Site icon BnBoi.Com

পঞ্চাঙ্গনা – কাজী নজরুল ইসলাম

পঞ্চাঙ্গনা - কাজী নজরুল ইসলাম

আনার কলি! আনার কলি!

আনার কলি! আনার কলি!
স্বপ্নে দেখে কোন ডালিমকুমারে
এসেছিলে রেবা ঝিলমের পারে
দিতে তব রাঙা হৃদয়ের অঞ্জলি॥
মরুর মণিকা বাদশাহি নওরোজে
এসেছিল কোন হারানো হিয়ার খোঁজে
তব রূপ হেরি হেরেমের দীপমালা
উঠেছিল চঞ্চলি॥
পতঙ্গ সম পাপড়ির পাখা মেলি
আনার কলি গো
সেলিমের অনুরাগে মোমের প্রদীপ
পড়িলে ঢলি গো
মিলায়েছে মাটিতে মোগলের মসনদ
আনার কলি॥
তুমি আজও দুলিতেছ ফুলের হাসিতে

বিরহীর বাঁশিতে, আনার কলি
তব, জীবন্ত সমাধির বিগলিত পাষাণে
আজও প্রেম যমুনার ঢেউ
ওঠে উথলি॥

চাঁদের কন্যা চাঁদ সুলতানা চাঁদের চেয়েও জ্যোতি

চাঁদের কন্যা চাঁদ সুলতানা চাঁদের চেয়েও জ্যোতি
তুমি দেখাইলে মহিমান্বিতা নারী কী শক্তিমতী
শিখালে কাঁকন চুড়ি পরিয়াও নারী
ধরিতে পারে সে উদ্ধত তরবারি
না রহিত অবরোধের দুর্গ, হত না এ দুর্গতি॥
তুমি দেখালে নারীর শক্তি স্বরূপ
চিন্ময়ী কল্যাণী
ভারত-জয়ীর দর্প নাশিয়া
মুছালে নারীর গ্লানি;
তুমি গোলকুণ্ডার কোহিনুর হিরা সম
আজও ইতিহাসে জ্বলিতেছ নিরুপম
রণরঙ্গিণী ফিরে এসো, ফিরে এসো
তুমি ফিরিয়া আসিলে ফিরিয়া আসিবে
লক্ষ্মী-সরস্বতী॥

নূরজাহান! নূরজাহান!

নূরজাহান! নূরজাহান!
সিন্ধু নদীতে ভেসে (এলে) মেঘলা-মতির দেশে
ইরানি গুলিস্থান॥
নার্গিস লালা গোলাপ আঙুর-লতা
শিঁরি-ফরহাদ-শিরাজের উপকথা
এসেছিলে তুমি তনুর পেয়ালা ভরি
বুলবুলি, দিলরুবা, রবাবের গান॥
তব প্রেমে উন্মাদ ভুলিল সেলিম সে যে রাজধিরাজ–
চন্দন সম মাখিল অঙ্গে কলঙ্ক লোক-লাজ।
যে কলঙ্ক লয়ে হাসে চাঁদ নীলাকাশে
(যাহা) লেখা থাকে শুধু প্রেমিকের ইতিহাসে
দেবে চিরদিন নন্দন-লোকচারী
তব সেই কলঙ্ক সে প্রেমের সম্মান॥

মোমতাজ! মোমতাজ! তোমার তাজমহল

মোমতাজ! মোমতাজ! তোমার তাজমহল
(যেন) বৃন্দাবনের এক মুঠো প্রেম আজও করে ঝলমল
(কত) সম্রাট হল ধূলি স্মৃতির গোরস্থানে
পৃথিবী ভুলিতে নারে প্রেমিক শাহজাহানে
শ্বেত মর্মরে সেই বিরহের ক্রন্দন মর্মর
গুঞ্জরে অবিরল।
কেমনে জানিল শাহজাহান? প্রেম পৃথিবীতে মরে যায়,
(তাই) পাষাণ প্রেমের স্মৃতি রেখে গেল পাষাণে লিখিয়া হায়!
(যেন) তাজের পাষাণ অঞ্জলি লয়ে বিধাতা পানে
অমৃত প্রেম বিরহী-আত্মা আজও অভিযোগ হানে
(বুঝি) সেই লাজে বালুকায় মুখ লুকাইতে চায়
শীর্ণা-যমুনা-জল॥

রাজার দুলালি জুলেখা আজিও কাঁদে

রাজার দুলালি জুলেখা আজিও কাঁদে
কাঁদে ইউসুফ তরে।
অশ্রু তাহার দূর নভ হতে
রাতের শিশিরে ঝরে॥
আসে বসন্ত ফোটে কুসুম
কিংশুকের আজিও ভাঙে না তো ঘুম,
যার এতো রূপ সে কীগো পাষাণ
প্রিয়ারে না মনে পড়ে॥
যুগ-যুগান্ত কাঁদে জুলেখা
বিরহ-সিন্ধু কূলে
চোখে লয়ে জল আসে ইউসুফ
বুঝি আজ পথ ভুলে।
মাধবী নিশীথ ডাকে বুলবুল
ফাল্গুন সমীরণ হয়েছে আকুল,
মিলন পরশে দু-জনার মন
ক্ষণে ক্ষণে শিহরে॥

লুকায়ে রহিলে চিরদিন তুমি শিশমহলের শার্সিতে

লুকায়ে রহিলে চিরদিন তুমি শিশমহলের শার্সিতে
তব রূপ হায় রূপায়িত হল শুধু হেরেমের আরশিতে॥
অমৃত অশ্রুনিশা –
পিঞ্জরে চিরবন্দিনী চিরযোগিনী – জেবুন্নিসা,
তোমার দিওয়ানে, ওগো শাহজাদি কবি
আঁকিলে যে তব বিরহ-বিষাদ ছবি,
লাজ পায় হায় তাজমহল তাহারই করুণ সংগীতে॥
কোন সে তরুণ কবি
তোমারে তোমার কবিতা রচে যে সুন্দর দেখেছিল
গোলাপ ফুলের পাপড়িতে তব ছবি
প্রেম চন্দনে এঁকেছিল
প্রিয়ার আদেশে আগুনের দাহ সহি
পুড়িল প্রেমিক একটি কথা না কহি
সেই মৌন প্রেমের মহিমা আজিও জাগে
ঝরা গোলাপের সুরভিতে॥

Exit mobile version