Site icon BnBoi.Com

সহিহ বুখারী ৬ষ্ঠ খণ্ড (৩০৯১-৩৭৪৫)

Sahi Bukhari 6th Part by Imam Bukhari

 

সহিহ বুখারী ৬ষ্ঠ খণ্ড (৩০৯১-৩৭৪৫)

 

আম্বিয়া কিরাম (আ.) অধ্যায় (৩০৯১-৩২৪২)

হাদীস নং ৩০৯১

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা’আলা আদম আ.-কে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর দেহের দৈর্ঘ্য ছিল ষাট হাত। এরপর তিনি (আল্লাহ) তাকে (আদমকে) বললেন, যাও। ঐ ফেরেশতা দলের প্রতি সালাম কর। এবং তাঁরা তোমার সালামের জওয়াব কিরূপে দেয় তা মনোযোগ দিয়ে শোন। কেননা, এটাই হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালামের রীতি। তারপর আদম আ. (ফেরেশতাদের) বললেন, “আসসলামু আলাইকুম”। ফেরেশতাগণ তার উত্তরে “আসসালামু আলাইকা ওয়া রাহমাতুল্লাহ” বললেন। ফেরেশতারা সালামের জওয়াবে “ওয়া রাহমাতুল্লাহ” শব্দটি বাড়িয়ে বললেন। যারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন তারা আদম আ.-এর আকৃতি বিশিষ্ট হবেন। তবে আদম সন্তানের দেহের দৈর্ঘ্য সর্বদা কমতে কমতে বর্তমান পরিমাপ পর্যন্ত পৌঁছেছে।

হাদীস নং ৩০৯২

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সর্বপ্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের মুখমণ্ডল হবে পূর্ণিমার রাতের চাঁদের মত উজ্জ্বল। তারপর যে দল তাদের অনুগামী হবে তাদের মুখমণ্ডল হবে আকাশের সর্বাধিক দীপ্তিমান উজ্জ্বল তারকার মত। তারা না করবে পেশাব আর না করবে পায়খানা। তাদের থুথু ফেলার প্রয়োজন হবে না এবং তাদের নাক হতে শ্লেষ্মাও বের হবে না। তাদের চিরুণি হবে স্বর্ণের তৈরী। তাদের ঘাম হবে মিসকের ন্যায় সুগন্ধ পূর্ণ। তাদের ধুনচি হবে চন্দন কাঠের। বড় চক্ষু বিশিষ্ট হুরগণ হবেন তাদের স্ত্রী। তাদের সকলের দেহের গঠন হবে একই। সবাই তাদের আদি পিতা আদম আ.-এর আকৃতিতে হবেন। উচ্চতায় তাদের দৈর্ঘ্য হবে ষাট হাত বিশিষ্ট।

হাদীস নং ৩০৯৩

মুসাদ্দাদ রহ……….উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত যে, উম্মে সুলাইম রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ সত্য প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করেন না। মেয়েদের স্বপ্নদোষ হরে কি তাদের উপর গোসল ফরয হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। যখন সে বীর্য দেখতে পাবে। এ কথা শুনে উম্মে সালামা রা. হাসলেন এবং বললেন, মেয়েদের কি স্বপ্নদোষ হয়? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা না হলে সন্তান তার সদৃশ হয় কিভাবে।

হাদীস নং ৩০৯৪

ইবনে সালাম রহ…………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে সালামের কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মদীনায় আগমনের খবর পৌঁছল, তখন তিনি তাঁর কাছে আসলেন। এরপর তিনি বলেছেন, আমি আপনাকে এমন তিনটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে চাই যার উত্তরে নবী ছাড়া আর কেউ অবগত নয়। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন কি? আর সর্বপ্রথম খাবার কি, যা জান্নাতবাসী খাবে? আর কি কারণে সন্তান তার পিতার সাদৃশ্য লাভ করে? আর কিসের কারণে (কোন কোন সময়) তার মামাদের সাদৃশ্য হয়? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এইমাত্র জিবারাঈল আ. আমাকে এ বিষয়ে অবহিত করেছেন। রাবী বলেন, তখন আবদুল্লাহ রা. বললেন, সে তো ফেরেশতাগণের মধ্যে ইয়াহুদীদের শত্রু । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন হল আগুন যা মানুষকে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে তাড়িয়ে নিয়ে একত্রিত করবে।আর প্রথম খাবার যা জান্নাতবাসীরা খাবেন খাবেন তা হল মাছের কলিজার অতিরিক্ত অংশ। আর সন্তান সদৃশ হওয়ার রহস্য এই যে পুরুষ যখন তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে তখন যদি পুরুষের বীর্য প্রথমে স্খলিত হয় তবে সন্তান তার সদৃশ হবে আর যখন স্ত্রীর বীর্য পুরুষের বীর্যের পূর্বে স্খলিত হয় তখন সন্তান তার সাদৃশ্যতা লাভ করে। তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছ নিঃসন্দেহে আপনি আল্লাহর রাসূল। এরপর তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইয়াহুদীরা অপবাদ ও কুৎসা রটনাকারী সম্প্রদায়। আপনি তাদেরকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করার পূর্বে তারা যদি আমার ইসলাম গ্রহণের বিষয় জেনে ফেলে, তাহলে তারা আপনার কাছে আমার কুৎসা রটনা করবে।তারপর ইয়াহুদীরা এল এবং আবদুল্লাহ রা. ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনে সালাম কেমন লোক? তারা বলল, তিনি আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তি এবং সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তির পুত্র। তিনি আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি এবং সর্বোত্তম ব্যক্তির পুত্র। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি আবদুল্লাহ ইসলাম গ্রহণ করে, এতে তোমাদের অভিমত কি হবে? তারা বলল, এর থেকে আল্লাহ তাকে রক্ষা করুক। এমন সময় আবদুল্লাহ রা. তাদের সামনে বের হয়ে আসলেন এবং তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। তখন তারা বলতে লাগল, সে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তির সন্তান এবং তার তাঁর গীবত ও কুৎসা রটনায় লিপ্ত হয়ে গেল।

হাদীস নং ৩০৯৫

বিশর ইবনে মুহাম্মদ রহ………আবু হুরায়রা রা. সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বনী ইসরাঈল যদি না হত তবে গোশত দুর্গন্ধযুক্ত হতো না। আর যদি হাওয়া আ. না হতেন তবে নারীই তার স্বামীর খেয়ানত করত না।

হাদীস নং ৩০৯৬

আবু কুরায়ব ও মূসা ইবনে হিযাম রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা নারীদেরকে উত্তম উপদেশ দিবে। কেননা নারী জাতিকে পাঁজরের হাড় দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে উপরের হাড়টি অধিক বাঁকা। তুমি যদি তা সোজা যাও, তাহলে তা ভেঙ্গে ফেলবে আর যদি ছেড়ে দাও, তাহলে সব সময় তা বাঁকাই থেকে যাবে। কাজেই নারীদের সাথে উপদেশপূর্ণ কথাবার্তা বলবে।

হাদীস নং ৩০৯৭

উমর ইবনে হাফস রহ………..আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সত্যবাদী-সত্যনিষ্ঠ হিসাবে স্বীকৃত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির উপাদান স্বীয় মাতৃগর্ভে চল্লিশ দিন পর্যন্ত জমা রাখা হয়। এরপর অনরূপভাবে (চল্লিশ দিনে) তা আলাকারূপে পরিণত হয়। তারপর অনুরূপভাবে (চল্লিশ দিনে) তা গোশতের টুকরার রূপ লাভ করে। এরপর আল্লাহর তার কাছে চারটি বিষয়ের নির্দেশ নিয়ে একজন ফেরেশতা পাঠান। সে তার আমল, মৃত্যু, রিযক এবং সে কি পাপী হবে না পুণ্যবান হবে, এসন লিখে দেন। তারপর তার মধ্যে রূহ ফুকে দেয়া হয়। এক ব্যক্তি একজন জাহান্নামীর আমলের ন্যায় আমল করতে থাকে এমনকি তার ও জাহান্নামের মধ্যে এক হাতের ব্যবধান থেকে যায়, এমন সময় তার ভাগ্যের লিখন এগিয়ে আসে। তখন সে জান্নাতবাসীদের আমলের ন্যায় আমল করে থাকে। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করে। আর এক ব্যক্তি (প্রথম হতেই) জান্নাতবাসীদের আমলের অনুরূপ আমল করতে থাকে। এমন কি শেষ পর্যন্ত তার ও জান্নাতের মাঝে মাত্র এক হাতের ব্যবধান থেকে যায়। এমন সময় তার ভাগ্যের লিখন এগিয়ে আসে। তখন সে জান্নামবাসীদের আমলের অনুরূপ আমল করে থাকে এবং পরিণতিতে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে।

হাদীস নং ৩০৯৮

আবু নুমান রহ………..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ মাতৃগর্ভে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করে রেখেছেন। (সন্তান জন্মের সূচনায়) সে ফেরেশতা বলেন, হে রব! এ তো বীর্য। হে রব! এ তো আলাক। হে রব! এ তো গোশতের টুকরা। এরপর আল্লাহ যদি তাকে সৃষ্টি করতে চান। তাহলে ফেরেশতা বলেন, হে রব! সন্তানটি ছেলে হবে, না মেয়ে হবে? হে রব! সে কি পাপীষ্ঠ হবে, না পুণ্যবান হবে? তার রিযক কি পরিমাণ হবে, তার আয়ু কত হবে? এভাবে তার মাতৃগর্ভে সবকিছুই লিখে দেয়া হয়।

হাদীস নং ৩০৯৯

কায়স ইবনে হাফস রহ………..আনাস রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে সহজ আযাব ভোগকারীকে জিজ্ঞাসা করবেন, যদি পৃথিবীর সব ধন-সম্পদ তোমার হয়ে যায়, তবে তুমি কি আযাবের বিনিময়ে তা দিয়ে দিবে? সে উত্তর দিবে, হ্যাঁ। তখন আল্লাহ বলবেন, যখন তুমি আদম আ.-এর পৃষ্ঠদেশে ছিলে, তখন আমি তোমার কাছে এর চেয়েও সহজ একটি জিনিস চেয়েছিলাম। সেটা হল, তুমি আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না।

হাদীস নং ৩১০০

উমর ইবনে হাফস ইবনে গিয়াস রহ……….আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলে, তার এ খুনের পাপের একাংশ আদম আ.-এর প্রথম ছেলের (কাবিলের) উপর বর্তায়। কারণ সেই সর্বপ্রথম হত্যার প্রচলন করেছে।

হাদীস নং ৩১০১

আবদান রহ………….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা জনসমাবেশে দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করলেন, তারপর দাজ্জালের উল্লেখ করে বললেন, আমি তোমাদেরকে তার থেকে সতর্ক করছি আর প্রত্যেক নবীই নিজ নিজ সম্প্রদায়কে এ দাজ্জাল থেকে সতর্ক করে দিয়েছেন। নূহ আ.-ও নিজ সম্প্রদায়কে দাজ্জাল থেকে সতর্ক করেছেন। কিন্তু আমি তোমাদেরকে তার সম্বন্ধে এমন একটা কথা বলছি, যা কোন নবী তাঁর সম্প্রদায়কে বলেননি। তাহল তোমরা জেনে রেখ, নিশ্চয়ই দাজ্জাল কানা, আল্লাহর কানা নন।

হাদীস নং ৩১০২

আবু নুআইম রহ…………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে দাজ্জাল সম্পর্কে এমন একটি কথা বলে দেব না, যা কোন নবীই তাঁর সম্প্রদায়কে বলেননি? তাহল, নিশ্চয়ই সে হবে কানা, সে সাথে করে জান্নাত এবং জাহান্নামের দুটি কৃত্রিম ছবি নিয়ে আসবে। অতএব যাকে সে বলবে যে এটি জান্নাত প্রকৃতপক্ষে সেটি হবে জাহান্নাম। আর আমি তার সম্পর্কে তোমাদের ঠিক তেমনি সতর্ক করছি, যেমনি নূহ আ. তার সম্প্রদায়কে যেন সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।

হাদীস নং ৩১০৩

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……….আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (হাশরের দিন) নূহ এবং তাঁর উম্মত (আল্লাহর দরবারে) হাযির হবেন । তখন আল্লাহ তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, তুমি কি (আমার বাণী) পৌঁছিয়েছ? তিনি বলবেন, হ্যাঁ, হে আমার রব! তখন আল্লাহ তাঁর উম্মতকে জিজ্ঞাসা করবেন, নূহ কি তোমাদের কাছে আমার বাণী পৌঁছিয়েছেন। তারা বলবে, না, আমাদের কাছে নবীই আসেননি। তখন আল্লাহ নূহকে বলবেন, তোমার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে কে? তিনি বলবেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং উম্মত। (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন) তখন আমরা সাক্ষ্য দিব। নিশ্চয়ই তিনি আল্লাহর বাণী পৌঁছিয়েছেন। আর এটিই হল আল্লাহর বাণী : আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে মধ্যমপন্থী উম্মত বানিয়েছি, যেন তোমরা মানব জাতির উপর সাক্ষী হও। (২: ১৪৩) ‘আল-ওয়াসাতু’ অর্থ ন্যায়বান।

হাদীস নং ৩১০৪

ইসহাক ইবনে নাসর রহ…………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এক যিয়াফতে উপস্থিত ছিলাম। তাঁর সামনে (রান্না করা) ছাগলের বাহু পেশ করা হল, এটা তাঁর কাছে পছন্দীয় ছিল। তিনি সেখান থেকে এক টুকরা খেলেন এবং বললেন, আমি কিয়ামতের দিন সমগ্র মানব জাতির সরদার হব। তোমরা কি জান? আল্লাহ কিভাবে (কিয়ামতের দিন) একই সমতলে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল মানুষকে একত্রিত করবেন। যেন একজন দর্শক তাদের সবাইকে দেখতে পায় এবং একজন আহবানকারীর ডাক সবার কাছে পৌঁছায়। সূর্য তাদের অতি নিকটে এসে যাবে। তখন কোন কোন মানুষ বলবে, তোমরা কি লক্ষ্য করনি, তোমরা কি অবস্থায় আছ এবং কি পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছ। তোমরা কি এমন ব্যক্তিকে খুজে বের করবে না, যিনি তোমাদের জন্য তোমাদের রবের নিকট সুপারিশ করবেন? তখন কিছু লোক বলবে, তোমাদের আদি পিতা আদম আ. আছেন। (চল তাঁর কাছে যাই)। তখন সকলে তাঁর কাছে যাবে এবং বলবে হে আদম! আপনি সমস্ত মানব জাতির পিতা। আল্লাহ আপনাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং তার পক্ষ থেকে রূহ আপনার মধ্যে ফুঁকেছেন। তিনি ফেরেশতাদেরকে (আপনার সম্মানের) নির্দেশ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী সকলে আপনাকে সিজাদও করেছেন এবং তিনি আপনাকে জান্নাতে বসবাস করতে দিয়েছেন। আপনি কি আমাদের জন্য আপনার রবের নিকট সুপারিশ করবেন না? আপনি দেখেন না, আমরা কি অবস্থায় আছি এবং কি কষ্টের সম্মুখীন হয়েছি? তখন তিনি বলবেন, আমার রব আজ আমাকে রাগন্বিত হয়েছেন, এর পূর্বে এমন রাগান্বিত হননি আর পরেও এমন রাগান্বিত হবেন না। আর তিনি আমাকে বৃক্ষটি থেকে (ফল খেতে) নিষেধ করেছিলেন। তখন আমি ভূল করেছি। এখন আমি নিজের চিন্তায়ই ব্যস্ত। তোমরা আমি ব্যতীত অন্যের কাছে যাও। তোমরা নূহের কাছে চলে যাও। তখন তারা নূহ আ. এর কাছে আসবে এবং বলবে, হে নূহ ! পৃথিবীবাসীদের নিকট আপনিই প্রথম রাসূল এবং আল্লাহ আপনার নাম রেখেছেন কৃতজ্ঞ বান্দ। আপনি কি লক্ষ করছেন না, আমরা কি ভয়াবহ অবস্থায় পড়ে আছি? আপনি দেখছেন না আমরা কতইনা দুঃখ কষ্টের সম্মুখীন হয়ে আছি? আপনি কি আমাদের জন্য আপনার রবের কাছে সুপারিশ করবেন না? তখন তিনি বললেন, আমার রব আজ এমন রাগান্বিত হয়ে আছেন, যা ইতিপূর্বে হন নাই এবং এমন রাগান্বিত পরেও হবেন না। এখন আমি নিজের চিন্তায়ই ব্যস্ত। তোমরা নবী (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )-এর কাছে চলে যাও। তখন তারা আমার কাছে আসবে আর আমি আরশের নীচে সিজদায় পড়ে যাব। তখন বলা হবে, হে মুহাম্মদ! আপনার মাথা উঠান এবং সুপারিশ করুন। আপনার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে আর আপনি যা চান, আপনাকে তাই দেওয়া হবে। মুহাম্মদ ইবনে উবাইদ রহ. বলেন, হাদীসের সকল অংশ আমি মুখস্থ করতে পারিনি।

হাদীস নং ৩১০৫

নাসর ইবনে আলী রহ……………আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল ক্বারীদের ক্বিরাতের ন্যায় فهل من مدكر তিলাওয়াত করেছেন।

হাদীস নং ৩১০৬

আবদান ও আহমাদ ইবনে সালিহ রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু যার রা. হাদীস বর্ণনা করতেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (লাইলাতুল মিরাজে) আমার ঘরের ছাদ উন্মক্ত করা হয়েছিল। তখন আমি মক্কায় ছিলাম। তারপর জিবরাঈল আ. অবতরণ করলেন এবং আমার বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। এরপর তিনি যমযমের পানি দ্বারা তা ধুইলেন। এরপর হিকমত ও ঈমান দ্বারা পরিপূর্ণ একখানা সোনার তশতরি নিয়ে আসেন এবং তা আমার বক্ষে ঢেলে দিলেন। তারপর আমার বক্ষকে পূর্বের ন্যায় মিলিয়ে দিলেন। এবার তিনি আমার হাত ধরলেন এবং আমাকে আকাশের দিকে উঠিয়ে নিলেন। এরপর যখন দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে পৌঁছলেন, তখন জিবরাঈল আ. আকাশের দ্বাররক্ষীকে বললেন, দরজা খুলুন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কে জবাব দিলেন, আমি জিবরাঈল। দ্বাররক্ষী বললেন, আপনার সাথে কি আর কেউ আছেন? তিনি বললেন, আমার সাথে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আছেন। দ্বাররক্ষী জিজ্ঞাসা করলেন, তাকে কি ডাকা হয়েছে? বললেন, হ্যাঁ। তারপর দরজা খোলা হল। যখন আমরা আকাশের উপরে আরোহণ করলাম, হঠাৎ দেখলাম এক ব্যক্তি যার ডানে একদল লোক আর তাঁর বামেও একদল লো। যখন তিনি তাঁর ডাক দিকে তাকান তখন হাসতে থাকেন আর যখন তাঁর বাম দিকে তাকান তখন কাঁদতে থাকেন। (তিনি আমাকে দেখে) বললেন, মারহাবা! নেক নবী ও নেক সন্তান। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে জিবরাঈল ! ইনি কে তিনি জবাব দিলেন, ইনি আদম আ. আর তাঁর ডানের ও বামের এ লোকগুলো হল তাঁর সন্তান (আত্ম সমূহ) এদের মধ্যে ডানদিকের লোকগুলো হল জান্নাতী আর বামদিকের লোকগুলো হল জাহান্নামী। অতএব যখন তিনি ডান দিকে তাকান তখন হাসেন আর যখন বাম দিকে তাকান তখন কাঁদেন। এরপর আমাকে নিয়ে জিবরাঈল আ. আরো উপরে উঠলেন। এমনকি দ্বিতীয় আকাশের দ্বারে এসে গেলেন। তখন তিনি এ আকাশের দ্বাররক্ষীকে বললেন, দরজা খুলুন! দ্বাররক্ষী তাকে প্রথম আকাশের দ্বাররক্ষী যেরূপ বলেছিল, অনুরূপ বলল। তারপর তিনি দরজা খুলে দিলেন। আনাস রা. বলেন, এরপর আবু যার রা. উল্লেখ করেছেন, যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আকাশসমূহে ইদরীস, মূসা, ঈসা ও ইবরাহীম আ.-এর সাক্ষাত পেয়েছেন। তাদের কার অবস্থান কোন আকাশে আমার কাছে তা বর্ণনা করেননি। তবে তিনি এটা উল্লেখ করেছেন যে, তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে আদম আ.-কে এবং ষষ্ঠ আকাশে ইবরাহীম আ.-কে দেখতে পেয়েছেন। আনাস রা. বলেন, জিবরাঈল আ. যখন (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহ) ইদরীস আ.-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন, তখন তিনি (ইদরীস আ.) বলেছিলেন, নেক নবী ও নেক ভাই। আপনাকে মারহাবা! আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি কে তিনি জবাব দিলেন, ইনি ইদরীস আ.। এরপর মূসা আ.-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম। তিনি বললেন, মারহাবা! নেক নবী ও নেক ভাই। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি কে তিনি জবাব দিলেন, ইনি মূসা আ.। তারপর ঈসা আ.-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম। তিনি বললেন, মারহাবা! নেক নবী ও নেক ভাই। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি কে তিনি জবাব দিলেন, ইনি ঈসা আ.। তারপর ইবরাহীম আ.-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম। তিনি বললেন, মারহাবা! নেক নবী ও নেক সন্তান। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি কে তিনি জবাব দিলেন, ইনি ইবরাহীম আ.। ইবনে শিহাব রহ. বলেন, আমাকে ইবনে হাযম রহ. জানিয়েছেন যে, ইবনে আব্বাস ও আবু হাইয়্যা আনসারী রা. বলতেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এরপর জিবরাঈল আ. বললেন, ঊর্ধ্বে নিয়ে গেলেন। শেষ পর্যন্ত আমি একটি সমতল স্থানে গিয়ে পৌঁছলাম। সেখান থেকে কলমসমূহের খসখস শব্দ শুনছিলাম। ইবনে হাযম রহ. এবং আনাস ইবনে মালিক রা. বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তখন আল্লাহ আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। এরপর ইম এ নির্দেশ নিয়ে ফিরে চললাম। যখন মূসা আ.-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার রব আপনার উম্মতের উপর কি ফরয করেছেন? আমি বললাম, তাদের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়েছে। তিনি বললেন, পুনরায় আপনার রবের কাছে ফিরে যান (এবং তা কমাবার জন্য আবেদন করুন) কেননা আপনার উম্মতের তা পালন করার সামর্থ্য থাকবে না। তখন ফিরে গেলাম এবং আমার রবের নিকট তা কমাবার জন্য আবেদন করলাম। তিনি তার অর্ধেক কমিয়ে দিলেন। আমি মূসা আ.-এর কাছে ফিরে আসলাম। তিনি বললেন, আপনার রবের কাছে গিয়ে পুনরায় কমাবার আবেদন করুন এবং তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পূর্বের অনুরূপ কথা আবার উল্লেখ করলেন। এবার তিনি (আল্লাহ) তার অর্ধেক কমিয়ে দিলেন। আবার আমি মূসা আ.-এর কাছে আসলাম এবং তিনি পূর্বের মত বললেন। আমি তা করলাম। তখন আল্লাহ তার এক অংশ মাফ করে দিলেন। আমি পুনরায় মূসা আ.-এর কাছে আসলাম এবং তাকে অবহিত করলাম। তখন তিনি বললেন, আপনার রবের নিকট গিয়ে আরো কমাবার জন্য আরয করুন। কেননা আপনার উম্মতের তা পালন করার সামর্থ্য থাকবে না। আমি আবার গিয়ে আমার রবের নিকট তা কমাবার আবেদন করলাম। তিনি বললেন, এ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত বাকী রইল। আর তা সাওয়াবের ক্ষেত্রে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতের সমান হবে। আমার কথার পরিবর্তন হয় না। তারপর আমি মূসা আ.-এর কাছে ফিরে আসলাম। তিনি এবারও বললেন, আপনার রবের কাছে গিয়ে আবেদন করুন। আমি বললাম, এবার আমার রবের সম্মুখীন হতে আমি লজ্জাবোধ করছি। এরপর জিবরাঈল আ. চললেন এবং অবশেষে আমাকে সাথে করে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। দেখলাম তা এমন অপরূপ রঙে পরিপূর্ণ, যা বর্ণনা করার ক্ষমতা আমার নেই। এরপর আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হল। দেখলাম এর ইট হচ্ছে মোতির তৈরী আর তার মাটি হচ্ছে মিসক বা কস্তুরীর ন্যায় সুগন্ধযুক্ত।

হাদীস নং ৩১০৭

মুহাম্মদ ইবনে আরআর রহ…………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমাকে ভোরের বায়ূ (পুবালী বাতাস) দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে। ইবনে কাসীর রহ. আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, আলী রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট কিছু স্বর্ণের টুকরো পাঠালেন। তিনি তা চার ব্যক্তির মাঝে বণ্টন করে দিলেন। (১) আল-আকরা ইবনে হাবেস হানযালী যিনি মাজাশেয়ী গোত্রের ছিলেন। (২) উআইন ইবনে বদর ফাযারী (৩) যায়েদ ত্বায়ী যিনি বনী নাবহান গোত্রের ছিলেন। (৪) আলকামা ইবনে উলাসা আমেরী, যিনি বনী কিলাব গোত্রের ছিলেণ এতে কুরাইশ ও আনসারগণ অসন্তুষ্ট হলেন এবং বলতে লাগলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজদবাসী নেতৃবৃন্দকে দিচ্ছেন আর আমাদেরকে দিচ্ছেন না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তা তাদেরকে (ইসলামের দিকে) আকৃষ্ট করার জন্য মনোরঞ্জন করছি। তখন এক ব্যক্তি সামনে এগিয়ে আসল, যার চোখ দুটি কোটরাগত, গণ্ড দ্বয় ঝুলে পড়া কপাল উঁচু, ঘন দাঁড়ি এবং মাথা মোড়ানো ছিল। সে বলল, হে মুহাম্মদ ! আল্লাহকে ভয় করুন। তখন তিনি বললেন, আমিই যদি নাফরমানী করি তাহলে আল্লাহর আনুগত্য করবে কে? আল্লাহ আমাকে পৃথিবীবাসীর উপর আমানতদার বানিয়েছেন আর তোমরা আমাকে আমানতদার মনে করছ না। তখন এক ব্যক্তি তাঁর কাছে তাকে হত্যা করার অনুমতি চাইল। (আবু সাঈদ রা. বলেন) আমি তাকে খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রা. বলে ধারণা করছি। কিন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নিষেধ করলেন। তারপর অভিযোগকারী লোকটি যখন ফিরে গেল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ ব্যক্তির বংশ হতে বা এ ব্যক্তির পরে এমন কিছু সংখ্যক লোক হবে তারা কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবেনা। দীন থেকে তারা এমনভাবে বেরিয়ে পড়বে যেমনি ধনুক থেকে তীর বেরিয়ে যায়। তারা ইসলামের অনুসারীদিগকে হত্যা করবে আর মূর্তি পূজারীদেরকে হত্যা করা থেকে মুক্তি দেবে।

হাদীস নং ৩১০৮

খালিদ ইবনে ইয়াযীদ রহ………আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে (আদ জাতির ঘটনা বর্ণনায়) فهل من مدكر এ আয়াতটি পড়তে শুনেছি।

হাদীস নং ৩১০৯

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ…………যায়নাব বিনতে জাহাশ রা. থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় তাঁর কাছে আসলেন এবং বলতে লাগলেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ । আরবের লোকদের জন্য সেই অনিষ্টের কারণে ধ্বংস অনিবার্য। যা নিকটবর্তী হয়েছে। আজ ইয়াজুজ ও মাজুজের প্রাচীর এ পরিমাণ খুলে (ছিদ্র হয়ে) গেছে। এ কথার বলার সময় তিনি তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলির অগ্রভাগকে তার সাথের শাহাদাত আঙ্গুলের অগ্রভাগের সাথে মিলিয়ে গোলাকৃতি করে ছিদ্রের পরিমাণ দেখান। যায়নাব বিনতে জাহাশ রা. বলেন, তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের মধ্যে নেক ও পূণ্যবান লোকজন বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাব। তিনি বললেন, হ্যাঁ যখন পাপাচার অধিক মাত্রায় বেড়ে যাবে। (তখন অল্প সংখ্যক নেক লোকের বিদ্যমানেই মানুষের ধ্বংস নেমে আসবে)।

হাদীস নং ৩১১০

মুসলিম ইবনে ইবরাহীম রহ……….আবু হুরায়রা র. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইয়াজুজ ও মাজুজের প্রাচীরে আল্লাহ এ পরিমাণ ছিদ্র করে দিয়েছেন। এই বলে, তিনি তাঁর হাতে নব্বই সংখ্যার আকৃতি ধারণ করে দেখালেন। (অর্থাৎ তিনি নিজ শাহাদাত আঙ্গুলের মাথা বৃদ্ধাঙ্গুলের গোড়ায় লাগিয়ে ছিদ্রের পরিমাণ দেখালেন।

হাদীস নং ৩১১১

ইসহাক ইবনে নাসর রহ……….আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মহান আল্লাহ (হাশরের দিন) ডাকবেন হে আদম আ.! তখন তিনি জবাব দিবেন, আমি হাযির আমি সৌভাগ্যবান এবং সকল কল্যাণ আপনার হাতেই। তখন আল্লাহ বললেন, প্রতি হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন। এ সময় (চরম ভয়ের কারণে) ছোটরা বুড়ো হয়ে যাবে। প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভপাত করে ফেলবে। মানুষকে দেখবে মাতাল সদৃশ যদিও তারা নেশাগ্রস্ত নয়। বস্তত: আল্লাহর শাস্তি কঠিন (২২:২)। সাহাবাগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! (প্রতি হাজারের মধ্যে একজন) আমাদের মধ্যে সেই একজন কে? তিনি বললেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর। কেননা তোমাদের মধ্য থেকে একজন আর এক হাজারের অবশিষ্ট ইয়াজুজ মাজুজ হবে। তারপর তিনি বললেন, যার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর কসম ! আমি আশা করি তোমরা (যারা আমার উম্ম) সমস্ত জান্নাতবাসীর এক চতুর্থাংশ হবে। (আবু সাঈদ রা. বলেন) আমরা এ সুসংবাদ শুনে) আল্লাহু আকবার বলে তাকবীর দিলাম। এরপর তিনি আবার বললেন, আমি আশা করি তোমরা সমস্ত জান্নাতীদের এক তৃতীয়াংশ হবে। আমরা পুনরায় আল্লাহু আকবার বলে তাকবীর দিলাম। তিনি আবার বললেন, আমি আশা করি তোমরা সমস্ত জান্নাতীদের অর্ধেক হবে। একথা শুনে আমরা আবারও আল্লাহু আকবার বলে তাকবীর দিলাম। তিনি বললেন, তোমরা তো অন্যান্য মানুষের তুলনায় এমন, যেমন সাদা ষাঁড়ের দেহে কয়েকটি কাল পশম অথবা কালো ষাঁড়ের দেহে কয়েকটি সাদা পশম।

হাদীস নং ৩১১২

মুহাম্মদ ইবনে কাসীর রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই তোমাদের হাশর ময়দানে খালি পা, বিবস্ত্র এবং খাতনাবিহীন অবস্থায় উপস্থিত করা হবে। এরপর তিনি (এ কথার সমর্থনে) পবিত্র কুরআনের আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন: যে ভাবে আমি প্রথমে সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব। এটি আমার প্রতিশ্রুতি।এর বাস্তবায়ন আমি করবই। (২১ : ১০৪) আর কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যাকে কাপড় পরানো হবে। তিনি হবেন ইবরাহীম আ.। আর (সে দিন) আমার অনুসারীদের মধ্য হতে কয়েকজনকে পাকড়াও করে বাম দিকে অর্থাৎ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলব, এরা তো আমার অনুসারী, এরা তো আমার অনুসারী। এ সময় আল্লাহ বললেন, যখন আপনি এদের থেকে বিদায় নেন, তখন তারা পূর্ব ধর্মে ফিরে যায়। কাজেই তারা আপনার সাহাবী নয়। তখন আল্লাহর নেক বান্দা (ঈসা আ.) যেমন বলেছিলেন, তেমন আমি বলব, হে আল্লাহ ! আমি যতদিন তাদের মাঝে ছিলাম, ততদিন আম ছিলাম তাদের অবস্থার পর্যবেক্ষক । আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় (৫ : ১২৭-১২৮)

হাদীস নং ৩১১৩

ইসমাঈল ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন ইবরাহীম আ. তার পিতা আযরের দেখা পাবেন। আযরের মুখমণ্ডলে কালিমা এবং ধূলাবালি থাকবে। তখন ইবরাহীম আ. তাকে বললেন, আমি কি পৃথিবীতে আপনাকে বলিনি যে, আমার অবাধ্যতা করবেন না? তখন তাঁর পিতা বলবে, আজ আর তোমার অবাধ্যতা করব না। এরপর ইবরাহীম আ. (আল্লাহর কাছে) আবেদন করবেন, হে আমার রব! আপনি আমার সাথে ওয়াদা করেছিলেন যে, হাশরের দিন আপনি আমাকে লজ্জিত করবেন না। আমার পিতা রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়ার চাইতে অধিক অপমান আমার জন্য আর কি হতে পারে। তখন আল্লাহ বললেন, আমি কাফিরদের জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছি। পুনরায় বলা হবে, হে ইবরাহীম! তোমার পদতলে কি? তখন তিনি নীচের দিকে তাকাবেন। হঠাৎ দেখতে পাবেন তাঁর পিতার স্থানে সর্ব শরীরে রক্তমাখা একটি জানোয়ার পড়ে রয়েছে। এর চার পা বেঁধে জাহান্নামে ছুঁড়ে ফেলা হবে।

হাদীস নং ৩১১৪

ইয়াহইয়া ইবনে সুলাইমান রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা কাবা ঘরে প্রবেশ করলেন। সেখানে তিনি ইবরাহীম আ. ও মারইয়ামেরে ছবি দেখতে পেলেন। তখন তিনি বললেন, তাদের কি হল? অথচ তারা তো শুনতে পেয়েছে, যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকবে, সে ঘরে (রহমতের) ফেরেশতাগণ প্রবেশ করেন না। এ যে ইবরাহীমের ছবি বানানো হয়েছে, (ভাগ্য নির্ধারক জুয়ার তীর নিক্ষেপরত অবস্থায়) তিনি কেন ভাগ্য নির্ধারক তীর নিক্ষেপ করবেন।

হাদীস নং ৩১১৫

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কাবা ঘরে ছবিসমূহ দেখতে পেলেন, তখন যে পর্যন্ত তাঁর নির্দেশে তা মিটিয়ে ফেলা না হল, সে পর্যন্ত তিনি তাঁতে প্রবেশ করলেন না। আর তিনি দেখতে পেলেন, ইবরাহীম এবং ইসমাঈল আ.-এর হাতে ভাগ্য নির্ধারণের তীর। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ তাদের (কুরাইশদের) উপর লানত বর্ষণ করুক। আল্লাহর কসম, তাঁরা দু’জন কখনও ভাগ্য নির্ধারক তীর নিক্ষেপ করেননি।

হাদীস নং ৩১১৬

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, তাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বেশী মুত্তাকী। তখন তারা বলল, আমরা তো আপনাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করিনি। তিনি বললেন, তাহলে (সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি) আল্লাহর নবী ইউসুফ, যিনি আল্লাহর নবী (ইয়াকুব)-এর পুত্র, আল্লাহর নবী (ইসহাক)-এর পৌত্র, এবং আল্লাহর খলীল (ইবরাহীম)-এর প্রপৌত্র। তারা বলল, আমরা আপনাকে এ সম্বন্ধেও জিজ্ঞাসা করিনি। তিনি বললেন, তাহলে কি তোমরা আরবের মূল্যবান গোত্রসমূহ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেছ? জাহিলী যুগে তাদের মধ্যে যারা সর্বোত্তম ব্যক্তি ছিলেন, ইসলামেও তাঁরা সর্বোত্তম ব্যক্তি যদি তাঁরা ইসলামী জ্ঞানার্জন করেন। আবু উসামা ও মুতামির রহ……..আবু হুরায়রা রা. সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত।

হাদীস নং ৩১১৭

মুআম্মাল ইবনে হিশাম রহ………..সামুরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আজ রাতে (স্বপ্নে) আমার কাছে দু’জন লোক আসলেন। তারপর আমরা এক দীর্ঘদেহী লোকের কাছে আসলাম। তাঁর দেহ দীর্ঘ হওয়ার কারণে আমি তাঁর মাথা দেখতে পাচ্ছিলাম না। মূলত: তিনি ইবরাহীম আ. ছিলেন।

হাদীস নং ৩১১৮

বায়ান ইবনে আমর রহ…………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, লোকজন তাঁর সামনে দাজ্জালের কথা উল্লেখ করেছেন। তার (দাজ্জালের) দু’ চোখের মাঝখানে অর্থাৎ কপালে লেখা থাকবে কাফির বা কাফ, ফা, রা। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে শুনেনি। বরং তিনি বলেছেন, যদি তোমরা ইবরাহীম আ.-কে দেখতে চাও তবে তোমাদের সাথীর (আমার) দিকে তাকাও মূসা আ. তিনি হলেন কুঁকড়ানো চুল, তামাটে রং-এর দেহ বিশিষ্ট। তিনি এমন একটি লাল উটের উপর উপবিষ্ট, যার নাকের রশি হবে খেজুর গাছের ছালের তৈরী। আমি তাকে দেখতে পাচ্ছি, তিনি আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিতে দিতে উপত্যকায় অবতরণ করছেন।

হাদীস নং ৩১১৯

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ…………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নবী ইবরাহীম আ. সূত্রধরদের অস্ত্র দ্বারা নিজের খাতনা করেছিলেন এবং তখন তার বয়স ছিল আশি বছর। আব্দুর রহমান ইবনে ইসহাক রহ. আবু যিনাদ রহ . থেকে হাদীস বর্ণনায় মুগীরা ইবনে আবদুর রাহমান রহ. -এর অনুসরণ করেছন। আজলান রহ. আবু হুরায়রা রা. থেকে হাদীস বর্ণনায় আরজ রহ.-এর অনুসরণ করেছেন। আর মুহাম্মদ ইবনে আমর রহ. আবু সালামা রর. থেকে বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৩১২০

সাঈদ ইবনে তালীদ রুআইনী ও মুহাম্মদ ইবনে মাহবুব রহ…………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবরাহীম আ. তিনবার ব্যতীত কখনও কথাকে ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলেননি। তন্মধ্যে দু’বার ছিল আল্লাহ প্রসঙ্গে। তার উক্তি “আমি অসুস্থ” (৩৭:৮৯) এবং তাঁর আবার এক উক্তি “বরং এ কাজ করেছে, এই তো তাদের বড়টি” (২১:৬৩) বর্ণনাকারী বলেন, একদা তিনি (ইবরাহীম আ. এবং তাঁর পত্নী) সারা অত্যাচারী শাসকগণের কোন এক শাসকের এলাকায় এসে পৌঁছলেন। (তা ছিল মিসর) তখন তাকে (শাসককে) সংবাদ দেয়া হল যে, এ এলাকায় এসেছে। তার সাথে একজন সর্বাপেক্ষা সুন্দরী মহিলা রয়েছে। তখন সে (রাজা) তাঁর (ইবরাহীম) কাছে লোক পাঠাল। সে তাকে মহিলাটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল, এ মহিলাটি কে? তিনি উত্তর দিলেন, মহিলাটি আমার বোন। তারপর তিনি সারা কাছে আসলেন এবং বললেন, হে সারা, তুমি আর আমি ছাড়া পৃথিবীর উপর আর কোন মুমিন নেই। এ লোকটি আমাকে তোমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিল। তখন আম তাকে জানিয়েছি যে, তুমি আমার বোন। কাজেই তুমি আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করো না। এরপর (অত্যাচারী রাজা) সারাকে আনার জন্য লোক পাঠালো। তিনি (সারা) যখন তার (রাজার) কাছে প্রবেশ করলেন এবং রাজা তাঁর দিকে হাত বাড়ালো তখনই সে (আল্লাহর গযবে) পাকড়াও হল। তখন অত্যাচারী রাজা সারাকে বলল, আমার জন্য আল্লাহর নিকট দু’আ কর, আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না। তখন সারা আল্লাহর নিকট দু’আ করলেন। ফলে সে মুক্তি পেয়ে গেল। এরপর দ্বিতীয়বার তাকে ধরতে চাইল। এবার সে পূর্বের ন্যায় বা তার চেয়ে কঠিনভাবে (আল্লাহর গযবে) পাকড়াও হল। এবারও সে বলল, আল্লাহর কাছে আমার জন্য দু’আ কর। আমি তোমার কো ক্ষতি করব না। আবারও তিনি দু’আ করলেন, ফলে সে মুক্তি পেয়ে গেল। তারপর রাজা তার কোন এক দারোয়ানকে ডাকল। সে তাকে বলল, তুমি তো আমার কাছে কোন মানুষ আননি। বরং এনেছ এক শয়তান। তারপর রাজা সারার খেদমতের জন্য হাজেরাকে দান করল। এরপর তিনি (সারা) তাঁর (ইবরাহীম) কাছে আসলেন, তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন। তখন তিনি (সালাতরত অবস্থায়) হাত দ্বারা ইশারা করে সারাকে বললেন, কি ঘটেছে? তখন সারা বললেন, আল্লাহ কাফির বা ফাসিকের চক্রান্ত তারই বক্ষে ফিরিয়ে দিয়েছেন। (অর্থাৎ তার চক্রান্ত নস্যাৎ করে দিয়েছেন)। আর সে (রাজা) হাজেরাকে খেদমতের জন্য দান করেছে। আবু হুরায়রা রা. বলেন, হে আকাশের পানির সন্তানগণ! এ হাজেরাই তোমাদের আদি মাতা।

হাদীস নং ৩১২১

উবাইদুল্লাহ ইবনে মূসা অথবা ইবনে সালাম রহ……….উম্মে শারীক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গিরগিট বা কাকলাশ মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তিনি বলেছেন, ইবরাহীম আ. যে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন তাঁতে এ গিরগিট ফুঁ দিয়েছিল।

হাদীস নং ৩১২২

উমর ইবনে হাফস গিয়াস রহ……….আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়: যারা ঈমান এনেছে এবং তারা তাদের ঈমানকে যুলুম দ্বারা কলুষিত করেনি। (৬: ৮২) তখন আমরা বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের মধ্যে কে এমন আছে, যে নিজের উপর যুলুম করেনি ? তিনি বললেন, তোমরা যা বল ব্যাপরটি তা নয়। বরং তাদের ঈমানকে যুলুম অর্থাৎ শিরক দ্বারা কলুষিত করেনি। তোমরা কি লুকমানের কথা শুননি ? তিনি তাঁর পুত্রকে বলেছিলেন হে বৎস! আল্লাহর সাথে কোনরূপ শিরক করো না। নিশ্চয় শিরক একটা চরম যুলুম। (৩১:১৩)।

হাদীস নং ৩১২৩

ইসহাক ইবনে ইবরাহীম ইবনে নাসর রহ…………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে কিছু গোশত আনা হল। তখন তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ কিয়ামতের দিন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলকে একই সমতল ময়দানে সমবেত করবেন। তখন আহবানকারী তাদের সকলকে তার আহবান সমভাবে শুনাতে পারবে। এবং তাদের সকলের উপর সমভাবে দর্শকের দৃষ্টি পড়বে আর সূর্য তাদের অতি নিকটবর্তী হবে। তারপর তিনি শাফায়াতের হাদীস বর্ণনা করলেন যে, সকল মানুষ ইবরাহীম আ.-এর নিকট আসবে এবং বলবে, পৃথিবীতে আপনি আল্লাহর নবী এবং তাঁর খলীল। অতএব আমাদের জন্য আপনি আপনার রবের নিকট সুপারিশ করুন। তখন তিনি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলা উক্তির কথা স্মরণ করে বললেন, নাফসী ! নাফসী ! তোমরা মূসার কাছে যাও। অনুরূপ হাদীস আনাস রা. ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৩১২৪

আহমদ ইবনে সাঈদ আবু আবদুল্লাহ রহ………….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইসমাঈলের মায়ের প্রতি আল্লাহ রহম করুন। যদি তিনি তাড়াতাড়ি না করতেন, তবে যমযম একটি প্রবহমান ঝর্ণায় পরিণত হত। আনসারী রহ. ইবনে জুরাইজ রহ. সূত্রে বলেন যে, কাসীর ইবনে কাসীর বলেছেন যে, আমি ও উসমান ইবনে আবু সুলাইমান রহ. সাঈদ ইবনে জুবাইর রহ.-এর নিকট বসা ছিলাম। তিনি বললেন, ইবনে আব্বাস রা. আমাকে এরূপ বলেন নি বরং তিনি বলেছেন, ইবরাহীম আ., ইসমাঈল আ. এবং তাঁর মাকে নিয়ে আসলেন। মা তখন তাকে দুধ পান করাতেন এবং তাঁর সাথে একটি মশক ছিল। এ অংশটি মারফুরূপে বর্ণনা করেননি।

হাদীস নং ৩১২৫

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ…………সাঈদ ইবনে জুবাইর রা. থেকে বর্ণিত, ইবনে আব্বাস রা. বলেণ, নারী জাতি সর্বপ্রথম কোমরবন্ধ বানানো শিখেছে ইসমাঈল আ.-এর মায়ের নিকট থেকে। হাযেরা আ. কোমরবন্দ লাগাতেন সারাহ আ. থেকে নিজের মর্যাদা গোপন রাখার জন্য। তারপর (আল্লাহর হুকুমে) ইবরাহীম আ. হাযেরা আ. এবং তাঁর শিশু ছেলে ইসমাঈল আ.-কে সাথে নিয়ে বের হলেন, এ অবস্থায় যে, হাযেরা আ. শিশুকে দুধ পান করাতেন। অবশেষে যেখানে কাবা ঘর অবস্থিত একটি বিরাট গাছের নীচে তাদেরকে রাখলেন। তখন মক্কায় না চিল কোন মানুষ না ছিল কোনরূপ পানির ব্যবস্থা। পরে তিনি তাদেরকে সেখানেই রেখে গেলেন। আর এছাড়া তিনি তাদের কাছে রেখে গেলেন একটি থলের মধ্যে কিছু খেজুর এবং একটি মশকে কিছু পরিমাণ পানি। এরপর ইবরাহীম আ. ফিরে চললেন। তখন ইসমাঈল আ.-এ মা পিছু পিছু ছুটে আসলেন এবং বলতে লাগলেন, হে ইবরাহীম ! আপনি কোথায় চলে যাচ্ছেন ? আমাদেরকে এমন এক ময়দানে রেখে যাচ্ছেন, যেখানে না আছে কোন সাহায্যকারী আর না আছে কোন (পানাহারের) কোন ব্যবস্থা। তিনি একথা তাকে বারবার বললেন। কিন্তু ইবরাহীম আ. তাঁর দিকে তাকালেন না। তখন হাযেরা আ. তাকে বললেন, এ (নির্বাসনের) আদশে কি আপনাকে আল্লাহ দিয়েছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। হাযেরা আ. বললেন, তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে ধ্বংস করবেন না। তারপর তিনি ফিরে আসলেন। আর ইবরাহীম আ. ও সামনে চললেন। চলতে চলতে যখন ঘরের দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন। তারপর তিনি দু’হাত তুলে এ দুআ করলেন, আর বললেন, হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার পরিবারের কতকে আপনার সম্মানিত ঘরের নিকট এক অনুর্বর উপত্যকায়………..যাতে আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। (১৪: ৩৭) আর ইসমাঈলের মা ইসমাঈলকে স্বীয় স্তন্যের দুধ পান করাতেন এবং নিজে ঐ মশক থেকে পানি পান করতেন। অবশেষে মশকে যা পানি ছিল তা ফুরিয়ে গেল। তিনি নিজে পিপাসিত হলেন, এবং তাঁর শিশু পুত্রটিও পিপাসায় কাতর হয়ে পড়ল। তিনি শিশুটির প্রতি দেখতে লাগলেন। পিপাসায় তার বুক ধড়ফড় করছে অথবা রাবী বলেন, সে মাটিতে পড়ে ছটফট করছে। শিশুপুত্রের এ করুন অবস্থার প্রতি তাকানো অসহনীয় হয়ে পড়ায় তিনি সরে গেলেন আর তাঁর অবস্থানের সংলগ্ন পর্বত ‘সাফা’ কে একমাত্র তাঁর নিকটতম পর্বত হিসেবে পেলেন। এরপর তিনি তার উপর উঠে দাঁড়ালেন আর ময়দানের দিকে তাকালেন। এদিকে সেদিকে তাকিয়ে দেখলেন, কোথায়ও কাউকে দেখা যায় কিনা? কিন্তু তিনি কাউকে দেখতে পেলেন না। তখন সাফা পর্বত থেকে নেমে পড়লেন। এমন কি যখন তিনি নিচু ময়দান পর্যন্ত পৌঁছলেন, তখন তিনি তাঁর কামিজের এক প্রান্ত তুলে ধরে একজন শ্রান্ত-ক্লান্ত মানুষের ন্যায় ছুটে চললেন। অবশেষে ময়দান অতিক্রম করে মারওয়া পাহাড়ের নিকট এসে তার উপর উঠে দাঁড়ালেন। তারপর এদিকে সেদিকে তাকালেন, কাউকে দেখতে পান কিনা? কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলেন না। এমনিভাবে সাতবার দৌড়াদৌড়ি করলেন। ইবনে আব্বাস আ. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এজন্যই মানুষ (হজ্জ বা উমরার সময়) এ পাহাড়দ্বয়ের মধ্যে সায়ী করে থাকে। এরপর তিনি যখন মারওয়া পাহাড়ে উঠলেন, তখন একটি শব্দ শুনতে পেলেন এবং তিনি নিজেকেই নিজে বললেন, একটু অপেক্ষা কর। তিনি একাগ্রচিত্তে শুনলেন। তখন তিনি বললেন, তুমি তো তোমার শব্দ শুনিয়েছ। যদি তোমার কাছে কোন সাহায্যকারী থাকে (তাহলে আমাকে সাহায্য কর)। হঠাৎ যেখানে যমযম কূপ অবস্থিত সেখানে তিনি একজন ফেরেশতা দেখতে পেলেন। সেই ফেরেশতা আপন পায়ের গোড়ালি দ্বারা আঘাত করলেন অথবা তিনি বলেছেন, আপন ডানা দ্বারা আঘাত করলেন। ফলে পানি বের হতে লাগল। তখন হাযেরা আ.-এর চারপাশে নিজ হাতে বাঁধা দিয়ে একে হাউযের ন্যায় করে দিলেন এবং হাতের কোষভরে তাঁর মশকটিতে পানি ভরতে লাগলেন। তখনো পানি উপছে উঠতে থাকলো। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইসমাঈলের মাকে আল্লাহ রহম করুন। যদি তনি বাঁধ না দিয়ে যমযমকে এভাবে ছেড়ে দিতেন কিংবা বলেছেন, যদি কোষে ভরে পানি মশকে জমা না করতেন, তাহলে যমযম একটি কূপ না হয়ে একটি প্রবহমান ঝর্ণায় পরিণত হতো। রাবী বলেন, তারপর হাযেরা আ. পানি পান করলেন, আর শিশু পুত্রকেও দুধ পান করালেন, তখন ফেরেশতা তাকে বললেন, আপনি ধ্বংসের কোন আশংকা করবেন না। কেননা এখানেই আল্লাহর ঘরে রয়েছে। এ শিশুটি এবং তাঁর পিতা দু’জনে মিলে এখানে ঘর নির্মাণ করবে এবং আল্লাহ তাঁর আপনজনকে কখনও ধ্বংস করেন না। ঐ সময় আল্লাহর ঘরের স্থানটি যমীন থেকে টিলার ন্যায় উঁচু ছিল। বন্যা আসার ফলে তার ডানে বামে ভেঙ্গে যাচ্ছিল। এরপর হাযেরা আ. এভাবেই দিন যাপন করছিলেন। অবশেষে জুরহুম গোত্রের কিছু লোক কাদা নামক উঁচু ভূমির পথ ধরে এদিকে আসছিল। তারা মক্কার নীচু ভূমিতে অবতরণ করল এবং তারা দেখতে পেল একঝাঁক পাখি চক্রাকারে উড়ছে। তখন তারা বলল, নিশ্চয় এ পাখিগুলো পানির উপর উড়ছে। আমরা এ ময়দানের পথ হয়ে বহুবার অতিক্রম করেছি। কিন্তু এখানে কোন পানি ছিল না। তখন তারা একজন কি দু’জন লোক সেখানে পাঠালো। তারা সেখানে গিয়েই পানি দেখতে পেল। তারা সেখান থেকে ফিরে এসে সকলকে পানির সংবাদ দিল। সংবাদ শুনে সবাই সেদিকে অগ্রসর হল। রাবী বলেন, ইসমাঈল আ.-এর মা পানির নিকট ছিলেন। তারা তাকে বলল, আমরা আপনার নিকটবর্তী স্থানে বসবাস করতে চাই। আপনি আমাদেরকে অনুমতি দিবেন কি? তিনি জবাব দিলেন হ্যাঁ। তবে, এ পানির উপর তোমাদের কোন অধিকার থাকবে না। তারা হ্যাঁ, বলে তাদের মত প্রকাশ করল। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এ ঘটনা ইসমাঈলের মাকে একটি সুযোগ এনে দিল। আর তিনিও মানুষের সাহচর্য চেয়েছিলেন। এরপর তারা সেখানে বসতি স্থাপন করল এবং তাদের পরিবার-পরিজনের নিকটও সংবাদ পাঠাল। তারপর তারাও এসে তাদের সাথে বসবাস করতে লাগল। পরিশেষে সেখান তাদের কয়েকটি পরিবারের বসতি স্থাপিত হল। আর ইসমাঈলও যৌবনে উপনীত হলেন এবং তাদের থেকে আরবী ভাষা শিখলেন। যৌবনে পৌঁছে তিনি তাদের কাছে অধিক আকর্ষনীয় ও প্রিয়পাত্র হয়ে উঠলেন। এরপর যখন তিনি পূর্ণ যৌবন লাভ করলেন, তখন তারা তাঁর সঙ্গে তাদেরই একটি মেয়েকে বিবাহ দিল। এরই মধ্যে ইসমাঈলের মা হাযেরা আ. ইন্তিকাল করেন। ইসমাঈলের বিবাহের পর ইবরাহীম আ. তাঁর পরিত্যক্ত পরিজনের অবস্থা দেখার জন্য এখানে আসলেন। কিন্তু ইসমাঈলকে পেলেন না। তিনি তাঁর স্ত্রীকে তাঁর সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন, স্ত্রী বলল, তিনি আমাদের জীবিকার খোঁজে বেরিয়ে গেছেন। এরপর তিনি পুত্রবধূকে তাদের জীবন যাত্রা এবং অবস্থা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন। সে বলল, আমরা অতি দুরবস্থায়, অতি টানাটানি ও খুব কষ্টে আছি। সে ইবরাহীম আ.-এর নিকট তাদের দুর্দশার অভিযোগ করল। তিনি বললেন, তোমার স্বামী বাড়ী আসলে, তাকে আমার সালাম জানিয়ে বলবে, সে যেন তার ঘরে দরজায় চৌকাঠ বদলিয়ে নেয়। এরপর যখন ইসমাঈল বাড়ী আসলেন, তখন তিনি যেন (তাঁর পিতা ইবরাহীম আ.-এর আগমনের) কিছুটা আভাস পেলেন। তখন তিনি তাঁর স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের কাছে কেউ কি এসেছিল? স্ত্রী বলল, হ্যাঁ। এমন এমন আকৃতির একজন বৃদ্ধ লোক এসেছিল এবং আমাকে আপনার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি তাকে আপনার সংবাদ দিলাম। তিনি আমাকে আমাদের জীবন যাত্রা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি তাকে জানালাম, আমরা খুব কষ্ট ও অভাবে আছি। ইসমাঈল আ. জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি কি তোমাকে কোন উপদেশ দিয়েছেন? স্ত্রী বলল, হ্যাঁ। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন আপনাকে তাঁর সালাম পৌঁছাই এবং তিনি আরো বলেছেন, আপনি যেন আপনার ঘরের দরজার চৌকাঠ বদলিয়ে ফেলেন। ইসমাঈল আ. বললেন, ইনি আমার পিতা । এ কথা দ্বারা তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়ে গেছেন, আমি যেন তোমাকে পৃথক করে দেই। অতএব তুমি তোমার আপন জনদের কাছে চলে যাও। এ কথা বলে, ইসমাঈল আ. তাকে তালাক দিয়ে দিলেন এবং ঐ লোকদের থেকে অপর একটি মেয়েকে বিবাহ করলেন। এরপর ইবরাহীম আ. এদের থেকে দূরে রইলেন, আল্লাহ যতদিন চাইলেন। তারপর তিনি আবার এদের দেখতে আসলেন। কিন্তু এবারও তিনি ইসমাঈল আ.-এর দেখা পেলেন না। তিনি ছেলের বউয়ের নিকট উপস্থিত হলেন এবং তাকে ইসমাঈল আ. সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। সে বলল, তিনি আমাদের খাবারের খোঁজে বেরিয়ে গেছেন। ইবরাহীম আ. জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কেমন আছ? তিনি তাদের জীবনযাপন ও অবস্থা জানতে চাইলেন। তখন সে বলল, আমরা ভাল এবং স্বচ্ছলতার মধ্যেই আছি। আর সে আল্লাহর প্রশংসাও করল। ইবরাহীম আ. জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের প্রধান খাদ্য কি? সে বলল, গোশত। তিনি আবার জানতে চাইলেন, তোমাদের পানীয় কি? সে বলল, পানি। ইবরাহীম আ. দু’আ করলেন, হে আল্লাহ! তাদের গোশত ও পানিতে বরকত দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ঐ সময় তাদের সেখানে খাদ্যশস্য উৎপাদন হতো না। যদি হতো তাহলে ইবরাহীম আ. সে বিষয়েও তাদের জন্য দু’আ করতেন। বর্ণনাকারী বলেন, মক্কা ব্যতীত অন্য কোথাও কেউ শুধু গোশত ও পানি দ্বারা জীবন ধারণ করতে পারেনা। কেননা, শুধু গোশত ও পানি জীবনযাপনের অনুকূল হতে পারে না। ইবরাহীম আ. বললেন, যখন তোমার স্বামী ফিরে আসবে, তখন তাকে আমার সালাম বলবে, আর তাকে আমার পক্ষ থেকে হুকুম করবে যে, সে যেন তার ঘরের দরজার চৌকাঠ ঠিক রাখে। এরপর ইসমাঈল আ. যখন ফিরে আসলেন, তখন তিনি বললেন, তোমাদের নিকট কেউ এসেছিলেন কি? সে বলল, হ্যাঁ। একজন সুন্দর আকৃতির বৃদ্ধ লোক এসেছিলেন এবং সে তার প্রশংসা করল, তিনি আমাকে আপনার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেছেন। আমি তাকে আপনার সংবাদ জানিয়েছি। এরপর তিনি আমার নিকট আমাদের জীবনযাপন সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আমি তাকে জানিয়েছি যে, আমরা ভাল আছি। ইসমাঈল আ. বললেন, তিনি কি তোমাকে আর কোন কিছুর জন্য আদেশ করেছেন? সে বলল, হে হ্যাঁ। তিনি আপনার প্রতি সালাম জানিয়ে আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আপনি যেন আপনার ঘরের দরজার চৌকাঠ ঠিক রাখেন। ইসমাঈল আ. বললেন, ইনিই আমার পিতা। আর তুমি হলে আমার ঘরের দরজার চৌকাঠ। একথার দ্বারা তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন তোমাকে স্ত্রী হিসাবে বহাল রাখি। এরপর ইবরাহীম আ. এদের থেকে দূরে রইলেন, যদ্দিন আল্লাহ চাইলেন। এরপর তিনি আবার আসলেন। (দেখতে পেলেন) যমযম কূপের নিকটস্থ একটি বিরাট বৃক্ষের নীচে বসে ইসমাঈল আ. তাঁর একটি তীর মেরামত করছেন। যখন তিনি তাঁর পিতাকে দেখতে পেলেন, তিনি দাঁড়িয়ে তাঁর দিকে এগিয়ে গেলেন। এরপর একজন বাপ-বেটার সঙ্গে, একজন বেটা-বাপের সঙ্গে সাক্ষাত হলে যেরূপ করে থাকে তাঁরা উভয়ে তাই করলেন। এরপর ইবরাহীম আ. বললেন, হে ইসমাঈল ! আল্লাহ আমাকে একটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন। ইসমাঈল বললেন, আপনার রব! আপনাকে যা আদেশ করেছেন, তা করুন। ইবরাহীম আ. বললেন, তুমি আমার সাহায্য করবে কি? ইসমাঈল আ. বললেন, আমি আপনার সাহায্য করব। ইবরাহীম আ. বললেন, আল্লাহ আমাকে এখানে একটি ঘর বানাতে নির্দেশ দিয়েছেন। এই বলে তিনি উঁচু টিলার দিকে ইশারা করলেন যে, এর চারপাশে ঘেরাও দিয়ে, তখনি তাঁরা উভয়ে কাবা ঘরের দেয়াল উঠাতে লেগে গেলেন। ইসমাঈল আ. পাথর আনতেন, আর ইবরাহীম আ. নির্মাণ করতেন। পরিশেষে যখন দেয়াল উঁচু হয়ে গেল, তখন ইসমাঈল আ. (মাকামে ইবরাহীম নামে খ্যাত) পাথরটি আনলেন এবং ইবরাহীম আ. এর জন্য তা যথাস্থানে রাখলেন। ইবরাহীম আ. তার উপর দাঁড়িয়ে নির্মাণ কাজ করতে লাগলেন। আর ইসমাঈল আ. তাকে পাথর যোগান দিতে থাকেন। তখন তারা উভয়ে এ দু’আ করতে লাগলেন। আর ইসমাঈল আ. তাকে পাথর যোগান দিতে থাকেন। তখন তারা উভয়ে এ দু’আ করতে থাকলেন, হে আমাদের রব! আমাদের থেকে (একাজ) কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সবকিছু শুনেন ও জানেন। তাঁরা উভয়ে আবার কাবা ঘর তৈরী করতে থাকেন। এবং কাবা ঘরের চার দিকে ঘুরে ঘুরে এ দু’আ করতে থাকেন। হে আমাদের রব! আমাদের থেকে (এ শ্রম টুকু) কবুল করে নিন। নিশ্চয়ই আপনি সবকিছু শুনেন ও জানেন। (২:১২৭)

হাদীস নং ৩১২৬

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………..ইবনে আব্বাস রা.থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন ইবরাহীম আ. ও তাঁর স্ত্রী (সারার) মাঝে যা হওয়ার হয়ে গেল, তখন ইবরাহীম আ. ইসমাঈল এবং তাঁর মাকে নিয়ে বের হলেন। তাদের সাথে একটি থলে ছিল, যাতে পানি ছিল। ইসমাঈল আ.-এর মা মশক থেকে পানি পান করতেন। ফলে শিশুরা জন্য তাঁর স্তন্য দুধ বাড়তে থাকে। অবশেষে ইবরাহীম আ. মক্কায় পৌঁছে হাযেরাকে একটি বিরাট বৃক্ষের নীচে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। এরপর ইবরাহীম আ. আপন পরিবার নিকট ফিরে চললেন। তখন ইসমাঈল আ. -এর মা কিছু দূর পর্যন্ত তাঁর অনুসরণ করলেন। অবশেষে যখন কাদা নামক স্থানে পৌঁছলেন, তখন তিনি পিছন থেকে ডেকে বললেন, হে ইবরাহীম! আপনি আমাদেরকে কার কাছে রেখে যাচ্ছেন ? ইবরাহীম আ. বললেন, আল্লাহর কাছে। হাযেরা আ. বললেন, আমি আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। রাবী (ইবনে আব্বাস রা.) বলেন, এরপর হাযেরা আ. ফিরে আসলেন, তিনি মশক থেকে পানি পান করতেন আর শিশুর জন্য (তাঁর স্তন্যের) দুধ বাড়ত। অবশেষে যখন পানি শেষ হয়ে গেল। তখন ইসমাঈল আ.-এর মা বললেন, আমি যদি গিয়ে এদিকে সেদিকে তাকাতাম তাহলে হয়ত কোন মানুষ দেখতে পেতাম। রাবী (ইবনে আব্বাস রা.) বলেন, এরপর ইসমাঈল আ.-এ মা গেলেন এবং সাফা পাহাড়ে উঠলেন আর এদিকে ওদিকে তাকালেন এবং কাউকে দেখেন কিনা এজন্য বিশেষভাবে তাকিয়ে দেখলেন। কিন্তু কাউকেও দেখতে পেলেন না। তখন দ্রুত বেগে মারওয়া পাহাড়ে এসে গেলেন। এবং এভাবে তিনি কয়েক চক্কর দিলেন। পুনরায় তিনি বললেন, যদি গিয়ে দেখতাম যে শিশুটি কি করছে। এরপর তিনি গেলেন এবং দেখতে পেলেন যে সে তার অবস্থায়ই আছে। সে যেন মরণাপন্ন হয়ে গেছে। এতে তাঁর মন স্বস্তি পাচ্ছিল না। তখন তিনি বললেন, যদি সেখানে (আবার) যেতাম এবং এদিকে সেদিকে তাকিয়ে দেখতাম। সম্ভবত: কাউকে দেখতে পেতাম। এরপর তিনি গেলেন, সাফা পাহাড়ের উপর উঠলেন এবং এদিক সেদিক দেখলেন এবং গভীরভাবে তাকিয়ে দেখলেন। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলেন না। এমনকি তিনি সাতটি চক্কর পূর্ণ করলেন। এরপর তিনি মনে মনে বললেন, যদি যেতাম তখন দেখতাম যে সে কি করছে। হঠাৎ তিনি একটি শব্দ শুনতে পেলেন। তখন তিনি বললেন, যদি আপনার কোন সাহায্য করার থাকে তবে আমাকে সাহায্য করুন। হঠাৎ তিনি জিবরাঈল আ.-কে দেখতে পেলেন। বারী (ইবনে আব্বাস রা.) বলেন, তখন তিনি তাঁর পায়ের গোড়ালি দ্বারা এরূপ করলেন অর্থাৎ গোড়ালি দ্বারা যমীনের উপর আঘাত করলেন। বারী (ইবনে আব্বাস রা.) বলেন, তখনই পানি বেরিয়ে আসল। এ দেখে ইসমাঈল আ.-এর মা অস্থির হয়ে গেলেন এবং গর্ত খনন করতে লাগলেন। রাবী (ইবনে আব্বাস রা.) বলেন, এ প্রসঙ্গে আবুল কাসিম (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, হাযেরা আ. যদি একে তার অবস্থার উপরে ছেড়ে দিতেন তাহলে পানি বিস্তৃত হযে যেত। রাবী (ইবনে আব্বাস রা.) বলেন তখন হাযেরা আ. পানি পান করতে লাগলেন এবং তাঁর সন্তানের জন্য তাঁর দুধ বাড়তে থাকে। রাবী (ইবনে আব্বাস রা. বলেন, এরপর জুরহুম গোত্রের (ইয়ামন দেশীয়) একদল লোক উপত্যকার নীচু ভূমি দিয়ে অতিক্রম করছিল। হঠাৎ তারা দেখল কিছু পাখি উড়ছে। তারা যেন তা বিশ্বাসই করতে পারছিল না আর তারা বলতে লাগল এসব পানি তো পানি ছাড়া কোথাও থাকতে পারে না। তখন তার সেখানে তাদের একজন দূত পাঠাল। সে সেখানে গিয়ে দেখল, সেখানে পানি মাওজুদ আছে। তখন সে তার দলের লোকদের কাছে ফিরে আসল এবং তাদেরকে সংবাদ দিল। এরপর তারা হাযেরা আ.-এর কাছে এসে বলল, হে ইসমাঈলের মা ! আপনি কি আমাদেরকে আপনার কাছে থাকা অথবা (রাবী বলেছেন) আপনার কাছে বসবাস করার অনুমতি দিবেন? (হাযেরা আ. তাদেরকে বসবাসের অনুমতি দিলেন এবং এভাবে অনেক দিন কেটে গেল)। এরপর তাঁর ছেলে বয়ঃপ্রাপ্ত হল। তখন তিনি (ইসমাঈল) জুরহুম গোত্রেরই একটি মেয়ে বিয়ে করলেন। রাবী (ইবনে আব্বাস রা.) বলেন, পুনরায় ইবরাহীম আ.-এর মনে জাগল (ইসমাঈল এবং তাঁর মা হাযেরা কথা) তখন তিনি তাঁর স্ত্রীকে বললেন, আমি আমার পরিত্যক্ত পরিজনের অবস্থা সম্পর্কে খবর নিতে চাই। রাবী (ইবনে আব্বাস রা.) বলেন, এরপর তিনি (তাদের কাছে) আসলেন এবং সালাম দিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ইসমাঈল কোথায়? ইসমাঈল আ.-এর স্ত্রী বলল, তিনি শিকারে গিয়েছেন। ইবরাহীম আ. বললেন, সে যখন আসবে তখন তুমি তাকে আমার এ নির্দেশের কথা বলবে, তুমি তোমার চৌকাঠখানা বদলিয়ে ফেলবে। ইসমাঈল আ. যখন আসলেন, তখন স্ত্রী তাকে খবরটি জানালেন, তখন তিনি স্ত্রীকে বললেন, তুমি সেই চৌকাঠ। অতএব তুমি তোমার পিতামাতার কাছে চলে যাও। রাবী (ইবনে আব্বাস রা.) বলেন, অতঃপর (তাদের কথা) ইবরাহীম আ.-এর আবার মনে পড়ল। তখন তিনি তাঁর স্ত্রী কে বললেন, আমি আমার নির্বাসিত পরিবারের খবর নিতে চাই। এরপর তিনি সেখানে আসলেন এবং (পুত্রবধূকে) জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি আমাদের এখানে অবস্থান করবেন না? কিছু পানাহার করবেন না? তখন ইবরাহীম আ. বললেন, তোমাদের খাদ্য এবং পানীয় কি? স্ত্রী বলল, আমাদের খাদ্য হল গোশত আর পানীয় হল পানি। তখন ইবরাহীম আ. দু’আ করলেন, ‘হে আল্লাহ! তাদের খাদ্য এবং পানীয় দ্রব্যের মাঝে বরকত দিন’। রাবী (ইবনে আব্বাস রা.) বলেন, আবুল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইবরাহীম আ.-এর দু’আর কারণেই (মক্কার খাদ্য ও পানীয় দ্রব্যের মধ্যে) বরকত রয়েছে। বারী (ইবনে আব্বাস রা.) বলেন, আবার কিছুদিন পর ইবরাহীম আ.-এর মনে তাঁর নির্বাসিত পরিজনের কথা জাগল। তখন তিনি স্ত্রী কে বললেন, আমি আমার পরিত্যক্ত পরিজনের খবর নিতে চাই। এরপর তিনি এলেন এবং ইসমাঈলের দেখা পেলেন, তিনি যমযম কূপের পিছনে বসে তাঁর একটি তীর মেরামত করছেন। তখন ইবরাহীম আ. ডেকে বললেন, হে ইসমাঈল! তোমার রব তাঁর জন্য একখানা ঘর নির্মাণ করতে আমাকে আদেশ দিয়েছেন। ইসমাঈল আ. বললেন, আপনার রবর আদেশ পালন করুন। ইবরাহীম আ. বললেন, তিনি আমাকে এও নির্দেশ দিয়েছেন যে, তুমি যেন আমাকে এ বিষয়ে সহায়তা কর। ইসমাঈল আ. বললেন, তাহলে আমি তা করব অথবা তিনি অনুরূপ কিছু বলেছিলেন। এরপর উভয়ে উঠে দাঁড়ালেন। ইবরাহীম আ. ইমারত বানাতে লাগলেন আর ইসমাঈল আ. তাকে পাথর এনে দিতে লাগলেন আর তাঁরা উভয়ে এ দু’আ করছিলেন, হে আমাদের রব! আপনি আমাদের এ কাজ কবুল করুন। আপনি তো সব কিছু শুনেন এবং জানেন। রাবী বলেন, এরি মধ্যে প্রাচীর উঁচু হয়ে গেল আর বৃদ্ধ ইবরাহীম আ. এতটা উঠতে দুর্বল হয়ে পড়লেন। তখন তিনি (মাকামে ইবরাহীমের) পাথরের উপর দাঁড়ালেন। ইসমাঈল তাকে পাথর এগিয়ে দিতে লাগলেন আর উভয়ে এ দু’আ পড়তে লাগলেন, হে আমাদের রব! আপনি আমাদের এ কাজটুকু কবুল করুন। নিঃসন্দেহে আপনি সবকিছু শুনেন ও জানেন। (২:১২৭)

হাদীস নং ৩১২৭

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……….আবু যার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ ! পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কোন মসজিদ তৈরী করা হয়েছে? তিনি বললেন, মসজিদে হারাম। আমি বললাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, মসজিদে আকসা। আমি বললাম, উভয় মসজিদের (তৈরীর) মাঝে কত ব্যবধান ছিল? তিনি বললেন, চল্লিশ বছর। (তিনি আরো বললেন) এরপর তোমার যেখানেই সালাতের সময় হবে, সেখানেই সালাত আদায় করে নিবে। কেননা এর মধ্যে ফযীলত নিহিত রয়েছে।

হাদীস নং ৩১২৮

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, উহুদ পাহাড় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দৃষ্টিগোচর হল। তিনি বললেন, এ পাহাড় আমাদের ভালবাসে আর আমরাও তাকে ভালবাসি। হে আল্লাহ! ইবরাহীম আ. মক্কাকে হরম ঘোষণা করেছে আর আমি হরম ঘোষণা করছি এ পাহাড়ের উভয় পার্শ্বের মধ্যবর্তী স্থানকে (মদীনাকে)। এ হাদীসটি আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ রা.-ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৩১২৯

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আয়িশা আ.-কে বলেছেন, তুমি কি জান? তোমার কওম যখন কাবা ঘর নির্মাণ করেছে, তখন তারা ইবরাহীম আ.-এর ভিত্তি থেকে তা ছোট করেছে। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি তা ইবরাহীম আ.-এর ভিত্তির উপর পুন নির্মাণ করবেন না? তিনি বললেন, যদি তোমার কওম কুফরী থেকে সদ্য আগত না হতো। (তাহলে আমি তা করে দিতাম)। আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বললেন, যদি আয়েশা রা. এ হাদীসটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনে থাকেন, তবে আমি মনে করি যে, কাবা ঘর ইবরাহীম আ.-এর ভিত্তির উপর পুরোপুরি নির্মাণ করা হয়নি। রাবী ইসমাঈল রহ. বলেন, ইবনে আবু বকর হলেন আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর রা.।

হাদীস নং ৩১৩০

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………..আবু হুমাইদ সাঈদী রা. থেকে বর্ণিত, সাহাবাগণ আরয করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ ! আমরা কিভাবে আপনার উপর দরূদ পাঠ করব? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এভাবে পড়বে, হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর, তাঁর স্ত্রীগণের উপর এবং তাঁর বংশধরদের উপর রহমত নাযিল করুন, যেরূপ রহমত নাযিল করেছেন ইবরাহীম আ.-এর বংশধরদের উপর। আর আপনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর, তাঁর স্ত্রীগণের উপর এবং তাঁর বংশধরদের উপর এমনিভাবে বরকত নাযিল করুন যেমনি আপনি বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীম আ.-এর বংশধরদের উপর। নিশ্চয় আপনি অতি প্রশংসিত এবং অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী।

হাদীস নং ৩১৩১

কায়স ইবনে হাফস ও মূসা ইবন ইসমাঈল রহ……….আবদুর রহমান ইবনে আবু লায়লা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কাব ইবনে উজরা রা. আমার সাথে দেখা করে বললেন, আমি কি আপনাকে এমন একটি হাদীয়া দেব না যা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি? আমি বললাম হ্যাঁ, আপনি আমাকে সে হাদীয়াটি দিন। তিনি বললেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনাদের উপর অর্থাৎ আহলে বায়তের উপর কিভাবে দরূদ পাঠ করতে হবে? কেননা, আল্লাহ তো (কেবল) আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন, আমরা কিভাবে আপনার উপর সালাম করব। তিনি বললেন, তোমরা এভাবে বল, হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশধরদের উপর রহমত নাযিল করুন, যেরূপ রহমত নাযিল করেছেন ইবরাহীম আ.-এর বংশধরদের উপর। নিশ্চয় আপনি অতি প্রশংসিত এবং অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী। হে আল্লাহ! মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর বংশধরদের উপর এমনিভাবে বরকত নাযিল করুন যেমনি আপনি বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীম আ.এবং তাঁর বংশধরদের উপর। নিশ্চয় আপনি অতি প্রশংসিত এবং অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী।

হাদীস নং ৩১৩২

উসমান ইবনে আবু শায়বা রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান এবং হুসাইন রা.-এর জন্য নিম্নোক্ত দু’আ পড়ে পানাহ চাইতেন আর বলতেন, তোমাদের পিতা (ইবরাহীম আ. ইসমাঈল ও ইসহাক আ.-এর জন্য এ দু’আ পড়ে পানাহ চাইতেন। (দু’আটি হল) আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমাত দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ট হতে পানাহ চাচ্ছি।

হাদীস নং ৩১৩৩

আহমদ ইবনে সালিহ রহ…………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (ইবরাহীম আ. তাঁর চিত্ত প্রশান্তির জন্য কিভাবে জীবিত করা হবে, এ সম্পর্কে আল্লাহর নিকট জিজ্ঞাসা করেছিলেন, একে যদি ‘শক’ বলে অভিহিত করা হয় তবে এরূপ ‘শক’ এর ব্যাপারে আমরা ইবরাহীম আ. চাইতে অধিক উপযোগী। যখন ইবরাহীম আ. বলেছিলেন, হে আমার রব! আমাকে দেখিয়ে দিন, আপনি কিভাবে মৃতকে জীবিত করেন।আল্লাহ বললেন, তুমি কি বিশ্বাস কর না? তিনি বললেন, হ্যাঁ, (অবশ্যই বিশ্বাস করি) তা সত্ত্বেও (এ জিজ্ঞাসা এজন্য যে) যাতে আমার চিত্ত প্রশান্তি লাভ করে। (২: ২৬০) এরপর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লুত আ.-এর ঘটনা উল্লেখ করে বললেন) আল্লাহ লূত আ.-এর প্রতি রহম করুন। তিনি (আল্লাহর দীন প্রচারের সহায়তার জন্য) একটি সুদৃঢ় খুঁটির (দলের) আশ্রয় চেয়েছিলেন আর আমি যদি কারাগারে এত দীর্ঘ সময় থাকতাম যত দীর্ঘ সময় ইউসুফ আ. কারাগারে ছিলেন তবে (বাদশাহর পক্ষ থেকে) তার ডাক সাড়া দিতাম।

হাদীস নং ৩১৩৪

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………সালামা ইবনে আকওয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ইয়ামানের) আসলাম গোত্রের একদল লোকের কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। এ সময় তারা তীরন্দাজির প্রতিযোগিতা করছিল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে বনী ইসমাঈল‍‍‍! তোমরা তীরন্দাজি করে যাও। কেননা তোমাদের পূর্বপুরুষ (ইসমাঈল আ.) তীরন্দাজ ছিলেন। সুতরাং তোমরাও তীরন্দাজি করে যাও আর আমি অমুক গোত্রের লোকদের সাথে আছি। রাবী বলেন, (এ কথা শুনে) তাদের এক পক্ষ হাত চালনা থেকে বিরত হয়ে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের কি হল, তোমরা যে তীরন্দাজি করছ না? তখন তারা বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ ! আমরা কিভাবে তীর ছুড়তে পারি, অথচ আপনি তো তাদের সাথে রয়েছেন। তখন তিনি বললেন, তোমরা তীর ছুড়তে থাক, আমি তোমাদের সাথে সাথেই আছি।

হাদীস নং ৩১৩৫

ইসহাক ইবনে ইবরাহীম রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, লোকদের মধ্যে অধিক সম্মানিত ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, তাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বেশী আল্লাহ ভীরু, সে সবচেয়ে অধিক সম্মানিত। সাহাবা কিরাম বললেন, ইয়া নাবীয়াল্লাহ! আমরা আপনাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিনি। তিনি বললেন, তাহলে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি হলেন, আল্লাহর নবী ইউসুফ ইবনে আল্লাহর নবী (ইয়াকুব) ইবনে আল্লাহর নবী (ইসহাক) ইবনে আল্লাহর খলীল ইবরাহীম আ.। তাঁরা বললেন, আমরা এ সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করিনি। তিনি বললেন, তবে কি তোমরা আমাকে আরবদের উচ্চ বংশ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছ? তারা বলল, হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, জাহেলিয়াতের যুগে তোমাদের মধ্যে যারা সর্বোত্তম ব্যক্তি ছিলেন ইসলাম গ্রহণের পরও তারাই সর্বোত্তম ব্যক্তি, যদি তাঁরা ইসলামী জ্ঞান অর্জন করে থাকেন।

হাদীস নং ৩১৩৬

আবুল ইয়ামান রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ লূত আ.-কে ক্ষমা করুন। তিনি একটি সুদৃঢ় খুঁটির আশ্রয় চেয়েছিলেন।

হাদীস নং ৩১৩৭

মাহমুদ রহ………..আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম فهل من مدكر (দাল সহ) পড়েছেন।

হাদীস নং ৩১৩৮

হুমাইদী রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে যামআ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনেছি এবং তিনি যে লোক (সালিহ আ.-এর) উটনী যখম করেছিল তার উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, উটনীকে হত্যা করার জন্য এমন এক লোক (কিদার) তৈরী হয়েছিল যে তার গোত্রের মধ্যে প্রবল ও শক্তিশালী ছিল, যেমন ছিল আবু যামআ।

হাদীস নং ৩১৩৯

মুহাম্মদ ইবনে মিসকীন আবুল হাসান রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুকের যুদ্ধের সময় যখন হিজর নামক স্থানে অবতরণ করলেন, তখন তিনি সাহাবাগণকে নির্দেশ দিলেন, তাঁরা যেন এখানে কূপের পানি পান না করে, এবং মশকেও পানি ভরে না রাখে। তখন সাহাবাগণ বললেন, আমরা তো এর পানি দ্বারা রুটির আটা গুলে ফেলেছি এবং পানিও ভরে রেখেছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে সেই আটা ফেলে দেয়ার এবং পানি ঢেলে ফেলার নির্দেশ দিলেন। সাবরা ইবনে মাবাদ এবং আবুশ শামূস রহ. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদ্য ফেলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আর আবু যার রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, এর পানি দ্বারা যে আটা গুলেছে (সে যেন তা ফেলে দেয়)।

হাদীস নং ৩১৪০

ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সামূদ জাতির আবসস্থল ‘হিজর’ নামক স্থানে অবতরণ করলেন আর তখন তারা এর কূপের পানি মশক ভরে রাখলেন এবং এ পানি দ্বারা আটা গুলে নিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে হুকুম দিলেন, তারা ঐ কূপ থেকে যে পানি ভরে রেখেছে, তা যেন ফেলে দেয় আর পানিতে গোলা আটা যেন উটগুলোকে খাওয়ায় আর তিনি তাদের হুকুম করলেন তারা যেন ঐ কূপ থেকে মশক ভরে নেয় যেখান থেকে (সালিহ আ.-এর উটনীটি পানি পান করত। উসামা রহ. নাফি রহ. থেকে হাদীস বর্ণনায় উবাইদুল্লাহ রহ. -এর অনুসরণ করেছেন।

হাদীস নং ৩১৪১

মুহাম্মদ রহ………..আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাবুকের পথে) যখন ‘হিজর’ নামক স্থান অতিক্রম করলেন, তখন তিনি বললেন, তোমরা এমন লোকদের আবাসস্থলে প্রবেশ কর না, যারা নিজেরাই নিজেদের উপর যুলুম করেছে। তবে প্রবেশ করতে হলে, ক্রন্দনরত অবস্থায়, যেন তাদের প্রতি যে বিপদ এসেছিল তোমাদের প্রতি অনুরূপ বিপদ না আসে। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহনের উপর বসা অবস্থায় নিজ চাদর দিয়ে চেহারা মোবারক ঢেকে নিলেন।

হাদীস নং ৩১৪২

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাবুকের পথে সাহাবাদেরকে) নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা একমাত্র ক্রন্দনরত অবস্থায়ই এমন লোকদের আবাসস্থলে প্রবেশ করবে যারা নিজেরাই নিজেদের উপর জুলুম করেছে। তাদের উপর যে মুসিবত এসেছে তোমাদের উপরও যেন সে মুসিবত না আসে।

হাদীস নং ৩১৪৩

ইসহাক ইবনে মানসুর রহ………..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সম্মানী ব্যক্তি-যিনি সন্তান সম্মানী ব্যক্তির, যিনি সন্তান সম্মানী ব্যক্তির, যিনি সন্তান সম্মানী ব্যক্তির, তিনি হলেন, ইউসুফ ইবনে ইয়াকুব ইবনে ইসহাক ইবনে ইবরাহীম আ.।

হাদীস নং ৩১৪৪

উবাইদ ইবনে ইসমাঈল রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সম্মানিত ব্যক্তি কে? তিনি উত্তর দিলেন, তাদের মধ্যে যে আল্লাহকে সবচেয়ে বেশী ভয় করে। তারা বললেন, আমরা আপনাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করিনি। তিনি বললেন, তাহলে মানুষের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত ব্যক্তি হলেন, আল্লাহর নবী ইউসুফ ইবনে আল্লাহর নবী (ইয়াকুব) ইবনে আল্লাহর নবী (ইসহাক) ইবনে আল্লাহর নবী (ইবরাহীম আ.)। তাঁরা বললেন, আমরা আপনাকে এ বিষয়েও জিজ্ঞাসা করিনি। তখন তিনি বললেন, তাহলে তোমরা আমার কাছে আরবের খনি অর্থাৎ গোত্রগুলোর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছ? (তাহলে শুন) মানুষ খনি বিশেষ, জাহেলিয়াতের যুগে যারা তাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি, যদি তারা ইসলামী জ্ঞান লাভ করে।

হাদীস নং ৩১৪৫

মুহাম্মদ ইবনে সালাম রহ………..আবু হুরায়রা রা. সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৩১৪৬

বাদল ইবনে মুহাব্বার রহ…………আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন, আবু বাকর র.-কে তিনি যেন লোকদের সালাত আদায় করিয়ে দেন। আয়েশা রা. বললেন, তিনি একজন কোমল হৃদয়ের লোক। যখন আপনার জায়গায় তিনি দাঁড়াবেন, তখন বিনম্র অন্তর হয়ে পড়বেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় তাই বললেন, আয়েশা রা. আবারও সেই উত্তর দিলেন, শোবা রহ. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তৃতীয় অথবা চতুর্থবার বললেন, (হে আয়েশা রা.) তোমরা ইউসুফ আ.-এর ঘটনায় নিন্দুক নারীদের মত। আবু আবু বকরকে বল, (সালাত আদায় করিয়ে দিক)।

হাদীস নং ৩১৪৭

রাবী ইবনে ইয়াহইয়া রহ……….আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লেন, তখন তিনি বললেন, আবু বকরকে বল, তিনি যেন লোকদের সালাত আদায় করিয়ে দেন। তখন আয়েশা রা. বললেন, আবু বকর রা. তো একজন এমন (কোমল হৃদয়ের) লোক। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুরূপ বললেন, তখন আয়েশা রা.ও তদরূপই বললেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবু বকরকে বল, (যেন সালাত আদায় করিয়ে দেন)। হে আয়েশা! নিশ্চয়ই তোমরা ইউসুফ আ.-এর ঘটনার নিন্দুক নারীদের ন্যায় হয়ে পড়েছ। এরপর আবু বকর রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবনকালে ইমামতী করলেন। রাবী হুসাইন রহ. যায়েদা রহ. থেকে বর্ণনা করেছেন رجل এখানে এর স্থলে رجل رقيق আছে অর্থাৎ তিনি একজন কোমল হৃদয়ের লোক।

হাদীস নং ৩১৪৮

আবুল ইয়ামান রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’আ করেছেন, হে আল্লাহ ! আয়্যাশ ইবনে আবু রবীআকে (কাফিরদের অত্যাচার হতে) মুক্তি দিন। হে আল্লাহ ! সালাম ইবনে হিশামকে নাজাত দিন। হে আল্লাহ ! ওয়ালীদ ইবনে ওয়ালীদকে নাজাত দিন। হে আল্লাহ ! দুর্বল মুমিনদেরকেও মুক্তি দিন। হে আল্লাহ ! মুযার গোত্রের উপর আপনার পাকড়াওকে মজবুত করুন। হে আল্লাহ ! এ গোত্রের উপর এমন দুর্ভিক্ষ ও অভাব অনটন নাযিল করুন যেমন দুর্ভিক্ষ ইউসুফ আ.-এর যামানায় হয়েছিল।

হাদীস নং ৩১৪৯

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আসমা রহ………..আবু হুরায়রা রা.থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ লূত আ.-এর উপর রহম করুন। তিনি একটি সুদৃঢ় খুঁটির আশ্রয় নিয়েছিলেন আর ইউসুফ আ. যত দীর্ঘ সময় জেলখানায় কাটিয়েছেন, আমি যদি অত দীর্ঘ সময় কারাগারে কাটাতাম এবং পরে বাদশাহর দূত (মুক্তির আদেশ নিয়ে) আমার নিকট আসত তবে নিশ্চয়ই আমি তার ডাক সাড়া দিতাম।

হাদীস নং ৩১৫০

মুহাম্মদ ইবনে সালাম রহ……….মাসরূক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়েশা রা.-এর মা উম্মে রুমানার নিকট আয়েশার বিষয়ে যে সব মিথ্যা অপবাদের কথা বলাবলি হচ্ছিল সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, আমি আয়েশার সাথে একত্রে বসা ছিলাম। এমন সময় একজন আনসারী মহিলা একথা বলতে বলতে আমাদের নিকট প্রবেশ করল। আল্লাহ অমুককে শাস্তি দিক। আর শাস্তি তো দিয়েছেন একথা শুনে উম্মে রুমানা রা. বললেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম একথা বলার কারণ কি? সে মহিলাটি বলল, ঐ লোকটিই তো কথাটির চর্চা করছে। তখন আয়েশা জিজ্ঞাসা করলেন, কোন কথাটির? এরপর সে আয়েশা রা.-কে বিষয়টি জানিয়ে দিল। আয়েশা রা. জিজ্ঞাসা করলেন, বিষয়টি কি আবু বকর রা. এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও শুনেছেন? সে বলল, হ্যাঁ, এতে আয়েশা রা. বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেলেন। পরে তাঁর হুশ ফিরে আসল তবে তাঁর শরীর কাঁপিয়ে জ্বর আসল। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে জিজ্ঞাসা করলেন, তার কি হল? আমি বললাম, তাঁর সম্পর্কে যা কিছু রটেছে তাঁতে সে (মনে) আঘাত পেয়েছে ফলে সে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। এ সময় আয়েশা রা. উঠে বসলেন, আর বলতে লাগলেন, আল্লাহর কসম, আমি যদি কসম খেয়ে বলি তবুও আপনারা আমায় বিশ্বাস করবেন না আর যদি উযর পেশ করি তাও আপনারা আমার উযর শুনবেন না। অতএব এখন আমার ও আপনাদের অবস্থা হল ইয়াকুব আ. এবং তাঁর সন্তাদের মত। আপনারা যা বর্ণনা করেছেন সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহর নিকটেই চাওয়া হল। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে চলে গেলেন এবং আল্লাহ যা নাযিল করার তা নাযিল করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে আয়েশা রা.-কে এ সংবাদ জানালেন। আয়েশা রা. বললেন, আমি একমাত্র আল্লাহরই প্রশংসা করব, অন্য কারো প্রশংসা নয়।

হাদীস নং ৩১৫১

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………..উরওয়া ইবনে যুবাইর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়েশা রা.-কে জিজ্ঞাসা করলেন আল্লাহর বাণী حتى إذا استيأس الرسل وظنوا أنهم قد كذبوا আয়াতাংশের মধ্যে كذبوا হবে, না كذبوا হবে? (যাল হরফে তাশদীদ সহ পড়তে হবে না তাশদীদ ব্যতীত)? হযরত আয়েশা রা. বলেন, (এখানে كذبوا নয়, كذبوا হবে) কেননা, তাদের কওম তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলেছিল। (উরওয়া রহ. বলেন) আমি বললাম, মহান আল্লাহর কসম, রাসূলগণের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, তাদের কওম তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলেছে, আর তাতো সন্দেহের বিষয় ছিল না। (কাজেই এখানে كذبوا হবে কিভাবে?) তখন হযরত আয়েশা রা. বলেন, হে উরাইয়্যাহ! এ ব্যাপারে তাদের তো দৃঢ় বিশ্বাস ছিল। (অর্থাৎ এখানে তিনি ظن -কে يقين অর্থে নিয়েছেন)। (উরওয়া রহ. বলেন) আমি বললাম, সম্ভবত: এখানে হবে। হযরত আয়েশা রা. বললেন, মাআযাল্লাহ (আল্লাহর পানাহ) রাসূলগণ কখনো আল্লাহ সম্পর্কে এরূপ ধারণা করতেন না। (অর্থাৎ كذبوا হলে অর্থ দাঁড়ায়, আল্লাহ পাক রাসূলগণের সাথে মিথ্যা বলেছেন। অথচ রাসূলগণ কখনো এরূপ ধারণা করতে পারে না) তবে এ আয়াত সম্পর্কে আয়েশা রা. বলেন, তারা রাসূলগণের অনুযায়ী যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছেন এবং রাসূলগণকে বিশ্বাস করেছেন। তাদের উপর আযমায়েশ (ঈমানের পরীক্ষা) দীর্ঘায়িত হয়। তাদের প্রতি সাহায্য পৌঁছতে বিলম্ব হয়। অবশেষে রাসূলগণ যখন তাদের কওমের লোকদের মধ্যে যারা তাদেরকে মিথ্যা মনে করেছে, তাদের ঈমান আনার ব্যাপারে নিরাশ হয়ে গেলেন এবং তাঁরা এ ধারণা করতে লাগলেন যে তাদের অনুসারীগণও তাদেরকে মিথ্যাবাদী মনে করবেন, ঠিক এ সময়ই মহান আল্লাহর সাহায্য পৌঁছে গেল। استيأسوا শব্দটি استفعلوا -এর ওযনে এসেছে। يئست منه থেকে নিষ্পন্ন হয়েছে। অর্থাৎ তারা ইউসুফ আ. থেকে নিরাশ হয়ে গেছে। لاتيئسوا من روح الله -এর অর্থ- তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।

হাদীস নং ৩১৫২

আবদা রহ………..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সম্মানিত ব্যক্তি -যিনি সন্তান সম্মানিত ব্যক্তির, যিনি সন্তান সম্মানিত ব্যক্তির, যিনি সন্তান সম্মানিত ব্যক্তির, তিনি হলেন ইউসুফ ইবনে ইয়াকুব ইবনে ইসহাক ইবনে ইবরাহীম আ.।

হাদীস নং ৩১৫৩

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ আলী জুফী রহ…………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, একদা আইয়্যূব আ. নগ্ন দেহে গোসল করছিলেন। এমন সময় তাঁর উপর স্বর্ণের এক ঝাঁক পঙ্গপাল পতিত হল। তিনি সেগুলো দুহাতে ধরে কাপড়ে রাখতে লাগলেন। তখন তাঁর রব তাকে ডেকে বললেন, হে আইয়্যূব! তুমি যা দেখতে পাচ্ছ, তা থেকে কি আমি তোমাকে মুখাপেক্ষীহীন করে দেইনি? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, হে রব! কিন্তু আমি আপনার বরকতের অমুখাপেক্ষী নই।

হাদীস নং ৩১৫৪

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ…………উরওয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আয়েশা রা. বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (হেরা পর্বতের গুহা থেকে) খাদীজা রা.-এর নিকট ফিরে আসলেন তাঁর হৃদয় কাঁপছিল। তখন খাদীজা রা. তাকে নিয়ে ওয়ারকা ইবনে নাওফলের নিকট গেলেন। তিনি খৃষ্টান ধর্ম অবলম্বন করেছিলেন। তিনি আরবী ভাষায় (অনুবাদ করে) ইনযীল পাঠ করতেন। ওয়ারকা জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি দেখেছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সব ঘটনা জানালেন। তখন ওয়ারকা বললেন, এত সেই নামুস (ফেরেশতা) যাকে আল্লাহ তা’আলা মূসা আ.-এর কাছে নাযিল করেছিলেন। আপনার সে সময় যদি আমি পাই, তবে সর্বশক্তি দিয়ে আমি আপনাকে সাহায্য করব। নামুস অর্থ গোপন তত্ত্ব ও তথাবাহী যাকে কেউ কোন বিষয়ে খবর দেয় আর সে তা অপর থেকে গোপন রাখে।

হাদীস নং ৩১৫৫

হুদবা ইবনে খালিদ রহ……….মালিক ইবনে সাসাআ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিরাজ রাত্রির ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে তাদের কাছে এও বলেন, তিনি যখন পঞ্চাশ আকাশে এসে পৌঁছলেন, তখন হঠাৎ সেখানে হারূন আ.-এর সাথে সাক্ষাত হল। জিবরাঈল আ. বললেন, ইনি হলেন, হারূন আ. তাকে সালাম করুন। তখন আমি তাকে সালাম করলাম। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, মারহাবা পূণ্যবান ভাই ও পূণ্যবান নবী। সাবিত এবং আব্বাদ ইবনে আবু আলী রহ. আনাস রা. সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনায় কাতাদা র.-এর অনুরসণ করেছেন।

হাদীস নং ৩১৫৬

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে রাতে আমার মিরাজ হয়েছিল, সে রাতে আমি মূসা আ.-কে দেখতে পেয়েছি। তিনি হলেন, হালকা পাতলা দেহ বিশিষ্ট ব্যক্তি, তাঁর চুল কুঁকড়ানো ছিলনা। মনে হচ্ছিল তিনি যেন ইয়ামান দেশীয় শানুআ গোত্রের একজন লোক, আর আমি ঈসা আ.-কে দেখতে পেয়েছি। তিনি হলেন মধ্যম দেহ বিশিষ্ট গায়ের রং ছিল লাল। যেন তিনি এইমাত্র হাম্মাম থেকে বের হলেন। আর ইবরাহীম আ.-এর বংশধরদের মধ্যে তাঁর সাথে আমার চেহারায় মিল সবচেয়ে বেশী। তারপর আমার সামনে দুটি পেয়ালা আনা হল। তার একটিতে ছিল দুধ আর অপরটিতে ছিল শরাব। তখন জিবরাঈল আ. বললেন, এ দুটির মধ্যে যেটি চান আপনি পান করতে পারেন। আমি দুধের পেয়ালাটি নিলাম এবং তা পান করলাম। তখন বলা হল, আপনি ফিতরাত বা স্বভাব ও প্রকৃতিকে বেছে নিয়েছেন। দেখুন, আপনি যদি শরাব নিয়ে নিতেন, তাহলে আপনার উম্মাতগণ পথভ্রষ্ট হয়ে যেত।

হাদীস নং ৩১৫৭

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন ব্যক্তির একথা বলা উচিৎ হবেনা যে, আমি (নবী) ইউনুস ইবনে মাত্তার চেয়ে উত্তম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একথা বলতে গিয়ে ইউনুস আ.-এর পিতার নাম উল্লেখ করেছেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিরাজের রজনীর কথাও উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন মূসা আ. বাদামী রং বিশিষ্ট দীর্ঘদেহী ছিলেন। যেন তিনি শানুআ গোত্রের একজন লোক। তিনি আরো বলেছেন যে, ঈসা আ. ছিলেন মধ্য দেহী, কোঁকড়ানো চুলওয়ালা ব্যক্তি। আর তিনি দোযখের দারোগা মালিক এবং দাজ্জালের কথাও উল্লেখ করেছেন।

হাদীস নং ৩১৫৮

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন (হিজরত করে) মদীনায় আগমন করেন, তখন তিনি মদীনাবাসীকে এমনভাবে পেলেন যে, তার একদিন সাওম পালন করে অর্থাৎ সে দিনটি হল আশুরার দিন। (জিজ্ঞাসা করার পর) তারা বলল, এটি একটি মহান দিবস। এমন দিন যে দিনে আল্লাহ মূসা আ.-কে নাজাত দিয়েছেন এবং ফিরাউনের সম্প্রদায়কে ডুবিয়ে দিয়েছেন। এরপর মূসা আ. শুকরিয়া হিসাবে এদিন সাওম পালন করেছেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাদের তুলনায় আমি হলাম। মূসা আ.-এর অধিক ঘনিষ্ঠ। কাজেই তিনি নিজেও এদিন সাওম পালন করেছেন এবং (সবাইকে) এদিন সাওম পালনের আদেশ দিয়েছেন।

হাদীস নং ৩১৫৯

মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ……….আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন সব মানুষ বেহুঁশ হয়ে যাবে। এরপর সর্বপ্রথম আমারই হুশ ফিরে আসবে। তখন আমি মূসা আ.-কে দেখতে পাব যে, তিনি আরশের খুঁটিগুলোর একটি খুঁটি ধরে রয়েছেন। আমি জানিনা, আমার আগেই কি তাঁর হুশ আসল, না কি তুর পাহাড়ে বেহুঁশ হওয়ার প্রতিদান তাকে দেয়া হল।

হাদীস নং ৩১৬০

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ জুফী রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি বনী ইসরাঈল না হত, তবে গোশত পচন ধরত না। আর যদি (মা) হাওয়া আ. না হতেন, তাহলে কোন সময় কোন নারী তার স্বামীর খেয়ানত করত না।

হাদীস নং ৩১৬১

আমর ইবনে মুহাম্মদ রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি এবং হুর ইবনে কায়েস ফাযারী মূসা আ.-এর সাথীর ব্যাপারে বিতর্ক করছিলেন। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, তিনি হলেন, খাযির। এমনি সময় উবাই ইবনে কাব রা. তাদের উভয়ের কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, তখন ইবনে আব্বাস রা. তাকে ডাকলেন এবং বললেন, আমি এবং আমার এ সাথী মূসা আ.-এর সাথী সম্পর্কে বিতর্ক করছি, যার সাথে সাক্ষাতের জন্য মূসা আ. পথের সন্ধান চেয়েছিলেন। আপনি কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর ঘটনা বর্ণনা করতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, মূসা আ. বনী ইসরাঈলের এক সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। তখন তাঁর কাছে একজন লোক আসল এবং জিজ্ঞাসা করল, আপনি কি এমন কাউকে জানেন, যিনি আপনার চেয়ে অধিক জ্ঞানী? তিনি বললেন, না। তখন মূসা আ.-এর প্রতি আল্লাহ ওহী পাঠায়ে জানায়ে দিলেন, হ্যাঁ, (তোমার চেয়েও অধিক জ্ঞানী) আমার বান্দা খাযির। তখন মূসা আ. তাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য পথের সন্ধান চেয়েছিলেন। তখন তাঁর জন্য একটি মাছ নিদর্শন হিসাবে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হল এবং তাকে বলে দেওয়া হল, যখন তুমি মাছটি হারাবে, তখন তুমি পিছনে ফিরে আসবে, তাহলেই তুমি তাঁর সাক্ষাত পাবে। তারপর মূসা আ. নদীতে মাছের পিছে পিছে চলছিলেন, এমন সময় মূসা আ.-কে তাঁর খাদেম বলে উঠল, “আপনি কি লক্ষ্য করেছেন? আমরা যখন ঐ পারটির কাছে অবস্থান করছিলাম, তখন আমি মাছটির কথা ভুলে গিয়েছিলাম। বস্তুত: তার স্মরণ থেকে একমাত্র শয়তানই আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল”। (১৮ : ৬৩) মূসা আ. বললেন, আমরা তো সে স্থানেরই অনুসন্ধান করছিলাম। অতএব তাঁরা উভয়ে পিছনে ফিরে চললেন, এবং খাযিরের সাক্ষাত পেলেন। (১৮ :৬৪) তাদের উভয়েরই অবস্থার বর্ণনা ঠিক তাই যা আল্লাহ তাঁর কিতাবে বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৩১৬২

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….সাঈদ ইবনে জুবাইর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনে আব্বাস রা. -কে বললাম, নাওফল বিক্কালী ধারণা করছে যে, খাযিরের সঙ্গী মূসা বনী ইসরাঈলের নবী মূসা আ. নন; নিশ্চয়ই তিনি অপর কোন মূসা। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর দুশমন মিথ্যা কথা বলেছে। উবাই ইবনে কাব রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, একবার মূসা আ. বনী ইসরাঈলের এক সমাবেশে ভাষণ দেয়ার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন। তখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কোন ব্যক্তি সবচেয়ে জ্ঞানী ? তিনি বললেন, আমি। মূসা আ.-এর এ উত্তরে আল্লাহ তাঁর প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন। কেননা তিনি জ্ঞানকে আল্লাহর দিকে সম্পর্কিত করেননি। আল্লাহ তাকে বললেন, বরং দুই নদীর সংযোগ স্থলে আমার একজন বান্দা আছে সে তোমার চেয়ে বেশী জ্ঞানী। মূসা আ. আরয করলেন, হে আমার রব! তাঁর কাছে পৌঁছতে কে আমাকে সাহায্য করবে? কখন সুফিয়ান এভাবে বর্ণনা করেছেন, হে আমার রব! আমি তাঁর সাথে কিভাবে সাক্ষাত করব? আল্লাহ বললেন, তুমি একটি মাছ ধর এবং তা (ভাজা করে) একটি থলের মধ্যে ভরে রাখ। যেখানে গিয়ে তুমি মাছটি হারিয়ে ফেলবে সেখানেই তিনি অবস্থান করছেন। তারপর মূসা আর একটি মাছ ধরলেন এবং (তা ভাজা করে) থলের মধ্যে ভরে রাখলেন। এরপর তিনি এবং তাঁর সাথী ইউশা ইবনে নূন চলতে লাগলেন অবশেষে তাঁরা উভয়ে (নদীর তীরে) একটি পাথরের নিকট এসে পৌঁছে তার উপরে উভয়ে মাথা রেখে বিশ্রাম করলেন। এ সময় মূসা আ. ঘুমিয়ে পড়লেন আর মাছটি (জীবিত হয়ে) নড়াচড়া করতে করতে থলে থেকে বের হয়ে নদীতে নেমে গেল। এরপর সে নদীতে সুড়ঙ্গ আকারে আপন পথ করে নিল আর আল্লাহ মাছটির চলার পথে পানির গতি থামিয়ে দিলেন। ফলে তার গমন পথটি সুড়ঙ্গের ন্যায় হয়ে গেল। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতের ইশারা করে বললেন, এভাবে সুড়ঙ্গের মত হয়েছিল। এরপর তাঁরা উভয়ে অবশিষ্ট রাত এবং পুরো দিন পথ চলবেন। অবশেষে যখন পরের দিন ভোর হল তখন মূসা আ. তাঁর যুবক সাথীকে বললেন, আমার ভোরের খাবার আন। আমি এ সফরে খুব ক্লান্তি অনুভব করছি। বস্তুত: মূসা আ. যে পর্যন্ত আল্লাহর নির্দেশিত স্থানটি অতিক্রম না করছেন সে পর্যন্ত তিনি সফরে কোন ক্লান্তিই অনুভব করেননি। তখন তাঁর সাথী তাকে বললেন, আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, আমরা যখন সেই পাথরটির কাছে বিশ্রাম নিয়েছিলাম (তখন মাছটি পানিতে চলে গেছে) মাছটি চলে যাওয়ার কথা বলতে আমি একেবারেই ভুলে গেছি। প্রকৃতপক্ষে আপনার কাছে তা উল্লেখ করতে একমাত্র শয়তানই আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছে। বস্তুত: মাছটি নদীতে আশ্চর্যজনকভাবে নিজের পথ করে নিয়েছে। (রাবী বলেন) পথটি মাছের জন্য ছিল একটি সুড়ঙ্গের মত আর তাদের জন্য ছিল একটি আশ্চর্যজনক ব্যপার। মূসা আ. তাকে বললেন, সে তাইতো সেই স্থান যা আমরা খুঁজে বেড়াচ্ছি। এরপর উভয়ে নিজ নিজ পদচিহ্ন অনুসরণ করতে করতে পিছনের দিকে ফিরে চললেন, শেষ পর্যন্ত তাঁরা উভয়ে সেই পাথরটির কাছে এসে পৌঁছলেন এবং দেখলেন সেখানে একজন লোক কাপড়ে আবৃত হয় আছেন। মূসা আ. তাকে সালাম করলেন। তিনি সালামের জওয়াব দিয়ে বললেন, এখানে সালাম কি করে এল? তিনি বললেন, আমি মূসা (আমি এ দেশের লোক নই)। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি বনী ইসরাঈলের (নবী) মূসা? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি আপনার নিকট এসেছি, সরল সঠিক জ্ঞানের ঐ সব কথাগুলো শিখার জন্য যা আপনাকে শিখানো হয়েছে। তিনি বললেন, হে মূসা ! আমার আল্লাহর প্রদত্ত কিছু জ্ঞান আছে, যা আল্লাহ আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন, আপনি তা জানেন। আর আপনারও আল্লাহ প্রদত্ত কিছু জ্ঞান আছে, যা আল্লাহ আপনাকে শিখিয়েছে, আমি তা জানিনা। মূসা আ. বললেন, আমি কি আপনার সঙ্গী হতে পারি? খাযির আ. বললেন, আপনি আমার সাথে থেকে ধৈর্য ধারণ করতে সক্ষম হবেন না আর আপনি এমন বিষয়ে ধৈর্য রাখবেন কি করে, যার রহস্য অনুধাবন করা আপনার জানা নেই? (মূসা আ. বললেন, ইনশা আল্লাহ আপনি আমাকে একজন ধৈর্য ধারণকারী হিসেবে দেখতে পাবেন। আমি আপনার কোন নির্দেশই অমান্য করব না। এরপর তাঁরা উভয়ে রওয়ানা হয়ে নদীর তীর দিয়ে চলতে লাগলেন। এমন সময় একটি নৌকা তাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিল। তারা তাদেরকেও নৌকায় উঠিয়ে নিতে অনুরোধ করলেন। তারা খাযির আ.-কে চিনে ফেললেন এবং তারা তাকে তাঁর সঙ্গীসহ পারিশ্রমিক ব্যতিরেকেই নৌকায় তুলে নিল। তাঁরা দুজন যখন নৌকায় আরোহণ করলেন, তখন একটি চড়ুই পাখি এসে নৌকাটির এক পাশে বসল এবং একবার কি দু’বার নদীর পানিতে সে তার ঠোঁট ডুবাল। খাযির আ. বললেন, হে মূসা আ.! আমার এবং তোমার জ্ঞানের দ্বারা আল্লাহর জ্ঞান হতে ততটুকুও হ্রাস পায়নি যতটুকু এ পাখিটি তার ঠোঁটের সাহায্য নদীর পানি হ্রাস করেছে। তারপর খাযির আ. হঠাৎ করে একটি কুঠার নিয়ে নৌকার একটি তক্তা খুলে ফেললেন, মূসা আ. অকস্মাৎ দৃষ্টি দিতেই দেখতে পেলেন তিনি কুঠার দিয়ে একটি তক্তা খুলে ফেলেন। তখন তাকে তিনি বললেন, আপনি এ কি করলেন? লোকেরা আমাদের পারিশ্রমিক ছাড়া নৌকায় তুলে নিল, আর আপনি তাদের নৌকার আরোহীদেরকে ডুবিয়ে দেয়ার জন্য নৌকাটি ছিদ্র করে দিলেন? এত আপনি একটি গুরুতর কাজ করলেন। খাযির আ. বললেন, আমি কি বলিনি যে, আপনি কখনও আমার সঙ্গে ধৈর্যধারণ করে থাকতে পারবেন না? মূসা আ. বললেন, আমি যে বিষয়টি ভুলে গেছি, তার জন্য আমাকে দোষারোপ করবেন না। আর আমার এ আচরণে আমার প্রতি কঠোর হবেন না। মূসা আ.-এর পক্ষ থেকে প্রথম এই কথাটি ছিল ভুলক্রমে। এরপর যখন তাঁরা উভয়ে নদী পার হয়ে আসলেন, তখন তাঁরা একটি বালকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন সে অন্যান্য বালকদের সাথে খেলছিল। খাযির আ. তার মাথা ধরলেন এবং নিজ হাতে ছেলেটির ঘাড় পৃথক করে ফেললেন। একথাটি বোঝানোর জন্য সুফিয়ান রহ. তাঁর একটি হাতের আঙ্গুল গুলোর অগ্রভাগ দ্বারা এমনভাবে ইশারা করলেন যেন তিনি কোন জিনিস ছিড়ে নিচ্ছিলেন। এতে মূসা আ. তাকে বললেন, আপনি কি একটি নিষ্পাপ ছেলেকে বিনা অপরাধে হত্যা করলেন? নিশ্চয়ই আপনি একটি গর্হিত কাজ করলেন। খাযির আ. বললেন, আমি কি আপনাকে বলিনি যে আপনি আমার সাথে ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না? মূসা আ. বললেন, এরপর যদি আমি আপনাকে আর কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করি তাহলে আপনি আমাকে আর আপনার সঙ্গে রাখবেন না। কেননা আপনার উযর আপত্তি চুড়ান্ত হয়েছে। এরপর তাঁরা চলতে লাগলেন শেষ পর্যন্ত তাঁরা এক লোকালয়ে এসে পৌঁছলেন। তাঁরা গ্রামবাসীদের কাছে খাবার চাইলেন। কিন্তু তারা তাদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল। তারপর তাঁর সেখানেই একটি প্রাচীর দেখতে পেলেন যা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। তা একদিকে ঝুঁকে গিয়েছিল। খাযির আ. তা নিজের হাতে সোজা করে দিলেন। রাবী আপন হাতে ইশারা করলেন। আর সুফিয়ান রহ. এমনিভাবে ইঙ্গিত করলেন যেন তিনি কোন জিনিস উপরের দিকে উচিয়ে দিচ্ছেন। ‘ঝুকে পড়েছে’ একথাটি আমি সুফিয়ানকে মাত্র একবার বলতে শুনেছি। মূসা আ. বললেন, তারা এমন মানুষ যে, আমরা তাদের কাছে আসলাম, তারা আমাদেরকে না খাবার পরিবেশন করল, না আমাদের মেহমানদারি করল আপনি এদের প্রাচীর সোজা করতে গেলেন। আপনি ইচ্ছা করলে এর বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারতেন। খাযির আ. বললেন, এখানেই আপনার ও আমার মধ্যে বিচ্ছেদ হল। তবে এখনই আমি আপনাকে অবহিত করছি ওসব কথার গুঢ় রহস্য, যেসব বিষয়ে আপনি ধৈর্যধারণ করতে পারিনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাদেরতো ইচ্ছা যে, মূসা আ. ধৈর্যধারণ করলে আমাদের কাছে তাদের আরো অনেক বেশী খবর বর্ণিত হত। সুফিয়ান রহ. বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ মূসা আ.-এর উপর রহমত বর্ষণ করুন। তিনি যদি ধৈর্যধারণ করতেন, তাহলে তাদের উভয়ের ব্যাপারে আমাদের কাছে আরো অনেক ঘটনা বর্ণিত হত। রাবী (সাঈদ ইবনে জুবাইর) বলেন, ইবনে আব্বাস রা. এখানে পড়েছেন, তাদের সামনে একজন বাদশাহ ছিল, সে প্রতিটি নিখুঁত নৌকা জবরদস্তিমূলক ছিনিয়ে নিত। আর সে ছেলেটি ছিল কাফির, তার মা-বাবা ছিলেন মুমিন। তারপর সুফিয়ান রহ. আমাকে বলেছেন, আমি এ হাদীসটি তাঁর (আমর ইবনে দীনার) থেকে দুবার শুনেছি এবং তাঁর নিকট হতেই মুখস্থ করছি। সুফিয়ান রহ.-কে জিজ্ঞাসা করা হলো আপনি কি আমর ইবনে দীনার রহ. থেকে শুনার আগেই তা মুখস্থ করেছেন না অপর কোন লোকের নিকট শুনে তা মুখস্থ করেছেন? তিনি বললেন, আমি কার নিকট থেকে তা মুখস্থ করতে পারি? আমি ছাড়া আর কেউ কি এ হাদীস আমরের নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন? আমি তাঁর কাছ থেকেই শুনেছি দুইবার কি তিনবার। আর তাঁর থেকেই তা মুখস্থ করেছি। আলী ইবন খুশরম রহ. সুফিয়ান রহ. সূত্রে বর্ণিত দীর্ঘ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৩১৬৩

মুহাম্মদ ইবনে সাঈদ ইবনে আসবাহানী রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, খাযির আ.-কে খাযির নামে অভিহিত করার কারণ হল এই যে, একদা তিনি ঘাস-পাতা বিহীন শুষ্ক সাদা জায়গায় বসেছিলেন। সেখান থেকে তাঁর উঠে যাওয়ার পরই হঠাৎ ঐ স্থানটি সবুজ হয়ে গেল। (এ ঘটনা থেকেই তাঁর নাম খাযির হয়ে যায়)।

হাদীস নং ৩১৬৪

ইসহাক ইবনে নাসর রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বনী ইসরাঈলকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, তোমরা দ্বার দিয়ে অবনত মস্তকে প্রবেশ কর আর মুখে বল, ‘হিত্তাতুন’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দাও)। কিন্তু তারা এ শব্দটি পরিবর্তন করে ফেলল এবং প্রবেশ দ্বার দিয়ে যেন জানুনত না করতে হয় সে জন্য তারা নিজ নিজ নিতম্বের উপর ভর দিয়ে শহরে প্রবেশ করল আর মুখে বলল, ‘হাব্বাতুন ফী শা’আরাতিন’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাদেরকে যবের দানা দাও)।

হাদীস নং ৩১৬৫

ইসহাক ইবনে ইবরাহীম রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মূসা আ. অত্যন্ত লজ্জাশীল ছিলেন, সব সময় শরীর আবৃত রাখতেন। তাঁর দেহের কোন অংশ খোলা দেখা যেতনা তা থেকে তিনি লজ্জাবোধ করতেন। বনী ইসরাঈলের কিছু সংখ্যক লোক তাকে খুব কষ্ট দিত। তারা বলত, তিনি যে শরীরকে এত বেশী ঢেকে রাখেন, তার একমাত্র কারণ হল, তাঁর শরীরে কোন দোষ আছে। হয়ত শ্বেত রোগ অথবা একশিরা বা অন্য কোন রোগ আছে। আল্লাহ তা’আলা ইচ্ছা করলেন মূসা আ. সম্পর্কে তারা যে অপবাদ রটিয়েছে তা থেকে তাকে মুক্ত করবেন। এরপর একদিন নির্জন স্থানে গিয়ে তিনি একাকী হলেন এবং তাঁর পরণের কাপড় খুলে একটি পাথরের উপর রাখলেন, তারপর গোসল করলেন, গোসল সেরে যখনই তিনি কাপড় নেয়ার জন্য সেদিকে এগিয়ে গেলেন তাঁর কাপড়সহ পাথরটি ছুটে চলল। এরপর মূসা আ. তাঁর লাঠিটি হাতে নিয়ে পাথরটির পেছনে পেছনে ছুটলেন। তিনি বলতে লাগলেন, আমার কাপড় হে পাথর! হে পাথর! পরিশেষে পাথরটি বনী ইসরাঈলের একটি জন সমাবেশে গিয়ে পৌঁছল। তখন তারা মূসা আ.-কে বিবস্ত্র অবস্থায় দেখল যে তিনি আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এবং তারা তাকে যে অপবাদ দিয়েছিল সে সব দোষ থেকে তিনি সম্পূর্ণ মুক্ত। আর পাথরটি থামল, তখন মূসা আ. তাঁর কাপড় নিয়ে পরিধান করলেন এবং তাঁর হাতের লাঠি দ্বারা পাথরটিকে জোরে জোরে আঘাত করতে লাগলেন। আল্লাহর কসম! এতে পাথরটিতে তিন, চার, কিংবা পাঁচটি আঘাতের দাগ পড়ে গেল। আর এটিই হল আল্লাহর এ বাণীর মর্ম : হে মুমিনগণ! তোমরা তাদের ন্যায় হয়োনা যারা মূসা আ.-কে কষ্ট দিয়েছিল। এরপর আল্লাহ তাকে নির্দোষ প্রমাণিত করেন তা থেকে যা তারা রটনা করেছিল। আর তিনি ছিলেন আল্লাহর কাছে মর্যাদাবান। (৩৩: ৬৯)

হাদীস নং ৩১৬৬

আবুল ওয়ালীদ রহ……….আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা কিছু জিনিস (লোকদের মধ্যে) বণ্টন করেন। তখন এক ব্যক্তি বলল, এত এমন ধরনের বণ্টন যা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে করা হয়নি। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে আসলাম এবং তাকে বিষয়টি জানালাম। তিনি খুব অসন্তুষ্ট হলেন, এমনকি তাঁর চেহারায় আমি অসন্তুষ্টির ভাব দেখতে পেলাম। এরপর তিনি বললেন, আল্লাহ মূসা আ.-এর প্রতি রহম করুন তাকে এর চেয়ে অনেক কষ্ট দেওয়া হয়েছিল, তবুও তিনি ধৈর্যধারণ করেছিলেন।

হাদীস নং ৩১৬৭

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ‘কাবাস’ (পিসু গাছের পাকা ফল বেছে নিচ্ছিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এর মধ্যে কালোগুলো নেওয়াই তোমাদের উচিৎ। কেননা এগুলোই বেশী সুস্বাদু। সাহাবাগণ বললেন, আপনি কি ছাগল চরিয়েছিলেন? তিনি জওয়াব দিলেন, প্রত্যেক নবীই তা চরিয়েছেন।

হাদীস নং ৩১৬৮

ইয়াহইয়া ইবনে মূসা রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মওতের ফেরেশতাকে মূসা আ.-এর নিকট তাঁর (জান কবযের) জন্য পাঠান হয়েছিল। ফেরেশতা যখন তাঁর নিকট আসলেন, তিনি তাঁর চোখে থাপ্পর মারলেন। তখন ফেরেশতা তাঁর রবের নিকট ফিরে গেলেন এবং বললেন, আপনি আমাকে এমন এক বান্দার নিকট পাঠিয়েছেন যে মরতে চায় না। আল্লাহ বললেন, তুমি তার কাছে যাও এবং তাকে বল সে যেন তার একটি হাত একটি গরুর পিঠে রাখে, তার হাত যতগুলো পশম ঢাকবে তার প্রতিটি পশমের পরিবর্তে তাকে এক বছর করে হায়াত দেওয়া হবে। মূসা আ. বললেন, হে রব! তারপর কি হবে? আল্লাহ বললেন, তারপর মৃত্যু। মূসা আ. বললেন, তাহলে এখনই হউক (বারী আবু হুরায়রা রা. বলেন, তখন তিনি আল্লাহর নিকট আরয করলেন, তাকে যেন আরদে মুকাদ্দাস বা পবিত্র ভূমি থেকে একটি পাথর নিক্ষেপের দূরত্বের সমান স্থানে পৌঁছে দেওয়া হয়। আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি যদি সেখানে থাকতাম তাহলে অবশ্যই আমি তোমাদেরকে রাস্তার পার্শ্বে লাল টীলার নীচে তাঁর কবরটি দেখিয়ে দিতাম। রাবী আবদুর রাযযাক বলেন, মামার রহ……….আবু হুরায়রা রা. সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৩১৬৯

আবুল ইয়ামান রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন মুসলিম আর একজন ইয়াহুদী পরস্পরকে গালি দিল। মুসলিম ব্যক্তি বললেন, সেই সত্তার কসম! যিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সমগ্র জগতের উপর মনোনীত করেছেন। কসম করার সময় তিনি একথাটি বলেছেন। তখন ইয়াহুদী লোকটিও বলল, ঐ সত্তার কসম! যিনি মূসা আ.-কে সমগ্র জগতের উপর মনোনীত করেছেন। তখন সেই মুসলিম সাহাবী সে সময় তার হাত উঠিয়ে ইয়াহুদী লোকটিকে একটি চড় মারলেন। তখন সে ইয়াহুদী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গেল এবং ঐ ঘটনাটি অবহিত করলো যা তার ও মুসলিম সাহাবীর মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আমাকে মূসা আ.-এর উপর অধিক মর্যাদা দেখাতে যেওনা (কেননা কিয়ামতের দিন) সকল মানুষ বেহুঁশ হয়ে যাবে। আর আমিই সর্বপ্রথম হুশ ফিরে পাব। তখনই আমি মূসা আ.-কে দেখব, তিনি আরশের একপাশে ধরে রয়েছেন। আমি জানিনা, যারা বেহুঁশ হয়েছিল, তিনিও কি তাদের মধ্যে ছিলেন? তারপর আমার আগে তাঁর হুশ এসে গেছে? অথবা তিনি তাদেরই একজন, যাদেরকে আল্লাহ বেহুঁশ হওয়া থেকে বাদ দিয়েছিলেন।

হাদীস নং ৩১৭০

আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আদম আ. ও মূসা আ. (রূহানী জগতে) তর্ক-বিতর্ক করছিলেন। তখন মূসা আ. তাকে বলছিলেন, আপনি সেই আদম যে, আপনার ভুল আপনাকে বেহেশত থেকে বের করে দিয়েছিল। আদম আ. তাকে বললেন, আপনি সেই মূসা যে, আপনাকে আল্লাহ তাঁর রিসালাত দান এবং বাক্যালাপ দ্বারা সম্মানিত করেছিলেন। তারপরও আপনি আমাকে এমন একটি বিষয়ে দোষারোপ করছেন যা আমার সৃষ্টির আগেই আমার তাকদীরে নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’বার বলেছেন, এ বিতর্কে আদম আ. মূসা আ.-এর উপর জয়ী হন।

হাদীস নং ৩১৭১

মুসাদ্দাদ রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে তিনি বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে আসলেন এবং বললেন, আমার নিকট সকল নবীর উম্মতকে পেশ করা হয়েছিল। তখন আমি এক বিরাট দল দেখতে পেলাম, যা দিগন্ত ঢেকে ফেলেছিল।তখন বলা হল, ইনি হলেন মূসা আ. তাঁর কওমের সাথে।

হাদীস নং ৩১৭২

ইয়াহইয়া ইবনে জাফর রহ………আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পুরুষের মধ্যে অনেকেই কামালিয়াত অর্জন করেছেন। কিন্তু মহিলাদের মধ্যে ফিরআউনের স্ত্রী আসিয়া এবং ইমরানের কন্যা মারইয়াম ব্যতীত আর কেউ কামালিয়াত অর্জনে সক্ষম হয়নি। তবে আয়েশার মর্যাদা সব মহিলার উপর এমন, যেমন সারীদে (গোশতের ঝোলে ভিজা রুটির) মর্যাদা সর্ব প্রকার খাদ্যের উপর।

হাদীস নং ৩১৭৩

মুসাদ্দাদ রহ. এবং আবু নুআইম রহ………আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যেন এরূপ না বলে যে, আমি (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইউনুস আ. থেকে উত্তম। মুসাদ্দাদ রহ. বাড়িয়ে বললেন, ইউনুস ইবনে মাত্তা।

হাদীস নং ৩১৭৪

হাফস ইবনে উমর রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন বান্দার জন্য এমন কথা বলা শোভনীয় নয় যে, নিশ্চয়ই আমি (মুহাম্মদ) ইউনুস ইবনে মাত্তা থেকে উত্তম আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে (ইউনুসকে) তাঁর পিতার দিকে সম্পর্কিত করেছেন।

হাদীস নং ৩১৭৫

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার এক ইয়াহুদী তার কিছু দ্রব্য সামগ্রী বিক্রির জন্য পেশ করছিল, তার বিনিময়ে তাকে এমন কিছু দেওয়া হল যা সে পছন্দ করল না। তখন সে বলল, না ! সেই সত্তার কসম, যে মূসা আ.-কে মানব জাতির উপর মর্যাদা দান করেছেন। এ কথাটি একজন আনসারী (মুসলিম) শুনলেন, তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। আর তার (ইয়াহুদীর) মুখের উপর এক চড় মারলেন। আর বললেন, তুমি বলছো সেই সত্তার কসম! যিনি মূসাকে মানব জাতির উপর মর্যাদা দান করেছেন অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে বিদ্যমান। তখন সে ইয়াহুদী লোকটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গেল এবং বলল, হে আবুল কাসিম! নিশ্চয়ই আমার জন্য নিরাপত্তা এবং আহাদ রয়েছে অর্থাৎ আমি একজন যিম্মী। অতএব অমুক ব্যক্তির কি হল, কি কারণে সে আমার মুখে চড় মারলো? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কেন তুমি তার মুখে চড় মারলে? আনসারী ব্যক্তি ঘটনাটি বর্ণনা করলো। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগান্বিত হলেন। এমনকি তাঁর চেহারায় তা প্রকাশ পেল। তারপর তিনি বললেন, আল্লাহর নবীগণের মধ্যে কাউকে কারো উপর (অন্যকে হেয় করে) মর্যাদা দান করো না। কেননা কিয়ামতের দিন যখন শিঙ্গায় ফুক দেওয়া হবে, তখন আল্লাহ যাকে চাইবেন সে ব্যতীত আসমান ও যমীনের বাকী সবাই বেহুঁশ হয়ে যাবে। তারপর দ্বিতীয়বার তাঁতে ফুক দেওয়া হবে। তখন সর্বপ্রথম আমাকেই উঠানো হবে। তখনই আমি দেখতে পাব মূসা আ. আরশ ধরে রয়েছেন। আমি জানি না, তূর পর্বতের ঘটনার দিন তিনি যে বেহুঁশ হয়েছিলেন, এটা কি তারই বিনিময়, না আমারই আগে তাকে উঠানো হয়েছে? আর আমি এ কথাও বলি না যে কোন ব্যক্তি ইউনুস ইবনে মাত্তার চেয়ে অধিক মর্যাদাবান।

হাদীস নং ৩১৭৬

আবুল ওয়ালীদ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন বান্দার পক্ষেই এ কথা বলা শোভনীয় নয় যে, আমি (মুহাম্মদ) ইউনুস ইবনে মাত্তার চেয়ে উত্তম।

হাদীস নং ৩১৭৬

আবুল ওয়ালীদ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন বান্দার পক্ষেই এ কথা বলা শোভনীয় নয় যে, আমি (মুহাম্মদ) ইউনুস ইবনে মাত্তার চেয়ে উত্তম।

হাদীস নং ৩১৭৭

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দাউদ আ.-এর পক্ষে কুরআন (যাবুর) তিলাওয়াত সহজ করে দেয়া হয়েছিল। তিনি তাঁর যানবাহনের পশুর উপর গদি বাঁধার আদেশ করতেন, তখন তার উপর গদি বাঁধা হত। তারপর তার যানবাহনের পশুটির উপর গদি বাঁধার পূর্বেই তিনি যাবুর তিলাওয়াত করে শেষ করে ফেলতেন। তিনি নিজ হাতে উপার্জন করেই খেতেন। মূসা ইবনে উকবা রহ……….আবু হুরায়রা সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীসটি রিওয়ায়েত করেছেন।

হাদীস নং ৩১৭৮

ইয়াহয়াই ইবনে বুকাইর রহ………আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জানান হল যে, আমি বলছি, আল্লাহর কসম! আমি যতদিন বেচে থাকব ততদিন অবশ্যই আমি বিরামহীনভাবে দিনে সাওম পালন করব আর রাতে ইবাদতে রত থাকব। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তুমিই কি বলেছ, আল্লাহর কসম, আমি যতদিন বাচবো, ততদিন দিনে সাওম পালন করবো এবং রাতে ইবাদতে রত থাকব। আমি আরয করলাম, আমিই তা বলছি। তিনি বললেন, সেই শক্তি তোমার নেই । কাজেই সাওম পালন কর, ইফতারও কর অর্থাৎ বিরতি দাও। রাতে ইবাদতেও দশগুণ সাওয়াব পাওয়া যায় আর এটা সারা বছর সাওম পালন করার সমান। তখন আমি আরয করলাম। ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি এর চেয়েও বেশী সাওম পালন ক্ষমতা রাখি। তখন তিনি বললেন, তাহলে তুমি একদিন সাওম পালন কর আর দু’দিন ইফতার কর অর্থাৎ বিরতি দাও। তখন আমি আরয করালাম। ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি এর চেয়েও অধিক পালন করার শক্তি রাখি। তখন তিনি বললেন, তাহলে একদিন সাওম পালন কর আর একদিন বিরতি দাও। এটা দাউদ আ.-এর সাওম পালনের পদ্ধতি। আর এটাই সাওম পালনের উত্তম পদ্ধতি। আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি এর চেয়েও বেশী শক্তি রাখি। তিনি বললেন, এর চেয়ে অধিক কিচু নেই।

হাদীস নং ৩১৭৯

খাল্লাদ ইবনে ইয়াহইয়া রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কি অবহিত হইনি যে, তুমি রাত ভর ইবাদত কর এবং দিন ভর সাওম পালন করি! আমি বললাম হ্যাঁ। (খবর সত্য) তিনি বললেন, যদি তুমি এরূপ কর; তবে তোমার দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে যাবে এবং দেহ অবসন্ন হয়ে যাবে। কাজেই প্রতি মাসে তিন দিন সাওম পালন কর। তাহলে তা সারা বছরের সাওমের সমতুল্য হয়ে যাবে। আমি বললাম, আমি আমার মধ্যে আরো বেশী পাই। মিসআর রা. বলেন, এখানে শক্তি বুঝানো হয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তুমি দাউদ আ.-এর পদ্ধতিতে সাওম পালন কর। তিনি একদিন সাওম পালন করতেন আর একদিন বিরত থাকতেন। আর শত্রু র সম্মুখীন হলে তিনি কখনও পলায়ন করতেন না।

হাদীস নং ৩১৮০

কুতাবাই ইবনে সাঈদ রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন, আল্লাহর নিকট অধিক পছন্দনীয় সাওম হল দাউদ আ.-এর পদ্ধতিতে সাওম পালন করা। তিনি একদিন সাওম পালন করতেন আর একদিন বিরতি দিতেন। আল্লাহর কাছে সর্বাধিক পছন্দনীয় সালাত হল দাউদ আ.-এর পদ্ধতিতে (নফল) সালাত আদায় করা। তিনি রাতের প্রথমার্ধে ঘুমাতেন, রাতের এক তৃতীয়াংশ দাঁড়িয়ে (নফল) সালাত আদায় করতেন আর বাকী ষষ্ঠাংশ আবার ঘুমাতেন।

হাদীস নং ৩১৮১

মুহাম্মদ রহ…………মুজাহিদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনে আব্বাস রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আমরা কি সূরা ছোয়াদ পাঠ করে সিজদা করব? তখন তিনি ومن ذريته داود وسليمان থেকে فبهداهم اقتده পর্যন্ত আয়াত তিলাওয়াত করলেন। এরপর ইবনে আব্বাস রা. বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সব মহান ব্যক্তিদের একজন, যাদের পূর্ববর্তীদের অনুসরণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।( ৬: ৮৪-৯০)।

হাদীস নং ৩১৮২

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সূরা ছোয়াদের সিজদা অত্যাশ্যকীয় নয়। কিন্তু আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এ সূরায় সিজদা করতে দেখেছি।

হাদীস নং ৩১৮৩

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একটি অবাধ্য জ্বিন এক রাতে আমার সালাতে বিঘ্ন সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আমার নিকট আসল। আল্লাহ আমাকে তার উপর ক্ষমতা প্রদান করলেন।আমি তাকে পাকড়াও করলাম এবং মসজিদের একটি খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখার মনস্থ করলাম, যাতে তোমরা সবাই সচক্ষে তাকে দেখতে পাও। তখনই আমার ভাই সুলাইমান আ.-এর এ দুআটি আমার মনে পড়ল। হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে দান করুন এমন এক রাজ্য যার অধিকারী আমার পরে আমি ছাড়া কেউ না হয়। (৩৮: ৩৫) এরপর আমি জ্বিনটিকে ব্যর্থ এবং অপমানিত করে ছেড়ে দিলাম। জ্বিন অথবা ইনসানের অত্যন্ত পিশাচ ব্যক্তিকে ইফরীত বলা হয় ইফরীত ও ইফরীয়াতুন যিবনীয়তুন-এর ন্যায় এক বচন, যার বহুবচন যাবানিয়াতুন।

হাদীস নং ৩১৮৪

খালীদ ইবনে মাখলাদ রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সুলাইমান ইবনে দাউদ আ. বলেছিলেন, আজ রাতে আমি আমার সত্তর জন্য স্ত্রীর নিকট যাব। প্রত্যেক স্ত্রী একজন করে অশ্বারোহী যোদ্ধা গর্ভধারণ করবে। এরা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে। তখন তাঁর সাথী বললেন, ইনশা আল্লাহ (বলুন)। কিন্তু তিনি মুখে তা বলেননি। এরপর একজন স্ত্রী ব্যতীত কেউ গর্ভধারণ করলেন না। সে যাও এক (পুত্র) সন্তান প্রসব করলেন। তাও তার এক অঙ্গ ছিলনা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনি যদি ইনশা আল্লাহ মুখে বলতেন, তাহলে (সবগুলো সন্তানই জন্ম নিত এবং) আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করত। শুআইব এবং ইবনে আবু যিনাদ রহ. এখানে নব্বই জন স্ত্রীর কথা উল্লেখ করেছেন আর এটাই সঠিক বর্ণনা।

হাদীস নং ৩১৮৫

উমর ইবনে হাফস রহ…………আবু যার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সর্বপ্রথম কোন মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বললেন, মসজিদে হারাম। আমি বললাম, এরপর কোনটি? তিনি বললেন, মসজিদে আকসা। আমি বললাম, এ দু’য়ের নির্মাণের মাঝখানে কত ব্যবধান? তিনি বললেন, চল্লিশ (বছরের) (তারপর বললেন,) যেখানেই তোমরা সালাতের সময় হবে, সেখানেই তুমি সালাত আদায় করে নিবে। কেননা, পৃথিবীটাই তোমার জন্য মসজিদ।

হাদীস নং ৩১৮৬

আবুল ইয়ামান রহ…………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, আমার ও অন্যান্য মানুষের উপমা হল এমন যেমন কোন এক ব্যক্তি আগুন জ্বালাল এবং তাতে পতঙ্গ এবং কীটগুলো ঝাঁকে ঝাঁকে পড়তে লাগল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দু’জন মহিলা ছিল। তাদের সঙ্গে দুটি সন্তানও ছিল। হঠাৎ একটি বাঘ এসে তাদের একজনের ছেলেন নিয়ে গেল। সাথের একজন মহিলা বলল, ‘তোমার ছেলেটিই বাঘে নিয়ে গেছে’। অপর মহিলাটি বলল, না, বাঘে তোমার ছেলেটি নিয়ে গেছে। তারপর উভয় মহিলাই দাউদ আ.-এর নিকট এ বিরোধ মিমাংসার জন্য বিচারপ্রার্থী হল। তখন তিনি ছেলেটির বিষয়ে বয়স্কা মহিলাটির পক্ষে রায় দিলেন। তারপর তারা উভয়ে (বিচারালয় থেকে) বেরিয়ে দাউদ আ.-এর পুত্র সুলাইমান আ.-এর কাছ দিয়ে যেতে লাগল এবং তারা উভয়ে তাকে ঘটনাটি জানালেন। তখন তিনি লোকদেরকে বললেন, তোমরা আমার কাছে একখানা ছোরা আনয়ন কর। আমি ছেলেটিকে দু’টুকরা করে তাদের উভয়ের মধ্যে ভাগ করে দেই। এ কথা শুনে অল্প বয়স্কা মহিলাটি বলে উঠল, তা করবেন না, আল্লাহ আপনার উপর করুন। ছেলেটি তারই। (এটা আমি মেনে নিচ্ছি)। তখন তিনি ছেলেটির ব্যাপারে অল্প বয়স্কা মহিলাটির পক্ষেই রায় দিয়ে দিলেন। আবু হুরায়রা রা. বলেন, আল্লাহর কসম! ছোরা অর্থে ‘ছিক্কিন’ শব্দটি আমি ঐ দিনই শুনেছি। আর না হয় আমরা তো ছোরাকে ‘মুদইয়াতুন’ ই বলতাম।

হাদীস নং ৩১৮৭

আবুল ওয়ালীদ রহ………..আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন এ আয়াতে কারীমা নাযিল হল : যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে যুলুমের দ্বারা কলুষিত করেনি। (৬ : ৮২) তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবাগণ বললেন, আমাদের মধ্যে কে এমন আছে যে, নিজের ঈমানকে যুলমের দ্বারা কলুষিত করেনি? তখন এ আয়াত নাযিল হয়: আল্লাহর সাথে শরীক করো না। কেননা শিরক হচ্ছে এক মহা যুলুম। (৩১ : ১৮)

হাদীস নং ৩১৮৮

ইসহাক রহ…….আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন এ আয়াতে কারীমা নাযিল হল : যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে যুলুমের দ্বারা কলুষিত করেনি। তখন তা মুসলমানদের পক্ষে কঠিন হয়ে গেল। তারা আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের মধ্যে কে এমন আছে যে নিজের উপর যুলুম করেনি? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এখানে অর্থ তা নয় বরং এখানে যুলুমের অর্থ হল শিরক। তোমরা কি কুরআনে শুননি? লুকমান তাঁর ছেলেকে উপদেশ প্রদানকালে কি বলেছিলেন ? তিনি বলেছিলেন, “হে আমার প্রিয় ছেলে ! তুমি আল্লাহর সাথে শিরক করো না। কেননা, নিশ্চয়ই শিরক এক মহা যুলুম।

হাদীস নং ৩১৮৯

হুদবা ইবনে খালিদ রহ……….মালিক ইবনে সাসাআ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাগণের কাছে মিরাজের রাত্রি সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, অনন্তর তিনি ( জিবরাঈল) আমাকে নিয়ে উপরে চললেন, এমনকি দ্বিতীয় আকাশে এসে পৌঁছলেন এবং দরজা খুলতে বললেন, জিজ্ঞাসা করা হল কে? উত্তর দিলেন, আমি জিবরাঈল। প্রশ্ন করা হল। আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। জিজ্ঞাসা করা হল। তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, এরপর আমরা যখন সেখানে পৌঁছলাম তখন সেখানে ইয়াহইয়া ও ঈসা আ.-কে দেখলাম। তাঁরা উভয়ে খালাত ভাই ছিলেন। জিবরাঈল বললেন, এরা হলেন, ইয়াহইয়া এবং ঈসা আ.। তাদেরকে সালাম করুন। তখন আমি সালাম করলাম। তাঁরাও সালামের জবাব দিলেন। তারপর তাঁরা বললেন, নেক ভাই এবং নেক নবীর প্রতি মারহাবা।

হাদীস নং ৩১৯০

আবুল ইয়ামান রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, এমন কোন আদম সন্তান নেই যাকে জন্মের সময় শয়তান স্পর্শ করে না। জন্মের সময় শয়তানের স্পর্শের কারণেই সে চিৎকার করে কাঁদে। তবে মারিয়াম এবং তাঁর ছেলে (ঈসা) আ.-এর ব্যতিক্রম। তারপর আবু হুরায়রা রা. বলেন, (এর কারণ হল মারিয়ামের মায়ের এ দু’আ “হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আম আপনার নিকট তাঁর এবং তাঁর বংশধরদের জন্য বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

হাদীস নং ৩১৯১

আহমদ ইবনে আবু রাজা রহ……….আলী রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, (ঐ সময়ের) সমগ্র নারীদের মধ্যে ইমরানের কন্যা মারিয়াম হলেন সর্বোত্তম আর (এ সময়ে) নারীদের সেরা হলেন খাদীজা রা.।

হাদীস নং ৩১৯২

আদম রহ……….আবু মূসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন সকল নারীর উপর আয়েশার মর্যাদা এমন, যেমন সকল খাদ্য সামগ্রীর উপর সারীদের মর্যাদা । পুরুষদের মধ্যে অনেকেই কামালিয়াত অর্জন করেছেন। (অতীত যুগে) কিন্তু নারীদের মধ্যে ইমরানের কন্যা মারিয়াম এবং ফিরাউনের স্ত্রী আছিয়া ব্যতীত কেউ কামালিয়াত অর্জন করতে পারেনি।

ইবনে ওহাব রা………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, কুরাইশ বংশীয়া নারীরা উটে আরোহণকারী সকল নারীদের তুলনায় উত্তম। এরা শিশু সন্তানের উপর অধিক স্নেহময়ী হয়ে থাকে আর স্বামীর সম্পদের প্রতি খুব যত্নবান হয়ে থাকে। তারপর আবু হুরায়রা রা. বলেছেন, ইমরানের কন্যা মারিয়াম কখনও উটে আরোহণ করেননি। ইবনে আখী যুহরী ও ইসহাক কালবী রা. যুহরী রহ. থেকে হাদীস বর্ণনায় ইউনুস রহ.-এর অনুসরণ করেছন।

হাদীস নং ৩১৯৩

সাদাকা ইবনে ফাযল রহ……….উবাদা রা. সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিল, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল আর নিশ্চয়ই ঈসা আ. আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল এবং তাঁর সেই কালিমা যা তিনি মারিয়ামকে পৌঁছিয়েছেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে একটি রূহ মাত্র, আর জান্নাত সত্য ও জাহান্নাম সত্য আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, তার আমল যাই হোক না কেন। ওলীদ রহ………জুনাদা রহ. থেকে বর্ণিত, হাদীসে জুনাদা বাড়িয়ে বলেছেন যে, জান্নাতের আট দরজার যেখান দিয়েই সে চাইবে। (আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন)।

হাদীস নং ৩১৯৪

মুসলিম ইবনে ইবরাহীম রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তিন জন শিশু ব্যতীত আর কেউ দোলনায় থেকে কথা বলেনি। বনী ইসরাঈলের এক ব্যক্তি যাকে ‘জুরাইজ’ বলে ডাকা হল। একদা ইবাদতে রত থাকা অবস্থায় তার মা এসে তাকে ডাকল। সে ভাবল আমি কি তার ডাকে সাড়া দেব, না সালাত আদায় করতে থাকব। (জবাব না পেয়ে) তার মা বলল, ইয়া আল্লাহ! ব্যভিচারিণীর চেহারা না দেখা পর্যন্ত তুমি তাকে মৃত্যু দিও না। জুরাইজ তার ইবাদত খানায় থাকত। একবার তার কাছে একটি মহিলা আসল। সে (অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য) তার সাথে কথা বলল। কিন্তু জুরাইজ তা অস্বীকার করল। তারপর মহিলাটি একজন রাখলের নিকট গেল এবং তাকে দিয়ে মনোবাসনা পূরণ করল। পরে সে একটি পুত্র সন্তান প্রসব করল। তাকে জিজ্ঞাসা হল। এটি কাঁর থেকে ? স্ত্রী লোকটি বলল, জুরাইজ থেকে। লোকেরা তার কাছে আসল এবং তার ইবাদতখানা ভেঙ্গে দিল। আর তাকে নীচে নামিয়ে আনল ও তাকে গালি গালাজ করল। তখন জুরাইজ অজু সেরে ইবাদত করল। এরপর নবজাত শিশুটির নিকট এসে তাকে জিজ্ঞাসা করল। হে শিশু ! তোমার পিতা কে? সে জবাব দিল সেই রাখাল। তারা (বনী ইসরাঈলেরা) বলল, আমরা আপনার ইবাদতখানাটি সোনা দিয়ে তৈরী করে দিচ্ছি। সে বলল, না। তবে মাটি দিয়ে (করতে পার)। বনী ইসরাঈলের একজন মহিলা তার শিশুকে দুধ পান করচ্ছিল। তার কাছ দিয়ে একজন সুদর্শন পুরুষ আরোহী চলে গেল। মহিলাটি দু’আ করল, ইয়া আল্লাহ আমার ছেলেটি তার মত বানাও। শিশুটি তখনই তার মায়ের স্তন ছেড়ে দিল। এবং আরোহীটির দিকে মুখ ফিরালো। আর বলল, ইয়া আল্লাহ! আমাকে তার মত করনা। এরপর মুখ ফিরিয়ে দুধ পান করতে লাগল। আবু হুরায়রা রা. বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পাচ্ছি তিনি আঙ্গুল চুষছেন। এরপর সেই মহিলাটির পাশ দিয়ে একটি দাসী চলে গেল। মহিলাটি বলল, ইয়া আল্লাহ! আমার শিশুটিকে এর মত করো না, শিশুটি তৎক্ষণাৎ তার মায়ের দুধ ছেড়ে দিল। আর বলল, ইয়া আল্লাহ! আমাকে তার মত কর। তার মা জিজ্ঞাসা করল, তা কেন? শিশুটি জবাব দিল সেই আরোহীটি ছিল যালিমদের একজন। আর এ দাসীটি লোকে বলছে তুমি চুরি করেছ, যিনা করেছ। অথচ কিছুই করেনি।

হাদীস নং ৩১৯৫

ইবরাহীম ইবনে মূসা ও মাহমুদ রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মিরাজ রজনীতে আমি মূসা আ.-এর দেখা পেয়েছি। আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূসা আ.-এর আকৃতি বর্ণনা করেছেন। মূসা আ. একজন দীর্ঘদেহী, মাথায় কোঁকড়ানো চুলবিশিষ্ট, যেন শানুআ গোত্রের একজন লোক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি ঈসা আ.-এর দেখা পেয়েছি। এরপর তিনি তাঁর আকৃতি বর্ণনা করে বলেছেন, তিনি হলেন মাঝারি গড়নের গৌর বর্ণবিশিষ্ট, যেন তিনি এই মাত্র হাম্মামখানা হতে বেরিয়ে এসেছেন। আর আমি ইবরাহীম আ.-কেও দেখেছি। তাঁর সন্তানদের মধ্যে আকৃতিতে আমিই তার বেশী সাদৃশ্যপূর্ণ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারপর আমার সামনে দুটি পেয়ালা আনা হল। একটিতে দুধ, অপরটিতে শরাব। আমাকে বল হল, আপনি যেটি ইচ্ছা গ্রহণ করতে পারেন। আমি দুধের পেয়ালাটি গ্রহণ করলাম এবং তা পান করলাম। তখন আমাকে বলা হল, আপনি ফিতরাত বা স্বভাবকেই গ্রহণ করে নিয়েছেন। দেখুন! আপনি যদি শরাব গ্রহণ করতেন, তাহলে আপনার উম্মত পথভ্রষ্ট হয়ে যেত।

হাদীস নং ৩১৯৬

মুহাম্মদ ইবনে কাসীর রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (মিরাজের রাতে) আমি ঈসা আ., মূসা আ. ও ইবরাহীম আ.-কে দেখেছি। ঈসা আ. গৌর বর্ণ, সোজা চুল এবং প্রশস্ত বক্ষ বিশিষ্ট লোক ছিলেন, মূসা আ. বাদামী রং বিশিষ্ট ছিলেন, তাঁর দেহ ছিল সুঠাম এবং মাথার চুল ছিল কোঁকড়ানো যেন ‘যুত’ গোত্রের একজন লোক।

হাদীস নং ৩১৯৭

ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকজনের সামনে মাসীহ দাজ্জালে কথা উল্লেখ করলেন। তিনি বললেন, আল্লাহ টেড়া নন। সাবধান! মাসীহ দাজ্জালের ডাক চোখ টেড়া। তার চোখ যেন ফুলে যাওয়া আঙ্গুলের মত। আমি এক রাতে স্বপ্নে নিজেকে কাবার কাছে দেখলাম। হঠাৎ সেখানে বাদামী রং এর এক ব্যক্তিকে দেখলাম। তোমরা যেমন সুন্দর বাদামী রঙ্গের লোক দেখে থাক তার থেকেও বেশী সুন্দর ছিলেন তিনি। তাঁর মাথার সোজা চুল, তার দু’কাধ পর্যন্ত ঝুলছিল। তার মাথা থেকে পানি ফোঁটা ফোঁটা করে পড়ছিল। তিনি দুজন লোকের কাঁধে হাত রেখে কাবা শরীফ তাওয়াফ করছিলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইনি কে? তারা জবাব দিলেন ইনি হলেন, মসীহ ইবনে মারিয়াম। তারপর তাঁর পেছনে আর একজন লোককে দেখলাম। তার মাথায় চুল ছিল বেশ কোঁকড়ানো, ডান চোখ টেড়া, আকৃতিতে সে আমার দেখা মত ইবনে কাতানের অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ। সে একজন লোকেরা দু’কাধে ভর করে কাবার চারদিকে ঘুরছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ লোকটি কে? তারা বললেন, এ হল মাসীহ দাজ্জাল।

হাদীস নং ৩১৯৮

আহমদ ইবনে মুহাম্মদ মাক্কী রহ……….সালিম রা.-এর পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলেননি যে ঈসা আ. রক্তিম বর্ণের ছিলেন। বরং বলেছেন, একদা আমি স্বপ্নে কাবা ঘর তাওয়াফ করছিলাম। হঠাৎ সোজা চুল ও বাদামী রং বিশিষ্ট একজন লোক দেখলাম। পানি বেয়ে পড়ছে। আমি বললাম, ইনি কে? তারা বললেন, ইনি মারিয়ামের পুত্র। তখন আমি এদিক সেদিক তাকালাম। হঠাৎ দেখলাম, এক ব্যক্তি তার গায়ের রং লালবর্ণ, খুব মোটা, মাথার চুল কোঁকড়ানো এবং তার ডান চোখ টেড়া। তার চোখ যেন ফুলা আঙ্গুলের ন্যায়। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ লোকটি কে? তারা বললেন, এ হল দাজ্জাল। মানুষের মধ্যে ইবনে কাতানের সাথে তার অধিক সাদৃশ্য রয়েছে। যুহরী রহ. তার বর্ণনায় বলেন, ইবনে কাতান খুযাআ গোত্রের একজন লোক, সে জাহেলী যুগেই মারা গেছে।

হাদীস নং ৩১৯৯

আবুল ইয়ামান রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আমি মারিয়ামের পুত্র ঈসার বেশী নিকটতম। আর নবীগণ পরস্পর আল্লাতী ভাই অর্থাৎ দীনের মূল বিষয়ে এক এবং বিধানে বিভিন্ন। আমার ও তার (ঈসার) মাঝখানে কোন নবী নেই।

হাদীস নং ৩২০০

মুহাম্মদ ইবনে সিনান রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি দুনিয়া ও আখিরাতে ঈসা ইবনে মারিয়ামের সবচেয়ে নিকটমত। নবীগণ একে অন্যের আল্লাতী ভাই। তাদের মা ভিন্ন ভিন্ন, অর্থাৎ তাদের বিধান ভিন্ন।(কিন্তু তাদের মূল দীন এক (তাওহীদ)। ইবরাহীম ইবনে তাহমান রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন।

হাদীস নং ৩২০১

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ঈসা আ. এক ব্যক্তিকে চুরি করতে দেখলেন, তখন তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি চুরি করেছ? সে বলল, কখনও নয়। সেই সত্তার কসম! যিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই । তখন ঈসা আ. বললেন, আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি আর আমি আমার দু’নয়নকে বাহ্যত সমর্থন করলাম না।

হাদীস নং ৩২০২

হুমাইদী রহ…………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি উমর রা.-কে মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, তোমরা আমার প্রশংসা করতে গিয়ে অতিরঞ্জিত কর না, যেমন ঈসা ইবনে মারিয়াম আ. সম্পর্কে খৃষ্টানরা অতিরঞ্জিত করেছিল। আমি তাঁর (আল্লাহর) বান্দা, বরং তোমরা আমার সম্পর্কে বলবে, আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।

হাদীস নং ৩২০৩

মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল রহ……..আবু মূসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন , রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি কোন লোক তার দাসীকে আদব-কায়দা শিখায় এবং তা ভালভাবে শিখায় এবং তাকে দীন শিখায় আর তা উত্তমভাবে শিখায় তারপর তাকে আযাদ করে দেয় অতঃপর তাকে বিয়ে করে তবে সে দুটি করে সওয়াব পাবে। আর যদি কেউ ঈসা আ.-এর প্রতি ঈমান আনয়ন করে তারপর আমার প্রতিও ঈমান আনে, তার জন্যও দুটি করে সওয়াব রয়েছে। আর গোলাম যদি তার প্রতিপালককে ভয় করে এবং তার মনীবদেরকে মেনে চলে তার জন্যও দুটি করে সাওয়াব রয়েছে।

হাদীস নং ৩২০৪

মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা হাশরের মাঠে খালি পা খালি গা এবং খাতনাবিহীন অবস্থায় সমবেত হবে। তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেন, যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব। এটা আমার ওয়াদা। আমি তা অবশ্যই পূর্ণ করব। (২১: ১০৪) এরপর (হাশরে) সর্বপ্রথম যাকে কাপড় পরানো হবে, তিনি হলেন ইবরাহীম আ. তারপর আমার সাহাবীদের কিছু সংখ্যককে ডান দিকে (বেহেশতে) এবং বাম দিকে (দোযখে) নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলব, এরা তো আমার অনুসারী। তখন বলা হবে আপনি তাদের থেকে বিদায় নেয়ার পর তারা মুরতাদ হয়ে গেছে। তখন আমি এমন কথা বলব, যেমন বলেছিল, পূণ্যবান বান্দা ঈসা ইবনে মারিয়াম আ.। তার উক্তিটি হল এ আয়াত: আর আমি যতদিন তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি তাদের উপর সাক্ষী ছিলাম। এরপর আপনি যখন আমাকে উঠিয়ে নিলেন তখন আপনিই তাদের হেফাযতকারী ছিলেন। আর আপনি তো সব কিছুর উপরই সাক্ষী। যদি আপনি তাদেরকে আযাব দেন, তবে এরা তো আপনারই বান্দা। আর যদি আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন তবে আপনি নিশ্চয়ই পরাক্রমশীল ও প্রজ্ঞাময়। (৫: ১১৭) কাবীসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এর হল ঐ সব মুরতাদ যারা আবু বকর রা.-এর খিলাফতকালে মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল। তখন আবু বকর রা. তাদের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন।

হাদীস নং ৩২০৫

ইসহাক রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কসম সেই সত্তার যার হাতে আমার প্রাণ, অচিরেই তোমদের মাঝে মারিয়ামের পুত্র ঈসা আ. শাসক ও ন্যায় বিচারক হিসেবে অবতরণ করবেন। তিনি ‘ক্রুশ’ ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকর মেরে ফেলবেন এবং তিনি যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটাবেন। তখন সম্পদের স্রোত বয়ে চলবে। এমনকি কেউ তা গ্রহণ করতে চাইবে না। তখন আল্লাহকে একটি সিজদা করা সমগ্র দুনিয়া এবং তার মধ্যকার সমস্ত সম্পদ থেকে বেশী মূল্যবান বলে গণ্য হবে। এরপর আবু হুরায়রা রা. বলেন, তোমরা ইচ্ছা করলে এর সমর্থনে এ আয়াতটি পড়তে পার। কিতাবীদের মধ্যে প্রত্যেকে তাঁর (ঈসা আ.-এর মৃত্যুর পূর্বে তাকে বিশ্বাস করবেই এবং কিয়ামতের দিন তিনি তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবেন।

হাদীস নং ৩২০৬

ইবনে বুকাইর রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের অবস্থা কেমন (আনন্দের) হবে যখন তোমাদের মাঝে মারিয়াম তনয় ঈসা আ. অবতরণ করবেন আর তোমাদের ইমাম তোমাদের মধ্য থেকেই হবে।

হাদীস নং ৩২০৭

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………উকবা ইবনে আমর রা. হুযায়ফা রা.-কে বললেন, আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা শুনেছেন, তা কি আমাদের কাছে বর্ণনা করবেন না? তিনি জবাব দিলেন, আম তাকে বলতে শুনেছি, যখন দাজ্জাল বের হবে তখন তার সাথে পানি ও আগুন থাকবে। এরপর মানুষ যাকে আগুনের মত দেখবে তা হবে আসলে শীতল পানি। আর যাকে মানুষ শীতল পানি ন্যায় দেখবে, তা হবে প্রকৃতপক্ষে দহনকারী আগুন। তখন তোমাদের মধ্যে যে তার দেখা পাবে, সে যেন অবশ্যই তাঁতে ঝাঁপিয়ে পড়ে, যাকে সে আগুনের ন্যায় দেখতে পাবে। কেননা, প্রকৃতপক্ষে তা সুস্বাদু শীতল পানি। হুযায়ফা রা. বলেন, আমি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) বলতে শুনেছি, তোমাদের পূর্ববর্তীদের মাঝে একজন লোক ছিল। তার কাছে ফেরেশতা তার জান কবয করার জন্য এসেছিলেন। (তার মৃত্যুর পর) তাকে জিজ্ঞাসা করা হল। তুমি কি কোন ভাল কাজ করেছ? সে জবাব দিল, আমার জন্য নই। তাকে বলা হল, একটু চিন্তা করে দেখ। সে বলল, এ জিনিসটি ব্যতীত আমার আর কিছুই জানা নেই যে, দুনিয়াতে আমি মানুষের সাথে ব্যবসা করতাম। অর্থাৎ ঋণ দিতাম। আর তা আদায়ের জন্য তাদেরকে তাগাদা করতাম। আদায় না করতে পারলে আমি স্বচ্ছল ব্যক্তিকে সময় দিতাম আর অভাবী ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিতাম। তখন আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালেন। হুযায়ফা রা. বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এটাও বলতে শুনেছি যে, কোন এক ব্যক্তির মৃত্যুর সময় এসে হাজির হল। যখন সে জীবন থেকে নিরাশ হয়ে গেল। তখন সে তার পরিজনকে ওসীয়াত করল, আমি যখন মরে যাব। তখন আমার জন্য অনেকগুলো কাঠ একত্র করে তাতে আগুন জ্বালিয়ে দিও। (আর আমাকে তাতে ফেলে দিও) আগুন যখন আমার গোশত খেয়ে ফেলবে এবং আমার হাড় পর্যন্ত পৌঁছে যাবে আর আমার হাড়গুলো বেরিয়ে আসবে, তখন তোমরা তা নিয়ে গুড়ো করে ফেলবে। তারপর যেদিন দেখবে খুব হাওয়া বইছে, তখন সেই ছাইগুলিকে উড়িয়ে দেবে। তার পরিজনেরা তাই করল। তারপর আল্লাহ সে সব একত্র করলেন এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এ কাজ তুমি কেন করলে? সে জবাব দিল, আপনার ভয়ে । তখন আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন। উকবা ইবনে আমর রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে ঐ ব্যক্তি ছিল কাফন চোর।

হাদীস নং ৩২০৮

বিশর ইবনে মুহাম্মদ রহ………ইবনে আব্বাস রা. ও আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তাঁরা উভয়ে বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তেকালের সময় হাযির হল। তখন তিনি আপন চেহারার উপর তার একখানা চাদর দিয়ে রাখলেন। এরপর যখন খারাপ লাগল, তখন তাঁর চেহারা মোবারক হতে তা সরিয়ে দিলেন এবং তিনি এ অবস্থায়ই বললেন, ইয়াহুদী ও নাসারাদের উপর আল্লাহর লানত। তারা তাদের নবীগণের কবরগুলোকে মসজিদ বানিয়ে রেখেছে। তারা যা করেছে তা থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদেরকে সতর্ক করছেন।

হাদীস নং ৩২০৯

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……….আবু হাযিম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি পাঁচ বছর যাবত আবু হুরায়রা রা.-এর সাহচর্যে ছিলাম। তখন আমি তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বণী ইসরাঈলের নবীগণ তাদের উম্মতকে শাসন করতেন। যখন কোন একজন নবী ইন্তেকাল করতেন, তখন অন্য একজন নবী তাঁর স্থলাভিসিক্ত হতেন। আর আমার পরে কোন নবী নেই । তবে অনেক খলীফা হবে। সাহাবাগণ আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমাদেরকে কি নির্দেশ করছেন? তিনি বললেন, তোমরা একের পর এক করে তাদের বায়আতের হক আদায় করবে। তোমাদের উপর তাদের যে হক রয়েছে তা আদায় করবে। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞাসা করবেন ঐ সকল বিষয় সমন্ধে যে সবের দায়িত্ব তাদের উপর অর্পণ করা হয়েছিল।

হাদীস নং ৩২১০

সাঈদ ইবনে আবু মারিয়াম রহ……….আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের তরীকাহ পুরোপুরি অনুসরণ করবে, প্রতি বিঘতে বিঘতে প্রবেশ করবে। আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি ইয়হুদী ও নাসারার কথা বলেছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে আর কার কথা?

হাদীস নং ৩২১১

ইমরান ইবনে মাইসার রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাঁরা (সাহাবাগণ সালাতের জামাআতে শরীক হওয়ার জন্য) আগুন জ্বালানো এবং ঘণ্টা বাজানোর কথা উল্লেখ করলেন। তখনই তাঁরা ইয়াহুদী ও নাসারার কথা উল্লেখ করলেন। এরপর বিলাল রা.-কে আযানের শব্দগুলো দু’দু বার করে এবং ইকামাতের শব্দগুলো বেজোর করে বলতে আদেশ করা হল।

হাদীস নং ৩২১২

মুহাম্মদ বিনে ইউসুফ রহ………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি কোমরে হাত রাখাকে না পছন্দ করতেন। আর বলতেন, ইয়াহুদীরা এরূপ করে। শুবা রহ. আমাশ রহ. থেকে হাদীস বর্ণনায় সুফিয়ান রহ.-এর অনুসরণ করেছেন।

হাদীস নং ৩২১৩

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের পূর্ববর্তী যেসব উম্মত অতীত হয়ে গেছে তাদের তুলনায় তোমাদের স্থিতিকাল হল আসরের সালাত এবং সূর্য ডুবার মধ্যবর্তী সময় টুকুর সমান। আর তোমাদের ও ইয়াহুদী নাসারাদের দৃষ্টান্ত হল ঐ ব্যক্তির মত, যে কয়েকজন লোককে তার কাজে লাগালো এবং জিজ্ঞাসা করল, তোমাদের মধ্যে কে আছে যে, আমার জন্য দুপুর পর্যন্ত এক কিরাতের বিনিময়ে কাজ করবে? তখন ইয়াহুদীরা এক এক কিরাতের বিনিময়ে দুপুর পর্যন্ত কাজ করল। তারপর সে ব্যক্তি আবার বলল, তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে, সে দুপুর থেকে আসর পর্যন্ত এক এক কিরাতের বিনিময়ে আমার কাজটুকু করে দেবে। তখন নাসারারা এক কিরাতের বিনিময়ে দুপুর হতে আসর সালাত পর্যন্ত কাজ করল। সে ব্যক্তি পুনরায় বলল, কে এমন আছ, যে দু’ দু’ কিরাতের বদলায় আসর সালাত থেকে সূর্যাস্ত আমার কাজ করে দেবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দেখ, তোমরাই হলে সে সব লোক যারা আসর সালাত হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দু’ দু’ কিরাতের বিনিময়ে কাজ করলে। দেখ, তোমাদের পারিশ্রমিক দ্বিগুণ। এতে ইয়াহুদী ও নাসারারা অসন্তুষ্ট হয়ে গেল এবং বলল, আমরা কাজ করলাম বেশী আর পারিশ্রমিক পেলাম কম। আল্লাহ বলেন, আমি কি তোমার পাওনা থেকে কিছু যুলুম বা কম করেছি? তারা উত্তরে বলল, না। তখন আল্লাহ বললেন, এই হল আমার অনুগ্রহ, আমি যাকে ইচ্ছা, তা দান করে থাকি।

হাদীস নং ৩২১৪

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর রা. বলেন, আল্লাহ অমুক ব্যক্তিকে ধ্বংস করুক। সে কি জানেনা যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ ইয়াহুদীদের উপর লানত করুন। তাদের জন্য চর্বি হারাম করা হয়েছিল। তখন তারা তা গলিয়ে বিক্রি করতে লাগল। জাবির ও আবু হুরায়রা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস বর্ণনায় ইবনে আব্বাস রা. -এর অনুসরণ করেছেন।

হাদীস নং ৩২১৫

আবু আসিম যাহহাক ইবনে মাখলাদ রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার কথা (অন্যদের নিকট) পৌঁছিয়ে দাও, তা যদি আয়াতও হয়। আর বনী ইসরাঈলের ঘটনাবলী বর্ণনা কর। এতে কোন দোষ নেই। কিন্তু যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যা আরোপ করল, সে যেন দোযখকেই তার ঠিকানা নির্ধারিত করে নিল।

হাদীস নং ৩২১৬

আবদুল আযীয বিন আবদুল্লাহ রহ…………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইয়াহুদী ও নাসারারা (দাঁড়ি ও চুলে) রং লাগায় না বা খেযাব দেয় না। অতএব তোমরা (রং বা খেযাব লাগিয়ে) তাদের বিপরীত কাজ কর।

হাদীস নং ৩২১৭

মুহাম্মদ রহ…………হাসান (বসরী) রহ. বলেন, জুনদুব ইবনে আবদুল্লাহ রা. বসরার এক মসজিদে আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেন। সে দিন থেকে আমরা না হাদীস ভুলেছি না আশংকা করেছি যে, জুনদুব রহ. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন, তোমাদের পূর্ববর্তী যুগে একজন লোক আঘাত পেয়েছিল তাঁতে কাতর হয়ে পড়েছিল। এরপর সে একটি ছুরি হাতে নিল এবং তা দিয়ে সে তার হাতটি কেটে ফেলল। ফলে রক্ত আর বন্ধ হল না। শেষ পর্যন্ত সে মারা গেল। মহান আল্লাহ বলেন, আমার বান্দাটি নিজেই প্রাণ দেয়ার ব্যাপারে আমার থেকে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করল (অর্থাৎ সে আত্মহত্যা করল)। কাজেই, আমি তার উপর জান্নাত হারাম করে দিলাম।

হাদীস নং ৩২১৮

আহমদ ইবনে ইসহাক ও মুহাম্মদ রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন, বনী ইসরাঈলের মধ্যে তিনজন লোক ছিল। একজন শ্বেতীরোগী, একজন মাথায় টাকওয়ালা আর একজন অন্ধ। মহান আল্লাহ তাদেরকে পরীক্ষা করতে চাইলেন। কাজেই, তিনি তাদের কাছে একজন ফেরেশতা পাঠালেন। ফেরেশতা প্রথমে শ্বেতী রোগীটির নিকট আসলেন এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কাছে কোন জিনিস বেশী প্রিয় ? সে জবাব দিল, সুন্দর রং ও সুন্দর চামড়া। কেননা, মানুষ আমাকে ঘৃণা করে। ফেরেশতা তার শরীরের উপর হাত বুলিয়ে দিলেন। ফলে তার রোগ সেরে গেল। তাকে সুন্দর রং সুন্দর চামড়া দান করা হল। তারপর ফেরেশতা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কোন ধরণের সম্পদ তোমার কাছে বেশী প্রিয়? সে জবাব দিল, উট, অথবা সে বলল, ‘গরু’। এ ব্যাপারে বর্ণনাকারীর সন্দেহ রয়েছে যে শ্বেতীরোগী না টাকওয়ালা দু’জনের একজন বলেছিল উট আর অপরজন বলেছিল গরু। অতএব তাকে একটি দশ মাসের গর্ভবতী উটনী দেয়া হল। তখন ফেরেশতা বললেন, এতে তোমার জন্য বরকত হোক। বর্ণনাকারী বলেন, ফেরেশতা টাকওয়ালার কাছে গেলেন এবং যায়। মানুষ আমাকে ঘৃণা করে। বর্ণনাকারী বলেন, ফেরেশতা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন এবং তৎক্ষণাৎ মাথার টাক চলে গেল। তাকে (তার মাথায়) সুন্দর চুল দেয়া হল। ফেরেশতা জিজ্ঞাসা করলেন, কোন সম্পদ তোমার নিকট অধিক প্রিয়? সে জবাব দিল, গরু। তারপর তাকে একটি গর্ভবতী গাভী দান করলেন। এবং ফেরেশতা দু’আ করলেন, এতে তোমাকে বরকত দান করা হোক। তারপর ফেরেশতা অন্ধের নিকট আসলেন এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কোন জিনিস তোমার কাছে বেশী প্রিয় ? সে বলল, আল্লাহ যেন আমার চোখের জ্যোতি ফিরিয়ে দেন, যাতে আমি মানুষকে দেখতে পারি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তখন ফেরেশতা তার চোখের উপর হাত বুলিয়ে দিলেন, তৎক্ষণাৎ আল্লাহ তার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিলেন। ফেরেশতা জিজ্ঞাসা করলেন, কোন সম্পদ তোমার কাছে অধিক প্রিয়? সে জবাব দিল ছাগল। তখন তিনি তাকে একটি গর্ভবতী ছাগী দিলেন। উপরে উল্লেখিত লোকদের পশুগুলো বাচ্চা দিল। ফলে একজনের উটে ময়দান ভরে গেল, অপরজনের গরুতে মাঠ পূর্ণ হয়ে গেল এবং আর একজনের ছাগলে উপত্যকা ভরে গেল। এরপর ঐ ফেরেশতা তাঁর পূর্ববর্তী আকৃতি প্রকৃতি ধারণ করে শ্বেতরোগীর কাছে এসে বললেন, আমি একজন নিঃস্ব ব্যক্তি। আমার সফরের সকল (সম্বল) শেষ হয়ে গেছে। আজ আমার গন্তব্য স্থানে পৌঁছার আল্লাহ ছাড়া কোন উপায় নেই । আমি তোমার কাছে ঐ সত্তার নামে একটি উট চাচ্ছি, যিনি তোমাকে সুন্দর রং কোমল চামড়া এবং সম্পদ দান করেছেন। আমি এর উপর সাওয়ার হয়ে আমার গন্তব্যে পৌঁছাব। তখন লোকটি তাকে বলল, আমার উপর বহু দায় দায়িত্ব রয়েছে। (কাজেই আমার পক্ষে দান করা সম্ভব নয়)। তখন ফেরেশতা তাকে বললেন, সম্ভবত আমি তোমাকে চিনি। তুমি কি এক সময় শ্বেতরোগী ছিলেনা? মানুষ তোমাকে ঘৃণা করত। তুমি কি ফকীর ছিলে না? এরপর আল্লাহ তা’আলা তোমাকে (প্রচুর সম্পদ) দান করেছেন। তখন সে বলল, আমি তো এ সম্পদ আমার পূর্বপুরুষ থেকে ওয়ারিশ সুত্রে পেয়েছি। ফেরেশতা বললেন, তুমি যদি মিথ্যাবাদী হও, তবে আল্লাহ তোমাকে সেরূপ করে দিন, যেমন তুমি ছিলে। তারপর ফেরেশতা মাথায় টাকওয়ালার কাছে তাঁর সেই বেশভূষা ও আকৃতিতে গেলেন এবং তাকে ঠিক তদ্রুপই বললেন, যেরূপ তিনি শ্বেতী রোগীকে বলেছিলেন। এও তাকে ঠিক অনুরূপ জবাব দিল যেমন জবাব দিয়েছিল শ্বেতরোগী। তখন ফেরেশতা বললেন, যদি তুমি মিথ্যাবাদী হও, তবে আল্লাহ তোমাকে তেমন অবস্থায় করে দিন, যেমন তুমি ছিলে। শেষে ফেরেশতা অন্ধ লোকটির কাছে তাঁর আকৃতিতে আসলেন এবং বললেন, আমি একজন নিঃস্ব লোক, মুসাফির মানুষ ; আমার সফরের সকল সম্বল শেষ হয়ে গেছে। আজ বাড়ী পৌঁছার ব্যাপারে আল্লাহ ছাড়া কোন গতি নেই। তাই আমি তোমার কাছে সেই সত্তার নামে একটি ছাগী প্রার্থনা করছি। যিনি তোমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন আর আমি এ ছাগীটি নিয়ে আমার এ সফরে বাড়ী পৌঁছতে পারব। সে বলল, বাস্তবিকই আমি অন্ধ ছিলাম। আল্লাহ আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমি ফকীর ছিলাম। আল্লাহ আমাকে ধনী করেছেন। এখন তুমি যা চাও নিয়ে যাও। আল্লাহর কসম! আল্লাহর ওয়াস্তে তুমি যা কিছু নিবে, তার জন্য আজ আমি তোমার নিকট কোন প্রশংসাই দাবী করব না। তখন ফেরেশতা বললেন, তোমার মাল তুমি রেখে দাও। তোমাদের তিন জনকে পরীক্ষা করা হল মাত্র। আল্লাহ তোমাদের তিন জনকে পরীক্ষা করা হল মাত্র। আল্লাহ তোমার উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তোমার সাথী দু’জনের উপর অসন্তুষ্ট হয়েছেন।

হাদীস নং ৩২১৯

ইসমাঈল ইবনে খালীল রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের পূর্ববর্তী যুগের লোকদের মধ্যে তিনজন লোক ছিল। তাঁরা পথ চলছিল। হঠাৎ তাদের বৃষ্টি পেয়ে গেল। তখন তারা এক গুহায় আশ্রয় নিল। অমনি তাদের গুহার মুখ (একটি পাথর চাপা পড়ে) বন্ধ হয়ে গেল। তাদের একজন অন্যদেরকে বললেন, বন্ধুগণ আল্লাহ কসম! এখন সত্য ছাড়া কিছুই তোমাদেরকে মুক্ত করতে পারবে না। কাজেই, এখন তোমাদের প্রত্যেকের সেই জিনিসের উসিলায় দু’আ করা উচিত,যে ব্যাপারে জানা রয়েছে যে, এ কাজটিতে সে সত্যতা বহাল রেখেছে। তখন তাদের একজন (এই বলে) দু’আ করলেন হে আল্লাহ ! আপনি জানেন যে, আমার একজন মযদুর ছিল। আমি এক ফারাক (পরিমাণ) চাউলের বিনিময়ে একজন মজুর রেখেছিলাম। যখন সে তার কাজ শেষ করল আমাকে বলল, আমার পাওনা দিয়ে দাও। আমি যখন তাকে তা দিতে গেলে সে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করল। তারপর আমি সে এক ফারাক শস্য দানা দিয়ে চাষ করে ফসল উৎপন্ন করি এবং তা দিয়ে গরু খরিদ করি । সে মজুর এসে আমার মুজরী দাবী করল। আমি বললাম, এই গাভীটির দিকে তাকাও এবং তা হাঁকিয়ে নিয়ে যাও। সে বলল, আমার তো আপনার কাছে মাত্র এক ফারাক চাউলই প্রাপ্য। আমি তাকে বললাম, গাভীটি নিয়ে যাও। কেননা, (তোমার) সেই এক ফারাক দ্বারা যা উৎপাদিত হয়েছে, তারই বিনিময়ে এটি খরীদ করা হয়েছে। তখন সে তা নিয়ে গেল। (হে আল্লাহ !) তুমি যদি জান আমি তা তোমারই ভয়েই করছি, তবে আমাদের (গুহার মুখ) থেকে (এই পাথরটি) সরিয়ে দাও। তখন তাদের কাছ থেকে পাথরটি কিছুটা সরে গেল। তাদের আরেকজন দু’আ করল, হে আল্লাহ! আপনি জানেন যে, আমার মা-বাপ খুব বৃদ্ধ ছিলেন। আমি প্রতি রাতে তাদের জন্য আমার বকরীর দুধ নিয়ে তাদের কাছে যেতাম। ঘটনাক্রমে একরাতে তাদের কাছে যেতে আমি দেরী করে ফেললাম। তারপর এমন সময় গেলাম, যখন তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েছেন। এদিকে আমার পরিবার পরিজন ক্ষুধার কারণে চিৎকার করছিল। আমার মাতা-পিতাকে দুধ পান করান পর্যন্ত ক্ষুধায় কাতর আমার সন্তানদেরকে দুধ পান করাইনি। কেননা, তাদেরকে ঘুম থেকে জাগানটা আমি পছন্দ করিনি। অপরদিকে তাদেরকে বাদ দিতেও ভাল লাগেনি। কারণ, এ দুধটুকু পান না করলে তাঁরা উভয়েই দুর্বল হয়ে যাবেন। তাই (দুধ হাতে) আমি (সারারাত) ভোর হয়ে যাওয়া পর্যন্ত (তাদের জাগ্রত হবার) অপেক্ষা করছিলাম। আপনি যে, একাজ আমি করেছি, একমাত্র আপানার ভয়ে তাই আমাদের থেকে (পাথরটি) সরিয়ে দিন। তারপর পাথরটি তাদের থেকে আরেকটু সরে গেল। এমনকি তার আসমান দেখতে পেল। অপর ব্যক্তি দু’আ করল, হে আল্লাহ! আপনি জানেন যে, আমার একটি চাচাতো বোন ছিল। সবার চেয়ে সে আমার নিকট অধিক প্রিয় ছিল। আমি তার সাথে (মিলনের) বাসনা করছিলাম। কিন্তু সে একশ দীনার (স্বর্ণ মুদ্রার) প্রদান ব্যতিত ঐ কাজে রাযী হতে চাইল না। আমি স্বর্ণমুদ্রা অর্জনের চেষ্টা আরম্ভ করলাম এবং তা অর্জনে সমর্থও হলাম। তারপর কথিত মুদ্রাসহ তার নিকট উপস্থিত হয়ে তাকে তা অর্পণ করলাম। সেও তার দেহ আমার ভোগে অর্পণ করল। আমি যখন তার দুই পায়ের মাঝে বসে পড়লাম। তখন সে বলল, আল্লাহকে ভয় কর, অন্যায় ও অবৈধভাবে পবিত্র ও রক্ষিত আবরুকে বিনষ্ট করো না। আমি তৎক্ষণাৎ সরে পড়লাম ও স্বর্ণমুদ্রা ছেড়ে আসলাম। হে আল্লাহ ! আপনি জানেন যে, আমি প্রকৃতই আপনার ভয়ে তা করে ছিলাম। তাই আমাদের রাস্তা প্রশস্ত করে দাও। আল্লাহ (তাদের) সংকট দূরীভূত করলেন। তারা বের হয়ে আসল।

হাদীস নং ৩২২০

আবুল ইয়ামান রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, একদা একজন মহিলা তার কোলের শিশুকে স্তন্য পান করাচ্ছিল। এমন সময় একজন অশ্বারোহী তাদের নিকট দিয়ে গমন করে। মহিলাটি বলল, মহিলাটি দু’আ করল, ইয়া আল্লাহ আমার ছেলেটি তার মত না বানিয়ে মৃত্যু দান করো না। শিশুটি তখন বলে উঠল, ইয়া আল্লাহ! আমাকে তার মত করনা। এরপর মুখ ফিরিয়ে দুধ পান করতে লাগল। তারপর একজন মহিলাকে কতিপয় লোক অপমানজনক ঠাট্টা বিদ্রুপ করতে করতে টেনে নিয়ে চলছিল। ঐ মহিলাকে দেখে শিশুর মাতা বলে উঠল, ইয়া আল্লাহ! আমার শিশুটিকে এর মত করো না, শিশুটি তৎক্ষণাৎ বলে উঠল, ইয়া আল্লাহ! আমাকে তার মত কর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ঐ অশ্বারোহী ব্যক্তি কাফির ছিল আর ঐ মহিলাকে লক্ষ্য করে লোকজন বলছিল, তুই ব্যভিচারিণী, সে বলছিল হাসবি আল্লাহ- আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট। তারা বলছিল তুই চোর আর সে বলছিল হাসবি আল্লাহ- আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট।

হাদীস নং ৩২২১

সাঈদ ইবনে তালীদ রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে, একদা একটি কুকুর এক কূপের চারদিকে ঘুরছিল এবং প্রবল পিপাসার কারণে সে মৃত্যুর নিকটে পৌঁছেছিল। তখন বনী ইসরাঈলের ব্যাভিচারিণীদের একজন কুকুরটির অবস্থা লক্ষ্য করল, এবং তার পায়ের মোজার সাহায্য পানি সংগ্রহ করে কুকুরটিকে পান করল। এ কাজের প্রতিদানে আল্লাহ তা’আলা তাকে ক্ষমা করে দিলেন।

হাদীস নং ৩২২২

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ……….হুমাইদ ইবনে আবদুর রাহমান রহ. বর্ণিত, তিনি মুআবিয়া ইবনে আবু আবু সুফিয়ান রা.-কে বলতে শুনেছেন যে, তার হজ্জ পালনের বছর মিম্বরে নববীতে উপবিষ্ট অবস্থায় তাঁর দেহরক্ষীদের নিকট হতে মহিলাদের একগুচ্ছ কেশ নিজ হাতে নিয়ে বলেন যে, হে মদিনাবাসী ! কোথায় তোমাদের আলিম সমাজ ? আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ জাতীয় পরচুলা ব্যবহার থেকে নিষেধ করতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, বনী ইসরাঈল তখনই ধ্বংস প্রাপ্ত হয়, যখন তাদের মহিলাগণ এ জাতীয় পরচুলা ব্যবহার করতে আরম্ভ করে।

হাদীস নং ৩২২৩

আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগণের মধ্যে মুহাদ্দাস (ইলহাম প্রেরণা প্রাপ্ত) ব্যক্তিবর্গ ছিলেন। আমার উম্মতের মধ্যে যদি এমন কেউ থাকে, তবে সে নিশ্চয় উমর ইবনুল খাত্তাব রা. হবেন।

হাদীস নং ৩২২৪

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……….আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বনী ইসরাঈলের মাঝে এমন এক ব্যক্তি ছিল, যে নিরানব্বইটি নর হত্যা করেছিল। তারপর (অনুশোচনা করত: নাজাতের পথের অনুসন্ধানে বাড়ী থেকে) বের হয়ে একজন পাদরীকে জিজ্ঞাসা করল, আমার তওবা কবুল হওয়ার আশা আছে কি? পাদরী বলল, না। তখন সে পাদরীকেও হত্যা করল। এরপর পুনরায় সে (লোকদের নিকট) জিজ্ঞাসাবাদ করতে লাগল। তখন এক ব্যক্তি বলল, তুমি অমুক স্থানে চলে যাও। সে রওয়ানা হল এবং পথিমধ্যে তার মৃত্যু এসে গেল। সে তার বক্ষদেশ দ্বারা সে স্থানটির দিকে ঘুরে গেল। মৃত্যুর পর রহমত ও আযাবের ফেরেশতাগণ তার রূহকে নিয়ে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলেন। আল্লাহ সম্মুখের ভূমিকা (যেখানে সে তওবার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল) আদেশ করলেন, তুমি মৃত ব্যক্তির নিকটবর্তী হয়ে যাও। এবং পশ্চাতে ফেলে আসা স্থানকে (যেখানে হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল) আদেশ দিলেন, তুমি দূরে সরে যাও। তারপর ফেরেশতাদের উভয় দলকে আদেশ দিলেন- তোমরা এখন থেকে উভয় দিকের দূরত্ব পরিমাপ কর। পরিমাপ করা হল, দেখা গেল যে, মৃত লোকটি সম্মুখের দিকে এক বিঘত অধিক অগ্রসরমান। আল্লাহর রহমতে সে ক্ষমাপ্রাপ্ত হল।

হাদীস নং ৩২২৫

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত শেষে লোকজনের দিকে ঘুরে বসলেন এবং বললেন, একদা এক ব্যক্তি একটি গরু হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ সে এটির পিঠে চড়ে বসল এবং ওকে প্রহার করতে লাগল। তখন গরুটি বলল, আমাদেরকে এজন্য সৃষ্টি করা হয়নি, আমাদেরকে চাষাবাদের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। ইহা শুনে লোকজন বলে উঠল, সুবহানাল্লাহ ! গরুও কথা বলে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি এবং আবু বকর ও উমর ইহা বিশ্বাস করি। অথচ তখন তাঁরা উভয়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। এবং জনৈক রাখাল একদিন তার ছাগল পালের মাঝে অবস্থান করছিল, এমন সময় একটি চিতা বাঘ পালে ঢুকে একটি ছাগল নিয়ে গেল। রাখাল বাঘের পিছু ধাওয়া করে ছাগলটি উদ্ধার করে নিল। তখন বাঘটি বলল, তুমি ছাগলটি আমার হতে কেড়ে নিলে বটে তবে ঐদিন কে ছাগলকে রক্ষা করবে? যেদিন হিংস্র জন্তু ওদের আক্রমন করবে এবং আমি ছাড়া তাদের অন্য কোন রাখাল থাকবে না। লোকেরা বলল, সুবহানাল্লাহ ! চিতা বাঘ কথা বলে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি এবং আবু বকর ও উমর ইহা বিশ্বাস করি। অথচ তখন তাঁরা উভয়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। আলী ইবনে আবদুল্লাহ রা. হতে বর্ণিত………..আবু হুরায়রা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৩২২৬

ইসহাক ইবনে নাসর রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগে) এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তি হতে একখণ্ড জমি ক্রয় করেছিল। ক্রেতা খরীদকৃত জমিতে একটা স্বর্ণ ভর্তি ঘড়া পেল। ক্রেতা বিক্রেতাকে তা ফেরত নিতে অনুরোধ করে বলল, কারণ আমি জমি ক্রয় করেছি, স্বর্ণ ক্রয় করিনি। বিক্রেতা বলল, আমি জমি এবং এত যা কিছু আছে সবই বিক্রয় করে দিয়েছি। তারপর তারা উভয়ই অপর এক ব্যক্তির নিকট এর মিমাংসা চাইল। তিনি বলল, আমার একটি মেয়ে আছে। মিমাংসাকারী বলেন, তোমার মেয়েকে তার ছেলের সাথে বিবাহ দিয়ে দাও আর প্রাপ্ত স্বর্ণের মধ্যে কিছু তাদের বিবাহে ব্যয় কর এবং অবশিষ্টাংশ তাদেরকে দিয়ে দাও।

হাদীস নং ৩২২৭

আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ…………সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা. উসামাহ ইবনে যায়েদ রা.-কে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্লেগ সম্বন্ধে কি শুনেছেন? উসামাহ রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, প্লেগ একটি আযাব। যা বনী ইসরাঈলের এক সম্প্রদায়ের উপর আপতিত হয়েছিল। অথবা তোমাদের পূর্বে যারা ছিল। তোমরা যখন কোন স্থানে প্লেগের প্রাদুর্ভাব শুনতে পাও, তখন তোমরা সেখানে যেওনা। আর যখন প্লেগ এমন স্থানে দেখা দেয়, যেখানে তুমি অবস্থান করছ, তখন সে স্থান থেকে পালানোর উদ্দেশ্যে বের হয়োনা। আবু নযর রহ. বলেন, পলায়নের উদ্দেশ্যে এলাকা ত্যাগ করো না। তবে অন্য প্রয়োজনে যেতে পার, তাঁতে বাঁধা নেই।

হাদীস নং ৩২২৮

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……….নবী সহধর্মিণী আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্লেগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে, উত্তরে তিনি বলেন, তা একটি আযাব বিশেষ। আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাদের ইচ্ছা করেন তাদের উপর তা প্রেরণ করেন। আর আল্লাহ তা’আলা তাঁর মুমিন বান্দাগণের উপর তা (আযাবের সুরতে) রহমত স্বরূপ করে দিয়েছেন। কোন ব্যক্তি যখন প্লেগক্রান্ত স্থানে সাওয়াবের আশায় ধৈর্য ধরে অবস্থান করে এবং তার অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস থাকে যে, আল্লাহ তাকদীরে যা লিখে রেখেছেন তাই হবে। তবে সে একজন শহীদের সমান সওয়াব পাবে।

হাদীস নং ৩২২৯

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, মাখযূম গোত্রের জনৈকা চোর মহিলার ঘটনা কুরাইশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন করে তুলল। এ অবস্থায় তারা (পরস্পর) বলাবলি করতে লাগল এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কে আলাপ আলোচনা (সুপারিশ) করতে পারে? তারা বলল, একমাত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রিয়তম ব্যক্তি ওসামা ইবনে যায়েদ রা. এ জটিল ব্যাপারে আলোচনা করার সাহস করতে পারেন। (নবীজীর খেদমতে তাকে পাঠান হল তিনি প্রসঙ্গ উত্থাপন করে) ক্ষমা করেও দেয়ার সুপারিশ করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লংঘনকারীণীর সাজা (হাত কাটা) মাওকুফের সুপারিশ করছ? তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে খুতবায় বললেন, তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমূহকে এ কাজই ধ্বংস করেছে যে, যখন তাদের মধ্যে কোন সম্ভ্রান্ত লোক চুরি করত, তখন তারা বিনা সাজায় তাকে ছেড়ে দিত। অপরদিকে যখন কোন সহায়হীন দরিদ্র সাধারণ লোক চুরি করত, তখন তার উপর হদ (হাতকাটা দণ্ডবিধি) প্রয়োগ করত। আল্লাহর কসম, যদি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কন্যা ফাতিমা চুরি করত (আল্লাহ তাকে হিফাযত করুন) তবে আমি তার হাত অবশ্যই কেটে ফেলতাম।

হাদীস নং ৩২৩০

আদম রহ……… ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে কুরআনের একটি আয়াত (এমনভাবে) পড়তে শুনলাম যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমার শ্রুত তিলাওয়াতের বিপরীত। আমি তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে ঘটনাটি বললাম তখন তাঁর চেহারায় অসন্তোষের ভাব লক্ষ্য করলাম। তিনি বললেন, তোমরা উভয়ই ভাল ও সুন্দর পড়েছ। তবে তোমরা ইখতিলাফ (মতবিরোধ) করো না। তোমাদের পূর্ববর্তীগণ ইখতিলাফ ও মতবিরোধের কারণেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।

হাদীস নং ৩২৩১

উমর ইবনে হাফস রহ……….আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখছি যখন তিনি একজন নবী আ.-এর অবস্থা বর্ণনা করছিলেন যে, তাঁর স্বজাতিরা তাকে প্রহার করে রক্তাক্ত করে দিয়েছে আর তিনি তাঁর চেহারা থেকে মুছে ফেলছেন এবং বলছেন, হে আল্লাহ ! আমার জাতিকে ক্ষমা করে দাও, যেহেতু তারা অজ্ঞ।

হাদীস নং ৩২৩২

আবুল ওয়ালীদ রহ………..আবু সাঈদ রা. সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তোমাদের পূর্ববর্তী যুগে এক ব্যক্তি, আল্লাহ তা’আলা তাকে প্রচুর ধন-সম্পদ দান করেছিলেন। যখন তার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এল তখন সে তার ছেলেদেরকে একত্রিত করে জিজ্ঞাসা করল। আমি তোমাদের কেমন পিতা ছিলাম? তারা উত্তর দিল আপনি আমাদের উত্তম পিতা ছিলেন। সে বলল, আমি জীবনে কখনও কোন নেক আমল করতে পারিনি। আমি যখন মারা যাব তখন তোমরা আমার লাশকে জ্বালিয়ে ভস্ম করে রেখে দিও এবং প্রচণ্ড ঝড়ের দিন ঐ ভস্ম বাতাসে উড়িয়ে দিও। সে মারা গেল। ছেলেরা ওসিয়াত অনুযায়ী কাজ করল। আল্লাহ তা’আলা তার ভস্ম একত্রিত করে জিজ্ঞাসা করলেন, এমন অদ্ভুত ওসিয়াত করতে কে তোমাকে উদ্বুদ্ধ করল? সে জবাব দিল হে, আল্লাহ! তোমার শাস্তির ভয়। ফলে আল্লাহ রহমত তাকে ঢেকে নিল। মুআয রহ…….আবু সাঈদ রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন।

হাদীস নং ৩২৩৩

মুসাদ্দাদ রহ……….হুযায়ফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, এক ব্যক্তির যখন মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এল এবং সে জীবন থেকে নিরাশ হয়ে গেল। তখন সে তার পরিবার পরিজনকে ওসিয়াত করল, যখন আমি মরে যাব তখন তোমরা আমার জন্য অনেক লাকড়ি জমা করে (তার ভিতরে আমাকে রেখে) আগুন জ্বালিয়ে দিও। আগুন যখন আমার গোস্ত জ্বালিয়ে পুড়িয়ে হাঁড় পর্যন্ত পৌঁছে যাবে তখন (অদগ্ধ) হাড়গুলি পিষে ছাই করে নিও। তারপর সে ছাই গরমের দিন কিংবা প্রচণ্ড বাতাসের দিনে সাগরে ভাসিয়ে দিও। (তারা তাই করল) আল্লাহ তা’আলা (তার ভস্মীভূত দেহ একত্রিত করে) জিজ্ঞাসা করলেন, এমন কেন করলে? সে বলল, আপনার ভয়ে। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন। উকবা রহ. বলেন, আর আমিও তাকে (হুযায়ফা রা.-কে বলতে শুনেছি।

হাদীস নং ৩২৩৪

আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ………আবু হুরায়রা রা. সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পূর্বযুগে কোন এক ব্যক্তি ছিল, যে, মানুষকে ঋণ প্রদান করত। সে তার কর্মচারীকে বলে দিত, তুমি যখন কোন অভাবীর নিকট টাকা আদায় করতে যাও, তখন তাকে মাফ করে দিও। হয়ত আল্লাহ তা’আলা এ কারণে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (মৃত্যুর পর) যখন সে আল্লাহ তা’আলার সাক্ষাৎ লাভ করল, তখন আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন।

হাদীস নং ৩২৩৫

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….আবু হুরায়রা রা. সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, পূর্বযুগে এক ব্যক্তি তার নফসের উপর অনেক যুলুম করেছিল। যখন তার মৃত্যুকাল ঘনিয়ে এল, সে তার পুত্রদেরকে বলল, মৃত্যুর পর আমার দেহ হাড় মাংসসহ পুড়িয়ে দিয়ে ভস্ম করে নিও এবং (ভস্ম) প্রবল বাতাসে উড়িয়ে দিও। আল্লাহর কসম! যদি আল্লাহ আমাকে ধরে ফেলেন, তবে তিনি আমাকে এমন কঠোরতম শাস্তি দিবেন যা অন্য কাউকেও দেননি। যখন তার মৃত্যু হল, তার সাথে সে ভাবেই করা হল। তারপর আল্লাহ যমিনকে আদেশ করলেন, তোমার মাঝে ঐ ব্যক্তির যা আছে একত্রিত করে দাও। (যমীন তৎক্ষণাৎ তা করে দিল) এ ব্যক্তি তখনই (আল্লাহ সম্মুখে) দাঁড়িয়ে গেল। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কিসে তোমাকে এ কাজ করতে উদ্বদ্ধ করল ? সে বলল, হে প্রতিপালক তোমার ভয়ে, অতঃপর তাকে ক্ষমা করা হল। অন্য রাবী مخافتك স্থলে خشيتك বলেছেন।

হাদীস নং ৩২৩৬

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আসমা রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, একজন মহিলাকে একটি বিড়ালের কারণে আযাব দেয়া হয়েছিল। সে বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছিল। সে অবস্থায় বিড়ালটি মরে যায়। মহিলা ঐ কারণে জাহান্নামে গেল। কেননা, সে বিড়ালটিকে দানা-পানি কিছুই দেয়নি এবং ছেড়েও দেয়নি যাতে সে নিজ খুশিমতো যমীনের পোক-মাকড় খেয়ে বেঁচে থাকত।

হাদীস নং ৩২৩৭

আহমদ ইবনে ইউনুস রহ……….আবু মাসউদ উকবা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আম্বিয়া-এ কিরামের সর্বসম্মত উক্তিসমূহ যা মানব জাতি লাভ করেছে, তন্মধ্যে একটি হল, “যখন তোমার লজ্জা-শরম না তখন তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পার”।

হাদীস নং ৩২৩৮

আদম রহ………..আবু মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রথম যুগের আম্বিয়া-এ কিরামের সর্বসম্মত উক্তিসমূহ যা মানব জাতি লাভ করেছে, তন্মধ্যে একটি হল, “যখন তোমার লজ্জা-শরম না তখন তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পার”।

হাদীস নং ৩২৩৯

বিশর ইবনে মুহাম্মদ রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এক ব্যক্তি গর্ব ও অহংকারের সহিত লুঙ্গী টাখনোর নীচে ঝুলিয়ে পথ চলছিল। এমতাবস্থায় তাকে যমীনে ধ্বসিয়ে দেওয়া হল এবং কিয়ামত পর্যন্ত সে এমনি অবস্থায় নীচের দিকেই যেতে থাকবে। আবদুর রাহমান ইবনে খালিদ রহ. ইমাম যুহরী রহ. থেকে হাদীস বর্ণনায় ইউনুস রহ.-এর অনুসরণ করেছেন।

হাদীস নং ৩২৪০

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পৃথিবীতে আমাদের আগমন সর্বশেষে হলেও কিয়ামত দিবসে আমরা অগ্রগামী। কিন্তু, অন্যান্য উম্মতগণকে কিতাব দেওয়া হয়েছে আমাদের পূর্বে, আর আমাদিগকে কিতাব দেওয়া হয়েছে তাদের পর। তারপর এ (ইবাদতের) যে সম্পর্ক তারা মতবিরোধ করেছে। তা ইয়াহুদীদের মনোনীত শনিবার, খৃষ্টানদের মনোনীত রবিবার। প্রত্যেক মুসলমানদের উপর সপ্তাহে অন্তত: একদিন (অর্থাৎ শুক্রবার) গোসল করা কর্তব্য।

হাদীস নং ৩২৪১

আদম রহ………….সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, যখন মুআবিয়া আবু সুফিয়ান রা. মদীনায় সর্বশেষ আগমন করেন, তখন তিনি আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা প্রদানকালে এক গুচ্ছ পরচুলা বের করে বলেন, ইয়াহুদীগণ ব্যতীত অন্য কেউ এর ব্যবহার করে বলে আমার ধারণা ছিল না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কর্মকে মিথ্যা প্রতারণা বলে আখ্যায়িত করেছেন । অর্থাৎ পরচুলা। গুনদর রহ. শুবা রহ. থেকে হাদীস বর্ণনায় আদম রহ.-এর অনুসরণ করেছেন।

হাদীস নং ৩২৪২

খালিদ ইবনে ইয়াযীদ কাহিলী রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আয়াতে বর্ণিত, الشعوب অর্থ বড় গোত্র এবং القبائل অর্থ ছোট গোত্র।

 

 নৈতিক গুণাবলী অধ্যায় (৩২৪৩-৩৩৮৬)

হাদীস নং ৩২৪৩

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ‍! মানুষের মধ্যে সর্বাধিক মর্যাদাবান কে ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে সর্বাধিক মুত্তাকী সে-ই অধিক সম্মানিত। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ! আমরা এ ধরণের কথা জিজ্ঞাসা করিনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে আল্লাহর নবী ইউসুফ আ.।

হাদীস নং ৩২৪৪

কায়স ইবনে হাফস রহ………কুলায়েব ইবনে ওয়ায়েল রহ. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অভিভাবকত্বে পালিত আবু সালমার কন্যা যায়নাকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি বলুন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি মুযার গোত্রের ছিলেন? তিনি বললেন, বনু নযর ইবনে কিনান উদ্ভুত গোত্র মুযার ছাড়া আর কোন গোত্র থেকে হবেন? এবং মুযার গোত্র নাযর ইবনে কিনান গোত্রের একটি শাখা ছিল।

হাদীস নং ৩২৪৫

মূসা রহ……….কুলায়েব বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অভিভাবকত্বে পালিতা কন্যা বলেন, আর আমার ধারণা তিনি হলেন যায়নাব। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুদর বাওশ, সবুজ মাটির পাত্র মুকাইয়ার ও মুযাফফাত (আলকাতরা লাগানো পাত্র বিশেষ) ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। কুলায়েব বলেন, আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, বলেন ত দেখি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন গোত্রের ছিলেন? তিনি কি মুযার গোত্রের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন ? তিনি জবাব দিলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযার গোত্র ছাড়া আর কোন গোত্রের হবেন? আর মুযার নাযর ইবনে কিনানার বংশধর ছিল।

হাদীস নং ৩২৪৬

ইসহাক ইবনে ইবরাহীম রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা মানুষকে খনির ন্যায় পাবে। জাহিলী যুগের উত্তম ব্যক্তিগণ ইসলাম গ্রহণের পরও তারা উত্তম। যখন তারা দীনী জ্ঞান অর্জন করে আর তোমরা শাসন ও নেতৃত্বের ব্যাপারে লোকদের মধ্যে উত্তম ঐ ব্যক্তিকে পাবে যে এই ব্যাপারে তাদের মধ্যে সবচাইতে অধিক অনাসক্ত। আর মানুষের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ঐ দুমুখী ব্যক্তি যে একদলের সাথে একভাবে কথা বলে অপর দলের সাথে অন্যভাবে কথা বলে।

হাদীস নং ৩২৪৭

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, খিলাফত ও নেতৃত্বের ব্যাপারে সকলেই কুরাইশের অনুগত থাকবে। মুসলমানগণ তাদের মুসলমানদের এবং কাফেরগণ তাহাদের কাফেরদের অনুগত। আর মানব সমাজ খনির ন্যায় জাহিলী যুগের উত্তম ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণের পরও উত্তম তারা দীনী জ্ঞানার্জন করে। তোমরা নেতৃত্ব ও শাসনের ব্যাপারে ঐ ব্যক্তিকেই সর্বোত্তম পাবে যে এর প্রতি অনাসক্ত, যে পর্যন্ত না সে তা গ্রহণ করে।

হাদীস নং ৩২৪৮

মুসাদ্দাদ রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, إلا المودة في القربى এ আয়াতের প্রসঙ্গে রাবী তাউস রহ. বলেন যে, সায়িব ইবনে জুবাইর রা. বলেন, কুরবা শব্দ দ্বারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিটক আত্মীয়কে বুঝান হয়েছে। তখন ইবনে আব্বাস রা. বলেন, কুরাইশের এমন কোন শাখা-গোত্র নেই যাদের সাথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আত্মীয়তা ছিল না। আয়াতখানা তখনই নাযিল হয়। অর্থাৎ তোমরা আমার ও তোমাদের মধ্যকার আত্মীয়তার প্রতি দৃষ্টি রাখ।

হাদীস নং ৩২৪৯

আলী ইবনে আব্দুল্লাহ রহ………আবু মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এই পূর্বদিক হতে ফিতনা-ফাসাদের উৎপত্তি হবে। নির্মমতা ও হৃদয়ের কঠোরতা উট ও গরুর লেজের নিকট। পশমী তাঁবুর অধিবাসীরা রাবীআ ও মুযার গোত্রের যারা উট ও গরুর পিছনে চিৎকার করে (হাঁকায়), তাদের মধ্যেই রয়েছে নির্মমতা ও কঠোরতা।

হাদীস নং ৩২৫০

আবুল ইয়ামান রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি বলতে শুনেছি যে, গর্ব-অহংকার পশম নির্মিত তাঁবুতে বসবাসকারী যারা (উট গরু হাঁকাতে চিৎকার করে) তাদের মধ্যে। আর শান্তভাবে বকরী পালকদের মধ্যে রয়েছে। ঈমানের দৃষ্টতা এবং হিকমত ইয়ামানবাসীদের মধ্যে রয়েছে। ইমাম বুখারী রহ. বলেন, ইয়ামান নামকরণ করা হয়েছে। যেহেতু ইহা কাবা ঘরের ডানদিকে (দক্ষিণ) অবস্থিত এবং শাম (সিরিয়া) কাবা ঘরের বাম (উত্তর) দিকে অবস্থিত বিধায় তার শাম নামকরণ করা হয়েছে। والمشأمة অর্থ বাম দিক, বাম হাতকে الشؤمى এবং বাম দিককে أشأم বলা হয়েছে।

হাদীস নং ৩২৫১

আবুল ইয়ামান রহ………মুহাম্মদ ইবনে জুবাইর ইবনে মুতঈম রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুআবিয়া রা.-এর নিকট কুরাইশ প্রতিনিধিদের সহিত তার উপস্থিতিতে সংবাদ পৌঁছালো যে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. বর্ণনা করেন, অচিরেই কাহতান বংশীয় একজন বাদশাহর আবির্ভাব ঘটবে। ইহা শুনে মুআবিয়া রা. ক্রোধান্বিত হয়ে খুতবা দেয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আল্লাহর যথাযোগ্য হামদ ও সানার পর তিনি বললেন, আমি জানতে পেরেছি, তোমাদের মধ্য হতে কিছু সংখ্যক লোক এমন সব কথাবার্তা বলতে শুরু করছে যা আল্লাহর কিতাবে নেই এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেও বর্ণিত হয়নি। এরাই মূর্খ, এদের থেকে সাবধান থাক এবং এরূপ কাল্পনিক ধারণা হতে সতর্ক থাক যা-এর পোষণকারীকে বিপথগামী করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি বলতে শুনেছি যে, যতদিন তারা দীন কায়েমে নিয়োজিত থাকবে ততদিন খিলাফত ও শাসন ক্ষমতা কুরাইশদের হাতেই থাকবে। এ বিষয়ে যে-ই তাদের সহিত শত্রু তা করবে আল্লাহ তাকে অধোমুখে নিক্ষেপ করবেন (অর্থাৎ লাঞ্ছিত ও অপমানিত করবেন)।

হাদীস নং ৩২৫২

আবুল ওলীদ রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এ বিষয়ে (খিলাফত ও শাসন ক্ষমতা) সর্বদাই কুরাইশদের হাতে ন্যস্ত থাকবে, যতদিন তাদের দু’জন লোকও বেঁচে থাকবে।

হাদীস নং ৩২৫৩

আবু নুআঈম ও ইয়াকুব ইবনে ইবরাহীম রহ…………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কুরাইশ, আনসার, জুহায়না, মুযায়না, আসলাম, আশজা ও গিফার গোত্রগুলো আমার সাহায্যকারী। আল্লাহ তাঁর রাসূল ব্যতীত তাদের সাহায্যকারী আর কেউ নেই।

হাদীস নং ৩২৫৪

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……….জুবাইর ইবনে মুতঈম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এবং উসমান ইবনে আফফান রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে হাযির হলাম। উসমান রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি মুত্তালিবের সন্তানগণকে দান করলেন এবং আমাদেরকে বাদ দিলেন। অথচ তারা ও আমরা আপনার বংশগতভাবে সমপর্যয়ের। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বনূ হাশিম ও বনূ মুত্তালিব এক ও অভিন্ন। লায়স………উরওয়া ইবনে জুবাইর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর রা. বনূ যুহরার কতিপয় লোকের সাথে আয়েশা রা.-এর খেদমতে হাযির হলেন। আয়েশা রা. তাদের প্রতি অত্যন্ত নম্র ও দয়ার্দ্র ছিলেন। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে তাদের আত্মীয়তা ছিল।

হাদীস নং ৩২৫৫

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ…………উরওয়া ইবনে জুবাইর রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবু বকর রা.-এর পর আয়েশা রা.-এর নিকট সকল লোকদের মধ্যে সর্বাধিক প্রিয়পাত্র ছিলেন এবং তিনি সকল লোকদের মধ্যে আয়েশা রা.-এর সবচেয়ে বেশী সদাচারী ছিলেন। আয়েশা রা.-এর নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে রিযিক স্বরূপ যা কিছু আসত তা জমা না রেখে সাদকা করে দিতেন। এত আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর রা. বললেন, অধিক দান খায়রাত করা থেকে তাকে বারণ করা উচিত। তখন আয়েশা রা. বললেন, আমাকে দান করা থেকে বারণ করা হবে? আমি যদি তার সাথে কথা বলি, তাহলে আমাকে কাফফারা দিতে হবে এবং আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর রা. তাঁর নিকট কুরাইশের কতিপয় লোক, বিশেষ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাতৃবংশের কিছু লোক দ্বারা সুপারিশ করালেন। তবুও তিনি তাঁর সাথে কথা বলা থেকে বিরত থাকলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাতৃবংশ বনী যুহরার কতিপয় বিশিষ্ট লোক যাদের মধ্যে আবদুর রাহমান ইবনে আসওয়াদ এবং মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রা. ছিলেন তারা বললেন, আমরা যখন আয়েশা রা.-এর গৃহে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করব তখন তুমি পর্দার ভিতরে ঢুকে পড়বে। তিনি তাই করলেন। পরে ইবনে জুবাইর রা. কাফফারা আদায়ের জন্য তার কাছে দশটি ক্রীতদাস পাঠিয়ে দিলেন। আয়েশা রা. তাদের সবাইকে আযাদ করে দিলেন। এরপর তিনি বরাবর আযাদ করতে লাগলেন। এমনকি তার সংখ্যা চল্লিশে পৌঁছে। আয়েশা রা. বললেন, আমি যখন কোন কাজ করার শপথ করি, তখন আমার সংকল্প থাকে যে আমি যেন সে কাজটা করে দায়িত্ব মুক্ত হয়ে যাই এবং তিনি আরো বলেন, আমি যখন কোন কাজ সম্পাদনের শপথ করি উহা যথাযথ পূরণের ইচ্ছা রাখি।

হাদীস নং ৩২৫৬

আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, উসমান রা. যায়েদ ইবনে সাবিত রা., আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর রা., সাঈদ ইবনে আস রা. আবদুর রাহমান ইবনে হারিস রা.-কে ডেকে পাঠালেন। তাঁরা (হাফসা রা.-এর নিকট) সংরক্ষিত কুরআনকে সমবেতভাবে লিপিবদ্ধ করার কাজ আরম্ভ করলেন। উসমান রা. কুরাইশ বংশীয় তিন জনকে বললেন, যদি যায়েদ ইবনে সাবিত রা. এবং তোমাদের মধ্যে কোন শব্দে (উচ্চরণ ও লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে) মতবিরোধ দেখা দেয় তবে কুরাইশের ভাষায় তা লিপিবদ্ধ কর। যেহেতু কুরআন শরীফ তাদের ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তাঁরা তা-ই করলেন।

হাদীস নং ৩২৫৭

মুসাদ্দাদ রহ……….সালামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আসলাম গোত্রের কিছু সঙখ্যক লোক বাজারের নিকটে প্রতিযোগিতামূলক তীর নিক্ষেপের অনুশীলন করছিল। এমন সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন এবং তাদেরকে দেখে বললেন, হে ইসমাঈল আ.-এর বংশধর। তোমরা তীর নিক্ষেপ কর। কেননা তোমাদের পিতাও তীর নিক্ষেপে পারদর্শী ছিলেন এবং আমি তোমাদের অমুক দলের পক্ষে রয়েছি। তখন একটি পক্ষ তাদের হাত গুটিয়ে নিল। বর্ণনাকারী বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের কি হল? তারা বলল, আপনি অমুক পক্ষে থাকলে আমরা কি করে তীর নিক্ষেপ করতে পারি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তীর নিক্ষেপ কর। আমি তোমাদের উভয় দলের সঙ্গে রয়েছি।

হাদীস নং ৩২৫৮

আবু মামার রহ………..আবু যার রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, কোন ব্যক্তি যদি নিজ পিতা সম্পর্কে জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও অন্য কাউকে পিতা বলে দাবী করে তবে সে আল্লাহর (নিয়ামতের) কুফরী করল এবং যে ব্যক্তি নিজকে এমন বংশের সাথে নসবী সম্পৃক্ততার দাবী করল যে বংশের সাথে তার কোন নসবী সম্পর্ক নেই, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে তৈরী করে নেয়।

হাদীস নং ৩২৫৯

আলী ইবনে আইয়্যাশ রহ…………ওয়াসিলা ইবনে আসকা রা. বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিঃসন্দেহে ইহা বড় মিথ্যা যে, কোন ব্যক্তি এমন লোককে পিতা বলে দাবি করা যে তার পিতা নয় এবং বাস্তবে যা দেখে নাই তা দেখা দাবি করা এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেননি তা তাঁর প্রতি মিথ্যারোপ করা।

হাদীস নং ৩২৬০

মুসাদ্দাদ রহ…………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন আবদুল কায়স গোত্রের এক প্রতিনিধি দল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে আরয করল, হে আল্লাহর রাসূল ! (আমাদের) এ গোত্রটি বাবীআ বংশের। আমাদের এবং আপনার মধ্যে মুযার গোত্রের কাফেরগন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছে। আমরা আশহুরে হারাম ব্যতীত অন্য সময় আপনার খেদমতে হাযির হতে পারি না। খুবই ভাল হত যদি আপনি আমাদিগকে এমন কিছু নির্দেশ দিয়ে দিতেন যা আপনার কাছ থেকে গ্রহণ করে আমাদের পিছনে অবস্থিত লোকদেরকে পৌঁছে দিতাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমাদেরকে চারটি কাজের আদেশ এবং চারটি কাজের নিষেধাজ্ঞা প্রদান করছি। (এক) আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং এ সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই, (দুই) সালাত কায়েম করা, (তিন) যাকাত আদায় করা, (চার) গনীমতের যে মাল তোমরা লাভ কর তার পঞ্চমাংশ আল্লাহর জন্য বায়তুল মালে দান করা। আর আমি তোমাদেরকে দুব্বা (কদু পাত্র), হান্তম (সবুজ রং এর ঘড়া), নাকীর (খেজুর বৃক্ষের মূল খোদাই করে তৈরী পাত্র), মুযাফফাত (আলকাতরা লাগানো মাটির পাত্র, এই চারটি পাত্রের) ব্যবহার নিষেধ করছি।

হাদীস নং ৩২৬১

আবুল ইয়ামান রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মিম্বরের উপর উপবিষ্ট অবস্থায় পূর্ব দিকে ইশারা করে বলতে শুনেছি, সাবধান! ফিতনা ফাসাদের উৎপত্তি ঐদিক থেকেই হবে এবং ঐদিক থেকেই শয়তানের শিং-এর উদয় হবে।

হাদীস নং ৩২৬২

আবু নুআঈম রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কুরাইশ, আনসার, জুহায়না, মুযায়না, আসলাম, গিফার এবং আশজা গোত্রগুলো আমার আপনজন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ব্যতীত অন্য কেহ তাদের আপনজন নেই।

হাদীস নং ৩২৬৩

মুহাম্মদ ইবনে গুরায়না যুহরী রহ………..আবদুল্লাহ (ইবনে উমর) রা. বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে উপবিষ্ট অবস্থায় বলেন, গিফার গোত্র, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করুন, আসলাম গোত্র, আল্লাহ তাদেরকে নিরাপদে রাখুন আর উসাইয়া গোত্র, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করেছে।

হাদীস নং ৩২৬৪

মুহাম্মদ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আসলাম গোত্র, আল্লাহ তাহাদিগকে নিরাপদে রাখুন। গিফার গোত্র, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করুন।

হাদীস নং ৩২৬৫

কাবিসা ও মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……….আবু বাকরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবা কিরামকে লক্ষ্য করে) বলেন, বলত জুহায়না, মুযায়না, আসলাম ও গিফার গোত্র যদি আল্লাহর নিকট বানূ তামীম, বানূ আসাদ, বানূ গাতফান ও বানূ আমের হতে উত্তম বিবেচিত হয়ে তবে কেমন হবে? তখন জনৈক সাহাবী বললেন, তবে তারা (শেষোক্ত গোত্রগুলো) ক্ষতিগ্রস্ত ও বঞ্চিত হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পূর্বোক্ত গোত্রগুলো বানূ তামীম, বানূ আসাদ, বানূ আবদুল্লাহ ইবনে গাতফান এবং বানূ আমের ইবনে সাসা থেকে উত্তম।

হাদীস নং ৩২৬৬

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ…………আবু বাকরা তার পিতা থেকে বর্ণিত যে, আকরা ইবনে হাবিস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আরয করলেন, আসলাম গোত্রের সুররাক হাজীজ, গিফার ও মুযায়না গোত্রদ্বয় আপনার নিকট বায়আর করেছে এবং (রাবী বলেন) আমার ধারণা জুহায়না গোত্রও। এ ব্যাপারে ইবনে আবু ইয়াকুব সন্দেহ পোষণ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তুমি কি জান, আসলাম, গিফার ও মুযায়না গোত্রদ্বয়, (রাবী বলেন) আমার মনে হয় তিনি জুহায়না গোত্রের কথাও উল্লেখ করেছেন যে বনূ তামীম, বনূ আমির আসাদ এবং গাতফান (গোত্রগুলো) যারা ক্ষতিগ্রস্থ ও বঞ্চিত হয়েছে, তাদের তুলনায় পূর্বোক্ত গোত্রগুলো উত্তম। রাবী বলেন, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সে সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, পূর্বোক্ত গুলো শেষোক্ত গোত্রগুলোর তুলনায় অবশ্যই অতি উত্তম।

হাদীস নং ৩২৬৭

সুলাইমান ইবনে হারব রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আসলাম, গিফার এবং মুযায়না ও জুহানা গোত্রের কিয়দংশ অথবা জুহানার কিয়দাংশ কিংবা মুযায়নার কিয়দংশ আল্লাহর নিকট অথবা বলেছেন কিয়ামতের দিন আসাদ, তামীম, হাওয়াযিন ও গাতফান গোত্র থেকে উত্তম বিবেচিত হবে।

হাদীস নং ৩২৬৮

যায়েদ ইব্‌ন আখযাম (রহঃ) ……. আবূ জামরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একদিন) আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) আমাদিগকে বললেন, আমি কি তোমাদিগকে আবূ যার (রাঃ) এর ইসলাম গ্রহনের ঘটনা সরববিস্তার বর্ণনা করব ? আমার বললাম, হ্যাঁ, অবশ্যই। তিনি বলেন, আবু যার (রাঃ) বলেছেন, আমি গিফার গোত্রের একজন মানুষ। আমরা জানোতে পেলাম মক্কায় এক ব্যক্তি আত্মপ্রকাশ করে নিজেকে নাবী (সাঃ) বলে দাবী করেছেন। আমি আমার ভাই (উনাইস)-কে বললাম, তুমি মক্কায় গিয়ে ঐ ব্যক্তির সহিত সাক্ষাত ও আলোচনা করে বিস্তারিত খোঁজ খবর নিয়ে এস। সে রওয়ানা হয়ে গেল এবং মক্কার ঐ লোকটির সহিত সাক্ষাত ও আলাপ আলোচনা করে ফিরে আসলে আমি জিজ্ঞাসা করলাম- কি খবর নিয়ে এলে ? সে বলল, আল্লাহ্‌র কসম ! আমি একজন মহান ব্যক্তিকে দেখেছি যিনি সৎকাজের আদেশ এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করেন। আমি বললাম, তোমার সংবাদে আমি সন্তুষ্ট হতে পারলাম না। তারপর আমি একটি ছড়ি ও এক পাত্র খাবার নিয়ে মক্কাভিমুখে রওয়ানা হয়ে পড়লাম। মক্কায় পৌছে আমার অবস্থা দাঁড়াল এই- তিনি আমার পরিচিত নন, কারো নিকট জিজ্ঞাসা করাও আমি সমীচীন মনে করি না। তাই আমি যমযমের পানি পান করে মসজিদে অবস্থান করতে থাকলাম। একদিন সন্ধ্যা বেলায় আলী (রাঃ) আমার নিকট দিয়ে গমন কালে আমার প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন, মনে হয় লোকটি বিদেশী। আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আমার সাথে আমার বাড়িতে চল। রাস্তায় তিনি আমাকে কোন কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করেন নি। আর আমিও ইচ্ছাকৃত ভাবে কোন কিছু বলিনি। তাঁর বাড়িতে রাত্রি যাপন করে ভোর বেলায় পুনরায় মসজিদে গমন করলাম যাতে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করব। কিন্তু ঐখানে এমন কোন ব্যক্তি ছিল না যে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু বলবে। ঐ দিনও আলী (রাঃ) আমার নিকট দিয়ে গমনকালে বললেন, এখনো কি লোকটি তার গন্তব্যস্থল ঠিক করতে পারেনি ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, আমার সাথে চল। পথিমধ্যে তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, বল, তোমার বিষয় কি ? কেন এ শহরে আগমন ? আমি বললাম, যদি আপনি আমার বিষয়টি গোপন রাখবেন বলে আশ্বাস দেন তাহলে তা আপনাকে বলতে পারি। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আমি গোপনীয়তা রক্ষা করব। আমি বললাম, আমরা জানোতে পেরেছি, এখানে এমন এক ব্যক্তির আবির্ভাব হয়েছে যিনি নিজেকে নাবী (সাঃ) বলে দাবী করেন। আমি তাঁর সাথে সবিস্তর আলাপ আলোচনার করার জন্য আমার ভাইকে পাঠিয়ে ছিলাম। কিন্তু সে ফেরত গিয়ে আমাকে সন্তোষজনক কোন কিছু বলতে পারেনি। তাই নিজে দেখা করার ইচ্ছা নিয়ে এখানে আগমন করেছি। আলী (রাঃ) বললেন, তুমি সঠিক পথপ্রদর্শক পেয়েছ। আমি এখনই তাঁর খেদমতে উপস্থিত হওয়ার জন্য রওয়ানা হয়েছি। তুমি আমার অনুসরন করো এবং আমি যে গৃহে প্রবেশ করি তুমিও সে গৃহে প্রবেশ করবে। রাস্তায় যদি তোমার বিপদজনক কোন ব্যক্তি দেখতে পাই তাহলে আমি জুতা ঠিক করার ভান করে দেয়ালের প্বার্শে সরে দাঁড়াব, যেন আমি জুতা ঠিক করতেছি। তুমি কিন্তু চলতেই থাকবে। (যেন কেউ বুঝতে না পারে তুমি আমার সঙ্গী)। আলী (রাঃ) পথ চলতে শুরু করলেন। আমিও তাঁর অনুসরন করে চলতে লাগলাম। তিনি নাবী (সাঃ) -এর নিকট প্রবেশ করলে, আমিও তাঁর সাথে ঢুকে পড়লাম। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাঃ), আমার নিকট ইসলাম পেশ করুন। তিনি পেশ করলেন। আর আমি মুসলমান হয়ে গেলাম। নাবী (সাঃ) বললেন, হে আবূ যার। আপাততঃ তোমার ইসলাম গ্রহন গোপন রেখে তোমার দেশে চলে যাও। যখন আমাদের বিজয় সংবাদ জানোতে পারবে তখন এসো। আমি বললাম, যে আল্লাহ্‌ আপনাকে সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন তাঁর কসম ! আমি কাফির মুশরিকদের সম্মুখে উচ্চস্বরে তৌহিদের বাণী ঘোষণা করব। [ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) বলেন, ] এই কথা বলে তিনি মসজিদে হারামে গমন করলেন, কুরাইশের লোকজনও সেথায় উপস্থিত ছিল। তিনি বললেন, হে কুরাইশগণ ! আমি নিশ্চিত ভাবে সাক্ষ্য দিতেছি যে, আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিতেছি যে, মুহাম্মদ আল্লাহ্‌র বান্দা ও তাঁর রাসূল (সাঃ)। ইহা শুনে কুরাইশগণ বলে উঠল, ধর এই ধর্মত্যাগী লোকটিকে। তারা আমার দিকে এগিয়ে আসল এবং আমাকে নির্মমভাবে প্রহার করতে লাগল ; যেন আমি মরে যাই। তখন আব্বাস (রাঃ) আমার নিকট পৌছে আমাকে ঘিরে রাখলেন (প্রহার বন্ধ হল)। তারপর তিনি কুরাইশকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমাদের বিপদ অবশ্যম্ভাবী। তোমরা গিফার বংশের একজন লোককে হত্যা করতে উদ্যোগী হয়েছ অথচ তোমাদের ব্যবসা বাণিজ্যের কাফেলাকে গিফার গোত্রের সন্নিকট দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। (ইহা কি তোমাদের মনে নেই ?) একথা শুনে তারা সরে পড়ল। পরদিন ভোরবেলা কাবাগৃহে উপস্থিত হয়ে গেল দিনের মতই আমি আমার ইসলাম গ্রহনের পূর্ণ ঘোষণা দিলাম। কুরাইশগণ বলে উঠল, ধর এই ধর্মত্যাগী লোকটিকে। পূর্ব দিনের মত আজও তারা নির্মমভাবে আমাকে মারধর করলো। এই দিনও আব্বাস (রাঃ) এসে আমাকে রক্ষা করলেন এবং কুরাইশদিগকে লক্ষ্য করে ঐ দিনের মতো বক্তব্য রাখলেন। ইব্‌ন ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, ইহাই ছিল আবূ যার (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহনের প্রথম ঘটনা।

হাদীস নং ৩২৬৯

আবদুল আযীয ইব্‌ন আবদুল্লাহ (রহঃ) ……. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) বলেছেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত কাহ্‌তান গোত্র থেকে এমন এক ব্যক্তির১ আবির্ভাব না হবে যে মানবজাতিকে তাঁর লাঠি দ্বারা (শক্তিদ্বারা সুশৃংখলভাবে) পরিচালিত করবে।

১. ইয়ামান বাসীদের পূর্বপুরুষ, মাহদী আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর পরে তাঁর আবির্ভাব ঘটবে।

হাদীস নং ৩২৭০

মুহাম্মদ রহ………..জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিচালনায় যুদ্ধে শামিল ছিলাম। এ যুদ্ধে বহু সংখ্যক মুহাজির সাহাবী অংশগ্রহণ করেছিলেন। মুহাজিরদের মধ্যে একজন কৌতুক পুরুষ ছিলেন। তিনি কৌতুকচ্ছলে একজন আনসারীকে আঘাত করলেন। তাতে আনসারী সাহাবী ভীষণ ক্রুদ্ধ হলেন এবং উভয় গোত্রের সহযোগিতার জন্য নিজ নিজ লোকদের ডাকলেন। আনসারী সাহাবী বললেন, হে আনসারীগণ ! মুহাজির সাহাবী বললেন, হে মুহাজিরগণ সাহায্যে এগিয়ে আস। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহা শুনে বের হয়ে আসলেন এবং বললেন, জাহেলী যুগের হাঁকডাক কেন? অতঃপর বললেন, তাদের ব্যাপার কি? তাকে ঘটনা জানান হল। মুহাজির সাহাবী আনসারী সাহাবীর কোমরে আঘাত করেছে। রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ জাতীয় হাঁকডাক ত্যাগ কর, এ অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ। (মুনাফিক নেতা) আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুল বলল, তারা আমাদের বিরুদ্ধে ডাক দিয়েছে? আমরা যদি মদীনায় নিরাপদে ফিরে যাই তবে সম্ভ্রান্ত ও সম্মানিত ব্যক্তিগণ অবশ্যই বাহির করে দিবে নিকৃষ্ট ও অপদস্ত ব্যক্তিগণকে (মুহাজিরদেরকে) এতে উমর রা. বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি এই খাবীসকে হত্যা করার অনুমতি দিবেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (এরূপ করলে) লোকজন বলাবলি করবে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গীদেরকে হত্যা করে থাকে।

হাদীস নং ৩২৭১

সাবিত ইবনে মুহাম্মদ রহ…………..আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ঐ ব্যক্তি আমাদের দলভূক্ত নয় যে, (বিপদ কালিন বিলাপরত অবস্থায়) গণ্ডদেশে চপেটাঘাত করে, পরিধেয় বস্ত্র ছিন্নভিন্ন করে থাকে এবং জাহিলীয়াতের যুগের ন্যায় হৈ চৈ করে।

হাদীস নং ৩২৭২

ইসহাক ইবনে ইবরাহীম রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমর ইবনে লুহাই ইবনে কামআ ইবনে খিনদাফ খুযাআ গোত্রের পূর্বপুরুষ ছিল।

হাদীস নং ৩২৭৩

আবুল ইয়ামান রহ…………যুহরী রহ. বলেন, আমি সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব রা. বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, বাহীরা বলে দেবতার নামে উৎসর্গীকৃত উটনি যার দুগ্ধ আটকিয়ে রাখা হত এবং কোন লোক তার দুধ দোহন করত না। সাইবা বলা হয় ঐ জন্তুকে যাকে তারা ছেড়ে দিত দেবতার নামে। ইহাকে বোঝা বহন ইত্যাদি কোন কাজ কর্মে ব্যবহার করা হয় না। রাবী বলেন, আবু হুরায়রা রা. বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি আমর ইবনে আমির খুযআইকে তার বেরিয়ে আসা নাড়ী-ভুষি নিয়ে জাহান্নামের আগুনে চলাফেরা করতে দেখেছি। সেই প্রথম ব্যক্তি যে (দেব-দেবীদের নামে) সাইবা উৎসর্গ করার প্রথা প্রচলন করে।

হাদীস নং ৩২৭৪

আবুন নু’মান (রহঃ) ……. ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তুমি যদি আরবদের অজ্ঞতা ও মূর্খতা সম্বন্ধে জ্ঞাত হতে আগ্রহী হও, তবে সূরা আন্‌’আমের ১৪০ আয়াতের অংশটুকু মনোযোগের সাথে পাঠ করো। (ইরশাদ হয়েছে) “নিশ্চয়ই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যারা অজ্ঞতা ও নির্বুদ্ধিতার কারণে নিজ সন্তানদিগকে (দারিদ্রের ভয়ে) হত্যা করেছে। এবং আল্লাহ্‌র দেওয়া হালাল বস্তু সমূহকে হারাম করেছে এবং আল্লাহ্‌র প্রতি জঘন্য মিথ্যা আরোপ করেছে, নিশ্চয়ই তারা পথভ্রষ্ট ও বিপথগামী হয়েছে। তারা সুপথগামী হতে পারে নি।

হাদীস নং ৩২৭৫

উমর ইবনে হাফস রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন এ আয়াত “তোমার নিকট আত্মীয়গণকে সতর্ক কর” অবতীর্ণ হল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে বনী ফিহর, হে বনী আদি, বিভিন্ন কুরাইশ শাখা গোত্রগুলিকে নাম ধরে ধরে ইসলামের দিকে আহবান করতে লাগলেন। এবং কাবীসা রহ…….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন এ আয়াত “তোমার আত্মীয়গণকে সতর্ক কর” অবতীর্ণ হল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের গোত্র গোত্র করে আহবান করতে লাগলেন।

হাদীস নং ৩২৭৬

আবুল ইয়ামান রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, (উপরোক্ত আয়াতের প্রেক্ষিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবদে মানাফের বংশধরগণ, তোমরা (ঈমান ও নেক আমলে দ্বারা) তোমাদের নিজেদেরকে আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা কর। হে আবদুল মুত্তালিবের বংশধরগণ, তোমরা (ঈমান ও আমলের দ্বারা) তোমাদের নিজেদেরকে হিফাযত কর। হে যুবাইরের মাতা- রাসূলুল্লাহ ফুফু, হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা ফাতিমা। তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে (ঈমান ও আমলের দ্বারা) রক্ষা কর। তোমাদেরকে আযাব থেকে বাঁচানোর সামান্যতম ক্ষমতাও আমার নাই আর আমার ধন-সম্পদ থেকে তোমরা যা ইচ্ছা তা চেয়ে নিয়ে যেতে পার (দেওয়ার ইখতিয়ার আমার আছে)।

হাদীস নং ৩২৭৭

সুলাইমান ইবনে হারব রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের বললেন, তোমাদের মধ্যে (এই মজলিশে) অপর কেউ আছে কি? তারা বললেন, না অন্য কেউ নেই। তবে আমাদের একজন ভাগিনা আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোন গোষ্ঠীর ভাগ্নে সে গোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত বলে গণ্য হবে।

হাদীস নং ৩২৭৮

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……….আয়েশা রা. বর্ণনা করেন, মিনায় অবস্থানের দিনগুলোতে আবু বকর রা. আমার গৃহে প্রবেশ করলেন। তখন তাঁর নিকট দুটি বালিকা ছিল। তারা দফ বাজিয়ে এবং নেচে নেচে গান করছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন চাদর দিয়ে মুখ ঢেকে শুয়ে ছিলেন। আবু বকর রা. এদেরকে ধমকালেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন মুখ থেকে চাদর সরিয়ে বললেন, হে আবু বকর এদেরকে গাইতে দাও। কেননা, আজ ঈদের দিন ও মিনার দিনগুলির অন্তর্ভূক্ত। আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে ছিলেন আর আমি (তাঁর পিছনে থেকে) হাবশীদের খেলা উপভোগ করছিলাম। মসজিদের নিকটে তারা যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে খেলা করছিল। এমন সময় উমর রা. এসে তাদেরকে ধমকালেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে উমর তাদেরকে বানূ আরফিদাকে নিরাপদে ছেড়ে দাও।

হাদীস নং ৩২৭৯

উসমান ইবনে আবু শায়বা রহ………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হাসসান রা. কবিতার ছন্দে মুশরিকদের নিন্দা করতে অনুমতি চাইলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার বংশকে কিভাবে তুমি পৃথক করবে? হাসসান রা. বললেন, আমি তাদের মধ্য থেকে এমনভাবে আপনাকে আলাদা করে নিব যেমনভাবে আটার খামির থেকে চুলকে পৃথক করে নেয়া হয়। উরওয়া রহ. বলেন, আমি হাসসান রা.-কে আয়েশা রা. এর সম্মুখে তিরস্কার করতে উদ্যত হলে, তিনি আমাকে বললেন, তাকে গালি দিও না। সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ থেকে কবিতার মাধ্যমে শত্রু দের বাক্যঘাত প্রতিহত করত। আবুল হায়ছম বলেন, نفحت الدابة (বলা হয়) যখন পশু তার ক্ষুর দ্বারা আঘাত করে আর نفحه بالسيف (বলা হয়) যখন দূর থেকে আঘাত করা হয়।

হাদীস নং ৩২৮০

ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ…………যুবাইর ইবনে মুতঈম রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার পাঁচটি (প্রসিদ্ধ) নাম রয়েছে, আমি মুহাম্মদ, আমি আহমদ, আমি আল-মাহী (নিশ্চিহ্নকারী) আমার দ্বারা আল্লাহ কুফর ও শিরককে নিশ্চিহ্ন করে দিবেন। আমি আল-হাশির (সমবেতকারী কিয়ামতের ভয়াবহ দিবসে) আমার চারপাশে মানব জাতিকে একত্রিত করা হবে। আমি আল-আক্বিব (সর্বশেষ আগমনকারী আমার পর অন্য কোন নবীর আগমন হবে না)।

হাদীস নং ৩২৮১

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আশ্চর্যান্বিত হওনা? (তোমরা কি দেখছনা) আমার প্রতি আরোপিত কুরাইশদের নিন্দা ও অভিশাপকে আল্লাহ তা’আলা কি চমৎকারভাবে দূরীভূত করেছেন? তারা আমাকে নিন্দিত মনে করে গালি দিচ্ছে, অভিশাপ করছে অথচ আমি মুহাম্মদ-চির প্রসংশিত। (কাজেই তাদের গাল-মন্দ আমার উপর পতিত হয় না)।

হাদীস নং ৩২৮২

মুহাম্মদ ইবনে সিনান রহ……….জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার ও অন্যান্য নবীগণের অবস্থা এমন, যেন কেউ একটি ভবন নির্মাণ করল আর একটি ইটের স্থান শূন্য রেখে নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করে গৃহটিকে সুন্দর সুসজ্জিত করে নিল। জনগণ (উহার সৌন্দর্য দেখে) মুগ্ধ হল এবং তারা বলাবলি করতে লাগল, যদি একটি ইটের স্থানটুকু খালি রাখা না হত (তবে ভবনটি কতাইনা সুন্দর হত)।

হাদীস নং ৩২৮৩

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………..আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি এবং পূর্ববর্তী নবীগণের অবস্থা এরূপ, এক ব্যক্তি যেন একটি ভবন নির্মাণ করল; ইহাকে সুশোভিত ও সুসজ্জিত করল, কিন্তু এক কোনায় একটি ইটের জায়গা খালি রয়ে গেল। অতঃপর লোকজন ইহার চারপাশে ঘুরে বিস্ময়ের সহিত বলতে লাগল ঐ শূন্যস্থানের ইটটি লাগনো হল না কেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমিই সে ইট। আর আমিই সর্বশেষ নবী।

হাদীস নং ৩২৮৪

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাত হয় তখন তাঁর বয়স হয়েছিল তেষট্টি বছর। ইবনে শিহাব বলেন, সাঈদ ইবনে মুসায়্যাব এভাবেই আমার নিকট বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৩২৮৫

হাফস ইবনে উমর রহ………..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন বাজারে গিয়েছিলেন। তখন এক ব্যক্তি হে আবুল কাসিম! বলে ডাক দিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেদিকে ফিরে তাকালেন। (এবং বুঝতে পারলেন, সে অন্য কাউকে ডাকছে)। তখন তিনি বললেন, তোমরা আমার আসল নাম (অন্যের জন্য) রাখতে পার, কিন্তু আমার উপনাম কারো জন্য রেখ না।

হাদীস নং ৩২৮৬

মুহাম্মদ ইবনে কাসীর রহ………..জাবির রা. সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বললেন, আমার আসল নামে অন্যের নাম রাখতে পার, কিন্তু আমার উপনাম অন্যের জন্য রেখ না।

হাদীস নং ৩২৮৭

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবুল কাসিম (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আমার নামে নামকরণ করতে পার, কিন্তু আমার কুনিয়্যাতে (উপনাম) তোমাদের নাম রেখ না।

হাদীস নং ৩২৮৮

ইসহাক ইবনে ইবরাহীম রহ……….জুআইদ ইবনে আবদুর রাহমান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সাইব ইবনে ইয়াযীদকে চুরানব্বই বছর বয়সে সুস্থ-সবল ও সুঠাম দেহের অধিকারী দেখেছি। তিনি বললেন, তুমি অবশ্যই অবগত আছ যে, আমি এখনও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দু’আর বরকতেই চক্ষু ও কর্ণ দ্বারা উপকৃত হচ্ছি। আমার খালা একদিন আমাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে গেলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমার ভাগিনাটি পীড়িত ও রোগাক্রান্ত। আপনি তার জন্য আল্লাহর দরবারে দু’আ করুন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার জন্য দু’আ করলেন।

হাদীস নং ৩২৮৯

মুহাম্মদ ইবনে উবাইদুল্লাহ রহ…………জুআইদ রহ. বলেন, আমি সাইব ইবনে ইয়াযীদকে বলতে শুনেছি যে, আমার খালা একদিন আমাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে গেলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমার ভাগিনাটি পীড়িত ও রোগাক্রান্ত। (আপনি তার জন্য আল্লাহর দরবারে দু’আ করুন) তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার মাথায় হাত বুলালেন এবং আমার জন্য বরকতের দু’আ করলেন। তিনি ওযু করলেন, তাঁর ওযুর অবশিষ্ট পানি আমি পান করলাম। এরপর আমি তাঁর পিছন দিকে গিয়ে দাঁড়ালাম তাঁর কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে ‘মোহরে নবুওয়্যাত’ দেখলাম যা কবুতরের ডিমের ন্যায় অথবা বাসর ঘরের পর্দার বুতামের মত। ইবনে উবাইদুল্লাহ বলেন, الحجلة অর্থ সাদা চিহ্ন, যা ঘোড়ার কপালের সাদা অংশ এর অর্থ থেকে গৃহিত। আর ইবরাহীম ইবনে হামযা বলেন, কবুতরের ডিমের মত। আবু আবদুল্লাহ বুখারী রহ. বলেন, বিশুদ্ধ হল زاء এর পূর্বে را হবে অর্থাৎ رز ।

হাদীস নং ৩২৯০

আবু আসিম রহ…………উকবা ইবনে হারিস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আবু বকর রা. বাদ আসর এর সালাতান্তে বের হয়ে চলতে লাগলেন। (পথিমধ্যে) হাসান রা.-কে ছেলেদের সাথে খেলা করতে দেখলেন। তখন তিনি তাকে কাঁধে তুলে নিলেন এবং বললেন, আমার পিতা কুরবান হউন। এ-ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাদৃশ্য আলীর সাদৃশ্য নয়। তখন আলী রা. হাসতে ছিলেন।

হাদীস নং ৩২৯১

আহমদ ইবনে ইউনুস রহ………..আবু জুহায়ফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি। আর হাসান (ইবনে আলী) রা. তাঁরই সাদৃশ্য।

হাদীস নং ৩২৯২

আমর ইবনে আলী রহ……….আবু জুহায়ফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি। আর হাসান ইবনে আলী তাঁরই সাদৃশ্য। (রাবী বলেন) আমি আবু জুহায়ফাকে ভিতর যৎসামান্য সাদা চুলও ছিল। তিনি তেরটি সবল উটনী আমাদিগকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন, কিন্তু আমাদের হস্তগত হওয়ার পূর্বেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাত হয়ে যায়।

হাদীস নং ৩২৯৩

আবদুল্লাহ ইবনে রাজা রহ………..আবু জুহায়ফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি তাঁর নীচের ঠোঁটের নিম্নভাগের দাঁড়িতে সামান্য সাদা চুল দেখেছি।

হাদীস নং ৩২৯৪

ইসাম ইবনে খালিদ রহ…………হারীয ইবনে উসমান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে বুসরকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছেন যে, তিনি বৃদ্ধ ছিলেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাচ্চা দাঁড়িতে কয়েকটি চুল সাদা ছিল।

হাদীস নং ৩২৯৫

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……….রাবীআ ইবনে আবদুর রাহমান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনে মালিক রা.-কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (দৈহিক গঠন) বর্ণনা দিতে শুনেছি। তিনি বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের মধ্যে মাঝারি গড়নের ছিলেন–বেমানান লম্বাও ছিলেন না বা বেঁটেও ছিলেন না। তাঁর শরীরের রং গোলাপী ধরনের ছিল, ধবধবে সাদাও নয় কিংবা তামাটে বর্ণেও নয়। মাথার চুল কুঁকড়ানোও ছিল না আবার সম্পূর্ণ সোজাও ছিল না। চল্লিশ বছর বয়সে তাঁর উপর ওহী নাযিল হওয়া আরম্ভ হয়। প্রথম দশ বছর মক্কায় অবস্থানকালে ওহী নাযিল হতে থাকে। এরপর দশ বছর মদীনায় অতিবাহিত করেন। অতঃপর তাঁর ওফাত হয় তখন তার মাথা ও দাঁড়িতে কুড়িটি সাদা চুলও ছিল না। রাবীআ রহ. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি চুল দেখেছি উহা লাল রং-এর ছিল । তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, বলা হল যে অধিক সুগন্ধী লাগানোর কারণে উহার রং লাল হয়েছিল।

হাদীস নং ৩২৯৬

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেমানান লম্বাও ছিলেন না বা বেঁটেও ছিলেন না। তাঁর শরীরের রং গোলাপী ধরনের ছিল, ধবধবে সাদাও নয় কিংবা তামাটে বর্ণেও নয়। মাথার চুল কুঁকড়ানোও ছিল না আবার সম্পূর্ণ সোজাও ছিল না। চল্লিশ বছর বয়সে তাঁর উপর নবুওয়্যাত প্রাপ্ত হন। তাঁর নবুওয়্যাত কালের প্রথম দশ বছর মক্কায় এবং পরের দশ বছর মদীনায় অতিবাহিত করেন। অতঃপর তাঁর ওফাত হয় তখন তার মাথা ও দাঁড়িতে কুড়িটি সাদা চুলও ছিল না।

হাদীস নং ৩২৯৭

আহমদ ইবনে সাঈদ রহ…………বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারা মুবারক ছিল মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর এবং তিনি ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। তিনি অতিরিক্ত লম্বাও ছিলেন না এবং বেমানান বেঁটেও ছিলেন না।

হাদীস নং ৩২৯৮

আবু নুআইম রহ……….কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুলে খেযাব ব্যবহার করেছেন কি ? তিনি বললেন, না (তিনি তা ব্যবহার করেননি)। তাঁর কানের পাশে গুটি কয়েক চুল সাদা হয়েছিল মাত্র। (কাজেই চুলে খেযাব ব্যবহারের আবশ্যক হয় নাই)।

হাদীস নং ৩২৯৯

হাফস ইবনে উমর রহ……….বারা ইবনে আযিব রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাঝারি গড়নের ছিলেন। তাঁর উভয় কাঁধের মধ্যবর্তী স্থান প্রশস্ত ছিল। তাঁর মাথার চুল দুই কানের লতি পর্যন্ত প্রসারিত ছিল। আমি তাকে লাল ডোরাকাটা জোড় চাদর পরিহিত অবস্থায় দেখেছি। তাঁর চেয়ে অধিক সুন্দর কাউকে আমি কখনো দেখিনি। ইউসুফ ইবনে আবু ইসহাক তাঁর পিতা থেকে হাদীস বর্ণনায় বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাথার চুল কাঁধ পর্যন্ত প্রসারিত ছিল।

হাদীস নং ৩৩০০

আবু নুআইম রহ…………আবু ইসহাক তাবেই রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বারা রা.-কে জিজ্ঞাসা করা হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারা মুবারক কি তরবারীর ন্যায় (চকচকে) ছিল ? তিনি বলেন না, বরং চাঁদের মত (স্নিগ্ধ ও মনোরম) ছিল।

হাদীস নং ৩৩০১

হাসান ইবনে মানসুর আবু আলী রহ……….হাকাম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু জুহায়ফা রা.-কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুপুর বেলায় বাতহার দিকে বেরিয়ে গেলেন। সে স্থানে অজু করে যুহরের দু’রাকআত ও আসরের দু’রাকআত সালাত আদায় করেন। তাঁর সম্মুখে একটি বর্শা পোতা ছিল। বর্শার বাহির দিক দিয়ে নারীগণ যাতায়াত করছিল। সালাত শেষে লোকজন দাঁড়িয়ে গেল এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উভয় হাত ধরে তারা নিজেদের মাথা ও চেহারায় বুলাতে লাগলেন। আমিও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাত মুবারক ধারণ করতঃ আমার চেহারায় বুলাতে লাগলাম। তাঁর হাত তুষার চেয়ে স্নিগ্ধ শীতল ও কস্তুরীর চেয়ে অধিক সুগন্ধ ছিল।

হাদীস নং ৩৩০২

আবদান রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বাপেক্ষা অধিক দানশীল ছিলেন। তাঁর বদান্যতা বহুগুণ বেড়ে যেত রমযান মোবারকের পবিত্র দিনে যখন জিবরাঈল আ. তাঁর সাক্ষাতে আসতেন। জিবরাঈল আ. রমযানের প্রতিরাতে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করে কুরআনে করীমের দাওর করতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কল্যাণ বিতরণে প্রবাহিত বায়ূ অপেক্ষাও অধিক দানশীল ছিলেন।

হাদীস নং ৩৩০৩

ইয়াহইয়া ইবনে মূসা রহ……….আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত আনন্দিত ও প্রফুল্লচিত্তে তাঁর কাছে প্রবেশ করলেন। খুশীর আমেজে তাঁর চেহারার খুশীর চিহ্ন ঝলমল করছিল। তিনি তখন আয়েশাকে বললেন, হে আয়েশা ! তুমি শুননি, মুদলাজী ব্যক্তিটি (চেহারার ও আকৃতি গণনায় পারদর্শী) যায়েদ ও উসামা সম্পর্কে কি বলেছে? পিতা পুত্রের শুধু পা দেখে (শরীরের বাকী অংশ ঢাকা ছিল) বলল, এ পাগুলো একটা অন্যটির অংশ (অর্থাৎ তাদের সম্পর্ক পিতা-পুত্রের)।

হাদীস নং ৩৩০৪

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………….আবদুল্লাহ ইবনে কাব রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতা কাব ইবনে মালিক রা.-কে তার তাবুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করার ঘটনা বর্ণনা করতে শুনেছি। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম করলাম, খুশী ও আনন্দে তাঁর চেহারা মুবারক ঝলমল করে উঠল। তাঁর চেহারা এমনি-ই খুশী ও আনন্দে ঝলমল করত। মনে হত যেন চাঁদের একটি টুকরা। তাঁর চেহারা মুবারকের এ অবস্থা থেকে আমরা তা বুঝতে সক্ষম হতাম।

হাদীস নং ৩৩০৫

কাতাইবা ইবনে সাঈদ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি মানব জাতির সর্বোত্তম যুগে আবির্ভূত হয়েছি। যুগের পর যুগ হয়ে আমি সেই যুগেই জন্মেছি যে যুগ আমার জন্য নির্ধারিত ছিল।

হাদীস নং ৩৩০৬

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চুল পিছনের দিকে আঁচড়িয়ে রাখতেন আর মুশরিকগণ তাদের চুল দু’ভাগ করে সিঁতি কেটে রাখত। আহলে কিতাব তাদের চুল পিছনের দিকে আঁচড়িয়ে রাখত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কোন বিষয়ে আল্লাহর আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত আহলে কিতাবের অনুকরণকে ভালবাসতেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চুল দু’ভাগ করে সিঁথি কেটে রাখতে রাখতে লাগলেন।

হাদীস নং ৩৩০৭

আবদান রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অশ্লীল ভাষী ও অসদাচারী ছিলেন না। তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বশ্রেষ্ঠ যে নৈতিকতায় সর্বোত্তম।

হাদীস নং ৩৩০৮

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে (জাগতিক বিষয়ে) যখনই দুটি জিনিসের একটি গ্রহণের ইখতিয়ার দেওয়া হত, তখন তিনি সহজ সরলটিই গ্রহণ করতেন যদি তা গুনাহ না হত। যদি গুনাহ হত তবে তা থেকে তিনি অনেক দূরে সরে থাকতেন । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যক্তিগত কারণে কারো থেকে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেন নি। তবে আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা লঙ্ঘন করা হলে আল্লাহকে রাযী ও সন্তুষ্ট করার মানসে প্রতিশোধ করতেন।

হাদীস নং ৩৩০৯

সুলাইমান ইবনে হারব রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতের তালু অপেক্ষা মোলায়েম কোন রেশম ও গরদকেও স্পর্শ করি নাই। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শরীর মোবারকের খুশব অপেক্ষা অধিকতর সুঘ্রাণ আমি কখনো পাই নাই।

হাদীস নং ৩৩১০

মুসাদ্দাদ রহ……….আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তপুরবাসিনী পর্দানশীন কুমারীদের চেয়েও অধিক লজ্জাশীল ছিলেন। মুহাম্মদ রহ………শুবা রহ. থেকে অনুরূপ রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে। (তবে এ বাক্যটি অতিরিক্ত রয়েছে যে,) যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কিছু অপছন্দ করতেন তখন তাঁর চেহারা মুবারকে তা (বিরক্তির ভাব) দেখা যেত।

হাদীস নং ৩৩১১

আলী ইবনে জাদ রহ…………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কোন খাদ্যবস্তুকে মন্দ বলতেন না। রুচি হলে খেয়ে নিতেন নতুবা ত্যাগ করতেন।

হাদীস নং ৩৩১২

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………… আবদুল্লাহ ইবনে মালিক ইবনে বুহায়না রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা করতেন, তখন উভয় বাহুকে শরীর থেকে এমনভাবে পৃথক করে রাখতেন যে, আমরা তাঁর বগল দেখতে পেতাম। অন্য বর্ণনায় আছে, বগলের শুভ্রতা দেখতে পেতাম।

হাদীস নং ৩৩১৩

আবদুল আলা ইবনে হাম্মাদ রহ………..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইস্তিসকা (বৃষ্টির জন্য সালাত ও দু’আ) ব্যতীত অন্য কোন দু’আয় তাঁর বাহুদ্বয় এতটা উর্ধ্বে উঠাতেন না কেননা এতে হাত এত উর্ধ্বে উঠাতেন যে তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখা যেত। আবু মূসা রহ. হাদীস বর্ণনায় বলেন, আনাস রা. বলেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’আর মধ্যে দুনু হাত উপরে উঠিয়েছেন ; এবং আমি তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখেছি।

হাদীস নং ৩৩১৪

হাসান ইবনে সাব্বাহ রহ…………আবু জুহায়ফা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে, (একদা) আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে নেয়া হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আবতাহ নামক স্থানে দুপুর বেলায় একটি তাবুতে অবস্থান করছিলেন। বেলাল রা. তাবু থেকে বেরিয়ে এসে যুহরের সালাতের আযান দিলেন এবং (তাঁবুতে) পুনঃ প্রবেশ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অজুর অবশিষ্ট পানি নিয়ে বেরিয়ে এলেন। লোকজন ইহা নেওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ল। অতঃপর তিনি আবার তাঁবুতে ঢুকে একটি ছোট বর্শা নিয়ে বেরিয়ে আসলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও (এবার) বেরিয়ে আসলেন। আমি যেন তাঁর পায়ের গোছার ঔজ্জ্বল্য এখনো দেখতে পাচ্ছি। বর্শাটি সম্মুখে পুতে রাখলেন। এরপর যুহরের দু’রাকআত এবং পরে আসরের দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন। বর্শার বাহির দিয়ে গাধা ও মহিলা চলাফেরা করছিল।

হাদীস নং ৩৩১৫

হাসান ইবনে সাব্বাহ রহ………….আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনভাবে (থেমে থেমে) কথা বলতেন যে, কোন গণনাকারী গণনা করতে চাইলে তাঁর কথাগুলি গণনা করতে পারত। লায়স রহ……….আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তুমি অমুকের (আবু হুরায়রা রা.) অবস্থা দেখে কি অবাক হও না? তিনি এসে আমার হুজরার পাশে বসে আমাকে শুনিয়ে হাদীস বর্ণনা করেন। আমি তখন (নফল) সালাতে ছিলাম। আমার সালাত শেষ হওয়ার পূর্বেই তিনি উঠে চলে যান। তাকে যদি আমি পেতাম তবে আমি অবশ্যই তাকে সতর্ক করে দিতাম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের মত দ্রুত কথা বলতেন না (বরং তিনি ধীরস্থির ও স্পষ্টভাবে কথা বলতেন)।

হাদীস নং ৩৩১৬

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ……….আবু সালামা ইবনে আবদুর রাহমান রহ. থেকে বর্ণিত যে, তিনি আয়েশা রা.-কে জিজ্ঞাসা করলেন, রমযান মাসে (রাতে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত কিভাবে ছিল? আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে ও অন্যান্য সব মাসের রাতে এগার রাকআতের বেশী সালাত আদায় করতেন না। প্রথমে চার রাকআত পড়তেন। এ চার রাকআত আদায়ের সৌন্দের্যের ও দৈর্ঘ্যের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করোনা। (ইহা বর্ণনাতীত) তারপর আরো চার রাকআত সালাত আদায় করতেন। এ চার রাকআতের সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্যের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না। তারপর তিন রাকআর (বিতর) আদায় করতেন। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি বিতর সালাত আদায়ের পূর্বে ঘুমিয়ে পড়েন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার চক্ষু ঘুমায় তবে আমার অন্তর ঘুমায় না।

হাদীস নং ৩৩১৭

ইসমাঈল রহ………..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি মসজিদে কাবা থেকে রাতে অনুষ্ঠিত ইসরা -এর ঘটনা বর্ণনা করছিলেন, যে তিন ব্যক্তি (ফেরেশতা) তাঁর নিকট হাযির হলেন মিরাজ সম্পর্কে ওহী অবতরণের পূর্বে। তখন তিনি মসজিদুল হারামে ঘুমন্ত ছিলেন। তাদের প্রথম জন বলল, তাদের (তিন জনের) কোন জন তিনি? (যেহেতু নবীজীর পাশে হামযা ও জাফর শুয়ে ছিলেন) মধ্যম জন উত্তর দিল, তিনিই (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের শ্রেষ্ঠ জন। আর শেষজন বলল, শ্রেষ্ঠজনকে নিয়ে চল। এ রাত্রে এতটুকুই হল, এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাদেরকে আর দেখেন নাই। তারপর আর এক রাতে তাঁরা আগমন করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্তর তা দেখতে পাচ্ছিল। যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চোখ ঘুমাত কিন্তু তাঁর অন্তুর সদা জাগ্রত থাকত। সকল আম্বিয়ায়ে কেরাম এর অবস্থা এরূপই ছিল যে, তাদের চোখ ঘুমাত কিন্তু অন্তর সদা জাগ্রত থাকত। তারপর জিবরাঈল আ. (ভ্রমণের) দায়িত্ব গ্রহণ করলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নিয়ে আকাশের দিকে চড়তে লাগলেন।

হাদীস নং ৩৩১৮

আবুল ওয়ালিদ রহ…………ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত যে, এক সফরে (খায়বার যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন কালে) তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলেন। সারারাত পথ চলার পর যখন ভোর নিকটবর্তী হল,তখন বিশ্রাম গ্রহণের জন্য থেমে গেলেন এবং গভীর নিদ্রায় ঘুমিয়ে পড়লেন। অবশেষে সূর্য উদিত হয়ে অনেক উপরে উঠে গেল, (কিন্তু কেউই জাগলেন না) (ইমরান রা. বলেন) যিনি সর্বপ্রথম ঘুম থেকে জাগলেন তিনি হলেন আবু বকর রা.। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বেচ্ছায় জাগ্রত না হলে তাকে জাগানো হত না। তারপর উমর রা. জাগলেন। আবু বকর রা. তাঁর শিয়রের নিকট গিয়ে বসে উচ্চস্বরে আল্লাহু আকবার বলতে লাগলেন। অবশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেগে উঠলেন এবং অন্যত্র চলে গিয়ে অবতরণ করে আমাদেরকে নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন। তখন এক ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে সালাত আদায় না করে দূরে দাঁড়িয়ে রইল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত শেষ করলেন তখন বললেন হে অমুক, আমাদের সাথে সালাত আদায় করতে কিসে বাধা দিল? লোকটি বলল, আমি অপবিত্র হয়েছি। (গোসলে প্রয়োজন হয়েছিল) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পাক মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করার আদেশ দিলেন, তারপর সে সালাত আদায় করল। (ইমরান রা. বলেন) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে অগ্রগামী দলের সাথে পাঠিয়ে দিলেন এবং আমরা ভীষণ তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়লাম। এমতাবস্থায় আমরা পথ চলছি। হঠাৎ এক উষ্ট্রারোহিণী মহিলা আমাদের নযরে পড়ল। সে পানি ভর্তি দুটি মষকের মধ্য খানে পা ঝুলিয়ে বসে ছিল। আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, পানি কোথায়? সে বলল, (আশেপাশে) কোথায়ও পানি নেই। আমরা বললাম, তোমার ও পানির জায়গার মধ্যে দূরত্ব কতটুকু? সে বলল, একদিন ও একরাতের দূরত্ব। আমরা তাকে বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিকট চল। সে বলল, রাসূলুল্লাহ কি? আমরা তাকে যেতে না দিয়ে তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে নিয়ে গেলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে এসেও ঐ জাতীয় কথাবার্তাই বলল যা সে আমাদের সাথে বলেছিল। তবে সে তাঁর নিকট বলল, সে কয়েকজন ইয়াতিম সন্তানের মাতা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মশক দুটি নামিয়ে ফেলতে আদেশ করলেন। তারপর তিনি মশক দুটির মুখে হাত বুলালেন। আমরা তৃষ্ণাকাতর চল্লিশ জন মানুষ পানি পান করে পিপাসা নিবারণ করলাম। তারপর আমাদের সকল মশক, বাসনপত্র পানি ভর্তি করে নিলাম। তবে উটগুলিকে পানি পান করান হয় নাই। এত সবের পরও মহিলার মশকগুলি এত পানি ভর্তি ছিল যে তা ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়ে গিয়েছিল। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের নিকট (খাবার জাতীয়) যা কিছু আছে উপস্থিত কর। কিছু খেজুর ও রুটির টুকরা জমা করে তাকে দেয়া হল। এ নিয়ে মহিলা আনন্দের সাথে তার গৃহে ফিরে গেল। গৃহে গিয়ে সকলের কাছে সে বলল, আমার সাক্ষাত হয়ে ছিল, এক মহাযাদুকরের সাথে অথবা মানুষ যাকে নবী বলে ধারণা করে তার সাথে। আল্লাহ এই মহিলার মাধ্যমে ও বস্তিবাসীকে হেদায়াত দান করলেন। মহিলাটি নিজেও ইসলাম গ্রহণ করল এবং বস্তিবাসী সকলেই ইসলাম গ্রহণে ধন্য হল।

হাদীস নং ৩৩১৯

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটি একটি পানির পাত্র আনা হল, তখন তিনি (মদীনার নিকটবর্তী) যাওরা নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত মোবারক ঐ পাত্রে রেখে দিলেন আর তখনই পানি আঙ্গুলির ফাঁক দিয়ে উপচে পড়তে লাগল। ঐ পানি দিয়ে উপস্থিত সকলেই অজু করে নিলেন। কাতাদা রা. বলেন, আমি আনাস রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার লোক সংখ্যা কত ছিল? তিনি বললেন, আমরা তিনশ অথবা তিনশ এর কাছাকাছি ছিলাম।

হাদীস নং ৩৩২০

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে (এমন অবস্থায়) দেখতে পেলাম যখন আসরের সালাতের সময় নিকটবর্তী। সকলেই পেরেশান হয়ে পানি খুঁজছেন কিন্তু পানি পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট অযুর পানি (একটি পাত্রসহ আনা হল) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে পাত্রে তাঁর হাত মোবারক রেখে দিলেন এবং সকলকে এ পাত্রের পানি দ্বারা অজু করতে আদেশ দিলেন। আমি দেখলাম তাঁর হাত মোবারকের নীচ হতে পানি সজোরে উথলে পড়ছিল। কাফেলার শেষ ব্যক্তিটি পর্যন্ত সকলেই এই পানি দিয়ে অজু করে নিলেন।

হাদীস নং ৩৩২১

আবদুর রাহমান ইবনে মুবারক রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক সফরে বের হয়েছিলেন। তাঁর সাথে সাহাবায়ে কেরামও ছিলেন। তারা চলতে লাগলেন, (আনাস রা. নিজেই) সামান্য পানিসহ একটি পেয়ালা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত করলেন। তিনি পেয়ালাটি হাতে নিয়ে তারই পানি দ্বারা অজু করলেন এবং তাঁর হাতের চারটি আঙ্গুল পেয়ালার মধ্যে সোজা করে ধরে রাখলেন। আর বললেন, উঠ তোমরা সকলে অজু কর। সকলেই ইচ্ছামত অজু করে নিলেন। তাদের সংখ্যা সত্তর বা এর কাছাকাছি ছিল।

হাদীস নং ৩৩২২

আবদুল্লাহ ইবনে মুনীর রহ………..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সালাতের সময় উপস্থিত হল (কিন্তু পানির ব্যবস্থা ছিলনা) যাদের বাড়ী মসজিদের নিকটে ছিল তারা অজু করার জন্য নিজ নিজ বাড়ীতে চলে গেলেন। কিন্তু কিছু সংখ্যক লোক থেকে গেলেন। (যাদের অজুর কোন ব্যবস্থা ছিলনা) তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে প্রস্তর নির্মিত একটি (ছোট) পাত্র আনা হল। এতে সামান্য পানি ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ পাত্রে তাঁর হাত মোবারক রাখলেন। কিন্তু পাত্রটি ছোট বিধায় হাতের আঙ্গুলগুলো প্রসারিত করতে পারলেন না বরং একত্রিত করে রেখে দিলেন। তারপর উপস্থিত সকলেই ঐ পানি দ্বারাই অজু করে নিল। হুমাইদ (একজন রাবী) রহ. বলেন, আমি আনাস রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম। আপনারা কতজন ছিলেন? তিনি বললেন, আশি জন।

হাদীস নং ৩৩২৩

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………..জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুদায়বিয়ার অবস্থান কালে একদিন সাহাবা কেরাম পীপাসায় অত্যন্ত কাতর হয়ে পড়লেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে একটি (চামড়ার) পাত্রে অল্প পানি ছিল। তিনি অজু করলেন। তাঁর নিকট পানি আছে মনে করে সকলে ঐদিকে ধাবিত হলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের কি হয়েছে? তাঁরা বললেন, আপনার সম্মুখস্থ পাত্রের সামান্য পানি ব্যতীত অজু ও পান করার মত পানি আমাদের নিকট নাই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ পাত্রে তাঁর হাত মোবারক রাখলেন। তখনই তাঁর হাত উপচিয়ে ঝর্ণা ধারার ন্যায় পানি ছুটিয়ে বের হতে লাগল। আমরা সকলেই পানি পান করলাম ও অজু করলাম। সালিম (একজন রাবী) বলেন আমি জাবির রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা কতজন ছিলেন ? তিনি বললেন, আমরা যদি এক লক্ষও হতাম তবুও আমাদের জন্য পানি যথেষ্ট হত। তবে আমরা ছিলাম মাত্র পনরশ।

হাদীস নং ৩৩২৪

মালিক ইবনে ইসমাঈল রহ………বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনিন বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে হুদায়বিয়ায় চৌদ্দশ লোক ছিলাম। হুদায়বিয়া একটি কূপ, আমরা তা হতে পানি এমনভাবে উঠিয়ে নিলাম যে তাতে এক ফোটা পানিও বাকী থাকল না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কূপের কিনারায় বসে কিছু পানি আনার জন্য আদেশ করলেন। (সামান্য পানি আনা হল) তিনি কুলি করে ঐ পানি কূপে নিক্ষেপ করলেন। কিছু সময় অপেক্ষা করলাম। তখন কূপটি পানিতে ভরে গেল। আমরা পান করে তৃপ্তি লাভ করলাম, আমাদের উটগুলোও পানি পানে তৃপ্ত হল। অথবা বলেছেন আমাদের উটগুলো পানি পান করে প্রত্যাবর্তন করল।

হাদীস নং ৩৩২৫

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু তালহা রা. তদীয় (পত্নী) উম্মে সুলাইমকে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কণ্ঠস্বর দুর্বল শুনেছি। আমি তাঁর মধ্যে ক্ষুধা বুঝতে পেরেছি। তোমার নিকট খাবার কিছু আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আছে। এই বলে তিনি কয়েকটি যবের রুটি বের করলেন। তারপর তাঁর একখানা ওড়না বের করে এর কিয়দংশ দিয়ে রুটিগুলো মুড়ে আমার হাতে গোপন করে রেখে দিলেন ও ওড়নার অপর অংশ আমার শরীর জড়িয়ে দিলেন এবং আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে পাঠালেন। রাবী আনাস রা. বলেন, আমি তাঁর নিকট গেলাম। ঐ সময় তিনি কতিপয় লোকসহ মসজিদে অবস্থান করছিলেন। আমি গিয়ে তাদের সম্মুখে দাঁড়ালাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখে বললেন, তোমাকে আবু তালহা পাঠিয়েছে? আমি বললাম জি হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, খাওয়ার দাওয়াত দিয়ে পাঠিয়েছে? আমি বললাম, জি হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সঙ্গীদেরকে বললেন, চল, আবু তালহা আমাদেরকে দাওআত করেছে। আমি তাদের আগেই চলে গিয়ে আবু তালহা রা.-কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমন বার্তা শুনালাম। ইহা শুনে আবু তালহা রা. বলেন, হে উম্মে সুলাইম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গী সাথীদেরকে নিয়ে আসছেন। তাদেরকে খাওয়ানোর মত কিচু আমাদের নিকট নেই। উম্মে সুলাইম রা. বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। আবু তালহা রা. তাদেরকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য বাড়ী হতে কিছুদূর অগ্রসর হলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাক্ষাত করলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু তালহা রা.-কে সঙ্গে নিয়ে তার ঘরে আসলেন, আর বললেন, হে উম্মে সুলাইম। তোমার নিকট যা কিছু আছে নিয়ে এসো। তিনি যবের ঐ রুটিগুলি হাযির করলেন এবং তাঁর নির্দেশে রুটিগুলো টুকরা টুকরা করা হল। উম্মে সুলাইম ঘিয়ের পাত্র ঝেড়ে মুছে কিছু ঘি বের করে তা তরকারী স্বরূপ পেশ করলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করে তাতে ফুঁ দিলেন এরপর দশজনকে নিয়ে আসতে বললেন। তাঁরা দশজন আসলেন এবং রুটি খেয়ে পরিতৃপ্ত হয়ে বেরিয়ে গেলেন। তারপর আরো দশজনকে আসার কথা বলা হল। তারা আসলেন রুটি খেয়ে পরিতৃপ্ত সহকারে রুটি খেয়ে পরিতৃপ্ত হয়ে বেরিয়ে গেলেন। আবার আরো দশজনকে আসতে বলা হল। তাঁরাও আসলেন এবং পেটভরে খেয়ে নিলেন। অনুরূপভাবে সমবেত সকলেই রুটি খেয়ে পরিতৃপ্ত হলেন। লোকজন সর্বমোট সত্তর বা আশিজন ছিলেন।

হাদীস নং ৩৩২৬

মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ………..আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা (সাহাবাগণ) অলৌকিক ঘটনাসমূহকে বরকত ও কল্যাণকর মনে করতাম আর তোমরা (যারা সাহাবী নও) ঐ সব ঘটনাকে ভীতিকর মনে কর। আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কোন সফরে ছিলাম। আমাদের পানি কমিয়ে আসল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অতিরিক্ত পানি তালাশ কর।(তালাশের পর) সাহাবাগণ একটি পাত্র নিয়ে আসলেন যার ভিতর সামান্য পানি ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত মোবারক ঐ পাত্রের ভিতর ঢুকায়ে দিলেন এবং ঘোষণা করলেন, বরকতময় পানি নিতে সকলেই এসো। এ বরকত আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। তখন আমি দেখতে পেলাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে পানি উপচে পড়ছে। সময় বিশেষে আমরা খাদ্য-দ্রব্যের তাসবীহ পাঠ শুনতাম আর তা খাওয়া হত।

হাদীস নং ৩৩২৭

আবু নুআইম রহ………..জাবির রা. থেকে বর্ণিত যে, তাঁর পিতা ঋণ রেখে শাহাদাত বরণ করেন। তখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বললাম, আমার পিতা অনেক ঋণ রেখে গেছেন। আমার নিকট বাগানের উৎপন্ন কিছু খেজুর ব্যতীত অন্য কোন সম্পদ নেই। কয়েক বছরের উৎপাদিত খেজুর একত্রিত করলেও তদ্বারা তাঁর ঋণ শোধ হবে না। আপনি দয়া করে আমার সাথে চলুন, যাতে পাওনাদারগণ (আপনাকে দেখে) আমার প্রতি কঠোর মনোভাব গ্রহণ না করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথে গেলেন এবং খেজুরের একটি স্তুপের চারদিক ঘুরে দু’আ করলেন। এরপর অন্য স্তুপের নিকটে গেলেন এবং এর নিকটে বসে পড়লেন এবং জাবির রা.-কে বললেন, খেজুর বের করে দিতে থাক। অতঃপর সকল পাওনাদারের প্রাপ্য শোধ করে দিলেন অথচ পাওনাদারদের যা দিলেন তার সমপরিমাণ রয়ে গেল।

হাদীস নং ৩৩২৮

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………..আবদুর রাহমান ইবনে আবু বকর রা. বর্ণনা করেন, আসহাবে সুফফার কতিপয় অসহায় দরিদ্র লোক ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বললেন, যার ঘরে দুজনের পরিমাণ খাবার আছে সে যেন এদের মধ্য থেকে তৃতীয় একজন নিয়ে যায়। আর যার ঘরে চার জনের পরিমাণ খাবার আছে সে এদের মধ্য থেকে পঞ্চম একজন বা ষষ্ঠ একজনকে নিয়ে যায় অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিলেন দশজন এবং আবু বকর রা. তিনজন নিলেন। আবদুর রাহমান রা. বলেন, (আমরা বাড়ীতে ছিলাম তিনজন) আমি আমার আব্বা ও আম্মা। আবু উসমান রা. রাবী বলেন, আমার মনে নাই আবদুর রাহমান রা. কি ইহাও বলেছিলেন যে আমার স্ত্রী ও আমাদের পিতা-পুত্রের একজন গৃহভৃত্যও ছিল। আবু বকর রা. ঐ রাতে নবীজীর বাড়ীতেই খেয়ে নিলেন এবং ইশার সালাত পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করলেন। ইশার সালাতের পর পুনরায় তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গৃহে গমন করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাতের আহার গ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তথায় অবস্থান করলেন। অনেক রাতের পর গৃহে ফিরলেন। তখন তাঁর স্ত্রী তাকে বললেন, মেহমান পাঠিয়ে দিয়ে আপনি এতক্ষণ কোথায় ছিলেন? তিনি বললেন, তাদের কি এখনো রাতের আহার দেওনি। স্ত্রী বললেন, আপনার না আসা পর্যন্ত তারা আহার খেতে রাযী হননি। তাদেরকে ঘরের লোকজন আহার দিয়েছিল। কিন্তু তাদের অসম্মতির নিকট আমাদের লোকজনে হার মানতে হয়েছে। আবদুর রাহমান রা. বলেন, আমি (অবস্থা বেগতিক দেখে) তাড়াতাড়ি কেটে পড়লাম। আবু বকর রা. (আমাকে উদ্দেশ্য করে) বললেন, ওরে বেওকুফ? আহস্মক! আরো কিছু কড়া কথা বলে ফেললেন। তারপর মেহমান পক্ষকে সম্বোধন করে বললেন, আপনারা খেয়ে নিন। আমি কিছুতেই খাবনা। (মধ্যে আরো কিছু কথা কাটাকাটি হয়ে গেল অবশেষে সকলেই খেতে বসলেন। আবদুর রাহমান রা. বলেন, আল্লাহর কসম, আমরা যখন গ্রাস তুলে নেই তখন দেখি পাত্রের খাবার অনেক বেড়ে যায়। খাওয়ার শেষে আবু বকর রা. লক্ষ্য করলেন যে পরিতৃপ্তভাবে আহারের পরও পাত্রে খাবার পূর্বাপেক্ষা অধিক রয়ে গেছে। তখন স্ত্রীকে লক্ষ্য করে বললেন, হে বনী ফিরাস গোত্রের বোন, ব্যাপার কি? তিনি বললেন, হে আমার নয়নমণি। খাদ্যের পরিমাণ এখন তিন গুণের চেয়েও অধিক রয়েছে। আবু বকর রা. তা থেকে কয়েক গ্রাস খেলেন এবং বললেন, আমার কসম শয়তানের প্ররোচনায় ছিল। তারপর অবশিষ্ট খাদ্য র-এর নিকট নিয়ে গেলেন এবং ভোর পর্যন্ত ঐ খাদ্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হেফাযতে রইল । রাবী বলেন, আমাদের ও অন্য একটি গোত্রের মধ্যে সন্ধি ছিল। চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়াতে তাদের মোকাবেলা করার জন্য আমাদের বার জনকে নেতা মনোনীত করা হল। প্রত্যেক নেতার অধীনে আবার কয়েক জন করে লোক ছিল। আল্লাহই ভাল জানেন তাদের প্রত্যেকের সাথে কতজন করে দেয়া হয়েছিল। আবদুর রাহমান রা. বলেন, এদের প্রত্যেকেই এ খাবার থেকে খেয়ে নিলেন। অথবা তিনি যা বলেছেন।

হাদীস নং ৩৩২৯

মুসাদ্দাদ রহ………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে একবার মদীনাবাসী অনাবৃষ্টির দরুন (দুর্ভিক্ষে) পতিত হল। ঐ সময় কোন এক জুমুআর দিনে খুতবা দিয়েছিলেন, তখন এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়াল, এবং বলল ইয়া রাসূলাল্লাহ! (অনাবৃষ্টির কারণে) ঘোড়াগুলো নষ্ট হয়ে গেল, বকরীগুলো ধ্বংস হয়ে গেল। আল্লাহর দরবারে বৃষ্টির জন্য দু’আ করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তৎক্ষণাৎ দু’হাত উঠিয়ে দু’আ করলেন। আনাস রা. বলেন, তখন আকাশ স্কটিক সদৃশ্য নির্মল ছিল। হঠাৎ মেঘ সৃষ্টিকারী বাতাস বইতে শুরু করল। এবং মেঘ ঘনিভূত হয়ে গেল। তারপর শুরু হল প্রবল বারিপাত যেন আকাশ তার দ্বার উন্মুক্ত করে দিল। আমরা (সালাত শেষে মসজিদ থেকে বের হয়ে) পানি ভেঙ্গে বাড়ী পৌঁছলাম। পরবর্তী শুক্রবার পর্যন্ত অনবরত বৃষ্টিপাত হল। ঐ শুক্রবার জুমুআর সময় ঐ ব্যক্তি বা অন্য কোন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! (অতিবৃষ্টির কারণে) গৃহগুলো বিনে) মুচকি হাসলেন এবং বললেন, (হে আল্লাহ!) আমাদের আশে পাশে বৃষ্টি হউক। আমাদের উপর নয়। (আনাস রা. বধ্বস্ত হয়ে গেল। বৃষ্টি বন্ধের জন্য আল্লাহর দরবারে দু’আ করুন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাঁর কথা শুলেন) তখন আমি দেখলাম, মদীনার আকাশ থেকে মেঘমালা চতুর্দিক সরে গেছে আর মদীনা (যেন মেঘমুক্ত হয়ে) মুকুটের ন্যায় শোভা পাচ্ছে।

হাদীস নং ৩৩৩০

মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মসজিদে) খেজুরের একটি কাণ্ডের সাথে (হেলান দিয়ে) খুতবা প্রদান করতেন। যখন মিম্বর তৈরী করে দেয়া হল। তখন তিনি মিম্বরে উঠে খুতবা দিতে লাগলেন। কাণ্ডটি তখন (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিরহে) কাঁদাতে শুরু করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাণ্ডটির নিকটে গিয়ে হাত বুলাতে লাগলেন। (তখন স্তম্ভটি শান্ত হল) উপরোক্ত হাদীসটি আবদুল হামীদ ও আবু আসিম রহ……ইবনে উমর রা. সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৩৩৩১

আবু নুআইম রহ……….জারিব ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বৃক্ষের উপর কিংবা একটি খেজুর বৃক্ষের কাণ্ডের উপর (হেলান দিয়ে) শুক্রবারে খুতবা প্রদানের জন্য দাঁড়াতেন। এমতাবস্থায় একজন আনসারী মহিলা অথবা একজন পুরুষ বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার জন্য একটি মিম্বর তৈরী করে দেব কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের ইচ্ছে হলে দিতে পার। অতঃপর তারা একটি কাঠের মিম্বর তৈরী করে দিলেন। যখন শুক্রবার এল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে আসন গ্রহণ করলেন, তখন কাণ্ডটি শিশুর ন্যায় চীৎকার করে কাঁদতে লাগল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বর হতে নেমে এসে উহাকে জড়িয়ে ধরলেন। কিন্তু কাণ্ডটি (আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে) শিশুর মত আরো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। রাবী বলেন, কাণ্ডটি এজন্য কাঁদছিল যেহেতু সে খুতবা কালে অনেক যিকর শুনতে পেত।

হাদীস নং ৩৩৩২

ইসমাঈল রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত যে, প্রথম দিকে খেজুরের কয়েকটি কাণ্ডের উপর মসজিদে নববীর ছাদ করা হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই খুতবা প্রদানের ইচ্ছা করতেন, তখন একটি কাণ্ডে হেলান দিয়ে দাঁড়াতেন। অতঃপর তাঁর জন্য মিম্বর তৈরী করে দেওয়া হলে তিনি সেই মিম্বরে উঠে দাঁড়াতেন। ঐ সময় আমরা কাণ্ডটির ভিতর থেকে দশ মাসের গর্ভবতী উষ্ট্রীর স্বরের ন্যায় কান্নার আওয়াজ শুনলাম। অবশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকটে এসে তাকে হাত বুলিয়ে সোহাগ করলেন। তারপর কাণ্ডটি শান্ত হল।

হাদীস নং ৩৩৩৩

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ. ও বিশর ইবনে খালিদ রহ………..উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ফিতনা সম্পর্কীয় হাদীস স্মরণ রেখেছ? যেমনভাবে তিনি বর্ণনা করেছেন। হুযায়ফা রা. বললেন, আমিই সর্বাধিক স্মরণ রেখেছি। উমর রা. বললেন, বর্ণনা কর, তুমি তো, অত্যন্ত সাহসী ব্যক্তি। হুযায়ফা রা. বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষের পরিবার-পরিজন ধন-সম্পদ এবং প্রতিবেশী দ্বারা সৃষ্ট ফিতনা-ফাসাদের ক্ষতিপূরণ হয়ে যাবে সালাত, সাদকা এবং সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ প্রদানের দ্বারা। উমর রা. বললেন, আমি এ জাতীয় ফিতনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিনি বরং উদ্বেলিত সাগর তরঙ্গের ন্যায় ভীষণ আঘাত হানে ঐ জাতীয় ফিতনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। হুযায়ফা রা. বলেন, হে আমীরুল মুমিনীন ! এ জাতীয় ফিতনা সম্পর্কে আপনার শঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। আপনার এবং এ জাতীয় ফিতনার মধ্যে একটি সুদৃঢ় কপাট বন্ধ অবস্থায় রয়েছে। উমর রা. জিজ্ঞাসা করলেন, এ কপাটটি কি (সাধারণ নিয়মে) খোলা হবে, না ভেঙ্গে ফেলা হবে। হুযায়ফা রা. বলেন, ভেঙ্গে ফেলা হবে। উমর রা. বললেন, তাহলে এ কপাটটি আর সহজে বন্ধ করা যাবে না। আমরা (সাহাবীগণ) হুযায়ফাকে জিজ্ঞাসা করলাম, উমর রা. কি জানতেন ঐ কপাট দ্বারা কাকে বুঝানো হয়েছে ? তিনি বললেন, অবশ্যই যেমন নিশ্চিতভাবে জানতেন আগামী দিনের পূর্বে অদ্য রাতের আগমন অনিবার্য। আমি তাতে এমন একটি হাদীস শুনিয়েছি, যাতে ভুল-ভ্রান্তির অবকাশ নেই। আমরা হুযায়ফাকে ভয়ে জিজ্ঞাসা করতে সাহস পাইনি, তাই মাসরূককে বললাম, (তুমি জিজ্ঞাসা কর) মাসরূক রহ. জিজ্ঞাসা করলেন ঐ বন্ধ কপাট দ্বার উদ্দেশ্য কে ? হুযায়ফা রা. বললেন, উমর রা. স্বয়ং।

হাদীস নং ৩৩৩৪

আবুল ইয়ামান রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না ততক্ষণ, যতক্ষণ না তোমাদের যুদ্ধ হবে এক জাতির সঙ্গে যাদের পায়ের জুতা হবে পশমের এবং যতক্ষণ না তোমাদের যুদ্ধ হবে তুর্কিদের সহিত যাদের চক্ষু ক্ষুদ্রাকৃতি, নাক চেপ্টা, চেহারা লাল বর্ণ যেন তাদের চেহারা পেটানো ঢাল। তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম মানুষ খনির ন্যায় (এতে ভাল মন্দ সবই আছে) যারা জাহিলিয়্যাতের যুগে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম ইসলাম গ্রহণের পরও তারা শ্রেষ্ঠ ও উত্তম। তোমাদের নিকট এমন যুগ আসবে যখন তোমাদের পরিবার-পরিজনরা, ধন-সম্পদের অধিকারী হওয়ার চাইতেও আমার সাক্ষাত লাভ তার কাছে অত্যন্ত প্রিয় মনে হবে।

হাদীস নং ৩৩৩৫

ইয়াইহয়া রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামত সংঘটিত হবেনা যে পর্যন্ত তোমাদের যুদ্ধ না হবে খুয ও কিরমান নামক স্থানে (বসবাসরত) অনারব জাতিগুলির সাথে, যাদের চেহারা লালবর্ণ, চেহারা যেন পিটানো ঢাল, নাক চেপ্টা, চক্ষু ক্ষুদ্রাকৃতি এবং জুতা পশমের। ইয়াহইয়া ব্যতীত অন্যান্য রাবীগণ ও আবদুর রাজ্জাক রহ. থেকে পূর্বের হাদীস বর্ণনায় তার অনুসরণ করেছেন।

হাদীস নং ৩৩৩৬

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহচর্যে তিনটি বছর কাটিয়েছি। আমার জীবনে হাদীস মুখস্থ করার আগ্রহ এ তিন বছরের চেয়ে অধিক আর কখনো ছিল না। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হাত দ্বারা এভাবে ইশারা করে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের পূর্বে তোমরা এমন এক জাতির সাথে যুদ্ধ করবে যাদের জুতা হবে পশমের এরা হবে পারস্যবাসী অথবা পাহাড়বাসী অনারব।

হাদীস নং ৩৩৩৭

সুলাইমান ইবনে হারব রহ……….আমর ইবনে তাগলিব রা. বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, তোমরা কিয়ামতের পূর্বে এমন এক জাতির সাথে যুদ্ধ করবে যারা পশমের জুতা ব্যবহার করে এবং তোমরা এমন এক জাতির সাথে যুদ্ধ করবে যাদের চেহারা হবে পিটানো ঢালের ন্যায়।

হাদীস নং ৩৩৩৮

হাকাম ইবনে নাফে রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে শুনেছি, ইয়াহুদীরা তোমাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। তখন বিজয়ী হবে তোমরাই। (এমনকি পাথরের আড়ালে কোন ইয়াহুদী আত্মগোপন করে থাকলে) স্বয়ং পাথরই বলবে, হে মুসলিম, এই ত ইয়াহুদী, আমার পিছনে আত্মগোপন করেছে, একে হত্যা কর।

হাদীস নং ৩৩৩৯

কুতাইবা রহ……….আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষের নিকট এমন এক সময় আসবে যে, তারা জিহাদ করবে। তখন তাদেরকে বলা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যক্তি আছেন কি? যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহচর্য লাভ করেছেন? তখন তারা বলবে, হ্যাঁ। তখন (ঐ সাহাবীর বরকতে) তাদেরকে জয়ী করা হবে। এরপরও তারা আরো জিহাদ করবে। তখন তাদেরকে বলা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি যিনি সাহাবা কেরামের সাহচর্য লাভ করেছেন ? তখন তারা বলবে, হ্যাঁ। তখন (ঐ তাবেবীর তুফায়েলে) তাদেরকে জয়ী করা হবে।

হাদীস নং ৩৩৪০

মুহাম্মদ ইবনে হাকাম রহ………আদি ইবনে হাতিম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মজলিসে বসা ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি এসে দুর্ভিক্ষের অভিযোগ করল। তারপর আর এক ব্যক্তি এসে ডাকাতের উৎপাতের কথা বলে অভিযোগ করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আদী, তুমি কি হীরা নামক স্থানটি দেখেছ, আমি বললাম, দেখি নাই, তবে স্থানটি আমার জানা আছে। তিনি বললেন, তুমি যদি দীর্ঘজীবী হও তবে দেখতে পাবে একজন উট সওয়ার হাওদানশীন মহিলা হীরা থেকে রওয়ানা হয়ে বায়তুল্লাহ শরীফে তাওয়াফ করে যাবে। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকেও ভয় করবেনা। আমি মনে মনে বলতে লাগলাম তাঈ গোত্রের ডাকাতগুলো কোথায় থাকবে যারা ফিতনা ফাসাদের আগুন জ্বালিয়ে দেশকে ছারখার করে দিচ্ছে। তিনি বললেন, তিনি বলেন, তুমি যদি দীর্ঘজীবী হও, তবে নিশ্চয়ই দেখতে পাবে যে কিসরার ধনভাণ্ডার কবজা করা হয়েছে। আমি বললাম, কিসরা ইবনে হুরমুযের ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, কিসরা ইবনে হুরমুযের। তোমার আয়ু যদি দীর্ঘ হয়, তবে অবশ্য তুমি দেখতে পাবে, লোকজন মুষ্টিভরা যাকাতের স্বর্ণ-রৌপ্য নিয়ে বের হবে এবং এমন ব্যক্তিকে তালাশ করে বেড়াবে যে তাদের এ মাল গ্রহণ করে। কিন্তু গ্রহণকারী একটি মানুষও পাবেনা। তোমাদের নিকট আমার বাণী পৌঁছানোর জন্য রাসূল প্রেরণ করিনি? সে বলবে, হ্যাঁ, প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ বলবেন, আমি কি তোমাকে ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি দান করিনি এবং দয়া মেহেরবাণী করিনি? তখন সে বলবে, হ্যাঁ দিয়েছেন। তারপর সে ডান দিকে নযর করবে, জাহান্নাম ব্যতীত কিছুই দেখবে না। আদী রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, অর্ধেকটি খেজুর দান করে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেকে রক্ষা কর আর যদি তাও করার তৌফিক না হয় তবে মানুষের জন্য মঙ্গলজনক সৎ ও ভাল কথা বলে নিজেকে আগুন থেকে রক্ষা কর। আদী রা. বলেন, আমি নিজে দেখেছি, এক উট সওয়ার মহিলা হীরা থেকে একাকী রওয়ানা হয়ে কাবা শরীফ তাওয়াফ করেছে। সে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকেও ভয় করেনা। আর পারস্য সম্রাট কিসরা ইবনে হুরমুযের ধনভাণ্ডার যারা দখল করেছিল, তাদের মধ্যে আমি একজন ছিলাম। যদি তোমরা দীর্ঘজীবী হও, তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন, তা স্বচক্ষে দেখতে পাবে। (অর্থাৎ মুষ্টিভরা স্বর্ণ দিতে চাইলে কিন্তু কেউ নিতে চাইবেনা)।

হাদীস নং ৩৩৪১

সাঈদ ইবনে শুরাহবিল রহ…….উকবা ইবনে আমির রা. থেকে বর্ণিত, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে মৃত ব্যক্তির সালাতে জানাযার ন্যায় উহুদ যুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী সাহাবীগণের কবরের পার্শ্বে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলেন। তারপর ফিরে এসে মিম্বরে আরোহণ করে বললেন, আমি তোমাদের জন্য অগ্রগামী ব্যক্তি, আমি তোমাদের পক্ষে আল্লাহর দরবারে সাক্ষ্য প্রদান করব। আল্লাহর কসম, আমি এখানে বসে থেকেই আমার হাউযে কাওসার দেখতে পাচ্ছি। পৃথিবীর ধন-ভাণ্ডারের চাবি আমার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর কসম আমার ওফাতের পর তোমরা মুশরিক হয়ে যাবে এ আশংকা আমার নাই। তবে আমি তোমাদের সম্পর্কে এ ভয় করি যে পার্থিব ধন-সম্পদ প্রাচুর্য ও মোহ তোমাদেরকে আত্মকলহে লিপ্ত করে তুলবে।

হাদীস নং ৩৩৪২

আবু নুআইম রহ……….উসামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন মদীনায় একটি উচু টিলায় আরোহণ করলেন, তারপর (সাহাবায়ে কেরামকে লক্ষ্য করে) বললেন, আমি যা দেখছি, তোমরা কি তা দেখতে পাচ্ছ? আমি দেখছি বারি ধারার ন্যায় ফাসাদ ঢুকে পড়ছে তোমাদের ঘরে ঘরে।

হাদীস নং ৩৩৪৩

আবুল ইয়ামান রহ……….যায়নাব বিনতে জাহাশ রা. থেকে বর্ণিত, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়তে পড়তে তাঁর গৃহে প্রবেশ করলেন এবং বলতে লাগলেন, এতটুকু পরিমাণ ছিদ্র হয়ে গিয়েছে, এ কথা বলে দুটি আঙ্গুল গোলাকৃতি করে দেখালেন। যায়নাব রা. বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসূল ! আমরা কি ধ্বংস হয়ে যাব, অথচ আমাদের মাঝে অনেক নেক লোক রয়েছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হ্যাঁ, যখন অশ্লীলতা বেড়ে যাবে। অন্য একটি বর্ণনায় উম্মে সালামা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেগে উঠলেন এবং বলতে লাগলেন, সুবহানাল্লাহ, আজ কি অফুরন্ত ধনভাণ্ডার অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং তারই সাথে অগণিত ফিতনা-ফাসাদ নাযিল করা হয়েছে।

হাদীস নং ৩৩৪৪

আবু নুআইম রহ………..আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি আবু সাসাআতকে বললেন, তোমাকে দেখছি তুমি বকরীকে অত্যন্ত পছন্দ করে এদেরকে সর্বদা লালান-পালন কর, তাই তোমাকে বলছি, তুমি এদের যত্ন কর এবং রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা কর। আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, এমন এক যামানা আসবে, যখন বকরীই হবে মুসলমানদের সর্বোত্তম সম্পদ ইহাকে নিয়ে পর্বত শিখরে বারি বর্ষণের স্থানে চলে যাবে এবং রক্ষা করবে তাদের দীনকে ফিতনা ফাসাদ থেকে।

হাদীস নং ৩৩৪৫

আবদুল আযীয ওয়াইসী রহ…………আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অচিরেই অসংখ্য সর্বগ্রাসী ফিতনা ফাসাদ আসতে থাকবে। ঐ সময় বসা ব্যক্তি দাঁড়ানো ব্যক্তির চেয়ে উত্তম (নিরাপদ) দাঁড়ানো ব্যক্তি চলমান ব্যক্তি হতে অধিক রক্ষিত আর চলমান ব্যক্তি ধাবমান ব্যক্তির চেয়ে অধিক বিপদমুক্ত। যে ব্যক্তি ফিতনার দিকে চোখ তুলে তাকাবে ফিতনা তাকে গ্রাস করবে। তখন যদি কোন ব্যক্তি তার দীন রক্ষার জন্য কোন ঠিকানা অথবা নিরাপদ আশ্রয় পায়, তবে সেখানে আশ্রয় গ্রহণ করাই উচিত হবে। ইবনে শিহাব যুহরী রহ………নাওফাল ইবনে মুআবিয়া রা. হতে আবু হুরায়রা রা.-এর হাদীসের অনুরূপই বর্ণনা করেছেন। তবে অতিরিক্ত আর একটি কথাও বর্ণনা করেছেন যে, এমন একটি সালাত রয়েছে (আসর) যে ব্যক্তির ঐ সালাত কাযা হয়ে গেল, তার পরিবার-পরিজন ধন-সম্পদ সবই যেন ধ্বংস হয়ে গেল।

হাদীস নং ৩৩৪৬

মুহাম্মদ ইবনে কাসীর রহ………..ইবনে মাসউদ রা. সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, অচিরেই স্বজনপ্রীতি প্রকাশ পাবে এবং এমন সব কর্মকাণ্ড ঘটবে যা তোমরা পছন্দ করতে পারবে না। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ! এমতাবস্থায় আমাদের কী করতে বলেন ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন কর তোমাদের প্রাপ্যের জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ কর।

হাদীস নং ৩৩৪৭

মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রাহীম রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কুরাইশ গোতের এ লোকগুলো জনগণকে ধ্বংস করে দিবে। সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন, তখন আমাদেরকে আপনি কী করতে বলেন ? তিনি বললেন, জনগণ যদি এদের সংশ্রব ত্যাগ করে দিত তবে ভাল্ই হত।

হাদীস নং ৩৩৪৮

ইয়াহইয়া ইবনে মূসা রহ………….হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকজন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন আর আমি তাকে অকল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতাম; এ আশংকায় যেন আমি ঐ সবের মধ্যে নিপতিত না হই। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা জহেলিয়্যাতে অকল্যাণকর পরিস্থিতিতে জীবন যাপন করতাম এরপর আল্লাহ আমাদের এ কল্যাণ দান করেছেন। এ কল্যাণকর অবস্থার পর কোন প্রকার অমঙ্গলের আশংকা আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আছে। আমি আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ঐ অমঙ্গলের পর কোন কল্যাণ আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আছে। তবে তা মন্দ মিশ্রিত। আমি বললাম, যে মন্দ মিশ্রিত কি? তিনি বললেন, এমন একদল লোক যারা আমার আদর্শ ত্যাগ করে অন্যপথে পরিচালিত হবে। তাদের কাজে ভাল-মন্দ সবই থাকবে। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম, এরপর কি আরো অমঙ্গল আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ তখন জাহান্নামের দিকে আহবানকারীদের আগমন ঘটবে। যারা তাদের ডাকে সারা দিবে তাকেই তারা জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! এদের পরিচয় বর্ণনা করুন। তিনি বললেন, তারা আমাদেরই সম্প্রদায়ভূক্ত এবং কথা বলবে আমাদেরই ভাষায়। আমি বললাম, আমি যদি এ অবস্থায় পতিত হই তবে আপনি আমাকে কি করতে আদেশ দেন? তিনি বললেন, মুসলমানদের (বৃহৎ) দল ও তাদের ইমামকে আকড়িয়ে ধরবে। আমি বললাম, যাদ মুসলমানদের এহেন দল ও ইমাম না থাকে? তিনি বলেন, তখন তুমি তাদের সকল দল উপদলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে এবং মৃত্যু না আসা পর্যন্ত বৃক্ষ মূল দাঁতে আকড়িয়ে ধরে থাকবে এবং তোমার দীনকে রক্ষা করবে।

হাদীস নং ৩৩৪৯

মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ………..হুযায়ফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার সঙ্গীগণ কল্যাণ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন আর আমি জানতে চেয়েছি ফিতনা ফাসাদ সম্পর্কে।

হাদীস নং ৩৩৫০

হাকাম ইবনে নাফি রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত এমন দুটি দলের মধ্যে যুদ্ধ না হবে যাদের দাবী হবে এক। অর্থাৎ উভয় পক্ষ নিজেদেরকে সত্য ও ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত বলে দাবী করবে।

হাদীস নং ৩৩৫১

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত দুটি দলের মধ্যে যুদ্ধ না হবে। তাদের মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। তাদের দাবী হবে অভিন্ন। আর কিয়ামত কায়েম হবেনা যে পর্যন্ত প্রায় ত্রিশজন মিথ্যাবাদী দাজ্জালের আর্বিভাব না হবে। এরা সবাই নিজ নিজকে আল্লাহর রাসূল বলে দাবী করবে।

হাদীস নং ৩৩৫২

আবুল ইয়ামান রহ……….আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দরবারে উপস্থিত ছিলাম। তিনি কিছু গনীমতের মাল বণ্টন করছিলেন। তখন বানু তামীম গোত্রের জুলখোয়াইসিরাহ নামে এক ব্যক্তি এসে হাযির হল এবং বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ ! আপনি (বণ্টন) ইনসাফ করুন। তিনি বললেন, তোমার দুর্ভাগ্য ! আমি যদি ইনসাফ না করি, তবে ইনসাফ করবে কে? আমি তো নিষ্ফল ও ক্ষতিগ্রস্থ হব যদি ইনসাফ না করি। উমর রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে অনুমতি দিন আমি এর গর্দান উড়িয়ে দেই। তিনি বললেন, একে যেতে দাও। তার এমন কিছু সঙ্গী সাথী আছে তোমাদের কেউ তাদের সালাতের তুলনায় নিজের সালাত এবং সিয়াম তুচ্ছ বলে মনে করবে। এরা কুরআন পাঠ করে, কিন্তু কুরআন তাদের কণ্ঠনালীর নিম্নদেশে প্রবেশ করে না। তারা দীন থেকে এমনভাবে (দ্রুত) বেরিয়ে যাবে যেমন তীর ধনুক থেকে বেরিয়ে যায়। তীরের অগ্রভাগের লোহা দেখা যাবে কিন্তু (শিকারের) কোন চিহ্ন পাওয়া যাবে না। কাঠের অংশটুকু দেখলে তাতেও কিছু পাওয়া যাবে না। মধ্যবর্তী অংশটুকু দেখলে তাতেও কিছু পাওয়া যাবে না। তার পালক দেখলে তাতেও কোন চিহ্ন পাওয়া যায় না। অথচ তীরটি শিকারী জন্তুর নাড়িভূড়ি ভেদ করে রক্তমাংস অতিক্রম করে বেরিয়ে গেছে। এদের নিদর্শন হল এমন একটি কাল মানুষ যার একটি বাহু মেয়ে লোকের স্তনের ন্যায় অথবা মাংস টুকরার ন্যায় নড়াচড়া করবে। তারা লোকদের মধ্যে বিরোধ কালে আত্মপ্রকাশ করবে। আবু সাঈদ রা. বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট থেকে একথা শুনেছি। আমি এ-ও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আলী ইবনে আবু তালিব রা. এদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। আমিও তার সঙ্গে ছিলাম। তখন আলী রা. ঐ ব্যক্তিকে তালাশ করে বের করতে আদেশ দিলেন। তালাশ করে যখন আনা হল। আমি মনোযোগের সহিত লক্ষ্য করে তার মধ্যে ঐ সব চিহ্নগুলি দেখতে পেলাম, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন।

হাদীস নং ৩৩৫৩

মুহাম্মদ ইবনে কাসীর রহ………….সুয়াইদ ইবনে গাফালা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আলী রা. বলেছেন , আমি যখন তোমাদের নিকট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন হাদীস বর্ণনা করি, তখন আমার এ অবস্থা হয়ে যে তাঁর উপর মিথ্যা আরোপ করার চেয়ে আকাশ থেকে পড়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়া আমার নিকট অধিক পছন্দীয় এবং আমরা পরস্পরে যখন আলোচনা করি তখন কথা হল এই যে, যুদ্ধ ছল-চাতুরী মাত্র। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, শেষ যামানায় একদল তরুণের আবির্ভাব ঘটবে যারা হবে। স্থূলবুদ্ধির অধিকারী । তারা নীতিবাক্যগুলো আওড়াতে থাকবে। তারা ইসলাম থেকে (এমন দ্রুত গতিতে ও চিহ্নহীনভাবে) বেরিয়ে যাবে যেভাবে ধনুক থেকে তীর বেরিয়ে যায়। তাদের ঈমান গলদেশ অতিক্রম করে (অন্তরে প্রবেশ) করবে না। যেখানেই এদের সঙ্গে তোমাদের সাক্ষাত হবে, এদেরকে তোমরা হত্যা করে ফেলবে। এদের হত্যাকারীদের জন্য এই হত্যার প্রতিদান রয়েছে কিয়ামতের দিন।

হাদীস নং ৩৩৫৪

মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ…………খাব্বাব ইবনে আরত রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে (কাফিরদের পক্ষ থেকে যে সব নির্যাতন ভোগ করছিলাম এসবের) অভিযোগ করলাম। তখন তিনি নিজের চাদরকে বালিশ বানিয়ে কাবা শরীফের ছায়ায় বিশ্রাম করছিলেন। আমরা তাকে বললাম, আপনি কি আমাদের জন্য (আল্লাহর নিকট) সাহায্য প্রার্থনা করবেন না ? আপনি কি আমাদের (দুঃখ দুর্দশা লাঘবের) জন্য আল্লাহর নিকট দু’আ করবেন না? তিনি বললেন, তোমাদের পূর্ববর্তী (ঈমানদার) গণের অবস্থা ছিল এই , তাদের জন্য মাটিতে গর্ত খনন করা হত এবং ঐ গর্তে তাকে পুঁতে রেখে করাত দিয়ে তার মস্তক দ্বিখণ্ডিত করা হত। এ (অমানুষিক নির্যাতনও) তাদেরকে দীন থেকে বিচ্যুত করতে পারতনা। লোহার চিরুণী দিয়ে আচড়িয়ে শরীরের হাড় পর্যন্ত মাংস ও শিরা -উপশিরা সব কিছু ছিন্নভিন্ন করে দিত। এ (লোমহর্ষক নির্যাতন) তাদেরকে দীন থেকে বিমুখ করতে পারেনি। আল্লাহর কসম, আল্লাহ এ দীনকে অবশ্যই পূর্ণতা দান করবেন (এবং সর্বত্র নিরাপদ ও শান্তিময় অবস্থা বিরাজ করবে)। তখনকার দিনের একজন উষ্ট্রারোহী সানআ থেকে হাযারামাউত পর্যন্ত ভ্রমণ করবে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকেও ভয় করবে না। অথবা তার মেষপালের জন্য নেকড়ে বাঘের আশংকাও করবে না। কিন্তু তোমরা (ঐ সময়ের অপেক্ষা না করে) তাড়াহুড়া করছ।

হাদীস নং ৩৩৫৫

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ…………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাবিত ইবনে কায়েস রা.-কে (কয়েকদিন) তাঁর মজলিসে অনুপস্থিত পেলেন। তখন এক সাহাবী বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তার সম্পর্কে জানি। তিনি গিয়ে দেখলেন সাবিত রা. তাঁর ঘরে নত মস্তকে (গভীর চিন্তায়মগ্ন অবস্থায়) বসে আছেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হে সাবিত, কি অবস্থা তোমার? তিনি বললেন, অত্যন্ত করুণ। বস্তুত: তার গলার স্বর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গলার স্বর থেকে উঁচু হয়েছিল। কাজেই (কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী) তার সব নেক আমল বরবাদ হয়ে গেছে। সে জাহান্নামীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেছে। ঐ ব্যক্তি ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানালেন সাবিত রা. এমন এমন বলেছে। মূসা ইবনে আনাস রহ. (একজন রাবী) বলেন, ঐ সাহাবী পুনরায় এ মর্মে এক মহাসুসংবাদ নিয়ে হাযির হলেন (সাবিতের খেদমতে) যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তুমি যাও সাবিতকে বল, নিশ্চয়ই তুমি জাহান্নামীদের অন্তর্ভূক্ত নও বরং তুমি জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভূক্ত।

হাদীস নং ৩৩৫৬

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……….বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সাহাবী (উসায়দ ইবনে হুযায়ব) (রাত্রিকালে) সূরা কাহফ তিলাওয়াত করছিলেন। তাঁর বাড়ীতে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। ঘোড়াটি তখন (আতংকিত হয়ে) লাফালাফি করতে লাগল। তখন ঐ সাহাবী শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য আল্লাহর দরবারে দু’আ করলেন। তারপর তিনি দেখতে পেলেন, একখণ্ড মেঘ এসে তাকে ঢেকে ফেলেছে। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে বিষয়টি আলোচনা করলেন। তিনি বললেন, হে অমুক তুমি এভাবে তিলাওয়াত করতে থাকবে। ইহা তো সাকীনা-প্রশান্তি ছিল, যা কুরআন তিলাওয়াতের কারণে নাযিল হয়েছিল।

হাদীস নং ৩৩৫৭

মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ………..বারা ইবন আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আবু বকর রা. আমার পিতার নিকট আমাদের বাড়ীতে আসলেন। তিনি আমার পিতার নিকট থেকে একটি হাওদা ক্রয় করলেন এবং আমার পিতাকে বললেন, তোমার ছেলে বারাকে আমার সাথে হাওদাটি বয়ে নিয়ে যেতে বল। আমি হাওদাটি বহন করে তাঁর তাঁর সাথে চললাম। আমার পিতাও উহার মূল্য গ্রহণের জন্য আমাদের সঙ্গী হলেন। আমার পিতা তাকে বললেন, হে আবু বকর দয়া করে আপনি আমাদেরকে বলুন, আপনারা কি করেছিলেন, যে রাতে (হিজরতের সময়) আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথী ছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। আমরা (সাওর গুহা থেকে বের হয়ে) সারারাত চলে পরদিন দুপুর পর্যন্ত চললাম। যখন রাস্তাঘাট জনশূন্য হয়ে পড়ল, রাস্তায় কোন মানুষের যাতায়াত ছিল না। হঠাৎ একটি লম্বা ও চওড়া পাথর আমাদের নযরে পড়ল, যার পতিত ছায়ায় সূর্যের তাপ প্রবেশ করছিল না। আমরা সেখানে গিয়ে অবতরণ করলাম। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য নিজ হাতে একটি জায়গা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে নিলাম, যাতে সেখানে তিনি ঘুমাতে পারেন। আমি ঐ স্থানে একটি চামড়ার বিছানা পেতে দিলাম এবং বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি শুয়ে পড়ুন। আমি আপনার নিরাপত্তার জন্য পাহারায় নিযুক্ত রইলাম। তিনি শুয়ে পড়লেন। আর আমি চারপাশের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য বেরিয়ে পড়লাম। হঠাৎ দেখতে পেলাম, একজন মেষ রাখাল তার মেষপাল নিয়ে পাথরের দিকে ছুটে আসছে। সেও মদীনার কি মক্কার এক ব্যক্তির নাম বলল, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার মেষপালে কি দুগ্ধবতী মেষ আছে? সে বলল, হ্যাঁ, আছে। আমি বললাম, তুমি কি দোহন করে দিবে? সে বলল, হ্যাঁ। তারপর সে একটি বকরী ধরে নিয়ে এল। আমি বললাম, এর স্তন ধূলা-বালু, পশম ও ময়লা থেকে পরিষ্কার করে নাও। রাবী আবু ইসহাক রহ. বলেন, আমি বারা রা.-কে দেখলাম এক হাত অপর হাতের উপরে রেখে ঝাড়ছেন। তারপর ঐ যুবক একটি কাঠের বাটিতে কিছু দুধ দোহন করল। আমার সাথেও একটি চামড়ার পাত্র ছিল। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অজুর পানি ও পান করার পানি রাখার জন্য নিয়ে ছিলাম। আমি দুধ নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলাম। (তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন) তাকে জাগানো উচিত মনে করলাম না। কিছুক্ষণ পর তিনি জেগে উঠলেন। আমি দুধ নিয়ে হাযির হলাম। আমি দুধের মধ্যে সামান্য পানি ঢেলেছিলাম তাঁতে দুধের নীচ পর্যন্ত ঠাণ্ডা হয়ে গেল। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি দুধ পান করুন। তিনি পান করলেন, আমি তাঁতে বললাম, হ্যাঁ হয়েছে। পুনরায় শুরু হল আমাদের যাত্রা। ততক্ষণে সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। সুরাকা ইবনে মালিক (অশ্বারোহণে) আমাদের পশ্চাদ্ধাবন করছিল। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের অনুধাবনে কে যেন আসছে। তিনি বললেন, চিন্তা করোনা, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ আমাদের সাথে রয়েছেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বিরুদ্ধে দু’আ করলেন। তৎক্ষণাৎ আরোহীসহ ঘোড়া তার পেট পর্যন্ত মাটিতে ধেবে গেল, শক্ত মাটিতে। রাবী যুহায়র এই শব্দটি সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন আমার ধারণা এরূপ শব্দ বলেছিলেন। সুরাকা বললা, আমার বিশ্বাস আপনারা আমার বিরুদ্ধে দু’আ করেছেন। আমার (উদ্ধারের) জন্য আপনারা দু’আ করে দিন। আল্লাহর কসম, আপনাদের অনুসন্ধানকারীদেরকে আমি ফিরিয়ে নিয়ে যাব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্য জন্য দু’আ করলেন। সে রেহাই পেল। ফিরে যাওয়ার পথে যার সাথে তার সাক্ষাত হত, সে বলত (এদিকে গিয়ে পণ্ডশ্রম করো না)। আমি সব দেখে এসেছি। যাকেই পেয়েছে, ফিরিয়ে নিয়েছে। আবু বকর রা. বলেন, সে আমাদের সাথে কৃত অঙ্গীকার পূরণ করেছে।

হাদীস নং ৩৩৫৮

মুআল্লাহ ইবনে আসাদ রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন অসুস্থ একজন বেদুঈনকে দেখতে (তার বাড়ীতে) গেলেন। রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অভ্যাস ছিল যে, পীড়িত ব্যক্তিকে দেখতে গেলে বলতেন, কোন দুশ্চিন্তার কারণ নেই, ইনশাআল্লাহ (পীড়াজনিত দুঃখকষ্টের কারণে) গোনাহ থেকে তুমি পবিত্র হয়ে যাবে। ঐ বেদুঈনকেও তিনি বললেন, চিন্তার কারণ নেই গুনাহ থেকে তুমি পবিত্র হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। বেদুঈন বলল, আপনি বলেছেন, গুনাহ থেকে তুমি পবিত্র হয়ে যাবে। তা তোন নয়। বরং এতো এমন এক জ্বর যা বয়ঃবৃদ্ধের উপর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। তাকে কবরের সাক্ষাৎ ঘটিয়ে ছাড়বে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাই হউক (পরদিন অপরাহ্নে সে মারা গেল)।

হাদীস নং ৩৩৫৯

আবু মামার রহ………..আনাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক খৃষ্টান ব্যক্তি মুসলমান হল এবং সূরা বাকারা ও সূরা আলে-ইমরান শিখে নিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য সে অহী লিপিবদ্ধ করত। তারপর সে পুনরায় খৃষ্টান হয়ে গেল সে বলতে লাগল, আমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে যা লিখে দিতাম তার চেয়ে অধিক কিছু তিনি জানেন না। (নাউজুবিল্লাহ) কিছুদিন পর আল্লাহ তাকে মৃত্যু দিলেন। খৃষ্টানরা তাকে যথারীতি দাফন করল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি তাকে বাইরে নিক্ষেপ করে দিয়েছে। তা দেখে খৃষ্টানরা বলতে লাগল-এটা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীদেরই কাজ। যেহেতু আমাদের এ সাথী তাদের থেকে পালিয়ে এসেছিল। এ জন্যই তারা আমাদের সাথীকে কবর থেকে উঠিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছে। তাই যতদূর সম্ভব গভীর করে কবর খুঁড়ে তাতে তাকে পুনরায় দাফন করল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি তাকে আবার বাইরে ফেলে দিয়েছে। এবারও তারা বলল, এটা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের কাণ্ড। তাদের নিকট থেকে পালিয়ে আসার কারণে তারা আমাদের সাথীকে কবর থেকে উঠিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছে। এবার আরো গভীর করে কবর খনন করে সমাহিত করল। পরদিন ভোরে দেখা গেল কবরের মাটি এবারও তাকে বাইরে নিক্ষেপ করেছে। তখন তারাও বুঝতে পারল, এটা মানুষের কাজ নয়। কজেই তারা শবদেহটি বাইরেই ফেলে রাখল।

হাদীস নং ৩৩৬০

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কিসরা ধ্বংস হবে, তারপর অন্য কোন কিসরার আবির্ভাব হবে না। যখন কায়সার ধ্বংস হবে তখন আর কোন কায়সারের আবির্ভাব হবে না। (তিনি এও বলেছেন) ঐ সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ নিশ্চয়ই এ দুই সাম্রাজ্যের ধন-ভাণ্ডার তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করবে।

হাদীস নং ৩৩৬১

কাবীসা রহ…………..জাবির ইবনে সামুরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিসরা ধ্বংস হবে, তারপর অন্য কোন কিসরার আবির্ভাব হবে না। যখন কায়সার ধ্বংস হবে তখন আর কোন কায়সারের আবির্ভাব হবে না। রাবী উল্লেখ করেন যে, (তিনি এও বলেছেন) নিশ্চয়ই তাদের ধন-ভাণ্ডার তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করা হবে।

হাদীস নং ৩৩৬২

আবুল ইয়ামান রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় মুসায়লামাতুল কাযযাব আসল এবং বলতে বলতে লাগল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি তাঁর পর আমাকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করেন, তাহলে আমি তাঁর অনুসরণ করব। তার স্বজাতির এক বিরাট বাহিনী সঙ্গে নিয়ে সে এসেছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকট আসলেন। আর তাঁর সাথী ছিলেন সাবিত ইবনে কায়েস ইবনে শাম্মাস রা.। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে খেজুরের একটি ডাল ছিল। তিনি সাথী দ্বারা বেষ্টিত মুসায়লামার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং বললেন, তুমি যদি আমার নিকট খেজুরের এই ডালটিও চাও, তবুও আমি তা তোমাকে দিবনা। তোমার সম্বন্ধে আল্লাহর যা ফায়সালা তা তুমি লংঘন করতে পারবেনা। যাদি তুমি কিছু দিন বেচেও থাক তবুও আল্লাহ তোমাকে অবশ্যই ধ্বংস করে দিবেন। নিঃসন্দেহে তুমি ঐ ব্যক্তি যার সম্বন্ধে স্বপ্নে আমাকে সব কিছু দেখান হয়েছে। (ইবনে আব্বাস রা. বলেন) আবু হুরায়রা রা. আমাকে জানিয়েছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (একদিন) আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। স্বপ্নে দেখতে পেলাম আমার দু’হাতে সোনার দুটি বালা শোভা পাচ্ছে। বালা দুটি আমাকে ভাবিয়ে তুলল। স্বপ্নেই আমার নিকট অহী এল, আপনি ফুক দিন। আমি তাই করলাম। বালা দুটি উড়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। আমি স্বপ্নের ব্যাখ্যা এভাবে করলাম, আমার পর দুজন কাযযাব (চরম মিথ্যাবাদী) আবির্ভূত হবে এদের একজন আসওয়অদ আনসী, অপরজন ইয়ামামার বাসিন্দা মুসায়লামাতুল কাযযাব।

হাদীস নং ৩৩৬৩

মুহাম্মদ ইবনে আলা রহ………..আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি স্বপ্নে দেখতে পেলাম, আমি মক্কা থেকে হিজরত করে এমন এক স্থানে যাচ্ছি যেখানে প্রচুর খেজুর গাছ রয়েছে। তখন আমার ধারণা হল, এ স্থানটি ইয়ামামা অথবা হাযর হবে। পরে বুঝতে পেলাম, স্থানটি মদীনা ছিল। যার পূর্বনাম ইয়াসরিব। স্বপ্নে আমি আরো দেখতে পেলাম যে আমি একটি তরবারী হাতে নিয়ে নাড়াচড়া করছি। হঠাৎ তার অগ্রভাগ ভেঙ্গে গেল। উহুদ যুদ্ধে মুসলমানদের যে বিপর্যয় ঘটেছিল এটা তা-ই। তারপর দ্বিতীয় বার তরবারীটি হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করলাম তখন তরবারীটি পূর্বাবস্থার চেয়েও অধিক উত্তম হয়ে গেল। এর তাৎপর্য হল যে, আল্লাহ মুসলমানগণকে বিজয়ী ও একত্রিত করে দিবেন। আমি স্বপ্নে আরো দেখতে পেলাম, একটি গরু (যা যাবই করা হচ্ছে) এবং শুনতে পেলাম আল্লাহ যা করেন সবই ভাল। এটাই হল উহুদ যুদ্ধে মুসলমানদের শাহাদত বরণ। আর খায়ের হল—আল্লাহর তরফ থেকে আগত ঐ সকল কল্যাণই কল্যাণ এবং সত্যবাদিতার পুরস্কার যা আল্লাহ আমাদেরকে বদর যুদ্ধের পর দান করেছেন।

হাদীস নং ৩৩৬৪

আব নুআইম রহ………আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চলার ভঙ্গিতে চলতে চলতে ফাতিমা রা. আমাদের নিকট আগমন করলেন। তাকে দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার স্নেহের কন্যাকে অনেক অনেক মোবারকবাদ। তারপর তাকে তার ডানপাশে অথবা বামপাশে বসালেন এবং তাঁর সাথে চুপিচুপি (কি যেন) কথা বললেন। তখন তিনি কেঁদে দিলেন। আমি তাকে বললাম, কাঁদছেন কেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় চুপিচুপি তার সাথে কথা বললেন। তিনি এবার হেসে উঠলেন। আমি বললাম, আজকের মত দুঃখ ও বেদনার সাথে সাথে আনন্দ ও খুশী আমি আর কখনো দেখিনি। আমি তাকে কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কি বলেছিলেন? তিনি উত্তর দিলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গোপন কথাকে প্রকাশ করব না। পরিশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকাল হয়ে যাওয়ার পর আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি কি বলেছিলেন? তিনি বললেন, তিনি প্রথম বার আমাকে বলেছিলেন, জিবরাঈল আ. প্রতি বছর একবার আমার সঙ্গে পরস্পর কুরআন পাঠ করতেন, এ বছর দু’বার এরূপ পড়ে শুনিয়েছেন। আমার মনে হয় আমার বিদায় কাল ঘনিয়ে এসেছে এবং এরপর আমার পরিবারের মধ্যে তুমিই সর্বপ্রথম আমার সাথে মিলিত হবে। তা শুনে আমি কেঁদে দিলাম। দ্বিতীয়বার বলেছিলেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, জান্নাতবাসী মহিলাদের অথবা মুমিন মহিলাদের তুমি সরদার হবে। এ কথা শুনে আমি হেসেছিলাম।

হাদীস নং ৩৩৬৫

ইয়াহইয়া ইবনে কাযাআ রহ………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তিম রোগকালে তাঁর কন্যা ফাতিমা রা.-কে ডেকে পাঠালেন। এরপর চুপিচুপি কি যেন বললেন। ফাতিমা রা. তা শুনে কেঁদে ফেললেন। তারপর আবার ডেকে তাকে চুপিচুপি আরো কি যেন বললেন। এতে ফাতিমা রা. হেসে উঠলেন। আয়েশা রা. বলেন, আমি হাসি-কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, (প্রথম বার) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে চুপে চুপে বলেছিলেন, যে রোগে তিনি আক্রান্ত হয়েছেন এ রোগেই তাঁর ওফাত হবে ; তাই আমি কেঁদে দিয়েছিলাম।এরপর তিনি চুপিচুপি আমাকে বলেছিলেন, তার পরিবার-পরিজনের মধ্যে আমিই সর্বপ্রথম তাঁর সাথে মিলিত হব, এতে আমি হেসে দিয়েছিলাম।

হাদীস নং ৩৩৬৬

মুহাম্মদ ইবনে আরআরা রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর ইবনে খাত্তাব রা. ইবনে আব্বাস রা.-কে বিশেষ মর্যাদা দান করতেন। একদিন আবদুর রাহমান ইবনে আউফ রা. তাকে বললেন, তাঁর মত ছেলে তো আমাদেরও রয়েছে। এতে তিনি বললেন, এর কারণ তো আপনি নিজেও জানেন। তখন উমর রা. ইবনে আব্বাস রা.-কে ডেকে إذ جاء نصر الله والفتح আয়াতের ব্যাখ্যা জিজ্ঞাসা করেন। ইবনে আব্বাস রা. উত্তর দিলেন, এ আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর ওফাত নিকটবর্তী বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। উমর রা. বললেন, আমিও এ আয়াতের এ ব্যাখ্যাই জানি, যা তুমি জান।

হাদীস নং ৩৩৬৭

আবু নুআইম রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তিম রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর (একদিন বৃহস্পতিবার) একটি চাদর পরিধান করে এবং মাথায় একটি কাল কাপড় দিয়ে পট্রি বেঁধে ঘরে থেকে বের হয়ে সোজা মিম্বরের উপর গিয়ে বসলেন। আল্লাহ তা’আলার হামদ ও সানা পাঠ করার পর বললেন, আম্মা বাদ। লোক সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকবে, আর আনসারদের সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকবে। ক্রমান্বয়ে তাদের অবস্থা লোকের মাঝে এ রকম দাঁড়াবে যেমন খাদ্যের মধ্যে লবণ। তখন তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি মানুষকে উপকার বা ক্ষতি করার মত ক্ষমতা লাভ করবে তখন সে যেন আনসারদের ভাল কার্যাবলী কবূল করে এবং তাদের ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখে। এটাই ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সর্বশেষ মজলিস।

হাদীস নং ৩৩৬৮

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….আবু বাকরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন হাসান রা.-কে নিয়ে বেরিয়ে এলেন এবং তাকে সহ মিম্বরে আরোহণ করলেন। তারপর বললেন, এ ছেলেটি (নাতি) সাইয়্যেদ । নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা এর মাধ্যমে বিবদমান দু’দল মুসলমানদের আপোস করিয়ে দিবেন।

হাদীস নং ৩৩৬৯

সুলাইমান ইবনে হারব রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাফর এবং যায়েদ রা. এর শাহাদত লাভের সংবাদ (আমাদেরকে) জানিয়ে দিয়েছিলেন, (যুদ্ধক্ষেত্র থেকে) তাদের উভয়ের শাহাদত লাভের সংবাদ আসার পূর্বেই। তখন তাঁর চক্ষু যুগল অশ্রু বর্ষণ করছিল।

হাদীস নং ৩৩৭০

আমর ইবনে আব্বাস রহ……….জাবির রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন , রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন? তোমাদের নিকট আনমাত (গালিচার কার্পেট) আছে কি? আমি বললাম, আমরা তা পা কোথায়? তিনি বললেন, অচিরেই তোমরা আনমাত লাভ করবে। (আমর স্ত্রী যখন আমার শয্যায় তা বিছিয়ে দেয়) তখন আমি তাকে বলি, আমার বিছানা থেকে এটা সরিয়ে নাও। তখন সে বলল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা কি তা বলেন নাই যে, অচিরেই তোমরা আনমাত পেয়ে যাবে? তখন আমি তা (বিছানো অবস্থায়) থাকতে দেই।

হাদীস নং ৩৩৭১

আহমদ ইবনে ইসহাক রহ………আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাদ ইবনে মুআয রা. ওমরা আদায় করার জন্য (মক্কা) গমন করলেন এবং সাফওয়ানের পিতা উমাইয়া ইবনে খালাফ এর বাড়ীতে তিনি অতিথি হলেন। উমাইয়াও সিরিয়ায় গমনকালে (মদীনায়) সাদ রা.-এর বাড়িতে অবস্থান করত। উমাইয়া সাদ রা.-কে বলর, অপেক্ষা করুন, যখন দুপুর হবে এবং যখন চলাফেরা কমে যাবে, তখন আমি যেয়ে তাওয়াফ করে নিবেন। সাদ রা. তাওয়াফ করছিলেন। এমতাবস্থায় আবু জেহেল এসে হাযির হল। সাদ রা.-কে দেখে জিজ্ঞাসা করল, এ ব্যক্তি কে? যে কাবার তাওয়াফ করছে? সাদ রা. বললেন, আমি সাদ। আবু জেহেল বলল, তুমি নির্বিঘ্নে কাবার তাওয়াফ করছ? অথচ তোমরাই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাথীদেরকে আশ্রয় দিয়েছ? সাদ রা. বললেন, হ্যাঁ। এভাবে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে গেল। তখন উমাইয়া সাদ রা.-কে বলল, আবুল হাকামের সাথে উচ্চস্বরে কথা না, কেননা সে মক্কাবাসীদের নেতা। এরপর সাদ রা. বললেন, আল্লাহর কসম! তুমি যদি আমাকে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করতে বাধা প্রদান কর, তবে আমিও তোমার সিরিয়ার সাথে ব্যবসা বাণিজ্যের রাস্তা বন্ধ করে দিব। উমাইয়া সাদ রা.-কে তখন বলতে লাগল তোমার স্বর উচু করো না এবং সে তাকে বিরত করতে চেষ্টা করতে লাগল। তখন সাদ রা. ক্রোধান্বিত হয়ে বললেন, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তারা তোমাকে হত্যা করবে। উমাইয়া বলল, আমাকেই ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। উমাইয়া বলল, আল্লাহর কসম মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও মিথ্যা কথা বলেন না। এরপর উমাইয়া তার স্ত্রীর কাছে ফিরে এসে বলল, তুমি কি জান, আমার ইয়াসরিবী ভাই (মদীনা) আমাকে কি বলেছে? স্ত্রী জিজ্ঞাসা করল কি বলছে? উমাইয়া বলল, সে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো মিথ্যা বলেন না। যখন মক্কার মুশরিকরা বদরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল এবং আহবানকারী আহবান চালাল। তখন উমাইয়ার স্ত্রী তাকে স্মরণ করিয়ে দিল, তোমার ইয়াসরিবী ভাই তোমাকে যে কথা বলছিল সে কথা কি তোমার স্মরণ নেই? তখন উমাইয়া (বদরের যুদ্ধে) না যাওয়াই সিদ্ধান্ত নিল। আবু জেহেল তাকে বলল, তুমি এ অঞ্চলের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা। (তুমি যদি না যাও তবে কেউ-ই যাবে না) আমাদের সাথে দুই একদিনের পথ চল। (এরপর না হয় ফিরে আসবে)। উমাইয়া তাদের সাথে চলল। আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছায় (বদর প্রান্তে মুসলমানদের হাতে) সে নিহত হল।

হাদীস নং ৩৩৭২

আবদুর রহমান ইবনে শায়বা রহ……….আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, একদা লোকজনকে একটি মাঠে সমবেত দেখতে পেলাম। তখন আবু বকর রা. উঠে দাঁড়ালেন এবং এক অথবা দুই বালতি পানি উঠালেন। পানি উঠাতে তিনি দুর্বলতা বোধ করছিলেন। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন। তারপর উমর রা. বালতিটি হাতে নিলেন। বালতিটি তখন বৃহদাকার হয়ে গেল। আমি মানুষের মধ্যে পানি উঠাতে উমরের মত দক্ষ ও শক্তিশালী নিয়ে গেল। হাম্মাম রহ. (একজন রাবী) বলেন, আমি আবু হুরায়রা. রা.-কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করতে শুনেছি আবু বকর দু’বালতি পানি উঠালেন।

হাদীস নং ৩৩৭৩

আব্বাস ইবনে ওয়ালীদ রহ……..আবু উসমান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে জানানো হল যে, একবার জিবরাঈল আ. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলেন। তখন উম্মে সালামা রা. তাঁর নিকট ছিলেন। তিনি এসে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করলেন। তারপর উঠে গেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে সালামাকে জিজ্ঞাসা করলেন, লোকটিকে চিনতে পেরেছ কি ? তিনি বললেন, এতো দেহইয়া। উম্মে সালামা রা. বলেন, জিবরাঈল আ.-এর আগমনের কথা বলতে শুনলাম। (সুলাইমান রা. বলেন) আমি আবু উসমানকে জিজ্ঞাসা করলাম এ হাদীসটি আপনি কার কাছে শুনেছেন? তিনি বললেন, উসামা ইবনে যায়েদ রা.-নিকট শুনেছি।

হাদীস নং ৩৩৭৪

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, ইয়াহুদীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে এসে বলল, তাদের একজন পুরুষ ও একজন মহিলা ব্যভিচার করেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করা সম্পর্কে তাওরাতে কি বিধান পেয়েছে? তারা বলল, আমরা এদেরকে লাঞ্ছিত করব এবং তাদের বেত্রাঘাত করা হবে। আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা. বললেন, তোমরা মিথ্যা বলছ। তাওরাতে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যার বিধান রয়েছে। তারা তাওরাত নিয়ে এসে বাহির করল এবং প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করা সংক্রান্ত আয়াতের উপর হাত রেখে তার পূর্বে ও পরের আয়াতগুলি পাঠ করল। আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রহ. বললেন, তোমার হাত সরাও। সে হাত সরাল। তখন দেখা গেল তথায় প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করার বিধান রয়েছে। তখন ইয়াহুদীরা বলল, হে মুহাম্মদ! তিনি সত্যই বলছেন। তাওরাতে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যার বিধানই রয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রস্তর নিক্ষেপে দু’জনকে হত্যা করার নির্দেশ দিলেন। আবদুল্লাহ রা. বলেন, আমি (প্রস্তর নিক্ষপকালে) ঐ পুরুষটি মেয়েটির দিকে ঝুঁকে পড়তে দেখেছি। সে মেয়েটিকে প্রস্তরের আঘাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছিল।

হাদীস নং ৩৩৭৫

সাদাকা ইবনে ফাযল রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সাক্ষী থাক।

হাদীস নং ৩৩৭৬

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ও খলীফা রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, মক্কাবাসী কাফিররা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট মুজিযা দেখানোর জন্য দাবী জানালে তিনি তাদেরকে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করে দেখালেন।

হাদীস নং ৩৩৭৭

খালাফ ইবনে খালিদ আল-কুরায়শী রহ…….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল।

হাদীস নং ৩৩৭৮

মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ………..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দু’জন সাহাবী (আব্বাদ ইবনে বিশর ও উসাইদ ইবনে হুযাইর রা.)অন্ধকার রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে হতে বের হলেন, তখন তাদের সাথে দুটি বাতির ন্যায় কিছু তাদের সম্মুখভাগ আলোকিত করে চলল। যখন তারা পৃথক হয়ে গেলেন তখন প্রত্যেকের সাথে এক একটি বাতি চলতে লাগল। অবশেষে তাঁরা নিজ নিজ বাড়ীতে পৌছে গেলেন।

হাদীস নং ৩৩৭৯

আবদুল্লাহ ইবনে আবুল আসওয়াদ রহ………..মুগিরা ইবনে শুবা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার উম্মতের একটি দল সর্বদা বিজয়ী থাকবে। এমন কি কিয়ামত আসবে তখনও তারা বিজয়ী থাকবে।

হাদীস নং ৩৩৮০

হুমাইদী রহ……….মুআবিয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আমার উম্মতের একটি দল সর্বদা আল্লাহর দীনের উপর অটল থাকবে। তাদেরকে যারা সাহায্য না করবে অথবা তাদের বিরোধীতা করবে, তারা তাদের কোন প্রকার প্রকার ক্ষতি করতে পারবে না। এমনকি কিয়ামত আসা পর্যন্ত তাঁরা তাদের অবস্থার উপর মজবুত থাকবে। উমাইর ইবনে হানী রহ. মালিক ইবনে ইউখামিরের রহ. বরাত দিয়ে বলেন, মুআয রা. বলেছেন, ঐ দলটি সিরিয়ার অবস্থান করবে। মুআবিয়া রহ. বলেন, মালিক রহ.-এর ধারণা যে ঐ দলটি সিরিয়ায় অবস্থান করবে বলে মুআয রা. বলেছেন।

হাদীস নং ৩৩৮১

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….উরওয়া বারিকী রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বকরী ক্রয় করে দেয়ার জন্য তাকে একটি দিনার দিলেন। তিনি ঐ দীনার দিয়ে দুটি বকরী ক্রয় করলেন। তারপর এক দীনার মূল্যে একটি বকরী বিক্রি করে দিলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে একটি বকরী ও একটি দীনার নিয়ে হাযির হলেন। তা দেখে তিনি তার ব্যবসা বাণিজ্যে বরকত হওয়ার জন্য দু’আ করে দিলেন। এরপর তার অবস্থা এমন হল যে, ব্যবসার জন্য যদি মাটিও তিনি খরীদ করতেন তাতেও তিনি লাভবান হতেন। সুফিয়ান রহ. শাবীব রহ. বলেন, আমি উরওয়া রা.-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ঘোড়ার কপালের কেশগুচ্ছ বরকত ও কল্যাণ নিহিত রয়েছে কিয়ামত পর্যন্ত। রাবী বলেন, আমি তার গৃহে সত্তরটা ঘোড়া দেখেছি। সুফিয়ান রহ. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য যে বকরীটি ক্রয় করা হয়েছিল, তা ছিল কুরবানীর উদ্দেশ্যে।

হাদীস নং ৩৩৮২

মুসাদ্দাদ রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ঘোড়ার কপালের কেশগুচ্ছে কিয়ামত পর্যন্ত কল্যাণ ও বরকত নিহিত রয়েছে।

হাদীস নং ৩৩৮৩

কায়স ইবনে হাফস রহ………..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ঘোড়ার কপালে কল্যাণ ও বরকত নিহিত রয়েছে।

হাদীস নং ৩৩৮৪

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঘোড়া তিন প্রকার। (ঘোড়া পালন) একজনের জন্য পূণ্য, আর একজনের জন্য (দারিদ্র্য ঢেকে রাখার) আবরণ ও অন্য আর একজনের জন্য পাপের কারণ। সে ব্যক্তির জন্য পূণ্য যে, আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদ করার উদ্দেশ্যে) ঘোড়াকে সদা প্রস্তুত রাখে এবং সে ব্যক্তি যখন লম্বা দড়ি দিয়ে ঘোড়াটি কোন চারণভূমি বা বাগানে বেঁধে রাখে তখন ঐ লম্বা দড়ির মধ্যে চারণভূমি অথবা বাগানের যে অংশ পড়বে তত পরিমাণ সাওয়াব সে পাবে। যদি ঘোড়াটি দড়ি ছিড়ে ফেলে এবং দুই একটি টিলা পার হয়ে কোথাও চলে যায় তার পরে তার লেদাগুলিও নেকী বলে গণ্য হবে। যদি কোন নদী-নালায় গিয়ে পানি পান করে, মালিক যদিও পানি পান করানোর ইচ্ছা করে নাই তাও তার নেক আমলে গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি নিজের স্বচ্ছলতা দারিদ্র্যের গ্লানি ও পরমুখাপেক্ষিতা থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য ঘোড়া পালন করে এবং তার গর্দান ও পিঠে আল্লাহর যে হক রয়েছে তা ভুলে না যায়। তবে এই ঘোড়া তার জন্য আযাব থেকে আবরণ স্বরূপ। অপর এক ব্যক্তি যে অহংকার, লোক দেখানো এবং আহলে ইসলামের সাথে শত্রু তার কারণে ঘোড়া লালন-পালন করে এ ঘোড়া তার জন্য পাপের বোঝা হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে গাধা (পালন) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি বললেন, এ সম্বন্ধে নির্দিষ্ট কোন আয়াত আমার নিকট অবতীর্ণ হয়নি। তবে ব্যাপক অর্থবোধক অনুপম আয়াতটি আমার নিকট নাযিল হয়েছে : যে ব্যক্তি অণু পরিমাণ নেক আমল করবে সে তার প্রতিফল অবশ্যই দেখতে পাবে। আর যে ব্যক্তি অণূ পরিমাণ মন্দ কাজ করবে সেও তার প্রতিফল দেখতে পাবে।(৯৯: ৭৮)।

হাদীস নং ৩৩৮৫

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব ভোরে খায়বারে পৌঁছলেন। তখন খায়বারবাসী কোদাল নিয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছিল। তাকে দেখে তারা বলতে লাগল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরা সৈন্যবাহিনী নিয়ে এসে পড়েছে। (এ বলে) তারা দৌড়াদৌড়ি করে তাদের সুরক্ষিত কিল্লায় ঢুকে পড়ল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’হাত উপরে উঠিয়ে বললেন, আল্লাহু আকবার খায়বার ধ্বংস হোক, আমরা যখন কোন জাতির (বিরুদ্দে অভিযান চালিয়ে) তাদের আঙ্গিনায় অবতরণ করি তখন এসব আতংকগস্থ লোকদের প্রভাতটি অত্যন্ত অশুভ হয়। আবু আবদুল্লাহ (বুখারী রহ.) বলেন, “ফারাআ ইয়াদাইহি” শব্দটি বর্জন করুন। কেননা আমার ধারণা যে, এ শব্দটি বিশুদ্ধ বর্ণনায় পাওয়া যায় না। যদি পাওয়াও যায় তবে তা নিশ্চয়ই অপ্রসিদ্ধ হবে।

হাদীস নং ৩৩৮৬

ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বললেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার থেকে অনেক হাদীস আমি শুনেছি, তবে তা আমি ভুলে যাই। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার চাদরটি বিছাও। আমি চাদরটি বিছিয়ে দিলাম। তিনি তার হাত দিয়ে চাদরের মধ্যে কি যেন রাখলেন এবং বললেন, চাদরটি চেপে ধর। আমি (বুকের সাথে) চেপে ধরলাম, তারপর আমি আর কোন হাদীস ভুলি নাই।

 

সাহাবাগণের ফযীলত অধ্যায় (৩৩৮৭-৩৫০৪)

হাদীস নং ৩৩৮৭

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জনগণের উপর এমন এক সময় আসবে যখন তাদের বিরাট সৈন্যবাহিনী জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হবে। তখন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি যিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহচর্য লাভ করেছেন? (অর্থাৎ সাহাবী) তাঁরা বললেন, হ্যাঁ আছেন। তখন (ঐ সাহাবীর বরকতে) তাদেরকে জয়ী করা হবে। তারপর জনগণের উপর পুনরায় এমন এক সময় আসবে যখন তাদের বিরাট বাহিনী যুদ্ধে লিপ্ত থাকবে। তখন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহচর্য লাভে ধন্য কিংবা কোন ব্যক্তির (সাহাবীর) সাহচার্য লাভ করেছেন? (অর্থাৎ তাবেয়ী) তখন তারা বলবেন, হ্যাঁ, আছেন। তখন (ঐ তাবেয়ীর বরকতে) তাদেরকে জয়ী করা হবে। এরপর লোকদের উপর এমন এক সময় আসবে তাদের বিরাট বাহিনী জিহাদে অংশগ্রহণ করবে। তখন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি, যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণের সাহচার্য লাভকারী কোন ব্যক্তির (তাবেয়ীর) সাহচার্য লাভ করেছেন? (অর্থাৎ তাবে-তাবেয়ী) বলা হবে আছেন। তখন তাদেরকে (ঐ তাবে-তাবেয়ীর বরকতে) জয়ী করা হবে।

হাদীস নং ৩৩৮৮

ইসহাক ইবনে রাহওয়াইহ রহ…………ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ যুগ আমার (সাহাবীগণের) যুগ। এরপর তৎ-সংলগ্ন যুগ (তাবেয়ীদের যুগ)।এরপর তৎসংলগ্ন (তাবে-তাবেয়ীদের যুগ)। ইমরান রা. বলেন, তিনি তাঁর যুগের পর দুযুগ অথবা তিন যুগ বলছেন তা আমার স্মরণ নেই। তারপর (তোমাদের যুগের পর) এমন লোকের আগমন ঘটবে যারা সাক্ষ্য প্রদানে আগ্রহী হবে অথচ তাদের নিকট সাক্ষ্য চাওয়া হবে না। বিশ্বাস ভঙ্গের কারণে তাদেরকে কেউ বিশ্বাস করবে না। তারা মান্নত করবে কিন্তু তা পূর্ণ করবে না। পার্থিব ভোগ বিলাসের কারণে তাদের মাঝে চর্বিযুক্ত স্থলদেহ প্রকাশ পাবে।

হাদীস নং ৩৩৮৯

মুহাম্মদ ইবনে কাসীর রহ……….আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার উম্মতের সর্বোত্তম মানুষ আমার যুগের মানুষ (সাহাবীগণ)। এরপর তৎসংলগ্ন যুগ। তারপর তৎসংলগ্ন যুগ। তারপর এমন লোকদের আগমন হবে যাদের কেউ কেউ সাক্ষ্য প্রদানের পূর্বে কসম এবং কসমের পূর্বে সাক্ষ্য প্রদান করবে। (মিথ্যাকে প্রমাণিত করার জন্য সাক্ষ্য, হলফ ইত্যাদি নির্দ্বিধায় করতে থাকবে) ইবরাহীম (নাখয়ী; রাবী) বলেন, ছোট বেলায় আমাদের মুরুব্বীগণ আল্লাহর নামে কসম করে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য এবং ওয়াদা-অঙ্গীকার করার কারণে আমাদেরকে মারধর করতেন।

হাদীস নং ৩৩৯০

আবদুল্লাহ ইবনে রাজা রহ…………বারা (ইবনে আযিব) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু বকর রা. আযিব রা.-এর নিকট থেকে তের দিরহাম মূল্যের একটি হাওদা ক্রয় করলেন। আবু বকর রা. আযিবকে বললেন, তোমার ছেলে বারাকে হাওদাটি আমার কাছে পৌঁছে দিতে বল। আযিব রা. বললেন, আমি বারাকে বলব না যতক্ষণ আপনি আমাদেরকে (হিজরতের ঘটনা) সবিস্তার বর্ণনা করে শুনাবেন যে আপনি ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি করছিলেন যখন আপনারা (হিজরতের উদ্দেশ্যে) মক্কা থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন? আর মক্কার মুশরীকগণ আপনাদের পিছু ধাওয়া করেছিল। আবু বকর রা. বললেন, আমরা মক্কা থেকে বেরিয়ে সারারাত এবং পরের দিন দুপুর পর্যন্ত অবিরাম চললাম। যখন ঠিক দুপুর হয়ে গেল, এবং উত্তাপ তীব্রতর হল আমি চারদিকে চেয়ে দেখলাম কোথাও কোন ছায়া দেখা যায় কিনা, যেন আমরা সেখানে বিশ্রাম নিতে পারি। তখন একটি বৃহদাকার পাথর নযরে পড়ল। এই পাথরটির পাশে কিছু ছায়াও আছে। আমি সেখানে আসলাম এবং ঐ ছায়াবিশিষ্ট স্থানটি সমতল করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য বিছানা করে দিলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর নবী, আপনি এখানে শুয়ে পড়ুন, তিনি শুয়ে পড়লেন। আমি চতুর্দিকের‌ অবস্থা পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লাম, আমাদের তালাশে কেউ আসছে কিনা? ঐ সময় আমি দেখতে পেলাম, একজন মেষ রাখাল তার ভেড়া ছাগল হাঁকিয়ে ঐ পাথরের দিকে আসছে। সেও আমাদের মত ছায়া তালাশ করছে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে যুবক, তুমি কার রাখাল? সে একজন কুরাঈশের নাম বলল, আমি তাকে চিনতে পারলাম। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার বকরীর পালে দুগ্ধবতী বকরী আছে কি? সে বলল, হ্যাঁ, আছে। আমি বললাম, তুমি কি আমাদেরকে দুধ দোহন করে দিবে? সে বলল, হ্যাঁ, দিব। আমি তাকে তা দিতে বললাম তৎক্ষণাৎ সে বকরীর পাল থেকে একটি বকরী ধরে নিয়ে এল। এবং পিছনের পা দুটি বেঁধে নিল। আমি তাকে বললাম, বকরীর স্তন দুটি ঝেড়ে মুছে ধূলাবালি থেকে পরিষ্কার করে নেও এবং তোমার হাত দুটি পরিষ্কার কর। তিনি এক হাত অন্য হাতের উপর মেরে (পরিষ্কারের পদ্ধতিটিও) দেখালেন। এরপর সে আমাদিগকে পাত্রভরে দুধ এনে দিল। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য এমন একটি চামড়ার পাত্র সাথে রেখে ছিলাম যার মুখ কাপড় দ্বারা বাঁধা ছিল। আমি দুধের মধ্যে সামান্য পানি মিশিয়ে দিলাম যেন দুধের নিম্নভাগও ঠান্ডা হয়ে যায়। এরপর আমি দুধ নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে হাযির হয়ে দেখলাম তিনি জেগেছেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি দুধ পান করুন। তিনি দুধ পান করলেন; আমি খুশী হলাম। তারপর আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের রওয়ানা হয়ে যাওয়ার সময় হয়েছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, হয়েছে। আমরা রওয়ানা হয়ে পড়লাম। মক্কাবাসী মুশরিকরা আমাদের অনুসন্ধানে ছুটাছুটি করছে। কিন্তু সুরাকা ইবনে মালিক ইবনে জশাম ব্যতীত আমাদের সন্ধান তাদের অন্য কেউ পায়নি। সে ঘোড়ায় চড়ে আসছিল। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অনুসন্ধানকারী আমাদের নিকটবর্তী। তিনি বললেন, চিন্তা করনা, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ আমাদের সাথে রয়েছেন।

হাদীস নং ৩৩৯১

মুহাম্মদ ইবনে সিনান রহ………..আবু বকর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যখন (সাওর) গুহায় আত্মগোপন করেছিলাম। তখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, যদি কাফেরগণ তাদের পায়ের নীচের দিকে দৃষ্টিপাত করে তবে আমাদেরকে দেখে ফেলবে। তিনি বললেন, হে আবু বকর ! ঐ দুই ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার কি ধারণা স্বয়ং আল্লাহ যাদের তৃতীয় জন।

হাদীস নং ৩৩৯২

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সাহাবীদের উদ্দেশ্যে খুতবা প্রদানকালে বললেন, আল্লাহ তাঁর এক প্রিয় বান্দাকে পার্থিব ভোগ বিলাস এবং তাঁর নিকট রক্ষিত নিয়ামতসমূহ এ দুয়ের মধ্যে যে কোন একটি গ্রহণ করার ইখতিয়ার দান করেছেন এবং ঐ বান্দা আল্লাহর নিকট রক্ষিত নিয়ামতসমূহ গ্রহণ করেছে। রাবী বলেন তখন আবু বকর রা. কাঁদতে লাগলেন। তাঁর কান্না দেখে আমরা আশ্চর্যান্বিত হলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বান্দার খবর দিচ্ছেন যাকে এভাবে ইখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। (তাতে কান্নার কি কারণ থাকতে পারে?) কিন্তু পরে আমরা বুঝতে পারলাম, ঐ বান্দা স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন এবং আবু বকর রা. আমাদের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি তার ধন-সম্পদ দিয়ে, তার সাহচার্য দিয়ে আমার উপর সর্বাধিক ইহসান করেছে সে ব্যক্তি হল আবু বকর রা.। আমি যদি আমার রব ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধু রূপে গ্রহণ করতাম, তবে অবশ্যই আবু বকরকে করতাম। তবে তার সাথে আমার দীনি ভ্রাতৃত্ব, আন্তরিক মুহাব্বত রয়েছে। মসজিদের দিকে আবু বকরের দরজা ব্যতীত অন্য কোন দরজা খোলা রাখা যাবে না।

হাদীস নং ৩৩৯৩

আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় সাহাবীগণের পরস্পরের মধ্যে মর্যাদা নিরূপণ করতাম। আমরা সর্বাপেক্ষা মর্যাদা দিতাম আবু বকর রা.-কে তারপর উমর ইবনে খাত্তাব রা.-কে তারপর উসমান ইবনে ইবনে আফফান রা.-কে।

হাদীস নং ৩৩৯৪

মুসলিম ইবনে ইবরাহীম রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি আমার উম্মতের কাউকে যদি অন্তরঙ্গ বন্ধু রূপে গ্রহণ করতাম, তবে আবু বকরকেই গ্রহণ করতাম। তবে তিনি আমার (দীনি) ভাই ও সাহাবী।

হাদীস নং ৩৩৯৫

মুআল্লা ইবনে আসাদ ও মূসা ইবনে সাঈদ রহ………আইয়্যূব রহ. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি কাউকে যদি অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম, তবে তাকেই (আবু বকরকেই) গ্রহণ করতাম। কিন্তু ইসলামী ভ্রাতৃত্বই সর্বোত্তম। কুতাইবা রহ……….আইয়্যূব থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন।

হাদীস নং ৩৩৯৬

সুলাইমান ইবনে হারব রহ………আবদুল্লাহ ইবনে আবু মুলাইকা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কুফাবাসীগণ দাদার (মিরাস) সম্পর্কে জানতে চেয়ে ইবনে যুবাইরের নিকট পত্র পাঠালেন, তিনি বললেন, ঐ মহান ব্যক্তি যার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এ উম্মতের কাউকে যদি অন্তরঙ্গ বন্ধু রূপে গ্রহণ করতাম, তবে তাকেই করতাম। (অর্থাৎ আবু বকর রা.) তিনি দাদাকে মিরাসের ক্ষেত্রে পিতার সমপর্যায়ভুক্ত করেছেন।

হাদীস নং ৩৩৯৭

হুমাইদী ও মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ রহ………যুবাইর ইবনে মুতঈম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে এল। (আলোচনা শেষে যাওয়ার সময়) তিনি তাকে আবার আসার জন্য বললেন। মহিলা বলল, আমি এসে যদি আপনাকে না পাই তবে কি করব? একথা দ্বারা মহিলাটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাতের প্রতি ইঙ্গিত করেছিল। তিনি বললেন, যদি আমাকে না পাও তবে আবু বকরের নিকট আসবে।

হাদীস নং ৩৩৯৮

আহমদ ইবনে আবু তৈয়্যেব রহ…………আম্মার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এমন অবস্থায় দেখেছি যে তাঁর সাথে মাত্র পাঁচজন গোলাম, (বিলাল, যায়েদ ইবনে হারিসা, আমির ইবনে ফুহাইরা, আবু ফুকীহা ও আম্মারের পিতা ইয়াসির) দুজন মহিলা (খাদীজা ও সুমাইয়া) এবং আবু বকর রা. ব্যতীত অন্য কেউ ছিল না।

হাদীস নং ৩৩৯৯

হিশাম ইবনে আম্মার রহ……….আবু দারদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় আবু বকর রা. পরিহিত কাপড়ের একপাশ এমনভাবে ধরে রেখে আসলেন যে তার উভয় হাটু বেরিয়ে পড়ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের এ সাথী এইমাত্র কারো সাথে ঝগড়া করে আসছে। (এমন সময় আবু বকর রা. মজলিসে উপস্থিত হয়ে) তিনি সালাম করলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার এবং উমর ইবনে খাত্তাবের মাঝে একটি ক্ষমা চেয়েছি। কিন্তু তিনি ক্ষমা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এখন আম আপনার খেদমতে হাযির হয়েছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন, হে আবু বকর রা.। একথাটি তিনি তিনবার বললেন। এরপর উমর রা. লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে আবু বকর রা.-এর বাড়ীতে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, আবু বকর কি বাড়ীতে আছেন? তারা বলল, না। তখন উমর রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে চলে আসলেন। (তাকে দেখে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। আবু বকর রা. ভীত হয়ে নতজানু হয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমিই প্রথম অন্যায় করেছি। একথাটি দুবার বললেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ যখন আমাকে তোমাদের নিকট রাসূল রূপে প্রেরণ করেছেন তখন তোমরা সবাই বলেছ, তুমি মিথ্যা বলছ আর আবু বকর বলেছে, আপনি সত্য বলছেন। তাঁর জান মাল সর্বস্ব দিয়ে আমার প্রতি যে সহানুভূতি দেখিয়েছে তা নযীরবিহীন। তোমরা কি আমার খাতিরে আমার সাথীকে অব্যাহিত প্রদান করবে? এ কথাটি তিনি দুবার বলেছেন। এরপর আবু বকর রা.-কে আর কখনও কষ্ট দেয়া হয়নি।

হাদীস নং ৩৪০০

মুআল্লা ইবনে আসাদ রহ………আমর ইবনে আস রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে যাতুস সালাসিল যুদ্ধের সেনানায়ক করে পাঠিয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি তাঁর খেদমতে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, মানুষের মধ্যে কে আপনার কাছে সবচেয়ে প্রিয়? তিনি বললেন, আয়েশা। আমি বললাম, পুরুষদের মধ্যে কে ? তিনি বললেন, আয়েশার পিতা (আবু বকর) আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তারপর কোন লোকটি? তিনি বললেন, উমর ইবনে খাত্তাব তারপর আরো কয়েকজনের নাম উল্লেখ করলেন।

হাদীস নং ৩৪০১

আবুল ইয়ামান রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, একদা একজন রাখাল তার বকরীর পালের কাছে ছিল। এমতাবস্থায় একটি নেকড়ে বাঘ আক্রমণ করে পাল থেকে একটি বকরী নিয়ে গেল। রাখাল নেকড়ে বাঘের পিছনে ধাওয়া করে বকরীটি ছিনিয়ে আনল। তখন বাঘটি তাকে লক্ষ্য করে বলল, তুমি বকরীটি ছিনিয়ে নিলে? হিংস্র জন্তুর আক্রমণের দিকে কে তাকে রক্ষা করবে, যেদিন তার জন্য আমি ব্যতীত অন্য কোন রাখাল থাকবে না। একদা এক ব্যক্তি একটি গাভীর পিঠে আরোহণ করে সেটিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন গাভীটি তাকে লক্ষ্য করে বলল, আমি এ কাজের জন্য সৃষ্ট হয়নি। বরং আমি কৃষি কাজের জন্য সৃষ্ট হয়েছি। একথা শুনে সকলেই বিস্ময়ের সাথে বলতে লাগল “সুবহানাল্লাহ” (কি আশ্চর্য গাভী কথা বলে! বাগ কথা বলে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি আবু বকর এবং উমর ইবনে খাত্তাব এ কথা বিশ্বাস করি (ঐ সময়ে তাঁরা দুজন সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।­)

হাদীস নং ৩৪০২

আবদান রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, একদা আমি ঘুমিয়ে ছিলেন। স্বপ্নে আমি আমাকে এমন একটি কূপের কিনারায় দেখতে পেলাম যেখানে বালতিও রয়েছে, আমি কূপ থেকে পানি উঠালাম যে পরিমাণ আল্লাহ ইচ্ছা করলেন। তারপর বালতিটি ইবনে আবু কুহাফা (আবু বকর) নিলেন এবং এক বা দু’বালতি পানি উঠালেন। তার উঠানোতে কিছুটা দুর্বলতা ছিল। আল্লাহ তার দুর্বলতাকে ক্ষমা করে দিবেন। তারপর উমর ইবনে খাত্তাব বালতিটি তার হাতে নিলেন। তার হাতে বালতিটির আয়তন বেড়ে গেল। আমি কোন দক্ষ, শক্তিশালী বাহাদুর ব্যক্তিকে উমরের ন্যায় পানি উঠাতে দেখিনি। অবশেষে মানুষ (তৃপ্ত হয়ে) নিজ নিজ আবাসে অবস্থান নিল।

হাদীস নং ৩৪০৩

মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি গর্বের সাথে পরিহিত কাপড় টাখনুর নিম্নভাগে ঝুলিয়ে চলাফিরা করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার প্রতি রহমতের নযর করবেন না। এ শুনে আবু বকর রা. বললেন, আমার অজ্ঞাতসারে কাপড়ের একপাশ কোন কোন সময় নীচে নেমে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তো গর্বের সাথে তা করছ না। মূসা রা. বলেন, আমি সালিমকে জিজ্ঞাসা করলাম, আবদুল্লাহ রা. কি যে ব্যক্তি তার লুঙ্গী ঝুলিয়ে চলল, বলেছেন? সালিম রহ. বললেন, আমি তাকে শুধু কাপড়ের কথা উল্লেখ করতে শুনেছি।

হাদীস নং ৩৪০৪

আবুল ইয়ামান রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কোন জিনিসের জোড়া জোড়া আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করবে। (পরকালে) তাকে জান্নাতে প্রবেশের জন্য সকল দরজা থেকে আহবান করা হবে। বলা হবে, হে আল্লাহর বান্দা, এ দরজাই উত্তম। যে ব্যক্তি (অধিক নফল) সালাত আদায়কারী হবে তাকে সালাতের দরজা দিয়ে প্রবেশের আহবান জানানো হবে। যে ব্যক্তি জিহাদকারী হবে তাকে জিহাদের দরজা থেকে আহবান করা হবে। যে ব্যক্তি (অধিক নফল) সাদকাদানকারী হবে, তাকে সাদকার দরজা দিয়ে ডাকা হবে। যে ব্যক্তি (অধিক নফল) সাওম আদায়কারী হবে তাকে সাওমের দরজা বাবুর রাইয়ান থেকে আহবান করা হবে। আবু বকর রা. বললেন, কোন ব্যক্তিকে সকল দরজা দিয়ে ডাকা হবে এমনতো অবশ্য জরুরী নয়, তবে কি এরূপ কাউকে ডাকা হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, আছে। আমি আশা করছি তুমি তাদের অন্তর্ভূক্ত হবে, হে আবু বকর।

হাদীস নং ৩৪০৫

ইসমাঈল ইবনে আবদুল্লাহ রহ…………নবী সহধর্মিণী আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যখন ওফাত হয়, তখন আবু বকর রা. (স্বীয় বাসগৃহ) সুনহ-এ ছিলেন। ইসমাঈল (রাবী) বলেন, সুনহ মদীনার উচু এলাকার একটি স্থানের নাম। (ওফাতের সংবাদ শুনার সাথে সাথে) উমর রা. দাঁড়িয়ে বলতে লাগলেন, আল্লাহর কসম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাত হয় নাই। আয়েশা রা. বলেন, উমর রা. বললেন, আল্লাহর কসম, তখন আমার অন্তরে এ বিশ্বাসই ছিল (তাঁর ওফাত হয় নাই) আল্লাহ অবশ্যই তাকে পুনরায় জীবিত করবেন। এবং তিনি কিছু সংখ্যক লোকের (মুনাফিকের) হাত-পা কেটে ফেলবেন। তারপর আবু বকর রা. এলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারা মোবারক থেকে আবরণ সরিয়ে তাঁর ললাটে চুমু খেলেন এবং বললেন, আমার পিতা-মাতা আপনার উপর কুরবান। আপনি জীবনে মরণে পূত পবিত্র। ঐ সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, আল্লাহ আপানাকে কখনও দুবার মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করাবেন না। তারপর তিনি বেরিয়ে আসলেন এবং (উমর রা.-কে লক্ষ্য করে বললেন) হে হলফকারী, ধৈর্যধারণ কর। আবু বকর রা. যখন কথা বলতে লাগলেন, তখন উমর রা. বসে পড়লেন।আবু বকর রা. আল্লাহ পাকের হামদ ও সানা বর্ণনা করে বললেন, যারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেছেন। আর যারা আল্লাহর ইবাদত করতে তারা নিশ্চিতই জেনে রাখ আল্লাহ চিরঞ্জীব, তিনি অমর। তারপর আবু রা. এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন: নিশ্চয়ই আপনি মরণশীল আর তারা সকলেইও মরণশীল। (৩৯:৩০) আরো তিলাওয়াত করলেন: মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন রাসূল মাত্র। তাঁর পূর্বে বহু রাসূল গত হয়েছেন। তাই যদি তিনি মারা যান অথবা তিনি নিহত হন তবে কি তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে? কেউ পৃষ্ঠ প্রদর্শন করলে সে কখনো আল্লাহর ক্ষতি করতে পারবে না। (৩: ১৪৪) আল্লাহ তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দাদেরকে পুরস্কৃত করবেন। রাবী বলেন, আবু বকর রা.-এর এ কথাগুলি শুনে সকলই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলেন। রাবী বলেন আনসারগণ সাকীফা বনূ সায়িদায়ে সাদ ইবনে উবাদইদা রা.-এর নিকট সমবেত হলেন এবং বলতে লাগলেন, আমাদের (আনসারদের) মধ্য হতে একজন আমীর হবেন এবং তোমাদের (মুহাজিরদে) মধ্য হতে একজন আমীর হবেন। আবু বকর রা. উমর ইবনে খাত্তাব, আবু উবাদইদা ইবনে জাররাহ রা.-এ তিনজন আনসারদের নিকট গমন করলেন। উমর রা. কথা বলতে চাইলে, আবু বকর রা. তাকে থামিয়ে দিলেন। উমর রা. বলেন, আল্লাহর কসম, আমি বক্তব্য রাখতে চেয়েছিলাম এই জন্য যে, আমি আনসারদের মাহফিলে বলার জন্য চিন্তা-ভাবনা করে এমন কিছু চমৎকার ও যুক্তিপূর্ণ কথা তৈরী করেছিলাম। যার প্রেক্ষিতে আমার ধারণা ছিল হয়ত: আবু বকর রা.-এর চিন্তা ভাবনা এতটা গভীরে নাও পৌঁছতে পারে। কিন্তু আবু বকর রা. অত্যন্ত জোরাল ও যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য পেশ করলেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বললেন, আমীর আমাদের (মুহাজিরদের) মধ্য থেকে একজন হবেন এবং তোমাদের মধ্য হতে (আনসারদের) হবেন উযীর। তখন হুবাব ইবনে মুনযির (আনসারী) রহ. বললেন, আল্লাহর কসম! আমরা এরূপ করব না। বরং আমাদের মধ্যে একজন ও আপনাদের মধ্যে একজন আমীর হবেন। আবু বকর রা. বললেন, না, এমন হয় না। আমাদের মধ্য হতে খলীফা এবং তোমাদের মধ্য হতে উযীর হবেন। কেননা কুরাইশ গোত্র অবস্থানের (মক্কা) দিক দিয়ে যেমন আরবের মধ্যস্থানে, বংশ ও রক্তের দিকে থেকেও তারা তেমনি শ্রেষ্ঠ। তাঁরা নেতৃত্বের জন্য যোগ্যতায় সবার শীর্ষে। তোমরা উমর রা. অথবা আবু উবাইদা ইবনে জাররাহ রা.-এর হাতে বায়আত করে নাও। উমর রা. বলে উঠলেন, আমরা কিন্তু আপনার হাতেই বায়আত করব। আপনিই আমাদের নেতা। আপনিই আমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। আমাদের মাঝে আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রিয়তম ব্যক্তি। এ বলে উমর আ. তাঁর হাত ধরে বায়আত করে নিলেন। সাথে সাথে উপস্থিত সকলেই বায়আত করলেন। তখন জনৈক ব্যক্তি বলে উঠলেন, আপনারা সাদ ইবনে উবাইদা রা.-কে মেরে ফেললেন? উমর রা. বললেন, আল্লাহ তাকে মেরে ফেলেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে সালিম……..আয়েশা রা. বলেন, ওফাতের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চোখ দুটি বার বার উপর দিকে উঠছিল এবং তিনি বার বার বলছিলেন, (হে আল্লাহ) সর্বোচচ বন্ধুর (আল্লাহর) সাক্ষাতের আমি আগ্রহী। আয়েশা রা. বলেন, আবু বকর ও উমর রা.-এর খুতবা দ্বারা আল্লাহ তা’আলা এ চরম মূহুর্তে উম্মতকে রক্ষা করেছেন। উমর রা. জনগণকে পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন যে, এমন কিছু মানুষ আছে যাদের অন্তরে কপটতা রয়েছে আল্লাহ তাদের ফাঁদ থেকে উম্মতকে রক্ষা করেছেন। এবং আবু বকর রা. লোকদিগকে সত্য সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন। হক ও ন্যায়ের পথ নির্দেশ করেছেন, তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তারপর সাহাবা কেরাম এ আয়াত পড়তে পড়তে প্রস্থান করলেন: মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন রাসূল মাত্র। তাঁর পূর্বে বহু রাসূলগণ গত হয়েছেন………কৃতজ্ঞ বান্দাদের।(৩: ১৪৪)

হাদীস নং ৩৪০৬

মুহাম্মদ ইবনে কাসীর রহ………..মুহাম্মদ ইবনে হানাফীয়া রা. বলেন, আমি আমার পিতা আলী রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ কে? তিনি বললেন, আবু বকর রা.। আমি বললাম, এরপর কে? তিনি বললেন, উমর রা.। আমার আশংকা হল যে, এরপর তিনি উসমান রা.-এর নাম বললেন, তাই (তাকে জিজ্ঞাসা না করে) আমি বললাম, তারপর আপনি? তিনি বললেন, না, আমি তো মুসলিমদের একজন।

হাদীস নং ৩৪০৭

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ…………. আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে এক যুদ্ধ সফরে গিয়েছিলাম। আমরা যখন বায়দা অথবা যাতুল জায়েশ নামক স্থানে গিয়েছিলাম, তখন আমার হারটি গলা থেকে ছিড়ে যায়। হার তালাশ করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে অবস্থান করেন। এজন্য সাহবীগণও তার সঙ্গে সেখানে অবস্থান করেন। যেখানে পানি ছিল না এবং তাদের সাথেও পানি ছিল না। তাই সাহবীগণ আবু বকর রা.-এর নিকট এসে বললেন, আপনি কি দেখছেন না, আয়েশা রা. কি করলেন? তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সঙ্গে সাহবীগণকে এমন স্থানে অবস্থান করালেন যেখানে পানি নেই এবং তাদের সাথেও পানি নেই। তখন আবু বকর রা. আমার নিকট আসলেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার উরুর উপর মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলেন। তিনি (আবু বকর রা.) আমাকে বলতে লাগলেন, তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এবং সাহাবীগণকে এমন এক স্থানে আটকিয়ে রেখেছ, যেখানে পানি নেই এবং তাদের সাথেও পানি নেই। আয়েশা রা. বলেন, তিনি আমাকে অনেক ভৎর্সনা করলেন। এক পর্যায়ে তিনি হাত দ্বারা আমার কোমরে খোঁচা মারতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার উরুর উপর মাথা রেখে শুয়ে থাকার কারণে আমি নড়াচড়াও করতে পারছিলাম না। এরূপ পানি না থাকা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভোর পর্যন্ত ঘুমিয়ে রইলেন। (ফজরের সালাতের সময় হল অথচ পানির কোন ব্যবস্থা নেই) তখন আল্লাহ পাক তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল করলেন এবং সকলেই তায়াম্মুম করলেন। উসাইদ ইবনে হুযাইর রা. বলেন, হে আবু বকর রা.-এর পরিবারবর্গ, এটা আপনাদের প্রথম (একমাত্র) বরকত নয়; (ইতিপূর্বেও আমরা এ পরিবার দ্বারা আরো বরকত পেয়েছি) আয়েশা রা. বলেন, এরপর আমরা সে উটটিকে উঠাইলাম যে উটের উপর আমি সাওয়ার ছিলাম। তখন হারটি তার নীচে পাওয়া গেল।

হাদীস নং ৩৪০৮

আদম ইবনে আবু ইয়াস রহ…………..আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাঁর উম্মতকে লক্ষ্য করে) বলেছেন, তোমরা আমার সাহাবীগণকে গালমন্দ করো না। তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় সমান স্বর্ণ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় কর, তবে তাদের একমুদ বা অর্ধ মুদ-এর সমপরিমাণ সাওয়াব হবে না। জরীর আবদুল্লাহ ইবনে দাউদ, আবু মুয়াবিয়া ও মুহাযির রহ. আমাশ রহ. থেকে হাদীস বর্ণনায় শুবা রহ.-এর অনুসরণ করেছেন।

হাদীস নং ৩৪০৯

মুহাম্মদ ইবনে মিসকীন রহ……….আবু মূসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি একদিন ঘরে অজু করে বের হলেন এবং (মনে মনে স্থির করলেন) আমি আজ সারাদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে কাটাব, তার থেকে পৃথক হব না। তিনি মসজিদে গিয়ে র-এর খবর নিলেন, সাহাবীগণ বললেন, তিনি এদিকে বেরিয়ে গেছেন। আমিও ঐ পথ ধরে তাঁর অনুগমন করলাম। তাঁর খুজে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকলাম। তিনি শেষ পর্যন্ত আরীস কূপের নিকট গিয়ে পৌঁছলেন। আমি (কূপে প্রবেশের) দরজার নিকট বসে পড়লাম। দরজাটি খেজুরের শাখা দিয়ে তৈরী ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁর প্রয়োজন (ইস্তিনজা) সেরে অজু করলেন। তখন আমি তাঁর নিকটে দাঁড়ালাম এবং দেখতে পেলাম তিনি আরীস কূপের কিনারার বাঁধের মাঝখঅনে বসে হাঁটু পর্যন্ত দুটি খুলে কূপের ভিতরে ঝুলিয়ে রেখেছেন, আমি তাকে সালাম করলাম। এবং ফিরে এসে দরজায় বসে রইলাম এবং মনে মনে স্থির করে আবু বকর রা. এসে দরজায় ধাক্কা দিলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কে ? তিনি বললেন, আবু বকর ! আমি বললাম, থামুন, (আমি আপনার জন্য অনুমতি নিয়ে আসি) আমি গিয়ে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আবু বকর রা. ভিতরে আসার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বললেন, ভিতরে আসার অনুমতি দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি ফিরে এসে আবু বকর রা. কে বললাম, ভিতরে আসুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন। আবু বকর রা. ভিতরে আসলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ডানপাশে কূপের কিনারায় বসে দুপায়ের কাপড় হাঁটু পর্যন্ত উঠায়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ন্যায় কূপের ভিতর ভাগে পা ঝুলিয়ে দিয়ে বসে পড়েন। আমি ফিরে এসে (দরজার পাশে) বসে পড়লাম। আমি (ঘর হতে বের হওয়ার সময়) আমার ভাইকে অযু করছে অবস্থায় রেখে এসেছিলাম। তারও আমার সাথে মিলিত হওয়ার কথা ছিল তাই আমি (মনে মনে) বলতে লাগলাম, আল্লাহ যদি তার (ভাইয়ের) মঙ্গল চান তবে তাকে নিয়ে আসেন। এমন সময় এক ব্যক্তি দরজা নাড়তে লাগল। আমি বললাম, কে? তিনি বললেন, আমি উমর ইবনে খাত্তাব। আমি বললাম, অপেক্ষা করুন। (আমি আপনার জন্য অনুমতি নিয়ে আসি) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে সালাম পেশ করে আরয করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! উমর ইবনে খাত্তাব (ভিতরে আসার) অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বললেন, তাকে ভিতরে আসার অনুমতি এবং জান্নাতের সুসংবাদ জানিয়ে দাও। আমি এসে তাকে বললাম, ভিতরে আসুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন। তিনি ভিতরে প্রবেশ করলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বামপাশে হাটু পর্যন্ত কাপড় উঠিয়ে কূপের ভিতরের দিকে পা ঝুলিয়ে বসে গেলেন। আমি আবার ফিরে আসলাম এবং বলতে থাকলাম আল্লাহ যদি আমার ভাইয়ের মঙ্গল চান, তবে যেন তাকে নিয়ে আসনে। এরপর আর এক ব্যক্তি এসে দরজা নাড়তে লাগল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কে ? তিনি বললেন, আমি উসমান ইবনে আফফান। আমি বললাম, থামুন (আমি অনুমতি নিয়ে আসছি) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে গিয়ে জানালাম। তিনি বললেন, তাকে ভিতরে আসতে বল এবং তাকেও জান্নাতের সুসংবাদ দাও। তবে (দুনিয়াতে তার উপর) কঠিন পরীক্ষা হবে। আমি এসে বললাম, ভিতরে আসুন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন; তবে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখে হয়ে। তিনি ভিতরে এসে দেখলেন, কূপের কিনারায় খালি জায়গা নাই। তাই তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে অপর এক স্থানে বসে পড়লেন। শরীক রহ. বলেন, সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব রহ. বলেছেন, আমি এর দ্বারা (পরবর্তী কালে) তাদের কবর এরূপ হবে এই অর্থ করেছি।

হাদীস নং ৩৪১০

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, (একবার) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর, উমর, উসমান রা. উহুদ পাহাড়ে আরোহণ করেন। পাহাড়টি (তাদেরকে ধারণ করে আনন্দে) নড়ে উঠল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে উহুদ স্থির হও। তোমার উপর একজন নবী, একজন সিদ্দীক ও দুজন শহীদ রয়েছেন।

হাদীস নং ৩৪১১

আহমদ ইবনে সাঈদ আবু আবদুল্লাহ রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একদা (স্বপ্নে দেখতে পেলাম যে) আমি একটি কূপ থেকে (বালতি দিয়ে) পানি টেনে তুলছি। তখন আবু বকর ও উমর রা. আসলেন। আবু বকর রা. আমার হাত থেকে বালতি তার হাতে নিয়ে এক বালতি কি দু’বালতি পানি টেনে তুললেন। তার উঠানোতে কিছুটা দুর্বলতা ছিল। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন। তারপর (উমর) ইবনে খাত্তাব রা. বালতিটি আবু বকরের হাত থেকে নিলেন, তার হাতে যাওয়ার সাথে সাথে বালতিটি বৃহদাকার হয়ে গেল। কোন শক্তিশালী বাহাদুরকে তার মত পানি উঠাতে আমি দেখিনি। লোকজন তাদের উটগুলিকে তৃপ্তি ভরে পানি পান করিয়ে উটশালায় নিয়ে গেল। ওয়াহাব (রাবী) বলেন, ‘আত্বনুন’ উটশালা। এমনকি উটগুলি পানি পানে তৃপ্ত হয়ে বসে পড়ল।

হাদীস নং ৩৪১২

অলীদ ইবনে সালিহ রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমিও ঐ দলের সাথে দুআয় রত ছিলাম, যারা উমর ইবনে খাত্তাবের জন্য দুআ করেছিল। তখন তাঁর মরদেহটি খাটের উপর রাখা ছিল। এমন সময় এক ব্যক্তি হঠাৎ আমার পিছন দিকে থেকে তার কনুই আমার কাঁধের উপর রেখে উমর রা.-কে লক্ষ্য করে বলল, আল্লাহ আপনার প্রতি রহম করুন। আমি অবশ্য এ আশা পোষণ করি যে, আল্লাহ আপনাকে আপনার উভয় সঙ্গীর সাথেই রাখবেন। কেননা, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বহুবার বলতে শুনেছি, আমি এবং আবু ও উমর এক সাথে ছিলাম, আমি এবং আবু বকর ও উমর এ কাজ করেছি। আমি ও আবু বকর এবং উমর (একসাথে) চলেছি। আমি এ আশাই পোষণ করি যে, আল্লাহ তা’আলা আপনাকে তাদের উভয়ের সঙ্গেই রাখবেন। আমি পেছনে তাকিয়ে দেখলাম, তিনি হলেন, আলী ইবনে আবু তালিব রা.।

হাদীস নং ৩৪১৩

মুহাম্মদ ইবনে ইয়াযিদ কুফী রহ……….উরওয়া ইবনে যুবাইর রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, মক্কার মুশরিকরা র-এর সাথে সর্বাধিক কঠোর আচরণ কি করেছিল? তিনি বললেন, আমি উকবা ইবনে আবু মুআইতকে দেখেছি; সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসল যখন তিনি সালাত আদায় করছিলেন। সে নিজের চাদর দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গলদেশে জড়িয়ে শক্তভাবে চেপে ধরল। আবু বকর রা. এসে উকবাকে সরিয়ে দিলেন এবং বললেন, তোমরা কি এমন ব্যক্তিকে হত্যা করতে চাও যিনি বলেন, একমাত্র আল্লাহই আমার রব। যিনি তাঁর দাবীর সত্যতার স্বপক্ষে তোমাদের রবের নিকট থেকে সুস্পস্ট প্রমাণাদি (মুজিযা) সঙ্গে নিয়ে এসেছেন?

হাদীস নং ৩৪১৪

হাজ্জাজ ইবনে মিনহাল রহ…………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি স্বপ্নে আমাকে দেখতে পেলাম যে, আমি জান্নাতে প্রবেশ করেছি। হঠাৎ আবু তালহা রা.-এর স্ত্রী রুমায়সাকে দেখতে পেলাম এবং আমি পদচারণার শব্দও শুনতে পেলাম। তখন আমি বললাম, এই ব্যক্তি কে? এক ব্যক্তি বলল, তিনি বিলাল রা.। আমি একটি প্রাসাদও দেখতে পেলাম যার আঙ্গিনায় এক মহিলা রয়েছে। আমি বললাম, ঐ প্রাসাদটি কার? এক ব্যক্তি বলল, প্রাসাদটি উমর ইবনে খাত্তাব রা. এর। আমি প্রাসাদটিতে প্রবেশ করে (সব কিছু) দেখার ইচ্ছা করলাম। তখন তোমার ( উমর রা.) সূক্ষ্ম মর্যাদাবোধের কথা স্মরণ করলাম। উমর রা. (এ কথা শুনে) বললেন, আমার বাপ-মা আপনার উপর কুরবান, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার কাছেও কি মর্যাদাবোধ প্রকাশ করতে পানি?

হাদীস নং ৩৪১৫

সাঈদ ইবনে আবু মারইয়াম রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সময় আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে ছিলাম। তখন তিনি বললেন, একবার আমি ঘুমিয়েছিলাম। স্বপ্নে আমি নিজেকে জান্নাতে দেখতে পেলাম। আমি দেখলাম, একজন মহিলা একটি প্রাসাদের আঙ্গিনায় (বসে) অযু করছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ প্রাসাদটি কার? ফেরেশতাগণ বললেন, তা উমর রা.-এর । আমি উমর রা. সূক্ষ্ম মর্যাদা বোধের স্মরণ করে ফিরে এলাম। উমর রা. (তা শুনে) কেঁদে ফেললেন এবং বললেন, আপনার কাছে কি মর্যাদাবোধ দেখাব ইয়া রাসূলাল্লাহ?

হাদীস নং ৩৪১৬

মুহাম্মদ ইবনে সালত আবু জাফর-কুফী রহ………..হামযা রহ.-এর পিতা (আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি ঘুমিয়ে ছিলাম (স্বপ্নে) দুধ পান করতে দেখলাম যে তৃপ্তির চিহ্ন যেন আমার নখগুলির মধ্যে প্রবাহিত হচ্ছিল। তারপর দুধ (পান করার জন্য) উমর রা.-কে দিলাম। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি ব্যাখ্যা দিচ্ছেন? তিনি বললেন, ইলম।

হাদীস নং ৩৪১৭

মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ……….. ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি স্বপ্নে দেখতে পেলাম, একটি কূপের পাড়ে বড় বালতি দিয়ে পানি তুলছি। তখন আবু বকর রা. এসে এক বালতি পানি তুললেন। তবে পানি তোলার মধ্যে তাঁর দুর্বলতা ছিল আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন। তারপর উমর ইবনে খাত্তাব রা. এলেন। বালতিটি তাঁর হাতে গিয়ে বৃহদাকারে পরিণত হল। তাঁর মত এমন বলিষ্ঠভাবে পানি উঠাতে আমি কোন বাহাদুরকেও দেখিনি। এমনকি লোকেরা পরিতৃপ্তির সঙ্গে পানি পান করে আবাসে বিশ্রাম নিল। ইবনে যুবাইর রহ. বলেন, العبقرى হল উন্নত মানের সুন্দর বিছানা। ইয়াহইয়া রহ. বলেন, الزاربى হল মখমলের সূক্ষ্ম সূতার তৈরী বিছানা।مبثوثة অর্থ প্রসারিত। العبقرى আর হল গোত্র নেতা।

হাদীস নং ৩৪১৮

আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ ও আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার উমর ইবনে খাত্তাব রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসার অনুমতি চাইলেন। তখন তাঁর সঙ্গে কুরাইশের কতিপয় মহিলা কথা বলছিলেন এবং তাঁরা বেশী পরিমাণ দাবী দাওয়া করতে গিয়ে তাঁর আওয়াজের চেয়ে তাদের আওয়াজ উচ্চকণ্ঠ ছিল। যখন উমর ইবনে খাত্তাব প্রবেশের অনুমতি চাইলেন তখন তাঁরা (মহিলাগণ) উঠে দ্রুত পর্দার অন্তরালে চলে গেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দিলেন। আর উমর রা. ঘরে প্রবেশ করলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসছিলেন। উমর রা. বললেন, আল্লাহ আপনাকে সদা হাস্য রাখুন ইয়া রাসূলাল্লাহ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মহিলাদের কান্ড দেখে আমি অবাক হচ্ছি, তাঁরা আমার কাছে ছিল, অথচ তোমার আওয়াজ শুনা মাত্র তারা সব দ্রুত পর্দার অন্তরালে চলে গেল। উমর রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনাকেই-ত অধিক ভয় করা উচিৎ। তারপর উমর রা. ঐ মহিলাগণকে লক্ষ্য করে বললেন, ওহে নিজ ক্ষতিসাধনকারী মহিলাগণ, তোমরা আমাকে ভয় কর, অথচ আল্লাহর রাসূলকে ভয় কর না? তারা উত্তরে বললেন, আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনেক রূঢ় ভাষী ও কঠিন হৃদয়ের। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, ঠিকই হে ইবনে খাত্তাব! যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর কসম, শয়তান যখনই কোন পথে কোন তোমাকে দেখতে পায় সে তখনই তোমার ভয়ে এ পথ ছেড়ে অন্যপথে চলে যায়।

হাদীস নং ৩৪১৯

মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ……….আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যেদিন উমর রা. ইসলাম গ্রহণ করেন, সেদিন থেকে আমরা অতিশয় বলবান ও মর্যাদাশীল হয়ে আসছি।

হাদীস নং ৩৪২০

আবদান রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর রা.-এর লাশ খাটের উপর রাখা হল। খাটটি কাঁধে তোলে নেয়ার পূর্বক্ষণ পর্যন্ত লোকজন তা ঘিরে দুআ পাঠ করছিল। আমিও তাদের মধ্যে একজন ছিলাম। হঠাৎ একজন আমার কাঁধের উপরে হাত রাখায় আমি চমকে উঠলাম। চেয়ে দেখলাম, তিনি আলী রা.। তিনি উমর রা.-এর জন্য আল্লাহর অশেষ রহমতের দুআ করছিলেন। তিনি বলছিলেন, হে উমর , আমার জন্য আপনার চেয়ে অধিক প্রিয় এমন কোন ব্যক্তি আপন রেখে যাননি, যার আমলের অনুসরণ করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করব। আল্লাহর কসম, আমার এ বিশ্বাস যে আল্লাহ আপনাকে (জান্নাতে) আপনার সঙ্গীদ্বয়ের সাথে রাখবেন। আমার মনে আছে, আমি বহুবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আমি আবু বকর ও উমর গেলাম। আমি, আবু বকর ও উমর প্রবেশ করলাম এবং আমি, আবু বকর ও উমর বের হলাম ইত্যাদি।

হাদীস নং ৩৪২১

মুসাদ্দাদ রহ………..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ পাহাড়ের উপর আরোহণ করলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আবু বকর উমর ও উসমান রা. তাদেরকে (ধারণা করতে পেরে) নিয়ে পাহাড়টি নিয়ে পাহাড়টি (আনন্দে) নেচে উঠল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাহাড়কে পায়ে আঘাত করে বললেন, হে উহুদ, স্থির হও। তোমার উপর নবী, সিদ্দীক ও শহীদ ব্যতীত অন্য কেউ নেই।

হাদীস নং ৩৪২২

ইয়াহইয়া ইবনে সুলাইমান রহ………..আসলাম রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনে উমর রা. আমাকে উমর রা.-এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে আমি তাকে সে সম্পর্কে অবহিত করলাম, তখন তিনি (ইবনে উমর রা.) বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লা-এর ইন্তিকালের পরে কাউকে (এ সব গুণের অধিকারী) আমি দেখি নি। তিনি (উমর রা.) অত্যন্ত দৃঢ়চিত্ত দানশীল ছিলেন। এসব গুণাবলী যেন উমর রা. পর্যন্ত শেষ হয়ে গেছে।

হাদীস নং ৩৪২৩

সুলাইমান ইবনে হারব রহ………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করল, কিয়ামত কখন হবে? তিনি বললেন, তুমি কিয়ামতের জন্য কি (পাথেয়) সংগ্রহ করেছ। সে বলল, কোন কিছুই সংগ্রহ করতে পারিনি, তবে আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে (আন্তরিকভাবে) মুহাব্বত করি। তখন তিনি বললেন, তুমি (কিয়ামতের দিন) তাদের সাথেই থাকবে যাদেরকে তুমি মুহাব্বত কর। আনাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ কথা দ্বারা আমরা এত আনন্দিত হয়েছি যে, অন্য কোন কথায় এত আনন্দিত হইনি। আনাস রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মুহাব্বত করি এবং আবু বকর ও উমর রা.-কেও। আশা করি তাদেরকে আমার মুহব্বতের কারণে তাদের সাথে জান্নাতে বসবাস করতে পারব; যদিও তাদের আমালের মত আমল করতে পারিনি।

হাদীস নং ৩৪২৪

ইয়াহইয়া ইবনে কাযাআ রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগণের মধ্যে অনেক মুহাদ্দাস (যার অন্তরে সত্য কথা অবতীর্ণ হয়) ব্যক্তি ছিলেন। আমার উম্মতের মধ্যে যদি কেউ মুহাদ্দাস হন তবে সে ব্যক্তি উমর । যাকারিয়া রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের পূর্ববর্তী বনী ইসরাঈলের মধ্যে এমন কতিপয় লোক ছিলেন, যারা নবী ছিলেন না বটে তবে ফেরেশতাগণ তাদের সাথে কথা বলতেন। আমার উম্মতে এমন কোন লোক হলে সে হবে উমর রা.। ইবনে আব্বাস রা. (কুরআনের আয়াতে) ولا محدث অতিরিক্ত বলেছেন।

হাদীস নং ৩৪২৫

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ…………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একদিন এক রাখাল তার বকরীর পালের সাথে ছিল। হঠাৎ একটি নেকড়ে বাঘ পাল আক্রমণ করে একটি বকরী নিয়ে গেল। রাখাল বাঘের পিছনে ধাওয়া করে বকরীকে উদ্ধার করে আনল। তখন বাঘ রাখালকে বলল, যখন আমি ছাড়া অন্য কেউ থাকবেনা তখন হিংস্র জন্তুদের আক্রমণ থেকে তাদেরকে কে রক্ষা করবে? (তা শুনে) সাহাবীগণ বললেন, সুবহানাল্লাহ! (বাঘ কথা বলে) তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তা বিশ্বাস করি এবং আবু বকর ও উমরও বিশ্বাস করে। অথচ তাঁরা কেউই সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।

হাদীস নং ৩৪২৬

ইয়াহইয়া ইব বুকাইর রহ……….আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, একদিন আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। (স্বপ্নে) দেখতে পেলাম, অনেক লোককে আমার সামনে উপস্থিত করা হল। তাদের গায়ে (বিভিন্ন রকমের) জামা ছিল। কারো কারো জামা এত ছোট ছিল যে, কোন প্রকারে বুক পর্যন্ত পৌঁছেছে। আবার কারো জামা এর চেয়ে ছোট ছিল। আর উমর রা.-কেও আমার সামনে পেশ করা হল। তাঁর শরীরে এত লম্বা জামা ছিল যে, সে জামাটি হেঁচড়াইয়া চলতেছিল। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি এ স্বপ্নের কি তাবীর (ব্যাখ্যা) করলেন। তিনি বললেন, দ্বীনদারী (ধর্মপরায়ণতা)।

হাদীস নং ৩৪২৭

সালত ইবনে মুহাম্মদ রহ………..মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন উমর রা. (আবু লুলু গোলামের খঞ্জরের আঘাতে) আহত হলেন, তখন তিনি বেদনা অনুভব করছিলেন। তখন তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার উদ্দেশ্যে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলতে লাগলেন, হে আমীরুল মুমিনীন, এ আঘাত জনিত কারণে (আল্লাহ না করুন) যদি আপনার কিছু (মৃত্যু) ঘঠে (তাঁতে চিন্তা-ভাবনা) বা দুঃখের কোন কারণ নেই) আপনি তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহচর্য লাভ করেছেন এবং তাঁর সাহচর্যের হক উত্তমরূপে আদায় করেছেন। এরপর (তাঁর থেকে) আপনি এ অবস্থায় পৃথক হয়েছেন, তিনি আপনার প্রতি সন্তুষ্ট। তারপর আপনি আবু বকর রা.-এর সাহচর্য লাভ করেন এবং এর হকও উত্তমরূপে আদায় করেন। এরপর (তাঁর থেকে) আপনি এ অবস্থায় পৃথক হয়েছেন যে, তিনি আপনার প্রতি সন্তুষ্ট। তারপর আপনি (খলীফা মনোনীত হয়ে) সাহাবা কেরামের সাহচর্য লাভ করেছেন এবং তাদের হকও উত্তমরূপে আদায় করেছেন। যদি আপনি তাদের থেকে পৃথক হয়ে পড়েন তবে আপনি অবশ্যই তাদের থেকে এমন অবস্থায় পৃথক হবেন যে তাঁরাও আপনার প্রতি সন্তুষ্ট। উমর রা. বললেন, তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহচর্য ও সন্তুষ্টি লাভ সম্পর্কে যা উল্লেখ করেছ, তাতো আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ যা তিনি আমার প্রতি করেছেন। এবং আবু বকর রা. এর সাহচর্য ও সন্তুষ্টি লাভের ব্যাপারে যা তুমি উল্লেখ করেছ তাও একমাত্র মহান আল্লাহর অনুগ্রহ যা তিনি আমার উপর করেছেন। আর আমার যে অস্থিরতা তুমি দেখছ তা তোমার এবং তোমার সাথীদের কারণেই। আল্লাহর কসম, আমার নিকট যদি দুনিয়া ভর্তি স্বর্ণ থাকত তবে আল্লাহর আযাব দেখার পূর্বেই তা হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য ফিদয়া হিসাবে এসব বিলিয়ে দিতাম। হাম্মাদ রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উমর রা.-এর কাছে প্রবেশ করলাম………।

হাদীস নং ৩৪২৮

ইউসুফ ইবনে মূসা রহ………..আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মদীনা কোন একটি বাগানের ভিতর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি এসে বাগানের দরজা খুলে দেওয়ার জন্য বলল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার জন্য দরজা খুলে দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি তার জন্য দরজা খুলে দিয়ে দেখলাম যে, তিনি আবু বকর রা. তাকে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদত্ত সুসংবাদ দিলাম। তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন। এরপর আরেক ব্যক্তি এসে দরজা খোলার জন্য বলল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার জন্য দরজা খুলে দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি তার জন্য দরজা খুলে দিয়ে দেখলাম যে, তিনি উমর রা.। তাকে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদত্ত সুসংবাদ দিলাম। তখন তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন। এরপর আর একজন দরজা খোলার জন্য বলল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার জন্য দরজা খুলে দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। কিন্তু তার উপর কঠিন বিপদ আসবে। (তার জন্য দরজা খুলে দিয়ে) দেখলাম যে, তিনি উসমান রা.। তাকে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদত্ত সুসংবাদ দিলাম। তখন তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন আর বললেন, আল্লাহই সাহায্যকারী।

হাদীস নং ৩৪২৯

ইয়াহইয়া ইবনে সুলাইমান রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে হিশাম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমর ইবনে খাত্তাব রা.-এর হাত ধরা অবস্থায় ছিলেন।

হাদীস নং ৩৪৩০

সুলাইমান ইবনে হারব রহ…………আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি প্রবেশ করলেন এবং বাগানের দরজা পাহাড়া দেওয়ার জন্য আমাকে আদেশ করলেন। তখন এক ব্যক্তি এসে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে আসতে দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি (দরজা খুলে) দেখলাম যে, তিনি আবু বকর রা.। তারপর আরেকজন এসে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে আসতে দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি (দরজা খুলে) দেখলাম যে, তিনি উমর রা.। তারপর আরেকজন এসে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, তাকে আসতে দাও এবং অচিরেই তাঁর উপর বিপদ আসবে এ কথাটির সাথে তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি (দরজা খুলে) দেখলাম যে, তিনি উসমান ইবনে আফফান রা.। হাম্মাদ রহ………..আবু মূসা রা. থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে। আসিম রহ. (একজন রাবী) উক্ত বর্ণনায় আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাগানের এমন এক জায়গায় বসা ছিলেন যেখানে পানি ছিল এবং তাঁর হাঁটু অথবা এক হাঁটুর উপর অতিরিক্ত ছিলনা। যখন উসমান রা. আসলেন তখন হাঁটু কাপড় দিয়ে ঢেকে ফেললেন।

হাদীস ৩৪৩১
Missing

হাদীস নং ৩৪৩২

মুহাম্মদ ইবনে হাতিম ইবনে বাযী রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় (মর্যাদায়) আবু বকর রা.-এর সমকক্ষ কাউকে মনে করতাম না, তারপর উমর রা.-কে তারপর উসমান রা.-কে (মর্যাদা দিতাম) তারপর সাহাবগণের মধ্যে কাউকে কারও উপর প্রাধান্য দিতাম না। আবদুল্লাহ ইবনে সালিহ রহ. আবদুল আযীয রহ. থেকে হাদীস বর্ণনায় শাযান রহ.-এর অনুসরণ করেছেন।

হাদীস নং ৩৪৩৩

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……….উসমান ইবনে মাওহাব রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক মিসরবাসী মক্কায় এসে হজ্জ সম্পাদন করে দেখতে পেল যে, কিছু সংখ্যক লোক একত্রে বসে আছে। সে বলল, এ লোকজন কারা ? তাকে জানানো হল এর কুরাইশ বংশের লোকজন। সে বলল, তাদের মধ্যে ঐ শায়েখ ব্যক্তিটি কে ? তারা বললেন, ইনি আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.। সে ব্যক্তি (তাঁর নিকট এসে) বলল, হে আবদুল্লাহ ইবনে উমর আমি আপনাকে একটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করব; আপনি আমাকে বলুন, ১. আপনি কি এটা জানেন যে, উসমান রা. উহুদ যুদ্ধ (চলাকালে) যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে গিয়েছিলন। তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। ২. সে বলল, আপনি জানেন কি উসমান রা. বদর যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন? ইবনে উমর রা. উত্তরে বললেন, হ্যাঁ। ৩. আপনি জানেন কি বায়আতে রিযওয়ানে তিনি অনুপস্থিত ছিলেন? ইবনে উমর রা. বললেন, হ্যাঁ। লোকটি বলে উঠল, আল্লাহ আকবার। ইবনে উমর রা. তাকে বললেন, এসে তোমাকে প্রকৃত ঘটনা বলে দেই। উসমান রা.-এর উহুদ যুদ্ধ থেকে পালিয়ে যাওয়া সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাকে মাফ করে দিয়েছেন ও ক্ষমা করে দিয়েছেন। (কুরআনে কারীমে এ বিষয়ে উল্লেখ আছে) আর তিনি বদর যুদ্ধে এজন্য অনুপস্থিত ছিলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা তাঁর স্ত্রী (রুকাইয়া রা.) রোগগ্রস্ত ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, বদরের অংশ গ্রহণকারী ব্যক্তির সমপরিমাণ সাওয়াব ও গনীমতের অংশ মিলবে। আর বায়আত রিযওয়ান থেকে তাঁর অনুপস্থিতির কারণ হল, মক্কার বুকে তাঁর (উসমান রা.) চেয়ে সম্ভ্রান্ত অন্য কেউ যদি থাকতো তবে তাকেই তিনি উসমানের পরিবর্তে পাঠাতেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মক্কায় প্রেরণ করেন। এবং তাঁর চলে যাওয়ার পর বায়আতে রিযওয়ান অনুষ্ঠিত হয়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান হাতের প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন, এটি উসমানের হাত। তারপর ডান হাত বাম হাতে স্থাপন করে বললেন যে, এ হল উসমানের বায়আত। ইবনে উমর রা. ঐ (মিসরীয়) লোকটিকে বললেন, তুমি এস এই জবাব নিয়ে যাও।

হাদীস নং ৩৪৩৪

মুসাদ্দাদ রহ………..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ পাহাড়ে আরোহণ করলেন। তাঁর সাথে ছিলেন আবু বকর, উমর ও উসমান রা. তাদেরকে পেয়ে পাহাড়টি (আনন্দে) কেঁপে উঠল। তিনি বললেন, হে উহুদ স্থির হও। (আনাস রা. বলেন) আমার মনে হয় তিনি পা দিয়ে পাহাড়কে আঘাত করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার উপর একজন নবী ও একজন সিদ্দীক ও দু’জন শহীদ ব্যতীত আর কেউ নেই।

হাদীস নং ৩৪৩৫

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ…………আমর ইবনে মায়মূন রহ. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উমর ইবনে খাত্তাব রা.-কে আহত হওয়ার কিছুদিন পূর্বে মদীনায় দেখেছি যে, তিনি হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান রা. ও উসমান ইবনে হুনায়ফ রহ.-এর নিকট দাঁড়িয়ে তাদেরকে লক্ষ্য করে বলছেন, (ইরাকবাসীর উপর কর ধার্যের ব্যাপারে) তোমরা এটা কি করলে? তোমরা কী আশংকা করছ যে তোমরা ইরাক ভূমির উপর যে কর ধার্য করেছ তা বহনে ঐ ভূখন্ড অক্ষম? তারা বললেন, আমরা যে পরিমাণ কর ধার্য করেছি, ঐ ভূ-খন্ড তা বহনে সক্ষম। এতে অতিরিক্ত কোন বোঝা চাপান হয়নি। তখন উমর রা. বললেন, তোমরা পুনঃ চিন্তা করে দেখ যে তোমরা এ ভূখণ্ডের উপর যে কর আরোপ করেছ তা বহনে সক্ষম নয়? বর্ণনাকারী বলেন, তাঁরা বললেন, না (সাধ্যাতীত কর আরোপ করা হয়নি) এরপর উমর রা. বললেন, আল্লাহ যদি আমাকে সুস্থ রাখের তবে ইরাকের বিধবাগণকে এমন অবস্থায় রেখে যাব যে তারা আমার পরে কখনো অন্য কারো মুখাপেক্ষী না হয়। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর চতুর্থ দিন তিনি (ঘাতকের আঘাতে) আহত হলেন। যেদিন প্রত্যুষে তিনি আহত হন, আমি তাঁর কাছে দাঁড়িয়েছিলাম এবং তাঁর ও আমার মাঝে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. ব্যতীত অন্য কেউ ছিল না। উমর রা. (সালাত শুরু করার প্রাক্কালে) দু’কাতারের মধ্য দিয়ে চলার সময় বলতেন, কাতার সোজা করে নাও। যখন দেখতেন কাতারে কোন ত্রু টি নেই তখন তাকবীর বলতেন। তিনি অধিকাংশ সময় সূরা ইউসুফ, সূরা নাহল অথবা এ ধরণের (দীর্ঘ) সূরা (ফজরের) প্রথম রাকআতে তিলাওয়াত করতেন, যেন অধিক পরিমাণে লোক প্রথম রাকআতে শরীক হতে পারেন। (সেদিন) তাকবীর বলার পরেই আমি তাকে বলতে শুনলাম, একটি কুকুর আমাকে আঘাত করেছে অথবা বলেন, আমাকে আক্রমণ করেছেন। ঘাতক ‘ইলজ’ দ্রুত পলায়নের সময় দু’ধারী খজ্ঞর দিয়ে ডানে বামে আঘাত করে চলছে। এভাবে তের জনকে আহত কর। এদের মধ্যে সাতজন শহীদ হলেন। এ অবস্থা দৃষ্টে এক মুসলিম তার লম্বা চাদরটি ঘাতকের উপর ফেলে দিলেন। ঘাতক যখন বুঝতে পারল সে ধরা পড়ে যাবে তখন সে আত্মহত্যা করল। উমর রা. আবদুর রাহমান ইবনে আউফ রা.-এর হাত ধরে আগে এগিয়ে দিলেন। উমর রা.-এর নিকটবর্তী যারা ছিল শুধুমাত্র তারাই ব্যাপরটি দেখতে পেল। আর মসজিদের প্রান্তে যারা ছিল তারা ব্যাপারটি এর বেশী বুঝতে পারল না যে উমর রা. -এর কণ্ঠস্বর শুনা যাচ্ছে না। তাই তারা ‘সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ’ বলতে লাগলেন। আবদুর রহমান ইবনে আউফ রা. তাদেরকে নিয়ে সংক্ষেপে সালাত আদায় করলেন। যখন মুসল্লীগণ চলে গেলেন, তখন উমর রা. বললেন, হে ইবনে আব্বাস রা. দেখ তো কে আমাকে আঘাত করল। তিনি কিছুক্ষণ অনুসন্ধান করে এসে বললেন, মুগীরা ইবনে শুবা রা.-এর গোলাম (আবু লুলু) উমর রা. জিজ্ঞাসা করলেন, ঐ কারীগর গোলামটি ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। উমর রা. বললেন, আল্লাহ তার সর্বনাশ করুন। আমি তার সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমার মৃত্যু ইসলামের দারীদার কোন ব্যক্তির হাতে ঘটাননি। হে ইবনে আব্বাস রা. তুমি এবং তোমার পিতা মদীনায় কাফির গোলামের সংখ্যা বৃদ্ধি পছন্দ করতে। আব্বাস রা.-এ নিকট অনেক অমুসলিম গোলাম ছিল। ইবনে আব্বাস রা. বললেন, যদি আপনি চান তবে আমি কাজ করে ফেলি অর্থাৎ আম তাদেরকে হত্যা করে ফেলি। উমর রা. বললেন, তুমি ভুল বলছ। (তুমি তা করতে পার না) কেননা তারা তেমাদের ভাষায় কথা বলে তোমাদের কিবলামুখী হয়ে সালাত আদায় করে, তোমাদের ন্যায় হজ্জ করে। তারপর তাকে তাঁর ঘরে নেয়া হল। আমরা তাঁর সাথে চললাম। মানুষের অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছিল, ইতিপূর্বে তাদের উপর এতবড় মসীবত আর আসেনি। কেউ কেউ বলছিলেন, ভয়ের কিছু নেই। আবার কেউ বলছিলেন, আমি তাঁর সম্পর্কে আশংকাবোধ করছি। তারপর খেজুরের শরবত আনা হল তিনি তা পান করলেন। কিন্তু তা তার পেট থেকে বেরিয়ে পড়ল। এরপর দুধ আনা হল, তিনি তা পান করলেন; তাও তার পেট থেকে বেরিয়ে পড়ল। তখন সকলই বুঝতে পারলেন মৃত্যু তাঁর অবশ্যম্ভাবী। আমরা তাঁল নিকট উপস্থিত হলাম। অন্যান্য লোকজনও আসতে শুরু করল। সকলেই তার প্রশংসা করতে লাগল। তখন যুবক বয়সী একটি লোক এসে বলল, হে আমীরুল মুমিনীন। আপনার জন্য আল্লাহর সুসংবাদ রয়েছে; আপনি তা গ্রহণ করুন। আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এ সাহচর্য গ্রহণ করেছেন। ইসলামের প্রাথমিক যুগেই আপনি তা গ্রহণ করেছেন, যে, সম্পর্কে আপনি নিজেই অবগত আছেন তারপর আপনি খলীফা হয়ে ন্যায় বিচার করেছেন। তারপর আপনি শাহাদাত লাভ করেছেন। উমর রা. বললেন, আমি পছন্দ করি যে তা আমার জন্য ক্ষতিকর বা লাভজনক না হয়ে সমান সমান হয়ে যাক। যখন যুবকটি চলে যেতে উদ্যত হল তখন তার (পরিহিত) লুঙ্গিটি মাটি ছুয়ে যাচ্ছিল। (এ দেখে) উমর রা. বললেন, যুবকটকে আমার নিকট ডেকে আন। (ছেলেটি আসল) তিনি বললেন, হে ভাতিজা, তোমার কাপড়টি উঠিয়ে নাও। এটা তোমার কাপড়ের পরিচ্ছন্নতার উপর এবং তোমার রবের নিকটও পছন্দীয়। (তারপর তিনি বললেন) হে আবদুল্লাহ ইবনে উমর তুমি হিসাব করে দেখ আমার ঋণের পরিমাণ কত। তাঁরা হিসাব করে দেখতে পেলেন ছিয়াশি হাজার (দিরহাম) বা এর কাছাকাছি। তিনি বললেন, যদি উমরের পরিবার পরিজনের মাল দ্বারা তা পরিশোধ হয়ে যায়, তবে তা দিয়ে পরিশোধ করে দাও। অন্যথায় আদি ইবনে কাব এর বংশধরদের নিকট থেকে সাহায্য গ্রহণ কর। তাদের মাল দিয়েও যদি ঋণ পরিশোধ না হয় তবে কুরাইশ কবিলা থেকে সাহায্য গ্রহণ করবে এর বাহিরে কারো সাহায্য গ্রহণ করবে না। আমার পক্ষ থেকে তাড়াতাড়ি ঋণ আদায় করে দাও। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা.-এর খেদমতে তুমি যাও এবং বল উমর আপনাকে সালাম পাঠিয়েছে। আমীরুল মুমিনীন, শব্দটি বলবে না। কেননা এখন আমি মুমিনগণের আমীর নই। তাকে বল উমর ইবনে খাত্তাব তাঁর সাথীদ্বয়ের পাশে দাফন হওয়ার অনুমতি চাচ্ছেন। ইবনে উমর রা. আয়েশা রা.-এর খেদমতে গিয়ে সালাম জানিয়ে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। তিনি বললেন, প্রবেশ কর, তিনি দেখলেন, আয়েশা রা. বসে বসে কাঁদছেন। তিনি গিয়ে বললেন, উমর ইবনে খাত্তাব রা. আপনাকে সালাম পাঠিয়েছেন এবং তাঁর সাথীদ্বয়ের পাশে দাফন হওয়ার জন্য আপনার অনুমতি চেয়েছেন। আয়েশা রা. বললেন, তা আমার আকাঙ্খা ছিল। কিন্তু আজ আমি এ ব্যাপারে আমার উপরে তাকে অগ্রাধিকার প্রদান করছি। আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. যখন ফিরে আসছেন তখন বলা হল, এই যে আবদুল্লাহ ফিরে আসছে। তিনি বললেন, আমাকে উঠিয়ে বসাও। তখন এক ব্যক্তি তাকে ঠেস দিয়ে বসিয়ে ধরে রাখলেন। উমর রা. জিজ্ঞাসা করলেন, কি সংবাদ ? তিনি বললেন, আমীরুল মুমিনীন, আপনি যা আকাঙ্খা করেছেন, তাই হয়েছে, তিনি অনুমতি দিয়েছেন। উমর রা. বললেন, আলহামদুলিল্লাহ। এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয় আমার নিকট ছিলনা। যখন আমার ওফাত হয়ে যাবে তখন আমাকে উঠিয়ে নিয়ে তাকে (আয়েশা রা.) আমার সালাম জানিয়ে বলবে, উমর ইবনে খাত্তাব রা. আপনার অনুমতি চাচ্ছেন। যদি তিনি অনুমতি দেন তবে আমাকে প্রবেশ করাবে আর যদি তিনি অনুমতি না দেন তবে আমাকে সাধারণ মুসলমানদের গোরস্থানে নিয়ে যাবে। এ সময় উম্মুল মুমিনীন হাফসা রা.-কে কতিপয় মহিলাসহ আসতে দেখে আমরা উঠে পড়লাম। হাফসা রা. তাঁর কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ কাঁদলেন। তারপর পুরুষগণ এসে প্রবেশের অনুমতি চাইলে, তিনি ঘরের ভিতর চলে (গেলেন) ঘরের ভেতর হতেও আমরা তাঁর কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। তাঁরা (সাহাবীগণ) বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন, আপনি ওয়াসিয়্যাত করুন এবং খলীফা মনোনীত করুন। উমর রা. বললেন, খিলাফতের জন্য এ কয়েকজন ব্যতীত অন্য কাউকে আমি যোগ্যতম পাচ্ছি না, যাদের প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ইন্তিকালের সময় রাযী ও খুশী ছিলেন। তারপর তিনি তাদের নাম বললেন, আলী, উসমান, যুবাইর, তালহা, সাদ ও আবদুর রাহমান ইবনে আউফ রা. এবং বললেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. তোমাদের সাথে থাকবে। কিন্তু সে খিলাফত লাভ করতে পারবে না। তা ছিল শুধু সান্ত্বনা হিসাবে। যদি খিলাফতের দায়িত্ব সাদ রা.-এর উপর ন্যস্ত করা হয় তবে তিনি এর জন্য যোগ্যতম ব্যক্তি। আর যদি তোমাদের মধ্যে অন্য কেউ খলীফা নির্বাচিত হন তবে তিনি যেন সর্ব বিষয়ে তাদের সাহায্য ও পরামর্শ গ্রহণ করেন। আমি তাকে (কুফার গভর্নরের পদ থেকে) অযোগ্যতা বা খিয়ানতের কারণে অপসারণ করিনি। আমার পরে (নির্বাচিত) খলীফাকে আমি ওয়াসিয়্যাত করছি, তিনি যেন প্রথম যুগের মুহাজিরগণের হক সম্পর্কে সচেতন থাকেন, তাদের মান-সম্মান রক্ষায় সচেষ্ট থাকেন। এবং আমি তাকে আনসার সাহাবীগণের যারা মুহাজিরগণের আগমনের পূর্বে এই নগরীতে বসবাস করে আসছিলেন এবং ঈমান এনেছেন তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার করার ওয়সিয়্যাত করছি, যে, তাদের মধ্যে নেককারগণের ওযর আপত্তি যেন গ্রহণ করা হয় এবং তাদের মধ্যে কারোর বিভিন্ন শহরের আধিবাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করেন। কেননা তাঁরাও ইসলামের হেফাযতকারী। এবং তারাই ধন-সম্পদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ যাকাত আদায় করা হয়। আমি তাকে পল্লীবাসীদের সহিত সদ্ব্যবহার করারও ওয়সিয়্যাত করছি। কেননা তারাই আরবের ভিত্তি এবং ইসলামের মূল শক্তি। তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ এনে তাদের দরিদ্রদের মধ্যে বিলিয়ে দেয় হয়। আমি তাঁতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জিম্মিদের (অর্থাৎ সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়) বিষয়ে ওয়াসিয়্যাত করছি যে, তাদের সাথে কৃত অঙ্গীকার যেন পুরা করা হয়। (তারা কোন শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে) তাদের পক্ষাবলম্বনে যেন যুদ্ধ করা হয়, তাদের শক্তি সামর্থ্যের অধিক জিযিয়া (কর) যেন চাপানো না হয়। উমর রা.-এর ইন্তিকাল হয়ে গেলে আমরা তাঁর লাশ নিয়ে পায়ে হেঁটে চললাম। আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. আয়েশা রা.-কে সালাম করলেন এবং বললেন, উমর ইবনে খাত্তাব রা. অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বললেন, তাকে প্রবেশ করাও। এরপর তাকে প্রবেশ করান হল এবং তাঁর সঙ্গীদ্বয়ের পার্শ্বে দাফন করা হল। যখন তাঁর দাফন কার্য সম্পন্ন হল, তখন ঐ ব্যক্তিবর্গ একত্রিত হলেন। তখন আবদুর রাহমান রা. বললেন, তোমরা তোমাদের বিষয়টি তোমাদের মধ্যে থেকে তিনজনের উপর ছেড়েও দাও। তখন যুবাইর রা. বললেন, আমি আমরা বিষয়টি আলী রা.-এর উপর অর্পণ করলাম। তালহা রা. বললেন, আমার বিষয়টি উসমান রা.-এর উপর ন্যস্ত করলাম। সাদ রা. বললন, আমার বিষয়টি আবদুর রাহমা ইবনে আউফ রা.-এর উপর ন্যস্ত করলাম। তারপর আবদুর রাহমান রা. উসমান ও আলী রা-কে বললেন,আপনাদের দুজনের মধ্য থেকে কে এই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেতে ইচ্ছা করেন? (একজন অব্যাহতি দিলে) এ দায়িত্ব অপর জনের উপর অর্পণ করব। আল্লাহ ইসলামের হক আদায় করা তাঁর অন্যতম দায়িত্ব হবে। কে অধিকতর যোগ্য সে সম্পর্কে দুজনেরই চিন্ত করা উচিৎ। ব্যক্তিদ্বয় (উসমান ও আলী রা.) নীরব থাকলেন। তখন আবদুর রাহমান রা. নিজেই বললেন, আপনারা এ দায়িত্ব আমার উপর ন্যস্ত করতে পারেন কি? আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি আপনাদের মধ্যকার যোগ্যতম ব্যক্তিকে নির্বাচিত করতে একটুও ত্রু টি করব না। তাঁরা উভয়ে বললেন, হ্যাঁ। তাদের একজনের (আলী রা.-এর) হাত ধরে বললেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে আপনার যে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তা এবং ইসলাম গ্রহণে অগ্রগামিতা রয়েছে তা আপনিও ভালভাবে জানেন। আল্লাহর ওয়াস্তে এটা আপনার জন্য জরুরী হবে যে যদি আপনাকে খলীফা মনোনীত করি তাহলে আপনি ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করবেন। আর যদি উসমান রা.-কে মনোনীত করি তবে আপনি তাঁর কথা শুনবেন এবং তাঁর প্রতি অনুগত থাকবেন। তারপর তিনি অপরজনের (উসমানের রা.-এর) সঙ্গে একান্তে অনুরূপ কথা বললেন। এভাবে অঙ্গীকার গ্রহণ করে তিনি বললেন, হে উসমান রা. আপনার হাত বাড়িয়ে দিন। তিনি (আবদুর রাহমান রা. তাঁর হাতে বায়আত করলেন। তারপর আলী রা. তাঁর (উসমান রা.-এর বায়আত করলেন)। এরপর মদীনাবাসীগ অগ্রসর হয়ে সকলেই বায়আত করলেন।

হাদীস নং ৩৪৩৬

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ……….সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি আগমীকাল এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা দিব যার হাতে আল্লাহ বিজয় দান করবেন। রাবী বলেন, তারা এই আগ্রহ ভরে রাত্রি যাপন করলেন যে, কাকে ঐ পতাকা দেয়া হবে। যখন সকাল হল তখন সকলেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গিয়ে হাযির হলেন। তাদের প্রত্যেকেই এ আশা পোষণ করছিলেন যে পতাকা তাকে দেয়া। হবে। তারপর তিনি বললেন, আলী ইবনে আবু তালিব কোথায়? তাঁরা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তিনি চক্ষু রোগে আক্রান্ত। তিনি বললেন, কাউকে পাঠিয়ে তাকে আমার কাছে নিয়ে এস। যখন তিনি এলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দুচোখে থুথু লাগিয়ে দিলেন এবং তাঁর জন্য দু’আও করলেন। এতে তিনি এমন সুস্থ হয়ে গেলেন যেন তাঁর চোখে কোন রোগই ছিলনা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পতাকাটি দিলেন। আলী রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের মত না হয়ে যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি কি তাদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাব। তিনি বললেন, তুমি সোজা অগ্রসর হতে থাক এবং তাদের আঙ্গিনায় উপনীত হয়ে তাদেরকে জানিয়ে দাও। আল্লাহর কসম, তোমার দ্বারা যদি একটি মানুষও হিদায়েত প্রাপ্ত হয়, তা হবে তোমার জন্য লাল রঙ্গের উট প্রাপ্তির চেয়েও অধিক উত্তম।

হাদীস নং ৩৪৩৭

কুতাইবা রহ………..সালামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আলী রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে খায়বার যুদ্ধে যাননি। কেননা তাঁর চোখে অসুখ ছিল। এতে তিনি (মনে মনে) বললেন, আমি কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে (জিহাদে) যাব না? তারপর তিনি বেড়িয়ে পড়লেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মিলিত হলেন। যেদিন সকালে আল্লাহ বিজয় দান করলেন, তার পূর্ব রাত্রে (সন্ধ্যায়) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আগামীকাল সকালে আমি এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা প্রদান করব, অথবা বলেছিলেন যে, এমন এক ব্যক্তি ঝান্ডা গ্রহণ করবে যাকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভালবাসেন, অথবা বলেছিলেন, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা বিজয় দান করবেন। তারপর আমরা দেখতে পেলাম তিনি হলেন আলী রা. অথচ আমরা তাঁর সম্পর্কে এমনটি আশা করিনি। তাই সকলেই বলে উঠলেন, এই যে আলী রা. । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকেই (পতাকা) দিলেন এবং তাঁর মাধ্যমেই আল্লাহ তা’আলা বিজয় দিলেন।

হাদীস নং ৩৪৩৮

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলাম রহ………..আবু হাযিম রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি সাহল ইবনে সাদ রা.-এর খেদমতে হাযির হয়ে বললেন, মদীনার অমুক আমীর মিম্বরের নিকট বসে আলী রা. সম্পর্কে অপ্রিয় কথা বলছে। তিনি বললেন, সে কি বলছে? সে বলল, সে তাকে আবু তুরাব রা. বলে উল্লেখ করছে। সাহল রা. (একথা শুনে) হেসে দিলেন এবং বললেন, আল্লাহর কসম, তাঁর এ নাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই রেখে ছিলেন। এ নাম অপেক্ষা তাঁর নিকট অধিক প্রিয় আর কোন নাম ছিল না। আমি (নাম রাখার) ঘটনাটি জানার জন্য সাহল রা. -এর নিকট আগ্রহ প্রকাশ করলাম এবং তাকে বললাম, হে আবু আব্বা, এটা কিভাবে হয়েছিল। তিনি বললেন, (একদিন) আলী রা. ফাতিমা রা. এর নিকট গেলেন এবং কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে সমজিদে শুয়ে রইলেন। (অল্পক্ষণ পর) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার চাচাত ভাই (আলী) কোথায়? তিনি বললেন, মসজিদে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন। পরে তিনি তাকে এমন অবস্থায় পেলেন যে তাঁর চাদর পিঠ থেকে সরে গিয়েছে। তাঁর পিঠে ধুলো-বালি লেগে গেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পিঠ থেকে ধূলা-বালি ঝাড়তে ঝাড়তে বলতে লাগলেন, উঠে বস হে আবু তুরাব। এ কথাটি তিনি দু’বার বলেছিলেন।

হাদীস নং ৩৪৩৯

মুহাম্মদ ইবনে রাফি রহ…………সাদ ইবনে উবাদইদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ইবনে উমর রা.-এর নিকট এসে উসমান রা.-এর সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করল। তিনি উসমান রা.-এর কতিপয় ভাল গুণ বর্ণনা করলেন। ইবনে উমর রা. ঐ ব্যক্তিকে বললেন,মনে হয় এটা তোমাদের কাছে খারাপ লাগছে। সে বলল, হ্যাঁ। ইবনে উমর রা. বললেন, আল্লাহ (তোমাকে) অপমানিত করুন! তারপর সে ব্যক্তি আলী রা.-এর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তিনি তাঁরও কতিপয় ভাল গুণ বর্ণনা করলেন এবং বললেন, ঐ দেখ। তাঁর ঘরটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘরগুলোর মধ্যে অবস্থিত এরপর তিনি বললেন, মেন হয় এসব কথা শুনতে তোমার খারাপ লাগছে। সে বলল, হ্যাঁ। ইবনে উমর রা. বললন, আল্লাহ তোমাকে লাঞ্ছিত করুন। যাও, আমার বিরুদ্ধে তোমার শক্তি ব্যয় কর।

হাদীস নং ৩৪৪০

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ…………আলী রা. থেকে বর্ণিত যে, ফাতিমা রা. যাতা চলানোর কষ্ট সম্পর্কে একদিন (আমার নিকট) অভিযোগ প্রকাশ করলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট কিছু সংখ্যক যুদ্ধবন্দী আসল। ফাতিমা রা. (একজন গোলাম পাওয়ার আশা নিয়ে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেদমতে গেলেন। কিন্তু তাকে না পেয়ে, আয়েশা রা.-এর কাছে তাঁর কথা বলে আসলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঘরে আসলেন তখন ফাতিমা রা. এর আগমন ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে আয়েশা রা. তাকে অবহিত করলেন। (আলী রা.) বলেন) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের এখানে আসলেন, যখন আমরা বিছানায় শুয়ে পড়েছিলাম। তাকে দেখে আমি উঠে বসতে চাইলাম। কিন্তু তিনি বললেন, তোমরা নিজ নিজ অবস্থায় থাক এবং তিনি আমাদের মাঝখানে এমনভাবে বসে পড়লেন যে আমি তাঁর পদদ্বয়ের শীতলতা আমার বক্ষে অনুভব করলাম। তিনি বললেন, আমি কি তোমরা যা চেয়েছিলে তার চেয়েও উত্তম জিনিস শিক্ষা দিব না? (তা হল) তোমরা যখন ঘুমানোর উদ্দেশ্যে বিছানায় যাবে তখন চৌত্রিশ বার ‘আল্লাহু আকবার’ তেত্রিশবার ‘সুবহানাল্লাহ’ তেত্রিশবার ‘আল হামদুলিল্লাহ’ পড়ে নিবে। এটা খাদিম (যা তোমরা চেয়েছিলে) অপেক্ষা অনেক উত্তম।

হাদীস নং ৩৪৪১

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……….সাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাবুক যুদ্ধের প্রাক্কালে) আলী রা.-কে বলেছিলেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, যেভাবে হারূন আ. মূসা আ. এর প্রতিনিধিত্বের মর্যাদা লাভ করেছিলেন, তুমিও আমার নিকট সেই মর্যাদা লাভ কর।

হাদীস নং ৩৫০০

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………..কাসিম ইবনে মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ রা. থেকে বর্ণিত, আয়েশা রা.। যখন (মৃত্যু) রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লেন। তখন ইবনে আব্বাস রা. এসে বললেন, হে উম্মুল মুমিনীন, আপনি সত্য পূর্বগামী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবু বকর রা.-এর নিকট যাচ্ছেন।

হাদীস নং ৩৫০১

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……….আবু ওয়াইল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আলী রা.-এর স্বপক্ষে জিহাদে সাহায্য করার জন্য লোক সংগ্রহের উদ্দেশ্যে আম্মার ও হাসান রা.-কে কুফায় প্রেরণ করেন। আম্মার রা. তাঁর ভাষণে একদিন বললেন, এ কথা আমি ভালভাবেই জানি যে, আয়েশা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দুনিয়া ও আখিরাতের সম্মানিত সহধর্মিণী। কিন্তু এখন আল্লাহ তোমাদেরকে পরীক্ষা করছেন যে তোমরা কি আলী রা.-এর আনুগত্য করবে না, আয়েশা রা.-এর আনুগত্য করবে।

হাদীস নং ৩৫০২

উবাইদ ইবনে ইসমাঈল রহ………আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি (তাঁর বোন) আসমা রা.-এর নিকট থেকে একটি হার চেয়ে নিয়েছিলেন। পরে হারটি হারিয়ে যায়। এর অনুসন্ধানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু সংখ্যক সাহাবীকে পাঠালেন। ইতিমধ্যে সালাতের সময় হয়ে গেলে তাঁরা পানির অভাবে অযু ছাড়াই সালাত আদায় করলেন। তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে এই বিষয়ে অভিযোগ পেশ করলেন। তখন তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল হল। উসাইদ ইবনে হুযাইর রা. বললেন, (হে আয়েশা) আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদানে পুরস্কৃত করুন। আল্লাহর কসম! যখনই আপনি কোন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন, তখনই আল্লাহ তা’আলা এর সমাধান করে দিয়েছেন এবং মুসলমানদের জন্য এর মধ্যে কল্যাণ নিহিত রেখেছেন।

হাদীস নং ৩৫০৩

উবাইদ ইবনে ইসমাঈল রহ……….উরওয়া রহ. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃত্যু রোগে আক্রান্ত তখন (পূর্বরীতি অনুযায়ী) সহধর্মিণীগণের ঘরে ঘরে ধারাবাহিকভাবে অবস্থান করতে থাকেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রা.-এর ঘরে অবস্থানের আগ্রহে এ কথাটি বলতেন, আগামীকাল আমি কার ঘরে থাকব? আগামীকাল আমি কার ঘরে থাকব? আয়েশা রা. বলেন, আমার ঘরে অবস্থানের নির্ধারিত দিনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন।

হাদীস নং ৩৫০৪

আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব রহ………..উরওয়া রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হাদীয়া প্রদানের জন্য আয়েশা রা.-এর গ্রহে তাঁর অবস্থানের দিন তালাশ করতেন। আয়েশা রা. বলেন, একদিন আমার সতীনগণ উম্মে সালামা রা.-এর নিকট সমবেত হয়ে বললেন, হে উম্মে সালামা। আল্লাহর কসম, লোকজন তাদের হাদীয়াসমূহ প্রেরণের জন্য আয়েশা রা.-এর গৃহে অবস্থানের দিন তালাশ করেন। আয়েশা রা.-এর ন্যায় আমরাও কল্যাণ আকাঙ্খা করি। আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলুন, তিনি যেন লোকদের বলে দেন, তারা যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেদিন যেখানেই অবস্থান করেন সেখানেই তারা হাদীয়া পাঠিয়ে দেন। উম্মে সালামা রা. বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করলেন। উম্মে সালামা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কথা শুনে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। পরে আমার গৃহে অবস্থানের জন্য পুনরায় আসলে আমি ঐ কথা তাকে বলি। এবারও তিনি মুখ ফিরিয়ে নিলেন। তৃতীয়বারেও আমি ঐ কথা তাকে বললাম, তিনি বললেন, হে উম্মে সালামা! আয়েশা রা.-এর ব্যাপারে তোমরা আমাকে কষ্ট দিবে না। আল্লাহর কসম, তোমাদের মধ্যে আয়েশা রা. ব্যতীত অন্য কারো শয্যায় শায়িত অবস্থায় আমার উপর ওহী নাযিল হয়নি।

আনসারদের মর্যাদা অধ্যায় (৩৫০৫-৩৬৬৩)

হাদীস নং ৩৫০৫

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……….গায়লান ইবনে জারীর রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনাদের আনসার নামকরণ সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কি? এ নাম কি আপনারা করেছেন না আল্লাহ আপনাদের এ নামকরণ করেছেন? আনাস রা. বললেন, বরং আল্লাহ তা’আলা আমাদের এ নামকরণ করেছেন। (গায়লান রহ. বলেন) আমরা (বসরায়) যখন আনাস রা.-এর নিকট যেতাম, তখন তিনি আমাদেরকে আনসারদের গুণাবলী ও কীর্তি সমূহ বর্ণনা করে শুনাইতেন। তিনি আমাকে অথবা আযদ গোত্রের এক ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বলতেন, তোমার গোত্র অমুক দিন অমুক কাজ করেছেন, অমুক দিন অমুক (সাহসিকতা পূর্ণ) কাজ করেছেন।

হাদীস নং ৩৫০৬

উবাইদ ইবনে ইসমাঈল রহ……….আয়েশা র. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বুআস যুদ্ধ (যা আউস ও খাযরাজ গোত্রদ্বয়ের মধ্যে সংঘটিত হয়ে দীর্ঘ একশ বিশ বছর স্থায়ী ছিল) এমন একটি যুদ্ধ ছিল, যা আল্লাহ তা’আলা (মদীনার পরিবেশকে) তাঁর (রাসূলের অনুকুল করার জন্য) মদীনা আগমনের পূর্বেই ঘটিয়ে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আগমন করলেন তখন সেখানকার সম্ভ্রান্ত ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ নানা দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। তাদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিগণ এ যুদ্ধে নিহত ও আহত হয়েছিল। তাদের ইসলাম গ্রহণকে আল্লাহ তা’আলা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য অনুকূল করে দিয়েছিলেন।

হাদীস নং ৩৫০৭

আবুল ওয়ালীদ রহ………..আবু তাইয়্যাহ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস রা.-কে বলতে শুনেছি, মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশদেরকে মালে গনীমত দিলে কতিপয় আনসার বলেছিলেন যে, এ বড় আশ্চর্যের বিষয় যে, তিনি কুরাইশদের আমাদের গনীমতের মাল দিলেন অথচ আমাদের তরবারি থেকে তাদের রক্ত এখনও ঝরছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ কথা পৌঁছলে তিনি আনসারদেরকে ডেকে বললেন, আমি তোমাদের থেকে যে কথাটি শুনতে পেলাম সে কথাটি কি ছিল? যেহেতু তাঁরা মিথ্যা কথা বলতেন না, সেহেতু তাঁরা বললেন, আপনার নিকট যা পৌঁছেছে তা সত্যই। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট নও যে লোকজন গনীমতের মাল নিয়ে তাদের ঘরে প্রত্যাবর্তন করবে আর তোমরা আল্লাহর রাসূলকে নিয়ে নিজ ঘরে প্রত্যাবর্তন করবে। যদি আনসারগণ উপত্যকা বা গিরিপথ দিয়ে চলে তবে আমি আনসারদের উপত্যকা বা গিরিপথ দিয়েই চলবে।

হাদীস নং ৩৫০৮

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা তিনি বলেছেন আবুল কাসিম বলেন, আনসারগণ যদি কোন উপত্যকা বা গিরিপথে চলে তবে আমি আনসারদের উপত্যকা দিয়েই চলব। যদি হিজরত (এর বিধান) না হত, তবে আমি আনসারদেরই একজন হতাম। আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথায় কোন অত্যুক্তি করেন নাই। আমার মাতা-পিতা তাঁর উপর কুরবান হউক তারা তাকে আশ্রয় দিয়েছেন, সর্বোতভাবে সাহায্য-সহায়তা করেছেন। অথবা এরূপ কিছু বলেছেন।

হাদীস নং ৩৫০৯

ইসমাঈল ইবনে আবদুল্লাহ রহ…………আবদুর রহমান ইবনে আওফ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন মুহাজিরগণ মদীনায় আগমন করলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুর রাহমান ইবনে আওফ ও সাদ ইবনে রাবী রা. এর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক স্থাপন করে দিলেন। তখন তিনি (সাদ রা.) আবদুর রাহমান রা. কে বললেন, আনসারদের মধ্যে আমিই সবচেয়ে অধিক সম্পদশালী ব্যক্তি। আপনি আমার সম্পদকে দু’ভাগ করে নিন। আমার দু’জন স্ত্রী রয়েছে, আপনার যাকে পছন্দ হয় বলুন, আমি তাকে তালাক দিয়ে দিব। ইদ্দতান্তে আপনি তাকে বিয়ে করে নিবেন। আবদুর রাহমান রা. বললেন, আল্লাহ আপনার পরিবারে এবং সম্পদে বরকত দান করুন। (আমাকে দেখিয়ে দিন) আপনাদের (স্থানীয়) বাজার কোথায়? তারা তাকে বনূ কায়নুকার বাজার দেখিয়ে দিলেন। (কয়েক দিন পর) যখন ঘরে ফিরলেন তখন (ব্যবসায় মুনাফা হিসেবে) কিছু পনীর ও কিছু ঘি সাথে নিয়ে ফিরলেন। এরপর প্রত্যহ সকাল বেলা বাজার যেতে লাগলেন। একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর কাছে এমতাবস্থায় আসলেন যে, তাঁর শরীর ও কাপড়ে হলুদ রং এর চিহ্ন ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ব্যাপার কি ! তিনি (আবদুর রাহমান রা.) বললেন, আমি (একজন আনসারী মহিলাকে) বিয়ে করেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তাকে কি পরিমাণ মোহর দিয়েছ? তিনি বললেন, খেজুরের এক আটির পরিমাণ অথবা খেজুরের এক আটির ওজন পরিমাণ স্বর্ণ দিয়েছি।

হাদীস নং ৩৫১০

কুতাইবা রহ………..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুর রাহমান ইবনে আওফ রা. হিজরত করে আমাদের কাছে এলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ও সাদ ইবনে রাবী রা.-এর মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন করে দিলেন। তিনি (সাদ রা.) ছিলেন অধিক সম্পদশালী ব্যক্তি। সাদ রা. বললেন, সকল আনসারগণ জানেন যে আমি তাদের মধ্যে অধিক বিত্তবান ব্যক্তি। আমি অচিরেই আমার ও তোমার মাঝে আমার সম্পত্তি ভাগাভাগি করে দিব দুই ভাগে। আমার দু’জন স্ত্রী রয়েছে ; আপনার যাকে পছন্দ হয় বলুন, আমি তাকে তালাক দিয়ে দিব। ইদ্দতকালীন আপনি তাকে বিয়ে করে নিবেন। আবদুর রাহমান রা. বললেন, আল্লাহ আপনার পরিবারে এবং সম্পদে বরকত দান করুন। (এরপর তিনি বাজারে গিয়ে ব্যবসা আরাম্ভ করেন) বাজার থেকে ব্যবসায় মুনাফা হিসেবে পনীর ও ঘি সাথে নিয়ে ফিরলেন। অল্প কয়েকদিন পর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে হাযির হলেন। তখন তাঁর শরীর ও কাপড়ে হলুদ রং এর চিহ্ন ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ব্যাপার কি ! তিনি (আবদুর রাহমান রা.) বললেন, আমি একজন আনসারী মহিলাকে বিয়ে করেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তাকে কি পরিমাণ মোহর দিয়েছ? তিনি বললেন, খেজুরের এক আটির ওজন পরিমাণ স্বর্ণ অথবা (বলেছেন) একটি আটি পরিমাণ স্বর্ণ দিয়েছি।

হাদীস নং ৩৫১১

সালত ইবনে মুহাম্মদ আবু হাম্মাম রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেক বর্ণিত, তিনি বলেন, আনসারগণ বললেন, (হে আল্লাহর রাসূল) আমাদের খেজুরের বাগনগুলি আমাদের এবং তাদের মাঝে বন্টন করে দিন। তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না, (ভাগ করে দেয়ার প্রয়োজন নেই)। তখন আনসারগণ (মুহাজিরগণকে লক্ষ্য করে) বললেন, আপনারা বাগানগুলির রক্ষণাবেক্ষণে আমাদের সহায়ক হউন এবং উৎপাদিত ফসলের অংশীদার হয়ে যান। মুহাজিরগণ বললেন, আমরা ইহা (সর্বান্তকরণে) মেনে নিলাম।

হাদীস নং ৩৫১২

হাজ্জাজ ইবনে মিনহাল রহ……….বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, মুমিন ছাড়া আনসারদেরকে কেউ ভালবাসবে না এবং মুনাফিক ছাড়া কেউ তাদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে না। যে ব্যক্তি তাদেরকে ভালবাসে আল্লাহ তা’আলা তাকে ভালবাসবেন আর যে ব্যক্তি তাদের সাথে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করবে আল্লাহ তা’আলা তাকে ঘৃণা করবেন।

হাদীস নং ৩৫১৩

মুসলিম ইবনে ইবরাহীম রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আনসারদের প্রতি মুহাব্বত ঈমানেরই নিদর্শন এবং তাদের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষন করা মুনাফেকীর পরিচায়ক।

হাদীস নং ৩৫১৪

আবু মামার রহ………..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (আনসারের) কতিপয় বালক-বালিকা ও মহিলাকে রাবী বলেন, আমার মনে হয়-তিনি বলেছিলেন, কোন শাদীর অনুষ্ঠান শেষে ফিরে আসতে দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে গেলেন। এরপর তিনি বললেন, আল্লাহ সাক্ষী, তোমরাই আমার সবচেয়ে প্রিয়জন। এ কথাটি তিনি তিনবার বললেন।

হাদীস নং ৩৫১৫

ইয়াকুব ইবনে ইবরাহীম ইবনে কাসীর রহ………..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন আনসারী মহিলা তার শিশুসহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে হাযির হলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সঙ্গে আলাপ করলেন এবং বললেন, ঐ সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ, লোকদের মধ্যে তোমরাই আমার সর্বাপেক্ষা প্রিয়জন। এ কথাটি তিনি দু’বার বললেন।

হাদীস নং ৩৫১৬

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………..যায়েদ ইবনে আরকাম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একদিন কতিপয়) আনসার বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! প্রত্যেক নবীরই অনুসারী ছিলেন। আমরাও আপনার অনুসারী। আপনি আমাদের উত্তরসূরিদের জন্য দু’আ করুন যেন তারা (সর্বোতভাবে) আপনার অনুসারী হয়। তিনি (আকাঙ্খা অনুযায়ী) দু’আ করলেন। (আমর একজন রাবী বলেন) আমি এই হাদীসটি (আবদুর রাহমান) ইবনে আবু লায়লার নিকট বর্ণনা করলাম, তিনি বললেন, যায়েদ ইবনে আরকাম রা. এ ভাবেই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৩৫১৭

আদম রহ……….আমর ইবনে মুররাহ রা. থেকে বর্ণিত, আবু হামযা রা. নামক একজন আনসার (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) বললেন, প্রত্যেক জাতির মধ্যে (তাদের রাসূলের) অনুসরণকারী একটি দল থাকে। ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরাও আপনার অনুসরণ করছি। আপনি আল্লাহর নিকট দু’আ করুন যেন আমাদের পরবর্তী গণ (সর্বক্ষেত্রে) আমাদের (মত আপনার একনিষ্ঠ) অনুসারী হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আল্লাহ! তাদের পরবর্তীগণকে (সম্পূর্ণ) তাদের মত করে দাও। আমর রহ. বলেন, আমি হাদীসটি আবদুর রাহমান ইবনে আবু লায়লা রা.-কে বললাম। তিনি বললেন, যায়েদও এইভাবে হাদীসটি বলেছেন। শুবা রহ. বলেন, আমার ধারণা, ইনি যায়েদ ইবনে আরকাম রা.-ই হবেন।

হাদীস নং ৩৫১৮

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………..আবু উসাইদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সর্বোত্তম গোত্র হল বানূ নাজ্জার, তারপর বানূ আবদুল আশহাল তারপর বানূ হারিস ইবনে খাযরাজ তারপর বানূ সায়িদা এবং আনাসারদের সকল গোত্রের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে। এ শুনে সাদ রা. বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যদেরকে আমাদের উপর প্রাধান্য দান করেছেন? তখন তাকে বলা হল; তোমাদেরকে তো অনেক গোত্রের উপর প্রাধান্য দান করেছেন। আবদুস সামাদ রহ……….আবু উসাইদ রা. সুত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে। সাদ ইবনে উবাদা রা. বলেছেন।

হাদীস নং ৩৫১৯

সাদ ইবনে হাফস রহ……….আবু উসাইদ রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আনসারদের মধ্যে বা আনসার গোত্রগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম গোত্র হল বানূ নাজ্জার বানূ আবদুল আশহাল, বানূ হারিস ও বানূ সায়িদা।

হাদীস নং ৩৫২০

খালিদ ইবনে মাখলাদ রহ………..আবু হুমাইদ রা. সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনসারদের মধ্যে সর্বোত্তম মধ্যে গোত্র হল বানূ নাজ্জার, তারপর বানূ আবদুল আশহাল, তারপর হারিস এরূপ বানূ সায়িদা। আনসারদের সকল গোত্রে রয়েছে কল্যাণ। (আবু হুমাইদ রহ. বলেন) আমরা সাদ ইবনে উবাদা রা.-এর নিকট গেলাম। তখন আবু উসাইদ রা. বললেন, আপনি কি শোনেননি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের পরষ্পরের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে আমাদেরকে সকলের শেষ পর্যায়ে স্থান দিয়েছেন? তা শুনে সাদ রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সাক্ষাত করে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আনসার গোত্রগুলোকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে এবং আমাদেরকে সকলের শেষ পর্যায়ে স্থান দেয়া হয়েছে। তিনি বললেন, এটা কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে, তোমরাও শ্রেষ্ঠদের অন্তর্ভূক্ত হয়েছ?

হাদীস নং ৩৫২১

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………..উসাইদ ইবনে হুযায়র রা. থেকে বর্ণিত, একজন আনসারী বললেন, ইয়া রাসূলাল্লা! আপনি কি আমাকে অমুকের ন্যায় দায়িত্বে নিয়োজিত করবেন না? তিনি বললেন, তোমরা আমার ওফাতের পর অপরকে অগ্রাধিকার দেওয়া দেখতে পাবে, তখন তোমরা ধৈর্যধারণ করবে অবশেষে আমার সাথে সাক্ষাত করবে এবং তোমাদের সাথে সাক্ষাতের স্থান হল হাউযে কাউসার।

হাদীস নং ৩৫২২

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………..ইয়াইয়া ইবনে সাঈদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি যখন ইবনে মালিক রা.-এর সঙ্গে ওয়ালীদ (ইবনে আবদুল মালিক)-এর সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে বাসরা থেকে দামেস্ক সফর করতে গিয়েছিলেন, তখন তিনি আনাস রা.-কে বলতে শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহরাইনের জমি তাদের জন্য (জায়গীর হিসাবে) বরাদ্দ করার উদ্দেশ্যে আনসারদিগকে আহবান করলে তারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের মুহাজির ভাইদের জন্য এরূপ জায়গীর বরাদ্দ না করা পর্যন্ত আমরা তা গ্রহণ করব না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা যদি তা গ্রহণ করতে নাও চাও, তবে (কিয়ামতর ময়দানে) হাউযে কাউসারের নিকট আমার সাথে সাক্ষাত না হওয়া পর্যন্ত ধৈর্যধারণ করতে থাক। কেননা অচিরেই তোমরা দেখতে পাবে, আমার পরে তোমাদের উপর অন্যদেরকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে।

হাদীস নং ৩৫২৩

আদম রহ…………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে আল্লাহ ! আখিরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন। হে আল্লাহ ! আনসার ও মুহাজিরদের মঙ্গল করুন। কাতাদা রা. আনাস রা. সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এরূপ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন হে আল্লাহ ! আনসারকে ক্ষমা করে দিন।

হাদীস নং ৩৫২৪

আদম রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনসারগণ খন্দক যুদ্ধের পরিখা খননকালে বলছিলেন, আমরা হলাম ঐ সমস্ত লোক যারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে জিহাদের জন্য বায়আত করেছি যতদিন আমরা বেঁচে থাকব। এর উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আল্লাহ ! আখিরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন। (হে আল্লাহ) আনসারও মুহাজিরদের বৃদ্ধি করে দিন।

হাদীস নং ৩৫২৫

মুহাম্মদ ইবনে উবাইদুল্লাহ রহ………..সাহল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যখন পরিখা খনন করে আমাদের কাঁধে করে মাটি বহন করছিলাম, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহ ! প্রকৃত জীবন একমাত্র আখিরাতের জীবনই। মুহাজির ও আনসারদেরকে আপনি ক্ষমা করে দিন।

হাদীস নং ৩৫২৬

মুসাদ্দ রহ…………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, জনৈক (ক্ষুধার্ত) ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে এল। তিনি খাদ্য দ্রব্য কিছু আছে কিনা তা জানার জন্য) তাঁর সহধর্মিণীদের কাছে লোক পাঠালেন। তাঁরা জানালেন, আমাদের নিকট পানি ব্যতীত অন্য কিছু নেই। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কে আছ যে এই (ক্ষুধার্ত) ব্যক্তিকে মেহমান হিসাবে নিয়ে নিজের সাথে খাওয়াতে পার? তখন জনৈক আনসারী সাহাবী (আবু তালহা রা.) বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মেহমানকে সম্মান কর। স্ত্রী বললেন, (বাড়িতে) গেলেন এবং স্ত্রীকে বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মেহমানকে সম্মান কর। স্ত্রী বললেন, বাচ্চাদের আহার্য ব্যতীত আমাদের ঘরে কিছুই নেই। আনসারী বললেন, তুমি আহার প্রস্তুত কর এবং বাতি জ্বালাও এবং বাচ্চারা খাবার চাইলে তাদেরকে ঘুম পাড়িয়ে দাও। (স্বামীর কথা অনুযায়ী) সে বাতি জ্বালাল, বাচ্চাদেরকে ঘুম পাড়াল এবং সামান্য খাবার যা তৈরী ছিল তা উপস্থিত করল। (তারপর মেহমান সহ তারা খেতে বসলেন) বাতি ঠিক করার বাহানা করে স্ত্রী উঠে গিয়ে বাতিটি নিভিয়ে দিলেন। তারপর তারা স্বামী-স্ত্রী উভয়ই অন্ধকারের মধ্যে আহার করার মত শব্দ করতে লাগলেন এবং মেহমানকে বুঝাতে লাগলেন যে তারাও সঙ্গে খাচ্ছেন। তাঁরা উভয়েই (বাচ্চারাসহ) সারারাত অভুক্ত অবস্থায় কাটালেন। ভোরে যখন তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গেলেন, তখন তিনি বললেন, আল্লাহ তোমাদের গত রাতের কার্যকলাপ দেখে হেসে দিয়েছেন অথবা বলেছেন খুশী হয়েছেন এবং এ আয়াত নাযিল করেছেন। (আনসারদের অন্যতম গুণ হল এই) তারা অভাবগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও নিজেদের উপর অন্যদেরকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। আর যাদেরকে অন্তরের কার্পণ্য থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে, তারাই সফলকাম। (৫৯: ৯)।

হাদীস নং ৩৫২৭

মুহাম্মদ ইবনে ইয়াহইয়া আবু আলী রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন অন্তিম রোগে আক্রান্ত তখন আবু বকর ও আব্বাস রা. আনসারদের কোন একটি মজলিসের পাশ দিয়ে যাওয়ার কালে দেখতে পেলেন যে, তারা (সকলেই বসে বসে) কাঁদছেন। তাদের একজন জিজ্ঞাসা করলেন, আপনারা কাঁদছেন কেন? তাঁরা বললেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে আমাদের মজলিস স্মরণ করে কাঁদছি। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে আনসারদের অবস্থা বললেন, রাবী বললেন, (তা শুনে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাদরের কিনারা দিয়ে মাথা বেঁধে (ঘর থেকে) বেরিয়ে আসলেন এবং মিম্বরে উঠে বসলেন। এ দিনের পর আর তিনি মিম্বরে আরোহণ করেননি। তারপর হামদ ও সানা পাঠ করে সমবেত সাহাবীদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, আমি আনসারগণের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখার জন্য তোমাদিগকে নির্দেশ দিচ্ছি ; কেননা তাঁরাই আমার অতি আপনজন, তাঁরাই আমার বিশ্বস্ত লোক। তারা তাদের উপর আরোপিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পরিপূর্ণভাবে পালন করেছে। তাদের যা প্রাপ্য তা তাঁরা এখনো পায়নি। তাদের নেক লোকদের উত্তম কার্যকলাপ সাদরে গ্রহণ করবে এবং তাদের ত্রু টি বিচ্যুতি ক্ষমা করবে।

হাদীস নং ৩৫২৮

আহমদ ইবনে ইয়াকুব রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (অন্তিম পীড়ায় আক্রান্তকালে) একখানা চাদর গায়ে জড়িয়ে, চাদরের দু-প্রান্ত দু’কাধে পেঁচিয়ে এবং মাথার একটি কাল রঙের পাগড়ি বেঁধে (ঘর থেকে) বের হলেন এবং মিম্বরে উঠে বসলেন। হামদ ও সানার পর বললেন, হে লোক সকল, জনসংখ্যা উত্তর উত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকবে আর আনসারগণের সংখ্যা ক্রমশ: হ্রাস পেয়ে যাবে! এমনকি তারা খাদ্য-দ্রব্যে লবণের মত (সামান্য পরিমাণে) পরিণত হবে। তোমাদের মধ্যে যদি কেউ এমন ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব লাভ করে সে ইচ্ছা করলে কারো উপকার বা অপকার করতে পারে, তখন সে যেন নেককার আনসারদের নেক কার্যাবলী কবুল করে এবং তাদের ত্রু টি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে দেয়।

হাদীস নং ৩৫২৯

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আনসারগণ আমার অতি আপনজন ও বিশ্বস্ত লোক। সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকবে আর তাদের সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকবে। তাই তাদের নেককারদের উত্তম কার্যাবলী কবুল কর এবং তাদের ত্রু টি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে দাও।

হাদীস নং ৩৫৩০

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এক জোড়া রেশমী কাপড় হাদীয়া দেয়া হল। সাহাবা কেরাম রা. তা স্পর্শ করে এর কোমলতায় অবাক হয়ে গেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এর কোমলতায় তোমরা অবাক হচ্ছ ? অথচ সাদ ইবনে মুআয রা.-এর (জান্নাতে প্রদত্ত) রুমাল এর চেয়ে অনেক উত্তম, অথবা বলেছেন অনেক মুলায়েম। হাদীসটি কাতাদা ও যুহরী রহ. আনাস রা. সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৩৫৩১

মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ……….জাবির রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি সাদ ইবনে মুআয রা.-এর মৃত্যুতে আল্লাহ তায়ালার আরশ কেঁপে উঠে ছিল। আমাশ রহ………. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে, একব্যক্তি জাবির রা. বললেন, সাদ ও বারা রা.-এর গোত্রদ্বয়ের মধ্যে কিছুটা বিরোধ ছিল, (কিন্তু এটা ঠিক নয়) কেননা, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ‘আল্লাহর আরশ’ সাদ ইবনে মুআযের (মৃত্যুতে) কেঁপে উঠল বলতে শুনেছি।

হাদীস নং ৩৫৩২

মুহাম্মদ ইবনে আরআরা রহ………আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, কতিপয় লোক (বনী কুরায়যার ইয়াহূদীগণ) সাদ ইবনে মুআয রা.-কে সালিশ মেনে (দুর্গ থেকে) নেমে আসে (তিনি আহত ছিলেন) তাকে নিয়ে আসার জন্য লোক পাঠানো হল। তিনি গাধায় সাওয়ার হয়ে আসলেন। যখন (যুদ্ধকালীন অস্থায়ী) মসজিদের নিকটে আসলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি অথবা (বললেন) তোমাদের সরদার আসছেন তাঁর দিকে দাঁড়াও। তারপর তিনি বললেন, হে সাদ! তারা (বনী কুরায়যার ইয়াহূদীগণ) তোমাকে সালিশ মেনে (দুর্গ থেকে) বেরিয়ে এসেছে। সাদ রা. বললেন, আমি তাদের সম্পর্কে এ ফয়সালা দিচ্ছি যে, তাদের যোদ্ধাদেরকে হত্যা করা হোক এবং শিশু ও মহিলাদেরকে বন্দী করে রাখা হোক। (তাঁর ফয়সালা শুনে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি আল্লাহ তায়ালার ফায়সালা অনুযায়ী ফায়সালা দিয়েছ অথবা (বলে ছিলেন) তুমি বাদশাহর (আল্লাহর) ফায়সালা অনুযায়ী ফায়সালা করেছ।

হাদীস নং ৩৫৩৩

আলী ইবনে মুসলিম রহ…………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, দু’ব্যক্তি অন্ধকার রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট থেকে বের হলেন। হঠাৎ তারা তাদের সম্মুখে একটি উজ্জ্বল আলো দেখতে পেলেন। রাস্তায় তাঁরা যখন ভিন্ন হয়ে পড়লেন তখন আলোটিও তাদের উভয়ের সাথে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে গেল। মামার রহ. সাবিত রহ.-এর মাধ্যমে আনাস রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, এদের একজন উসাইদ ইবনে হুযায়র রা. এবং অপরজন এক আনসারী ব্যক্তি ছিলেন এবং হাম্মাদ রহ. সাবিত রহ.-এর মাধ্যমে আনাস রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, উসাইদ (ইবনে হুযায়র) ও আব্বাদ ইবনে বিশর রা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ছিলেন।

হাদীস নং ৩৫৩৪

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, কুরআন পাঠ শিক্ষা কর চারজনের নিকট থেকে : ইবনে মাসউদ আবু হুযায়ফার আযাদকৃত গোলাম সালিম , উবাই (ইবনে কাব) ও মুআয ইবনে জাবাল রা. থেকে।

হাদীস নং ৩৫৩৫

ইসহাক রহ……….আবু উসাইদ রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আনসার গোত্রগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠতম গোত্র হল, বানূ নাজ্জার তারপর বানূ আবদ-ই আশহাল, তারপর বানূ হারিস ইবনে খাযরাজ তারপর বানূ সায়িদা। আনসারদের সকল গোত্রের মধ্যেই খায়র ও কল্যাণ রয়েছে। তখন সাদ ইবনে উবাদা রা. বললেন, তিনি ছিলেন প্রথম যুগের অন্যতম মুসলমান। আমার ধারণা হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যদেরকে আমাদের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন (তদুত্তরে তাকে বলা হল, আপনাদেরকে বহু গোত্রের উপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।

হাদীস নং ৩৫৩৬

আবুল ওয়ালিদ রহ…………মাসরূক রহ. থেকে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা.-এর মজলিসে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর আলোচনা চলছিল। তখন তিনি বললেন, তিনি সে ব্যক্তি যাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বক্তব্য শুনার পর থেকে আমি অত্যন্ত ভালবাসি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কুরআন শিক্ষা কর চারজনের নিকট থেকে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (সর্বপ্রথম তিনি এ নামটি বললেন) সালিম আবু হুযাইফার আযাদকৃত গোলাম, মুআয ইবনে জাবাল ও উবাই ইবনে কাব রা.।

হাদীস নং ৩৫৩৭

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবাই ইবনে কাব রা.-কে বললেন, আল্লাহ সূরা لم يكن الذين كفروا তোমাকে পড়ে শুনানোর জন্য আমাকে আদেশ করেছেন। উবাই ইবনে কাব রা. জিজ্ঞাসা করলেন আল্লাহ আমার নাম উচ্চারণ করেছন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। তখন তিনি (আনন্দের আতিশয্যে) কাঁদলেন।

হাদীস নং ৩৫৩৮

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে (সর্বপ্রথম) যে চার ব্যক্তি সম্পূর্ণ কুরআনুল কারীম হিফয করছিলেন, তাঁরা সবাই ছিলেন আনসারী (তাঁরা হলেন) উবাই ইবনে কাব রা., মুআয ইবনে জাবাল রা., আবু যায়েদ রা. ও যায়েদ ইবনে সাবিত রা.। কাতাদা রা. বলেন, আমি আনাস রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আবু যায়েদ কে? তিনি বললেন, উনি আমার চাচাদের মধ্যে একজন।

হাদীস নং ৩৫৩৯

আবু মামার রহ………..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধের এক পর্যায়ে সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। তখন আবু তালহা রা. ঢাল হাতে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে প্রাচীরের ন্যায় অটল হয়ে দাঁড়ালেন। আবু তালহা রা. সুদক্ষ তীরন্দাজ ছিলেন। অনবরত তীর ছুড়তে থাকায় তাঁর হাতে ঐদিন দু’ বা তিনটি ধনুক ভেঙ্গে যায়। ঐ সময় তীর ভর্তি শরাধার নিয়ে যে কেউ তাঁর নিকট দিয়ে যেত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকেই বলতেন, তোমরা তীরগুলি আবু তালহার জন্য রেখে দাও। এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা উচু করে শত্রু দের অবস্থা অবলোকন করতে চাইলে আবু তালহা রা. বললেন, হে আল্লাহর নবী ! আমার মাতা পিতা আপনার জন্য কুরআন হউক, আপনি মাথা উচু করবেন না। হয়ত শত্রুদের নিক্ষিপ্ত তীর এসে আপনার গায়ে লাগতে পারে। আমার বক্ষ আপনাকে রক্ষা করার জন্য ঢাল স্বরূপ। আনাস রা. বলেন, ঐদিন আমি আবু বকর রা.-এর কন্যা আয়েশা রা.-কে এবং (আমার মাতা) উম্মে সুলাইমকে দেখতে পেলাম যে, তাঁরা পরিধেয় কাপড় এতটুকু পরিমাণ তুলে ফেলেছেন যে, তাদের পায়ের খাড়ু আমি দেখতে পাচ্ছিলাম। তাঁরা পানির মশক ভরে নিজেদের পিঠে বহন করে এনে আহতদের মুখে পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন। পুনরায় ফিরে গিয়ে পানি ভরে নিয়ে আহতদের কে পান করাচ্ছিলেন। ঐ সময় আবু তালাহ রা.-এর হাত থেকে (তন্দ্রাবেশে) তাঁর তরবারীখানা দু’বার অথবা তিনবার পড়ে গিয়েছিল।

হাদীস নং ৩৫৪০

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা. ব্যতীত ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী কারো সম্পর্কে এ কথাটি বলতে শুনিনি যে, ‘নিশ্চয়ই তিনি জান্নাতবাসী’। সাদ রা. বলেন, তাঁরই সম্পর্কে সূরা আহকাফের এ আয়াত নাযিল হয়েছে: ‘এ বিষয়ে বনী ইসরাঈলের মধ্য থেকেও একজন সাক্ষ্য প্রদান করেছে।

হাদীস নং ৩৫৪১

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….কায়েস ইবনে উবাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মদীনায় মসজিদে বসা ছিলাম। তখন এমন এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করলেন যার চেহারায় বিনয় ও নম্রতার ছাপ ছিল। (তাকে দেখে) লোকজন বলতে লাগলেন, এই ব্যক্তি জান্নাতিগণের একজন। তিনি, সংক্ষিপ্তাকারে দু’রাকআত সালাত আদায় করে মসজিদ থেকে বেরিয়ে এলেন। আমি তাকে অনুসরণ করলাম এবং তাকে বললাম, আপনি যখন মসজিদে প্রবেশ করছিলেন তখন লোকজন বলাবলি করছিল যে, ইনি জান্নাতবাসিগণের একজন। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম কারো জন্য এমন কথা বলা উচিত নয়, যা সে জানেনা। আমি তোমাকে প্রকৃত ঘটনাটি বলছি কেন ইহা বলা হয়। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায় একটি স্বপ্ন দেখে তাঁর নিকট বর্ণনা করলাম। আমি দেখলাম যে, আমি যেন একটি বাগানে মধ্যে একটি লোহার স্তম্ভ যার নিম্নভাগ মাটিতে এবং উর্ধ্বভাগ আকাশ স্পর্শ করেছে, স্তম্ভের উর্ধ্বে একটি শক্ত কড়া সংযুক্ত রয়েছে। আমাকে বলা হল, উর্ধ্বে আরোহণ কর। আমি বললাম, ইহা তো আমার সমর্থের বাইরে। তখন একজন খাদিম এসে পিছন দিক থেকে আমার কাপড় সমেত চেপে ধরে আমাকে আরোহণে সাহায্য করলেন। আমি চড়তে লাগলাম এবং উপরে গিয়ে আংটাটি ধরিলাম। তখন আমাকে বলা হল, শক্তভাবে আংটাটি আকড়ে ধর। তারপর কাড়াটি আমার হাতের মেঠায় ধারণ অবস্থায় আমি জেগে গেলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট স্বপ্নটি বললে, তিনি স্বপ্নটির (তাবীর হিসাবে) বললেন, এ বাগন হল ইসলাম, আর স্তম্ভটি হল ইসলামের খুটিসমূহ (করণীয় মৌলিক বিষয়াদি) কড়াটি হল (কুরআনে কারীম উল্লিখিত) ‘উরওয়াতুল উসকা’ (শক্ত ও অটুট কড়া) এবং তুমি আজীবন ইসলামের উপর অটল থাকবে। (রাবী বলেন) এই ব্যক্তি হলেন, আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা. খলীফা রহ. منصف এর স্থলে وصيف বলেছেন।

হাদীস নং ৩৫৪২

সুলাইমান ইবনে হারব রহ……….আবু বুরদা রা. বলেন, আমি মদীনায় গেলাম; আবদুল্লাহ ইবনে সালামের সাথে আমার সাক্ষাত হল। তিনি আমাকে বললন, তুমি আমাদের এখানে আসবে না? তোমাকে আমি খেজুর ও ছাতু খেতে দেব এবং একটি (মর্যাদাপূর্ণ) ঘরে থাকতে দেব। অতঃপর তিনি বললেন, তুমি এমন স্থানে (ইরাকে) বসবাস কর, যেখানে সুদের কারবার অত্যন্ত ব্যাপক। যখন কোন মানুষের নিকট তোমার কোন প্রাপ্য থাকে আর সেই মানুষটি যদি তোমাকে কিছু ঘাস, খড় অথবা খড়ের ন্যায় নগণ্য বস্তুর হাদীয়া পেশ করে তার তা গ্রহণ করো না, যেহেতু তা সুদের অন্তর্ভূক্ত। নযর রহ. আবু দাউদ রহ. ও ওয়াহাব রহ. শুবা রহ. থেকে بيت শব্দটি বর্ণনা করেননি।

হাদীস নং ৩৫৪৩

মুহাম্মদ ও সাদাকা রহ…………আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মারিয়াম আ. ছিলেন (তৎকালীন) নারী সমাজের শ্রেষ্ঠতমা নারী। আর খাদীজা রা. (এ উম্মতের) নারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ।

হাদীস নং ৩৫৪৪

সাঈদ ইবনে উফাইর রহ………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন সহধর্মিণীর প্রতি এতটুকু অভিমান প্রদর্শন করিনি ; যতটুকু খাদীজা রা.-এর প্রতি করেছি। কেননা, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর কথা বারবার আলোচনা করতে শুনেছি, অথচ আমাকে বিবাহ করার পূর্বেই তিনি ইন্তিকাল করেছিলেন। খাদীজা রা.-কে জান্নাতে মণি-মুক্তা খচিত একটি প্রাসাদের সু-সংবাদ দেয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আদেশ করেন। কোন দিন বকরী যবাহ হলে খাদীজা রা.-এর বান্ধবীদের নিকট তাদের প্রত্যেকের আবশ্যক পরিমাণ গোশত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীয়া স্বরূপ পাঠিয়ে দিতেন।

হাদীস নং ৩৫৪৫

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্য কোন সহধর্মিণীর প্রতি এতটুকু ঈর্ষা প্রকাশ করিনি, যতটুকু খাদীজা রা.-এর প্রতি করেছি। যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর আলোচনা অধিক করতেন। তিনি (আরো) বলেন, খাদীজা রা.-এর (ইন্তিকালের) তিন বছর পর তিনি আমাকে বিবাহ করেন। আল্লাহ স্বয়ং অথবা জিবরাঈল আ. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আদেশ করলেন যে, খাদীজা রা.-কে জান্নাতে মণিমুক্তা খচিত একটি প্রাসাদের সুসংবাদ দিন।

হাদীস নং ৩৫৪৬

উমর ইবনে মুহাম্মদ ইবনে হাসান রহ…………আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য অন্য কোন সহধর্মিণীর প্রতি এতটুকু অভিমান করিনি যতটুকু খাদীজা রা.-এর প্রতি করেছি। অথচ আমি তাকে দেখিনি। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কথা অধিক সময় আলোচনা করতেন। কোন কোন সময় বকরী যবেহ করে গোশতের পরিমাণ বিবেচনায় হাড়-মাংসকে ছোট ছোট টুকরা করে হলেও খাদীজা রা.-এর বান্ধবীদের ঘরে পৌঁছে দিতেন। আমি কোন সময় অভিমানের সূরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতাম, (আপনার অবস্থা দৃষ্টে) মনে হয়, খাদীজা রা. ব্যতীত পৃথিবীতে যেন আর কোন নারী নাই। প্রতি উত্তরে তিনি বলতেন, হ্যাঁ। তিনি এমন ছিলেন, এমন ছিলেন তাঁর গর্ভে আমার সন্তান জন্মেছিল।

হাদীস নং ৩৫৪৭

মুসাদ্দাদ রহ……….ইসমাঈল রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদীজা রা.-কে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছিলেন কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এমন একটি সুরম্য প্রাসাদের সুসংবাদ দিয়েছিলেন, যে প্রাসাদটি তৈরী করা হয়েছে এমন মুতী দ্বারা যার ভিতরদেশ ফাঁকা। আর সেখানে থাকবে না হৈ হুল্লোড়, কোন প্রকার ক্লেশ ও ক্লান্তি।

হাদীস নং ৩৫৪৮

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, জিবরাঈল আ. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে হাযির হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ যে খাদীজা রা. একটি পাত্র হাতে নিয়ে আসছেন। ঐ পাত্রে তরকারী, অথবা খাবার দ্রব্য অথবা পানীয় ছিল। যখন তিনি পৌঁছে যাবেন তখন তাকে তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এবং আমর পক্ষ থেকেও সালাম জানাবেন আর তাকে জান্নাতের এমন একটি সুরম্য প্রাসাদের সুসংবাদ দিবেন যার ভিতরদেশ ফাঁকা-মুতি দ্বারা তৈরী করা হয়েছে। সেখানে থাকবে না কোন প্রকার হট্টগোল; না কোন প্রকার ক্লেশ ও ক্লান্তি।

ইসমাঈল ইবনে খলীল রহ……..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার খাদীজার বোন হালা বিনতে খুওয়ায়লিদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসার অনুমতি চাইলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মনে করলেন খাদীজার অনুমতি প্রার্থনার কথা। এজন্য তিনি খুশী হয়ে বললেন, ইয়া আল্লাহ ! হালা (এর কি খবর?) আয়েশা রা. বললেন, এতে আমি অভিমান করে বললাম, আপনি কি কুরাইশ বংশের লাল গণ্ডধারী এক বৃদ্ধার স্মরণ করছেন, যে অনেক আগে মৃত্যুবরণ করেছে? আল্লাহ তো তার চেয়ে উত্তম মহিলা দান করেছেন।

হাদীস নং ৩৫৪৯

ইসহাক আল ওয়াসিতী রহ……….জারীর ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর গৃহে প্রবেশ করতে কোনদিন আমাকে বাঁধা প্রদান করেননি এবং যখনই আমাকে দেখেছেন মুচকি হাসি দিয়েছেন।
জারীর রা. আরো বলেন, জাহিলী যুগে (খাসআম গোত্রের একটি প্রতীমা রক্ষিত মন্দির) যুল-খালাসা নামে একটি ঘর ছিল। যাকে কাবায়ে ইয়ামানী ও কাবায়ে শামী বলা হত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি কি যুল-খালাসার ব্যাপারে আমাকে শান্তি পার? জারীর রা. বলেন, আমি আহমাস গোত্রের একশ পঞ্চাশ জন অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে যাত্রা করলাম, এবং (প্রতীমা ঘরটি) বিধ্বস্ত করে দিলাম। সেখানে যাদেরকে পেলাম হত্যা করে ফেললাম। ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সংবাদ শুনলাম। তিনি (অত্যন্ত খুশী হয়ে) আমাদের জন্য এবং আহমাস গোত্রের জন্য দু’আ করলেন।

হাদীস নং ৩৫৫০

ইসমাঈল ইবনে খালীল রহ………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধে (প্রথম দিকে) মুশরিকরা যখন চরমভাবে পরাজিত হয়ে পড়ল, তখন ইবলীস চীৎকার করে (মুসলমানগণকে) বলল, হে আল্লাহর বান্দাগণ ! পিছনের দিকে লক্ষ্য কর। তখন অগ্রবর্তী দল পিছন দিকে ফিরে (শত্রু দল মনে করে) নিজদলের উপর আক্রমণ করে বসল এবং একে অন্যকে হত্যা করতে লাগল। এমন সময় হুযায়ফা রা. পিছনের দলে তাঁর পিতাকে দেখতে পেয়ে চীৎকার করে বলতে লাগলেন, হে আল্লাহর বান্দাগণ, এই যে আমার পিতা, এই যে আমার পিতা। আয়েশা রা. বলেন, আল্লাহর কসম, কিন্তু তারা কেহই বিরত থাকেনি। শেষ পর্যন্ত তাকে হত্যা করে ফেলল। হুযায়ফা রা. বললেন, আল্লাহ তোমাদিগকে মাফ করে দিন। আমার পিতা উরওয়া রহ. বলেন, আল্লাহর কসম, এ কথার কারণে হুযায়ফা রা.-এর মধ্যে তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মঙ্গলের চিহ্ন বিদ্যমান ছিল।

হাদীস নং ৩৫৫১

মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, ওহী নাযিল হওয়ার পূর্বে একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার নিম্নাঞ্চলে বালদা নামক স্থানে যায়েদ ইবনে আমর ইবনে নুফায়েলের সাথে সাক্ষাত করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে আহার্য পূর্ণ একটি খানচা পেশ করা হল। তিনি তা থেকে কিছু খেতে অস্বীকৃতি জানালেন। এরপর যায়েদ রা. বললেন, আমিও ঐ সব জন্তুর গোশত খাই না যা তোমরা তোমাদের দেব-দেবীর নামে জবাই কর। আল্লাহর নামে জবাইকৃত অন্যের নামে যবাই করা জন্তুর গোশত আমি খাইনা। যায়েদ ইবনে আমর কুরাইশের যবাইকৃত জন্তু সম্পর্কে তাদের উপর দোষারোপ করতেন এবং বলতেন, বকরীকে সৃষ্টি করলেন আল্লাহ, তাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করলেন। ভূমি থেকে উৎপন্ন করলেন, তৃণ-লতা অথচ তোমরা আল্লাহ তায়ালার সমূহদান অস্বীকার করে প্রতিমার প্রতি সম্মান করে আল্লাহর নাম ছাড়া অন্যের নামে যবেহ করছ।
মূসা (সনদসহ) বলেন………. সালিম ইবনে আবদুল্লাহ রহ. আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। মূসা রহ. বলেন, আমার জানা মতে তিনি ইবনে উমর রা. থেকে এ ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন যে, যায়েদ ইবনে আমর সফিক তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত দীনের তালাশে সিরিয়ায় গমন করলেন। সে সময় একজন ইয়াহূদী আলেমের সাথে তাঁর সাক্ষাত হল। তিনি তার নিকট তাদের দীন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন এবং বললেন, হয়ত আমি তোমাদের দীনের অনুসারী হব, আমাকে সে সম্পর্কে অবহিত কর। তিনি বললেন, তুমি আমাদের দীন গ্রহণ করবেনা। গ্রহণ করলে যে পরিমাণ গ্রহণ করবে সে পরিমাণ আল্লাহর গযব তোমার উপর আপতিত হবে। যায়েদ বললেন, আমি তো আল্লাহর গযব থেকে পালিয়ে আসছি। আমি যথাসাধ্য, আল্লাহর সামান্যতম গযবকেও আমি বহন করব না। আর আমার কি ইহা বহনের শক্তি-সামর্থ্য আছে? তুমি কি আমাকে এ ছাড়া অন্য কোন পথের সন্ধান দিতে পার? সে বলল, আমি তা জানি না, তবে তুমি দীনে হানীফ গ্রহণ করে নাও। যায়েদ জিজ্ঞাসা করলেন। (দীনে) হানীফ কি? সে বলল, তাহল ইবরাহীম আ.-এর দীন। তিনি ইয়াহূদীও ছিলেন না নাসারাও ছিলেন না। তিনি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করতেন না। তখন যায়েদ বের হলেন এবং তাঁর সাথে একজন খৃষ্টান আলিমের সাক্ষাত হল। ইয়াহূদী আলিমের নিকট ইতিপূর্বে তিনি যা যা বলেছিলেন তার কাছেও তা বললেন। তিনি বললেন, তুমি আমাদের দীন গ্রহন করবেনা । গ্রহণ করলে যে পরিমাণ গ্রহণ করবে সে পরিমাণ আল্লাহর লানত তোমার উপর আপতিত হবে। যায়েদ বললেন, আমি তো আল্লাহর লানত থেকে পালিয়ে আসছি। আর আমি যথাসাধ্য সামান্যতম আল্লাহর লানত ও গযবও বহন করব না। তিনি বললেন, আমাদের ধর্মের যে পরিমাণ তুমি গ্রহণ করবে সে পরিমাণ আল্লাহর লানত তোমার উপর পড়বে। যায়েদ রা. বললেন, আমি তো আল্লাহর লানত থেকে পালিয়ে এসেছি এবং আমি আল্লাহর লানত ও গযবের সামান্যতম অংশ বহন করতে রাযী নই, এবং আমি কি তা বহনের শক্তি রাখি? তুমি কি আমাকে এ ছাড়া অন্য কোন পথের সন্ধান দেবে সে বলল, আমি অন্য কিছু জানিনা। শুধু এতটুকু বলতে পারি যে, তুমি দীনে হানিফ গ্রহণ কর। তিনি বললেন, হানীফ কি? উত্তরে তিনি বললেন তাহল ইবরাহীম আ.-এর দীন, তিনি ইয়াহূদীও ছিলেন না এবং খৃষ্টানও ছিলেন না। এবং আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করতেন না। যায়েদ যখন ইবরাহীম আ. সম্পর্কে তাদের মন্তব্য জানতে পারলেন, তখন তিনি বেরিয়ে পড়ে দু’হাত উঠিয়ে বললেন, হে আল্লাহ ! আমি তোমাকে সাক্ষী রেখে বলছি আমি দীনে ইবরাহীম আ.-এর উপর আছি। লায়স রহ. বলেন হিশাম তাঁর পিতা সূত্রে তিনি আসমা বিনতে আবু বকর রা. থেকে বর্ণনা করতে গিয়ে আমার কাছে লিখছেন যে, তিনি (আসমা) বলেন, আমি দেখলাম যায়েদ ইবনে আমর ইবনে নুফায়লকে কাবা শরীফের দেয়ালে পিঠ লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন এবং বলছেন, হে কুরাইশ গোত্র আল্লাহর কসম, আমি ব্যতীত তোমাদের কেউ-ই দীনে ইবরাহীমের উপর নেই। আর তিনি তো যেসব কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়ার জন্য নেওয়া হত তাদেরকে তিনি বাঁচাবার ব্যবস্থা করতেন। যখন কোন লোক তার কন্যা সন্তানকে হত্যা করার জন্য ইচ্ছা করত, তখন তিনি এসে বলতেন, হত্যা করো না আমি তার জীবিকার ব্যবস্থার ব্যয়ভার গ্রহণ করব। এ বলে তিনি শিশুটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসতেন। শিশুটি বড় হলে পরে তার পিতাকে বলতেন, তুমি যদি তোমার কন্যাকে নিয়ে যেতে চাও, তাহলে আমি দিয়ে দেব। আর তুমি যদি নিতে ইচ্ছুক না হও, তবে আমিই-এর যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করতে থাকব।

হাদীস নং ৩৫৫২

মাহমূদ রহ………..জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন কাবাগৃহ পুননির্মাণ করা হচ্ছিল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আব্বাস রা. (অন্যদের সাথে) পাথর বয়ে আনছিলেন। আব্বাস রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, তোমার লুঙ্গি কাঁধের উপর রাখ, পাথরের ঘর্ষণ হতে তোমাকে রক্ষা করবে। (লুঙ্গিটি খোলার সাথে সাথে) তিনি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন। তাঁর চোখ দুটি আকাশের দিকে নিবিষ্ট ছিল। (কিছুক্ষণ পর) তাঁর চেতনা ফিরে এল, তখন তিনি বলতে লাগলেন, আমার লুঙ্গি দাও। আমার লুঙ্গি দাও। তৎক্ষণাৎ তাঁর লুঙ্গি পরিয়ে দেয়া হল।

হাদীস নং ৩৫৫৩

আবু নুমান রহ……….আমর ইবনে দীনার ও উবায়দুল্লাহ ইবনে আবু ইয়াযীদ রহ. থেকে বর্ণিত, তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে কাবা গৃহের চতুষ্পার্শ্বে কোন প্রাচীর ছিল না। লোকজন কাবা গৃহকে কেন্দ্র করে তার চারপাশে সালাত আদায় করত। উমর রা. (তাঁর খিলাফত কালে) কাবার চতুষ্পার্শ্বে প্রাচীর নির্মাণ করেন। উবায়দুল্লাহ রহ. বলেন, এ প্রাচীর ছিল নীচু, আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. (তাঁর যুগে দীর্ঘ ও উচু) প্রাচীর নির্মাণ করেন।

হাদীস নং ৩৫৫৪

মুসাদ্দাদ রহ……….আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাহিলী যুগে আশুরার দিন কুরাইশরা ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম পালন করতেন। যখন হিজরত করে মদীনায় আগমন করলেন। তখন তিনি নিজেও আশুরার সাওম পালন করতেন এবং অন্যকেও তা পালনে আদেশ দিতেন। যখন রমযানের সাওম ফরয করা হল, (তখন আশুরার সাওম ঐচ্ছিক করে দেয়া হল)। তখন যারা ইচ্ছা রোযা রাখতেন আর যার ইচ্ছা রোযা রাখতেন না।

হাদীস নং ৩৫৫৫

মুসলিম রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজ্জের মাসগুলোতে উমরা পালন করাকে কুরাইশগণ পাপ কাজ বলে মনে করত। তারা মুহাররম মাসের নামকে পরিবর্তন করে সফর মাস নামে আখ্যায়িত করত এবং বলত, (উটের) যখম যখন শুকিয়ে যাবে এবং পদচিহ্ন মুছে যাবে তখন উমরা পালন করা হালাল হবে যারা তা পালন করত চায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সঙ্গী সাথীগণ যিলহাজ্ব মাসের চতুর্থ তারিখে হজ্জের তালবিয়া পড়তে পড়তে মক্কায় হাযির করে নেও। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমাদের জন্য কোন কোন বিষয় হালাল হবে? তিনি বললেন, যাবতীয় বিষয় হালাল হয়ে যাবে।

হাদীস নং ৩৫৫৬

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব রহ. তাঁর পিতার মাধ্যমে দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, জাহেলিয়্যাতের যুগে একটি মহা প্লাবন হয়েছিল। যদ্বারা মক্কায় দুটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থান সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়েছিল। সুফিয়ান রা. বলেন, আমর ইবনে দীনার বলতেন, এ হাদীসটির একটি দীর্ঘ কাহিনী রয়েছে।

হাদীস নং ৩৫৫৭

আবু নুমান রহ……….কায়েস ইবনে আবু হাযিম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আবু বকর রা. আহমাস গোত্রের যায়নাব নাম্নী জনৈক মহিলার নিকট গমন করলেন। তিনি গিয়ে দেখতে গেলেন, মহিলাটি কথাবার্তা বলছেন। তিনি (লোকজনকে) জিজ্ঞাসা করলেন, মহিলাটির এ অবস্থা কেন, কথাবার্তা বলছে না কেন? তারা তাকে জানালেন, এ মহিলা নীরব থেকে থেকে হজ্জ পালন করে আসছেন। আবু বকর রা. তাকে বললেন, কথা বল কেন না ইহা হালাল নয়। ইহা জাহেলিয়্যাত যুগের কাজ। তখন মহিলাটি কথাবার্তা বলল, জিজ্ঞাসা করল, আপনি কে? আবু বকর রা. উত্তরে বললেন, আমি একজন মুহাজির ব্যক্তি। মহিলাটি জিজ্ঞাসা করলেন, কোন কুরাইশের কোন শাখার আপনি? আবু বকর রা. বললেন, তুমি তো অত্যাধিক উত্তম প্রশ্নকারী। আমি আবু বকর রা.। তখন মহিলাটি তাকে জিজ্ঞাসা করল, জাহিলীয়্যাত যুগের পর যে উত্তম দীন ও কল্যাণময় জীবন বিধান আল্লাহ আমাদেরকে দান করেছেন সে দীনের উপর আমরা কতদিন সঠিকভাবে টিকে থাকতে পারব? আবু বকর রা. বললেন, যতদিন তোমাদের ইমামগণ তোমাদেরকে নিয়ে দীনের উপর অবিচল থাকবেন। মহিলা জিজ্ঞাসা করল, ইমামগণ কারা? আবু বকর রা. বললেন, তোমাদের গোত্রে ও সমাজে এমন সম্ভ্রান্ত ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ কি দেখনি। যারা আদেশ করলে সকলেই তা মেনে চলে। মহিলা উত্তর দিল, হ্যাঁ। আবু বকর রা. বললেন, এরাই হলেন জনগণের ইমাম।

হাদীস নং ৩৫৫৮

ফারওয়া ইবনে আবুল মাগলা রহ……….আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আরবের কোন এক গোত্রের জনৈকা (মুক্তিপ্রাপ্ত)কৃষ্ণকায় মহিলা ইসলাম গ্রহণ করেন। (বসবাসের জন্য) মসজিদের পাশে ছির তার একটি ছোট ঘর। আয়েশা রা. বলেন, সে আমাদের নিকট আসত এবং আমাদের সাথে (নানা রকমের) কথাবার্তা বলত, যখন তার কথাবার্তা শেষ হত তখন প্রায়ই বলত, ইয়াওমুল বিশাহ (মণিমুক্তা খচিত হারের দিন) আমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আশ্চর্যজনক ঘটনাবলীর একটি দিন জেনে রাখুন। আমার প্রতিপালক আমাকে কুফর এর দেশ থেকে নাজাত দিয়েছেন। সে এ কথাটি প্রায়ই বলত। একদিন আয়েশা রা. ঐ মহিলাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়ামুল বিশাহ কি? তখন সে বলল, যে আমার মুনীবের পরিবারের জনৈকা শিশু কন্যা ঘর থেকে বের হল। তার গলায় চামড়ায় (উপর মনিমুক্তা খচিত) একটি হার ছিল। হারটি (ছিড়ে) গলা থেকে পড়ে গেল। তখন একটি চিল একে গোশতের টুকরা মনে করে ছো মেরে নিয়ে গেল। তারা আমাকে হার চুরির সন্দেহে শাস্তি ও নির্যাতন করতে লাগল। শেষ পর্যন্ত তারা আমার লজ্জা স্থানে তল্লাশী চালাল। যখন তারা আমার চারপাশে ছিল এবং আমি চরম বিষাদে ছিলাম। এমন সময় একটি চিল কোথা হতে উড়ে আসল এবং আমাদের মাথার উপরে এসে হারটি ফেলে দিল। তারা হারটি তুলে নিল। তখন আমি বললাম, এটা সেই হার যে হার চুরির অপরাধে আমার উপর অপবাদ দিয়েছ, অথচ এ ব্যাপারে আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ।

হাদীস নং ৩৫৫৯

কুতাইবা রহ……..ইবনে উমর রা. সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাবধান ! যদি তোমাদের শপথ করতে হয় হবে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে শপথ করো না। লোকজন তাদের বাপ-দাদার নামে শপথ করত। তিনি বললেন, সাবধান ! বাপ-দাদার নামে শপথ করো না।

হাদীস নং ৩৫৬০

ইয়াহইয়া ইবনে সুলাইমান রহ………আমর রহ. থেকে বর্ণিত যে, আবদুর রাহমান ইবনে কাসিম রা. তার কাছে বলেছেন যে, কাসিম জানাযা বহনকালে আগে আগে চলতেন। জানাযা দেখলে তিনি দাঁড়াতেন না এবং তিনি বর্ণনা করছেন যে, আয়েশা রা. বলতেন, জাহিলী যুগে মুশরিকগণ জানাযা দেখলে দাঁড়াত এবং মৃত ব্যক্তির রূহকে লক্ষ্য করে বলত, তুমি তোমার আপনজনদের সাথেই রয়েছ যেমন তোমার জীবদ্দশায় ছিলে। এ কথাটি তারা দু’বার বলত।

হাদীস নং ৩৫৬১

আমর ইবনে আব্বাস রহ……..আমর ইবনে মায়মূন রহ. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, উমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলেন, মুশরিকগণ সাবীর পাহাড়ের উপর সূর্যকিরণ পতিত না হওয়া পর্যন্ত মুযদালিফা থেকে রাওয়ানা হত না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যোদয়ের পূর্বে রাওয়ানা হয়ে তাদের প্রথার বিরোধিতা করেন।

হাদীস নং ৩৫৬২

ইসহাক ইবনে ইবরাহীম রহ………ইকরিমা রহ. বলেন, আল্লাহর বাণী: এর তাফসীর প্রসংগে বলেন, শরাব পরিপূর্ণ এবং একের পর এক পেয়ালা। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, আমার পিতা আব্বাস রা.-কে ইসলাম পূর্বে যুগে বলতে শুনেছি, আমাদেরকে পাত্র পূর্ণ শরাব একের পর এক পান করাও।

হাদীস নং ৩৫৬৩

আবু নুআইম রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সর্বাধিক সঠিক বাক্য যা কোন কবি বলেছেন তা হল লাবীদ এর এ পংক্তিটি – সাবধান, আল্লাহ ব্যতীত সকল জিনিসই বাতিল ও অসার। এবং কবি উমাইয়্যা ইবনে আবু সালত (তার কথাবার্তার মধ্য দিয়ে) ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল।

হাদীস নং ৩৫৬৪

ইসমাঈল রহ………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু বকর রা.-এর একজন ক্রীতদাস ছিল। সে প্রত্যহ তার উপর নির্ধারিত কর আদায় করত। আর আবু বকর রা. তার দেওয়া কর থেকে আহার করতেন। একদিন সে কিছু খাবার জিনিস এনে দিল। তা থেকে তিনি আহার করলেন। তারপর গোলাম বলল, আপনি জানেন কি ইহা কিভাবে উপার্জন করা হয়েছে যা আপনি খেয়েছেন? তিনি বললেন, বলত ইহা কি? গোলাম উত্তরে বলল, আমি জাহিলী যুগে এক ব্যক্তির ভবিষ্যৎ গণনা করে দিয়েছিলাম। কিন্তু ভবিষ্যৎ গণনা করা আমার উত্তমরূপে জানা ছিল না। তথাপি প্রতারণামূলকভাবে ইহা করেছিলাম। (কিন্তু ভাগ্যচক্রে আমার গণনা সঠিক হল) আমার সাথে তার সাক্ষাত হলে গণনার বিনিময়ে এ দ্রব্যাদি সে আমাকে হাদীয়া দিল যা থেকে আপনি আহার করলেন। আবু বকর রা. ইহা শুনামাত্র মুখের ভিতর হাত ঢুকিয়ে দিয়ে বমি করে দিলেন এবং পাকস্থলীর মধ্যে যা কিছু ছিল সবই বের করে দিলেন।

হাদীস নং ৩৫৬৫

মুসাদ্দাদ রহ………..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইসলাম পূর্ব যুগের মানুষ হাবালুল হাবালা রূপে উটের গোশত ক্রয়-বিক্রয় করত। রাবী বলেন, হাবালুল হাবালার অর্থ হল- তারা উট ক্রয়-বিক্রয় করত এই শর্তে যে কোন নির্দিষ্ট গর্ভবতী উটনী বাচ্চা প্রসব করলে পর ঐ প্রসব কৃত বাচ্চা যখন গর্ভবতী হবে তখন উটের মূল্য পরিশোধ করা হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে এরূপ ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করে দিলেন।

হাদীস নং ৩৫৬৬

আবু নুমান রহ……….গায়লান ইবনে জারীর রহ. থেকে বর্ণিত, আমরা আনাস ইবনে মালিক রা. এর কাছ থেকে তিনি আমাদের কাছে আনসারদের ঘটনা বর্ণনা করতেন। রাবী বলেন, আমাকে লক্ষ্য করে তিনি বলতেন, তোমার স্বজাতি অমুক অমুক দিন অমুক অমুক কাজ করেছে, অমুক অমুক দিন অমুক অমুক কাজ করেছে।

হাদীস নং ৩৫৬৭

আবু মামার রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সর্বপ্রথম কাসামা হত্যাকারী গোত্রের লোকের (শপথ গ্রহণ) জাহিলী যুগে অনুষ্ঠিত হয় আমাদের হাশেম গোত্রে। (এতদ সম্পর্কীয় ঘটনা হল এই) কুরাইশের কোন একটি শাখা গোত্রের একজন লোক বানূ হাশিমের একজন মানুষ (উমর ইবনে আলকামা) কে মজুর হিসাবে নিয়োগ করল। ঐ মজুর তার সাথে উটগুলির নিকট গমন করল। ঘটনাক্রমে বনূ হাশিমের অপর এক ব্যক্তি তাদের নিকট দিয়ে যাচ্ছিল। তাদের নিকটবর্তী হওয়ার পর খাদ্য ভর্তি বস্তার বাঁধন ছিড়ে গেল। তখন সে মজুর ব্যক্তিটিকে বলল, আমাকে একটি রশি দিয়ে সাহায্য কর, যেন তা দিয়ে আমার বস্তার মুখ বাঁধতে পারি এবং উটটিও যেন পালিয়ে যেতে না পারে। মজুর তাকে একটি রশি দিল। ঐ ব্যক্তি তার বস্তার মুখ বেঁধে নিল। যখন তারা অবতরণ করল তখন একটি ব্যতীত সকল উট বেঁধে রাখা হল। মজুর নিযুক্তকারী ব্যক্তি মজুরকে জিজ্ঞাসা করল, সকল উট বাঁধা হল কিন্তু এ উটটি বাঁধা হল না কেন? মজুর উত্তরে বলল, এ উটটি বাঁধার কোন রশি নেই। তখন সে বলল, এই উটটির রশি কোথায়? রাবী বলেন, এ কথা শুনে মালিক মজুরকে লাঠি দিয়ে এমনভাবে আঘাত করল যে শেষ পর্যন্ত এ আঘাতেই তার মৃত্যু হল। আহত মজুরটি যখন মমূর্ষ অবস্থায় মৃত্যুর প্রহর গুনছিল, তখন ইয়ামানের একজন লোক তার নিকট দিয়ে যাচ্ছিল। আহত মজুরটি বলল, আপনি কি এবার হজ্জে যাবেন? সে বলল, না, তবে অনেকবার গিয়েছি। আহত মজুরটি বলল, আপনি কি আমার সংবাদটি আপনার জীবনের যে কোন সময় পৌঁছে দিতে পারেন? ইয়ামানী লোকটি উত্তরে বলল, হ্যা তা পারব। তারপর মজুরটি বলল, আপনি যখন হজ্জ উপলক্ষে মক্কায় উপস্থিত হবেন তখন হে কুরাইশের লোকজন বলে ঘোষণা দিবেন।যখন তারা আপনার ডাকে সাড়া দিবে, তখন আপনি বনূ হাশিম গোত্রকে ডাক দিবেন, যদি তারা আপনার ডাকে সাড়া দেয়, তবে আপনি তাদেরকে আবু তালিব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন এবং তাকে পেলে জানিয়ে দিবেন, অমুক ব্যক্তি (উটের মালিক) একটি রশির কারণে আমাকে হত্যা করেছে। কিছুক্ষণ পর আহত মুজরটি মৃত্যুবরণ করল। মজুর নিয়োগকারী ব্যক্তিটি যখন মক্কায় ফিরে এল্ তখন আবু তালিব তার নিকট গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন। আমাদের ভাইটি কোথায়? তার কি হয়েছে? এখনও ফিরছেনা কে? সে বলল, আপনার ভাই হঠাৎ ভীষণ রোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত মারা গেছে। আমি যথাসাধ্য সমাহিত সেব শুশ্রুষা করেছি। (কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে মারাই গেল)। মারা যাওয়ার পর আমি তাকে যথারীতি সমাহিত করেছি। আবু তালিব বললেন, তুমি এরূপ করবে আমরা এ আশাই পোষণ করি। এভাবে কিছুদিন কেটে গেল। তারপর ঐ ইয়ামানী ব্যক্তি যাকে সংবাদ পৌঁছে দেয়ার জন্য মজুর ব্যক্তিটি অসিয়অত করেছি, হজ্জব্রত পালনে মক্কায় উপস্থিত হল এবং (পূর্ব অঙ্গীকার অনুযায়ী) হে কুরাইশগণ বলে ডাক দিল। তখন তাকে বলা হল, এই যে, কুরাইশ। সে আবার বলল, হে বনূ হাশিম, বলা হল, এই যে, বনূ হাশিম। সে জিজ্ঞাসা করল, আবু তালিব কোথায়? লোকজন আবু তালিবকে দেখিয়ে দিল। তখন ইয়ামানী লোকটি বলল, আপনাদের অমুক ব্যক্তি আপনার নিকট এ সংবাদটি পৌঁছে দেয়ার জন্য আমাকে অসিয়াত করেছিল যে, অমুক ব্যক্তি একটি রশির কারণে তাকে হত্যা করেছে। (সে ঘটনাটিও সবিস্তারে বর্ণনা করল) এ কথা শুনে আবু তালিব মজুর নিয়োগকারী ব্যক্তির নিকট গমন করে বলল, (তুমি আমাদের ভাইকে হত্যা করেছ) কাজেই আমাদের তিনটি প্রস্তাবের যে কোন একটি তোমাকে মেনে নিতে হবে। তুমি হয়ত হত্যার বিনিময় স্বরূপ একশ উট দিবে অথবা তোমার গোত্রের বিশ্বাসযোগ্য পঞ্চাশ জন লোক হলফ করে বলবে যে তুমি তাকে করনি। যদি তুমি এসব করতে অস্বীকার কর তবে আমরা তোমাকে হত্যার বিনিময়ে হত্যা করব। তখন হত্যাকারী ব্যক্তিটি স্ব-গোত্রীয় লোকদের নিকট গমন করলে মহিলা যার বিবাহ হত্যাকারীর গোত্রে হয়েছিল এবং তার একটি সন্তানও হয়েছিল, আবু তালিবের নিকট এসে বলল, হে আবু তালিব, আমি এ আশা নিয়ে এসেছি যে, আপনি পঞ্চাশজন হলফকারী থেকে আমার এ সন্তানটিকে রেহাই দিবেন এবং ঐ স্থানে তার হলফ নিবেননা যে স্থানে হলফ নেয়া হয়। (অর্থাৎ রুকনে ইয়ামীনী ও মাকামে ইবরাহীমের মধ্যবর্তী স্থান) আবু তালিব তার আবদরটি মনজুর করলেন। তারপর হত্যাকারীর গোত্রের জনৈক পুরুষ আবু তালিবের নিকট এসে বলল, হে আবু তালিব, আপনি একশ উটের পরিবর্তে পঞ্চাশ জনের হলফ নিতে চাচ্ছেন, এ হিসাব অনুযায়ী প্রতিটি হলফকারীর উপর দুটি উট পড়ে। আমার দুটি উট গ্রহণ করুন এবং আমাকে অব্যাহতি দেন। অপর আট চল্লিশজন এসে যথাস্থানে হলফ করল। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, আল্লাহর কসম, হলফ করার পর একটি বছর অতিবাহিত হওয়ার পূর্বেই ঐ আটচল্লিশ জনের একজনও বেঁচে ছিলাম।

হাদীস নং ৩৫৬৮

উবাইদ ইবনে ইসমাঈল রহ………আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বুআস যুদ্ধ এমন একটি যুদ্ধ ছিল যা আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুকূলে (হিজরতের পূর্বেই সংঘটিত করেছিলেন। এ যুদ্ধের কারণে তারা (মদীনাবাসীরা) বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত হয়েছিল এবং এদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এই যুদ্ধে নিহিত ও আহত হয়েছিল। আল্লাহ তায়ালা এ যুদ্ধ ঘটিয়ে ছিলেন এ কারণে যেন তারা ইসলাম গ্রহণ করে নেয়। ইবনে ওহাব রহ……….ইবনে আব্বাস রা. বলেন, সাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তী বাতনে ওয়াদী নামক স্থানে সাঈ (দৌড়ান) করা সুন্নত নয়। জাহেলী যুগের লোকেরাই শুধু সেখানে সাঈ করতে এবং বলত, আমরা বাতহা নামক স্থানটি দ্রুত দৌঁড়িয়ে অতিক্রম করব।

হাদীস নং ৩৫৬৯

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ আল-জুফী রহ………..আবুসসাফর রহ. বলেন, আমি ইবনে আব্বাস রা.-কে এ কথা বলতে শুনেছি, হে লোক সকল! আমি যা বলছি তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ কর এবং তোমরা যা বলতে চাও তাও আমাকে শুনাও এবং এমন যেন না হয় যে তোমরা এখান থেকে চলে গিয়ে বলবে ইবনে আব্বাস এরূপ বলেছেন। (অতঃপর ইবনে আব্বাস রা. বললেন) যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করতে ইচ্ছা করে সে যেন হিজর এর বাহির থেকে তাওয়াফ করে এবং এ স্থানকে হাতীম বলবেনা কারণ, জাহেলীয়াতের যুগে কোন ব্যক্তি ঐ জায়গাটিতে তার চাবুক, জুতা তীর ধনু ইত্যাদি নিক্ষেপ করে হলফ করত।

হাদীস নং ৩৫৭০

নুআইম ইবনে হাম্মাদ রহ………..আমর ইবনে মায়মূন রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জাহিলীয়্যাতের যুগে দেখেছি, একটি বানর ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার কারণে অনেকগুলো বানর একত্রিত হয়ে প্রস্তর নিক্ষেপে তাকে হত্যা করল। আমিও তাদের সাথে প্রস্তর নিক্ষেপ করলাম।

হাদীস ৩৫৭১

হাদীস নং ৩৫৭২

আহমদ ইবনে আবু রাজা রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর যখন (ওহী) নাযিল করা হয় তখন তাঁর বয়স ছিল চল্লিশ বছর। এরপর তিনি মক্কায় তের বছর অবস্থান করেন। তারপর তাকে হিজরতের আদেশ দেওয়া হয়। তিনি হিজরত করে মদীনায় চলে গেলেন এবং তথায় দশ বছর অবস্থান করলেন, তারপর তাঁর ওফাত হয়।

হাদীস নং ৩৫৭৩

আল-হুমায়দী রহ………..খাব্বাব রা. বলেন, আমি (একবার) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেদমতে হাযির হলাম। তখন তিনি তাঁর নিজের চাদরকে বালিশ বানিয়ে কাবা গৃহের ছায়ায় বিশ্রাম গ্রহণ করছিলেন। (যেহেতু) আমরা মুশরিকদের পক্ষ থেকে কঠিন নির্যাতন ভোগ করছিলাম। তাই আমি বললাম, আপনি কি (আমাদের শান্তি ও নিরাপত্তার) জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করবেন না? তখন তিনি উঠে বসলেন এবং তাঁর চেহারা রক্তিম বর্ণ হয়ে গেল। তখন তিনি বললেন, তোমাদের পূর্ববর্তী ঈমানদারদের মধ্যে কারো কারো শরীরের হাড় পর্যন্ত সমস্ত মাংস ও শিরা উপশিরাগুলি লোহার চিরুনী দিয়ে আঁচড়ে বের করে ফেলা হত। কিন্তু এসব নির্যাতনও তাদেরকে দীন থেকে বিমুখ করতে পারত না। তাদের মধ্যে কারো মাথার মধ্যবর্তী স্থানে করাত স্থাপন করে তাকে দ্বিখণ্ডিত করে ফেলা হত। কিন্তু এ নির্যাতনও তাদেরকে তাদের দীন থেকে ফিরাতে পারত না। আল্লাহর কসম, আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই দীনকে পরিপূর্ণ করবেন, ফলে একজন উষ্ট্রারোহী সানআ (শহর) থেকে হাযারামাউত পর্যন্ত একাকী ভ্রমণ করবে। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে সে ভয় করবে না। রাবী আরো অতিরিক্ত বর্ণনা করেন এবং তার মেষ পালের উপর নেকড়ে বাঘের আক্রমণে সে ভয় করবে না।

হাদীস নং ৩৫৭৪

সুলাইমান ইবনে হারব রহ……….আবদুল্লাহ রা. (ইবনে মাসউদ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা আন-নাজম তিলাওয়াত করে সিজদা করলেন। তখন এক ব্যক্তি ব্যতীত (উপস্থিত) সকলেই সিজদা করলেন। ঐ ব্যক্তিকে আমি দেখলাম, সে এক মুষ্টি কংকর তুলে নিয়ে তার উপর সিজদা করল এবং সে বলল, আমার জন্য এরূপ সিজদা করাই যথেষ্ট। (আবদুল্লাহ রা. বলেন) পরবর্তীকালে আমি তাকে কাফির অবস্থায় (বদর যুদ্ধে) নিহত হতে দেখেছি।

হাদীস নং ৩৫৭৫

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……….আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদা করলেন। তার আশেপাশে কুরাইশের কয়েকজন লোক বসেছিল। এমন সময় উকবা ইবনে আবু মুয়াইত (যবাইকৃত) উটের নাড়ীভুঁড়ি নিয়ে উপস্থিত হল এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিঠের উপর নিক্ষেপ করল। ফলে তিনি তাঁর মাথা উঠাতে পারলেন না। (সংবাদ পেয়ে) ফাতিমা রা. এসে তাঁর পিঠের উপর থেকে তা সরিয়ে দিলেন এবং যে এ কাজটি করেছে তার জন্য বদ দু’আ করলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মাথা উঠিয়ে) বললেন, ইয়া আল্লাহ ! পাকড়াও কর কুরাইশ নেতৃবৃন্দকে–আবু জেহেল ইবনে হিশাম, উৎবা ইবনে রাবিয়া, শায়বা ইবনে রাবিয়া, উমাইয়া ইবনে খালফ অথবা উবাই ইবনে খালাফ। উমাইয়া ইবনে খালফ না উবাই ইবনে খালফ এ বিষয়ে (শুবা রাবী সন্দেহ করেন) (ইবনে মাসউদ রা. বলেন) আমি এদের সবাইকে বদর যুদ্ধে নিহত অবস্থায় দেখেছি। উমাইয়া অথবা উবাই ব্যতীত এদের সবাইকে সে দিন একটি কূপে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তার গ্রন্থিগুলি এমনভাবে ছিন্নভিন্ন হয়েছিল যে তাকে কূপে নিক্ষেপ করা যায়নি।

হাদীস নং ৩৫৭৬

উসামান ইবনে আবু শায়বা রহ……..সাঈদ ইবনে জুবাইর রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুর রাহমান ইবনে আবযা রা. একদিন আমাকে আদেশ করলেন যে, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. কে এ আয়াত দুটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কর, এর অর্থ কি? আয়াতটি হল এই : ‘আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন, যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করবে না। এবং যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করে’। আমি ইবনে আব্বাস রা. কে জিজ্ঞাসা করলাম, তখন তিনি বললেন, যখন সূরা আল-ফুরকানের আয়াতটি নাযিল করা হল তখন মক্কার মুশরিকরা বলল, আমরা তো মানুষকে হত্যা করেছি যা আল্লাহ হারাম করেছেন এবং আল্লাহর সাথে অন্যকে মাবুদ হিসাবে শরীক করেছি। আরো নানা জাতীয় অশ্লীল কাজ কর্ম করেছি। তখন আল্লাহ তায়ালা নাযিল করলেন, ‘কিন্তু যারা তাওবা করেছে এবং ঈমান এনেছে…………সুতরাং এ আয়াতটি তাদের প্রযোজ্য। আর সূরা নিসার যে আয়াতটি রয়েছে তা। ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে যে ইসলাম ও তার বিধি-বিধানকে জেনে বুঝে কবুল করার পর কাউকে (ইচ্ছাকৃত) হত্যা করেছে। তখন তার শাস্তি, জাহান্নাম। তারপর মুজাহিদ রহ. কে আমি এ বিষয় জানালাম। তিনি বললেন, তবে যদি কেউ অনুতপ্ত হয়…….।

হাদীস নং ৩৫৭৭

আইয়্যাশ ইবনে ওয়ালিদ রহ………উরওয়া ইবনে যুবাইর রহ. বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. এর নিকট বললাম, মক্কার মুশরিক কর্তৃক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সর্বাপেক্ষা কঠোর আচরণের বর্ণনা দিন। তিনি বললেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবা শরীফের (পশ্চিম পার্শ্বস্থ) হিজর নামক স্থানে সালাত আদায় করছিলেন। তখন উকবা ইবনে আবু মুআইত এল এবং তার চাদর দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কণ্ঠনালী পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে ফেলল। তখন আবু বকর রা. এগিয়ে এসে উকবাকে কাঁধে ধরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট থেকে সরিয়ে দিলেন এবং বললেন, তোমরা এমন ব্যক্তিকে হত্যা করতে চাও যিনি বলেন, একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই আমাদের প্রতিপালক।

হাদীস নং ৩৫৭৮

আবদুল্লাহ ইবনে হাম্মাদ আমুলী রহ………..আম্মার ইবনে ইয়াসির রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এমন অবস্থায় (ইসলাম গ্রহণের জন্য) সাক্ষাত করলাম যে, তখন তাঁর সঙ্গে (ইসলাম গ্রহণ করেছেন) এমন পাঁচজন কৃতদাস, দুইজন মহিলা ও আবু বকর রা. ব্যতীত অন্য কেউ ছিলনা।

হাদীস নং ৩৫৭৯

ইসহাক রহ……….সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা. বলেন, যেদিন আমি ইসলাম গ্রহণ করলাম, সেদিনের পূর্বে অন্য কেউ ইসলাম গ্রহণ করেনি। আর আমি সাতদিন পর্যন্ত বয়স্কদের মধ্যে ইসলাম গ্রহণকারী হিসাবে তৃতীয় ব্যক্তি ছিলাম।

হাদীস নং ৩৫৮০

উবায়দুল্লাহ ইবনে সাদ রহ……….মা’ন ইবনে আবদুর রাহমান রহ. আমি মাসরূক রহ. কে জিজ্ঞাসা করলা যে, রাতে জ্বিনরা মনোযোগের সাথে কুরআন শ্রবণ করেছিল ঐ রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাদের উপস্থিতি সম্পর্কে সংবাদটি কে দিয়েছিল? তিনি বললেন, তোমার পিতা আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ রা.) আমাকে বলেছেন যে, তাদের উপস্থিতির সংবাদ একটি বৃক্ষ দিয়েছিল।

হাদীস নং ৩৫৮১

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ…………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অজু ও ইস্তিনজার কাজে ব্যবহারের জন্য পানি ভর্তি একটি পাত্র বহন করে পিছনে পিছনে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ তিনি তাকিয়ে বললেন, কে ? আমি বললাম, আমি আবু হুরায়রা। তিনি বললেন, আমাকে কয়েকটি পাথর তালাশ করে দাও। আমি উহা দ্বারা ইস্তিনজা করব। তবে, হাঁড় এবং গোবর আনবে না। আমি আমার কাপড়ের কিনারায় করে কয়েকটি পাথর এনে তাঁর নিকটে রেখে দিলাম এবং আমি তথা হতে কিছুটা দূরে সরে গেলাম। তিনি যখন ইস্তিনজা থেকে অবসর হলেন, তখন আমি অগ্রসর হয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, হাড় ও গোবর এর বিয়ষ কি? তিনি বললেন, এগুলো জ্বিনের খাদ্য। আমার নিকট নাসীবীন নামক জায়গা থেকে জ্বিনের একটি প্রতিনিধি দল এসেছিল। তারা উত্তম জ্বিন ছিল। তারা আমার কাছে খাদ্যদ্রব্যের প্রার্থনা জানাল। তখন আমি আল্লাহর নিকট দু’আ করলাম যে, যখন কোন হাড় বা গোবর (তাদের) হস্তগত হয় তখন যেন উহাতে তাদের খাদ্যদ্রব্য পায়।

হাদীস নং ৩৫৮২

আমর ইবনে আব্বাস রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আবির্ভাবের সংবাদ যখন আবু যার রা.-এর নিকট পৌঁছল, তখন তিনি তাঁর ভাই (উনাইস) কে বললেন, তুমি এই উপত্যকায় যেয়ে ঐ ব্যক্তির সম্পর্কে জেনে আস যে ব্যক্তি নিজেকে নবী বলে দাবী করছেন ও তাঁর কাছে আসমান থেকে সংবাদ আসে। তাঁর কথাবার্তা মনোযোগ সহকারে শুন এবং ফিরে এসে আমাকে শুনাও। তাঁর ভাই (মক্কামুখী) রওয়ানা হয়ে ঐ ব্যক্তির নিকট পৌঁছে তাঁর কথাবার্তা শোনালেন। এরপর তিনি আবু যারের নিকট প্রত্যাবর্তন করে বললেন, আমি তাকে দেখেছি যে, তিনি উত্তম স্বভাব অবলম্বন করার জন্য (লোকদেরকে) নির্দেশ দান করছেন এবং এমন কালাম (পড়তে শুনলাম) যে পদ্য নয়। এতে আবু যার রা. বললেন, আমি যে উদ্দেশ্যে তোমাকে পাঠিয়েছিলাম সে বিষয়ে তুমি আমাকে সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারলেনা। আবু যার রা. সফরের উদ্দেশ্যে যৎসামান্য পাথেয় সংগ্রহ করলেন এবং একটি ছোট্র পানির মশকসহ মক্কায় উপস্থিত হলেন। মসজিদে হারামে প্রবেশ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তালাশ করতে লাগলেন। তিনি তাকে (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) চিনতেন না। আবার কাউকে তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করাও পছন্দ করলেন না। এমতাবস্থায় রাত হয়ে গেল। তিনি (মসজিদে) শুয়ে পড়লেন। আলী রা. তাকে দেখে বুঝতে পারলেন যে, লোকটি বিদেশী মুসাফির। যখন আবু যার আলী রা.-কে দেখলেন, তখন তিনি তাঁর পিছনে গেলেন। কিন্তু সকাল পর্যন্ত একে অন্যকে কোন কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করলেন না। আবু যার রা. পুনরায় তাঁর পাথেয় ও মশক নিয়ে মসজিদে হারামের দিকে চলে গেলেন। এ দিনটি এমনিভাবে কেটে গেল, কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে পেলেন না। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল। তিনি (পূর্ব দিনের) শোয়ার জায়গায় ফিরে গেলেন। তখন আলী রা. তাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, এখন কি মুসাফির ব্যক্তির গন্তব্য স্থানের সন্ধান লাভের সময় হয়নি? সে এখনও এ জায়গায় অবস্থান করছে। তিনি তাকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন। (পথিমধ্যে) কেউ কাউকে কোন কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করলেন না। এমতাবস্থায় তৃতীয় দিন হয়ে গেল। আলী রা. পূর্বের ন্যায় তাঁর পাশ দিয়ে যেতে লাগলেন। তিনি তাকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন। এরপর তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন। তুমি কি আমাকে বলবেনা কি জিনিস এখানে আসতে তোমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে? আবু যার রা. বললেন, তুমি যদি আমাকে সঠিক পথ প্রদর্শনের পাকা পোক্তা অঙ্গীকার কর তবেই আমি তোমাকে বলতে পারি। আলী রা. অঙ্গীকার করলেন এবং আবু যার রা. ও তাঁর আগমনের উদ্দেশ্য বর্ণনা করলেন। আলী রা. বললেন, তিনি সত্য, তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ভোর হয়ে যাবে তখন তুমি আমার অনুসরণ করবে। তোমার জন্য ভয়ের কারণ আছে এমন যদি কোন কিছু আমি দেখতে থাকি তবে তুমিও আমার অনুসরণ করতে থাকবে এবং যে ঘরে আমি প্রবেশ করি সে ঘরে তুমিও প্রবেশ করবে। আবু যার রা. তাই করলেন আলী রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে প্রবেশ করলেন এবং তিনিও তাঁর (আলীর) সাথে প্রবেশ করলেন। তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথাবার্তা শোনালেন এবং ঐ স্থানেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তোমাদের স্বগোত্রে ফিরে যাও এবং আমার নির্দেশ না পৌঁছা পর্যন্ত আমার ব্যাপারে তাদেরকে অবহিত করবে। আবু যার রা.বললেন, ঐ সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, আমি আমার ইসলাম গ্রহণকে মুশরিকদের সম্মুখে উচ্চস্বরে ঘোষণা করব। এই বলে তিনি বেরিয়ে পড়লেন ও মসজিদে হারামে গিয়ে উপস্থিত হলেন এবং উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করলেন, أشهد أن لآ إله إلا الله وأشهد أن محمدا رسول الله (ইহা শোনামাত্র মুশরিক) লোকজন (উত্তেজিত হয়ে) তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং প্রহার করতে করতে তাকে মাটিতে ফেলে দিল। এমন সময় আব্বাস রা. এসে তাকে আগলিয়ে রাখলেন এবং বললেন, তোমাদের বিপদ অনিবার্য। তোমরা কি জাননা, এ লোকটি গিফার গোত্রের? আর তোমাদের ব্যবসায়ী দলগুলোকে গিফার গোত্রের নিকট দিয়েই সিরিয়া যাতায়াতে করতে হয়। একথা বলে তিনি তাদের হাত থেকে আবু যারকে রক্ষা করলেন। পরদিন ভোরে তিনি অনুরূপ বলতে লাগলেন। লোকেরা তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে বেদম প্রহার করতে লাগল। আব্বাস রা. এসে আজো তাকে রক্ষা করলেন।

হাদীস নং ৩৫৮৩

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………..কায়েস রহ. বলেন, আমি সাঈদ ইবনে যায়েদ ইবনে আমর ইবনে নুফাইল রা.-কে কুফার মসজিদে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন, আল্লাহর কসম, উমরের ইসলাম গ্রহণের পূর্বে আমার ইসলাম গ্রহণের কারণে তাঁর হাতে আমাকে বন্দী অবস্থায় দেখেছি। তোমরা উসমান রা.-এর সাথে যে ব্যবহার করলে এ কারণে যদি উহুদ পাহাড় দীর্ণ-বিদীর্ণ হয়ে যায় তবে তা হওয়া সঙ্গতই হবে।

হাদীস নং ৩৫৮৪

মুহাম্মদ ইবনে কাসীর রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর রা. যেদিন ইসলাম গ্রহণ করলেন ঐ দিন থেকে আমরা সর্বদা প্রভাব প্রতিপত্তির আসনে সমাসীন রয়েছি।

হাদীস নং ৩৫৮৫

ইয়াহইয়া ইবনে সুলাইমান রহ………..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাঁর পিতা উমর রা. (ইসলাম গ্রহণের পর,) একদিন নিজ গ্রহে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় অবস্থান করছিলেন। যখন আবু আমর আস ইবনে ওয়াইল সাহমী তাঁর কাছে আসলেন তার গায়ে ছিল ধারিদার চাদর ও রেশমী জরির জামা। তিনি বানু সাহম গোত্রের লোক ছিলেন। জাহেলী যুগে তারা আমাদের হালীফ (বিপদ কালে সাহায্যের চুক্তি যাদের সাথে করা হয়) ছিল। আস উমর রা. কে জিজ্ঞাসা করলেন আনার অবস্থা কেমন? উমর রা. উত্তর দিলেন। তোমার গোত্রের লোকজন ইসলাম গ্রহণ করার কারণে অচিরেই আমাকে হত্যা করবে। ইহা শুনে আস রা. বললেন, তোমাকে কোন কিছু করার শক্তি ও ক্ষমতা তাদের নেই। তার কথা শুনে উমর রা. বললেন, তোমার কথা শুনে আমি শঙ্কাহীন হলাম। আস বেরিয়ে পড়লেন এবং দেখতে পেলেন, মক্কা ভূমি লোকে লোকারণ্য। তিনি তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা কোথায় যাচ্ছ? তারা বলল, আমরা উমর ইবনুল খাত্তাবের নিকট যাচ্ছি, যে নিজ ধর্ম ত্যাগ করে বিধর্মী হয়ে গেছে। আস বললেন, তার নিকট যাওয়া, তাকে কোন কিছু করার ক্ষমতা তোমাদের নেই। এতে লোকজন ফিরে গেল।

হাদীস নং ৩৫৮৬

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, যখন উমর রা. ইসলাম গ্রহণ করলেন, তখন লোকেরা তাঁর গ্রহের পাশে সমবেত হল এবং বলতে লাগল, উমর স্বধর্ম ত্যাগ করেছে। আমি তখন ছোট বালক। আমাদের ঘরের ছাদে দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য দেখতে ছিলাম। তখন একজন লোক এসে বলল, তার গায়ে রেশমী জুব্বা ছিল, উমর স্বধর্ম ত্যাগ করেছে, (তাতে কার কিছু হল?) তবে এ সমাবেশ কিসের আমি তাকে আশ্রয় দিচ্ছি। ইবনে উমর রা. বলেন, তখন আমি দেখলাম, লোকজন চারদিকে ছত্রভঙ্গ হয়ে চলে গেল। তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ লোকটি কে? লোকেরা বলল, ইনি আস ইবনে ওয়াইল।

হাদীস নং ৩৫৮৭

ইয়াহইয়া ইবনে সুলাইমান রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যখনই উমর রা. কে কোন ব্যপারে এ কথা বলতে শুনেছি যে, আমার ধারণা হয় ব্যাপারটি হবে, তাকে তার ধারণা মত ব্যাপারটি সংঘটিত হয়েছে। একবার উমর রা. বসা ছিলেন, এমন সময় একজন সুদর্শন ব্যক্তি তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। উমর রা. বললেন, আমার ধারণা ভুলও হতে পারে তবে আমার মনে হয় লোকটি জাহিলী ধর্মাবলম্বী অথবা ভবিষ্যৎ গণনাকারীও হতে পারে। লোকটিকে আমার কাছে নিয়ে এস। তাকে তাঁর কাছে ডেকে আনা হল। উমর রা. তার ধারণার কথা তাকে শোনালেন। তখন সে বলল, একজন মুসলিমের পক্ষ থেকে বলা হল যা আজকার মত আর কোন দিন দেখেনি। উমর রা. বললেন, আমি তোমাকে কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, তুমি আমাকে তোমার ব্যাপারটা খুলে বল। সে বলল, জাহিলী যুগে আমি তাদের ভবিষ্যৎ গণনাকারী ছিলাম। উমর রা. বললেন, জ্বিনেরা তোমাকে যে সব কথাবার্তা বলেছে, তন্মধ্যে কোন কথাটি তোমার নিকট সর্বাধিক বিস্ময়কর ছিল। সে বলল, আমি একদিন বাজারে অবস্থান করছিলাম। তখন একটি মহিলা জ্বিন আমার নিকট আসল। আমি তাকে ভীত-সন্ত্রস্ত দেখতে পেলাম। তখন সে বলল, তুমি কি জ্বিন জাতির অবস্থা দেখছনা, তারা কেমন দুর্বল হয়ে পড়ছে? তাদের মধ্যে হতাশা ও বিমুখ হওয়ার চিহ্ন পরিলক্ষিত হচ্ছে। তারা ক্রমশ: উট ওয়ালাদের এবং চাদর জুব্বা পরিধানকারীদের (আরববাসী) অনুগত হয়ে পড়ছে। উমর রা. বললেন, সে সত্য কথা বলেছে। আমি একদিন তাদের দেবতাদের কাছে ঘুমন্ত ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি একটি গরুর বাছুর নিয়ে হাযির হল এবং সেটা যবাই করে দিল। ঐ সময় এক ব্যক্তি এমন বিকট চীৎকার করে উঠল, যা আমি আর কখনও শুনিনি। সে চীৎকার করে বলছিল, হে জলীহ! একটি স্বাভাবিক কল্যাণময় ব্যাপারে অচিরেই প্রকাশ লাভ করবে। তা হল- একজন বিশুদ্ধভাষী লোক বলবেনা; لآ إله إلا أنت (এ ঘোষণা শুনে উপস্থিত) লোকজন ছুটাছুটি করে পলায়ন করল। আমি বললাম, এ ঘোষণার রহস্য উদঘটন অবশ্যই করব। তারপর আবার ঘোষণা দেওয়া হল। হে জলীহ ! একটি স্বাভাবিক ও কল্যাণময় ব্যাপার অতি সত্বর প্রকাশ পাবে। তাহল একজন বাগ্মী ব্যক্তি لآ إله الله এর প্রকাশ্যে ঘোষণা দিবে। তারপর আমি উঠে দাঁড়ালাম। এর কিছুদিন পরেই বলা হল যে, তিনিই নবী।

হাদীস নং ৩৫৮৮

মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ…………কায়েস রহ. বলেন, আমি সাঈদ ইবন যায়েদ রা.-কে তাঁর কওমকে লক্ষ্য করে এ কথা বলতে শুনেছি যে, আমি দেখেছি উমর রা. আমাকে এবং তার বোন ফাতিমাকে ইসলাম গ্রহণ করার কারণে বেঁধে রেখেছেন। তখন তিনি ইসলাম গ্রহণ করেননি। তোমরা উসমান রা.-এর সাথে যে অসদাচরণ করেছ তার কারণে যদি উহুদ ভেঙ্গে পড়ে তবে যা হওয়াটাই স্বাভাবিক।

হাদীস নং ৩৫৮৯

আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল ওয়াহাব রহ………..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, মক্কাবাসী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর নবুওয়াতের নিদর্শন হিসাবে কোনরূপ মুজিযা দেখানোর দাবী জানাল। তিনি তাদেরকে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করে দেখালেন। এমনকি তারা চাঁদের দু’খণ্ডের মধ্যখানে হেরা পর্বতকে দেখতে পেল।

হাদীস নং ৩৫৯০

আবদান রহ………..আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয় তখন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে মিনায় অবস্থান করছিলাম। তিনি আমাদিগকে বললেন, তোমরা সাক্ষী থাক। তখন আমরা দেখলাম, চাদের একটি খণ্ড হেরা পর্বতের দিকে চলে গেল। আবু যুহা মাসরূকের বরাত দিয়ে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয় মক্কা শরীফে।

হাদীস নং ৩৫৯১

উসমান ইবনে সালিহ রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল।

হাদীস নং ৩৫৯২

উমর ইবনে হাফস রহ………..আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে) চাঁদ খণ্ডিত হয়েছিল।

হাদীস নং ৩৫৯৩

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ আল-জুফী রহ………..উবায়দুল্লাহ ইবনে আদী ইবনে খিয়ার রহ. উরওয়া ইবনে যুবাইরকে বলেন যে, মিসওয়ার ইবনে মাখরামা এবং আবদুর রাহমান ইবনে আসওয়াদ ইবন আবদ ইয়াগুস রা. উভয়ই তাকে বলেন, (হে উবায়দুল্লাহ) তুমি তোমার মামা উসমান রা. সাথে তার (বৈপিত্রেয়) ভাই ওয়ালীদ ইবনে উকবা সম্পর্কে কোন আলাপ-আলোচনা করছ না কেন? জনগণ তার বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করছে। উবায়দুল্লাহ বলেন, উসমান রা. যখন সালাতের উদ্দেশ্যে মসজিদে আসছিলেন তখন আমি তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম এবং তাকে উদ্দেশ্যে করে বললাম, আপনার সাথে আমার কথা বলার প্রয়োজন আছে এবং তা আপনার মঙ্গলার্থেই। তিনি বললেন, ওহে, আমি তোমা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি তখন ফিরে আসলাম এবং যখন সালাত সমাপ্ত করলাম, তখন মিসওয়ার ও ইবনে আবদ ইয়াগুস রা.-এর নিটক যেয়ে বললাম, এবং উসমান রা. কে আমি যা বলেছি এবং তিনি যে উত্তর দিয়েছেন তা উভয়কে শুনালাম। তারা বললেন, তোমার উপর যে দায়িত্বও কর্তব্য ছিল তা তুমি আদায় করেছ। আমি তাদের নিকট বসাই আমি এ সময় উসমান র.-এর পক্ষ থেকে একজন দূত আমাকে ডেকে নেওয়ার জন্য আসলেন। তারা দু’জন আমাকে বললেন, আল্লাহ তোমাকে পরীক্ষায় ফেলেছেন। আমি চললাম এবং উসমান রা.-এর নিকট প্রবেশ করলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি উপদেশ যা তুমি কিছুক্ষণ পূর্বে বলতে চেয়েছিলে? তখন আমি কালিমা শাহাদত পাঠ করে (তাকে উদ্দেশ্যে করে) বললাম, আল্লাহর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রাসূলরূপে প্রেরণ করেছেন, তাঁর উপর কিতাব অবতীর্ণ তাঁর উপর ঈমান এনেছেন, এবং প্রথম দুহিজরাতে (মদীনা ও হাবশা) আপনি অংশ গ্রহণ করেছেন, আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহচর্য লাভ করেছেন এবং তাঁর স্বভাব-চরিত্র স্বচক্ষে দেখেছেন। জনসাধারণ ওয়ালিদ ইবনে উকবার ব্যাপারে অনেক সমালোচনা করছে, আপনার কর্তব্য তাঁর উপর বিধান দণ্ড জারি করা। উসমান রা. আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে ভাহিজা, তুমি কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পেয়েছ? আমি বললাম, না, পাইনি। তবে তাঁর বিষয় আমার নিকট এমনভাবে নিরঙ্কুশ পৌঁছেছে যেমনভাবে কুমারী মেয়েদের নিকট পর্দার অন্তরালে সংবাদ পৌঁছে থাকে। উবায়দুল্লাহ রহ. বলেন, উসমান রা. কালিমা শাহাদত পাঠ করলেন, এবং বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, তার উপর কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ডাকে সাড়া দিয়েছেন তাদের মধ্যে আমিও ছিলাম। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যা সহ প্রেরণ করা হয়েছিল আমি তাঁর প্রতি ঈমান এনেছি। ইসলামের প্রথম যুগের দু’হিজরতে অংশগ্রহণ করেছি যেমন তুমি বলছ। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহচর্য লাভ করেছি, তাঁর হাতে বায়আত করেছি। আল্লাহর কসম, আমি তাঁর নাফরমানী করিনি। তাঁর সাথে প্রতারণা করিনি। এমতাবস্থায় তাঁর ওফাত হয়ে যায়। তারপর আল্লাহ তায়ালা আবু বকর রা. কে খলীফা নিযুক্ত করলেন। আল্লাহর কসম, আমি তাঁরও নাফরমানী করিনি, তাঁর সাতে প্রতারণা করিনি। তারপর উমর রা খলীফা মনোনীত হলেন। আল্লাহর কসম, আমি তাঁরও অবাধ্য হইনি, তাঁর সাথে প্রতারণা করিনি। তিনিও ওফাত প্রাপ্ত হলেন। এবং তারপর আমাকে খলীফা নিযুক্ত করা হল। আমার উপর তাদের বাধ্য থাকার যে রূপ হক ছিল তোমাদের উপর তাদের ন্যায় আমার প্রতি বাধ্য থাকার কি কোন হক নাই? উবায়দুল্লাহ বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই হক আছে। উসমান রা. বললেন, তাহলে এসব কথাবার্তা কি, তোমাদের পক্ষ থেকে আমার নিকট আসছে? আর ওয়ালীদ ইবনে উকবা সম্পর্কে তুমি যা বললে, সে ব্যাপারে আমি অতি সত্বর সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করব ইনশাআল্লাহ। অতঃপর তিনি ওয়ালীদকে চল্লিশটি বেত্রাঘাত করার রায় প্রদান করলেন এবং ইহা কার্যকরী করার জন্য আলী রা. কে আদেশ করলেন। তৎকালে অপরাধীদেরকে শাস্তি প্রদানের দায়িত্বে আলী রা. নিযুক্ত ছিলেন। ইউনুস এবং যুহরির ভাতিজা যুহরী সূত্রে যে বর্ণনা করেন তাতে রয়েছে; তোমাদের উপর আমার কি হক নেই যেমনটি হক ছিল তাদের জন্য।

হাদীস নং ৩৫৯৪

মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন উম্মে হাবীবা ও উম্মে সালামা রা. তাঁর সাথে আলোচনা করল যে তাঁরা হাবশায় (ইথিওপিয়া) খৃষ্টানদের একটি গির্জা দেখে এসেছেন। সে গির্জায় নানা রকমের চিত্র অঙ্কিত রয়েছে। তাঁরা দু’জন এসব কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে উল্লেখ করলেন। তখন তিনি বললেন, (এদের অভ্যাস ছিল যে,) তাদের কোন নেককার লোক মারা গেলে তার কবরের উপর মসজিদ (উপাসনালয়) নির্মাণ করত এবং এসব ছবি অঙ্কিত করে রাখত, এরাই কিয়ামতের দিনে আল্লাহর নিকট সর্বনিকৃষ্ট সৃষ্টি হিসাবে পরিগণিত হবে।

হাদীস নং ৩৫৯৫

হুমাইদী রহ……….উম্মে খালিদ (বিনতে খালিদ)রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যখন হাবশা থেকে মদীনায় আসলাম তখন আমি ছোট বালিকা ছিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে একটি চাদর পরিয়ে দিলেন যাতে ডোরা কাটা ছিল। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ডোরাগুলির উপর হাত বুলাতে লাগলেন এবং বলতে ছিলেন সানাহ-সানাহঃ হুমাইদী রহ. বলেন, অর্থাৎ সুন্দর সুন্দর।

হাদীস নং ৩৫৯৬

ইয়াহইয়া ইবনে হাম্মাদ রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (ইসলামের প্রাথমিক যুগে) সালাতে রত থাকা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমরা সালাম করতাম, তিনিও আমাদের সালামের উত্তর দিতেন। যখন আমরা নাজাশীর (হাবশা) কাছ থেকে ফিরে এলাম, তখন সালাতে রত অবস্থায় তাকে সালাম করলাম, কিন্তু তিনি সালামের জবাব দিলেন না। আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমরা (সালাতের মধ্যে) আপনাকে সালাম করতাম এবং আপনিও সালামের উত্তর দিতেন। কিন্তু আজ আপনি আমাদের সালামের জবাব দিলেন না? তিনি বললেন, সালাতের মধ্যে আল্লাহর দিকে নিবিষ্টতা থাকে। রাবী বলেন, আমি ইবরাহীম নাখয়ীকে জিজ্ঞাসা করলাম, (সালাতের মধ্যে কেউ সালাম করলে) আপনি কি করেন? তিনি বললেন, আমি মনে মনে জবাব দিয়ে দেই।

হাদীস নং ৩৫৯৭

মুহাম্মদ ইবনে আলা রহ……….আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের নিকট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আবির্ভাবের সংবাদ এসে পৌঁছল। তখন আমরা ইয়ামানে অবস্থান করছিলাম। আমরা একটি নৌকায় আরোহণ করলাম। কিন্তু (প্রতিকূল বাতাসের কারণে) আমাদের নৌকা (গন্তব্য স্থানের দিকে না পৌঁছে) হাবশায় নাজাশীর নিকট নিয়ে গেল। সেখানে জাফর ইবনে আবু তালিবের রা সাথে সাক্ষাৎ হল। আমরা তাঁর সাথে অবস্থান করতে লাগলাম কিছুদিন পর আমরা সেখান থেকে রওয়ানা হলাম। এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খায়বর বিজয় করলেন তখন আমরা তাঁর সাথে মিলিত হলাম। আমাদেরকে দেখে তিনি বললেন, হে নৌকারোহীগণ, তোমাদের জন্য দুটি হিজরতের মর্যাদা রয়েছে।

হাদীস নং ৩৫৯৮

আবুর রাবী রহ………..জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন নাজাশীর (আসহাম) মৃত্যু হল তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আজ একজন সৎ ব্যক্তি মারা গেছেন। উঠ, এবং তোমাদের (ধর্মীয়) ভাই আসহামার জন্য জানাযার সালাত আদায় কর।

হাদীস নং ৩৫৯৯

আবদুল আলা ইবনে হাম্মাদ রহ………..জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজাশীর উপর জানাযার সালাত আদায় করেন। আমরাও তাঁর পিছনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে গেলাম। আমি দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় কাতারে ছিলাম।

হাদীস নং ৩৬০০

আবদুল্লাহ ইবনে আবু শায়বা রহ………….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসহাম নাজাশীর জানাযার সালাত আদায় করেন এবং চারবার তাকবীর বলেন।

হাদীস নং ৩৬০১

যুহাইর ইবনে হাবর রহ……….আবদুর রাহমান ও ইবনে মুসাইয়ার রহ. বলেন, আবু হুরায়রা রা. তাদেরকে বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে হাবশা (ইথিওপিয়া)-এর বাদশাহ নাজাশীর মৃত্যু সংবাদ সেদিন শোনালেন, যেদিন মারা গিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, তোমরা তোমাদের (দীনী) ভাই এর জন্য মাগফিরাত কামনা কর।
আবু হুরায়রা রা. থেকে এরূপও বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবা কেরামকে নিয়ে ঈদগাহে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ালেন এবং নাজাশীর উপর জানাযার সালাত আদায় করলেন এবং তিনি চারবার তাকবীরও উচ্চারণ করলেন।

হাদীস নং ৩৬০২

আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনায়ন যুদ্ধে যাওয়ার ইচ্ছা করলেন, তখন তিনি বললেন, আমরা আগামীকাল খায়ফে বনী কেনানায় অবতরণ করব ইনশা আল্লাহ যেখানে তারা (কুরাইশ) সকলে কুফর ও শিরক এর উপর অটল থাকার শপথ গ্রহণ করেছিল।

হাদীস নং ৩৬০৩

মুসাদ্দাদ রহ………..আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব রা. বলেন, আমি একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি আপনার চাচা আবু তালিবের কি উপকার করলেন অথচ তিনি (জীবিত থাকাবস্থায়) আপনাকে দুশমনের সকল আক্রমণ ও ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে হিফাযত করেছেন। (আপনাকে যারা কষ্ট দিয়েছে) তাদের বিরুদ্ধে তিনি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হতেন। তিনি বললেন, সে জাহান্নামে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত আগুনে আছে। যদি আমি না হতাম তবে সে জাহান্নামের সর্ব নিম্ন স্তরে অবস্থান করত।

হাদীস নং ৩৬০৪

মাহমূদ রহ………..ইবনে মুসাইয়্যাব তার পিতা মুসাইয়্যাব রহ. থেকে বর্ণনা করেন, যখন আবু তালিবের মুমুর্ষ অবস্থা তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট গেলেন। আবু জেহেলও তার নিকট বসা ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে লক্ষ্য করে বললেন, চাচাজান, কালেমাটি একবার পড়ুন, তাহলে আপনি আপনার জন্য আল্লাহর নিকট কথা বলতে পারব। তখন আবু জেহেল ও আবদুল্লাহ ইবনে উমাইয়া বলল, হে আবু তালিব! তুমি কি আবদুল মুত্তালিবের ধর্ম থেকে ফিরে যাবে? এরা দু’জন তার সাথে এ কথাটি বারবার বলতে লাগল। সর্বশেষ আবু তালিব তাদের সাথে যে কথাটি বলল, তাহল আমি আবদুল মুত্তালিবের মিল্লাতের উপরেই আছি। এ কথার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকব যে পর্যন্ত আপনার ব্যাপারে আমাকে নিষেধ করা না হয়। এ প্রসঙ্গে এ আয়াতটি নাযিল হল: আত্মীয় স্বজন হলেও মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা নবী এবং মুমিনদের পক্ষে সংগত নয়- যখন তা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, নিশ্চিতই তারা জাহান্নামী। (৯ : ১১৩) আরো নাযিল হল : আপনি যাকে ভালবাসেন ইচ্ছা করলেই সৎপথে আনতে পারবেন না। (২৮: ৫৬)।

হাদীস নং ৩৬০৫

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………..আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, যখন তাঁরই সামনে তাঁর চাচা আবু তালিবের আলোচনা করা হল, তিনিই বললেন, আশা করি কিয়ামতের দিনে আমার সুপারিশ তাঁর উপকারে আসবে। অর্থাৎ আগুনের হালকা স্তরে তাকে নিক্ষেপ করা হবে, যা তার পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত পৌঁছবে এবং এতে তার মগয বলকাবে।

হাদীস নং ৩৬০৬

ইবরাহীম ইবনে হামযা রহ……….ইয়াযিদ রহ. ও এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং আরো বলেছেন, এর তাপে মস্তিস্কের কেন্দ্র পর্যন্ত বলকাতে থাকবে।

হাদীস নং ৩৬০৭

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………..জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, যখন (মিরাজের ব্যাপারে) কুরাইশরা আমাকে অস্বীকার করল, তখন আমি কাবা শরীফের হিজর অংশে দাঁড়ালাম। আল্লাহ তায়ালা তখন আমার সম্মুখে বায়তুল মুকাদ্দাসকে প্রকাশ করে দিলেন, যার ফলে আমি দেখে বায়তুল মুকাদ্দাসের সমূহ নিদর্শনগুলো তাদের কাছে বর্ণনা করছিলাম।

হাদীস নং ৩৬০৮

হুদবা ইবনে খালিদ রহ………..মালিক ইবনে সা’সা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রাতে ভ্রমণ করানো হয়েছে সে রাতের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, একদা আমি কাবা ঘরের হাতিমের অংশে ছিলাম। কখনো কখনো রাবী (কাতাদা) বলেছেন, হিজরে শুয়েছিলাম। হঠাৎ একজন আগন্তুক আমার নিকট এলেন এবং আমার এস্থান থেকে সে স্থানের মধ্যবর্তী অংশটি চিরে ফেললেন। রাবী কাতাদা বলেন, আনাস রা. কখনো কাদ্দা (চিরলেন) শব্দ আবার কখনো শাক্কা(বিদীর্ণ) শব্দ বলেছেন। রাবী বলেন, আমি আমার পার্শ্বে বসা জারূদ রহ. কে জিজ্ঞাসা করলাম, এ দ্বারা কী বুঝিয়েছেন? তিনি বললেন, হলকূমের নিম্নদেশ থেকে নাভী পর্যন্ত। কাতাদা রহ. বলেন, আমি আনাস রা-কে এ-ও বলতে শুনেছি বুকের উপরিভাগ থেকে নাভির নীচ পর্যন্ত। তারপর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন) আগন্তুক আমার হৃদপিন্ড বের করলেন। তারপর আমার নিকট একটি স্বর্ণের পাত্র আনা হল যা ঈমানে পরিপূর্ণ ছিল। তারপর আমার হৃদপিন্ডটি (যমযমের পানি দ্বারা) ধৌত করা হল এবং ঈমান দ্বারা পরিপূর্ণ করে যথাস্থানে পুনরায় রেখে দেয়া হল। তারপর সাদা রং এর একটি জন্তু আমার নিকট আনা হল। যা আকারে খচ্চর থেকে ছোট ও গাধা থেকে বড় ছিল? জারুদ তাকে বলেন, হে আবু হামযা, ইহাই কি বুরাক? আনাস রা. বললেন, হ্যাঁ। সে একেক কদম রাখে দৃষ্টির শেষ প্রান্তে। আমাকে তার উপর সাওয়ার করানো হল। তারপর আমাকে নিয়ে জিবরাঈল আ. চললেন, প্রথম আসমানে নিয়ে এসে দরজা খোলে দিতে বললেন, জিজ্ঞাসা করা হল ইনি কে? তিনি বললেন, জিবরাঈল। আবার জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আবার জিজ্ঞাসা করা হল, তাকে কি ডেকে পাঠান হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন বলা হল, তার জন্য খোশ-আমদেদ, উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। তারপর আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হল। আমি যখন পৌঁছলাম, তখন তথায় আদম আ. এর সাক্ষাত পেলাম। জিবরাঈল আ. বললেন, ইনি আপনার আদি পিতা আদম আ. তাকে সালাম করুন। আমি তাকে সালাম করলাম। তিনি সালামের জবাব দিলেন এবং বললেন, নেককার পুত্র ও নেককার নবীর প্রতি খোশ আমদেদ। তারপর উপরের দিকে চলে দ্বিতীয় আসমানে পৌঁছে দরজ খুলে দিতে বললেন, জিজ্ঞাসা করা হল কে? তিনি বললেন, জিবরাঈল। আবার জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আবার জিজ্ঞাসা করা হল, তাকে কি ডেকে পাঠান হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন বলা হল, তার জন্য খোশ-আমদেদ, উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। তারপর আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হল। যখন তথায় পৌঁছলাম। তখন সেখানে ইয়াহইয়া ও ঈসা আ. এর সাক্ষাত পেলাম। তাঁরা দু’জন ছিলেন পরস্পরের খালাত ভাই। তিনি বললেন, এরা হলেন, ইয়াহইয়া ও ঈসা আ.। তাদের প্রতি সালাম করুন। তখন আমি সালাম করলাম। তাঁরা জবাব দিলেন, তারপর বললেন নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি খোশ আমদেদ। এরপর তিনি আমাকে নিয়ে তৃতীয় আসমানের দিকে চললেন, সেখানে গিয়ে জিবরাঈল বললেন, খুলে দাও। জিজ্ঞাসা করা হল কে? তিনি বললেন, জিবরাঈল। আবার জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আবার জিজ্ঞাসা করা হল, তাকে কি ডেকে পাঠান হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন বলা হল, তার জন্য খোশ-আমদেদ, উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। তারপর আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হল। যখন তথায় পৌঁছলাম। তখন সেখানে ইউসুপ আ. কে দেখতে পেলাম। জিবরাঈল বললেন, ইনি ইউসুফ আ. আপনি তাকে সালাম করুন। তখন আমি সালাম করলাম। তিনিও জবাব দিলেন, তারপর বললেন নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি খোশ আমদেদ। এরপর তিনি আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্ব-যাত্রা করলেন এবং চতুর্থ আসমানে পৌঁছলেন। সেখানে গিয়ে (ফেরেশতাদের) দরজা খুলে দিতে বললেন। জিজ্ঞাসা করা হল কে? তিনি বললেন, জিবরাঈল। আবার জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আবার জিজ্ঞাসা করা হল, তাকে কি ডেকে পাঠান হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন বলা হল, তার জন্য খোশ-আমদেদ, উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। তারপর আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হল। আমি ইদ্রীস আ. এর কাছে পৌঁছলে জিবরাঈল বললেন, ইনি ইদ্রীস আ.। আপনি তাকে সালাম করুন। তখন আমি সালাম করলাম। তিনিও জবাব দিলেন, তারপর বললেন নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি খোশ আমদেদ। এরপর তিনি আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্ব-যাত্রা করলেন এবং পঞ্চম আসমানে পৌঁছলেন। সেখানে গিয়ে (ফেরেশতাদের) দরজা খুলে দিতে বললেন। জিজ্ঞাসা করা হল কে? তিনি বললেন, জিবরাঈল। আবার জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আবার জিজ্ঞাসা করা হল, তাকে কি ডেকে পাঠান হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন বলা হল, তার জন্য খোশ-আমদেদ, উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। তারপর আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হল। তথায় পৌঁছে হারূন আ. কে দেখতে পেলাম। জিবরাঈল আ. বললেন ইনি হারূন আ.। আপনি তাকে সালাম করুন। তখন আমি সালাম করলাম। তিনিও জবাব দিলেন, তারপর বললেন নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি খোশ আমদেদ। এরপর তিনি আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্ব-যাত্রা করলেন এবং ষষ্ঠ আসমানে পৌঁছলেন। সেখানে গিয়ে (ফেরেশতাদের) দরজা খুলে দিতে বললেন। জিজ্ঞাসা করা হল কে? তিনি বললেন, জিবরাঈল। আবার জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আবার জিজ্ঞাসা করা হল, তাকে কি ডেকে পাঠান হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। ফেরেশতারা বললেন, তার জন্য খোশ-আমদেদ, উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। তথায় পৌঁছে আমি মূসা আ. কে দেখতে পেলাম। জিবরাঈল আ. বললেন ইনি মূসা আ.। আপনি তাকে সালাম করুন। তখন আমি সালাম করলাম। তিনিও জবাব দিলেন, তারপর বললেন নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি খোশ আমদেদ। আমি যখন অগ্রসর হলাম তখন তিনি কেঁদে ফেললেন।তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, আপনি কিসের জন্য কাঁদছেন? তিনি বললেন, আমি এজন্য কাঁদছি যে, আমার পর একজন যুবককে নবী বানিয়ে পাঠানো হয়েছে, যার উম্মত আমার উম্মত থেকে অধিক সংখ্যায় জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারপর জিবরাঈল আ. আমাকে নিয়ে সপ্তম আকাশের দিকে গেলেন। সেখানে গিয়ে (ফেরেশতাদের) দরজা খুলে দিতে বললেন। জিজ্ঞাসা করা হল এ কে? তিনি বললেন, জিবরাঈল। আবার জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আবার জিজ্ঞাসা করা হল, তাকে কি ডেকে পাঠান হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন বলা হল, তার জন্য খোশ-আমদেদ, উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। তারপর আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হল। তথায় পৌঁছে ইবরাহীম আ. কে দেখতে পেলাম। জিবরাঈল আ. বললেন ইনি আপনার পিতা। আপনি তাকে সালাম করুন। তখন আমি সালাম করলাম। তিনিও জবাব দিলেন, তারপর বললেন নেককার পুত্র ও নেককার নবীর প্রতি খোশ আমদেদ। তারপর আমাকে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত উঠানো হল। দেখতে পেলাম, উহার ফল হাজর অঞ্চলের মটকার ন্যায় এবং তার পাতাগুলি এই হাতির কানের মত। আমাকে বলা হল, এ হল সিদরাতুল মুনতাহা (জড় জগতের শেষ প্রান্ত)। সেখানে আমি চারটি নহর দেখতে পেলাম, যাদের দুটি ছিল অপ্রকাশ্য দুটি ছিল প্রকাশ্য। তখন আমি জিবরাঈল আ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, এ নহরগুলি কী? তিনি বললেন, অপ্রকাশ্য দুটি হল জান্নাতের দুইটি নহর। আর প্রকাশ্য দুটি হল নীল নদী ও ফুরাত নদী। তারপর আমার সামানে আল-বায়তুল মামুর প্রকাশ করা হল, এরপর আমার সামনে একটি শরাবের পাত্র, একটি দুধের পাত্র ও একটি মধুর পাত্র পরিবেশন করা হল। আমি দুধের পাত্রটি গ্রহণ করলাম। তখন জিবরাঈল বললেন, এই হয়েছে ফিতরাত (দীন-ই-ইসলাম)। আপনি ও আপনার উম্মতগণ এর উপর প্রতিষ্ঠিত। তারপর আমার উপর দৈনিক ৫০ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হল। এরপর আমি ফিরে আসলাম। মূসা আ. এর সম্মুখ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন। আল্লাহ তায়ালা আপানাকে কী আদেশ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাকে দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতের আদেশ করা হয়েছে। তিনি বললেন, আপনার উম্মত দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে সমর্থ হবে না। আল্লাহর কসম। আমি আপনার আগে লোকদের পরীক্ষা করেছি এবং বনী ইসরাঈলের হেদায়েতের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। তাই আপনি আপনার প্রতিপালকের নিকট ফিরে যান এবং আপনার উম্মতের (বোঝা) হালকা করার জন্য আবেদন করুন। আমি ফিরে গেলাম। ফলে আমার উপর থেকে দশ (ওয়াক্ত সালাত) হ্রাস করে দিলেন। আমি আবার মূসা আ.-এর নিকট ফিরে এলাম তিনি আবার আগের মত বললেন, আমি আবার ফিরে গেলাম। ফলে আল্লাহ তায়ালা আরো দশ (ওয়াক্ত সালাত) কমিয়ে দিলেন। ফিরার পথে মূসা আ. এর নিকট পৌঁছলে, তিনি আবার পূর্বোক্ত কথা বললেন, আমি আবার ফিরে গেলাম। আল্লাহ তায়ালা আরো দশ (ওয়াক্ত সালাত) হ্রাস করলেন। আমি মূসা রা. নিকট ফিরে এলাম। তিনি আবার ঐ কথাই বললন, আমি আবার ফিরে গেলাম। তখন আমাকে প্রতিদিন দশ (ওয়াক্ত) সালাতের আদেশ দেওয়া হয়। আমি (তা নিয়ে) ফিরে এলাম। মূসা আ. ঐ কথাই আগের মত বললেন, আমি আবার ফিরে গেলাম, আমাকে পাঁচ (ওয়াক্ত) সালাতের আদেশ করা হয়। তারপর মূসার আ. নিকট ফিরে এলাম। তিনি বললেন, আপনাকে কী আদেশ দেওয়া হয়েছে। আমি বললাম, আমাকে দৈনিক পাঁচ (ওয়াক্ত) সালাত আদায়ের আদেশ দেওয়া হয়েছে। মূসা আ. বললেন, আপনার উম্মত দৈনিক পাঁচ (ওয়াক্ত) সালাত আদায় করতে সমর্থ হবে না। আপনার পূর্বে আমি লোকদের পরীক্ষা করেছি। বনী ইসরাঈলের হেদায়েতের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। আপনি আপনার রবের নিকট ফিরে যান এবং আপনার উম্মতের জন্য আরো সহজ করার আবেদন করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি আমার রবের নিকট (অনেকবার) আবেদন করেছি, এতে আমি লজ্জাবোধ করছি। আর আমি এতেই সন্তষ্ট হয়েছি এবং তা মেনে নিয়েছি। এরপর তিনি বললেন, আমি যখন (মূসা আ. কে অতিক্রম করে) অগ্রসর হলাম, তখন জনৈক ঘোষণাকারী ঘোষণা দিলেন, আমি আমার অবশ্য পালনীয় আদেশটি জারি করে দিলাম এবং আমার বান্দাদের উপর লঘু করে দিলাম।

হাদীস নং ৩৬০৯

আল হুমাইদী রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহ তায়ালার বাণী: “আর আমি যে দৃশ্য আপনাকে দেখিয়েছি তা কেবল মানুষের পরীক্ষার জন্য” এর তাফসীরে বলেন এটি হল চোখের দেখা চাক্ষুস যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সে রাতে দেখানো হয়েছে। যে রাতে তাকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত ভ্রমণ করানো হয়েছিল। ইবনে আব্বাস রা. আরো বলেন, কুরআন শরীফে যে অভিশপ্ত বৃক্ষের কথা বলা হয়েছে, তাহল যাককুম বৃক্ষ।

হাদীস নং ৩৬১০

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ…………আবদুল্লাহ ইবনে কাব রহ. যিনি কাব এর পথ প্রদর্শক ছিলেন যখন কাব অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি বলেন, আমি কাব ইবনে মালিক রা.-কে তাবূক যুদ্ধকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তাঁর পশ্চাতে থেকে যাওয়ার ঘটনাটি সবিস্তারে বর্ণনা করতে শুনেছি। ইবনে বুকাইর তাঁর বর্ণনায় এ কথাটিও বলেন যে, কাবরা. বলেছেন, আমি আকাবার রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। যখন আমরা ইসলামের উপর অটল থাকার অঙ্গীকার করেছিলাম। সে রাত্রির পরিবর্তে বদর যুদ্ধে উপস্থিত হওয়া আমার নিকট অধিক প্রিয় নয়, যদিও বদর যুদ্ধ জনগণের মধ্যে আকাবার তুলনায় অধিক আলোচিত ছিল।

হাদীস নং ৩৬১১

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আকাবা রাতে আমার দু’জন মামা আমাকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিলেন। ইমাম বুখারী রহ. বলেন, ইবনে উয়ায়না বলেন, দু’জন মামার একজন হলেন বারা ইবনে মারূর রা.।

হাদীস নং ৩৬১২

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ……….আতা রহ. থেকে বর্ণিত যে, জাবির রা. বলেন, আমি আমার পিতা আবদুল্লাহ এবং আমার মামা আকাবায় (বায়আতে) অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলাম।

হাদীস নং ৩৬১৩

ইসহাক ইবনে মানসুর রহ…………আবু ইদরীস আইযুল্লাহ রহ. থেকে বর্ণিত যে, উবাদা ইবনে সামিত রা. যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বদর যুদ্ধে এবং আকবার রাতে উপস্থিত সাহাবীদের মধ্যে ছিলেন তিনি আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের একটি দলকে লক্ষ্য করে বললেন, এস তোমরা আমার কাছে একথায় উপর বায়আত কর যে, তোমরা আল্লাহ তায়ালার সাথে কোন কিছু কে শরীক করবে না, তোমরা চুরি করবে না, তোমরা ব্যাভিচার করবে না, তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, তোমরা (কারো প্রতি) অপবাদ আরোপ করবে না যা তোমরা নিজে থেকে বানিয়ে নাও , তোমরা নেক কাজে আমার নাফরমানী করবে না, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এসব শর্ত পূরণ করে চলবে তাকে এ কারণে দুনিয়াতে আইনানুগ শাস্তি দেয়া হয়, তবে এ শাস্তি তার জন্য কাফফারা হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি এ সবের কোনটিতে লিপ্ত হল আর আল্লাহ তা গোপন রাখেন, তবে তার ব্যাপারটি আল্লাহ পাকের উপর ন্যস্ত। তিনি ইচ্ছা করলে শাস্তি দিবেন আর ইচ্ছা করলেন মাফ করবেন। উবাদা রা. বলেন, আমিও এসব শর্তের উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বায়আত করেছি।

হাদীস নং ৩৬১৪

কুতাইবা রহ……….উবাদা ইবনে সামিত রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ঐ মনোনীত প্রতিনিধি দলের অন্তর্ভূক্ত ছিলাম, যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বায়আত গ্রহণ করেছিল। তিনি আরও বলেন, আমরা তাঁর কাছে বায়আত গ্রহণ করছিলাম জান্নাত লাভের জন্য যদি আমরা এই কাজগুলো করি এই শর্তে যে, আমরা আল্লাহর সঙ্গে কোন কিছুকেই শরীক করব না, ব্যভিচারে লিপ্ত হব না, চুরি করব না। আল্লাহ যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, তাকে না হক হত্যা করব না, লুটতরাজ করব না এবং নাফরমানী করব না। আর যদি আমরা এর মধ্যে কোনটিতে লিপ্ত হই, তবে এর ফায়সালা আল্লাহ তায়ালার উপর ন্যস্ত।

হাদীস নং ৩৬১৫

ফারওয়া ইবনে আবু মাগরা রহ……….আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আমাকে বিবাহ করেন, তখন আমার বয়স ছিল ছয় বছর। তারপর আমরা মদীনায় এলাম এবং বনু হারিস গোত্রে অবস্থান করলাম। সেখানে আমি জ্বরে আক্রান্ত হলাম। এতে আমার চুল পড়ে গেল। (সুস্থ হওয়ার) পরে যখন আমার মাথার সামনের চুল জমে উঠল। সে সময় আমি একদিন আমার বান্ধবীদের সাথে দোলনায় খেলা করছিলাম। তখন আমার মাতা উম্মে রূমান আমাকে উচ্চস্বরে ডাকলেন। আমি তাঁর কাছে এলাম। আমি বুঝতে পারিনি, তার উদ্দেশ্য কি? তিনি আমার হাত ধরে ঘরের দরজায় এসে আমাকে দাঁড় করালেন। আর আমি হাঁপাচ্ছিলাম। অবশেষে আমার শ্বাস-প্রশ্বাস কিছুটা স্থির হল। এরপর তিনি কিছু পানি নিলেন এবং এর দ্বারা আমার মুখমণ্ডল ও মাথা মাসেহ করে দিলেন। তারপর আমাকে ঘরের ভিতর প্রবেশ করালেন। সেখানে কয়েকজন আনসারী মহিলা ছিলেন। তাঁরা বললেন, (তোমার আগমন) কল্যাণময়, বরকতময় এবং সৌভাগ্যময় হউক। আমাকে তাদের কাছে সোর্পদ করে দিলেন। তাঁরা আমার অবস্থান ঠিকঠাক করে দিলেন, তখন ছিল পূর্বাহ্ন। হঠাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমন আমাকে সচকিত করে তুলল। তাঁরা আমাকে তাঁর কাছে সোপর্দ করে দিলেন। সে সময় আমি নয় বছরের বালিকা।

হাদীস নং ৩৬১৬

মুআল্লা রহ……………আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন, দু’বার তোমাকে আমায় স্বপ্নে দেখানো হয়েছে। আমি দেখলাম, তুমি একটি রেশমী বস্ত্রে বেষ্টিত এবং আমাকে বলছে ইনি আপনার স্ত্রী, আমি তার ঘুমটা সরিয়ে দেখলাম, সে মহিলা তুমিই। তখন আমি (মনে মনে) বলছিলাম, যদি তা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে, তবে তিনি তা কার্যকরী করবেন।

হাদীস নং ৩৬১৭

উবাইদ ইবনে ইসমাঈল রহ……….হিশাম এর পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মদীনার দিকে বেরিয়ে আসার তিন বছর আগে খাদীজা রা.-এর ওফাত হয়। তারপর দু’বছর অথবা এর কাছাকাছি সময় অপেক্ষা করে তিনি আয়েশা রা.-কে বিবাহ করেন। যখন তিনি ছিলেন ছয় বছরের বালিকা, তারপর নয় বছর বয়সে বাসর উদযাপন করেন।

হাদীস নং ৩৬১৮

হুমাইদী রহ………..আবু ওয়াইল রা. বলেন, আমরা পীড়িত খাব্বাব রা.-কে দেখতে গেলাম। তিনি আমাদেরকে বললেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে হিজরত করেছিলাম- আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। আল্লাহর নিকট আমাদের সাওয়াব রয়েছে। তবে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ কোন প্রতিদানের কিছু না নিয়েই চলে গেছেন। এদের মধ্যে ছিলেন মুসআব ইবনে উমায়ের রা.। তিনি উহুদের দিন শহীদ হন। তিনি একখানা চাদর রেখে যান। আমরা যখন (কাফন হিসাবে) এটি দিয়ে তাঁর মাথা ঢেকে দিতাম তখন তাঁর পা বেরিয়ে পড়ত, আর যখন আমরা পা ঢেকে দিতাম, তখন মাথা বেরিয়ে পড়ত। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নির্দেশ দিলেন যে, আমরা যেন তাঁর মাথা ঢেকে দিই এবং তাঁর পায়ের উপর কিছু ইযখির (ঘাস) রেখে দিই। আর আমাদের মধ্যে এমন কেউ কেউ রয়েছেন, যাদের ফল পরিপক্ক হয়েছে এবং তারা তা পেড়ে খাচ্ছেন।

হাদীস নং ৩৬১৯

মুসাদ্দাদ রহ…………উমর রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, আমলের ফলাফল নির্ভর করে নিয়্যাতের উপর। সুতরাং যার হিজরত হয় দুনিয়া লাভের জন্য কিংবা কোন স্ত্রীলোককে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে, তবে তার হিজরত হবে যে উদ্দেশ্যে সে হিজরত করেছে তার। আর যার হিজরত হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলে উদ্দেশ্যে, তবে তার হিজরত হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলেরই জন্য।

হাদীস নং ৩৬২০

ইসহাক ইবনে ইয়াযীদ দামেশকী রহ………..মুজাহিদ ইবনে জুবাইর মাক্কী রহ. আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলতেন, (মক্কা) বিজয়ের পর হিজরতের কোন প্রয়োজন নেই।
আওযায়ী আতা রহ………..আতা ইবনে আবু রবাহ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উবাইদ ইবনে উমাইর লাইসী রা.-এর সঙ্গে আয়েশা রা. এর সাথে সাক্ষাত করলাম। তারপর তাকে হিজরত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এখন হিজরতের কোন প্রয়োজন নেই। অতীতে মুমিনদের কেউ তার দীনের জন্য তার প্রতি ফিতনার ভয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি হিজরত করতেন আর আজ আল্লাহ ইসলামকে বিজয়ী করেছেন। এখন কোন মুমিন তার রবের ইবাদত যেখানে ইচ্ছা করতে পারে। তবে জিহাদ ও নিয়্যাত (কল্যাণ ও ফযীলতের) রয়েছে।

হাদীস নং ৩৬২১

যাকারিয়্যা ইবনে ইয়াহইয়া রহ……….. আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (খন্দকের যুদ্ধে মারাত্মকভাবে আহত হওয়ার পর) সাদ রা. দু’আ করলেন, ইয়া আল্লাহ আপনি তো জানেন, আমার নিকট আপনার রাহে জিহাদ করা এত প্রিয় যতটুকু অন্য কারো বিরুদ্ধে নয়। ইয়া আল্লাহ আমার ধারণা আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যকার লড়াই খতম করে দিয়েছেন। আবান ইবনে ইয়াযীদ রহ………আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে, সে কওম যারা তোমার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অবিশ্বাস করেছে এবং তাকে (স্বদেশ থেকে) বের করে দিয়েছে, তারা কুরাইশ গোত্রই।চ্চচ্চচ

হাদীস নং ৩৬২২

মাতার ইবনে ফাযল রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নবুওয়াত দেওয়া হয় চল্লিশ বছর বয়সে, এরপর তিনি তের বছর মক্কায় অবস্থান করেন। এ সময় তাঁর প্রতি ওহী নাযিল হচ্ছিল। তারপর হিজরতের নির্দেশ পান। এবং হিজরতের পর দশ বছর (মদীনায়) অবস্থান করেন। আর তিনি তেষট্টি বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন।

হাদীস নং ৩৬২৩

মাতার ইবনে ফাযাল রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় তের বছর অবস্থান করেন। আর তিনি তেষট্টি বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন।

হাদীস নং ৩৬২৪

ইসমাঈল ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে বসলেন এবং বললেন, আল্লাহ তার এক বান্দাকে দুটি বিষয়ের একটির ইখতিয়ার দিয়েছেন। তার একটি হল- দুনিয়ার ভোগ-সম্পদ আর একটি হল আল্লাহর নিকট যা রক্ষিত রয়েছে। তখন সে বান্দা আল্লাহর কাছে যা রয়েছে তাই পছন্দ করলেন।এ কথা শুনে, আবু বকর রা. কেঁদে ফেললেন, এবং বললেন, আমাদের পিতা-মাতাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করলাম। তাঁর অবস্থা দেখে আমরা বিস্মিত হলাম। লোকেরা বলতে লাগল এ বৃদ্ধের অবস্থা দেখ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বান্দা সম্বন্ধে খবর দিলেন যে, তাকে আল্লাহ পার্থিব ভোগ-সম্পদ দেওয়ার এবং তার কাছে যা রয়েছে, এ দু’য়ের মধ্যে ইখতিয়ার দিলেন আর এই বৃদ্ধ বলছে, আপনার জন্য আমাদের মাতা-পিতা উৎসর্গ করলাম। (প্রকৃতপক্ষে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই হলেন সেই ইখতিয়ার প্রাপ্ত বান্দা। আর আবু বকর রা.-ই হলেন আমাদের মধ্যে সবচাইতে বিজ্ঞ ব্যক্তি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি তার সাহচর্য ও মাল দিয়ে আমার প্রতি সর্বাধিক ইহসান করেছেন তিনি হলেন আবু বকর রা.। যদি আমি আমার উম্মতের কোন ব্যক্তিকে অন্তরঙ্গ বন্ধরূপে গ্রহণ করতাম। তাহলে আবু বকরইকে করতাম। তবে তার সঙ্গে আমার ইসলামী ভ্রাতৃত্বের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মসজিদের দিকে আবু বকর রা. এর দরজা ছাড়া অন্য কারো দরজা খোলা থাকবে না।

হাদীস নং ৩৬২৫

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……….নবী সহধর্মিণী আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার মাতা পিতাকে কখনো ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দীন পালন করতে দেখিনি এবং এমন কোন দিন অতিবাহিত হয়নি যেদিন সকালে কিংবা সন্ধ্যায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বাড়ীতে আসেননি। যখন মুসলামানগণ (মুশরিকদের নির্যাতনে) অতিষ্ঠ হয়ে পড়লেন, তখন আবু বকর রা. হিজরত করে আবিসিনিয়ায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলেন। অবশেষে বারকুল গিমাদ (নামক স্থানে) পৌঁছলে ইবনে দাগিনার সাথে তাঁর সাক্ষাত হয়। সে ছিল তার গোত্রের নেতা। সে বলল, হে আবু বকর, কোথায় যাচ্ছেন? উত্তরে আবু বকর রা. বললেন, আমার স্বজাতি আমাকে বের করে দিয়েছে। তাই আমি মনে করছি, পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াব এবং আমার প্রতিপালকের ইবাদত করব। ইবনে দাগিনা বলল, হে আবু বকর রা. আপনার মত ব্যক্তি (দেশ থেকে) বের হতে পারে না এবং বের করাও হতে পারে না। আপনি তো নিঃস্বদের জন্য উপার্জন করে দেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন, অক্ষমদের বোঝা নিজে বহন করেন, মেহমানের মেহমানদারী করে থাকেন এবং সত্য পথের পথিকদের বিপদ আপদে সাহায্য করেন। সুতরাং আমি আপনাকে আশ্রয় দিচ্ছি, আপনাকে সর্বপ্রকার সাহায্য ও সহযোগিতার অঙ্গীকার করছি। আপনি ফিরে যার এবং নিজ শহরে আপনার রবের ইবাদত করুন। আবু বকর রা. ফিরে এলেন। তাঁর সঙ্গে ইবানে দাগিনাও এল। ইবনে দাগিনা বিকেল বেলা কুরাইশের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের নিকট গেল এবং তাদের বলল, আবু বকরের মত লোক দেশ হতে বের হতে পারে না এবং তাকে বের করে দেওয়া যায়না। আপনারা কি এমন ব্যক্তিকে বের করবেন, যে নিঃস্বদের জন্য উপার্জন করে দেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন, অক্ষমদের বোঝা নিজে বহন করেন, মেহমানের মেহমানদারী করে থাকেন ন্যায় পথে থাকার দরুন বিপদ আপদে সাহায্য করেন। ইবনে দাগিনার আশ্রয়দান কুরাইশগণ মেনে নিল, এবং তারা ইবনে দাগিনাকে বলল, তুমি আবু বকরকে বলে দাও, তিনি যেন তাঁর রবের ইবাদত তাঁর ঘরে করেন। সালাত তথায়ই আদায় করেন, ইচ্ছা মাফিক কুরআন তিলাওয়াত করেন। কিন্তু এর দ্বারা আমাদের যেন কষ্ট না দেন। আর এসব যেন প্রকাশ্যে না করেন। কেননা, আমরা আমাদের মেয়েদের ও ছেলেদের ফিতনায় পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করি। ইবনে দাগিনা এসব কথা আবু বকর রা.-কে বলে দিলেন। সে মতে কিছুকাল আবু বকর রা. নিজের ঘরে তাঁর রবের ইবাদত করতে লাগলেন। সালাত প্রকাশ্যে আদায় করতেন না এবং ঘরেই কোরআন তিলওয়াত করতেন। এরপর আবু বকরের মনে (একটি মসজিদ নির্মাণের কথা) উদিত হল। তাই তিনি তাঁর ঘরের পাশেই একটি মসজিদ তৈরী করে নিলেন। এতে তিনি সালাত আদায় করতে ও কুরআন পড়তে লাগলেন। এতে তার কাছে মুশরিক মহিলা ও যুবকগণ ভীড় জমাতে লাগল। তারা আবু বকর রা.-এর একাজে বিস্মিত হত এবং তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকত। আবু বকর রা. ছিলেন একজন ক্রন্দন শীল ব্যক্তি, তিনি যখন কুরআন পড়তেন তখন তাঁর চোখের অশ্রু সামলিয়ে রাখতে পারতেন না। এ ব্যাপারটি মুশরিকদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় কুরাইশদের আতঙ্কিত করে তুলল এবং তারা ইবনে দাগিনাকে ডেকে পাঠান। সে এল। তারা তাকে বলল, তোমার আশ্রয় প্রদানের কারণে আমরাও আবু বকরকে আশ্রয় দিয়েছিলাম এই শর্তে যে, তিনি তাঁর রবের ইবাদত তাঁর ঘরে করবেন কিন্তু সে শর্ত তিনি লংঘন এবং নিজ গৃহের পাশে একটি মসজিদ তৈরী করে প্রকাশ্যে সালাত ও তিলাওয়াত আরম্ভ করেছেন। আমাদের ভয় হচ্ছে, আমাদের মহিলা ও সন্তানরা ফিতনায় পড়ে যাবে। কাজেই তুমি তাকে নিষেধ করে দাও। তিনি তাঁর রবের ইবাদত তাঁর গৃহে সীমাবদ্ধ রাখতে পছন্দ করলে, তিনি তা করতে পারেন। আর যদি তিনি তা অস্বীকার করে প্রকাশ্যে তা করতে তা করতে চান তবে তাকে তোমার আশ্রয় প্রদান ও দায় দায়িত্বকে প্রত্যার্পণ করতে বল। আমরা তোমার আশ্রয় প্রদানের ব্যাপারে বিশ্বাসঘাতকতা করাকে অত্যন্ত অপছন্দ করি, আবার আবু বকরকেও এভাবে প্রকাশ্যে ইবাদত করার জন্য ছেড়ে দিতে পারিনা। আয়েশা রা. বলেন, ইবনে দাগিনা এসে আবু রা. কে বলল, আপনি অবশ্যই জানেন যে, কী শর্তে আমি আপনার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিলাম। আপনি হয়ত তাকে সীমিত থাকবেন অন্যথায় আমার জিম্মাদারী আমাকে ফিরত দিবেন। আমি এ কথা আদৌ পছন্দ করিনা যে আমার সাথে চুক্তিবদ্ধ এবং আমার আশ্রয়প্রাপ্ত ব্যক্তির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার অফবাদ আরববাসীর নিকট প্রকাশিত হউক। আবু বকর রা. তাকে বললেন, আমি তোমার আশ্রয় ফিরিয়ে দিচ্ছি। আমি আমার আল্লাহর আশ্রয়ের উপর সন্তুষ্ট আছি। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের বললেন, আমাকে তোমাদের হিজরতের স্থান (স্বপ্নে) দেখান হয়েছে। সে স্থানে খেজুর বাগান রয়েছে এবং তা দুইটি প্রস্তরময় অবস্থিত। এরপর যারা হিজরত করতে চাইলেন, তা!রা মদীনার দিকে হিজরত করলেন। আর যারা হিজরত করে আবিসিনিয়ায় চলে গিয়েছিলেন, তাদেরও অধিকাংশ সেখান থেকে ফিরে মদীনায় চল আসলেন। আবু বকর রা. ও মদীনায় দিকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি অপেক্ষা কর। আশা করছি আমাকেও অমুমতি দেওয়া হবে। আবু বকর রা. বললেন, আমার পিতা আপনার জন্য কুরবান ! আপনিও কি হিজরতের আশা করছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন আবু বকর রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহচার্য লাভের জন্য নিজেকে হিজরত থেকে বিরত রাখলেন এবং তাঁর নিকট যে দুটি উট ছিল এ দুটি চার মাস পর্যন্ত (ঘরে রেখে) বাবলা গাছের পাতা (ইত্যাদি) খাওয়াতে থাকেন। ইবনে শিহাব উরওয়া রা. সূত্রে আয়েশা রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, ইতিমধ্যে একদিন আমরা ঠিক দুপুর বেলায় আবু বকর রা. এর ঘরে বসা ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে আবু বকরকে সংবাদ দিল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা ঢাকা অবস্থায় আসছেন। তা এমন সময় ছিল যে সময় তিনি পূর্বে কখনো আমাদের এখানে আসনেনি। আবু বকর রা তাঁর আগমন বার্তা শুনে বললেন, আমার মাতা-পিতা তাঁর প্রতি কুরবান। আল্লাহর কসম, তিনি এ সময় নিশ্চয় কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কারণেই আসছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৌঁছে (প্রবেশের) অনুমতি চাইলেন। তাকে অনুমতি দেয়া হল। প্রবেশ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকরকে বললেন, এখানে অন্য যারা আছে তাদের বের করে দাও । আবু বকর রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ‍! আমার পিতা-মাতা আপনার প্রতি কুরবান, এখানেতো আপনারই পরিবার। তখন তিনি বললেন, আমাকেও হিজরতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আবু বকর রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান ! আমি আপনার সফর সঙ্গী হতে ইচ্ছুক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঠিক আছে। আবু বকর রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমার পিতা-মাতা কুরবান! আমার এ দুটি উট থেকে আপনি যে কোন একটি গ্রহণ করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (ঠিক আছে) তবে মূল্যের বিনিময়ে। আয়েশা রা. বলেন, আমরা তাদের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা দ্রুততার সহিত সম্পন্ন করলাম এবং একটি থলের মধ্যে তাদের খাদ্যসামগ্রী প্রস্তুত করে দিলাম।আমার বোন আসমা বিনতে আবু বকর রা তার কোমর বন্ধের কিছু অংশ কেটে সে থলের মুখ বেঁধে দিলেন। এ কারণেই তাকে জাতুন নেতাক (কোমর বন্ধ বিশিষ্ট) বলা হত। আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবু বকর রা. (রওয়ানা হয়ে) সাও পর্বতের একটি গুহায় আশ্রয় নিলেন। তাঁরা সেখানে তিনটি রাত অবস্থান করলেন। আবদুল্লাহ ইবনে আবু বকর রা. তাদের পাশেই রাত্রি যাপন করতেন। তিনি ছিলন একজন তীক্ষ্ম বুদ্ধসম্পন্ন তরুণ। তিনি শেষ রাত্রে ওখান থেকে বেরিয়ে মক্কায় রাত্রি যাপনকারী কুরাইশদের সহিত ভোর বেলায় মিলিত হতেন এবং তাদের দু’জনের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র করা হত তা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন, ও স্মরণ রাখতেন। যখন আধার ঘনিয়ে আসত তখন তিনি সংবাদ নিয়ে তাদের উভয়ের কাছে যেতেন। আবু বকর রা.-এর গোলাম আমির ইবনে ফুহাইরা তাদের কাছই দুধালো বকরীর পাল চড়িয়ে বেড়াত। রাত্রের কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর সে বকরীর পাল নিযে তাদের নিকটে যেত এবং তাঁরা দু’জন দুধ পান করে আরামে রাত্রিযাপন করতেন। তাঁরা বকরীর দুধ দোহন করে সাথে সাথেই পার করতেন। তারপর শেষ রাতে আমির ইবনে ফুহাইরা বকরীগুলো হাঁকিয়ে নিয়ে যেত। এ তিনটি রাতের প্রত্যেক রাতে সে এরূপই করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর রা. বনী আবদ ইবনে আদি গোত্রের এক ব্যকিএক পারিশ্রমিকের বিনিময়ে খিররীত পথ প্রদর্শক হিসাবে নিযুক্ত কাফির কুরাইশের ধর্মালম্বী। তাঁরা উভয়ে তাকে বিশ্বস্ত মনে করে তাদের উট দুটি তার হাতে দিয়ে দিলেন এবং তৃতীয় রাত্রের পরে সকালে উট দুটি সাওর গুহার নিকট নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করলেন। আর সে যথা সময়ে তা পৌঁছিয়ে দিল। আর আমির ইবনে ফুহাইরা ও পথপ্রদর্শক তাদের উভয়ের সঙ্গে চলল। প্রদর্শক তাদের নিয়ে উপকূলের পথ ধরে চলতে লাগল। ইবনে শিহাব রহ……….বলেন, আবদুর রাহমান ইবনে মালিক মুদলেজ আমাকে বলেছেন, তিনি সুরাকা ইবনে মালিকের ভ্রাতুষ্পুত্র। তার পিতা তাকে বলেছেন, তিনি সুরাকা ইবনে জুশুমকে বলতে শুনেছেন যে, আমাকে নিকট কুরাইশী কাফিরদের দূত আসল এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবু বকর রা. এ দুইজনের যে কোন একজনকে যে হত্যা করবে অথবা বন্দী করতে পারবে তাকে (একশ উট) পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিল। আমি আমার কওম বনী মুদলীজের এক মজলিসে বসা ছিলাম। সে বলল, হে সুরাকা, আমি এই মাত্র উপকূলের পথে কয়েকজন মানুষকে যেতে দেখলাম। আমার ধারণা, এরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সহগামীগণ হবেন। সুরাকা বলেন, আমি বুঝতে পারলাম যে এর তারাই হবেন। কিন্তু তাকে বললাম, এরা তাঁরা নয়, বরং তুমি অমুক অমুককে দেখেছ। এরা এই মাত্র আমাদের সম্মুখ দিয়ে চলে গেল। তারপর আমি কিছুক্ষণ মজলিসে অবস্থান করে (বাড়ী) চলে এলাম এবং আমার দাসীকে আদেশ করলাম, তুমি আমার ঘোড়াটি বের করে নিয়ে যাও এবং অমুক টিলার আড়ালে ঘোড়াটি ধরে দাঁড়িয়ে থাক। আমি আমার বর্শা হাতে নিলাম এবং বাড়ীর পিছন দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। বর্শাটির এক প্রান্ত হাতে ধরে অপর প্রান্ত মাটি সংলগ্ন অবস্থায় আমি টেনে নিয়ে চলছিলাম ঐ অবস্থায় বর্শার মাটি মাটি সংলগ্ন অংশ দ্বারা মাটির উপর রেখাপাত করতে করতে আমার ঘোড়ার নিকট গিয়ে পৌঁছলাম এবং ঘোড়ায় আরোহণ করে তাকে খুব দ্রুত ছুটালাম। সে আমাকে নিয়ে ছুটে চলল। আমি প্রায় তাদের নিকট পৌঁছে গেলাম, এমন সময় আমার ঘোড়াটি হোঁচট খেয়ে আমাকে নিয়ে পড়ে গেল। আমিও তার পিঠ থেকে ঠিটকে পড়লাম। তারপর আমি উঠে দাঁড়ালাম এবং তুণের দিকে হাত বাড়ালাম এবং তা থেকে তীরগুলি বের করলাম ও তীর নিক্ষেপের মাধ্যমে ভাগ্য পরীক্ষা করে নিলাম যে আমি তাদের কোন ক্ষতি করতে পারব কি না। তখন তীরগুলি দুর্ভাগ্যবশত এমনভাবে বেরিয়ে এল যে, ভাগ্য নির্ধারণের বেলায় এমনটি হওয়া পছন্দ করি না। আমি পুনরায় ভাগ্য পরীক্ষায় ফলাফল অমান্য করে অশ্বারোহণ করে সম্মুখ দিকে অগ্রসর হতে লাগলাম। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এত নিকটবর্তী হয়ে গেলাম যে তাঁর তিলাওয়াতের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। তিনি (আমার দিকে) ফিরে তাকাচ্ছিলে কিন্তু আবু বকর রা. বার বার তাকিয়ে দেখছিলেন। এমন সময় হঠাৎ আমার ঘোড়ায় সামনের পা দুটি হাঁটু পর্যন্ত মাটিতে গেড়ে গেল এবং আমি তার উপর থেকে পড়ে গেলাম। তখন ঘোড়াটিকে ধমক দিলাম, সে দাঁড়াতে ইচ্ছা করল, কিন্তু পা দুটি বের করতে পারছিল না। অবশেষে যখন ঘোড়াটি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে উঠল, তখন হঠাৎ তার সামনের পা দুটি যে স্থানে গেড়ে ছিল সে স্থান থেকে ধুয়ার ন্যায় ধূলি আকাশের দিকে উঠতে লাগল। তখন আমি তীর দিয়ে ভাগ্য পরীক্ষা করলাম। এবারও যা আমার অপছন্দনীয় তাই প্রকাশ পেল। তখন উচ্চস্বরে তাদের নিরাপত্তা চাইলাম। এতে তাঁরা থেমে গেলেন এবং আম আমার ঘোড়ায় আরোহণ করে এলাম। আমি যখন ইত্যাকার অবস্থায় বার বার বাঁধাপ্রাপ্ত ও বিপদে পতিত হচ্ছিলাম তখনই আমার অন্তরে এ বিশ্বাস বদ্ধমূল হয়েছিল যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ মিশনটি অচিরেই প্রভাব বিস্তার করবে। তখন আমি তাকে বললাম আপনা কওম আপনাকে ধরে দিতে পারলে একশ উট পুরস্কার ঘোষণা করেছে। মক্কায় কাফেরগণ তাঁর সম্পর্কে যে ইচ্ছা করেছে তা তাকে জানালাম। এবং আমি তাদের জন্য কিছু খাবার ও অন্যান্য সামগ্রী পেশ করলাম । তাঁরা তা থেকে কিছুই নিলেন না। আর আমার কাছে এ কথা ছাড়া কিছুই চাইলেন না, আমাদের সংবাদ গোপন রেখ। এরপর আমি আমাকে একটি নিরাপত্তা লিপি লিখে দেওয়ার জন্য তাকে অনুরোধ করলাম। তখন তিনি আমির ইবনে ফুহাইরাকে আদেশ করলেন। তিনি একখন্ড চামড়ায় তা লিখে দিলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রওয়ানা দিলেন। ইবনে শিহাব রহ বলেন, বলেন, উরওয়া ইবনে যুবাইর রা. আমাকে বলেছেন, পথিমধ্যে যুবাইরের সঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাক্ষাত হয়। তিনি মুসলমানদের একটি বাণিজ্যিক কাফেলার সাথে সিরিয়া থেকে ফিরছিলেন। তখন যুবাইর রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবু বকর রা. কে সাদা রঙের পোশাক দান করলেন। এদিকে মদীনায় মুসলিমগণ শুনলেন যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে মদীনার পথে রওয়ানা হয়েছেন। তাই তাঁরা প্রত্যহ সকালে মদীনার (বাইরে) হাররা পর্যন্ত গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন, দুপুরে রোদ প্রখর হলে তারা ঘরে ফিরে আসতেন। একদিন তারা পূর্বাপেক্ষা অধিক সময় অপেক্ষা করার পর নিজ নিজ গৃহে ফিরে গেলেন। এমন সময় একজন ইয়াহূদী তার নিজ প্রয়োজনে একটি টিলায় আরোহণ করে এদিক ওদিক কি যেন দেখছিল। তখন সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাথী সঙ্গীদেরকে সাদা পোশাক পরিহিত অবস্থায় মরীচিকাময় মরুভূমির উপর দিয়ে আগমন করতে দেখতে পেল। ইয়াহূদী তখন নিজেকে সংবরণ করতে না পেরে উচ্চস্বরে চিৎকার করে বলে উঠল, হে আরব সম্প্রদায়! এইতো সে ভাগ্যবান ব্যক্তি-যার জন্য তোমরা অপেক্ষা করছ। মুসলিমগণ তাড়াতাড়ি হাতিয়ার তুলে নিয়ে এবং মদীনার হাররার উপকণ্ঠে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সঙ্গে মিলিত হলেন। তিনি সকলকে নিয়ে ডানদিকে মোড় নিয়ে বনী আমর ইবন আউফ গোত্রে অবতরণ করলেন। এদিনটি ছিল রবিউল আউওয়াল মাসের সোমবার। আবু বকর রা. দাঁড়িয়ে লোকদের সঙ্গে কথা বলতে লাগলেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব রইলেন। আনসারদের মধ্য থেকে যারা এ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেন নি তাঁরা আবু বকর রা. এর কাছে সমবেত হতে লাগলেন, তারপর যখন রৌদ্রতাপ নবীজীর উপর পড়তে লাগল এবং আবু বকর রা. অগ্রসর হয়ে তাঁর চাদর দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপর ছায়া করে দিলেন। তখন লোকেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে চিনতে পারল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমর ইবনে আউফ গোত্রে দশদিনের চেয়ে কিছু বেশী সময় অতিবাহিত করলেন এবং সে মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন, যা (কুরআনের ভাষায়) তাকওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতে সালাত আদায় করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উটে আরোহণ করে রওয়ানা হলেন। লোকেরাও তাঁর সঙ্গে চলতে লাগলেন। মদীনায় (বর্তমান) মসজিদে নববীর স্থানে পৌঁছে উটটি বসে পড়ল। সে সময় ঐ স্থানে কতিপয় মুসলিম সালাত আদায় করতেন। এ জায়গাটি ছিল আসআদ ইবনে যুরারার আশ্রয়ে পালিত সাহল ও সুহাইল নামক দু’জন ইয়াতীম বালকের খেজুর শুকাবার স্থান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নিয়ে উটটি যখন এস্থানে বসে পড়ল, তখন তিনি বললেন, ইনশাআল্লাহ, এ স্থানটিই হবে মানযিল। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই বালক দুটিকে ডেকে পাঠালেন এবং মসজিদ নির্মাণের জন্য তাদের নিকট জায়গাটি মূল্যের বিনিময়ে বিক্রয়ের আলোচনা করলেন। তারা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! বরং এটি আমরা আপনার জন্য বিনামূল্যে দিচ্ছি। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছ থেকে বিনামূল্যে গ্রহণে অসম্মতি জানালেন এবং অবশেষে স্থানটি তাদের থেকে খরীদ করে নিলেন। তারপর সেই স্থানে তিনি মসজিদ নির্মাণ করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদ নির্মাণকালে সাহাবা কেরামের সঙ্গে ইট বহন করছিলেন এবং ইট বহনের সময় তিনি আবৃত্তি করছিলেন এ বোঝা খায়বারের (খাদ্যদ্রব্য) বোঝা বহন নয়। ইয়া রব, এর বোঝা অত্যন্ত পুণ্যময় ও অতি পবিত্র। তিনি আরো বলছিলেন, ইয়া আল্লাহ! পরকালের প্রতিদানই প্রকৃত প্রতিদান। সুতরাং আনসার ও মুহাজিরদের প্রতি অনুগ্রহ করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক মুসলিম কবির কবিতা আবৃত্তি করেন, যার নাম আমাকে বলা হয়নি। ইবনে শিহাব রহ. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কবিতাটি ছাড়া অপর কোন পূর্ণাঙ্গ কবিতা পাঠ করছেন বলে কোন বর্ণনা আমার কাছে পৌঁছেনি।

হাদীস নং ৩৬২৬

আবদুল্লাহ ইবনে আবু শায়বা রহ……….আসমা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবু বকর রা. যখন মদীনায় যাওয়ার ইচ্ছা করলেন, তখন আমি তাদের জন্য সফরের সফরের খাদ্য সামগ্রী প্রস্তুত করলাম। আর আমার পিতাকে বললাম, থলের মুখ বেঁধে দেয়ার জন্য আমার কোমরবন্দ ব্যতীত অনু কিছু পাচ্ছি না (এখন কি করি) তিনি বললেন, এটি তুমি টুকরো করে নাও। আমি তাই করলাম। এ কারণে আমার নাম হয়ে গেল, যাতুন নেতাকাইন (কোমরবন্দ দুই ভাগে বিভক্তকারিণী)।

হাদীস নং ৩৬২৭

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……….বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বেলন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনার দিকে যাচ্ছিলেন তখন সুরাকা ইবনে মালিক ইবনে জুশাম তাঁর পশ্চাদ্বাবন করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য বদদুআ করলেন। ফলে তার ঘোড়াটি তাকে সহ মাটিতে দেবে গেল। তখন সে বলল, আপনি আল্লাহর কাছে আমার জন্য দু’আ করুন। আমি আপনার কোন ক্ষতি করব না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য দু’আ করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিপাসার্ত হলেন। তখন তিনি এক রাখালের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আবু বকর রা. সিদ্দীক রা. বলেন, তখন আমি একটি পেয়ালা নিয়ে এতে কিছু দুধ দোহন করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলাম, তিনি এমনভাবে তা পান করলেন যে, আমি তাঁতে খুশী হলাম।

হাদীস নং ৩৬২৮

যাকারিয়া ইবনে ইয়াহইয়া রহ…………আসমা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তখন তাঁর গর্ভে ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর, তিনি বলেন, আমি এমন সময় হিজরত করি যখন আমি আসন্ন প্রসবা। আমি মদীনায় এস কুবাতে অবতরণ করি। এ কুবাই আমি পুত্র সন্তানটি প্রসব করি। এরপর আমি তাক নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে তাঁর কোলে দিলাম। তিনি একটি খেজুর আনালেন এবং তা চিবিয়ে তার মুখে দিলেন। কাজেই সর্বপ্রথম যে বস্তুটি আবদুল্লাহর পাকস্থলীতে প্রবেশ করল তা হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর থুথু। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চিবান খেজুরের সামান্য অংশ নবজাতকের মুখের ভিতরের তালুর অংশে লাগিয়ে দিলেন। এরপর তার জন্য দু’আ করলেন এবং বরকত কামনা করলেন। তিনি হলেন প্রথম নবজাতক সন্তান যিনি (হিজরতের পর) মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। খালিদ ইবনে মাখলাদ রহ. উক্ত রেওয়াত বর্ণনায় যাকারিয়অ ইবনে ইয়াহইয়া রহ. এর অনুসরণ করেছেন। এতে রয়েছে যে, আসমা রা. গর্ভাবস্থায় হিজরত করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসেন।

হাদীস নং ৩৬২৯

কুতাইবা রহ………….আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (মদীনায় হিজরতের পর) মুসলিম পরিবারে সর্বপ্রথম আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইরই জন্মগ্রহণ করেন। তাঁরা তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলেন। তিনি একটি খেজুর নিয়ে তা চিবিয়ে তার মুখে দিলেন। সুতরাং সর্বপ্রথম যে বস্তুটি তার পেটে প্রবেশ করল তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর থুথু।

হাদীস নং ৩৬৩০

মুহাম্মদ রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় এলেন তখন উটের পিঠে আবু বকর রা. তাঁর পেছনে ছিলেন। আবু বকর রা. ছিলেন বয়োজ্যেষ্ঠ ও পরিচিত। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন (দেখতে) জাওয়ান এবং অপরিচিত তখন বর্ণনাকারী বলেন, যখন আবু বকরের সঙ্গে কারো সাক্ষাত হত, সে জিজ্ঞাসা করত হে আবু বকর রা. তোমার সম্মুখে বসা ঐ ব্যক্তি কে? আবু বকর রা. বলতেন, তিনি আমার পথ প্রদর্শক। রাবী বলেন, প্রশ্নকারী সাধারণ পথ মনে করত এবং তিনি (আবু বরক) সত্যপথ উদ্দেশ্যে করতেন। তারপর একবার আবু বকর রা. পিছনে তাকিয়ে হঠাৎ দেখতে পেলেন একজন অশ্বারোহী তাদের প্রায় নিকটে পৌঁছে গেছে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিছনের দিকে তাকিয়ে দু’আ করলেন, ইয়া আল্লাহ ! আপনি ওকে পাকড়াও করুন। তৎক্ষণাৎ ঘোড়াটি তাকে নীচে ফেলে দিয়ে দাঁড়িয়ে হ্রেষা রব করতে লাগল। তখন অশ্বারোহী বলল, ইয়া নবী আল্লাহ ! আপনার যা ইচ্ছা আমাকে আদেশ করুন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি সেখানেই থেমে যাও। কেউ আমাদের দিকে আসতে চাইতে তুমি তাকে বাঁধা দিবে। বর্ণনাকারী বলেন, দিনের প্রথম ভাগে ছিল সে নবীর বিরুদ্ধে সংগ্রামকারী আর দিনের শেষ ভাগে হয়ে গেল তাঁর পক্ষ থেকে অস্ত্র ধারণকারী। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় হাররায় একপাশে অবতরণ করলেন। এরপর আনসারদের সংবাদ দিলেন। তাঁরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলেন এবং উভয়কে সালাম করে বললেন, আপনারা নিরাপদ ও মান্য হিসেবে তাদের বেষ্টন করে চলতে লাগলেন। মদীনায় লোকেরা বলতে লাগল, আল্লাহর নবী এসেছেন, আল্লাহর নবী এসেছেন, লোকজন উচু জায়গায় উঠে তাদের দেখতে লাগল। আর বলতে লাগল আল্লাহর নবী এসেছেন, আল্লাহর নবী এসেছেন। তিনি সামনের দিকে চলতে লাগলেন। অবশেষে আবু আইয়ূব রা.-এর বাড়ীর পাশে গিয়ে অবতরণ করলেন। আবু আইয়ূব রা. ঐ সময় তাঁর পরিবারের লোকদের সাথে কথাবার্তা বলছিলেন। ইতিমধ্যে আবদুল্লাহ ইবনে সালাম তাঁর আগমনের কথা শুনলেন তখন তিনি তাঁর নিজের বাগানে খেজুর আহরণ করছিলেন। তখন তিনি তাড়াতাড়ি ফল আহরণ করা থেকে বিরত হলেন এবং আহরিত খেজুরসহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে হাযির হলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কিছ কথাবার্তা শুনে নিজ গৃহে ফিরে গেলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাদের লোকগের মধ্যে কার বাড়ী এখান থেকে সবচেয়ে নিকটবর্তী? আবু আইয়ূব রা. বললেন, ইয়া নবী আল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বাড়ী, এই যে তার দরজা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে চল, আমাদের বিশ্রামের ব্যবস্থা কর। তিনি বললেন, আপনারা উভয়েই চলুন। আল্লাহর বরকত দানকারী। যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাড়ীতে এলেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা. এসে হাযির হলেন এবং বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপন আল্লাহর রাসূল ; আপনি সত্য নিয়ে এসেছেন। ইয়া রাসূলাল্লাহ ! ইয়াহূদী সম্প্রদায় জানে যে আম তাদের সর্দার এবং আমি তাদের সর্দারের পুত্র। আমি তাদের মধ্যে বেশী জ্ঞানী এবং তাদের বড় জ্ঞানীর সন্তান। আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি এ কথাটি জানাজানি হওয়ার পূর্বে আপনি তাদের ডাকুন এবং আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করুন, আমার সম্পর্কে তাদের ধারণা অবগত হউন। কেননা তারা যদি জানতে পারে যে আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি, তবে আমার সম্বন্ধে তারা এমন সব অলিক উক্তি করবে যে সব আমার মধ্যে নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ইয়াহূদী সম্প্রদায়কে) ডেকে পাঠালেন। তারা এসে তার কাছে হাযির হল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, ইয়াহূদী সম্প্রদায়, তোমার উপর অভিশাপ ! তোমরা সেই আল্লাহকে ভয় করে, তিনি ছাড়া তিনি ছাড়া বাবুদ নেই। তোমরা নিশ্চয়ই জান যে আমি সত্য রাসূল। সত্য নিয়েই তোমাদের নিকট এসেছি। সুতরাং তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর। তারা উত্তর দিল, আমরা এসব জানিনা। তারা তিনবার এ কথা বলল। তারপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা. কেমন লোক? তারা উত্তর দিল, তিনি আমাদের নেতা এবং আমাদের নেতার সন্তান। তিনি আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ আলিম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ আলিমের সন্তান। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনি যদি ইসলাম গ্রহণ করেন, তবে তোমাদের মতামত কী হবে? তারা বলল, আচ্ছা বলতো, যদি তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন তবে তোমরা কী মনে করবে? তারা আবার বলল, আল্লাহ রক্ষা করুন, কিছুতেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করতে পারেন না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার বললেন, আচ্ছা বলতো, তিনি যদি মুসলমান হয়েই যান তবে তোমাদের মত কী? তারা বলল, আল্লাহ রক্ষা করুন, তিনি মুসলমান হয়ে যাবেন ইহা কিছুতেই সম্ভব নয়। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে ইবনে সালাম, তুমি এদের সামনে বেরিয়ে আস। তিনি বেরিয়ে আসলেন এবং বললেন, হে ইয়াহূদী সম্প্রদায় ! আল্লাহকে ভয় কর। ঐ আল্লাহর কসম, যদি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। তোমরা নিশ্চয়ই জান তিনি সত্য রাসূল, হক নিয়েই আগমন করেছেন। তখন তারা বলে উঠল, তুমি মিথ্যা বলছ। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বের করে দিলেন।

হাদীস নং ৩৬৩১

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ………..উমর ইবনে খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি প্রাথমিক পর্যায়ের মুহাজিরদের জন্য চার কিস্তিতে বাৎসরিক চার হাজার দেরহাম ধার্য করলেন, এবং (তাঁর ছেলে) ইবনে উমরের জন্য ধার্য করলেন তিন হাজার পাঁচশ। তাকে বলা হল, তিনিও তো মুহাজিরদের অন্তর্ভূক্ত। তাঁর জন্য চার হাজার থেকে কম কেন করলেন? তিনি বললেন, সে তো তার পিতা-মাতার সাথে হিজরত করেছে। কাজেই সে ঐ ব্যক্তির সমকক্ষ হতে পারে না যে ব্যক্তি একাকী হিজরত করেছে।

হাদীস নং ৩৬৩২

মুহাম্মদ ইবন কাসীর ও মুসাদ্দাদ রহ……….খাব্বাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে হিজরত করেছি একমাত্র আল্লাহর তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের জন্য। আমাদের ইহজগতে ভোগ না করে আখিরাতে চলে গিয়েছেন; তন্মধ্যে মুসআব ইবনে উমাইর রা. অন্যতম। তিনি উহুদ যুদ্ধে শহীদ হন। তাকে কাফন দেয়ার জন্য তার একটি চাদর ব্যতীত আর অন্য কিছুই আমরা পাচ্ছিলাম না। আমরা এ চাদরটি দিয়ে যখন তাঁর মাথা আবৃত করলাম তাঁর পা বের হয়ে গেল আর যখন চাদরটি দিয়ে তাঁর পা ঢাকতে গেলাম তখন মাথা বের হয়ে গেল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের আদেশ করলেন, চাদরটি দিয়ে তাঁর মাথা ঢেকে দাও এবং পা দুটির উপর ইযখির ঘাস রেখে দাও। আর আমাদের মধ্যে এমন রয়েছেন যাদের ফল পেকে গেছে এবং এখন তারা তা আহরণ করছেন।

হাদীস নং ৩৬৩৩

ইয়াহইয়া ইবনে বিশর রহ………..আবু বুরদা ইবনে আবু মূসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. আমাক বললেন, তুমি তুমি কি জান আমার পিতা তোমার পিতাকে কি বলেছিলেন? আমি বললাম, না । তিনি বললেন, আমার পিতা তোমার পিতাকে বলেছিলেন, হে আবু মূসা তুমি কি ইহাতে সন্তুষ্ট আছ যে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেছি, তাঁর সঙ্গে হিজরত করেছি, তাঁর সঙ্গে জিহাদ করেছি এবং তাঁর জীবদ্দশায় কৃত আমাদের প্রতিটি আমল যা করেছি তা আমাদের জন্য সঞ্চিত থাকুক। তাঁর ওফাতের পর, আমরা যে সব আমল করেছি, তা (জবাবদিহি) আমাদের জন্য সমান সমান, হউক। অর্থাৎ সাওয়াবও না হউক আযাবও না হউক। তখন তোমার পিতা আবু মূসা রা. বললেন, না (আমি এতে সন্তুষ্ট নেই) কেননা আল্লাহর কসম, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পর জিহাদ করেছি, সালাত আদায় করেছি, সাওম পালন করেছি এবং বহু নেক আমল করেছি। আমাদের হাতে অনেক মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে। আমরা এসব কাজের সাওয়াব-এর আশা রাখি। তখন আমার পিতা (উমরা রা.) বললেন, কিন্তু আমি ঐ সত্তার কসম, যার হাতে উমরের প্রাণ রয়েছে, এতেই সন্তুষ্টি যে, (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায় তাঁর সাথে কৃত আমল) আমাদের জন্য সঞ্চিত থাকুক আর তাঁর ওফাতের পর আমরা যে সব আমল করেছি তা থেকে যেন আমরা অব্যাহতি পাই সমান সমান ভাবে। তখন আমি বললাম, আল্লাহর কসম, নিশ্চয়ই তোমার পিতা আমার পিতা থেকে উত্তম।

হাদীস নং ৩৬৩৪

মুহাম্মদ ইবনে সাববাহ রহ……….আবু উসমান রহ. বলেন, আমি ইবনে উমর রা.-কে বলতে শুনেছি যে, তাকে এ কথা বলা হলে, “আপনি আপনার পিতার আগে হিজরত করেছেন” তিনি রাগ করতেন। ইবনে উমর রা. বলেন, (প্রকৃত ঘটনা এই যে,) আমি এবং উমর রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে হাযির হলাম। তখন তাকে কায়লুলা অবস্থায় (দুপুরের বিশ্রাম) পেলাম। কাজেই আমরা আমাদের আবাস্থলে ফিরে এলাম। কিছুক্ষণ পর উমর রা. আমাকে পাঠালেন এবং বললেন, যাও গিয়ে দেখ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেগেছেন কিনা? আমি এসে তাঁর কাছে উপস্থিত হলাম এবং তাঁর কাছে বায়আত করলাম। তারপর উমর রা. এর কাছে এসে তাকে খবর দিলাম যে, তিনি জেগে গেছেন। তখন আমরা তাঁর নিকট গেলাম দ্রুতবেগে। তিনি তাঁর কাছে প্রবেশ করে বায়আত করলেন। তারপর আমিও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাতে (দ্বিতীয়বার উমর রা.) বায়আত করলাম।

হাদীস নং ৩৬৩৫

আহমদ ইবনে উসমান রহ………..আবু ইসহাক রহ. বলেন আমি বারা রা.-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি আবু বকর রা. আমার পিতা আযিব রা.-এর নিকট হাওদা খরীদ করলেন। আমি আবু বকরের সাথে খরীদ হাওদাটি বহন করে নিয়ে চললাম। তখন আমার পিতা আযিব রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহিত তাঁর হিজরতের ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তখন আবু বকর রা. বললেন, আমাদের অনুসন্ধান করার জন্য মুশরিকরা লোক নিয়োগ করেছিল। অবশেষে আমরা রাত্রিকালে বেরিয়ে পড়লাম এবং একরাত ও একদিন অবিরাম চলতে থাকলাম। যখন দুপুর হয়ে গেল, তখন একটি বিরাট পাথর নযরে পড়ল। আমরা সেটির কাছে এলাম, পাথরটির কিছু ছায়া পড়ছিল। আমি সেখানে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য আমার সঙ্গের চামড়াখানি বিছিয়ে দিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর শুয়ে পড়লেন। আমি এদিক-ওদিক পর্যবেক্ষণ করার জন্য বেরিয়ে পড়লাম। হঠাৎ এক বকরী রাখালকে দেখতে পেলাম। সে তার বকরীগুলো নিয়ে আসছে। সেও আমাদের মত পাথরের (ছায়ায়) আশ্রয় নিতে চায়। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কার গোলাম? সে বলল, আমি অমুকের। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার বকরীর পালে দুধ আছে কি? সে বলল, হ্যাঁ। আমি বললাম, তুমি কি (আমাদের জন্য) কিছু দোহন করে দিবে? সে বলল, হ্যাঁ। সে তার পাল থকে একটি বকরী ধরে নিয়ে এল।আমি বললাম, বকরীর স্তন দুটি ঝেড়ে মুছে সাফ করে নাও। সে এক পাত্র ভর্তি দুধ দোহন করল। আমার সাথে একটি পানির পাত্র ছিল। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য কাপড় দিয়ে তার মুখ বেঁধে ছিলাম। আমি তা থেকে দুধের মধ্যে কিছু পানি ঢেলে দিলাম। ফলে পাত্রের তলা পর্যন্ত শীতল হয়ে গেল। আম তা নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বললাম, পান করুন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতখানি পান করলেন যে, আমি সন্তুষ্ট হলাম। এরপর আমরা রওয়ানা হলাম এবং অনুসন্ধানকারী আমাদের পিছনে ছিল। রাবা রা. বলেন, আমি আবু বকর রা.-এর সঙ্গে তাঁর ঘর প্রবেশ করলাম। তখন দেখলাম তাঁর মেয়ে আয়েশা রা. বিছানায় শুয়ে আছেন। তাঁর জ্বর হয়েছে। তাঁর পিতা আবু বকর রা.-কে দেখলাম তিনি মেয়ের গালে চুমু খেলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, মা তুমি কেমন আছ?

হাদীস নং ৩৬৩৬

সুলাইমান ইবনে আবদুর রাহমান রহ………নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খাদেম আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মদীনায়) আগমন করলেন। এই সময় তাঁর সাহাবীদের মধ্যে সাদা কাল চুল বিশিষ্ট আবু বকর রা. ব্যতীত অন্য কেউ ছিলেন না। তিনি তাঁর চুলে মেহদী ও কতম একত্র করে কলপ (এক প্রকার কালো ঘাস) লাগিয়েছিলেন। দোহায়েম অন্য সূত্রে আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় এলেন, তখন তাঁর সাহাবীদের মধ্যে আবু বকর রা. ছিলেন সবচে বয়স্ক। তিনি মেহদী ও কতম একত্র করে কলপ লাগিয়েছিলেন। এতে তাঁর সাদা চুল (ও দাঁড়ি ) টকটকে লাল রং ধারণ করেছিল।

হাদীস নং ৩৬৩৭

আসবাগ রহ………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু বকর রা. কালব গোত্রের উম্মে বাকরা নামে একজন মহিলাকে শাদী করলেন। যখন আবু বকর রা. হিজরত করেন, তখন তাকে তালাক দিয়ে যান। তারপর ঐ মহিলাকে তার চাচাত ভাই শাদী করে নিল। এই ব্যক্তিটিই হল সেই কবি যে বদর যুদ্ধে নিহত কুরাইশ কাফেরদের শোকগাথা রচনা করেছিল। বদর প্রান্তে কালীব নামক কূপে নিক্ষিপ্ত ঐ সব কাফেরগণ আজ কোথায় যাদের শিযা নামক কাঠের তৈরী খাদ্য-পাত্রে উটের কুজের গোশতে সুসজ্জিত থাকত। বদরের কালীব কূপে নিক্ষিপ্ত ব্যক্তিগণ আজ কোথায় যারা গায়িকা ও সম্মানিত মদ্যপানকারী নিয়ে নিমগ্ন ছিল। উম্মে বাকরা শান্তির স্বাগত জানাচ্ছে। আর আমার কাওমের (ধ্বংস হয়ে যাওয়ার) পর আমার জন্য শান্তি কোথায়? রাসূল আমাদের বলেছেন যে, অচিরেই আমাদের জীবিত করা হবে। কিন্তু উড়ে যাওয়া আত্মা ও মাথার খুলীর জীবন আবার কেমন হবে?

হাদীস নং ৩৬৩৮

মূসা ইবনে ইসামাঈল রহ…………আবু বকর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে (সাওর পর্বতের) গুহায় ছিলাম। আমি আমার মাথা তুলে উপরের দিকে তাকালাম এবং লোকের পা দেখতে পেলাম। তখন আমি বললাম, ইয়া নবী আল্লাহ ! তাদের কেউ নীচের দিকে দৃষ্টিপাত করলেই আমাদের দেখে ফেলবে। তিনি বললেন, হে আবু বকর ! নীরব থাক। আমরা দু’জন আল্লাহ হলেন যাদের তৃতীয়।

হাদীস নং ৩৬৩৯

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন বেদুঈন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এল এবং তাকে হিজরত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তিনি বললেন, ওহে! হিজরত বড় কঠিন ব্যাপার। এরপর বললেন, তোমার কি উট আছে ? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তুমি কি উটের সাদকা আদায় কর? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তুমি কি উটনীর দুধ অন্যকে পান করতে দাও? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, যেদিন পানি পান করানোর উদ্দেশ্যে উটগুলো ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয় সেদিন কি তুমি দুধ দোহন করে (ফকীর মিসকীনদের) দান কর? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তবে তুমি সমুদ্রের ওপার থেকেই নেক আমল করতে থাক। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমার আমলের কিছুই হ্রাস করবেন না।

হাদীস নং ৩৬৪০

আবুল ওয়ালিদ রহ……….বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সর্বপ্রথম আমাদের মধ্যে (মদীনায়) আগমন করেন মুসআব ইবনে উমাইর ও ইবনে উম্মে মাকতুম রা.। তারপর আমাদের কাছে আসেন, আম্মার ইবনে ইয়াসির ও বিলাল রা.।

হাদীস নং ৩৬৪১

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ…………বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সর্বপ্রথম আমাদের মধ্যে (মদীনায়) আগমন করলেন মুসআব ইবনে উমাইর এবং ইবনে উম্মে মাকতুম। তারা লোকদের কুরআন পড়াতেন। তারপর আসলেন, বিলাল, সাদ ও আম্মার ইবনে ইয়াসির রা. এরপর উমর ইবনে খাত্তাব রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বিশজন সাহাবীসহ মদীনায় আসলেন। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করলেন। তাঁর আগমনে মদীনাবাসী যে পরিমাণ আনন্দিত হয়েছিল সে পরিমাণ আনন্দ হতে কখনো দেখিনি। এমনকি দাসীগণও বলছিল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুভাগমন করেছেন। বারা রা. বলেন, তাঁর আগমনের আগেই মুফাসসালের কয়েকটি সূরাসহ আমি سبح اسم ربك الأعلى সূরা পর্যন্ত পড়ে ফেলেছিলাম।

হাদীস নং ৩৬৪২

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আগমন করলেন, তখন আবু বকর ও বিলাল রা. ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়লেন। আমি তাদেরকে দেখতে গেলাম এবং বললাম, আব্বাজান, কেমন আছেন? হে বিলাল, আপনি কেমন আছেন? আবু বকর রা. জ্বরাক্রান্ত হলেই এ পংক্তিগুলো আবৃত্তি করতেন। “প্রতিটি ব্যক্তিকে জিন পরিবারে সুপ্রভাত বলা হয় অথচ মৃত্যু তার জুতার ফিতার চাইতেও অধিক নিকটবর্তী”। আর বিলাল রা. এর অবস্থা ছিল এই যখন তাঁর জ্বর ছেড়ে যেত তখন কণ্ঠস্বর উচু করে এ কবিতাটি আবৃত্তি করতেন : “হায় আমি যদি জানতাম আমি ঐ মক্কা উপত্যকায় পুনরায় রাত্রি যাপন করতে পারব কিনা যেখানে ইযখির ও জলীল ঘাস আমার চারপাশে বিরাজমান থাকত। হায়, আর কি আমার ভাগ্যে জুটবে যে, আমি মজান্না নামক কূপের পানি পান করতে পারব! এবং শামা ও তাফিল পাহাড় কি আর আমার দৃষ্টিগোচর হবে”। আয়েশা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গিয়ে এ সংবাদ জানালাম। তখন তিনি এ দু’আ করলেন, হে আল্লাহ! মদীনাকে আমাদের প্রিয় করে দাও যেমন প্রিয় ছিল আমাদের মক্কা বরং তার চেয়েও অধিক প্রিয় করে দাও। আমাদের জন্য মদীনাকে স্বাস্থ্যকর বানিয়ে দাও।মদীনার সা ও মুদ এর মধ্যে বরকত দান কর। আর এখানকার জ্বর রোগকে স্থানান্তর করে জুহফায় নিয়ে যাও।

হাদীস নং ৩৬৪৩

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ…………উবাইদুল্লাহ ইবনে আদী রহ. বলেন, আমি উসমান রা.-এর ঘরে প্রবেশ করলাম। তিনি আমার বক্তব্য শুনার পর তাশাহহুদ পাঠের পর বললেন, আম্মা বাদু। আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আহবানে সাড়া দিয়েছিলেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যে সত্যসহ প্রেরণ করা হয়েছিল তৎপ্রতি ঈমান এনেছিলেন আমিও তাদের অন্তর্ভূক্ত ছিলাম। উভয় হিজরতে (হাবশায় ও মদীনায়) অংশ গ্রহণ করেছি। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জামাতা হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছি। আমি তাঁর হাতে বায়আত করেছি, আল্লাহর কসম আমি কখনো তাঁর নাফরমানী করিনি তাঁর সাথে প্রতারণামূলক কোন কিছু করিনি। এমতাবস্থায় তাঁর ওফাত হয়েছে। ইসহাক কালবী শুয়ায়বের অনুসরণ করতঃ যুহরী সুত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৩৬৪৪

ইয়াহইয়া ইবনে সুলাইমান রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেন, যে বছর উমর রা. শেষ হজ্জ আদায় করেন সে বছর আবদুর রাহমান ইবনে আউফ রা. মিনায় তাঁর পরিবারে কাছে ফিরে আসেন এবং সেখানে আমার সাথে তাঁর সাক্ষাত ঘটে। (উমর রা. লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে চাইলে) আবদুর রাহমান রা. বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন, হজ্জ মওসুমে বুদ্ধিমান ও নির্বোধ সব রকমের মানুষ একত্রিত হয়। তাই আমার বিবেচনায় আপনি ভাষণ দান থেকে বিরত থাকুন। এবং মদীনা গমন করে ভাষণ দান করুন। মদীনা হল দারুল হিজরত, (হিজরতের স্থান) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুন্নাতের পবিত্র ভূমি। সেখানে আপনি অনেক জ্ঞানী, গুণী ও বুদ্ধিমান লোককে একান্তে পাবেন। উমর রা. বললেন, মদীনায় গিয়েই সর্বপ্রথম আমার ভাষণটি অবশ্যই প্রদান করব।

হাদীস নং ৩৬৪৫

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………….খারিজা ইবনে যায়েদ ইবনে সাবিত রা. বলেন, উম্মুল আলা রা. নামক জনৈক আনসারী মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাতে বায়আত করেন। তিনি বর্ণনা করেন, যখন মুহাজিরদের অবস্থানের ব্যাপারে আনসারদের মধ্যে লটারী অনুষ্ঠিত হল তখন উসমান ইবনে মাযউনের বসবাস আমাদে ভাগে পড়ল। উম্মুল আলা রা. বলেন, এরপর তিনি আমাদের এখানে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমি তার সেবা শুশ্রূষা করলাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর ওফাত হয়ে গেল। আমরা কাফনের কাপড় পরিয়ে দিলাম। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের এখানে তাশরীফ আনলেন। ঐ সময় আমি উসমান রা.-কে লক্ষ্য করে বলছিলাম। হে আবু সায়িব ! তোমার উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। তোমার ব্যাপারে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ নিশ্চয়ই তোমাকে সম্মানিত করেছেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কেমন করে জানলে যে, আল্লাহ তাকে সম্মানিত করেছেন? আমি বললাম, আমার মাত-পিতা আপনার উপর কুরবান হোক। ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি তো জানিনা। (তবে তাকে যদি সম্মানিত করা না হয়) তবে কাকে আল্লাহ সম্মানিত করবেন? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর কসম, উসমানের মৃত্যু হয়ে গেছে। আল্লাহর কসম, আমি তার সম্বন্ধে কল্যাণের আশা পোষণ করছি। আল্লাহর কসম, আমি আল্লাহর রাসূল হওয়া সত্ত্বেও জানিনা আল্লাহর তাঁর সাথে কি ব্যবহার করবেন। উম্মুল আলা রা. বলেন, আল্লাহর কসম, আমি এ কথা শুনার পর আর কাউকে (দৃঢ়তার সহিত) পূত-পবিত্র বলব না। উম্মুল আলা রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এ কথা আমাকে চিন্তিত করল। এরপর আমি স্বপ্নে দেখতে পেলাম যে, উসমান ইবনে মাযউন রা. এর জন্য একটি নহর প্রবাহিত রয়েছে। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গিয়ে আমার স্বপ্নটি ব্যক্ত করলে তিনি বললেন, এ হচ্ছে তার (নেক) আমল।

হাদীস নং ৩৬৪৬

উবায়দুল্লাহ ইবনে সাঈদ রহ…………আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বুআস যুদ্ধ এমন একটি যুদ্ধ ছিল যা আল্লাহ তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুকূলে তাঁর হিজরতের পূর্বেই সংঘটিত করিয়েছিলেন, যা তাদের (মদীনাবাসীদের) ইসলাম গ্রহণের পক্ষে সহায়ক হয়েছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আগমন করলেন তখন তাদের গোত্রগুলো ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে নানা দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল এবং তাদের অনেক নেতৃবৃন্দ নিহত হয়েছিল।

হাদীস নং ৩৬৪৭

মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ…………আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে, আবু বকর রা. ঈদুল ফিতর অথবা ঈদুল আযহার দিনে তাকে দেখতে এলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রা.-এর গৃহে অবস্থান করছিলেন। ঐ সময় দুজন অল্প বয়সী বালিকা এ কবিতাটি উচ্চস্বরে আবৃত্তি করছিল যা আনসারগণ বুআস যুদ্ধে আবৃত্তি করেছিল। তখন আবু বকর রা. দু’বার বললেন, এ হল শয়তানের বাদ্যযন্ত্র। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবু বকর, তাদেরকে ছেড়ে দাও। কেননা প্রত্যেক সম্প্রদায়েই ঈদ রয়েছে আর আজকের দিন হল আমাদের ঈদের দিন।

হাদীস নং ৩৬৪৮

মুসাদ্দাদ ও ইসহাক ইবনে মানসুর রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আগমন করেন তখন মদীনার উচু এলাকার আমর ইবনে আউফ গোত্রে অবস্থান করলেন। আনাস রা. বলেন, সেখানে তিনি চৌদ্দ দিন অবস্থান করেন। এরপর তিনি বানু নাজ্জারের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নিকট সংবাদ পাঠালেন। তারা সকলেই তরবারী ঝুলিয়ে উপস্থিত হলেন। আনাস রা. বলেন, সেই দৃশ্য এখনো যেন আমি দেখতে পাচ্ছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবু বকর রা. তাঁর পিছনে উপবিষ্ট রয়েছেন, আর বনু নাজ্জারের প্রধানগণ রয়েছেন তাদের পার্শ্বে। অবশেষে আবু আইয়্যূব রা.-এর বাড়ীর চত্বরে উটটি বসে পড়ল। রাবী বলেন, ঐ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানেই সালাতরে সময় হত সেখানেই সালাত আদায় করে নিতেন। এবং তিনি কোন কোন সময় ছাগল-ভেড়ার খোয়াড়েও সালাত সালাত আদায় করতেন। রাবী বলেন, তারপর তিনি মসজিদ নির্মাণের আদেশ দিলেন। তিনি বনী নাজ্জারের নেতাদের ডাকলেন এবং তারা এলে তিনি বললেন, তোমাদের এ বাগানটি আমার নিকট বিক্রি করে দাও। তারা বলল, আল্লাহর কসম, আমরা বিক্রি করব না। আল্লাহর কসম-এর বিনিময় আল্লাহর নিকট চাই। রাবী বলেন, এই স্থানে তখন ছিল মুশরিকদের পুরাতন কবর, বাড়ী ঘরের কিছু ভগ্নাবশেষ কয়েকটি খেজুরের গাছ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশে মুশরিকদের কবরগুলি নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হল। অগ্নাবশেষ সমতল করা হল, খেজুর গাছগুলি কেটে ফেলা হল। রাবী বলে, কর্তিত খেজুর গাছের কাণ্ডগুলি মসজিদের কেবলার দিকে এর খুটি হিসাবে এক লাইনে স্থাপন করা হল এবং খুটির ফাঁকা স্থানে রাখা হল পাথর। তখন সাহবায়ে কেরাম পাথর বহন করে আনছিলেন এবং ছন্দ যুক্ত কবিতাটি আবৃত্তি করছিলেন: আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাদের সঙ্গে ছিলেন এবং বলছেন, হে আল্লাহ ! প্রকৃত কল্যাণ একমাত্র আখিরাতের কল্যাণই। হে আল্লাহ ! তুমি মুহাজির ও আনসারদের সাহয্য কর।

হাদীস নং ৩৬৪৯

ইবরাহীম ইবনে হামযা রহ………উমর ইবনে আবদুল আযীয রহ. হতে বর্ণিত, তিনি সাইব ইবনে উখতে নামর রা.-কে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি (মুহাজিরদের হজ্জ সম্পাদনান্তে) মক্কায় অবস্থান সম্পর্কে কি শুনেছেন? তিনি বললেন, আমি আলা ইবনুল হাযরামী রা.-এর নিকট শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুহাজিরদের জন্য তাওয়াফে সদর আদায় করার পর তিন দিন মক্কায় অবস্থান করার অনুমতি রয়েছে।

হাদীস নং ৩৬৫০

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ………..সাহল ইবনে সাদ রা. বর্ণনা করেন, লোকেরা বছর গণনা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নবুওয়াত লাভের দিন থেকে করেনি এবং তাঁর ওফাত দিবস থেকেও করে দিন বরং তাঁর মদীনায় হিজরত থেকে বছর গণনা করা হয়েছে।

হাদীস নং ৩৬৫১

মুসাদ্দাদ রহ……….আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রথম অবস্থায় দু’দু রাকআত করে সালাত ফরয করা হয়েছিল। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হিজরত করলেন, ঐ সময় সালাত চার রাকআত করে দেয়া হয়। এবং সফর কালে পূর্বাবস্থায় অর্থাৎ দু’রাকআত বহাল রাখা হয়। আবদুর রাজ্জাক রহ. মামর সূত্রে রেওয়ায়াত বর্ণনায় যাদীদ ইবনে যুবাইর-এর অনুসরণ করেছেন।

হাদীস নং ৩৬৫২

ইয়াহইয়া ইবনে কাযআ রহ……….সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা. বলেন, বিদায় হজ্জের বছর আমি মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর নিকটবর্তী হয়ে পড়ি তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখতে আসেন। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমার রোগ কি পর্যায় পৌঁছেছে তা আপনি দেখতে পাচ্ছেন। আমি একজন বিত্তবান লোক। আমার ওয়ারিশ হচ্ছে একটি মাত্র কন্যা। আমি আমার সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ আল্লাহর রাস্তায় সাদকা করে দিব? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তবে কি অর্ধেক? তিনি বললেন, হে সাদ, এক তৃতীয়াংশ দান কর। তৃতীয়াংশই অনেক বেশী। তুমি তোমার সন্তান-সন্ততিদেরকে বিত্তবান রেখে যাও ইহাই উত্তম, এর চাইতে যে তুমি তাদেরকে নিঃস্ব রেখে গেলে যে তারা অন্যের নিকট হাত পেতে ভিক্ষা করে। আহমদ ইবনে ইউসুফ রহ………..ইবরাহীম রহ. থেকে এ কথাগুলোও বর্ণনা করেছেন। তুমি তোমার উত্তরাধিকারীদের সম্পদশালী রেখে যাবে আর তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যা কিছু করবে, আল্লাহ তার প্রতিদান তোমাকে দেবে। তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যে লোকমাটি তুলে দিবে এর প্রতিদানও আল্লাহর তোমাকে দেবে। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কি আমার সাথী সঙ্গীদের থেকে পিছনে পড়ে থাকব? তিনি বললেন, তুমি কখনই পিছনে পড়ে থাকবে না আর এ অবস্থায় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তুমি যে কোন নেক আমল করবে তাহলে তোমার সম্মান ও মর্যাদা আরো বেড়ে যাবে। সম্ভবতঃ তুমি পিছনে থেকে যাবে এবং এর ফলে তোমার দ্বারা অনেক মানুষ উপকৃত এবং অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। হে আল্লাহ ! আমার সাহাবীদের হিজরতকে অক্ষুণ্ন রাখুন। তাদেরকে পশ্চাৎমুখী করে ফিরিয়ে নিবেন না। কিন্তু অভাবগ্রস্ত সাদ ইবনে খাওলার মক্কায় মৃত্যুর কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন। আহমদ ইবনে ইউনুস রহ. ও মূসা রহ. ইব্রাহীম সুত্রে বর্ণনা করেছেন, أن تذر ورثتك তোমার উত্তরাধিকারীদের রেখে যাওয়া……।

হাদীস নং ৩৬৫৩

মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ…………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুর রাহমান ইবনে আউফ রা. যখন মদীনায় আগমন করলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ও সাদ ইবনে রাবী আনসারী রা-এর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করে দিলেন। সাদ রা. তার সম্পত্তি ভাগ করে অর্ধেক সম্পত্তি এবং দু’জন স্ত্রীর যে কোন একজন নিয়ে যাওয়ার জন্য আবদুর রাহমানকে অনুরোধ করলেন। তিনি উত্তরে বললেন, আল্লাহ আপনার পরিবাবর্গ ও ধন-সম্পদে বরকত দান করুন। আমাকে স্থানীয় বাজারের রাস্তাটি দেখিয়ে দিন। তিনি (বাজারে গিয়ে ব্যবসা আরম্ভ করলেন এবং) মুনাফা স্বরূপ কিছু ঘি ও পনীর লাভ করলেন। কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাত হল। তিনি তখন তার গায়ে ও কাপড়ে হলুদ রং-এর চিহ্ন দেখতে পেয়ে বললেন, হে আবদুর রাহমান ব্যাপার কি? তিনি বললেন,আমি একজন আনসারী মহিলাকে বিবাহ করেছি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তাকে কি পরিমাণ মোহর দিয়েছ? তিনি বললেন, তাকে নাওয়াত (খেজুর বিচি) পরিমাণ স্বর্ণ দিয়েছি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, একটি বকরী দিয়ে হলেও ওয়ালীমা করে নাও।

হাদীস নং ৩৬৫৪

হামীদ ইবনে উমর রহ…………আনাস রা. বর্ণনা করেন, আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা.-এর নিকট নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মদীনায় আগমনের সংবাদ পৌঁছলে তিনি এসে তাকে কয়েকটি প্রশ্ন করলেন। তিনি বললেন, আমি আপনাকে তিনটি প্রশ্ন করছি। এগুলোর সঠিক উত্তর নবী ব্যতীত অন্য কেউ জানেনা। ১. কিয়ামতের সর্বপ্রথম আলামত ও লক্ষণ কি? ২. জান্নাতবাসীদের সর্বপ্রথম আহার্য কি? ৩. কি কারণে সন্তান আকৃতিতে কখনও পিতার অনুরূপ কখনো বা মায়ের অনুরূপ হয়? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ বিষয়গুলো সম্পর্কে এই মাত্র জিবরাঈল আ. আমাকে জানিয়ে গেলেন। আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা. এ কথা শুনে বললেন, তিনিই ফেরেশতাদের মধ্যে ইয়াহূদীদের শত্রু । নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ১. কিয়ামতের নিকটবর্তী হওয়ার সর্বপ্রথম লক্ষণ হল লেলীহান আগুন যা মানুষকে পূর্বদিক থেকে পশ্চিম দিকে ধাওয়া করে নিয়ে যাবে এবং সবাইকে সমবেত করবে। ২. সর্বপ্রথম আহার্য যা জান্নাতবাসী ভক্ষণ করবে তা হল মাছের কলীজার অতিরিক্ত অংশ ৩. যদি নারীর আগে পুরুষের বীর্যপাত ঘটে তবে সন্তান পিতার অনুরূপ হয় আর যদি পুরুষের আগে নারীর বীর্যপাত ঘটে তবে সন্তান মায়ের অনুরূপ হয়। আবদুল্লাহ ইবনে সালাম বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই এবং নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রাসূল। ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইয়াহূদীগণ এমন একটি সম্প্রদায় যারা অন্যের কুৎসা রটনায় অত্যন্ত পটু। আমার ইসলাম গ্রহণ প্রকাশ হওয়ার পূর্বে আমার অবস্থা সম্পর্কে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করুন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ডাকলেন, তারা হাযির হল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মাঝে আবদুল্লাহ ইবনে সালাম কেমন লোক? তারা বলল, তিনি আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি এবং সর্বোত্তম ব্যক্তির পুত্র। তিনি আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তির পুত্র। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আচ্ছা বলত, যদি আবদুল্লাহ ইবনে সালাম ইসলাম গ্রহণ করে তবে কেমন হবে? তোমরা তখন কি করবে? তারা বলল, আল্লাহ তাকে একাজ থেকে রক্ষা করুন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার এ কথাটি বললেন, তারাও পূর্বরূপ উত্তর দিল। তখন আবদুল্লাহ ইবনে সালাম বেরিয়ে আসলেন, এবং বললেন, أشهد أن لا إله إلا الله وأن محمدا رسول الله ইহা শুনে ইয়াহূদীগণ বলতে লাগল, সে আমাদের মধ্যে মন্দ লোক এবং মন্দ লোকের ছেলে। অতঃপর তারা তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে আরো অনেক কথাবার্তা বলল। আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা. বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি ইহাই আশংকা করেছিলাম।

হাদীস নং ৩৬৫৫

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..আবদুর রাহমান ইবনে মুতঈম রা. বলেন, আমার ব্যবসার একজন অংশীদার কিছু দেরহাম (রৌপ্য মুদ্রা) বাজারে নিয়ে বাকীতে বিক্রি করে। আমি বললাম, সুবহানাল্লাহ। এরূপ ক্রয়-বিক্রয় কি জায়েজ? তিনিও বললেন, সুবহানাল্লাহ ! আল্লাহর কসম, আমি ইহা খোলা বাজারে বিক্রি করেছি তাতে কেউ তা আপত্তি করেননি। এরপর আমি বারা ইবনে আযিব রা. কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আগমন করেন তখন আমরা এরূপ বাকীতে ক্রয়-বিক্রয় করতাম; তখন তিনি বললেন, যদি নগদ হয় তবে তাকে কোন বাঁধা নেই। আর যদি ধারে হয় তবে জায়েয হবে না। তুমি যায়েদ ইবনে আরকাম রা.-এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে জিজ্ঞাসা করে নাও। কেননা তিনি আমাদের মধ্যে একজন বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। এরপর আমি যায়েদ ইবনে আরকামকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনিও অনুরূপ বললেন। সুফিয়ান রহ. রাবী হাদীসটি কখনও এরূপ বর্ণনা করেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আমাদের নিকট আসনে, তখন আমরা হজ্জের মৌসুম পর্যন্ত মিয়াদে বাকীতে ক্রয়-বিক্রয় করতাম।

হাদীস নং ৩৬৫৬

মুসলিম ইবনে ইবরাহীম রহ………..আবু হুরায়রা রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যদি আমার উপর দশজন ইয়াহূদী ঈমান আনত তবে সমগ্র ইয়াহূদী সম্প্রদায়ই ঈমান গ্রহণ করত।

হাদীস নং ৩৬৫৭

আহমদ অথবা মুহাম্মদ ইবনে উবায়দুল্লাহ আল-গুদনী রহ………..আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আগমন করলেন, তখন ইয়াহূদী সম্প্রদায়ের কিছু লোক আশুরা দিবসকে অত্যন্ত সম্মান করত এবং সেদিন তারা সাওম পালন করত। এতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইয়াহূদীদের অপেক্ষা ঐ দিন সাওম পালন করার আমরা অধিক হকদার। তারপর তিনি সকলকে সাওম পালন করার আদেশ দিলেন।

হাদীস নং ৩৬৫৮

যিয়াদ ইবনে আইয়্যূব রহ………..ইবনে আব্বাস রা. বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আগমন করেন, তখন দেখতে পেলেন ইয়াহূদীগণ আশুরা দিবসে সাওম দিবসে সাওম পালন করে। তাদেরকে সাওম পালনের কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বলল, এদিনই আল্লাহ তায়ালা মূসা আ. ও বনী ইসরাঈলকে ফিরাউনের উপর বিজয় দান করেছিলেন। তাই আমরা ঐ দিনের সম্মানার্থে সাওম পালন করে থাকি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের চাইতে আমরা মূসা আ.-এর অধিক নিকটবর্তী। এরপর তিনি সাওম পালনের আদেশ দেন।

হাদীস নং ৩৬৫৯

আবদান রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুলে সিঁথি না কেটে সোজা পিছনের দিকে ছেড়ে দিতেন। আর মুশরিকগণ তাদের চুলে সিঁথি কাটত। আহলে কিতাব সিঁথি কাত না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন আদেশ না আসা পর্যন্ত আহলে কিতাবের অনুকরণকে পছন্দ করতেন। তারপর (আদেশ আসলে) তাঁর মাথায় সিঁথি কাটলেন।

হাদীস নং ৩৬৬০

যিয়াদ ইবনে আইয়্যূব রহ…………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এরাই তো সেই আহলে কিতাব যারা (তাওরাত ও কুরআনকে) ভাগাভাগি করে ফেলেছে, কিছু অংশের উপর ঈমান এনেছে এবং কিছু অংশকে অস্বীকার করেছে।

হাদীস নং ৩৬৬১

হাসান ইবনে উমর ইবনে শাকীক রহ………..সালমান ফারসী রা. থেকে বর্ণিত, আমি (অন্যায়ভাবে) দশজনের অধিক মালিকের হাত বদল হয়েছি।

হাদীস নং ৩৬৬২

মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ………..আবু উসমান রা. বলেন, তুমি সালমান রা.-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি (পারস্যের) রাম হুরমুয শহরের অধিবাসী।

হাদীস নং ৩৬৬৩

হাসান ইবনে মুদরিক রহ………..সালমান ফারসী রা. বলেন, ঈসা এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমনের মধ্যে ছয়শ বছরের ব্যবধান ছিল।

 মাগাযী (যুদ্ধাভিযান) অধ্যায় (৩৬৬৪-৩৭৪৫)

হাদীস নং ৩৬৬৪

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….আবু ইসহাক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যায়েদ ইবনে আরকামের পাশে ছিলাম। তখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়ছি যুদ্ধ করেছেন? তিনি বললেন, উনিশটি। পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হল আপনি তাঁর সাথে কতটি যুদ্ধে শরীক ছিলেন? তিনি বললেন, সতেরটিতে। (আবু ইসহাক বলেন) আমি বললাম, এসব যুদ্ধের মধ্যে সর্বপ্রথম সংঘটিত হয়েছিল কোনটি? তিনি বললেন, উশায়রা বা উসায়রা। (বর্ণনাকারী বলেন) বিষয়টি আমি কাদাতা রা.-এর কাছে আলোচনা করলে তিনিও বললেন, উশায়রা (এর যুদ্ধই সর্বপ্রথম সংঘটিত হয়েছিল)।

হাদীস নং ৩৬৬৫

আহ্‌মাদ ইব্‌ন উসমান(রহঃ) সা‘দ ইব্‌ন মু‘ইয়ায (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন। তাঁর ও উমাইয়া ইব্‌ন খালফের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব ছিল। উমাইয়া মদিনায় আসলে সা‘দ ইব্‌ন মু’আযের অতিথি হত এবং সা‘দ (রাঃ) মক্কায় গেলে উমাইয়ার আতিথেয়তা গ্রহণ করতেন। রাসূল (সাঃ) মদিনায় হিজতর করার পর একদা সা‘দ (রাঃ) উমরা করার উদ্দেশ্যে মক্কা গেলেন এবং উমাইয়ার বাড়ীতে অবস্থান করলেন। তিনি উমাইয়াকে বললেন, আমাকে এমন একটি নিরিবিলি সময়ের কথা বল যখন আমি (শান্তভাবে) বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করতে পারব। তাই দ্বি-প্রহরের সময় একদিন উমাইয়া তাঁকে সাথে নিয়ে বের হল, যখন তাঁদের সাথে আবূ জেহেলের দেখা হল। তখন সে ( আবূ জেহেল উমাইয়াকে লক্ষ্য করে) বলল, হে আবূ সাফ্‌ওয়ান! তোমার সাথে ইনি কে? সে বলল, ইনি সা’দ (ইব্‌ন মু’আয)। তখন আবূ জেহেল তাকে (সা’দ ইব্‌ন মু‘আযকে) লক্ষ্য করে বলল, আমি তোমাকে নিঃশঙ্ক চিত্তে ও নিরাপদে মক্কায়(বায়তুল্লাহর)তাওয়াফ করতে দেখেছি অথচ তোমরা ধর্মত্যাগীদের আশ্রয় দান করেছ এবং তাদেরকে সাহায্য ও সহযোগিতা করে চলেছ। আল্লাহর কসম, (এ মুহূর্তে) তুমি আবূ সাফওয়ানের (উমাইয়া) সঙ্গে না থাকলে তোমার পরিজনদের কাছে নিরাপদে ফিরে যেতে পারতে না। সা’দ (রাঃ) এর চেয়েও অধিক উচ্চস্বরে বললেন, আল্লাহর কসম, তুমি এতে যদি আমাকে বাঁধা দাও তাহলে আমিও এমন একটি ব্যাপারে তোমাকে বাঁধা দেব যা তোমার জন্য এর চেয়েও ভীষণ কঠিন হবে। আর তা হল, মদিনার উপকন্ঠ দিয়ে তোমার(ব্যবসা বাণিজ্যের বৃহত্তম কেন্দ্র সিরিয়ার) যাতায়তের রাস্তা (বন্ধ করে দেব)। তখন উমাইয়া তাকে বলল, হে সা’দ (রাঃ) এ উপত্যাকার প্রধান সর্দার আবূল হাকওমের( আবূ জেহেল) সাথে এরূপ উচ্চস্বরে কথা বলিও না। তখন সা’দ (রাঃ) বললেন, হে উমাইয়া! তুমি চুপ কর। আল্লাহর কসম, আমি রাসুল্লুল্লাহ -কে বলতে শুনেছি যে, তারা তোমার হত্যাকারী। উমাইয়া জিজ্ঞাসা করল, মক্কার বুকে? সা’দ (রাঃ) বললেন, তা জানিনা। উমাইয়া এতে ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। এরপর উমাইয়া বাড়ী গিয়ে তার(স্ত্রীকে ডেকে) বলল, হে উম্মে সাফওয়ান সা’দ আমার সম্পর্কে কি বলছে জানো? সে বলল, সা’দ তোমাকে কি বলেছে? উমাইয়া বলল, সে বলেছে যে, রাসূল (সাঃ) তাদেরকে জানিয়েছে যে, তারা আমার হত্যাকারী। তখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তা কি মক্কায়? সে(সা’দ) বলল, তা আমি জানিনা। এরপর উমাইয়া বলল, আল্লাহর কসম, আমি কখনো মক্কা থেকে বের হব না। কিন্তু বদর যুদ্ধের দিন সমাগত হলে আবূ জেহেল সর্বস্তরের জনসাধারণকে সদলবলে বের হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলল, তোমরা তোমাদের কাফেলা রক্ষা করার জন্য অগ্রসর হও। উমাইয়া(মক্কা ছেড়ে) বের হওয়াকে অপছন্দ করলে আবূ জেহেল এসে তাকে বলল, হে আবূ সাফওয়ান। তুমি এ উপত্যাকার আধিবাসিদের(একজন) নেতা, তাই লোকেরা যখন দেখবে(তুমি যুদ্ধ যাত্রায়) পেছনে বয়ে গেছ তখন তারাও তোমার সাথে এ বলে পেছনেই থেকে যাবে। এ বলে আবূ জেহেল তার সাথে পীড়াপীড়ি করতে থাকলে সে বলল, তুমি যেহেতু আমাকে বাধ্য করে ফেলেছ তাই খোদার কসম অবশ্যই আমি এমন একটি উষ্ট্র ক্রয় করব যা মক্কার সবচাইতে ভাল। এরপর উমাইয়া(তার স্ত্রীকে) বলল, হে উম্মে সাফওয়ান; আমার সফরের ব্যবস্থা কর। তখন তার স্ত্রী তাকে বলল, হে আবূ সাফওয়ান! তোমার মদিনাবাসী ভাই যা বলেছিলেন তা তুমি ভূলে গিয়েছ কি? সে বলল, না। আমি তাদের সাথে কিছু দূর যেতে চাই মাত্র। রওয়ানা হওয়ার পর রাস্তায় যে মন্‌যিলেই উমাইয়া কিছুক্ষণ অবস্থান করেছে সেখানেই সে তার উট বেঁধে রেখেছে, গোটা পথেই এরূপ সে করল পরিশেষে বদর প্রান্তরে আল্লাহর হুকুমে সে মারা গেল।

হাদীস নং ৩৬৬৬

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে কাব রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি কাব ইবনে মালিক রা.-কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তন্মধ্যে তাবুকের যুদ্ধ ব্যতীত অন্য সব যুদ্ধে আমি শরীক ছিলাম। তবে বদর যুদ্ধেও আমি শরীক হইনি। কিন্তু বদর যুদ্ধে যারা যোগদান করেননি তাদেরকে কোন প্রকার দোষারূপ করা হয়নি। কারণ প্রকৃতপক্ষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশ কাফেলার পশ্চাদ্বাবন করার উদ্দেশ্যেই যাত্রা করেছিলেন। কিন্তু পূর্বনির্ধারিত সময় ছাড়া আল্লাহ তায়ালা তাদের (মুসলমানদের) সাথে তাদের শত্রু দের মুখামুখী করিয়ে দেন।

হাদীস নং ৩৬৬৭

আবু নুআইম রহ…………ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মিকদাদ ইবনে আসওয়াদকে এমন একটি ভূমিকায় পেয়েছি যে, সে ভূমিকায় যদি আমি হতাম, তবে যা দুনিয়ার সব কিছুর তুলনায় আমার নিকট প্রিয় হত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আসলেন, তখন তিনি মুশরিকদের বিরুদ্ধে দু’আ করছিলেন। এতে তিনি (মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ) বললেন, মূসা আ. এর কওম যেমন বলেছিল যে, “তুমি (মূসা) আর তোমার প্রতিপালক যাও এবং যুদ্ধ কর”। (আমরা তেমন বলল না, বরং আমরা তো আপনার ডানে, বামে সম্মুখে, পেছনে সর্বদিক থেকে যুদ্ধ করব। ইবনে মাসউদ রা. বলেন, আমি দেখলাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হয়ে উঠল এবং (একথা) তাকে খুব আনন্দিত করল।

হাদীস নং ৩৬৬৮

মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে হাওশাব রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বদরের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছিলেন, হে আল্লাহ ! আমি আপনার প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার পূরণ করার জন্য প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ ! আপনি যদি চান (কাফিররা আমাদের উপর জয়লাভ করুক) আপনার ইবাদত করার লোক আর থাকবে না। এমতাবস্থায় আবু বকর রা. তাঁর হাত চেপে বললেন, আপনার জন্য এ যথেষ্ট। তখন তিনি এ আয়াত পড়তে পড়তে বের হলেন। “শত্রু দল শীঘ্রই পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে”। (৫৪ ক্বামার ৪৫)

হাদীস নং ৩৬৬৯

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ…………আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুমিনদের মধ্যে (যারা অক্ষম) অথচ ঘরে বসে থাকেন তারা সমান নন। অর্থাৎ বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এবং যারা বদরের যুদ্ধ থেকে বিরত রয়েছেন তারা সমান নন।

হাদীস নং ৩৬৭০

মুসলিম রহ. মাহমূদ রহ………..বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বদরের দিন আমাকে ও ইবনে উমরকে ছোট মনে করা হয়েছিল, এ যুদ্ধে মুহাজিরদের সংখ্যা ছিল ষাটের বেশী এবং আনসারদের সংখ্যা ছিল দুইশ চল্লিশেরও কিচু বেশী।

হাদীস নং ৩৬৭১

আমর ইবনে খালিদ রহ………..বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যে সব সাহাবী বদরে অংশগ্রহণ করেছেন তারা আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, তাদের সংখ্যা তালুতের যেসব সঙ্গী (জিহাদে শরীক হওয়ার নিমিত্তে তাঁর সাথে) নদী পার হয়েছিলেন তাদের সমান ছিল। তাদের সংখা ছিল তিনশত দশেরও কিছু বেশী। বারা রা. বলেন, আল্লাহর কসম, ঈমানদার ব্যতীত আর কেউই তাঁর সাথে নদী অতিক্রম করেনি।

হাদীস নং ৩৬৭২

আবদুল্লাহ ইবনে রাজা রহ………বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবাগণ পরস্পর আলোচনা করতাম যে, বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবীদের সংখ্যা তালুতের সঙ্গে অতিক্রমকারী লোকদের সমানই ছিল এবং তিনশত দশ জনের অধিক ঈমানদার ব্যক্তিই কেবল তাঁর সাথে নদী পার হয়েছিলেন।

হাদীস নং ৩৬৭৩

আবদুল্লাহ ইবনে আবদু শায়বা রহ. ও মুহাম্মদ ইবনে কাসীর রহ……….বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা পরস্পর আলোচনা করতাম যে, বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবীদের সংখ্যা তালুতের সঙ্গে অতিক্রমকারী লোকদের সমানই ছিল। আর তিনশত দশ জনের অধিক ঈমানদার ব্যক্তিই কেবল তাঁর সাথে নদী পার হয়েছিলেন।

হাদীস নং ৩৬৭৪

আমর ইবনে খালিদ রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবার দিকে মুখ করে কুরাইশ গোত্রীয় কতিপয় লোক তথা- শায়বা,উতবা, ওয়ালীদ এবং আবু জেহেল ইবনে হিশামের বিরুদ্ধে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দু’আ করেন। (আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন) আমি আল্লাহর নামে সাক্ষ্য দিচ্ছি, অবশ্যই আমি এ সমস্ত লোকদেরকে (বদরের রণাঙ্গনে) নিহত হয়ে বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে থাকতে দেখেছি। রৌদ্রের প্রচণ্ডতা তাদের দেহগুলোকে বিকৃত করে দিয়েছিল। বস্তুতঃ সে দিনটি ছিল প্রচণ্ড গরম।

হাদীস নং ৩৬৭৫

ইবনে নুমাইর রহ……….আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, বদর যুদ্ধের দিন আবু জেহেল যখন মৃত্যুর মুখোমুখি তখন তিনি (আবদুল্লাহ) তার কাছে গেলেন। তখন আবু জেহেল বলল, (আজ) তোমরা তোমাদের এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছ এতে আমি কি আশ্চর্যবোধ করব।

হাদীস নং ৩৬৭৬

আহমদ ইবনে ইউনুস রহ. ও আমর ইবনে খালিদ রহ……..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, (বদরের দিন) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবু জেহেলের কি অবস্থা কেউ তা দেখে আসতে পার কি? তখন ইবনে মাসউদ রা. তার খোঁজে বের হলেন এবং দেখতে পেলেন যে, আফরার দুই পুত্র তাকে এমনিভাবে প্রহার করেছে যে, মুমূর্ষু অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে। রাবী বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. তার দাঁড়ি ধরে বললেন, তুমিই কি আবু জেহেল? আবু জেহেল বলল, যাকে (অর্থাৎ আবু জেহেল) তোমরা অথবা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) তার গোত্রের লোকেরা হত্যা করল তার চেয়ে বেশী আর কি? আহমদ ইবনে ইউনুস রহ. বলেন, তুমিই কি আবু জেহেল।

হাদীস নং ৩৬৭৭

মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ…………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, (বদরের দিন) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবু জেহেল কি করল, কে তা খোঁজে নিয়ে আসতে পারে? (এ কথা শুনে) ইবনে মাসউদ রা. চলে গেলেন এবং তিনি দেখতে পেলেন, আফরার দুই পুত্র তাকে এমনিভাবে প্রহার করেছে যে, সে মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে আছে। তখন তিনি তার দাঁড়ি ধরে বললেন, তুমি কি আবু জেহেল? উত্তরে সে বলল, এক ব্যক্তিকে তার গোত্রের লোকেরা হত্যা করল অথবা (রাবীর সন্দেহ) যাকে তোমরা হত্যা করলে ! এর চাইতে বেশী আর কি? ইবনে মুসান্না রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে অনুরূপ একটি রেওয়ায়েত বর্ণিত আছে।

হাদীস নং ৩৬৭৮

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..ইবরাহীমের দাদা থেকে বদর তথা আফরার দুই ছেলের সম্পর্কে এক রেওয়ায়ত বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৩৬৭৯

মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ রুকাশী রহ………..আলী ইবনে আবু তালিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি যে কিয়ামতের দিন দয়াময়ের সামনে বিবাদের (মিমাংসার) জন্য হাঁটু গেড়ে বসব। কায়েস ইবনে উবাদ রা. বলেন, এদের সম্পর্কেই কুরআন মজীদের هذان خصمان اختصموا في ربهم ‘এর দুটি বিবাদমান পক্ষ তাঁরা তাদের প্রতিপালক সম্বন্ধে বিতর্ক করে’। আয়াতটি নাযিল হয়েছে। তিনি বলেন, (মুসলিম পক্ষের) তারা হল হামযা, আলী ও উবায়দা অথবা (রাবীর সন্দেহ) আবু উবায়দা ইবনুল হারিস (কাফের পক্ষের) শায়বা ইবনে রাবীআ, উতবা এবং ওয়ালীদ ইবনে উতবা।

হাদীস নং ৩৬৮০

কাবীসা রহ……….আবু যার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, خصمان اختصموا في ربهم ‘এর দুটি বিবাদমান পক্ষ তাঁরা তাদের প্রতিপালক সম্বন্ধে বিতর্ক করে’। আয়াতটি কুরাইশ গোত্রীয় ছয়জন লোক (এদের তিনজন মুসলিম এবং তিনজন মুশরিক) সম্বন্ধে নাযিল হয়েছে। তারা হলেন (মুসলিম পক্ষে) আলী, হামযা, উবায়দা ইবনুল হারিস রা. ও (কাফের পক্ষে) শায়বা ইবনে রাবীআ, উতবা ইবনে রাবীআ এবং ওয়ালীদ ইবনে উতবা।

হাদীস নং ৩৬৮১

ইসহাক ইবনে ইবরাহীম সাওয়াফ রহ………..কায়েস ইবনে উবাদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আলী রা. বলেছেন, আয়াতটি আমাদের সম্পর্কেই নাযিল হয়েছে। خصمان اختصموا في ربهم ‘এর দুটি বিবাদমান পক্ষ তাঁরা তাদের প্রতিপালক সম্বন্ধে বিতর্ক করে’।

হাদীস নং ৩৬৮২

ইয়াহইয়া ইবনে জাফর রহ………..কায়েস ইবনে উবাদ রহ. থেকে বর্ণিত, (তিনি বলেছেন) আমি আবু যার রা.-কে কসম করে বলতে শুনেছি যে, উপরোক্ত আয়াতগুলো উল্লেখিত বদরের দিন ঐ ছয় ব্যক্তি সম্পর্কে নাযিল হয়েছিল।

হাদীস নং ৩৬৮৩

ইয়াকুব ইবনে ইবরাহীম রহ………..কায়েস রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বলেছেন, আমি আবু যার রা..-কে কসম করে বলতে শুনেছি যে, خصمان اختصموا في ربهم ‘এর দুটি বিবাদমান পক্ষ তাঁরা তাদের প্রতিপালক সম্বন্ধে বিতর্ক করে’। আয়াতটি বদরের দিন দ্বন্দ্বযুদ্ধে হামযা, আলী ও উবায়দা অথবা আবু উবায়দা ইবনুল হারিস, রাবীআর দুই ছেলে শায়বা উতবা এবং ওয়ালীদ ইবনে উতবার সম্বন্ধে নাযিল হয়েছে।

হাদীস নং ৩৬৮৪

আহমদ ইবনে সাঈদ আবু আবদুল্লাহ রহ………..আবু ইসহাক রহ. থেকে বর্ণিত যে, আমি শুনলাম, এক ব্যক্তি বারা রা.-কে জিজ্ঞাসা করল, আলী রা. কি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন? তিনি বললেন, আলী তো নিঃসন্দেহে মুকাবিলায় অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং দুইটি লৌহ পোশাক পরিধান করেছিলেন।

হাদীস নং ৩৬৮৫

আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..আবদুর রাহমান ইবনে আউফ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উমাইয়া ইবনে খালফের সাথে একটি চুক্তি করেছিলাম। যখন বদর দিবস উপস্থিত হল, এরপর তিনি উমাইয়া ইবনে খালফ ও তার পুত্রের নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ করলেন। সেদিন বিলাল রা. বললেন, যদি উমাইয়া ইবনে খালফ প্রাণে বেঁচে যায় তাহলে আমি সফল হব না।

হাদীস নং ৩৬৮৬

আবদান ইবনে উসমান রহ………..আবদুল্লাহ রা. সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যে, তিনি সূরা নাজম তিলাওয়াত করলেন এবং (সাথে সাথে) সিজদা করলেন। এক বৃদ্ধ ব্যতীত নবীজীর নিকট যারা উপস্থিত ছিলেন তারা সকলেই সিজদা করলেন। সে বৃদ্ধ এক মুষ্টি মাটি উঠিয়ে কপাল লাগিয়ে বলল, আমার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। আবদুল্লাহ রা. বলেন, কিছুদিন পর আমি তাকে কাফের অবস্থায় নিহত হতে দেখেছি।
ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ……….হিশামের পিতা (উরওয়া) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (তার পিতা) যুবাইরের শরীরে তিনটি মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন বিদ্যমান ছিল। এর একটি ছিল তার কাঁধে। উরওয়া বলেন, আমি আমার আঙ্গুলগুলো ঐ ক্ষতস্থানে ঢুকিয়ে দিতাম, বর্ণনাকারী উরওয়া বলেন, ঐ আঘাত তিনটির দুটি ছিল বদর যুদ্ধের এবং একটি ছিল ইয়ারমুক যুদ্ধের। উরওয়া বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর শহীদ হলেন তখন আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান আমাকে বললেন, হে উরওয়া, যুবাইরের তরবারি খানা তুমি কি চিন? আমি বললাম, হ্যা, চিনি। আবদুল মালিক বললেন, এর কি কোন চিহ্ন (তোমার জানা) আছে? আমি বললাম, এর ধার পাশে এক জায়গায় ভাঙ্গা আছে যা বদর যুদ্ধের দিন ভেঙ্গে ছিল তখন তিনি বললেন, হ্যাঁ তুমি সত্য বলেছ, (তারপর তিনি একটি কবিতাংশ আবৃত্তি করলেন) بهن فلول من قراع الكتائب সে তরবারীর ভাঙ্গন ছিল শত্রু সেনাদের আঘাত করার কারণে। এরপর আবদুল মালিক তরবারী খানা উরওয়ার নিকট ফিরিয়ে দিলেন, হিশাম বলেন, আমরা নিজেরা এর মূল্য নির্ধারণ করেছিলাম তিন হাজার দেরহাম। এরপর আমাদের এক ব্যক্তি তা (উত্তররাধিকারী সূত্রে) নিয়ে নিল। আমার মনে বাসনা জাগল যে যদি আমি তরবারীটি নিয়ে নিতাম।

হাদীস নং ৩৬৮৭

ফারওয়া রহ…………হিশামের পিতা (উরওয়া) রা. থেকে বর্ণিত যে, যুবাইর রা.-এর তরবারী রূপার কারুকার্য খচিত ছিল। হিশাম রহ. বলেন, উরওয়া রহ-এর তরবারীটিও রূপার কারুকার্য খচিত ছিল।

হাদীস নং ৩৬৮৮

আহমদ ইবনে মুহাম্মদ রহ………..উরওয়া রহ. থেকে বর্ণিত যে, ইয়ারমুকের (যুদ্ধের) দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবাগণ যুবাইর রা. কে বলেন যে, (মুশরিকদের প্রতি) আপনি কি আক্রমণ করবেন না তাহলে আমরাও আপনার সঙ্গে আক্রমণ করব। তখন তিনি বলেন, আমি যদি (তাদের প্রতি) আক্রমণ করি তখন তোমরা পিছে সরে পড়বে। তখন তারা বললেন, আমরা তা করব না। এরপর তিনি তাদের উপর আক্রমণ করলেন। এমনকি শত্রু দের কাতার ভেদ করে সামনে এগিয়ে গেলেন। কিন্তু (এ সময়) তার সঙ্গে আর কেউই ছিলনা। মুখোমুখি হয়ে ফিরে আসার জন্য উদ্যত হলে শত্রু গণ তাঁর ঘোড়ার লাগাম ধরে ফেলে এবং তার কাঁধের উপর দুটি আঘাত করে, যে আঘাত দুটির মাঝেই বিদ্যমান রয়েছে বদর যুদ্ধের আঘাতের চিহ্নটি। উরওয়া রহ. বলেন, আমি যখন ছোট ছিলাম তখন ঐ ক্ষত চিহ্ন গুলোতে আমার সবগুলো আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়ে আমি খেলা করতাম। উরওয়া রহ. আরো বলেন, ঐদিন তার সঙ্গে (তার পুত্র) আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. ও শরীক ছিলেন, তখন তার বয়স ছিল দশ বছর। যুবাইর রা. তাকে ঘোড়ার পিঠে উঠিয়ে নিলেন এবং এক ব্যক্তিকে তার তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দিলেন।

হাদীস নং ৩৬৮৯

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………….আবু তালহা রা. থেকে বর্ণিত যে, বদর যুদ্ধের দিন আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশে চব্বিশজন কুরাইশ সর্দারের লাশ বদর প্রান্তরের একটি কদর্য আবর্জনাপূর্ণ কূপে নিক্ষেপ করা হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করলে সে স্থানের উপকণ্ঠে তিন দিন অবস্থান করতেন। সে মতে বদর প্রান্তরে অবস্থানের পর তৃতীয় দিন তিনি তাঁর সাওয়ারী প্রস্তুত করার আদেশ দিলেন, সাওয়ারীর জিন কষে বাঁধা হল। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পদব্রজে (কিছু দূর) এগিয়ে গেলেন। সাহাবাগণও তাঁর পেছনে পেছনে চলছেন। তাঁরা বলেন, আমরা মনে করছিলাম। কোন প্রয়োজনে (হয়ত) তিনি কোথাও যাচ্ছেন। অবশেষে তিনি ঐ কূপের কিনারে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং কূপে নিক্ষিপ্ত ঐ নিহত ব্যক্তিদের নাম ও তাদের পিতার নাম ধরে এভাবে ডাকতে শুরু করলেন, হে অমুকের পুত্র অমুক হে অমুকের পুত্র অমুক ! তোমরা কি এখন অনুভব করতে পারছ যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য তোমাদের জন্য পরম খুশীর বস্তু ছিল? আমাদের প্রতিপালক আমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আমরা তো তা সত্য পেয়েছি, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদেরকে যা বলেছিলেন তোমরাও তা সত্য পেয়েছ কি? বর্ণনাকারী বলেন, (এ কথা শুনে) উমর রা. বললেন, হে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনি আত্মহীন দেহগুলোকে সম্বোধন করে কি কথা বলছেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঐ মহান সত্তার শপথ, যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, আমি যা বলছি তা তাদের তুলনায় তোমরা অধিক শ্রবণ করছ না। কাতাদা রা. বলেন, আল্লাহ তাঁর (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা শুনাতে) ধমকি, লাঞ্ছনা, দুঃখ-কষ্ট, আফসোস এবং লজ্জা দেওয়ার জন্য (সাময়িকভাবে) দেহে প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন।

হাদীস নং ৩৬৯০

হুমাইদী রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি الذين بدلوا نعمة الله كفرا আয়াতাংশ সম্পর্কে বলেছেন, আল্লাহর কসম, এর হল কাফির কুরাইশ সম্প্রদায়। আমর রহ. বলেন, এরপ হচ্ছে কুরাইশ সম্প্রদায় এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন আল্লাহর নিয়ামত। এবং وأحلو قومهم دار البوار আয়াতাংশের মাঝে বর্ণিত এর البوار অর্থ হচ্ছে النار দোযখ। (অর্থাৎ বদর যুদ্ধের দিন তারা তাদের কাওমকে দোযখে পৌঁছিয়ে দিয়েছে।

হাদীস নং ৩৬৯১

উবাইদ ইবনে ইসমাঈল রহ………..হিশামের পিতা (উরওয়া) রহ . থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবার পরিজনদের কান্নাকাটি করার কারণে কবরে শাস্তি দেওয়া হয়। ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথাটি আয়েশা রা. -এর নিকট উল্লেখ করা হলে তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো বলেছেন, মৃত ব্যক্তির অপরাধ ও গোনাহর কারণে তাকে (কবরে) শাস্তি দেওয়া হয়। অথচ তখনও তার পরিবারের লোকেরা তার জন্য ক্রন্দন করছে। তিনি রা. বলেন, এ কথাটি ঐ কথাটিরই অনুরূপ যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ কূপের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, যে কূপে বদর যুদ্ধে নিহত মুশরিকদের নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তিনি তাদেরকে যা বলার বললেন (এবং জানালেন) যে, আমি যা বলছি তারা তা সবই শুনতে পাচ্ছে। তিনি বললেন, এখন তারা খুব বুঝতে পারছে যে, আমি তাদেরকে যা বলছিলাম তা ছিল যথার্থ। এরপর আয়েশা রা. إنك لا تسمع الموتى وما أنت بمسمع من في القبور ‘তুমি তো মৃতকে শুনাতে পারবে না) (৩০ রূম ৫২) (এবং তুমি শুনাতে সমর্থ হবেনা তাদেরকে যারা কবরে রয়েছে) (৩৫ ফাতির ২২) আয়াতাংশ দুটো তিলাওয়াত করলেন। উরওয়া রহ. বলেন, (এর অর্থ হল) জাহান্নামে যখন তাঁরা তাদের আসন গ্রহণ করে নেবে।

হাদীস নং ৩৬৯২

উসমান রহ…………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদরে অবস্থিত কূপের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন, (হে মুশরিকগণ) তোমাদের রব তোমাদের নিকট যা ওয়াদা করেছিলেন তা তোমরা ঠিক মত পেয়েছ? পরে তিনি বললেন, এ মুহূর্তে তাদেরকে আমি যা বলছি তা সবই শুনতে পাচ্ছে। এ বিষয়টি আয়েশা রা.-এর সামনে উল্লেখ করা হলে তিনি বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন তার অর্থ হল, তারা এখন বুঝতে পারছে যে, আমি তাদেরকে যা বলতাম তাই হক ছিল। এরপর তিনি তিলাওয়াত করলেন إنك لا تسمع الموتى حتى قرأت الاية‘তুমি তো মৃতকে শুনাতে পারবে না) এভাবে আয়াতটি সম্পূর্ণ তিলাওয়াত করলেন।

হাদীস নং ৩৬৯৩

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ…………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলতেন, হারিসা রা একজন নও জওয়ান লোক ছিলেন। বদর যুদ্ধে তিনি শাহাদাত বরণ করার পর তার আম্মা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হারিসা আমার কত আদরের আপনি তো তা অবশ্যই জানেন। (বলুন) সে যদি জান্নাতী হয় তাহলে আমি ধৈর্যধারণ করব এবং আল্লাহর নিকট সাওয়াবের আশা পোষণ করব। আর যদি এর অন্যথা হয় তাহলে আপনি তো দেখতেই পাচ্ছেন, আমি (তার জন্য) যা করছি। তখন তিনি বললেন, তোমার কি হল, তুমি কি জ্ঞানশূন্য হয়ে গেলে? বেহেশত কি একটি ? (না…….না) বেহেশত অনেকগুলি, সে তো জান্নাতুল ফেরদাউসে অবস্থান করছে।

হাদীস নং ৩৬৯৪

ইসহাক ইবনে ইবরাহীম রহ…………আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু মারসাদ, যুবাইর ও আমাকে কোথাও পাঠিয়েছিলেন এবং আমরা সকলেই ছিলাম অশ্বারোহী। তিনি আমাদেরকে বললেন, তোমরা যাও। যেতে যেতে তোমরা ‘রাওয়া খাখা’ নামক স্থানে পৌঁছে তথায় একজন স্ত্রীলোক দেখতে পাবে। তার নিকট (মক্কায়) মুশরিকদের কাছে লিখিত হাতিব ইবনে আবু বালতার একখানা পত্র আছে। (সে পত্রখানা ছিনিয়ে আনবে)। আলী রা. বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নির্দেশিত স্থানে গিয়ে তাকে ধরে ফেললাম। সে তখন স্বীয় একটি উটের উপর আরোহণ করে পথ অতিক্রম করছিল। আমরা তাকে বললাম, পত্রখানা আমাদের নিকট অর্পণ কর। সে বলল, আমার নিকট কোন পত্র নেই। আমরা তখন তার উটটিকে বসিয়ে তার তল্লাশী নিলাম। কিন্তু পত্রখানা উদ্ধার করতে পারলাম না। আমরা বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিথ্যা বলেনি। তোমাকে পত্রখানা বের করতেই হবে। নতুবা আমরা তোমাকে উলঙ্গ করে ছাড়ব। যখন (আমাদের) কঠোর মনোভাব লক্ষ্য করল তখন স্ত্রীলোকটি তার কোমরের পরিধেয় বস্ত্রের গিটে কাপড়ের পুটুলির মধ্য থেকে পত্রখানা বের করে দিল। আমরা তা নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দরবারে উপস্থিত হলাম (সব দেখে শুনে) উমর রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! সে তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং মুমিনদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আপনি আমাকে অনুমতি দিন, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (হাতিব ইবনে আবু বালতা রা. কে ডেকে) বললেন, তোমাকে একাজ করতে কিসে উদ্ধুদ্ধ করল? হাতিব রা. বললেন, আল্লাহর কসম! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আমি বিশ্বাসী নই, আমি এরূপ নই। বরং (এ কাজ করার পেছনে) আমার মূল উদ্দেশ্য হল (মক্কার শত্রু) কাওমের প্রতি কিছু অনুগ্রহ করা যাতে আল্লাহ এ উসিলায় (তাদের অনিষ্ট থেকে) আমার মাল এবং পরিবার ও পরিজনকে রক্ষা করেন। আর আপনার সাহাবীদের সকলেরই কোন না কোন আত্মীয় সেখানে রয়েছে, যার দ্বারা আল্লাহ তার ধন-সম্পদ ও পরিবারবর্গকে রক্ষা করছেন (এ কথা শুনে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে সত্যই বলেছে। সুতরাং তার ব্যাপারে ভাল ব্যতীত আর কিছু বলো না। তখন উমর রা. বললেন, সে তো আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। সুতরাং আপনি আমাকে অনুমতি দিন, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে কি বদরী সাহাবী নয়? নিশ্চয়ই বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদেরকে দেখে শুনেই আল্লাহ বলেছেন : ‘তোমাদের যা ইচ্ছা কর’ তোমাদের জন্য জান্নাত অবধারিত অথব (রাবীর সন্দেহ) আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি। (এ কথা শুনে) উমর রা. এর দুচোখ তখন অশ্রু সজল হয়ে উঠল। তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সর্বাধিক জ্ঞাত।

হাদীস নং ৩৬৯৫

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ আল জুফী রহ………..আবু উসাইদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, শত্রু তোমাদের নিকটবর্তী হলে তোমরা তীর নিক্ষেপ করবে এবং তীর ব্যহারে সংযমী হবে।

হাদীস নং ৩৬৯৬

মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রাহীম রহ………….আবু উসাইদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, তারা (শত্রুরা) তোমাদের নিকটবর্তী হল তোমরা তাদের প্রতি তীর নিক্ষেপ করবে এবং ব্যবহারে সংযমী হবে।

হাদীস নং ৩৬৯৭

আমর ইবনে খালিদ রহ……….বারা ইবনে আযিব রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইরকে তীরন্দাজ বাহিনীর অধিনায়ক নিযুক্ত করেছিলেন। (এ যুদ্ধে) তারা (মুশরিক বাহিনী) আমাদের সত্তর জনকে শহীদ করে দেয়। বদর যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীগণ মুশরিকদের একশ চল্লিশ জনকে নিহত ও গ্রেফতার করে ফেলেছিলেন। এর মধ্যে সত্তর জন বন্দী হয়েছিল এবং সত্তর জন নিহত (উহুদ যুদ্ধের দিন যুদ্ধ সমাপনান্তে কুফরী অবস্থায়) আবু সুফিয়ান রা বললেন, আজকের এদিন হল বদরের বদলা (বিজয়)। যুদ্ধ কূপের বালতির ন্যায় হাত বদল হয়।

হাদীস নং ৩৬৯৮

মুহাম্মদ ইবনে আলা রহ…………আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি স্বপ্নে যে কল্যাণ দেখতে পেয়েছিলাম সে তো ঐ কল্যাণ যা পরবর্তী সময়ে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দান করেছেন। আর উত্তম প্রতিদান সম্বন্ধে যা দেখেছিলাম তা তো আল্লাহ আমাদেরকে দান করেছেন বদর যুদ্ধের দিন।

হাদীস নং ৩৬৯৯

ইয়াকুব রহ………..আবদুর রাহমান ইবনে আউফ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, বদরের রণাঙ্গনে সৈন্যদের সারিতে দাঁড়িয়ে আমি এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখলাম, আমার ডানে ও বামে অল্প বয়স্ক দু’জন দাঁড়িয়ে আছে। পাশে তাদের মত অল্প বয়স্ক দু’জন যুবক দাঁড়িয়ে থাকার ফলে আমি নিজেকে নিরাপদ করে করছিলাম না। এমতাবস্থায় তাদের একজন অপরজন থেকে গোপন করে আমাকে জিজ্ঞাসা করল চাচাজান, আবু জেহেল কোন লোকটি আমাকে তা দেখিয়ে দিন? আমি বললাম, ভাতিজা তাকে চিনে তুমি কি করবে? সে বলল, আমি আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করেছি, তার দেখা পেলে আমি তাকে হত্যা করব না হয় (এ চেষ্টায়) নিজেই শহীদ হয়ে যাব। এরপর দ্বিতীয় যুবকটিও তাঁর সঙ্গীকে গোপন করে আমাকে অনুরূপ জিজ্ঞাসা করল। আবদুর রাহমান ইবনে আউফ রা. বলেন, (তাদের কথা শুনে) আমি এত অধিক সন্তুষ্ট হলাম যে, দু’জন পূর্ণবয়স্ক পুরুষের মধ্যস্থলে অবস্থানেও আমি ততটুকু সন্তুষ্ট হতাম না। এরপর আমি তাদের দু’জনকে ইশারা করে আবু জেহেলকে দেখিয়ে দিলাম। তৎক্ষণাৎ তাঁরা বাজ পাখির ন্যায় ক্ষিপ্রতার সাথে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং ভীষণভাবে তাকে আঘাত করল। এরা দুজন ছিল আফরার দু’পুত্র।

হাদীস নং ৩৭০০

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসিম ইবনে উমর ইবনে খাত্তাবের নানা আসিম ইবনে সাবিত আনসারীর নেতৃত্বে দশজন সাহাবীর একটি দল গোয়েন্দাগিরির জন্য পাঠালেন। তাঁরা উসফান ও মক্কার মধ্যবর্তী স্থান হান্দায় পৌঁছলে হুযাইল গোত্রের একটি শাখা বানু লিহয়ানকে তাদের আগমন সম্বন্ধে অবগত করা হয়। (এ সংবাদ শুনে) তারা প্রায় একশ জন তীরন্দাজ তৈরী হয়ে মুসলমানের বিরুদ্ধে লড়াই করার উদ্দেশ্য রওয়ানা হয়ে তাদের পদচিহ্ন অনুসরণ করে পথ চলতে আরম্ভ করে। যেতে যেতে তারা এমন স্থানে পৌঁছে যায় যেখানে অবস্থান করে তাঁরা (সাহাবীগণ) খেজুর খেয়েছিলেন। এত দৃষ্টে তারা (বানু লিহয়ানের লোকেরা) ইয়াসরিবের খেজুর (এর আটি) বলে তাদের পদচিহ্ন অনুসরণ করে তাদেরকে খুঁজতে লাগল। আসিম ও তাঁর সঙ্গীগণ তাদের (আগমন) সম্বন্ধে অনুভব করতে পেরে একটি (পাহাড়ী) স্থানে গিয়ে আশ্রয় নেন। (লিহয়ান) কাওমের লোকেরা তাদেরকে বেষ্টন করে ফেলে। তারপর তারা মুসলমানদেরকে নিচে অবতরণ করে আত্মসমর্পণের আহবান জানিয়ে বলল, তোমাদেরকে ওয়াদা দিচ্ছি, আমরা তোমাদের কাউকে হত্যা করব না। তখন আসিম ইবনে সাবিত রা. বললেন, হে আমার সাথী ভাইয়েরা, কাফিরের নিরাপত্তায় আশ্বস্ত হয়ে আমি কখনো নিচে অবতরণ করব না। তারপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ ! আমাদের খবর আপনার নবীকে জানিয়ে দিন। এরপর তারা মুসলমানদের প্রতি তীর নিক্ষেপ আরম্ভ করল এংব আসমিকে (আরো ছয়জন সহ) শহীদ করে ফেলল। অবশিষ্ট তিনজন, খুবাইব, যায়েদ ইবনে দাসিনা এবং অপর একজন (আবদুল্লাহ ইবনে তারিক) তাদের ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করে তাদের নিকট নেমে আসলেন। তারা (শত্রু গণ) তাদেরকে কাবু করে নিয়ে নিজেদের ধনুকের তার খুলে তা দিয়ে তাদেরকে বেঁধে ফেলল। এ দেখে তৃতীয়জন বললেন, এটাই প্রথম বিশ্বাসঘাতকতা। আল্লাহর কসম, আমি তোমাদের সাথে যাবনা, আমার জন্য তো এদের (শহীদ সাথীদের) আদর্শই অনুসরণীয়। অর্থাৎ আমিও শহীদ হয়ে যাব। তারা তাকে বহু টানা হেচড়া করল। কিন্তু তিনি তাদের সাথে যেতে অস্বীকার করলেন। (অবশেষে তারা তাকে শহীদ করে দিল) এরপর খুবাই এবং যায়েদ ইবনে দাসিনাকে (বন্দী করে) নিয়ে গিয়ে তাদেরকে (মক্কার বাজারে) বিক্রি করে দিল। এটা ছিল বদর যুদ্ধের পরবর্তী ঘটনা। বদরু যুদ্ধে খুবাইব যেহেতু হারিস ইবনে আমিরকে হত্যা করেছিলেন। তাই (প্রতিশোধের উদ্দেশ্যে) হারিস ইবনে আমির ইবনে নাওফিলের পুত্রগণ তাকে খরীদ করে নিল। খুবাইব তাদের নকিট বন্দী অবস্থায় কাটাতে লাগলেন। এরপর তারা সবাই তাকে হত্যা করার দৃঢ় সংকল্প করল। তিনি হারিসের কোন এক কন্যার নিকট থেকে ক্ষৌর কর্মের জন্য একটি ক্ষুর চেয়ে নিলেন। তার (হারিসের কন্যা) দেখতে পেল তিনি (খুবাইব) তার বাচ্চাকে কোলে নিয়ে রানের উপর বসিয়ে ক্ষুর খানা হাতে ধরে আছেন। সে (হারিসের কন্যা) বর্ণনা করেছে, (এ দেখে) আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়লাম, খুবাইব তা বুঝতে পারলাম, তিনি বললেন, আমি তাকে (শিশুটিকে) হত্যা করে ফেলব বলে তুমি কি ভয় পেয়েছ। আমি কখনো এ কাজ কবর না। সে আরো বলেছে, আল্লাহ কসম, আমি খুবাইবের মত উত্তম বন্দী আর কখনো দেখেনি। আল্লাহর কসম একদিন আমি তাকে আঙ্গুলে গুচ্ছ হাতে নিয়ে আঙ্গুর খেতে দেখেছি। অথচ সে লোহার শিকলে বাঁধা ছিল এবং সে সময় মক্কায় কোন ফলও ছিল না। সে (হারিসের কন্যা) বলত, ঐ আঙ্গুরগুলো আল্লাহ তায়ালা খুবাইবকে রিযকস্বরূপ দান করেছিলেন। অবশেষে একদিন তারা খুবাইবকে হত্যা করার জন্য যখন হারামের সীমানার বাইরে নিয়ে গেল। তখন খুবাইব রা. তাদেরকে বললেন, আমাকে দু’রাকআত সালাত আদায় করার সুযোগ দাও, তারা সুযোগ দিলে তিনি দু’রাকআত সালাত আদায়ে করে বললেন, আল্লাহর কসম, আমি (মৃত্যু ভয়ে) ভীত হয়ে পড়েছি, তোমরা এ কথা না ভাবলে আমি সালাত আরো দীর্ঘায়িত করতাম। এরপর তিনি এ বলে দু’আ করলেন, হে আল্লাহ ! তাদেরকে এক এক করে গুণে রাখ, তাদেরকে বিক্ষিপ্তভাবে হত্যা কর এবং তাদের একজনকও অবশিষ্ট রেখনা। তারপর তিনি আবৃত্তি করলেন : আমি যখন মুসলমান হিসাবে মৃত্যুবরণ করার সৌভাগ্য লাভ করছি, তাই আমার কোনই ভয় নেই। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যে কোন অবস্থাতেই আমার মৃত্যু হউক। আর তা যেহেতু একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির লাভের জন্যই । তাই তিনি ইচ্ছা করলে আমার প্রতিটি কর্তিত অঙ্গে বরকত প্রদান করতে পারেন। এরপর (হারিসের পুত্র) আবু সারুআ উকবা (উকবা ইবনে হারিস) তাঁর দিকে দাঁড়াল এবং তাকে শহীদ করে দিল। (এভাবেই খুবাইর রা. সে সব মুসলমানের জন্য দু’রাকআত সালাত নিয়ম (সুন্নত) চালু করে গেলেন যারা ধৈর্যের সাথে শাহাদত বরণ করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐদিনই সাহাবীদেরকে অবহিত করেছিলেন যে দিন তাঁরা শত্রু কবলিত হয়ে শাহাদত বরণ করেছিলেন। কুরাইশদের নিকট তাঁর (আসিম রা. এর) নিহত হওয়ার খবর পৌঁছলে তারা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আসিমের শরীরের কোন অঙ্গ কেটে আনার উদ্দেশ্য কতিপয় কুরাইশ কাফেরকে প্রেরণ করল। যেহেতু (বদর যুদ্ধের দিন) আসিম ইবনে সাবিত তাদের (কুরাইশদের) একজন বড় নেতাকে হত্যা করেছিলেন। এদিকে আল্লাহ আসিমের লাশকে হিফাযাত করার জন্য মেঘখন্ডের ন্যায় এক ঝাঁক মৌমাছি পাঠিয়ে দিলেন। মৌমাছিগুলো আসিম রা. এর লাশকে শত্রু সেনাদের হাত থেকে রক্ষা করল। ফলে তারা তাঁর দেহের কোন অঙ্গ কেটে নিতে সক্ষম হল না। কাব ইবনে মালিক রা. বলেন, মুরারা ইবনে রাবী আল উমরী এবং হিলাল ইবনে উমাইয়া আল ওয়াকিফী সম্বন্ধে লোকেরা বলেছেন যে, তাঁরা উভয়ই আল্লাহর নেক বান্দা ছিলেন এবং দুজনই বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

হাদীস নং ৩৭০১

কুতাইবা রহ………..নাফি রহ. থেকে বর্ণিত যে, সাঈদ ইবনে যায়েদ ইবনে আমর ইবনে নুফায়ল রা. ছিলেন বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন সাহাবী। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ইবনে উমরের নিকট জুমআর দিন এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি সাওয়ারীর পিঠে আরোহণ করে তাকে দেখতে গেলেন। তখন বেলা হয়ে গিয়েছে এবং জুমুআর সালাতের সময়ও ঘনিয়ে আসছে দেখে তিনি জুমুআর সালাত আদায় করতে পারলেন না। (আর এক সনদে) লায়স রহ……….উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবা থেকে বর্ণনা করেন যে, তার পিতা উমর ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আরকাম আয যুহরী সুবায়া বিনতে হারিস আসলামিয়্যা রা. এর কাছে গিয়ে তার ঘটনা ও (গর্ভবতী মহিলার ইদ্দত সম্বন্ধে) তার প্রশ্নের উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে যা বলেছিলেন সে সম্পর্কে পত্র মারফত জিজ্ঞাসা করে জানতে আদেশ করলেন। এরপর উমর ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আরকাম রা. আবদুল্লাহ ইবনে উতবাকে লিখে জানালেন যে, সুবায়া বিনতুল হারিস তাকে জানিয়েছেন যে, তিনি বানু আমির ইবনে লুয়াই গোত্রের সাদ ইবনে খাওলার স্ত্রী ছিলেন, সাদ রা. বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ছিলেন। তিনি বিদায় হজ্জের বছর ইন্তিকাল করেন। তখন তাঁর স্ত্রী গর্ভবতী ছিলেন। তার ইন্তিকালের কিছুদিন পরেই তিনি সন্তান প্রসব করলেন। এরপর নিফাস থেকে পবিত্র হয়েই তিনি বিবাহের পয়গাম দাতাদের উদ্দেশ্যে সাজসজ্জা আরম্ভ করলেন। এ সময় আবদুদ্দার গোত্রের আবুস সানাবিল ইবনে বাকাক নামক এক ব্যক্তি তাকে গিয়ে বললেন কি হয়েছে, আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি যে, তুমি বিবাহের আশায় পয়গাম দাতাদের উদ্দেশ্যে সাজসজ্জা আরম্ভ করে দিয়েছ? আল্লাহর কসম চার মাস দশদিন অতিবাহিত হওয়ার পূর্বে তুমি বিবাহ করতে পারবে না। সুবায়া রা. বলেন, (আবুস সানাবিল আমাকে) এ কথা বলার পর আমি ঠিকঠাক মত কাপড় চোপড় পরিধান করে বিকেল বেলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গেলাম এবং এ সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেন, যখন আমি বাচ্চা প্রসব করেছি তখন থেকেই আমি হালাল হয়ে গিয়েছি। এরপর তিনি আমাকে বিয়ে করার নির্দেশ দিলেন যদি আমার ইচ্ছা হয়। (ইমাম বুখারী রহ. বলেন, আসবাগ ………ইউনুসের সূত্রে লায়সের মতই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। লায়স রহ. বলেছেন, ইউনুস ইবনে শিহাব থেকে আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। ইবনে শিহাব রহ. বলেন, বানু আমির ইবনে লুয়্ই গোত্রের আযাদকৃত গোলাম মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রহমান ইবনে সাওবান আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুহাম্মদ ইবনে ইয়াস ইবনে বুকাইয়ের পিতা তাকে জানিয়েছেন।

হাদীস নং ৩৭০২

ইসহাক ইবনে ইবরাহীম রহ……….মুআয ইবনে রিফাআ ইবনে রাফি যুরাকী রহ. তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তার পিতা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের একজন। তিনি বলেন, একদা জিবরাঈল আ. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, আপনারা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুসলমানদেরকে কিরূপ গণ্য করেন? তিনি বললেন, তারা সর্বোত্তম মুসলমান অথবা (রাবীর সন্দেহ) এরূপ বাক্য তিনি বলেছিলেন। জিবরাঈল আ. বললেন, ফেরেশতাগণের মধ্যে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীগণও তদ্রূপ মর্যাদার অধিকারী।

হাদীস নং ৩৭০৩

সুলাইমান ইবনে হারব রহ……….মুআয ইবনে রিফাআ ইবনে রাফি রহ. থেকে বর্ণিত যে, রিফাআ রা. ছিলেন বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন সাহাবী আর রাফি রা. ছিলেন বায়আতে আকাবায় অংশগ্রহণকারী একজন সাহাবী। রাফি রা. তার পুত্র (রিফাআ.) কে বলতেন, বায়আতে আকাবায় শরীক থাকার চেয়ে বদর যুদ্ধে শরীক থাকা আমার কাছে বেশী আনন্দের বিষয় বলে মনে হয় না। কেননা জিবরাঈল আ. এ বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন।

হাদীস নং ৩৭০৪

ইসহাক ইবনে মানসুর রহ……….মুআয ইবনে রিফাআ রহ. থেকে বর্ণিত যে, একজন ফেরেশতা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। (অন্য সনদে) ইয়াহইয়া থেকে বর্ণিত যে, ইয়াযীদ ইবনুল হাদ রহ. তাকে জানিয়েছেন যে, যেদিন মুআয রা. এ হাদীসটি বর্ণনা করেছিলেন সেদিন আমি তার কাছেই ছিলাম। ইয়াযীদ বলেছেন, মুআয রা. বর্ণনা করেছেন যে, প্রশ্নকারী ফেরেশতা হলেন জিবরাঈল আ.।

হাদীস নং ৩৭০৫

ইবরাহীম রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, বদর যুদ্ধের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এই তো জিবরাঈল আ. রণ-সজ্জায় সজ্জিত হয়ে ঘোড়ার মাথা (ঘোড়ার লাগাম) হাত দিয়ে ধরে আছেন।

হাদীস নং ৩৭০৬

খালীফা রহ………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আবু যায়েদ রা. ইন্তিকাল করেন। তিনি কোন সন্তান-সন্ততি রেখে যাননি। তিনি ছিলেন বদরী সাহাবী।

হাদীস নং ৩৭০৭

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ…………ইবনে খাব্বাব রহ. থেকে বর্ণিত যে, আবু সাঈদ ইবনে মালিক খুদরী রা. সফর থেকে বাড়ী ফেরার পর তার পরিবারের লোকেরা তাকে কুরবানীর গোশত থেকে কিছু গোশত খেতে দিলেন। তিনি বললেন, আমি না জিজ্ঞাসা করে এ গোশত খেতে পারি না। তারপর তিনি তার মায়ের গর্ভজাত ভ্রাতা কাতাদা ইবনে নুমানের কাছে গিয়ে বিষয়টি জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি ছিলেন, একজন বদরী সাহাবী। তখন তিনি তাকে বললেন, তিন দিন পর কুরবানীর গোশত খাওয়ার ব্যাপারে তোমাদের প্রতি যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়েছিল পরবর্তীতে (অনুমতি সম্বলিত হাদীসের দ্বারা) তা সম্পূর্ণভাবে রহিত করে দেয়া হয়েছে।

হাদীস নং ৩৭০৮

উবাইদ ইবনে ইসমাঈল রহ………..উরওয়া রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যুবাইর রা. বলেছেন, বদর যুদ্ধের দিন আমি উবায়দা ইবনে সাঈদ ইবনে আস রা. কে এমন অস্ত্রাবৃত অবস্থায় দেখলাম যে, তার দুচোখ ব্যতীত আর কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। তাকে আবু যাতুল কারিশ বলে ডাকা হত। সে বলল, আমি আবু যাতুল কারিশ। (এ কথা শুনে) বর্শা দিয়ে আমি তার উপর হামলা করলাম এবং তার চোখ ফুড়ে দিলাম। সে তৎক্ষণাৎ মারা গেল।হিশাম বলেন, আমাকে জানানো হয়েছে যে, যুবাইর রা. বলেছেন, তার (উবায়দা ইবনে সাঈদ ইবনে আসের) লাশের উপর পা রেখে বেশ বল প্রয়োগ করে ( তার চোখ থেকে) আমি বর্শাটি টেনে বের করলাম। এতে বর্শার উভয় প্রান্তে বাঁকা হয়ে যায়। উরওয়া রহ. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবাইরের নিকট বর্শাটি চাইলে তিনি তা তাকে দিয়ে দেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকালের পর তিনি তা নিয়ে যান। এবং পরে আবু বকর রা. তা চাইলে তিনি তাকে বর্শা খানা দিয়ে দেন। আবু বকরের ইন্তিকালের পর উমর রা. তা চাইলেন। তিনি তাকে বর্শা খানা দিয়ে দিলেন। কিন্তু উমরের ইন্তিকালের পর যুবাইর রা. পুনরায় বর্শাটি নিয়ে যান। এরপর উসমান রা. তাঁর নিকট বর্শাখানা চাইলে তিনি উসমানকে তা দিয়ে দেন। তবে উসমানের শাহাদতের পর তা আলীর লোকজনের হস্তগত হওয়ার পর আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. তা চেয়ে যান। এরপর থেকে শহীদ হওয়া পর্যন্ত বর্শাখানা তাঁর নিকটই থাকে।

হাদীস নং ৩৭০৯

আবুল ইয়ামান রহ……….আবু ইদরীস আয়িযুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ রহ. থেকে বর্ণিত যে, উবাদা ইবনে সামিত রা. বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার হাতে বায়আত গ্রহণ কর। তিনি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

হাদীস নং ৩৭১০

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……….নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবী আবু হুযাইফা রা. এর আনসারী মহিলার আযাদকৃত গোলাম সালিমকে পালকপুত্র হিসাবে গ্রহণ করেন, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়েদকে পালকপুত্র হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন এবং তিনি তাকে তার ভ্রাতুস্পুত্রী হিনদা বিনতে ওয়ালীদ ইবনে উতবার সাথে বিয়ে করিয়ে দেন। জাহিলিয়্যাতের আমলে কেউ কোন ব্যক্তিকে পালকপুত্র হিসাবে গ্রহণ করলে লোকেরা তাকে তার (পালনকারী) প্রতিই সম্বোধন করত, এবং সে তার পরিত্যক্ত সম্পদের উত্তরাধিকারী হত। অবশেষে আল্লাহ তায়ালা এ আয়াত নাযিল করলেন, “তোমরা তাদেরকে ডাক তাদের পিতৃ পরিচয়ে”। এরপর (আবু হুযায়ফার স্ত্রী) সাহলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে হাদীসে বর্ণিত প্রকৃত ঘটনা বর্ণনা করলেন।

হাদীস নং ৩৭১১

আলী রহ………..রুবায়ই বিনতে মুআওয়িয রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমার বাসর রাতের পরদিন সকাল বেলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট আসলেন এবং তুমি (খালিদ ইবনে যাকওয়ান) যেভাবে আমার কাছে বসে আছে ঠিক সে ভাবে আমার পাশে আমার বিছানায় এসে বসলেন। তখন কয়েকজন ছোট বালিকা দুফ বাজিয়ে বদর যুদ্ধে নিহত শহীদ পিতাদের প্রশংসা শ্লোক আবৃত্তি করছিল। পরিশেষে একটি বালিকা বলে উঠল, আমাদের মাঝে এমন একজন নবী আছেন, যিনি জানেন, আগামীকাল কি হবে। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এরূপ কথা বলবে না, বরং পূর্বে যা বলতে ছিলে তাই বল।

হাদীস নং ৩৭১২

ইবরাহীম ইবনে মূসা ও ইসমাঈল রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবী আবু তালহা রা. আমাকে জানিয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ঘরে কুকুর কিংবা ছবি থাকে সে ঘরে (রহমতের) ফেরেশতা প্রবেশ করেন না। ইবনে আব্বাসের মতে ছবি-এর অর্থ হচ্ছে প্রাণীর ছবি।

হাদীস নং ৩৭১৩

আবদান ও আহমাদ ইবনে সালিহ রহ………..আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের গনীমতের মাল থেকে আমার অংশে আমি একটি উট পেয়েছিলাম। ফায় থেকে প্রাপ্ত এক পঞ্চামাংশ থেকেও সেদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে একটি উট প্রদান করেন। আমি যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা ফাতিমার সাথে বাসর রাত যাপন করার ইচ্ছা করলাম এবং বানু কায়নুকা গোত্রের একজন ইয়াহূদী স্বর্ণকারকে ঠিক করলাম যেন সে আমার সাথে যায়। (সেখান থেকে) আমরা ইযখির ঘাস সংগ্রহ করে নিয়ে আসব। পরে ঐ ঘাস স্বর্ণকারদের নিকট বিক্রি করে তা আমি আমার বিয়ের ওয়ালিমায় খরচ করার ইচ্ছা করেছিলাম। (একদা ঐ কার্যে যাত্রা করার জন্য) আমি আমার উট দুটোর জন্য গদি, বস্তা এবং দড়ি ব্যবস্থা করছিলাম আর উট দুটো এক আনসারী ব্যক্তির ঘরের পার্শ্বে বসানো ছিল। আমার যা কিছু সংগ্রহ করার তা সংগ্রহ করে নিয়ে এসে দেখলাম উট দুটোর চুট কেটে ফেলা হয়েছে এবং সে দুটির বক্ষ বিদীর্ণ করে কলিজা খুলে নেওয়া হয়েছে। এ দৃশ্য দেখে আমি আমার অশ্রু সংবরণ করতে পারলাম না। আমি (নিকটস্থ লোকদেরকে) জিজ্ঞাসা করলাম, এ কাজ কে করেছে? তারা বললেন, আবদুল মুত্তালিবের পুত্র হামযা এ কাজ করেছেন। এখন তিনি এ ঘরে আনসারদের কিছ মদ্যপায়ীদের সাথে মদপান করছেন। সেখানে আছে একদল গায়িকা ও কতিপয় সঙ্গী সাথী।(মদ্যপানের সময়) গায়িকা ও তার সঙ্গীগণ গানের ভেতর বলেছিল, হে হামযা ! মোটা উষ্ট্রদ্বয়ের চুট দুটো কেটে নিল আর তাদের পেট চিরে কলীজা বের করে নিয়ে আসল। আলী রা. বলেন, তখন আমি পথ চলতে চলতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট চলে গেলাম। তখন তাঁর নিকট যায়েদ ইবনে হারিসা রা. উপস্থিত ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাকে দেখা মাত্রই) আমি যে বিপদের সম্মুখীন হয়েছি তা বুঝে ফেললেন। তিনি আমাকে বললেন, তোমার কি হয়েছে ? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আজকের মত বেদনাদায়ক ঘটনা আমি কখনো দেখিনি। হামযা আমার উট দুটোর উপর খুব যুলুম করেছেন, তিনি উট দুটোর চুট কেটে ফেলেছেন এবং বক্ষ বিদীর্ণ করেছেন। এখন তিনি একটি ঘরে একদল মদ্যপায়ীদের সাথে অবস্থান করছেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চাদরখানা চেয়ে নিলেন এবং তা গায়ে দিয়ে হেটে রওয়ানা হলেন। (আলী বলেন) এরপর আমি এবং যায়েদ ইবনে হারিস রা. তাকে অনুসরণ করলাম। (হাটতে হাটতে) তিনি যে ঘরে অবস্থান করছিলেন সে ঘরের কাছে পৌঁছে তার নিকট অনুমতি চাইলেন। তাকে অনুমতি দেয়া হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হামযাকে তার কৃতকর্মের জন্য ভৎসনা করতে শুরু করলেন। হামযা তখন নেশাগ্রস্ত। চোক দুটো তার লাল। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন এবং দৃষ্টি উপর দিকে উঠিয়ে তারপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাটুর দিকে তাকালেন। এরপর দুষ্টি আরো একটু উপর দিকে উঠিয়ে তিনি তাঁর চেহারার প্রতি তাকালেন। এরপর হামযা বললেন, তোমরা তো আমার পিতার দাস। (এ কথা শুনে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝলেন যে, তিনি এখন নেশাগ্রস্ত। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেছনের দিকে হটে (সেখান থেকে) বেরিয়ে পড়লেন, আমরাও তাঁর সাথে সাথে বেরিয়ে পড়লাম।

হাদীস নং ৩৭১৪

মুহাম্মদ ইবনে আব্বাদ রহ………..ইবনে মাকিল রা. থেকে বর্ণিত যে, (তিনি বলেছেন) আলী রা. সাহল ইবনে হুনাইফের (জানাযার সালাতে) তাকবীর উচ্চারণ করলেন এবং বললেন, তিনি (সাহল ইবনে হুনাইফ) বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

হাদীস নং ৩৭১৫

আবুল ইয়ামান রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, (উমর রা. তাকে বলেছেন) উমর ইবনে খাত্তাবের কন্যা হাফসা স্বামী খুনায়স ইবনে হুযাফা সাহামী রা. যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবী ছিলেন এবং বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন, মদীনায় ইন্তিকাল করলে হাফসা রা. বিধবা হয়ে পড়লেন। উমর রা. বলেন, তখন আমি উসমান ইবনে আফফানের সাথে সাক্ষাৎ করলাম এবং তাঁর নিকট হাফসার কথা আলোচনা করে তাকে বললাম, আপনি চাইলে আমি আপনার সাথে উমরের মেয়ে হাফসাকে বিয়ে দিয়ে দেব। উসমান রা. বললেন, ব্যাপরটি আমি একটু চিন্তা করে দেখি। (উমর রা. বলেন, এ কথা শুনে) আমি কয়েকদিন অপেক্ষা করলাম। পরে উসমান রা. বললেন, আমার সুস্পষ্ট অভিমত এই যে, এ সময় আমি বিয়ে করব না। উমর রা. বলেন, এরপর আমি আবু বকরের সাথে সাক্ষাত করলাম এবং তাকে বললাম, আপনি ইচ্ছা করলে উমরের কন্যা হাফসাকে আমি আপনার নিকট বিয়ে দিয়ে দেব।(এ কথা শুনে) আবু বকর রা. চুপ করে রইলেন এবং আমাকে কোন জবাব দিলেন না। এতে আমি উসমানের (অস্বীকৃতির) চেয়েও অধিক দুঃখ পেলাম। এরপর আমি কয়েকদিন চুপ করে রইলাম, এমতাবস্থায় হাফসার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই প্রস্তাব দিলেন। আমি তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বিয়ে দিয়ে দিলাম।এরপর আবু বকর রা. আমার সাথে সাক্ষাত করে বললেন, আমার সাথে হাফসার বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পর আমি আপনাকে কোন উত্তর না দেওয়ার ফলে সম্ভবত আপনি মনে কষ্ট পেয়েছেন। (উমর রা. বলেন) আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন আবু বকর রা. বললেন, আপনার প্রস্তাবের জবাব দিতে একটি জিনিসই আমাকে বাঁধা দিয়েছে, আর তাহল এই যে, আমি জানতাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই হাফসা রা. সম্পর্কে আলোচনা করেছিলেন, তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গোপনীয় বিষয়টি প্রকাশ করার আমার ইচ্ছা ছিল না। (এ কারণেই তখন আমি আপনাকে কোন উত্তর দেই নি। যদি তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে গ্রহণ না করতেন, অবশ্যই আমি তাকে গ্রহণ করতাম।

হাদীস নং ৩৭১৬

মুসলিম রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াযীদ রহ. বদরী সাহাবী আবু মাসউদ রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, স্বীয় আহলের (পরিবার পরিজনের) জন্য ব্যয় করাও সাদকা।

হাদীস নং ৩৭১৭

আবুল ইয়ামান রহ………উরওয়া ইবনে যুবাইর রহ. থেকে বর্ণিত, উমর ইবনুল আবদুল আযীয রহ. তাঁর খিলাফত কালের (একটি ঘটনা) বর্ণনা করেছেন যে, মুগীরা ইবনে শুবা রা. কুফার আমীর থাকা কালে তিনি (একদা) আসরের সালাত আদায় করতে বিলম্ব করে ফেললে যায়েদ ইবনে হাসানের দাদা বদরী সাহাবী আবু মাসউদ উতবা ইবনে আমর আনসারী রা. তাঁর নিকট গিয়ে বললেন, আপনি তো জানেন যে, জিবরাঈল আ. এসে সালাত আদায় করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাঁর সাথে) পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করলেন। জিবরাঈল আ. বললেন, আপনি এভাবেই সালাত আদায় করানোর জন্য আদিষ্ট হয়েছেন। (উরওয়া বলেন) বশীর ইবনে আবু মাসউদ তার পিতার নিকট থেকে হাদীসটি এভাবেই বর্ণনা করতেন।

হাদীস নং ৩৭১৮

মূসা রহ………বদরী সাহাবী আবু মাসউদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সূরা বাকারার শেষে এমন দুটি আয়াত রয়েছে যে ব্যক্তি রাতের বেলা আয়াদ দুটো তিলাওয়াত করবে তার জন্য এ আয়াত দুটোই যথেষ্ট। অর্থাৎ রাত্রে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করার যে হক রয়েছে কমপক্ষে সূরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত তিলাওয়াত করলে তার জন্য তা যথেষ্ট। আবদুর রাহমান রহ. বলেন, পরে আমি আবু মাসউদের সাথে সাক্ষাত করলাম। তখন তিনি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করছিলেন। (সেখানে) এ হাদীসটি সম্পর্কে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি তা আমার নিকট বর্ণনা করলেন।

হাদীস নং ৩৭১৯

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……….ইবনে শিহাব রহ. থেকে বর্ণিত যে, মাহমূদ ইবনে রবী রহ. আমাকে জানিয়েছেন যে, ইতবান ইবনে মালিক রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আনসারী সাহাবী ছিলেন এবং তিনি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গেলেন।

হাদীস নং ৩৭২০

আহমদ রহ………ইবনে শিহাব রহ. থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেছেন, আমি বনী সালিম গোত্রের অন্যতম নেতা হুসাইন ইবনে মুহাম্মদকে রহ. ইতবান ইবনে মালিক থেকে মাহমূদ ইবনে রাবী এর বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার পর তিনি উহার স্বীকৃতি দিলেন।

হাদীস নং ৩৭২১

আবুল ইয়ামান রহ…………যুহরী রহ. থেকে বর্ণিত, বনী আদী গোত্রের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি আবদুল্লাহ ইবনে আমির ইবনে রাবীআ যার পিতা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, আমাকে বর্ণনা করেন যে, উমর রা. কুদামা ইবনে মাযউনকে রা. বাহরাইনের শাসনকর্তা নিয়োগ করেছিলেন। তিনি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং তিনি ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. এবং হাফসা রা.-এর মামা।

হাদীস নং ৩৭২২

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আসমা রহ……….রাফি ইবনে খাদিজ রা. আবদুল্লাহ ইবনে উমরকে বলেছেন যে, বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী তার দু’চাচা তাকে জানিয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবাদযোগ্য ভূমি ভাড়া দিতে নিষেধ করেছেন। (রাবী বলেন) আমি সালিমকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি তো এ ধরনের জমি ভাড়া দিয়ে থাকেন ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাফি (ইবনে খাদীজ) তো নিজের প্রতি বাড়াবাড়ি করেছেন।

হাদীস নং ৩৭২৩

আদাম রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে শাদ্দাম ইবনে হাদ লায়সী রহ . থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রিফাআ ইবনে রাফি আনসারী রা. কে দেখেছি, তিনি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

হাদীস নং ৩৭২৪

আবদান রহ……….নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবী, বনী আমির ইবনে লুওয়াই গোত্রের বন্ধু আমর ইবনে আউফ রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহকে জিযিয়া আনার জন্য বাহরাইন পাঠান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহরাইন বাসীদের সাথে সন্ধি করে আলা ইবনে হাযরামী রা.-কে তাদের আমীর নিযুক্ত করেছিলেন। আবু উবায়দা রা. বাহরাইন থেকে মাল নিয়ে এস পৌঁছলে আনসারগণ তার আগমনের সংবাদ জানতে পেয়ে সকলেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ফজরের সালাত আদায় করার উদ্দেশ্যে উপস্থিত হলেন।সালাত সমাপ্তির ফিরে বসলে তারা সকলেই তাঁর সামনে আসলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে দেখে মুচকি হেসে বললেন, আমার মনে হয়, আবু উবায়দা কিছু মাল নিয়ে এসেছে বলে তোমরা শুনতে পেয়েছ। তারা সকলেই বললেন, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তিনি বললেন, সুসংবাদ গ্রহণ কর এবং তোমাদের আনন্দদায়ক বিষয়ের আশায় থাক, আল্লাহর কসম, আমি তোমাদের জন্য দারিদ্রের আশংকা করি না। বরং আমি আশংকা করি যে, তোমাদের কাছে দুনিয়ার প্রাচুর্য এসে যাবে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের কাছে এসেছিল, তখন তোমরা তা লাভ করতে পরষ্পরে প্রতিযোগিতা করবে যেমনভাবে তারা করেছিল। আর এ ধন-সম্পদ তাদেরকে যেমনিভাবে ধ্বংস করেছিল তোমাদেরকেও তেমনিভাবে ধ্বংস করে দিবে।

হাদীস নং ৩৭২৫

আবুন নুমান রহ……..নাফি রহ. থেকে বর্ণিত যে, ইবনে উমর রা. সব ধরনের সাপকে হত্যা করতেন। অবশেষে বদরী সাহাবী আবু লুবাবা রা. তাকে বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে বসবাসকারী (শ্বেতবর্ণের) ছোট সাপ মারতে নিষেধ করেছেন। এতে তিনি তা মারা থেকে বিরত থাকেন।

হাদীস নং ৩৭২৬

ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, কতিপয় আনসারী সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করলেন। তারা বললেন, আমাদেরকে আমাদের ভাগিনা আব্বাসের ফিদয়া মাফ করে দেয়ার অনুমতি দিন। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, তোমরা তার (মুক্তিপণ এর) একটি দেরহামও মাফ করবে না।

হাদীস নং ৩৭২৭

আবু আসিম ও ইসহাক রহ………বনী যুহরা গোত্রের হালীফ (মিত্র) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবী মিকদাদ ইবনে আমর কিনদী রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলুন, কোন কাফিরের সাথে আমার যদি (যুদ্ধক্ষেত্রে) সাক্ষাৎ হয় এবং আমি যদি তার সাথে লড়াই করি আর সে যদি তলোয়ারের আঘাতে আমার একখানা হাত কেটে ফেলে এবং তারপর আমার থেকে আত্মরক্ষার জন্য গাছের আড়ালে গিয়ে বলে আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে ইসলাম গ্রহণ করলাম, এ কথা বলার পরেও কি আমি তাকে হত্যা করব? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে হত্যা করবে না। এরপর তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! সে তো আমার একখানা হাত কেটে এরপর এ কথা বলেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় বললেন, না তুমি তাকে হত্যা করবে না। কেননা, তুমি তাকে হত্যা করলে হত্যা করার পূর্বে তোমার যে মর্যাদা ছিল সে সেই মর্যাদা লাভ করবে, আর ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেয়ার পূর্বে তার যে মর্যাদা ছিল তুমি সেই স্তরে গিয়ে পৌঁছবে।

হাদীস নং ৩৭২৮

ইয়াকুব ইবনে ইবরাহীম রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদরের দিন বললেন, আবু জেহেলের কি অবস্থা কেউ দেখে আসতে পার কি? তখন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. তার খোজে বের হলেন। এবং আফরার দুই পুত্র তাকে আঘাত করে মুমুর্ষ করে ফেলে রেখেছে দেখতে পেলেন। তখন তিনি তাকে বললেন, তুমি কি আবু জেহেল? (উত্তরে আবু জেহেল বলল) একজন লোককে হত্যা করা ছাড়া তোমরা তোম বেশী কিছু করনি? সুলাইমান বলেন, অথবা সে (আবু জেহেল) বলেছিল, (এর চেয়ে বেশী কিছু হয়েছে কি যে,) একজন লোককে তার কাওমের লোকেরা হত্যা করেছে? আবু মিজলায রা. বলেন, আবু জেহেল বলেছিল, কৃষক ব্যতীত অন্য কেউ যদি আমাকে হত্যা করত, (তাহলে কতই না ভাল হত)।

হাদীস নং ৩৭২৯

মূসা রহ……….উমর রা. থেকে বর্ণিত, (তিনি বলেছেন) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যখন ওফাত হল তখন আমি আবু বকরকে বললাম, আমাদেরকে আনসার ভাইদের নিকট নিয়ে চলুন। পথিমধ্যে আমরা আনসারদের দু’জন নেক ব্যক্তির সাক্ষাত পেলাম। যারা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। রাবী বলেন, আমি উরওয়া ইবনে যুবাইরের নিকট এ হাদীসখানা বর্ণনা করলে তিনি বললেন, তারা ছিলেন উওয়াম ইবনে সাঈদা এবং মান ইবনে আদী রা.।

হাদীস নং ৩৭৩০

ইসহাক ইবনে ইবরাহীম রহ…….কায়েস রা. থেকে বর্ণিত যে, বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবীদের (বাৎসরিক) ভাতা পাঁচ হাজার পাঁচ (দেরহাম) করে নির্ধারিত ছিল। উমর রা. বলেছেন, অবশ্যই আমি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবীদেরকে পরবর্তী লোকদের চেয়ে অধিক মর্যাদা প্রদান করব।

হাদীস নং ৩৭৩১

ইসহাক ইবনে মানসুর রহ……….যুবাইর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মাগরিবের সালাতে সূরা তুর পড়তে শুনেছি। এ ঘটনা থেকেই সর্বপ্রথম আমার হৃদয়ে ঈমান বদ্ধমূল হয়।
(অপর এক সনদে) যুহরী রহ………….. মুহাম্মদ ইবনে যুবাইর ইবনে মুতঈমের মাধ্যমে তার পিতা যুবাইর ইবনে মুতঈম রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদরের যুদ্ধবন্দীদের সম্পর্কে সুপারিশ করতেন, তাহলে তার খাতিরে এদেরকে আমি (মুক্তিপণ ব্যতীতই) ছেড়ে দিতাম। লায়স ইয়াহইয়ার সূত্রে সাঈদ ইবনে মুসায়্যাব রহ. থেকে বর্ণনা করেন যে, প্রথম ফিতনা অর্থাৎ উসমানের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হবার পর বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবীদের আর কেউ অবশিষ্ট ছিলেন না। দ্বিতীয় ফিতনা তথা হারবার ঘটনা সংঘটিত হলে পরে হুদায়বিয়ার সন্ধিকালীন সময়ের কোন সাহাবীই আর বাকী ছিলেন না। এরপর তৃতীয় ফিতনা সংঘটিত হওয়ার পর তা কখনো শেষ হয়নি, যতদিন মানুষের মধ্যে আকল ও কল্যাণকামিতা বিদ্যমান ছিল।

হাদীস নং ৩৭৩২

হাজ্জাজ ইবনে মিনহাল রহ………যুহরী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উরওয়া ইবনে যুবাইর, সাঈদ ইবনে মুসায়্যাব, আলকামা ইবনে ওয়াক্কাস ও উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ রহ. থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়েশার (প্রতি আরোপিত) অপবাদের ঘটনা সম্পর্কে শুনেছি। তারা সকলেই হাদীসটির একটি অংশ আমার নিকট বর্ণনা করেছেন, আয়েশা রা. বলেছেন। আমি এবং উম্মে মিসতাহ (প্রাকৃতিক প্রয়োজনে) বের হলাম। তখন উম্মে মিসতাহ চাদরে পেচিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল। এতে সে বলল, মিসতাহ এর জন্য ধ্বংস । (আয়েশা রা .বলেন) তখন আমি বললাম, আপনি ভাল বলেন নি। আপনি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিকে মন্দ বলেছেন। এরপর অপবাদ-এর (ইফক) ঘটনাটি উল্লেখ করলেন।

হাদীস নং ৩৭৩৩

ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ………ইবনে শিহাব রা. থেকে বর্ণিত, (তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জিহাদসমূহের বর্ণনা দেয়ার পর) বলেছেন, এ গুলোই ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামরিক অভিযান। এরপর তিনি (বদর যুদ্ধের) ঘটনা বর্ণনা করলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (নিহত) কুরাইশ কাফিরদের লাশ কূপে নিক্ষেপ করার সময় (সে গুলোকে সম্বোধন করে) বললেন, তোমাদের রব তোমাদেরকে যে ওয়াদা দিয়েছিলেন তা পেয়েছ তো ? (রাবী) মূসা নাফির মাধ্যমে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীদের থেকে কেউ কেউ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি মৃত লোকদের আহবান করছেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার কথাগুলো তোমরা তাদের থেকে অধিক শুনতে পাচ্ছনা। গনীমতের অংশ লাভ করেছিলেন, এ ধরনের যে সব কুরাইশী সাহাবী বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের সংখ্যা হল একাশি। উরওয়া ইবনে যুবাইর বললেন, যে যুবাইর রা. বলেছেন, (বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী) কুরাইশী সাহাবীদের গনীমতের মালের অংশগুলো বন্টন করা হয়েছিল। তাদের সংখ্যা ছিল সর্বমোট একশ’ আল্লাহই ভাল জানেন।

হাদীস নং ৩৭৩৪

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ………….যুবাইর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, বদরের দিন মুহাজিরদের জন্য (গনীমতের মালের) একশ’ হিসসা দেয়া হয়েছিল।

হাদীস নং ৩৭৩৫

ইসহাক ইবনে নাসর রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, বনু নাযীর ও বনু কুরায়যা গোত্রের ইয়াহূদী সম্প্রদায় (মুসলমানদের বিরুদ্ধে) যুদ্ধ আরম্ভ করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনু নাযীর গোত্রকে দেশান্তরিত করে দেন এবং বনু কুরায়যা গোতের প্রতি কৃপা প্রদর্শন করে তাদেরকে (তাদের ঘর বাড়ীতেই) থাকতে দেন। কিন্তু (পরবর্তীকালে) বনু কুরায়যা গোত্র (মুসলমানদের বিরুদ্ধে) যুদ্ধে লিপ্ত হলে কিছু সংখ্যক ব্যক্তি যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দলভূক্ত হবার পর তিনি তাদেরকে নিরাপত্তা দিয়েছিলেন তারা মুসলমান হয়ে গিয়েছিল তারা ব্যতীত অন্য সব পুরুষ লোককে হত্যা করে দেয়া হয় এবং মহিলা, সন্তান-সন্ততি ও সব ধন-সম্পদ মুসলমানদের মাঝে বন্টন করে দেয় হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনার সকল ইয়াহূদীকে দেশান্তরিত করলেন। আবদুল্লাহ ইবনে সালামের গোত্র বনু কায়নুকা ও বনু হারিসাহ অন্যান্য ইয়াহূদী সম্প্রদায়কেও তিনি দেশান্তরিত করেন।

হাদীস নং ৩৭৩৬

হাসান ইবনে মুদরিক রহ………..সাঈদ ইবনে যুবাইর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনে আব্বাসের নিকট সূরা হাশরকে সূরা হাশর বলে উল্লেখ করলে, তিনি আমাকে বললেন, বরং তুমি বলবে “সূরা নাযীর”। আবু বিশর থেকে হুশাইমও এ বর্ণনায় তার (আবু আওয়ানা) অনুসরণ করেছেন।

হাদীস নং ৩৭৩৭

আবদুল্লাহ ইবনে আবুল আসওয়াদ রহ………..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনসারগণ কিছু কিছু খেজুর গাছ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছিলেন। অবশেষে বনু কুরায়যা ও বনু নাযীর বিজিত হওয়ার পর তিনি ঐ খেজুর গাছগুলো তাদেরকে ফেরত দিয়ে দেন।

হাদীস নং ৩৭৩৮

আদম রহ………….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুওয়াইরা নামক স্থানে বনু নাযীর গোত্রের যে খেজুর গাছ ছিল তার কিছু জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন এবং কিছু কেটে ফেলেছিলেন। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেছেন: তোমরা যে খেজুর গাছগুলো কেটে ফেলেছ অথবা যেগুলো কাণ্ডের উপর স্থির রেখে দিয়েছ, তা তো আল্লাহরই অনুমতিক্রমে (হাশর ৫৯ : ৫)।

হাদীস নং ৩৭৩৯

ইসহাক রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনু নাযীর গোত্রের খেজুর গাছগুলো জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। ইবনে উমর রা. বলেন, এ সম্বন্ধেই হাসসা ইবন সাবিত রা. বলেছেন: “বনু লুওয়াই গোত্রের নেতাদের (কুরাইশদের) জন্য সহজ হয়ে গিয়েছে বুওয়াইরা নামক স্থানের সর্বত্রই অগ্নিশিখা প্রজ্ব্বলিত হওয়া”। রাবী ইবনে উমর রা. বলেন, এর উত্তরে আবু সুফিয়ান ইবনে হারিস বলেছিল, “আল্লাহ এ কাজকে স্থায়ী করুন এবং জ্বালিয়ে রাখুন মদীনার আশে পাশে লেলিহান আগুন, অচিরেই জানবে আমাদের মাঝে কারা নিরাপদ থাকবে এবং জানবে দুই নগরির কোনটি ক্ষতিগ্রস্থ হবে”।

হাদীস নং ৩৭৪০

আবুল ইয়ামান রহ……….মালিক ইবনে আওস ইবনে হাদসান সাসিরী রা. বর্ণনা করেন যে, (একদা) উমর ইবনে খাত্তাব রা. তাকে ডাকলেন। এ সময় তার দ্বাররক্ষী ইয়ারফা এসে বলল, উসমান আবদুর রহমান, যুবাইর এবং সাদ রা. আপনার নিকট আসার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাদেরকে আসতে বল। কিছুক্ষণ পর এসে বলল, আব্বাস এবং আলী রা. আপনার নিকট অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ। তাঁরা উভয়েই ভিতরে প্রবেশ করলেন। আব্বাস রা. বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন ! আমার এবং তাঁর মাঝে (চলমান বিবাদের) মিমাংসা করে দিন। বনু নাযীরের সম্পদ থেকে আল্লাহ তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ফাই (বিন যুদ্ধে লব্ধ সম্পদ) হিসাবে যা দিয়েছিলেন তা নিয়ে তাদের উভয়ের মাঝে বিবাদ চলছিল। এ নিয়ে তারা তর্কে লিপ্ত হয়েছিলেন, (এ দেখে আগত) দলের সকলেই বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন ! তাদের মাঝে একটি ফয়সালা করে তাদের পারস্পারিক এ বিবাদ থেকে অব্যাহতি দিন। তখন উমর রা. বললেন, তাড়াহুড়া করবেন না। আমি আপনাদেরকে আল্লাহর নামে শপথ দিয়ে বলছি, যার আদেশে আসমান ও যমিন স্থির আছে। আপনারা কি জানেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের সম্বন্ধে বলেছেন, আমরা (নবীগণ) কাউকে উত্তরাধিকারী রেখে যাই না। যা রেখে যাই তা সদকা হিসাবেই গণ্য হয়। এর দ্বারা তিনি নিজের কথাই বললেন। উপস্থিত সকলেই বললেন, হ্যাঁ, তিনি একথা বলেছেন। উমর রা. আলী এবং আব্বাসের দিকে লক্ষ্য কর বললেন, আমি আপনাদের উভয়কে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে এ কথা বলেছেন, আপনারা তা জানেন কি? তারা উভয়েই বললেন, হ্যাঁ, এরপর তিনি (উমর) বললেন, এখন আমি আপনাদেরকে (উত্থাপিত) বিষয়টির প্রকৃত অবস্থা খুলে বলছি। ফায়ের কিছু অংশ আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসূলের জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, যা তিনি আর অন্য কাউকে দেননি। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: আল্লাহ ইয়াহূদীদের নিকট হতে তাঁর রাসূলকে যে ফায় দিয়েছেন, তার জন্য তোমরা অশ্বে কিংবা উষ্ট্রে আরোহণ করে যুদ্ধ করনি; আল্লাহ তো তাঁর রাসূলকে যার উপর ইচ্ছা তার উপর কর্তৃত্ব দান করেন; আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (৬: ৫৯) অতএব এ ফায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাস ছিল। আল্লাহ কসম! এরপর তিনি তোমাদেরকে বাদ দিয়ে নিজের জন্য এ সম্পদকে সংরক্ষিতও রাখেননি এবং নিজের জন্য নির্ধারিতও করে যাননি। বরং এ অর্থকে তিনি তোমাদের মাঝে বন্টন করে দিয়েছেন। অবশেষে এ মাল উদ্বৃত্ত আছে। এ মাল থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পরিবার পরিজনের এক বছরের খোরপোশ দিতেন। এর থেকে যা অবশিষ্ট থাকত তা তিনি আল্লাহর পথে খরচ করতে দিতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবদ্দশায় এ রূপই করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাতের পর আবু বকর রা. বললেন, এখন থেকে আমিই হলাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওলী। এরপর আবু বকর রা. তা স্বীয় তত্ত্বাবধানে নিয়ে এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে নীতি অনুসরণ করেছিলেন তিনিও সে নীতিই অনুসরণ করে চললেন। তিনি আলী ও আব্বাসের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, আজ আপনারা যা বলছেন এ বিষয়ে আপনারা আবু বকরের সাথেও এ ধরণের আলোচনা করেছিলেন। আল্লাহ কসম, তিনিই জানেন, এ বিষয়ে আবু বকর রা. ছিলেন সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ণ এবং হকের অনুসারী এক মহান ব্যক্তিত্ব। এরপর আবু বকরের ইন্তিকাল হলে আমি বললাম, (আজ থেকে) আমিই হলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবু বকরের ওলী। এরপর এ সম্পদকে আমি আমার খেলাফতের দুই বছরকাল আমার তত্ত্বাবধানে রাখি এবং এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবু বকরের অনুসৃত নীতিই অনুসরণ করে চলছি। আল্লাহ তায়ালাই ভাল জানেন, এ বিষয়ে নিশ্চয়ই আমি সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ণ ও হকের একনিষ্ঠ অনুসারী। তা সত্ত্বেও পুনরায় আপনারা দুজনই আমার নিকট এসেছেন। আপনাদের উভয়কেই বলেছিলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমরা (নবীগণ) কাউকে উত্তরাধিকারী করি না, আমরা যা রেখে যাই তা সদকা হিসাবেই গণ্য হয়। এরপর এ সম্পদটি আপনাদের উভয়ের তত্ত্ববধানে দেওয়ার বিষয়টি যখন আমার নিকট স্পষ্ট হল তখন আমি বলেছিলাম, যদি আপনারা চান তাহলে একটি শর্তে তা আমি আপনাদের নিকট অর্পণ করব। শর্তটি হচ্ছে, আপনারা আল্লাহর নির্দেশ ও তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এমনভাবে কাজ করবেন যেভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবু বকর রা. করেছেন। আমার তত্ত্বাবধানে আসার পর আমি করেছি। অন্যথায় এ বিষয়ে আপনারা আমার সাথে আর কোন আলোচনা করবেন না। তখন আপনারা বলেছিলেন, এ শর্তেই আপনি তা আমাদের নিকট অর্পণ করুন। আমি তা আপনাদের হাতে অর্পণ করেছি। এখন আপনারা আমার নিকট অন্য কোন ফয়সালা কামনা করেন কি? আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, যার আদেশে আসমান যমীনে স্থির আছে কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত আমি এর বাইরে অন্য কোন ফয়সালা দিতে পারব না। আপনারা যদি এর দায়িত্ব পালনে অক্ষম হয়ে থাকেন তাহলে আমার নিকট ফিরিয়ে দিন। আপনাদের এ দায়িত্ব পালনে আমিই যথেষ্ট। রাবী (যুহরী) বলেন, আমি হাদীসটি উরওয়া ইবনে যুবাইরের নিকট বর্ণনা করার পর তিনি (আমাকে) বললেন, মালিক ইবনে আওস রা. ঠিকই বর্ণনা করেছেন। আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়েশা রা. কে বলতে শুনেছি, (বনী নাযীর গোত্রের সম্পদ থেকে) ফায় হিসাবে আল্লাহ তাঁর রাসূলকে যে সম্পদ দিয়েছেন তার অষ্টমাংশ আনার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণীগন উসমানকে আবু বকরের নিটক পাঠালে (পাঠাতে ইচ্ছা করলে) এই বলে আমি তাদেরকে বারণ করছিলাম যে, আপনারা কি আল্লাহকে ভয় করেন না? আপনারা কি জানেন না যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন আমরা (নবী রাসূলগণ) কাউকে উত্তরাধিকারী রেখে যাই না, আমরা যা রেখে যাই তা সাদকা হিসাবেই থেকে যায়। এ দ্বারা তিনি নিজেকে উদ্দেশ্য করেছেন। এ সম্পদ থেকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণীগণ বিরত হলেন। রাবী (উরওয়া ইবনে যুবাইর রহ.) বলেন, অবশেষে সাদকার এ মাল আলীর তত্ত্বাবধানে ছিল। তিনি আব্বাসকে তা দিতে অস্বীকার করেন এবং পরিশেষে (এ যমীনের ব্যাপারে) তিনি আব্বাসের উপর জয়ী হন। এরপর তা যথাক্রমে হাসান ইবনে আলী এবং হুসাইন ইবনে আলীর হাতে ছিল। পুনরায় তা আলী ইবনে হুসাইন এবং হাসান ইবনে হাসানের হস্তগত হয়। তাঁরা উভয়ই পর্যায়ক্রমে তার দেখা শোনা করতেন। এরপর তা যায়েদ ইবনে হাসানের তত্ত্বাবধানে যায়। ইহা অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাদকা।

হাদীস নং ৩৭৪১

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ……….আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে, ফাতিমা এবং আব্বাস রা. আবু বকরের কাছে এসে ফাদাক এবং খায়বারের (ভূমির) অংশ দাবী করেন। আবু বকর রা. বললেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আমরা (নবী রাসূলগণ আমাদের সম্পদের) কাউকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে যাই না। আমরা যা রেখে যাই সাদকা হিসাবেই রেখে যাই। এ মাল থেকে মুহাম্মদের পরিবার পরিজন ভোগ করবে। আল্লাহর কমস, আমার আত্মীয় স্বজনের সাথে আত্মীয়তা বন্ধনকে সুদৃঢ় করার চেয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আত্মীয়তাই আমার নিকট অধিক প্রিয়।

হাদীস নং ৩৭৪২

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, (একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কাব ইবনে আশরাফের হত্যা করার জন্য প্রস্তুত আছে কে? কেননা সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দিয়েছে। মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. দাঁড়ালেন, এবং বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি কি চান যে, আমি তাকে হত্যা করি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন মুহাম্মদ ইবনে মাসলাম রা. বললেন, তাহলে আমাকে কিছু (কৃত্রিম) কথা বলার অনুমতি দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ বল। এরপর মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. কাব ইবনে আশরাফের নিকট গিয়ে বললেন, এ লোকটি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাদকা চায়। এবং সে আমাদেরকে বহু কষ্টে ফেলে। তাই (বাধ্য হয়ে) আমি আপনার নিকট কিছু ঋণের জন্য এসেছি। কাব ইবনে আশরাফ বলল, আল্লাহর কসম পরে সে তোমাদেরকে আরো বিরক্ত করবে এবং আরো অতিষ্ঠ করে তুলবে। মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. বললেন, আমরা তো তাকে অনুসরণ করছি। পরিণাম ফল কি দাঁড়ায় তা না দেখে এখনই তাঁর সঙ্গ পরিত্যাগ করা ভাল মনে করছিনা। এখন আমি আপনার কাছে এক ওসাক বা দুই ওসাক খাদ্য ধার চাই। রাবী সুফিয়ান বলেন, আমর রা. আমার নিকট হাদীসখানা কয়েকবার বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি এক ওসাক বা দুই ওসাকের কথাটি উল্লেখ করেননি। আমি তাকে (স্মরণ করিয়ে) বললাম, এ হাদীসে তো এক ওসাক বা দুই ওসাকের কথাটি বর্ণিত আছে। তখন তিনি বললেন, মনে হয় হাদীসে এক ওসাক বা দুই ওসাক কথাটি বর্ণিত আছে। কাব ইবনে আশরাফ বলল, ধারতো পেয়ে যাবে তবে কিছু বন্ধক রাখ। মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. বললেন, আপনি কি জিনিস আপনি বন্ধক চান। সে বলল, তোমাদের স্ত্রীদেরকে বন্ধক রাক। মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. বললেন, আপনি আরবের অন্যতম সুশ্রী ব্যক্তি, আপনার নিকট কি করে, আমাদের স্ত্রীরদেরকে বন্ধক রাখব আমরা? তখন সে বলল, তাহলে তোমাদের পুত্র সন্তানদেরকে বন্ধক রাক। তিনি বললেন, আমাদের পুত্র সন্তানদেরকে আপনার নিকট কি করে বন্ধক রাখি? (কেননা তা যদি করি তাহলে) তাদেরকে এ বলে সমালোচনা করা হবে যে, মাত্র এক ওসাক বা দুই ওসাকের বিনিময়ে বন্ধক রাখা হয়েছে। এটা তো আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর বিষয়। তবে আমরা আপনার নিকট অস্ত্রশস্ত্র বন্ধক রাখতে পারি। রাবী সুফিয়ান বলেন, লামা শব্দের অর্থ হল অস্ত্রশস্ত্র। অবশেষে তিনি (মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা) তাকে পনুরায় যাওয়ার ওয়াদা করে চলে আসলেন। এরপর তিনি কাব ইবনে আশরাফের দুধ ভাই আবু নাইলাকে সঙ্গে করে রাতের বেলা তার নিকট গেলেন। কাব তাদেরকে দুর্গের মধ্যে ডেকে নিল এবং সে নিজে (উপর তলা থেকে নিচে নেমে আসার জন্য প্রস্তুত হল। এ সময় তার স্ত্রী বলল, এ সময় তুমি কোথায় যাচ্ছ? সে বলল, এইতো মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা এবং আমার ভাই আবু নাইলা এসেছে। (তাদের কাছে যাচ্ছি) আমর ব্যতীত রাবীগণ বলেন যে, কাবের স্ত্রী বলল, আমি তো এমনই একটি ডাক শুনতে পাচ্ছি যার থেকে রক্তের ফোটা ঝড়ছে বলে আমার মনে হচ্ছে। কাব ইবনে আশরাফ বলল, মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা এবং দুধ ভাই আবু নাইলা, (অপরিচিত কোন লোক তো নয়) ভদ্র মানুষকে রাতের বেলা বর্শা বিদ্ধ করার জন্য ডাকলে তার যাওয়া উচিৎ। (রাবী বলেন) মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. সঙ্গে আরো দুই ব্যক্তিকে নিয়ে (তথায়) গেলেন। সুফিয়ানকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, আমর কি তাদের দুজনের নাম উল্লেখ করেছিলেন? উত্তরে সুফিয়ান বললেন, একজনের নাম উল্লেখ করেছিলেন। আমর বর্ণনা করেন যে, তিনি আরো দু’জন মানুষ সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলেন। এবং তিনি বলেছিলেন যখন সে (কাব ইবনে আশরাফ) আসবে। আমর ব্যতীত অন্যান্য রাবীগণ (মুহাম্মদ ইবনে মাসলামার সাথীদের সম্পর্কে) বলেছেন যে (তারা হলেন) আবু আবস ইবনে জাবর হারিস ইবনে আওস এবং আব্বদ ইবনে বিশর। আমর বলেছেন, তিনি অপর দুই ব্যক্তিকে সাথে করে নিয়ে এসেছিলেন। এবং তাদেরকে বলেছিলেন, যখন সে আসবে তখন আমি (কোন বাহানায়) তার মাথার চুল ধরে শুকতে থাকবে। যখন তোমরা আমাকে দেখবে যে, খুব শক্তভাবে আমি তার মাথা আঁকড়িয়ে ধরেছি, তখন তোমরা তরাবারি দ্বারা তাকে আঘাত করবে। তিনি (মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা) একবার বলেছিলেন যে, আমি তোমাদেরকেও শুকাব। সে (কাব) চাদর নিয়ে নিচে নেমে আসলে তার শরীর থেকে সুঘ্রাণ বের হচ্ছিল। তখন (মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. বললেন, আজকের মত এতো উত্তম সুগন্ধি আমি আর কখনো দেখিনি। আমর ব্যতীত অন্যান্য রাবীগণ বর্ণনা করেছেন যে, কাব বলল, আমার নিকট আরবের সম্ভ্রান্ত ও মর্যাদারসম্পন্ন সুগন্ধী ব্যবহারকারী মহিলা আছে। আমর বলেন, মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. বললেন, আমাকে আপনার মাথা শুকতে অনুমতি দেবেন কি? সে বলল, হ্যাঁ, এরপর তিনি তার মাথা শুকলেন এবং এরপর তার সাথীদেরকে শুকালেন। তারপর তিনি পুনরায় বললেন, আমাকে (আরেকবার শুকবার জন্য) অনুমতি দেবেন কি? সে বলল, হ্যাঁ। এরপর তিনি তাকে কাবু করে ধরে সাথীদেরকে বললেন, তোমরা তাকে হত্যা কর। তাঁরা তাকে হত্যা করলেন। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে এ সংবাদ জানালেন।

হাদীস নং ৩৭৪৩

ইসহাক ইবনে নাসর রহ……….বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশ জনের কম একটি দলকে আবু রাফির উদ্দেশ্যে পাঠালেন। (তাদের মধ্যে) আবদুল্লাহ ইবনে আতীক রা. রাতের বেলা তার ঘরে প্রবেশ করে ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে হত্যা করেন।

হাদীস নং ৩৭৪৪

ইউসুফ ইবনে মূসা রহ…………বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল্লাহ ইবনে আতীককে আমীর বানিয়ে তার নেতৃত্বে আনসারদের কতিপয় সাহাবীকে ইয়াহূদী আবু রাফির (হত্যার) উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন। আবু রাফি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কষ্ট দিত এবং এ ব্যাপারে লোকদেরকে সাহায্য করত। হিজায ভূমিতে তার একটি দুর্গ ছিল। (সে সেখানে বসবাস করত) তারা যখন তার দুর্গের কাছে গিয়ে পৌঁছলেন তখন সূর্য ডুবে গিয়েছে এবং লোকজন নিজেদের পশু পাল নিয়ে রওয়ানা হয়েছে (নিজ নিজ বাড়ীর দিকে) আবদুল্লাহ (ইবনে আতীক) তার সাথীদেরকে বললেন, তোমরা তোমাদের স্থানে বসে থাক। আমি চললাম ভিতরে প্রবেশ করার জন্য দ্বার রক্ষীর সাথে আমি (কিছু) কৌশল প্রদর্শন করব। এরপর তিনি সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে দরজার কাছে পৌঁছলেন এবং কাপড় দ্বারা নিজেকে এমনভাবে ঢাকলেন যেন তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজনে রত আছেন। তখন সবাই ভিতরে প্রবেশ করলে দ্বাররক্ষী তাকে ডেকে বলল, হে আবদুল্লাহ ভিতরে প্রবেশ করতে চাইলে প্রবেশ কর। আমি এখনই দরজা বন্ধ করে দেব। আমি তখন ভিতরে প্রবেশ করলাম এবং আত্মগোপন করে রইলাম। সকলে ভিতরে প্রবেশ করার পর সে দরজা বন্ধ করে দিল এবং একটি পেরেকের সাথে চাবিটা লটকিয়ে রাখল। (আবদুল্লাহ ইবনে আতীক রা. বলেন) এরপর আমি চাবিটার দিকে এগিয়ে গেলাম এবং চাবিটা নিয়ে দরজাটি খুললাম। আবু রাফির নিকট রাতের বেলা গল্পের আসর জমতো, এ সময় সে তার উপর তলার কামরায় অবস্থান করছিল। গল্পের আসরে আগত লোকজন চলে গেলে, আমি সিঁড়ি বেয়ে তার কাছে গিয়ে পৌঁছলাম। এ সময় আমি একটি করে দরজা খুলছিলাম এবং ভিতরে থেকে তা আবার বন্ধ করে দিয়ে যাচ্ছিলাম, যাতে লোকজন আমার (আগমন) সম্বন্ধে জানতে পারলেও হত্যা না করা পর্যন্ত আমার নিকট পৌঁছতে না পারে। আমি তার কাছে গিয়ে পৌঁছলাম। এ সময় সে একটি অন্ধকার কক্ষে ছেলেমেয়েদের মাঝে শুয়েছিল। কক্ষের কোন অংশে সে শুয়ে আছে আমি তা বুঝতে পারছিলাম না। তাই আবু রাফি বলে ডাক দিলাম। সে বলল, কে আমাকে ডাকছ? আমি তখন আওয়াজটি লক্ষ্য করে এগিয়ে গিয়ে তরবারী দ্বারা প্রচন্ড জোরে আঘাত করলাম। আমি তখন কাঁপছিলাম এ আঘাতে আমি তাকে কোন কিছুই করতে পারলাম না। সে চীৎকার করে উঠলে আমি কিছুক্ষণের জন্য বাইরে চলে আসলাম। এরপর পুনরায় ঘরে প্রবেশ করে (কন্ঠস্বর পরিবর্তন করত: তার আপন লোকের ন্যায়) জিজ্ঞাসা করলাম, আবু রাফি এ আওয়াজ হল কিসের ? সে বলল, তোমার মায়ের সর্বনাশ হোক। কিছুক্ষণ পূর্বে ঘরের ভিতর কে যেন আমাকে তরবারী দ্বারা আঘাত করেছে। আবদুল্লাহ ইবনে আতীক রা. বলেন, তখন আমি আবার তাকে ভীষণ আঘাত করলাম এবং মারাত্মকভাবে ক্ষত বিক্ষত করে ফেললাম। কিন্তু তাকে হত্যা করতে পারিনি। তাই তরবারীর ধারাল দিকটি তার পেটের উপর চেপে ধরলাম এবং পিঠ পার করে দিলাম। এবার আমি নিশ্চিত রূপে অনুভব করলাম যে, এখন আমি তাকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছি। এরপর আমি এক এক করে দরজা খুলে নিচে নামতে শুরু করলাম নামতে নামতে সিঁড়ির শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছলাম। পূর্ণিমার রাত্র ছিল। (চাঁদের আলোতে তাড়াহুড়ার মধ্যে সঠিকভাবে অনুধাবন করতে না পেরে) আমি মনে করলাম, (সিঁড়ির সকল ধাপ অতিক্রম করে) আমি মাটির নিকটে এসে পড়েছি। (কিন্তু তখনও একটি ধাপ অবশিষ্ট ছিল) তাই নিচে পা রাখতেই পড়ে গেলাম। অমনিই আমার পায়ের গোছার হাড় ভেঙ্গে গেল। (তাড়াহুড়া করে) আমি আমার মাথার পাগড়ি দ্বারা পা খানা বেঁধে নিলাম এবং একটু হেটে গিয়ে দরজা সোজা বসে রইলাম মনে সিদ্ধান্ত করলাম, তার মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত অবগত না হয়ে আজ রাতে আমি এখান থেকে যাব না। ভোর রাতে মোরগের ডাক আরম্ভ হলে মৃত্যু ঘোষণাকারী প্রাচীরের উপর উঠে ঘোষণা করল, হিজায অধিবাসীদের অন্যতম ব্যবসায়ী আবু রাফির মৃত্যু সংবাদ গ্রহণ কর। তখন আমি আমার সাথীদের নিকট গিয়ে বললাম, দ্রুত চল, আল্লাহ আবু রাফিকে হত্যা করেছেন। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গেলাম এবং সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম। তিনি বললেন, তোমার পাটি লম্বা করে দাও। আমি আমার পাটি লম্বা করে দিলে তিনি উহার উপর স্বীয় হাত বুলিয়ে দিলেন। (এতে আমার পা এমন সুস্থ হয়ে গেল) যেন তাতে কোন আঘাতই পায়নি।

হাদীস নং ৩৭৪৫

আহমদ ইবনে উসমান রহ………….বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু রাফির (হত্যার) উদ্দেশ্যে আবদুল্লাহ ইবনে আতীক ও আবদুল্লাহ ইবনে উতবাকে একদল লোকসহ প্রেরণ করেন। যেতে যেতে তারা দুর্গের কাছে গিয়ে পৌঁছলে আবদুল্লাহ ইবনে আতীক রা. তাদেরকে বললেন, তোমরা অপেক্ষা কর। আমি যাই, দেখি কি করে সুযোগ করা যায়। আবদুল্লাহ আতীক রা বলেন, দুর্গের ভিতর প্রবেশ করার জন্য আমি কৌশল অবলম্বন করব। ইতিমধ্যে তারা একটি গাধা হারিয়ে ফেলল, এবং একটি আলো নিয়ে এর সন্ধানে বের হল। তিনি বলেন, আমকে চিনে ফেলবে আমি এ আশংকা করছিলাম। তাই (কাপড় দিয়ে) আমি আমার মাথা ও পা ঢেকে ফেললাম এবং এমনভাবে বসে রইলাম যেন আমি প্রাকৃতিক আবশ্যক মলমূত্র এখনই দরজা বন্ধ করার আগে ভিতরে ঢুকে পড়ুন। আমি প্রবেশ করলাম এবং দুর্গের দরজার পার্শ্বে গাধা বাঁধার স্থানে আত্মগোপন করে থাকলাম। আবু রাফির নিকট সবাই বসে রাতে খানা খেয়ে গল্প গুজব করল। এভাবে রাতের কিছু অংশ কেটে যাওয়ার পর সকলেই নিজ নিজ বাড়ীতে চলে গেল। যখন কোলাহল থেমে গেল এবং কোন নড়াচড়া শুনতে পাচ্ছিলাম না। তখন আমি বের হলাম। আবদুল্লাহ ইবনে আতীক রা. বলেন, দুর্গের চাবি যে ছিদ্রপথে রাখা হয়েছিল তা আমি পূর্বেই দেখেছিলাম। তাই রক্ষিত স্থান থেকে চাবিটি নিয়ে আমি দুর্গের দরজাটি খুললাম। তিনি বলেন, আমি মনে মনে ভাবলাম, কাওমের লোকেরা যদি আমাকে দেখে ফেলে তাহলে সহজেই আমি (পালিয়ে) যেতে পারব। এরপর দুর্গের ভিতরে তাদের যত ঘর ছিল সবগুলো দরজা আমি বাইরে থেকে বন্ধ করে দিলাম। এরপর সিঁড়ি বেয়ে আবু রাফির কক্ষে উঠলাম। বাতি নিভিয়ে দেয়া হয়েছিল বলে ঘরটি ছিল ভীষণ অন্ধকার। লোকটি কোথায়, কিছুতেই আমি বুঝতে পারছিলাম না। সুতরাং আমি তাকে ডাকলাম, হে আবু রাফি। সে বলল, কে ডাকছ? তিনি বললেন, আওয়াজটি লক্ষ্য করে আমি একটু এগিয়ে গেলাম এবং তাকে আঘাত করলাম। সে চীৎকার করে উঠল। এ আঘাতে কোন কাজই হয়নি। এরপর আবার আমি তার কাছে গেলাম, যেন আমি তাকে সাহায্য করব। আমি এবার স্বর পরিবর্তন করে বললাম, হে আবু রাফি তোমার কি হয়েছে? সে বলল, কি আশ্চর্য ব্যাপার, তার মায়ের সর্বনাশ হোক, এইতো এক ব্যক্তি আমার ঘরে ঢুকে আমাকে তরবারী দ্বারা আঘাত করেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আতীক বলেন, তাকে লক্ষ্য করে পুনরায় আমি আঘাত করলাম এবারও কোন কাজ হল না। সে চীৎকার করলে তার পরিবারের সবাই জেগে উঠল। তারপর পুনরায় আমি সাহায্যকারীর ভান করে কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন করে তার দিকে এগিয়ে গেলাম। এ সময় সে পিঠের উপর চিৎ হয়ে শুয়ে ছিল (এ দেখে) আমি তরবারীর অগ্রভাগ তার পেটের উপর রেখে এমন জোরে চাপ দিলাম যে, আমি তার হাড়ের আওয়াজ শুনতে পেলাম। এরপর আমি কাঁপতে কাঁপতে সিঁড়ির নিকট এসে পৌঁছলাম। ইচ্ছা ছিল নেমে যাব। কিন্তু (নামতে গিয়ে) আছাড় খেয়ে পড়ে গেলাম। এবং এতে আমার পা খানা ভেঙ্গে গেল। সাথে সাথে (পাগড়ী দিয়ে) আমি তা বেঁধে ফেললাম। এবং আস্তে আস্তে হেটে সাথীদের নিকট চলে এলাম। এরপর বললাম, তোমরা যাও এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সুসংবাদ দাও। আমি তার মৃত্যুসংবাদ না শুনে আসব না। ঊষালগ্নে মৃত্যু ঘোষণাকারী (প্রাচীরে) উঠে বলল, আমি আবু রাফির মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা করছি। আবদুল্লাহ ইবনে আতীক রা. বলেন, এরপর আমি উঠে চলতে লাগলাম। এ সময় আমার (পায়ে) কোন ব্যথাই ছিল না। আমার সাথীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পৌঁছার আগেই আমি তাদের ধরে ফেললাম এবং (গিয়ে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তার (আবু রাফির) মৃত্যুর সংবাদ জানালাম।

 

 

Exit mobile version