Site icon BnBoi.Com

অগ্রন্থিত গান – কাজী নজরুল ইসলাম

অগ্রন্থিত গান - কাজী নজরুল ইসলাম

আঁধার মনের মিনারে মোর

আঁধার মনের মিনারে মোর
হে মুয়াজ্জিন, দাও আজান!
গাফেলতির ঘুম ভেঙে দাও
হউক নিশি অবসান॥

আল্লাহ নামের যে তকবীরে
ঝর্না বহে পাষাণ চিরে
শুনি’ সে তকবিরের ধ্বনি
জাগুক আমার পাষাণ প্রাণ॥

জামাত ভারী জমবে এবার
এই দুনিয়ার ঈদগাহে,
মেহেদী হবেন ইমাম সেথায়
রাহ দেখাবেন গুমরাহে।
আমি যেন সেই জামাতে
শামিল হতে পারি প্রাতে
ডাকে আমায় শহীদ হতে
সেথায় যতো নওজোয়ান॥

আবীর-রাঙা আভীর নারী সনে

আবীর-রাঙা আভীর নারী সনে
কৃষ্ণ কানাই খেলে হোরি।
হোরির মাতন চুড়ি ও কাঁকনে
উঠিছে কল-কাকলি।।

শ্যামল তনু হল রাঙা আবীর রেঙে,
ইন্দ্রধনু-ছটা যেন কাজল মেঘে,
রাঙিল রঙে নীল চোলি।।

লহু লহু হাসে মহু মহু ভাসে
রাঙা কুঙ্কুম ফাগের রাগে,
দোঁহে দুহু ধরি, মারে পিচকারি
চাঁদ-মুখে কলঙ্ক জাগে
রাঙা কুঙ্কুম ফাগের রাগে।
অঙ্গে অপাঙ্গে অনঙ্গ-রঙ্গিমা
ইঙ্গিতে উঠিছে উছলি।।

আবে-হায়াতের পানি দাও

আবে-হায়াতের পানি দাও, মরি পিপাসায়।
শরণ নিলাম নবীজীর মোকারক পায়।।

ভিখারিরে ফিরাবে কি শূন্য হাতে,
দয়ার সাগর তুমি যে মরু সাহারায়।।
অন্ধ আমি আঁধারে মরি ঘুরিয়া,
দেখাবে না-কি মোরে পথ, এই নিরাশায় ।।

যে-মধু রহে না ক্ষুধা তৃষা,
মরার আগে সেই মধু দি গো আমায়।।

আমার ধ্যানের ছবি আমারি হযরত

আমার ধ্যানের ছবি আমারি হযরত।
ও-নাম প্রাণে মিটায় পিয়াসা
আমার তামান্না আমারি আশা
আমার গৌরব আমার ভরসা
এ দীন গুনাহগার তাঁহারই উম্মত।।
ও-নামে রওশন জমিন আসমান
ও-নামে মাখা তামাম জাহান
ও-নাম দরিয়ায় বহায় উজান
ও-নাম ধেয়ায় মরু ও পর্বত।।

আমার নবীর নাম জপে নিশিদিন
ফেরেশতা আর হুর পরী জিন,
ও-নাম যদি আমার ধ্যানে রয়
পাব কিয়ামতে তাঁহার শাফায়ত।।

আমার প্রিয় হযরত নবী কামলিওয়ালা

আমার প্রিয় হযরত নবী কামলিওয়ালা!
যাঁহার রওশনীতে দ্বীন- দুনিয়া উজালা।।
যাঁরে খুঁজে ফেরে কোটি গ্রহ তারা,
ঈদের চাঁদে যাঁহার নামের ইশারা;
বাগিচায় গোলাব গুল গাঁথে যাঁর মালা।।

আউলিয়া আম্বিয়া দরবেশ যাঁর নাম
খোদার নামের পরে জপে অবিরাম,
কেয়ামতে যাঁর হাতে কাওসার পিয়ালা।।

পাপে মগ্ন ধরা যাঁর ফজিলতে
ভাসিল সুমধুর তৌহিদ- স্রোতে,
মহিমা যাঁহার জানেন একে আল্লাহতায়ালা।।

আমার মোহাম্মদের নামে ধেয়ান হৃদয়ে যার রয়

আমার মোহাম্মদের নামে ধেয়ান হৃদয়ে যার রয়
ওগো হৃদয়ে যার রয়।
খোদার সাথে হয়েছে তার গোপন পরিচয়।।

ঐ নামে যে ডুবে আছে
নাই দুঃখ-শোক তাহার কাছে;
ঐ নামের প্রেমে দুনিয়াকে সে দেখে প্রেমময়।।

যে খোশ-নসীব গিয়াছে ঐ নামের স্রোতে ভেসে,
জেনেছে সে কোরন-হাদিস-ফেকা এক নিমেষে।

মোর নবীজীর বর-মালা,
করেছে যার হৃদয় আলা
বেহেশতের সে আশ রাখে না,
তার নাই দোজখে ভয়।।

আমার সুরের ঝর্ণা-ধারায় করবে তুমি স্নান

আমার সুরের ঝর্ণা-ধারায় করবে তুমি স্নান।
ওগো বধূ, কন্ঠে আমার তাই ঝরে এই গান।।

কেশে তোমার পরলে বালা
তাই গাঁথি এই গানের মালা,
তোমার টানে ভাব-যমুনায় তাই ঝরে এই গান।।

আমার সুরের ইন্দ্রাণী গো, উঠবে তুমি বলে
নিত্য বানীর সিন্ধুতে মোর মন্থন তাই চলে।

সিংহাসনের সুর-সভাতে
বসবে রানীর মহিমাতে,
সৃজন করি সেই গরবে সুরের পরীস্হান।।

আমারে সকল ক্ষুদ্রতা হতে বাঁচাও প্রভু উদার

মোনাজাত

আমারে সকল ক্ষুদ্রতা হতে
বাঁচাও প্রভু উদার।
হে প্রভু! শেখাও – নীচতার চেয়ে
নীচ পাপ নাহি আর।

যদি শতেক জন্ম পাপে হই পাপী,
যুগ-যুগান্ত নরকেও যাপি,
জানি জানি প্রভু, তারও আছে ক্ষমা-
ক্ষমা নাহি নীচতার।।

ক্ষুদ্র করো না হে প্রভু আমার
হৃদয়ের পরিসর,
যেন সম ঠাঁই পায়
শত্রু-মিত্র-পর।

নিন্দা না করি ঈর্ষায় কারো
অন্যের সুখে সুখ পাই আরো,
কাঁদি তারি তরে অশেষ দুঃখী
ক্ষুদ্র আত্মা তার।।

আমি অগ্নি-শিখা, মোরে বাসিয়া ভালো

আমি অগ্নি-শিখা, মোরে বাসিয়া ভালো
যদি চাও, তব অন্তরে প্রদীপ জ্বালো।।

মোর দহন-জ্বালা রবে আমারি বুকে,
তব তিমির রাতে হব রঙিন আলো।।

হব তোমার প্রেমে নব উদয়-রবি,
আমি মুছাব প্রাণের তব বিষাদ-কালো।।

লয়ে বহ্নি-দাহ, প্রিয়! করো না খেলা,
কবে লাগিবে আগুন, ভাঙিবে মেলা;
শেষে আমার মতো কেন মরিবে জ্বলে;
তুমি মেঘের মায়া, শুধু সলিল ঢালো।।
মোরে আঁচলে ঢেকে তুমি বাঁচালে ঝড়ে,
আজ তুমিই আবার তারে নিভায়ো না লো।।

আমি গরবিনী মুসলিম বালা

আমি গরবিনী মুসলিম বালা।
সংসার সাহারাতে আমি গুলে লালা।।

জ্বালায়েছি বাতি আমি আঁধার কাবায়
এনেছি খুশির ঈদে শিরনির থালা।।

আনিয়াছি ঈমান প্রথম আমি,
আমি দিয়াছি সবার আগে মোহাম্মদে মালা।।
কত শত কারবালা বদরের রণে
বিলায়ে দিয়াছি স্বামী-পুত্র স্বজনে;
জানে গ্রহ-তারা জানে আল্লাহ্‌তালা।।

আমি বাণিজ্যেতে যাব এবার মদিনা শহর

আমি বাণিজ্যেতে যাব এবার মদিনা শহর।
আমি এদেশে হায় গুনাহগারি দিলাম জীবন ভর।।

পাঞ্জেগানার বাজার যেথা বসে দিনে রাতে,
দুই টাকা আল্লাহ বসুল পুঁজি নিয়ে হাতে
কত পথের ফকির সওদা করে হল সওদাগর।।

সেথা আজান দিয়ে কোরান পড়ে ফেরিওয়ালা হাঁকে,
বোঝাই করে দৌলত দেয়, যে সাড়া দেয় ডাকে।
ওগো জানেন তাহার পাকে পাকে কাবা খোদার অাফিস-ঘর।।

বেহেশতে রোজগারের পরে ছাড়পত্র পায়,
পায় সে সাহস ঈমান-জাহাজ যদি ডুবে যায়।
ওগো যেতে খোদার খাস-মহলে পায় সে সীলমোহর।।

আমি যদি আরব হতাম মদিনারই পথ

ইসলামি গান

আমি যদি আরব হতাম, মদিনারই পথ।
এই পথে মোর চলে যেতেন নূর-নবী হজরত।।

পয়জা তাঁর লাগত এসে আমার কঠিন বুকে,
আমি ঝর্ণা হয়ে গলে যেতাম অমনি পরম সুখে।
সেই চিহ্ন বুকে পুরে
পালিয়ে যেতাম কোহ-ই-তুরে,
(সেথা) দিবানিশি করতাম তার কদম জিয়ারত।।

মা ফাতেমা খেলত এসে আমার ধূলি লয়ে,
আমি পড়তাম তার পায়ে লুটিয়ে ফুলের রেণু হয়ে।
হাসান হোসেন হেসে হেসে
নাচত আমার বক্ষে এসে,
চক্ষে আমার বইত নদী পেয়ে সে ন্যামত।।

আমার বুকে পা ফেলে রে বীর আসহাব যত
রণে যেতেন দেহে আমার আঁকি মধুর ক্ষত।
কুল মুসলিম আসত কাবায়,
চলতে পায়ে দলত আমায়
আমি চাইতাম খোদার দীদার শাফায়ত জিন্নত।।

আমি যার নূপুরের ছন্দ বেণুকার সুর

আমি যার নূপুরের ছন্দ,
বেণুকার সুর–
কে সেই সুন্দর, কে।।

আমি যার বিলাস যমুনা,
বিরহ বিধুর–
কে সেই সুন্দর, কে।।

যাহার গানের আমি বনমালা
আমি যার কথার কুসুম–ডালা
না -দেখা -সুদূর–
কে সেই সুন্দর, কে?।।

যার শিখী-পাখা লেখনী হয়ে
গোপনে মোরে কবিতা লেখায়–
সে রহে কোথায় হায়!
আমি যার বরষার আনন্দ- কেকা
নৃত্যের সঙ্গিনী দামিনী-রেখা
যে মম অঙ্গের কাঁকন-কেয়ূর–
কে সেই সুন্দর, কে।।

আমিনার-দুলাল এস মদিনায় ফিরিয়া আবার

আমিনার-দুলাল এস মদিনায় ফিরিয়া আবার।
ডাকে ভুবন-বাসী।
হে মদিনার চাঁদ, জ্যেতিতে তোমার, আধাঁর ধরার
মুখে ফোটও হাসি।।

নয়নের পিয়ালায় আনো হযরত
তরাইতে পাপীরে খোদার রহমত;
আবার কাবার পানে ডাকো সকলে
বাজায়ে মধুর কোরানের বাঁশি।।

শোকে বেদনার পাপের জ্বালায় হের প্রায় আজি বিশ্ব-নিখিল
খোদার হাবিব এসে বাঁচাও বাঁচাও বসাও খুশীর হাট
তাজা কর দীল
প্রেম-কওসর দিয়ে বেহেশত হতে
মেহবুব পাঠাও দুঃখের জগতে,
দুনিয়া ভাসুক পুন পুণ্য-স্রোতে
শোনাও আজান পাপ-তাপ-বিনাশী।।

আল্লাজী গো আমি বুঝি না রে তোমার খেলা

আল্লাজী গো আমি বুঝি না রে তোমার খেলা।
তাই দুঃখ পেলে ভাবি বুঝি হানিলে হেলা।।

কুমোর যখন হাঁড়ি গড়ে, কাঁদে মাটি –
ভাবে, কেন পোড়ায় আমায় চড়িয়ে ভাটি;
ফুলদানি হয় পোড় খেয়ে সেই মাটির ঢেলা।।

মা শিশুরে ধোয়ায় মোছায়, শিশু ভাবে–
ছাড়া পেলে, মা ফেলে সে পালিয়ে যাবে
মোর দোষ করে তাই দুষি তোমায় সারা বেলা।।

আমরা তোমার বান্দা খোদা তুমি জানো,
কেন হাসাও কেন কাঁদাও, আঘাত হানো।
যে গড়তে জানে, তারি সাজে ভেঙে ফেলা।।

আল্লাহ কে যে পাইতে চায় হযরত কে ভালবেসে

আল্লাহ কে যে পাইতে চায় হযরত কে ভালবেসে–
আরশ কুর্সী লওহ কালাম না চাইতেই পেয়েছে সে।।

রসুল নামের রশি ধ’রে
যেতে হবে খোদার ঘরে,
নদী-তরঙ্গে যে পড়েছে, ভাই
দরিয়াতে সে আপনি মেশে।।

তর্ক করে দুঃখ ছাড়া কী পেয়েছিস অবিশ্বাসী,
কী পাওয়া যায় দেখনা বারেক হযরতে মোর ভালবাসি?

এই দুনিয়ায় দিবা- রাতি
ঈদ হবে তোর নিত্য সাথী;
তুই যা চাস তাই পাবি হেথায়,
আহমদ চান যদি হেসে।।

আল্লাহ থাকেন দূর আরশে

আল্লাহ থাকেন দূর আরশে–
নবীজী রয় প্রানের কাছে।
প্রাণের কাছে রয় যে প্রিয়,
সেই নবীরে পরান যাচে।।

পয়গম্বরও পায় না খোদায়,
মোর নবীরে সকলে পায়,
নবিজি মোর তাবিজ হ’য়ে
আমার বুকে জড়িয়ে আছে।।

খোদার নামে সেজদা করি,
নবীরে মোর ভালোবাসি,
খোদা যেন নূরের সুরয,
নবী যেন চাঁদের হাসি।।

নবীরে মোর কাছে পেতে
হয় না পাহাড়- বনে যেতে,
বৃথা ফকির – দরবেশ মরে
পুড়ে খোদার আগুন – আঁচে।।

আল্লাহ নামের নায়ে চড়ে যাব মদিনায়

আল্লাহ নামের নায়ে চড়ে যাব মদিনায়।
মোহাম্মদের নাম হবে মোর
(ও ভাই) নদী-পথে পুবান বায়।।

চার ইয়ারের নাম হবে মোর সেই তরণীর দাঁড়;
কলমা শাহাদতের বানী হাল ধরিবে তার।
খোদার শত নামের গুন টানিবি
(ও ভাই) নাও যদি না যেতে চায়।।

মোর নাও যদি না চলিতে দেয় সাহারার বালি,
মরুভুমে বান ডাকাব, পানি দিব ঢালি’
চোখের পানি দিব ঢালি’
তাবিজ হয়ে দুলবে বুকে কোরান, খোদার বানী;
অাধার রাতে ঝড়-তুফানে আমি কি ভয় মানি!
আমি তরে যাব রে
তরী যদি ডুবে তারে না পায়।।

আল্লাহতে যার পূর্ণ ঈমান, কোথা সে মুসলমান

আল্লাহতে যার পূর্ণ ঈমান, কোথা সে মুসলমান।
কোথা সে আরিফ, অভেদ যাহার জীবন-মৃত্যু-জ্ঞান।।

যাঁর মুখে শুনি তওহিদের কালাম
ভয়ে মৃত্যুও করিত সালাম।
যাঁর দ্বীন দ্বীন রবে কাঁপিত দুনিয়া জ্বীন-পরী ইনসান।।

স্ত্রী-পুত্ররে আল্লারে সপি জেহাদে যে নির্ভীক
হেসে কোরবানী দিত প্রাণ হায়! আজ তারা মাগে ভিখ।

কোথা সে শিক্ষা–আল্লাহ ছাড়া
ত্রিভুবনে ভয় করিত না যারা।
আজাদ করিতে এসেছিল যারা সাথে ল’য়ে কোরআন।।

আসিছেন হাবীবে-খোদা, আরশ পাকে তাই উঠেছে শোর

আসিছেন হাবীবে-খোদা, আরশ পাকে তাই উঠেছে শোর,
চাঁদ পিয়াসে ছুটে আসে আকাশ- পানে যেমন চকোর,
কোকিল যেমন গেয়ে উঠে ফাগুম আসার আভাস পেয়ে,
তেমনি করে হরষিত ফেরেশতা সব উঠলো গেয়ে,–
হের আজ আরশে আসেন মোদের নবী কামলীওয়ালা
দেখ সেই খুশীতে চাঁদ- সুরুয আজ হল দ্বিগুন আলা।।

ফকির দরবেশ আউলিয়া যাঁরে
ধ্যানে জ্ঞানে ধরতে নারে,
যাঁর মহিমা বুঝতে পারে
এক সে আল্লাহতালা।।

বারেক মুখে নিলে যাঁর নাম
চিরতরে হয় দোযখ হারাম,
পাপীর তরে দস্তে যাঁহার
কাওসারের পেয়ালা।।

মিম হরফ না থাকলে যে আহাদ
নামে মাখা যার শিরীন শহদ,
নিখিল প্রেমাস্পদ আমার মোহাম্মদ
ত্রিভুবন-উজালা।।

আহার দিবেন তিনি, রে মন

আহার দিবেন তিনি, রে মন,
জীব দিয়েছেন যিনি।
তোরে সৃষ্টি করে তোর কাছে যে
আছেন তিনি ঋণী।

সারা জীবন চেষ্টা করে
ভিক্ষা-মুষ্টি আনলি ঘরে;
ও মন, তাঁর কাছে তুই হাত পেতে দেখ
কী দান দেন তিনি।।

না চাইতে ক্ষেতের ফসল
পায় বৃষ্টির জল;
তুই যে পেলি পুত্র-কন্যা
তোরে কে দিল তা বল।

যার করুণায় এত পেলি,
তাঁরেই কেবল ভুলে গেলি;
তোর ভাবনার ভার দিয়ে তাঁকে
ডাক রে নিশিদিনই।।

ইসলামের ঐ বাগিচাতে ফুটলো দুটি ফুল

ইসলামের ঐ বাগিচাতে ফুটলো দুটি ফুল।
শোভায় অতুল সে ফুল আমার আল্লা ও রসুল।।

যুগল কুসুম উজল রঙে
হৃদয় আমার উঠলো রেঙে,
খোশবুতে তা’র মাতোয়ারা মনের বুলবুল।।
ফুটলো যদি সে ফুল আমার খোশ-নসিবের ফলে,
জিন্দেগি ভর তা’রি মালা পরবো আমার গলে।

দুই বাজুতে তাবিজ ক’রে
খাড়া হব রোজ হাশরে,
বরকতে তার হব রে পার পুলসেরাতের পুল।।

ইয়া আল্লাহ, তুমি রক্ষা করো দুনিয়া ও দ্বীন

ইসলামী /কোরাস

ইয়া আল্লাহ, তুমি রক্ষা করো দুনিয়া ও দ্বীন।
শান-শওকতে হোক পূর্ণ আবার নিখিল মুসলেমিন।
আমিন আল্লাহুম্মা আমিন।।

খোদা, মুষ্টিমেয় আরববাসী যে ঈমানের জোরে
তোমার নামের ডঙ্কা বাজিয়েছিল দুনিয়াকে জয় ক’রে,
খোদা, দাও সে ঈমান, সেই তরক্কী, দাও সে একিন।
খোদা দাও সে একিন।
আমিন আল্লাহুম্মা আমিন।।

হায়! যে-জাতির খলিফা ওমর শাহানশাহ হয়ে
ছেঁড়া কাপড় প’রে গেলেন উপবাসী র’য়ে
আবার মোদের সেই ত্যাগ দাও, খোদা
ভোগ-বিলাসে মোদের জীবন ক’রো না মলিন।
আমিন আল্লাহুম্মা আমিন।।

খোদা, তুমি ছাড়া বিশ্বে কারো করতাম না ভয়
তাই এ বিশ্বে হয়নি মোদের কভু পরাজয়
দাও সেই দীক্ষা শক্তি সেই ভক্তি দ্বিধাহীন।
আমিন আল্লাহুম্মা আমিন।।

ইয়া মোহাম্মদ বেহেশত হতে

ইয়া মোহাম্মদ বেহেশত হতে
খোদায় পাওয়ার পথ দেখাও।
এই দুনিয়ার দুঃখ থেকে
এবার আমার নাজাত দাও।।

পীর মুর্শিদ পাইনি আমি,
তাই তোমায় ডাকি দিবস-যামী,
তোমারই নাম হউক হযরত
আমার পর-পারের নাও।।

অর্থ-বিভব যশ- সম্নান
চেয়ে চেয়ে নিশিদিন
দুঃখ- শোকে জ্বলে মরি
প্রান কাঁদে শান্তিহীন।।

আল্লাহ ছাড়া ত্রিভূবনে
শান্তি পাওয়া যায় না মনে,
কোথায় পাবো সে আবেহায়াত–
ইয়া নবীজী, রাহ বাতাও।।

ইয়া রসুলুল্লাহ! মোরে রাহা দেখাও সেই কাবার

ইয়া রসুলুল্লাহ! মোরে রাহা দেখাও সেই কাবার–
যে কাবা মসজিদে গেলে পাব আল্লার দীদার।।

দ্বীন-দুনিয়া এক হয়ে যায় যে কাবার ফজিলতে,
যে কাবাতে হাজী হলে রাজি হন পরওয়ারদিগার।।

যে কাবার দুয়ারে জামে তৌহিদ দেন হযরত আলী,
যে কাবার কুল-মগফেরাতে কর তুমি ইন্তেজার।।

যে কাবাতে গেলে দেখি আরশ কুর্সি লওহ কালাম;
মরণে আর ভয় থাকে না, হাসিয়া হয় বেড়া পার।।

উঠুক তুফান পাপ-দরিয়ায়

উঠুক তুফান পাপ-দরিয়ায়–
ও ভাই আমি কি তাই ভয় করি।
পাক্কা ঈমান তক্তা দিয়ে
গড়া যে আমার তরী।।

লা -ইলাহা ইল্লাল্লাহুর পাল তুলে
ঘোর তুফানকে জয় করে ভাই,
যাবই কূলে ।
আমার মোহাম্মদ মোস্তফা নামের
গুনের রশি ধরি।।

খোদার রাহে সঁপে দেওয়া ডুববে না মোর এ তরি,
সওদা করে ফিরবে তীরে সওয়াব-মানিক ভরি’।

দাঁড় এ তরীর নামাজ,রোজা, হজ্জ্ব ও জাকাত,
উঠুক না মেঘ, আসুক বিপদ–যত বজ্রপাত,
আমি যাব বেহেশত বন্দরেতে রে
এই কিশতিতে চড়ি।

এ কোন মধুর শরাব দিলে আল আরাবি সাকি

এ কোন্ মধুর শরাব দিলে আল আরাবি সাকি,
নেশায় হলাম দিওয়ানা যে রঙিন হল আঁখি।।

তৌহিদের শিরাজি নিয়ে
ডাকলে সবায় : ‘যা রে পিয়ে!’
নিখিল জগৎ ছুটে এলো
রইল না কেউ বাকি।।

বসলো তোমার মহ্ফিল দূর মক্কা মদিনাতে,
আল্-কোরানের গাইলে গজল শবে কদর রাতে।

নরনারী বাদশা ফকির
তোমার রূপে হয়ে অধীর
যা ছিল নজ্রানা দিল
রাঙা পায়ে রাখি’।।

এল আবার ঈদ ফিরে এল আবার ঈদ

এল আবার ঈদ ফিরে এল আবার ঈদ–
চলো ঈদগাহে।
যাহার আশায় চোখে মোদের ছিল না রে নিঁদ।
চলো ঈদগাহে।।

শিয়া-সুন্নি লা-মজহাবি একই জামায়াতে
এই ঈদ মোবারক মিলিবে এক সাথে,
ভাই পাবে ভাইকে বুকে, হাত মিলাবে হাতে;
আজ এক আকাশের নীচে মোদের একই সে মসজিদ।
চলো ঈদগাহে।।

ঈদ এনেছে দুনিয়ার শিরিন বেহেশতি,
দুশমনে আজ গলায় ধরে পাতাব ভাই দোস্তি,
জাকাত দেবো ভোগ-বিলাস আজ গোম্বা বদমস্তি,
প্রাণের তশতরিতে ভরে বিলাব তৌহিদ।
চলো ঈদগাহে।।

আজিকার এ ঈদের খুশি বিলাব সকলে,
আজের মতো সবার সাথে মিলব গলে গলে,
আজের মতো জীবন পথে চলব দল দলে
প্রীতি দিয়ে বিশ্ব -নিখিল করব রে মুরিদ
চলো ঈদগাহে।।

এলে কি স্বপন-মায়া আবার আমায় গান গাওয়াতে

গজল-গান

এলে কি স্বপন-মায়া আবার আমায় গান গাওয়াতে।
নিদাঘের দগ্ধ জ্বালা করলে শীতল পুব-হাওয়াতে।।

ছিল যে পাষাণ-চাপা আমার গানের উৎস-মুখে।।
তারে আজ মুক্তি দিলে ঐ রাঙা চরণ -আঘাতে।।

এলে কি বর্ষারানী নিরশ্রু মোর নয়ন-লোকে।
বহালে আবার সুরের সুরধুনী বেদনাতে।।

এসেছ ঘূর্ণি হাওয়া হয়ত বা ভুল এক নিমিষের।
এসেছ সঙ্গে নিয়ে বজ্র ভরা ঝঞ্ঝা-রাতে।।

তবু ঐ ভুল যে প্রিয় ফুল ফুটাল শুষ্ক শাখে।
আকাশের তপ্ত নয়ন জুড়িয়ে গেল ঐ চাওয়াতে।।

তোমার ঐ সোনার হাতের সোনার চুড়ির তালে তালে
নাচে মোর গানের শিখী মনের গহন মেঘলা রাতে।।

এলে কি তারার দেশের হারিয়ে যাওয়া সুরের পরী।
শ্রান্ত এ বাণ-বেঁধা মোর গানের পাখির ঘুম ভাঙাতে।।

এলে আজ বাদলা-শেষে ইন্দ্রধনুর রঙিন মায়া।
ছোট সুর উজান স্রোতে, চোখ জুড়াল রূপ-শোভাতে।।

এলো বরষা শ্যাম সরসা প্রিয়-দরশা

সুরদাসী মল্লার -তেতালা

এলো বরষা শ্যাম সরসা প্রিয়-দরশা।
দাদুরী পাপিয়া চাতকী বোলে
নব-জলধারা-হরষা।।

নাচে বন-কুন্তলা যামিনী উতলা,
খুলে পড়ে গগনে দামিনী মেখলা,
চলে যেতে ঢলে পড়ে অভিসারে
চপলা-যৌবন-মদ-অলসা।।

একা কেতকী বনে কেকা কিহরে,
বহে পুব-হাওয়া কদম্ব শিহরে।

দুরন্ত ঝড়ে কোন অশান্ত চাহি রে
ঘরে নাহি রহে মন,যেতে চায় বাহিরে,
যত ভয় জাগে তত সুন্দর লাগে
শ্রাবণ-ঘন-তমসা।

এস ফিরে প্রিয়তম এস ফিরে

এস ফিরে প্রিয়তম এস ফিরে।
আঁখির আলোক হায় জীবনের সন্ধ্যায়
ডুবে যায় নিরাশা-তিমিরে।।

আসে যে-পথে প্রভাতী আলোর ধারা,
যে-পথে আসে চাঁদ, রাতের তারা
নিতি সেই পথে চাই, যদি তব দেখা পাই,
সুধাই তোমার কথা দক্ষিণ সমীরে।।
খুঁজে ফিরি ঝরা নদীর স্রোতে,
ঘর-ছাড়া পথিক ধায় যে পথে,

তব পথ, হে সুদূর,
কত দূর, কত দূর,
কোথা পাব তব দেখা
(কোন) কালের তীরে।।

ঐ হের রসুলে-খোদা এল ঐ

ঐ হের রসুলে-খোদা এল ঐ।
গেলেন মদিনা যবে হিজরতে হযরত
মদিনা হল যেন খুশিতে জিন্নত,
ছুটুয়া আসিল পথে মর্দ ও আওরত
লুটায়ে পায়ে নবীর, গাহে সব
(মোর) ঐ হের রসুলে-খোদা এল ঐ।।

হাজার সে কাফের সেনা বদরে,
তিন শত তের মোমিন এধারে ;
হযরতে দেখিল যেই, কাঁপিয়া ডরে
কহিল কাফের সব তাজিমের ভরে
ঐ হের রসুলে-খোদা এল ঐ।।

কাঁদিবে কেয়ামতে গুনাহগার সব,
নবীর কাছে শাফায়তি করিবেন তলব,
আসিবেন কাঁদন শুনি’ সেই শাহে-আরব
অমনি উঠিবে সেথা খুশির কলরব
ঐ হের রসুলে-খোদা এল ঐ।।

ওগো মা-ফাতেমা ছুটে আয়

ওগো মা-ফাতেমা ছুটে আয়–
তোর দুলালের বুকে হানে ছুরি।
দিনের শেষে বাতি নিভিয়া যায় মাগো,
বুঝি আঁধার হলো মদিনা-পুরী॥

কোথায় শেরে-খোদা, জুলফিকার কোথা–
কবর ফেঁড়ে এস কারবালা যথা;
তোমার আওলাদ বিরান হলো আজি,
নিখিল শোকে মরে ঝুরি॥

কোথায় আখেরী নবী, চুমা খেতে তুমি
যে গলে হোসেনের–
সহিছ কেমনে, সে গলে দুশমন
হানিছে শমসের!
রোজ হাশরে না-কি কওসরের পানি
পিয়াবে তোমরা গো গুনাহ্গারে আনি,
দেখ না কি চেয়ে, দুধের ছেলে-মেয়ে
পানি বিহনে মরে পুড়ি।।

ওগো মুর্শিদ বলো বলো রসুল কোথায় থাকে

গজল

ওগো মুর্শিদ! বলো বলো
রসুল কোথায় থাকে?
কোথায় গেলে কেমন করে
দেখতে পাব তাঁকে?

বেহেশত-পাবে দূর আকাশে
তাঁহার আসন খোদার পাশে,
সে এতই প্রিয়, আপনি খোদা
লুকিয়ে তারে রাখে।।

কোরান পড়ি, হাদিস শুনি,
সাধ মেটে না তাহে,
আতর পেয়ে মন যে আমার
ফুল দেখতে চাহে।
সবাই খুশি ঈদের চাঁদে,
আমার কেন পরান কাঁদে?
দেখব কখন, আমার ঈদের
চাঁদ-মোস্তফাকে।।

ওর নিশীথ-সমাধি ভাঙিও না

ওর নিশীথ-সমাধি ভাঙিও না।
মরা ফুলের সাথে ঝরিল যে ধূলি-পথে –
সে আর জাগিবে না, তারে ডাকিও না।।

তাপসিনী-সম তোমারি ধ্যানে
সে চেয়েছিল তব পথের পানে,
জীবনে যাহার মুছিলে না আঁখি ধার
আজি তাহার পাশে কাঁদিও না।।

মরণের কোলে সে গভীর শান্তিতে
পড়েছে ঘুমায়ে,
তোমারি তরে গাঁথা শুকানো মালিকা
বক্ষে জড়ায়ে

যে মরিয়া জুড়ায়েছে–
ঘুমাইতে দাও তারে জাগিও না।।

ওরে ও দরিয়ার মাঝি

ওরে ও দরিয়ার মাঝি! মোরে
নিয়ে যা রে মদিনা।
তুমি মুর্শিদ হয়ে পথ দেখাও ভাই
আমি যে পথ চিনি না।।

আমার প্রিয় হযরত যেথায়
আছেন নাকি ঘুমিয়ে, ভাই!
আমি প্রাণে যে আর বাঁচি না রে
আমার হযরতের দরশ বিনা।।

নদী নাকি নাই ও দেশে,
নাও না চলে যদি
আমি চোখের সাঁতার-পানি দিয়ে
বইয়ে দেব নদী।।

ঐ মদিনার ধুলি মেখে
কাঁদবো ‘ইয়া মোহাম্মদ’ ডেকে ডেকে রে,
কেঁদেছিল কারবালাতে
যেমন বিবি সকিনা।।

ওরে ও নতুন ঈদের চাঁদ

ওরে ও নতুন ঈদের চাঁদ
তোমার হেরে হৃদয় সাগর আনন্দে উন্মাদ।।

তোমার রাঙা তশতরিতে ফিরদৌসের পরী
খুশির শিরনি বিলায় রে ভাই নিখিল ভুবন ভরি
খোদার রহম পড়ছে তোমার চাঁদিননী রূপে ঝরি।
দুঃখ-শোক সব ভুলিয়ে দিতে তুমি মায়ার ফাঁদ।।

তুমি আসমানে কালাম
ইশারাতে লেখা যেন মোহাম্মাদের নাম।
খোদার আদেশ তুমি জান, স্মরণ করাও এসে;
যাকাত দিতে দৌলত সব দরিদ্রেরে হেসে
শত্রুরে আজি ধরিতে বুকে শেখাও ভালবেসে।
তোমায় দেখে টুটে গেছে অসীম প্রেমের বাঁধ।।

ওরে ও মদিনা, বলতে পারিস কোন সে পথে তোর

ওরে ও মদিনা, বলতে পারিস কোন সে পথে তোর
খেলতো ধূলা-মাটি নিয়ে মা ফাতেমা মোর।।

হাসান-হোসেন খেলতো কোথায় কোন সে খেজুর বনে–
পাথর-কুচি কাঁকর ল’য়ে দুম্বা শিশুর সনে
সেই মুখকে চাঁদ ভেবে রে উড়িত চকোর।।

মা আয়েশা মোর নবীজীর পা ধোয়াতেন যথা–
দেখিয়ে দে সে বেহেশত আমায়, রাখরে আমার কথা
তোর প্রথম কোথায় আজান-ধ্বনি ভাঙলো ঘুমের ঘোর।।

কোন পাহাড়ের ঝর্ণা-তীরে মেষ চরাতেন নবী
কোন পথ দিয়ে রে যেতেন হেরায় আমার আল-আরবী,
তুই কাঁদিস কোথায় বুকে ধ’রে সেই নবীজীর গোর।।

ওরে কে বলে আরবে নদী নাই

ওরে কে বলে আরবে নদী নাই।
যথা রহমতের ঢল বহে অবিরল
দেখি প্রেমে-দরিয়ার পানি, যেদিকে চাই।।

যাঁর কাবা ঘরের পাশে আবে-জমজম,
যথা আল্লা-নামের বাদল ঝরে হরদম,
যার জোয়ার এসে দুনিয়ার দেশে দেশে
পুণ্যের গুলিস্তান রচিল দেখিতে পাই।।

যার ফোরাতের পানি আজো ধরার পরে
নিখিল নর-নারীর চোখে ঝরে
(ওরে) শুকায় না যে নদী দুনিয়ায়।

যার শক্তির বন্যার তরঙ্গ-বেগে
যত বিষণ্ন-প্রাণ ওরে আনন্দে উঠল জেগে
যাঁর প্রেম-নদীতে,যাঁর পুণ্য-তরীতে
মোরা ত’রে যাই।।

ওরে শুভ্রবসনা রজনীগন্ধা বনের বিধবা মেয়ে

ওরে শুভ্রবসনা রজনীগন্ধা
বনের বিধবা মেয়ে,
হারানো কাহারে খুঁজিস নিশীথ–
আকাশের পানে চেয়ে॥

ক্ষীণ তনু-লতা বেদনা-মলিন
উদাস মূরতি ভূষণ-বিহীন,
তোরে হেরি’ ঝরে কুসুম অশ্রু
বনের কপোল বেয়ে॥

তুই লুকায়ে কাঁদিস্ রজনী জাগিস্
সবাই ঘুমায় যবে,
বিধাতারে যেন বলিস, “দেবতা,
আমারে লইবে কবে”।

করুণ-শুভ্র-ভালোবাসা তোর
সুরভি ছড়ায় সারা নিশি ভোর,
প্রভাত বেলায় লুটাস্ ধুলায়
যেন কারে নাহি পেয়ে॥

কল-কল্লোলে ত্রিংশ কোটি-কণ্ঠে উঠেছে গান

কল-কল্লোলে ত্রিংশ কোটি-কণ্ঠে উঠেছে গান
জয় আর্যাবর্ত, জয় ভারত, জয় হিন্দুস্থান।।

শিরে হিমালয় প্রহরী, পদ বন্দে সাগর যার,
শ‍্যাম বনানী কুন্তলা রানী জন্মভূমি আমার।
ধূসর কভু উষর মরুতে,
কখনো কোমল লতায় তরুতে,
কখনো ঈশানে জলদ-মন্দ্রে বাজে মেঘ-বিষাণ।।

সকল জাতি সকল ধর্ম পেয়েছে হেথায় ঠাঁই
এসেছিল যারা শত্রুর রূপে, আজ সে স্বজন ভাই।
বিজয়ীর বেশে আসিল যাহারা,
আজি মা’র কোলে সন্তান তারা,
(তাই) মা’র কোল নিয়ে করে কাড়াকাড়ি হিন্দু-মুসলমান।।

জৈন পার্শী বৌদ্ধ শক্তি খ্রিস্টান বৈষ্ণব
মা’র মমতায় ভুলিয়া বিরোধ এক হয়ে গেছে সব।
ভুলি’ বিভিন্ন ভাষা আর বেশ
গাহিছে সকলে আমার স্বদেশ
শত দল মিলে’ শতদল হ’য়ে করিছে অর্ঘ‍্য দান।।

কলমা শাহাদতে আছে খোদার জ্যোতি

কলমা শাহাদতে আছে খোদার জ্যোতি।
ঝিনুকের বুকে লুকিয়ে থাকে যেমন মোতি।।
ঐ কলমা জপে যে ঘুমের আগে
ঐ কলমা জপিয়া যে প্রভাতে জাগে,
দুখের সংসার যার সুখময় হয়, তা’র-
তার মুসিবত আসে না কো, হয় না ক্ষতি।।

হরদম জপে মনে কলমা যে জন
খোদায়ী তত্ত্ব তা’র রহে না গোপন,
দীলের আয়না তার হয়ে যায় পাক সাফ,
সদা আল্লার রাহে তার রহে মতি।।

এসমে আজম হতে কদর ইহার
পায় ঘরে ব’সে খোদা রসুলের দিদার,
তাহারি হৃদয়াকাশে সাত বেহেশত নাচে
তার আল্লার আরশে হয় আখেরে গতি।।

কুহু কুহু কুহু বলে মহুয়া-বনে

কুহু কুহু কুহু বলে মহুয়া-বনে।
মাধবী চাঁদ এলে পূব গগনে।

দুলে ওঠে বনান্তে,
আসিলে কে পান্থ,
তব পদধ্বনি অশান্ত হে
শুনি মম মনে।।
বাতায়নে প্রদীপ জ্বালি’
আসা-পথ চাহি,
প্রহর গণি, গান গাহি।

এলে আজি নিশীথে
দেখা দিতে তৃষিতে,
শুনি দশদিশিতে
বাঁশি তব ক্ষণে ক্ষণে।।

কে হেলে দুলে চলে এলোচুলে

কে হেলে দুলে চলে এলোচুলে,
হেসে নদীকুলে এলো হেলে দুলে;
নূপুর রিনিকি ঝিনি বাজে রে
পথ-মাঝে রে, বাজেরে।।
দূরে মন উদাসি
বাজে বাঁশের বাঁশি,
বকুল-শাখে পাপিয়া ডাকে-
হেরিয়া বুঝি এই বন-বালিকায়
রঙিন সাজে রে, বাজে রে।।

এ বুঝি নদীর কেউ
তাই অধীর হলো জলে ঢেউ;
চন্দন-মাখা যেন চাঁদের পুতলি,
যত চলে তত রূপ ওঠে উথলি,
মেঘে লুকালো পরী লাজে রে, বাজে রে
পথ-মাঝে রে, বাজে রে।।

 খাতুনে-জান্নাত ফাতেমা জননী

খাতুনে-জান্নাত ফাতেমা জননী
বিশ্ব-দুলালী নবী নন্দিনী।।
মদিনা বাসিনী পাপ-তাপ-নাশিনী
উম্মত-তারিণী আনন্দিনী।।

সাহারার বুকে মাগো তুমি মেঘ-মায়া,
তপ্ত মরুর প্রাণে স্নেহ-তরুছায়া;
মুক্তি লভিল মা গো তব শুভ পরশে
বিশ্বের যত নারী বন্দিনী।।

হাসান হোসেনে তব উম্মত তরে, মা গো!
কারবালা– প্রান্তরে দিলে বলিদান;
বদলাতে তার রোজ হাশরের দিনে
চাহিবে মা মোর মত পাপীদের ত্রাণ।

এলে পাষাণের বুক চিরে নির্ঝর-সম,
করুণার ক্ষীর-ধারা আবে-জমজম;
ফিরদৌস হ’তে রহমত বারি ঢালো
সাধ্বী মুসলিম গরবিনী।।

 খেলা শেষ হল, শেষ হয় নাই বেলা

খেলা শেষ হল, শেষ হয় নাই বেলা।
কাঁদিও না কাঁদিও না —
তব তরে রেখে গেনু প্রেম-আনন্দ মেলা।।

খেলো খেলো তুমি আজো বেলা আছে,
খেলা শেষ হলে এসো মোর কাছে,
প্রেম-যমুনার তীরে বসে র’ব
লইয়া শূন্য ভেলা।।

যাহারা আমার বিচার করে’ছে —
ভুল করিয়াছে জানি;
তাহাদের তরে রেখে গেনু মোর
বিদায়ের গানখানি!

হই কলঙ্কী, হোক মোর ভুল,
বালুকার বুকে ফুটায়েছি ফুল;
তুমিও ভুলিতে নারিবে সে-কথা–
হানো যত অবহেলা।।

খেলে চঞ্চলা বরষা-বালিকা

খেলে চঞ্চলা বরষা-বালিকা
মেঘের এলোকেশে ওড়ে পুবালি বায়
দোলে গলায় বলাকার মালিকা।।

চপল বিদ্যুতে হেরি’ সে চপলার
ঝিলিক হানে কণ্ঠের মণিহার,
নীল আঁচল হতে তৃষিত ধরার পথে
ছুঁড়ে ফেলে মুঠি মুঠি বৃষ্টি শেফালিকা।।

কেয়া পাতার তরী ভাসায় কমল -ঝিলে
তরু-লতার শাখা সাজায় হরিৎ নীলে।
ছিটিয়ে মেঠো জল খেলে সে অবিরল
কাজলা দীঘির জলে ঢেউ তোলে
আনমনে ভাসায় পদ্ম-পাতার থালিকা।।

খোদায় পাইয়া বিশ্ববিজয়ী ছিল একদিন যারা

খোদায় পাইয়া বিশ্ববিজয়ী ছিল একদিন যারা।
খোদায় ভুলিয়া ভীত পরাজিত আজ দুনিয়ায় তারা।।

খোদার নামের আশ্রয় ছেড়ে
ভিখারির বেশে দেশে দেশে ফেরে,
ভোগ-বিলাসের মোহে ভুলে, হায়, নিল বন্ধন-কারা।।

খোদার সঙ্গে যুক্ত সদাই ছিল যাহাদের মন
দুখে রোগে শোকে অটল যাহারা রহিত সর্বক্ষণ—

এসে শয়তান ভোগ-বিলাসের
কাড়িয়া লয়েছে ঈমান তাদের;
খোদায় হারায়ে মুসলিম আজ হয়েছে সর্বহারা।।

খয়বর-জয়ী আলী হায়দর

খয়বর-জয়ী আলী হায়দর,
জাগো জাগো আরবার!
দাও দুশমন-দুর্গ-বিদারী
দুধারী জুলফিকার।।
এস শেরে-খোদা ফিরিয়া আরবে–
ডাকে মুসলিম ইয়া আলী রবে;
হায়দরি-হাকে তন্দ্রা-মগনে
করো করো হুঁশিয়ার।।

আলবোর্জের চূড়া গুঁড়া-করা
গোর্জ আবার হানো;
বেহেশতি সাকি,মৃত এ জাতিরে
আবে-কওসর দানো।

আজি বিশ্ব-বিজয়ী জাতি যে বেহুঁশ,
দাও তারে নব কুয়ত ও জোশ;
এস নিরাশার মরু-ধূলি উড়ায়ে
দুলদুল-আসওয়ার।।

গগনে খেলায় সাপ বরষা-বেদিনী

গগনে খেলায় সাপ বরষা-বেদিনী।
দূরে দাঁড়ায়ে দেখে ভয়-ভীতা মেদিনী।।

দেখায় মেঘের ঝাঁপি তুলিয়া,
ফনা তুলি’ বিদ্যুৎ-ফণি ওঠে দুলিয়া,
ঝড়ের বাঁশিতে বাজে তার
অশান্ত রাগিণী।।

মহাসাগরে লুটায় তার সর্পিল অঞ্চল,
দিগন্তে দুলে তার এলোকেশ পিঙ্গল,
ছিটায় মন্ত্রপূত ধারাজল অবিরল
তন্বী-মোহিনী।।

অশনি-ডমরু ওঠে দমকি’
পাতালে বাসুকি ওঠে চমকি’
তার ডাক শুনে ছুটে আসে নদীজল
(যেন) পাহাড়িয়া নাগিনী।।

চমকে চপলা মেঘে মগন গগন

চমকে চপলা, মেঘে মগন গগন।
গরজিছে রহি রহি অশনি সঘন।।

লুকায়েছে গ্রহতারা, দিবসে ঘনায় রাতি,
শূন্য কুটির কাঁদি, কোথায় ব্যথার সাথী,
ভীত চমকিত চিত সচকিত শ্রবণ।।

অবিরত বাদল বরষিছে ঝরঝর
বহিছে তরলতর পুবালী পবন।
বিজলি -জ্বালার মালা পরিয়া কে মেঘবালা
কাঁদিছে আমারি মত বিষাদ-মগন।।

ভীরু এ মন-মৃগ আলয় খুঁজিছে ফিরে,
জড়ায়ে ধরিছে লতা সভয়ে বনস্পতিরে,
গগনে মেলিয়া শাখা বন-উপবন।।

চল রে কাবার জেয়ারতে, চল নবীজীর দেশ

চল রে কাবার জেয়ারতে, চল নবীজীর দেশ।
দুনিয়াদারির লেবাস খুলে পর রে হাজীর বেশ।।

আওকাতে তোর থাকে যদি আরফাতের ময়দান,
চল আরফাতের ময়দান,
এক জামাত হয় যেখানে ভাই নিখিল মুসলমান–
মুসলিম গৌরব দেখার যদি থাকে তোর খায়েশ।।

যেথায় হজরত হলেন নাজেল মা আমিনার ঘরে
খেলেছেন যার পথে-ঘাটে মক্কার শহরে–
চল মক্কার শহরে –
সেই মাঠের ধূলা মাখবি যথা নবী চরাতেন মেষ।।

ক’রে হিজরত কায়েম হলেন মদিনায় হজরত–
যে মদিনায় হজরত,
সেই মদিনা দেখবি রে চল, মিটবে রে তোর প্রানের হসরত;
সেথা নবীজীর ঐ রওজাতে তোর আরজি করবি পেশ।।

চীন আরব হিন্দুস্থান, নিখিল ধরাধাম

চীন আরব হিন্দুস্থান, নিখিল ধরাধাম
জানে আমায়, চেনে আমার, মুসলিম আমার নাম।।

অন্ধকারে আজান দিয়ে ভাঙনু ঘুমঘোর,
আলোর অভিযান এনেছি, রাত করেছি ভোর,
এক সমান করেছি ভেঙ্গে উচ্চ-নীচ তামাম।।

চেনে মোরে সাহারা গোবি দুর্গম পর্বত,
মন্থন করেছি সাগর নহর সিন্ধু রথ;
বয়েছে আফ্রিকা ইউরোপে আমারই তাঞ্জাম।।

পাক মুলুকে বসিয়েছি খোদার মসজিদ,
জগৎ সাক্ষী পাপীদেরকে পিইয়েছি তৌহিদ;
বিরান-বনে রচেছি যে হাজার নগর গ্রাম।।

চোখে চোখে চাহ যখন তোমরা দুটি পাখি

চোখে চোখে চাহ যখন
তোমরা দুটি পাখি,
সেই চাহনি দেখি আমি
অন্তরালে থাকি’।।

মনে জাগে, অনেক আগে
এমনি গভীর অনুরাগে
আমার পানে চাইত কেহ
এমনি অরুণ-আঁখি।।

ঘুমাও যখন তোমরা দু’জন
পাখায় বেঁধে পাখা,
আমি দূরে জেগে থাকি,
যায় না কাঁদন রাখা।

পরশ যেন লেগে আছে
শূন্য আমার বুকের কাছে,
তোমার মতন ঘুমাত কেউ
এই বুকে মুখ রাখি’।।

জরীন হরফে লেখা রূপালি হরফে লেখা

জরীন হরফে লেখা রূপালি হরফে লেখা
আসমানের কোরআন–
(নীল)আসমানের কোরআন।
সেথা তারায় তারায় খোদার কালাম
(তোরা) পড়, রে মুসলমান।।

সেথা ঈদের চাঁদে লেখা
মোহাম্মদের ‘মীম’-এর রেখা,
সুরুযেরই বাতি জ্বেলে’ পড়ে রেজোয়ান।।

খোদার আরশ লুকিয়ে আছে ঐ কোরআনের মাঝে,
খোঁজে ফকির-দরবেশ সেই আরশ সকাল-সাঁঝে।

খোদার দীদার চাস রে, যদি
পড় এ কোরআন নিরবধি;
খোদার নুরের রওশনীতে রাঙ রে দেহ-প্রাণ।।

জাগো অমৃত-পিয়াসী চিত

জাগো অমৃত-পিয়াসী চিত
আত্মা অনিরুদ্ধ
কল্যাণ প্রবুদ্ধ।
জাগো শুভ্র জ্ঞান পরম
নব -প্রভাত পুষ্প সম
আলোক-স্নান-শুদ্ধ।।

সকল পাপ কলুষ তাপ
দু:খ গ্লানি ভোলো,
পুণ্য প্রাণ-প্রদীপ-শিখা
স্বর্গ-পানে তোলো।
বাহিরে আলো ডাকিছে জাগো
তিমির-কারারুদ্ধ।।

ফুলের সম আলোর সম
ফুটিয়া ওঠ হৃদয় মম
রূপ-রস-গন্ধে
অনায়াস আনন্দে
জাগো মায়া-বিমুগ্ধ।।

জাগো রে তরুণ জাগো রে ছাত্রদল

ছাত্র -সঙ্গিত

জাগো রে তরুণ জাগো রে ছাত্রদল
স্বতঃ-উৎসারিত ঝর্ণাধারায় প্রায়
জাগো প্রাণ-চঞ্চল।।

ভেদ-বিভেদের গ্লানির কারা-প্রাচীর
ধুলিসাৎ করি জাগো উন্নত শির
জবা-কুসুম-সঙ্কাশ জাগে বীর,
বিধি নিষেধের ভাঙ্গো ভাঙ্গো অর্গল।

ধর্ম-বর্ণ-জাতির ঊর্ধ্বে জাগো রে নবীন প্রাণ!
তোমার অভ্যুদয়ে হোক সব বিরোধের অবসান
সঙ্কীর্ণতা ক্ষুদ্রতা ভোলো ভোলো
সকল মানুষে ঊর্ধ্বে ধরিয়া তোলো!
তোমাদের চাহে আজ নিখিল জনসমাজ
আনো জ্ঞানদীপ এই তিমিরের মাঝ,
বিধাতার সম জাগো প্রেম-প্রোজ্জ্বল।

জানি আমার সাধনা নাই আছে তবু সাধ

জানি আমার সাধনা নাই আছে তবু সাধ,
তুমি আপনি এসে দেবে ধরা দূর-আকাশের চাঁদ।।
চকোর নহি মেঘও নহি
আপন ঘরে বন্দী রহি’
আমি শুধু মনকে কহি–
কাঁদ নিশি দিন কাঁদ।।

কূল-ডুবানো জোয়ার কোথা পাব হে সুন্দর?
হে চাঁদ, আমি সাগর নহি, পল্লী-সরোবর।
আমি পল্লী -সরোবর।

নিশীথ-রাতে আমার নীরে,
প্রেমের কুমুদ ফোটে ধীরে,
মোর ভীরু প্রেম যেতে নারে
ছাপিয়ে লাজের বাঁধ।।

ঝরল যে ফুল ফোটার আগেই

আশাবরী মিশ্র-লাউনী

ঝরল যে ফুল ফোটার আগেই
তারি তরে কাঁদি, হায়!

মুকুলে যার মুখের হাসি
চোখের জলে নিভে যায়।।
হায় যে বুলবুল গুল-বাগিচায়
গোলাপকুঁড়ির গাইত গান,
আকুল ঝড়ে আজ সে পড়ে
পথের ধূলায় মূরছায়।।

সুখ-নদীর উপকূলে
বাঁধিল সে সোনার ঘর।
আজ কাঁদে সে গৃহ-হারা
বালুচরে নিরাশায়।।

যাবার যারা, যায় না তারা
থাকে কাঁটা, ঝরে ফুল।
শুকায়ে নদী মরুর বুকে,
প্রভাত-আলো মেঘে ছায়।।

তব চরণ-প্রান্তে মরণ-বেলায় শরণ দিও

কীর্তন

তব চরণ-প্রান্তে মরণ-বেলায় শরণ দিও, হে প্রিয়।
তুমি মুছায়ে ক্লান্তি, ঘুচায়ে শ্রান্তি (প্রাণে) শান্তি বিছায়ে দিও।।

বরণের ডালা সাজায়ে, হে স্বামী,
সারাটি জীবন চেয়ে আছি আমি;
তুমি নিমেষের তরে মোর দ্বারে থামি’
সে ডালা চরণে নিও।।

তারপর আছে মোর চির-সাথী
অকূল আঁধার অনন্ত রাতি,
ক্ষোভ নাই, যদি নিভে যায় বাতি,
তুমি এসে জ্বালাইও।।

যে যাহা চেয়েছে, পেয়েছে সে কবে;
আশা ঝ’রে যায় নিরাশে নীরবে,
আঘাত-বেদনা, বঁধূ, সব স’বে (শুধু)
একবার দেখা দিও।।

তুমি অনেক দিলে খোদা

তুমি অনেক দিলে খোদা,
দিলে অশেষ নিয়ামত।
আমি লোভী, তাইতো আমার
মিটেনা হসরত।।

কেবলই পাপ করি আমি,
মাফ করিতে তাই, হে স্বামী!
দয়া করে শ্রেষ্ঠ নবীর করিলে উম্মত।
তুমি নানান ছলে করছ পূরণ ক্ষতির খেসারত।।

মায়ের বুকে স্তন্য দিলে, পিতার বুকে স্নেহ,
মাঠে শস্য- ফসল দিলে, আরাম লাগি গেহ।

কোরান দিলে পথ দেখাতে,
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শেখাতে,
নামায দিয়ে দেখাইলে মসজিদেরই পথ।
তুমি কেয়ামতের শেষে দিবে বেহেশতী দৌলত।।

তুমি আশা পুরাও খোদা

হামদ

তুমি আশা পুরাও খোদা,
সবাই যখন নিরাশ করে।
সবাই যখন পায়ে ঠেলে,
সান্তনা পাই তোমায় ধরে।।

দ্বারে দ্বারে হাত পাতিয়া
ফিরি যখন শূন্য হাতে
তোমার দানের শিরনি তখন
আসে আমায় পথ দেখাতে।
দেখি হঠাৎ শূন্য
তোমার দানে গেছে ভরে।।

খোদা তোমার ভরসা করি
নামি যখন কোন কাজে,
সে কাজ হাসিল হয় সহজে
শত বিপদ-বাধার মাঝে।
(খোদা) তোমায় ছেড়ে অন্য জনে
শরণ নিলে, যায় সে সরে।।

মাঝ-দরিয়ায় ডুবলে জাহাজ
তোমায় যদি ডাকি,
তোমার রহম কোলে করি
তীরেতে যায় রাখি।
দুখের অনল কুসুম হয়ে
ফুটে ওঠে থরে থরে ।।

 তুমি রহিমুর রহমান আমি গুনাহগার বান্দা

তুমি রহিমুর রহমান আমি গুনাহগার বান্দা।
হাত ধরে মোর পথ দেখাও, য়্যা আল্লাহ
আমি আন্ধা।।

(মোর) সারা জীবন গেল কেটে
পাঁচ ভুতেরই বেগার খেটে
(এখন) শেষের বেলা ঘুচাও আল্লাহ
এই দুনিয়ার ধান্দা

(আল্লাহ) আমি তোমার বনের পাখি,
কেন আমায় ধরে
রাখলে মায়ায় শিকলি বেঁধে
এই দেহ-পিঞ্জরে।

বলে এদের বাঁধা বুলি
আল্লাহ তোমায় গেছি ভুলে,
(এবার) শিকলি কেটে কাছে ডাকো,
শেষ করো এই কান্দা।।

তেপান্তরের মাঠে বঁধু হে একা বসে থাকি

সাঁওতালি সুর

তেপান্তরের মাঠে বঁধু হে একা বসে থাকি।
তুমি যে পথ দিয়ে গেছ চলে, তারি ধূলা মাখি’ হে।।
একা বসে থাকি।।

যেমন পা ফেলেছ গিরিমাটির রাঙা পথের ধূলাতে,
অমনি করে আমার বুকে চরণ যদি বুলাতে,
আমি খানিক জ্বালা ভুলতাম ঐ মানিক বুকে রাখি’ ।।

আমার খাওয়া পরার নাই রুচি, আর ঘুম আসে না চোখে
আমি আউরী হয়ে বেড়াই পথে, হাসে পাড়ার লোকে।
দেখে হাসে পাড়ার লোকে।

আমি তাল পুকুরে যেতে নারি, একি তোমার মায়া হে,
আমি কালো জলে দেখি তোমার কালো-রূপের ছায়া হে;
আমার কলঙ্কিনী নাম রটিয়ে তুমি দিলে ফাঁকি ।।

তোমার নামে একি নেশা হে প্রিয় হজরত

গজল নাতিয়া

তোমার নামে একি নেশা
হে প্রিয় হজরত!
যত ডাকি তত কাঁদি
মেটে না হস্‌রত।।

কোথায় আরব কোথায় এ হিন্দ্
নয়নে মোর নাই তবু নিন্দ
আমার প্রাণে শুধু জাগে তোমার
মদিনার ঐ পথ।।

কে বলে তুমি গেছ চলে হাজার বছর আগে
আছ লুকিয়ে তুমি প্রিয়তম আমার অনুরাগে।
মোর অন্তরের হেরা গুহায়
আজোও তোমার ডাক শোনা যায়
জাগে আমার প্রেমের ‘কাবা’ ঘরে
তোমারি সুরত।।

যারা দোজখ হতে ত্রাণের তরে তোমায় ভালোবাসে,
আমার এ প্রেম দেখে তারা কেউ কাঁদে কেউ হাসে।
তুমি জান, হে মোর স্বামী, শাফায়াৎ চাহি না আমি
আমি শুধু তোমায় চাহি তোমার হজরত তোমার মুহব্বত।।

তোমার দেওয়া ব্যথা সে যে তোমার হাতের দান

তোমার দেওয়া ব্যথা, সে যে
তোমার হাতের দান।
তাই ত সে-দান মাথায় তুলে
নিলাম, হে পাষাণ।।

তুমি কাঁদাও, তাই ত বঁধু,
বিরহ মোর হল মধু,
সে যে আমার গলার মালা
তোমার অপমান।।

আমি বেদীমূলে কাঁদি
তুমি পাষাণ অবিচল
জানি হে নাথ, সে যে তোমার
পূজা নেওয়ার ছল।

তোমার দেবালয়ে মোরে
রাখলে পূজারিণী করে,
সেই আনন্দে ভুলেছি নাথ
সকল অভিমান।।

তোমারি আঁখির মত আকাশের দুটি তারা

আধুনিক

তোমারি আঁখির মত আকাশের দুটি তারা
চেয়ে থাকে মোর পানে নিশীথে তন্দ্রাহারা।
সে কি তুমি? সে কি তুমি?

ক্ষীণ আঁখি-দীপ জ্বালি বাতায়নে জাগি একা
অসীম অন্ধকারে খুঁজি তব পথ-রেখা
সহসা দখিনবায়ে চাঁপাবনে জাগে সাড়া।
সে কি তুমি? সে কি তুমি?

তব স্মৃতি যদি ভুলি ক্ষণতরে আন-কাজে
কে যেন কাঁদিয়া ওঠে আমার বুকের মাঝে।
সে কি তুমি, সে কি তুমি?

বৈশাখী ঝড়ে রাতে চমকিয়া উঠি জেগে
বুঝি অশান্ত মম আসিলে ঝড়ের বেগে
ঝড় চলে যায় কেঁদে ঢালিয়া শ্রাবণধারা।
সে কি তুমি? সে কি তুমি?

ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ এলো রে দুনিয়ায়

ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ
এলো রে দুনিয়ায়।
আয় রে সাগর আকাশ বাতাস, দেখবি যদি আয়।।

ধূলির ধরা বেহেশ্তে আজ,
জয় করিল দিলরে লাজ;
আজকে খুশির ঢল নেমেছে ধূসর সাহারায়।।

দেখ্ আমিনা মায়ের কোলে
দোলে শিশু ইসলাম দোলে,
কচি মুখে শাহাদাতের বাণী সে শোনায়।।

আজকে যত পাপী ও তাপী
সব গুনাহের পেল মাফী,
দুনিয়া হতে বে-ইনসাফী
জুলুম নিল বিদায়।।

নিখিল দরুদ পড়ে লয়ে ও-নাম–
সাল্লাল্লাহু আলায়হি ও-সাল্লাম;
জীন পরী ফেরেশ্‌তা সালাম
জানায় নবীর পায়।।

 দিন গেল মোর মায়ায় ভুলে মাটির পৃথিবীতে

দিন গেল মোর মায়ায় ভুলে মাটির পৃথিবীতে।
কে জানে কখন নিয়ে যাবে গোরে মাটি দিতে রে।।

পাঁচ ভূতে আর চোরে মিলে
রোজগার মোর কেড়ে নিলে;
এখন কেউ নাই রে পারে যাবার দুটো কড়ি দিতে রে।।

রাত্রে শুয়ে আবার যে ভাই উঠব সকাল বেলা —
বলতে কি কেউ পারি, তবু খেলি মোহের খেলা।

বাদশা আমীর ফকির কত
এলো আবার হল গত রে;
দেখেও বারেক আল্লার নাম জাগে নাকো চিতে।
এবার বসবি কবে ও ভোলা মন আল্লার তসবিতে রে।।

দীপ নিভিয়াছে ঝড়ে জেগে আছে মোর আঁখি

মর্ডান

দীপ নিভিয়াছে ঝড়ে
জেগে আছে মোর আঁখি।
কে যেন কহিছে কেঁদে
মোর বুকে মুখ রাখি’
‘পথিক এসেছ না কি’।।

হারায়ে গিয়াছে চাঁদ
জল-ভরা কালো মেঘে,
আঁচলে লুকায়ে ফুল
বাতায়নে আছি জেগে,
শূন্য গগনে দেয়া
কহিতেছে যেন ডাকি’
‘পথিক এসেছ না কি’।।

ভাঙিয়া দুয়ার মম
কাড়িয়া লইতে মোরে–
এলে কি ভিখারি ওগো
প্রলয়ের রূপ ধ’রে?

ফুরাইয়া যায় বঁধূ
শুভ-লগনের বেলা
আনো আনো ত্বরা করি’
ওপারে যাবার ভেলা।
‘পিয়া পিয়া’ ব’লে বনে
ঝুরিছে পাপিয়া পাখি
‘পথিক এসেছ না কি’।।

দুখের সাহারা পার হয়ে আমি

দুখের সাহারা পার হয়ে আমি
চলেছি কাবার পানে।
পড়িব নামাজ মারেফাতের
আরাফাত ময়দানে।।

খোদার ঘরের দীদার পাইব,
হজ্বের পথে জ্বালা জুড়াইব;
মোর মুূর্শিদ হয়ে হযরত পথ
দেখাও সুদূর পানে।।

রোজা রাখা মোর সফল হইবে,
পাব পিয়াসার পানি;
আবে-জমজম তৌহিদ পিয়ে
ঘুচাব পথের গ্লানি।।

আল্লাহর ঘর তওয়াফ করিয়া
কাঁদিব সেথায় পরাণ ভরিয়া;
ফিরিব না আর,কোরবানী দেবো
এই জান সেইখানে।।

 দূর বনান্তের পথ ভুলি কোন বুলবুলি

গজল

দূর বনান্তের পথ ভুলি কোন্ বুলবুলি
বুকে মোর আসিলি, হায়!
হায় আনন্দের দূত যে তুই, তবু তোর চোখে
কেন জল কি ব্যথায়।।

কোথা দিই ঠাঁই তোরে ওরে ভীরু পাখি,
বেদনাময় আমার ও প্রাণ ,
এ মরুতে নাই তরু, নাই তোর তৃষ্ণার তরে
জল যে হেথায়।।

নিকুঞ্জে কার গাইতে গেলি গান,
বিঁধিল বুক কণ্টকে ;
হায় পুড়িয়া বৈশাখে এলি ভিজিতে
অশ্রুর বরষায়।।

দে জাকাত, দে জাকাত, তোরা দেরে জাকাত

দে জাকাত, দে জাকাত, তোরা দেরে জাকাত।
তোর দীল খুলবে পরে, ওরে আগে খুলুক হাত।।

দেখ পাক কোরান, শোন নবীজীর ফরমান–
ভোগের তরে আসেনিরে দুনিয়ায় মুসলমান
তোর একার তরে দেননি খোদা দৌলতের খেলাত।।

তোর দরদালানে কাঁদে ভুখা হাজারো মুসলিম,
আছে দৌলতে তোর তাদেরও ভাগ–বলেছেন রহিম,
বলেছেন রহমানুর রহিম, বলেছেন রসূলে করীম,
সঞ্চয় তোর সফল হবে, পাবিরে নাজাত।।

এই দৌলত বিভব -রতন যাবে না তোর সাথে,
হয়তো চেরাগ জ্বলবে না তোর গোরে শবে-রাতে ;
এই জাকাতের বদলাতে পাবি বেহেশ্‌তি সওগাত।

দেশে দেশে গেয়ে বেড়াই তোমার নামের গান

দেশে দেশে গেয়ে বেড়াই তোমার নামের গান
হে খোদা, এ যে তোমারই হুকুম, তোমারই ফরমান।।

এমনি তোমার নামের আছর –
নামাজ রোজার নাই অবসর,
তোমার নামের নেশায় সদা মশগুল মোর প্রাণ।
তকদিরে মোর এই লিখেছ
হাজার গানের সুরে
নিত্য দিব তোমার আজান
আঁধার মিনার-চূড়ে।

কাজের মাঝে হাটের পথে
রণ-ভূমে এবাদতে
আমি তোমার নাম শোনাব, করব শক্তি দান।।

নবীর মাঝে রবির সময় আমার মোহাম্মদ রসুল

নবীর মাঝে রবির সময়
আমার মোহাম্মদ রসুল।
খোতার হবিব নকিব
বিশ্বে নাই যার সমতুল।।

পাক আরশে পাশে খোদার
গৌরবময় আসন যাঁহার,
খোশ নসিব উম্মত আমি তাঁর
পেয়েছি অকূলে কূল।।

আনিলেন যিনি খোদার কালাম,
তাঁর কদমে হাজার সালাম;
ফকীর দরবেশ জপি সেই নাম
ঘর ছেড়ে হল বাউল।।

জানি, উম্মত আমি গুনাহগার,
হব তবু পুলসরাত পার;
আমার নবী হযরত আমার
কর মোনাজাত কবুল।।

না মিটিতে সাধ মোর নিশি পোহায়

না মিটিতে সাধ মোর নিশি পোহায়।
গভীর আঁধার ছেয়ে
আজো হিয়ায়।।

আমার নয়ন ভরে
এখনও শিশির ঝরে,
এখনো বাহুর পরে
বঁধু ঘুমায়।।

এখনো কবরী-মূলে
কুসুম পড়েনি ঢুলে,
এখনো পড়েনি খুলে
মালা খোঁপায়।।

নিভায়ে আমার বাতি
পোহালো সবার রাতি;
নিশি জেগে মালা গাঁথি
প্রাতে শুকায়

নাচের নেশার ঘোর লেগেছে নয়ন পড়ে ঢুলে লো

নাচের নেশার ঘোর লেগেছে
নয়ন পড়ে ঢু’লে লো–
নয়ন পড়ে ঢুলে।
বুনোফুল পড়লো ঝ’রে নাচের ঘোরে
দোলন-খোঁপা খুলে লো–
দোলন খোঁপা খুলে।।

শুনে এই মাদল-বাজা
নাচে চাঁদ রাতের রাজা নাচে লো নাচে –
শালুকের কাঁকাল ধ’রে
তাল-পুকুরের জলে হে’লে দু’লে (লো)–
জলে হেলে দুলে।

আঁউরে গেল ঝুমকো জবা
লেগে গরম গালের ছোঁয়া,
বাঁশি শুনে ঘুলায় মনে কয়লা-খাদের ধোঁওয়া ।

সই নাচ ফুরালে ফিরে’ ঘরে,
রাত কাটাব কেমন ক’রে
পড়বে মনে বাঁশুরিয়ার
চোখ দু’টি টুলটুলে লো–
চোখ দুটি টুলটুলে।।

নামাজ রোজা হজ্ব জাকাতের পসারিণী আমি

নামাজ রোজা হজ্ব জাকাতের পসারিণী আমি।
নবীর কলমা হেঁকে ফিরি পথে দিবস-যামী।।

আমার নবীজীর পিয়াসী
আয় রে ছুটে মুসলিম নারী,
দ্বীনের সওদা করবি কে আয় রে মুক্তিকামী।।
জন্ম আমার হাজার বছর আগে আরব দেশে,
সারা ভুবন ঠাঁই দিয়েছে আমায় ভালোবেসে।

আমার আজান-ধ্বনি বাজে
কুল মুমিনের বুকের মাঝে;
আমি নবীর মানস কন্যা আল্লাহ আমার স্বামী।।

নিখিল ঘুমে অচেতন সহসা শুনিনু আজান

নিখিল ঘুমে অচেতন সহসা শুনিনু আজান;
শুনি’ সে তকবিরের ধ্বনি আকুল হল মন-প্রাণ;
বাহিরে হেরিনু আসি: বেহেশতী রৌশনীতে রে
ছেয়েছে জমিন ও আসমান;
আনন্দে গাহিয়া ফেরে ফেরেশ্তা হুর গেলেমান –
এলো কে, কে এলো ভুলোকে!
দুনিয়া দুলিয়া উঠিল পুলকে।।

তাপীর বন্ধু, পাপীর ত্রাতা,
ভয়-ভীত পীড়িতের শরণ-দাতা,
মুকের ভাষা নিরাশার আশা,
ব্যথার শান্তি, সান্ত্বনা শোকে
এলো কে ভোরের আলোকে।।

দরুদ পড় সবে : সাল্লে আলা,
মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লে আলা।
কেহ বলে, এলো মোর কমলিওয়ালা–
খোদার হাবীব কেহ কয় নিরালা
মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লে আলা!
কেহ বলে, আহমদ নাম মধু ঢালা–
মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লে আলা!
মজনুঁরও চেয়ে হল দীওয়ানা সবে,
নাচে গায় নামের নেশায় ঝোঁকে।

 নিম ফুলের মউ পিয়ে

নিম ফুলের মউ পিয়ে
ঝিম হয়েছে ভোমরা।
মিঠে হাসির নূপূর বাজাও
ঝুমুর নাচো তোমরা।।

কভু কেয়া-কাঁটায়,
কভু বাবলা-আঠায়
বারে বারে ভোমরার পাখা জড়ায় গো–পাখা জড়ায়
দেখে হেসে লুটিয়ে পড়ে
ফুলের দেশের বউরা।।

নিশীথ রাতে ডাকলে আমায়

নিশীথ রাতে ডাকলে আমায়
কে গো তুমি কে?
কাঁদিয়ে গেলে আমার মনের
বননভূমিকে।।
কে গো তুমি?

তোমার আকুল করুণ স্বরে
আজকে তারেই মনে পড়ে—
এমনি রাতে হারিয়েছি যে
হৃদয়-মণিকে।।

দুয়ার খুলে চেয়ে আছি
তারার পানে দূরে;
আর একটি বার ডাকো ডাকো
তেমন করুন সুরে।

একটি কথা শুনব বলে
রাত কেটে যায় চোখের জলে;
দাও সাড়া দাও, জাগিয়ে তোলো
আঁধার-পুরীকে।।

পায়েল বোলে রিনিঝিনি

রূপমঞ্জরি তেতালা

পায়েল বোলে রিনিঝিনি।
নাচে রূপমঞ্জরী শ্রীরাধার সঙ্গিনী।।

ভাব-বিলাসে
চাঁদের পাশে
ছড়ায়ে চাঁদের ফুল নাচে যেন নিশীথিনী।।
নাচে উড়ায়ে নীলাম্বরী অঞ্চল ;
মৃদু মৃদু হাসে
আনন্দ-রাসে
শ্যামল চঞ্চল।
কভু মৃদু মন্দ
কভু ঝরে দ্রুত তালে সমধুর ছন্দ;
বিরহের বেদনা মিলন-আনন্দ
ফোটার তনুর ভঙ্গিমাতে
ছন্দ-বিলাসিনী।।

পুবাল হাওয়া পশ্চিমে যাও কাবার পথে বইয়া

পুবাল হাওয়া পশ্চিমে যাও কাবার পথে বইয়া।
যাও রে বইয়া এই গরীবের সালামখানি লইয়া।।

কাবার জিয়ারতের আমার নাই সম্বল ভাই,
সারা জনম সাধ ছিল যে, মদিনাতে যাই (রে ভাই)।
মিটল না সাধ, দিন গেল মোর দুনিয়ার বোঝা বইয়া।।

তোমার পানির সাথে লইয়া যাও রে আমার চোখের পানি,
লইয়া যাওরে এই নিরাশের দীর্ঘ নিশ্বাস খানি।
নবীজীর রওজায় কাঁদিও ভাই রে আমার হইয়া।।

মা ফাতেমা হযরত আলীর মাজার যেথায় আছে,
আমার সালাম দিয়া আইস(রে ভাই) তাঁদের পায়ের কাছে।
কাবায় মোজানাজাত করিও আমার কথা কইয়া।।

প্রিয় মুহরে-নবুয়ত-ধারী হে হজরত

প্রিয় মুহরে-নবুয়ত-ধারী হে হজরত
(প্রিয়) তারিতে উম্মত এলে ধরায়।
মোহাম্মদ মোস্তফা, আমহদ মুজতবা–
নাম জপিতে নয়নে আঁসু ঝরায়।।

দিলে মুখে তকবীর, দিলে বুকে তৌহিদ,
দিলে দুঃখেরই সান্ত্বনা খুশির ঈদ;
দিলে প্রাণে ঈমান, দিলে হাতে কোরআন,
দিলে শিরে শিরতাজ নাম মুসলিম আমায়।।

তব সব নসিহত মোরা গিয়াছি ভুলে
শুধু নাম তব আছে জেগে প্রাণের কূলে
ও-নামে এ প্রাণ-সিন্ধু তব দোলে
আমি ঐ নামে ত’রে যাব, আছি আশায়।।

ফুটলো সন্ধ্যামণির ফুল আমার মনের আঙিনায়

ফুটলো সন্ধ্যামণির ফুল
আমার মনের আঙিনায়।
ফুল-ফোটাতে কে এলে
ফুল-ঝরানো সাঁঝ-বেলায়।।

আজ কি মোর দিনের শেষে
উঠলো চাঁদ মধুর হেসে’
কৃষ্ণা-তিথির তৃষ্ণা মোর
মিটলো ওই জোছনায়।।

আজ যে আঁখি অশ্রু-হীন,
কি দিয়ে ধোয়াই চরণ’
সুন্দর বরের বেশে
এলে কি আমার মরণ’!
দেখ বসন্তের পাখি
কোয়েলা গেছে ডাকি
আনন্দের দূত তুমি
ডাকিয়া ফুল ফোটায়।

ফুলে পুছিনু, বল, বল ওরে ফুল

ফুলে পুছিনু, বল, বল ওরে ফুল!
কোথা পেলি এ সুরভি, রূপ এ অতুল?
“যার রূপে উজালা দুনিয়া, কহে গুল,
দিল সেই মোরে এই রূপ এই খোশবু।
আল্লাহু আল্লাহু।।”

“ওরে কোকিল, কে তোরে দিল এ সুর,
কোথা পেলি পাপিয়া এ কন্ঠ মধুর?”
কহে কোকিল পাপিয়া, “আল্লাহ গফুর,
তাঁরি নাম গাহি ‘পিউ পিউ’ কুহু কুহু-
আল্লাহু আল্লাহু।।”

“ওরে রবি-শশী, ওরে গ্রহ-তারা
কোথা পেলি এ রওশনী জ্যোতি ধারা?”
কহে, “আমরা তাহারি রূপের ইশারা
মুসা, বেহুঁশ হলো হেরি’ যে খুবরু
আল্লাহু আল্লাহু।।”

যারে আউলিয়া আম্বিয়া ধ্যানে না পায়
কূল-মখলুক যাঁহারি মহিমা গায়,
যে নাম নিয়ে এসেছি এইদুনিয়ায়,
নাম নিতে নিতে মরি এই আরজু
আল্লাহু আল্লাহু।।

ফোরাতের পানিতে নেমে ফাতেমা-দুলাল কাঁদে

ফোরাতের পানিতে নেমে ফাতেমা-দুলাল কাঁদে
অঝোর নয়নে রে।
দু’হাতে তুলিয়া পানি ফেলিয়া দিলেন অমনি
পড়িল কি মনে রে।।

দুধের ছাওয়াল আসগর এই পানি চাহিয়ে রে
দুশমনের তীর খেয়ে বুকে ঘুমাল খুন পিয়ে রে;
শাদীর নওশা কাসেম শহীদ এই পানি বিহনে রে।।

এই পানিতে মুছিল রে হাতের মেহেদী সকীনার,
এই পানিতে ঢেউয়ে ওঠে তারি মাতম হাহাকার,
শহীদানের খুন মিশে আছে এই পানিরই সনে রে।।

বীর আব্বাসের বাজু শহীদ হলো এরি তরে রে,
এই পানি বিহনে জয়নাল খিমায় তৃষ্ণায় মরে রে,
শোকে শহীদ হলেন হোসেন জয়ী হয়েও রণে রে।।

বন-কুন্তল এলায়ে বন-শবরী ঝুরে সকরুণ সুরে

বন-কুন্তলা-তেতালা

বন-কুন্তল এলায়ে
বন-শবরী ঝুরে
সকরুণ সুরে।
বিষাদিত ছায়া তার
চৈতালি সন্ধ্যায়
চাঁদের মুকুরে।।

চপলতা বিসরি’ যেন বন-যৌবন
বিরহ-ক্ষীণ আজি উদাস উন্মন,
তোলে না ঝঙ্কার আর
ঝরা পাতার
মর্মর নূপুর।।

যে কুহু কুহরিত মধুর পঞ্চমে
বিভোর ভাবে,
ভগ্ন কন্ঠে তার থেমে যায় সুর
করুণ রেখাবে।

কোন বন-শিকারির অকরুণ তীর
আলো হরে নিল ওই উজল অাঁখির;
ফেলে-যাওয়া বাঁশি তার অঞ্চলে লুকায়ে–
গিরি-দরী-পান্তরে খোঁজে সে নিঠুরে।

বরণ করে নিও না গো আমারে নিয় হরণ করে

(মিশ্র) গান্ধারী-ত্রিতাল

বরণ করে নিও না গো
(আমারে) নিয় হরণ করে।
ভীরু আমায় জয় কর গো
তোমার মনের জোরে।।

পরাণ ব্যাকুল তোমার তরে
চরণ শুধু বারণ করে।
লুকিয়ে থাকি তোমার আশায়
রঙিন বসন পরে।।

লজ্জা আমার ননদিনী লতিকার-ই-প্রায়
যখনই যাই শ্যামের কাছে দাঁড়িয়ে আছে ঠায়।

চাইতে নারি চোখে চোখে
দেখে পাছে কোন লোকে,
নয়নকে তাই শাসন করি
অশ্রুজলে ভরে।।

রচনা-কাল-১৯৩৫

বর্ষা ঋতু এলো এল বিজয়ীর সাজে

বর্ষা ঋতু এলো এল বিজয়ীর সাজে।
বাজে গুরু গুরু আনন্দ-ডমরু অম্বর মাঝে।।
(বাঁকা) বিদ্যুৎ তরবারি ঘন ঘন চমকায়,–
শুনি রথচক্রের ধ্বনি অশনির রোল,
সিন্ধু-তরঙ্গে মঞ্জীর বাজে।।

ভীত বন উপবন লুটায়ে লুটায়ে
প্রণতি জানায় সেই বিজয়ীর পায়ো;
(তার) অশান্ত গতিবেগ শুনি পুব-হাওয়াতে
চলে মেঘ-কুঞ্জর-সেনা তার সাথে,
তূণীর কেতকী জল-ধনু হাতে
হের চঞ্চল দুরন্ত গগনে বিরাজে।।

বহে শোকের পাথার আজি সাহারায়

বহে শোকের পাথার আজি সাহারায়।
‘নবিজী নাই’–উঠলো মাতম মদিনায়।।

আঁখি-প্রদীপ এই ধরণীর
গেল নিভে, ঘিরিল তিমির;
দ্বীনের রবি মোদের নবী চায় বিদায়।
সইলো নারে বেহেশতি দান দুনিয়ার।।

না পুরিতে সাধ আশা,
না মিটিতে তৌহিদ-পিপাসা,
যায় চলে দ্বীনের শাহানশাহ, হায় রে হায়!
সেই শোকেরই তুফান বহে লু-হাওয়ায়।।

বেড়েছে আজ দ্বিগুণ পানি
দজলা ফোরাত নদীতে,
তুর ও হেরা হেরা পাহাড় ফেটে
অশ্রু-নিঝর বয়ে যায়।।

ধরার জ্যোতি হরণ করে
উজল হল ফের বেহেশত;
কাঁদে পশু-পাখি ও তরু-লতায়,
সেই কাঁদনের স্মৃতি দোলে দরিয়ায়।।

ভুল করিলে বনমালী এসে বনে ফুল ফোটাতে

ভুল করিলে বনমালী এসে বনে ফুল ফোটাতে।
বুলবুলি যে ফুলও ফোটায় বন-মাতানোর সাথে সাথে।।

আঘাত দিলে, দিলে বেদন,
রাঙাতে হায় পারলে না মন,
প্রেমের কুড়ি ফুটল না তাই,
পড়ল ঝরে নিরাশাতে।।

আমায় তুমি দেখলে না কো দেখলে
আমার রৃপের মেলা
হায় রে দেহের শ্মশান-চারী, শব নিয়ে মোর করলে খেলা।
শয়ন-সাথী হলে আমার, রইলে না কো নয়ন-পাতে।।

ফুল তুলে হায় ঘর সাজালে, করলে না কো গলার মালা,
ত্যজি সুধা পিয়ে সুরা হলে তুমি মাতোয়ালা।
নিশাস ফেলে নিভাইলে যে-দীপ আলো দিতে রাতে।।

ভেসে আসে সুদূর স্মৃতির সুরভি

ভেসে আসে সুদূর স্মৃতির সুরভি
হায় সন্ধ্যায়।
রহি’ রহি’ কাঁদি’ ওঠে সকরুণ
পূরবী, আমারে কাঁদায়।।

কা’রা যেন এসেছিল,
এসে ভালোবেসেছিল,
ম্লান হ’য়ে আসে মনে তাহাদের সে-ছবি
পথের ধুলায়।।

কেহ গেল দ’লি– কেহ ছ’লি, কেহ গলিয়া
নয়ন নীরে;
যে গেল সে জনমের মত গেল চলিয়া
এল না ফিরে।
কেহ দুখ দিয়া গেল
কেহ ব্যথা নিয়া গেল
কেহ সুধা পিয়া গেল
কেহ বিষ-করবী ;
তাহারা কোথায়, হায় তাহারা কোথায়।।

ভেসে যায় হৃদয় আমার মদিনা-পানে

ভেসে যায় হৃদয় আমার মদিনা-পানে।
আসিলেন রসুলে-খোদা প্রথম যেখানে।।

উঠিল যেখানে রণি’,
প্রথম তকবির ধ্বনি,
লভিনু মণির খনি যথায় কোরানে।

যথা হেরা গুহার আঁধারে প্রথম
ইসলামের জ্যোতি লভিল জনম,
ঝরে অঝোর ধারায় যথা খোদার রহম,
ভাসিল নিখিল ভুবন যাহার তুফানে।।

লাখো আউলিয়া আম্বিয়া বাদশা ফকির
যথা যুগে যুগে আসি’করিল ভিড়
তারি ধূলাতে লুটাবো আমি নোয়া’ব শির;
নিশিদিন শুনি তাঁরি ডাক আমার পরাণে।।

মম তনুর ময়ূর-সিংহাসনে

মম তনুর ময়ূর-সিংহাসনে
এস রূপ-কুমার ফরহাদ্।
(মোর)ঘুম যবে ভাঙিল, প্রিয়,
গগনে ঢলিয়া পড়িল চাঁদ।।

আমি শিঁরি–হেরেমের নন্দিনী গো
ছিনু অন্ধকারের কারা-বন্দিনী গো,
ভেবেছিনু তুমি শুধু রূপের পাগল —
বুঝি নাই কা’রে বলে প্রেম-উন্মাদ।।

গিরি-পাষাণে আঁকিলে তুমি যে ছবি মম,
দিলে যে মধু,
সেই মধু চেয়ে, সেই শিলা বুকে
ল’য়ে কাঁদি,ফিরে এস, ফিরে এস বঁধু।।

মোরে ল’য়ে যাও সেই প্রেম-লোকে,
বিরহী
কাঁদিছে যেথায় ‘শিরী শিরী কহি;
আজ ভরিয়াছে বিষাদের বিলাপে
গোলাপের সাধ।।

মরু সাহারা আজি মাতোয়ারা

মরু সাহারা আজি মাতোয়ারা।
হলেন নাজেল তাহার দেশে খোদার রসুল—
যাঁহার নামে যাঁহার ধ্যানে
সারা দুনিয়া দীওয়ানা প্রেমে মশগুল।।

যাঁহার আসার আশাতে অনুরাগে
নীরস খর্জুর তরুতে রস জাগে,
তপ্ত মরু, ‘পরে খোদার রহম ঝরে,
হাসে আকাশ পরিয়া চাঁদের দুল।।

ছিল ত্রিভুবন যাঁহার পথ চাহি,
এল রে সে নবী ‘ইয়া উম্মতি’ গাহি’
যতেক গুমরাহে নিতে খোদার রাহে
এল ফুটাতে দুনিয়াতে ইসলামী ফুল।।

মসজিদে ঐ শোন রে আজান, চল নামাজে চল

মসজিদে ঐ শোন্ রে আজান, চল নামাজে চল্ ।
দুঃখে পাবি সান্ত্বনা তুই বক্ষে পাবি বল।।
ওরে চল নামাজে চল।।

ময়লা-মাটি লাগবে যা তোর দেহ-মনের মাঝে —
সাফ হবে সব, দাঁড়াবি তুই যেম্নি জায়নামাজে;
রোজগার তুই করবি যদি আখেরের ফসল।।
ওরে চল নামাজে চল।।

তুই হাজার কাজের অছিলাতে নামাজ করিস কাজা,
খাজনা তারি দিলি না, যে দ্বীন-দুনিয়ার রাজা;
তাঁরে পাঁচ বার তুই করবি মনে, তাতেও এত ছল্।।
ওরে চল নামাজে চল।।

কার তরে তুই মরিস খেটে; কে হবে তোর সাথী;
বে-নামাজীর আঁধার গোরে কে জ্বালাবে বাতি;
খোদার নামে শির লুটায়ে জীবন কর্ সফল।
ওরে চল নামাজে চল।।

মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই

মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই।
যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই।।

আমার গোরের পাশ দিয়ে ভাই নামাজীরা যাবে,
পবিত্র সেই পায়ের ধ্বনি এ বান্দা শুনতে পাবে।
গোর-আজাব থেকে এ গুনাহগার পাইবে রেহাই।।

কত পরহেজগার খোদার ভক্ত নবীজীর উম্মত
ঐ মসজিদে করে রে ভাই, কোরান তেলাওয়াত।
সেই কোরান শুনে যেন আমি পরান জুড়াই।।

কত দরবেশ ফকির রে ভাই, মসজিদের আঙ্গিনাতে
আল্লার নাম জিকির করে লুকিয়ে গভীর রাতে,
আমি তাদের সাথে কেঁদে কেঁদে
(আল্লার নাম জপতে চাই)।।

মা গো আমায় কেন শিখাইলি কেন আল্লাহ নাম

মা গো আমায় কেন শিখাইলি কেন আল্লা নাম
নাম জপিতে আর হুঁশ থাকে না, ভুলি সকল কাম।।
লোকে বলে, আল্লাতালায় যায় না না-নাকি পাওয়া;
ও-নাম জপিলে প্রানে কেন বহে দখিন হাওয়া!
ও-নাম জপিলে হিয়ার মাঝে
কেন এত ব্যাথা বাজে,
কে তবে মা আমার বুকে কাঁদে অবিরাম।।

পুরুষরা সব মসজিদে যায়
আমি ঘরে কাঁদি;
কে যেন কয় কানের কাছে-তুই যে আমার বাঁদী
তাই ঘরে রাখি বাঁধি।

মাগো আমার নামাজ রোজা খোদায় ভালোবাসা,
ঐ নাম জপিলেই মিটে আমার বেহেশতের পিয়াসা!
শত ঈদের চাঁদও দিতে নারে আল্লাহ নামের দাম।।

মাদল বাজিয়ে এল বাদল মেঘ এলোমেলো

মাদল বাজিয়ে এল বাদল মেঘ এলোমেলো
মাতলা হাওয়া এল বনে।
ময়ুর-ময়ুরী নাচে কলো জামের গাছে
প্রিয়া পিয়া বন-পাপিয়া ডাকে আপন মনে।।

বেত -বনের আড়ালে ডাহুকী ডাকে
ডাকে না এমন দিনে কেহ আমাকে;
একলা মনে টেকে না ঘরের কোণে।।

জঙ্গল পাহাড় কাঁপে বাজের আওয়াজে,
বুকের মাঝে তবু নুপুর বাজে;
ঝিঁঝি তার ডাকে ভুলে
ঝিম্‌ ঝিম্‌ ঝিম্‌ বৃষ্টির বাজ্না‌ শোনে।।

মালা গাঁথা শেষ না হতে তুমি এলে ঘরে

মালা গাঁথা শেষ না হতে তুমি এলে ঘরে,
শূন্য হাতে তোমায় বরণ করব কেমন ক’রে?

লজ্জা পাবার অবসর মোর
দিলে না হে চঞ্চল, চোর,
সজ্জা-বিহীন মলিন তনু দেখলে নয়ন ভরে।।

বিফল মালার ফুলগুলি হায় কোথায় এখন রাখি,
ক্ষণিক দাঁড়াও, ঐ কুসুমে (তোমার) চরণ দু’টি ঢাকি।
(তোমার) চরণ দুটি ঢাকি।

আকুল কেশে পা মুছিয়ে
করব বাতাস আঁচল দিয়ে,
মোর নয়ন হবে আরতি-দীপ তোমার পূজার তরে।।

মিটিল না সাধ ভালোবাসিয়া তোমায়

মিটিল না সাধ ভালোবাসিয়া তোমায়।
তাই আবার বাসিতে ভালো আসিব ধরায়।

আবার বিরহে তব কাঁদিব
আবার প্রণয়-ডোরে বাঁধিব
শুধু নিমেষেরি তরে আঁখি দুটি জলে ভ’রে
ঝ’রে যাব অবেলায়।।
যে গোধূলি-লগ্নে নববধূ হয় নারী
(সেই) গোধূলি-লগ্নে বঁধু দিল আমারে
গেরুয়া শাড়ি

বঁধু আমার বিরহ তব গানে
সুর হয়ে কাঁদে প্রাণে প্রাণে
আমি নিজে নাহি ধরা দিয়ে সকলের প্রেম নিয়ে
দিনু তব পায়।।

মেঘ-বরণ কন্যা থাকে মেঘলামতীর দেশে

মেঘ-বরণ কন্যা থাকে
মেঘলামতীর দেশে।
সেই দেশে মেঘ জল ঢালিও
তাহার আকুল কেশে।।

তাহার কালো চোখের কাজল
শাওন- মেঘের চেয়ে শ্যামল,
চাউনিতে তার বিজলি ছড়ায়,
চমক বেড়ায় ভেসে ।।

সে ব’সে থাকে পা ডুবিয়ে
ঘুমতী নদীর জলে;
সেু দাঁড়িয়ে থাকে ছবির মত
একলা তরু-তলে।

কদম ফুলের মালা গেঁথে
ছড়িয়ে সে দেয় ধানের ক্ষেতে;
তারে দেখতে পেলে আমার কথা
কইও ভালোবেসে।।

মেষ চারণে যায় নবী কিশোর রাখাল-বেশে

মেষ চারণে যায় নবী কিশোর রাখাল-বেশে
নীল রেশমি রুমাল বেঁধে তার চারু- চাঁচর কেশে।

তাঁর রাঙা পদতলে পুলকে ধরা টলে
তাঁর রূপ -লাবনির ঢলে মরুভূমি গেল ভেসে।।

তাঁর মুখে রহে চাহি মেষ-শিশু তৃণ ভুলি’,
বিশ্বের শাহানশাহ আজ মাখে গোঠের ধূলি,
তাঁর চরণ-নখরে কোটি চাঁদ কেঁদে মরে
তাঁর ছায়া ক’রে চলে আকাশে মেঘ এসে।।,
কিশোর নবী গোঠে চলে–
তাঁর চরণ-ছোঁয়ায় পথের পাথর
মোম হয়ে যায় গ’লে
তসলিম জানায় পাহাড়
চরণে ঝুঁকে তাঁহার।
নারঙ্গী আঙুর খর্রজু পায়ে নজরানা দেয় হেসে।।

মোর না মিটিতে আশা ভাঙিল খেলা

মোর না মিটিতে আশা ভাঙিল খেলা।
জীবন প্রভাতে এ লো বিদায়-বেলা।।
আঁচলের ফুলগুলি করুণ নয়ানে
নিরাশায় চেয়ে আছে মোর মুখপানে,
বাজিয়াছে বুকে যেন, কার অবহেলা।।

আঁধারের এলোকেশ দু’ হাতে জড়ায়ে
যেতে যেতে নিশীথিনী কাঁদে বন-ছায়ে।

বুঝি দুখ-নিশি মোর
হবে না হবে না ভোর;
ভিড়িবে না কূলে মোর বিরহের ভেলা।।

যখন আমার কুসুম ঝরার বেলা

যখন আমার কুসুম ঝরার বেলা,
তখন তুমি এলে
ভাটির স্রোতে ভাসলো যখন
ভেলা পারের পথিক এলে।।

আঁধার যখন ছাইল বনতল
পথ হারিয়ে এলে হে চঞ্চল
দীপ নিভাতে এলে হে বাদল
ঝড়ের পাখা মেলে।।

শূন্য যখন নিবেদনের থালা
তখন তুমি এলে
শুকিয়ে যখন ঝরল বরণ-মালা
তখন তুমি এলে।।

নিরশ্রু এই নয়ন-পাতে
শেষ পূজা মোর আজকে রাঁতে
নিবু নিবু প্রাণ-শিখাতে
আরতি-দীপ জ্বেলে।।

যাবার বেলায় সালাম লহো হে পাক রমজান

যাবার বেলায় সালাম লহো হে পাক রমজান।
তবু বিদায়-ব্যাথায় কাঁদিছে নিখিল মুসলিম জাহান।।

পাপীর তরে তুমি পারের তরী ছিলে দুনিয়ায়,
তোমারি গুণে দোজখের আগুন নিভে যায়;
তোমারি ভয়ে লুকিয়ে ছিল শয়তান।

ওগো রমজান, তোমারি তরে মুসলিম যত
রাখিয়া রোজা ছিল জাগিয়া চাহি তব পথ;
আনিয়াছিলে দুনিয়াতে তুমি পবিত্র কোরআন।।

পরহেজ্গা‌রের তুমি যে প্রিয় প্রাণের সাথী,
মসজিদে প্রাণের তুমি যে জ্বালাও দ্বীনের বাতি,
উড়িয়ে গেলে যাবার বেলায় নূতন ঈদের চাঁদের নিশান।

যে আল্লাহ কথা শোনে তারি কথা শোনে লোকে

যে আল্লাহ কথা শোনে
তারি কথা শোনে লোকে।
আল্লাহ নূর যে দেখেছে
পথ পায় লোক তার আলোকে।।

যে আপনার হাত দেয় আল্লায়,
জুলফিকারের তেজ সেই পায়;
যার চোখ আছে খোদার জ্যোতি
রাত্রি পোহায় তারি চোখে।

ভোগের তৃষ্ণা মিটেছে যার
খোদার প্রেমের শিরনি পেয়ে,
যায় বাদশা-নবাব গোলাম হয়ে
সেই ফকিরের কাছে যেয়ে।

আসে সেই কওমের ইমাম সেজে
কওমকে পেয়েছে যে,
তারি কাছে খোদার দেওয়া
শান্তি আছে দুখে-সুখে।।

যে পেয়েছে আল্লার নাম সোনার কাঠি

যে পেয়েছে আল্লার নাম সোনার কাঠি
তার কাছে ভাই এই দুনিয়া দুধের বাটি।।

দ্বীন দুনিয়া দুই-ই পায় সে মজা লোটে।
সে সদাই বিভোর পিয়ে খোদার এশক খাঁটি।।

সে গৃহী, তবু ঘরে তাহার মন থাকে না;
হাঁসের মতো জলে থেকেও জল মাখে না।
তার সবই সমান খাঁটি সোনা এঁটেল মাটি।।

সবই খোদার দান ভেবে সে গ্রহন করে,
দুঃখ-অভাব সুখের মতোই জড়িয়ে ধরে
ভোগ করে সে নিত্য বেহেশত পরিপাটী।।

যে রসুল বলতে নয়ন ঝরে

যে রসুল বলতে নয়ন ঝরে
সেই রসুলের প্রেমিক আমি।
চাহে আমার হৃদয়-লায়লী
সে মজনুরে দিবস-যামী।।

ফরহাদ সে, আমি শিরী
ওই নামের প্রেমে পথে ফিরি;
ঈমান আমার রইল কি না
জানেন তিনি অন্তর্যামী।।

প্রেমে তাঁহার দীওয়ানা হয়ে
গেল দুনিয়া আখের সবই;
কোথায় রোজা,কোথায় নামাজ,
কেবল কাঁদি :`নবী নবী।’

রোজ-কেয়ামত আসবে কবে ;
কখন তাঁহার দীদার হবে;
নিত্য আমার রোজ-কেয়ামত
বিনে আমার জীবন-স্বামী।।

যেতে নারি মদিনায়, আমি নারী হে প্রিয় নবী

যেতে নারি মদিনায়, আমি নারী হে প্রিয় নবী!
আমারই ধ্যানে এসো প্রাণে এসো আল-আরবী।।

তপ্ত যে নিদারুণ আরবের সাহারা গো
শীতল হৃদে মম রাখিব তোমারই ছবি।।

ভালোবাস যদি সে মরুভূ ধূসর গো
জ্বালায়ে, হৃদি মম করিব সাহারা গোবি।।

হে প্রিয়তম, গোপনে তব তরে আমি কাঁদি
তোমারে দিয়াছি মোর, দুনিয়া আখের সবই।।

যেদিন রোজ হাশরে করতে বিচার

যেদিন রোজ হাশরে করতে বিচার
তুমি হবে কাজী,
সেদিন তোমার দিদার আমি
পাব কি আল্লাজী।।

সেদিন নাকি তোমার ভীষন কাহহার-রূপ দেখে
পীর পয়গাম্বর কাঁদবে ভয়ে ‘ইয়া নফসি’ ডেকে।
সেই সুদিনের আশায় আমি নাচি এখন থেকে।
আমি তোমায় দেখে হাজার বার দোজখ যেতে রাজী (আল্লা)।।

যে রূপে হোক বারেক যদি দেখে তোমায় কেহ,
দোজখ কি আর ছুঁতে পারে পবিত্র তার দেহ।
সে হোক না কেন হাজার পাপী, হোক না বে-নামাজী।।

ইয়া আল্লাহ, তোমার দয়া কত, তাই দেখাবে ব’লে
রোজ হাশরে দেখা দেবে বিচার করার ছলে।
প্রেমিক বিনে কে বুঝিবে তোমার এ কারসাজি।।

 রসুল নামের ফুল এনেছি রে

রসুল নামের ফুল এনেছি রে
(আয়) গাঁথবি মালা কে?
এই মালা নিয়ে রাখবি বেঁধে
আল্লা তালাকে॥

অতি অল্প ইহার দাম
শুধু আল্লা রসুল নাম,
এই মালা প’রে দুঃখ-শোকের
ভুলবি জ্বালাকে॥

এই ফুল ফোটে ভাই দিনে রাতে
(ভাই,রে ভাই!) হাতের কাছে তোর
ও তুই কাঁটা নিয়ে দিন কাটালি রে
তাই রাত হ’ল না ভোর।

এর সুগন্ধ আর রূপ র’য়ে যায়
নিত্য এসে তোর দরজায় রে
পেয়ে ভাতের থালা ভুললি রে তুই
চাঁদের থালাকে॥

রুম ঝুম ঝুম বাদল নুপুর বোলে

রুম ঝুম ঝুম বাদল নুপুর বোলে।
তমাল-বরনী কে নাচে গগন কোলে

তার অঙ্গের লাবনী যেন ঝরে অবিরল
হয়ে শীতল মেঘলামতির ধারাজল;
কদম ফুলের পীত উত্তরী তার
পুব হাওয়াতে দোলে।

বিজলি ঝিলিকে তারবন মালার
আভাস জাগে,
বন-কুন্তলা ধরা হল শ্যাম মনহরা
তাহারই অনুরাগে।

তারে হেরি পাপিয়া পিয়া পিয়া কহে,
সাগর কাঁদে, নদীজল বহে;
ময়ূর-ময়ূরী বন-শর্বরী
নাচে টলে টলে।।

লহ সালাম লহ, দ্বীনের বাদশাহ

লহ সালাম লহ, দ্বীনের বাদশাহ
জয় আখেরি নবী।
পীড়িত জনগণে মুক্তি দিতে এলে
হে নবীকুলের রবি।।

তুমি আসার আগে ধরার মজলুম
তরিত ফরিয়াদ, চোখে ছিল না ঘুম;
ধরার জিন্দানে বন্দী ইনসানে
আজাদী দিতে এলে, হে প্রিয় আল-আরবি।।

তব দামন ধরি’ যত গুনাহগার
মাগিল আশ্রয়,
তুমিই করিবে পার।

মানুষ ছিল আগে বন্য পশু প্রায়
কাঁদিত পাপে-তাপে অভাবে-বেদনায়,
শান্তিদাতা-রূপে সহসা এলে তুমি
ফুটিল দুনিয়ায় নব বেহেশতের ছবি।।

লাল নটের ক্ষেতে, লাল টুকটুকে বৌ যায় গো

লাল নটের ক্ষেতে, লাল টুকটুকে বৌ যায় গো
(তার) আলতা পায়ের চিহ্ন এঁকে নালতা শাকের হায় গো।।

লাল নটের খেতে মৌমাছি ওঠে মেতে
তার রূপের আঁচে পায়ের তলায় মাটি ওঠে তেতে।
লাল পুঁইয়ের লতা নুয়ে পড়ে জড়িয়ে ধরে পায় গো।।

কাঁকল বাকা রাখাল ছোঁড়া আগল দাঁড়ায় আল–
রাঙা বৌয়ের চোখে লাগে লাল লঙ্কার ঝাল।

বৌয়ের ঘেমে ওঠে গা
লাজে সরে না পা
সে মুখ ফিরিয়ে শাড়ির আঁচর আঙুলে জড়ায় গো।

শোনো শোন য়্যা ইলাহি আমার মুনাজাত

মোনাজাত

শোনো শোন য়্যা ইলাহি
আমার মুনাজাত।
তোমারি নাম জপে যেন
আমার হৃদয় দিবস-রাত।।

যেন কানে শুনি সদা
তোমারি কালাম, হে খোদা,
চোখে যেন দেখি শুধু
কোরআনের আয়াত।।

মুখে যেন জপি আমি
কলমা তোমার দিবস-যামী,
(তোমার) মসজিদেরই ঝাড়ু-বর্দার
হোক আমার এ হাত।।

সুখে তুমি, দুখে তুমি,
চোখে তুমি, বুকে তুমি,
এই পিয়াসী প্রানের খোদা
তুমিই আব-হায়াত।।

সজল হাওয়া কেঁদে বেড়ায়

সজল হাওয়া কেঁদে বেড়ায়
কাজল আকাশ ঘিরে’,
তুমি এস ফিরো।
উঠছে কাঁদন ভাঙন-ধরা
নদীর তীরে তীরে।
তুমি এস ফিরে।।

বন্ধু তব বিরহেরি
অশ্রু ঝরে গগন ঘেরি’,
লুটিয়ে কাঁদে বনভূমি
অশান্ত সমীরে।।

আকাশ কাঁদে, আমি কাঁদি,
বাতাস কেঁদে সারা;
তুমি কোথায়, কোথায় তুমি
পথিক পথহারা।

দুয়ার খুলে নিরুদ্দেশে
চেয়ে আছি অনিমিষে,–
আঁচল ঢেকে রাখবো কত
আশার প্রদীপটিরে।।

ভারতবর্ষ
শ্রাবণ ১৩৪৩

সেদিন অভাব ঘুচবে কি মোর

সেদিন অভাব ঘুচবে কি মোর
যেদিন তুমি আমার হবে?
আমার ধ্যানে আমার জ্ঞানে
প্রাণ মন মোর ঘিরে রবে।।

রইবে তুমি প্রিয়তম
আমার দেহে আত্মা-সম,
জানি না সাধ মিটবে কি-না –
তেমন করেও পাব যবে।।

পাওয়ার আমার শেষ হবে না
পেয়েও তোমায় বক্ষতলে,
সাগর মাঝে মিশে গিয়েও
নদী যেমন ব’য়ে চলে।

চাঁদকে দেখে পরান জুড়ায়
তবু দেখার সাধ কি ফুরায়,
মিটেছেল সাধ কি রাধার
নিত্য পেয়েও নীল-মাধবে।।

সোজা পথে চল রে ভাই, ঈমান থেকো ধরে

সোজা পথে চল রে ভাই, ঈমান থেকো ধরে।
খোদার রহম মেঘের মতো ছায়া দেবে তোরে।।

তুমি বিচার করো না, কেউ করলে তোমার ক্ষতি;
এক সে বিচার-করনেওয়ালা ত্রিভুবনের পতি।
তোর ক্ষতির ডালে ধরবে মোতি তাঁর বিচারের জোরে।।

সকল সময় ধরে থেকো আল্লাহ নামের খুঁটি,
তিনি তোমার হেফাজতে দিবেন ক্ষুধার রুটি;
ইয়াকিন্‌-দীলে থেকো তুমি,দিবেন তোমায় তরে।।

হাওয়াতে নেচে নেচে যায় ঐ তটিনী

খাম্বাজ –কাওয়ালি

হাওয়াতে নেচে নেচে যায় ঐ তটিনী
পাহাড়ের পথ-ভোলা কিশোরী নটিনী।।
তরঙ্গ-আঁচল দুলায়ে,
বন-ভূমির মন ভুলায়ে,
চলেছে চপল পায়ে
একাকিনী উদাসিনী।।

এঁকেবেকে থমকে গিয়ে
হরিণীরে চমকে দিয়ে
ছুটিয়া যায় সুদূরে;
আয় আয় বলি ডাকে কে কুলের বধূরে।

কূলে কূলে ফুটিয়ে ফুল
টগর জবা পলাশ শিমুল,
নেচে চলে পথ বেভুল
ঘর-ছাড়া বিবাগিনী।।

হায় হায় উঠেছে মাতম

হায় হায় উঠেছে মাতম
আকাশ পবন ভুবন ভরি।
আখেরি নবী দ্বীনের রবি নিল বিদায়
বিশ্ব-নিখিল আঁধার করি।।

অসীম তিমিরে পুণ্যের আলো
অানিল যে চাঁদ, সে কোথায় লুকালো;
আকাশে ললাট হানি ‘কাঁদিছে মরুভূমি’
শোকে গ্রহ-তারকা পড়িছে ঝরি।।

তৃণ নাহি খায় উট, মেষ নাহি মাঠে যায়;
বিহগ-শাবক কাঁদে জননীরে ভুলি হায়!

বন্ধুর বিরহ কি সহিল না আল্লার,
তাই তাঁরে ডাকিয়া নিল কাছে আপনার;
হায় কাণ্ডারি গেল চলে’ রাখিয়া পারের তরী।।

 হে প্রিয় নবী রসূল আমার

হে প্রিয় নবী রসূল আমার
প’রেছি আভরণ নামেরি তোমার।।

নয়নের কাজলে তব নাম,
ললাটের টীপে জ্বলে তব নাম;
গাঁথা মম কুন্তলে আহমদ—
বাঁধা মোর অঞ্চলে তব নাম।
দুলিছে গলে মোর তব নাম মণি-হার।।

তাবিজ অঙ্গুরী তব নাম,
বাজু ও পৈচী চুড়ি তব নাম;
ভয়ে ভয়ে পথে পথে ঘুরি যে—
পাছে কেউ করে চুরি তব নাম
ঐ নাম রূপ মোর ঐ নাম আঁখি ধার।।
বুকের বেদনা ঢাকা তব নাম;
ধ্যানে মোর জ্ঞানে মোর তুমি যে—
প্রেম-ও ভক্তি মাখা তব নাম
প্রিয় নাম আহমদ জপি আমি অনিবার।।

হে মদিনাবাসী প্রেমিক, ধর হাত মম

হে মদিনাবাসী প্রেমিক, ধর হাত মম।
জ্বলওয়া দেখালে দীল হরিলে শুধু হলে বেগানা;
হেসে হেসে সংসার কহে–দীওয়ানা এ দীওয়ানা॥
হে মদিনাবাসী প্রেমিক, ধরো হাত মম।।

দুখের দোসর কেউ নাহি মোর নাই ব্যথিত ব্যথার,
তোমায় ভুলে ভাসি অকূলে, পার করো সরকার॥
হে মদিনাবাসী প্রেমিক, ধরো হাত মম।।

বিরহের রাত একেলা কেঁদে হলো ভোর;
হৃদয়ে মোর শান্তি নাই, কাঁদে পরাণ মোর॥
হে মদিনাবাসী প্রেমিক, ধরো হাত মম।

হেরেমের বন্দিনী কাঁদিয়া ডাকে

হেরেমের বন্দিনী কাঁদিয়া ডাকে–
তুমি শুনিতে কি পাও?
আখেরি নবী প্রিয় আল-আরবি বারেক ফিরে চাও।।

পিঁজরার পাখি সম অন্ধকারায়
বন্ধ থাকি’ এ জীবন কেটে’ যায়;
কাঁদে প্রাণ ছুটে যেতে তব মদিনায়
মরণের এই জিঞ্জির খুলে’ দাও।।

ফতেমার মেয়েদের হেরি’ আঁখি-নীর
বেহেশতে কেমনে আছ তুমি থির!
যেতে নারি মসজিদে শুনিয়া আজান,
বাহিরে ওয়াজ হয়, ঘরে কাঁদে প্রাণ
ঝুটা এই বোরখার হোক অবসান–
আঁধারে হেরেমে আশা-আলোক দেখাও।।

Exit mobile version