? এরপর হচ্ছে তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া। বর্ণনাকারী বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এ কথার সমর্থনে এ আয়াত নাযিল হয়। “এবং তারা আল্লাহর সাথে কোন ইলাহকে ডাকেনা। আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারন ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করে না”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪০১ | 4401 | ٤٤۰۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ আর তারা আল্লাহর সঙ্গে কোন ইলাহ কে ডাকেনা। আল্লাহই যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারন ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করেনা এবং ব্যভিচার করেনা। যে এগুলো করে সে শাস্তি ভোগ করবে’। الثام মানে শাস্তি।
৪৪০১। ইব্রাহিম ইবনু মূসা (রহঃ) … কাসিম ইবনু আবূ বাযযা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি সাঈদ ইবনু জুবায়ির (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, যদি কেউ কোন মু’মিন ব্যাক্তিকে ইচ্ছাপূর্বক হত্যা করে; তবে কি তার জন্য তওবা আছে? আমি তাঁকে এ আয়াত পাঠ করে শোনালাম ‏وَلاَ يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ “আল্লাহ্ যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করে না।” সাঈদ (রাঃ) বললেন, তুমি যে আয়াত আমার সামনে পাঠ করলে, আমিও এমনিভাবে ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর সামনে এ আয়াত পাঠ করেছিলাম। তখন তিনি বললেন, এ আয়াতটি মক্কী। সূরা নিসার মধ্যের মাদানী আয়াতটি একে রহিত করে দিয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪০২ | 4402 | ٤٤۰۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ আর তারা আল্লাহর সঙ্গে কোন ইলাহ কে ডাকেনা। আল্লাহই যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারন ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করেনা এবং ব্যভিচার করেনা। যে এগুলো করে সে শাস্তি ভোগ করবে’। الثام মানে শাস্তি।
৪৪০২। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … সাঈদ ইবনু জুবায়ির (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বাশশার মু’মিনের হত্যার ব্যাপারে কূফাবাসী মতভেদ করতে লাগল। আমি (এ ব্যাপারে) ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে গেলাম (এবং তাঁকে এ সর্ম্পকে জিজ্ঞেস করলাম)। তখন তিনি বললেন, (মু’মিনের হত্যা সম্পর্কিত) এ আয়াত সর্বশেষে নাযিল হয়েছে। একে অন্য কিছু রহিত করেনি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪০৩ | 4403 | ٤٤۰۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ আর তারা আল্লাহর সঙ্গে কোন ইলাহ কে ডাকেনা। আল্লাহই যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারন ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করেনা এবং ব্যভিচার করেনা। যে এগুলো করে সে শাস্তি ভোগ করবে’। الثام মানে শাস্তি।
৪৪০৩। আদম (রহঃ) … সাঈদ ইবনু জুবায়ির (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ ‏فَجَزَاؤُهُ جَهَنَّمُ (তাদের পরিণাম হচ্ছে জাহান্নাম) সম্পর্কে জিজ্ঞস করলাম। তিনি বললেন, তার জন্য তওবা নেই। এরপরে আমি আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ لاَ يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, এ আয়াত মুশরিকদের ব্যাপারে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪০৪ | 4404 | ٤٤۰٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ “কিয়ামতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সেখানে সে স্থায়ী হবে হীন অবস্থায়।”
৪৪০৪। সা‘দ ইবনু হাফস (রহঃ) … সাঈদ ইবনু জুবায়ির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু আবযা (রাঃ) বলেন, ইবনু আব্বাসকে জিজ্ঞস করা হল, আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ “কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মু‘মিনকে হত্যা করলে তাকে তার শাস্তি জাহান্নাম” এবং আল্লাহর এ বাণীঃ “এবং আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া, তারা তাকে হত্যা করে না” এবং “কিন্তু যারা তওবা করে” পর্যন্ত, সম্পর্কে। আমিও তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম। তখন তিনি জবাবে বললেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হল তখন মক্কাবাসী বলল, আমরা আল্লাহর সঙ্গে শরীক করেছি, আল্লাহ্ তা‘আলা এ আয়াত অবতীর্ণ করলেন, “যারা তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। ”… আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু … পর্যন্ত।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪০৫ | 4405 | ٤٤۰۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ “তারা নহে, যারা তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। আল্লাহ্ তাদের পাপ পরিবর্তন করে দিবেন পুণ্যের দ্বারা। আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”
৪৪০৫। আবদান (রহঃ) … সাঈদ ইবনু জুবায়ির (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুর রহমান ইবনু আবযা (রাঃ) আমাকে নির্দেশ দিলেন যে, আমি যেন ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর কাছে এ দুটি আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। وَمَنْ يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُتَعَمِّدًا‏ আমি তাকে (এ আয়াত সম্পর্কে) জিজ্ঞেস করায় তিনি বললেন, এ আয়াতকে অন্য কিছু রহিত (মানসূখ) করেনি এবং ‏وَالَّذِينَ لاَ يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করলাম, তিনি [আব্বাস (রাঃ)] বললেন, এ আয়াত মুশরিকদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪০৬ | 4406 | ٤٤۰٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ “অচিরেই নেমে আসবে অপরিহার্য ধ্বংস।” لزاما অর্থ ধ্বংস
৪৪০৬। উমর ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পাঁচটি ঘটনা ঘটে গেছে ধূম্রাচ্ছন্ন, চন্দ্র বিদীর্ণ হওয়া, রোমকদের পরাজয়, প্রবলভাবে পাকড়াও এবং ধ্বংসের। لِزَامًا অর্থ ধ্বংস। ‏

হাদিস নম্বরঃ ৪৪০৭ | 4407 | ٤٤۰۷

পরিচ্ছদঃ অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ ‘আমাকে লাঞ্ছিত করো না পুনরুত্থান দিবসে।’ ইব্রাহীম ইব্ন তহমান (র)………. আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, কিয়ামতের দিন ইব্রাহীম (আ) তাঁর পিতাকে ধূলি-ময়লা অবস্থায় দেখতে পাবেন। এর অর্থ ধূলি-ময়লা।
সুরা শু’আরা

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন تَعْبَثُوْنَ তোমরা নির্মাণ করে থাক। هَضِيْمٌ স্পর্শ করা মাত্রই চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। مُسَحَّرِيْنَ জাদুগ্রস্ত। اللَّيْكَةُ ও الأَيْكَةُ أَيْكَةٍ এর বহুবচন যার অর্থ বৃক্ষে পরিপূর্ণ। يَوْمِالظُّلَّةِ যেদিনে শাস্তি তাদের ছেয়ে ফেলবে। مَوْزُوْنٍ জ্ঞাত। كَالطَّوْدِ পর্বতের ন্যায়। অন্যরা বলেন, الَشِرْذِمَةٌ ছোট দল। فِيالسَّاجِدِيْنَ সালাত আদায়কারী। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন لَعَلَّكُمْتَخْلُدُوْنَ যেন তোমরা স্থায়ী থাকবে। الرِّيعُ যমীনের উঁচু অংশ। এর বহুবচন رِيَعَةٌ এবং أَرْيَاعٌ তার একবচন رِيْعَةٌ।مَصَانِعَ প্রত্যেক ইমারতকে مَصْنَعَةٌ বলা হয়। فَرِهِيْنَ অহংকারীরা। مَرِحِيْنَفَارِهِيْنَ একই অর্থের। فَارِهِيْنَ বলা হয় দক্ষদের। تَعْثَوْا ভয়ঙ্কর ফ্যাসাদ। এটি يَا দ্বারাও ব্যবহৃত হয়। যথা عَاثَ يَعِيْثُ عَيْثًا। الْجِبِلَّةَ সৃষ্টি جُبِلَ এর অর্থ-সৃষ্টি করা হয়েছে। جُبُلًا وَجِبِلًا وَجُبْلًا সবগুলোর অর্থ সৃষ্টি।

৪৪০৭। ইসমাঈল (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (হাশরের ময়দানে ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) তাঁর পিতার সাক্ষাত পেয়ে (তাকে এ অবস্থায় দেখে) বলবেন, ইয়া রব! আপনি আমার সাথে ওয়াদা করেছেন যে, কিয়ামতের দিন আমাকে লাঞ্ছিত করবেন না। আল্লাহ্ তা‘আলা বলবেন, আমি কাফেরদের উপর জান্নাত হারাম করে দিয়েছি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪০৮ | 4408 | ٤٤۰۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ “তোমার নিকটের আত্মীয়বর্গকে সতর্ক করে দাও এবং (মু’মিনদের প্রতি) বিনয়ী হও। (اخفض جناحك ) “তোমার পার্শ্ব নম্র রাখ।”
৪৪০৮। উমর ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এ আয়াত وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الأَقْرَبِينَ অবতীর্ণ হল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফা (পর্বতে) আরোহণ করলেন এবং ডাকতে লাগলেন, হে বনী ফিহর! হে বনী আদী! কুরাইশদের বিভিন্ন গোত্রকে। অবশেষে তারা একত্রিত হল। যে নিজে আসতে পারল না, সে তার প্রতিনিধি পাঠাল, যাতে দেখতে পায়, ব্যাপার কী? সেখানে আবূ লাহাব ও কুরাইশগণও আসল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বল তো, আমি যদি তোমাদের বলি যে, শক্রসৈন্য উপত্যকায় এসে পড়েছে, তারা তোমাদের উপর অতর্কিতে আক্রমণ করতে উদ্যত, তোমরা কি আমাকে বিশ্বাস করবে? তারা বলল, হাঁ আমরা আপনাকে সর্বদা সত্য পেয়েছি। তখন তিনি বললেন, “আমি তোমাদের সম্মুখে কঠিন শাস্তির ভয় প্রদর্শন করছি।” আবূ লাহাব (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে) বলল, সারাদিন তোমার উপর ধ্বংস আসুক! এজন্যই কি তুমি আমাদের একত্র করেছ? তখন নাযিল হয়, “ধ্বংস হোক আবূ লাহাবের দু-হস্ত এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও। তার ধন-সস্পদ ও তার উপার্জন তার কোন কাজে আসেনি।”

হাদিস নম্বরঃ ৪৪০৯ | 4409 | ٤٤۰۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ “তোমার নিকটের আত্মীয়বর্গকে সতর্ক করে দাও এবং (মু’মিনদের প্রতি) বিনয়ী হও। (اخفض جناحك ) “তোমার পার্শ্ব নম্র রাখ।”
৪৪০৯। আবূল ইয়ামান (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন ‏وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الأَقْرَبِينَ (তোমার নিকটের আত্মীয়বর্গকে সতর্ক করে দাও) এ আয়াত অবতীর্ণ হল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে কুরাইশ সম্প্রদায়! অথবা অনুরূপ বাক্য, নিজেদের কিনে নাও। আমি আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষার ব্যাপারে তোমাদের কোন উপকারে আসব না। হে বনী আবদ মানাফ! আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষার ব্যাপারে আমি তোমাদের কোন উপকারে আসব না। হে আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব! আমি আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষার ব্যাপারে তোমার কোনই উপকারে আসব না। হে আল্লাহর রাসূল এর ফুফু সুফিয়া! আমি তোমার নাজাতের ব্যাপারে কোনই উপকার করতে পারব না। হে মুহাম্মদ এর কন্যা ফাতিমা! আমার ধন-সম্পদ থেকে যা চাও নিয়ে যাও, কিন্তু আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষার ব্যাপারে আমি তোমার কোনই উপকারে আসব না। আসবাগ (রহঃ) … ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪১০ | 4410 | ٤٤۱۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ “তুমি যাকে ভালবাস ইচ্ছা করলেই তাকে সৎপথে আনতে পারবে না, তবে আল্লাহ্‌ যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনয়ন করেন”
সুরা নম্‌ল

الْخَبْءُ যা তুমি গোপন কর। لَا قِبَلَ لَهُمْ তাদের কোন শক্তি নেই। الصَّرْحُ কাঁচ মিশ্রিত গারা এবং الصَّرْحُ প্রাসাদকেও বলা হয়। এর বহুবচন صُرُوْحٌ। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, وَلَهَا عَرْشٌ তার সিংহাসন অতি সম্মানিত, শিল্প কর্মে উত্তম এবং বহু মূল্যবান। يَأْتُوْنِيْ مُسْلِمِيْنَ অনুগত হয়ে আমার নিকট আসবে। رَدِفَ নিকটবর্তী হয়েছে। جَامِدَةً স্থির। أَوْزِعْنِيْ আমাকে বানিয়ে দাও। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, نَكِّرُوْا পরিবর্তন করে দাও। وَأُوْتِيْنَا (আমাদের জ্ঞান দেয়া হয়েছে) এ কথা সুলাইমান (আঃ) বলেন, الصَّرْحُ পানির একটি হাউয। সুলাইমান (আঃ) সেটি কাঁচ দ্বারা আবৃত করে দিয়েছিলেন।

সুরা কাসাস

বলা হয় إِلَّا وَجْهَه তার রাজত্ব ব্যতীত এবং এ-ও বলা হয়, যে কার্যাবলী দ্বারা আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জন উদ্দেশ্য, তা ব্যতীত (সবই ধ্বংস হবে) মুজাহিদ (রহঃ) বলেন الْأَنْبَاءُ অর্থ প্রমানাদি।

৪৪১০। আবূল ইয়ামান (রহঃ) … মূসাইয়্যাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন আবূ তালিবের মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছিল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে আসলেন। তিনি সেখানে আবূ জাহল এবং আবদুল্লাহ ইবনু আবূ উমাইয়া ইবনু মুগীরাকে উপস্থিত পেলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে চাচা! আপনি বলুন “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু। ” এ ‘কালেমা’ দ্বারা আমি আপনার জন্য (কিয়ামতে) আল্লাহর কাছে (আপনার মুক্তির) দাবি করতে পারব। আবূ জাহল এবং আবদুল্লাহ ইবনু আবূ উমাইয়া বলল, তুমি কি আবদুল মুত্তালিবের ধর্ম ছেড়ে দেবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারবার তার কাছে এ ‘কালেমা’ পেশ করতে লাগলেন। আর তারা সে উক্তি বারবার করতে থাকল। অবশেষে আবূ তালিব তাঁদের সঙ্গে সর্বশেষ এ কথা বললেন, আমি ‘আবদুল মুত্তালিবের ধর্মের উপর আছি, এবং কালেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু” পাঠ করতে অস্বীকার করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর কসম। আমাকে নিষেধ না করা পর্যন্ত আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেই থাকব। তারপর আল্লাহ্ তা‘আলা নাযিল করলেন, নাবী ও মু’মিনদের জন্য এটা শোভনীয় নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। আর আল্লাহ্ তা’আলা আবূ তালিব সম্পর্কে নাযিল করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সম্বোধন করে আল্লাহ্ তা’আলা বললেন, “তুমি যাকে ভালবাস (ইচ্ছা করলেই) তাকে সৎপথে আনতে পারবে না। তবে আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনয়ন করেন।”

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন أُوْلِي الْقُوَّة লোকের একটি দল সে চাবিগুলো বহন করতে সক্ষম ছিল না। لَتَنُوْءُ বহন করা কষ্টসাধ্য ছিল। فَارِغًا মূসা (আঃ)-এর স্মরণ ব্যতীত সব কিছু থেকে খালি ছিল। الْفَرِحِيْنَ দম্ভকারীরা! قُصِّيْهِ তার চিহ্ন অনুসরণ কর। কথার বর্ণনা অর্থেও প্রয়োগ হয়। نَحْنُ نَقُصُّ عَلَيْكَعَنْ جُنُبٍ এখানে جُنُبٍ অর্থ দূর থেকে। عَنْ جَنَابَةٍ، عَنْ اجْتِنَابٍ এর একই অর্থবোধক।يَبْطِشُـــيَبْطُشُ উভয়ই পড়া হয়। يَأْتَمِرُوْنَ পরস্পর পরামর্শ করছে। وَالْعَدَاءُ وَالتَّعَدِّيْ واعدوان (শব্দ তিনটির) অর্থ একই; সীমা অতিক্রম করা। آنَسَ দেখা الْجِذْوَةُ কাঠের মোটা টুকরা যাতে শিখা নেই। الشِّهَابُ যাতে শিখা আছে। الْحَيَّاتُ বহু প্রকার সাপ; যেমন, চিকন জাতি, অজগর, কালনাগ (ইত্যাদি) رِدْءًا সাহায্যকারী। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, يُصَدِّقُنِيْ (তিনি قاف কে পেশ দিয়ে পড়েন। অন্য হতে বর্ণিত سَنَشُدُّ আমরা শীঘ্র তোমাকে সাহায্য করব। যখন তুমি কোন জিনিসকে শক্তিশালী করলে, তখন তুমি যেন তার জন্য বাহুবল প্রদান করলে। যখন আরবগণ কাউকে সাহায্য করেন তখন বলে থাকেন جَعَلْتَ لَهُ عَضُدًا (বাহুবল প্রদান করলে) مَقْبُوْحِيْنَ ধ্বংসপ্রাপ্ত। وَصَّلْنَا আমি বর্ণনা করেছি; আমি তা পূর্ণ করেছি। يُجْبَى আমদানি করা হয়। بَطِرَتْ দম্ভ করল। فِيْ أُمِّهَا رَسُوْلًا মক্কা এবং তার চতুষ্পার্শকে বলা হয়। تُكِنُّ গোপন করছ। আরবগণ বলে থাকেন أَكْنَنْتُ الشَّيْءَ আমি তা গোপন করেছি। كَنَنْتُهُ আমি তা লুকিয়েছি; আমি প্রকাশ করেছি। وَيْكَأَنَّ اللهَ আর أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّ اللهَ সমার্থক (তারা কি দেখেনি?) يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَقْدِر আল্লাহ্ যার জন্য চান খাদ্য প্রসারিত করে দেন, আর যার থেকে চান সংকুচিত করে দেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪১১ | 4411 | ٤٤۱۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ “যিনি তোমার জন্য কুরআনকে করেছেন বিধান।”
৪৪১১। মুহাম্মাদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, لَرَادُّكَ إِلَى مَعَادٍ‏ এর অর্থ মক্কার দিকে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪১২ | 4412 | ٤٤۱۲

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা আন্‌কাবুত

মুজাহিদ বলেছেন, وَكَانُوْا مُسْتَبْصِرِيْنَ অর্থাৎ পথহারা। অন্যরা বলেছেন, الْحَيَوَانُ এবং الْحَيُّ শব্দ দু’টি একই। فَلَيَعْلَمَنَّ اللهُ আল্লাহ্ আগে থেকেই তা জানতেন। এখানে ব্যবহৃত হয়েছে فَلِيَمِيْزَاللهُ (যেন আল্লাহ্ তা‘আলা চিহ্নিত করেন)-এর অর্থে। যেমন, আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ لِيَمِيْزَ اللهُ الْخَبِيْثَ مِنَالطَّيِّبِ أَثْقَالًا مَّعَ أَثْقَالِهِمْ (যেন আল্লাহ্ তা‘আলা খবীছকে ভাল থেকে পৃথক করেন) অর্থাৎ তাদের অপরাধের সাথে।

সুরা রূম

فَلَا يَرْبُوْ অর্থাৎ যে এ আশায় দান করে যে, এর চেয়ে উত্তম বিনিময় পাবে, এতে কোন সওয়াব নেই। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, يُحْبَرُوْنَ তারা নিয়ামত প্রাপ্ত হবে। يَمْهَدُوْنَ তাদের আরাম আয়েশের জায়গা প্রস্ত্তত করবে। الْوَدْقُ বৃষ্টি। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, هَلْ لَّكُمْ مِمَّا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ এ আয়াত ইলাহ সম্পর্কে। تَخَافُوْنَهُمْ তোমরা কি পছন্দ কর যে, তোমাদের দাস-দাসী তোমাদের অংশীদার হোক, যেমন তোমরা পরস্পরের উত্তরাধিকার হও। يَصَّدَّعُوْنَ পৃথক পৃথক হয়ে যাবে। فَاصْدَعْ স্পষ্ট বর্ণনা কর। ইবনু ‘আব্বাস ব্যতীত অন্যে বলেন, ضُعْفٌ এবং ضَعْفٌ উভয়ের অর্থ একই। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, السُّوأَى অপরাধীকে যথাযোগ্য শাস্তি দেয়া।

৪৪১২। মুহাম্মাদ ইবনু কাসীর (রহঃ) … মাসরূক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি কিন্দাবাসীদের সামনে বলছিল, কিয়ামতের দিন ধোঁয়া আসবে এবং মুনাফিকদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করে দেবে। এ কথা শুনে আমরা ভীত হয়ে পড়লাম। এরপর এবং আমি ইবনু মাসউদ (রাঃ)-এর নিকট এলাম। তখন তিনি তাকিয়ায় ঠেস লাগিয়ে বসেছিলেন। (এ সব ঘটনা শুনে তিনি রাগান্বিত হয়ে উঠে বসলেন এবং বললেন, যার জানা আছে সে যেন তা বলে, আর যে না জানে সে যেন বলে, আল্লাহ্ তা’আলাই ভাল জানেন। জ্ঞানের মধ্যে এটাও একটা জ্ঞান যে, যার যে বিষয় জানানেই সে বলবে “আমি এ বিষয়ে জানিনা।”

আল্লাহ্ তা’আলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলেছেন, হে নাবী! আপনি বলুন, “আমি আল্লাহর দ্বীনের দিকে আহবানের জন্য তোমাদের নিকট কোন বিনিময় চাই না এবং যারা মিথ্যা দাবি করে আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নই। কুরাইশগণ ইসলাম গ্রহণে দেরী করতে লাগল, সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য বদদোয়া করেন। “হে আল্লাহ্! আপনি তাদের উপর ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর ন্যায় সাত বছর (দুর্ভিক্ষ) দিয়ে আমাকে সাহায্য করুন।” তারপর তারা এমন ভীষণ দুর্ভিক্ষের মধ্যে পতিত হল যে, তারা তাতে ধ্বংস হয়ে গেল এবং মৃত জন্তু ও তার হাড় খেতে বাধ্য হল। তারা (দুর্ভিক্ষের দরুন) আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানে ধোঁয়ার মত দেখতে পেল। তারপর আবূ সুফিয়ান তাঁর কাছে এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! তুমি আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার ও তাদের প্রতি সদয় ব্যবহার করার জন্য নির্দেশ দিচ্ছ; অথচ তোমার গোত্রের লোকেরা এখন ধ্বংস হয়ে গেল। সুতরাং আমাদের (এ দুর্ভিক্ষ থেকে) বাঁচার জন্য দোয়া কর।

তখন তিনি এ আয়াত পাঠ করলেন فَارْتَقِبْ يَوْمَ تَأْتِي السَّمَاءُ بِدُخَانٍ مُبِينٍ‏}‏ إِلَى قَوْلِهِ ‏{‏عَائِدُونَ‏ “অতএব, তুমি অপেক্ষা কর সেদিনের, যেদিন স্পষ্ট ধূমরাচ্ছন্ন হবে আকাশ।” তোমরা তো তোমাদের পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে। অবশেষে দুর্ভিক্ষের অবসান হল কিন্তু তারা কুফরীর দিকে প্রত্যাবর্তন করলো। তখন আল্লাহ্ তা’আলা এদের উদ্দেশ্যেই নাযিল করলেন, যেদিন আমি তোমাদের প্রবলভাবে পাকড়াও করব। الْبَطْشَةَ এবং لِزَامًا দ্বারা বদরের যুদ্ধ বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ আলিফ, লাম, মীম। রোমকগণ পরাজিত হয়েছে। এবং পরাজয়ের পর শীঘ্রই বিজয়ী হবে। রোমকগণের ঘটনা অতিবাহিত হয়ে গেছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪১৩ | 4413 | ٤٤۱۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ “আল্লাহর সৃষ্টিতে কোনই পরিবর্তন নেই” خلق الله আল্লাহর সৃষ্টি এর অর্থ আল্লাহর দ্বীন। যেমন خلق الأولين অর্থাৎ دين الأولين পূর্ববর্তীদের দ্বীন। الفطرة ইসলাম
৪৪১৩। আবদান (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সকল মানব শিশুই ফিতরাত (ইসলাম) এর ওপর জন্ম গ্রহণ করে। তারপর তার পিতা ও মাতা তাকে ইহুদী, নাসারা অথবা অগ্নি উপাসক বানিয়ে দেয়। যেমন জানোয়ার পূর্ণ বাচ্চার জন্ম দেয়। তোমরা কি তার মধ্যে কোন ত্রুটি পাও? পরে তিনি এ আয়াত পাঠ করলেন। (আল্লাহর প্রকৃতির অনুসরণ কর) যে প্রকৃতি অনুযায়ী তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এ-ই সরল দ্বীন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪১৪ | 4414 | ٤٤۱٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ لا تشرك بالله إن الشرك لظلم عظيم “আল্লাহর কোন শরীক করো না, নিশ্চয়ই শিরক চরম জুলুম”
৪৪১৪। কুতায়বা ইবনু সা’দ (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হল (আল্লাহর বাণী): যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে জুলুম দ্বারা কলুষিত করেনি। এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাদের উপর খুবই কঠিন (ভারী) মনে হল। তখন তাঁরা বললেন, আমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে, তারা তাদের ঈমানকে জুলুম দ্বারা কলুষিত করেনি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ আয়াত দ্বারা এ অর্থ বোঝানো হয়নি। তোমরা লুকমানের বাণী, যা তিনি তাঁর পুত্রকে সম্ভোধন করে বলেছিলেন, إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ শির্ক করা বড় জুলুম, তা কি শোননি?

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌, তারই কাছে রয়েছে কিয়ামতের জ্ঞান (অর্থাৎ কখন ঘটবে)
৪৪১৫। ইসহাক (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের সাথে বসেছিলেন। এক ব্যাক্তি তাঁর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ঈমান কী? তিনি বললেন, “আল্লাহতে ঈমান আনবে এবং তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর নাবী ও রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনবে এবং (কিয়ামতে) আল্লাহর দর্শন লাভ ও পুনরুত্থানের ওপর ঈমান আনবে।” লোকটি জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইসলাম কী? তিনি বললেন, ইসলাম (হল) আল্লাহর ইবাদত করবে ও তার সঙ্গে অন্য কাউকে শরীক সাব্যস্ত করবে না এবং সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করবে, ফরয যাকাত দিবে ও রমযানের সিয়াম পালন করবে। লোকটি জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইহ্সান কী? তিনি বললেন, ইহ্সান হচ্ছে আল্লাহর ইবাদত এমন একাগ্রতার সাথে করবে, যেন তুমি তাঁকে দেখছ। আর যদি তুমি তাঁকে দেখতে না পাও, তবে (মনে করবে) আল্লাহ্ তোমাকে দেখছেন।

লোকটি আরও জিজ্ঞেস করল, ইয়াাল্লাহ! কখন কিয়ামত সংঘটিত হবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ বিষয়ে প্রশ্নকারীর চাইতে যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে, সে বেশি জানে না। তবে আমি তোমার কাছে এর (কিয়ামতের) কতগুলো লক্ষণ বলছি। তা হল, যখন দাসী তার মনিবকে প্রসব করবে, এটা তার (কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার) একটি নিদর্শন। আর যখন দেখবে, নগ্নপদ ও নগ্নদেহ লোকেরা মানুষের নেতা হবে, এও তার একটি লক্ষণ। এটি ঐ পাঁচটি বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত, যা আল্লাহ্ ছাড়া আর কেউ জানেন নাঃ

(১) ‘কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহর নিকটই রয়েছে। (২) তিনই বৃষ্টি বর্ষণ করান, (৩) তাঁরই জ্ঞানে রয়েছে, মাতৃগর্ভে কি আছে। এরপর লোকটি চলে গেল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে আমার নিকট ফিরিয়ে আন। সাহাবাগণ তাঁকে ফিরিয়ে আনতে গেলেন, কিন্তু কিছুই দেখতে পাননি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনি জিবরীল, লোকদের তাদের দ্বীন শিক্ষা দেয়ার জন্য এসেছিলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪১৬ | 4416 | ٤٤۱٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌, তারই কাছে রয়েছে কিয়ামতের জ্ঞান (অর্থাৎ কখন ঘটবে)
৪৪১৬। ইয়াহ্ইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গায়েবের চাবি পাঁচটি। এরপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেনঃ কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহ্ তা’আলারই রয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪১৭ | 4417 | ٤٤۱۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ فلا تعلم نفس ما أخفي لهم “কেউ ই জানে না, তাদের জন্য কি লুকায়িত রয়েছে।”
সুরা সাজ্‌দা

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, مَهِيْنٍ দুর্বল অর্থাৎ পুরুষের বীর্য। ضَلَلْنَا আমরা ধ্বংস হয়েছি। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, الْجُرُزُ ঐ মাটি যেখানে এত অল্প বৃষ্টি হয়, যাতে তা কোন উপকারে আসে না। نَهْدِ তাকে সঠিক পথ বলে দিয়েছি।

৪৪১৭। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন সব সামগ্রী তৈরী করে রেখেছি, যা কোন নয়ন দর্শন করেনি, কোন কর্ণ শ্রবণ করেনি এবং কোন অন্তকরণের চিন্তায় আসেনি। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন, তোমরা চাইলে (প্রমাণ স্বরূপ) এ আয়াত তিলাওয়াত করঃ কেউ জাননা তাদের জন্য নয়ন শীতলকারী কী লুক্কায়িত রাখা হয়েছে।

সুফিয়ান (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, পরবর্তী অংশ পূর্ববর্তী হাদীসের অনুরূপ। আবূ সুফিয়ান (রাঃ) এর কাছে জিজ্ঞেস করা হল, আপনি কি এ হাদিস রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন? তিনি বললেন, তা নয়তো কি? আবূ মু’আবীয়া (রহঃ) আবূ সালিহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ হুরায়রা (রাঃ) قُرَّاتِ “আলিফ” এবং লম্বা ‘তা’ সহ পাঠ করেছিলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪১৮ | 4418 | ٤٤۱۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ فلا تعلم نفس ما أخفي لهم “কেউ ই জানে না, তাদের জন্য কি লুকায়িত রয়েছে।”
৪৪১৮। ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন সব জিনিস তৈরি করে রেখেছি, সঞ্চিতরুপে যা কোন নয়ন দর্শন কনেনি, কোন কর্ণ শ্রবণ করেনি এবং কোন ব্যাক্তির মনেও তার কল্পনা সৃষ্টি হয়নি। আর যা তোমাদের অবহিত করা হয়েছে, তা ছাড়া। তারপর এ আয়াত পাঠ করলেন, কেউ জাননা তাদের জন্য নয়ন শীতলকারী কী লুক্কায়িত রাখা হয়েছে, তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরূপ।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪১৯ | 4419 | ٤٤۱۹

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা আহযাব

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, صَيَاصِيْهِمْ তাদের মহল।

৪৪১৯। ইব্রাহীম ইবনুল মুনযির (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুনিয়া ও আখিরাতে সকল মু’মিনের জন্য আমিই ঘনিষ্ঠতম। তোমরা ইচ্ছা করলে এ আয়াত পাঠ করতে পার। “নাবী মু’মিনদের নিকট তাদের নিজেদের চাইতে বেশি ঘনিষ্ঠ।” সুতরাং কোন মু’মিন কোন মাল-সম্পদ রেখে গেলে তার নিকটআত্মীয় সে যে-ই হোক, হবে তার উত্তরাধিকারী, আর যদি ঋণ অথবা অসহায় সন্তানাদি রেখে যায় সে যেন আমার কাছে আসে, আমি তার অভিভাবক।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪২০ | 4420 | ٤٤۲۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ ادعوهم لآبائهم “তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাক”
৪৪২০। মুয়াল্লা ইবনু আসাদ (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আযাদকৃত গোলাম যায়িদ ইবনু হারিসাকে আমরা “যায়িদ ইবনু মুহাম্মদ-ই” ডাকতাম, যে পর্যন্ত না এ আয়াত নাযিল হয়। “তোমরা তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাক, আল্লাহর দৃষ্টিতে এটই অধিক ন্যায়সংগত।”

হাদিস নম্বরঃ ৪৪২১ | 4421 | ٤٤۲۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ فمنهم من قضى نحبه ومنهم من ينتظر وما بدلوا تبديلا “তাদের কেউ কেউ তার অঙ্গীকার পূরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে তারা তাতে কোন পরিবর্তন করেনি”। نحبه তার অঙ্গীকার أقطارها তার পার্শ্বসমূহ الفتنة لآتوها তারা তা গ্রহন করত
৪৪২১। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা মনে করি, এ আয়াত আনাস ইবনু নাযর সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। “মু’মিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে।”

হাদিস নম্বরঃ ৪৪২২ | 4422 | ٤٤۲۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ فمنهم من قضى نحبه ومنهم من ينتظر وما بدلوا تبديلا “তাদের কেউ কেউ তার অঙ্গীকার পূরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে তারা তাতে কোন পরিবর্তন করেনি”। نحبه তার অঙ্গীকার أقطارها তার পার্শ্বসমূহ الفتنة لآتوها তারা তা গ্রহন করত
৪৪২২। আবূল ইয়ামান (রহঃ) … যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যখন সহীফা থেকে কুরআন লিপিবদ্ধ করছিলাম তখন সূরা আহযাবের একটি আয়াত অবিদ্যমান পেলাম, যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে (অধিক পরিমাণ) তিলওয়াত করতে শুনেছি। (অবশেষে) সেটি খুযায়মা আনসারী ব্যতীত অন্য কারও কাছে পেলাম না; যার সাক্ষী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’জন পুরুষ সাক্ষীর সমান গণ্য করেছেন। (আয়াতটি হল) مِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ

হাদিস নম্বরঃ ৪৪২৩ | 4423 | ٤٤۲۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ قل لأزواجك إن كنتن تردن الحياة الدنيا وزينتها فتعالين أمتعكن وأسرحكن سراحا جميلا “হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের বলুনঃ তোমরা যদি পার্থিব জীবন ও তার ভূষণ কামনা কর তবে আস আমি তোমাদের ভোগ-সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দেই এবং সৌজন্যের সাথে তোমাদের বিদায় দেই।” التبرج আপন সৌন্দর্য প্রকাশ করা। سنة الله যে নীতি আল্লাহ্‌ নির্ধারণ করেছেন।
৪৪২৩। আবূল ইয়ামান (রহঃ) … নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী আয়িশা (রাঃ) বলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে এলেন, যখন আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর সহধর্মিণীগণের ইখতিয়ার দেয়ার ব্যাপারে নির্দেশ দিলেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম আমাকে দিয়ে শুরু করলেন এবং বললেন, আমি তোমার কাছে একটি কথা উল্লেখ করছি। তাড়াহুড়ো না করে তোমার পিতা-মাতার সঙ্গে পরামর্শ করে উত্তর দেবে। তিনি এ কথা ভালভাবেই জানতেন যে, আমার আব্বা-আম্মা তাঁর (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে আমাকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরামর্শ কখনও দিবেন না। আয়িশা (রাঃ) বলেন, (আমাকে এ কথা বলার পর) তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহ্ বলছেন, “হে নাবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের বলুন। তোমরা যদি পার্থিব জীবন ও তার ভূষণ কামনা কর……। তখন আমি তাঁকে বললাম, তাতে আমার আব্বা-আম্মা থেকে পরামর্শ নেবার কী আছে? আমি তো আল্লাহ্, তাঁর রাসূল এবং আখিরাতের জীবনই চাই।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪২৪ | 4424 | ٤٤۲٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ وتخفي في نفسك ما الله مبديه وتخشى الناس والله أحق أن تخشاه তুমি তোমার অন্তরে যা গোপন কর, আল্লাহ্‌ তা প্রকাশ করে দিচ্ছেন। তুমি লোকভয় করছিলে অথচ আল্লাহকেই ভয় করা তোমার পক্ষে অধিকতর সঙ্গত।
অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ আর যদি তোমরা আল্লাহ্‌ তার রাসুল ও আখিরাতের জীবন কামনা কর, তবে তোমাদের মধ্যে যারা সৎকর্মশীল আল্লাহ্‌ তাদের মধ্যে মহা প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন।

কাতাদাহ (রহঃ) বলেন, وَاذْكُرْنَ مَا يُتْلٰى فِيْ بُيُوْتِكُنَّ مِنْ اٰيٰتِ اللهِ وَالْحِكْمَةِ এর মধ্যে اٰيٰتِ দ্বারা সুন্নাত ও হিকমত বোঝানো হয়েছে।

লাইস (রহঃ) … আয়শা (রাঃ) বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর সহধর্মিণীদের ব্যাপারে দু’টি পন্থার একটি পন্থা বেছে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হল, তখন তিনি প্রথমে আমাকে বললেন, তোমাকে একটি বিষয় সম্পর্কে বলব। তাড়াহুড়ো না করে তুমি তোমার আববা ও আম্মার সঙ্গে পরামর্শ করে নিবে। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, তিনি অবশ্যই জানতেন, আমার আববা-আম্মা তাঁর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কথা বলবেন না। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, এরপর তিনি বললেন, আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেনঃ وَإِنْ كُنْتُنَّ تُرِدْنَ اللهَ وَرَسُوْلَه” وَالدَّارَ الْاٰخِرَةَ فَإِنَّ اللهَ أَعَدَّ لِلْمُحْسِنٰتِ مِنْكُنَّ أَجْرًا عَظِيْمًا ‘‘হে নাবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে বলুন, তোমরা যদি পার্থিব জীবন ও তার ভূষণ কামনা কর…..মহা প্রতিদান পর্যন্ত। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, এ ব্যাপারে আমার আববা-আম্মার সঙ্গে পরামর্শের কী আছে? আমি তো আল্লাহ্, তাঁর রাসূল এবং আখিরাতের জীবন কামনা করি। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্যান্য সহধর্মিণী আমার অনুরূপ জবাব দিলেন।

৪৪২৪। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুর রহীম (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এ আয়াতটি, ‏وَتُخْفِي فِي نَفْسِكَ مَا اللَّهُ مُبْدِيهِ‏ “(তুমি তোমার অন্তরে যা গোপন করছ, আল্লাহ্ তা প্রকাশ করে দিচ্ছেন।)” জয়নব বিনতে জাহ্শ এবং যায়িদ ইবনু হারিসা সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪২৫ | 4425 | ٤٤۲۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ ترجئ من تشاء منهن وتؤوي إليك من تشاء ومن ابتغيت ممن عزلت فلا جناح عليك “তুমি তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তোমার কাছ থেকে দূরে রাখতে পার এবং যাকে ইচ্ছা তোমার কাছে স্থান দিতে পার। আর তুমি যাকে দূরে রেখেছ, তাকে কামনা করলে তোমার কোন অপরাধ নেই। ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন ترجئ দূরে রাখতে পার। أرجئه তাকে দূরে সরিয়ে দাও, অবকাশ দাও।
৪৪২৫। যাকারিয়া ইবনু ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যেসব মহিলা নিজকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে হেবাস্বরূপ ন্যাস্ত করে দেন, তাদের আমি ঘৃণা করতাম। আমি (মনে মনে) বলতাম, মহিলারা কি নিজেকে অর্পণ করতে পারে? এরপর যখন আল্লাহ্ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করেনঃ “আপনি তাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা আপনার কাছ থেকে দূরে রাখতে পারেন এবং যাকে ইচ্ছা আপনার নিকট স্থান দিতে পারেন। আর আপনি যাকে দূরে রেখেছেন, তাকে কামনা করলে আপনার কোন অপরাধ নেই।” তখন আমি বললাম, আমি দেখছি যে, আপনার রব আপনি যা ইচ্ছা করেন, তা-ই পূরণ করেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪২৬ | 4426 | ٤٤۲٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ ترجئ من تشاء منهن وتؤوي إليك من تشاء ومن ابتغيت ممن عزلت فلا جناح عليك “তুমি তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তোমার কাছ থেকে দূরে রাখতে পার এবং যাকে ইচ্ছা তোমার কাছে স্থান দিতে পার। আর তুমি যাকে দূরে রেখেছ, তাকে কামনা করলে তোমার কোন অপরাধ নেই। ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন ترجئ দূরে রাখতে পার। أرجئه তাকে দূরে সরিয়ে দাও, অবকাশ দাও।
৪৪২৬। হাব্বান ইবনু মূসা (রহঃ) … মু’আয (রহঃ) সূত্রে … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীদের সঙ্গে অবস্থানের পালার ব্যাপারে আমাদের থেকে অনুমতি চাইতেন এ আয়াত নাযিল হওয়ার পরও, “আপনি তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা আপনার নিকট হতে দূরে রাখতে পারেন এবং যাকে ইচ্ছা আপনার নিকট স্থান দিতে পারেন এবং আপনি যাকে দূরে রেখেছেন তাকে কামনা করলে আপনার কোন অপরাধ নেই।” এ আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার পর মু’আয বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞস করলাম, আপনি এর উত্তরে কি বলতেন? তিনি বলতেন, আমি তাঁকে বলতাম, এ বিষয়ের অধিকার যদি আমার থেকে থাকে তাহলে আমি ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার ব্যাপারে কাউকে অগ্রাধিকার দিতে চাই না। আব্বাদ বিন আব্বাদ ‘আসম থেকে অনুরূপ শুনেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪২৭ | 4427 | ٤٤۲۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ لا تدخلوا … عند الله عظيما হে মু’মিনগণ! তোমরা খাওয়ার জন্য খাবার প্রস্তুতির অপেক্ষা না করে নাবীর ঘরে তোমাদেরকে অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত প্রবেশ করবে না; তবে তোমাদেরকে ডাকা হলে তোমরা প্রবেশ করবে এবং খাওয়া শেষ হলে নিজেরাই চলে যাবে, কথাবার্তায় মাশগুল হয়ে পড়বে না। তোমাদের এ আচরণ অবশ্যই নাবীকে পীড়া দেয়। তিনি তোমাদেরকে উঠিয়ে দিতে সংকোচ বোধ করেন। কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সংকোচবোধ করেন না। তোমরা যখন তাঁর পত্নীদের নিকট হতে কোন কিছু চাইবে, তখন পর্দার অন্তরাল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র উপায়। আল্লাহর রসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পত্নীদেরকে বিবাহ করা তোমাদের কারও পক্ষে কখনও বৈধ নয়। এটা আল্লাহর কাছে সাংঘাতিক অপরাধ। বলা হয় إِنَاهُ খাদ্য পরিপাক হওয়া। এটা أَنَى يَأْنِيْ أَنَاةًথেকে গঠিত। لَعَلَّ السَّاعَةَ تَكُوْنُ قَرِيْبًا সম্ভবত ক্বিয়ামাত অতি নিকটবর্তী। যদি তুমি স্ত্রী লিঙ্গ হিসেবে ব্যবহার কর, তবে قَرِيْبَةً বলবে। আর যদি الصِّفَةَ না ধর ظَرْفًا বা بَدَلًا হিসেবে ব্যবহার কর তবে ‘তা’ নিয়ে যুক্ত করবে না। তেমনি এ শব্দটি একবচন, দ্বি-বচন, বহুবচন এবং নারী-পুরুষ সকল ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়।
৪৪২৭। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার কাছে ভাল ও মন্দ লোক আসে। আপনি যদি উম্মাহাতুল মু’মিনীনদের ব্যাপারে পর্দার আদেশ দিতেন (তবে ভাল হত) তারপর আল্লাহ্ তা’আলা পর্দার আয়াত নাযিল করেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪২৮ | 4428 | ٤٤۲۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ لا تدخلوا … عند الله عظيما হে মু’মিনগণ! তোমরা খাওয়ার জন্য খাবার প্রস্তুতির অপেক্ষা না করে নাবীর ঘরে তোমাদেরকে অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত প্রবেশ করবে না; তবে তোমাদেরকে ডাকা হলে তোমরা প্রবেশ করবে এবং খাওয়া শেষ হলে নিজেরাই চলে যাবে, কথাবার্তায় মাশগুল হয়ে পড়বে না। তোমাদের এ আচরণ অবশ্যই নাবীকে পীড়া দেয়। তিনি তোমাদেরকে উঠিয়ে দিতে সংকোচ বোধ করেন। কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সংকোচবোধ করেন না। তোমরা যখন তাঁর পত্নীদের নিকট হতে কোন কিছু চাইবে, তখন পর্দার অন্তরাল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র উপায়। আল্লাহর রসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পত্নীদেরকে বিবাহ করা তোমাদের কারও পক্ষে কখনও বৈধ নয়। এটা আল্লাহর কাছে সাংঘাতিক অপরাধ। বলা হয় إِنَاهُ খাদ্য পরিপাক হওয়া। এটা أَنَى يَأْنِيْ أَنَاةًথেকে গঠিত। لَعَلَّ السَّاعَةَ تَكُوْنُ قَرِيْبًا সম্ভবত ক্বিয়ামাত অতি নিকটবর্তী। যদি তুমি স্ত্রী লিঙ্গ হিসেবে ব্যবহার কর, তবে قَرِيْبَةً বলবে। আর যদি الصِّفَةَ না ধর ظَرْفًا বা بَدَلًا হিসেবে ব্যবহার কর তবে ‘তা’ নিয়ে যুক্ত করবে না। তেমনি এ শব্দটি একবচন, দ্বি-বচন, বহুবচন এবং নারী-পুরুষ সকল ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়।
৪৪২৮। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ রকাশী (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জয়নাব বিনত জাহশকে যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিয়ে করেন, তখন তিনি লোকদের দাওয়াত দিলেন। লোকেরা আহারের পর বসে কথাবার্তা বলতে লাগল। তিনি উঠে যেতে উদ্যত হচ্ছিলেন, কিন্তু লোকেরা উঠছিল না। এ অবস্থা দেখে তিনি উঠে দাঁড়ালেন। তিনি উঠে যাওয়ার পর যারা উঠবার তারা উঠে গেল। কিন্তু তিন ব্যাক্তি বসেই রইল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশের জন্য ফিরে এসে দেখেন, তারা তখনও বসে রয়েছে (তাই তিনি চলে গেলেন)। এরপর তারাও উঠে গেল। আমি গিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাদের চলে যাওয়ার সংবাদ দিলাম। তারপর তিনি এসে প্রবেশ করলেন। এরপরও আমি প্রবেশ করতে চাইলে তিনি আমার ও তার মাঝে পর্দা ঝুলিয়ে দিলেন। তখন আল্লাহ্ তা’আলা নাযিল করেনঃ ‏يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَدْخُلُوا بُيُوتَ النَّبِيِّ‏}‏ الآيَةَ “হে মু’মিনগণ! তোমরা নাবীর গৃহে প্রবেশ করো না …… শেষ পর্যন্ত।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪২৯ | 4429 | ٤٤۲۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ لا تدخلوا … عند الله عظيما হে মু’মিনগণ! তোমরা খাওয়ার জন্য খাবার প্রস্তুতির অপেক্ষা না করে নাবীর ঘরে তোমাদেরকে অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত প্রবেশ করবে না; তবে তোমাদেরকে ডাকা হলে তোমরা প্রবেশ করবে এবং খাওয়া শেষ হলে নিজেরাই চলে যাবে, কথাবার্তায় মাশগুল হয়ে পড়বে না। তোমাদের এ আচরণ অবশ্যই নাবীকে পীড়া দেয়। তিনি তোমাদেরকে উঠিয়ে দিতে সংকোচ বোধ করেন। কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সংকোচবোধ করেন না। তোমরা যখন তাঁর পত্নীদের নিকট হতে কোন কিছু চাইবে, তখন পর্দার অন্তরাল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র উপায়। আল্লাহর রসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পত্নীদেরকে বিবাহ করা তোমাদের কারও পক্ষে কখনও বৈধ নয়। এটা আল্লাহর কাছে সাংঘাতিক অপরাধ। বলা হয় إِنَاهُ খাদ্য পরিপাক হওয়া। এটা أَنَى يَأْنِيْ أَنَاةًথেকে গঠিত। لَعَلَّ السَّاعَةَ تَكُوْنُ قَرِيْبًا সম্ভবত ক্বিয়ামাত অতি নিকটবর্তী। যদি তুমি স্ত্রী লিঙ্গ হিসেবে ব্যবহার কর, তবে قَرِيْبَةً বলবে। আর যদি الصِّفَةَ না ধর ظَرْفًا বা بَدَلًا হিসেবে ব্যবহার কর তবে ‘তা’ নিয়ে যুক্ত করবে না। তেমনি এ শব্দটি একবচন, দ্বি-বচন, বহুবচন এবং নারী-পুরুষ সকল ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়।
৪৪২৯। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি পর্দার আয়াত সম্পর্কে লোকদের চেয়ে বেশি জানি। যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট যয়নাবকে বাসর যাপনের জন্য পাঠানো হয় এবং তিনি তাঁর ঘরে তাঁর সঙ্গে অবস্থান করেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাবার তৈরি করে লোকদের দাওয়াত দিলেন। তারা (খাওয়ার পর) বসে কথাবার্তা বলতে লাগল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইরে গিয়ে আবার ঘরে ফিরে এলেন, তখনও তারা বসে আলাপ-আলোচনা করছিল। তখন আল্লাহ্ তা’আলা নাযিল করেন। “হে মু’মিনগণ, তোমাদের অনুমতি দেয়া না হলে তোমরা আহার্য প্রস্তুতির জন্য অপেক্ষা না করে আহারের জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গৃহে প্রবেশ করবে না।” …… পর্দার আড়াল থেকে’ পর্যন্ত। এরপর পর্দার বিধান কার্যকর হল এবং লোকেরা চলে গেল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৩০ | 4430 | ٤٤۳۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ لا تدخلوا … عند الله عظيما হে মু’মিনগণ! তোমরা খাওয়ার জন্য খাবার প্রস্তুতির অপেক্ষা না করে নাবীর ঘরে তোমাদেরকে অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত প্রবেশ করবে না; তবে তোমাদেরকে ডাকা হলে তোমরা প্রবেশ করবে এবং খাওয়া শেষ হলে নিজেরাই চলে যাবে, কথাবার্তায় মাশগুল হয়ে পড়বে না। তোমাদের এ আচরণ অবশ্যই নাবীকে পীড়া দেয়। তিনি তোমাদেরকে উঠিয়ে দিতে সংকোচ বোধ করেন। কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সংকোচবোধ করেন না। তোমরা যখন তাঁর পত্নীদের নিকট হতে কোন কিছু চাইবে, তখন পর্দার অন্তরাল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র উপায়। আল্লাহর রসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পত্নীদেরকে বিবাহ করা তোমাদের কারও পক্ষে কখনও বৈধ নয়। এটা আল্লাহর কাছে সাংঘাতিক অপরাধ। বলা হয় إِنَاهُ খাদ্য পরিপাক হওয়া। এটা أَنَى يَأْنِيْ أَنَاةًথেকে গঠিত। لَعَلَّ السَّاعَةَ تَكُوْنُ قَرِيْبًا সম্ভবত ক্বিয়ামাত অতি নিকটবর্তী। যদি তুমি স্ত্রী লিঙ্গ হিসেবে ব্যবহার কর, তবে قَرِيْبَةً বলবে। আর যদি الصِّفَةَ না ধর ظَرْفًا বা بَدَلًا হিসেবে ব্যবহার কর তবে ‘তা’ নিয়ে যুক্ত করবে না। তেমনি এ শব্দটি একবচন, দ্বি-বচন, বহুবচন এবং নারী-পুরুষ সকল ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়।
৪৪৩০। আবূ মা’আমার (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জয়নাব বিনত জাহশের বাসর যাপন উপলক্ষে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু রুটি-গোশতের ব্যবস্থা করলেন। তারপর খানা খাওয়াবার জন্য আমাদের লোকদের ডেকে আনতে পাঠালেন। একদল লোক এসে খেয়ে বের হয়ে গেল। তারপর আর একদল এসে খেয়ে বের হয়ে গেল। এরপর আবার আমি ডাকতে গেলাম; কিন্তু কাউকে আর ডেকে পেলাম না। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আর কাউকে ডেকে পাচ্ছি না। তিনি বললেন, খানা উঠিয়ে নাও। তখন তিন ব্যাক্তি ঘরে রয়ে গেল, তারা কথাবার্তা বলছিল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে আয়িশা (রাঃ) এর হুজরার দিকে গেলেন এবং বললেন, আসসালামু আলায়কুম ইয়া আহলাল বায়ত ওয়া রহমাতুল্লাহ্! আয়িশা (রাঃ) বললেন, ওয়া আলায়কা ওয়া রাহমাতুল্লাহ্। আল্লাহ্ আপনাকে বরকত দিন, আপনার স্ত্রীকে কেমন পেলেন? এভাবে তিনি পর্যায়ক্রমে সব স্ত্রীর হুজরায় গেলেন এবং আয়িশাকে যেমন বলেছিলেন তাদেরও অনুরূপ বললেন। আর তাঁরা তাঁকে সে জবাবই দিয়েছিলেন, যেমন আয়িশা (রাঃ) দিয়েছিলেন। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে এসে সে তিন ব্যাক্তিকেই ঘরে আলাপরত দেখতে পেলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব লাজুক ছিলেন। (তাই তাদের দেখে লজ্জা পেয়ে) আবার আয়িশা (রাঃ) এর হুজরার দিকে গেলেন। তখন, আমি স্মরণ করতে পারছি না, অন্য কেউ না আমি তাকে লোকদের বের হয়ে যাওয়ার খবর দিলাম। তিনি ফিরে এসে দরজার চৌকাঠের ভিতরে এক পা ও বাইরে এক পা রেখে আমার ও তাঁর মধ্যে পর্দা ঝুলিয়ে দিলেন এবং আল্লাহ্ তা’আলা পর্দার আয়াত নাযিল করেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৩১ | 4431 | ٤٤۳۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ لا تدخلوا … عند الله عظيما হে মু’মিনগণ! তোমরা খাওয়ার জন্য খাবার প্রস্তুতির অপেক্ষা না করে নাবীর ঘরে তোমাদেরকে অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত প্রবেশ করবে না; তবে তোমাদেরকে ডাকা হলে তোমরা প্রবেশ করবে এবং খাওয়া শেষ হলে নিজেরাই চলে যাবে, কথাবার্তায় মাশগুল হয়ে পড়বে না। তোমাদের এ আচরণ অবশ্যই নাবীকে পীড়া দেয়। তিনি তোমাদেরকে উঠিয়ে দিতে সংকোচ বোধ করেন। কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সংকোচবোধ করেন না। তোমরা যখন তাঁর পত্নীদের নিকট হতে কোন কিছু চাইবে, তখন পর্দার অন্তরাল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র উপায়। আল্লাহর রসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পত্নীদেরকে বিবাহ করা তোমাদের কারও পক্ষে কখনও বৈধ নয়। এটা আল্লাহর কাছে সাংঘাতিক অপরাধ। বলা হয় إِنَاهُ খাদ্য পরিপাক হওয়া। এটা أَنَى يَأْنِيْ أَنَاةًথেকে গঠিত। لَعَلَّ السَّاعَةَ تَكُوْنُ قَرِيْبًا সম্ভবত ক্বিয়ামাত অতি নিকটবর্তী। যদি তুমি স্ত্রী লিঙ্গ হিসেবে ব্যবহার কর, তবে قَرِيْبَةً বলবে। আর যদি الصِّفَةَ না ধর ظَرْفًا বা بَدَلًا হিসেবে ব্যবহার কর তবে ‘তা’ নিয়ে যুক্ত করবে না। তেমনি এ শব্দটি একবচন, দ্বি-বচন, বহুবচন এবং নারী-পুরুষ সকল ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়।
৪৪৩১। ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) … আনাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, জয়নাব বিন্ত জাহশের সাথে বাসর উদ্যাপনের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়ালীমা করলেন। লোকদের তিনি গোশত-রুটি তৃপ্তি সহকারে খাওয়ালেন। তারপর তিনি উম্মুল মু’মিনীনদের কক্ষে যাওয়ার জন্য বের হলেন। যেমন বাসর রাত্রির ভোরে তার অভ্যাস ছিল যে, তিনি তাঁদের সালাম দিতেন ও তাঁদের জন্য দোয়া করতেন এবং তাঁরাও তাঁকে সালাম বলতেন, তাঁর জন্য দোয়া করতেন। তারপর ঘরে ফিরে এসে দু’ব্যাক্তিকে আলাপরত দেখতে পেলেন। তাদের দেখে তিনি ঘর থেকে ফিরে গেলেন। সে দু’জন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ঘর থেকে ফিরে যেতে দেখে দ্রুত বের হয়ে গেল। এরপরে, আমার স্মরণ নেই যে আমি তাঁকে তাদের বের হয়ে যাওয়ার সংবাদ দিলাম, না অন্য কেউ দিল। তখন তিনি ফিরে এসে ঘরে প্রবেশ করলেন এবং আমার ও তাঁর মধ্যে পর্দা লটকিয়ে দিলেন এবং পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৩২ | 4432 | ٤٤۳۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ لا تدخلوا … عند الله عظيما হে মু’মিনগণ! তোমরা খাওয়ার জন্য খাবার প্রস্তুতির অপেক্ষা না করে নাবীর ঘরে তোমাদেরকে অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত প্রবেশ করবে না; তবে তোমাদেরকে ডাকা হলে তোমরা প্রবেশ করবে এবং খাওয়া শেষ হলে নিজেরাই চলে যাবে, কথাবার্তায় মাশগুল হয়ে পড়বে না। তোমাদের এ আচরণ অবশ্যই নাবীকে পীড়া দেয়। তিনি তোমাদেরকে উঠিয়ে দিতে সংকোচ বোধ করেন। কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সংকোচবোধ করেন না। তোমরা যখন তাঁর পত্নীদের নিকট হতে কোন কিছু চাইবে, তখন পর্দার অন্তরাল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র উপায়। আল্লাহর রসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পত্নীদেরকে বিবাহ করা তোমাদের কারও পক্ষে কখনও বৈধ নয়। এটা আল্লাহর কাছে সাংঘাতিক অপরাধ। বলা হয় إِنَاهُ খাদ্য পরিপাক হওয়া। এটা أَنَى يَأْنِيْ أَنَاةًথেকে গঠিত। لَعَلَّ السَّاعَةَ تَكُوْنُ قَرِيْبًا সম্ভবত ক্বিয়ামাত অতি নিকটবর্তী। যদি তুমি স্ত্রী লিঙ্গ হিসেবে ব্যবহার কর, তবে قَرِيْبَةً বলবে। আর যদি الصِّفَةَ না ধর ظَرْفًا বা بَدَلًا হিসেবে ব্যবহার কর তবে ‘তা’ নিয়ে যুক্ত করবে না। তেমনি এ শব্দটি একবচন, দ্বি-বচন, বহুবচন এবং নারী-পুরুষ সকল ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়।
৪৪৩২। যাকারিয়া ইবনু ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পর সাওদা প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বাইরে যান। সাওদা এমন মোটা শরীরের অধিকারিণী ছিলেন যে, পরিচিত লোকদের থেকে তিনি নিজকে গোপন রাখতে পারতেন না। উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) তাঁকে দেখে বললেন, হে সাওদা! জেনে রাখ, আল্লাহর কসম, আমাদের দৃষ্টি থেকে গোপন থাকতে পারবে না। এখন দেখ তো, কেমন করে বাইরে যাবে? আয়িশা (রাঃ) বলেন, (এ কথা শুনে) সাওদা (রাঃ) ফিরে আসলেন। আর এ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে রাতের খানা খাচ্ছিলেন। তাঁর হাতে ছিল টুকরা হাড়। সাওদা (রাঃ) ঘরে প্রবেশ করে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বাইরে গিয়েছিলাম। তখন উমর (রাঃ) আমাকে এমন এমন কথা বলেছে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, এ সময় আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর নিকট ওহী নাযিল করেন। ওহী অবতীর্ণ হওয়া শেষ হল, হাড় টুকরা তখনও তাঁর হাতেই ছিল, তিনি তা রাখেননি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অবশ্যই প্রয়োজনে তোমাদের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৩৩ | 4433 | ٤٤۳۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ তোমরা কোন বিষয় প্রকাশ কর অথবা গোপন রাখ, আল্লাহ্‌ সকল বিষয়ে জ্ঞাত। নবী (সাঃ) এর পত্নীদের জন্য কোন গুনাহ নেই, তাদের পিতা, পুত্র, ভাই ভাতিজা, ভাগিনা, সাধারণ মহিলা এবং দাসীদের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহ্‌কে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ সবকিছু দেখেন।
৪৪৩৩। আবূল ইয়ামান (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর, আবূল কু’আয়স এর ভাই-আফলাহ আমার কাছে প্রবেশ করার অনুমতি চায়। আমি বললাম, এ ব্যাপারে যতক্ষণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুমতি না দিবেন, ততক্ষণ আমি অনুমতি দিতে পারি না। কেননা তার ভাই আবূ কুআয়স সে নিজে আমাকে দুধ পান করান নি। কিন্তু আবূল কু’আয়াসের স্ত্রী আমাকে দুধ পান করিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আসলেন। আমি তাঁকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আবূল কু’আয়াসের ভাই-আফলাহ্ আমার সাথে দেখা করার অনুমতি চাইছিল। আমি এ বলে অস্বীকার করেছি যে, যতক্ষণ আপনি এ ব্যাপারে অনুমতি না দেবেন, ততক্ষণ আমি অনুমতি দেব না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার চাচাকে (তোমার সাথে দেখা করার) অনুমতি দিতে কিসে বাধা দিয়েছে? আমি বললাম, সে ব্যাক্তি তো আমাকে দুধ পান করাননি; কিন্তু আবূল কু’আয়াসের স্ত্রী আমাকে দুধ পান করিয়েছে। এরপর তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার হাত ধুলি ধূসরিত হোক, তাকে অনুমতি দাও, কেননা, সে তোমার চাচা। উরওয়া বলেন, এ কারণে আয়িশা (রাঃ) বলতেন বংশের দিক দিয়ে যা হারাম মনে কর, দুধ পানের কারণেও তা হারাম জান।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৩৪ | 4434 | ٤٤۳٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ এবং তার ফেরেশতারা নবীর প্রতি দুরুদ পাঠ করেন। হে মুমিনগণ (তোমরাও) তার প্রতি দুরুদ ও সালাম পাঠ কর। আবুল ‘আলীয়া (রহ.) বলেন, আল্লাহর সালাতের অর্থ নাবীর প্রতি ফেরেশতাদের সামনে আল্লাহর প্রশংসা। ফেরেশতার সালাতের অর্থ- দু‘আ। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, يُصَلُّوْنَ -এর অর্থ-বারকাতের দু‘আ করছেন। لَنُغْرِيَنَّكَ আমি তোমাকে বিজয়ী করব।
৪৪৩৪। সাঈদ ইবনু ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) … কা’ব ইবনু উজরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বলা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার উপর সালাম (প্রেরণ করা) আমরা জানতে পেরেছি; কিন্তু সালাত (নামায/নামাজ) কি ভাবে? তিনি বললেন, তোমরা বলবে, “হে আল্লাহ্! তুমি মুহাম্মদ এবং মুহাম্মদের পরিজনের উপর রহমত অবতীর্ণ কর, যেমনিভাবে ইব্রাহীম এর পরিজনের উপর তুমি রহমত অবতীর্ণ করেছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত, মর্যাদাবান। হে আল্লাহ্! তুমি মুহাম্মদ এর উপর এবং মুহাম্মদ এর পরিজনের প্রতি বরকত অবতীর্ণ কর। যেমনিভাবে তুমি বরকত অবতীর্ণ করেছ ইব্রাহীমের পরিজনের প্রতি। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত, মর্যাদাবান।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৩৫ | 4435 | ٤٤۳۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ এবং তার ফেরেশতারা নবীর প্রতি দুরুদ পাঠ করেন। হে মুমিনগণ (তোমরাও) তার প্রতি দুরুদ ও সালাম পাঠ কর। আবুল ‘আলীয়া (রহ.) বলেন, আল্লাহর সালাতের অর্থ নাবীর প্রতি ফেরেশতাদের সামনে আল্লাহর প্রশংসা। ফেরেশতার সালাতের অর্থ- দু‘আ। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, يُصَلُّوْنَ -এর অর্থ-বারকাতের দু‘আ করছেন। لَنُغْرِيَنَّكَ আমি তোমাকে বিজয়ী করব।
৪৪৩৫। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ তো হল সালাম পাঠ; কিন্তু কেমন করে আমরা আপনার প্রতি দরূদ পাঠ করব? তিনি বললেন, তোমরা বলবে, “হে আল্লাহ্! আপনার বান্দা ও আপনার রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহাম্মাদ এর প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, যেভাবে রহমত অবতীর্ণ করেছেন ইব্রাহীমের পরিজনের প্রতি এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ও মুহাম্মাদের পরিজনের প্রতি বরকত অবতীর্ণ করুন, যেভাবে বরকত অবতীর্ণ করেছেন ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর প্রতি।

তবে বর্ণনাকারী আবূ সালিহ লায়েস থেকে বর্ণনা করেছেন মুহাম্মাদ ও তার পরিজনের প্রতি বরকত অবতীর্ণ করুন যেমন আপনি বরকত অবতীর্ণ করেছেন ইব্রাহীমের পরিজনের প্রতি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৩৬ | 4436 | ٤٤۳٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ এবং তার ফেরেশতারা নবীর প্রতি দুরুদ পাঠ করেন। হে মুমিনগণ (তোমরাও) তার প্রতি দুরুদ ও সালাম পাঠ কর। আবুল ‘আলীয়া (রহ.) বলেন, আল্লাহর সালাতের অর্থ নাবীর প্রতি ফেরেশতাদের সামনে আল্লাহর প্রশংসা। ফেরেশতার সালাতের অর্থ- দু‘আ। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, يُصَلُّوْنَ -এর অর্থ-বারকাতের দু‘আ করছেন। لَنُغْرِيَنَّكَ আমি তোমাকে বিজয়ী করব।
৪৪৩৬। ইব্রাহীম ইবনু হামযা (রহঃ) … ইয়াযীদ থেকে বর্ণিত। তিনি (এমনিভাবে) বলেন, যেমনভাবে ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) এর উপর রহমত নাযিল করেছেন। আর বরকত নাযিল করুন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি এবং মুহাম্মদের পরিজনের প্রতি, যেভাবে বরকত অবতীর্ণ করেছেন ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) এর প্রতি এবং ইব্রাহীমের পরিবারের প্রতি।

আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা মূসা (আলাইহিস সালাম) কে কষ্ট দিয়েছে। ইসহাক ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মূসা (আলাইহিস সালাম) ছিলেন বড় লজ্জাশীল ব্যাক্তি। আর এ প্রেক্ষিতে আল্লাহর এ বাণী, হে মু’মিনগণ! তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা মূসা (আলাইহিস সালাম) কে কষ্ট দিয়েছে। তারপর আল্লাহ্ তা’আলা তাঁকে ওদের অভিযোগ থেকে পবিত্র করেছেন। আর তিনি ছিলেন আল্লাহর কাছে অতি সম্মানিত।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৩৭ | 4437 | ٤٤۳۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ ‘এমনকি যখন তাদের মন থেকে আতংক দূরীভূত হয়, তখন তারা বলে তোমাদের প্রতিপালক কি বলেছেন? তারা বলবে সত্যই। আর তিনি উচ্চ ও মহান।
সুরা সাবা

مُعَاجِزِيْنَ প্রতিযোগিতাকারী بِمُعْجِزِيْنَ ব্যর্থকারী। مُعَاجِزِيْنَ বিজয়ী হওয়ার প্রয়াসী। سَبَقُوْا ছুটে গিয়েছে, পরিত্রাণ পেয়েছে। لَايُعْجِزُوْنَ তারা ছুটে যেতে পারবে না, ছাড়া পাবে না। يَسْبِقُوْنَا আমাদের অক্ষম করবে। بِمُعْجِزِيْنَ ব্যর্থকারী। مُعَاجِزِيْنَ পরস্পর বিজয়ী হওয়ার প্রত্যাশী। প্রত্যেকেই তার প্রতিপক্ষের অক্ষমতা প্রকাশ করতে চায়। مِعْشَارٌ এক-দশমাংশ। الْأُكُلُ ফল, بَاعِدْ – بَعِّدْ একই অর্থ, দূরত্ব করে দাও। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, لَايَعْزُبُ অদৃশ্য হয় না। الْعَرِمِ বাঁধ, আল্লাহ্ তা‘আলা সে বাঁধের মধ্য দিয়ে লাল পানি প্রবাহিত করে তা ফাটিয়ে ধ্বংস করে দেন এবং একটি উপত্যকা খুদে ফেলেন। ফলে তার দু’পার্শ্ব উঁচু হয়ে তা থেকে পানি সরে পড়ে এবং উভয় পার্শ্ব শুকিয়ে যায়। এ লাল পানি বাঁধ থেকে আসেনি, বরং তা ছিল তাদের প্রতি আল্লাহর প্রেরিত আযাব, যা তিনি যেখান থেকে ইচ্ছে পাঠিয়েছিলেন।

‘আমর ইবনু শুরাহবীল (রহ.) বলেন, الْعَرِمُ ইয়ামানবাসীদের ভাষায় কুঁজের মত উঁচু। অন্য হতে বর্ণিত। الْعَرِمُ উপত্যকা, السَّابِغَاتُ বর্মসমূহ। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, يُجَازَى শাস্তি দেয়া হবে। أَعِظُكُمْ بِوَاحِدَةٍ আল্লাহর আনুগত্য। مَثْنَىوَفُرَادَى একা একা এবং দু’ দু’জন। التَّنَاوُشُ পরজগত থেকে দুনিয়ার দিকে ফিরে আসা। وَبَيْنَ مَا يَشْتَهُوْنَ অর্থাৎ সম্পদ, সন্ততি বা জাঁক-জমক। بِأَشْيَاعِهِمْ তাদের মত। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, كَالْجَوْبَةِ যমীনে হাউজ সদৃশ। الْخَمْطُ বিস্বাদ বৃক্ষ। الْأَثَلُ ঝাউ গাছ। الْعَرِمُ কঠিন।

৪৪৩৭। আল হুমায়দী (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ্ তা’আলা যখন আকাশে কোন ফয়সালা করেন তখন ফেরেশতারা আল্লাহর নির্দেশের প্রতি অতি বিনীতভাবে তাদের পাখা ঝাড়তে থাকে; যেন মসৃণ পাথরের উপর শিকলের আওয়াজ। “যখন তাদের মনের আতংক বিদূরিত হয় তারা (একে অপরকে) জিজ্ঞেস করে, তোমাদের প্রতিপালক কি বলেছেন? তারা (উত্তরে) বলেন, তিনি যা বলেছেন, সত্যই বলেছেন। তিনি মহান উচ্চ। যে সময়ে লুকোচুরিকারী (শয়তান) তা শোনে, আর লুকোচুরিকারী এরূপ একের ওপর এক। সুফিয়ান তাঁর হাত উপরে উঠিয়ে আঙ্গুলগুলো ফাঁক করে দেখান। তারপর শয়তান কথাগুলো শুনে নেয় এবং প্রথমজন তার নিচের জনকে এবং সে তার নিচের জনকে পৌঁছিয়ে দেয়। এমনিভাবে এ সংবাদ দুনিয়ার জাদুকর ও জ্যোতিষের মুখে পৌছে দেয়। কোন কোন সময় কথা পৌঁছানোর পূর্বে তার উপর অগ্নিশিখা নিক্ষিপ্ত হয় আবার অগ্নিশিখা নিক্ষিপ্ত হওয়ার পূর্বে সে কথা পৌঁছিয়ে দেয় এবং এর সাথে শত মিথ্যা মিশিয়ে বলে। এরপর লোকেরা বলাবলি করে। সে কি অমুক দিন অমুক অমুক কথা আমাদের বলেনি? এবং সেই কথা যা আসমান থেকে শুনে এসেছে তার জন্য সব কথা সত্য বলে মনে করে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৩৮ | 4438 | ٤٤۳۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ “সে তো আমাদের সম্মুখে এক আসন্ন কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ককারী মাত্র।”
৪৪৩৮। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সাফা (পাহাড়ে) আরোহণ করে ‘ইয়া সাবাহাহ, বলে সকলকে ডাক দিলেন। কুরাইশগণ তাঁর কাছে সমবেত হয়ে বলল, তোমার ব্যাপার কী? তিনি বললেন, তোমরা বল তো, আমি যদি তোমাদের বলি যে, শত্রুবাহিনী সকাল বা সন্ধ্যায় তোমাদের উপর আক্রমণ করতে উদ্যত; তবে কি তোমরা আমার এ কথা বিশ্বাস করবে? তারা বলল, অবশ্যই। তিনি বললেন, আমি তো তোমাদের জন্য এক আসন্ন কঠিন শাস্তির ভয় প্রদর্শনকারী। একথা শুনে আবূ লাহাব বলল, তোমার ধ্বংস হোক। এই জন্যই কি আমাদেরকে সমবেত করেছিলে? তখন আল্লাহ্ অবতীর্ণ করেনঃ ‏تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ “আবূ লাহাবের দুহাত ধ্বংস হোক।”

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৩৯ | 4439 | ٤٤۳۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহর বাণীঃ والشمس تجري لمستقر لها ذلك تقدير العزيز العليم “এবং সূর্য ভ্রমন করে তার নির্দৃিষ্ট গন্তব্যের দিকে, এ পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রন।”
সুরা ফাতির

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, الْقِطْمِيْرُ অর্থ-খেজুরের অাঁটির পর্দা। مُثْقَلَةٌ ভারাক্রান্ত ব্যক্তি। অন্যরা বলেছেন, الْحَرُوْرُ (আল-হারূর- অর্থ-দিবাভাগে সূর্যের উত্তাপ। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, রাতের উত্তাপকে الْحَرُوْرُ এবং দিনের উত্তাপকে السَّمُوْمُ বলা হয়।

غَرَابِيْبُ অর্থ أَشَدُّ سَوَادٍ অর্থাৎ নিকষ কালো الْغِرْبِيْبُ। (আল-গিরবীব) অর্থ الشَّدِيْدُ السَّوَادِ অধিক কালো।

সুরা ইয়াসীন

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, فَعَزَّزْنَا আমি অধিক শক্তি দিলাম। يَا حَسْرَةً عَلَى الْعِبَادِ দুনিয়াতে রাসূলদের সঙ্গে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করার ফলে আখিরাতে তাদের অবস্থা দুঃখময় হবে। أَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ একটির আলো অন্যটির আলোর উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারে না এবং চন্দ্র ও সূর্যের জন্য তা সম্ভব নয়। سَابِقُ النَّهَارِ রাত্র এবং দিন উভয়ই একে অপরের পেছনে অবিরাম গতিতে চলছে। نَسْلَخُ (রাত-দিন) উভয়ের মধ্যে একটিকে আমি অপরটি থেকে সরিয়ে দিই এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে সাঁতার কাটে। مِنْ مِثْلِهِ অনুরূপ চতুষ্পদ জন্তু। فَكِهُوْنَ আনন্দিত। جُنْدٌ مُحْضَرُوْنَ হিসাবের সময় তাদের উপস্থিত করা হবে তাদের বাহিনীরূপে। ইকরামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, الْمَشْحُوْنِ বোঝাইকৃত।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, طَائِرُكُمْ তোমাদের বিপদাপদ। يَنْسِلُوْنَ তারা বেরিয়ে আসবে। مَرْقَدِنَا আমাদের বের হবার স্থান। أَحْصَيْنَاهُ হিফাযাত করেছি আমি প্রতিটি বস্তুকে। مَكَانَتُهُمْ এবং مَكَانُهُمْএকই; তাদের স্থানে।

৪৪৩৯ আবূ নু’আয়ম (রহঃ) … আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সূর্যাস্তের সময় আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে মসজিদে ছিলাম। তিনি বললেন, হে আবূ যার! তুমি কি জানো সূর্য কোথায় ডুবে? আমি বললাম, আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল সবচেয়ে ভাল জানেন। তিনি বললেন, সূর্য চলে, অবশেষে আরশের নিচে গিয়ে সিজদা করে। নিম্নবর্ণিত আয়াত ‏وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ‏ এ এ কথাই বর্ণনা করা হয়েছে, অর্থাৎ সূর্য ভ্রমণ করে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে, এ পরাক্রমশলী সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৪০ | 4440 | ٤٤٤۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহর বাণীঃ والشمس تجري لمستقر لها ذلك تقدير العزيز العليم “এবং সূর্য ভ্রমন করে তার নির্দৃিষ্ট গন্তব্যের দিকে, এ পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রন।”
৪৪৪০। হুমায়দী (রহঃ) … আবূ যার গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আল্লাহর বাণীঃ مُسْتَقَرُّ এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেছেন, সূর্যের গন্তব্যস্থল আরশের নিচে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৪১ | 4441 | ٤٤٤۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহর বাণীঃ وإن يونس لمن المرسلين ইউনুস ছিলেন রাসুলদের একজন।
সুরা সাফ্‌ফাত

মুজাহিদ (রহঃ) বলেছেন, আল্লাহর বাণীঃ مِنْ مَكَانٍمبَعِيْدٍ মানে সকল স্থান থেকে। يُقْذَفُوْنَ নিক্ষিপ্ত হবে তাদের প্রতি। وَاصِبٌ অবিরাম বা অব্যাহত। لَازِبٌ আঠালো। تَأْتُوْنَنَا عَنِ الْيَمِيْنِ তোমরা তো হাক, কল্যাণ এবং সুখ-শান্তির বাণী নিয়ে আমাদের কাছে আসতে, এ কথাগুলো কাফিররা শায়ত্বনকে বলবে। غَوْلٌ পেটের ব্যথা। يُنْزَفُوْنَ তাদের বুদ্ধি নষ্ট হবে না। قَرِيْنٌ শায়তান। يُهْرَعُوْنَ দ্রুত পদক্ষেপে চলা। يَزِفُّوْنَ দ্রুতগতিতে পথ চলা। بَيْنَ الْجِنَّةِ نَسَبًا কুরাইশ কাফেররা বলত, মালাক আল্লাহর কন্যা এবং তাদের মা জিন নেতাদের কন্যারা। আল্লাহ্ বলেন, وَلَقَدْ عَلِمَتِ الْجِنَّةُ إِنَّهُمْ لَمُحْضَرُوْنَ জিনেরা জানে, তাদেরও উপস্থিত করা হবে- তাদের হাজির করা হবে শাস্তির জন্য।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, لَنَحْنُ الصَّافُّوْنَ‘ আমরা তো সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান’ দ্বারা ফেরেশতাদের বোঝানো হয়েছে। صِرَاطِ الْجَحِيْمِ জাহান্নামের পথে বা জাহান্নামের মধ্যে। لَشَوْبًا তাদের খাদ্য ফুটন্ত পানি মিশ্রিত। مَدْحُوْرًا বিতাড়িত। بَيْضٌ مَكْنُوْنٌ সুরক্ষিত মুক্তা। وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِي الاٰخِرِيْنَ তাদেরকে সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করা হবে। يَسْتَسْخِرُوْنَ তারা উপহাস করত। بَعْلًا দেবমূর্তি।

৪৪৪১ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (ইউনুস) ইবনু মাত্তার চেয়ে উত্তম বলে দাবি করা কারো জন্য সমীচীন নয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৪২ | 4442 | ٤٤٤۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহর বাণীঃ وإن يونس لمن المرسلين ইউনুস ছিলেন রাসুলদের একজন।
৪৪৪২। ইব্রাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে বলে, আমি ইউনুস ইবনু মাত্তার চেয়ে শ্রেষ্ঠতর, সে মিথ্যা বলে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৪৩ | 4443 | ٤٤٤۳

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
৪৪৪৩। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … আওওআম (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি মুজাহিদকে সূরা সা’দ-এর সাজদা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, (এ বিষয়ে) ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি পাঠ করলেন, ‏أُولَئِكَ الَّذِينَ هَدَى اللَّهُ فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهْ ‘তাদেরই আল্লাহ্ সৎপথে পরিচালিত করেছেন, সুতরাং তাঁদের পথের অনুসরণ কর। . ইবনু আব্বাস (রাঃ) এতে সিজদা করতেন।’

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৪৪ | 4444 | ٤٤٤٤

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
৪৪৪৪। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আওওআম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মুজাহিদকে সূরা সা’দ-এর সাজদা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, (এ সূরায়) সাজদা কোত্থেকে? তিনি বললেন, তুমি কি কুরআনের এ আয়াত পড়নি وَمِنْ ذُرِّيَّتِهِ دَاوُدَ وَسُلَيْمَانَ‏}‏ ‏{‏أُولَئِكَ الَّذِينَ هَدَى اللَّهُ فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهْ‏ “আর তার বংশধর দাউদ ও সুলায়মান তাদেরই আল্লাহ্ সৎপথে পরিচালিত করেছেন, সুতরাং তাঁদের পথের অনুসরণ কর। দাউদ তাঁদের অন্যতম, তোমাদের নাবীদের যাদের অনুসরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাই নাবী এ সূরায় সাজদা করেছেন।

عُجَابٌ অত্যাশ্চর্য। الْقِطُّ লিপি। এখানে صَحِيْفَةُ দ্বারা নেক লিপি বোঝানো হয়েছে। মুজাহিদ বলেছেন, فِيْعِزَّةٍ ঔদ্ধত্য। الْمِلَّةِالْآخِرَةِ কুরাইশদের ধর্ম। الاخْتِلَاقُ মিথ্যা। الْأَسْبَابُ আকাশের পথসমূহ جُنْدٌ مَّا هُنَالِكَ مَهْزُوْمٌ এ বাহিনীও সে ক্ষেত্রে অবশ্যই পরাজিত হবে অর্থাৎ কুরাইশ সম্প্রদায়। أُولٓٓئِكَ الْأَحْزَابُ অতীতকাল। فَوَاقٍ প্রত্যাবর্তন। قِطَّنَا আমাদের শাস্তি। اتَّخَذْنَاهُمْ سُخْرِيًّا আমি তাদের বেষ্টন করে রেখেছি। أَتْرَابٌ সমবয়স্কা। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, ‘ইবাদাতে শক্তিশালী ব্যক্তি। الْأَبْصَارُ আল্লাহর কাছে সূক্ষ্মদর্শী ব্যক্তি। حُبَّ الْخَيْرِ عَنْ ذِكْرِ رَبِّيْ আল্লাহর স্মরণ থেকে। طَفِقَ مَسْحًا তিনি ঘোড়াগুলোর পা ও গলায় হাত বুলাতে লাগলেন। الْأَصْفَادِ শৃংখল (বাঁধন)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৪৫ | 4445 | ٤٤٤۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহর বাণীঃ هب لي ملكا لا ينبغي لأحد من بعدي إنك أنت الوهاب “হে আমার রব! আমাকে দান করুন এমন এক রাজ্য, যার অধিকারী আমি ছাড়া কেউ না হয়। আপনি তো পরম দাতা (৩৮ঃ ৩৫)
৪৪৪৫। ইসহাক ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গতরাতে অবাধ্য জ্বীনের একটি দৈত্য আমার কাছে এসেছিল অথবা এ ধরনের কিছু কথা তিনি বললেন, আমার সালাত (নামায/নামাজ) নষ্ট করার জন্য। তখন আল্লাহ্ আমাকে তার উপর ক্ষমতা দান করলেন। আমি ইচ্ছা করলাম, মসজিদের খুঁটিগুলোর একটির সাথে ওকে বেঁধে রাখতে, যাতে ভোরে তোমরা সকলে ওটা দেখতে পাও। তখন আমার ভাই সুলায়মান (আলাইহিস সালাম) এর দোয়া স্মরণ হল, رَبِّ هَبْ لِي مُلْكًا لاَ يَنْبَغِي لأَحَدٍ مِنْ بَعْدِي “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দান কর এমন এক রাজ্য যার অধিকারী আমি ছাড়া আর কেউ না হয়।” রাবী রাওহ্ বলেন, এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অপমান করে তাড়িয়ে দেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৪৬ | 4446 | ٤٤٤٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহর বাণীঃ “আমি বানোয়াটকারীদের অন্তর্ভুক্ত নই”
৪৪৪৬। কুতায়বা (রহঃ) … মাসরূক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) এর কাছে গেলাম। তিনি বললেন, হে লোকসকল! যে ব্যাক্তি কোন বিষয়ে জানে সে তা বর্ণনা করবে। আর যে না জানে, তার বলা উচিত, আল্লাহ্ই ভাল জানেন। কেননা অজানা বিষয় সম্বন্ধে আল্লাহ্ই ভাল জানেন। এ কথা বলাও জ্ঞানের লক্ষণ। আল্লাহ্ তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলেছেন, ‘বল, এর (কুরআন বা তাওহীদ প্রচারের) জন্য আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না এবং আমি বানোয়টকারীদের অন্তর্ভুক্ত নই।’ (কুরআনে বর্ণিত) ধুম্র সম্পর্কে শীঘ্র আমি তোমাদের বলব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশদেরকে ইসলামের প্রতি দাওয়াত দিলে তারা (এ দাওয়াতে সাড়া দিতে) বিলম্ব করল। তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ্! . ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর জীবনকালের দুর্ভিক্ষের সাত বছরের মত দুর্ভিক্ষ দ্বারা তুমি আমাকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্য কর। এরপর দুর্ভিক্ষ তাদেরকে গ্রাস করে নিল। শেষ হয়ে গেল সমস্ত কিছু। অবশেষ তারা মৃত জন্তু ও চামড়া খেতে লাগল। তখন তাদের কেউ আকাশের দিকে তাকালে ক্ষুধার জ্বালায় চোখে আকাশ ও তার মধ্যে ধোঁয়া দেখত।

আল্লাহ্ বললেন, “অতএব তুমি সেদিনের অপেক্ষা কর, যেদিন ধোঁয়া হবে আকাশে, এবং তা আচ্ছন্ন করে ফেলবে সকল মানুষ। এ তো মর্মন্তুদ শাস্তি।” রাবী বলেন, তারপর তারা দোয়া করল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এ আযাব থেকে মুক্তি দাও, আমরা ঈমান আনব। তারা কিভাবে উপদেশ গ্রহণ করবে? তাদের কাছে তো এসেছে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যাদাতা এক রাসূল। তারপর তারা মুখ ফিরিয়ে নিল তাঁর থেকে এবং বলল, সে তো শিখানো বুলি আওড়ায়, সে তো এক উন্মাদ। আমি তোমাদের শাস্তি কিছুকালের জন্য রহিত করছি। তোমরা তো অবশ্য তোমাদের পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে। (ইবনু মাসউদ বলেন), কিয়ামতের দিনও কি তাদের থেকে আযাব রহিত করা হবে? তিনি (ইবনু মাসউদ) বলেন, আযাব দূর করা হলে তারা পুনরায় কুফরীর দিকে ফিরে গেল। তারপর আল্লাহ তা’আলা বদর যুদ্ধের দিন তাদের পাকড়াও করলেন। আল্লাহ্ বলেন, যেদিন আমি তোমাদের কঠোরভাবে পাকড়াও করব, সেদিন আমি তোমাদের শাস্তি দেবই।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৪৭ | 4447 | ٤٤٤۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহর বাণীঃ يا عبادي الذين أسرفوا على أنفسهم لا تقنطوا من رحمة الله إن الله يغفر الذنوب جميعا إنه هو الغفور الرحيم “বল হে আমার বান্দাগন! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ্‌ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দিবেন। তিনি তো পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (৩৯ঃ ৫৩)
সুরা যুমার

মুজাহিদ (রহঃ) বলেছেন, يَتَّقِيْ بِوَجْهِهٰ অধোমুখী করে তাদেরকে জাহান্নামের দিকে হেঁচড়িয়ে নেয়া হবে। এ আয়াতটি নিম্নোক্ত আয়াতের মতই, ‘‘যে ব্যক্তি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে সে শ্রেষ্ঠ, না যে ক্বিয়ামাতের দিন নিরাপদে থাকবে সে?’’ ذِيْ عِوَجٍ সন্দেহপূর্ণ। وَرَجُلًا سَلَمًا لِرَجُلٍ মুশরিকদের বাতিল মাবূদ এবং হক মাবূদের উদাহরণ দেয়া হয়েছে। وَيُخَوِّفُوْنَكَ بِالَّذِيْنَ مِنْ دُوْنِهٰ তারা তোমাকে আল্লাহর পরিবর্তে অপরের ভয় দেখায়। এখানে دُوْنِهٰ মানে প্রতিমা। خَوَّلْنَا আমি দিলাম। وَالَّذِيْ جَآءَ بِالصِّدْقِ এর الصِّدْقِ মানে কুরআন। وَصَدَّقَ بِهِ মু’মিনগণ ক্বিয়ামাতের দিন বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! এই সে কুরআন যা আপনি আমাকে দিয়েছেন এবং আমি তার বিধানসমূহের ওপর ‘আমাল করেছি। مُتَشَاكِسُوْنَ ঐ উদ্ধত পশু প্রকৃতির ব্যক্তি, যে ইনসাফে সন্তুষ্ট নয়। وَرَجُلًا سِلْمًا যোগ্য বা নেককার; যেমন বলা হয় سَالِمًاصَالِحًا। اشْمَأَزَّتْ পলায়ন করে। بِمَفَازَتِهِمْ নির্গত হয়েছে الْفَوْزِ হতে যার অর্থ; সাফল্যসহ। بِحِفَافَيْهِ তারা ঘুরবে; তাওয়াফ করবে। حَافِّيْنَ চতুষ্পার্শ্বে। مُتَشَابِهًا শব্দটি الاشْتِبَاهِ মাসদার হতে গঠিত নয়: কুরআন সত্যায়নের ব্যাপারে পরস্পর সামঞ্জস্যপূর্ণ।

৪৪৪৭। ইব্রাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) … . ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুশরিকদের কিছু লোক অত্যধিক হত্যা করে এবং অত্যধিক ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। তারপর তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এল এবং বলল, আপনি যা বলেন এবং আপনি যেদিকে আহবান করেন, তা অতি উত্তম। আমাদের যদি জানিয়ে দিতেন যে, আমরা যা করেছি, তার কাফফারা কি? এর প্রেক্ষিতে নাযিল হয় ‘এবং যারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন ইলাহ্কে ডাকে না, আল্লাহ্ যাকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন, তাকে না-হক হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। আরো নাযিল হলঃ “হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অন্যায় করে ফেলেছ, আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৪৮ | 4448 | ٤٤٤۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহর বাণীঃ “তারা আল্লাহ্‌র যথোচিত সম্মান করে না”
৪৪৪৮। আদম (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদী আলিমদের থেকে জনৈক আলিম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমরা (তাওরাতে দেখতে) পাই যে, আল্লাহ্ তা’আলা আকাশসমূহকে এক আঙ্গুলের উপর স্থাপন করবেন। যমীনকে এক আঙ্গুলের উপর, বৃক্ষসমূহকে এক আঙ্গুলের উপর, পানি এক আঙ্গুলের উপর, মাটি এক আঙ্গুলের উপর এবং অন্যান্য সৃষ্টি জগত এক আঙ্গুলের উপর স্থাপন করবেন। তারপর বলবেন, আমিই বাদশাহ্। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা সমর্থনে হেসে ফেললেন; এমনকি তাঁর সামনের দাঁত প্রকাশ হয়ে পড়ে। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করলেন, তারা আল্লাহর যথোচিত সম্মান করে না।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৪৯ | 4449 | ٤٤٤۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ কিয়ামতের দিন সমস্ত পৃথিবী থাকবে তার হাতের মুষ্ঠিতে এবং আকাশমন্ডলী থাকবে তার করায়ত্ত। পবিত্র ও মহান তিনি, তারা যার শরীক করে তিনি তার ঊর্ধ্বে।
৪৪৪৯। সাঈদ ইবনু উফায়র (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা’আলা যমীনকে নিজ মুঠায় নিবেন এবং আকাশমণ্ডলীকে ভাঁজ করে তাঁর ডান হাতে নিবেন, তারপর বলবেন, আজ আমিই মালিক, দুনিয়ার বাদশারা কোথায়?

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৫০ | 4450 | ٤٤۵۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ونفخ في الصور فصعق من في السموات ومن في الأرض إلا من شاء الله ثم نفخ فيه أخرى فإذا هم قيام ينظرون “এবং শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে, ফলে যাদের আল্লাহ্‌ ইচ্ছা করেন তারা ব্যতীত আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সকলে মুর্ছিত হয়ে পড়বে। এরপর আবার শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে, তৎক্ষণাৎ তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে।
৪৪৫০। হাসান (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শেষ বার শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার পর যে সর্বপ্রথম মাথা উঠাবে, সে আমি। তখন আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) কে দেখব আরশের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায়। আমি জানিনা, তিনি আগে থেকেই এভাবে ছিলেন, না শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার পর।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৫১ | 4451 | ٤٤۵۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ونفخ في الصور فصعق من في السموات ومن في الأرض إلا من شاء الله ثم نفخ فيه أخرى فإذا هم قيام ينظرون “এবং শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে, ফলে যাদের আল্লাহ্‌ ইচ্ছা করেন তারা ব্যতীত আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সকলে মুর্ছিত হয়ে পড়বে। এরপর আবার শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে, তৎক্ষণাৎ তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে।
৪৪৫১। উমর ইবনু হাফস (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুইবার ফুঁৎকারের মাঝে ব্যবধান চল্লিশ। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আবূ হুরায়রা, চল্লিশ দিন? তিনি বললেন, আমার জানা নেই। তারপর তারা জিজ্ঞেস করল, চল্লিশ বছর? এবারও তিনি অস্বীকার করলেন। এরপর তাঁরা পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে কি চল্লিশ মাস। এবারও তিনি অস্বীকার করলেন, এবং বললেন, মেরুদণ্ডের হাড় ব্যতীত মানুষের সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে। এ দ্বারাই সৃষ্টি জগত আবার সৃষ্টি করা হবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৫২ | 4452 | ٤٤۵۲

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা মু’মিন

মুজাহিদ (রহঃ) বলেছেন, অন্যান্য সূরাতে حم শব্দটি যেভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, এখানেও তা একইভাবেই ব্যবহৃত হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন حم এই সূরার নাম। এর প্রমাণস্বরূপ তাঁরা শুরায়হ্ ইবনু আবূ আওফা আবসীর কবিতাটি পেশ করছেন। তিনি বলেছেন يُذَكِّرُنِيْ حاميم وَالرُّمْحُ شَاجِرٌ فَهَلَّا تَلَا حاميم قَبْلَ التَّقَدُّمِ (জঙ্গে জামালের মধ্যে) বর্শা যখন উভয় দিক থেকে বর্ষিত হচ্ছিল, তখন আমার حَامِيْمَ স্মরণ এল। হায়! যুদ্ধে আসার পুর্বে কেন حم পাঠ করা হল না। الطَّوْلِ সম্মানিত হওয়া। دَاخِرِيْنَ অর্থ خَاضِعِيْنَ লাঞ্ছিত বা বিনয়ী। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, إِلَى النَّجَاةِ এর النَّجَاة অর্থ الإِيْمَانُ ঈমান। لَيْسَ لَهُ دَعْوَةٌ এর لَهُ মানে প্রতিমা। يُسْجَرُوْنَ তাদের জন্য আগুন জ্বালানো হবে تَمْرَحُوْنَ তোমরা দম্ভ করতে।

আলা ইবনু যিয়াদ (রহঃ) লোকদেরকে জাহান্নামের ভয় দেখাতেন। ফলে এক ব্যক্তি তাকে প্রশ্ন করলেন, আপনি লোকদের নিরাশ করে দিচ্ছেন কেন? তিনি বললেন, আমি কি (আল্লাহর রহমাত থেকে) লোকদের নিরাশ করে দিতে পারি! কেননা, আল্লাহ্ বলেছেন, ‘‘হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, আল্লাহর রহমাত থেকে নিরাশ হয়ো না।’’ আরও বলেছেন, ‘‘সীমাতিক্রমকারীরাই জাহান্নামের অধিবাসী।’’ বস্তুত তোমরা চাও, পাপাচারে লিপ্ত থাকা সত্ত্বেও তোমাদের জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হোক। কিন্তু তোমরা জেনে রেখ, আল্লাহ্ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ঐ সমস্ত লোকদের সুসংবাদদাতারূপে পাঠিয়েছেন, যারা তাঁর আনুগত্য করে এবং যারা তাঁর নাফরমানী করবে তাদের জন্য তিনি ভয় প্রদর্শনকারী।

৪৪৫২ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … উরওয়া ইবনু যুবায়ির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আ’স (রাঃ) কে বললাম, মুশরিকরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে কঠোরতম কি আচরণ করেছে, সে সম্পর্কে আপনি আমাকে বলুন। তিনি বললেন, একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা’বা শরীফের আঙ্গিনায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। এমতাবস্থায় উকবা ইবনু আবূ মু’আইত আসল এবং সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘাড় ধরল এবং তার কাপড় দিয়ে তাঁর গলায় পেচিয়ে খুব শক্ত করে চিপ দিল। এ সময়ে (হঠাৎ) আবূ বকর (রাঃ) উপস্থিত হয়ে তার ঘাড় ধরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তাকে সরিয়ে দিলেন এবং বললেন, তোমরা কি এ ব্যাক্তিকে এ জন্য হত্যা করবে যে, সে বলে ‘আমার রব আল্লাহ্; অথচ তিনি তোমাদের রবের নিকট থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণসহ তোমাদের কাছে এসেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৫৩ | 4453 | ٤٤۵۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وما كنتم تستترون أن يشهد عليكم سمعكم ولا أبصاركم ولا جلودكم ولكن ظننتم أن الله لا يعلم كثيرا مما تعملون “তোমাদের চক্ষু, কান এবং তোমাদের চামড়া তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে, এ থেকে তোমরা কখনো নিজেদের লূকাতে পারবে না। কিন্তু তোমরা মনে করতে তোমরা যা কিছু করেছ তার অনেক কিছুই আল্লাহ্‌ জানেন না (৪১ঃ ২২)
সুরা হা-মীম আস্‌সাজদা

তাউস (রহ.)….ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, ائْتِيَا طَوْعًاأعطيا অর্থাৎ তোমরা উভয় আস; তারা উভয়ে বলল, أَتَيْنَا طَآئِعِيْنَ অর্থাৎ আমরা এলাম। মিনহাল (রহঃ) সা‘ঈদ (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, জনৈক ব্যক্তি ইবনু ‘আববাস (রাঃ)-কে প্রশ্ন করল, আমি কুরআনে এমন বিষয় পাচ্ছি, যা আমার কাছে পরস্পর বিরোধী মনে হচ্ছে। আল্লাহ্ বলেছেন, যে দিন (যে দিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে) সেদিন পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না এবং একে অপরের খোঁজ খবর নেবে না।’’ আবার বলেছেন, ‘‘তারা একে অপরের সামনা-সামনি হয়ে খোঁজ খবর নেবে।’’ ‘‘তারা আল্লাহ্ থেকে কোন কথাই গোপন করতে পারবে না।’’ (তারা বলবে) ‘‘আল্লাহ আমাদের রব! আমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না।’’ এতে বোঝা যাচ্ছে যে, তারা আল্লাহ্ থেকে নিজেদের মুশরিক হবার ব্যাপারটিকে লুকিয়ে রাখবে। (তোমাদেরকে সৃষ্টি করা কঠিন), না আকাশ সৃষ্টি? তিনিই তা নির্মাণ করেছেন…. এরপর পৃথিবীকে করেছেন সুবিস্তৃত’’ পর্যন্ত। এখানে আকাশকে যমীনের পূর্বে সৃষ্টি করার কথা বলেছেন; কিন্তু অন্য এক স্থানে বর্ণিত আছে যে, ‘‘তোমরা কি তাঁকে স্বীকার করবেই যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দুই দিনে, আমরা এলাম অনুগত হয়ে।’’ এখানে যমীনকে আকাশের পূর্বে সৃষ্টির কথা উল্লেখ রয়েছে।

অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্ বলেছেনঃ {وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا} {عَزِيْزًا حَكِيْمًا} {سَمِيْعًامبَصِيْرًا} উপরোক্ত আয়াতসমূহের প্রেক্ষাপটে বোঝা যাচ্ছে যে, উপরোক্ত গুণাবলী প্রথমে আল্লাহর মধ্যে ছিল; কিন্তু এখন নেই। (জনৈক ব্যক্তির এসব প্রশ্ন শুনার পর) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, ‘‘যে দিন পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না।’’

এ আয়াতের সম্পর্ক হল প্রথমবার শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার সঙ্গে। কেননা, ইরশাদ হয়েছে যে, এরপর শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে। ফলে যাদেরকে আল্লাহ্ ইচ্ছে করেন, তারা বাদে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সকলে মূর্ছিত হয়ে পড়বে। এ সময় পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না এবং একে অন্যের খোঁজ খবর নেবে না। তারপর শেষবারের মত শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়ার পর তারা একে অপরের সামনাসামনি হয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।

দ্বিতীয় প্রশ্ন সম্পর্কে এক আয়াতে আছে, ‘‘তারা আল্লাহ্ থেকে কোন কথাই গোপন করতে পারে না।’’ অন্য আয়াতে আছে ‘‘মুশরিকগণ বলবে যে, আমরা তো মুশরিক ছিলাম না।’’ এর সমাধান হচ্ছে এই যে, ক্বিয়ামাতের দিন প্রথমে আল্লাহ্ রাববুল আলামীন মুখলিস লোকদের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেবেন। এ দেখে মুশরিকরা বলবে, আস! আমরাও বলব, (হে আল্লাহ্! আমরাও তো মুশরিক ছিলাম না। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের মুখে মোহর লাগিয়ে দেবেন। তখন তাদের হাত কথা বলবে। এ সময় প্রকাশ পাবে যে, ‘‘তাদের কোন কথাই আল্লাহ্ থেকে গোপন রাখা যাবে না।’’ এবং এ সময়ই কাফিরগণ আকাঙ্ক্ষা করবে (…..হায়! যদি তারা মাটির সঙ্গে মিশে যেত)।

তৃতীয় প্রশ্ন সম্বন্ধে সমাধান হচ্ছে এই যে, প্রথমে আল্লাহ্ তা‘আলা দু’দিনে যমীন সৃষ্টি করেছেন। এরপর আসমান সৃষ্টি করেন। তারপর তিনি আকাশের প্রতি মনোযোগ দেন এবং তাকে বিন্যস্ত করেন দু’দিনে। তারপর তিনি যমীনকে বিছিয়ে দিয়েছেন। যমীনকে বিছিয়ে দেয়ার অর্থ হচ্ছে, এর মাঝে পানি ও চারণভূমির বন্দোবস্ত করা, পর্বত-টিলা, উট এবং আসমান ও মধ্যবর্তী সমস্ত কিছু সৃষ্টি করা। এ সবকিছুও তিনি আরো দু’দিনে সৃষ্টি করেন। আল্লাহর বাণীঃ دَحَاهَا -এর মধ্যে এ কথাই বর্ণনা করা হয়েছে : خَلَقَ الْأَرْضَ فِيْ يَوْمَيْنِ ‘এবং তিনি দু’দিনে যমীন সৃষ্টি করেছেন’’ এ কথাও ঠিক; তবে যমীন এবং যত কিছু যমীনের মধ্যে বিদ্যমান আছে এসব তিনি চার দিনে সৃষ্টি করেছেন এবং আকাশমন্ডলী সৃষ্টি করা হয়েছে দু’দিনে।

وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا সম্বন্ধে উত্তর এই যে, আল্লাহ্ রাববুল আলামীন নিজেই এ সমস্ত বিশেষণযুক্ত নামের দ্বারা নিজের নামকরণ করেছেন। উল্লিখিত গুণবাচক নামের অর্থ হচ্ছে এই যে, আল্লাহ্ রাববুল ‘আলামীন সর্বদাই এই গুণে গুণান্বিত থাকবেন। কারণ, আল্লাহ্ রাববুল আলামীন যখন কারো প্রতি কিছু করার ইচ্ছে করেন, তখন তিনি তাঁর ইচ্ছে অনুযায়ী করেই থাকেন, সুতরাং কুরআনের আলোচ্য বিষয়ের একটিকে অপরটির বিপরীত সাব্যস্ত করবে না। কেননা, এগুলো সব আল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণ হয়েছে। মুজাহিদ (রহঃ) বলেছেন ممنون অর্থ গণনাকৃত। أَقْوَاتَهَا তাদের জীবিকা। فِيْ كُلِّ سَمَآءٍ أَمْرَهَا যার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। نَحِسَاتٍ শুভ। وَقَيَّضْنَا لَهُمْ قُرَنَآءَ আমি তাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম তাদের সহচর। تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمْ الْمَلَآئِكَةُ তাদের নিকটবর্তী হয় মালায়িকাহ। আর এ সময়টি হচ্ছে عِنْدَ الْمَوْتِ মৃত্যুর সময়। اهْتَزَّتْ ফলে ফুলে আন্দোলিত হয়ে উঠে। وَرَبَتْ বেড়ে যায় এবং স্ফীত হয়ে উঠে। মুজাহিদ ব্যতীত অন্যেরা বলেছেন, مِنْ أَكْمَامِهَا যখন তা আবরণ হতে বিকশিত হয়। لَيَقُوْلَنَّهَذَالِيْ আমলের ভিত্তিতে এ সমস্ত অনুগ্রহের হকদার আমিই। سَوَآءً لِلسَّآئِلِيْنَ আমি সমভাবে নির্ধারণ করেছি। فَهَدَيْنَاهُمْ অর্থাৎ আমি তাদেরকে ভাল-মন্দ সম্বন্ধে পথ বলে দিয়েছি। যেমন, আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন, ‘‘এবং আমি তাকে দু’টি পথই দেখিয়েছি।’’ অন্যত্র বর্ণিত আছে যে, ‘‘আমি তাকে ভাল পথের নির্দেশ দিয়েছি।’’ الْهُدٰى পথ দেখানো এবং গন্তব্য স্থান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়া। এ অর্থেই কুরআনে বর্ণিত আছে যে, ‘‘তাদেরই আল্লাহ্ সৎপথে পরিচালিত করেন। يُوْزَعُوْنَ তাদের আটক রাখা হবে। مِنْ أَكْمَامِهَا অর্থ বাকলের উপরের আবরণ। এটাকে كم ও বলা হয়। وَلِيٌّحَمِيْمٌ নিকটতম বন্ধু। مِنْ مَحِيْصٍ শব্দটি حَاصَعَنْهُ থেকে নির্গত হয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে, সে তার থেকে পলায়ন করেছে। مِرْيَةٌ এবং مُرْيَةٌ একার্থবোধক শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে সন্দেহ। মুজাহিদ বলেছেন, اعْمَلُوْامَاشِئْتُمْ (তোমাদের যা ইচ্ছে কর) বাক্যটি মূলত সতর্কবাণী হিসেবে এখানে ব্যবহৃত হয়েছে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, بِالَّتِيْ هِيَأَحْسَنُ -এর মর্মার্থ হচ্ছে, রাগের মুহূর্তে ধৈর্যধারণ করা এবং অন্যায় ব্যবহারকে ক্ষমা করে দেয়া। যখন কোন মানুষ ক্ষমা ও ধৈর্যধারণ করে তখন আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে হেফাজত করেন এবং তার শত্রুকে তার সামনে নত করে দেন। ফলে সে তার অন্তরঙ্গ বন্ধুতে পরিণত হয়ে যায়।

৪৪৫৩। সালত ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) … ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। আল্লাহর বাণীঃ “তোমাদের কর্ণ তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে- এ থেকে তোমরা কখনো নিজেদের লুকাতে পারবে না।” আয়াত সম্পর্কে বলেন, কুরাইশ গোত্রের দুই ব্যাক্তি ছিল, যাদের জামাতা ছিল বনী সাকীফ গোত্রের অথবা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) দুই ব্যাক্তি ছিল বনী সাকীফ গোত্রের আর তাদের জামাতা ছিল কুরাইশ গোত্রের। তারা সকলেই একটি ঘরে ছিল। তারা পরস্পর বলল, তোমার কি ধারণা, আল্লাহ্ কি আমাদের কথা শুনতে পাচ্ছেন? একজন বলল, তিনি আমাদের কিছু কথা শুনছেন। এরপর দ্বিতীয় ব্যাক্তি বলল, তিনি যদি আমাদের কিছু কথা শুনতে পান, তাহলে সব কথাও শুনতে পাবেন। তখন নাযিল হলঃ “তোমাদের কান ও তোমাদের চোখ তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে, এ থেকে তোমরা কখনো নিজেদের লুকাতে পারবে না। …… আয়াতের শেষ পর্যন্ত।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৫৪ | 4454 | ٤٤۵٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ তা তোমাদের ধারনা … আয়াতের শেষ পর্যন্ত।
৪৪৫৪। হুমায়দী (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কা’বা শরীফের কাছে দু’জন কুরাইশী এবং একজন সাকাফী অথবা দু’জন সাকাফী ও একজন কুরাইশী একত্রিত হয়। তাদের পেটের মেদ ছিল বেশি; কিন্তু অন্তরের বুদ্ধি ছিল কম। তাদের একজন বলল, তোমাদের কি ধারণা, আমরা যা বলছি তা কি আল্লাহ শুনছেন? উত্তরে অপর এক ব্যাক্তি বলল, আমরা যদি জোরে বলি, তাহলে তিনি শুনতে পান। আর যদি চুপে চুপে বলি, তাহলে তিনি শুনতে পান না। তৃতীয় ব্যাক্তি বলল, আমরা জোরে বললে যদি তিনি শুনতে পান, তাহলে চুপে চুপে বললেও তিনি শুনতে পাবেন। তখন আল্লাহ্ নাযিল করলেন, ‘তোমাদের চোখ, কান এবং তোমাদের চামড়া তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে, এ থেকে তোমরা কখনো নিজেদের লুকাতে পারবে না …… (আয়াতের শেষ পর্যন্ত)। হুমায়দী বলেন, সুফিয়ান এ হাদীস বর্ণনার সময় বলতেন, মানসূর বলেছেন, অথবা ইবনু আবূ নাজীহ্ অথবা হুমায়দী তাঁদের একজন বা দু’জন। এরপর তিনি মানসূরের উপরই নির্ভর করেছেন এবং একাধিকবার তিনি সন্দেহ বর্জন করে বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৫৫ | 4455 | ٤٤۵۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ “এখন তারা ধৈর্য ধারণ করলেও জাহান্নামই হবে তাদের আবাস এবং তারা ক্ষমা চাইলেও তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে না” (৪১ঃ ২৪)
৪৪৫৫। আমর ইবনু আলী (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৫৬ | 4456 | ٤٤۵٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إلا المودة في القربى আত্মীয়ের সৌহার্দ ব্যতীত
সুরা শুরা

ইবনু ‘আব্বাস হতে বর্ণিত। عَقِيْمًا অর্থ বন্ধ্যা। رُوْحًا مِّنْ أَمْرِنَا অর্থাৎ আল কুরআন। মুজাহিদ বলেছেন يَذْرَؤُكُمْ فِيْهِ, আল্লাহ্ তোমাদেরকে গর্ভাশয়ের মধ্যে ধারাবাহিক বংশ পরম্পরার সঙ্গে সৃষ্টি করতে থাকবেন। لَا حُجَّةَ بَيْنَنَا আমাদের মধ্যে কোন ঝগড়া-বিবাদ নেই। مِنْ طَرْفٍ خَفِيٍّ অবনমিত। মুজাহিদ ছাড়া অন্যরা বলেন। فَيَظْلَلْنَ رَوَاكِدَ عَلٰى ظَهْرِهٰ নৌযানগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠে আন্দোলিত হতে থাকে; কিন্তু চলতে পারবে না। شَرَعُوْا তারা আবিষ্কার করেছে।

৪৪৫৬ মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা তাকে إِلاَّ الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার পর (কাছে উপস্থিত) সাঈদ ইবনু জুবায়ির (রাঃ) বললেন, এর অর্থ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিবারের আত্মীয়তার বন্ধন। (এ কথা শুনে) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, তুমি তাড়াহুড়া করে ফেললে। কুরাইশের কোন শাখা ছিল না যেখানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আত্মীয়তা ছিল না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বলেছেন, আমার এবং তোমাদের মাঝে যে আত্মীয়তার বন্ধন রয়েছে তার ভিত্তিতে তোমরা আমার সঙ্গে আত্মীয়সুলভ আচরণ কর। এই আমি তোমাদের থেকে কামনা করি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৫৭ | 4457 | ٤٤۵۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ونادوا يا مالك ليقض علينا ربك “তারা চিৎকার করে বলবে, হে মালিক! তোমার প্রতিপালক যেন আমাদের নিঃশেষ করে দেন।”
সুরা যুখ্‌রুফ

মুজাহিদ (রহ.) বলেছেন, عَلٰى أُمَّةٍ এক নেতার অনুসারী। وَقِيْلَه يَا رَبِّ এর ব্যাখ্যা এই যে, কাফিররা কি মনে করে, আমি তাদের গোপন বিষয় ও মন্ত্রণার খবর রাখি না এবং আমি তাদের কথাবার্তা শুনি না? ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেছেন, وَلَوْلَا أَنْ يَّكُوْنَ النَّاسُ أُمَّةً وَّاحِدَةً যদি সমস্ত মানুষ কাফের হয়ে যাবার আশংকা না থাকত, তাহলে আমি কাফেরদের গৃহের জন্য দিতাম রৌপ্য নির্মিত ছাদ এবং রৌপ্য নির্মিত মা‘রিজ অর্থাৎ সিঁড়ি আর রৌপ্য নির্মিত পালঙ্ক। مُقْرِنِيْنَ সামর্থ্যবান লোক। اٰسَفُوْنَا তারা আমাকে রাগান্বিত করল। يَعْشُ অন্ধ হয়ে যায়। মুজাহিদ বলেছেন, أَفَنَضْرِبُ عَنْكُمْ الذِّكْرَ তোমরা কুরআন মাজীদকে মিথ্যা মনে করবে, তারপর এজন্য কি তোমাদের শাস্তি দেয়া হবে না? وَمَضٰى مَثَلُ الْأَوَّلِيْنَ পূর্ববর্তী লোকদের উদাহরণ। وَمَا كُنَّا لَه مُقْرِنِيْنَ উট, ঘোড়া, খচ্চর ও গাধাকে বোঝানো হয়েছে। يَنْشَأُ فِي الْحِلْيَةِ কন্যা সন্তান; এদের তোমরা আল্লাহর সন্তান সাব্যস্ত করছ- এ তোমরা কেমন সিদ্ধান্ত দিচ্ছ ……… لَوْ شَآءَ الرَّحْمٰنُ مَا عَبَدْنَاهُمْ আয়াতাংশে বর্ণিত هم সর্বনাম-এর দ্বারা মূর্তিকে বোঝানো হয়েছে। কেননা, আল্লাহ্ বলেছেন, مَا لَهُمْ بِذَلِكَ مِنْ عِلْمٍ এ সম্বন্ধে প্রতিমাদের কোন জ্ঞান নেই। فِيْ عَقِبِهٰ তার সন্তানদের মধ্যে مُقْتَرِنِيْنَ এক সঙ্গে তারা চলে আসছিল। سَلَفًا দ্বারা উদ্দেশ্য ফির‘আউন সম্প্রদায়। কেননা, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মাতের কাফেরদের জন্য তারা হচ্ছে অগ্রগামী দল এবং তারা হচ্ছে শিক্ষা গ্রহণের এক নমুনা। يَصِدُّوْنَ তারা চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। مُبْرِمُوْنَ আমিই তো সিদ্ধান্ত দানকারী। أَوَّلُالْعَابِدِيْنَ মু’মিনদের অগ্রণী। إِنَّنِيْ بَرَآءٌ مِّمَّا تَعْبُدُوْنَ আরবরা বলে, نَحْنُ مِنْكَ الْبَرَآءُ وَالْخَلَآءُ আমরা তোমার থেকে পৃথক, পুরুষলিঙ্গ, স্ত্রীলিঙ্গ, বহুবচন, দ্বিবচন ও একবচন সকল ক্ষেত্রে الْبَرَآءُ শব্দটি একইভাবে ব্যবহৃত হয়। কেননা, এ শব্দটি হচ্ছে মাসদার (মূল শব্দ)। যদি بَرِيْءٌ বল, তাহলে দ্বিবচনে بَرِيئَآنِ বলা হবে এবং বহুবচনে বলা হবে بَرِيــٓئُوْنَ। ‘আবদুল্লাহ্ إِنَّنِيْبَرِيْٓءٌ (يا দ্বারা) পাঠ করতেন। الزُّخْرُفُ স্বর্ণ। مَلَآئِكَةً তারা পরস্পরের স্থলাভিষিক্ত হতো।

৪৪৫৭। হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) … ইয়ালা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মিম্বরে পড়তে শুনেছি- وَنَادَوْا يَا مَالِكُ لِيَقْضِ عَلَيْنَا رَبُّكَ (তারা চীৎকার করে বলবে, হে মালিক! তোমার প্রতিপালক যেন আমাদের নিঃশেষ করে দেন।) ক্বাতাদাহ বলেন, مَثَلًا لِّلْاٰخِرِيْنَ এর অর্থ পরবর্তী লোকদের জন্য উপদেশ।

ক্বাতাদাহ (রহঃ) ব্যতীত অন্যান্য মুফাসসির বলেছেন, مُقْرِنِيْنَ নিয়ন্ত্রণকারী। বলা হয় فُلَانٌ مُقْرِنٌ لِفُلَانٍ অর্থাৎ তার নিয়ন্তা। الأَكْوَابُ অর্থ হাতল বিহীন পানপাত্র। ক্বাতাদাহ (রহ.) أُمِّ الْكِتَابِ সম্পর্কে বলেন, তা হচ্ছে মূল কিতাব ও সারাংশ। أَوَّلُ الْعَابِدِيْنَ অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর কোন সন্তান নেই এ কথা প্রত্যাখ্যানকারী সর্বপ্রথম আমি নিজেই। رَجُلٌ عَابِدٌ وَعَبِدٌ দু’ ধরনের ব্যবহার রয়েছে। ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) وَقَالَ الرَّسُوْلُ يَا رَبِّ পাঠ করতেন। কোন কোন মুফাসসির বলেন, أَوَّلُ الْعَابِدِيْنَ এ বর্ণিত الْعَابِدِيْنَ শব্দটি عَبِدَ يَعْبَد এর ওজনে এসেছে; যার অর্থ অস্বীকারকারী।

কাতাদা (রহঃ) বলেন أُمِّ الْكِتَابِ‏ অর্থাৎ মূল কিতাব। ‏أَفَنَضْرِبُ عَنْكُمُ الذِّكْرَ صَفْحًا أَنْ كُنْتُمْ قَوْمًا مُسْرِفِينَ এর মাঝে উল্লিখিত مُسْرِفِينَ‏ এর অর্থ مُشْرِكِينَ অর্থাৎ আমি কি তোমাদের হতে এই উপদেশবাণী সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করে নেব এই কারণে যে, তোমরা মুশরিক? আল্লাহর কসম, এ উম্মতের প্রাথমিক অবস্থায় যখন (কুরাইশগণ) আল-কুরআনকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, তখন যদি তাকে প্রত্যাহার করা হত, তাহলে তাঁরা সকলেই ধ্বংস হয়ে যেত। ‏فَأَهْلَكْنَا أَشَدَّ مِنْهُمْ بَطْشًا وَمَضَى مَثَلُ الأَوَّلِينَ এর মাঝে বর্ণিত مَثَلُ الأَوَّلِينَ এর অর্থ তাদের মধ্যে যারা তাদের অপেক্ষা শক্তিতে প্রবল ছিল, তাদের আমি ধ্বংস করেছিলাম। আর এভাবেই চলে এসেছে পূর্ববর্তী লোকদের শাস্তির দৃষ্টান্ত। ‏جُزْء অর্থ সমকক্ষ।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৫৮ | 4458 | ٤٤۵۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ فارتقب يوم تأتي السماء بدخان مبين “অতএব তুমি অপেক্ষা কর সেদিনের, যেদিন ধুম্রাচ্ছন্ন হবে আকাশ।” (৪৪ঃ ১) فارتقب অপেক্ষা কর
সুরা দুখান

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, رَهْوًا শুষ্ক পথ। عَلَى الْعَالَمِيْنَ সমকালীন লোকদের উপর। فَاعْتُلُوْهُ নিক্ষেপ কর তাকে। وَزَوَّجْنَاهُمْ بِحُوْرٍ عِيْنٍ আমি তাদের ডাগর চক্ষু বিশিষ্ট হুরদের সঙ্গে বিয়ে দেব, যাদেরকে দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। تَرْجُمُوْنِ হত্যা করা। رَهْوَا স্থির। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, كَالْمُهْلِ যায়তুনের গাদের মত কাল। অন্যরা বলেছেন, تُبَّعُ ইয়ামানের বাদশাদের উপাধি। তাদের একজনের পর যেহেতু অপরজনের আগমন ঘটত, এজন্য তাদের প্রত্যেক বাদশাহ্কেই تُبَّعُ বলা হত। ছায়াকেও تُبَّعُ বলা হয়। কেননা, ছায়া সূর্যের অনুসরণ করে।

৪৪৫৮ আবদান (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পাঁচটি নিদর্শনই বাস্তবায়িত হয়ে গিয়েছে। ধোঁয়া (দুর্ভিক্ষ), রোম (পরাজয়), চন্দ্র (দ্বিখণ্ডিত হওয়া), পাকড়াও (বদর যুদ্ধে) এবং ধ্বংস।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৫৯ | 4459 | ٤٤۵۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ يغشى الناس هذا عذاب أليم “তা আবৃত করে ফেলবে মানব জাতিকে, এ হবে মর্মন্তুদ শাস্তি।” (৪৪ঃ ১১)
৪৪৫৯। ইয়হ্ইয়া (রহঃ) … মাসরূক (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন, অবস্থা এ জন্য যে, কুরাইশরা যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাফরমানী করল, তখন তিনি তাদের বিরুদ্ধে এমন দুর্ভিক্ষের দোয়া করলেন, যেমন দুর্ভিক্ষ হয়েছিল ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর সময়ে। তারপর তাদের উপর দুর্ভিক্ষ ও ক্ষুধার কষ্ট এমনভাবে আপতিত হল যে, তারা হাড্ডি খেতে আরম্ভ করল। তখন মানুষ আকাশের দিকে তাকালে ক্ষুধার তাড়নায় তারা আকাশ ও তাদের মধ্যে শুধু ধোঁয়ার মত দেখতে পেত। এ সম্পর্কেই আল্লাহ্ নাযিল করলেন, “অতএব তুমি অপেক্ষা কর সেদিনের, যেদিন স্পষ্ট ধূম্রাচ্ছন্ন হবে আকাশ এবং তা আবৃত করে ফেলবে মানব জাতিকে। এ হবে মর্মন্তুদ শাস্তি।”

বর্ণনাকারী বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট (কাফেরদের পক্ষ থেকে) এক ব্যাক্তি এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মুদার গোত্রের জন্য বৃষ্টির দোয়া করুন। তারা তো ধ্বংস হয়ে গেল। তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, মুদার গোত্রের জন্য দোয়া করতে বলছ। তুমি তো খুব সাহসী। তারপর তিনি বৃষ্টির জন্য দোয়া করলেন এবং বৃষ্টি হল। তখন নাযিল হল, তোমরা তো তোমাদের পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে। যখন তাদের সচ্ছলতা ফিরে এলো, তখন আবার নিজেদের পূর্বের অবস্থায় ফিরে গেল। তারপর আল্লাহ্ নাযিল করলেন, “যেদিন আমি তোমাদের প্রবলভাবে পাকড়াও করব, সেদিন আমি তোমাদের প্রতিশোধ নেবই। বর্ণনাকারী বলেন, অর্থাৎ বদর যুদ্ধের দিন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৬০ | 4460 | ٤٤٦۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ربنا اكشف عنا العذاب إنا مؤمنون “তখন তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এ শাস্তি থেকে মুক্তি দান কর, নিশ্চয়ই আমরা ঈমান আনব।” (৪৪ঃ ১২)
৪৪৬০। ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) … মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ (রাঃ) এর কাছে গেলাম। তখন তিনি বললেন, যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, সে সম্পর্কে আল্লাহ্ই ভাল জানেন, একথা বলাও জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। নিশ্চয় আল্লাহ্ তার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলেছেন, “বল, আমি এর জন্য তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না এবং আমি বানোয়াটকারীদের অন্তর্ভুক্ত নই।” কুরাইশরা যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বাড়াবাড়ি করল এবং বিরোধিতা করল, তখন তিনি দোয়া করলেন, ইয়া আল্লাহ্! ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর সময়কার সাত বছরের দুর্ভিক্ষের মত দুর্ভিক্ষের দ্বারা তুমি আমাকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্য কর। তারপর দুর্ভিক্ষ তাদেরকে পাকড়াও করল। ক্ষুধার জ্বালায় তারা হাড্ডি এবং মরা খেতে আরম্ভ করল। এমনকি তাদের কোন ব্যাক্তি আকাশের দিকে তাকালে ক্ষুধার জ্বালায় তার ও আকাশের মাঝে শুধু ধোঁয়ার মতই দেখতে পেত। তখন তারা বলল, “হে আমাদের রব! আমাদের থেকে এ শাস্তি সরিয়ে নাও, নিশ্চয়ই আমরা ঈমান আনব।” তাঁকে বলা হল, যদি আমি তাদের থেকে শাস্তি রহিত করে দেই, তাহলে তারা আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে। তারপর তিনি তাঁর রবের নিকট দোয়া করলেন। আল্লাহ্ তাদের থেকে শাস্তি রহিত করে দিলেন; কিন্তু তারা আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে এল। তাই আল্লাহ্ বদর যুদ্ধের দিন তাদের থেকে প্রতিশোধ নিলেন। নিম্নোক্ত আয়াতসমূহে এ কথাই বর্ণনা করা হয়েছে। আয়াত يَوْمَ تَأْتِي السَّمَاءُ بِدُخَانٍ مُبِينٍ إِلَى قَوْلِهِ جَلَّ ذِكْرُهُ إِنَّا مُنْتَقِمُونَ পর্যন্ত।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৬১ | 4461 | ٤٤٦۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ أنى لهم الذكرى وقد جاءهم رسول مبين তারা কি করে উপদেশ গ্রহন করবে? তাদের নিকট তো এসেছে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দানকারী এক রাসুল। (৪৪ঃ ১৩) الذكر এবং الذكرى একার্থবোধক শব্দ।
৪৪৬১। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) … মাসরূক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহর কাছে গেলাম। তারপর তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কুরাইশদের ইসলামের দাওয়াত দিলেন এবং তাঁকে মিথ্যাবাদী বলল ও তার নাফরমানী করল, তখন তিনি বললেন, ইয়া আল্লাহ্! ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর সময়কার সাত বছরের দুর্ভিক্ষের মত দুর্ভিক্ষের দ্বারা তুমি আমাকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্য কর। ফলে দুর্ভিক্ষ তাদের এমনভাবে গ্রাস করল যে, নির্মূল হয়ে গেল সমস্ত কিছু; অবশেষে তারা মৃতদেহ খেতে আরম্ভ করল। তাদের কেউ দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালে ক্ষুধার জ্বালায় সে তার ও আকাশের মাঝে ধোঁয়ার মতই দেখতে পেত। এরপর তিনি পাঠ করলেন, “অতএব তুমি অপেক্ষা কর সে দিনের, যে দিন স্পষ্ট ধূম্রাচ্ছন্ন হবে আকাশ এবং তা আবৃত করে ফেলবে মানব জাতিকে। এ হবে মর্মন্তুদ শাস্তি। আমি তোমাদের শাস্তি কিছুকালের জন্য রহিত করছি, তোমরা তো তোমাদের পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে।” পর্যন্ত আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, কিয়ামতের দিনও কি তাদের থেকে শাস্তি রহিত করা হবে? তিনি বলেন, الْبَطْشَةُ الْكُبْرَى দ্বারা বদরের দিনের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৬২ | 4462 | ٤٤٦۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ثم تولوا عنه وقالوا معلم مجنون এরপর তারা তাকে অমান্য করে বলে সে তো শিখানো বুলি বলছে, সে তো এক পাগল (৪৪ঃ ১৪)
৪৪৬২। বিশর্ ইবনু খালিদ (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা’আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পাঠিয়ে বলেছেন, “বল, আমি এর জন্য তোমাদের কোন প্রতিদান চাই না এবং যারা মিথ্যা দাবি করে তাদের অন্তর্ভুক্ত নই।” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দেখলেন যে, কুরাইশরা তাঁর নাফরমানী করছে, তখন তিনি বললেন, ইয়া আল্লাহ্! ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর সময়কার সাত বছরের দুর্ভিক্ষের মত দুর্ভিক্ষের দ্বারা তুমি আমাকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্য কর। ফলে দুর্ভিক্ষ তাদের গ্রাস করল। নিঃশেষ করে দিল তাদের সমস্ত কিছু, এমনকি তারা হাড় ও চামড়া খেতে আরম্ভ করল। আর একজন রাবী বলেছেন, তারা চামড়া ও মৃতদেহ খেতে লাগল। তখন যমীন থেকে ধোঁয়ার মত বের হতে লাগল। এ সময় আবূ সুফিয়ান নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, হে মুহাম্মদ! তোমার কওম তো ধ্বংস হয়ে গেল। আল্লাহর কাছে দোয়া কর, যেন তিনি তাদের থেকে এ অবস্থা দূরীভূত করে দেন। তখন তিনি দোয়া করলেন, এবং বললেন, এরপর তারা আবার নিজেদের পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে। মানসুর থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে, তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেন, “অতএব, তুমি অপেক্ষা কর সে দিনের, যে দিন স্পষ্ট ধূম্রাচ্ছন্ন হবে আকাশ, তোমরা তো পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবেই …… পর্যন্ত। (তিনি বলেন) আখিরাতের শাস্তিও কি দূরীভূত হয়ে যাবে? ধোঁয়া, প্রবল পাকড়াও এবং ধ্বংস তো অতীত হয়েছে। এক রাবী চন্দ্র এবং অন্য রাবী রোমের পরাজয়ের কথাও উল্লেখ করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৬৩ | 4463 | ٤٤٦۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ يوم نبطش البطشة الكبرى إنا منتقمون “যেদিন আমি তোমাদেরকে প্রবলভাবে পাকড়াও করব, সেদিন আমি তোমাদের শাস্তি দেবই।” (৪৪ঃ ১৬)
৪৪৬৩। ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পাঁচটি বিষয় ঘটে গেছেঃ ধ্বংস, রূম, পাকড়াও, চন্দ্র ও ধোঁয়া।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৬৪ | 4464 | ٤٤٦٤

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা জাছিয়া

الْجَاثِيَةِ ভয়ে নতজানু। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, نَسْتَنْسِخُ অর্থ- আমি লিখছিলাম। نَنْسَاكُمْ অর্থ-আমি তোমাদেরকে ত্যাগ করব।

৪৪৬৪। হুমায়দী (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ্ বলেন, আদম সন্তানরা আমাকে কষ্ট দেয়। তারা যমানাকে গালি দেয়; অথচ আমিই যমানা। আমার হাতেই ক্ষমতা; রাত ও দিন আমিই পরিবর্তন করি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৬৫ | 4465 | ٤٤٦۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ والذي قال لوالديه أف لكما أتعدانني أن أخرج وقد خلت القرون من قبلي وهما يستغيثان الله ويلك آمن إن وعد الله حق فيقول ما هذا إلا أساطير الأولين “আর এমন লোক আছে যে, তার পিতামাতাকে বলে, তোমাদের জন্য আফসোস! তোমরা কি আমাকে এই ভয় দেখাতে চাও যে, আমি পুনরুত্থিত হব, যদিও আমার পূর্বে বহু পুরুষ গত হয়েছে। তখন তার পিতা মাতা আল্লাহ্‌র কাছে ফরিয়াদ করে বলে, দুর্ভোগ তোমাদের জন্য! ঈমান আন- আল্লাহ্‌র প্রতিশ্রুতি অবশ্যই সত্য। কিন্তু সে বলে, এ তো অতীতকালের উপকথা ব্যতীত কিছুই নয়” পর্যন্ত (৪৬ঃ ১৭)
সুরা আহকাফ

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, تُفِيْضُوْنَ তোমরা বলছ বা বলবে। কোন কোন মুফাসসির বলেছেন, أَثَرَةٍ এবং أُثْرَةٍ ও وَأَثَارَةٍ এর অর্থ ‘ইলমের অবশিষ্টাংশ। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, بِدْعًا مِنْ الرُّسُلِ আমি তো প্রথম রাসূল নই। অন্য তাফসীরকারগণ বলেছেন, أَرَأَيْتُمْ এর الف অক্ষরটি استفهام تهديد এর জন্য এখানে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ তোমাদের দাবী যদি সঠিক হয়, তাহলেও তাদের ‘ইবাদাত করার উপযুক্ত তারা নয়। أَرَأَيْتُمْ এর অর্থ, চাক্ষুস দেখা নয়; বরং এর অর্থ হচ্ছে, তোমরা কি জানতে যে, আল্লাহ্ ছাড়া তোমরা যাদের ‘ইবাদাত করছ, তারা কি কোন কিছু সৃষ্টি করতে সক্ষম?

৪৪৬৫। মূসা ইবনু ইসমাঈল … ইউসুফ ইবনু মাহাক থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মারওয়ান ছিলেন হিজাযের গভর্নর। তাকে নিয়োগ করেছিলেন মু’আবিয়া (রাঃ)। তিনি একদা খুতবা দিলেন এবং তাতে ইয়াযীদ ইবনু মু’আবিয়ার কথা বারবার উল্লেখ করতে লাগলেন, যেন তাঁর পিতার ইন্তেকালের পর তার বায়আত গ্রহন করা হয়। এ সময় তাকে আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর কিছু কথা বললেন, মারওয়ান বললেন, তাঁকে পাকড়াও কর। তৎক্ষণাৎ তিনি আয়িশা (রাঃ) এর ঘরে চলে গেলেন। তারা তাঁকে ধরতে পারল না। তারপর মারওয়ান বললেন, এ তো সেই ব্যাক্তি যার সম্বন্ধে আল্লাহ নাযিল করেছেন, “আর এমন লোক আছে যে, মাতাপিতাকে বলে, তোমাদের জন্য আফসোস! তোমরা কি আমাকে এ ভয় দেখাতে চাও যে, আমি পুনরুত্থিত হব যদিও আমার পূর্বে বহু পুরুষ গত হয়েছে, তখন তার মাতাপিতা আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করে বলে, দুর্ভোগ তোমার জন্য। বিশ্বাস স্থাপন কর, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি অবশ্যই সত্য। কিন্তু সে বলে এ তো অতীতকালের উপকথা ব্যতীত কিছুই নয়।”

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৬৬ | 4466 | ٤٤٦٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ فلما رأوه عارضا مستقبل أوديتهم قالوا هذا عارض ممطرنا بل هو ما استعجلتم به ريح فيها عذاب أليم “এরপর যখন তাদের উপত্যকার দিকে মেঘ আসতে দেখল তখন তারা বলতে লাগল, এ তো মেঘ, আমাদের বৃষ্টি দান করবে (হুদ বলল) এ তো যা তোমরা ত্বরান্বিত করতে চেয়েছ, এতে রয়েছে এ ঝড়- মর্মন্তুদ শাস্তি বহনকারী।” (৪৬ঃ ২৪) ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, عارض অর্থ মেঘ।
৪৪৬৬। আহমদ (রহঃ) … নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এমনভাবে কখনো হাসতে দেখিনি, যাতে তাঁর কন্ঠনালীর আলজিভ দেখা যায়। তিনি মুচকি হাসতেন। যখনই তিনি মেঘ অথবা ঝঞ্ঝা বায়ু দেখতেন, তখনই তাঁর চেহারায় তা ফুটে উঠত। আয়িশা (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মানুষ যখন মেঘ দেখে, তখন বৃষ্টির আশায় আনন্দিত হয়। কিন্তু আপনি যখন মেঘ দেখেন, তখন আমি আপনার চেহারায় আতংকের ছাপ পাই। তিনি বললেন, হে আয়িশা! এতে যে আযাব নেই, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই। বাতাসের দ্বারাই তো এক কওমকে আযাব দেয়া হয়েছে। সে কওম তো আযাব দেখে বলেছিল, এ তো আমাদের বৃষ্টি দান করবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৬৭ | 4467 | ٤٤٦۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وتقطعوا أرحامكم “এবং আত্মীয়ের বন্ধন ছিন্ন করবে।”
সুরা মুহাম্মদ

أَوْزَارَهَا তার অস্ত্র, যাতে মুসলিম ব্যতীত আর কেউ বাকী না থাকে। عَرَّفَهَا অর্থ, বর্ণনা করে দিয়েছেন তার সম্বন্ধে। মুজাহিদ বলেন, مَوْلَى الَّذِيْنَاٰمَنُوْا অর্থাৎ তাদের অভিভাবক। عَزَمَ الْأَمْرُ অর্থ, কোন বিষয়ের তথা জিহাদের সিদ্ধান্ত হলে। لَا تَهِنُوْا অর্থাৎ তোমরা দুর্বল হয়ো না। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, أَضْغَانَهُمْ তাদের হিংসা। اٰسِنٍ অর্থ, দূষিত হয়ে স্বাদ বদলে গেছে।

৪৪৬৭ খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ্ তা’আলা সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করেন। এ থেকে তিনি ফারেগ হলে ‘রাহিম’ (রক্তসম্পর্ক) দাঁড়িয়ে পরম করুণাময়ের আঁচল টেনে ধরল। তিনি তাকে বললেন, থামো। সে বলল, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী ব্যাক্তি থেকে আশ্রয় প্রার্থনার জন্যই আমি এখানে দাঁড়িয়েছি। আল্লাহ্ বললেন, যে তোমাকে সম্পৃক্ত রাখে, আমিও তাকে সম্পৃক্ত রাখব; আর যে তোমার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে, আমিও তার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করব- এতে কি তুমি সন্তুষ্ট নও? সে বলল, নিশ্চয়ই, হে আমার প্রভু। তিনি বললেন, যাও তোমার জন্য তাই করা হল। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, ইচ্ছা হলে তোমরা পড়, “ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে।”

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৬৮ | 4468 | ٤٤٦۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وتقطعوا أرحامكم “এবং আত্মীয়ের বন্ধন ছিন্ন করবে।”
৪৪৬৮। ইব্রাহীম ইবনু হামযা (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (এরপর তিনি বলেন) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইচ্ছা হলে তোমরা পড় (“ক্ষমতার অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে।”)

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৬৯ | 4469 | ٤٤٦۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وتقطعوا أرحامكم “এবং আত্মীয়ের বন্ধন ছিন্ন করবে।”
৪৪৬৯। বিশর ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … মু’আবিয়া ইবনু আবূল মুযাররাদ (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (আবূ হুরায়রা বলেন) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইচ্ছা হলে তোমরা পড়, (ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৭০ | 4470 | ٤٤۷۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إنا فتحنا لك فتحا مبينا “নিশ্চয়ই আমি তোমাদের দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়।”
সুরা ফাতহ

মুজাহিদ বলেন, سِيْمَاهُمْ فِيْ وُجُوْهِهِمْ তাদের মুখমন্ডলের নিদর্শন। মানসূর মুজাহিদের সূত্রে বর্ণনা করেন যে, এর অর্থ হচ্ছে বিনয় ও নম্রতা। شَطْأَهُ অর্থ, কচি পাতা। فَاسْتَغْلَظَ পুষ্ট হয়। سُوْقِهِ ঐ কান্ড যা গাছকে দাঁড় করিয়ে রাখে। دَآئِرَةُالسَّوْءِ শব্দটি এখানে رَجُلُالسَّوْءِ এর মত ব্যবহৃত হয়েছে। دَآئِرَةُالسُّوْءِ শাস্তি। تُعَزِّرُوْهُ তাঁরা তাঁকে সাহায্য করে। شَطْأَهُ কচি পাতা, একটি বীজ থেকে দশ, আট এবং সাতটি করে বীজ অঙ্কুরিত হয় এবং একটি অপরটিকে শক্তিশালী করে। আল্লাহর বাণীঃ فَاٰزَرَهُ (এরপর এটা শক্তিশালী হয়) এর মধ্যে এ কথাই বর্ণনা করা হয়েছে। অঙ্কুর যদি একটি হয় তাহলে তা কান্ডের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। আল্লাহ্ তা‘আলা এ উপমাটি নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্বন্ধে ব্যবহার করেছেন, কেননা, প্রথমত তিনি একাই দাওয়াত নিয়ে উত্থিত হয়েছেন, তারপর সহাবীদের দ্বারা (আল্লাহ্) তাকে শক্তিশালী করেছেন যেমন বীজ থেকে উদগত অঙ্কুর দ্বারা বীজ শক্তিশালী হয়।

৪৪৭০। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) … আসলাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের বেলা কোন এক সফরে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-ও চলছিলেন। উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) তাঁকে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করলেন, কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কোন জবাব দেননি। তিনি আবার তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, কিন্তু তিনি কোন জবাব দিলেন না। তারপর তিনি আবার তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, এবারও তিনি কোন জবাব দিলেন না। তখন উমর (রাঃ) (নিজেকে) বললেন, উমরের মা হারাক। তুমি তিনবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশ্ন করলে, কিন্তু একবারও তিনি তোমার জবাব দিলেন না। উমর (রাঃ) বলেন, তারপর আমি আমার উটটি দ্রুত চালিয়ে লোকদের আগে চলে গেলাম এবং আমার ব্যাপারে কুরআন নাযিলের আশংকা করলাম। বেশিক্ষণ হয়নি, তখন শুনলাম এক আহবানকারী আমাকে আহবান করছে। আমি (মনে মনে) বললাম, আমি তো আশংকা করছিলাম যে, আমার ব্যাপারে কোন আয়াত নাযিল হতে পারে। তারপর আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, আজ রাতে আমার উপর এমন একটি সূরা অবতীর্ণ হয়েছে, যা আমার কাছে, এই পৃথিবী, যার ওপর সূর্য উদিত হয়, তা থেকেও অধিক প্রিয়। তারপর তিনি পাঠ করলেন, “নিশ্চয়ই আমি তোমাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৭১ | 4471 | ٤٤۷۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إنا فتحنا لك فتحا مبينا “নিশ্চয়ই আমি তোমাদের দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়।”
৪৪৭১। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, إِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُبِينًا “এর দ্বারা হুদাবিয়ার সন্ধি বোঝানো হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৭২ | 4472 | ٤٤۷۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إنا فتحنا لك فتحا مبينا “নিশ্চয়ই আমি তোমাদের দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়।”
৪৪৭২। মুসলিম ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন সূরা ফাতহ্ সুমধুর কণ্ঠে পাঠ করেন। মু’আবিয়া (রাঃ) বলেন, আমি ইচ্ছা করলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কিরাআত তোমাদের নকল করে শোনাতে পারি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৭৩ | 4473 | ٤٤۷۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ليغفر لك الله ما تقدم من ذنبك وما تأخر ويتم نعمته عليك ويهديك صراطا مستقيما “যেন আল্লাহ্‌ তোমার অতীত ও ভবিষ্যৎ ত্রুটিসমূহ মার্জনা করেন এবং তোমার প্রতি তার অনুগ্রহ পূর্ণ করেন ও তোমাকে সরল পথে পরিচালিত করেন (৪৮ঃ ২)
৪৪৭৩। সাদাকা ইবনু ফায্ল (রহঃ) … মুগীরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত বেশি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন যে, তাঁর কদমদ্বয় ফুলে যেতো। তাঁকে বলা হল, আল্লাহ্ তো আপনার অতীত ও ভবিষ্যতের ত্রুটিসমূহ মাজনা করে দিয়েছেন। তিনি বললেন, আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না?

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৭৪ | 4474 | ٤٤۷٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ليغفر لك الله ما تقدم من ذنبك وما تأخر ويتم نعمته عليك ويهديك صراطا مستقيما “যেন আল্লাহ্‌ তোমার অতীত ও ভবিষ্যৎ ত্রুটিসমূহ মার্জনা করেন এবং তোমার প্রতি তার অনুগ্রহ পূর্ণ করেন ও তোমাকে সরল পথে পরিচালিত করেন (৪৮ঃ ২)
৪৪৭৪। হাসান ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে এত বেশি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন যে, তাঁর দুই পা ফেটে যেতো। আয়িশা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ্ তো আপনার আগের ও পরের ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করে দিয়েছেন? তবু আপনি কেন তা করছেন? তিনি বললেন, আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হতে ভালবাসবো না? তাঁর মেদ বেড়ে গেলে* তিনি বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। যখন রুকু করার ইচ্ছা করতেন, তখন তিনি দাঁড়িয়ে কিরাআত পড়তেন, তারপর রুকূ করতেন।

* অর্থাৎ তিনি বার্ধক্যে উপনীত হলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৭৫ | 4475 | ٤٤۷۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إنا أرسلناك شاهدا ومبشرا ونذيرا আমি তোমাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী রূপে (৪৮ঃ ৮)
৪৪৭৫। আবদুল্লাহ (রহঃ) … আমর ইবনু আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, কুরআনের এ আয়াত, “আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে” তাওরাতে আল্লাহ্ এভাবে বলেছেন, হে নাবী আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদবাদা ও উম্মী লোকদের মুক্তি দাতারূপে। তুমি আমার বান্দা ও রাসূল। আমি তোমার নাম নির্ভরকারী (মুতাওয়াক্কিল) রেখেছি যে রূঢ় ও কঠোরচিত্ত নয়, বাজারে শোরগোলকারী নয় এবং মন্দ মন্দ দ্বারা প্রতিহতকারীও নয়; বরং তিনি ক্ষমা করবেন এবং উপেক্ষা করবেন। বক্র জাতিকে সোজা না করা পর্যন্ত আল্লাহ্ তাঁর জান কবয করবেন না। তা এভাবে যে, তারা বলবে, আল্লাহ্ ছাড়া ইলাহ নেই। ফলে খুলে যাবে অন্ধ চোখ, বধির কান এবং পর্দায় ঢাকা অন্তরসমূহ।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৭৬ | 4476 | ٤٤۷٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ هو الذي أنزل السكينة في قلوب المؤمنين তিনিই মুমিনদের অন্তরে প্রশান্তি প্রদান করেন। (৪৮ঃ ৪)
৪৪৭৬. উবায়দুল্লাহ্ ইবনু মূসা (রহঃ) … বারা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জনৈক সাহাবী কিরাআত পাঠ করছিলেন। তাঁর একটি ঘোড়া ঘরে বাঁধা ছিল। হঠাৎ তা পালিয়ে যেতে লাগলো। সে ব্যাক্তি বেরিয়ে এসে নজর করলেন; কিন্তু কিছুই দেখতে পেলেন না। ঘোড়াটি ভেগেই যাচ্ছিল। যখন ভোর হল তখন তিনি ঘটনাটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বর্ণনা করলে তিনি বললেন, এ হল সেই প্রশান্তি, যা কুরআন তিলাওয়াত করার সময় নাযিল হয়ে থাকে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৭৭ | 4477 | ٤٤۷۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إذ يبايعونك تحت الشجرة যখন বৃক্ষতলে তারা তোমার কাছে বায়আত গ্রহন করল। (৪৮ঃ ১৮)
৪৪৭৭। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুদায়বিয়ার (সন্ধির) দিন আমরা এক হাজার চারশ’ লোক ছিলাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৭৮ | 4478 | ٤٤۷۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إذ يبايعونك تحت الشجرة যখন বৃক্ষতলে তারা তোমার কাছে বায়আত গ্রহন করল। (৪৮ঃ ১৮)
৪৪৭৮। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মাগাফফাল মুযানী (রাঃ) (যিনি সন্ধির সময় উপস্থিত ছিলেন) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই আঙ্গুলের মাঝে কংকর নিয়ে নিক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন। উকবা ইবনু সুহবান (রহঃ) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল মুযানী (রাঃ) কে গোসলখানায় পেশাব করা সম্পর্কে বর্ণনা করতে শুনেছি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৭৯ | 4479 | ٤٤۷۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إذ يبايعونك تحت الشجرة যখন বৃক্ষতলে তারা তোমার কাছে বায়আত গ্রহন করল। (৪৮ঃ ১৮)
৪৪৭৯। মুহাম্মদ ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ) … সাবিত ইবনু দাহ্হাক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনিও বৃক্ষতলে বায়আতকারী সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৮০ | 4480 | ٤٤۸۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إذ يبايعونك تحت الشجرة যখন বৃক্ষতলে তারা তোমার কাছে বায়আত গ্রহন করল। (৪৮ঃ ১৮)
৪৪৮০। আহমাদ ইবনু ইসহাক সুলামী (রহঃ) … হাবীব ইবনু আবূ সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ ওয়ায়িল (রাঃ) এর কাছে কিছু জিজ্ঞেস করার জন্য এলে, তিনি বললেন, আমরা সিফফীনের ময়দানে ছিলাম। এমন সময় এক ব্যাক্তি বললেন, তোমরা কি সে লোকদেরকে দেখতে পাচ্ছ না, যাদের আল্লাহর কিতাবের দিকে আহবান করা হচ্ছে? আলী (রাঃ) বললেন, হাঁ। তখন সাহল ইবনু হুনায়ফ (রাঃ) বললেন, প্রথমে তোমরা নিজেদের খবর নাও। হুদায়বিয়ার দিন অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মক্কার মুশরিকদের মধ্যে যে সন্ধি হয়েছিল, আমরা তা দেখেছি। যদি আমরা একে যুদ্ধ মনে করতাম, তাহলে অবশ্যই আমরা যুদ্ধ করতাম। সেদিন উমর (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলেছিলেন, আমরা কি হকের উপর নই, আর তারা কি বাতিলের উপর নয়? আমাদের নিহত ব্যাক্তিরা জান্নাতে, আর তাদের নিহত ব্যাক্তিরা কি জাহান্নামে যাবে না? তিনি বললেন, হাঁ। তখন উমর (রাঃ) বললেন, তাহলে কেন আমাদের দ্বীনের ব্যাপারে অবমাননাকর শর্ত আরোপ করা হবে এবং আমরা ফিরে যাব? অথচ আল্লাহ্ আমাদেরকে এ সন্ধির ব্যাপারে অবমাননাকর শর্ত আরোপ করা হবে এবং আমরা ফিরে যাব? অথচ আল্লাহ্ আমাদেরকে এ সন্ধির ব্যাপারে নির্দেশ দেননি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে খাত্তাবের পুত্র! আমি আল্লাহর রাসূল। আল্লাহ্ কখনো আমাকে ধ্বংস করবেন না। উমর (রাঃ) গোস্বায় ক্ষুণ্ন মনে ফিরে গেলেন। তিনি ধৈর্য ধারণ করতে পারলেন না। তারপর তিনি আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর কাছে গেলেন এবং বললেন, হে আবূ বকর! আমরা কি হকের উপর নই এবং তারা কি বাতিলের উপর নয়? তিনি বললেন, হে খাত্তাবের পুত্র! নিশ্চয়ই তিনি আল্লাহর রাসূল। আল্লাহ্ কখনো তাকে ধ্বংস করবেন না। এ সময় সূরা ফাতহ্ নাযিল হয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৮১ | 4481 | ٤٤۸۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ لا ترفعوا أصواتكم فوق صوت النبي (হে মুমিনগণ) তোমরা নবীর কণ্ঠস্বরের উপর নিজেদের কণ্ঠ উঁচু করোনা (৪৯ঃ২) تشعرون মানে তোমরা জ্ঞাত আছ। الشاعر শব্দটি এ ধাতু থেকেই নির্গত হয়েছে।
সুরা হুজুরাত

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, لَاتُقَدِّمُوْا অর্থ, রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কোন বিষয় তোমরা জিজ্ঞেস করবে না যতক্ষণ না, আল্লাহ্ তাঁর যবানে এর ফয়সালা জানিয়ে দেন। امْتَحَنَ মানে পরিশুদ্ধ করেছেন। لَا تَنَابَزُوْا ইসলাম গ্রহণের পর অপরকে যেন কুফরীর প্রতি না ডাকা হয়। يَلِتْكُمْ মানে হ্রাস করা হবে তোমাদের أَلَتْنَا মানে হ্রাস করেছি আমি।

৪৪৮১। ইয়াসারা ইবনু সাফওয়ান ইবনু জামীল লাখমী (রহঃ) … ইবনু আবূ মুলায়কা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উত্তম দুই জন- আবূ বকর ও উমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কন্ঠস্বর উঁচু করে ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছিলেন। যখন বনী তামীম গোত্রের একদল লোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসেছিল। তাদের একজন বনী মাজাশে গোত্রের আকরা ইবনু হাবিসকে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তাব করল এবং অপরজন অন্য ব্যাক্তির নাম প্রস্তাব করল। নাফি বলেন, এ লোকটির নাম আমার মনে নেই। তখন আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) উমর (রাঃ) কে বললেন, আপনার ইচ্ছাই হল কেবল আমার বিরোধিতা করা। তিনি বললেন, না, আপনার বিরোধিতা করার ইচ্ছা আমার নেই। এ ব্যাপারটি নিয়ে তাঁদের কন্ঠস্বর উঁচু হয়ে গেল। তখন আল্লাহ্ তা’আলা নাযিল করলেন, “হে মু’মিনগণ! তোমরা নাবীর কন্ঠস্বরের উপর নিজেদের কন্ঠস্বর উঁচু করবে না” … শেষ পর্যন্ত।

ইবনু যুবায়র (রাঃ) বলেন, এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর উমর (রাঃ) এতো আস্তে কথা বলতেন যে, দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস না করা পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনতে পেতেন না। তিনি আবূ বকর (রাঃ) সম্পর্কে এ ধরনের কথা বর্ণনা করেন নি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৮২ | 4482 | ٤٤۸۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ لا ترفعوا أصواتكم فوق صوت النبي (হে মুমিনগণ) তোমরা নবীর কণ্ঠস্বরের উপর নিজেদের কণ্ঠ উঁচু করোনা (৪৯ঃ২) تشعرون মানে তোমরা জ্ঞাত আছ। الشاعر শব্দটি এ ধাতু থেকেই নির্গত হয়েছে।
৪৪৮২। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাবিত ইবনু কায়স (রাঃ) কে খুঁজে পেলেন না। একজন সাহাবী বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আপনার কাছে তাঁর সংবাদ নিয়ে আসছি। তারপর লোকটি তাঁর কাছে গিয়ে দেখলেন যে, তিনি তাঁর ঘরে অবনত মস্তকে বসে আছেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনার কি অবস্থা? তিনি বললেন, খারাপ। কারণ এই (অধম) তার কন্ঠস্বর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কন্ঠস্বরের চেয়ে উঁচু করে কথা বলত। ফলে, তার আমল বরবাদ হয়ে গেছে এবং সে জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। তারপর লোকটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ফিরে এসে সংবাদ দিলেন যে, তিনি এমন এমন কথা বলছেন। মূসা বলেন, এরপর লোকটি এক মহাসুসংবাদ নিয়ে তাঁর কাছে ফেরে গেলেন (এবং বললেন) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন। তুমি যাও এবং তাকে বল, তুমি জাহান্নামী নও; বরং তুমি জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৮৩ | 4483 | ٤٤۸۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ “যারা ঘরের পেছন থেকে আপনাকে উচ্চ স্বরে ডাকে, তাদের অধিকাংশই নির্বোধ” (৪৯ঃ ৪)
৪৪৮৩। হাসান ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … ইবনু আবূ মুলায়কা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) তাদেরকে জানিয়েছেন যে, একবার বনী তামীম গোত্রের একদল লোক সাওয়ার হয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলেন। আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) বললেন, কা’কা ইবনু মাবাদ (রাঃ) কে আমীর বানানো হোক এবং উমর (রাঃ) বললেন, আকরা ইবনু হাবিস (রাঃ) কে আমীর নিযুক্ত করা হোক। তখন আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) বললেন, আপনার ইচ্ছা হল কেবল আমার বিরোধিতা করা। উত্তরে উমর (রাঃ) বললেন, আমি আপনার বিরোধিতা করার ইচ্ছা করিনি। এ নিয়ে তাঁরা পরস্পর তর্ক-বিতর্ক করতে লাগলেন, এক পর্যায়ে তাদের কন্ঠস্বর উঁচু হয়ে গেল। এ উপলক্ষে আল্লাহ্ নাযিল করলেন, “হে মু’মিনগণ! আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের সমক্ষে তোমরা কোন বিষয়ে অগ্রণী হয়ো না। … আয়াত শেষ।”

অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وَلَوْ أَنَّهُمْ صَبَرُوا حَتَّىٰ تَخْرُجَ إِلَيْهِمْ لَكَانَ خَيْرًا لَهُمْ ۚ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ “তুমি বের হয়ে তাদের কাছে আসা পর্যন্ত যদি তারা ধৈর্যধারণ করত, তা তোমার জন্য উত্তম হতো। আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (৪৯ঃ ৫)

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৮৪ | 4484 | ٤٤۸٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وتقول هل من مزيد “এবং জাহান্নাম বলবে আরো আছে কি?”
সুরা কাফ

رَجْعٌ মানে প্রত্যাবর্তন। فُرُوْجٍ মানে ফাটল। এর একবচন হলো وَرِيْدٌ فِيْ حَلْقِهٰ ঘাড়ের রগ। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, مَا تَنْقُصُ الْأَرْضُ দ্বারা তাদের ঐ সমস্ত হাড্ডিকে বোঝানো হয়েছে, যেগুলোকে মৃত্তিকা ক্ষয় করে। تَبْصِرَةً জ্ঞানস্বরূপ। حَبَّ الْحَصِيْدِ গম। بَاسِقَاتٍ সমুন্নত ও লম্বা। أَفَعَيِيْنَا আমাদের জন্য কি ক্লান্তিকর ছিল? وَقَالَ قَرِيْنُه ঐ শায়ত্বন যা তার জন্য নির্দিষ্ট হয়েছে। فَنَقَّبُوْا তারা ভ্রমণ করেছে। أَوِ الْقَى السَّمْعَ অর্থ, যে কুরআন শ্রবণ করে নিবিষ্ট চিত্তে, এ ব্যতীত অন্য কোন দিকে তার মনোযোগ নেই। رَقِيْبٌ عَتِيْدٌ মানে প্রহরী। سَآئِقٌ وَشَهِيْدٌ দু’জন মালাক- একজন লেখক এবং অন্যজন সাক্ষী। شَهِيْدٌ অন্তরের অন্তস্থল থেকে সাক্ষ্যদাতা ব্যক্তিকে شَهِيْدٌ বলা হয়। لُغُوْبٍ ক্লান্তি। মুজাহিদ (রহঃ) ব্যতীত অন্য মুফাসসিরগণ বলেছেন, نَضِيْدٌ ফুলের কলি যা এখনো ফুটেনি। এখানে শব্দটি ভাজ করা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রস্ফুটিত ফুলের কলিকে نَضِيْدٌ বলা হয় না। কারী আসিম (রহঃ) সূরাহ ‘কাফ’-এ বর্ণিত إدْبَارِ السُّجُوْدِ এর হামযার মধ্যে যবর দেন এবং সূরাহ তূর-এ উল্লিখিত إِدْبَارِالنُّجُوْمِ এর হামযার মধ্যে যের দেন। তবে উভয় স্থানে হামযাতে যেরও দেয়া যায় অথবা যবরও দেয়া যায়। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, يَوْمَ الْخُرُوْجِ কবর থেকে বের হওয়ার দিন।

৪৪৮৪। আবদুল্লাহ ইবনু আবূল আসওয়াদ (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হলে জাহান্নাম বলবে, আরো আছে কি? পরিশেষে আল্লাহ্ তাঁর পা সেখানে রাখবেন, তখন সে বলবে, আর না, আর না।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৮৫ | 4485 | ٤٤۸۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وتقول هل من مزيد “এবং জাহান্নাম বলবে আরো আছে কি?”
৪৪৮৫। মুহাম্মদ ইবনু কাযযান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে মারফূ হাদীস হিসাবে বর্ণিত। তবে আবূ সুফয়ান এ হাদীসটিকে অধিকাংশ সময় মওকুফ হাদীস হিসাবে বর্ণনা করেছেন। জাহান্নামকে বলা হবে, তুমি কি পূর্ণ হয়ে গিয়েছ? জাহান্নাম বলবে, আরো আছে কি? তখন আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন আপন চরণ তাতে রাখবেন। তখন জাহান্নাম বলবে, আর নয়, আর নয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৮৬ | 4486 | ٤٤۸٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وتقول هل من مزيد “এবং জাহান্নাম বলবে আরো আছে কি?”
৪৪৮৬। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাত ও জাহান্নাম পরস্পর বিতর্কে লিপ্ত হয়। জাহান্নাম বলে দাম্ভিক ও পরাক্রমশালীদের দ্বারা আমাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। জান্নাত বলে, আমার কি হল? আমাতে কেবল মাত্র দুর্বল এবং নিরীহ লোকেরাই প্রবেশ করছে। তখন আল্লাহ্ তা’আলা জান্নাতকে বলবেন, তুমি আমার রহমত। তোমার দ্বারা আমার বান্দাদের যাকে ইচ্ছা আমি অনুগ্রহ করব। আর তিনি জাহান্নামকে বলবেন, তুমি হলে আযাব। তোমার দ্বারা আমার বান্দাদের যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেব। জান্নাত ও জাহান্নাম প্রত্যেকের জন্যই রয়েছে পরিপূর্ণতা। তবে জাহান্নাম পূর্ণ হবে না যতক্ষণ না তিনি তাঁর কদম মুবারক তাতে রাখবেন। তখন সে বলবে, বস, বস, বস। তখন জাহান্নাম ভরে যাবে এবং এর এক অংশ অপর অংশের সাথে মুড়িয়ে দেয়া হবে। আল্লাহ্ তাঁর সৃষ্টির কারো প্রতি জুলুম করবেন না। অবশ্য আল্লাহ্ তা’আলা জান্নাতের জন্য অন্য মাখলুক পয়দা করবেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৮৭ | 4487 | ٤٤۸۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وسبح بحمد ربك قبل طلوع الشمس وقبل الغروب “এবং তোমার প্রতিপালকের প্রশংসা-পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে” (৫০ঃ ৩৯)
৪৪৮৭। ইসহাক ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) … জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একরাতে আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বসা ছিলাম। তখন তিনি চৌদ্দ তারিখের রজনীর চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমরা যেমন এ চাঁদটি দেখতে পাচ্ছ, অনুরূপভাবে তোমরা তোমাদের রবকে দেখতে পাবে এবং তাঁকে দেখার ব্যাপারে (তোমরা একে অন্যের কারণে) বাধাপ্রাপ্ত হবে না। তাই তোমাদের সামর্থ্য থাকলে সূর্যোদয়ের আগে এবং সূর্যাস্তের আগের সালাত (নামায/নামাজ)-এর ব্যাপারে প্রভাবিত হবে না। তারপর তিনি পাঠ করলেন, “আপনার রবের প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের পূর্বে।” (৫০ঃ ৩৯)

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৮৮ | 4488 | ٤٤۸۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وسبح بحمد ربك قبل طلوع الشمس وقبل الغروب “এবং তোমার প্রতিপালকের প্রশংসা-পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে” (৫০ঃ ৩৯)
৪৪৮৮। আদম (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা’আলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রত্যেক সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর তাঁর পবিত্রতা বর্ণনার নির্দেশ দিয়েছেন।

আল্লাহ্‌র বাণীঃ وَأَدْبَارَ السُّجُودِ এর দ্বারা তিনি এ অর্থ করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৮৯ | 4489 | ٤٤۸۹

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা যারিয়াত

‘আলী (রাঃ) বলেছেন, الرِّيَاحُ বায়ুরাশি। অন্যদের হতে বর্ণিত। تَذْرُوْهُ মানে তাকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। وَفِيْٓ أَنْفُسِكُمْ أَفَلَا تُبْصِرُوْنَ তোমাদের মধ্যেও নিদর্শন রয়েছে, (‘‘তোমরা কি অনুধাবন করবে না?) অর্থাৎ তোমরা খানাপিনা কর এক পথে এবং তা বের হয় দু’পথ দিয়ে। فَرَاغَ মানে সে ফিরে এল। فَصَكَّتْ সে মুষ্টি বন্ধ করে নিজ কপালে মারল। الرَّمِيْمُ যমীনের উদ্ভিদ যখন শুকায় এবং তা মাড়াই করা হয়। لَمُوْسِعُوْنَ অবশ্য সম্প্রসারণকারী। এমনিভাবে عَلَى الْمُوْسِعِ قَدَرَهُ অর্থাৎ সামর্থ্যবান। زَوْجَيْنِ নারী-পুরুষ, আলাদা আলাদা বর্ণের এবং মিষ্টি ও টক উভয়কেই زَوْجَانِ বলা হয়। فَفِرُّوْآ إِلَى اللهِ আল্লাহর নাফরমানী ত্যাগ করে তোমরা আল্লাহর আনুগত্যের পানে এসো। إِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ মানুষ ও জিন উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে যারা ভাগ্যবান, তাদেরই আমার তাওহীদের উপর বিশ্বাস স্থাপনের জন্য সৃষ্টি করেছি। কোন কোন মুফাসসির বলেছেন, এর অর্থ হচ্ছে, তাদের সকলকেই আল্লাহর বন্দেগীর জন্য সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু কেউ তা করেছে আর কেউ তা ত্যাগ করেছে। এ আয়াতে মুতাযিলাদের জন্য তাদের পক্ষে কোন প্রমাণ নেই। الذَّنُوْبُ বড় বালতি। মুজাহিদ বলেন, صَرَّةٍ চীৎকার। ذُنُوْبًا রাস্তা। الْعَقِيْمُ যে নারী সন্তান জন্ম দেয় না। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, الْحُبُكُ আকাশের সুবিন্যস্ততা ও তার সৌন্দর্য। فِيْغَمْرَةٍ নিজেদের ভুলের দিকে ধাবিত হচ্ছে। অন্য হতে বর্ণিত যে, تَوَاصَوْا একে অপরের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছে আরও বলেছেন, مُسَوَّمَةً চিহ্নিত। مُسَوَّمَةً শব্দটি السِيِّمًا থেকে উদ্ভূত। قُتِلَ الْإِنْسَانُ অভিশপ্ত।

সুরা তূর

ক্বাতাদাহ (রহ.) বলেন, مَسْطُوْرٍ লিখিত। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, সুরয়ানী ভাষায় পর্বতকে طُّوْرُ বলা হয়। رَقٍّمَّنْشُوْرٍ (উন্মুক্ত) সহীফা। السَّقْفِ الْمَرْفُوْعِ (সমুন্নত) আকাশ। الْمَسْجُوْرِ জ্বলন্ত। হাসান (রহ.) বলেন, (সমুদ্র) জ্বলে উঠবে। ফলে সমস্ত পানি ফুরিয়ে যাবে এবং এক ফোঁটা পানি থাকবে না। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, أَلَتْنَاهُمْ আমি হ্রাস করেছি। অন্যান্য মুফাসসির বলেছেন, تَمُوْرُ আন্দোলিত হবে। أَحْلَامُهُمْ বুদ্ধি। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, الْبَرُّ দয়ালু। كِسْفًا খন্ড, الْمَنُوْنُ মৃত্যু। অন্যান্য মুফাসসির বলেছেন, يَتَنَازَعُوْنَ তারা আদান-প্রদান করবে।

৪৪৮৯ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ওযর পেশ করলাম যে, আমি অসুস্থ। তিনি বললেন, তুমি সওয়ার হয়ে লোকদের পেছন তাওয়াফ করে নাও। তখন আমি তাওয়াফ করলাম। এ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবার এক পার্শ্বে দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন এবং وَالطُّوْرِ وَكِتَابٍ مَّسْطُوْرٍ তিলাওয়াত করছিলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৯০ | 4490 | ٤٤۹۰

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
৪৪৯০। হুমায়দী (রহঃ) … জুবায়র ইবনু মুত’ইম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মাগরিবে সূরা তূর পাঠ করতে শুনেছি। যখন তিনি এ আয়াত পর্যন্ত পৌছেনঃ তারা কি স্রষ্টা ব্যতীত সৃষ্টি হয়েছে, না তারা নিজেরাই স্রষ্টা? আসমান-যমীন কি তারাই সৃষ্টি করেছে? আসলে তারা অবিশ্বাসী। আমার প্রতিপালকের ধনভাণ্ডার কি তাদের কাছে রয়েছে, না তারাই্ এ সমুদয়ের নিয়ন্তা? তখন আমার অন্তর প্রায় উড়ে যাবার অবস্থা হয়েছিল। সুফয়ান (রহঃ) বলেন, আমি যুহরীকে মুহাম্মদ ইবনু জুবায়ির ইবনু মুত’ইমকে তার পিতার বর্ণনা করতে শুনেছি, যা আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মাগরিবে সূরা তূর পাঠ করতে শুনেছি। কিন্তু এর অতিরিক্ত আমি শুনেছি যা তাঁরা আমার কাছে বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৯১ | 4491 | ٤٤۹۱

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা নাজ্‌ম

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, ذُوْ مِرَّةٍ শক্তিশালী। قَابَ قَوْسَيْنِ দুই ধনুকের ছিলার পরিমাণ। ضِيْزَىْ বক্রতা وَأَكْدٰى সে তাঁর দান বন্ধ করে দেয়। رَبُّ الشِّعْرٰى জওযারামীর মিরজাম নক্ষত্র। الَّذِيْوَفّٰى সে তাঁর প্রতি ন্যস্ত দায়িত্ব পালন করেছে। أَزِفَتْ الْاٰزِفَةُ ক্বিয়ামাত সন্নিকট। سَامِدُوْنَ দ্বারা بَرْطَمَةُ নামক খেলাধুলা বোঝানো হয়েছে। ইকরামা বলেন, হামারিয়্যাহ ভাষায় গান গাওয়াকে سَامِدُوْنَ বলা হয়। ইব্রাহীম (রহঃ) বলেন, أَفَتَجْحَدُوْنَه তোমরা কি তাঁর সঙ্গে বিতর্ক করবে? যারা এ শব্দটিকে أَفَتَجْحَدُوْنَه পড়ে, তাদের কিরাআত অনুসারে এর অর্থ হবে أَفَتَجْحَدُوْنَه তোমরা কি তার কথাকে অস্বীকার করবে? مَا زَاغَ الْبَصَرُ (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর) দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি وَمَاطَغٰى এবং তাঁর দৃষ্টি লক্ষ্যভ্রষ্টও হয়নি। فَتَمَارَوْا তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করল। হাসান (রহঃ) বলেন, إِذَاهَوٰى যখন সে অদৃশ্য হয়ে গেল। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, أَغْنٰىوَأَقْنٰى তিনি দান করলেন এবং খুশী করে দিলেন।

৪৪৯১। ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) … মাসরূক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, আম্মা! মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তাঁর রবকে দেখেছিলেন? তিনি বললেন, তোমার কথায় আমার গায়ের পশম কাটা দিয়ে খাড়া হয়ে গেছে। তিনটি কথা সম্পর্কে তুমি কি অবগত নও? যে তোমাকে এ তিনটি কথা বলবে সে মিথ্যা বলবে। যদি কেউ তোমাকে বলে যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রতিপালককে দেখেছেন, তাহলে সে মিথ্যাবাদী। তারপর তিনি পাঠ করলেন, তিনি দৃষ্টির অধিগম্য নহেন কিন্তু দৃষ্টিশক্তি তাঁর অধিগত; এবং তিনই সূক্ষদর্শী, সম্যক পরিজ্ঞাত” “মানুষের এমন মর্যাদা নেই যে, আল্লাহ্ তাঁর সাথে কথা বলবেন, ওহীর মাধ্যম ছাড়া অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতিরেকে”। আর যে ব্যাক্তি তোমাকে বলবে যে, আগামীকাল কি হবে সে তা জানে, তাহলে সে মিথ্যাবাদী। তারপর তিনি তিলওয়াত করলেন, “কেউ জাননা আগামীকাল সে কি অর্জন করবে।” এবং তোমাকে যে বলবে যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কথা গোপন রেখেছেন, তাহলেও সে মিথ্যাবাদী। এরপর তিনি পাঠ করলেন, “হে রাসূল! তোমার প্রতিপালকের কাছ থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা প্রচার কর।” হ্যাঁ, তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীল (আলাইহিস সালাম) কে তাঁর নিজস্ব আকৃতিতে দু’বার দেখেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৯২ | 4492 | ٤٤۹۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ فكان قاب قوسين أو أدنى “ফলে তাদের মধ্যে দুই ধনুকের ছিলার ব্যবধান রইল অথবা তারও কম।” (৫৩ঃ ৯) অর্থাৎ ধনুকের দুই ছিলার সমান ব্যবধান রইল মাত্র।
৪৪৯২। আবূন্ নু’মান (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى * فَأَوْحَى إِلَى عَبْدِهِ مَا أَوْحَى আয়াত দু’টোর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীল (আলাইহিস সালাম) কে দেখেছেন। তাঁর ছয়’শ ডানা ছিল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৯৩ | 4493 | ٤٤۹۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ فأوحى إلى عبده ما أوحى “তখন আল্লাহ্‌ তার বান্দার প্রতি যা ওহী করার তা ওহী করলেন (৫৩ঃ ১০)
৪৪৯৩ তালক বি্ন গান্নাম (রহঃ) … শায়বানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যিরর (রহঃ) কে আল্লাহর বাণীঃ فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى * فَأَوْحَى إِلَى عَبْدِهِ مَا أَوْحَى এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমাকে আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীল (আলাইহিস সালাম) কে দেখেছেন। এ সময় তাঁর ডানা ছিল ছ’শ।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৯৪ | 4494 | ٤٤۹٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ لقد رأى من آيات ربه الكبرى “সে তো তার প্রতিপালকের মহান নিদর্শনাবলী দেখেছিল।” (৫৩ঃ ১৮)
৪৪৯৪। কাবীসা (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি ‏لَقَدْ رَأَى مِنْ آيَاتِ رَبِّهِ الْكُبْرَى আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবুজ রঙের একটি ‘রফরফ’ দেখেছিলেন যা সম্পূর্ণ আকাশ জুড়ে রেখেছিল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৯৫ | 4495 | ٤٤۹۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ أفرأيتم اللات والعزى “তোমরা কি ভেবে দেখেছ ‘লাত’ ও ‘উযযা’ সম্বন্ধে (৫৩ঃ ১৯)
৪৪৯৫। মুসলিম (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আল্লাহর বাণীঃ ‏اللاَّتَ وَالْعُزَّى এর ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে ‘লাত’ বলে এ ব্যাক্তিকে বোঝানো হয়েছে, যে হাজীদের জন্য ছাতু গুলত।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৯৬ | 4496 | ٤٤۹٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ أفرأيتم اللات والعزى “তোমরা কি ভেবে দেখেছ ‘লাত’ ও ‘উযযা’ সম্বন্ধে (৫৩ঃ ১৯)
৪৪৯৬। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি কসম করে বলে যে, লাত ও উযযার কসম, তাহলে সাথে সাথে তার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা উচিত। আর যে ব্যাক্তি তার সাথীকে বলে, এসো আমি তোমার সাথে জুয়া খেলব, তার সাদকা দেয়া উচিত।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৯৭ | 4497 | ٤٤۹۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ومناة الثالثة الأخرى “এবং তৃতীয় আরেকটি মানত সম্বন্ধে?” (৫৩ঃ ২০)
৪৪৯৭। হুমায়দী (রহঃ) … উরওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, মুশাল্লাল নামক স্থানে অবস্থিত মানাত দেবীর নামে যারা ইহরাম বাঁধতো, তারা সাফা ও মারওয়ার মাঝে তাওয়াফ করতো না। তারপর আল্লাহ্ তা’আলা নাযিল করলেন, “সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম।” এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুসলমানগণ তাওয়াফ করলেন। সুফয়ান (রহঃ) বলেন, ‘মানাত’ কুদায়দ নামক স্থানের মুশাল্লাল নামক জায়গায় অবস্থিত ছিল।

অপর এক বর্ণনায় আবদুর রহমান ইবনু খালিদ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এ আয়াতটি আনসারদের সম্বন্ধে নাযিল হয়েছে। ইসলাম গ্রহণের পূর্বের আনসার ও গাসসান গোত্রের লোকেরা মানাতের নামে ইহরাম বাঁধতো। হাদীসের অবশিষ্টাংশ সুফয়ানের বর্ণনার মতই।

অপর এক সূত্রে মা’মার (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনসারদের কতিপয় লোক মানাতের নামে ইহরাম বাঁধতো, মানাত মক্কা ও মদিনার মধ্যস্থলে রক্ষিত একটি দেবমূর্তি। তারা বললেন, হে আল্লাহর নাবী! মানাতের সম্মানার্থে আমরা সাফা ও মারওয়ার মাঝখানে তাওয়াফ করতাম না। এ হাদীসটি পূর্বের হাদীসেরই অনুরূপ।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৯৮ | 4498 | ٤٤۹۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ فاسجدوا لله واعبدوا “অতএব, আল্লাহকে সিজদা কর এবং তার ইবাদত কর” (৫৩ঃ ৬২)
৪৪৯৮। আবূ মা’মার (রহঃ) … ইবনু আব্বস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা নাজমের মধ্যে সিজদা করলেন এবং তাঁর সঙ্গে মুসলমান, মুশরিক, জ্বীন ও মানব সকলেই সিজদা করল। আইয়ূব (রহঃ) এর সূত্রে ইবনু তাহমান (রহঃ) উপরোক্ত বর্ণনার অনুসরণ করেছেন; তবে ইবনু উলাইয়া (রহঃ) আইয়ূব (রহঃ) এর সূত্রে ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর কথা উল্লেখ করেননি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৯৯ | 4499 | ٤٤۹۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ فاسجدوا لله واعبدوا “অতএব, আল্লাহকে সিজদা কর এবং তার ইবাদত কর” (৫৩ঃ ৬২)
৪৪৯৯। নাসর ইবনু আলী (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সিজদার আয়াত সম্বলিত নাযিল হওয়া সর্বপ্রথম সূরা হল আন-নাজম। এ সূরার মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদা করলেন এবং সিজদা করল তাঁর পেছনের সকল লোক। তবে এক ব্যাক্তিকে আমি দেখলাম, এক মুষ্টি মাটি হাতে তুলে তার ওপরে সিজদা করছে। এরপর আমি তাকে কাফের অবস্থায় নিহত হতে দেখেছি। সে হল উমাইয়া ইবনু খালফ।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫০০ | 4500 | ٤۵۰۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ “চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে, তারা কোন নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় (৫৪ঃ ১-২)
সুরা কামার

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, مُسْتَمِرٌّ বিলুূপ্ত। مُزْدَجَرٌ বাধা দানকারী। وَازْدُجِرَ তাকে পাগল করে দেয়ার ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। دُسُرٍ নৌকার কীলক। لِمَنْ كَانَ كُفِرَ এর কারণে যে নূহ্ (আঃ) কে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।جَزَآءً প্রতিদান আল্লাহর তরফ থেকে। مُحْتَضَرٌ তারা পানির জন্য উপস্থিত হবে। ইবনু জুবায়র (রহঃ) বলেন, مُهْطِعِيْنَ তারা দ্রুত চলবে। ইবনু জুবায়র (রহঃ) ব্যতীত অন্যরা বলেছেন, فَتَعَاطٰى তারপর সে উষ্ট্রীটিকে ধরল এবং তাকে হত্যা করল। الْمُحْتَظِرِ শুকনো গাছের বেড়া যা জ্বলে গেছে। ازْدُجِرَ – زَجَرْتُ ধাতু হতে بابافْتُعِلَ এর زَجَرْتُ، صيحه থেকে এর নিষ্পন্ন। كُفِرَ আমি নূহ্ এবং তাঁর কওমের সঙ্গে যা করেছি তা প্রতিদান ছিল ঐ ‘আমালের, যা তাঁর কওমের লোকেরা তাঁর ও তাঁর সাথীদের সঙ্গে করেছিল। مُسْتَقِرٌّ আল্লাহর তরফ থেকে শাস্তি। الْأَشَرُ দাম্ভিকতা ও অহংকার।

৪৫০০। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছে। এর এক খণ্ড পাহাড়ের উপর এবং অপর খণ্ড পাহাড়ের নিচে পড়েছিল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সাক্ষী থাক।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫০১ | 4501 | ٤۵۰۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ “চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে, তারা কোন নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় (৫৪ঃ ১-২)
৪৫০১। আলী (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রহঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, চন্দ্র বিদীর্ণ হল, এ সময় আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। এবং তা দু’টুকরা হয়ে গেল। তখন তিনি আমাদের বললেন, “তোমরা সাক্ষী থাক, তোমরা সাক্ষী থাক”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫০২ | 4502 | ٤۵۰۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ “চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে, তারা কোন নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় (৫৪ঃ ১-২)
৪৫০২। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রহঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যামানায় চাঁদ বিদীর্ণ হয়েছিল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫০৩ | 4503 | ٤۵۰۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ “চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে, তারা কোন নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় (৫৪ঃ ১-২)
৪৫০৩। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- মক্কাবাসীরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে একটি নিদর্শন দেখানোর দাবি জানালো। তখন তিনি তাদের চাঁদ বিদীর্ণ হওয়ার নিদর্শন দেখালেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫০৪ | 4504 | ٤۵۰٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ “চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে, তারা কোন নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় (৫৪ঃ ১-২)
৪৫০৪। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন- চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫০৫ | 4505 | ٤۵۰۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ “যা চলত আমার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এ-ই পুরস্কার তাঁর জন্য, যে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। আমি একে রেখে দিয়েছি এক নিদর্শনরূপে; অতএব উপদেশ গ্রহনকারী কেউ আছে কি?” (৫৪ঃ ১৫-১৫) কাতাদা (রহঃ) বলেন, আল্লাহ্‌ তা’আলা নুহ (আঃ) এর নৌকাটি রেখে দিয়েছেন। ফলে এ উম্মতের প্রথম যুগের লোকেরাও তা পেয়েছে।
৪৫০৫। হাফস ইবনু উমর (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‏فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ পড়তেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫০৬ | 4506 | ٤۵۰٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ “আমি কুরআন সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহনের জন্য; অতএব উপদেশ গ্রহনকারী কেউ আছে কি? মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, يسرنا আমি এর পঠন পদ্ধতি সহজ করে দিয়েছি।
৪৫০৬। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‏فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ পড়তেন। (মূল পাঠে ছিল مذكر কিন্তু আরবী ব্যাকরণের বিধান অনুযায়ী কুরআনে ব্যবহৃত হয়েছে مُدَّكِرٍ)

হাদিস নম্বরঃ ৪৫০৭ | 4507 | ٤۵۰۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ “উন্মুলিত খেজুর কান্ডের ন্যায়, কী কঠোর ছিল আমার শাস্তি ও সতর্কবাণী” (৫৪ঃ ২০-২১)
৪৫০৭। আবূ নু’আঈম (রহঃ) … আবূ ইসহাক (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি এক ব্যাক্তি আল-আসওয়াদ (রহঃ) এর নিকট জিজ্ঞেস করেছেন যে, আয়াতের মধ্যে فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ নাকি مُذَّكِرٍ? তিনি বললেন, “আমি আবদুল্লাহকে আয়াতখানা فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ‏ পড়তে শুনেছি। তিনি বলেছেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আয়াতখানা ‘দাল’ দিয়ে পড়তে শুনেছি”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫০৮ | 4508 | ٤۵۰۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ “ফলে তারা হয়ে গেল খোঁয়াড় প্রস্তুতকারী দ্বিখন্ডিত শুস্ক, শাখা-প্রশাখার ন্যায়। আমি কুরআনকে উপদেশ গ্রহনের জন্য সহজ করে দিয়েছি; অতএব উপদেশ গ্রহনকারী কেউ আছে কি? (৫৪ঃ ৩১-৩২)
৪৫০৮। আবদান (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‏فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ পড়েছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫০৯ | 4509 | ٤۵۰۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ প্রত্যুষে বিরামহীন শাস্তি তাদেরকে আঘাত করল এবং আমি বললাম, আস্বাদন কর আমার শাস্তি ও সতর্কবাণীর পরিনাম।
৪৫০৯। মুহাম্মদ (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ পড়েছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫১০ | 4510 | ٤۵۱۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ولقد أهلكنا أشياعكم فهل من مدكر “আমি ধ্বংস করেছি তোমাদের মত দলগুলোকে, অতএব, তা থেকে উপদেশ গ্রহনকারী কেউ আছে কি?” (৫৪ঃ ৫১)
৪৫১০। ইয়াহইয়া (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে فَهَلْ مِنْ مُذَّكِرٍ পড়ার পর তিনি বললেনঃ فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ

হাদিস নম্বরঃ ৪৫১১ | 4511 | ٤۵۱۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ سيهزم الجمع ويولون الدبر “এ দল তো শীঘ্র পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে (৫৪ঃ ৫৫)
৪৫১১। মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু হাওশাব (রহঃ) … মুহাম্মদ ইবনু ইয়াহইইয়া (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদর যুদ্ধের দিন একটি ছোট্ট তাঁবুতে অবস্থান করে এ দু’আ করেছিলেন- “হে আল্লাহ! আমি তোমাকে তোমার ওয়াদা ও অঙ্গীকার বাস্তবায়নের আবেদন করছি! হে আল্লাহ! যদি তুমি চাও, আজকের পর তোমার ইবাদত আর না করা হোক” … ঠিক এ সময়ই আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) তাঁর হাত ধরে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! “যথেষ্ট হয়েছে। আপনি আপনার রবের নিকট অনুনয়-বিনয়ের সাথে বহু দু’আ করেছেন”। এ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ম পরা অবস্থায় দাঁড়িয়ে গেলেন। এরপর তিনি তাঁবু থেকে বেরিয়ে গেলেন দুটি আয়াত পড়তে পড়তে, “এ দল তো শীঘ্রই পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে। অধিকন্তু কিয়ামত তাদের আযাবের নির্ধারিতকাল এবং কিয়ামত হবে কঠিনতর ও তিক্ততর” (৫৪: ৪৫-৪৬)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫১২ | 4512 | ٤۵۱۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ بَلِ السَّاعَةُ مَوْعِدُهُمْ وَالسَّاعَةُ أَدْهٰى وَأَمَرُّ “অধিকন্তু কিয়ামতে তাদের শাস্তির নির্ধারিত কাল এবং কিয়ামত হবে কঠিনতর ও তিক্ততর” (৫৪ঃ ৪৬) مرارة শব্দ থেকে أَمَرُّ শব্দটির উৎপত্তি- যার মানে তিক্ততা।
৪৫১২। ইবরাহিম ইবনু মূসা (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- بَلِ السَّاعَةُ مَوْعِدُهُمْ وَالسَّاعَةُ أَدْهَى وَأَمَرُّ‏ আয়াতটি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। আমি তখন কিশোরী ছিলাম, খেলাধুলা করতাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫১৩ | 4513 | ٤۵۱۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ بَلِ السَّاعَةُ مَوْعِدُهُمْ وَالسَّاعَةُ أَدْهٰى وَأَمَرُّ “অধিকন্তু কিয়ামতে তাদের শাস্তির নির্ধারিত কাল এবং কিয়ামত হবে কঠিনতর ও তিক্ততর” (৫৪ঃ ৪৬) مرارة শব্দ থেকে أَمَرُّ শব্দটির উৎপত্তি- যার মানে তিক্ততা।
৪৫১৩। ইসহাক (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোট্ট একটি তাঁবুতে অবস্থান করে এ দু’আ করেছিলেন- “হে আল্লাহ! আমি তোমাকে তোমার ওয়াদা ও অঙ্গীকার বাস্তবায়ন কামনা করছি! হে আল্লাহ! যদি তুমি চাও, আজকের পর তোমার ইবাদত আর না করা হোক” … ঠিক এ সময় আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) তাঁর হাত ধরে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! “যথেষ্ট হয়েছে। আপনি আপনার রবের নিকট অনুনয়-বিনয়ের সাথে বহু দু’আ করেছেন”। এ সময় তিনি লৌহবর্ম পরিহিত ছিলেন। এরপর তিনি এ আয়াত পড়তে পড়তে তাঁবু থেকে বেরিয়ে এলেনঃ “এ দল শীঘ্রই পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে। অধিকন্তু কিয়ামতে তাদের শাস্তির নির্ধারিতকাল এবং কিয়ামত হবে কঠিনতর ও তিক্ততর” (৫৪: ৪৫-৪৬)।

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ومن دونهما جنتان “এবং এ উদ্যানদ্বয় ব্যতীত আরো দু’টি উদ্যান রয়েছে” (৫৫ঃ ৬২)
সুরা রাহমান

وَأَقِيْمُوا الْوَزْنَ এর মাঝে বর্ণিত الْوَزْنَ হচ্ছে পাল্লার ডান্ডি। وَالْعَصْفُ ঘাস, ফসল পাকার পূর্বে যে চারাগুলোকে কেটে ফেলা হয় তাদেরকেই اَلْعَصْفُ বলা হয়। الرَّيْحَانُ শস্যের পাতা এবং যমীন থেকে উৎপাদিত দানা যা ভক্ষণ করা হয় আরবী ভাষায় রিযকের অর্থে ব্যবহৃত হয়। কারো মতে, الْعَصْفُ খাওয়ার উপযোগী দানা এবং الرَّيْحَانُ খাওয়ার অনুপযোগী পাকা দানা। মুজাহিদ ব্যতীত অন্যান্য মুফাসসির বলেছেন, اَلْعَصْفُ গমের পাতা। দাহ্হাক (রহ.) বলেন, اَلْعَصْفُ মানে ভূষি। আবূ মালিক (রহঃ) বলেন, সর্বপ্রথম যা উৎপন্ন হয় তাকে اَلْعَصْفُ বলা হয়। হাবশী ভাষায় তাকে هَبُوْرًا হাবুর বলা হয়। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, اَلْعَصْفُ গমের পাতা। الرَّيْحَانُ খাদ্য। الْمَارِجُ হলুদ এবং সবুজ বর্ণের অগ্নিশিখা যা আগুনের উপরে দেখা যায় যখন তা জ্বালানো হয়। মুজাহিদ (রহঃ) থেকে কোন কোন মুফাসসির বলেন, رَبُّ الْمَشْرِقَيْنِ সূর্যের শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন উদয়স্থান। তেমনি رَبُّ الْمَغْرِبَيْنِ শীত ও গ্রীস্মকালে সূর্যের দুই অস্তস্থল। لَا يَبْغِيَانِ তারা মিলিত হয় না। الْمُنْشَاٰتُ নদীতে পাল তোলা নৌকা। আর যে নৌকার পাল তোলা হয়নি তাকে الْمُنْشَاٰتُ বলা হয় না। মুজাহিদ বলেন, نُحَاسٌ পিতল, যা তাদের মাথার উপর ঢালা হবে এবং এর দ্বারা তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে। خَافَ مَقَامَ رَبِّهٰ সে গুনাহ্ করার ইচ্ছে করে; কিন্তু তার আল্লাহর কথা মনে পড়ে যায়। অবশেষে সে গুনাহ্ করার ইচ্ছা ত্যাগ করে। الشُّوَاظُ অগ্নি শিখা। مُدْهَآمَّتَانِ দেখতে কালো হবে সজীবতার কারণে। صَلْصَالٍ মাটি বালির সঙ্গে মিশে পোড়া মাটির মত ঝনঝন করে। বলা হয় صَلْصَالٍ দুর্গন্ধময়। শব্দটির মূল ছিল صَلَّ صَلْصَالٍ বলা হয় যেমন صَرَّالْبَابُ বলা হয় এবং صَرَّصَرَّ الْبَابُ ও বলা হয়। (অর্থাৎ مضاعف رباعى থেকে مضاعفثلاثى এর উৎপত্তি)। যেমন كَبْكَبْتُه ব্যবহার করা হয়। যার মূল فَاكِهَةٌ وَّنَخْلٌ وَّرُمَّانٌ ফলমূল, খেজুর ও আনার। কারো মতে খেজুর ও আনার ফল নয়; কিন্তু আরবীয় লোকেরা এগুলোকেও ফল বলে গণ্য করে। খেজুর ও আনার ফলমূলের অন্তর্ভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও উপরোক্ত আয়াতে ফলমূলের কথা উল্লেখ করে এরপর খেজুর ও আনারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন حَافِظُوْا عَلَى الصَّلَوٰتِ এর মাঝে সকল সালাতের প্রতি যত্নবান হবার নির্দেশ প্রদান করতঃ পরে আবার বিশেষভাবে আসরের সালাতের প্রতি বিশেষ যত্নবান হবার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যেমনভাবে أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللهَ يَسْجُدُ لَه مَنْ فِي السَّمَوٰتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ্কে সাজদাহ করে যা কিছু আছে আকাশমন্ডলীতে ও পৃথিবীতে….। (সূরাহ হাজ্জ ২২/২৮)-এর মধ্যে সকল মানুষ অন্তর্ভুক্ত থাকা সত্ত্বেও وَكَثِيْرٌ مِّنَ النَّاسِ وَكَثِيْرٌ حَقَّ عَلَيْهِ الْعَذَابُ আয়াতাংশটি পরে উল্লেখ করা হয়েছে (সুতরাং খেজুর ও আনারকে ফলমূল বহির্ভূত বলা ঠিক নয়)। মুজাহিদ (রহঃ) ছাড়া অন্যান্য মুফাসসির বলেন, أَفْنَانٍ ডালাসমূহ। وَجَنَى الْجَنَّتَيْنِ دَانٍ দুই উদ্যানের ফল হবে তাদের নিকটবর্তী- (সূরাহ আর্ রহমান ৫৫/৫৪)। উভয় উদ্যানের ফল যা পাড়া হবে তা খুবই নিকটবর্তী হবে। হাসান (রহঃ) বলেন, فَبِأَيِّاٰلَآءِ আল্লাহর কোন অনুগ্রহকে? ক্বাতাদাহ (রহঃ) বলেন, মানব এবং দানব জাতিকে বোঝাবার জন্য رَبِّكُمَا দ্বি-বচনের صيغه ব্যবহার করা হয়েছে। আবুদ্ দারদা (রাঃ) বলেন, كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِيْ شَأْنٍ (তিনি প্রতিদিন গুরুত্বপূর্ণ কার্যে রত)-এর ভাবার্থ হচ্ছে, প্রত্যহ তিনি মানুষের গুনাহ ক্ষমা করেন, বিপদ বিদূরিত করেন, এক সম্প্রদায়কে সুউচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেন এবং অপর সম্প্রদায়ের অবনতি ঘটান। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, بَرْزَخٌ অন্তরাল। الْأَنَامُ সৃষ্ট জীব। نَضَّاخَتَانِ খায়ের ও বারাকাতে উচ্ছলিত। ذُو الْجَلَالِ মহিমাময়। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ব্যতীত অন্যান্য মুফাসসির বলেছেন, مَارِجُ নির্ধূম অগ্নিশিখা। রাজা প্রজাদের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে দেয়ার পর তারা যখন পরস্পর পরস্পরের প্রতি অবাধে অত্যাচার করতে আরম্ভ করে তখন বলা হয়, اَلَامِيْرُمَرَجَالَامِيْرُرِعَيَّتَهمَرَجَاَمْرُالنَّاسِ মানুষের বিষয়টি গোলমেলে হয়ে পড়েছে। مَرِيْجٍ দোদুল্যমান। مَرَجَ الْبَحْرَيْنٍ দুই সমুদ্র পরস্পর মিলিত হয়ে গিয়েছে। مَرَجْتَ دَابَّتَكَ এর উৎপত্তি অর্থাৎ তুমি ছেড়ে দিয়েছ। سَنَفْرُغُ لَكُمْ অচিরেই আমি তোমাদের হিসাব গ্রহণ করব কারণ কোন অবস্থা আল্লাহ্ তা‘আলাকে অন্য অবস্থা হতে গাফিল করতে পারে না। এ ধরনের ব্যবহার-বিধি আরবী ভাষায় সুপ্রসিদ্ধ। যেমন বলা হয়, لَا تَفَرَّ غَنَّ لَكَ অথচ তার কোন ব্যস্ততা নেই (বরং এ ধরনের কথা ধমক-স্বরূপ বলা হয়ে থাকে)। এ বাক্যের মাধ্যমে বক্তা শ্রোতাকে এ কথাই বোঝাতে চায় যে, অবশ্যই আমি তোমাকে তোমার এ গাফলতের মজা আস্বাদন করাব।

৪৫১৪। আবদুল্লাহ ইবনু আবূল আসওয়াদ (রহঃ) … কায়স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসূল বলেছেন, (জান্নাতে) দুটি উদ্যান থাকবে। এই দুটির সকল পাত্র এবং এর অভ্যন্তরের সকল বস্তু রূপার তৈরি হবে। এবং (জান্নাতে) আরও দুটি উদ্যান থাকবে। এই দুটির সকল পাত্র এবং এর অভ্যন্তরের সকল বস্তু সোনার তৈরি হবে। জান্নাতে-আদনের মধ্যে জান্নাতবাসীরা তাদের রবকে দেখবে। জান্নাতবাসী এবং তাদের রবের এই দর্শনের মাঝে আল্লাহর সত্তার উপর জড়ানো তাঁর বড়ত্বের পর্দা ছাড়া আর কিছুই থাকবে না।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫১৫ | 4515 | ٤۵۱۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ حور مقصورات في الخيام “তারা তাবুতে সুরক্ষতি হুর” (৫৫ঃ ৭২) ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, حور অর্থ কালো মনি যুক্ত চক্ষু। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, مقصورات অর্থ مقصورات মানে তাদের দৃষ্টি এবং তাদের স্বত্বা তাদের স্বামীদের জন্য সুরক্ষিত থাকবে। قاصرات তারা তাদের জন্যই নির্ধারিত থাকবে। তারা তাদের ব্যতীত অন্য কাউকে স্বামী হিসাবে গ্রহন করার আকাঙ্ক্ষাও করবে না।
৪৫১৫। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) … কায়স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাতের মধ্যে ফাঁপা মোতির একটি তাঁবু থাকবে যা হবে ষাট মাইল প্রশস্ত। এর প্রতিটি কোণে থাকবে হুর-বালা, যাদের এক কোণার জন অপর কোণার জনকে দেখবে না। ঈমানদার লোকেরা তাদের কাছে যাবে। এতে দুটি উদ্যান থাকবে, যার সকল পাত্র এবং এর অভ্যন্তরের সকল বস্তু রূপার তৈরি হবে। এবং আরও দুটি উদ্যান থাকবে, যার সকল পাত্র এবং এর অভ্যন্তরের সকল বস্তু সোনার তৈরি হবে। জান্নাতে-আদনের মধ্যে জান্নাতবাসী এবং তাদের প্রতিপালকের দর্শন লাভের মাঝখানে আল্লাহর বড়ত্বের প্রভাময় আভা ভিন্ন আর কিছু থাকবে না।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫১৬ | 4516 | ٤۵۱٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وظل ممدود “সম্প্রসারিত ছায়া” (৫৫ঃ ৩০)
সুরা ওয়াকি’আ

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, رُجَّتْ প্রকম্পিত হবে। بُسَّتْ চূর্ণ-বিচূর্ণ হওয়া, ছাতু যেমন চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হয় তেমিনভাবে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হবে। الْمَخْضُوْدُ বোঝার কারণে চরম ভারাক্রান্ত। কণ্টকহীন বৃক্ষকেও مَخْضُوْدُ বলা হয়। مَنْضُوْدٍ কলা। الْعُرُبُ স্বামীর কাছে প্রিয়তমা স্ত্রীগণ। ثُلَّةٌ উম্মত। يَحْمُوْمٍ কালো ধোঁয়া। يُصِرُّوْنَ তারা অবিরাম করতে থাকবে। الْهِيْمُ পিপাসিত উট। لَمُغْرَمُوْنَ যাদের উপর ঋণ পরিশোধ করা অপরিহার্য করে দেয়া হয়েছে। رَوْحُ উদ্যান ও কোমলতা। اَلرَيْحَانُ জীবনোপকরণ। نَنْشَأَكُمْ যে কোন আকৃতিতে আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করব। মুজাহিদ ব্যতীত অন্যান্য মুফাসসির বলেন, تَفَكَّهُوْنَ তোমরা বিস্মিত হয়ে যাবে। عُرُبًا বহুবচন। একবচনে عَرُوْبٌ যেমন, صُبُرٌ বহুবচন। একবচনে صَبُوْرٍ মক্কাবাসী লোকেরা তাকে الْعَرِبَةَ মদিনা্বাসী লোকেরা الْغَنِجَةَ এবং ইরাকী লোকেরা তাকে الشَّكِلَةَ বলে। خَافِضَةٌ তা একদল লোককে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। رَافِعَةٌ তা একদল লোককে জান্নাতে নিয়ে যাবে। مَوْضُوْنَةٍ مَّنْسُوْجَةٍ গ্রথিত। এর থেকেই وَضَيْنُ النَّاقِةٍ শব্দটির উৎপত্তি (অর্থ উটের পালানের রশি) الكُوْبُ নল ও হাতলবিহীন পানপাত্র। الْأَبَارِيْقُ নল ও হাতল সম্পন্ন লোটা। مَسْكُوْبٍ প্রবহমান। وَفُرُشٍ مَّرْفُوْعَةٍ একটির উপর আরেকটি বিছানো শয্যাসমূহ। مُتْرَفِيْنَ ভোগ বিলাসী লোকজন। مَا تُمْنُوْنَ মহিলাদের গর্ভাশয়ে নিক্ষিপ্ত বীর্য। لِلْمُقْوِيْنَ মুসাফিরদের জন্য। الْقِيُّ ঘাস, পানি এবং জন-মানবহীন ভূমি। بِمَوَاقِعِ النُّجُوْمِ কুরআনের মুহ্কাম আয়াতসমূহ। بِمَسْقِطِ النُّجُوْمِ নক্ষত্ররাজির অস্তাচলের স্থান। مَوَاقِعٌএবং مَوْقِعٌ শব্দ দু’টো একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। مُدْهِنُوْنَ তুচ্ছকারী লোকজন। যেমন অন্যত্র আছে, لَوْ تُدْهِنُ فَيُدْهِنُوْنَ যদি তুমি তুচ্ছ কর, তবে তারাও তুচ্ছ করবে। فَسَلَامٌ لَكَ তোমার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। কেননা, তুমি দক্ষিণ পার্শ্বে অবস্থিত। এখানে إِنَّশব্দটি উহ্য আছে। যেমন, اِنِّىْ مُسَافِرٌ عَنْ قَلِيْلٍ এর উত্তরে কথিত أَنْتَ مُصَدَّقٌ مُّسَافِرٌ عَنْ قَلِيْلٍ বাক্যের মাঝে إِنَّ শব্দটি উহ্য আছে। মূলে ছিল إِنَّكَ مُسَافِرٌ শ্রোতার প্রতি দু‘আ হিসেবেও سَلَامَ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন فَسَقْيًا مِّنْ الرِّجَالِ (পরিতৃপ্ত লোকজন) বাক্যটিও দু‘আ হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। سَلَامٌ শব্দটিকে مَرْفُوْعٌ পড়া হলে তা দু‘আ হিসেবেই গণ্য হবে। تُوْرُوْنَ তোমরা বের কর, প্রজ্জ্বলিত কর। পক্ষান্তরে أَوْرَيْتُ بِمَعْزٍ اَوْ فَدْتُ থেকে تُوْرُوْنَ শব্দটির উৎপত্তি। لَغْوًا অসার। تَأْثِيْمًا মিথ্যা বাক্য।

৪৫১৬। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আবূ হুরাইরা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, “জান্নাতের মধ্যে এমন বড় একটি বৃক্ষ আছে, যার ছায়ায় একজন সওয়ারী একশ বছর চলতে পারবে, তবুও সে এ ছায়া অতিক্রম করতে পারবে না। তোমার ইচ্ছা হলে (সম্প্রসারিত ছায়া) পাঠ করতে পার”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫১৭ | 4517 | ٤۵۱۷

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা হাদীদ

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, جَعَلَكُمْ مُّسْتَخْلَفِيْنَ আমি তোমাদেরকে তাতে আবাদকারী বানিয়েছি। مِنْ الظُّلُمٰتِ إِلَى النُّوْرِ ভ্রান্তি থেকে হিদায়াতের দিকে। وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ ঢাল ও অস্ত্রশস্ত্র। مَوْلَاكُمْ তিনিই তোমাদের জন্য যোগ্য। لِئَلَّا يَعْلَمَ أَهْلُ الْكِتَابِ যাতে কিতাবী লোকেরা জানতে পারে। বলা হয়, বস্তুর বাহ্যিক বিষয়ের উপরও عِلْمٍ ব্যবহৃত হয়। এমনিভাবে বস্তুর অভ্যন্তরীণ বিষয়ের উপরও عِلْم ব্যবহৃত হয়। أَنْظِرُوْنَا তোমরা আমাদের জন্য একটু অপেক্ষা কর।

সুরা মুজাদালা

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, يُحَادُّوْنَ তারা (আল্লাহর) বিরোধিতা করছে। كُبِتُوْا তাদেরকে অপদস্থ করা হবে। الْخِزْيِ ধাতু হতে উক্ত শব্দটির উৎপত্তি। اسْتَحْوَذَ সে প্রাধান্য বিস্তার করেছে।

সুরা হাশর

الْجَلَاءَ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নির্বাসিত করা।

৪৫১৭। মুহাম্মদ ইবনু আবদুর রহীম (রহঃ) … সাঈদ ইবনু জুবাইর (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন- আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে সূরা তাওবা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, এটি তো লাঞ্ছনাকারী সূরা। وَمِنْهُمْ وَمِنْهُمْ অর্থাৎ “তাদের একদল এই করছে, আরেক দল ঐ করছে”, এই বলে একাধারে এ সূরা নাযিল হতে থাকলে লোকজন ধারণা করতে লাগলো যে, তাদের মধ্যে এমন কেউ আর বাকী থাকবেনা, যাকে এই সূরায় উল্লেখ করা হবে না। বর্ণনাকারী বলেন- আমি তাঁকে সূরা আনফাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, এই সূরাটি বদর যুদ্ধের সময় নাযিল হয়েছে। আমি তাঁকে সূরা হাশর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, এই সূরাটি বনী নাযীর সম্পর্কে নাযিল হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫১৮ | 4518 | ٤۵۱۸

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
৪৫১৮। হাসান ইবনু মুদরিক (রহঃ) … সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে ‘সূরা হাশর’ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, এটিকে ‘সূরা বনী নাযীর’ বল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫১৯ | 4519 | ٤۵۱۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ ما قطعتم من لينة أو تركتموها قائمة على أصولها فبإذن الله وليخزي الفاسقين “তোমরা যে খেজুর বৃক্ষগুলো কর্তন করেছ বা যেগুলোর কান্ডের উপর স্থির রেখে দিয়েছ, তা তো আল্লাহরই অনুমতিক্রমে; এ তো এ জন্য যে, আল্লাহ্‌ পাপাচারিদের লাঞ্ছিত করবেন” (৫৯ঃ৫) لينة এবং برنية ব্যতীত সকল খেজুরকেই لينة বলা হয়।
৪৫১৯। কুতায়বা (রহঃ) … ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনী নাযীর গোত্রের খেজুর গাছ জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন এবং কেটে ফেলেছিলেন, যা ‘বুওয়াইরা’ নমক স্থানে (মদিনার নিকটে) ছিল। এরপর আল্লাহ তা’আলা নাযিল করলেনঃ “তোমরা যে খেজুর গাছ কেটেছ বা যেগুলোকে কাণ্ডের উপর স্থির রেখে দিয়েছ, তা তো আল্লাহরই অনুমতিতে, যাতে আল্লাহ পাপীদের লাঞ্ছিত করবেন” (সূরা ৫৯, আয়াত ০৫)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫২০ | 4520 | ٤۵۲۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ما أفاء الله على رسوله “আল্লাহ্‌ এই জনপদবাসীদের কাছ থেকে তাঁর রাসুল (সাঃ) কে যা কিছু দিয়েছে” (৫৯ঃ ৭)
৪৫২০। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন- বনী নাযীরের বিষয়-সম্পত্তি ঐ সকল বস্তুর অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা আল্লাহ তাঁর রাসূলকে ‘ফাই’ হিসেবে দিয়েছেন, এ জন্য যে মুসলিমরা ঘোড়ায় বা উটে চড়ে যুদ্ধ করেনি। সুতরাং এটি খাস ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য। এর মধ্য থেকে তিনি তাঁর পরিবারের জন্য এক বছরের খরচ দান করতেন। এরপর বাকিটা তিনি অস্ত্রশস্ত্র এবং ঘোড়া সংগ্রহের কাজে ব্যয় করতেন আল্লাহর পথে জিহাদের প্রস্তুতি হিসেবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫২১ | 4521 | ٤۵۲۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ما آتاكم الرسول فخذوه “রাসুল তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্রহন কর (এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা হতে বিরত থাক)” (৫৯ঃ ৭)
৪৫২১। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ লা’নত করেছেন ঐ সকল নারীর প্রতি যারা অন্যের শরীরে উল্কি অংকন করে, নিজ শরীরে উল্কি অংকন করায়, যারা সৌন্দর্যের জন্য ভ্রূ উপড়িয়ে ফেলে ও দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে। এরা আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি ঘটিয়েছে। এরপর বনী আসাদ গোত্রের উম্মে ইয়াকুব নামে এক মহিলার কাছে এ সংবাদ পৌঁছালে সে এসে বলল, আমি জানতে পারলাম, আপনি এ ধরনের মহিলাদের প্রতি লানত করেছেন। তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যার প্রতি লা’নত করেছেন, আল্লাহর কিতাবে যার প্রতি লানত করা হয়েছে, আমি তার প্রতি লা’নত করব না কেন? তখন মহিলা বলল, আমি দুই ফলকের মাঝে যা আছে তা (পূর্ণ কুরআন) পড়েছি। কিন্তু আপনি যা বলেছেন, তা তো এতে পাইনি।

আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, যদি তুমি কুর’আন পড়তে অবশ্যই তা পেতে, তুমি কি পড়নি? “রাসূল তোমাদের যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা তোমাদের নিষেধ করেন তা হতে বিরত থাক”। (সূরা ৫৯, আয়াত ০৭) মহিলা বলল, হ্যাঁ নিশ্চয়ই পড়েছি। আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কাজে নিষেধ করেছেন। তখন মহিলা বলল, আমার মনে হয় আপনার পরিবারও এ কাজ করে। তিনি বললেন, তুমি যাও এবং ভালোভাবে দেখে এসো। এরপর মহিলা গেল এবং ভালোভাবে দেখে এলো। কিন্তু তার প্রয়োজনীয় কিছুই দেখতে পেলো না। তখন আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, আমার স্ত্রী যদি এমন করত, তবে সে আমার সাথে একত্রে থাকতে পারত না।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫২২ | 4522 | ٤۵۲۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ما آتاكم الرسول فخذوه “রাসুল তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্রহন কর (এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা হতে বিরত থাক)” (৫৯ঃ ৭)
৪৫২২। আলী (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে নারী কৃত্রিম চুল লাগায়, তার প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেছেন। রাবী বলেন, আমি উম্মে ইয়াকুব নামক মহিলার কাছ থেকে হাদিসটি শুনেছি, তিনি আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, মানসুরের হাদীসের অনুরূপ।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫২৩ | 4523 | ٤۵۲۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ والذين تبوءوا الدار والإيمان “মুহাজীরদের যারা এ নগরীতে বসবাস করে আসছে ও ঈমান এনেছে, (তারা মুহাজিরদের ভালবাসে এবং মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে, তাঁর জন্য তারা অন্তরে আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে না)” (৫৯ঃ ৯)
৪৫২৩। আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) … আমর ইবনু মাইমুন (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমার (রাঃ) বলেছেন, আমি আমার পরবর্তী খলীফাকে অসীয়ত করেছি, প্রথম যুগের মুহাজিরদের হক আদায় করার জন্য এবং আমার পরবর্তী খলীফাকে আনসারদের ব্যাপারে অসীয়ত করেছি, যারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হিজরতের পূর্বে এ নগরীতে বসবাস করতেন এবং ঈমান এনেছিলেন যেন সে তাদের পুণ্যবানদের সৎকর্মকে গ্রহণ করে এবং দোষ-ত্রুটিকে ক্ষমা করে দেয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫২৪ | 4524 | ٤۵۲٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ويؤثرون على أنفسهم “এবং তারা তাদের নিজেদের উপর প্রাধান্য দেয় (নিজেদের অভাবগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও) … শেষ পর্যন্ত (৫৯ঃ ৯) الخصاصة অর্থ ক্ষুধা। المفلحون অর্থ যারা (জান্নাতে) চিরকাল থাকার সফলতা অর্জন করেছেন। الفلاح অর্থ স্থায়িত্ব। حي على الفلاح অর্থ সফলতা ও চিরস্থায়ী জীবনের দিকে তাড়াতাড়ি আস। হাসান (রহঃ) বলেন, حاجة অর্থ হিংসা।
৪৫২৪। ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম ইবনু কাসীর (রহঃ) … আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে। তখন তিনি তাঁর স্ত্রীদের কাছে পাঠালেন, কিন্তু তিনি তাদের কাছে কিছুই পেলেন না। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এমন কেউ আছে কি, যে আজ রাতে এ লোকটিকে মেহমানদারী করতে পারে? আল্লাহ তার প্রতি রহমত করবেন। তখন আনসারদের একজন দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আছি। এরপর তিনি তাকে সাথে নিয়ে বাড়িতে গেলেন এবং নিজ স্ত্রীকে বললেন, ইনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মেহমান, কোন জিনিস জমা রাখবে না। মহিলা বলল, আল্লাহর কসম! আমার কাছে ছেলে-মেয়েদের খাবার ছাড়া আর কিছুই নেই। তিনি বললেন, ছেলে-মেয়েরা রাতের খাবার চাইলে তুমি তাদেরকে ঘুম পাড়িয়ে দিও এবং বাতি নিভিয়ে দিও। আজ রাতে আমরা অভুক্ত থাকব। সুতরাং মহিলা তা-ই করল। পরদিন সকালে আনসার সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলে তিনি বললেন, অমুক ব্যাক্তি ও তার স্ত্রীর প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন। এরপর আল্লাহ নাযিল করলেন, “এবং তারা তাদের নিজেদের উপর প্রাধান্য দেয় নিজেরা অভাবগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও” (সূরা ৫৯, আয়াত ০৯)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫২৫ | 4525 | ٤۵۲۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ لا تتخذوا عدوي “(হে মু’মিনগণ) আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহন করো না” (৬০ঃ১)
সুরা মুম্‌তাহিনা

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, لَا تَجْعَلْنَا আমাদেরকে কাফিরদের হাতে শাস্তি দিও না। তাহলে তারা বলবে, যদি মুসলিমরা হাকের ওপর থাকত, তাহলে তাদের ওপর এ মুসীবত আসত না। بِعِصَمِ الْكَوَافِرِ নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহাবীদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাঁরা যেন তাদের ঐ স্ত্রীদের বর্জন করে, যারা মক্কাতে কাফির অবস্থায় বিদ্যমান আছে।

৪৫২৫। হুমায়দী (রহঃ) … আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবাইর (রাঃ), মিকদাদ (রাঃ) ও আমাকে পাঠালেন এবং বললেন, তোমরা ‘রওদা খাখ’ নামক স্থানে যাও। সেখানে এক উট-আরোহিণী মহিলা পাবে। তার কাছে একটি পত্র রয়েছে, তোমরা তার কাছ থেকে সেই চিঠিটি নিয়ে নিবে। এরপর আমরা রওনা হলাম। আমাদের ঘোড়া আমাদেরকে নিয়ে ছুটে চলল। যেতে যেতে আমরা রওদায় গিয়ে পৌঁছলাম। সেখানে পৌঁছেই আমরা উট-আরোহিণীকে পেয়ে গেলাম। আমরা বললাম, পত্রখানা বের কর। সে বলল, আমার কাছে কোন পত্র নেই। আমরা বললাম, অবশ্যই তুমি পত্রখানা বের করবে, তা না হলে তোমাকে বিবস্ত্র করে ফেলা হবে। এরপর সে তার চুলের বেণী থেকে পত্রখানা বের করল। আমরা পত্রখানা নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলাম।

দেখা গেল, পত্রখানা হাতিব ইবনু আবূ বালতাআহ (রাঃ) এর পক্ষ থেকে মক্কার কতিপয় মুশরিকের কাছে লিখা। এ চিঠিতে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিষয় তাদের কাছে ব্যক্ত করে দিয়েছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, হাতিব কী ব্যাপার? তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার ব্যাপারে দ্রুত কোন সিদ্ধান্ত নেবেন না। আমি কুরাইশ বংশীয় লোকদের সাথে বসবাসকারী এক ব্যাক্তি, কিন্ত বংশগতভাবে তাদের সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক নেই। আপনার সাথে যত মুহাজির আছেন, তাদের সবারই সেখানে আত্নীয়-স্বজন রয়েছে। এসব আত্নীয়-স্বজনের মক্কায় তাদের পরিবার-পরিজন এবং ধন-সম্পদ রক্ষা পাচ্ছে। আমি চেয়েছিলাম, যেহেতু তাদের সাথে আমার বংশগত কোন সম্পর্ক নেই, তাই এবার যদি আমি তাদের প্রতি অনুগ্রহ করি, তাহলে হয়তো তারাও আমার আত্মীয়স্বজনের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবে। কুফর ও নিজ ধর্ম ত্যাগ করার মনোভাব নিয়ে আমি এ কাজ করিনি।

তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে তোমাদের কাছে সত্য কথাই বলেছে। তখন উমার (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে অনুমতি দিন এখনই আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। তুমি কি জানো না, আল্লাহ অবশ্যই বদরে অংশগ্রহণকারীদের প্রতি লক্ষ্য করে বলেছেনঃ “তোমরা যা চাও কর, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছি”। আমর বলেন, এ ঘটনার প্রেক্ষিতে নাযিল হয়েছেঃ “হে ঈমানদারগণ! আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না” (সূরা ৬০, আয়াত ০১)। সুফইয়ান বলেন, আয়াতটি হাদিসের অংশ নাকি আমর (রাঃ) এর কথা, তা আমি জানি না।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫২৬ | 4526 | ٤۵۲٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ لا تتخذوا عدوي “(হে মু’মিনগণ) আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহন করো না” (৬০ঃ১)
৪৫২৬। আলী (রহঃ) হতে বর্ণিত যে, সুফইয়ান ইবনু উয়াইনা (রহঃ) কে “হে মুমিনগণ! আমার শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না” আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, মানুষ বর্ণনার মাঝে তো এমনই পাওয়া যায়। আমি এ হাদিসটি আমর ইবনু দ্বীনার (রহঃ) থেকে মুখস্ত করেছি। এর মধ্য থেকে একটি অক্ষরও আমি বাদ দেইনি। আমার ধারণা, আমর ইবনু দ্বীনার (রহঃ) থেকে আমি ব্যতীত আর কেউ এ হাদিস মুখস্ত করেনি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫২৭ | 4527 | ٤۵۲۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إذا جاءكم المؤمنات مهاجرات “(হে মু’মিনগণ!) যখন তোমাদের কাছে মু’মিন নারীরা দেশত্যাগী হয়ে আসেঃ (৬০ঃ ১০)
৪৫২৭। ইসহাক (রহঃ) … উরওয়া (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী আয়িশা (রাঃ) তাঁকে বলেছেন, কোন মুমিন মহিলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে হিজরত করে এলে, তিনি তাকে আল্লাহর এই আয়াতের ভিত্তিতে যাচাই করতেন- “হে নাবী! মুমিন নারীরা যখন আপনার কাছে এ মর্মে বায়’আত করতে আসে যে, তারা আল্লাহর সাথে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, নিজ সন্তানকে হত্যা করবে না, তারা সজ্ঞানে কোন অপবাদ রটাবে না এবং সৎকাজে আপনাকে অমান্য করবে না, তখন তাদের বায়’আত গ্রহণ করবেন এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু” (৬০ঃ ১২)।

উরওয়া (রহঃ) বলেন, আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, যে মুমিন নারী এসব শর্ত মেনে নিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলতেন, আমি কথার মাধ্যমে তোমাকে বায়’আত করে নিলাম। আল্লাহর কসম! বায়’আত গ্রহণকালে কোন নারীর হাত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতকে স্পর্শ করেনি। নারীদেরকে তিনি শুধু এ কথার দ্বারাই বায়’আত করতেন- قَدْ بَايَعْتُكِ عَلَى ذَلِكَ “আমি তোমাকে এ কথার উপর বায়’আত করলাম”।

ইউনুস, মা’মার ও আবদুর রহমান ইবন ইসহাক (রহঃ) যুহরীর মাধ্যমে উক্ত বর্ণনার মুতাবআত (সমর্থন) করেছেন। ইসহাক ইবন রাশীদ যুহরী থেকে এবং যুহরী উরওয়া ও আমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫২৮ | 4528 | ٤۵۲۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إذا جاءك المؤمنات يبايعنك “(হে নবী!) মু’মিন নারীগণ যখন তোমার কাছে এ মর্মে বায়’আত করতে আসে” (৬০ঃ ১২)
৪৫২৮। আবূ ম’মার (রহঃ) … উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বায়’আত গ্রহণ করেছি। এরপর তিনি আমাদের সামনে পাঠ করলেন, “তারা আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না”। এরপর তিনি আমাদেরকে মৃত ব্যাক্তির জন্য বিলাপ করে কাঁদতে নিষেধ করলেন। এ সময় এক মহিলা তার হাত টেনে নিয়ে বলল, অমুক মহিলা আমাকে বিলাপে সাহায্য করেছে, আমি তাকে এর বিনিময় দিতে চেয়েছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কিছুই বলেন নি। এরপর মহিলাটি উঠে চলে গেল এবং পুনরায় ফিরে আসলো, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বায়’আত করলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫২৯ | 4529 | ٤۵۲۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إذا جاءك المؤمنات يبايعنك “(হে নবী!) মু’মিন নারীগণ যখন তোমার কাছে এ মর্মে বায়’আত করতে আসে” (৬০ঃ ১২)
৪৫২৯। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি আল্লাহর বানী وَلاَ يَعْصِينَكَ فِي مَعْرُوفٍ “এবং তারা সৎকাজে আপনাকে অমান্য করবে না” এর ব্যাখ্যায় বলেন যে, এটি একটি শর্ত, যা আল্লাহ নারীদের প্রতি আরোপ করেছেন (যারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বায়’আত করতে আসতেন)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৩০ | 4530 | ٤۵۳۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إذا جاءك المؤمنات يبايعنك “(হে নবী!) মু’মিন নারীগণ যখন তোমার কাছে এ মর্মে বায়’আত করতে আসে” (৬০ঃ ১২)
৪৫৩০। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ছিলাম, তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি এসব শর্তে আমার কাছে বায়’আত করবে যে, তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করবে না, যিনা করবে না এবং চুরি করবে না। এরপর তিনি নারীদের শর্ত সম্পর্কিত আয়াত পাঠ করলেন। বর্ণনাকারী সুফইয়ান প্রায়ই বলতেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়াতটি পাঠ করেছেন। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের যে ব্যাক্তি এসব শর্ত পূরণ করবে, আল্লাহ তার প্রতিদান দিবেন। আর যে ব্যাক্তি এসবের কোন একটি করে ফেলবে এবং তাকে (দুনিয়াতে) শাস্তিও দেয়া হবে, তবে এ শাস্তি তার জন্য কাফফারা হয়ে যাবে। আর যে ব্যাক্তি এসবের কোন একটি করে ফেলল এবং আল্লাহ তা গোপন রাখলেন, তাহলে এ বিষয়টি আল্লাহর কাছে রইল। তিনি চাইলে তাকে শাস্তিও দিতে পারেন অথবা তাকে ক্ষমাও করে দিতে পারেন। আবদুর রহমান (রহঃ) মা’মার (রহঃ) এর সুত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৩১ | 4531 | ٤۵۳۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إذا جاءك المؤمنات يبايعنك “(হে নবী!) মু’মিন নারীগণ যখন তোমার কাছে এ মর্মে বায়’আত করতে আসে” (৬০ঃ ১২)
৪৫৩১। মুহাম্মদ ইবনু আবদুর রহীম (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন- আমি ঈদুল-ফিতরের দিন ঈদের সালাত (নামায/নামাজ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে উপস্থিত ছিলাম এবং আবূ বকর (রাঃ), উমার (রাঃ) এবং উসমান (রাঃ)ও সাথে ছিলেন। তাঁরা সকলেই খুতবার আগে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের পর তিনি খুতবা দিয়েছেন। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বর থেকে নামলেন। তখন তিনি যে লোকজনকে হাতের ইশারায় বসাচ্ছিলেন, এ দৃশ্য আমি এখন ও যেন দেখতে পাচ্ছি। এরপর তিনি তাদের দুভাগ করে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন এবং মহিলাদের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। তাঁর সাথে বিলাল (রাঃ)ও ছিলেন। এরপর তিনি পাঠ করলেন, “হে নাবী! মুমিন নারীরা যখন আপনার কাছে এ মর্মে বায়’আত করতে আসে যে, তারা আল্লাহর সাথে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, নিজ সন্তানকে হত্যা করবে না, তারা সজ্ঞানে কোন অপবাদ রটাবে না এবং সৎকাজে আপনাকে অমান্য করবে না”। তিনি পূর্ণ আয়াত তিলাওয়াত করে শেষ করলেন। এরপর তিনি বললেন, তোমরা কি এই শর্ত পূরণে রাজি আছো? একজন মহিলা বলল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! এ ছাড়া আর কোন মহিলা কোন উত্তর দেয়নি। এ মহিলাটি কে ছিলেন, হাসান (রাঃ) তা জানতেন না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা দান করো। তখন বিলাল (রাঃ) তাঁর কাপড় বিছিয়ে দিলেন এবং মহিলারা তাদের রিং ও আংটি বিলাল (রাঃ) এর কাপড়ে ছুঁড়ে ছুঁড়ে দিতে লাগলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৩২ | 4532 | ٤۵۳۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ من بعدي اسمه أحمد “যিনি আমার পরে আসবেন এবং যার নাম হবে আহমাদ” (৬১ঃ ৬)
সুরা সাফ্‌ফ

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, مَنْ أَنْصَارِيْٓ إِلَى اللهِ অর্থ, আল্লাহর পথে কে আমার অনুসরণ করবে? ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, مَرْصُوْصٌ ঐ বস্তু যার এক অংশ অপর অংশের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সংযুক্ত। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ব্যতীত অপরাপর তাফসীরকারের মধ্যে رَّصَاصِ (মানে শিলা) ধাতু থেকে مَرْصُوْصًا শব্দটির উৎপত্তি।

৪৫৩২। আবূল ইয়ামান (রহঃ) … জুবাইর ইবনু মুত’ইম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, “আমার অনেকগুলো নাম আছে। আমি মুহাম্মাদ, আমি আহমাদ এবং আমি মাহী, যার দ্বারা আল্লাহ সকল কুফরী বিলুপ্ত করবেন। এবং আমি হাশির, আমার পিছনে সকল মানুষকে সমবেত করা হবে এবং আমি আকিব, সর্বশেষ আগমনকারী”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৩৩ | 4533 | ٤۵۳۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وآخرين منهم لما يلحقوا بهم “এবং তাদের অন্যান্যের জন্যও যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হয় নি” (৬২ঃ৩) উমর (রাঃ) فاسعوا إلى ذكر الله এর স্থলে امضوا إلى ذكر الله (ধাবিত হও আল্লাহ্‌র দিকে) পড়তেন।
৪৫৩৩। আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বসেছিলাম। এই অবস্থায় তাঁর উপর নাযিল হল সূরা জুমু’আ, যার একটি আয়াত হল- “এবং তাদের অন্যান্যের জন্যও যারা এখনও তাদের সাথে মিলিত হয়নি”। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! তারা কারা? তিনবার জিজ্ঞেস করা সত্ত্বেও তিনি কোন উত্তর দিলেন না। আমাদের মাঝে সালমান ফারসী (রাঃ)ও উপস্থিত ছিলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালমান (রাঃ) এর উপর হাত রেখে বললেন, ঈমান সুরাইয়া নক্ষত্রের কাছে থাকলেও আমাদের কিছু লোক অথবা তাদের এক ব্যাক্তি তা অবশ্যই পেয়ে যাবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৩৪ | 4534 | ٤۵۳٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وآخرين منهم لما يلحقوا بهم “এবং তাদের অন্যান্যের জন্যও যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হয় নি” (৬২ঃ৩) উমর (রাঃ) فاسعوا إلى ذكر الله এর স্থলে امضوا إلى ذكر الله (ধাবিত হও আল্লাহ্‌র দিকে) পড়তেন।
৪৫৩৪। আবদুল্লাহ ইবনু ওয়াহাব (রহঃ) … আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাদের লোক অথবা তাদের কিছু লোক অবশ্যই তা পেয়ে যাবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৩৫ | 4535 | ٤۵۳۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وإذا رأوا تجارة “এবং যখন তারা ব্যবসা (পণ্য দ্রব্য) দেখল (৬২ঃ ১১)
৪৫৩৫। হাফস ইবনু উমর (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার জুমু’আর দিন একটি বাণিজ্য দল আসল, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। বারজন লোক ছাড়া সকলেই সেদিকে ছুটে গেল। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ নাযিল করলেন- “এবং যখন তারা দেখল ব্যবসা ও খেল-তামাশা, তখন তারা (আপনাকে দাঁড়ান অবস্থায় রেখে) সেদিকে ছুটে গেল” (৬২ঃ ১১)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৩৬ | 4536 | ٤۵۳٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إذا جاءك المنافقون قالوا نشهد إنك لرسول الله إلى لكاذبون “যখন মুনাফিকগণ তাদের কাছে আসে, তারা বলে, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহ্‌র রাসুল। আল্লাহ্‌ জানেন যে, তুমি নিশ্চয়ই তাঁর রাসুল এবং আল্লাহ্‌ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী” (৬৩ঃ ১)
৪৫৩৬। আবদুল্লাহ ইবনু রাজা (রহঃ) … যাইদ ইবনু আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক যুদ্ধে আমি অংশগ্রহণ করেছিলাম। তখন আবদুল্লাহ ইবনু উবাইকে বলতে শুনলাম, আল্লাহর রাসূলের সহচরদের জন্য তোমরা ব্যয় করবে না, যতক্ষণ না তারা তাঁর থেকে সরে পড়ে এবং সে এও বলল, আমরা মদিনায় প্রত্যাবর্তন করলে তথা হতে প্রবল লোকেরা দুর্বল লোকদের বহিষ্কৃত করবেই। এ কথা আমি আমার চাচা কিংবা উমার (রাঃ) এর কাছে বলে দিলাম। তিনি তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন। ফলে তিনি আমাকে ডাকলেন। আমি তাঁকে বিস্তারিত সব বললাম। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল্লাহ ইবনু উবাই এবং তাঁর সাথীদের কাছে খবর পাঠালেন, তারা সকলেই কসম করে বলল, এই কথা তারা বলেনি। ফলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কথাকে মিথ্যা ও তার কথাকে সত্য বলে মেনে নিলেন। এতে আমি এমন মনকষ্ট পেলাম যা আগে কখনো পাইনি। আমি (মনের দুঃখে) ঘরে বসে ছিলাম এবং আমার চাচা আমাকে বললেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করেছেন এবং তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন বলে তুমি কীভাবে ভাবলে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ নাযিল করলেন- “যখন মুনাফিকগণ আপনার কাছে আসে” (৬৩ঃ ০১)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে লোক পাঠালেন এবং এ সূরা পাঠ করলেন। এরপর বললেন, হে যাইদ! আল্লাহ তোমাকে সত্যবাদী বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৩৭ | 4537 | ٤۵۳۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ اتخذوا أيمانهم جنة يجتنون بها “তারা তাদের শপথগুলোকে ঢালরূপে ব্যবহার করে” (৬৩ঃ ২)
৪৫৩৭। আদম ইবনু ইয়াস (রহঃ) … যাইদ ইবনু আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার চাচার সাথে ছিলাম। তখন আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালূলকে বলতে শুনলাম, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহচরদের জন্য তোমরা ব্যয় করবে না, যতক্ষণ না তারা তাঁর থেকে সরে পড়ে এবং সে এও বলল, আমরা মদিনায় প্রত্যাবর্তন করলে তথা হতে প্রবল লোকেরা দুর্বল লোকদের বহিষ্কৃত করবেই। এ কথা আমি আমার চাচার কাছে বলে দিলাম। তিনি তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল্লাহ ইবনু উবাই এবং তার সাথীদেরকে ডেকে পাঠালেন। তারা সকলেই কসম করে বলল, এই কথা তারা বলেনি। ফলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কথাকে মিথ্যা ও তাদের কথাকে সত্য বলে মেনে নিলেন। এতে আমি এমন মনকষ্ট পেলাম যা আগে কখনো পাইনি। এমনকি আমি (মনের দুঃখে) ঘরে বসে ছিলাম। তখন আল্লাহ নাযিল করলেন- “যখন মুনাফিকগণ আপনার কাছে আসে” (৬৩ঃ ০১); “তারা বলে আল্লাহর রাসূলের সহচরদের জন্য তোমরা ব্যয় করবে না, যতক্ষণ না তারা সরে পড়ে” (৬৩ঃ ০৭); “তথা হতে প্রবল লোকেরা দুর্বল লোকদের বহিষ্কৃত করবেই” (৬৩ঃ ০৭-০৮)। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ডেকে পাঠালেন এবং আমার সামনে এ সূরা পাঠ করলেন। এরপর বললেন, আল্লাহ তোমাকে সত্যবাদী বলে ঘোষণা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৩৮ | 4538 | ٤۵۳۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ “এটা এই জন্য যে, তারা ঈমান আনার পর কুফরী করেছে, ফলে তাদের হৃদয় মোহর করে দেয়া হয়েছে, পরিনামে তারা বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেছে” (৬৩ঃ ৩)
৪৫৩৮। আদম (রহঃ) … যাইদ ইবনু আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উবাই যখন বলল, “আল্লাহর রাসূলের সহচরদের জন্য তোমরা ব্যয় করবে না” এবং এও বলল, “যদি আমরা মদিনায় প্রত্যাবর্তন করি …। তখন এ খবর আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানালাম। এ কারণে আনসারগণ আমার নিন্দা করলেন এবং আবদুল্লাহ ইবনু উবাই কসম করে বলল, এই কথা সে বলেনি। এরপর আমি বাড়ি ফিরে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম। এরপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ডেকে পাঠালেন। আমি তাঁর কাছে গেলাম। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ তোমার সত্যতা ঘোষণা করেছেন এবং নাযিল করেছেন- “তারা বলে তোমরা ব্যয় করবে না … শেষ পর্যন্ত। ইবন আবু যায়িদ (রহঃ) উক্ত হাদিস যায়াদ ইবন আরকামের মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৩৯ | 4539 | ٤۵۳۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وإذا رأيتهم تعجبك أجسامهم الخ “এবং তুমি যখন তাদের দিকে তাকাও তখন তাদের দেহাকৃতি তোমাদের কাছে প্রীতিকর মনে হয় এবং তারা যখন কথা বলে, তুমি সাগ্রহে তাদের কথা শ্রবন কর, যেন তারা দেয়ালে ঠেকানো স্তম্ভ সদৃশ। তারা যে কোন শোরগোলকে মনে করে তাদেরই বিরুদ্ধে। তারাই শত্রু, অতএব তাদের সম্পর্কে সতর্ক হও। আল্লাহ্‌ তাদেরকে ধ্বংস করুন। বিভ্রান্ত হয়ে তারা কোথায় চলেছে” (৬৩ঃ ৪)
৪৫৩৯। আমর ইবনু খালিদ (রহঃ) … যাইদ ইবনু আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা কোন এক সফরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বের হলাম। সফরে এক কঠিন অবস্থা লোকদের গ্রাস করে নিল। তখন আবদুল্লাহ ইবনু উবাই তার সাথীদের বললেন, “আল্লাহর রাসূলের সহচরদের জন্য তোমরা ব্যয় করবে না, যতক্ষণ না তারা তাঁর থেকে সরে পড়ে যারা তার পাশে আছে” এবং সে এও বলল, “আমরা মদিনায় প্রত্যাবর্তন করলে তথা হতে প্রবল লোকেরা দুর্বল লোকদের বহিষ্কৃত করবেই”। (এ কথা শুনে) আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে তাঁকে এ সম্পর্কে খবর দিলাম। তখন তিনি আবদুল্লাহ ইবনু উবাইকে ডেকে পাঠালেন। সে জোরালো কসম করে বলল, এই কথা সে বলেনি। তখন লোকেরা বলল, যাইদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মিথ্যা বলেছে। তাদের এ কথায় আমি খুব মনকষ্ট পেলাম। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ আমার সত্যতা সম্পর্কে এই আয়াত নাযিল করলেন- “যখন মুনাফিকগণ আপনার কাছে আসে”)। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ডাকলেন, যাতে তারা তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, কিন্তু তারা তাদের মাথা ফিরিয়ে নিল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৪০ | 4540 | ٤۵٤۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وإذا قيل لهم تعالوا يستغفر لكم رسول الله لووا رءوسهم ورأيتهم يصدون وهم مستكبرون “যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা এস, আল্লাহ্‌র রাসুল তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। তখন তারা মাথা ফিরিয়ে নেয় এবং তুমি তাদেরকে দেখতে পাচ্ছ, তারা দম্ভ ভরে ফিরে যায়” (৬৩ঃ ৫)
আল্লাহ্‌র বাণীঃ خُشُبٌ مُّسَنَّدَةٌ “দেয়ালে ঠেকানো কাষ্ঠ স্তম্ভ” রাবী বলেন, তারা অত্যান্ত সুন্দর দেহের অধিকারী পুরুষ ছিল।

لَوَّوْا তারা মাথা নেড়ে নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ঠাট্টা করত। কেউ কেউ لَوَّوْا শব্দটিকে لَوَيْتُ (تَخْفِيْفِ সহকারে) পড়ে থাকেন।

৪৫৪০। উবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ) … যাইদ ইবনু আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার চাচার সাথে ছিলাম। তখন আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালূলকে বলতে শুনলাম, “আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহচরদের জন্য তোমরা ব্যয় করবে না, যতক্ষণ না তারা তাঁর থেকে সরে পড়ে” এবং “আমরা মদিনায় প্রত্যাবর্তন করলে তথা হতে প্রবল লোকেরা দুর্বল লোকদের বহিষ্কৃত করবেই”। এ কথা আমি আমার চাচার কাছে বলে দিলাম। তিনি তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ডাকলেন। আমি তাঁকে বিস্তারিত সব বললাম। তখন তিনি আবদুল্লাহ ইবনু উবাই এবং তার সাথীদেরকে ডেকে পাঠালেন। তারা সকলেই কসম করে বলল, এই কথা তারা বলেনি। ফলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কথাকে মিথ্যা ও তাদের কথাকে সত্য বলে মেনে নিলেন। এতে আমি এমন কষ্ট পেলাম যা আগে কখনো পাইনি। এরপর আমি ঘরে বসে ছিলাম। তখন আমার চাচা আমাকে বললেন, এমন কাজের চিন্তা কেন করলে, যাতে নবী তোমাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করেছেন এবং তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন? তখন আল্লাহ নাযিল করলেন- “যখন মুনাফিকগণ আপনার কাছে আসে তখন তারা বলে, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূল”। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে লোক পাঠালেন এবং আমার সামনে এ সূরা পাঠ করলেন ও বললেন, আল্লাহ তোমাকে সত্যবাদী বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৪১ | 4541 | ٤۵٤۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃهم الذين يقولون لا تنفقوا على من عند رسول الله حتى ينفضوا ينفضوا يتفرقوا ولله خزائن السموات والأرض ولكن المنافقين لا يفقهون “তারাই বলে, আল্লাহ্‌র রাসুলের সহচরদের জন্য ব্যয় করবে না, যতক্ষন না তারা সরে পড়ে। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর ধনভান্ডার তো আল্লাহরই! কিন্তু মুনাফিকরা তা বুঝে না” (৬৩ঃ ৭)
৪৫৪১। আলী (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক যুদ্ধে আমরা উপস্থিত ছিলাম। বর্ণনাকারী সুফইয়ান (রহঃ) একবার غَزَاةٍ এর স্থলে جَيْشٍ বর্ণনা করেছেন। এ সময় জনৈক মুহাজির এক আনসারের পাছায় লাথি মারেন। তখন আনসারী হে আনসারী ভাইয়েরা! বলে সাহায্য চাইলেন এবং মুহাজির সাহাবী হে মুহাজির ভাইয়েরা! বলে সাহায্য চাইলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনে বললেন, কি হল, আইয়্যামে জাহিলিয়্যাতের মত ডাকাডাকি করছ কেন? তখন উপস্থিত লোকেরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এক মুহাজির এক আনসারীর পাছায় লাথি মেরেছে। তিনি বললেন, বাদ দাও, এটি খুবই বাজে কথা। এরপর ঘটনাটি আবদুল্লাহ ইবনু উবাইর কানে পৌঁছল। সে বলল, আচ্ছা মুহাজির কি এ কাজ করেছে? আল্লাহর কসম! আমরা মদিনায় প্রত্যাবর্তন করলে সেখান থেকে প্রবল লোকেরা দুর্বলদের বহিষ্কার করবেই। এ কথা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌঁছল। তখন উমার (রাঃ) উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে অনুমতি দিন। আমি এখনই এ মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দিচ্ছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। ভবিষ্যতে যেন কেউ এ কথা বলতে না পারে যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথীদের হত্যা করেন। মুহাজিররা পরবর্তীতে যখন মদিনায় হিজরত করে আসেন, তখন মুহাজিরদের তুলনায় আনসাররা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন। অবশ্য পরে মুহাজিররা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যান।

সুফইয়ান (রহঃ) … বলেন, এ হাদিসটি আমি আমর (রহঃ) থেকে মুখস্ত করেছি। আমর (রহঃ) বলেন, আমি জাবির (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৪২ | 4542 | ٤۵٤۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃهم الذين يقولون لا تنفقوا على من عند رسول الله حتى ينفضوا ينفضوا يتفرقوا ولله خزائن السموات والأرض ولكن المنافقين لا يفقهون “তারাই বলে, আল্লাহ্‌র রাসুলের সহচরদের জন্য ব্যয় করবে না, যতক্ষন না তারা সরে পড়ে। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর ধনভান্ডার তো আল্লাহরই! কিন্তু মুনাফিকরা তা বুঝে না” (৬৩ঃ ৭)
৪৫৪২। ইসমাঈল ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাররায় যাদেরকে শহীদ করা হয়েছিল তাদের খবর শুনে শোকাহত হয়েছিলাম। আমার এ শোকের খবর যাইদ ইবনু আরকাম (রাঃ) এর কাছে পৌঁছলে তিনি আমার কাছে চিঠি লিখেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন যে, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, হে আল্লাহ! আনসার ও আনসারদের সন্তানদের তুমি ক্ষমা করে দাও। এ দু’আর মাঝে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের তাদের সন্তানদের ও তাদের সন্তানদের জন্য দু’আ করেছেন কিনা এ ব্যাপারে ইবনু ফাযল (রাঃ) সন্দেহ করেছেন। এ ব্যাপারে আনাস (রাঃ) তার কাছে উপস্থিত ব্যাক্তিদের কাউকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, যাইদ ইবনু আরকাম (রাঃ) ঐ ব্যাক্তি যার শ্রবণ করাকে আল্লাহ সত্য বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৪৩ | 4543 | ٤۵٤۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ يقولون لئن رجعنا إلى المدينة ليخرجن الأعز منها الأذل ولله العزة ولرسوله وللمؤمنين ولكن المنافقين لا يعلمون “তারা বলে, আমরা মদিনায় প্রত্যাবর্তন করলে তথা প্রবল লোকেরা দুর্বল লোকদের বহিস্কৃত করবেই। কিন্তু শক্তি তো আল্লাহরই, আর তার রাসুল ও মু’মিনদের, তবে মুনাফকরা তা জানে না” (৬৩ঃ ৮)
৪৫৪৩। হুমায়দী (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক যুদ্ধে আমরা উপস্থিত ছিলাম। জনৈক মুহাজির এক আনসারের নিতম্বে আঘাত করলেন। তখন আনসারী সাহাবী, হে আনসারী ভাইগণ! এবং মুহাজির সাহাবী- হে মুহাজির ভাইগণ! বলে ডাক দিলেন। আল্লাহ তার রাসূলের কানে এ কথা পৌছিয়ে দিলেন। তিনি বললেন, এ কি ধরণের ডাকাডাকি? তখন উপস্থিত লোকেরা বললেন, এক মুহাজির এক আনসারীর নিতম্বে আঘাত করেছে। আনসারী হে আনসারী ভাইগণ! এবং মুহাজির সাহাবী হে মুহাজির ভাইগণ! বলে নিজ নিজ গোত্রকে ডাক দিলেন। এ কথা শুনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বাদ দাও, এটি খুবই বাজে কথা। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় হিজরত করে আসেন তখন আনসাররা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন। অবশ্য পরে মুহাজিররা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যান। এরপর ঘটনাটি আবদুল্লাহ ইবনু উবাইর কানে পৌঁছল। সে বলল, সত্যই তারা কি এ কাজ করেছে? আল্লাহর কসম! আমরা মদিনায় প্রত্যাবর্তন করলে সেখান থেকে প্রবল লোকেরা দুর্বলদের বহিষ্কার করবেই। তখন উমার ইবনু খত্তাব (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে অনুমতি দিন। আমি এখনই এ মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দেই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, উমার! তাকে ছেড়ে দাও, যেন কেউ এ কথা বলতে না পারে যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গীদের হত্যা করছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৪৪ | 4544 | ٤۵٤٤

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা তাগাবুন

‘আলক্বামাহ (রহ.) ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর বাণীঃ وَمَنْ يُّؤْمِنْمبِاللهِ يَهْدِ قَلْبَه ‘‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে, তিনি তার অন্তরকে সৎপথ প্রদর্শন করেন।’’ (৬৪ঃ ১১)-এর ব্যাখ্যায় বলেন যে, এর দ্বারা এমন লোককে বোঝানো হয়েছে, যখন বিপদগ্রস্ত হয় তখন আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকে এবং এ কথা বুঝতে পারে যে, এ বিপদ আল্লাহর পক্ষ হতেই এসেছে।

সুরা তালাক

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, إِنْ ارْتَبْتُمْ যদি তোমরা অবগত না থাক যে তারা ঋতুমতী হবে কি না, যারা ঋতু হতে অবসর গ্রহণ করেছে আর যাদের এখনও তা শুরু হয়নি। فَعِدَّتُهُنَّ ثَلَاثَةُ أَشْهُرٍ তাদের কৃতকর্মের শাস্তি।

৪৫৪৪। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি তাঁর ঋতুবতী স্ত্রীকে তালাক দেয়ার পর উমার (রাঃ) তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানালেন। এতে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুবই অসন্তুষ্ট হলেন। এরপর তিনি বললেন, সে যেন তাকে ফিরিয়ে নেয়। এরপর পবিত্রাবস্থা না আসা পর্যন্ত তাকে নিজের কাছে রেখে দিক। এরপর ঋতু এসে পুনরায় পবিত্র হলে তখন যদি তালাকের প্রয়োজন মনে করে তাহলে পবিত্রাবস্থায় স্পর্শ করার পূর্বে সে যেন তাকে তালাক দেয়। আল্লাহ যে ইদ্দত পালনের নির্দেশ দিয়েছেন, এটি সেই ইদ্দত।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৪৫ | 4545 | ٤۵٤۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ “এবং গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। আল্লাহকে যে ভয় করে, আল্লাহ্‌ তার সমস্যা সহজে সমাধান করে দিবেন” (৬৫ঃ ৪) وأولات الأحمال এর একবচন ذات حمل
৪৫৪৫। সা’দ ইবনু হাফস (রহঃ) … আবূ সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর কাছে আসল, যখন আবূ হুরাইরা (রাঃ) তাঁর সাথে বসে ছিলেন। লোকটি বলল, এক মহিলা তার স্বামীর মৃত্যুর চল্লিশ দিন পর বাচ্চা প্রসব করেছে। সে এখন কীভাবে ইদ্দত পালন করবে, এ বিষয়ে আপনার রায় দিন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, ইদ্দত সম্পর্কিত হুকুম দুটির যেটি দীর্ঘ, তাকে সেটি পালন করতে হবে। আবূ সালামা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আল্লাহর হুকুম তো হল- গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, আমি আমার ভ্রাতুষ্পুত্রের [আবূ সালামা (রাঃ)] এর সাথে একমত। তখন ইবনু আব্বাস (রাঃ) তাঁর ক্রীতদাস কুরাইবকে বিষয়টি জিজ্ঞেসের জন্য উম্মে সালামা (রাঃ) এর কাছে পাঠালেন। তিনি বললেন, সুবাই’আ আসলামিয়া (রাঃ) গর্ভবতী থাকাকালীন সময়ে তার স্বামী নিহত হন, এবং মৃত্যুর চল্লিশ দিন পর তিনি একটি সন্তান প্রসব করলেন। এরপর তার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো হল, এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বিয়ে দিয়ে দিলেন। যারা তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে একজন ছিলেন আবূ সানাবিল।

(অন্য এক সনদে) সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) ও আবূন নু’মান, হাম্মাদ ইবনু যায়দ ও আইয়ুবের মাধ্যমে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করছেন, তিনি বলেছেন, আমি ঐ মজলিশে ছিলাম, যেখানে আবদুর রহমান ইবনু আবূ লায়লা (রহঃ)-ও উপস্থিত ছিলেন। তার সঙ্গীরা তাকে খুব সম্মান করতেন। তিনি ইদ্দত সম্পর্কিত হুকুম দু’টি থেকে দীর্ঘ সময় সাপেক্ষে হুকুমটির কথা উল্লেখ করলে আমি আবদুল্লাহ ইবনু উতবার বরাত দিয়ে সুবায়আ বিনত হারিস আসলামিয়া (রহঃ) সম্পর্কিত হাদিসটি বর্ণনা করলাম।

মুহাম্মদ ইবনু সিরিন (রহঃ) বলেন, এতে তার কতিপয় সঙ্গী সাথী আমাকে থামিয়ে দিল। তিনি বলেন, আমি বুঝালাম তারা আমার হাদিসটি অস্বীকার করছে। তাই আমি বললাম, আবদুল্লাহ ইবনু উতবা (রহঃ) কুফাতে এখনও জীবিত আছেন, এমতাবস্থায় যদি আমি তার নাম নিয়ে মিথ্যা কথা বলি, তাহলে এতে আমার চরম দুঃসাহসিকতা দেখান হবে। এ কথা শুনে আবদুর রহমান ইবনু আবূ লায়লা লজ্জিত হলেন এবং বললেন, কিন্তু তারা চাচা তো এ হাদিস বর্ণনা করেন নি। তখন আমি আবূ আতিয়া মালিক ইবনু আমিরের সাথে সাক্ষাৎ করে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি সুবায়আ (রাঃ) এর হাদিসটি বর্ণনা করে আমাকে শোনাতে লাগলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, (এ বিষয়ে) আপনি আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে কোন কথা শুনেছেন কি? তিনি বললেন আমরা আবদুল্লাহ (রাঃ) এর সঙ্গে ছিলাম। তখন তিনি বললেন, তোমরা কি এ ধরনের মহিলাদের প্রতি সহজ পন্থা অবলম্বন না করে কঠোরতা অবলম্বন করতে চাচ্ছ? সুরা নিসা আলকুসরা এরপর নাযিল হয়েছে। আল্লাহ বলেন, গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৪৬ | 4546 | ٤۵٤٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ يا أيها النبي لم تحرم ما أحل الله لك تبتغي مرضاة أزواجك والله غفور رحيم “হে নবী! আল্লাহ্‌ তোমার জন্য যা বৈধ করেছেন তুমি তা নিষিদ্ধ করছ কেন? তুমি তোমার স্ত্রীদের সন্তুষ্টি চাচ্ছ; আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু” (৬৬ঃ ১)
৪৫৪৬। মু’আয ইবনু ফাযালা (রহঃ) … সাঈদ ইবনু জুবায়ির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন কেউ যদি তার স্ত্রীকে বলে যে, “তুমি আমার জন্য অবৈধ” তাহলে তাকে অবশ্যই এর কাফফারা দিতে হবে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) আরও বললেন, “আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৪৭ | 4547 | ٤۵٤۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ يا أيها النبي لم تحرم ما أحل الله لك تبتغي مرضاة أزواجك والله غفور رحيم “হে নবী! আল্লাহ্‌ তোমার জন্য যা বৈধ করেছেন তুমি তা নিষিদ্ধ করছ কেন? তুমি তোমার স্ত্রীদের সন্তুষ্টি চাচ্ছ; আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু” (৬৬ঃ ১)
৪৫৪৭। ইবরাহিম ইবনু মূসা (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যয়নাব বিনতে জাহশ (রাঃ) এর কাছে মধু পান করতেন এবং সেখানে কিছুক্ষণ থাকতেন। তাই আমি ও হাফসা একমত হলাম যে, আমাদের যার ঘরেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসবেন, সে তাঁকে বলবে, আপনি কি মাগাফীর খেয়েছেন? আপনার মুখ থেকে মাগাফীরের গন্ধ পাচ্ছি। (আমরা তাই করলাম) এবং তিনি বললেন, না, বরং আমি যয়নাব বিনতে জাহশ এর ঘরে মধু পান করেছি। তবে আমি কসম করলাম, আর কখনো মধু পান করব না। তুমি এ বিষয়টি আর কাউকে জানাবে না।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৪৮ | 4548 | ٤۵٤۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ قد فرض الله لكم تحلة أيمانكم والله مولاكم وهو العليم الحكيم “আল্লাহ্‌ তোমাদের শপথ হতে মুক্তি লাভের ব্যবস্থা করেছেন, আল্লাহ্‌ তোমাদের সহায়, তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়” (৬৬ঃ ২)
অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ تَبْتَغِيْ مَرْضَاتَ أَزْوَاجِكَ “তুমি তোমার স্ত্রীদের সন্তুষ্টি চাচ্ছ (৬৬ঃ ১)

৪৫৪৮। আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমার ইবনু খত্তাব (রাঃ) কে একটি আয়াতের (সূরা তাহরীমের) ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞেসের জন্য আমি এক বছর ধরে চেয়েছিলেম, কিন্তু তাঁর ব্যাক্তিত্বের প্রভাবের ভয়ে আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করতে পারিনি। অবশেষে একবার হাজ্জ (হজ্জ) করার উদ্দেশ্যে আমি তাঁর সাথে যাত্রা করলাম। ফিরে আসার সময় আমরা যখন কোন একটি পথ অতিক্রম করছিলাম, তখন তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণে একটি পিলু গাছের আড়ালে গেলেন। তিনি প্রয়োজন সেরে না আসা পর্যন্ত আমি সেখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলাম। এরপর তাঁর সাথে পথ চলতে চলতে বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সেই দুজন স্ত্রী কারা, যারা তাঁর বিরুদ্ধে পরস্পরকে সাহায্য করেছিল? তিনি বললেন, তারা হল আয়িশা এবং হাফসা। তারপর আমি তাঁকে বললাম, আল্লাহর কসম! আমি আপনাকে এই ব্যাপারে এক বছর আগেই জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আপনাকে আমি সম্মান করি বলে তা করতে পারিনি। উমার (রাঃ) বললেন, আমাকে জিজ্ঞেস করতে পিছপা হবে না। যদি তুমি মনে কর যে আমি জানি তাহলে জিজ্ঞেস করবে, এবং আমি যদি জানি তাহলে আমি তোমাকে বলব।

এরপর উমার (রাঃ) আরও বললেন, আল্লাহর কসম! জাহেলী যুগে নারীদের কোন আধিকার আছে বলে আমরা মনে করতাম না। অবশেষে আল্লাহ তাদের সম্পর্কে যে বিধান নাযিল করার ছিল তা নাযিল করলেন এবং তাদের হক হিসেবে যা নির্দিষ্ট করার ছিল তা নির্দিষ্ট করলেন। তিনি বলেন, একদিন আমি কোন এক বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করছিলাম, এই এবস্থায় আমার স্ত্রী আমাকে বলল, কাজটি যদি আপনি এভাবে করেন (তাহলে ভালো হবে)। আমি বললাম, তোমার কি দরকার? এবং আমার কাজে তুমি মাথা ঘামাচ্ছ কেন? সে আমাকে বলল, হে খত্তাবের পুত্র! কি আশ্চর্য, আপনি চান না যে, আমি আপনার কথার উত্তর দেই, অথচ আপনার মেয়ে হাফসা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তর্ক করেছে, এমনকি এতে তিনি পুরো একদিন রাগান্বিত ছিলেন। এ কথা শুনে উমার (রাঃ) দাঁড়িয়ে গেলেন এবং চাঁদরটি নিয়ে তার বাড়িতে চলে গেলেন। তিনি তাকে বললেন, হে আমার কন্যা! তুমি নাকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তর্ক কর, ফলে তিনি দিনভর রাগান্বিত থাকেন?

হাফসা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা তো অবশ্যই তাঁর কথার জবাব দিয়ে থাকি। উমার (রাঃ) বললেন, জেনে রাখো! আমি তোমাকে আল্লাহর শাস্তি ও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসন্তুষ্টি সম্পর্কে সতর্ক করছি। রূপ-সৌন্দর্যের কারণে আল্লাহর রাসূলের ভালোবাসা যাকে গর্বিতা করে রেখেছে [আয়িশা (রাঃ)], সে যেন তোমাকে প্রতারিত করতে না পারে। উমার (রাঃ) বললেন, এরপর আমি সেখান থেকে বেরিয়ে উম্মে সালামা (রাঃ) এর ঘরে ঢুকলাম ও এই বিষয়ে তাঁর সাথে কথা বললাম। কারণ তাঁর সাথে আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। তখন উম্মে সালামা (রাঃ) বললেন, হে খত্তাবের পুত্র! কি আশ্চর্য, তুমি প্রত্যেক বিষয়েই হস্তক্ষেপ করছ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর স্ত্রীদের বিষয়েও হস্তক্ষেপ করতে চাচ্ছ। আল্লাহর কসম! তিনি আমাকে এমন কঠোরভাবে ধরলেন যে, আমার রাগ কিছুটা কমে গেল।

এরপর আমি তাঁর কাছ থেকে চলে এলাম। সেসময় আমার এক আনসার বন্ধু ছিল। সে আমার অনুপস্থিতিতে এবং আমি তার অনুপস্থিতিতে খবর (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে) সংগ্রহ করতাম। সেসময় আমরা গাসসানী বাদশাহের (আক্রমণের) ভয়ে ছিলাম। আমরা শুনেছিলাম যে সে আমদেরকে আক্রমণের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে। তাই আমাদের অন্তর ভয়ে আতঙ্কিত ছিল। একদিন আমার আনসার বন্ধু অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আমার দরজায় করাঘাত করল এবং বলল, খুলুন খুলুন! আমি বললাম, গাসসানী বাদশাহ কি এসেছে? সে বলল, না, কিন্তু আরও বেশি অঘটন ঘটেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের কাছ থেকে আলাদা হলেন। আমি বললাম, হাফসা ও আয়িশার নাক ধূলায় ধূসরিত হোক। এরপর আমি কাপড় নিয়ে বেরিয়ে এলাম। গিয়ে দেখলাম, আল্লাহর রাসূল একটি উঁচু টোঙে আবস্থান করছেন। সিঁড়ি বেয়ে সেখানে উঠতে হয়। সিঁড়ির মুখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এক কালো গোলাম বসা ছিল।

আমি বললাম, বলুন, উমার ইবনু খত্তাব এসেছেন। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে অনুমতি দিলেন, আমি তাঁকে এসব ঘটনা বললাম, এক পর্যায়ে আমি যখন উম্মে সালামার কথোপকথন পর্যন্ত পৌঁছলাম তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসলেন। এসময় তিনি একটি চাটাইয়ের উপর শুয়ে ছিলেন। চাটাই ও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাঝে আর কিছুই ছিল না। তাঁর মাথার নিচে ছিল খেজুরের ছালভর্তি চামড়ার একটি বালিশ ও পায়ের কাছে ছিল সলম গাছের পাতার একটি স্তূপ ও মাথার উপর লটকানো ছিল চামড়ার একটি মশক। আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এক পাশে চাটাইয়ের দাগ দেখে কেঁদে ফেললে তিনি বললেন, তুমি কাঁদছ কেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কিসরা ও কায়সার পার্থিব ভোগবিলাসের মধ্যে ডুবে আছে, অথচ আপনি আল্লাহর রাসূল! তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি পছন্দ করো না যে, তারা দুনিয়া লাভ করুক, আর আমরা আখিরাত লাভ করি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৪৯ | 4549 | ٤۵٤۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وإذ أسر النبي إلى بعض أزواجه حديثا فلما نبأت به وأظهره الله عليه عرف بعضه وأعرض عن بعض فلما نبأها به قالت من أنبأك هذا قال نبأني العليم الخبير “স্মরণ কর, নবী তার সহধর্মিণীদের একজনকে গোপনে কিছু বলেছিলেন। যখন সে তা অন্যকে বলে দিল এবং আল্লাহ্‌ নবী (সাঃ) কে তা জানিয়ে দিলেন। তখন নবী (সাঃ) এ বিষয়ে কিছু ব্যক্ত করলেন এবং কিছু অব্যক্ত রাখলেন। যখন নবী (সাঃ) তা তার সে স্ত্রীকে জানালেন তখন সে বলল, কে আপনাকে এ বিষয়ে অবহিত করল? নবী (সাঃ) বললেন, আমাকে অবহিত করেছেন তিনি যিনি সর্বজ্ঞ, সম্যক অবগত” (৬৬ঃ ৩) এ বিষয়ে আয়শা (রাঃ)-ও এক হাদীস নবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।
৪৫৪৯। মুহাম্মদ ইবনু ইসমাঈল ইবনু ইবরাহিম ইবনু মুগীরা আল জুফী (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উমার (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা করলাম, আমি বললাম, হে আমীরুল মু’মিনীন! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণীদের কোন দু’জন তার ব্যাপারে একমত হয়ে পরস্পর একে অন্যকে সহযোগিতা করেছিলেন? আমি আমার কথা শেষ করতে না করতেই তিনি বললেন, তারা হল আয়িশা এবং হাফসা (রাঃ)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৫০ | 4550 | ٤۵۵۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وَإِنْ تَظَاهَرَا عَلَيْهِ فَإِنَّ اللهَ هُوَ مَوْلَاهُ وَجِبْرِيْلُ وَصَالِحُ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمَلَائِكَةُ بَعْدَ ذَلِكَ ظَهِيْرٌ কিন্তু যদি তোমরা নাবীর বিরুদ্ধে একে অপরকে পোষকতা কর তবে জেনে রাখ, আল্লাহ্ই তাঁর বন্ধু এবং জিবরীল ও সৎকর্মপরায়ণ মু’মিনগণও, উপরন্তু অন্যান্য ফেরেশতাগণও তাঁর সাহায্যকারী (৬৬ঃ ৪) ظَهِيْرٌ অর্থ সাহায্যকারী تَظَاهَرُوْنَ পরস্পর তোমরা একে অপরকে সাহায্য করছ। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন,قُوْآ أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيْكُمْ بِتَقْوَى اللهِ وَأَدِّبُوْهُمْ ‘‘তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে তাকওয়া অবলম্বন করার জন্য ওসীয়াত কর এবং তাদেরকে আদব শিক্ষা দাও।
অনুচ্ছেদঃ আল্লাহর বাণীঃ إن تتوبا إلى الله فقد صغت قلوبكما “যদি তোমরা উভয়েই অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহ্‌র দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যেহেতু তোমাদের হৃদয় ঝুঁকে পড়েছে। আল্লাহ্‌ তোমাদের ক্ষমা করে দিবেন। (৬৬ঃ ৪) صَغَوْتُ এবং َأَصْغَيْتُ (ثلاثى مجرد وموزيد فيه) উভয়ের অর্থ আমি ঝুঁকে পড়েছি। لِتَصْغَى অর্থ- لِتَمِيْلَ মানে যেন সে অনুরাগী হয়, ঝুঁকে পড়ে।

৪৫৫০। হুমায়দী (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিরুদ্ধে একমত হয়ে যে দুজন নারী পরস্পরকে সাহায্য করেছিল তাদের সম্পর্কে উমার (রাঃ) কে আমি জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু জিজ্ঞেসের সুযোগ না পেয়ে আমি এক বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। অবশেষে একবার হাজ্জ (হজ্জ) করার উদ্দেশ্যে আমি তাঁর সাথে যাত্রা করলাম। আমরা ‘যাহরান’ নামক স্থানে পৌঁছলে উমার (রাঃ) প্রাকৃতিক প্রয়োজনে গেলেন। এরপর আমাকে বললেন, আমার জন্য ওযুর পানির ব্যবস্থা কর। আমি পাত্র ভরে পানি নিয়ে আসলাম এবং ঢালতে লাগলাম। প্রশ্ন করার সুযোগ মনে করে আমি তাঁকে বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! ঐ দুজন মহিলা কারা, যারা পরস্পরকে সাহায্য করেছিল? ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি আমার কথা শেষ করতে না করতেই তিনি বললেন, তারা হল আয়িশা এবং হাফসা (রাঃ)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৫১ | 4551 | ٤۵۵۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ عسى ربه إن طلقكن أن يبدله أزواجا خيرا منكن مسلمات مؤمنات قانتات تائبات عابدات سائحات ثيبات وأبكارا “যদি নাবী তোমাদের সবাইকে পরিত্যাগ করেন, তবে তাঁর প্রতিপালক সম্ভবত তাকে দেবেন তোমাদের অপেক্ষা উৎকৃষ্ট স্ত্রী তাঁকে দিবেন, যারা হবে আত্মসমার্পনকারী, বিশ্বাসী, অনুগত, তাওবাহ্কারিণী, ইবাদাতকারিণী, সওম পালনকারীণী, অকুমারী ও কুমারী।“ (৬৬ঃ ৫)
৪৫৫১। আমর ইবনু আউন (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমার (রাঃ) বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সচেতন করার জন্য তার সহধর্মীগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন। তাই আমি তাঁদেরকে বললাম, যদি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের সকলকে পরিত্যাগ করেন, তবে তার প্রতিপালক সম্ভবত তাকে দেবেন তোমাদের অপেক্ষা উত্তম স্ত্রী। তখন এই আয়াতটি নাযিল হয়েছিল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৫২ | 4552 | ٤۵۵۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ عتل بعد ذلك زنيم “রুঢ় স্বভাব এবং তদপুরি কুখ্যাত” (৬৮ঃ ১৩)
সুরা মুলক

التَّفَاوُتُ বিভিন্নতা। التَّفَاوُتُএবং التَّفَوُّتُ শব্দ দু’টো একই অর্থবোধক। تَمَيَّزُ টুকরো হয়ে যাবে বা ফেটে পড়বে। مَنَاكِبِهَا তার দিগদিগন্ত। تَدَّعُوْنَ এবং تَدْعُوْنَবাক্যদ্বয় تَذَّكَّرُوْنَ ও تَذْكُرُوْنَ এর মতই। يَقْبِضْنَ তারা তাদের পাখা মেলে উড়ে বেড়ায়। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, صَافَّاتٍ তারা তাদের পাখা বিস্তার করে। نُفُوْرٌ কুফর ও সত্যবিমুখতা।

সুরা কলম

ক্বাতাদাহ (রহ.) বলেন, حَرْدٍ অর্থ جِدٍّ فِيْٓ أَنْفُسِهِمْ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, اِنَّالَضَآلُّوْنَ অর্থ আমরা আমাদের জান্নাতের স্থানের কথা ভুলে গিয়েছি। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ব্যতীত অন্যান্য ভাষ্যকার বলেছেন, كَالصَّرِيْمِ অর্থ রাত থেকে বিচ্ছিন্ন প্রভাতের মত বা দিন থেকে বিচ্ছিন্ন রাতের মত। صَّرِيْمُ ঐ বালুকণাকেও বলা হয় যা বালুস্তূপ হতে বিচ্ছিন্ন। مَصْرُوْمُ- صَرِيْمُ শব্দ قَتِيْلٍ এবং مَقْتُوْلٍ এর মত।

৪৫৫২। মাহমুদ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি عُتُلٍّ بَعْدَ ذَلِكَ زَنِيمٍ‏ “রুঢ় এবং তদুপরি কুখ্যাত” আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, এই ব্যাক্তিটি হল কুরাইশ গোত্রের এমন এক ব্যাক্তি, যার ঘাড়ে বকরীর চিহ্নের মত একটি বিশেষ চিহ্ন ছিল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৫৩ | 4553 | ٤۵۵۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ عتل بعد ذلك زنيم “রুঢ় স্বভাব এবং তদপুরি কুখ্যাত” (৬৮ঃ ১৩)
৪৫৫৩। আবূ নুআঈম (রহঃ) … হারিস ইবনু ওয়াহব খুযাই (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, আমি কি তোমাদের জান্নাতী লোকদের পরিচয় বলব না? তারা দুর্বল এবং অসহায়, কিন্তু তারা যদি কোন বিষয়ে শপথ করে ফেলেন, তাহলে আল্লাহ তা পূরণ করে দেন। এবং আমি কি তোমাদের জাহান্নামী লোকদের পরিচয় বলব না? যারা রুঢ় স্বভাব, অধিক মোটা এবং অহংকারী তারাই জাহান্নামী।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৫৪ | 4554 | ٤۵۵٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ يوم يكشف عن ساق “স্মরণ কর, সে চরম সংকট দিনের কথা” (৬৮ঃ ৪২)
৪৫৫৪। আদম (রহঃ) … আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, আমাদের প্রতিপালক যখন তাঁর পায়ের গোড়ালির জ্যোতি বিকীর্ণ করবেন, তখন ঈমানদার নারী ও পুরুষ সবাই তাঁকে সিজদা করবে। কিন্তু যারা দুনিয়াতে লোক দেখানো ও প্রচারের জন্য সিজদা করত, তারা কেবল অবশিষ্ট থাকবে। তারা সিজদা করতে চাইলে তাদের পিঠ একখণ্ড কাঠফলকের মত শক্ত হয়ে যাবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৫৫ | 4555 | ٤۵۵۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ودا ولا سواعا ولا يغوث ويعوق “তোমরা পরিত্যাগ করবে না ওয়াদ, সুওয়’আ, ইয়াগুস, ইয়াউক ও নাসরকে (৭১ঃ ২৩)
সুরা হাক্‌কা

عِيْشَةٍ رَّاضِيَةٍ সন্তোষজনক জীবন। الْقَاضِيَةَ প্রথম মৃত্যুটাই যদি এমন হত যে, তারপর আর জীবিত না করা হত। مِنْ أَحَدٍ عَنْهُ حَاجِزِيْنَ তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে তাকে রক্ষা করতে পারে। احِدِ শব্দটি একবচন ও বহুবচন উভয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, الْوَتِيْنَ হৃদপিন্ডের সঙ্গে যুক্ত রগ। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, طَغٰى অতিরিক্ত হয়েছে বা বেশি হয়েছে। বলা হয় بِالطَّاغِيَةِ তাদের বিদ্রোহ এবং কুফরীর কারণে طَغَتْ عَلَى الْخَزَّانِ বায়ু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে এবং সামূদ সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে দিয়েছে যেমন পানি নূহ্ সম্প্রদায়ের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।

সুরা মা’আরিজ

الْفَصِيْلَةُ তাদের পূর্ব-পুরষদের থেকে সর্বাধিক নিকটাত্মীয়, যাদের থেকে তারা পৃথক হয়েছে এবং যাদের দিকে তাদেরকে সম্পৃক্ত করা হয়। لِلشَّوٰى দু’হাত, দু’পা, শরীরের বিভিন্ন প্রান্ত ভাগ এবং মাথার চামড়া সবগুলোকে شَوَاةٌ বলা হয়। الْعِزُوْنَ দলসমূহ। এর একবচন عِزَةٌ।

সুরা নুহ

طْوَارًا পর্যায়ক্রমে, বলা হয়। عَدَا طَوْرَهُ সে তার মর্যাদাকে অতিক্রম করে গেছে। بِالتَّخْفِيْفِ الكُبَّارُ এর তুলনায় بالتشديد الكُبَّارُ এর অর্থের মাঝে কিছু আধিক্য ও কঠোরতা বিদ্যমান আছে। এমনিভাবে جُمَّالٌ এর মাঝে جَمِيْلٌ -এর তুলনায় অধিকতর সৌন্দর্যের অর্থ বিদ্যমান আছে। كُبَّارٌ الْكَبِيْرُ ও بِالتَّخْفِيْفِ الكُبَّارُ এর অবস্থা অনুরূপই। আরবীয় লোকের তাশ্দীদের সঙ্গে رَجُلٌ حُسَّانٌ وَجُمَّالٌ ও বলেন, এমনিভাবে তাখ্ফীফের সঙ্গে رَجُلٌ حُسَّانٌ وَجُمَّالٌ ও বলে থাকেন। دَيَّارًا শব্দটির উৎপত্তি دَوْرٍ ধাতু থেকে। তবে যদি তাকে فَيْعَالٌ এর ওযনে ধরা হয় তাহলে এর উৎপত্তি হবে الدَّوَرَانِ শব্দমূল থেকে। যেমন, ‘উমার (রাঃ) الْحَيُّ الْقَيَّامُ পড়েছেন। قُمْتُ থেকে الْقَيَّامُ শব্দটির উৎপত্তি। অন্যান্য মুফাসসির বলেছেন, دَيَّارًا কাউকে। تَبَارًا ধ্বংস। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, مِدْرَارًا একটি অপরটির পেছনে। وَقَارًا শ্রেষ্ঠত্ব।

৪৫৫৫। ইবরাহিম ইবনু মূসা (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে প্রতিমার পূজা নূহ (আলাইহিস সালাম) এর জাতির মাঝে প্রচলিত ছিল, পরবর্তী সময়ে আরবদের মাঝেও তার পূজা প্রচলিত হয়েছিল। ওয়াদ ‘দুমাতুল জান্দাল’ নামক স্থানে অবস্থিত কালব গোত্রের একটি দেবমূর্তি, সূওয়া’আ হল হুযাইল গোত্রের একটি দেবমূর্তি এবং ইয়াগুস ছিল মুরাদ গোত্রের, অবশ্য পরে তা গাতীফ গোত্রের হয়ে যায়। এর আস্তানা ছিল কওমে সাবার নিকটে ‘জাওফ’ নামক স্থানে। ইয়াউক ছিল হামাদান গোত্রের দেবমূর্তি, নাসর ছিল যুলকালা গোত্রের হিমযায় শাখারদের মূর্তি। নূহ (আলাইহিস সালাম) এর জাতির কতিপয় নেক লোকের নাম নাসর ছিল। তারা মারা গেলে, শয়তান তাদের জাতির লোকদের হৃদয়ে এই কথা ঢুকিয়ে দিল যে, তারা যেখানে বসে মজলিস করত, সেখানে তোমরা কিছু মূর্তি স্থাপন কর এবং ঐ সকল নেক লোকের নামানুসারেই এগুলোর নামকরণ কর। সুতরাং তারা তাই করল, কিন্তু তখনও ঐসব মূর্তির পূজা করা হত না। তবে মূর্তি স্থাপনকারী লোকগুলো মারা গেলে এবং মূর্তিগুলো সম্পর্কে সত্যিকারের জ্ঞান বিলুপ্ত হলে লোকজন তাদের পূজা করতে শুরু করে দেয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৫৬ | 4556 | ٤۵۵٦

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
৪৫৫৬। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল সাহাবীকে নিয়ে বাজারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। এ সময়ই জ্বীনদের আসমানি খবরাদি শোনার ব্যাপারে বাঁধা সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে নিক্ষেপ করা হয়েছে লেলিহান অগ্নিশিখা। ফলে জ্বীন শয়তানরা ফিরে আসলে অন্য জ্বীনরা তাদের বলল, তোমাদের কি হয়েছে? তারা বলল, আসমানি খবরাদি শোনার ব্যাপারে আমাদের উপর বাঁধা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং আমাদের বিরুদ্ধে নিক্ষেপ করা হয়েছে লেলিহান অগ্নিশিখা। তখন শয়তান বলল, আসমানি খবরাদি শোনার ব্যাপারে তোমাদের উপর যে বাঁধা সৃষ্টি করা হয়েছে, অবশ্যই তা কোন নতুন ঘটনা ঘটার কারণেই হয়েছে। সুতরাং তোমরা পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম দিগন্ত পর্যন্ত সফর কর এবং দেখ ব্যাপারটা কি ঘটেছে? তাই আসমানি খবরাদি সংগ্রহের ব্যাপারে যে বাঁধা সৃষ্টি হয়েছে, এর কারণ খুঁজতে তারা সকলেই পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিমে অনুসন্ধান সফরে বেরিয়ে পড়ল।

আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, যারা তিহামার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিল তারা ‘নাখলা’ নামক স্থানে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে উপস্থিত হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখান থেকে উকায বাজারের দিকে যাওয়ার জন্য ঠিক করেছিলেন। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের নিয়ে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। জ্বীনদের ঐ দলটি কুর’আন শুনতে পেয়ে আরও বেশি মনোযোগ দিয়ে তা শুনতে লাগল এবং বলল, আসমানি খবরাদি এবং তোমাদের মাঝে এটই মূলত বাঁধা সৃষ্টি করেছে। তারপর তারা তাদের জাতির কাছে ফিরে এসে বলল, হে আমাদের জাতি! আমরা এক বিস্ময়কর কুর’আন (তিলাওয়াত) শুনেছি, যা সঠিক পথ নির্দেশ করে। এতে আমরা ঈমান এনেছি। আমরা কখনো আমাদের রবের সাথে কাউকে শরীক করব না। এরপর আল্লাহ তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি নাযিল করলেনঃ “বলুন, আমার প্রতি ওহী প্রেরিত হয়েছে যা জ্বীনদের একটি দল মনোযোগ দিয়ে শুনেছে”। জ্বীনদের উপরোক্ত কথা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অহীর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৫৭ | 4557 | ٤۵۵۷

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা মুয্‌যাম্মিল

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, وَتَبَتَّلْ একনিষ্ঠভাবে মগ্ন হওয়া। হাসান (রহঃ) বলেন, أَنْكَالًا শৃঙ্খল। مُثْقَلَةٌ بِهٰ ভারে অবনত। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, كَثِيْبًامَّهِيْلًا বহমান বালুকারাশি। وَبِيْلًا কঠিন।

সুরা মুদ্‌দাছছির

ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, عَسِيْرٌ কঠিন। قَسْوَرَةٌ মানুষের কোলাহল, আওয়াজ। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, قَسْوَرَةٌ বাঘ। প্রত্যেক কঠিন বস্তুকে الْقَسْوَرَةُ বলা হয়। مُسْتَنْفِرَةٌ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পলায়নপর।

৪৫৫৭। ইয়াহইয়া (রহঃ) … ইয়াহইয়া ইবনু কাসীর (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) কে কুর’আনের নাযিলকৃত প্রথম আয়াত (সূরা) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিলি বললেন, ‏يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ (সূরা মুদ্দাসসির)। আমি বললাম, লোকজন তো বলে- اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ (সূরা আলাক)। এতে আবূ সালামা (রহঃ) বলেন, আমি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম এবং তুমি যা বললে আমিও তাকে তাই বলেছিলাম। এতে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের যা বলেছেন তা বাদে আমি তোমাকে কিছুই বলব না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি হেরা গুহায় ইতিকাফ রত অবস্থায় ছিলাম। আমার ইতিকাফ শেষ হলে আমি সেখান থেকে নেমে এলাম। তখন আমি আমাকে ডাকার শব্দ শুনতে পেলাম। এরপর আমি ডানে তাকালাম, কিন্তু কিছু দেখলাম না। বামে তাকালাম, কিন্তু এদিকেও কিছু দেখলাম না। এরপর সামনে তাকালাম, এদিকেও কিছু দেখলাম না। এরপর পিছনে তাকালাম, কিন্তু এদিকেও আমি কিছু দেখলাম না। অবশেষে আমি উপরে তাকালাম এবং কিছু একটা দেখলাম। এরপর আমি খাদিজা (রাঃ) এর কাছে গেলাম এবং তাঁকে বললাম, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর এবং আমার গায়ে ঠাণ্ডা পানি ঢাল। তাই তারা আমাকে বস্ত্রাবৃত করে এবং আমার গায়ে ঠাণ্ডা পানি ঢালে। এরপর নাযিল হলঃ “হে বস্ত্রাবৃত! উঠুন, সতর্কবাণী প্রচার করুন এবং আপনার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৫৮ | 4558 | ٤۵۵۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ قم فأنذر “উঠ, সতর্কবাণী প্রচার কর” (৭৪ঃ ২)
৪৫৫৮। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি হেরা গুহায় ইতিকাফ করেছিলাম। উসমান ইবনু উমার, আলী ইবনু মুবারক (রহঃ) থেকে যে হাদিস বর্ণনা করেছেন তিনিও অনুরূপ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৫৯ | 4559 | ٤۵۵۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وربك فكبر “এবং তোমার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর (৭৪ঃ ৩)
৪৫৫৯। ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) … ইয়াহইয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, কুরআনের কোন আয়াতটি প্রথম নাযিল হয়েছিল। তিলি বললেন, يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ (সূরা মুদ্দাসসির)। আমি বললাম, আমাকে তো বলা হয়েছে, اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ (সূরা আলাক)। এ কথা শুনে আবূ সালামা (রহঃ) বলেন, এ সম্পর্কে আমি জাবির (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করার পর তিনি বলেছেন, ‏يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ প্রথম নাযিল হয়েছে। তখন আমি বললাম, আমাকে তো বলা হয়েছে- ‏اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ প্রথমে নাযিল হয়েছিল। তখন তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন, আমি তোমাকে তাই বলছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি হেরা গুহায় ইতিকাফ রত অবস্থায় ছিলাম। ইতিকাফ শেষ হলে আমি সেখান থেকে নেমে উপত্যকার মাঝে পৌঁছলে আমি আমাকে ডাকার শব্দ শুনতে পেলাম। তখন আমি সামনে, পিছনে, ডানে ও বামে তাকালাম। দেখলাম সে (ফেরেশতা জিবরীল) আসমান ও জমিনের মাঝে রক্ষিত একটি আসনে বসে আছে। এরপর আমি খাদিজার (রাঃ) এর কাছে গিয়ে বললাম, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর এবং আমার গায়ে ঠাণ্ডা পানি ঢাল। তখন আমার প্রতি নাযিল হলঃ “হে বস্ত্রাবৃত! উঠুন, সতর্কবাণী প্রচার করুন এবং আপনার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন” (সূরা মুদ্দাসসির)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৬০ | 4560 | ٤۵٦۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وثيابك فطهر “তোমার পরিচ্ছদ পবিত্র রাখ” (৭৪ঃ ৪)
৪৫৬০। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ওহী বন্ধ থাকা সময়কাল সম্পর্কে আলোচনা করতে শুনেছি। তিনি তাঁর আলোচনার মাঝে বলেন, একদা আমি চলছিলাম, এমতাবস্থায় আকাশ থেকে একটি আওয়াজ শুনতে পেলাম। মাথা উপরে তুলেই আমি দেখলাম, যে ফেরেশতা হেরা গুহায় আমার কাছে এসেছিল সে আসমান ও জমিনের মাঝে রক্ষিত একটি আসনে বসে আছে। আমি তাঁর ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বাড়ি ফিরে এসে বললাম, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর। তারা আমাকে বস্ত্রাবৃত করল। এরপর আল্লাহ নাযিল করলেন, “হে বস্ত্রাবৃত! উঠুন … অপবিত্রতা হতে দূরে থাকুন” এই আয়াতগুলো সালাত (নামায/নামাজ) ফরয হওয়ার আগে নাযিল হয়েছিল। الرِّجْزَ অর্থ হল মূর্তিসমূহ।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৬১ | 4561 | ٤۵٦۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ والرجز فاهجر “এবং অপবিত্রতা হতে দূরে থাক। (৭৪ঃ ৫) কেউ কেউ বলেন, الرجز এবং والرجس অর্থ আযাব
৪৫৬১। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ওহী বন্ধ থাকা সময়কাল সম্পর্কে আলোচনা করতে শুনেছি। তিনি তাঁর আলোচনার মাঝে বলেন, একদা আমি পথ চলছিলাম, এমতাবস্থায় আকাশ থেকে একটি আওয়াজ শুনতে পেলাম। আকাশের দিকে তাকিয়ে আমি দেখলাম, যে ফেরেশতা হেরা গুহায় আমার কাছে এসেছিল সে আসমান ও জমিনের মাঝে রক্ষিত একটি আসনে বসে আছে। আমি তাঁর ভয়ে এতটাই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে গেলাম যে মাটিতে পড়ে গেলাম। এরপর আমি আমার স্ত্রীর কাছে গিয়ে বললাম, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর। তারা আমাকে বস্ত্রাবৃত করল। এরপর আল্লাহ নাযিল করলেন, “হে বস্ত্রাবৃত! …… অপবিত্রতা হতে দূরে থাকুন”। আবূ সালামা (রহঃ) বলেছেন, الرِّجْزَ অর্থ হল মূর্তিসমূহ। এরপর অধিক পরিমাণে ওহী নাযিল হতে লাগল এবং ধারাবাহিকভাবে ওহী আসতে থাকল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৬২ | 4562 | ٤۵٦۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ لا تحرك به لسانك لتعجل به “তাড়াতাড়ি ওহী আয়ত্ত করার জন্য তুমি তোমার জিহ্বা সঞ্চালন করবে না। (৭৫ঃ ১৬) ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, سدى অর্থ নিরর্থক ও উদ্দেশ্যহীন, ليفجر أمامه অর্থ শীঘ্রই তওবা করব, শীঘ্রই তওবা করব। لا وزر অর্থ কোন আশ্রয়স্থল নেই।
৪৫৬২। হুমায়দী (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি যখন ওহী নাযিল হত তখন তিনি দ্রুত তাঁর জিহ্বা নাড়তেন (পড়তেন)। রাবী সুফইয়ান বলেন, এভাবে করার পিছনে তাঁর উদ্দেশ্য ছিল ওহী মুখস্ত করা। এতে আল্লাহ নাযিল করলেনঃ “তাড়াতাড়ি ওহী আয়ত্ত করার জন্য আপনি আপনার জিহ্বা সঞ্চালন করবেন না”

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৬৩ | 4563 | ٤۵٦۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إن علينا جمعه وقرآنه “এ কুরআন সংরক্ষণ ও পাঠ করিয়ে দেবার দায়িত্ব আমারই” (৭৫ঃ ১৭)
৪৫৬৩। উবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ) … মূসা ইবনু আবূ আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আল্লাহর বানীঃ ‏لاَ تُحَرِّكْ بِهِ لِسَانَكَ “দ্রুত ওহী আয়ত্ত করার জন্য আপনি আপনার জিহ্বা নাড়াবেন না” সম্পর্কে সাঈদ ইবনু জুবাইর (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করার পর তিনি বললেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি যখন ওহী নাযিল করা হত, তখন তিনি তাঁর ঠোঁট দুটো দ্রুত নাড়তেন। তখন তাঁকে বলা হল, দ্রুত ওহী আয়ত্ত করার জন্য আপনি আপনার জিহ্বা সঞ্চালন করবেন না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহী ভুলে যাবার আশংকায় এমন করতেন। নিশ্চয়ই এ কুর’আন সংরক্ষণ ও পাঠ করিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমারই। অর্থাৎ আমি নিজেই তাকে তোমার স্মৃতিপটে সংরক্ষিত রাখব। তাই আমি যখন তা পাঠ করব অর্থাৎ যখন তোমার প্রতি ওহী নাযিল হতে থাকবে, তখন তুমি তার অনুসরণ করবে। এরপর তা বর্ণনা করার দায়িত্ব আমারই অর্থাৎ এ কুরআনকে তোমার মুখ দিয়ে বর্ণনা করিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমার।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৬৪ | 4564 | ٤۵٦٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ فإذا قرأناه فاتبع قرآنه قال ابن عباس قرأناه “সুতরাং আমি যখন তা পাঠ করি তুমি সে পাথের অনুসরণ কর” (৭৫ঃ ১৮) ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, قرأناه অর্থ আমি যখন তা বর্ণনা করি فاتبع অর্থ এ অনুযায়ী আমল কর।
৪৫৬৪। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি আল্লাহর বানীঃ لاَ تُحَرِّكْ بِهِ لِسَانَكَ لِتَعْجَلَ بِهِ – এর ব্যাখ্যায় বলেন যে, জিবরীল (আলাইহিস সালাম) যখন ওহী নিয়ে আসতেন তখন রাসুল তাঁর জিহ্বা ও ঠোঁট দুটো দ্রুত নাড়তেন। এটা তাঁর জন্য কষ্টকর হত এবং তাঁর চেহারা দেখেই বোঝা যেত। তাই আল্লাহ তা’আলা ‏لاَ تُحَرِّكْ بِهِ لِسَانَكَ لِتَعْجَلَ بِهِ * إِنَّ عَلَيْنَا جَمْعَهُ وَقُرْآنَهُ “দ্রুত ওহী আয়ত্ত করার জন্য আপনি আপনার জিহ্বা সঞ্চালন করবেন না। এ কুর’আন সংরক্ষণ ও পাঠ করিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমারই” নাযিল করলেন। এতে আল্লাহ বলেছেনঃ এ কুরআনকে আপনার বক্ষে সংরক্ষণ করা ও পড়িয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমারই। সুতরাং আমি যখন তা পাঠ করি, আপনি সে পাঠের অনুসরণ করুন, অর্থাৎ আমি যখন ওহী নাযিল করি তখন আপনি মনোযোগ সহকারে শুনুন। তারপর এর বিশদ ব্যাখ্যার দায়িত্ব আমারই অর্থাৎ আপনার মুখে তা বর্ণনা করার দায়িত্ব আমারই। রাবী বলেন, এরপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) চলে গেলে, আল্লাহর ওয়াদা ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا بَيَانَهُ মুতাবিক তা পাঠ করতেন। ‏أَوْلَى لَكَ فَأَوْلَى অর্থ দুর্ভোগ তোমার জন্য, দুর্ভোগ! تَوَعُّدٌ‏ এ আয়াতে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৬৫ | 4565 | ٤۵٦۵

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা দাহর

هَلْ أَتَى عَلَى الإِنْسَانِ অর্থাৎ কালের প্রবাহে মানুষের উপর এক সময় এসেছিল। هَلْ শব্দটি কখনো নেতিবাচক, আবার কখনো ইতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়। তবে এখানে অবহিতকরণ তথা ইতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আল্লাহ্ বলেন, এক সময় মানুষের অস্তিত্ব ছিল কিন্তু উল্লেখযোগ্য কোন বস্তু ছিল না। আর ঐ সময়টা হল মাটি থেকে সৃষ্টি করা হতে তার মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করা পর্যন্ত। أَمْشَاجٍ সংমিশ্রণ। অর্থাৎ মাতৃগর্ভে পুরুষ ও মহিলার বীর্যের সংমিশ্রণে রক্ত এবং পরে জমাট বাঁধা রক্ত সৃষ্টি হওয়াকে أَمْشَاجٍ বলা হয়েছে। এক বস্তুর অপর বস্তুর সঙ্গে মিশ্রিত হলে তাকে مَشِيْجٌ বলে। তাকে خَلِيْطٌ ও বলা হয়। আর مَمْشُوْجٌ ও مَخْلُوْطٍ এর অর্থ একই। কেউ কেউ سَلَاسِلًا وَأَغْلَالًا পড়ে থাকেন। কিন্তু কেউ কেউ এভাবে পড়াকে জায়িয মনে করেন না। مُسْتَطِيْرًا দীর্ঘস্থায়ী বিপদ। الْقَمْطَرِيْرُ ভয়ংকর ও কঠিন। সুতরাং يَوْمٌ قَمْطَرِيْرٌ এবং يَوْمٌ قُمَاطِرٌ উভয়ই ব্যবহৃত হয়। الْعَبُوْسُ، الْقَمْطَرِيْرُ، الْقُمَاطِرُ، এবং الْعَصِيْبُ বিপদের সবচেয়ে কঠিনতম দিনকে বলা হয়। হাসান (রহ.) বলেন, النُّضْرَةُ চেহারায় সজীবতা ও হৃদয়ে আনন্দ। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, الْأَرَآئِكِ খাট-পালঙ্ক। আর বারা (রাঃ) বলেন, وَذُلِّلَتْ قُطُوْفُهَا তাদের ইচ্ছেমাফিক ফল পাড়বে। মা‘মার (রহঃ) বলেন, أَسْرَهُمْ সুদৃঢ় গঠন। উটের গদির সঙ্গে শক্ত করে যে জিনিস বাঁধা থাকে তাকে مَأْسُوْرٌ বলা হয়।

সুরা মুরসালাত

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, جِمَالَاتٌ উটের সারি। ارْكَعُوْا সালাত আদায় কর। لَا يَرْكَعُوْنَ তারা সালাত আদায় করে না। لَايَنْطِقُوْنَ (তার কথা বলতে সক্ষম হবে না), وَاللهِ رَبِّنَا مَا كُنَّا مُشْرِكِيْنَ (আল্লাহর শপথ! আমরা কখনো মুশরিক ছিলাম না) এবং الْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلٓٓى أَفْوَاهِهِمْ (আমি আজ মোহর লাগিয়ে দেব) এ আয়াত সম্বন্ধে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি বললেন, ক্বিয়ামাতের দিন বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষের বিভিন্ন অবস্থা ঘটবে। কখনো সে কথা বলতে পারবে এবং নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে, আবার কখনো তার মুখে মোহর লাগিয়ে দেয়া হবে। তখন সে আর কোন কথা বলতে সক্ষম হবে না।

৪৫৬৫। মাহমুদ (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। এসময় তাঁর প্রতি সূরা মুরসালাত নাযিল হল। আমরা তাঁর মুখে শুনে সেটি শিখছিলাম। তখন একটি সাপ বেরিয়ে এল। আমরা ওদিকে দৌড়ে গেলাম, কিন্তু সাপটি আমাদের থেকে দ্রুত পালিয়েগিয়ে গর্তে ঢুকে পড়ল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা যেমন তার অনিষ্ট হতে রক্ষা পেলে, তেমনি সেও তোমাদের অনিষ্ট হতে বেঁচে গেল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৬৬ | 4566 | ٤۵٦٦

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
৪৫৬৬। আবদা ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। ইসরাইল সুত্রে আসওয়াদ ইবনু আমির পূর্বের হাদিসটির অনুসরন করেছেন। (অন্য সনদে) হাফস, আবূ মুআবিয়া এবং সুলায়মান ইবনু কারম (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (অপর এক সনদে) ইবনু ইসহাক (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে ঠিক এমনি বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৬৭ | 4567 | ٤۵٦۷

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
৪৫৬৭। কুতায়বা (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক গুহার মধ্যে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। এসময় তাঁর প্রতি সূরা মুরসালাত নাযিল হল। আমরা যত জলদি সম্ভব তাঁর মুখ থেকে শুনে সেটি শিখছিলাম। হঠাৎ একটি সাপ বেরিয়ে এলো। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা ওটাকে মেরে ফেল। আমরা সেদিকে ছুটে গেলাম, কিন্তু সাপটি আমাদের আগে চলে গেল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা যেমন তার অনিষ্ট হতে রক্ষা পেলে, তেমনি সেও তোমাদের অনিষ্ট হতে বেঁচে গেল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৬৮ | 4568 | ٤۵٦۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إنها ترمي بشرر كالقصر “তা উৎক্ষেপ করবে বৃহৎ স্ফুলিঙ্গ অট্রালিকা তুল্য।” (৭৭ঃ ৩২)
৪৫৬৮। মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) … আবদুর রহমান ইবনু আবিস (রহঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আমি ঐ আয়াতের (“নিশ্চয়ই তা উৎক্ষেপ করবে বৃহৎ স্ফুলিঙ্গ অট্টালিকার মত”-সূরা মুরসালাত আয়াত ৩২) ব্যাখ্যায় ইবনু আমির (রহঃ) কে বলতে শুনেছি, আমরা তিন গজ বা এর চেয়ে ছোট কাঠের কাণ্ড সংগ্রহ করে শীতকালের জন্য উঠিয়ে রেখে দিতাম। আর আমরা একেই قصر বলতাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৬৯ | 4569 | ٤۵٦۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ كأنه جمالات صفر “তা পীতবর্ণ উষ্ট্রশ্রেনী সদৃশ” (৭৭ঃ ৩৩)
৪৫৬৯। আমর ইবনু আলী (রহঃ) … আবদুর রহমান ইবনু আবিস (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন আমি আয়াতের (সূরা মুরসালাত, আয়াত ৩২) ব্যাখ্যায় ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, আমরা তিন গজ বা এর চেয়ে লম্বা কাঠ সংগ্রহ করে শীতকালের জন্য উঠিয়ে রেখে দিতাম। আর আমরা একেই قصر বলতাম। جِمَالاَتٌ صُفْرٌ অর্থ জাহাজের রশি, যা জমা করে রাখা হত। এমনকি তা মধ্যম দেহী মানুষের সমান উঁচু হয়ে যেত।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৭০ | 4570 | ٤۵۷۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ “এ সেই দিন যেদিন তারা কিছুই বলবে না” (৭৭ঃ ৩৫)
৪৫৭০। উমর ইবনু হাফস (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক গুহায় আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। এসময় তাঁর প্রতি ‘সূরা ওয়াল মুরসালাত নাযিল হল। তিনি তা তিলাওয়াত করছিলেন, আর আমি তাঁর মুখ থেকে শুনে সেটি শিখছিলাম। তিলাওয়াতে তখনো তাঁর মুখ সিক্ত ছিল। হঠাৎ আমাদের সামনে একটি সাপ বেরিয়ে এলো। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ওটাকে মেরে ফেল। আমরা সেদিকে ছুটে গেলাম, কিন্তু সাপটি চলে গেল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা যেমন তার অনিষ্ট হতে রক্ষা পেলে, তেমনি সেও তোমাদের অনিষ্ট হতে বেঁচে গেল। উমার ইবনু হাফস বলেন, এই হাদিসটি আমি আমার পিতার কাছ থেকে শুনে মুখস্ত করেছি। গুহাটি মিনায় অবস্থিত বলে উল্লেখ আছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৭১ | 4571 | ٤۵۷۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ يوم ينفخ في الصور فتأتون أفواجا “সেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং তোমরা দলে দলে সমাগত হবে” (৭৮ঃ ১৮)
সুরা নাবা

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, لَا يَرْجُوْنَ حِسَابًا তারা কখনও হিসাবের ভয় করত না। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, ثَجاجًا অবিরাম বর্ষণ। ألْفافًا ঘন সন্নিবিষ্ট। لَا يَمْلِكُوْنَ مِنْهُ خِطَابًا যাদেরকে আল্লাহ্ অনুমতি দিবেন, তাদের ছাড়া তাঁর কাছে আবেদন-নিবেদনের ক্ষমতা কারো থাকবে না। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, وَهَّاجًا উজ্জ্বল, ইবনু ‘আব্বাস ব্যতীত অন্যরা বলেন, غَسَّاقًا যেমন আরবরা বলে, চোখে পিষ্টি হয়েছে এবং ক্ষত হতে পূঁজ চুয়ে চুয়ে পড়ছে। الْغَسَاقَ এবং الْغَسِيْقَ একই অর্থ বহন করে। عَطَاءً حِسَابًا যথোচিত দান। যেমন বলা হয়, أَعْطَانِيْ مَا أَحْسَبَنِيْ অর্থাৎ সে আমাকে যথেষ্ট দান করেছে।

৪৫৭১। মুহাম্মদ (রহঃ) … আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রথম ও দ্বিতীয়বার শিঙ্গায় ফুঁ দেয়ার মাঝে চল্লিশের ব্যবধান হবে। জনৈক ব্যাক্তি আবূ হুরাইরা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করল, এর মানে চল্লিশ দিন? কিন্তু তিনি অস্বীকার করলেন। তারপর সে জিজ্ঞেস করল, চল্লিশ মাস? এবারও তিনি অস্বীকার করলেন। তারপর সে জিজ্ঞেস করল, চল্লিশ বছর? পুনরায় তিনি অস্বীকার করলেন। এরপর আবূ হুরাইরা (রাঃ) বললেন, এরপর আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করবেন। এতে মৃতরা জীবিত হয়ে উঠবে, যেমনি বৃষ্টির পানিতে উদ্ভিদরাজি উৎপন্ন হয়। তখন মেরুদণ্ডের হাড় ছাড়া মানুষের সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পচে গলে শেষ হয়ে যাবে। কিয়ামতের দিন ঐ হাড়-খণ্ড থেকেই পুনরায় মানুষকে সৃষ্টি করা হবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৭২ | 4572 | ٤۵۷۲

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা নাযিয়াত

زَجْرَةٌ আওয়াজ বা শব্দ। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, تَرْجُفُ الرَّاجِفَةُ দ্বারা ভূমিকম্প বোঝানো হয়েছে। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, الْاٰيَةَ الْكُبْرَى তার [মূসা (আঃ)] লাঠি এবং তার হাত। سَمكَها আকাশকে স্তম্ভ ব্যতীত নির্মাণ করেছেন। طَغَى লাঠি। النَّاخِرَةُ ও النَّخِرَةُ সমার্থবোধক শব্দ। যেমন الطَّامِعِ ও الطَّمِعِ এবং الْبَاخِلِ ও الْبَخِيْلِএক অর্থবোধক শব্দ। কোন কোন মুফাস্সির বলেছেন, النَّخِرَةُ গলিত (হাড্ডি) এবং النَّاخِرَةُ খোল হাড্ডি, যার মধ্যে বাতাস ঢোকার পর আওয়াজ সৃষ্টি হয়। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, الْحَافِرَةِ পূর্ব জীবন। ইবনু ‘আববাস ছাড়া অন্যান্য মুফাস্সির বলেছেন,أَيَّانَ مُرْسٰهَا ক্বিয়ামাতের শেষ কোথায়? যেমন (আরবী ভাষায়) জাহাজ নোঙ্গর করার স্থানকে مُرْسَى السَّفِيْنَةِ বলে।

৪৫৭২। আহমদ ইবনু মিকদাম (রহঃ) … সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি দেখেছি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মধ্যমা ও শাহাদাত আঙ্গুল দুটি এভাবে একত্রিত করে বলেছেন, কিয়ামত ও আমাকে এরূপে পাঠানো হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৭৩ | 4573 | ٤۵۷۳

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা ‘আবাসা

عَبَسَ সে ভ্রূকুঞ্চিত করল এবং মুখ ফিরিয়ে নিল। مُطَهَّرَة অর্থ যারা পূত-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ তা স্পর্শ করে না। এখানে পূত-পবিত্র বলে মালাইকাকে বোঝানো হয়েছে। উল্লিখিত আয়াতটি আল্লাহর বাণীঃ فَالْمُدَبِّرَاتِ أَمْرًا এর অনুরূপ। পূর্বের আয়াতে মালাক এবং সহীফা উভয়কেই مُطَهَّرَةً বলা হয়েছে। অথচ التَّطْهِيْرُ এর সম্পর্ক মূলতঃ সহীফার সঙ্গে, মালায়িকার সঙ্গে নয়। তবে মালাক যেহেতু উক্ত সহীফার হামিল ও বাহক, এই হিসাবে মালাককেও مُطَهَّرَةً বলা হয়েছে। سَفَرَةٍ অর্থ মালাক (ফেরেশতা)। এর এক বচন হচ্ছে سَافِرٌ।سَفَرْتُ أَصْلَحْتُ بَيْنَهُمْ আমি তাদের বিবাদ মিটিয়ে দিয়েছি। ওয়াহী অবতীর্ণ করত তা নাবীদের (নবীদের) পর্যন্ত পৌঁছানোর দায়িত্ব অর্পণ করে আল্লাহ্ রাববুল আলামীন মালাকগণকে السَّفِيْرِ (দূত) সদৃশ ঘোষণা করেছেন যিনি কওমের পরস্পর বিবাদ মীমাংশা করেন। অন্যান্য মুফাস্সির বলেছেন, تَصَدَّى সে এর থেকে অমনোযোগিতা প্রকাশ করেছে। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, لمَاَّ يَقْضِيْ তিনি তাকে যা আদেশ করেছেন, সে এখনও তা পুরাপুরি করেনি। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, تَرْهَقُهَا মানে সেগুলোকে আচ্ছন্ন করবে এক মহাবিপদ। مُسْفِرَةٌ উজ্জ্বল। بِأَيْدِيْ سَفَرَةٍ লিপিবদ্ধকারী ফেরেশতা। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) আরো বলেন, أَسْفَارًا কিতাবসমূহ। تَلَهَّى তুমি ব্যস্ত হলে। বলা হয়أَسْفَارِ এর একবচন سِفْرٌ।

৪৫৭৩। আদম (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, কুর’আনের হাফেজ পাঠক লিপিকর সম্মানিত ফেরেশতার মত। অতি কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও যে ব্যাক্তি বারবার কুর’আন তিলাওয়াত করে, সে দ্বিগুণ পুরস্কার পাবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৭৪ | 4574 | ٤۵۷٤

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা তাকবীর

انْكَدَرَتْ অর্থ বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়বে। হাসান (রহ.) বলেন, سُجِّرَتْ অর্থ পানি নিঃশেষ হয়ে যাবে, এক বিন্দু পানিও বাকী থাকবে না। মুহাজিদ (রহ.) বলেন, الْمَسْجُوْرُ অর্থ কানায় কানায় ভর্তি। মুজাহিদ ব্যতীত অন্যান্য মুফাসসির বলেছেন, سُجِرَتْ অর্থ একটি সমুদ্র আরেকটির সঙ্গে মিলিত হয়ে এক সমুদ্রে পরিণত হবে। وَالْخُنَّسُ অর্থ নিজের গতিপথে পশ্চাদপসরণকারী।تَكْنِسُ মানে সূর্যের আলোতে অদৃশ্য হয়ে যায়, যেমন হরিণ গা ঢাকা দেয়। تَنَفَّسَ অর্থ যখন দিনের আলো উদ্ভাসিত হয়। الظَّنِيْنُ অপবাদ দানকারী। الضَّنِيْنُ অর্থ বখিল, কৃপণ। ‘উমার (রাঃ) বলেছেন, وَإِذَا النُّفُوْسُ زُوِّجَتْ অর্থ প্রত্যেককে তার মত চরিত্রের লোকের সঙ্গে জান্নাত ও জাহান্নামে জুড়ে দেয়া হবে। পরে এ কথার সমর্থনে তিনি احْشُرُواالَّذِيْنَ ظَلَمُوْا وَأَزْوَاجَهُمْ عَسْعَسَ (একত্র করে যালিম ও তাদের সহচরগণকে) আয়াতংশটি পাঠ করলেন। عَسْعَسَ অর্থ অবসান হয়েছে, পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছে।

সুরা ইনফিতার

রাবী ইবনু খুশাইম (রহঃ) বলেন, فُجِّرَتْ অর্থ-প্রবাহিত হবে, আ‘মাশ এবং ওয়াসিম (রহঃ) فَعَدَلَكَ তাখফীফ-এর সঙ্গে পড়তেন এবং হিজাযের অধিবাসী فَعَدَّلَكَ তাশদীদ-এর সঙ্গে পড়তেন। অর্থ তিনি তোমাকে সামঞ্জস্যপূর্ণ সৃষ্টি করেছেন। যারা فَعَدَلَكَ তাখফীফ-এর সঙ্গে পড়তেন, তারা বলেন, এর অর্থ হল, তিনি তোমাকে সুন্দর বা কুৎসিৎ; লম্বা খাটো যে আকারে ইচ্ছে, সৃষ্টি করেছেন।

সুরা মুতাফ্‌ফিফীন

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, بَلْرَانَ অর্থ গুনাহের জন্য। ثُوِّبَ অর্থ প্রতিদান দেয়া হল। মুজাহিদ ছাড়া অপরাপর মুসাসসির বলেছেন, الْمُطَفِّفُ ঐ লোক যে অন্যকে মাপে পুরো দেয় না।

৪৫৭৪। ইবরাহিম ইবনু মুনযির (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‏يَوْمَ يَقُومُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ “যেদিন সকল মানুষ বিশ্বজগতের রবের সামনে দাঁড়াবে” (৮৩ঃ ৬) এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, সেদিন প্রত্যেকের কানের লতি পর্যন্ত ঘামে ডুবে যাবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৭৫ | 4575 | ٤۵۷۵

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা ইন্‌শিকাক

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, كِتَابَهُ بِشِمَالِهٰ অর্থাৎ সে পেছন দিক হতে নিজের ‘আমালনামা গ্রহণ করবে। وَسَقَ অর্থ সে যেসব জীবজন্তুর সমাবেশ ঘটায়। ظَنَّ أَنْ لَّنْ يَّحُوْرَ অর্থ সে মনে করত যে, সে কখনই আমার কাছে ফিরে আসবে না।

৪৫৭৫। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) ও মুসাদ্দাদ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন যে ব্যাক্তিরই হিসাব নেয়া হবে, সে ধ্বংস হয়ে যাবে। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য কুরবান করুন। আল্লাহ কি বলেননিঃ “যার আমলনামা তার ডান হাতে দেয়া হবে, তার হিসাব নিকাশ সহজ হবে” (৮৪ঃ ৭-৮)। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এখানে তো কেবল আমলনামা কিভাবে দেয়া হবে তার উল্লেখ করা হয়েছে, অন্যথায় যার চুলচেরা হিসাব নেয়া হবে, সে ধ্বংস হয়ে যাবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৭৬ | 4576 | ٤۵۷٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ لتركبن طبقا عن طبق “নিশ্চয়ই তোমরা ধাপে ধাপে আরোহণ করবে” (৮৪ঃ ১৯)
৪৫৭৬। সাঈদ ইবনু নাযর (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‏لَتَرْكَبُنَّ طَبَقًا عَنْ طَبَقٍ এর মর্মার্থ হচ্ছে, এক অবস্থার পর আরেক অবস্থা হওয়া। তোমাদের নাবী-ই এ অর্থ বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৭৭ | 4577 | ٤۵۷۷

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা বুরুজ

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, الْأُخْدُوْدِ মাটিতে ফাটল। فَتَنُوْا তাদেরকে শাস্তি দেয়া হয়েছে।

সুরা তারিক

মুজাহিদ বলেন, ذَاتِ الرَّجْعِ অর্থ ঐ মেঘ যা বৃষ্টি নিয়ে আসে। ذَاتِ الصَّدْعِ অর্থ ঐ যমীন যা উদ্ভিদ বের হওয়ার সময় বিদীর্ণ হয়ে যায়।

৪৫৭৭। আবদান (রহঃ) … বারা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের মধ্যে প্রথম যারা হিজরত করে আমাদের কাছে এসেছিলেন, তাঁরা হলেন মুসআব ইবনু উমাইর (রাঃ) ও ইবনু উম্মে মাকতুম (রাঃ)। তাঁরা দুজন এসেই আমাদেরকে কুর’আন পড়াতে শুরু করেন। এরপর এলেন আম্মার, বিলাল ও সা’দ (রাঃ)। এরপর এলেন বিশজন সাহাবীসহ উমার ইবনু খত্তাব (রাঃ)। এরপর এলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনে মদিনাবাসীকে এত বেশি আনন্দিত হতে দেখেছি যে, অন্য কোন বিষয়ে তাদেরকে ততটা আনন্দিত হতে আর কখনো দেখিনি। এমনকি আমি দেখেছি, ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা পর্যন্ত বলছিল যে, ইনই তো আল্লাহর সেই রাসূল, যিনি আমাদের মাঝে এসেছেন। বারা ইবনু আযিব (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আসার আগেই আমি سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى (সূরা আ’লা) অনুরূপ আরও কিছু সূরা শিখে নিয়েছিলাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৭৮ | 4578 | ٤۵۷۸

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা গাশিয়া

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, عَامِلَةٌ نَّاصِبَةٌ (ক্লিষ্ট-ক্লান্ত) বলে খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে বোঝানো হয়েছে। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, عَيْنٍاٰنِيَةٍ টগবগে গরম পানিতে কানায় কানায় ভর্তি ঝরণাধারা। حَمِيْمٍاٰنٍ চরম ফুটন্ত পানি। لَا تَسْمَعُ فِيْهَا لَاغِيَةً সেখানে তারা গালি-গালাজ শুনবে না। الشِّبْرِقُএক প্রকার কাঁটাওয়ালা গুল্ম। (তা যখন সবুজ থাকে তখন) তাকে الضَّرِيْعَ বলা হয়, আর যখন শুকিয়ে যায়, তখন হিজাযবাসীরা একেই الضَّرِيْعُ বলে। এ এক প্রকার বিষাক্ত আগাছা। بِمُسَيْطِرٍ কর্মবিধায়ক। শব্দটি س ও ص উভয় বর্ণ দিয়েই পড়া হয়। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, إِيَابَهُمْ তাদের প্রত্যাবর্তনের স্থান।

সুরা ফাজ্‌র

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, الْوَتْرُ মানে বেজোড়। এর দ্বারা আল্লাহ্ তা‘আলাকে বোঝানো হয়েছে। إِرَمَذَاتِ الْعِمَادِ দ্বারা প্রাচীন এক জাতিকে বোঝানো হয়েছে। وَالْعِمَادُ খুঁটি ও স্তম্ভের মালিক, যারা স্থায়ীভাবে কোথাও বসবাস করে না; তারা তাঁবু পেতে জীবন যাপন করে (যাযাবর)। سَوْطَعَذَابٍ যাদেরকে তা দিয়ে শাস্তি প্রদান করা হবে।أَكْلًا لَّمًّاসম্পূর্ণরূপে ভক্ষণ করা। جَمًّا অতিশয়। মুহাজিদ (রহ.) বলেন, আল্লাহর সকল সৃষ্টিই হল জোড়ায় জোড়ায়। সুতরাং আসমানও জোড়া বাঁধা; وَالْوَتْرُ তবে একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলাই হলেন বেজোড়। মুজাহিদ (রহ.) ব্যতীত অন্য সকলেই বলেছেন, আরবরা যাবতীয় শাস্তির ব্যাপারে سَوْطَعَذَابٍ শব্দটি ব্যবাহর করে থাকে। যে কোন শাস্তি سَوْطَ عَذَابٍ এর অন্তর্ভুক্ত। لَبِالْمِرْصَادِ তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। تَحَاضُّوْنَ তোমরা হেফাজত করে থাক। تَحَآضُّوْنَ তোমরা খাদ্য দান করতে আদেশ করে থাক। الْمُطْمَئِنَّةُ সওয়াবকে সত্য বলে বিশ্বাসকারী। হাসান (রাঃ) বলেন, يٓٓأَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ দ্বারা এমন আত্মাকে বোঝানো হয়েছে, যে আত্মাকে আল্লাহ্ মৃত্যুদানের ইচ্ছে করলে সে আল্লাহর প্রতি এবং আল্লাহ্ও তার প্রতি পুরোপুরি প্রশান্ত থাকেন। এরপর আল্লাহ্ তার রূহ কবয করার নির্দেশ দেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে তাকে তাঁর সৎকর্মশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। হাসান (রহ.) ব্যতীত অন্যরা বলেছেন جَابُوْا তারা ছিদ্র করেছে; যে শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে جِيْبَالْقَمِيْص থেকে। যার অর্থ হচ্ছে, জামার পকেট কাটা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা হয়ে থাকে يَجُوْبُالْفَلَاةَ সে মাঠ অতিক্রম করছে। لَمَّالَمَمْتُهُأَجْمَعَ বলা হলে এর অর্থ হবে- আমি এর শেষ প্রান্তে উপনীত হয়েছি।

সুরা বালাদ

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, بِهٰذَا الْبَلَدِ দ্বারা মক্কা্কে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ একানে যুদ্ধ কররে অন্য মানুষের উপর যে গুনাহ হবে, তোমার তা হবে না। وَوَالِدٍ আদম (আঃ)। وَمَا وَلَدَ যাসে জন্ম দেয়, لِبَدًا প্রচুর। وَ النَّجْدَيْنِ ভাল-মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণ। مَسْغَبَةٍ ক্ষুধা। مَتْرَبَةٍ ধূলি লুন্ঠিত। বলা হয় فَلَااقْتَحَمَ الْعَقَبَةَ সে দুনিয়ায় দুর্গম গিরিপথে চলাচল করেনি। এরপর আল্লাহর তা‘আলা এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ইরশাদ করেছেন, তুমি কি জান দুর্গম গিরিপথ কী? তা হচ্ছে দাস মুক্ত করা, অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে আহার্য দান।

সুরা শামস

মুহাজিদ (রহঃ) বলেন, بِطَغْوَاهَا অবাধ্যতা বা নাফরমানীর কারণে। وَلَايَخَافُ عُقْبَاهَا কারো পরিণামের জন্য আল্লাহ্ আশংকা করবার কিছু নেই।

৪৫৭৮। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু যাম‘আ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে খুতবা দিতে শুনেছেন, যেখানে তিনি সামূদ গোত্রের কাছে প্রেরিত উটনী ও তার পা কাটার কথা বললেন। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম إِذِ انْبَعَثَ أَشْقَاهَا এর ব্যাখ্যায় বললেন, ঐ উটনীটিকে হত্যা করার জন্য এক হতভাগা শক্তিশালী ব্যাক্তি তৎপর হয়ে উঠলো যে সে সমাজের মধ্যে আবূ যাম’আতের মত প্রভাবশালী ও অত্যন্ত শক্তিধর ছিল। এই খুতবায় তিনি মেয়েদের সম্পর্কেও আলোচনা করেছিলেন। তিনি বলেছেন, তোমাদের মধ্যে এমন লোকও আছে যে তার স্ত্রীকে ক্রীতদাসের মত মারে, কিন্তু ঐ দিন শেষেই সে আবার তার সাথে একই বিছানায় মিলিত হয়। এরপর তিনি বায়ু নিঃসরণের পর হাসি দেয়া সম্পর্কে বললেন, তোমাদের কেউ কেউ হাসে সে কাজটির উপর যে কাজটি সেও করে।

(অন্য সনদে) আবু মুয়াবিয়া (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবন আবু যাম’আ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যুবায়র ইবন আওআমের চাচা আবূ যাম’আর মত।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৭৯ | 4579 | ٤۵۷۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ والنهار إذا تجلى “কসম শপথ দিবসের, যখন তা আবির্ভূত হয়” (৯২ঃ ২)
সুরা লায়ল

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, وَكَذَّبَ بِالْحُسْنٰى অর্থ প্রতিদানে অস্বীকার করল। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, تَرَدّٰى যখন যে মরে যাবে। تَلَظّٰى মানে লেলিহান অগ্নি্। ‘উবায়দ ইবনু উমায়র (রাঃ) শব্দটিকে تَتَلَظّٰى পড়তেন।

৪৫৭৯। কাবীসা ইবনু উকবা (রহঃ) … আলকামা (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ (রাঃ) এর একদল সাথীর সাথে সিরিয়া গেলাম। আবূ দারদা আমাদের কাছে এসে বললেন, কুর’আন পাঠ করতে পারেন এমন কেউ আছেন কি? আমরা বললাম, হ্যাঁ আছে। এরপর তিনি বললেন, তাহলে আপনাদের মাঝে উত্তম তিলাওয়াতকারী কে? লোকেরা ইশারা করে আমাকে দেখিয়ে দিলে তিনি আমাকে বললেন, পড়ুন। আমি পড়লাম, وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَى * وَالنَّهَارِ إِذَا تَجَلَّى * وَالذَّكَرِ وَالأُنْثَى‏ তিলাওয়াত শুনে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি এই সূরা আপনার ওস্তাদ আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদের মুখে শুনেছেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, আমি এই সূরাটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখে শুনেছি। কিন্তু তারা (সিরিয়াবাসী) তা অস্বীকার করছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৮০ | 4580 | ٤۵۸۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وما خلق الذكر والأنثى “এবং শপথ তার যিনি নর নারী সৃষ্টি করেছেন” (৯৩ঃ ২)
৪৫৮০. উমর ইবনু হাফস (রহঃ) … ইবরাহিম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) এর কিছু সাথী আবূ দারদা (রাঃ) এর কাছে আসলেন। তিনিও তাদের খোঁজ করে পেয়ে গেলেন। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) এর কিরাআত অনুযায়ী কে কুর’আন তিলাওয়াত করতে পারে? তারা বললেন, আমরা সবাই। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হাফিয কে? সকলেই আলকামার দিকে ইঙ্গিত করলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদকে وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَى কিভাবে পড়তে শুনেছেন? আলকামা (রাঃ) বললেন, আমি তাকে ‏‏وَالذَّكَرِ وَالأُنْثَى পড়তে শুনেছি। এ কথা শুনে আবূ দারদা বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অনুরূপ তিলাওয়াত করতে শুনেছি। কিন্তু এসব (সিরিয়াবাসীরা) চায় আমি যেন তিলাওয়াত করি এভাবে- ‏وَمَا خَلَقَ الذَّكَرَ وَالأُنْثَى। কিন্তু আল্লাহর কসম! আমি তাদের কথা মানব না।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৮১ | 4581 | ٤۵۸۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ فأما من أعطى واتقى “সুতরাং কেউ দান করলে এবং মুত্তাকী হলে” (৯২ঃ ৫)
৪৫৮১। আবূ নু’আইম (রহঃ) … আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বাকীউল গারকাদ নামক স্থানে এক জানাজায় আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। সেসময় তিনি বলেছিলেন, তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যাক্তি নেই যার স্থান জান্নাত বা জাহান্নামে নির্ধারিত হয়নি। একথা শুনে সবাই বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাহলে কি আমরা নিয়তির উপর নির্ভর করে বসে থাকব? উত্তরে তিনি বললেন, তোমরা আমল করতে থাক। কেননা যাকে যে আমলের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য সে আমল সহজ করা হয়েছে। এরপর তিনি পাঠ করলেন, “সুতরাং কেউ দান করলে, মুত্তাকী হলে এবং যা উত্তম তা গ্রহণ করলে, আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ এবং কেউ কার্পণ্য করলে ও নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে, এবং যা উত্তম তা বর্জন করলে, তার জন্য আমি সুগম করে দেব কঠোর পরিণামের পথ”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৮২ | 4582 | ٤۵۸۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وصدق بلحسنى “এবং যা উত্তম তা গ্রহন করলে” (৯২ঃ ৬)
৪৫৮২। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বসে ছিলাম। তারপর তিনি উপরোক্ত হাদিসটি বর্ণনা করেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৮৩ | 4583 | ٤۵۸۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ فسنيسره لليسرى “আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ” (৯২ঃ ৭)
৪৫৮৩। বিশর ইবনু খালিদ (রহঃ) … আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি কোন একটি জানাজায় অংশ নিয়েছিলেন। এরপর তিনি একটি কাঠি হাতে নিয়ে তা দিয়ে মাটি খোঁচাতে খোঁচাতে বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যাক্তি নেই যার স্থান জান্নাত বা জাহান্নামে নির্ধারিত হয়নি। একথা শুনে সবাই বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাহলে কি আমরা নিয়তির উপর নির্ভর করে বসে থাকব? উত্তরে তিনি বললেন, তোমরা আমল করতে থাক। কেননা যাকে যে আমলের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য সে আমলকে সহজ করে দেয়া হবে। এরপর তিনি পাঠ করলেন, “সুতরাং কেউ দান করলে, মুত্তাকী হলে এবং যা উত্তম তা গ্রহণ করলে, আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ এবং কেউ কার্পণ্য করলে ও নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে, এবং যা উত্তম তা বর্জন করলে, তার জন্য আমি সুগম করে দেব কঠোর পরিণামের পথ”

শুবা (রহঃ) বলেন, উপরোক্ত হাদিস আমার কাছে মানসুর বর্ণনা করেছেন। তাকে আমি সুলায়মানের হাদিসের ব্যতিক্রম মনে করিনি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৮৪ | 4584 | ٤۵۸٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وأما من بخل واستغنى “এবং কেউ কার্পণ্য করলে ও নিজকে স্বয়ং সম্পূর্ণ মনে করলে” (৯২ঃ ৮)
৪৫৮৪। ইয়াহইয়া (রহঃ) … আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বসে ছিলাম। এসময় তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যাক্তি নেই যার স্থান জান্নাত বা জাহান্নামে নির্ধারিত হয়নি। একথা শুনে আমরা সবাই বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তাহলে কি আমরা তাকদিরের উপর নির্ভর করে বসে থাকব? তিনি বললেন, না, তোমরা আমল করতে থাক। কেননা যাকে যে আমলের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য সে আমলকে সহজ করে দেয়া হবে। এরপর তিনি পাঠ করলেন, “সুতরাং কেউ দান করলে, মুত্তাকী হলে এবং যা উত্তম তা গ্রহণ করলে, আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ এবং কেউ কার্পণ্য করলে ও নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে, এবং যা উত্তম তা বর্জন করলে, তার জন্য আমি সুগম করে দেব কঠোর পরিণামের পথ”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৮৫ | 4585 | ٤۵۸۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وكذب بالحسنى “এবং যা উত্তম তা বর্জন করলে” (৯২ঃ ৯)
৪৫৮৫। উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বাকীউল গারকাদ নামক স্থানে এক জানাজায় আমরা অংশ নিয়েছিলাম। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এসে বসলেন। আমরাও তাঁর চারপাশে গিয়ে বসলাম। এসময় তাঁর হাতে একটি কাঠি ছিল। তিনি তাঁর মাথা নিচু করে সেটি দিয়ে মাটি খুঁড়তে শুরু করলেন। এরপর বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যাক্তি নেই যার স্থান জান্নাত বা জাহান্নামে নির্ধারিত হয়নি, কিংবা তাকে ভাগ্যবান বা হতভাগ্য লিখা হয়নি। একথা শুনে জনৈক সাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাহলে কি আমরা আমল করা বাদ দিয়ে ভাগ্যের উপর নির্ভর করে বসে থাকব? আমাদের মধ্যে যে সৌভাগ্যবান সে তো সৌভাগ্যবান লোকদের মাঝেই শামিল হয়ে যাবে, আর আমাদের মধ্যে যে হতভাগা, সে তো হতভাগা লোকদের আমলের দিকেই এগিয়ে যাবে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সৌভাগ্যের অধিকারী লোকদের জন্য সৌভাগ্য লাভ করার মত আমল সহজ করে দেয়া হবে। এবং দুর্ভাগ্যের অধিকারী লোকদের জন্য দুর্ভাগ্য লাভ করার মত আমল সহজ করে দেয়া হবে। এরপর তিনি পাঠ করলেন, “সুতরাং কেউ দান করলে, মুত্তাকী হলে এবং যা উত্তম তা গ্রহণ করলে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৮৬ | 4586 | ٤۵۸٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ فسنيسره لليسرى “আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ” (৯২ঃ ৭)
৪৫৮৬। আদম (রহঃ) … আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক জানাজায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অংশ নিয়েছিলেন। এসময় তিনি কিছু একটা কাঠি হাতে নিয়ে তা দিয়ে মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যাক্তি নেই যার স্থান জান্নাত বা জাহান্নামে নির্ধারিত হয়নি। একথা শুনে সবাই বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাহলে কি আমরা আমল করা বাদ দিয়ে আমাদের লিখিত তাকদিরের উপর নির্ভর করে বসে থাকব? উত্তরে তিনি বললেন, তোমরা আমল করতে থাক। কেননা যাকে যে আমলের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য সে আমলকে সহজ করে দেয়া হবে। সৌভাগ্যের অধিকারী লোকদের জন্য সৌভাগ্য লাভ করার মত আমল সহজ করে দেয়া হবে। এবং দুর্ভাগ্যের অধিকারী লোকদের জন্য দুর্ভাগ্য লাভ করার আমল সহজ করে দেয়া হবে। এরপর তিনি পাঠ করলেন, “সুতরাং কেউ দান করলে, মুত্তাকী হলে এবং যা উত্তম তা গ্রহণ করলে, আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ এবং কেউ কার্পণ্য করলে ও নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে, এবং যা উত্তম তা বর্জন করলে, তার জন্য আমি সুগম করে দেব কঠোর পরিণামের পথ”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৮৭ | 4587 | ٤۵۸۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ مَا وَدَّعَكَ رَبُّكَ وَمَا قَلٰى “তোমার প্রতিপালক তোমাকে পরিত্যাগ করেন নি এবং তোমার প্রতি বিরূপও হননি (৯৩ঃ ৩৩) مَا وَدَّعَكَ শব্দটি তাশদীদ ও তাখফীফ অর্থাৎ وَدَّعَكَ وَدَعَكَ উভয় ভাবেই পড়া যায়। উভয় অবস্থাতে অর্থ একই। তোমাকে রব পরিত্যাগ করেননি। ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, এর অর্থ হচ্ছে, তোমাকে তোমার রব পরিত্যাগ করেননি এবং তোমার প্রতি বিরূপও হয় নি।
সুরা দুহা

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, إِذَا سَجٰى ‘‘যখন তা সমান সমান হয়’’, মুজাহিদ (রহঃ) ব্যতীত অন্যরা বলেন, إِذَا سَجٰى মানে যখন তা নিঝুম ও অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়। عَآئِلًا নিঃস্ব।

৪৫৮৭। আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) … জুনদুব ইবনু সুফইয়ান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, অসুস্থতার কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই বা তিন রাত তাহাজ্জুদের জন্য উঠতে পারেন নি। এসময় এক মহিলা এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমার মনে হয়, তোমার শয়তান তোমাকে পরিত্যাগ করেছে। দুই বা তিন দিন ধরে আমি তাকে তোমার কাছে আসতে দেখছি না। তখন আল্লাহ নাযিল করলেনঃ “শপথ পূর্বাহ্ণের, শপথ রজনীর যখন তা গভীর হয়, আপনার রব আপনাকে পরিত্যাগ করেন নি এবং আপনার প্রতি বিরূপও হন নি” (৯৩ঃ ৩)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৮৮ | 4588 | ٤۵۸۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ مَا وَدَّعَكَ رَبُّكَ وَمَا قَلٰى “তোমার প্রতিপালক তোমাকে পরিত্যাগ করেন নি এবং তোমার প্রতি বিরূপও হননি (৯৩ঃ ৩৩) مَا وَدَّعَكَ শব্দটি তাশদীদ ও তাখফীফ অর্থাৎ وَدَّعَكَ وَدَعَكَ উভয় ভাবেই পড়া যায়। উভয় অবস্থাতে অর্থ একই। তোমাকে রব পরিত্যাগ করেননি। ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, এর অর্থ হচ্ছে, তোমাকে তোমার রব পরিত্যাগ করেননি এবং তোমার প্রতি বিরূপও হয় নি।
৪৫৮৮। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … জুনদাব বাজালী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক মহিলা এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি দেখছি, আপনার সাথী আপনার কাছে ওহী নিয়ে আসতে বিলম্ব করে ফেলছে। তখনই নাযিল হলঃ “আপনার রব আপনাকে পরিত্যাগ করেন নি এবং আপনার প্রতি বিরূপও হন নি”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৮৯ | 4589 | ٤۵۸۹

পরিচ্ছদঃ পরিছেদ নাই
সুরা ইনশিরাহ

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, وِزْرَكَ জাহিলী যুগের বোঝা। أَنْقَضَ মানে অতিশয় কষ্টদায়ক। مَعَالْعُسْرِيُسْرًا এর ব্যাখ্যায় ইবনু উয়াইয়াহ (রহঃ) বলেন, এ কঠিন অবস্থার পরই আরেকটি সহজঅবস্থা আছে। যেমন আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন, هَلْ تَرَبَّصُوْنَ بِنَآ إِلَّآ إِحْدَى الْحُسْنَيَيْنِ তোমরা আমাদের দু’টি কল্যাণের একটির অপেক্ষা করছ। একটি কঠিন অবস্থা দু’টি সহজ অবস্থাকে কখনো পরাভূত করতে পারবে না। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, فَانْصَبْ অর্থ-প্রয়োজন পূরণের জন্য তুমি তোমার রবের কাছে কাকুতি-মিনতি করে প্রার্থনা কর। ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) أَلَمْ نَشْرَحْ لَكَ صَدْرَكَ এর ব্যাখ্যায় বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ্ রাববুল আলামীন নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বক্ষকে ইসলামের জন্য প্রশস্ত করে দিয়েছেন।

সুরা তীন

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, আয়াতের মধ্যে التِّيْنُ وَالزَّيْتُوْنُ বলে ঐ তীন ও যায়তূনকে বোঝানো হয়েছে, যা মানুষ খেয়ে থাকে। فَمَا يُكَذِّبُكَ মানুষকে তাদের ‘আমালের প্রতিদান দেয়া হবে এ ব্যাপারে কোন জিনিস তোমাকে অবিশ্বাসী করে। অর্থাৎ শাস্তি কিংবা পুরস্কার দানের ব্যাপারে তোমাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করার ক্ষমতা রাখে কে?

৪৫৮৯। হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) … বারা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে থাকাকালীন সময় ইশার সালাত (নামায/নামাজ)-এর দুই রাকআতের কোন এক রাকআতে ‘সূরা তীন’ তিলাওয়াত করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৯০ | 4590 | ٤۵۹۰

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা আলাক্‌

কুতাইবাহ (রহঃ) …..হাসান বসরী (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, কুরআন মাজীদের শুরুতে ‘বিস্মিল্লা-হির রহমা-নির রহীম’ লিখ এবং দু’ সূরার মধ্যে একটি রেখা টেনে দাও।

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, نَادِيَهُ গোত্র। الزَّبَانِيَةَ ফেরেশতা। মা‘মার (রা বলেন, الرُّجْعٰى ফিরে আসার জায়গা। لَنَسْفَعَنْ আমি অবশ্যই পাকড়াও করব। لَنَسْفَعَنْ শব্দটি نون خفيفة এর সঙ্গে। سَفَعْتُبِيَدِهِ আমি তাকে হাত দ্বারা ধরলাম।

৪৫৯০। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র ও সাঈদ ইবনু মারওয়ান (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ঘুমন্ত অবস্থায় সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ওহী শুরু হয়েছিল। ঐ সময় তিনি যে স্বপ্ন দেখতেন, তা প্রভাতের আলোর মতই সুস্পষ্ট হত। এরপর নির্জনতা তাঁর কাছে প্রিয় হয়ে উঠলো। তিনি হেরা গুহায় চলে যেতেন এবং পরিবার-পরিজনের কাছে আসার পূর্বে সেখানে একটানা কয়েকদিন পর্যন্ত তাহান্নুস করতেন। তাহান্নুস মানে বিশেষ নিয়মের ইবাদত। এজন্য তিনি কিছু খাবার নিয়ে যেতেন। এরপর তিনি বিবি খাদিজার কাছে ফিরে এসে পুনরায় অনুরূপ কিছু খাবার নিয়ে যেতেন। অবশেষে হেরা গুহায় থাকা অবস্থায় আকস্মিক তাঁর কাছে সত্যবানী এসে পৌঁছল। ফেরেশতা তাঁর কাছে এসে বললেন, পড়ুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি পড়তে পারিনা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এরপর তিনি আমাকে খুব জোরে জড়িয়ে ধরলেন। এতে আমি খুব মারাত্মক কষ্ট অনুভব করলাম। এরপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, পড়ুন। আমি বললাম, আমি তো পড়তে পারিনা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এরপর তিনি দ্বিতীয়বারের মত আমাকে খুব জোরে জড়িয়ে ধরলেন। এবারও আমি খুব মারাত্মক কষ্ট অনুভব করলাম। এরপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, পড়ুন। আমি বললাম, আমি পড়তে পারিনা। এরপর তিনি তৃতীয়বারের মত আমাকে খুব জোরে জড়িয়ে ধরলেন। এবারও আমি খুব মারাত্মক কষ্ট অনুভব করলাম। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, “পাঠ করুন আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক (জমাটবাঁধা রক্তপিণ্ড) হতে। পাঠ করুন এবং আপনার রব মহিমান্বিত। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না”।

এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আয়াতগুলো নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। এসময় তাঁর কাঁধের পেশী ভয়ে থরথর করে কাঁপছিল। খাদিজার কাছে পৌঁছেই তিনি বললেন, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর। তখন সকলেই তাঁকে বস্ত্রাবৃত করল। অবশেষে তাঁর ভীতি কেটে গেলে তিনি খাদিজাকে বললেন, খাদিজা আমার কি হল? আমি আমার নিজের সম্পর্কে আশংকাবোধ করছি। এরপর তিনি তাঁকে সব খুলে বললেন। একথা শুনে খাদিজা (রাঃ) বললেন, কখনো নয়। আপনার জন্য সুসংবাদ। আল্লাহর কসম! আল্লাহ কখনো আপনাকে লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি আত্মীয়দের খোঁজ-খবর নেন, সত্য কথা বলেন, অসহায় লোকদের কষ্ট লাঘব করে দেন, নিঃস্ব লোকদের উপার্জন করে দেন, মেহমানদের আপ্যায়ন করেন এবং সত্যের পথে আগত বিপদাপদে লোকদের সাহায্য করে থাকেন। তারপর খাদিজা তাঁকে নিয়ে তাঁর চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবনু নাওফালের কাছে গেলেন। তিনি জাহেলী যুগে খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি আরবীতে বই লিখতেন। আর তিনি আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী আরবীতে ইনজীল কিতাব অনুবাদ করে লিখতেন। তিনি খুব বৃদ্ধ ও অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।

খাদিজা (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে আমার চাচাতো ভাই! আপনার ভাতিজা কি বলতে চায় তা শুনুন। ওয়ারাকা বললেন, হে আমার ভাতিজা! তুমি কি দেখেছ? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা কিছু দেখেছেন তা খুলে বললেন। ওয়ারাকা বললেন, এটা তো সেই ফেরেশতা যাকে পাঠানো হয়েছিল মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে। আহ! আমি যদি যুবক হতাম। আহ! সেসময় আমি যদি জীবিত থাকতাম। এরপর তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যই তারা কি আমাকে তাড়িয়ে দিবে? ওয়ারাকা বললেন, হ্যাঁ, তারা তোমাকে তাড়িয়ে দিবে। তুমি যে দাওয়াত নিয়ে এসেছ, এ দাওয়াত যেই নিয়ে এসেছে তাকেই কষ্ট দেয়া হয়েছে। তোমার নবুয়তকালে আমি জীবিত থাকলে অবশ্যই আমি বলিষ্ঠভাবে তোমাকে সাহায্য করতাম। কিন্তু কিছুদিন পরেই ওয়ারাকা ইন্তেকাল করলেন এবং ওহী নাযিলও বেশ কিছিদিন ধরে বন্ধ ছিল যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়লেন।

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহী বন্ধ থাকা সময়কাল সম্পর্কে আলোচনার মাঝে বলেন, একবার আমি পথে হাঁটছিলাম, তখন আকাশ থেকে একটি আওয়াজ শুনতে পেলাম। মাথা উপরে তুলেই আমি দেখলাম, যে ফেরেশতা হেরা গুহায় আমার কাছে এসেছিলেন তিনি আসমান ও জমিনের মাঝে রক্ষিত একটি আসনে বসে আছেন। আমি এতে ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বাড়ি ফিরে এসে বললাম, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর। সুতরাং সকলেই আমাকে বস্ত্রাবৃত করল। তখন আল্লাহ নাযিল করলেন, “হে বস্ত্রাবৃত! উঠুন অপবিত্রতা হতে দূরে থাকুন” (সূরা মুদ্দাসসির, আয়াত ০১-০৫)। আবূ সালামা (রাঃ) বলেন, আরবরা জাহেলী যুগে সেসব মূর্তির পূজা করত তাদের الرجز বলে ঐসব মূর্তিকে বুঝানো হয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর থেকে ওহীর সিলসিলা অব্যাহত থাকে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৯১ | 4591 | ٤۵۹۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ خلق الإنسان من علق “তিনি মানুষকে আলাক হতে সৃষ্টি করেছেন” (৯৬ঃ ২)
৪৫৯১। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রথমত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ওহীর সূচনা হয়েছিল সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে। এরপর তাঁর কাছে ফেরেশতা এসে বললেন, “পড়ুন, আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক হতে। পাঠ করুন, এবং আপনার রব মহা মহিমান্বিত” (৯৬ঃ ১-৫)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৯২ | 4592 | ٤۵۹۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ পাঠ কর, আর তোমার প্রতিপালক মহা মহিমান্বিত”
৪৫৯২। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে ওহীর সূচনা হয়। এরপর তাঁর কাছে ফেরেশতা এসে বললেন, “পড়ুন, আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক হতে। পাঠ করুন, এবং আপনার রব মহা মহিমান্বিত” (৯৬ঃ ১-৫)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৯৩ | 4593 | ٤۵۹۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ الذي علم بالقلم যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন (৯৬ঃ ৪)
৪৫৯৩। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদিজা (রাঃ) এর কাছে ফিরে এসে বললেন, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর। এরপর রাবী সম্পূর্ণ হাদিসটি বর্ণনা করলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৯৪ | 4594 | ٤۵۹٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ كلا لئن لم ينته لنسفعن بالناصية ناصية كاذبة خاطئة “সাবধান, সে যদি বিরত না হয় তবে আমি তাকে অবশ্যই হেচড়িয়ে নিয়ে যাব, মস্তকের সম্মুখ ভাগের কেশগুচ্ছ ধরে, মিথ্যাচারী, পাপিষ্ঠের কেশগুচ্চছ। (৯৬ঃ ১৫-১৬)
৪৫৯৪। ইয়াহইয়া (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ জাহল বলেছিল, আমি যদি মুহাম্মাদকে কাবার পাশে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখি তাহলে অবশ্যই আমি তার ঘাড় পদদলিত করব। এ খবর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌঁছার পর তিনি বলেছেন, সে যদি তা করে তাহলে অবশ্যই ফেরেশতা তাকে পাকড়াও করবে। উবায়দুল্লাহর মাধ্যমে আবদুল থেকে আমর ইবনু খালিদ এ হাদিস বর্ণনা করতে গিয়ে উপরোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৯৫ | 4595 | ٤۵۹۵

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা কাদ্‌র

الْمَطْلَعُ বলা হয় উদয় হওয়াকে, পক্ষান্তরে, الْمَطْلِعُ মানে উদয়স্থল। أَنْزَلْنَاهُ এর ه দ্বারা আল-কুরআনের প্রতি ইশারা করা হয়েছে। এখানে বহুবচনের শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যদিও একবচনের গ্রহণ করা হয়েছে। কেননা, কুরআন অবতীর্ণকারী হলেন আল্লাহ্ তা‘আলা। বস্তুত কোন বস্তুর গুরুত্ব প্রকাশ বা জোরালো ভাব প্রকামের জন্য আরবরা একবচনের স্থলে বহুবচনে ব্যবহার করে থাকে।

সুরা বায়্যিনা

مُنْفَكِّيْنَ বিচলিত ও পদস্খলিত। قَيِّمَةٌ সঠিক। دِيْنُ الْقَيِّمَةِ এর মাঝে دِيْنُ শব্দটিকে স্ত্রী লিঙ্গের দিকে اضافت করা হয়েছে।

৪৫৯৫। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) কে বলেছিলেন, তোমাকে لَمْ يَكُنِ الَّذِينَ كَفَرُوا‏ পড়ে শোনানোর জন্য আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) বললেন, আল্লাহ কি আমার নাম নিয়ে বলেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। একথা শুনে উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) কাঁদতে লাগলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৯৬ | 4596 | ٤۵۹٦

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
৪৫৯৬। হাসসান ইবনু হাসসান (রহঃ) … আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) কে বলেছিলেন, তোমাকে কুর’আন পড়ে শোনানোর জন্য আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) বললেন, আল্লাহ কি আপনার কাছে আমার নাম উল্লেখ করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহ তোমার নাম উল্লেখ করেছেন। একথা শুনে উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) কাঁদতে লাগলেন। কাতাদা (রহঃ) বলেন, আমাকে জানানো হয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ‏لَمْ يَكُنِ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ পাঠ করে শুনিয়েছিলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৯৭ | 4597 | ٤۵۹۷

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
৪৫৯৭। আহমদ ইবনু আবূ দাউদ (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) কে বলেছিলেন, তোমাকে কুর’আন পড়ে শোনানোর জন্য আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। একথা শুনে তিনি বললেন, আল্লাহ কি আপনার কাছে আমার নাম উল্লেখ করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) আশ্চর্যান্বিত হয়ে পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, সমগ্র বিশ্বের প্রতিপালকের কাছে কি আমার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে? উত্তরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। একথা শুনে তাঁর উভয় চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠলো।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৯৮ | 4598 | ٤۵۹۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ فمن يعمل مثقال ذرة خيرا يره “কেউ অনু পরিমাণ সৎকর্ম করলে, সে তা দেখবে” (৯৯ঃ ৭)
সুরা যিলযাল

বলা হয়, وَوَحَى لَهَا ও وَوَحَى إِلَيْهَا শব্দ দু’টির অর্থ একই।

৪৫৯৮। ইসমাঈল ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিন শ্রেণীর মানুষের ঘোড়া থাকে। এক শ্রেণীর জন্য তা সওয়াব ও পুরস্কারের কারণ হয়, এক শ্রেণীর মানুষের জন্য হয় তা (গুনাহ হতে) আবরণরূপে এবং এক শ্রেণীর মানুষের প্রতি তা হয় গুনাহের কারণ। যার জন্য তা সওয়াবের কারণ হয়, তারা সেসব ব্যাক্তি, যারা আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য তা প্রস্তুত করে রাখে এবং কোন চারণ ক্ষেত্রে বা বাগানে লম্বা রশি দিয়ে তাকে বেঁধে রাখে। রশির আওতায় চারণ ক্ষেত্রে বা বাগানে সে যা কিছু খায় তা ঐ ব্যাক্তির জন্য নেকী হিসেবে গণ্য হয়। যদি ঘোড়াটি রশি ছিঁড়ে ফেলে এবং নিজ স্থান অতিক্রম করে দু’ এক উঁচু স্থানে চলে যায়, তাহলে তার পদচিহ্ন ও গোবরের বিনিময়েও ঐ ব্যাক্তি সওয়াব লাভ করবে। আর ঘোড়াটি যদি কোন জলাধারের কিনারায় গিয়ে নিজে নিজেই পানি পান করে, তবে মালিকের সেখান থেকে পানি পান করানোর ইচ্ছা না থাকলেও সে ব্যাক্তি এর বিনিময়ে সওয়াব লাভ করবে। এই ঘোড়া এই ব্যাক্তির জন্য তো হল সওয়াবের কারণ। আরেক শ্রেণীর মানুষের জন্য হয় তা (গুনাহ হতে) আবরণরূপে, তারা ঐ ব্যাক্তি যারা মানুষের থেকে মুখাপেক্ষী না থাকার জন্য ও মানুষের কাছে হাত পাতা থেকে বেঁচে থাকার জন্য তা পালন করে। কিন্তু তাতে আল্লাহর যে হক আছে তা দিতে ভুলে যায় না। এই শ্রেণীর মানুষের জন্য এ ঘোড়া হল পর্দা। আরেক শ্রেণীর ঘোড়ার মালিক যারা গর্ব করার মনোভাব ও দুশমনীর জন্য ঘোড়া রাখে। এ ঘোড়া হল তাদের জন্য গুনাহের কারণ। এরপর আল্লাহর রাসূল কে গাধা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, একক ও ব্যাপক অর্থব্যঞ্জক এ একটি মাত্র আয়াত ছাড়া এ বিষয়ে আল্লাহ আমার প্রতি আর কোন আয়াত নাযিল করেননি। আয়াতটি এইঃ “কেউ অণু পরিমাণ সৎকাজ করলে সে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকাজ করলেও সে তা দেখবে” (৯৯ঃ ৭-৮)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৯৯ | 4599 | ٤۵۹۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ومن يعمل مثقال ذرة شرا يره “কেউ অনু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে সে তাও দেখবে” (৯৯ঃ ৭-৮)
৪৫৯৯। ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) … আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে গাধা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, একক ও ব্যাপক অর্থব্যঞ্জক এ একটি মাত্র আয়াত ব্যতীত এ বিষয়ে আল্লাহ আমার প্রতি আর কোন আয়াত নাযিল করেন নি। আয়াতটি হচ্ছে এইঃ “কেউ অণু পরিমাণ সৎকাজ করলে সে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকাজ করলেও সে তা দেখবে” (৯৯ঃ ৭-৮)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬০০ | 4600 | ٤٦۰۰

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা আদিয়াত

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, الْكَنُوْدُ অকৃতজ্ঞ। فَأَثَرْنَ بِهٰ نَقْعًا সে সময় ধূলি উৎক্ষিপ্ত করে। لِحُبِّ الْخَيْرِ ধন-সম্পদের প্রতি ভালবাসার কারণে। لَشَدِيْدٌ মানে অবশ্যই কৃপণ। কৃপণকে আরবী ভাষায় شَدِيْدٌ বলা হয়। حُصِّلَ পৃথক করা হবে।

সুরা কারি’আ

كَالْفَرَاشِ الْمَبْثُوْثِ মানে বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মত। পতঙ্গ যেমন একটি আরেকটির ওপর পড়ে, ঠিক তেমনিভাবে একজন মানুষ আরেকজনের ওপর পড়বে। كَالْعِهْنِ নানা রঙের তুলার ন্যায়। ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) كَالصُّوْفِ পড়েছেন।

সুরা তাকাছুর

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, التَّكَاثُرُ ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির আধিক্য।

সুরা আসর

বলা হয় الْعَصْرُ কাল বা সময়। আল্লাহ্ তা‘আলা এখানে কালের শপথ করেছেন।

সুরা হুমাযা

الْحُطَمَةُ ‘লাযা’ ও ‘সাকার’ যেমন জাহান্নামের নাম, তেমনি ‘হুতামা’ও একটি জাহান্নামের নাম।

সুরা ফীল

أَبَابِيْلَ ঝাঁকে ঝাঁকে ও একত্রিত। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, مِنْ سِجِّيْلٍ শব্দটি سَنْكِ ও كِلْ থেকে আরবীকৃত আরবী শব্দ (এর অর্থ হল পাথর ও মাটির ঢিল)।

সুরা কুরায়শ

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, لِإِيْلَافِ মানে তারা এ বিষয়ে অভ্যস্ত ছিল। ফলে, শীত ও গ্রীষ্মে তা তাদের জন্য কষ্টকর হয় না। وَاٰمَنَهُمْ আল্লাহ্ তা‘আলা হারামের মাধ্যমে তাদের যাবতীয় শত্রু থেকে নিরাপত্তা দিয়েছেন। ইবনু উআয়না (রহ.) বলেন, لِإِيْلَافِ কুরাইশদের প্রতি আমার নি‘মাতের কারণে।

সুরা মাউন

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, يَدُعٌ সে তাকে হাক না দিয়ে ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। বলা হয় এ শব্দটি শব্দ থেকে উদ্ভূত। يُدَعُّوْنَ তাদেরকে বাধা দেয়া হয়। ساهُوْنَ উদাসীন। الماعُوْن সর্বপ্রকার কল্যাণকর কাজ। কোন কোন আরবী ভাষা বিশেষজ্ঞ বলেন, الماعُوْنُ পানি। ‘ইকরামাহ (রাঃ) বলেন, মাউনের অন্তর্ভুক্ত সর্বোচ্চ স্তরের বিষয় হচ্ছে যাকাত প্রদান করা এবং সর্বনিম্ন পর্যায়ের বিষয় হচ্ছে গৃহস্তালির প্রয়োজনীয় ছোট খাট জিনিস ধার দেয়া।

সুরা কাউসার

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, شانِئَكَ তোমার শত্রু।

৪৬০০। আদম (রহঃ) … আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আকাশের দিকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মি’রাজ হলে তিনি বলেন, আমি একটি জলাধারের (নদী) ধারে পৌঁছলাম, যার উভয় তীরে ফাঁপা মুক্তার তৈরি গম্বুজ রয়েছে। আমি বললাম, হে জিবরাঈল! এটি কি? তিনি বললেন, এটই (হাউযে) কাওসার।

 ফাযায়িলুল কুরআন অধ্যায় (৪৬১৪-৪৬৯২)

হাদীস নং ৪৬১৪ – ওহী কিভাবে নাযিল হয় এবং সর্বপ্রথম কোন আয়াত নাযিল হয়েছিল।

উবায়দুল্লাহ ইবনে মূসা রহ………..আবু সালামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আয়েশা রা. ও ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় দশ বছর অবস্থান করেন। এ সময় তাঁর প্রতি কুরআন নাযিল হয়েছে এবং মদীনাতেও তিনি দশ বছর অবস্থান করেন (এ সময়ও তাঁর প্রতি দশ বছর কুরআন নাযিল হয়েছে)।

হাদীস নং ৪৬১৫

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………….আবু উসমান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে অবগত করা হয়েছে যে, একদা জিবরাঈল আ. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর কাছে আগমন করলেন। তখন উম্মে সালামা রা .তাঁর কাছে ছিলেন। জিবরাঈল আ. তাঁর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে সালামা রা.-কে জিজ্ঞাসা করলেন, ইনি কে? অথবা তিনি এ ধরনের কোন কথা জিজ্ঞাসা করলেন। উম্মে সালামা রা. বললেন, ইনি দাহইয়া রা.। তারপর জিবরাঈল আ. উঠে দাঁড়ালেন। তিনি বললেন , আল্লারহ কসম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণে জিবরাঈল আ.-এর খবর না শুনা পর্যন্ত আমি তাকে সে দাহইয়া রা.-ই মনে করেছি। অথবা তিনি (রাবী) অনুরূপ কোন কথা বর্ণনা করেছেন। রাবী মুতামির রহ. বলেন, আমার পিতা সুলাইমান বলেছেন, আমি উসমান রহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কার থেকে এ ঘটনা শুনেছেন? তিনি বললেন উসামা ইবনে যায়েদের কাছ থেকে।

হাদীস নং ৪৬১৬

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক নবীকে তাঁর যুগের চাহিদা মুতাবিক কিছু মুজিযা দান করা হয়েছে, যা দেখে লোকেরা তাঁর প্রতি ঈমান এনেছে। আমাকে যে মুজিযা দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে, ওহী –যা আল্লাহ পাক আমার প্রতি অবতীর্ণ করেছেন। সুতরাং আমি আশা করি, কিয়ামতের দিন তাদের অনুসারীদের তুলনায় আমার অনুসারীদের সংখ্যা অনেক বেশি হবে।

হাদীস নং ৪৬১৭

আমর ইবনে মুহাম্মদ রহ…………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর প্রতি ধারাবাহিকভাবে ওহী নাযিল করতে থাকেন এবং তাঁর ইন্তিকালের নিকটবর্তী সময়ে আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রতি সর্বাধিক পরিমাণ ওহী নাযিল করেন। এরপর তিনি ওফাত প্রাপ্ত হন।

হাদীস নং ৪৬১৮

আবু নুআইম রহ……….জুনদুব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ফলে এক কি দু’রাত তিনি উঠতে পারেননি। জনৈকা মহিলা তাঁর কাছে এসে বলল, হে মুহাম্মদ ! আমার মনে হয়, তোমার শয়তান তোমাকে পরিত্যাগ করেছে। তখন আল্লাহ নাযিল করলেন, “শপথ পূর্বাহ্নের, শপথ রজনীর, যখন তা হয় নিঝুম। তোমার প্রতিপালক তোমাকে পরিত্যাগ করেননি এবং তোমার প্রতি বিরূপও হননি”।

হাদীস নং ৪৬১৯ – কুরআন কুরাইশ এবং আরবদের ভাষায় নাযিল হয়েছে।

আবুল ইয়ামান রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,উসমান রা. যায়েদ ইবনে সাবিত রা., সাঈদ আস রা., আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. এবং আবদুর রহমান ইবনে হারিস ইবনে হিশাম রা.-কে পবিত্র কুরআন গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করার জন্য নির্দেশ দিলেন এবং তাদেরকে বললেন, আল কুরআনের কোন শব্দের আরবী হওয়ার ব্যাপারে যায়েদ ইবনে সাবিতের সঙ্গে তোমাদের মতবিরোধ হলে তোমরা তা কুরাইশদের ভাষাষ লিপিবদ্ধ করবে। কারণ, কুরআন তাদের ভাষায় নাযিল হয়েছে। অতএব তাঁরা তা-ই করলেন।

হাদীস নং ৪৬২০

আবু নুআইম রহ………..ইয়ালা ইবনে উমাইয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলতেন, হায়! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ওহী নাযিল হওয়ার সময় যদি তাকে দেখতে পারতাম। যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিরিররানা নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন এবং চাঁদোয়া দিয়ে তাঁর উপর ছায়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল এবং তাঁর সঙ্গে ছিলেন কতিপয় সাহাবী। এমতাবস্থায় সুগন্ধি মেখে এক ব্যক্তি এলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল। ঐ সম্পর্কে আপনার মত কী, যে সুগন্ধি মেখে জুব্বা পরে ইহরাম বেঁধেছে? কিছু সময়ের জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপেক্ষা করলেন, এমনি সময় ওহী এল। উমর রা. ইয়ালা রা.-কে ইশারা দিয়ে ডাকলেন। ইয়ালা রা. এলেন এবং তাঁর মাথা ঐ চাদরের ভেতর ঢোকালেন। দেখলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুখমণ্ডল সম্পূর্ণ রক্তিম বণৃ এবং কিছু সময়ের জন্য অত্যন্ত জোরে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করছেন। তারপর তাঁর থেকে এ অবস্থা সম্পূর্ণরূপে দূরীভূত হওয়ার পর তিনি বললেন, প্রশ্নকারী কোথায়? যে কিছুক্ষণ পূর্বে আমাকে উমরা সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিল। লোকটিকে তালাশ করে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর কাছে নিয়ে আসা হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে সুগন্ধি তুমি তোমার শরীরে মেখেছ, তা তিনবার ধুয়ে ফেলবে আর জুব্বাটি খুলে ফেলবে। তারপর তুমি তোমার উমরাতে ঐ সমস্ত অনুষ্ঠান পালন করবে, যা তুমি হজ্বের মধ্যে করে থাক।

হাদীস নং ৪৬২১ – কুরআন সংকলন।

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……..যায়েদ ইবনে সাবিত রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়ামামার যুদ্ধে বহু লোক শহীদ হবার পর আবু বকর সিদ্দীক রা. আমাকে ডেকে পাঠালেন। এ সময় উমর রা.-ও তাঁর কাছে উপস্থিত ছিলেন। উমর রা. আমার কাছে এসে বলেছেন, ইয়ামামার যুদ্ধে শাহাদত প্রাপ্তদের মধ্যে ক্বারীদের সংখ্যা অনেক। আমি আশংকা করছি, এমনিভাবে যদি ক্বারীগণ শহীদ হয়ে যান, তাহলে কুরআন শরীফের বহু অংশ হারিয়ে যাবে। অতএব আমি মনে করি যে, আপনি কুরআন সংকলনের নির্দেশ দিন। উত্তরে আমি উমর রা-কে বললাম, যে কাজ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেন নি, সে কাজ তুমি কিভাবে করবে? উমর রা. এর জবাবে বললেন, আল্লাহর কসম, এটা একটা উত্তম কাজ। উমর রা. এ কথাটি আমার কাছে বার বার বলতে থাকলে অবশেষে আল্লাহ তায়ালা এ কাজের জন্য আমার বক্ষকে প্রশস্ত করে দিলেন এবং এ বিষয়ে উমর যা ভাল মনে করলেন আমিও তাই করলাম। যায়েদ রা. বলেন, আবু বকর সিদ্দীক রা. আমাকে বললেন, তুমি একজন বুদ্ধিমান যুবক। তোমার ব্যাপারে আমার কোন সংশয় নেই । অধিকন্তু তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওহীর লেখক ছিলে। সুতরাং তুমি কুরআন শরীফের অংশগুলোকে তালাশ করে একত্রিত কর। আল্লাহর শপথ ! তারা যদি আমাকে একটি পাহাড় এক স্থান হতে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিত, তাহলেও তা আমার কাছে কুরআন সংকলনের নির্দেশের চাইতে কঠিন বলে মনে হত না। আমি বললাম, যে কাজ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেননি, আপনারা সে কাজ কিভাবে করবেন? তিনি বললেন, আল্লাহর কসম ! এটা একটা কল্যাণকার কাজ। এ কথাটি আবু বকর সিদ্দীক রা. আমার কাছে বার বার বলতে থাকেন, অবশেষে আল্লাহ পাক আমার বক্ষকে প্রশস্ত ও প্রসন্ন করে দিলেন সে কাজের জন্য, যে কাজের জন্য তিনি আবু বকর এবং উমর রা.-এর প্রশস্ত ও প্রসন্ন করে দিয়েছিলেন। এরপর আমি কুরআন অনুসন্ধান কাজে আত্মনিয়োগ করলাম এবং খেজুর পাতা, প্রস্তরখণ্ড ও মানুষের বক্ষ থেকে আমি তা সংগ্রহ করতে থাকলাম। এমনকি আমি সূরা তওবার শেষাংশ আবু খুযায়মা আনসারী রা. থেকে সংগ্রহ করলাম। এ অংশটুকু তিনি ব্যতীত আর কারো কাছে আমি পাইন। আয়তগুলো হচ্ছে এই : তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের কাছ এক রাসূল এসেছে। তোমাদের যা বিপন্ন করে তা তাঁর জন্য কষ্টদায়ক। সে তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। এরপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তুমি বল, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি এবং তিনি মহা আরশের অধিপতি। (১২৮-১২৯) তারপর সংকলিত সহীফাসমূহ মৃত্যু পর্যন্ত আবু বকর রা.-এর কাছে সংরক্ষিত ছিল। তাঁর মৃত্যুর পর তা উপর রা.-এর কাছে সংরক্ষিত ছিল , যতদিন তিনি জীবিত ছিলেন। এরপর তা উমর –তনয়া হাফসা রা.-এর কাছে সংরক্ষিত ছিল।

হাদীস নং ৪৬২২

মূসা রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান রা. একবার উসমান রা.-এর কাছে এলেন। এ সময় তিনি আরমিনিয়া ও আযারবাইজান বিজয়ের ব্যাপারে সিরীয় ও ইরাকী যোদ্ধাদের জন্য রণ-প্রস্তুতির কাজে ব্যস্ত ছিলেন। কুরআন পাঠে তাদের মতবিরোধ হযযায়ফাকে ভীষণ চিন্তিত করল। সুতরাং তিনি উসমান রা. কে বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন ! কিতাব সম্পর্কে ইহুদী ও নাসারাদের মত মতপার্থক্যে লিপ্ত হবার পূর্বে এই উম্মতকে রক্ষা করুন। তারপর উসমান রা. হাফসা রা.-এর কাছে জনৈক ব্যক্তিকে এ বলে পাঠালেন যে, আপনার কাছে সংরক্ষিত কুরআনে সহীফাসমূহ আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিন, যাতে আমরা সেগুলোকে পরিপূর্ণ মাসহাফসমূহে লিপিবদ্ধ করতে পারি। এরপর আমরা তা আপনার কাছে ফিরিয়ে দেব। হাফসা রা. তখন সেগুলো উসমান রা.-এর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। এরপর উসমান রা. যায়েদ ইবনে সাবিত রা. , আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা., সাঈদ ইবনে আস রা. এবং আবদুর রহমান ইবনে হারিস ইবনে হিশাম রা.-কে নির্দেশ দিলেন। তাঁরা মাসহাফে তা লিপিবদ্ধ করলেন। এ সময় হযরত উসমান রা. তিনজন কুরাইশী ব্যক্তিকে বললেন, কুরআনের কোন বিষয়ে যদি যায়েদ ইবনে সাবিতের সঙ্গে তোমাদের মতপার্থক্য দেখা দেয়, তাহলে তোমরা তা কুরাইশদের ভাষায় লিপিবদ্ধ করবে। কারণ, কুরআন তাদের ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তাঁরা তাই করলেন। যখন মূল লিপিগুলো থেকে কয়েকটি পরিপূর্ণ গ্রস্থ লিপিবদ্ধ হয়ে গেল, তখন উসমান রা. মূল লিপিগুলো হাফসা রা-এর কাছে ফিরিয়ে দিলেন। তারপর তিনি কুরআনের লিখিত মাসহাফ –সমূহের এক একখানা মাসহাফ এক এক প্রদেশে পাঠিয়ে দিলেন এবং এতদভিন্ন আলাদা আলাদা বা একত্রে সন্নিবেশিত কুরআনের যে কপিসমূহ রয়েছে তা জ্বালিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। ইবনে শিহাব রহ. খারিজা ইবনে যায়েদ ইবনে সাবিতের মধ্যমে যায়েদ ইবনে সাবিত থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমরা যখন গ্রন্থাকারে কুরআন লিপিবদ্ধ করছিলাম তখন সূরা আহযাবের একটি আয়াত আমার থেকে হারিয়ে যায়, অথচ আমি তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে পাঠ করতে শুনেছি। তাই আমরা অনুসন্ধান করতে লাগলাম। অবশেষে আমরা তা খুযায়মা ইবনে সাবিত আনসাসী রা.-এর কাছে পেলাম। আয়াতটি হচ্ছে এই “মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সঙ্গে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে, তাদের কেউ কেউ শাহাদত বরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে। তাঁরা তাদের অঙ্গীকারে কোন পরিবর্তন করেনি”। (৩৩: ২৩) তারপর আমরা এ আয়াতটি সংশ্লিষ্ট সূরার সাথে মাসহাফে লিপিবদ্ধ করলাম।

হাদীস নং ৪৬২৩ – নবী (সা.) এর কাতিব।

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……..যায়েদ ইবনে সাবিত রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,আবু বকর রা. আমাকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওহী লিখতে। সুতরাং তুমি কুরআনের আয়াতগুলো অনুসন্ধান কর। এরপর আমি অনুসন্ধান করলাম। শেষ পর্যন্ত সূরা তাওবার শেষ দুটো আয়াত আমি আবু খুযায়মা আনসারী রা.-এর কাছে গেলাম। তিনি ব্যতীত আর কারো কাছে আমি এর সন্ধান পায়নি। আয়াত দুটো হচ্ছে এই : “তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের কাছে এক রাসূল এসেছে। তোমাদের যা বিপন্ন করে তা তাঁর জন্য কষ্টদায়ক। সে তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি সে দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। তারপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তুমি বলবে, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি এবং তিনি মহা আরশের অধিপতি”। (৯: ১২৮:১২৯)

হাদীস নং ৪৬২৪

উবায়দুল্লাহ ইবনে মূসা রহ………..বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, لايستوى القاعدون من المؤمنين والمجاهدون في سبيل الله আয়াতটি নাযিল হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যায়েদকে আমার কাছে ডেকে আন এবং তাকে বল যে যেন কাষ্ঠখণ্ড, দোয়াত এবং কাঁধের হাড় রাবী বলেন, অথবা তিনি বলেছেন, কাঁধের হাড় এবং দোয়াত নিয়ে আসে। এরপর তিনি বললেন, লিখ لا يستوى। এ সময় অন্ধ সাহাবী আমর ইবনে উম্মে মাকতুম রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে বসা ছিলেন। তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি তো অন্ধ, আমার ব্যাপারে আপনার কি নির্দেশ ? এ কথার প্রেক্ষিতে পূর্বোক্ত আয়াতের পরিবর্তে নাযিল হল: “মুমিনদের মধ্যে যারা অক্ষম নয়, অথচ ঘরে বসে থাকে ও যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে তারা সমান নয়”।(৪: ৯৫)

হাদীস নং ৪৬২৫ – কুরআন সাত উপ (আঞ্চলিক) ভাষায় নাযিল হয়েছে।

সাঈদ ইবনে উফাইর রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জিবরাঈল আ. আমাকে একভাবে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। এরপর আমি তাকে অন্যভাবে পাঠ করার জন্য অনুরোধ করতে লাগলাম এবং পুনঃ পুনঃ অন্যভাবে পাঠ করার জন্য অব্যাহতভাবে অনুরোধ করতে থাকলে তিনি আমার জন্য পাঠ পদ্ধতি বাড়িয়ে যেতে লাগলেন। অবশেষে তিনি সাত উপ (আঞ্চলিক) ভাষায় তিলাওয়াত করে সমাপ্ত করলেন।

হাদীস নং ৪৬২৬

সাঈদ ইবনে উফাইর রহ……….উমর ইবনে খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হিশাম ইবনে হাকীম রা.-কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায় সূরা ফুরকান তিলাওয়াত করতে শুনেছি এবং গভীর মনোযোগ সহকারে আমি তাঁর কিরআত শুনেছি। তিনি বিভিন্নভাবে কিরাআত পাঠ করেছেন; অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এভাবে শিক্ষা দেননি। এ কারণে সালাতের মাঝে আমি তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উদ্যত হয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু বড় কষ্টে নিজেকে সামলে নিলাম। তারপর সে সালাম ফিরালে আমি চাদর দিয়ে তার গলা পেঁচিয়ে ধরলাম এবং জিজ্ঞাসা করলাম, তোমাকে এ সূরা যেভাবে পাঠ করতে শুনলাম, এভাবে তোমাকে কে শিক্ষা দিয়েছে? সে বলল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই আমাকে এভাবে শিক্ষা দিয়েছেন। আমি বললাম, তুমি মিথ্যা বলছ। কারণ, তুমি যে পদ্ধতিতে পাঠ করেছ, এর থেকে ভিন্ন পদ্ধতিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন। এরপর আমি তাকে জোর করে টেনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে নিয়ে গেলাম এবং বললাম, আপনি আমাকে সূরা ফুরকান যে পদ্ধতিতে পাঠ করতে শিখিয়েছেন এ লোককে আমি এর থেকে ভিন্ন পদ্ধতিতে তা পাঠ করতে শুনেছি। এ কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। হিশাম, তুমি পাঠ কর শোনাও। তারপর সে সেভাবেই পাঠ করে শোনাল, যেভাবে আমি তাকে পাঠ করতে শুনেছি। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এভাবেই নাযিল করা হয়েছে। এরপর বললেন, হে উমর ! তুমিও পড়। সুতরাং আমাকে তিনি যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন, সেভাবেই আমি পাঠ করলাম। এবারও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এভাবেও কুরআন নাযিল করা হয়েছে। এ কুরআন সাত উপ (আঞ্চলিক) ভাষায় নাযিল করা হয়েছে। সুতরাং তোমাদের জন্য যা সহজতর, সে পদ্ধতিতেই তোমরা পাঠ কর।

হাদীস নং ৪৬২৭ – কুরআন সংকলন ও সুবিন্যস্তকরণ।

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ………ইউসুফ ইবনে মাহিক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা.-এর কাছে ছিলাম। এমতাবস্থায় ইরাকী ব্যক্তি এসে তাকে জিজ্ঞাসা করল: কোন্ ধরনের কাফন শ্রেষ্ঠ? তিনি বললেন, আফসোস তোমার প্রতি ! এতে তোমার কি ক্ষতি? তারপর লোকটি বলল, হে উম্মুল মুমিনীন ! আমাকে আপনি আপনার কুরআন শরীফের কপি দেখান। তিনি বললেন, কেন? লোকটি বলল, এ তরতীবে কুরআন শরীফকে বিন্যস্ত করার জন্য। কারণ লোকেরা তাকে অবিন্যস্তভাবে পাঠ করে। আয়েশা রা. বললেন, তোমরা এর যে অংশই আগে পাঠ কর না কেন, এতে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। মুফাসসাল সূরাসমূহের মাঝে প্রথমত ঐ সূরাগুলো অবতীর্ণ হয়েছে। যার মধ্যে জান্নাত ও জাহান্নামের উল্লেখ রয়েছে। তারপর যখন লোকেরা দলে দলে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হতে লাগল তখন হালাল-হারামের বিধান সম্বলিত সূরাগুলো নাযিল হয়েছে। যদি সূচনাতেই এ আয়াত নাযিল হত যে, তোমরা মদ পান করো না, তাহলে লোকেরা বলত, আমরা কখনো মদপান ত্যাগ করব না। যদি শুরুতেই নাযিল হতো তোমরা ব্যভিচার করো না, তাহলে তারা বলত আমরা কখনো অবৈধ যৌনাচার বর্জন করব না। আমি যখন খেলাধূলার বয়সী একজন বালিকা তখন মক্কায় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি নিম্নলিখিত আয়াতগুলো নাযিল হয়: بل الساعة موعدهم الساعة أدهى وأمرমানে, “অধিকন্তু কিয়ামত তাদের শাস্তির নির্ধারিত কাল এবং কিয়ামত হবে কঠিনতর ও তিক্ততর”। বিধান সম্বলিত সূরা বাকারা ও সূরা নিসা আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে থাকাকালীন অবস্থায় নাযিল হয়। রাবী বলেন, এরপর আয়েশা রা. তাঁর কাছে সংরক্ষিত কুরআনের কপি বের করলেন এবং সূরাসমূহ লেখালেন।

হাদীস নং ৪৬২৮

আদম রহ………..ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি সূরা বনী ইসরাঈল, সূরা কাহফ, সূরা মরিয়ম, সূরা তাহা এবং সূরা আম্বিয়া সম্পর্কে বলতেন যে, এগুলো হচ্ছে সূরাসমূহের মাঝে উন্নত এবং এগুলো ইসলামের প্রাথমিক যুগে অবতীর্ণ হয়েছে।

হাদীস নং ৪৬২৯

আবুল ওয়ালীদ রহ……….বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আসার পূর্বে আমি سبخ اسم ربك الأعلىসূরাটি শিখেছি।

হাদীস নং ৪৬৩০

আবদান রহ………আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সমপর্যায়ের ঐ সূরাগুলো সম্পর্কে আমি খুব অবগত আছি, যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রাকআতে জোড়া জোড়া পাঠ করতেন। তারপর আবদুল্লাহ রা. দাঁড়ালেন এবং আলকামা রা. তাকে অনুসরণ করলেন। যখন আলকামা রা. বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলেন তখন আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এগুলো হচ্ছে মোট বিশটি সূরা, ইবনে মাসউদ রা.-এর সংকলন মুতাবিক মুফাসসাল থেকে যার শুরু এবং যার শেষ হচ্ছে حواميم অর্থাৎ ‘হামীম’ ‘আদদুখান’ এবং ‘আম্মা ইয়াতাসা আলূন’।

হাদীস নং ৪৬৩১ – জিবরাঈল (আ.) নবী (সা.)এর সাথে কুরআন শরীফ দাওর করতেন।

ইয়াহইয়া ইবনে কাযাআ রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কল্যাণের কাজে ছিলেন সবচেয়ে বেশি দানশীল, বিশেষভাবে রমযান মাসে। (তাঁর দানশীলতার কোন সীমা ছিল না) কেননা, রমযান মাসের শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক রাত্রে জিবরাঈল আ. তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং তিনি তাকে কুরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন। যখন জিবরাঈল আ. তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি কল্যাণের ব্যাপারে প্রবহমান বায়ুর চেয়েও অধিক দানশীল হতেন।

হাদীস নং ৪৬৩২

খালিদ ইবনে ইয়াযীদ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রতি বছর জিবরাঈল আ. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে একবার কুরআন শরীফ দাওর করতেন। কিন্তু যে বছর তিনি ওফাত লাভ করেন সে বছর তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে দুবার দাওর করেন। প্রতি বছর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে দশ দিন ইতিকাফ করতেন। কিন্তু যে বছর তিনি ওফাত লাভ করেন সে বছর তিনি বিশ দিন ই’তিকাফ করেন।

হাদীস নং ৪৬৩৩ – রাসূল (সা.)এর যে সব সাহাবী ক্বারী ছিলেন।

হাফস ইবনে উমর রহ………..মাসরূক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে আমর আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, আমি তাকে ঐ সময় থেকে ভালবাসি, যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি বলতে শুনেছি যে, তোমরা চার ব্যক্তি থেকে কুরআন শিক্ষা কর-আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা., সালিম রা., মুআয রা. এবং উবায় ইবনে কাব রা.।

হাদীস নং ৪৬৩৪

উমর ইবনে হাফস রহ……….শাকীক ইবনে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন এবং বললেন, আল্লাহর শপথ। সত্তরেরও কিছু অধিক সূরা আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুখ থেকে হাসিল করেছি। আল্লাহর কসম ! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীরা জানেন, আমি তাদের চাইতে আল্লাহর কিতাবে সম্বন্ধে সর্বাধিক জ্ঞাত; অথচ আমি তাদের চাইতে উত্তম নই। শাকীক রহ. বলেন, সাহাবীগণ তাঁর বক্তব্য শুনে কি বলেন এ কথা শোনার জন্য আমি মসলিশে বসেছি, কিন্তু আমি কাউকে তার বক্তব্যে কোন আপত্তি উত্থাপন করতে শুনিনি।

হাদীস নং ৪৬৩৫

মুহাম্মদ ইবনে কাসীর রহ……….আলকামা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা হিমস শহরে ছিলাম। এ সময় ইবনে মাসউদ রা. সূরা ইউসুফ তিলাওয়াত করলেন। তখন এক ব্যক্তি বললেন, এ সূরা এ ভাবে নাযিল হয়নি। এ কথা শুনে ইবনে মাসউদ রা. বললেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে এ সূরা তিলাওয়াত করেছি। তিনি বলেছেন, তুমি সুন্দরভাবে পাঠ করেছ। এ সময় তিনি ঐ লোকটির মুখ থেকে মদের গন্ধ পেলেন। তাই তিনি তাকে বললেন, তুমি আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলা এবং মদ পান করার মত জঘন্যতম অপরাধ এক সাথে করছ? এরপর তিনি তার উপর হদ জারি করলেন।

হাদীস নং ৪৬৩৬

উমর ইবনে হাফস রহ………..মাসরূক রহ. থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ রা. বলেন, আল্লাহর কসম ! যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, আল্লাহর কিতাবের অবতীর্ণ প্রতিটি সূরা সম্পর্কে আমি জানি যে, তা কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং প্রতিটি আয়াত সম্পর্কে আমি জানি যে, তা কর সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। আমি যদি জানতাম যে, কোন ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে আমার চাইতে অধিক জ্ঞাত এবং সেখানে উট গিয়ে পৌঁছতে পারে, তাহলে সাওয়ার হয়ে আমি সেখানে গিয়ে পৌঁছতাম।

হাদীস নং ৪৬৩৭

হাফস ইবনে উমর রহ………কাতাদা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনে মালিক রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় কে কে কুরআন সংগ্রহ করেছেন? তিনি বললেন, চারজন এবং তাঁরা চারজনই ছিলেন আনসারী সাহাবী। তাঁরা হলেন: উবায় ইবনে কাব রা., মুআয ইবনে জাবাল রা., যায়েদ ইবনে সাবিত রা. এবং আবু যায়েদ রা.। (অন্য সনদে) ফাদল রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে অনুরূপ বর্ণনা করছেন।

হাদীস নং ৪৬৩৮

মুআল্লা ইবনে আসাদ রহ……..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন। তখন চার ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ কুরআন সংগ্রহ করেননি। তাঁরা হলেন আবুদ দারদা রা., মুআয ইবনে জাবাল রা., যায়েদ ইবনে সাবিত রা. এবং আবু যায়েদ রা.। আনাস রা. বলেন, আমরা আবু যায়েদ রা.-এর উত্তরসুরি।

হাদীস নং ৪৬৩৯

সাদাকা ইবনে ফাদল রহ…………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর রা. বলেছেন, আলী রা. আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম বিচারক এবং উবায় রা. আমাদের মাঝে সর্বোত্তম কারী। এতদসত্ত্বেও তিনি যা তিলাওয়াত করেছেন, আমরা তার কতিপয় অংশ বর্জন করছি, অথচ তিনি বলছেন, আমি তা আল্লাহর রাসূলের যবান মুবারক থেকে শুনেছি, কোন কিছুর বিনিময়ে আমি তা বর্জন করব না। আল্লাহ বলেছেন, “আমি কোন আয়াত রহিত করলে কিংবা বিস্মৃত হতে দিলে তা হতে উত্তম কিংবা তার সমতুল্য কোন আয়াত আনয়ন করি”।

হাদীস নং ৪৬৪০ – সূরা ফাতিহার ফযীলত

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আবু সাঈদ ইবনে মুআল্লা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সালাতরত ছিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ডাকলেন; কিন্তু আমি তাঁর ডাকে সাড়া দিলাম না। পরে আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি সালাতরত ছিলাম তিনি বললেন, আল্লাহ তায়ালা কি বলেননি, “হে মুমিনগণ, আল্লাহ ও রাসূল যখন তোমাদের কে আহবান করেন তখন আল্লাহ ও রাসূলের আহবানে সাড়া দাও”। (৮: ২৪) তারপর তিনি বললেন, তোমার মসজিদ থেকে বের হওয়ার পূর্বে আমি কি তোমাকে কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ সূরা শিক্ষা দেব না? তখন তিনি আমার হাত ধরলেন। যখন আমরা মসজিদ থেকে বের হওয়ার ইচ্ছা করলাম তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি তো বলেছেন মসজিদ থেকে বের হওয়ার পূর্বে আমাকে কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ সূরার কথা বলবেন। তিনি বললেন, তা হল: “আল হামদুলিল্লাহ রাব্বিল আলামীন”। এটা বারবার পঠিত সাতটি আয়াত (সাবআ মাছানী) এবং কুরান আজীম যা আমাকে দেয়া হয়েছে।

হাদীস নং ৪৬৪১

মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ……….আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার সফরে চলছিলাম। (পথিমধ্যে) অবতরণ করলাম। তখন একটি বালিকা এসে বলল, এখানকার গোত্রপ্রধানকে সাপে কেটেছে। আমাদের পুরুষগণ অনুপস্থিত। অতএব, আপনাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি, যিনি ঝাড়-ফুঁক করতে পারেন? তখন আমাদের মধ্য থেকে একজন ঐ বালিকাটির সঙ্গে গেলেন। যদি আমরা ভাবিনি যে সে ঝাড়-ফুঁক জানে। এরপর সে ঝাড়-ফুঁক করল এবং গোত্রপ্রধান সুস্থ হয়ে উঠল। এতে সর্দার খুশী হয়ে তাকে ত্রিশটি বকরী দান করলেন এবং আমাদের সকলকে দুধ পান করালেন। ফিরে আসার পথে আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি ভালভাবে ঝাড়-ফুঁক করতে জান (অথবা বারীর সন্দেহ) তুমি কি ঝাড়-ফুঁক করতে পার? সে উত্তর করল, না, আমি তো কেবল উম্মুল কিতাব –সূরা ফাতিহা দিয়েই ঝাড়-ফুঁক করেছি। আমরা তখন বললাম, যতক্ষণ না আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর কাছে পৌঁছে তাকে জিজ্ঞাসা করি ততক্ষণ কেউ কিছু বলবে না। এরপর আমরা মদীনায় পৌঁছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ঘটনাটি তুলে ধরলাম। তিনি বললেন, সে কেমন করে জানল যে, তা (সূরা ফাতিহা) চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যেতে পাবে ? তোমরা নিজেদের মধ্যে এগুলো বণ্টন করে নাও এবং আমার জন্যও একাংশ রেখ। আবু মামার……..আবু সাঈদ থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছদঃ সুরা বাকারার ফযীলত
৪৬৪২। মুহাম্মদ ইব্‌ন কাসীর (রহঃ) … আবূ মাসঊদ (রাঃ) সূত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে দু’টি আয়াত তিলাওয়াত করে। আবূ নু’আইম (রহঃ) আবূ মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ যদি রাতে সূরা বাকারার শেষ দু’টি আয়াত পাঠ করে, সেটাই তার জন্য যথেষ্ট। উসমান ইব্‌ন হায়সাম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রমযানে প্রাপ্ত যাকাতের মাল হেফাজতের দায়িত্ব দিলেন। এ সময় জনৈক ব্যাক্তি এসে খাদ্য-দ্রব্য উঠিয়ে নিতে উদ্যত হল। আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি তোমাকে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে যাব। এরপর পুরো হাদীস বর্ণনা করে। তখন লোকটি বলল, যখন আপনি ঘুমাতে যাবেন, তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ করবেন। এর ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন পাহারাদার নিযুক্ত করা হবে এবং ভোর পর্যন্ত শয়তান আপনার কাছে আসতে পারবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এ ঘটনা শুনে) বললেন, (যে তোমার কাছে এসেছিল) সে সত্য কথা বলেছে, যদিও সে বড় মিথ্যাবাদী শয়তান।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৪৩ | 4643 | ٤٦٤۳

পরিচ্ছদঃ সুরা কাহফের ফযীলত
৪৬৪৩। আমর ইবনু খালিদ (রহঃ) … বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি “সূরা কাহ্ফ” তিলাওয়াত করেছিলেন। তার ঘোড়াটি দু’টি রশি দিয়ে তার পাশে বাঁধা ছিল। তখন এক খন্ড মেঘ এসে তার উপর ছায়া বিস্তার করল। মেঘখন্ড ক্রমশ নিচের দিকে নেমে আসতে লাগল। আর তার ঘোড়াটি ভয়ে লাফালাফি শুরু করে দিল। ভোর বেলা যখন লোকটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উক্ত ঘটনার কথা বললেন, তখন তিনি বললেন, এ ছিল আস্‌সাকিনা (প্রশান্তি), যা কুরআন তিলাওয়াতের কারণে অবতীর্ণ হয়েছিল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৪৪ | 4644 | ٤٦٤٤

পরিচ্ছদঃ সুরা আল-ফাতহর ফযীলত
৪৬৪৪। ইস্‌মাঈল (রহঃ) … আসলাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক সফরে রাতের বেলায় চলছিলেন এবং উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তাঁর সাথে ছিলেন। তখন উমর (রাঃ) তাঁর কাছে কিছু জিজ্ঞেস করলেন; কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কোন উত্তর দিলেন না। তারপর আবার জিজ্ঞেস করলেন; কিন্তু তিনি কোন উত্তর দিলেন না। পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, এবারও তিনি কোন উত্তর দিলেন না। এমতাবস্থায়, উমর (রাঃ) নিজকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক! তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তিনবার প্রশ্ন করে কোন উত্তর পাওনি। উমর (রাঃ) বললেন, এরপর আমি আমার উটকে দ্রুত চালিয়ে সকলের আগে চলে গেলাম এবং আমি শঙ্কিত হলাম, না জানি আমার সম্পর্কে কুরআন অবতীর্ণ হয়। কিছুক্ষণ পর কেউ আমাকে ডাকছে, এমন আওয়োজ শুনতে পেলাম। আমি মনে আশংকা করলাম যে, হয়তো বা আমার সম্পর্কে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। তখন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে গেলাম এবং তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন আজ রাতে আমার কাছে এমন একটি সূরা অবতীর্ণ হয়েছে, যা আমার কাছে সূর্যালোক পতিত সকল স্থান হতেও উত্তম। এরপর তিনি পাঠ করলেন, إِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُبِينًا “নিশ্চয় আমি তোমাকে সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৪৫ | 4645 | ٤٦٤۵

পরিচ্ছদঃ কুল্‌হু আল্লাহু আহাদ (সূরা ইখলাস) এর ফযীলত
৪৬৪৫। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি অন্য আরেক ব্যাক্তিকে ‘কুল হুআল্লাহু আহাদ’ পড়তে শুনলেন। সে বার বার তা মুখে উচ্চারন করছিল। (তিনি মনে করলেন এভাবে বারাবার পাঠ করা যথেষ্ট নয়) পরদিন সকালে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে এ সম্পর্কে বললেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে সত্তার কসম, যার হাতে আমার জীবন। এ সূরা হচ্ছে সমগ্র কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান।

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বললেনঃ আমার ভাই- কাতাদা ইবনু নুমান আমাকে বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় এক ব্যাক্তি শেষ রাতে সালাতে শুধুমাত্র “কুল হুআল্লাহু আহাদ” ছাড়া আর কোনো সূরাই তিলাওয়াত করেন নি। পরদিন সকালে কোন এক ব্যাক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাছে আসলেন। বাকী অংশ পূর্বের হাদীসের অনুরূপ।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৪৬ | 4646 | ٤٦٤٦

পরিচ্ছদঃ কুল্‌হু আল্লাহু আহাদ (সূরা ইখলাস) এর ফযীলত
৪৬৪৬। উমর ইবনু হাফ্‌স (রহঃ) … আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদেরকে বলেছেন, তোমাদের কেউ কি এক রাতে কুরআনের এ-তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করতে অসাধ্য মনে কর? এ প্রশ্ন তাদের জন্য কঠিন ছিল। এরপর তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে কার সাধ্য আছে যে, এমনটি পারবে? তখন তিনি বললেন, “কুল হুআল্লাহু আহাদ” অর্থাৎ সূরা ইখ্‌লাস কুরআন শরীফের এক-তৃতীয়াংশ।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৪৭ | 4647 | ٤٦٤۷

পরিচ্ছদঃ মু’আবিযাত (সূরা ফালাক ও সূরা নাস) এর ফযীলত
৪৬৪৭। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যখনই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হতেন তখনই তিনি ‘সূরায়ে মু’আবিযাত’ পাঠ করে নিজের উপর ফুঁক দিতেন। যখন তাঁর রোগ কঠিন আকার ধারন করল, তখন বরকত লাভের জন্য আমি এই সকল সূরা পাঠ করে হাত দিয়ে শরীর মাসেহ্‌ করিয়ে দিতাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৪৮ | 4648 | ٤٦٤۸

পরিচ্ছদঃ মু’আবিযাত (সূরা ফালাক ও সূরা নাস) এর ফযীলত
৪৬৪৮। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, প্রতি রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শয্যা গ্রহনকালে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করে দু’হাত একত্রিত করে হাতে ফুঁক দিয়ে সমস্ত শরীরে হাত বুলাতেন। মাথা ও মুখ থেকে শুরু করে তাঁর দেহের সম্মুখভাগের উপর হাত বুলাতেন এবং তিনবার করে এরূপ করতেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৪৯ | 4649 | ٤٦٤۹

পরিচ্ছদঃ ২৪০৫. যারা বলে, দুই মলাটের মধ্যে (কুরআন) যা কিছু আছে তাছাড়া নবী (সা) কিছু রেখে যাননি
২৪০৪. অনুচ্ছেদঃ কুরআন তিলাওয়াতের সময় প্রশান্তি নেমে আসে ও ফেরেশতা নাযিল হয়। লায়স (রহঃ) উসাইদ ইব্‌ন হুদায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদা রাতে তিনি সূরা বাকারা পাঠ করছিলেন। তখন তাঁর ঘোড়াটি তারই পাশে বাঁধা ছিল। হঠাৎ ঘোড়াটি ভীত হয়ে লাফ দিয়ে উঠল এবং ছুটাছুটি শুরু করল। যখন পাঠ বন্ধ করলেন তখনই ঘোড়াটি শান্ত হল। ঘোড়াটি পূর্বের মতো আচরণ করল। যখন পাঠ বন্ধ করলেন ঘোড়াটি শান্ত হলো। পুনরায় পাঠ আরম্ভ করলে ঘোড়াটি পূর্বের মতো করতে লাগল। এ সময় তার পুত্র ইয়াহইয়া ঘোড়াটির নিকটে ছিল। তার ভয় হচ্ছিল যে, ঘোড়াটি তার পুত্রকে পদদলিত করবে। তখন তিনি পুত্রকে টেনে আনলেন এবং আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু দেখতে পেলেন। পরদিন সকালে তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উক্ত ঘটনা ব্যক্ত করলেন। ঘটনা শুনে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে ইব্‌ন হুদায়র! তুমি যদি পাঠ করতে, হে ইব্‌ন হুদায়র! তুমি যদি পাঠ করতে। ইব্‌ন হুদায়র আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আমার ছেলেটি ঘোড়ার নিকট থাকায় আমি ভয় পেয়ে গেলাম হয়ত বা ঘোড়াটি তাকে পদদলিত করবে, সুতরাং আমি আমার মাথা উপরে উঠাতেই মেঘের মত কিছু দেখলাম, যা আলোকময় ছিল। আমি যখন বাইরে এলাম তখন আর কিছু দেখ্‌খলাম না। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি জান, ওটা কি ছিল? তিনি বললেন, না। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা ছিল ফেরেশতামন্ডলী। তোমার তিলাওয়াত শুনে তোমার কাছে এসেছিল। তুমি যদি ভোর পর্যন্ত তিলাওয়াত করতে থাকতে তারাও ততক্ষন পর্যন্ত এখানে অবস্থান করত এবং লোকেরা তাদেরকে দেখতে পেত। এরপর হাদীসের অন্য একটি সনদ বর্ণিত হয়েছে।

৪৬৪৯। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … আবদুল আযীয ইবনু রুফাঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এবং শাদ্দাদ ইবনু মা’কিল ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হলাম। শাদ্দাদ ইবনু মা’কিল তাকে জিজ্ঞেস করলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন ব্যতীত অন্য কিছু রেখে যাননি? ইবনু আব্বাস (রাঃ) উত্তর দিলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই মলাটের মাঝে যা কিছু আছে অর্থাৎ কুরআন ব্যতীত অন্য কিছু রেখে যাননি। আবদুল আযীয বললেন, আমরা মুহাম্মদ ইবনুল হানাফিয়ার নিকট গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনিই বললেন যে, দুই মলাটের মাঝে ছাড়া আর কিছু রেখে যাননি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৫০ | 4650 | ٤٦۵۰

পরিচ্ছদঃ ২৪০৬. সব কালামের উপর কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব
৪৬৫০। হুদ্‌বাত ইবনু খালিদ (রহঃ) … আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) সূত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যাক্তি কুরআন তিলওয়াত করে, তার উদাহরণ হচ্ছে ঐ লেবুর ন্যায় যা সুস্বাদু এবং সুগন্ধযুক্ত। আর যে ব্যাক্তি (মু’মিন) কুরআন পাঠ করে না, তার উদাহরণ হচ্ছে এমন খেজুরের মত, যা সুগন্ধহীন, কিন্তু খেতে সুস্বাদু। আর ফাসিক-ফাজির ব্যাক্তি যে কুরআন পাঠ করে, তার উদাহরণ হচ্ছে রায়হান জাতীয় গুল্মের মত, যার সুগন্ধ আছে, কিন্তু খেতে বিস্বাদযুক্ত (তিক্ত)। আর ঐ ফাসিক যে কুরআন একেবারে পাঠ করে না, তার উদাহরণ হচ্ছে ঐ মাকাল ফলের মত, যা খেতেও বিস্বাদ (তিক্ত) এবং যার কোনো সুঘ্রানও নেই।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৫১ | 4651 | ٤٦۵۱

পরিচ্ছদঃ ২৪০৬. সব কালামের উপর কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব
৪৬৫১। মুসাদ্দাস (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) সূত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, অতীতের জাতিসমূহের সঙ্গে তোমাদের জীবনকালের তুলনা হচ্ছে আসর ও মাগরিব সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যবর্তী সময়কালের মত। তোমাদের এবং ইহুদী-নাসারাদের উদাহরণ হচ্ছে ঐ ব্যাক্তির ন্যায়, যে শ্রমিকদের কাজে নিযুক্ত করে তাদেরকে বলল, “তোমাদের মধ্যে কে এক কীরাতের বিনিময়ে দ্বি-প্রহর পর্যন্ত কাজ করবে”? ইহুদীরা কাজ করল। তারপর সেই ব্যাক্তি আবার বলল, তোমাদের মধ্যে কে এক কীরাতের বিনিময়ে দুপুর থেকে আসর পর্যন্ত কাজ করবে? নাসারার কাজ করল। এরপর তোমরা (মুসলামানরা) আসরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত প্রত্যেক দু’কীরাতের বিনিময়ে কাজ করেছ। তারা বলল, আমরা কম মজুরি নিয়েছি এবং বেশী কাজ করেছি। তিনি (আল্লাহ) বলবেন, আমি কি তোমাদের অধিকারের ব্যাপারে জুলুম করেছি? তারা উত্তরে বলবে, না। এরপর আল্লাহ বলবেন, এটা আমার দয়া, আমি যাকে ইচ্ছা দিয়ে থাকি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৫২ | 4652 | ٤٦۵۲

পরিচ্ছদঃ ২৪০৭. কিতাবুল্লাহর ওসীরত
৪৬৫২। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ‌ ইবনু আবূ আউফ (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কোন ওসীয়ত করে গেছেন? তিনি বললেন, না। তখন আমি বললাম, যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে কোন ওসীয়ত করে যাননি, তখন কি করে মানুষের জন্য ওসীয়ত করাকে (কুরআন মজীদে) বাধ্যতামূলক করা হল এবং তাদেরকে এজন্য নির্দেশ দেয়া হল। জবাবে তিনি বললেন, তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর কিতাব (গ্রহণ) এর ওসীয়ত করে গেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৫৩ | 4653 | ٤٦۵۳

পরিচ্ছদঃ ২৪০৮. যার জন্য কুরআন যথেষ্ট নয়। আল্লাহ্‌র বাণীঃ তাদের জন্য কি যথেষ্ট নয় যে, আমি আপনার নিকট কিতাব নাযিল করেছি, যা তাদের নিকট পাঠ করা হয়
৪৬৫৩। ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ কোন নাবী কে ঐ অনুমতি দেননি, যা আমাকে দিয়েছেন, আর তা হয়েছে কুরআন তিলাওয়াত যথেষ্ট। বারী বলেন, এর অর্থ সুষ্পষ্ট করে আওয়াজের সাথে কুরআন পাঠ করা।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৫৪ | 4654 | ٤٦۵٤

পরিচ্ছদঃ ২৪০৮. যার জন্য কুরআন যথেষ্ট নয়। আল্লাহ্‌র বাণীঃ তাদের জন্য কি যথেষ্ট নয় যে, আমি আপনার নিকট কিতাব নাযিল করেছি, যা তাদের নিকট পাঠ করা হয়
৪৬৫৪। আলী ইবন আবদুল্লাহ‌ … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা’আলা অন্য কোন নাবী কে অনুমতি দেননি, যা আমাকে দিয়েছেন যে, কুরআন তিলাওয়াত করাই যথেষ্ট। সুফিয়ান (রহঃ) বলেন, কুরআনই তার জন্য যথেষ্ট।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৫৫ | 4655 | ٤٦۵۵

পরিচ্ছদঃ ২৪০৯. কুরআন তিলাওয়াতকারী হবার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করা
৪৬৫৫। আবূল ইয়ামান (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, দু’টি বিষয় ছাড়া অন্য কোন ব্যাপারে ঈর্ষা করা যায় না। প্রথমত, যাকে আল্লাহ তা’আলা কিতাবের জ্ঞাণ দান করেছেন এবং তিনি তার থেকে গভীর রাতে তিলাওয়াত করে। দ্বিতীয়ত, যাকে আল্লাহ তা’আলা সম্পদ দান করেছেন এবং তিনি সেই সম্পদ দিন-রাত দান-খয়রাত করতে থাকেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৫৬ | 4656 | ٤٦۵٦

পরিচ্ছদঃ ২৪০৯. কুরআন তিলাওয়াতকারী হবার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করা
৪৬৫৬। আলী ইবন ইব্‌রাহীম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দু’ব্যাক্তি ব্যতীত অন্য কারও সাথে ঈর্ষা করা যায় না। এক ব্যাক্তি, যাকে আল্লাহ তা’আলা কুরাআন শিক্ষা দিয়েছেন এবং সে তা দিন-রাত তিলাওয়াত করে। আর তা শুনে তার প্রতিবেশীরা তাকে বালে, হায়! আমাদেরকে যদি এরূপ জ্ঞান দেয়া হত, যেরূপ জ্ঞাণ অমুককে দেয়া হয়েছে, তাহলে আমিও তার মত আমল করতাম। অন্য আর এক ব্যাক্তি, যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন এবং সে সম্পদ সত্য ও ন্যায়ের পথে ব্যয় করে। এ অবস্থা দেখে অন্য এক ব্যাক্তি বলেঃ হায়! আমাকে যদি অমুক ব্যাক্তির মত সম্পদশালী করা হত, তাহলে সে যেরূপ ব্যয় করছে, আমিও সেরূপ ব্যয় করতাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৫৭ | 4657 | ٤٦۵۷

পরিচ্ছদঃ ২৪১০. তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি উত্তম, যে নিজে কুরআন শিক্ষা গ্রহণ করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়
৪৬৫৭। হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) … উসমান (রাঃ) সূত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যাক্তি সর্বোত্তম যে কুরআন শিখে এবং অন্যকে শিখায়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৫৮ | 4658 | ٤٦۵۸

পরিচ্ছদঃ ২৪১০. তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি উত্তম, যে নিজে কুরআন শিক্ষা গ্রহণ করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়
৪৬৫৮। আবূ নু’আয়ম (রহঃ) … উসমান ইবনু আফ্‌ফান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম তারা, যারা নিজেরা কুরআন শিখে এবং অন্যকেও শিক্ষা দেয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৫৯ | 4659 | ٤٦۵۹

পরিচ্ছদঃ ২৪১০. তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি উত্তম, যে নিজে কুরআন শিক্ষা গ্রহণ করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়
৪৬৫৯। আমর ইবনু আউন (রহঃ) … সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা একজন মহিলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে হাযির হয়ে বলল, সে নিজকে আল্লাহর রাসূলের জন্য উৎসর্গ করার ইচ্ছা করেছে। এ কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার কোন মহিলার প্রয়োজন নেই। এক ব্যাক্তি তাঁকে বলল, একে আমার সঙ্গে শাদী করিয়ে দিন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তাকে একখানা কাপড় দাও। ঐ ব্যাক্তি তার অক্ষমতার কথা প্রকাশ করল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তাকে একখানা লোহার আংটি হলেও দাও। এবারেও লোকটি আগের মত অক্ষমতা প্রকাশ করল। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রশ্ন করলেন, তোমার কি কুরআনের কিছু অংশ মুখস্থ আছে? লোকটি উত্তর করলঃ হ্যাঁ। আমার অমুক অমুক সূরা মুখস্থ আছে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে পরিমাণ কুরআন তোমার মুখস্থ আছে, তার বিনিময়ে তোমার নিকট এ মহিলাটিকে শাদী দিলাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৬০ | 4660 | ٤٦٦۰

পরিচ্ছদঃ ২৪১১. মুখস্থ কুরআন পাঠ করা
৪৬৬০। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদা জনৈকা মহিলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আমার জীবনকে আপনার জন্য দান করতে এসেছি। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে তাকিয়ে তার আপাদমস্তক অবলোকন করে মাথা নিচু করলেন। মহিলাটি যখন দেখল যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন ফয়সালা দিচ্ছেন না তখন সে বসে পড়ল। এমতাবস্থায়, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের একজন বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আপনার কোন প্রয়োজন না থাকে, তবে এ মহিলাটির সাথে আমার শাদী দিয়ে দিন। তিনি বললেন, তোমার কাছে কি কিছু আছে? সে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ্‌! আল্লাহর কসম কিছুই নেই। তিনি বললেন, তুমি তোমার পরিবার-পরিজনদের কাছে ফিরে যাও এবং দেখ কিছু পাও কি-না!

এরপর লোকটি চলে গেল এবং ফিরে এসে বলল, আল্লাহর কসম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কিছুই পেলাম না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দেখ একটি লোহার আংটি হলেও! তারপর সে চলে গেল এবং ফিরে এসে বলল, আল্লাহর কসম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! একটি লোহার আংটিও পেলাম না’ কিন্তু এই যে আমার তহবন্দ আছে। সাহাল (রাঃ) বলেন, তার কোন চাঁদর ছিল না। অথচ লোকটি বলল, আমার তহবন্দের অর্ধেক দিতে পারি। এ কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ তহবন্দ দিয়ে কি হবে? যদি তুমি পরিধান কর, তাহলে মহিলাটির কোন আবরণ থাকবে না। আর যদি সে পরিধান করে, তোমার কোন আবরণ থাকবে না।

লোকটি বসে পড়লো, অনেকক্ষন সে বসে থাকল। এরপর উঠে দাঁড়াল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ফিরে যেতে দেখে তাকে ডেকে আনালেন। যখন সে ফিরে আসল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার কুরআনের কতটুকু মুখস্থ আছে? সে উত্তরে বলল, অমুক অমুক সূরা মুখস্থ আছে। সে এমনিভাবে একে একে উল্লেখ করতে থাকল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি এ সকল সূরা মুখস্থ তিরাওয়াত করতে পার? সে উত্তর করল, হ্যাঁ! তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যাও তুমি যে পরিমান কুরআন মুখস্থ রেখেছ, উহার বিনিময়ে এ মহিলাটিকে তোমার সঙ্গে শাদী দিলাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৬১ | 4661 | ٤٦٦۱

পরিচ্ছদঃ ২৪১২. কুরআন শরীফ বারবার তিলাওয়াত করা ও স্মরণ রাখা
৪৬৬১। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি অন্তরে কুরআন গেঁথে (মুখস্থ) রাখে তার উদাহরন হচ্ছে ঐ মালিকের ন্যায়, যে উট বেঁধে রাখে। যদি সে উট বেঁধে রাখে, তবে সে উট তার নিয়ন্ত্রণে থাকে, কিন্তু যদি সে বন্ধন খুলে দেয়, তবে তা আয়ত্তের বাইরে চলে যায়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৬২ | 4662 | ٤٦٦۲

পরিচ্ছদঃ ২৪১২. কুরআন শরীফ বারবার তিলাওয়াত করা ও স্মরণ রাখা
৪৬৬২। মুহাম্মদ ইবনু আর’আরা (রহঃ) … আবদুল্লাহ‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এটা খুবই খারাপ কথা যে, তোমাদের মধ্যে কেউ বলবে, আমি কুরআনের অমুক অমুক আয়াত ভুলে গেছি; বরং তাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। সুতরাং, তোমরা কুরআন তিলাওয়াত করতে থাক কেননা, তা মানুষের অন্তর থেকে উটের চেয়েও দ্রুতবেগে চলে যায়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৬৩ | 4663 | ٤٦٦۳

পরিচ্ছদঃ ২৪১২. কুরআন শরীফ বারবার তিলাওয়াত করা ও স্মরণ রাখা
৪৬৬৩। মুহাম্মদ ইবনু আলা (রহঃ) … আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কুরআনের প্রতি লক্ষ্য রাখবে। আল্লাহর কসম! যার কবজায় আমার জীবন! কুরআন বন্ধনমুক্ত উটের চেয়ে দ্রুত বেগে দৌড়ে যায়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৬৪ | 4664 | ٤٦٦٤

পরিচ্ছদঃ ২৪১৩. জন্তুর পিঠে বসে কুরআন পাঠ করা
৪৬৬৪। হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) … আবদুল্লাহ‌ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে (উটের পিঠে) সওয়ার অবস্থায় ‘সূরা আল ফাত্হ’ তিলাওয়াত করতে দেখেছি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৬৫ | 4665 | ٤٦٦۵

পরিচ্ছদঃ ২৪১৪. শিশুদের কুরআন শিক্ষাদান
৪৬৬৫। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) … সাঈদ ইবনু যুবায়র (রহঃ) যে সকল সূরাকে তোমরা মুফাস্‌সাল বলো তা হচ্ছে মুহ্‌কাম। রাবী বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, যখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন, তখন আমার বয়স দশ বছর এবং আমি ঐ বয়সেই মুহ্‌কাম আয়াত সমূহ শিখে নিয়েছিলাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৬৬ | 4666 | ٤٦٦٦

পরিচ্ছদঃ ২৪১৪. শিশুদের কুরআন শিক্ষাদান
৪৬৬৬। ইয়াকূব ইবনু ইব্‌রাহীম (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মুহকাম সূরা সমূহ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় মুখস্থ করেছিলাম। রাবী সাঈদ (রহঃ) বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘মুহকাম’ অর্থ কি? তিনি বললেন, মুফাস্‌সাল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৬৭ | 4667 | ٤٦٦۷

পরিচ্ছদঃ ২৪১৫. কুরআন মুখস্থ করে ভুলে যাওয়া এবং কেউ কি বলতে পারে, আমি অমুক অমুক আয়াত ভুলে গেছি? এবং আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ নিশ্চয়ই আমি তোমাকে পাঠ করাবো, ফলে তুমি বিস্মৃত হবে না, অবশ্য আল্লাহ্‌ যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত……।
৪৬৬৭। রবী ইবনু ইয়াহ্‌ইয়া (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক ব্যাক্তিকে মসজিদে নববীতে কুরআন পাঠ করতে শুনলেন। তিনি বললেন, তার প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক, সে আমাকে অমুক সূরার অমুক আয়াত স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৬৮ | 4668 | ٤٦٦۸

পরিচ্ছদঃ ২৪১৫. কুরআন মুখস্থ করে ভুলে যাওয়া এবং কেউ কি বলতে পারে, আমি অমুক অমুক আয়াত ভুলে গেছি? এবং আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ নিশ্চয়ই আমি তোমাকে পাঠ করাবো, ফলে তুমি বিস্মৃত হবে না, অবশ্য আল্লাহ্‌ যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত……।
৪৬৬৮। মুহাম্মদ ইবনু উবায়দ ইবনু মায়মূন (রহঃ) … হিশাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত পূর্বের হাদীসের অতিরিক্ত রয়েছে, “যা ভুলে গেছি অমুক অমুক সূরা থেকে”। আলী এবং আবদা হিশাম থেকে তার সমর্থন ব্যক্ত করেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৬৯ | 4669 | ٤٦٦۹

পরিচ্ছদঃ ২৪১৫. কুরআন মুখস্থ করে ভুলে যাওয়া এবং কেউ কি বলতে পারে, আমি অমুক অমুক আয়াত ভুলে গেছি? এবং আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ নিশ্চয়ই আমি তোমাকে পাঠ করাবো, ফলে তুমি বিস্মৃত হবে না, অবশ্য আল্লাহ্‌ যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত……।
৪৬৬৯। আহ্‌মাদ ইবনু আবূ রজা (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে রাতে কুরআন পাঠ করতে শুনে বললেন, আল্লাহ তাকে রহমত করুন। কেননা, সে আমাকে অমুক অমুক সূরার অমুক অমুক আয়াত স্মরন করিয়ে দিয়েছে, যা আমি ভুলতে বসেছিলাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৭০ | 4670 | ٤٦۷۰

পরিচ্ছদঃ ২৪১৫. কুরআন মুখস্থ করে ভুলে যাওয়া এবং কেউ কি বলতে পারে, আমি অমুক অমুক আয়াত ভুলে গেছি? এবং আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ নিশ্চয়ই আমি তোমাকে পাঠ করাবো, ফলে তুমি বিস্মৃত হবে না, অবশ্য আল্লাহ্‌ যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত……।
৪৬৭০। আবূ নু’আয়ম (রহঃ) … আবদুল্লাহ‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন লোক এ কথা কেন বলে যে, আমি অমুক অমুক আয়াত ভুলে গেছি; বরং (আল্লাহর পক্ষ থেকে) তাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৭১ | 4671 | ٤٦۷۱

পরিচ্ছদঃ ২৪১৬. যারা সূরা বাকারা বা অমুক অমুক সূরা বলাতে দোষ মনে করেন না
৪৬৭১। উমর ইবনু হাফ্‌স (রহঃ) … আবূ মাসউদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি কোন ব্যাক্তি সূরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত পাঠ করে, তবে এটাই তার জন্য যথেষ্ট।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৭২ | 4672 | ٤٦۷۲

পরিচ্ছদঃ ২৪১৬. যারা সূরা বাকারা বা অমুক অমুক সূরা বলাতে দোষ মনে করেন না
৪৬৭২। আবূল ইয়ামান (রহঃ) … উমর ইব্‌ন খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হিশাম ইব্‌ন হাকীম ইব্‌ন হিযামকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় ‘সূরা ফুরকান’ তিলাওয়াত করতে শুনলাম। আমি লক্ষ্য করলাম যে, সে বিভিন্ন কিরাআতে তা পাঠ করছে, যা আল্লাহর রাসূল আমাকে শিখাননি। যার ফলে তাকে সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যেই ধরতে উদ্যাত হলাম। অবশ্য আমি তার সালাত (নামায/নামাজ) শেষে সালাম ফিরানো পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। সালাত (নামায/নামাজ) শেষ হতেই তার গলায় রুমাল পেঁচিয়ে ধরলাম এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, এই মাত্র তোমাকে যা পাঠ করতে শুনলাম, তা তোমাকে কে শিখিয়েছে? সে উত্তর করল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এরূপ শিখিয়েছেন। আমি বললাম, তুমি মিথ্যা বলছো। আল্লাহর কসম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ভিন্ন পদ্ধতিতে তিলাওয়াত করা শিখিয়েছেন, যা তোমাকে তিলাওয়াত করতে শুনেছি।

এরপর আমি তাকে টেনে নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উপস্থিত হলাম এবং বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি এই ব্যাক্তিকে ভিন্ন এক পদ্ধতিতে “সূরা ফুরকান” পাঠ করতে শুনেছি, যে পদ্ধতি আপনি আমাকে তিলাওয়াত করতে শিখাননি। অথচ আপনি আমাকে সূরা ফুরকান তিলাওয়াত শিখিয়েছেন।

এরপর তিনি বললেন, হে হিশাম! পাঠ করো! সুতরাং আমি যে পদ্ধতিতে পাঠ করতে শুনেছি, সে সেই পদ্ধতিতেই পাঠ করল। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এভাবে কুরআন নাযিল হয়েছে।

এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে উমর। তুমি পাঠ করো, সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে যেভাবে শিখিয়েছিলেন, সেভাবে আমি পাঠ করলাম। এরপর তিনি বললেন, কুরআন এভাবেই নাযিল হয়েছে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বললেন, সাত কিরাআত বা পদ্ধতিতে পাঠ করার জন্য কুরআন নাযিল হয়েছে। সুতরাং এর মধ্যে যে পদ্ধতি তোমার জন্য সহজ, সে পদ্ধতিতে পড়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৭৩ | 4673 | ٤٦۷۳

পরিচ্ছদঃ ২৪১৬. যারা সূরা বাকারা বা অমুক অমুক সূরা বলাতে দোষ মনে করেন না
৪৬৭৩। বাশার ইবনু আদম (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক কারীকে রাতে মসজিদে কুরআন শরীফ পাঠ করতে শুনলেন। এরপর তিনি বললেন, আল্লাহ তার প্রতি রহম করুন। সে আমাকে অমুক অমুক আয়াত স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, যা অমুক অমুক সূরা থেকে ভুলতে বসেছিলাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৭৪ | 4674 | ٤٦۷٤

পরিচ্ছদঃ ২৪১৭. সুস্পষ্ট ও ধীরে কুরআন তিলাওয়াত করা। এ সম্পর্কে আল্লাহর বাণীঃ কুরআন তিলাওয়াত কর ধীরে ধীরে সুস্পষ্টভাবে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ আমি কুরআন নাযিল করেছি যাতে তুমি তা মানুষের নিকট পাঠ করতে পার ক্রমে ক্রমে। কবিতা পাঠের মতো দ্রুতগতিতে কুরআন পাঠ করা অপছন্দনীয়।
৪৬৭৪। আবূ নু’মান (রহঃ) … আবূ ওয়ায়িল (রহঃ) সূত্রে আবদুল্লাহ‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ ওয়ায়িল (রহঃ) বলেন, আমরা একদিন সকালে আবদুল্লাহ‌ (রাঃ) এর কাছে গেলাম। একজন লোক বলল, গতকাল সকালে আমি মুফাস্‌সাল সূরা পাঠ করেছি। এ কথা শুনে আবদুল্লাহ‌ (রাঃ) বললেন, এত তাড়াতাড়ি পাঠ করা যেন কবিতা পাঠ করার মতো; অথচ আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাঠ শুনেছি এবং তা আমার ভালভাবে স্মরণ আছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যে সমস্ত সূরা পাঠ করতে আমি শুনেছি, তার সংখ্যা মুফাস্‌সাল হতে আঠারটি এবং ‘আলিফ-লাম হামিম’ হতে দু’টি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৭৫ | 4675 | ٤٦۷۵

পরিচ্ছদঃ ২৪১৭. সুস্পষ্ট ও ধীরে কুরআন তিলাওয়াত করা। এ সম্পর্কে আল্লাহর বাণীঃ কুরআন তিলাওয়াত কর ধীরে ধীরে সুস্পষ্টভাবে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ আমি কুরআন নাযিল করেছি যাতে তুমি তা মানুষের নিকট পাঠ করতে পার ক্রমে ক্রমে। কবিতা পাঠের মতো দ্রুতগতিতে কুরআন পাঠ করা অপছন্দনীয়।
৪৬৭৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আল্লাহর বাণীঃ “হে নাবী! আপনার জিহ্বাকে তাড়াতাড়ি মুখস্ত করার জন্য নাড়াবেন না”। আল্লাহর এই কালাম সম্পর্কে তিনি বলেন, যখনই জিবরীল (আলাইহিস সালাম) ওহী নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসতেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব তাড়াতাড়ি জিহবা এবং ঠোঁট নাড়াতেন এবং তার জন্য খুব কষ্টের ব্যাপার হত। আর এ অবস্থা সহজেই অন্য একজন অনুমান করতে পারত। সুতরাং এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তা’আলা এই আয়াত নাযলি করেন। “আমি কিয়ামত দিবসের কসম করছি, হে নাবী! তাড়াতাড়ি ওহী মুখস্থ করার জন্য আপনি আপনার জিহ্বা নাড়াবেন না। এ মুখস্থ করিয়ে দেয়া ও ফাঠ করিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমারই। যখন আমি তা পাঠ করিতে থাকি, তখন আপনি সে পাঠকে মনোযোগ সহকারে শুনতে থাকুন। পরে এর অর্থ বুঝিয়ে দেয়াও আমার দায়িত্ব”। সুতরাং যখন জিবরীল (আলাইহিস সালাম) পাঠ করেন আপনি তার অনুসরণ করুন। এরপর থেকে যখন জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বলে যেতেন তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা নীরবে শুনতেন। যখন তিনি চলে যেতেন, আল্লাহর ওয়াদা অনুযায়ী তিনি তা পাঠ করতেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৭৬ | 4676 | ٤٦۷٦

পরিচ্ছদঃ ২৪১৮. মদ অক্ষরকে দীর্ঘ করে পড়া
৪৬৭৬। মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কিরাআত পাঠ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘায়িত করে পাঠ করতেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৭৭ | 4677 | ٤٦۷۷

পরিচ্ছদঃ ২৪১৮. মদ অক্ষরকে দীর্ঘ করে পড়া
৪৬৭৭। আমর ইবনু আসিম (রহঃ) … কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনাস (রাঃ) কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ‘কিরাআত’ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ‘কিরাআত’ কেমন ছিল? উত্তর তিনি বললেন, কোন কোন ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ করতেন। এরপর তিনি “বিস্‌মিল্লাহির রাহমানির রাহীম” তিলাওয়াত করে শোনালেন এবং তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘বিসমিল্লাহ্’, ‘আর রাহমান’, ‘আর রাহীম’ পড়ার সময় মদ্ করতেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৭৮ | 4678 | ٤٦۷۸

পরিচ্ছদঃ ২৪১৯. আত্‌তারজী
৪৬৭৮। আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) … আবদুল্লাহ‌ ইবনু মুগাফ্‌ফাল (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উষ্ট্রির পিঠে অথবা উটের পিঠে আরোহণ করা অবস্থায় যখন উষ্ট্রটি চলছিল, তখন আমি তিলাওয়াত করতে দেখেছি। তিনি “সূরা ফাত্হ” এবং “সূরা ফাত্হ’র অংশ বিশেষ অত্যন্ত নরম এবং মধুর ছন্দোময় সুরে পাঠ করছিলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৭৯ | 4679 | ٤٦۷۹

পরিচ্ছদঃ ২৪২০. সুললিত কন্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করা
৪৬৭৯। মুহাম্মদ ইবনু খালাফ (রহঃ) … আবূ মুসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আবূ মূসা! তোমাকে দাঊদ (আলাইহিস সালাম) এর সুমধুর কন্ঠ দান করা হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৮০ | 4680 | ٤٦۸۰

পরিচ্ছদঃ ২৪২১. যে ব্যক্তি অন্যের নিকট থেকে কুরআন পাঠ শুনতে ভালবাসে
৪৬৮০। উমর ইবনু হাফ্‌স ইবনু গিয়াস (রহঃ) … আবদুল্লাহ‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, “আমার সামনে কুরআন পাঠ কর”। আবদুল্লাহ বললেন, আমি আপনার সামনে কুরআন পাঠ করব; অথচ আপনার উপর কুরআন নাযিল হয়েছে। তিনি বললেন, আমি অন্যের নিকট থেকে শুনতে ভালবাসি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৮১ | 4681 | ٤٦۸۱

পরিচ্ছদঃ ২৪২২. তিলাওয়াতকারীর তিলাওয়াত শোনার পর শ্রোতার মন্তব্য “তোমার জন্য এটাই যথেষ্ট”
৪৬৮১। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি কুরআন পাঠ কর। আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আপনার সামনে কুরআন পাঠ করব? অথচ তা তো আপনার ওপরই নাযিল হয়েছে। তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর আমি “সূরা নিসা” পাঠ করলাম। যখন আমি এই আয়াত পর্যন্ত আসলাম “চিন্তা করো আমি যখন প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে থেকে একজন করে স্বাক্ষী উপস্থিত করব এবং সকলের ওপরে তোমাকে স্বাক্ষী হিসাবে হাযির করব তখন তারা কি করবে”। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আপাতত এটুকুই যথেষ্ট। আমি তাঁর চেহারা মুবারকের দিকে তাকালাম, দেখলাম, তাঁর চক্ষুদ্বয় থেকে অশ্রু ঝরছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৮২ | 4682 | ٤٦۸۲

পরিচ্ছদঃ ২৪২৩. কতটুকু সময় কুরআর পাঠ করা যায়? এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলার কালামঃ “যতটা কুরআন তুমি সহজে পাঠ করতে পার, ততটাই পড়”
৪৬৮২। আলী (রহঃ) … সুফিয়ান ইবনু উয়ায়না (রহঃ) বলেন, আমাকে ইবনু সুবরুমা (রহঃ) বললেন, আমি দেখতে চাইলাম, সালাতে কি পরিমাণ আয়াত পাঠ করা যথেষ্ট এবং আমি তিন আয়াত বিশিষ্ট সূরার চেয়ে ছোট কোন সূরা পাইনি। সুতরাং আমি বললাম, কারো জন্য তিন আয়াতের কম সালাত (নামায/নামাজ) পড়া উচিত নয়। আবূ মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সাক্ষাত করলাম, তখন তিনি বায়তুল্লাহ্ তাওয়াফ করছিলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি কোন ব্যাক্তি সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত রাতে পাঠ করে, তাহলে তা তার জন্য যথেষ্ট।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৮৩ | 4683 | ٤٦۸۳

পরিচ্ছদঃ ২৪২৩. কতটুকু সময় কুরআর পাঠ করা যায়? এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলার কালামঃ “যতটা কুরআন তুমি সহজে পাঠ করতে পার, ততটাই পড়”
৪৬৮৩। মূসা … আবদুল্লাহ‌ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা আমাকে সম্ভ্রান্ত বংশীয়া মহিলার সাথে শাদী দেন এবং প্রায়ই তিনি আমার সম্পর্কে আমার স্ত্রীর কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করতেন। আমার স্ত্রী বলত, সে কতইনা ভাল মানুষ যে, সে কখনও আমার বিছানায় আসেনি এবং শাদীর পর থেকে আমার সম্পর্কে খোঁজ খবরও নেয়নি। এ অবস্থা যখন দীর্ঘকাল পর্যন্ত চলতে থাকল তখন আমরা পিতা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমার সম্পর্কে অবগত করালেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পিতাকে বললেন, তাকে আমার সাথে সাক্ষাতের জন্য ব্যবস্থা করুন। এরপর আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সাক্ষাত করলে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি রকম রোযা পালন কর? আমি উত্তর দিলাম, প্রতিদিন রোযা পালন করি। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, এ অবস্থায় পূর্ণ কুরআন শরীফ খতম করতে তোমার কত সময় লাগে? আমি উত্তর দিলাম, প্রত্যেক রাতেই এক খতম করি।

তিনি বললেন, প্রত্যেক মাসে তিনদিন রোযা পালন করবে এবং কুরআন এক মাসে এক খতম দেবে”। আমি বললাম, আমি এর চেয়ে বেশী করার সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন, তাহলে প্রতি সপ্তাহে তিনদিন রোযা পালন করবে। আমি বললাম, আমি এর চেয়ে বেশী করার শক্তি রাখি। তিনি বললেন, দু’দিন পর এক দিন রোযা রাখ। আমি বললাম, আমি এর চেয়ে বেশী সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন, তাহলে সব চেয়ে উত্তম পদ্ধতির রোযা পালন কর। তা হল, দাঊদ (আলাইহিস সালাম) এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এর পদ্ধতি। তিনি এক দিন অন্তর একদিন রোযা পালন করতেন এবং প্রতি সাত দিনে একবার আল্লাহর কিতাব খতম করতেন। আহা! আমি যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দেয়া সুবিধা গ্রহণ করতাম! যেহেতু এখন আমি একজন দুর্বল বৃদ্ধ ব্যাক্তিতে পরিণত হয়েছি।

আবূল্লাহ্ (রাঃ) প্রত্যেক দিন তার পরিবারের একজন সদস্যের সামনে কুরআনের সপ্তমাংশ পাঠ করে শোনাতেন। দিবা ভাগে পাঠ করে দেখতেন, তার স্মরণশক্তি সঠিক আছে কিনা? যা তিনি রাতে পাঠ করবেন তা যেন সহজ হয় এবং যখনই তিনি শারীরিক শক্তি সঞ্চয়ের ইচ্ছা করতেন তখন কয়েক দিন রোযা রাখা বন্ধ রাখতেন এবং পরবর্তীকালে ঐ ক’দিনের হিসাব করে রোযা পালন করতেন। কেননা, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় যে নিয়ম পালন করতেন পরে সে নিয়ম বর্জন করাটা অপছন্দ মনে করতেন। আবূ আবদুল্লাহ বলেন, কেউ তিন দিনে, কেউ পাঁচ দিনে এবং অধিকাংশ লোক সাত দিনে কুরআন খতম করতেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৮৪ | 4684 | ٤٦۸٤

পরিচ্ছদঃ ২৪২৩. কতটুকু সময় কুরআর পাঠ করা যায়? এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলার কালামঃ “যতটা কুরআন তুমি সহজে পাঠ করতে পার, ততটাই পড়”
৪৬৮৪। সা’দ ইবনু হাফস (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, সমগ্র কুরান খতম করতে তোমার কত সময় লাগে?

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৮৫ | 4685 | ٤٦۸۵

পরিচ্ছদঃ ২৪২৩. কতটুকু সময় কুরআর পাঠ করা যায়? এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলার কালামঃ “যতটা কুরআন তুমি সহজে পাঠ করতে পার, ততটাই পড়”
৪৬৮৫। ইসহাক … আবদুল্লাহ‌ ইবনু আম্‌র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, “এক মাসে কুরআন খতম কর”। আমি বললাম, আমি এর চেয়ে বেশী করার শক্তি রাখি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে প্রতি সাত দিনে একবার খতম করো এবং এর চেয়ে কম সময়ের মধ্যে খতম করো না।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৮৬ | 4686 | ٤٦۸٦

পরিচ্ছদঃ ২৪২৪. কুরআন পাঠ করা অবস্থায় ক্রন্দন করা
৪৬৮৬। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি আমার সামনে কুরআন পাঠ করো। আমি উত্তরে বললাম, আমি আপনার সামনে কুরআন পাঠ করবো; অথচ আপনারই ওপর কুরআন নাযিল হয়েছে। তিনি বললেন, আমি অন্যের কাছ থেকে কুরআন পাঠ শোনা পছন্দ করি। আমি যখন সূরা নিসা পাঠ করলাম, এমনকি যখন আমি এ আয়াত পর্যন্ত পৌঁছলামঃ “তারপর চিন্তা করো, আমি প্রত্যেক উম্মাতের মধ্যে একজন করে সাক্ষী হাযির করব এবং এ সকলের ওপরে তোমাকে সাক্ষী হিসাবে হাযির করব’। তখন তারা কি করবে”। তখন তিনি আমাকে বললেন, “থাম”! আমি লক্ষ্য করলাম, তাঁর (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দু’চোখ মুবারক থেকে অশ্রু ঝরছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৮৭ | 4687 | ٤٦۸۷

পরিচ্ছদঃ ২৪২৪. কুরআন পাঠ করা অবস্থায় ক্রন্দন করা
৪৬৮৭। কায়স ইবনু হাফস (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বর্ণনা করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, আমার সামনে কুরআন পাঠ করো। আমি বললাম, আমি আপনার নিকট কুরআন পাঠ করব; অথচ আপনার ওপর কুরআন নাযিল হয়েছেন। তিনি বললেন, আমি অন্যের তিলাওয়াত শুনতে পছন্দ করি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৮৮ | 4688 | ٤٦۸۸

পরিচ্ছদঃ ২৪২৫. যে ব্যক্তি দেখানো বা দুনিয়ার লোভে অথবা গর্বের জন্য কুরআন পাঠ করে
৪৬৮৮। মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) … আলী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, শেষ যামানায় এমন একদল মানুষের আবির্ভাব ঘটবে, যারা হবে অল্পবয়স্ক এবং যাদের বুদ্ধি হবে স্বল্প। ভাল ভাল কথা বলবে; কিন্তু তারা ইসলাম থেকে এমন ভাবে বেরিয়ে যাবে যেমন তীর ধনুক থেকে বেরিয়ে যায়। তাদের ঈমান গলদেশের নীচে পৌঁছবে না। সুতরাং তোমরা তাদের যেখানে পাও, হত্যা কর। এদের হত্যাকারীর জন্য কিয়ামতে পুরস্কার রয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৮৯ | 4689 | ٤٦۸۹

পরিচ্ছদঃ ২৪২৫. যে ব্যক্তি দেখানো বা দুনিয়ার লোভে অথবা গর্বের জন্য কুরআন পাঠ করে
৪৬৮৯। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ ভবিষ্যতে এমন সব লোকের আগমন ঘটবে, যাদের সালাত (নামায/নামাজ)-এর তুলনায় তোমাদের সালাত (নামায/নামাজ) কে, তাদের রোযার তুলনায় তোমাদের রোযাকে এবং তাদের আমলের তুলনায় তোমাদের আমলকে তুচ্ছ মনে করবে। তারা কুরআন পাঠ করবে; কিন্তু তা তাদের কন্ঠনালীর নিচে প্রবেশ করবে না (অর্থাৎ অন্তরে প্রবেশ করবে না এবং তা লোক দেখানো হবে)। এরা দ্বীন (ইসলাম) থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যেমনভাবে নিক্ষিপ্ত তীর ধনুক থেকে বেরিয়ে যায়। আর অন্য শিকারী সেই তীরের অগ্রভাগ পরীক্ষা করে দেখতে পায়, তাতে কোন চিহ্ন নেই। সে তীরের ফলার পাশ্বদেশদ্বয়েও নজর করে অথচ সেখানে কিছু দেখতে পায় না। অবশেষে ঐ ব্যাক্তি কোন পাওয়ার জন্য তীরের নিম্নভাগে সন্দেহ পোষণ করে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৯০ | 4690 | ٤٦۹۰

পরিচ্ছদঃ ২৪২৪. কুরআন পাঠ করা অবস্থায় ক্রন্দন করা
৪৬৯০। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … আবূ মূসা (রাঃ) সূত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ঐ মু’মিন যে কুরআন পাঠ করে এবং সে অনুযায়ী আমল করে, তাঁর ঊদাহরণ ঐ লেবুর মত যা খেতে সুস্বাদু এবং গন্ধে মন মাতানো। আর ঐ মু’মিন যে কুরআন পাঠ করে না; কিন্তু এর অনুসারে আমল করে। তার ঊদাহরণ হচ্ছে ঐ খেজুরের মত যা খেতে সুস্বাদু কিন্তু গন্ধ নেই। আর সকল মুনাফিক যারা কুরআন পাঠ করে; তার উদাহরণ হচ্ছে, ঐ রায়হানের ন্যায়, যার মন মাতানো খুশবু গন্ধ আছে, অথচ খেতে একেবারে বিস্বাদ (তিক্ত)। আর ঐ মুনাফিক কুরআন পাঠ করে না, তার উদাহরণ হচ্ছে ঐ হাঞ্জাল (মাকাল) ফলের ন্যায়, যা খেতেও বিস্বাদ এবং তা দুর্গন্ধযুক্ত।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৯১ | 4691 | ٤٦۹۱

পরিচ্ছদঃ ২৪২৬. যতক্ষন মন চায় কুরআন তিলাওয়াত করা
৪৬৯১। আবূ নু’মান (রহঃ) … জুনদুব ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যতক্ষণ মন চায় তিলওয়াত কর এবং মন যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন ছেড়ে দাও।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৯২ | 4692 | ٤٦۹۲

পরিচ্ছদঃ ২৪২৬. যতক্ষন মন চায় কুরআন তিলাওয়াত করা
৪৬৯২। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, তিনি এক ব্যাক্তিকে আয়াত পাঠ করতে শুনলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যেভাবে পাঠ করতে শুনতেন, তার থেকে ভিন্ন পদ্ধতিতে সে পাঠ করছিল। তখন ঐ ব্যাক্তিকে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিয়ে গেলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা উভয়ই সঠিকভাবে পাঠ করেছ। সুতরাং এভাবে কুরআন পাঠ করতে থাক। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বললেন, তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমূহ ধ্বংস হয়ে গেছে তাদের পরস্পরের বিভেদের কারণে।

 

 বিয়ে-শাদী অধ্যায় (৪৬৯৩-৪৮৭০)

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৯৩ | 4693 | ٤٦۹۳

পরিচ্ছদঃ শাদী করতে উৎসাহ দান। আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ ‘তোমরা শাদী করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে’
৪৬৯৩। সাঈদ ইবনু আবূ মারয়াম (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিন জনের একটি দল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিবিগণের গৃহে আগমন করল। যখন তাঁদেরকে এ সম্পর্কে অবহিত করা হল, তখন তারা এ ইবাদতের পরিমাণ যেন কম মনে করল এবং বলল, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সমকক্ষ হতে পারি না। কারণ, তার আগে ও পরের সকল গুনাহ্ মাফ করে দেয়া হয়েছে। এমন সময় তাদের মধ্য থেকে একজন বলল, আমি সারা জীবন রাতে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে থাকব। অপর একজন বলল, আমি সারা বছর রোযা পালন করব এবং কখনও বিরতি দিব না। অপরজন বলল, আমি নারী বিবর্জিত থাকব-কখনও শাদী করব না।

এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট এলেন এবং বললেন, “তোমরা কি ঐ সকল ব্যাক্তি যারা এরূপ কথাবার্তা বলেছ? আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশী ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে তাঁর প্রতি আমি বেশি আনুগত্যশীল; অথচ আমি রোযা পালন করি, আবার রোযা থেকে বিরতও থাকি। সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করি এবং ঘুমাই ও বিয়ে-শাদী করি। সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগ ভাব পোষণ করবে, তারা আমার দলভুক্ত নয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৯৪ | 4694 | ٤٦۹٤

পরিচ্ছদঃ শাদী করতে উৎসাহ দান। আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ ‘তোমরা শাদী করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে’
৪৬৯৪। আলী (রহঃ) … যুহরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উরওয়া (রহঃ) আমাকে অবহিত করেছেন যে, তিনি আয়িশা (রাঃ) কে আল্লাহর এই বাণী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ তোমরা যদি আশংকা কর যে, ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে শাদী কর নাদীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে- দুই, তিন অথবা চার। কিন্তু তোমাদের মনে যদি ভয় হয় যে, তোমরা সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকে অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকে। এতে পক্ষপাতিত্ব না করার অধিকতর সম্ভাবনা”।

আয়িশা (রাঃ) বলেন, হে ভাগ্নে! একটি ইয়াতীম বালিকা এমন একজন অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে ছিল, যে তার সম্পদ ও রূপের প্রতি আকৃষ্ট ছিল। সে তাকে তার সমকক্ষ মহিলাদের চেয়ে কম মোহর দিয়ে শাদী করার ইচ্ছ করে তখন লোকদেরকে নিষেধ করা হল। ঐসব ইয়াতীমের শাদী করার ব্যাপারে; তবে যদি তারা তোমাদের ব্যাপারে সুবিচার করে ও পূর্ণ মোহর আদায় করে (তাহলে পারবে)। যদি না পারে, তাহলে তোদের ব্যতীত অন্য নারীদের শাদী করার আদেশ করা হল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৯৫ | 4695 | ٤٦۹۵

পরিচ্ছদঃ ২৪২৭. রাসূলুল্লাহ্ (সা) এর বাণী “ তোমাদের মধ্যে যাদের শাদীর সামর্থ্য আছে, সে যেন শাদী করে। কেননা, শাদী তার দৃষ্টিকে অবনমিত রাখতে সাহায্য করবে এবং তার লজ্জাস্থান রক্ষা করবে”। এবং যার দরকার নেই সে শাদী করবে কি না?
৪৬৯৫। উমর ইবনু হাফস (রহঃ) … আলকামা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন আমি আবদুল্লাহ‌ (রাঃ) এর সাথে ছিলাম, উসমান (রাঃ) তাঁর সাথে মিনাতে দেখা করে বলেন, হে আবদুর রহমান! আপনার কাছে আমার কিছু প্রয়োজন আছে। এরপর তারা উভয়েই এক পার্শ্বে গেলেন। তারপর উসমান (রাঃ) বললেন, হে আবদুর রহমান! আমি আপনার সাথে এমন একটি কুমারী মেয়ের শাদী দেব, যে আপনাকে আপনার অতীত দিনকে স্মরণ করিয়ে দিবে? আবদুল্লাহ যখন দেখলেন, তার এ শাদীর প্রয়োজন নেই তখন তিনি আমাকে ‘হে আলকামা’ বলে ডাক দিলেন। আমি তাঁর কাছে গিয়ে বলতে শুনলাম, আপনি যখন আমাকে একথা বলেছেন (তখন আমার স্মরনে এর চেয়ে বড় কথা আসছে আর তা হচ্ছে) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বললেন, হে যুবকের দল! তোমাদের মধ্যে যে শাদীর সামর্থ্য রাখে, সে যেন শাদী করে এবং যে শাদীর সামর্থ্য রাখে না, সে যেন ‘রোযা’ পালন করে। কেননা, রোযা যৌন ক্ষমতাকে অবদমন করবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৯৬ | 4696 | ٤٦۹٦

পরিচ্ছদঃ ২৪২৮. যে শাদী করার সামর্থ্য রাখে না, সে সওম পালন করবে
৪৬৯৬। উমর ইবনু হাফ্‌স ইবনু গিয়াস (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, আমরা যুবক বয়সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম; অথচ আমাদের কোনো কিছু (সম্পদ) ছিল না। এমনি অবস্থায় আমাদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা শাদী করার সামর্থ্য রাখে, তারা যেন শাদী করে। কেননা, শাদী তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং যৌনতাকে সংযমী করে এবং যাদের শাদী করার সামর্থ্য নেই, সে যেন রোযা পালন করে। কেননা, রোযা তার যৌনতাকে দমন করবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৯৭ | 4697 | ٤٦۹۷

পরিচ্ছদঃ ২৪২৯. বহুবিবাহ
৪৬৯৭। ইব্‌রাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) … আতা (রহঃ) বলেন, আমরা ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর সঙ্গে ‘সারিফ’ নামক স্থানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী মায়মূনা (রাঃ) এর জানাযায় উপস্থিত ছিলাম। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, ইনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী। সুতরাং যখন তোমরা তাঁর জানাযা উঠাবে তখন ধাক্কা-ধাক্কি এবং জোরে নাড়া-চাড়া করো না; বরং ধীরে ধীরে নিয়ে চলবে। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নয়জন বিবি ছিলেন। তিনি আট জনের সাথে পালাক্রমে রাত্রি যাপন করতেন। কিন্তু একজনের সাথে রাত্রি যাপনের পালা ছিল না।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৯৮ | 4698 | ٤٦۹۸

পরিচ্ছদঃ ২৪২৯. বহুবিবাহ
৪৬৯৮। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একই রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সকল বিবির নিকট গমন করতেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ন’জন স্ত্রী ছিল। অন্য সনদে “মুসাদ্দাদ” এর স্থলে খলীফা নাম উল্লেখ আছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬৯৯ | 4699 | ٤٦۹۹

পরিচ্ছদঃ ২৪২৯. বহুবিবাহ
৪৬৯৯। আলী ইবনু হাকাম (রহঃ) … সাঈদ ইবনু জুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমাকে বললেন, তুমি শাদী করেছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, শাদী কর। কেননা, এই উম্মতের মধ্যে যিনি শ্রেষ্ঠ ব্যাক্তি, তাঁর অধিক সংখ্যক বিবি ছিল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭০০ | 4700 | ٤۷۰۰

পরিচ্ছদঃ ২৪৩০. যদি কেউ কোন নারীকে শাদী করার উদ্দেশ্যে হিজরত করে অথবা কোন সৎ কাজ করে তবে তার নিয়্যত অনুসারে (ফল) পাবে।
৪৭০০। ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু কাযা’আ (রহঃ) … উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিয়্যতের ওপরেই কাজের ফলাফল নির্ভর করে এবং প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিয়্যত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে। সুতরাং যার হিজরত আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টির জন্য তার হিজরত আল্লাহ্ এবং তাঁর বসূলের জন্যই। আর যার হিজরত পার্থিব স্বার্থের জন্য অথবা কোন মহিলাকে শাদী করার জন্য, সে তাই পাবে, যে উদ্দেশ্যে সে হিজরত করেছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭০১ | 4701 | ٤۷۰۱

পরিচ্ছদঃ ২৪৩১. এমন দরিদ্র ব্যক্তির সাথে শাদী যিনি কুরআন ও ইসলাম সম্পর্কে অবহিত। সাহল ইব্ন সা’দ নবী (সা) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৪৭০১। মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) … ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে জিহাদে অংশ গ্রহণ করি। আমাদের সাথে আমাদের স্ত্রীগণ থাকত না। তাই আমরা বলেছিলাম, ইয়া রাসূলল্লাহ! আমরা কি খাসি হয়ে যাব? তিনি আমাদেরকে তা থেকে বিরত থাকার আদেশ দিলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭০২ | 4702 | ٤۷۰۲

পরিচ্ছদঃ ২৪৩২. যদি কেউ তার (মুসলমান) ভাইকে বলে, আমার স্ত্রীগণের মধ্যে যাকে তুমি চাও, আমি তোমার জন্য তাকে তালাক দেব। এ প্রসঙ্গে আবদুর রহমান ইব্ন আউফ (রা) একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৪৭০২। মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) মদিনায় এলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এবং সা’দ ইবনু রাবী আল আনসারী (রাঃ) এর মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে দেন। এ আনসারীর দু’জন স্ত্রী ছিল। সা’দ (রাঃ) আবদুর রহমান (রাঃ) কে বললেন, আপনি আমার স্ত্রী এবং সম্পদের অর্ধেক নিন। তিনি উত্তর দিলেন, আল্লাহ আপনার স্ত্রী ও সম্পদের বরকত দিন। আপনি আমাকে বাজার দেখিয়ে দিন। এরপর তিনি বাজারে গিয়ে পনির ও মাখনের ব্যবসা করে অর্থ উপার্জন করলেন। কিছুদিন পরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর শরীরে হলুদ রং-এর ছিটা দেখতে পেলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, হে আবদুর রহমান। তোমার কি হয়েছে? তিনি উত্তরে বললেন, আমি জনৈকা আনসারী রমণীকে শাদী করেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তাকে কত মোহর দিয়েছ। তিনি উত্তরে বললেন, একটি খেজুরের আটির সমপরিমাণ স্বর্ণ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ওয়ালীমার (বিবাহ ভোজ) ব্যবস্থা কর, যদি একটি বকরি দিয়েও হয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭০৩ | 4703 | ٤۷۰۳

পরিচ্ছদঃ ২৪৩৩. শাদী না করা এবং খাসি হয়ে যাওয়া অপছন্দনীয়।
৪৭০৩। আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) … সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসমান ইবনু মাজ’উনকে শাদী থেকে বিরত থাকতে নিষেধ করেছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে যদি অনুমতি দিতেন, তাহলে আমরাও খাসি হয়ে যেতাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭০৪ | 4704 | ٤۷۰٤

পরিচ্ছদঃ ২৪৩৩. শাদী না করা এবং খাসি হয়ে যাওয়া অপছন্দনীয়।
৪৭০৪। আবূল ইয়ামন (রহঃ) … সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসমান ইবনু মাজ’উনকে শাদী থেকে বিরত থাকতে নিষেধ করেছেন। তিনি তাকে অনুমতি দিলে, আমরাও খাসি হয়ে যেতাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭০৫ | 4705 | ٤۷۰۵

পরিচ্ছদঃ ২৪৩৩. শাদী না করা এবং খাসি হয়ে যাওয়া অপছন্দনীয়।
৪৭০৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে জিহাদে অংশ নিতাম; কিন্তু আমাদের কোন কিছু ছিল না। সুতরাং আমরা রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বললাম, আমরা কী খাসি হয়ে যাব? তিনি আমাদেরকে খাসি হতে নিষেধ করলেন এবং কোন মহিলার সাথে একখানা কাপড়ের বিনিময়ে হলেও শাদী করার অনুমতি দিলেন এবং আমাদেরকে এই আয়াত পাঠ করে শোনালেনঃ হে মু’মিনগণ! আল্লাহ যে পবিত্র জিনিসগুলো তোমাদের জন্য হালাল করেছেন তোমরা তা হারাম করো না এবং সীমালংঘন করো না। আল্লাহ সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেন না।

আসবাগ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বললাম, ইয়া রাসূলল্লাহ! আমি একজন যুবক। আমার ভয় হয় যে, আমার দ্বারা না জানি কোন গুনাহর কাজ সংঘটিত হয়ে যায়; অথচ আমার শাদী করার মতো পর্যাপ্ত সম্পদ নেই। এই কথা শুনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ রইলেন। আমি আমার প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করলাম। তিনি চুপ রইলেন। আমি আবারও অনুরূপভাবে বললাম। তিনি চুপ থাকলেন। আবারও অনুরূপভাবে বললে তিনি উত্তর করলেন, হে আবূ হুরায়রা! যা কিছু তোমার ভাগ্যে আছে, তা লেখার পর কলমের কালি শুকিয়ে গেছে। তুমি খাসি হও বা না হও, তাতে কিছু আসে যায় না। [১]

[১] খাসি হও বা না হও তোমার ভাগ্যে যা আছে, তা অবশ্যই ঘটবে। সুতরাং খাসি হওয়ার দরকার নেই।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭০৬ | 4706 | ٤۷۰٦

পরিচ্ছদঃ ২৪৩৪. কুমারী মেয়ের শাদী সম্পর্কে। ইবন আবী মুলায়কা (র) বলেন, ইবন আব্বাস (রা) আয়েশা (রা)-কে বললেন, আপনাকে ছাড়া নবী (সা) আর কোন কুমারী মেয়ে শাদী করেননি।
৪৭০৬। ইসমাঈল ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমি বললাম, ইয়া রাসূলল্লাহ! মনে করুন আপনি এমন একটি ময়দানে গিয়ে পৌঁছলেন, যেখানে একটি গাছের কিছু অংশ খাওয়া হয়ে গেছে। আর এমন কটি গাছ পেলেন, যার কিছুই খাওয়া হয়নি। এর মধ্যে কোন গাছের পাতা আপনার উটকে খাওয়াবেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, যে গাছ থেকে কিছুই খাওয়া হয়নি। এ কথার দ্বারা আয়িশা (রাঃ) এর উদ্দেশ্য ছিল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ছাড়া অন্য কোন কুমারীকে শাদী করেননি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭০৭ | 4707 | ٤۷۰۷

পরিচ্ছদঃ ২৪৩৪. কুমারী মেয়ের শাদী সম্পর্কে। ইবন আবী মুলায়কা (র) বলেন, ইবন আব্বাস (রা) আয়েশা (রা)-কে বললেন, আপনাকে ছাড়া নবী (সা) আর কোন কুমারী মেয়ে শাদী করেননি।
৪৭০৭। উবায়দুল্লাহ্ ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দু’বার করে আমাকে স্বপ্নযোগে তোমাকে দেখানো হয়েছে। এক ব্যাক্তি রেশমী কাপড়ে জড়িয়ে তোমাকে নিয়ে যাচ্ছিল, আমাকে দেখে বলল, এই হচ্ছে তোমার স্ত্রী। তখন আমি পর্দা খুলে দেখি, সে তুমিই। তখন আমি বললাম, এ স্বপ্ন যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়, তবে তিনি বাস্তবে পরিণত করবেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭০৮ | 4708 | ٤۷۰۸

পরিচ্ছদঃ ২৪৩৫. তালাকপ্রাপ্তা অথবা বিধবা রমণীকে শাদী করা (প্রসঙ্গে)। উম্মে হাবীবা (রা) বলেন, নবী (সা) আমাকে বললেন, আমাকে তোমাদের কন্যা বা বোনকে আমার সঙ্গে প্রস্তাব দিও না।
৪৭০৮। আবূ নু’মান (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে এক জিহাদ থেকে ফিরছিলাম। আমি আমার দুর্বল উটটি দ্রুত চালাতে চেষ্টা করছিলাম। এমন সময় কে একজন আরোহী আমার পিছন থেকে এসে আমার উটটিকে ছড়ি দ্বারা খোঁচা দিলে উটটি দ্রুত চলতে লাগল। পিছনে ফিরে দেখি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন, জাবির, তোমার এত তাড়াতাড়ি করার কারণ কী? আমি উত্তর দিলাম, আমি নতুন শাদী করেছি। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি কুমারী শাদী করেছ, না বিধবাকে? আমি উত্তর দিলাম বিধবাকে। তিনি বললেন, তুমি কেন কুমারী মেয়েকে শাদী করলে না? যার সাথে ক্রীড়া-কৌতুক করতে আর সেও তোমার সাথে খেল-তামাসা করত। বর্ণনাকারী বলেন, যখন আমরা মদিনায় প্রবেশ করব এমন সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি অপেক্ষা কর এবং রাতে প্রবেশ কর, যেন (তোমার মহিলাটি স্ত্রী) (যার স্বামী এতদিন কাছে ছিল না) নিজের অগোছালো কেশরাশি বিন্যাস করে নিতে পারে এবং ক্ষৌরকার্য করতে পারে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭০৯ | 4709 | ٤۷۰۹

পরিচ্ছদঃ ২৪৩৫. তালাকপ্রাপ্তা অথবা বিধবা রমণীকে শাদী করা (প্রসঙ্গে)। উম্মে হাবীবা (রা) বলেন, নবী (সা) আমাকে বললেন, আমাকে তোমাদের কন্যা বা বোনকে আমার সঙ্গে প্রস্তাব দিও না।
৪৭০৯। আদম (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শাদী করলে, রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেমন মেয়ে শাদী করেছ? আমি বললাম, পূর্ব বিবাহিতা রমণীকে বিয়ে করেছি। তিনি বললেন, কুমারী মেয়ে এবং তাদের কৌতুকের প্রতি তোমার আগ্রহে নেই? (রাবী বলেন) আমি এ ঘটনা আমর ইবনু দীনার (রহঃ) কে অবগত করালে তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন, তুমি কেন কুমারী মেয়েকে শাদী করলে না, যাতে তুমি তার সাথে এবং সে তোমার সাথে ক্রীড়া-কৌতুক করতে পারত?

হাদিস নম্বরঃ ৪৭১০ | 4710 | ٤۷۱۰

পরিচ্ছদঃ ২৪৩৬. বয়স্ক পুরম্নষের সাথে অল্প বয়স্কা মেয়ের শাদী
৪৭১০। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … উরওয়া (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর (রাঃ) এর কাছে আশেয়া (রাঃ)-এর শাদীর পয়গাম দিলেন। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমি আপনার ভাই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি আমার আল্লাহর দ্বীনের এবং কিতাবের ভাই। তবে, সে আমার জন্য হালাল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭১১ | 4711 | ٤۷۱۱

পরিচ্ছদঃ ২৪৩৭. কোন্ প্রকৃতির মেয়ে শাদী করা উচিত এবং কোন্ ধরনের মেয়ে উত্তম এবং নিজের ঔরসের জন্য কোন্ ধরনের মেয়ে পছন্দ করা মুস্তাহাব।
৪৭১১। আবূল ইয়ামান (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, উষ্ট্রারোহী মহিলাদের মধ্যে কুরাইশ বংশীয় মহিলারা সর্বোত্তম। তারা শিশুদের প্রতি স্নেহশীলা এবং স্বামীর মর্যাদা রক্ষার্থে উত্তম হেফাজতকারিণী।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭১২ | 4712 | ٤۷۱۲

পরিচ্ছদঃ ২৪৩৮. দাসী গ্রহণ এবং আপন দাসীকে মুক্ত করে শাদী করা
৪৭১২। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) … আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে আপন ক্রীতদাসীকে উত্তম শিক্ষা দান করে এবং শিষ্টচার শিক্ষা দেয়। এরপর তাকে মুক্ত করে শাদী করে তার জন্য দ্বিগুণ সওয়াব। ঐ আহলে কিতাব, যে তার নাবীর ওপর ঈমান আনে এবং আমার ওপর ঈমান এনেছে, তার জন্য দ্বিগুণ সওয়াব রয়েছে। আর ঐ গোলাম, যে তার প্রভুর হক আদায় করে এবং আল্লাহরও হক আদায় করে তার জন্য দ্বিগুণ সওয়াব।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭১৩ | 4713 | ٤۷۱۳

পরিচ্ছদঃ ২৪৩৮. দাসী গ্রহণ এবং আপন দাসীকে মুক্ত করে শাদী করা
৪৭১৩। সাঈদ ইবনু তালীদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) তিনবার ব্যতীত কোন মিথ্যা কথা বলেন নি। [১] অত্যাচারী বাদশাহর দেশে তাকে যেতে হয়েছিল এবং তার সাথে ‘সারা’ (রাঃ) ছিলেন। এরপর রাবী পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন। (সেই বাদশাহ) হাজেরাকে তাঁর সেবার জন্য তাঁকে দান করেন। তিনি ফিরে এসে বললেন, আল্লাহ কাফের থেকে আমাকে নিরাপত্তা দান করেছেন এবং আমার খেদমতের জন্য আজেরা (হাজেরা) কে দিয়েছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, ‘‘হে আকাশের পানির সন্তানগণ (কুরাইশ)! এ হাজেরাই তোমাদের মা।

[১] প্রকৃতপক্ষে . ইব্রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিথ্যা বলেননি’ বরং প্রয়োজনবশত দ্ব্যর্থবোধক বাক্য ব্যবহার করেছিলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭১৪ | 4714 | ٤۷۱٤

পরিচ্ছদঃ ২৪৩৮. দাসী গ্রহণ এবং আপন দাসীকে মুক্ত করে শাদী করা
৪৭১৪। কুতায়বা (রাঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার এবং মদিনার মাঝখানে তিন দিন অবস্থান করলেন এবং হুয়ায়্যার কন্যা সাফীয়ার সাথে রাতে বাসর যাপনের ব্যবস্থা করলেন। আমি মুসলমানদের ওয়ালীমার দাওয়াত দিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দস্তরখানা বিছাবার নির্দেশ দিলেন এবং সেখানে গোশত ও রুটি ছিল না। খেজুর, পনির, মাখন ও ঘি রাখা হল। এটাই ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওয়ালীমা। উপস্থিত মুসলমানরা পরস্পর বলাবলি করতে লাগল। তিনি (সাফীয়া) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণীদের মধ্যে গণ্য হবেন অথবা ক্রীতদাসীদের মধ্যে গণ্য হবেন। এরপর তাঁরা ধারণা করলেন যে, যদি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফীয়ার জন্য পর্দার ব্যবস্থা করেন, তাহলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী হিসাবে গণ্য করা হবে। আর যদি পর্দা না করা হয়, তাহলে তাঁর ক্রীতদাসী হিসাবে মনে করা হবে। যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখান থেকে অন্যত্র যাওয়ার ব্যবস্থা করলেন, তখন সাফীয়ার জন্য উটের পিছনে জায়গা করলেন এবং তাঁর লোকদের মাঝখানে পর্দার ব্যবস্থা করলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭১৫ | 4715 | ٤۷۱۵

পরিচ্ছদঃ ২৪৩৯. ক্রীতদাসীকে আযাদ করাকে মোহর হিসাবে গণ্য করা
৪৭১৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফীয়াকে আযাদ করলেন এবং এই আযাদীকে তার শাদীর মোহরানা হিসাবে ধার্য করলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭১৬ | 4716 | ٤۷۱٦

পরিচ্ছদঃ ২৪৪০. দরিদ্র ব্যক্তির শাদী করা বৈধ। যেহেতু আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেন, যদি তারা দরিদ্র হয়, আল্লাহ্ তার মেহেরবানীতে সম্পদশালী করে দেবেন।
৪৭১৬। কুতায়বা (রহঃ) … সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একজন মহিলা রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আমার জীবনকে আপনার হাতে সমর্পণ করতে এসেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে তাকালেন এবং সতর্ক দৃষ্টিতে তার আপাদমস্তক লক্ষ্য করলেন। তারপর তিনি মাথা নিচু করলেন। যখন মহিলাটি দেখলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে কোন ফয়সালা দিচ্ছে না, তখন সে বসে পড়ল। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের মধ্যে একজন দাঁড়ালেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আপনার শাদীর কোন প্রয়োজন না থাকে, তবে আমার সাথে একে শাদী দিয়ে দিন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কাছে কি আছে? সে উত্তর করলো- না, আল্লাহর কসম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার কাছে কিছুই নেই। রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তোমার পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে গিয়ে দেখ। কিছু পাও কিনা।

এরপর লোকটি চলে গেল। ফিরে এসে বলল, আল্লাহর কসম! আমি কিছুই পাইনি। এরপর রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবার দেখ, লোহার একটি আংটিও যদি পাও। তারপর লোকটি আবার ফিরে গেল। এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাও পেলাম না, কিন্তু এই যে আমার তহবন্দ (শুধু আছে)।

(রাবী) সাহল (রাঃ) বলেন, তার কাছে কোন চাঁদর ছিল না। লোকটি এর অর্ধেক তাকে দিতে চাইলেন। তখন রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে তোমার তহবন্দ দিয়ে কি করবে? তুমি যদি পরিধান কর, তাহলে তার কোন কাজে আসবে না আর সে যদি পরিধান করে, তবে তোমার কোন কাজে আসবে না। তারপর বেশ কিছুক্ষণ লোকটি নীরবে বসে থাকল। তারপর উঠে দাঁড়াল। সে যেতে উদ্যত হলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে আনলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি পরিমাণ কুরআন শরীফ মুখস্থ আছে? সে বলল, আমার অমুক অমুক সূরা মুখস্থ আছে এবং সে হিসাব করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, এগুলো কি তোমার মুখস্থ আছে? সে বলল, হাঁ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে পরিমাণ কুরআন তোমার মুখস্থ আছে তার বিনিময়ে তোমার কাছে এই মহিলাটিকে (শাদী) দিলাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭১৭ | 4717 | ٤۷۱۷

পরিচ্ছদঃ ২৪৪১. স্বামী এবং স্ত্রীর একই দীনভুক্ত হওয়া। আল্লাহ্‌র বাণী, ‘‘এবং তিনিই পানি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তিনি তার বংশগত ও বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপন করেছেন। তোমার প্রতিপালক সর্বশক্তিমান।’’
৪৭১৭। আবূল ইয়ামন (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুযায়ফা (রাঃ) ইবনু উতবা ইবনু রাবিয়া ইবনু আবদে শামস, যিনি বদরের যুদ্ধে রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে উপস্থিত ছিলেন, তিনি সালিমকে পালক পুত্র হিসাবে গ্রহণ করেন এবং তার সাথে তিনি তাঁর ভাতিজী, ওয়ালীদ ইবনু উতবা ইবনু রাবিয়ার কন্যা হিন্দাকে শাদী দেন। সে ছিল জনৈকা আনসারী মহিলার আযাদকৃত দাস। যেমন নাকি যায়দকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালক-পুত্র হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। জাহিলী যুগের রীতি ছিল যে, কেউ যদি অন্য কোন ব্যাক্তি পালক-পুত্র হিসাবে গ্রহণ করত, তবে লোকেরা তাকে ঐ ব্যাক্তির পুত্র হিসাবে ডাকত এবং মৃত্যুর পর ঐ ব্যাক্তির উত্তরাধিকারী হত। যতক্ষণ না পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা এই আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ ‘তাদেরকে (পালক পুত্রদেরকে) তাদের জন্মদাতা পিতার নামে ডাক তারা তোমাদের মুক্ত করা গোলাম। এরপর থেকে তাদেরকে পিতার নামেই শুধু ডাকা হত। যদি তাদের পিতা সম্পর্কে জানানা যেত, তাহলে তাকে মাওলা বা দ্বীনী ভাই হিসাবে ডাকা হত। তারপর [আবূ হুযায়ফা ইবনু উতবা (রাঃ) এর স্ত্রী] সাহলা বিনতে সুহায়ল ইবনু আমর আল কুরাইশী আল আমিরী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা সালিমকে আমাদের পুত্র হিসাবে মনে করতাম’ অথচ এখন আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা তো আপনই ভাল জানেন। এরপর তিনি পুরো হাদীস বর্ণনা করলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭১৮ | 4718 | ٤۷۱۸

পরিচ্ছদঃ ২৪৪১. স্বামী এবং স্ত্রীর একই দীনভুক্ত হওয়া। আল্লাহ্‌র বাণী, ‘‘এবং তিনিই পানি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তিনি তার বংশগত ও বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপন করেছেন। তোমার প্রতিপালক সর্বশক্তিমান।’’
৪৭১৮। উবায়দা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবা’আ বিন্তে যুবায়র এর নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন। তোমার হাজ্জে (হজ্জ) যাওয়ার ইচ্ছা আছে কি? সে উত্তর দিল, আল্লাহর কসম! আমি খুবই অসুস্থবোধ করছি (তবে হাজ্জে (হজ্জ) যাওয়ার ইচ্ছা আছে।) তার উত্তরে বললেন, তুমি হাজ্জের (হজ্জ) নিয়্যতে বেরিয়ে যাও এবং আল্লাহর কাছে এই শর্ত আরোপ করে বল, হে আল্লাহ! যেখানেই আমি বাধাগ্রস্থ হব, সেখানেই আমি আমার ইহরাম শেষ করে হালাল হয়ে যাব। সে ছিল মিকদাদ ইবনু আসওয়াদের স্ত্রী।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭১৯ | 4719 | ٤۷۱۹

পরিচ্ছদঃ ২৪৪১. স্বামী এবং স্ত্রীর একই দীনভুক্ত হওয়া। আল্লাহ্‌র বাণী, ‘‘এবং তিনিই পানি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তিনি তার বংশগত ও বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপন করেছেন। তোমার প্রতিপালক সর্বশক্তিমান।’’
৪৭১৯। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে শাদী করা যায়- তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দীনদারী। সুতরাং তুমি দীনদারীকেই প্রাধান্য দেবে। অন্যথায় তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭২০ | 4720 | ٤۷۲۰

পরিচ্ছদঃ ২৪৪১. স্বামী এবং স্ত্রীর একই দীনভুক্ত হওয়া। আল্লাহ্‌র বাণী, ‘‘এবং তিনিই পানি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তিনি তার বংশগত ও বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপন করেছেন। তোমার প্রতিপালক সর্বশক্তিমান।’’
৪৭২০। ইব্রাহীম ইবনু হামযা (রহঃ) … সাহল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট দিয়ে গমন করছিল, তখন তিনি বললেন, তোমাদের এর সম্পর্কে কি ধারণা? তারা উত্তর দিলেন, ‘‘যদি কোথাও কোন মহিলার প্রতি এ লোকটি শাদীর প্রস্তাব করে, তার সাথে বিয়ে দেয়া যায়। যদি সে সুপারিশ করে, তাহলে সুপারিশ গ্রহণ করা যায়, যদি কথা বলে, তবে কান লাগিয়ে শোনা উচিত। তারপর সেখান দিয়ে একজন গরীব মুসলমান অতিক্রম করতেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, এ ব্যাক্তি সম্পর্কে তোমাদের কি ধারণা? তারা জবাব দিলেন, যদি এ ব্যাক্তি কোথাও শাদীর প্রস্তাব করে, তো বিবাহ দেয়া ঠিক হবে না। যদি কারও সুপাশি করে, তবে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। যদি কোন কথা বলে, তবে তা শোনার প্রয়োজন নেই। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সমস্ত পৃথিবীতে ঐ ব্যাক্তির চেয়ে এ উত্তম (ধনীদের চেয়ে গরীবরা উত্তম)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭২১ | 4721 | ٤۷۲۱

পরিচ্ছদঃ ২৪৪২. শাদীর ব্যাপারে ধন-সম্পদের সামঞ্জস্য প্রসঙ্গে এবং ধনী মহিলার সাথে গরীব পুরুষের শাদী
৪৭২১। ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) … ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার কাছে উরওয়া (রহঃ) বলেছেন যে, তিনি আয়িশা (রাঃ) এর কাছে ‘তোমরা যদি ভয় কর যে ইয়াতীমদের প্রতি ইনসাফ করতে পাবে না’-এই আয়াতের মর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, হে ভাগ্নে! এই আয়াত ঐসব ইয়াতীম বালিকাদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে, যারা কোন অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে আছে। আর অভিভাবক তার ধন-সম্পদ ও সৌন্দর্যের প্রতি আসক্ত; কিন্তু শাদীর পর মোহর দিতে অনিচ্ছুক। এই রকম অভিভাবককে ঐ ইয়াতীম বালিকাদের শাদী বন্ধনে আবদ্ধ করতে নিষেধ করা হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা ইনসাফের সাথে পূর্ণ মোহর তাদেরকে দিয়ে দেয় এবং এদেরকে ছাড়া অন্যদের শাদী করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আয়িশা (রাঃ) বলেন, পরবর্তীকালে লোকেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে আল্লাহ তা’আলা এই আয়াত নাযিল করেন, “লোকেরা তোমার নিকট স্ত্রীলোকদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে বল, আল্লাহ তাদের সম্পর্কে তোমাদের প্রতি এই নির্দেশ দিচ্ছেন এবং সেই সঙ্গে এই হুকুমগুলো স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, যা অনেক পূর্ব থেকেই তোমাদেরকে শোনানো হয়েছে। সেই হুকুমগুলো যা এই ইয়াতীম মেয়েদের সম্পর্কে। যাদের হক তোমরা সঠিক মত আদায় কর না। যাদেরকে শাদী বন্ধনে আবদ্ধ করার কোন আগ্রহ তোমাদের নেই।”

ইয়াতীম বালিকারা যখন সুন্দরী এবং ধনবতী হয়, তখন অভিভাবকগণ তার বংশমর্যদা রক্ষা এবং শাদী বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করতঃ তারা এদের পূর্ণ মোহর আদায় না করা পর্যন্ত শাদী করতে পারে না। আর তারা যদি এদের ধন-সম্পদ এবং সৌন্দর্যের অভাবের কারণে শাদী বন্ধনে আবদ্ধ করতে আগ্রহী না হত, তাহলে তারা এদের ছাড়া অন্য মহিলাদের শাদী করত। সুতরাং যখন তারা এদের মধ্যে স্বার্থ পেতো না তখন তাদের বাদ দিত। এ কারণে তাদেরকে স্বার্থের বেলায় পূর্ণ মোহর আদায় করা ব্যতীত শাদী করতে নিষেধ করা হয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭২২ | 4722 | ٤۷۲۲

পরিচ্ছদঃ ২৪৪৩. অশুভ স্ত্রীলোকদের থেকে দূরে থাকা। আলস্নাহ্ বলেন, নিশ্চয়ই তোমাদের স্ত্রীগণ এবং সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে তোমাদের শত্রু রয়েছে
৪৭২২। ইসমাঈল (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই তোমাদের স্ত্রী, বাড়িঘর এবং ঘোড়ার ভিতরে অশুভের লক্ষণ আছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭২৩ | 4723 | ٤۷۲۳

পরিচ্ছদঃ ২৪৪৩. অশুভ স্ত্রীলোকদের থেকে দূরে থাকা। আলস্নাহ্ বলেন, নিশ্চয়ই তোমাদের স্ত্রীগণ এবং সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে তোমাদের শত্রু রয়েছে
৪৭২৩। মুহাম্মদ ইবনু মিনহাল (রহঃ) … উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট লোকেরা অশুভ স্ত্রীলোক সম্পর্কে আলোচনা করলে তিনি বলেন, কোন কিছুর মধ্যে যদি অপয়া থাকে, তা হলঃ বাড়ি-ঘর, স্ত্রীলোক এবং ঘোড়া।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭২৪ | 4724 | ٤۷۲٤

পরিচ্ছদঃ ২৪৪৩. অশুভ স্ত্রীলোকদের থেকে দূরে থাকা। আলস্নাহ্ বলেন, নিশ্চয়ই তোমাদের স্ত্রীগণ এবং সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে তোমাদের শত্রু রয়েছে
৪৭২৪। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যদি কোন কিছুর মধ্যে কুলক্ষণ থাকে, তা হচ্ছে, ঘোড়া, স্ত্রীলোক এবং বাসগৃহ।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭২৫ | 4725 | ٤۷۲۵

পরিচ্ছদঃ ২৪৪৩. অশুভ স্ত্রীলোকদের থেকে দূরে থাকা। আলস্নাহ্ বলেন, নিশ্চয়ই তোমাদের স্ত্রীগণ এবং সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে তোমাদের শত্রু রয়েছে
৪৭২৫। আদম (রহঃ) … উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পুরুষের ওপরে মেয়েলোকের অপেক্ষা অন্য কোন বড় ফিতনা আমি রেখে গেলাম না।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭২৬ | 4726 | ٤۷۲٦

পরিচ্ছদঃ ২৪৪৪. ক্রীতদাসের সঙ্গে মুক্ত মহিলার শাদী
৪৭২৬। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রারীরা’ থেকে তিনটি বিষয় জানা গেছে যে, যখন তাকে মুক্ত করা হয় তখন তাকে ইখতিয়ার দেয়া হয় (সে ক্রীতদাস স্বামীর সাথে থাকবে কিনা)? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ক্রীতদাসের আল ওয়ালার* অধিকার মুক্তকারী ব্যাক্তির। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করে চুলার ওপরে ডেকচি দেখতে পেলেন। কিন্তু তাকে রুটি এবং তরকারী দেয়া হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, চুলার ওপরের ডেকচির তরকারী দেখতে পাচ্ছি না যে? উত্তর দেয়া হল, ডেকচিতে রারীরার জন্য দেয়া সা’দকার গোশত রয়েছে। আর আপনি তো সা’দকার গোশত খান না। তখন তিনি বললেন, এটা রারীরার জন্য সাদকা এবং আমাদের জন্য হাদিয়া।

* মুক্ত দাস-দাসীর ব্যাপারে যে অধিকার জন্মে তাকে ‘ওয়ালা’ বলা হয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭২৭ | 4727 | ٤۷۲۷

পরিচ্ছদঃ ২৪৪৫. চারের অধিক শাদী না করা সম্পর্কে। আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ তোমরা শাদী কর দু’জন, তিনজন অথবা চারজন। আলী ইব্ন হুসায়ন (র) বলেন, এর অর্থ হচ্ছে দু’জন অথবা তিনজন অথবা চারজন। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, (ফেরেশতাদের) দু’ অথবা তিন অথবা চারখানা পাখা আছে-এর অর্থ দু’ দু’খানা, তিন তিনখানা এবং চার চারখানা।
৪৭২৭। মুহাম্মদ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। ‘যদি তোমরা ভয় কর ইয়াতীমদের মধ্যে পূর্ণ ইনসাফ কায়েম করতে পারবে না’ এই আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই আয়াত ঐ সমস্ত ইয়াতীম বালিকাদের সম্পর্কে নাযিল করা হয়েছে, যাদের অভিভাবক তাদের সম্পদের লোভে শাদী করে। কিন্তু তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে এবং তাদের সম্পত্তিকে ইনসাফের সাথে রক্ষণাবেক্ষণ করে না। তার জন্য সঠিক পন্থা এই যে, ঐ বালিকাদের ব্যতীত মহিলাদের মধ্য থেকে তার ইচ্ছা অনুযায়ী দুইজন অথবা তিনজন অথবা চারজনকে শাদী করতে পারবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭২৮ | 4728 | ٤۷۲۸

পরিচ্ছদঃ ২৪৪৬. আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেন, তোমাদের জন্য দুধমাতাকে হারাম করা হয়েছে। রক্তের সম্পর্কের কারণে যাদের সাথে শাদী হারাম, দুধের সম্পর্কের কারণেও তাদের সাথে শাদী হারাম
৪৭২৮। ইসমাঈল (রহঃ) … রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে ছিলেন। এমন সময় শুনলেন এক ব্যাক্তি হাফসা (রাঃ) এর ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! লোকটি আপনার ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাচ্ছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বলেন, আমি জানি, সে ব্যাক্তি হাফসার দুধের সম্পর্কে চাচা। আয়িশা (রাঃ) বলেন, যদি অমুক ব্যাক্তি বেঁচে থাকত সে দুধ সম্পর্কের থেকে আমার চাচা হত (তাহলে কি আমি তার সাথে দেখা করতে পারতাম)? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হাঁ, রক্তের সম্পর্কের কারণে, যাদের সাথে যাদের শাদী নিষিদ্ধ, দুধের সম্পর্কের কারণে তাদের সঙ্গে শাদী নিষিদ্ধ।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭২৯ | 4729 | ٤۷۲۹

পরিচ্ছদঃ ২৪৪৬. আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেন, তোমাদের জন্য দুধমাতাকে হারাম করা হয়েছে। রক্তের সম্পর্কের কারণে যাদের সাথে শাদী হারাম, দুধের সম্পর্কের কারণেও তাদের সাথে শাদী হারাম
৪৭২৯। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলল, আপনি কেন হামযা (রাঃ) এর মেয়েকে শাদী করছেন না? তিনি বললেন, সে আমার দুধ সম্পর্কের ভাইয়ের মেয়ে। পরে হাদীসের অন্য একটি সনদ বর্ণিত হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৩০ | 4730 | ٤۷۳۰

পরিচ্ছদঃ ২৪৪৬. আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেন, তোমাদের জন্য দুধমাতাকে হারাম করা হয়েছে। রক্তের সম্পর্কের কারণে যাদের সাথে শাদী হারাম, দুধের সম্পর্কের কারণেও তাদের সাথে শাদী হারাম
৪৭৩০। হাকাম ইবনু নাফি … উম্মে হাবীবা বিনতে আবূ সুফিয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আমার বোন আবূ সুফিয়ানের কন্যাকে শাদী করুন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি এটা পছন্দ কর? তিনি উত্তর করলেন হাঁ। এখন তো আমি আপনার একা স্ত্রী নই এবং আমি চাই যে, আমার বোনও আমার সাথে উত্তম কাজে অংশীদার হোক। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, এটা আমার জন্য হালাল নয়। আমি বললাম, আমরা শুনতে পেলাম, আপনি নাকি আবূ সালমার মেয়েকে শাদী করতে চান। তিনি বললেন, তুমি বলতে চাচ্ছ যে, আমি উম্মে সালমার মেয়েকে শাদী করতে চাই। আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, যদি সে আমার প্রতিপালিতা কন্যা না হত, তাহলেও তাকে শাদী করা হলাল হত না। কেননা, সে দুধ সম্পর্কের দিক দিয়ে আমার ভাতিজী। কেননা, আমাকে এবং আবূ সালমাকে সুওয়াইবা দুধ পান করিয়েছেন। সুতরাং, তোমরা তোমাদের কন্যা ও ভগিনীদেরকে শাদীর জন্য পেশ করো না।

উরওয়া (রাঃ) বর্ণনা করেন, সুওয়াইবা ছিল আবূ লাহাবের দাসী এবং সে তাকে আযাদ করে দিয়েছিল। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দুধ পান করায়। আবূ লাহাব যখন মারা গেল, তার একজন আত্মীয় তাকে স্বপ্নে দেখল যে, সে ভীষণ কষ্টের মধ্যে নিপতিত আছে। তাকে জিজ্ঞেস করল, তোমার সাথে কিরূপ ব্যবহার করা হয়েছে। আবূ লাহাব বলল, যখন তোমাদের থেকে দূরে রয়েছি, তখন থেকেই ভীষণ কষ্টে আছি। কিন্তু সুওয়াইবাকে আযাদ করার কারণে কিছু পানি পান করতে পারছি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৩১ | 4731 | ٤۷۳۱

পরিচ্ছদঃ ২৪৪৭. যারা বলে দু’বছরের পরে দুধপান করালে দুধের সম্পর্ক স্থাপন হবে না। এই প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, ‘‘পিতামাতা যারা সন্তানের দুধ পান করানো পুরা করতে চায়, তাদের সময়সীমা পূর্ণ দু’বছর।’’ কম-বেশি যে পরিমাণ দুধ পান করুক না কেন, তাতে সম্পর্ক হারাম হবে না।
৪৭৩১। আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে এলেন। সে সময় একজন লোক তার কাছে বসা ছিল। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা মুবারকে ক্রোধের ভাব প্রকাশ পেল, যেন তিনি এ ব্যাপারে অসন্তুষ্ট হয়েছেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, এ আমার ভাই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যাচাই করে দেখ, তোমাদের ভাই কারা? যথন দুধই একমাত্র পানীয়, যা খেয়ে শিশুরা প্রাণ রক্ষা করে। [১]

[১] সন্তানের দু’বছর বয়সের মধ্যে যদি দুধপান করে থাকে, তবে দুধের সম্পর্ক হবে, নতুবা হবে না।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৩২ | 4732 | ٤۷۳۲

পরিচ্ছদঃ ২৪৪৮. যে সন্তান যে মহিলার দুধ পান করে, সে সন্তান ঐ মহিলার স্বামীর দুধ-সন্তান হিসাবে গণ্য হবে
৪৭৩২। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পর্দার আয়াত নাযিল হবার পর তাঁর [আয়িশা (রাঃ)] দুধ সম্পর্কীয় চাচা আবূল কু’আয়াসের ভাই ‘আফলাহ্’ তাঁর ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইল। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি অনুমতি দিতে অস্বীকার করলাম। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন। আমি তার সাথে যে ব্যবহার করেছি, সে সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করলাম। তিনি তাকে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়ার জন্য আমাকে বললেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৩৩ | 4733 | ٤۷۳۳

পরিচ্ছদঃ ২৪৪৯. দুধমাতার সাক্ষ্য গ্রহণ
৪৭৩৩। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … উকবা ইবনু হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শাদী করলাম। এরপর একজন কালো মহিলা এসে বলল, আমি তোমাদের দু’জনকে দুধ পান করিয়েছি। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললাম, আমি অমুকের কন্যা অমুককে শাদী করেছি। এরপর জনৈকা কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা এসে আমাদেরকে বলল যে, আমি তোমাদের দু’জনকে দুধ পান করিয়েছি; অথচ সে মিথ্যাবাদিনী। এই কথা শোনার পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। আমি আবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে এসে বললাম, সে মিথ্যাবাদী। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কেমন করে তোমার সাথে শাদী হল; অথচ তোমাদের উভয়কে ঐ মহিলা দুধ পান করিয়েছে- এ কথা বলছে। অতএব, তোমার স্ত্রীকে ছেড়ে দাও। রাবী ইসমাঈল শাহাদাত এবং মধ্যমা আঙ্গুলীদ্বয় উত্তোলন করে ইশারা করেছে যে, তার উর্ধ্বতন রাবী আইউব এইরূপ করে দেখিয়েছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৩৪ | 4734 | ٤۷۳٤

পরিচ্ছদঃ ২৪৫১. আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ ‘‘এবং (তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে) তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যার সাথে সংগত হয়েছ তার পূর্ব স্বামীর ঔরসে তার গর্ভজাত কন্যা, যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে আছে।’’ এ প্রসঙ্গে হযরত ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন যে, ‘দুখুল’ ‘মাসীস’ ও ‘লিমাস’ শব্দত্রয়ের অর্থ হচ্ছে, যৌন মিলন। যে ব্যক্তি বলে যে, স্ত্রীর কন্যা কিংবা তার সমত্মানের কন্যা হারামের ব্যাপারে নিজ কন্যার সমান, সে দলীল হিসাবে নবী (সা)-এর হাদীসখানা পেশ করে। আর তা হচ্ছেঃ নবী (সা) উম্মে হাবীবা (রা)-কে বলেন, তোমরা তোমাদের কন্যাদের ও বোনদের আমার সঙ্গে শাদীর প্রস্তাব করো না। একইভাবে নাতবৌ এবং পুত্রবধু শাদী করা হারাম। যদি কোন সৎ-কন্যা কারো অভিভাবকের আওতাধীন না থাকে তবে তাকে কি সৎ-কন্যা বলা যাবে? নবী (সা) তার একটি সৎ কন্যাকে কারো অভিভাবকত্বে দিয়ে দিলেন। নবী (সা) স্বীয় দৌহিত্রকে পুত্র সম্বোধন করেছেন।
২৪৫০. অনুচ্ছেদঃ কোন্ কোন্ মহিলাকে শাদী করা হালাল এবং কোন্ কোন্ মহিলাকে শাদী করা হারাম। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, ‘‘তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা, কন্যা, বোন, ফুফু, খালা-ভাতিজী-ভাগ্নি এবং ঐ সমস্ত মা, যারা তোমাদের দুধ পান করিয়েছেন এবং তোমাদের দুধবোন, তোমাদের শাশুড়ি এবং তোমাদের স্ত্রীদের কন্যা যারা তোমাদের ঘরে লালিত-পালিত হয়েছেন, আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’’

আনাস (রা) বলেছেন, وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ النِّسَاءِ এই কথা দ্বারা সধবা স্বাধীনা মহিলাদেরকে শাদী করা হারাম বোঝানো হয়েছে; কিন্তু ক্রীতদাসীকে ব্যবহার করা করা হারাম নয়। যদি কোন ব্যক্তি বাঁদীকে তার স্বামী থেকে তালাক নিয়ে পরে ব্যবহার করে, তাহলে দোষ নেই। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণীঃ ‘‘কোন মুশরিক মহিলাকে শাদী বন্ধনে আবদ্ধ করো না, যতক্ষণ না তারা পূর্ণ ঈমান আনে।’’ ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন, চারজনের বেশি শাদী করা ঐরূপ হারাম বা অবৈধ যেরূপ তার গর্ভধারিণী মা, কন্যা, এবং ভগিনীকে শাদী করা হারাম। রাবী বলেন, আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) ….. ইব্ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রক্তের সম্পর্কের সাতজন ও বৈবাহিক সম্পর্কের সাতজন নারীকে শাদী করা হারাম। এরপর তিনি এই আয়াতন পাঠ করলেন, ‘‘তোমাদের জন্যে তোমাদের মায়েদের শাদী করা হারাম করা হয়েছে।’’ আবদুল্লাহ্ ইব্ন জা’ফর (রহঃ) একসাথে হযরত আলী (রা)-এর স্ত্রী ও কন্যাকে শাদী বন্ধনে আবদ্ধ করেন (তারা উভয়েই সৎ-মা ও সৎ-কন্যা ছিল) ইব্ন সিরীন বলেন, এতে দোষের কিছুই নেই। কিন্তু হাসান বসরী (রহঃ) প্রথমত এই মত পছন্দ করেননি; কিন্তু পরে বলেন, এতে দোষের কিছুই নেই। কিন্তু হাসান ইব্ন হাসান ইব্ন আলী একই রাতে দুই চাচাত বোনকে একই সাথে শাদী করেন। জাবির ইবন যায়দ সম্পর্কছেদের আশংকায় এটা মাকরূহ মনে করেছেন; কিন্তু এটা হারাম নয়। যেমন আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, এসব ছাড়া আর যত মেয়ে লোক রয়েছে তা তোমাদের জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছে। ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন, যদি কেউ তার শালীর সাথে অবৈধ যৌন মিলন করে তবে তার স্ত্রী তার জন্য হারাম হয়ে যায় না। শা’বী (রা) এবং আবু জা’ফর (রা) বলেন, যদি কেউ কোন বালকের সঙ্গে সমকামে লিপ্ত হয়, তবে তার মা তার জন্য শাদী করা হারাম হয়ে যাবে। ইকরামা ….. ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কেউ যদি শাশুড়ির সঙ্গে যৌন মিলনে লিপ্ত হয়, তবে তার স্ত্রী হারাম হয় না। আবু নসর ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, হারাম হয়ে যাবে। ইমরান ইবন হুসায়ন (রা) হাবির ইবন যায়দ (রা) আল হাসান (রহঃ) এবং কতিপয় ইরাকবাসী থেকে বর্ণনা করেন যে, তার স্ত্রীর সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম হয়ে যাবে। উপরোক্ত ব্যাপারে আবূ হুরায়রা (রা) বলেছেন যে, স্ত্রীর সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক ততক্ষণ হারাম হয় না, যতক্ষণ না কেউ তার শাশুড়ির সাথে অবৈধ যৌন মিলনে লিপ্ত হয়। ইবন মুসাইয়িব, উরওয়া (রা) এবং যুহরী এমতাবস্থায় স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক রাখা বৈধ বলেছেন। যুহরী বলেন, আলী (রা) বলেছেন, হারাম হয় না। ঐখানে যুহরীর কথা মুরসাল অর্থাৎ এই কথা যুহরী আলী (রাঃ) থেকে শোনেননি।

৪৭৩৪ হুমায়দী (রহঃ) … উম্মে হাবীবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি কি আবূ সুফিয়ানের কন্যার ব্যাপারে আগ্রহী? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, তাকে দিয়ে আমার কি হবে? আমি বললাম, তাকে আপনি শাদী করবেন। তিনি প্রশ্ন করলেন, তুমি কি তা পছন্দ করবে? আমি বললাম, হাঁ। এখন তো আমি একাই আপনার স্ত্রী নই। সুতরাং আমি চাই, আমার বোনও আমার সাথে কল্যাণে অংশীদার হোক। তিনি বললেন, তাকে শাদী করা আমার জন্য হালাল নয়। আমি বললাম, আমরা শুনেছি যে, আপনি আবূ সালামার কন্যা-দুররাকে শাদী করার জন্য পয়গাম পাঠিয়েছেন। তিনি প্রশ্ন করলেন, উম্মে সালামার কন্যা? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেন, সে যদি আমার প্রতিপালিতা সৎ কন্যা যদি নাও হতো তবুও তাকে শাদী করা আমার জন্য হালাল হতো না। কেননা সুয়াইবিয়া আমাকে ও তার পিতাকে দুধ পান করিয়েছিল। সুতরাং শাদীর জন্য তোমাদের কন্যা বা বোন কাউকে পেশ করো না। লাইছ বলেন, হিশাম দুররা বিনত আবী সালামার নাম বলেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৩৫ | 4735 | ٤۷۳۵

পরিচ্ছদঃ ২৪৫২. আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ দুই বোনকে একত্রে শাদী করা (হালাল নয়) তবে অতীতে যা হয়ে গেছে
৪৭৩৫। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … উম্মে হাবীবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আমার বোন আবূ সুফিয়ানের কন্যাকে শাদী করুন। তিনি বলেন, তুমি কি তা পছন্দ কর? আমি বললাম, হ্যাঁ, আমি তো আপনার একমাত্র স্ত্রী নই এবং আমি যাকে সবচেয়ে ভালবাসি, তার সাথে আমার বোনকেও অংশীদার বানাতে চাই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা আমার জন্য হালাল নয়। আমি বললাম, আল্লাহ্‌র কসম! আমরা শুনেছি যে আপনি আবু সালামার কন্যা দুররাকে শাদী করতে চান। তিনি বললেন, তুমি কি উম্মে সালামার কন্যার কথা বলেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, যদি সে আমার সৎ কন্যা নাও হতো তবুও তাকে শাদী করা আমার জন্য হালাল হতো না। কারণ সে হচ্ছে আমার দুধ সম্পর্কীয় ভাইয়ের কন্যা। সুওয়াইবা আমাকে এবং তার পিতা আবূ সালমাকে দুধ পান করিয়েছিলেন। সুতরাং তোমাদের কন্যা বা বোনদের শাদীর পয়গাম আমার কাছে পেশ করো না।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৩৬ | 4736 | ٤۷۳٦

পরিচ্ছদঃ ২৪৫৩. আপন ফুফু যদি কোন পুরুষের স্ত্রী হয়, তবে যেন কোন মহিলা উক্ত পুরুষকে শাদী না করে
৪৭৩৬। আবদান (রহঃ) … জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যাক্তি যেন তার স্ত্রীর ভাইয়ের মেয়ে এবং ভাগ্নীকে শাদী না করে। অপর এক সূত্রে এই হাদীসখানা আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৩৭ | 4737 | ٤۷۳۷

পরিচ্ছদঃ ২৪৫৩. আপন ফুফু যদি কোন পুরুষের স্ত্রী হয়, তবে যেন কোন মহিলা উক্ত পুরুষকে শাদী না করে
৪৭৩৭। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ যেন ফুফু ও তার ভাতিজীকে এবং খালা ও তার বোনঝিকে একত্রে শাদী না করে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৩৮ | 4738 | ٤۷۳۸

পরিচ্ছদঃ ২৪৫৩. আপন ফুফু যদি কোন পুরুষের স্ত্রী হয়, তবে যেন কোন মহিলা উক্ত পুরুষকে শাদী না করে
৪৭৩৮। আবদান (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাউকে একসাথে ফুফু ও ভ্রতুষ্পুত্রী এবং খালা ও তার বোনের মেয়েকে বিবাহ করতে নিষেধ করেছেন। অধস্তন রাবী যুহরী বলেছেন, আমার স্ত্রীর পিতার খালার ব্যাপারেও এ নির্দেশ জানি, কেননা উরওয়া আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, রক্তের সম্পর্কের কারণে যা হারাম, দুধ পানের কারণেও এসব তোমরা হারাম মনে করো।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৩৯ | 4739 | ٤۷۳۹

পরিচ্ছদঃ ২৪৫৪. আশ্-শিগার বা বদল বিবাহ
৪৭৩৯। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশ্-শিগার নিষিদ্ধ করেছেন। ‘আশ্-শিগার’ হলঃ কোন ব্যাক্তি নিজের কন্যাকে অন্য এক ব্যাক্তির পুত্রের সাথে বিবাহ দিবে এবং তার কন্যা নিজের পুত্রের জন্য আনবে এবং এক্ষেত্রে কোন কনেই মোহর পাবে না।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৪০ | 4740 | ٤۷٤۰

পরিচ্ছদঃ ২৪৫৫. কোন মহিলা কোন পুরুষের কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে পারে কিনা ?
৪৭৪০। মুহাম্মাদ ইবনু সালাম (রহঃ) … হিশামের পিতা উরওয়া থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, যে সব মহিলা নিজেদেরকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট সমর্পণ করেছিলেন, খাওলা বিনতে হাকীম তাদেরই একজন ছিলেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, মহিলাদের কি লজ্জা হয় না যে, নিজেদের পুরপুরুষের কাছে সমর্পণ করছে? কিন্তু যখন কুরআন ের এ আয়াত অবর্তীর্ণ হল- “হে মুহাম্মাদ! তোমাকে অধিকার দেয়া হল যে নিজ স্ত্রীগণের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা আলাদা রাখতে পার।” আয়িশা (রাঃ) বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার মনে হয়, আপনার রব আপনার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করার ত্বড়িৎ ব্যবস্থা নিচ্ছেন। উক্ত হাদীসটি আবূ সাঈদ মুয়াদ্দিব, মুহাম্মাদ ইবনু বিশর এবং আবদাহ্ হিশাম থেকে আর হিশাম তার পিতা হতে একে অপরের চেয়ে কিছু বেশী-কমসহ আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৪১ | 4741 | ٤۷٤۱

পরিচ্ছদঃ ২৪৫৬. ইহরামকারীর বিবাহ
৪৭৪১। মালিক ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) … হাবির ইবনু যায়দ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, ইহরাম অবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবাহ করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৪২ | 4742 | ٤۷٤۲

পরিচ্ছদঃ ২৪৫৭. অবশেষে রাসূল (সা) মুতা’আ বিবাহ নিষেধ করেছেন
৪৭৪২। মালিক ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) … হাসান ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আলী ও তাঁর ভাই আবদুল্লাহ তাঁদের পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, আলী (রাঃ) ইবনু আব্বাস বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বর যুদ্ধে মুতা’আ বিবাহ এবং গৃহপালিত গাধার গোশত খাওয়া নিষেধ করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৪৩ | 4743 | ٤۷٤۳

পরিচ্ছদঃ ২৪৫৭. অবশেষে রাসূল (সা) মুতা’আ বিবাহ নিষেধ করেছেন
৪৭৪৩। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … আবূ জামরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আমি মহিলাদের মুতা’আ বিবাহ সম্পর্কে ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে প্রশ্ন করতে শুনেছি, তখন তিনি তার অনুমতি দেন। তাঁর আযাদকৃত গোলাম তাঁকে বললেন, যে এরূপ হুকুম অপরিহার্য প্রয়োজনীয়তা, মহিলাদের স্বল্পতা ইত্যাদির কারণেই ছিল? তখন ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, হাঁ।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৪৪ | 4744 | ٤۷٤٤

পরিচ্ছদঃ ২৪৫৭. অবশেষে রাসূল (সা) মুতা’আ বিবাহ নিষেধ করেছেন
৪৭৪৪। আলী (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ এবং সালামা আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আমরা কোন এক সেনাবাহিনীতে ছিলাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রেরিত এক ব্যাক্তি আমাদের নিকট এসে বললেন, তোমাদেরকে মুতা’আ বিবাহের অনুমতি দেয়া হয়েছে। সুতরাং তোমরা মুতা’আ করতে পার। ইবনু আবূ যিব বলেন, আয়াস ইবনু সালামা ইবনু আকওয়া তার পিতা সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, যে কোন পুরুষ এবং মহিলা উভয়ে (মুতা’আ করতে) একমত হলে তাদের পরস্পরের এই সম্পর্ক তিন রাতের জন্য গণ্য হবে। এরপর তারা ইচ্ছা করলে এর চেয়ে বেশি সময় স্থায়ী করতে পারে অথবা বিচ্ছিন্ন হতে চাইলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। (বর্ণনাকারী বলেন) আমরা জানিনা এ ব্যবস্থা শুধু আমাদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল, না সকলের জন্য উন্মুক্ত ছিল। আবূ আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) বলেন, আলী (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এটা পরিস্কার করে বলে দিয়েছেন, মুতা’আ বিবাহ প্রথা রহিত হয়ে গেছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৪৫ | 4745 | ٤۷٤۵

পরিচ্ছদঃ ২৪৫৮. স্ত্রীলোকের সৎ পুরুষের কাছে নিজকে (বিবাহের জন্য) পেশ করা
৪৭৪৫। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … সাবিত আল বুনানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ) এর কাছে ছিলাম। তখন তাঁর কাছে তাঁর কন্যাও ছিলেন। আনাস (রাঃ) বললেন, একজন মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে সমর্পণ করতে এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার কি আমার প্রয়োজন আছে? এ কথা শুনে আনাস (রাঃ) এর কন্যা বললেন, সে মহিলা তোমার চেয়ে উত্তম, সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহচর্য পেতে আকৃষ্ট হয়েছিল। এ কারণেই সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিজেকে পেশ করেছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৪৬ | 4746 | ٤۷٤٦

পরিচ্ছদঃ ২৪৫৮. স্ত্রীলোকের সৎ পুরুষের কাছে নিজকে (বিবাহের জন্য) পেশ করা
৪৭৪৬। সাঈদ ইবনু আবূ মারয়াম (রহঃ) … সাহল (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একজন মহিলা এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিজেকে পেশ করলেন। এক ব্যাক্তি বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তাকে আমার সঙ্গে শাদী বন্ধনে আবদ্ধ করিয়ে দিন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কাছে কি আছে? সে উত্তর দিল, আমার কাছে কিছুই নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যাও তালাশ কর, কোন কিছু পাও কিনা? যদি একটি লোহার আংটিও পাও (তা নিয়ে এসো)। লোকটি চলে গেলে এবং ফিরে এসে বলল, একটি কিছুই পেলাম না এমনটিক একটি লোহার আংটিও না; কিন্তু আমার তহবন্দখানা আছে। এর অর্ধেকাংশ তার জন্য।

সাহল (রাঃ) বলেন, তার দেহে কোন চাঁদর ছিল না। অতএব নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার তহবন্দ দিয়ে কি করবে? যদি তুমি এটা পরিধান কর, মহিলার শরীরে কিছুই থাকবে না, আর যদি সে এটা পরিধান করে তবে তোমার শরীরে কিছুই থাকবে না। এরপর লোকটি অনেক্ষণ বসে রইল। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চলে যেতে দেখে ডাকলেন বা ডাকানো হল এবং বললেন, তুমি কুরআন কতটুকু জানো? সে বলল, আমার অমুক অমুক সূরা মুখস্থ আছে এবং সে সূরাগুলোর উল্লেখ করল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যে পরিমাণ কুরআন জানো, তার বিনিময়ে তোমাকে তার সাথে শাদী দিলাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৪৭ | 4747 | ٤۷٤۷

পরিচ্ছদঃ ২৪৫৯. নিজের কন্যা অথবা বোনকে শাদীর জন্য কোন নেক্কার পরহেজগার ব্যক্তির সামনে পেশ করা
৪৭৪৭। আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যখন উমর (রাঃ) এর কন্যা হাফসা (রাঃ) খুনায়স ইবনু হুযায়ফা সাহমীর মৃত্যুতে বিধবা হলেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একজন সাহাবী ছিলেন এবং মদিনায় ইন্তেকাল করেন। উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেন, আমি উসমান ইবনু আফফান (রাঃ)-এর কাছে গেলাম এবং হাফসাকে শাদীর জন্য প্রস্তাব দিলাম; তখন তিনি বললেন, আমি এ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করে দেখি। এরপর আমি কয়েক রাত অপেক্ষা করলাম, তারপর আমার সঙ্গে সাক্ষাত করে বললেন, আমার কাছে এটা প্রকাশ পেয়েছে যে, যেন এখন আমি তাকে শাদী না করি। উমর (রাঃ) বলেন, তারপর আমি আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাত করলাম এবং বললাম, যদি আপনি চান, তাহলে আপনার সাথে উমরের কন্যা হাফসাকে শাদী দেই। আবূ বকর (রাঃ) নীরব থাকলেন এবং প্রতি-উত্তরে আমাকে কিছুই বললেন না। এতে আমি উসমান (রাঃ) এর চেয়ে বেশি অসন্তুষ্ট হলাম, তারপর আমি কয়েকরাত অপেক্ষা করলাম।

তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাফসাকে শাদীর জন্য প্রস্তাব পাঠালেন এবং হাফসাকে আমি তার সাথে শাদী দিলাম। এরপর আবূ বকর (রাঃ) আমার সঙ্গে সাক্ষাত করে বললেন, সম্ভবত আপনি আমার ওপর অসন্তুষ্ট হয়েছেন। আপনি যখন হাফসাকে আমার জন্য পেশ করেন তখন আমি কোন উত্তর দেইনি। উমর (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হাঁ। আব বকর (রাঃ) বললেন, আপনার প্রস্তাবে সাড়া না দিতে কোন কিছুই আমাকে বিরত করেনি, বরং আমি জানি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাফসার বিষয় উল্লেখ করেছেন, কখনও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গোপন ভেদ প্রকাশ আমার পক্ষক্ষ সম্ভব নয়। যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রত্যাহার করতেন তাহলে আমি হাফসাকে গ্রহণ করতাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৪৮ | 4748 | ٤۷٤۸

পরিচ্ছদঃ ২৪৫৯. নিজের কন্যা অথবা বোনকে শাদীর জন্য কোন নেক্কার পরহেজগার ব্যক্তির সামনে পেশ করা
৪৭৪৮। কুতায়বা (রহঃ) … ইরাক ইবনু মালিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, যয়নাব বিনতে আবূ সালামা (রাঃ) তাঁর কাছে বর্ণনা করেছেন যে, উম্মে হাবীবা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বলেছেন, আপনি দুররাহ্ বিনত আবূ সালামাকে শাদী করতে যাচ্ছেন- এ কথা আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি উম্মে সালামা থাকতে তাকে শাদী করব? যদি আমি উম্মে সালামাকে শাদী নাও করতাম, তবুও সে আমার জন্য হালাল হত না। কেননা তার পিতা আমার দুধভাই।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৪৯ | 4749 | ٤۷٤۹

পরিচ্ছদঃ ২৪৬১. শাদী করার পূর্বে মেয়ে দেখে নেয়া
২৪৬০. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহর বাণীঃ যদি তোমরা শাদীর ইচ্ছা কর প্রকাশ্যে অথবা অন্তরে গোপন রা, উভয় অবস্থা আল্লাহ্ জানেন। আল্লাহ্ ক্ষমাকারী এবং ধৈর্যশীল। أَكْنَنْتُمْ আরবী অর্থ – তোমরা গোপনে মনে পোষণ কর, প্রত্যেক বস্তু যা তুমি গোপনে রাখ তা হলো ‘মাকনূন’। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবন আব্বাস (রা) বলেনঃ যদি কোন ব্যক্তি ইদ্দত পালনকারী কোন মহিলাকে বলে যে, আমার শাদী করার ইচ্ছ আছে। আমার শাদী করার ইচ্ছা আছে। আমি কোন নেক্কার মহিলাকে পেতে ইচ্ছা পোষণ করি। কাসিম (রহঃ) বলেন, এই আয়াতের ব্যাখ্যা হচ্ছে, যেন কোন ব্যক্তি বলল, তুমি আমার কাছে খুবই সম্মানিতা এবং আমি তোমাকে পছন্দ করি। আল্লাহ্ তোমার জন্য কল্যাণ বর্ষণ করুন। অথবা এই ধরণের উক্তি। আতা (রহঃ) বলেনে, শাদীর ইচ্ছা ইশারায় ব্যক্ত করা উচিত- খোলাখুলি এই ধরণের কোন কথা বলা ঠিক নয়। কেউ এ ধরণের বলতে পারে, আমার এ সকল গুণের প্রয়োজন আছে। আর তোমার জন্য সুখবর সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য আপনি পুনঃ শাদীর উপযুক্ত। সে মহিলাও বলতে পারে আপনি যা বলেছেন, তা আমি শুনেছি কিন্তু এর বেশি ওয়াদা করা ঠিক নয়। তার অভিভাবকদেরও তার অজ্ঞাতে কোন প্রকার ওয়াদা দেয়া ঠিক নয়। কিন্তু যদি কেউ ইদ্দতের মাঝে কাউকে শাদীর কোন প্রকার ওয়াদা করে এবং ইদ্দত শেষে সে ব্যক্তি যদি তাকে শাদী করে তবে সেই শাদী বিচ্ছেদ করতে হবে না। হাসান (রহঃ) বলেছেন, (লা তুয়াঈদু হুন্না সিররান) এর অর্থ হলঃ ব্যভিচার। ইবন আব্বাস (রা) এর উদ্ধৃতি দিয়ে এই কথা বলা হয় যে, কিতাবু আজালাহু তানকাদী ইদ্দাতা অর্থ হল- ইদ্দত পূর্ণ হওয়া।

৪৭৪৯। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন, আমি তোমাকে স্বপ্নের মধ্যে দেখেছি, একজন ফেরেশতা তোমাকে রেশমী চাঁদরে জড়িয়ে আমার কাছে নিয়ে এসে বলল, এ হচ্ছে আপনার স্ত্রী। এরপর আমি তোমার মুখমন্ডল থেকে চাঁদর খুলে ফেলে তোমাকে দেখতে পেলাম। তখন আমি বললাম, যদি স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই তা বাস্তবায়িত হবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৫০ | 4750 | ٤۷۵۰

পরিচ্ছদঃ ২৪৬১. শাদী করার পূর্বে মেয়ে দেখে নেয়া
৪৭৫০। কুতায়বা (রহঃ) … সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একজন মহিলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি নিজেকে আপনার কাছে সমর্পণ করতে এসেছি। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে দেখলেন এবং অত্যন্ত সতর্কতার সাথে দৃষ্টি দিলেন। আপাদমস্তক দেখা শেষ করে তিনি মাথা নিচু করলেন। যখন মহিলা দেখতে পেল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে কোন ফায়সালা দিচ্ছেন না, তখন সে বসে পড়ল।

তারপর একজন সাহাবী দাঁড়িয়ে অনুরোধ করলেন। ইয়া রাসুলাল্লাহ! যদি আপনার এ মহিলার কোন প্রয়োজন না থাকে, তাহলে আমার সাথে তাকে শাদী দিয়ে দিন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কাছে কোন সম্পদ আছে কি? সে বলল- না, আল্লাহর কসম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার কাছে কোন সম্পদ নেই। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তোমার পরিবারের কাছে গিয়ে দেখ, কোন কিছু পাও কিনা? তারপর সে চলে গেল, ফিরে এসে বলল, না, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি কিছুই পেলাম না। তখন তিনি বললেন, দেখ, একটি লোহার আংটি পাও কিনা! এরপর সে চলে গেল, ফিরে এসে বলল, না, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহর কসম, একটি লোহার আংটিও পেলাম না; কিন্তু আমার তদবন্দ আছে।

[বর্ণনাকারী সাহল (রাঃ) বলেন, তার অন্য কোন চাঁদর ছিল না] এর অর্ধেক তাকে দিয়ে দেব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমার এ তদবন্দ দ্বারা কি হবে? যদি তুমি পরিধান কর, তার ওপর কিছুই থাকবে না, আর যদি সে পরিধান করে তাহলে তোমার জন্যও কিছুই থাকবে না। এরপর লোকটি বসে পড়ল। দীর্ঘক্ষণ পরে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন এবং ডেকে এনে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কুরআন কতটুকু জানা আছে? সে বলল, হ্যাঁ, আমার অমুক, অমুক, অমুক সূরা জানা আছে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি এগুলো মুখস্থ পড়তে পার? সে বলল, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, যাও যে পরিমাণ কুরআন শরীফ মুখস্থ জানো, এর বিনিময়ে এই মহিলাকে তোমার সাথে শাদী করিয়ে দিলাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৫১ | 4751 | ٤۷۵۱

পরিচ্ছদঃ ২৪৬২. যারা বলে, ওলী বা অভিভাবক ব্যতীত শাদী শুদ্ধ হয় না, তারা আল্লাহ্ তা’আলার কালাম দলীল হিসাবে পেশ করেঃ ‘‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা যখন স্ত্রীদের তালাক দাও তাদের নির্দিষ্ট ইদ্দত পূর্ণ করে তখন তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী স্বামীর সাথে বিবাহে বাধা দিও না‘‘-এ নির্দেশের আওতায় বয়স্কা বিবাহিতা মহিলারা যেমন, তদ্রম্নপ কুমারী মেয়েরাও এসে গেছে। মহান আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, ‘‘তোমরা মুশরিক মহিলাদেরকে কখনও বিবাহ করবে না, যতক্ষণ পর্যমত্ম তারা ঈমান না আনবে।’’ আল্লাহ্ তা’আলা আরও বলেন, ‘‘তোমাদের ভিতরে যারা অবিবাহিতা আছে তাদের শাদী দিয়ে দাও’’
৪৭৫১। ইয়াহ্ইয়া ইবনু সুলায়মান ও আহমদ ইবনু সালিহ্ (রহঃ) … উরওয়া ইবনু যুবায়র (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, জাহিলী যুগে চার প্রকারের বিয়ে প্রচলিত ছিল। এক প্রকার হচ্ছে, বর্তমান যে ব্যবস্থা চলছে অর্থাৎ কোন ব্যাক্তি কোন মহিলার অভিভাবকের নিকট তার অধীনস্থ মহিলা অথবা তার কন্যার জন্য বিবাহের প্রস্তাব দিবে এবং তার মোহর নির্ধারণের পর বিবাহ করবে। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, কোন ব্যাক্তি তার স্ত্রীকে মাসিক ঋতু থেকে মুক্ত হওয়ার পর এই কথা বলত যে, তুমি অমুক ব্যাক্তির কাছে যাও এবং তার সাথে যৌন মিলন কর। এরপর তার স্বামী নিজ স্ত্রী থেকে পৃথক থাকত এবং কখনও এক বিছানায় ঘুমাত না, যতক্ষণ না সে অন্য ব্যাক্তির দ্বারা গর্ভবতী হত, যার সাথে স্ত্রীর যৌন মিলন হত। যখন তার গর্ভ সুস্পষ্টবাবে প্রকাশ হত তখন ইচ্ছা করলে স্বামী তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করত। এটা ছিল তার স্বামীর অভ্যাস। এতে উদ্দেশ্য ছিল যাতে করে সে একটি উন্নত জাতের সন্তান লাভ করতে পারে। এ ধরণের বিবাহকে ‘নিকাহুল ইস্তিবদা’ বলা হত।

তৃতীয় প্রথা ছিল যে, দশ জনের কম কতিপয় ব্যাক্তি একত্রিত হয়ে পালাক্রমে একই মহিলার সাথে যৌনমিলনে লিপ্ত হত। যদি মহিলা এর ফলে গর্ভবতী হত এবং কোন সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর কিছুদিন অতিবাহিত হত, সেই মহিলা এ সকল ব্যাক্তিকে ডেকে পাঠাত এবং কেউই আসতে অস্বীকৃতি জানাতে পারত না। যখন সকলেই সেই মহিলার সামনে একত্রিত হত, তখন সে তাদেরকে বলত, তোমরা সকলেই জানো- তোমরা কি করেছ! এখন আমি সন্তান প্রসব করেছি, সুতরাং হে অমুক! এটা তোমারই সন্তান। ঐ মহিলা যাকে খুশি তার নাম ধরে ডাকত, তখন এ ব্যাক্তি উক্ত শিশুটিকে গ্রহণ করতে বাধ্য থাকত এবং ঐ মহিলা তার স্ত্রীরূপে গণ্য হত।

চতুর্থ প্রকারের বিবাহ হচ্ছে, বহু পুরুষ একই মহিলার সাথে যৌন মিলনে লিপ্ত হত এবং ঐ মহিলা তার কাছে যত পুরুষ আসত, কাউকে শয্যা-শায়ী করতে অস্বীকার করত না। এরা ছিল বারবনিতা (পতিতা), যার চিহ্ন হিসাবে নিজ ঘরের সামনে পতাকা উড়িয়ে রাখত। যে কেউ ইচ্ছা করলে অবাধে এদের সাথে যৌন মিলনে লিপ্ত হতে পারত। যদি এ সকল মহিলাদের মধ্য থেকে কেউ গর্ভবতী হত এবং কোন সন্তান প্রসব করত তাহলে যৌন মিলনে লিপ্ত হওয়া সকল কাফাহ্ পুরুষ এবং একজন ‘কাফাহ্’ (এমন একজন বিশেষজ্ঞ, যারা সন্তানের মুখ অথবা শরীরের কোন অঙ্গ দেখে বলতে পারত- অমুকের ঔরসজাত সন্তান) কে ডেকে আনা হত সে সন্তানটির যে লোকটি সাথে এ সা’দৃশ্য দেখতে পেত তাকে বলত, এটি তোমার সন্তান। তখন ঐ লোকটি ঐ সন্তানকে নিজের হিসাবে অস্বীকার করতে পারত না। যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সত্য দ্বীনসহ পাঠানো হল তখন তিনি জাহেলী যুগের সমস্ত বিবাহ প্রথাকে বাতিল করে দিলেন এবং বর্তমানে প্রচলিত শাদী ব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দিলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৫২ | 4752 | ٤۷۵۲

পরিচ্ছদঃ ২৪৬২. যারা বলে, ওলী বা অভিভাবক ব্যতীত শাদী শুদ্ধ হয় না, তারা আল্লাহ্ তা’আলার কালাম দলীল হিসাবে পেশ করেঃ ‘‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা যখন স্ত্রীদের তালাক দাও তাদের নির্দিষ্ট ইদ্দত পূর্ণ করে তখন তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী স্বামীর সাথে বিবাহে বাধা দিও না‘‘-এ নির্দেশের আওতায় বয়স্কা বিবাহিতা মহিলারা যেমন, তদ্রম্নপ কুমারী মেয়েরাও এসে গেছে। মহান আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, ‘‘তোমরা মুশরিক মহিলাদেরকে কখনও বিবাহ করবে না, যতক্ষণ পর্যমত্ম তারা ঈমান না আনবে।’’ আল্লাহ্ তা’আলা আরও বলেন, ‘‘তোমাদের ভিতরে যারা অবিবাহিতা আছে তাদের শাদী দিয়ে দাও’’
৪৭৫২। ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এই আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এবং যা কিছু তোমার কাছে তিলাওয়াত করা হয় ইয়াতীম নারী সম্পর্কে তোমরা যাদের প্রাপ্য পরিশোধ কর না এবং যাদের তোমরা শাদী করতে আগ্রহী” তিনি বলেন, এই আয়াত হচ্ছে ঐ ইয়াতীম নারীদের সম্পর্কে, যারা কোন অভিভাবকের আওতাধীন রয়েছে এবং তার ধন-সম্পদে সে শরীকানা রাখে কিন্তু তাকে শাদী করা পছন্দ করে না এবং তার সম্পদের জন্য অন্যের কাছে শাদী দিতে আগ্রহীও নয়, যাতে করে অন্য লোক এ সম্পত্তিতে তাদের সাথে অংশীদার হয়ে না বসে (উক্ত আয়াতে অভিভাবকদের এরূপ গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়ছে)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৫৩ | 4753 | ٤۷۵۳

পরিচ্ছদঃ ২৪৬২. যারা বলে, ওলী বা অভিভাবক ব্যতীত শাদী শুদ্ধ হয় না, তারা আল্লাহ্ তা’আলার কালাম দলীল হিসাবে পেশ করেঃ ‘‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা যখন স্ত্রীদের তালাক দাও তাদের নির্দিষ্ট ইদ্দত পূর্ণ করে তখন তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী স্বামীর সাথে বিবাহে বাধা দিও না‘‘-এ নির্দেশের আওতায় বয়স্কা বিবাহিতা মহিলারা যেমন, তদ্রম্নপ কুমারী মেয়েরাও এসে গেছে। মহান আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, ‘‘তোমরা মুশরিক মহিলাদেরকে কখনও বিবাহ করবে না, যতক্ষণ পর্যমত্ম তারা ঈমান না আনবে।’’ আল্লাহ্ তা’আলা আরও বলেন, ‘‘তোমাদের ভিতরে যারা অবিবাহিতা আছে তাদের শাদী দিয়ে দাও’’
৪৭৫৩। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমর (রাঃ) এর কন্যা হাফসা (রাঃ) যখন তার স্বামী খুনায়স ইবনু হুযাফা আসসাহামীর মৃত্যুর ফলে বিধবা হল, ইনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী ছিলেন এবং বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন এবং মদিনায় ইন্তেকাল করেন। উমর (রাঃ) বলেন, আমি উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাত করলাম এবং তাঁর কাছে হাফসার শাদীর প্রস্তাব করলাম এই বলে যে, যদি আপনি ইচ্ছা করেন, তবে হাফসাকে আপনার সঙ্গে শাদী দিব। তিনি বললেন, আমি এ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করে দেখি। আমি কয়েকদিন অপেক্ষা করলাম। তারপর তিনি আমার সাথে সাক্ষাত করে বললেন, আমি বর্তমানে শাদী না করার জন্য মনস্থির করেছি। উমর (রাঃ) আরো বলেন, আমি আবূ বকর (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাত করে বললাম, আপনি যদি চান, তাহলে হাফসাকে আপনার সাথে শাদী দেব।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৫৪ | 4754 | ٤۷۵٤

পরিচ্ছদঃ ২৪৬২. যারা বলে, ওলী বা অভিভাবক ব্যতীত শাদী শুদ্ধ হয় না, তারা আল্লাহ্ তা’আলার কালাম দলীল হিসাবে পেশ করেঃ ‘‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা যখন স্ত্রীদের তালাক দাও তাদের নির্দিষ্ট ইদ্দত পূর্ণ করে তখন তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী স্বামীর সাথে বিবাহে বাধা দিও না‘‘-এ নির্দেশের আওতায় বয়স্কা বিবাহিতা মহিলারা যেমন, তদ্রম্নপ কুমারী মেয়েরাও এসে গেছে। মহান আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, ‘‘তোমরা মুশরিক মহিলাদেরকে কখনও বিবাহ করবে না, যতক্ষণ পর্যমত্ম তারা ঈমান না আনবে।’’ আল্লাহ্ তা’আলা আরও বলেন, ‘‘তোমাদের ভিতরে যারা অবিবাহিতা আছে তাদের শাদী দিয়ে দাও’’
৪৭৫৪। আহমদ ইবনু আবূ আমর (রহঃ) … আল হাসান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “তোমরা তাদেরকে আটকিয়ে রেখো না” এই আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন, মা’কিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) বলেছেন যে, উক্ত আয়াত তার সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। তিনি বলেন, আমি আমার বোনকে এক ব্যাক্তির সাথে শাদী দেই, সে তাকে তালাক দিয়ে দেয়। যখন তার ইদ্দতকাল অতিক্রান্ত হয় তখন সেই ব্যাক্তি আমার কাছে আসে এবং তাকে পুনরায় শাদীর পয়গাম দেয়। কিন্তু আমি তাকে বলে দেই, আমি তাকে তোমার সাথে শাদী দিয়েছিলাম এবং তোমরা মেলামেশা করেছ এবং আমি তোমাকে মর্যাদা দিয়েছি। তারপরেও তুমি তাকে তালাক দিলে? পুনরায় তুমি তাকে চাওয়ার জন্য এসেছ? আল্লাহর কসম, সে আবার কখনও তোমার কাছে ফিরে যাবে না। মা’কিল বলেন, সে লোকটি অবশ্য খারাপ ছিল না এবং তার স্ত্রীও তার কাছে ফিরে যেতে আগ্রহী ছিল। এমতাবস্থায় আল্লাহ তা’আলা এই আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ “তাদেরকে বাদা দিও না” এরপর আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি আমার বোনকে তার কাছে শাদী দেব। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তাকে তার সাথে পুনঃ শাদী দিলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৫৫ | 4755 | ٤۷۵۵

পরিচ্ছদঃ ২৪৬৩. ওলী বা অভিভাবক নিজেই যদি শাদীর প্রার্থী হয়। মুগীরা ইব্ন শু’বা (রা) এমন এক মহিলার সাথে শাদীর প্রসত্মাব দেন, যার নিকটতম অভিভাবক তিনিই ছিলেন। সুতরাং তিনি অন্য একজনকে তার সাথে শাদী বন্ধনে আদেশ দিলে সে ব্যক্তি তার সঙ্গে শাদী করিয়ে দিলেন। আবদুর রহমান ইব্ন আউফ (রা) উম্মে হাকীম বিন্তে কারিয (রা)-কে বললেন, তুমি কি তোমার শাদীর ব্যাপারে আমাকে দায়িত্ব দেবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আবদুর রহমান (রা) বললেন, আমি তোমাকে শাদী করলাম। আতা (রা) বলেন, অভিভাবক লোকদেরকে সাক্ষী রেখে বলবে, আমি তোমাকে শাদী করলাম, অথবা ঐ মহিলার নিকটতম আত্মীয়দের কাউকে তার কাছে তাকে শাদী দেয়ার জন্য বলবে। সাহল (রা) বলেন, একজন মহিলা এসে নবী (সা)-এর কাছে বলল, আমি নিজেকে আপনার কাছে সমর্পন করলাম। এরপর একজন লোক বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! এই মহিলাকে যদি আপনার প্রয়োজন না থাকে তাহলে আমার সাথে শাদী দিয়ে দিন।
৪৭৫৫। ইবনু সালাম (রাঃ) … আয়িশা (রাঃ) আয়াতের ব্যাখ্যা সম্পর্কে বলেন, এ আয়াত হচ্ছে ‘‘তারা আপনার কাছে নারীদের সম্পর্কে ফয়সালা চায়। আপনি বলে দিন, আল্লাহ তাদের সম্পর্কে তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন …।’’ এই আয়াত হচ্ছে ইয়াতীম বালিকাদের সম্পর্কে, যারা কোন অভিভাবকের অধীনে আছে এবং তারা ঐ অভিভাবকের ধন-সম্পদেও অংশীদার; অথচ সে নিজে ওকে শাদী করতে ইচ্ছুক নয় এবং অন্য কেউ তাদেরকে শাদী করুক এবং ধন-সম্পদে ভাগ বসাক তাও পছন্দ করে না। তাই সে তার শাদীতে বাধার সৃষ্টি করে। সুতরাং আল্লাহ তা’আলা এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৫৬ | 4756 | ٤۷۵٦

পরিচ্ছদঃ ২৪৬৩. ওলী বা অভিভাবক নিজেই যদি শাদীর প্রার্থী হয়। মুগীরা ইব্ন শু’বা (রা) এমন এক মহিলার সাথে শাদীর প্রসত্মাব দেন, যার নিকটতম অভিভাবক তিনিই ছিলেন। সুতরাং তিনি অন্য একজনকে তার সাথে শাদী বন্ধনে আদেশ দিলে সে ব্যক্তি তার সঙ্গে শাদী করিয়ে দিলেন। আবদুর রহমান ইব্ন আউফ (রা) উম্মে হাকীম বিন্তে কারিয (রা)-কে বললেন, তুমি কি তোমার শাদীর ব্যাপারে আমাকে দায়িত্ব দেবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আবদুর রহমান (রা) বললেন, আমি তোমাকে শাদী করলাম। আতা (রা) বলেন, অভিভাবক লোকদেরকে সাক্ষী রেখে বলবে, আমি তোমাকে শাদী করলাম, অথবা ঐ মহিলার নিকটতম আত্মীয়দের কাউকে তার কাছে তাকে শাদী দেয়ার জন্য বলবে। সাহল (রা) বলেন, একজন মহিলা এসে নবী (সা)-এর কাছে বলল, আমি নিজেকে আপনার কাছে সমর্পন করলাম। এরপর একজন লোক বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! এই মহিলাকে যদি আপনার প্রয়োজন না থাকে তাহলে আমার সাথে শাদী দিয়ে দিন।
৪৭৫৬। আহমদ ইবনু মিকদাম (রহঃ) … সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) বর্ণনা করেন, একদা আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে বসা ছিলাম। এমন সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট একজন মহিলা এসে নিজকে পেশ করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার আপাদমস্তক সুন্দর করে দেখলেন; কিন্তু তার কথা কোন প্রতি-উত্তর দিলেন না। একজন সাহাবী আরয করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তাকে আমার সাথে শাদী দিয়ে দিন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কাছে কিছু আছে কি? লোকটি উত্তর করল, না, আমার কাছে কিছু নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, একটি লোহার আংটিও নেই? লোকটি উত্তর করল, না, একটি লোহার আংটিও নেই। কিন্তু আমি আমার পরিধানের তহবন্দের অর্ধেক তাকে দেব আর অর্ধেক নিজে পরব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না। তোমার কুরআন মজীদের কিছু জানা আছে? সে বলল, হ্যাঁ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যে পরিমাণ কুরআন জানো, তার পরিবর্তে তাকে তোমার সাথে শাদী দিলাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৫৭ | 4757 | ٤۷۵۷

পরিচ্ছদঃ ২৪৬৪. কার জন্য ছোট শিশুদের শাদী দেয়া বৈধ। আল্লাহ্ তা’আলার কালাম ‘‘এবং যারা ঋতুমতী হয়নি’’ -এই আয়াতকে দলীল হিসাবে ধরে নাবালেগার ইদ্দত তিন মাস নির্ধারণ করা হয়েছে
৪৭৫৭। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁকে শাদী করেন তখন তাঁর বয়স ছিল ৬ বছর এবং নয় বছর বয়সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথে বাসর ঘর করেন এবং তিনি তাঁর সান্নিধ্যে নয় বছরকাল ছিলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৫৮ | 4758 | ٤۷۵۸

পরিচ্ছদঃ ২৪৬৫. আপন পিতা কর্তৃক কন্যাকে কোন ইমামের সঙ্গে শাদী দেয়া। উমর (রা) বলেন, নবী (সা) আমার কন্যা-হাফসার সাথে শাদীর প্রস্তাব দিলে আমি তাকে তাঁর সাথে শাদী দেই
৪৭৫৮। মু’আল্লা ইবনু আসাদ (রাঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যখন তাঁর ছয় বছর বয়স তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে শাদী করেন। তিনি তাঁর সাথে বাসর ঘর করেন নয় বছর বয়সে। হিশাম বলেন, আমি জেনেছি যে, আয়িশা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নয় বছর ছিলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৫৯ | 4759 | ٤۷۵۹

পরিচ্ছদঃ ২৪৬৬. সুলতানই ওলী বা অভিভাবক (যার কোন ওলী নেই)। এর প্রমাণ নবী (সা)-এর হাদীসঃ আমি তাকে তোমার কাছে জানা কুরআনের বিনিময়ে শাদী দিলাম।
৪৭৫৯। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, কোন এক মহিলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, আমি আমার জীবনকে আপনার কাছে পেশ করলাম। এরপর সে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল এরপর একজন লোক দাঁড়িয়ে বলল, আপনার প্রয়োজন না থাকলে, আমার সঙ্গে এর শাদী দিয়ে দিন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কাছে মোহরানা দেয়ার মতো কি কিছু আছে? লোকটি বলল, আমার এ তহবন্দ ছাড়া আর কিছুই নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি তুমি তহবন্দখানা তাকে দিয়ে দাও, তাহলে তোমার কিছু থাকবে না। সুতরাং তুমি অন্য কিছু তালাশ কর। লোকটি বলল, আমি কোন কিছুই পেলাম না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তালাশ কর, যদি একটি লোহার আংটিও পাও। সে কিছুই পেল না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, কুরআন শরীফের কিছু অংশ তোমার জানা আছে? লোকটি বলল, হ্যাঁ! অমুক অমুক সূরা আমার জানা আছে এবং সে সূরাগুলোর নাম একে একে উল্লেখ করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কুরআনের যে যে অংশ তোমার জানা আছে, তার বিনিময়ে আমি তাকে তোমার নিকট শাদী দিলাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৬০ | 4760 | ٤۷٦۰

পরিচ্ছদঃ ২৪৬৭. পিতা বা অভিভাবক কুমারী অথবা বিবাহিতা মেয়েকে তাদের সম্মতি ব্যতীত শাদী দিতে পারে না
৪৭৬০। মু’আয বিন ফদালা (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন বিধবা নারীকে তার সম্মতি ছাড়া শাদী দেয়া যাবে না এবং কুমারী মহিলাকে তার অনুমতি ছাড়া শাদী দিতে পারবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কেমন করে তার অনুমতি নেব। তিনি বললেন, তার চুপ করে থাকাটাই তার অনুমতি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৬১ | 4761 | ٤۷٦۱

পরিচ্ছদঃ ২৪৬৭. পিতা বা অভিভাবক কুমারী অথবা বিবাহিতা মেয়েকে তাদের সম্মতি ব্যতীত শাদী দিতে পারে না
৪৭৬১। আমর ইবনু রবী (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! নিশ্চয়ই কুমারী মেয়েরা লজ্জাশীলা। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তার চুপ থাকাটাই তার সম্মতি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৬২ | 4762 | ٤۷٦۲

পরিচ্ছদঃ ২৪৬৮. যদি কোন ব্যক্তি তার কন্যার অনুমতি ব্যতীত তাকে শাদী দেয়, সে শাদী বাতিল বলে গণ্য হবে
৪৭৬২। ইসমাঈল (রহঃ) … খানসা বিনতে খিযাম আল আনসারিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন যে, যখন তিনি বয়স্কা ছিলেন তখন তার পিতা তাকে শাদী দেন। এ শাদী তার পছন্দ ছিল না। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলে তিনি এ শাদী বাতিল করে দেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৬৩ | 4763 | ٤۷٦۳

পরিচ্ছদঃ ২৪৫৮. স্ত্রীলোকের সৎ পুরুষের কাছে নিজকে (বিবাহের জন্য) পেশ করা
৪৭৬৩। ইসহাক (রহঃ) … আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ এবং মুজাম্মি ইবনু ইয়াযীদ উভয়েই বর্ণনা করেন যে, ‘খিযামা’ নামক এক ব্যাক্তি একটা মেয়েকে তার অনুমতি ছাড়া অন্যের সঙ্গে শাদী দেন। পরবর্তী অংশ পূর্ববর্তী হাদীসের বর্ণনার ন্যায়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৬৪ | 4764 | ٤۷٦٤

পরিচ্ছদঃ ২৪৬৯. ইয়াতীম বালিকার শাদী দেয়া। আল্লাহ্ তা’আলার বাণী’’ ‘‘যদি তোমরা ভয় কর যে ইয়াতীম বালিকাদের প্রতি পূর্ণ ইনসাফ করতে পারবে না, তাহলে তোমার পছন্দ মতো অন্য কাউকে শাদী কর।’’ কেউ কোন অভিভাবককে যদি বলে, অমুক মহিলাকে আমার সঙ্গে শাদী দিন এবং সে যদি চুপ থাকে অথবা তাকে বলে তোমার কাছে কি আছে? সে উত্তরে বলে, আমার কাছে এই এই আছে অথবা নীরব থাকে। এরপর অভিভাবক বলেন, আমি তাকে তোমার কাছে শাদী দিলাম, তাহলে তা বৈধ। এ ব্যাপারে সাহল (রা) নবী (সা) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৪৭৬৪। আবূল ইয়ামান (রহঃ) … উরওয়া ইবনু আবূ যুবায়র (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, তিনি আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করেন, খালাম্মা, “যদি তোমরা ভয় কর যে, ইয়াতীম বালিকাদের প্রতি ন্যায় বিচার করতে পারবে না তোমাদের দক্ষিন হস্ত যার মালিক …। এই আয়াত কোন্ প্রসঙ্গে নাযিল হয়েছে? আয়িশা (রাঃ) বললেন, হে আমার ভাগ্নে! এই আয়াত ঐ ইয়াতীম বালিকাদের প্রসঙ্গে অবর্তর্ণ হয়েছে, যারা তার অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে রয়েছে এবং সেই অভিভাবক তার রূপ ও সম্পদে আকৃষ্ট হয়ে তাকে শাদী করতে চায়; কিন্তু তার মোহরানা কম দিতে চায়। এই আয়াতের মাধ্যমে উক্ত বালিকাদের শাদী করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং তাদের ব্যতীত অন্য নারীদের শাদী করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অবশ্য যদি সে এদের পূর্ণ মোহরানা আদায় করে দেয় তবে সে শাদী করতে পারবে।

আয়িশা (রাঃ) আরো বলেন, পরবর্তী সময়ে লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে জিজ্ঞেস করলে আল্লাহ তা’আলা এই আয়াত নাযিল করেনঃ “তারা তোমার কাছে মহিলাদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে এবং তোমরা যাদের শাদী করতে চাও” আল্লাহ তা’আলা এদের জন্য এ আয়াত নাযিল করেন; যদি কোন ইয়াতীম বালিকার সৌন্দর্য এবং সম্পদ থাকে, তাহলে এরা তাদেরকে শাদী করতে চায় এবং এদের স্বীয় আভিজাত্যের ব্যাপারেও ইচ্ছা পোষণ করে এবং মোহর কম দিতে চায়। কিন্তু সে যদি তাদের পছন্দমতো পাত্রী না হয়, তার সম্পদ ও রূপ কম হওয়ার কারণে এদেরকে ত্যাগ করে অন্য মেয়ে শাদী করে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, যেমনিভাবে এদের প্রতি অনীহার সময় এদের পরিত্যাগ করতে চায় তদ্রুপ যে সময় আকর্ষণ থাকবে, সে সময়েও যেন তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করে পূর্ণ মোহর আদায় করে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৬৫ | 4765 | ٤۷٦۵

পরিচ্ছদঃ ২৪৭০. যদি কোন শাদী প্রার্থী পুরুষ অভিভাবককে বলে, অমুক মেয়েকে আমার কাছে শাদী দিন এবং মেয়ের অভিভাবক বলে, তাকে এত মোহরানার বিনিময়ে তোমার সাথে শাদী দিলাম, তাহলে এই শাদী বৈধ হবে যদিও সে জিজ্ঞেস না করে, তুমি কি রাযী আছ? তুমি কি কবুল করেছ
৪৮৬৫। আবূ নু’মান … সাহল (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একজন মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলো এবং নিজকে শাদীর জন্য তাঁর কাছে পেশ করল। তিনি বললেন, এখন আমার কোন মহিলার প্রয়োজন নেই। এরপর উপস্থিত একজন লোক বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তাকে আমার সাথে শাদী দিন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি আছে? লোকটি বলল, আমার কিছু নেই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে একটি লোহার আংটি হলেও দাও। লোকটি বলল, আমার কাছে কিছুই নেই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কাছে কি পরিমাণ কুরআন আছে? লোকটি বলল, এ পরিমাণ কুরআন শরীফ আছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যে পরিমাণ কুরআন শরীফ জানো, তার বিনিময়ে এই মহিলাকে তোমার কর্তৃত্বে দিয়ে দিলাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৬৬ | 4766 | ٤۷٦٦

পরিচ্ছদঃ ২৪৭১. কোন ব্যক্তির প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব দেবে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত তার শাদী হবে অথবা আপন প্রস্তাব উঠিয়ে নেবে
৪৭৬৬। মাক্কী ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাউকে এক ভাই কোন জিনিসের দাম করলে অন্যকে তার দরদাম করতে নিষেধ করেছেন এবং এক মুসলিম ভাইয়ের শাদী প্রস্তাবের ওপরে অন্য ভাইকে প্রস্তাব দিতে নিষেধ করেছেন, যতক্ষণ না প্রথম প্রস্তাবকারী তার প্রস্তাব উঠিয়ে নেবে বা তাকে অনুমতি দেবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৬৭ | 4767 | ٤۷٦۷

পরিচ্ছদঃ ২৪৭১. কোন ব্যক্তির প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব দেবে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত তার শাদী হবে অথবা আপন প্রস্তাব উঠিয়ে নেবে
৪৭৬৭। ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকায়ব (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তোমরা কারো প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করো না। কেননা, খারাপ ধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। একে অপরের ছিদ্রান্বেষণ করো না, একে অন্যের ব্যাপারে মন্দ কথায় কান দিও না এবং একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুতা রোখো না’ বরং পরস্পর ভাই হয়ে যাও। এক মুসলিম ভাইয়ের প্রস্তাবিত মহিলার কাছে শাদীর প্রস্তাব করো না; বরং ঐ পর্যন্ত অপেক্ষা কর, যতক্ষণ না সে তাকে শাদী করে অথবা বাদ দেয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৬৮ | 4768 | ٤۷٦۸

পরিচ্ছদঃ ২৪৭২. শাদীর প্রস্তাব বাতিলের ব্যাখ্যা
৪৭৬৮। আবূল ইয়ামান (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, উমর (রাঃ) বলেন, হাফসা (রাঃ) বিধবা হলে আমি আবূ বকর (রাঃ) এর সঙ্গে সাক্ষাত করে তাকে বললাম, আপনি যদি চান তবে হাফসা বিনত উমরকে আপনার কাছে শাদী দিতে পারি। আমি কয়েকদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। তারপরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার শাদীর পয়গাম পাঠালেন। পরে আবূ বকর (রাঃ) আমার সাথে সাক্ষাত করে বললেন, আপনার প্রস্তাবে উত্তর দিতে কোন কিছুই আমাকে বাধা দেয়নি; তবে আমি জেনেছিলাম যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে আলোচনা করেছেন এবং আমি কখনও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গোপন প্রকাশ করতে পারি না। তিনি যদি তাকে বাদ দিতেন, তাহলে আমি তাকে গ্রহণ করতাম। ইউনুস, মূসা ইবনু উকবা এবং ইবনু আকিকে যুহরীর সূত্রে উক্ত হাদীসের সমর্থন ব্যক্ত করেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৬৯ | 4769 | ٤۷٦۹

পরিচ্ছদঃ ২৪৭৩. শাদীর খুতবা
৪৭৬৯। কাবিস (রাঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) বর্ণনা করেন, পূর্বাঞ্চল থেকে দু’ব্যাক্তি এসে বক্তৃতা দিল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোন কোন বক্তৃতা জাদুমন্ত্রের মতো।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৭০ | 4770 | ٤۷۷۰

পরিচ্ছদঃ ২৪৭৪. বিবাহ অনুষ্ঠানে এবং বিবাহ ভোজে দফ বাজানো
৪৭৭০। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … রুবাই বিনত মুআব্বিয ইবনু আফরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার বাসর রাতের পরের দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন এবং আমার চাঁদরের ওপর বসলেন, যেমন বর্তমানে তুমি আমার কাছে বসে আছ। সে সময় আমাদের কচি মেয়েরা দফ বাজাচ্ছিল এবং বদরের যুদ্ধে শাহাদাত প্রাপ্ত আমার বাপ-চাচাঁদের শোকগাঁথা হচ্ছিল। তাদের মধ্যে একজন এ কথা বলে ফেলল যে, আমাদের মধ্যে একজন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আছেন, যিনি আগামী দিনের কথা জানেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ কথা বলা ছেড়ে দাও এবং পূর্বে যা বলেছিলে তাই বল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৭১ | 4771 | ٤۷۷۱

পরিচ্ছদঃ ২৪৭৫. আল্লাহ্‌র বাণীঃ ‘‘এবং তোমরা তোমাদের স্ত্রীদিগকে সন্তুষ্টচিত্তে মোহরানা পরিশোধ কর।’’ আর অধিক মোহরানা এবং সর্বনিমণ মোহরানা কত এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, ‘‘এবং তোমরা যদি তাদের একজনকে অগাধ অর্থও দিয়ে থাক, তবুও তা থেকে কিছুই প্রতিগ্রহণ করো না।’’ এবং আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন, ‘‘অথবা তোমরা তাদের মোহরানার পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দাও।’’ সাহ্ল (রা) বলেছেন, নবী (সা) এক ব্যক্তিকে বললেন, যদি একটি লোহার আংটিও হয়, তবে মোহরানা হিসাবে যোগাড় করে দাও।
৪৭৭১। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) কোন এক মহিলাকে শাদী করলেন এবং তাকে মোহরানা হিসাবে খেজুর দানার পরিমাণ স্বর্ণ দিলেন। যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মুখে শাদীর আনন্দের ছাপ দেখলেন তখন তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন; তখন সে বললঃ আমি একজন নারীকে খেজুরের আটি পরিমাণ স্বর্ণ দিয়ে শাদী করেছি। কাতাদা আনাস থেকে বর্ণনা করেন যে, আবদুর রহমান খেজুরের দানা পরিমাণ স্বর্ণ মোহরানা হিসাবে দিয়ে কোন মহিলাকে শাদী করেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৭২ | 4772 | ٤۷۷۲

পরিচ্ছদঃ ২৪৭৬. কুরআন শিক্ষা দেয়ার বিনিময় এবং কোন মোহরানা ব্যতীত বিবাহ প্রদান
৪৭৭২। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) … সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি অন্যান্য লোকের সঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বসা ছিলাম। এমন সময় একজন মহিলা দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি নিজেকে আপনার কাছে পেশ করছি, এখন আপনার মতামত দিন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন উত্তর দিলেন না। এরপর মহিলাটি পুনরায় দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি আমার জীবনকে আপনার কাছে পেশ করেছি। এতে আপনার মতামত কি? তিনি কোন প্রতিউত্তর করলেন না। তারপর তৃতীয় বারে দাঁড়িয়ে বলল, আমি আমার জীবন আপনার কাছে সোপর্দ করছি। আপনার মতামত কি? এরপর একজন লোক দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এই মহিলাকে আমার সাথে শাদী দিয়ে দিন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কাছে কিছু আছে? লোকটি বলল, না। তিনি বললেন, যাও তালাশ কর, একটি লোহার আংটি হলেও নিয়ে এসো। লোকটি চলে গেল এবং খুঁজে দেখল। এরপর এসে বলল, আমি কিছুই পেলাম না; এমনকি একটি লোহার আংটিও না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কি কিছু কুরআন জানা আছে? সে বলল, অমুক অমুক সূরা আমার মুখস্থ আছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যে পরিমাণ কুরআন মুখস্থ পার, তার বিনিময়ে এ মহিলাকে তোমার সাথে শাদী দিলাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৭৩ | 4773 | ٤۷۷۳

পরিচ্ছদঃ ২৪৭৭. মোহরানা হিসাবে দ্রব্যসামগ্রী এবং লোহার আংটি
৪৭৭৩। ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) … সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে বললেন, তুমি শাদী কর একটি লোহার আংটির বিনিময়ে হলেও।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৭৪ | 4774 | ٤۷۷٤

পরিচ্ছদঃ ২৪৭৮. শাদীতে শর্ত আরোপ করা। হযরত উমর (রা) বলেছেন, কোন চুক্তির শর্ত নির্ধারণ করলেই অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। মিস্ওয়ার (রা) বলেন, নবী (সা) তাঁর এক জামাতার প্রশংসা করে বলেছেন যে, যখন সে আমার সাথে কথা বলেছে, সত্য বলেছে। যখন সে ওয়াদা করেছে, তখন ওয়াদা রক্ষা করেছে।
৪৭৭৪। আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) … উকবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সকল শর্তের চেয়ে শাদীর শর্ত পালন করা তোমাদের জন্য অধিক কর্তব্য এই জন্য যে, এর মাধ্যমেই তোমাদেরকে মহিলাদের বিশেষ অংশ ভোগ করার অধিকার দেয়া হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৭৫ | 4775 | ٤۷۷۵

পরিচ্ছদঃ ২৪৭৯. শাদীর সময় মেয়েদের জন্য যেসব শর্ত আরোপ করা বৈধ নয়। ইবন মাসউদ (রা) বলেন, একজন নারীর জন্য তার হবু স্বামীর কাছে এরূপ শর্ত আরোপ করা বৈধ নয় যে, সে তার (মুসলিম) বোনকে (অর্থাৎ হবু স্বামীর আগের স্ত্রীকে) তালাক দেয়ার কথা বলে
৪৭৭৫। উবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শাদীর সময় কোন নারীর জন্য এরূপ শর্ত আরোপ করা বৈধ নয় যে, তার বোনের তালাক দাবি করবে, যাতে সে তার পাত্র পূর্ণ করে নেয় (সব কিছুর ওপরে তার একচেটিয়া অধিকার প্রতিষ্ঠা করে) কেননা, তার ভাগ্যে যা আছে তাই ঘটবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৭৬ | 4776 | ٤۷۷٦

পরিচ্ছদঃ ২৪৮০. বরের জন্য সুফরা (হলুদ রঙ্গের সুগন্ধি) ব্যবহার করা। আবদুর রহমান ইবন আউফ (রা) নবী (সা) থেকে বর্ণনা করেছেন
৪৭৭৬। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বণিত যে, আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে এমন অবস্থায় এলেন যে, তার সুফরার চিহ্ন বিদ্যমান ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চিহ্ন সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) তার উত্তরে বললেন, তিনি এক আনসারী নারীকে শাদী করেছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তাকে কি পরিমাণ মোহরানা দিয়েছে? তিনি বললেন, আমি তাকে খেজুরের আটির সমপরিমাণ স্বর্ণ দিয়েছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ওয়ালীমার ব্যবস্থা কর যদি একটি বকরী দিয়েও হয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৭৭ | 4777 | ٤۷۷۷

পরিচ্ছদঃ ২৪৮০. বরের জন্য সুফরা (হলুদ রঙ্গের সুগন্ধি) ব্যবহার করা। আবদুর রহমান ইবন আউফ (রা) নবী (সা) থেকে বর্ণনা করেছেন
৪৭৭৭। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যয়নাব (রাঃ) এর শাদীতে ওয়ালীমার ব্যবস্থা করেন এবং মুসলমানদের জন্য উত্তম খাদ্যের ব্যবস্থা করেন। তারপর তার অভ্যাস মত তিনি বাইরে আসেন এবং উম্মুল মু’মিনীনদের গৃহে প্রবেশ করে তাদের জন্য দোয়া করেন এবং তাঁরাও তাঁর জন্য দোয়া করেন। এরপরে ফিরে এসে তিনি লক্ষ্য করলেন যে, দু’জন লোক বসে আছে। এরপর তিনি ফিরে গেলেন। বর্ণনাকারী বলে, আমি ঠিক স্মরণ করতে পারছি না যে, আমি তাকে ঐ লোক দু’টি চলে যাওয়ার সংবাদ দিয়েছিলাম, না তিনি নিজেই কারুর দ্বারা খবর পেয়েছিলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৭৮ | 4778 | ٤۷۷۸

পরিচ্ছদঃ ২৪৮১. বরের জন্য কিভাবে দোয়া করতে হবে
৪৭৭৮। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) এর দেহে সুফরার চিহ্ন দেখতে পেয়ে বললেন, এ কি? আবদুর রহমান (রাঃ) বললেন, আমি একজন মহিলাকে একটি খেজুরের আটি সমপরিমাণ স্বর্ণের বিনিময়ে শাদী করেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তা’আলা তোমার এ শাদীতে বরকত দান করুন। তুমি একটি ছাগলের দ্বারা হলেও ওয়ালীমার ব্যবস্থা কর।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৭৯ | 4779 | ٤۷۷۹

পরিচ্ছদঃ ২৪৮২. ঐ নারীদের দোয়া যারা কনেকে সাজায় এবং বরকে উপহার দেয়
৪৭৭৯। ফারওয়া (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে শাদী করেন তখন আমার মা আমার কাছে এলেন এবং আমাকে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করালেন, আমি সেখানে কয়েকজন আনসারী মহিলাকে দেখলাম। তারা মঙ্গল, বরকত ও সৌভাগ্য কামনা করে দোয়া করছিলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৮০ | 4780 | ٤۷۸۰

পরিচ্ছদঃ ২৪৮৩. জিহাদে যাওয়ার পূর্বে স্ত্রীর সঙ্গে মিলন প্রত্যাশী
৪৭৮০। মুহাম্মদ ইবনু আলা (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আম্বিয়ায়ে কিরামের মধ্য থেকে কোন একজন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিহাদের জন্য বের হলেন এবং নিজ লোকদেরকে বললেন, ঐ ব্যাক্তি যেন আমার সাথে জিহাদে না যায়, যে শাদী করেছে এবং স্ত্রীর সাথে মিলিত হতে ইচ্ছা করে: অথচ এখনও মিলন হয়নি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৮১ | 4781 | ٤۷۸۱

পরিচ্ছদঃ ২৪৮৪. যে ব্যক্তি নয় বছরের মেয়ের সাথে বাস রাত্রি অতিবাহিত করে
৪৭৮১। কাবিসা ইবনু উকবা (রহঃ) … উরওয়া থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়িশা (রাঃ) কে শাদী করেন তখন তাঁর বয়স ছিল ছয় বছর এবং যখন বাসর করেন তখন তাঁর বয়স ছিল নয় বছর এবং (মোট) নয় বছর তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে জীবন যাপন করেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৮২ | 4782 | ٤۷۸۲

পরিচ্ছদঃ ২৪৮৫. সফরে স্ত্রীর মিলন সম্পর্কে
৪৭৮২। মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনদিন পর্যন্ত মদিনা এবং খায়বরের মধ্যবর্তী কোন এক স্থানে অবস্থান করেন। সেখানে তিনি সাফিয়া বিনতে হুয়ায়া (রাঃ) এর সাথে শাদী বন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর আমি মুসলমানদেরকে ওয়ালীমার জন্য দাওয়াত করি, তাতে রুটি ও গোশত ছিল না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চামড়ার দস্তরখানা বিছাবার জন্য আদেশ করলেন এবং তাতে খেজুর, পনির এবং মাখন রাখা হল। এটাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওয়ালীমা। মুসলমানেরা একে অপরকে বলতে লাগল, সাফিয়া কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী হিসাবে গণ্য হবেন, না ক্রীতদাসী হিসাবে। সকলে বলল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি তাকে পর্দার ভিতরে রাখেন তাহলে তিনি উম্মুহাতুল মু’মিনীনদের মধ্যে গণ্য হবেন। আর যদি পর্দায় না রাখেন, তাহলে ক্রীতদাসী হিসাবে গণ্য হবে। এরপর যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রওয়ানা হলেন তখন লোকজন এবং তার মধ্যে পর্দার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৮৩ | 4783 | ٤۷۸۳

পরিচ্ছদঃ ২৪৮৬. দিনের বেলায় শাদীবন্ধনের পর বাস করা এবং আগুন জ্বালানো ও সওয়ারী ব্যতীত
৪৭৮৩। ফারওয়া ইবনু আবূ মাগরা (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে শাদী করার পর আমার আম্মা আমার কাছে এলেন এবং আমাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘরে নিয়ে গেলেন। মধ্যাহ্নের সময় আমার কাছে তাঁর আগমন ছাড়া আর কিছুই আমাকে অবাক করেনি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৮৪ | 4784 | ٤۷۸٤

পরিচ্ছদঃ ২৪৮৭. মহিলাদের জন্য বিছানার চাদর ও বালিশের ওয়ার ব্যবহার করা
৪৭৮৪। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি বিছানার চাঁদর ব্যবহার করেছ? আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কোথায় বিছানার চাঁদর পাব? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অতি সত্বর তুমি এগুলো পেয়ে যাবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৮৫ | 4785 | ٤۷۸۵

পরিচ্ছদঃ ২৪৮৮. যেসব নারী কনেকে বরের কাছে সাজিয়ে পাঠায় তাদের প্রসঙ্গ
৪৭৮৫। ফযল ইয়াকূব (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, কোন এক আনসারীর জন্য এক মহিলাকে শাদীর কনে হিসাবে সাজালে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আয়িশা! এই শাদী উপলক্ষে তুমি কি কোন রকম আনন্দ ফূর্তির ব্যবস্থা করনি? আনসারদের নিকট এটা খুবই পছন্দনীয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৮৬ | 4786 | ٤۷۸٦

পরিচ্ছদঃ ২৪৯০. দুলহীনের জন্যে কাপড়-চোপড় পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি ধার করা
২৪৮৯. অনুচ্ছেদঃ দুলহীনকে উপঢৌকন প্রদান। আবু উসমান বলেন, একদিন আনাস ইবন মালিক (রা) আমাদের বনী রিফা’আর মসজিদের নিকট গমনকালে তাকে এ কথা বলতে শুনেছি যে, যখনই উম্মে সুলায়মের নিকট দিয়ে নবী (সা) যেতেন, তাঁকে সালাম দিতেন। আনাস (রা) আরো বলেন, নবী (সা) এর যখন যয়নাব (রা) এর সাথে শাদী হয়, তখন উম্মে সুলায়ম আমাকে বললেন, চল আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সা) এর জন্য কিছু হাদীয়া পাঠাই। আমি তাকে বললাম, হ্যাঁ, এ ব্যবস্থা করুন। তখন তিনি খেজুর, মাখন ও পনির এক সাথে মিশিয়ে হালুয়া বানিয়ে একটি ডেকচিতে করে আমার মারফত রাসূলুল্লাহ্ (সা) এর কাছে পাঠালেন। আমি সেসব নিয়ে তাঁর খিদমতে উপস্থিত হলে তিনি এগুলো রেখে দিতে বলেন, এবং আমাকে কয়েকজন লোকের নাম উল্লেখ করে ডেকে আনার আদেশ করলেন। আরো বললেন, যার সাথে দেখা হয় তাকেও দাওয়াত দিবে। তিনি যেভাবে আমাকে হুকুম করলেন, আমি সেইভাবে কাজ করলাম।

যখন আমি ফিরে এলাম, তখন ঘরে অনেক লোক দেখতে পেলাম। নবী (সা) তখন হালুয়া (হাইশা) পাত্রের মধ্যে হাত রাখা অবস্থায় ছিলেন এবং আল্লাহ্ তা’আলার মর্জি মোতাবেক কিছু কথা বললেন। তারপর তিনি দশ দশ জন করে লোক খাবারের জন্য ডাকলেন এবং বললেন, তোমরা ‘বিস্মিল্লাহ্’ বলে খাওয়া শুরু কর এবং প্রত্যেকে পাত্রের নিজ নিজ দিক হতে খাও। যখন তাদের খাওয়া-দাওয়া শেষ হল তাদের মধ্য থেকে অনেকেই চলে গেল এবং কিছু সংখ্যক লোক কথাবার্তা বলতে থাকল। যা দেখে আমি বিরক্তি বোধ করলাম।

তারপর নবী (সা) সেখান থেকে বের হয়ে অন্য ঘরে গেলেন। আমিও সেখান থেকে বেরিয়ে এলাম। যখন আমি বললাম, তারাও চলে গেছে তখন তিনি নিজের কক্ষে ফিরে এলেন এবং পর্দা ফেলে দিলেন। তিনি তাঁর কক্ষে থাকলেন এবং এই আয়াত পাঠ করলেনঃ মু’মিনগণ, তোমাদেরকে অনুমতি না দেয়া হলে তোমরা খাবার তৈরির অপেক্ষা না করে নবীগৃহে খাবার জন্য প্রবেশ করো না। তবে যদি তোমাদেরকে ডাকা হয় তাহলে প্রবেশ কর এবং খাওয়া শেষ করে চলে যাবে। তোমরা কথাবার্তায় মশগুল হয়ে পড়ো না এবং তোমাদের এরূপ আচরণ নবীর মনে কষ্ট হয়। তিনি তোমাদেরকে উঠিয়ে দিতে সংকোচ বোধ করেন, কিন্তু আল্লাহ্ তা’আলা সত্য বলতে সংকোচ বোধ করেন না। আবু উসমান (রহঃ) বলেন, আনাস (রা) বলেছেন যে, তিনি দশ বছর নবী (সা) এর খেদমত করেছেন।

৪৭৮৬। উবায়দ ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, তিনি আসমা (রাঃ) থেকে গলার একছাড়া হার ধার হিসাবে এনেছিলেন। এরপর তা হারিয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কয়েকজন সাহাবীকে তা খোঁজ করে বের করার জন্য পাঠালেন। এমন সময় সালাত (নামায/নামাজ) এর ওয়াক্ত হয়ে গেলে তারা বিনা উযূ (ওজু/অজু/অযু)তে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে হাযির হয়ে অভিযোগ করলেন, তখন তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল হল। উসায়দ ইবনু হুযায়র (রাঃ) বললেন, [হে আয়িশা (রাঃ)!] আল্লাহ আপনাকে উত্তম পুরস্কার দান করুন! কারণ যখনই আপনার ওপর কোন অসুবিধা আসে, তখনই আল্লাহ তা’আলার তরফ থেকে তা আপনার জন্য বিপদমুক্তির ও উম্মতের জন্য বরকতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৮৭ | 4787 | ٤۷۸۷

পরিচ্ছদঃ ২৪৯১. স্ত্রীর কাছে গমনকালে কি বলতে হবে?
৪৭৮৭। সা’দ ইবনু হাফস (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন স্ত্রী-সহবাস করে, তখন যেন সে বলে, ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনিশ শায়তানা ওয়া জান্নিবিশ শায়তানা মা রাযাকতানা’ আল্লাহর নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ! আমাকে তুমি শয়তান থেকে দূরে রাখ এবং আমাকে তুমি যা দান করবে তা থেকে শয়তানকে দূরে রাখ। এরপরে যদি তাদের দু’জনের মাঝে কিছু ফল দেয়া হয় অথবা বাচ্চা পয়দা হয়, তাকে শয়তান কখনো ক্ষতি করতে পারবে না।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৮৮ | 4788 | ٤۷۸۸

পরিচ্ছদঃ ২৪৯২. ওয়ালীমা একটি অধিকার। আবদুর রহমান ইব্ন আউফ (রা) বলেছেন, নবী (সা) আমাকে বললেন, ওয়ালীমার ব্যবস্থা কর, যদি একটি মাত্র বকরীর দ্বারাও হয়।
৪৭৮৮। ইয়াহিয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আসেন তখন আমার বয়স দশ বছর ছিল। আমার মা, চাচী ও ফুফুরা আমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খাদেম হওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছিল। এরপর আমি দশ বছরকাল তাঁর খেদমত করি। যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকাল হয় তখন আমার বয়স ছিল বিশ বছর। আমি পর্দা সম্পর্কে অন্যদের চেয়ে বেশি জানি। পর্দা সম্পর্কীয় প্রাথমিক আয়াতসমূহ যয়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) এর সাথে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাসর রাত যাপনের সময় অবতীর্ণ হয়েছিল। সেদিন সকাল বেলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুলহা ছিলেন এবং লোকদেরকে ওয়ালীমার দাওয়াত করলেন। সুতরাং তাঁরা এসে খানা খেলেন। কিছুসংখ্যক ছাড়া সবাই চলে গেলেন। তাঁরা দীর্ঘক্ষণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে কাটালেন। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে বাইরে গেলেন।

আমি তাঁর পিছু পিছু চলে এলাম, যাতে করে অন্যেরাও বের হয়ে আসে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন, এমনকি তিনি আয়িশা (রাঃ) এর কক্ষের দ্বারপ্রান্তে গেলেন, এরপরে বাকি লোকগুলো হয়ত চলে গেছে এ কথা ভেবে তিনি ফিরে এলেন, আমি তাঁর সাথে ফিরে এলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যয়নব (রাঃ) এর কক্ষে প্রবেশ করে দেখতে পেলেন যে, লোকগুলো বসে রয়েছে- চলে যায়নি। সুতরাং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় বাইরে বের হলেন এবং আমি তাঁর সাথে এলাম। যখন আমরা আয়িশা (রাঃ) এর কক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছলাম, তিনি ভাবলেন যে, এতক্ষণে হয়ত লোকগুলো চলে গিয়েছে। তিনি ফিরে এলেন। আমিও তাঁর সাথে ফিরে এসে দেখলাম যে, লোকগুলো চলে গেছে। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ও তাঁর মাঝখানে একটি পর্দা টেনে দিলেন। এ সময়ে পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৮৯ | 4789 | ٤۷۸۹

পরিচ্ছদঃ ২৪৯৩. ওয়ালীমা বা বিবাহ-ভোজের ব্যবস্থা করা উচিত, যদিও তা একটি বকরীর দ্বারা হয়
৪৭৮৯। আলী (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) একজন আনসারী মহিলাকে শাদী করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, কি পরিমাণ মোহর দিয়েছ? তিনি উত্তর করলেন, একটি খেজুরের আটির পরিমাণ স্বর্ণ দিয়েছি। আনাস (রাঃ) আরও বলেন, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবিগণ মদিনায় আগমন করলেন, তখন মুহাজিরগণ আনসারদের গৃহে অবস্থান করতেন। আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) সা’দ ইবনুুর রাবী (রাঃ) এর গৃহে অবস্থান করতেন। সা’দ (রাঃ) আবদুর রহমান (রাঃ) কে বললেন, আমি আমার বিষয়-সম্পত্তি দু’ভাগ করে আমরা উভয়ে সমান ভাগে ভাগ করে নেব এবং আমি আমার দুই স্ত্রীর মধ্যে একজন তোমাকে দেব। আবদুর রহমান (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তোমার সম্পত্তি ও স্ত্রীদেরকে বরকত দান করুন। তারপর আবদুর রহমান (রাঃ) বাজারে গেলেন এবং ব্যবসা করতে লাগলেন এবং লাভ হিসাবে কিছু পনির ও ঘি পেলেন এবং শাদী করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, একটি ছাগল দ্বারা হলেও ওয়ালীমার ব্যবস্থা কর।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৯০ | 4790 | ٤۷۹۰

পরিচ্ছদঃ ২৪৯৩. ওয়ালীমা বা বিবাহ-ভোজের ব্যবস্থা করা উচিত, যদিও তা একটি বকরীর দ্বারা হয়
৪৭৯০। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন শাদী করেন, তখন ওয়ালীমা করেন, কিন্তু যয়নাব (রাঃ) এর শাদীর সময় যে পরিমাণ ওয়ালীমার ব্যবস্থা করেছিলেন, তা অন্য কারো বেলায় করেননি। সেই ওয়ালীমা ছিল একটি ছাগল দিয়ে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৯১ | 4791 | ٤۷۹۱

পরিচ্ছদঃ ২৪৯৩. ওয়ালীমা বা বিবাহ-ভোজের ব্যবস্থা করা উচিত, যদিও তা একটি বকরীর দ্বারা হয়
৪৭৯১। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফিয়া (রাঃ) কে আযাদ করে শাদী করেন এবং এই আযাদ করাকেই তাঁর মোহরানা নির্দিষ্ট করেন এবং ‘হাইস’ বা এক প্রকার সুস্বাদু হালুয়ার দ্বারা ওয়ালীমার ব্যবস্থা করেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৯২ | 4792 | ٤۷۹۲

পরিচ্ছদঃ ২৪৯৩. ওয়ালীমা বা বিবাহ-ভোজের ব্যবস্থা করা উচিত, যদিও তা একটি বকরীর দ্বারা হয়
৪৭৯২। মালিক ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এক সহধর্মিণীর সাথে বাসর ঘরের ব্যবস্থা করলেন এবং ওয়ালীমার দাওয়াত দেয়ার জন্য আমাকে পাঠালেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৯৩ | 4793 | ٤۷۹۳

পরিচ্ছদঃ ২৪৯৪. কোন ব্যক্তি কোন স্ত্রীর শাদীর সময় অন্যদের শাদীর সময়কাল ওয়ালীমার চেয়ে বড় ধরণের ওয়ালীমার ব্যবস্থা করা
৪৭৯৩। মুহাম্মদ (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যয়নাবের শাদীর আলোচনায় আনাস (রাঃ) উপস্থিত হয়ে তিনি বললেন, যয়নাব বিনতে জাহাশের সাথে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শাদীর সময় যে ওয়ালীমার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তার চেয়ে অধিক ওয়ালীমার ব্যবস্থা কারো শাদীর সময় করতে আমি দেখিনি। এই শাদী অনুষ্ঠানে তিনি একটি ছাগল দ্বারা ওয়ালীমা করেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৯৪ | 4794 | ٤۷۹٤

পরিচ্ছদঃ ২৪৯৫. একটি ছাগলের চেয়ে কম কিছুর দ্বারা ওয়ালীমা করা
৪৭৯৪। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … সাফিয়া বিনত শায়বা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোন এক স্ত্রীর শাদীতে দুই মুদ (চার সের) পরিমাণ যব দ্বারা ওয়ালীমার ব্যবস্থা করেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৯৫ | 4795 | ٤۷۹۵

পরিচ্ছদঃ ২৪৯৬. ওয়ালীমার দাওয়াত গ্রহণ করা কর্তব্য। যদি কেউ একাধারে সাত দিন অথবা অনুরূপ বেশি দিন ওয়ালীমার ব্যবস্থা করে, কেননা নবী (সা) ওয়ালীমার সময় এক বা দুই দিন ধার্য করেননি
৪৭৯৫। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কাউকে ওয়ালীমার দাওয়াত করলে তা অবশ্যই গ্রহণ করবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৯৬ | 4796 | ٤۷۹٦

পরিচ্ছদঃ ২৪৯৬. ওয়ালীমার দাওয়াত গ্রহণ করা কর্তব্য। যদি কেউ একাধারে সাত দিন অথবা অনুরূপ বেশি দিন ওয়ালীমার ব্যবস্থা করে, কেননা নবী (সা) ওয়ালীমার সময় এক বা দুই দিন ধার্য করেননি
৪৭৯৬। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বন্দীদেরকে মুক্তি দাও, দাওয়াত কবূল কর এবং রোগীদের সেবা কর।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৯৭ | 4797 | ٤۷۹۷

পরিচ্ছদঃ ২৪৯৬. ওয়ালীমার দাওয়াত গ্রহণ করা কর্তব্য। যদি কেউ একাধারে সাত দিন অথবা অনুরূপ বেশি দিন ওয়ালীমার ব্যবস্থা করে, কেননা নবী (সা) ওয়ালীমার সময় এক বা দুই দিন ধার্য করেননি
৪৭৯৭। হাসান ইবনু রবী (রহঃ) … বারা ইবনু আযিব (রাঃ) বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সাতটি কাজ করতে বলেছেন এবং সাতটি কাজ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি আমাদেরকে রোগীর সেবাযত্ন করা, জানাযায় অংশগ্রহণ করা, হাঁচি দিলে তার জবাব দেয়া, কসম পুরা করায় সহযোগিতা করা, মজলুমকে সাহায্য করা, সালামের বিস্তার করা এবং কেউ দাওয়াত দিলে তা কবূল করা- এইসব করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি আমাদের নিষেধ করেছেন স্বর্ণের আংটি পরতে, রূপার পাত্র ব্যবহার করতে, ঘোড়ার পিঠের ওপরে রেশমী গদি ব্যবহার করতে এবং ‘কাসসিয়া’ বা পাতলা রেশমী কাপড় এবং দ্বীবাজ ব্যবহার করতে।

আবূ আওয়ানা এবং শায়বানী আশ্আস সূত্রে সালামের বিস্তারের কথা সমর্থন করে বর্ণনা করেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৯৮ | 4798 | ٤۷۹۸

পরিচ্ছদঃ ২৪৯৬. ওয়ালীমার দাওয়াত গ্রহণ করা কর্তব্য। যদি কেউ একাধারে সাত দিন অথবা অনুরূপ বেশি দিন ওয়ালীমার ব্যবস্থা করে, কেননা নবী (সা) ওয়ালীমার সময় এক বা দুই দিন ধার্য করেননি
৪৭৯৮। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ উসায়দ আস্ সাঈদী (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তার শাদী উপলক্ষে ওয়ালীমার দাওয়াত করেন। তাঁর নববধু সেদিন খাদ্য পরিবেশন করছিলেন। সাহল বলেন, তোমরা কি জানো, সে দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কি পানীয় সরবরাহ করা হয়েছিল? সারারাত ধরে কিছু খেজুর পানির মধ্যে ভিজিয়ে রেখে তা থেকে তৈরি পানীয়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খাওয়া শেষ করলেন, তখন তাঁকে ঐ পানীয়ই পান করতে দেয়া হয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৭৯৯ | 4799 | ٤۷۹۹

পরিচ্ছদঃ ২৪৯৭. যে দাওয়াত কবূল করে না, সে যেন আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল (সা)-কে নাফরমানী করল
৪৭৯৯। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ওয়ালীমায় শুধুমাত্র ধনীদেরকে দাওয়াত করা হয় এবং গরীবদেরকে দাওয়াত করা হয় না সেই ওয়ালীমা সবচেয়ে নিকৃষ্ট। যে ব্যাক্তি দাওয়াত কবূল করে না, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সঙ্গে নাফরমানী করে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮০০ | 4800 | ٤۸۰۰

পরিচ্ছদঃ ২৪৯৮. বকরীর পায়া খাওয়ানোর জন্যও যদি দাওয়াত করা হয়
৪৮০০। আবদান (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাকে যদি কেউ পায়া খেতে দাওয়াত দেয় আমি তা কবূল করব এবং আমাকে যদি কেউ পায়া হাদীয়া দেয়, তবে আমি তা অবশ্যই গ্রহণ করব।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮০১ | 4801 | ٤۸۰۱

পরিচ্ছদঃ ২৪৯৯. শাদী বা অন্যান্য অনুষ্ঠানে দাওয়াত গ্রহণ করা
৪৮০১। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যদি তোমাদেরকে শাদী অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়া হয়, তবে তা গ্রহণ কর। নাফে বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) এর অভ্যাস ছিল, তিনি রোযাদার হলেও শাদী বা এ ধরণের দাওয়াত পেলে সে দাওয়াত রক্ষা করতেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮০২ | 4802 | ٤۸۰۲

পরিচ্ছদঃ ২৫০০. বরযাত্রীদের সাথে মহিলা ও শিশুদের অংশগ্রহণ
৪৮০২। আবদুর রহমান ইব’নুল মুবারক (রহঃ) … আনাস ইব’ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু সংখ্যক মহিলা এবং শিশুকে শাদীর অনুষ্ঠান শেষে ফিরে আসতে দেখলেন। তিনি আনন্দের সাথে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেন, আমি আল্লা’হর নামে বলছি, তোমরা সকল মানুষের চেয়ে আমার কাছে প্রিয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮০৩ | 4803 | ٤۸۰۳

পরিচ্ছদঃ ২৫০১. যদি কোন অনুষ্ঠানে দীনের খেলাফ বা অপছন্দনীয় কোন কিছু নজরে আসে, তাহলে ফিরে আসবে কি ? ইব’ন মাস ঊদ (রা) কোন এক বাড়ীতে (প্রাণীর) ছবি দেখে ফিরে এলেন। ইব’ন উমর (রা) আবু আইয়ুব (রা)-কে দাওয়াত করে বাড়িতে আনলেন। তিনি এসে ঘরের দেয়ালের পর্দায় ছবি দেখতে পেলেন। এরপর হযরত ইব’ন উম র (রা) এ ব্যাপারে বললেন, মহিলারা আমাদের উপর প্রভাব বিস্তার করেছে। হযরত আবু আইয়ূব (রা) বললেন, আমি যাদের সম্পর্কে আশংকা করেছিলাম, আপনি তাদের মধ্যে হবেন না বলেই মনে করেছিলাম। আল্লাহ’র কসম, আমি আপনার ঘরে কোন খাদ্য গ্রহ ণ করব না । এরপর তিনি চলে গেলেন।
৪৮০৩। ইসমাঈল (রহঃ) … নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একটি বালিশ বা গদি কিনে এনেছিলাম, যার মধ্যে ছবি ছিল। যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই ছবিটি দেখেলেন, তিনি দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে গেলেন; ভিতরে প্রবেশ করলেন না। আমি বুঝতে পারলাম যে, তাঁর চোখে এটা অত্যন্ত অপছন্দনীয় ব্যাপার। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আল্লাহর কাছে তওবা করছি এবং তাঁর রাসূলের কাছে ফিরে আসছি। আমি কী অন্যায় করেছি? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন এই বালিশ কিসের জন্য? আমি বললাম, এটা আপনার জন্য খরিদ করে এনেছি, যাতে আপনি বসতে পারেন এবং হেলান দিতে পারেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এই ছবি নির্মাতাকে কিয়ামতের দিন শাস্তি প্রদান করা হবে এবং বলা হবে, যা তুমি সৃষ্টি করেছ তার প্রাণ দাও এবং তিনি আরও বলেন, যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে, সেই ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮০৪ | 4804 | ٤۸۰٤

পরিচ্ছদঃ ২৫০২. নববধু কর্তৃক শাদী অনুষ্ঠনে খেদমত করা
৪৮০৪। সাঈদ ইবন আবূ মারয়াম (রহঃ) … সাহাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন আবূ উসায়দ আস’সাঈদী (রাঃ) তাঁর ওয়ালীমায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবিগণ কে দাওয়াত দিলেন, তখন তাঁর নববধু উম্মু উসায়দ ছাড়া আর কেউ উক্ত খাদ্য প্রস্তুত এবং পরিবেশন করেনি। তিনি একটি পাথরের পাত্রে সারা রাত পানির মধ্যে খেজুর ভিজিয়ে বাখেন। যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাওয়া-দাওয়া শেষ করেন, তখন সেই তোহফা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পান করান।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮০৫ | 4805 | ٤۸۰۵

পরিচ্ছদঃ ২৫০৩. আন্-নাকী বা অন্যান্য শরবত বা পানীয়, যার মধ্যে মাদক তা নেই। এই রকম শরবত ওয়ালীমাতে পান করানো
৪৮০৫। ইয়াহ্ইয়া ইব’ন বুকায়র (রহঃ) … সাহ’ল ইব’ন সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ উসায়দ আস’সাঈদী (রাঃ) তাঁর ওয়ালীমায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দাওয়াত দেন। তাঁর নববধু সেদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে খাদ্য এবং পানীয় পরিবেশন করেন। সাহ’ল (রাঃ) বলেন, তোমরা কি জানো সেই নববধু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কি পান করিয়েছেলেন? তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য একটি পানপাত্রে কিছু খেজুর সারা রাত ধরে ভিজিয়ে রেখেছিলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮০৬ | 4806 | ٤۸۰٦

পরিচ্ছদঃ ২৫০৪. নারীদের প্রতি সদ্ব্যবহার, আর এই সম্পর্কে নবী (সাঃ) বলেন, নারীরা পাঁজরের হাড়ের মত
৪৮০৬। আবদুল আযীয ইব’ন আবদুল্লাহ (রহঃ) … আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নারীরা হচ্ছে পাঁজরের হাড়ের ন্যায়। যদি তোমরা তাকে একেবারে সোজা করতে চাও, তাহলে ভেঙ্গে যাবে। সুতরাং, যদি তোমরা তাদের থেকে লাভবান হতে চাও, তাহলে ঐ বাঁকা অবস্থাতেই লাভবান হতে হবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮০৭ | 4807 | ٤۸۰۷

পরিচ্ছদঃ ২৫০৫. নারীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করার ওসীয়ত
৪৮০৭। ইসহাক ইব’ন নসর (রহঃ) … আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে আল্লাহ এবং আখিরাতের ওপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন আপন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। আর তোমরা নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। কেননা, তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে পাঁজরের হাড় থেকে এবং সবচেয়ে বাঁকা হচ্ছে পাঁজরের ওপরের হাড়। যদি তুমি তা সোজা করতে যাও, তাহলে ভেঙে যাবে। আর যদি তুমি তা যেভাবে আছে সে ভাবে রেখে দাও তাহলে বাঁকাই থকবে। অতএব, তোমাদেরকে ওসীয়াত করা হল নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮০৮ | 4808 | ٤۸۰۸

পরিচ্ছদঃ ২৫০৫. নারীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করার ওসীয়ত
৪৮০৮। নুআয়ম (রহঃ) … ইবন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় আমাদের স্ত্রীদের সাথে কথা-বার্তা ও হাসি-ঠাট্টা থেকে দূরে থাকতাম এই ভয়ে যে, এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক করে কোন ওহী নাযিল হয়ে যায়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকালের পর আমরা তাদের সাথে অবাধে কথা-বার্তা ও হাসি-ঠাট্টা করতাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮০৯ | 4809 | ٤۸۰۹

পরিচ্ছদঃ ২৫০৬. আল্লাহ তা’আলা বলেন, তোমরা নিজ়েকে এবং তোমাদের পরিবারকে দোযখের আগুন থেকে বাঁচাও
৪৮০৯। আবূ নু’মান (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইব’ন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক এবং তোমরা প্রত্যেকেই জিজ্ঞাসিত হবে। একজন শাসক সে তার অধীনস্তদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন পুরুষ তার পরিবারের রক্ষক, সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন স্ত্রী তার স্বামীর গৃহের রক্ষক, সে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন গোলাম তার মনিবের সম্পদের রক্ষক, সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব সাবধান, তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক এবং তোমরা প্রত্যেকেই জিজ্ঞাসিত হবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮১০ | 4810 | ٤۸۱۰

পরিচ্ছদঃ ২৫০৭. পরিবার-পরিজনের সাথে উত্তম ব্যবহার
৪৮১০। সুলায়মান ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) ও আলী ইবনু হুজ্‌র (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ১১ জন মহিলা এক স্থানে একত্রিত হয়ে বসল এবং সকলে মিলে এই কথা উপর একমত হল যে, তারা নিজেদের স্বামীর ব্যাপারে কোন তথ্যই গোপন রাখবে না। প্রথম মহিলা বলল, আমার স্বামী অত্যন্ত হাল্‌কা-পাতলা দুর্বল উটের গোশতের ন্যায় যেন কোন পাহাড়ের চুড়ায় রাখা হয়েছে এবং সেখানে আরোহণ করা সহজ কাজ নয় এবং গোশতের মধ্যে এত চর্বিও নেই, যে কারনে সেখানে উঠার জন্য কেউ কষ্ট স্বীকার করবে। দ্বিতীয় মহিলা বলল, আমি আমার স্বামী সম্পর্কে কিছু বলবনা, কারন আমি ভয় করছি যে, তার সম্পর্কে বলতে গিয়ে শেষ করা যাবে না। কেননা, যদি আমি তার সম্পর্কে বলতে যাই, তা হলে আমাকে তার সকল দুর্বলতা এবং মন্দ দিকগুলো সম্পর্কেও বলতে হবে।

তৃতীয় মহিলা বলল, আমার স্বামী একজন দীর্ঘদেহী ব্যাক্তি। আমি যদি তার বর্ণনা দেই (আর সে যদি তা শোনে) তাহলে সে আমাকে তালাক দিবে। আর যদি আমি কিছু না বলি, তাহল সে আমাকে ঝুলন্ত অবস্থায় রাখবে। অর্থাৎ তালাকও দেবে না, স্ত্রীর মতো ব্যবহারও করবে না। চতুর্থ মহিলা বলল, আমার স্বামী হচ্ছে তিহামার রাতের মতো মাঝামাঝি- অতি গরমও না, অতি ঠাণ্ডাও না, আর আমি তাকে ভয়ও করি না, আবার তার প্রতি অসন্তুষ্টও নই। পঞ্চম মহিলা বলল, যখন আমার স্বামী ঘরে প্রবেশ করে, তখন চিতা বাঘের ন্যায় থাকে। যখন বাইরে যায় তখন সিংহের ন্যায় তার স্বভাব থাকে এবং ঘরের কোন কাজের ব্যাপারে কোন প্রশ্ন তোলে না।

ষষ্ঠ মহিলা বলল, আমার স্বামী যখন খেতে বসে, তখন সব খেয়ে ফেলে। যখন পান করে, তখন সব শেষ করে। যখন নিদ্রা যায়, তখন একাই চাঁদর বা কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকে। এমনকি হাত বের করেও আমার খবর নেয় না। সপ্তম মহিলা বলল, আমার স্বামী হচ্ছে পথভ্রষ্ট অথবা দুর্বল মানসিকতা সম্পন্ন এবং চরম বোকা, সব রকমের দোষ তার আছে। সে তোমার মাথায় বা শরীরে অথবা উভয় স্থানে আঘাত করতে পারে। অষ্টম মহিলা বলল, আমার স্বামীর পরশ হচ্ছে খরগোশের মত এবং তার দেহের সুগন্ধ হচ্ছে যারনাব (এক প্রকার বনফুল-এর মত), নবম মহিলা বলল, আমার স্বামী হচ্ছে অতি উচ্চ অট্টালিকার মত এবং তার তরবারি ঝুলিয়ে রাখার জন্য সে চামড়ার লম্বা ফালি পরিধান করে (অর্থাৎ সে দানশীল ও সাহসী)। তার ছাইভস্ম প্রচুর পরিমাণের (অর্থাৎ প্রচুর মেহমান আছে এবং মেহমানদারীও হয়) এবং মানুষের জন্য তার গৃহ অবারিত। লোকজন তার সঙ্গে সহজেই পরামর্শ করতে পারে।

দশম মহিলা বলল, আমার স্বামীর নাম হল মালিক। মালিকের কি প্রশংসা আমি করব। যা প্রশংসা করব সে তার চেয়ে উর্ধ্বে। তার অনেক মঙ্গলময় উট আছে, তার অধিকাংশ উটকেই ঘরে রাখা হয় (অর্থাৎ মেহমানদের জবাই করে খাওয়ানোর জন্য) এবং অল্প সংখ্যক মাঠে চরার জন্য রাখা হয়। বাঁশির শব্দ শুনলেই উটগুলো বুঝতে পারে যে, তাদের মেহমানদের জন্য জবাই করা হবে।

একাদশতম মহিলা বলল, আমার স্বামী আবূ যার’আ। তার কথা আমি কি বলব। সে আমাকে এত বেশি গহনা দিয়েছে যে, আমার কান ভারী হয়ে গেছে, আমার বাজুতে মেদ জমেছে এবং আমি এত সন্তুষ্ট হয়েছি যে, আমি নিজেকে গর্বিত মনে করি। সে আমাকে এনেছে অত্যন্ত গরিব পরিবার থেকে, যে পরিবার ছিল মাত্র কয়েকটি বকরীর মালিক। সে আমাকে অত্যন্ত ধনী পরিবারে নিয়ে আসে, যেখানে ঘোড়ার হ্রেষাধ্বনি এবং উটের হাওদার আওয়াজ এবং শস্য মাড়াইয়ের খসখসানি শব্দ শোনা যায়। সে আমাকে ধন-সম্পদের মধ্যে রেখেছে। আমি যা কিছু বলতাম, সে বিদ্রূপ করত না এবং আমি নিদ্রা যেতাম এবং সকালে দেরী করে উঠতাম এবং যখন আমি পান করতাম, অত্যন্ত তৃপ্তি সহকারে পান করতাম। আর আবূ যার’আর আম্মার কথা কি বলব! তার পাত্র ছিল সর্বদা পরিপূর্ণ এবং তার ঘর ছিল প্রশস্ত। আবূ যার’আর পুত্রের কথা কি বলব! সেও খুব ভাল ছিল। তার শয্যা এত সংকীর্ণ ছিল যে, মনে হত যেন কোষবদ্ধ তরবারি অর্থাৎ সে অত্যন্ত হালকা পাতলা দেহের অধিকারী। তার খাদ্য হচ্ছে ছাগলের একখনা পা।

আর আবূ যার’আর কন্যা সম্পর্কে বলতে হয় যে, সে কতই না ভাল। সে বাপ-মায়ের সম্পূর্ণ বাধ্যগত সন্তান। সে অত্যন্ত সুস্বাস্থের অধিকারিণী, যে কারনে সতীনরা তাকে হিংসা করে। আবূ যার’আর কৃতদাসীরও অনেক গুন। সে আমাদের গোপন কথা কখনও প্রকাশ করত না, সে আমাদের সম্পদকে কমাত না এবং আমাদের বাসস্থানকে আবর্জনা দিয়ে ভরে রাখত না। সে মহিলা আরও বলল, একদিন দুধ দোহন করার সময় আবূ যার’আ বাইরে বেরিয়ে এমন একজন মহিলাকে দেখতে পেল, যার দুটি পুত্র সন্তান রয়েছে। ওরা মায়ের স্তন্য নিয়ে চিতা বাঘের মত খেলছিল (দুধ পান করছিল)। সে ঐ মহিলাকে দেখে আকৃষ্ট হল এবং আমাকে তালাক দিয়ে তাকে শাদী করল।

এরপর আমি এক সম্মানিত ব্যাক্তিকে শাদী করলাম , সে দ্রুতগামী অশ্বে আরোহণ করত এবং হাতে বর্শা রাখত। সে আমাকে অনেক সম্পদ দিয়েছে এবং প্রত্যেক প্রকারের গৃহপালিত জন্তু থেকে এক এক জোড়া আমাকে দিয়েছে এবং বলেছে, হে উম্মে আরযা! তুমি এ সম্পদ থেকে খাও, পরিধান কর এবং উপহার দাও। মহিলা আরও বলল, সে আমাকে যা কিছু দিয়েছে, তা আমু যার’আর একটি ক্ষুদ্র পাত্রও পুর্ন করতে পারবে না (অর্থাৎ আবূ যার’আর সম্পদের তুলনায় খুবই সামান্য ছিল)। আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসুলূল্লাহ্‌ আমাকে বলেলেন, “আবূ যার’আ তার স্ত্রী উম্মে যার’আর প্রতি যেরূপ আমিও তোমার প্রতি তদ্রূপ (পার্থক্য এতটুকুই) আমি তোমাকে তালাক দেব না এবং তোমার সাথে উত্তম ব্যাবহার করব।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮১১ | 4811 | ٤۸۱۱

পরিচ্ছদঃ ২৫০৭. পরিবার-পরিজনের সাথে উত্তম ব্যবহার
৪৮১১। আবদুল্লাহ‌ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … উরওয়া, আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদিন হাবশীরা তাদের বর্শা নিয়ে খেলা করছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নিয়ে পর্দা করে তার পেছনে দাঁড়িয়েছিলেন এবং আমি সেই খেলা দেখছিলাম। যতক্ষণ আমার ভাল লাগছিল ততক্ষণ আমি দেখছিলাম। এরপর আমি স্বেচ্ছায় সে স্থান ত্যাগ করলাম। সুতরাং তোমরা অনুমান করতে পারলে যে, অল্প বয়স্কা মেয়েরা কি পরিমাণ আমোদ-প্রমোদ পছন্দ করে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮১২ | 4812 | ٤۸۱۲

পরিচ্ছদঃ ২৫০৮. কোন ব্যক্তির নিজ কন্যাকে তার স্বামী সম্পর্কে উপদেশ দান করা
৪৮১২। আবূল ইয়ামান (রহঃ) … আবদুল্লাহ‌ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বহুদিন ধরে উৎসুক ছিলাম যে, আমি উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) এর নিকটে জিজ্ঞেস করব, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিবিগণের মধ্যে কোন্ দু’জন সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা এই আয়াত নাযিল করেছেনঃ “তোমরা দু’জন যদি আল্লাহর নিকট তওবা কর (তবে এটা উত্তম) কেননা, তোমাদের মন সঠিক পথ থেকে সরে গেছে।”

এরপর একবার তিনি [উমর (রাঃ)] হাজ্জের (হজ্জ) জন্য রওয়ানা হলেন এবং আমিও তাদের সঙ্গে হাজ্জে (হজ্জ) গেলাম। (ফিরে আসার পথে) তিনি ইস্তিঞ্জার জন্য রাস্তা থেকে সরে গেলেন। আমি পানি পূর্ণ পাত্র হাতে তাঁর সাথে গেলাম। তিনি ইস্তিঞ্জা করে ফিরে এলে আমি উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পানি তাঁর হাতে ঢেলে দিতে লাগলাম। তিনি যখন উযূ (ওজু/অজু/অযু) করছিলেন, তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আমিরুল মু’মিনীন! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণীগণের মধ্যে কোন দু’জন, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ “তোমরা দু’জন যদি আল্লাহর নিকট তওবা কর (তবে তোমাদের জন্য উত্তম) কেননা, তোমাদের মন সঠিক পথ থেকে সরে গেছে।”

জবাবে তিনি বললেন, হে ইবনু আব্বাস! আমি তোমার প্রশ্ন শুনে অবাক হচ্ছি। তাঁরা দু’জন তো আয়িশা (রাঃ) ও হাফসা (রাঃ)। এরপর উমর (রাঃ) এই ঘটনাটি বর্ণনা করলেন, “আমি এবং আমার একজন আনসারী প্রতিবেশী যিনি উমাইয়া ইবনু যায়দ গোত্রের লোক এবং তারা মদিনার উপকণ্ঠে বসবাস করত। আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে পালাক্রমে সাক্ষাত করতাম। সে একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে যেত, আমি আর একদিন যেতাম। যখন আমি যেতাম, ঐ দিন ওহী অবতীর্ণসহ যা ঘটত সবকিছুর খবর আমি তাকে দিতাম এবং সেও অনুরুপ খবর আমাকে দিত।

আমরা কুরাইশরা নিজেদের স্ত্রীগণের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে রেখেছিলাম। কিন্তু আমরা যখন আনসারদের মধ্যে এলাম, তখন দেখতে পেলাম, তাদের স্ত্রীগণ তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে আছে এবং তাদের ওপর কর্তৃত্ব করে চলছে। সুতরাং আমাদের স্ত্রীরাও তাদের দেখাদেখি সেরূপ ব্যবহার করতে লাগল। একদিন আমি আমার স্ত্রীর প্রতি নারাজ হলাম এবং তাকে উচ্চস্বরে কিছু বললাম, সেও প্রতি-উত্তর দিল। আমার কাছে এরকম প্রতি-উত্তর দেয়াটা অপছন্দ হল। সে বলল, আমি আপনার কথার পাল্টা উত্তর দিচ্ছি এতে অবাক হচ্ছেন কেন? আল্লাহর কসম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিবিগণ তাঁর কথার মুখে মুখে পাল্টা উত্তর দিয়ে থাকেন এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার এক দিন এক রাত পর্যন্ত কথা না বলে কাটান।

[উমর (রাঃ) বলেন], এ কথা শুনে আমি ঘাবড়ে গেলাম এবং আমি বললাম, তাদের মধ্যে যারা এরূপ করেছে, তারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এরপর আমি আমার কাপড় পরিধান করলাম এবং আমার কন্যা হাফসার ঘরে প্রবেশ করলাম এবং বললামঃ হাফ্‌সা! তোমাদের মধ্যে থেকে কারো প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী সারা দিন রাত পর্যন্ত অসন্তুষ্ট থাকেননি? সে উত্তর করল, হ্যাঁ। আমি বললাম, তুমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছ। তোমরা কি এ ব্যাপারে ভীত হচ্ছো না যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসন্তুষ্টির কারনে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হয়ে যাবেন? পরিণামে তোমরা ধ্বংসের মধ্যে পড়ে যাবে। সুতরাং তুমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে অতিরিক্ত কোন জিনিস দাবি করবে না এবং তাঁর কথার প্রতি-উত্তর করবে না এবং তাঁর সাথে কথা বলা বন্ধ করবে না। তোমার যদি কোন কিছুর প্রয়োজন হয়, তবে আমার কাছে চেয়ে নেবে। আর তোমার সতীন তোমার চেয়ে অধিক রূপবতী এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অধিক প্রিয় তা যেন তোমাকে বিভ্রান্ত না করে। এখানে সতীন বলতে আয়িশা (রাঃ) কে বোঝানো হয়েছে।

উমর (রাঃ) আরও বলেন, এ সময় আমাদের মধ্যে এ কথা ছড়িয়ে পড়েছিল যে, গাস্‌সানের শাসনকর্তা আমাদের ওপর আক্রমণ চালাবার উদ্দেশ্যে তাদের ঘোড়াগুলোকে প্রস্তুত করেছে। আমার প্রতিবেশী আনসার তার পালার দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমত থেকে রাতে ফিরে এসে আমার দরজায় খুব জোরে করাঘাত করল এবং জিজ্ঞেস করল, আমি ঘরে আছি কিনা? আমি শঙ্কিত অবস্থায় বেরিয়ে এলাম। সে বলল, আজ একটা বিরাট ঘটনা ঘটে গেছে। আমি বললাম, সেটা কি? গাস্‌সানিরা কি এসে গেছে? সে বলল, না, তার চেয়ে বড় ঘটনা এবং তা ভয়ংকর। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সহধর্মিণীগণকে তালাক দিয়েছেন। আমি বললাম, হাফসা তো ধ্বংস হয়ে গেল, ব্যর্থ হল। আমি আগেই ধারনা করেছিলাম, খুব শীগগীরই এরকম একটা কিছু ঘটবে।

এরপর আমি পোশাক পরিধান করলাম এবং ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে আদায় করলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওপরের কামরায় (মাশরুবা) একাকী আরোহণ করলেন, আমি তখন হাফ্‌সার কাছে গেলাম এবং তাকে কাঁদতে দেখলাম। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কাঁদছ কেন? আমি কি তোমাকে এ ব্যাপারে পূর্বেই সতর্ক করে দেইনি? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তোমাদের সকলকে তালাক দিয়েছেন? সে বলল, আমি জানিনা। তিনি ওখানে ওপরের কামরায় একাকী রয়েছেন। আমি সেখান থেকে বেরিয়ে এসে মিম্বরের কাছে বসলাম। সেখানে কিছু সংখ্যক লোক বসা ছিল এবং তাদের মধ্যে অনেকেই কাঁদছিল। আমি তাদের কাছে কিছুক্ষন বসলাম, কিন্তু আমার অন্তর এ অবস্থা সহ্য করতে পারছিল না। সুতরাং যে ওপরের কামরায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবস্থান করছিলেন আমি সেই ওপরের কামরায় গেলাম এবং তাঁর হাবশী কালো খাদেমকে বললাম, তুমি কি উমরের জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে যাওয়ার অনুমতি এনে দেবে?

খাদেমটি গেল এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে কথা বলল। ফিরে এসে উত্তর করল, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আপনার কথা বলেছি; কিন্তু তিনি নিরুত্তর আছেন। তখন আমি ফিরে এলাম এবং যেখানে লোকজন বসা ছিল সেখানে বসলাম। কিন্তু এ অবস্থা আমার কাছে অসহ্য লাগছিল। তাই আবার এসে খাদেমকে বললাম! তুমি কি উমরের জন্য অনুমতি এনে দিবে? সে গেল এবং ফিরে এসে বলল, আমি তার কাছে আপনার কথা বলেছি; কিন্তু তিনি নিরুত্তর আছেন। সুতরাং আমি আবার ফিরে এসে মিম্বরের কাছে ঐ লোকজনের সাথে বসলাম। কিন্তু এ অবস্থা আমার কাছে অসহ্য লাগছিল। পুনরায় আমি খাদেমের কাছে গেলাম এবং বললাম, তুমি কি উমরের জন্য অনুমতি এনে দিবে? সে গেল এবং আমাকে উদ্দেশ্য করে বলতে বলতে আসল, আমি আপনার কথা উল্লেখ করলাম; কিন্তু তিনি নিরুত্তর আছেন।

যখন আমি ফিরে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি, এমন সময় খাদেমটি আমাকে ডেকে বলল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে অনুমতি দিয়েছেন। এরপর আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট প্রবেশ করে দেখলাম, তিনি খেজুরের চাটাইয়ের ওপর চাঁদরবিহীন অবস্থায় খেজুরের পাতা ভর্তি একটি বালিশে ভর দিয়ে শুয়ে আছেন। তাঁর শরীরে পরিষ্কার চাটাইয়ের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। আমি তাকে সালাম দিলাম এবং দাঁড়ানো অবস্থাতেই জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ‌! আপনি কি আপনার বিবিগণকে তালাক দিয়েছেন? তিনি আমার দিকে চোখ ফিরিয়ে বললেন, না (অর্থাৎ তালাক দেইনি)। আমি বললাম, আল্লাহু আকবার। এরপর আলাপটা নমনীয় করার উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে থেকেই বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি যদি শোনেন তাহলে বলিঃ আমরা কুরাইশগণ, মহিলাদের ওপর আমাদের প্রতিপত্তি খাটাতাম; কিন্তু আমরা মদিনায় এসে দেখলাম, এখানকার পুরুষদের ওপর নারীদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বিদ্যমান। এ কথা শুনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসলেন।

তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আপনি আমার কথার দিকে একটু নজর দেন। আমি হাফ্‌সার কাছে গেলাম এবং আমি তাকে বললাম, তোমার সতীনের রূপবতী হওয়া ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রিয় পাত্রী হওয়া তোমাকে যেন ধোঁকায় না ফেলে। এর দ্বারা আয়িশা (রাঃ) এর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় মুচকি হাসলেন। আমি তাঁকে হাসতে দেখে বসে পড়লাম। এরপর আমি তাঁর ঘরের চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম, আল্লাহর কসম, শুধু মাত্র তিনটি চামড়া ছাড়া আমি আর তাঁর ঘরে উল্লেখযোগ্য কিছুই দেখতে পেলাম না। তারপর আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! দোয়া করুন, আল্লাহ তা’আলা যাতে আপনার উম্মতদের সচ্ছলতা দান করেন। কেননা, পারস্য ও রোমানদের প্রাচুর্য দান করা হয়েছে এবং তাদের দুনিয়ার আরাম প্রচুর পরিমানে দান করা হয়েছে; অথচ তারা আল্লাহর ইবাদত করে না।

এ কথা শুনে হেলান দেয়া অবস্থা থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোজা হয়ে বসে বললেন, হে খাত্তাবের পুত্র! তুমি কি এখন এই ধারনা পোষণ করছ? ওরা ঐ লোক, যারা উত্তম কাজের প্রতিদান এ দুনিয়ায় পাচ্ছে! আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমার ক্ষমার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। হাফ্‌সা (রাঃ) কর্তৃক আয়িশা (রাঃ) কে কথা ফাঁস করে দেয়ার কারনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঊনত্রিশ দিন তাঁর বিবিগণ থেকে আলাদা থাকেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, আমি এক মাসের মধ্যে তাদের কাছে যাব না তাদের প্রতি গোস্বার কারণে। তখন আল্লাহ তা’আলা তাঁকে মৃদু ভর্ৎসনা করেন। সুতরাং যখন ঊনত্রিশ দিন হয়ে গেল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম আয়িশা (রাঃ) এর কাছে গেলেন এবং তাঁকে দিয়েই শুরু করলেন।

আয়িশা (রাঃ) তাঁকে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কসম করেছেন যে, এক মাসের মধ্যে আমাদের কাছে আসবেন না; কিন্তু এখন তো ঊনত্রিশ দিনেই এসে গেলেন। আমি প্রতিটি দিন এক এক করে হিসাব করে রেখেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঊনত্রিশ দিনেও এক মাস হয়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এ মাস ২৯ দিনের। আয়িশা (রাঃ) আরও বলেন, ঐ সময় আল্লাহ তা’আলা ইখতিয়ারের আয়াত নাযিল করেন* এবং তিনি তাঁর বিবিগণের মধ্যে আমাকে দিয়েই শুরু করেন এবং আমি তাকেই গ্রহন করি। এরপর তিনি অন্য বিবিগণের অভিমত চাইলেন। সকলেই তাই বলল, যা আয়িশা (রাঃ) বলেছিলেন।

* সূরা আহযাবের ২৮ নং আয়াত নাযিল হয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮১৩ | 4813 | ٤۸۱۳

পরিচ্ছদঃ ২৫০৯. স্বামীর অনুমতিক্রমে স্ত্রীদের নফল রোযা রাখা
৪৮১৩। মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোন স্ত্রী স্বামীর উপস্থিতিতে তাঁর অনুমতি ছাড়া নফল রোযা রাখবে না।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮১৪ | 4814 | ٤۸۱٤

পরিচ্ছদঃ ২৫১০. যদি কোন মহিলা তার স্বামীর বিছানা বাদ দিয়ে আলাদা বিছানায় রাত কাটায়
৪৮১৪। মুহাম্মদ ইবনু বাশ্‌শার (রাঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে তার সাথে একই বিছানায় শোয়ার জন্য ডাকে, আর তার স্ত্রী অস্বীকার করে, তবে সকাল পর্যন্ত ফেরেশতারা ঐ মহিলার ওপর লা’নত বর্ষণ করতে থাকে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮১৫ | 4815 | ٤۸۱۵

পরিচ্ছদঃ ২৫১০. যদি কোন মহিলা তার স্বামীর বিছানা বাদ দিয়ে আলাদা বিছানায় রাত কাটায়
৪৮১৫। মুহাম্মদ ইবনু আর’আরা (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি কোন স্ত্রী তার স্বামীর শয্যা ছেড়ে অন্যত্র রাত্রি যাপন করে এবং যতক্ষণ না সে তার স্বামীর শয্যায় ফিরে আসে, ততক্ষণ ফেরেশতারা তার ওপর লা’নত বর্ষণ করতে থাকে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮১৬ | 4816 | ٤۸۱٦

পরিচ্ছদঃ ২৫১১. স্বামীর অনুমতি ছাড়া অন্য কাউকে স্বামীগৃহে প্রবেশ করতে দেয়া উচিত নয়
৪৮১৬। আবূল ইয়ামান (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন স্বামী উপস্থিত থাকবে, তখন স্বামীর অনুমতি ছাড়া রোযা রাখবে না এবং স্বামীর অনুমতি ছাড়া অন্য কাউকে তার গৃহে প্রবেশ করতে দেবে না। যদি কোন স্ত্রী স্বামীর নির্দেশ ছাড়া তার সম্পদ থেকে খরচ করে, তাহলে স্বামী তার অর্ধেক সওয়াব পাবে। হাদীসটি সিয়াম অধ্যায়ে আবূয্‌ যানাদ মূসা থেকে, তিনি নিজ পিতা থেকে এবং তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮১৭ | 4817 | ٤۸۱۷

পরিচ্ছদঃ ২৫১১. স্বামীর অনুমতি ছাড়া অন্য কাউকে স্বামীগৃহে প্রবেশ করতে দেয়া উচিত নয়
৪৮১৭। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … উসামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি জান্নাতের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখতে পেলাম, যারা জান্নাতে প্রবেশ করেছে তাদের অধিকাংশই গরীব-মিসকীন; অথচ ধনবানগণ আটকা পড়ে আছে। বিপরীতে জাহান্নামীদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমি জাহান্নামের প্রবেশ দ্বারে দাঁড়ালাম এবং দেখলাম যে, অধিকাংশই নারী।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮১৮ | 4818 | ٤۸۱۸

পরিচ্ছদঃ ২৫১২. ‘আল-আশীর’ অর্থাৎ স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞ হওয়া । ‘আল-আশীর’ বলতে সাথী-সঙ্গী বা বন্ধুকে বোঝায় । এ শব্দ মু’আশারা থেকে গৃহীত । এ প্রসঙ্গে আবু সাঈদ (রা) রাসূলুল্লাহ্‌ থেকে হাদীস বর্ণনা করেন
৪৮১৮। আবদুল্লাহ‌ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আবদুল্লাহ‌ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় একদিন সুর্য গ্রহন আরম্ভ হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতুল খুসুফ বা সুর্যগ্রহনের সালাত (নামায/নামাজ) পড়লেন এবং লোকেরাও তার সাথে অংশগ্রহণ করল। তিনি এত দীর্ঘক্ষন কিয়াম করলেন, যাতে সূরা বাকারার সমপরিমাণ কুরআন পাঠ করা যায়। এরপর তিনি দীর্ঘক্ষন রুকূ করলেন এবং মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকলেন; এ প্রথম কিয়ামের চেয়ে কম সময় ছিল। তারপর কুরআন তিলাওয়াত করলেন, পুনরায় দীর্ঘক্ষন রুকূ করলেন। কিন্তু এবারের রুকূর পরিমাণ পুর্বের চেয়ে সংক্ষিপ্ত ছিল। এরপর তিনি দাঁড়ালেন এবং সিজদায় গেলেন। এরপর তিনি কিয়াম করলেন, কিন্তু এবারের সময় ছিল পুর্বের কিয়ামের চেয়ে সল্পস্থায়ী। এরপর পুনরায় তিনি রুকূতে গেলেন, কিন্তু এবারের রুকূর সময় পূর্ববর্তী রুকূর সময়ের চেয়ে কম ছিল। এরপর পুনরায় তিনি দাঁড়ালেন। কিন্তু এবারে দাঁড়াবার সময় ছিল পুর্বের চেয়েও কম। এরপর রুকূতে গেলেন; এবারের রুকূর সময় পুর্ববর্তী রুকূর চেয়ে কম ছিল। তারপর সিজদায় গেলেন এবং সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করলেন। ততক্ষনে সুর্যগ্রহন শেষ হয়ে গেছে।

এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, চন্দ্র এবং সুর্য এ দু’টি আল্লাহর নিদর্শনের অন্যতম। কারো জন্ম বা মৃত্যুর কারণে এদের গ্রহন হয় না। তাই তোমার যখন প্রথম গ্রহন দেখতে পাও, তখন আল্লাহকে স্মরণ কর।

এরপর তাঁরা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা আপনাকে দেখতে পেলাম যে, আপনি কিছু নেয়ার জন্য হাত বাড়িয়েছেন, এরপর আবার আপনাকে দেখতে পেলাম যে, আপনি পিছনের দিকে সরে এলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি জান্নাত দেখতে পেলাম অথবা আমাকে জান্নাত দেখান হয়েছে এবং আমি সেখান থেকে আঙ্গুরের থোকা ছিঁড়ে আনার জন্য হাত বাড়ালাম এবং তা যদি আমি ধরতে পারতাম, তবে তোমরা তা থেকে পৃথিবীর শেষ দিন পর্যন্ত খেতে পারতে। এরপর আমি দোযখের আগুন দেখতে পেলাম। আমি এর পূর্বে কখনও এত ভয়াবহ দৃশ্য দেখিনি এবং আমি আরও দেখতে পেলাম যে, তার অধিকাংশ আদিবাসীই নারী।

লোকেরা জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এর কারন কি? তিনি বললেন, এটা তাদের অকৃতজ্ঞতার ফল স্বরূপ। লোকেরা বলল, তারা কি আল্লাহ তা’আলার সাথে নাফরমানী করে? তিনি বললেন, তারা তাদের স্বামীদের প্রতি অকৃতজ্ঞ এবং তাদের প্রতি যে অনুগ্রহ দেখানো হয়, তার জন্য তাদের শোকর নেই। তোমারা যদি সারা জীবন তাদের সাথে ভাল ব্যবহার কর; কিন্তু তারা যদি কখনও তোমার দ্বারা কষ্টদায়ক কোন ব্যবহার দেখতে পায়, তখন বলে বসে, আমি তোমার থেকে জীবনে কখনও ভাল ব্যবহার পেলাম না।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮১৯ | 4819 | ٤۸۱۹

পরিচ্ছদঃ ২৫১২. ‘আল-আশীর’ অর্থাৎ স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞ হওয়া । ‘আল-আশীর’ বলতে সাথী-সঙ্গী বা বন্ধুকে বোঝায় । এ শব্দ মু’আশারা থেকে গৃহীত । এ প্রসঙ্গে আবু সাঈদ (রা) রাসূলুল্লাহ্‌ থেকে হাদীস বর্ণনা করেন
৪৮১৯। উসমান ইবনু হায়সাম (রহঃ) … ইমরান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি জান্নাতের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম, দেখলাম, অধিকাংশ বাসিন্দাই হচ্ছে গরীব এবং দোযখের দিকে তাকিয়ে দেখি তার অধিকাংশ অধিবাসী হচ্ছে নারী। আইউব এবং সালম বিন যরীর উক্ত হাদীসের সমর্থন ব্যক্ত করেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮২০ | 4820 | ٤۸۲۰

পরিচ্ছদঃ ২৫১৩. তোমার স্ত্রীর তোমার ওপর অধিকার আছে । হযরত আবু হুযায়ফা (রা) এ প্রসঙ্গে নবী (সাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন
৪৮২০। মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) … আবদুল্লাহ‌ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হে আবদুল্লাহ‌! আমাকে কি এ খবর প্রদান করা হয়নি যে, তুমি রাতভর ইবাদতে দাঁড়িয়ে থাক এবং দিনভর সিয়াম পালন কর? আমি বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, তুমি এরূপ করো না, বরং সিয়ামও পালন কর, ইফতারও কর, রাত জেগে ইবাদত কর এবং নিদ্রাও যাও। তোমার শরীরেরও তোমার ওপর হক আছে; তোমার চোখেরও তোমার উপর হক আছে এবং তোমার স্ত্রীরও তোমার ওপর হক আছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮২১ | 4821 | ٤۸۲۱

পরিচ্ছদঃ ২৫১৪. স্ত্রী স্বামীগৃহের রক্ষক
৪৮২১। আবদান (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেকেই এক একজন রক্ষক এবং তোমরা প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। আমীর রক্ষক, একজন ব্যাক্তি তার পরিবারের লোকদের রক্ষক, একজন নারী তার স্বামীর গৃহের ও সন্তানদের রক্ষক। এ ব্যাপারে তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক, আর তোমাদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ অধীনস্ত লোকদের রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮২২ | 4822 | ٤۸۲۲

পরিচ্ছদঃ ২৫১৫. পুরুষ মহিলাদের ওপর কর্তৃত্বকারী এবং দায়িত্বশীল, যেহেতু আল্লাহ্‌ তা’আলা একে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন ….. নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ মহান ও শ্রেষ্ঠ
৪৮২২। খালিদ ইবনু মাখ্‌লাদ (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শপথ করলেন যে, এক মাসের মধ্যে তিনি স্ত্রীদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করবেন না। তিনি নিজস্ব একটি উঁচু কামরায় অবস্থান কছিলেন। ঊনত্রিশ দিন অতিবাহিত হলে তিনি সেখান থেকে নিচে নেমে এলেন। তাঁকে বলা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি শপথ করেছেন যে, এক মাসের মধ্যে কোন স্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করবেন না। তিনি বললেন, মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়ে থাকে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮২৩ | 4823 | ٤۸۲۳

পরিচ্ছদঃ ২৫১৬. নবী (সাঃ) এর আপন স্ত্রীদের সাথে আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত এবং তাদের কক্ষের বাইরে অন্য কক্ষে অবস্থানের ঘটনা
৪৮২৩। আবূ আসিম (রহঃ) … উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শপথ গ্রহন করলেন যে, এক মাসের মধ্যে তাঁর কতিপয় বিবির নিকট তিনি গমন করবেন না; কিন্তু যখন ঊনত্রিশ দিন অতিবাহিত হল তখন তিনি সকালে কিংবা বিকালে তাঁদের কাছে গেলেন। কোন একজন তাঁকে বলেলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি শপথ করেছেন এক মাসের মধ্যে কোন বিবির কাছে যাবেন না। তিনি বললেন, মাস ঊনত্রিশ দিনেরও হয়ে থাকে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮২৪ | 4824 | ٤۸۲٤

পরিচ্ছদঃ ২৫১৬. নবী (সাঃ) এর আপন স্ত্রীদের সাথে আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত এবং তাদের কক্ষের বাইরে অন্য কক্ষে অবস্থানের ঘটনা
৪৮২৪। আলী ইবনু আবদুল্লাহ‌ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একদিন প্রত্যুষে দেখতে পেলাম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিবিগণ কাঁদছেন এবং তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে পরিবারের লোকজনও রয়েছে। আমি মসজিদে গেলাম এবং সেখানকার অবস্থা ছিল জনাকীর্ণ। উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) সেখানে এলেন এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপরিস্থিত কক্ষে আরোহণ করলেন এবং সালাম করলেন, কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন উত্তর দিলেন না। পুনরায় তিনি সালাম দিলেন; কিন্তু কেউ কোনরূপ সাড়া দিল না। আবার তিনি সালাম দিলেন; কিন্তু কেউ কোনরূপ জবাব দিল না। এরপর খাদেমকে ডাকলেন এবং তিনি ভেতরে প্রবেশ করলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি আপনার বিবিগণকে তালাক দিয়েছেন? তিনি বললেন, না, কিন্তু আমি শপথ করেছি যে, তাদের কাছে এক মাস পর্যন্ত যাব না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঊনত্রিশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করে তাঁর বিবিগণের কাছে গমন করেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮২৫ | 4825 | ٤۸۲۵

পরিচ্ছদঃ ২৫১৭. স্ত্রীদের প্রহার করা নিন্দনীয় কাজ এবং আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেনঃ (প্রয়োজনে) তাদেরকে মৃদু প্রহার কর
৪৮২৫। মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আবদুল্লাহ‌ ইবনু যাম’আ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কেউ নিজ স্ত্রীদেরকে গোলামের মতো প্রহার করো না। কেননা, দিনের শেষে তার সাথে তো মিলিত হবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮২৬ | 4826 | ٤۸۲٦

পরিচ্ছদঃ ২৫১৮. অবৈধ কাজে স্ত্রী স্বামীর অনুগত্য করবে না
৪৮২৬। খাল্লাদ ইবনু ইয়াহ্‌ইয়া (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক আনসারী মহিলা তার মেয়েকে শাদী দিলেন। কিন্তু তার মাথার চুলগুলো উঠে যেতে লাগল। এরপর সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে এ ঘটনা বর্ণনা করে বলল, আমার স্বামী আমাকে বলেছে আমি যেন আমার মেয়ের মাথায় কৃত্রিম চুল পরিধান করিয়ে দেই। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না তা করো না, কারন, আল্লাহ তা’আলা এ ধরনের মহিলাদের ওপর লা’নত বর্ষণ করে থাকেন, যারা মাথায় কৃত্রিম চুল পরিধান করে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮২৭ | 4827 | ٤۸۲۷

পরিচ্ছদঃ ২৫১৯. আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেছেন, কোন স্ত্রীলোক যখন তার স্বামীর পক্ষ থেকে অশোভন ব্যবহার কিংবা উপেক্ষার আশংকা করে
৪৮২৭। ইবনু সালাম (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, “যদি কোন স্ত্রী তার স্বামীর পক্ষ থেকে নিষ্ঠুরতা বা উপেক্ষার আশংকা করে” এই আয়াত প্রসঙ্গে বলেন, এ আয়াত হচ্ছে ঐ মহিলার সম্পর্কে, যার স্বামী তার স্ত্রীকে নিজের কাছে রাখতে চায় না; বরং তাকে তালাক দিয়ে অন্য কোন মহিলাকে শাদী করতে চায়। তখন তার স্ত্রী তাকে বলে, আমাকে রাখ এবং তালাক দিও না বরং অন্য মহিলাকে বিয়ে করে নাও এবং তুমি ইচ্ছা করলে আমাকে খোরপোষ না-ও দিতে পার আর আমকে শয্যাসঙ্গিনী না-ও করতে পার। আল্লাহ তা’আলার উক্ত আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে, স্বামী-স্ত্রী যদি পারস্পরিক সন্ধি করে নেয়, তবে তাতে কোন দোষ নেই এবং সন্ধি করা উত্তম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮২৮ | 4828 | ٤۸۲۸

পরিচ্ছদঃ ২৫২০. আযল প্রসঙ্গে
৪৮২৮। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে আমরা ‘আযল’ করতাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮২৯ | 4829 | ٤۸۲۹

পরিচ্ছদঃ ২৫২০. আযল প্রসঙ্গে
৪৮২৯। আলী ইবনু আবদুল্লাহ‌ (রহঃ) … জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা ‘আযল’ করতাম, তখন কুরআন নাযিল হত। অন্য সূত্র থেকেও জাবির (রাঃ) এরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৩০ | 4830 | ٤۸۳۰

পরিচ্ছদঃ ২৫২০. আযল প্রসঙ্গে
৪৮৩০। আবদুল্লাহ‌ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আসমা (রহঃ) … আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধকালীন সময় গনীমত হিসেবে কিছু দাসী পেয়েছিলাম। আমরা তাদের সাথে আযল করতাম। এরপর আমরা এ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি উত্তরে বললেনঃ আরে! তোমার কি এমন কাজও করো? একই প্রশ্ন তিনি তিনবার করলেন এবং পরে বললেন, কিয়ামত পর্যন্ত যে রূহ পয়দা হবার, তা অবশ্যই পয়দা হবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৩১ | 4831 | ٤۸۳۱

পরিচ্ছদঃ ২৫৩১. আত্মমর্যাদাবোধ । হযরত সা’দ ইব্‌ন উবাদা (রা) বললেন, আমি যদি অন্য কোন পুরুষকে আমার স্ত্রীর সাথে দেখতে পাই; তাহলে আমি তাকে তরবারির ধারালো দিক দিয়ে আঘাত করব অর্থাৎ হত্যা করব । নবী (সাঃ) তাঁর সাহাবিগণকে বললেন, তোমরা কি সা’দের আত্মমর্যাদাবোধের কারণে আশ্চর্যান্বিত হচ্ছ ? (আল্লাহ্‌র কসম!) আমার আত্মমর্যাদাবোধ তাঁর চেয়েও অনেক বেশি এবং আল্লাহ্‌র আত্মমর্যাদাবোধ আমার চেয়েও অনেক বেশি
৪৮৩১। আবূ নু’আয়ম (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখনই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে যাওয়ার ইরাদা করতেন, তখনই বিবিগণের মধ্যে লটারি করতেন। এক সফরের সময় আয়িশা (রাঃ) এবং হাফসা (রাঃ) এর নাম লটারিতে ওঠে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অভ্যাস ছিল যখন রাত হত তখন আয়িশা (রাঃ) এর সাথে এক সওয়ারীতে আরোহণ করতেন এবং তাঁর সাথে কথা বলতে বলতে পথ চলতেন। একরাতে হাফসা (রাঃ) আয়িশা (রাঃ) কে বললেন, আজ রাতে তুমি কি আমার উটে আরোহণ করবে এবং আমি তোমার উটে, যাতে করে আমি তোমাকে এবং তুমি আমাকে এক নতুন অবস্থায় দেখতে পাবে? আয়িশা (রাঃ) উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, আমি রাজি আছি।

সে হিসাবে আয়িশা (রাঃ) হাফসা (রাঃ) এর উটে এবং হাফসা (রাঃ) আয়িশা (রাঃ) এর উটে সওয়ার হলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়িশা (রাঃ) এর নির্ধারিত উটের কাছে এলেন, যার ওপর হাফসা (রাঃ) বসা ছিলেন। তিনি সালাম করলেন এবং তাঁর পার্শ্বে বসে সফর করলেন। পথিমধ্যে এক স্থানে সবাই অবতরণ করলেন। . আয়িশা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হলেন। যখন তাঁরা সকলেই অবতরণ করলেন তখন আয়িশা (রাঃ) নিজ পদযুগল ‘ইযখির’ নামক ঘাসের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে বলতে লাগলেন, হে আল্লাহ! তুমি আমার জন্য কোন সাপ বা বিচ্ছু পাঠিয়ে দাও, যাতে আমাকে দংশন করে। কেননা, আমি এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কিছু বলতে পারব না।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৩২ | 4832 | ٤۸۳۲

পরিচ্ছদঃ ২৫২২. যে স্ত্রী স্বামীকে নিজের পালার দিন সতীনকে দিয়ে দেয় এবং এটা কিভাবে ভাগ করতে হবে
৪৮৩২। মালিক ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সওদা বিনতে যাম’আ (রাঃ) তাঁর পালার রাতে আয়িশা (রাঃ) কে দান করেছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়িশা (রাঃ) এর জন্য দু’দিন বরাদ্দ করেন একদিন আয়িশা (রাঃ) এর জন্য নির্দিষ্ট দিন এবং সওদা (রাঃ) এর দিন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৩৩ | 4833 | ٤۸۳۳

পরিচ্ছদঃ ২৫২৪. যদি বিধবা বিবাহিতা স্ত্রী’র উপস্থিতিতে কুমারী মেয়ে শাদী করে
بَابُ الْعَدْلِ بَيْنَ النِّسَاءِ

وَلَنْ تَسْتَطِيعُوا أَنْ تَعْدِلُوا بَيْنَ النِّسَاءِ} إِلَى قَوْلِهِ: {وَاسِعًا حَكِيمًا

২৫২৩. অনুচ্ছেদঃ আপন স্ত্রীদের মধ্যে ইনসাফ করা। আল্লাহ্‌ বলেন, “স্ত্রীদের মধ্যে পুরাপুরি সুবিচার ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখা তোমাদের ক্ষমতার বাইরে ….. বস্তুত আল্লাহ্‌ বিশাল ক্ষমতার মালিক এবং মহাজ্ঞানী ”

৪৮৩৩। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নত এই যে, যদি কেউ কুমারী মেয়ে শাদী করে, তবে তার সাথে সাত দিন-রাত্রি যাপন করতে হবে আর যদি কেউ কোন বিধবা মহিলাকে বিবাহ করে, তাহলে তার সাথে যেন তিন দিন অতিবাহিত করে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৩৪ | 4834 | ٤۸۳٤

পরিচ্ছদঃ ২৫২৫. যদি কেউ কুমারী স্ত্রী থাকা অবস্থায় শাদী করে কোন বিধবাকে
৪৮৩৪। ইউসুফ ইবনুুে রাশিদ (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নত হচ্ছে, যদি কেউ বিধবা স্ত্রী থাকা অবস্থায় কুমারী শাদী করে তবে সে যেন তার সঙ্গে সাত দিন অতিবাহিত করে এবং এরপর পালা অনুসারে এবং কেউ কোন বিধবাকে শাদী করে এবং তার ঘরে পূর্ব থেকেই কুমারী স্ত্রী থাকে তবে সে যেন তার সাথে তিন দিন কাটায় এবং তারপর পালাক্রমে। আবূ কিলাবা (রহঃ) বলেন, আমি ইচ্ছা করলে বলতে পারতাম যে, আনাস (রাঃ) এর হাদীস রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন। আবদুর রাযযাক বলেন, আমি ইচ্ছা করলে বলতে পারতাম যে, খালেদ এই হাদীস রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৩৫ | 4835 | ٤۸۳۵

পরিচ্ছদঃ ২৫২৬. যে ব্যক্তি একই গোসলে একাধিক স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয়
৪৮৩৫। আবূল আলা ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) … কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, . আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই রাতে সকল বিবির সঙ্গে মিলিত হয়েছেন। ঐ সময় তাঁর সর্বমোট ন’জন বিবি ছিল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৩৬ | 4836 | ٤۸۳٦

পরিচ্ছদঃ ২৫২৭. দিবাভাগে স্ত্রীদের নিকট গমন করা
৪৮৩৬। ফারাওয়া (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করতেন, তখন স্বীয় স্ত্রীদের মধ্যে থেকে যে কোন একজনের নিকট গমন করতেন। একদিন তিনি বিবি হাফসা (রাঃ) এর কাছে গেলেন এবং স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি সময় কাটালেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৩৭ | 4837 | ٤۸۳۷

পরিচ্ছদঃ ২৫২৮. কোন ব্যক্তি যদি অসুস্থতার সময় স্ত্রীদের অনুমতি নিয়ে এক স্ত্রীর কাছে সেবা-শুশ্রূষার জন্য থাকে এবং তাকে যদি সবাই অনুমতি দেয়
৪৮৩৭। ইসমাঈল (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর যে অসুখে ইন্তেকাল করেছিলেন, সেই অসুখের সময়ে জিজ্ঞেস করতেন, আগামীকাল আমার কার কাছে থাকার পালা? আগামীকাল আমার কার কাছে থাকার পালা? তিনি আয়িশা (রাঃ) এর পালার জন্য এরূপ বলতেন। সুতরাং উম্মাহাতুল মু’মিনীন তাঁকে যার ঘরে ইচ্ছা থাকার অনুমতি দিলেন এবং তিনি ওফাত পর্যন্ত আয়িশা (রাঃ)-এর ঘরেই অবস্থান করেন এবং সেখানে তাঁর স্বাভাবিক পালার দিন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমার কাছে থাকার পালার দিনই আল্লাহ তাঁর প্রিয় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাঁর নিজের কাছে নিয়ে গেলেন এ অবস্থায় যে, আমার বুক ও গলার মাঝখানে তাঁর বুক ও মাথা ছিল এবং তাঁর মুখের লালা আমার মুখের লালার সঙ্গে মিশেছিল। [১]

[১] আয়িশা (রাঃ) কাঁচা মিসওয়াক চিবিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দিলেন এবং নিজ দন্ত দ্বারা চিবালেন, এমনি করে একজনের মুখের লালা অন্যের মুখে গেল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৩৮ | 4838 | ٤۸۳۸

পরিচ্ছদঃ ২৫২৯. এক স্ত্রীকে অন্য স্ত্রীর চেয়ে বেশি ভালবাসা
৪৮৩৮। আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ‌ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) উমর (রাঃ) থেকে শুনে বর্ণনা করেছেন যে, . উমর (রাঃ) হাফসা (রাঃ) এর কাছে প্রবেশ করলেন এবং বললেন, হে আমার কন্যা! তার আচরণ-ব্যবহার দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ো না, কারন সে তার সৌন্দর্য ও তার প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভালবাসার কারণে গর্ব অনুভব করে। এ কথার দ্বারা তিনি আয়িশা (রাঃ) কে বুঝিয়েছিলেন। তিনি আরও বললেন, আমি এ ঘটনা আল্লাহর রাসূলের কাছে বললাম। তিনি এ কথা শুনে মুচকি হাসলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৩৯ | 4839 | ٤۸۳۹

পরিচ্ছদঃ ২৫৩০. কোন নারী কর্তৃক কৃত্রিম সাজ-সজ্জা করা এবং সতীনের মুকাবিলায় আত্মগরিমা প্রকাশ করা নিষেধ
৪৮৩৯। সুলায়মান ইবনু হারব্‌ (রহঃ) এবং মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) … আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, কোন একজন মহিলা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার সতীন আছে। এখন তাঁকে রাগানোর জন্য যদি আমার স্বামী আমাকে যা দেয়নি তা বাড়িয়ে বলি, তাতে কি কোন দোষ আছে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যা তোমাকে দেয়া হয়নি, তা দেয়া হয়েছে বলা ঐরূপ প্রতারকের কাজ, যে প্রতারনার জন্য দু প্রস্থ মিথ্যার পোশাক পরল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৪০ | 4840 | ٤۸٤۰

পরিচ্ছদঃ ২৫৩১. আত্মমর্যাদাবোধ । হযরত সা’দ ইব্‌ন উবাদা (রা) বললেন, আমি যদি অন্য কোন পুরুষকে আমার স্ত্রীর সাথে দেখতে পাই; তাহলে আমি তাকে তরবারির ধারালো দিক দিয়ে আঘাত করব অর্থাৎ হত্যা করব । নবী (সাঃ) তাঁর সাহাবিগণকে বললেন, তোমরা কি সা’দের আত্মমর্যাদাবোধের কারণে আশ্চর্যান্বিত হচ্ছ ? (আল্লাহ্‌র কসম!) আমার আত্মমর্যাদাবোধ তাঁর চেয়েও অনেক বেশি এবং আল্লাহ্‌র আত্মমর্যাদাবোধ আমার চেয়েও অনেক বেশি
৪৮৪০। উমর ইবনু হাফ্‌স (রহঃ) … আবদুল্লাহ‌ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহর চেয়ে বেশি আত্মমর্যাদাশীল কেউ নয় এবং এ কারণেই তিনি সকল অশ্লীল কাজ হারাম করেছেন আর (আল্লাহর) প্রশংসার চেয়ে আল্লাহর অধিক প্রিয় কিছু নেই।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৪১ | 4841 | ٤۸٤۱

পরিচ্ছদঃ ২৫৩১. আত্মমর্যাদাবোধ । হযরত সা’দ ইব্‌ন উবাদা (রা) বললেন, আমি যদি অন্য কোন পুরুষকে আমার স্ত্রীর সাথে দেখতে পাই; তাহলে আমি তাকে তরবারির ধারালো দিক দিয়ে আঘাত করব অর্থাৎ হত্যা করব । নবী (সাঃ) তাঁর সাহাবিগণকে বললেন, তোমরা কি সা’দের আত্মমর্যাদাবোধের কারণে আশ্চর্যান্বিত হচ্ছ ? (আল্লাহ্‌র কসম!) আমার আত্মমর্যাদাবোধ তাঁর চেয়েও অনেক বেশি এবং আল্লাহ্‌র আত্মমর্যাদাবোধ আমার চেয়েও অনেক বেশি
৪৮৪১। আবদুল্লাহ‌ ইবনু মাসলামা (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে উম্মতে মুহাম্মদী! আল্লাহর চেয়ে বেশি আত্মমর্যাদাবোধ আর কারো নেই। তিনি তাঁর কোন বান্দা নর হোক কি নারী হোক তার ব্যভিচার তিনি দেখতে চান না। হে উম্মতে মুহাম্মদী! যা আমি জানি, তা যদি তোমরা জানতে, তাহলে খুব কম হাসতে এবং বেশি বেশি কাঁদতে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৪২ | 4842 | ٤۸٤۲

পরিচ্ছদঃ ২৫৩১. আত্মমর্যাদাবোধ । হযরত সা’দ ইব্‌ন উবাদা (রা) বললেন, আমি যদি অন্য কোন পুরুষকে আমার স্ত্রীর সাথে দেখতে পাই; তাহলে আমি তাকে তরবারির ধারালো দিক দিয়ে আঘাত করব অর্থাৎ হত্যা করব । নবী (সাঃ) তাঁর সাহাবিগণকে বললেন, তোমরা কি সা’দের আত্মমর্যাদাবোধের কারণে আশ্চর্যান্বিত হচ্ছ ? (আল্লাহ্‌র কসম!) আমার আত্মমর্যাদাবোধ তাঁর চেয়েও অনেক বেশি এবং আল্লাহ্‌র আত্মমর্যাদাবোধ আমার চেয়েও অনেক বেশি
৪৮৪২। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) … আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর চেয়ে বেশি আত্মমর্যাদাবোধ আর কারো নেই। ইয়াহ্‌ইয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু সালামা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে শুনেছেন যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অনুরূপ হাদীস বলতে শুনেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৪৩ | 4843 | ٤۸٤۳

পরিচ্ছদঃ ২৫৩১. আত্মমর্যাদাবোধ । হযরত সা’দ ইব্‌ন উবাদা (রা) বললেন, আমি যদি অন্য কোন পুরুষকে আমার স্ত্রীর সাথে দেখতে পাই; তাহলে আমি তাকে তরবারির ধারালো দিক দিয়ে আঘাত করব অর্থাৎ হত্যা করব । নবী (সাঃ) তাঁর সাহাবিগণকে বললেন, তোমরা কি সা’দের আত্মমর্যাদাবোধের কারণে আশ্চর্যান্বিত হচ্ছ ? (আল্লাহ্‌র কসম!) আমার আত্মমর্যাদাবোধ তাঁর চেয়েও অনেক বেশি এবং আল্লাহ্‌র আত্মমর্যাদাবোধ আমার চেয়েও অনেক বেশি
৪৮৪৩। আবূ নুআয়ম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, আল্লাহ তা’আলার আত্মমর্যাদাবোধ আছে এবং আল্লাহর আত্মমর্যাদাবোধ এই যে, যেন কোন মু’মিন বান্দা হারাম কাজে লিপ্ত না হয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৪৪ | 4844 | ٤۸٤٤

পরিচ্ছদঃ ২৫৩১. আত্মমর্যাদাবোধ । হযরত সা’দ ইব্‌ন উবাদা (রা) বললেন, আমি যদি অন্য কোন পুরুষকে আমার স্ত্রীর সাথে দেখতে পাই; তাহলে আমি তাকে তরবারির ধারালো দিক দিয়ে আঘাত করব অর্থাৎ হত্যা করব । নবী (সাঃ) তাঁর সাহাবিগণকে বললেন, তোমরা কি সা’দের আত্মমর্যাদাবোধের কারণে আশ্চর্যান্বিত হচ্ছ ? (আল্লাহ্‌র কসম!) আমার আত্মমর্যাদাবোধ তাঁর চেয়েও অনেক বেশি এবং আল্লাহ্‌র আত্মমর্যাদাবোধ আমার চেয়েও অনেক বেশি
৪৮৪৪। মাহমুদ (রহঃ) … আসমা বিনত আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন যুবায়র (রাঃ) আমাকে শাদী করলেন, তখন তার কাছে কোন ধন-সম্পদ ছিল না, এমন কি কোন স্থাবর জমি-জমা, দাস-দাসীও ছিল না; শুধু মাত্র কুয়ো থেকে পানি উত্তোলনকারী একটি উট ও একটি ঘোড়া ছিল। আমি তাঁর উট ও ঘোড়া চড়াতাম, পানি পান করাতাম এবং পানি উত্তোলনকারী মশক ছিঁড়ে গেলে সেলাই করতাম, আটা পিষতাম; কিন্তু ভাল রুটি তৈরি করতে পারতাম না। তাই আনসারী প্রতিবেশী মহিলারা আমার রুটি তৈরিতে সাহায্য করত। আর তাঁরা ছিল খুবই উত্তম নারী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবায়রা (রাঃ) কে একখণ্ড জমি দিয়েছিলেন। আমি সেখান থেকে মাথায় করে খেজুরের আটি বহন করে আনতাম। ঐ জমির দূরত্ব ছিল প্রায় দু’মাইল। একদিন আমি মাথায় করে খেজুরের আটি বহন করে নিয়ে আসছিলাম। এমন সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাক্ষাত হল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে কয়েকজন আনসারও ছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাক ডাকলেন এবং আমাকে তাঁর উটের পিঠে বসার জন্য তাঁর উটকে আখ্‌! আখ্‌! বললেন, যাতে উটটি বসে এবং আমি তাঁর পিঠে আরোহণ করতে পারি।

আমি পরপুরুষের সাথে একত্রে যাওয়াকে লজ্জাবোধ করতে লাগলাম এবং যুবায়র (রাঃ) এর আত্মসম্মানবোধ এর কথা আমার মনে পড়ল। কেননা, সে ছিল খুবই আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ব্যাক্তি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝতে পারলেন, আমি খুব লজ্জিত বোধ করছি। সুতরাং তিনি এগিয়ে চললেন। আমি যুবায়র (রাঃ) এর কাছে পৌঁছলাম এবং বললাম, আমি খেজুরের আটির বোঝা মাথায় নিয়ে আসার সময় পথিমধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে আমার দেখা হয় এবং তাঁর সাথে কিছু সংখ্যক সাহাবী ছিলেন। তিনি তাঁর উটকে হাঁটু গেড়ে বসালেন, যেন আমি তাতে সওয়ার হতে পারি। কিন্তু আমি তোমার আত্মসম্মানের কথা চিন্তা করে লজ্জা অনুভব করলাম। এ কথা শুনে যুবায়র (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! খেজুরের আটির বোঝা মাথায় বহন করা তাঁর সাথে উটে চড়ার চেয়ে আমার কাছে বেশি লজ্জাজনক। এরপর আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) এর ঘোড়া দেখাশোনার জন্য আমাকে সাহায্যার্থে একজন খাদেম পাঠিয়ে দিলেন। এরপরই আমি যেন রেহাই পেলাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৪৫ | 4845 | ٤۸٤۵

পরিচ্ছদঃ ২৫৩১. আত্মমর্যাদাবোধ । হযরত সা’দ ইব্‌ন উবাদা (রা) বললেন, আমি যদি অন্য কোন পুরুষকে আমার স্ত্রীর সাথে দেখতে পাই; তাহলে আমি তাকে তরবারির ধারালো দিক দিয়ে আঘাত করব অর্থাৎ হত্যা করব । নবী (সাঃ) তাঁর সাহাবিগণকে বললেন, তোমরা কি সা’দের আত্মমর্যাদাবোধের কারণে আশ্চর্যান্বিত হচ্ছ ? (আল্লাহ্‌র কসম!) আমার আত্মমর্যাদাবোধ তাঁর চেয়েও অনেক বেশি এবং আল্লাহ্‌র আত্মমর্যাদাবোধ আমার চেয়েও অনেক বেশি
৪৮৪৫। আলী ইবনু মাদানী (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জনৈকা বিবির কাছে ছিলেন। ঐ সময় উম্মুহাতুল মু’মিনীনের আর একজন একটি পাত্রে কিছু খাদ্য পাঠালেন। যে বিবির ঘরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবস্থান করছিলেন সে বিবির খাদেমের হাতে আঘাত করলেন। ফলে খাদ্যের পাত্রটি পড়ে ভেঙ্গে গেল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাত্রের ভাঙ্গা টুকরোগুলো কুড়িয়ে একত্রিত করলেন, তারপর খাদ্যগুলো কুড়িয়ে তাতে রাখলেন এবং বললেন, তোমাদের আম্মাজীর আত্মমর্যাদাবোধে আঘাত লেগেছে। তারপর তিনি খাদেমকে অপেক্ষা করতে বললেন এবং যে বিবির কাছে ছিলেন তাঁর কাছ থেকে একটি পাত্র নিয়ে যার পাত্র ভেঙ্গেছিল, তাকে পাঠাবার ব্যবস্থা করলেন এবং ভাঙ্গা পাত্রটি যে ভেঙ্গেছিল তার কাছেই রাখলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৪৬ | 4846 | ٤۸٤٦

পরিচ্ছদঃ ২৫৩১. আত্মমর্যাদাবোধ । হযরত সা’দ ইব্‌ন উবাদা (রা) বললেন, আমি যদি অন্য কোন পুরুষকে আমার স্ত্রীর সাথে দেখতে পাই; তাহলে আমি তাকে তরবারির ধারালো দিক দিয়ে আঘাত করব অর্থাৎ হত্যা করব । নবী (সাঃ) তাঁর সাহাবিগণকে বললেন, তোমরা কি সা’দের আত্মমর্যাদাবোধের কারণে আশ্চর্যান্বিত হচ্ছ ? (আল্লাহ্‌র কসম!) আমার আত্মমর্যাদাবোধ তাঁর চেয়েও অনেক বেশি এবং আল্লাহ্‌র আত্মমর্যাদাবোধ আমার চেয়েও অনেক বেশি
৪৮৪৬। মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বকর (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি জান্নাতে প্রবেশ করে একটি প্রাসাদ দেখতে পেলাম এবং জিজ্ঞেস করলাম, এটি কার প্রাসাদ? তাঁরা (ফেরশতাগণ) বললেন, এই প্রাসাদটি উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) এর। আমি তার মধ্যে প্রবেশ করতে চাইলাম; কিন্তু [তিনি সেখানে উপস্থিত উমর (রাঃ) এর উদ্দেশ্যে বললেন] তোমার আত্মমর্যাদাবোধ আমাকে সেখানে প্রবেশে বাধা দিল। এ কথা শুনে উমর (রাঃ) বললেন, ইয়া নাবী আল্লাহ! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক! আপনার ক্ষেত্রেও আমি (উমর) আত্মমর্যাদাবোধ প্রকাশ করব?

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৪৭ | 4847 | ٤۸٤۷

পরিচ্ছদঃ ২৫৩১. আত্মমর্যাদাবোধ । হযরত সা’দ ইব্‌ন উবাদা (রা) বললেন, আমি যদি অন্য কোন পুরুষকে আমার স্ত্রীর সাথে দেখতে পাই; তাহলে আমি তাকে তরবারির ধারালো দিক দিয়ে আঘাত করব অর্থাৎ হত্যা করব । নবী (সাঃ) তাঁর সাহাবিগণকে বললেন, তোমরা কি সা’দের আত্মমর্যাদাবোধের কারণে আশ্চর্যান্বিত হচ্ছ ? (আল্লাহ্‌র কসম!) আমার আত্মমর্যাদাবোধ তাঁর চেয়েও অনেক বেশি এবং আল্লাহ্‌র আত্মমর্যাদাবোধ আমার চেয়েও অনেক বেশি
৪৮৪৭। আবদান (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বসা ছিলাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি একদিন ঘুমন্ত অবস্থায় জান্নাতের একটি প্রাসাদের পার্শ্বে একজন মহিলাকে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতে দেখলাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এই প্রাসা’দটি কার? আমাকে বলা হল, এটা উমর (রাঃ) এর। তখন আমি উমরের আত্মমর্যাদার কথা স্মরণ করে পিছনে ফিরে চলে এলাম। এ কথা শুনে উমর (রাঃ) সেই মজলিসেই কাঁদতে লাগলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার সাথেও কি আমি আত্মসম্মানবোধ বজায় রাখব?

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৪৮ | 4848 | ٤۸٤۸

পরিচ্ছদঃ ২৫৩২. মহিলাদের বিরোধিতা এবং তাদের ক্রোধ
৪৮৪৮। উবায়দ ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, “আমি জানি কখন তুমি আমার প্রতি খুশি থাক এবং কখন রাগান্বিত হও।” আমি বললাম, কি করে আপনি তা বুঝতে সক্ষম হন? তিনি বললেন, তুমি প্রসন্ন থাকলে বল, না মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রব-এর কসম! কিন্তু তুমি আমার প্রতি নারাজ থাকলে বল, না! ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর রব এর কসম! শুনে আমি বললাম, আপনি ঠিকই বলেছেন। আল্লাহর্‌ কসম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে ক্ষেত্রে শুধু আপনার নাম মুবারক উচ্চারন করা থেকেই বিরত থাকি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৪৯ | 4849 | ٤۸٤۹

পরিচ্ছদঃ ২৫৩২. মহিলাদের বিরোধিতা এবং তাদের ক্রোধ
৪৮৪৯। আহমদ ইবনু রাজা (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিবিগণের মধ্যে থেকে খাদীজা (রাঃ) এর চেয়ে অন্য কোন বিবির প্রতি বেশি ঈর্ষা-পোষণ করিনি। কারন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায় তাঁর কথা স্মরণ করতেন এবং তাঁর প্রশংসা করতেন। তাছাড়াও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ওহীর মাধ্যমে তাঁকে [খাদিজা (রাঃ)] কে জান্নাতের মধ্যে একটি মতির প্রাসাদের সুসংবাদ দেবার জন্য জ্ঞাত করানো হয়েছিল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৫০ | 4850 | ٤۸۵۰

পরিচ্ছদঃ ২৫৩৩. কন্যার মধ্যে ঈর্ষা সৃষ্টি হওয়া থেকে বাধা প্রদান এবং ইনসাফমূলক কথা
৪৮৫০। কুতায়বা (রহঃ) … মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মিম্বরে বসে বলতে শুনেছি যে, বনি হিশাম ইবনু মুগীরা, আলী ইবনু আবূ তালিবের কাছে তাদের মেয়ে শাদী দেবার জন্য আমার কাছে অনুমতি চেয়েছে; কিন্তু আমি অনুমতি দেব না, আমি অনুমতি দেব না, আমি অনুমতি দেব না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আলী ইবনু আবূ তালিব আমার কন্যাকে তালাক দেয় এবং এর পরেই সে তাদের মেয়েকে শাদী করতে পারে। কেননা, ফাতেমা হচ্ছে আমার কলিজার টুকরা এবং সে যা ঘৃণা করে, আমিও তা ঘৃণা করি এবং তাকে যা কষ্ট দেয়, তা আমাকেও কষ্ট দেয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৫১ | 4851 | ٤۸۵۱

পরিচ্ছদঃ ২৫৩৪. পুরুষের সংখ্যা কম হবে এবং নারীর সংখ্যা বেড়ে যাবে । আবু মূসা (রা) নবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, (এমন একটা সময় আসবে যখন) একজন পুরুষ দেখতে পাবে, তাঁর পেছনে চল্লিশজন নারী অনুসরণ করছে আশ্রয়ের জন্য । কেননা, তখন পুরুষের সংখ্যা অনেক কমে যাবে আর নারীর সংখ্যা বেড়ে যাবে
৪৮৫১। হাফ্‌স ইবনু উমরুল হাওদী (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি তোমাদের কাছে একখানি হাদীস বর্ণনা করব, যা আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে শুনেছি এবং আমি ছাড়া আর কেউ সে হাদীস বলতে পারবে না। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের আলামতের মধ্যে রয়েছে ইল্‌ম উঠে যাবে, অজ্ঞতা বেড়ে যাবে, ব্যভিচার বৃদ্ধি পাবে, মদ্য পানের মাত্রা বেড়ে যাবে, পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে এবং নারীদের সংখ্যা এত অধিক হারে বেড়ে যাবে যে, একজন পুরুষকে পঞ্চাশজন নারীর দেখাশোনা করতে হবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৫২ | 4852 | ٤۸۵۲

পরিচ্ছদঃ ২৫৩৫. ‘মাহ্‌রাম’ অর্থাৎ যার সাথে শাদী হারাম সে ব্যতীত অন্য কোন পুরুষের সাথে কোন নারী নির্জনে দেখা করবে না এবং স্বামীর অনুপস্থিতিতে কোন নারীর কাছে কোন পুরুষ গমন (হারাম)
৪৮৫২। কুতুয়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … উকবা ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহিলাদের নিকট একাকী যাওয়া থেকে বিরত থাক। জনৈক আনসার জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! দেবরদের ব্যাপারে কি নির্দেশ? তিনি উত্তর দিলেন, দেবর তো মৃত্যুতুল্য।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৫৩ | 4853 | ٤۸۵۳

পরিচ্ছদঃ ২৫৩৫. ‘মাহ্‌রাম’ অর্থাৎ যার সাথে শাদী হারাম সে ব্যতীত অন্য কোন পুরুষের সাথে কোন নারী নির্জনে দেখা করবে না এবং স্বামীর অনুপস্থিতিতে কোন নারীর কাছে কোন পুরুষ গমন (হারাম)
৪৮৫৩। আলী ইবনু আবদুল্লাহ‌ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মাহ্‌রমের উপস্থিতি ব্যতীত কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে সাক্ষাত করবে না। এক ব্যাক্তি উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার স্ত্রী হাজ্জ (হজ্জ) করার জন্য বেরিয়ে গেছে এবং অমুক অমুক জিহাদে অংশগ্রহণের জন্য আমার নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ফিরে যাও এবং স্বীয় স্ত্রীর সাথে হাজ্জ (হজ্জ) সমাপন কর।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৫৪ | 4854 | ٤۸۵٤

পরিচ্ছদঃ ২৫৩৬. লোকজনের উপস্থিতিতে স্ত্রীলকের সাথে পুরুষের কথা বলা বৈধ
৪৮৫৪। মুহাম্মদ ইবনু বাশ্‌শার (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক আনসারী মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে এলে, তিনি তাকে ডেকে এক পার্শ্বে নিয়ে বললেন, আল্লাহর কসম! আল্লাহর কসম! তোমার আমার কাছে সকল লোকের চেয়ে অধিক প্রিয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৫৫ | 4855 | ٤۸۵۵

পরিচ্ছদঃ ২৫৩৭. যে পুরুষ মহিলার মত সাজ-গোজ করে, তার সাথে কোন নারীর চলাফেরা নিষেধ
৪৮৫৫। উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে থাকাকালে সেখানে একজন মেয়েলী ভাবাপন্ন পুরুষ ছিল। ঐ মেয়েলী পুরুষটি উম্মে সালামার ভাই আবদুল্লাহ‌ ইবনু আবূ উমাইয়াকে বলল, যদি আগামীকাল আপনাদেরকে আল্লাহ তায়েফ বিজয় দান করেন, তবে আমি আপনাকে গায়লানের মেয়েকে গ্রহন করারা পরামর্শ দিচ্ছি। কেননা, সে এত মেদবহুল যে, সে সম্মুখ দিকে আগমন করলে তার পেটের চামড়ায় চার ভাঁজ পড়ে আর পিছু ফিরে যাওয়ার সময় আট ভাঁজ পড়ে। একথা শোনার পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (এ মেয়েলী পুরুষ হিজড়া) সে যেন কখনো তোমাদের কাছে আর না আসে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৫৬ | 4856 | ٤۸۵٦

পরিচ্ছদঃ ২৫৩৮. হাব্‌শী বা অনুরূপ লোকদের প্রতি মহিলাদের সন্দেহজনক না হলে দৃষ্টি দেয়া যায়
৪৮৫৬। ইসহাক ইবনু ইববাহীম (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদিন হাবশীদের খেলা দেখছিলাম। তারা মসজিদের আঙ্গিনায় খেলা খেলছিল। আমি খেলা দেখে বিরক্ত না হওয়া পর্যন্ত দেখছিলাম। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চাঁদর দিয়ে আমাকে আড়াল করে রেখেছিলেন। তোমরা অনুমান কর যে, অল্পবয়স্কা মেয়েরা খেলাধূলা দেখতে কি পরিমাণ আগ্রহী।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৫৭ | 4857 | ٤۸۵۷

পরিচ্ছদঃ ২৫৩৯. প্রয়োজনে মহিলাদের ঘরের বাইরে যাওয়া
৪৮৫৭। ফারাওয়া ইবনু আবূল মাগ্‌রা (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে উম্মাহাতুল মু’মিনীন সওদা বিনত জামাআ (রাঃ) কোন কারণে বাইরে গেলেন। উমর (রাঃ) তাঁকে দেখে চিনে ফেললেন। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! হে সওদা (রাঃ) তুমি নিজেকে আমাদের কাছ থেকে লুকাতে পারনি। এতে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট ফিরে গেলেন এবং উক্ত ঘটনা তাঁর কাছে বললেন। তিনি তখন আমার ঘরে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন এবং তাঁর হাতে গোশ্‌তপূর্ণ একখানা হাড় ছিল। এমতাবস্থায় তাঁর কাছে ওহী নাযিল হল। যখন ওহী নাযিল হওয়া শেষ হল, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তা’আলা প্রয়োজনে তোমাদের জন্য বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৫৮ | 4858 | ٤۸۵۸

পরিচ্ছদঃ ২৫৪০. মসজিদে অথবা অন্য কোথাও যাওয়ার জন্য মহিলাদের স্বামীর অনুমতি গ্রহন
৪৮৫৮। আলী ইবনু আবদুল্লাহ‌ (রহঃ) … সালিমের পিতা [ইবনু উমর (রাঃ)] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি তোমাদের কারো স্ত্রী মসজিদে যাওয়ার অনুমতি চায়, তাহলে তাকে নিষেধ করো না।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৫৯ | 4859 | ٤۸۵۹

পরিচ্ছদঃ ২৫৪১. যে সমস্ত মহিলার সাথে দুধ পান করার কারণে দুধ সম্পর্কীয় আত্মীয়তা হয়েছে তাদের সাথে সাক্ষাতের জন্য গমন করা এবং তাদের দিকে দৃষ্টিপাত করা যায়
৪৮৫৯। আবদুল্লাহ‌ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার দুধ সম্পর্কের চাচা এলেন এবং আমার কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন; কিন্তু আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে অনুমতি নেয়া ছাড়া প্রবেশের অনুমতি দিতে অস্বীকার করলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসার পর তাঁকে আমি জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তিনি হচ্ছেন তোমার চাচা। সুতরাং তাকে ভিতরে আসার অনুমতি দাও। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে মহিলা দুধ পান করিয়েছেন; কিন্তু কোন পুরুষ আমাকে দুধ পান করায়নি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে তোমার চাচা, সুতরাং তাকে তোমার কাছে আসার অনুমতি দাও। আয়িশা (রাঃ) বলেন, এই ঘটনা পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর। তিনি আরও বলেন, জন্মসূত্রে যারা হারাম, দুধ সম্পর্কের কারনেও তাঁরা হারাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৬০ | 4860 | ٤۸٦۰

পরিচ্ছদঃ ২৫৪২. এক মহিলা আর এক মহিলার সঙ্গে দেখা করে তার বর্ণনা যেন নিজের স্বামীর কাছে না দেয়
৪৮৬০। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আবদুল্লাহ‌ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন নারী যেন অন্য কোন নারীর সঙ্গে সাক্ষাত করে তার বর্ণনা নিজ স্বামীর নিকট এমনভাবে না দেয়, যেন সে (স্বামী) তাকে (ঐ নারীকে) দেখতে পাচ্ছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৬১ | 4861 | ٤۸٦۱

পরিচ্ছদঃ ২৫৪২. এক মহিলা আর এক মহিলার সঙ্গে দেখা করে তার বর্ণনা যেন নিজের স্বামীর কাছে না দেয়
৪৮৬১। উমর ইবনু হাফ্‌সা ইবনু গিয়াস (রহঃ) … আবদুল্লাহ‌ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন নারী যেন অন্য কোন নারীর সঙ্গে সাক্ষাত করে তার বর্ণনা নিজ স্বামীর নিকট এমনভাবে না দেয়, যেন সে তাকে দেখতে পাচ্ছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৬২ | 4862 | ٤۸٦۲

পরিচ্ছদঃ ২৫৪৩. কোন ব্যক্তির এ কথা বলা যে, নিশ্চয়ই আজ রাতে আমি আমার সকল স্ত্রীর সাথে মিলিত হব
৪৮৬২ মাহমুদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, দাউদ (আলাইহিস সালাম) এর পুত্র সুলায়মান (আলাইহিস সালাম) একদা বলেছিলেন, নিশ্চয়ই আজ রাতে আমি আমার একশত বিবির সঙ্গে মিলিত হব এবং তাদের প্রত্যেকেই একটি করে পুত্র সন্তান প্রসব করবে, যারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এ কথা শুনে একজন ফেরেশতা বলেছিলেন, আপনি ‘ইন্‌শাআল্লাহ’ বলুন; কিন্তু তিনি একথা ভুলক্রমে বলেননি। এরপর তিনি তার বিবিগণের সঙ্গে মিলিত হলেন; কিন্তু তাদের কেউ কোন সন্তান প্রসব করল না। শুধুমাত্র একজন বিবি একটি অপূর্ণাঙ্গ সন্তান প্রসব করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি সুলায়মান (আলাইহিস সালাম) ‘ইন্‌শাআল্লাহ’ বলতেন, তাহলে আল্লাহ তাঁর আশা পূর্ণ করতেন। আর সেটাই ছিল তাঁর প্রয়োজন মেটানোর জন্য উত্তম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৬৩ | 4863 | ٤۸٦۳

পরিচ্ছদঃ ২৫৪৪. যদি কোন লোক দূরে থাকে অথবা পরিবার থেকে অনেকদিন অনুপস্থিত থাকে, তাহলে বাড়ি আসার পর সঙ্গে সঙ্গেই রাতে ঘরে প্রবেশ করা উচিত নয়, যাতে করে সে এমন কিছু পায় যা তাকে আপন পরিবার সম্পর্কে সন্দিহান করে তোলে, অথবা তাদের কোন ত্রুটি আবিষ্কার করে ।
৪৮৬৩। আদম … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর থেকে এসে রাতে ঘরে প্রবেশ করা অপছন্দ করতেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৬৪ | 4864 | ٤۸٦٤

পরিচ্ছদঃ ২৫৪৪. যদি কোন লোক দূরে থাকে অথবা পরিবার থেকে অনেকদিন অনুপস্থিত থাকে, তাহলে বাড়ি আসার পর সঙ্গে সঙ্গেই রাতে ঘরে প্রবেশ করা উচিত নয়, যাতে করে সে এমন কিছু পায় যা তাকে আপন পরিবার সম্পর্কে সন্দিহান করে তোলে, অথবা তাদের কোন ত্রুটি আবিষ্কার করে ।
৪৮৬৪। মুহাম্মাদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের মধ্যে কেউ দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকে রাতে আকস্মিকভাবে তার ঘরে প্রবেশ করা উচিত নয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৬৫ | 4865 | ٤۸٦۵

পরিচ্ছদঃ ২৫৪৫. সন্তান কামনা করা
৪৮৬৫। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক যুদ্ধে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। যখন আমরা ফিরে আসছিলাম, আমি আমার মন্থর গতি উটের পিঠে ত্বরা করতে লাগলাম। তখন আমার পিছনে একজন আরোহী এসে মিলিত হলেন। তাকিয়ে দেখলাম যে, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি বললেন, তোমার এ ব্যস্ততার কারন কি? আমি বললাম, আমি সদ্য শাদী করেছি। তিনি বললেন, কুমারী, না পূর্ব-বিবাহিতা বিয়ে করেছ? আমি বললাম, পূর্ব-বিবাহিতা। তিনি বললেন, কুমারী করলে না কেন? তুমি তার সাথে আমোদ-প্রমোদ করতে, আর সেও তোমার সাথে আমোদ-প্রমোদ করত। (রাবী) বলেন, আমরা মদিনায় পৌঁছেনিজ নিজ বাড়িতে যাইতে চাইলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা অপেক্ষা কর- পরে রাতে অর্থাৎ এশা নাগাদ ঘরে যাবে, যাতে এলোকেশী নারী তার চুল আঁচড়িয়ে নিতে পারে এবং প্রবাসী স্বামীর স্ত্রী ক্ষুর ব্যবহার করতে পারে। (রাবী) বলেন, আমাকে এক নির্ভরযোগ্য ব্যাক্তি বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদীসে এও বলেছেন যে, হে জাবির। বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দাও, বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দাও। (কোন রাবী বলেন) অর্থাৎ সন্তান কামনা কর, সন্তান কামনা কর।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৬৬ | 4866 | ٤۸٦٦

পরিচ্ছদঃ ২৫৪৫. সন্তান কামনা করা
৪৮৬৬। মুহাম্মাদ ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সফর থেকে রাতে প্রত্যাবর্তন করে গৃহে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না স্বামীর অবিদ্যমান স্ত্রী ক্ষুর ব্যবহার করতে পারে এবং রুক্ষকেশী স্ত্রী চিরুনী করে নিতে পারে। (রাবী), বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমার কর্তব্য সন্তান কামনা করা, সন্তান কামনা করা। উবায়দুল্লাহ্‌ (রহঃ) ওয়াহাব (রহঃ) থেকে জাবির (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ‘সন্তান অন্বেষণ’ শব্দটি উল্লেখ করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৬৭ | 4867 | ٤۸٦۷

পরিচ্ছদঃ ২৫৪৬. স্বামীর অবিদ্যমান স্ত্রী ক্ষুর ব্যবহার করবে এবং রুক্ষকেশী নারী (মাথায়) চিরুনি করে নেবে
৪৮৬৭। ইয়াকুব ইবনু ইব্‌রাহীম (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে এক যুদ্ধে ছিলাম। যুদ্ধ শেষে প্রত্যাবর্তনকালে যখন আমরা মদিনার নিকটবর্তী হলাম, আমি আমার মন্থর গতি সম্পন্ন উটের পিছে ত্বরা করতে লাগলাম। একটু পরেই জনৈক আরোহী আমার পিছনে এসে মিলিত হলেন এবং তাঁর লাঠি দ্বারা আমার উটকে খোঁচা দিলেন। এতে আমার উটটি সর্বোৎকৃষ্ট উটের ন্যায় চলতে লাগল। মুখ ফিরিয়ে দেখলাম যে, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি সদ্য বিয়ে করেছি। তিনি বললেন, বিয়ে করেছ? আমি বললাম, জি-হ্যাঁ। তিনি বললেন, কুমারী না বিধবা? আমি বললাম, বরং বিধবা। তিনি বললেন, কুমারী করলে না কেন? তুমি তার সাথে আমোদ-প্রমোদ করতে, আর সেও তোমার সাথে আমোদ-প্রমোদ করত। রাবী বলেন, এরপর আমরা যখন মদিনায় উপস্থিত হয়ে (নিজ নিজ গৃহে) প্রবেশে উদ্যত হলাম, তখন তিনি বললেন, আস, সকলে রাতের অর্থাৎ সন্ধ্যায় প্রবেশ করবে, যাতে এলোকেশী নারী চিরুনি করে নিতে পারে এবং স্বামী অবিদ্যমান স্ত্রী ক্ষুর ব্যবহার করে নিতে পারে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৬৮ | 4868 | ٤۸٦۸

পরিচ্ছদঃ ২৫৪৭. “তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, আপন নারীগণ, তাদের মালিকানাধীন দাসী, যৌন কামনা রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ব্যতীত কারও নিকট তাদের আভরন প্রকাশ না করে ।” (২৪ : ৩১)
৪৮৬৮। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … আবূ হাযিম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উহুদের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ক্ষতস্থানে কি ঔষধ লাগানো হয়েছিল, এ নিয়ে লোকদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হল। পরে তারা সাহল ইবনু সা’দ সাঈদীকে জিজ্ঞেস করল, যিনি মদিনার অবশিষ্ট নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবিগণের সর্বশেষ ছিলেন। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার চেয়ে বেশি অভিজ্ঞ কোন ব্যাক্তি অবশিষ্ট নেই। ফাতেমা (রাঃ) তাঁর মুখমণ্ডল হতে রক্ত ধৌত করছিলেন আর আলী (রাঃ) ঢালে করে পানি আনছিলেন। পরে একটি চাটাই পুড়ে, তা ক্ষতস্থানে চতুর্দিকে লাগিয়ে দেয়া হল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৬৯ | 4869 | ٤۸٦۹

পরিচ্ছদঃ ২৫৪৮. যারা বয়ঃপ্রাপ্ত হয়নি
৪৮৬৯। আহ্‌মদ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … আবদুর রহমান ইবনু আবিস থেকে বর্ণিত যে, আমি জনৈক ব্যাক্তিকে ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর নিকট প্রশ্ন করতে শুনেছি যে, আপনি আযহা বা ফিতরের কোন ঈদে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে উপস্থিত ছিলেন? তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ’। তবে তাঁর সাথে আমার এত ঘনিষ্ঠতা না থাকলে সল্প বয়সের দরুন আমি তাঁর সাথে উপস্থিত হতে পারতাম না। তিনি (আরও) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন। তারপর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন, এরপর খুতবা দিলেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) আযান ও ইকামতের কথা উল্লেখ করেননি। এরপর তিনি মহিলাদের কাছে এলেন এবং তাদেরকে ওয়াজ ও নসীহত করলেন ও তাদেরকে সা’দকা করার আদেশ দিলেন। (রাবী বলেন,) আমি দেখলাম, তারা তাদের কর্ণ ও কণ্ঠের দিকে হাত প্রসারণ করে (গয়নাগুলো) বিলালের কাছে অর্পণ করছে। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও বিলাল (রাঃ) গৃহে প্রত্যাবর্তন করলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৮৭০ | 4870 | ٤۸۷۰

পরিচ্ছদঃ ২৫৪৯. কোন ব্যক্তির তার সাথীকে এ কথা বলা যে, তোমরা কি গত রাতে সহবাস করেছ ? এবং ধমক দেয়া কালে কোন ব্যক্তি তার কন্যার কোমরে আঘাত করা
৪৮৭০। আবদুল্লাহ‌ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) আমাকে ভর্ৎসনা করলেন এবং আমার কোমরে তাঁর হাত দ্বারা আঘাত করতে লাগলেন। আমার ঊরুর ওপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মস্তক থাকায় আমি নড়াচড়া করতে পারিনি।

Exit mobile version